দূর আলাপন পর্ব-০৯

0
188

দূর আলাপন ~ ৯
___________________________
নিনাদের যাওয়ার দিন প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। বিয়ে নিয়ে আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। অথবা আড়ালে কিছু আয়োজন শুরু হয়ে থাকলেও তার খবর পেলনা তিতিক্ষা। শিউলি ফুআম্মা কি আদৌ ব্যপার টা আগে ভেবেছেন? নিনাদ কি রাজি হয়েছে? বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কি আফরিন?
নাহ! কিচ্ছু জানে না তিতিক্ষা। ওবাড়ির কারো সাথেই যোগাযোগ তেমন নেই ওর। ছিল না কখনো। অথচ তারই বড় বোন তিহা সারাদিন ফোনে গুজুরগুজুর করে ওবাড়ির লোকেদের সাথে। রান্নার সময় কানে ফোন, ছেলেকে পড়ানোর বেলায় কানে ফোন। রাতে দিনে অনুক্ষণ কি অত কথা বলে ওদের সঙ্গে বুবু? বিয়ে নিয়ে আলাপ? কি রঙের শাড়ি পরবে আফরিন… কোন ফুলের ঝালরে ওদের বাড়ি সাজানো হবে… এইসব?

আজকাল তিতিক্ষা আপনার জগতে আরো বেশি একা। বুবুর দেহ এখানে কিন্তু মনের সবটুকু পড়ে থাকে মোহাম্মদপুরের এক ছোট ফ্ল্যাটে। এরমধ্যে মারুফকে আবার যেতে হলো দেশের বাড়ি। কিশোরগঞ্জে নিজেদের গেরস্তের বাড়ি, দুটো দুধেল গাভী আর জমিজমাও যথেষ্ট রয়েছে। সেসব দেখাশোনা করে মারুফের দুসম্পর্কের এক ভাই। মাসে মাসে গিয়ে তিনি গেরস্ত দেখে আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্য সকল কিছুর হিসেবপত্তর নিয়ে আসেন।

বাবা বাসায় নেই। ফিরতে অন্তত দুদিন লাগবে। দুই বোন ছানাটিকে নিয়ে বাসায় একা।
সন্ধ্যে থেকেই আকাশ গজরাচ্ছে। এলোমেলো দমকা হাওয়ার সাথে অনবরত লোডশেডিং। বাবা টর্চটা সঙ্গে নিয়ে গেছেন। এখন মোমবাতিই ভরসা।
ঘরের চারকোণে চারটা মোমবাতি জ্বালিয়ে চায়ের ট্রে এনে পা মুড়ে আয়েস করে সোফায় বসে তিতিক্ষা। মায়ের সঙ্গে কথা থামিয়ে ছোটন হামলে পড়ে মাখানো মুড়ির বাটিতে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তিতিক্ষা বুবুকে বলে, ‘আজ আর ঝামেলা না ই করি। চালে ডালে মিলিয়ে খিচুড়ি বসিয়ে দিই। গরম খিচুড়ি আর গরুর মাংস। এই আবহাওয়ায় বেশ হবে!’

দ্বিমত করবার কোনো কারণ নেই। অগত্যা চা শেষ করেই মাতা-পুত্র-ভগিনী তিনে মিলে চলল রান্নাঘরে ধুন্ধুমার বাঁধাতে। রাতের দিকে বাইরের উত্তাল আবহাওয়া তখন আরও উগ্র। সন্ধ্যার আকাশ দেখে এতটা বোঝা যায় নি। বাবা বাড়ি নেই। কিছুটা ভয় ভয় করছিল দুই বোনের। যদিও মনের শঙ্কা প্রকাশ করল না কেউ। বরং জমপেশ আড্ডায় রান্নাঘর হয়ে উঠল জমজমাট। কখনো মা কথা বলছে মিমি হাসছে, কখনো বা মিমির কথায় মা আর ছোটন হেসে কুপোকাত। আজ নানাভাই নেই, মা মিমি দুজনের সমস্ত আদর আহ্লাদের একমাত্র মধ্য মণি তাই ছোটন। ওরা একসাথে ওযু করল, এশার সলাত পড়ল, মিমির সঙ্গে হাত তুলে ছোটন আল্লাহর কাছে দুআও করল। সব মিলিয়ে আজ সে বেজায় খুশি।

কিন্তু খানিক বাদেই ছোটন অবাক হয়ে দেখে মায়ের মুখখানা কেমন মিইয়ে গেছে। একটু আগের উৎফুল্ল ভাব একেবারে নেই। তিতিক্ষা টেবিলে খাবার গোছাচ্ছিল। এক ফাঁকে এসে রান্নাঘরে বোনকে মলিন মুখে সালাদ কাটতে দেখল।
‘কি হয়েছে বুবু? হঠাৎ মনমরা দেখাচ্ছে কেন?’

‘না রে। কি আবার হবে?’

‘বলোনা বুবু। কিছু তো নিশ্চিত হয়েছে। কারো কথা মনে পড়ছে?’

ম্লান মুখ তুলে তিহা তাকায় বোনের পানে। এত যে আগ্রহ দেখাচ্ছে তিতিক্ষা। অথচ স্পষ্ট জানে মন খারাপের কারণ বলা মাত্র মেয়েটা রেগে আগুন হবে।
‘কিছু না।’

চোখের সামনে বুবুর মলিন মুখখানা দেখে সত্যি খারাপ লাগছিল তিতিক্ষার। এই না খানিক আগেও বুবু কত হাসছিল! ইচ্ছে হলো যেকোনো উপায়ে বুবুর মন ভালো করে দেয়।
‘বলো না প্লিজ। না বললে কি করে তোমার মন ভালো করার উপায় খুঁজি বলোতো?’

‘বললেও তো তুই রাগই করবি।’

‘যা! কি বলছো!’

‘হ্যাঁ।’

‘বাজে কথা। অকারণে কেন রাগ করবো? বলেই দেখোনা। যা করলে তোমার মন ভালো হয় তাই করবো।’

বলার আগে তিহা কিছুক্ষণ সময় নেয়। বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় নিশ্বাস ফেলে বলে,’আর মাত্র তিনদিন। তারপরই নিনাদ কত দূরে চলে যাবে। ও খিচুড়ি খেতে খুব ভালোবাসে। গতকাল কথায় কথায় বলেছিল খাবার কথা… ‘

বুবুর বিমর্ষ হবার কারণ তবে এই! মুখের রঙ বদলায় মুহুর্তে। এব্যপারে বুবুকে কোনোরকম সাহায্যের পথ তার জানা নেই।
দুজনকে ঘিরে নেমে আসে অমোঘ নিরবতা। একসময় নিরবতা ভেঙে তিহা মৃদ্যু গলায় অস্পষ্ট আওয়াজে বলে, ‘বলেছিলাম না তুই রেগে যাবি?’

‘আমি রাগিনি।’

‘তাহলে নিনাদ কে ডাকি?’

তিতিক্ষা ঝাপসা চোখে তাকায়।

কৈফিয়তের সুরে তিহা বলে,’খেয়েই চলে যাবে। একদন্ড বসতেও বলবো না। দেখিস!’

দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল তিতিক্ষা। স্বরে আভাসিত হলো মৌন সম্মতি,’কিন্তু তোমার তো পর্দা নষ্ট হবে। মুখে ভাই বললেও ওযে তোমার লা মাহরাম।’

‘পর্দা তো করি না। নষ্ট হবার কি?’

‘কিন্তু করাই উচিত ছিল।’ তিতিক্ষার গলায় আফসোস ঝরে পড়ে।

‘করবো করবো… তুই আল্লাহ ওয়ালা মানুষ। আমার জন্য বেশি করে হেদায়েতের দুআ করে দিস!’ তিহার স্বরে খুশির নতুন মাত্রা। রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে নিচু গলায় বলল,’যাই, নিনাদ কে একটা ফোন করে আসতে বলে দিই।’

বুবুর ছায়া পুরোপুরি বিলীন হবার পর একা রান্নাঘরে তিতিক্ষা চাপা রাগে আস্ফালন করল। ফোঁস ফোঁস করে বলল,
‘শুধু নিনাদকেই বা কেন ডাকবে? ওর বউ নাকি হবু বউ আফরিন। ও কি দোষ করেছে? ওকেও ডাকো। দুজন একসাথে আসুক৷ একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যাবস্থা করে দিই। খেতে খেতে প্রেম করুক!’

.

বাইরে তখন ঝোড়ো হাওয়ায় পরিবেশ উত্তাল। থেকে থেকে অশনির চমক আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির নিস্বন। টং দোকানের সাধারণ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিনাদ সামনে ফেরে। সঙ্গে ছাতা নেই। ভালোই হলো। আধভেজা কাঠের বেঞ্চ ছেড়ে ওঠার জোরটা ঠিকঠাক পাচ্ছে না।
চা টা বিস্বাদ, রোজকার মতো। তবু নিনাদ রোজ আসে, বসে, চা খায়। ভালো লাগে।
কেন ভালো লাগে তার কারণ খতিয়ে দেখার কথাটা নিনাদ ভাবে না। ভাবতে ভালো লাগে না। কিছু আবেগ এতটাই অর্থহীন যে তা নিয়ে ভাবতেও অস্বস্তি বোধ হয়।

সামনে, অদূরে, ওই হলুদাভ ল্যাম্পপোস্টের আলো অবিরত নিয়ন আলো ছড়াচ্ছে যেখানে, তার ঠিক ডানে একতলা বাড়িটা তিতিক্ষাদের। আজ যে বাইরের পৃথিবীটা এত অস্থির, দুর্নিবার ঝড়ে সমাচ্ছন্ন, ভেতরের নিরাপদ আলয়ে কি করছে ওরা, কি করছে তিতিক্ষা?
কখনো, ভুলেও কি একবারের জন্য নিনাদের নামটা ওর মনে পড়েছে? মনে পড়া মাত্রই কি তিতিক্ষা ভীষণ ক্ষোভে তেঁতে উঠেছে? হ্যাঁ, তাই তো হবার কথা। নিনাদ নাম টা যে বড় অপ্রিয় তিতিক্ষার। নিনাদ শব্দটাই এত বিরক্তিকর। না রেগে পারে না মেয়েটা। অথচ তার প্রিয় পাত্র হবার চেষ্টা নিনাদ এখনো করে যাচ্ছে। করে গেছে আজীবন।

কিন্তু অত রাগী, অত সাবধানী, অত খুঁতখুঁতে যার রুচি সব ব্যপারে, তার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠা সোজা কথা তো নয়! যেমন সে দশটা মেয়ের চেয়ে আলাদা, তেমনি আলাদা ধরন তার চাওয়া পাওয়ার। ওর মনের মতো হতে গেলে যে নিনাদকে নিজের গোটা জীবনের ছকটাই বদলে ফেলতে হয়। এতটা ও পেরে ওঠে কি করে? পারে না বলেই বুঝি এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল তিতিক্ষা। এই দূরত্ব কখনো ঘুচবে সেরকম ধারণাও এখন প্রহসন ছাড়া কিছু না।

আর তিনদিন মাত্র। তারপর কতশত বার পৃথিবী ঘুরবে নিজ কক্ষপথে, কত সন্ধ্যা নিজের রঙ হারিয়ে ঝরে যাবে বৃষ্টি হয়ে, কত আশ্চর্য বিকেল, অলীক ভোর কেটে যাবে। নিনাদ নিবিড় নিঃসঙ্গতায় একা হয়ে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পড়ে থাকবে। এখানে ঘটে যাবে কত অত্যাশ্চর্য ঘটনা। সেসব থামানোর ক্ষমতা নিনাদের তো নেই!

অথচ শেষ সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে। কিছু বলা হলো না, বলা গেল না৷ যেভাবে রেখে যাচ্ছে, সেভাবেই থাকবে তো সব? নিজের জগৎ নিয়ে তিতিক্ষা আলাদা থাকতে চায় থাকুক। শুধু একইরকম রয়ে যাক, কখনো অতটা দূরে না যাক যাতে ওর স্মৃতি বিস্মৃতির পথে পা বাড়ায়…

বেজে ওঠে ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিহা বলে বড় বোনের মতো আবদারের গলায়,’ওরে নিদু, একবার জলদি আয় তো। এক্ষুনি আসতে হবে কিন্তু। পারবি না?’

‘আসছি। কেন?’

‘আছে আছে… এভাবে বলা যায় নাকি? যেখানে আছিস, আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পর। এলেই দেখবি।’

খেয়ালি তিহা ডাকছে, হয়তো তিহার মতই খেয়ালি কোনো কারনে। না গেলে হয় না? একটা মিথ্যা বাহানা দিয়ে যাবে না বলে দিলেই তো হয়! কিন্তু নিজের চাওয়া পাওয়ার বাইরেও তো কতকিছু করতে হয় মানুষকে। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় নিনাদ। টাকা মিটিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আবছায়া পথে নামে তিতিক্ষাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে।

__________________

নিনাদের ঘুম হয় না। হালফিল রাতগুলো জেগে কেটে যাচ্ছে। এরপর হয়তো এটাই তার রুটিন হয়ে দাঁড়াবে। দিনভর ঘুমিয়ে রাতটা জেগে কাটানো। বাংলাদেশে যখন দিন, তখন আমেরিকায় গাঢ় রাত। সেখানে গিয়ে রাতের বেলা ঘুমালেও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দিনেই ঘুমানো হয়। হিসেবে দাঁড়ায় একরকম।

এদেশে আজ শেষ রাত। বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অস্থির মন নিয়ে নিনাদ শোয়া থেকে উঠে বসে। এই রাতটাও নির্ঘুম যাবে।
অথচ কাল বিকেলে ফ্লাইট। একটা ঘুমের ওষুধ কি খেয়ে নেবে? ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সজাগ যতক্ষণ, উটকো দুর্ভাবনারা ওকে মুহুর্তের তরে রেহাই দেবে না। এই মুহুর্তে একটাই অনুশোচনা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, এতটাই যে দেশ ছাড়ার কষ্টটাও এর কাছে ফিঁকে হয়ে গেছে।

কেন যে তখন বলতে গেছিল ওসব কথা। ও সুযোগ দিল বলেই তো অতগুলো কথা শোনানোর সুযোগ পেয়েছিল তিতিক্ষা। বিকেলের সবটা স্মৃতি মনে পড়ে নিনাদের।
তিহা বলে রেখেছিল যাবার আগে নিনাদকে কিছু মাংসের কোয়াব বানিয়ে দেবে। বিদেশবিভুঁইয়ে কি না কি খেতে হয়। এজন্য তিহা যত পারছে শুকনো খাবার সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছে। কোয়াব নিয়ে কথা বলার জন্যই বিকেলে ওর নাম্বারে কল করতে উদ্যত হল নিনাদ। ফোনে ব্যলেন্স শেষ দেখে শেষ পর্যন্ত কল করেছিল আফরিনের ফোন থেকে। তিহা তখন ছেলেকে নিয়ে ছাদে। বুবুর ফোনে আননোন নাম্বার দেখে ইতস্তত করে রিসিভ করল তিতিক্ষা।
নিনাদের স্বর শুনে রেখেই দিচ্ছিল। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর কল কাটায় এক মিনিট বিলম্ব করতে রাজি হলো। মূলত রাজি হলো দয়াবশত। হয়তো সত্যিই কোনো জরুরি কথা বলার আছে ছেলেটার। খানিক পরেই যদিও শতভাগ ভুল প্রমাণিত হয় তিতিক্ষা। ঝাঝালো গলায় ও যখন প্রথম বলল
‘কি বলার আছে জলদি বলুন। আমি বুবু এলে বলব।’

নিনাদ প্রত্যুত্তর করল,
‘তিহার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা পরেও বলা যাবে। কল যেহেতু ধরেছো তোমার সঙ্গে কথাটা আগে সেরে নিই।’

তিতিক্ষা সন্দিগ্ধ হয়,’কিসের কথা?’

‘আমাদের কথা। না মানে আমাদের ফিউচারের কথা।’

‘আপনার সঙ্গে আমার ফিউচার সম্পর্কিত কথা কি করে থাকতে পারে?’

‘ওমা! থাকতে পারে না?’

‘না!’

নিনাদ নড়েচড়ে বসল,’আচ্ছা তর্কাতর্কি রাখো। দেখো তিতিক্ষা আমি ফ্র‍্যাঙ্কলি একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। তুমি কি আমার জন্য একটা বছর অপেক্ষা করবে?’

‘আপনার জন্য আমার অপেক্ষা করার কথা ছিল নাকি?’

‘তবে কি অপেক্ষা করবে না?’

‘এই ধরনের কোনো কমিটমেন্ট আমি কারো সঙ্গে করেছি বলে তো মনে পড়ছে না।’

‘তবে কি বিয়েই করে ফেলবে?’

‘সেটা আল্লাহর মর্জি। তিনি যখন যার সঙ্গে বিয়ে লিখে রেখেছেন তার সঙ্গেই তো হবে!’

নিনাদ আৎকে উঠল,’না না… যার তার সঙ্গে কেন? এক বছর পরে আমিই তো ফিরছি…’

‘আমি ফোন রাখছি।’

‘কেন?’

‘কারণ আপনি অবান্তর কথা বলছেন।’

‘বিয়ের কথা অবান্তর কেন হতে যাবে!’

‘বিয়ে কথাটা অবান্তর না। একে কেন্দ্র করে আপনি যা ভুলভুলাইয়া গড়ছেন সেটা অবান্তর। ‘

‘কেন আমাদের কি বিয়ে হতে পারে না? ‘

‘না।’

‘কারণ?’

‘কারণ আপনার সঙ্গে আমার দৃষ্টিভঙ্গির আকাশ পাতাল পার্থক্য। আর…’

‘আর?’

‘আরো নানা রকম জটিলতা.. ‘

‘জটিলতা কার জীবনে নেই বলো? এরকম অজস্র জটিলতা নিয়েই তো পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ একে অন্যের সঙ্গে দিনের পর দিন বাস করছে। আমরাও পারব।’

দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আরো কিছু অপ্রিয় সত্য বলতে গিয়ে থেমে যায় তিতিক্ষা। বুঝতে পারে, নিনাদ এসব কথা বলছে একটা ঘোরের বশে। ঘোর কেটে গেলেই পূর্বাবস্থায় ফিরবে। তখন এসব কথা ওর নিজের কাছেই বড় ঠুকনো মনে হবে।
ছলনা করেই হোক কাউকে খুশি করবে, এমন মেয়ে তিতিক্ষা নয়। স্পষ্টতই বলল, ‘আমার মানসিকতার সঙ্গে আমার নিজের পরিবারেরই বিস্তর পার্থক্য। আপনার সঙ্গে মিল হবার প্রশ্নই আসে না।
একথা বলাই বাহুল্য যে আমি যেমন, তেমন কাউকেই আমি চাইব। আল্লাহর সমস্ত বিধান পালনের ক্ষেত্রে যত্নবান, আদর্শ, চরিত্রবান কেউ। প্রাচুর্যের ছড়াছড়ি তার নাই-বা থাকল, দুবেলা পেট পুরে নাই-বা খেতে পেলাম কিন্তু বাকি ক্ষেত্র গুলোতে আমি ছাড় দিতে পারি না।
দুনিয়াতে কিছু না হোক অন্তত আখিরাতে একটা
স্থায়ী সুখের আবাস চাই আমার।’
উত্তর শুনে নিনাদের মনে হল এতদিনে এই মেয়েটিকে সে কিছুমাত্র চিনতে পারে নি। তার এতদিনের সমস্ত স্বপ্ন, আশাও বৃথাই আঁকা হয়েছিল। এই মেয়ের চিন্তাধারা বয় অন্য এক স্রোতে, যার ধারে কাছে নিনাদের অস্তিত্বের কোনো চিহ্নও নেই!

বিকেলের আলো মরে আসছিল, সেই সাথে আলো হারাচ্ছিল নিনাদের বিমর্ষ মন। হঠাৎ সে সচেতন হয়ে ভাবতে চেষ্টা করল নিজের সরূপের প্রকৃত পরিচয়। কান পেতে শুনলো তার বহুদিনের জমানো সমস্ত আশার ধূলিসাৎ হবার, ওপাশের দরজাটা চিরতরে বন্ধ হবার নিদারুণ ভয়ানক শব্দ।
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে