প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০১

0
412

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#দ্বিতীয়_সিজন(১ম_পর্ব)

অবন্তীকে মেঝে থেকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাতের কাগজটার দিকে লক্ষ করলাম কি এমন আছে এখানে লেখা যার জন্য অবন্তী হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
কাগজে লেখা গুলো দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। চন্দ্রিমা অবন্তী পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি কাগজে থেকে মুখ তুলে চন্দ্রিমার দিকে তাকালাম।
“চন্দ্রিমা, ছোট মা’র অবন্তী ছাড়াও একটা ছেলে আছে এটা তোমরা আমায় এতোদিন জানালে না কেন! আর এই সামান্য একটা লেখা পড়ে অবন্তী এমন অজ্ঞান হয়ে গেলো কেন! ”
আমার কথা শুনে মনে হচ্ছে চন্দ্রিমা শক লেগে গেলো।
– তোমাকে কিভাবে বলবো, আমরা নিজেরাই তো জানতাম না। হয়তো অবন্তীও আজকেই প্রথম জানলো। তাই জন্য সেই শক নিতে না পেরেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– সেখানে গিয়ে কতদিন থাকলাম কেউ একবার ও সেই বাড়ির ছেলের ব্যাপারে বিন্দু মাত্র কোনো আলোচনা করলো না কেন?
– আমি তো সেখানে ছোট থেকেই আছি। আমি তো কোনো দিন কাউকে এমন কিছু আলোচনা করতে শুনিনি।
– তোমাদের ঐ বাড়িতে আর কতো অজানা কথা লুকিয়ে আছে! রাজা বাদশা আমলের মতো কোনো গোপন কক্ষ আছে নাকি যেখানে সব সিক্রেট জানতে পারবো।
– তুমি মজা নিচ্ছো? এতো বড় একটা বিষয় এতো বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনো বড় কারণ আছে।
– তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সব কিছু আম্মু জানতো কি করে! কে বলতো আম্মুকে!

দু’জনেই কিছু সময় নিরবতায় বসে আছি। এর মাঝেই অবন্তী চোখ খুললো। চোখ খুলতেই কান্না জুড়ে দিলো। – ভাইয়া তুমি বড় মা’র লেখা কাগজটা পড়ছো?
– হ্যাঁ পড়েছি। এখন এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
অবন্তী কান্না করেই যাচ্ছে। আমি অবন্তীর সামনে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চন্দ্রিমা কে বললাম- তুমি আর অবন্তী না হয় এখানেই ঘুমিয়ে পড়। আমি আম্মুর রুমে শুয়ে পড়ছি।
– না, আজ তোমাদের বাসর রাত। আমি এসে সব কিছু নষ্ট করে দিলাম। আমি ঐ রুমে যাচ্ছি তোমরা এখানে থাকো।
– তোমার একা থাকার দরকার নেই। নয়তো সারা রাত কান্না করবা। তার থেকে ভালো আমি যেটা বললাম সেটাই করো। এখানেই শুয়ে পড়।

আম্মুর রুমে পায়চারি করছি। সব কিছু কেমন গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। আমার হাতের পেইজটা ভালো করে দেখছি এটা তো ঐ ডায়েরির পেইজ। হয়তো সেলাই খুলে কোথায় পড়ে ছিলো। আচ্ছা একবার কি আব্বু কে কল করবো! এতো রাতে কল করা উচিত হবে না।

আনমনে হেঁটেই চলছি। না হাটার অবসান হচ্ছে আর না ভাবনার। কোনো কিছুই নদীর কিনারায় নেই মনে হচ্ছে মাঝ নদীতে ভাসছে শুধু। তখনই চোখ পড়লো দরজার দিকে কেউ চন্দ্রিমা দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ চন্দ্রিমাকে দেখে হার্ট বিট কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল।
– তুমি এখানে! অবন্তী ঘুমিয়ে গেছে?
– হ্যাঁ।
– তুমি এখানে কি করছো?
– তুমি ঘুমিয়েছ কি না সেটা দেখতে আসছি।
– তুমি ঘুমিয়ে পড় আমার দেরি হবে।
– তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে চলো।
– সেটা কিভাবে?
– আমি মাঝে থাকবো তোমার কাছে। নয়তো তুমি একা একা এভাবেই হাঁটতে থাকবে ঘুমাবে না।
চন্দ্রিমা আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো।

আমার বুকে মাথা রেখে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে আছে।
– আজকের রাত নিয়ে আমার কতো ভাবনা ছিলো কিন্তু সব কিছু এভাবে হবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি।
– হুম।
– তুমি এখনো এসব নিয়ে পড়ে আছো! আজ ঘুমাও যা ভাবার কাল ভেবো।

রাতে যতসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমিয়ে গিয়েছি। এখন সময় ঠিক কত সেটা আন্দাজ করতে পারছি না। চন্দ্রিমা আমার সামনে চা হাতে দাঁড়িয়ে বসে আছে।
– অনেকটা বেলা হয়ে গেছে। এখন ঘুম থেকে ওঠো।
– ক’টা বাজে!
– প্রায় বারোটা।
– অবন্তী কোথায়!
– ও তো কোচিং গিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো ফিরে আসবে।
– তুমি যাও নি!
– গতকাল কেবল বিয়ে করলাম তো আজকেই আবার পড়তে ভালো লাগবে! তাই যাই নি।

ফ্রেশ হয়ে বারন্দায় বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে রাদিয়াকে কল করলাম।
– ভাইয়া এতো দিন পর কেমন আছো!
– ভালোই। তুমি কেমন আছো?
– আমি তো ভালোই আছি।
– তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করলে তুমি কি সঠিক উত্তর দিবা?
– কি কথা ভাইয়া! তোমার কন্ঠ এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেন!
– অবন্তীর কি আদৌও কোনো ভাই ছিলো!
রাদিয়া চুপ হয়ে গেলো।
– রাদিয়া, বলো।
– আমি জানিনা ভাইয়া।
– আমি তোমার থেকে আমার এই প্রশ্নের উত্তর টা আশা করছিলাম। কিন্তু তুমি নিরাশ করলে। ভলো থেকো আল্লাহ হাফিজ।
কল কাটাতে যাবো ঠিক তখনই রাদিয়া বললো- ভাইয়া একটু দাঁড়াও। অবন্তীর একটা বড় ভাই ছিলো। আরশ ভাইয়া। ও আমার থেকে মনে হয় কয়েক বছরের বড় হবে। তোমার বয়সের অথবা তোমার থেকে কিছুটা ছোট।
– সে কোথায় এখন! তার ব্যাপারে অবন্তীরা কেউ কিছু জানে না কেন?
– অবন্তী চন্দ্রিমা অধরা এরা যখন কেবল বুঝতে শিখছে সেই সময় একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভাইয়া জেলে চলে যায়।
– কি দুর্ঘটনা?
– ভাইয়া মাদকাসক্ত ছিলো। বাসার সবাই হাজার নিষেধ করা সত্বেও সে কারো কথা শুনতো না। একদিন হঠাৎই জানতে পারি আরশ ভাইয়াকে পুলিশ আটক করেছে।
– মাদক নেওয়ার জন্য!
– না।
– তবে!
– মাদকাসক্ত হয়ে একটা মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগে। কিন্তু ভাইয়া বিশ্বাস করো আরশ ভাইয়া নেশা করলেও ও মেয়েদের সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করেনি।
– প্রবল নেশা মানুষের বিবেক কে বিকলাঙ্গ করে দেয়। বাসা থেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করে নি?
– মেয়ে জাতীয় মামলা হওয়ার জন্য কেউ ভাইয়াকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা করেনি। দাদুকে ভয় পেয়ে কেউ কখনো সে বিষয়ে কথা বলেনি। দাদুকে তো জানোই। এখন তো অনেক দিন কেটে গেছে সেটাও সবাই ভুলেই গিয়েছে প্রায়।

রাদিয়ার কল কাটলাম।
সবাই ভুলে গেলেও মা সে তো আর কখনো ভুলতে পারবে না। এই জন্য সেদিন ছোট মা কে সেন্ট্রাল জেলে দেখেছিলাম। কিন্তু আব্বু নিজের ছেলের প্রতি এমন অবিচার কিভাবে করলো? যে কিনা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসে।

বিকেলে অবন্তীর সাথে বসে চা’য়ে চুমক দিচ্ছি।
– আমার ভাইয়া যদি আমার পাশে থাকতো তবে আমিও আম্মুর মতোই ভাগ্যবতী হতাম।
– কিভাবে!
– আম্মুর একজন ভাইয়া ছিলো একটু অস্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু আম্মুকে খুব ভালোবাসতো। আম্মুকে কেউ কষ্ট দিলে তাকে আচ্ছা শিক্ষা দিতো।
– ভালো তো। আচ্ছা অবন্তী তুমি তোমার ভাইয়াকে দেখতে চাইবে অবশ্যই।
– দেখতে তো অনেক ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি তো অনেক দূরে।
– চলো একবার ঘুরে আসি তোমাদের বাড়ি থেকে। আমার শ্বশুর বাড়িটাও দেখে আসা হবে নাহয়।
– আচ্ছা।
সেখানে গিয়েই বাকী কি কি লুকিয়ে আছে এই চোখে দেখা সত্যির পিছনে সেইসব জেনে নিতে হবে। আমার রক্তে কখনো কলঙ্ক থাকতে পারে না।

চলবে।

প্রিয় চন্দ্রিমা সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে