এক শহর ভালোবাসা পর্ব-৪৪+৪৫

0
2721

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪৪
#সুরাইয়া_নাজিফা

সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ শরীরে প্রচন্ড অস্বস্তি হতেই উঠে বসলাম। কেমন গা গোলাতে লাগলো তাই ধাক্কা দিয়ে শানের হাত সরিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে এমন হওয়ায় শান দ্রুত উঠে পড়ে আর দৌঁড়ে আমার পিছনে ওয়াশরুমে আসে। কল ছেড়ে কুলি করে মুখটা ধুয়ে নিলাম।আমি পাশ থেকে টাওয়ালটা নিতে পা বাড়াতে যাবো তখনই মাথাটা আবার ঘুরে উঠতেই শান পিছন থেকে আমাকে ধরে ফেললো। আমি শানের বুকে মাথা রাখলাম কিছুক্ষন।

“কি হয়েছে তোমার? ”

শানের এমন গম্ভীর কন্ঠো শুনে আমি আস্তে আস্তে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম আর নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“কই কিছু না। ”
“আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো কালকে তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলেছো তোমার শরীরটা ভালো নেই তাই না। ”

শান অস্থির হয়ে আমার কপালে, গলায় হাত দিয়ে দেখল,
“কই জ্বর তো নেই তবে?”

আমি কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে আছি। কি যে আছে আমার কপালে। দেখে তো মনে হচ্ছে প্রচুর রেগে আছে। আমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে শান প্রচন্ড পরিমানে রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বললো,

“কি হলো চুপ করে আছো কেন আন্সার মি। ”

শানের ধমক শুনে একটু কেঁপে উঠলাম আমি শান আমার ডান বাহু শক্ত করে ধরে বললো,
“এই ঠিক করে বলোতো খাওয়া দাওয়া করছো তুমি এই কয়দিন যাবৎ ঠিক মতো। ”

সর্বনাশ করেছে। এই কয়দিন ধরে তো সত্যি সত্যিই আমি ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়া করিনা। আমারই বা কি দোষ খেতে পারলে তো খাবো।শান আনাকে চুপ থাকতে দেখে নিজের কোমড়ে একহাত রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“এখনও বাচ্চাদের মতোই সবসময় তোমার পিছনে যতক্ষন খাবার নিয়ে দৌঁড়ানো যায় ততক্ষন ঠিকঠাক থাকো এই কয়দিন কাজে ব্যস্ত বলে তোমার খাওয়ার দিকে নজর দিতে পারিনি এজন্য না খেয়ে শরীরের এই অবস্থা করেছো তাই না। ”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“উফ সকাল সকাল এতো চিৎকার চেঁচামেচি করছেন কেন আপনি?বাড়িসহ মাথায় তুলে ফেলবেন নাকি?কিছু হয়নি আমার। ”

শান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“গলা তুলে আর একটা বললে ঠাঁটিয়ে এক চড় মারব। আমি দেখতে পাচ্ছি ঠিক আছো কি নাই তোমাকে বলার প্রয়োজন নেই। কালকে রাতেও মিথ্যা বলেছো তুমি। ”

শানকে এতো রাগতে দেখে আমার কান্না পাচ্ছিল। আমি গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম।

শান রেগে বললো,
“ছাড়ো আমাকে। ”

আমি ঝাপটে ধরেই বললাম,
“না। ”

শান কিছু না বলে চুপ করে রইল কিন্তু আমাকে ধরল না। আমি উনার গালে আমার ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মন খারাপ করে ধরা গলায় বললাম,
“স্যরি তো আমি আপনাকে টেনশন দিতে চাইনি এতো কাজের প্রেশারে থাকেন এই কয়দিন।”

এবার শানও আমাকে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে রেখেই বললো,
“তোমার থেকে বেশী আমার লাইফে আর কোনো কিছুই ইমপর্টেন্ট নয়। তুমি টেনশন দিতে না চাইলেও আমি সারাদিন তোমার টেনশনেই থাকি সেটা কি তুমি জানো। তুমি খাচ্ছো কিনা, নিজের খেয়াল রাখছো কিনা সেটা ভেবেই অস্তির হয়ে থাকি। কারণ আমি জানি তুমি বেখেয়ালি। শুধু শুধু এই নামে ডাকি না আমি তোমায়।”

কিছুক্ষন আমি শানের বুকেই মাথা দিয়ে রইলাম। শান আমাকে কোলে তুলে নিল। এখন আর কিছু বললাম না কারণ এখন কিছু বললেই বকা খাবো। শান আমাকে কোলে তুলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসপ আমাকে বেডে বসিয়ে দিলো।

“এখন ঠিক লাগছে শরীর? ”

আমি ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“হুম। ”

“ওকে রেডি হয়ে নেও?”

আমি চমকে উঠে বললাম,
“রেডি হবো কেন?”

“ডাক্তারের কাছে যাবো।”

“ডাক্তারের কাছে কেন?কার কি হয়েছে?এই আপনি ঠিক আছেন তো?”

শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
“জাস্ট শাট ইউর মাউথ সোহা আমার কি হবে তোমাকে দেখাবো। ”

আমি ইনোসেন্ট ভাবে তাকিয়ে বললাম,
“দেখুন আমার কিছু হয়নি যাবোনা আমি। ”
শান কাবার্ড থেকে নিজের প্যান্ট শার্ট বের করতে করতে বললো,
“তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি যা বললাম করো দ্রুত রেডি হও। ”

কথাটা বলেই উনি ওয়াশরুমে চলে গেল। ধ্যাত যে জন্য বলতে চাইনি সেটাই হলো এখন পুরোপুরি রোগী বানিয়ে ছাড়বে।


সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে ছিল সাথে আমরা এসে যোগ দিলাম। আমাকে সকাল সকাল এমন বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি দেখে মা বললো,
“কিরে কোথায়ও যাচ্ছিস নাকি সোহা?”

আমি কিছু বলার আগে শান বললো,
“হুম ডাক্তারের কাছে।”

বাবা ব্যস্ত হয়ে বললো,
“কেন কার কি হয়েছে?”

শান চেয়ার টেনে বসে বললো,
“সোহা অসুস্থ। ”

স্মৃতি আপু অবাক হয়ে বললো,
“হঠাৎ অসুস্থ মানে? কালকে পর্যন্ত তো সুস্থই ছিল। ”

আপু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে বাবু তোর।”

শান স্মৃতি আপুকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
“তোমার বোনকে তো তুমি চেনো স্মৃতি মরে গেলেও কাউকে মুখ ফুঁটে কিছুই বলবে না। ”
আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
“কিছুই না উনি একটু বেশী বেশী করছে। শরীরটা একটু দূর্বল লাগে কিছুদিন ধরে এজন্যই এখন ধরে বেঁধে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ”

আমার কথাটা শুনে শান রক্তচোখে আমার দিকে তাকালো শানের তাকানো দেখে আমি নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে খাওয়া শুরু করলাম।কিছুটা খেতেই আর খেতে ইচ্ছা করছিলো না তাই প্লেটটা ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম।

“কি হলো কই যাও খাওয়া ফেলে?”
“খাবো না আর।”
শান চোখ দেখিয়ে বললো,
“একটু খাবারও প্লেটে দেখতে চাই না শেষ করো পুরোটা। ”
“প্লিজ না খেতে পারছি না। ”
“কোনো কথা শুনতে চাইছি না খাও। ”

আর কি করার খেতে বসে গেলাম আবারও শানকে মনে মনে বকা দিতে দিতে। কিন্তু দুই একবার মুখে দিতেই ভিতর থেকে সব ঠেলে আসতে চাইছে এমন অবস্থা।

শান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“দেখেছো না খেয়ে কি করেছো শরীরের।”

ভূমিকা আপু আমার সামনাসামনি বসে গালে হাত দিয়ে গোলগোল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শানের উপর তো আর রাগ দেখাতে পারছি না তাই ভূমিকা আপুর তাকানো দেখে আমি একটু তেঁতে বললাম,
“কি হয়েছে ওভাবে কি তাকিয়ে আছো কেন?মজা নিচ্ছো?”

আমার কথা শুনে ভূমিকা আপু একটু হেসে বললো,
“না ভাবছি হঠাৎ তোমার এমন কি হয়ে গেল যে খেতেই পারছো না আমার তো অন্যকিছু মনে হচ্ছে।”

শান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“আর ভাবা ভাবির কাজ নেই। সোহা উঠো লেইট হচ্ছে। ”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে সবাইকে বলে শানের পিছু চললাম। কিছুটা গিয়ে শান আবার দাঁড়িয়ে পড়ল আর আরশ ভাইয়াকে উদ্দেশ্যে করে বললো,
“আমার অফিসে যেতে লেইট হবে সব সামলে নিস ভাইয়ার সাথে। ”
“ওকে টেনশন নিস না। ”

তারপর আমি আর শান দুজনেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।


ডাক্তারের কাছে আসার পর বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে আমার চেকাপ করল। শান আমার সাথেই ছিল। যদিও আমাকে চেক করার সময় শানকে বলেছিল বাহিরে যেতে কিন্তু সে তো নাছড় বান্দা যাবে না মানে যাবেই না। উনার মুখটা কেমন কালো হয়ে আছে হয়তো একটু বেশীই চিন্তা করছে শান আমাকে নিয়ে এখন আমার নিজেরও খারাপ লাগছে এজন্যই বলতে চাইনি। চেকাপ করার পর ডাক্তার বললো উঠে আসতে। আমি উঠে গেলাম। তারপর আমরা দুজনেই ডাক্তারের সামনে দুটো চেয়ার টেনে বসে গেলাম।

ডাক্তার আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিয়ে হয়েছে কত বছর?”
শান বললো,
“চার বছর চারমাস। ”
ডাক্তার একটু হেসে বললেন,
“অনেক ভালোবাসেন নিজের ওয়াইফকে তাই না?”

ডাক্তারের কথা শুনে আমি একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম। শান কোনো দ্বিধা ছাড়াই বললো,
“নিজের থেকেও বেশী। ”
আমি শানের দিকে তাকালাম। ডাক্তার আবার বললো,
“হুম আপনাকে দেখেই বুঝা যায়। তো বেবী আছে আপনাদের।”
“না।”
“কেন প্লান করেননি? ”
“আসলে ওর এখনও স্ট্যাডি চলছে তাই। ”

ডাক্তারের এসব কথার আগা মাথা কিছুই মাথায় ডুকতেছে না। এসব প্রশ্ন কেন করছে উনি? শুধু নিরব দর্শক হয়ে দেখে যাচ্ছি সব। ডাক্তার শানের কথার প্রতি উত্তরে বললো,
“ওহ।আচ্ছা এখানে কিছু টেস্ট দিয়েছি এগুলো করিয়ে কালকে দেখা করবেন। ”

“কি হয়েছে সোহার? ”

ডাক্তার হেসে বললো,
“অনেক বড় অসুখ হয়েছে তবে সেটা কালকে রিপোর্ট দেখে শিউর ভাবে বলতে পারবো। তবে আপাদত ওনার খাওয়া দাওয়ার দিকে একটু বিশেষ নজর দিবেন। অনেক দূর্বল উনার শরীর। ”

ব্যাস এটাই বাকি ছিল বলার। শান আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম তারপর ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। সেখান থেকে একেবারে টেস্ট করিয়ে নিলাম। টেস্টের রেজাল্ট কালকে দিবে। আমরা দুজনেই হাসপাতালের বাহিরে এসে দাঁড়ালাম।

শান বললো,
“তুমি একটু দাঁড়াও আমি গাড়িটা পার্কিং থেকে নিয়ে আসছি। ”
“আচ্ছা। ”

শান চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠল,
“সোহা।”

হাসপাতালের মধ্যে নিজের নাম কোনো পরিচিত মানুষের কন্ঠে শুনতে পেয়ে অনেকটাই অবাক হলাম আমি। পিছনে ঘুরতেই যাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তাকে দেখে মোটেও বিশ্বাস হচ্ছে না।আবারও পুরোনো ভয়টা জেগে উঠল। আমার অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল,
“রায়ান ভাইয়া। ”

রায়ান একটু হেসে বললো,
“যাক তাও ভালো আমাকে এখনও মনে রেখেছো আমি তো ভেবেছি ঐদিনের পর আর মনেও রাখবে না। ”

উনার কথা শুনে আমার একটু খটকা লাগল তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
“আপনাকে মনে না রাখার মতো কোনো ভুল তো আপনি করেননি তাহলে কেন ভুলে যাবো। ”

রায়ানের চোখে মুখে অপরাধের ছাপ একদম স্পষ্ট হয়ে আছে। রায়ান মাথা নিচু করেই বললো,
“সত্যিই সোহা তোমার মন অনেক বড় যে এত সহজে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো। সত্যি বলতে ঐদিনের পর আমি নিজেও ভালো নেই। এই একটা অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমি তোমার ভালোবাসায় না ভালোবাসা না ভালোবাসা হলে হয়তো তোমার ক্ষতি করার চিন্তা করতাম না। আসলে আমি তোমার সৌন্দর্যে এতটাই অন্ধ হয়ে গেছিলাম যে ঠিক ভুলের পার্থক্যই করতে পারিনি। তোমাকে নিজের করার জন্য কতটা নিচে নেমে গেছিলাম ভাবলেই নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয়। ভাগ্যিস ঠিক সময় মতো সেদিন যদি শান না আসতো তাহলে তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হওয়ার কারণটা আমিই হতাম। পরবর্তীতে আমি অনুভব করেছি আমি কি পাপ করতে যাচ্ছিলাম তোমার আর শানের সম্পর্কটা নষ্ট করতে চাইছিলাম তেমার জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিলাম যাইহোক শেষ মূহূর্তে আমি বেঁচে গেছি এই পাপ করা থেকে। তবে আমি সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী। তুমি ক্ষমা না করলে আমি কখনোই শান্তিতে থাকতে পারবো না। প্লিজ সোহা ক্ষমা করে দেও আমাকে। ”

আমি উনার কথার অর্থ বুঝলাম না উনি কিসের জন্য অনুতপ্ত আর কেনই বা এতটা দোষি মনে করছে। উনি তো আমার সাথে তেমন কিছু করেনি শুধু একটু বিরক্ত অনুভব করতাম উনার এই গায়ে পড়া স্বভাবে বাট উনি যেভাবে বলছে তাতে তো মনে হচ্ছে উনি অনেক বড় কিছু করেছে। আমি একটহ ইতস্তত করে বললাম,

“ভাইয়া আপনি কি বলছেন আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি কাইন্ডলি বিষয়টা একটু খুলে বলবেন কি? ”

সোহার কথা শুনে রায়ান বেশ অবাক হলো নিজের বিষ্ময় নিয়ে বলে উঠল,
“কেন তানিশার পার্টির কথা মনে নেই তোমার? ”
“তো কি হয়েছে তাতে?”

সোহার এমন পাল্টা প্রশ্ন শুনে রায়ানের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে সোহা সেদিনের ঘটা কোনো ঘটনাই জানে না হয়তো কেউ বলেনি? যাক ভালোই হয়েছে।রায়ান ভাবলো তাহলে সেই রাতের কথা নাহয় সোহার না জানাই থাক।

রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা ঘুরিয়ে বললো,
“না তেমন কিছুই হয়নি। আচ্ছা এসব কথা বাদ দেও তোমার খবর কি? তুমি হাসপাতালে কেন? অসুস্থ নাকি?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“একটু অসুস্থ? ”

“কি বলো কি হয়েছে?”

“জানি না কালকে রিপোর্ট দিলে বুঝতে পারব। তা আপনি বাংলাদেশে কবে এলেন আমি যতটা শুনে ছিলাম আপনি তো চলে গেছিলেন না দেশ থেকে? ”

রায়ান একটু হেসে বললো,
“হুম চলে গেছিলাম নিজের করা কিছু ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে তবে এই একবছর হলো দেশে ফিরেছি। চলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু কাল রাতেই আমার ওয়াইফের লিভার পেইন ওঠে যার কারণে ওকে এখানে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ”

“ওহ কি হয়েছে উনার? প্রেগন্যান্ট ছিলো কি?”

“হুম ছেলে হয়েছে। ”

রায়ান ভাইয়ার কথা শুনে আমি অনেক খুশি হলাম। যাক অবশেষে উনিও নিজের জীবনে ভালো আছে খুশি আছে।

আমি হেসে বললাম,
“কনগ্রাচুলেশন। ”

“ধন্যবাদ।এসো না ভিতরে এসে আমার বেবী আর ওয়াইফকে দেখে যাও। ”
আমি একটু মন খারাপ করে বললাম,
“আসলে ভাইয়া আমি শানের সাথে এসেছি আর শান গাড়িটা আনতে গেছে পার্কিং থেজে এসে যদি আমাকে না দেখতে পায় অনেক রাগ করবে বুঝতেই তো পারছেন। ”

“ওহ আচ্ছা তাহলে কোনো একসময় এসে দেখে যেও আর আমার ছেলের জন্য দোয়া করো। ”

“অবশ্যই।”

রায়ান ভাইয়া এমন কিছু টুকটাক কথা বলে চলে গেলেন।আমি উনাকে হাসিমুখে বিদায় দিলাম। যাক মানুষটা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু উনার কিছুক্ষন আগে বলা কথা গুলো আমার কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছি না। উনি কেন এমন ভাবে কথা গুলো বললো।আর তানিশার পার্টির কথাই বললো যেই রাডের কোনো কথা আমার মনে নেই। তাহলে কি ঐ রাতে এমন কিছু হয়েছিল যেই কথা আমাকে শান বলেনি। শান তো কখনো আমার থেকে কিছু লুকায়নি। তাহলে ঐদিনের কথা লুকিয়েছে কেন?কেন বলেনি আমায়? উনি এটা মোটেও ঠিক করেনি।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ দিনদিন অলস হয়ে যাচ্ছি রিচেক দেওয়া হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪৫
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমি কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বারবার রায়ান ভাইয়ার বলা কথা ভাবছি আর শান আসার জন্য অপেক্ষা করছি।গাড়ির ভিতরে একটা কথাও বলিনি উনার সাথে।যদিও উনি আসতে আসতে অনেক কথাই বলছিলেন কিন্তু আমি তেমন একটা কথা বলিনি। আমি চেষ্টা করছিলাম বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার কিন্তু আমি বিফল হয়েছি। এখন যদি আমি এটা মনে চেপে রাখি তাহলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারব না তাই শানের সাথে কথা বলে পরিষ্কার হওয়াটাই ভালো। কিন্তু শান এখনও আসছে না। তখন দেখেছিলাম সাম্য আর আরশ ভাইয়ারদের সাথে কথা বলতে হয়তো ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু।আমার শরীরে অস্বস্থি লাগছিলো।কেমন ঘুম ঘুম ভাব। তাই সুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না।

আমার ঘুম ভাঙ্গল কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। শান আমার পাশে বসে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।শানকে দেখতে পেয়ে তখনকার কথা গুলো আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। শানকে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত উঠে বসলাম শোয়া থেকে।

আমাকে ধরফরিয়ে উঠতে দেখে শান ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“শরীর খারাপ লাগছে?”

আমি শানের দিকে তাকিয়ে “না সূচক ” মাথা নাড়ালাম।
“তাহলে উঠে গেলে যে? ”

আমি উৎকণ্ঠিত হয়ে বললাম,
“আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে। ”

শান কপাল কুচকে বললো,
“এমন কি কথা যেই কথা তোমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। ”

শান একটু কাছে এসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
“কোনো স্পেশাল কথা বলতে চাও না কিছু করতে চাও। ”

আমি উনার থেকে একটু দূরে সরে বললাম,
“আমি এখন মোটেও এসবের মুডে নেই আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। ”

শান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“সিরিয়াস?”
“হুম। ”
“কি কথা?”

আমি কিছুক্ষন নিজের প্রশ্ন গুলো একবার ভেবে নিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
“ঐদিন তানিশার পার্টিতে আমার সাথে কি হয়েছিল?কেন সেদিন আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম? আপনি কখন এসেছিলেন? কেন আমার কিছু মনে নেই? ”

“আবার এসব প্রশ্ন?”

“জানতে চাই আমি।”

শান চুপ করে রইল আমি উনাকে চুপ থাকতে দেখে বললাম,
“প্লিজ চুপ করে থাকবেন না উত্তর দিন? ”

“তোমাকে আগেই বলা হয়েছে সবকিছু তারপরেও কেন সেটা বিশ্বাস করছো না । বারবার একই কথা বলো কেন?”

আমি কঠোর গলায় বললাম,
“কারণ সেটাতে কোনো সত্যি কথা ছিল না যে বিশ্বাস করব তাই সত্যি জানতে চাই আমি। ”

“তোমাকে সত্যিই বলেছি। ”
“আপনি মিথ্যেটাকে জোর দিয়ে সত্যি বললে সেটা তো আর সত্যি হয়ে যাবে না। ”

শান রক্তলাল চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি বেশ বুঝতে পারছি শানের রাগ হচ্ছে। শান কখনো এটা পছন্দ করে না যে উনার দিকে কেউ আঙ্গুল উঠাক। কিন্তু এখন যদি আমি ভয় পেয়ে চুপ থাকি তাহলে আমি কখনোই সত্যি কথা গুলো জানতে পারব না। শান চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে আবারও আমার দিকে তাকালো। চেষ্টা করছে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার।

“সুইটহার্ট কিসব কথা নিয়ে পড়ে আছো বলোতো ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে এমনিতেও তুমি অসুস্থ। ” কথাটা বলেই উনি শুয়ে পড়লেন

“আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন। ”

কিন্তু শানের কোনো উত্তর পেলাম না। একটু বিরক্ত হলাম আমি। অদ্ভুত এভাবে চুপ করে থাকার মানে কি?আমি জিভ দিয়ে একটু নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,

“আজ হাসপাতালে রায়ান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল।”

আমার কথা শুনে শান শোয়া থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসল আর অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ভিত কন্ঠে বললো,
“রায়ান? ওর সাথে কি করে দেখা হলো? ও তো দেশে ছিলো না?কি বলেছে তোমায়? ”

আমি শানের কথা শুনে সরু চোখে শানের দিকে তাকালাম,
“শান আপনার কথা শুনেই মনে হচ্ছে আপনারা কিছুতো লুকাচ্ছেন। আপনি রায়ানের সম্পর্কে এতো জানেন কি করে? আমি যেতটুকু জানি ওর সাথে আপনার একবারই দেখা তাতে নিশ্চয় এতো জানা পরিচিত থাকার কথা না যে ও কখন কোথায় থাকে সেটাও জানবেন।”

শান রাগান্বিত স্বরে বললো,
“তোমাকে কি বলেছে ও প্রথমে সেটা বলো। ”

শানকে এভাবে রাগতে দেখে আমি একটু দম নিয়ে বললাম,
“ও কিছু বলেনি তবে আমি আপনার থেকে জানতে চাই। ”

শান একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো। আজকে রায়ান যদি সোহাকে কিছু বলতো তাহলে হয়তো রায়ানকে আজকে পুঁতে ফেলতো শান। তাহলে তানিশা ঠিকই বলেছে রায়ান পরিবর্তন হয়ে গেছে আশা করি ওর থেকে সোহার আর কোনো বিপদ নেই।

শানকে একদৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকিয়ে আকাশ -কুসুম ভাবনা ভাবতে দেখে আমি বললাম,
“কথা বলছেন না কেন?”

আমার কথা শুনে শানের ঘোর কাঁটে। শান আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে টেনে ওনার বুকের মাঝে নিয়ে আসল তারপর জড়িয়ে ধরে বললো,

“বেখেয়ালি কিছু কথা না যদি সারাজীবন অজানাই থাকে তাহলেই ভালো। সবকথা জানতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। যদি কারো ভালোর জন্য কোনো কথা লুকানো হয় তাতে কোনো অপরাধ নেই। আমি চাই না তোমার মনে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ুক বা তুমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ো। শুধু তুমি এতটাই জেনে রাখো তুমি যখন যেই অবস্থাতেই থাকোনা কেন সব সময় সেইফ থাকবে এইখানে আমার বুকের মাঝে। কোনো বিপদ আসার আগে তাকে আমাকে পেড়িয়ে যেতে হবে। সব সময় তোমাকে যত্ন করে আগলে রাখব আমার বুকে। খুব ভালোবাসি তোমায় । ”

শান আমার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো শানের কথা শুনে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আমি জানি উনি যা করবেন আমার ভালোর জন্যই করবেন হয়তো এই কথা না বলার মাঝেও আমার কিছু ভালোই হবে।

আমিও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“আমিও আপনাকে খুব খুব খুব বেশী ভালোবাসি।”


পরেরদিন সকাল বেলা আমরা দুজনেই উঠে গেলাম। আরো একটা ব্যস্ত সকালের শুরু। তবে প্রতিদিনের মতো আজও মনে একরাশ মুগ্ধতা আর ভালোবাসা ছেয়ে আছে শানের যেই ভালোবাসার মুগ্ধতা থেকে আমি কখনো বের হতে চাই না।

প্রতিদিনের মতো আমি আমার নিজস্ব কাজ গুলো সেড়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। কারণ এখন আর বাড়ির কাজ খুব একটা আমাকে কেউ করতেই দেয় না। সব আমার দুই আপু সামলে নেয় আর আমি সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কাঁটাই। ওড়নাটা গায়ে সেট করে নিয়ে টেবিলের কাছে বই গুছানোর জন্য যেতেই শান প্রশ্ন করল,

“কোথায় যাচ্ছো তুমি? ”
“ভার্সিটিতে। ”
“কোনো প্রয়োজন নেই। ”
আমি গুছানো বন্ধ করে শানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কেন?”
“কেন কি তুমি যে অসুস্থ সেটা কি ভুলে গেছো। ”
আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
“আমাকে দেখে আপনার কোন দিক থেকে অসুস্থ মনে হয় কত সুন্দর চলে ফিরে বেড়াচ্ছি। ”
“অসুস্থ মানুষকে দেখে অসুস্থ মনে হতে হতেই হবে এমন কোনো কথা আছে কি?”
“সবসময় এমন উল্টা প্রশ্ন না করলে হয় না। ”
“তোমার এতো বেশী কথা না বলে যেটা বললাম সেটা শুনতে ইচ্ছা করে না। ”

আমি মুখ ফুলালাম। উনি হেসে দিলেন। আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিলেন আর ঠোঁটে আলতো করে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে বললো,
“বাসায় থাকো আর রেস্ট নেও।”

“রিপোর্ট কে আনবে? আমি ভেবেছিলাম আসার পথে নিয়ে আসবো।”

“তোমাকে ভাবতে হবে না আমি বুঝে নেবো তুমি শুধু আমার জানের দিকে খেয়াল রাখো। ”

আমি একটু হাসলাম তারপর উনাকে বিদায় দিয়ে আবারও রুমে এসে একটা ঘুম দিলাম। কিছুক্ষন পর ঘুম থেকে উঠে আরিশের কাছে গেলাম আর সারাদিন ওর সাথেই যেমন খেলাধুলা করে কাঁটাই তেমনই আজকের দিনটাও পার করলাম। বিকাল বেলা ভূমিকা আর স্মৃতি আপু এসে আমার রুমে ঢুকল,

স্মৃতি আপু বললো,
“আচার খাবি? ”
আচারের নাম শুনেই আমার মুখে পানি চলে আসলো,
“কিসের আচার? ”
ভূমিকা আপু বললো,
“আমের আমি আনিয়েছি। ”

আমি ছোঁ মেরে নিয়ে নিলাম আর কাউকে কিছু না বলেই খেতে আরম্ভ করলাম।আচার আনবে আর আমি খাবো না সেটা কি হয় নাকি। আর আজকাল তো একটু বেশীই খেতে মন চায় আচার। শুধু শানকে বলতে পারিনা। উনি এসব খাওয়া পছন্দ করে না। স্মৃতি আপু আর ভূমিকা আপু আমার মুখপানে তাকিয়ে খানিকটা হাসলো। তখনই রহিমা আন্টি হাতে করে খাবার নিয়ে ডুকল।

স্মৃতি আপু বললো,
“খেয়ে নে। ”

আমি আচার খেতে খেতে বললাম,
“না খাবো না। ”

“না খেলে আমি ভাইয়াকে বলব তুই দুপুরেও ঠিকঠাক খাস নি তবে বুঝবি ভাইয়া কিন্তু আমাকে বলে গেছে।”

আমি আচার খাওয়া বাদ দিয়ে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম,
“উফ সবসময় একজন না একজনকে আমার পিছনে লাগিয়েই রাখতে হবে উনার। ”

আমি হাতে খাবারের প্লেটটা তুলে খেতে আরম্ভ করলাম।

ভূমিকা আপু বললো,
“তোমার শরীর কি ঠিক আছে এখন?
“হুম। ”
“রিপোর্ট কি আজকে দিবে। ”

খেতে খেতে আমার হাত আটকে গেল। রিপোর্ট? শিট আমি তো ভুলেই গেছি প্রায় রিপোর্টের কথা। আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“হুম। ”

এভাবে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম যদিও খাবার পুরাটা শেষ করিনি। যেটুকু পেরেছি খেয়েছি।যদি গল্পে মসগুল না থাকতাম তাহলে ততটুকুও হয়তো পেটে যেত না।


সন্ধ্যায় গিয়ে বাগানের ওই বেঞ্চটাতে বসলাম।ঘরের মধ্যে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ এসে বারবার নাকে ঠেঁকছিল তাই এখানে এসে বসলাম এখন একটু ভালো লাগছে। চারদিকে লাইট জ্বলছে তাই চারপাশটা খুব ভালো দেখা যাচ্ছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শান আসার টাইম হয়েছে।হয়তো আসতে আরেকটু সময় লাগবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল রিপোর্ট নিয়ে। রিপোর্টের কথা ভাবতেই মনের মধ্যে সুপ্ত থাকা ভয়টা আবারও জেগে উঠল আচ্ছা রিপোর্ট ভালো আসবে তো। যদি ভুলভাল কিছু হয় তখন। বুকের মধ্যে ডিপডিপ করতে লাগল। তারপরও নিজেকে একটু শান্ত করে বেঞ্চেই বসে রইলাম।

কিছুটা সময় যাওয়ার পর একটু দূর থেকে দেখলাম শান আসছে। শানকে আসতে দেখে আমি উঠে দাঁড়ালাম। শান এক পা দু পা ফেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। শানকে দেখে বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো। মুখটা কালো করে রেখেছে। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার মাথায় খারাপ চিন্তা গুলো বাসা বাঁধতে লাগলো। আমি নিজেকে শান্ত করে শানের উদ্দেশ্যে বললাম,

“গেছিলেন ডাক্তারের কাছে? ”

শান মুখে কিছু না বলে মাথাটা একবার উপর নিচ করে নাড়ালো।আমি আবারও বললাম,
“রিপোর্ট কি হলো? ”

শান কোনো কথা না বলে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ রিপোর্টের কথা জানতে চাইতে শানের ব্যবহারে একটু অবাকই হলাম। শান চোখ বন্ধ করে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে আছে আর উনার নিঃশ্বাস খুব দ্রুত গতিতে পড়ছে। হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণের শব্দটাও যেন আনি শুনতে পাচ্ছি এতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আমায়। আমি এক হাত শানের পিঠে রেখে বললাম,
“শান? ”

কোনো রেসপন্স করল না আমি আবারও বললাম,
“রিপোর্টের কি হলো বললেন না কিন্তু। ডাক্তার কি কিছু খারা….।”

পুরো কথা বলার আগেই শান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠলো,
“আমাদের মাঝে একটা ছোট্ট প্রাণ আসতে চলেছে সোহা। আমার অংশ ধীরে ধীরে তোমার মাঝে বেড়ে উঠছে। ইউ আর প্রেগন্যান্ট মাই লাভ। ”

শানের কথাটা শুনে একমিনিটের জন্য হয়তো আমার হৃদপিন্ডের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কানের মধ্যে শানের বলা শেষের কথাটা প্রতিধ্বনিত হতে থাকল “ইউ আর প্রেগন্যান্ট মাই লাভ। ”

শান আমাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের পেটে হাত রাখলাম। কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“রিপোর্ট? ”

শান রিপোর্টটা আমার হাতে তুলে দিলো। আমার হাত কাঁপছিল। কাঁপা হাতে রিপোর্টটা আস্তে আস্তে খুললাম। পুরো রিপোর্টের এত লেখার মধ্যে আমার চোখে যেন শুধু “পজেটিভ “লেখার মধ্যে আটকে রইল। আমি ধাপ করে বেঞ্চের উপর বসে পড়লাম। শান এসে হাটু গেড়ে আমার সামনে বসল। আমার হাত ধরে বললো,

“সুইটহার্ট ?”
“শান এটা কি সত্যি?”
“হুম। ”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ”
শান হাসল,
“তোমার কথা কি বলবো জানো ডাক্তার যখন আমাকে এই কথাটা বলেছিল আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। আমিও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি বাবা হবো আর এই ছোট্ট মেয়েটা মা। আমাদের অংশ আর কিছুদিন পর আমার সামনে থাকবে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পুরো বাড়ি দৌঁড়ে বেড়াবে। তার সব আবদার আমাকে ঘিরে হবে যেগুলো সব আমি পূরণ করব। তার হাসির কলকল ধ্বনিতে বাড়ির আনাচে-কানাচে খুশিরা খেলা করবে।আমার মনে হচ্ছে সব আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আমার এত খুশি হচ্ছে মনে হয় তোমাকে কোলে তুলে পুরো পৃথিবী বলে বেড়াই আমি বাবা হতে চলেছি। ”

শানের এত খুশি দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো। মানুষটা কতটা খুশি হয়েছে। শানের খুশি দেখে আমারও এতো খুশি লাগছে যেটা বলে বুঝানো যাবে না। আমার শরীরে একটা ছোট্ট প্রাণ বেড়ে উঠছে যে কিছু মাস পর আমার সামনে থাকবে তাকে আমি ছুঁতে পারব ভাবতেই খুশিতে দম আঁটকে আসছে।

শান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর আবার বললো,
“কিন্তু তোমার স্ট্যাডি?এভাবে মাঝপথে বেবী? আই থিংক তুমি হয়তো এখন চাওনি আই আ’ম সো স্য…..।”

শান পুরো কথা বলার আগেই আমি আমার হাত দিয়ে উনার মুখ চেঁপে ধরলাম আর এসে উনার সামনেই হাটু গেড়ে বসে বললাম,
“প্লিজ এই কথা বলবেন না। আপনি জানেন আমি কতটা খুশি হয়েছি। এই বেবীটা খুব প্রয়োজন ছিল শান। আর বাকি রইল আমার মাস্টার্স সেটা তো যেকোনো সময়েই শেষ করা যাবে এই বছর নাহলে পরের বছর। এই চিন্তা করে কেউ কখনো নিজের জীবনের এতো সুন্দর অনুভুতি গুলো নষ্ট করে নাকি। এখন আমি যদি কিছু চাই তাহলে এই সময়ের এই অনুভুতি গুলো অনুভব করতে। ”

শানের কপালে কপাল ঠেঁকিয়ে আমরা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম জীবনে যেই ছোট্ট অভাবটুকু ছিল সেটাও আজ পূর্ন হয়ে জীবনটাই রংধনুর সাত রঙ দিয়ে সেজে গেল।
.
.
চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে