অনুভবে পর্ব-২০+২১

0
446

অনুভবে
পর্ব-২০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

ইনারা সভ্যের বুকে হাত রেখে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে নিলেই সভ্য তার কোমরে হাত রেখে টান দেয়। চমকে উঠে ইনারা। শিউরে ওঠে সে। এক মুহূর্তের জন্য যেন নিশ্বাস ফেলতে ভুলে যায়।

সভ্য বিরক্ত হয়ে বলে, “উফফ তোমার মত জেদি মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। এত জেদ কেন তোমার? কিছু সময়ের জন্য চুপ থাকতে পারো না?”

ইনারার গাল দুটো ভারী হয়ে আসে। লজ্জায় মাখা মাখা হয়ে যায় সে। স্থির হয়ে বসে থাকে সে। চোখ নামিয়ে নেয়। জড়োসড়ো হয়ে বলে, “ঠিকাছে, আমি নড়বো না। এইবার ছাড়ুন।”

সভ্য ইনারাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তার বিশ্বাস হয় না যে ইনারা তার কথা মানবে। অদ্ভুতভাবে ইনারা মেনে যায়। চুপচাপ বসে থাকে। কীভাবে হলো এই চমৎকার? যে মেয়েটা এতক্ষণ ধরে যুদ্ধ করছিলো সে এখন জলের মতো শান্ত? ব্যাপারটা সভ্যের মাথায় ঢুকে না, এ মেয়ে এত শান্ত! ব্যাপারটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল তার।

সারারাস্তা ইনারা টু শব্দও করে নি। চুপচাপ বসে ছিলো। এ মেয়ে কখনো এমন শান্ত থাকতে পারে তা মোটেও জানা ছিলো না। প্রায় এক ঘন্টা ট্রাভেল করে তারা পৌঁছায় শুটিং লোকেশনে। প্রথমে হবে গ্রুপ ফটো। সকলে প্রায় তৈরি কেবল সভ্যে এবং জোহানের খবর নেই। সাইদ ইভেন্ট ইসপোন্সারের সাথে কথা বলছিলো। তাদের দেরি হওয়ায় সে বলে, “ইনু যেয়ে জোহান এবং সভ্যকে ডেকে আনো তো।”

ইনারা সামি এবং ঐশির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। সাইদের কথা শুনে সে চমকে তাকায়, “আমি?”
“হ্যাঁ, তুমি। জলদি যাও।”
“কিন্তু… ”
“কোনো কিন্তু না, জলদি যাও।”

ইনারার না চাওয়া সত্ত্বেও উঠতে হলো। সে চেঞ্জিং রুমের দিকে এগিয়ে থেমে যায়। এ দুইজনের সাথে তার ঝামেলা লেগেছে আর এই দুজনের আশেপাশেই তাকে ঘুরতে হচ্ছে। অথচ তার একজনের চেহেরা দেখারও ইচ্ছা নেই। কী বাজে এক অবস্থা! কাকে দেখে আগে মুড নষ্ট করবে তাই ভাবতে শুরু করে সে। জোহানের কথা ভাবতেই তার সাথে দীপার দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠে এবং সভ্যের কথা ভাবতেই একটু আগের কান্ড আবার সেদিন তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা।

দুই দিকেই জ্বালায় ইনারা নিজেই নিজেকে বলল, “ইনু দেখ, জোহানের কাছে গেলে তোকে ঘুরে আবার আসতে হবে। এতে তোর আইলসামি ঠাডা খারাপ মনে করবো। হুদাই না যেয়ে আগে ওই অসভ্যের মুখ দেখেই মুডের বারোটা বাজিয়ে আয়।”

যেই কথা, সেই কাজ। ইনারা সভ্যের রুমের সামনে যেয়ে দরজা খুলে বলে, “মিঃ অসভ্য আপনাকে সাইদ ভাই…”
দরজা খুলে না তাকিয়েই কথাগুলো বলতে বলতে ঢুকে ইনারা। সাথে সাথে থেমে যায়। সভ্য শার্ট চেঞ্জ করছে। হতভম্ব হয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সে সভ্যের দিকে৷ তারপর লজ্জা পেয়ে পিছনের দিকে ফিরে যায়। হড়বড়ে বলে, “সরি সরি সরি…ভুলে এসে পড়েছি। আমি যায়।”
“সেখানেই দাঁড়াও। এমন নাটক করছ যেন আগে শার্টলেস দেখ নি।”

ইনারার মনে পড়ে যায় প্রথম দিনের কথা। তখন তার কত অচেনা ছিলো সভ্য। আজও অনেক চেনা এমনও না। তবে কে জানতো এই লোকটাকে দিনরাত সহ্য করতে পারবে সে। আর মিডিয়ার সামনে রুষ্ট সেজে থাকা এই লোকটার এত রূপ দেখতে পারবে সে। সে মন খারাপ করলে এসে সান্ত্বনা দেওয়া, তার সাথে খুনসুটিতে বেঁধে থাকা, তার ব্যান্ডমেটদের প্রতি এতটা কেয়ার করা, সবার সাথে কঠিন ব্যবহার করেও তার খেয়াল রাখা যায় এটাও কেবল সভ্যের মাঝেই দেখেছে সে। কে জানতো, সারাদিন নাকের ডগায় রাগ নিয়ে থাকা এই লোকটার জীবনের কতখানি অধ্যায় একা কেটেছে। আর একাকিত্বতা মানেই তো অসম্পূর্ণতা।

“এই মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেলে? এদিকে আসো তো।” সভ্যের কথায় ঘোর ভাঙে তার। সে তার ভাবনার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। একটু আগে তার কোমরে সভ্যের হাত রাখার কথা মনে পড়তেই সে বলে উঠে, “এহ, আপ…আপনাকে খালি গায়ে দেখার আমার কোনো শখ নেই। আর আপনি শার্ট না পরে আমাকে কা…কাছে ডাকছেন কেন?
“এই’যে মিস খামখেয়ালী পিছনে তাকান। আমি শার্ট পরেছি। একটু টাই’টা লাগিয়ে দেও।”

ইনারা পিছনে তাকায়। সভ্যকে শার্ট পরা দেখে সে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আর বলে, “আমি অন্যকাওকে ডেকে আনছি।”
“কেন তোমার হাতে মেহেদী লাগা? এদিকে আসো।”

ইনারা বিরক্ত হয়ে যায় সেদিকে। সভ্যের হাত থেকে টাই নিয়ে বলে, “আপনাকে নিয়ে কিছু ভালো ভাবাটাও ভুল, বুঝলেন?”
“তুমি আমার আমাকে ব্যাপারে ভালোও ভাবো?”
“ভুলে ভেবে ফেলেছিলাম।”

ইনারা পা’য়ের পাতা উঁচু করে সভ্যের গলায় টাই বাঁধার জন্য। সে এতটা কাছে আসায় সভ্য ভালো করে যাচাই করে নেয় তাকে। সে চোখ নামিয়ে রেখেছে, একারণে তার নীলাভ চোখের দর্শন পাওয়াটা দুষ্কর। তাই তার ঘন পলকগুলোর দিকেই তাকিয়ে রইলো সে। এরপর তার নরম তুলতুলে গালের দিকে চোখ আটকাল তার। একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা হলো কিন্তু সে ছুঁতে পারে না। আরেকটু চোখ নামায় সে। ইনারার গোলাপি ঠোঁটের দিকে তাকাতেই তার দম বন্ধ হয়ে এলো । কী নিখুঁত গোলাপি ঠোঁট! ঠোঁটজোড়া খুব করে আকর্ষণ করে তাকে। হঠাৎ তার খুব করে চুমু খেতে ইচ্ছা হলো। আচ্ছা এই মুহূর্তে ইনারার গালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে তার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতে পারলে কেমন হতো? সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে নেয় সভ্য। নিজের ভাবনাতে নিজেই লজ্জা পায়। এ কী ভাবছে সে! আগে কখনো এমন ভাবনা তাকে কাবু করে নি। তবে আজ কেন?

আবারও বেহায়ার মতো তাকায় সে ইনারার দিকে। কেন যেন এতটা কাছ থেকে ইনারার নিঁখুত চেহেরার গঠনটা বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। তার সৌন্দর্য হাজারোগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এখনো কিছুটা মিসিং লাগে তার। সভ্য ইনারার চুলে থাকা ক্লিপ এক ঝটকায় খুলে দেয়। সাথে সাথে তার স্বর্ণজ্জ্বল চুলগুলো ঝরঝরে হয়ে পিঠ ছড়ায়। সাথে সাথে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার তার দিকে। মিলে তার নীলাভ দৃষ্টির দর্শন। এক মুহূর্তের জন্য বুক কেঁপে উঠে তার। আচ্ছা এতটা কাছ থেকে কেউ ইনারার এই নিখুঁত সৌন্দর্যের দর্শন করেছে?

“কী হলো এটা?” ইনারা প্রশ্ন করে। বিরক্তির সুরে।
“কী?”
“চুল খুললেন কেন?”
“আমার ইচ্ছা হলো তাই।”
“আপনার যখন যা ইচ্ছা হবে তাই করবেন? চুলগুলো বাঁধতে কত কষ্ট জানেন? এক জ্বলায় থাকি। আমার মা’য়ের পছন্দ ছিলো বলে কাঁটতেও পারি না, নাহলে একদম কাঁধ পর্যন্ত কেটে ফেলতাম।”
“আমারও খুব পছন্দ।” মিনমিনিয়ে বলে সভ্য। ইনারা তা শুনতে পায় না। সে জিজ্ঞেস করে, “কী বললেন?”
“কোথায়? কিছু না।”

ইনারা বিরক্ত হয়ে আবারও কাজ শুরু করে। তার চুলগুলো মুখে এসে খেলতে শুরু করে। জ্বালাতে শুরু করে তাকে। অথচ সভ্যের কেন যেন এই দৃশ্যটা সুন্দর লাগে। সে হঠাৎ বলে বসে, “আমি সহজে কাওকে আমার কাছে আসতে দেই না। বিশেষ করে মেয়েদের। তাই তোমাকে টাই পড়াতে বললাম।”

অবাক হয়ে তাকায় ইনারা, “কারও কাছে আসা পছন্দ না হলে আমায় বললেন কেন? আমার উপর তো আপনার সবচেয়ে বেশি বিরক্তি!”
অদ্ভুত ব্যাপার! কথাটা সভ্য কেন ইনারাকে বলতে গেল সে নিজেও বুঝলো না। এ কথাটা তো ইনারার জানার প্রয়োজন ছিলো না। হঠাৎ করে সে পিছিয়ে যেয়ে টাই নিজে ঠিক করতে করতে বলল, “হয়েছে আর প্রয়োজন নেই। দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“মানে নিজেই দেরি করেছেন, এখন আমাকে শুনাচ্ছেন?”
“কিছু শুনাচ্ছি না। চলো, বাকিটা রাস্তায় ঠিক করে নিব।” বলেই সভ্য দরজার দিকে এগোয়।
“এখন জোহানকে ডাকা বাকি।”
জোহানের নাম শুনতেই সভ্যের মুখ কালো হয়ে গেল। তবুও সে মানা করল না। শুধু বলল, “চুল বেঁধে যেও।”
“পারবো না। এতগুলো চুল বাঁধা অনেক কষ্টের।”

কথাটা শুনতেই সভ্য দরজা খুলতে যেয়েও থেমে যায়। সে ফিরে আসে। ইনারার কাছে এসে তার দুই কাঁধের উপর দিয়ে হাত তুলে চুলে খোঁপা বাঁধতে শুধু করে। সে চোখ নামিয়ে দেখে ইনারার দিকে। ইনারা তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তার চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তবুও সভ্য চোখ সরায় না। তাকিয়ে রয়। আরেকটু কাছে যায়। সে অনুভব করতে পারে তার গলায় এসে লাগা ইনারার উষ্ণ নিশ্বাস।

ইনারা চমকে উঠে। এতটা কাছে সভ্যকে দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় সে। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। সভ্যও দৃষ্টি সরায় না। হয় দৃষ্টিমিলন। মধুর কিছু মুহূর্তের দর্শন। হঠাৎ সভ্য বলে উঠে, “তুমি কিছু জিনিসের যত্ন করতে পারো না? এত সুন্দর চুল কেউ এভাবে রাখে? আর কোথায় এত সময় লাগলো। এই’যে আমি এক মিনিটে করে ফেললাম। ভারী অধৈর্য্য তুমি। ”

ইনারা বলতে চেয়েছিলো, “তো আপনার কী? নিজে রঙ ঢঙ করে এসে চুল খুলে দিলেন, এখন আবার কথা শুনাচ্ছেন? অসভ্য একটা।”
কিন্তু পারলো না। কোনো পুরুষ তার এতটা কাছে ভেবেই তার কেমন যেন লাগতে থাকে। চেয়েও তার গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না।

সভ্য যত্ন করে ইনারার চুল বেঁধে দিয়ে তার দিকে তাকায়। ইনারার এমন লজ্জা এবং অস্বস্তি মাখা মুখ দেখে বাঁকা হাসে সে। কেন যেন তাকে এভাবে দেখতে মজাই লাগে তার। তার চোখে চোখ মেলতেই ইনারা চোখ নামিয়ে নেয়। সভ্য হেসে বলে, “আমি যাচ্ছি, তুমি তোমার কাজ সেরে আসো।”
.
.
ইনারার একটুখানি আগের ঘটনা থেকে বের হতে সময় লাগে। সে নিজেকে সামলে যায় জোহানের কক্ষে। দরজা খুলে বলে, “আপনাকে ফটোশুটের জন্য ডাকছে।”
দ্বিতীয়বারের মতো ঝটকা খায় সে। জোহানের সাথে দীপাকে আপত্তিজনক অবস্থায় দেখে নেয়। আবারও। দীপা জোহানের কোলে বসা ছিলো। দুইজনে কিস করছিলো। সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দেয় সে। ইনারার এবার রাগের থেকে বেশি বিরক্ত লাগে। যেখানে সেখানে কে এমন কিস করতে শুরু করে?

তাকে ডাকা হয়। রুমে ঢুকতেই জোহান তাকে ধমক দিয়ে বলে, “তোমার জ্ঞান বুদ্ধি নেই? এভাবে কে না নক করে ভেতরে ঢুকে?”
ইনারা মনে মনে ভাবে, “আসলেই নেই। নাহলে সভ্যের সাথে হওয়া ঘটনার পর আবার না নক করে ঢুকতে যায় কে? এই সেলিব্রিটি লোকেরা আরেক জিনিস ভাই। দরজা লক কীভাবে করে তাও মনে হয় হাতে-কলমে শিখাতে হবে তাদের।”
কিন্তু মুখে নিজের দোষ স্বীকার করলো না। নিজের দোষ স্বীকার করার মানুষ তো সে নয়। তাই সে উল্টো গলা চড়িয়ে বলে, “তো এটা কী এসব করার জিনিস? এসব কিচুমিচু হলে রুমে করেন। পাবলিক প্লেসে কী? আজাইরা যতসব।”
ইনারার ভেংচি কেটে যেতে নিলেই জোহান আবার তাকে ডাক দেয়, “আচ্ছা দাঁড়াও,” গলা পরিষ্কার করে নেয় জোহান। বলে, “এ কথা কাওকে জানিও না।”
“জানাব না? অফিসের করিডরে যখন করছিলেন তখন মানুষ দেখে নি?”
“তুমি দেখেছ?”
“না দেখলে কীভাবে বলি? এ-সব কিচুমিচু করার জায়গা এটা?”
“কিচুমিচুটা কী?”
“আপনারা যা করছিলেন তা তো আমি খোলামেলা বলতে পারি না তাই নাম দিসি।”

এর মধ্যে দীপা উঠে দাঁড়ায়। সে ইনারার সামনে এসে হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে দাঁড়াই। ভ্রু কপালে তুলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ইনারাকে যাচাই করে তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “একথা একারণে বলছ তুমি কারণ তুমি আসলেই জোহানকে পছন্দ করতে তাই তো? তোমার মতো কিছু মানুষ এমনই হয়। পছন্দ করার আগে নিজের যোগ্যতাও দেখ না? নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছ ওকে পছন্দ করার পূর্বে?”

ইনারা থতমত খেয়ে যায়। সে এতবছর টিভিতে দীপার মিষ্টি কথা দেখে আসছে। সে কখনো এমন কোনো কথা বলতে পারে ধারণা ছিলো না তার। সে একবার তাকায় জোহানের দিকে। জোহানও দীপার এমন কথায় কিছু বলছে না?

ইনারার মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ সে-ও দীপার মতো হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে একই সুরে বলে, “আয়নায় তো আমি নিজেকে দেখেছি। এজন্যই আমি আমার ফেভারিট। এত্ত কিউট আমি! এখন কী করব সবাই ন্যাচারালি এত সুন্দর হয় না। তাই অন্যকারো প্রেমে পড়ার আগে আমিই নিজের প্রেমে পড়ে যাই। আচ্ছা দীপা আপু আপনার নামে অনেক গুজব আছে আপনি না’কি প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন? এখন আপনার এমন নিচু চিন্তার জন্যই কী আপনার নিজেকে পছন্দ হয় নি?”
“ইউ….তোমার সাহস কত বড় আমার সাথে এভাবে কথা বলার? তুমি জানো আমি কে?”
“আহারে! আপনি নিজে জানেন না?”
“তুমি… ”
“আমি?”
দীপা দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে চিৎকার করে উঠে। সাথে সাথে জোহান তার হাত ধরে চিন্তিত সুরে বলে, “কুল ডাউন বেবি, রাগ করো না।” সে ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি যাও তো এখন তোমাকে পরে দেখব আমি।”

ইনারা ভাব দেখিয়ে দরজায় যেয়ে আবার ফিরে তাকিয়ে দুষ্টুমির সুরে দীপাকে বলে, “আপনার নাকে কী যেন বসে আছে।”
দীপা মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টার সাথেই নাকে হাত দেয়। মুছতে থাকে। কিন্তু কিছু পায় না। ইনারা আবার বলে, “ও আচ্ছা আপনার নাক বেশি বড় তো তাই আমি ভাবছি কিছু বসা। পরে বুঝলাম ত্তো বড় অহংকার ঝুলে আসে।”
“তোমাকে আমি…”

জোহান ফিক করে হেসে দেয় ইনারার কথা বলার ধরণে। দীপা রাগে তাকায় তার দিকে। আর অন্যদিকে ইনারা ভেঙিয়ে এক দৌড়ে পালায়।

চলবে…..

অনুভবে
পর্ব-২১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“এতক্ষণ লাগলো তোমার? জোহান কোথায়?” সাইদ ব্যস্ততার মাঝে জিজ্ঞেস করে। হঠাৎ এত কাজের চাপে তার কথার মাঝে বিরক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের জোহান এবং দীপার কথায় এমনিতেই তার মেজাজ গরম ছিল। তাই সেও কাঠখোট্টা গলায় বলে, “তিনি প্রেম করছে। সাথে কিচুমিচুও করছে।”

“কিচুমিচু! এটা আবার কী?” সামি জিজ্ঞেস করে আগ্রহের সুরে। ইনারার পিছন থেকেই জোহান আসে। ইনারা তাকে দেখে ভেংচি কেটে বলে, “তাকেই জিজ্ঞেস করো।”
সামিও অবুঝের মতো জোহানকে জিজ্ঞেস করে বসে, “ভাই এই কিচুমিচু কি’রে?”
জোহান রাগী দৃষ্টিতে তাকায় সামির দিকে। তারপর ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সাথে আসো। এখনই।”
সাইদ বলে, “জোহান স্যুটের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
“হোক।” জোহান আবার ইনারার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলে, “শুনো নি কী বলেছি?”
“শুনেছি, তো?”
“আসো।”
“আসব না। কি করবেন শুনি?”

সামি তার পাশে বসা ঐশির দিকে ঝুঁকে বলে, “মেয়েটা কী জিনিস ভাই, যাদের সাথে পাঙ্গা নেওয়া সবচেয়ে বেশি ডেঞ্জারাস তাদের সাথে মুখে মুখে তর্ক করে। জোহান আর সভ্যের সাথে কথা বলতে আমার বুক কাঁপে আর এই মেয়ে তাদের সাথে ঝগড়া করে।”
“ইনারা না জোহানের পাগল ছিলো? কী হলো হঠাৎ?”
“দীপা যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকেই এমন।”
ঐশি হাসে, “দীপার কথা শুনে ওর প্রেম উড়ে গেছে? যাক ভালো, মেয়েটা অনেক মিষ্টি। জোহানের পাল্লায় পড়লে কষ্ট পাবে। দীপাকে ছাড়াও আজকাল না’কি শ্রেষ্ঠার সাথেও কথা বলে।”
“বলিস কী? আমাকে তো বললো নিধির কথা।”
“বাদ দে, আর গুণা লাগবে না।”

সাইদ ইনারার এমন কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়। মেয়েটা নিজের চাকরি তো ডুবাবেই, সাথে তার চাকরিও নিয়ে ডুববে। সে অস্থির হয়ে বলল, “ইনু প্লিজ যাও। এমন করে না।”
ইনারা বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে। আর জোহানের পিছনে যায়। সভ্য এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো। তার কাজ করছিলো। এত কথার মাঝেও সে চোখ তুলে তাকায় নি। কিন্তু ইনারার যাওয়ার কথাতেই সে চোখ তুলে তাকায় তার দৃষ্টি ইনারার উপরই আটকে গেল। অনুসরণ করল তার পথ।
.
.
জোহান ইনারাকে একপাশে নিয়ে আসে। এদিকে সচারাচর মানুষ কম আসে। তাই সে নিজের রাগ বের করল, “তোমার সাহস কত বড় দীপার সাথে এভাবে কথা বলার? আচ্ছা তুমি কী ভাবো নিজেকে বলো তো। তুমি সামান্য একটা মেয়ে ইমপ্লোয়ী। এভাবে ওর সাথে কথা বলার অধিকার তুমি কোথায় পাও। ও রাগে আমাদের কোম্পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে কী করবে তুমি? আমাদের কত বড় ক্ষতি হবে তুমি জানো? এর ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে তুমি? তুমি আজই ওর কাছে ক্ষমা চাইবে। ও তোমার জন্য ভীষণ বাজে মেজাজ নিয়ে বাহিরে গেছে।”

ইনারা হাই তুলে, “হয়েছে? এবার আমি যাব?”
“আমি কী বলেছি কিছু শুনেছ তুমি? তুমি দীপাকে সরি বলবে। নাহলে… ”
“নাহলে কী? কী করবেন আপনি? আর দীপার ফিফা বানায় দিব। তোকে আমার জুতাও সরি বলবে না।”
“তুমি আমাকে পছন্দ করতে একারণে ওর উপর তোমার এত রাগ তাই না? একারণে ওকে তুমি এত শুনালে। নিজের কাজে কাজ রাখো। আর টক্সিক ফ্যানের মতো ব্যবহার করা বন্ধ করো। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কি করি তাতে তোমার কিছু আসে যায় না।”

একথায় মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ইনারার, “এক্সকিউজ মি? আপনার সো কলড গার্লফ্রেন্ড আমাকে কি বলেছে তা আপনার কানে যায় নি। আমি আপনাকে পছন্দ করতাম। তো কী? আমি নিজের রাগ অকারণে কারও উপর ঝারি না। আর আমি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সম্মান করি দেখেই চুপ আছি। আর আপনি হয়তো আমাকে ভুলে গেছেন আমি ভুলিনি। আপনার জন্য আমার সাথে কাটানো একদিন খুব তুচ্ছ ছিলো কিন্তু সেদিনটি আমি আজও মনে রেখেছি। কারণ আমার কাছে মা’য়ের ইচ্ছার সম্মান রাখাটা সর্বোপরি। অন্যদিকে আপনি সৌমিতা আন্টির…. ” সৌমিতার কথা আনতেই চুপ হয়ে যায় ইনারা। এ কথাগুলো সে কখনো জোহান কে বলতে চাইনি। সে চেয়েছিলো জোহান নিজ থেকে সবকিছু মনে করুক। কিন্তু এখন দীপার সাথে তার সম্পর্ক জানার পর তার কিছু আসে যায় না। এ চাকরি নিয়েও তার কিছু আসে যায় না। যার কারণে সে চাকরিটা করতে শুরু করেছিলো আজ তার এমন বেমানান প্রতিচ্ছবি তার সামনে ফুটে উঠবে সে কখনো ভাবে নি।
না’কি জোহান সঠিক? হঠাৎ জোহানকে অন্যকারো সাথে দেখেই কী তার জোহানকে অসহ্য লাগছে?

“এতক্ষণ ধরে এখানে কী করছ?” হঠাৎ এক ভারী কন্ঠে ঘোর ভাঙে তার। সভ্য তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “স্যুটের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথা ধরেছে যেয়ে কফি নিয়ে আসো।”
“আপনি অন্যকাওকে বলতে পারেন না?”
“তাহলে তুমি কী করবে? আসো।” সভ্য ইনারার এক হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে নিলেই জোহানও ইনারার হাতটা ধরে নেয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সভ্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ওর সাথে কথা বলছি।”
“আই ডোন্ট কেয়ার।”
“তোকে…” জোহান ক্ষেপে সভ্যের দিকে এগোতে নিলেই ইনারা সামনে এসে পড়ে। জোহান সেখানেই থেমে যায়। সে একটা মেয়ের উপর তো তার ক্ষোভ বের করতে পারে না। সভ্য কিছু বলে না। ইনারার হাত ধরে নিয়ে যায় তাকে।

ইনারা সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা দুইজন সবসময় এমন কুত্তা বিলাইয়ের মতো মারামারি করেন কেন?”
“ভাষা ঠিক করো।”
“আপনারা এমন ব্যবহার করবেন। আমি বলতেও পারবো না? ঠিক কি হয়েছে আপনাদের মাঝে।”
“নন অফ ইউর বিজনেস। আর এতই জানার ইচ্ছা থাকলে আমাকে আগে বলো, তুমি কে?”
ইনারা বিস্ময় নিয়ে তাকায় সভ্যের দিকে, “আমি কে মানে? আমি ইনারা”
“জোহানের মা’য়ের নাম কেবল তার কাছের কিছু মানুষ জানে। তুমি সৌমিতা আন্টিকে কীভাবে চিনো? আর তোমার মা’য়ের ইচ্ছা বলতে কী বুঝালে তুমি? তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলেছ?”

সভ্যের এতগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে হতভম্ব হয়ে যায় ইনারা। তার জন্য কথা বানানো বা ঘুরানো বড় ব্যাপার না। এতবছর ধরে এসব করে অভ্যাস আছে। কিন্তু কোনটা ছেড়ে কোন প্রশ্নের জন্য মিথ্যা বলবে ভেবে পায় না সে। এর উপর সভ্যের দৃষ্টি দেখে আরও ভয় লাগে তার। মিথ্যা বলতে কষ্ট হয়। ইনারা ভীত সুরে বলে, “আমি…আমি আপনার জন্য কফি আনছি। আপনি অপেক্ষা করুন।”
ইনারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে নিলেই সভ্য তার বাহু ধরে নিজের কাছে টান দেয়।

ইনারা কাছে এসে পড়ে তার। তার নয়নে ভয়, বিস্ময়। সভ্য সে নয়নে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। মৃদু স্বরে বলে, “হাজারোবার ছুটে পালালেও অবশেষে আমার কাছেই তোমার ফিরে আসতে হবে।”
সভ্যের এমন দৃষ্টিতে ইনারার ভয়ের সাথে সাথে হৃদয়ের স্পন্দনও বেড়ে গেল। কেমন যেন তার দৃষ্টি। ভয়ের থেকে বেশি অস্বস্তিটা বেড়ে গেল ইনারার। সে এক মুহূর্তের চোখ নামিয়ে নেয়। আবার একপলক তাকায় তার দিকে। এখনো সে গভীর দৃষ্টি! এমনিতেই সভ্যের চোখদুটো সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় এর মধ্যে এমন দৃষ্টিতে তাকালে যে কোনো নারী তার হৃদয় হেরে বসবে। তাই ইনারা নিজেকে সামলায়, বাঁচায়। সে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলেই তার হাতের ব্রেসলেটটা খুলে আসে সভ্যের হাতে। আভাসও পায় না সে।

সভ্য তার হাতে থাকা ব্রেসলেট দেখে বাঁকা হাসে। তার মনে পড়ে তার ও ইনারার প্রথম দেখা। এভাবেই পালিয়ে গিয়েছিলো ইনারা। সভ্যের হাতে বন্দী হয়ে ছিলো কেবল তার চুড়ি। আর আজ ব্রেসলেট। মেয়েটার কী নিজের জিনিসের কোনো কদর নেই?
.
.
ফটোশুট শেষ হবার পর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে ইনারা। এত পরিশ্রম কখনো করা হয় নি তার। এর উপর শুটিং এর এত তীক্ষ্ণ রশ্মিতে এবং এত মানুষের শব্দে তার মাথা ব্যাথা করছে। তবুও সে সভ্যের সাথে শান্তিতে না এসে, সামি এবং ঐশির সাথে তাদের গাড়িতে চাপাচাপি করে বসে আসে। দুইজনে তার মতো কথা বলা পার্টি। এই কথা বলার চক্করে তার মাথা ব্যাথা আরও বাড়ল। সবই সভ্যের থেকে বাঁচার চেষ্টা। সে ভেবেছিলো গন্তব্যে পৌঁছে সে একটু আরাম করবে কিন্তু সেখানে যেয়ে আরও বাজে অবস্থা দেখে সে। গাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই দেখে চারদিকে গিজগিজ করছে। ভিড়ে গাড়িও ধীর গতি করে নিয়েছে। সাথে সাথে ইনারা তার স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়।

গাড়ি থামে। তাদের গাড়ি সবার শেষে ছিলো। বডিগার্ডরা বের হয়ে সবাইকে নিয়ে যাচ্ছিলো। ইনারাই কেবল পিছনে ছুটে গেল। আশেপাশের মেয়েরা ছুটাছুটি লাগিয়ে দেয়।
নিজেকে এত ভিড়ের মাঝে সে সামলাতে পারে না। ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায়। উঠে দাঁড়াবে যে অবস্থাও নেই। ছোটবেলা থেকেই সে ভিড়কে ভয় পায়। ছোটবেলায় এমন অবস্থায় তার মা তাকে সামলাতো। আর আজকাল সুরভি এবং প্রিয় সামলায়। আজ তারাও নেই। ইনারা কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।

সভ্য যাবার পথে খেয়াল করে আশেপাশে কোথাও ইনারা নেই। অথচ সে ঐশীর পিছনে ছিল। তাকে না পেয়ে ঘাবড়ে যায় সভ্য। এত ভিড়ের মাঝে মেয়েটার কিছু হলো না তো? তার পিছনে ফিরে যাওয়াটাই মানা। বডিগার্ড সকলে তাকে প্রটেকশন দিয়ে গেছে। কিন্তু ইনারা জন্য সে নিজেকে আটকাতে পারে না। ছুটে যায় পিছনে। ভিড়ের মাঝে অনেকেই তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করা। কতজনে দিশেহারা হয়ে যায় তাকে কাছে পেয়ে। হৈ-হুল্লোড় বেড়ে যায়। বডিগার্ডটা বারবার তাকে ডাকে। সে শুনেনা
এই মুহূর্তে তার নজর কেবল ইনারাকে খুঁজছে। অবশেষে সে ইনারাকে পায়। ভিড়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে চুপ করে বসে আছে সে। চোখ দুটো চেপে ধরে, কানে হাত দিয়ে বসে আছে। তাকে দেখে যেন সভ্যের প্রাণে প্রাণ ফিরে। সে শান্তির নিশ্বাস ফেলে ইনারার হাত ধরে তাকে টেনে উঠায়। তারপর তার মাথার ক্যাপ ইনারার মাথায় দিয়ে তাকে নিজের বুকের মাঝারে ভরে কোর্ট দিয়ে তাকে ঢেকে নেয়।

হঠাৎ করে এক টান অনুভব করে ইনারা। কারো হাতের উষ্ণতা পেয়ে নরম দৃষ্টিতে উপরে তাকায় সে। বুঝে উঠার পূর্বেই সভ্য তাকে বুকের মাঝে ভরে নেয়। তাকে সকলের থেকে লুকিয়ে, তার কাঁধে হাত রেখে সামলিয়ে তাকে নিয়ে যেতে থাকে বিল্ডিং এর ভেতরে।

“ভয় পাবার কিছু নেই, আমি আছি তো।” সভ্য বলে। চারদিকে হৈ-হুল্লোড়। তবুও এই সাধারণ কিছু শব্দ তার সকল ভয় মুহূর্তেই দূর করে দেয়। কেমন শান্তি ছড়িয়ে দেয় তার মাঝে। তার মনে পড়ে ছোটবেলায় তার মা’ও এই কথা বলেছিলো একবার তাকে। এমন ভিড়ের মাঝে তার কান্না থামানোর জন্য এ ক’টি শব্দই যথেষ্ট। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সভ্যের দিকে। কত গম্ভীর দেখাচ্ছে তাকে! আচ্ছা গম্ভীরমুখে কী যেকোনো পুরুষের প্রতি আকর্ষণীয়তা বাড়ে? না’কি এটা কেবল সভ্যের প্রতিই প্রযোজ্য?

বডিগার্ডরা এতক্ষণে এসে তাদের আশেপাশে খালি করে ভেতরে নিয়ে যায়। বিল্ডিং-এ ঢুকতে পারে তারা। দলের সবাই আগের থেকেই ভেতরে চলে গেছে।। বাহিরে চেঁচামেচি বেড়েছে। সাইদ ভাইয়াকে কেমন ভীত দেখাচ্ছে। সে কিছু বলতে নিলেই সভ্য তাকে থামিয়ে দেয়। এবং একজন স্টাফ মেম্বারকে বলে, “ওকে আমার ভ্যানিটি রুমে নিয়ে যাও। আমি আসা পর্যন্ত ওকে বের হতে দিবে না এবং কাওকে ঢুকতেও দিবে না।”
স্টাফকে এত কঠিন গলায় কথাগুলো বলার পরে সে ইনারার দিকে তাকিয়ে নরমসুরে বলল, “তোমার শরীর খারাপ দেখাচ্ছে। তুমি যে আরাম করো। খিদে পেলে ওকে বলবে, ও খাবার এনে দিবে বুঝলে?”
ইনারা তার এত বড় কাণ্ডের পরে মুখ খুলে কিছু বলতে পারেনা। তার জন্য সভ্যের এক ক্ষতিও হতে পারতো এই ভীড়ে। তাই সে বাচ্চাদের মতো আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় কেবল।
.
.
ইন্টারভিউ শেষে এক মুহূর্তও সভ্য অপেক্ষা করে না। দ্রুত আসে তার রুমে। এসে দেখে ইনারা সোফায় বসে বসে ঘুমিয়ে পরেছে। এ ক’দিনে তার উপর দিয়ে অনেক চাপ গেছে। নিশ্চয়ই ক্লান্ত সে। সভ্যের হঠাৎ করে তাকে কাছে থেকে দেখার শখ জাগলো
। ইনারার পিছনে যেয়ে দাঁড়িয়ে সোফায় হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। তার দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে পরীক্ষণ করতে থাকে তার চোখের পাঁপড়ি, কপালে ছুঁয়ে থাকা ছোট চুলগুলো, গালের লালচে আভা, গোলাপি ঠোঁট জোড়া। তাকে নিদ্রার জগতে হারিয়ে যাওয়া রাজকন্যা লাগছে। আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। ইনারার ক্লান্তি দূর করার জন্য সে আলতো করে তার কপালে হাত রেখে মাথা টিপে দিতে থাকে। কয়েক মুহূর্তই কাটে। হঠাৎ মাথা টিপে দিতে দিতে তার প্রচুর ইচ্ছা জাগে ইনারার কপালে একটু চুমু খেতে। ইনারা তো ঘুমন্ত। নিদ্রার জগতে হারানো। তার কপালে একখানা চুমু খেলে কী বিরাট বড় কোনো অপরাধ হয়ে যাবে?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে