এই প্রেম তোমাকে দিলাম পর্ব-০৩+০৪

0
3846

#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_০৩
#আফিয়া_আফরিন

ওদের কথোপকথন শুনে তিথি কিছু না বলে, একটা বই নিয়ে ওদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসে পড়লো।

শিমি আর আদিত্য তিথিকে নিয়েই কথা বলছে, এটা তিথি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। রাগ লাগছে তার, কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।

পরিশেষে শিমি আদিত্য কে জিজ্ঞাসা করলো, “ওর সাথে ব্রেকআপ কেন করেছিলে তুমি?”

এইবারের উত্তরটা তিথি দিলো। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বই তাকের উপর রাখতে রাখতে কাঠ কন্ঠে জবাব দিলো, “তোমার মত নিজের চরিত্র বিসর্জন দিতে পারি নাই তো, তাই সে ব্রেকআপ করছে।”

কথাটা বলে গটগট করে বেরিয়ে চলে গেল।
.
.
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে ধাক্কা খেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
ছেলেটার ঝটপট তিথির দিকে এগিয়ে এসে বললো, “আই এম এক্সট্রিমলি সরি! একদম খেয়াল করি নাই। তার মধ্যে আপনি হুট করে কোথা থেকে এসে পড়লেন, সো সরি!”

তিথি উঠে দাঁড়িয়ে জামা কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে বললো, “ইটস ওকে।”

ছেলেটি মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। তিথি ওখানে দাঁড়িয়ে কপাল চাপড়ে বললো, “এই ধাক্কাধাক্কি খাওয়াই কি আমার কপালে লেখা আছে নাকি? যেদিকে যাই সেদিকেই কেমন ধাম ধাম করে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই! ইশশশ, পোড়া কপাল আমার!”

ক্লাস রুমে বসে বসে তিথি কলম ঘুরাচ্ছিলো। ক্লাসে ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারছে না। তার মধ্যে বন্ধুবান্ধবরা আজ কেউ নাই!
বারবার সকালের ওই দৃশ্যটা চোখের সামনে ঘুরছে।
কি একটা দুর্বিষহ পরিস্থিতি!
.
.
ক্লাস শেষ করে দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিল তিথি। এমন সময় অরিন ফোন করলো।

“হ্যালো দোস্ত বল।”

“তুই বাসায় আছিস তিথি?”

“হ্যাঁ একটু আগেই আসলাম ভার্সিটি থেকে। এখন বাসায় আছি।”

“আমিও মাত্র ফিরলাম দাদা বাড়ি থেকে। আর শোন, আকাশ বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করছে। আমি আকাশের বাসায় আছি। তুই আয় তাড়াতাড়ি।”

আঁতকে উঠল তিথি। বললো,” এতক্ষণ পর তুই আমাকে এই কথা বলতেছিস? কিভাবে এক্সিডেন্ট করছে? কোথায় এখন আকাশ?”

“আরেহ, এত উতলা হওয়ার কিছু হয় নাই। এইজন্যই আকাশ তোকে বলতে বারণ করছিলো। যাইহোক মাথায় সামান্য চোট পেয়েছে, এখন বাসায় আছে।”

“আচ্ছা তুই রাখ। আমি আসছি।”

তিথি তড়িঘড়ি করে কোনরকম রেডি হয়ে ফারজানা বেগমকে বলে বেরিয়ে গেল।
রাস্তায় গিয়ে রিক্সা নিয়ে নিলো। ক্ষণে ক্ষণে জ্যামের মধ্যে আটকাচ্ছে। যখন তাড়াতাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন তখনই এরকম লাগে!
এক ঘণ্টার মধ্যে সে আকাশ দের বাড়ি পৌঁছে গেলো।

ড্রইংরুম পার হয়ে যেতেই শেষে ধাম করে কারো সাথে ধাক্কা খেলো। এবার একেবারে উপর হয়ে মেঝেতে পরে গেলো।
তিথি ফিসফিসিয়ে বললো,”হায় আল্লাহ, এইটা আবার তোমার কোন বান্দা!”

যে ছেলেটির সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিথি উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটিকে দেখেই ভীষণ অবাক হলো। ছেলেটিও তিথিকে দেখে একরকম শকড খেলো। এটাই তো সেই মেয়ে যার সাথে সকালেও ধাক্কা খেয়েছিল!

সামনে থাকা ছেলেটি তিথিকে প্রশ্ন করলো,
“তুমি কি আমার পিছু নিয়েছো নাকি? সকালবেলা হুটহাট একবার ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলা। এখন আবার আমার বাড়িতে এসে একবার আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলা। সিরিয়াসলি! তুমি আমার পিছু নিয়েছো?”

তিথি এবার অবাক হয়ে বললো,” আমি আপনার পিছু নিয়েছি মানে কি? আপনি এমন কোন মহান ব্যক্তি যে আপনার পিছু নিতে হবে?”

“মহান ব্যক্তি নয়। দেখতে সুন্দর, হ্যান্ডসাম, কিউট আমি! যে কোন মেয়ের পিছু লাগা তো অসম্ভব না তাই না?”

“হুহ। ফাজলামি মারেন? শুধু তো গায়ের রং টা ফর্সা। আর কারেন্টের খাম্বার মত লম্বা। তাতেই কি নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে করেন?”

তিথির কথার ধরনে ছেলেটির হাসি পেলো।
পরক্ষণেই সে কলার নাচিয়ে বললো, “না আমি নিজেকে জ্যাক মনে করি। যাই হোক বাদ দাও, এখানে কার কাছে এসেছ?”

তিথি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, “আপনাকে বলব কেন? আপনার কাছে তো আসি নাই? তাই, আপনার না জানলেও চলবে।”

বলেই তিথি গটগট করে ভেতরের দিকে চলে গেল। আকাশের রুমে গিয়ে দেখে আকাশ খাটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে। তিথি পাশে গিয়ে বসলো।
আকাশ চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বত্রিশ টা দাঁত বের করে হেসে দিল।

তিথি চোখ পাকিয়ে বললো, “এত বড় একটা কান্ড করে আবার হাসছিস? লজ্জা করে না তোর!”

“একদম না।”

“বেদ্দব, এক্সিডেন্ট কেমনে করলি?”

আকাশ মেকি হেসে বললো,” চল। আরেকবার অ্যাক্সিডেন্ট করে তোকে দেখাই, কেমনে করলাম!”

“হুস। যত ফালতু কথা।”

“তুই বললি বলেই না বললাম।”

“আচ্ছা বাদ দে। কেমন আছিস এখন?”

“এক্কেরে বিন্দাস!”

“তুই কোনদিনও কি সিরিয়াস হবি না?”

“আই এম অল সো সিরিয়াস ইয়ার! তুই অন্তত এখনই সে আম্মুর মত জ্ঞান দিতে বসিস না।”

“রং-ঢং এর শেষ নাই! অরিনের না থাকার কথা, কই সে?”

“আন্টি ফোন করে বলল কি জানি এমার্জেন্সি কাজ আছে। তাই চলে গেছে।”

“ওহ।”

এই সেই গল্প করতে করতেই আকাশের মা আয়েশা বেগম চা নিয়ে এলো। তিথি তাকে সালাম দিয়ে পাশে বসার জায়গা করে দিলো।

আয়েশা বেগম বসে বললেন, “কেমন আছো মা?”

“জি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?”

“আমার কথা আর কি বলি মা, পোড়া কপাল আমার! ছেলে দুইটা নিয়ে পড়ছি বড় বিপদে। একটা তো মাথা ফাটিয়ে বসে আছে, কি রক্তারক্তি কান্ড! আরেকজন পড়ে আছে বিদেশে, যেনো বাংলাদেশ পড়াশোনার জায়গা নেই। বাংলাদেশের মানুষ তার জজ, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার হয় না!
অনেক বলে কয়ে দেশে ফিরাইছি।”

হঠাৎ করেই তিথির মনে পড়ে গেল, তখনকার সেই ছেলেটির কথা। যার সাথে ধাক্কা খেয়েছিল। তারমানে ওইটাই আকাশের বড় ভাই!

এমন সময় পেছন থেকে সে আকাশের উদ্দেশ্যে বললো,”এই পেত্নী মেয়েটাই তাহলে তোর বান্ধবী?”

তিথি ঘুরে তাকালো। আয়েশা বেগম বললো, “তুই ওকে পেত্নী বলিস কোন হিসেবে?”

“পেত্নীর মত তাই পেত্নী বললাম।”

আকাশ বললো, “কি যে বলিস ভাইয়া? তিথি মত সুন্দরী কন্যা একটাও পাবি?”

সে খাটের উপর বসতে বসতে বলল, ” সুন্দরী কই? আমি তো দেখি না।”

আয়েশা বেগম ধমকের সুরে বললো,”আয়াশ! কি শুরু করলি তুই মেয়েটার সাথে?”

তিথি মুখ বাঁকিয়ে বললো, “আপনার মত নচ্ছার মানুষ আমি পৃথিবীতে আর একটাও দেখিনি।”

“আমিও তোমার মত ঝগড়ুটে মেয়ে একটাও দেখিনি।”

আয়েশা বেগম বললেন,”তোরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনিস?”

তিথি বলল, “হ্যাঁ আন্টি। আপনারই ছেলে খুব পাজি। সকালে ভার্সিটিতে উনার সাথে দেখা হয়েছিল, আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিছে! এখনো এখানে আসার আগে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে!”

আয়াশ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ও হ্যালো! ধাক্কা আমি তোমাকে দেই নাই। তুমিই বারবার পেত্নীর মত উদয় হয়ে এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছো।”

তিথি আয়াশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচালো।
আয়াশ মুখ বাঁকিয়ে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো, ” দেখেছ মা, এই মেয়ে তোমার কাছে আমার নামে এমন ভাবে নালিশ দিচ্ছে, মনে হয় শাশুড়িকে তার নিজের জামাইয়ের নামে যত নালিশ আছে সব শোনাচ্ছে!”

তিথির মুখ অলরেডি বোয়াল মাছের মতো হা হয়ে গেল।
আয়াশের কথা শুনে নিধি বাদে সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো।

তিথি দাঁত কিড়মিড় করে ফিসফিসানি কন্ঠে বললো, “অসভ্য, পাজি, নচ্ছাড় লোক একটা!”
.
.
.

চলবে…….

#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_০৪
#আফিয়া_আফরিন

সন্ধ্যার পর পর তিথি বাসায় ঢুকতেই তার মা ফারজানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, “আকাশের কি অবস্থা রে, মা?”

“এখন ভালই আছে মা। মাথায় সামান্য একটু চোট পেয়েছে!”

“বাসায় আসতে বলিস তো। কতো দিন দেখি না ছেলেমেয়ে গুলোকে!”

তিথি হেসে বলল, “আচ্ছা, নিয়ে আসবো।”

“হ্যাঁ, আদিত্যকেও সাথে করে নিয়ে আসিস তো। এক মাসের বেশি হয়েছে ওর সাথে কথা হয় না।”

আদিত্যর কথা শুনে তিথির ভেতর থেকে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস উপড়ে এলো। এই মানুষটার বেঈমানীর কথা মাকে কিভাবে বলবে সে?

তিথি ছোট্ট করে উত্তর দিল, “হুম।”
.
.
.
বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে তিথি। মন খারাপ। আদিত্যর কথা উঠলেই তার মনটা অকপটে খারাপ হয়ে যায়।
যতই আদিত্যর কথা মনে করতে চায় না, ততই মনে পড়ে যায়!

কিছুক্ষণ বাদে ফারজানা বেগম এসে বলল, “কিরে এভাবে পড়ে আছিস কেন? কি হয়েছে?”

তিথি তার মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো, “মা আমি আমার বিশ্বাসের কাছে নির্মমভাবে ঠকে গিয়েছি। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি লজ্জিত! নিজের কাছে নিজেই চরমভাবে ঠকে গিয়েছি। প্রতিটা মুহূর্ত নিজের কাছে ছোট হচ্ছি!”

“এভাবে কেন বলছিস মা? কি হইছে?”

“আদিত্য আমায় ভালোবাসে না, মা।”

অশ্রুসিক্ত নয়নে তিথি তাকাল তার মায়ের দিকে। পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল, “তোমাদের কাছে আমি মুখ দেখাবো কি করে বলোতো, মা। যাকে ভালোবেসে তোমাদের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করলাম, সে মানুষটা নিঃশেষ করে চলে দিয়ে গেল আমায়।”

তিথির মায়ের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। তার একটা মাত্র আদরের মেয়ে, কতই না কষ্ট পাচ্ছে!

সে কিছু না বলে তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো, খুব শক্ত করে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই যে।
তিথির মনে হলো সে দীর্ঘক্ষন পর একটু শান্তির পরশ পেয়েছে। মাকে জড়িয়ে ধরেই অঝোরে কেঁদে ফেলল।

ফারজানা বেগম বলেন, “কাঁদিস না মা, যা হয়েছে ভুলে যা।”

“ভুলতে পারছিনা তো মা।”

” যন্ত্রণাময় অতীত মনে রেখে কোনো লাভ নেই। যে অতীত মনে রাখলে আমরা শুধু কষ্টই পাবো, সেই বিষাক্ত অতীত ভুলে যাওয়াই শ্রেয়!”

“জানো মা আদিত্য বলেছে, আমি নাকি ওর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্য না!”

“দেখিয়ে দে। তুই কার যোগ্য আর কার অযোগ্য। এভাবে ভেঙে পড়ছিস কেন?”

এই কথাটা তিথির জন্য এক প্রকার ঔষধের ন্যায় ছিল। তিথি উঠে বসে চোখের পানি মুছে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে ফেলল।
.
.
.
পরদিন আকাশ, আয়াশ, অরিন মাঠে বসে গল্প করছে। আকাশের সাথে সাথে আয়াশ ও এসেছে, ঘোরাঘুরি করার জন্য।
ক্লাস বাদ দিয়ে সবাই মাঠে বসে আছে।

অরিন আকাশের উদ্দেশ্যে বললো,”দোস্ত, আদিত্যকে দেখলাম শিমির সাথে। ব্যাপার কি?
আকাশ কিছু বলল না। চুপ করে বসে রইল।

সেই মুহূর্তে তিথি এগিয়ে এলো ওদের দিকে। আয়াশ কে ওদের সাথে দেখি চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। অরিন আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “ক্লাস হচ্ছে। ক্লাসে যাচ্ছিস না কেন তোরা? আমাকে কি একা একা ক্লাস করতে হবে?”

অরিন তিথির হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে বসালো।
“রাখ তোর ক্লাস! তোর বয়ফ্রেন্ড এর খবর জানিস?”

তিথি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকালো। অরিন ফের বললো, “শিমির সাথে দেখি সেই ভাব! তোর বয়ফ্রেন্ড সে, শিমির সাথে তার এত কি?”

অরিনের কথা শুনে তিথি স্বজোরে হেসে উঠলো। আকাশ এবং আয়াশ ওর দিকে অদ্ভুত বিস্ময় নিয়ে তাকালো।

তিথি হাসতে হাসতেই বলল, “ব্রেকআপ দোস্ত, আরো কিছুদিন আগেই।”

অরিন মনে হয় এইবার আকাশ থেকে পড়ল। মাছের মত খাবি খাওয়া মুখ নিয়ে বললো, “কীহ, তার মানে ব্রেকআপ করেই সে নিউ রিলেশনে গেছে! কেমনে কি, ভাই? কি করে সে আবার নতুন কাউকে ভালবাসতে পারলো?”

“যে আমায় ভালবাসতে পারলো না, সে অন্য কাউকে ভালোবাসুক। সে টের পাক, কতটা তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে কাউকে ভালোবাসা যায়!”
মৌন কন্ঠে বলল তিথি।

তিথির এমন জবাবে আয়াশ মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার দিকে এই প্রথম দৃষ্টিপাত করলো। কতটা আকুতি জড়ানো ছিল এই কথাটাই, আয়াশ সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে।
সে তাকালো তিথির দিকে।
তিথির মুচকি হাসি দেখে মুহুর্তেই তার ভেতর কালবৈশাখী ঝড় উঠলো।
বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই, মনের মধ্যে হাজারখানেক রংবেরঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি শুরু হয়ে গেলো।

কিন্তু এই অসময়ে কালবৈশাখী ঝড় ওঠার কারণ কি? এই বর্ষাকালে কেনো উঠলো তার মনে এমন কালবৈশাখী ঝড়??
তবে কি এটা ভালোবাসা নাকি ভালোলাগা?
আয়াশের অবুঝ মন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে চলে গেল অতীতে।

কই! রায়ার সাথে যখন প্রেম ছিল সেই সময় তো এমন অদ্ভুত মনে হয় নাই। এরকম উথালপাতার ঢেউ তো কখনো সৃষ্টি হয় নাই।
অথচ সেই রায়া নামের মেয়েটাই ছিল, আয়াশের অল্প বয়সের প্রেম! স্বাভাবিকভাবেই তখন আবেগ বেশি ছিল, এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু তখন তো এমনটা হয় নাই!
তাহলে কি রায়ার জন্য ভালোবাসাটা ছিল সাময়িক মোহ?

আজ জীবনের পঁচিশ বসন্তকালে এমন কেন মনে হচ্ছে? তিথি নামক এই মেয়েটাকে দেখে ভিতরটা আউলে ঝাউলে কেন যাচ্ছে? তবে কি তাহলে তিথির জন্য তার মনের মধ্যে সত্যি কারের ভালোবাসার সঞ্চার হচ্ছে?
.
.
.
এরপর দুটো দিন কেটে গেছে। কিন্তু আয়াশের এই দুটো দিন দুটো বছরে প্রিয় মানুষকে না দেখা আকুলতা- ব্যাকুলতার ন্যায় ছটফট করতে করতে কেটেছে।

আয়াশ নিজেকে সময় দিতে চাচ্ছে। আপাতত নিজের কাজের দিকে ডাইর্ভাট করতে চায়।
কিন্তু বেহায়া মন তা হতে দিচ্ছে না, ঘুরেফিরে সেই তিথির দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। শেষমেষ মন মস্তিষ্কের কাছে হেরে গিয়ে ভয়ঙ্কর একটা কাজ করে ফেলল সে।
তিথি ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরলে সে তিথির অগোচরে তার পিছু নিয়ে বাড়ি চিনে এল।
এরপর থেকে আয়াশের জীবনের শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। প্রতিদিন অফিসের কাজ শেষ করে নিয়মমাফিক একবার সন্ধ্যায় তিথির বাড়ির সামনে গিয়ে তাকে দেখে আসা!
ওই সময়টায় কোন কোন দিন তিথি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে আর আয়াশ আড়াল থেকে তাকে দেখে নিজের অতৃপ্ত চোখ দুটোকে তৃপ্ততা দেয়!
যখন তিথির দেখা পায় না তখন অতৃপ্ত দৃষ্টি নিয়েই বাড়ি ফিরে যায়।
মেয়েটা তো একেবারে চোখ ধাঁধানো সুন্দরী নয়, তবে স্নিগ্ধময়ী সুন্দরী!

এতো স্নিগ্ধতা কেন মেয়েটার মধ্যে?
.
.
.
.

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে