ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব-৮+৯

0
1266

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_০৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তানিশা বাসায় পৌঁছেই আগে তার ব্যাগ গোছাতে লাগলো।তা দেখে তন্নি বললো,হয়েছে টা কি তানিশা?কলেজ থেকে এসেই এভাবে ব্যাগ গোছাচ্ছিস কেনো?
তানিশা তখন বললো আমি হোস্টেলে যাচ্ছি তন্নি।আমার মাথার ব্যাথা তো এখন মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
তন্নি সেই কথা শুনে বললো তার মানে তুই আমাদের বাসায় থাকতে চাচ্ছিস না?মামা এতো করে বলার পরও তুই চলে যাচ্ছিস?
তানিশা তখন ব্যাগ গোছা বাদ দিয়ে বললো,
তন্নি দেখ এটা হয় না কখনো।আমি কেনো তোর মামার বাসায় এভাবে থাকবো?শুধু মামা চাইলেই তো হবে না।এ বাসার অনেকেই চাই না আমি তোদের সাথে থাকি।

তন্নি তখন তানিশাকে বললো,কে চায় না?নাম বল তার।
–না না। এমনি বললাম।আমার নিজেরই ভালো লাগছে না।দেখ আমার একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।আমি নিজে কষ্ট করে আজ এতোদূর এসেছি। সেজন্য বাকি পথচলা নিজেই সামলাতে চাই।

তন্নি তখন তানিশার হাত ধরে তাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসালো।আর বললো,সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?কে কি বলেছে?
তানিশা তখন তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো কেউ কিছুই বলে নি।আমারই ইচ্ছে করছে না আর থাকতে।এই বলে তানিশা তার বাবাকে খুঁজতে গেলো।তার বাবার সাথে আগে এ নিয়ে কথা বলতে হবে।কিন্তু তানিশার বাবা বাসায় ছিলেন না।তায়েব চৌধুরী ওনাকে সাথে করে নিয়ে অফিসে গেছেন।

তানিশা সেজন্য ব্যাগ গুছিয়ে রেখে বিছানার এক সাইডে রেখে দিলো।আর তন্নিকে বললো,তুই আর কখনো তোদের বাসায় আসতে বলবি না প্লিজ।যদি কখনো আমাকে দেখার ইচ্ছা হয় তাহলে কলেজে গিয়ে দেখা করিস বা হোষ্টেলে চলে যাস।তবুও এই বাসায় আসতে বলবি না।

হঠাৎ আমান প্রবেশ করলো রুমে।আর এসেই তানিশার উপর এক প্রকার রাগ দেখিয়ে বললো,তানিশা তোমার হয়েছে টা কি?সকালবেলা তুমি আমাকে রেখেই একা একা চলে গিয়েছো কলেজে।আবার কলেজ শেষ হলে তোমাকে আনতে গেলাম গিয়ে দেখি তুমি নাই।তোমাকে না বার বার সবাই বলছে এভাবে একা একা কলেজ যাবে না।তারপরও গেলে কেনো?

তানিশা তখন বললো, আমান ভাইয়া আমাকে নিয়ে আপনারা সবাই একটু বেশিই টেনশন করছেন।কিছুই হবে না আমার।আপনারা প্লিজ অযথা টেনশন করবেন না।আর আমি আজ একা একা যাই নি কলেজে।আপনার ছোট ভাই নিয়ে গিয়েছিলো।

–নোমান?নোমান তোমাকে নিয়ে গিয়েছে?সে আবার কবে থেকে এতো বড় দায়িত্বশীল হলো?তার তো আশেপাশে তাকানোর সময়ই নাই।
তানিশা তখন বললো, হ্যাঁ ঠিক বলছেন।তার হাতে কোনো সময় নাই।কিন্তু আমি বলেছিলাম,যে আমাকে একটু কলেজে রেখে আসেন।

–তুমি বলেছো?কিন্তু কেনো?

তানিশা তখন বললো এমনি বলেছি।উনি কলেজে যাচ্ছিলেন সেজন্য ভাবলাম ওনার সাথেই যাই।আপনি আবার অযথা কষ্ট করতে যাবেন কেনো?

আমান তখন বললো,ওহ,তাহলে আসার সময়ও ওর সাথেই এসেছো?

–হ্যাঁ।

আমান সেই কথা শুনে শান্ত কন্ঠে বললো,ভালোই করেছো।আমি তো ভেবেছিলাম একা একা এসেছো বাসায়।এই বলে আমান তানিশার রুম থেকে চলে গেলো।

আমান চলে যাওয়ার সাথে সাথে তন্নি তানিশাকে বললো,নোমান ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে তাই না?কি বলেছে সত্যি করে বল।

তানিশা কি বলবে এখন?সে তখন বললো না কিছুই বলে নি।উনি তো জাস্ট আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন।আর আসার সময় নিয়ে আসলেন।

তন্নি বুঝতে পারলো নোমানই কিছু বলেছে।তা না হলে তানিশা কলেজ থেকে এসেই এরকম পাগলামি করছে কেনো?

তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।তহিদুল সাহেব ভীষণ খুশি হলেন তায়েব চৌধুরীর সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে।এবার তায়েব চৌধুরী তহিদুল সাহেব কে প্রস্তাব দিলেন পরবর্তী তে তিনি যেনো তানিশার মাকে নিয়ে বেড়াতে আসেন।তহিদুল সাহেব রাজিও হয়ে গেলেন।তিনি হাসতে হাসতে তানিশার রুমে প্রবেশ করলেন।আর সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সব কথা তানিশাকে বলবেন এখন।কিন্তু তানিশা যে মন খারাপ করে বসে আছেন তা তহিদুল সাহেব বুঝতেই পারলেন না।তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
জানিস মা,এমন ভালো মানুষ আমি জীবনেও দেখি নি।কত বড়লোক!অথচ কত সহজ সরল।তিনিও নাকি এক সময় খুব সাধারণ ঘরের ছিলেন।কিন্তু নিজের অগাধ পরিশ্রমে আজ এতোদূর এসেছেন।খুব ভালো লাগলো ওনার সাথে ঘুরে বেড়িয়ে।পরবর্তীতে তোর মাকে নিয়ে বেড়াতে আসবো।

তহিদুল সাহেব অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছেন।কিন্তু তানিশা আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।সেজন্য সে তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছিয়ে নিয়ে বললো,বাবা তোমার গল্প বলা শেষ হয়ে গেলে আমি কিছু বলতে চাই তোমাকে।

তহিদুল সাহেব সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল।কি বলবি?

তানিশা তখন বললো,তায়েব মামা আমাদের নিকটতম কোনো আত্নীয় নয়।বা তাদের সাথে না আছে আমাদের কোনো সম্পর্ক।

–হ্যাঁ।তা হঠাৎ এ কথা বলছিস কেনো?

–এজন্যই বলছি যে, আমি জানি তুমি পুরোপুরি এই পরিবারকে বিশ্বাস করো।আর সেই বিশ্বাসের জেরেই আমাকে এখানে রাখতে চাচ্ছো।

তহিদুল সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না।তিনি তানিশার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলেন।

তানিশা তখন বললো,আমি বলছি না এই পরিবার খারাপ,বা এই পরিবারের সদস্যরা খারাপ।আমি বলছি আমার আত্নসম্মানের কথা।তোমার মানসম্মানের কথা।আমি এখানে থাকলে নানা মানুষ নানা ধরনের কথা বলবে।

–হ্যাঁ তা ঠিক বলেছিস।আমি তো তায়েব চৌধুরী কে বার বার সেটাই বোঝাচ্ছি।কিন্তু উনি তো বুঝতেই চাচ্ছেন না।

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, এভাবে বললে হবে না।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকেই চলে যাবো হোস্টেলে।আমি আর থাকবো না এ বাড়িতে।বা আর কখনো আসবো ও না।তাহলেই আর তায়েব চৌধুরী কিছু বলবেন না।

–কিন্তু মা সেই দিনের সন্ত্রাসী গুলো যদি আবার এট্যাক করে।তোর যদি কোনো ক্ষতি হয়।

তানিশা নির্ধিদ্বায় বলে দিলো,হবে না কিছু।চলো তাড়াতাড়ি। আর দেরী করতে চাই না আমি।এই বলে তানিশা তার বাবার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তন্নি তানিশাকে চলে যাওয়া দেখে তার হাত ধরে বললো,এই তানিশা?আবার তুই পাগলামি করছিস?

তানিশা তখন তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,কিসের পাগলামি?আমি তোদের বাসায় কি জন্য থাকবো বল?আমাকে নিয়ে এতো বেশি চিন্তা করতে হবে না।তুই ভালোভাবে পড়াশোনা করিস।এই বলে তানিশা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।সে আর কাউকেই বলে গেলো না।তায়েব চৌধুরী আর আমান গিয়েছে বাহিরে।বাসায় শুধু নোমান আর তন্নি ছিলো।অন্যদিকে তাহমিনা চৌধুরী থেকেও নেই।তিনি তো তানিশা যাওয়াতে বেশ খুশিই হয়েছেন।
নোমান বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে তানিশাদের যাওয়া দেখছিলো।আর বেলকুনিতে লাগানো লতানো পাতাগুলোর একটা একটা করে পাতা ছিড়ছিলো।

কিন্তু তানিশা একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালো না।সে সোজা তার বাবার হাত ধরে চলে গেলো।

তহিদুল সাহেবের বেশ খারাপ লাগলো।এভাবে তায়েব চৌধুরী কে না বলে যাওয়াটা কি ঠিক হলো তাদের? কিন্তু তানিশার জোরাজোরি তে তিনি আর সে কথা বললেন না তানিশাকে।

তানিশা চলে যাওয়াতে তন্নির ভীষণ মন খারাপ হলো।সে তখন নোমানকে গিয়ে বললো,
ভাইয়া আপনি কি বলেছেন তানিশাকে?যে ও আর এক সেকেন্ডও দেরী করলো না।
নোমান কোনো উত্তর দিলো না।
তন্নি তখন বললো, কি হলো ভাইয়া?কিছু তো বলেন।

নোমান তখন তন্নিকে ধমক দিয়ে বললো, তুই যাবি এখান থেকে।দেখছিস না আমি পড়ছি।এসব আজাইরে বিষয়ে কথা বলার মোটেও ইচ্ছা নাই আমার।

তন্নি নোমানের এমন ধমক খেয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে তায়েব চৌধুরী আর আমান একসাথে বাসায় প্রবেশ করছে।তন্নি তার মামাকে দেখামাত্র বললো,মামা তানিশা আর তার বাবা চলে গিয়েছে।

–মানে?কি বলছিস এসব?আমাকে না বলে এভাবে যেতে পারলো?

তন্নি তখন বললো,এ বাসার কেউ হয় তো তানিশাকে কিছু বলেছে।সেজন্য তানিশা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।ও অনেক কাঁদছিলো।

তায়েব চৌধুরী তখন চিৎকার করে তাহমিনা চৌধুরী কে ডাকতে লাগলো,আর বললো নিশ্চয় তুই কিছু বলেছিস।

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,না ভাইয়া।কসম আমি কিছু বলি নি।আমি যখন বুঝতে পারলাম আমার চেয়েও তুমি তানিশাকে বেশি ভালোবাসো তখন থেকে আমি কিছুই বলি না ওকে।

–তাহলে কে বলেছে?

নোমান তার বাবার চিল্লানি শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসলো আর বললো আমি বলেছি।আমি বলেছি তানিশা তুমি চলে যাও।আর যেনো তোমায় না দেখি এ বাড়িতে।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন আর নোমানের কাছে গিয়ে বললো,কেনো বলেছো?তানিশা তোমার কি ক্ষতি করেছে?

–আমার কোনো ক্ষতি করে নি।তবে এই পরিবারের অনেক ক্ষতি হতে পারতো।

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো এসব বলে কোনো লাভ নেই নোমান।তোমার বাবা তো তানিশার একদম বড় ভক্ত হয়ে গেছেন।

আমান এবার কথা বলে উঠলো।সে নোমানকে বললো,যা বলার স্পষ্ট করে বল।কেনো তুই তানিশাকে যেতে বলেছিস?আর তোর কেনো মনে হলো তানিশা এ বাড়িতে থাকলে এ বাড়ির ক্ষতি হতে পারে।

নোমান তখন বললো, ভাইয়া তুমি একজন ভবিষ্যৎ পুলিশ অফিসার।তোমার দ্বারা এই কাজ আশা করি নি কখনো।আমি যদি এখন মুখ খুলি খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।

আমান সেই কথা শুনে তোতলাতে লাগলো।আর বললো কি বলছিস এসব?

তায়েব চৌধুরী এবার এগিয়ে এসে বললো,বাবা নোমান তুমি কি ঠিক আছো?কি সব ভুলভাল বলছো।সারাদিন পড়াশোনা করতে করতে তোমার মাথা তো পুরাই শেষ হয়ে গেছে।

নোমান তখন বললো,না বাবা।ঠিক আছি আমি।আমান ভাইয়ার থেকেই শোনো সে কি কি করেছে তানিশার সাথে।

আমান বুঝতে পারলো নোমান সবকিছু জেনে গেছে।সেজন্য সে চলে যেতে ধরলো। তখন নোমান বললো,ভাইয়া যাচ্ছো কেনো এভাবে?বাবাকেও একটু বলো তোমার কাহিনী।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো,নোমান!আমার ধৈর্যের সীমা কিন্তু এবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।যা বলার পরিষ্কার করে বল।

নোমান তখন বললো সেদিনের যে সন্ত্রাসী গুলো তানিশাকে এট্যাক করেছিলো সেগুলো তোমার গুনধর ছেলের টাকাই কেনা লোক ছিলো।তোমার গুনধর ছেকে যা যা করতে বলেছে ছেলেগুলো সেটাই করেছে।কিন্তু মাঝখানে আমি গিয়ে তার প্লান সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

তায়েব চৌধুরী তখন আমানের দিকে তাকিয়ে বললো,নোমান এসব কি বলছে?আমান সেই কথা শুনে সেখান থেকে চলে গেলো।

তায়েব চৌধুরী তখন নোমানকে বললো তুমি এসব জানলে কি করে?

–আমি সন্ত্রাসী গুলোরে খুঁজে বের করেছিলাম তাদের পুলিশে দেবো বলে।কিন্তু সন্ত্রাসী গুলো জেলে যাওয়ার ভয়ে সব সত্য কথা বলে দিয়েছে।সেজন্য আমি ওদের ছেড়ে দিয়েছি।কারণ ওদের পুলিশে দিলে আমাদের মানসম্মানই নষ্ট হয়ে যেতো।

তায়েব চৌধুরীর মাথা এবার চক্কর দিয়ে উঠলো।শুধু তায়েব চৌধুরী না বাসার সবাই অনেক বেশি অবাক হলো।সবার এক কথা আমান এসব কেনো করতে গেলো?
তন্নি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।সেও বুঝতে পারলো ফেক আইডি থেকে মেসেজ দেওয়া ছেলেটা তাহলে আমানই।কারণ সে নিজেকে একজন পুলিশ অফিসার বলে দাবি করছিলো।তাহলে কি সত্যি সত্যি তার আমান ভাইয়া তানিশাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

নোমান তখন পুরো ঘটনা খুলে বললো।যে আমান হিরো হয়ে তানিশা কে বাঁচাতে চেয়েছিলো।আর এসব সন্ত্রাসী দের ভয়ে যাতে তানিশাকে সবাই এ বাড়িতেই রাখতে চায় আর তানিশা নিজেও এ বাড়িতে থাকতে চায় সেজন্য সে এ নাটক সাজিয়েছে।

তায়েব চৌধুরী বুঝতে পারলো আমান তাহলে নিজেও তানিশাকে পছন্দ করে।কিন্তু সে এসব কাজ মোটেও ঠিক করে নি।তানিশাকে পছন্দ করে সেটা সে বলতেও পারতো।তা না করে অযথা বাড়তি ঝামেলায় জড়িয়েছে।সেজন্য তায়েব চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিলেন এখন কিছু বলবেন না তিনি।আপাতত চুপচাপ ই থাকবেন।আমান চাকরি টা পাওয়ার সাথে সাথে তিনি তহিদুল সাহেব কে তানিশার সাথে আমানের বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।

তায়েব চৌধুরী এবার নোমানকে বললো যা হবার হয়ে গেছে।ভুল করেও যেনো এই নিউজ বাহিরের কেউ না জানে।তাহলে মানসম্মান একদম শেষ হয়ে যাবে।আর তন্নি তুই কিন্তু তানিশাকে এসব বলবি না খবরদার।তা না হলে আমি কিন্তু মুখ দেখাতে পারবো না।

–জ্বি মামা।তবে আমান ভাইয়াকে সতর্ক করে দিয়েন যে পরবর্তীতে যেনো এরকম জঘন্য কাজ আর না করে।

–সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।আমি আমানের সাথে কথা বলবো।

নোমান ভেবেছিলো তার বাবাকে আমানের এমন কুকীর্তির কথা বলে দিলে তিনি আমানকে শাসন করবেন।যাতে আমান ভুল করেও আর তানিশার দিকে না তাকায়।কিন্তু নোমান এটা জানে না তার বাবা অনেক আগে থেকেই আমানের বউ হিসেবে তানিশাকে ভেবে রেখেছে।নোমান আজ এসব বলায় তায়েব চৌধুরী আরো তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন।

তানিশা বাসা থেকে চলে যাওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ হলো। বাড়িটা কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছিলো নোমানের কাছে।মনে হচ্ছে কি যেনো নাই তার।পড়াশোনাতে মোটেও মন বসছে না তার।নোমান একটা একটা করে বই হাতে নিচ্ছে আর তার পৃষ্ঠা ওল্টাচ্ছে।তার আজ কোনো সাবজেক্ট ই পড়তে ইচ্ছে করছে না।তখন নোমানের হঠাৎ করেই তানিশার ছবিটার কথা মনে হলো।যেটি সে তার বই এর ভিতর রেখেছিলো।নোমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে।

আসলে নোমান তানিশার ছবিটা বেলকুনিতে কুড়িয়ে পেয়েছিলো।তন্নির কাছে অনেক ছবি আছে তানিশার।তন্নি আর তানিশার দুইজন মিলে অনেক ছবি আছে।বা তানিশার কোনো ছবি একক ভাবেও আছে।হয়তো তন্নির এলব্যাম থেকে তানিশার এই ছবিটা পড়ে গিয়েছিলো।কিন্তু নোমান তন্নিকে ছবিটা ফেরত না দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো।সে ভেবেছিলো তন্নিকে এই ছবি দিতে গেলে নানা প্রকারের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাকে।কিন্তু আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে ছবিটা রেখে সে ভালোই করেছে।

নোমান ছবিটা স্পর্শ করছে আর বলছে,
তোমার সাথে আমার না আছে কোনো সম্পর্ক না তুমি আমার রক্তের কেউ হও।তবুও তোমাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন যেনো শূন্য শূন্য লাগছে।যে কয়দিন ছিলে এখানে সে কয়দিন কিছু মনে হয় নি।কিন্তু আজ হঠাৎ এতো খারাপ লাগছে কেনো?মনে হচ্ছে যদি আর একবার তোমাকে কাছে থেকে দেখতে পেতাম!এই বলে নোমান হাত দিয়ে তানিশার ছবিটায় বোলাতে লাগলো।তার বুকের ভিতর টা কেমন যেনো খাঁ খাঁ করছে।সেজন্য নোমান সিদ্ধান্ত নিলো আজ কলেজ শেষ করে তানিশাকে এক নজর দেখবে সে।সে দেখতে চায় তখন তার অনুভূতি কেমন হয়?এই বলে নোমান ছবিটা আবার তার বই এর পাতার মধ্যেই রেখে দিলো।

নোমান আটটার আগেই কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু আটটা বেজে গেলো তবুও সে তানিশাকে দেখতে পেলো না।তারপর ভাবলো তিরিশ মিনিটের টিফিন পিরিয়ডে হয়তো ক্যান্টিনে দেখতে পাবে।কিন্তু ক্যান্টিনেও দেখতে পেলো না তাকে।অবশেষে কলেজ ছুটি হলে সবার আগে গেটে এসে দাঁড়ালো তবুও সে তানিশার দেখা পেলো না।
হঠাৎ নোমানের তানিশার রুমমেট রিশা আর লিরার সাথে দেখা হলো।নোমান তানিশার কথা কিভাবে জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারলো না।সে মনে মনে কথা তৈরি করতেই তারা হোস্টেলের দিকে চলে গেলো।নোমান তখন মন খারাপ করে বাসায় চলে এলো।পরের দিনও ঠিক এভাবেই নোমান তানিশাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করলো।বাট সেদিনও দেখতে পেলো না।
এবার নোমান ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।তানিশা হঠাৎ কই উধাও হলো।তাকে সে কেনো দেখতে পাচ্ছে না।আর তানিশাকে দেখতে না পেয়ে তার এমন কেনো লাগছে।ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছিলো নোমানের মধ্যে।সে আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না।আজ সে রিশা আর লিরাকে তানিশার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে বলে ডিসিশন নিলো।যেমন ভাবা তেমনি কাজ।নোমান আজও কলেজ শেষ করে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো,আর রিশা আর লিরাকে দেখামাত্র হাত দিয়ে ইশারা করলো।

লিরা আর রিশা ভীষণ অবাক হলো।তারা ভাবতেই পারছে না নোমান তাদের ডাকছে।কিন্তু কাকে ডাকছে তারা ঠিকভাবে বুঝতে পারলো না।তখন দুইজনই এগিয়ে এসে বললো,ভাইয়া ডাকছেন আমাদের?
–হ্যাঁ ডেকেছি।

নোমানকে কলেজের সবাই এক নামেই চেনে।সিনিয়র আর মেধাবী স্টুডেন্ট হিসেবে নোমানের বেশ ডাকনাম।সে নিজের থেকে যে লিরা আর রিশাকে ডাকছে তারা ভীষণ প্রাউড ফিল করলো।

নোমান তখন নির্ধিদ্বায় বললো,তোমরা তানিশার রুমমেট না?

–জ্বি ভাইয়া।

–তা তানিশাকে দেখছি না যে।তোমরা শুধু দুইজন কেনো?

রিশা আর লিরা তখন দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।তারা দুইজন ভাবলো কি আর নোমান বলছে কি?

লিরা তখন বললো তানিশা ওর বাড়ি চলে গেছে।

নোমান লিরার কথা শুনে বললো,বাড়িতে গেছে?কিন্তু কেনো?

–ওর বড় বোনের বিয়ে।

–ওহ।এই বলে নোমান চলে যেতে ধরলো।

কিন্তু রিশা জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া তানিশা আপনার কে হয়?সেদিনও দেখলাম আপনার সাথে একই গাড়ি করে যেতে।

নোমান তখন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললো,কেউ হয় না।

#চলবে,

#ডাক্তার_ম্যাডাম
#পর্ব_০৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

নোমান কলেজ থেকে ফিরেই তন্নি তন্নি করে ডাকতে লাগলো।কারণ সে জানতে চায় তানিশার বোনের বিয়েতে তাদের ইনভাইট করেছে কিনা?
তন্নি নোমানের মুখে এই প্রশ্ন শুনে ভীষণ অবাক হলো।কারণ তন্নিই তো জানে না তানিশার বোনের বিয়ের কথা।তাহলে নোমান জানলো কি করে?

হঠাৎ সেই সময় তায়েব চৌধুরীও কার সাথে যেনো কথা বলতে বলতে বাসায় প্রবেশ করলেন।
তিনি বলছেন,
না আমরা কেউই যাবো না।কারণ আমি তোমাদের প্রতি ভীষণ রেগে আছি।তোমরা কি করে এই কাজটা করতে পারলে?আমাকে না জানিয়ে কিভাবে বাসা থেকে চলে গেলে?
তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তিনি তানিশার সাথে কথা বলছেন।সেজন্য নোমান আর তন্নি চুপচাপ থাকলেন।

তায়েব চৌধুরী এবার তহিদুল সাহেবের সাথে কথা বলছেন, তায়েব চৌধুরী বলছেন,
তানিশা না হয় ছোটো মানুষ, কিছু বোঝে না।কিন্তু আপনি বুঝদার মানুষ হয়ে কি করে এই কাজটা করতে পারলেন?আমরা কেউই যাবো না আপনাদের বাসায়।

তন্নি আর নোমান চুপচাপ তায়েব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকলো।আর তায়েব চৌধুরী কি কি বলছে সেসব কথা ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো।

হঠাৎ তন্নির ফোনেও কল আসলো।তানিশা ফোন দিয়েছে।তন্নি কল রিসিভ করতেই তানিশা এক নিঃশ্বাসে বললো,
তন্নি, আমার বড় আপুর হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।পরশুদিন পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো।তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে আপুকে।সেজন্য তারা সেদিনই বিয়ে করতে চাইছিলো।কিন্তু আব্বু রাজি হয় নি।কারণ বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা।সবাই আনন্দ করবে বলে অনেক আশা নিয়ে বসে আছে।এভাবে হুট করে কি বিয়ে দেওয়া যায়?সেজন্য এখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে পাত্রপক্ষ। এখন ধুমধামেই হবে আপুর বিয়ে।আমি পরশু দিন এসেছি গ্রামে।কারণ সেদিনই ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু এখন যেহেতু দুইদিন পরে বিয়ে সেজন্য আমাদের পরিচিত সবাইকে ইনভাইট করতেছি।প্লিজ দোস্ত আসবি কিন্তু।আর দেরী করে বলার জন্য সরি।ভীষণ ব্যস্ত আছি রে।একা হাতে আর কয়দিকে সামলায়।

তন্নি সেই কথা শুনে বললো,হ্যাঁ দেরী করে ইনভাইট পাবার আত্নীয়ই তো আমরা।তুই যে মনে করেছিস এটাই তো অনেক। আমরা কি তোর পরিচিত কেউ নাকি?তুই তো আমাদের অপরিচিতই ভাবিস।

–কি বলছিস এসব?একটু বোঝার চেষ্টা কর।তুই সেই আগের কাহিনী তেই পড়ে আছিস?তুই বল,এভাবে কারো বাসায় থেকে পড়াশোনা করা যায় কি?নিজেরও তো একটা আত্নসম্মানবোধ আছে।প্লিজ তোরা ওই বিষয় টা আর উঠাস না।এটা এখানেই স্টপ কর।বর্তমানে ফিরে আয় তন্নি।

–হ্যাঁ বল।

তানিশা তখন বললো, কিছুক্ষন আগে মামাকে ইনভাইট করেছি।মামা তো সেই রেগে আছেন আমার উপর।তবে আমার বিশ্বাস বেশিক্ষন তিনি রেগে থাকতে পারবেন না।নিশ্চয় আসবেন আপুর বিয়েতে।তুই কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই আসবি।আমি বার বার কিন্তু বলতে পারবো না।কারন আমার উপর অনেক দায়িত্ব। অনেক দিকে সামলাতে হচ্ছে।

তন্নি শান্তভাবে বললো,দেখি কি করি?

তানিশা সেই কথা শুনে বললো, কিসের দেখাদেখি?তুই মাস্ট আসবি।তুই না আসলে কিন্তু জীবনেও কথা বলবো না তোর সাথে।

তন্নি তখন ভীষণ অভিমান মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো,আমার সাথে এখন কথা না বললেও চলবে তোর।এখন কলেজে নতুন নতুন বান্ধুবি পেয়েছিস।পুরাতন বান্ধুবি দিয়ে কি করবি?

তানিশা তখন হাসতে হাসতে বললো,জানিসই তো ওল্ড ইজ গোল্ড।তাছাড়া আমাদের গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা আছে যে পুরাতন চাল ভাতে বাড়ে।বুঝেছিস!কথা বাড়াস না এখন।
রাখ এখন পরে কথা বলছি।অনেক জায়গায় ইনভাইট করা বাকি আছে।এই বলে তানিশা কল কেটে দিলো।

তন্নি কল কেটে দেওয়ার সাথে সাথে নোমান বললো,তানিশা ফোন দিয়েছিলো?

–হ্যাঁ।আমাকে ইনভাইট করলো।

–শুধু তোকে ইনভাইট করলো?

–হ্যাঁ।আর তো কারো কথা বললো না।
নোমান সেই কথা শুনে বললো, ভালো তো।তা কবে যাবি?

–জানি না।আম্মু যেতে দিলে তো যাবো।দেখি মামা কি বলে?তা আপনি কি করে জানলেন ওর বোনের বিয়ের কথা?

নোমান তন্নির কথা শুনে একদম চুপসে গেলো।এখন কি জবাব দেবে তন্নিকে?কিন্তু তন্নি ব্যাপারটাকে সিরিয়াস ভাবে নিলো না।সে তায়েব চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, তানিশা তো খুবই রিকুয়েষ্ট করছে।আমাকে নাকি যেতেই হবে। মামা কি করবো এখন?

তায়েব চৌধুরী তন্নির কথা শুনে বললো,কি করবি মানে?যেতেই হবে।তা না হলে তহিদুল সাহেব মন খারাপ করবেন।কারণ বার বার রিকুয়েষ্ট করেছেন আমাকে।কিন্তু সমস্যা হলো আমি কি করে যাবো?অফিসে অনেক কাজ আছে।এই সময়ে অফিস ছেড়ে কি করে যাবো সেটাই ভাবছি।

তন্নি তখন বললো, তাহলে আমি একা একাই যাবো?
–একা যাবি কেনো?আমান আর তুই যাবি।
–ওকে।এই বলে খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো তন্নি। কতদিন পর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে সে।আর সে বিয়েটা যদি বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।কত দিন পর এমন আনন্দ করার সুযোগ পাবে সে।
তন্নি আর এক সেকেন্ড দেরী করলো না।তার রুমে গিয়ে কাপড় চোপড় প্যাক করতে লাগলো।

অন্যদিকে নোমান বেচারা বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।কারণ তার কথা একবারের জন্যও কেউ বললো না।তন্নি ব্যস্ত তার যাওয়া নিয়ে অন্যদিকে তার বাবা ব্যস্ত আমান কে পাঠানোর জন্য।নোমান সেজন্য মন খারাপ করে থাকলো।তবে তার ভীষণ ইচ্ছা করছে তানিশাদের গ্রামে যেতে।অনেকদিন ধরে সে নিজেও তো কোনো প্রোগ্রামে যায় না।কিন্তু কেউ তো তাকে ইনভাইট ই করলো না।

তবুও নোমান একটু চেষ্টা করে দেখলো।সে তায়েব চৌধুরী কে বললো,বাবা আমান ভাইয়া এতো বড় একটা ঘটনা ঘটানোর পরও কি করে তাকে পাঠাতে চাইছেন?ওখানে গিয়ে যদি আবার খারাপ কিছু করে তানিশার সাথে।আমাদের মানসম্মান তখন কিন্তু একটুও থাকবে না।

তায়েব চৌধুরী তখন হাসতে হাসতে বললো,আর খারাপ কিছু করবে না সে।আমি আমানের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি।বেচারা তানিশাকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছে।সেজন্য এমন পাগলামি করেছে।আমান তার ভুল স্বীকার করেছে আমার কাছে।সে এটাও বলেছে এমন ভুল আর কখনোই হবে না।আমানের প্রতি আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে।এই বলে তায়েব চৌধুরী চলে গেলেন তার রুমে।

নোমান তখন মন খারাপ করে নিজেও তার রুমে চলে গেলো।

নোমানকে একটিবারের জন্য কেউ যেতে বলছে না, কারন বাসার সবাই জানে নোমান কোনো প্রোগ্রামেই যেতে চায় না।আর সেখানে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে তিনচার দিন সময় নষ্ট তো সে কখনোই করবে না।কিন্তু তাদের নোমান যে ইতোমধ্যে কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে সেটা এখন পর্যন্ত কেউই বুঝতে পারলো না।নোমান তানিশার বাড়িতে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে আছে।কেউ যদি একটিবার শুধু বলতো তাহলে সে সাথে সাথে রাজি হয়ে যেতো।

এদিকে তন্নি তো উত্তেজনায় একদম পাগল হয়ে যাচ্ছিলো।সে শুধু অপেক্ষা করছে কখন সে সময় আসবে?তন্নি ঠিক করলো সে কালকেই রওনা দিবে।কারণ দুই একদিন আগে না গেলে সে বিয়ে বাড়ির অনেক আনন্দই মিস করবে।কারণ সে বিয়ে বাড়ির সব আনন্দ উপভোগ করতে চায়।কোনো আনন্দ মিস করতে চায় না।

কিন্তু তার মা তো এখনো জানে না।সেজন্য তন্নি দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে চলে গেলো।আর তার মায়ের গলা ধরে বললো,
আম্মু একটা কথা বলি?কথা দাও রাগ করবে না?
তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে তন্নির হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,ন্যাকামো না করে যা বলার বলে ফেল।
তন্নি তখন সাহস করে বলেই ফেললো যে সে তানিশাদের বাড়িতে যেতে চায়।কারণ তানিশা এই মুহুর্তে তাকে তার বোনের বিয়েতে ইনভাইট করলো।

তাহমিনা চৌধুরী শোনার সাথে সাথে বললো,না, আমি যেতে দিবো না তোকে।ওখানে গেলে পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।তাছাড়া অচেনা জায়গা অচেনা মানুষজন।না না যাওয়া হবে না ওখানে।

তন্নি তখন বললো,কিন্তু মামা যে পারমিশন দিলো।তিনি নিজেই আমাকে যাওয়ার জন্য বললেন।

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, তোর মামা যখন পারমিশন দিয়েই দিয়েছে তাহলে আমাকে বলতে এসেছিস কেনো?যা চলে যা।

তন্নি তখন তার মায়ের গলা ধরে বললো,তুমি আমার মা হও না?সেজন্য তোমার থেকে পারমিশন না নিয়ে কি করে যাই বলো?

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো হইছে এবার। আর পাম দিতে হবে না।তা তুই একা একা কি করে যাবি?

–একা যাবো কেনো?আমান ভাইয়া আর আমি যাবো।

আমানের কথা শুনে তাহমিনা চৌধুরীর মাথা যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো।তার ভাই আমানের ব্যাপারে সবকিছু জেনেও তাকে পাঠাচ্ছে কেনো?তার ভাই তো এ ধরনের লোক না।অন্যায় কে প্রশয় দেওয়ার লোক নন তিনি।নিশ্চয় এর পিছনে কোনো বড় ধরনের রহস্য আছে।

এজন্য তাহমিনা চৌধুরী তায়েব চৌধুরীর রুমে গিয়ে বললো, ভাই, ভাই তন্নি কি বলছে এসব?ও নাকি তানিশাদের বাড়ি যাবে।তুমিই নাকি যেতে বলেছো?

–হ্যাঁ।বলেছি।

–কিন্তু তন্নি একা একা কি করে যাবে?

–একা যাবে কেনো?আমান ও যাবে।

তাহমিনা চৌধুরী সেই কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বললো,কি বলছো ভাই?আমানের ব্যাপারে এতোকিছু জেনেও কি করে ওকে পাঠাচ্ছো?

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, তুই বুঝবি না ওসব।

–বুঝবো না মানে?বোঝালেই বুঝবো।

তায়েব চৌধুরী এবার তার গোপনীয় কথা টা পেটে বেশিক্ষণ রাখতে পারলেন না। তিনি তাহমিনা কে বললেন,
আসলে আমার অনেক ইচ্ছা আমানের সাথে তানিশার বিয়ে হোক।কিন্তু সেটা প্রকাশ করার আগেই আমান নিজেই যখন প্রকাশ করলো তখন আর কি বলবো তাকে?আমান তানিশাকে পছন্দ করে।সে ওকে বিয়ে করতে চায়।সেজন্য আমার মনে হয় আমানেরই যাওয়া উচিত তন্নির সাথে।এতে করে তানিশার ফ্যামিলি কিছুটা হলেও আমানের সম্পর্কে জানতে পারবে তাকে ভালোভাবে চিনবে।যাতে করে পরবর্তীতে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তানিশার ফ্যামিলি আর না করতে না পারে।

তাহমিনা চৌধুরী এবার পুরাই শকড খেলেন।তার ভাই তলে তলে এতোদূর পর্যন্ত পরিকল্পনা করে ফেলেছে।যেখানে সে কিছুই জানে না।অথচ তার ভাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার আগে তার পরামর্শ নেন।অথচ এবার একা একাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তাহমিনা চৌধুরী তখন মনে মনে ভাবলো তুমি যেমন আমানের সাথে তানিশার বিয়ের কথা ভাবছো আমিও তেমন নোমান আর তন্নির বিয়ের কথা ইতোমধ্যে ভেবে ফেলেছি।তবে আমানের সাথে তানিশার বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেবো না।তানিশা এই বাড়ির বউ হবে?অসম্ভব! এ আমি হতে দেবো না। কিছু একটা বুদ্ধি বের করে আমানকে তানিশার থেকে দূরে পাঠাতে হবে।আর তন্নি আর নোমানকে কাছাকাছি আসার সুযোগ দিতে হবে।

–কি হলো?কি ভাবছিস?আর আমার আইডিয়া টা কেমন লাগলো?কিছু বললি না তো?

তাহমিনা চৌধুরী তখন বললো,খুব ভালো আইডিয়া ভাই।তবে আমি একটা কথা বলতে চাই শুনবে কি?

–কি কথা?

তাহমিনা চৌধুরী তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,আমার ভীষণ ইচ্ছা ছিলো তন্নিকে এই বাড়িতেই রাখতে।তাছাড়া আমান আর নোমান অন্য জায়গায় বিয়ে করলে তাদের বউরা যে কেমন আচরণ করে আমার সাথে সেটা ভাবতেই আমার ভয় লাগছে।আমি আর এ বয়সে কোথায় যাবো ভাই?মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকতে চাই।সেজন্য তুমি যখন আমানের সাথে তানিশার বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছো তাহলে অন্তত নোমানের সাথে তন্নির বিয়ে টা পাকা করে দাও।

তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে তাহমিনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তাহমিনা তার ভাইয়ের এমন চাহনি দেখে একদম ভয় পেয়ে গেলো।তাহমিনা ভাবলো তার ভাই এই প্রস্তাব শুনে নিশ্চয় ভীষণ রেগে যাবে।কিন্তু তায়েব চৌধুরী তার বোনকে অবাক করে দিয়ে বললো,
তন্নি কে আমি কেনো বার বার বলি যে ভালোকরে পড়াশোনা কর,তোকে মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে।
–কেনো ভাই?
–কারণ একজন ডাক্তার ছেলে কখনোই কম মেধাবী স্টুডেন্ট কে পছন্দ করবে না।বা তাকে বিয়েও করতে চাইবে না।
–মানে?কি বলছো ভাই?
–বুঝলি না?
–না তো।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো, আমানের মা চলে যাওয়ার পর সংসার টা একদম আমার এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম প্রায়।সবাই বলেছিলো আরেকটা বিয়ে করতে কিন্তু ছেলে দুইটার ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজি হই নি।অনেক কষ্টে ছেলেদুই টাকে নিয়ে বেঁচে আছি।দেখ ভাগ্যের কি পরিহাস,তুই ও ঘরছাড়া হলি সেই সময়ে।নিজের স্বামীর সংসার বাদ দিয়ে তোর ভাই এর সংসার টাকে নিজের করে নিলি।তুই না থাকলে আমার সংসার টা এমন গোছানো হতো না।সেজন্য এই সুখের সংসার টাকে আরো ভালোভাবে সাজাতে আমার দুইজন লক্ষ্ণীর প্রয়োজন এখন।যারা দুইজন বোনের মতো একসাথে থেকে সংসার টাকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করবে।
আমি অনেক আগে থেকেই তন্নিকে নোমানের জন্য ঠিক করে রেখেছি।কারণ তন্নি এতোবেশি চালু না।সে ছোট বউ হলেই বেশি মানাবে।তাছাড়া আমার নোমানের সাথে বেশ মানাবে তাকে।তবে যেদিন থেকে তানিশাকে দেখলাম,ওকে দেখেই যেনো মনে হলো আমার বাড়িরই সদস্য সে।কেমন সহজেই মিশে গেলো আমাদের পরিবারের সাথে।ওকে আমি আমার আমানের বউ বানাবোই বানাবো।বাকিটা এখন উপরওয়ালার হাতে।সে হবে আমার বাড়ির বড় বউ।

তাহমিনা চৌধুরী তার ভাই এর কথা শুনে একদম কেঁদে ফেললেন।তবে তিনি তানিশাকে মোটেও এ বাড়িতে আনতে চান না।তানিশাকে দেখলেই কেমন যেনো রাগ ওঠে তার।তবে তার ভাই যখন চাচ্ছে তখন তো মেনেই নিতে হবে।

অন্যদিকে তন্নি নিজেও মনে মনে নোমানকে ভীষণ পছন্দ করে।নোমানের তার প্রতি এক্সট্রা কেয়ারগুলো সত্যি তার ভালো লাগে।সারাক্ষণ পড়তে বসতে বলা।খাওয়ার সময় মনে করিয়ে দেওয়া।বেশি রাত না জাগা।বাহিরে গেলেই তার জন্য হরেক রকমের খাবার আনা।সে অসুস্থ হলে ভীষণ টেনশন করা,বার বার তার খোঁজখবর নেওয়া।এসব এক্সট্রা কেয়ারগুলোতে সে ভীষণ ভাবে দূর্বল নোমানের প্রতি।আজকাল নোমান কে ভাইয়া বলে ডাকতে তার কেমন যেনো লাগে।কিন্তু সে যে তার মামাতো ভাই,সেজন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই ভাই বলে ডাকতে হচ্ছে তাকে।
তন্নি সেদিন তানিশাকে নোমানের কথাই বলতে চাইছিলো।কিন্তু যেখানে সে নোমানের মনের খবর এখন পর্যন্ত পাই নি সেখানে কোন সাহসে তার ভালোবাসা সে প্রকাশ করবে?সেজন্য তার মনের কথা আড়ালেই রয়ে গেলো।

#চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে