আমি অর্ষা পর্ব-০৩

0
318

#আমি_অর্ষা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#পর্ব_৩
আমি রুনার হাতে কাগজের টুকরোটা দিয়ে বললাম,পড়ে দেখ।
রুনা আর প্রেমা এক্সাইটেড হয়ে পড়তে লাগলো।
আর আমি ভাবতে লাগলাম,
কে দিলো এগুলো আমাকে।
আর কেনই বা দিলো।
মানুষ টা কে?

_কি ভাবছিস?
_কি আর ভাব্বো,ভাবছি কে দিলো এগুলো।
_সত্যিই জানিস না কে দিয়েছে?
_সত্যিই জানিনা।
_আচ্ছা চল,পরে দেখা যাবে কে দিয়েছে।
দেরি হয়ে যাচ্ছে।

এরপর আমরা কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
তখনই নিচের ফ্ল্যাটের ছেলেটার সাথে দেখা।
আমাকে দেখে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আমি দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম,
_হাই!কেমন আছেন?(রুনা)
_এই তো ভালো।
আপনারা?
_জ্বী ভালো আছি।
_কোথায় যাওয়া হচ্ছে তিন বান্ধবী মিলে?
_এইতো কলেজে যাচ্ছিলাম।
_আচ্ছা ভাইয়া আদিব কোথায়?(প্রেমা)
_ও তো একটু আগে বেরিয়ে গেছে।
_ওহ।
_অর্ষা!আপনি কথা বলছেন না যে?
_কি বলবো?
ওরা তো বলছেই।
চল তোরা দেরি হয়ে যাচ্ছে।
_আচ্ছা আসছি কেমন।আবার দেখা হবে,কথা হবে।(মুচকি হাসি দিয়ে,রুনা)
_আচ্ছা ঠিক আছে।

সেদিন ক্লাস শেষ করে আমরা চলে আসি।
প্রতিদিনের মত স্বাভাবিক ভাবেই চলছে আমার জীবন।
বাসায় এসে খাওয়াদাওয়া করে ফ্রী হয়ে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কথা বলি।
প্রথমাদের পড়াই।
রাতে পড়াশোনা করে ঘুমিয়ে যাই।
এভাবেই চলছে।

একদিন শিলা আপু এসে দরজায় নক করেন।
দরজা খুলে দেখি আপু।
_আপু আসেন আসেন ভেতরে আসেন।
_কি ব্যাপার,তোমাদের তো আর দেখাই যায়না।
আসোনা কেন বাসায়?
_এইতো আপু একটু ব্যস্ত থাকি।
_আম্মুর মুখে তোমাদের অনেক প্রশংসা শুনেছি।
তোমরা নাকি আম্মুর অনেক খেয়াল রাখো।
তো এখন কেন আসোনা?

_আপু এখন তো আপনারা আছেন।
তাই আসিনা।

_আমরা আছি বলে আসা নিষেধ নাকি?
আসবে কেমন?

শিলা আপুর সাথে কথা বলতে বলতে অরণ্য আর তার মামাতো বোন প্রিয়াও চলে আসে।

_শিলা তুই এখানে,আর আমরা তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
আম্মু বল্লো এখানে আসছিস তাই চলে আসলাম।
_কিছু দরকার?
_নাহ,
_তাহলে এত খোঁজাখুঁজির কারণ?
_শোন,ভাবছি কি আমরা সবাই চল দূরে কোথাও ঘুরতে যাই।
_কোথায় যাবা?
_আরে চল কোন পার্কে টার্কে।
যাবে অর্ষা?
_যাবেনা মানে,আমরা সবাই যাবো।
(প্রেমা)
_হ্যাঁ ভাইয়া সবাই যাবো আমরা।
কত দিন হয় এখানে এসেছি।
কোথাও তো যাওয়াই হয়না।(রুনা)
_অর্ষা,
_জ্বী আপু।
_তাহলে সবাই রেডি হয়ে নাও।
একটু পরেই বের হই।
_আপনারাই যেতেন।
আমরা আবার কেন,
_কোন কথা না।
তোমরাও যাচ্ছো আমাদের সাথে।
যাও রেডি হয়ে নাও।
আমরা গিয়েও রেডি হই।

এরপর আমরা সবাই একটা পার্কে ঘুরতে যাই।
জায়গাটা অনেক সুন্দর।
সবাই যে যার মত ছবি তোলায় ব্যস্ত।
তা দেখে অরণ্য আমাকে এসে বলেন,

_তুমি ছবি তুলছো না যে?
_এমনি।
_এমনি কেন?ফোন দাও আমি ছবি তুলে দেই।আমি কিন্তু দারুণ ছবি তুলতে পারি।
_আমার তো ভালো ফোন নেই।তুলতে হবেনা ধন্যবাদ।
_ওহ এই কথা।
এক মিনিট।
দাঁড়াও দাঁড়াও,
সুন্দর করে দাঁড়াও একটু আমার ফোন দিয়ে তুলে দিচ্ছি।
যখন তোমার ভালো ফোন হবে,তখন না হয় নিয়ে নিও আমার থেকে।
_না না লাগবেনা।
_জেদ করোনা।
আজকের মুহূর্ত গুলো বন্দি হয়ে থাকুক মুঠোফোনে।

এই বলে অরণ্য আমার কিছু ছবি তুলেন।
আর বলেন,

_তুমি কি জানো?
তোমার চোখে অনেক মায়া?
_নাহ।
_তাহলে আজ থেকে জেনে রাখো।

আমি তার কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলি।

_আচ্ছা তুমি এত চুপচাপ থাকো কেন?
_এমনি।
_আমি বলার পরই ওরা আসতে চাইলো আর তুমি কিছু বললে না যে?
_দেখুন,আপনারা বড় লোক মানুষ,ধনী মানুষ।
আর আমি একটা গ্রামের সামান্য একজন জেলের মেয়ে।
আপনাদের সাথে ঘুরার মত সাহস হয় না আমার।
আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতাও আমার নেই।
কোথায় আপনারা আর কোথায় আমি।

কিন্তু আংকেল আন্টি খুব ভালো মানুষ।
তাই আমাকে আপন করে নিয়েছেন।
আমি যে তাদের বাসায় ভাড়া থাকি।
সেটাও তারা আমাকে বুঝতে দেন না।
মনে হয় আমি তাদের ই কোন আত্মীয়।
আপন মানুষ।

_শোনো,আমি আর আমার বোন আমাদের বাবা মায়ের শিক্ষায় শিক্ষিত।
তারা আমাদের সব সময় শিক্ষা দিয়েছেন।
মানুষ কে যেন আমরা মানুষ মনে করি।
সব পেশাকে যেন সম্মান করি।
কারণ তারা কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে।
আর সৎ পেশায় কোন লজ্জা নেই।
সব কাজ ই সমান।
কাজ কখনো ছোট বড় হয়না।

তোমার আব্বু একজন জেলে।
উনি সৎ ভাবে টাকা উপার্জন করেন।এই ভেবে তোমার তো গর্ব করা উচিৎ।
যে আমার বাবা হালাল পথে হালাল ভাবে টাকা রোজগার করেন।
আর তোমাকে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

এখানে যোগ্যতা অযোগ্যতার কি দেখলে তুমি,বুঝলাম না।
কখনো নিজেকে ছোট মনে করবেনা।
নিজের বাবার পেশাকে ছোট মনে করবেনা।বরং সম্মান দিবে।
কেমন?

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
কত ভালো মন মানসিকতার মানুষ অরণ্য।
এমন কি তাদের পরিবারের প্রতিটা সদস্যই কত ভালো।

তখনই প্রিয়া অরণ্যকে ডাকে।
আর বলে,তার কিছু ছবি তুলে দিতে।
যত টুকু বোঝা যায়,
আমার মনে হয় প্রিয়া অরণ্য কে মনে মনে পছন্দ করে।
ওর চোখ দেখলেই বোঝা যায়।

যাইহোক,সেদিনের মত আমরা সবাই ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরে যাই।
অনেক ভালো কাটে সময় গুলো।

কেটে যায় কয়েক টা দিন।

এর মধ্যে আদিব আর প্রেমার মধ্যে ভালবাসাবাসিও শুরু হয়ে যায়।
এরা ধুমসে ফোনে কথা বলে দিন রাত।ছাদে গিয়ে দেখাও করে।
ঝগড়া থেকে প্রেম।
ব্যাপার টা দারুণ কিন্তু।

এর মধ্যে আমার নামে প্রায়ই টুকটাক গিফট আসে কয়েক বার,

একবার ঝুমকা সহ একটা চিরকুট আসে।

আরেকবার বেলি ফুলের মালা সহ চিরকুট।

আজ আবার এসেছে নীল শাড়ির সাথে একটা চিরকুট।

এখানে লিখা,আজ বিকেলে শাড়ি টা পরে ছাদে এসো।

আমি অবাক হবার সাথে চিন্তায় পড়ে যাই।
কে আমাকে দিচ্ছে এগুলো।
আর না নিয়েও তো পারিনা।
কারণ আমি না নিলে অন্য কেউ দেখলে আবার সমস্যা।

যেই ভাবা সেই কাজ।
আজ জানতেই হবে কে এই ছেলে।
তাই আমি শাড়ীটা পরে ছাদে চলে যাই।

কিছু ক্ষণ পর আমি কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই।

পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি নিচের ফ্ল্যাটের ছেলেটা,

আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি,
আপনি?
আপনি এখানে?
_হ্যাঁ আমি।
অর্ষা দারুণ লাগছে আপনাকে।
অর্ষা আজ আর কোন ভনিতা নয়।
আমি আমার মনের সমস্ত অনুভূতি আজ প্রকাশ করতে চাই।

এই কথা বলে তিনি,
হাঁটু গেড়ে বসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
অর্ষা আমি তুর্জ আশরাফ।
মোঃতারেক আশরাফ এর এক মাত্র পুত্র। আমি আপনাকে ভালবাসি।
আমি আপনার হাত দুটো সারাজীবনের জন্য ধরতে চাই।
অনুগ্রহ করে আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করুন।
বাড়িয়ে দিন আপনার হাত।

উনার কথা শুনে আমি যেন ঘামতে শুরু করি।
আর তাকে জিজ্ঞেস করি,
আ আ আপনার বাসা টা কোথায় বলা যাবে?
_ওহ হো,আপনাকে তো আমার বাসা কোথায় সেটাই বলা হয়নি।
আমার বাসা হচ্ছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে।

তার কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে