একা তারা গুনতে নেই পর্ব-১০+১১

0
263

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১০
দীপা সময় নিয়ে চুড়ি পরা শেষ করল। তারপর কপালে টিপ দিতে দিতে বলল, “আমার বিয়ে হচ্ছে।”
নিলয় দ্রুত পায়ে এসে ইমাদের পাশে বসল। চিন্তিত গলায় দীপাকে বলল, “তোর মাথা ঠিক আছে?”
“বিয়ের বয়সে বিয়ে না হলে মাথা কী আর ঠিক থাকে বন্ধু?”
দীপা টুল ছেড়ে উঠে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখল। সে কলা পাতা রঙের সিল্কের একটা শাড়ি পরেছে। বন্ধুদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “দেখ ত কেমন লাগছে? পছন্দ করবে না আমায়?”
ইমাদ চোখ মেলে সোজা হয়ে বসে দীপার দিকে মুখ তুলে তাকাল, “ছেলেটা কে?”
“কড়ির ভাই। কড়ি ত সুন্দর। ওর ভাইও দেখতে ভালোই হবে, তাইনা বল?”
নিলয় বলল, “কড়ির ভাই তা তো আমরাও জানি।”
ইমাদ প্রশ্ন করল, “কেন বিয়ে করছিস তুই?”
“ডার্টি আনসার আসছে মাইন্ডে। ডোন্ট আস্ক মি ব্রো।”
নিলয় বলল, “ফাইজলামি রাখ তোর। কী হয়েছে কেন এসব করছিস প্লিজ খুলে বল। তোকে আমরা চিনি না? কেন বিয়েতে রাজি হয়েছিস এখনি বলবি তুই। তাহমিদের বেলায় কিছু শুনিস নি, বলিসনি। এবার সে কাজটা করিস না দয়া করে। আমাকে আর ইমাদকে সব বল।”
দীপা শাড়ির আঁচলটা পেছন দিয়ে টেনে এনে মুখের সামনে বাতাস করতে করতে বলল, “উফ এত নার্ভাস লাগছে! আমাকে যদি পছন্দ না হয়? যদি রিজেক্ট করে দেয়? ডান চোখের আই লাইনার আর বাম চোখেরটা মেলেনি তাইনা? চোখ একটা ছোট, একটা বড় লাগছে। উফ।”
দীপা আবার ড্রেসিংটেবিল এর কাছে গিয়ে আয়না দেখে দেখে টিস্যুতে আই লাইনার তুলছে।
ইমাদ আয়না দিয়ে দীপার দিকে তাকাল, “টিপ ঠিক মত বসেনি।”
দীপা টিপ খুলে নতুন করে পড়ে বলল, “ঠিক আছে না?”
“হুম।”
“সুন্দর দেখাচ্ছে?”
নিলয় বলল, “পেত্নীর মত লাগছে।”
দীপার মুখ থেকে অস্ফুটে আর্তনাদ বেরিয়ে এল, “আসলেই? কী করব? খোঁপা খুলব? লিপস্টিকটা মুছে ফেলব?”
নিলয় ধমকে উঠে হাত দেখাল, “এক থাপ্পরে তোর সব দাঁত ফেলে দিব। বল এসবের পেছনের মোটিভ কী?”
দীপা বলল, “ধুর! এখন জ্বালাস না তো। এমনিতেই টেনশনে আছি।”
দীপা নতুন করে আর সাজবার আর সুযোগ পেল না। ওকে দেখতে মেহমানরা চলে এল। দীপার মা দীপাকে শক্ত করে বলে দিলো, “দোহাই লাগে কথা কম বলবি তুই। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবি না। যা জানতে চাইবে শর্টকাটে আনসার দিবি।”
“ওকে ডান।”
কাদিনের সাথে তার পুরো পরিবার এসেছে। দীপার পরিবারের তুলনায় কাদিনদের পরিবার বেশ বড়। দীপার বাবা নেই। মা আর ছোট ভাই ব্যস। দীপার মা ওদের নাশতা দিয়ে বসালেন। এরপর দীপাকে নিয়ে যেতে এলেন। দীপা মহা দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন করল, “ঘোমটা দিলে ভালো নাকি না দিলে?”
“কী আশ্চর্য! ঘোমটা দিবি না?”
“ঘোমটা দিলে ক্ষ্যাত বলবে না ত? আজকাল কেউ ঘোমটা টেনে যায় নাকি?”
তিনি একটু ভেবে বললেন, “আচ্ছা, তাহলে দিস না।”
“কিন্তু ঘোমটা না দিলে ত বউ বউ লাগবে না।”
“এখন কিন্তু মার খাবি।”
দীপা শেষ পর্যন্ত ঘোমটা ছাড়াই মায়ের সাথে চলল। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দীপা বিভ্রান্ত হয়ে গেল। পাত্র কোনটা? তিনজন একাধারে বসে আছে। ও কড়ির দিকে তাকাল। কড়ি দুই আঙুল তুলে দেখাল। তার মানে মাঝের জন। দীপা আরেকটা সোফায় গিয়ে বসল।
.
মুবিন আজ স্কুলে যায়নি। তাই মিলা একাই স্কুলে গেল। ছুটির পর বাসায় ফিরে এসে অবাক হয়ে গেল। তার ঘরের পাখাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন পাখা কিনে আনা হয়েছে। কিন্তু সে পাখা তার ঘরে লাগানো হয়নি। মুবিনের ঘরের পুরাতন পাখাটা খুলে এনে তার ঘরে ফিট করা হয়েছে। আর নতুন পাখাটা মুবিনের ঘরে লাগান হচ্ছে। মিলা হতভম্ব হয়ে তাকাল। মিস্ত্রি ঠিকঠাক পাখা লাগাচ্ছে কিনা শিল্পী মুবিনের ঘরে দাঁড়িয়ে তদারকি করছে। মিলা ছুটে নিজের ঘরে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে কাঁধ থেকে স্কুল ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলল। চুলের ফিতা, রাবার ব্যান্ড খুলেও ছুঁড়ে ফেলল এখানে সেখানে। বেণুণী খুলে হাত দিয়ে মাথার চুল যত পারল এলোমেলো করল, দু’হাতে টেনে ছেড়বার চেষ্টাও করল। উঠে গিয়ে পাখার সুইচ বন্ধ করে দিলো। পাখার গতি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, যা বাড়ছে তা হলো অবহেলা।
.
রিমা অনেকক্ষণ দীপাকে এটাসেটা জিজ্ঞাসা করল। এরপর দীপার মাকে বলল, “আন্টি কিছু মনে না করলে কাদিন আর ও আলাদা একটু কথা বলুক?”
দীপার মা সম্মতি দিলেন, “অবশ্যই, অবশ্যই।”
দীপার ভাই দীপাকে আর কাদিনকে আলাদা ঘরে দিয়ে চলে গেল। ইতোমধ্যে দীপাকে কাদিনের মন্দ লাগেনি। হালকা – পাতলা গড়নের ছিমছাম চেহারার মেয়ে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা তবে হাসিটা ভালো। হাসলে দাঁতের মাড়িগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। চেহারায় মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব চলে আসে। রিমা আপুর সাথে যখন হেসে হেসে কথা বলছিল তখন ভালোই লাগছিল। এখন ঝটপট মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করে ফেলা দরকার।
কাদিন গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলল, “ভালো আছেন?”
“জি। আপনি?”
পাল্টা প্রশ্ন করে দীপার মনে হলো প্রশ্নটা না করাই ভালো ছিল। মা পইপই করে কম কথা বলতে বলে দিয়েছিলেন।
কাদিন উত্তর দিলো, “জি ভালো। আপনার কোনো প্রশ্ন আছে?”
একটা প্রশ্ন করতে দীপার পেটটা মোচড় দিয়ে উঠল, কিন্তু এই প্রশ্ন করেছে জানলে মা ওকে ঝাড়ুপেটা করবে। প্রশ্নটা হলো, “আপনি কোন পারফিউম ইউজ করেন? গন্ধটা ভালো। এটা কী দেশে আছে? থাকলে আমার ভাইকে কিনে দিব। গাধাটা কী একটা পারফিউম যে দেয় গন্ধে মাথা ভোঁ ভোঁ করে।”
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে দীপা না – বোধক মাথা নাড়ল। কাদিন প্যান্টের দু পকেটে দু হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?”
“জি।”
“আপনি বসুন না, বসুন।”
“না ঠিক আছে।”
“যৌথ পরিবার নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাইছি। মানে যৌথ পরিবারে কোনো অস্বস্তি আছে কি?”
“কোনো অস্বস্তি নেই।”
শুনে কাদিন উপর নীচ মাথা নাড়ল। খানিক থেমে জানতে চাইল, “এই আয়োজনে আপনার মত আছে? আপনার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু হচ্ছে না তো?”
“না, আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু হচ্ছে না।”
“আমি যদি এ ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলি আপনার কি তাতে কোনো আপত্তি থাকবে?”
দীপা মনে মনে বলল, “মানুষটাতো সেই বোরিং! পৃথিবীতে এত ধরনের প্রশ্ন থাকতে তিনি বেছে বেছে কীসব প্রশ্ন করছেন! যাচ্ছে তাই একটা!”
মুখে বলল, “না।”
“আচ্ছা। ভালো থাকবেন। আসছি।”
কাদিন ঘুরে বেরিয়ে আসছিল। দীপা হঠাৎ বলে বসল, “আপনার আবার কথায় কথায় আচ্ছা বলার অভ্যাস নেই তো?”
কথাটা বলেই সে জিহ্ব কাটল। উফ শেষ পর্যন্ত নিজের কথার উপর সে আর নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেনি। কী লাভ হলো এত কষ্ট করে! সব ঐ ইমিটার দোষ। আচ্ছা শুনেই মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেছে। কাদিন দরজার নব ধরে রেখেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল, “না, সে অভ্যাস নেই।”
তারপর দরজা খুলে চলে গেল। দীপা নিজের ঘরে গিয়ে ইমাদের উপর চড়াও হলো, “তোর জন্য সব গোলমাল হয়ে গেছে। তোর জন্যে, শুধু তোর জন্যে।”
ইমাদ আর নিলয় কিছুই বুঝল না। দীপা মুখ ভোঁতা করে বসে রইল। ওরা কতবার কত প্রশ্ন করল কোনো উত্তরই দিলো না সে। কাদিনরা চলে গেল। হ্যাঁ, না কিছুই বলল না। দীপাকে শুধু উপহারসরূপ কিছু বই দিয়ে গেল। দীপার মন খারাপ। শেষ প্রশ্নটা কেন করল সে? ধ্যাত!
চলবে…

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ১১
ইমাদ কোটবাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উঠল। সবুজের সমারোহকে সাই সাই করে পেছনে ফেলে বাসটা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা শহরের দিকে। সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। বাসের তালে তালে তার শরীরটাও দুলছে। সে নির্বিকারভাবে দেখছে শহরের টানে প্রকৃতিকে ফেলা আসার এই ক্লান্তিমাখা যাত্রা। একইসাথে অনেকক্ষণ ধরে একটা বিষয় মনে করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না। একটু পরই কড়ির সাথে ওর দেখা হবে। কিন্তু কোথায় যেন? কড়ি কী উজির দীঘির পাড় বলেছিল নাকি রাণীর দীঘির পাড়? আবার ধর্মসাগর দীঘির ওখানে নয় ত? নানুয়া দীঘির পাড়ও হতে পারে। এজন্যই ত কুমিল্লাকে লোকে দীঘির শহর বলে। এই শহর ত জলের কুটুমবাড়ি। শহরের বুকে এত এত জলাধার। কী আশ্চর্য! এই শহরেই সে থাকে অথচ, বিষয়টা এর আগে কখনো ভাবায় হয়নি! হ্যাঁ, এই তো মনে পড়েছে। নানুয়া দীঘির পাড়ের কথা হয়েছিল। সকালে সেই কড়িকে ফোন করেছিল, “আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
“আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলার ছিল।”
“জি বলুন।”
“এভাবে না, সামনাসামনি কথা বলতে চাইছি। বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”
“কী বিষয়ে?”
“দীপুর বিষয়ে।”
কড়ি একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে।”
“কখন? কোথায়?”
“রেস্টুরেন্টে আমি বেশিক্ষণ বসতে পারি না।”
“আচ্ছা।”
“অন্য কোথায় দেখা করলে ভালো হয়।”
“আচ্ছা।”
“নানুয়া দীঘির পাড় আসতে পারবেন?”
“জি পারব।”
“আপনি আপনার সুবিধামত সময় বলতে পারেন। আমার ব্যস্ততা নেই।”
“পাঁচটার দিকে হলে আমার জন্য ভালো হয়।”
“ওকে।”
নানুয়া দীঘি শান্ত জলের জলাধার। যার চারিদিক জুড়ে বিশাল বিশাল সব দালানকোঠা। তবে জায়গাটা কোলাহলমুক্ত। এখানে এলে সময় যেন থমকে যায়। আকাশ হয়ে উঠে সাদা মেঘেদের ঠিকানা। আর বাতাসে বয়ে বেড়ায় মিষ্টি গন্ধ।
বিশাল দীঘির প্রতিটি পাড়েই বসবার জন্য একটি করে পাকা করে গড়ে তুলা বেঞ্চের মতন জায়গা আছে। কড়ি দক্ষিণ পাড়ে বসে ইমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ইমাদকে অন্য পাড় দিয়ে হেঁটে আসতে দেখল সে। ইমাদ এসে ওর মুখোমুখি হয়ে উল্টোদিকের জায়গাটায় বসল। কড়ি বলল, “বলুন কী বলবেন।”
“দীপু এ বিয়েটা কেন করছে?”
কড়ি ভ্রু কুঁচকে তাকাল, “এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন?”
“জি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছি।”
“আপনি কী কিছুই জানেন না?” কড়ি সামান্য অবাক হলো।
“না।”
“তারমানে দীপা আপনাকে কিছুই বলেনি।”
“কিছুই বলেনি।”
“আর আপনি সেটাই জানতে এসেছেন?”
“জি।”
“আপু না বললে আমি কী করে বলতে পারি?”
“ও আমাকে বলেনি তার মানে হলো ও জানে কাজটায় আমি সায় দিব না এবং বাধা দিব। আর আমি বাধা দিব মানে ঘটনা নিশ্চয়ই ওর অনুকূলে নয়।”
“আপু বিয়েতে রাজি হয়েছে। জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করছেন।”
“সে বিয়েতে এমনি এমনি রাজি হয়নি।”
“জি এমনি এমনি রাজি হয়নি। কেন রাজি হয়েছে আপনাকে বলতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। তবে উনি যেহেতু লুকাচ্ছেন আমি নিশ্চয় সে কথা আপনাকে বলে দিতে পারি না?”কড়ি চলে যেতে উঠে দাঁড়িয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে চড়াল। সেই আবার বলল, “দুঃখিত, আমি আসছি।”
সে চলে যেতে পা বাড়াতেই ইমাদও উঠে দাঁড়াল। বলল, “আপনি কেন যেচে পড়ে নিজের ভাইয়ের সাথে এমন একটা মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন যে কিনা তার এক্সকে পাগলের মতন ভালোবাসে?”
কড়ি ফিরে তাকাল, “আপনি জবাবদিহি চাইছেন?”
“বিষয়টা একটু কেমন হয়ে গেল না?”
কড়ি আবার নিজের জায়গায় বসল, “কেমন হয়ে গেল?”
ইমাদও আবার নিজের জায়গায় বসল, “নিজের ভাইয়ের প্রতি অন্যায় হয়ে গেল না? বন্ধুদের সাথে এমন অন্যায় মানুষ করতে পারে, কিন্তু নিজের ভাইয়ের সাথে না।”
কড়ি হাসল, “আপনার বোধহয় মনে হচ্ছে এর পেছনে আমার নিজস্ব কোনো স্বার্থ আছে।”
ইমাদ নিশ্চুপ। কড়ি জবাব দিলো, “কোনো স্বার্থ নেই।”
“আচ্ছা।”
“আমি অতটা খারাপ কেউ নই যে স্বার্থের কারণে আপনার বন্ধুর সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে দিব। আমার ভাইয়ের মাঝে কোনো ঘাটতি আছে বলে সন্দেহ করবেন না। আবার, আমি অতি মহান কেউও নই। অতি মহান হলে দীপাদের বাসায় আরো আগেই বিয়ের প্রস্তাব যেত। ভাইয়ার জন্য ত অনেকদিন ধরেই পাত্রী খুঁজছি আমরা। আমাদের বাসায় দীপাকে দেখে বাবা পছন্দ করে ফেলেন। এখন আমি নিশ্চয়ই এতটাও খারাপ নই যে দীপার সব জানি বলেই বিয়েতে বাধা দিয়ে বসব। যেখানে আমিও ওর মতই ভোক্তভোগী।”
ইমাদ নির্লিপ্ত গলায় বলল, “আচ্ছা।”
কড়ি উঠে বিদায় নিয়ে হাঁটতে শুরু করল। সন্ধ্যে নেমে আসছে। বড় বড় দালানগুলোর সাঁঝবাতির প্রতিফলন দীঘির পানিতে টলটল করছে। কড়ি পাড় ধরে নীরবে বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। বাতাসে ওর চুলগুলো উত্তাল হয়ে উড়ছে। সেও নিশ্চয়ই সারাজীবন ঐ প্রতারকের জন্য বসে থাকবে না? সময় এলে সেও বিয়ে করব। সংসার করবে এবং অনেকবছর পর এক্সের সাথে দেখা হয়ে গেল আমার বাচ্চাকাচ্চার সাথে মামা বলে পরিচয়ও করিয়ে দিবে। সেও ত রামিমকে পাগলের মতন ভালোবাসে। এখন তার বিয়ের সময় যদি কেউ একই কারণে বাধা দেয়! তখন কেমন লাগবে ওর? একটা মেয়ে হয়ে কেন আরেকটা মেয়ের সুখে বাধা দিতে যাবে সে?
ইমাদ এক পায়ের উপর ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে অন্য পা তুলে একই জায়গায় বসে আছে। সে এখনো উঠেনি। কড়িকে এখন উত্তরপাড়ে দেখা যাচ্ছে। চেহারা স্পষ্ট নয়, শুধু হেঁটে চলাই চোখে পড়ে।
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে