তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ১৮

0
1204

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-১৮

‘ বাবা মা কালতো শুক্রবার তাই ভাবছি কাল আমি আর সুশি বের হবো। ‘

মা আমার কথা শুনে খেতে খেতে বললো,
মা: কোথাও যাবি?
আফরীন: হুম সুশির জন্য শ্যাম্পু, ক্যাট ফুড আর কিছু জিনিস আনতে হবে।
বাবা: তাহলে এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে?শুধু তাহরীম কে বললেই তো হলো।এরপর থেকে শুধু তাহরীম কে বলে নিবে।
আমি বাবার কথায় আলতো ভাবে মাথা নাড়লাম।
ওইদিকে নিহা শুধু আকুপাকু করছে আমার পাশে বসে সুশি কে নেওয়ার জন্য কিন্তু ও একটু টাচ করলে সুশি চিকন গলায় মিয়াও বলে চিৎকার দিয়ে উঠছে।

‘ আঃ ও যখন তোর কাছে যেতে চাইছে না তখন কেন ওকে জোর করছিস নিহা? ‘ বললো তাহসান ভাইয়া।

নিহা: ও কেন আমার কাছে আসবে না সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।
তাহরীম: শুনেছিলাম বিড়ালরা পরিষ্কার মানুষদের কাছে যায়।তোর কাছে যখন যাচ্ছে না…
নিহা: কি বললে তুমি ভাইয়া?আমি পরিষ্কার না? কোথা দিয়ে আমাকে তোমার অপরিষ্কার মনে হচ্ছে?
তাহরীম: আমি কি একবারও বলেছি তুই অপরিষ্কার তাহলে নিজের উপর নিচ্ছিস কেন?আসলেই তুই নোংরা নস তো?চোরের মন পুলিশ পুলিশ…
নিহা: ভাইয়া এবার কিন্তু এটা বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।তুমি শুধু শুধু আমায় জ্বালাচ্ছ। ও মা দেখনা ভাইয়া আমায় কিসব বলছে।

‘ নিহাকে এভাবে কেন জালাচ্ছ তাহরীম?এমনিতেই সুশিকে নিতে পারছেনা বলে বেচারীর মন খারাপ এইদিকে তুমি ওকে আরও জ্বালাচ্ছ।সবাই যদি এমন করো তাহলে ও বেচারি কোথায় যাবে? ‘ বললো মা।

আমি আর সুশি এদের ভাই বোনের কান্ড দেখছি।এদের এমন বাচ্চামিপনা করতে দেখে আমার অনেক হাসি আসছে।আমি কোনমতে হাসি চেপে খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষে ডাক্তার সাহেব উনার ঘরে চলে গেলেন।আমি,মা,ভাবী আর নিহা মিলে সবটা গুছিয়ে নিচ্ছি।আমি ঘরে যাচ্ছি না বলে সুশিও যেতে পারছেনা।শুধু আমার পায়ে পায়ে ঘুরে মিয়াও মিয়াও করছে।

কাজ শেষে মা আমায় শুতে যেতে বললেন।আমি ঘরে চলে এলাম।আমার পিছন পিছন সুশিও এলো।এবার আর ওকে কোলে নিলাম না।ঘরে ঢুকে চোখ গেলো ডাক্তার সাহেবের দিকে।উনি স্টাডি টেবিলে বসে গম্ভীর মুখে ল্যাপটপে কাজ করছেন।আমি এসেছি বুঝতে পেরেও আমার দিকে তাকালেন না।আমি ওসব পাত্তা দিলাম না।আগে সুশি কে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেই তারপর উনাকে দেখবো।

একটা ছোট বালিশে কাপড় বিছিয়ে সুশিকে ইসারা করলাম শুতে।আমার ইসারা বুঝে সাথে সাথে শুয়ে পড়লো সুশি। সুশির বয়স মাস ছয়েক হবে আমার ছোটো বিড়ালই পছন্দ।আমি সুশি কে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার সাহেবের দিকে এগিয়ে গেলাম।

ডাক্তার সাহেব খুব মনযোগ সহকারে একটা ফাইল দেখছিলেন আর তখনই আমি ধুপ করে উনার ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলাম।আমার এহেন কাজে ডাক্তার সাহেব ভরকে গেলেও কিছু বললেন না।ল্যাপটপের উপর থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে আবার ল্যাপটপ খুলে কাজ করতে লাগলেন।আমি উনি একটু হাত সরাতেই আমি আবার ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলাম।এবার বোধহয় উনি রেগে গেলেন।চোখ গরম করে কটমট চোখে তাকালেন আমার দিকে কিন্তু আমি উনার সেই দৃষ্টি কে পাত্তা দিলাম না।

উনি আমার ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে আরো রেগে গেলেন।আমার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে দাতে দাত চেপে বললেন,
তাহরীম: এই নিশিরাতে কি তোমায় ভূতে ধরেছে?আমায় কাজ করতে দিচ্ছ না কেন? সরো…আমায় কাজ করতে দাও।
আফরীন: তো করুন কাজ। নিষেধ করেছে কে?
তাহরীম: তাহলে আমার ল্যাপটপ বন্ধ করে ধরে দাড়িয়ে আছো কেন?
আফরীন: আপনার ল্যাপটপ কোথায় ধরলাম? আমি তো আমার বরের ল্যাপটপ ধরেছি। বর আমার,ল্যাপটপ আমার তাই আমিই ধরবো কিন্তু তাতে আপনার কি বলে আমি উনার বুকে এক আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিতে লাগলাম ।

ডাক্তার সাহেব মনে হয় আমার কথাগুলো ঠিক হজম করতে পারলেন না।আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছেন ডাক্তার সাহেব।উনি এক পলক তাকিয়ে আছেন বলে আমি উনার হাত ধরে টান দিয়ে বললাম,
আফরীন: চলুন না ঘুমাই…

আমার কথায় উনার সম্বিত ফিরলো।উনি নিজেকে আবারও কঠিন আবরণের আড়ালে মুড়িয়ে বললেন,
তাহরীম: তো যাও আমি কি নিষেধ করেছি।
আফরীন: আমি তো চাইছি আমার সঙ্গে আমার বরও ঘুমাক কিন্তু সেতো অন্য কাজে ব্যস্ত।তার কি আর আমার দিকে তাকানোর জো আছে?
তাহরীম: তোমার বর তোমার দিকেই তাকিয়ে আছে,এখন তুমি যদি পাত্তা না দাও তাহলে কিছু করার নেই।কথায় আছে রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার।তুমি অবহেলা করলে তুমিও অবহেলাই পাবে।

ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে বুঝলাম উনি এখনো রেগে আছেন কিন্তু উনার রেগে থাকার কারন কি? আসলে ডাক্তার সাহেবের মন বোঝা এতই কঠিন যে আমি বুঝতেই পারিনা কখন কি চলে উনার মাথায়।উনার মন একেবারে মেয়েদের মনের মত।অনেক ছেলেদের বলতে শুনেছি যে মেয়েদের মন নাকি বোঝা দায় কিন্তু আমার তো এখন মনে হচ্ছে ডাক্তার সাহেবের মন বোঝা দায়।

‘ আপনি না গেলে কিন্তু আমি আজ সারারাত ঠান্ডায় বারান্দায় বসে থাকবো। ‘ বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললাম।আমায় এভাবে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে ডাক্তার সাহেব গরম চোখে তাকালেন কিন্তু তবুও আমি থামলাম না।আর উপায়ন্তর না পেয়ে ডাক্তার সাহেব বিছানায় গিয়ে ধুপধাপ আওয়াজ করে শুয়ে পড়লেন যাতে খাটের আওয়াজ শুনে আমি বারান্দা থেকে ফিরে এসে শুয়ে পড়ি।

উনার কার্যকলাপ দেখে আমার পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু সিরিয়াস মোমেন্ট বলে হাসতে পারছি না।ডাক্তার সাহেব শুয়ে পরেছেন বুঝতে পেরেও আমি বারান্দা থেকে বের হলাম না।আমি তো চাইছি ডাক্তার সাহেব নিজে এসে আমাকে নিয়ে যান তাইতো এত কান্ড কারখানা।

এইদিকে তাহরীম শুয়ে তো পড়েছে কিন্তু আফরিন আসছে না।এইদিকে ঠান্ডার মধ্যে আফরীন বসে আছে বলে তাহরীমের চিন্তার শেষ নেই।এই মেয়েটা বোধ হয় ওকে চিন্তা করিয়ে করিয়েই মারবে।আফরিনের জন্য চিন্তা করতে করতেই ওর চুল পেকে যাচ্ছে।

‘ কি হলো কি? আমি তো বিছানায় গিয়ে শুয়েছি তারপরও কেন শুতে যাচ্ছনা? এখন কি আমার তোমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে? ‘ বিছানা থেকে উঠে এসে আমার কাছে বারান্দায় দাড়িয়ে কথাগুলো বললেন ডাক্তার সাহেব।

আমার উনার কথা শুনে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে তবুও হাসলাম না আমি কারণ এখন একটু সিরিয়াস হওয়ার নাটক করতে হবে নাহলে আমার প্ল্যান বিগড়ে যাবে কিন্তু হুট করে ডাক্তার সাহেব যে এমন একটা কাজ করে বসবেন সেটা আমি কস্মিনকালেও ভাবতে পারিনি।উনি আমায় ঝট করে কোলে তুলে নিলেন।আমি বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি।

‘ আরে কি করছেন কি? ‘ বড় বড় চোখ করে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললাম।

‘ আমি আগেই বলেছিলাম উঠতে কিন্তু তুমি উঠনি। জিজ্ঞেসও করেছিলাম তোমায় কোলে নিতে হবে কিনা কিন্তু তুমি নিরব রয়ে গেলে আর নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ। ‘ সামনের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে কথাগুলো বললেন ডাক্তার সাহেব।

আর কি আমি আর কিছু বলার মত খুজেই পেলাম না।ডাক্তার সাহেব আমায় নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লেন তবে অন্য পাশ ফিরে।আমি উনার দিকে চোখ মুখ কুচকে তাকালাম কিন্তু উনি অন্য পাশে ফিরে আছেন বলে দেখেননি।

হঠাৎ নিজের পায়ের উপর কারোর পা আর গলায় কারোর হাত অনুভব করতেই পাশ ফিরে তাকালো তাহরীম।পাশ ফিরে দেখল আফরিন ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।ওর গায়ের উপর পুরো ভর ছেরে দিয়ে শুয়ে আছে আফরিন।

‘ কি হলো কি? এভাবে আমার গলা জড়িয়ে,পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে শুয়ে আছো কেন? বিছানায় কি জায়গার অভাব পড়েছে? আরও ঐদিকে যাও…’ বললেন ডাক্তার সাহেব ।

আমি ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে উনাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,
আফরীন: আমার বর,আমার বরের গলা,আমার বরের পা তাই আমি পা দিয়েছি আপনার কী?
তাহরীম: বাহ্ বাহ্ আমার পায়ের উপর পা দিয়ে আমায়ই বলছো আমার কি?আমি বুঝিনা তোমার মুড এত ক্ষণে ক্ষণে চেঞ্জ হয় কেন?
আফরীন: মুড আমার না আপনার চেঞ্জ হয়।সকাল বেলা আমাকে ডক্টর ফারহানের সঙ্গে দেখে রেগে বোম হয়ে গেলেন।তারপর আমায় উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতে লাগলেন আর এখন আবার সন্ধ্যা থেকে আপনার এই সুন্দর সুন্দর চোখ দুটো লাল করে ফুলিয়ে বসে আছেন।কি হয়েছে কি? এত মেয়েদের মত মুড চেঞ্জ করেন কেন?
তাহরীম: আর তখন তুমি যে মিথ্যা বলে বেরিয়ে গেলে সেটা?তার বেলায় কিছু না তাইনা? মিথ্যা বলে বের তো হয়ে গেলে কিন্তু একবারও আমায় বলে গেলে না কোথায় গেলে? আমাকে বলবেও বা কেন, আমি কি তোমার কেউ লাগি?

আফরীন: আপনি আমার অনেক কিছু লাগেন যেটা হয়তো বলে বোঝানো সম্ভব না আর আমি হসপিটালের সামনের ক্লিনিকে গিয়েছিলাম….
আমার কথা শুনে হুট করে ঘাবড়ে গেলেন ডাক্তার সাহেব।আমার হাতে,মুখে,গলায় ধরে বললেন,
তাহরীম: কি হয়েছে তোমার? কেন গিয়েছিলে ক্লিনিকে?
আফরীন: আমার কিছু হয়নি কিন্তু…
তাহরীম: কিন্তু কি? কাম অন আফরিন এত থেমে থেমে না বলে তাড়াতাড়ি বলো।
আফরীন: আফরা প্রেগনেন্ট…

আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লেন।আমার দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বললেন,
তাহরীম: এ্যা…
আফরীন: এ্যা না হ্যাঁ।আফরীন ইজ থ্রি মাণ্থ প্রেগনেন্ট অফ আর্যালস বেবী।
তাহরীম: তোমার মাথা তো ঠিক আছে আফরীন? আফরা কি করে প্রেগনেন্ট? আমি বুঝতে পারছি যে ওদের সম্পর্ক আছে তাই বলে আফরা বিয়ে না করেই প্রেগনেন্ট হয়ে গেছে।এটা আদৌ পসিবল?
আফরীন: পসিবল কারণ ওদের বিয়ে হয়েছে।
তাহরীম: হোয়াট? আর ইউ সিরিয়াস?
আফরিন: হ্যাঁ আমি সিরিয়াস।ওদের বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে তাও আবার লুকিয়ে লুকিয়ে।ওরা এক বছর আগেই লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে আর সেটা কাউকে জানায়ও নী।
তাহরীম: কিন্তু এই বিয়ে তো সমাজ মেনে নিবে না।
আফরীন: জানি তো সেটাই তো সমস্যা।
তাহরীম: এখন কি করবে?
আফরীন: আফরা আর আর্যাল অনেক রিকোয়েস্ট করেছে যেন আমি আর আপনি গিয়ে ওদের বাবা মাকে মানিয়ে আসি।প্লিজ ডাক্তার সাহেব মানা করবেন না।এটা আমার বন্ধুদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন।
তাহরীম: কিন্তু আমি কি করে…
আফরীন: প্লিজ ডাক্তার সাহেব.. বলেই আমি ডাক্তার সাহেবের দিকে ছলছল চোখে তাকালাম।

আমাকে ওভাবে তাকাতে দেখে ডাক্তার সাহেব ছিটকে দূরে সরে গেলেন আর বললেন,
তাহরীম: ভুল করেও এভাবে তাকাবেনা আফরীন।তুমি সবসময় আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করো।তোমার জন্য আমি শান্তিও পাবনা।এখন আমাকে যেতেই হবে। ফাইন আমি যাবো।
ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে আমি প্রচন্ড খুশিতে লাফিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ডাক্তার সাহেব কে।ডাক্তার সাহেব আমার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেছেন।খানিক হা করে থেকে বললেন,
তাহরীম: তুমি আবারও আমায় জড়িয়ে ধরেছ?
আমি ডাক্তার সাহেব কে ছেরে দিয়ে এক প্রকার ধস্তাধস্তি করে উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে বললাম,
আফরীন: আমার বরের শরীর,আমি জড়িয়ে ধরবো নাতো কে ধরবে?
ডাক্তার সাহেব আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই বললেন না শুধু আমায় আলতো করে জড়িয়ে ধরে আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলেন।আমি আলতো হেসে চোখ দুটো বন্ধ করে উনার শরীরের ওম অনুভব করতে লাগলাম।

পরেরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙলো পাখির ডাকে।ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে দৌড় দিলাম। সুশির ঘুম আগেই ভেঙে গেছে আর ঘরের দরজা লাগানো বলে ও ঘরেই ঘুরঘুর করছে।আমি দশ মিনিটের মধ্যে গোসল সেরে একটা মেরুন কালারের শাড়ি পরে বেরিয়ে এলাম।

চুলের পানিগুলো মুছার জন্য আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। টাওয়েল খুলে নিয়ে চুলগুলো সামনে এনে চুল ঝাড়তে লাগলাম।চুল ঝাড়তে আমি এতই ব্যস্ত যে কখন ডাক্তার সাহেব ঘুম থেকে উঠে এসে আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন সেটাই দেখতে পারলাম না।আমার খেয়াল হলো তখন যখন ডাক্তার সাহেব আমায় জড়িয়ে ধরলেন।হুট করে জড়িয়ে ধরাতে কেপে উঠলাম।চোখ দুটো আয়নার দিকে স্থির হয়ে আছে।আমি অপলক দৃষ্টিতে ডাক্তার সাহেব কে দেখছি আয়না দিয়ে।উনি আমায় জড়িয়ে ধরে উনার হাত দুটো আমার কোমরের ভাজে রেখে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছেন।

ডাক্তার সাহেব মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন বলে উনার চোখ মুখ ফুলে আছে। তাছাড়া চুলগুলো ললাটে লেপ্টে আছে।ডাক্তার সাহেবের ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসিও আছে যার কারণ বুঝতে পারলাম না।আমি অপলক দৃষ্টিতে উনাকে দেখছি।মানুষটা কে হুট করেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ মনে হচ্ছে আমার কাছে।

‘ এভাবেই কি তাকিয়ে থাকবেন মিসেস আফরিন? ‘

ডাক্তার সাহেবের গলা কানে আসতেই সম্বিত ফিরল আমার।আমি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ডাক্তার সাহেবের হাত সরিয়ে দিলাম আমার কোমর থেকে আর উনার থেকে খানিকটা দূরে সরে দাড়ালাম তারপর উনার দিকে দৃষ্টি দিলাম।উনার মুখে এখনও সেই হাসি লেগে আছে।আমি বললাম,
আফরিন: আপনি জড়িয়ে ধরলে সমস্যা নেই আর আমি তাকিয়ে থাকলে সমস্যা তাইনা?আপনি রাগ দেখালে সমস্যা নেই,আমি রাগ দেখালে সমস্যা। মানে আপনি কিছু করলে দোষ নেই কিন্তু আমি কিছু করলে দোষ।

আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব বাকা হেসে আমার কনুইয়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার বুকে টেনে নেন।আমি ডাক্তার সাহেবের এমন কাজে হকচকিয়ে গেছি।আমি স্তম্ভিত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে আমার গালে হাত রেখে আমায় উনার দিকে টেনে নিলেন।আমি গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।

ক্রমশ উনার ঠোঁট এগিয়ে আসছে আমার ঠোঁটের দিকে।যখন আমাদের ঠোঁট প্রায় ছুঁইছুঁই তখনই আমি আমার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে উনাকে আটকে দিলাম।আমার এহেন কাজে উনি খানিকটা বিরক্ত হলেন।আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম,
আফরিন: আপনি আমাকে….
তাহরীম: আরে ইয়ার কিস করতে চাচ্ছিলাম…

উনার কথা শুনে আমার চোখ রীতিমত কোটর ছেরে বেরিয়ে আসছে।আমি উনার দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছি কিন্তু উনি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি বুকে বার কয়েক থুথু দিয়ে বললাম,
আফরিন: ছিঃ ছিঃ আপনি ঘুম থেকে উঠে এসে ময়লা মুখে আমায় কিস করছিলেন?এখন অব্দি গোসল করেন নী, দাত ব্রাশ করেন নী আর এসেছেন আমায় কিস করতে।যান গিয়ে গোসল করুন।

আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব কিছু বললেন না ।সোজা নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালেন কিন্তু যেতে যেতে বললেন,
তাহরীম: আপনা ভি টাইম আয়েগা….
আমি উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে আর উনি বাকা হেসে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে