নূপুর বাঁধা যেখানে পর্ব-০৮

0
992

#নূপুর_বাঁধা_যেখানে-৮
#মিফতা_তিমু

ঝুমুরকে রোলার কোস্টার গতিতে বেরিয়ে যেতে দেখার পর ওকে আহত অবস্থায় ফিরতে দেখবে এই আশা করেনি ফাহমান। সে যখন দুপুরের খাবার গরম করতে ব্যস্ত তখন কলিং বেলের শব্দ পেলো। দেওয়াল ঘড়িতে তখনও একটা। ও এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। দেখলো সদর দরজার বাহিরে তার আদরের বোন আর তার আহত বান্ধবী দাড়িয়ে আছে।

টাকা নিয়ে তাড়াহুড়োয় বাড়ি থেকে যেতে সময় রাস্তায় এক প্রকার ছোটখাটো অ্যাকসিডেন্ট করে রিকশা থেকে পড়ে গিয়েছিল ঝুমুর। অ্যাকসিডেন্টটা তেমন আহামরি কিছু নয়। তবে হাত ছিলে তার পছন্দের শুভ্র হলুদের মিশেলে কূর্তিটার কনুইয়ের দিকে রফাদফা হয়ে গেছে। এখন এই দুঃখেতেই ঝুমুরের চায়ের কাপে ডুবে মরতে ইচ্ছা করছে। কত শখ করে আরং থেকে কিনেছিল ড্রেসটা অথচ নষ্ট হয়ে গেলো।

বান্ধবীর জোরাজুরিতে আর পারিপার্শ্বিক দিকগুলোর কথা ভেবেই মারিয়ামের বাড়িতে এসেছিল ঝুমুর। এখন ফারুক বাসায় নেই কাজেই কেউ এখন তার ট্রিটমেন্ট করতে পারবে না। মনোয়ারা বেগম তার এই সামান্য কাটাছেঁড়া দেখে তার সেবা শুশ্রুষা তো করবেনই না উল্টো রক্ত দেখে ভয়ে জ্ঞান হারাবেন। রক্তে তার ফোবিয়া আছে কিনা।

আবার আঞ্জুম আরাও আতঙ্কিত হয়ে ব্যাপারটা বাড়িয়ে চাড়িয়ে আজমাঈন সাহেবের কানে তুলবেন। তখন হবে আরেক কাহিনী। এর থেকে হৈমন্তীর ভাইয়ের কাছেই প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট নেওয়া উচিত ভাবলো ঝুমুর। কিন্তু হৈমন্তীর বড় ভাই যে কালকের সেই প্রকৃতি প্রেমী বৃষ্টিতে পাগলের মতো ভিজতে থাকা অদ্ভুত ছেলেটা হবে সেটা জানা ছিল না তার।

ফাহমানকে দেখেই ভুত দেখার মতো চমকেছে সে। ফাহমান নিজেও বোনের সঙ্গে বোনের বান্ধবী বাগান কন্যাকে আশা করেনি। সে ভাবতে পারেনি তাদের মুখোমুখি দ্বিতীয় দেখাটা এভাবে হবে। তবে হৈমন্তী অত কিছু দেখলো না। ঝুমুরকে নিয়ে সে সাবধানে ঘরে ঢুকলো তারপর বসার ঘরের সোফায় বসালো। বান্ধবীর কনুইয়ের আঘাত দেখিয়ে ভাইকে বললো ‘ ভাই ও ঝুমুর, আমার বান্ধবী। আজ রিকশা অ্যাকসিডেন্ট করেছে। ‘

‘ তো তুই আমাকে কি করতে বলছিস ? ‘

ফাহমানের প্রশ্নের ভরকে গেল হৈমন্তী। এ আবার কেমন প্রশ্ন ? ওর বান্ধবীর সামনে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে মান সম্মানের বারোটা বাজাতে চাচ্ছে নাকি ? ও ধীর গলায় বললো ‘ আমি চাচ্ছি তুমি ওর হাতটা ব্যান্ডেজ করে দাও। আমি পানি নিয়ে আসছি ‘

এতক্ষণে ঝুমুরের হতবুদ্ধি ভাবটা কেটেছে। ঝুমুরের কি হলো কে জানে কিন্তু ফাহমানের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটা তার ভালো লাগেনি। সে ভাবেনি তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এরকম ইম্বেরেস্মেন্ট সিচুয়েশনে হবে। ফাহমানের সামনে তার সম্মানটাই মাঠে মারা গেলো। ফাহমান নিশ্চই ভাবছে এক সামান্য রিকশা অ্যাক্সিডেন্ট করে মেয়েটা চিৎপটাং হয়ে ট্রিটমেন্ট নিতে এসেছে। এর তো ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতাই নেই।

পরক্ষণেই ঝুমুরের মনে হলো ফাহমান কি করে জানবে ঝুমুর মেডিক্যাল কোচিং করবে। আবার মনে পড়লো হৈমন্তী নিশ্চই এতদিনে বলে দিয়েছে তার মেডিক্যাল কোচিংয়ের ব্যাপারটা। তার তো পেটে কিছুই আটকায় না। কাজেই মান সম্মান বাঁচাতে হলে এখনই মানে মানে কেটে পড়ো ঝুমুর নাহলে এই আধ পাগল লোকের সামনে তোমার সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না।

যেই ভাবা সেই কাজ। ঝুমুর ‘ না আমার কোনো ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই বাসায় গিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করতে পারবো। সামান্য স্ক্র্যাচই তো পড়েছে, বেশি কিছু না। ‘ বলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখনই এই বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারলে সে বাঁচে।

‘ ডাক্তার কি তুমি না আমি যে স্ক্র্যাচ পড়েছে নাকি ইনফেকশন হয়েছে বুঝবে ? ‘

বান্ধবীর এমন নির্বুদ্ধিতায় কিছু বলতে যাচ্ছিল হৈমন্তী। তবে ফাহমানকে বলতে দেখে আর কিছু বললো না। সে গেলো বোল ভরে পানি আনতে। ঝুমুর দমে গেছে ফাহমানের কথায়। এবার সে শিওর লোকটা আসলে আধ পাগল নয় পুরোই পাগল। নাহলে কারোর মুখের উপর এমন করে রুঢ় স্বরে কেউ কথা বলে ?

ঝুমুরের ডান হাতটায় বেশি লেগেছে তাই ফাহমান সেই হাতটাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একেবারে চামড়া উঠে মনে হচ্ছে মাংস পিন্ড দেখা যাচ্ছে। ফাহমান ওর হাত দেখতে দেখতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল ‘ মানুষ কার অ্যাকসিডেন্ট করে, ট্রেন অ্যাকসিডেন্ট করে আবার বাস অ্যাকসিডেন্টও করে। কিন্তু তোমার মতো রিকশা অ্যাকসিডেন্ট করে জানতাম না। অত দৌড়ঝাঁপ পারলে অ্যাকসিডেন্টই হতে থাকবে। ‘

ফাহমানের কথায় আতে ঘা লাগলো ঝুমুরের। কিঞ্চিৎ অপমানে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো সে। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি টেনে দাতে দাত চেপে মিহি স্বরে বললো ‘ ডাক্তার সাহেব যে ট্রাফিক পুলিশও ছিলেন জানতাম নাতো। এত অ্যাক্সিডেন্টের খবর জানেন যে আমি নিজেই চমকিত। ‘

ঝুমুরের কথা আর ধরনে ফাহমান বুঝলো ঝুমুর তাকে হাসিমুখে খোঁচা মেরেছে। তবে সে বিশেষ পাত্তা দিল না। হৈমন্তী আগেই ফার্স্ট এড বক্স দিয়ে গেছিলো। এবার বোলে করে পানি এনেছে। ফাহমান ঝুমুরের জামার হাতা কনুইয়ের উপর অব্দি উঠিয়ে দিলো। ঝুমুরের এতে কিঞ্চিৎ অসস্তি হচ্ছে। যতই সে মুক্তমনা হোক না কেন এত বছর তো বাংলাদেশী সংস্কৃতি মেনেই বড় হয়েছে।

তবে ঝুমুরের অসস্তির কারণ ধরতে পারলো ফাহমান। পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে দিতে দিতে বলল ‘ ভয়ের কিছু নেই, আমি তোমার ডক্টর। ডক্টরের সামনে হাতা উঠালে কিছু হবে না। ‘

ফাহমানের এতক্ষণ ঠেস মেরে কথা বলাতে ঝুমুরের যতটা গায়ে লেগেছিল এখন সেই গা জ্বালানো ভাব খানিকটা হলেও কমলো। সে নম্র চোখে তাকালো ফাহমানের পানে। ফাহমান ফার্স্ট এড কিটে ব্যান্ডেজ শেষ হয়ে যেতে দেখে হৈমন্তীকে তার ঘর থেকে খুঁজে আনতে বলল। ভাইয়ের আদেশ মেনে হৈমন্তী নিজের ঘরে গেলো ব্যান্ডেজ আনতে।

হাতটা পরিষ্কার করা শেষে সেভলনে তুলো ভিজিয়ে ফাহমান ঝুমুরের ব্যথার জায়গার আশেপাশে লাগিয়ে আস্তে আস্তে পুরো এরিয়া কভার করার চেষ্টা করলো। তবে সেভলন ব্যথার জায়গায় লাগতেই জলুনিতে ঝুমুর কেপে উঠে ফাহমানের বাম হাত খামচে ধরলো। বদ্ধ চোখ দিয়ে বেরিয়ে এলো কয়েক ফোঁটা রুপোর অশ্রু।

‘ পিয়ে বাং গেলাদেশি ‘ পরিষ্কার কোরিয়ান ভাষায় বাংলাদেশকে ধমকে দিয়ে উঠলো ঝুমুর। ফাহমান শুনলো কিন্তু কিছু বললো না। ঝুমুর যে বাংলাদেশকে কটূক্তি করে উঠলো সে ওর মুখ ভঙ্গি দেখে ভালই বুঝতে পারছে ফাহমান। এবং ঝুমুর যে হাফ কোরিয়ান সেটাও ঝুমুরের আচার আচরণ আর বোনের কাছ থেকে শোনার বদৌলতে জানা হয়ে গেছে। কাজেই এমন একটা পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে বাংলাদেশের উপর রাগ উঠার ব্যাপারটা একজন বাইরের দেশী মানুষের জন্য মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ফাহমান ঝুমুরের ব্যথায় সেভলন ভেজানো তুলা লাগাতে লাগাতে বললো ‘ বেশি লেগেছে ? এখন লাগছে…. এই নূপুর বেশি লাগছে তোমার। ‘
ফাহমানের মুখে নূপুর নামটা শুনে ঝট করে চোখ খুলে ফেললো ঝুমুর। ভীত চোখে মাথা নেড়ে বললো ‘ কিন্তু আমার নাম তো নূপুর নয়। ‘

ফাহমান বুঝলো না এই কথার জবাবে কি বলবে। সে নিজের অজান্তেই বারবার ঝুমুরকে ঝুমুরের জায়গায় নূপুর ডাকে। সেই মিস নূপুরের সঙ্গে ঝুমুরকে গুলিয়ে ফেলে সে। ঝুমুরকে এই নূপুর নামে ডাকাটাই সহজবোধ্য মনে হয় তার। তাই সে নিজের দোষ ঢাকতে বলল ‘ ওই নামটা মনে থাকে না আমার। নূপুর সোজা। ‘

‘ কিন্তু ঝুমুর আর নূপুরের মধ্যে পার্থক্য কি ? ‘

ঝুমুরের মিনমিন গলায় বলা কথাটা ফাহমান শুনলো কিন্তু প্রতি উত্তর করলো না। না শোনার ভান ধরে রইলো। ফাহমানের জায়গাটা ক্লিন করা হয়ে গেলেও হৈমন্তীর এখনও দেখা নেই। ফাহমান একবার হাক ছেড়ে ডাকলো। হৈমন্তী জানালো সে খুঁজে বের করছে। ফাহমান বিরক্ত হয়ে ভাবলো একবার নিজে গিয়ে দেখে আসবে।

ফাহমান উঠে দাড়াতে দাড়াতে ঝুমুরের দিকে আড়চোখে তাকালো। ঝুমুর ওর দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে। চোখের কোণে মুক্তোর দানার মতো অশ্রুগুলো ভেসে আছে। মুক্তোর দানায় ভেসে যাওয়া চোখ দুটো পদ্ম পাতায় ভেসে থাকা শিশিরের মতোই ছলছল করছে।

ঝুমুরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফাহমানের ঘোর লেগে যাচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে সে আবিষ্কার করলো সে প্রেমের মতো অসম্ভব কাজটা করে ফেলেছে। প্রেমের সাগরে ভেসে ভেসে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার এতকাল লুকিয়ে রাখা প্রেমিক পুরুষের মুগ্ধ সত্তা ঝুমুরকে দেখা মাত্র উপচে পড়ছে।

ফাহমান হতবাক। তার বিশ্বাস হচ্ছে না সে নাকি প্রেমে পড়েছে। তাও আবার কার ? বাগান কন্যা নূপুর থুক্কু ঝুমুরের প্রেমে যে নাকি ওর বোনের বান্ধবী। বোনের বান্ধবী মানে নিজেরও বোন। অসম্ভব!! ঝগড়ুটে,খোঁচা মেরে কথা বলা, ধারালো আর নিখুঁত সৌন্দর্য্যের এই মেয়েকে সে কখনোই বোন রুপে মেনে নিবে না। এই মেয়ে আর ওর বোন হবে, এ তো নেহাতই অসম্ভব আবদার।

ফাহমান দুনিয়ার সবাইকে বোন বানাতে পারবে শুধুমাত্র ঝুমুর ছাড়া। ওই নূপুর না ঝুমুর, যে ওকে একটু আগে খোঁচা মেরে কথা বললো তার মতো অহংকারী মেয়েকে সে কিছুতেই বোন বানাবে না। সব সুন্দরীরা বোন হয় না। বোন হওয়ার যোগ্যতা সবার থাকে না। বিশেষ করে ঝুমুরের তো নেইই সেই যোগ্যতা।

ফাহমান ভ্রু কুচকে ঝুমুরের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। হৈমন্তীকে ডাকতে গিয়ে এক প্রস্তর ধমকাধমকি করে ব্যান্ডেজ সমেত ফিরে এলো। সাবধানে ঝুমুরের হাতে ব্যান্ডেজ করে বললো সময়মতো খাবার খেয়ে যেন পেইন কিলার খেয়ে নেয় যেন। উত্তরে ঝুমুর হা বোধক মাথা নাড়ল।

—-

ঘরে ফিরে ঝুমুরকে এক ঝাঁক প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো। সে কোনোমতে এটা ওটা বুঝিয়ে বলে দিলো সামান্য জাস্ট মাইনর ইঞ্জুরি। যদিও মনোয়ারা বেগম এ নিয়ে গাইগুই করলেন কিন্তু ঝুমুরের যুক্তির কাছে আর কিছু বলতে পারলেন না। এমনিতেই ঝুমুরের মন মেজাজ সকালের ঘটনার জন্য ভালো নয় কাজেই বেশি কথা বাড়ালো না। সোজা ঘরে গিয়ে ঢুকলো।

জামা কাপড় বদলে আর খেতে গেলো না ঝুমুর। জানিয়ে দিল বাহির থেকে খেয়ে এসেছে অথচ তার পেটে খিদে কিন্তু ইচ্ছে করছে না। তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই। তার অমনি থাকলে নিশ্চই খাইয়ে দিত। সে যখন ছোট ছিল তখন তো এমনই করত সে। সবসময় মুখে তুলে খাইয়ে দিত।

ঝুমুরের মনে হলো সে মনের দিক থেকে ভেঙে পড়েছে। দূর্বল মন তার শরীরকেও কাবু করেছে। বাহিরে দিয়ে ঝুমুর দেখতে শক্তপোক্ত মনের আর খুবই বুঝদার। অথচ ভিতর থেকে সে একজন মানুষ হিসেবে একেবারেই ভেঙেচুরে গেছে। তাফিম আর সামিকে দেখে তার মাঝে মাঝে মনে হয় যদি তারও মা থাকতো তাহলে ওদের মতো করেই বাহির থেকে ফিরতে সময় ভালোবেসে চিপস নিয়ে আসতো।

এমন নয় ঝুমুর খুবই খাদ্যভিলাষী। সে খুবই চুজি ধরনের মানুষ। বেছে বেছে ম্যান্ডেটরি খাবার খায় আর জাঙ্কফুড এভয়েড করে। তবুও মনে হয় যদি ইশ অমনি থাকতো, বাবা থাকতো তাহলে আজ ও আর শাওমি কতই না সুখে থাকতো। হালমনি, অমনি, বাবা, শাওমি আর তার পাঁচজনের এক সুখী পরিবার হতো।

অথচ ভাগ্যের পরিহাসে এমনটা হলো না। ঝুমুর চেয়েছিল তার অমনিও তাকে অনেক ভালোবাসবে, মুখে তুলে খাইয়ে দিবে, বাবা তার জন্য ভালোবেসে কিছু আনবে, শীতকালে হালমনির হাতের মোমো খাবে কিন্তু তার কিছুই হলো না। একজন কোথায় আছে সেটা কেউই জানেনা আর আরেকজন থেকেও নেই।

অমনির নিরুদ্দেশ হওয়ার পরও ঝুমুর তার বাবার কাছ থেকে এমনটা আশা করেনি। অমনি ছিল না তবুও যে বাবা তাকে একলা করে দিবে সে সেটা ভাবতেই পারেনি। অথচ এমনটাই হলো। মোতালেব সাহেব নিজের কথা ভাবলেন অথচ নিজের ঔরসজাত সন্তানের কথা ভাবলেন না। এসবে ঝুমুর দিনকে দিন ভেঙে পড়ছে। খুব করে ইচ্ছা করে মোতালেব সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু তাদের মধ্যে থাকা দূরত্বে তার আর কথা বলা হয়ে উঠে না।

ক্লান্ত ঝুমুর ঘরের কোণে থাকা ল্যাম্প শেড জ্বালিয়ে লবি চেয়ারে বই নিয়ে বসলো। খুবই আনন্দের দিন কিংবা তীব্র মন খারাপের দিনগুলোতে বই পড়ে সময় কাটায় ঝুমুর। আজ তার মন খারাপের শেষ দিন। কাল থেকে কোচিং শুরু। এরপর পড়াশোনা, মেডিক্যাল কলেজের অ্যাডমিশন টেস্ট নিয়েই সময় কেটে যাবে। তখন আর মন খারাপ করার মতো বিলাসিতা করার সময়ও হবে না তার।

এমনিতেই বিলাসিতা পছন্দ নয় ঝুমুরের। তবুও মাঝে মাঝে বেহিসাবি দিনে তার মনটা হুটহাট খারাপ হয়ে যায়। তখন বিদ্রোহী মন ঘোষণা দেয় আজ আমার মন খারাপ। সেও সেই ঘোষণা মেনে আয়োজন করে বসে বই নিয়ে। মন খারাপ কাটানোর এটাই ঝুমুরের জানা শ্রেষ্ঠ উপায়। এই মন খারাপ তো ঝুমুরের অবসর সময়টাতেই হয়। পড়াশোনার চাপ থাকলে মন খারাপ করার সুযোগ হয়না।

তবে নির্দিষ্ট এক দিনে ঝুমুরের পড়াশোনার মাঝেও মন খারাপ হয়। যেদিনটায় টানা ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি ঝড়ে যায় অবিরাম। ঝুমুরের মনে হয় ঝুমঝুম বৃষ্টির দিনগুলোতে বাতাবরণে বিরহের রেশ থাকে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সেই বৃষ্টি দেখতে দেখতে একসময় মনটা মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অকারণে মনটা বেজায় খারাপ হয়ে যায় তখন। তাই ঝুমুর ব্যক্তিগত ভাবে ঝুম বৃষ্টি পছন্দ করে না।

ঝুম বৃষ্টির দিনে বৃষ্টির ছন্দে বাজতে থাকা প্রকৃতির প্রাকৃতিক গানের সুর ঝুমুরকে বিরহের রেশ দিয়ে যায় মনে। মনটা ক্রমশ মন খারাপে নুয়ে পড়ে। সেই সময়টা এড়াতেই পারতপক্ষে ঝুমুর ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে ফিজিক্স বই নিয়ে বসে পড়ে। পড়াশোনার মাঝে থাকলে বৃষ্টির বিরহী সুর তার কানে আসবে না।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে