আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি পর্ব-০৯

0
859

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৯

” মাহমুদের বিয়ের দিন ঠিক করেছি শুক্রবারে। বিয়ে যেহেতু শুক্রবার আর আজ সোমবার সে হিসেবে আপনারা বুধবার বা বৃহস্পতিবার চলে আসবেন। ”

মাজিদ হোসেনের কথা শুনে হাতের কুশন বালিশ খাঁমচে ধরে এশা। মাজিদ সাহেবের দিক থেকে চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয় সে। নাহ, এখানে আর বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এশার এই বিষয়গুলো নজর এড়ায় না রায়ার। এশা যেই উঠতে যাবে ঠিক তখনই রায়া এশার হাত খপ করে ধরে সোফার সাথে আটকে রাখে। এশা রায়ার দিকে তাকালে রায়া ইশারায় এখানেই বসে থাকতে বলে।

মাজিদ সাহেবের সামনে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে দিতে দিতে বলেন, ” এখন কি সবার সবার বাড়ি বাড়ি যেয়ে দাওয়াত দিবেন? এত এনার্জি কই পান ভাই?”

মাজিদ সাহেব কুটিল হেসে জবাব দেন, ” একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা, কষ্ট তো করতেই হবে ভাবি। এসবের মাঝে আনন্দ কোথায় জানেন? যাদের সাথে বছরেও দেখা হয় না তাদের সাথে দেখা হবে। এই যে আপনার কথাই ভাবেন, আপনাদের বাড়িতে শেষ কবে আসছিলাম বলেন তো? মনে করতে পারবেন? আমার কিন্তু মনে পড়ে না। ইহান আর রায়ার বিয়ের সময় আসতে পারি নি।”

ইরিনা বেগম সম্মতি জানিয়ে বলেন, ” তা ঠিক বলেছেন। বিষয়টা পরিশ্রমের হলেও আনন্দ আছে। এখান থেকে কোথায় যাবেন?”
” বউয়ের দিকের আত্মীয় আজ দাওয়াত করে শেষ করে বাড়ি ফিরব একদম।”

মাজিদ সাহেব ইরিনা বেগম আর ইহানের সাথে কথা শেষ করে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে উদ্যোত হন। ইরিনা বেগম বিদায় দিতে সাথে সাথে এগিয়ে যান।

ইহান রায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” একটু রুমে আয়।”
এশা বসা থেকে উঠে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। রায়া এশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইহানকে বলে, ” আমি একটু এশার কাছে থেকে আসছি।”
” কেন? আমার সাথে আসার চেয়ে এশার কাছে যাওয়া বেশি প্রয়োজন? ”
” হ্যাঁ। ”
” মানে?”
” আমি এসে বলি? আমি আসলে নিশ্চিত নই তবে এশার ব্যবহার আমার ঠিক লাগে নি।”
” বুঝলাম না।”
” আমি আগে বুঝে আসছি। আপনি রুমে যান।”
” হুম।”

ইহান নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলে রায়া নিজেও এশার রুমে চলে যায়।

রায়া এশার রুমে এসে দেখে এশা রুমে নেই। ওয়াশরুম থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে। রায়া গিয়ে দরজায় নক করে বিছানায় এসে বসে। কিছুক্ষণ পর এশা মুখ ধুয়ে বেরিয়ে আসে।

স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় বলে, ” তুমি এখানে?”
রায়া এদিক ওদিক দিয়ে কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপটা প্রশ্ন করে বসে, ” তুই মাহমুদ ভাইয়াকে পছন্দ করিস?”

এশা মুখ মুছতে মুছতে বলে, ” এটা কেমন প্রশ্ন আপু? আমি মাহমুদ ভাইয়াকে পছন্দ করতে যাব কেন?”
” আমি বাচ্চামেয়ে না এশা। ভাইয়ার বিয়ের কথা শুনেই ওমন করছিলি কেন তখন? উঠে চলেও আসতে চেয়েছিলি।”
” বড়দের কথাবার্তার মাঝে আমি থেকে কী করব তাই আসতে চেয়েছিলাম।”
” বিয়ের কথাবার্তা হলে সেটা বড়দের বিষয় হতো কিন্তু ফুপা তো দাওয়াত দিতে এসেছিল। সত্যি কথা বল এশা।”
” না আপু, এমন কিছুই না। তোমার সন্দেহ ভুল।”
” কসম কেটে বল?”
” কী বলব? তোমার কথা স্বীকার করে নিলে কি মাহমুদ ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দেবে? পারবে উনার সাথে আমাকে বিয়ে দিতে?”
” তার মানে আমি যা ভেবেছি তা সত্য? আর তুই বিয়ের কথা বলছিস! বিয়ের বয়স হয়েছে তোর? শোন এই ফা*লতু কারণে বিয়ে বাড়িতে যদি মুখ কালো দেখেছি তাহলে তোর খবর খারাপ আছে এশা। ”
” আমি ভাইয়ার মতো হলে জোর করে বিয়ে করে নিতাম।” এশা কথাটা বলেই ফিক করে হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে আবার বলে, ” তুমি যতটা গুরুতর ভাবছো, ঠিক ততটুকু না। শুধু ভাল্লাগতো এতটুকুই। আর আমি জানি আমার এই বয়সে যাকে তাকেই ভালো লাগবে, ইভেন আমার তো কয়েকটা ক্রাশও আছে।”

” আসলেই?”
” হ্যাঁ তো।”
” সবগুলোকে চিনিয়ে দিবি। যেটাকে বেশি ভালো লাগবে সেটাকে হাতে রাখব। পাঁচ বছর পর ধরে বিয়ে দিয়ে দেব। ”
” পাঁচ বছর পর কি সে আর আমার ক্রাশ থাকবে?”
” থাকবে না?”

এশা মাথা ঝাঁকায়। মুচকি হেসে বলে, ” এখনকার ক্রাশ পাঁচবছর পর কারো বাচ্চার বাবা হয়ে যাবে।”
রায়া হাসতে হাসতে বলে, ” তোকেও বাচ্চার মা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করব নাকি বড়মাকে বলে?”
” আম্মি আমারে বাড়ি থেকে বের করে দেবে।”

রায়া এশার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ” আয় একটু জড়িয়ে ধরি। তুই যে এত বুঝদার আমি তো জানতামই না।”
এশাও মুখে হাসি ফুটিয়ে রায়ার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
রায়া এশাকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলে, ” বেড়াতে যাবি আজ?”
” কোথায়?”
” সামনেই যে নতুন ব্রিজ হলো ওদিকে।”
” তোমাদের যাওয়ার প্ল্যান আছে নাকি?”
” না, তুই গেলে যেতাম।”
” নাহ, আমার আজ বের হতে ভালো লাগছে না। কাল যাব। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে রুমে যাই।”
” হ্যাঁ যাও, তোমার বর তো তখনই ডাকলো।”
” ছিঃ এশা, ওটা না তোর ভাই হয়!”
” আমি কি বলেছি ওটা আমার ভাই না? যাও এবার, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

এশা রায়াকে ঠেলে বের করে দিয়ে দরজা চাপা দিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে৷ মাহমুদের বিয়ের কথা শোনার পর থেকে কেমন একটা অস্থির অস্থির লাগছে তার। তবে কি মাহমুদের প্রতি অন্যরকম কিছু জন্মাতে শুরু করেছিল!
_____

রায়া রুমে এসে দেখে ইহান বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে হেডফোনে কিছু একটা শুনছে। রায়া পা টিপে খাটের দিকে এগিয়ে আসে। ইহানের মাথার পাশে এসে দাঁড়ায়। ইহান তখনও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। রায়া সাইডবক্সে রাখা গ্লাস থেকে কিছুটা পানি নিয়ে ইহানের মুখে ছিটিয়ে দিতেই ইহান চমকে ওঠে। রায়া পাশে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে। ইহান উঠে বসে পড়ে। হেডফোনটা খুলে বিছানার ওপর রেখেই বলে, ” কী হলো এসব? গোসল করার শখ হয়েছে?”

রায়া হাসতে হাসতে বলে, ” আমার কেন গোসল করার শখ হবে? আমি কি আপনাকে বলেছি যে আমার গোসল দেওয়ার শখ হয়েছে?”
” আমাকে ভিজিয়ে দিলি কোন সুখে?”
” কে যেন আমার কানে কানে বলল- এই রায়া, যা তো ইহানকে একটু ভিজিয়ে দে। ইহান বিকেলবেলা কেন ঘুমোবে?”
” এটাই বলেছে?”
” হ্যাঁ, আমি এমনি এমনি কেন ভিজিয়ে দেব আপনাকে?”
” আচ্ছা।”
” কী আচ্ছা?”

ইহান কিছুক্ষণ মৌন থেকে বিছানা থেকে ফ্লোরে পা নামিয়ে বসে। রায়া গ্লাসটা সাইডবক্সে রেখে ভ্রু উঁচু করে দাঁড়ায়।
হাসি আটকে বলে, ” কিছু বলবেন বলে ভাবছেন?”
” ভাবাভাবিতে আমি নেই। আমি সোজা কাজে আছি।” বলেই ইহান এক ঝটকায় রায়াকে নিজের কাছে টেনে আনে। রায়াকে নিজের পায়ের ওপর বসিয়ে নিজের ভেজা মুখ রায়া শরীরে মুছে দেয়। রায়ার গলার কাছে ঠোঁট ছোঁয়াতেই রায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইহান রায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়া চোখ বন্ধ করে আছে। ইহান রায়ার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসতে থাকে।

” রায়া, আমাদের প্রথমরাতে আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। আমাদের সম্পর্কটা অনেকদূর সেদিন এগুলেও আমরা সম্পূর্ণ সম্পর্কে গড়াইনি। শেষ মুহুর্তে এসে মনে হয়েছিল, আমি ভুল করছি। তাই আর এগুতে মন সায় দেয় নি। কিন্তু রাগের বশে তোর শরীরের ওপর অমানবিক নির্যা*তন চালিয়েছিলাম আমি। আমাকে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায়?”

রায়া এতক্ষণে চোখ খুলে ইহানের দিকে একপলকে তাকিয়ে ছিল। ইহান কথা শেষ করতেই রায়া বলে ওঠে, ” পুরোনো কথাতে শুধু মন খারাপ, মন ভাঙার গল্প ছিল। ওই রাতের কথা আমি ভুলে যেতে চাই।”

” আমি তোকে তোর ইচ্ছেতে সম্পূর্ণভাবে পেতে চাই রায়া। আমিও সেদিনের কথা তোকে ভুলিয়ে দিতে চাই। তুই আমাকে স্বামীর অধিকার দিবি?”

রায়া কোন কথা না বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। রায়ার চুপ থাকতে দেখে ইহান বলে ওঠে, ” তবে কি মৌনতা সম্মতির লক্ষ্মণ হিসেবে ধরে নেব?”

রায়া আর ইহানের এতকাছে চুপচাপ বসে থাকতে পারছে। নিচে নামার জন্য নড়ে উঠতেই ইহান আবার রায়াকে খপ করে ধরে ফেলে।

রায়ার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে। প্রশ্ন করে, ” আমার উত্তর দিবি না? আমার প্রশ্নের উত্তর চাই রায়া। ”
” কী উত্তর চাই?”
” তুই আমাকে স্বামীর অধিকার দিবি?”
” স্বামীকে আবার আলাদা করে স্বামীর অধিকার দিতে হয় নাকি?”
” হ্যাঁ, সেদিন তোর অনুমতি ছাড়া যতটুকু তোকে পাইনি, ততটুকু আমি তোকে চাই। আমাদের সম্পর্কের সম্পূর্ণ একটা পরিচয় চাই রায়া।”

রায়া এবার আর কোনভাবেই ইহানের কাছে থাকতে না পেরে জোর করে নিচে নেমে সেখান থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। রায়ার অবস্থা দেখে ইহান সেখানেই বসে হাসতে থাকে।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে