একা_তারা_গুনতে_নেই পর্ব-২২+২৩

0
274

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২২
কড়ি ট্রেনের এক দরজা দিয়ে উঠে, অপর দরজা দিয়ে বেরিয়ে বিপরীত প্ল্যাটফর্মে নেমে গেল। ভিড়ের মাঝে ওড়না দিয়ে মুখ আড়াল করে সাবধানে পেছনের দিকে চলে গেল। রামিমের মা তার জন্য অপেক্ষা করছেন। ভোরের দিকে তিনি কল করেছিলেন। ভাগ্য ভালো আজই তিনি এসেছেন নতুবা এতদূর আসা পুরোটাই বৃথা যেত। কড়ি চলে যেত গ্রামের বাড়িতে। দেখাটুকু আর হতো না। আলাদা করে দেখা করার মত সময় কড়ির হাতে নেই। তাই সোজা রেলস্টেশন চলে আসতে বলেছে। কেন এসেছেন তিনি? কিজন্যে? কড়ি সোজা চলে গেল ওয়েটিংরুমে। রোকসানা বেগম একটা চেয়ারে বসে মাথা কাত করে কি যেন লিখছিলেন। কোলের উপর কালো চামড়ার হ্যান্ডব্যাগ। ব্যাগের উপরে একটা কাগজ রেখে লিখছেন। কড়ি সামনে গিয়ে দাঁড়াল, “আন্টি!”
তিনি লিখা শেষ করে মাথা তুললেন। ক্লান্ত ভঙ্গিতে কড়ির হাত আঁকড়ে ধরে উঠে দাঁড়ালেন, “ট্রেন ছুটে যাবে না ত আবার?”
কড়ি বলল, “খুব বেশি দেরি করা যাবে না।”
রোকসানা বেগম হাতের কাগজটা ভাঁজ করে কড়ির হাতে দিলেন। হ্যান্ডব্যাগ থেকে কাপড়ে প্যাঁচানো একটি ছোট বক্সও তুলে দিলেন সাথে। বললেন, “সাবধানে যেও।”
কড়ি দাঁত দিয়ে ওড়না চেপে মুখ আরো ঢেকে মাথা ঝাঁকাল, “আসছি।”
ট্রেনে উঠে কড়ি এক কোণায় দাঁড়িয়ে চিঠিটা পড়ল।
কড়ি মা জননী,
“তোমার নিকট ক্ষমা চাহিয়া এই পত্র। আমার পুত্র দুদিনের জন্য বাড়ি আসিয়াছিল। তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া এই অসহায় মাতা জানিতে পারিয়াছে তোমার মাতার সকল গহনাগাঁটি সে বিক্রয় করিয়া ফেলিয়াছে। আমি শুধুমাত্র এই আংটিখানাই উদ্ধার করিতে পারিলাম। তোমার ট্রেন ছুটিয়া যাইবে, বেশিক্ষণ কথা বলিতে পারিব না এই আশংঙ্কায় ওয়েটিংরুম বসিয়া সংক্ষিপ্ত একখানা চিঠি লিখিয়া রাখিলাম। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তোমার মঙ্গল করিবে।”
ইতি,
এক কুপুত্রের ব্যর্থ জন্মদাত্রী।

বাঁশি বাজানো হয়ে গেছে। ট্রেন এখনি ছেড়ে দেওয়া হবে। কড়ি এমন সময়ে লাফ দিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে গেল। যাত্রীরা ট্রেনে উঠে যাওয়ায় স্টেশন বেশ ফাঁকা। কড়ি দৌড়ে ওয়েটিং রুমের দিকে গেল। রোকসানা বেগম এখনও চলে যাননি। ক্লান্ত থাকায় চেয়ারেই মাথা এলিয়ে ঘুমোচ্ছেন। মাত্রই চোখটা লেগেছিল তার। কড়ি গিয়ে শক্ত করে জাপটে জড়িয়ে ধরল তাঁকে। ঘুমের মধ্যেই তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। ঘুম ছুটে গেল। কড়ি বলল, “আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করতে পারব না, আন্টি।”
তিনি ব্যাথা পাচ্ছেন। বোরকার নীচে হাতে জঘন্য আঘাত। পুত্রের দেয়া আঘাত! লজ্জায় আহটুকুও করলেন তিনি। বললেন, “ফিরে এলে কেন আবার? যাও। তোমার বাবা, ভাইয়েরা চিন্তা করবেন।”
কড়ি বলল, “জি আসছি।”
ট্রেন ইতোমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। ওয়েটিংরুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ট্রেনে উঠে গেল কড়ি। হাঁপাচ্ছে সে। তখনি ইমাদকে দেখা গেল। একটা কিশোর ইমাদের কাঁধের ব্যাগটা টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিশোরটিকে দেখে বেশ স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিশালী মনে হচ্ছে। কিশোরটির নাম মুবিন। যাঁর ইচ্ছেঘুড়ি ধর্মপুর রেলগেইটে আটকে গেলেও শুধু সমিলের ছেলে দুটোকে প্রতিদিন দেখার লোভে সে রেললাইন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে সরে দাঁড়ানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। ভাগ্যিস সরে দাঁড়িয়েছিল। নাহয় ইমাদ স্যারের সাথে দেখা হতো না। এখন এই “আচ্ছা, আচ্ছা” ব্যাটার উপর সে জন্মের শোধ তুলবে। তাকে পড়াতে আসবে বলে এলো না! স্যরি বলার পরও এল না! এখন তো তাকে মুবিন যেত দিবে না। মুবিন শয়তানি হাসি হেসে মনে মনে বলল, “গেলে যান না, ব্যাগ রেখে যান। আপনার ব্যাগের জিনিসপাতিতে দাঁড়িয়ে আমি পি করব। আপনার ট্রেন আমি ছুটাব।”
ইমাদের সাথে মুবিন বেশিক্ষণ পারল না। ইমাদ হেঁচকা টানে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। কড়ি সাহায্য করতে হাত বাড়িয়ে দিলো। ইমাদ কড়ির হাত ধরল না। ট্রেনের গতি হঠাৎ বেড়ে গেল। প্ল্যাটফর্মও শেষ হওয়ার পথে। কড়ি ইমাদের শার্টের হাতা খামচে ধরে টেনে তুলল ইমাদকে। ইমাদের হাঁপ ধরে গেছে। বড় বড় শ্বাস ফেলছে। কড়ি বলল, “হাত ধরলে আপনার প্রেমিকা নিশ্চয়ই আপনাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলত না।”
ইমাদ বলল, “আপনি মনে করেন আপনি সব বুঝেন কিন্তু আপনি অনেককিছুই বুঝেন না। আপনার হাতটা ধরলে আপনার কাছে তা সাহায্য হিসেবে মনে হলেও আমার মাথায় সাহায্য হিসেবে গণ্য হতো না।”
“মানে?”
“মানে আমি আপনাকে অন্যচোখে দেখি। তাই এভাবে হাত ধরতে চাইনি। আমি কেমন চোখে দেখি তা যদি বুঝতেন তবে এই হাত বাড়িয়ে দিতেন না। যেহেতু দিতেন না তাই আমিও এ হাত ধরতে চাইনি। আমি আপনার সম্মতিতে আপনার হাত ধরতে চাই এবং ধরে থাকতে চাই।”
কড়ি বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল। ইমাদ নির্বিকার। ময়লা শাড়ি পরা দু তিনটে মহিলা চিনির বস্তা টেনে এনে ট্রেনের দরজায় ফেলছে। কড়ি সরতে গিয়ে পড়ে যেত নিলো। ইমাদ দ্রুত হাতে কড়ির ডান বাহু খামচে ধরল এবং সাথে সাথে বলল, “স্যরি।”
কড়ি সোজা হয়ে দাঁড়াল। ইমাদ হাত সরিয়ে কাঁধের ব্যাগটা দু’কাঁধে ঝুলিয়ে কেবিন নম্বর খুঁজতে চলে গেল। কড়ি সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। সে বিরক্ত, এবং স্তম্ভিত।

দুটো কেবিন এর জন্য টিকিট কাটা হয়েছে। একটায় কাদের সাহেব, কাইয়ূম, রিমা আর কায়েস। অন্যটায় কাদিন, দীপা, দীপার ভাই মেহেদী আর নিলয় বসেছে। দীপার পরবর্তী ফরমায়েশ ছিল তার সাথেই সে তার ছোট ভাই আর বন্ধুদের নিয়ে আসবে। ইমাদ দীপাদের কেবিনে গিয়ে কড়া নাড়ল। কাদিন উঠে এসে দরজা খুলে দিলো, “ভালো আছেন?”
ইমাদ বলল, “ভালো আছি। আপনি?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ্‌।”
“আচ্ছা।” ইমাদ কেবিনের ভেতর ঢুকল।
নিলয় বলল, “কই ছিলি তুই? এতক্ষণ লাগল।”
ইমাদ বলল, “হুম।”
দীপা ফুঁসে উঠল, “হুম আবার কি? কই ছিলির উত্তর কি হুম? তোর কথার উপর কি সরকার ট্যাক্স বসিয়েছে? প্রশ্ন করলে স্পষ্টভাবে প্রশ্নের উত্তর দিবি।”
ইমাদ বলল, “আচ্ছা।”
“তোকে যদি আমি এখন ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিই তবে আমার নাম ইসরাত জাহান দীপা না।”
ইমাদ আবারো বলল, “আচ্ছা।”
দীপার গা’টা জ্বলে গেল। কড়ি চলে গেল তার বাবার কেবিনে।
চলবে…

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২৩
শিল্পী দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাসার ডাইনিং টেবিলের সামনে। তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি বেশ উদ্ধত, গলার স্বর ঠাণ্ডা, “মুবিন?”
মুবিন পিজা খেতে খেতে বিরক্তিতে বলল, “হু।”
শিল্পী বলল, “আমি তোকে খুব সহজ একটা শাস্তি দিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ কোনোপ্রকার ফাস্টফুড খেতে পারবি না।”
মুবিন বলল, “তো?”
শিল্পী বলল, “পিজাটা রাখ। রুটি আছে রুটি খা।”
মুবিন বলল, “মা, ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে থেকো না। যাও এখান থেকে।”
শিল্পী কখনো ছেলের গায়ে হাত তুলে না। ছেলে যখন বড় বড় অপরাধ করে, ছেলেকে ফাস্টফুড, আইসক্রিম না দেয়ার মত তুচ্ছ শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে সে। তবে আজ হাত তুলল। সপাটে মুবিনের গালে চড় বসাল। মুবিনের হাত থেকে পিজা খসে পড়ল প্লেটে। ঘাড় শক্ত হয়ে উঠল। শিল্পী বলল, “পঁচা রক্ত শরীর কেটে ধুয়ে ফেললেও শুধরানো যায় না। রক্তের দাগ রয়েই যায়। বাপ কোন দেশের ফেরেশতা যে ছেলে বস্তি হবে না। মারামারি, স্কুল পালানো, ফেইল এর উপর ফেইল করা আর কোনটা বাকি রেখেছে এই ছেলে! লজ্জা হয় এমন ছেলে পেটে ধরেছি।”
মুবিন চেয়ারে লাথি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অবজ্ঞার স্বরে বলল, “তোমাদের ছেলে বলে আমারো লজ্জা হয়।”
এ কথা শুনে শিল্পী নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। তেড়ে এসে মারতে শুরু করল মুবিনকে। মুবিন সরল না। জমাট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মারুক যত পারুক। তার মা – বাবার সো কল্ড আদরের চাইতে তাদের মার খাওয়া ভালো। ফেরানোর মত কেউ নেই মুবিন জানে। মিলা মাকে ভয় পায়। দূরে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে একটু পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে। বোধহয় কাঁদছে। মুবিন তার বাবার ঘরের দরজার দিকে তাকাল। দরজা দিয়ে তাকালে স্পষ্ট বাবার বিছানা দেখা যায়। বাবা এখন শুয়ে শুয়ে আয়েশ করে সিগারেট টানছেন। তাকিয়ে আছেন সিলিং এর দিকে ছুটে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়ার দিকে। তাঁর ঠোঁটে হাসি। মুবিন নিশ্চিত তার বাবা
এখন আসবেন না। তিনি অপেক্ষা করছেন মায়ের রাগ নামার এবং মুবিনের মার খাওয়া শেষ হওয়ার। তিনি এখন মনে মনে যুক্তি সাজাবেন। পরে তাঁর এই সম্পূর্ণ যুক্তির ঢল নামবে মায়ের বিপরীতে। একটু পরে এসে তাঁর প্রথম কথাটা অনেকটা এমন হতে পারে যে “আমি থাকতেই আমার ছেলের গায়ে তুমি হাত তুলো। ছেলে আমি কোনোভাবেই তোমাকে দিব না। ইন ইউর প্রেজেন্স মাই সান ইজ নট সেইফ।”

মুবিনের মার খাওয়া শেষ হয়েছে। ঠোঁট ফুলে গেছে। পিঠে স্কেলের দাগ পড়েছে। মঈন এতক্ষণে উঠে এল এবং একইসাথে করুণ এবং হিংস্র মুখ করে বলল, “মাই সান ইজ নট সেইফ উইথ ইউ এট অল। তুমি ত আমার ছেলেকে মেরেই ফেলবে। তুমি পুরোপুরিভাবে একজন সাইকো মহিলা। আমার ছেলে থাকবে তোমার কাছে? অসম্ভব।”
বলতে বলতে মঈন এসে আগলে ধরল মুবিনকে। মুবিন জোরে ধাক্কা দিয়ে বাবাকে দূরে সরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। রাস্তা পেরিয়ে কাঠের সমিলের স্তূপকরা কাঠের গুঁড়ির উপর বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে ঢুকরে কেঁদে উঠল মুবিন। তার কান্নায় আকাশ থেকে জোছনা নেমে এল। পরম আদরে পিঠে আলো বুলিয়ে দিলো। মুবিন স্পষ্ট শুনতে পেল রাস্তার পাশে ঝিম ধরে শুয়ে থাকা কালো কুকুরটা জিহ্ব বের করে তাকে বলছে, “কেমন লাগে মুবিন? কেমন লাগে? মা – বাবার লড়াই শেষের ট্রফি হতে দারুণ লাগে?”
.
কড়ি তার মরহুম দাদীর ঘরের পালঙ্কে বসে পান খাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। একসময় সে জানালা দিয়ে মুখের পান ছুঁড়ে ফেলল। দীপা এসে পাশে দাঁড়াল, “অ্যাই কি করছ?”
কড়ি বিস্বাদ মুখে বলল, “পান খাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। খুবই বাজে স্বাদ।”
“পাতা ছাগলদের খাদ্য। তুমি কেন পাতা খাবে? দাও পান আমাকে দাও। আমি খাই। কারণ আমি ছাগল।”
কড়ি অবাক হয়ে দীপার দিকে তাকাল। দীপা পানের বাটা থেকে পান তুলে নিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, “তুমি কেন আমাদের কেবিনে বসোনি? আ’ম স্যরি, কড়ি। আমি তো ছাগল। মাথা আউলে গিয়েছিল তাই তোমাকে উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়েছিলাম। তুমি আমার সাথে এভাবে রেগে থাকলে আমি কেঁদে ফেলব।”
কড়ি যে রাগ করেনি সে কথাটুকু বলার সুযোগ কড়ি পেল না। তার আগেই মুখ ভর্তি পান নিয়ে দীপা কেঁদে ফেলল। কড়ি দু’হাঁটু একসাথে জড়ো করে বসেছিল। এখন হাঁটুর উপর কনুই রেখে গালে হাত রেখে তাকিয়ে তাকিয়ে দীপার কান্না দেখতে দেখতে হেসে ফেলল। অপরাধবোধ মুহূর্তেই দীপার রাগ হয়ে গেল। রেগেমেগে সে বলল, “আমি কাঁদছি আর তুমি হাসছ? একটু নাহয় এটাসেটা বলেছি তাই বলে তুমি আমার কান্না দেখে হাসবে? ভাইটা যেমন শয়তান, বোনটাও খারাপ।”
কড়ি হা হা করে হেসে উঠল। ঝুনঝুনির শব্দের মত সে হাসি সারা ঘরে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল। কড়ি আছে দারুণ ফূর্তিতে। ফূর্তির পেছনের সম্পূর্ণ অবদান ইমাদের। ট্রেনের ঘটনার পর ইমাদের প্রতি খুব বিরক্ত ছিল সে । দীপার জন্য নয়, ইমাদ ঐ কেবিনে ছিল বলেই সে সেখানে যায়নি। পরে খুব মজা পেয়ে গেল। মজা পাওয়ার কারণ হলো একটু আগে দখিনের বড় ঘরটায় সে তার মোবাইল চার্জ দিতে গিয়েছিল। সেখানে চার্জ দিতে সুবিধা বেশ। প্লাগ ইন করে মোবাইলটা মিটসেফ এর উপর রেখে দেয়া যায়। অন্য ঘরগুলোতে মোবাইল রাখতে হয় নীচে। কখন কে পা দিয়ে ভেঙে ফেলে এই ভয়ে সবাই দখিনের ঘরেই চার্জ দিতে যায়। কড়ি চার্জ দিতে গিয়ে দেখল সেখানে আরেকজন চার্জ দিয়ে রেখেছে। চার্জ ফুল হয়েছে কিনা দেখার জন্যে কড়ি মোবাইল খুলে দেখল। মোবাইল লক করা, চার্জ ৮৮%, স্ক্রিনে ইমাদের ছবি। সাথে একটা মেয়ে বাবু। বাবুটা ইমাদের গালে চুমু দিচ্ছে। ইমাদের ভাবভঙ্গি ভাবলেশনহীন, চোখের দৃষ্টি ঠাণ্ডা, ঠোঁটে হাসির চিহ্ন মাত্র নেই। অথচ, বাবুটা পরীর মত হাসছে। কথা সেটা না। কথা হলো সেখানে অনামিকা নামে কারো মেসেজ ভাসছিল। মেসেজে লেখা “খেয়ে নাও।”
কড়ি মুচকি হেসে আপনমনে বিড়বিড় করল, “হায়রে হায়নার দল! তোরা সবগুলোই এক গোয়ালের গরু।”
সে মোবাইল জায়গামত রেখে চলে এল। হয় হায়না নাহয় গরুর তালিকায় রামিম এবং তাহমিদের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হলো ইমাদের নাম। এতক্ষণ ইমাদের কথাগুলো মনে পড়লেই মেজাজ খিটখিট করত আর এখন আরো বিনোদন পাচ্ছে। সামনে ইমাদ যা যা বলবে তাতেও মজা পাবে। কড়ি সেজন্যই প্রফুল্ল। তার প্রফুল্লচিত্তের এই হাসির শব্দটুকু ছুটে গেল পাশের ঘরেও। ইমাদ ভার্সিটি অথরিটির কাছে মোবাইলে একটা মেইল লিখছিল। সে ভুল করে সেই মেইল পাঠিয়ে দিলো তার এক কাজিনকে। এই এক সমস্যা। কড়ি আশেপাশে থাকলে সবকিছুতে সে ভুল করে ফেলে। ইমেইল আবার নতুন করে ফরোয়ার্ড করল, কাজিনকেও স্যরি লিখে মেইল করতে হলো।
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে