Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 91



শ্যামাপ্রিয়া পর্ব-০২

0

#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব২
#তামান্না_আনজুম_মায়া
ফাহমিদ থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির পেছনের দিকের পুকুর পাড়।তখনই কেউ পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখলো চট করে রেগে গেলো ফাহমিদ জোরে এক ধ’মক বসিয়েছে অপর পাশের ব্যক্তিকে না দেখেই!

,,এই কেমন মেয়ে মানুষ তুমি?কখন থেকে গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছো পাড়লে!এতো নির্লজ্জ মেয়ে তো আগে দেখিনি,দেখছো কথা বলতে চাচ্ছি না তাও দেঢ় হাত ঘোমটা দিয়ে বউদের মতো সেজে ঠোঁটের কোনে ওড়নার কোনা ঝুলিয়ে কি প্রমান করতে চাইছো! একটা চ’ড় দিলে এসব ভুত মাথা থেকে সরে যাবে পুঁচকে মেয়ে!
সৌরভ ভড়কালো বন্ধু তার বো”ম হয়ে আছে কেনো হঠাৎ! সে মিহি সুরে ডাকলো
—,,দোস্ত!আমি সৌরভ কি হয়েছে রেগে আছিস কেন?কাকেই বা এতো গুলো কথা শুনালি?
ফাহমিদ ততক্ষণে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো পেছনে দ্বিগুণ রাগ মিশিয়ে বললো

—,,ভাই এটা কেমন কথা হলো?আজই ফিরে যাওয়ার কথা আমার।আর তুই কি বললি এটা এখানে সপ্তাহ খানেক থাকতে হবে আমায়!আর ইউ মে’ড?আর তোদের ওই ঘরময় শুধু নির্লজ্জ ধাঁচের মেয়ে,একটা তো মাথা খারাপ করে দিয়েছে ভাই!
আসার পর থেকেই এখানকার মেয়েদের কাহিনি দেখছি,একজন অভদ্র বেয়া’দব মেয়ে কে দেখলাম বাবার বয়সী কারো সাথে উচ্চ বাক্য করছে,আর বাকি সব গায়ে পড়া টাইপের, এ জন্যই আসতে চাই না আমি!

–,,মেয়েদের নিয়ে এতো সমস্যা কেন তোর?আর অভদ্র কাকে বলছিস?

–,,তোদের পাশের বাসার মেয়েটা, এতো বড় বাড়ির মেয়ে নুন্যতম কমনসেন্স নেই!পরিবার কি শিক্ষা দিতে পারেনি।
সৌরভ এবার বিরক্ত হলো না জেনে বুঝে কি সব বলছে ফাহমিদ!

–,,কারো বিষয় না জেনে শুনে মন্তব্য করা উচিত না ফাহমিদ!তিথি চমৎকার মেয়ে,পরিচিত যদি হতে পারতি তাহলে এরকম কথা মুখেও আনতি না!

ফাহমিদ ভ্রু কুঁচকালো পরিচিত হতে পারতো মানে?

–,,এই মেয়ে কি আলাদা নাকি?দেখবি ছেলে দেখলেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে,চোখ দিয়ে পারলে গি’লে খাবে!

সৌরভ হাসলো –,,তিথির ব্যক্তিত্বের প্রেমে যে পুরুষ পড়বে না আমি বলবো সে পুরুষের মেয়েদের চেনার মতো ক্ষমতা নেই!
পুরুষ মানেই মেয়েদের রূপ,গুনের আগে তার ব্যক্তিত্বে আটকায়!

ফাহমিদ চকিত নয়নে তাকিয়ে বললো–,,মেয়েটাকে পছন্দ করিস তুই?

—,,মানুষ হিসেবে পছন্দ করি, অন্য কোনো কিছু ভেবে বসতে যাস না যেনো ছোট বোনের মতো। দুই দিন পর বিয়ে করলে বউ ঝা’ড়ু হাতে আসবে।

–,,বিয়ে?

–,,হ্যাঁ!যার জন্য বাড়ি ভর্তি মেয়ে মানুষ, মানে আমার ফুফাতো, মামাতো ভাই বোন রা এসেছে,সাথে বড়রা, তুই আমাদের টিনসেড ঘরটার ওইদিকে যাস না,ছেলেদের বেশি সুন্দর হতে নেই মেয়ে মানুষ তাকাবেই এতে তাদের কোনো দোষ নেই।ওরা তো আর জানে না তুই মেয়েদের নাম শুনলেই কে’টে পড়িস তাও আমি সবাই কে মানা করে দিবো!কাল আংকেল আন্টিসহ তোদের বাসার সবাই আসবে,আর তুই ও থাকবি, তোকে গ্রামে আনা যাবে না আগেই জানতাম তাই বাবা আর আংকেল মিলে প্ল্যান করে তোকে আগে পাঠিয়েছে!
————
দেয়াল করা একটা মস্ত বড় বাড়ি পর পর তিনটা একতলা দালান,তার পাশেই পুরনো আমলের তৈরি দু’তালা দালানটা!গাছগাছালির ছায়ায় বাড়িটার সৌন্দর্য বেড়েছে অনেকটা,আজ নিস্তেজ হয়ে নিরবতা পালন করছে যেনো,বাড়ির পেছনে ঘাট বাঁধানো পুকুর পাড় তার উপরেই ছায়া দিতে অবস্থান করছে কৃষ্ণচূড়া গাছটা!
বিমূঢ় হয়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি ফেলে সবুজ রঙা পানির দিকে তাকিয়ে আছে এক রমনী,হালকা রোদের আলোয় চকচক করছে তার শ্যামলা তেল চিকচিকে ত্বক!
পড়নের ওড়না বেশ কিছুটা ঝুলে আছে ঘাটের সিঁড়ির ভাঁজে। ঘন কালো লম্বা কেশ গুলো উড়ে যাচ্ছে শরৎ এর মৃদু মন্দ বাতাসে।
মেয়েটা কি ভীষণ উদাসিনী?এই উদাসীনি শান্ত রমনীর জীবনের ঝ’ড় কি কোনো দিন থামবে?নাকি থাকবে বহমান।রূপ লাবণ্য ছাড়া মানুষ আর কিছু কেনো দেখে না,চামড়ার রঙ দিয়েই কি মানুষ বিচার করা লাগবে?সরলতা,মমতা,মায়ার কি কোনো স্থান নেই দুনিয়ায় সবাই কি শুভ্র রঙা মেঘের পিছনে ঘুরে?মেঘের রঙ ও তো ধূসর হয় সে ধূসর রঙা মেঘ কে ও তো মানুষ ভালোবাসে,নাকি ভালোবাসার নাম করে উপভোগ করে তার বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসা বৃষ্টি কে!
সবাই শুধু ভেঙ্গে চূড়ে দিতে চায়,কেউ কেন গড়তে আসে না?আশার হাত বাড়িয়ে বলে না। তুমি যেমন তেমনই থাকো আমি তোমায় ওরকম ভাবেই ভালোবাসি!
নাকি ভালোবাসা নামক বস্তু রঙিন মখমলে মোড়ানো।

তিথি তিথি ওই তিথি,,,,,,!
কারো অনবরত ডাকের অতিষ্ঠ হয়ে উঠে দাঁড়ায় তিথি, কি আশ্চর্য মানুষ জন কি একটু একা ছেড়ে দিতে পারে না তাকে।বিরক্তি নিয়ে হাঁটা দিলো তিথি গলা উঁচিয়ে বললো
—,,হ্যাঁ এদিকে আমি।
ইসমা নামক মেয়েটি দৌড়ে আসলো,এসেই ঝাপটে ধরলো তিথি কে।
তিথি খুশি হয়ে বললো–,,কবে ফিরলি?ভার্সিটি বন্ধ দিয়েছে নাকি?
ইসমার হাস্যউজ্জ্বল কন্ঠ
–,,না!ছুটিতে এসেছি, ভাইয়ার বিয়ে তো তিন দিন পর কাল থেকেই অনুষ্ঠান শুরু তুই দেখছি কিছুই জানিস না তিথি!এবার বল মন খারাপ কেনো?
তিথি হাসলো মেয়েটির সাথে তার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের ছোট থেকেই একই সাথে বেড়ে উঠা,স্কুল, কলেজ একসাথে শেষ করলো।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিটাই আলাদা করে দিলো ওদের, গন্তব্য হলো ভিন্ন দুই শহরে।

তিথি আবার এসে পাকা সিমেন্টের বেঞ্চিটাতে বসলো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো–,,ওই একই কাহিনি নেহালের বাবা এসে ঝা’মেলা করলো!
তা তুই বল তোর খবর কি?

–,,ওসব ছাড় তো, তোদের বাড়িতে এই একই কাহিনি।এখন তুই আমার সাথে শপিং এ যাবি,ভাইয়ার বিয়ের জন্য কেনাকাটা বাকি কিছু।তুই মানা করতে পারবি না,অনেক দিন এক সাথে ঘুরতে যাই না!

–,,মেজো চাচী অসুস্থ তার উপর ওই স্বার্থপর মানুষ টা বাড়িতে,যাওয়ার পরই যদি শুরু করে!

–,,কিছু হবে না, দাদু সামলে নিবে।
ইসমা মেয়েটা চঞ্চল, হাসিখুশি অপর দিকে তিথি শান্ত, গোমরা ধরনের মানুষ, এতো এতো অমিল হয়েও তাদের মাঝে বুঝাপড়া টা হয় বেশ ভালো!

তিথি তৈরি হয়ে আসলো পুরনো দোতলা দালানটার কাছে,নিচতলায় প্রথম ঘরটাতেই থাকেন জয়নাল বেপারী।বাকি তিনটা এক তলা দালান তিন ছেলের,পরিবার এখনো একসাথে তাদের শুধু থাকে আলাদা ঘরে,জয়নাল বেপারী মৃ’ত্যুর আগে ছেলেদের জন্য যা পেরেছেন সব করে দিয়ে গেছেন।যেনো পরবর্তীতে কোনো ঝামেলা পোহাতে না হয়। দুতলা ঘরটার উপরে তলায় আত্নীয়দের জন্য বরাদ্দ কিছু ঘর আছে,নিচে শুধু তারা বুড়ো বুড়ি থাকে,একপাশের ছোট টিনের ঘরটায় বাড়ির কাজের লোক!

বিশাল বাড়িটির এক পাশে হাঁস,মুরগি,গরু,ছাগল পালন করা হয়,পুকুর ভর্তি মাছ!ফসলি জমিরও অভাব নেই জয়নাল বেপারীর।গ্রামে একজন অতি সম্মানীয় ব্যক্তি তিনি।যে সম্মান এতো বছরে কুড়িয়েছেন তা এখন এক ছেলের কর্মকান্ডে খোয়াতে বসেছেন!
চেয়ারে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন তিনি,তিথি গিয়ে ডাকলো
–,,দাদু!
জয়নাল বেপারী নাতনির ডাকে হাসলেন
–,,দাদু একটু মার্কেটে যাচ্ছি ইসমার সাথে।
–,,গাড়ি করে যা!
–,,না দাদু এতো গাড়ি চড়তে ভালো লাগে না মুক্ত বাতাস পাওয়া যায় না।মুক্ত বাতাসে উড়তে হয়, কখনো কখনো ধুলো মাখতে হয় শরীরে,কৃত্রিম এসি যুক্ত গাড়িতে ভাব থাকলেও ভালো লাগা নেই।আমি চাই অতি সাধারণ হতে যেখানে হেঁটে বেড়াতেও দুবার ভাবতে হবে না,অনায়াসে ফুটপাতে বসে চা খাওয়া যাবে,সকল মানুষের মনের কাছে পৌঁছানো যাবে।নিজেকে আভিজাত্যের খোলসে আবৃত রাখলে কখনো ভালো মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় না।আমি সত্যিকারের বন্ধু চাই যারা সত্যি কার অর্থে আমার আপন হবে।টাকা আভিজাত্যের বলে কেউ আমার কাছে না আসুক,মুখোশ ধারীদের থেকে দূরে থাকতে চাই,মন খুলে হাসতে চাই।প্রাণ খুলে বাঁচতে চাই!

জয়নাল বেপারী হাসলেন।বড় ছেলের টাকার কমতি নেই না আছে তার,তবুও নাতনী তার আত্মনির্ভরশীল! ভার্সিটি জীবনের শুরু থেকে এ অব্দি নিজের যোগ্যতায় নিজে কে গড়ে তুলেছে।তিনি নিজেও জানেন মানুষের ক’টূ কথা কখনো দমাতে পারবে না এই জ্বলজ্বলে সন্ধ্যা তারাকে!

তিথি বেরিয়ে গেলো গেইটের বাহিরে,ইসমা সেজেগুজে হাজির।দুধে আলতা গায়ের রঙ মেয়েটার,চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য! তিথি রিকশা ডেকে নিলো
,,চড়ে বসলো দুজন!

————-
কানে ফোন গুঁজে শপিং মল থেকে দ্রুত পায়ে বেরিয়ো যাচ্ছে একজন মেয়ে,কন্ঠে চলনে বলনে তার ভীষণ তাড়া,ফাহিমদ দাড়িয়ে আছে মলের এক পাশে সৌরভ এসেছে তার হবু বউ এর সাথে দেখা করতে।ফাহমিদ দোতলায় উঠার সিঁড়ির কাছে আসতেই ধাক্কা লাগলো কারো সাথে।
ফাহমিদ বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হাঁটার গতি বাড়িয়ে চলে গেলো সামনে থাকা ব্যক্তি।ফাহমিদের দিক একবারও তাকালো না, বড় কথা মেয়েটা ধাক্কা দিয়েছে নিজে তাও এমন ভাবে গেলো যেনো পথে কেউ ছিলোই না!

ফাহমিদ রাগি রাশভারি কন্ঠে বললো–,,এ কেমন অভদ্রতা!ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছেন?

কিছু দূর গিয়ে মেয়েটা থেমে গেলো,ঘোমটা টানা মাথায়, ছাই রঙা থ্রি পিস গায়ে!একটা অতি ঠান্ডা কন্ঠের শব্দ শুনে চমকে গেলো ফাহমিদ।

–,,স্যরি!তবে দোষটা আপনার ছিলো।

মেয়েটা কথা টা বলেই বেরিয়ে গেলো, একবার পেছন ফেরার প্রয়োজন মনে করলো না!মেয়েটার কি অহং”কার বেশি?

ইসমা শপিং ব্যাগ হাতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো ফাহমিদ কে দেখে বললো–,,কেমন আছেন ভাইয়া?
ফাহমিদ ইসমা কে দেখে চিনলো,মৃদু হেসে বললো
–,,ভালো!তা তুমি এখানে?

–,,এইতো ভাইয়া একটু কেনাকাটা বাকি ছিলো।তা আপনি ওদিকে কি দেখছেন?

ফাহমিদ শপিং মলের কাঁচের দরজা বাহিরে দাড়িয়ে থাকা মোবাইলে কথা বলতে থাকা মেয়েটার দিক আঙুল উঁচিয়ে বললো
–,,ওই মেয়েটাকে!যে মাত্র একটা ধাক্কা মেরে চলে গেলো,কিন্তু ফিরেও দেখলো কাকে মেরেছে কি অদ্ভুত মেয়ে।

ইসমা হেসে ফেললো,বলে উঠলো
–,,ফিরে তাকাবেও না ভাইয়া!ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি!

ফাহমিদের কন্ঠে তীব্র কৌতূহল
–,,কে এই মেয়ে?

–,,তিথি!মেঘলা আইনুম তিথি।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আর বলবেন না ভাইয়া মেয়েটা পুরো তেঁতো করলা।সব কথা বলে সোজাসাপ্টা এতে সামনের ব্যক্তি কষ্ট পেলেও ওর কিছু যায় আসে না!ওর একটাই কথা মিথ্যা বলে হাসানোর চেয়ে সত্যি বলে কাঁদানো অনেক ভালো!

ফাহমিদের মন মস্তিষ্কে কি যেনো খেলে গেলো,কেমন ঝোঁকের মতো বসে গেলো একটা নাম তিথি!
কে এই মেয়ে তাকে তো একবার দেখতেই হবে।সকাল থেকে শুধু প্রশংসা শুনে যাচ্ছে,কৌতুহল টা যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
চলবে?

শ্যামাপ্রিয়া পর্ব-০১

0

#শ্যামাপ্রিয়া
#সূচনাপর্ব
#তামান্না_আনজুম_মায়া

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনে বে”হুঁশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বেপারী বাড়ির মেজো বউ!

কিছুসময়ের ব্যবধানেই যেনো সবকিছু এলোমেলো হতে দেখলো জয়নাল বেপারী,,,,!কিছু সময় পূর্বের কথা মনে করেই হতাশ শ্বাস ছাড়লেন ছেলেটা বাড়ি ফিরলেই কোনো না কোনো অঘট’ন ঘটে,,,,,,,!

“বেপারী বাড়িতে বড় উঠোনে বসে মাছ কাটছিলেন বাড়ির বউ রা,আজ পুকুর থেকে মাছ ধরা হয়েছে,মাছ কাটার ফাঁকে টুকটাক গল্প করছেন তিন জা খোদেজা, নাজমা,আঁখি তাদের শ্বশুর এগিয়ে আসলেন তাদের দিকে তা দেখে তিনজনই ঘোমটা আরো কিছু্টা টেনে দিলেন।
আঁখি জিজ্ঞেস করলেন,,আব্বা কিছু বলবেন?
,,নাতি-নাতনিরা সব স্কুল কলেজে যাবে সকালের খাবারের বন্দোবস্ত হলো কি না জানতে আসলাম।
,,জ্বি আব্বা,সকালের নাশতা তৈরি করেই মাছ কাটতে বসেছি,ময়নার মা কে বলে দিয়েছি সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে,আম্মাকে খাবার দিয়ে এসেছেন বড় ভাবি আপনি আসতে দেরি হওয়াও মেজো ভাবিও এসে যোগ দিলেন মাছ কাটায়,আপনি গিয়ে ঘরে বসুন আমি আসছি আপনাকে খাবার দিবো।
জয়নাল বেপারী হাঁটা দিলেন পুরোনো দুইতলা ভবনটির দিকে।তিনি উঠোনের মাঝ বরাবর যেতেই লোহার মরিচা ধরা গেইট টা ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে উঠলো,একটু জোরেই যেনো কেউ গেইটটা ধাক্কা দিয়েছে তা বুঝতে পেরে সেদিকে চোখ নিবদ্ধ করলেন তিনি,তার মেজো ছেলে রিপন বাড়িতে এসেছে, দুই বছর ধরে কোনো খোঁজ খবর নেই আজ হঠাৎ বাড়িতে আসায় চমকালেন জয়নাল।ছেলেটা বউ বাচ্চার খবর রাখে না বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ করে না আজ আসলো কি মনে করে।

রিপন এসেই উঠোনে পাতা চেয়ারটায় বসলো,এতোদিন পর স্বামী কে দেখে হাতের মাছ ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো নাজমার,চোখ জোড়া ছলছল করে উঠলো, চোখের কার্নিশ বেয়ে দুই ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়লো।

রিপন ফ্যাচফ্যাচে কন্ঠে বললো
,,এই নাজমা এক গ্লাস পানি দে তো।
নাজমা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন রান্নাঘরের দিকটায় এক প্রকার ছুট লাগালেন, স্বামীর এতো অবহেলার পরও যেনো তার আদেশ অমান্য করতে পারলো না সে।
পেছন থেকে জয়নাল ডেকে উঠলেন

,,নাজমা এই অপদার্থ টার কোনো কথাই শোনবে না তুমি।বাড়ি এসে হুকুম চালাচ্ছে কোন দেশের জমিদার সে,বউ বাচ্চার খবর রাখে না এখানে এসে আবার খবরদারী করে কোন সাহসে?লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারি না।বাড়ি ছিলো না শান্তিতেই তো ছিলাম,কোন মতলবে বাড়ি তে এসেছে বলে যেনো বিদায় হয়,ওর মুখ ও দেখতে চাই না আমি।কোনো কথাই অজানা না আমার, নতুন সংসার পেতেছে শহরে তাহলে এমুখো হলো কেনো আবার।

নাজমার আর রান্নাঘরে যাওয়া হলো না,শ্বশুরের মুখ থেকে স্বামীর দ্বিতীয় সংসারের কথা শুনে সেখানেই জ্ঞান হারিয়েছে সে।”

খোদেজা, আঁখি মাছ কাটা ফেলে ছুটে গেলেন সেদিকে, নাজমার হাত ঠেলে ডেকে চলেছেন। আঁখি তিথি বলে ডাক দিলেন,,
,,ও তিথি কই গেলি মা তাড়াতাড়ি আয় দেখ তোর চাচি বেহুঁ’শ হইয়া গেছে। ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো তিথি দশটায় ক্লাস আজ এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে,তার উপর নিচ থেকে চেচামেচির শব্দ পেয়ে ওড়না হাতে নিয়ে বের হলো তাড়াতাড়ি। তার মেজো চাচি কে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে জগ ভর্তি পানি নিয়ে আসলো।চিৎকার চেচামেচি তে বাকিরাও ছুটে এসেছে ময়নার মায়ের হাতে তরকারি বাটি তার পেছনে বর্ষা,নেহাল,ইফাত, অসুস্থ শরীর নিয়ে জুলেখা বেগমও ছুটে এসেছেন।

নেহাল ছুটে মায়ের কাছে গেলো,তিথি নাজমার মাথায় অনবরত পানি ঢালছেন ইফাত ছুটে তেলের বোতল নিয়ে আসলো তেল, পানি দেওয়ার দশ মিনিটের মাথায় চোখ খুললেন তিনি।উঠেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কেঁদে দিলেন।নেহাল মা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উঠালো, বর্ষা চেয়ার এনে দিলো তাতে বসালেন নাজমা কে।

রিপন কর্কশ গলায় বললো
,,এসব ন্যাকা কান্না শুনতে এখানে আসিনি আমি, আর কারো নাটক দেখার ও সময় নাই আমার।ছাফ ছাফ বলে দিচ্ছি আব্বা এবার আমি আমার ভাগের সম্পত্তি নিয়েই তবে যাবো।

জয়নাল বেপারী রেগে বলে উঠলেন,সংসারের জন্য কি ছাই টা করেছিস তুই যে ভাগ নিতে এসেছিস।দিন রাত এক করে সংসারের জন্য করে গেছে তোর বড় আর ছোট ভাই সংসারে তো এক কানা কড়ি ও দেসনি কখনো কোন মুখে ভাগ চাস তুই লজ্জা করে না।

,,না করে না আব্বা।তুমি তো আমাকে জন্ম দিয়েছো সে সুবাদে আমি ও সমান অংশ পাবো কথা বাড়িয়ো না দুই দিন থাকবো দুইদিনের ভিতর উকিল ডেকে সব ঝামেলা মিটাও এর পর আর এই বাড়িতে ফিরবো না আমি,এখন ব্যবসায় লস হয়েছে আর্জেন্ট আমার টাকা লাগবে মাথা আর গরম কইরো না তোমরা।

,,তোকে আমি একটা কিছু দিবো না,যা পারিস করে নে।তুই যেহেতু এই বাড়ির কারোর সাথে কোনো সম্পর্ক রাখিসনি এতোদিন আমরাও আর তোকে চিনি না। আজ থেকে আমি ভাববো আমার তিন মেয়ে দুই ছেলে নাজমা আমার মেয়ের মতো থাকবে এখানে বিয়ে করে এনে কষ্ট তো কম দিলি না।তোর মতো একটা ছেলের সাথে বাড়ি ছাড়াই ওর বড় ভুল ছিলো।তোর ভাগের সব সম্পত্তি আমি নেহাল আর নিশিতার নামে করে দিবো এই কথাই চূড়ান্ত আর কোনো কথা বলতে চাই না আমি।তুই ভালো করেই জানিস আমি এক কথার মানুষ।
“রিপন তেড়ে আসলেন জয়নালের দিকে তিথি গিয়ে সামনে দাড়িয়ে পড়ে,
,,কি করছেন টা কি চাচ্চু ভুলে যাচ্ছেন তিনি আপনার বাবা।
,,না ভুলি নাই, তুই সব সময়ের মতো আমার আর আব্বার মাঝে আসবি না সর সামনে থেকে বাপের মতো এতো সব বিষয়ে পন্ডিতি করতে আসোছ কেন?
,,দেখেন আমাকে নিয়ে যাই বলেন আমার বাবা কে নিয়ে কিছু বললে তা আমি মেনে নিবো না বলে দিলাম।আপনি বাড়ি তে কেনো আসেন বুঝি না। বাড়ির পরিবেশ টা ন’ষ্ট না করলে কি আপনার শান্তি লাগে না নাকি।
,,বাপরে নিয়া বললে গাঁয়ে লাগে বুঝি,তা তোর বাপ কোন দিক দিয়া সাধু রে দুই দুইটা বিয়ে করছে আর আমি করলেই মানুষ চোখে দেখতে পারে না।কেনো আমি করলে দোষ তোর বাপে করলে পুণ্য?তোর মা
মর’তে না মর’তেই তো আরেক টা বিয়া কইরা আনছে।
তোরে তো ওই মহিলা নিজের মাইয়া বলে মেনে ই নেয় নাই তোর বাপ ও তো বউয়ের উপর কিছু কইতে পারলো না, ওই বাপের জন্য দেখি তোর দরদ উতলাইয়া পড়ে!

,,আমার বাবা যেমনই হোক আমার মা বেঁচে থাকতে তো আরেকটা বিয়ে করেন নাই, আর এমন না যে তিনি আমার ভরণ পোষণ দেন না সব দায়িত্ব ঠিকই পালন করে রোজ সময় করে আমার খোঁজ নেন।আর আপনি নিজেকে আমার বাবার সাথে তুলনা দেন কোন সাহসে।আপনি তো চাচীআম্মার খোঁজ ও নেন না নেহাল নিশিতাকে একটা ফোন দেওয়ার সময় হয় না।দায়িত্বজ্ঞা”নহীন মানুষ আপনি।চলে যান এখান থেকে।

,, এক চ ড় বসাবো কানের নিচে, বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছিস দেখছি,তা আব্বা এমন দা*মড়ি মেয়ে কে বাড়িতে বসিয়ে খাওয়াচ্ছেন কেনো?বিয়ে সাদি দিতে পারছেন না নাকি, যা কালি গাঁয়ের রং কোনো পোলা তো থুথুও ফেলবো না এদিকে।মায়ের মতোই রং পাইছে মা টারে তো তোর নানা আমার ভাইয়ের কপালে ঝুলাই ছিলো আল্লাহ বাঁচাইছে অকালে ম রছে আ’পদ!

তিথির চোখ টা কেমন ভিজে উঠলো,তবুও কান্না আটকে রাখলো ঠোঁট চেপে।এটা নতুন না কোনো কিছু ঘটলেই আগে তার গাঁয়ের রং নিয়ে প্রশ্ন তুলে সবাই,পরে তার মা,তিথির বাবা তিথি কে অসম্ভব ভালোবাসেন, মা বাবা দুজনের ভালোবাসা একাই দিয়েছেন মেয়েকে তা নিয়ে আফসোস নেই তিথির।বাবার দ্বিতীয় বিয়ে সৎ মা নিয়েও কখনো কথা বলেনি।তবে তার সৎ মা খোদেজা কখনো তার দিকে মমতার হাত বাড়ায় নি ভালোবেসে মায়ের ভালোবাসা দেয় নি সেই ছোট বেলা থেকেই তিথি শিখে গেছে একলা থাকা, সত্যের জন্য লড়াই করা।সবাই যাই বলুক তার দাদা দাদি তাকে সব সময় সবার উপরে রেখেছেন ভালোবেসেছেন এর থেকে বেশি কিছু পাওয়ার নেই জীবনে।তবুও অবুঝ মন ক টূ কথা মেনে নিতে চায় না সহজে।তিথি চুপ করে গেলো।

নেহাল বলে উঠলো আপনার তো বহুত সুন্দর চেহারা যা দেখিয়ে দুই বাচ্চার বাপ হওয়া সত্ত্বেও আরেকটা বিয়ে করে ফেললেন নাচতে নাচতে, আপনার লজ্জা করে না এই মুখ নিয়ে আবার সবার সামনে আসতে, আপনার ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে সে দিকে তাকিয়ে অন্তত ভালো হয়ে যেতেন, আগে থেকেই তো পর কীয়া করাটা আপনার স্বভাব হয়ে দাড়িয়ে ছিলো এখন আরেক টা সংসার পেতেছেন।আপনার ছেলে বলে নিজেকে পরিচয় দিতেও আমার রুচিতে বাঁধে।
নেহালের কথা শেষ না হতেই তাকে মা রতে এগিয়ে আসে রিপন।তার যেনো মাথায় রক্ত উঠে গেছে।
,,,,,,,,,,
পাশের বাড়ির সৌরভ এগিয়ে আসতে গেলো তখনই তাকে পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো।
সৌরভ আর নেহালদের বাড়ি আসলো না আজ তার বন্ধু এসেছে ঢাকা থেকে, আবার চলে যাবে তাই বন্ধু কে সময় দিতে লাগলো, এমনিতে ও অন্যের বাড়ির ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলাটা পছন্দ না সৌরভের।
*
রিপন নেহাল কে মা রার জন্য হাতে ইট তুলে নেন, জয়নাল সাহেব চেচিয়ে উঠেন,নাজমা বেগম বলে উঠে
,,কি করছেন আপনি শান্ত হোন নেহাল আপনার ছেলে।
রিপন রেগে বললো
,,এই ছেলে তোর আমার না, আমার বিষয়ে কথা বলতে না করে দে না হয় একদম মাটিতে পুঁ’তে ফেলবো।

বলেই আবার তেড়ে আসে তিথি নেহালকে বাঁচাতে গিয়ে ধাক্কা দেয় রিপন কে।ভুলবসত তিনি মাটিতে পড়ে যায়।
তিথি রেগে কথা শুনাতে থাকে রিপন কে।রেগে গেলে তার গলার আওয়াজ বৃদ্ধি পায় যেনো দ্বিগুণ। জয়নাল ও কিছু বলছেন না কি বলবেন বুঝতে পারছেন না তিনি, এ নিয়ে বাড়িতে চার বার এমন হয়েছে সব কিছুর পেছনে রয়েছে রিপন, আর তাকে পরিবারের বিরুদ্ধে উস”কে দিয়েছে তার নতুন বউ।

বেপারী বাড়িতে যে কিছু হয়েছে তা রাস্তায় চলাচল করা পথচারী রাও বুঝতে পারছেন।কেউ কেউ উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন আবার নিজের কাজে চলে গেছেন।
***
সৌরভের ঢাকা থেকে আসা বন্ধু ফাহমিদের গ্রাম মোটেও পছন্দ না, এখানের মানুষ সহজ সরল তবে এরা ঝ গ ড়া করে বেশি, এক জনের বিষয় অন্য জন নাক গলায় এসব তার ভীষণ অপছন্দ আর মানুষ গুলাও কেমন গায়ে পড়া টাইপের বাবার জোড়াজুড়ি তে এসেছে সে সৌরভের বাবা আর ফাহমিদের বাবা বন্ধু, বন্ধুর জন্য কিছু জিনিস ফাহমিদকে দিয়ে পাঠিয়েছেন তিনি।সৌরভ ও ঢাকাতেই থাকে,ফাহমিদ সব সময় বলে যেনো পুরোপুরি ভাবে সেখানে থাকে গ্রামে আসে কে! ফাহমিদ বাতাস খেতে একটু বাহিরে বের হয়ে উঠোনে পায়চারি করছিলো, পাশের বাড়ির থেকে একটা মেয়ের উচ্চ শব্দে বলা কথা ভেসে আসছে,ফাহমিদ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়।মনে মনে বলে এসব মানুষের আর কাজ নেই নাকি।এগিয়ে এসে দেখে একটা মেয়ের পেছনের দিক দেখা যাচ্ছে তার সামনে একজন মধ্যবয়স্ক লোক।দুজনের মধ্যে তর্কা তর্কি চলছে।
ফাহমিদ মনে মনে বলে উঠে
,,কি বেয়া”দব মেয়ে!বড়দের সাথে এভাবে কে কথা বলে।গ্রামের মেয়েরা মনে হয় এমনই হয়।মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসে ডিজ গাস্টিং!
চলবে?

কেশের মায়া পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

#গল্পঃ #কেশের_মায়া
#লেখিকা – #চন্দ্রাবতী
#পর্ব – ২ বা সমাপ্তি_পর্ব

সেই বদলা নেবো বলে বিভিন্ন কৌশল ছলাকলা অনেক কিছুই তার উপর ট্রাই করেছি। এমনকি নিজের শরীরকে কষ্ট দিয়ে টানা একসপ্তাহ জ্বরে ভুগেছি। যাতে ডাক্তারকে দিয়ে বলা যায় এই এতো বড়ো ভিজে চুলের জন্যই জ্বর এসেছে। এগুলো যেনো ছোটো করে ফেলি। কিন্তু ওই আমার পোড়া কপাল, ডাক্তার সেই কথা বলার পরও কোনো কাজ হয়নি। আমার পতিদেব রোজ সকালে উঠে পুরো চুল ভিজিয়ে চান করার শাস্তি হিসেবে তিনদিন আমার ফোন ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে রেখেছিলেন। আমার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ও কোনো কাজে আসেনি। তবে বলাবাহুল্য আমার শরীরখারাপের কটা দিনে সে নিজে আমার চুলের যত্ন নিয়েছে। হেয়ার ড্রায়ার আরও কি কি সব প্রোডাক্ট অনিয়েছে তারপর নিজেই সেগুলো নিয়ে মাখিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে আমিও তেমন একটা ঝামেলা করিনি। কারন এই চুলের ঝামেলা ছাড়া সে আমায় মাথায় করেই রাখে বলতে গেলে। এইটুকু তো মেনে নেওয়াই যায়।

এইভাবেই বরকে লাই দিয়ে মাথায় উঠিয়ে আবার ঝামেলায় পড়েছি। আমার চুল বেশ ঝরছে কয়েকটা দিন ধরে। তাকে কিছু সেসব নিয়ে বলিনি। বলেছি চুল কাটা দরকার এখন একটু। কিন্তু ওই সে কোনো কারণ শুনতে রাজি না বলে কি

– ” এই তো কয়দিন আগে চুল কাটলে না ..? ”

– ” সেটা অলরেডি পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে রাজ ”

– ” ওহ, তাও এতো ঘন ঘন চুল কাটা উচিত না। আবার কয়েকটা মাস পরে কাটবে ”

–” তোমার সাথে চুল নিয়ে কথা বলাই বেকার। ধূর ”

আমি রেগে উঠে চলে এলাম ঘরে। শরীরটা ভালো নেই আজকাল। কেমন গা গুলায় বমি পায় এইসব লক্ষণ প্রেগন্যান্সির। অথচ আমি টেস্ট করে দেখেছি রেজাল্ট কিন্তু নেগেটিভ। রাজ সারাদিন বাইরে কাজে থাকে তাই আর তাকে এইসব ব্যাপারে জড়াইনি। আমর শরীর এমনিই নাজুক। কয়েকদিন উল্টোপাল্টা খেয়েছি বোধ্হয়। ওষুধ খেলই ঠিক হয়ে যাবে।

কয়েকদিন ধরে টানা ওষুধ খাওয়ার পর যখন দেখলাম শরীরের অবনতি হচ্ছে বেশি। রাজকে জানাতেই সে ভাবলো আমি আবার চুল কটা নিয়ে নাটক জুড়েছি। ভাবাই স্বাভাবিক। আমি আগে এমনটা বহুবার করেছি। তবে তার কিছুদিনের মধ্যেই আমার শরীর বমি করে এতটাই দূর্বল হয়ে পড়ল যে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলাম ঘরে।

আমাদের কাজের দিতি মাসি এসে দেখে চিৎকার করে সঙ্গে সঙ্গে রাজকে ফোন দিলেন। রাজ ছুটে এলো। আমায় কোলে তুলে বিছানায় রেখে মুখ ধরে বলল

– ” এই ইশা এই, একদম নাটক করবেনা। চোখ খোলো, খোলো বলছি চোখ। তুমি কি আমায় একদন্ড শান্তি দেবেনা..? আচ্ছা কেটো চুল হয়েছে। এবার ওঠো ”

আমি তখনও নিস্তেজ দেখে দিতি মাসি এবার বলে উঠলেন

– ” রাজবাবা ইশা মায়ের মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি জ্ঞান হারিয়েছে। এমনিও কয়দিন ধরেই শরীরটা খারাপ ছিল। তুমি এক্ষুণি ডাক্তার ডাকো হয়তো খুশির খবর হবে ”

রাজ আর কিছু না ভেবে ডক্টরকে ফোন করলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্তর এসে দেখে বলল ইমিডিয়েটলি যেনো হসপিটালে ভর্তি করা হয়। রাজ আর দিক বেদিক না দেখে দৌড়ালো ইশাকে নিয়ে হসপিটাল।
.
.
.
– ” আপনিই ওনার হাসবেন্ড..? ”

– ” ইয়েস ডক্টর, ওর জ্ঞান ফিরছেনা কেনো..? ”

– ” ইনজেকশন দিয়েছি। কিছুক্ষণ পরই ফিরে যাবে। কয়েকটা টেস্ট ওনার দ্রুত করা লাগবে। আপনি প্লিজ তার রিপোর্ট গুলো তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করুন ”

– ” ওকে ডক্তর ”

রাজ ক্লান্ত মুখ নিয়ে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে রিপোর্ট করে নিলো।
আমায় জ্ঞান ফেরার পরই কিছু টেস্ট করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
রাজ রয়ে গেল সেখানে। ভিতরের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে একটু বেশি তাড়াতাড়িই করে ফেলল বৈকি সে রিপোর্ট গুলো। এমনিও রাজের টেনশনে মাথা কাজ করছেনা। কেনো যে তখন অসুস্থতাকে নাটক ভেবে উড়িয়ে দিলো সেই ভাবনাই কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। রিপোর্ট গুলো নিয়ে ডক্টরের কাছে যেতেই তিনি কিছুক্ষণ তা দেখে চুপচাপ বসে বললেন

– ” মিস্টার রাজ, যা বলছি তা মন শক্ত করে শুনবেন। মনে রাখবেন আপনিই পারবেন তাকে এইজয়গা দিয়ে বের করে আনতে”

রাজ আগেই বুঝতে পেরেছিল এতো রিপোর্ট দেখে। তাই এবার আর বেশি অবাক হলো না। তবে আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠলো ক্ষণে ক্ষণে। তাও নিজের মনকে শক্ত করে বলল

– ” আপনি বলতে পারেন ”

– ” ওনার গলব্লাডারে ক্যান্সার ধরা পড়েছে ”

রাজের চোখ ঘোলা হয়ে এলো। বারবার ঢোঁক গিললো। বারবার মন চাইলো এটা একটা স্বপ্ন হোক। ইশার সাজানো কোনো নাটক হোক আবার। এবার সত্যি সে ইশাকে আর বকবে না।

– ” মিস্টার রাজ আপনি ভেঙে পড়বেন না। বেশি দেরি এখনও হয়নি। ট্রিটমেন্ট শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছি দ্রুত। তার আগে ঠাণ্ডা মাথায় আপনি তাকে বোঝান। আমি ভর্তির ডেট লিখে দিচ্ছি। ”

– ” ওকে ডক্টর ”

_____________________________

আমি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাজ সেই যে আমায় বাড়ি পাঠিয়ে দিলো গাড়িতে তারপর তার আর পাত্তাই নেই। এখন বাজে রাত একটা। এখনও বাড়ি আসলনা..? কই সে একটা ফোন করি তো।

ফোন করতেই তার রিংটোন মেইন ডোরের সামনে বেজে উঠলো। আমি ফোন কেটে দৌড়ে গেলাম সেখানে।

– ” কিগো আজ এতো দেরি হলো..? রিপোর্ট গুলো কবে দেবে বললো কিছু..?”

রাজ আমার দিকে মলিন চোখে তাকালো। তারপর জুতো খুলে বলল

–” হুম, খেতে দাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”

আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেতে দিলাম। রাজ এসে বসে খাওয়ার সময় আমার মুখেও তুলে দিলো দু-য়েক লোকমা। আমি হাসলাম, এই স্বভাবটা শত বলেও আমি তার শোধরাতে পারিনি। খাওয়ার সময় সে নিজের পাত থেকে একটু আমার মুখে তুলে দেবই যতোই আমার পেট ভরা থাকুক। এখন আমিও বারণ করিনা আর আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে এগুলো।
.
.
.
বাসন গুছিয়ে বেডরুমে যেতেই দেখলাম রাজ এক হাত কপালে ভাঁজ করে শুয়ে আছে। আমার ভালো ঠেকলো না এটা। কারন এমন ভাবে ও তখনই শোয় যখন সে খুব চিন্তিত কোনো বিষয়ে। কিন্তু যাই হোক সে আমায় আগে খুলে বলে। তাতে নাকি তার মন হালকা হয় তাহলে আজ কি হলো..?

আমি ডিম লাইটটা শুধু জেলে রাজের দিকে একহাতে ভর দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে রাজের মাথায় হাত বুলাতেই রাজ চোখ খুললো। অস্পষ্ট আলোতেও আমি তার চোখে ভয় দেখলাম। কিন্তু তার আবার কিসের ভয়..?

আমার কিছু বলার আগেই রাজ পাশ ফিরে আমায় নিজের কাছে টেনে নিয়ে আমার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে রইলো। আমি বেশ অবাক হলাম। রাজের মাথায় অনবরত হাত বুলাতে বুলাতে আদুরে গলায় বললাম

– ” রাজ কি হয়েছে..? আমাকে বলো। তোমায় এত অশান্ত দেখাচ্ছে কেনো..? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না দেখো। ”

রাজ এবার মাথা তুললো। আমায় পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে নিজে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছে মুখ ঘষতেই আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম। রাজ পুনরায় একই কাজ করলো। আমি আরোও করে হেসে বললাম

– ” আমার সুরসুরি লাগছে রাজ ছাড়ো বলছি ”

রাজ এবার নিজে মুচকি হেসে মিলন কন্ঠে বলল

– ” আমার ঘরের লক্ষী তুমি। তোমায় ছেড়ে দিলে তো আমি নিজেই ছন্নছাড়া হয়ে যাবো। তুমি ছাড়া আর আপন আছেই বা কে বলোতো আমার। আমার যে সব তোমাতেই শুরু, তোমাতেই শেষ। ”

রাজের কথাগুলো আমার কানে বড্ড ঠেকলো যেনো আজ। আমি জানি রাজের বাবা – মা কেউই নেই। এক বড়ো ভাই ছিল, সেও সম্পত্তির লাভে যোগাযোগ রাখে না রাজের সাথে। অথচ রাজের নিজেরই যথেষ্ট আছে তার থেকে। কোনোদিন সে দাবিও রাখেনি সম্পত্তির। প্রকৃতপক্ষেই তার আমি ছাড়া আপন কেউ নেই। কিন্তু আজ একথা বলার কারণ..? রাজ তো এতো ইমোশনালি কোনোদিনও কিছু বলে না। সে নিজেকে সবসময় শক্ত মানব হিসেবেই জাহির করে। আমি এবার সিরিয়াস হলাম

– ” কি হয়েছে রাজ..? এমন করে কেনো বলছো বলোতো..? যেনো আমি কোথাও চলে যাচ্ছি ”

রাজের আমার মাথাটা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে নিল সঙ্গে সঙ্গে।

– ” কোথাও যাচ্ছ না তুমি। তুমি আমার সাথেই থাকবে সারাজীবন। আমি বিনা মুক্তি নেই তোমার ”

– ” রিপোর্টে কি আছে..? ”

রাজ বোধ্হয় চমকালো খানিক। তারপর ধীর গলায় বলল

– ” যাই থাকুক। তুমি দ্রুত সুস্থ্ হয়ে যাবে। ”

– ” আমি জানতে চেয়েছি রাজ ”

রাজ কিছুক্ষণ চুপ করে গেলো। তারপর শান্ত গলায় বলল

– ” গলব্লাডার ক্যান্সার ”

আমার নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না। আমার বরাবরই ভীতি এইসবে। দাদুকে যখন ছোটবেলায় ক্যান্সারে মারা যেতে দেখলাম ঠিক তখন থেকেই। সেই ভীতি যে আজ আমার উপর এসেই বর্তাবে তা গুণাক্ষরেও টের পাইনি আমি।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম

– ” আমার বেঁচে থাকার মেয়াদ কতদিন তাহলে..? ”

রাজ আরও শক্ত করে আমায় আমায় জড়িয়ে ধরলো। কাতর কন্ঠে বলে উঠলো ” এই কথা আর মুখে আনবেনা তুমি ইশা। তেমন কিছুই হয়নি তোমার ডক্টর বলেছেন ট্রিটমেন্ট করতেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে। তাই আমার আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা মাথাতেও আনবেনা। ”

আমি আর কিছু না বলে রাজকে জড়িয়ে ধরলাম। রাজের থেকে দূরে যাওয়ার ভয় আমায় চেপে ধরলো।

__________________________________

শুরু হলো আমার ট্রিটমেন্ট। আমায় নিয়ে গিয়ে রাখা হলো বাপের বাড়িতে। কারন ফ্ল্যাটে রাজ আমায় একা রেখে যেতে মোটেও রাজি না। বাড়ির লোক মা-বাবা দাদা সবাই আমার সুস্থ হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করলো। রাজ কাজ ছেড়ে সবসময় আসতে না পারলেও কষ্ট করে কাজের শেষেই ছুটে আসত আমার কাছে।

ট্রিটমেন্ট চলাকালীন আর কেমোথেরাপির আমার ওঢেল সৌন্দর্যে ভাটা পড়ল। ওজন চর চর করে তো কমলোই সাথে চোখের নীচে জমলো ডার্ক সার্কেলস। চুল পড়ার কথা তো বাদই দিলাম। রোজ চুলে হাত দিলেই এক মুঠো চুল উঠে হাতে চলে আসতো। আমি বিষন্নতায় ডুবে যেতে লাগলাম ধীরে ধীরে। আমার শুধু মনে হতে লাগলো রাজ আমায় আর নিজের কাছে রাখবে না। আর রাখলেও দয়া করে। কেনো রাখবে সে আমার মতো অসুস্থ, অসুন্দর এক বোঝাকে।

রাজ এলো বিকেলে। দেখেই বোঝা গেলো কতটা ক্লান্ত সে। এসে বসলোও না। আমায় নিয়ে ছুটলো হসপিটাল চেকাপে। আমি পুতুলের মত গেলাম তার সাথে। ডক্টর চেকাপ করে আমায় বাইরে বসতে বললেন। আমায় রাজ বাইরে বসিয়ে নিজে ভিতরে গেলো।

– ” ডক্টর আমার ইশা ভালো হয়ে যাবে তো..? ”

– ” দেখুন, ভালো হওয়ার চান্স আছে আমি আপনাকে আগেও বলেছি। কিন্তু ওর যা অবস্থা দেখলাম ও মানসিক ভাবে প্রচন্ড ডিপ্রেসড। এবার পেশেন্টের নিজেরই যদি বাঁচার ইচ্ছে না থাকে তাহলে আমাদের কোনো ওষুধই কোনো কাজে আসবেনা। আপনি আশা করি বুঝতে পেরেছেন”

রাজ ঘাড় নাড়ল। আসলেই তো, সে ইশার অসুস্থতার পর শুধু তার যত্ন হসপিটালে নিয়ে আসা টাইমে টাইমে তার খাবার ওষুধ পত্রের খোঁজ নিয়েছে। তার মনের খোঁজ তো নেয়নি। তার নিজের দোষে যদি সে ইশাকে হারিয়ে ফেলে তাহলে তারও যে আর বেঁচে থাকা হবে না।

– ” মিস্টার রাজ, আপনি বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ মানুষ। আসা করি আমার কথার অর্থ বুঝেছেন। এই সময় আপনার স্ত্রীয়ের সাইকিয়াট্রিস্টের থেকেও বেশি আপনার পাশে থাকা বেশি কাজে লাগবে। ”

রাজ দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে টুকটাক কথা বলে আমায় নিয়ে চলে এলো বাড়ি।
.
.
.

– ” দেখো তোমার জন্য কি এনেছি। আজ ছাড় তোমার নাও। যা খুশি খেতে পারো। ”

আমি রাজের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ নীচু করে নিলাম। যেমন বসে ছিলাম তেমনই বসে রইলাম।

রাজ হতাশার দৃষ্টি দিয়ে আমায় দেখল। তারপর বিছানায় বসতেই চারিদিকে চুল আর চুল নজরে এলো তার। রাজ উঠে গিয়ে খবরের কাগজ চেয়ার নিয়ে বাথরুমের আয়নায় সামনে রাখলো। তারপর কোনো কথা ছাড়াই আমায় কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো চেয়ারে।

আমি এতক্ষণে বুঝলাম কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে। আমার মাথায় বাঁধা রুমালে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলাম

– ” না আমি চুল কাটবো না। কাটবে না তুমি আমার চুল। যাও যাও বলছি এখান থেকে। ”

আমার চেঁচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে এলো আমার রুমে। তারপর রাজের ইশারাতে আবার বেরিয়েও গেলো। কিন্তু আমার মাথা কাজ করছেনা। অস্থির হয়ে উঠছি আমি। পাগলের মত লাগছে নিজেকে। শুধু মনে হচ্ছে রাজ আমায় আর ভালোবাসবেনা। আর কাছে টানবে না আগের মতো। আর চুলে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকবে না ঘণ্টার পর ঘন্টা। এখন যে আমার কিছুই নেই সৌন্দর্য বলতে।

রাজ আমার গালের পাশে দুই হাত দিয়ে ধরে ধীরে ধীরে আমার মাথায় চোখের পাতায় চুমু খেলো। আমি শান্ত হয়ে এলাম এবার। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো জল। রাজ সযত্নে তা মুছে আমার মুখোমুখি হয়ে বসে বললো

– ” ইশা, তোমার এমন কেনো মনে হচ্ছে তোমার সৌন্দর্যের জন্য আমি তোমায় এত ভালবাসি..? তোমার #কেশের_মায়া অবশ্যই ছিল আমার।কিন্তু তা যে তোমার থেকে বেশি নয়। বৃদ্ধ বয়সে যে দুজনেরই এই সৌন্দর্য রূপ এমনিই মলিন হয়ে আসবে। তাই এসবের কোনোটাই আমার ভালোবাসা বিন্দু পরিমাণ কমাতে পারবেনা। আর বাকি রইলো তোমার ওই লম্বা চুল। সে আমরা আবার ফিরে পাবো নিশ্চই, যদি তাও না পাই তাহলে নাই। কিন্তু তোমাকে আমি কোনমতেই নিজের থেকে দূরে যেতে দেবোনা এই কারণে। তুমি নিজেও জানো তুমি আমার জন্যে কি। সো প্লিজ ইশা… আমার সাথে কোয়াপরেট করো। তোমার সুস্থ হওয়ার পর যত রাগ হয় দেখিও আমি আর কোনো বকাবকি করবো না। ”

আমি এবার হু হু করে কেঁদে ফেললাম। তবে আর বাঁধা দিলাম না। রাজ আমার মাথাটা নিজের সাথে চেপেই আমার সমস্ত চুল রেজার দিয়ে ফেলে দিলো। ভাগ্য কি অদ্ভুত খেলা খেলে তাই না..? যেই চুল কাটার জন্য আমি শত শত বায়না নাটক করতাম সেই আমিই আজ চুল কাটতে চাইছি না। আর যে আমার হাফ ইঞ্চি চুল কাটা নিয়ে সারা বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলতো সে কি সানন্দে আমার চুল সব ফেলে দিচ্ছে। যদিও আমি নিজেও জানি এতে আমার চেয়ে বেশি হয়তো রাজই কষ্ট পাচ্ছে। শুধু আমি ভেঙে পড়ব বলে দেখাচ্ছেনা।

– ” দেখো তো আমার বউ টাকে এখন কত্ত মিষ্টি লাগছে”

আমি আয়নায় চোখ তুলে তাকাতেই রাজ হেসে রেজার নিজের চুলেও চালিয়ে দিল। আমি এবার এতটাই অবাক হলাম যে মুখ দিয়ে আর কথা বেরোলো না। মাথায় কথাটা নাড়াচাড়া দিতেই চেঁচিয়ে উঠলাম আমি

– ” এ কি করলে রাজ..? পাগল হলে নাকি..?”

রাজ মুচকি হাসলো। তারপর নিজের সম্পূর্ণ চুল ফেলে বলল

– ” হ্যাঁ পাগলই বটে তোমার প্রেমে। তবে তুমি যদি নিজের #কেশের_মায়া ত্যাগ করতে পারো তবে আমি কেনো না..? ”

আমি চেয়ার থেকে উঠে রাজকে জড়িয়ে ধরে পুনরায় হু হু করে কেঁদে উঠলাম। রাজ আমায় জড়িয়ে ধরে পকেট থেকে দুটো টুপি বার করে বলল

– ” নাও লালটা তোমার নীলটা আমার ”

রাজের বলার ধরন দেখে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। রাজ এবার আমার চোখ ভালো করে মুছিয়ে আমায় কোলে তুলে নিয়ে বলল

– ” এসব ছাড়ো। আসল কথা বলো, এইকটা দিন আদর কম পড়েছে বলে ম্যাডামের মন খারাপ”

আমি এবার খানিক লজ্জা পেয়ে রাজের বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম

– ” হ্যাঁ তাই ”

রাজ হেসে আমায় নিয়ে বেডের দিকে অগ্রসর হলো।

_________________________________

সেই অভিশপ্ত সময় কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর। এখন ডক্টরের কথামত আমি ফিট। তাই বেবি প্লানিং করতে পারি। কিন্তু ডক্টরের বলার আগেই যে আমি টের পেয়েছি আমার ভিতর নতুন প্রাণের। আপাতত ডক্টর আর রাজের কড়া রুটিনে বাঁধা আমি।

রাজের বোঝানোয় ধীরে ধীরে আমি সেই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। প্রেগন্যান্সির পর যেনো আবার আমি আগের সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছি। সব কিছু আগের মতো হলেও শুধু আমার চুলটাই আগের মতো ওতো বড়ো হয়নি। সেটা পিঠ পর্যন্তই রয়েছে। তবে এতে রাজের আর কোনো আফসোস দেখিনা আমি। সে আগের মতোই এখনও সময় পেলেই আমার চুলের যত্ন নেয়। আমি সত্যিই ধন্য এই মানুষটাকে এই জীবনে পেয়ে।

এইভাবেই কেটে গেছে গোটা নয় মাস ছয় দিন। আমার ডেলিভারির ডেট কাল বাদ পরশু। কিন্তু আমি ভালোই বুঝতে পারছি অতটা আর দিন গুনতে হবে না বোধহয়। আমার ধারণা সত্যি করে আমার লিভার পেইন উঠলো বিকেলেই। আমি বাপের বাড়িতেই ছিলাম বিগত দুই মাস। তাই মা বাবা দাদা সবাই গেলো আমার সাথে হসপিটালে। রাজকে দেখলাম না আমি। হয়তো খবর পেয়ে সেও রাস্তায় আছে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে। আমি কষ্টে চোখ বোধ করে নিলাম।

চোখ পিট পিট করতেই দেখলাম রাজ হাসি মুখে একটা ছোট্ট প্রাণ কোলে নিয়ে আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকতেই রাজ সেই ছোট্ট প্রাণকে আমার হাতে দিতে দিতে বললো

– “দেখো ইশা আমার মেয়ের কত্ত সুন্দর চুল হয়েছে”

আমি হাসলাম। আদর করে দিলাম আমার মেয়েকে। আসলেই মেয়েটার চুল গুলো সাধারণের তুলনায় একটু বড়োই হয়েছে। রাজ চুমু আঁকলো আমাদের মা মেয়ে দুজনেরই কপালে। আমি তার পিঠে গা এলিয়ে বসলাম। তারপর দুজনেই মেয়েকে নিয়ে কথাবার্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

জীবন সুন্দর আমি আজ আবার উপলব্ধি করলাম। আমি আগে ভাবতাম রাজের শুধু আমার #কেশের_মায়া- ই আছে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। তার যে আমার প্রতি তার চেয়েও দ্বিগুণ অশেষ মায়া আর ভালোবাসা আছে। আর কি চাই জীবনে..? এভাবেই কেটে যাক আমাদের সুখের সংসার।

_________________সমাপ্ত_________________

কেশের মায়া পর্ব-০১

0

#সূচনা_পর্ব
#গল্পঃ #কেশের_মায়া
#লেখিকা – #চন্দ্রাবতী

(18 + সতর্কতা 🚫)

আমার বর আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর পিছনের কারনটা হলো আমি আমার হাঁটুসম চুল কেটে মাজাসম করে ফেলেছি।

আমি পৃথ্বিশা। আমার বর মেজর দেবরাজ সেনগুপ্ত। তার পোস্টিংয়ের কারণে তার আসার কথা ছিল আরও তিন মাস বাদ। কিন্তু বউয়ের টানে তিনি তার দুইমাস আগেই ফিরে পড়েছেন। তারপর বউকেই ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন।

আমি এখন বাপের বাড়ি না গিয়ে ঝিলপাড়ে এসে বসে আছি। কারণ বাপের বাড়ি গেলে মায়ের বকা খাবো চুল কাটার জন্য। আর রাজের কাছে তো যেতেই পারব না। সে খোঁচে বোম হয়ে আছে আমার উপর। আমি বেচারা অবলা প্রাণী, যার নিজের চুলের উপর নিজেরই কোনো অধিকার নেই। কই ভেবেছিলাম রাজ আসার আগেই চুল ঠিক বেড়ে যাবে তা না মহারাজা আমায় বকাঝকা করার জন্য আগেই এসে হাজির হয়েছেন।

আমি জানি রাজ আমায় ঠিক খুঁজতে আসবে। কিন্তু আজ আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল। কিছুতেই ফিরবনা ওই বেয়াবপ লোকের সাথে আমি। আমায় বাড়ি থেকে বের করা..?

কিছুক্ষণ পর আমার ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী রাজ আমায় খুঁজতে এলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিধ্বস্ত সে। গায়ে ঘামে শার্ট লেপ্টে,চুল এলোমেলো। হয়তো ফোন দিয়ে জেনেছে আমি বাপের বাড়ি যায়নি। বেশ হয়েছে ভুগুক একটু। আমি আরেকটু আড়াল করে বসলাম নিজেকে। দেখি সে কতক্ষন খোঁজে।

রাজ চারিপাশে আরও একবার খুঁজলো। নাম ধরে ডাকলোও বারকয়েক কিন্তু না মহারানীর কোনো পাত্তা নেই। রাজ এবার নিজেকে অপরাধী ভাবলো। সে কি আসলেই বেশি করে ফেললো নাকি..? কিন্তু সেই বা কি করবে মেয়েটা তার দূর্বলতা জেনেও বার বার একই কাজ করে।

কিছুক্ষণ পর চেনা অবয়ব আর শাড়ির আঁচল দেখতে পেয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো রাজ। দম আটকে এসেছিল আরেকটু হলেই যেন তার।

– ” ইশা..? ”

ইশা চমকে পিছনে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো । শক্ত কঠিন মুখাবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটির দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোঁক গিলে রাগ দেখানোর চেষ্টা করলো। মুখ ফিরিয়ে নিলো পুনরায়।

– ” ঘরে চলো ইশা ”

– ” কেনো যাবো..? ওইটা কি আর আমার ঘর..? ”

– ” না ওটা আমাদের ঘর। চলো এখন বাড়ি ”

শান্ত কন্ঠস্বর শুনে ইশার ভয় হলেও রাগ বজায় রাখলাম সে।

– ” মোটেই না। আমাদের ঘর হলে তুমি কখনোই এইভাবে আমাকে বের করে দিতে পারতে না…”

– ” পারি চাইলে তুমিও আমায় বের করে দিতে পারো। কিন্তু সেটা গ্রান্টেড হবে যখন আমি কোনো অপরাধ করবো। কিন্তু এখন তুমি অপরাধী ”

– ” হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার চুলে আমার চেয়ে বেশি তো অন্যদের অধিকার। নিজের বলতে আর কিইবা আছে আমার..? ”

রাজ দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে উঠলো

– ” বেশি বলছো ইশা। বাড়ি চলো এক্ষুণি বাকি কথা বাড়ি গিয়ে বলবে। ”

– ” বললাম তো যাবো না ”

রাজ কোমরে এক হাত রেখে নিজের দুই আঙুলের সাহায্যে নিজের কপাল ঘষে বলল

– ” ওকে ফাইন ”

বলেই ইশাকে এক কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। ইশা বুঝে উঠতেই নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি শুরু করলো। চেঁচালোও খানিক। তবে বলিষ্ঠ দেহের কাছে বেশি সুবিধে করতে পারল না।

রাজ ইশাকে বাড়িতে এনে সোফায় বসিয়ে ক্ষান্ত হলো। ইশা এখনও ফুলে আছে। বিড়বিড় করে চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে রাজের।

– ” খাবার আনো ইশা ”

– ” পারবনা আমি ”

– ” আমি দুইদিন ধরে না খেয়ে টানা জার্নি করে এখানে এসেছি ইশা ”

ইশা একবার রাজের মুখের দিকে তাকালো। আসলেই রাজের মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বিরক্ত হয়ে ” ধুর ” বলে চলে গেলো রান্নাঘরে। খাবার বাড়তে বাড়তে এইভাবে হবে না ভেবেই মনে মনে আলাদা ছক কষলো সে।

খাওয়ার সময় রাজ নিজের পাশে বসিয়ে নিজের হাতেই খাইয়ে দিল ইশাকে। ইশা চুপচাপ খেয়ে নিলো। রাজ ভেবেছিল ইশা রাগ দেখাবে কিন্তু এইভাবে চুপচাপ সব মেনে নিতে সে অবাক হলো বেশ।
.
.
আমি রোজকার মতো খাওয়া দাওয়া শেষে থালা বাসন ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। বলাবাহুল্য অন্যদিনের তুলনায় একটু খোলামেলাই ড্রেস পড়লাম। তারপর টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আয়নাতে দৃশ্যমান হলো রাজ বেডে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কেমন নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি বাঁকা হাসলাম। আমার মিশন সফল হয়েছে। তারপরই বেডের সাইডে গিয়ে নিজের বালিশ নিয়ে ফিরতেই রাজ হাত টান দিয়ে ধরলো।

অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করলো ” কোথায় যাচ্ছ..? ”

আমি এবার একটু ঢং করে বললাম ” কেনো বাড়ি থেকে বের করার আগেই তো বললে চুল বড়ো না হওয়া অবধি যেনো তোমার ধারে কাছে না ঘেঁষি। ”

– ” ওসবের জন্য তো আমি সরি বললাম ”

– ” আচ্ছা সেসব বাদ দিলাম। তুমি না বললে তুমি দুই দিন জার্নি করে এসেছ..? এখন রেস্ট নাও আমি থাকলে আবার যদি ডিস্টার্ব হও ”

রাজ আমার হাতে আরও চাপ দিয়ে বলল

– ” কোনো ডিস্টারবেন্স হবে না। তুমি কোত্থাও যাচ্ছ না ”

– ” না আমি যা………..”

আর কিছু বলার আগেই রাজ আমায় টেনে তার কোলে ফেলে ডুব দিলো আমার ঠোঁটে। আমিও বারণ করলাম না। তিষ্ণার্ত যে আমিও ছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে আমার মিশনের কথা ভুললে হবে না। দীর্ঘ চুম্বনের পর রাজ আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে আমার নাইট ড্রেসের ফিতেতে হাত দিতেই আমি আটকে দিলাম সেই হাত। রাজ তোয়াক্কা না করলেও আমি ছাড়াতে দিলাম না এবার।

– ” আগে বলো পরের বার চুল কাটলে বাড়ি থেকে বের করবে না। ”

রাজ এবার বিরক্ত হয়ে বলল ” কি হচ্ছেটা কি ইশা..?”

আমি না না করে উঠলাম ” প্রমিজ না করলে আমি কিছুতেই অনুমতি দেবো না ”

রাজের মাথায় এখন নেশা চড়ে। সে মহা বিরক্ত হয়ে আগে পিছে কিছু না ভেবে বলল ” ওকে কিন্তু দুই ইঞ্চি এর বেশি না ”

– ” না না তাহলে হবে না ”

– ” উফ ইশা পাগল করে দেবে তুমি আমায়। ঠিক আছে যাও আড়াই ইঞ্চি কেটো। শান্তি..? হাত সরাও এবার ”

আমি প্রথমে মুখ বেজার করলেও মেনে নিলাম। যাই হোক অনুমতি তো পেয়েছি। এতেই হবে। এবার নিজে থেকেই রাজকে জড়িয়ে ধরলাম। যতোই রাগ ক্ষোভ দেখাই না কেনো দিনশেষে দুজনের দুজনকে ছাড়া যে চলে না।
.
.
.
.
সকাল থেকেই আমার মেজাজ ফুরফুরা। ভাবা যায় রাজের কাছ থেকে চুল কাটার অনুমতি নিয়েছি বলে কথা। রাজ এর মধ্যেই এসে বসলো ডাইনিং টেবিলে। আমি প্রজাপতির মতো উড়ে গিয়ে তার পাশে বসে আহ্লাদ করে ফোনের একটা হেয়ার স্টাইল দেখিয়ে বললাম

– ” এই দেখো পরের বার এইটা করবো কেমন লাগবে…? ”

রাজ এবার ফটোটায় চোখ বুলিয়ে প্লেট সোজা করতে করতে বলল

– ” হুম ভালোই। তবে হাফ ইঞ্চির বেশি যেনো না কাটা হয়। ”

আমি হাঁ…কি বলে কি এই লোক..?

– ” এই এই তুমি কাল প্রমিজ করেছো আড়াই ইঞ্চির”

– ” আমি করিনি তুমি দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছ আমার। তাই ওটা প্রমিজের কাতারে পড়ে না ”

আমার রাগে চোখের কোনায় জল এসে গেছে। এতো বড়ো ধোঁকা আমার সাথে..? আমি ধপ করে উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার থেকে। হাত ঠুকে বললাম

– ” এমন পাল্টিবাজের সাথে আমি কিছুতেই সংসার করবো না। আমি আজই বাপের বাড়ি চলে যাব। গিয়ে যা চুল আছে সব ঘাড় অবধি কেটে তোমায় পার্সেল করে পাঠানো। কি করার করে নাও ”

বলেই আমি রেগে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম। যদিও বলা কথাটা আমি বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবো না। কারন চুলটা আমারও বড়ো সাধের। তাও ভয় তো দেখাতে পারব।

রাজ বিরক্তিসূচক আওয়াজ বের করলো মুখ দিয়ে। এই মেয়েকে তার বিশ্বাস নেই যদি সত্যি চুল ঘাড় অবধি কেটে ফেলে..? না না এতো রাজ হতে দেবে না। ওই ঘন কালো কেশ যে তার অতি প্রিয়। যদি তাকে তার প্রিয় জিনিস বলতে বলা হয় তখন সে গর্ব করে বলে ” আমার প্রিয়তমা ওই কালো কেশ। যা দেখে আমি মুগ্ধ হই বারংবার। ”

রাজ এবার উঠে রুমে এসে আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি রেগে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। শেষমেশ না পেরে সাপের মত রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলাম।

– ” আর বউ রাগ করো কেনো..? আমি তো মজা করছিলাম। তুমি তোমার ইচ্ছে মতো চুল কাটতে পারো। শুধু তিন ইঞ্চির বেশি না হলেই হবে। ”

আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম

– ” সত্যি..? ”

– ” তিন সত্যি ”

____________________________________

সেই ঘটনার এক বছর গড়িয়েছে। আমি এখন বসে আছি বাপের বাড়িতে। রাগে ফোঁস ফোঁস করছি। কারন রাজের কথা মতো আমার নাকি তিন ইঞ্চির চুল কাটার কথা ছিল আমি কেটেছি সাড়ে তিন ইঞ্চি। তাই সে এবার নিজের দায়িত্বে মায়ের বোকা খাওয়ানোর জন্য আমায় বাপের বাড়ি বসিয়ে দিয়ে গেছে। মানা যায়..? এই পুরুষ গুলো হয়ই এমন,পাল্টিবাজ। নাহ্ এইবারে আর ছোটো খাটো বদলা নিলে হবে না দেখছি।

#চলবে..?

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৮(শেষ পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“সব দোষ কী আমার একার? তোমার দোষ নেই? তোমরা যখন ঠিক করে রেখেছ। যে তোমরা সারাজীবন প্রবাসে কাটাবে তাহলে তোমরা বিয়ে করো কেন? বিয়ে করে অর্থ দিলেই সবকিছু হয়ে যায়? একটা মেয়ের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার স্বামীর ভালোবাসা। আমি যদি স্বামীর ভালোবাসা না পাই। তাহলে টাকা দিয়ে কী করব?”
“অথচ টাকা না থাকলে একটা বেকার ছেলের হাত তোমরা ধরতে চাও না। তুমি কি একা প্রবাসীর বউ? পৃথিবীতে তাকিয়ে দেখে হাজার হাজার প্রবাসীর বউ আছে। তারা দূরে থেকে স্বামীর ভালোবাসা নিয়ে নিজেকে হেফাজত করেছে। তাহলে তুমি পারলে না কেন?”
“একটা অবিবাহিত মেয়ে যেটা পারে একটা বিবাহিত মেয়ে সেটা পারে না। অন্যরা কীভাবে থাকে জানি না তবে আমি থাকতে পারিনি। তুমি বিদেশে গিয়ে আমাকে সময় কম দিতে শুরু করলে। আমাকে একাকিত্ব ঘিরে ধরল। তোমার অবহেলা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল। আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। তারপর জোহানের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। তোমার যে কাজ গুলো করার কথা ছিল। জোহান সেগুলো করে দিয়েছে। আমাকে সময় দিয়েছে। আমারে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে। আমাকে মুখ তুলে খাইয়ে দিয়েছে। আর তুমি কী করেছ দু’টো টাকা পাঠিয়েই সব শেষ। রাত হলে দু’টো কথা বলে ঘুমিয়ে যাও। আবার সারাদিনে তোমার কোনো খোঁজ থাকে না।”
“ছি! তোমার মন মানসিকতা এতটা নিচু। তোমার মতো কিছু মেয়েদের জন্য সব নারীর নাম খারাপ হয়। সব নারী তো খারাপ হয় না। আমি আমার মাকে দেখেছি অভাবের সংসারে আমার বাবাকে কীভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। কেউ কাউকে ছাড়া মরে যায় না নয়না। আমিও তোমাকে ছাড়া মরে যাব না। আমি বাঁচব কিন্তু মনের কোথাও দুঃখ থেকে যাবে। আমি চাইলে তোমার গায়ে হাত তুলতে পারি। তোমাকে মে’রেও ফেলতে পারি। কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে এসব শেখানি। বিচার করার জন্য আল্লাহ আছেন। আমার আল্লাহ জানেন তোমাকে ভালো রাখার জন্য আমি কী কী করেছি। তোমার যদি মনে হয় তুমি আমার সাথে ঠিক করেছ। তাহলে সেই ঠিকটা তোমার সাথেও হোক। তুমি কালকে তোমার বাবা-মাকে বলবে তারা যেন এসে তোমাকে নিয়ে যায়। এমন নষ্টা মেয়ের সাথে আমি অন্তত সংসার করব না।”
“তুমি যদি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবো তাহলে আমি তোমার নামে নারী নির্যাতনের মামলা দিব।”
“আমি জেলে পঁচে মরব তবুও নষ্টা নারীর সাথে সংসার করব না।”
তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে উড়ানের বাবা-মা আসলো। বাবা-মাকে দেখে উড়ান নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। তাদের জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠল। হামিদা অস্থির হয়ে বলল, “কাঁদছিস কেন? কী হয়েছে তোর?”
“আমি তোমাদের বলেছিলাম। আমি বিয়ে করব না। তবুও তোমরা আমার কথা শুনোনি। এই মেয়ে আমাদের সবাইকে ঠকিয়েছে মা। এই মেয়েটাকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাও। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ছি! এই মেয়েটা অন্য পুরুষের সাথে শুয়ে এসে আমাকে স্পর্শ করেছে। আমার পুরো শরীরে কলঙ্ক লেগে গিয়েছে।”
“এসব তুই কী বলছিস উড়ান?”
উড়ান তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলল। উড়ানের বাবা-মা বিশ্বাসই করতে পারছে না। এই ফুলের মতো মেয়েটার ভেতরে এত বিষ ছিল।
হামিদা বেগম রেগে বললেন, “তুমি কাল সকালেই আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে। তোমাকে কীসের কমতিতে রেখে ছিলাম আমরা? আশেপাশে তাকিয়ে দেখো শশুর শাশুড়ীর ভালোবাসা পাবার জন্য মেয়েরা কতটা হাহাকার করছে। আর তুমি সেই ভালোবাসা পেয়ে অবহেলায় ফেলে দিলে। আমার ফুলের মতো ছেলেটাকে কষ্ট দিয়েছ আল্লাহ তোমার বিচার করবে। আমাদেরই ভুল না জেনেশুনে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছি।”
“আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে মাফ করে দিন।”
“তুমি যেটা ভুল বলছো সেটা অন্যায়। অন্যায়কে কখনো ক্ষমা করা যায় না। যে একবার এই পথে হাঁটে সে হাজার চাইলেও ফিরে আসতে পারে না। দরকার পড়লে আমার ছেলে সারাজীবন একা থাকবে। তবুও তোমার মতো মেয়ের সাথে সংসার করতে দিব না। আমি কালকেই উকিল ডেকে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে ফেলব।”
“আমি এই বাড়ি থেকে কিছুতেই যাব না। আমাকে রাগিয়ে দিবেন না। এতক্ষণ বহুত ভালো করে বলছি। আমাকে যদি বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে আপনাদের চৌদ্দ শিকের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।”
তাদের মধ্যে ঝামেলা চলতেই থাকল। ঝামেলা চলতে চলতে ভোরের আলো ফুটে গেল। উড়ান নয়নার ব্যাগ গুছিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। সকাল সকাল সবাই উড়ানের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। সবার হাতে হাতে ফোন। কাল রাত তিনটার সময় জোহান আর নয়নার অন্তরঙ্গের ছবি এবং ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেগুলো সবাই উড়ানকে দেখাচ্ছে। লজ্জা উড়ানদের মাথা কাটা যাচ্ছে। সবাই ছি ছি করছে। নয়নার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জোহান এমন কাজ করতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি। নয়না থানায় গিয়ে উড়ানের নামে মামলা দিল। পুলিশ এসে উড়ানকে থানায় নিয়ে গেল। তারা প্রমাণ পেলে উড়ানকে শাস্তি দিবে। নয়না এখানো উড়ানদের বাড়িতেই আছে। এভাবে সাতদিন কেটে গেল উড়ানকে এখনো ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে পারেনি তার বাবা-মা। নয়নাকে তার ছেলের জন্য সহ্য করছে। কতবার যে বলেছে তার ছেলের নামে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে তা তুলে নিতে। কিন্তু নয়না তাদের কথা শুনছে না। উড়ানের বাবা-মা উকিলের সাথে কথা বলেছে উকিল তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।

রাত দু’টো বাজে। নয়নার ঘরে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিল। এমন সময় জোহান নয়নার ঘরে প্রবেশ করল। উড়ানের বাবা-মা তাদের এক আত্নীয়দের বাড়ি গিয়েছে ভালো উকিলের খোঁজ করতে। নয়নার সাথে থাকতেও তাদের ঘৃণা লাগে। জোহানকে দেখে চমকে উঠল নয়না। জোহান নয়নার কাছে গিয়ে নয়নার বুক থেকে শাড়ির আঁচল টেনে খুলে ফেলল।

নয়না চেঁচিয়ে বলল, “তোমার সাহস কীভাবে হয় আমার বাড়িতে আসার।”
“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাই আমার নামে মামলা না দিয়ে উড়ানের নামে দিয়েছ। আমি রাগের মাথায় অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলছি। আমাকে তুমি মাফ করে দিও জান। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার শশুর শাশুড়ী বাড়িতে নেই শুনে ছুটে তোমার কাছে চলে এসেছি। তুমি যেভাবে চলতে বলবে আমি সেভাবেই চলব।”
নয়না হেসে জোহানকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল, “আমি উড়ানকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেয়াদবটা সেটা বুঝল না। আমিও তোমাকে কথা শুনিয়ে ভুল করেছি। তাই আজ রাতটা আমাদের। আমি কালকেই তোমার সাথে চলে যাব।”
নয়নার কথা শেষ হবার সাথে সাথে জোহান নয়নাকে সঙ্গ দিতে লাগল। দু’জন যখন ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। জোহান তখন নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। নয়নাও খুশি মনে জোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান উঠে বসল। নয়না জোহানের হাত ধরে আছে। প্রকৃতিও বোধহয় আজ রেগে গিয়েছে। বাহিরে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যে তুমুল ঝড় হতে শুরু করল। বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগল। প্রকৃতি ডেকে বলল প্রকৃতি তার নিয়মে চলে প্রকৃতি তার বিচারে এতটুকুও অনিয়ম করে না। তোমার বেলায়ও করবে না। বেশি বাড় বাড়লে ঝড়ে ভেঙে যেতে হয়। তুমি সহ্য সীমা পার করে গিয়েছ। প্রকৃতি সব সময় সত্য থাকতে পছন্দ করে। তুমি সত্যকে মিথ্যা দিয়ে চাপা দিয়েছ। প্রকৃতির সাথে অন্যায় করেছ। তোমাকে তো প্রকৃতির বিচার পেতেই হবে। জোহান বালিশ হাতে নিয়ে নয়নার মুখে চেপে ধরল। হঠাৎ আক্রমণে নয়নার কিছুই করার ছিল না। নয়না দুই পা নাড়াচ্ছে। হাত দিয়ে জোহানের হাত সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পুরুষালি শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। উড়ানের কথা বড্ড মনে পড়ছে। পৃথিবীতে উড়ান মনে হয় এক পিসই আছে। যার সাথে এত বড়ো অন্যায় হয়ে গেল। তবুও সে অন্যায়কারীকে ছেড়ে দিল কিছুটি বলল না। উড়ানের কাছে শেষ বারের মতো মাফ চাইতে ইচ্ছে করল। সবাই যেমন উড়ান হয় না ঠিক তেমনই সবাই নয়না হয় না। নয়নার প্রাণপাখিটা উড়ান দিয়ে চলে গেল। জোহান এতেই শান্ত হলো না। রান্না ঘর থেকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে এসে নয়নাকে কো’পা’তে লাগল। নয়নার মাথার ঘিলু ছিটকে এসে জোহানে হাতে পড়ল। নয়নার মুখটা থেঁ’তে করে দিয়ে জোহান বলল, “তোর মানুষের জীবন নিয়ে খুব খেলার শখ ছিল না, শা’লী। এবার ওপারে গিয়ে খেলিস।”
কথাগুলো বলেই জোহান পালিয়ে গেল।

ব্রেকিং নিউজ পরকীয়ার প্রেমিকের সাথে প্রতারণা করার কারণে প্রেমিকে হাতে প্রেমিকা খুন। প্রেমিক জোহান নয়না নামক প্রেমিকাকে খুন করে পালিয়েছে। প্রেমিকা নয়না ছিলেন একজন প্রবাসীর স্ত্রী। স্বামীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় না পাওয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়নার পরিচয় হয় জোহান নামক যুবকের সাথে। সেই পরিচয় ধীরে ধীরে প্রণয়ে রুপ নেয়।

টিভির দিকে তাকিয়ে উড়ান মুচকি হাসলো। বাকিটুকু সোনার প্রয়োজনবোধ করল। যে ঠকায় সময়ের পরিবর্তনে সেও ঠকে উড়ানের আজ খারাপ লাগছে না৷ সে এই কয়দিনে যতটা পুড়েছে। তার একাংশ যদি নয়না পুড়ত তাহলে উড়ানের সাথে প্রতারণা করার সাহস পেত না। যে মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ছিল। আজ সেই মেয়েটার জন্য ঘৃণা হচ্ছে। জোহান আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে ধরা পড়ে এবং সব সত্যি কথা স্বীকার করে। উড়ানে বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়া উড়ানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। উড়ানের বুকটা ভারি হয়ে আছে। সে ওয়াদা করেছে এই জীবনে আর কাউকে ভালোবাসবে না। তার বাবা-মাকে বুকে নিয়ে বাকি জীবন পার করে দিবে। আজকে উড়ান বিদেশে যাবে। উড়ানের বাবা-মা খুব কেঁদেছিল। কিন্তু উড়ান খুব শক্ত থেকেছে। আগের মতো সে হাসে না। আগের থেকে কথা বলার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এয়ারপোর্টে উড়ান বসেছিল। তখনই একটা নারী উড়ানের পাশে বলল, “কেমন আছিস?”
“আরিয়া তুই! আমি ভালোই আছি। তোর সংসার কেমন চলছে বল।”
“আমি টিভিতে তোদের খবর দেখলাম। আমার খুব খারাপ লেগেছে। তোকে মেসেজ করতে চেয়েছিলাম। তুই যদি কিছু মনে করিস তাই।”
“এসব বাদ দে ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। হয়তো তোকে কষ্ট দিয়েছি বলেই ভালোবাসা পাইনি।”
“আমি তোকে এখনো ভালোবাসি।”
“এখনো আবেগে চলিস। তোর স্বামী কেমন আছে?”
“আমি আবেগে চলিনি। কোনটাকে তুই আবেগ বলিস? স্কুল জীবন থেকে তোকে ভালোবাসি। এখনো ভালো বেসেই যাচ্ছি। এটাকে তুই আবেগ বলবি আর কয়টা দিন পর বুড়ি হয়ে যাব। তবুও তোকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না। আমাকে তোকে বিয়ে করতে বলছি না। আমি চাই তুই ভালো থাক। ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকা দেখতেও শান্তি লাগে। আমি এখনো বিয়ে করিনি তোকে ভালোবাসি বলে। কার কাছে কী বলছি যে আমার ভালোবাসা বুঝেনি তার কাছে ভালোবাসার কথা বলছি। ভালো থাকিস রে। যদি বেঁচে থাকি আমাদের দেখা হবে। এই জীবনে তোকে আমি পাইনি পরপারে ঠিক আল্লাহর কাছে চেয়ে নিব।”

কথাগুলো বলেই আরিয়া চলে গেল। উড়ানের জীবনে প্রথম আফসোস হলো। সেটা কখনো সঠিক মানুষ চিনতে পারেনি। একটা মানুষ তাকে নিঃস্বার্থভাবে সারাজীবন ভালোবেসে গেল। আর সে যাকে ভালোবাসলো তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেল ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না। পৃথিবীতে যেমন নয়নার মতো স্বার্থপর মেয়ে আছে। ঠিক তেমনই আরিয়ার মতোও মেয়েও আছে। যারা একটি মানুষকে ভালোবেসে গোটা জীবন একা কাটিয়ে দেওয়ার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নেয়। উড়ান আরিয়ার জন্য মন থেকে দোয়া করল। সে চায় আরিয়ার একটা সুন্দর সংসার হোক। আরিয়ার সুন্দর সংসার দেখার জন্য হলেও যেন আরিয়ার সাথে দেখা হয়। নয়নার কথা মনে হতেই চোখেমুখে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল। প্রকৃতির বিচার বড়ই কঠিন। যে পায় সে জানে বেঁচে থাকার মূল্য কতটা। যে অন্যায় করেছে পাপ করেছে প্রকৃতি তাকে তার বিচার ঠিক দিয়েছে। মলিন মুখ এবং বুকভরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উড়ান আকাশে উড়াল দিয়ে দূর প্রবাসে চলে গেল।

(সমাপ্ত)

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৭

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“তুমি এত রাতে এখানে কী করছো? তোমাকে না বলেছি তুমি এই কয়টা দিন আমার সাথে দেখা করতে আসবে না। তবুও আমার কথা শুনছো না কেন বলো তো?”
নয়নার কথায় জোহান রেগে গিয়ে বলল, “আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই চলে আসলাম। তোমার স্বামী কোথায়? নয়না তুমি চাইলে আজকেই আমরা পালিয়ে যেতে পারি। চলো না আমরা এখন পালিয়ে যাই।”
নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আমি তোমাকে কতবার বলব আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না। তবুও তুমি আমার কথা শুনছো না কেন? আমি তোমাদের দু’জনের সাথে সারাজীবন সম্পর্ক রাখতে চাই। তাই আমাকে পেতে হলে তোমাকে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। তুমি যদি মানিয়ে নিয়ে চলতে না পারো তাহলে আমাকে ভুলে যাও। আমি এত সুখের সংসার ছেড়ে তোমার মতো বেকারের সাথে পালিয়ে যাব না।”
“তুমি যে এতবড়ো প্রতারক সেটা আমি আগে জানতাম না। আমি আজ বেকার আছি। তোমাকে পেয়ে গেলে কালকে ঠিক কাজ করব।”
উড়ান বসারঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল, “এতরাতে কে এসেছে নয়না?
“আমি চিনি না ভুল করে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছে। তুমি ঘরে যাও আমি কথা বলে বিদায় দিয়ে আসছি।”
উড়ান নয়নার ঘরে চলে গেল। নয়না জোহানের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিল। জোহান রাগান্বিত হয়ে নয়নার ফোনে মেসেজ পাঠাল।
“আজ রাতে যদি আমার ফোন না ধরো। তাহলে তোমার আর আমার সব ভিডিও এবং ছবি তোমার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিব। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসা কীভাবে ছিনিয়ে নিতে হয়। সেটা আমি জোহান আমার ভালো করেই জানা আছে।”
মেসেজ শেষে জোহান কয়টা ছবি এবং দুটো ভিডিও পাঠাল। উড়ানের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। তার বুকের মধ্যে জ্বালা পোড়া করতে লাগল। সে অবিশ্বাস্য নয়নে নয়নার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের কার্ণিশে অশ্রু এসে জমা হয়েছে। নয়না ঘরে এসে উড়ানকে কাঁদতে দেখে অস্থির হয়ে বলল, “কী হয়েছে তোমার? তুমি কাঁদছ কেন?”
উড়ান হেসে বলল, “কই কাঁদছি না তো। আমার চোখের মধ্যে একটা পোকা ঢুকে গিয়েছে। সেজন্য চোখ ডলেছি তাই চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। অনেকে রাত হয়ে গিয়েছে ঘুমাবে না নয়না?”
“তোমার মন খারাপ হয়ে গেল কেন উড়ান। তুমি কী আমার উপরে কোনো কারণে রাগ করেছ?”
“আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। তুমি কিছু মনে করো না। তুমি খেয়ে শুয়ে পড়বে কেমন।”
কথাগুলো বলেই উড়ান চোখ বন্ধ করল। তার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নয়না এমন কিছু করতে পারে। তার নয়না তো এমন ছিল না তবে নয়না এমন হয়ে গেল কেন? যে নয়নাকে সে বিয়ে করেছিল এটা তো সেই নয়না নয়। উড়ান কাঁদছে। তার বুক ভারি হয়ে আসছে। তার বিশ্বাস নয়না ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। উড়ানের রাতে ঘুম আসলো না। সে ভেতর থেকে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত তিনটা বাজে নয়নার ফোন বেজে উঠল। নয়না উঠে বেলকনিতে চলে গেল। উড়ানও নয়নার পেছনে পেছনে গেল। নয়না রাগান্বিত হয়ে বলল, “আমি তোমাকে কতবার বলেছি। তুমি আমাকে যখনতখন ফোন দিবে না। আমাকে বেশি বিরক্ত করলে আমি তোমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিব।”
জোহান শব্দ করে হেসে বলল, “তুমি যদি আমার ফোন না ধরতে তাহলে আমি তোমার স্বামীকে সবকিছু দেখিয়ে দিতাম।”
“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?”
“হ্যাঁ দেখাচ্ছি।”
“আমার স্বামী তোমাকে বিশ্বাস করবে না। আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসে। তুমি চাইলেও আমাদের মধ্যে ফাটল ধরাতে পারবে না।”
“তুমি আমার সাথে আসবে না তাই তো?”
“হ্যাঁ যাব না।”
“আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে উড়ানকেও পেতে দিব না।”
“তোমার এমন অবস্থা করব তুমি ভাবতেও পারবে না। তোমাকে মেরে তোমার লা’শ গুম করে দিব। তোমার দেহখানা কুকুর দিয়ে খাওয়াব আমি।”
“তোকে কিন্তু খু’ন করে ফেলব নয়না।”
“তুই আমার কিছু করতে পারবি না। তার আগেই তোর উপরের টিকিট কেটে ফেলব আমি।”
“আমি তোকে বাঁচতে দিব না। আমি উড়ানকে সব সত্যি কথা বলে দিব।”
“পারলে আমার বা*ল ফেলিয়ে নিস।”
নয়না রেগে কল কেটে দিল। সে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। উড়ান মলিন কণ্ঠে বলল, “এত রাতে কার সাথে কথা বলছিলে নয়না?”
“তুমি ঘুমাওনি?”
“তোমার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গিয়েছে।”
“আমি রিয়ার সাথে কথা বলছিলাম।”
“রিয়াকে একটু কল দাও। আমি রিয়ার সাথে কথা বলব।”
“রিয়া এতক্ষণে ঘুমিয়ে গিয়েছে।”
“মাত্রই তো কথা বলল!”
“তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?”
“তুমি যে জোহানের সাথে কথা বললে সেটা কেন বলছো না।”
“এই ছেলেটা একদম ভালো না। তুমি আর ওর নাম আমার সামনে নিবে না।”
“যখন ওই ছেলেটার সাথে শুয়েছ তখন অনেক ভালো লেগেছে বুঝি।”
“উড়ান এসব তুমি কী বলছো? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে! তোমার মন মানসিকতা এতটা নিচু সেটা আমি জানতাম না।”
“তোমার শরীরে এত তেজ সেটাও আমি আগে জানতাম না। বয়ফ্রেন্ডের সাথে রুম ডেট করেছ। সেটা আবার ভিডিও করেছ। বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিপকিস করেছ সেটার ছবি তুলেছ। এত তেজ কোথায় থেকে পাও? আমি মাসে মাসে যে টাকা পাঠাই সেই টাকায় খেয়ে অন্যের বিছানায় গিয়ে সুখ দাও।”
“আমার নামে মিথ্যা বদনাম দিবে না। তুমি এসব কথা বলছো তার কী প্রমাণ আছে তোমার কাছে?”
উড়ান নিজের ফোন বের করে দু’টো ভিডিও এবং দশটা ছবি দেখাল। নয়নার মাথা নিচু হয়ে গেল। নয়না কাঁদতে কাঁদতে উড়ানের পা জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। আমি কীভাবে কী করে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারিনি। আমি আর জীবনে এমন ভুল করব না। জোহান আমাকে হু’ম’কি দিচ্ছে তুমি আমাকে জোহানের হাত থেকে বাঁচাও। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আর তোমার সাথেই থাকতে চাই। তুমি আমাকে একটাবার সুযোগ দাও। আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো স্ত্রী হয়ে দেখাব।”
“মানুষের জীবনের চাওয়ার শেষ নেই জানো নয়না। প্রেম, ভালোবাসা বলতে যদি শরীর বোঝানো হয়। তাহলে পতিতারা শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা হয়। সেখানে আমার সুযোগ থাকা সত্বেও আমি তোমার হক নষ্ট করিনি। সেখানে তুমি দিনের পর দিন কীভাবে আমাকে ঠকালে? একজনের বউ হয়ে আরেকটা পরপুরুষের বিছানায় শুতে তোমার বুক কাঁপল না। তোমার মনে হলো না তোমার স্বামী অনেক আশা নিয়ে তোমায় বিশ্বাস করে। তার বিশ্বাস ভেঙে গেলে সে কী নিয়ে বাঁচবে? দিনে দশ-বারো ঘন্টা কাজ করেছি, নিজের রান্না নিজে করেছি, অসুস্থ হয়ে নিজের সেবা নিজে করেছি। তবুও তোমাদের কখনো চিন্তায় ফেলে দেইনি। তোমরা ভালো থাকবে বলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাজ করেছি। আমার বাবা-মায়ের থেকে তোমাকে বেশি টাকা পাঠিয়েছি আর তুমি কি-না সেই টাকায় পরপুরুষ নিয়ে ফুর্তি করেছ। আমাকে নীলা বলেছিল তুমি সকাল সকাল গোসল করো। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে একা বের হয়ে যাও। আমি তখন নীলাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম তুই যাকে খারাপ বলছিস। সে আমার বউ হয় প্রতিটি স্বামীর উচিত তার স্ত্রীর উপর বিশ্বাস করা আর প্রতিটি স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া। আজকের পর আমি আর কোনো নারীকে বিশ্বাস করতে পারব না। আমি তো ভালোবাসতেই চাইনি। তবুও বিধাতা আমাকে তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিল। আমি তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করলাম আর তুমি আমাকে অন্ধ প্রমাণ করে দিলে। তোমার কাছে অনুরোধ করেছিলাম তোমার পা ধরাটা বাকি ছিল আমার। তোমার শরীরে যদি মরণব্যাধি রোগও হতো। তবুও আমি তোমাকে ছাড়তাম না। যে মেয়ে স্বামী থাকার পরেও অন্য পুরুষের কাছে যায়। সেই নারীর ক্ষমা কখনো হয় না। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তুমি আমার সাথে এমনটা কেনো করলে নয়না? আমি শ্বাস নিতে পারছি না আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি যে কেন বিয়ে করতে গেলাম। আমি এভাবে ঠকে যাব ভাবতেও পারিনি। আমার বুকের মধ্যে অসহনীয় যন্ত্রণা করছে। সেটা কি তুমি অনুভব করতে পারছো নয়না?”

চলবে…..

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৬

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“তোমাকে আমি কালকেই টাকা দিলাম। আর তুমি আজকেই আমার পিছু নিয়েছ! তোমার থেকে এটা একদমই আশা করিনি। তুমি জানো আমার স্বামী এখন আমার সাথে আছে। তবুও তুমি পাগলামি করছো কেন? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছে? নাকি তোমাকে রেখে পালিয়ে যাচ্ছি বলো তো? আমার স্বামী আইসক্রিম নিয়ে আসতে গিয়েছে। তুমি এখানে থেকে চলে যাও। আমার স্বামী চলে যাওয়ার পর আমি তোমার কাছে চলে যাব প্রমিস।”

“তুমি আমাকে যে টাকা দিয়েছ। সেই টাকায় কিছু হয় না। তুমি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দাও। তুমি যদি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা না দাও। তাহলে আমি তোমার স্বামীকে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সবকিছু বলে দিব। তখন দেখব তোমার এত বড়ো বড়ো কথা কোথায় যায়। তুমি আমাকে টাকা দিতে না পারলে তোমার সংসার করার সাধ আমি মিটিয়ে দিব।”

নয়না অবাক হয়ে বলল, “তুমি এত টাকা নিয়ে কী করো জোহান? আমার এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছি। আমার একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তুমি আমার পাশে ছিলে। তুমি আমাকে মানসিক ভাবে ভরসা দিয়েছ। তোমার জীবনের কিছুটা সময় আমাকে দিয়েছ। তাই বলে তুমি দিনের পর দিন আমার থেকে এভাবে টাকা চাইবে? আমি তোমাকে কত টাকা দিয়েছি তার কোনো হিসাব আছে? আমি ভাবতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল। তুমি যদি আমার সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করো। তাহলে আমি তোমাকে পুলিশ দিয়ে দিব।”

জোহান তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম নয়না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিলাম না। তাই ডাকাত সেজে তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে বিশ্বাস করো না। আমারই ভুল জানো তো আমি যে কেন তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে গেলাম। আজ যদি তোমাকে আমি ভালো না বাসতাম তাহলে আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগতো না। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো তোমার সামনে আসব না। তুমি ভালো থেকো তোমাদের সুখের সংসারে আমি আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াব না।”

নয়না মলিন কণ্ঠে বলল, “তুমি আমাকে মাফ করে দাও জোহান৷ আমি তোমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি উড়ানের চোখে কিছুতেই খারাপ হতে চাইছি না। উড়ান আমাকে অনেক ভালোবাসে। এত ভালোবাসা রেখে কী কোথাও যাওয়া যায় বলো? আমি তোমাকেও ভালোবাসি আমি উড়ানকেও ভালোবাসি। তোমাদের দু’জনের কাউকেই আমি ছাড়তে পারব না। উড়ান যখন দেশে আসবে তখন আমি উড়ানের আর উড়ান যখন বিদেশে যাবে তখন আমি তোমার। তুমি যদি এভাবে আমাকে মেনে নিতে পারো। তাহলে আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে। আর না হলে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে নিতে পারো।”

জোহানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সে মানছে সে নেশার জন্য নয়নার থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে নয়নাকে সত্যি অনেক ভালোবেসে ফেলছে। সে ভেবেছিল নয়নার সাথে কয়েকদিন রিলেশন করে ছেড়ে দিবে। কিন্তু ভালোবাসার অভিনয় করতে গিয়ে কখন যে সে নয়নাকে মন দিয়ে বসেছে সেটা জানা নেই জোহানের। নয়না উড়ানকে ভালোবাসে এটা জোহান কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে নয়নাকে ছাড়া থাকতে পারছে না। জোহান নয়নার হাত ধরে বলল, “তুমি আমাকে আর কষ্ট দিও না নয়না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি খালি হাত পায়ে উড়ানের কাছ থেকে চলে আসো। আমি একটা কাজ করে তোমাকে ঠিক ভালো রাখতে পারব। তুমি অন্যের হয়ে আমাকে এভাবে স্বপ্ন কেন দেখালে? আমি তো তোমাকে ভালোবাসতে চাইনি। তবে তোমার সাথে আমার দেখা কেন হলো? আমি মানছি আমি নেশা করার জন্য তোমার থেকে অনেক টাকা নিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে মনের ভুলেও তাকাইনি। আমি তোমাকে ছাড়া মরে যাব নয়না। তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমি তোমাকে পেলে সব খারাপ কাজ ছেড়ে দিব।”
নয়না দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আমার হাতটা ছাড়ো জোহান। আমার স্বামী আসছে। তোমার জন্য যদি আমি উড়ানের কাছে খারাপ হয়ে যাই। তাহলে তুমি আমাকে কোনোদিন পাবে না। যদিও আজকের পর আর কোনোদিন তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব না।”
জোহাদ কাঁদতে কাঁদতে বলল, “দু’দিন আগেও আমার জন্য পাগল ছিলে তুমি! আজ তোমার স্বামী আসার সাথে সাথেই আমাকে ভুলে গেলে? আমার হতে পারবে না তবে কেন মিথ্যা স্বপ্ন দেখালে বলো?”
“তোমাকে আমি মিথ্যা স্বপ্ন দেখায়নি। আমি তোমাদের দু’জনের হয়ে থাকতে চাই।”
“বেশ তোমার কথা আমি মেনে নিলাম।”
“উড়ান আসছে। তুমি আমার হাতটা ছাড়ো। আমি উড়ানকে বলব তুমি আমার কলেজের বন্ধু। তুমি আমার কথার সাথে তাল মিলাবে মনে থাকবে তো?”
“হুম মনে থাকবে।”

উড়ান আইসক্রিম হাতে নয়নার সামনে আসলো। নয়নার পাশে অন্য পুরুষকে দেখে উড়ানের ভ্রু কুঁচকে গেল। নয়না হেসে বলল, “ওর নাম জোহান। আমরা একসাথে কলেজে পড়াশোনা করেছি। আজকে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। তাই দু’জন গল্প করছিলাম।”
উড়ান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “তাই তো ভাবছি আমার বউটা কার সাথে কথা বলছে।”
জোহান রাগে হাত মষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। তার দু’চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তবুও সে উড়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমি জোহান নয়নার সাথে পড়াশোনা করেছি।”
উড়ান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আমি উড়ান নয়নার স্বামী।”
জোহান বলল, “চলুন তিনজন মিলে বসে চা খাই।”
“আজকে চা খাব না। আকাশের অবস্থা ভালো না। আপনাকে আমাদের বাসায় দাওয়াত রইল। আপনি সময় করে একদিন আমাদের বাড়িতে আসবেন। আজকে আসছি।”

উড়ান নয়নাকে নিয়ে চলে গেল। জোহান হিংস্র চোখে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নয়না তার না হলে সে নয়নাকে কারো হতে দিবে না। সে নয়নাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল।

রাত বারোটা। নয়না এবং উড়ান দু’জন পাশাপাশি শুয়ে আছে। হঠাৎ করে নয়না বলে উঠল, “আমার না খুব বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।”
“এত রাতে তো দোকান সব বন্ধ। তুমি যদি দিনের বেলায় আমাকে বলতে তাহলে কিনে এনে রেখে দিতাম।”
“আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে। আমি দিনের বেলায় বলে কী করব বলো? এসব বাদ দাও তুমি বিদেশে কী কী করছো গল্প করো।”
“আমার বউয়ের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে আর আমি বাদ দিব। দরকার পড়লে নিজে বানিয়ে খাওয়াব। তুমি আমাকে একটু সময় দাও। আমি এখনই বিরিয়ানি বানিয়ে নিয়ে আসছি।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এত রাতে রান্না ঘরে গেলে সবাই কী বলবে?”
“আমি কারো পরোয়া করি না। আমার বউয়ের ইচ্ছের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। তুমি শুয়ে থাকো আমি রান্না করে নিয়ে আসি।”

উড়ান চলে গেল। নয়না ভাবল জোহানকে ফোন দিয়ে জোহানের সাথে কথা বলবে। কিন্তু কী মনে করে যেন ফোন দিল না। নয়না বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। চুলগুলো বেঁধে ঘরের বাহিরে চলে গেল। উড়ান রান্না ঘরে মনযোগ দিয়ে রান্না করছে। নয়না গিয়ে উড়ানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল। নয়নাকে দেখে উড়ান মিষ্টি হাসি উপহার দিল। নয়না উড়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি তো দেখছি খুব সুন্দর করে রান্না করতে পারো।”
“কী করব বলো? আমার এখানে মা আছে বউ আছে। কিন্তু বিদেশে কেউ নেই। তাই নিজের রান্না নিজেকেই করতে হয়।”
“তুমি আর বিদেশে যেও না। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগে না।”
“কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হয় বউ।”

উড়ানের কথায় নয়না কিছু বলল না। সে চুপচাপ উড়ানকে ধরে রাখল। উড়ানও কিছু বলল না। সে জানে নয়নার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে নয়নার মন খারাপ বাড়িয়ে দিতে চায় না বলেই নীরব হয়ে গিয়েছে।

চলবে…..

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৫

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

দরজা খুলে উড়ানকে দেখে নয়না চমকে উঠল। তার মুখটা মুহুর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। উড়ান হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী করে নয়নাকে জড়িয়ে ধরল। নয়নাও ভীত মুখ নিয়ে উড়ানকে জড়িয়ে ধরল। নয়নার মুখশ্রীতে হাসি দেখতে না পেয়ে উড়ান বলল, “তুমি আমাকে পেয়ে খুশি হওনি নয়না?
নয়না কৃত্রিম হেসে বলল, “তোমাকে দেখে খুশি হব না কেন? হঠাৎ করে তোমাকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি। আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছি। আমি কী বলব কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি। তুমি যে আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিবে সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। তুমি আসবে আমাকে আগে বলোনি কেন?”
“তোমাকে যদি আগে বলতাম আমি আসব। তাহলে কি তুমি সারপ্রাইজ হতে? আমি আমার কোম্পানির মালিকের থেকে অনেক কষ্টে পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। তোমার জন্য মনটা খুব ছটফট করছিল। তুমি জানো আমি বাড়ি আসব বলে এই কয়দিন অনেক কাজ করেছি। আমার শরীরের হয়তো অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এই যে বাড়িতে এসে তোমার মুখটা দেখলাম। আমার সব কষ্ট সুখে পরিণত হয়েছে গিয়েছে।”
“আমি সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি। মা জানলে অনেক খুশি হবে।”
উড়ান নয়নার হাত ধরে বলল, “তোমাকে কোথাও যেতে হবে না৷ আমি সবাইকে ডাকছি। তুমি আমার চোখের সামনে বসে থাকো। তুমি আমার চোখের সামনে বসে থাকলেই শান্তি লাগে। আমি দীর্ঘদিন এই শান্তি থেকে বঞ্চিত ছিলাম। মাত্র কযটা দিনই তো আছি। আমি এতটুকু শান্তি পেতে চাই নয়না।”

উড়ানের কথায় নয়না হাসলো। তার ভেতরে ভয় কাজ করছে। তার ফোন থেকে জোহানের নাম্বার ডিলিট করতে হবে। সে জোহানের সাথে মেসেজে কথা বলেছে সেগুলো ডিলিট করতে হবে। জোহানকে সব জায়গা থেকে ব্লক করতে হবে। এসব চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল নয়না। নয়নার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে উড়ান। নয়না উড়ানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উড়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অদ্ভুত ভাবে উড়ানকে আর তার ভালো লাগছে না। অথচ এই মানুষটাকে সে দুই বছর ভালোবাসতো। মানুষটার ছোঁয়া ছাড়া অন্য কারো ছোঁয়া তার কাছে বিষাক্ত লাগতো। সময়ের সাথে মানুষ বদলায়। মানুষের পছন্দ বদলায়। নয়নাও বদলেছে। উড়ান মুগ্ধ নয়নে নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। উড়ান তার বাবা মাকে ডাকল। উড়ানকে দেখে হামিদা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। উড়ান একহাতে তার বাবাকে কাছে ডাকল। উড়ানের বাবা উড়ানের পাশে বসে উড়ানকে জড়িয়ে ধরল। নয়না এই সুযোগে নিজের ঘরে চলে গেল। দ্রুত ফোন বের করে জোহানকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিল। সব কিছু ডিলিট করে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। নয়না ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমন সময় উড়ান এসে নয়নার হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নিল। নয়না চমকে উঠল। উড়ান রাগী কণ্ঠে বলল, “তোমার জামাই তোমার কাছে এসেছে। তুমি ফোনের মধ্যে তাকিয়ে কী করছো?”
“আমার মনে হলো আমার মা ফোন দিয়েছিল। তাই আমি দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম কল আসেনি। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমার জন্য খাবার বাড়ছি। আজকে আমি তোমার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াব।”
“আজ কিছু খাওয়াবেন না?”
“একদম অসভ্য কথা বলবে না।”
“বউয়ের সাথে একটু অসভ্য হওয়া যায়।”
“ভালো পুরুষেরা কখনো কারো সাথেই অসভ্য হয় না।”
“আমি তো ভালো পুরুষ না।”
“এতদূর থেকে এসেছ। তোমার ক্লান্ত লাগছে না?”
“আমার সব ক্লান্তি তোমার মুখ দেখে শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার যেটা হবে সেটা ভালোবাসা।”
“তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার তৈরি করছি।”

উড়ান নয়নাকে আর বিরক্ত করল না। সে ফ্রেশ হতে চলে গেল। নয়না খাবার টেবিলে উড়ানের জন্য খাবার বাড়ছে। নয়নার শাশুড়ী বলল, “আজকে উড়ান আসবে সেটা তুমি জানতে নয়না?”
“না মা উড়ান আমাকে কিছু বলেনি। আমাদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য মনে হয় চলে এসেছে।”
“আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার ছেলেকে এভাবে দেখতে পাব। আমার কী যে আনন্দ লাগছে আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। ছেলেটা আমাকে আগে জানালে আমি উড়ানের পছন্দের সব রকম খাবার রান্না করতাম।”
“আপনি আর আমি উড়ানের পছন্দের সব রকম খাবার রান্না করব। আমি ভাবছি কী আজকে আমরা পিঠাও বানাব।”

তাদের কথার মাঝে উড়ান এসে সেখানে উপস্থিত হয়। নয়না উড়ানকে খেতে দেয়। উড়ানের ক্ষুদা লেগেছিল তাই সে চুপচাপ খেতে লাগল। হামিদা বেগম মন ভরে ছেলেকে দেখছেন। তার ছেলেটা আগের থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছে। হামিদা বেগম নিজের মনকে নিজেই শাসন করে দিল। মা হয়ে ছেলেকে নজর দিচ্ছে!

“তোমরা আমাকে আসার কথা বলেছিলে। তখন থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম। দশ দিনের জন্য হলেও আমি দেশে যাব। আমি ছয়মাস ধরে মালিকের কাছে ছুটির অনুমতি চাইছিলাম। কিন্তু পরের কাজ করি তো ছুটি পাওয়া এত সহজ না। বেশি বেশি কাজ করে মালিকের মন গলিয়েছি। তারপর সে দয়া করে আমাকে ছুটি দিয়েছে। আমি কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারব না।”
উড়ানের মা বলল, “তোকে যে এত তাড়াতাড়ি দেখতে পাব। এটা আমি আশা করিনি। তোকে এই পনেরো দিন নিজের মন মতো রান্না করে খাওয়াব। তুই বউমাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাবি। মেয়েটা বাসায় একা একা থাকে ওর বান্ধবী রিয়া আসলে একটু বাহিরে যায়। তা না হলে একটুও বাহিরে যায় না। বলে আমার স্বামী নেই আমি বাহিরে গিয়ে কী করব? তুই ভাব কতটা ভালো মেয়ে আমার।”

উড়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। নয়না লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।

রাত দু’টো। উড়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে নয়না। এমন সময় মুঠোফোনটা বেজে উঠল। নয়না আস্তে করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার। তাই সে রেখে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ফোনটা আবার বেজে উঠল। নয়না ফোনটা কানে ধরতেই জাহান রাগান্বিত হয়ে বলল, “তুমি আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করেছ কেন নয়না? তুমি কি কেনো ভাবে আমার সাথে বেইমানি করার চেষ্টা করছো?”
নয়না তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। সে বিলম্ব না করে বেলকনিতে চলে গেল। নয়না অস্থির হয়ে বলল, “তুমি এসব কী বলছো। তুমি আমাকে কয়টা দিন কল দিও না। আজকে আমার স্বামী হঠাৎ করেই বাড়ি চলে এসেছে। ও যে এভাবে বাড়ি চলে আসবে। সেটা আমরা কেউ জানতাম না। আমাদের না জানিয়ে ও চলে এসেছে। তাই আমি ভয়ে তোমাকে ব্লক দিয়েছি। উড়ান মাত্র পনেরো দিন থেকে চলে যাবে। তখন আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করব।”
“তোমার স্বামী দেশে আসছে মানে না কী? আমাকে বোকা পেয়েছ? তুমি সবকিছু জানতে তাই না? তুমি উড়ানের সাথে ঘুমামে না। উড়ানকে স্পর্শ করতে দিবে না। উড়ান যদি তোমাকে স্পর্শ করে তাহলে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”
“তুমি এমন আচরণ করছো কেন? উড়ান আমার স্বামী হয়। উড়ানের সাথে না ঘুমালে উড়ান আমাকে সন্দেহ করবে। তখন আমি উড়ানকে কী জবাব দিব?”
“সেটা আমি জানিনা। তুমি উড়ানের কাছে গেলে আমি উড়ানকে সবকিছু বলে দিব। আমি উড়ানের সাথে তোমাকে কিছুতেই সহ্য করব না।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। উড়ান আমার স্বামী। তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না। আমি তোমাকে পরে ফোন দিব।”
“তুমি কল কাটলে আমি এখনই তোমাদের বাসায় চলে আসব।”
“এমন পাগলামি করছো কেন জোহান?”
“তোমার জন্য।”
“আমার ভালো চাইলে যোগাযোগ বন্ধ রাখো কয়টা দিন।”
“তোমার সাথে একদিন দেখা না হলে পাগল পাগল লাগে।”
“আমি বুঝতে পারছি। তুমি এই কয়টা দিন সহ্য করতে পারবে না।”
“নয়না।”
“বলো।”
“আমি একটু তোমার বাসার নিচে আসি?”
“না।”
“একটু দেখেই চলে যাব।”
“পাগলামি করো না।”
“আচ্ছা আসব না। তাহলে আমাকে বিশ হাজার টাকা দাও।”
“এত টাকা দিয়ে তুমি কী করবে?”
“তুমি কয়টা দিন জামাই নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আমার বুকে আগুন জ্বলবে তাই নেভানোর জন্য ঘুরতে যাব। আমার কাছে টাকা নেই।”
“আমি তোমাকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে কল দিও না।”

কথাগুলো বলেই নয়না কল কেটে দিল। বিকাশ থেকে জোহানের নাম্বারে বিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিল। সে বিলম্ব না করে ঘরে এলো। উড়ান ক্লান্ত থাকায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। নয়নাও উড়ানের পাশে শুয়ে পড়ল।

চলবে…..

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৪

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রাত প্রায় শেষের দিকে চলে আসছে। নয়না নামাজ পড়ে দেখে মাঝেমধ্যে তার ঘুম ভেঙে যায়। নয়নার ঘুম ভেঙে দেখল চারটা বাজতে যাচ্ছে। নয়নার চোখ কপালে উঠে গেল। নয়না জোহানকে ডাকতে লাগল। জোহান বিরক্তি নিয়ে নয়নার দিকে তাকাল। জোহানের পরক্ষনেই মনে পড়ল সে নয়নাদের বাড়ি আছে। তাই সে উঠে বসল। নয়নার কপালে চুমু খেয়ে নয়নার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। নয়না ডাটা অন করে ফেসবুক ঢুকল। উড়ানকে একটিভ দেখে একটুও অবাক হলো। নয়না উড়ানকে মেসেজ দিল,

–আসসালামু আলাইকুম, জান। শুভ সকাল।

উড়ান সাথে সাথে রিপ্লাই দিল,

–আমার মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে? আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, জান। তুমি রাতে ঘুমিয়েছিলে তাই তোমাকে বিরক্ত করিনি। আমি জানতাম তোমার ঘুম ভাঙলে তুমি সবার আগে আমার কাছে আসবে।

–তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি। সেটা আমি নিজেও জানি না। তোমার জন্য অপেক্ষা করে করে যখন তুমি আসো না। তখন আমার খুব মন খারাপ হয়। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আমি কতবার ভেবেছি তোমার সাথে আর কখনো কথা বলব না। কিন্তু তুমি যখনই বউ বলে ডাক দাও। তখন আমার সব রাগ হারিয়ে যায়।

–আমি তো এখানে বসে থাকি না বলো। এখানে কাজ করে খেতে হয়। কাজ না করলে টাকা নেই। তুমি যত পরিশ্রম করবে তত টাকা পাবে। আমি যদি টাকা ইনকাম না করি তোমরা কি ভালোভাবে চলতে পারবে বলো? তাই প্রিয়জনদের মন খারাপ করিয়ে হলেও আমাদের কাজে মন দিতে হয়।

–তুমি আমার কথায় মন খারাপ করো না। আমি মাঝেমধ্যে নিজের মনকে মানাতে পারি না। তাই তোমাকে কথা শুনিয়ে ফেলি।

–তুমি আমার বউ। তোমার সব কথা শোনার জন্য এই অধম প্রস্তুত।

নয়না হেসে জবাব দিল,

–আমাকে নামাজ পড়তে হবে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব। আরেকটু ঘুমিয়ে নেই, জান।

–তুমি নিজের খেয়াল রাখবে। তোমার কোনো কিছুর প্রয়োজনীয় হলে আমাকে বলবে। আমি তোমার সব আবদার পূরণ করে দিব। এবার ঘুমিয়ে যাও। আমাকে কাজে যেতে হবে। আমি রান্না করছি খেয়ে কাজে যাব।

দু’জন কথা বলে ফোনটা রেখে দিল। নয়না জোহানের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। আজকে সে উঠে নামাজও পড়ল না। সকালে উঠে গোসল করে বাহিরে বের হলো। নীলা রান্না করে কাজ করছিল। নয়নাকে ভেজা চুলে দেখে অবাক হয়ে গেল। নয়না তো কোনো দিন এত সকাল সকাল গোসল করে না। নীলার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। নীল উৎসুক কণ্ঠে বলল,

–আপনি এত সকাল সকাল গোসল দিছেন কেন, ভাবি?

–আমার খুব গরম লাগছিল তাই গোসল দিয়েছি।

–এই ভোরে কি কারো গরম লাগে! ভোরের শীতল বাতাস শরীরকে শীতল করে তুলে। আমার মনে হয় আপনি মিথ্যা কথা বলছেন। সত্যি করে বলেন আপনি কিসের জন্য গোসল দিয়েছেন।

–আমি তোকে বলতে চেয়েছিলাম না। তবুও তোকে বলছি। মেয়েদের তো প্রতি মাসে মাসে যে সমস্যা হয় জানিস। আমার সেই সমস্যা হয়েছিল রাতে। তাই আমি বাধ্য হয়ে সকালে গোসল করেছি৷ এবার তোর বিশ্বাস হয়েছে নাকি আরো গভীর ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে?

–এই ব্যাপার আপনে আগে কইবেন না। আমার সমস্যা হলে আমিও মাঝেমধ্যেই সকালে গোসল করি। এটা অবিশ্বাস করার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আপনি আমাকে সত্যি কথা বলে দিলেই পারতেন। প্রথেম মিথ্যা কথা বলার কী দরকার ছিল?

–তুই সব ব্যাপারে এত মাথা ঘামাস আমার খুব বিরক্ত লাগে। তুই কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মতো থাকবি। একদম আমার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে আসবি না।

–আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারলেন। আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলতে আসুম না।

নীলা চা নিয়ে হামিদা বেগমের ঘরে এলো। নীলাকে মুখ কালো করে থাকতে দেখে হামিদা বেগম বললেন,

–তুই মুখটা কালো করে রেখেছিস কেন?

–আমি কাজ করে খাই বলে কী আমি মানুষ না?

–কী হয়েছে সেটা বলবি তো!

–আপনার পোলার বউ সকাল সকাল গোসল দিয়া ঘর থেকে বের হয়েছে। আমি কইলাম সকাল সকাল গোসল দিছেন কেন? আমারে কইলো গরম লাগছে। আমি কইলাম ভোরে তো শীত লাগে গরম লাগে না। হেতে কইলো তার সমস্যা হয়েছে তাই গোসল দিয়েছে। আমি কইলাম মিথ্যা কতা কইলেন কেন? হেতে আমারে কয় কাজের মাইয়া কাজের মাইয়ার মতন থাকবে।

–একটা মানুষের সমস্যা হতেই পারে। তুই পুলিশের মতো সব বিষয়ে জেরা করতে গিয়েছিস কেন? মন মানসিকতা সব সময় ভালো রাখতে শিখ। অন্যকে খারাপ ভাবার আগে ভাববি আমি নিজে কেমন। তাহলে দেখবি অধিকাংশ মানুষের চিন্তা ধারা বদলে গিয়েছে।

–পরের মাইয়াকে এত অন্ধবিশ্বাস করা ঠিক না। এই মাইয়া আপমাগো কাল হইয়া দাঁড়াইব। এই মাইয়ারে যত আলাভোলা লাগে এই মাইয়া খুব ধুরন্ধর। এই মাইয়ারে আমিও মেলা ভালোবাসছিলাম। কিন্তু এই মাইয়া রাত দিন যেভাবে চলাফেরা করে আমার পছন্দ হয় না। আপনারা এই মাইয়ার উপরে নজর রাখেন।

হামিদা বেগম রাগ দেখিয়ে বলল,

–তুই অনেক কথা বলতে শিখে গিয়েছিস তাই না? আমার ছেলের বউকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস কোথায় পাস? আমি আমার ছেলের বউকে নিজের মেয়ে মনে করি। তাই সে নিজের বাড়ি মনে করে নিজের মন মতো চলাফেরা করে। এখানে আমি খারাপের কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

নীলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নয়না এবং রিয়া হামিদার ঘরে প্রবেশ করল। রিয়া নয়নার বেস্ট ফ্রেন্ড। রিয়াকে হামিদা বেগম চিনেন। রিয়া হামিদা বেগমকে সালাম দিয়ে ভালোমন্দ কথা জানতে চাইল। হামিদা বেগম রিয়ার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে। রিয়া আহ্লাদ করে বলল,

–আজকে আমার জন্মদিন আন্টি। তাই আমি নয়নাকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরতে চাই। নয়না আপনাদের অনুমতি ছাড়া এক পাও এ বাড়ি থেকে নড়বে না। তাই আমি আপনার কাছে অনুমতি নিতে আসলাম।

–তুমি নয়নাকে নিয়ে যেতে পারো মা। তবে বিকালের মধ্যে নয়নাকে বাসায় দিয়ে যেতে হবে। আমার ঘরের মেয়ে রাত করে বাহিরে থাকবে এটা আমি মেনে নিতে পারব না। তুমি যদি বিকালের মধ্যে দিয়ে যেতে পারো। তবেই আমি তোমার সাথে নয়নাকে যেতে দিব।

রিয়া হেসে বলল,

–আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনি আমাকে ভরসা করে নয়নাকে আমার সাথে পাঠাচ্ছেন। আমি আপনার ভরসার মূল্য ঠিকিই দিব। আমি বিকালের আগেই নয়নাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি কি নয়নাকে নিয়ে যেতে পারি?

–হ্যাঁ, নিয়ে যাও।

নয়না মাথা নিচু করে বলল,

–আমি কি রিয়ার সাথে যাব মা?

–হ্যাঁ, মা যাও। দেখেশুনে থাকবে। নিজের খেয়াল রাখবে। আর তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসবে।

নয়না খুশি হয়ে রিয়ার সাথে চলে গেল। নীলা নয়নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকাল। মনে মনে বলল এই মেয়েটাই এদের সর্বনাশ করে ছাড়বে।

জোহান পার্কে নয়নার জন্য অপেক্ষা করছিল। নয়না জোহানকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরল। নয়নার স্পর্শ চিনতে অসুবিধা হলো না জোহানের। সে আমার বউ বলে নয়নাকে খুশি করে দিল। নয়না খুশি হয়ে জোহানের পাশে বসল।

জোহান মলিন মুখ করে বলল,

–তুমি আসতে এত দেরি করলে কেন?

–আমার শাশুড়ীর থেকে অনুমতি নিতে নিতে দেরি হয়ে গেল।

–তোমার থেকে একটা জিনিস চাইব দেবে?

–কী চাই তোমার?

–আমি একটা বাইক দেখেছি। চার লক্ষ টাকা জোগাড় করেছি। কিন্তু বাইকের দাম ছয় লক্ষ টাকা। তুমি আমাকে দুই লক্ষ টাকা দিবে নয়না?

–তুমি এটা নিয়ে চিন্তা করছো? আমি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই। আমি কালকেই তোমাকে টাকা দিব।

–কিন্তু তুমি এত টাকা কোথায় পাবে?

–আমি বিয়ের সময় অনেক গয়না পেয়েছি। সেখানে থেকে কিছু গয়না বিক্রি করে দেব। তাহলে আমার শ্বশুর শাশুড়ী বুঝতে পারবে না।

–আমার জন্য তুমি গয়না বিক্রি করবে। এটা আমি মেনে নিতে পারব না। আমি বাইক কিনব না,নয়না।

–আমি থাকতে তুমি তোমার শখ পূরণ করতে পারবে না। এটা তো হতে দেওয়া যায় না। আমি চাইলে অনেক গয়না বানিয়ে নিতে পারব। তুমি না করো না আমি কিন্তু রাগ করব।

–তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেন বলো তো?

–তুমি আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলে তাই।

–আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, নয়না।

–আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি, জোহান।

দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। জোহান নয়নার হাত ধরে গল্প করতে লাগল। নয়না মন দিয়ে জোহানের কথা গুলো শুনতে লাগল।

চলবে…..

প্রকৃতির বিচার পর্ব-০৩

0

#প্রকৃতির_বিচার
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বাহিরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গাছের ডালপালা গুলো হেলেদুলে পড়ছে। নয়না বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেওয়ার চেষ্টা করছে। শ্রাবণের ধারা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নয়না আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সে গা ঝেড়ে নিজের ঘরে এলো। নয়না ঘরে আসতেই নয়নার মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল। নয়না ফোনের কাছে এসে ফোনটা হাতে তুল নিল। জোহান ফোন করেছে। জোহানের নাম্বারটা দেখতেই নয়নার মুখে হাসি ফুটে উঠল। নয়না স্নিগ্ধ হেসে ফোনটা কর্ণে ধরল।

“এই বর্ষণের ধারায় যদি তোমার মন কাঁদে,
তবে তুমি চলো এসো, চলো এসো আমার
মনের ঘরে। আমি রইব তোমার অপেক্ষায়
বৃষ্টি থামার আগে।”

জোহানের কথায় নয়নার অধরযুগলে একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে। রৌদ্রের সোনালী আলোর মতো নয়নার হাসি ঝলমল করছে। নয়না জোহানের সাথে তাল মিলিয়ে বলল,

“এই মন কাঁদে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য,
তোমাকে পেয়ে আমার জীবনও ধন্য। আমি তো
চেয়েছি তোমাকে। বিবাহের সমীকরণে বাঁধা পড়েছি
আমি। তাই তো তোমার কাছে যেতে পারিনি।”

জোহান আদুরে কণ্ঠে বলল,

–এই মেঘলা আবহাওয়া বৃষ্টির রাতে তোমাকে খুব মিস করছি, জান। আজ যদি তুমি আমার বাড়িতে থাকতে তাহলে তোমাকে অনেক আদর করতাম। তোমাকে ভিষণ আদর করতে ইচ্ছে করছে। এই বৃষ্টির রাতে তুমি আমি একই কম্বলের নিচে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতাম। আমার উষ্ণতা তোমাকে দিতাম। তোমার উষ্ণতা আমাকে দিতে কতই না ভালো হতো তাই না বলো?

–আমার যে তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে না৷ এমন টা না। আমারও তোমাকে কাছে পেতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি পরের সংসার করি। এখন যদি আমি রাত করে তোমার কাছে যাই। তাহলে আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে চাই না বলেই যেতে পারব না। আমি তোমার সাথে পরে একদিন দেখা করে দিব।

–তোমার শ্বশুর-শাশুড়ী কী করছে?

–তারা ঘুমিয়ে গিয়েছে।

–তোমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা কোথায়?

–সে তো তার বাড়ি চলে গিয়েছে।

–একটা কথা বলব, জান?

–বলো, অনুমতি নেওয়ার কী আছে!

–আমি এখন তোমার বাড়িতে আসি। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ লাগছে। এত সুন্দর বউ রেখে দূরে থাকা যায় বলো? আমি তোমার কাছে আসি না, জান। এখন বৃষ্টি হচ্ছে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে শুয়ে আছে। আমাদের দেখার মতো কেউ নেই। তুমি খালি একবার হ্যাঁ বলো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে চলে আসব।

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? আমার শ্বশুর-শাশুড়ী কোনো ভাবে জানতে পারলে আমাকে শেষ করে ফেলবে। আমার খুব ভয় করছে। তুমি আজকে আসবে না, জোহান। আমি কালকে তোমাকে সময় দিব, কথা দিলাম।

–আমার তোকে এখন কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। আমি কালকে তোমাকে পেয়ে কী করব বলো? ছোটো একটা জীবন সময়ের ইচ্ছেকে যদি সময়ে প্রাধান্য না দেই। তাহলে সেই অনুভূতি পরে আর কাজ করবে না। আমার অনুভূতিকে তুমি কষ্ট দিতে পারবে, নয়না? তোমার কী লাগবে সেটা বলো আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারব। তুমি যদি বলো আমাকে এখনই ম’রে যেতে হবে। তাহলে আমি এখনই ম’রে যাব। তবুও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

–তুমি আমার জন্য এতটা পাগলামি করো কেন বলো তো? আমার বিয়েটা তোমার সাথেই হওয়া উচিত ছিল। আমার আব্বু আম্মু কেন যে প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। আমাকে একটুও সময় দেয় না। সে সারাদিন কাজ নিয়ে বসে থাকে। আমি মন খুলে তার সাথে কথা বলতে পারি না। কোনো কিছু লাগলে টাকা দিয়ে দেয়। তুমিই বলো স্বামী যদি আমাকে সময় না দেয়। আমি যদি স্বামী হাত ধরে পছন্দের জিনিস কিনতে না পারি। তাহলে কি মন থেকে শান্তি পাব? আমার স্বামী আমার চাওয়া-পাওয়া গুলো বুঝল না। সে সারাদিন টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। তোমার মতো একটা ছেলেকে স্বামী হিসেবে আমি চেয়েছিলাম। যে আমাকে সময় দিবে। আমাকে অনেক ভালোবাসবে। আমার ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবকিছুকে প্রাধান্য দিবে। এই যে বৃষ্টি হচ্ছে আমার এই মুহুর্তে একটু সঙ্গের প্রয়োজন। আমি আমার স্বামীকে ফোন দিলাম সে কেটে দিল। অথচ তুমি কত সুন্দর আমার মনের কথা বুঝে গেলে। আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছ৷ তুমি আমাকে এতটা ভালোবাসো কেন বলো তো?

–মনের টান থাকলে সবকিছু হয়, নয়না। আমি তো তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছি। তোমার সাথে আমার এখনো বিয়ে হয়নি। তবুও আমি তোমাকে বউ বলে ডাকি। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বউ হিসেবে আমি মানতেই পারি না। তোমার স্বামী আসার পর যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও। তবুও আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসবে না। আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না, নয়না। আমি তোমাকে তোমার স্বামীর মতো কখনো অবহেলা করব না। আমার ভেতরে যতটুকু ভালোবাসা আছে সবটুকু উজাড় করে তোমাকে ভালোবাসব।

–আই লাভ ইউ সো মাচ, জান।

–আই লাভ ইউ টু, জানপাখি। আমি আসছি তোমাকে ভালোবাসা দিতে। তুমি দরজা খুলে রেখো। আজকে এত আদর দিব যে তুমি সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।

জোহানের কথায় লজ্জা পেয়ে গেল নয়না। জোহান ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। সময়ের সাথে ঝড়বৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে লাগল। পুরো শহর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঘুম নেই শুধু নয়নার চোখে। জোহানকে পাওয়ার আকুলতা তাকে মাতাল করে তুলেছে। সে অধীর আগ্রহে জোহানের জন্য অপেক্ষা করছে। নয়নার ভেতরে ভেতরে ভয়ও কাজ করছে। তার শ্বশুর-শাশুড়ী যদি জেগে যায় তখন সে কী করবে? এখনো অনেক টাকার মালিক হয়নি নয়না। এত তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে চলবে না। তার ভবিষ্যতের সবকিছু জোগাড় করে নিতে হবে। নয়নার ভাবনার মাঝেই এক জোড়া শীতল হাত নয়নাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। নয়নার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। নয়না চিৎকার দিতে যাবে। তার আগেই জোহান নয়নার অধরে নিজের অধর এক করে দিল। পরিচিত পুরুষের ঘ্রাণ পেয়ে নয়নাও মুহুর্তটা এনজয় করতে লাগল। নয়না জোহানের হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। জোহান বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে। নয়না জোহানের মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে। জোহান নয়নাকে কোলে বসিয়ে নিয়ে নয়নার গালে, কপালে, ঠোঁটে আদুরে ভাবে চুমু খাচ্ছে। নয়না লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। জোহান নয়নার হাত থেকে তোয়ালে ফেল দিল। নয়নার নাকের সাথে নাক ঘষে নয়নাকে কোলে তুলে নিল। নয়না কোনো আওয়াজ করছে না। তার শ্বশুর-শাশুড়ী জেগে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

জোহান নয়নার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

–আজকে রাতে তোমাকে অনেক আদর দিব, জান। আমি একটা মুহুর্ত নষ্ট করতে চাই না। তাহলে চলো শুরু করা যাক, জান।

কথাগুলো বলেই জোহান নয়নাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। নয়না চোখ বন্ধ করে জোহানকে অনুভব করতে লাগল। জোহান নয়নার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে নয়নার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। নয়নার হাতের ভাজে জোহানের হাত মিলিত হয়েছে। দু’জনের মাঝে মাতাল করা অনুভূতি কাজ করছে। দু’জন যখন একে অন্যকে উষ্ণ করতে ব্যস্ত তখনই নয়নার ফোনটা বেজে উঠল। এমন মধুর মিলেনর সময়টা ফোনের শব্দটা দু’জনের কাছে বিষাক্ত ঠেকল। নয়না ফোন ধরতে চাইলে জোহান নয়নার ফোনটা দূরে সরিয়ে দিল। তারপর নয়নাকে সম্পূর্ণ রুপে নিজের দখলে করে নিল।

নয়না ঘুমিয়েছে ভেবে উড়ান আর ফোন দিল না। ফোন থেকে নয়নার ছবি বের করে নয়নার সাথে কথা বলতে লাগল। নয়নার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরল। এই মেয়েটার জন্য উড়ানের অদ্ভুত এক মায়া কাজ করে। তার জীবন প্রথম ভালোবাসার নারী নয়না। এই নারীর কারণে যে দীর্ঘদিন বাঁচতে চায়। এই নারীর সাথে পুরো শহর ঘুরতে চায়। এই নারীর সাথে বৃদ্ধ হয়ে চায় উড়ান। দেশে গিয়ে নয়নার সাথে আদুরে মুহুর্ত কাটাবে। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়ে নিদ্রা দেশে তলিয়ে গেল। বেচারা উড়ান জানতেও পারল না যাকে নিয়ে সে স্বপ্ন বুনছে। সেই নারী অন্য কাউকে সুখ দিতে মত্ত হয়ে গিয়েছে।

চলবে…..