আমি অর্ষা পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
331

#আমি_অর্ষা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#অন্তিম_পর্ব

সেদিনের মত ক্লাস শেষ করে যখন আমি রুম থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছি,
হঠাৎ করেই চোখ যায় বিদ্যালয়ের মেইন গেইটের সামনে।
আর আমি আঁতকে উঠি।

_অরণ্য…
আমি অবাক হয়ে যাই,
দেখি যে অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে।

অরণ্যকে দেখে আমি গেইটের সামনে এগিয়ে যাই।

_আপনি এখানে?
_হাই মিস অর্ষা
_হাই
_কেমন আছো?
_এইতো চলছে।
_আপনি?
_ভালো থাকতে দিলে আর কই
_আমি কি করলাম?
_কি করোনি বলো,
_কি করেছি তাইতো জানতে চাচ্ছি
_আরে ভাই,শাড়ি দিলাম আমি,ছাদে আসতে বললাম আমি।
আর আমার দেয়া শাড়ি পরে ছাদে গিয়ে প্রেম করো আরেক জনের সাথে।
_আপনিই তাহলে চিরকুট আর গিফট গুলো দিয়েছেন নাহ?
_জ্বী হ্যাঁ।
তাহলে সেদিন ছাদে কেন আসেন নি?
_ছাদে না গেলে জানলাম কি করে শাড়ি পরে ছাদে গিয়ে তুর্জর সাথে প্রেম করছিলে?

আমি যেদিন প্রথম শিলার জন্মদিনে তুর্জকে দেখেছিলাম তোমার হাত ধরে নাচার জন্য টানছে সেদিনই আমার রাগ হচ্ছিলো।
জেদ হচ্ছিলো।
সহ্য হচ্ছিলোনা।
তাই তো আমি মিথ্যা বলে তোমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম যে আম্মু ডাকছে।
তুমি সেদিনও আমার অনুভূতি বুঝোনি।

আচ্ছা ওইদিন যে ঘুর‍তে যাবার প্ল্যান করেছিলাম সবাইকে নিয়ে।
তা কেন করেছিলাম বলতো?
_কেন?
_যাতে তোমার সাথে কিছুটা মুহূর্ত এক সাথে কাটাতে পারি।
আরে মেয়ে তোমার ছবি গুলো কি এমনি এমনি আমার ফোনে তুলেছি নাকি?
_কেন তুলেছেন?
_তুমি যখন চোখের সামনে থাকবে না। তোমায় দেখবো বলে।
_কেন দেখবেন?
_ভালবাসি বলে।
_কিহ?
_জ্বী মিস অর্ষা।
আমি অরণ্য আপনাকে ভালবাসি।
আপনি যদি ওই ব্যাটা তুর্জকে এখন আর ভাল না বেসে থাকেন তাহলে আপনি আমাকে ভালবাসতে পারেন।
_এই যে মিঃ
আমি তুর্জ টুর্জ কাউকেই ভালবাসিনা বুঝলেন?
_তাহলে ওই দিন ছাদে কি করছিলে?
_আরে আমি ছাদে গিয়ে দাঁড়াতেই কিছু ক্ষণ পর সে আসে।
আর আমাকে প্রপোজ করে,তাইতো আমি ভেবেছি শাড়ি আর চিরকুট সে ই পাঠিয়েছে।
আমি কি জানি নাকি ওসব সে না আপনি পাঠাতেন?
_আর আমি যখন ছাদে গেলাম আমার মনের কথা জানাতে,দেখি আপনার সামনে তুর্জ সাহেব হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
আর আপনি শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে।
তখন আমার কেমন লেগেছে বলেন।
তাইতো আমি ওই দৃশ্য দেখে কিছু না বলেই চলে আসি।

আর খুব দ্রুত দেশ ছেড়ে চলে যাই।
_আমার সাথে দেখা করেও যান না।
তাইনা?
_হুম তাই।

_আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে,এখন কি করবেন?
_উমহু,আমি সব জানি।
_কি জানেন?
_আমি আম্মুকে ফোন দিয়ে তোমাকে চেয়েছিলাম একটু কথা বলার জন্য।ভীষণ মিস করছিলাম।
আম্মু বললেন তুমি চলে এসেছো।
তাই প্রেমা আর রুনার সাথে কথা বলতে চাইলাম তোমার খবর জানতে।
তোমার আর তুর্জর প্রেম কেমন চলছে তা জানতে।

পরে ওরা বল্লো পুরো কাহিনী।

আর আমিও তাই দেরি না করে চলে আসলাম।
একবার হারাতে বসেছিলাম।
আর হারাতে চাইনা।

_কাকে?
_তোমাকে।
_তাহলে এখন আমার কি করতে হবে?
_কি আবার,আমাকে বিয়ে করতে হবে।
_আপনার পরিবার, সমাজ?মানবে আমাকে?
_আমার পরিবার কে আমি জানিয়েছি সব।
তাদের তোমাকে খুব পছন্দ বুঝলে?
তাদের কোন আপত্তি নেই।
বরং তারা কি বলেছেন শুনবে?
_কি?
_তারা বলেছেন আমি যেন তোমাদের এলাকায় জায়গা কিনে একটা বাড়ী তৈরী করি।
তারা তোমাকে নিয়ে এখানেই থাকবেন।
মানে আমার বাবা মা।
কারণ তাদের পুত্রবধূ তো তার স্বপ্নের শিক্ষকতা ছেড়ে শহরে যাবেন না।
তাই তারাই তাদের পুত্রবধূর কাছে চলে আসতে চান।
তাদের শেষ বয়স টা তারা গ্রামেই কাটাতে চান।
স্বচ্ছ আলো বাতাস উপভোগ করতে চান।
মাঝে মাঝে ঢাকায় গিয়েও থাকবেন।
ঘুরে দেখে আসবেন।
দুই জায়গায়ই ঘুরে ফিরে থাকবো আমরা।
কেমন হয় বলোতো?

আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে।
এত সুখ আমার কপালে সইবে কিনা তাই ভাবছি।
আর অবাক হয়ে ভাবছি,মানুষ এত ভালো হয় কি করে?
উনারা এত ভালো কেন?

_এই মেয়ে,তুমি কাঁদছো কেন?
_এটা খুশির কান্না।
_এই যে অরণ্য সাহেব,
#আমি_অর্ষা দরিদ্র এক জেলের মেয়ে।
আপনি কি আমায় প্রতিদিন সকাল বেলা নাস্তা বানাতে সাহায্য করবেন?
_কাজের লোক হয়ে?
_যাহ দুষ্টু,বর হয়ে।
_ওরে লজ্জা পেয়েছেরে অর্ষা ম্যাডাম, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি রাজি।ভালবাসি।
_আমিও বাসবো,তবে বিয়ের পর (দুষ্টুমির হাসি হেসে)

অতঃপর আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে,উপস্থিতিতে ধুমধাম করে বিয়ে হয় আমাদের।
আমাদের এলাকায় অরণ্য একটা জায়গা কিনে সুন্দর করে একটা বাড়ী তৈরী করেন।
যাতে করে আমার স্বপ্নের শিক্ষকতা ছাড়তে না হয়।
বাবা মাকে ছেড়ে একবারে দূরে যেতেও না হয়।
দুই জায়গাতেই এখন থাকি আমরা।
অরণ্যর বাবা মা মানে আমার শশুড় শাশুড়ীরও গ্রাম অনেক পছন্দ।তাদের নাকি ইচ্ছেও ছিলো শেষ বয়সে তারা গ্রামের আলো বাতাস উপভোগ করবেন।
তারা এখন শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি থাকেন।
আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এত সুখ যে আমার কপালে লিখা ছিলো।
অরণ্য আর অরণ্যর পরিবার আমাকে এত ভালবাসেন যা আমার কাছে মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত মনে হয়।
এমন পরিবার পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
আমার বাবা মাকেও তারা যথেষ্ট সম্মান করেন।
একজন মেয়ের জন্য এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে।

(সমাপ্ত)

#ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
সবাই ভালো থাকবেন।
আসসালামু আলাইকুম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে