খোলা জানালার দক্ষিণে পর্ব-২২+২৩+২৪

0
166

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ভারাক্রান্ত হৃদয়, বিষন্ন মন, ছন্নছাড়া মস্তিষ্ক নিয়ে মেহেভীন নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। যে বাড়িতে তার মতামতের গুরুত্ব নেই। সেই বাড়ির গুরুত্বও তার কাছে নেই। কালকে সকালেই এই বাড়ি ছাড়বে সে। অশান্ত মস্তিষ্ককে শান্ত করার জন্য পরিবারের কাছে এসেছিল সে। কিন্তু ঘরের লোক যদি পরের মতো আচারের করে। তখন বেঁচে থাকা মুসকিল হয়ে যায়। মেহেভীনকে বিষাদগ্রস্ত হয়ে কিছু ভাবতে দেখে রাইমা বেগম মেয়ের পাশে বসলেন। মায়ের চোখের ভাষা বুঝতে বেগ পেতে হলো না মেহেভীনের।

–আমি তোকে এখন যা বলব একটা কথাও বলনি না। শুধু চুপচাপ শুনে যাবি। ভেতরটা যে বহু বছর ধরে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে রে মা। শরীরের আঘাত মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু হৃদয়ের আঘাত কেউ দেখতে পায় না। বহু আগেই আমার হৃদয়টা রক্তাক্ত করে দিয়েছে তোর বাবা। তুই তোর যে বাবাকে চিনিস। তার ভেতরের রুপ বাহিরে আসলে সহ্য করতে পারবি না৷ নিজের ভালো চাস তো এখানে আসিস না। মায়ের মন তো তাই মেয়ের জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করে। তাই বারবার তোকে এখানে আসতে বলি। কিন্তু সময় যত সামনের দিকে আগাচ্ছে। তোর জন্য পরিস্থিতি ততই জটিল হচ্ছে। তুই বুদ্ধিমান মেয়ে আশা করি কি বোঝাতে চেয়েছি। সেটা তুই বুঝবি। আগের সময় আর এখানকার সময়ের অনেক তফাৎ। মেহেভীন হতবাক হয়ে বসে রইল। মায়ের এমন জটিল কথা তার মস্তিষ্কে ঢুকলো না। সে নিষ্পলক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেয়েকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে রাইমা বেগম চলে গেলেন।

সূর্যি মামা বিদায় নিয়েছে কিছুক্ষণ হলো। ধরনীর বুকে প্রাকৃতিক নিয়মে আঁধার নেমে এসেছে। নির্বাচনের সময় হওয়ায় পাড়ার মোড়ে আড্ডা নিত্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই বেড়েছে। কথায় আছে না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না৷ আড্ডার মাঝেই দুই দলের ঝামেলা লেগে গেল। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঝামেলা গুরুতর হয়ে উঠল। মুখের ঝামেলা মা’রা’মা’রিতে পরিনত হলো। এক দল আরেক দলকে বেদম পে’টা’চ্ছি’ল। আশেপাশের মানুষ ঝামেলা এড়াতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। কেউ কেউ ভয়ে দোকান বন্ধ করে ভেতরের মধ্যে বসে থাকলো। কিছুক্ষণের মধ্যে এক দলের এক লোকের র’ক্তা’ক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সেটা দেখে বিরোধী দল দিগুন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। কয়েকজনকে ফোন দিয়ে প্রয়োজনীয় অ’স্ত্র নিয়ে আসতে বলা হলো। মুহুর্তের মাঝে গু’লা’গু’লি’র শব্দ কর্ণকুহরে ভেসে আসলো। মানুষ ভয়ে জড়সড় হয়ে বাসার মধ্যে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সবকিছু দেখছে। প্রাণের ভয়ে কেউ বাহিরে বের হচ্ছে না৷ এসব ঝামেলার কথা তাইয়ানের কর্ণে আসতেই তাইয়ান হন্তদন্ত হয়ে মুনতাসিমের কাছে গেল। উত্তেজিত হয়ে বলল,

–স্যার পাড়ার মোড়ে আমাদের লোক আর বিরোধী দলের লোকের মধ্যে বিশাল ঝামেলা হয়ে গিয়েছে। বিষয়টা গু’লা’গু’লিতে পরিনত হয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা আসবে আসতে একটু সময় লাগবে। তাইয়ানের কথায় মুনতাসিমের ক্রোধে মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। কোনো কথা না বলে সোজা কক্ষ থেকে হনহন করে বের হয়ে গেল। তাইয়ান হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে মুনতাসিমকে বলে দিয়েছে। এখন মুনতাসিম নিজের জীবনের পরোয়া না করে, ওদেরকে বাঁচাতে চলে যাবে। তাইয়ান চিন্তিত হয়ে বলল,

–স্যার আপনার ওখানে যাওয়া উচিৎ হবে না। পুলিশ আসলে আমরা পুলিশের সহায়তায় নিয়ে যাব। এভাবে নিজের বিপদ ডেকে নিয়ে আসবেন না। আপনাকে মা’রা’র জন্য সবাই পা’গ’লা কু’কু’র হয়ে আছে। হতেও পারে ওরা ইচ্ছে করে এমন করছে। আপনাকে বাহিরে বের করে আপনার ক্ষতি করে দিবে। তাইয়ানের কথায় মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হয়ে এল। সে গর্জন করে উঠল,

–তুমি আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছ তাইয়ান। নিজের লোকের বিপদ জেনেও ঘরে বসে থাকার মতো কাপুরষ আমি না। আমার দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ আমি সবাইকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করব। তুমি আমাকে এত দেরি করে খবরটা দিলে কেন? না জানি কতজনের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ওদের কাউকে আমি ছাড়ব না। মুনতাসিম ফুয়াদ মৃ’ত্যু’র ভয় করে না। মৃ’ত্যু হবে জেনেও আমি স্বেচ্ছায় মৃ’ত্যু’র দিকে অগ্রসর হই।

–আপনি কারো কথা না ভাবতে পারেন। আপনি আপনার পরিবারের কথা ভাবুন। আপনি আপনার পরিবারের ওপরে কতবড় ছাদ হয়ে আছেন। আপনি সরে গেলে আপনার পরিবারের ওপর কিরূপ ঝড় বয়ে আসবে৷ সেটা সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও অধিক অবগত আছেন।

–তুমি স্বার্থপরের মতো আমার কথা কেন ভাবছ! আমি যেমন কারো ছেলে কারো ভাই। তারাও কারো স্বামী, বাবা, ভাই। টাকা দিলেই কি তার জীবন ফিরে পাওয়া যাবে! আমার সামনে অন্তত এমন স্বার্থরের মতো কথা তুমি বলবে না। ফলাফল ভালো হবে না। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম বেড়িয়ে গেল। মুনতাসিমের সুরক্ষার জন্য কয়েকজন গার্ড তার পেছনে পেছনে ছুটলো।

কালো পিচ ঢালাই করা রাস্তা রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ছয় সাতজন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। মুনতাসিমকে দেখে কয়েকজন একটু দুর্বল হয়ে পড়লে বিরোধী দল এই সুযোগ টাই লুফে নিতে চাইলো। মুনতাসিম শান্ত মস্তিষ্কে কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা শুনতে চাইনি৷ মুনতাসিমকে রক্ষা করার জন্য কয়েকজন গার্ড মুনতাসীমের সামনে এসে দাড়ালো। প্রত্যেক জনের হাতে বন্দুক। মুনতাসিমকে আঘাত করার সাথে সাথে বিপরীত পক্ষের মানুষ গুলো ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাবে। তারাও কয়েকজন বন্দুক তাদের দিকে তাক করে আছে। তবে তাদের ভেতরে ভয় ঢুকে গিয়েছে। হালক করে হাত কাঁপছিল। তখনই পুলিশ এসে সবাইকে পেছনে থেকে ধরে ফেলে। মুনতাসিম যেন এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা করছিল। কিছু সময়ের জন্য হয়তো মা’রা’মা’রি বন্ধ রাখতে পারলে, কয়টা প্রাণ বেঁচে যাবে। কিছু আঘাত কমে যাবে। পুলিশ এসে সবাইকে গাড়িতে তুলল। ঠিক এমন সময় মুনতাসিমের কর্ণের পাশ কাটিয়ে একটা গু’লি গিয়ে গার্ডের হাতে লাগলো। মুনতাসিম দ্রুত পেছনের দিকে ঘুরে তাকালো৷ গাছের আড়াল থেকে খুব সাবধানতার সাথে মুনতাসিমকে গু’লি করা হয়েছে। যে গার্ডের হাতে গুলি লাগছে। সেই গার্ড হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মুনতাসিম আগেই এম্বুলেন্সকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছিল। নিজের প্রাণ সংশয়ের কথা চিন্তা না করে, দ্রুত সবাইকে হসপিটালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। সে কে? যে এত যত্ন করে মুনতাসিমকে মারতে চাইলো। সেটা না হয় পরেই জানা যাবে। আগে তার কাছের মানুষ গুলোকে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।

সারাদিন খাওয়া হয়নি মেহেভীনের। তার চেনা বাবা কিভাবে এতটা অচেনা হয়ে গেল। সেটা মানতেই মেহেভীনের ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। সে প্রভাতের আলো ফুটতেই বাড়ি ছেড়েছে৷ ঐ বাড়িতে থাকলে হয়তো দম বন্ধ হয়ে মা’রা যেত। তার বাবা তাকে মুখের ওপরে বাসায় যেতে নিষেধ করেছে। মনে মনে শপথ গ্রহণ করল৷ সে কিছুতেই এই বাড়িতে আসবে না। যেদিন তার বাবা আবার আগের মতো হয়ে যাবে। সেদিন না হয় আবার ফিরবে সেই চিরচেনা গৃহে। মনটা কেমন হাহাকার করে উঠল। কাল রাতে মুনতাসিমের সাথে কথা হয়নি। কথা হলে বোধহয় একটু শান্ত পেত। কিন্তু মুনতাসিম তাকে কালকের সব ঘটনা জানিয়েছে। এতকিছু জানার পরে-ও মানুষটার সাথে কঠিন হতে পারেনি মেহেভীন। মানুষটাকে সামলে নেওয়ার সময় দিয়েছে। মাথাটা ভিষণ ঘুরছে মেহেভীনের। শরীর প্রচন্ড দুর্বল লাগছে৷ হয়তো না খাওয়ার কারনে শরীরটা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। ড্রাইভারকে একটা দোকান দেখে দাঁড়াতে বলল মেহেভীন। কিছু খাবার কিনে আবার উঠে বসলো। পেটের আর কি দোষ রাগ করে শুধু শুধু নিজের রুহুকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না। মনের দোষ পেটের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে কতদিন চলবে? তার থেকে ভালো খেয়ে শান্ত মস্তিষ্কে চুপ থাকা৷

ক্লান্ত শরীর নিয়ে মেহেভীন নিজের বাসায় ফিরলো। রুপা মেহেভীনের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। বাড়ি থেকে গেল এক হাসোজ্জল মুখশ্রী। আর বাসায় ফিরলো এক বিষাদগ্রস্ত মুখশ্রী। ব্যাপারটা রুপার মোটেও হজম হলো না। সে মেহেভীনকে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই মেহেভীন দ্রুত নিজের কক্ষে চলে গেল।

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। জীবন আগের ন্যায় চলতে শুরু করেছে। মাঝেমধ্যে মনটা শুধু থেমে যায়। বাবা-মায়ের কথা ভিষণ মনে পড়ে। যার হাত ধরে হাঁটতে শিখেছে। যার মুখ থেকে শব্দ শিখেছে। সেই বাবা-মার থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টকর। তা একমাত্র পিতামাতাহীন সন্তানই অনুভব করতে পারে। কিন্তু মেহেভীনের বাবা-মা থেকে-ও মেহেভীন সেই অনুভূতি অনুভব করছে। সাতদিন ধরে মেহেভীনের বাবা মেহেভীনকে বাসায় যেতে বলছে। মেহেভীন মুখের ওপরে না করে দিয়েছে। তবুও শেষ বারের মতো তিনি কথা বলতে চান৷ মেহেভীন না করতে পারেনি। মুনতাসিমও মেহেভীনকে অনুরোধ করেছিল। ভোটের দিন সে যেন মুনতাসিমের পাশে থাকে। কিন্তু মেহেভীন ছুটি পাচ্ছিল না দেখে যেতে পারছিল না। বৃহস্পতিবার কাজ করে রাতে যাবে। অবশেষে কাঙ্খিত সময় চলে এসেছে। মেহেভীন আঁধারে আচ্ছন্ন বিষন্ন রাতের সাথে তাল মিলিয়ে বিষাদগ্রস্ত মন নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটে চলছে। মনটা ভিষণ কু ডাকছে বারবার ঘুরে যেতে ইচ্ছে করছে। তবুও মনের বিরুদ্ধে যেতে হচ্ছে। রাতের শেষ প্রহরে মেহেভীন বাসায় গিয়ে পৌঁছালো। মেয়ের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মায়ের হৃদয় কেঁপে উঠল। মেহেভীন কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে নিল। মেহেভীনের মা মেহেভীনের জন্য খাবার নিয়ে বসেছিল। মেহেভীন আসতেই মেহেভীনকে খাইয়ে দিল। মেহেভীন আবারও মাকে নতুন ভাবে জানলো। যে মা ধরণীর বুকে আঁধার নামার কিছুক্ষণ পরেই নিদ্রা চলে যায়। সেই মা সারারাত মেয়ের জন্য জেগে পার করে দিল। মনের অজান্তেই মেহেভীনের আঁখিযুগলে অশ্রুকণা এসে জমা হলো। তা দেখে রাইমা বেগম মেহেভীনের ললাটে চুমু খেয়ে মেয়েকে বুকে আগলে নিল। কিছুক্ষণ পরে মেহেভীন ঘুমিয়ে পড়লে রাইমা বেগম চলে গেল।

পরের দিন মেহেভীনের বারোটায় ঘুম ভেঙে গেল। তা দেখে মেহেভীনের চক্ষু চড়কগাছে উঠে গেল। সে দ্রুত উঠে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিল। আজকের দিনটা মুনতাসিম তার পাশে থাকতে বলেছিল। তাকে ভরসা জোগাতে বলেছিল। কিন্তু অর্ধেক বেলা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল। ভেতরে ভেতরে ভিষণ অপরাধ বোধ কাজ করছিল তার। ফোন হাতে নিতেই দেখলো মুনতাসিম তাকে বিশ বারের মতো ফোন করেছে। পঞ্চাশ টার মতো মেসেজ দিয়েছে। সে বিলম্ব করল না দ্রুত মুনতাসিমকে ফোন দিল। মুনতাসিম ভোট কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছিল। সে দ্রুত মেহেভীনের কল কেটে দিয়ে মেসেজ দিল। ” ব্যস্ত আছি অবসর হয়ে ফোন করছি। মেসেজটা দেখে মেহেভীনের মুখশ্রীতে বিষাদ এসে ধরা দিল। কেন পারলো না মানুষটাকে একটু শান্তি দিতে, প্রিয় মানুষকে শান্তি না দিতে পারলে ভেতরটা বুঝি এভাবে পোড়ায়। মেহেভীন ভিষণ করে বুঝতে পারছে। অজানা কারনে ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠছে। মেহেভীন দুই ঘন্টা ধরে ফোনের কাছে বসে আছে। মেহেভীনের বাবা ভোট দিতে গিয়েছে সেই সকালে এখনো বাড়ি ফিরেনি। যাবার সময় মেহেভীনকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুনতাসিমের ফোন আসলো। ফোন কর্ণে ধরতেই গম্ভীর কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাল।

–আপনি সারাদিন কোথায় ছিলেন? একটা দিন আপনাকে আমার পাশে থাকতে বলেছিলাম। সেটাও পারলেন না। এখন কেন ফোন করেছেন? আপনার আমার সাথে কথা বলতে হবে না। আপনি যেখানে ছিলেন। সেখানে যান৷

–আপনার জন্য সারারাত জার্নি করে বাসায় আসলাম। ভোরের দিকে ঘুমিয়েছি। বুঝতে পারিনি এতটা বেলা হয়ে যাবে। আপনি অনুগ্রহ করে রাগ করবেন না। আমি আপনার কথা রাখতে পারিনি। তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনার মতো শক্তপোক্ত মানুষের এমন দুর্বল হলে চলবে।

–আমার ভিষণ ভয় করছে মেহেভীন।

–জনগণ কি জানে তারা একটা ভীতু ছেলেকে তাদের নিতা হিসবে গ্রহণ করছে। আপনি আমাকে শিখিয়েছেন। কিভাবে দুঃসময়ে শান্ত মস্তিষ্কে থাকতে হয়। তাহলে আপনি কেন এতটা অস্থির হচ্ছেন। চিন্তা করে লাভ নেই। আল্লাহ ভাগ্যে যা রাখছে তাই হবে। ভাগ্যের লিখন কেউ খন্ডাতে পারবে না৷ এভাবে দুশ্চিন্তা করে নিজের মনকে দুর্বল করবেন না। আমি জানি এমন সময় চিন্তা করতে হয় না। তারা নিজ দায়িত্বে এসে হাজির হয়ে যায়। আমাদের উচিৎ যথাসম্ভব চিন্তাকে উপেক্ষা করা। জনগণ আপনাকে ভিষণ ভালোবাসে। আর জনগণ যাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা কিছুতেই হেরে যেতে পারে না। এভাবে আপনি অস্থির হবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। তিনি উত্তম পরিকল্পনা কারী। আপনি যতটুকু ভেবে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার থেকে দশগুন আপনার জন্য ভেবে রেখেছে। এবার একটু শান্ত হোন মন্ত্রী সাহেব। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের উথাল-পাতাল করা হৃদয়টা শান্ত নদী হয়ে গেল। এই জন্যই বুঝি প্রিয় মানুষটাকে মন ভালো করার ঔষধ বলে উপাধি দেওয়া হয়েছিল। এক নিমিষেই মেয়েটা কেমন তার অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করে দিল। ক্ষণিকের জন্য সমস্ত দুশ্চিন্তা দূরে পালিয়ে গেল। মস্তিস্ক সচল হয়ে গেল এই মুহুর্তে মেহেভীনকে সে কি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। সেই ভাষা জানা নেই মুনতাসিমের। মনটা ডেকে বলছে। আপনাকে আমার লাগবেই লাগবে।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রৌদ্রের প্রখরতা বেড়ে চলেছে। মেহেভীন ফ্রেশ এসে খেতে বসেছিল। রাইমা বেগম গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। মেহেভীন মাকে প্রশ্ন করলে উত্তর আসে না। মুখের সামনে খাবার রেখে বসে থাকা যায় না। মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত খাবার খেতে শুরু করল। খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে রাইমা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–তোর লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। এতটা নির্লজ্জ হয়ে গেলি কি করে! নাকি সরকার তোকে চলার মতো অর্থ প্রদান করে না। কাল রাতে দূর থেকে জার্নি করে এসেছিস। তাই রাতে কথা গুলো বলতে আমার বিবেকে বাঁধা দিয়েছে। না হলে কালকে দরজা থেকে বিদায় করতাম৷ তোর মতো আত্মসম্মান বিহীন আমার মেয়ে ভাবতেই বিরক্ত লাগছে। যে চাকরি করে খেতে পাস না। সেই চাকরি ছেড়ে দে। চাকরি করেও যদি খাওয়ার জন্য বাবার বাসায় আসতে হয়। তাহলে এখানেই পড়ে থেকে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দে। বেহায়া মেয়ে মানুষ কোথাকার। মায়ের কথা মেহেভীন বিস্ময় নয়নে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পৃথিবীতে কথার আঘাত বড়ো মারাত্মক জিনিস। ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়ে যায়। মায়ের কথা গুলো মেনে নিতে পারল না মেহেভীন।

–তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন আম্মু? কতটুকু খেয়েছি তোমাদের? আমাকে একটা টাকার হিসাব দিও। আমি তোমাদের সব টাকা ফিরিয়ে দিব। তবুও খাবারের খোঁটা দিও না। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায়। মেহেভীনের কথায় জ্বলে উঠল রাইমা বেগম। আগের চেয়ে দিগুন ক্রোধ নিয়ে বলল,

–তোকে আমি এখানে আসতে কতবার নিষেধ করেছিলাম। তবুও বাবা ডাকলো আর বেহায়ার মতো চলে আসলি। তোর কি ভেতর লজ্জা টুকুও নেই। মায়ের আদেশ পালন করতে পারিস না। তোর মতো মেয়ে থাকার থেকে না থাকা অনেক ভালো। তুই আমাকে টাকার গরম দেখাস। ভুলে যাস না প্রাপ্তির কথা শুনে পালিয়েছিলি। তোর এই মা তোকে সব বিপদ থেকে আগলে রেখেছে। এই যে চাকরি করে খাচ্ছিস। এর পেছনে আমার একটা বড় অবদান আছে। আমি চেয়েছিলাম। তুই যেন অনেক বড় হোস। তোর যেন কারো পায়ের কাছে আসতে না হয়। তুই নিজের সুন্দর ব্যক্তিত্ব নিয়ে বাঁচতে পারিস। সেজন্য আমি তোকে সব রকম সাহায্য করেছি। আর তুই মুর্খতার পরিচয় দিয়ে দিলি। এখানে কেন এসেছিস তুই?

–আমি আসতে চাইনি আম্মু। আব্বু আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছে। তুমি জানো বাবা-মা মেয়েদের একটা আবেগের জায়গা। যেখানে তারা কঠিন অপরাধ করার পরে একটু ভালোবেসে দিলেই মেয়েরা সব ভুলে যায়। বাবার আদুরে ডাক আমি অপেক্ষা করতে পারিনি। যে বাবা জন্ম দিয়েছে তার সাথে কিভাবে বেয়াদবি করতে পারি বলো?

–আমি ঠান্ডা মাথায় তোকে কিছু কথা বলি। আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবি। বাবা নামটা ছোট হলে-ও এর দায়িত্ব অনেক বড়। বাবা আমাদের আবেগের জায়গা। বাবা নামটা শুনলেই প্রতিটি মেয়ের হৃদয়ে একটা স্নিগ্ধ অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু তোর বাবা সেই আবেগের জায়গা নয়। সেটা তুই আজই ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবি। তোর বাবা সাপের চেয়েও বেশি বিষাক্ত। তার স্বার্থে আঘাত লাগলে রঙ বদলাতে এক সেকেন্ড সময় নিবে না। এখনো সময় আছে যদি নিজের ভালো চাস। তাহলে এখনই এই বাসা থেকে বেড়িয়ে যা। আমি চাইনা তুই একটা তিক্ত সত্যের মুখোমুখি হোস।

–সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না আম্মু। তোমাকে আজ বলতেই হবে। তুমি আমার সাথে এত ধোঁয়াশা রেখে কেন কথা বলো। আমি সবকিছু জানতে চাই। আমার আব্বু কি করেছে। নিজের বাবা হয়ে কেউ কখনো নিজের মেয়ের ক্ষতি করে। ধরনীর বুকে মেয়েরা সবচেয়ে নিরাপদ তার বাবার কাছে। সেই বাবা কি করে কারো ক্ষতির কারন হতে পারে!

–তোর বাবা আরিয়ানের সাথে তোর বিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে এখানে নিয়ে এসেছে। আরিয়ানকে বিয়ে করে সংসার করার এজন্য এখানে এসেছিস তুই! আমার কোনো আপত্তি নেই। তুই যদি আরিয়ানের সাথে সংসার করে খেতে পারিস। তাহলে আমার নিশ্চুপ থাকাই ভালো।

–তুমি চিন্তা করো না আম্মু। আব্বু এত সহজে আমাকে আরিয়ান ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারবে না। এসব কথা তুমি আমাকে আগে জানালে, আমি কখনো এখানে আসতাম না৷ এসে যখন পড়েছি আব্বুর সাথে লড়াই করেই বের হয়ে যাব।

–তুই যতটা সহজ ভাবে তোর আব্বুকে নিচ্ছিস। তার ভেতরের রুপ বেড়িয়ে আসলে, তোর রুহু পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। মেহেভীন চিন্তায় পড়ে গেল। শত্রুর সাথে লড়াই করে জেতা যায়। কিন্তু ঘরের লোকের সাথে লড়াই করে, ঘরের লোককে সে কিভাবে আহত করবে!

–তুমি আমাকে এতদিন ফোন দিয়ে জানাওনি কেন?

–সুযোগ পেলে অবশ্যই জানাতাম। মেহেভীন কিছু ভাবতে শুরু করল। তখনই তাহিয়ার আগমন। তাহিয়াকে দেখেই বিরক্তিতে মুখশ্রী কুঁচকে এল। তাহিয়া রাইমা বেগমকে সালাম দিয়ে মেহেভীনের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। রাইমা বেগম তাহিয়াকে দেখে গম্ভীর মুখশ্রী করে নিজের কক্ষ চলে গেলেন। এই কয়দিনে মেয়েটাকে হারে হারে চিনেছে। সে-ই মেহেভীনের বাবার মাথা খেয়েছে। নিজের মেয়ে এমনিতেই চোখের বি’ষ হয়েছিল। সময়ের সাথে আরো একটু বি’ষ যোগ করে ভয়ংকর রকমের বিষাক্ত করে তুলছে। তাহিয়া হাসোজ্জল মুখশ্রী করে বলল,

–আপনি আমার কাছে প্রমাণ চেয়েছিলেন না৷ আমি সব প্রমাণ জোগাড় করেছি। সেই কবে থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনার আব্বু আম্মু জানে কতদিন আপনাদের বাসায় এসেছি। কথা গুলো বলেই কিছু কাগজ মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দিল। মেহেভীন কাগজ গুলো পর্যবেক্ষণ করল। এগুলো দেখার পরে যে কারো বিশ্বাস হবে না। যে তাহিয়া মিথ্যা কথা বলছে। নিপুণ দক্ষ হাতে মুনতাসিমের সাইন দেখেই বুঝতে পারলো। তাহিয়া সত্যি কথা বলছে। সে জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো। বিশাল আকাশটা যেন তার মস্তকে এসে পড়েছে। তাহিয়া তৃপ্তির হাসি হেসে বলল,

–এরপরেও বলবেন আমি মিথ্যা কথা বলছি।

–আমার ওপরে ভরসা রাখুন। আমি আজকের পর থেকে আপনার স্বামীর সাথে কথা বলব না। তাহিয়া কাগজ গুলো মেহেভীনের হাত নিয়ে চলে গেল। মেহেভীনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তাহিয়ার হাতের সব কাগজ দেখে সর্ব শান্ত হয়ে গেল। দৌড়ে নিজের কক্ষে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। সারারাত আর দরজা খুলেনি। তাকে সবাই ডাকতে গেলে বলছে সবার সাথে সকালে কথা বলবে। সবাই মেহেভীনের কথা মেনে নিয়েছে। এখন মেহেভীনকে রাগানো উচিৎ হবে না। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে মেহেভীন। মুনতাসিম বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। চারদিকে ঈদ ঈদ আমেজ লেগে গিয়েছে। সমস্ত এলাকা জুড়ে মুনতাসিমের স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। রাতভর আনন্দ উল্লাস মেতে উঠেছিল এলাকাবাসী। এত আনন্দের মাঝে নিজের প্রেয়সীর জন্য ভেতরটা ছটফট করেছে। শতবার ফোন দিয়েও মেহেভীনকে পাওয়া যায়নি। অজানা কষ্টে বুকটা হাহাকার করে উঠছে। হঠাৎ মেয়েটার কি হলো ভাবতে ভাবতে রজনী পার করল মুনতাসিম৷ সকালে হলেই মেহেভীনের বাসায় চলে আসবে। মেয়েটাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত সে শান্তিতে থাকতে পারে না। সবকিছু জেনেও মেয়েটা কেন তাকে এভাবে পোড়াচ্ছে। সেসব ভেবে পায় না মুনতাসিম।

ভোরের আজান কর্ণকুহরে আসতেই মেহেভীন উঠে বসলো। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। আঁখিযুগল দিয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকণা গুলো পরম যত্নে মুছে নিল। অজু করে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। এতদিনের জমিয়ে রাখা সব শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আঁখিযুগল দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রিয় মানুষদের নতুন নতুন রুপ সে সহ্য করতে পারছে না। সব সময় তার জীবন থেকেই সবকিছু হারিয়ে যায় কেন? সে কি কারো ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা রাখে না। তবে কেন বারবার সবার ছলনার স্বীকার হয়। দীর্ঘ সময় কান্না করার ফলে মনটা হালকা লাগছে বেশ৷ নিজের কষ্ট হলে নিজেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অনুভূতিটা ভিষণ সুন্দর। মেহেভীনের চেহারায় মলিনতা এসে ধরা দিয়েছে। মেয়ের এহেন বিধ্বস্ত চেহারা দেখলে যেকোনো বাবার রুহু কেঁপে উঠবে। কিন্তু ফরিদ রহমান মেয়ের মনের অবস্থা বুঝবে? মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। মেহেভীন দরজা খুলে ফরিদ রহমানকে দেখে চমকে গেলে। তার বাবা সচরাচর এত সকালে তার কাছে আসে না। তবে আজ হঠাৎ কি মনে করে আসলেন? মেয়ের বিধস্ত অবস্থা দেখে রাইমা বেগমের ভেতরটা হুঁ হুঁ করে উঠল। ফরিদ রহমান মিষ্টি হেসে মেয়ের হাত ধরে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসলো। মেহেভীন বিস্মিত কণ্ঠে বলল,

–এত সকালে ডেকে নিয়ে আসার কারন কি আব্বু?

–আমি তোর সাথে আরিয়ানের বিয়ে দিব। রাতে দরজা খুলিসনি। কাজী সাহেব রাগ করে চলে গিয়েছে। তাই ভোরের আজান শেষ হবার সাথে সাথে নামাজ শেষ করে, সবাই মিলে তোর জন্য অপেক্ষা করছি। এবার আর আমাকে হতাশ করিস না মা। তুই আরিয়ানকে বিয়ে করে ফেল৷ তাহলে জীবনে তুইও সুখী হবি। আর আমিও তোর সুখ দেখে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে পারব। মেহেভীনের বিষণ্ণতা মুহুর্তের মাঝে কেটে গেল। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুমি আবার সেই এক গান গাইছো কেন আব্বু । তোমাকে আর কিভাবে বোঝালে বুঝবে। আমি আরিয়ান ভাইকে বিয়ে করব না। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে, তার কি অবস্থা আমি করতাম। সেটা আমি নিজেও জানিনা৷ আমারই ভুল হয়েছে। কেন যে আম্মুর কথা শুনলাম না। তুমি শুধু নিজের কথাই ভাবছ। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস পড়লে দেখা যায়। পৃথিবীর সমস্ত শক্তিশালী মানুষ গুলো শত্রু দ্বারা নিহত হয়নি। হয়েছে আপন মানুষের বেইমানি কারনে। যেমন তোমার কথার মায়ায় পড়ে ছুটে আসলাম তোমার কাছে। আর তুমি আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে পাঠাচ্ছ। এবার যদি আমি এই বাড়ি থেকে বের হই। তাহলে আমার লা’শ আসবে এই বাড়িতে, তবুও আমি জীবিত থাকতে এই বাড়িতে আসব না।

–আরিয়ানকে বিয়ে করবি না কাকে বিয়ে করবি। ঐ মুনতাসিম ফুয়াদকে যে কি-না বিবাহিত সন্তানের বাবা হতে চলেছে। একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ। যাকে তুই স্বামী বানানোর চেষ্টা করছিস। সে তোকে রক্ষিতা বানানোর চেষ্টা করছে। এসব এমপি মন্ত্রীরা ভালো হয় নাকি। এরা কখনো এক নারীতে আসক্ত থাকে না। এরা প্রতিদিন কাপড় বদলের মতো একটা করে মেয়ে বদল করে। প্রতি রাতে নতুন নতুন মেয়ে লাগে। সেখানে তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করে ঘরের বউ করবে। এত মহান আশা নিয়ে বাঁচিস না। মুনতাসিম ফুয়াদের রক্ষিতা হয়ে থাকবি তুই। ফরিদ রহমানের কথায় মেহেভীনের মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে গেল। ঘৃণায় পুরো শরীর রি রি করছে। ক্রোধে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরিবেশ গরম করে তুলল রাইমা বেগম। স্বামীর মুখশ্রীতে একদলা থুতু ফেলে পায়ের জুতা খুলে পর পর চারটা বাড়ি মা’র’লে’ন মুখে। স্বামীর গলা চেপে ধরে বললেন,

–জা’নো’য়া’রে’র বাচ্চা বহু বছর ধরে তোর নাটক আমি সহ্য করছি৷ তোর কলিজা কে’টে আমি সিদ্ধ করে পা’গ’লা কু’ত্তা’কে খাওয়াব। তুই নিজে একটা নষ্ট হয়ে, আমার ফুলের মতো পবিত্র মেয়ের দিকে নোংরামির কাঁদা ছুঁড়ে দিস। আমি বেঁচে থাকতে এসব সহ্য করে চুপ থাকতে হবে। তোকে আমি বাঁচতে দিব না। তোর মতো অমানুষের না আছে বাবা হবার যোগ্যতা আর না আছে স্বামী হবার যোগ্যতা। তোর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তুই ম’রে গেলে আমি দুধ দিয়ে গোসল দিব। আমার মেয়েকে নোংরা কথা বলার আগে তুই ম’র’তে পারলি না। প্রাণ প্রিয় প্রেয়সীর এমন রুপ দেখে হৃদয় থমকে গেল ফরিদ রহমানের। তার শান্ত শিষ্ট অর্ধাঙ্গিনীর ভেতরে এমন ভয়ংকর রুপ আছে। সেটা সে কোনোদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত সে তবুও অর্ধাঙ্গিনীকে আঘাত করবে না। কারন মানুষটা তার ভিষণ শখের। রাইমা বেগম মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে বজ্র কণ্ঠে বলল,

–কি রে হতভাগা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? নাকি আরো কিছু শোনার বাকি আছে। জেদ ধরে এখানে থেকে গিয়েছিলি না। এখন নিজের প্রাণ প্রিয় বাবার আসল রুপ দেখ। তোর মতো মেয়ে আমার পেটে হলো কিভাবে তাই ভাবছি। বে’য়া’দ’বে’র মতো দাঁড়িয়ে না থেকে এখনই এই বাসা থেকে বের হয়ে যা। এই বাড়ির আশেপাশে যেন তোকে না দেখি।

–আমি তোমাকে রেখে যাব না আম্মু। তুমিও আমার সাথে যাবে। এই লোকটা যদি আমার বাবা না হতো। তাহলে একদলা থুতু তার মুখে ছুঁ’ড়ে ফেলতাম। ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে এত ভালো মানুষির পেছনে জঘন্যতম রুপ লুকিয়ে আছে। তোমাকে আমি এই মানুষটার সাথে সংসার করতে দিব না। তোমাকে শেষ করে দিবে এই মানুষটা। এতটা যন্ত্রনা বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াও। আমাকে একটা বার জানালে কি হতো।

–আমি তোর মতো দুর্বল নই। নিজেকে রক্ষা করার মতো ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। তাছাড়া এই জা’নো’য়া’র টা আমার শরীরে একটা ফুলের টোকাও দিবে না। বড্ড শখের মানুষ বলে কথা। তুই আমার চোখের সামনে থেকে যাবি নাকি তোর চোখের সামনেই একে রক্তাক্ত করে ফেলব। মেহেভীন মায়ের এমন রুপে স্তব্ধ হয়ে গেল। তার সহজ সরল মায়ের মধ্যে এমন ভয়ংকর রুপ লুকিয়ে আছে। সেটা গুন অক্ষেরও টের পায়নি। সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। ফল কাটা ছুরিটা হাতে নিয়ে ফরিদ রহমানের গলায় ধরে আছে রাইমা বেগম। একটু নড়লে ফরিদ রহমানের মৃত্যু যেন নিশ্চিত। তা দেখে মেহেভীনের শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

হিম শীতল করা হওয়া মেহেভীনের শরীর কাঁপিয়ে তুলছে। ধরণীতে বাবা নামক বটগাছটা এত জঘন্যতম হতে পারে, তা মেহেভীনের কল্পনার বাহিরে ছিল। সে তো বাবার ভালোবাসা চেয়েছিল। কিন্তু তার বাবা তার মৃত্যু চাইল! এমন বাবাও ধরনীর বুকে আছে। মেহেভীনের মা দিব্বি দিয়ে, মেহেভীনকে বাসার বাহিরে বের করে দিয়েছে। না চাইতেও তাকে আসতে হয়েছে। গুটি গুটি পায়ের মেহেভীন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তখনই মুনতাসিম হন্তদন্ত হয়ে মেহেভীনের সামনে উপস্থিত হয়৷ চেহারায় বিধ্বস্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সে রাগান্বিত হয়ে উচ্চ স্বরে বলল,

–আপনার সমস্যাটা কি? আপনি সব সময় আমার সাথে এমন করেন কেন? আমাকে কি মানুষ মনে হয় না। আমি কি এতটাই তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জিনিস। প্রতিনিয়ত আমাকে ভেঙে চূড়ে চুরমার করে দিচ্ছেন। আপনার জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাই। তবুও আপনাকে আহত করার চেষ্টা কখনোই করি নি। মানুষ এতটা স্বার্থপর হয় কিভাবে কাল থেকে শতশতবার আপনাকে ফোন দিয়েছি। আপনি কেন আমার ফোন তুলেনি। মেহেভীন নিষ্পলক চাহনিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। মেহেভীনের শান্ত চাহনি মুনতাসিমের উথাল-পাতাল করা হৃদয়টা শান্ত করে দিল। মনটা কু ডেকে বলছে। ভালো কিছু হবে না অনর্থ হয়ে যাবে। নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করো মুনতাসিম ফুয়াদ। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

–মানুষ এতটা সুন্দর ভাবে ঠকাতে পারে৷ সেটা আপনাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। সুযোগের সৎ ব্যবহার করলেন। আর কতজনকে ঠকিয়েছেন আপনি? একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন। আল্লাহ তায়ালা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷ আপনি যেভাবে আমাকে ঠকিয়েছেন৷ একদিন আপনি-ও ঠিক একই ভাবে ঠকবেন। আমার অনুভূতিরা কবেই ম’রে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে একটু সতেজ হয়ে উঠেছিল। জেগে উঠার আগেই অনুভূতি গুলোকে দাফন করে দিলেন আপনি। আমার মধ্যে অনেক ভুল আছে। সবকিছু জানার পরে-ও কেন আমার ভেতরে এসে, অনুভূতি তৈরি করে সেগুলোকে দাফন করে দিলেন৷ মেহেভীনের কথায় নিস্তব্ধ হয়ে গেল মুনতাসিম। অজানা ভয়ে বুকটা হাহাকার করে উঠছে৷ মেহেভীন এসব কি বলছে! সে কি কোনো কারনে আবার তাকে ভুল বুঝল। মুনতাসিন শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল,

–আপনি এসব কি বলছেন। আমার যদি কোনো ভুল পান। তাহলে সেটা আমাকে বলুন। আমি সেই ভুলটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। আমি চাইনা আমার কোনো কাজে আপনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। যদি হয়ে থাকেন। তাহলে সেটা আমাকে জানান। আমি ধরনীর বুক থেকে তাকে গায়েব করে দিব। তবুও আপনার এক বিন্দু কষ্ট আমি সহ্য করব না।

–আপনি আমার সামনে থেকে সরে যান। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না। আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। পুরুষ জাতিকে বিশ্বাস করাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। এরা নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। অথচ আপনার জন্য নিজ জন্মদাতা পিতার কাছে কি জঘন্যতম অপবাদ টাই না পেলাম।

–আমার অপরাধ?

–আপনি একজন বিবাহিত পুরুষ দু’দিন পরে বাচ্চার বাবা হবেন। ঘরে অর্ধাঙ্গিনী থাকা সত্বেও পর নারীর পেছনে কেন ঘুরেন। কেন তাকে প্রেমালাপ কথা বার্তা শোনান। দুর্বলতার সুযোগ নিলেন। এতটা বাজে ভাবে আঘাত না করলে-ও পারতেন।

–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপনাকে কতবার বলব আমি বিবাহিত না। আপনাকে কিভাবে বোঝালে বুঝবেন। আমি শুধু… কথা গুলো বলতে গিয়েও থেমে গেল। মেহেভীনের দমিয়ে রাখা ক্রোধ গুলো বের হয়ে আসলো। চারিদিকের এত এত মানসিক চাপ তাকে দিশেহারা করে দিয়েছে। জীবনটা তার কাছে মূল্যহীন লাগছে৷ সে বজ্রকণ্ঠে বলল,

–চরিত্রহীন পুরুষ কোথাকার! ঘরে বউ রেখে পরনারীর পেছনে ঘুরতে আপনার লজ্জা করে না৷ আপনার মতো পুরুষকে মৃত্যু দন্ড দেওয়া উচিৎ। এলাকার লোক কি জানে, তাদের মহৎ নেতা কতবড় চরিত্রহীন। ভালো মানুষির মুখোশ পরে থাকেন। আসলেই এমপি মন্ত্রীরা এক নারীতে আসক্ত থাকে না। এদের কোনো শখের নারী হয় না। সকল নারীই এদের শখের নারী। আপনি যদি আমার সামনে থেকে না গিয়েছেন। আমি লোক জড় করে আপনার অবস্থা খারাপ করে ফেলব। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। ফর্সা মুখশ্রী ভয়ংকর ভাবে রক্তিম বর্ন ধারণ করল৷ বজ্র কণ্ঠে বলল,

–ডাকেন কাকে ডাকবেন। কার এত ক্ষমতা মুনতাসিম ফুয়াদের বিচার করবে। আমি অপেক্ষা করছি। নিজেকে আপনি কি মনে করেন। আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট দেওয়ার আপনি কে? বেশি মূল্য পেয়েছেন তাই নিজেকে মহান কিছু ভাবতে শুরু করেছেন। আমি যদি বিবাহিত হয়েও থাকি। তাহলে আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন। আমি কি এমন ব্যবহার করার মতো কোনো কাজ করেছি। না আমি আপনাকে বলেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার সাথে আমার প্রণয়ের সম্পর্ক থাকলে, এসব কথা বললে সহ্য করা যেত। কিন্তু আপনার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আপনি কেন এমন আচরণ করছেন! মুনতাসিমের কথায় মেহেভীন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কথা বলার শক্তি যেন সে হারিয়েছে। আসলেই তো মুনতাসিম তাকে কখনোই ভালোবাসার কথা বলেনি। তবে ভালোবাসার দিক গুলো প্রকাশ পেয়েছে বলেই সে কথা গুলো বলেছে। মেহেভীনকে নিরুত্তর দেখে মুনতাসিম দু’হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। ক্রোধে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মেহেভীন চেঁচিয়ে বলল,

–মিথ্যেবাদী, ঠক, জালিয়াত, ভন্ড, প্রতারক আমাকে ভালোবাসেননি। তাহলে আমার কাছে কেনো এসেছিলেন? আমার অনুভূতি নিয়ে কেনো খেললেন? আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের মুখ আমি দেখতে চাই না৷ যে মেয়ের স্বামী এমন চরিত্রহীন যে মেয়ের সারাজীবনই বরবাদ। মেহেভীনের কথায় মুনতাসিম ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। শীতের মাঝে-ও তরতর করে ঘামছে। ক্রোধের মস্তকে প্রেয়সী আঘাত পাবে। এমন কথা স্মরণ রাখতে যেন ভুলল না। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে, ঘুষি মা’র’লো। মুহুর্তের মধ্যে হাতটা রক্তাক্ত হয়ে গেল। মুনতাসিমের এমন কান্ডে চমকে গেল মেহেভীন। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল। আশেপাশে ভিড় জমা হয়ে গিয়েছে। মুনতাসিমের ভয়ে কারো মুখ দিয়ে টু ও শব্দ বের হচ্ছে না। কয়েকজন কানাঘুষো শুরু করে দিয়েছে। একজন বৃদ্ধ মেহেভীনের দিকে এগিয়ে এসে ধীর কণ্ঠে বলল,

–কি হয়েছে মা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে দু’জন চিৎকার চেঁচামেচি করছ কেন?

–আমি চিৎকার চেঁচামেচি করতে চেয়েছিলাম। আপনাদের ভালোবাসার নেতা আমার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে। সে একজন বিবাহিত পুরুষ হয়ে পরনারীর পেছনে ঘুরে। তার বউ এসে আমাকে সবকিছু জানায়। একটা মেয়ে হয়ে আমার উচিৎ এই চরিত্রহীন পুরুষকে প্রশ্রয় না দেওয়া। যদি আবেগ বশত দিয়ে ফেলি। তখন আমার নামের সাথে কলঙ্ক লেগে যাবে। একটা নারী কখনোই শরীরে কলঙ্ক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে চাইবে না। আমি মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার কিছুতেই ভাঙতে পারব না। দু’দিন পরে এই লোক বাবা হবে। তিনি তার বউকে সময় না দিয়ে, পরনারীর পেছনে ছুটছে। তার অর্ধাঙ্গিনীর ভেতরে কি হচ্ছে একটা বার ভাবুন। আমি নিজেও সরে যাচ্ছি। আর প্রতিটি নারীকে উদ্দেশ্য করে বলে যাচ্ছি। এই চরিত্রহীন পুরুষকে যেন কেউ প্রশ্রয় না দেয়। কথা গুলো বলেই মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত ভিড় ঠেলে বের হয়ে গেল। মুনতাসিম গাছের সাথে এক হাত ধরে মেহেভীনের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। রক্তাক্ত আঁখিযুগল, চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তাইয়ান অসহায় দৃষ্টিতে মুনতাসিমের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। গার্ডদের ইশারা করতেই ভিড় কমিয়ে ফেলা হলো। কেউ কেউ মেহেভীনের কথা বিশ্বাস করল। কেউ কেউ মানতে নারাজ মুনতাসিম এমন কাজ করতে পারে না। মুনতাসিমের বুকটা ভারি হয়ে আসতে শুরু করল। সে তাচ্ছিল্য করে বলল,

–আপনার কাছে নিজেকে বড্ড সস্তা বানিয়ে ফেলছিলাম। যার পরিনাম এমনটা হবার কথাই ছিল। সস্তা জিনিসের দাম বরাবরের মতোই কম থাকে। আপনি না আমায় ভালোবাসতেন। তাহলে আমাকে বিশ্বাস কেন করলেন না। ভালোবাসার আগে বিশ্বাস আর ভরসা করাটা জরুরি। ওহে আমার শখের নারী সর্বকালের সর্ব সুখ আপনার হোক। তবুও আপনি ক্ষমার অযোগ্য। আপনি ছেড়ে যাওয়ার বাহানা খুঁজ ছিলেন। আর আমি রাগ করে তা সহজ করে দিলাম। কাউকে ভালোবাসলে এক সমুদ্র সমান বিশ্বাস আর ভরসা নিয়ে বাসবেন। তাহলে আপনার করা আঘাতে কারো ছোট্ট হৃদয়টা চূর্ণবিচূর্ণ হবে না। এতদিন ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। আপনি আমায় সস্তা ভেবে উড়িয়ে দিলেন। এবার আপনি আমার অবহেলা দেখবেন। একটা মুহূর্ত বাঁচার মতো বাঁচতে দিব না। আমাকে বিনা দোষে ভুল বোঝার কারনে জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাবেন। ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলবে আপনার। আগুন নেভানোর জন্য আমি আসব না। আমার ভালোবাসা যতটা তীব্র ছিল। আমার অবহেলা ভয়ংকর রকমের সুন্দর। আপনি আমার মুখ দেখতে চান না। আমার এই মুখ আপনি কোনোদিন দেখতে পাবেন না। একদিন আপনি নিজে ছুটে আসবেন আমার কাছে। ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবেন। সেদিন আমি ভয়ংকর রকমের পাষাণ হব। আপনার ভেতরটা পোড়াতে পোড়াতে কয়লা করে ফেলব। কথা গুলো বলেই বাসার দিকে অগ্রসর হলো।

চৌধুরী বাড়িতে আনন্দ যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। কিন্তু যার জন্য এত আনন্দ এত উল্লাস। তার ভেতরটা পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে গিয়েছে। মুখের হাসি পরিস্থিতি শুষে নিয়েছে। ছেলের বিধ্বস্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে, রিয়াদ চৌধুরীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। মুনতাসিমের আঁখিযুগলের দিকে তাকিয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেল বাবার হৃদয়। ভয়ংকর ভাবে মুনতাসিমের আঁখিযুগল রক্তিম হয়ে আছে। ছেলের এমন বিভর্স চেহারা আগে কখনো দেখেননি তিনি। রিয়াদ চৌধুরী মুনতাসিমের কাছে এগিয়ে আসতে চাইলে। মুনতাসিম তাকে উপেক্ষা করে চলে গেল। ভেতরটা এতটা দুর্বল হয়ে গেল কেন তার? মেয়েটা আসলেই জাদুকরী নিমিষেই মনটা বিষাদে ভরিয়ে দেয়। আবার মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত সুখ তার মুখশ্রীতে এনে দেয়। পরিস্থিতির কাছে সে হেরে গেল। আর দেখতে পাবে না চাঁদ মুখটা। শুনতে পারবে না মায়াবী কণ্ঠ স্বরটা। করতে পারবে না পাগলামি। হতে চাইবে না ছোট বাচ্চা। হয়ে যাবে আগের ন্যায় কঠিন। তার আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা টা অত্যন্ত জরুরী। মুনতাসিম তাইয়াকে ফোন দিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে আসে। তাইয়ানের উপস্থিতি অনুভব করতেই মুনতাসিম বলল,

–আমার নামে মেহেভীনকে কে কি বলেছে তাইয়ান। তাড়াতাড়ি খোঁজ নিয়ে জানাও। ইলেকশন নিয়ে এতটা ব্যস্ত ছিলাম যে এদিকে খেয়াল করিনি। কে সে যে এত বড় জঘন্যতম অপরাধ করেছে। তাকে সামনে পেলে আমি জ্যা’ন্ত পুঁ’তে ফেলব।

–আপনি ম্যাডামকে ভুল বুঝবেন না স্যার। ম্যাডাম অনেক ভালো। সে আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আমার মনে হয় কারো প্রচারনায় এমন কাজ করে ফেলছে। আপনাকে নিয়ে কটুক্তি করার সময় ম্যাডামের কণ্ঠ স্বর কাঁপছিল। আমি ম্যাডামের আঁখিযুগলে আপনার জন্য তীব্র ভালোবাসা আর অভিমান দেখেছি। তাইয়ানের কথা শেষ হবার আগেই মুনতাসিম বালিশের পাশে রাখা নিজের ব’ন্দু’ক টা তাইয়ানের বুক বরাবর তাক করল। তাইয়ান ভীত দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই তিরস্কার করল তাইয়ান। ভুল সময়ে ভুল কথা বলে ফেলছে। মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাইয়ান। ধীর কণ্ঠে বলল,

–স্যরি স্যার আমি আপনাকে আঘাত করতে চাইনি৷ আমার ভুল হয়েছে। আমি এমন অন্যায় আচরন কখনো করব না।

–গেট আউট ফর্ম হেয়ার। কালকের মধ্যে সব তথ্য চাই। তাইয়ানের কণ্ঠনালি দিয়ে আর একটা বাক্য উচ্চারিত হলো না। সে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল।

পরের দিন সকাল বেলা মুনতাসিমের নামে টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হচ্ছে। বিবাহিত হয়েও নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে পরনারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন মন্ত্রী মুনতাসিম ফুয়াদ। বিবাহের খবর এতদিন আড়ালে রাখলেও। মুনতাসিম ফুয়াদের স্ত্রী সঠিক তথ্য ফাঁস করে দেন। পরকীয়া প্রেমিকার সাথে রাস্তায় ঝামেলা করছিলেন তিনি। এমন সময় সঠিক সত্যটা সকলের সামনে বেড়িয়ে আসে। কেউ কেউ বলছে মেয়েটি মিথ্যা কথা বলছে। আবার কেউ কেউ বলছে সত্য বলছে। সবকিছু এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। সঠিক তথ্য নিয়ে হাজির হব আমি আনিকা তাসনিম।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে