Shadow_in_love Part-3

0
1921

#Shadow_in_love

Part-3

#ফাবিহা_নওশীন

??
আরহান অনেক চেষ্টা করেও ঘোড়ার মালিককে খোজে বের করতে পারেনি।আরহান মালিককে না খোজে পাওয়া পর্যন্ত ঘোড়াকে নিজের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।
ঘোড়ার থাকার জন্য একটা ঘর বানিয়ে দিয়েছে।আরহান যত্ন করে নিজ হাতে ঘোড়াকে খাওয়ায়,গোসল করায়।

আরহান থ্রি কোয়াটার প্যান্ট,সাদা টিশার্ট পড়ে ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াচ্ছে।তখন কেউ ফোন করে।
—–হ্যালো।

—-…….

আরহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–ওকে।

আরহান রেডি হয়ে ঘোড়াকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
আয়েশা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে পার্কে ঘুরতে গেছে।পার্কের সাথে মাঠের মতো একটা খালি জায়গা আছে।আরহান সেখানে ওর ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াচ্ছে।
আয়েশা পার্কে থেকে বের হয়ে একটা সাদা ঘোড়া দেখতে পেলো।
আয়েশা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।ঘোড়াটা ওকে কেমন যেনো টানছে।
আয়েশা ওর বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে বললো,
—-তোরা যা আমি আসছি।

ওর বান্ধবীদের রেখে আয়েশা একা একাই ঘোড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আয়েশা ঘোড়ার সামনে দাড়িয়ে আনমনে ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দূর থেকে আরহান দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আয়েশাকে দেখছে।

তারপর মুখ গম্ভীর করে আয়েশার সামনে এসে বললো,
—–এই মেয়ে আমার ঘোড়াকে আদর করে চুরি করার ফন্দি করছো?

আয়েশা কারো এমন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো তারচেয়ে বেশি হকচকিয়ে গেলো কথাটা বলা ব্যক্তিকে দেখে।আয়েশার ব্রেইন বলছে এই ব্যক্তিকে কোথাও দেখেছে।

আরহান ভ্রু কুচকেবললো,
—–এইভাবে চেয়ে আছো কেন?

আয়েশা ঘাবড়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
—–না মানে ইয়ে…মনে হচ্ছে আপনাকে কোথাও দেখেছি।কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছিনা।

আরহান মনে মনে বলছে এর ব্রেইন এতো ডেম।আমি একদেখায় সারাজীবনের জন্য সেইভ করে ফেলেছি আর ও মনেই করতে পারছেনা।
আরহান গলা ঝেড়ে বললো,
—–আচ্ছা ধরা পড়ে গিয়ে আমাকে পটানোর ধান্দা।

আয়েশা বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–পটানোর ধান্দা মানে….
এই ওয়েট ওয়েট আপনি তো সেই….(ভীত হয়ে)

—–সেই কি?

—–ভূতের মতো চোখ ওয়ালা লোক।

—–কিহ!!! আমার চোখ ভূতের মতো? তুমি জানো আমার এই চোখের উপর কত মেয়ে ক্রাশ খেয়েছে?

আয়েশা ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,
—–জানিনা।কতজন?

আরহান আয়েশার প্রশ্ন শুনে হতবাক।এটা তো কথার কথা বলেছে।আর ও একুরেট কত জন জানতে চাইছে।
—–ওসব বাদ দেও কি যেনো বলছিলে কোথায় দেখেছো?

আয়েশার মনে করানোর চেষ্টা করে বললো,
—–ওই যে কিছুদিন আগে আমি ভূতের ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই,আর আপনি আমার জ্ঞান ফেরান তারপর বাসায় পৌছে দেন।

আরহান মনে পড়ার ভান করে বললো,
—-আরে হ্যা,,হ্যা,,মনে পড়েছে।তুমি সেই ষ্টুপিড গার্ল যে কিনা আমাকে বাড়িতে নিয়ে কফি অফার তো দূর একটা থ্যাংকস পর্যন্ত দেওনি।

আয়েশা লজ্জিত ভংগীতে বললো,
—–সরি,,আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম।আর তার সাথে আপনার চোখ দেখে বেশি ভয় পেয়েছি।ভেবেছি,,

—–ভেবেছো?(আগ্রহ নিয়ে)

—–ভূত।(মাথা নিচু করে)

—–তোমার সব কথা কি ভূত নিয়ে?ভূত ছাড়া কথা বলতে পারোনা?যত্তসব।(কিছুটা রেগে)

—–আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।

—–ওকে ওকে,, (ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে)

আয়েশা আগ্রহ নিয়ে বললো,
—–নাম কি?

আরহান মাথা তুলে বললো,
—–আরহান আহমেদ খান।

—–ঘোড়ার এতো বড় নাম হয়??!!(বিস্ময় নিয়ে)

আরহান হতবাক।মনে হচ্ছে স্ট্রোক করবে।বেচার এই দুঃখ কই রাখবে।
—–লিশেন ঘোড়ার নাম আরহান নয় আমার নাম আরহান।

—-ওহহ!! তা ঘোড়ার নাম কি?

—–কোনো নাম নেই।

—-এতো সুন্দর ঘোড়া অথচ নাম নেই?

—-রিসেন্টলি নিয়েছি তো তাই।তোমার ইচ্ছে হলে তুমি একটা নাম রেখে দেও।

—–ঘোড়াটা ছেলে না মেয়ে?

আরহান আয়েশার দিকে চেয়ে রইলো।কি উত্তর দিবে?ঘোড়া ছেলে না মেয়ে?
—–জানিনা।

—–ঘোড়া কিনেছেন আর জানেন না ছেলে না মেয়ে?
যাইহোক ছেলে-মেয়ে কোনো ফ্যাক্ট না।এত সুন্দর একটা ঘোড়া।কি নাম দেওয়া যায়?উমম(কিছুক্ষণ ভেবে)
“এঞ্জেল” ওর নাম “এঞ্জেল”।

আরহান অস্ফুটস্বরে উচ্চারণ করলো,।এঞ্জেল,,নট ব্যাড।ওকে ডান।ওর নাম এঞ্জেল।
ঘোড়ার মুখ তুলে আরহান বললো,
—–এই শুনেছিস তোর নাম এঞ্জেল।নাম পছন্দ হয়েছে?

ঘোড়া মাথা ঝাকিয়ে হর্ষধ্বনি দিলো।যার মানে পছন্দ হয়েছে।
আয়েশার চোখ মুখ আনন্দে জ্বলজ্বল করছে।আয়েশার ইচ্ছে করছে ঘোড়ার উপরে চড়তে।
কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছেনা।আয়েশা এঞ্জেলের কানে ফিসফিস করে বললো,
—–আমি তোর এতো সুন্দর একটা নাম দিলাম আর আমাকে এনাম দিবিনা?আমাকে তোর পিঠে চড়তে দিবি?

আরহান বুঝার চেষ্টা করছে আয়েশা কি করছে।এঞ্জেল একটু নিচু হলো।যার মানে ওর পিঠে চড়তে বলছে।আয়েশা ভাবতে পারেনি সত্যি সত্যি এমন কিছু হবে।আরহান আয়েশা দুজনেই অবাক হয়ে চেয়ে আছে।

—–উঠো।
আরহান আয়েশাকে বললো।আয়েশা উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।আরহান আয়েশার হাত ধরে উঠতে সাহায্য করলো।কিছুক্ষণ চড়ার পর সন্ধ্যার আজান পড়ে গেলো।আয়েশা বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো।
আয়েশা আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—–এঞ্জেলকে থামান আমি নামবো।

আরহান এঞ্জেলকে থামিয়ে আয়েশাকে নামালো।
আয়েশা তরিঘটি করে বললো,
—–সন্ধ্যা হয়ে গেছে,আমি চলে যাচ্ছি।

আরহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–কেন ভয় পাচ্ছো?ভূতের।(অদ্ভুত ভাবে)

আয়েশা আমতা আমতা করে বললো,
—–জ্বি না,,আমি ভয় পাইনা।আমি কোনো কিছু ভয় পাইনা।

—–তাই নাকি!!
(বাকা হেসে আয়েশার দিকে এগুচ্ছে।)

আয়েশা ভয় পেয়ে পিছাচ্ছে।আরহান জিজ্ঞেস করলো,
——তুমি তো ভয় পাওনা,,তবে পিছাচ্ছো কেন?

—–কারণ আপনি আগাচ্ছেন।

—–আমি আগালে তোমাকে কেন পিছাতে হবে?আমার আগানোর সাথে তোমার পেছানোর কি সম্পর্ক?

—-দে,,খু,,ন…আপনি দাড়িয়ে যান।আপনি আগালে আমি পিছাবোই।

আরহান না থেমে আয়েশার হাত খপ করে ধরে ফেললো।আয়েশা চোখ বড়বড় করে হাতের দিকে চেয়ে আছে।তারপর আতংকিত হয়ে আরহানের দিকে তাকাচ্ছে।আরহান ওর সাথে কি করছে বা করতে চাইছে বুঝার চেষ্টা করছে।
—–আরহান যদি কারো দিকে এক পা আগায় তাহলে তাকে দুপা আগাতে হবে।নট পেছানো।গট ইট?

আরহান আয়েশার হাত ধরে টান দিলো।
আচমকা টানে তাল সামলাতে পারেনি।তাই আরহানের কাধে ওর হাত গিয়ে পড়লো।
আরহান আয়েশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—–সো আগাও।

এতো আস্তে কথায় যেনো আয়েশার কান শিরশির করে উঠলো।আরহান কি বললো সেটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড পার হয়ে গেলো।
আয়েশা কানে হাত বুলিয়ে আরহানের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো।
আরহান ফিক করে হেসে উঠলো।আয়েশা অবাক হয়ে আরহানের মুখের দিকে চেয়ে আছে।এই প্রথম এভাবে হাসতে দেখলো।

আরহান হাসি থামিয়ে বললো,
—–একদিনে সব বুঝার চেষ্টা করোনা।তাহলে পাগল হয়ে যাবে।চলো তোমাকে পৌছে দেই।

আরহান আয়েশার হাত ছেড়ে কাউকে ফোন করলো।কিছুক্ষণ পর একটা গার্ড এসে এঞ্জেলকে নিয়ে গেলো।
আরহান আয়েশাকে গাড়িতে উঠতে বললো।আয়েশাও চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে।
আরহান আয়েশার বাসার সামনে গাড়ি থামাতেই আয়েশা চমকে বললো,
—–আপনি আমার বাসার ঠিকানা কিভাবে জানলেন?

আরহান কপাল কুচকে বললো,
—–ভুলে গেলে?তোমাকে সেদিন ড্রপ করে দিয়েছিলাম।

—–জ্বি না ভুলিনি।কিন্তু আপনি তো আমাকেই চিনতে পারেন নি তবে বাসার ঠিকানা কিভাবে মনে আছে।

—–আমি আরহান।আমি মন থেকে যেটা চাই আমার মাথায় সেটা সেট হতে ১মিনিটও লাগেনা।বুঝলে?

আয়েশা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।তারপর গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই আরহান বললো,
—–তোমাকে ফোন করবো,রিসিভ করতে যেনো দেরী না হয়।

আয়েশা ভ্রু কুচকে বললো,
—-আমার নাম্বার আপনার কাছে আছে?

আরহানের কাছে ওর নাম্বার আছে কিন্তু সেটা তো বলা যাবেনা।তাই আরহান বললো,
—–না,,বাট নাও তুমি দেবে।

——আমি আমার নাম্বার আপনাকে কেন দেবো?

——না দিলেও সমস্যা নেই।আমি কালেক্ট করে নিবো।

—–ঠিক আছে পারলে কালেক্ট করেই নিন।
আয়েশা গাড়ি থেকে নেমে গেলো।আরহান গাড়ির ভেতরে থেকেই বললো,
—–ফোন রিসিভ করতে দেরি হলে বাসায় চলে আসবো।

আরহান বাসায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ লেগে গেলো।স্বপ্ন দেখছে।
সাদা লম্বা পোশাক পরিহিত একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে।বয়স অনুমান করা যাচ্ছে না পেছনে থেকে।নুপুরের ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছে।আরহান মেয়েটার পেছনে পেছনে এগিয়ে যাচ্ছে কৌতুহল বশত।মেয়েরা আনমনে নাম নিজের মতো হেটে চলেছে।আরহান বারবার ডাকছে কিন্তু সে থামছেনা।

হটাৎ আরহানের ঘুম ভেঙে গেলো।আরহান উঠে বসে।স্বপ্নটা আবার মনে করার চেষ্টা করে।তারপর অবাক হয় এটা ভেবে ও মাঝরাতে এই সাদা পোশাকের ব্যক্তিটিকে স্বপ্নে দেখে।কিন্তু আজ এই সন্ধ্যায়?
তাও আজ স্বপ্নটা কিছুটা আলাদা ছিলো।প্রতিদিন একটা কন্ঠস্বর ওকে ডাকে,কিন্তু আজ ডাকেনি।প্রতিদিন ডেকেও ওকে ওর পেছনে নিতে পারেনি কিন্তু আজ নিজ ইচ্ছায় ওর পেছনে যাচ্ছে।কেন?

আরহানের মাথা ফেটে যাচ্ছে।আরহান ফোন বের করে একটা নাম্বার ডায়েল করে আবার কেটে দেয়।উনাকে ফোন করলেই আজেবাজে কথা বলবে।যা আরহানের পছন্দ নয়৷যেসব আরহান বিশ্বাস করে না।
বাট কি মনে করে আরহান তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।বাড়ি বললে ভুল।কেমন একটা ঝুপড়ীর মতো।কেউ থাকেনা তার সাথে।
আরহান ঝুপড়ীর সামনে গাড়ি থামায়।আশেপাশে ছোট ছোট অনেক মোমবাতি,আগড়বাতি জ্বলছে।
আরহান হেটে হেটে একটা গাছের সামনে গেলো।একটা লোক চোখ বন্ধ করে হাতের তর্জনী উঁচু করে কিছু একটা করছে।

আরহান সামনে গিয়ে দাড়াতেই চোখ খোলে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—–আমি জানতাম তুই আবার আসবি।তুই মুখে যতই বলিস না কেন তুই এসবে বিশ্বাস করিস না কিন্তু মনে মনে ঠিকই,,

—–এত কথা শুনার সময় আমার নেই।আমি যা বলি শুনুন।
আরহান সব খোলে বললো।সবটা শুনে উনি বললেন,
—–সময় হয়ে গিয়েছে।ওর আশার সময় হয়ে গিয়েছে।ও আসবে তোকে সাথে নিয়ে যাবে।

আরহানের এমন আজগুবি কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।আরহান তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে এলো।

পেছনে থেকে লোকটা চিতকার করছে,
——বিশ্বাস করলি নাতো??ও আসবে,,সময় হয়ে গিয়েছে,,,ও আসবে,,,

আরহান গাড়ি স্টার্ট দিলো।লোকটার কথা শুনে আরহানের মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেছে।
এটা কি সিনেমা??সে আসবে?কে আসবে?আমাকে নিয়ে যাবে?কোথায় নিয়ে যাবে?মঙ্গল গ্রহে?অদ্ভুৎ।
আরহান ফোন বের করে আয়েশাকে ফোন করলো।কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেলো।ফোন রিসিভ হয়নি।আরহান এতে আরো রেগে গেলো।আরহান ফোন রেখে চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
—–আমার ফোন রিসিভ করছোনা এতবড় সাহস?আমি আসছি।

আরহান গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলো।ও এখন আয়েশার বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে