Shadow_in_love Part-2

0
2210

#Shadow_in_love

Part-2

#ফাবিহা_নওশীন

??
আয়েশা তরি ঘটি করে ক্লাসে যাচ্ছে কডিটোর দিয়ে হেটে।সবসময়ের মতো আজো লেট করে ক্লাসে যাচ্ছে।না জানি আজ কপালে কি আছে।
আয়েশা এসব ভাবতেই কেউ ওর হাত ধরে টান দিয়ে একটা রুমে নিয়ে যায়।তারপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।আয়েশা চোখ বন্ধ করে চিতকার করতে নিলে কেউ ওর মুখ চেপে ধরে।আয়েশা ভয়ে চুপ করে আছে।
—–আয়শু চিতকার করিস না।আমি শ্রাবণ।

আয়েশা চোখ খোলে দেখে ওর ফ্রেন্ড শ্রাবণ,রায়া আর সুমি।আয়েশা শ্রাবণকে ধাক্কা মেরে বললো,
——তোরা! এগুলো কি?আমি ভয় পেয়ে গেছি।

রায়া হেসে বললো,
—–তুই তো ভিতূর ডিম তাই আমরা একটু মজা করছিলাম।তোকে ভয় দেখাতে চেয়েছি।

আয়েশা রেগে বললো,
—–ক্লাসে দেরী হয়ে যাচ্ছে আর তোরা মজা করছিস?

সুমি বললো,
——লেট লতিফ মেডাম আজ আপনি বেচে গেছেন।আজকে স্যার আসেনি তাই ক্লাস অফ।নয়তো ইচ্ছে মতো ঝাড়ি দিতো স্যার।

আয়েশা হাফ ছেড়ে বললো,
—–ওহহ,,যাক ভালো হয়েছে।
তারপর কটাক্ষ দেখিয়ে বললো,
—–তাই বলে এভাবে ভয় দেখাবি?হার্ট এটাক হতো আরেকটু হলে।

সবাই হোহো করে হেসে দিলো।আয়েশা সবার দিকে রাগী দৃষ্টি দিয়ে দরজা খোলে বেরিয়ে গেলো।

এ হচ্ছে আয়েশা নূর।ভালোবেসে কাছের মানুষ আয়শু বলে।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে।আয়েশার মা ছোট বেলায় মারা গেছে তারপর বাবার আদর যত্নে বড় হয়েছে।
আয়েশা নম্র-ভদ্র,শান্তসৃষ্ট মেয়ে।অনেক ম্যাচুয়েড কিন্তু একটাই সমস্যা ওর ভূতে বিশ্বাস।আয়েশা ছোট থেকেই ভূতে বিশ্বাসী।প্রচুর ভূতের বই আর মুভি দেখেছে।সে থেকে ওর ভূতের প্রতি একটা বিশ্বাস জন্মেছে।
এ নিয়ে আয়েশার বন্ধু মহলে অনেক মজা করা হয়।
যেমনটি আজ করলো।

~আরহানের অফিস~
আরহান নিজের কেবিনে একটা ফাইল নিয়ে ম্যানেজারের সাথে আলোচনা করছিলো।
হটাৎ করে আরহানের অন্যরকম ফিল হচ্ছিলো।কেমন একটা অদ্ভুত শব্দ কানে ভেসে আসছে।যা ওর ব্রেইনে প্রচুর প্রভাব ফেলছিলো।
আরহান হটাৎ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে ম্যানেজারকে বললো,
—–মি.আসাদ আমার একটু কাজ আছে।একটা ফোন করতে হবে।আপনি এখন যান আমরা মিটিংটা পরে করে নিবো।এক্সকিউজ মি।

ম্যানেজার অবাক হয়ে আরহানের দিকে চেয়ে রইলো।
কেননা আরহান এর আগে কখনো মিটিং চলাকালীন সময়ে ব্রেক নেয়নি।সবকিছুতেই ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করে চলে।
আরহান ম্যানেজারের দিকে দৃষ্টি দিতেই ম্যানেজার উঠে দাড়িয়ে বললো,
—–ওকে স্যার।

ম্যানেজার রুম থেকে বের হতেই আরহান কেবিন ছেড়ে উঠে দরজা লক করে দিলো।আরহানের কানের কাছে শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।আরহানের মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।আরহান দুহাতে কানমাথা চেপে ধরলো।তারপর কেবিনের দিকে এগুচ্ছে কিন্তু শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা।পা ভেঙে আসছে।তবুও হেলেদুলে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে।তারপর টেবিলে রাখা পানির গ্লাসের দিকে চেয়ে হাত বাড়ায় কিন্তু হাত আগাতে পারছেনা আর না পারছে গ্লাস ধরতে।আরহানের হাত অনবরত কাপছে।আরহান আবারো দুহাতে কান চেপে ধরে।তারপর চোখ বন্ধ করে নিজেকে রিলেক্স করার চেষ্টা চালায়।নিজেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরে গ্লাসটা হাতে নিয়ে অর্ধেক পানি খেয়ে নিয়ে গলা ভেজায়।কিন্তু হাতের ব্যালেন্স রাখতে না পারায় গ্লাস নিচে পড়ে যায়।আরহান ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে যায়।ছড়িয়ে পড়া পানিগুলো একত্রে জমা হচ্ছে।
এটা দেখে আরহানের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম।পানিগুলো একত্রে জমা হয়ে কিছু একটা আকার ধারণ করলো।
আর সেটা হলো “শবনম”
আরহানের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে উচ্চারিত হলো,
“শবনম”

আরহান নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছেনা।মনে হচ্ছে স্বপ্ন।
তারপর পানিগুলো মিলিয়ে গেলো।আরহান চিন্তায় পড়ে গেলো।
কে এই শবনম?
আরহান সব ঘটনা একে একে মিলাচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে স্বপ্নে দেখা সেই অববয়ের নাম শবনম।কিন্তু কে এই শবনম? কি চায়?
এর উত্তর আরহান পাচ্ছেনা।কার কাছে এর উত্তর পাবে জানে না।আরহানের মাথায় কিছু ঢুকছেনা।

আরহান ডিনার টেবিলে বসে আছে কিন্তু খাবার খাচ্ছে না।প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করছে।আরহানের মা আরহানের কাধে হাত দিয়ে বললো,
—–কি হয়েছে বাবাই?খাচ্ছোনা কেন?শরীর খারাপ?

আরহার জোরপূর্বক হেসে বললো,
—–নো মম।আমি ঠিক আছি।

আরহানের পাপা বললো,
—–আরহান কোনো সমস্যা হলে বলো?

আরহান উসখুস করছে কিছু বলার জন্য। মম,পাপার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার ডিসিশন পাল্টে ফেললো।তাদের অযথা টেনশনে ফেলবেনা।
—–নো পাপা এভ্রিথিং অলরাইট।

আরহান নিজের রুমে গেলো।পাজল নিয়ে মিলাতে লাগলো।বাট হটাৎ করে পাজল সব নিজে নিজেই মিলে গেলো।আরহান পাজলের দিকে চেয়ে আছে কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করছেনা।কেননা এসব ছোটখাটো ঘটনায় এখন আর অবাক হয়না আরহান।মুচকি হেসে আশেপাশে তাকালো।

?
?

আয়েশা পপকন খাচ্ছে আর মুভি দেখছে।হরর মুভি।ভূত ভয় পেলেও হরর মুভির ফ্যান।ওর বাবা ওকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও শুনেনা।

আরহানের অস্থির অস্থির লাগছে।বারান্দার রেলিঙ এতটা জোরে চেপে ধরেছে যেনো দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলবে।হটাৎ করে কি হলো রেলিঙে জোরে ঘুষি মারলো।রেলিঙ ভেঙে গেলো।আরহান অবাক চোখে রেলিঙের দিকে চেয়ে রইলো।হটাৎ করে ওর গায়ে এত শক্তি কোথায় থেকে এলো।
একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেলো।আরহান চোখ বন্ধ করে নিলো।সারা শরীরের শিরায় শিরায় কিছু একটা বয়ে যাচ্ছে।শরীর কেপে কেপে উঠছে।অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
তারপর আস্তে আস্তে চোখ খোলে।চোখের মনি গাঢ়তর হচ্ছে।আরহান নিজের ভিতরে নেই।ও হেটে চলেছে আনমনে।

সিড়ি বেয়ে নিতে নেমে বাইরে গেলো।হাতের ইশারায় গাড়ি চলে এলো।গাড়িতে উঠে বসেছে।আরহান স্টেয়ারিং হাত দিতেই গাড়ি নিজ থেকেই চলছে।গভীর রাত।গাড়ি নীরব নিস্তব্ধ পথে চলছে।
মাঝে মাঝে দু’একটা গাড়ি শা শা শব্দে ছুটে যাচ্ছে।
হটাৎ করে গাড়ি থেমে গেলো।আরহানের হুশ হলো।চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করছে।

নিজেকে গাড়ির মধ্যে আবিষ্কার করে থমকে যায়।
“আমি এখানে কি করে এলাম?কিভাবে এলাম?কখন এলাম?মাই গড।কি হচ্ছে আমার সাথে?”
আরহান সিটের মধ্যে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কেমন অস্থির লাগছে।
এ অস্থিরতা কিভাবে কাটবে?মনটা এতো অশান্ত লাগছে?কোথায় শান্তি পাবে?
আরহান হটাৎ চোখ খোলে মুচকি হাসলো।
কেননা চোখ বন্ধরত অবস্থায় আয়েশার মুখ ভেসে উঠেছে।আরহান গাড়ি ঘুরালো।উদ্দেশ্য আয়েশার বাড়ি।

আরহান ১৫মিনিট যাবত গাড়ি পার্ক করে দাড়িয়ে আছে।এত রাতে নিশ্চয়ই অপরিচিত একটা ছেলেকে বাড়িতে এলাউ করবেনা।
কিন্তু আয়েশাকে ওর দেখা চাই।কিন্তু কিভাবে দেখবে?দেয়াল টপকে যাবে?পাইপ বেয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকবে?

“আরহান হোয়াটস হ্যাপেন্ড টু ইউ?শেষে কিনা আরহান আহমেদ খান রাতের বেলায় চোরের মতো একটা মেয়ের বাড়িতে ঢুকবে?ইটস নট ফেয়ার।”
আরহান ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কিছু একটা পড়ে যাওয়ায় শব্দ পেলো।আরহান উপরের দিকে তাকালো।একটা রুমে লাইট জ্বলছে।জানালার পর্দা ভেদ করে একটা অববয় দেখা যাচ্ছে।অববয়টা একটা মেয়ের।আরহানের চোখ আটকে গেলো।ওর মন বলছে এটা আয়েশা।
কিছুক্ষণ পর লাইট অফ হয়ে গেলো।
আরহান মনে মনে বলছে,
“আজ তোমার ছায়া দেখেই সন্তুষ্ট থাকি,কাল নাহয় আবার আসবো।”

?

আরহানের ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়ে গেছে।গতকাল অনেক রাতে বাড়িতে ফিরেছে।তাছাড়া নিয়ম-মাফিক স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায়।
আরহান তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।

আরহান অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে।অপরপাশে ওর পার্সোনাল ইনফর্মার সাজিদ বসে আছে।
আরহান একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে বললো,
—–নেম এড্রেস সব লিখা আছে।আই নিড এভ্রি ইনফরমেশন এবাউট হার।
এভ্রিথিং।

—–ওকে স্যার পেয়ে যাবেন।

—–ইউ ক্যান গো নাও।
সাজিদ কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো।

আরহান সানগ্লাস খোলে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
তারপর বিরবির করে বললো,
—-আয়েশা তুমি আমার মাথায় এমন ভাবে সেট হয়ে গেছো যে মাথায় তুমি ছাড়া আর কিছুই ঘুরে না।

বিকেলের মধ্যে আরহান আয়েশার সব ইনফরমেশন পেয়ে গেছে।

এখন আরহান আয়েশার ভার্সিটির সামনে নিজের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আয়েশাকে দেখার জন্য।
আয়েশা ক্লাস শেষ করে গেইট দিয়ে বাইরে বের হচ্ছে।পড়নে লাল চুড়িদার।নিজের মতো আনমনে হেটে বের হচ্ছে।তারপর গাড়িতে উঠে গেলো।

আরহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে গেলো।

মাঝরাতে আরহান সেম স্বপ্ন দেখে জেগে গেলো।এক গ্লাস পানি খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলো।কাজে পুরোদমে মন দিয়েছে।আজ মন খুব ফ্রেশ আয়েশার সম্পর্কে সবটা জেনে আর ওকে একনজর দেখতে পেয়ে।
আরহান কাজ শেষ করতেই আজান পড়ে গেলো।মনোযোগ দিয়ে আজান শুনলো।মনের ভিতরে স্নিগ্ধ প্রশান্তি বয়ে গেলো।উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।নামাজ শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।
গার্ডেনে একটা সাদা ঘোড়া দেখতে পালো।
আরহান অবাক হয়ে ঘোড়াটাকে দেখছে।ঘোড়াটা সাধারণ ঘোড়ার মতো নয়।এত সুন্দর ঘোড়া কখনো দেখেনি।কি সুন্দর কেশরাজ।আরহান কৌতুহল নিয়ে নিচে গেলো।ঘোড়ার কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আরহান আশেপাশে দেখছে কেউ আছে কিনা।ঘোড়াটা ধীরপায়ে আরহানের কাছে এলো।তারপর আরহানের পায়ের সাথে মাথা ঘষতে লাগলো।আরহান ঘোড়াটার বিহেভিয়ার দেখে অবাক হচ্ছে।আরহান ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।ঘোড়াটা খুশিতে হর্ষধ্বনি দিলো।
আরহানের কেন জানি ঘোড়াটাকে খুব পছন্দ হচ্ছে।আরহান ঘোড়াটাকে সেফ জায়গায় বেধে রাখলো।সকাল হলে মালিকের খোজ করবে।তারপর তার কাছে কিনে ঘোড়াটা নিজের কাছে রেখে দিবে।
আরহান ঘোড়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।

চলবে….
(কেউ বাস্তব ঘটনা কিংবা লজিক দিয়ে বিচার করতে যাবেন না।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে