অবিবাহিত বউ পর্ব-০১

0
520

#অবিবাহিত_বউ
#পর্বঃ১
#লেখিকা_লক্ষী_দেব

অচেনা, অজানা ছেলেকে বরের পরিচয় দিয়ে বসে আছে তোহা। তার পাশে বসে ভয়ে নখ কামরাচ্ছে অরিন। চোখ মুখে স্প’ষ্ট ভয়ের ছাপ। তোহা কি করে অচেনা ছেলেটাকে বর বলে দিল? ছেলেটা জানতে পেরে যদি সিন’ক্রিয়েট করে? তখন কি হবে? অরিনের মাথা কাজ করছে না। অন্য দিকে তোহা বেশ আরাম করেই বসে আছে। তার মুখে স্প’ষ্ট বিজয়ের হাসি।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই একটা ছেলে তাকে ফলো করছে। কয়েকবার প্রেমের প্রস্তাব ও দিয়েছে। কিন্তু তোহা ডিরে’ক্ট মানা করে দিছে। মানা করার অবশ্য কারণ আছে। ছেলেটা নে’শা করে। এখনও চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। নিশ্চিত কিছু খেয়ে এসেছে।

তোহা রি’জেক্ট করার পরও ছেলেটা তার পিছু ছাড়ছে না। কলেজ লাইফ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে পা রাখবে তোহা। আজ অরিনকে নিয়ে মার্কেটে এসেছে। তোহাকে দেখেই ছেলেটি ওদের পিছু পিছু ঘুরতে লাগলো। তোহা বি’রক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল আজ যে করেই হোক এই বোঝা সে মাথা থেকে নামাবে। যে করেই হোক।

তাই তো ছেলেটাকে নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে চলে এলো। প্রথমে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলল। কিন্তু যখন দেখল কোনো লাভ হচ্ছে না তখন তাদের পেছনের টেবিলের নীল শার্ট পড়া অচেনা ছেলেটিকে দেখিয়ে বলল,
“দেখুন নীল শার্ট পড়া ছেলেটা আমার বর। যদিও বিয়েটা এখনও হয়নি তবে খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে। আপনি এবার আমার পিছু ছেড়ে দেন।

‘নীল শার্ট পড়া ছেলেটা আমার বর’ কথাটা শুনে নাহিদ নিজের শার্টের দিকে তাকাল। তার শার্টটা ও নীল রঙের। নাহিদ চোখ তুলে সম্পূর্ণ রেস্টুরেন্টে চোখ ঘুরিয়ে নিল। আ’শ্চর্য! কারো গায়ে তো নীল শার্ট নেই। তবে কি মেয়েটা আমাকে বর বলল?

নাহিদ পেছন ফিরে তাকাল। দুইটা মেয়ে পাশাপাশি বসে আছে। তাদের মুখমুখি একটা ছেলে। নাহিদ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল‌। একটা মেয়ে ভিতু চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। নাহিদের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলে চোখ সরিয়ে নিল।

অরিন চোখ সরিয়ে নিলেও নাহিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পেছনের টেবিলের দিকে। অরিন কয়েক সেকেন্ড পর তাকিয়ে দেখল ছেলেটা একই ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। ভয়টা আরেকটু গাঢ় হলো। অরিন তোহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“তোহা তোর বর এইদিকে রাক্ষ’সের মতো তাকিয়ে আছে কেন?

অরিনের কথায় তোহা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। অবাক কন্ঠে ফিসফিস করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“কি যা তা বলছিস। আমার বর আসবে কোত্থেকে?

অরিন আগের মতোই ফিসফিস করে বলল,
“আরে একটু আগে যে বললি নীল শার্ট পড়া ছেলেটা তোর বর। সেই ছেলেটা তাকিয়ে আছে। তোর কথাটা কি শুনতে পেল নাকি?

অরিনের কথা শুনে তোহার বুকটা ধক করে উঠল। ছেলেটা কি সব শুনে ফেলল? তোহা পেছনে ফিরে তাকাল। চোখাচোখি হয়ে গেল তোহা আর নাহিদের। তোহা মেকি হেসে দ্রুত চোখে ফিরিয়ে নিল।

অরিনের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“সত্যি তো। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? আর তাকিয়ে থাকলেই বা কি? আমাদের খেয়ে তো ফেলবে না।

নাহিদের পাশে বসে থাকা তার ফ্রেন্ড রনিও তোহার বলা কথাটা শুনল। রনি নাহিদের দিকে তাকিয়ে দেখল নাহিদ পেছনের টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। নাহিদকে হালকা ধাক্কা দিয়ে রনি বলল,
“কিরে মামা বিয়ে করে বর হয়ে গেছিস। আমাদের ট্রিট দেওয়া তো দূরের কথা জানালিও না।

নাহিদ রনির দিকে তাকিয়ে আফসোসের স্বরে বলল,
“বিয়ে করলাম আমি, বর হলাম আমি অথচ আমিই জানি না। তোদের কি ট্রিট দিবো মামা। তোরা আমাকে ট্রিট দিয়ে আমায় সান্তনা দে।

নাহিদের মুখমুখি বসে থাকা ফাহিম ওদের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারলো না। বি’স্ময়ে হত’ভম্ব হয়ে বলল,
“কিসব বলছিস তোরা? কিসের বিয়ে? কিসের ট্রিট?

“এটাই তো। বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।

নাহিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পেছনের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে রনি, ফাহিম উৎসুক চোখে চেয়ে রইল।

নাহিদ তোহার সামনে গিয়ে তোহার উদ্দেশ্যে বলল,
“হ্যালো বউ। কেমন আছো?

আক’স্মিক নাহিদকে দেখে তোহা, অরিন দুজনই ভড়কে গেল। একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়াল। অরিনের মুখে ভিতু ভাবটা স্প’ষ্ট হলেও তোহার মুখভঙ্গি রইল স্বাভাবিক। তোহা কি করবে বুঝতে না পেরে মেকি হাসল। হুট করে মাথায় এলো ‘এটাই মো’ক্ষম সুযোগ ছেলেটাকে পিছু ছাড়নোর’। তোহা নাহিদের দিকে চেয়ে আ’হ্লাদ করে বলল,
“দেখো না তোমার বউকে এই ছেলেটা ডি’স্টার্ব করছে।

তোহাকে চমকে দিতে এসে নাহিদ নিজেই চমকে গেল। মেয়েটা সরাসরি আমায় বর বলছে? অদ্ভুত! নাহিদ কিছু বলার শব্দ খুঁজে পেল না।

অরিন তোহার কথায় চোখ বড়বড় করে তাকাল। তার মুখের ভিতু ভাবটা মিলিয়ে গিয়েছে। চোখে ফুটে উঠেছে কৌতুহল। তোহা ছেলেটার সাথে এভাবে কথা বলছে? ওর কি একটুও ভয় করছে না?

তোহা নাহিদকে চুপ থাকতে দেখে তার মুখমুখি বসে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“দেখেছেন আমার বরকে? এবার আপনি বিদায় হোন তো।

ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। তোহা আর নাহিদকে একবার দেখে চুপচাপ বেরিয়ে গেল। ছেলেটা চলে যেতেই তোহা স্ব’স্তির শ্বাস ফেলল। চেয়ারে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্ব’স্তি নিয়ে বলল,
“উফ। বাঁচলাম বাবা।

নাহিদ তোহার দিকে তাকিয়ে ক্রু’দ্ধ স্বরে বলল,
“এই মেয়ে। তুমি আমার কোন জন্মের বউ? আমি তোমায় চিনি না, জানি না অথচ আমাকে তোমার বরের পরিচয় দিয়ে দিলে? এতো সাহস।

নাহিদের কথাটা কানে যেতেই তোহা ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়াল। মনে মনে বলল,
“এক ঝামেলা শেষ হতে না হতেই আরেক ঝামেলা শুরু। অস’হ্য।

তোহা কিছু বলে উঠার আগেই অরিন বলল,
“আসলে ভাইয়া ওই ছেলেটা অনেক দিন ধরে তোহাকে ডি’স্টার্ব করছিল। তোহা ছেলেটাকে বুঝাচ্ছিল কিন্তু ছেলেটা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। তাই তোহা ছেলেটার পিছু ছাড়াতে কিছু না ভেবেই আপনাকে বর বলে দিয়েছে।

নাহিদ অরিনের দিকে তাকাল। ভ্রুঁ কুটি করে কড়া গলায় বলল,
“আমাকে কেন বর বলল? এই দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব? নাকি এই রেস্টুরেন্টে ছেলে কম আছে? আমাকে কেন বর বলতে হবে?

নাহিদের কথা শুনে তোহার মাথায় আগুন জ্ব’লে উঠলো। কঠিন গলায় বলল,
“আপনাকে বর বলেছি বলে কি আপনার গায়ে ফো’স্কা পড়েছে? নাকি বর বলাতে আপনি আমার বর হয়ে গেছেন?

তোহার কথা শুনে নাহিদ হেসে উঠল। পরিহাস করে বলল,
“আমি হবো তোমার বর? হাউ ফানি।

তোহা নাহিদের কথা শুনে আরো তেঁতে উঠল। নাহিদকে বি’দ্রুপ করে বলল,
“আপনার কোনো যোগ্যতা আছে আমার বর হওয়ার? আপনার ভাগ্য ভালো আমি আপনাকে বর বলে পরিচয় দিয়েছি।

নাহিদ তোহার কথা শুনে রেগে গেল। কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“নাহিদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছো। এই মেয়ে তোমার কোনো যোগ্যতা আছে আমার বউ হওয়ার?

নাহিদ কথাটা জোরে বলায় রেস্টুরেন্টের সকলে ওদের দিকে তাকাল। অবস্থা বেগতিক দেখে রনি, ফাহিম উঠে দাঁড়াল। ফাহিম নাহিদের কাছে গিয়ে বলল,
“কি করছিস নাহিদ? সকলে তাকিয়ে আছে। আ’স্তে কথা বল।

নাহিদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সত্যি সকলে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে শান্ত করে বলল,
“আস্তে কীভাবে কথা বলব? এই মেয়েটা বলছে আমার নাকি কোনো যোগ্যতা নেই ওর বর হওয়ার।

রনি নাহিদের দিকে তাকাল। মশকরা করে বলল,
“তোর যোগ্যতা প্রমাণ করতে এখন কি ওর বর হবি নাকি?

তোহা নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“এই ছেলেটা আমার বর হবে। অস’ম্ভব

তোহার কথা বলার ভ’ঙ্গি দেখে নাহিদ বি’দ্রুপ করে বলল,
“আমি যেমন তোমার বর হওয়ার জন্য নাচতেছি।

রনি আর ফাহিম একে অপরেরর মুখের দিকে তাকাল। দুজনই মুচকি হেসে ত’প্ত শ্বা’স ফেলল। ফাহিম নাহিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোর বর হওয়া লাগবে না। তোদের বিয়ে হলে দেখা যাবে দুজনই টম এন্ড জেরীর মতো লেগে থাকবি। কেউ কাউকে না চিনেই এভাবে ঝগড়া করছিস। বিয়ে হলে না জানি কি করবি।

নাহিদ ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে ফাহিমের দিকে তাকাল। ফাহিম নাহিদের ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিকে পাত্তা দিল না। উল্টো মুখ ভেং’চি দিল। ফাহিমকে মুখ ভেং’চি দিতে দেখে অরিন মনে মনে বলল,
“কথায় কথায় মেয়েরা মুখ ভেং’চি দেয় বাট এই ছেলেও তো মেয়েদের মতো মুখ ভেং’চি দিচ্ছে। অদ্ভু’ত!

রনি নাহিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“যা হয়েছে, হয়েছে।‌ এখন আর ঝগড়া-ঝাটি না করে এখান থেকে চল‌ তো।

নাহিদ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। রনি কিছুটা জোর করে নাহিদকে নিয়ে গেল। নাহিদ যেতে যেতে তোহার দিকে অ’গ্নি দৃষ্টিতে তাকাল। যেন চোখ দুটো দিয়েই তোহাকে ভ’স্ম করে দিবে।

নাহিদ চলে যেতেই তোহা বলল,
“আল্লাহ এই লোকের সাথে যেন আমার কখনো দেখা না হয়।
_______________________

ভার্সিটিতে আজকে প্রথম দিন। তোহা অরিন দুজনই ভার্সিটিতে এসেছে। দুজনের চোখে মুখেই খুশি খুশি ভাব। ভার্সিটির গেইট পেরিয়ে ওরা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেল। ক্ষানিকটা পথ যেতেই তোহার কানে দুটো শ’ব্দ গেল।

তোহা এতটা পাত্তা না দিয়ে আবারো পা বাড়াল। মুহূর্তের মধ্যেই চমকে গেল। কেউ যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই বলে উঠল,
“এই বউ দাঁড়াও।

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে