Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 82



এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-১০

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ১০

সেদিন সারা দিন প্রত্যাশা নাওয়াসকে খুঁজেছিলো। কিন্তু পায়নি। নাওয়াসকে না পেয়ে অজানা কারোনেই প্রত্যাশা মন বিষণ্নতায় মূঢ় হয়ে গেছিলো। প্রত্যাশা কাজের জন্য শহর থেকে একটু দূরে আসে। নির্জন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়, প্রত্যাশার নজর কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে যায়। আর সেই গাছের নিচে নাওয়াসকে দেখতে পায়। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে,কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখে তুরন্ত রিঁকশা থামায়। নাওয়াসের দিকে ছুটে যায়। উত্তেজনায় প্রত্যাশা এটাও ভুলে যায়,রিঁকশা করেই সে দ্রুত পৌঁছাতে পারতো। প্রত্যাশাকে নিজেদের দিকে এমন ছুটে আসতে দেখে মিন্টুর অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। কম্পিত কণ্ঠে বলে,

“এই মেয়ে এখানে কী করছে?”

সকলে ভ্রু কুঁচকে মিন্টুর দিকে চাইল। মিন্টুর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই, বাকিরাও অবাক হয়। প্রত্যাশা নাওয়াসের সামনে এসে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,

“অ্যাই, নিজেকে কী ভাবো হ্যাঁ? বলা নেই কওয়া নেই, এমন দুম করে কর্পূরের মতো উধাও হয়ে গেছো। তোমার বাড়ির লোক যে তোমার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। সে খবর রাখো?
তোমার ছোটো ভাই সে তোমার শোকে দুনিয়াদারি ভুলে, সন্ন্যাস গ্রহণ করেছে। তার খবর কী রেখেছো?”

প্রত্যাশার এহেন ব্যবহারে নাওয়াস হতভম্ব বনে চেয়ে থাকে। পরপর নিজের চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

“আমি কী করলাম না করলাম, তার কৈফত কী তোমায় দিতে হবে?”

নাওয়াসের শক্ত কণ্ঠের পরিবর্তে প্রত্যাশা দ্বিগুন তেজ নিয়ে বলল,

“আলবাত দেবে।”

“কেন দেবো? কে হও তুমি আমার?”

“আমি…”

প্রত্যাশা থেমে যায়। মনে মনে ভাবে,সত্যিই তো কে হয় আমি? কোন অধিকারে আমি কৈফত চাইছি? নাওয়াস এক ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,

“বলো?”

প্রত্যাশা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

“আমি তোমার ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ডের আপু হয়। তোমার ভাই তোমার কারণে, আমার বোনের সাথে যোগাযোগ করছে না। স্কুলে আসছে না। এতে আমার বোন দুঃখ পাচ্ছে। আমি আমার বোনের দুঃখ দেখতে পারিনা। আর তাই আমি কৈফত চাইতেই পারি।”

নাওয়াস এখনও ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। প্রত্যাশা বলল,

“এভাবে তাকানোর কী আছে?”

“আমার তোমার কথা বিশ্বাস হয় না।”

“হ্যাঁ তো করো না বিশ্বাস।”

নাওয়াস সন্দিহান লোচনে প্রত্যাশাকে অবলোকন করল। বুকে হাত গুজে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“শুনলাম তুমি না-কি আমার খোঁজ করছিলে? তা সেটা কী নিজের বোনের দুঃখের হিসেব নিতে?”

প্রত্যাশা হকচকায়। ও-যে নাওয়াসের খোঁজ করছিলো। বিষয়টা নাওয়াস জানলো কী করে? নাওয়াস প্রত্যাশার সামনে তুড়ি বাজায়। প্রত্যাশার ধ্যান ছোটে।

“হ্যাঁ করেছি। কারণ আমার তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো তাই।”

নাওয়াস তাচ্ছিল্য হাসে।

“আমার মতো বখাটের সাথে, তোমার আবার কীসের কথা?”

নাওয়াসের নিঃসৃত বাক্যে প্রত্যাশার বক্ষস্থল ধ্বক করে ওঠে। প্রত্যাশা শান্ত কণ্ঠে বলল,

“আমার তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার ছিলো।”

নাওয়াসের ভ্রু সংকুচিত হয়। বলে,

“কীসের ধন্যবাদ?”

“মাস দুয়েক আগে তুমি শুধু আমায় প্রাণেই বাঁচাওনি। আমার সম্মানও বাঁচিয়ে ছিলে। তার জন্য ধন্যবাদ শব্দটাও ভিষণ নগণ্য।”

“তার বিনিময়ে, তুমিও নিহানকে আমায় হসপিটালে নিতে হেল্প করেছিলে। হিসেব বরাবর।”

প্রত্যাশা গাল ভরে শ্বাস টানে। বলে,

“আই আ’ম স্যরি! প্রথম দিন আমার তোমাকে থা’প্প’ড় মা’রা উচিত হয়নি।”

প্রত্যাশার নিঃসরণকৃত বাক্যে নাওয়াস সহ ওর বন্ধুরাও বিস্মিত হয়। নাওয়াস নিজেকে সামলে বলল,

“একজন বখাটেকে থা’প্প’ড় মে’রেছো। এতে স্যরির কী আছে?”

“বখাটে বলে কী মানুষ নও?”

“খারাপ মানুষ।”

“কেউ ইচ্ছে করে খারাপ হয় না নাওয়াস। তুমিও হওনি। ইন ফ্যাক্ট তুমি তো খারাপও নও।”

“কে বলেছে তোমায়? যে আমি খারাপ নয়?”

“প্রত্যাশা ইমাম মানুষ চিনতে জানে।”

“আমাকে চেনার ক্ষমতা তোমার নেই।”

“তাই?”

“হুম!”

প্রত্যাশা হাসলো। বলল,

“যদি তুমি খারাপ হতে,তোমাকে বিনা কারণে থা’প্প’ড় মা’রার জন্য। তুমি অবশ্যই আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে। যেমনটা হিট্টু নিতে চেয়েছিলো। তাও কারণ থাকার সত্ত্বে।”

নাওয়াস কোনো প্রত্যুত্তর করে না। প্রত্যাশা নাওয়াসের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,

“আমরা বন্ধু হতে পারি?”

নাওয়াস হতবুদ্ধির ন্যায় চাইল। নাওয়াসের বন্ধুদের অবস্থা আরো শোচনীয়। বিশেষ করে মিন্টুর সে যেন আজ দফায় দফায় ঝটকা খাচ্ছে। নাওয়াস নিজেকে সামলে বিদ্রুপের সহিত বলল,

“আমি এই সমাজের নোংরা। আমার সাথে কথা বললেও, তুমি নোংরা হয়ে যাবে। আর তুমি কি-না নোংরা ঘাটতে চাইছো?”

“আমি সত্যিই তোমার বন্ধু হতে চাই।”

“আমি চাই না। আমার কোনো বন্ধুর প্রয়োজন নেই। আমি একাই ঠিক আছি।”

নাওয়াসের নিরেট চোয়াল। কাঠ কাঠ উত্তরে,প্রত্যাশা আহত দৃষ্টিতে নাওয়াসের দিকে চাইলো। নাওয়াস সহসাই মুখ ফিরিয়ে নিলো। প্রত্যাশা নতমস্তকে সেখান থেকে চলে যেতে নিয়ে ফিরে। বলল,

“মানুষ কখনো সারা জীবন একা কাটাতে পারে না।
আমাদের সকলের জীবন-যাপনের জন্য, কাউকে না কাউকে প্রয়োজন হয়। সেই জন্যই তো পরিবার, বন্ধু-বান্ধব আর জীবন সঙ্গি হয়…”
_________

সেদিন হসপিটালে নাওয়াসের বলা কথা গুলো কামাল মাহমুদের মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেন। এই একমাস উনি সেই কথা গুলো বারংবার স্মরণ করছেন। এবং শেষে ওনার মনে হয়েছে। সত্যিই উনিই দায়ি। ওনার কারণেই ওনার প্রথম স্ত্রী মা’রা গেছেন। এবং ওনার কারণেই নাওয়াস বখে গেছে। এই সব নিয়ে চিন্তা করতে করতে কামাল মাহমুদ স্টোক করেন। বিগত একমাস উনি ঘর থেকে বের হননি। অফিসে কিছু ঝামেলা হয়েছিলেন। বিধায় অফিসে যান। নাগাদ দুপুর অফিস থেকে বিধ্বস্ত অবস্থায় ফেরেন। সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সময় অবচেতন হয়ে নিচে পড়ে যান। রিনা রান্না ঘরে কাজ করছিলো। কোনো কিছু পড়ার আওয়াজে বাইরে আসেন। বাইরে আসতেই স্বামীকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন, পড়ে যাওয়ার ফলে মাথার পিছন দিকে ফেঁটে র’ক্ত পড়ছে। এমন দৃশ্যে রিনা আতঁকে ওঠে। দিক বেদিক শূন্য হয়ে পড়েন। বাড়িতে উনি একাই আছেন। নিহান স্কুলে আছে। উনি ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসেন। চিৎকার করে আশেপাশের লোক ডাকেন সাহায্যের জন্য। তবে কেউ এগিয়ে আসে না। একটা সিএনজি আসতে দেখে উনি সেই সিএনজির সামনে চলে আসেন। হঠাৎ সামনে আসায় সিএনজি চালক জোরে ব্রেক কষে। ফলে ভিতরে থাকা প্যাসেঞ্জার সামনে ঝুঁকে আসে। সিএনজি চালক রিনাকে অকাট্য ভাষায় গালি দেন। রিনা সেসব কানে না নিয়ে আকুতি করে সিএনজি চালককে বলে,

“আমাকে একটু সাহায্য করেন না। দয়া করুন।”

সিএনজির ভিতরে প্রত্যাশা ছিলো। একটা বিয়ের লেহেঙ্গার অর্ডার এসছে। কনের মাপ আর ডিজাইন সম্পর্কে আলোচনা করতে এদিকে এসেছিলো। সাধারণত প্রত্যাশা এই সব কাজ গুলো নিজেই করে। গন্তব্যে যাওয়ার সময় এমন ঘটনা ঘটে। রিনা কে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে তড়িৎ প্রত্যাশা বাইরে বেরিয়ে আসে।

“আন্টি আপনি এখানে? আপনি এমন করছেন কেন?কী হয়েছে?”

প্রত্যাশাকে দেখে যেন মরুভূমিতে পানির সন্ধান পেলেন রিনা। প্রত্যাশাকে আকঁড়ে ধরে ক্রন্দনরত স্বরে বললেন,

“নাওয়াসের বাবা সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে। মাথা ফেঁটে র’ক্ত পড়ছে।”

সহসাই প্রত্যাশা চমকে ওঠে। সিএনজি চালককে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। তিনজন ধরাধরি করে ওনাকে সিএনজি পর্যন্ত আনেন। এবং হসপিটালে নিয়ে যায়। কামাল মাহমুদকে ইমারজেন্সি ক্যাবিনে নেওয়া হয়। ডাক্তার জানান কামাল মাহমুদ ব্রেন স্টোক করেছেন। আরেকটু দেরী করে হসপিটালে আনলে ওনাকে বাঁচানো যেতো না। ডাক্তারের কথা শুনে রিনা ভেঙে পরেন। রিনার নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। তিনি বুঝে পাননা কী করবেন, না করবেন। কামাল মাহমুদের কোনো আত্মীয়ও নেই। রিনা এক ভাই আছে। যে দেশে থাকে না। আর নিহান যথেষ্ট ছোটো। ওর পক্ষে এই সব সামলানো সম্ভব না। এক মাত্র নাওয়াসই আছে। কিন্তু তিনি তার কোনো খোঁজ জানেন না। ছেলেটার ফোনও বন্ধ। প্রত্যাশা হয়তো ওনার মনের অবস্থা বোঝেন। আশ্বস্ত করে বলল,

“আন্টি চিন্তা করবেন না। আঙ্কেল সুস্থ হয়ে যাবেন।”

রিনা নিহানের স্কুলের স্যার কে ফোন করে কামাল মাহমুদের বিষয়ে জানায়। সাথে এটাও অনুরোধ করে যাতে নিহান কে স্কুল থেকে ছুটি দিয়ে দেন। নিহানের স্যার নিহানকে ছুটি দিয়ে একটি সিএনজিতে তুলে দেন। নিহান হসপিটালে পৌঁছে, মাকে শান্ত করতে চাই। ভাই না থাকায় এমনিতেই নিহানের মন-মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত ছিলো। বাবার এই খবর পেয়ে তা বাড়লো বই-কী কমলো না। প্রত্যাশা হসপিটালের ফর্মালিটি গুলো সম্পূর্ণ করে। প্রত্যাশার একা একা ছোটাছুটি করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে। নিহান যতটা সম্ভব প্রত্যাশাকে সাহায্য করে। প্রত্যাশার মনে হলো এই মুহূর্তে রিনা এবং নিহানের নাওয়াসকে প্রয়োজন। আর নাওয়াসেরও বিষয়টা জানা দরকার। প্রত্যাশা উঠে দাঁড়ালো। হ্যান্ড ব্যাগ কাঁধে তুলে নিহানের উদ্দেশ্যে বলল,

“আন্টির খেয়াল রেখো। আমার একটু কাজ আছে, আমি সেটা সেরে আসি। কোনো প্রয়োজন হলে আমায় ফোন করবে।”

নিহান ছোট্ট করে বলল,

“আচ্ছা!”
.
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এসছে। প্রত্যাশা নাওয়াসকে খোঁজার জন্য সেদিন কার সেই জায়গায় যায়। এবং পেয়েও যায়। প্রত্যাশা নাওয়াসদের সামনে রিঁকশা থামায়। এই সময় প্রত্যাশাকে এখানে দেখে নাওয়াসের ললাটে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। বরাবরের মতো মিন্টু আতঙ্কিত,ভীতু হয়।

“তুমি আবার এখানে কেন এসেছো?”

“তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলার ছিলো।”

“আমি তোমার কোনো কথা শুনতে আগ্রহী নয়।”

“নাওয়াস তোমার বাবা স্টোক করেছেন।”

প্রত্যাশার নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াস চমকিত প্রত্যাশার পানে চায়।

কাঁপা কণ্ঠে শুধায়,

“কী বললে? বা-বাবা স্টোক করছে?”

নাওয়াসের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। প্রত্যাশা বলে,

“হ্যাঁ নাওয়াস। উনি স্টোক করেছেন। নিহান ছোটো ও এতো কিছু সামলাতে পারবে না। আন্টি আর নিহানের এই সময় তোমাকে প্রয়োজন।”

“বাবা এখন কোথায় আছেন।”

নাওয়াসের কম্পিত কণ্ঠ স্বর। প্রত্যাশা উত্তরে বলল,

“হসপিটালে। তুমি যাবে?”

নাওয়াস তুরন্ত হ্যাঁ বোধক মাথা নাঁড়ায়। নাওয়াস শকের ভিতরে আছে। এই ভাবে বাইক চালে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেকারণে প্রত্যাশা নাওয়াসকে রিঁকশা করে নিয়ে যায়। নাওয়াসের বাইক নিয়ে, পিয়াশ, তন্ময় আর মিন্টু প্রত্যাশাদের পিছু যায়। নিহান আর রিনা কামাল মাহমুদের ক্যাবিনের সামনে বসে আছেন। নাওয়াসকে প্রথমে নিহানই দেখতে পায়। নাওয়াসকে দেখা মাত্রই নিহান ছুটে আসে। জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে,

“ভাইয়া তুমি এসেছো? বাবা না-কি স্টোক করছে। বাবার অবস্থা না-কি সংঙ্কা জনক। বাবা ফিরবে তো?”

নাওয়াস নিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“বাবা সুস্থ হয়ে যাবেন। তুমি কান্না করো না। তুমি না স্ট্রোং বয়?”

নাওয়াসের একটুখানি ভরসায় নিহান শান্ত হয়ে যায়। এই ভরসার হাতটার-ই তো দরকার ছিলো। এই দৃশ্যে রিনা শাড়ির আঁচলে মুখগোঁজ করে চাপা স্বরে কান্না করেন। ডাক্তারকে বের হতে দেখে নাওয়াস এগিয়ে যায়। কথা বলে। ডাক্তার জানায় আল্লাহ রহমতে কামাল মাহমুদ এখন বিপদ মুক্ত আছেন। ভাগ্য ভালো ছিলো,সময় মতো হসপিটালে আনা হয়েছিলো। বিধায় যা কিছু হতে পারতো। ডাক্তার নাওয়াসকে আরো কিছু কথা বলে। ওনার ব্যাপারে সব বুঝিয়ে বলে। সব শেষে মেডিসিন আনতে বলে। পিয়াশ আর তন্ময় এগিয়ে এসে বলে,

“ভাই আমরা ঔষুধ এনে দিচ্ছি। আপনি এখানেই থাকুন।”

নাওয়াস প্রেসক্রিপশন ওদের হাতে দেয়। মিন্টুকে বলে কিছু শুকনো খাবার আনতে। মিন্টুও তাই করে। নাওয়াস একপলক রিনা কে দেখল। এগিয়ে এসে দ্বিধা-দ্বন্দিত কণ্ঠে বলল,

“আপনি চিন্তা করবেন না। বাবার কিছু হবে না।”

নাওয়াসের আশ্বস্তবানীতে বিস্মিত হন রিনা। পরপরই খুশিও হন। এই বিপদের সময় নাওয়াসের এই ভরসা বাক্য ওনার মনে সাহস যোগাতে সক্ষম হন। এতক্ষণ মনের মধ্যে থাকা সকল ভয়ডর কেটে যায়।

চলবে…

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৯

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৯

নাওয়াসের জ্ঞান ফিরেছে বেশ কিছুক্ষণ সময় হয়েছে। রিনা নাওয়াসের কাছে বসে আছেন। মাথায় আদুরে ভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পাশেই নিহান দাঁড়িয়ে আছে। সেই সময় কক্ষে প্রবেশ করেন, কামাল মাহমুদ। কামাল মাহমুদ কামরাই প্রবেশ করেই রোষানল কণ্ঠে বললেন,

“আর কী ভাবে বললে তুমি শুধরাবে? তোমার এই উগ্র জীবন ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে? কবে তুমি আর পাঁচজন মানুষের মতো বাঁচবে?”

রিনা ত্রস্ত উঠে দাঁড়ান। স্বামীর নিকট এগিয়ে এসে ত্রাসস্বরে বললেন,

“আপনি দয়া করে শান্ত হন। এসব কথা এখন বলবেন না। ছেলেটা অসুস্থ। দেখুন কত চোট পেয়েছে।”

কামাল মাহমুদ রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বললেন,

“ওর চোটের কথা ভাবছো? ওর জন্য তোমার নিজের ছেলে ম’রতে জাচ্ছিল…”

রিনা চমকে ওঠেন। আতঙ্কিত সুরে বললেন,

“ওরা দুজনেই আমার ছেলে। আপনি দয়া করে এভাবে বলবেন না।”

“নাহ্! ও তোমার ছেলে না। ও যদি তোমার ছেলে হতো, তাহলে এমন বখে যেতো না। শুধুমাত্র ওর কারণে নিহানের আজ প্রাণ সংশয় ঘটতে যাচ্ছিল।”

নাওয়াস অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিতে শোয়া থেকে উঠে বসে। রিনা ওকে ধরতে নিলে হাতের ইশারায় থামতে বলে। ধীর ভাবে নাওয়াস কামাল মাহমুদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। চোখ জোড়া শান্ত।

“তুমি ঠিক বলেছো। আমি ওনারা সন্তান নয়। কিন্তু আমি তোমার সন্তান। আমার শরীরে তোমার র’ক্ত বয়ছে। এমন একজনের র’ক্ত যার কাছে সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই। যার ভূবন ঘিরে শুধু টাকার ছড়াছড়ি।
মা বলতো,আমি না-কি তোমার মতো হয়েছি। অ্যান্ড ইট’স ট্রু! আমি সত্যিই তোমার মতো হয়েছি।
জাস্ট দুটো পার্থক্য আছে। আমি তোমার মতো টাকার কাঙাল নয়।”

কামাল মাহমুদের ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজের সৃষ্টি হয়। সহসাই শুধান,

“কী বলতে চাও তুমি? আমি লো’ভী?”

নাওয়াস দূর্বল চিত্তে হাসল। তা দেখে কামাল মাহমুদের কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয়।

“হাসচ্ছো কেন? আমি হাসার মতো কী বলেছি?”

“তুমি হয়তো লো’ভী নও। কিন্তু তুমি টাকাকে যতটা মূল্যায়ন করো। ততোটা মূল্যায়ন যদি আমার মাকেও দিতে,তবে হয়তো আমার মাকে এতো অল্প বয়সে ম’রতে হতো না।”

কামাল মাহমুদ রেগে যান।

“তুমি বোঝাতে চাইছো নাসরিন আমার জন্য মা’রা গেছে? আমি ওকে মূল্যায়ন করিনি?”

নাওয়াসের কাঠ উত্তর,

“হ্যাঁ! তোমার কারণেই আমার মা মা’রা গেছে। তোমার নির্লিপ্ততা আমার মা’য়ের মৃ’ত্যু’র কারণ।”

কামাল মাহমুদ আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। থা’প্প’ড় মে’রে বসেন নাওয়াসের বা গালে। অকস্মাৎ ঘটনায় রিনা চমকে ওঠেন। নিহানও বিস্মিত হয়। তবে নাওয়াসের মাঝে ভাবাবেগ হয় না। সাবলীল ভাবে আবারও বলে,

“সত্যি কথা গায়ে লাগলো? তুমি কী অস্বীকার করতে পারবে? পারবে না। কারণ তুমিও জানো আমি ভুল নয়।”

“অবশ্যই পারবো। ততুমি ভুল বলছো। মিথ্যে অভিযোগ করছো তুমি। আম-আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম নাসরিন কে বাঁচানোর।
ওকে সুস্থ করার জন্য আমি সব কিছু করেছি। বিদেশ থেকে ডাক্তারও নিয়ে এসেছি…”

কামাল মাহমুদের কম্পিত স্বর। নাওয়াস তাচ্ছিল্য হাসে।

“সেই চেষ্টাটা যদি শুরুতেই করতে, তাহলে হয়তো মা আজ জীবিত থাকতো।”

“তুমি আমাকে মিথ্যে দোষারোপ করছো।”

“মিথ্যে? তুমি টাকার পিছে ছুটতে গিয়ে, মাকে অবহেলা করেছো এটা মিথ্যে?”

“আমি তোমার মাকে কখনও অবহেলা করিনি। আমি সব সময় চেয়েছি ওকে ভালো রাখতে। সুখে রাখতে। তোমাদের জন্যই আমার এতো পরিশ্রম। যাতে তোমাদের একটা লাক্সুরিয়াস লাইফ দিতে পারি।”

“টাকা দিলেই সব দায়িত্ব পূরণ হয়ে যায় না বাবা।”

কামাল মাহমুদ কম্পিত কণ্ঠে বললেন,

“নাওয়াস!”

“মা তোমার থেকে একটু সময় চাইতো বাবা। মায়ের সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো তোমাকে। যতটা না মা রোগে ভুগেছে। তার থেকেও বেশি একাকিত্বে ভুগেছে। মা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তোমার একটুখানি সঙ্গ চেয়েছিলো। আফসোস মা সেই সঙ্গ পায়নি।”

নাওয়াস থামে। টলমলে চোখে কামাল মাহমুদের দিকে চেয়ে পুনরায় বলল,

“আমি জানি তুমি মাকে অসম্ভব ভালোবাসতে। এখনও বাসো। কিন্তু কী জানো তো বাবা। তুমি মাকে বিলাসিতা দিতে গিয়ে, ভালোবাসা দিতে ভুলে গেছিলে। শখ, আহ্লাদ পূরণ করতে গিয়ে, মায়ের অতিব শখের তুমি ব্যস্তার বেড়া জালে আটকে গেছিলে। আর এই জিনিসটায় মা মেনে নিতে পারেনি।
তোমার প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে।
যাই হোক,আমার জন্য যখন নিহানের জীবন সংশয় ঘটেছিলো। তখন আমার তোমাদের জীবনে না থাকায় ভালো।”

নাওয়াসের নিঃসৃত বাক্যে সকলে চমকে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে রিনা বললেন,

“থাকবে না মানে?”

নাওয়াস একপলক রিনা দিকে চাইলো। তারপর বলল,

“নিহানের খেয়াল রাখবেন। আর আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। পারলে নিহানকে আমার মতো হতে দেবেন না।”

নাওয়াস খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেরিয়ে যায়। দরজার অব্দি যায়। দরজার হাতলে হাত রেখে পিছে না ঘুরেই বলল,

“পারলে ওনাদের সময় দিবেন। ওনার পরিনতি যেন আমার মায়ের মতো না হয়। আর না আরেক জন নাওয়াস আফফান জন্ম নিক।”

নাওয়াস আর দাঁড়ায় না। পিছেও ফেরে না। নিহান এখনও স্তব্ধ হয়ে আছে। ঘটনা মস্তিষ্কের নিউরনে পৌঁছানো মাত্রই অস্থির হয়ে বলল,

“মা ভাইয়া কোথায় গেলো? ভাইয়া কী আর আসবে না?”

রিনা নিহানকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি জানেন না এখন তার কী করা উচিত। কী ভাবে সব ঠিক করবেন। এতবছর কম চেষ্টা তো করেননি। রিনা একপলক কামাল মাহমুদের আনন পানে চাইলেন। মুখটা কেমন পাংশুটে হয়ে গেছে। চোখ মুখ অস্বাভাবিক লাগছে। আর কেউ না জানুক উনি তো জানেন, যে কামাল মাহমুদ নিজের মৃ’তা স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসেন। যার দিনের শুরু এবং সমাপ্তি হয়, নিজের মৃ’তা স্ত্রীর মুখ দেখে। উনি তো দেখেছেন কতটা কষ্ট বুকে চেপে রেখেছেন এই মানুষটা। ওনাকে বিয়েও করেছিলেন নাওয়াসের কারণে। নাওয়াসকে দেখাশোনার করার জন্য। বিয়ের কয়েক বছরের ওনাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি। রিনাকে নিজের মনে জায়গা দিতে কামাল মাহমুদের কয়েক বছর লেগেছিলো। তবুও পুরো-পুরি ভাবে দিতে পারেননি। তবে ওনাকে কখনও অবহেলা করেনি। মানুষটা প্রথম যেদিন কাছে এসেছিলো। সেদিনই বলেছিলো।

“রিনা তোমাকে আমি সন্মান করি। তোমার ধৈর্য, নিষ্ঠার দ্বারা তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো। আমি হয়তো নাসরিনকে যেমন ভাবে ভালোবাসতাম। তোমায় সেভাবে পারবো না। তবে তুমি আমায় যেভাবে ভালোবাসো,তোমাকে আমিও সেভাবে ভালোবাসবো। নাসরিন আমার প্রথম ভালোবাসা। আমার অস্বস্তি। ওকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না।
কিন্তু তোমার জন্য আমি নতুন ভাবে আবারও বাঁচতে পেরেছি। কথা দিচ্ছি কখনও তোমার কোনো অসন্মান হতে দেবো।”

সেদিন কামাল মাহমুদের কথায় রিনার একটুও রাগ বা হিংসে হয়নি। বরং বিমুগ্ধ হয়েছিলেন। কোনো মানুষ ঠিক কতটা ভালোবাসলে নিজের মৃ’ত স্ত্রীর ভালোবাসার ভাগ দ্বিতীয় কোনো নারীকে দেননা। উনি কামাল মাহমুদের থেকে ভালোবাসা পেয়েছেন। ওনাকেও কামাল মাহমুদ প্রচন্ড ভালোবাসেন। আলাদা ভাবে। যেমনটা উনি কথা দিয়েছিলেন। কখনও ওনাদের মাঝে কামাল মাহমুদের প্রথম স্ত্রী আসেনি। আর না ওনার প্রথম স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার মাঝে রিনা এসছেন।
___________

প্রায় এক মাস কেটে গেছে নাওয়াস বাড়ি ফেরে না। এই এক মাসে বদলে গেছে অনেক কিছু। নিহানকে আর কারণে অকারণে হাসতে দেখা যায় না। ঠিক মতো পড়াশোনা করে না। কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। নিজের প্রিয় বড়ো ভাইয়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটা ছেলেটা মানতে পারেনি। এই এক মাস স্কুলেও যায়নি। ছেলের এমন দশায় রিনার বুকটা হুঁহু করে কেঁদে ওঠেন। সেদিন নাওয়াসের বলা কথা গুলো কামাল মাহমুদকে চুপচাপ করে দিয়েছেন। একেই নাওয়াসের চিন্তা। তার ওপর স্বামী ছেলের এরূপ ঘরকুনো দশা। রিনা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রিনা নিহানকে আজ জোর করে স্কুলে নিয়ে যান। ছেলেটা ঘরের ভিতরে থেকে থেকে কেমন হয়ে গেছে। স্কুলে গেলে বন্ধুদের সাথে মিশলে। হয়তো একটু স্বাভাবিক হবে।

এই এক মাসে প্রত্যাশার মাঝেও অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যাশার অবচেতন মনে বারংবার নাওয়াসের চিন্তা ঘুর পাক খায়। এই এক মাসের মধ্যে নাওয়াসের সাথে প্রত্যাশার দেখা হয়নি। পরের দিন প্রত্যাশা হসপিটালে গেছিলো। সেখানে কাউকে পায়নি। এমন কী পিউয়ের স্কুলে নিহানের সাক্ষাৎও মেলেনি। আজ প্রত্যাশা যখন পিউকে স্কুলকে রাখতে এসেছিলো। তখন রিনা কে স্কুলের সামনে দেখে প্রথমে অবাক হয়। পরপর উৎফুল্ল চিত্তে প্রত্যাশা ওনার নিকট যায়। হাসি মুখে বলল,

“কেমন আছেন আন্টি?”

অকস্মাৎ কণ্ঠে কিঞ্চিৎ ভরকান রিনা। পিছে ফিরে প্রত্যাশাকে দেখে মুখে হাসি টেনে বললেন,

“এই তো আছি। তা তুমি কেমন আছো?”

“জ্বি আমিও ভালো আছি। আন্টি নাওয়াস কেমন আছে?”

প্রত্যাশা জড়তাহীন প্রশ্ন। চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। রিনা একপলক প্রত্যাশাকে অবলোকন করেন। প্রত্যাশার ওনার চোখ মুখ ঠিক লাগে না। তাই ফের শুধাল,

“আন্টি সব ঠিক আছে?”

রিনা প্রত্যাশার বিচলিত লোচন পানে চেয়ে বললেন,

“নাওয়াস আজ এক মাস হলো বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।”

সহসাই প্রত্যাশা চমকায়,থমকায়, বিস্ময়ভূত হয়ে বলল,

“কিহ্?”

“হুম!”
.
.
.

একটি পার্কে প্রত্যাশা আর রিনা বসে আছেন। প্রত্যাশা বিস্তারিত সব জানতে চাই। সেকারণেই রিনাকে সাথে নিয়ের স্কুলের কাছের পার্কে আসে।

“এবার বলুন আন্টি এমন কী হয়েছে, যে নাওয়াস বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে?”

“সেদিন তুমি হসপিটাল থেকে চলে আসার পর,নাওয়াসের বাবা আসেন। আর নাওয়াসের উগ্র জীবন-যাপনকে,ওই ঘটনার কেন্দ্র ভাবেন। নাওয়াসকে বকাবকি করেন। নাওয়াস সেদিন নিজের বাবার প্রতি জমে থাকা অভিযোগ করে। নিজের মাকে হারানোর জন্য দায়ি মনে করে।”

প্রত্যাশার ভ্রু কুঁচকে আসে। সন্দিহান হয়ে শুধায়,

“মাকে হারানোর দায় মানে?”

রিনা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“তুমি নিশ্চয়ই জানো না আমি নাওয়াসের নিজের মা নয়। আমি ওর সৎ মা।”

প্রত্যাশা কিংকর্তব্যবিমূঢ় বনে যায়। রিনা বললেন,

“নাওয়াস যখন বারো বছরের ছিলো। তখন ওর মায়ের ক্যান্সার ধরা পরে। আর সেটাও লাস্ট স্টেজ। তবুও নাওয়াসের বাবা অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু বাঁচানো যায় না। এটা নিয়ে নাওয়াসের অভিযোগ।”

“ওনি তো অসুস্থ হয়ে মা’রা গেছেন? তাহলে নাওয়াস আঙ্কেল কেন দোষী করছে?”

“নাওয়াসের বাবা আর ওর মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো। নাওয়াসের বাবার থেকে মায়ের পারিবারিক অবস্থা অনেক ভালো ছিলো। ওনাদের বিয়ের পর নাওয়াসের বাবা ভয় পেতেন। অভাব আসলে যদি, নাওয়াসের মা দূরে চলে যায়।
সেকারণেই নাওয়াসের বাবা দিন রাত এক করে কাজ করতেন। টাকা রোজকার করতে। যাতে নাওয়াসের মা কে সুখে রাখতে পারেন।”

রিনা একটু থামল। শ্বাস নিয়ে ফের বলল,

“আর এই সব কিছু করতে গিয়ে নাওয়াসের বাবা ওনাকে সময় দিতে ভুলে গেলেন। নাওয়াসের মায়ের মনে হতে লাগল, উনি আর ওনাকে ভালোবাসেন না। বাবার থেকে সময় না পাওয়ার জন্য মাকে কষ্ট পেতে দেখে, ছোটো নাওয়াসের মনেও বাবার প্রতি অভিমান হয়। নিজের মায়ের মৃ’ত্যু’র পর সেই অভিমান বৃদ্ধি পায়।
নাওয়াস নিজেকে গুটিয়ে নেয়। একা হয়ে যায়। আর তারপর এমন বাউণ্ডুলে হয়ে ওঠে। ওকে সবাই বখাটে বলে, কারণ ও বেপরোয়া, উগ্র। কিন্তু আজ পর্যন্ত নাওয়াস কখনও কোনো অন্যায় করেনি। বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। যার নাম লোকে বখাটে দিয়েছে।”

প্রত্যাশা মনোযোগের সহিত সব কিছু শোনে। নাওয়াসের সাথে সাক্ষাতের পর থেকে সব কিছু মনে করে। প্রত্যাশা কখনও নাওয়াসকে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখেনি। এমনকি ও থা’প্প’ড় মা’রার পরও প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো তাগিদ দেখেনি। যেমনটা হিট্টুর মধ্যে দেখে ছিলো। প্রত্যাশা অনুভব করে নাওয়াসের মাঝে অনেক কষ্ট চাপা আছে। নাওয়াস ভিষণ একা। প্রত্যাশা উঠে দাঁড়ায়। রিনার উদ্দেশ্যে বলে,

“আন্টি আমি আসি। আপনি সাবধানে বাড়ি যাবেন।”

প্রত্যাশা আর দাঁড়ায় না। ত্রস্ত চলে যায়। প্রত্যাশার গমন পথে চেয়ে একটা ভারি শ্বাস ছাড়েন রিনা।

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে…

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৮

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৮

প্রত্যাশা চোখ খোলার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করল। অ’জ্ঞা’ন হওয়ার আগে মুহূর্ত মানসপটে ভেসে উঠল। ঘাড়ে ব্যথা করছে। প্রত্যাশা ধীরে ধীরে ধীরে উঠার চেষ্টা করল। সেই সময় একজন নার্স এগিয়ে এসে বলল,

“আপনি উঠবেন না। আপনার শরীর দূর্বল।”

প্রত্যাশা আর ওঠার চেষ্টা করে না। নার্স ফের বলল,

“আমি আপনার পরিবারের লোকদের খবরটা জানিয়ে আসি।”

নার্সে বের হয়ে যেতে নিলে প্রত্যাশা পিছু ডেকে বলল,

“শুনুন!”

“জ্বি!”

“আমাকে যে ছেলেটা হসপিটালে নিয়ে এসেছিলো। তাকে একটু ডেকে দিবেন?”

“উনি তো আপনাকে হসপিটালে এডমিট করেই চলে গেছেন।”

প্রত্যাশা ছোট্ট করে বলল,

“ওহ্!”

“জ্বি!”

নার্স চলে যায়। প্রত্যাশা মনে মনে ঠিক করে। হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে নাওয়াসকে আগে ধন্যবাদ জানাবে। আজ যদি সময় মতো নাওয়াস না আসত। তাহলে এতক্ষণে হয়তো পুলিশ ওর মৃ’ত্যু দেহ পেত। আর কালকের কাগজের শিরোনাম হয়ে যেত। প্রত্যাশা তাচ্ছিল্য হাসে। মানুষ সব কিছুতে নিজের লাভ খোঁজে। প্রত্যাশা যখন নিজের ভাবনায় মত্ত ছিলো। তখন ওর মা ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। কাঁন্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,

“তুই ঠিক আছিস মা? তোর কিছু হয়নি তো?”

প্রত্যাশা মিনা বেগম কে শান্ত করতে বলল,

“আমি ঠিক আছি। এমন করে কান্নাকাটি করো না। তোমার শরীর খারাপ করবে।”

“তুই কী করে বুঝবি মায়ের কষ্ট?”

প্রত্যাশা হালকা হাসে। তখনই কানে আসে পূর্ব ইমামের গমগমে কণ্ঠস্বর।

“আমি আগেই সাবধান করেছিলাম তোমায়। সংযত হয়ে চলতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কথা শোনোনি। উল্টে প্রতিবাদ করতে গেছিলে। দেখলে তো তোমার প্রতিবাদের পরিনাম?”

প্রত্যাশা হতবাক হয় এই সময়ও তার বাবা এধরণের কথা বলছে? পূর্ব ইমাম ফের বললেন,

“আজ যদি ওরা তোমার সাথে কিছু করে দিতো। তখন কী হতো একবারও ভেবে দেখেছো? মুখ লুকানোর জায়গা পাওয়া যেত না।”

প্রত্যাশা উঠে বসল। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,

“সিরিয়াসলি বাবা তুমি এখন এই সব কথা বলছো? ওরা তোমার মেয়ের সন্মানহানী করার চেষ্টা করেছিলো। তোমার তো ওদের পুলিশে দেওয়া উচিত।”

পূর্ব ইমাম ত্রাস স্বরে বললেন,

“খবরদার প্রত্যাশা এই ভুল করবে না। থানা পুলিশের ভিতরে যাবে না। একবার থানা পুলিশ হলে বিষয়টা সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। এতে আমাদের সন্মানহানী হবে।
সবাই তোমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে। তোমার নামে কুৎসা রটাবে।”

প্রত্যাশা হতবিহ্বল হয়ে যায়। সাথে রাগও হয়। কিছু বলতে নিবে মিনা বললেন,

“তোর বাবা ঠিক বলেছে। তুই আর এই সবের ভিতরে জড়াবি না। যা হয়েছে ভুলে যা। এই ব্যাপার নিয়ে আর বেশি জল ঘোলা করার দরকার নেই।”

“মা তুমি…”

“হ্যাঁ আমি বলছি।”

প্রত্যাশা বিস্মিত বিহ্বল, বিমূঢ়। তার পরিবারের এরূপ চিন্তা ধারা প্রত্যাশা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। প্রত্যাশা বিক্ষিপ্ত মনে বসে রইল।
.
.
.
সেই ঘটনার পনেরো দিন পার হয়ে গেছে। সেদিনের ঘটনার পর পূর্ব ইমাম প্রত্যাশাকে ঘর বন্দি করে রাখেন। প্রত্যাশার মা-ও তাতে সায় দেয়। এবং এই পনেরো দিন প্রত্যাশাকে কড়া নজরে রাখেন। পনেরো দিন অনেক বুঝিয়েও বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। যখন প্রত্যাশা সবার সামনে কথা দিলো, যে সে আর কোনো রকম ঝামেলায় জড়াবে না। তারপরে যেয়ে প্রত্যাশা বাড়ির বাইরে আশার অনুমতি পেল।

“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কথা দিচ্ছি। আমি আর কোনো দিন কোনো ঝামেলায় জড়াবো না। কোনো ধরনের প্রতিবাদ করবো না। নিজের হাত আর মুখ সামলে রাখবো…”

পূর্ব ইমামের গম্ভীর স্বর,

“বেশ,আমি তোমাকে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। আশা করি বরাবরের ন্যায় তুমি নিজের কথা রাখবে।”

প্রত্যাশা গাল ভরে শ্বাস নিয়ে বলল,

“রাখবো!”
_________

পনেরো দিন পর বাইরে বের হতে পেরে প্রত্যাশা বুক ভরে শ্বাস নিলো। প্রত্যাশার নিজেকে এই মুহূর্তে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে। প্রত্যাশা মুগ্ধ হয়ে চারপাশ দেখছে। মনে মনে বলল,

“এমন খোলা আকাশের নিচে চলার স্বাধীনতায় তো চেয়ে ছিলাম।”

হঠাৎ প্রত্যাশার নাওয়াসের কথা মনে আসে। সেদিন নাওয়াসের জন্যই অ-তো বড়ো একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছিলো। তার জন্য ওর একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য আছে। এছাড়াও নাওয়াস দু-দুবার পিউকে বাজে পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে ছিলো। প্রত্যাশার মনে হলো নাওয়াস খারাপ নয়। সব বখাটে খারাপ হয় না। সাথে এটাও ভাবল। প্রথম দিন ওভাবে থা’প্প’ড় মা’রা ঠিক হয়নি। ক্ষমা চাওয়া উচিত। হুম একি সাথে ক্ষমা চাওয়া আর ধন্যবাদ দেওয়া, দুটোই হয়ে যাবে। প্রত্যাশা একটা রিঁকশা ডেকে উঠে বসল। নাওয়াসরা যেখানে আড্ডা দেয়। সেই জায়গার নাম বলল। কিন্তু অবাক করার বিষয় নাওয়াসদের আড্ডার জায়গাটা ফাঁকা ছিলো।

“সচারচর তো এখানে থাকে। আজ নেই কেন? আজ কী এখনও আসেনি? হবে হয়তো। বাড়ি ফেরার সময় না হয় ধন্যবাদ জানাবো।”

প্রত্যাশা ভেবেছিলো নাওয়াসদের আড্ডার ওখানে রিঁকশা থামিয়ে কথা বলবে। কিন্তু নাওয়াস না থাকায়, রিঁকশা ওয়ালাকে বুটিকে নিয়ে যেতে বলল। প্রত্যাশার ড্রেস হোম ডেলিভারিও করে। আজ প্রত্যাশার কয়েকটা ড্রেস ডেলিভারি করার আছে। কিন্তু ডেলিভাবি ম্যান ছুটিতে আছে। সেকারণে প্রত্যাশা নিজেই ডেলিভারি দিচ্ছিল। শেষ ডেলিভারি করে ফেরার সময় হুট করেই বৃষ্টি নামে। শীতের সময়ে বৃষ্টি হওয়াই প্রত্যাশা বিরক্ত হয়। রিঁকশাওয়ালা হুড তুলে দিলেন। বৃষ্টির গতি বাড়তে থাকে। প্রত্যাশা রিঁকশাওয়ালাকে জোরে বৃষ্টি নামার আগেই দ্রুত পৌঁছে দিতে বলল। হঠাৎ রিঁকশাওয়ালা থেমে যান।

“কী হলো মামা থামলেন কেন?”

“সামনে মনে হয় অ্যাকসিডেন্ট হইছে।”

প্রত্যাশা সাথে সব সময় ছাতা রাখে। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নেমে আসল। ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই প্রত্যাশা আঁতকে ওঠে। র’ক্তা’ক্ত অবস্থা নাওয়াস মাটিতে পড়ে আছে। আর পাশে বসে সমানে নাওয়াসকে ডাকছে। আর লোকের সাথে সাহায্য চাইছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। বরং ফোনে ভিডিও করছে। প্রত্যাশার প্রচুর রাগ হয়। একটা বাচ্চা ছেলে সাহায্য চাইছে। যার কপাল কেটেও র’ক্ত ঝড়ছে। আর লোকজন কি-না ভিডিও করতে ব্যস্ত? প্রত্যাশা ক্রোধে হিসহিসে বলল,

“এই আপনারা কী মানুষ? একটা বাচ্চা ছেলে আপনাদের কাছে সাহায্য চাইছে। আর আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিডিও করছেন?”

ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন বলল,

“ওদের মতো বখাটেদের এমন পরিনামই হয়…”

প্রত্যাশা দ্বিগুন তেজ নিয়ে বলল,

“বখাটে বলে কী মানুষ না? আর এই বাচ্চাটা? ওর কী দোষ? ওকেও তো সাহায্য করতে পারেন।”

“আপনার যখন এতো দরদ আপনি করুন না। এই সব ঝামেলায় জড়ানোর আমাদের কোনো শখ নেই।”

“সেটা আমি করবো। আপনাদের বলা প্রয়োজন নেই। এখন যান এখান থেকে। ফ্রিতে অনেক বিনোদন নিয়েছেন। এই মুহূর্তে জায়গা ফাঁকা করুন।”

“এই চলো চলো।”

লোক গুলো চলে যায়। নিহান সমানে নাওয়াসের মুখে পানি দিচ্ছে আর ডেকে চলেছে। প্রত্যাশা গিয়ে বলল,

“নিহান আগে তোমার ভাইয়াকে হসপিটালে নিতে হবে। এভাবে নিয়ে বসে থাকলে হবে না।”

নিহান এতক্ষণ নিজেকে সামলে রেখেছিলো। কান্না করেনি। প্রত্যাশাকে দেখে কান্না করে দিলো।

“আপু প্লিজ কিছু করো। আমার ভাইয়াকে প্লিজ বাঁচিয়ে দাও। ওরা খুব মে’রেছে ভাইয়াকে…”

“শান্ত হও। তোমার ভাইয়ার কিছু হবে না।”

প্রত্যাশা নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে নিহানের ক্ষত স্থানে দিয়ে বলল চেপে ধরে রাখতে। তারপর উঠে একটা সিএনজি ডাকলো। নিহান আর প্রত্যাশা মিলে নাওয়াসকে সিএনজিতে ওঠালো। সিএনজি ওয়ালা প্রথমে যেতে চাইনি। প্রত্যাশা যখন দ্বিগুন টাকা দেবে বলে। তখনই রাজি হয়। প্রত্যাশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। নাওয়াসের শরীরে অসংখ্য চোট। কপালের কাছে অনেকক্ষাণি কেটে গেছে। যা দিয়ে অনর্গল র’ক্ত পড়ছে। প্রত্যাশা নিজের স্কার্ফের এককোণা দিয়ে নাওয়াসের মাথার কাটা স্থান চেপে ধরে র’ক্তপাত কমানোর জন্য। একপল নিহানের ফ্যাকাসে মুখের দিকে চাইল। ছেলেটা নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছে। নিহান যে নাওয়াসকে অনেক ভালোবাসে তা ওকে দেখলেই বোঝা যায়। ওর নিজের কপালও ছুড়ে গেছে। সামান্য হলেও। একবারে সামান্যও নয়। কিন্তু তবুও ছেলেটা নিজের ব্যথা উপেক্ষা করে, নাওয়াসকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রত্যাশা চোখ ঘুরিয়ে নাওয়াসের দিকে চাইল। শ্যামবর্ণ চেহারায় কোনো উজ্জ্বলতা নেই। সকাল থেকে যার দেখা পেতে চাইছিলো। তার সাথে যে এভাবে দেখা হবে ভাবেনি। অজানা এক কারণে প্রত্যাশা বুক ভারি হয়। প্রত্যাশা কখনও কল্পনাও করেনি নাওয়াসকে এভাবে দেখবে। প্রচুর র’ক্ত বেরিয়ে গেছে। এখনও বের হচ্ছে। প্রত্যাশার বুক ঢিপ ঢিপ করে। অজানা ভয়ে বক্ষ উত্তাল হয়ে আছে।

প্রত্যাশা নাওয়াসকে হসপিটালে ভর্তি করে। নিহানকেও নার্স ব্যান্ডেজ করে দিলো। প্রত্যাশা নিহানের থেকে ওর বাড়ির নাম্বার নিয়ে, বাড়িতে জানিয়ে দিলো। কিয়ৎক্ষণ পরে এক মধ্যবয়সী মহিলা ছুটে আসেন। চোখে অশ্রু। কপালে চিন্তার ছাপ। একজন নার্সকে শুধাল,

“এখানে নাওয়াস আফফান আর নিহান মাহমুদ বলে কেউ ভর্তি হয়েছে?”

মধ্যবয়স্ক মহিলার নিঃসৃত বাক্য কর্ণকুহের প্রবেশ করতে, প্রত্যাশা ঘাড় ঘুড়িয়ে চাইলো। এগিয়ে গিয়ে বলল,

“এক্সকিউজ মি! আপনি কী নাওয়াস আর নিহানের মা?”

কারো কণ্ঠস্বরে মহিলাটি তুরন্ত পিছে ফিরল

“হ্যাঁ! কিন্তু আপনি?”

“জ্বি! আমি প্রত্যাশা। আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম।”

“আমার ছেলেরা কেমন আছেন? আমাকে ওদের কাছে নিয়ে চলুন।”

“আপনি শান্ত হন আন্টি। ওরা ঠিক আছে। ডাক্তার চেক করছে। আর আপনি আমাকে তুমি করে বলুন।”

নিহানের স্যালাইন চলছে। নাওয়াসের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। তবে বিপদ মুক্ত। প্রত্যাশা স্বস্তির শ্বাস ফেলল। মনে হলো বক্ষ হতে বড়ো কোনো পাথর নেমে গেলো। প্রত্যাশার মা অনেকক্ষণ ধরে প্রত্যাশাকে কল করছে। প্রত্যাশা কল রিসিভ করছেনা।

“তোমার বাড়ি থেকে বোধহয় ফোন করছে। তুমি বরং বাড়ি চলে যাও।”

“না আন্টি প্রব্লেম নেই।”

“অনেক রাত হয়েছে। তুমি অনেকটা করেছো। এখন বাড়ি যাও।”

“কিন্তু আপনাকে একা রেখে আমি কীভাবে যাবো? যদি কোনো প্রয়োজন হয়?”

রিনা হালকা হাসেন। বললেন,

“তুমি চিন্তা করো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের বাবা চলে আসবে। তুমি যাও।”

প্রত্যাশা কিয়ৎক্ষণ ভাবলো। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হতে চলল। সত্যিই এখন বাড়ি যাওয়া উচিত। তাই আর দ্বিমত করলো না। বলল,

“আচ্ছা! আপনি সাবধানে থাকবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন। ওদের চিন্তায় নিজে অসুস্ত হবেন না।”

প্রত্যাশা ব্যাগ থেকে পানি, কেক আর বিস্কেটের প্যাকেট বের করে রিনাকে দিয়ে বলল,

“এগুলো খেয়ে নিবেন।”

রিনা পানি আর কেক,বিস্কেট নিয়ে প্রত্যাশার মাথায় স্নেহের সহিত হাত বুলিয়ে বললেন,

“তুমি খুব ভালো। আল্লাহ তোমার মনের সকল নেক আশা পূরণ করুন। ফি আমানিল্লাহ!”

বিনিময়ে প্রত্যাশা মুচকি হাসে। তারপর সেখান থেকে প্রন্থান করেন।

চলবেয়…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৭

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৭

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এখন অনুষ্ঠানের মধ্যভাগ। নাওয়াস আর নিহানের গান করছে। ওদের গানে শেষ হতেই চারিদিকে করতালির শব্দে মুখোরীত হয়। পিউ বলে,

“নাওয়াস ভাইয়া দারুণ গান করে তাই না আপু?”

প্রত্যাশা কোনো উত্তর করে না। মাইকে পিউ আর প্রত্যাশার নাম বলা হয়। ওরা দুজন রবীন্দ্রনাথের ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’ গানে নাচে। পিউ আর প্রত্যাশার নাচ সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখে। নাওয়াস মনে মনে বলল,

“মেয়েটা মা’রকুটে হলেও, গুনি আছে।”

প্রত্যাশারা নাচ শেষে স্টেজ থেকে নামতে সবাই ওদের ঘিরে ধরে। সাধুবাদ জানায়। দুজনের অনেক প্রসংশা করে। অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। পুরুষ্কার পর্ব বাকি। পুরুষ্কার দেওয়ার আগে লান্স বিরতি দেওয়া হলো। পিউ প্রত্যাশার হাত টেনে নাওয়াসদের নিকট নিয়ে গেল।

“আরে কোথায় যাচ্ছিস? আস্তে পড়ে যাবি।”

পিউ যেন প্রত্যাশার কথা শুনতেই পেলো না। একদম নিহানদের সামনে গিয়ে থামল। প্রত্যাশার হাত ছেড়ে দিয়ে উৎফুল্ল চিত্ত বলল,

“ভাইয়া আপনি দারুণ ভালো গান করেন। গিটারও অসাধারণ বাজান। আপনাদের দুজনের যুগলবন্দী বেস্ট ছিলো। আমি শিওর আজকে সংগীতে প্রথম পুরুষ্কার আপনারা দুজন পাবেন।”

“আমরা পুরুষ্কার পাবো কি-না জানি না। কিন্তু তুই আর আপু নিঃসন্দেহ পুরুষ্কার পাবি। তোরা দুজন অনেক ভালো নাচ করেছিস।”

প্রত্যাশা হালকা হাসে। পিউ বলল,

“চল আমরা এক সাথে খায়। আমরা বাড়ি থেকে কাচ্চি এনেছি। এবং সেটাও আমি আর আপু দুজনে মিলে রান্না করে।”

শেষের কথা পিউ দ্বিগুন উৎফুল্ল নিয়ে বলে। নিহানও তেমনই উৎফুল্ল হয়ে বলল,

“সত্যি? তোর কথা শুনে আমার খিদে দ্বিগুন হয়ে গেলো। চল!”

ওরা যেতে নিয়েও থেমে যায়। নিহান নাওয়াসের উদ্দেশ্যে বলল,

“কী হলো ভাইয়া? আসো?”

“তুমি যাও। আমি এখানে আছি।”

নিহান কিছু বলবে তার আগেই পিউ বলল,

“আপনি খাবেন না?”

পিউয়ের প্রশ্নে নাওয়াস বলল,

“আমরা বাইরে থেকে খেয়ে নিবো।”

“বাইরে থেকে কেন খাবেন ভাইয়া?”

“এমনি!”

“এমনি কেন? আপনি কী আমাদের সাথে খেতে চাইছেন না? কারণ কী আমার আপু ? আপু সাথে আপনাদের ঝামেলা আছে। সেই জন্যই আপনি আমাদের সাথে যেতে চাইছেন না।”

পিউয়ের কথায় নাওয়াস প্রত্যাশা দুজনেই চমকায়। চমকিত একে অন্যে দিকে চাইল। নাওয়াস অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,

“আমি কী তোমার আপু কে ভয় পায়? তোমাদের ফ্রেন্ডসদের মাঝে আমি যেতে চাইছি না। সেই জন্য…”

নিহান এবার বলল,

“তুমিও তো আমার ফ্রেন্ডই হও। বড়ো ভাইয়া মানে বেস্ট ফ্রেন্ড। পিউও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। এখানে এতো হেজিটেট করার কী আছে। আসো তো।”

নিহান নাওয়াসের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। নাওয়াসের বারণও শোনে না। পিয়াশ,তন্ময়, মিন্টুও সাথে যায়। প্রত্যাশার সাথে খেতে হবে শুনেই মিন্টু শুকনো ঢোক গিলে। পিউ ব্যাগ থেকে কাচ্চি বের করে নিহান কে দিলে। নাওয়াস মিন্টু কে খাবার আনতে বলে,

“মিন্টু খাবার কিনে নিয়ে আয়!”

তড়িৎ পিউ বলল,

“খাবার কেন কিনে আনবে? এখানে যা খাবার আছে সবার আরামছে হয়ে যাবে।”

নাওয়াস পিউয়ের বাক্যে নাকচ করে বলল,

“তার প্রয়োজন নেই। মিন্টু যা নিয়ে আয়…”

পিউ শাসনের সুরে বলল,

“কেউ কোনো খাবার কিনে আনবে না। আপনারা আমাদের আনা খাবারই খাবেন। ব্যস আমি আর কিছু শুনবো না।”

“তুমি অযথা জেদ করছো পিউ। আমি খাবার আনাছি তো।”

“কেন আমাদের খাবার খেলে কী হবে? আপনি না আমায় ছোটো বোন বলেন? তাহলে ছোটো বোনের আনা খাবার খেতে এতো কীসের সমস্যা?”

“সমস্যা নেই। কিন্তু…”

“তাহলে আর কিছু শুনবো না আমি। আপনি আমার আনা খাবারই খাবেন। মিন্টু ভাইয়া বসুন কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।”

মিন্টু দ্বিধা চোখে নাওয়াসের দিকে চাইল। নাওয়াস ইশারা করল বসতে, মিন্টুও বসে পড়লো। পিউ আর প্রত্যাশা খাবার পরিবেশ করে দিলো।

মিন্টু বিড়বিড় করে বলল,

“যেমন বড়ো বোন তেমনই ছোটো বোন। বড়ো বোন কথায় কথায় থা’প্প’ড় মা’রে। আর ছোটো জন হুমকি ধামকি দিয়ে খাবার খাওয়াই। আমাদের ভাইকে এই দুই বোন নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘোরানোর ক্ষমতা রাখে।”

পিয়াশ বলল,

“তা যা বলেছিস মামা।”

“এরা কী চালের ভাত খেয়ে এমন ডা’কাত হয়েছে? সেই চালের ভাত আমিও খাবো।যাতে নাওয়াস ভাইয়ের সামনে সাহস নিয়ে কথা বলতে পাড়ি।”

নাওয়াস তন্ময়ের দিকে সুচালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তন্ময় আবেগে বেশি বলেছে বুঝে বোকা হাসে।

“হে হে মানে আপনার মতো সাহসী হতে…”

সকলে খাওয়া শুরু করে। পিউ, প্রত্যাশা, নিহান জমিয়ে গল্প করছে। নাওয়াস এমনিতেই কম কথা বলে। এদের মাঝে আরোই চুপ চাপ আছে। প্রত্যাশা আড় চোখে নাওয়াসকে অবলোকন করল। নাওয়াস নিজ মনে খেয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে ধ্যান নেই।
কথা বলার মাঝে হঠাৎ নিহানের বিষম লাগে। নাওয়াস নিহানকে পানি দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

“খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই।”

“স্যরি ভাইয়া!”

নাওয়াস ইশারায় আবার খাওয়া শুরু করতে বলল। নিহান আবার খাওয়া শুরু করে। এবার সবাই চুপ হয়ে যায়। মিন্টু তো প্রত্যাশার ভয়ে গুটিয়ে আছে। বেচারার সামনে প্রিয় খাবার। তবুও ঠিক মতো খেতে পারছে না। বলাবাহূল্য মিন্টু খেতে প্রচুর ভালোবাসে এর জন্য শরীর স্বাস্থ্যও ভালো। প্রত্যাশা মিন্টুর দিকে তাকাতেই মিন্টু দুই হাতে গাল আড়াল করে। মিন্টুর এহেন অবস্থায় তন্ময়,পিয়াশ মিটমিট করে হাসতে থাকে। নাওয়াস বিরক্তিতে ‘চ’ বর্গীয় শব্দ করে।

বিড়বিড় করে বলল,

“আহাম্মক!”
___________

পুরুষ্কার বিতিরণ করা হবে। তার আগে ছোটো খাটো বক্তব্য দিচ্ছেন স্যার ম্যাম। যা ভিষণ বিরক্তি কর। প্রত্যাশার গরমে অস্বস্তি হচ্ছে। সেই জন্য প্রত্যাশা ভাবলো। চোখ মুখে একটু পানি দিলে হয়তো ভালো লাগে। এই ভেবে প্রত্যাশা উঠে ভিতরের দিকে চলে গেল। আজ স্কুলে অনুষ্ঠান থাকায় যে কেউ স্কুলে প্রবেশ করছে। সেই জন্য এখানে কয়েক জন বখাটে ঢুকে এসেছে। ওদের মধ্যে একজন প্রত্যাশাকে দেখে বলল,

“হিট্টু ভাই দ্যাহেন সেই মাইয়াডা!”

হিট্টু নামক বখাটে বলল,

“কোন মেয়ে?”

“ওই যে আমাদের মা’রছিলো? মনে নাই?”

হিট্টু সতর্ক দৃষ্টিতে চাইলো। প্রত্যাশাকে দেখে মনে পড়ে গেলো সেদিন কী ভাবে ওকে মে’রে ছিলো। হিট্টু মিন্টুর খালাতো ভাই হয়। মিন্টু বখাটে হলেও হিট্টুর মতো চরিত্র খারাপ না। প্রত্যাশাকে সেদিন মূলত হিট্টুই টিজ করেছিলো। মিন্টু সেখানে উপস্থিত ছিলো। খালাত বড়ো ভাই বলে কিছু বলতে পারেনি। এমনিতেই মিন্টু ভীতু প্রকৃতির। প্রত্যাশাকে দেখে হিট্টুর রাগ হয়। মনে মনে প্রতিশোধ নেওয়ার কুৎসিত পরিকল্পনা করে। নিজের পরিকল্পনা সাথে থাকা সাঙ্গপাঙ্গদের বললে সকলে একযোগে বিশ্রী হাসে। একজন বলে,

“আজ তাইলে সেই মস্তি হবে?”

প্রত্যাশা বাথরুমে থেকে বের হতেই হুট করে হিট্টু সামনে চলে আসে। প্রথমে প্রত্যাশা চমকে ওঠে। পরক্ষণে সামনে সেদিনের সেই বখাটে ছেলেকে দেখে প্রত্যাশার মুখশ্রী শক্ত হয়ে আসে। হিট্টুর মুখের বিশ্রী হাসি। প্রত্যাশাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুদৃষ্টিতে দেখে। হিট্টুর এহেন দৃষ্টিতে প্রত্যাশা মাথা গরম হয়ে যায়। পায়ের তালু পর্যন্ত ক্রোধে জ্বলে ওঠে। হিট্টু তখন বলল,

“যাই বলি। তুই কিন্তু একদম খাসা মা’ল আছিস। তোর ফি’গার একদম বলিউডের নায়িকাদের মতো। দেখলেই ছুঁয়ে দিত…”

হিট্টুর কথা সম্পূর্ণ করার আগেই প্রত্যাশা হিট্টু গালে সজরে থা’প্প’ড় মা’রে।

“সেদিন বোধহয় ডোজ কম পড়ে গেছিলো। তাই আজ আবার এসছিস? কোনো ব্যাপার না। আজ এমন ডোজ দেবো। যে বাপের জন্মে আর মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাবি না।”

হিট্টু রাগে হিসহিসিয়ে বলে।

“তুই কী ডোজ দিবি? আজ আমি তোকে এমন শিক্ষা দেবো না। তোর সব তেজ পানি হয়ে যাবে। এই ধর শা**”

হিট্টুর সাথে থাকা দুজন ছেলে প্রত্যাশাকে ধরতে গেলে প্রত্যাশা ওদের থেকে নিজেকে ডিফেন্ড’স করে পেটে ঘুষি মা’রে। প্রত্যাশা বলে,

“আমাকে দূর্বল ভাবার ভুল করবি না। আ’ম ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ান।”

“সে তুই যাই হোস আজ তোকে আমি উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।”

“দেখা যাক কে কাকে শিক্ষা দেয়।”

প্রত্যাশা ওদের সাথে মা’রামা’রি করছিলো। প্রত্যাশাকে বাগে আনতে না পেরে হিট্টুর রাগ বাড়ে। সেই সময় নজর পড়ে পাশে ভাঙা বেঞ্চের দিকে। হিট্টু ক্রূর হাসে। বেঞ্চের পায়া তুলে নিলো।পিছন থেকে প্রত্যাশার ঘাড়ে আঘাত করে। আকস্মিক আক্রমণে প্রত্যাশা থমকে যায়। ঘাড়ে আঘাত লাগায় ব্যথায় মুখ নীল হয়ে আসে। ঘাড়ের কাছে শীতল অনুভব হয়। মনে হয় শীতল কিছু গড়িয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশা ঘাড়ে হাত দিতে হাতে তরল চিটচিটে কিছু লেগে যায়। হাত সামনে নিতেই দেখে র’ক্ত। প্রত্যাশার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। পাশের দেওয়াল ধরে বহু কষ্টে নিজেকে সামলায়। যথা সম্ভব নিজেকে শক্ত রাখে। হিট্টু ওর চ্যালেদের ইশারা করে প্রত্যাশাকে ধরার জন্য। ওরা কাছে আসতে নিলেই প্রত্যাশা পা দিয়ে লাথি মা’রে। তা দেখে হিট্টু বলে,

“এখনও তোর তেজ কমেনি?”

হিট্টু এবার প্রত্যাশার পায়ের আঘাত করে। প্রত্যাশার দূর্বল শরীর এবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশার হাতের চুড়ি ঝনঝনিয়ে ভেঙে যায়। হিট্টু হেসে বলে,

“এবার তোকে বোঝাবো হিট্টু কী জিনিস। তোকে আমি আমার র’ক্ষি’তা করে রাখবো।”

হিট্টু ওদের ইশায়ার বলে প্রত্যাশাকে নিয়ে ওদিকে যেতে। ওরা প্রত্যাশার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। প্রত্যাশার এখনও জ্ঞান আছে। তবে শরীরে শক্তি নেই। সম্পূর্ণ শরীর অসাড় হয়ে আসছে। মনে মনে আল্লাহ কে সরণ করে।

নাওয়াসের ভিড় পছন্দ না। অনেকক্ষণ ভিড়ের মধ্যে থেকে মাথা ধরেছে। তাই উঠে নিরিবিলি জায়গায় আসলো। এখানে এসে সিগারেটে ধরিয়ে নিকোটিনের সাদা-কালো ধোয়া নিতে লাগলো। হঠাৎ আওয়াজে আর কারো অস্পষ্ট কথার শব্দে নাওয়াসের মনে খটকা লাগে। এই সময় এখানে কারো থাকার কথা না। আর অস্পষ্ট ভাবে ভেসে আসা কথা গুলোই নাওয়াস যেটা বুঝল। তাতে কেউ হয়তো কোনো মেয়ে সাথে খারাপ কিছু করতে চাইছে। নাওয়াস সময় ব্যয় না করে ভিতরে চলে যায়। ভিতরে যেতেই বাথরুমের সামনে ভাঙা চুড়ি দেখতে পায়। নাওয়াস ভাঙা চুড়ির টুকরে হাতে নিতেই বক্ষ ছ্যাত করে ওঠে। অজানা আতঁকে বুক কাপে। মনে মনে বলে,

“এটা তো ওই মা’রকুটে মেয়ের চুড়ি।”

নাওয়াস আশেপাশে খুঁজতে থাকে। তখন ফ্লোরে ফোটা ফোটা র’ক্ত দেখতে পায়। র’ক্তের ফোটা অনুসরণ করতে থাকে। একটা ক্লাস রুমের কাছে এসে র’ক্তের ফোটা আর পাওয়া যায় না। নাওয়াস আলত ভাবে ক্লাস রুমের দরজা ধাক্কায় ভিতর থেকে লাগানো। দরজায় কান পাতে। চাপা স্বরে কথার আওয়াজ শোনা যায়। প্রত্যাশা দূর্বল শরীরেও নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। হিট্টু বলে,

“এই শা** হাত ধর।”

হিট্টু নিজের শার্ট খুলে প্রত্যাশার দিকে হাত বাড়াতে নিবে। সে মুহূর্তে দরজায় ভেঙে হিট্টুর গায়ে পড়ে। নাওয়াসকে দেখে হিট্টুর সাথের দুজন আতঁকে ওঠে। নাওয়াসের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। চোখ দুটো জ্বলন্ত কোনো আগুনের গোলা। যে আগুনের গোলাই ওরা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। প্রত্যাশার হাত ছেড়ে দিয়ে দুপা পিছিয়ে যায়। একে ওপকে ধরে কম্পিত কণ্ঠে বলে,

“ভাই এ এখানে কী করে এলো? এখন কী হবে?”

নাওয়াস তড়িৎ এসে হিট্টুকে মাটি থেকে তুলে মা’রতে থাকে। বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বলে,

“হা’রা—দা তোর এতো কলিজা হয়েছে তুই আমার এলাকায় ঢুকে। একটা মেয়ের সম্মানহানি করতে যাচ্ছিলি? আজ তোকে জানে মে’রে দেবো…”

প্রত্যাশা নিভু চোখে নাওয়াসকে দেখলো। ওর কথাও অস্পষ্ট শুনলো। এতক্ষণ নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে, নিজের শরীর ও মনের সব শক্তি দিয়ে চোখ খোলা রেখেছিলো। নাওয়াসকে দেখে স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে শরীর ছেড়ে দিলো। নাওয়াসকে ডাকতে মিন্টু এদিকে এসেছিলো। তখন এই সব কিছু দেখে পিয়াশ আর তন্ময়কে ফোন করে ডাকে। ওরা এসে নাওয়াসকে ছাড়িয়ে নিলো। কেননা হিট্টুর অবস্থা খারাপ। আর যদি মা’রে তাহলে ম’রেই যাবে। তখন পুলিশের ঝামেলা হবে। নাওয়াসের নজর প্রত্যাশার ওপর পড়তে নিজেকে পিয়াশ আর তন্ময়ের থেকে ছাড়িয়ে,প্রত্যাশার পাশে হাঁটু ভেঙে বসে বলল,

“প্রত্যাশা শুনতে পাচ্ছো?”

প্রত্যাশা রেসপন্স করে না। নাওয়াস প্লাস চেক করে। দ্রুত প্রত্যাশাকে কোলে তুলে পিয়াশদের উদেশ্যে বলল,

“ওদের তিনজন যেন ছয় মাসের কমে, হসপিটাল থেকে বের হতে না পারে। আর এই ব্যাপারটা যেন জানাজানি না হয়।”

নাওয়াস চলে যায়। ওরা তিনজন হিট্টুর চ্যালাদের দিকে বাকা হেসে তাকায়। ওরা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।

চলবে

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৬

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৬

অক্টোবর মাস। মনোমুগ্ধকর একটি মাস। এই মাসেই শীতের সূচনা হয়। ঘাসে জমা বিন্দু বিন্দু পানির কণা জানান দেয়, শীতের আগমনী বাতা হিসেবে। সকালের মিষ্টি সূচনা হয় পাখিদের শ্রুতি মধু কাকলীর মাধ্যমে। আজ পিউদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। প্রতিবছর এই সময়টায় ওদের স্কুলে, সংস্কৃতি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। যেখানে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ হয়। যেমন- নৃত্যানুষ্ঠান, সংগিত পরিবেশন, কবিতা আবৃতি সহ বিভিন্ন ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। পিউ ভিষণ ভালো নাচ জানে। প্রতি বছরই পিউ নৃত্য পরিবেশন করবে। এবারও করবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে একটু ভিন্নতা আনতে বলা হয়েছে, এবার জোড়ায় পারফরমেন্স করতে হবে। অর্থাৎ যারা যারা পারফর্ম করবে তাদের সাথে, পরিবারের একজন সদস্যকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। বিষয়টা শুনে সবার মাঝে উত্তেজনা কয়েক গুন বেরে যায়। পিউ তো ঠিক করে প্রত্যাশার সাথে নাচ করবে। সেই অনুযায়ী এতদিন দুবোন প্রস্তুতিও নিয়েছে। ওদিকে নিহান ঠিক করেছে নাওয়াসকে সঙ্গে নিয়ে পারফর্ম করবে। নাওয়াস খুব ভালো গান করতে আর গিটার বাজাতে জানে। নিহান নাওয়াসকে না জানিয়েই ওর সাথে নাম এন্ট্রি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ম্যাচিং পাঞ্জাবিও আনিয়েছে। কিন্তু এই সব কিছু নাওয়াস জানে না। নিহান নাওয়াসের রুমে উঁকিঝুঁকি করছে। নাওয়াস বিষয়টা দেখে বলল,

“কিছু বলবে?”

অকস্মাৎ আওয়াজে নিহান চমকে যায়। বুকে থুথু দিয়ে ভাবে।

“ভাইয়া আমায় দেখল কী ভাবে?”

“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। আয়নায় তোমার প্রতিবিম্ব দেখা যায়।”

নাওয়াসের নিরেট কণ্ঠে আওড়ানো শব্দে নিহান বোকা হাসে। ভিতরে ঢুকে বলে,

“ওহ তাই বলো। আমি আবার ভাবলাম তোমার পিছেও চোখ আছে নাকি?হে হে!”

“কী বলবে বলো।”

নিহান শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“তোমার একটা হেল্প লাগত।”

নাওয়াসের ভাবলেশহীন উত্তর,

“কীহ হেল্প?”

নিহান মনে মনে কথা গুছিয়ে নিলো। নাওয়াসের মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,

“আমার স্কুলে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। সেখানে পরিবারের সদস্যর সাথে অংশগ্রহণ করতে হবে। তুমি তো ভালো গান জানো। তাই আমি আমার সাথে তোমার নাম এন্ট্রিন করে দিয়েছি।”

নিহান এক নিঃশ্বাস গড়গড় করে কথা শেষ করে। নাওয়াস বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। এতক্ষণ নিহানকে তেমন পাত্তা না দিলেও, এবার ঘুরে দাঁড়ায়। নিহানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে চায়। ছেলেটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নিহান সেভাবেই ফের বলল,

“তুমি চাইলে আমায় একটা চ’ট’কানা মা’রতে পারো। কিন্তু তবুও না বলো না।”

নিহান গাল বাড়িয়ে দিয়ে উক্ত বাক্যটি বলে। নাওয়াস বুকে হাত গুজে নিহানের দিকে ছোটো ছোটো চোখে তাকিয়ে থাকল। নাওয়াসের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে নিহান ধীরে চোখ খুলল। নাওয়াসকে এমন সূচালো দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে শুষ্ক ঢোক গিলল। নাওয়াস চিরপরিচিত গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,

“কার অনুমতিতে তুমি আমার নাম এন্ট্রি করিয়েছো?”

নাওয়াসে নিঃসৃত বাক্যে নিহানের মুখটা চুপসে যায়। সাফায় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

“আসলে ভাইয়া তুমি তো ভালো গিটার বাজাও। সাথে তোমার গানের ভয়েসও অনেক সুন্দর। তার জন্যই…”

“তার জন্য তুমি আমার অনুমতি ব্যতিত আমার নাম দিয়ে দিবে? আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে হয়নি তোমার? আমি আদৌ অংশগ্রহণ করতে চাই কি-না?”

নাওয়াস কিছুটা ধমকে ওঠে। নিহান মাথা নিচু করে নিলো। অপরাধি কণ্ঠে বলল,

“আই অ্যা’ম স্যরি ভাইয়া। আমি বুঝতে পারিনি।”

“কী বুঝতে পারোনি? অন্য সময় তো সবই বুঝো, এত টুকু বুঝতে পারোনি?”

“আমি ভেবে ছিলাম, ছোটো ভাই হিসেবে, তোমার ওপর এতটুকু অধিকার আমার আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি, আমার ভাবনাটা ভুল ছিলো।
আমি অনেক স্যরি। আর কখনও এমন কিছু হবে না।”

নিহান দাঁড়ায় না। সেখান থেকে প্রন্থান করে। নাওয়াস নিহানের যাওয়ার দিকে নিষ্পলক চেয়ে রয়। ছেলেটার আঁখিযুগল ভেজা মনে হলো… ও-কী একটু বেশিই বলে ফেলল?

“নিহান তোমার ছোটো ভাই হয়। ওর সাথে এমন বিহেভ না করলেও পারতে।”

হঠাৎ মোটা কণ্ঠে নাওয়াসের ভাবনায় ছেদ পড়ে। সামনে কামাল মাহমুদকে দেখে নাওয়াসের ভ্রু গুটিয়ে আসে। নাওয়াস নিজ ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে, কামাল মাহমুদকে খেয়ালই করেনি। এতক্ষণ যদিও বা একটু অনুতাপ হচ্ছিল। কামাল মাহমুদকে দেখা মাত্র তা হাওয়াই মিলিয়ে গেল। নিরেট বদনে বলল,

“ও আমায় না জানিয়ে আমার নাম এন্ট্রি করে অন্যায় করেছে। এটা ওর প্রাপ্য ছিলো।”

“ও তোমায় ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। তাই ছোটো ভাই হিসেবে একটু অধিকার দেখিয়ে ছিলো। কিন্তু তুমি? তুমি কী ওকে ভালোবাস? যে শাসন করলে? শাসন করা তাকেই মানায় যে ভালোবাসতে জানে।”

কামাল মাহমুদ থামেন বড়ো করে শ্বাস নিয়ে বলেন,

“আমি জানি না তোমার আমার প্রতি কীসের রাগ। কেন তুমি এমন বিপথে গেছো। কোন কারণে তুমি আমাদের থেকে দূরে থাকো। আমি সত্যিই জানি না। কিন্তু নিহান? ও তো তোমার ভাই হয়। ছোটো ভাই। তোমার থেকে এতটুকু স্নেহও কী চাইতে পারে না? তোমার রাগ তো আমার প্রতি,আমার ওপরেই প্রকাশ করো। নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো?
কেন সকলের থেকে দূরে থাকতে চাইছো? এভাবে একা একা বাঁচা যায় না। মানুষ কখনও একা বাঁচতে পারেনা।”

নাওয়াস কোনো প্রত্যুত্তর করে না। কামাল মাহমুদ বুঝেন নাওয়াস ওনার কথা শুনতে আগ্রহী নয়। তিনি দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে কক্ষ হতে বেরিয়ে যান। নাওয়াসের মানসপটে নিহানের ভেজা চোখ জোড়া ভেসে উঠছে। আর কানের কাছে বারবার প্রতিধ্বনিত হয় ওর বলা শেষ বাক্য গুচ্ছ…
___________

পিউ আর প্রত্যাশা লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছে। পিউয়ের চুলে বেনী করে বেলী ফুলের মালা পেঁচিয়েছে। আর প্রত্যাশা নিজের কাধ সমান চুল গুলো খোলা রেখেছে। প্রত্যাশার চুলের তুলনায় পিউয়ের চুল লম্বা আর ঘন। দুজনকে দেখতে ভিষণ মিষ্টি লাগছে। পিউকে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রত্যাশা পানি কেনার জন্য দোকানে যায়। পিউ ভিতরে এসে দেখে নিহান একটা চেয়ারে বসে আছে। পিউ হাসি মুখে নিহানের দিকে এগিয়ে যায়। নিহানের নিকটে পৌঁছাতেই পিউ খেয়াল করল,নিহান উদাস মনে বসে আছে। নিহানকে এমন মনম’রা দেখে পিউয়ের হাসি মিলিয়ে যায়।

“নিহান!”

পরিচিত মেয়েলি ডাকে নিহান মাথা তুলে পিউকে দেখে যথা সম্ভব ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

“আরে তুই। কখন এলি?”

“একটু আগে। কিন্তু তোর কী হয়েছে? এমন বিষণ্ন দেখাচ্ছে কেন তোকে?”

নিহান হাসি আরেকটু চওড়া করে বলল,

“বিষণ্ণ? বিষণ্ণ কেন দেখাবে? তুই কী যে বলিস।”

“একদম মিথ্যে বলবি না। সত্যি করে বল কী হয়েছে তোর?”

“বিশ্বাস কর কিছু হয়নি।”

“আমরা না বেস্ট ফ্রেন্ড হয়? বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকে কিছু লুকাতে নেই। বল না কী হয়েছে? না-কি তুই আমাকে ফ্রেন্ড মনে করিস না? তাই বলতে চাইছিস না?”

নিহান গাল ভরে শ্বাস নিলো। বুঝলো লুকিয়ে আর কোনো লাভ নেই। সব না শুনে পিউ ওকে ছাড়বে না। উপায়ান্ত না পেয়ে পিউকে সব খুলে বলে। সব শুনে পিউয়েরও মন খারাপ হয়ে যায়। নিহান উদাস কণ্ঠে বলল,

“কত ইচ্ছে ছিলো ভাইয়ার সাথে গলা মিলিয়ে গান করার। আমার সেই ইচ্ছে বোধহয় কখনও পূরণ হবে না…”

হঠাৎ পিউয়ের ওষ্ঠধারে হাসি ফোঁটে। নিহানের উদ্দেশ্যে বলল,

“আল্লাহ তোর ইচ্ছে নিশ্চয়ই পূরণ করবে। সেটাও আজকেই করবে।”

নিহান অবাক হয়। পিউয়ের কথার অর্থ বোঝে না। আর না হাসার অবাক স্বরে শুধায়,

“মানে?”

“ওদিকে দেখ!”

পিউ ইশারায় নিহানকে পিছে তাকাতে বলে। নিহান ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে ফেরে। নাওয়াস বাইক স্ট্যান্ড করছে। নাওয়াসের সাথে ওর বন্ধুরাও আছে। নাওয়াসের পরনে নীল পাঞ্জাবি। নিহান ভালো করে খেয়াল করতেই চমকে গেলো। এটাতো সেই পাঞ্জাবিটা, যেটা অনুষ্ঠানের জন্য নিহানই বানিয়েছিলো। নাওয়াস নিহানের মুখোমুখি দাঁড়ায়। নিহানের বিস্ময় ভাব এখনও কাটেনি। নাওয়াস নিহানকে এমন বড়ো বড়ো চোখে তাকাতে দেখে হালকা কাঁশে। তৎক্ষণাৎ নিহানের ধ্যান ভাঙ্গে। বিস্মিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,

“ভাইয়া তুমি? এখানে, এভাবে?”

নাওয়াস গলা ঝেড়ে নিহানের দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“তাড়াতাড়ি চেন্জ করে আসো। একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।”

“এতে কী আছে?”

“পাঞ্জাবি!”

“পাঞ্জাবি?”

“হুম পারফর্ম করবে না? ম্যাচিং না হলে টিম মনে হবে না।”

নিহান কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে যায়। বিমূর্ত কণ্ঠে আওড়াই,

“তুমি পারফর্ম করবে?”

“হ্যাঁ!”

মুহূর্তে নিহান খুশি হয়ে যায়। নাওয়াসকে ঝাপটে ধরে বলে,

“থ্যাঙ্ক ইয়্যু সো মাচ ভাইয়া! আই লাভ ইয়্যু!”

নাওয়াস ভিষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। পিউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। নাওয়াস দ্বিধা-দ্বন্দ্বিত ভাবে নিহানের মাথা হাত বুলিয়ে বলল,

“চেন্জ করে আসো। নয়তো লেট হয়ে যাবে।”

নিহান নাওয়াসকে ছেড়ে বলল,

“হ্যাঁ এখুনি যাচ্ছি।”

নিহান উৎফুল্লতার সহিত চেন্জ করতে গেল। নিহানের মুখে হাসি দেখে নাওয়াস মনে মনে খুশি হলো। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করল না। পিউ নাওয়াসের সামনে এগিয়ে এসে বলল,

“মাশাহআল্লাহ ভাইয়া আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

নাওয়াস পিউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“তোমাকেও ভিষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে।”

“ধন্যবাদ!”

“আমাদের কেমন লাগছে?”

পিয়াশ,তন্ময় আর মিন্টু এক সাথে শুধায়। পিউ হেসে বলল,

“আপনাদেরকেও সুন্দর লাগছে।”

পিউকে ম্যাম ডাকায় পিউ ভিতরে চলে যায়। নাওয়াস আর ওর বন্ধুরা ওখানেই অপেক্ষা করে। সেই সময় প্রত্যাশা ভিতরে আসে। নাওয়াস আশেপাশে তাকিয়ে স্কুলের ডেকোরেশন দেখছিল। সেই সময় নাওয়াসের চোখ মেইন গেটের সামনে আটকে যায়। এক মুহূর্তের জন্য নাওয়াসের হার্টবিট মিস হয়। সাদা শাড়ি পরিহত
প্রত্যাশা ব্যস্ত পায়ে এদিকেই আসছে। দ্রুত হাঁটার দরুন প্রত্যাশার কাধসম খোলা লালচে বাদামি চুল হাওয়াতে দুলচ্ছে। হাতে চুড়ি আর পায়ের নূপুরের রিনঝিন রিনঝিন শব্দ, শুনে মনে হচ্ছে এযেন কোনো শ্রুতিমধুর সংগিতের ধ্বনি। কথায় বলে শাড়িতেই নারী। রুফাইজের আজ মনে হলো কথাটা যে বলেছে সে একশ শতাংশ সঠিক বলেছে। নাওয়াস প্রত্যাশাকে এতদিন সেভাবে খেয়াল করেনি। মেয়েটা চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের অধিকারী। শাড়িতে যেন আজ মেয়েটার সেই রূপ আরও ভালো মতো প্রকাশপাচ্ছে… নিজের দিকে কারো গভীর দৃষ্টি অনুভব করে,প্রত্যাশা আশেপাশে চাইল। নাওয়াসের স্থির দৃষ্টিতে দৃষ্টি পড়তে প্রত্যাশাও থমকে গেল। প্রথমে একটি বিবর্তবোধ করে। পরক্ষণে প্রত্যাশা নাওয়াসকে ভালো করে খেয়াল করতেই বিমোহিত হলো। একপলক নাওয়াসকে সম্পূর্ণ দেখে নিলো। শ্যামবর্ণের এই মানবকে পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুদর্শন লাগছে। নীল রঙের কারুকাজ সম্পূর্ণ পাঞ্জাবি বেশ ভালোই মানিয়েছে। শক্তপোক্ত দেহে আঁটসাঁট হয়ে লেপ্টে আছে পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ওপরের দুটো বোতামও খোলা আছে। সাথে হাতাও গুটিয়ে রাখা। বরাবরের ন্যায় ঝাঁকরা অগোছালো চুল। এতে যেন ছেলেটার সৌন্দর্যবর্ধন করছে বহুগুন। অদ্ভূত বিষয়।প্রত্যাশার নীল রং ভিষণ প্রিয়। কাঁকতালিয় ভাবে নাওয়াসেরও প্রিয় রং নীল। সেকারণেই নিহান নীল পাঞ্জাবি বানিয়েছে।
নিহান পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে আসে। প্রত্যাশাকে দেখে বলল,

“আরে আপু কেমন আছো?”

নিহানের বাক্যে দুজনেরই হুঁশ আসে। মিন্টু এতক্ষণ প্রত্যাশাকে খেয়াল করেনি। প্রত্যাশাকে দেখা মাত্রই নাওয়াসের পিছে লুকায়।

“আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

“আমিও ভালো আছি। তোমাকে কিন্তু শাড়িতে দারুণ লাগছে আপু। পুরো বিদেশী বঙ্গ ললোনা।”

নিহানের ফাজলামোতে প্রত্যাশা ঠোঁট প্রসারিত হয়। নিহানের চুল এলোমেলো করে বলল,

“তোমাকেও কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম লাগছে। পুরো শাহরুখ খান।”

উত্তরে নিহানও বিস্তর হাসে। বলে,

“আচ্ছা আমি ওদিকে যায়। ম্যাম ডাকছে।”

“ভাইয়া তুমি কিন্তু আশেপাশেই থেকো।”

প্রত্যাশা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। নাওয়াস আড়চোখে প্রত্যাশাকে দেখছিলো। মেয়েটা অন্যেদের থেকে আলাদা। স্ট্রোং ব্যক্তিতের। আত্মনির্ভর, স্পষ্টভাষী। দিনকে দিন রাতকে রাত বলতে জানে। প্রত্যাশা ওদের দিকে তাকাতে মিন্টুর কাচুমাচু মুখ দেখতে পেলো। মিন্টু যে ওকে দেখেই এমন লুকিয়েছে বুঝতে পেরে বলল,

“এমন কাজ করো কেন? যার জন্য অন্যে পিছে মুখ লোকাতে হয়?”

মিন্টু থতমত খেয়ে যায়। প্রত্যাশা চলে যায়। নাওয়াস কঠিন দৃষ্টি মিন্টুর ওপর নিক্ষেপ করে। কিন্তু কিছু বলে না। বরং নাওয়াসও চলে যায়।

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৫

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া আফরিন ইমারা
#পর্বঃ০৫

তীব্র বর্ষণের পর মুহূর্তে প্রকৃতি হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। ভেজা মাটির গন্ধে আশপাশ মোঁ মোঁ করে। প্রত্যাশা বুটিককে যাবে। আজ নতুন ড্রেসের কালেকশন আসবে। বুটিককে প্রচুর কাজ আছে। বৃষ্টির কারণে এমনিতেই অনেকটা দেরী হয়ে গেছে। তারপর রিঁকশা বা সিএনজি কোনোটায় পাচ্ছে না। নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তবুও কোনো রিঁকশা বা সিএনজির দেখা মেলেনি। উপায়ান্ত না পেয়ে প্রত্যাশা হাঁটা শুরু করে। একা একাই বিড়বিড় করে বলে,

“দরকারের সময় একটা রিঁকশা বা সিএনজি পাওয়া যায় না। অথচ যখন লাগে না। তখন এসে জিজ্ঞেস করবে, মামা যাবেন। অসহ্য।”

প্রত্যাশা রিঁকশাওয়ালাদের গুষ্টি উধার করতে করতে হাঁটছিলো। একটা রিঁকশা দেখতে পেয়ে থামানোর জন্য দাঁড়ালো প্রত্যাশা। হঠাৎ চার-পাঁচটা দ্রুতগামি বাইক ওর পাশ ঘেষে চলে যায়। বৃষ্টির কারণে রাস্তার ছোটো ছোটো গর্তে ময়লা পানি জমে আছে। সেই সমস্ত পানি ছিটকে প্রত্যাশার গায়ে পড়ে। পায়ের পাতা থেকে হাঁটুর উপোরিভাগ পর্যন্ত কাঁদা পানিতে মেখে গেছে। অকস্মাৎ ঘটনায় প্রত্যাশা হতভম্ব হয়ে গেছে। বড়ো বড়ো চোখে একবার নিজেকে অবলোকন করে। বাইক গুলোর দিকে তাকালো। দ্রুতগামী বাইকের মধ্যে প্রথম দুটো বাইকের, একটা বাইক পিচ রাস্তায় ছিটকে পড়ে। পরপর পিছের তিনটে বাইক তাদের নিকট বাইক থামায়। পড়ে যাওয়া বাইকের লোক দুজনকে তুলে, বেধম পেটাতে শুরু করে। প্রত্যাশা চমকায়। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে যায়। সামনে এগিয়ে যেতেই নাওয়াস আর ওর সাঙ্গপাঙ্গদের নজরে পড়ে। নাওয়াস আর ওর সাঙ্গপাঙ্গদের দুজন ছেলেকে মা’রতে দেখে প্রত্যাশার মাথায় র’ক্ত চড়ে যায়। নাওয়াস একজনের কলার টেনে মাটি থেকে তুলল। ঘুষি মারতে নিবে, তৎক্ষণাৎ হাতে টান অনুভব হয়। এখানে প্রত্যাশাকে দেখে মিন্টু,পিয়াশ,তন্ময় অবাক হয়। মিন্টু তো প্রত্যাশাকে দেখা মাত্রই লুকিয়ে পড়ে। নাওয়াস পিছে ফিরতে প্রত্যাশাকে দেখতে পায়। প্রত্যাশাকে দেখা মাত্র নাওয়াসের পোক্ত চোয়াল আরও শক্ত হয়ে আসে।

“দিন দুপুরে গুণ্ডামি করতে লজ্জা করে না?”

“হাত ছাড়ো!”

নাওয়াসের নিরেট চোয়াল। প্রত্যাশা নাওয়াসের কথা সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করল। নিজের মতো বলতে লাগল।

“একজন মানুষ হয়ে, অন্য আরেকজন মানুষকে কেউ এভাবে মা’রে? আপনার মধ্যে কী বিন্দু মাত্র দয়া-মায়া নেই?”

নাওয়াস রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। দিকবেদিক ভুলে প্রত্যাশার থেকে নিজের হাত ঝাটকা মে’রে ছাড়িয়ে নিলো। আকস্মিক পুরুষালি ঝাটকাই প্রত্যাশা দু-পা পিছিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের টুকরোতে পা লেগে মাঝ রাস্তায় পড়ে যায়। নাওয়াসের এভাবে ধাক্কা দেওয়ায় প্রত্যাশা হতভম্ব হয়ে যায়। নাওয়াস রাগে দন্তে দন্ত পিষে বলল,

“না নেই। আমার কোনো দয়া- মায়া নেই। আমার মতো বখাটেদের দয়া-মায়া থাকে না।”

নাওয়াস ছেলেটা কে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিলো। বাইকে বসে রাগে চটে সেখান থেকে প্রন্থান করল। প্রত্যাশার বিস্ময় ভাব কাটে আশ-পাশের মানুষের কানাকানিতে। রাস্তার মাঝে ছোটো খাটো একটা জটলা পাকিয়ে গেছে। প্রত্যাশা নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায়। রাস্তায় জমায়েত উৎসুক লোকেদের উদ্দেশ্যে ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে,

“তামাশা দেখা শেষ হয়েছে?”

প্রত্যাশার ঝাঁঝাল বাক্যে ভিড় কমে গেল। প্রত্যাশা একটা রিঁকশা দেখে রিঁকশায় চড়ে বসল। আজ আর বুটিকে গেল না। বরং বাড়ি ফিরে গেল। বাড়িতে ঢুকতেই পূর্ব ইমামের মুখোমখি হতে হলো। প্রত্যাশা মনে মনে বলে,

“আজকের দিনটায় খারাপ। নিশ্চয়ই বাবা ওকে এখন কথা শোনাবেন।”

প্রত্যাশার ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই পূর্ব ইমাম ধমকে ওঠেন।

“কী শুরু করেছো তুমি? আমার মান-সন্মান ধুলোয় না মিশেনো পর্যন্ত কী তুমি খান্ত হবে না?”

স্বামী চিৎকারে মিনা বেগম ছুটে আসেন। মেয়েকে বাড়িতে দেখে যতটা না অবাক হোন। তার থেকেও বেশি অবাক হোন মেয়ের কাঁদায় মাখামাখি অবস্থায়। ধীম স্বরে শুধান,

“কী হয়েছে?”

“কী হয়নি বলো। আজ আবার ওই বখাটেদের সাথে মা’রা’মা’রি করেছে।”

“বাবা আমি মা’রামা’রি কর…”

প্রত্যাশার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই পূর্ব ইমাম ধমকে ওঠেন।

“চুপ কর!”

প্রত্যাশা ফের হাঁ করতে নিলে মিনা বেগমের ইশারায় চুপ হয়ে যায়। পূর্ব ইমাম প্রত্যাশাকে কড়াকড়া আরো কিছু বাক্য শুনিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। উনি বের হতেই প্রত্যাশা মুখ ফুলিয়ে বলে,

“বিয়ে করার জন্য আর লোক পাওনি? এই খচ্চর লোকটাকেই পেয়ে ছিলে?”

মিনা বেগম চোখ রাঙিয়ে বলেন,

“প্রত্যাশা উনি তোমার বাবা হয়।”

“ধুর..”

প্রত্যাশা ধুপ ধাপ পা ফেলে চলে যায়।
.
.
.
নিহান টিফিন খেতে নিয়েছিলো মাত্র। তখন একজন ছেলে এসে বলল,

“ভাই আমার না আজ টিফিন আনা হয়নি। তোর থেকে খেতে পারি?”

নিহান হাসি মুখে বলল,

“কেন পারবি না। অবশ্যই পারবি। আয় বস।”

নিহান ছেলেটাকে বসার জায়গা করে দিলো। ছেলেটা একটা স্যান্ডউইচ খেয়ে নিলো। আরেকটাই আছে। তা দেখে বলল,

“এটাও খাবো?”

নিহান স্যান্ডউইচ খাওয়ার জন্য সবে হাতে নিয়েছিলো। বন্ধুর কথায় স্যান্ডউইচ এগিয়ে দিলো হেসে বলল,

“নে!”

ছেলেটা স্যান্ডউইচ খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়াল বলল,

” আমি তো দুটোই খেয়ে নিলাম। তুই কী খাবি?”

“সমস্যা নেই! আমি কিছু কিনে খেয়ে নিবো।”

“থ্যাংঙ্ক’স রে! আমার অনেক খিদে পেয়েছিলো।”

ছেলেটা চলে গেল। নিহান পকেট হাতরে দেখলো টাকা নেই। সকাল থেকে অনেকে প্রয়োজন বলে নিয়ে ছিলো। নিহান হাসলো। এই সব কিছু পিউ এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছে। নিহান উঠে চলে যেতে নিলে, কেউ ওর দিকে টিফিন বক্স বাড়িয়ে দেয়। হাতের মালিককে দেখে নিহান কিঞ্চিৎ চমকায়। চমিকত সুরে বলে,

“পিউ!”

“তুমি আমার সাথে খাবার শেয়ার করবে?”

নিহান কিয়ৎক্ষণ পিউয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মস্তিষ্কের নিউরন কথাটা ধরতেই বিস্মিত হয়। নিজের বিস্ময় ভাব রেখেই তুরন্ত বলে,

“না না! তার প্রয়োজন নেই। তুই খা।”

পিউ নিহানের মুখো মুখি বেঞ্চে বসে বলল,

“কেন প্রয়োজন নেই? তুমি না বলেছিলে আমি তোমার বন্ধু হয়? তাহলে বন্ধুর সাথে টিফিন শেয়ার করতে প্রব্লেম কোথায়? নাকি তুমি আমায় সত্যি সত্যি বন্ধু ভাবো না?”

নিহান যেন বড়ো সড়ো ধাক্কা খেলো। বিস্মিত লোচনে পিউকে দেখে বলল, “বন্ধু?”

“হ্যাঁ আমি আর তুমি। আজ থেকে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাকে আবার তোমার ধান্দাবাজ বন্ধুের মতোন ভেবো না। যারা শুধু নিয়েই খা’লাস। আমি পিওর, লয়াল ফ্রেন্ড।”

পিউয়ের নিঃসৃত বাক্যে নিহান বলল,

“আমি তোর টিফিন শেয়ার করতে পারি। তবে একটা শর্তে।”

“কী শর্ত?”

“তোকে আমায় তুই সম্বোধন করতে হবে। বন্ধু হলে পাক্কাওয়ালা বন্ধু হতে হবে।”

পিউ হেসে বলল,

“ওকে ডান! এখন ঝটপট খাওয়া শুরু কর। আজ টিফিন আমার আপু বানিয়ে দিয়েছে। আপু কিন্তু দারুণ রান্না করে। বিশেষ করে আপুর বানানো নুডুলস আমার সব থেকে প্রিয়।”

“ওকে পিওর পিউ!”

বলেই নিহান হেসে ফেলল। নিহানের সাথে পিউও হাসে।
__________

রাত নয়টার সময় নাওয়াস বাড়ি আসে। নিজের রুমে ঢুকে গায়ের শার্টটা খুলে রাখে। ওয়াশরুমে ঢুকতে নিবে। তখন রিনা আসেন। ধীরুজ কণ্ঠে বলে,

“এখনও ফ্রেশ হওনি? ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আমি খাবার দিয়েছি।”

“আমি খাবো না। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। আপনারা খেয়েনিন!”

নাওয়াসের নিরেট স্বর। রিনা আহত হয়। ম্লান কণ্ঠে বলল,

“নিহান তোমার সাথে খাবে বলে, অপেক্ষা করে ছিলো।”

নাওয়াস কোনো প্রত্যুত্তর করে না। রিনা দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করেন। আজ অব্দি উনি নাওয়াসকে বুঝে উঠতে পারেনি। নাওয়াসের সাথে ফ্রি হওয়ার কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু হতে পারেননি। ছোটো বেলায় যদিও একটু কাছে ঘেষতে পারতেন। বড়ো হওয়ার পর সেটাও পারেন না। ছোটো বেলায়ও নাওয়াস একা একা থাকত। কারো সাথে মিশতো না। এমন কী নিহানের সাথেও না। নিহান বড়ো ভাই বলতে পা’গল। কিন্তু নাওয়াস ওর সাথে ঠিক করে কথাই বলে না। ছোটো ভাই বলে কাছে ডেকে আদর করে না। দিন দিন কেমন এগুয়ে,জেদী হয়ে গেছে। এখন তো বখেই গেছে। ওনার মনে হয় নাওয়াস ওনাকে পছন্দ করেন না। হয়তো সৎ মা সেই জন্যই। আর নিহান ওনার ছেলে বলেই নিহানকেও, নিজের কাছে যেতে দেয়না। মাঝে মাঝে রিনার এটাও মনে হয় উনি মা হিসেবে ব্যর্থ। ওনার কারণেই নাওয়াস এমন বখে গেছে। রিনা মলিন মুখে চলে যেতে নিলে, নাওয়াসের নিঃসরণকৃত বাক্যে থেমে যান।

“আপনি খাবার দিন। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”

রিনার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। খুশি মনে ঘাড় নেড়ে চলে যান। নাওয়াস সচারচর ওনাদের সাথে ডিনার করে না। করতে চাই না। ভুল-ভবিষ্যৎ কখনো-সখনো করে। তাই আজ নিহান বলেছিলো নাওয়াসের সাথে খাবে। যদিও রিনা বলেছিলো নাওয়াস রাজি হবে না। কিন্তু নিহান দৃঢ়তার সহিত বলেছিলো,

“তুমি দেখো ভাইয়া আজ আমাদের সাথেই খাবে।”

মনে মনে কথা গুলো ভেবে রিনা মুচকি হাসেন।

পিউ আজকেও প্রত্যাশার সাথে ঘুমাতে এসেছে।

“আপু জানো আজ কী হয়েছে?”

প্রত্যাশা বিছানা গোছাছিলো। পিউয়ের কথায় কাজ করতে করতেই বলল,

“না বললে কী করে জানবো?”

পিউ বোকা হেসে বলল,

“আজ সকালে যখন আমি স্কুলে যাচ্ছিলাম। তখন আমাদের পাশের এলাকার দুজন বখাটে আমায় উত্যক্ত করছিলো।”

প্রত্যাশা আতঙ্কিত হয়ে বলল,

“কীহ্! কে তোকে উত্যক্ত করেছে? তোর সাথে কিছু করেনি তো?”

“আরে আপু থামো। আগে আমার কথা শুনো। আমাকে যখন ওরা উত্যক্ত করছিলো, তখন সে দিক দিয়ে নাওয়াস ভাইয়া যাচ্ছিল। আমায় বিরক্ত করতে দেখে ওদের পিটিয়ে ছিলো।
পরে তো ওরা নাওয়াস ভাইয়ার হাত থেকে পালিয়ে যায়। তখন নাওয়াস ভাইয়াও ওদের পিছু ধাওয়া করে।”

পিউয়ের কথায় প্রত্যাশার সকালের ঘটনা সরণ হয়। মনে মনে আওড়ায়,

“সকালে কী নাওয়াস ওই জন্যই ছেলে গুলো কে মা’রছিলো?”

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৪

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া_আফরিন_ইমারা
#পর্বঃ০৪

টিফিনের ঘণ্টা বাঁজতে সকলে হৈ হৈ করে ওঠে। স্কুল জীবনের সব থেকে মুধুর স্মৃতি, এই টিফিন টাইমেই তৈরি হয়। একে অন্যের টিফিন ভাগ করে খাওয়া। এক সাথে গোল টেবিল বৈঠক করা। স্যারদের নামনে সমালোচনা করা। আরো কতশত মজার মজার অনুভূতি তৈরি হয়। তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। পিউ টিফিন খাওয়া শেষে বোতলে পানি আনতে বাইরে যায়। তখন দেখে রিহান তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। বলা বাহূল্য রিহানের ভাই বখাটে বলে সবার মা-বাবাই, সবাইকে ওর সাথে মিশতে মানা করেছে। তারপরও অনেকেই মেশে। কিন্তু সেটা ব্যক্তি স্বার্থে। রিহান পরিষ্কার মনের মানুষ কোনো প্যাচগোচ নেই মনে। যাদের কে বন্ধু ভাবে, তারা সবাই ওর থেকে সুবিধা নিতে ওর সাথে মেশে। যখন যার যা প্রয়োজন পরে রিহানের সাথে চাই। টাকা হোক কিংবা অন্য কিছু। বোকা রিহান হাসি মুখে ওদের সব আবদার মেটায়। পিউয়ের নিকট রিহান কে সত্যিই বোকা মনে হয়। বোকা না হলে কেউ এমন করে? মানছি তোর বাবার মেলা টাকা। তাই বলে কী তুই বিলিয়ে বেড়াবি। হুঁহ্! হঠাৎ পিউয়ের গত কাল প্রত্যাশার বলা কথা মনে পড়ে। কালকের জন্য নিহানের আসলেই একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। নিহানের বন্ধুরা প্রয়োজন শেষে এটা সেটা বাহানা দিয়ে চলে যায়। নিহান হাসি মুখে বিদায় দিলো।

“নিহান!”

অকস্মাৎ মেয়েলি কণ্ঠে নিহান ভরকাই। পিছে ফিরে পিউকে দেখে কিঞ্চিৎ চমকায়। পরপর হেসে বলে,

“আরে পিউ কেমন আছিস?”

“ভালো।”

“কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ মানে না। মানে আসলে…”

“কি বলবি বল। এত মানে মানে কেন করছিস?”

“থ্যাংঙ্ক’স! কালকে আমার হেল্প করার জন্য।”

নিহান হেসে বলে,

“বন্ধুদের সাথে এত ফরমালিটি করতে নেই।”

“বন্ধু?”

“হুঁ আমরা তো একসাথে পড়ি। তাহলে তো বন্ধুই হলাম। তোরা সবাই আমার বন্ধু। যদিও সবাই আমাকে বন্ধু ভাবে না।”

নিহানের শেষক্ত কথায় পিউয়ের বেশ খারাপ লাগে। পরপর নিহান নিজের মুখে হাসি টেনে বলে,

“ঘণ্টা দিয়ে দিলো। ক্লাসে চল। দেরী হলে স্যার বকবে।”

নিহান চলে যেতে নিলে পিউ পিছু ডাকে। নিহান প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ফিরে চায়। পিউ বলল,

“ওরা কেউ তোমায় নিজের বন্ধু ভাবে না। নিজের প্রয়োজন মেটানোর মেশিন ভাবে। প্রয়োজন মিটে গেলে, ওরা তোমায় চিনেও না। বিপদে কখনও তুমি ওদের নিজের পাশে পাবে না।”

নিহান ম্লান হাসে। তারপর বলল,

“জানি! আমি ওদের প্রয়োজন, প্রিয়জন না। কিন্তু তবুও প্রয়োজনের খাতিরে মিথ্যে মিথ্যে হলেও বন্ধু তো হয়…”

নিহান আর দাঁড়ায় না। ক্লাসের দিকে চলে যায়। পিউয়ের মনটা খারাপ হয়ে যায়। কাল প্রত্যাশা ঠিকই বলেছিল। এতদিনে আজ যেন পিউ সব কিছু বুঝতে পারছে। একটা মানুষ কতটা একা হলে, সব জেনেও তাদের সাথে মিশে নিঃস্বার্থ ভাবে সবার উপকার করে। ছোটো বড়ো সবার বিপদে নিহান সবার আগে ছুটে যায়। ছেলেটা এই অল্প বয়সেও অনেক বুঝদার। পিউয়ের মনটা বিষণ্ন হয়ে যায়।
.
.
.
আজ পিউদের স্কুল চারটার আগে ছুটি হয়ে গেছে। কোনো এক অগ্যাত কারণে টিফিনের পরের তিনটে ক্লাসের শুধু একটি ক্লাস হয়েছে। টিফিনে পর থেকে পিউয়ের পেটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হয়। পিউ সেরকম পাত্তা দেয়না। ছুটির পরে পিউ বাড়ি যাওয়ার জন্য যখন ব্যাগ গোছাছিল। তখন খেয়াল করে বেঞ্চে লাল তরল পদার্থ লেগে আছে। পিউ আতঁকে ওঠে। স্কুল ড্রেসের সফেদ কামিজেও সেই দাগ লেগে গেছে। এতক্ষণে পেট ব্যথার কারণ উপলব্ধি করতে পারে পিউ। সঙ্গে সঙ্গে পিউয়ের মুখশ্রী গভীর তিঁমিরে ডুবে যায়। স্কুলের পিয়ন তালা দেওয়ার জন্য, পিউকে তাড়াতাড়ি কক্ষ থেকে বের হতে বলে। পিউ নিজের স্কার্ফ খুলে কোমড়ের দিকে নামিয়ে বাধে। ধীর পায়ে কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যায়। পেটে ব্যথা বেড়েছে। এভাবে বাড়ি যাওয়া সম্ভব না। ওর কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসটাও নেই। পূর্ব ইমাম ওকে নিতে আসবেন, এখনও এক ঘণ্টা পর। পিউয়ের ভিষণ কান্না পায়। কান্নার তোপে শুভ্র মুখশ্রী লাল হয়ে যায়। স্কুলের মাঠের বেঞ্চে বসে পিউ নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করছিল। নিহান বাড়ি যেতে গিয়ে পিউকে দেখে থেমে গেল। ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,

“পিউ তুই এখানে বসে কেন? বাড়ি যাবি না?”

পিউ ঠোঁট কামড়ে বলল,

“বাবা নিতে আসবে। তাই বসে আছি।”

“তাহলে তুই স্যারকে বলল, আঙ্কেলকে ফোন করে বলতে। তোর তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে।”

“বাবার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এখন ফোন দিলেও আসতে পারবে না।”

“তোর আপু কে ফোন দে।”

“আপু বাসায় নেই। আর আমি আপুর নাম্বার জানি না।”

“ওহ্!”

নিহান পিউয়ের লালচে মুখশ্রী দেখে সন্দিহান হয়ে বলল,

“তোর কী কোনো সমস্যা হয়েছে?”

পিউ চমকিত মাথা তুলে তুরন্ত বলে,

“সসমস্যা? কই না তো আমার কোনো সমস্যা হয়নি তুমি যাও। এখন তো দিন। আর স্কুলের ভিতরে আছি। একা অপেক্ষা করতে পারবো। যাও তুমি যাও।”

নিহান গাল ভরে শ্বাস নিলো। বুঝল পিউ ওকে বলতে চাই না। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। বাইরে গিয়ে নাওয়াসের সাথে দেখা হয়। অবাক হয়ে বলল,

“ভাইয়া তুমি?”

“হুম! তোমার নাকি তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেছে। সেজন্য বাবা তোমায় বাসায় নিয়ে যেতে বলল।”

নিহান ছোটো করে বলল, “ওহ্!”

“আসো!”

“ভাইয়া!”

নিহানের ডাকে নাওয়াস থেমে বলল,

“হুম!”

“তোমার সেদিন সন্ধ্যেবেলার ওই মেয়েটার কথা মনে আছে? ওই যে পিউ বলে মেয়েটা? যার জন্য আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম?”

নাওয়াস ভ্রু গুটিয়ে চেয়ে থাকে। নিহান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পুনরায় বলে,

“আমার মনে হয় ও আবার কোনো প্রব্লেমে পড়েছে।”

“হুম তো?”

“আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু ও আমায় বলেনি। তুমি একটু গিয়ে দেখবে ওর কী সমস্যা হয়েছে?”

নাওয়াস বিরক্তিতে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বলল,

“সে যখন নিজের প্রব্লেম শেয়ার করতে চাইছে না। তখন তুমি কেন তাকে সাহায্য করতে চাইছো? আর তাছাড়া ও প্রব্লেমে পড়লে তোমার কী?”

“ও আমার বন্ধু হয় ভাইয়া। আমার বন্ধু প্রব্লেমে আছে। কোনো কারণে সেটা সে শেয়ার করতে পারছে না। এটা বুঝেও আমি হাত গুটিয়ে রাখতে পারবো না। তুমি প্লিজ একটু দেখো না। যদি তোমায় বলে তো।”

নিহানের নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াস স্তব্ধ হয়ে যায়। ছেলেটা বয়সের তুলনায় অধিক বুঝদার। বিষয়টা নাওয়াসকে বিস্মিত করছে। নাওয়াস ছোট্ট করে বলে,

“চলো!”

নিহান খুশি হয়ে যায়। নাওয়াস নিহানকে সাথে নিয়ে স্কুলের ভিতরে আসে। পিউ পেট চেপে ধরে আছে। অক্ষি কোটরে জল জমা হয়েছে। এতক্ষণ আটকে রাখলেও, টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। নাওয়াস সেই দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে যায়। নাওয়াসের আর বুঝতে বেগ পেতে হয় না। পিউয়ের কী হয়েছে।

“কী হলো ভাইয়া? দাঁড়িয়ে গেলে কেন?”

নাওয়াস নিজের পকেট থেকে বাইকের চাবি বের করে নিহান কে দিয়ে বলল,

“তুমি বাড়ি চলে যাও। তোমার মা চিন্তা করবে।”

“কিন্তু ভাইয়া পিউ…”

“এক কথা বার বার বলা আমার পছন্দ না।”

নিহান কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। নাওয়াস নিজেও চলে যায়।
________

পিউ যখন ঠোঁট কাঁমড়ে কান্না আটকাতে ব্যস্ত ছিলো। তখন কেউ একজন ওর সামনে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো। পিউ বাড়িয়ে রাখা হাতের মালিক কে দেখতে মাথা তুলে চাইলো। নাওয়াসকে দেখে পিউ ভয় পায়। ভয়ে গুটিশুটি হয়ে ব্যাগ আকঁড়ে ধরে। নাওয়াস পিউকে অবলোকোন করে। মুখ ভরে শ্বাস নিয়ে বলল,

“ভয় নেই। তোমার যা প্রয়োজন এতে আছে।”

পিউ চমকিত নাওয়াসের চিত্ত পানে চাইল। নাওয়াস ইশারায় প্যাকেট নিতে বলল। পিউ কাঁপা হাতে প্যাকেট নিয়ে,ভিতরে দেখা মাত্রই লজ্জা পেল। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।

“আমাকে তোমার বড়ো ভাইয়া মনে করতে পারো। এত আনইজি ফিল করার কিছু নেই।”

পিউ ছোট্ট করে বলল,

“ধন্যবাদ ভাইয়া!”

প্যাকেটটা নিয়ে পিউ ওয়াশরুমে চলে গেলে। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে। নাওয়াস তখনও ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। নাওয়াস কে দেখে পিউয়ের ভিষণ অস্বস্তি হয়।

“এটা লজ্জা পাওয়ার বিষয় না। এটা একটা ন্যাচারাল সার্কেল। প্রতি মেয়েকে নারী এবং একজন মা হিসেবে, পূর্ণতা দেওয়ার প্রসেস এর মাধ্যমেই শুরু হয়। আমার তেমন ধারণা নেই। তোমায় ওতো ভালো বোঝাতেও পারবো না। শুধু এতটুকু জানি, এই প্রক্রিয়া একজন মেয়েকে পরিপূরণ ভাবে নারীতে রূপান্তর করে।”

পিউ নাওয়াসের বাক্যে বিস্মিত হয়। আবারও বলে,

“আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।”

“আমায় ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না। তোমাকে সাহায্য নিহান করেছে। আমি মাধ্যম মাত্র। এখন আসো তোমায় বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।”

নাওয়াস আগে চলে গেলো। পিউ পিছন পিছন গেল। নাওয়াস একটা রিঁকশা ডেকে পিউকে তুলে দেয়। এবং ভাড়াও মিটিয়ে দেয়। পিউ ভাড়া দিতে মানা করলেও নাওয়াস শোনে না। সাথে পিউ অবাকও হয়। ও তো জানে বখাটেরা ভাড়াটারা দেয়না। এমনিই ফ্রি ফ্রি যাতায়াত করে, ভয় দেখিয়ে।

রাতে পিউ আজ প্রত্যাশার সাথে ঘুমাতে চাই। প্রত্যাশা দ্বিমত করে না। বরং বোনকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে, বোনের মাথা নিজের কোলে নিয়ে বিলি কেটে দিতে থাকে। পিউ বোনের আদর উপভোগ করতে করতে হুট করেই অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে।

“আচ্ছা আপু মানুষ বখাটে কেন হয়?”

হঠাৎ পিউয়ের এহেন প্রশ্নে প্রত্যাশা ভ্রু সংকুতি করে শুধাল,

“হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করছিস?”

পিউ ওঠে বসে বলল,

“বলো না আপু। মানুষ বখাটে কেন হয়?”

প্রত্যাশা পিউকে বালিশে শুয়ে দিয়ে নিজে আধ শোয়া হয়ে বলে,

“মানুষ বিভিন্ন কারণে বখাটে হয়, কেউ পরিবারের জন্য, তো কেউ একাকিত্বের জন্য, কেউ আবার সঙ্গ দোষে। আসলে কী জানিস তো কোউ শখের বসে খারাপ হয় না। কোনো না কোনও কারণ থাকে।
কিন্তু আমরা মানুষের খারাপ রূপ দেখে ভেবে নিই সে জন্মগতই খারাপ। এমনকি এটাও ভাবি তার ফ্যামিলি, বন্ধু রিলেটিভ সবাই খারাপ। যার কারণে তার সাথে তার পরিবার,আত্মীয়-স্বজনদের কেউও এড়িয়ে চলি। কিন্তু তুই এগুলো কেন জিজ্ঞেস করছিস?”

“আজকে না নাওয়াস ভাইয়া আমাকে হেল্প করে ছিলো।”

প্রত্যাশ কুঁচকে বলল,

“নাওয়াস?”

“এলাকার বখাটে নাওয়াস আফফান।”

এবার প্রত্যাশা অবাক হয়। পরপর জানতে চাই কী সাহায্য করেছিলো। পিউ সব কিছু প্রত্যাশাকে বলে। প্রত্যাশা সব শুনে বড়ো সড়ো ধাঁক্কা খায়। তবে কিছু বলে না। পিউ কে ঘুমিয়ে যেতে বলে।

নিহান আজ নাওয়াসের সাথে শোয়ার জন্য বায়না করে। নিহানের জেদের কাছে হার মেনে নাওয়াস ওকে ঘুমাতে নিল। নাওয়াস চোখ বন্ধ করে আছে। নিহান একবার নাওয়াস কে দেখে বলল,

“ভাইয়া!”

“হুম!”

“তুমি পিউকে হেল্প করেছিলে?”

“তোমার কী মনে হয়?”

“আমি জানি তুমি করেছিলে। সবাই তোমায় খারাপ বলেও তুমি খারাপ নও।”

নাওয়াস নিরেট কণ্ঠে বলল,

“কথা বলার হলে,নিজের রুমে যাও।”

নাওয়াসের নিরেট স্বরে নিহান চুপ হয়ে যায়। কিয়ৎক্ষণ পর নিহান ফের বলল,

“আমার মানুষকে হেল্প করতে খুব ভালো লাগে। ঠিক তুমি যেভাবে করতে।”

নাওয়াস নিহানের নিঃসৃত বাকদ্বয়ে চমকায়। নিহান ফের বলে,

“আমি বড়ো হয়ে তোমার মতো হতে চাই।”

নাওয়াস তাচ্ছিল্যপূর্ণ কণ্ঠে বলে,

“আমার মতো হলে তোমাকে নিয়েও বাবার লজ্জা হবে।”

“উহুঁহ্! তোমায় নিয়ে বাবা গর্ব করবে। আগে যেমন করতো।”

নাওয়াস উত্তর করে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে। মিনিট দশেক পরে নিহান ঘুমিয়ে যায়। ঘুমের ঘরে নাওয়াসকে ঝাপটে ধরে। নাওয়াস নিহানের মাথা হাত বুলিয়ে বলল,

“তুমি কখনোই আমার মতো না হও।”

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০৩

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া_আফরিন_ইমারা
#পর্বঃ০৩

বড়ো এবং বেশ পুরনো একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে নাওয়াস ও তার বন্ধুরা বসে আছে। এখান থেকে কিছু দূরেই একটা চা-য়ের দোকানও আছে। নির্জন জায়গা। আশেপাশে দুয়েকটা বাড়ি আছে। তাও দূরে দূরে। এখানে লোকসমাগম কম বিধায় নাওয়াস দিনের বেশির ভাগ সময় এখানেই থাকে। এটা মূলত নাওয়াসদের আড্ডার জায়গা। মিন্টু তিন কাপ চা নিয়ে আসে। প্রথমে নাওয়াস কে দিলো। নাওয়াস চা নিয়ে এক চুমুক বসিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিস?”

“কোন মেয়ে?”-শুধাল তন্ময়।

“কালকের ওই মেয়েটা!”

মিন্টু সবে মাত্র চা-য়ে এক চুমুক দিয়েছিলো। কালকের ওই মেয়েটার কথা শুনে প্রথমেই মানসপটে থা’প্প’ড়ের দৃশ্য ভেসে ওঠে। সাথে সাথে মিন্টুর গলায় চা আটকে যায়। মিন্টু কেঁশে ওঠে। তন্ময় মিন্টুর পিঠে চাপ দিয়ে বলে,

“আরে আস্তে তোর চা কে নিয়ে যাচ্ছে না।”

মিন্টু নিজেকে সামলে বলে,

“ভাই ওই মেয়ের খবর নিয়ে কী করবেন? কী দরকার শুধু শুধু ওর খবর নেওয়ার? ছেড়ে দিন না। দেখা গেল খবর নেওয়ার জন্য, এসে আবার থা’প্প’ড় মা’রবে। আমি ওই মেয়ের থা’প্প’ড় আর খেতে চাই না। বাবা কী সাংঘাতিক জোর গায়ে। আপনি নিজেও তো খেয়েছেন ব…”

কথায় কথায় মিন্টু বেশি বলে ফেলেছে। বুঝে,নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। নাওয়াস ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মিন্টুর দিকে তাকিয়ে আছে। এই বুঝি চোখের অনল দিয়ে ভস্ম করে দেবে। মিন্টু শুষ্ক ঢোক গেলে। নাওয়াসের থেকে দু হাত দূরে চলে যায়। থড়বড় করে বলে,

“একটু লাগেনি। মেয়েদের হাতে লাগে নাকি। ওদের হাত তো কমল হয়। তুলার মতো নরম হয়। লাগে তো ছেলেদের হাতে। একদম ইটে মতো। না লোহার মতো, না না পাথরের মতো। যেমন আপনার হাতে লেগেছিলো। আমি তো বধির হতে হতে বেঁচে গেছি।”

তন্ময় মাথা চাঁপড়াই। এই ছেলেটা এত বাজে বকে। যার জন্যই ঝাড় খায় বেশি। নাওয়াসকে ওরাও ভয় পায়। তবে মিন্টু একটু বেশিই পায়। আর ভয়ে উলটো পালটা বেশি বলে। নাওয়াসের রাগ বাড়ে। মিন্টু কে এক রাম ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। নাওয়াসের ধমকে মিন্টুর হাত থেকে চায়ের কাপ ছুটে যায়। কাঁচের গ্লাস নিচে পড়ে ঝনঝনিয়ে ভেঙে যায়। নাওয়াস ওর দিকে এগোতে গেলেই পিয়াশ আসে।

“মেয়েটার খবর নিয়ে এসেছি।”

পিয়াশের নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াস থেমে যায়। নাওয়াস থেমে যাওয়া মিন্টু গাল ভরে শ্বাস টানে। একপলক মিন্টুকে দেখে নিয়ে, ক্ষীণ কণ্ঠে বলে,

“বল!”

“মেয়েটার নাম প্রত্যাশা ইমাম। পূর্ব ইমামের মেয়ে।”

নাওয়াস পিয়াশকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো। নিরেট কণ্ঠে বলল,

“ওষুধ ব্যবসায়ী পূর্ব ইমাম?”

“হুম!”

নাওয়াস তন্ময়ের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে তন্ময় ভরকে যায়। নাওয়াস দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

“তুই জানিস আমি মিথ্যে পছন্দ করি না। তারপরও কেন বলেছিলি মেয়েটা কে খুঁজে পাসনি। পূর্ব ইমামের মেয়ে ছোটো?”

“ভভাই বিশ্বাস করেন আমি মিথ্যে বলিনি। আমি সত্যিই জানি না রাতা-রাতি কীভাবে, পূর্ব ইমামের এত বড়ো মেয়ে হয়ে গেলো। আআমি তো শুধু পপিউ কে চিনি। আপনার ভাইয়ের সাথেই পড়ে।”

“ও সত্যি বলছে। প্রত্যাশা ইমাম বিদেশে ছিলো বিগত পাঁচ বছর ধরে। প্রত্যাশা বিদেশে যাওয়ার পর, পূর্ব ইমাম ওই পাড়ায় আসেন। উনি কখনও নিজের বড়ো মেয়ের কথা কাউকে বলেননি। বিধায় অনেকই জানেনা যে ওনার আরও একটা মেয়ে আছে।”

পিয়াশের ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর নাওয়াস থেমে যায়। চা-য়ের কাপ রেখে বাইকে উঠে বসে। হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট করবে। সেই সময় চা-ওয়ালা কাপ নিতে আসে। চা-ওয়ালা নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াস থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকে চায়।

“হায় হায়! তোমরা আবার আমার চায়ের কাপ ভাঙচ্ছো? একেই চা খাইয়া ট্যাহা দেওনা। তার ওপার দুদিন পরপর চা-য়ের কাপ ভাঙাই ফেলাও। আল্লাহ তোমার যত অবিচার গরীবের ওপারেই করান লাগে?”

লোকটা আহাজারি করতে থাকে। নাওয়াসকে থেমে যেতে দেখে ওরা তিন জন ঢোক গিলে একে অন্যের দিকে তাকায়। ইশায়ার চা-ওয়ালাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলে। পিয়াশই বলে,

“আরে চাচা থামেন। একটা কাপের জন্য কেউ এমন করে। আমি আপনাকে নতুন কাপ কিনে দেবো। চলেন চলেন।”

“তোমাগো আমি বিশ্বাস করি না। তোমরা হইলা মিথুক। প্রতিদিন বিনা পয়সায় চা খাও। আর কও আজ দিমু কাল দিমু। এমনে কইরা আমার মতো গরীবের হোক মা’রো। আল্লাহ তোমাগো কোনো দিন ভালা করবো না। গরীবের চোখের পানি বৃথা যায় না।”

নাওয়াস হেলমেট খুলে বাইক থেকে নেমে বয়সষ্ক লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,

“ওরা আপনাকে চা-য়ের দাম দেয়না?”

“নাটক করো? তুমিই তো ওদের মাথা। তোমার পথেই তো ওরা চলে। তোমার লিগাই তো ওদের এত সাহস। তোমার লোক কইয়া আমাগো মতো কত গরীবের থেকে বিনে পয়সায় জিনিস লইয়া যায়।”

নাওয়াস তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। ওদের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

“আপনি আমাকে বলুন আপনার কত টাকা হয়েছে। আমি সব পরিশোধ করে দিবো।”

লোকটা একবার নাওয়াস কে দেখে এক বছরের হিসেব করে বলল। নাওয়াস লোকটার পাওনার থেকে বেশি টাকা দিলো। তারপর বাইকে উঠে ওদের উদ্দেশ্যে গমগমে স্বরে বলল,

“আজকের মধ্যেই সবার টাকা পরিশোধ হয়ে যাওয়া চাই।”

ওরা ঝটপট মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। নাওয়াস বাইক নিয়ে চলে গেল। ওরা এতক্ষণে আটকে রাখা দম ছাড়ল।
__________

আশেপাশে থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। পিউ স্কুল ছুটির পর কোচিং করে। সামনে বোর্ড পরীক্ষা তাই রোজ কোচিং করাই। শীতের আমেজ চলে আসায়, বেলা আগের তুলনায় ছোটো হয়ে গেছে। মাগরিবের আযান এখন ছয়টার আগেই দেয়। পিউয়ের স্কুল ছুটি হতে হতে বিকেল হয়ে যায়। তারপর সেখান থেকে কোচিং এ যায়। সন্ধ্যে হয়ে আসায় প্রত্যাশা পিউকে নেওয়ার জন্য এসেছে। মোটা-মুটি অনেকেই চলে গেছে। পিউ আর নিহান ছাড়া সবাই চলে গেছে। পিউকে পূর্ব ইমামের নিতে আসার কথা থাকলেও উনি আসেননি। প্রায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছে পিউ। সন্ধ্যে নেমে আসায় একা দাঁড়াতেও ভয় পাচ্ছে। নিহান কে নেওয়ার জন্য আজকে নাওয়াস এসছে। নাওয়াস নিহানকে বাইকে উঠতে বলে। নিহান বাইকে উঠতে নিয়ে পিউ কে দেখে শুধায়,

“তুই বাড়ি যাবি না?”

অকস্মাৎ কণ্ঠ স্বরে পিউ চমকে ওঠে। নিহান কে দেখে বুকে ফু দিলো। ছোট্ট করে বলল,

“বাবা এখনও নিতে আসেনি।”

নাওয়াস ভ্রু কুঁচকে নিহান কে দেখে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“নিহান তুমি কী আসবে?”

নিহান তুরন্ত নাওয়াসের কাছে গিয়ে বলল,

“ভাইয়া ওকে এখনও কেউ নিতে আসেনি।”

নাওয়াস ভ্রু কুঁচকে বলে,

“তো?”

“ও একা একা থাকবে? দেখো না আশেপাশে কোনো লোকজন নেই। সন্ধ্যেও হয়ে গেছে যদি কোনো বিপদে পড়ে?”

নাওয়াস একপলক পিউয়ের দিকে চাইল। মেয়েটা বারবার সতর্ক দৃষ্টিতে আশেপাশে দেখছে। ব্যাগটাও বুকের সাথে শক্ত করে ধরে আছে। নাওয়াস বাইক স্ট্যান্ড করল। নিজেও নেমে দাঁড়ালো। পিউ আড়চোখে একবার ওদের দেখল। পরপর সাইডে আরও একটু সরে দাঁড়ালো। নাওয়াসের সম্পর্কে এলাকার সকলেই অবগত। পিউও জানে। নিহান নাওয়াসের ভাই হওয়াই, নিহানকেও কম বেশি সবাই চেনে। নিহান পিউয়ের ক্লাসমেট। পূর্ব ইমাম পিউ কে কড়া কণ্ঠে বারণ করেছে, নিহানের সাথে মিশতে। মনে মনে ভাবে,

“এরা এখানে দাঁড়িয়ে কেন আছে?”

পিউ দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করে। পিউয়ের দোয়া দরুদ পড়ার মধ্যে প্রত্যাশা এক প্রকাশ ছুটে আসে।

“স্যরি স্যরি। আমার আসতে লেট হয়ে গেছে। তুই ঠিক আছিস তো? মা হঠাৎ করে বলল বাড়ি ফেরার সময় তোকে সাথে করে নিয়ে আসার জন্য। আমি তো দূরে ছিলাম। তাই আসতে লেট হয়ে গেছে।”

প্রত্যাশা সাফায় দিতে কথা গুলো বলে দম নিলো। প্রত্যাশাকে দেখে পিউয়ের জানে পানি আসে। প্রত্যাশা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

প্রত্যাশা হালকা হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“ধুর বোকা মেয়ে। ভয়ের কী আছে? শোন তুই যত ভয় পাবি লোকে ততো তোর ভয়ের সুযোগ নেবে। তাই কখনও ভয় পাবি না। বরং শক্ত হবি। কেউ তোকে একটা আঘাত করতে চাইলে, তুই তাকে পাল্টা দুটো আঘাত করবি। বুঝেছিস?”

পিউ হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ায়। নাওয়াস কপাল ভাঁজ করে এতক্ষণ প্রত্যাশার কথা শুনচ্ছিল। প্রত্যাশার মনে হয় কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রত্যাশা সামনে তাকাতেই নাওয়াসকে দেখতে পায়। নাওয়াসকে দেখা মাত্রই প্রত্যাশার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।

“পিউ চল।”

প্রত্যাশা পিউকে নিয়ে চলে যেতে নিবে নিহান এগিয়ে এসে বলে,

“আপনি পিউয়ের আপু?”

নিহানের প্রশ্নে প্রত্যাশা একটু অপ্রস্তুত হয়। হাসার চেষ্টা করে বলে,

“হুম!”

“আমি নিহান পিউয়ের সাথেই পড়ি। এরপর থেকে পিউকে একটু তাড়াতাড়ি নিতে আসবেন। জায়গাটা বিশেষ ভালো না।”

নিহানের বিজ্ঞদের মতো কথা বলায় প্রত্যাশা শুধায়,

“তুমি কী আমার বোনকে প্রহরা দিচ্ছিলে?”

“নাহ্ মানে ওই আরকি! একা দাঁড়াবে যদি বিপদ হয়। তাই আমি আর ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

প্রত্যাশা স্মিত হেসে নিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“থ্যাঙ্ক ইয়্যু! তুমি অনেক দায়িত্ববান ছেলে। এরকমই থেকেও। কারো মতো বখে যেও না।”

শেষোক্ত কথাটা যে নাওয়াসের উদ্দেশ্যে ছিলো সেটা নাওয়াসের বুঝতে বেগ পেতে হয়। নিহান নিজেও বোঝে। সাফায় দিতে বলতে চাই,

“আমার ভাইয়া অনেক ভা…”

“নিহান চলে আসো! দেরী হচ্ছে।”

নিহানের বাক্য সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই নাওয়াস গম্ভীর স্বরে ডাকে। নিহান দেখে নাওয়াস বাইকে উঠে গেছে। কথা না বাড়িয়ে, নিহান বিদায় নিয়ে চলে যায়। পিউ বলে,

“আপু তুমি ওদের সাথে কথা কেন বললে?”

প্রত্যাশা ভ্রু কুঁচকে বলে,

“কেন?”

“বাবা মানা করেছে ওর সাথে মিশতে।”

“কেন মানা করেছে?”

“ওর ভাইয়া তো বখাটে। সেই জন্য।”

“শোন পিউ কারো ভাই বখাটে মানে, যে সেও খারাপ এমনটা নাও হতে পারে। আর তাছাড়া একজনের দোষে অন্যদের শাস্তি দিতে নেই। খারাপ ব্যবহার করতে নেই। নিহান।কিন্তু আজ তোর সাহায্য করেছে। এমন নির্জন জায়গায় তোর সঙ্গ দিয়েছে। তোর উচিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
কারো ভাই বা পরিবারের কেউ খারাপ বলে তুই তাকেও খারাপ বলবে,এড়িয়ে যাবে। এটা মোটেও ভালো বিষয়টা। এতে অপর মানুষটা কষ্ট পাবে। এমনটা আর করবি না ওকে?”

“আচ্ছা!”

“এখন বাসায় চল। মা চিন্তা করবে।”

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০২

0

এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া_আফরিন_ইমারা
#পর্বঃ০২

নীল সাদা অম্বরে সফেদ কাদম্বিনী সূর্যের হলদে-কমলা রশ্মি মেখে ভেসে বেড়াচ্ছে সুবিশাল অম্বর জুড়ে। মেঘ-সূর্যরশ্মির রঙ খেলায় নীলাম্বর হয়ে উঠেছে অত্যাধিক আকর্ষনীয়। সেই সৌন্দর্য বসুন্ধরার প্রাণী জৎগতকে করেছে বিমোহিত,মুগ্ধ। তবে এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দুজন মানব-মানবীর মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়। প্রত্যাশা ভ্রু সংকুচিত করে নাওয়াস কে দেখচ্ছে। দুজনের কারো মুখেই রা নেই। ফের বাতাসে মিশে পুরুষালী নিরেট স্বর।

“তুমিই সকালে আমার বন্ধুকে মে’রে ছিলে?”

প্রত্যাশার সংকুতিচ ভ্রুদ্বয় আরেকটু প্রগাঢ় হয়। পরপর মানসপটে ভাসে সকালের ঘটনা। সাথে সাথেই নাওয়াসের সাথে থাকা বাকিদের দিকে দৃষ্টিপাত করে। ওই তো ব্লু গেঞ্জি পরিহত এক ছেলের পিছে, সকালের সেই ছেলেটা মুখ লুকিয়ে আছে। প্রত্যাশা ক্যাট কণ্ঠে বলে,

“অ্যাই ছেলে এদিকে আসো।”

প্রত্যাশার বাক্যে মিন্টু হকচকায়। সে মোটেও মেয়েটার সামনে যেতে চাই না। গেলে যদি আবার থা’প্প’ড় লাগায় তখন? না না সে যাবে না। মেয়ে তো কী হয়েছে। গায়ে মেলা জোর আছে। সকালের দুটো থা’প্প’ড়ে গাল ব্যাথায় টনটন করছিলো।

“কী হলো শুনতে পাওনি? নিজের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমায় শায়েস্তা করতে এসে, এখন লুকিয়ে কেন আছো?”

তন্ময় বলল,

“কী রে যা!”

“না না যাবো না। গেলে যদি আবার মা’রে। মেয়েটার হাতে মেলা জোর। আমি আর ওই হাতের থা’প্প’ড় খেতে চাই না।”

মিন্টুর বাক্য পিয়াশ ‘চ’ সূচক শব্দ করে বলল,

“একটা মেয়ের থা’প্প’ড় খেয়ে এমন লুকিয়ে আচ্ছি? সামনে না গেলে যখন নাওয়াস থা’প্প’ড় দেবে। তখন কী করবি?”

পিয়াশের কথায় মিন্টু ঢোক গেলে। তৎক্ষণাৎ কর্ণকুহের প্রবেশ করে নাওয়াসের গম্ভীর স্বরে করা আদেশ।

“মিন্টু এদিকে আয়।”

মিন্টু সুর সুর করে এগিয়ে আসে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নাওয়াসের পাশে দাঁড়ায়। নাওয়াস প্রত্যাশা কে দেখিয়ে বলে,

“এই মেয়েটায় কী তোকে মে’রে ছিলো?”

মিন্টু একবার প্রত্যাশার দিকে চায়। শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগে প্রত্যাশা বলে,

“হ্যাঁ আমিই মে’রে ছিলাম। তা তে কী হয়েছে?”

প্রত্যাশা বুকে হাত গুজে উক্ত বাক্যটি ব্যয় করে। নাওয়াস এবার পুর্ণদৃষ্টিতে প্রত্যাশার পানে চায়। ছিমছাম গড়নের একটি মেয়ে। কাঁধ সমান গ্লোডেন ব্রাউন স্ট্রে চুল। ডাগর ডাগর চোখ। ফোলা ফোলা গাল। খুব একটা লম্বা না। পাঁচ ফিট এক বা দুই হবে। পরনে জিন্স আর হাঁটু সমান রাউন্ড জামা। গলায় ওড়না জড়ানো। পায়ে আবার জুতো আছে। মেয়েটার মুখের বদল বাঙালি বাঙালি হলে। চেহারায় বিদেশী একটা ভাব আছে। হয়তো দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। নাওয়াসকে এমন করে স্ক্যান করতে দেখে প্রত্যাশা ঈষৎ বিবর্তবোধ করে। তবে তেঁজ কমায় না। বরং বাড়ায়।

“এমন অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছেন কেন?”

প্রত্যাশার নিঃসৃত বাক্যে নাওয়াসের ধ্যান ভাঙে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

“তুমি কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুলেছো?”

“এবার তো শুধু থা’প্প’ড় দিয়েছি। ফারদার আমার সামনে কাউকে টিজ করলে মে’রে হাত পা ভেঙে দেবো।”

নাওয়াসের বন্ধুরা বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যায়। এই মেয়ের সাহস কত? নাওয়াসের মুখে মুখে তর্ক করছে। নাওয়াসের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে। নিরেট কণ্ঠে বলল,

“তুমি জানো আমি কে? আমার ত্রাসে পুরো শহর তটস্থ থাকে।”

“তো?”

প্রত্যাশার ভাবলেশহীন উত্তর। নাওয়াস নিজেও থতমত খায়। কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করে না। পিয়াশ বলে,

“তুমি মনে হয় এই এলাকায় নতুন! তাই ওকে চেনো না।”

“আপনাদের মতো লোকদের আমার নতুন করে চেনা লাগবে না। আপনারা হলেন বড়ো লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলে।”

“তুমি কিন্তু নিজের সীমা অতিক্রম করছো। নাওয়াস আফফান মোটেও ভালো ছেলে না। এলাকায় আমার বদনাম আছে। আমাকে রাগিও না। তোমার জন্য ভালো হবে না।”

নাওয়াসের কণ্ঠে ক্রোধ। নাওয়াসের থেকেও দ্বিগুন ক্রোধ নিয়ে প্রত্যাশা বলল,

“কী করবেন? গায়ে হাত তুলবেন? থা’প্প’ড় মা’রবেন?”

“আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না।”

“ওহ্ আচ্ছা আপনি তো সাধু পুরুষ। মেয়েদের গায়ে হাত তোলেন না। কিন্তু বন্ধু কে ঠিকই মেয়েদের টিজ করতে লেলিয়ে দেন?”

প্রত্যাশার তাচ্ছিল্য পূর্ণ কণ্ঠ স্বর।

“মুখ সামলে কথা বলো। মেয়ে বলে পার পাবে না।”

প্রত্যাশা রাগে রিতমত কাঁপছে। মেয়ে বলে তাকে হেলা করছে? তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে?

“আমাকে অন্যদের মতো দূর্বল মেয়ে ভাবেন না। আমি মা’রামা’রিতে রীতিমত ট্রেনড্।”

নাওয়াস তাচ্ছিল্য হাসে। বিদ্রুপের সহিত বলল,

“এখুনি আমার বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাও।”

“চায়বো না!”

“তুমি কিন্তু ভুল করছো। ভুল লোকের সাথে লাগতে আসছো। এখনও সময় আছে। সময় থাকে নিজের ভুল শুধরে নেও।”

প্রত্যাশার মুখের আদল পরিবর্তন হয়। রহস্যময়ী হাসি ফোটে ওষ্ঠধারে। তেমন ভাবেই বলল,

“আপনি ঠিক বলেছেন। আমি ভুল করেছি।”

প্রত্যাশার হার মেনে নেওয়াই নাওয়াস বাঁকা হাসে। ওর বন্ধুরা এতক্ষণ বিস্মিত লোচনে প্রত্যাশা কে দেখছিল। এত সহজে হার মেনে নেওয়াই সেই বিস্ময়ভাব বৃদ্ধি পায়। ওরা তো ভেবে ছিলো এই মেয়ে জীবনেও ক্ষমা চাইবে। কিন্তু এত সহজে মেনে যাওয়াই ওরা অবাক হয় পরপর হেসে তন্ময় বলল,

“দেখেচ্ছিস সব চোটপাট শেষ। আমাদের ভাই হচ্ছে সিংহ। সিংহের সামনে বিড়াল যতই মিও মিও করুক। সিংহের এক গর্জনে সব ফুসকি বো’ম হয়ে যাবে।”

“তবে যাই বল ভাই মেয়ের কিন্তু সাহস আছে।”-বলল পিয়াশ।

“সাথে গায়ে জোরও আছে।”

মিন্টুর কথায় ওরা মুখ চেপে হাসে। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ টেকে না।

“ওকে থা’প্প’ড় মে’রে আমি সত্যিই মস্ত বড়ো ভুল করেছি। কিন্তু এখন আমি আমার সেই ভুল শুধরে নেবো।”

নাওয়াস ভ্রু কুঁচকে প্রত্যাশার দিকে তাকাল তৎক্ষণাৎ বিকট শব্দে নাওয়াসে গালে প্রত্যাশা থা’প্প’ড় মে’রে দিলো। পিয়াশ,তন্ময় হতবিহ্বল, হতচকিত, বিমূঢ় বনে গেল। অক্ষিযুগল ফাঁটা ফাঁটা হয়ে আসে। এই বুঝি কোটর থেকে বেরিয়ে পড়বে। মিন্টু ভয়ে কয়েক ধাপ পিছিয়ে পিয়াশ আর তন্ময়ের পিছে লোকালো।

“আমার উচিত ছিলো ওকে না মে’রে ওর বাপ কে মা’রা। যার সঙ্গ দোষে এমন বখেছে। লজ্জা করে না? একটা মেয়ে কে টিজ করতে? আবার সেই যখন নিজের জন্য স্ট্যান্ড নিয়েছে। তখন তাকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়াতে তৎপর হয়ে, মাঝ রাস্তায় রিঁকশা থামাতে?
তোমাদের মতো ছেলেদের জন্যই না আজ সমাজে নারীরা অনিরাপদ। তাদের পরিবার তাদের একা ছাড়তে ভয় পায়। নিজেকে ত্রাস বলো না এই শহরের? আসলে তোমরা সমাজের ঘৃণীত প্রাণী। নূন্যতম সন্মানও তোমাদের প্রাপ্য না। নেহাত আমার মুখের ওপর সংযত আছে। নয়তো তুমিও বলতাম না।মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ।”

নাওয়াস ক্রোধে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। প্রত্যাশা এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। ত্রস্ত পায়ে প্রন্থান করে। নাওয়াস চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে। পিয়াশা,তন্ময়, মিন্টু নাওয়াসের মুখের দিকে চাইল। নাওয়াসের শরীর কাঁপছে। শক্ত করে মুঠো বেধে আছে। নিজের খসখসে হাতের তালুতে নখ বিধিয়ে দিচ্ছে। ওদের জন্য একটু আগের দৃশ্যটা আশ্চর্যান্বিতর থেকেও কয়েক ধাপ বেশি। এই দৃশ্য যে এক্কে বারে অসম্ভবপ্রায়। আজ অব্দি স্বপ্নে এমন দৃশ্যের সাথে ওদের কারো সাক্ষাৎ হয়নি। মিন্টু ভীতগ্রস্ত হয়ে নাওয়াসের দিকে তাকায়। সেই মুহূর্তে নাওয়ার নিজের চোখ খুলে ওর দিকেই জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চায়। নাওয়াসের রক্তিম দৃষ্টিতে মিন্টুর আত্মা উঁড়ে যাওয়া উপক্রম হয়। কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“আমাকে ওভাবে কেন দেখেছে ভাই?”

তন্ময় কিছু বলার জন্য হাঁ করবে তার আগেই নাওয়াস মিন্টুর কলার টেনে সামনে এনে সপাটে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। শক্ত হাতের থা’প্প’ড়ে মিন্টুর মাথা ভোঁ ভোঁ করে ওঠে। তন্ময় পিয়াশ দু কদম পিছিয়ে বলল,

“ও-ওই মেয়ের রাগ আমাদের কেন দেখাচ্ছিস?”

“তোদের বারণ করেছি না? মেয়েদের টিজ করবি না? অসন্মান করবি না? তারপরও কেন করেছিস?”

মিন্টু কাঁদো কাঁদো সুরে বলল,

“আমি তো একটু মজা করছিলাম। আমি কী জানতাম, এই মেয়ে এমন ভয়ংকর। জানলে ওকে টিজ করতাম না।”

নাওয়াস কটমট লোচনে তাকাতে মিন্টু মিইয়ে গেল। পারলে মাটিতে মিশে যাবে।

“ফারদার যদি আর কাউকে টিজ করিস, ওই মেয়ে তোর কী করবে আমি জানি না। কিন্তু আমি তোকে দুনিয়াতেই জা’হা’ন্না’ম দেখিয়ে দেবো।”

নাওয়াস বাইকে চরে বসে। হেলমেট পরতে পরতে কাঠ কণ্ঠে বলে,

“খোঁজনে মেয়েটা কে। ওর সব ডিটেলস আমার চাই। নাওয়াস আফফানকে থা’প্প’ড় মা’রার মাশুল ওকে গুনতেই হবে।”

নাওয়াস বাইকে স্টার্ট করে চলে যায়। নাওয়াস যেতেই ওরা তিনজন আটকে রাখা শ্বাস ছাড়ে।
__________

“তুমি না-কি আজকে খোলা ময়দানে এলাকার মেয়েদের জমায়েত করে,হেনস্তা করেছো?”

নাওয়াস কেবল মাত্র সিঁড়িতে এক পা দিয়েছে। সেই সময় অকস্মাৎ গম্ভীর কণ্ঠে নাওয়াসের পদযুগল থেমে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে সোফায় গম্ভীর মুখে বসে থাকা নিজের বাবার দিকে চায়। কামাল মাহমুদ সোফা থেকে উঠে ছেলের নিকটে আসেন। নাওয়াস চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে।

“কী হলো চুপ করে আছো কেন?”

রিনা বেগম দ্রুত পায়ে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন। কামাল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলেন,

“ছেলেটা বাইরে থেকে সবে ফিরল। দয়া করে এখন এই সব কথা বলবেন না।”

“এসেছে তো আড্ডা বাজি, বখাটেপনা করে। দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে। এই সোসাইটিতে আমার যে একটা মান-সম্মান আছে। সেটা তুমি ভুলে গেছো। তোমার জন্য আমি রাস্তাই বের হতে পারি না।
তোমায় আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে।”

“আপনাকে তো কেউ জোর করেনি আমায় ছেলে বলে পরিচয় দেওয়া জন্য। আপনার যখন এতই মানে লাগে
তখন আমাকে নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দেবেন না।”

কামাল মাহমুদ হতভম্ব হয়ে যান নাওয়াসের বাক্যে। হতভম্ব কণ্ঠে বললেন,

“তবুও তুমি নিজের উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন ত্যাগ করবে না?”

“নাহ্!”

নাওয়াসের সোজাসাপ্টা উত্তর। এপার্যায়ে কামাল মাহমুদ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েন। রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন,

“কেন পারবে না? কী সমস্যা তোমার? তোমার বাবার এত বড়ো একটা ব্যবসা আছে। তোমার ব্রাইট ফিউচার। নিজের হাতে কেন তুমি সেই সব নষ্ট করছো? আমি তো কখনো তোমায় কোনো অভাব বুঝতে দিইনি। তারপরেও কী কারণে তুমি বিপথে চলে গেলে?”

নাওয়াস তাচ্ছিল্য হাসে। সেভাবেই বলে,

“আপনি যদি সেটা বুঝতেন। তাহলে না আমি একজন বখাটে হিসেবে পরিচিত হতাম। আর না আমার মা আমার থেকে দূরে যেত।”

কামাল মাহমুদ চমকে ওঠেন।

“তুমি আমার কারণে বখাটে হয়েছো?”

“নিজেই উত্তর খুঁজেনিন।”

নাওয়াস প্রন্থান করে। সত্যিই কী নাওয়াসের বিপথে যাওয়া জন্য উনি দায়ি? উনি কী বাবা হিসেবে ব্যর্থ?

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।)

এক ঝড়ো হাওয়ায় পর্ব-০১

0

#এক_ঝড়ো_হাওয়ায়
#লেখনীতে-ইনসিয়া_আফরিন_ইমারা
#সূচনা_পর্ব
#জনরা_রোমান্টিক_সামাজিক

বখাটে নাওয়াস আফফানের সাঙ্গপাঙ্গদের নাকি একটা মেয়ে পি’টিয়েছে। মুহূর্তেই সেকথা এলাকায় ছড়িয়ে গেলো। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে এই খবর নাওয়াস আফফানের কানে এসে পৌঁছেছে। নাওয়াস আফফান দেশের নামকরা নিউজ পত্রিকার মালিকের একমাত্র ছেলে। লোকে বলে বড়ো লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া ছেলে। রাগ যেনও তার নাকের ডগায় থাকে। শহরের কারো সাহস নেই তার সামনে রা করার। সাহস হবেই বা কী ভাবে। বাপের হাত যে অনেক লম্বা। দেশের বড়ো বড়ো সব রাঘব বোয়ালদের সাথে ওঠা বসা। বাপের আদরের দুলাল। অতি আদরে বাঁদর হওয়ার বদলে বখাটে হয়ে গেছে। যে নাওয়াস আফফানের ত্রাসে পুরো শহর তটস্থ থাকে। সেই নাওয়াস আফফানের সাঙ্গপাঙ্গদেরকে-ই নাকি কেউ পাব্লিক প্লেসে পি’টিয়েছে। তাও আবার একটা মেয়ে। এই খবরটা যেন আলোর বেগে ছড়াছে। অনেকে সেই মেয়ের সাহসের বাহ্বা দিচ্ছে। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই নাওয়াসের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে। নাওয়াস মেয়েদের থেকে যোজন যোজন দ্রুত বজায় রাখে। তবে এইবার সেটা পারছে না। তার বন্ধুদের গায়ে আঘাত করার স্পর্ধা করেছে। সেই হাত নাওয়াস ভে’ঙ্গে গুড়িয়ে দিবে। হোক সেটা কোনো মেয়ে।

“মেয়েটা কে চিনিস?”

“নাহ্! এর আগে কখনও এই এলাকায় দেখিনি।”

“দেখলে চিন্তে পারবি?”

“হ্যাঁ পারবো।”

“তন্ময়!”

নাওয়াসের ডাকে তন্ময় এগিয়ে আসে। তন্ময় এগিয়ে আসতে নাওয়াস বলে,

“ওই এলাকার যত মেয়ে আছে। তাদের সবাই কে বিকেলে, খোলা খেলার মাঠে জমায়েত করবি। একটা মেয়েও যেন বাদ না পরে।”

“আচ্ছা!”
.
.
.
“তুমি নাকি আজ রাস্তায় মা’রা মারি করেছো?”

বুটিক থেকে সবেই বাড়ি ফিরেছে প্রত্যাশা। বাড়ির মেইন ফটক পার না হতেই, বাবার গুরুগম্ভীর স্বরে করা প্রশ্নে থেমে যায়।

“তোমাকে কিছু জিঙ্গেস করেছি।”

“তোমার লোকেরা অলরেডি তোমাকে খবরটা জানিয়েই দিয়েছে। শুধু শুধু আমায় কেন জিঙ্গেস করছো?”

“এটা আমেরিকা না। এখানে আমার একটা মান-সন্মান আছে। লোকে যদি জানে তুমি রাস্তার বখাটেদের সাথে মা’রামা’রি করেছো। তাহলে সবাই ছিঃ ছিঃ করবে।”

প্রত্যাশা এবার নিজের বাবার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। শান্ত কণ্ঠে বলল,

“ওই বখাটে গুলো তোমার মেয়েকে টিজ করেছিলো।”

“এড়িয়ে গেলেই পারতে। মা’রপিট করার তো কোনো প্রয়োজন দেখচ্ছি না?”

“ওরা আমাকে টিজ করেছিলো। আর তুমি সেটা এড়িয়ে যেতে বলছো?”

“হ্যাঁ যাবে। ভুলে যেওনা তুমি একটা মেয়ে। সমাজে চলতে হলে, মেয়েদের সব সময় চুপ থাকতে হয়। মেনে নিতে হয়।”

প্রত্যাশা কিংকর্তব্যবিমূঢ় বনে যায়। বিস্মিত স্বরে বলে,

“কেউ আমায় বুলিং করবে? অপমান করবে। আর আমি সেই সব কিছু চুপচাপ হজম করবো?”

“হ্যাঁ করবে! তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এরপর থেকে তুমি একা বাইরে যাবে না। গার্ড থাকবে তোমার সাথে।”

“আই অ্যাম স্যরি। তোমার কথা আমার পক্ষে মানা সম্ভব না।”

পূর্ব ইমাম এবার রেগে যান। গলার স্বর চওড়া করে বলেন,

“তুমি যে ওদের গায়ে হাত দিয়েছো। ওরা যদি এখন প্রতিশোধ নিতে চাই? তোমার সাথে কিছু করে দিলে? তখন কী হবে? পারবে এই সমাজে মুখ দেখাতে?”

বাবার এহেন কথায় প্রত্যাশা বাক্য রুদ্ধ হয়ে যায়। পরপর নিজের স্বর উচিয়ে বলে,

“নিজেকে প্রটেক্ট করতে জানি আমি। আর রইলো তোমার সমাজ। আমি তাদের মন জুগিয়ে চলতে বাধ্য নয়। আমার সাথে কেউ অন্যায় করলে, সেই অন্যায়ের যোগ্য জব্বাব আমি দেবো।”

” প্রত্যাশা!”

পূর্ব ইমাম হুংকার ছুড়লেন। সেই হুংকারে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত মিনা এবং পিউ কেঁপে উঠে। বাপ-মেয়ের ঝগড়া এতক্ষণ যাবত্র নীরব দর্শকের মতো দেখচ্ছিলেন মিনা। ব্যাপারটা বেশি হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি বললেন,

“আপনি শান্ত হোন। এত উত্তেজিত হবে না। আমি ওকে বোঝাচ্ছি।”

“নিজের মেয়েকে ভালো করে বুঝিয়ে দিও,এটা ওর বিদেশ না। সব কিছু ওর মর্জি মতো হবে না। এই সমাজে থাকতে হলে চোখ মুখ বন্ধ করে থাকতে হবে।”

নিজ বাক্য শেষ করে পূর্ব ইমাম প্রন্থান করেন। প্রত্যাশা চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে। প্রত্যাশা বাবার মেয়েদের নিয়ে এমন নিম্ন মানুসিকতা কিছুতেই মানতে পারছে না। মিনা মেয়ের কাছে এগিয়ে আসে। কিছু বলার জন্য হাঁ করতে নিবেন। তৎক্ষণাৎ নিরেট কণ্ঠে প্রত্যাশ বলল,

“আমাকে এই নিয়ে কিছু বলতে আসবে না।”

প্রত্যাশ হনহন করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। মিনা অসহায় ভাবে সেই দিকে তাকিয়ে রইলেন। বাপ-মেয়ের দ্বন্দ্বে তিনি ক্লান্ত। পাঁচ বছর আগে বিদেশে যাওয়া নিয়ে, সেই যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিলো। তার রেশ যেন এখনও রয়ে গেছে। মিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছোটো মেয়ের ভীতগ্রস্ত মুখ দেখলেন। মেয়ের ভয় কাটাতে ঘরে নিয়ে গেলেন।

প্রত্যাশা ঘরে এসে রাগে ফোঁসফোঁস করছে। একেই তখন ওই বখাটে গুলোর বাজে ব্যবহারে মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। তার ওপর বাবার এরূপ ব্যবহার। মাস খানেক হবে প্রত্যাশা আমেরিকা থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর কোর্স কমপ্লিট করে দেশে এসেছে। ছোটো থেকেই ইচ্ছে ছিলো ডিজাইনার হওয়ার। বিদেশ থেকে কোর্স করার। কিন্তু প্রত্যাশার বাবা পূর্ব ইমামের এই দুয়েতেই ছিলো ঘোর আপত্তি। তিনি চেয়ে ছিলেন মেয়ে বিয়ে করাতে। দেশে থেকেই কোনো রকমে গ্রাজুয়েট পাশ করাতে। কিন্তু প্রত্যাশা জেদ করে বিদেশে যায়। তিনি প্রায় খরচ পাঠাতে লেট করতেন। এমন নয় যে ওনার সামর্থ্য নেই। আসলে উনি ইচ্ছাকৃত এমনটা করতেন। যাতে প্রত্যাশা কোর্স কমপ্লিট না হয়। সেই জন্যই প্রত্যাশা পার্ট টাইম জব করে। তা দিয়ে নিজের খরচ চালাতে শুরু করে। সে ব্যাপারে পূর্ব ইমাম যখন জানতে পারেন। বিষয়টা তখন ওনার মানে লাগে। মেয়ের প্রতি ওনার মনে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়। তারপর থেকেই এত বিবাধ। কয়েক বছর কেউ কারো সাথে কথাও বলেননি। এক বছর আগে প্রত্যাশা আমেরিকাতে নিজের বুটিক হাউজ খোলে। এখন প্রত্যাশা সেই বুটিক হাউজ বাংলাদেশে করতে চাই।কয়েক মাস জায়গায় ঠিক করাতে কেটে গেছে। আজ বুটক হাউজের ওপেনিং ছিলো। সকালে সেখানেই যাচ্ছিলো। তখন কয়েক জন বখাটে গান গেয়ে টিজ করছিলো। প্রত্যাশাও চুপ না থেকে ওদের থা’প্প’ড় দিয়েছিলো। পরপর বেশ কয়েকটা থা’প্প’ড় মে’রে খান্ত হয়েছিলো। ভবিষ্যৎ এরূপ কাজ না করার জন্য হুমকিও দিয়ে এসেছে। সেটাই কেউ রং মশলা মাখিয়ে পূর্ব ইমাম কে বলেছে প্রত্যাশা রাস্তায় মা’রপিট করেছে। যা নিয়েই একটু আগে বাবার সাথে প্রত্যাশার তর্ক হলো।

প্রত্যাশার বাবা পূর্ব ইমাম একজন ঔষধ ব্যবসায়ী। রাজধানী সহ, দেশের বিভিন্ন স্থানে ওনার ঔষধ কম্পানি আছে। প্রত্যাশারা দুই বোন। প্রত্যাশা বড়ো। এবং পিউ ছোটো। দশম শ্রেনীতে অধ্যানয়রত। মাসখানেক আগেই প্রত্যাশার পড়াশোনা শেষ হয়েছে। পূর্ব ইমাম সে-কালে ধারণা নিয়ে চলেন। ওনার কাছে মান-সন্মান, সমাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন কি তিনি ভাবেন মেয়েদের বাইরে কাজ করার প্রয়োজন নেই। মেয়ে মানুষ বিয়ে করে সংসার করবে ব্যস। প্রত্যাশার মা মিনা অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির। স্বামীর মুখের ওপরে রা করেন না।
_________

গোধূলি বেলা। নীল-সাদা অম্বরে ঝাঁক বেঁধে পাখি উড়ে চলেছে। থেকে থেকে বাতাসের তালে গাছের পাতা নেঁচে উঠছে। সেই নাঁচের সাথে ভেসে যাচ্ছে শিউলি ফুলের ঘ্রাণ। মনোমুগ্ধকর বিকেল। সেই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কিছু মানুষের নিকট আতঙ্কে পরিনত হয়েছে। নাওয়াসের লোক এলাকার সব মেয়েদের জড়ো করেছে। সকলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে আছে। নাওয়াস নিজের বাইকে বসে সিগারেট ফুঁকছে। নিকোটিনের সাদা-কালো ধোঁয়া হাওয়াতে মিশে, বিশুদ্ধ বায়ুকে দূষিত করছে। সাথে ছড়িয়ে দিচ্ছে দমবন্ধকর বিদঘুটে গন্ধ।

“ভাই এলাকার সবাই রে নিয়ে এসছি।”

“মিন্টু!”

“জ্বি ভাই!”

“তোদের কে যে মেয়ে মে’রে ছিলো। সে এদের মধ্যে আছে কিনা দেখ?”

নাওয়াসের বাক্য শেষ হতেই মিন্টু সব মেয়েদের দেখতে থাকে।
কিন্তু এই মেয়েদের মধ্যে সেই মেয়ে কে পায় না। যে ওদের মে’রে ছিলো। উদাস হয়ে ফিরে এলো নাওয়াসের কাছে এসে বলল,

“এদের মধ্যে ওই মেয়ে নেই ভাই।”

“শিওর!”

“জ্বি ভাই!”

নাওয়াস এবার তন্মায়ের দিকে তাকালো। নাওয়াসের দৃষ্টিতে তন্ময় ভরকে গেল। থতমত গলায় বলল,

“সব মেয়ে কে এনেছি ভাই। একটা বাড়ির মেয়েও বাদ দেয়নি। শুধু পূর্ব ইমামের বাড়ি বাদ। ওনার মেয়ে তো ছোটো ক্লাস ১০ এ পড়ে।”

নাওয়াসের সুচালো দৃষ্টি তন্ময়ের রীতিমত ঘাম ছুটে যাচ্ছে। না জানি ওই মেয়ের রাগ ওর ওপরে ঝেরে দেয়। ভয়ে ভয়ে ফের বলল,

“আমার মনে হয় মেয়েটা এই এলাকার না।”

নাওয়াসের নিরেট চোয়াল দেখে তন্মায় শুকনো ঢোক গিলে। বাকিদের ইশারা করে সাফায় গায়তে। পিয়াশ বলল,

“মিন্টু তো বলেছিলো মেয়েটাকে আগে কখনও দেখেনি। সত্যিই হয়তো মেয়েটা এই এলাকার না।”

নাওয়াস গম্ভীর স্বরে বলল,

“এই এলাকায় নেই। অন্য কোনো এলাকায় তো নিশ্চয়ই আছে। আশেপাশের এলাকা ভালো করে খোঁজ। ওই মেয়েকে আমার চাই।”

নাওয়াস নিজের বাক্য সমাপ্ত করে বাইকে উঠে বসে। বাকিরাও যে যার মতো বাইকে উঠে। তন্ময় আর পিয়াশ এক বাইকে শিমুল আর মিন্টু এক বাইকে ওঠে। সকলে বাইক ঘুরিয়ে নেই। মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়ে গুলো এতোক্ষণ শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরা যেতেই মেয়ে মুখ ভরে শ্বাস নিলো। মাঠ থেকে কিছু দূর আসতে মিন্টু চেঁচিয়ে উঠে।

“ভাই ওই তো! ওই মাইয়াডা আমারে মা’রছিলো।”

অকস্মাৎ মিন্টুর চিৎকারে সকলে বাইক থামায়। নাওয়াস ভ্রু কুঁচকে পিছনে চাইলো। নিরেট স্বরে বলল,

“কোথায়?”

“ওই যে ওই রিঁকশাটায়।”

নাওয়াস বাইক ঘুরিয়ে নিলো। বাকিরাও তাই করলো। বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিলো। সহসা রিঁকশা সামনে গিয়ে বাইক থামালো। হুট করে রিঁকশার সামনে বাইক থামায়। রিঁকশাওয়ালা সজরে ব্রেক করে। যার ফলে প্রত্যাশা সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। পড়ে যেতে নিয়ে রিঁকশা ধরে নিজেকে সামলে নেয়। তবে এভাবে বাইক থামানোর জন্য প্রত্যাশার রাগ হয়।

“ওই মিয়া ওই? সমস্যা কি হ্যাঁ? রাস্তা কী কম পড়ে গেছে? না-কি রাস্তাটা আপনার পৈতৃকসম্পত্তি? যে এভাবে রাস্তার আটকেছেন! রাস্তা ছাড়ুন।”

নাওয়াস প্রত্যুত্তর করে না। কোনো উত্তর না পেয়ে প্রত্যাশা রাগ তরতর করে বেরে যায়।

“কি হলো সরুন!”

এপর্যায়ে নাওয়াস মাথা থেকে হেলমেট খুলল। দুদিকে মাথা নাড়িয়ে চুলে ব্যাকব্রাশ করে। রিঁকশায় বসা রমনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে। প্রত্যাশা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নাওয়াস কে দেখে রিঁকশাওয়ালা রিঁকশা রেখে পালিয়ে গেলো। রিঁকশাওয়ালা কে পালিয়ে যেতে দেখে প্রত্যাশা অবাক হয়।

“আরে মামা দাঁড়ান! কই যান?”

রিঁকশাওয়ালা শুনলে তো। তৎক্ষণাৎ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে মোটা পুরুষালি কণ্ঠ স্বর।

“নাওয়াস আফফান যেখানে থাকে, সেখানে ওরা দাঁড়ায় না।”

প্রত্যাশার কপালে ভাঁজ পড়ে। বাইকে বসা ছেলেটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। শ্যামবর্ণ গায়ের রং। মাথা ভর্তি ঘন কালোচুল। গাল ভর্তি এলোমেলো দাঁড়ি। গলায় চেইন। হাতে ব্রেসলেট আর ঘড়ি। সাদা টি-শার্টের ওপর ব্ল্যাক শার্ট। শার্টের সব বোতাম খুলে রাখা। একপলক দেখে প্রত্যাশা বুঝে যায় এটা একটা বখাটে।

চলবে…