প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৬

0
262

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৬ষ্ঠ_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
এখন ভোর রাত,
চন্দ্রিমা গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। কিন্তু আমার দু-চোখেে যেন বিন্দু মাত্র ঘুম নেই। সারাটা সময় বিভিন্ন কিছু মাথায় এসে জুড়ে যাচ্ছে। কখনো হাতের এই চেইন, কখনো ছোট মা’র হঠাৎই আরশকে ছাড়াতে না বলার কারণ। আচ্ছা মায়ার গলার চেইনটা যদি আম্মু ওকে দিয়ে থাকে তবে এই চেইনটা নিশ্চয়ই ছোট মা’র। কারণ তারা দুজন একসময় খুব ক্লজ ছিলো। এটা তাদের পুরাতন ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু গত রাতে যে লোকটা চুপিচুপি বাসা থেকে পালিয়ে গেলো সে তো ছোট মা নয়। সে একজন পুরুষ ছিলো। তবে সে কি চুরি করতে আসছিলো! কিন্তু কিছু চুরি না করেই চলে গেলো! এসব বিভিন্ন ভাবনায় মাথায় প্রচন্ড বোঝ বাড়তে শুরু করলো।

সকালের সূর্য উঠবে সেই মুহুর্তে ঘুমিয়ে পড়ছি। হঠাৎই চন্দ্রিমার গলা শুনে চোখ খুললো। ও কাউকে বলছিলো – তুমি এখানে কি করো! তোমাকে এই রুমে আসতে কে বলেছে!
আমি চোখ খুলে চন্দ্রিমার আগুন ঝড়া চোখ দেখলাম ও দরজায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি তো ঘুমে ছিলাম তবে ও কাকে এসব বলছে!
আমার মাথার কাছে থেকে কেউ বললো- আমি ভাইয়াকে দেখতে এসেছিলাম। এভাবে বলছো মনে হচ্ছে আমি তোমার বর কে নিয়ে যেতে এসেছি।
এখন বুঝতে পারছি মাথার পাশে কেউ আছে।
অধরা আমার মাথার পাশে বসে আছে। এই জন্য চন্দ্রিমা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।
– তুমি বাইরে যাও আমরা এখন রেডি হবো।
অধরা বিরক্তিকর একটা ফেস নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অধরা বের হতেই চন্দ্রিমা দরজা লাগিয়ে এসে আমায় বেডের সাথে চেপে ধরে বললো- তোমায় নিষেধ করছি না ওর ধারের কাছেও যেন না দেখি।
– আমি কি ওর কাছে গিয়েছিলাম নাকি! আমি তো ঘুমে ছিলাম । তুমি হয়তো দরজা খুলে রেখেছিলে তাই ও ভিতরে চলে আসছে।
– ওহ।
চন্দ্রিমা কিছুটা শান্ত হলো।
– বাইরে যাও। আন্টি ডাকছে। রাদিয়া আপুও আসছে ।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম। বাসার মোটামুটি সবাই আছে। সবার উদ্দেশ্যে বললাম – আপনারা সবাই তৈরি হয়েছেন!
মেজো চাচী অবাক হয়ে বললেন – তৈরি কেন হবো! কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে নাকি!
আমি ভেবেছিলাম ছোট মা সবাইকে বলেছে আরশের সাথে ঘুরতে যাওয়া কথাটা। কিন্তু উনি কাউকে বলেনি। ছোট মা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় নিষেধ করছে কাউকে যেন না বলি।

আব্বু বললো- কোথাও যাবে তোমরা!
– শুধু আমরা না। বাসার সবাই যাবে।
ছোট চাচ্চু – কোথায়!
– আরশের সাথে দেখা করতে।
আরশের নাম শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। কিন্তু এরমাঝে দাদু বলে উঠলেন – এই বাসায় আরশ নামের কেউ থাকে না।
– কেউ থাকে বা না থাকে এগুলো শুনতে চাইনি আমি। আমি বলেছি মানে সবাইকে যেতে হবে। বাসার একটা ছেলে এতোদিন ধরে কারাগারে আছে আপনারা কেউ তার খোঁজ নিতে যান নি। আপনারা তাকে একবার বোঝার চেষ্টা করেন নি। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সেটাও যাচাই করেন নি। আজ আমরা সবাই আরশের সাথে দেখা করতে যাবো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন সবাই।
– তুমি কে যে তোমার কথা শুনতে হবে!
– আমি কে সেটা জানা বেশি জরুরি না। এখানে জিদ দেখানোর চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন একই রক্ত শরীরে আছে। আজ যদি আমার সাথে না গিয়ে বাসায় বসে থাকেন তবে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শান্তিতে বসতে দিবো না কখনো। আপনারা সবাই রেডি হয়ে নিন।

রুমে এসে রেডি হচ্ছি। রাদিয়া রুমে আসলো।
– ভাইয়া সত্যি আমরা আরশ ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যাবো!
– হ্যাঁ। কিন্তু তুমি সকাল সকাল কিভাবে আসলে!
– আমি গতকাল শুনেছি তুমি আসছো তাই শুভ্র কে বলতেই ও নিষেধ করেনি।
– সংসার জীবন কেমন চলছে!
– মানুষটা অসম্ভব সুন্দর ভাইয়া। আমায় অনেক ভালোবাসে।
– সৌন্দর্য হারালে কয়েকদিন আফসোস থাকে কিন্তু ভালোবাসা হারানোর আফসোস সারাজীবন থাকে। এই জন্য খুব সহজে কখনো ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দিতে নেই। শেষ অব্দি পাওয়ার চেষ্টা করতে হয় আর শুভ্র সেটাই করেছে।
– হ্যাঁ ভাইয়া। একটা কথা বলি!
– বলো।
– আমার মনে হয় না দাদু যাবে।
– দেখাই যাক না কি হয়। তুমি গিয়ে দেখো তোমার আম্মু চাচী উনারা কি করছে।

এখন রাত,
ছোট মা আজ আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন। আরশের সাথে দেখা করে এসে। আজ আরশ ও অনেকটা শান্তি পেয়েছে বাসার সবার সাথে একসাথে দেখা করে। বাসার সবাই কতটা ভালোবাসে তাকে।
– তুমি এই সময় ছাঁদে কি করছো!
ছোট মা’র কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরলাম।
– তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো! আমি কখনোই ভাবিনি আরশের দাদুও যাবে দেখা করতে।
– আপনার এতোদিনের ইচ্ছে পূর্ণ করতে পেরেছি এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া ধন্যবাদ লাগবে না।
– তোমার রুমে কেউ নেই। চন্দ্রিমা কোথায়!
– হয়তো অবন্তী আর মায়ার সাথে গল্প করছে।
একটা এলবাম আমার দিকে তুলে ধরে বললো- এখানে হয়তো তুমি তোমার বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবে। তবে আমায় ক্ষমা করে দিও বাবা আমি আমার ভালোবাসাকে পেতেই তোমাকে তোমার পরিবার থেকে আলাদা করে দিয়েছি। এই এলবামে আমাদের সব ছবি আছে। অনেক দিন খুব যত্নে আগলে রেখেছিলাম। তোমার আম্মুর মৃত্যুর খবর শুনে প্রচন্ড কান্না এসেছিলো কিন্তু তবুও আমি কান্না করতে পারিনি। কারণ স্বার্থপর মানুষের চোখে কখনো পানি শোভা পায় না।
To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে