Sunday, June 29, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 90



ধৈর্যের পরীক্ষা পর্ব-০১

0

#ধৈর্যের_পরীক্ষা
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি।
#পর্ব_সূচনা

পছন্দের মানুষটির সাথে পবিত্র এক বন্ধনের মাধ্যমে সারা জীবনের জন্য জুড়ে যাওয়ার মতো আনন্দ আর সুখের হয়তো কিছুই নেই।আমিও এই সুখটা অনুভব করেছিলাম যখন রাতুলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।রাতুল রহমান আমার স্বামীর নাম,,যার সাথে আমার আজ বিয়ে হয়েছে। আমার নাম সারিকা সুলতানা।কিন্তু আমার এই সুখানুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে না যখন কিনা রাতুল আমাকে বলে~~

~~দেখো আমি তোমাকে শুরুতেই বলে দিচ্ছি আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি আর এই বিয়েটা আমি আমার মা-বোনের ইচ্ছেতে করেছি।তাই কখন আমার থেকে স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না।

তার এই কথাটা আমাকে বুকে যেয়ে কতটা বাজে ভাবে আঘাত করলো সেটা যদি তাকে দেখাতে পারতাম তাহলে সে হয়তো তার কথাটা ফেরত নিয়ে নিতো।কিন্তু আফসোস বাহ্যিক আঘাত দেখানো গেলোও অভ্যন্তরীণ আঘাত দেখানো যায় না।আমি তেজহীন গলায় বললাম~~

~~তাহলে যাকে ভালোবাসতেন তার কথা পরিবারকে জানান নি কেন..?তারা নিশ্চয়ই আপনার পছন্দের মানুষটির সাথেই আপনার বিয়েটা দিতো। মাঝখান দিয়ে আমাকে এই লোক দেখানো সম্পর্কে জড়াতে হতো না।

রাতুল বললো~~

~~আমার গার্লফ্রেন্ড এখনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।সে আরো পরে বিয়ে করবে।আমি চেয়েছিলাম আরো পরে বিয়ে করতে কিন্তু আম্মু আমার বিয়ের চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পরেছিলো।ডাক্তার বলেছেন তাকে চিন্তা মুক্ত না রাখতে পারলে যেকোন সময় স্টোক করতে পারে।তাই মায়ের খুশির জন্য এই বিয়েটা করা।

আমি আর কোন কথা বললাম না,,এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকলাম তার মায়াবী মুখ টার দিকে।বুকের অসহ্য যন্ত্রণা গুলোর প্রকাশ হতে চাইছে অশ্রুর মাধ্যমে কিন্তু আমি তা কিছুতেই হতে দিবো না।রাতুল নিজেই বললেন ~~

~~তুমি চিন্তা করো না।তোমার পড়াশোনা ও যাবতীয় সব দায়-দায়িত্ব আমি ভালো ভাবে পালন করবো।পৃথিবীর সামনে আমি হবো বেস্ট হাসবেন্ড কিন্তু এই চার দেয়ালে জানবে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের আসল সমীকরণ।

আমও একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম~~

~~আমার মনের দায়িত্ব কে নেবে.?!যাবতীয় অন্য দায়িত্বের চেয়ে এই দায়িত্বটা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়..?! আপনাকে আমায় নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারবো।এই বিষয়ে আশা করি আপনি আর কথা বলবেন না।

রাতুল আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু সারিকার কথা শুনে আর কিছু বলতে পারে না।মূলত সে বলতে পারে না।সারিকার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অনেক কষ্ট পেয়েছে কিন্তু সে-ও যে দুই নারীর কাছে বাধা।এক তার মা আরেক তার প্রিয় নারীটি।

সারিকা নিজের লাগেজ থেকে একটা সালওয়ার সুট বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফিরে আসে এক ঘন্টা পরে।রাতুল ততক্ষণে ঘরেই চেঞ্জ করে ফেলেছে।আড়চোখে সারিকার দিকে তাকিয়ে দেখে তার চোখ ফুলে গেছে,, ছোট্ট খাট্টো নাকটাও লাল হয়েছে আছে।সারিকা একটু পরপরই নাল টানছে।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সারিকা নামাজের হিজাব পরে রাতুলের সামনে এসে বলে~~

~~জায়নামাজ কোথায় একটু বলবেন..?!আমারটা আনা হয়নি তাই আপনার কাছে চাইলাম।

রাতুল বিছানায় বসে ফোন টিপছিলো সারিকার কথায় তার দিকে তাকায়। মেকআপ তোলার পর সারিকার আসল রূপটা দেখে ঘোর লেগে যায়।যতই হোক আল্লাহর কালাম পড়ে তিনবার কবুল বলে তারা একে অপরকে আপন করে নিয়েছে। এমন একটা পবিত্র সম্পর্কের সামনে একটা হারাম সম্পর্ক নিতান্তই তুচ্ছ। তার ঘোর কাটে সারিকার গলার আওয়াজে।সারিকা আবার তাকে জায়নামাজের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বিছানা থেকে উঠে একটা জায়নামাজ এনে সারিকাকে দেয়।তারপর আবার বেডে বসে ফোন টিপতে থাকে।সে কিছুতেই ফোনে মন দিতে পারছে না,,ঘুরে ফিরে তার চোখ সেই সারিকার দিকেই চলে যাচ্ছে।

নিজের মন ঘোরানোর জন্য সে কল লাগায় তার ভালবাসার মানুষটিকে।তার নাম অনামিকা।অনামিকা একজন মডেল।তেমন নাম ডাক না থাকলেও একেবারেই যে নেই তাও না। কথা বলার জন্য সারিকার নামাজের ডিস্টার্ব হতে পারে এই ভেবে রাতুল ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায় আর বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে দেয়।সারিকা ২ রাকাত করে ৪ রাকা’ত নফল নামাজ পরে।শেষে দোয়া করে~~~

~~~হে রাব্বুল আলামিন,, আপনি সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞানী। আপনি বান্দার জন্য যা ভালো মনে করেন তাই করেন।হে রহমানুর রাহিম,,আমাকে ধৈর্য দিন যাতে আমি ভবিষ্যতে খারাপ পরিস্থিতি গুলোতে টিকে থাকতে পারি।আপনি তো জানেন আমি তাকে(রাতুল)কতটা ভালোবাসি,,কতটা চাই।আজ সে আমার হয়েও আমার হইলো না।সে দয়াময় প্রভু আপনি আমাকে তাকে দান করুন।তাকে সকল প্রকার হারাম থেকে বের করে সরল সঠিক পূণ্য পথে পরিচালিত করুন।আমি আমার স্বামীর ঘর করতে চাই,,যেখানে থাকবে একে অপরের প্রতি জান্নাতী ভালোবাসা,, বিশ্বাস,, মর্যাদা,,সম্মান।আমি বুঝতে পারছি আমার সামনের একটা কঠিন পরীক্ষা আসতে চলেছে যা কিনা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা। আপনি আমাকে এই পরীক্ষায় টিকে থাকার মতো পর্যাপ্ত ধৈর্য দিন প্রভু।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ। আমিন।

সারিকা নিজের মোনাজাত শেষ করে আরো কিছুসময় জায়নামাজে বসে থাকে তারপর উঠে হিজাব ও জায়নামাজ নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যায়।শুতেই ক্লান্তির কারণে ঘুম চলে আসে।সারিকা ঘুমিয়ে যাওয়ার আরো এক ঘন্টা পর রাতুল অনামিকার সাথে কথা বলে ঘরে আসে।এসে দেখে সারিকা সোফায় ঘুমিয়ে আছে।সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও ঘুমাতে চলে যায়।

__________________

দেখতে দেখতে তিন মাস চলে যায়।এই তিন মাসে রাতুল-সারিকার সম্পর্কে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।রাতুলের ক্ষেত্রে তা চোখে পরার মতো।সারিকাকে সে নিজের বেস্টফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছে। তার সকল প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো তার সারিকাকে বলা লাগবেই।সারিকাও নিরব শ্রোতার মতো মন দিয়ে রাতুলের কথা শুনে। রাতুল যখন তার আর অনামিকার দুষ্টু -মিষ্টি খুনসুটি গুলোর কথা বলে তখন সারিকার বুকে প্রচন্ড ব্যথা হয়।স্বামীর মুখে তার ভালোবাসার নারীর কথা শুনে কোন নারীই বা ভালো থাকতে পারে..?!

রাতুল যখন রাতে ২/৩ টায় অনামিকার সাথে কথা শেষ করে ঘুমের কোলে ঢলে পরে তখনই সারিকা উঠে নামাজে দাঁড়ায়। তার রবের কাছে মন খুলে সারাদিনের কথা উগরে দেয়।নিজের জন্য অঢেল ধৈর্য চায়।কারণ কোন খারাপ পরিস্থিতিই আসে বান্দার ধৈর্য পরীক্ষার জন্য। যে যতো বেশি ধৈর্য ধারন করতে পারবে সে তত বেশি সফল হবে ধৈর্যের পরীক্ষায়।

কিছু দিন পর~~

রাতুল তার দুলাভাইয়ের সাথে পার্টনারশীপে একটা বিজনেস শুরু করেছে।রাতুল এইসব বিষয়ে নতুন তাই বিজনেসে তার বেশি সময় দেওয়া লাগছে সব কিছু বুঝে নেওয়ার জন্য। এই কারণে অনামিকাকে সময় দিতে পারছে বলে আজ তিনদিন অনামিকা রাগ করে তার সাথে কথা বলছে না।

সারিকাকে এই বিষয়ে বললে সে বলে~~

~~তাহলে আজ তার সাথে মিট করেন।কিন্তু আপনি তাকে বলবেন না।হুট করেই দেখা করতে চলে যান।এক প্রকার সারপ্রাইজিং হবে বিষয়টা।কিছু টুকটাক গিফ্টও নিতে পারেন।

রাতুলের তার কথাটা পছন্দ হয়।সে একটা ফুলের বুকে নিয়ে তার সাথে দেখা করতে যায়।রাতুল জানে অনামিকার আজ একটা ফটো সুট আছে আর সে কোথায় থাকতে পারে।তাই সে সেই জায়গাই চলে যায়।গিয়ে দেখে সে একজন ছেলের সাথে অনেক ক্লোজ হয়ে দাড়িয়ে আছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। বিষয়েটা রাতুলের একটুও পছন্দ হয় না।সে অনামিকাকে ডাক দিলে অনামিকা চমকে তার দিকে তাকায়।সেই সাথে তার সাথে দাড়ানো ছেলেটাও।

রাতুল তার কাছে এগিয়ে গিয়ে ফুলের বুকেটা দিয়ে বলে~~

~~কেমন আছো..?আর এটা তোমার জন্য।

~~ভালো আছি।তুমি এখানে কি করছো..?!দেখছো না ফটো সুট হচ্ছে তাও সেটে ঢুকে পরলে।

একটা রুড ভাবেই কথাগুলো বলে অনামিকা।তার পাশে দাড়ানো ছেলেটা অনামিকাকে বলে~~

~~উনি কে অনু..?

~~ফ্রেন্ড।

রাতুলকে শুধু নিজের ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় রাতুল অনেক অবাক+রেগে যায়।সে বলে~~

~~জাস্ট ফ্রেন্ড..?আর কিছু নই আমি..?!

অনামিকা আমতা আমতা করে বলে~~

~~নাহ,,ভালো ফ্রেন্ড আর কি।

~~ওহহ,,আচ্ছা। ভালো,,থাকো তুমি।সরি এসে ডিস্টার্ব করার জন্য।

রাতুল কথাগুলো বলে হনহনিয়ে চলে যায়।অনামিকা তাকে একবারও আটকানোর চেষ্টা করে না।রাতুল তার বাইক চালিয়ে বাসায় এসে পরে।ময়না এসে দরজা খুলে দেয়।ময়না একটু অবাকই হয় রাতুলকে এই অসময়ে বাসায় দেখে।তাও কিছু জিজ্ঞেস করে না।রাতুল গটগটিয়ে নিজের রুমে যেয়ে দেখে সারিকা ফার্স্ট এড বক্স নিয়ে কিছু একটা করছে।পায়ে কিছু একটা লাগাচ্ছে। হাতেও ব্যান্ডেজ দেখা যাচ্ছে। সে এগিয়ে এসে দেখে তার বাম হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে বেশ খানিকটা কেটে গিয়েছে আর বাম পা টাও এক জায়গায় রক্ত জমে কালো হয়ে আছে।সে তাড়াতাড়ি করে তার পাশে বলে বলে~~

~~এইসব কি করে হলো..?এত ব্যথা পেলে কীভাবে..?

সারিকা তাকে এই অসময়ে দেখে থতমত খেয়ে যায়।সে আমতা আমতা করে না বলার জন্য। রাতুল এমনিতেই রেগে ছিলো এখন আবার তার এই আমতা আমতা দেখে রেগে বিশাল এক ধমক লাগায়।

~~বলবে কি হয়েছে না দিবো হাত ঘুরিয়ে এক থাপ্পড়..?!

সারিকা ভয়ে ভয়ে বলে~~

~~একটা রিক্সা এসে ধাক্কা দিয়েছে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি।

~~কেমনে..?চোখ কই রেখে হাটো তুমি..?

~~চোখ জায়গা মতো রেখেই হাটি।আসলে আমি রাস্তা পার হতে পারি না তো।যেই ফ্রেন্ডটা রাস্তা পার করিয়ে দেয় সে আসে নাই আজ।তাই আজ এমনটা হলো।

রাতুল তাকে বকতে বকতে তার হাতে পায়ে ঔষধ লাগিয়ে দেয়।সারিকা এত ব্যথার মধ্যেও হাসছে।কারণ বিয়ের ওপর আজ প্রথম রাতুল তার অধিকার দেখালো।তাকে বকছে।

সন্ধ্যায় রাতুলের বড় বোন নাফিসা তার দুই বাচ্চাকে নিয়ে আসে।তার হাসবেন্ড তাকে রাতুলদের বাসার সামনে রেখে গিয়েছে। রাতে এসে আবার নিয়ে যাবে একি এলাকায় বাবার বাড়ি হওয়ায় নাফিসা মন চাইলেই মা-ভাইকে এসে দেখে যায়।সারিকা তো তাদের আসায় এত খুশি হয়েছে যে নিজের ব্যথা ভুলে গিয়ে লাফ দেয়।ফলাফল স্বরুপ পরে যায়।কিন্তু নাহ,,পরে গিয়েও পরে না।কারণ রাতুল যে তাকে ধরে ফেলেছে।

~~তুমি আদিল-আহনাফ হয়ে গেলে..?ব্যথা অবস্থায় কেউ লাফ দেয়..?!

সারিকা অপরাধী কন্ঠে বলে~~

~~সরি।আসলে আপাদের দেখে খুশির ঠেলায় এমন করে ফেলেছি।একটু আদিল-আহনাফকে কাছে নিয়ে যান।আমি ওদের আদর করবো।তার আগে কিচেনে নিয়ে যান ওদের জন স্নেক্সস বানাবো।

রাতুল তাকে দুই ধমক দিয়ে সোফায় বসিয়ে রাখে পরে রেস্টুরেন্টে থেকে স্নেক্সস অর্ডার দেয়।পুরোটা সন্ধ্যা পরিবারের সাথে বেশ ভালোই কাটে।একবারও রাতুলের অনামিকার কথা মনে পরে না।

রাতে শুতে গিয়েও রাতুলের ঝাড়ি শুনেছে সারিকা।সারিকা সোফায় শুবে কিন্তু রাতুল তাকে বেডের শোয়াবে। ব্যথা পায়ে সোফায় কি ভালো ভাবে শোয়া যায়..?সারিকা তার কথা শুনবে না,,রাতুলও তার কথায় অটল।শেষে রাতুল সারি কাকে বেডে শুইয়ে নিজের এক হাতের সাথে সোফিয়ার ভালো হাত শক্ত করে বেধে দেয়।যাতে সারিকা রাতে উঠে সোফায় গিয়ে না শুতে পারে।সারিকাও অসহায়ের মতো শুয়ে থাকে বিছানায়।

চলবে

বসন্ত পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0

#বসন্ত
#last_part
#writer_Nahida_islam

ফাতিহা ছেলেদে থেকে আরো সরে গিয়ে অন্য জায়গা দাড়াতে ই আবার ছেলে দুটো তার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা বিরক্ত হয়ে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে
–কি সমস্যা
মুরাদ তখন ফাতিহার হাত ধরে বলে দেখ রবিন মালটা আমাদের সমস্যা জিজ্ঞেস করছে। সমস্যা তো তুমি মামুনি।
মুরাদ ফাতিহার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলতে গেলে ফাতিহার চিৎকারে অনেক মানুষের জড়ো হয়ে যায়। পরিস্থিতি আয়ত্তে নাই বুঝতে পেরে ফাতিহার দিকে বন্ধুক তাক। ফাতিহা উঠে চলে যেতে নিলে গুলি করে তিনটা। দুইটা ফাতিহার শরীরে লাগে। একটা গুলি প্রাইভেট কারের চাকায় লাগে। দুইটা গুলি ই পেটে লাগে।
উপস্থিত মানুষ মুরাদকে সাথে সাথে ধরে ফেলে। গাড়ির চাকায় গুলি লাগার কারণে সে আর পালাতে পারেনি।

চোখ খুলতে ই নিজের হাতে কেউ শক্ত করে ধরে আছে মনে হচ্ছে। চোখ খুলে ডান দিকে তাকতে ই দেখি তন্ময়। আমার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। চোখ মুখ ফোলে আছে। অবস্থা এমন দেখে প্রশ্ন করলাম,
–কি হয়েছে আপনার।
প্রশ্ন করতে ই চোখের পানি লুকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–ফাতিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো। যদিও গুলো বেরিয়ে গেছে এখন আশংকা মুক্ত আছো তাও বার বার বলা শর্তে ও তুমি গাড়ি নিয়ে যাওনি কেনো?
–এভাবে ঝাপটে ধরলে তো শ্বাস বন্ধ হয়ে সত্যি ই মরে যাবো।
তন্ময় নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে বললো,
–মুরাদ আমার বিজনেস পার্টনার ছিলো তার অসৎ ও নোংরা চরিত্রের কারণে তাকে আমি পার্টার হিসেবে নেইনি। তার ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার কারণে আমাকে দোষী মনে করে। একদিন তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে ছিলাম। তা মারামারির পর্যায় চলে গিয়েছিলো। সেদিন সে বলেছিলো সে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কেড়ে নিবে। কিন্তু তোমার দিকে হাত বাড়াবে তা ভাবিনি।

–মরে গেলে ই তো ভালো ছিলো আপনার আর টেনশন থাকতো না কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার পর এতোগুলো টাকা ও দিতে হবে না।

—তুমি বললে আমার জান দিতেমও প্রস্তুত। আর এ তো সামান্য টাকা।

দরজায় নক করতে ই তন্ময় কেবিনের দরজা খুলে দেয়। দেখলাম তন্ময়ের মা এবং বোন এসেছে।
–কি অবস্থা মা এখন কেমন আছো?
–এইতো ভালো।
–আমার ছেলে টাকে দেখো তোমার জন্য সেই গতকাল থেকে এখানে বসে আছে খাওয়া দাওয়া ঘুম গোসল কিছু ই নাই। বার বার বলেছি আমি থাকি তুই বাসায় যা কিন্তু না তার এক কথা বাসায় যেতে হলে তোমাকে নিয়ে ই যাবে। মা আমি না থাকলে ও আমার ছেলেটাকে তুমি কষ্ট দিও না।
____________________________
ফাতিহা বাসায় ফিরেছে। এখন প্রায় সুস্থ ই। কন্টাক্টের তিন মাস প্রায় হয়ে গেছে। তন্ময় বেডে শুয়ে শুয়ে অফিসের কাজ করছে। ফাতিহা লাগেজ বের করে জামাকাপড় ঘুচাতে দেখে প্রশ্ন করলো,
–ফাতিহা হানিমুনে যাওয়ার জন্য ব্যাগ ঘুচাচ্ছো নাকি। বিয়ের তো অনেক দিন হলো আমার শার্ট প্যান্ট ও নিয়ে নিও। বিয়ের তো অনেকদিন হলো চলো হানিমুনে যাই।
ফাতিহা শান্তভাবে উত্তর দিলো ,

–কন্ট্রাক্টের সময় শেষ এটা মেনে আছে তো। আমি চলে যাচ্ছি।
কথাটা বলার সাথে সাথে তন্ময় উঠে ড্রায়ার থেকে কন্ট্রাক্ট পেপার বের করে ছিড়ে ফাতিহার উপর উড়িয়ে দেয়।

ফাতিহা রাগ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে
–এটা কি করলেন। আপনি এটা কি করলেন?
তন্ময় ফাতিহার দুইহাত একসাথে করে ডানহাত দিয়ে দেওয়ালে চেপে ধরে। ফাতিহার অনেকটা কাছে চলে যায়। দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

–ছাড়ুন আমাকে।
–ছাড়বো না কি করবে তুমি। তোমার অনেল শক্তি বেড়ে গেছে তাই না।অনেক শক্তির অধিকারী হয়ে গেছো তাই না। পালরে নিজেকে আমার থেকে ছাড়াও।
–আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন প্লিজ।

–কি চাচ্ছো ফাতিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটা বুঝতে পেরে কি এখন আমাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছো।
–বিয়েটা তো আর ভালোবেসে করেনি।
–যেভাবে ই হক করেছি তো। বিয়ে তো হয়ে গেছে। এখন প্লিজ তুমি এসব পাগলামি করো না।
–ব্যথা পাচ্ছি আমি আমাকে ছাড়ুন।
তন্ময় ফাতিহাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বললো,
–যদি যেতে চাও তাহলে আমার লা-শের উপর দিয়ে যেতে হবে ফাতিহা।

ফাতিহা এবার তন্ময়ের কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
–আপনার যখন যেভাবে ইচ্ছে আমাকে নাচাবেন। যখন বিয়ে করতে ইচ্ছে করেছেন। বিয়ে আগে বলেছেন তিন মাসের চুক্তিতে বিয়ে। বিয়ের পরে বলেছেন আপানর মায়ের জন্য বিয়ে করেছেন। এখন আবার বলছেন ভালোবাসেন। আপনি রংধনুর মতো রং কেন বদলান। আমাকে সস্তা পেয়েছেন বলে ই এভাবে নাচাচ্ছেন। কারণ আমি অনাথ। আমার বাবা নেই। যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।
তন্ময় এভার ফাতিহার পা জড়িয়ে ধরে বললো,
–ফাতিহা আমাকে ছেড় যেয়ো না। আমি ভুল করেছি আমাকে মাফ করো প্লিজ। ছেড়ে যাওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। ঋতুর রাজা যেমন বসন্ত। বসন্ত যেমন বাহারি রংয়ের ফুলের আগমন নিয়ে আসে। তেমনে আমার জীবনে তুমি ভালোবাসার বার্তা নিয়ে এসেছো।তুমি আমার জীবনের বসন্ত।
এভবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর বললো,

–মাফ করতে পারি একটা শর্তে?
তন্ময় দাড়িয়ে বললো,

–কি?

–সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে, অবন্তীর মুখও দর্শন করা যাবে না। আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে।
কথাটা শুনতে দেরি তন্ময় ফাতিহাকে জড়িয়ে ধরতে দেরি করেনি। জড়িয়ে ধরে ফাতিহার কপালে চুমু একে বললো, তোমার সব শর্তে রাজি। শুধু তুমি আমার হয়ে থাকো……

সমাপ্ত

বসন্ত পর্ব-০২

0

#বসন্ত
#part_2
#writer_Nahida_islam

ফাতিহা তন্ময়ের হাত ধরে জোরে টান দেয় তন্ময়ও তার হাত নিজের দিকে টান দিলে টাল সামলাতে না পেরে ফাতিহা তন্ময়ের উপরে পড়ে যায়,এমন ভাবে পড়ে ঠোঁট ঠোঁট লেগে যায়।

এমন ঘটনায় ফাতিহা তন্ময় দুজনই বেশ লজ্জা পেয়ে দুজন থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফাতিহা কথা না বাড়িয়ে সোফা গিয়ে শুয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে ফাতিহার মোবাইলের কলে শব্দে। ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করতে ই অপর পাশ থেকে তন্ময়ের মায়ের কন্ঠ ভেসে আসে।
–ফাতিহা তোমার মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি তুমি তন্ময়কে নিয়ে হসপিটালে আসো।
আমি দ্রুত উঠে জামা চেঞ্জ করে বাসা থেকে একা ই বের হয়ে যাই।
ফাতিহাকে এভাবে যেতে দেখে তন্ময় কৌতূহল বসত উঠে ফাতিহার পিছু নেয়।

মায়ের কিছু হলে আমি একেবারে অনাথ হয়ে যাবো। পৃথিবীতে আমার আর কেউ থাকবে না। আমরা ভাড়া বাসায় থাকতাম, যে ভাড়া বাসায় থাকতাম ঐখানে ও পাঁচ মাসের ভাড়া বাকি আছে। গতকাল মা বাসায় চলে যেতে চাইলে ও তন্ময়ের মা উনার বাসায় রেখে দিয়েছে, কারণ উনি একা দেখাশোনা করার মতো একমাত্র আমি ই ছিলাম। আমার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে মাকে দেখাশোনা করার মতো আর কেউ রইলো না।বাবার মৃত্যুর পর যা ছিলো সব বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। এতে কোনো আক্ষেপ নেই তবুও মা বেঁচে থাকুক

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতে ই আমি দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করে আমার পা আর চলছে না কিছুদূর যেতে ই তন্ময়ের মাকে চোখে পড়লো সাথে দেখলাম আমার মাকে একটা সাদা কাপড় দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রেখেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না আমার মা নেই।
________________________________
দুই মাস পর,
ফাতিহার মায়ের মৃত্যু পর ফাতিহা তার চঞ্চলতা হারিয়ে ফেলেছে। যদিও এখন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। তন্ময় বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ লক্ষ করছে ফাতিহা এক জায়গায় চুপ হয়ে বসে আছে কিছুটা নিচু হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–মিস ফাতিহা কি ভাবছেন বলা যাবে?
—আপনাকে বলার জন্য ই তো ভাবছি। শুনোন তাহলে, আপনার তিন মাসের কন্ট্রাক্ট প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই আগে থেকে ডিভোর্স পেপার রেডি করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
কথাটা শুনে তন্ময় কিছুটা হাসি দিয়ে ফাতিহাকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে দিলো। বেডে বসিয়ে ফাতিহার কুলে মাথা রেখে বললো,

–এতো তাড়াতাড়ি বেবি আরো তো এক মাস।
আপনার এই আমার সাথে লেপ্টে থাকার অভ্যাসটা গেলো না?
–তুমি চলে গেলে তোমার অভ্যাস ও চলে যাবে। এখন আমাকে একটু আরাম করতে দাও।

ফাতিহা তন্ময়ের মাথায় জোরে ধাক্কা দিয়ে নিছে ফেলে দেয়। তন্ময় ও জোরে ফাতিহাকে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে উপর নিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
—শক্তি থাকলে আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেখাও।
ফাতিহা যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তন্ময় আরো শক্ত করে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। এক পর্যায় ফাতিহা নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে শান্ত হয়ে যায়।

–পারলে না তো ফাতিহা। চিন্তা করো সামন্য ধরেছি এটা ই নিজেকে ছাড়াতে পারলে না। বেশি করে খাবে তাহলে শক্তি হবে।
এটা বলে তন্ময় ফাতিহা ছেড়ে দেয়। ফাতিয়া উঠে সবগুলো বালিশ তন্ময়ের দিকে ছুড়ে মারে।

এই দুই মাসে তন্ময় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে শয়তানি ভাব কিছুটা কমেছে। ফাতিহা আর তন্ময় দুজনে ই বেডে থাকে মাঝখানে বর্ডার হিসেবে কোলবালিশ ব্যবহার করে।
সকাল দশটা অনবরত বাসার কলিং বেল বাজছে। তন্ময় ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে চা খাচ্ছে। এখন ই অফিসে যাবে চা শেষ করে। ফাতিহা এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। কিন্তু কলিং বেলে শব্দ ঘুম ভেঙ্গেছে। ফাতিহার বেশ রাগ হচ্ছে এতো শান্তির ঘুমটা কে নষ্ট করেছে তা দেখতে ফাতিহা ঘুম ঘুম চোখে নিচে নামতে ই দেখে অবন্তী এসেছে। অবন্তীকে দেখে ফাতিহার মাথা গরম হয়ে গেছে। অবন্তী তন্ময়ের অনেকটা কাছাকাছি বসেছে। ফাতিহাকে দেখে আরো কাছাকাছি গিয় বসলো। ফাতিহা এটা দেখে সোজা গিয়ে তন্ময়ের কোলে গিয়ে বসে বলতে শুরু করলো,
–বেবি আমাকে কেন ঘুম থেকে উঠাওনি। তুমি ঠোঁট চুমু না দিলে আমার ঘুম ভাঙ্গে না জানো না।বেবি এখন চুমু দেও প্লিজ।
ফাতিহা দুই হাতে তন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে মুখ উচু করে রেখে বলতেছে চুমু দেওয়ার জন্য।
তন্ময়ের অনেক হাসি পাচ্ছে। সে কোনো রকম হাসি চেপে রেখেছে। অবন্তী জন্য যে এই নাটকগুলো করছে তা তন্ময় বেশ ভালো ই বুঝতে পারছে। যেদিন থেকে ফাতিহা বুঝতে পেরেছে অবন্তী তন্ময়কে বিয়ে করতে চায় ঐদিন থেকে অবন্তী বাসায় আসলে একটা না একটা কান্ড ঘটায়। কিন্তু আজকে একটু বেশি ই করছে।
–বেবি তুমি কি বাহিরের মানুষের সামনে আমাকে চুমু দিতে লজ্জা পাচ্ছো তাহলে থাক রুমে গিয়ে দিও।
তন্ময় হেসে বললো,
–না না বেবি আমি ভয় পাচ্ছি না, এখন ই দিচ্ছি
এটা বলার সাথে সাথে ফাতিহা তন্ময়ে পিঠে চিমটি কাটে।
তন্ময় ফাতিহার কানে কানে বলে,
–সুযোগ পেয়েছি মিস করবো কেনো চিমটি দিলে কাজ হবে না বেবি।
তন্ময় চুমু দিতে যাবে ঠিক সেই সময় ফাতিহা তন্ময়ের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,
–বেবি আমি তো পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। হৃদয় পোড়া গন্ধ তুমি পাচ্ছো না এই বলে অবন্তী সরিয়ে মাঝখানে বসে পড়ে।
অবন্তী এতোক্ষণ সব কাহিনী দেখে ভেতর ভেতর জ্বলে যাচ্ছে। যদি পাড়তো ফাতিহাকে এক থাপ্পড় দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতো। নিজের রাগ ভেতরে চেপে রেখে বললো,
–চল তন্ময়ের অফিসে যাই সময় তো প্রায় অনেকটা পার হয়ে গেছে।
তন্ময় কিছু বলার আগে ই ফাতিহা বললো,
–তন্ময় পরে যাবে কাজ আছে আপনি আগে যান।
অবন্তী কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। অবন্তী বের হতে ই তন্ময় ফাতিহাকে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি কি জেলাস?
—না
–ফাতিহা তোমার মনে এক মুখে আরেক নয়তো?
ফাতিহা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নিলে তন্ময় হাত ধরে ফেলে।

–পালাচ্ছো তুমি।
–না আমাকে ছাড়ুন।
–প্রশ্নের উত্তর দেও ছেড়ে দিচ্ছি।
–তাহলে শুনোন আমি যাওয়ার পর যেনো সে আপনাকে বিয়ে না করে তাই এমন করছি। যেনো আপনার থেকে দূরে থাকে।

–এতে তোমার লাভ কি
–এতো কিছু বলতে পারবো না
বলে ই দৌড়ে উপরে চলে যায়। তন্ময় অফিসে চলে গেলে ফাতিহা কলেজে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে। ফাতিহা পাবলিক গাড়িতে যাতায়েত করে। তন্ময় হাজার বলা শর্তে ও তার গাড়ি ব্যবহার করে না।
কলেজে ক্লাস শেষ করে যখন গাড়ির জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন ই সামনে প্রাইভেট কার থেকে নেমে দুটো ছেলে ফাতিহার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা ছেলেদে থেকে আরো সরে গিয়ে অন্য জায়গা দাড়াতে ই আবার ছেলে দুটো তার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা বিরক্ত হয়ে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে
–কি সমস্যা
মুরাদ তখন ফাতিহার হাত ধরে বলে দেখ রবিন মালটা আমাদের সমস্যা জিজ্ঞেস করছে। সমস্যা তো তুমি মামুনি………

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

বসন্ত পর্ব-০১

0

#বসন্ত
#part_1
#writer_Nahida_islam

বিয়ের কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করা শেষ করে ই কেবল আমার সামনে আসবে মিস ফাতিহা, টেবিলে উপর চোখ দিয়ে দেখো কন্টাক্ট পেপার রাখা আছে। আগে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবে তারপর বিয়ের বাকি কাজ শেষ করবো।
ফাতিহার মুখে রাগের ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠলে ও নিজেকে যথেষ্ট সংযত করে বললো,
মিস্টার উদয় আপনি কি বিয়ের জন্য আর কোনো মেয়ে খোঁজে পান নাই। আমাকে ই কেন?
তন্ময় ফাতিহার দিকে কিছুটা ঝুঁকে আস্তে করে বললো
— না পাই না।
ফাতিহা কিছুটা দূরে গিয়ে বললো,
— আপনার মত বদ স্বার্থপর শয়তান আমি জীবনে ও দেখিনি। শুধু টাকার প্রয়োজন বলে নয়তো আপনার মত অহংকারি স্বার্থপর মানুষের মুখ ও আমি জীবনে কোনোদিন দেখতাম না।
__এখন থেকে রোজ দেখবা।
ফাতিহা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে তন্ময়ের হাতে দিয়ে বললো,

— দশ নাম্বার পয়েন্ট মনে রাখবেন মিনিমাম তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন।
তন্ময় মুখো একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
–তোমার মতো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই মিস ফাতিহা। নিজেকে সুন্দরী ভাবা বন্ধ করো।

–এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনাকে আমার বেশ পছন্দ। আপনাকে দেখে ই
কথাটা শেষ করার আগে ই তন্ময়ের মা রুমে নক করে।
–ফাতিহা মা তোমাদের কথা বলা শেষ হলে চলো কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে।
আমি তন্ময়ের মায়ের সাথে নিচে যেতে ই আমার মায়ের দিকে চোখ পড়লো হুইল চেয়ারে বসে আছে। দ্রুত গিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কষ্ট হচ্ছে মা? আপনার কষ্ট হলে বলেন হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–তুমি বিয়ে করছো আমি যে দেখে যেতে পারছি এটা ই আমার জীবনের শেষ পাওয়া। আমার আর কোনো আক্ষেপ নাই মা। কষ্ট হবে কেনো আজকে সবচেয়ে সুখের দিন।
মায়ের দুটি কিনডি ই নষ্ট। বেচে থাকার চান্স কম। মায়ের জন্য ই আমার এই তন্ময়ের কন্ট্রাক্টে রাজি হওয়া। হসপিটাল বিল মায়ের ডায়ালাইসিস ঔষুধে বিল দিতে আমি অপারগ। যখন একটা চাকুরী পাগল হয়ে খুজছিলাম তখন তন্ময়ের সাথে দেখা। পৃথিবীতে মা ছাড়া কেউ নেই। তাই অনিচ্ছা থাকা শর্তে ও আমি রাজি হয়েছি।
–বিয়ে শেষ করে পরে যা ভাবনা আছে সব ভেবে নিয়ো তোমার জন্য এতো এতো গেস্ট সব তো বসে থাকবে না।
বিয়ের সকল কাজ সম্পূর্ণ করার পর তন্ময়কে আর আমাকে একসাথে সোফায় বসিয়েছে।
–গায়ের সাথে এমন লেপ্টে বসছেন কেন কন্ট্রাক্টের কথা মনে নেই তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন।
তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগ আমার মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেকে বললাম দূরে যেতে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাল।

-আপনার এটা হাত না লোহা। আমাকে এতো জোরে ধাক্কা দিলেন কেনো কন্ট্রাক্টে কোথায় লিখা ছিলো আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাবেন?

–চুপচাপ থাকো নতুন বউ এতো কথা বলতে হয় না।
-ধাক্কা দিলেন কেনো এটা বলেন আর আপনার সাথে আমি কথা বলতে চাই ও না।

— বেশ করেছি আরকেটা কথা বললে আবার ধাক্কা দিয়ে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।
–শয়তান, ধলা মুলা, বজ্জাতে হাড্ডি। কোন কুক্ষণে যে আপনার সাথে আমার দেখা হলো।
তন্ময়রে বোন অর্পা মিষ্টি নিয়ে আসছে, এসে আমার কানে কানে বলছে,
–ভাবি বাকি কথা তোমাদের বাসর রাতের জন্য রেখে দেও। এখন এই মিষ্টি দুজন দুজনে খাওয়াতে হয়। এটা একটা নিয়ম। তাহলে সবসময় তোমদের সম্পর্ক মিষ্টি থাকবে।

–এই এই বদ লোককে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে পারবো না।
কথাটা বলার সাথে সাথে তন্ময় আস্তে আস্তে আমার কানের কাছে এসে বললো,
— কন্ট্রাক্ট লিখা ছিলো সব নিয়ম মানবে দ্রুত সব শেষ করো এখান থেকে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে, তোমার কোনো কাজ নাই বা থাকতে পারে আমার কাজ ঠিক ই আছে।
বাধ্য হয়ে দুজন দুজনকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো। এটা তন্ময়ের মায়ের ফ্ল্যাট। তন্ময়ের নিজের বাসা আছে যেখানে সে একা থাকে। আজ থেকে ফাতিহাকে নিয়ে ও তন্ময় তার নিজের বাসায় থাকবে। সব কাজ শেষ করে তন্ময় ফাতিহাকে নিয়ে বের হয়ে যায়। গাড়িতে দুজন ই নিশ্চুপ। হঠাৎ ফাতিহা বলে উঠলো,

–মুখটা তেঁতো হয়ে আছে। এমন তেঁতো বিস্বাদের মিষ্টি আমি জীবনেও খাইনি।
আমার কথা শুনার সাথে সাথে গাড়ির থামিয়ে দিলো এতো স্পিডে মধ্যে হঠাৎ গাড়ি থামানোর কারনে টাল সামলাতে না পেরে আমার মাথায় আঘাত লাগে।
–এই মেয়ে সিট বেল পড়লে না কেনো দেখলে তো এখন মাথায় লাগলো। বাচ্চা নাকি তুমি এইটুকু খেয়লা নেই।
কথাটা বলে ই তন্ময় আমার কপালে হাত দিতে গেলে আমি হাত সরিয়ে দেই। তন্ময় আমার দুহাত তার এক হাতে মধ্যে নিয়ে আমার কপালে হাত দিলে ম্যাসাজ করে দিলো। তন্ময় অনেকটা কাছে চলে এসেছে তার নিশ্বাস শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
–আমার অস্বস্তি হচ্ছে আপনি দূরে সরুন।
তন্ময় আমার সিট বেট লাগিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। বিশাল এক বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো। পুরো বাড়ির সামনে অনেক গার্ড। আমাদের গাড়ি ডুকার সাথে সাথে আরো তিনটা গাড়ি ডুকলে। বুঝলাম ঐসব গাড়িতে গার্ডরা আছে। এতো বডিগার্ড রেখে কি করে। আর এতো বডিগার্ড থাকবে না ই বা কেনো এতো বড় বিজনেস ম্যান। যাকগে এসব ভেবে আমার লাভ নেই।

–হেটে ভেতরে ডুকবে নাকি কোলে করে নিবো?
তন্ময় দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে ই হেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম। চারদিকে চোখ বুলাতে ই দেখলাম সবকিছু পরিপাটি। খুব সুন্দর করে সাজানো।
–যাও ফ্রেশ হয়ে নেও। উপরে আলমারিতে তোমার জন্য জামাকাপড় রাখা আছে যেটা পছন্দ পড়ে নেও।
তন্ময়ের কথা শুনে ও না শোনার বান করে উপরে উঠতে গেলাম হঠাৎ লেহেঙ্গা সাথে পা জড়িয়ে প্রথম সিঁড়িতে ই পড়ে গেলাম। পায়ে চুটটা বেশ ভালোই লেগেছে সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।

__এই মেয়ে তোমার কি নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই। পায়ে কি খুব বেশি লেগেছে?

__প্লিজ আপনি আমার পায়ে ধরবেন না, আমি ব্যথা পেয়েছি আমি ঠিক নিজেকে সামলে নিতে পারবো।
–বেশি পাকামো করো না, হাত সরাও দেখি।

_______________________________
সিগারেট ধোঁয়া উপরের দিকে উড়িয়ে মুরাদ রবিনকে জিজ্ঞেস করছে,
–তন্ময়ের পাখিটাকে আমার চাই হয় জীবিত নয় মৃত।
–ভাই আপনার টার্গেট তো তন্ময় ছিলো হঠাৎ তার বউয়ের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন কেনো?

কথাটা বলার সাথে সাথে থাপ্পড়টা এসে রবিনের গালে পড়ে,
–তোকে এতো কৈফিয়ত দিবো আমি? কাজ করতে বলছি কাজ কর।

রবিন উল্টো কোনো কথা বলার সাহস করে না, জানে মুরাদ যা বলে তা যেকোনো কিছু বিনিময়ে তা নিজের করে নেয়।

অবন্তী তার ওয়ালপেপার দিকে তাকিয়ে আছে, তন্ময়ের হাস্যউজ্জ্বল ছবির দিকে তাকালে মনে প্রশান্তি ছুয়ে যায় কিন্তু পরোক্ষনে ই মনে হয় সে তো আজ বিয়ে করেছে অন্য কাউকে। হয়তো কখনো মুখফুটে ভালোবাসার কথা বলেনি তবে স্কুল লাইফ থেকে ই অবন্তী তন্ময় ভালোবাসা। দুজন এখনও বিজনেস পার্টনার হিসেবে আছে। হাজার বার বুঝাবো শর্তে ও তন্ময় তার মনের কথা বুঝতে পারে না। তবে অবন্তী ও হাল ছাড়ার মানুষ নয়। শেষ পর্যন্ত তন্ময়কে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।

রাত প্রায় দুইটা বাজে। ফাতিহা আর তন্ময় বেডে থাকা ফুলগুলো খুলছে, আর্পা শখ করে বাসার ঘর সাজিয়ে ছিলো কিন্তু এসব তাদের কাছে মূল্যহীন তাই সব ফুল খুলে ফেলছে,
—ফাতিহা তুমি কত কেজি?
তন্ময়ের এমন প্রশ্নে ফাতিহা কিছুটা হাসি পাচ্ছে।
তখন পায়ে ব্যথা লাগার কারণে তন্ময় কোলে তুলে উপরে আনে। হাসি চেপে রেখে বললাম,
—দুইশো
— দুইশো হলে ফাতিহা না বলে বলতাম হাতি তুমি কত কেজি?
বিছার সব ফুল নামিয়ে পরিষ্কার করার পর তন্ময় বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফাতিহা এটা দেখে বলে,
–আপনি নিচে শুবেন আমি বিছানায় ঘুমাবো।
–মামা বাড়ির আবদার। নিচে ঘুমালে ঘুমাও নয়তো দাড়িয়ে থাকো।

ফাতিহা তন্ময়ের হাত ধরে জোরে টান দেয় তন্ময়ও তার হাত নিজের দিকে টান দিলে টাল সামলাতে না পেরে ফাতিহা তন্ময়ের উপরে পড়ে যায়,এমন ভাবে পড়ে ঠোঁট ঠোঁট লেগে যায়……..
চলবে

দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0

#দ্বিতীয়_অধ্যায়

(শেষ পর্ব)

খুব মন দিয়ে এতীমখানায় হিসাবের কাজ’টা করে স্নিগ্ধা৷ বাজার খরচ, কাপড় চোপড়, লেখাপড়া বাবদ কত খরচ হলো আর কতো টাকা দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে মোট কথা আয় ব্যয়ের একদম চুল চেরা হিসাব করে। স্নিগ্ধা বোঝে হিসাবে বেশ গন্ডগোল আছে৷

বিশেষ করে যিনি বাজার করেন, রফিক চাচা অনেক ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। উনি বেশ বেলা করে বাজারে যেয়ে শেষ বাজারের কাঁচা সবজি কম দামে কিনে আনেন কিন্তু বাজারের খাতায় হিসাবের ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়েই লেখা। মাছ মাংসের হিসাবে আরো গড়বড়। সাবিকুন নাহার বয়স্ক মানুষ, একা সব সামলাতে পারেন না। এর সাথে রান্নার খালা জরি খালাও জড়িত, স্নিগ্ধা খুব ভালো করেই বোঝে। স্নিগ্ধা এগুলো বেশ শক্ত করে ধরে৷ আগে জানায় সাবিকুন নাহারকে। উনি মনে ভীষণ কষ্ট পান। আহা, মানুষ আর মানুষ নাই। এতীম বাচ্চাগুলোর টাকা, খাবার খেতেও তোদের বাঁধে না!

স্নিগ্ধা আগেই কিছু বলতে নিষেধ করে। সুযোগ বুঝে একদিন পঁচা মাছ কিনে আনলে ছবি তুলে রাখে। এরপর রান্না হওয়ার পরে সেই মাছ এনে সাবিকুন নাহারকে খেতে বলে। সাবিকুন নাহার মুখে দিয়েই বোঝেন খাওয়ার অযোগ্য পঁচা মাছ। অথচ খরচের হিসেবে বড় মাছ হিসেবে বেশ দাম ধরে রেখেছে। সেদিনই রফিক আর জরিকে বিদায় করে দেন। যারা এতিম বাচ্চার খাবারের টাকা চুরি করতে পারে, তারা কখনোই ভালো হবে না৷ বাচ্চাগুলোকে শাসিয়ে রাখতো রফিক আর জরি মিলে। ভয়ে কিছু বলতে পারতো না। স্নিগ্ধা আসাতে ওরা যেন খেয়ে, পরে, দম ফেলে বাঁচতে শিখলো।

স্নিগ্ধার ভালো লাগে, ভীষণ রকম ভালো লাগে এই বাচ্চাদের সাথে মিশতে, ওদের জন্য কিছু করতে পারাকে সৌভাগ্য মনে হয়। বাচ্চারা স্নিগ্ধাকে খুব পছন্দ করে। কেউ খালামণি বলে, কেউ আপু আবার কেউ মা মণিও বলে। যার যা ইচ্ছা৷ সকালে হিসাব দেখা, কি বাজার হলো, রান্না হলো এসব দেখে আর বিকালে ওদের সাথে খেলে, গল্প করে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী ভর্তি হয়েছে। ভেবে দেখলো এটাই ওর জন্য ভালো হবে। এতীমখানায় কাজও করা হবে পাশাপাশি পড়াও হবে। ওর সার্টিফিকেটগুলো তোলার ঝামেলায় যায় নি। বাবাকে ফোন দিয়েছিলো। বলেছিলো এই ঠিকানায় সেগুলো পাঠিয়ে দিতে। এটুকু উপকার উনি করেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কেন স্নিগ্ধা এখানে, কি করছে, কেন করছে – এসব কোন কিছুই উনি জিজ্ঞাসা করেন নি। বরং স্নিগ্ধা যে বাবার বাড়িতে যেয়ে উঠেনি এতেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।

শফিকের ঠিকানায় তালাক পাঠিয়ে দিয়েছে। নাহ, তারা কোন খোঁজ নেয় নি। একটা জিডি পর্যন্ত করে নি। উল্টো কেস খাওয়ার ভয়ে হোক কিংবা অপছন্দের লোক চোখ থেকে সরে যাওয়ার কারণেই হোক। যাক সবাই ভালো থাকুক, ভালো পরিবেশে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পেরে স্নিগ্ধার মন বড় হয়ে যায়। সবাইকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করে। বাচ্চাগুলোর জীবনের কষ্টের কথা শুনে নিজের যেন কষ্ট ভুলে যায় স্নিগ্ধা। তবে এটা তো সত্য আর কিছুদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকলে ও নিশ্চিত পাগল হয়ে যেতো। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকা, ঠিক মতো খাবার না, বিশ্রাম না খালি কাজ আর কাজ সাথে চিৎকার চেঁচামেচি, ধমক। কোথাও যেতে দিতো না, যাওয়ার জায়গাও ওর ছিলো না। অতীত মনে হলে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। দ্বিগুণ উদ্যোমে নিজেকে গড়ায় মন দেয়। এতীম খানায় দেখাশোনা বাবদ কিছু টাকা পায় স্নিগ্ধা। থাকা খাওয়া তো সাবিকুন নাহারই দেন আর কাপড় চোপড়ও উনি যা কিনে দিয়েছেন তাতে স্বাচ্ছন্দ্যে আরো বেশ কিছু দিন চলে যাবে। বেতনের টাকা জমিয়ে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনে। অনলাইনে নানান রকম প্রশিক্ষণ নেয়। এছাড়া এতীমখানাতেও একটা প্রজেক্ট আছে, সেখানে একটা এন জিও থেকে মেয়েদের ফ্রি ব্লক বাটিকের কাজ, টেইলারিং এর কাজ শেখায় , স্নিগ্ধা মন দিয়ে এগুলো শেখে।

বছর গড়িয়ে যায়। স্নিগ্ধা এখন আত্মবিশ্বাসী, উদ্যোমী, প্রাণবন্ত একটা মেয়ে। এতীমখানার মেয়েদের সাথে নিয়ে একটা দোকানও দিয়েছে। আশার আলো ভ্যারাইটিজ। সেখানে হাতের কাজের বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে। যা লাভ হয়, যাদের কাজ তাদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ওদের টেইলারিং ইউনিটটা বেশ ভালো অর্ডার পাচ্ছে। অল্প মজুরিতে ভালো কাজ হওয়ায় আশেপাশের সবাই এখানে আসে।

এতীমখানায় অনেক সময় দাতারা আসেন, বাচ্চাদের জন্য নানা রকম জিনিস, খাবার, খেলনা নিয়ে আসেন। এমনই একজন শিহাব শাহীন। উনি গত তিন মাস ধরে প্রায় নিয়মিত আসেন। প্রতি শনিবার বিকালে । সাথে প্রচুর খেলনা, রঙ পেন্সিল, চকলেট, কেক। বাচ্চারা তো এখন উনার কাছে নানান জিনিসের আবদার করে। উনি হাসি মুখে সবার আবদার রাখার চেষ্টা করেন। স্নিগ্ধার সাথে পরিচয় আছে কিন্তু উনি যেহেতু প্রতি সপ্তাহে আসেন, স্নিগ্ধা সযতনে ঐ সময়টা বাসায় কাটায়। নতুন কোন গল্পের খোরাক হতে চায় না স্নিগ্ধা। এমনিতে রফিক চাচা আর জরি খালার অনিয়ম ধরাতে তারা যাওয়ার আগে স্নিগ্ধার নামে নানা আজেবাজে কথা ছড়িয়ে গেছে।

সাবিকুন নাহার স্নিগ্ধাকে আপন মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। প্রতি রাতে দুই জন দুই এক ঘন্টা করে গল্প করবেই। তেমনই এক গল্পের মাঝে উঠে আসে শিহাব শাহীনের কথা।

– বুঝলি মা ছেলেটা অনেক দু:খী।

– কেন মা, উনার আবার কি হয়েছে? শুনি তো বেশ ধনী পরিবারের সন্তান। নিজেও ভালো পদে চাকরি করে। তার আবার কি দু:খ।

– দুনিয়াতে শুধু টাকা পয়সার অভাবেই দু:খী হয় না রে মা। আরো কতো দু:খ কষ্ট থাকে উপর থেকে বোঝা যায় না। ছেলেটা যেহেতু নিয়মিত আসে, আমি একবার এই আসা নিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম। বুঝিস তো মেয়েরাও থাকে, আমাকে কত সতর্ক থাকতে হয়৷ তখন ছেলেটা মাথা নিচু করে খুব নরম স্বরে বলে নিজের কষ্টের কথা।

ছেলেটার বাবা বেঁচে নেই। মা বোনের সাথে লন্ডনে থাকেন। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো যাকে, সেই মেয়েটা বিয়ের দুই বছরের মাথায় ছেড়ে চলে গেছে। কারণ, ছেলেটা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। ভাই বোনেরা যে যার মতো আছে। নিজের এই অক্ষমতা নিয়ে আর কোন জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে চায় না। এখন বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। বিশেষ করে পিতৃ মাতৃহীন বাচ্চাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে।
এজন্যই বলছি মা, সব কিছু থাকতেও অনেকে দু:খী হতে পারে।

স্নিগ্ধার সত্যি খারাপ লাগে৷ একটা সংসার, দুইটা দুষ্টু মিষ্টি বাচ্চা, সাংসারিক খুনসুটি কে না চায়? স্নিগ্ধাও তো চায়।

– কিন্তু মা, সংসারে বাচ্চা হতেই হবে এই নিয়মই কেন? কত বাচ্চার তো বাবা মা নেই। তাদের বাবা মা হয়েও তো জীবন পার করা যায়। তারাও বাবা মা পেলো আবার সন্তানের সাধও পূরণ হলো।

– বলছিস ঠিক আছে কিন্তু কে মানবে? যে মেয়ে বাচ্চা হওয়াতে সক্ষম সে কী আর অন্যের বাচ্চা পালবে? আর অনেকেই হয়তো বিয়ে করতে চাইবে সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুযোগ সন্ধানী কেউই হবে৷

স্নিগ্ধা আর কথা বাড়ায় না কিন্তু মাথার মধ্যে এই কথাটা ঘুরতে থাকে। পরের শনিবার দুপুরের পর আর বাসায় আসে না। শিহাবকে ভালো করে দেখতে চায়। আসলে স্নিগ্ধা নিজেও পোড় খাওয়া এজন্য আরেকজনের কষ্ট ও ভালোই বোঝে। দূর থেকে শিহাবকে দেখে বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়।

হঠাৎ করেই সাবিকুন নাহার অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেয়ার পরে জানা যায় মাইল্ড স্ট্রোক। কিছুদিন পরে সুস্থ হলেও কেমন গম্ভীর হয়ে যান। আগের মতো কথা বলেন না, চুপচাপ থাকেন। অসুস্থতার কথা সন্তানদেরও বলতে চান না। এরপর হঠাৎই একদিন স্নিগ্ধাকে বলে বসেন

– তুই যদি শিহাবের বিষয়টা মেনে নিতে পারিস তা হলে আমি ওর সাথে কথা বলতে পারি। তোর একটা সংসার দরকার।

– এসব কি বলছেন মা আপনি? উনি কেন আমাকে বিয়ে করতে যাবেন আর হঠাৎ করে এসব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা কেন করছেন?

– আমার বয়স হয়েছে, আমার কিছু হলে তুই আবার পথে পড়বি৷ একটা সংসার দরকার৷ আমি কয়েকদিন ধরে খুব ভেবে দেখেছি৷ শিহাব যতোই সংসার নিয়ে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করুক নিশ্চয় মনের গভীরে একটা সংসারের স্বপ্ন দেখে।

– মা, এটা খুব হ্যাংলামি হয়ে যায়৷ আমি উনার সমস্যা নিয়ে ভাবছি না কিন্তু এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াতে বোঝায় আমি খুব অসহায় উনি ছাড়া আমার উদ্ধার নাই। কিন্তু মা, আমি ইনশাআল্লাহ কিছু না কিছু করে খেতে পারবো। কারো বোঝা হবো না৷ সেই স্নিগ্ধা আমি আর নই, আমি নিজেকে চালাতে সক্ষম।

– শুধু তোর কথা ভাবছি না রে মা। এতীমখানার কথাও ভাবছি। রফিক, জরিদের মতোই লোক এখন সমাজে বেশি৷ বাচ্চাগুলো রাস্তায় না বসে।

– আমি থাকতে তা হতে দেবো না!

– বাস্তবতা কিন্তু বেশ কঠিন। একা যুবতী মেয়ে হয়ে বাচ্চাগুলোকে সাথে নিয়ে লড়াই করা অতোটা সহজ না। ভাবতে পারিস আমি স্বার্থপর। ভেবে নে সেটাই। বাচ্চাদের জন্য স্বার্থপরের মতোই ভাবছি। আমার সন্তানেরা তো আর দেশে এসে দায়িত্ব নেবে না৷ তুই যদি মানতে পারিস তাহলে..

– মা, সন্তান হওয়া না হওয়া আল্লাহর ফয়সালা। আমরা এখানে কতটুকু জানি। আমার ভয় লাগে, উনি আমাকে স্বার্থান্বেষী না ভাবে৷ আত্মসম্মান ছাড়া কি আর আছে বলেন মা?

সাবিকুন নাহার আর কিছু বলেন না। কিন্তু পরের শনিবার ঠিকই শিহাবের সাথে কথা বলেন। প্রথমে শিহাবও অবাক হয় এবং নিজের অক্ষমতার জন্য অন্য একটা জীবনকে জড়াতে দ্বিধা করে৷ কিন্তু সাবিকুন নাহার নাছোড়বান্দা। এতীমখানার স্বার্থে এবং স্নিগ্ধার একটা ভালো জীবনের জন্য উনি কিছুটা চাপই দিতে থাকেন।

শিহাব স্নিগ্ধাকে বহুবার দেখেছে। সাবিকুন নাহারের কাছে ওর জীবনের ঘটনাও শুনেছে। কমনীয় মুখের আড়ালে দৃঢ় চরিত্র। সাবিকুন নাহারই বলেছেন যে শিহাবের ক্রুটির জন্য ওর আপত্তি নেই, আপত্তি সাবিকুন নাহারের অনেকটা এভাবে জোর করাতে।

শিহাব বোঝে এমন জোর করার মতো কোন অভিভাবক তার মাথার উপরে নেই বলেন জীবনটা এমন ছন্নছাড়া। কোন এক অজানা সুখের সন্ধানে রাজী হয়ে যায়।

শিহাবের সাথে খুব সাদামাটা ভাবে বিয়ে হয় স্নিগ্ধার। খুব খুশি হয় সাবিকুন নাহার কিন্তু তার চেয়েও খুশি হয় এতীমখানার বাচ্চাগুলো। খুব প্রিয় দুইজন মানুষের বিয়েতে আনন্দে হাসিতে মাতিয়ে তোলে।

চলবে।

দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব-০২

0

#দ্বিতীয়_অধ্যায়

সাবিকুন নাহারের সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস। বাড়িতে একাই থাকেন। সাথে কাজের মেয়েটা। হঠাৎ মেয়েটা দৌড়ে আসে ওর কাছে।

– ও খালাম্মা, ময়লা ফেলতে গেট খুলছিলাম। কে জানি আমাগোর দরজার পাশে শুয়ে আছে।

– রাস্তায় তো অনেকেই ঘুমায়, তাদের কেউ হবে হয়তো।

– না খালাম্মা, ভালো ঘরের মাইয়া মনে কয়। আপনি একবার আসেন না।

ছোট্ট একটা ডুপ্লেক্স বাসায় সাবিকুন নাহারের বসবাস। মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে, শহরতলীতে। স্বামী গত হয়েছেন। ব্যবসায়ী ছিলেন টাকা পয়সার অভাব নেই। ছেলে মেয়ে দুই জনই দেশের বাইরে সেটেল্ড। সাবিকুন নাহারের সেখানে মন টেকে না। নিয়ম করে বছরে দুই একবার যেয়ে দেখে আসেন।

বাড়ির বাইরে একটা শিউলির চারা আছে একদম গেটের সাথে। আরেকপাশে বাগান বিলাস। মেয়েটা শিউলি গাছের নিচে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে। গায়ের উপর দুই একটা শিউলি পড়ে আছে। চোখ মুখে গভীর ক্লান্তি কিন্তু শিউলি ফুলের মতোই স্নিগ্ধ একটা মুখ।

সাবিকুন নাহার গায়ে হাত দেন। বেশ গরম। হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ঝাঁকুনি দিলে লাল চোখ মেলে বসে। ঘোর লাগা দৃষ্টি।

– কি নাম তোমার?

– স্নিগ্ধা। আমি পানি খাবো..

ধরে ধরে বাসার মধ্যে আনেন। দুই দিন তুমুল জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করে বকতে থাকে মেয়েটা।
– আমি ইচ্ছা করে পুড়াই নি। আমার ভুল হয়েছে। ও মা, মা গো আমাকে নিয়ে যাও। আমি আর পারছি না। এমন নানা কথা অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে।

তিনদিনের মাথায় জ্বর ছেড়ে দেয়। কিন্তু কিছুই বলে না। চুপ করে থাকে। সাবিকুন নাহারও জিজ্ঞাসা করেন না। জীবনের অনেক ধাপ পার হয়ে এখন শেষ প্রান্তে এসেছেন। নানান মানুষ, তাদের জীবনের দু:খ কষ্ট দেখেছেন। একটা এতিমখানা চালান। স্বামীর অর্থ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তার ছেলে মেয়েরা অনুদান দেয়, কিছু ডোনারও ঠিক করে দিয়েছে। মায়ের আনন্দই তাদের আনন্দ। সাবিকুন নাহার জীবন দেখে অভ্যস্ত। বোঝেন মেয়েটা একটা কঠিন ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

স্নিগ্ধাকে সাথে নিয়ে ঘোরেন। একসাথে হাঁটতে যান, খেতে বসেন। মাথা আঁচড়ে দেন, কিছু কাপড় চোপড়ও কিনে দিয়েছেন। এতীমখানায় নিয়ে যান। একা ঘরে ঘুমাতে দেন না। কাজের মেয়েটাকে নিচে বিছানা করে ঘুমাতে বলেন। কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করেন না। নিজে থেকেই বলার অপেক্ষা করেন। ঠিক মাস দুয়েকের মাথায় স্নিগ্ধা কিছুটা সামলে নেয়। এক বিকেলে চা খেতে খেতে নিজের সব কথা বলে। খুব মন দিয়ে চুপ করে সব কথা শোনেন।

– জীবন এই রকম মা। কখনো কঠিন, কখনো দুর্বোধ্য। তুমি ইচ্ছা করলে শফিক আর ওর মায়ের বিরুদ্ধে থানায় যেয়ে অভিযোগ দিতে পারো। তোমার বাবাকেও ফোন দিতে পারো।

– বাবা অনেক আগেই আর বাবা নেই। সম্পর্ক তো লালন করতে হয় তাই না মা? আপনাকে মা বলতে ইচ্ছা করে, এতিম খানার বাচ্চাদের মতো। আমিও তো এতিম মা।

– অবশ্যই বলবে। এখন বলো কি করতে চাও।

– আমি ওদের বিরুদ্ধে কিছুই করবো না। আমি সব ভুলে যেতে চাই। নতুন করে জীবন শুরু করবো। পড়াশোনাটা আবার শুরু করতে চাই মা। আমাকে কোন কাজ, সে যে কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিলে যতো কষ্টই হোক চালিয়ে নিতে পারবো। আপনার কাছে আর কতদিন থাকবো মা।

– মা বললে এভাবে বলতে হয় না। তবে তোমাকে বসিয়ে রাখবো না। এতিমখানায় হিসাব শাখায় একজন দরকার। তুমি আপাতত: সেখানেই বসে কাজ শেখো। আর ভর্তির বিষয়ে কি করা যায় দেখছি। কাগজপত্র তুলতে হবে। আমার এতো বড় বাড়ি, ছেলে মেয়েরা তো আসতেই পারে না। একা দমবন্ধ লাগে, আমার সাথে থাকো সেটাই না হয় তোমার বাড়ি ভাড়া!

– আরেকটা কথা মা। আমি শফিককে তালাক পাঠাতে চাই। যে সম্পর্ক আগেই মনে মনে মরে গেছে, তা টেনে লাভ কি!

হেসে সম্মতি দেন সাবিকুন নাহার। স্নিগ্ধা ঘরে ফিরে আসে। রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ঘর ভরে যায়। বাইরে তাকিয়ে এর সৌন্দর্য দেখে। এমন এক রাতে সে ঘোর লাগা মানুষের মতো ঘর ছেড়েছিলো। স্টেশনে যেয়ে ছেড়ে দেয়া এক ট্রেনে উঠে। ভোর রাতে নেমে হাঁটতে হাঁটরে বেহুঁশ হয়ে এখানে পড়ে ছিলো।

জীবন! এক আশ্চর্য জার্নি। ভালো কি মন্দ স্নিগ্ধা জানে না। কিন্তু এটুকু বোঝে, এর নিয়ন্ত্রণ এখন নিজেকেই নিতে হবে। বোকা মানুষের জায়গা এখানে নয়। একটু প্রতিবাদী না হলে টিকে থাকা কঠিন। সাবিকুন নাহার এর মতো মানুষ সবার জীবনে আসে না। ওর সাথে খারাপ কিছুও হতে পারতো। সৃষ্টিকর্তা যখন সুযোগ দিয়েছেন, সেই সুযোগ কাজে লাগাবে। নিজের জন্য, ওর মতো অসহায় মানুষের জন্য। দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করবে। নিজেকে গড়তে হবে, জীবনে হয়তো আরো অনেক শফিক, তার মা বোনের মতো লোকের সম্মুখীন হতে হবে তবে থেমে থাকবে না। ট্রেনের মতো চলতেই থাকবে, গন্তব্যে না পৌঁছা পর্যন্ত।

(চলবে।)

দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব-০১

0

#দ্বিতীয়_অধ্যায়

– ইশ দুধটুকু ফেলে দিলে? কেন চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে না?

– ছিলাম তো আম্মা, কিন্তু মিতু আবার ডাক দিলো। ওর কোন ড্রেস নাকি পাচ্ছে না। এসে দেখি দুধ উপচে পড়ে গেছে৷

– চুপ করো মুখে মুখে তর্ক করো না।

চুপ হয়ে যায় স্নিগ্ধা। ওর চোখ জুড়ে পানি টলমল করে। শুনতে পায় শাশুড়ি জোর গলায় ওর শ্বশুরকে বলছে – আজ আর দুধ খেতে হবে না। তোমার আদরের বউমা দুধ ফেলে দিয়েছেন।

এ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। কোন এক অজানা কারণে বিয়ের পর থেকেই স্নিগ্ধার শাশুড়ি ওকে সহ্যই করতে পারে না। স্নিগ্ধার এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। ওর স্বামী আর শ্বশুর পছন্দ করে এনেছে। শাশুড়ির নাকি মত ছিলো না। কারণ, স্নিগ্ধার মা নেই ঘরে সৎ মা।

বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে স্নিগ্ধার৷ কিছু কিছু মানুষের জীবন’টা বুঝি এমনই হয়। অন্ধকার, এতোটুকু আলো নেই। সেই ক্লাস নাইনে থাকতে মা ছেড়ে চলে গেলো, জীবনের সব আনন্দ ভালোবাসা সব যেন সাথে করে কবরে নিয়ে গেলো। বাবা আর কি করবে নানান চাপে কিংবা প্রয়োজনে বিয়ে করলেন। না, সৎ মা নির্যাতন করে না। উনি উনার মতো থাকে। স্নিগ্ধা যে একটা মানুষ, তা যেন উনার চোখেই পড়ে না। দিন দিন কেমন যেন অপাংক্তেয় লাগতো স্নিগ্ধার। মনে হতো, এই পৃথিবীতে ও যেন সবার উপরে বোঝা।

তারপর কোন রকম এইচ এস সি পাশের পরেই বিয়ে। চেহারা মোটামুটি সাথে অল্প বয়সের একটা কমনীয়তা – পার হয়ে যায় বিয়ে নামক পুলসিরাতে!

কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে যে হাবিয়া দোজখ অপেক্ষা করছে ঘূর্ণাক্ষরেও বোঝে নি স্নিগ্ধা। এক শাশুড়ির শাসনে অতিষ্ট স্নিগ্ধা। সাথে ননদের নানা বাহানা। আচ্ছা ও তো আর জোর করে এদের ঘরে ঢুকে পড়ে নি! তাহলে কেন এতো বিদ্বেষ! মাঝে মাঝে ওর শ্বশুর আর স্বামীর উপর রাগ হয়। শাশুড়ির পছন্দ না জেনেও কেন ওকে টেনে আনলো? না হয় আরো খারাপ জায়গায় বিয়ে হতো আর না হয় হতোই না কিন্তু এই যে প্রতিনিয়ত উঠতে বসতে কথা শোনা এর থেকে তো বাঁচতো!

এসব ভাবতে ভাবতে হাতের কাজ সারতে থাকে স্নিগ্ধা। রান্নাঘর, চুলা, থালাবাটি সব ধুয়ে মুছে চকচক করে ঘরে এসে বসে। ইশ! সারাদিন চুলটা শুকানোর সময়টা পায় নি। চুলের মধ্যে কেমন ভেজা ভেজা আর গন্ধ লাগছে। বারান্দায় বসে চিরুনী দিয়ে চুল ছাড়াতে থাকে। বেডরুমে লাইট অফ করে মোবাইলে কি যেন দেখছে শফিক, স্নিগ্ধার স্বামী। স্নিগ্ধার মতে পৃথিবীর সুখি মানুষ। যা হয়ে যায় যাক, সে সকালে উঠে গোসল করে খেয়ে অফিসে যাবে আর ফিরে খাওয়া, টিভি আর মোবাইল। এর বাইরে তার কোন দুনিয়া নেই। ও হ্যাঁ আছে, মোবাইলে কথা বলে অফিসের অমুক খারাপ তমুকের এই সমস্যা বলে বদনাম করে। স্নিগ্ধা যেন একটা শরীর মাত্র যাকে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করে। তার যে মন থাকতে পারে, ভালো লাগা মন্দ লাগা থাকতে পারে এই ব্যাপারে শফিকের মনে কখনোই কিছু আসে না কিংবা এসব নিয়ে ভাবার চিন্তাই করে না!

দুই একদিন একটু বলার চেষ্টা করেছিলো, স্নিগ্ধার কষ্ট হয়ে যায়। শফিক মুখ কালো করে বলেছিলো- ওর অফিসের মেয়েরা ঘর সংসার সামলে অফিস করে আর স্নিগ্ধা শুধু ঘরের কাজেই কাত হয়ে যায়!

ঘরে এসে বিছানায় বসে স্নিগ্ধা
– উফ, তোমার শরীর দিয়ে তো ডাস্টবিনের মতো গন্ধ বের হচ্ছে। রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গোসল করতে পারো না?
নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠে শফিক। গরমে রান্নাঘরে কাজ করাতে শরীর ভিজে গেছে কিন্তু এতোটা দুর্গন্ধ তো হচ্ছে না! তবুও পাল্টা কোন উত্তর না করে গোসল করে আসে। এসে দেখে শফিক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আবার চুল শুকিয়ে ফেলে। না হলে ঠান্ডা লাগতে পারে।
সকালে উঠে রুটি, আলুভাজি, ডিম এই নাস্তাগুলো তৈরি করে টেবিলে দেয়। রুটি নরম আর ফুলো ফুলো হতে হবে। আলুভাজি চিকন করে কেটে অল্প তেলে ভাজি। ডিমের মামলেটের রঙ হতে হবে বাদামী এবং অবশ্যই ফুলে ডাবল হবে। সাথে মশলা দেয়া দুধ চা। শফিকের দুপুরের খাবার হটপটে ভরে টেবিলে দিয়ে দেয়। এরপর রুমে ঢুকে সবার বিছানা ঝেড়েঝুড়ে ঠিক করে কাপড় নিয়ে ধোয়ার জন্য রাখে।

ঠিকা বুয়া জরিনা ঠিক টাইম মতো এসে গুণে গুণে দুই কাজ করে – ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া। এর বাইরে সে কোন কাজেই হাত দেয় না। স্নিগ্ধা হাতের কাজ সেরে টেবিলে এসে দেখে সবার খাওয়া শেষ, রুটিও শেষ! এমন তো হওয়ার কথা না! ও তো সবার জন্যই বানিয়েছে।

– আম্মা, রুটি তো নাই আর। আমি কি খাবো?
– পেট মেপে খেতে হবে নাকি? কারো কি দুটোর বেশি তিনটে রুটি খাওয়া বারণ? গতরাতের ভাত তরকারি আছে, সেটাই খাও।

বাসি ভাত আর তরকারি নিয়ে বসে স্নিগ্ধা। দুই নার মুখে নেয়ার পরে মিতু এসে চিল্লাতে থাকে।

– কি ইস্তি করেছো ভাবী? কিচ্ছু হয় নাই। কুঁচকায়ে আছে।এই ড্রেস পরে আমি এখন কিভাবে বের হবো। সময় নাই তেমন। শিঘ্রী আবার ইস্ত্রি করে দাও।
ভাতের প্লেট রেখে উঠে পড়ে স্নিগ্ধা। ঠিকা বুয়া জরিনা ঘর মুছছিলো। সে রাগে গজগজ করতে থাকে – মাইয়াডারে পাইয়া এরা একদুম ল্যাংড়া হইয়া গেছে গা, কেউ কিচ্ছু করার পারে না।

শাশুড়ি আর মিতুর হুকুম করা, খুঁত ধরা আর অল্প কিছুতেই চিল্লাচিল্লি করাতে স্নিগ্ধা আজকাল এতো বেশি ভয়ে থাকে যে, বেশি করে কাজে ভুল হয়। এমনকি রাতেও দু:স্বপ্ন দেখতে থাকে। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো ভুলে যায়, অন্যমনস্ক হয়ে যায় শুধু। শফিকও রাগ করে আজ কাল।
– কি অবস্থা তোমার হাতের? একটু লোশন লাগাও না? চুলগুলোর যত্ন নাও না ঠিকঠাক? আমি আসলে তো একটু নিজেকে গুছিয়ে রাখতে পারো নাকি! দেখে মনে হয় কাজের বেটি, পাঁচ বাসায় কাজ করে ঘরে ফিরেছে!

দিন দিন স্নিগ্ধার মায়াবী একটা সংসারের স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে। এদিকে শাশুড়ির কড়া শাসন – এখুনি বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বসো না বাপু, নিজেই ঠিকঠাক মানুষ হও নি, আরেকটা মানুষ করবে কিভাবে!

লজ্জায় মাথা কাটা যায় স্নিগ্ধার। ঠিকমতো ঘুম না, খাওয়া না -চোখের নিচে কালি, চুল পড়ে গেছে। মুখের রঙ তামাটে। শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। কোন কালে মরে যাওয়া মা’কে মনে পড়ে শুধু। কান্নাকাটিও ভুলে গেছে। কেউ কিছু বললে মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।

– হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? যাও আমার এই শাড়ি’টা ভালো করে ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিও। বেশ দামী শাড়ি, শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে দিও৷ জরিনার হাতে দিও না। ও তো আঁচড়ে ফেলা ছাড়া ধুইতে পারে না।

বিপত্তি বাঁধে ইস্ত্রি করার সময়। ইস্ত্রি করার সময় হঠাৎ মনে হয় চুলায় চায়ের পানি বসানো ছিলো । শুকিয়ে হাঁড়ি পুড়ে গেলো না তো! দৌড়ে গিয়ে চুলা বন্ধ করতে যায়। এসে দেখে শাড়ি এক জায়গায় সামান্য একটু পুড়ে গেছে। ভয় পেয়ে যায় স্নিগ্ধা। কাউকেই কিছু বলে না। রাতে ভয়ে খায়ও না। বারান্দায় বসে বসে কাঁদে। কি করবে বুঝতে পারে না। কেমন যেন পাগল পাগল লাগে। এরপর বেশ গভীর রাতে যখন এক ফালি চাঁদ এসে আলো দিচ্ছে, কাউকে কিছু না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে।

(চলবে)

শ্যামাপ্রিয়া পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0

#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব৫(অন্তিম পর্ব)
#তামান্না_আনজুম_মায়া
তিথির পেছন পেছন আসলো ফাহমিদ,তিথি বলে উঠলো
–,,আপনি ভিতরে গিয়ে অপেক্ষা করুন আমি কফি নিয়ে আসছি!

–,,আপনার রুম কোনটা?যেটাতে আপনি থাকেন ওইটার কথাই কিন্তু বলবেন!

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়ালো ছেলেটা এতো তেঁদড় কোনো কথা শোনার মানুষই না!

–,,ছাদের চিলেকোঠার ঘরে থাকি আমি।

–,,যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন?

–,,অনুমতি না দিলে বুঝি যাবেন না?

–,,তা তো আমি যাবোই!
তাহলে চলুন, ফাহমিদ ভ্রু কুঁচকে বললো
–,,রুম দেখাবেন বলে কফি খাওয়াবেন না?
তিথি কোনো কথা না বলে ভিতরের দিক চলে গেলো।সিঁড়ি বেয়ে উঠলো ফাহমিদ।
তিথি রুমে এসে দরজা ধাক্কা দিলো ভিতরে ঢুকে গেলো পেছনে ফাহমিদ।
রুমে ঢুকেই ফাহমিদ হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটা এই মাঝারি সাইজের রুম টাকে কি সুন্দর ভাবে গুছিয়েছে!
এক পাশে দুইটা সোফা,অপর পাশে পড়ার টেবিল।একটা পর্দা টেনে দিয়ে পাশে বিছানা।ওয়াশরুমের অপরপাশে একটা ছোট্ট কেবিনেট তার সংলগ্ন একটা বৈদ্যুতিক চুলা!যার উপর এখন মনোযোগ সহকারে কফি বানাচ্ছে তিথি।

ফাহিমদ ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালো তিথির পেছনে।কফি তৈরি করে পেছনে ফিরতেই চমকে উঠলো তিথি।
ফাহমিদ কে এতো কাছে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করে ভয়ই পেয়ে গেছিলো।

তিথি সৌজন্যে মূলক হেসে কফি কাপ এগিয়ে দিলো।

তিথি প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও ফাহমিদের একের পর এক কথা বলাতে জড়তা কাটতে থাকলো তার। ছাদে হেঁটে হেঁটে কথা বলছে দুজন, দরজায় আড়ি পেতেছে সব ভাই বোন।ইসমা বলছে–,,আমাকে দেখতে দে আমার ছেলে বি’দ্বেষি বান্ধুবী কেমনে প্রেম করতাছে!

সৌরভ বললো–,,দুটোকে মানিয়েছে ভালো।দুজনেরই বিপরীত মানুষের প্রতি এর্লা’জি ছিলো।এবার যদি এদের একটা গতি হয়!
———
বড়দের আড্ডায় এবার সবাই কে থামিয়ে দিয়ে সুরেখা বললো
,,যদি কেউ কিছু মনে না করেন তো একটা কথা বলতাম!

জয়নাল বেপারী বললো–,,বলো অনুমতির কি আছে,আমরা আমরাই তো!

–,,আসলে আমরা মানে ফাহমিদের বাবা আর আমি চাই তিথি কে ফাহমিদের বউ করে ঘরে তুলতে!

সুরেখা শ্বশুরের দিক তাকিয়ে বললো –,,বাবা আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?

পুরো ঘর ময় নিরবতা। এবার হেসে উঠলেন সাত্তার সিকদার সাথে জয়নাল বেপারী।

দুজনই একত্রে বললেন–,,উত্তম প্রস্তাব!তবে ছেলে মেয়ের মত নেওয়া জরুরি!

সুরেখা বললো–,,বাবা আপনার নাতিই বলেছে তার তিথিকে পছন্দ, আমার বিয়ে করতে না চাওয়া ছেলেটা নিজে বিয়ে করতে চেয়েছে বাবা।সত্যি মেয়েটা জা’দু জানে।

সাত্তার সিকদার বললো–,,তা যা বলেছো বউ মা।

সবার মতামত নেওয়া হলো এইরকম একটা সিদ্ধান্তে সবাই সম্মতি দিলো!
সুরেখা বললো–,,তবে একেবারে ছেলের বউ নিয়েই ফিরবো।কারো আপত্তি নেই তো?

জুলেখা বেগম বললেন–,,আপত্তি থাকবো কেন আমার নাতনি তোমাদের পরিবারে যাবে এতে তো আরো খুশি আমরা।

তবে তাই হোক শুক্রবারই বিয়ের তারিখ নির্ধারন করা হোক!
——–
বড়দের সব কথা গিলে নিয়ে দৌড় লাগালো ইফাত। হাফাতে হাফাতে গিয়ে পৌঁছালো সিঁড়ির উপর।

–,,তোমরা এখানে জানো কি হয়েছে? তিথি আপু আর ফাহমিদ ভাইয়ার বিয়ে শুক্রবার। বড়রা একটু আগেই সব ঠিক করলো!

কথাটা শুনতে পেলো তিথি।ফাহমিদ নিজেও অবাক একেবারে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে?তিথি যদি এখন না করে দেয় তখন কি হবে আগে কিছুদিন মেয়েটা কে জানা বুঝার তো দরকার ছিলো!

তিথি ফাহমিদের দিকে একবার তাকালো দ্রুত পায়ে নেমে গেলো ছাদ থেকে।

সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।

রাতে তিথির ঘরে আসলো জয়নাল বেপারী, তিথি জানতো তার দাদু এখন আসবে!

জয়নাল বেপারী এসেই বসলো নাতনীর পাশে।তিথি গম্ভীর হয়ে বসে রইলো

–,,শোন বোন,জীবনে অনেক সময় এমন কিছু বয়ে আনে যা আমাদের কে শুধু কষ্টই দেয়।তবে সব সময় যে এমনটা হবে এরকম ধারনা রাখাটা ভুল।ফাহমিদ ভালো ভদ্র ছেলে,সে নিজে থেকেই তোকে পছন্দ করেছে তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি!

তিথির নতমস্তক কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো–,,কিন্তু দাদু!

–,,কিসের কিন্তু? বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক, বিয়েটা হোক দুজন দুজনকে জানবি বুঝবি দেখবি তোদের মাঝে ভালোবাসা অদশ্য ভাবেই আসবে।বিয়েতে রহমত হিসেবে আল্লাহ ভালোবাসা সুখ শান্তি দান করেন।আমি দাদু হয়ে চাইবো তুই বিয়েটা কর,তোর বাবার সাথেও কথা হয়েছে সে ও খুশি হয়েছে!এবার বাকিটা তোর ইচ্ছে।

–,,আমি ফাহমিদের সাথে এই বিষয় কিছু কথা বলতে চাই যদি সব কিছু মিলে তো আমার কোনো অসুবিধে নেই!

জয়নাল বেপারী খুশিতে নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

সকাল না হতেই তিথির ডাক পেয়ে ফাহমিদ চমকালো।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ছুটলো ছেলেটি।ঘাট পাড় সিঁড়িতে বসে আছে তিথি।তার পাশে গিয়ে বসলো ফাহমিদ!

ফাহমিদের উসকোখুসকো চুল দেখে হাসলো তিথি স্নিগ্ধতায় ঘেরা হাসিটি মুগ্ধ হয়ে দেখলো ফাহমিদ।

তিথি সবুজ পানি গুলোর দিকে তাকিয়ে বললো–,,মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই এক প্রকার ছুটে এসেছেন?এতো তাড়া কিসের মহাশয়?

ফাহমিদ চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো–,,আপনাকে পাওয়ার তাড়া মহাশয়া!

তিথি চট করে তাকালো ফাহমিদের দিকে।ছেলেটি তার দিকেই তাকিয়ে।

–,,যদি আমি আপনার না হতে চাই তখন?

–,,জোর করে হলেও নিজের বানাবো।প্রথমে সময় দিবো,নিজে তোমার মন মতো হওয়ার চেষ্টা করবো তার পরও যদি তুমি ঝামে’লা করো তো আমি জোর করে হলেও তোমায় নিজের করবো!

–,,তাই বুঝি?

তিথি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো মজা করা বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথায় আসি আমি আপনাকে যে কারনে ডাকলাম।

–,হুম বলো!

,,আপনি কেনো আমাকে পছন্দ করেছেন তা আমি জানি না।

,,তোমাকে জানতে হবে ও না!

তিথি বিরক্তি নিয়ো তাকালো আবার বললো–,,আজ অব্দি এমন কোনো মানুষ নেই যারা আমাকে আমার গায়ের রঙ নিয়ে কথা শুনায়নি!আমার এতে মাথা ব্যাথা নেই তবুও আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন জানতে চাচ্ছি আমি।সবাই সুন্দরই খোঁজে ফাহমিদ আপনি কেনো ব্যতিক্রম হবেন এই প্রশ্নের উত্তরটাই চাই আমার!

ফাহমিদ বলে উঠলো–,,আমার চোখ তোমার মাঝেই মুগ্ধতা খোঁজে পেয়েছে শ্যামাপ্রিয়া!
আমি সুন্দর বলতে তোমার মায়া ভরা চোখ,তিমিরে ঢাকা অম্বরের ন্যায় তোমার দীঘল কালো চুল।তোমার পলাশ রাঙা ঠোঁটের হাসিকেই বুঝি।তোমার মুক্তোর মতো চকচকে হৃদয় তোমার ব্যক্তিত্বের প্রেমে আমি পড়েছি।তোমাকে প্রথম দেখায় ই আমি ভালোবেসে ফেলেছি!জানি বিশ্বাস করবে না তবুও চাইবো একবার বিশ্বাস করে হাতটি ধরো যাতে প্রমান করতে পারি কতোটুকু ভালোবাসি!

ভালোবাসায় এতো কিছু দেখতে নেই তিথিয়া।এবার বলো তুমি কি আমার এই ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে হাত বাড়িয়ে দিবে আমার দিকে?হাত রাখবে আমার হাতে সারাটি জীবন একসাথে চলার জন্য? কথা দিচ্ছি আজীবন ভালোবাসবো তোমায়!

তিথির চোখ জলে চিক চিকি করে উঠলো, ভালোবাসার কাঙ্গালি কে কেউ এমন ভাবে ভালোবাসবে কোনো দিন কল্পানাও করেনি তিথি।
তিথি চোখ বুঁজে নিলো, হাত বাড়িয়ে দিলো ফাহমিদের হাতে।
———
আজ শুক্রবার নিয়ম মাফিক বিয়ে সম্পন্ন হলো ফাহিমদ ও তিথির।
তিথির ঘরে মিটমিটে আলো জ্বলছে লাল রঙা বেনারসি পড়ে এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে তিথি।দরজা ঠেলার শব্দে অজানা নতুন অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো তিথির মন মস্তিষ্ক!

ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো ফাহমিদ।তিথির ঘোমটা দুহাতে সরাতেই মেয়েটি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে বসলো।

ফাহমিদ ফিসফিস কন্ঠে বললো–,,লজ্জাবতী লতা নেতিয়ে পড়ুক আমার বুকে!আমি স্বযত্নে তাহার লজ্জা রাঙা মুখ দেখবো নয়ন ভরে।অতঃপর একদিন সব লাজ ভেঙে দিবো ভালোবেসে!

তিথি যেনো আরো বেশি লজ্জা পেলো।ফাহমিদ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো–,,ভালোবাসি শ্যামাপ্রিয়া!

চলো আজ চন্দ্রবিলাস করি,চাঁদের মায়া মাধুরি মিশিয়ে শুরু করি আমাদের নতুন পথচলা!
সমাপ্ত

শ্যামাপ্রিয়া পর্ব-০৪

0

#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব৪
#তামান্না_আনজুম_মায়া
সকালেই হসপিটালে হাজির দুই পরিবারের মানুষ। বেপারী বাড়ি থেকে এসেছেন জয়নাল বেপারী, জুলেখা বেগম,খোদেজা বেগম,আঁখি বেগম।সিকদার বাড়ির কর্তা সাত্তার সিকদার,সবীজ, সুরেখা।
কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে নেহাল,পাশে ফাহমিদ।তিথি দাঁড়িয়ে আছে আইসিই”উর সামনে।

নিশিতা এগিয়ে এসে বললো—,, বলো আমার মা কোথায়?আমি দেখবো।

নেহাল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো মুখ তেঁতো করে বোনের দিকে এগিয়ে এসে বললো–,,কি সমস্যা চেঁচামেচি করছিস কেনো?এখানে তোর কোনো মা নেই!যেদিন তুই আমাদের মিথ্যা বলে সিকদার বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেছিস সেদিন থেকেই তোর মা ম’রে গেছে!এখন কি লোক দেখানো কান্না করতে এসেছিস?তোর এসব করার কোনো দরকার নেই যেখান থেকে এসেছিস ওখানে চলে যা।তোর মতে তো আমরা ছোটলোক আমাদের সাথে তোর যায় না।তাই আমিও মনে করি আমার বোন তুই না তিথি!

তিথি রেগে এসে বললো–,,কি শুরু করেছিস নেহাল
এটা হসপিটাল।বাড়ি গিয়ে এসব কথা বলার অনেক সময় পাবি।

জয়নাল বেপারী এগিয়ে এসে বললো–,,বল বোন আমার মেয়েটা কেমন আছে?মেয়েটা শুধু কষ্টই পেয়ে গেলো এখানে আসার পর থেকে।

সাত্তার সিকদারের অনুশোচনা জাগলো মনে,অনুতাপে পু’ড়লেন,তিনি না জেনে বুঝে জয়নাল বেপারী কে কতো কি না বলেছেন।সে মানুষ টা তার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো করে রেখেছে!যেখানে মেয়ের জামাই তাকে ছেড়ে গেছে।বৃদ্ধর চোখ অশ্রুশিক্ত হলো,তিনি অপ’রাধী মেয়ের খারাপ সময় তিনি পাশে থাকতে পারেননি।এখন মেয়ের সামনে দাড়াবেন কোন মুখে।সুরেখা এগিয়ে গেলেন শ্বশুরের দিকে কাঁধে হাত রেখে বললো
–বাবা ভেঙ্গে পড়ছেন কেনো?নাজমা দেখবেন ঠিক তার বাবা কে মাফ করে দিবে।আবার বাবা বলে জড়িয়ে ধরবে!দোয়া করেন যাতে আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে যায়।

নেহালের দিক তাকিয়ে আছে সাত্তার সিকদার,ছেলেটি যেনো তাকে চিনেই না কতোটা ঘৃ’ণা করে তা যেনো স্পষ্ট চোখে।নিশিতা যখন এসেছিলো তখন তিনি না করেননি মেয়ের প্রতি রাগ থাকলেও নাতি নাতনির প্রতি তার কোনো দিনই রাগ ছিলো না।
মেয়েটাকে ওইদিন তাড়িয়ে দেওয়ার পর কতো মাস টানা ফোন করতো মেয়েটা সাত্তার সিকদার বার বার তাকে কথা শোনাতো।মেয়েটা অভিমান করে ফোন করা বন্ধ করে দিলো পরে কাটলো বছরের পর বছর,এতোদিন পর এসে মেয়ের কষ্টের কথা শুনে কি করে ঠিক রাখবেন নিজেকে?তিনি তো এক ব্যর্থ পিতা।

তিথি জয়নাল বেপারীর সাথে কথা বলছে।সকালেই ডাক্তার জানিয়েছে ছোট একটা অ”স্ত্র পা’চার করতে হবে।রোগীর কন্ডিশন তেমন ভালো না।
জয়নাল বেপারী ইতস্তত হয়ে বললেন

–,,টাকা কোথায় পেয়েছিস? এতো গুলো টাকা তুই দিবি কি করে?

–আমার কাছে অনেক টাকাই আছে দাদু।এই সামান্য টাকা কোনো বিষয় না আমার নিজের মা তো আমার কাছে নেই,যে মানুষ টা মায়ের ভালোবাসা দিলো তার বিপ’দে যদি পাশেই না থাকতে পারি তবে কেমন মেয়ে হলাম বলো!টাকা আসবে যাবে মানুষের জীবনটাই তো গুরুত্বপূর্ণ।

–তাই বলে তুই একা পাঁচ লাখ টাকা দিবি?আমি দেই কিছু!

–আমি পুরোটা দেওয়া মানেই তো তুমি দেওয়া দাদু।ভাই বোনে কোনো ভাগ হয় নাকি?আমি তোমার বোন না বলো!

জয়নাল বেপারীর চোখ ছলছল করে উঠলো,নিশ্চয়ই তার বড় ছেলে বড় কোনো পূণ্য করেছে যার জন্য আল্লাহ এতো ভালো একটা মেয়ে তাকে দান করেছে।

নিশিতা বলে উঠলো –,,দয়া করছো তুমি আমাদের?তোমার দয়া চেয়েছি নাকি।আমার ভাই মা কে কেঁ’ড়ে নিয়েছো তুমি!নিজের সৎ মা তো তোমাকে কোনো দিন এক ফোঁটাও পছন্দ করে না তাই আমার মাকে বশ করে নিয়েছো?এতো স্বার্থ লোভী কেনো তুমি!
নেহাল এসে একটা চ’ড় মারলো নিশিতা কে।

–,,কাকে স্বার্থ লোভী বলছিস নিশিতা?তুই স্বার্থ’পর,তুই ওই বড়লোক বাড়িটাতে গিয়ে নিজেও লো’ভী অহং’কারী হয়ে উঠেছিস।দিনে একবার মাকে কোনো দিন ফোন করতি?বাড়িতে দেখতে আসতি?আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিস?বাবার মতো হয়েছিস তুই! আর সিকদার বাড়ির কর্তার মতো যার অহং”কারে মাটিতে পা পড়ে না।এতোদিন তো খোঁজ নেয়নি কেউ এখনও কারো দরকার নেই আমার আর মায়ের।আর নিজেকে তিথির সাথে তুলনা করছিস কোন সাহসে।

এই যে মাস শেষে মোটা অংকের হাত খরচ তোকে দেয় কে দেয় জানিস?তোর বাপ তো আগেই ভেগেছে নিজের দায়িত্ব ফেলে।তাও তোর মন একটুও নরম হয়নি?ঝুঁকতে শিখিস নি,পরিবার কি জিনিস তুই এটা জানিসই না জানলে ওই বাড়িতে এক পা ও রাখতি না।

তিথি দেয় তোর মাস শেষের হাত খরচ,আমাকে কি বলে জানিস?আমার বোন তাই দেই তোর কি সমস্যা নেহাল। আর তুই কিনা আজ তার দিকে আঙুল তুলছিস?কতো টা নিচ তুই নিশি!
তিথির বাবা আছে দেখেই তো এতোটা শান্তিতে বাড়িতে থাকি মা আর আমি যা বাবা করেনি তা বড়আব্বু করে আমাদের জন্য।
এতো যখন তোর দয়া মনে হচ্ছে তবে নিজে দে টাকা!

তোর সামর্থ্য আছে দেওয়ার?ইনকাম করিস তুই!

সাত্তার সিকদার বললো–, আমি দিবো নিশির হয়ে!

এবার তিথি বলে উঠলো-,কিছু মনে করবেন না নানাভাই!পরিবার মানেই একে অন্যের পাশে থাকা আমাদের পরিবারের যথেষ্ট অর্থ সম্পদ আছে।আপনার থেকে নিতে হবে না আমাদের।আমার দাদুর মেয়ে আমাদের সব ভাই বোনের মা।আমাদের পরিবারে কেউ কারো থেকে আলাদা না তাই এক সাথে আছি এতো বছর পরেও থাকবো।আমার বাবা, ছোট চাচা আছেন কোনো অসুবিধে হবে না।আপনি ছোটদের কথায় কান দিবেন না টাকা দেওয়া হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আপনার মেয়ে তাই আপনি দিতে চাচ্ছেন আপনার প্রতি রাগ নেই আমাদের।তবে যেহেতু পরিবার আমাদের মা ও আমাদের দায়িত্ব অধিকার সবই বেশি আমাদের।নিশি ছোট মানুষ ওর কথা না ধরাই উচিত।

নেহাল আবার কিছু বলতে গেলেই তিথি থামিয়ে দেয়
–,,হসপিটাল ভাই কখন থেকে বলছি চুপ কর।সিনক্রি’য়েট কেনো করছিস?

ফাহমিদ এসে বললো–,,হ্যাঁ দাদু তিথি ঠিক কথাই বলেছে।তর্ক করার সময় অনেক আছে আগে ফুপ্পি সুস্থ হয়ে উঠুক।সবার উচিত এখন আল্লাহ কাছে দোয়া করা।
————
নাজমা বেগম পরিপূর্ণ সুস্থ। হসপিটাল থেকে বাড়িতে নেওয়া হবে কাল।তিথি মোবাইল কানে দিয়ে কথা বলছে নিজের বাবার সাথে।

–,,মা সব ঠিক আছে তো নাজমা সুস্থ তো?

–,,হ্যাঁ বাবা সুস্থ দাঁড়াও আমি তোমাকে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।
কেবিনের ভিতর বোনের সাথে কথা বলছেন সজীব সিকদার কতোদিন খুঁজেছেন লুকিয়ে কিন্তু বোনের খোঁজ পাননি।আজ কতো দিন পর ভাই বোনের মিল হলো সুরেখা মুগ্ধ চোখে দেখছেন পাশে দাঁড়িয়ে।
তিথি ভিতরে ঢুকে বললো

— স্যরি আপনাদের একটু বিরক্ত করলাম।আসলে বাবা কথা বলতে চাচ্ছেন মেজো চাচীর সাথে।

নাজমা হাত বাড়ালেন ফোন নেওয়ার জন্য!
তিথি পাশে বসে ফোন এগিয়ে দিলো।নাজমা ডাকলেন
–,,ভাইজান আপনি ভালো আছেন?

নুরুল বলে উঠলো –,,আর কি করে ভালো থাকি বলো, আমার বোনই তো অসুখ বাঁধিয়ে রেখেছে,ভাই কেও বলেনি পর হয়ে গেছি কিনা!

–ভাইজান এভাবে বলছেন কেনো?

–,,তো কিভাবে বলবো তোমাকে?ছোটদের মতো এসব কান্ড কেউ ঘটায়।বাড়ি আসি এর বিচার করবো আমি।

তিথি বলে উঠলো —-,বাবা তুমি আমার মাকে বকতে পারো না।আমি কিন্তু তার দলে বুঝলে আমাদের দল ভারী।

সুরেখা, সজীব দেখলেন মেয়েটিকে,তাদের মনে জেগে উঠলো এক উত্তম বাসনা!স্বামী স্ত্রী যেনো নিজেদের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে হাসলেন!

সজীব খুশি হলেন তার বোন সব কিছুই পেয়েছে শুধু স্বামীর সুখ পায় নি।যে মানুষ টাকে ভালোবেসে সেই ঠকিয়ে ছে বোন কে কিন্তু বাকিরা এতো এতো ভালোবাসায় আগলে রেখেছে বোন কে হয়তো তারাও এতো ভালো পারতো না।আসলেই সব সুখ কপালে সয় না।মানুষ কোনো না কোনো দিক দিয়ে অপূর্ণই থেকে যায়!
———–
বাড়িতে আনা হলো নাজমা বেগম কে,অবশেষে মান অভিমানের পালা শেষ হলো।সিকদার পরিবার, বেপারী পরিবার এক সাথে হয়েছে।সৌরভের বিয়েটাও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
আজ পুরোদমে রান্না করছে খোদেজা,আঁখি, হাত লাগিয়েছে তিথি,বর্ষা,নিশিতা!সহকারী কাজের মহিলারা।

রান্না ঘর থেকে ঘামে লেপ্টে বেরিয়ে আসলো তিথি। ছুট লাগালো নিজের ঘরের দিকে।
পথিমধ্যে দেখা ফাহমিদের সাথে।তিথি ভড়কালো এই ছেলেটার হঠাৎ কি হলো কয়েক দিন ধরে খেয়াল করছে কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে!

ফাহমিদ কথা বাড়ানোর জন্য বললো–,,তিথি একটা সাহায্যে লাগতো!

তিথি নেহাল কে ডেকে বললো–,,আমি রুমে যাচ্ছি ভাই প্রচুর গরম তুই তোর ভাই কে একটু সাহায্য করে দে!
ফাহমিদ কি বলবে বুঝতে পারলো না মেয়েটা এমন কেন?কোনো ফিলিংস টিলিংস কি আদো আছে এর মাঝে!

নেহাল নিজের সাথে করে ফাহমিদ কে নিজেদের ঘরে নিয়ে গেলো।তিথি উঠে গেলো চিলেকোঠার ঘরটায়!

গোসল সেরে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে চুল ঝাড়তে ব্যস্ত তিথি আশেপাশে কাউকে খেয়াল করেনি।নেহালদের ছাদে দাড়িয়ে আছে ফাহমিদ মুগ্ধ চোখে দেখছে তিথি কে,মেয়েটা কতো স্নিগ্ধ! দিন দিন যেনো আকৃষ্ট হয়েই যাচ্ছে ফাহমিদ।

লম্বা চুল গুলো ঘুরিয়ে অপরপাশে সরাতেই মুখ দেখা গেলো এবার তিথি স্বযত্নে কানে গুঁজে দিলো চুলগুলো ।

নেহাল ফাহমিদের কাঁধে হাত রেখে বললো—,, ভাইয়া ভুল জিনিসে নজর দিতে নেই!পটাতে পারবে না,তার থেকে ভালো দাদু কে পটাও দাদু দিন বললে তিথিরও দিন রাত বললে রাত।বুঝছো!

ফাহমিদ গাল এলিয়ো হাসলো।মুখে বললো
–,,চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!
ভাবছি ওর সাথে গিয়ে একবার কথা বলে আসি,ওর রুম কোন টা বলে দে তো!

–,,ছাদেই থাকে চিলেকোঠায়!তবে রুমে আজ অব্দি কাউকে ঢুকতে দেয়নি।আমরা ও যাইনি ওর চিলেকোঠার ঘরে।

–,,আমাকে যেতে দিবে। আপটারঅল মেহমান কিনা!
——-
দাওয়াত করা হয়েছিলো সৌরভদের পরিবার কে।
খাওয়া দাওয়া শেষে বড়রা নিজেদের মধ্যে আড্ডায় মেতে উঠলেন।

ছোট রা বসে ছে ঘাট পাড়। সিঁড়িতে বসেছে কয়েকজন সৌরভ আর বউ নিলি আড্ডার মধ্যে মনি।
সৌরভ এক ফাঁকে ফাহমিদ কে জিজ্ঞেস করে
–,,কিরে এখনো ফিরে যাচ্ছিস না কেনো?এখন কি গ্রাম ভালো লাগতে শুরু করলো নাকি!
ফাহমিদ মাথা চুলকে বললো–,,তিথি চাইলে সারাজীবনই এখানে কাটিয়ে দিবো আমি।

সৌরভ হেসে বললো–,,ফেঁসেছ মামা এবার বুঝবে তুমি কিভাবে বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়!যা গিয়ে ফ্রেন্ডশিপ কর আগে বন্ধুত্ব করাটা জরুরি পরে বাকিসব।

ফাহমিদ গলা খাঁকারি দিয়ে বললো–মিস তিথি আপনি আর আমি সেইম ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট মানে আমি
প্রাক্তন স্টুডেন্ট আপনি বর্তমান।

তিথি ভ্রু কুঁচকে বললো–,,তো কি হয়েছে।
অনু,ইসমা,নোহাল মিট মিট করে হাসছে।অনু ফিসফিস করে বললো–ভাইয়া আজ অব্দি কতো মেয়ে কে রিজেক্ট করলো আজ ভাইয়ার পালা!
ইসমা বলে উঠলো –তুই তো দেখছি নিজের ভাইয়ের বিরোধী।

অনু বলে উঠলো তো কি করবো।এখনো ভাবি পেলাম না ভাইয়ার এই মেয়ে পছন্দ হয় না শুনতে শুনতে।এবার একটু নাকানিচুবানি খেলে শিক্ষা হবে।তবে যাই বলো তিথি আপু ভাবি হিসেবে মন্দ না।

ফাহমিদ বললো–,,না মানে কিছু না।কিন্তু আমরা তো বন্ধুও হতে পারি!এতে দুজনেরই লাভ।

তিথি সবার দিকে তাকালো ফাহমিদের বাড়ানো হাত উপেক্ষা করে চলে গিয়ে বললো– ভেবে দেখবো।
ফাহমিদ মৃদু হাসলো ফের বললো

—বন্ধু না বানান এক কাপ কফি তো খাওয়াতেই পারেন।
তিথি পিছন ফিরে বললো–,,চলুন!
তিথি চলে যেতেই সবাই ফাহমিদ কে নিয়ে মজা করলো পরে একে একে অল দ্যা বেস্ট বলে পাঠালো!
চলবে,,,

শ্যামাপ্রিয়া পর্ব-০৩

0

#শ্যামাপ্রিয়া
#পর্ব৩
#তামান্না_আনজুম_মায়া
বিয়ের আমেজে মেতে উঠেছে সৌরভদের বাড়িতে সবাই।মানুষে গিজগিজ করছে পুরো বাড়ি,বেপারী বাড়ির সবাই টানা চার দিন নিমন্ত্রিত। বাড়ির তিন বউ সেখানে কাজে টুকটাক সাহায্য করছে হাসি খেলায় মেতে উঠেছে সবাই।
গায়ে হলুদের স্টেজের সামনে চেয়ার পাতা হয়েছে ইসমার কাজিনরা বসে আছে।
ইসমা গিয়েছে তিথির কাছে,মেয়েটা দারুণ ভাবে সাজাতে পারে,তবে সবাইকে সাজিয়ে দেয় না কখনো,মেয়েটার এই গুণ প্রকাশ পাওয়ার কোনো উপায় নেই কারন সে নিজে কোনো দিন সাজেনি!মানুষ অন্তত লিপস্টিক, কাজল দেয়।এর থেকে এটাও আশা করা ভুল।

ইসমা কে শাড়ি পড়িয়ে তৈরি করে দিলো তিথি।ইসমা জোড়া-জোড়ি করলো শাড়ি যাতে আজকে অন্তত পরে।
ছাদের চিলেকোঠার ঘরটায় থাকে তিথি,নিচে ও থাকতে পারতো তবে দিনে কয়েকবার তার মুখ দেখা তার সৎ মায়ের ভীষণ অপছন্দের!
তিথি কে ঠেলেঠুলে বাসন্তী রঙা এক শাড়ি পড়িয়েছে ইসমা।চুল গুলো খোঁপা করে নিয়েছে তিথি মাথায় সম্পুর্ন গোলাপের এক গাজরা।
মেয়েটা সত্যি আদুরে!ইসমা শুধু ভাবে গায়ের রং বাদ দিয়ে কেনো মানুষ আসল সৌন্দর্য খুঁজে না?এই যে তিথির চেহারাটা এতো মায়াবী,স্নিগ্ধ দেখলেই কেমন চোখ জুড়িয়ে যায়!শ্যামলা রঙটা ছাড়া তো তিথি সোনায় মুড়িয়ে রাখার মতো।একটা কমতি কি ডেকে দিবে সবকিছু?
ইসমার ভাবনার ছেদ ঘটে তিথির কন্ঠে –,,কিরে চল। কি ভাবছিস এতো পরে দেখা যাবে তোর ভাইয়ের বিয়েতে তোকে রেখেই সবাই মেয়ের বাড়িতে চলে যাবে!

তিথি আর ইসমা গেলো নিজেদের বাড়িতে,পথে দেখা হলো সুরেখা বেগমের সাথে।ইসমা হেসে তিথিকে পরিচয় করিয়ে দিলো
–,,আন্টি এটা তিথি আমার ফ্রেন্ড।
তিথি সৌজন্যেতার খাতিরে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলেন।সুরেখা বেগম হেসে জবাব দিলেন

–,,এইতো ভালো মা।তুমি কেমন আছো?
সুন্দর গড়নের মধ্যবয়স্কা মহিলা পড়নে চকচকে কাজ করা থ্রি পিস!তবে তাকে দেখে ততোটাও বয়স মনে হয়নি তিথির।সুরেখা বেগম চলে যেতেই ইসমা ফিসফিস কন্ঠে বললো
—,,আন্টির কিন্তু ভাইয়ার বয়সী একটা ছেলে আছে!
তিথি চোখ বড় বড় করে তাকায়,দেখে তো বুঝাই যায়নি।
ইসমা কে দেখে একটা মেয়ে ছুটে আসলো–,,আপু তোমাকেই তো খুঁজছিলাম কখন থেকে,জানো তো এখানে কাউকেই চিনি না বোর হচ্ছিলাম!

তিথির দিকে তাকিয়ে বলে–,,এই সুইট আপি টা কি তোমার ফ্রেন্ড?

ইসমা হেসে বললো–,,হ্যাঁ ওর নামই তো তিথি!
তিথি নামটা শুনেই এক জোড়া চোখ দ্রুত চোখ রাখলো সেদিকে!সোনালী রঙা আলোতে সোনালী শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে কোনো এক অপ্সরা!
ফাহমিদ এই প্রথম বারের মতো কোনো মেয়ের দিক এতো সময়ের জন্য তাকিয়েছে!মেয়েটার মুচকি হাসিটা যেনো হৃদয়ে এসে লাগছে ওর!গোলাপ গুলো চকচকে মুক্তোর মতো জানান দিচ্ছে আমরা ভীষণ সৌভাগ্যের অধিকারী এই অপ্সরার খোঁপায় সোভা পেয়েছি!
ফাহমিদের হাত আপনাআপনি নিজের বুকে চলে গেলো,বুঝতে পারলো সে ফেঁসেছে খুব বা’জে ভাবে আটকে গেছে এই রমনীর উপর!
চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,তুমি আমার হৃদয়ের রাণী, আমার শ্যামাপ্রিয়া!

সৌরভ বন্ধুর তব্দা খাওয়া দেখে এগিয়ে আসলো।
কাঁধে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলে—,, কিরে কি হইছে কখন থেকে এক ধ্যানে কি দেখছিস?

–,,তিথিকে!

সৌরভ মুখ ভরে হাসলো–,,অবশেষে তুই প্রেমে পড়লি!তাও এমন একজনের যার এসবের প্রতি বিন্দু মাত্ররো ইন্টারেস্ট নেই,তোকে অনেক কাঠখড় পুড়া’তে হবে বন্ধু!

—,,আমি রাজি!যেকোনো উপায়ে তিথি শুধু আমার হোক।

ফাহমিদ হাসলো,এই মেয়েটাকে দেখেই প্রথম কতো কিছু বলেছে,এখন এই মেয়েটাই তাকে মুগ্ধতার, মায়ার বাঁধনে আটকে ফেললো!
———–
নিশিতা ভীষণ রকম বিরক্ত হলো,শেষে কিনা সৌরভ কে ফাহমিদের বন্ধু হতে হলো?বাড়ি থেকে দূরে থাকছে কবে থেকে,এরকম একটা গ্রাম্য জীবন কিছুতেই কাটাতে চায় না তাই অনেক কষ্টে নানার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে সেখানে থাকছে!শহরের আভিজাত্য ছেড়ে এই বাড়িতে আর ফিরতে চায় নি সে।কিন্তু হায় ভাগ্য তাকে এখানে এনে ফেললো।বাড়ির কারো সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার ভয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে না।তার উপর ইসমা,সৌরভ তাদের পরিবার ও নিশিতা কে চিনে।

অনু এসে এবার টেনেটুনে বের করলো নিশিতা কে!বলতেও পারছে না সে যাবে না।অনু নিশিতা বের হতেই মুখোমুখি হয় নেহাল আর তিথির।

তিথি নিশিতা কে দেখে অবাক হয়ে বলে–,,নিশি তুই?একা আসলি যে কাউকে তো জানালিই না হোস্টেল থেকে চলে আসলি?
তিথি এক হাত চেপে ধরতেই নিশিতা ঝাপটা মেরে ফেলে দিয়ে বলে–,,কে আপনি?নোং’রা হাতে কেনো ধরছেন আমাকে?আমি আপনাকে চিনি না আর কে হোস্টেলে থাকে আমি এখানে বেড়াতে এসেছি!শহরের মানুষ দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে?

তিথি চোখ বড় বড় করে তাকালো,নিশিতা বরাবরই একটু অহং”কারী শহুরে জীবন তার পছন্দ তাই ক্লাস এইট থেকেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।বাড়িতে না পারতে আসতো যেনো,চার বছরে সর্বোচ্চ পাঁচ বার এসেছে!
নেহাল রাগে কিড়মিড় করছে বোনটা এতো স্বার্থপর কিভাবে হলো সবার সামনে পরিচয় দিতে অস্বীকার করছে?

অনু বলে উঠলো–,,এগুলা কেমন বিহেভিয়ার নিশিতা?তিথি আপুর সাথে এমন করছিস কেনো?মা জানতে পারলে ভীষণ রাগ করবেন।

নিশিতা শুকনো ঢোক গিললো,ওই বাড়িতে পার্মানেন্ট ভাবে থাকতে হলে তাকে যে সুরেখা বেগম কে হাতে রাখতেই হবে,ফাহমিদ কে বিয়ে করতে পারলেই ওই বড় বাড়ির রাজত্ব ওর হবে!

নিশিতা আমতা আমতা করতে শুরু করে।নেহাল জানে তার বোন এতোদিন কোথায় ছিলো, কি করছে শহরে গিয়ে শুধু মা কষ্ট পাবে ভেবে বলেনি,যে বাড়িতে তার মায়ের জায়গা হয়নি সে বাড়িতে গিয়ে নিশি কিভাবে আত্নসম্মান ভুলে থাকছে তাই বুঝে আসে না নেহালের!

তিথি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলো নিশিতার উপর অনু কে জিজ্ঞেস করলো —-,,তুমি ওকে কিভাবে চিনো অনু?

–,,আমার ফুফাতো বোন আপু!

তিথির যেনো মাথায় বা’জ পড়লো,নিশিতা নেহালের মা মানে নাজমা বেগম তার মেজো চাচ্চু রিপনের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো যা মানতে পারেনি সিকদার বাড়ির কর্তা সাত্তার সিকদার!তিনি মেয়ে কে ত্যাজ্য করেছিলেন,আর আদর্শে আত্নসম্মানে টইটুম্বুর মহিলা নাজমা বেগমের মেয়ে কিনা তার সেই বাবার বাড়িতেই গিয়ে উঠেছে!

নেহাল হাত উঁচালো নিশিতাকে মা’রার জন্য। তিথি থামিয়ে দিয়ে বললো–,,কি করছিস তুই।ছোট মানুষ চল এখান থেকে সকালে ডেকে বুঝিয়ে বলতে হবে!

দূর থেকে কথা শুনতে না পেলেও কিছু একটা হয়েছে তা বুঝলো ফাহমিদ।এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইফাত ছুটে আসলো!

হাঁপাতে হাঁপাতে বললো—,,তিথি আপা মেজো চাচী মেজো চাচী,,,!

তিথি ইসমা কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো মেজো চাচী তোদের বাড়িতে ছিলো না?

–,,অনেকক্ষণ হলো তো বাড়ি গেছে বললো তার নাকি মাথা ব্যাথা করছে!
তিথি চিন্তিত হয়ে বললো—,,বল ইফাত কি হয়েছে?

ছোট মেয়েটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। খবর পেয়ে এসেছেন খোদেজা, আঁখি। সৌরভের মা রানু বেগম।
হাসিখুশি পরিবেশ মুহুর্তেই আ’তংকে ছেয়ে গেছে।আত্মীয়দের মধ্যে, অনু,সজীব সিকদার,সুরেখা বেগম,সাথে সৌরভের বাবা আফসার জামান!

আঁখি বেগম মেয়েকে আবার জিজ্ঞেস করলেন—,,কি হয়েছে ভালো করে বলছিস না কেনো?

ইফাতের কাঁপা কন্ঠ–,,রক্ত!মেজো চাচী হাতের শি’রা কেটে ফেলেছে।রিপন চাচ্চু কোথায় যেনো দৌড়ে চলে গেছে!

তিথি এক দৌড় লাগালো বাড়ির দিকে,নেহাল হতবুদ্ধের মতো দাড়িয়ে রইলো,হঠাৎ ই ফাহমিদ এগিয়ে এসে বললো—,,নেহাল তুই এখানে?

নেহালের গলা কাঁপছে, ফাহমিদ আবার জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে কথা বলছিস না কেনো?

সুরেখা নেহাল নাম শুনেই এগিয়ে আসলো নিশিতার কাছে জেনেছে তার ভাইয়ের নাম নেহাল!

নেহাল কাঁপা কন্ঠে বললো–,,মা,,!
উদভ্রা”ন্তের মতো দৌড়ে গেলো বাড়ির দিকে। যতই অহং”কারী হোক,জন্মদাত্রী মা তো নিশিতা কেঁদে উঠে বললো–,,মা!

সে কান্না করছে অনবরত। অনু জিজ্ঞেস করলো–,,কোথায় ফুপ্পি!

ফাহমিদ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো সৌরভ তুই নিশিতাকে চিনিস?
—,,হ্যাঁ নিশিতা তো জয়নাল দাদুর মেজো ছেলের ঘরের সন্তান!
বৃদ্ধ সাত্তার সিকদার ছিলেন ভিতরের ঘরে,হট্টগোলের শব্দে বাহিরে আসলেন!
ফাহমিদ যা বুঝার বুঝে গেলো এখন সর্বপ্রথম কাজ নাজমা বেগম কে সুস্থ করা!সেও ছুট লাগালো বেপারী বাড়ির দিকে একে একে সবাই ছুটে আসলো।

জয়নাল বেপারীর চোখ ছলছল মেয়ের মতো রেখেছেন তিনি বাড়ির বউদের এক মেয়ের করুন দশা এই বৃদ্ধ বয়সে এসে দেখতে হবে ভাবতেও পারেনি!
জুলেখা বেগম কি করবেন বুঝতে পারলো না।তিথি মেয়েটা একা হাতে সামলাচ্ছে,অন্যদের মতো কেঁদে কেটে ভাসাচ্ছে না!
তিথি ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,,নেহাল গাড়ি বের কর!

নেহাল দ্রুত ছুটলো গাড়ি এনে গেইটের বাহিরে রাখলো,নাজমা বেগমকে কোলে তুলে গাড়ির ভিতর রাখলো নেহাল দরজার বাহিরে দাড়িয়ে এবার কেঁদে দিলো মা ছাড়া আর কে আছে তার!

তিথি বিরক্তি নিয়ে জোরে এক ধমক দিলো–,মেয়েদের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবি না নেহাল মেজাজ বিগরে গেলে ঠাটিয়ে এক চ’ড় লাগাবো এখন! রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না, নাকি চাস তোর মা টা এখানেই এভাবে মরু’ক!
হসপিটালে নিতে হবে তো নাকি!

ফাহমিদ কথা গুলো শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো এই মেয়ে এমন সময় এই কথা বলছে?কোন ধাঁচে তৈরি এটা!
তিথি আরো জোরে বললো–,,এই গা’ধা গাড়ি স্ট্রার্ট দে।
আঁখি বেগম এসে বললো আমি তোদের সাথে যাই!

তিথি কঠিন কন্ঠে বললো–,,তুমি বাড়িতে থাকো চাচী,সবাই আছে দাদী আর দাদু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাদের খেয়াল রেখো।আমি আর নেহাল সামলে নিবো!

ফাহমিদ এগিয়ে এসে বললো –,,আমিও সাথে যাচ্ছি আন্টি আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন!

তিথি এবার বললো–,,নেহাল তুই গাড়ি চালাতে না পারলে পিছনে আয় ভাই চাচীর মাথার কাছে বস আমি গাড়ি চালাচ্ছি!টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে।

ফাহমিদ এগিয়ে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্ট্রার্ট দিলো।

নেহাল ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে,তিথি এতোক্ষণ রাগারাগি করলেও এখন শান্ত কন্ঠে বললো–,,চাচী ঠিক হয়ে যাবে এতো চিন্তা করছিস কেনো?দেখবি ডাক্তার দেখালেই চট করে সেরে উঠবে!

নেহাল সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো।তিথি নেহালের হাত চেপে ধরে বললো–,,বিপদে ভেঙ্গে পড়লে চলে?তুই ছাড়া চাচীর কে আছে বল,তাকে তো তোকেই দেখে রাখতে হবে।শক্ত হতে শিখ!

ফাহমিদ দেখলো মুগ্ধ চোখে মেয়েটা এই রেগে ছিলো আবার এই যেনো একদম নরম হয়ে গেছে!

হসপিটালের সামনে এসে নামলো ওরা, ভেতর থেকে নার্স সহ এসে নাজমা বেগম কে নিয়ে গেলো।
রিসিপশনে গিয়ে ফর্ম ফিলআপ করলো তিথি। প্রাইভেট হসপিটাল,রাত তখন এগারোটা প্রায় লোকজন কম,নিস্তব্ধ পরিবেশে বেঞ্চিতে বসে পড়লো নেহাল মায়ের চিন্তায় দিশেহারা।

নার্স ডেকে বললো –,,ম্যাম এখনই ত্রিশহাজার টাকা জমা করতে হবে!পেসেন্টের কন্ডিশন খা”রাপ,ধারনা করা হচ্ছে হাত কা’টার সাথে সাথে উনি স্ট্র”ক ও করেছেন দ্রুত চেকআপ শুরু করতে হবে!
তিথি এগিয়ে গেলো সেদিকে,ফাহমিদ অবাকের উপর অবাক মেয়েটা একটা বারের জন্য ও বিচলিত হচ্ছে না!এতো টা কঠিনও কি মেয়ে মানুষ হয়?
ফাহমিদ এগিয়ে গিয়ে বললো–,,টাকা আমি দিচ্ছি!

তিথি স্বাভাবিক ভাবে চেয়ে থেকে বললো–,,ধন্যবাদ!তবে আপনার থেকে টাকা নিলে এটা আমাদের পরিবারের জন্য অপমান জনক হবে।
ফাহমিদ কে সরিয়ে তিথি এগিয়ে গিয়ে পার্স থেকে বিশ হাজার টাকা বের করে দিলো!
নার্সের উদ্দেশ্য বললো–,,বাকি দশহাজার আধ ঘন্টার মধ্যে জমা করছি!
মহিলাটি জিজ্ঞেস করলো–,,ম্যাম আপনি পেসেন্টের কি হোন?
–,,মেয়ে!

ফাহমিদ চকিত নয়নে তাকালো!তিথি একবার ফাহমিদের দিক তাকিয়ে বললো–,,আপনার যদি অসুবিধে না হয় আমার সাথে একটু আসবেন?

–,,চলুন!

তিথি আশেপাশে খুঁজে ভাগ্যক্রমে একটা বিকাশের দোকান খোলা পেলো,মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিলো সে।দোকানদার তিথির পরিচিত তিথি কে দেখেই জিজ্ঞেস করলো–,,তিথি মা এতো রাতে?কোনো সমস্যা?

—,,আংকেল দোকান কি বন্ধ করে দিচ্ছেন?আমার চাচী হসপিটালে ভর্তি টাকা উঠাতাম বিকাশ থেকে!

বৃদ্ধ লোকটি লকার চেক করে বললো–,,বিশ হাজারের বেশি নেই মা!

তিথি চোখ চকচক করে উঠলো –,,এতেই হবে আংকেল,অসংখ্য ধন্যবাদ আমি টাকা সেন্ড করে দিচ্ছি আপনার নাম্বারে!
———-
হসপিটালে ফিরে এসেই টাকা জমা করলো তড়িঘড়ি, পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো,সত্যি এবার তিথি ক্লান্ত, অনুভূতি কি আদো লুকানো যায়?মা মা’রা যাওয়ার পর থেকে নাজমা বেগমই তাকে বড় করেছেন মায়ের ভালোবাসা দিয়েছেন,সে মানুষ টা আজ মৃত্যুর সাথে লড়ছে কি করে নিজেকে সামলাচ্ছে শুধু সে নিজেই জানে!তার দাদু, নেহাল ভীষণ নাজুক প্রকৃতির বাবা ছোট চাচ্চু দেশের বাহিরে থাকে,তিথির উপর সব ভার যেনো এসে পড়েছে অদৃশ্য ভাবে।এতো কম বয়সেই মেয়েটা নিতে শিখে গেছে দায়িত্ব!

ফাহমিদ তিথির মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ, সৌরভের কথাটা মনে পড়লো তার।তিথির ব্যক্তিত্বের প্রেমে যে পড়বে না সে কোনো পুরুষই না।
ফাহমিদ যেনো দ্বিতীয় বারের মতো প্রেমে পড়লো এবার রূপের না ব্যক্তিত্বের!
চলবে?