প্রতারক part 9

0
1399

প্রতারক part 9
#Roja_islam

আমি ঝলঝল চোখে অবাক হয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে। আবার শুয়ে থাকা পূর্নির দিকে তাকালাম। কি অবস্থা মেয়েটার চোখের নিচে কালি পড়ে আছে শুকিয়ে কাগলাশ হয়ে গেছে।হাত পা মাথা পুরাটা ব্যান্ডেজ করা। দুই হাতে কেনলা লাগানো মুখে অক্সিজেন। কিন্তু খুবি যত্নকরে শুয়িয়ে রেখেছে কেউ এমন মনে হচ্ছে। পূর্নিও শান্তু মেয়ের মতো ঘুমিয়ে আছে। দেখে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার এই অতি চঞ্চল মেয়েটা কত্ত কঠিন অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে।আমার চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পরছে।
.
একটু পড় মাথায় এলো কি করে হলো ওর এই অবস্থা?? কি হয়েছে পূর্নির?? আমি রাহুল কে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো। তার আগেই ঘুমিয়ে থাকা বোনের কপালে চুমু খায় রাহুল। এই দৃশ্য দেখে বুঝতে বাকি নেই রাহুল পূর্নিকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। রাহুল পূর্নির কানেকানে কি জেনো বলছে শুনা যাচ্ছে না আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমি অবাক হয়ে এক্টু এগিয়ে যাবো কি বলে শুনতে তার আগেই রাহুল উঠে খপ করে আমার হাত ধরে বেরিয়ে যায় রুম থেকে আমি পিছু ফিরে তাকিয়ে থাকি পূর্নির রমের দিকে। রাহুল আমায় টানতে টানতে নিয়ে যায় গাড়ীর কাছে। তারপর দরজা খুলে বসিয়ে দেয় ধাক্কা দিয়ে। আমি বুঝতে পাড়ছি রাহুল রেগে আছে কিন্তু প্রশ্ন কেনো?? আমাকে এখানে আনারি বা কি কারণ?? আর পূর্নির এই অবস্থা করলো কে কি হয়েছে ওর।হাজার প্রশ্নে মাথা ফেটে যাচ্ছে!! কিন্তু উত্তর কার কাছে চাইবো রাহুলের কাছে সাহস হচ্ছে না। রাহুল সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে কপালে একহাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে যার ফসফস শব্দ হচ্ছে। এই অদ্ভুত শব্দে ভয়ে কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ আমার ফোন টা বেজে উঠলো। আমি কান্না থামিয়ে তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে ফোন টা হাতে নিলাম। নাম্বার টা দেখে অবাক এর শেষ পর্যায় আমি শিহাব কল করেছে!!
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


বড়বড় অক্ষরে তার নাম। আর কিউট একটা ছবি স্ক্রিনে ভাসছে তা দেখে। আমি এক নজর রাহুলের দিকে তাকালাম। সে সেভাবেই আছে। আমি ফোন টা পিক করবো কি করবোনা দিধাদন্দে পড়ে গেলাম। এসব চিন্তার মাঝে হঠাৎ রিং কেটে গেলো। বুকে আগের মতো ধক করে উঠলো। শিহাব কল লেইট করে পিক করা পছন্দ করে না। আমি চট করে ফোনের দিকে তাকালাম আবার কল আসছে!! আমি ধরেই ফেলছি অমনি রাহুল হাত থেকে ফোন টা নিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিজের কানে ধরে!!
.
— হ্যালো হীর ওয়ের আর ইউ??
— হোয়ায় ব্রো??
.
শিহাব ঝংকার ময় পুরুষালী কন্ঠ শুনে ফোন কান থেকে নামিয়ে।আবার দেখে নেয় এটা হীর এর নাম্বার কিনা। হ্যাঁ এটা হীর এর নাম্বার তাহলে কে ধরলো হীর এর ফোন। হীর কোনো ছেলের সাথে আছে ভাবতেই শিহার দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে।
— হু আর ইউ ম্যান ??
— হীরের বয়ফ্রেন্ড!! হু আর ইউ ব্রো??
.
শিহাবের কান, মুখ গরম হয়ে গেলো ঐপাশে থাকা ছেলের কথা শুনে। তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বললো।
— এক্স, এক্স আমি ওর এক্স। ওকে কল টা দেওয়া যাবে??
— নো সরি!! একচুয়ালি প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছি প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব ব্রো!!
.
বলেই রাহুল কেটে দেয় কল। আমি রাহুলের কথা শুনে ঝটকা খেয়ে চুপ মেরে বসে আছি রাহুলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে। হঠাৎ রারুল। চিল তার শিকারির দিকে যেভাবে তাকায়। আমার দিকে ওভাবে তাকালো। জেনো সে চিল আমি হচ্ছি তার শিকারি। আমি ভয়ে দুচারটি ঢোগ গিললাম। রাহুল আমার কুনুই টেনে নিজের কাছে নিয়ে আঙুল তুলে শাশিয়ে বললো।
.
— হাউ ড্যায়ার ইউ??…… উফফ কন্ট্রোল রাহুল!!
.
এতোটুকু বলেই থামে রাহুল। চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে তারপর কঠিন স্বরে বলে।
— আর কোনোদিন যদি ঐ প্রতারক টার সাথে কথা তো দূর ওর কলের দিকে তাকাতে দেখেছি এভাবে তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না হীর!
.
আমি ভয়ে উনার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে ভয়ে বললাম।
— ছাড়ুন লাগছে!!
.
রাহুল হিসহিসিয়ে বললো!!
— আমি কি বলেছি মনে থাকবে??
— হ হ্য হ্যাঁ থাকবে ছাড়ুন!!
.
রাহুল মৃদু ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় হীর কে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। এই মেয়ের মিনিমাম সম্মান টুকু কি নেই?? এতোকিছুর পড়েও কি করে ঐছেলের কল পিক করতে পারে এই মেয়ে ভেবে পায় না রাহুল। তার মন চাইছে এই মুহূর্তে ঠাশঠাশ করে দুটি হীরের গালে লাগিয়ে দিতে। জেনো শিহাব নামেত ভূত এই মেয়ের মাথা থেকে নেমে যায়!! ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাহুল।এমনটা তো আর চাইলেই করতে পারবেনা রাহুল!! সে নিজেও তো ভুলতে পারেনি। এভিজাকে!!
.
হীর চুপচাপ বসে আছে কেনো রাহুল এসব বললো ভাবছে হীর!!তার মাথা আপাদত হেং আর কত প্রশ্ন জাগবে তার মাথায় মাথায় না শুধু এই ছোট মাথায়!!হীর বেশ ক্লান্ত ঘুম লাগবে তার লম্বা ঘুম। তাই হীর আর বসে থাকতে না পেরে বলে উঠে।
— প্লিজ বাসায় নিয়ে চলুন!!
— হুম তার আগে কিছু বলবো তোমায়!!
— হু!!
— পূর্নি!!!
.
পূর্নির নাম শুনে। মনে থাকা প্রশ্ন করেই বসলাম।
— কি পূর্নি কি হয়েছে ওর??
কিভাবে হয়েছে??
— পূর্নি হিরাকে ভালোবাসে।আই মিন তোমার ভাই হিরাকে!! হিরা তাকে রিজেক্ট করায়। ইচ্ছে করেই পূর্নি এক্সিডেন্ট করেছে!!
.
আমায় জেনো কেউ বিশাল বিদুৎতিক শক দিলো। যাতে আমার মুখ এর ভাবভঙ্গি সব বদলে গেলো!! আমি এসব কি শুনছি আমার কান গরম হয়ে গেলো। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। একটা মেয়ে হয়ে পূর্নি এমনটা করেছে কতটা ভালোবাসে ভাইকে বুঝতে বাকি নেই আমার দৌড়ে পূর্নি কে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে কতটা অসহায় হয়ে পূর্নি এই কাজ করেছে বুঝতে বাকি নেই কিন্তু ভাই এমনটা কেনো করলো মাথায় ঢুকছে না!! আমি হঠাৎ কিছু চিন্তা করে বলে উঠলাম।
— এটা সত্যি না আপনি হয়তো ভুল জানেন!!
— তুমি তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করিও ওকে!!
— আমায় এসব কেনো বলছেন কি চান আপনি??
— হিরাকে চাই। আমার বোন যাকে ভালোবাসে তাকে চাই আমার যে কোনো মূল্যে। আমি কথা দিয়েছি পূর্নিকে!! হিরা তার হবে।
— দেখুন ভাইয়ার ব্যাপারে আমি কি করে কিছু বলবো। আর এটা আমার বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
— লিসেন হীর ভেরী ক্লিয়ারলি। আমি চাইলেই ডাইরেক্ট হিরার সাথে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি তার কারণ তাহলে তোমার ভাইকে পৃথিবীর কেউ আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবেনা।ওর সাহস কি করে হলো পূর্নিকে রিজেক্ট করার?? তাই তোমার সাথে এসব বলা। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি নিজের ভাইকে বুঝাও। তা না হলে আমি তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবো না।তখন তোমার ভাই বুঝবে কেউ বোন কে কষ্ট দিলে কেমন লাগে!! বোনের লাইফ নিয়ে কথা এখানে কোনো ছাড় নেই। কোনো না!! হীর আমি চাইলেই তোমার ক্ষতি এখুনি করতে পারি। আমি চেষ্টা করেছি ইউ নো বাট এতো টাও খারাপ হতে পারিনি। তাই আমি চাই সব বাদ দিয়ে হিরা পূর্নি কে মিলিয়ে দিতে। আর তুমি আমার হেল্প করবে!! গটইট?? বাসায় গিয়ে হিরার সাথে কথা বলবে এট এনি কস্ট!!
.
বলেই ড্রাইভ শুরুকরলো রাহুল। আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমি বুঝতে পারছি একটা ব্যাপার আমার ক্ষতি করতেই রাহুল আমার ব্যাপারে সব খোজ খবর নিয়েছিলো! তাই তো নিতু শিহাব এর ব্যাপারে সব জানে!! কতো ডেঞ্জারাস এই ছেলে!! আমি আর কিছু বললাম না চুপচাপ বসে রইলাম। এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম চিন্তায় চিন্তায়।
.
.
শিহাব প্রায় এক ঘণ্টা যাবত ফোনে হীর এর নাম্বার দিকে তাকিয়ে আছে!! হীর এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে নতুন রিলেশন এ চলে গিয়েছে ভাবতে পারছেনা শিহাব। শিহাবের সাথে তো কখনো প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করেনি হীর তবে নিও বয়ফ্রেন্ড এর সাথে তাও করছে। শিহাবের মাথা ফেটে যাচ্ছে।কেমন যেনো লাগছে শিহাবের।হীরকে ভুলতে শিহাব নিতুকে ফোন দেয় প্রায় ৫০ টা কল এর পড় কল রিসিভ করে নিতু কিন্তু শুধু গানের সাউন্ড শোনা যাচ্ছে নিতুর কণ্ঠ না। শিহাব প্রায় দু মিনিট হ্যালো হ্যালো করে রেখে দেয়। শিহাব কিছুক্ষণ কিসব ভেবে ক্যাফে থেকে চলে যায় নিতুর বাসায়।
.
নিতু প্রায় অনেক গুলা ছেলের সাথে ড্যান্স এ ব্যস্ত। শিহাবের কল দেখে বেশ বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে রেখে দেয় এমনি। শিহাব কিছুক্ষণ পড় কল কেটে দেওয়ায়। সে চিৎকার করে গান গায় আর ড্যান্স করতে থাকে তার সেই ক্রাশ এর সাথে।
ফাস্ট মিটিং ছেলেটা কে ভালোই ইম্প্রেস করতে পেরেছে নিতু। সেকি খুশী নিতুর। দিন দুনিয়ার খেয়াল নেই যে সে অন্যকাউর স্ত্রী পরপুরুষ তার জন্য হারাম। সে সব ভুলে ক্রাশ আর ডান্স ড্রিঙ্ক এ মত্ত।
.
ঐদিকে শিহাব নিতুর বাড়ী গেলে নিতুর না দরজা খুলে মুখে ফেইস পেক লাগানো। শিহাব নিতুর মাকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। নিতুর মা শিহাব কে দেখে ভরখে যায়।
— আন্টি নিতু কোথায়?? শিহাব নিতুর মাকে আন্টিই ডাকে।
— আরে শিহাব বাবা ভিতরে আসো আসো।
.
নিতুর মা শিহাব কে কি বলবে ভাবছে। শিহাব আস্তে করে ঢুকে ভিতরে ড্রইং রুমে গিয়ে বসে। নিতুর মা শিহাব বসিয়ে নিজে ঠিকঠাক হয়ে একগাদা নাস্তা নিয়ে আসে শিহাবের জন্য। শিহাবের রাগ লাগছে তাই সে বলে উঠে।
— আন্টি এসব লাগবেনা!! নিতুকে ডেকে দিন বাসায় যেতে হবে।
.
নিতুর না গলা পরিষ্কার করে বণিতা করতে করতে বলে।
— আসলে বাবা কিভাবে বলি তোমাকে জিজ্ঞেস করা দরকার ছিলো আমার।
— আন্টি স্রেট খাট বলুন। নিতু কই??
— নিতু আসলে ওর এক ফ্রেন্ড এর বাসায় গেছে। ফ্রেন্ড এর নাকি জন্মদিন। আমি অনেক বলেছি তোমায় বলে যেতে।সে বললো তুমি নাকি কিছুই বলবে না।
.
শিহাব এবার বুঝে গানের সাউন্ড কই থেকে আসছিলো কিন্তু নিতুর মাকে আর কিছুই বলে না শিহাব বিদায় নিয়ে চলে গেলেও নিতুর মা শিহাব কে একটি বার ও বলে না আজ থেকে যাও। শিহাব যেতেই নিতুকে কল লাগায় তার মা কিন্তু পিক করে না নিতু।
.
.
এদিকে!!!!
রাহুল যখন হীরকে দেখতে আর ড্রাইভ করতে ব্যস্ত তখনি ওর ফোন বেজে উঠে। রাহুল ফোন টা এক নজর দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কানে ফোন রাখে।
.
— হ্যালো ব্রো আমি। আস্ফি!!
— ইয়াহ ব্রো আই রিমেম্বার ইউ। হোয়াট নিউজ??
— ব্রো যেই মেয়েটার কথা বলেছো। প্রোস্টুটিউট বলা চলে ওকে। টোটাল কত্ত গুলা বয়ফ্রেন্ড আছে ওর গুনতে পারিনি। কিন্তু এসব কেউ জানেনা!! এই মাত্র ফলো করে দেখলাম। কিছু ছেলের সাথে বারে ঢুকছে। তুমি চাইলে আমি… বুঝতে পারছোত।
.
রাহুল খুব মনোযোগ দিয়ে আস্ফির কথা শুনছিলো। তারপর বাঁকা হেসে বলে উঠে।
— ইয়াহ ব্রো….. আর কাল আমার সাথে মিট করবে তুমি আমার ফ্লাটে!! ওকে!!
— ওকে ব্রো। বায়!!
— বায়!!
.
কল কেটে রাহুল বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুকিয়ে ঘুমন্ত হীর এর দিকে তাকায় তারপর বলে উঠে।
— স্লিপিংকুইন তোমার সব কষ্ট শেষ। এখন ওদের টা শুধু জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!
.
বলেই রাহুল নিজের অজান্তেই মুখ বারিয়ে হীর এর কপালে শব্দ করে চুমু খেলো। চুমু খেয়ে রাহুল নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলো!!
.
.
চলবে??
[ সত্যি কি আমার গল্পের পার্ট ছোট হয়?? কই আমি তো আগে থেকেও বড় করে লিখি!! তাও ছোট হয় আমি কি করবো ভাই / বোন ?]
Roja Islam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে