একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
503

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪০
#Saji_Afroz

মানতাশাকে এভাবে দেখে বুকটা ধুক করে উঠলো এজাজের। এত সুন্দরী মেয়েটার এ কী হাল হলো! আজরা ও নাবীহা এজাজকে বসতে বলে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। এজাজ এসে চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসলো। মানতাশা বলল, তুমি?
-কথা বলতে এলাম তোমার সাথে।
-কটু কথা শোনাবে?

এজাজ মৃদু হেসে বলল, নাহ।

মানতাশা একটু থেমে বলল, আমি নিজের করা ভুলের জন্য সত্যিই অনুতপ্ত। ভুল শোধরানোর কোনো উপায় থাকলে তা করে নিতাম। এখন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার।

মানতাশার চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। এজাজ বলল, আমি তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ রাখিনি। এটা জানাতে আসলাম।
-এত কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। তবুও এটা বলছ?
-হয়তো আমিই তোমাকে ভালো রাখার যোগ্যতা অর্জন করিনি তখন। তাই দূরে সরে গেছ।

চোখের পানি মুছতে মুছতে মানতাশা বলল, তোমার মন অনেক বড়। তাই এটা বলছ তুমি।

আবারও থেমে যায় দু’জনে। এজাজ বলল, আমি আমেরিকা যাচ্ছি কিছু দিন বাদে।

তার কথা শুনে অবাক চোখে তাকায় মানতাশা। এজাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আরেকটু অপেক্ষা করলে আমাদের দিনটাও কত সুন্দর হত তাইনা?

নিজের মাথায় নিজেরই আঘাত করতে ইচ্ছে হলো মানতাশার। লোভে পড়ে আরশানকে বিয়ে করেছে সে। অথচ আজ এজাজও ধনী হতে চললো। কী হত একটু সবুর করলে! তাকে যে ভালোবাসতো কষ্ট দিয়েছে সে, নিজে কিভাবে সুখে থাকতে পারে! প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে।
.
.
.
নিজের রুমে বসে রয়েছে আরশান। মনটা খারাপ হয়ে আছে তার। মানতাশাকে মনে পড়ছে খুব বেশি। মেয়েটা সারাক্ষণ কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করতো। যখন সম্পর্ক ভালো ছিল তখন, আবার যখন খারাপ হয় তখনো। ভালোবেসেই নিজের বউ করে এই বাড়িতে নিয়ে আসে তাকে আরশান। ভেবেছিল অনেক সুখে তাদের দিনগুলো অতিবাহিত হবে। কিন্তু একটা বছরও সংসারটা টিকলো না।
-আসব?

আশফাকুল হোসাইনকে দেখে আরশান বলল, এসো ভাইয়া।

তিনি এসে আরশানের পাশে বসতে বসতে বললেন-
তোর ভাবী বলছিল, তুই নাকি মানতাশাকে ডিভোর্স দিচ্ছিস?

আরশান অবাক হয়ে বলল, এমন কিছু তো আমি বলিনি।
-বলিসনি। কিন্তু না করবি না এটা আমি ভালোভাবেই জানি। যত যাই হোক, ভাবীর কথা শুনবি তুই। কিন্তু ভাবীর কথাতে বউ ছেড়ে দিবি?

আরশান গম্ভীরমুখে বলল, ওর দোষ আছে বলে ও দোষী।
-দোষ তোদের নেই?
-আমাদের?
-ও তোর স্ত্রী আরশান! আমি যেমন সবকিছু তোর ভাবীর উপরে ছেড়ে দিয়েছি, তুইও তো কিছুটা মানতাশার উপরে ছেড়ে দিতে পারতি। তাইনা?
-হ্যাঁ মানছি আমি প্রথমে চাপাচাপি করেছি। কিন্তু পরে ওকে সব সুযোগ সুবিধা আমি দিয়েছিলাম। যেটার অপব্যবহার করেছে ও।
-ও তোর বউ। পর কেউ না যে ভুল করলে শাস্তি দিবি। বুঝিয়ে বলবি!

মালিহা চলে আসে। সে বলল, খেতে আসো তোমরা।

মালিহাকে দেখে কথা থামায় তারা। তার সাথে খেতে গেল দু’জনেই।

.
.
.
-তুমিই বলো? আরশান ভাই কী এটা ঠিক করেছে?

আজরার সব কথা শুনে ইনতিসার বলল, এত কিছু হয়ে গেল আর আমি জানিও না! আরশান তো কখনো কিছু শেয়ার করেনি আমাকে।
-মানতাশাও না।
-আচ্ছা আমি কথা বলে দেখব ওর সঙ্গে।
-কোনো দরকার নেই! মানতাশাও এটা চায় না।
-তবে কী চায়? বিচ্ছেদ?
-এখন দু’জনেই রেগে আছে। কিছুদিন যাক। রাগ কমুক। ডিসিশন বদলাক ওদের। এরপর সাহায্য প্রয়োজন হলে নাহয় করব। ততদিন নীরব থাকুন।
-হুম।
.
.
.
অফিসের কাজে ব্যস্ত নাবীহা। আজরার ফোন আসে। সে রিসিভ করতেই আজরা বলল, ব্যস্ত তুই?
-একটু। বল কী বলবি?
-কাল আমার শাশুড়ীর জন্মদিন। ছোটখাটো একটা আয়োজন করতে চাচ্ছিলাম। আমি চাচ্ছি তুই আর মানতাশাও আসবি।

নাবীহা বলল, আমার অফিসে অনেক প্রেসার রে কাজের।
-সেসব ইনতিসার বুঝে নেবে। তোকে মানতাশাকে আনার দায়িত্ব দিচ্ছি। ওর মনটা কিছুটা হলেও ফ্রেশ হবে এখানে আসলে।
-কিন্তু…
-রাখছি আমি।

আজরা ফোন রাখে। নাবীহা পড়ে যায় চিন্তায়। ও বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে তার নেই। কিন্তু না গেলে আজরা অভিমান করবে।

পরেরদিন মানতাশাকে নিয়ে আজরার বাড়ি আসে নাবীহা। তাদের দেখে আজরার সাথে সাথে ইলারা জামানও বেশ খুশি হোন।
এদিকে নাবীহাকে দেখে ইনতিসার তার দিকে আড়চোখে তাকাতে থাকে। বিষয়টা নাবীহা বুঝতে পারে। তার ভালো লাগে না। মানতাশাকে নিয়ে রান্নাঘরে আসে সে আজরার কাছে। এখনো মেহমান আসতে শুরু করেনি। আগে করেই এসেছে তারা। নাবীহা আজরাকে সাহায্য করতে থাকে। খানিকবাদে আজরা বলল, তোরা ড্রয়িংরুমে গিয়ে বস। আমি ইনতিসারকে তার পোশাক দিয়ে আসি। আসলে ম্যাচিং করে পরব বলে উনার জন্যেও শপিং করেছি আমি।

এই বলে আজরা চলে যায়। মানতাশা তার পথের দিকে চেয়ে রয়েছে। নাবীহা বলল, কী ভাবছিস?
-ভাবছি আজরার এসব দেখে আমার মাঝে লোভের সৃষ্টি হয়েছিল। লোভ ছিল বলে হয়তো সব হারিয়েছি৷ আর আজরা? ভালোবাসা ছিল বলে আজও টিকে আছে সব।

তার কথা শুনে নাবীহা কিছু বলল না। আজরা যে ভালো নেই তা সে নিজেও জানেনা। যেদিন জানবে সেদিন কী হবে? আর জানবেও বা কেন! এসব জানতে দেবে না নাবীহা। ইনতিসারের থেকে দূরেই থাকবে সে।

এদিকে রুমে এসে ইনতিসারকে তৈরী দেখে আজরা বলল, আপনি রেডি হয়ে গেলেন?
-হু। ভালো লাগছে না বলো আমায়?
-কিন্তু আমি যে আপনার জন্য ম্যাচিং করে স্যুট এনেছিলাম।
-তাই! আমায় বলোনি তো।
-আচ্ছা আমি বের করে দিচ্ছি।

আজরাকে থামিয়ে ইনতিসার বলল, এখন আর বদলাতে ইচ্ছে করছে না। পরে কোথাও পরব সেটি।
-কিন্তু…
-ওহহো আজরা! চলো তো।

আজরার সাথে নিচে নেমে আসে ইনতিসার। তাদের দেখে নাবীহা অবাক হয়। ইনতিসার নাবীহার পোশাকের রঙের সাথে মিলিয়ে স্যুট পরেছে। আজরার সামনেই সে এসব করতে শুরু করেছে!
.
.
.
-এসব কী শুনছি এজাজ? মানতাশার নাকি ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে?

মা এর কথা শুনে এজাজ বলল, তুমি কিভাবে জানলে?
-এসব কথা কী লুকিয়ে থাকে! যা হয়েছে বেশ হয়েছে ওই মেয়ের সাথে। কষ্ট কাকে বলে তারও বোঝা উচিত।
-আহ মা! থামো!
-কেন থামব? ও থেমেছিল? তবে আমি কেন থামব! জায়নামাজ এ বসে বসে ওর ক্ষতি চেয়েছি আমি। আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছে। পঙ্গু হয়ে গেলে আরও বেশি খুশি হতাম।

এইবার চ্যাঁচিয়ে এজাজ বলল, কারো জন্য এমন কামনা তুমি কিভাবে করো মা? ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। এটাই যথেষ্ট নয় কী?
-মানে! ও তোর সাথে যোগাযোগ করেছে?
-হু।
মাথায় হাত দিয়ে আসমা আক্তার বললেন, হায় হায় হায়! সংসার ভেঙে এখন আবার আমার ছেলের গলায় ঝুলতে চাচ্ছে। নিশ্চয় তুই আমেরিকা যাবি শুনেছে সে।
-এমন কিছু…
-তুই আর ওই মেয়ের সাথে কথা বলবি না।

এজাজ কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। পাশে থাকা এলিজার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ভয় হচ্ছে! এজাজ আবার না এই মেয়ের ফাঁদে পা বাড়ায়!
.
.
.
কেক কাটার পর্ব শেষ হয়। অতিথিরা নাস্তা খেয়ে বেশ প্রশংসা করতে থাকে আজরার। সে নিজের হাতে হরেক রকমের নাস্তা বানিয়েছে।
ইনতিসার এক প্লেট নাস্তা নিয়ে নাবীহার কাছে আসলো। তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, কিছু খাচ্ছ না তুমি!
-খেয়েছি। সবার মতো আমিও আজরার প্রশংসা না করে পারলাম না। গুণবতী সে। আপনি আসলেই ভাগ্যবান।

ইনতিসার মৃদু হেসে বলল, যদি তোমাকে পাই তবেই হব ভাগ্যবান। এর আগে নয়!

নাবীহা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি আরশানকে দেখতে পায়। আরশান ভেতরে এসে এত মানুষকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে এসেছিল ইনতিসারের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এখানে যে মানতাশার দেখা পাবে ভাবেনি। তাকে দেখেই ভয়ে মানতাশা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। মানুষের সামনে না আবার তামাশা করে বসে আরশান!
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪১
#Saji_Afroz

আজ যে এখানে কোনো অনুষ্ঠান রয়েছে তা জানা ছিল না আরশানের। নতুবা এই সময়ে আসতো না সে। অবশ্য আজ এসে ভালোই হয়েছে। মানতাশাকে পেয়ে গেল। ওর সাথে কথা বলাটাও প্রয়োজন।
এদিকে আজরার রুমে এসে গুটিসুটি মেরে বসে রয়েছে মানতাশা। নাবীহা বলল, এত মানুষের ভিড়ে ঘাবড়ানোর কোনো দরকার নেই তোর।
-তুই জানিস না ও কেমন!
-কিছুই হবে না।
-আমি বাসায় যাব।
-আচ্ছা চল।

মানতাশার জন্যে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে রাজি হলো নাবীহা। তারা নিচে নেমে আসে। মানতাশাকে চলে যেতে দেখে তার পথ আটকায় আরশান। সে বলল, তোমার সাথে কথা আছে আমার।
-কিন্তু তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই। থাকতেও পারে না।
-একটু কথা শোনো?
-শুনব না।

মানতাশা চলে যেতে চাইলে তার হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমের বারান্দায় তাকে নিয়ে আসে আরশান। তাদের পিছু নেয় নাবীহা। তাকে দেখে মানতাশা বলল, দেখলি? এই ভয়টাই আমি পেয়েছিলাম। কেমন আচরণ দেখ ওর!

নাবীহা বলল, আপনি প্লিজ ওকে যেতে দিন। ওর এমনিতেই মানসিক অবস্থা ভালো নেই।

আরশান একটু গম্ভীর হয়ে বলল, বেশি সময় নেব না আমি। আপনি প্লিজ যান।

এরইমধ্যে সেখানে হাজির হয় আজরা ও ইনতিসার। তাদের দেখে মানতাশা বলল, তোরা কিছু বল প্লিজ! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাসায় কী আমি নিরাপদ না?

নাবীহা মানতাশার হাত ধরে বলল, আয় তুই।

তাদের থামালো আজরা। সে বলল, নাবীহা থাম। ওরা স্বামী স্ত্রী! টুকটাক ঝামেলা হতেই পারে৷ যেটা মিটমাট করার দায়িত্ব ওদেরই। কথা বলতে দে।
-টুকটাক! এসব কে তুই টুকটাক বলছিস?

আরশান ইনতিসারকে বলল, তুই তো কিছু বল?

আজরা বলল, বলুন না আপনি! আপনার কথা শুনবে মানতাশা।

ইনতিসার কিছু না বলে নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো। নাবীহা বলল, সব কিছুকে টুকটাক বলে ছেড়ে দিতে নেই আজরা।

এরপর ইনতিসারের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল সে, টুকটুক বলতে বলতে একদিন আরও বড়ো কিছু হয়ে যাবে তা টেরই পাবি না।

এই বলে মানতাশাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে চাইলে মুখ খুললো ইনতিসার। সে বলল, তোমরা কেন যাবে? তোমরা এখানে এসেছ এনজয় করো। আমি আরশানের সাথে কথা বলছি। প্লিজ তোমরা আজরার রুমে গিয়ে বসো। না খেয়ে যাবে না।

ইনতিসারের জোরাজোরিতে রাজি হলো তারা। উভয়েই বারান্দা থেকে বেরুলো।

আরশান হতাশ হয়ে বলল, একটু কথা বলতে দিলো না।

ইনতিসার বলল, মানতাশা আসবে জেনেই আমি তোকে দাওয়াত দিইনি।
-এখন কী করি বল তো?

আজরা বলল, আপনি কী সব ঠিকঠাক করতে চান?
-হু।
-তবে সবুর করুন। রাগ কমুক ওর। আর আপনিও নিজেকে বদলে নিন। যা শুনেছি তাতে ওর রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।

এই বলে আজরা চলে আসে। তবে নাবীহার কথা গুলো তাকে ভাবাচ্ছে খুব। সাথে ইনতিসারের কর্মও। আজরা কিছু বলতে বলার পরেও চুপ ছিল সে। কিছু তো বলতে পারতো আজরার জন্য হলেও!

আরশান আজ আর বসলো না। ইনতিসারের কথাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে সে। তবে আজ মানতাশাকে দেখে নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তার। কত সুন্দরী একটা বউ তার! সে কিনা এত অত্যাচার করলো তাকে। মানতাশা চাইলেই তো যেকোনো ছেলে পেয়ে যাবে। ওর আচরণে মনে হচ্ছে আরশানকে সে তার জীবনে আর চায় না। কিন্তু আরশান এমন কিছু চায় না। মানতাশাকে আবারও ফিরে পেতে চায় সে।

আজরার রুমে বসে রয়েছে নাবীহা। দেয়ালে টাঙানো আজরা ও ইনতিসারের ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। দেখে মনে হচ্ছে হাসিখুশি একটা দম্পতি। অথচ! ছবির লোকটি নাকি সুখে নেই মেয়েটির সঙ্গে। আসলে কোনোকিছু অতি সহজে পেয়ে গেলে তার কদর থাকে না। আজরার মতো কাউকে কষ্ট ছাড়া পেয়েছেই বলে হয়তো ইনতিসার তার মূল্য বুঝছে না।

আজরাকে দেখে নাবীহা বলল, ছবির ফ্রেমটা দেখছিলাম। অনেক সুন্দর।
-ফ্রেমটা গোল্ড এর। ইনতিসার বাধাই করে সারপ্রাইজ দিয়েছে আমাকে।

মানতাশা বলল, তোর কী কপাল রে! টাকা ওয়ালা জামাই তো পেলিই। সাথে নিত্যনতুন সারপ্রাইজ পাস। আর আমাকে দেখ! মার খেতে খেতে খাবার খাওয়ারও সময় পাইনি।
-তোর দোষও কম না।
-তাই বলে হাত তুলবে?
-স্বামী শাসন করতে পারে। ছোটো বেলায় মা বাবার হাতে খাসনি মার?

নাবীহা বলল, এটা কোনো তুলনা হতে পারে না।
-আবার শুরু হয়ে যাস না তোর প্লিজ! আমার সাথে তোদের মিলবেই না।

ইনতিসার আসলো। তাকে দেখে সকলে চুপ হয়ে গেল। নানা বাহানায় বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে ইনতিসার। একবার স্যুট বদলাতে, আরেকবার ঘড়ি। অন্যবার তো কোনো কারণই বলতে পারেনি। এখন কী বলবে সে?
নাবীহা বেশ বুঝতে পারছে তার জন্যই এখানে এতবার আসা।
আজরাকে দেখে ইনতিসার বলল, তুমি এখানে? তোমাকে খুঁজছিলাম।
-তাই! কেন বলুন তো?
-খাবার রেডি করতে বলো। রাত হচ্ছে।

মানতাশা বলল, আমরা প্রথমেই খেয়ে নেব। আসলে বাড়ি ফিরতে হবে তো।
-ঠিক আছে।

রান্নাঘরে এসে কর্মচারীদের ভাতের আয়োজন শুরু করতে বলল আজরা। ইনতিসার আজ মা এর পছন্দের গরুর মাংস নিজের হাতে রান্না করেছে। সে রান্নাঘরে এসে একটি বাটিতে মাংস নেয়। তা দেখে আজরা বলল, কী করছেন?

ইনতিসার চেয়েছে তার রান্না প্রথম নাবীহা খেয়ে বলুক তা কেমন হয়েছে। এতে করে নাবীহাও বুঝবে, তাকে ইনতিসার কতটা গুরুত্ব দেয়। আজরার এমন প্রশ্নে বিরক্ত হলো ইনতিসার। সে বলল, তোমার কাজ তুমি সামলাও। আমি আসছি।
-আরে যাচ্ছেন কোথায় তো বলবেন!

একটু গম্ভীরমুখেই ইনতিসার বলল, আমার বাড়ি থেকে কী আমাকেই এক বাটি মাংস নিতে জবাবদিহি করতে হবে?

তার কথা শুনে চমকায় আজরা। আশেপাশে থাকা কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে বলল সে, অন্যভাবে নিয়েন না প্লিজ বিষয়টি।

ইনতিসার কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। নাবীহাকে দেখে তার পাশে আসলো সে। বলল, আমি রান্না করেছি। খেয়ে বলো তো কেমন হয়েছে?

আশেপাশে মানুষ ছিল বলে নাবীহা কিছু না বলে এক টুকরো মাংস মুখে দিয়ে বলল, ভালোই।
-তুমি ভালো বলেছ মানে সকলের ভালো লাগবে।

এই বলে সে চলে যায়। একটু আগে যা ঘটেছে তা দেখেছে নাবীহা। আজরাকে সাহায্য করতে এসেছিল সে। সব দেখে মনে হচ্ছে আসলেই ইনতিসার আজরার সাথে সুখে নেই। কিন্তু নিজের সুখের কথা ভাবতে গিয়ে সে যে আজরার সাথে অন্যায় করে ফেলছে!
.
.
.
পরেরদিন যথারীতি অফিসে আসলো নাবীহা। ড্রয়ার খুলতেই চমকে গেল সে। একটি গিফট বাক্স সেখানে। খুলতেই আরও বেশি অবাক হয়। সেখানে রয়েছে একটি চেইন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে স্বর্ণের। সাথে রয়েছে একটি চিরকুট। তাতে লেখা-
তোমার ওই সুন্দর গলাটা খালি দেখতে ভালো লাগে না। এটা পরো। মানাবে খুব!

নাবীহা অবাক হয় ইনতিসারের এমন কর্মে। সে রেগেমেগে তার কাছে এসে বলল, এসব কী!
-একটা ছোট্ট উপহার।
-এটা আমি গ্রহণ করতে পারব না।
-কেন?
-আপনি এসব করছেন আজরা জানলে কী হবে?
-সে জানে।
-মানে?
-মানে আমরা একসাথে পছন্দ করে তোমার জন্য এটা নিয়েছি।

এইবার শান্ত হয় নাবীহা। সে চলে যেতে চাইলে ইনতিসার বলল, কিন্তু এভাবে যে দিয়েছি আর আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন তা সে জানেনা।

নাবীহা তার দিকে তাকিয়ে বলল-
আপনি কে? আর কীসব করছেন! আপনার সাথে কী এসব যায়? আমি দু:খিত যে এটা বলার জন্য, আপনাকে আমার এখন কলেজে যে মেয়েদের পেছনে ঘুরে বেড়ায় কিছু বেকার ছেলেপেলে আছেনা! ওসবের মতোই লাগছে।
-এক কথায় ছ্যাচড়া বলতে পারো।

নাবীহাকে নীরব দেখে ইনতিসার বলল-
ছ্যাচড়া হয়ে যদি তোমাকে পাওয়া যায়, শুধু দিনেই শতবার ছ্যাচড়ামো করতে আমি রাজি।

নাবীহা কোনো জবাব না দিয়ে ফিরে আসে। এদিকে ইনতিসার হাসলো। তার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এখন, নাবীহার মন জয় করা।

নাবীহা কী করবে ভেবে পায় না। চাকরি ছাড়া সম্ভব নয় তার পক্ষে। এদিকে এসব সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। যেসব সে ভাবেওনি, সেসবই হতে যাচ্ছে।
নাবীহার ফোন বেজে উঠে। আজরা ফোন করেছে। সে রিসিভ করতেই আজরা বলল, কাল একটা কথা বলা হয়নি তোদের।
-হু এখন বল?
-আমার শাশুড়ী কিছুদিন পর দেশের বাইরে যাবেন একমাসের জন্য। তুই আর মানতাশা আমার সাথে থাকতে পারবি ক’টা দিন?

অন্য সময় হলে হয়তো নাবীহা রাজি হত। কিন্তু এখন সে হতে পারলো না। বলল, মানতাশার কথা আমি জানিনা। কিন্তু আমি পারব না।
-কেন?
-জানিস তো, মা আর জহির একা। তাছাড়া অফিসে প্রচুর কাজ।
-অফিসের কাজ ইনতিসার বুঝবে। আর আন্টি তো নিজেই রান্নাবান্না করেন। সমস্যা কী!
-তুই বরং তোর বাবার বাসায় চলে যা।
-না রে! ইনতিসার একা থাকবে!
-তাহলে আঙ্কেল, আন্টিকে নিয়ে আয়।
-বাবা আসবেন না। পছন্দ করবেন না মেয়ের বাসায় থাকাটা। তবে মা আসতে পারে।
-তাহলে তো হলোই।
-তুই আসলে কী হয়!
-আমি পারলে তো আসতামই।
-আগে মা কিছুদিন থাকুক। তারপর তোরা কিভাবে না আসিস আমি দেখব।

এই বলে ফোন রাখলো আজরা। নাবীহা পড়ে যায় ভাবনায়। বিড়বিড়িয়ে বলল সে, আজরা ঠিকই জোর করবে। তখন কিভাবে যে না করব তাকে!
.
.
.
এদিকে ইলারা জামানের সাথে তার এক বান্ধবী দেখা করতে আসলেন। গতকাল কাজ থাকায় আসতে পারেননি। তার বান্ধবী রশিদা খাতুন কারো জীবনের সুখ দু:খের ভবিষ্যৎ বাণী দিতে পারেন। আশ্চর্যভাবে তা মিলেও যায়।

আজরা চা নিয়ে এসে তার সাথে পরিচিত হয়। সে চলে গেলে তিনি বললেন, তোর বউ এর কপালে স্পষ্ট দু:খ দেখতে পাচ্ছি আমি।

এসব আবার ইলারা জামান বিশ্বাস করেন না। তিনি বললেন, তুই এখনো এসব ছাড়িসনি?
-এখন কাউকে বলিনা এসব। কেন যেন তোকে না বলে পারলাম না। মেয়েটাকে দেখে মনে হলো অনেক লক্ষ্মী একটা মেয়ে।
-তা তো বটেই।
-ভালো দেরই যে জীবন পরীক্ষা বেশি দেওয়া লাগে। আশাকরি আমার এই ভাবনা মিথ্যে প্রমাণিত হোক।

দূর থেকে এসব শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে আজরা। অজানা এক ভয় কাজ করে তার মনে। আবারও বাচ্চা না হওয়ার ভয় জেগে উঠে। তার দু:খের কারণ কী এটাই হবে!
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪২
#Saji_Afroz

লাগেজ সব গাড়িতে তোলা হয়েছে৷ ইলারা জামানরা এক মাসের জন্য বেড়াতে যাচ্ছেন। কিন্তু আজরার কান্না দেখে মনে হচ্ছে তারা সেখানেই থেকে যাবেন! সেই কবে থেকে কেঁদে চলেছে সে। সময় ঘনিয়ে আসলে কান্নার গতি আরও বেড়ে যায় ওর। ইলারা জামান তাকে শান্তনা দিয়ে বললেন, আরে বোকা মেয়ে! চলে আসব তো আমি।
-জানি। তবুও এই একটা মাস আপনাদের ছাড়া কিভাবে থাকব।

এই বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। ওর শশুর বললেন, এইজন্যই বলেছিলাম সাথে যেতে।

ইনতিসার তাদের তাড়া দিয়ে বলল, বেরিয়ে গেলে ভালো হয়। সময় হয়ে আসছে।

তারা দেরী না করে গাড়িতে উঠে বসেন। ইলারা জামানের চোখও অশ্রুসিক্ত। তবুও নিজেকে সামলে রাখছেন তিনি। কারণ তিনি সামান্য কাঁদলেও যে আজরা কান্নার বন্যা ভাসিয়ে দেবে ভালোই জানেন। ভাগ্য করে একটা বউ, নাহ! মেয়ে পেয়েছেন তিনি। আজরাকে নিজের মেয়ের মতোই মনে করেন ইলারা জামান। মেয়ে না হওয়ার আফসোস জীবনে আর রইলো না।

গাড়ি ছাড়ার আগে ইনতিসারের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, আমার আজরার খুব করে খেয়াল রাখবি।
-সব মায়েরা পুত্রবধূকে বলে ছেলের খেয়াল রাখতে। আর আমার মা উলটো বলছে।
-কারণ আমি জানি আমার মেয়ে কেমন। তাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।

তাদের গাড়ি চলে যায়। ইনতিসারও ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলল। আজরা বলল, আজ অফিস না গেলে হয় না? একা লাগছে খুব।
-না গিয়ে পারলে তো বিদেশেই ঘুরে আসতাম।
-কিছু সময় পরে যান।
-তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করব।

এই বলে গাড়ি আসলে সেও উঠে পড়ে। ইদানীং ইনতিসারের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছে আজরা। আগে অফিসে যাওয়ার সময় তাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরতো। মিষ্টি করে বিদায় জানাতো। অথচ এখন! এমন কিছুই সে করে না৷ বিয়ের সময় দীর্ঘ হচ্ছে বলে কী এমন পরিবর্তন?
.
.
.
-আজরা নাকি বাসায় যেতে বলেছিল তোমাকে?

ইনতিসারের প্রশ্ন শুনে নাবীহা বলল, হু।
-যাচ্ছ না?
-নাহ।
-কেন?
-কারণটা আপনার থেকে ভালো আর কে বুঝবে!

ইনতিসার একটু থেমে বলল, তুমি রাগ কেন করছ? কাউকে ভালোবাসার অধিকার কী আমার নেই?
-কাউকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার আপনার নেই।
-আজরা জানবে না কিছু। তোমাকে আলাদা ফ্লাট দেব আমি।

নাবীহা খুব বেশি অবাক হয় ইনতিসারের কথা শুনে। সে বলল-
নিজেকে অনেক বেশি অভাগী মনে হত এই ভেবে যে, সাজির অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু আমার চেয়েও অভাগী দেখছি আজরা! সাজির নাহয় মা এর জন্য পারেনি। কিন্তু আপনি? কিসের জন্য ওকে ঠকাচ্ছেন?
-নিজের জন্য। নিজেকে আর ঠকাতে পারছি না তাই। আর তুমিও এত কষ্ট পাবে কেন আমি থাকতে? আমিই তোমার লাইফের সব কষ্ট দূর করতে পারি।
-আমার কষ্ট লাঘবের দায়িত্ব আমি আপনাকে দিইনি আর দেবও না।

নাবীহার মেজাজ খারাপ বুঝতে পেরে কথা বাড়ালো না ইনতিসার। চুপচাপ বেরিয়ে গেল সে।
.
.
.

-এভাবে হাত পা গুটে বসে আছ কেন বুঝলাম না! ওই মেয়ের ডিভোর্স পেপার পাঠানোর অপেক্ষায় আছ নাকি?

মালিহার কথা শুনে আরশান বলল, আমি বিচ্ছেদ চাইনা ভাবী।

মালিহা অবাক হয়ে বলল, এতকিছুর পরেও এইসব বলছ তুমি?
-হ্যাঁ বলছি।
-যা বলছ ভেবে বলছ তো?
-ওকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি। কাছে রাখতে বিয়ে করেছি, ছাড়তে নয়।

এই বলে মালীহার পাশ থেকে উঠে যায় আরশান। দূর থেকে তার ভাই এই দৃশ্য দেখে আপনমনে বললেন, সাব্বাশ! নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিচ্ছিস বলে আমি খুশি হলাম।
.
.
.
এজাজের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসে রয়েছে মানতাশা। এজাজই তাকে দেখা করতে বলেছে। দু’জনে কফি খাচ্ছে। এজাজ মগে এক চুমুক দিয়ে বলল, তোমার মতো মেয়ে এতসব কিছু সহ্য করতে পারে আমি ভাবিনি।
-তোমাকে খুব বেশি অত্যাচারিত করতাম আমি। তাইনা?
-হু। এইজন্যই ভাবিনি।

এই বলে হাসলো এজাজ। মানতাশা বলল, তোমাকে ঠকানোর শাস্তি এসব।
-আবার শুরু করলে! আমি তোমাকে ডেকেছি যাতে করে কিছু সময় এসব চিন্তা থেকে দূরে থাকো তুমি।
-চলে যাবে বলে মায়া হচ্ছে? না গেলে হয়তো ক্ষমা করতে না সহজেই!
-আমি যাব শুনে তোমার মায়া হচ্ছে না?
-তোমাকে এক নিমিষে ছাড়তে মায়া হয়নি আমার। এই প্রশ্ন কিভাবে করো?
-কারণ এখন তো নিশ্চয় বুঝেছ, আমার ভালোবাসায় ভালো থাকতে তুমি।

নিশ্চুপ মানতাশা আপনমনে নিজের ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে। এজাজের সঙ্গে সুন্দর একটা ভবিষ্যত হত তার। এজাজ তার সবকিছু কত সহজে মেনে নিতো৷ আসলেই মানুষ খাঁটি জনের মান কম বুঝে। ছুটতে থাকে চাকচিক্যের পেছনে। যা শুধু দেখতেই ঝলমলে!
.
.
.
কয়েকদিন পর…

বাবার বাড়ি থেকে আসলো আজরা৷ মাত্র ক’টা দিন তার সঙ্গে তার বাসায় ছিলেন আজিজা বানু। হঠাৎ আজহার শেখের শরীর খারাপ হয়ে যায়৷ তাই মা এর সঙ্গে ও বাড়ি যায় আজরা। কয়েকদিন সেখানে থাকে। বাবার শরীর আগের চেয়ে সুস্থ। তাই ইনতিসারের কথা ভেবে চলে আসলো সে। কিন্তু আসার পর থেকেই একা বাড়িতে কিছুতেই মন বসছে না। এভাবে বাকি দিন গুলো কিভাবে পার করবে সে!
মানতাশাকে ফোন করে এখানে আসতে বলল আজরা। সে আসতে রাজি হয়। এরপর ফোন করে নাবীহাকে। সে রাজি না হলে আজরা বেশ রাগ দেখিয়ে ফোন রেখে দিলো। নাবীহা অনেক ভেবে তাকে মেসেজ করে জানালো সেও আসবে।
আজরা খুশি হয়ে এই খবর ইনতিসারকে দিলো। ইনতিসার জানালো, অফিস শেষে সে নাবীহা ও মানতাশাকে নিয়ে আসবে।

আজরার কথাতে অফিস শেষে আজ ইনতিসারের গাড়িতেই উঠলো নাবীহা। মা কে ফোন করে ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে বলেছিল। সেটিই নিতে যাচ্ছে। সাথে মানতাশাকেও গাড়িতে উঠাবে।

ইনতিসার বলল, ভালোই হচ্ছে তুমি যাচ্ছ।
-শুধু আজরার কথা রাখতে। আমি আশা করব এমন কিছু আপনি করবেন না, যাতে করে আজরা আর আমার সম্পর্কটা নষ্ট হয়।

ইনতিসার কিছু বলল না। ব্যাগ ও মানতাশাকে নিয়ে বাড়ি পৌঁছে তারা। দরজা খুলতেই তাদের দেখে জড়িয়ে ধরলো আজরা। মানতাশা বলল, কী ভালো ঘ্রাণ আসছে রে! কী রান্না হচ্ছে?
-আমার বান্ধবীরা আসবে বলে তাদের পছন্দের সব রান্নাই করেছি।
-আমরা তো বেশ কয়েকদিন থাকব। প্রতিদিনই করবি?
-হু। এবং নিজ হাতে করব।

ইনতিসার বলল, এখনই গল্প শুরু করে দিলে? ফ্রেশ হতে দাও। অন্তত আমার আর নাবীহাকে তো হতে হবে। অফিস সেরে আসলাম আমরা।

আজরা তাদের গেস্ট রুম দেখিয়ে দিলো। এরপর ফ্রেশ হয়ে সবাই ডাইনিং রুমে খেতে আসলো। খেতে খেতেই গল্প শুরু করে সবাই৷ কথার এক ফাঁকে আজরা বলল, নাবীহা এ ক’দিন অফিস না যাক। কী বলেন আপনি?

ইনতিসার সাথে সাথেই জবাব দিলো, নাহ। যেতে হবে।

আজরা তার দিকে তাকাতেই হালকা কেশে বলল, আসলে ও হিসাবের কাজটা সামলে নেয়। না গেলে কিভাবে হবে বলো? মানতাশা তো আছেই তোমার সাথে। রাতেই নাহয় তিন বান্ধবী গল্প করো।

মানতাশা বলল, সমস্যা নেই ভাইয়া। আমি আছি আজরার সঙ্গে সারাদিন।

নাবীহা ভালোই বুঝতে পারছে কেন ইনতিসার চায় না সে এখানে সারাদিন থাকুক। এ ক’টা দিন সে নিজেই বাড়ি ফিরে যেত। আর এখন! অফিস যেতে হবে ইনতিসারের সঙ্গে, সারাদিন অফিসে কাটিয়ে আবার রাতেও বাড়ি ফিরতে হবে একসাথে। কী বিরক্তিকর ব্যাপার!
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে পানি খেতে গিয়ে তার হাত থেকে গ্লাস মেঝেতে পড়ে ভেঙে যায়। সে বলল, আমি দু:খিত! পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

আজরা তাকে নিষেধ করে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ওর পা এ কাচ লেগে যায়। ব্যথায় মুখে শব্দ করে উঠলো নাবীহা। ইনতিসার ব্যস্ত হয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে। আজরাকে ধমকের সুরে বলল, হা করে কী দেখছ! জলদি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসো।

আজরা ছুটে যায়। নাবীহা বলল, আপনি ব্যস্ত হবেন না।

আজরা বক্স নিয়ে আসলে ইনতিসার নিজেই নাবীহার সেবায় ব্যস্ত হয়ে উঠে। এতে আজরা কিছু মনে না করলেও মানতাশা অবাক হয়ে এসব দেখতে থাকে। নাবীহাও আপনমনে বলল, এই ভয়টাই পেয়েছিলাম! আজরার সামনে না আবার সত্যিটা বেরিয়ে আসে!

খাওয়া শেষে রান্না ঘরের সব কাজ গোছানো হয়েছে কিনা দেখতে আসে আজরা। তার পিছু নেয় মানতাশা। তাকে দেখে সে বলল, কিছু লাগবে?
-তুই কী করছিস?
-থালা বাসন গুছিয়ে রাখলো কি না দেখতে আসলাম।
-বুয়াদের বলে দিলে হয়না?
-তাও নিজের কাজ নিজেকে দেখেশুনে রাখা ভালো।
-আর স্বামীকে?
-মানে?
-ভাইয়া নাবীহার জন্য কেমন করলো দেখলি না?

আজরা হেসে বলল, সে জায়গায় তুই থাকলেও এমন করতেন উনি।
-আমার তা মনে হয় না।
-মানতাশা! এখনো এসব ছাড়িসনি তুই?
-কী করলাম! ভালোর জন্যই বললাম।

এই বলে সে চলে যায়। আজরা আপনমনে বলল, বিষয়টা যে আমিও খেয়াল করিনি তা নয়। কিন্তু আমি তোর মতো সবকিছু জটিল করতে চাইনা। আমি এটাই বিশ্বাস করি, সে জায়গায় অন্য কেউ হলেও ইনতিসারের আচরণ একই হত।
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে