Sunday, August 3, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 68



এক শহর প্রেম ২ পর্ব-১১+১২

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
অডিটোরিয়ামের ভেতর মারসাদ ও আদিরা একা। পুরো অডিটোরিয়ামে আর একটা মানুষও নেই। আদিরা মাথা নিচু করে মারসাদের থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। মনের মাঝে তার এক রাশ ভয় তাড়া করছে। মারসাদ টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ানো। সেই সাথে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আদিরাতে নিবদ্ধ। একটু আগেই মাহি ও সাবিহারা আদিরাকে নিয়ে এখানে এসেছে। তারপর মারসাদ আদিরা ব্যাতিত সবাইকে চলে যেতে বললে সবাই বেরিয়ে যায়। তখন থেকেই আদিরা ঠায় এভাবে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ হালকা কেঁশে বলে,

“তোমাকে একটা কথা বলব, আদিরা।”

আদিরা এক পলক মারসাদের দিকে চেয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। মারসাদ ফের বলে,
“এবং কথাটা তোমাকে মানতে হবে। কথাটা শুনে অযথা রিয়াক্ট করতে পারবে না।”

মারসাদের এমন ধরনের কথা শুনে আদিরা কিছুটা ভাবুক হলো। কী এমন বলতে পারে? তখনি মারসাদ টেবিলের উপর থেকে এক বোতল পানি আদিরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“নাও।”

হঠাৎ মারসাদ তাকে পানির বোতল দিচ্ছে দেখে আদিরা কিছুটা অবাক হয়। সে কৌতুহলী দৃষ্টিতে মারসাদের দিকে চেয়ে থাকে। তখন মারসাদ ইশারা করে, পানি খেতে। আদিরা বোতোলের ছিপ খুলে এক ঢোক পানি খেয়ে আরেক ঢোক মুখে নিয়েছে। এখনও গিলেনি। একটু সময় নিয়ে গিলছে তখনি মারসাদ বলে উঠে,

“তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।”

মারসাদ কথাটা বলেই সেরেছে, আর আদিরা হতচকিত হয়ে মুখ থেকে পানি গুলো ছিটকে ফেলে দিয়েছে! বোতলটাও ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর বেচারি আদিরা কাঁশতে কাঁশতে বুকে ও মাথায় হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মারসাদ হঠাৎ আদিরার অবস্থা দেখে ফ্লোর থেকে বোতল উঠিয়ে আদিরাকে পানি খেতে বলে,

“পানি খাও। আর তুমি পানি এতক্ষণ মুখে রেখে দিয়েছো কেন?”

আদিরা হাত দিয়ে মারসাদের এগিয়ে দেওয়া বোতলটা সরিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আর দেরি করলো না। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। মারসাদ তা দেখে বলে উঠলো,

“জবাবটা দিয়ে যাও। তোমাকে কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।”

আদিরা দাঁড়িয়ে পড়লো। তার হাত-পা রীতিমত কাঁপছে। কিন্তু তাকে এবার জবাব দিতে হবে। কিন্তু বলার জন্য গলার জোড়ও তো প্রয়োজন! তারপরও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পিছু ফিরে। অতঃপর সে কিছু বলার আগেই মারসাদ আবার বলে,

“সত্যি সত্যি আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে না। জাস্ট আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার এক্টিং করতে হবে। সবাই জানবে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তুমি প্রিটেন্ডও করবে সেরকম। কিন্তু ইন রিয়েল আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হবো না।”

আদিরার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো! তাকে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে হবে? তাকে? কেন? মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নের ভীড়। কিন্তু উত্তরদাতাকে প্রশ্নই তো করতে পারছে না। দুজনের মাঝে এখন নিরবতা। এক জনের চোখে-মুখে বিস্ময় ও প্রশ্ন তো আরেকজনের মুখে লেগে আছে সন্দিহান হাসি। মারসাদ বুঝলো আদিরার মনের প্রশ্ন। তাই সে উত্তর স্বরূপ বলে,

“তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করতে বলছি কারণ, আমি চাই সামিরা আমার লাইফ থেকে সরে যাক। কারণ আমি এইটুকু তো বুঝেছি সামিরা অন্য কাউকে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে বিশ্বাস তো করবেই না, আবার ব্ল্যা*কমেইল করে পেট থেকে সত্যি বের করে নিবে। আর যদি তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে দেখে তবে ও…..সন্দেহ তো করেই। নাহলে কথায় কথায় তোমাকে এতো শোনাতে আসতো না। আরেকটা প্লাস পয়েন্ট আছে, যদিও সেটা তোমার জন্য নেগেটিভ পয়েন্ট। তোমাে উচিত সেটা বদলানো। তোমার পেটে বো*ম মা*রলেও তুমি সামিরাকে কিছুই বলবে না। খালি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদবে!”

শেষের কথাগুলো শুনে আদিরা মাথা নিচু করে ফেলল। মারসাদ টেবিল থেকে তার বাইকের চাবিসহ রিং নিয়ে আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। দরজার কাছে ঠিক আদিরার থেকে সামান্য দূরত্বে গিয়ে পিছনের দিকে হেলে স্লো ভয়েজে বলে,

“আমি কিন্তু তোমার থেকে অনুমতি চাইছি না! আমি তোমাকে বলছি। সো ইউ হ্যাভ টু ডু ইট!”

তারপর মারসাদ অডিটোরিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আর আদিরাকে রেখে যায় অথৈ জলে!

_______

সামিরা জানতে পেরেছে, মারসাদের বাবা-মা এখানে মারসাদদের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে। সে সেখানে যায়। মিসেস মীরা সামিরাকে দেখে ভীষণ খুশি হন। তিনি বলেন,
“কেমন আছো, সামিরা?”

হুট করে সামিরা মিসেস মীরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করার মতো করে বলে,
“আন্টি, আমি ভালো নেই।”

মিসেস মীরা খানিক ভড়কালেন। তিনি সামিরার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কেন? কী হয়েছে তোমার?”

সামিরা মিসেস মীরাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে টিসু দিয়ে চোখ মুছে বলে,
“তোমার ছেলে, আন্টি। তোমার ছেলে আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেই না। বলছি আজকে তার ফ্রেন্ডদের, ও মাহির ফ্রেন্ডদের সামনে আমাকে ইনসাল্ট করেছে। আমাকে যা নয় তাই বলেছে।”

মিসেস মীরা অবাক হলেন। তিনি ফের শুধালেন,
“কিন্তু কেন? কী হয়েছে ঠিক করে বলোতো।”

সামিরা আবার টিসু দিয়ে চোখ মুখে ঠোঁ*ট কাম*ড়ে বলে,

“আমার অপরাধ কী ছিল, জানো? আমার অপরাধ এইটাই যে, কালকে যেই মেয়ের জন্য তোমার ছেলে জেলে গিয়েছিল, সেই মেয়েকে আমি দুটো কথা বলেছি। আমি ওই মেয়েকে দুটো কথা বলতে দেরি, কিন্তু তোমার ছেলে ও তোমার মেয়ের ওই মেয়ের হয়ে প্রোটেস্ট করতে দেরি নেই। আমার ছেলে কিভাবে পারলো, সবার সামনে আমাকে এভাবে অপমান করার! আই ফিল সো হার্ট, আন্টি।”

বলেই আবার কাঁদতে লাগলো সামিরা। মিসেস মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। গতকাল রাতে মাহি তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা বলেছে। এখানে তিনি ওই মেয়েটার দোষও দেখতে পাচ্ছেন না। তার ছেলেই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। আজকে আবার তার ছেলে সামিরাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছে। তার ছেলে যে কি চাইছে সেটা তিনিই বুঝতে পারছেন না। এই কথা যদি মারমাদের বাবা জানতে পারেন তাহলে তিনি খুব রাগ করবেন। মিসেস মীরা সামিরার মন ভালো করতে বলেন,

“তুমি কষ্ট পেয়ো না, সামিরা। মারসাদ এলে আমি ও-কে বলব, ও যেন তোমার সাথে আর এরকম না করে। আর কেঁদো না। তুমি বসো আমি দুপুরের রান্নাটা সেরে ফেলি। তুমিও কিন্তু আজ আমাদের সাথে লাঞ্চ করো।”

সামিরা মুচকি হেসে রাজি হয়ে যায়। তারপর মিসেন মীরা রান্নাঘরে চলে গেলে সামিরা বাঁকা হেসে বলে,
“এবার কি করবে, মারসাদ বেবি? তুমি তো আন্টির কথা ফেলতে পারো না। উফ সামিরা! ইউ আর জিনিয়াস!”

______

অডিটোরিয়ামের দরজার বাহিরে মাহি, সাবিহা, রিন্তিরা ও মারসাদের বন্ধুরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তখনই দরজা খুলে মারসাদ বের হয়। মাহি এগিয়ে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“তোরা ভিতরে কি কথা বললি, দাভাই?”

“সেটা তোর ভীতু বান্ধবীর থেকেই জেনে নিস!”

মারসাদ সংক্ষেপে জবাব দিয়েই চলে যায়। মারসাদ যাওয়ার পর ওর বন্ধুরাও চলে যায়। তারপর মাহি, সাবিহা ও রিন্তি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে দেখে আদিরা চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
মাহি, সাবিহা ও রিন্তি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে দেখে আদিরা চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে আছে। ওরা আদিরার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে? কী বলল দাভাই?”

আদিরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তোর দাভাইয়ের ঘাড়ে ভূ*ত চেপেছে। ওঝা ডাক আর এই ভূ*ত নামা।”

মাহি সহ রিন্তি, সাবিহাও কৌতুহল যেন বেড়ে গেল। মাহি আদিরার মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে কিঞ্চিত ভ্রুকুটি করে ফের শুধালো,
“পরিষ্কার করে বল কী হয়েছে? দাভাই তোকে কী বলেছে?”

আদিরা দৃষ্টি নিচু করে মিনমিন স্বরে বলল,
“তোর দাভাই আমাকে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে!”

আদিরার জবাব শুনে মাহি, রিন্তি ও সাবিহা তিনজনে একত্রে বেশ জোড়েই বলে উঠলো,
“হোয়াট!”

ওদের এই আচমকা চিৎকারে আদিরা কানে হাত দিয়ে দ্রুত কন্ঠে আবার বলল,
“তবে রিয়েল না ফেক!”

এবার ওরা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একসাথে ফের শুধালো,
“ফেক মানে?”

“ফেক মানে তো ফেকই। মানে উনি বলেছেন, আমাকে উনার গার্লফ্রেন্ড তো হতে হবে কিন্তু আসলে গার্লফ্রেন্ড হবো না! আসলে সবার সামনে গার্লফ্রেন্ড কিন্তু এমনিতে গার্লফ্রেন্ড না। এক্টিং করতে হবে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। আমি কেমন সবকিছুতে প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলছি! আমার মাথা কাজ করছে না! পানি হবে? পানি?”

আদিরা তাড়াহুড়ো করে কীসের মধ্যে কী বলল, এখন মাহি, রিন্তি ও সাবিহা হা করে আদিরার মুখ পানে চেয়ে আছে। আদিরা নিজেই রিন্তির ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি পান করে। তারপর একটু দম নিয়ে মাহিকে বলে,

“দেখ মাহি, তোর ভাইকে বুঝিয়ে বল, আমি এইসব এক্টিং করতে পারব না। ঝুট-ঝামেলা আমার ভালো লাগে না। উনি যদি সামিরা আপুর থেকে পিছু ছাড়াতেই চায় তাহলে অন্য উপায় বের করুক। আমাকে ব্যবহার না করুক। এমনিতেই সামিরা আপু আমাকে অপমান করতে এক বিন্দু পরিমান সুযোগও ছাড়ে না। আমার ভালো লাগে না এসব। অনেক কষ্ট করে, পরিবারের থেকে দূরে থেকে ভার্সিটিতে পড়তে এসেছি। কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে যদি আমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে আমার বাবা আমাকে আর পড়াবেন না। সোজা বিয়ে দিয়ে দিবেন। এখানে চান্স পেয়েছি বলেই পড়াচ্ছেন। প্লিজ মাহি, তোর ভাইকে একটু বুঝা।”

তারপর আদিরা নিজের ব্যাগ উঠিয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে যায়। আদিরার পিছু পিছু সাবিহা ও রিন্তিও যায়। মাহি বসে বসে চিন্তায় মগ্ন। তার ভাই যে এসব কেন করছে, সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

________
দুপুরে লাঞ্চ করতে এসে খাবার টেবিলে সামিরাকে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় মারসাদের। মাহি মারসাদকে পাশ কাটিয়ে খাবার টেবিলের দিকেই যাচ্ছিলো তখন মারসাদ মাহিকে আটকায়। তার জিজ্ঞাসা করে,

“এই সামিরা এখানে কেন?”

মাহি জবাবে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“আমি কীভাবে জানব? আমাকে বলে এসেছে নাকি?”

মাহি কথাটা বলে আবার হাঁটা ধরলে মারসাদ ফের তাকে আটকায়। তারপর কপাল কুঁচকে শুধায়,
“বেশি ত্যাড়ামি করিস না। ঠিক করে বল, এই সামিরা এখানে কেন এসেছে? মা যে এখানে এসেছে, সেটা সামিরাকে কে বলেছে?”

মাহিও উলটো মারসাদের সাথে রাগ দেখিয়ে বলে,
“আজব! তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ, দাভাই? আমি তো আর সামিরা আপুকে মায়ের আসার কথা বলব না। তাই না? সামিরা আপু তার হবু শাশুড়ির খোঁজ-খবর রাখার জন্য ননদের সাহায্য তো নেয় না!”

হবু শাশুড়ি ও ননদ কথাটা বলার কারনে মারসাদ মাহিকে মা*রতে তেড়ে গেলে মাহি চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
“আমাকে পরে মে*রো! সামিরা আপু মায়ের কাছে কি বিচার দিয়েছে সেটা তো দেখো! বাবার কানেও সেই কথাটা তুলেছে কী*না দেখো আবার!”

এই বলে মাহি মুখ ভে*ঙচি দিয়ে চলে যায়। মারসাদ দেয়ালে ঘু*ষি দিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে মিস্টার আরশাদ খান ছেলেকে ডাক দেন।

“নিজের রাগ কমিয়ে খেতে আসো।”

অঅগ্যতা বাধ্য হয়ে মারসাদ ডাইনিং টেবিলের কাছে যায়। খেতে খেতে সামিরা মিস্টার আরশাদ খানকে বলে,
“আঙ্কেল, আপনারা চট্টগ্রামে আসলেন আমাদের বাড়িতে কিন্তু গেলেন না। মম-ড্যাড অনেক মাইন্ড করবে।”

আরশাদ খান বলেন,
“আমরা তো সময় নিয়ে আসিনি। এসেছি তো আমার সুপুত্রের কল্যানে! আবার যখন সময় নিয়ে আসব তখন যাব।”

মারসাদ তার বাবার দিকে এক পলক চেয়ে মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তার বাবার রাগ এখনো পড়েনি। সামিরা মারসাদকে এভাবে দেখে মনে মনে বেশ আনন্দ পায়। সামিরা কন্ঠে দুঃখী ভাব টেনে বলে,

“কী বলব, আঙ্কেল? আপনার ছেলে তো মানুষের জন্য নিজের জা*নটাও দিয়ে দিতে হাজির! কিন্তু কার জন্য জা*ন দিচ্ছে সেটা একটু ভেবে-চিন্তে দেখে না! একটা মেয়ে এসে তাকে অভিযোগ করলো, আর সে সেই অভিযোগের উপর সত্য-মিথ্যা বিচার না করে একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো মা*রলো! দোষটা কিন্তু আপনার ছেলেরই, আঙ্কেল। কাউকে কেউ এতো বিশ্বাস করে নাকি? পুলিশ নাকি বলে দিয়েছে, ওই ছেলের বিরুদ্ধে ওই মেয়েকে বিরক্ত করার কোন প্রমাণ নেই। আসলে আঙ্কেল, সবাই বিশ্বাসের যোগ্য না। মেয়েটাকে আপনার দুই ছেলে-মেয়েই খুব বিশ্বাস করে। ভোলাভালা চেহারা তো!”

সামিরার কথাগুলো আর মাহি ও মারসাদ দুজনেই শুনছে। মাহি ভ্রু কুঁচকে সামিরার দিকে চেয়ে আছে, আর মারসাদ রাগে খাওয়া বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে টেবিলের দিকে চেয়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মিসেস মীরা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে সামিরাকে বলে,

“সামিরা, খাবার টেবিলে এসব টপিক আর তুলো না। ওই ছেলেটার ক্রি*মিনাল রেকর্ডও কিন্তু আছে। এখন খাবার খেয়ে নাও। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

সামিরা আবার কিছু বলতে নিলে মিসেস মীরা সামিরার প্লেটে চিকেনের আরেকটা ফ্রা*ইড পিস তুলে দিতে নেয়। যার দরুণ সামিরাকে থামতে হয়। মারসাদও তৎক্ষণাৎ খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। মিসেস মীরা তা দেখে উৎকণ্ঠিত হয়ে ছেলেকে ডাকেন,

“বাবু, খাবার তো কিছুই খেলি না। না খেয়ে উঠে গেলি কেন, বাবা?”

মারসাদ নিজের রুমে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয়,
“আর পেট ভরে গেছে, মা। তাছাড়া আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তোমরা পেট ভরে খাও!”

তারপর মারসাদ নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। এবার মাহি সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি তোমার প্রবলেম ঠিকভাবে বুঝতে পারছি না, সামিরা আপু। তুমি সব সময়, সব কিছুতে শুধু আদুর ভুল ধরো! তুমি কি গিয়েছিলে কালকে পুলিশ স্টেশনেম তুমি ঘটনাস্থলে ছিলে? লোকমুখে শোনা কথা শুনে ডিটেলসে ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছ কেন? তুমি তো আজকে সকালেও আদুকে যা নয় তাই বলে আসলে! আর আদু ভাইয়াকে বি*চার দেয়নি। ভাইয়া নিজেই ওই ছেলেকে ফলো করতে দেখেছে। আর….”

“আহ্, মাহি! আমি এই টপিক নিয়ে কথা বলতে না করলাম তো। খাবার টেবিলে খেতে বসেছ, চুপচাপ খাও না!”

মিসেস মীরা মাহিকে কথার মাঝে বাধ সাধেন। মাহিও আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকে। আর সামিরা দাঁতে দাঁত পি*ষে বিরক্তি ও রাগ নিয়ে একটু একটু করে খাচ্ছে। এদিকে আরশাদ খানও চুপচাপ খাচ্ছেন। তিনি মাহি বা সামিরা কারো কথারই কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। কিন্তু সবার কথাই মন দিয়ে শুনলেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-১০

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
সকাল সকাল স্টুডেন্টকে পড়ানোর জন্য রওনা করেছে আদিরা। রাস্তায় পথ চলতে চলতে মনের মাঝে ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে তার। বিড়ালের শব্দ পেয়েও কয়েকবার শিউরে উঠেছে সে। যার দরুণ বেশ কয়েকবার পিছনে ফিরেও কাউকে এরকম দেখতে পায়নি তারপর আবার পথ চলতে শুরু করে। এবারেও আদিরা পেছনে ফিরে দেখে নিয়ে আবার সামনে ফিরেই ভীষণ ভাবে চমকে উঠে। সেই সাথে চিৎকার করে উঠে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটিও নিজের কান চেপে ধরেছে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি হচ্ছে মারসাদ! মারসাদ আদিরার এভাবে চিৎকার করে উঠাতে ধ*মকে বলে,

“চিৎকার করে উঠলে কেন? আমি বা*ঘ না ভা*ল্লুক?”

আদিরা নিজের মুখ চেপে ধরা অবস্থাতেই তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে। মারসাদ তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে এদিক-সেদিক একবার চেয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কোথায় যাচ্ছো?”

মারসাদ প্রশ্নটা করে দেখে আদিরা তার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। মারসাদ তা দেখে আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজালে আদিরা থতমত খেয়ে নজর নিচু করে নেয়। মারসাদ ফের বলে,

“এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে যেটা জিজ্ঞাসা করছি সেটার উত্তর দাও।”

“স্টুডেন্টের বাসায়।”

“ওহ। চলো।”

বলেই মারসাদ হাঁটা ধরলো। আদিরা মারসাদের নিঃসঙ্কোচ সাথে চলতে চাওয়াতে যেন আরেক দফা ঝটকা খেলো। ঠায় সেইখানেই দাঁড়িয়ে রইল। মারসাদ কিছুদূর গিয়ে পিছনে ঘুরে দেখলো আদিরা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে পিছনে ফিরে গেল আদিরার কাছে। তারপর বলল,

“এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে কী তোমার স্টুডেন্টকে পড়ানো হবে? দেরি হচ্ছে না?”

আদিরার হুঁশ ফিরে সে তাড়াতাড়ি করে হাঁটা শুরু করে। মারসাদও আদিরার স্টুডেন্টের বাড়ি পর্যন্ত যায়।

________

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আদিরা উদাসীন হয়ে বসে আছে। আর ওর পাশেই ওর তিন বান্ধবী কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। রিন্তি এবার আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,

“আদু, আজ আবার ওই ছেলে বা কেউ তোকে রাস্তায় ডিস্টার্ব করেনি তো?”

আদিরা অন্যমনস্ক ছিল। সে আনমনেই বলে ফেলে,
“হ্যাঁ!”

সাবিহা, মাহি ও রিন্তি অবাক হয়। কাল এতো মা*র খাওয়ার পরও ওই ছেলে আবার আদিরার পিছু নিয়েছে? মাহি প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আজ কিছু বলেছে? অস*ভ্যতামি করেছে? দাভাইকে বলতে হবে। ওই ছেলে একে তো বেহায়া আবার অতিরিক্ত সাহস দেখাচ্ছে।”

মাহির কথা শুনে আদিরা মনোযোগী হয়। সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে,

“কে? কার কথা বলছিস?”

আদিরার এহেন প্রশ্ন শুনে রিন্তি, মাহি ও সাবিহা একে-অপরের দিকে তাকিয়ে ফের আদিরার দিকে সন্দিহান হয়ে তাকায়। সাবিহা জিজ্ঞাসা করে,

“কার কথা বলছি মানে? তুই কি আমাদের কোনো কথা শুনছিস?”

আদিরা দেখে তার তিন বান্ধবী তার দিকে কেমন করে চেয়ে আছে। সে হাসার চেষ্টা করে বলে,

“আসলে কালকের ঘটনাটা এখনো মাথা থেকে বের করতে পারিনি। তাই একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। তোরা কি বিষয়ে কথা বলছিলি?”

মাহি প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুই আগে এটা বল, কালকের মা*র খাওয়া ছেলেটা কি তোকে আজ কোনো রকম বিরক্ত করেছে?”

আদিরা না বোধক মাথা নাড়ে। তারপর বলে,
“বিরক্ত তো করেনি কিন্তু আমার মন থেকে ভয় কমছে না। আমি কোনো রকম ঝামেলা চাইনি বলে বিষয়টা কাউকে জানাতে চাইনি। এখন প্রতিনিয়ত ভয় করছে ছেলেটা যদি প্রতিশো*ধ নিতে আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চায়? কারণ আমার কারণেই তো সে মা*র খেয়েছে।”

আদিরা কথাটা বলে শেষ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
“ঠিকই বলেছ! তোমার জন্য একটা ছেলে কালকে অযথা মা*র খেয়েছে এবং আরেকটা ছেলে অযথা জেলে গিয়েছে। পু*লিশের খাতায় নাম লিখিয়ে এসেছে।”

আদিরা, মাহি, সাবিহা ও রিন্তি একযোগে পিছনে তাকিয়ে দেখে সামিরা দাঁড়ানো। সামিরা সাথে সামিরার আরেক বান্ধবীও। মাহি বিপরীতে কিছু বলতে নিলে সামিরা হাতের ইশারায় মাহিকে চুপ করতে বলে। তারপর সে বলে,

“নিজেকে খুব বোকা, ডা*ম্ব ভাবে সবার সামনে প্রেজেন্ট করো! কিন্তু তুমি মোটেও ডাম্ব নও। ইউ আর সো ক্লেভার, ইউ নো!”

তারপর দুটো তালি দিলো সামিরা। সামিরার এই তালি যে ব্যাঙ্গাত্নক তা বুঝতে দেরি নেই কারোই। মাহি এবার বলে উঠে,

“তুমি ওকে এভাবে বলতে পারো না, সামিরা আপু।”

“প্লিজ মাহি, আমার ও আদিরের কথার মাঝখানে তুমি কথা বলো না। তুমি শুধু তোমার বান্ধবীর উপরের ভোলাভালা রূপটাই দেখেছ। সে যে ভেতরে ভেতরে কতটা চালাক ও চতুর সেটা তুমি জানো না। তোমাদেরকে দেখায় সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না! কিন্তু মাছটাও সেই ভাজছে!”

রিন্তি ফিসফিস করে সাবিহাকে বলে,
“এই সামিরা আপু আদিরাকে কেন এত অপছন্দ করে? যখন তখন যেখানে সেখানে সে আদিরাকে কথা শোনাতে চলে আসে!”

সাবিহাও কন্ঠস্বর নিচু করে বলে,
“আমার মনে হয় সে মনে করে, আদিরা তার কাছ থেকে মারসাদ ভাইয়াকে ছিনিয়ে নেবে! অথচ মারসাদ ভাইয়া কখনো তার ছিলই না!”

“তুইও, সাবিহা! আদিরা মারসাদ ভাইয়াকে য*মের মত ভয় পায়! আর তুই কী-না বলছিস, আদিরা সামিরা আপুর থেকে উনাকে ছিনিয়ে নেবে? আগে আদিরা মারসাদ ভাইয়াকে ভয় পাওয়াটা কমাক। তারপর না হয় দেখা যাবে।”

বলেই মিটিমিটি হাসলো রিন্তি। ওদিকে সামিরা আদিরার হাত ধরে টেনে তুলেছে। তারপর শা*সানোর স্বরে বলে,

“তোমাকে বারবার বলেছি মারসাদের থেকে দূরে থাকবে। তুমি কেন ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করো? তোমাকে একই কথা বারবার কেন আমাকে বলতে হয়? এতো বেহায়া কেন তুমি? লজ্জা করে না?”

আদিরার দৃষ্টি নত। তার চোখ ভর্তি অশ্রু জমে উঠেছে। যেকোনো সময় তা মাটিতে টুপ করে পড়বে। মাহি সামিরার এহেন আচরণে খুবই বিরক্ত। সে আদিরার হাত সামিরার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,
“তোমার সমস্যা কী, সামিরা আপু? তুমি কেন আদিরার পিছনে পড়ে আছো? আদিরা কার থেকে দূরে থাকবে, আর কার কাছে থাকবে সেটা কি তোমাকে বলতে হবে? একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছো না তুমি?
আর আদিরা যদি আমার দাভাইয়ের কাছে থাকেও তাতে তোমার সমস্যা কী? সত্যি করে বলোতো, দাভাই কে হয় তোমার? আমার জানা মতে, তুমি দাভাইকে পছন্দ করো। কিন্তু দাভাই তোমাকে পছন্দ করে না। তাই দাভাইয়ের সাথে, কাছে, পেছনে কে থাকবে না থাকবে সেটা তোমার দেখার বিষয় না।”

আদিরা সাবিহাকে জড়িয়ে কাঁদছে আর সামিরা ফুঁসছে। অতঃপর চিৎকার করে উঠে। আর বলে,
“ওই থার্ড ক্লাস মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো? তুমি জানো না আমি কে?”

“তুমি তো জানো, তুমি কে? মাহির না জানলেও চলবে।”

কথাটা শুনে উপস্থিত সকলে পাশে ফিরে তাকায়। দেখে মারসাদ ও তার বন্ধুরা আসছে। মারসাদ ওদের কাছে এসে বলে,
“জানো তো তুমি কে? নাকি তোমার পরিচয়টা আমায় দিতে হবে?”

সামিরা ভ্রুকুটি করে কিছু বলতে আঙুল তুলে মুখ খুলবে, তার আগেই মারসাদ বলে,
“তুমি বাবার বিজনেস পার্টনারের মেয়ে। তবে আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, তুমি আমার মায়ের দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে। এটাই তো তোমার পরিচয়। আর কাকে যেন থার্ড ক্লাস বললে? কামঅন সামিরা! কথায় কথায় সবার ক্লাস বিচার করতে কেন যাও? তোমার নিজের ক্লাস তুমি জানো তো? তোমার নিজের ক্লাস জানলেই হবে। অন্য কেউ ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস নাকি থার্ড ক্লাস সেটা তোমার জানতে হবে না।”

সামিরা হতবাক হয়ে মারসাদের দিকে চেয়ে আছে। মারসাদ তাকে এভাবে বলবে তা সে কল্পনাও করেনি। এভাবে অপমান করলো তাকে? রাগে তার চোখ জ্বা*লা করছে। আদিরার দিকে তাকিয়ে তার রাগ আরও বাড়ছে। সে রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠে,

“কাজটা তোমরা ভালো করলে না। আমাকে এভাবে অপমান তোমরা করতে পারো না। তোমাকে ভালোবাসি বলেই আমি…..”

“হোল্ড অন! তুমি আমাকে ভালবাসতেই পারো। এতে আমার তো কিছু যায় আসে না। কিন্তু তুমি আমার কারনে আরেকটা নিরপরাধ মেয়েকে মুখে যা আসবে, মনে যা আসবে তাই বলে বসবে! এইটা করার রাইটও তোমার নেই। কেউ চুপ করে আছে বলে তাকে সব সময় কথা শোনাবে এই ধরনের মানসিকতা রাখতে পারে এমন মেয়ে যে কাউকে ভালবাসতে পারে, সেটাই তো বিশ্বাস হয় না আমার! প্লিজ সামিরা, তোমার এই ভালোবাসা তুমি তোমার কাছেই রাখো, তোমার মধ্যে রাখো। এগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করতে যেও না। নয়তো কিছুদিন পর লোক তোমাকেই বেহায়া বলবে!”

কথাগুলো শুনে সামিরার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। সে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে সেখান থেকে চলে যায়। সামিরার পিছু পিছু সামিরার বান্ধবীও চলে যায়। মারসাদ এবার এগিয়ে গিয়ে মাহিকে বলে,

“তোর বান্ধবীকে নিয়ে অডিটোরিয়ামে আয়। জলদি আসবি।”

তারপর মারসাদও সেখান থেকে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৯

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
সন্ধ্যার পর মারসাদের বাবা আরশাদ খান ছেলের জন্য উকিল ঠিক করে জামিনের ব্যবস্থা করেন। তারপরই মারসাদকে ছাড়া হয়। পু*লিশ মারসাদকে বলেন,
“দেখুন মিস্টার মারসাদ, আপনি হয়তো একটা মেয়ের সম্মান বাঁচাতে মা*রামা*রি করেছেন। কিন্তু আপনার নামটা আইনের খাতায় উঠে গেছে। তাই বলব এসবে আর জড়াবেন না। মিস আদিরাকে যেন দেলোয়ার আর বিরক্ত করতে না পারে সেটা আমরা দেখব। তাছাড়া দেলোয়ারের নামে ২-৩টা চু*রি, ছি*নতাই এসবের কে-স আছে। সেও জামিনে ছাড়া পাওয়া আবার জে*লও খেটেছে। এবারও যদি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে সঠিক প্রুভ পেতাম তবে তাকে জেলে ভরতাম। কিন্তু এবার আমরা কোনো প্রুভ পাইনি। আপনি বুঝতে পারছেন, আমি কী বলছি?”

মারসাদ সব শুনে চুপ করে রইল। কিছু ভাবছে সে। আহনাফ বিষয়টা লক্ষ্য করে পু*লিশকে বলে,
“জি, অফিসার। আমরা বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ, অফিসার।”

তারপর আহনাফ মারসাদের হাত ধরে বাকিদের নিয়ে পু*লিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে আসতেই মারসাদ আহনাফের হাত ছেড়ে বলে,
“তোরা যা। আমি যেতে পারব।”

মৃদুল বলে উঠে,
“না বাবা না! তোকে একা ছাড়ব? এহ! পা*গ*লা কু** কা*ম*ড়া*ইছে নাকি! যা করছো তুমি! মাফ চাই। আপনেরে আমরা আপনার বাসায় দিয়ে আসমু। আর মাহিরে বলে আসমু যেন তোর রুমের বাহিরে তালা লাগায়!”

রিহানও তাল মেলায় সাথে।
“আমি আর মৃদুল যদি তোকে হুট করে গেইটের বাহিরে দিকে যেতে না দেখতাম, তাহলে? তুই আরও আগেই ছেলেটারে মে*রে ফেলতি! আমরা দেখেও তোরে আটকাতে পারিনি। এতো রাগ কেন তোর?”

রবিন কিছু একটা চিন্তা করে বলে ফেলে,
“তুই কি আদিরাকে পছন্দ করিস?”

কথাটা বলা মাত্রই মারসাদ ধা*রালো দৃষ্টিতে তাকায় রবিনের দিকে। রবিন মৃদুলের পিছনে গিয়ে খানিক আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলে,
“না মানে এর আগেও তো কয়েকজন মেয়ে তোর কাছে এসে কোনো ছেলে ই*ভটি*জিং করেছে বলে বিচার দিয়েছিল। তুই তো তাদেরও বিচার করেছিস। ছেলেগুলোকে তোর কাছে ডেকে এনে দুই-তিনটা থা*প্প*ড় দিয়ে কা*ন ধরে মাফ চাইয়েছিস। কিন্তু এবারেরটা একটু বেশিই হয়ে গেল বলে বললাম। আর কিছু না।”

রবিনের পুরো কথা শুনে আহনাফ, রিহান, মৃদুল তিনজনই মারসাদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মারসাদ সবার এমন করে তাকানো দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে। তারপর বলে,

“তোরা সবসময় দুই কদম বেশি বুঝিস! আর ফা*লতু বকবক করিস। যা এখান থেকে!”

তারপর নিজেই ওদের রেখে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। মারসাদ যাওয়ার পর রিহান বলে,
“ডাল মে কুচ তো বহত বড়া কালা হে!”

আহনাফও বলে,
“আদিরাও বলছিল, আহনাফ নিজে লাইব্রেরিতে গিয়ে ওর কাছ থেকে জানতে গিয়েছিল। আদিরা বিচার দেয়নি। তারমানে…”

চার বন্ধু এক যোগে হেসে উঠে।

________

আদিরা জানালার ধারে নিজের পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে আছে। পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে থাকলেও সে কিন্তু পড়ছে না! সামনে বই খোলা, দখিনা জানালা দিয়ে মৃদুমন্দ বাতাসে তার খোলা চুল গুলো আপনমনে উড়ছে। আর এদিকে আনমনা আদিরা গালে হাত দিয়ে আঁধারিয়া অম্বরে নির্নিমেষ চেয়ে আছে। তার হৃদয়পটে বারবার আজকের ঘটনা ভেসে উঠছে। একবার মা*রামা*রির ঘটনা, তো আরেকবার লাইব্রেরির ঘটনা, আবার মেডিকেল সেন্টারে মারসাদের সেই তীক্ষ্ণ ধা*রালো দৃষ্টি! আদিরা কিছুতেই এগুলো থেকে নিজের মনকে বের করতে পারছে না। পড়াতেও মন সংযোগ করতে পারছে না। বুক ধড়ফড় করছে তার। মন কেমন অস্থির লাগছে। মারসাদের সেই ধা*রালো দৃষ্টি, লাইব্রেরিতে তার দিকে ঝুঁকে আসা, সব কেমন তার কাছে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আকাশ দেখতে দেখতেই গলা শুকিয়ে গেছে তার। তাড়াতাড়ি করে বোতল থেকে তিন ঢোক পানি খেয়ে জানালার দিকে তাকাতেই নিচের রাস্তায় কাউকে দেখতে পায়। প্রথমে ঠিক ভাবে খেয়াল না করে বোতলের মুখ লাগিয়ে বোতল রাখতে নিলে তার মন তাকে সাবধান করে। দ্রুত আবার জানালার দিকে তাকাতেই দেখে নিচে কেউ নেই। একটা রিকশা চলে গেল। আদিরা বুকে হাত দিয়ে লম্বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে জোড় করে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো।

এদিকে মারসাদ, মোটা বৈদ্যুতিক খুঁটির পেছনে পাশ হয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। সেখান থেকে আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখে আদিরা এখন পড়ছে। মারসাদ বেশ বিরক্ত হলো। নিজে নিজেই বলছে,

“সবগুলো জানালা খুলে রেখে কে পড়তে বসে? রাস্তা থেকে তো রুমের ভেতরে কে ওইখানে বসা সবই দেখা যায়! এই মেয়েটার বুদ্ধি হবে না!”

মারসাদ কিছু একটা ভাবলো। তারপর রাস্তায় এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা ঢি*ল উঠিয়ে আদিরার জানালা বরাবর ছুঁ*ড়লো! ঢি*ল ছুঁ*রে তৎক্ষণাৎ মারসাদ কিছুটা দূরে গিয়ে লুকালো। আদিরা হঠাৎ জানালা দিয়ে পড়ার টেবিল ঢি*ল আসা দেখে থতমত খেয়ে ঘাবড়ে যায়। ঢি*ল আসা দেখে আদিরার পাশের বেডের মেয়েটা যে কী-না শুয়ে শুয়ে পড়ছিল, সেও উঠে বসে। সে বলে,

“হঠাৎ কে রুমের ভেতর এভাবে ঢি*ল ছুঁ*ড়লো? আজব মানুষ তো! ঢি*ল ছুঁ*ড়লো কে?”

মেয়েটার কথা শুনেও রুমে থাকা আরও দুই জন মেয়েও আদিরার কাছে এগিয়ে আসে। আদিরা বলে,
“আমি তো জানিনা। আমি তো পড়ছিলাম। হঠাৎই ঢি*লটা আমার টেবিলে এসে পড়লো! (আদিরা সামান্য উঁকিঝুঁকি দিয়ে) রাস্তায় তো এখন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।”

“কোনো এক অস*ভ্য ছেলেই হবে! ম্যা*নারলেস! একটা মেয়ের জানালার দিকে কেউ এভাবে ঢি*ল ছুঁ*ড়ে!”

“এই আদিরা, তোকে যে রাস্তায় ফলো করতো, সেই ছেলেটা না-তো আবার?”

আদিরা এবার আরও ভয় পেয়ে যায়। সে বলে,
“এভাবে বলো না, আপু। হয়তো কোনো বাচ্চা এই কাজ করেছে। ”

“আদিরা, তুই নিজেকে স্বান্ত্বনা দিতে বাচ্চার অজুহাত টানিস না। এখন রাত নয়টার মতো বাজে, এখন কোনো বাচ্চা বুঝি রাস্তায় থাকে? কোনো ব*খাটেরই কাজ এগুলা। তুই জানালা বন্ধ করে রাখ। সবগুলো জানালা খুলে রাখিস কেন? একটা খুললেই তো হয়। বন্ধ কর।”

আদিরা ফটাফট সবগুলো জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিলো। তারপর ওর রুমমেটরাও নিজেদের জায়গায় চলে গেলো। কিন্তু আদিরার মনে ভয় যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে! সে তো এখন ওই ছেলেটার কাজ ভেবেই বারবার ঘামছে।

এদিকে মারসাদ বাঁকা হেসে নিজে নিজে বলে,
“ভীতু মেয়েকে ঠিক লাইনে আনতে ভ*য়ই যথেষ্ট! এখন থেকে আর সে রাতে সবগুলো জানালা খুলে রাখবে না।”

তারপর মারসাদ একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলো।

_____

রাত প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে মারসাদ তার বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই দেখলো মাহি একা না। মারসাদের মা, বাবা, বড়ো বোন, বোনজামাই সবাই বসা। মিস্টার আরশাদ খানের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ। মিলি তার বাবার রাগ দেখে ছোটো ভাইকে বাঁচাতে আস্তে আস্তে উঠে এসে মারসাদের কা*ন টেনে ধরলো। তারপর বলল,

“এতো পা*জি কেন তুই? তোর এই মা*রামা*রি করার স্বভাবটা যাবে না নাকি?”

মারসাদ নিজের কান ছাঁড়ানোর প্রয়াসে বলে উঠে,
“আহ্, আপিলি। আমার কা*ন ছাড়। লাগছে।”

“লাগুক! লাগার জন্যই তো তোর কান ধরেছি। জানিস, তোর খবরটা শুনে আমরা কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম? মা তো কেঁদে-কেটেই শেষ! দেখ মায়ের মুখটা একবার। কিছুদিন আগেই হাত-পা ভে*ঙে মায়ের কাছে গিয়েছিল, আজকে আরেকজনেরটা ভা*ঙতে উদ্ধত হয়েছিস! তারপর পু*লিশি কান্ডও ঘটিয়েছিস!”

মারসাদ বলে,
“আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। আর ওই ছেলেটা একটা মেয়েকে….”

মারসাদ তার কথার শেষ করার আগেই আরশাদ খান ধ*মকে উঠেন,
“চুপ করো তুমি। ওসব বিচার করার জন্য দেশে পু*লিশ আছে। তোমাকে কেন ভার্সিটি ক্যাম্পাসে মা*রামা*রি করে একটা ছেলেকে আধম*রা করতে হবে? ছেলেটা যদি আজকে মা*রা যেত, তাহলে তুমি এখন এই সময়ে এইখানে থাকতে পারতে না! জামিনেও কিচ্ছু হতো না।”

মারসাদ চোখ নামিয়ে ফেলে। আরশাদ খান আবার বলেন,
“তুমি জানো, তোমার এই ঘটনার জন্য আমার কতটা মানহা*নি হয়েছে? আমার পার্টির লোকেরাই আমাকে অন্য নজরে দেখছে। নিজের রাগকে কন্ট্রোলে রাখো। এভাবে সব জায়গায় নিজের এমন উদ্ধত আচরণ প্রকাশ করবে না।”

মারসাদ ছোটো করে সরি বলে নিজের ঘরে চলে যায়। মিসেস মীরা স্বামীকে বলেন,
“ছেলেকে এখন এভাবে না বললেও পারতে। ছেলেটা নিজেও তো মা*র খেয়েছে।”

“তুমি চুপ করো, মীরা! তোমার অন্যায়ের উপর পর্দা ঢালার চেষ্টা করবে না। তাকে আমি সবসময় এপ্রিসিয়েট করি কিন্তু তার এরকম উদ্ধত আচরণকে প্রশ্রয় দিব না। একটা ছোটো ঘটনায় পু*লিশের খাতায় সে নাম লিখিয়ে ফেলেছে! বুঝতে পারছো তুমি?”

মিসেস মীরা চুপ করে গেলেন। মাহি ও মিলি এসে এবার তাদের বাবাকে সামলাচ্ছে। এদিকে মিলির স্বামী রাদিব বসে বসে এই ফ্যামিলির সবকিছু অবজার্ভ করছে!

চলবে ইন শা আল্লাহ

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৮

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
মারসাদকে যখন পু*লিশ সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে তখন মাহি আদিরাকে ফিসফিস করে বলে,
“দেখ আদু, আমার দাভাইকে এবার পু*লিশ নিয়ে যাচ্ছে। তোকে এবার কিছু বলতেই হবে।”

আদিরা ঢোক গিলে বলে,
“বলব তো। কিন্তু পু*লিশ কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। আমি এজন্যই কাউকে কিছু বলতে চাইনি।”

“প্রমাণ থাক বা না থাক। তুই এখন পু*লিশকে বলবি, ওই ছেলেটা তোকে বিরক্ত করতো, তার জন্য তুই দাভাইকে বলেছিস। তারপর দাভাই ছেলেটাকে শায়েস্তা করেছে।”

“হু।”

তারপর আদিরা পু*লিশকে ডাক দেয়।
“স্যার, আমি কিছু বলতে চাই।”

পু*লিশ অফিসার থামেন। তারপর বলেন,
“আপনার যা বলার থানায় গিয়ে বলবেন। এখন আমাদেরকে আমাদের ডিউটি করতে দেন।”

তারপর পুলিশ মারসাদকে নিয়ে চলে যায়। পুলিশ যাওয়ার পর আহনাফ এসে আদিরাকে বলে,
“ওই ছেলেটা তোমাকে ঠিক কবে থেকে ফলো করে তুমি বলতে পারো?”

আদিরা বলে,
“যেদিন আমরা মাহির সাথে রাতে থেকেছিলাম, তার পরদিন যখন আমি সকাল সকাল চলে এসে স্টুডেন্টের বাসায় পড়াতে যাচ্ছিলাম, তখন ওই ছেলেটা আমাকে ফলো করা শুরু করে। এর আগে আমি ছেলেটাকে কখনো দেখিনি।”

“ওকে। এটাই তুমি পু*লিশকে বলবে।”

আদিরা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। তারপর ওরা পু*লিশ স্টেশনে যায়।

____

এদিকে সাগরের কানে যখন পু*লিশের খবরটা আসে, তখন সাগর অট্টহাসিতে ফে*টে পড়ে! সাগর বলে,
“পু*লিশ তো মারসাদকে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখন ওই ছেলেটার খোঁজ পেলেই হলো। ওই ছেলেই পারবে মারসাদের অহংকার শেষ করতে। এই স্বপন, খোঁজ কি পেয়েছিস?”

স্বপন বলে,
“দাঁড়ান ভাই, নীলয় ভাই তো গেছে। সাথে রাকিব, মনিরও গেছে। কল কইরা দেখি।”

স্বপন কল করতে নিবে তার আগেই একটা কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
“কল করতে হবে না, স্বপন। আমরা চলে এসেছি। ওই ছেলেটাকেও নিয়ে এসেছি।”

সাগর নীলয়ের কন্ঠ শুনে উঠে বসে। নীলয়, রাকিব ও মনিরের সাথে আরেকটা ছেলে। ছেলেটার হাল দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটাই ওই ছেলে। সাগর ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করে,

“নাম কী তোর?”

ছেলেটা জবাবে বলে,
“দেলোয়ার হোসেন।”

সাগর আবার জিজ্ঞাসা করে,
“তোকে ওই মারসাদ আসলে মা*রলো কেন? কী করেছিলি?”

“আমি কিছু করি নাই। ওই হা*রামি আমারে হুদাই মা*রছে।”

দেলোয়ার ছেলেটা ফ্লোরের দিকে চঞ্চল দৃষ্টি রেখে কথাটা বলে। সাগর উঠে দেলোয়ারের কাছে আসে। তারপর হুট করে ছেলেটাকে সপাটে একটা চ*র মে*রে বলে,
“আমাকে কি তোর ব*লদ মনে হয়? তুই বললি আর আমি বিশ্বাস করে ফেললাম? তুই কিছু করিস নাই তারপরও মা&ইর খাইছিস! মারসাদ তোরে মা*রছে! মারসাদ কাউরে শুধু শুধু মা*রবে? তোর এই বয়ান পু*লিশে বিশ্বাস করলেও এই সাগর বিশ্বাস করে না। শোন, পুরা ক্যাম্পাস জানে মারসাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই সাগর। তারপরও আমি জানি মারসাদ কেমন। ও রগচটা কিন্তু অন্যায় সহ্য করে না। আর এইজন্যই ওরে আমার পছন্দ না।”

দেলোয়ার গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে চেয়ে ফুঁ*সছে। সাগর এবার দেলোয়ারের দুই গালে এক হাত দিয়ে চেপে ধরে মুখটা উঁচু করে। তারপর বলে,
“সত্যি কথা বল। আর তুই আমাদের হয়ে কাজ কর। তাহলে দেখবি তোরও লাভ আমাদেরও লাভ। তুই যেটা করতে চাইছিলি সেটাও পাবি। আর মারসাদের উপর প্রতিশোধও নিতে পারবি।”

দেলোয়ার সাগরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। সাগরকে দেখে দেলোয়ারের মনে হচ্ছে তার মতোই। তাই সে বলে,
“আমি কয়েকদিন ধইরা একটা মাইয়ারে ফলো করতেছি। আমার ওরে ভাল্লাগছে। মাইয়াডা এইখানেই পড়ে।”

সাগর দেলোয়ারকে ছেড়ে দিয়ে নাক ছিটকে বলে,
“মেয়ের খ*প্পর! মেয়ের খ*প্পর হলে সেটা ভার্সিটি পর্যন্ত কেন আনলি? রাস্তাই তো ছিল! তো বল, কোন মেয়ে? নাম কী? কোন ডিপার্টমেন্ট? কোন ইয়ার?”

“জানিনা আমি কিছু। ওই মাইয়ারে ফলো করতাম। আর ওই মাইয়ারে আমি আমার এলাকায় সেইদিনই প্রথমবার দেখছি। আর ওই মারসাদরে তো প্রায়ই দেখি, আমার এলাকাতেই থাকে। ওর বইনেও থাকে জানি। আমি তো ওর বইনের দিকে নজর দেই নাই। তারপরও হা*রামি আমারে পি*ডাইছে।”

“হয়তো মেয়েটা মারসাদের কাছে কম*প্লেন করেছে। ক্যাম্পাসে কোনো কিছু হলে সবাই তো ওর কাছেই যায়। আচ্ছা সেসব বাদ দে। এখন তুই আমার সাথে পু*লিশ স্টেশনে চল।”

দেলোয়ার কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। সে বলে,
“না না। আমি পুলিশের কাছে যামু না।”

এবার নীলয় বলে উঠে,
“কেন? পু*লিশের কাছে যাবি না কেন?”

“যামু না কইছি যামু না।”

রাকিব বলে,
“তুই কি চো*র, গু*ন্ডা?”

দেলোয়ার চুপ করে থাকে। সাগর কিছু একটা ভেবে বলে,
“শোন, কিচ্ছু হবে না। তুই গিয়ে এটেম্প্ট টু মা*র্ডার কেস করবি। আর তুই যদি সামান্য চো*র, গু*ন্ডাও হোস তাতে সমস্যা নেই। আমরা আছি তো।”

তারপর ওরা দেলোয়ারকে রাজি করিয়ে পু*লিশ স্টেশনে নিয়ে যায়।

_____

পু*লিশ স্টেশনে গিয়ে আদিরা পু*লিশ অফিসারকে সবটা বলে। সব শুনে পু*লিশ অফিসার বলেন,
“দেখুন মেম, আমি আপনার অভিযোগটা বুঝতে পারছি। রাস্তাঘাটে এখন অনেক লা*ফা*ঙ্গারা ঘুরে বেড়ায়। যারা মেয়েদেরকে বিরক্ত করে। কিন্তু একটা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে এভাবে মা*রামা*রি করাটা তো ঠিক না। এখন যাকে মা*রা হয়েছে, সে যদি এসে মা*র্ডার কে*স দেয়! তাহলে? আপনি ই*ভটি*জিংয়ের কে*স দিলেও, মা*র্ডার কে*স তো…” (আমার জ্ঞা*নের পরিধি সী*মাবদ্ধ। ভুল হলে কমেন্টে জানিয়ে দিবেন।)

মৃদুল বলে,
“স্যার, এখন আমরা কি করতে পারি?”

“উকিল ধরে দেখুন, কী করতে পারেন। আমরা আমাদের ডিউটি করছি। জামিনে তাকে বের করতে পারবেন, কিন্তু মা*র্ডার কে*সের মা*মলা হলে কোর্ট পর্যন্ত যাবে।”

তখনই সাগররা দেলোয়ারকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে। তারপর সাগর উচ্চস্বরে বলে উঠে,
“মা*র্ডার কে*সই তো, অফিসার! একটা ছেলেকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসের গেইটের কাছে জনসম্মুক্ষে বেধড়ক মা*রপিট করে বেহাল অবস্থা করাকে আর কী বলে? আপনি দেখুন, ছেলেটার অবস্থা! ছেলেটার কী দোষ ছিল? সে তো কারো কোন ক্ষতি করেনি।”

দেলোয়ারকে দেখেই মারসাদ জে*লের ভেতরের রড খিঁচে ধরে। রবিন মারসাদকে ইশারায় শান্ত হতে বলে। পু*লিশ অফিসার সাগরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনি কে?”

“আমি যেই হই, অফিসার! আমার পরিচয়ে কী? আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসের গেইটে একটা বাইরের ছেলেকে বেধ*ড়ক ভাবে আমারই ব্যাচমেট এভাবে মা*রবে সেটা আমার জন্য লজ্জাকর। ছেলেটা এসে আমার কাছে বিচার চেয়েছে। এখন আমি তো আর পু*লিশের উর্ধ্বে না। তাই আমি ছেলেটাকে নিয়ে পুলিশের কাছে এসেছি। আপনারাই এর বিচার করবেন।”

মারসাদের বন্ধুমহল সাগরের হঠাৎ এই পরিবর্তন দেখে হা হয়ে গিয়েছে! রিহান তো মৃদুলকে চি*মটি কে*টে নিশ্চিত হতে চাইছে! বদলে সে মৃদুলের একটা চা*টাও খেয়েছে! পু*লিশ অফিসার বলেন,

“আপনি ভাল কাজ করেছেন। আপনার বন্ধুও যদি এই কাজটা করতো তাহলে হয়তো আজকে তিনি জেলের ভিতরে থাকতেন না।”

পু*লিশের কথা শুনে সাগর মারসাদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি হাসে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৭

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
বৃষ্টির মধ্যে ভার্সিটির মেইন গেটের কাছে বিশাল জটলা লেগেছে। ভার্সিটির ভিপি পদে দাঁড়ানো মারসাদ ইশরাক এক ছেলেকে উদম কেলানি দিচ্ছে। আর মারসাদের বন্ধু মৃদুল ও রিহান মারসাদকে থামাতে গিয়ে নিজেরাও দুয়েকটা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেছে! তারপর আবার উঠে ধরতে যাচ্ছে। রবিন ভয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বারবার আহনাফের নাম্বারে কল লাগাচ্ছে। এদিকে আহনাফ রিকশায় থাকার কারণে পকেট থেকে ফোন বের করতে কিছুটা দেরি হয়। ফোন বের করে দেখে রবিন তাকে চার-পাঁচ বার কল করেছে। আহনাফ তা দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। অতঃপর সময় নষ্ট না করে দ্রুত রবিনকে কল করে। রবিন কল রিসিভ করেই বলা শুরু করে,

“জলদি মেইন গেইটের কাছে আয়। এখানে মারসাদ মা*রামা*রি শুরু করে দিয়েছে!”

আহনাফ আঁতকে উঠে। সে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“মা*রামা*রি শুরু করে দিয়েছে মানে? কার সাথে? সাগরের সাথে?”

“আরে না। সাগর না। জানি না কার সাথে! একটা ছেলেকে হঠাৎই মা*রতে শুরু করেছে। মৃদুল, রিহান থামাতে গিয়েও মা*ইর খে*য়ে এসেছে। দোস্ত, তুই তাড়াতাড়ি আয়। তুই ছাড়া মারসাদকে কেউ থামাতে পারবে না। আমার ভয় করতেছে, পুলিশ কেস না হয়ে যায়! প্লিজ তাড়াতাড়ি আয়!”

আহনাফ দ্রুত বলে,
“আসছি আমি।”

তারপর আহনাফ ফোন কেটে রিক্সাওয়ালা মামাকে বলে,
“মামা মেইন গেটের দিকে তাড়াতাড়ি নেন। তাড়াতাড়ি!”

আহনাফকে হঠাৎ এত বিচলিত হতে দেখে মাহি সন্দিহান হয়ে যে শুধায়,
“কী হয়েছে? আপনি এরকম করছেন কেন? ”

“কী হয়েছে সেটা সেখানে গেলেই বুঝতে পারবা! তোমার ভাই কি আমাকে একটু শান্তি দেয়? দুইটা ঘন্টা হয়নি আর সে! উফ্! মামা, তাড়াতাড়ি চালান না?”

আহনাফের অস্থির অবস্থা। রিক্সাওয়ালা মামা জবাবে বলেন,
“মামা, এটা রিকশা! এটা কোন প্লেন না যে আমি উড়াইয়া লইয়া যামু!”(আমি চট্টগ্রামের ভাষা জানিনা। তাই লোকাল রিকশাচালকরা যেভাবে বলে সেভাবে দিলাম।)

আহনাফ সময় গুনছে আর মাহি এদিকে চিন্তিত তার ভাই আবার কী করে বসেছে!

মারসাদের মা*রামা*রির ঘটনার কথা পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আদিরা ব্যাগ গুছিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোনোর সময় দুইটা মেয়েকে বলতে শুনেছে,

“মারসাদ ভাইয়া কী করেছে জানিস? মেইন গেইটের কাছে একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো মা*রছে। তার বন্ধুরাও তাকে আটকে রাখতে পারছে না!”

“কিন্তু কেন মা*রছে? হঠাৎ করে কাউকে অযথা মা*রবে কেন?”

“কিজানি! আমার তো ভয় হচ্ছে পু*লিশ না এসে পড়ে! দুয়েকজনকে বলতে শুনলাম যে পু*লিশ কেস হয়ে যেতে পারে যেভাবে মা*রছে!”

“চল তো দেখে আসি। এই বৃষ্টির মধ্যে ভার্সিটিতে এসব ঝামেলা কি ভালো লাগে বল?”

মেয়ে দুটো চলে যায়। আদিরা কথাগুলো শুনে কেমন ঘাবড়ে যায়। তার ভয় হচ্ছে, মারসাদ আবার ওই ছেলেটাকে মা*রছে না তো? কিছুক্ষণ আগেই তো মারসাদ তার কাছে এসে ওই ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইলো। তারপর রেগে বেরিয়ে গেল। যদি সত্যি সত্যি মারসাদ ওই ছেলেটাকেই মা*রে? তাহলে? ভীষণ ভয় পেয়ে গেল আদিরা। তাড়াতাড়ি করে ছুট লাগালো সেদিকে।

_______

মা*রামা*রি এক পক্ষের বললে ভুল হবে। দুই পক্ষেই চলছে। শুরুটা মারসাদ করেছে। তবে ওই ছেলেটার অবস্থা বেহাল। ছেলেটাকে রাস্তায় ফেলে তাকে ইচ্ছে মতো মারতে মারতে মারসাদ বলছে,

“আর কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করবি? বল? কথা বলিস না কেনো এখন? অচেনা মেয়েদের ফলো করবি আর?”

ছেলেটা হাত জোগ করে ইশারায় মাথা নাড়াচ্ছে। কিন্তু মারসাদ তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এরইমধ্যে আহনাফ এসে বৃষ্টির মধ্যে রিকশা থেকে নেমে দৌঁড়ে মারসাদকে ঝাপটে ধরে আটকায়। মৃদুল ও রিহান ছেলেটাকে উঠায়। ছেলেটা উঠে বসে ওদেরকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে অকথ্য গা*লাগা*ল ও হু*মকি দিয়ে কোনোমতে পালিয়ে যায়। মারসাদ আবারও তেড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আহনাফ টেনে ধরে রাখে।

আদিরা মানুষের ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে এই অবস্থা দেখে ভয়ে কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারপর কিছুটা দূরে মাহিকে দেখে মাহির কাছে ছুটে যায়। মাহি আদিরাকে দেখে বিচলিত হয়ে বলে উঠে,

“কী যে হচ্ছে, আদু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। দাভাই কেন ছেলেটাকে এভাবে মারলো? এখনো যেভাবে রেগে আছে, জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলবে না। তুই এখানে ছিলি? শুনেছিস কিছু? জানিস কিছু?”

আদিরা উত্তরে কী বলবে ভাবছে। তখন পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে,
“আরে মাহি, এটা একটা মেয়ে ঘটিত বিষয়! তোমার দাভাই একটা মেয়ের জন্য ওই ছেলেটার গায়ে হা*ত তুলেছে। ছেলেটার কী যে বাজে অবস্থা করেছে! ছেলেটা নাকি একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করতো তাই। এখন যদি ছেলেটা গিয়ে পু*লিশ কম*প্লেন করে, তাহলে কি ওই মেয়েটা আসবে তোমার দাভাইকে বাঁচাতে?”

মাহি শুনে চিন্তায় পড়ে গেল। আদিরা ভাবলো, মাহিকে বিষয়টা জানাবে। তাই বলল,
“মাহি, আমার সাথে একটু… একটু আয় না?”

“তোর আবার কী হয়েছে?”

“আয় না। বলছি।”

তারপর আদিরা মাহিকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে লাইব্রেরির ঘটনাটা বলে। ওই ছেলেটা যে কিছুদিন যাবত আদিরাকে বিরক্ত করছে তাও বলে। সব শুনে মাহি মাথায় হাত দিয়ে বলে,

“এতো বো*কা কেন তুই? আহনাফ আমাকে একটু আগে বলেছিল, তোকে একটা ছেলে কিছুদিন যাবত ফলো করছে। কিন্তু আমার ধারনার বাইরে ছিল যে দাভাই ওই ছেলেটাকেই এভাবে মা*রলো! তারউপর তোকে একটা ছেলে বিরক্ত করছে অথচ আমি জানিনা! হচ্ছেটা কী?”

আদিরা ভীতু স্বরে বলে,
“আমি জানিনা। আমি তো কাউকেই বলিনিম তোর ভাইয়া কিভাবে জেনেছে আমি সেসব জানিনা। উনি আমাকে একটু আগে লাইব্রেরিতে ছেলেটার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু এখন যে উনি এসব ঘটিয়ে বসবে এটা আমি ঘুনাক্ষরেও ধারণা করিনি। যদি ধারণা করতাম তাহলে আমি উনাকে আটকানোর চেষ্টা তো করতাম।”

“এখন আর বলে কি হবে! আর তুই রাস্তাঘাটে চো’খ-কান খোলা রেখে চলবি। সাবধানে থাকবি। বিপদ তো বলে কয়ে আসে না। হয়তো ছেলেটা সুযোগের অপেক্ষা করছিল! সুযোগ পেলেই তোর সাথে খারাপ কিছু করতে পারতো!”

আদিরা বুঝতে পারে, তাকে আরও সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। তারউপর আজকের ঘটনার পর না জানি কী হয়?

আহনাফ, রিহানরা মারসাদকে নিয়ে যাচ্ছে মাহি ও আদিরার সামনে দিয়ে। মাহিও আদিরার হাত ধরে টেনে ওদের পিছু পিছু যাচ্ছে। মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর মারসাদের ফার্স্টএইড করা হচ্ছে আর মাহি ব্যাকুল হয়ে তার ভাইয়ের কোথায় কোথায় কে*টেছে তা দেখতে ব্যস্ত। আর আদিরা ভয়ে চোরা চোখে মারসাদের দিকে তাকায়। আদিরা মারসাদের দিকে তাকাতেই দেখে মারসাদ তার দিকে ক্রু*দ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই সে আদিরাকে ভ*স্ম করে দেবে! শুকনো ঢোক গিলে আদিরা। ফার্স্টএইড করার পর সবাই মেডিকেল সেন্টার থেকে বের হচ্ছে তখনই বাইরে পু*লিশ দেখতে পায়। পুলিশ বলে,

“মিস্টার মারসাদ ইশরাক, আপনাকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে নাশ*কতা ছড়ানোর জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। আপনার নামে কমপ্লেন করা হয়েছে।”

পু*লিশের কথা শুনে মারসাদ ছাড়া বাকি সবাই চমকে উঠে। আহনাফ বলে,
“স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। মারসাদ শুধু শুধু ছেলেটাকে মা*রেনি। ছেলেটার দোষ ছিল। ছেলেটা একটা মেয়েকে…..”

“সেইসব পু*লিশ স্টেশনে গিয়েই শোনা যাবে। এখন মিস্টার মারসাদ ইসরাককে আমাদের সাথে যেতে হবে। তারপর বোঝা যাবে কী হয়েছে বা হবে। আমাদেরকে আমাদের ডিউটি করতে দিন।”

পু*লিশের কথা শুনে মৃদুল ও রিহান কিছু বলতে নিলে মারসাদ ইশারায় ওদেরকে থামতে বলে। তারপর পু*লিশকে বলে,
“চলুন, অফিসার।”

অতঃপর মারসাদকে পু*লিশ সাথে করে নিয়ে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৬

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
হোস্টেলে ফিরে আদিরা ব্যাগপত্র গুছিয়ে টিউশন পড়াতে যাবে বলে বের হয়েছে। স্টুডেন্টের বাড়ির পথটুকু সে হেঁটেই যায়। আজও যাচ্ছে, তখন হঠাৎ তার মনে হতে লাগলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে। প্রথমে বিষয়টাকে মনের ভুল ধরে নিলেও কিছুক্ষণ পর তার মন ঘাবড়ানো শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে এই পর্যন্ত তিন বার পিছু ফিরে একই ব্যাক্তিতে কখোনো রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখেছে, আবার চায়ের দোকানে চিপসের প্যাকেট ধরে নাড়াচাড়া করতে দেখেছে তো আবার অন্যদিকে ফিরে আকাশে আঙুল তাক করে কিছু করতে দেখেছে। বিষয়টা কি এতোটাই কাকতালীয়? আদিরা নিজের পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলো। গলির মুখে ঢুকে স্টুডেন্টের বাড়ির গেইটে ঢুকে যায়। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি পান করে।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মারসাদ জানতে পারে আদিরা খুব ভোরে এখান থেকে চলে গেছে। ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করার সময় সাবিহা ও রিন্তি এই বিষয়েই কথা বলে চলেছে। খাওয়ার মাঝে মারসাদ তাতে বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,

“চুপচাপ খেতে পারো না? যে চলে গেছে তাকে নিয়ে এতো কথা বলার কী আছে?

রিন্তি ও সাবিহা চুপ হয়ে যায়। মাহি ইশারায় ওদের শান্ত হতে বলে। তারপর মাহি পরিস্থিতি ঠিক করতে তার ভাইকে বলে,
“দাভাই, তোমার ডান হাতের ব্যথা কমেছে?”

মারসাদ নিজের ডান হাত দেখিয়ে মাহিকে বলে,
“না হলে খাচ্ছি কিভাবে?”

মাহি দমে গেল। তারপর ফের বলে,
“না মানে আমি ভাবলাম হাতে তো ব্যথা পেয়েছিলে। একদিনে ঠিক হয়ে গেল?”

“হু। চুপচাপ খা। তারপর ভার্সিটিতে যা।”

মাহি কিছুটা রেগে গেল। তারপর বলল,
“তোর জন্য আমি আর চিন্তা করব না দেখিস! ভালো কথা জিজ্ঞাসা করলেও খিটখিট করে! তোর বউ যে তোকে কিভাবে সহ্য করবে আমি এটাই ভেবে পাই না!”

মাহির রাগ দেখে মারসাদের হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসলো না। খাবারের শেষ অংশটুকু মুখে পুরে নেয়। তারপর খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,

“সেটা তোর চিন্তা করতে হবে না। আমারটা আমি বুঝে নিবো। তুই নিজের চরকায় তেল দে।”

তারপর মারসাদ বেরিয়ে যায়। মাহি চোখ ছোটো ছোটো করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। তারপর রিন্তি ও সাবিহাকে বলে,
“দেখলি? কেমন মেজাজ তার! এইসব ওই আহনাফের সাথে চলার ফল! আমার দাভাই রাগী আমি জানি। কিন্তু সে আমাকে রাগাতো না। আহনাফের সাথে চলতে চলতে এখন সে আমাকেও রাগায়! উফ!”

সাবিহা ও রিন্তি মাহির রাগ দেখে হেসে ফেলে। রিন্তি বলে,
“তুই রাগিস বলেই রাগায়। তাছাড়া আহনাফ ভাইয়া শুধু তোকেই একটু রাগায়। এমনিতে সে তোর ভাইয়ের রাগ কমানোর দায়িত্বই পালন করে। তুই অযথাই ভুল বুঝিস।”

“এই চুপ! ওই লোকের হয়ে সাফাই গাইবি না। চুপচাপ খা। তারপর ভার্সিটিতে যা।”

“যেমন ভাই তার তেমন বোন!”

সাবিহা এটা বলতেই মাহি চোখ কটমট করে তাকায়। তারপর সাবিহা ভয় পাওয়ার ভান করে তাড়াতাড়ি খেতে থাকে।

________

কিছুদিন পর,
আদিরা লাইব্রেরিতে বসে নিরিবিলি পড়ছে। বাহিরে মেঘের গুড়গুড় ডাক ও মুষলধারা বৃষ্টি। একটা মুগ্ধ করা পরিবেশ। লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। কয়েকজন আছে যারা কেউ টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে তো কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। রিন্তি ও সাবিহা আজ বৃষ্টির কারণে আলসেমি করে ভার্সিটিতে আসেনি। আর মাহি এসেও আহনাফের সাথে চলে গিয়েছে। তাই আদিরা লাইব্রেরিতে চলে এসেছে। আজকে মানুষজনও কম ভার্সিটিতে। আদিরা সকালে টিউশনে চলে গিয়েছিল, তারপর ভার্সিটিতে চলে এসেছে। হঠাৎ কেউ একজন এসে আদিরার হাত থেকে বইটা হুট করে নিয়ে নিলো। তৎক্ষণাৎ আদিরা চমকে উঠলো। চমকে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখে মারসাদ এক হাত পকেটে গুঁজে আরেক হাতে বইটা নিয়ে দেখছে। চেহারাতে কাঠিন্য ফুটে আছে তার। আদিরা তা দেখে ভয় তো পেলোই, সেই সাথে এটা বুঝতে পারছে না, যে সে আবার কী করেছে? সে তো কয়েকদিন যাবত মারসাদের গণ্ডির ভেতরেও যায়নি। তাহলে? নিজের মনের প্রশ্নে এতোটাই খোয়ে ছিল যে মারসাদ যে তার পাশের চেয়ারে বসে তার দিকে নিগূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে! সেটাও সে বুঝতে পারেনি। অতঃপর মারসাদ আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজালে আদিরা সতর্ক হয়। মারসাদ আর কালক্ষেপণ না করে নিজের মনের প্রশ্ন, যার জন্য এখানে আসা! সেটা করেই বসে!

“ওই ছেলেটা কে?”

প্রশ্ন শুনে আদিরা খানিক বিভ্রান্ত হয়। সে জবাবের বদলে প্রশ্ন করে,
“কোন ছেলেটা, ভাইয়া?”

মারসাদ ভ্রুকুঞ্চন করে ফেলে। তারপর ফের শুধায়,
“যেই ছেলেটা কয়েকদিন যাবত তোমার পিছু পিছু ভার্সিটি পর্যন্ত আসছে।”

আদিরা এবার বুঝতে পারে। সে নড়েচড়ে বসে মৃদু স্বরে বলে,
“আমি চিনি না, ভাইয়া।”

“তুমি যদি তাকে না চেনো, তাহলে সে তোমার পিছু পিছু এতদিন যাবত আসছে কেন? আর তুমিও তাকে কিছু বলছো না কেন?”

মারসাদের কণ্ঠে যেন রাগের আভাস। আদিরা এক পলক মারসাদের চোখের দিকে চেয়ে আবার দৃষ্টি নিচু করে ফেলে। তারপর ভীতু স্বরে বলে,
“আমি জানিনা উনি আমার পিছু পিছু কেন আসছে।”

“জানবে না কেন? একটা ছেলে তোমাকে কন্টিনিউয়াসলি প্রতিদিন ফলো করছে, আর তুমি জানো না সে তোমার পিছু পিছু কেন আসছে? এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি চলাফেরা করো?”

কথাগুলো মারসাদ ধমকের সুরেই বলেছে। আজকের লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা ও বাহিরে বৃষ্টির ছন্দে হয়তো যে কয়েকজন আছে তারা শুনতে পায়নি। আদিরা মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। বলার মতো কিছু তো পাচ্ছে না। মারসাদ আবার জিজ্ঞাসা করে,

“চুপ করে আছো কেন? বলো?”

আদিরা তোঁতলানো স্বরে বলল,
“ঐ লোকটা তো আমাকে রাস্তাঘাটে কোনো রকম বিরক্ত করেনি। তাই আমি আগবাড়িয়ে কিছু বলিনি। যদি আগবাড়িয়ে কিছু বলতে যাই আর সে আমার কোন ক্ষতি করতে চায়? এজন্য কিছু বলিনি।”

মারসাদ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে আদিরার মাথায় আলতো টো*কা মে*রে সতর্ক করে বলে,
“তুমি কি তোমাকে বিরক্ত করার অপেক্ষায় বসে থাকবে? তারপর তুমি কিছু বলবে? এত বোকা কেন তুমি? চেনো না জানোনা একটা ছেলে তোমাকে ফলো করছে, কোনো ভালো উদ্দেশ্য তো ফলো করছে না নিশ্চয়ই?”

আদিরা না বোধক মাথা নাড়ায়। মারসাদ তারপর আর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। আদিরা সেদিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। যেন এতক্ষণ যাবত সে দম আটকে রেখেছিল!

______

খোলা মাঠের শেষ প্রান্তে বৃষ্টির মধ্যে ভীষণ আনন্দে ভিজছে মাহি। মাহির থেকে একটু দূরে গাছের নিচে ছাতা মাথায় দাঁড়ানো আহনাফ। আহনাফ মোবাইলের ক্যামেরায় মাহির বৃষ্টিস্নাত হাস্যজ্জ্বল কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছে। বৃষ্টির তেজ ক্রমাগত বাড়ছে। মাহি প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট যাবত ভিজছে। এবার আহনাফের মনে হলো মাহিকে ডাকা দরকার।

“মাহি, চলে এসো। আর ভিজো না।”

“না। মাত্রই তো বৃষ্টি ঠিকভাবে পড়ছে। আপনিও আসুন না।”

“তুমি অনেক্ষণ যাবত ভিজছো। চলে আসো এবার। পরে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“লাগবে না। আপনার ঠান্ডা লাগবে বলেই তো আপনি ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে আছেন! আমার ঠান্ডা লাগবে না। বাসায় গিয়ে দুইটা প্যা*রাসিটে*মল খেয়ে নিব। আর কিছু হবে না।”

আহনাফ মোবাইলে সময় দেখলো। তারা ঘুরতে বেরিয়েছে প্রায় দুই ঘন্টার মতো হয়ে গিয়েছে। মারসাদকে বলেছে একটু দরকারে যাচ্ছে। কিন্তু দরকারটা কী তাও বলেনি আর মারসাদও জানতে চায়নি। মারসাদের মুখের অবস্থাও আজ তেমন ভালো ছিল না। আহনাফের মন বলছে তার এবার যেতে হবে। তাই আচমকা মাহির হাত ধরে টেনে হাঁটতে শুরু করে। মাহি তাতে ক্ষে*পে গিয়ে আহনাফের হাতে আ*ঘা*ত করতে করতে বলছে,

“আরে! ছাড়ুন আমার হাত। আমি আরেকটু ভিজবো। ছাড়ুন।”

“চুপচাপ চলো। তোমার ভাই যেন কী করছে!”

“দাভাই যা খুশি করুক, আপনি আমার হাত ছাড়ুন! আমি যাব না এখন।”

আহনাফ থামে। তারপর মাহিকে বলে,
“তুমি বুঝতে পারছো না, মাহি। আমরা এসেছি দুই ঘন্টার মতো হয়েছে। কিন্তু তোমার ভাই একটা কলও করলো না আমাকে।”

“কেন? দাভাই কি সারাদিন আপনাকে চোখে হারায় নাকি?”

“তোমার দাভাই একটা ছেলেকে টার্গেট করে রেখেছে! আমাদেরকে মুখে না বললেও ওই ছেলেটার দিকে যেভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সে দিচ্ছিলো! আমি জানিনা কী হয়!”

মাহি সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“ছেলেটা কে? আর কী করেছে?”

“ছেলেটার নাম তো জানিনা। তবে ছেলেটা আদিরাকে কয়েকদিন যাবত ফলো করছে।”

মাহি ভাবনায় পড়ে গেলো! আদিরাকে একটা ছেলে ফলো করছে, কিন্তু সে জানে না! অথচ তার ভাই জানে! এই চিন্তা করতে করতে সে আহনাফ রিকশা ডাকলে রিকশাতেও উঠে পড়ে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৫

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
আদিরা চিৎকার করে উঠতেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকায়। ওদিকে ঠিক একই সময়ে মুভিতে ভূতের আকস্মিক আগমনে মাহি, রিন্তি ও সাবিহাও চিৎকার করে উঠেছে। যার দরুণ আদিরার চিৎকার ফিঁকে পড়ে গেছে। আদিরা নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে তখন মারসাদ বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলে,

“তুমি এখানে কী করছো? আর আমাকে দেখে এভাবে ভূত দেখার মতো চিৎকার করলে কেন?”

মারসাদ জবাবের অপেক্ষা করছে। কিন্তু আদিরার তো মুখ বন্ধ। সে উম উম করছে বলে মারসাদ ফের বলে,
“সমস্যা কী তোমার? বলছো না কেন?”

কথাটা নিজে বলে সাথে সাথে তার নিজেরই বোধ হয়। তারপর আদিরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে খানিক পিছিয়ে যায়। দুজনেই নিরব। কিছুক্ষণ পর আবার মাহির ঘর থেকে আর্তচিৎকার ভেসে আসলে আদিরা ভয়ে দৌঁড়ে সেখানে যেতে নিলে মারসাদ আবার ওর হাত ধরে ফেলে। তারপর ফের শুধায়,

“এই চিৎকার কেন করছ ওরা? ওই ঘরে কে কে আছে? কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো তোমরা?”

আদিরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“না মানে ভাইয়া, আসলে আমরা….”

মারসাদ চোখ বন্ধ করে ফের খুলে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আদিরা…”

আদিরা চোখ-মুখ খিঁচে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠে,
“মাহি বলেছিল, আপনি কুমিল্লা যাবেন। তাই মাহি ফ্ল্যাটে একটা কিভাবে থাকবে ভেবে আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি কিন্তু আসতে চাইনি, মাহি বলেছে তাই এসেছি।”

আদিরা রেলগাড়ির গতিতে বলা কথাগুলো শুনে মারসাদ সংক্ষেপে ধীরেসুস্থে বলল,
“ওহ আচ্ছা।”

মারসাদের জবাব শুনে পিটপিট করে চোখ খুলে আদিরা। এত শান্ত জবাব! আদিরা ভেবেছিল তাকে বকবে। যেভাবে প্রথম সাক্ষাতের দিন ভুলে আইসক্রিম পড়ে যাওয়াতে বকেছিল!

ফ্ল্যাশব্যাক,
ভার্সিটিতে আজ চতুর্থয় দিন আদিরার। তার নতুন বান্ধবী রিন্তির সাথে সে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খাচ্ছে। রিন্তিই জোর করে আদিরাকে কিনে দিয়েছে যদিও। আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটার সময় রিন্তি তার কিছু ফানি মেমোরি শেয়ার করছে। যার দরুণ হাসি আটকে রাখতে না পেরে আদিরা টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল। তখন পাশ দিয়ে মারসাদ যাচ্ছিলো, ঠিক তখনি মারসাদের সাথে ধা*ক্কা লাগে আদিরার। মারসাদের সাদা জ্যাকেটে আদিরার অরেঞ্জ আইসক্রিম লেগে যায়। সাথে সাথে সাদা জ্যাকেটের বুকের দিকটার একটু নিচে কমলা দাগ পড়ে যায়। তাতে ভীষণ রেগে যায় মারসাদ। চিৎকার করে বলে উঠে,

“এই মেয়ে, কী করলে তুমি এটা?”

সাথে সাথে আদিরা ঘাবড়ে যায়। সেই সাথে রিন্তিও। সে চোখ বড়ো বড়ো করে নিজের আইসক্রিম ও মারসাদের জ্যাকেটে লাগা কমলা দাগটা দেখছে। মারসাদ নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আরো রেগে যায়। সে ফের ধ*মকে বলে উঠে,

“এখন হ্যা*বলার মতো তাকিয়ে আছো কেন? হাঁটার সময় চো*খ কি হাতে নিয়ে হা*টো? দেখো না, সামনে পিছনে কেউ আসছে কি না?”

আদিরা ভয়ে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কোনোমতে মুখ দিয়ে ‘সরি’ উচ্চারণ করে। মারসাদ তা শুনে আবারও ধ*মকে বলে,

“সরি বললেই বুঝি সব শেষ? আমার জ্যাকেটটা যে নষ্ট হলো? সেটা কি তোমার সরির দ্বারা ঠিক হয়ে যাবে?”

রিন্তি এবার ভয়ে ভয়ে বলে,
“সরি ভাইয়া, আসলে ওর কোন দোষ ছিল না। আসলে…”

“কী আমার দোষ? আমি তোমাদের রাস্তায় চলে এসেছি?”

মারসাদের কঠোর কণ্ঠস্বর শুনে রিন্তিও চুপ হয়ে গেছে। পাশ থেকে আহনাফ, রিহান, মৃদুলরা মারসাদকে শান্ত হতে বলছে। আহনাফ বলে,

“সাগরের উপর করা রাগটা ওদের উপর ঝাড়িস না। ওদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ওরা ইচ্ছে করে করেনি। ভুলে হয়ে গেছে। তুই চল এখান থেকে।”

“এজন্য রাস্তার মধ্যে মা*তালের মতো হাঁটবে।”

মৃদুল বলে,
“বাদ দে না। তুই চল। ওই আইসক্রিমটা তোর জ্যাকেটে না লেগে মুখে লাগা উচিত ছিল! তোর মাথা ঠান্ডা হওয়া উচিত! এই শীতের মধ্যেও তোর মাথায় ডি*ম ভা*জি করা যাবে!”

মারসাদ এবার চোখ গরম করে মৃদুলের দিকে তাকায়। মৃদুল হাসার চেষ্টা করলে মারসাদ হনহনিয়ে চলে যায়।

তারপর থেকে আদিরা আরও গড়বড় করেছে আর মারসাদের ধ*মক খেয়েছে। সেই থেকে সে মারসাদকে ভয় পায়।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড

আদিরাকে নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মারসাদের ভ্রু কুঁচকে আসে। সে আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কী?”

আদিরা অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি নামিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে,
“কিছু না।”

“কিছু না হলেই ভালো। এখন গিয়ে মাহিকে বলে দাও আমি চলে এসেছি।”

এই বলে মারসাদ তার নিজের রুমে চলে যায়। মারসাদ যেতেই আদিরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তারপর তাড়াহুড়ো করে রুমে গিয়ে লাইট জ্বালায়। হঠাৎ লাইট জ্বালানোতে মাহি, সাবিহা, রিন্তি সবাই বিরক্ত হয়। মাহি বলে,

“লাইট বন্ধ কর। তোর ভয় করছে জানি। মুভি প্রায় শেষের দিকে। তারপর।”

“তোর ভাই এসেছে, মাহি।”

আদিরার কথা শুনে মাহি অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে,
“গেলোও না বলে, আসলোও না বলে! কী যে চলতেছে দাভাইয়ের মনে! যাই দেখে আসি।”

মাহি ল্যাপটপ পজ করে তার ভাইয়ের রুমে যায়। মাহি যেতেই আদিরা সাবিহা ও রিন্তিকে বলে,
“এখন তো মাহির ভাইয়াও ফিরে এসেছে। আমাদের কি এখানে থাকা ঠিক হবে?”

সাবিহা বলে,
“কেন ঠিক হবে না কেন? আমরা তো মাহি একা থাকবে এজন্য এসেছি। এখন উনি তো মাহিকে বলেও যায়নি, আর বলেও আসেনি। উনি না আসলে তো মাহিকে একাই থাকতে হতো।”

“তাই তো। তুই একটু বেশি বুঝিস, আদু! আর এত রাতে তোর জন্য হোস্টেলের গেট কি খোলা রাখবে নাকি?”

সাবিহা ও রিন্তির কথা শুনে আদিরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে রইল।

এদিকে মাহি মারসাদের ঘরে গিয়ে মারসাদকে জিজ্ঞাসা করে,
“তুমি আমাকে না বলে চলে গেলে কেন? আর এখন না বলেই চলে এসেছো! তুমি আজ আসবি না ভেবে আমার ফ্রেন্ডদের ডেকে নিয়েছি। ”

“আমি ফিরে আসবো বলেই তোকে জানাইনি।”

“কোন ঝামেলা হয়েছিল, দাভাই?”

“না। কাজ ছিল। তুই এখন যা। আমি রেস্ট করব। আর চি*ল্লাপা*ল্লা করবি না। আর শোন…”

কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো মারসাদ। অতঃপর আবার বলল,
“যা এবার।”

মাহি তারপর চলে আসে। রুমে এসে মাহি ল্যাপটপটা অফ করে বলে,
“মুভিটার বাকি অংশ আজকে আর দেখা যাবে না। যদি আরো ভয়ংকর কিছু হয়, আর আমরা চিৎকার করে উঠি? তবে দাভাই খুব রাগ করবে। মনে হয় দাভাইয়ের শরীরটা খারাপ। সকালে অ্যা*ক্সিডেন্ট হলো, তারপরে কুমিল্লা গেল আসলো।”

মাহির কথা শুনে ওরা তিনজনেই মেনে নিল। একটু পর আদিরা বলল,
“আমরা যদি এখানে থাকি তাহলে উনার কোনো প্রবলেম হবে না তো?”

“আরে না। আমার দাভাই এসব বিষয় নিয়ে ঝামেলা করে না। তুই অযথাই আমার দাভাইকে এত ভয় পাস।”

আদিরা চুপ করে রইল।

______

পরদিন ভোর সকালে আদিরা ফজর নামাজ পড়েই আদিরা মাহিকে ডেকে তুলল। মাহি ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছ তোর? এভাবে ডাকছিস কেন?”

“উঠে নামাজ পড়। আর আমি চলে যাচ্ছি।”

আদিরা চলে যাবে শুনে মাহি চোখ ভালো করে মেলে তাকায়। তারপর বলে,
“মাথা ঠিক আছে তোর? বাহিরে মাত্র আলো ফোটা শুরু হয়েছে। মানুষজন রাস্তায় থাকবে এখন? আমাদের সাথে একসাথে ভার্সিটিতে যাবি তা না! এখন সে নাকি চলে যাচ্ছে! চুপ করে বসে থাক।”

আদিরা নাছোড়বান্দা। সে যাবেই।
“না। আমি চলে যাব।”

“মহা ঝামেলা তো তোকে নিয়ে! দাভাই রাতে চলে এসেছে বলেই তো তুই চলে যেতে চাচ্ছিস। তাই তো? এখন বের হলে যদি কোনো বিপদে পরিস তখন দাভাই তোকে আরও বকবে। ঝামেলা বাড়াস না। প্লিজ চুপ করে বসে থাক। নয়তো ঘুমা।”

আদিরা ফের বলে,
“আমাকে টিউশন পড়াতে যেতে হবে। তুই বোঝার চেষ্টা কর।”

“একদিন না পড়ালে কি হবে? সকালেরটা না হয় বিকালে পড়িয়ে দিস। তাও চুপ করে বসে থাক।”

“না। ওদের টাইম মিলবে না। আমার কিছু হবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। আমি গিয়ে তোকে কল করব।”

তারপর আদিরা মাহির কোন রাখডাক না মেনেই বেরিয়ে গেলো। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েই আদিরা লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। পুরোটা রাত সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। তার বারবার অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিন্তু রিন্তি ও সাবিহা ঠিকই ভালোমতো ঘুমাচ্ছিল। ওদের যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে তার সমস্যা কেন হচ্ছে এটাই সে বুঝতে পারছে না!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৪

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
আরসাদ খান ভিষণ চিন্তিত হয়ে তার অফিসরুমে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেই তার বড়ো মেয়ে মিলির কল এসেছিল। তার বড়ো মেয়ে তাকে যা বলেছে তা নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত। এখন মারসাদকে তার এখানে খুব দরকার। কিন্তু সকালে মাহি তাকে ফোন করে বলেছিল মারসাদের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এখন মারসাদকে এখানে আসতেই বা কীভাবে বলবে! চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা আসতে যদিও সময় বেশি লাগবে না। ভেবে-চিন্তে আরশাদ খান মারসাদকে কল লাগালো। মারসাদ কল রিসিভ করতেই আরশাদ খান বলেন,

“তুমি কি আজকে একটু কুমিল্লা আসতে পারবে?”

মারসাদ সন্দিহান কণ্ঠে শুধালো,
“কেন? জরুরী দরকার?”

“হু। মিলি কল করেছিল। বলল রুহুল আমিন রাদিবকে এবার কা*উন্সিলর পদে দাঁড়া করাচ্ছে। তুমি তো জানোই…”

মারসাদ তার বাবাকে পুরো কথা বলতে দিলো না। সে বলে উঠলো,
“নিজের ছলচাতুরী থেকে শুধরালো না! আমি আসছি।”

তারপর মারসাদ কল কে*টে আহনাফকে বলে,
“তুইও আমার সাথে যাবি।”

“কোথায়?”

“কুমিল্লা।”

আহনাফ অবাক হয়ে বলে,
“কুমিল্লা কেন?”

“বাবা যেতে বলেছে। আর বাইক তুই চালাবি। এক কাজ কর, তোর বাইকটাই নিয়ে চল।”

তারপর মারসাদ হাঁটা শুরু করে। আহনাফ মাথা চুলকে ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মাহিকে মেসেজ করে দেয়। তার আজকের বিকেলের সারপ্রাইজ ক্যান্সেল।

______

মাহি মেসেজটা দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে নেয়। তারপর বলে,
“হঠাৎ করে দাভাই কুমিল্লা যাচ্ছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”

তারপর মাহি বিষয়টা জানতে তার মাকে কল করে। মিসেস মীরা তখন আচার বানাচ্ছিলেন। বড়ো মেয়ের জন্য পাঠাবেন বলে। ফোন বাজতে দেখে তিনি হাত মুছে রিসিভ করেন। তখন মাহি বলে,

“কী করছো, আম্মু?”

“আচার বানাচ্ছি। মিলি খেতে চেয়েছে।”

“খালি আপিলির জন্যই আচার বানাও! আমাকে তো চোখেই দেখো না! হুহ্!”

মিসেস মীরা হেসে ফেললেন। তারপর বললেন,
“তোর জন্যও বানাব। তুই বাড়িতে তো আয়।”

মাহি রাগ করে বলে,
“আপিলিও বাড়িতে থাকে না। আমিও থাকি না। কিন্তু তুমি বেশি ভালোবাসো আপিলিকেই। আমার প্রতিও তো একটু মায়া দয়া করে আচার, কিছু রান্না করে পাঠিয়ে দিতে পারো। দাভাই তো আজকে যাচ্ছে ওখানে।”

মারসাদের আসার কথা শুনে মিসেস মীরা অবাক হলেন। তিনি শুধালেন,
“তোর দাভাই আসছে, আমি তো জানি না। তোকে কখন বলল?”

মাহি থতমত খেয়ে যায়। তারপর একটু ভেবে বলে,
“আমি শুনলাম। রবিন ভাইয়া বলছিল তখন শুনে ফেলেছি। দাভাই তো আমাকেও জানায়নি। আমি যে ফ্ল্যাটে এখন একা থাকবো সেটারও কোনো খবর নেই তোমার ছেলের!”

“দাঁড়া। দেখি। হঠাৎ করে কী হলো যে হুট করে আসছে?”

মাহি বুঝতে পারলো, তাে মাও এই ব্যাপারে জানে না। মাহি বলে,
“আম্মু, কল রাখি। ক্লাস আছে।”

তারপর মাহি কল রেখে তার বান্ধবীদেরকে বলে,
“দাভাই কুমিল্লা যাচ্ছে, আমাকে বলেওনি। মাও নাকি জানে না। আমি এখন অতো বড়ো ফ্ল্যাটে একা কিভাবে থাকব?”

রিন্তি বলে,
“আমার ও সাবিহার সাথে মেসে চলে আয়। একা একা একটা ফ্ল্যাটে থাকা তো ঠিক না।”

মাহি গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে। সাবিহা বলে,
“এতো চিন্তা করছিস কেন? ভাইয়া হয়তো কোনো কাজেই যাচ্ছে।”

মাহি হুট করে বলে উঠে,
“তোরা তিনজনই আজকে আমার সাথে ফ্ল্যাটে থাকবি।”

রিন্তি ও সাবিহা তো রাজি। কিন্তু আদিরা হকচকিয়ে বলে উঠে,
“না না। আমি মেসেই থাকব।”

রিন্তি আদিরকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কেন রে? একটা দিন আমাদের সাথে থাকতে কী সমস্যা তোর?”

“আমার জিনিসপাতি সব তো ওখানে। যদি হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। ওখানের আপুরা বলেছে, তাদের নাকি অনেক কিছু খুঁজে পায় না।”

সাবিহা বলে,
“টাকা-পয়সা নিজের সাথে করে নিয়ে নিবি। তাহলেই তো হলো।”

“টাকা-পয়সা আমার সাথেই থাকে।”

“তাহলে বাহানা করা বন্ধ কর। দুইটা জামা-কাপড় নিয়ে মাহির ফ্ল্যাটে চলে আসবি।”

মাহিও বলে,
“আজ তাহলে বেশ মজা হবে। একটা হরর মুভি অনেকদিন ধরে দেখব ভাবছিলাম। আজ চারজনে মিলে দেখব।”

আদিরা হরর মুভির কথা শুনে আরও ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। তা নিয়েও ওদের হাসাহাসি চলতে থাকে।

_______

বিকেলের দিকে মারসাদ ও আহনাফ কুমিল্লায় পৌঁছায়। প্রথমেই যায় রুহুল আমিনের অফিসে। রুহুল আমিন মারসাদকে দেখে অবাক হয়। সে প্রশ্ন ছুঁড়েন,

“মারসাদ, তুমি এখানে?”

মারসাদ জবাবে বলে,
“হ্যাঁ আমি। অবাক হলেন?”

“তা তো কিছুটা হলামই। তুমি এখন চট্টগ্রাম থাকো জানি। হঠাৎ কুমিল্লায়?”

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
“আপনার চেহারাটা বারবার মনে পড়ছিল। তাই দেখতে এলাম।”

রুহুল আমিন মেকি হাসলো। মারসাদ ফের বলল,
“আমার আপিলি কেমন আছে? আপনার ভাগ্নে তার কোনো অযত্ন করছে না তো?”

রুহুল আমিন ভড়কে গেলেন। তিনি বললেন,
“তুমি এভাবে বলছো কেন? তোমার বোন তো একদম ভালো আছে।”

“থাকলেই ভালো। আপনি রা*জনী*তি করেন সমস্যা নাই। আমার দুলাভাইকে ও আপিলিকে জড়াবেন না। এটা কিন্তু বিয়ের সময় শর্ত ছিল। মনে আছে? নাকি পেপারস দেখাব? পেপারসে আপনারও সাইন আছে।”

রুহুল আমিন হতভম্ব হয়ে গেছে। সে তো তখন উদ্দেশ্য নিয়ে মিলির সাথে রাদিবের বিয়েটা করিয়েছিল। কিন্তু একটা পেপারে মারসাদ তার সাইন নিয়েছিল। তারপর থেকেই মারসাদ তাকে বলতো যেন রাদিবকে রা*জনী*তির প্যাচে না জড়ায়। তবে কি এটাই সেই পেপার? রুহুল আমিন বলেন,

“আমি এসব জানি না। তোমার দুলাভাই চাইছে। আর রা&জনী*তিতে আসলে ক্ষতি কী?”

“ক্ষতি তো কিছু না কিন্তু আপনার সাথে আর যাই হোক, ভদ্রতা যায় না! তাই আগে থেকেই সাবধান করলাম। আমার আপিলি প্রেগন্যান্ট। সো মাইন্ড ইট। হু?”

রুহুল আমিন মেকি হাসলো। মারসাদ আহনাফকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মারসাদরা যেতেই রুহুল আমিন কাউকে কল করে বলল,
“এই মারসাদ এসে সব প্ল্যান ঘেটে দিলো। এখন আমাকেই যা করার করতে হবে। নতুন প্ল্যানিং করতে হবে। যেন মারসাদ কিছু না করতে পারে। তার জন্য মিলিকে হাতের মুঠোয় আনতে হবে।”

মারসাদ ও আহনাফ তারপর নিজ নিজ বাড়িতে যায় বাড়ির সবার সাথে দেখা করতে। মিসেস মীরা মারসাদের অ্যাক*সিডেন্টের কথা জানতেন না। তিনি মারসাদের এই অবস্থা দেখে ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়লেন।

“বাবু, তোর এই অবস্থা কীভাবে হলো? কোথায় অ্যা*কসিডেন্ট হলো? ঠিক আছিস তুই?”

মায়ের বিচলিত মুখখানা দেখে মারসাদ মৃদু হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,
“সামান্য একটু। কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”

“কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে তো কী হয়েছে, আমি তোকে বারবার বলি বাইক চালানোর সময় সাবধানে চালাবি। আমার একটা কথাও তুই শুনিস না। তোর বাবাকে বারবার নিষেধ করেছিলাম, ছেলেকে বাইক কিনে দিও না। দিলে গাড়ি দাও। কিন্তু তোর বাবা তো ছেলে যা বলবে সেটাই করবেন। আমার কথা কেন শুনবেন তিনি?”

মারসাদ তার মাকে চেয়ার বসিয়ে নিজেও আরেকটা চেয়ারে বসে বলে,
“তুমি অনেক বেশি চিন্তা করো, মা। কিচ্ছু হবে না আমার। আমার সাথে আহনাফ আছে তো। ও একটু গেছে ওর বাসায় সবার সাথে দেখা করতে।”

মিসেস মীরা মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন। মারসাদ বুঝে গেছে তা মা এখন এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেই থাকবে। তাই মাকে একটু ব্যস্ত করতে বলে,

“খুব খিদে পেয়েছে, মা। সেই বারোটার দিকে বের হয়েছি। কিছু খাওয়া হয়নি। তুমি তাড়াতাড়ি করে আমায় একটু খাইয়ে দাও তো।”

মিসেস মীরা এবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছেলের জন্য খাবার আনতে চলে গেলেন।

_______

রাত প্রায় ৯টার বেশি বাজে। চার বান্ধবী পপকর্ন, চানাচুর ও চিপস নিয়ে পুরো ফ্ল্যাটের আলো নিভিয়ে মুভি দেখছে। যখন যখন ভ*য়ংকর সিন গুলো আসছে তখন তখন চিৎকার দিয়ে উঠছে। হঠাৎ আদিরা বলে উঠে,

“পানি খাব। বোতলের পানি তো শেষ।”

মাহি বলে,
“ডাইনিং থেকে নিয়ে আয়।”

আদিরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলে,
“আমি একা যাব না। আমার সাথে কাউকে যেতে হবে।”

“দেখ, এখন কোথাও যেতে পারবো না। মুভিটার ক্লাইম্যাক্স পর্যায়ে আছে। এখন মিস করাই যাবে না। তোর পানি খেতে হলে অপেক্ষা কর। নয়তো নিজে গিয়ে নিয়ে আয়।”

বাধ্য হয়ে আদিরা শুকনো মুখে জড়েসড়ো হয়ে বসে আছে। তার মনোযোগ আর মুভিতে নেই। তার কাছে বারবার মনে হচ্ছে সে কারও পায়ের শব্দ পাচ্ছে। সে শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“এই তোরা কারও পায়ের শব্দ পাচ্ছিস?”

রিন্তি জবাবে বলে,
“না! শুধু তোর কানেই পায়ের শব্দ আসছে? আমরা তো মুভিতেই মনোযোগ দিয়ে রেখেছি। তুইও দে। অন্যদিকে মনোযোগ দিচ্ছিস বলেই তোর এরকম ভয় লাগছে।”

সাবিহাও বলে,
“এই নিয়ে তুই এই কথা কয়বার বললি? বলতো। চুপচাপ দেখ না।”

মাহি বলে,
“তোরা চুপ কর। এখুনি ভূ*তটা বের হবে। আস্তে।”

আদিরা নিজের কথায় পাত্তা না পেয়ে বারবার অন্ধকারে আশেপাশে খুঁজছে। তার গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে যাওয়ার দশা! মাহির ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বা*লিয়ে মনে খুব সাহস নিয়ে দোয়া, দুরুদ পড়তে পড়তে বিছানা থেকে নেমে ডাইনিংয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মাহির কড়া নিষেধ রুমের লাইট জ্বা*লানো যাবে না। তারপর ডাইনিংয়ের লাইট জ্বা*লিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ চকিতে চোখ-মুখ খিঁচে চিৎকার করে উঠলো সে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৩

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩
আদিরা তার পাশের চেয়ারে এসে বসা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠে। চমকে হঠাৎ করে দাঁড়াতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যথাও পেয়েছে। তারপর সে তোঁতলানোর স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আ..আপনি? আপনি এখানে?”

মারসাদ আদিরাকে চেয়ারে বসতে ইশারা করে নিচু গলায় বলে,
“বসো। আর আস্তে কথা বলো। সবার মনোযোগ কি এদিকে আনবে নাকি?”

আদিরা ফিসফিস করে ফের শুধায়,
“আপনি এখানে কী করছেন?”

মারসাদ বিরক্ত হয়ে নিজেই বাম হাত দিয়ে আদিরার হাত ধরে টান দিয়ে চেয়ারে বসায়। তারপর নিচু স্বরে বলে,
“কেন? আমি এখানে আসতে পারি না? এখানে কি আমার আসা নিষেধ?”

মারসাদ কথা বলতে গিয়ে আদিরার দিকে সামান্য ঝুঁকে গিয়েছিল। আদিরা তাই বিপরীত পাশে কিছুটা হেলে আমতা আমতা করে বলে,
“না, ভাইয়া। আমি আসলে তা বলিনি। মানে আমি…”

মারসাদ কপাল কুঁচকে আদিরার প্রতিক্রিয়া দেখে সোজা হয়ে বসে। তারপর বলে,
“এই তোমাকে না বলেছি, এই মানে! আসলে! এগুলো বলবে না। যা বলার ডিরেক্ট বলো।”

আদিরা মাথা নিচু করে বলে,
“কিছু না।”

“গুড। এখন বলো, সামিরাকে তখন কিছু বলোনি কেন?”

আদিরা নজর উঁচু করে মারসাদের দিকে তাকায়। তারপর আবার দৃষ্টি টেবিলের দিকে রেখে চুপ করে থাকে। মারসাদ জবাবের অপেক্ষা করেও জবাব না পেয়ে ফের শুধায়,
“চুপ করে আছো কেন? বলো?”

“কী বলব?”

মারসাদ চোখ বন্ধ করে নিজের কপালে দুটো চ*ড় মা*রে। আদিরা তা দেখে অবাক হয়ে বলে,
“ভাইয়া, আপনি এমন করবেন না। এমনিতেই আমার কারণে হাতে-পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।”

“আমি ব্যথা পেয়েছি, তাই তো? তাহলে তোমাকে কিছু বললে আমি বলব। সামিরা কেন বলবে?”

আদিরা চট করে বলে ফেলে,
“আপনার গার্লফ্রেন্ড তাই!”

“কী!”

মারসাদ বেশ জোরেই বলে ফেলে। আদিরা মুখে হাত দিয়ে দ্রুত চেয়ার ঠেলে দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব তৈরি করে ফেলে। বুকশেলফের পেছনের দিকে টেবিল হওয়াতে ওদেরকে দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু এখন কয়েকজন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মারসাদ সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি দিলে যে যার যার পড়া ও কাজে মন দেয়। তারপর মারসাদ আদিরার দিকে চেয়ে মাঝের দূরত্ব দেখে ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“আদিরা, কথা বলছিলাম। তুমি এতো দূরে গিয়ে বসেছ কেন? আর এটা লাইব্রেরি।”

আদিরা বলে উঠে,
“আই অ্যাম সরি, ভাইয়া!”

এটা বলেই আদিরা নিজের ব্যাগটা কোনোমতে উঠিয়ে ছুটে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যায়। মারসাদ ডাকতে গিয়েও থেমে যায়। টেবিলে কয়েকটা বই খোলা আর একটা খাতা। মারসাদ বইগুলো দেখে বুঝলো এসব লাইব্রেরির বই। তাই সে খাতাটা উঠিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোনোর আগে এক জুনিয়র ছেলেকে বলল বইগুলো যেন শেলফে জায়গা মতো রেখে দেয়।

________

“আহনাফ, মারসাদ যে এলো না?”

ভি*পি আশিকের কথার জবাবে আহনাফ বলে,
“ভাই, আজ সকালে মারসাদের বাইক অ্যা*কসিডেন্ট হয়েছে। এজন্য ওর বদলে আমি এসেছি।”

ভি*পি আশিককে চিন্তিত দেখালো। তিনি বললেন,
“এখন কী অবস্থা ওর?”

“আমি ও-কে রেস্ট করতে পাঠিয়েছি।”

তখন মাঝ থেকে বিরোধীদলের একজন বলে উঠলো,
“একটু আগেই মারসাদকে লাইব্রেরির দিতে যেতে দেখলাম। আসলে মারসাদের ইচ্ছা নাই মিটিংয়ে আসার। তাই বাহানা করছে।”

বিরোধীদলের হয়ে যে ভি*পি পদে দাঁড়িয়েছে সেই সাগর এবার বলে উঠে,
“একটা সামান্য মিটিং জয়েন করতে যার এতো বাহানা সে আবার হবে ভি*পি! ভি*পি হওয়া বাচ্চাদের খেল না। বুঝিয়ে দিস এটা তোর বন্ধুকে।”

আহনাফ মৃদুলের দিকে তাকায়। মারসাদকে এতো করে বলল রেস্ট নিতে, আর সে কী-না লাইব্রেরিতে গেছে! এখন ভি*পি আশিককে কী জবাব দিবে তাই ভাবছে আহনাফ। তখনি মারসাদ সেখানে হাজির হয়। আর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“কোনটা বাচ্চাদের খেল সেটা তুই আমাকে বুঝাতে আসিস না। তুই তোর নিজের চরকায় তেল দে। কাজে আসবে।”

ভি*পি আশিক মারসাদকে দেখে বলেন,
“তুমি রেস্ট নিলেই পারতে। ঠিক আছো? হাতে কী ফ্র্যাকচার হয়েছে?”

“না ভাই। ডাক্তার রেস্টে রাখতে বলাতেই হাতটা এভাবে গলায় ঝুলিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এমনিতে কয়েক জায়গায় কা*ট পড়েছে। কিন্তু সিরিয়াস কিছু না।”

বলতে বলতে মারসাদ ফাঁকা চেয়ারে বসে। এরপর ওরা মিটিং শুরু করে।

_______

আদিরা তার বান্ধবীদের সাথে বসে মাথা চাঁ*পড়ে এখন আফসোস করছে।
“আমার খাতা! লাইব্রেরিতেই ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু এখন গিয়ে পেলাম না।”

রিন্তি বলে,
“মারসাদ ভাই কি তোকে খে*য়ে ফেলতো? উনি বা*ঘ না ভা*ল্লুক! এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? আজব!”

সাবিহা বলে,
“থাক বসে। খাতায় থাকা সব নোট তোর গেছে! এবার তোর সাথে সাথে আমাদেরও কপাল চাঁ*পড়াতে হবে! এই যুগে এসে মানুষ নাকি এতো ভীতু হয়!”

মাহি বলে উঠে,
“থামতো তোরা। এখন নাতাশার কাছে নোটস চাইতে হবে। কিন্তু ও কি দিবে? এই আদু, আমার দাভাই এতোটাও খারাপ না যে তুই ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে এসেছিস! তোর সাথে একটু কথা বলতেই গিয়েছিল।”

চারজনেই মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মাহির ফোন বেজে উঠে। মাহি দেখে তার দাভাই কল করেছে। মাহি বলে,

“দাভাই কল দিচ্ছে।”

আদিরা বলে,
“আমি কিন্তু উনার সাথে কথা বলতে যাব না।”

“তোকে যেতে বলেছে? আগে থেকেই বেশি ভয় পাস!”

তারপর মাহি কল রিসিভ করে। মারসাদ বলে,
“কই তুই?”

“এই তো মিনারের কাছে বসে আছি।”

“আচ্ছা আমি আসছি।”

তারপর মারসাদ কল কেটে তার বন্ধুদের নিয়ে মিনারের কাছে যাচ্ছে।

সাবিহা বলল,
“ভাইয়া, কী বলল?”

“আসছে এখানে।”

আদিরা বলে উঠলো,
“এখানে আসছে কেন? তুই গিয়ে কথা বলে আয়।”

মাহি এবার কটমট দৃষ্টিতে চাইলে আদিরা চুপ হয়ে যায়।

প্রায় কিছুক্ষণ পর মারসাদ ও তার বন্ধুরা সেখানে আসে। ওরা সেখানে এসে দাঁড়াতেই আদিরা রিন্তির দিকে সরে বসে। রিন্তিও রাহিনকে দেখে নিচের দিকে চেয়ে লাজুক হাসছে। মারসাদ এসে আদিরার দিকে এক পলক চেয়ে মাহিকে বলে,

“তোর ফ্রেন্ডকে বলে দিস, আমি রা*ক্ষস নই যে এভাবে ভয়ে থরথর করে কাঁপবে। আর এই নে ধর।”

অতঃপর মাহির হাতে আদিরার খাতাটা তুলে দিয়ে আবার বলে,
“পালানোর চক্করে টেবিলের উপর বইগুলো গুছানোর প্রয়োজন তো মনে করেইনি, সেই সাথে নিজের খাতাটাও ফেলে এসেছে।”

মাহি আদিরার খাতাটা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,
“থ্যাংকিউ, দাভাই। তুই খাতাটা না তুললে আমাদেরকে নোট যে কই থেকে জোগাড় করতে হতো! ওই ভীতু তো সব ভুলে চলে এসেছে।”

“একটা সাধারণ প্রশ্ন করেছিলাম তোমাকে। সেটার জন্য পালিয়ে আসার দরকার ছিল না।”

এরপর মারসাদ উলটো দিকে ঘুরে হাঁটা ধরে। আদিরা মারসাদের কথাগুলো শুনে মন খারাপ করে বসে থাকে। এদিকে যাওয়ার আগে আহনাফ মাহির কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলে,
“বিকেলে ক্লাসের পর পদ্ম পুকুরের কাছে আসবে।”

তারপর আহনাফও মারসাদের পিছনে যাওয়া ধরে। মাহি মুখ ভেঙ*চি কে*টে বলে,
“বললেই হলো! যাব না আমি। দেখি কী করে! মহারাজ এসে আদেশ দিয়ে গেল! মতামত শোনার দেরিও করলো না। কত্তো বড়ো নবাব!”

সাবিহা, রিন্তি ও আদিরা মাহিকে রাগতে দেখে হেসে ফেলে। সাবিহা বলে,
“তোদের টম এন্ড জেরির মতো ঝ*গ*ড়া দেখলে বুঝাই যায় না, তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস।”

“কে পছন্দ করে! আমি ওই লোককে পছন্দ করি না। ওই লোকই সারাক্ষণ আমাকে জ্বা*লাতে আসে। কোনো কাজ না থাকলে যা হয় আরকি! এরে ভালোবাসার থেকে এক বালতি পানিতে ডু*বে ম*রাও উত্তম!”

মাহির কথা শুনে ওরা তিনজন আরেক দফায় হাসলো। আর মাহি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।

এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০২

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২
ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার থেকে ফার্স্টএইড করে বেরোতেই আচমকা একটা মেয়ে এসে মারসাদকে জড়িয়ে ধরে। মারসাদ হঠাৎ এই কাণ্ডে দুই পা পিছিয়ে যায়। মেয়েটি বলছে,

“বেবি, তোমার অ্যাকসিডেন্ট কীভাবে হলো? তুমি ঠিক আছো?”

মারসাদ ব্যাথায় চোখ খিঁচে নিয়ে বলে উঠে,
“লিভ মি, সামিরা!”

“নো। আই ওয়াজ স্কেয়ার্ড। তোমার অ্যাকসিডেন্টের খবর শোনার পর আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছি। যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?”

পাশ থেকে মৃদুল বলে উঠে,
“এখন কি তুমি খাড়ার উপর ম*রা ঘা দিতে এসেছ?”

মৃদুলের কথা শুনে রাহিন, আহনাফ, সুমি, মৌমি হেসে ফেলে। সামিরা তাতে রেগে মারসাদকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোমাদের প্রবলেম কী? আমি টেনশনে আছি আর তোমরা হাসছো?”

মৃদুল আবার কিছু বলতে উদ্ধত হলে আহনাফ ও-কে থামিয়ে বলে,
“তোমার টেনশনটা বুঝতে পারছি কিন্তু টেনশনের কারণে তোমার বেবিকে আরও কষ্ট দিবে নাকি? দেখো না, ওর হাত ঝুলিয়ে দিয়েছে! এখন কী তুমি চাও, ও হুইল চেয়ারে বসুক?”

সামিরা চিন্তা করলো, তারপর মুখ ভার করে বলল,
“তাই তো। আমিও না! ভয়ে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। জান, চলো তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে যাই। রেস্ট করো তুমি।”

মারসাদ মনে মনে বিরক্ত হলেও হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আমার একটু কাজ আছে। ভেরি ইম্পরট্যান্ট। সো, আমি এখন কোথাও যাব না।”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না। তুমি ক্লাসে যাও। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তো।”

সামিরা হেসে বলে,
“আমার ক্লাস এখন না। পরে। আমি তোমার সাথে থাকতে পারব।”

মারসাদ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ফের চোখ খুলে খুব সুন্দর করে মেকি হেসে বলে,
“কিন্তু আমি তো এখন মিটিংয়ে যাব। ইট সো ইম্পরট্যান্ট। সো তুমি এখন যাও। এই মৌমি, সামিরাকে নিয়ে যা। তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া কর। বিল আমার নামে লিখে দিস।”

তারপর সুমি, মৌমি, রাত্রীরা সামিরাকে নিয়ে চলে গেলো। সামিরা যেতেই মারসাদ বাম হাতে আহনাফকে কয়েকটা ঘু*ষি মা-রে। আর বলে,

“তোকে না করেছি না? আমাকে ওর বেবি বলবি না। বারবার ভুলে যাস কেন? বল!”

আহনাফ হাসতে হাসতে বলে,
“আরে ইয়ার! মজা করছিলাম।”

“তোর মজা তোর কাছে রাখ। আমার সাথে এসব মজা করবি না।”
বলতে বলতে মারসাদ আহনাফকে আরও দুইটা লাগিয়ে দিয়েছে। মারসাদের রাগ দেখে আহনাফ ফের হাসতে হাসতে বলে,
“আচ্ছা সরি। এবার কী তোর আরেকটা হাতও ভা*ঙবি নাকি! তোর রেস্ট দরকার। চল তোকে রবিন তোর ফ্লাটে পৌঁছে দিবে।”

“আমি ওখানে যাব না। হোস্টেলে যাব। বলা তো যায় না, সাগর কখন কী বলে!”

“তোর মর্জি। চল।”

______

“এই আদিরা, তুই নাকি আজ ভাইয়ার বাইকে করে ভার্সিটিতে এসেছিস?”

মাহির প্রশ্নে ঘুরে তাকায় আদিরা। ক্লাস চলছে। আর মাহি তার পেছনে বসে ফিসফিস করে আদিরাকে এসব জিজ্ঞাসা করছে। আদিরা হাতের ইশারায় মাহিকে থামতে বলে সামনের দিকে তাকায়। কিন্তু মাহি কথা শুনলো না। সে আদিরার পিঠে গুঁ*তো দিয়ে বলে,

“বল না? ভাইয়ার অ্যা*কসিডেন্টও হয়েছে শুনলাম। কীভাবে হলো?”

আদিরা পেছনে ঘুরে মাহিকে কিছু বলতে নিলে ক্লাসের টিচার আদিরাকে সাবধান করে। আদিরাও সামনে ফিরে ভদ্র বাচ্চার মতো ক্লাসে মনোযোগ দেয়।

ক্লাসে শেষে বের হওয়ার পর মাহি আদিরাকে চেপে ধরে। তারপর আদিরা পুরো ঘটনা বললে মাহি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“বড়ো ধরনের অ্যা*কসিডেন্টও হতে পারতো। আমি ভাইয়াকে খুঁজে দেখি। কী অবস্থা কে জানে!”

আদিরা মাহির হাত ধরে ও-কে আটকিয়ে বলে,
“আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। সত্যি আমি বুঝতেই পারিনি, এসব হবে।”

মাহি মৃদু হেসে বলে,
“রিল্যাক্স। আমি জানি তুই ইচ্ছে করে করিসনি। এতো গিল্টি ফিল করতে হবে না। শুধু একটু সাবধানে রাস্তায় চলাচল করবি। আচ্ছা থাক তুই। আমি গেলাম ভাইয়াকে খুঁজতে।”

মাহি যেতেই আদিরা একটা গাছের নিচে বসে। তারপর খাতা বের করে নোটটা দেখছে। কিছুক্ষণ পর সামিরা সেখানে এসে হঠাৎ করেই আদিরার হাত থেকে খাতাটা ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে। আচমকা এমন হওয়াতে আদিরা চমকে উঠে। সামনে সামিরাকে দাঁড়ানো দেখে নিকট ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা কিছুটা আন্দাজ হয় তার। সামিরা রাগত দৃষ্টিতে আদিরার দিকে চেয়ে আছে। সামিরার পেছনে সুমি ও রাত্রীরা। মৌমি বলছে,

“সামিরা, লেট ইট বি। ও তো ইচ্ছে করে করেনি।”

“না, মৌমি আপু। ও এসব ইচ্ছে করেই করেছে। আমার মারসাদ বেবিকে ও ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চায়। যখনি ও মারসাদ বেবির আশেপাশে আসে, ট্রাবল যেন মারসাদ বেবির সাথে চিপকু হয়ে লেগে যায়। সি এজ অ্যা ট্রাবলমেকার।”

আদিরা ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর কাঁচুমাচু করে এক কদম পিছিয়ে যায়। দূর থেকে আদিরার দুই ফ্রেন্ড রিন্তি ও সাবিহা এসব দেখে। ওরা ক্যান্টিন থেকে খাবার আনতে গিয়েছিল। এখন ওদের একজন ফোন করে মাহিকে কল করতে করতে খুঁজতে যায়। আরেকজন আদিরার কাছে আসে। সাবিহা এসে বলে,

“আপু, তুমি ভুল বুঝছো। আদিরা জেনেশুনে কিছু করেনি। ও তো মারসাদ ভাইয়ার বাইক দেখেইনি। আর ভাইয়া তো কতো স্পিডে…”

“এই তুমি চুপ করো! তোমাকে কথা বলতে বলেছি?”

সাবিহা চুপ হয়ে যায়। সামিরা ফের বলে,
“তোমাকে যেন আমার মারসাদ বেবির আশেপাশেও না দেখি! তুমি আশেপাশে আসলে আমার মারসাদ বেবির লাইফে ট্রাবল কমবে না। বরং বাড়বে। গট ইট? নাউ গেট লস্ট!”

বলে আদিরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায় সামিরা। সাবিহা তাড়াতাড়ি করে ধরে ফেলে। অতঃপর সামিরা চলে যায়। আদিরার নেত্রকোণ বেয়ে অশ্রুধারা বইছে। মৌমি এসে আদিরার গালে হাত রেখে বলে,

“তুমি প্লিজ কেঁদো না। সুমি মুখ ফসকে সামিরার সামনে বলে ফেলেছে। আমরা সামিরাকো আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সামিরা আসলে মারসাদের প্রতি খুব কনসার্ন। ভালোবাসে তো। তুমি প্লিজ মনে নিও না। হুম?”

তারপর মৌমিও চলে যায়। আদিরা চোখ মুছে নিজের খাতাটা তুলে এনে ব্যাগ নিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাত্রা করলো। সাবিহা ও-কে কিছু বলতে চাইলেও সে শুনলো না। সাবিহা হতাশ হয়ে বলে,

“এই মেয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না কেন? যে কেউ এসে একে শুনিয়ে দিয়ে যায়, আর ও চুপচাপ কাঁদতে কাঁদতে দেখে! আমাদের তিন এক্সট্রোভার্টের সাথে এই ইন্ট্রোভার্ট কীভাবে মিলল, আল্লাহই ভালো জানে। এখন যাবে নিরিবিলি কোথাও। তারপর সেখানে গিয়ে নিরিবিলি নিজের দুঃখবিলাস করবে!”

তারপর সাবিহা মুখ ভার করে রিন্তিকে কল লাগাতে লাগাতে রিন্তিকে খুঁজতে গেলো।

_______

লাইব্রেরিতে পিনপতন নীরবতা। আদিরা একদম পেছনের একটা টেবিলে নিরিবিলি বসে আছে। বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা লাইব্রেরি এড়িয়ে চলে। কারণ এখানে আসলে আড্ডা চলে না। তাই যারা বই পড়ে বা পড়তে চায় তারাই আসে। আবার তো অনেকে ঘুমাতেও আসে! আদিরা তার সামনে দুই তিনটা বই ও খাতা খুলে ছড়িয়ে রেখে টেবিলে হাত গোল করে মাথা নিচু করে আছে। শুধু মাথা নিচু করে আছে বললে ভুল হবে, সে কাঁদছে। ছোটো থেকেই সে এমন। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। কারো সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। বাবা-মায়ের বড়ো শান্ত মেয়ের পারফেক্ট উদাহারণ।

প্রায় অনেক্ষণ পর আদিরা নিজের পাশের চেয়ারের শব্দ পেলো। কেউ চেয়ার টেনে সেখানে বসেছে। আদিরা পাশে বসা মানুষটিকে দেখতে ও নিজের বই গুলো গুছাতে মাথা উঠায়। অতঃপর মাথা উঠিয়ে পাশে তাকাতেই সে চমকে উঠে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।