ডিভোর্সের পরে পর্ব-৬+৭

0
1112

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ৬
#লেখকঃরিয়াজ।

আয়ানের সাথে ডিভোর্সের ৩ বছর পর হঠাৎ একদিন আমার সাথে আমার এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়।ওর নাম ছিলো নীলয়।আমি রিকশায় করে বাসায় যাচ্ছিলাম তখন ও কোত্থেকে যেনো বাইক নিয়ে এসে রিকশার সামনে দাঁড়ালো।প্রথমে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।পরে সে আমাকে বল্লো তুমি খাদিজা না?স্কুলে এই নীলয় ই একমাত্র আমাকে খাদিজা বলে ডাকতো।

তাছাড়া সবাই আমাকে মিম বলেই ডাকতো।আমি প্রথমে ওকে দেখে চিনতে পারিনি।না চেনারই কথা প্রায় ৮’৯ বছর পর দেখা।আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে আর এভাবে রিকশার সামনে এসে দাঁড়ালেন কেনো?সে স্কুল লাইফে তোমাকে খাদিজা বলে কে ডাকতো এটা অন্তত মনে থাকার কথা।

আমি একটু চিন্তা করতেই মনে পড়ে গেলো এটাতো আর কেউ নয় নীলয়।আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বল্লাম তুমি নীলয় না?নীলয় বল্লো এক্সেক্টলি আমি নীলয়।এতোদিন পর তুমি আমাকে দেখে যে চিনতে পেরেছো এটাই আমার জন্য অনেক কিছু।তারপর নীলয় আমাকে বল্লো আচ্ছা চলো রিকশা থেকে নামো আমার বাইক দিয়ে কোথাও যেয়ে বসি।এতোদিন পর একটা স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা যদি তার সাথে না বসি খারাপ দেখায়।

তাই আমি রাজি হয়ে গেলাম।ওর বাইকের পিছনে বসে একটা আমাদের এলাকা থেকে অনেক ধুরে একটা চায়ের টং দোকানে যেয়ে বসলাম।এখনকার মানুষ জন তো আসলে অনেক ভালো তারা অন্যের বদনাম করতেই ভালোবাসে তাই এলাকা থেকে অনেক ধুরে একটা টং দোকানে যেয়ে বসেছি যাতে কেউ না চিনে।

নীলয় একটা রং চা আর একটা দুধ চায়ের অর্ডার দিয়ে এসে আমার পাশে বসলো।আমি তাকে আচ্ছা দুজনের চায়ের স্বাদ টা এখনো বদলায় নি?মানে নীলয় সেই স্কুল লাইফ থেকেই রং চা খেতো।আর আমি দুধ চা।সেই নীলয় এখনো সেই রঙ চা ই খায় আর আমিও সেই দুধ চা ই খাই।চায়ে চুমুক দিতে দিতে বল্লাম তুমি সেই রং চা তেই রয়ে গেলা।আর আমি সেই দুধ চা তেই রয়ে গেলাম।

কিন্তু ৮’৯ বছরে আমাদের সাথে কতো কিছুই না ঘটে গেলো।কতো মানুষ আমাদের জীবনে আসলো কতো মানুষ হারিয়ে গেলো।নীলয় আমার এসব কথা শুনে বল্লো তুমি হঠাৎ এগুলো বলছো কেনো?আমি বল্লাম না এমনিতেই। তখন নীলয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা বাচ্চা কাচ্চা কয়জন তোমার?আমি বল্লাম বাচ্চা কাচ্চা নেই।

নীলয় অবাক হয়ে বল্লো কি বলো করলা কতোদিন হলো এখনো বাচ্চা কাচ্চা হয়নি যে?দুলাভাই কি করে কতোদিন হলো বিয়ে করেছো?আমি বল্লাম বলবো বলবো সব বলবো।কিন্তু আজকে না।আজকে তুমি তোমার টা বলো।নীলয় বল্লো আমার টা আবার কি বলবো?

আমি বল্লাম কেনো তুমি বিয়ে সাদি করোনি?বাচ্চা কাচ্চা নেই তোমার?নীলয় একটি অবাক করার মতোই উত্তর দিলো। না আমিতো এখনো বিয়েই করিনি বউ বাচ্চা কাচ্চা এসব কোত্থেকে আসবে?

আমি অবাক হয়ে বল্লাম কি বলো তুমি এখনো বিয়ে করোনি কেনো?সে উত্তর কারণ আমি একজন প্রচুর পরিমাণে ভালোবাসি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা পসিবল না।আমি শুধু একজনকেই ভালোবাসি তার সাথেই সারাজীবন থাকতে চাই।সেজন্য অন্য মানুষ কে আমার লাইফে জড়াইনি।

আমি বল্লাম আচ্ছা কে সেই মেয়ে শুনি?নামটা বলো তার?সে উত্তর বলবো বলবো সময় হলে বলবো।আমি বল্লাম আচ্ছা তাহলে সেই সময়ের অপেক্ষাতেই রইলাম।এরপর আমি ঠিক আছে আজ তাহলে উঠি।আরেকদিন দেখা হবে।এরপর নীলয় আমার ফোন নাম্বার আর ফেসবুক আইডি রেখে দিলো।আমিও দিলাম কারণ আমার সেই স্কুল ফ্রেন্ড।

এরপর যা হওয়ার তাই হলো।বাসায় আসার পর সে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিলো আমি এক্সেপ্ট করলাম।চ্যাট শুরু হলো।আমি দেখলাম সে মোটামুটি ভালোই দূর্বল আমার প্রতি।এরপর দিন ও সে আমার সাথে দেখা করতে চাইলো আমি বললাম না প্রতিদিন বাসা থেকে বের হলে সমস্যা আমি সময় হলে বলবো তোমাকে।

এরপর সে আমাকে প্রশ্ন করলো আচ্ছা আমার স্কুলের লাইফের একটা প্রেম কাহিনি বলবো শুনবা?আমি বললাম হ্যাঁ শুনা যায়।তারপর সে কল দিয়ে গল্প শুনাতে চাইলো।আমি বল্লাম ঠিকআছে দাও কল।

এরপর নীলয় আমাকে কল দিলো।সে কল দিয়ে বলতে শুরু করলো।জানো খাদিজা স্কুল লাইফে আমি একটা মেয়েকে আমাদের ক্লাসেরই একটা মেয়েকে প্রচুর ভালোবাসতাম।স্কুলের আমার সেই ভালোবাসাটা ছিলো একতরফা ভালোবাসা।আমি বাসা থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিন ওর জন্য অপেক্ষা করতাম কখন ও আসবে।

ও আসার পর আমি প্রতিদিন ওর পিছু পিছু যেতাম।কিন্তু কোনো দিনও ও আমাকে ওর পিছনে দেখেনি।আবার স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথেও আমি ওর পিছু পিছু যেতাম।আমাদের ক্লাসের রায়হান নামে একটি ছেলে ছিলো ও একবার আমার সেই মানুষটি প্রপোজ করার জন্য প্রিপারেশন নেয়।

বিষয়টি তখন জানতে পেরে আমি আমার বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে যেয়ে ওকে সেই প্রপোজ করা থেকে আঁটকালাম।তবে ও সেদিন বলেছিলো তুই যদি ওকে ভালোবাসিস তাহলে ওকে বলে দে।এভাবে ধুর থেকে না বলে কোনো ভালোবাসা হয় না।আমি তখন তাকে বলেছিলাম সেটা আমি ব্যাপার আমার সময় মতো আমি তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দিবো।

মিমঃআচ্ছা বাবা যাকে নিয়ে এতোকিছু আমাদের ক্লাসেই পড়ে সেই মেয়েটাকে তুমি আমাকে বলবা না?

নীলয়ঃবলবো বলবো তবে এখনই না।আরও কিছুদিন পর।

মিমঃআচ্ছা তারপর কি হলো বলো?

নীলয়ঃএভাবে আমি সব সময় ধুর থেকেই ভালোবেসে যেতাম।আচ্ছা খাদিজা তুমি ওয়ান সাইড লাভে বিশ্বাস করো?

মিমঃহ্যা অবশ্যই।

নীলয়ঃওয়ান সাইড লাভের সবচেয়ে ভালো দিক হলো।এখানে যে ভালোবাসে সে তার ভালোবাসার মানুষকে শুধু দেখেই শান্তি পায়।

মিমঃআচ্ছা ভালোবাসা প্রকাশ না করে এভাবে নিজের ভিতর রাখার কারণ সেটা একটু তুমি বলো তো?তুমি যেহেতু ওয়ান সাইড লাভ করেছো সেজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।
নীলয়ঃএখানে এটা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।কেউ ভয়ে তার ভালোবাসার কথা বলে না।আবার কেউ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে বলে না।এমন আরও অনেক কারণ আছে।

মিমঃবুঝলাম।

*মিম আর খাদিজা কিন্তু একই ব্যাক্তি।

নীলয়ঃআচ্ছা শুনো এভাবে অনেক দিন কেঁটে যায় আমি ধুর থেকেই ওকে ভালোবেসে এসেছি আর এখনো সেই ধুর থেকেই তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

মিমঃইন্টারেস্টিং।কিন্তু সেই মেয়েটার যদি এখন বিয়ে হয়ে থাকে।তখন তুমি কি করবে?

নীলয়ঃআমি জানি তার বিয়ে হয়নি।

মিমঃযদি হয় তখন কি করবা বলো?

নীলয়ঃআমি তখনো শুধু তাকেই ভালোবাসবো।আমি কোনো ভাবেই তাকে ভুলতে পারবো না।

মিমঃবাহ বাহ ভালোই ভালোবাসা।দোয়া করি তোমার ভালোবাসার জয় হোক।আচ্ছা নীলয় শুনো তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।আসলে নিজের লাইফের কথা তো মানুষের কাছে বলতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে কিন্তু তুমি আমার স্কুল ফ্রেন্ড তোমার কাছে বলাই যায়।এই ৮’৯ বছরে আমার লাইফে অনেক কছুই ঘটে গিয়েছে। যার কিছুই আমি তোমাকে বলিনি।

নীলয়ঃকি বলো কি কি ঘটলো বলো শুনি?

মিমঃঅনেক কিছুই ঘটেছে। কলেজে থাকার সময় একটা ছেলের সাথে আমার রিলেশন হয়। প্রায় ৫ বছর রিলেশন করার করার পর আমার পরিবারকে ম্যানেজ করে আমি তাকে বিয়ে করি।

নীলয়ঃআচ্ছা তারমানে তুমি বিয়ে করে ফেলছো?

মিমঃহ্যা করেছি তবে পুরোটা শুনো।

নীলয়ঃহ্যা বলো শুনছি।

মিমঃবিয়ের ১ বছরের মাঁথায় আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।আর এখন তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।

আমি এটা বলার সাথে সাথেই নীলয় কল কেঁটে দিলো। কল কাঁটার পর আরও অনেক বার কল দিলাম কিন্তু সাথে সাথেই নাম্বার বন্ধ।আমি বুঝলাম কাহিনি হঠাৎ আমার ডিভোর্সের কথা শুনে ওর আবার কি হলো।

চলবে??

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃ৭
#লেখকঃরিয়াজ।

সকাল বেলা আমি ঘুম থেকে উঠার পর ডাটা অন করতেই দেখি নীলয়ের অনেক গুলো মেসেজ।সাথে অনেক গুলো কল ও। মেসেজে লিখা ছিলো সরি সরি আসলে আমার ফোনে চার্জ ছিলো না যে আমি একদমই খেয়াল করিনি।তুমি প্লিজ কিছু মনে করিও না।সকাল বেলাও দিয়েছিলো অনেক গুলো মেসেজ।

সেখানে লিখা ছিলো কাল সারারাত আমি ঘুমাতে পারিনি।তুমি এটা কি শুনালে কাল রাতে আমাকে।আমার কাছে এখনো এটা স্বপ্নই মনে হচ্ছে।একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে এতোটা ভালোবাসার পরেও তারা কিভাবে এখন একে অপরকে ছাড়া থাকছে কিছুই আমার মাঁথায় আসছে না।

এটা কি করে সম্ভব আমি কিছুই বুঝতেছি না।তার উপর তোমারা আবার ৫ বছর রিলেশন করে বিয়ে করেছো ৫ বছরের প্রেমের সম্পর্কে বিয়েতে যেয়ে ১ বছর ও টিকলো না।এটাও সম্ভব?
সবগুলো মেসেজ পড়ে আমি কি লিখবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।কাল রাতে যখন নীলয় আমার কল কেঁটে দেয় আর তার ফোন বন্ধ আমি তখন অন্য কিছু ভেবেছিলাম।

আমি ভেবেছিলাম আমার ডিভোর্স কথা শুনে নীলয় ও হয়তো অন্য সবার মতো আমাকে ইগনোর করে চলে গেছে।কিন্তু এখানে নীলয় অন্য সবার চাইতে ভিন্ন।এই জিনিস টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।কিন্তু ভালো লাগলেও আমার কিছু করার নেই।

সেই অবিবাহিত একটি ছেলে খুব সুন্দর সুন্দর মেয়ে অপেক্ষা করে বসে আছে তার জন্য। আমি চাইলেও তো আর তাকে বিয়ে করতে পারবো না।যাই হোক সেদিন আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো।আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসায় নাস্তা, পানি, চা কিছুই বানানো হয়নি এখনো।আমি আম্মুর কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম মা বাসায় নাস্তা পানি এখনো কিছু হলো না যে?

আম্মু বল্লো বাসায় কি কোনো কাজের লোক আছে?নাস্তা বানাবে কে বল?তুই ই তো বাসার সব কাজ করিস তুই ছাড়া আর কেউ কি কোনো কাজ করবে বা করতে পারে?
আমি আম্মু কে বল্লাম মা তোমারাও খাওনি এখনো নাস্তা?আম্মু বল্লো না আমরা তো এখনো না খেয়েই আছি।
কি বল্লো মা এতো বেলা হয়ে গেলো এতক্ষণ না খেয়ে কিভাবে আছো?

বাবা কই বাবা তো সকালে খুব ভোর বেলা নাস্তা খায় বাবার খুব সকালেই ক্ষুধা লেগে যায়।সেই মানুষ এখনো না খেয়ে কিভাবে আছে?
সময় আর পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছুই শেখায় রে মা।
মা লিজা কই?
কই থাকবে আর হয়তো ঘুমোচ্ছে এখনো।
ও নাস্তা খায়নি?আর ভাই কি না খেয়েই চলে গেছে অফিসে?
হ্যাঁ ও মনে হয় না খেয়েই চলে গিয়েছে। বাহির থেকে হয়তো খেয়ে নিবে।

তারপর আমি আম্মুকে বল্লাম আচ্ছা আমি নাস্তা বানাচ্ছি আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো।আমার শরীর টা ভালো লাগছিলো না তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো।আম্মু বল্লো আচ্ছা মা লাগবে এখন আর নাস্তা বানানো তুই গিয়ে শুয়ে থাক।

মিমঃকি বলো তোমরা কি না খেয়ে থাকবা নাকি?
মাঃএক বেলা না খেয়ে থাকলে আমাদের কিছুই হবে না।
মিমঃমা কি যে বলো না।আমি যতোদিন বেঁচে থাকবো ইনশাআল্লাহ তোমাদের ততদিনে কোনোদিনও না খেয়ে থাকতে হবে না।

তোমরা বসো আমি যেয়ে নাস্তা বানাচ্ছি।
আসলে আমার আব্বু আম্মু তেমন একটা কাজ করতে পারে না।ওনাদের সব কাজ গুলো আমিই করে দেই।তবে আমি মাঝে একটা জিনিস ভাবি যদি এই বাড়িতে এখন আমি না থাকতাম তাহলে আমার বাবা মায়ের দেখাশোনা কে করতো?তাদের সেবাযত্ন কে করতো?

আমার যেই ভাইয়ের বউ সে কোনো দিনও তাদের কোনো কাজ ছুয়ে দেখেছে বলে আমার মনে হয় না।
আমার ভাইয়ের বউয়ের কেনো যে এতো সমস্যা। আমি বুঝি না।আমাদের বাসায় মাত্র আমরা ৩ জন।ভাই আর ভাইয়ের বউ সহ ৫ জন।তারপরেও সারাদিন শুয়ে বসে থাকে।কোনো কাজ করে না।

যদি এই বাসায় আমি থাকতাম তখন এই কাজ গুলো কে করতো?আজ আমি এই বাসায় আছি বলে বাসার সব গুলা করছি।আমার একটা স্বপ্ন আছে তবে এই বাসার কাজ আব্বু আম্মুর সেবা করা এসবের জন্য আমি এখনো কোনো কিছুতে হাত দিতে পারিনি।আমাকে সাপোর্ট দেয়ার মতো এখনো তেমন কাউকেই পাইনি সেজন্য এখনো কিছু করা হয়নি।

যাইহোক আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে চলে গেলাম নাস্তা বানাতে।নাস্তা বানিয়ে আব্বু আম্মুকে পরিবেশন করে আবার ঘড় ঝাড়ু দেয়া, থালা বাসন পরিষ্কার করা রান্না বান্না করা সব কাজ আমি অসুস্থ শরীর নিয়েই করলাম।কারণ কিছুই করার ছিলো না আমার।আমি জানিনা এভাবে আর কতোদিন যাবে।

কতোদিন আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।সব কাজ শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে যখন শুতে গিয়ে একটু ফোন হাতে নিলাম দেখলাম নীলয় অনেক গুলো মেসেজ দিয়ে রেখেছে।আমি রিপ্লাই দিলাম কি হলো এতো ব্যাস্ত হয়ে গেলা কেনো?
নীলয় সাথে সাথেই রিপ্লাই দিলো এতক্ষণ কই ছিলা?

মিমঃসকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো তাই সব কাজ গুলো শেষ করে এখন একটু রেস্ট নিচ্ছি।

নীলয়ঃকি বলো?মিরাজের বউ কোথায় মিরাজ কি এখনো বিয়ে করেনি?(মিরাজ মিমের ছোট ভাইয়ের নাম)।

মিমঃহ্যা বিয়ে করেছে।

নীলয়ঃমিরাজ বিয়ে করলে ওর বউ থাকলে বাসার সব কাজ তুমি কেনো করো?

মিমঃসে অনেক কাহিনি পরে বলবো।

নীলয়ঃকালকে দেখা করতে পারবা?

মিমঃউম্মম্ম দেখা করা যায়।তবে বিকালের আগে আমি ফ্রি হবো না।

নীলয়ঃআচ্ছা বিকালে ফ্রি হয়ে আমাকে মেসেজ দিও।পরদিন বিকালে বাসার সব কাজ শেষ করে নীলয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম।বাসা থেকে অনেক ধুরে একটি পার্কে যেয়ে ওর সাথে দেখা করি।করাণ বাসার আশেপাশে আমাকে কেউ নীলয়ের সাথে দেখলে ১ দিনের মধ্যেই আমার নামে বদনাম রটিয়ে ফেলবে।এমনিতেই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় এখন বোরকা পড়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে চলা ফেরি করি যাতে কেউ আমাকে না চিনে।কারণ এলাকার মানুষ আমাকে দেখলেই নানান জন নানান কথা বলতে শুরু করে।

নীলয়ের সাথে যেয়ে বসার সাথে সাথেই নীলয় বল্লো আগে তুমি বল তো যে বাসার সব কাজ তোমাকেই কেনো করতে হয়?মিরাজের বউ থাকা সত্যেও তোমাকে কেনো এই সব করতে হয়?

মিমঃকেনো তুমি জানোন?

নীলয়ঃনা আমি কি করে জানবো তুমি ই বলো?

মিমঃএই সমাজ আমাদের এই সমাজ ডিভোর্সি মেয়েদেরকে মেনে নেয় না।বাংলাদেশের একটি মেয়ের ডিভোর্স হয়ে যাওয়া মানে সে অর্ধেক মৃত।একটি ডিভোর্সি মেয়ের কোনো মূল্যই থাকে না এই সমাজের।

আমি কখনো ডিভোর্সি মেয়ের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারিনি।কেনোনা আমার ডিভোর্স হওয়ার আগে আমি জানতাম না এই সমাজ একটি ডিভোর্সি মেয়ের সাথে কেমন আচরণ করে।
এগুলো বলে মিম থেমে গেলো।

নীলয়ঃকি বলো একটি ডিভোর্সি মেয়ের ডিভোর্স হওয়ার জন্য এমনিতেও সে অনেক কষ্টে থাকে।তারউপর আমাদের সমাজের এমন ব্যাবহারে ডিভোর্সি একটি মেয়ের বেচে থাকাই তো দায়।

মিমঃহ্যা অনেক বার ইচ্ছাপোষণ করেছি আত্বহত্বা করার চেষ্টাও করেছি।কিন্তু আমার বৃদ্ধ বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে সেটা আর করা হয়নি।

নীলয়ঃনা না ওই চিন্তা ভুলেও মাঁথায় আনবা না।খবরদার বলে দিলাম।

মিমঃনা না ওটা আমি কখনোই করবো।যতোদিন পর্যন্ত না আমার স্বপ্নপূরণ হয় ততদিন পর্যন্ত আল্লাহ যাতে আমাকে বাঁচিয়ে রাখে সেই দোয়াই করি।
নীলয়ঃইনশাল্লাহ।আচ্ছা সেই স্বপ্নটা কি আমি কি জানতে পারি?

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে