তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ২৫

0
1147

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-২৫

ঠক ঠক ঠক… বাড়ির সদর দরজার বেল বাজতেই রহিমা বেগম তার বড় ছেলের বউ রিমা কে বললেন,
মা: রিমা যাও গিয়ে দরজাটা খুলে দাও তো।
রিমাও তার শাশুড়ি মায়ের আদেশে আচ্ছা মা বলে সিম কাটা ফেলে রেখে উঠে গেলো দরজা খুলতে। মাথায় ওড়না ঠিক করে এগিয়ে গেলো সদর দরজার দিকে ।দরজা খুলতেই হাতে ব্লেজার নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ঘর্মাক্ত তাহরীম কে দেখে অবাক হলো।কণ্ঠে চরম বিস্ময় নিয়ে বললো,
রিমা: তাহরীম এই অবস্থা কেন?

রিমার গলা শুনে তাহরীম চোখ দিলো রিমার দিকে। তাহরীমের চোখ দেখেই রিমার গলা শুকিয়ে এলো কারণ তাহরিমের চোখ অসম্ভব পরিমাণে লাল হয়ে আছে যেন মাত্রাতিরিক্ত রেগে আছে।রিমা খানিকটা আন্দাজ করতে পারলো যে তাহরীম কার কারণে রেগে থাকতে পারে তাই সেই ব্যাপারে আর কিছু না বলে তাহরিমকে বললো,
রিমা: এসো ভিতরে এসো…

রিমার কথায় তাহরীম ভিতরে এলো আর পায়ে থাকা জুতা মোজা খুলে সেগুলো জায়গা মত রেখে ধুপধাপ পা ফেলে সিড়ি দিয়ে উঠে ঘরে চলে গেলো।ঘরে গিয়ে রাগে জোড়ে শব্দ করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। তাহরীম এত জোড়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়েছে যে তার আওয়াজ রহিমা বেগম এর কানেও গেলো।উনি শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে রিমাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে।

রিমা: জানিনা মা, আমি দরজা খুলে কিছু বলতেই আমার দিকে লাল লাল চোখে তাকালো।মনে হয় আফরিনের সঙ্গে ঝামেলা করেছে।
মা: আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে আমাদের আর ওদের মাঝে ঢুকে লাভ নেই।ওদের ব্যাপার ওরাই মিটিয়ে নিবে।
রিমাও তার শাশুড়ি মায়ের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিল।

ঘরে ঢুকেই তাহরীম বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো ব্লেজারটা। ওর এখন পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে।ইচ্ছা করছে সব ভেঙে ফেলতে।আর ওর এই এত রাগের একমাত্র কারণ হলো আফরিন।আজ আফরা আর আর্যালের বিয়ে ছিল।সেই সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ওরা কাজী অফিসে বসে আফরিনের জন্য অপেক্ষা করেছে কিন্তু না আফরিনের কোনো পাত্তা নেই।একসময় বাধ্য হয়ে তাহরীম আফরিন কে ফোন দেয় কিন্তু ওর ফোন এনগেজড দেখায়।হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে কোনমতে সামলে বলে বিয়েটা সেরে নিতে কারণ আফরিন আসবে না।

তাহরীমের কথা শুনে প্রথমে সকলে আপত্তি করেছিল কারণ কেউই চায়না আফরা আর আর্যালের বিয়ে আফরিনের অনুপস্থিতিতে হোক কিন্তু তাহরীমের জোরাজুরি তে সবাই বাধ্য হলো ওদের বিয়ে পড়াতে।বিয়ে পড়ানোর পরও সবাই অপেক্ষা করেছে আফরিনের জন্য কিন্তু তার কোনো পাত্তা নেই।অতঃপর সবাই বাধ্য হলো যে যার যার বাড়িতে ফিরে যেতে।আফরা ওর মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার শশুর বাড়ী মানে আর্যালদের বাড়ি চলে গেলো।

এখন বাজে রাত সাড়ে নয়টা। চারদিক নিস্তব্ধ,আকাশটা প্রচ্ছন্ন কালো মেঘে। তাহরীম কপালে হাত রেখে হেলান দিয়ে মুখটা হাতের আড়ালে রেখে বসে আছে চেয়ারে।বারান্দা পুরো অন্ধকারে আচ্ছাদিত।বারান্দায় থাকা ছোট নীল বাতিটাও জ্বালায় নী তাহরীম।ওর এখন মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য হলেও একটু একা থাকা দরকার।আফরিনের উপর অনেক রাগ উঠছে আবার ওকে নিয়ে চিন্তাও হচ্ছে যে এত রাত হয়ে গেলো তবুও মেয়েটার কোনো খবর নেই।

কপালে আঙ্গুল ঘষতে ঘষতেই এগুলো ভাবছিল হঠাৎ তাহরীমের কানে গাড়ির হর্নের শব্দ আসে।এত রাতে এখন কে এসেছে। ও যতোটুকু জানে সন্ধার আগেই এপার্টমেন্টের সকলে বাড়ি চলে আসে। তাহরীম উঠে গিয়ে বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়ালো।চোখ দুটো এপার্টমেন্টের গেটের বাইরে স্থির করলো। আস্তে আস্তে তাহরীমের দৃষ্টি বদলে গেলো। তাহরীমের দৃষ্টিতে এখন কাঠিন্যতার ছাপ স্পষ্ট।

এপার্টমেন্টের বাইরে মাত্র যেই গাড়ি আসল তার দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো আফরিন।গাড়ি থেকে বেরিয়ে এপার্টমেন্টের পথে হাটা দিল কিন্তু গাড়ির ভিতরে থাকা মানুষটার ডাকে আবারও পিছন ফিরে গাড়ির দিকে তাকালো আর এক হাত দিয়ে বাই দিলো।এপার্টমেন্টের অনেক উপরে থাকায় আফরিন কি বললো তা শুনতে পারলো না তাহরীম তবে আন্দাজ করলো আফরিন এখন কি বলতে পারে। আফরিন গাড়ির ভিতরে থাকা লোকটাকে বায় বলে এপার্টমেন্টের গেটের ভিতরে চলে এলো । এপার্টমেন্টে ঢোকার সময় আফরিনের চোখ পড়ল তাহরীমদের বারান্দার দিকে।

আফরিন ওর দিকে তাকিয়েছে বুঝতে পেরে শক্ত মুখে দৃষ্টি ফিরিয়ে বারান্দার চেয়ারে গিয়ে বসলো তাহরীম।এই তাহলে আফরিনের দেরি হওয়ার কারণ।আজকাল তবে আফরিনও অবহেলা করতে শিখে গেছে। আফরিন তবে পেয়ে গেছে তার জীবনসাথীকে। আফরিনের জীবনে আদৌ কি ওর কোনো জায়গা আছে?

রুমের দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই আমার চোখ গেলো ঘরের মেঝের দিকে।ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার জামা কাপরগুলো আর সেই জামা কাপড়ে ডাক্তার সাহেব গেলন দিয়ে পানির মত কিছু একটা ফেলছেন।গেলন থেকে বের হওয়া জিনিসটার গন্ধে আমার বুঝতে দুই মিনিট সময়ও লাগলো না জিনিসটা কি।কাধের ব্যাগ ফেলে দৌড়ে গেলাম ডাক্তার সাহেব কে থামাতে কিন্তু ততক্ষণে ডাক্তার সাহেব গেলন ফেলে কাপড়গুলোতে ম্যাচ বক্স দিয়ে আঙ্গুল লাগিয়ে দিয়েছেন।

দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন মেঝেতে থাকা কাপড়ে যার দুই পাশে দাড়িয়ে আছি আমি আর ডাক্তার সাহেব। কাপড়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ আমাদের মনেও আগুন লেগেছে।এই আগুন আমাদের মাঝে এক অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি করেছে যার তো সবে শুরু হয়েছে। আমি ডাক্তার সাহেবের চোখে চোখ রেখে মনে মনে বললাম ‘ ভুল বোঝাবুঝি তো সবে শুরু। আরও কত ভুল বুঝাবুঝি হওয়ার বাকি। ‘

ডাক্তার সাহেব আমার সমস্ত জামা কাপড় পুড়িয়ে দিয়েছেন জেনেও কিছু বললাম না।ক্লান্ত চোখে শুধু মেঝেতে থাকা জামা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম।চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে কারণ সেই জামা কাপড়ের মাঝে মায়ের বিয়ের শাড়ীও ছিল।ডাক্তার সাহেব যে এই কাজটা রাগ থেকে করেছেন তা আমার সম্পূর্ণ জানা তবুও আমি কিছু বললাম না।

দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়ে ভাবীর কাছ থেকে রিকোয়েস্ট করে কয়েকটা শাড়ি নিয়ে এলাম যেগুলো নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই ডাক্তার সাহেব ধুপধাপ পা ফেলে বারান্দায় চলে গেলেন।আমি সেই দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝেতে পরে থাকা কাপড়ের ছাইগুলো তুলে ঘরে থাকা ডাস্টবিনে ফেললাম।কলেজ ব্যাগটা তার জায়গায় রেখে ভাবীর কাছ থেকে আনা শাড়িগুলো আলতো হাতে আলমারিতে তুলে রেখে তার থেকে একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।

মিনিট দশেক পরে শাড়ি পরে বের হতেই চোখ গেলো বিছানার দিকে।বিছানায় বসে এক দৃষ্টিতে দেখছেন আমায় ডাক্তার সাহেব।আমি উনাকে দেখেও কিছু বললাম না।কলেজে যেই কাপড় পরে গেছিলাম সেগুলো বারান্দায় মেলে দিয়ে নিঃশব্দে নিচে চলে এলাম।

রাত ১২:০০ টা,

সময়টা নির্ঘুম কাটছে। পাশে ডাক্তার সাহেবও জেগে আছেন কিন্তু এমন ভান ধরেছেন যেন উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।আমি জানি আজকের রাতটা আমাদের দুজনেরই নির্ঘুম কাটবে।দেরি করে ফেরার কারনে মা অনেক রাগারাগি করেছে কিন্তু কোনমতে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মাকে শান্ত করেছি।এখন থেকে সময়টা হয়তো আমাদের নির্ঘুমই কাটবে।হয়তো আর কয়েকদিন একসাথে আছি তারপর তো আলাদা হয়েই যাবো।যতদিন একসাথে আছি ততদিন নাহয় সময়টা না ঘুমিয়েই এক সঙ্গে পার করি।

ডাক্তার সাহেব কে প্রতিদিন রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যার কারণে শত চেষ্টা করেও ঘুম ধরা দিচ্ছে না আমার এই চোখে।হাতগুলো নিশপিশ করছে উনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য।নিজেকে আটকে রাখতে না পেরে হুট করে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।

অদ্ভুত ভাবে আমার উপর এতটা রেগে থাকার পরও উনি আমার হাত সরিয়ে দিলেন না উনার গায়ের উপর থেকে।আমি ওভাবেই উনাকে জড়িয়ে ধরে পরে রইলাম।শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়ালই হলো না।ঘুম ভেংগে নিজেকে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলাম।ঘুম ঘুম চোখে বিছানা হাতড়ে ডাক্তার সাহেব কে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।

চোখগুলো হাত দিয়ে ডলে রুমের চারদিকে চোখ বুলালাম কিন্তু ফলাফল শূন্য।ডাক্তার সাহেব ঘরে নেই।উনি এত সকাল সকাল কোথায় গেছেন?আজ কি উনার কোথাও বের হওয়ার কথা ছিল? বের হওয়ার কথা থাকলে তো বলে যেতেন।মাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে।আমি তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে বিছানাটা গুছিয়ে বাথরুমে দৌড় দিলাম জামা কাপর নিয়ে।

সিঁড়ি দিয়ে ধুপধাপ করে নামার শব্দে সকলের চোখ গেলো সিড়ির দিকে।আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে কাধে ব্যাগ নিয়ে নেমে এসেছি।নিচে নামতেই মা আমায় দেখে বললো,
মা: কিরে আজও তাড়াতাড়ি যেতে হবে?তাড়াতাড়ি যাওয়ার হলে খাবার নিয়ে যা, আমি রেডি করে দিচ্ছি।
আফরিন: মা ডাক্তার সাহেব কোথায় গেছেন কিছু কি বলে গেছেন?

মা খাবার টিফিন বাটিতে নিতে নিতে বলল,
মা: সেকি তাহরীম তোকে বলে যায়নি? ও তো আমায় বললো যে ও ওর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে গেছে আর সেটা নাকি ও তোকে বলেছে।
আমি মাথায় হাত দিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হেসে বললাম,
আফরিন: বলেছিলেন তো আসলে হুট করে মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।
মা: এই জন্যই বলি বেশি করে বাদাম,দুধ, ডিম এসব খা তাহলে যদি শরীরে একটু শক্তি আর মাথায় একটু বুদ্ধি আসে। নে এখন টিফিন ব্যাগে ভরে নে আর কলেজে গিয়ে খেয়ে আমায় উদ্ধার কর বলে আমার দিকে টিফিন বাটি এগিয়ে দিল মা।আমি আলতো মাথা নেড়ে টিফিন বাটি ব্যাগ ভরে সবাইকে বিদায় জানিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।

আজ ডাক্তার সাহেব আমার আগে বেরিয়ে গেছেন বলে আমায় বাধ্য হয়ে বাস দিয়ে আসতে হলো।বাস থেকে নেমেই তাড়াতাড়ি পা চালালাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।হসপিটালে ঢুকেই ফারহান স্যারের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলাম কারণ স্যার বলেছেন কলেজে এসে উনার সঙ্গে দেখা করতে কারণ পেশেন্ট নিয়ে নাকি আমার সঙ্গে ডিসকাস করবেন।

Tumhein koi aur dekhe to jalta hai dil
Badi mushkilon se phir sambhalta hai dil
Kya kya jatan karte hain tumhein kya pata
Yeh dil bekarar kitna ye hum nahi jaante

Magar jee nahin sakte tumhare bina Hamein tumse pyar kitna ye hum nahi jaante
Magar jee nahin sakte tumhare bina
Hamein tumse pyar

আবারও সেই অভিশপ্ত গান… গানটা শুনতেই গা কেপে উঠলো। আস্তে আস্তে পিছন ফিরলাম।পিছন ফিরতেই চোখ গেলো সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে যার ঠোঁটের কোণে থাকা হাসি দেখে শরীরটা ঈষৎ কেপে উঠলো।আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম মানুষটার দিকে।মানুষটা আমায় দেখে বললেন ‘ হায় সুইটহার্ট ‘।

সেই ডাক যার জন্য একসময় অপেক্ষা করে থাকতাম।আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় বললাম,
আফরিন: আরাফাত…

আরাফাত আফরিন কে ভয় পেতে দেখে নিঃশব্দে হাসল।কাউকে ভয় পেতে দেখলে ওর খুব ভালো লাগে আর সেটা যদি হয় তার নিজের ভালোবাসার মানুষ তাহলে তো কথাই নেই। যার জন্য এতকিছু করলো, সাত সমুদ্র পাড়ি দিল সেই কিনা আরেকজন কে বিয়ে করে বসে আছে এটা কি সহ্য করা যায়? তাইতো আফরিনের কাছ থেকে ওর ভালোবাসার মানুষ কে আলাদা করে দিলো।কাউকে আলাদা করার ব্যাপারে ওর জুলি মেলা ভার।আরাফাত এসব ভাবতে ভাবতেই কাল রাতের কথা মনে করলো।

কাল রাতে হসপিটাল ছেরে বের হওয়ার সময় আফরিন সেই পরিচিত অভিশপ্ত গানটা শুনেই ভয়ার্ত মুখে পিছনে ঘুরে আর সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা কে দেখে কেপে উঠে।সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা আর কেউ নয় বরং ওরই প্রাক্তন প্রেমিক আরাফাত শিকদার যার সঙ্গে চার বছরের সম্পর্ক শেষ করে দেড় বছর আগে বাংলাদেশে চলে এসেছিল শুধুমাত্র মানুষটার অতিরিক্ত ভালোবাসার জন্য।

কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না সে সেটা ভালোবাসাই হোক কিংবা অন্যকিছু। আরাফাতের অতিরিক্ত ভালোবাসা আফরিন কে তিলেতিলে শেষ করেছে তিনটা বছর।সম্পর্কের শুরুতে প্রথম এক বছর সব ঠিক থাকলেও এক বছর যেতেই আরাফাতের আফরিন কে নিয়ে পসেসিভনেস বাড়তে থাকে।কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই অতিরিক্ত চিল্লাচিল্লি করা, ছেলে তো দূর কারোর সঙ্গেই কথা বলতে দিত না ।

একবার একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখে নিজের রাগ দমন করতে না পেরে অনেক জোড়ে চর মেরেছিল আফরিন কে আর সেটাই ওদের সম্পর্ক শেষ হওয়ার কারণ হয়ে দাড়ায়। আরাফাত সম্পর্কে আফরিনের মামার বন্ধুর ছেলে হলেও আফরিন এই ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করেনি,সোজা সম্পর্ক শেষ করে মামা মামীর কাছে মিথ্যা বলে চলে আসে আর তার কারণ হিসেবে দেখায় ফিরোজা বেগমের বলা মিথ্যেটা।

চার বছরের সম্পর্কের মধ্যে প্রথম এক বছর জীবনটা মধুর মত হলেও পরের তিন বছরে জীবনটা বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল যার ভার সহ্য করতে না পেরেই আফরিন এভাবে পালিয়ে আসে।তবে ওর পালিয়ে আসায় কোনো লাভ হলো না কারণ আরাফাত আবার এসেছে ওর জীবন বিভীষিকাময় করে তুলতে। আরাফাত যদি আফরিন কে না পায় তাহলে অন্য কাউকেও ওকে পেতে দিবে না।

আরাফাত কে দেখে আফরিন কাপা কাপা কণ্ঠে বললো,
আফরিন: আরাফাত….
আরাফাত: কি মনে করেছিলে সুইটহার্ট আমি জানতে পারব না তুমি কোথায়? বাট সি আমি জেনে গেছি…
আফরিন: আরাফাত… আই এম ম্যারিড…

কথাটা বলতেই আফরিন ওর দুই গালে চাপ অনুভব করলো। ব্যপারটা বুঝতে পারলো যখন আরাফাত তেজী গলায় বললো,
আরাফাত: কি মনে করেছিলে তুমি বিয়ে হয়ে গেছে দেখে আমি তোমায় কিছু করতে পারব না? তোমার বিয়ে হোক আর নাহোক তুমি সবসময় আমার ছিলে আর আমারই থাকবে।এই আরাফাত শিকদারের জিনিসের উপর হাত দেওয়ার সাহস কারোর নেই আর কেউ যদি এমনটা করে তাহলে তাকে মারতেও আমার হাত কাপবে না।

আরাফাত আমার গাল চেপে ধরে থাকলেও উনার কথা শুনে আমি কেপে উঠায় আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
আরাফাত: বাহ্ এত ভালোবাসা বরের জন্য?যদি এত ভালোবাসা থেকেই থাকে তাহলে বর কে বাঁচানোর জন্য তাকে ছেড়ে দাও নাহলে তোমার বর ডক্টর তাহরীম মেহমাদের মৃত্যু আমার…

আমি আরাফাতের কথা শেষ করবার আগেই উনার পা ধরে বসে পড়লাম আর বললাম,
আফরিন: প্লিজ আরাফাত এমন করবেন না।আপনার দোহাই লাগে ডাক্তার সাহেব কে ছেরে দিন।উনার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।প্লিজ উনাকে ছেরে দিন।
আরাফাত: বাহ্ এত ভালোবাসা বরের জন্য যে নাম ধরে না ডেকে ডাক্তার সাহেব ডাক। ইমপ্রেসিভ ভেরি ইমপ্রেসিভ। ভেবে নাও বর কে বাঁচিয়ে আমার হাতের পুতুল হবে নাকি বর কে মেরে আমার হাতে বন্দী হবে।যেটাই চুস কর না কেন তোমাকে বন্দী তো আমার হাতেই হতে হবে।
আফরিন: না আরাফাত প্লিজ এমন করবেন না।আমি আপনি যা বলবো তাই শুনবো তবুও ডাক্তার সাহেব কে কিছু করবেন না।আমি আপনার হাতে বন্দী হতে রাজি আছি তবুও ডাক্তার সাহেব কে কিছু করবেন না।

তারপরই তো ডক্টর তাহরীমকে ভুল বুঝানোর জন্য আফরিন কে নিজের কাছে রাত সাড়ে নয়টা অব্দি আটকে রেখেছিল আর রাতে বাড়িও ওই পৌঁছে দিয়েছিল যাতে তাহরীম ভুল বুঝে। ব্যপারটা কাজেও দিয়েছে।কালকে রাতের কথা ভাবতে ভাবতেই আরাফাতের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। আরাফাত ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বলে,
আরাফাত: তোমার বরের কি অবস্থা?

আফরিন: আপনি যেমনটা চেয়েছিলেন তেমনটাই হয়েছে।হয়তো খুব তাড়াতাড়ি উনার মনে আমার প্রতি ঘৃণা তৈরি হবে।
আরাফাত: ওয়েল ডান…একবার তোমার বর তোমায় ভুল বুঝলে আমি তোমাকে নিয়ে আবার লন্ডন ফিরে যাবো।
আমি আরাফাতের কথায় আলতো ভাবে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বললাম,
আফরিন: এখন আমি যাই।ডক্টর ফারহান ডেকেছিলেন…উনার নাকি কিছু ডিসকাস করার আছে।
আরাফাত: যাও কিন্তু ওই ফারহান থেকে একশো হাত দূরে থাকবে।তোমাকে যদি আমি ওর কাছাকাছি দেখেছি তাহলে তোমার বরের জায়গায় ওকে উপরে পাঠিয়ে দিবো।ওর সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করবে?…আঙ্গুল দেখিয়ে কথাগুলো বললেন আরাফাত।

উনার কথা শুনে আমি দ্রুত মাথা ডানে বামে করে না বুঝালাম।উনি ইসারায় আমায় যেতে বললেন।উনার ইসারা দেখে আমি তড়িৎ গতিতে সামনে ফিরে পা চালালাম ডক্টর ফারহানের কেবিনের উদ্দেশ্যে।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে