তি আমো পর্ব-১৬+১৭

0
1199

#তি_আমো❤
#পর্ব_১৬
Writer:Sidratul muntaz

🍁
সকাল থেকেই নিহাদের বাড়ির পরিবেশ রমরমে হয়ে আছে। হাজার হাজার চেনা পরিচিত মানুষের ভীড়।কিন্তু আমি শুধু একটা মুখই খুজে বেড়াচ্ছি। ওই ঘটনার পর থেকে ঈশান আমার সাথে আর একবারও কথা বলেন নি। প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা কেটে গেছে। এটুকু সময়েই যেন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি মেনে নিতে পারছি না উনার অবহেলা। যতবার উনার সামনে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছি উনি নানা অযুহাতে আমাকে এড়িয়ে চলছেন। আমার দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেন পর্যন্ত না। ব্যাপারটা আমার জন্য চুড়ান্ত কষ্টদায়ক।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা, ঈশান মাহাথি ভাইয়ার সাথে ডেকোরেশনের লিষ্ট বানাচ্ছিলেন। সামিরা, রিদিতা ওরাও সেখানে ছিল। অবশ্য এদের কাজই ঈশানের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করা। সকাল থেকেই দেখছি। আমি সামিরা, রিদিতার পাশে গিয়ে বসলাম। যদিও আমি ইচ্ছে করে যাইনি। ওরাই আমাকে ডেকেছিল। মেহেন্দির ডিজাইন চুজ করার জন্য। আমি ওখানে গিয়ে বসতেই ঈশান মাহাথি ভাইয়ার হাতে লিষ্ট ধরিয়ে চলে গেলেন। ঈশানের হুট করে চলে যাওয়ায় সবাই আমার দিকে তাকাল। যেন আমিই উনাকে ভাগিয়ে দিয়েছি। আমি চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।

একবার আন্টি মানে নিহার মা আমাকে বললেন ঈশানকে পুলসাইট থেকে ডেকে আনতে। জরুরি কাজ আছে। আমিও খুশিমনে গেলাম। উদ্দেশ্য ছিল ঈশানকে একা পেলে সরি বলবো। প্রত্যাশিতভাবে একাই পেয়ে গেলাম উনাকে। একাকি দাড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলেন উনি। আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই উনার হাসোজ্জল মুখ মেঘে ঢেকে গেল। আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলেন। আমি উনার হাতের বাহু টেনে ধরলাম। কান্না জড়ানো কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম, “সরি”। কিন্তু উনি? এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলেন। আমি জোর গলায় বললাম, ” সুমনা আন্টি আপনাকে খুজছে।” উনি শুনলেন কিনা জানিনা। একটিবার পেছন ফিরে দেখলেনও না।

আমি উপলব্ধি করলাম আমার গাল বেয়ে অশ্রুপাত হচ্ছে। এতোটা কষ্ট এর আগে কখনো হয়নি। কি দোষ ছিল আমার? কেনো এভাবে শাস্তি দিচ্ছেন উনি? আমি তো নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। সরি বলেছি। যদিও তখন এইটা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলনা। উনি যেটা করতে যাচ্ছিলেন সেটাও তো ভুল। তাহলে উনারও কি আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ নয়? ভুল কি শুধু আমি একাই করেছি? উনি নিজেও তো করেছেন। তাহলে কিসের এতো অহংকার উনার। আমি সুইমিংপুলের ভেজা ফ্লোরই বসে পড়লাম। টলটলে পানি পানিতে পা ভিজিয়ে কাদছি। এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাকল,

“তারি আপু, তুমি কি কর?”

আমি চট করে চোখের জল মুছে পেছনে তাকালাম। আরিশা কোমরে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা প্রচুর কিউট। বয়স ৮/৯ হবে। নিহার পিচ্ছি কাজিন। এটুকু বয়সেও কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল মেয়েটার। ফরসা মুখে গাল দুটো টুকটুকে গোলাপী। ঠিক যেন সাদা পুতুল। দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। আমি আরিশার একহাত ধরে কাছে আনলাম। কোলের উপর বসিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বললাম,

“আনিশা পরি, কেমন আছো তুমি?”

“আমি ভালো আছি। কিন্তু তুমি স্যাড কেনো তারি আপু?”

“কই স্যাড না তো? আমি তো খুব হ্যাপি! এইযে আমি হাসছি।”

আরিশা অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। ঘন পলক ঝাকিয়ে বলল,

“আচ্ছা বুঝেছি। এখন বলো তো ঈশান কোথায়?”

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, “ঈশান? ঈশানকে তুমি কেনো খুজছো বেবি?”

আরিশা ভ্রু কুচকে বলল, “ঈশান ইজ এল্ডার দেন ইউ। ইউ শুড কল হিম ভাইয়া। নট অনলি ঈশান।”

আমি অবাক হয়ে তাকালাম। আমতা-অমতা করে বললাম, ” হ্যা। ঠিকাছে। কিন্তু ঈশান তো তোমারও বড়। তুমি ভাইয়া বলছো না কেনো?”

আরিশা আমার কোল থেকে উঠে পরল। কোমরে হাত রেখে বলল, ” তুমি আর আমি কি এক হলাম? ঈশান ইজ মাই ফিয়্যান্সে। আই ক্যান কল হিম ঈশান।”

আমি চোখ গোল করে বললাম,” মানে? ঈশান তোমার ফিয়্যান্সে?”

“হ্যা! মাম্মা বলেছে আমি যদি ম্যাথ এক্সামে নাইন্টি পারসেন্ট মারকস পাই, তাহলে ঈশানের সাথে আমার বিয়ে দিবে। ”

কথাটা শুনে আমার হেচকি উঠার উপক্রম। এই ইঁচড়েপাকা মেয়ে বলে কি? আর ওর মা-ই বা এটা কেমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে মেয়েকে? অদ্ভুত! আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,

” কিন্তু আরিশা বেবি! ঈশান তো তোমার ভাইয়া। ভাইয়াকে কি কেউ বিয়ে করে?”

আরিশা মাথা দুলিয়ে বলল, ” করাই যায়! ঈশান তো আমার কাজিন ভাইয়া। মানুষ তো কাজিনকে বিয়ে করেই। মাম্মা এন্ড বাপিও তো কাজিন ছিল। বাট দে আর কাপল নাউ। আমি আর ঈশানও কাপল হয়ে যাবো। ভেরি সুন! তোমাকেও দাওয়াত দিবো বিয়েতে। আমি আমার পারপেল লেহেঙ্গাটা পড়বো। তুমি তো খুব ভালো মেহেন্দি দিতে পারো রাইট? আমাকে বিয়ের দিন দিয়ে দিও?”

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। আরিশা বলল,

“আচ্ছা এখন বায়। ঈশানকে খুজে দেখি। আমার জন্য চকলেট আনতে বলেছিলাম। যদি না আনে, তাহলে আজকেই ব্রেকআপ।”

লাস্ট লাইনটা শুনে আমার হেচকি উঠেই গেল। মাথায় হাত দিয়ে উচ্চারণ করলাম, ” ষাট ষাট! বালাইষাট! ”

নিহার বেডরুমের বন্ধ দরজার সামনের রুমটায় গোল হয়ে সোফায় বসে আছি আমরা, মানে মেয়েরা। সবাই গল্পে মশগুল থাকলেও আমি নিশ্চুপ। আমাকে নিয়ে কারো তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। তবে নিহা থাকলে এভাবে অবহেলায় পড়ে থাকতে পারতাম না আমি। ঠিকই আমার মনোরঞ্জনের চেষ্টায় নানান কৌশল খাটাতো সে। কিন্তু আজ নিহা ব্যস্ত, বড্ড ব্যস্ত। বাড়িজুড়ে এমন এলাহি অনুষ্ঠানের মধ্যমণি তো সেই-ই।

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে নিহাকে মেকআপ করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর সেই মহান কার্য এখনো সিদ্ধি লাভ করেনি। নিহা কিভাবে এতোক্ষণ ধরে শান্ত হয়ে বসে আছে কে জানে? আমার তো অসহ্য লাগছে। তার উপর আবার মেয়েদের ঘ্যানঘ্যানানি। আমার বিরক্তির মাত্রা তীব্র করে তুলছে। সামিরা নামের মেয়েটি আমার মাথা অর্ধেক খেয়ে নিচ্ছে। ঈশানের কথা আমি ভুলে থাকতে চাইলেও এই মেয়েটার জন্য একদমই পারছি না।

প্রত্যকটা বাক্যে কমপক্ষে তিন চারবার করে ঈশানের নাম নিচ্ছে সামিরা। আর বাকিরা খুব মনোযোগ দিয়ে গিলছে তার ফালতু বকবকানি। আচ্ছা ক্রাশ খেয়েছিস ভালো কথা, তাই বলে মুখে এইভাবে খই ফুটতে হবে? মানুষ তো তোকে ছেছড়া ভাববে রে! ঈশানের সাথে সেল্ফি তুলে ইন্সট্রাগ্রামে পিক দিয়েছে। ওই পিকে আবার ঈশান লভ রিয়েক্ট দিয়েছে। এই নিয়ে চলছে আলোচনা।

হঠাৎ মাহাথি ভাইয়ার আগমন ঘটল। উনি সামিরাকে ডাকতে এসেছেন। ঈশান নাকি সামিরাকে খুজছে। কথাটা শুনে সামিরার মুখে পূর্ণিমার চাদের মতো হাসি ফুটে উঠলেও আমার বুকের মধ্যে যেন আগুন জ্বলে উঠল। অন্যসময় হলে এ নিয়ে মাথা ঘামাতাম না আমি। কিন্তু এখন এই সামান্য বিষয়টাও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যেখানে আমি সকাল থেকে যন্ত্রণায় ছটফট করছি, সেখানে ঈশান কিনা..। প্রচন্ড রাগ লাগছে আমার।

সামিরার মতো মডেল টাইপ সুন্দরী মেয়ে উনার পেছনে ঘুরছে, এতে নিশ্চয়ই উনি খুব আনন্দিত। মনে লাড্ডু ফুটছে! এতো এতো সুন্দরী মেয়ের ভীড়ে আমার কথা মনে না থাকাটাই তো স্বাভাবিক। আমি তো ওদের কাছে ক্ষ্যাত,ব্যাকডেটেড। উনি যখন আমাকে অবহেলা করছে আমি কেনো শুধু শুধু উনার জন্য কষ্ট পেয়ে মরবো? আমারও উচিৎ উনাকে ভুলে থাকা। যেভাবেই হোক ভুলে থাকা।

নিহার বেডরুমের দরজা এতোক্ষণে খোলা হয়েছে। আমি সুযোগ পেয়েই ঢুকে পড়লাম। বেশ কিছু সময় ধরে নিহার সাথে দেখা হচ্ছে না। মনটা আনচান করছিল। আমি ঘরে ঢুকতেই নিহা সর্বপ্রথম যে বাক্যটি উচ্চারণ করল,

“দোস্ত, দেখতো আইল্যাশ টা ঠিক আছে কিনা। চোখে কেমন জ্বালাপোড়া করছে।”

আমি নিহার আইল্যাশ ঠিক করতে এগিয়ে গেলাম। মনে মনে একটা বিষয় চিন্তা করছি, নিহাকে কালরাতের ঘটনাটা জানাবো কিনা। আমার জানানোর প্রয়োজন হলো না। নিহা আমার মনখারাপের কারণ নিজে থেকেই জানতে চাইল। আমিও সংকোচ কাটিয়ে বলে ফেললাম। সব ঘটনা শোনার পর নিহা যেই কথাটা আমায় বলল, সেটা শোনার জন্য আমি মানসিকভাবে একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। নিহা বলল,

“সবই বুঝলাম.. কিন্তু তুই চড় মারতে গেলি কেনো?”

নিহার কথা শুনে আমি চোখ বড় করে বললাম, ” এইটা ছাড়া আমার আর কি উপায় ছিল? তুই আমার জায়গায় থাকলে কি করতি শুনি?”

নিহা বলল, ” না ঠিকাছে। আমি তোর সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছি। কিন্তু তাই বলে চড় মারাটা উচিৎ হয়নি। একটু বেশিই হয়ে গেল না?”

“আর উনি যেটা করেছে সেটা কি কম?”

“দেখ দুজনেরই ভুল আছে। আমি কাউকেই সাপোর্ট করছি না”

“দুজনের ভুল আছে মানে? তুই আমার ভুলটা কোথায় দেখলি?”

“চড় মারাটাই তোর একটা বিরাট ভুল। এবার ঈশান ভাইয়া যে তোর সাথে কথা বলছেন না, যদি ব্রেকআপ করে? তখন কি করবি তুই?”

নিহার প্রশ্নে আমার অন্তরাত্মা কেপে উঠল। এইটা তো আমি চিন্তাই করিনি। উনি কি সত্যিই আমার সাথে ব্রেকআপ করবেন? আমি বিচলিত হয়ে বললাম,

” উনি ব্রেকআপ করবেন? সামান্য একটা চড়ের জন্য ব্রেকআপ?”

” করতেও পারে। মানুষের মন বদলাতে কতক্ষণ? ”

“নিহা তুই এই কথা কেনো বলছিস? তুই তো ঈশানকে খুব ভালো করে চিনিস। উনি কি সত্যিই ব্রেকআপ করবে? বল না!”

“এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী যদি সব হতো, তাহলে তো ভালোই ছিল? আচ্ছা ঈশান ভাইয়া কালরাতে যেটা করলেন, সেটা কি প্রত্যাশিত ছিল? কিন্তু হয়েছে। তেমনি আরো অনেক কিছুই হতে পারে। আগে থেকে কি করে বলি?”

আমার মাথায় চিন্তা বাবাজি বেশ ভালোমতোই চেপে বসল। নিহা খুব ভুল কিছু বলেনি। মানুষের মন বদলাতে কতক্ষণ?

অস্থিরভাব নিয়ে বাগানে পায়চারি করছিলাম। হঠাৎ মেইন গেইটের সামনে একটা সি এন জি এসে থামল। সি এন জি থেকে নামছে ভাইয়া, মা আর বুড়িটাও। আমি সবাইকে একসঙ্গে দেখে চমকে উঠলাম। ভাইয়া তো সকালেও বলেছিলেন, বিয়েতে নাকি কেউ আসবে না। বুড়ির নাকি শরীর খারাপ। তাহলে এখন কি বুড়ি সুস্থ হয়ে গেছে? আমার মাথায় পাহাড় সমান চিন্তা ভর করল। ঈশানের সাথে যদি কারো একবার দেখা হয়ে যায়, তাহলে যে সর্বনাশ। দুশ্চিন্তায় যখন আমি বিভোর, ঠিক সেই সময় ভাইয়া উচ্চারণ করলেন,

” আরে ঈশান? তুমি এখানে?”

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম। ঈশান দ্রুতগতিতে স্টেজের পেছন দিকটায় চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভাইয়ার ডাকে জোরপূর্বক থেমে যেতে হল উনাকে। ভাইয়া হাসিমুখে ঈশানকে আলিঙ্গন করলেন। পিঠ চাপড়ে বললেন,

” তুমি এখানে কি করছো ভাই?”
🍂

চলবে

#তি_আমো❤
#পর্ব_১৭
Writer: Sidratul muntaz

🍂
ঈশান অপ্রস্তুত ভাবে হাসলেন। একহাতের সাথে আরেকহাত ঘষতে ঘষতে বললেন,”বিয়ে তো আমার ফ্রেন্ডের।”

তারিফ ভাই ভ্রু কুচকে মাথার এক সাইড হালকা চুলকে বললেন, ” কোন ফ্রেন্ড? তোমার জামিন করিয়েছিল যে সে নাকি?

ঈশান মুখে হাসি রেখেই মাথা ঝাকিয়ে “হ্যা” উচ্চারণ করলেন। তারিফ ভাইয়া উৎফুল্লকর হাসি দিয়ে মায়ের দিকে তাকালেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

” বাহ! হোয়াট আ কো এক্সিডেন্ট। আমি তো ভাবতেই পারছি না। নিহার তাহলে কপাল আছে। এমন উদারমনের মানুষের সাথে বিয়ে হওয়া কি কম সৌভাগ্যের ব্যপার? আচ্ছা ঈশান ছেলের নামটা কি যেন?”

ঈশান এক আঙুল কপালে ঠেকিয়ে বললেন, “সাফিন!”

তারিফ ভাইয়াও উচ্চারণ করলেন, “সাফিন, সাফিন!”

অতঃপর ঈশান মায়ের কাছে এসে নিচু হয়ে মায়ের ডান হাত থেকে বড় ব্যাগটা নিলেন আর বললেন,
” আন্টি আমি নিচ্ছি এটা।”

মা অমায়িক হাসি দিয়ে ঈশানের দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিলেন।ঈশান ভাইয়ার দিকে ঘুরে ভাইয়ার হাতের বড় গিফটের প্যাকেট টাও নিলেন। বললেন, ” এগুলো আমি রাখছি তোমরা সামনে চলো।”

বুড়ির কাছে এসে গা ঘেষে দাড়ালেন ঈশান। নিচু হয়ে বললেন, “দাদী আস্তে আস্তে আসুন। এখন শরীরের কি অবস্থা আপনার?”

বুড়ি বিড়বিড় করে ঈশানকে কিছু বলছিল। আর ঈশান নিচু হয়ে শুনছিল। আমি দূর থেকেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘটনা দেখলাম। সামনে যেতে ইচ্ছে হলো না। আমি সামনে গেলেই ঈশানের হাসিমাখা মুখটা গম্ভীর না হয়ে যায়।

.

মোহনা আন্টিকে আজ অত্যন্ত সুন্দর লাগছে। বেশ জাকজমকপুর্ণভাবে সেজেছেন উনি। রেড কালার সিল্কের শাড়ির সাথে কলারওয়ালা গোল্ডেন ব্লাউজ। তবে স্লিভলেস। এই মহিলাকে আমি স্লিভলেস ব্লাউজ ছাড়া অন্যকোনো ব্লাউজ জীবনে পড়তেই দেখলাম না। কিন্তু মনে হয় যেন এভাবেই উনাকে সবথেকে বেশি মানায়। ঠিক যেন বলিউডের কোনো নায়িকা। আমি মোহনা আন্টির পাশে গিয়ে বসলাম। আন্টি আমায় দেখে আনন্দের হাসি দিলেন। ব্রাউনিশ চুলগুলো এক সাইডে সরাতে সরাতে বললেন, “কেমন আছো তারিন?”

আমার বলতে ইচ্ছে হল, ” আপনার গুণধর ছেলের জন্য ভালো থাকা যায়?” তবে বললাম না। ঠোট প্রসারিত করে হাসলাম। বললাম,” ভালো আছি”
কিছুসময় মোহনা আন্টির সাথে গল্পগুজব হল। কালো করে টি শার্ট পরিহিত একজন মহিলা হঠাৎ মোহনা আন্টিকে ডাকলেন। ডেকেই কুশল বিনিময় শুরু করলেন। আমি উঠে যেতে চাইলাম। কিন্তু একটা কথা শুনে থামতে হল আমায়। কালো করে মহিলাটি জিজ্ঞেস করছে, “আপনার ছেলেটা কই ভাবী?”

মোহনা আন্টি স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলেন,” ছেলে তো বান্দরবান। ট্যুরে গেছে।”

অমনি কোথা থেকে সুমনা আন্টি মানে নিহার মা এসে বলে উঠলেন, “এই মোহনা! কি আজগুবি কথা বলছো? ঈশান বান্দরবান কখন গেলো? ঈশান তো আজ সারাদিন এখানেই।”

আমি সুমনা আন্টিকে তুমুল গতিতে হাত ইশারা করে থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনি বলেই দিলেন। মোহনা আন্টি সুমনা আন্টির কথা শুনে বোকা বনে গেলেন। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন, ” কি বলেন ভাবি? ঈশান এখানে আসবে কোথ থেকে? ও তো বান্দরবান। ”

সুমনা আন্টি সামনের দিকে ইশারা করে বললেন, “ওইতো ঈশান!”

ঈশান সুমনা আন্টিকে হাত নাড়িয়ে না করছিলেন। কিন্তু মোহনা আন্টি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই সেই “না” টা হয়ে গেল” হাই মম!”

মোহনা আন্টি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। ছেলেকে দেখে পিলে চমকে উঠেছে উনার। আমি সুমনা আন্টির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

“আন্টি এটা আপনি কি করলেন? মোহনা আন্টিকে বলে দিলেন কেনো?”

সুমনা আন্টির এতোক্ষণে হুশ ফিরল। হালকা জিভ কেটে বললেন, ” ইশশ! ভুলেই গিয়েছিলাম। ঈশান তো বলতে নিষেধ করেছিল না? আরে… কাজের মধ্যে এতো কথা মনে থাকে বল? তুই তো আমার লক্ষি মা। একটু ম্যানেজ করে নে। প্লিজ!”

আমার থুতনিতে স্পর্শ করে কথাটা বলে সুমনা আন্টি চলে গেলেন। আমি মাথায় হাত ঠেকালাম। আসল সমস্যাটা যদি সুমনা আন্টি জানতো, তাহলে এভাবে বলতো না। আমি ঈশান আর মোহনা আন্টির দিকে নজর দিলাম। মোহনা আন্টি ঈশানের দুই কাধ স্পর্শ করে বললেন,

“কখন এসেছিস তুই?”

ঈশান মাথার পেছন দিকটা চুলকে বলে উঠলেন, ” আজ সকালেই।”

“হঠাৎ? কিছু না বলে আসার কারন কি?”

“নিহার বিয়েটা মিস করতে চাইনি। তাই আর কি।”

মোহনা আন্টি ঈশানের বাহুতে আঘাত করে বললেন, “তাহলে আমাকে জানাস নি কেনো?”

ঈশান আঘাতকৃত স্থান ঘষতে ঘষতে বলল, “সারপ্রাইজ!”

.

আজকে সামিরার পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে আমার খুব একটা ভালো লাগছে না। এই মেয়ের শাড়ি পড়ার ধরণটা মোটেও শালীন না। যদিও সামিরা সবসময় এমন ধাচের জামা-কাপড়ই পড়ে। তবে আজকের ব্যাপারটা একটু বেশিই চোখে লাগছে। আর সবথেকে বেশি চোখে যেটা লাগছে তা হলো সামিরার ঈশানের সাথে মেলামেশা। উঠতে ঈশান, বসতে ঈশান, প্রত্যেকটা কাজকর্মেই শুধু ঈশান আর ঈশান। এই মেয়েকে কলেজের প্রথমদিন থেকেই আমি অপছন্দ করি। আমার জানামতে ঈশানও সামিরাকে অপছন্দ করতো।তাহলে এখন হঠাৎ এতো ঘনিষ্ঠতার কারণ কি? সব আমাকে জ্বালানোর ফন্দি নয়তো?

বরযাত্রীর সামনে লাল ফিতা বেধে দাড়িয়ে আছি সবাই। আমি সামনে দাড়াতে চাইনি, কিন্তু মেঘলার জোরাজোরিতে সামনেই দাড়াতে হল। সামিরা আমার বাম পাশটায় দাড়িয়ে। ওর হাতে শরবত। মেঘলার হাতে বাটিভর্তি রসগোল্লা। এসব দিয়ে বরযাত্রীকে বরণ করা হবে। মেঘলা কাটাচামচ দিয়ে একটা রসগোল্লা তুলে সাফিন ভাইয়ার মুখের সামনে ধরলো। সাফিন ভাইয়া হা করতেই মেঘলা হাত গুটিয়ে নিল। বলল,

“আগে তো পারিশ্রমিক দিতে হবে। তারপরেইনা মিষ্টিমুখ”

রিফাত ভাইয়া তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, “পারিশ্রমিক কিসের?”

সামিরা বলল,” বাঃ রে! এতো কষ্ট করে আয়োজন সাজিয়েছি। মিষ্টি, শরবত বানিয়েছি। আর আমাদের পারিশ্রমিক দিবেন না?”

ঈশান বললেন, “আয়োজন তোমরা সাজাও নি। সাজিয়েছে ডেকোরেটরটা। আর মিষ্টি শরবত এসব কিছুই তোমরা বানাও নি। শুধু হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকলেই পারিশ্রমিক পাওয়া যায়না। যারা আসলেই পরিশ্রম করেছে পারিশ্রমিক কেবল ওরাই পাবে। এবার এসব ঝামেলা সরাও। ভিতরে আসতে দাও নাহলে হামলা হবে।”

ঈশানের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই আওয়াজ তুলল, “হ্যা। হ্যা।হ্যা।”

মেঘলা বলল, “ওয়েট, ওয়েট। অবশ্যই শরবত আমি বানিয়েছি। আর মিষ্টি আমাদের তারু বানিয়েছে। আর এই ফিতা, ফুল এইসব কিছু আমরাই অ্যারঞ্জ করেছি। একটা ছেলেও আমাদের দলে আসেনি। মাহাথি ভাইয়াও হেল্প করেনি। আর সেটাও আপনার জন্যই ঈশান ভাইয়া। ”

সামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, “হ্যা। আর তাছাড়া এটাও তো ঠিক না ঈশান। আপনার আমাদের সাইড নেওয়া উচিত। আর আপনি বরপক্ষের সাইড নিচ্ছেন?”

সাফনান ভাইয়া বললেন,” নিবে না কেন? আগে ফ্রেন্ডশিপ তারপর অন্যকিছু।”

মেঘলা হাত ঠেকিয়ে বলল,” সে যাই হোক। আমরা ন্যায্য পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত গেইট ছাড়ছি না।”

ঈশান বললেন, “এক মিনিট, মিষ্টি কে বানিয়েছে? ও?”

ঈশান আমার দিকে না তাকিয়েই আঙুল ইশারা করলেন। মেঘলা সামনে চুলগুলো কানে গুজে মুচকি হেসে বলল,

“হুম!”

ঈশান বললেন, “ব্যস! এটা খাওয়ার যোগ্য হবে কিনা সন্দেহ আছে। এসব থার্ড ক্লাস মার্কা জিনিস খেয়ে পেটখারাপ করার প্রশ্নই আসেনা। ”

কথাটা যেন আমার বুকে তীরের মতো আঘাত করল। চোখ টলমল হয়ে আসল আমার। রিফাত ভাইয়া বিষয়টাকে মজা হিসেবে নিয়ে হেসে উড়িয়ে দিলেন। মেঘলা মুখ কুচকে বলল,

“মানে? থার্ড ক্লাস জিনিস?”

ঈশান বললেন, “নো ডাউট।”

আমি ভ্রু কুচকে ঈশানের দিকে তাকালাম।সামিরা ঠোট বাকা করে হাসছে। ঈশানের কথাটায় বেশ মজা পেয়েছে সে। সাফিন ভাইয়া ইতস্তত হয়ে বললেন,

“আচ্ছা এসব কি কথা বলিস ঈশান? ঘরে বানানো মিষ্টি থার্ডক্লাস হবে কেনো? বরং বাহিরে থেকে আনা মিষ্টি থার্ডক্লাস। এটাতো ফার্স্ট ক্লাস। আমার তো এখনি খেতে ইচ্ছে করছে। এই তোমাদের কত পারিশ্রমিক লাগবে? বলে ফেলো বলে ফেলো!”

আমার কান্না চলে আসার আগেই আমি ভীড় ঠেলে দৌড়ে চলে আসলাম সেখান থেকে। সবাই কৌতুহল নিয়ে আমাকে দেখছিল। কেউ কেউ হয়তো ডাকছিল। কিন্তু আমি তোয়াক্কা করলাম না। স্টেজের পেছনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে নিরবে কেদে যাচ্ছি। ঈশান এইভাবে ইনসাল্ট করল আমাকে? তাও আবার সামিরার সামনে? প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার। ভুল তো আমারই। ঈশানের সাথে সম্পর্কে জড়ানোটাই আমার সবথেকে বড় ভুল। ওমন আবেগমাখা চিঠি, মিষ্টি মিষ্টি বুলি সবাই আওরাতে পারে। কিন্তু সত্যিকারভাবে কয়জনই বা ভালোবাসতে পারে? শুধুমাত্র একটা চড়কে কেন্দ্র করে উনি আমার সাথে যা করছেন, সত্যিকারের ভালো বাসলে কখনোই এমনটা করতে পারতেন না। উনার মতো ছেলের জন্য সামিরাই ঠিকাছে। আমি না, আমি তো থার্ড ক্লাস। তাহলে ফার্স্ট ক্লাস নিয়েই ভালো থাকুক। হঠাৎ তারিফ ভাইয়ার হু হা হাসির আওয়াজ শুনলাম। পেছনে উকি মেরে তাকিয়ে দেখলাম সাফিন ভাইয়ার সাথে কোলাকোলি করছে তারিফ ভাইয়া। ঈশান পাশেই দাড়িয়ে আছে। তারিফ ভাইয়া সাফিন ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বলছেন,

বন্ধু হিসেবে তুমি একদম পারফেক্ট। খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে দেখার। একটা মানুষ এতোটা নিঃস্বার্থভাবে কারো উপকারে আসতে পারে? জিও ভাই জিও!

সাফিন ভাইয়া বোকার মতো ঈশানের দিকে তাকালেন। আবার তারিফ ভাইয়ার দিকে তাকালেন। বললেন,

“কি এমন করলাম ভাই?”

তারিফ ভাই বললেন,” এই দেখো! আবার জিজ্ঞেস করে কি করেছে। এতোগুলো টাকা দিয়ে বন্ধুকে হেল্প করলে। জামিন করিয়ে আনলে। এটা কি কম বড় উপকার?”

সাফিন চোখ বড় করে তাকালেন। ঈশান সাফিনের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

“ও আসলে এতো মানুষের হেল্প করে, কয়জনের কথাই আর মনে থাকে? তাই হয়তো ভুলে গেছে।”

সাফিন বললেন, “না রে ভুলি নাই। আমার স্পষ্ট মনে আছে। তোরে আমি কবে টাকা ধার দিলাম?উল্টা তুই আমারে চারমাস আগে দশ হাজার টাকা ধার দিছিলি, ওইটাই শোধ দিতে পারলাম না বেটা। মজা লস না?”

ঈশান সাফিন ভাইয়ার পিঠ খামচে ধরলেন। তারিফ ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন,” মানে?”

ঈশান জোড়পূর্বক হাসলেন। বললেন, “আসলে ও খুব ভালো মানুষ তো। শো অফ একদম পছন্দ করে না। তাই অস্বীকার করছে। ”

তারিফ ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে হাসলেন আর বললেন, “ও!এই ব্যাপার? এইটা তো আরো ভালো গুণ।”

বলেই সাফিন ভাইয়ের কাধে আঘাত করলেন তারিফ ভাইয়া।

সাফিন ভাইয়া অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ঈশানের দিকে তাকালেন। বললেন,

“ওই তুই কি আমারে পচাইতাছোস?”

সাফিন ভাইয়ার কথা শুনে আমার হাসি পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি হাসলাম না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

.

সামিরা আর ঈশান পাশাপাশি চেয়ারে বসে তখন থেকে ফিসফাস করছে। আমি ওদের থেকে অনেকটা দূরে বসে আছি বিধায় ওদের কথা আমার কান অবধি পৌছাচ্ছে না। ঈশানকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখালেও সামিরাকে দেখে মনে হচ্ছে আজকে তার ঈদের দিন। প্রায় প্রত্যেকটা কথা বলতে বলতেই ঈশানের হাতের উপর হাত রাখছে। মাঝে মাঝে তো কাধও খামচে ধরছে। সাথে উদ্ভট হাসির বহর তো আছেই। ঈশানকে দেখে মনে হচ্ছে সামিরার কথাগুলো উনি মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না, আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজছেন । কি খুজছেন কে জানে? হঠাৎ রিফাত ভাইয়া আমার পাশের চেয়ারটায় বসলেন। উনার উপস্থিতি টের পেয়ে আমি সোজা হয়ে একটু সংকুচিত ভাবে বসলাম। রিফাত ভাইয়া বললেন,

“কি ব্যপার তারিন? একা একা বসে আছো যে?”

আমি উত্তরে মিষ্টি করে হাসলাম। রিফাত ভাইয়ার হাতে দুটো মাটির ওয়ানটাইম গ্লাস। একটা গ্লাস উনি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “খাবে?”

আমি অনাগ্রহ দেখিয়ে “না” বললাম। উনি কিছুটা জোরপূর্বক আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ” আরে খাও খাও! ভালো জিনিস।”

আমি অগত্যাই হাতে নিলাম। খাওয়ার ইচ্ছে একদমই নেই। আরেকবার সামনের দিকে দৃষ্টি দিতেই দেখলাম সামিরা ঈশানের মাথার চুল ঝেড়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে আমার ভেতরটায় যেন আগ্নেয়গিরির মতো অগ্নুৎপাত শুরু হল। হাতের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরে দাত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম। রিফাত ভাইয়া আমার অবস্থা খেয়াল করে বললেন,” এ্যানিথিং রং?”

আমি আড়চোখে রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। গ্লাসের শরবতটা একটানে শেষ করে উনার হাতে দিয়ে বললাম,

“আরো এক গ্লাস পাওয়া যাবে?”

উনি উৎসাহ নিয়ে হাসলেন। বললেন, “অবশ্যই।”

নিজের গ্লাসটাও আমায় দিয়ে দিলেন। আমি এবারও এক টানে সম্পুর্ন টা শেষ করলাম। বেশ ভালোই লাগছে। মাথাটা হালকা ঘুরছে, মনে হচ্ছে যেন হাওয়ায় ভাসছি আমি। ইশশ কি চমৎকার অনুভূতি! আমি রিফাত ভাইয়ার দিকে ঘুরে বসলাম। দাত কেলিয়ে হাসতে হাসতে উনার দুই গাল টিপে দিয়ে বললাম,

“আমার কিউট ভাইয়া! আরো এক গ্লাস হবে?”

উনি তো হেসে কুটিকুটি। পায়ের উরুতে করাঘাত করে বললেন,

“ডেফিনেটলি। তুমি বসো। আমি নিয়ে আসছি।”

রিফাত ভাইয়া উঠে যেতেই চেয়ারে কারো ছায়া দেখতে পেলাম। চোখটা হালকা ডলে সামনের দিকে তাকাতেই ঈশানকে খুজে পেলাম। রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি। আমি গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে হেসে দিলাম। ঈশান আমার এক হাত ধরে টেনে দাড় করালেন আমায়। আমার মনে হল হাতটা যেন ভেঙেই যাচ্ছে। এতো শক্ত করে কেউ ধরে? ঈশান ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন,

“কি খেয়েছো তুমি?”

আমি ঘাড় বাকা করে তাকালাম। ভ্রু কুচকে বললাম,

“আপনার কি তাতে? আপনি আপনার মতো থাকেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। যান তো সামিরার কাছে যান। আপনার থেকে রিফাত ভাইয়া অনেক ভালো।”

আমি রিফাত ভাইয়াকে জোর গলায় ডাকলাম। হালকা টলতে টলতে রিফাত ভাইয়ার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম। ঈশান আমার হাত আরেকবার টেনে ধরলেন। আমি ঝটকা মেরে উনার হাত সরাতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। বরং মনে হল, শরীরের অর্ধেকটা শক্তি অপচয় করলাম। ঈশান আচমকা আমায় কোলে তুলে নিলেন। আর আমি খিলখিল করে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতে উনার গলার পেছনে হাত বাধলাম। উনার দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে বললাম,

আচ্ছা আপনি এতো কিউট কেনো? একটা কিসি দেই?

ঈশান দাত কিড়মিড়িয়ে বললেন, শাট আপ।

আমাকে উনি একটা ছোট্ট রুমে নিয়ে আসলেন। ধাম করে বিছানার উপর আছাড় দিয়ে ফেললেন। আর তারপর? ঘরের দরজা ঠাস করে বাহিরে থেকে আটকে দিলেন। তাই দেখে আমি দৌড়ে দরজার কাছে গেলাম৷ দরজায় জোরে জোরে চপোটাঘাত করতে করতে বললাম,

” এই আপনি আমায় বন্দী করে দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? দরজা খুলুন বলছি! প্লিজ খুলুন! ”

ঈশান আমার কথার কর্ণপাত করলেন না। চলে গেলেন। আর আমি হতাশ হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লাম।এতো খারাপ কেনো উনি? খুব পচা। আমি রিফাত ভাইয়ার সাথে একটু কথা বললাম বলে এমন করলেন আমার সাথে? আর উনি যে সারাদিন ধরে সামিরার সাথে ঢলাঢলি করছেন? সেটা কিছু না? নিজের বেলায় ষোলআনা আর আমার বেলায় কাচকলা? না। তা হবে না তা হবে না। আমি হতে দিব না। ওই সামিরা শাকচুন্নিকে আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব। কিন্তু তার আগে আমাকে এই বন্দী দশা থেকে মুক্ত হতে হবে। কিভাবে মুক্ত হই? জানালার কাছে গিয়ে উকি দিলাম। যদি সাহায্যের জন্য কাউকে পাওয়া যায়। বলবো দরজাটা খুলে দিতে। প্রত্যাশিতভাবে আরিশাকে দেখলাম মাথার লম্বা ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে হেটে যাচ্ছে। আমি আরিশাকে ডাকলাম।

” আরিশা বেবি?”

আরিশা থেমে দাড়ালো। এদিকে ওদিক তাকিয়ে শব্দের উৎস খুজছে সে। আমি আবার বললাম,

এইযে এদিকে দেখো! আমি তারি আপু।

আরিশা জানালা বরাবর তাকাল। মুচকি হেসে ছোট্ট হাত নাড়িয়ে বলল, “হাই তারি আপু!”

এদিকে একবার এসো।

আরিশা জানালার কাছে আসল। আমি বললাম,

আরিশা! একটা হেল্প করতে পারবে?

আরিশা ভ্রু কুচকে ঠোটের কোণে আঙুল রেখে বলল,

হেল্প? ওকে। আই ক্যান হেল্প ইউ। বাট ইউ হেভ টু গিভ মি দ্যা রিটার্ন গিফট।

রিটার্ন গিফট?আচ্ছা আমি তোমাকে চকলেট দিবো। আগে তুমি দরজাটা একটু খুলে দাও?

আরিশা বলল, “উহুম! আগে চকলেট দাও।”

আমি চোখ সরু করে তাকালাম।
🍂

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে