অনুভবে পর্ব-৪০+৪১

0
501

অনুভবে
পর্ব–৪০
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“কী ব্যাপার ম্যাডাম? এখনো বাড়ি পৌঁছান নি?” প্রশ্ন করে সভ্য।
“এসে পৌঁছেছি। আপনাকে কল দিতে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম বাসায় মেহমান এসেছে।” খানিকক্ষণ চিন্তা করে ইনারা। জোহানের কথা বলবে কি? বাসায় কে এসেছে না এসেছে তা সভ্য জেনে কি করবে? তারপরও কিছু একটা ভেবে সে বলল, “জোহান এসেছে। সাঈদ ভাইয়ার সাথে।”
সভ্য গিটার বাজাচ্ছিল। তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল ফোন দিয়ে। কিন্তু জোহনের নাম শুনতেই শব্দটা বন্ধ হয়ে গেল। সভ্যের কণ্ঠ মৃদু হয়ে আসলো, “জোহান এসেছে?”
“হুম।”
পরক্ষণেই কিছু এটা হলো। সভ্য স্বাভাবিক গলাতেই বলল, “আসতেই পারে। সৌমিতা আন্টি তোমাদের পরিচিত।”
কোন এক কারণে ইনারার বুকে ভয় ভয় করছিল। সভ্য জোহানের কথা জানতে পেরে যদি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়? কিন্তু তার এই কথাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইনু। হেসে বলে, “হ্যাঁ, আমি তো জানতামই না সে আসবে। হঠাৎ করে এসে দেখে অবাক হয়েছি। তারপর আমার পেটেও ইন্দুররা কাবাডি খেলছিলো তাই খেয়ে নিলাম। এতেই কল দিতে আরও দেরি হলো।”
“তোমার পেটে তো সারাক্ষণই ইঁদুররা কাবাডি খেলে। আরে তোমার বন্ধু হয় না? ফ্রী তে পার্মানেন্ট থাকে আর খায়।”
“এত অসভ্য কেন আপনি? জানেন না মেয়েদের এসব কথা বলতে নেই?”
হাসে সভ্য। তারপর বলে, “আচ্ছা শুনো, একটা কথা ছিলো।”
“বলুন।”
“হয়েছে কি…ওই তোমার… ”
হঠাৎ করে সাইদকে দেখতে পায় ফোনে ফিসফিস করে বলে, “একটু অপেক্ষা করুন।”
বলেই সে ফোনটা পিঠের কাছে নিয়ে গেল। লুকিয়ে নিল। যেভাবে লুকাল যেন কেউ তার বড় চুরি ধরে ফেলবে। আচ্ছা ভালোবাসায় কি এই খেলা খেলতে মজা লাগে?

সাইদ এসে সামনে দাঁড়ায় তার। ইনারা জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়া কিছু লাগবে?”
“না, কিছু লাগবে না। একটা কথা বলতে এসেছিলাম। আজ জানলাম সভ্য না’কি তোমাকে কাজ থেকে বাদ দিতে চাইছে। এর বিশেষ কারণটা ধরতে পারলাম না। শেষ কয়েকদিন ধরে তুমি অনেক বেশি পরিশ্রম করেছ। যাই হোক তুমি চিন্তা করোনা, আমি নতুন এক চাকরি খুঁজে দেব।”
কথাটা শুনে ইনারা বড়োসড়ো ঝটকা খায়। অন্য কেউ হলে সে মানতে পারতো। কিন্তু সভ্য করবে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তবুও সে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তার মুখের রাগ এবং কষ্টের মিশ্রণটা লুকিয়ে রাখল। নিজেকে সংযত রেখে মাথা নাড়াল।
সাইদ বলে, “তুমি আসলেই চিন্তা করও না। এখন তো দেখেছি কত মন দিয়ে কাজ করো তুমি। তা ভালো চাকরি পেতে সমস্যা হবে না। আর তুমি শুনেছ আইজার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে যে প্রিয়কে রেখেছি?”
ইনারা আবারো মাথা নাড়ায়। সে শুনেছে।”
সাইদ এবার হাসে, “আমিও কাকে কি জিজ্ঞেস করছি! প্রিয়’র চাকরি হয়েছে এটা তো সবার আগে তোমাকে এবং সুরভিকেই জানাবে। আচ্ছা তাহলে আমি যাই। কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলো।”
সাঈদ চলে যায়। ইনারা ফোন থেকে অনেক শব্দ শুনতে পায়। সম্ভবত সভ্য ডাকছে। কিন্তু সে ফোন কানের কাছে নেয় না। কেটে দেয়। তার এখন আর এ চাকরির প্রয়োজন নেই। সে সেখানে কেবল সভ্যের জন্যই ছিলো। আর যে মানুষটার জন্য ছিল সেই তাকে এভাবে বিনা কারণে বের করে দিয়েছে? ব্যাপারটা ভাবতেই তার দেহে শিরায় শিরায় রাগ অতিবাহিত হতে শুরু করে। ইনারার রাগ প্রচন্ড বেশি। তার ছটপট করে রাগ উঠে যায়। আর একবার রাগ উঠলে তা সহজে যায় না।

সভ্য নিজেই ইনারাকে চাকরি থেকে বাদ দেবার কথা জানাতে চাচ্ছিল। কিন্তু তা হলোনা। সে হয়তো নিজ থেকে বললে বুঝিয়ে বলতে পারতো। গুছিয়ে বলতো। কারণটা জানাতো।কিন্তু এর পূর্বে সাঈদ সব বলে দিল। এখন নিশ্চয়ই ইনারা তাকে ভুল বুঝবে। সে আবার কলব্যাক করল। ইনারা তা কেটে দেয়। এরপর বারবার কল করতেই থাকে। ইনারা একটিবারও কল রিসিভ করে না।
.
.
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। হঠাৎ সুরভির কল আসে। ইনারা তখনও রাগে কটমট করছিল। তার মেজাজ চওড়া ছিলো। এর মধ্যেই সুরভি বলল, “কি’রে শুনলাম তোকে না’কি চাকরি থেকে বের করে দিছে।”
“হ্যাঁ তাইলে এখন নাচ। ব্যান্ড বাজা নিয়া আসব?”
“আরে ব্রো সেন্টি খাস কেন?”
“কে বের করেছে এটা শুনিস নি?”
“কে?”
“ওই অসভ্য। আর তুই বলছিলি তোর মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করে। কচু করে। তারে…তারে আমার কি করতে মন চাইতেছে জানিস? পাটায় রেখে ছেঁচতে মন চাইতেছে। তারপর… তারপর ভূত বাড়িতে ভূতের কাছে ফেলে আসতে মন চাইতেছে। এরপর তাকে বটগাছের সাথে উলটা লটকিয়ে ইচ্ছামতো মাইর…..”
এরমধ্যে সুরভি তাকে থামাল। সে ভীত গলায় বলল, “কুল ডাউন জান। এভাবে বলিস না। আমারই ভয় লাগছে। আচ্ছা তার কোনো কারণও তো হতে পারে তাই না? কথা বলে দেখ।”
“কারণ? কি কারণ হতে পারে ওই অসভ্যের?”
“হয়তো কোম্পানি থেকে বলেছে। জোহান এক্টিং ক্যারিয়ার শুরু করবে জানিস তো?”
“হঁ”
“এছাড়াও দলীয় কাজ এখন আর তেমন হবে না।হয়তো এ কারণেই গ্রুপের কাজও কমে যাবে।”
“বলিস কী!”
“হ্যাঁ। আমার তো শুনে গা জ্বলছিলো। ওই মিঃ হকের তো এমনিতেই চুল কয়টা। তার ওই চুলগুলো টেনে ছিঁড়তে মন চাইছিলো। তারপর ভাবলাম আমরা তাইলে আর কি করতে পারব।”
বলে আফসোসের নিঃশ্বাস ফেলল সুরভি। কিন্তু তার কথা শুনে ইনারা হেসে দেয়। সুরভি বলে, “হয়তো কোম্পানি থেকে মানা করেছে। তুই খুলে কথা বল সভ্যের সাথে।”
“আচ্ছা কাল অফিস যেয়েই কথা বলব। এতক্ষণে হয়তো জনাব ঘুমিয়ে গেছেন।”

কিন্তু সে কি জানে মানুষটা তার জন্য চিন্তা করে সারাটারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে।
.
.
পরের দিন সকাল সকাল ইনারা ঘুম থেকেই উঠে যায় কোম্পানিতে। রিহার্সাল রুমে যেয়ে সভ্যকে পায় না। তারা না-কি রেকর্ডিং রুমে। তার কিছু জিনিসপত্র ছিল রিহার্সাল রুমে। সেগুলো নিতে এসেছিলো। সেখানে ঐশি এবং ইরফানকে পায় ইনু। সেখানে ঐশির ব্যবহারটা তার কাছে অনেকটা অকপটে লাগে। মেয়েটা খুবই মিষ্টি। তার সাথে সব সময় বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করে এসেছে। হঠাৎ মেয়েটার কি হলো সে ধরতে পারে না। কিন্তু আপাতত তার ধ্যান সম্পূর্ণ সভ্যের উপর রাখা উচিত। তাই সে ঐশির কথা মাথা থেকে ঝেরে সোজা যায় সভ্যকে খুঁজতে। সে জানতে পায় সভ্য সামির সাথে রেকর্ডিং রুমে আছে। সে রেকর্ডির রুমের সামনে যেয়ে দরজা খুলতেই সে দেখতে শুনতে পায় সামির কন্ঠ,
“তোর মাথা ঠিক আছে তো? তুই ঐশির কথায় ইনারাকে চাকরি থেকে বের করে দিলি? আমাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না? মেয়েটা কত কষ্ট পাবে বুঝতে পারছিস? ওর ফ্যামিলির অবস্থা এমনিতেই ভালো না এর উপর তুই….”
আর শুনতে পারল না সে। বুকের ভিতরে কেমন ভার হয়ে এলো। তার বুকে চিনচিন ব্যথা করছে কেন? এমন কান্না পাচ্ছে কেন? ঘটনা তো এমন বড় নয়। মন উদাসীন হয়ে গেল তার। বুকের ভেতর জমে গেল এক আকাশ অভিমান। তার চোখ বয়ে অভিমান ঝরার পূর্বেই সে সেখান থেকে চলে যায়।

সামি আবারও জিজ্ঞেস করে, “উফফ কিছু তো বল।”
সভ্য ব্যস্ত ছিলো তার কাজে। রুমটা একটু পূর্বেও ভর্তি ছিলো মানুষে। সকলে বের হতেই সামি তাকে ভালোভাবে ধরল। তাকে তদন্ত করেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে অবশেষে সব উত্তর দিলো, “ভাই থামবি তুই? কে বলল আমি কেবল ঐশির জন্য ইনারাকে কাজের থেকে বাদ দিয়েছি?”
“তাহলে আর কি কারণ আছে তোর?”
“ওর পড়াশোনা। শ্রী মঙ্গল থেকে আসার সময় উনার সাথে কথা হচ্ছিল। তখন ও বলল ওর ইউনিভার্সিটি শুরু হবে। ভর্তি হতে হবে। তাহলে ও কখন পড়াশোনা করতো, আর কখন এখানে আসতো? এর মধ্যে ওর পড়াশোনা নষ্ট হতো। যা আমি চাই নি। আর রইলো ঐশির কথা, ওকে বুঝানো কোনো বড় ব্যাপার না।”
“তুই ঐশীর ব্যাপারটা এত হালকা ভাবে নিস না। তোর ওর প্রতি দুর্বলতা আছে। ও যদি পরে তোকে ইনারা থেকে দূর হতে বলে তাহলে কাকে বেছে নিবি তুই? কীভাবে বেছে নিবি?”
কপাল কুঁচকে নেয় সভ্য, “ঐশি কেন আমাকে ইনারা থেকে দূর করবে?”
“তুই বুঝিস না? ও তোকে পছন্দ করে।”
“কে আমাকে পছন্দ করে?”
“ঐশি।”
সভ্য মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে টোকা মারে সামির মাথার পিছনে, “ছাগল তোকে কে বলেছে ঐশি আমাকে পছন্দ করে?”
“সবাই তো বলে।”
“কতজনে তো কতকিছুই বলে। তোর সাথেও তো কত নায়িকার সম্পর্ক তৈরি করে নেয়। তারা তোকে দু’পয়সার পাত্তা দেয়?”
“দেখ সভ্য এভাবে আমার সম্মান নষ্ট করবি না।”
“নষ্ট করার জন্য থাকতেও হবে। এছাড়া ঐশি অন্যকাওকে লাইক করে। একটা ছেলে আর মেয়ে বন্ধু মানে এই নয় তাদের মধ্যে কিছু থাকতে হবে। এটা ফালতু কথা।”
“বুঝলাম।” বলে সামি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর শেষ কথা মনে পড়ে তার। হঠাৎ চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে, “ওয়েট ঐশি কাওকে লাইক করে? কাকে? আমি জানি না কেন?”
“তোদের জানায় নি তাই। আমি ছাড়া কেউ জানে না।”
“মীরজাফরনী কোথাকার। পিচ্চিকাল থেকে সারাক্ষণ আমার সাথে ঘুরে বেরিয়ে আমাকেই বলে নাই। উল্টো আমি ভাবলাম আমিই সবার সিক্রেট জানি। তোর, জোহানের, সবার। ঐশির বাচ্চাকে আমি…আচ্ছা ও কাকে পছন্দ করে?”
“ইরফানকে। ইরফানও না’কি সেদিন পার্টিতে ইনারাকে দেখে ওর ছবি এঁকেছিল। তা দেখে নেয় ঐশি। ইনসিকিউরড ফিল করছিল।”
“কী ইরফানকে! ভাই মামা জীবনেও ওর জন্য মানবে না। আর সবাই ইনারাকেই পছন্দ করতেছে কেন ভাই? প্রথমে জোহান এখন ইরফান।”
“অভিনেতা রোহানকে চিনিস?”
“অফকোর্স। দেশে পপুলারিটির দিক থেকে তোর এবং জোহানের পর আসে। তৃতীয় নাম্বারে।”
“সে পার্টিতে ও আমাকে ইনারার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এছাড়া অনেকেই সেদিন ওকে দেখে ওর তথ্য চাচ্ছে।”
“ভাই তোর প্রতিযোগিতা দেখি দিন দিন বাড়ছে। ভয় লাগছে না তোর?”
“না, আমার ভালোবাসার যদি ওকে পাবার ক্ষমতা থাকে তাহলে এ পৃথিবীর কেউ ওকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। কয়েকটা পরিচালকও এসেছিলো আমার কাছে। ওর সাথে ডান্সের পর। মানা করে দিয়েছি।”
“কেন? ওর অভিনেত্রী হবার ইচ্ছা আছে।”
“ইচ্ছা থাকলেই কেবল হয় না। দক্ষতা, ক্ষমতা, ধৈর্য, বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ঘৃণা সহ্য করার শক্তি সব প্রয়োজন। যা এখনো ওর মাঝে নেই। আমি একটি এক্টিং স্কুল দেখছি। ভাবছি ওকে সেখানে ভর্তি হতে বলব। তারপর আরেকটু বুঝ আসার পর ও নিজে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।” সভ্য তাকায় সামির দিকে। তার শান্ত দৃষ্টি এখন তীক্ষ্ণ। সে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে, “এবার বল জোহানের কি হয়েছে? তুই ওর কোন গোপন তথ্য জানিস?”
“আ…আমি? ওহ ওই ইনারাকে যে পছন্দ করে।”
“সেটা তো আমিও জানি। সম্ভবত ঐশিও। কেবল তুই কোনটা জানিস?”
সামি ঢোক গিলে। সে বলে, “আমার একটু কাজ মনে পড়ে গেছে।”
সামি এগিয়ে যেতে নিলেই সভ্য বলে, “এক’ পা এগোলে ভালো হবে না। আর আমি হাওয়ায় হুমকি দেই না।”
সামি ভয়ে ভয়ে পিছু ফিরে। সভ্যের মুখের কঠিন ভাব দেখ হার মেনে যেয়ে বসে চেয়ারে। সব বলে দেয়, “জোহানের গত তিন চার বছর ধরে মানসিক সমস্যা হচ্ছে। ডিপ্রেশনে একবার সুসাইড করার চেষ্টা করেছিল। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছি। সে ঔষধ দিচ্ছে, আগের থেকে ভালো কিন্তু কিছুতেই সুস্থ হয়ে উঠছে না।”
কথাটা শুনতেই বড়সড় ঝটকা খায় সভ্য। তার দৃষ্টি কঠোর থেকে মুহূর্তেই নম্র হয়ে আসে। চিন্তিতভাব ছড়িয়ে যায় তার মুখে। সে কিছু বলে না। মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেমন অশান্তি লাগছে তার। হাত পা কাঁপছে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না তার সবচেয়ে ভালো বন্ধুর এ অবস্থা, অথচ সে কিছুই জানে না!

রাত গভীর। আজ কিছুতেই শান্তি লাগছে না সভ্যের। অশান্তিতে যেন দম আটকে আসছে। গানও তার আত্নাকে শান্ত করতে পারছে না। এই মুহূর্তে তার কেবল একজনের কথাই মাথায় এলো। সে মেসেজ দিলো ইনারাকে।
সভ্যঃ ঘুমিয়ে পড়েছ?

ইনারা আড্ডা দিচ্ছিল সুরভির সাথে। তার মন খারাপের দিনগুলোতে তার সুরভি ও প্রিয়কে লাগে। তারাই তার স্বস্তির স্থান। প্রিয় কিছুসময় আগেই বের হলো। সে এবং সুরভী গল্প করছে। সভ্যের মেসেজ পেয়ে সে ফোনটা পাশে রাখতে নিয়ে কি বুঝে যেন রিপ্লাই দিলো। তার উওর দেবার কথা ছিলো না। সে তো অভিমান করেছে। কিন্তু না করে থাকতে পারছে না কেন সে?

ইনারাঃ উঁহু।

সভ্যঃ এতরাতে কি করো?

ইনারাঃ সুরভির সাথে গল্প করছি।

সভ্যঃ ওর বাসায় তুমি?

ইনারাঃ হ্যাঁ।

এরপর আর উওর এলো না সভ্যের। ইনারা আড়চোখে বারবার দেখতে থাকলো ফোনের দিকে। কিন্তু তখন কোনো মেসেজ আর আসে না। মেসেজ আসে আধাঘন্টা পর।
সভ্যঃ আমি সুরভির বাসার সামনে। একটু বাহিরে আসো।

ইনারা মেসেজ পেতেই ফোনটা দ্রুত হাতে নেয়। তার মনে তখন উড়ু উড়ু ভাব। কিন্তু ভাবটা মুহূর্তে চমকে পরিবর্তন হয়। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে। তারপর বিছানা থেকে নেমে সুরভিকে জিজ্ঞেস করে, “ঘরে কেউ জেগে আছে?”
“না, কেন? তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
“তুই খেয়াল রাখিস। আমি এই যাচ্ছি, আর আসছি।”

বলেই দৌড়ে যায় ইনারা। রাগ, অভিমান সব পিছনে ফেলে। এই প্রথম। এমনটা আগে কখনো হয় নি। কেউ একবার তাকে কষ্ট দিলে তাকে সহজে ক্ষমা করে না সে। জোহানের উদাহরণও দেওয়া যায়। কি করে এত বছরের পছন্দ মুহূর্তে ভুলে গেল সে। তাকে অপমান করেছে বলে। কিন্তু সভ্যের প্রতি তার রাগ, মান, অভিমান কিছুই ধরে রাখতে পারে না।

ইনারা দরজার বাহিরে যেয়ে দেখে আসলেই সভ্য দাঁড়ানো। তার পিছনে একটি সাদা রঙের গাড়ি। তার হাতে ফোন। কিছু একটা করছে সে। সাথে সাথে তার ফোনে মেসেজ এলো।

সভ্যঃ ইনারা একটু আসো না প্লিজ। কেবল একবার দেখব তোমায়। কেবল একবার।

মেসেজটা দেখে নিজ অজান্তেই হাসি এঁকে উঠে ইনারার ঠোঁটের কোণে। সে সভ্যের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। নিজের ঠোঁটের মুচকি হাসি লুকানোর চেষ্টা করে বলে,”কী ব্যাপার আপনি এখানে কেন?”
সভ্য কিছু বলে না। ল্যাম্পপোস্টের বাতির আলোয় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনারার দিকে। হঠাৎ করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে।

চমকে উঠে ইনারা। আকস্মিকতায় তার হাত থেকে ফোন ছুটে পরে যায় রাস্তায়। এই নির্জন রাস্তায় সে স্পষ্ট শুনতে পায় সভ্যের নিশ্বাসের শব্দ, অনুভব করতে পারে তার নিশ্বাসের উষ্ণতা।

সভ্য শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রণয়ীকে। মুখটা লুকানোর চেষ্টা করে তার কাঁধে। তার কেন যেন খুব কাঁদতে মন চাইছে। কিন্তু তার চোখ দিয়ে জল আসে না সহজেই। তবুও তার হাত পা কাঁপছে। তার গলার স্বর কাঁপা-কাঁপা। সে এখন পর্যন্ত ভাবতে পারছে না জোহান সুসাইড করার চেষ্টা করেছে। তার জীবনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল অথচ সে পাশে ছিলো না। অথচ একসময় সে এবং জোহান ওয়াদা করেছে যে সবসময় একে অপরের খেয়াল রাখবে। একে অপরের জন্য জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। অথচ যখন জোহান তার জীবন দেবার চেষ্টা করেছিল তখন সে তার সাথেই ছিলো না? ভাবতেই কেমন বুক কেঁপে উঠে তার। অশান্তি লাগে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ইনারাকে জড়িয়ে ধরার পর তার অশান্তি ভাবটা কমেছে।

ইনারার কন্ঠ শুন পায় সে, “কী…কী করছেন?”
“আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকি প্লিজ।” কাঁপানো গলায় বলে সভ্য।
ইনারার পক্ষ থেকে আর কোনো শব্দ আসে না। কিন্তু সভ্য আভাস পায় ইনারা তার একটি হাত সরিয়ে নেয়। সে হাতটা নেয় নিজের হাতে। আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে দেয়। আর মৃদুস্বরে বলে, “আপনি শান্ত হন। আমি আছি আপনার সাথে।”

চলবে…..

অনুভবে
পর্ব-৪১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

প্রায় একমাস কেটে যায়। ইনারা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। হঠাৎ তার বাবা একদিন তাকে ডাকে। ঘটনাটা ঘটে ঠিক তার চাকরি থেকে বের করার কিছুদিন পরেই। আচমকায় তাকে বলে, “তোমাকে আব্দুল বলে নি যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি?”
“কীসের জন্য ক্ষমা করেছেন? কী ভুল করেছি আমি?”
মুশতাক সাহেব কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। কিন্তু সহ্য করে নেয়। কঠিন কিছু বলে না। শান্ত গলাতেই বলে, “তোমার বেয়াদবি ক্ষমা করেছি। তোমার আর কাজ করার প্রয়োজন নেই। আমি একমাস আগেই আব্দুলকে জানাতে বলেছিলাম।”
“হুম, পার্টির ঠিক একদিন পর। জানিয়েছে।”
“এখন পড়াশোনায় মন দেও। তোমার যে ভার্সিটিতে ইচ্ছা ভর্তি হতে পারো।”
কথাটা শুনে একটু খুশি হয় ইনারা। বাবা তার কথা ভাবছে জেনে তার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। সে হাসিমুখে বলল, “আমি এক্টিং ক্লাসেও ভর্তি হতে চাই।”
কথাটা শুনেই কপাল কুঁচকে নেয় মুশতাক সাহেব, “কেন?”
“আমার ছোট থেকে মা’য়ের মতো অভিনেত্রী হবার ইচ্ছা। জানোই তো। তাই…”
“সম্ভব না।”
“কেন? আইজা আপু হতে পেরেছে। আমি পারব না কেন?”
“ইনারা…” রাগে উঁচু স্বরে বলতে বলতে শান্ত হলেন মুশতাক সাহেব। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে আবার বলে, “আপাতত পড়াশোনায় মন দেও। আর তোমার অভিনেত্রী হবার আশা ছেড়ে দেও। আমি এটা কখনোই হতে দিব না।”

একমাস আগে মুশতাক সাহেব হুমকি দিয়ে কথাটা বললেও ইনারা এভাবে চুপ করে থাকার ব্যক্তি না। তাকে যা জোর করা হবে সে করবে তার ঠিক উল্টো। তাই সে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটির থিয়েটারে যোগ দিলো। এমন কি প্রথমবারেই তাকে সে প্রধান চরিত্রের মাঝের একজন হিসেবে বাছাই করা হলো। তাদের প্রথম নাটকটা হয় নবীনবরণের দিন। নাটকটা একটি বন্ধুমহলকে ঘিরে। সকল বন্ধুদের জীবন কীভাবে সময়ের সাথে সাথে কীভাবে পরিবর্তন হয় এবং বন্ধুত্ব কেমন করে পালটায় তা নিয়েই নাটকটা। ইনারার ছোট থেকেই যেহেতু অভিনয়ের শখ তাই সে প্রায়ই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করতো। অনেক ছবি দেখতো। এ থেকেই তার অভিনয় শেখা। যদিও তার অভিনয় একদম ভালো তা নয় কিন্তু তার অভিনয়ে নৈপুণ্যতা প্রকাশ পায়।

ইনারা প্রচুর নার্ভাস। এত বড়ভাবে সে কখনো কোনো নাটকে অংশগ্রহণ করে নি। সে শুনেছে আজ না-কি প্রধান অতিথি হিসেবে পরিচালক আলতাফ আসছে। দেশের বড় বড় পরিচালকদের মধ্যে তার নাম অন্তর্ভুক্ত। তার সামনে অভিনয় করাটা অনেক বড় ব্যাপার। তার মেকাপ করা হচ্ছিল। এমন সময় কল আসে সভ্যের।
“হ্যালো ম্যাডাম, কী খবর আপনার? নাটকের প্রিপারেশন কেমন?”
সভ্যের সাথে প্রতিদিনই কথা হয় ইনারার। অফিসে দেখা না হলেও প্রতি সাপ্তাহে এক দুইবার তাদের দেখা হয়। তবে আজ পর্যন্ত সে সভ্যকে চাকরি থেকে বের করার কথা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে নি। যদিও সভ্য নিজে তাকে বলেছে তার কারণ ভিন্ন। তার পড়াশোনার জন্য বাদ দিয়েছে তাকে। তার কথাটা বিশ্বাস করতে মন চায় কিন্তু নিজের কানের শোনা কথাটা কীভাবে অমান্য করে সে? এছাড়া সভ্য তো জানে সে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তাহলে একবারও কি তার কথা ভাবে নি?
এমন অনেক প্রশ্ন আসে ইনারার মনে। কিন্তু তা মনেই থেকে যায়। সে আর জিজ্ঞেস করে না। স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে সভ্যের সাথে। হয়তো কোনো একদিন জিজ্ঞেস করবে। জিজ্ঞেস করবে তার মনে থাকা সকল প্রশ্ন। কিন্তু সময়টা এখনও আসে নি।

ইনারা উওরের পরিবর্তে পালটা সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে কি জিজ্ঞেস করছেন? আপনি কোথায়? এখনো রওনা দেন নি?”
“কিছু কাজ আছে। শেষ হতেই রওনা দিব।”
“কী আপনি এখনো রওনা দেন নি!” চেঁচিয়ে উঠে ইনারা। একটি রুমের মাঝেই সকল মেয়ের মেকাপ হচ্ছিল। ইনারার গলার স্বর শুনে তার পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা ভয়ে লাফিয়ে উঠে। ইনারা আরও রাগী কন্ঠে বলে, “আপনি যদি সময়ে এখানে এসে না পৌঁছান তাহলে আপনাকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে কুকুরদের খাওয়াব। বুঝলেন?”
“আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।”
“আপনার ভয় পাওয়া উচিত। আপনি সময়ে না আসলে খবর আছে আপনার। অসভ্য একটা।”
“ওকে বাবা বের হচ্ছি। আর শুনো, নার্ভাস হবে না। তুমি অনেক পরিশ্রম করেছ। আমি জানি তুমি অনেক ভালো অভিনয় করবে।”
মুচকি হাসে ইনারা। ফোন রেখে সে বসতেই দেখে আশেপাশের সকলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলে, “আমার মুখে কি মধু আছে? নিজের কাজ করো সবাই।”
সাথে সাথে সকলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার মেকাপ করা মেয়েটা তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার বয়ফ্রেন্ড নাটক দেখতে আসছে?”
“আমার বয়ফ্রেন্ড নেই।”
“তাহলে হাসবেন্ড?”
“আমাকে বিবাহিত মনে হয়?” চোখ দুটো বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে ইনারা। মেয়েটা হেসে দেয়, “তা নয়। কিন্তু যেভাবে ফোনে কথা বলছিলো মনে হলো বিশেষ কেউ।”
কথাটা শুনে লজ্জা পায়, “বিশেষ কেউ-ই। কিন্তু বিষয়টা জটিল। মানুষটার মনে কি চলে বুঝি না। সে রহস্যের মতো। সে রহস্য ভেদে তার মনের কথন আমি জানতে পারি নি। না এ কিনারার রইলাম, আর না ও কিনারার। আমি একতরফা প্রেমে পড়ে মাঝপথে ভাসছি।”
“অসম্ভব। তোমায় দেখে কোনো পুরুষ না প্রেমে পড়ে থাকতে পারবে আমি বিশ্বাসই করি না। আমি নিজে ছেলে হলে তোমাকে অপহরণ করে নিয়ে যেতাম।”
ইনারা হাসে, “সে রূপ দেখে প্রেমে পড়ার মানুষ নয়। হাজারো রূপবতী তার আগেপিছে ঘুরে। সে কারও দিকে চোখ তুলেও তাকায় না। এজন্যই তো তার প্রেমে পড়েছি আমি।”
.
.
সভ্য খুব দ্রুত সব কাজ করছে। আজ রাতে তার ফ্লাইট।আগামী সাপ্তাহ থেকে এক্সাম তার। তার পড়াশোনা করার জন্য আগে দিয়েই যাচ্ছে। সব জলদি করে শেষ করে ইনারার ফাংশনের জন্য বের হতে নিবে তখনই একজন আরও কয়েকটি ফাইল নিয়ে আসে। তার অনুপস্থিতিতে ঐশি, সামি এবং ইরফানের প্রজেক্টগুলো তারই এপ্রুভ করে যেতে হবে। ভবিষ্যতে কোথায় ইন্টারভিউ দিবে বা কোন কোম্পানির এড করবে কি করবে না, এসব। মিঃ হকের তার ছেলে বাদে অন্যকাওকে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। এসব বিষয়ে একবার গাফিলতি হওয়ায় অনেক সমস্যা হয়েছিলো তাই সভ্য এপ্রুভাল দিলেই এসব কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। সভ্য ফাইল দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। এখন এসব নিয়ে বসলে ইনারার কনসার্টে যেতে দেরি হয়ে যাবে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর আবারও বসে ফাইলগুলো নিয়ে।
.
.
স্টেজে উঠে ইনারার দৃষ্টি সর্বপ্রথম খুঁজে সভ্যকে। কিন্তু সে নেই এই ভিড়ের মাঝে। সামি এবং জোহান আছে। তারা বসেছে বিশেষ অতিথির পাশেই। পঞ্চসুরের সবাইকেই আমন্ত্রণ করেছিলো সে। কিন্তু সে ভেবেছিলো সভ্য ছাড়া কেউ-ই আসবে না। কিন্তু এখন তার দৃষ্টি জোড়া সভ্যকেই খুঁজে পাচ্ছে না।

নাটক প্রায় অর্ধেক শেষ হয়ে এলো কিন্তু সভ্য আসে না। ইনারার দৃষ্টি যে তাকে খুঁজতে ব্যস্ত থাকবে মানুষটা কেন বুঝে না? আজ তার জীবনের এত বিশেষ দিনে সে কেবল তাকে চাইতো। সে চাইতো লোকটা তাকে স্টেজে অভিনয় করতে দেখুক। কিন্তু তার তো খবরই নেই। এমন কী জরুরী কাজ এসে পড়লো তার সে তার সাথে দেখা করার সময়ও হয় না। এখন তার চরিত্র নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য। কিন্তু তার ধ্যান এখনো প্রবেশদ্বারের দিকে। তার খুব অস্থির লাগছে। সে তার দৃশ্যটা প্রদর্শন করার পূর্বে আবার তাকালো দরজার দিকে। দেখলো একটি লোক দ্রুত দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। মুখে মাস্ক এবং মাথায় নীল রঙের ক্যাপ পরা। তাকে চিনতে এক মুহূর্তও লাগে না ইনারার। চোখে মুখে খুশির ঝলকে ওঠে। তাকে দেখতেই মুহূর্তে অস্বস্তিভাবটা দূর হয়ে যায় ইনারার। সে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার দৃশ্যটা প্রদর্শন করে। দৃশ্যটা ছিলো ভীষণ আবেগী। যা ভালো করে প্রদর্শন করে ইনারা। তার অভিনয়ে অনেকের চোখে জল এসে পড়ে। তালির শব্দে গুঁজে উঠে চারপাশ।

অভিনয় শেষে সকলে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সভ্যকে আর দেখতে পায় না সে। তার ফোনে সামির মেসেজ আসে, “পোলাপানদের থেকে বাঁচার জন্য তোমার প্রিন্সিপাল আমাদের স্টাফরুমে নিয়ে এসেছে। গার্ডকে বলেছি তোমাকে আসতে দিতে। জলদি করে চলে আসো পার্টনার অটোগ্রাফ নিব।”

ইনারা বুঝে নেয় সভ্যও সেখানে। সে এক দুই না ভেবে সেখানে ছুটে যায়। যাবার পথে সে দেখে তাদের প্রিন্সিপাল আলতাফ সাহেবকে নিয়ে যাচ্ছে। আলতাফ সাহেব তার দিকে আড়চোখে তাকালেন এক মুহূর্ত। তার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছা ছিলো ইনারার কিন্তু তাকে দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেল সে। কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। তাই নিজেকে মনে মনে বকে রুমে গেল। রুমে ঢুকতেই সামি ছুটে এসে ইনারার সামনে হাত পেতে বলে, “ম্যাডাম অটোগ্রাফ প্লিজ।”
হাসে ইনারা, “আমার অটোগ্রাফ তো অনেক এক্সপেন্সিভ। টাকা প্লিজ।”
সামি মুখটা মলিন করে বলে, “পার্টনার তুমি আমার থেকে টাকা নিবা?”
“আবার জিগায়, পার্টনারশিপ আলাদা আর টাকার ব্যাপার আলাদা।”
জোহান তখন বলল, “ব্লাঙ্ক চেক কাটতে রাজি। তবে কেবল আমাকেই দিতে পারবে।”
ইনারা মৃদু হাসে। উওর দেয় না তার কথার।

রুমে প্রবেশ করে সভ্য। দরজা বন্ধ করে জিজ্ঞেস করে, “কিসের সভা বসলো এখানে?”
কোনো উওর পাবার পূর্বেই ইনারা তার বাহুতে মেরে বসলো। আর চোখজোড়া ছোট করে জিজ্ঞেস করল, “ছিলেন কোথায় আপনি? সাহস কত আমি বলার পরও দেরি করে আসেন?”
” কি মেয়েরে বাবা। দেখতে এতটুকু কিন্তু গন্ডারের মতো শক্তি!”
“আপনি আমাকে গন্ডার বলতে পারলেন? আপনাকে তো।”
ইনারা সভ্যকে আবার মারতে নিলে সে হাত ধরে নেয়, “আর কাজ সব বানরের মতো।”
“আপনি বান্দর। আপনাকে বান্দরের খাঁচায় ফেলে আসলে তো কেউ মানুষ হিসেবে চিনবেও না।”
“হিহি খুব রসিকতা করে ফেলেছ তাই না? হাসবো?”
“একদম না। ব্যাঙের মতো দেখা যায় হাসলে।”
“তোমাকে….”

দুইজনের মাঝে না বলা একটা অধিকার আছে যা জোহানের কিছুতেই সহ্য হয় না। সে দুইজনের কথা থামিয়ে বলে, “ইনারা, আম্মুকে তোমার প্লে এর কথা বলেছিলাম। সে খুশিতে তোমার জন্য হালুয়া রান্না করেছে। তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।”
সভ্য তাকায় জোহানের দিকে, “কিন্তু আজকে সবার আমার বাসায় আসার কথা। আমি কাল সকালে…”
“আমি তোর সাথে কথা বলছি না।”
মুহূর্তে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল। ইনারা বুঝতে পারছে না সে কি করবে। না সে সভ্যকে কষ্ট দিতে চায়, আর না সৌমিতা আন্টিকে আঘাত করতে চায়। সে সভ্যের দিকে তাকাল।

জোহান তখন আবারও বলে, “তুমি না গেলে মা কষ্ট পাবে।”
ইনারা কিছু মুহূর্ত নিয়ে বলে, “আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
সে চলে গেল। জোহান বাঁকা হেসে তাকায় সভ্যের দিকে, “জোহান যা চায় তা পাবে না এমন হতেই পারে না।”
সামি ভ্রু কপালে তুলে বলে, “ওহ জোহানও একটু এগোচ্ছে তাহলে। সভ্য- সাতাশ এবং জোহান-আট।”
জোহান এবং সভ্য দুইজনেই অবাক হয়ে তাকায় সামির দিকে। দুইজনের এমন দৃষ্টি দেখে সামি ভয়ে জোরপূর্বক হেসে বলল, “মানে ইনারাকে নিয়ে তোদের পয়েন্ট গুনছিলাম আরকি। কে কতবার জিতে। সভ্য এগিয়ে আছে।”
জোহান সভ্যের দিকে তাকিয়ে আত্নবিশ্বাস নিয়ে বলে, “যে যত এগিয়ে থাকুক না কেন! বিজয়ী তো আমিই হবো।”
“আন্টিকে ব্যবহার করে?” শান্ত গলায় বলল সভ্য, ” ইউ নো হোয়াট জোহান তোর করা সবচেয়ে বিশ্রী জিনিসের মধ্যে একটা হলো তুই ইনারাকে পাবার জেদ পূরণের জন্য আন্টিকে ব্যবহার করছিস।”
“ওহ প্লিজ আমি আমার পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছি।”
“নিজের মা’কে ব্যবহার করা তোর পদ্ধতি? তুই আগে আন্টিকে কত ভালোবাসতি আর সম্মান করতি আর এখন কেবল তোর জেদ পূরণের সময় নিজের মা’য়ের কথা মনে পড়ে?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে সভ্য। জোহানের অবস্থা জানার পর তার সাথে নরম কন্ঠে কথা বলতে হবে তার। কিন্তু সে নিজের রাগে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। সে আবারও জোহানের কাঁধে হাত রেখে বলল, “দেখ ভাই, আমি জানি তোর মাঝে এখনো আগের জোহানটি বেঁচে আছে যে সবাইকে ভালোবাসতো, এবং যাকে সবাই ভালোবাসতো।”
জোহান তার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়, “এখনো সবাই আমাকে ভালোবাসে। আরও বেশি মানুষ ভালোবাসে। তাই আগের কেউ আমার জীবনে না থাকলেও আমার কিছু আসে যায় না। আর তোর এতই আমার চিন্তা থাকলে ছেড়ে দে ইনারাকে। আর সব ঠিক হয়ে যাবে।”
হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে মৃদু হাসে সভ্য। তাকায় জোহানের দিকে, “তুই তো জানিস আমি গানকে কত ভালোবাসি। জীবনের অর্ধেক সময় কেবল গানে আমার খুশি খুঁজেছে। তুই এই মুহূর্তে একবার বললে আমি আমার গান ছেড়ে দিতে পারব। কিন্তু ইনারাকে, কখনোই না।”
সভ্য পিছনে ফিরে যাবার জন্য রওনা দেয়। তখনই জোহান বলে উঠতে, “তুই এটা তো জানিস ইনারা একসময় আমাকে ভালোবাসতো। পাগল ছিলো আমার জন্য। হয়তো রাগ করেছে, বা অভিমান। একসময় তা গলে যাবে এবং ও আমার কাছে ফিরে আসলে। তোর মনে হয়েছে তুই কখনো ওর অনুভবে ছিলি?”
সভ্য এক পলক তাকায় জোহানের দিকে। তারপর চলে যায়।
.
.
সভ্য কাওকে না বললেও ইনারার না আসায় সে খুব কষ্ট পায়। আগামীকাল চলে যাবে সে। শেষবারের মতো ইনারার সাথে সময় কাটাবে না? এর উপর জোহানের শেষ কথাটা তাকে খুব জ্বলাচ্ছে। কথাটা তো মিথ্যা নয়। ইনারা আসলেই একসময় জোহানকে পছন্দ করতো। সে কি আবার জোহানের কাছে ফিরে যাবে না তো?

রান্নাঘরে কেক বানাচ্ছিল সে। সকলে বাহিরে গেছে তার জন্য কিছু গিফট নিতে এবং ডিনার আনতে। যাবার আগে ঐশী আবদার করে গেছে সে ব্রাউনি খাবে। তাও কেবল সভ্যের হাতের। তাই সে বানাতে শুরু করে। এমন সময় কলিংবেল বাজে। সে হেলেদুলে যায় দরজার কাছে। দরজা খুলতেই তার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ঠোঁটে হাসি এঁকে আসে, “তুমি!”
ইনারা সভ্যের হাতে ব্যাগটা দিয়ে ঘরে ভেতর ঢুকে যায়,”সৌমিতা আন্টিকে দিয়ে আপনার জন্য খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করিয়ে এনেছি। হালুয়াও আনলাম। কিন্তু আপনি তো মরিচপ্রেমি মানুষ, আমার মতো মিষ্টি তো আর নয় যে হালুয়া খাবেন। তাই আপনার ভাগটা আমার।” বলে এক গভীর নিশ্বাস ফেলে সে। আবার বলে, “কথা বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি। মানুষ একটু পানি জিজ্ঞেস করে নাকি?”
কিন্তু এতক্ষণে ইনারা নিজেই ফ্রীজ থেকে পানি নিয়ে পান করতে শুরু করে। আবারও জিজ্ঞেস করে, “আপনার ঘর এত অগুছালো কীভাবে? দুনিয়া উল্টায় গেলেও তো নিজের ঘর অগুছালো হতে দেন না।”
সভ্যের ঠোঁটের হাসিটা বিদ্যমান। প্রশান্তির সে হাসি। ইনারার আসাতে নিজেকে খুব বিশেষ মনে হতে লাগলো। এটা গর্বিত হবার কোনো বিষয় না। তবুও সে গর্ব অনুভব করছে। কিন্তু সে ইনারার সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলল, “এখন তোমার মতো অগুছালো মেয়েকে সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত আমি।”
“আমি মোটেও অগুছালো না।”
“তুমি আসার পর প্রতিবার আমার একঘন্টা লাগে ঘর গুছাতে।”
ইনারা মুখ ফুলিয়ে নেয়।
সভ্য হাসে। বলে, “আমি যাবার পর এক মাস তো খালি থাকবে। তাই ভাবলাম একটু রেনোভেট করাব। এ দেয়াল জুড়ে পেইন্টিং করা হবে। তোমার কি ধরণের পেইন্টিং পছন্দ।”
“ঘর আপনার আমার পছন্দ দিয়ে কি করবেন।”
“ভবিষ্যতে তো তোমারও হবে।” বিড়বিড় করে বলে সভ্য।
“কী বললেন?”
“কোথায়? কিছু না।”

দুইজনে রান্নাঘরে যায়। ইনারা বসে কিচেন কাউন্টারে। সে হালুয়ার বাটি হাতে নিয়ে বসে। সভ্য তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার চকোলেট ব্রাউনি পছন্দ না। তাই না?”
“ঠিকঠাক। বেশি ভাল্লাগে না।”
সভ্য ব্রাউনি বাদ দিয়ে প্রস্তুতি নিলো কফি ফ্লেভার কেক বানানোর। ইনারা এর মধ্যে তার বকবকানি করতেই থাকে। ব্যাকস্টেজে কত কি হয়েছে এসব বলে। কথায় কথায় সে বলে ফেলে, “জানেন আজ আপনার ফোন রাখার পর একজন আমাকে বলে আমার ফোনে কথা বলার ধরণে ও বুঝেছে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড বা হাসবেন্ড। আমি তো শকড। আমি এতটুকু একটা মেয়ে, আমাকে না-কি বিবাহিত বলে মেয়েটা। আর বলেন তো আপনার সাথে আমি এভাবে কথা বলি নাকি?””
কথাটা শুনে সভ্য। তার মাথায় ঘুরে দুষ্টুমি বুদ্ধি। সে ইনারার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। কাউন্টারে সে যেখানে বসে ছিল তার দুই পাশে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ইনারার দিকে। ভারী কন্ঠে বলে, “তাইতো, তুমি এভাবে আমার সাথে কথা বলো কেন যে লোক ভাবে তুমি আমার বউ।”

সভ্যের কথাটি বলার কন্ঠ সম্মোহন করার মতো। ইনারার গালদুটো মুহূর্তে লাল হয়ে এলো। লজ্জায় রঙে যায় সে। চোখ নামিয়ে নেয়।
সভ্য মুখ টিপে হাসে। আবারও জিজ্ঞেস করে, “এখন তুমি যদি অন্যকে এটা দেখাতে চাও তুমি আমার বউ সেটা মুখে বললেই তো পারো।”
বলেই সে ইনারার হাত থেকে হালুয়া খেয়ে নিলো। এবং আবারও নিজের কেক বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। ইনারা লজ্জিত ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনার তো মিষ্টি পছন্দ না। তাহলে খেলেন কেন?”
“তোমার হাত থেকে খেয়েছি তো তাই ঝাল লেগেছে। মিস বোম্বাই মরিচ।”
“কী বললেন আপনি আমাকে? সারাক্ষণ বোম্বাই মরিচের মতো আমার সাথে ঝগড়া করতে থাকো। তাই নতুন উপাধি দিলাম।”
ইনারা রাগে কটমট করতে থাকে। সে বিড়বিড় করে বলে, “ব্যাটায় আমাকে একটু লজ্জাও পেতে দেয় না। এক মুহূর্তে রোমেন্টিক কথা বলে অন্য মুহূর্তে ফিরে যায়। এই ব্যাটার মাথায় কি চলে তা যদি একটু খুলে দেখতে পারতাম।”
সে নিচে নেমে কাউন্টার থেকে দুই মুঠো ভর্তি ময়দা নিয়ে সভ্যের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি মরিচের মতো ঝগড়া করি তাই না? নেন তাহলে মিঃ অসভ্য মরিচের ঝাল বুঝেন।” বলেই সে সভ্যের মুখে মাখিয়ে দিলো তার হাতের ময়দা।
সভ্য হতবাক। তার মুখে, জামা কাপড়ে ভরে গেছে ময়দা। সে তা পরিষ্কার করতে করতে রাগান্বিত স্বরে বলে, “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
ইনারা সভ্যকে দেখে হাসতে হাসতে কাহিল, “আমার মাথা এখনো খারাপ হয়েছে কিনা জানিনা তবে আপনাকে যে হুবহু জোকারের মতো লাগছে এই মিল দেখে ভবিষ্যতে হতে পারে।”
“তবে রে…মজা বুঝাচ্ছি তোমাকে দাঁড়াও। পালাচ্ছ কোথায়?”

ইনারা দৌঁড়ে যেতেই সে তার পিছু ছুটে। ইনারা বেশিক্ষণ পালাতে পারে না। রান্নাঘর থেকে বের হবার পূর্বেই সভ্য তাকে পিছন থেকে ধরে নেয়। তার গালে গলায় মেখে দেয় হাতে থাকা ময়দা। ইনারা অনুরোধ করে বলে, “আচ্ছা আর দুষ্টুমি করব না। ছাড়ুন এবার।”
“তোমাকে বিশ্বাস করব আমি?”
ইনারা এবার মৃদুস্বরে বলল, “আপনি আমার একটু বেশি কাছে এসে পড়েছেন।”
সভ্য খেয়াল করল সে আসলেই ইনারাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তার এক হাত ইনারার পেটে রাখা অন্যহাত কাঁধে। খেয়াল করতেই সে ছেড়ে দেয় ইনারাকে। সাথে সাথে পিছিয়ে যেয়ে মাথা নিচু করে বলে, “সরি। খেয়াল করি নি।”

কিন্তু ইনারার মাথায় তো অন্যকিছু চলছিলো। সে বলল, “আচ্ছা আসুন আপনার মুখ পরিষ্কার করে দেয়।”
ইনারা সভ্যকে নিয়ে যেয়ে বসে সোফায়। যত্ন করে মুছতে থাকে তার মুখে লাগা ময়দা। তারপর চুল নিজের হাত দিয়ে ঝেরে দেয়।

সভ্য মুগ্ধ নয়নে তাকে দেখতে থাকে। তার এই যত্ন নেওয়াটা খুব ভালো লাগে তার। তার নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ বুকের ভেতর অন্যরকম এক আবেগ জাগিয়ে তুলে।

ইনারা আড়চোখে তাকায় পাশে থাকে পেইন্টের বোতলের দিকে। সে একটি ব্রাশে পেইন্ট নিয়ে ঝট করে সভ্যের মুখে লাগিয়ে দেয়।
হঠাৎ এমন করায় সভ্য বুঝে উঠতে পারে না। সে গালে হাত রেখে অস্থির সুরে জিজ্ঞেস করে, “কি করেছ তুমি?”
“আমাকে জব্দ করা এত সহজ নয় মিঃ অসভ্য। জিতব তো আমিই। শেষ পর্যন্ত আপনাকে আমিই রঙে দিলাম।”
বলে খিলখিল করে হাসে ইনারা। মেয়েটার হাসি দেখেই মন গলে যায় তার। সে আবার রঙ লাগাতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়। টান দেয় তাকে নিজের দিকে। চোখে চোখ আটকায়। হয় মধুর দৃষ্টিমিলন। তার ক্লিপ খুলতেই চুলগুলো ঝরঝরে পড়ে তার পিছু। কিছু অবাধ্য চুল তার সৌন্দর্য বাড়াতে কপালে এসে পড়ে। সভ্য বাঁকা হাসে। ইনারার দিকে এগিয়ে যেতেই সে চোখ টিপে বন্ধ করে নেয়।

সভ্যকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। কি চলছে তার মাথায়? কি চায় সে? ধারণাও করতে পারছে না সে। তার হৃদয়ের স্পন্দন দিশেহারা হয়। গালে ছোঁয়া পায় সভ্যের। সাথে সাথে শিউরে ওঠে সে।

সভ্য ইনারার গালে নিজের গাল মিশিয়ে রঙটা তাকেও মাখিয়ে দেয়। একটু সরে সে তাকায় ইনারার দিকে। হাসে। ইনারার দিকে ঝুঁকে তার চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয় এবং মৃদুস্বরে বলে, “এবার তো তুমি আমার রঙে রঙিন হয়ে গেলে। এখন কি করবে?”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে