Saturday, August 2, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 67



এক শহর প্রেম_২ পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৮
“আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। আর নয়তো করব না। এখন তো তুমিও আমাকে ভালোবাসো। এখন যদি তুমি ওই সামিরার কথায় এসে আমাকে ইগনোর করো বা বিয়ে করতে না চাও তবে, এবার আমি এমনভাবে লাপাত্তা হবো যে কেউ খুঁজে পাবে না। মাইন্ড ইট!”

মারসাদ কথাটা বলে সমুদ্রের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে দেখছে। আদিরা পেছন থেকে অসহায় দৃষ্টিতে মারসাদকে দেখছে। মারসাদ আবার ঘুরে কঠোর স্বরে বলে উঠে,
“তুমি যখন আমাকে ভালোবাসোনি, তখন আমি তোমাকে সময় দিয়েছি না? দিয়েছি তো? বলো?”

শেষের বাক্যটা মারসাদ ধ*মকের সুরেই বলল। আদিরা দ্রুত উপরনিচে মাথা দুলায়। মারসাদ আরও বলে,
“তবে এবার সবকিছু ঠিক করতে তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। যে যাই বলুক, তুমি কেয়ার করবে না। মনে থাকবে?”

আদিরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মারসাদ চোখ বন্ধ করে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর অনুনয় করে বলল,
“প্লিজ! আমি তোমাকে বলছি, আর কিছু হবে না। সবাইকে পু*লিশ আট*ক করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসুন।”

“তুমি আমার কথা আমলে নিচ্ছো না। তাই না?”

“প্লিজ মারসাদ!”

মারসাদ আর কিছু বলল না। আদিরার হাত ছেড়ে বাইকে গিয়ে বসলো। আদিরাও পেছনে উঠে বসলো।

——–

প্রায় কয়েকদিন পেরিয়ে গেলো। মারসাদ অফিস, ভার্সিটি দুই দিকেই ম্যানেজ করে চলছে। আদিরার সাথে তার দেখা হচ্ছে না। অসুস্থতার জন্য সে ৭টা-৪টা অফিস টাইমটাই করে। ওভারটাইম করে না। ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতে প্রায় প্রায় ওভারটাইম করতে হয়। আদিরা তার ফোন রিসিভ করে না। মাহির মাধ্যমে যতোটুকু খবর পায়। আদিরা টিউশনের সময় আধঘণ্টা এগিয়ে এনেছে। যার দরুণ মারসাদের অফিস ছুটির আগেই আদিরা টিউশনে চলে যায়। তারপর মারসাদ ভার্সিটিতে গেলে ঠিক সময়ে আর বের হতে পারে না।

পূজার ছুটি ও শুক্রবার সহ তিন দিনের ছুটি পেয়েছে। আর বৃহস্পতিবার একটা ক্লাস। আদিরা ভাবলো গ্রামে গিয়ে বেরিয়ে আসবে। তার খুব মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। মাকে বলতে ইচ্ছে করছে, সে আবার এই গ্রামে ফিরে আসতে চায়। ওই শহরে এখন তার জন্য বিষাদের ছাঁয়া ভর করেছে। কাউকে ভালোবেসেও তাকে দূরে ঠেলে দিতে হচ্ছে। আদিরা বাসের টিকেট কে*টে ফেলেছে। বুধবার ক্লাস করেই হোস্টেলে গিয়ে সব গুছিয়ে নিবে। তারপর সন্ধ্যার বাসে রওনা দিবে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে। আদিরা মাহিকে বলল যেন বৃহস্পতিবার ও সোমবারের ক্লাসটার নোট করে।

টিউশন শেষে আদিরা ক্লান্ত বেশে পথের ধার দিয়ে হাঁটছে। তখনি একটা বাইক তার পাশে থামলো। আদিরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো। মারসাদকে দেখে সে দাঁড়ালো। কিন্তু তার দৃষ্টি রাস্তার দিকে। মারসাদ বাইক থেকে নেমে বলল,

“তুমি তোমার গ্রামে যাচ্ছো?”

“হু।”

“আমাকে তো বললে না।”

“প্রয়োজন মনে করিনি।”

হাসলো মারসাদ। আদিরা এক বার মাথা উঁচু করে দেখে আবার নিচু করে ফেলল। মারসাদ ও থুতনিতে আলতো স্পর্শ করে মুখটা উঁচু করে শুধালো,

“এসব করে নিজেও তো শান্তি পাচ্ছো না। আমাকেও কষ্ট দিচ্ছো। যদি এমন হতো, তুমি অন্তত শান্তিতে আছো। তবে আমি মেনে নিতাম।”

“আমি ভালো আছি।”

“হু! খুব! দেখতেই পাচ্ছি!”

আদিরা আঁড়চোখে তাকালো। মারসাদ যে তাকে ব্যঙ্গ করে বলছে সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। সে বলে,
“আমি হোস্টেলে যাব।”

“বাইকে উঠো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”

“না। আমি রিকশা নিয়ে নিব।”

“ওকে! আমি রিকশা ডেকে দিচ্ছি।”

আদিরা কিছুটা অবাক হয়। মারসাদ রিকশা ডেকে দিলে তাতে উঠে পড়ে।

———
আদিরা গ্রামে তার বাড়িতে ঢুকতেই আহাদকে দেখতে পায় উঠানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে। আহাদ তার বোনকে দেখে ছুটে আসে। তারপর চিৎকার করে মাকে ডাকে। আদিরার মা সকালের নাস্তা বানাচ্ছিলেন। তিনি বাহিরে এসে মেয়েকে দেখে খুব খুশি হোন। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন,

“কয়দিন থাকবি?”

“দুই-তিন দিন। তারপর চলে যাব।”

“দুই-তিন দিনে কী থাকা পোষায়? আরও কতোদিন সময় নিয়া আসবি তো।”

আদিরা হুট করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা আশা বেগম হুট করে মেয়ে এমন জড়িয়ে ধরাতে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। মেয়ের মুখটাও কেমন শুকনো। তিনি মেয়েকে ছাড়িয়ে চুলার জাল নিভিয়ে মেয়েকে ঘরে নিয়ে দরজা দিলেন। তারপর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন,

“তোর কী হইছে, মা? আমারে বল।”

মায়ের আকুল স্বর শুনে আদিরা কেঁদে ফেলল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি আর ওখানে যেতে চাই না। আমার সবকিছু দমবন্ধ লাগে।”

আশা বেগম আরও বিচলিত হয়ে পড়লেন।
“কী হইছে তা বল। যাবি না কেন? তোর তো বড়ো ভার্সিটিতে পড়ার শখ আছিলো। আল্লাহ তোর ইচ্ছাও পূরণ করছে। তো এখন কী হইলো?”

আদিরা বলতে শুরু করলো। দেলোয়ারের কাহিনী। মারসাদ কীভাবে তাকে উদ্ধার করেছে। সব। তারপর আদিরা কাঁদতে কাঁদতে আরও বলে,
“ক্যাম্পাসের অনেকে আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন দেখে। আমার সামনে-পিছনে আমারে নিয়া কথা বলে। ওরা বলে, আমারে নাকি দেলোয়ার র‍ে*প করছে! কিন্তু মা, এমন কিছু হয় নাই। তার আগেই মারসাদ ভাইয়া চলে এসেছিল। উনি সময় মতো না আসলে হয়তো…”

আশা বেগম মেয়ের মুখ চেপে ধরেন। তারপর ধরা কণ্ঠে বলে,
“চুপ চুপ। এসব আর মুখে আনবি না। যা হয় নাই, তা হয় নাই। মাইনষে তো কতো কথা কইব। তুই এতো ভালো একটা ভার্সিটিতে পড়তে গেছোস, এখন মাঝপথে ছাইড়া আইলেও মানুষ কম কথা কইতো না। অচেনা শহরে বদনাম নিয়াও থাকা যায়। কিন্তু চেনা শহরে বদনাম লাগলে সেটা নিয়া থাকা যায় না। তোরে শক্ত হইতে হইব।”

আদিরা কাঁদতে কাঁদতে মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা তার থেকে সাহসী। তার মা তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এতো দূর এনেছেন। ওদের মা-মেয়ের কথাবার্তার মাঝে আহাদ আবার চিৎকার করে উঠলো।

“মা, দেখো। কতোগুলো ভাইয়া, আপু আইছে। ওরা আপুরে খুঁজতাছে।”

আদিরা চোখ মুছে। আশা বেগম বলেন,
“এখন আবার কে আইলো? তোরে খুঁজে কেন?”

“চলো দেখি।”

আদিরা ও আশা বেগম ঘর থেকে বের হলেই দেখতে পায়, মাহি, সাবিহা, রিন্তি ও মারসাদের পুরো বন্ধুমহল! সবাইকে একসাথে দেখে আদিরা হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। মাহি, সাবিহা ও রিন্তি আশা বেগমকে সালাম দেয়। তারপর মাহি বলে,

“আন্টি, আমরা আদিরার ফ্রেন্ড। আর ওই যে আমার ভাই মারসাদ ইশরাক খান (মারসাদকে দেখিয়ে)। আর ওরা সবাই আমার ভাইয়ে ফ্রেন্ড।”

সবাই সালাম দিলে আশা বেগম একসাথে সবার সালামের জবাব দেন। তারপর সবাইকে বসতে বলে তিনি আহাদকে নিয়ে ঘরে যান। তারপর আহাদকে টাকা দিয়ে হোটেল থেকে নাস্তা আনতে পাঠায়।

আদিরা মাহিকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। তারপর শুধায়,
“তোরা এখানে এসেছিস কেন?”

“কারণ তোর মনের অবস্থা ভালো না। তাই আমার ভাইয়েরও মন খারাপ। সে তার হবু বউকে একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছিলো না।”

আদিরা নজর ঘুরিয়ে রুষ্ট স্বরে বলে,
“কে তোর ভাইয়ের হবু বউ? আমি তো না। সামিরা আপু তোর ভাইয়ের হবু বউ!”

মাহি আয়েশ করে বসে। তারপর বলে,
“সেটা পরে দেখা যাবে। তুই রাজি না হলেও তোর বাবা-মা যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে?”

“মাহি! তোরা এখানে বাড়াবাড়ি করিস না প্লিজ। বাবা এমনিই আমাকে এত দূরে রেখে পড়ালেখা করাতে রাজি ছিলেন না।”

“রিল্যাক্স, বে’ব! তুই জাস্ট ফ্লো ফ্লো তে যা। বাকিটা আমরা বুঝে নিব।”

মাহি তাকে কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে বললেও আদিরা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। তার বাবা খুব রাগী। কী থেকে কী হয়ে যায়!

চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৯
আদিরার বাবা কাশেম আলী দোকান থেকে দুপুরে বাড়িতে খেতে এসে এতো আয়োজন ও মানুষ দেখে অবাক হয়ে যান। সবাই উঠানে পাটি পেতে দুপুরের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে বসেছে। কাশেম আলী হাঁক ছেড়ে আহাদকে ডাকেন। আহাদ আসলে আহাদকে জিজ্ঞাসা করেন,

“বাড়িতে এতো মানুষ কেন?”

“আপুর ভার্সিটিরতে আইছে।”

মেয়ের আগমনের কথা শুনে কাসেম আলীর মুখে হাসি ফোটে।
“কই তোর আপায়?”

“মা’র সাথো পাকেরঘর থেকে ভাত-তরকারি আনতেছে। সবাই এখন খাইতে বসবে।”

কথাটা বলে আহাদ আবার ছুটে চলে গেলো। কাশেম আলী দেখলেন। উনার স্ত্রী ও মেয়ে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে বড়ো দুইটা পাটির মাঝে রাখছে। উনি হাত-মুখ ধুঁতে কলপাড়ে গেলেন। কাশেম আলী কলপাড়ে গিয়ে কলে একবার চাপ দিয়ে পা ধুঁয়ে, আবার চাপ দিতে নিলে দেখেন আদিরা কলে চাপ দিয়ে দিচ্ছে। কাশেম আলীর মুখে হালকা হাসি ফোটে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন,

“হঠাৎ আইলা যে? তোমার মায় তো বলে নাই, তুমি আসবা।”

“তোমাদের দেখতে ইচ্ছে করতেছিল, বাবা।”

আবারও মৃদু হাসেন কাশেম আলী। অজু করে ঘরে গিয়ে নামাজে দাঁড়ান।

এদিকে আশা বেগম সবার পাতে ভাত বাড়তে নিলে মারসাদ বাধা দেয়।
“আন্টি, আঙ্কেল আসুক। তারপর সবাই একসাথে খাই।”

আশা বেগম কথাটা শুনে খুশি হলেও বলেন,
“উনি নামাজ পড়তেছে, বাবা। তোমরা খাওয়া শুরু করো। নামাজ শেষ হলেই উনিও আসবেন।”

মারসাদ হালকা হেসে বলে,
“না, আন্টি। আঙ্কেলল নামাজ শেষ করে আসুক, তারপর আমরা একসাথে খাব।”

আশা বেগম আবার কিছু বলতে চাইলে আদিরা ইশারায় না করে। মৃদুল মারসাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“হবু শশুরকে ইমপ্রেস করতে চাইছিস?”

মারসাদ কটমট দৃষ্টিতে তাকালে মৃদুল চুপসে যায়। তারপর ওরা আদিরার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
কাশেম আলী নামাজ শেষ করে আসতেই দেখে সবাই বসে আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন,
“তোমরা সবাই বইসা আছো কেন? খাওয়া শুরু করলা না?”

আশা বেগম প্রত্যুত্তরে বলেন,
“ওরা সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে ছিল।”

“আরে কী বলো? আমার জন্য কেন অপেক্ষা করতে ছিল?”

আশা বেগম মারসাদকে দেখিয়ে বললেন,
“ছেলেটা বলল, আপনে আসলেই খাওয়া শুরু করবে। আমি বলছিলাম। শোনে নাই।”

কাশেম আলী মারসাদের দিকে তাকালো। তারপর মৃদু হেসে পাটিতে বসতে বসতে বললেন,
“আচ্ছা। এখন সবাইরে খাবার দাও। ভাত-তরকারি ঠান্ডা না হইয়া গেছে! কী রানছো আজ?”

“লাল মুরগীর গো*শত, তেলাপিয়া মাছ, করলা ভাজি, ডাল।”

আশা বেগম ও আদিরা মিলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। উনাদের সাথে রাত্রি, সুমিও হাত বাটালো।

——-
বিকেলে ওরা গ্রামে হাঁটতে বের হয়েছে। ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটছে। গতকাল রাতে বৃষ্টির কারণে মাটি ভেজা। সুমি স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারছে। কারণ তার বাড়িও গ্রামের দিকে। বাকিদেে ঝামেলা হচ্ছে। মারসাদ আদিরার সাথে সবার পেছনে পাশাপাশি হাঁটছে। আদিরাই প্রথমে শুধায়,

“কেন এসেছেন?”

“তোমার জন্য।”

মারসাদের সাবলিল উত্তর। কিন্তু আদিরা তাতে সন্তুষ্ট না। আদিরা বলে,
“আপনি নিজের সময় নষ্ট করছেন। সেই সাথে আপনার বাবার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। আপনার বাবা তো চাইছেন, সামিরা আপুর সাথে আপনাকে দিয়ে দিতে।”

“বিয়ে করব তো আমি। সেখানে আমার সম্মতিও ইম্পরট্যান্ট। আমি রাজি না থাকলে বাবা চাইলেই কী!”

“আঙ্কেল খুব রাগ করবেন।”

“করুক।”

আদিরা বুঝতে পারছে না, এই ছেলে এতো ঢিট কেন? সে আবার বলে,
“আপনি উনার একমাত্র ছেলে। উনি নিশ্চয়ই আপনার খারাপ চাইবেন না।”

মারসাদ এবার হাঁটা থামায়। সেই সাথে আদিরাও। তারপর আদিরার দুই কাঁধে ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। আর বলে,
“আমি জানি, আমার বাবা আমার খারাপ চাইছেন না। কিন্তু ওই যে, আমি যা ফেস করেছি তা আমার বাবা জানেন না। জানেন না বিধায় তিনি সামিরার সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন। তারউপর এখন আমি বললেও তিনি মানবেন না।”

আদিরা চুপ করে রইল। মারসাদ আবার বলল,
“বাবা আমাকে বাধ্য করতে পারবেন না। যাতে কখনো বাধ্য করতে না পারে, এজন্যই আমি উনার সাজেস্ট করা সাবজেক্টে পড়িনি। আমি সবসময় স্বাধীন ভাবে থাকতে চেয়েছি।”

“কিন্তু উনি আপনার বাবা।”

মারসাদের এবার মা*থা খারাপ হচ্ছে। সে বলে,
“এতো ভোলাভালা কেন তুমি? নিজের হ্যাপিনেস নিয়েও ভাবো। মানুষের কথা ভাবতে যাও কেন?”

“কাউকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায় না।”

“আদিরা, তুমি কি জানো আমি এতো ধৈর্যশীল না! কিন্তু তোমার কারনে আমাকে জোরপূর্বক ধৈর্য ধরতে হচ্ছে! তো আমাকে ধৈর্যহারা হতে বাধ্য করো না। প্লিজ!”

কথাটা বলেই মারসাদ আদিরাকে রাখে রেখে সামনে মৃদুল, রাফিনদের কাছে এগিয়ে গেলো। আহনাফ মারসাদকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হলো আবার? রেগে আছিস মনে হচ্ছে?”

“আমার মা*থায় একটা বা*ড়ি মা-/র! এতো নেইব একটা মেয়েকে কীভাবে ভালোবাসলাম!”

রাফিন ফট করে বলে উঠে,
“তোর কি আফসোস হচ্ছে, দোস্ত?”

“আফসোস না! রাগ হচ্ছে। আমি যা শুনতে চাই না, ও আমাকে সেগুলোই বলে! আর যা শুনতে চাই সেটা বলতেই ওর বছর পেরিয়ে যায়।”

হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো মারসাদ। ওর বন্ধুরা ও-কে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে।

মাহি, সাবিহা, রিন্তি খানিকটা পিছিয়ে আদিরার সাথে হাঁটছে। মাহি শুধায়,
“তুই আবার কী বলেছিস?”

“কিছু না।”

মাহি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। সাবিহা বলে,
“তুইও তো মারসাদ ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তাহলে এমন কেন করছিস?”

মাহি মুখের ভাব বি*কৃত করে বলে উঠে,
“ওর কাছে জামাইয়ের থেকে শ্বশুরের চিন্তা বেশি! জামাই ভাড় মে যাক!”

রিন্তু মাহির হাতে একটা থা*প্পড় লাগায়। মাহি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালে রিন্তি ইশারায় চুপ থাকতে বলে। রিন্তি বলে,
“তুই মারসাদ ভাইয়ার বাবা-মাকে নিয়ে একদমই চিন্তা করবি না। তোরা জাস্ট বিয়েটা কর! তারপর উনারা ঠিক মেনে নিবে।”

আদিরা হতবাক হয়ে তাকায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়,
“বিয়ে!”

সাবিহাও রিন্তির সাথে সহমত পোষণ করে বলে,
“ঠিক বলেছিস, রিন্তি। কয়েক বছর পর নাতি-নাতনী নিয়ে উনাদের সামনে গেলে উনারা আর রাগ করে থাকতেই পারবে না।”

মাহিও হাসি হাসি কণ্ঠে বলে উঠে,
“ঠিক ঠিক। আর আমি আর মা আছি তো! ইমো*শোনাল ব্ল্যা*কমে-ইল করতে!”

আদিরা এদের কথা শুনে মা*থায় হাত দেয়! এরা সব পা*গল হয়ে গেছে।

——–
রাতের খাবার খেতে সবাই বসেছে। আশা বেগম সবার জন্য চিতই পিঠা বানাচ্ছেন। চিতই পিঠার সাথে হাঁসের গো*শত, শুঁ*টকি ভর্তা ও সরিষা ভর্তা। সবাই একসাথে রান্নাঘরের পাশে পাটি বিছিয়ে বসে খাচ্ছে। কাশেম আলী দোকান বন্ধ করে সবে এসেছেন। তিনি কলপাড়ের দিকে গেলে আদিরা উঠে যেতে চায়। তখন মাহি ও-কে বাধা দিয়ে নিজে যায়। তারপর কাশেম আলীকে বলে,

“আঙ্কেল, আমি কল চেপে দেই? আপনি হাতমু-খ ধুঁয়ে নিন।”

“তুমি পারবা?”

“চেষ্টা করে দেখি।”

কাশেম আলী হেসে সায় দিলেন। মাহি নিজের সর্বস্ব জোর লাগিয়ে কল চাপার চেষ্টা করছে! কল দিয়ে পানি সামান্যই বের হচ্ছে। কাসেম আলী বলেন,
“তুমি পারবা না, মা। আমিই কল চেপে নিতে পারমু।”

মাহি বাধা দেয়।
“না না। আমি পারব।”

তারপর আবার চেষ্টা করে। কল চাপতে চাপতে মাহি নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
মাহি সাহস করে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে,
“আঙ্কেল, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি? কিছু মনে করবেন না তো?”

“না। তুমি কও।”
মাহি সামান্য ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,
“আদিরা তো শহরে থাকে। ধরেন, ওর শহরেই কাউকে পছন্দ হলো। তাকে বিয়ে করতে চাইলো। তখন?”

কাশেম আলীর কপাল কুঁচকে গেলো। মাহি আগ্রহ নিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। কাশেম আলী জবাব দেন,
“পোলা যদি ভালো হয়, তাইলে আমাগো সমস্যা নাই। মাইয়া তো আগেই সাহস কইরা শহরে গেছে গা। এহন কি তার গ্রামের কাউরে পছন্দ হইব!”

কাশেম আলী কথাটা আফসোসের সাথেই বললেন। মাহি ফের প্রশ্ন করে,
“ছেলে কেমন হতে হবে? মানে আপনাদেরও তো কিছু পছন্দ-অপছন্দ আছে।”

“স্বভাব-চরিত্র ভালা হইতে হইব। ভালা পরিবারের হইতে হইব। আমার মাইয়া সুখে থাকব এতটুকুনই।”

মাহি খুশি হয়ে যায়। তারপর বলে,
“চলুন, আঙ্কেল। আন্টি চিতই পিঠা বানাচ্ছেন।”

তারপর কাশেম আলী ও মাহি রান্নাঘরের কাছে যায়। মাহি সাবিহার পাশে বসতেই সাবিহা ওর কানে কানে শুধায়,
“কী বলল, আঙ্কেল?”

“পরে বলব। এখন পিঠা খা।”

আশা বেগম পিঠার শেষ খোলা উঠিয়ে সবাইকে বললেন,
“খাওয়া শেষ কইরা তোমরা ছেলেরা উত্তরের ওই ঘরটাতে চইলা যাইয়ো। আর মাইয়ারা সব আদিরার ঘরেই কষ্ট কইরা কাটাইতে হইব। আমাগো আর রুম তো নাই। উত্তরের ঘরটা মেহমানগো জন্য বানাইছে। ওখানে দুইটা আরও বেশি তোষক আছে। বড়োটা আদিরার রুমে নিয়া আসলেই হইয়া যাইব।”

তারপর তিনি আদিরাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“উত্তরের ঘরটা আমি ঝা*ড়ু দিয়া রাখছি। তুই দুইটা তোষক বিছায় দিস। আর কয়েল জ্বা*লায় দিস।”

আদিরা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে খেতে খেতে মারসাদের দিকে তাকায়। মারসাদ তার দিকেই তাকিয়ে আছে! অতঃপর আদিরা দ্রুত নিজের দৃষ্টি নিচু করে ফেলে। মারসাদও মাথা নিচু করে মৃদু হাসে।

উত্তরের ঘরে তোষক, চাদর বিছানো ও বালিশ ঠিক করছে আদিরা। ঘরের বাহিরে মারসাদ ও তার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। রাফিন মারসাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,

“আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

“তো কী করব?”

ভ্রুঁ কুঁচকে প্রত্যুত্তর করে মারসাদ। রাফিন কপাল চা*পড়ে বলে,
“আদিরা ভেতরে। তুই গিয়ে ওর কাজে হেল্পও তো করতে পারিস!”

মারসাদ ভাবে। রাফিন ভুল কিছু বলছে না। সে রাফিনের এক গা*ল খুব জো*রে টে*নে ঘরের ভেতরে ছুটে যায়। রাফিন চোখমুখ কুঁচকে বলে,
“ভালো একটা আইডিয়া দিলাম, আর ও কী না আমার গা*ল এতো জোরে টে*নে দিলো! শা*লা এক নাম্বারের অকৃতজ্ঞ!”

রাফিনের কথা শুনে মৃদুল, আহনাফ, রবিন ঠোঁ’ট চেপে হাসলো। আহনাফ হালকা কাঁশি দিয়ে হাসি চেপে রেখে বলে,
“ও আমার শা*লা! তোর না!”

আহনাফের কথা শুনে মৃদুল ও রবিন আর নিজেদের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। রাফিন রেগে আহনাফকে দু ঘা লাগিয়ে দেয়। আহনাফও হাসতে হাসতে সহ্য করে নেয়।

ঘরের ভেতরে গিয়ে মারসাদ হালকা কাঁশি দিয়ে আদিরার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো। আদিরা বিছানার চাদর টান টান করে বালিশ গুলোর জায়গা মতো রাখতে রাখতে পেছনে ঘুরলো। মারসাদ জিজ্ঞাসা করলো,
“তোমার কোনো হেল্প লাগবে?”

মারসাদের কথা শুনে আদিরা মুখ বিকৃত করে ফেলল! সে নিজের আশেপাশে তাকিয়ে জবাব দিলো,
“বাটা মরিচের বটু ফেলতে আসছেন?”

“সরি?”

মারসাদ প্রথমেই বুঝলো না যে আদিরা তাকে ব্যঙ্গ করেছে! আদিরা আবার বলে,
“হেল্প লাগবে যে বললেন! এবার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে এখানে ঘুমিয়ে আমার হেল্প করেন!”

তারপর আদিরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মারসাদ কয়েক সেকেন্ড সেখানে দাঁড়িয়ে যখন আদিরার কথাগুলো বুঝতে পারলো, তখন সেও ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আদিরা উঠোন দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে তখন মারসাদ ডাক দিলো।
“আদিরা, আমি হেল্প করতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এতো ফার্স্ট যে….”

আদিরা ঘুরে জবাব দিলো,
“বুঝেছি! এবার ঘুমান!”

মারসাদ মা*থা চু*লকে তাকিয়ে রইল। তখন রাফিন মারসাদের কাছে এসে বলল,
“আমার যে এত জো*রে গা*ল টেনে গিয়েছিস, এইটা ছিল প্রতিদান!”

তারপর রাফিন ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়। আহনাফ, মৃদুল, রবিনও হাসতে হাসতে ঘরের ভেতরে যায়।

———

আদিরার ঘরের ভেতর মেয়েরা গোল হয়ে বসেছে। আজ রাতটা তারা ফোনে চারজন চারজন করে লুডো খেলে কাটাবে। আহাদও এসে ওদের সাথে যোগ দিয়েছে। খেলতে খেলতে একটু পর আহাদ ঘুমিয়ে যায়। আদিরা ও-কে বাবা-মায়ের রুমে রেখে আসে। সুমি বলে,

“আমারও খুব ঘুম আসছে। কাল সারারাত জার্নি করেছি। এখন চো’খ খু’লে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

“তাহলে সবাই ঘুমিয়ে যাই। সকালে এদিককার মেলাতে যাব। পূজোর জন্য এখানে মেলা বসে। খাবার, মেয়েদের চুড়ি, গহনা, শাড়ি এসব বসে।”

আদিরার কথা শুনে মৌমি বলে,
“তাহলে তো ভালোই হয়। সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাও।”

অতঃপর ওরাও ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ে।

সকালবেলা। সূর্য পূর্ব দিগন্তে উঠে গেছে। আদিরা বাদে এখনও বাকিদের ঘুম ভাঙেনি। আদিরা ঘর থেকে বেরিয়ে কলপাড়ে যায়। কাশেম আলী দোকানে যাওয়ার আগে নাস্তা করছেন। তিনি আদিরাকে ডাকেন। আদিরা মুখ ধুঁয়ে বাবার কাছে যায়। কাশেম আলী মেয়েকে বসতে ইশারা করলেন। আদিরা বসলে তিনি শুধালেন,

“তোমার শহরেই কাউরে বিয়া করার ইচ্ছা?”

বাবার মুখে এমন প্রশ্নে আদিরা থতমত খেয়ে যায়। হঠাৎ তাকে এরকম প্রশ্ন কেন করছে, সেটা সে বুঝতে পারছে না। আদিরা আমতা আমতা করে বলে,
“হঠাৎ এগুলো জিজ্ঞাসা করছো কেন?”

“এমনেই। তুমি এখন শহরে গেছো। তোমার এহন গ্রামের দিকে পরান টিকব না, তাও বুঝি৷ তাছাড়া গ্রামের কোনো পোলা শিক্ষিত হইলে শহরেই থাইকা যায়।”

আদিরা বলে,
“আমি তোমাদেরকেও শহরে নিয়ে যাব। আমরা একসাথে থাকব।”

“না, মা। আমি গ্রামেই ভালা আছি। যান্ত্রিক শহরে পরান টিকব না। তোমারে কথাখানা কেন কইলাম, তা তুমি বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই? তোমার তো ভার্সিটিতে এক বছর শেষ। আস্তে আস্তে সময়ও পার হইয়া যাইব। মাইয়া মানুষ, বিয়াশাদীরও ব্যাপার আছে। তুমি যেহানে ভালা থাকবা, সেইহানেই তোমারে বিয়া দিমু। তোমার খালার ননদের পোলাডা আসলে ভালা আছিলো না। কয়দিন আগে তোমার খালায় ফোন কইরা কইলো, তার নাকি বিদেশে এক বউ আছে। এইডা প্রথমে কাউরে জানায় নাই। ওই বউয়ের লগে যোগাযোগ বন্ধ করছিল দেইখা বউটায় কয়দিন আগে বাংলাদেশে আইছে। তোমার ভাগ্য ভালা ছিল যে ওই পোলার লগে তোমার বিয়াটা হয় নাই। নাইলে যে কী হইতো!”

বলতে বলতে আফসোস করলেন কাসেম আলী। আদিরা সবটা শুনলো। এবার বুঝলো, তার বাবা কেন এত নরম স্বরে কথাগুলো বলছেন। তার খালার ননদের ছেলের বিদেশে বিয়ের কথা জানতে পেরেই তিনি তার সিদ্ধান্তের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আদিরা মুচকি হেসে বলে,
“দোয়া করো, বাবা। যেন সঠিক মানুষটাকে নিজের জীবনে পাই। সবাইকে খুশি করেই যেন পাই।”

কাশেম আলী মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। তারপর খাওয়া শেষ করে দোকানের দিকে চলে গেলেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৫
“আমারে খালি এইডা ক, তুই আমারে বিয়া করতে রাজি হইলি না কেন? তুই জানোস, তোর সাথে এহন কী হইব?”

আদিরা নিরব। ভেতরে ভেতরে দোয়াদুরুদ পড়ছে অনবরত। দেলোয়ার কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে উত্তর না পেয়ে আবার বলে,
“ওই মারসাদরে তো কিছু কইতা না। আমারে দেখলেই তোমার গাত্রে আ*গু*ন ধইরা উঠে! কেন? ওয়ও তো তোমারে পথেঘাটে পিছে পিছে ঘুরে। ওরে তো কিছু কও না। সব খালি আমার সময় কেন? ওই মারসাদ বড়োলোক আর শিক্ষিত দেইখা? আর আমি গরীব, বকলম দেইখা? তোমার বাপের অবস্থাও শুনছি তেমন ভালা না। তাইলে কি তুমি লোভে পইরা ওই মারসাদরে পটানোর চেষ্টা করতেছ? তুমি তো একটা লো*ভী! ”

আদিরা এবারও চুপ। দেলোয়ার ঘর কাঁপিয়ে হেসে ব্যা*ঙ্গ করে বলে,
“মাইনষে ঠিকই কয়, পয়সা থাকলে মাইয়ারা ভালোবাসা দেখে না।”

আদিরা দাঁতে দাঁত চেপে এতক্ষণ শুনেছে। এবার সে চিৎকার করে বলে উঠে,
“তোর ওই নোং*রা মুখে আর একটা কথাও বলবি না। মারসাদ তোর মতো ব*খাটে না। সে আমার ব্যাপারে কখোনো খারাপ ইনটেনশন রাখেনি। এটাই পার্থক্য আমি তোকে ঘৃণা করি আর মারসাদকে ভালোবাসি।”

দেলোয়ার এবার আদিরার কাছে এসে আবার ওর গা*ল চে*পে ধরে। তারপর বলে,
“তুই মারসাদরে ভালোবাসোস? আমার ফুলকলি তুই। তুই আরেকজনরে কেমনে ভালোবাসতে পারোস? আমারে ভালোবাসবি তুই। আমারে।”

আদিরা তৎক্ষণাৎ একদলা থুথু আবার দেলোয়ারের দিকে ছুঁ*ড়ে ফেলল। দেলোয়ারকে রাগে আদিরাকে আরও একবার জোড়ে থা*প্প*র মা*র-লো। তারপর আদিরার পায়ের বাঁধন খুলতে শুরু করে।

——–

কাজি রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এখানে দুইটা পরিত্যাক্ত গুদাম ঘর। ওরা পু*লিশকে লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর দুই ভাগে দুটোতে যায়। আহনাফ ও মৃদুলকে সামনেরটাতে পাঠায়। আর মারসাদ ও রাফিন পেছনেরটাতে যায়। রবিন আগে থেকেই ভয়ে কাঁপছে বলে ও-কে পু*লিশের জন্য অপেক্ষা করতে বাইরে থাকতে বলে। সামনের গুদাম ঘরে আদিরা নেই তবে কয়েকজন ছেলে এখানে বসে ম*দ খেয়ে টাল হয়ে আছে। আহনাফ মৃদুলকে বলে,

“এদেরকে কিছু করার দরকার নেই। এগুলো এমনিই সেন্সে নেই। চল পেছনেরটাতে যাই।”

“চল। পেছনেরটাতেই থাকবে।”

মারসাদ ও রাফিন পেছনের গুদাম ঘরের কাছে যেতেই ভেতর থেকে নারী কণ্ঠের চিৎকার ও আকুতি শুনতে পায়। এটা যে আদিরা সেটা বুঝতে তাদের বাকি নেই। ওরা দুজন দ্রুত গুদাম ঘরটাতে ঢুকতে নিতেই ওদের উপর আ*ক্রমণ হলো। তিন জন আ-ক্র*মণ করলো। তিন জনের হাতেই ধা*রালো ছুঁ*ড়ি! তিনজনের আ*ক্রমণ থেকে বেঁচে কয়েটা লা*-থি, ঘু/ষি দিয়েছে। কিন্তু তাতে তো তারা কাবু হয়নি। তখনি আহনাফ ও মৃদুল এসে যোগ দেয়। আরও দুইজন এসে ওদেরকে আ*ক্রমণ করে। মারসাদ কোনোমতে আগে ভেতরে ঢুকে। দেলোয়ার মারসাদকে দেখে আদিরার হাত ছেড়ে দেয়। আদিরা তার জামার ছেঁ*ড়া হাতা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে যায়। দেলোয়ারের গো*প:না/-ঙ্গে ইচ্ছে মতো লা-:থি দিয়ে দেলোয়ারকে একদম প্রায় নিস্তেজ করে ফেলেছে। তারপর মারসাদ দ্রত ফ্লোর থেকে ওড়না উঠিয়ে আদিরার কাছে যায়। আদিরাকে ভালো করে ওড়না দিয়ে মু-ড়িয়ে দেয়। আদিরা অনবরত কাঁদছে। মারসাদ ওর সামনে বসে অস্থির হয়ে দেখছে কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি তার স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ। আর একটু পর এলে কী হতো? এটা চিন্তা করতে গেলেই তার চিন্তাশক্তি সেখানেই থেমে যাচ্ছে। মারসাদ তার কাঁপা কাঁপা হাত বাড়ালে আদিরা আরও পেছানোর চেষ্টা করে দেয়ালের সাথে লেগে যায়। আরও জড়োসড়ো হয়ে বসে। মারসাদ হাত গুটিয়ে নেয়। সে বুঝতে পারছে আদিরার মানসিক অবস্থা।
তখনি দেলোয়ার আস্তে আস্তে উঠে। তারপর একটু আগে আদিরাকে যেই কাঠের চেয়ারটাতে বেঁধে রেখেছিল, সেটা উঠিয়ে মারসাদের মাথা ও পিঠে সজো*রে বা*ড়ি দেয়। মূহুর্তেই মাথায় হাত দিয়ে পেছনে ঘুরে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে মারসাদ। আদিরা তা দেখে মারসাদের নাম ধরে আর্তচিৎকার করে উঠে। এতক্ষণে পু*লিশও এসে পড়েছে। পু*লিশ গুদামের ভেতরে ঢুকছে। দেলোয়ার আদিরার দিকে এগুতে নিতেই পু*লিশ ভেতরে ঢুকে পড়ে। পু*লিশ দেলোয়ারকে আ*টক করে আর আদিরার অবস্থা দেখে লেডি কন*স্টবলকে ভেতরে ডাকে। মারসাদকে ধরে বাহিরে নিয়ে আসে।

—–

হসপিটালের করিডোরে পায়চারি করছে মারসাদের বন্ধুরা। মারসাদের মা*থা ফে*টেছে। আরেকটা কেবিনে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি আদিরার পাশে বসে আছে। আদিরা খুব প্যানিক করছিল বলে ঘু*মের ই-নজেক*শন দিয়েছে, সাথে স্যালাইন চলছে। মাহি আদিরার বাম হাত ধরে নিষ্পলক চেয়ে আছে ওর মলিন মুখটার দিকে। তার দাভাইয়ের মা*থা ফে*টেছে, ব্লা*ড লস হয়েছে সেসব সে জানে। সেটা নিয়েও খুব দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতায় আছে। তবে ডাক্তার বলেছে মা*থার আ*ঘা*ত তেমন গুরুতর না। ফে*টেছে কিছুটা। যদি লো*হার কোনো বস্তু দিয়ে আ*ঘা*ত করতো তবে আরও খারাপ অবস্থা হতো। দুই দিকের চিন্তায় মাহি এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলল। সাবিহা ও রিন্তি ও-কে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে কিন্তু ও শান্ত হতে পারছে না। আদিরার সাথে কী হতে চলেছিল তা আহনাফ তাকে বলেছে। একটা মেয়ের জন্য এটা কতো বড়ো মানসিক আ*ঘা*ত সেটা ভু*ক্তভুগীই ভালো বলতে পারবে।

ডাক্তার মারসাদের ট্রিটমেন্ট করে করিডোরে এসে বলেন,
“উনার আ*ঘা*ত গুরুতর না। হি ইজ লাকি। আমরা উনাকে রেস্টের জন্য সি*ডে*টিভ দিয়েছি। ঘুমাচ্ছে এখন। তবে উনাকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলবেন। একই জায়গায় যেন আ*ঘা*ন না পায়।”

তারপে ডাক্তার চলে যায়। আহনাফ, মৃদুলরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মাহিদের কাছে গিয়ে বলে। মাহিকে কাঁদতে দেখে আহনাফ ও-কে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে আসে। তারপর ফ্রেশ এয়ারের জন্য হসপিটাল থেকে বাহিরে নিয়ে আসে।

——–

“এবারও ফ্লপ! শিট! মারসাদ কি আদিরার পেছনে গার্ড ঠিক করে রেখেছে নাকি? আর দেলোয়ার ওর মা*থায় বা*ড়ি দিলো তো দিলো কোনো লো*হার ভারী কিছু দিয়ে দিতো। তাহলেই না মারসাদের চাপ্টার ক্লোজ হয়ে যেত।”

“কিন্তু সাগর, এবার যে দেলোয়ারকে পু*লিশে ধরে নিয়ে গেছে। ও যদি পু*লিশকে বলে দেয়? তবে? তখন….”

সাগরও এই ভয়টা পাচ্ছে। সে নিলয়কে থামিয়ে বলে,
“চুপ কর! চুপ কর। দেলোয়ারের কাছে কোনো প্রুভ নেই। আর আমাদের কেউ তো ওখানে ছিল না। আমরা কাউকে হায়ারও করিনি। তাহলে আমরা ফাঁ*সব কীভাবে। কিছু করতে পারবে না আমাদের।”

“না হলেই তো ভালো। তারও সাবধানে থাকতে হবে।”

নিলয় সাগরের সাথে কথা বলতে বলতে তার নতুন নাম্বারে কল আসে। নিলয় ফোনের স্ক্রিণে রাত্রির নাম দেখে অবাক হয়। হঠাৎ রাত্রি তাকে কল করছে কেন? কাল তো সে রাত্রির নাম্বারে কতো কল করেছে কিন্তু কল ঢুকেনি। ব্লক করেছিল। তাহলে আজ রাত্রি নিজেই কল করছে? ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে নিলয়কে। ভাবতে ভাবতেই কল কেটে যায়। সাগর বলে,

“ফোন ধরিস না কেন? কে ফোন করেছ?”

“কল সেন্টার থেকে।”

“ওহ।”
নিলয় রিংটোন সাইলেন্ট করতে না করতেই আবার কল আসে। নিলয় এবার বাইরে এসে কল রিসিভ করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৬
“তুমি কী বলেছিলে? তুমি আমাকে ভালোবাসো আর তোমার আমার ভালবাসার মাঝে আমাদের ফ্রেন্ডদের শত্রুতা আসবে না? সিরিয়াসলি? তোমরাই দেলোয়ারকে সেদিন সেভ করেছিলে না? আর তোমরা কাউকে সেভ করো, তাও কোনো ইনটেনশন ছাড়া! এটা আমাকে মানতে হবে?”

“রাত্রি, তুমি যা ভাবছো তা না। তুমি….”

রাত্রি নিলয়কে থামিয়ে দিলো। আর বলল,
“কী? আমি ভুল ভাবছি? তাও তোমাকে ও তোমাদের গ্রুপকে? পাঁচ বছর যাবৎ তোমাদের চিনি। ভুল ভাবার কোনো প্রশ্নই আসে না। তোমরাই দেলোয়ারকে দিয়ে এসব করিয়েছ। এখন মারসাদ ও আদিরা হসপিটালে ভর্তি। তোমাদের জন্য আমার ফ্রেন্ড হসপিটালে ভর্তি।”

“আমার কথা তো শোনো…”

“না। পুলিশ নিয়ে গেছে তো দেলোয়ারকে। তারপর সব বের হবে। ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

রাত্রি কল কেটে দিতেই নিলয় কল লাগায়। ফোন রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয় না। এরপর আবার কল করলে কল ঢুকে না। তার মানে ব্লক করে দিয়েছে। নিলয় নিজের রাগ প্রকাশ করতে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

——-
পু*লিশ হসপিটালে এসে পরের দিন আদিরার বয়ান নিয়েছে। তারপর আহনাফ, মৃদুলদেরও বয়ান নিয়েছে। মারসাদের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু তাকে অভজার্ভেশনে রাখা হয়েছে। আদিরাকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সে সুমি, মৌমিদের সাথে হোস্টেলে আছে। এদিকে হসপিটালে মিসেস মীরা, মিস্টার আরশাদ খান, মিলি ও রাকিব এসেছে মারসাদকে দেখতে। মিসেস মীরা ছেলের কেবিনের বাইরে বসে কাঁদছেন। মিলি ও মাহি উনাকে স্বাত্বনা দিচ্ছে। মিস্টার আরশাদ পাশেই চিন্তিত হয়ে বসে আছেন।
কিছুক্ষণ পর হসপিটালে সামিরা আসলো। এসেই মাহিকে সরিয়ে মিসেস মীরাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। মাহি বোকার মতো সামিরাকে দেখছে। সামিরা বলতে শুরু করলো,

“এসব ওই মেয়েটার জন্য হয়েছে, আন্টি। ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে গিয়ে মারসাদ আজকে হসপিটালে। এর আগেও ওই মেয়ের জন্যই মারসাদ অনেক চোট পেয়েছে।”

মিসেস মীরা ও মিস্টার আরশাদ খান সামিরার কথা শুনে চুপ করে রইলেন। কিন্তু মাহি চুপ করে থাকতে পারলো না। সে বলে উঠলো,
“ননসেন্স কথাবার্তা বলবে না, সামিরা আপু। আদিরা কিছু করেনি।”

“আমি মোটেও ননসেন্স কথাবার্তা বলছি না, মাহি। তোমার ভাইয়া আদিরাকে বাঁচাতে গিয়েই তো আজ এই হাল।”

“একটা মেয়েকে গু*ন্ডারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, সেটা জানার পরও দাভাই চুপ করে থাকবে? আর তুমি এখন এসব বলে কি প্রমাণ করতে চাইছ?”

“তুমি সবসময় বেশি বুঝো, মাহি! নিজের ভাইয়ের থেকে তোমার কাছে আদিরা ইম্পরট্যান্ট?”

“অফকোর্স নট। বাট অ্যাই অ্যাম নট ব্লা*ইন্ড!”

সামিরা কিছু বলতে নিবে, তার আগেই মিলি বলে,
“থামো তোমরা। এটা হসপিটাল। এখানে অহেতুক ঝ*গড়া করো না। ডাক্তার বলেছে ভাই ঠিক হয়ে যাবে।”

মিস্টার আরশাদ খান চেয়াে ছেড়ে উঠতে উঠতে বলেন,
“সে ঠিক হলে এর একটা পার্মানেন্ট সলিউশন করতে হবে।”

মিস্টার আরশাদ এরপর অন্যদিকে যান। সামিরা মাহির দিকে চেয়ে বিজয়ী হাসে। মাহি বুঝতে পারছে না, তার বাবা কী করতে চলেছেন। চিন্তায় সে কিছুটা দূরে গিয়ে আহনাফকে কল লাগায়। আহনাফ কল রিসিভ করতেই মাহি বলে,

“সামিরা আপু এসে ভে*জাল লাগিয়ে দিয়েছে।”

“কী করেছে?”

“আদিরার এগেইনস্টে উ*সকে দিচ্ছে। ভাল্লাগে এসব আর! দাভাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেলে বুঝা যাবে।”

আহনাফও চিন্তায় পড়ে গেছে। এতো কিছুর মধ্যে এই সামিরাকে আবার কেন হাজির হতে হলো! এমনিতে ঝামেলা কি কম ছিল? আহনাফ লম্বা করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“মারসাদ সুস্থ না হওয়া অবধি আমরা কিছু বলতে পারছি না।”

মাহি এবার কিছুটা ইতস্তত করে বলে,
“কালকে আদু স্বিকার করেছে। ও দাভাইকে ভালোবাসে। এতোদিন পর সব ঠিক হওয়ার পথে আর এখনি এসব! মা-বাবা যে কিভাবে জানলো দাভাই হসপিটালে! আমার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে, সামিরা আপুই জানিয়েছে।”

“আমারও তাই মনে হচ্ছে। তবে আঙ্কেল-আন্টিকে আমরা বিষয়টা না জানিয়েও থাকতে পারতাম না।”

“ভার্সিটির মিটিং শেষ হয়েছে? সাগর ভাইয়াদের গ্রুপ কোনো ঝামেলা করেছে আবার?”

“ওরা মারসাদের পদত্যাগ চাচ্ছে। ওরা বলছে মারসাদ ভিপি হওয়ার যোগ্য না। ক্যাম্পাসে মারসাদকে এখন খুব একটা দেখাও যায় না।”

“আপনি সব সামলে নিয়েছেন না?”

“হু। হসপিটালে আসছি আমি।”

“আচ্ছা।”

আদিরা জানালার ধার ঘেষে বসে আছে। সুমি ওর পাশে বসে কাঁধে হাত রাখলো। চমকে উঠে ঘুরে তাকালো আদিরা। সুমিকে দেখে আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।

“খেয়ে নাও কিছু। সকালেও খাওনি। এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।”

“খিদে নেই।”

“না খেলে উইক হয়ে পড়বে।”

“কিছু হবে না আমার।”

সুমি হতাশ হয়ে উঠে যায়। তারপর মৌমিকে গিয়ে বলে,
“মারসাদের খবর কী? ডাক্তার বলেছে অভজার্ভেশনে রাখবে। আরও দুই দিন রাখতে পারে।”

“ওই দেলোয়ারের থেকে কিছু জানতে পেরেছে?”

“আশিক তো বলল, কাল রি*মা*ন্ডে নিবে।”

“এবার সাগর পার পাবে না।”

দেলোয়ারের নামে এটেম্পট টু মা*র্ডার কে*স, কি*ডন্যা*পিং ও এটেম্পট টু রে*প কে*স হয়েছে।
দেলোয়ারকে রিমা*ন্ডে নেওয়া হয়েছে। সে মা*রের চো*টে সব উগলে দিয়েছে। সেখানে সাগর, রুহুল আমিনের নাম এসেছে। রুহুল আমিন যে দেলোয়ারকে গাড়ি ও নিজের লোক দিয়ে সাহায্য করেছে সেটাও বলে। সাগরকে পু*লিশ খুঁজছে। এদিকে সাগর ভয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে তার বাড়িতে চলে গেছে। সাগরকে না পেয়ে পু*লিশ ওর বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে।

নিলয় ও বাকিদের থেকে রুহুল আমিনের ব্যাপারে ডিটেইলসে জানে। এটাও জানতে পারে, রুহুল আমিন আসলে মারসাদের পেছনে। তাই মারসাদকে পথ থেকে সরাতে সে দেলোয়ারকে আদিরার কি*ডন্যাপিংয়ে সাহায্য করেছে। নিলয় এটাও বলেছে, রুহুল আমিন তাদের গ্রুপের সাথে মারসাদদের গ্রুপের শ*ত্রুতা জেনে তাদেরকে এপ্রোচ করেছে।
এবার পুলিশ রুহুল আমিনকে খুঁজতে কুমিল্লার থানাতে যোগাযোগ করে।

——-

দুই দিন পর মারসাদকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। তারপর মারসাদকে ওর বাবা ও বন্ধুরা মিলে চট্টগ্রামের ফ্লাটে নিয়ে আসে। মিসেস মীরা ছেলের জন্য স্যুপ বানিয়ে রেখেছেন। মারসাদ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে বসতেই মিসেস মীরা ছেলেকে খাওয়াচ্ছেন। তখন মিস্টার আরশাদ খান এসে বলেন,

“সামনের মাসে তোমার ও সামিরার এনগেজমেন্ট।”

খাওয়া থেমে যায় মারসাদের। মাহি, আহনাফ, মৃদুল, রাফিন ও রবিন সবাই অবাক হয়ে মিস্টার আরশাদের দিকে চেয়ে আছে। মিস্টার আরশাদ আরও বলেন,

“আমি চেয়েছিলাম নেক্সট উইকে এনগেজমেন্ট করতে। কিন্তু সামিরার বাবাকে নেক্সট উইকে দেশের বাহিরে যেতে হবে। আমারও পরবর্তী দুই উইকে ব্যস্ততা আছে।”

“আমাকে না জানিয়ে তুমি এনগেজমেন্ট কীভাবে ঠিক করতে পারো, বাবা?”

“তোমার বাবা তাই। তোমার ভালো খারাপ দেখার দায়িত্ব আমার।”

মারসাদ হাতের মুঠ ক্রমশ শক্ত করছে। মৃদুল ও রাফিন মারসাদের দুই পাশে বসে ক্ষীণ স্বরে ও-কে শান্ত হতে বলছে। মারসাদ শক্ত কণ্ঠে বলে উঠে,

“আমি সামিরার সাথে এনগেজমেন্ট করব না।”

“কেন করবে না? কারণ কী?”

মিস্টার আরশাদের কণ্ঠে রাগের আভাস। মারসাদ উত্তরে বলে,
“আমি সামিরাকে ভালোবাসি না।”

“বিয়ের পর ভালোবাসা হয়ে যাবে।”

“না।”

“কেন? ওই আদিরা মেয়েটার জন্য?”

মারসাদ এবার তার বাবার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মিস্টার আরশাদও ছেলের চোখের দিকে চেয়ে আছেন। মারসাদ নিজের দৃষ্টি সরিয়ে কাটকাট শব্দে বলে,

“না। আদিরা আমার জীবনে না আসলেও আমি সামিরাকে বিয়ে করব না।”

“তুমি বিয়ে করবে। ওই আদিরার জন্য নিজের জীবন আর কতো রি*স্কে ফেলবে? আমার একমাত্র ছেলে তুমি। তুমি যা চেয়েছ সব তোমাকে দেওয়া হয়েছে। এখন তোমারও উচিত বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে শান্তি দেওয়া।”

কথাগুলো বলে মিস্টার আরশাদ ছেলের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিসেস মীরা মারসাদের হাত ধরে আকুল কণ্ঠে বলেন,
“দেখ বাবা, তোর বাবা ভুল কিছু বলেনি। ওই মেয়ের জন্য তুই কম ঝামেলাতে পড়িসনি।”

“তোমার কী মনে হয়, মা? যারা আদিরাকে কি*ডন্যাপ করেছে ওদের কেবল আদিরাই উদ্দেশ্য ছিল? পুলিশ রুহুল আমিনের জন্য কুমিল্লা থানাতে পাঠিয়েছে। রুহুল আমিন কি আদিরাকে চিনতো?”

“আমি অতোকিছু জানিনা। সামিরার বাবা অনেক পাওয়ারফুল। উনার কাছে রুহুল আমিনও কিছু না। তোর বাবার কথায় রাজি হয়ে যা।”

মিসেস মীরা কাঁদতে কাঁদতে বললেন। মারসাদ মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। বেশি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার। মাহি তার মাকে জোর করে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৭
মারসাদ বাহিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিজের রুম থেকে বের হতেই ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খেতে বসা মিস্টার আরশাদ খান ডাক দেন,

“কোথায় যাচ্ছো?”

“ক্যাম্পাসে।”

মিস্টার আরশাদ খান অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি বললেন,
“তুমি অফিস থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছ রেস্ট করতে। আর তুমি এখন ক্যাম্পাসে যাচ্ছো?”

মারসাদ কেডসের ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলে,
“আমি কাল থেকে অফিসেও যাচ্ছি। তাছাড়া আমি ভার্সিটির ভিপি। তোমাকে এটাও মনে রাখতে হবে।”

“ভিপি হলে চাকরি নিয়েছ কেন? এমন তো না, তোমার চাকরির খুব দরকার ছিল!”

“ছিল। এতো কষ্ট করে বিফার্ম করলাম, এখন এমফার্ম করছি নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে থাকতে না! একজন ফার্মাসিস্ট হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে।”

“তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। আমি তোমাকে এই সাবজেক্টটা নিতেই না করেছিলাম। বিবিএ নিয়ে পড়তে।”

মারসাদ কোনো প্রত্যুত্তর করে না। সে বেরিয়ে যায়।

——
আদিরা ক্লাসে বসে আছে। মাহি আহনাফের সাথে মারসাদের বিষয়ে কথা বলতে গেছে। সাবিহা ও রিন্তি এখনও এসে পৌঁছায়নি। ক্লাসে আদিরাকে নিয়ে কানাঘুষা হচ্ছে। আদিরা বসে বসে সব দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। এক মেয়ে তো ও-কে জিজ্ঞাসা করেই বসে,
“গু*ন্ডাটা কি তোমাকে রে* করেছে?”

আদিরার প্রচণ্ড অস্থির লাগছে। সে দ্রুত ব্যাগ উঠিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। সাবিহা ও রিন্তি সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল। ওরা আদিরাকে ছুটে আসতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করার আগেই আদিরা সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। সাবিহা ও রিন্তি বুঝতে পারে না হঠাৎ কী হলো? তখন দুইটা মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলছে,

“আদিরাকে নাকি গু*ন্ডারা উঠিয়ে নিয়ে গেছিলো। তারপর…”

রিন্তি ও সাবিহার এবার সন্দেহ হয়, ক্লাসেও কেউ হয়তো এসব নিয়ে চর্চা করছিল। ওরাও তাড়াতাড়ি করে আদিরার পিছু নেয়। আদিরা ভবন থেকে বেরিয়ে এখন চলে যাচ্ছে। এদিকে মারসাদ বাইকে করে আসতে আসতে সামনে আদিরাকে কাঁদতে কাঁদতে এদিকে আসতে দেখে। মারসাদ ডাকে,

“আদিরা, কোথায় যাচ্ছো?”

কিন্তু আদিরা শোনে না। সে মারসাদকে ক্রস করে চলে যায়। মারসাদ দ্রুত বাইক ঘুরিয়ে আদিরার সামনে নিয়ে ব্রেক করে। যার দরুন আদিরা আচমকা পড়ে যেতে নিলে মারসাদ ধরে ফেলে। মারসাদ আদিরাকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে বাইক থেকে নামে। তারপর জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে? কোথায় যাচ্ছো? আর কাঁদছো কেন?”

“কিছু হয়নি।”

“কিছু না হলে কাঁদছো কেন? আর কোথায় যাচ্ছো?”

“আমার ভালো লাগছে না বলে হোস্টেলে যাচ্ছি।”

তখন সেখানে সাবিহা ও রিন্তি এসে হাজির হয়। রিন্তি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“ক্লাসে তোকে কেউ কিছু বলেছে তাই না?”

মারসাদ ভ্রুঁ কুঁচকে শুধায়,
“কী বলেছে?”

“ভাইয়া, আমরা তো একটু আগেই এলাম। ক্লাসে ঢুকিনি পর্যন্ত।”

মারসাদ এবার আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছে?”

আদিরা নিরব। মারসাদ এবার খানিক ধমকে জিজ্ঞাসা করে। তৎক্ষণাৎ মাথায় ব্যাথার সূক্ষ্ম চিলিক দিয়ে উঠে। মারসাদ মাথায় হাত চেপে ‘আহ’ করে বাইকে হেলান দিলে আদিরা, সাবিহা ও রিন্তি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। আদিরা চিন্তিত স্বরে শুধায়,
“আপনি ঠিক আছেন?”

মারসাদ ধিমি স্বরে জবাব দেয়,
“হুম। তুমি বলো, কে তোমাকে কী বলেছে?”

“কেউ কিছু বলেনি। আপনি এতো চিন্তা করবেন না। আর ভার্সিটিতে এসেছেন কেন? ডাক্তার আপনাকে রেস্ট করতে বলেছেন না? আপনি ডাক্তারের কথা শুনছেন না কেন? কী সমস্যা আপনার? এতো কেয়ারলেস কেন আপনি?”

আদিরার মারসাদকে এভাবে উঁচু স্বরে বকছে দেখে সাবিহা ও রিন্তি দুজনেই ঠোঁট টিপে হাসছে। মারসাদ কিছুটা অবাক তো হচ্ছেই তবে তার ভালো লাগছে। মুচকি হাসলো সে। আদিরা আবার বলল,

“হাসছেন কেন? বাসায় যান। গিয়ে রেস্ট করুন।”

মারসাদ আদিরার হাত ধরলো। তারপর বলল,
“চলো, তোমাকে ক্লাসে দিয়ে আসি।”

“না। আমি এখন ক্লাসে যাব না।”
আদিরা মারসাদের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলল। মারসাদ জিজ্ঞাসা করে,
“কেন?”

“ভালো লাগছে না।”

“তাহলে আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?”

আদিরা ভ্রুঁকুঞ্চন করে তাকিয়ে বলল,
“আপনি অসুস্থ।”

“আমি ঠিক আছি। চলো তুমি।”

তারপর আদিরাকে বাইকে বসতে বলে বাইক স্টার্ট দেয়।

———

পু*লিশ রুহুল আমিনকেও গ্রেফতার করেছে। সাগরকেও তার বাসা থেকে ধরেছে। কে*স কোর্টে উঠেছে অলরেডি। কোর্ট থেকে সাগরকে রি*মান্ডে নিতে বলা হয়েছে। রুহুল আমিনকে গ্রুফতার করাতে পু*লিশ মিস্টার আরশাদ খানকে আজই কুমিল্লা যেতে হচ্ছে। তিনি মিসেস মীরাকে বললেন,

“তোমরা থাকো। তোমার ছেলেকে সাবধান করো। রুহুল আমিনকে পু*লিশে ধরলেও সে কিন্তু দমে যাওয়ার না। আর ওই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে বলবে।”

মিসেস মীরা স্বামীকে আশ্বাস দিলেন। এদিকে রাকিব মিলিকে কল করেছে।
“তোমার ভাইকে বলো কে*স তুলে নিতে। আমার মামা ও তোমার ভাইয়ের মধ্যে না মিলতেই পারে। কিন্তু আমার মামা তোমার ভাইকে মা*রতে চাইবে কেন? তাদের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে ঝামেলা। সেটার জেরে পু*লিশ কেস!”

মিলি বলে,
“আমার ভাই তোমার মামার নামে কোনো ক*মপ্লেন করেনি। পু*লিশ সেটা খুঁজে বের করেছে। তিনি যদি নির্দোষ হন তাহলে তো পু*লিশ উনাকে ছেড়েই দিবে।”

“দেখো, আমার মামার যেন কিছু না হয়। আমি তোমার ভাই ও তোমার কথা শুনে মামার প্রপোজাল রিজেক্ট করেছি। দাঁড়াইনি নির্বাচনে।”

“রাকিব, তুমি আমাদের ভুল বুঝছো। আমার ভাই তোমার মামার নামে কোন কম*প্লেনই করেনি। আমার ভাই শুধু ওই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ক*মপ্লেন করেছে। এখন দেলোয়ার জবানবন্দিতে কী বলেছে সেটা তো আমরা জানিনা। তোমরা পুলিশের সাথে কোঅপারেট করো। উনি নির্দোষ হলে ছাড়া পেয়েই যাবেন। এটা নিয়ে চিন্তা করছো কেন?”

“মিলি, তুমি বুঝতে পারছো না…”

“আমি বুঝতে চাইছি না, রাকিব। ছেলের কান্না শুনতে পাচ্ছো না? ছেলেকে খাওয়াতে হবে। কল রাখো। ”

এই বলে নিলি রাকিবের কল কে*টে দিলো। তারপর ছেলের দিকে মনোযোগ দেয়।

—–
পতেঙ্গা সমুদ্রতটে বাইক রেখে দাঁড়িয়ে আছে আদিরা ও মারসাদ। আদিরা সমুদ্রের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। এখানে আসার পর বাইক থেকে নামার আগে ও পরে আদিরা আর একটা কথাও বলেনি। মারসাদও ওর নিরবতা মেয়েটার মনের উপর দিয়ে যা গেছে তা এখনও ঠিক হয়নি সেটা মারসাদও বুঝতে পারছে। সাগরের ঢেউয়ের কলতান কানে এক সুমধুর ধ্বনির মতো বাজছে। মারসাদ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্তব্ধ রমণীটির দিকে অপলক চেয়ে আছে। প্রায় দশ-পনেরো মিনিট এভাবেই কে*টে গেলো। অতঃপর আদিরা তার নিরবতা ভাঙলো। সে বলল,

“মারসাদ…”

মারসাদ জবাব দিলো,
“হু?”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

থমকে গেলো মারসাদ। সম্মুখে সাগরের ঢেউয়ের শব্দও এখন তার কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে। সে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“কী বললে?”

আদিরা এবার মারসাদের দিকে তাকালো। চোখে চোখ রেখে প্রাণহীন স্বরে বলল,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি আপনার জন্য ঠিক নই। আমার জন্য আপনার জীবনে শুধু দুঃখই আসে। আপনি বারবার বিপদে পড়েন। আজ আমি আপনাকে ভালোবাসার কথাটা এই কারণে জানালাম, যাতে আপনার মনে না হয়, আপনার ভালোবাসা ব্যর্থ! আপনার ভালোবাসা ব্যর্থ না। বরং আমি আপনার জন্য অশুভ। সামিরা আপুকে বিয়ে করে নিন।”

মারসাদ হতবাক হয়ে আদিরার দিকে চেয়ে আছে। আদিরা কথাগুলো বলে আবার সামনের দিকে ফিরে। মারসাদ ওর বাহু ধরে আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে শুধায়,

“তোমাকে এসব কে বলেছে? আর সামিরাকে বিয়ে করব মানে? বলো, এসব কে বলেছে?”

আদিরা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলে,
“উত্তেজিত হবেন না। আপনার জন্য এখন উত্তেজিত হওয়া ক্ষতিকর।”

“তুমি বলো, কে বলেছে এসব? সামিরা? সামিরা বলেছে তাই না?”

“যেই বলুক। সত্য সত্যই। বিগত এক বছরে আপনি যতো বিপদে পড়েছেন, তার অর্ধেক বিপদও আপনার বিগত পাঁচ বছরে হয়নি। তাহলে কী দাঁড়ায়?”

মারসাদ আদিরাকে দেখছে। মেয়েটার চোখ ভাষাহীন। যেন নিজেকে খুব শক্ত করে কথাগুলো বলছে। মারসাদ বলে….

চলবে ইন শা আল্লাহ,!

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩২
মারসাদের আঁকা ছবিটাকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে কিছুক্ষণ দেখার পর মুচকি হাসলো আদিরা। ছবিটার নিচের দিকে মারসাদের নামের ইংলিশে সাইন ও তারিখ দেওয়া। আদিরা নামটা দিকে আরও কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইল। পরক্ষণেই রুমমেটের ঘুমে জড়ানো ‘গুড মর্নিং’ শুনে জলদি করে ছবিটা আগের মতো গোল করে মুড়িয়ে যত্ন করে রেখে দেয়।

ছুটির পর আজ ভার্সিটি খুলল। আদিরা ক্লাসরুমে বসে আছে। বসে বসে বারবার দরজার দিকে দেখছে। একটু পর সাবিহা, রিন্তি এসে আদিরার সামনের ও সামনের সিটের পাশেরটাতে বসে। অতঃপর গল্প করা শুরু করে দেয়। আদিরা ওদের সাথে গল্প করছে আর কিছুক্ষণ পরপর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। স্যার আসতে বেশি সময় বাকি নেই। নিজের পাশের চেয়ারটা এখনও ফাঁকা। আদিরা আশা করছে মাহি এসে তার পাশের চেয়ারটায় বসবে। কিন্তু মনে মনে আবার ভাবছেও, হয়তো বসবে না। তখনি দরজা দিয়ে মাহির আগমন ঘটে। সাবিহা, রিন্তি একসাথে মাহিকে হাতের ইশারায় ‘হাই’ দেয়। তারপর তাদের কাছে আসতে বলে। মাহিও ওদেরকে হাত নেড়ে ‘হাই’ দিয়ে আদিরার দিকে তাকায়। আদিরা তার দিকেই চেয়ে আছে। কিন্তু চোখ-মুখের ভাবমূর্তি ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। মাহি ওদের দিকে আগাতে আগাতে তার মনে পড়লো মারসাদ কাল রাতে তাকে যা বলেছিল,

“শোন বাচ্চা, তোর আর আদিরার মধ্যে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং সলভ করে নে। আমার জন্য তুই ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করবি কেন? আমিই তো প্রথমে ভুল স্টেপ নিয়েছি। ওই স্টেপের পর যেকেনো মেয়ে, মানে আদিরার মতো মেয়ে আমাকে বিশ্বাস নাই করতে পারে। তুই নিজেও বিশ্বাস করতি না।”

মাহি বলেছিল,
“আমি এজন্য ওর সাথে রাগ করিনি, দাভাই। তোকে বলেছিলাম।”

“হু বলেছিলি। কোনো একটা রিলেশন বা বন্ড নষ্ট হওয়ার পর আমরা কী করি? সেই মানুষটার থেকে দূরে থাকি। কিন্তু প্রতিদিন যদি সেই মানুষটাকে দেখতে হয় তখন এটা মিসারেবল হয়ে যায়। ফ্রেন্ডশিপ তেমনই একটা বন্ড। চোখের সামনে বেস্টফ্রেন্ডকে অন্য কোনো ক্লাসমেট বা ফ্রেন্ডের সাথে হাসতে দেখলে যেমন আমরা এগিয়ে যাই, যে কেন হাসছে? কিন্তু যখন এই বন্ডটা ব্রেক করে তখন ওই এগিয়ে যাওয়াটা হয় না। তাই বলে যে আমাদের থিংকিং সেখানে স্টপ হয়, তাও কিন্তু না। বিয়ে ভাঙার মতো হলে আদালতও তিন মাসের টাইম পিরিয়ড দেয়, নিজেদের মধ্যে সলভ করার। তাতেও না হলে পারমানেন্টলি সেপারেশন। তারপর দুজনের দুনিয়া আলাদা। তারপরও মুভঅন করতে সময় লেগে যায়। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ ভিন্ন। যদি সেটার ব্রেকডাউন ‘আর কখোনো দেখা হবে না’ স্টেজে হয়, তখন হয়তো সেটা তেমন পে*ইন দেয় না। কিন্তু তোদের প্রতিদিন দেখা হবে কিন্তু কথা হবে না। দুজনের মনেই অস্থিরতা থাকবে। তাই বলছি, আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না। আমারটা আমি বুঝে নিব। তোরটা তুই বুঝে নে।”

মাহি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার ভাইয়ের কথাগুলো শুনেছিল। অতঃপর মুচকি হেসে ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিল।

মাহি আদিরার পাশের সিটটাতেই বসলো। মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালো। স্যার এসেছেন। সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।

———–

সন্ধ্যাকাল। ঘড়িতে সময় সাতটার কিছু বেশি বাজে। পার্কের ধারের রাস্তার খানেক বাদে স্ট্রিট লাইটে আলোকিত। আকাশে আজ পূর্ণ চন্দ্রমা। আজ পূর্ণিমা কি না আদিরা জানে না। তার চন্দ্রমাসের তারিখ হিসাব করা হয় না। তবে আজ চাঁদটা বিগত কিছু দিনের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল ও বড়ো লাগছে। আদিরা চাঁদের দিকে চেয়ে হাঁটতে হাঁটকে হঠাৎ হোঁচট খেলো। তৎক্ষণাৎ এক বলিষ্ঠ হাতের মালিক তাকে তার কাঁধ ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকালো। আর বলল,

“এখানে মেনহোলের ঢাকনাটা একটু উঁচু। সাবধানে হাঁটো।”

আদিরা লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। লোকটাও বিনিময়ে মৃদু হাসলো। লোকটা বলল,

“তুমি বললে আজকে মাহি তোমার পাশের সিটে বসেছে। তারপর কি হয়েছে তা তো বললে না। কথা শেষ না করেই চাঁদের দিকে লক্ষ্য করে হাঁটতে লাগলে। আর এখন তো পড়েই যাচ্ছিলে।”

“আজকে তো একটাই ক্লাস হয়েছে। পরের ক্লাসটা তো ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে। তাই মাহি বলল, ওর গোছগাছ বাকি আছে। বাসায় চলে গেলো।”

“হু। ওর গোছগাছ বাকি আছে। কারণ ও কালকে বিকেলেই এসেছে। আপিলি মাহিরকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আছে। আর মাহি মাহিরকে ছেড়ে আসতেই চাচ্ছিলো না।”

আদিরা বলল,
“আমাকে একটু মাহিরের ছবি দেখান না। আপনি শুধু ডেলিভারির দিনের ছবি আমাকে দেখিয়েছেন। তারপর ও কয়েকদিনে কতটুকু বড়ো হল সেটার ছবি দেখান।”

হাসলো মারসাদ। তারপর বলল,
“মাত্র ৯ দিন বয়স ওর। আর তুমি বলছো নয় দিনে কতটুকু বড়ো হলো! তুমি আর মাহি পুরো একই! মাহি তো প্রতিটা মুহূর্তের ছবি তুলে ওর। কালকে এখানে আসার পর আপিলিকে যে ও কতবার কল করেছে! ভিডিওকল, অডিওকল সব। বারবার কল করে মাহিরের দিকেই ক্যামেরা রাখতে বলে আর বাসে আসার সময় অডিও কল দিয়ে নাকি বারবার বলেছিল, ‘আপিলি, আমার মাহির বাচ্চার ছবি তুলে দাও!’ আপিলি পরে বিরক্ত হয়ে আমাকে বলেছে, আমি যেন ওর ফোন ওর থেকে কেড়ে নেই।”

“খালা হওয়ার ফিলিংস আপনি বুঝবেন না। প্রতিটা ছোটো বোনের প্রথম সন্তান তার বড়ো বোনের বাচ্চা। আমার তো আফসোস হয়, আমার কেন বড়ো বোন নেই। আসলে আমার একটা বোন না থাকারই আফসোস। ছোটো বোন থাকলেও হতো। বোন থাকা মানে ‘লাকি’।”

আদিরের কথা শুনে মারসাদ বিড়বিড় করে বলে,
“হুম লাকি! খুব লাকি! দুই বোনের যন্ত্রণায় আমি স্যান্ডুইচ হওয়ার পথে! একজনে বিচার দেয়, তারপর দুজনে মিলে পি*টাই করে! এজন্যই হয়তো বলে, বোনের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম বা প্রেম করার চেষ্টা না করতে!”

আদিরা মারসাদের কথা শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। রিকশা যাওয়ার টুংটাং শব্দে শোনা গেলো না। আদিরা শুধালো,

“কিছু বলছেন?”

মারসাদ ধাতস্থ হলো। বোকার মতো হেসে জবাব দিলো,
“কই না তো। কিছু বলছি না। তুমি বলছিলে কিছু।”

“হ্যাঁ। আপনি শোনেননি?”

“শুনেছি তো। বোন থাকা লাকি। অনেক লাকি!”

“হু। ভাই থাকাও লাকি।”

মারসাদ আদিরার দিকে আঁড়চোখে দেখলো। আদিরা বলছে,
“বড়ো ভাই হলে তো সবসময় বোনকে প্রটেক্ট করে। আর ছোটো ভাই হলে বোনের কাছে নানান আবদার করে। বড়ো বোনকে মায়ের মতো মনে করে। আমার আহাদ। জানেন, ও কী করে?”

“কী করে?”

“আমি গ্রামে গেলে ও আমাকে আসতেই দিতে চায় না। যাওয়ার দুই দিন আগে থেকে আমার ওড়নার কোণা ধরে আঠার মতো লেগে থাকবে। বারবার বলবে, ‘তুমি সত্যি চলে যাবে?’ হাহ্! আমারও তো ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। আমি ভাবছি গ্র্যাজুয়েশনের পর একটা চাকরি নিয়ে বাবা-মা, আহাদ সবাইকে নিয়ে আসব।”

মারসাদ হুট করে প্রশ্ন করে বসে,
“তোমার কী চট্টগ্রামেই থাকার ইচ্ছা?”

আদিরা থেমে মারসাদের দিকে তাকালো। তারপর চিন্তা করে বলল,
“তা জানিনা। মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এর সাথে সাথে স্থান, কালও বদলায়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ আমাকে কোথায় পৌঁছায়।”

মারসাদ মুচকি হেসে ফের হাঁটা শুরু করলো। সাথে আদিরাও। কিছুক্ষণ পর ওরা হাঁটতে হাঁটতে আদিরার হোস্টেলের কাছে চলে এসেছে। আদিরাকে বিদায় দেওয়ার সময় মারসাদ বলল,
“প্রায় আধ ঘণ্টার মতো হাঁটলাম কিন্তু মনে হচ্ছে পাঁচ মিনিট।”

আদিরা কথার দ্বারা প্রত্যুত্তর করলো না। লাজুক হাসলো শুধু। তারপর হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে হোস্টেলের ভেতর চলে যায়। আদিরা চলে যাবার পর মারসাদ সেখানে মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে ছিল। রুমে গিয়ে আদিরা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই মারসাদ হাত নাড়লো। মারসাদ হাত নাড়তেই আদিরা তৎক্ষণাৎ জানালার পর্দা আবার সোজা করে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে পড়লো। তার হৃৎপিন্ডের গতি অস্থির। মেডিকেল সাইন্সের বাইরে বললে এটাকে লজ্জা, অস্থিরতা, ভালোবাসার অনুভূতি বলে। এদিকে মারসাদ আদিরাকে হুট করে আবার পর্দা সোজা করে ফেলতে দেখে মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসলো। অতঃপর রিকশা ডেকে উঠে পড়লো।

———

ছোটো পাহাড়ের মতো ঢিবির উপরের মতো স্খানটায় গিয়ে মাহি তার ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছবি আঁকতে। জায়গাটা ভার্সিটির ভেতরেই কিন্তু এটাকে পাহাড় না বলে ঢিবি বলাই ভালো। ছবিতে সে আজকে এই জায়গাটাই আঁকবে। প্রথমেই প্রথমেই ভবন আঁকা শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর মাহি ছবি আঁকতে আঁকতে একজন তার সামনে স্ট্রবেরিশেক বাড়িয়ে দিলো। মাহি পাশে না ফিরেই মুচকি হেসে তা নিলো। ক্রমাগত কাগজে তুলি ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,

“আপনার বন্ধু তো জব করছে। আপনি করবেন না?”

আহনাফ হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“মাস্টার্স শেষ হোক। তারপর।”

“কেন আগে করবেন না কেন?”

“তিনটা টিউশনি করাই। তিনটা টিউশনি মিলিয়ে স্টুডেন্ট যদিও ৬-৭ জন। তাতে ভালোই এমাউন্ট আসে। চাকরি করলে প্রথম স্যালারিও এতো দেয় কী না!”

“এজন্য চাকরি করবেন না? টিউশনি তো দাভাইও একটা করায়।”

“করব। তোমার দাভাইয়েরটা আলাদা। সে টিউশনি নেয়, আবার ছাড়ে। এই পর্যন্ত কতোগুলো ছেড়েছে হিসাব নেই! লাস্টে দুটো করাতো। এখন একটা। তার টিউশনি ছাড়ার কারণ হচ্ছে ফিমেইল স্টুডেন্ট! রিসেন্টলি এডমিশন টেস্ট কয়েকটা ভার্সিটিতে বাকি আছে তাই ওই দুইটা মেয়েকে পড়ানো এতোদিন পর ছাড়লো। অনেক রিকুয়েস্ট করেছিল যাতে না ছাড়ে। তাই চাকরির দোহাই দিয়ে ছাড়লো। এখন দুটো ছেলেকে পড়ায় আর চাকরি করে।”

“তো আপনার কাছে মেয়েরা পড়ে না?”

“পড়ে তো। তিনটা মেয়ে।”

মাহি আঁকা থামিয়ে দিলো। তারপর আহনাফের দিকে চেয়ে একটা লুক দিলো, যা দেখে আহনাফ বোকার মতো হেসে বলে,
“রিল্যাক্স। আমি ওদের বলে দিয়েছি আমার একটা আ*গ্নেয়*গিরির সাথে মন দেওয়া-নেওয়া আছে। ওরা খুব ভয় পেয়েছে।”

মাহি এবার হাতের তুলিটা জোড়ে ওয়াশ কৌটাতে রাখলো। তারপর কোমড়ে হাত গুঁজে আহনাফের দিকে তেড়ে গিয়ে শুধালো,
“আমি কী?”

আহনাফ এক পা পিছিয়ে গিয়ে সামান্য ঢোক গিলে বলল,
“কী?”

“আপনি আমাকে কী বললেন?”

“কী..কী বললাম?”

“তোঁতলাচ্ছেন কেন? কী সম্বোধন করেছেন ওদের কাছে?”

“আ…ইস! আইস কুল লেডি। এটাই বলেছি।”

মাহি বাম চোখের ভ্রঁ উঁচু করে ফের শুধায়,
“এটা বলেছেন?”

আহনাফ মাথা উপর নিচে নাড়তে নাড়তে বলে,
“হু হু। এটাই বলেছি। তুমি যদি ভুল শুনো এটাও কী আমার দোষ?”

“ওহ আমি ভুল শুনেছি।”

আহনাফ আবারও মাথা উপর নিচে নাড়ে। মাহি কয়েক সেকেন্ড আহনাফের চোখের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তারপর স্ট্রবেরিশেকের স্ট্রতে শেষবারের মতো টান দিয়ে খালি প্লাস্টিকটা আহনাফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হনহন করে হাঁটা ধরে। আহনাফ অবাক হয়ে মাহির পিছু যেতে যেতে বলে,

“এই আ.. মাহি! সরি। শোনো না….”

মাহি যেতে যেতে জোড়ে বলে,
“যদি ছবি আঁকার জিনিস গুলো ওখানে ফেলে আমার পিছু এসেছেন, তবে বুঝে নিয়েন কিন্তু!”

থেমে যায় আহনাফ। মুখ ভার করে হতাশ হয়ে একবার মাহির চলে যাওয়া দেখে তো আরেকবার পিছনে ঘুরে অর্ধেক আঁকা ছবিটার দিকে তাকায়। অতঃপর হতাশ হয়ে ছবিটার দিকেই এগিয়ে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৩
সারাদিন বৃষ্টি। একবার মুষলধারা তো আরেকবার ঝিরিঝিরি। সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণেই এতো বৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতিতে শরৎ ঋতু তার রূপে আত্মপ্রকাশ করতে না করতেই গ্রীষ্ম, বর্ষা আবার নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ব্যস্ত। হোস্টেলে অলস বসে আছে সুমি, মৌমি, রাত্রিরা। সুমি ও মৌমি কিছু ডাউনলোড করা চাইনিজ সিরিজ দেখছে কিন্তু রাত্রি উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবনায় খোয়ে আছে। সুমি ড্রামা দেখতে দেখতে রাত্রিকে খেয়াল করে। অতঃপর প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কী রে? তুই এভাবে শুয়ে আছিস কেন?”

রাত্রি অনড়ভাবে জবাব দিলো,
“ভালো লাগছে না তাই।”

“বৃষ্টির জন্য?

“না।”

“তবে?”

রাত্রি উঠে বসলো। তারপর হতাশ স্বরে বলল,
“আমি জানলে কখোনোই এসবে জড়াতাম না। আমি তার মিথ্যাকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।”

এবার সুমির সাথে সাথে মৌমিও কৌতুহলী হলো। মৌমি ফোন হাত থেকে নামিয়ে রেখে রাত্রিকে উৎসাহী হয়ে শুধালো,
“কাল না তুই তোর অনলাইন বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে জিইসি মোড়ের দিকে গেছিলি? কেমন গেলো তোদের ফার্স্ট ডেট?”

সুমিও বলল,
“হ্যাঁ তাই তো। তারপর সেখান থেকেই টিউশনিতে গেছিলি বলেছিলি। এসে ঘুমিয়ে গেলি। বললি না তো প্রথম দেখা কেমন ছিল?”

রাত্রি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“সে আমাকে মিথ্যা বলেছে। সে চুয়েট থেকে পড়াশোনা করেনি।”

“হ্যাঁ? তবে?”

“সে চবিতেই পড়ে। আমরা তাকে চিনিও।”

সুমি ও মৌমি অবাক হলো। ফের শুধালো,
“আমরা চিনি? কে সে?”

“নিলয়। সাগরদের সাথের নিলয়।”

“কী!”

সুমি ও মৌমি একসাথে চিৎকার করে উঠে। তারপর দুজনেই নিজেদের মুখ চেপে ধরে রাত্রির কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“নিলয়! ও কি তোর সাথে খারাপ কিছু করেছে? কত্তো বড়ো ফ্র*ড এরা! ছিহ্!”

“না, আমার সাথে খারাপ কিছু করেনি। কিন্তু…”

“কিন্তু কী?”

“সে জানতো আমি রাত্রি। জেনে শুনেই আমাকে এপ্রোচ করেছে।”

সুমি চিন্তিত হয়ে বলে,
“জেনেশুনে যেহেতু এপ্রোচ করেছে, তার মানে কোনো উদ্দেশ্য তো আছেই। ওই গ্রুপের কেউ আমাদের সহ্যই করতে পারে না। সেখানে তোকে এপ্রোচ করা মানে কোনো প্ল্যান তো আছেই।”

মৌমি বলে,
“শোন, তুই ভয় পাবি না। নিলয় তোর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা আহনাফ, মারসাদদের জানাবো ব্যাপারটা।”

রাত্রি মৌমির কথা শুনে তাড়াতাড়ি অনুরোধ করে বলে,
“প্লিজ ওদের জানাস না। আমি নিলয়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছি। কালকেই আমি ও-কে ব্লক করেছি। মারসাদরা জানলে ঝামেলা করবে। সব শান্ত আছে, ভালো আছে। আর ঝামেলা লাগানোর দরকার নেই। আমার জন্য তো আরও আগে দরকার নেই।”

“কিন্তু পরে যদি ওরা ঝামেলা করে?”

“ওরা করলে সেটা পরে দেখা যাবে। আমি এই বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি চাই না। অনলাইনে পরিচয় ছিল। তাই ব্যাপারটা অনলাইনেই সমাধান করা ভালো। আমাদের মাস্টার্স শেষ হতে আর দেড় বছরেরও কম সময় বাকি। এখান থেকে চলে গেলে নিলয় কখোনো আমাকে খুঁজেও পাবে না।”

সুমি ও মৌমি একে-অপরের দিকে চেয়ে রাত্রিকে এই বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করার সিদ্ধান্ত নিলো।

———–
“মুড খারাপ তোর?”

সাবিহা মাহিকে প্রশ্ন করে মাহির দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। সাবিহার সাথে সাথে আদিরা, রিন্তিও। মাহি ও আদিরার মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে। তবে মাহি এখন সতর্ক থাকে যাতে করে তার ভাইয়ের টপিক না উঠে। মাহি আইসক্রিম খেতে খেতে জবাব দেয়,

“না তো।”

“তাহলে এতো আইসক্রিম খাচ্ছিস কেন?”

“মাত্রই তো তিন কাপ খেলাম। আর এগুলো এখন আর আইসক্রিম নেই। চকলেট শেক হয়ে গেছে!”

রিন্তি সাবিহাকে পূর্ব দিকে তাকাতে ইশারা করে। সাবিহা পূর্ব দিকে তাকায়। দেখে আহনাফ ও রাফিন কিছুটা দূরে অনবরত হাঁটছে। রিন্তি তাকাতেই আহনাফ হাত জোড় করার মতো দেখায়। বিষয়টা রিন্তি ঠিক বুঝতে পারে না। সে জিজ্ঞাসা করে বসে মাহিকে।

“আচ্ছা মাহি, আহনাফ ভাই ও তোর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে?”

“না তো।”

“তাহলে উনি এভাবে উঁকিঝুঁকি করছেন কেন?”

মাহি একবার তাকালো সেদিকে। তারপর বিরক্তি কণ্ঠে বলল,
“সেটা উনাকেই জিজ্ঞাসা কর। আমি কীভাবে জানব, উনি কেন এমন করছেন!”

সাবিহা উঠে আহনাফ ও রাফিনের কাছে গেলো। সাবিহাকে আসতে দেখে রাফিন জিজ্ঞাসা করে,

“মাহির রাগ ভেঙেছে?”

“না মনে হয়। কিন্তু হয়েছে কী? আইসক্রিম যে হারে খাচ্ছে!”

আহনাফ বলে,
“আমার স্টুডেন্ট আজকে চবিতে ঘুরতে এসেছিল। এসে আমাকে দেখেই ছুটে এসে এক প্রকার বায়না করা শুরু করেছে তাকে এবং তার বান্ধবীদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাতে হবে। তখন আমার পাশে মাহি ছিল।”

“ওও.. তো আপনি মেয়েটাকে ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন?”

“হু। কিছুক্ষণ দেখিয়ে বলেছি নিজেরা দেখে নাও। আমার কাজ আছে।”

“মাহি সাথে গিয়েছিল?”

“না। ও তো তখনি চলে এসেছে।”

সাবিহা মিনমিন করে বলে,
“এজন্যই এতো আইসক্রিম খাচ্ছে!”

“কিছু বললে?”

“না না। আমি দেখছি। আপনি চিন্তা করবেন না। ও একটু জেলাস আরকি। ঠিক হয়ে যাবে, ভাইয়া।”

এই বলে সাবিহা আবার তার বান্ধবীদের কাছে চলে আসে। তারপর আদিরা ও রিন্তিকে কানেকানে সবটা বলছে। মাহি আড়িপেতে শুনতে চাইলে ওরা আরেকটু সরে যায়। মাহি তারপর মুখ বাঁকিয়ে নিজের আইসক্রিম খাওয়াতে মন দেয়।

———-

“ওই মারসাদ এবার বেশি করতাছে। আমারে বারবার পু*লিশের দৌঁড়ানি দেওয়াইতাছে। ওই মাইয়ার লইগ্যা তার এতো কীসের পিরিত?”

দেলোয়ারের কথা শুনে সাগর সি*গরে*টে সুখ টান দিতে দিতে কিছু চিন্তা করলো। তারপর ফট করে বলে উঠলো,
“কি*ডন্যা*প করো আদিরাকে!”

“কি*ডন্যা*প?”

“হু। মারসাদ সারাদিন অফিসে থাকে। তাই কি&ডন্যা*প করতে তেমন ঝামেলা হবে না। আদিরা দুপুরের পর যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়, তখনি উঠিয়ে নিবে। তারপর সুযোগ বুঝে বিয়ে করে ফেলবে!”

সাগরের বুদ্ধিটা দেলোয়ারের মনে ধরলো। সে সহাস্যে বলল,
“ভালা বুদ্ধি দিছেন। এই ফুলকলিরে পাওয়ার লইগ্যা এইডা ছাড়া উপায় নাই। অনেক জ্বা*লা*ইছে ওই মারসাদ। একবার বিয়াটা কইরা ফালাইলে সব তেজ বাইর হইয়া যাইব!”

“তাহলে ব্যবস্থা করে ফেলো। তাড়াতাড়ি কাজটা করো।”

তারপর দেলোয়ার সব ব্যবস্থা করতে চলে যায়। দেলোয়ার যেতেই নিলয় সাগরের কাছে এসে বলে,
“আদিরাকে কিডন্যাপ করলে মারসাদের কী লস? তার থেকে ভালো রুহুল আমিনের দেওয়া কাজটা করার চেষ্টা কর। মারসাদকে কোনোভাবে গা*য়েব করে দিলেই তো হয়! তারপর মারসাদের বাবা তার ব্যবসার দায়িত্ব রাকিবকে বুঝিয়ে দিবে। মারসাদ না থাকলে রাকিব ছাড়া আর তো কোনো অপশন থাকবে না উনার কাছে।”

সাগর শ*য়তা*নি হেসে বলে,
“গায়েব করতেই তো! আদিরার পেছনে মারসাদ যাবেই। এক ঢি*লে দুই পা*খি শি-কার। তুই খালি দেখতে থাক।”

তারপর নতুন আরেকটা সি*গ*রেট ধরালো সাগর। নিলয় ভাবছে, এতে যদি কাজ না হয়? তবে কী হবে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
আদিরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে হাঁটছে। হঠাৎ তার সামনে একটা মাইক্রোবাস থামলো। আদিরা চকিতে থামলো। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ির ডোর খুলে তাকে কেউ মুখে রুমাল চেপে ধরে এক টানে গাড়ির ভেতরে তুলে নিলো। জ্ঞান হারালো আদিরা। রাস্তায় পড়ে রইল আদিরার ব্যাগ। তার জ্ঞান যখন ফিরলো তখন তার সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাত-পা নাড়াতে গিয়ে বুঝতে পারলো সে বন্ধি! চেয়ারের সাথে তার হাত-পা মোটা দ*ড়ি দিয়ে বাঁ*ধা। তৎক্ষণাৎ আদিরার মনে পড়লো হঠাৎ যখন তার সামনে মাইক্রোবাসটি এসে থেমেছিল। ঘাবড়ে যায় আদিরা। চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকে। কয়েকবার চিৎকার করে ডাকার পর হঠাৎই তার মাথার উপরের বাল্বটি জ্ব*লে উঠে। চোখ-মুখ কুঁচকে নেয় আদিরা। আলো সহনশীল হওয়ার আগেই কারও পায়ের শব্দ পায়। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখতে চেষ্টা করে সে।

“এতো চিল্লাচিল্লি করো কেন, ফুলকলি? আমাগো বিয়া হইব তো। একটু পরেই কাজি আসবো। তারপর আমাগো বিয়া পড়াইব। এতো অস্থির হইয়ো না।”

আদিরা কণ্ঠস্বর চিনতে পারে। ভয়ে এখন তার হাত-পা কাঁপছে। দেলোয়ার তাকে বিয়ে করতে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে? সে কি তবে এখান থেকে বাঁচতে পারবে না? এসব মনে আসতেই সে চিৎকার করে অনুরোধ করে কাঁদতে থাকে,

“প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমাকে যেতে দিন। প্লিজ। আমি কাউকে বলব না কি*ডন্যা*পের কথা। তাও আমাকে ছেড়ে দিন। আমি…আমি চলে যাব এই শহর থেকে। কখোনো আসব না এই শহরে। আমাকে যেতে দিন, ভাই। দয়া করুন।”

আদিরা এতো কাকুতি-মিনতি কিছুতেই মন গ*ললো না দেলোয়ারের। সে বিশ্রি হেসে বলে,
“তুমি যতোই ফড়ফড় করো, আইজকা তোমার ছাড় নাই। অনেক তোমার পিছে ঘুরছি। তোমার ওই মারসাদ আশিকের লইগ্যা দইম্মা আছিলাম। এইবার যহন বাগে পাইছি, কেমনে তোমারে যাইতে দেই? কও তো, ফুলকলি! তোমার ওই পেয়ারের মজনু এইহানে আইতেও পারতো না। হে তো এখন অফিসে কাম করে। অতো সময় নাই হের। আর তোমারে আনার সময় কেউ খেয়ালও করে নাই।”

“আমাকে ছেড়ে দিন। দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি আমার গ্রামে চলে যাব। প্লিজ প্লিজ।”

দেলোয়ার এবার ধ*মকে উঠে,
“চুপ! আর এই পিলিজ পিলিজ করবা না। আমার দয়ার শ*রীর! কিন্তু আমি এহন তোমারে দয়া করতে পারতাম না। একটু পর বিয়া হইব আমাগো। তারপর তোমার সব কথা শুনমু। এহন চুপ কইরা থাকো। নাইলে হাত-পায়ের মতো মুখটাও বন্ধ কইরা দিমু। বুঝছো?”

আদিরা মানে না। কাকুতিমিনতি করে কাঁদতেই থাকে। শেষে দেলোয়ার তার মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দেয়।

——

আদিরাকে মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় মারসাদের এক জুনিয়র দেখেছে। যাকে মারসাদই ভার্সিটি খোলার পর আদিরার উপর নজর রাখতে বলেছে। নজর বললে ভুল হবে। আদিরাকে দেলোয়ার বা কেউ কোনো রকম বিরক্ত করলে তুহিন নামের ছেলেটা তা মারসাদকে জানাবে সে। ছেলেটা আদিরার ডিপার্টমেন্টেই আদিরার এক ইয়ার সিনিয়র। সে মাইক্রোটার পিছু করতে করতে নাম্বার প্লেট নোট করেছে। অনেকখানি পর্যন্ত সে বাইকে করে পিছুও করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁকের কারণে আর দেখতে পায়নি।

তুহিন মারসাদ ও তার বন্ধুদেরকে আদিরার কি*ডন্য*পিংয়ের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। পুলি*শ এখন মাইক্রোর নাম্বার ট্র্যাক করে দেলোয়ার পর্যন্ত পৌছানোর ট্রাই করছে। পু*লিশ চেকপোস্ট গুলোতেও চেকিং হচ্ছে। মারসাদ ও তার বন্ধুরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যতোটুকু পর্যন্ত তুহিন মাইক্রোটাকে ফলো করতে পেরেছিল, তার পর থেকে খুঁজছে। মারসাদ আহনাফকে কল করে,

“ওদিকে পেয়েছিস?”

“না। এদিকে নেই। তুই পেয়েছিস?”

“এখনও না।”

“পু*লিশ লোকেশন হয়তো এতক্ষণে ট্র্যাক করে ফেলেছে। পু*লিশ বলার পর সামনে আগাবো।”

“আমি কল করে দেখি।”

মারসাদ তারপর পু*লিশকে কল করে। পু*লিশ কিছুক্ষণ পর মারসাদকে একটা লোকেশন দেয়, যেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এড়িয়া। মারসাদ যেই রোডে গেছে, সেদিকেই। অতঃপর সবাই সেদিকে খোঁজা শুরু করে।

———

“কন্যার নাম কী?”

কাজি আদিরার নাম জিজ্ঞাসা করলে দেলোয়ার বলে,
“আদিরা।”

“পুরা নাম বলেন। সাথে বাবর নাম, ঠিকানা সব বলেন। আর ভোটার আইডিকার্ড দেন।”

দেলোয়ার এবার আদিরার দিকে ঘুরে তাকায়। আদিরাকে এখনও হাত-পা, মুখ বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দেলোয়ার এক টান দিয়ে আদিরার মুখ থেকে কস্টেপ খুলে জিজ্ঞাসা করে,

“তোমার পুরা নাম কও, ফুলকলি। আর তোমার বাপ মানে আমার শশুর আব্বার নাম কি? তোমাগো গ্রামের ঠিকানা কও।”

আদিরা চুপ করে খিঁচে বসে থাকে। তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয় না। দেলোয়ার আরো একবার আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু আদিরা এইবারও চুপ। কাজী সাহেব তাড়া দিলে দেলোয়ার ধ*মকে বলে,

“এতক্ষণ তো চিল্লাচিল্লি কইরা আমার কানের পো*কা মা*ইরা ফেলতাছিলা! এখন কি তোমার মুখের মধ্যে বো*বায় ধরছে? কথা কও না কেন? যা জিগাইতাছি তার জবাব দাও না কেন?”

আদিরা ভয় পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অনবরত কাঁদছে সে। কাজি সাহেব আদিরার অবস্থা দেখে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

“আমি আগেই বলেছিলাম, মেয়ে রাজি না থাকলে কিন্তু বিয়ে হবে না। মেয়ের পরিবারও তো…”

“এই কাজি, চুপ! তোর কাম বিয়া পড়ানি, তুই বিয়া পড়াইবি। এত দিকে কথা কইতে যাস কেন? চুপচাপ বিয়া পড়া।”

কাজি ভয়ে ফের কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“পড়াইতেছি। কিন্তু মেয়ের জন্ম, পরিচয় সব তো লাগবে। আপনি না হয় আমাকে মেয়ের ভোটার আইডি কার্ডটাই দেন।”

দেলোয়ার কিছুটা ভাবে। আদিরার ব্যাগটা তো রাস্তাতেই ফেলে এসেছিল। এখন আদিরা মুখ না খুললে, ভোটার আইডি কার্ডই বা পাবে কোথায়? রাগে এখন মা*থা খারাপ হচ্ছে তার। সে এবার আদিরার গাল খুব শক্ত হাতে চেপে ধরে আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরায়। আর বলে,

“তুই তোর নাম পরিচয় কইবি না?”

আদিরা মুখের ব্যাথায় কা*কিয়ে উঠে। কোনোমতে জড়ানো স্বরে উত্তর দেয়,
“না! বলব না।”

“ঠিক আছে! কাজি সাহেব, নাম পরিচয় ছাড়াই বিয়া পড়ান!”

“কিন্তু…নাম পরিচয় ছাড়া তো বিয়া হয় না!”

দেলোয়ার এবার রক্ত চক্ষু নিয়ে কাজির দিকে তাকায়। আর রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আপনারে যা করতে কইছি করেন। বেশি কথা কইলে এইখান থেকে বাড়িতে ফি*রতে পারবেন না।”

কাজি ভয়ে কোনো উপায় না পেয়ে দেলোয়ারের কথা মতো কাজ করতে লাগলো। আদিরা অতিরিক্ত নড়চড় করার চেষ্টা করলে দেলওয়ার ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। দেলোয়ার হাত সরানো মাত্রই আদিরা দেলোয়ারের দিকে একদলা থুথু ছুঁ*ড়ে মা*রে আর নিজের ভেতরকার রাগ, জেদ, ঘৃণার সহিত বলে,

“তুই কখনোই আমাকে বিয়ে করতে পারবি না! যেমনে তুই বিয়ে পড়াতে বলতেছিস, তেমনে বিয়ে হয় না। তুই খালি আমার অর্ধেক নাম ছাড়া আর কিচ্ছু জানিস না। তুই এখন আমাকে দিয়ে যেখানে খুশি সাইন করিয়ে নিলেও বিয়ে হবে না।”

দেলোয়ার রেগে ঠা*স করে আদিরার গা*লে চ*ড় মা*রে। আদিরার গা-লে পাঁচ আঙু*লের ছাঁপ পড়ে যায় তাতে। দেলোয়ার হিসহিসিয়ে বলে,
“তাইলে তোর সাথে বিয়া ছাড়াই বা-স*র করি? কী বলোস? এইডা একটা ঝা*ক্কাস আইডিয়া। তারপর তোরে দুনিয়ার কোনো পোলা বিয়া করব না। তহন আমার কাছেই আইতে হইব।”

আদিরার মনে ভয়ের তীব্রতা বাড়ছে কিন্তু তার মনে উথলে উঠা ঘৃণার কাছে তা প্রায় হার মেনে নিচ্ছে।
“তোর মত ল*ম্প*ট তো এগুলাই করতে পারে! ম*রে যাব তাও তোরে জিততে দিব না। তোর মুখ দেখলেই ঘেন্না হয়।”

আদিরার চু*লের মু*ঠি খিঁচে ধরে দেলোয়ার। আদিরা তার লা*ভায় নেয় ফুলে ফেঁপে উঠা রাগ ও ঘৃণা সম্বলিত র*ক্তচ*ক্ষু নিয়ে দেলোয়ারের দিকে চেয়ে থাকে। দেলোয়ার তা দেখে বিশ্রি হেসে বলে,

“তোরে বিয়া কইরা সম্মান দিতে চাইছিলাম। কিন্তু তুই সেই সম্মানের যোগ্য না! তাই তোরে আমি মা*রমু না! কিন্তু তুই প্রতিদিন ম*র*বি।”

দেলোয়ারের ইশারা পেয়ে দেলোয়ারের লোকেরা কাজিকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। তারপর পরিত্যাক্ত এই গোডাউনের বাইরে বের করে দেয়। আর বলে দেয় যেন কারও কাছে মুখ না খোলে।

——-

শুনশান রাস্তা দিয়ে হঠাৎ এক পাজামা-পাঞ্জাবি ও লাল-সাদা স্কার্ফ পরিহিত মুরব্বীকে আসতে দেখে মারসাদ ও তার বন্ধুরা এগিয়ে যায়। মুরুব্বীকে থামিয়ে মারসাদ তার ফোনে আদিরার ছবি দেখিয়ে মুরুব্বীকে জিজ্ঞাসা করে,

“চাচা, এই মেয়েটিকে এখানে কোথাও দেখেছেন? কেউ এই মেয়েটিকে কি*ডন্যা*প করে নিয়ে এসেছে।”

মুরব্বী আদিরার ছবি দেখে আরও ঘাবড়ে যায়। সে অস্থিরতার সাথে জবাব দেন,
“না বাবা, আমি এই মেয়েরে কোথাও দেখি নাই। আমি কিছু জানিনা। আমারে যাইতে দাও, বাবা!”

মুরুব্বীর চোখে মুখে অস্থিরতা ও ভয় দেখতে পেয়ে মারসাদ ও তার বন্ধুরা কিছুটা আন্দাজ করে। আহনাফ বলে,
“চাচা, আমাদের সাথে পু*লিশও আছে। কিছুক্ষণ পর পু*লিশের গাড়িও এদিকে চলে আসবে। মেয়েটাকে যারা কি*ডন্যা*প করেছে আমরা সেই গাড়ির লোকেশন ট্র্যাক করেই এদিকে এসেছি।”

মুরুব্বীটি এবার মাটিতে বসে পড়ে মারমাদের পা ধরতে চায়। তৎক্ষণাৎ মারসাদ পিছিয়ে যায়। মুরুব্বীটি বলেন,
“আমারে মাফ কইরা দাও, বাবা। আমি তোমাগো কিছু কইলে আমারে ওরা মা*ইরা ফেলবে। আমার দুইটা মেয়ে আছে। বিয়ের উপযোগী হয়ে গেছে। মাফ করো আমারে।”

মারসাদ মুরুব্বীকে উঠায়। তারপর বলে,
“আপনি ভয় পাবেন না। ওদের সবাইকে পু*লিশের স্পেশাল হেফাজতে নেওয়া হবে! ওরা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি শুধু বলেন, এই মেয়েটাকে কোথায় দেখেছেন।”

অতঃপর মুরুব্বীটি মারসাদ ও তার বন্ধুদেরকে জায়গাটা দেখিয়ে দেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-২৯+৩০+৩১

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
পরেরদিন দুপুরে আদিরা ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে। একটু আগেই খাওয়াদাওয়া শেষ করেছে। এখন বাহির থেকে শুকনো কাপড় গুলো গুছিয়ে ব্যাগে ভরছে। আদিরার ব্যাগ গোছানের সময় আদিরার মা মেয়ের ঘরে আসেন। আদিরা মাকে একবার দেখে আবার ব্যাগ গোছানোতে মন দেয়। আদিরার মা ও-কে জিজ্ঞাসা করেন,

“তোর খালার ননদের ছেলেকে তোর পছন্দ হয়নি, তাই না?”

আদিরা হাতের কাজ রেখে ঘুরে মায়ের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“না। তার সাথে উনাদের পরিবারও আমার পছন্দ হয়নি।”

“পরিবার আবার কী করলো?”

“আমি অন্য শহরে পড়ি এটা তো খালা তাদের আগেই বলেছে। তার মানে তো এই না যে আমার চরিত্র খারাপ! খালার ননদ এমন করছিল যেন আমি তার ছেলেকে বশ করেছি! তার ছেলেরও নজর খারাপ। বারবার আমার দিকে কীভাবে যেন তাকাচ্ছিল আর কয়েকবার মোবাইল নাম্বারও চেয়েছে।”

“তুই ডালিয়াকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা কেন বলছিস?”

“সত্যিটা বলেছি।”

“জানিস, তোর খালার শাশুড়ি, ননদ, ননদের মেয়ে তোর খালাকে কতো কথা শুনায় দিছে!”

“তোমারে আমি আগেও বলছি, মা। প্রবাসী বিয়ে করব না। এরা বিদেশে পড়ে থাকে। আর হয় মা-বোনের কথায় উঠে বসে, নয়তো বউয়ের কথায়। ঝামেলা হয় অনেক। এখনি তো উনাদের আমার পড়ালেখা নিয়ে সমস্যা। পরে কী করবে কে জানে?”

“তোর বাপে জানতে পারলে কী হবে জানোস?”

“আমি আজকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য রওনা দেওয়কর পর বাবারে জানাইতে চাইলে জানাও। তার আগে না।”

“তোর বাবা অনেক রাগ করবে।”

আদিরা আর কোনো উত্তর দেয় না। কখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে সেই অপেক্ষায় বসে আছে।

——-
পরেরদিন প্রায় ভোর সকালে আদিরা এসে পৌঁছেছে। তারপর ফজর নামাজ পড়ে একটু ঘুমিয়েছে।

সকালে টিউশন পড়াতে যাচ্ছে আদিনা। পথটা যথাসম্ভব প্রতিদিনকার তুলনায় নিরব। ভোরের দিকে বৃষ্টি হয়েছে। তার ছাঁপও রাস্তায় লেগে আছে। বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এলেও বর্ষার দাপট এখনও কমেনি! প্রশান্তিপূর্ণ শ্বাস নিয়ে আদিরা আস্তে আস্তে হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর আদিরার মনে হতে লাগলো কেউ তার পিছু আসছে। ভয় হতে লাগলো তার। অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে থামলো সে। এরপর হুট করে পিছনে ঘুরে দেখলো মারসাদ দাঁড়ানো! মারসাদের মুখে লেগে আছে চমৎকার মৃদু হাসি। মারসাদকে দেখে আদিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর আবার সামনে ঘুরে হাঁটা শুরু করলো। আর ধিমি স্বরে বলতে লাগলো,

“আজও এসেছে! এতো নিষেধ করি তারপরও। ভাল্লাগে না আর!”

মারসাদ ইতোমধ্যে আদিরার পাশাপাশি চলে এসেছে। দুজনের মাঝে ১ ইঞ্চি পরিমাণ দূরত্ব। মারসাদ আদিরার শেষে ‘ভাল্লাগে না আর’ এতটুকু কথা শুনে খানিক ঝুঁকে জিজ্ঞাসা করে,

“কী ভাল্লাগে না তোমার?”

“আপনাকে।”

“আচ্ছা! আর বিরক্ত করব না।”

তারপর মারসাদ চলে গেলো। আদিরা সেখানেই দাঁড়িয়ে বারবার মারসাদকে ডাকলেও মারসাদ দাঁড়ায় না।

ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে আদিরা। তারপর ওটা স্বপ্ন বুঝতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে কাছে রাখা বোতল থেকে পানি পান করে। অতঃপর নিজে নিজেই বলতে থাকে,

“আমি এমন স্বপ্ন কেন দেখছি? কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না কেন? উফ!”

নিজের মাথা চেপে ধরে আদিরা। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দশটা বাজে। আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে নাস্তা আনতে গেলো।

———–

বিকেলের দিকে আদিরা টিউশনি পড়াতে যাচ্ছে। পার্কের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে আশেপাশে তাকাচ্ছে। প্রতিদিনকার মতো পার্কে বৃদ্ধ, শিশু ও কিছু উঠতি বয়সীদের আনাগোনা। আদিরা ভাবলো, হয়তো ভার্সিটি বন্ধ বলেই এদিকটায় তিনি বাইক নিয়ে আসেননি। পরক্ষণেই মনে হলো, এসব কেন ভাবছে! তারপর দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলো।

স্টুডেন্টকে পড়া দিয়ে দেয়ালে টাঙানো চিত্রলিপিটা দেখছে। আদিরার কাছে মনে হলো, ছবিটাতে শুধু সবুজেরই বিভিন্ন শেড ব্যবহার করে আঁকার চেষ্টা করেছে। অন্য কোনো রঙের মিশ্রণ নেই। আদিরাকে গভীর ভাবে ছবিটার দিকে দেখতে দেখে আদিরার স্টুডেন্ট বলে,

“ম্যাম, ছবিটা সুন্দর না?”

আদিরা মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। স্টুডেন্ট আবার বলে,
“ছবিটা পরশুদিন মামা আম্মুর বার্থডেতে গিফট করেছে। কুমিল্লা থেকে নিয়ে এসেছে। ওখানে আর্ট এক্সিবেশন থেকে নিয়েছে। আচ্ছা ম্যাম? আর্ট এক্সিবেশন কেন করে? আমি কখোনো যাইনি। মামা বলেছে আমাকে পরেরবার নিয়ে যাবে।”

আদিরা বলে,
“আচ্ছা যখন যাবে তখন দেখো। পড়া শেষ হয়েছে প্রশ্নগুলো?”

“আরেকটু বাকি।”

তারপর স্টুডেন্ট আবার পড়তে লাগলো। আদিরা ভাবতে লাগলো এই রকম একটা মৌলিক রঙের চিত্র সে মাহির ফ্ল্যাটেও দেখেছে। ওটাও সবুজের ভেতরেই ছিল। আরও অনেক সুন্দর সুন্দর চিত্র দেখেছে। সে শুনেছে মাহি ছবি আঁকতে ভালোবাসে। কিন্তু কখোনো ও-কে সামনাসামনি আঁকতে দেখেনি। ভাবতে ভাবতেই আদিরা হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো।

——–
দুই দিন পর, আদিরা তার হোস্টেলের রুমমেটদের সাথে ফুচকা খেতে সন্ধ্যার পর বেরিয়েছে। ফুচকা অর্ডার দেওয়ার পর আদিরার এক রুমমেট বলে,
“কাল একবার চবির ক্যাম্পাসে যেতে চাই। আদিরা, সুরমা আমাকে নিয়ে যাবি?”

সুরমা নামের মেয়েটা বলে,
“চলো, আপু।”

“আসলে এখন তো ভীড় কম থাকবে। তাই যেতে চাইছি। আগেও কয়েকবার গিয়েছি। কিন্তু ছুটির সময় যাওয়া হয়নি।”

আদিরা বলে,
“আমিও অনেকদিন যাই না। চলো তাহলে।”

তখন একটা পুরুষ কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
“কই যাইবা, ফুলকলি? আমারেও লইয়া যাও।”

আদিরা সহ ওরা দুজন কণ্ঠস্বরের মালিকের দিকে তাকায়। আদিরা ভয়ে সুরমার হাত শক্ত করে ধরে। দেলোয়ার হাই তুলতে তুলতে আরেকটা টুল টেনে বসে। তারপর বলে,
“পু*লিশি ঝামেলার লইগ্যা তোমারে প্রত্যেকদিন দেখতে আসতে পারি না। ওই দিন তোমার রিকশা থামানোর জন্য আমার নামে আবার বিচার গেছে। তোমার ওই আশিক অনেক চালু মা*ল বুঝলা! তা ফুচকা খাইতে আইছো? যাও, বিল আমার। তোমরা যতো মন চায় খাও। ওই মামা (ফুচকাওয়ালাকে ডেকে) এগোর বিল নিবা না। বিল আমি দিমু।”

আদিরা চট করে উঠে দাঁড়ালো। তা দেখে দেলোয়ারও উঠে দাঁড়িয়ে শুধায়,
“কী হইলো? দাঁড়ায় গেলা কেন? বসো। মামা ফুচকা বানাইতাছে।”

আদিরা তার দুই রুমমেটের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। দেলোয়ার আবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আদিরা বলে,
“সমস্যা কী আপনার? আমার পথ আটকাবেন না। তাহলে এবার আমি নিজে গিয়ে পুলিশ কম্প্লেন করব।”

দেলোয়ার বিশ্রি হাসে। তারপর বলে,
“তোমার লইগ্যা দুই-এক দিন জে*ল খাটা ব্যাপার না। তোমারে যে ভালোবাসি, তা তো বুঝো না। এহনকার যুগে কে কার লইগ্যা জে*ল খাটে কও তো?”

আদিরা বিরক্ত হয়ে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরে। পেছন থেকে দেলোয়ার নানান কথা বলে চলেছে। আদিরার রুমমেট আপুটা বলে,
“এই আদিরা, এই ব*খাটেটা এখনও তোকে বিরক্ত করে?”

“মাঝেমাঝে পথরোধ করে। এতো জে*ল খাটে যে লজ্জা হয় না।”

“লজ্জা হলে কী আর ব*খাটে হতো? তুইও আদিরা! আরেকবার কিছু বললে ঠা*স করে থা*প্প-র লা*গায় দিবি।”

সুরমার কথা শুনে রুমমেট আপুটা বলে,
“তাহলে তুই এখন কিছু বললি না কেন?”

সুরমা আমতা আমতা করে বলে,
“ভয়ে। যদি আবার আমার পিছনে পড়ে?”

“তাহলে আদিরাকে এই বুদ্ধি দেস কেন? পরে ক্ষো*ভে আরও ক্ষতি করতে পারে। এই আদিরা, সুরমার কথা শুনবি না। পু*লিশের কাছে যাবি তাও নিজে মা*র-তে যাবি না।”

আদিরা কোনো প্রত্যুত্তর করে না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁটতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
বিকেলবেলা আদিরা টিউশন পড়াতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার। আশেপাশে সন্ধানী নজর বুলাতে বুলাতে হাঁটছে সে। পার্কের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় আদিরা হঠাৎ থমকে গেলো। কিছুটা দূরে খুব চেনা একজন বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছে। আজ সে সবসময়কার ক্যাজুয়াল হুডি, টিশার্ট, জ্যাকেট ছেড়ে অফিসের ফর্মাল গেটাপে। আকাশি রঙের শার্টের স্লিভ কনুই পর্যন্ত গোটানো। হঠাৎ এতোদিন পর তাকে দেখে আদিরার মনে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে। আদিরা কিয়ৎ দাঁড়িয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। যখনই দুজনের চোখাচোখি হলো তখনই আদিরা অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি নত করলো। অপরদিকে ওই মানুষটির অবস্থাও তাই। সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে। আদিরা ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। তারপর জিজ্ঞাসা করে,

“কেমন আছেন?”

“ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। অফিস থেকে ফিরলেন?”

“হুম। আজ বৃহস্পতিবার তাই কিছুটা তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে।”

“ওহ। এদিকে কি পার্কে ঘুরতে এসেছেন?”

“হু? হুম হুম।”

দুজনেই আবারও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আদিরা বলে,
“আচ্ছা। থাকুন। আমার টিউশনের সময় হয়ে যাচ্ছে।”

তারপর আদিরা সামনের দিকে এগিয়ে গেলে মারসাদ পিছু ডাকে।
“শুনো?”

আদিরা ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। মারসাদ বলে,
“তোমার সাথে একটু কথা ছিল।”

“জি বলুন।”

“তুমি টিউশন শেষ করে আসো। তারপর বলব।”

“টিউশন শেষ হতে দেরি হবে। আপনি এতক্ষণ কী করবেন?”

“সমস্যা নেই। তুমি টিউশন পড়িয়ে আসো। আমি ঘুরাঘুরি করব।”

আদিরা আর কোনো প্রত্যুত্তর করে না। চলে যায় টিউশনে।

——–
ঘণ্টা দেড়েক পর আদিরা তাড়াহুড়ো করে সেই জায়গায় এসে দেখে মারসাদ এখনও সেখানে দাঁড়িয়ে। এখন সে দাঁড়িয়ে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে এনার্জি ড্রিংক পান করছে। অন্ধকারে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় এই মূহুর্তটাও আদিরা কিছুটা দূর থেকে দেখতে চাইলো। অতঃপর নিজের সম্ভিৎ ফিরে পায়। হঠাৎ নিজের এরকম আচরণে নিজেই বিচলিত সে। নিজের দুই গা*লে আলতো চ*ড়ের মতো করে দিয়ে মারসাদের কাছে এগিয়ে যায়। তারপর বলে,
“বলুন কী বলবেন?”

মারসাদ আদিরার দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়,
“সরি।”

“কেন?”

এবার মারসাদ আদিরার দিকে তাকায়। আলো আঁধারিতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দুজনেই দুজনের মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। আদিরার চোখে-মুখে জিজ্ঞাসু ভাব। মারসাদ হালকা হেসে জবাব দেয়,

“তোমার সেল্ফরেসপেক্টে হার্ট করার জন্য। আমি একটু শর্ট টেম্পার্ড (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে), ওই সময়ে আমার ওটাই ভালো মনে হয়েছিল। আমি কিছুদিনের মধ্যেই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলাম, তারপর থেকে আর তোমাকে এক্টিং করতে বলিনি। কিন্তু আমি জানি, প্রথমেই তোমাকে এক্টিংয়ের কথা বলাটা আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল। রিয়েলি সরি।”

আদিরা মৃদু হাসলো। তারপর বলল,
“আপনি বুঝতে পেরেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। আমি আসি তবে।”

আদিরা চলে যেতে চাইলে মারসাদ ইতস্তত করে বলে,
“তুমি কিছু মনে না করলে আমি তোমাকে পৌঁছে দেই?”

আদিরা মারসাদের মুখের দিকে চেয়ে কিছু ভাবলো। তারপর বলল,
“আপনি এমনিতেই আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। অফিস থেকে এখনো বাড়ি ফেরেননি। আপনাকে ক্লান্ত লাগছে। বাড়ি গিয়ে রেস্ট করুন।”

“আমি টায়ার্ড না। ভার্সিটি খুললেই তো সন্ধ্যার পর ক্লাস। তখন জব ও ক্লাস একসাথেই হ্যান্ডেল করতে হবে। তাছাড়া কাল অফিস ছুটি। তাই তোমাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিতে প্রবলেম নেই। কিন্তু তুমি যেতে না চাইলে জোড় করব না।”

আদিরা ও মারসাদ একে-অপরের মুখের দিকে চেয়ে আছে। অতঃপর আদিরা বলল,
“চলুন।”

মারসাদ অবাক সাথে খুশি। সে দ্রুত বাইকে বসে আদিরাকে হেলমেটটা দিয়ে সেটা পরে পেছনে বসতে ইশারা করে। আদিরাও হেলমেটটা পরে কিন্তু ঠিক ভাবে পারছিল না। মারসাদ সেটা ঠিক করে দেয়। আদিরা নিরবে তা মেনে নেয়। অতঃপর মারসাদের বাইকের পেছনে বসে।

হোস্টেলের সামনে আদিরাকে নামিয়ে মারসাদ বলে,
“মাহি তোমার সাথে কথা বলছে না শুনলাম।”

আদিরা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়। মারসার ফের বলে,
“ও ভাবছে তোমার সামনে যদি ভুলে আমাকে নিয়ে কথা বলে ফেলে, তখন যদি তুমি রাগ করো? ও ছোটো থেকেই আমি বলতে পা*গল। তাই তো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও চট্টগ্রামেই ভর্তি হয়েছে। ও না আগে কিছুটা তোমার মতোই ইন্ট্রোভার্ট ছিল। তারপর আমিই বলেছিলাম, ইন্ট্রোভার্ট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভাইভ করা টাফ। তারপর কলেজে উঠার পর থেকে চেঞ্জ হতে থাকে। আগে ফ্রি টাইমে ড্রয়িং নিয়ে বসে থাকতো। আর এখন ও-কে কালেভদ্রে ড্রয়িং করতে দেখা যায়। তবে ইদানীং ও আবার ড্রয়িংয়ে মনোযোগ দিয়েছে। নিজের আঁকা ছবি এক্সিবিশনে দিচ্ছে। কুমিল্লাতে যাওয়ার পর আমাকেও জোড় করে ড্রয়িং করিয়েছে। ও তোমাদের এঁকেছে। দেখবে?”

আদিরা কৌতুহলী হলো। মুচকি হেসে সায় দিলো। মারসাদ ফোন বের করে মাহির আঁকা ছবিটা দেখালো। গাছতলায় চারটা মেয়ে বসা। প্রত্যেকে একেকভাবে হাসছে। আদিরা ছবিটার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। সেই ছবিটার সাথেই আরেকটা ছবির কিছু অংশ আদিরা দেখলো। তখন তার স্টুডেন্টের বাসার দেয়ালের ছবিটার কথা মনে পড়লো। আদিরা মারসাদকে জিজ্ঞাসা করে,

“পাশের ছবিটা কে এঁকেছে?”

“কোনটা?”

“এই যে এটা। সবুজ রঙের।”

মারসাদ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো। তারপর মাথা চুলকে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“ওটা আমি এঁকেছি।”

আদিরা অবাক হয়ে বলল,
“এটা একটু দেখা যাবে?”

“হ্যাঁ ছবি তোলা আছে আমার। কিন্তু এটা মাহি এক্সিবেশনে নিয়ে গেছিলো। সেখানেই সেল হয়ে গেছে।”

তারপর মারসাদ ছবিটা দেখালো। আদিরা ছবিটা দেখে আরও অবাক হলো। কারণ তার স্টুডেন্টের বাড়িতে যে ছবিটা সেটাই এটা। আদিরা বলল,
“ছবিটা অনেক সুন্দর।”

“থ্যাংকিউ।”

“আপনি তবে এবার বাড়ি যান। এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানোটা ঠিক হবে না।”

“হুম। তুমিও হোস্টেলের ভেতরে যাও।”

তারপর আদিরা হোস্টেলের ভেতরে চলে যায়। মারসাদও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

——–
হসপিটালের বিছানায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে মিলি। কিছুক্ষণ আগেই সে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। কিন্তু মিলির অবস্থা খুব নাজুক। শেষ রাতের দিকে বাথরুমে গিয়ে পিছলে বাথরুমের ফ্লোরে পড়ে গেছিলো। চিৎকার করে উঠলে মিসের মীরার ঘুম ছুটে যায়। তিনি তার বড়ো মেয়ের সাথে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি সবাইকে ডাকেন। এখন সকাল ৭ টার কিছু বেশি বাজে। হাতে ক্যানোলা লাগানো। মারসাদ কিছুক্ষণ আগেই হসপিটালে এসে পৌঁছেছে। এখন করিডোরে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। রাস্তায় তার একটা ছোটো অ্যাকসিডেন্টও হয়েছে। মাথায় বা*ড়ি খেয়েছে। হেলমেটের জন্য তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। হাত ও হাঁটু ছিঁ*লে গেছে। মাহি মারসাদের জন্য জুস এনে পাশে বসে। তারপর বলে,

“তোকে এতো স্পিডে বাইক চালাতে কে বলেছে? এমনিতেই আপিলির জন্য সবাই টেনশনে। তারউপর তুইও! এখন নে, জুস খা।”

মারসাদ প্রত্যুত্তর না করে জুসটা হাতে নেয়। তখন আহনাফ সেখানে এসে বলে,
“আমাকে পর্যন্ত জানায়নি। আমি ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশে মারসাদ নেই! রাতে ঠান্ডার মে*ডিসিন খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। সকালে উঠে তোমার মিসডকল না দেখলে জানতেই পারতাম না।”

মাহি আহনাফের দিকে চেয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“আপনার ঘুম ভেঙেছে কয়টায়?”

“৫টায়।”

“আর আপনাকে আমি কল দিয়েছি ৪টায়।”

“বললাম তো ঔ*ষুধ খেয়েছিলাম।”

মারসাদ এদের কথাবার্তাতে বিরক্ত হয়ে বলে,
“এটা হসপিটাল। তোদের ঝগড়া করতে হলে বাইরে যা। কানের কাছে প্যানপ্যান করবি না।”

মাহি তীক্ষ্ম দৃষ্টি ছুঁড়ে কিছু বলতে চাইলে আহনাফ ইশারায় হাত জোড় করে নিষেধ করে। তারপর মাহি শান্ত হয়।
একটু পর ডাক্তার মিলিকে চেক করে এসে বলে,
“পেশেন্ট এখন স্টেবল। খিঁচুনি কমে গেছে। আর র*ক্ত দেওয়াও শেষ। কিছুক্ষণ পরেই সেন্স ফিরবে।”

অতঃপর সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে। আরেকটা নার্স বাচ্চাটার সব চেকাপ করিয়ে দিয়ে যায়। রাকিব তার ছেলেকে কোলে নিয়ে বলে,
“ও-কে মিলির কাছে নিয়ে যাই?”

রাকিবের মা বলেন,
“যা। তবে ওকে আলগা দুধ খাওয়াতে হবে। এক ঘণ্টার মতো হলো নাতি আমার দুনিয়ায় এসেছে। এসেই ভয় পাইয়ে দিয়েছে। অক্সিজেন পাচ্ছিল না। যাক আলহামদুলিল্লাহ, এখন ঠিক আছে। মিলির তো সেন্সই নেই। নার্স কিছু খাইয়েছে কী-না কে জানে!”

তখন মিসেস মীরা বলেন,
“আপনি চিন্তা করবেন না, বেয়ান। ওর খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে।”

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩১
মিলির জ্ঞান ফিরেছে। সবাই এখন মিলি ও তার সদ্যজাত ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত। মাহি কথায় কথায় হঠাৎ মন খারাপ করে বলে,
“আর কয়েকদিন পর আমার ছুটি শেষ হয়ে যাবে, আপিলি। আমি মাহিরের কাছে থাকতে পারব না।”

তখন মিলির ১৫ বছর বয়সী ননদ রিহা প্রতিবাদী স্বরে বলে উঠে,
“ওর নাম মাহির না। রিহাম।”

“বললেই হলো! ওর নাম মাহির। আমি রেখেছি। আমি ওর একমাত্র খালামণি, মানে মামনি।”

“তুমি ওর খালামণি হলে আমিও ও ফুফমণি, মানে ফুইফুই!”

“ফু দিলেই উড়ে যাবে! বুঝছো! ওর নাম মাহির।”

“না না। ওর নাম রিহাম। এই ভাইয়া, ভাবি, দেখো না।”

বলেই রিহা মন খারাপ করে মিলির হাত জড়িয়ে ধরে। অপরপাশ থেকে মাহিও গিয়ে মিলির হাত জড়িয়ে ধরে। সবাই ওদের কাণ্ড দেখে হাসছে। মিলি মৃদু হেসে দুজনকে আগলে নিয়ে বলে,
“দুটোই ওর নাম। আমার দুটোই পছন্দ হয়েছে। আমরা দুই নামেই ডাকব আর দুই নামই লেখা হবে। খুশি?”

ওরা দুজনে কিছু ভাবে, অতঃপর খুশি হয়ে একসাথে বলে উঠে,
“ওকে ডান।”

——-

শুক্রবার বিকেল। আদিরা আজ একটু জলদি টিউশনের জন্য বেরিয়েছে। পার্কের কাছ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। আবার ঘড়ি দেখছে। প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে ও পার্কের কাছ দিয়ে ঘুরাঘুরির পর মনে মনে ভাবে,
“আজ তো উনার ছুটির দিন। মনে হয় রেস্ট নিচ্ছে।”

তারপর স্টুডেন্টের বাসার দিকে যেতে নিলেই পথ আগলে দাঁড়ায় দেলোয়ার। আদিরা হঠাৎ করে সামনে কেউ এমে দাঁড়ানোতে ঘাবড়ে যায়। দুই পা পিছিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করে দেলোয়ারকে দেখে আরও বেশি ভয় পায়। দেলোয়ার ধা*তুর তৈরি কা*ন খোঁ*চানি দিয়ে কা*ন খোঁ*চাচ্ছে। তারপর বিশ্রি হাসি দিয়ে বলে,

“তোমার ওই আশিকের লইগ্যা অপেক্ষা করতাছো, ফুলকলি?”

আদিরা আশেপাশে তাকাচ্ছে। সে চিৎকার করে লোক জড়ো করার কথা ভাবলো। তখনি দেলোয়ার বলে উঠে,
“তুমি আমারে এতো ডরাও কেন? আমি তোমারে কিছু করছিনি? তোমারে ভালোবাসি তাই দেখতে আহি। কাইলও আইছিলাম, কিন্তু তোমার ওই আশিকের জন্য সামনে আইতে পারি নাই। একদিন ঠিক আমু। তুমি দেইখো খালি।”

আদিরা মনে সাহস সঞ্চার করে বলল,
“আপনাকে যদি আর কোনোদিন আমাকে ফলো করতে দেখি তবে আমি নিজে পু*লিশের কাছে যাব।”

দেলোয়ার হুট করে রেগে গেলো। খপ করে আদিরার বাহু ধরে টান দিলো। আদিরা ভয়ে চিৎকার করে উঠে। দেলোয়ার হিসহিসিয়ে বলে,
“আমারে ভয় দেখাস? তোর তো সাহস অনেক! মাইয়া মানুষের এতো সাহস ভালো না।”

এদিকে আদিরার চিৎকারে আশেপাশের কিছু লোকজন জড়ো হয়। দেলোয়ার তা দেখে আর কালক্ষেপণ না করে আদিরাকে ছেড়ে পা*লায়। এক বৃদ্ধ লোক আদিরাকে বলে,
“এই ছেলে কে, মা?”

আদিরা বড়ো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমাকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করে।”

“পু*লিশের কাছে যাও। এসব ব*খা*টে গুলোর বিশ্বাস নেই।”

“পু*লিশে কম্প্লেন করা আছে, আঙ্কেল। জে*লও খাটে। তারপর আবার বিরক্ত করে।”

“কী আর বলব! এদের লজ্জা নাই। পু*লিশও অপেক্ষা করে কখন এরা বড়ো কোনো অ*পরা*ধ করবে! তার আগে ধরে আবার ছেড়ে দেয়।”

আদিরা মলিন হাসে। লোকটা বলে,
“সাবধানে যাও, মা। এদের ভয় পাবা না। আশেপাশের মানুষ ডাকবা।”

আদিরা মাথা নেড়ে চলে যায়।

——–

পরেরদিন ভোরে। আদিরা ফজর নামাজ পড়ে সবে বসেছে। তখনি আদিরার ফোন বেজে উঠে। আদিরা কৌতুহল নিয়ে ফোনটা নিয়ে দেখে মারসাদ কল করেছে। আদিরা দ্রুত রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে মারসাদ বলে উঠে,
“জলদি নিচে নামো।”

আদিরা অবাক হয়ে শুধায়,
“কেন?”

“আসতে বলেছি আসো না। আমি তোমার হোস্টেলের নিচে দাঁড়ানো। তাড়াতাড়ি আসো। আমার বাসায় গিয়ে অফিসেও যেতে হবে।”

আদিরা তাড়াতাড়ি করে জানালার কাছে গিয়ে দেখে দুটো বাইক আর দুজন দাঁড়ানো। আদিরা বলে,
“আপনি তবে এত সকালে এখানে কেন এসেছেন? এখনো তো গেট খুলেনি।”

“তুমি গেইটের কাছে আসো শুধু।”

তারপর মারসাদ কল কেটে দেয়। আদিরা ওড়না ঠিক ভাবে পেঁচিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যায়। কেঁচিগেইটের তালা খোলা দেখে স্বস্তি পেলো। হয়তো নামাজে যাবে বলে পুরুষ কেয়ারটেকার কেঁচিগেইট খুলেছে। আদিরা দেখে মারসাদ দেয়ালের উপর দিয়ে একটা বড়ো আর্ট কাগজ গোল করে মোড়ানো, তা তার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আদিরা কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে এসে বলে,

“এত সকালে এসেছেন কেন? এই কাগজটা তো আপনি আমাকে পরে দিলেও পারতেন।”

“তুমি জানো কাগজে কী আছে?”

“না। কী আছে?”

“খুলে দেখো।”

আদিরা তাই করলো। কাগজটা খুলে দেখলো সেখানে একটা মেয়ের ছবি আঁকা। মেয়েটার ফেসের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। মুখের আরেকপাশে হাত দিয়ে চুল ঠিক করার মতো করে দেওয়া। খোঁপায় বেলি ফুল আর পরনে আকাশি শাড়ি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। সূর্য তখন প্রায় ডুবুডুবু। শাড়ির আঁচল বাতাসে উড়ছে। হলুদাভ রক্তিম আলোতে ছবিটা কেমন জীবন্ত মনে হচ্ছে। আদিরা নিষ্পলক দৃষ্টিতে ছবিটা দেখছে। ছবির মেয়েটার এক পাশের মুখের ছবিটা কিছুটা নিজের মতো লাগাতে আদিরা আরও ভাবুক হয়। ছবিটা থেকে চোখ সরিয়ে মারসাদকে জিজ্ঞাসা করে,

“এটা কি আমার ছবি?”

মারসাদ মা*থা চু*লকে হাসে। পাশ থেকে আহনাফ বলে,
“আমাকে একটু দেখাও তো। রাস্তায় আসতে আসতে এতবার বললাম একটু দেখা। ও দেখালোই না।”

আদিরা ছবিটা মেলে ধরলো। আহনাফ ছবিটা দেখে বলল,
“অনেকদিন পর আঁকার পরও তোর ছবি আঁকার স্কিল এখনও যথেষ্ট ভালো। অ*সাম!”

আদিরা জিজ্ঞাসা করলো,
“আপনি এটা কাল এঁকেছেন? তাই পার্কের ওদিকে যাননি?”

মারসাদ উত্তর দেওয়ার আগেই আহনাফ মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“আরে না! ও কালকে কিভাবে আঁকবে? অ্যাকসিডেন্ট করে হাতে যেভাবে ব্যাথা পেয়েছে….!”

আদিরা তৎক্ষণাৎ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মারসাদ অলরেডি আহনাফের বাহুতে একটা লাগিয়ে দিয়েছে। আহনাফ মিনমিন করে বলে,
“সরি, দোস্ত। আমি কখোনো মুখ ফসকে কিছু বলি না। আজ মনে হয় ঘুমটা কম হওয়াতে নাকি গতকালকের ঔ*ষুধের কারণে প্রপার ঘুম না হওয়াতে….!”

মারসাদ শুধু সামান্য চোখ রা*ঙানি দিলো। তারপর আদিরার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল,
“এটা অফিসে জয়েন করার আগে যখন কুমিল্লা গিয়েছিলাম, তখনকার আঁকা। আজ নিয়ে আসলাম।”

“আপনি কালকে কুমিল্লা গিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ। আপিলির বেবি হয়েছে। শেষরাতের দিকে বাথরুমে পা পি*ছলে পড়ে গেছিলো তারপর হসপিটালে নিয়ে গেছিল। ছেলে বেবি হয়েছে।”

“এখন আপনার আপিলি কেমন আছে? বেবি কেমন আছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছে।”

“আলহামদুলিল্লাহ। আপনার অ্যা*কসি*ডেন্ট কীভাবে হয়েছে? কী অবস্থা হাতের?”

মারসাদ নিজের হাতের দিকে চেয়ে বলে,
“তেমন কিছু না। বেশি স্পিডে তোলার কারণে একটু ব্যালেন্স হারিয়ে গেছিলো। আমরা যাই এবার। অফিসে যেতে হবে।”

আদিরাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মারসাদ বাইকে গিয়ে বসে। আহনাফও নিজের বাইকে বসে। তারপর স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। আদিরা ছবিটা নিয়ে রুমে ফিরে আসে। তারপর বিছানায় মেলে ছবিটা ভালো করে দেখতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-২৬+২৭+২৮

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
মাহির মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে। সে আহনাফকে কানে কানে কিছু বলে। আহনাফ হ্যাঁ বোধক ইঙ্গিত দিলে মাহি হুট করে বলে উঠে,

“জানিস দাভাই, এই প্ল্যানটা কে করেছিল? আদিরা! আদিরাই তো আমাদের এই প্ল্যানটা দিয়েছিল। আমরা তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে তোর খবর পাওয়ার যায়।”

মাহির কথা শুনে আদিরা হকচকিয়ে উঠলো। বড়ো বড়ো চোখ করে হতবাক হয়ে মাহির দিকে চেয়ে আছে। মারসাদও অবাক হয়ে আদিরার দিকে তাকায়। আদিরা দৃষ্টি সামান্য ঘুরিয়ে মারসাদের দিকে তাকাতেই মারসাদকে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে দেখে দ্রুত নজর সরিয়ে অপ্রস্তত কণ্ঠে বলে,

“আমি কোনো প্ল্যা..ন করিনি। শুধু…”

“আমরা বুঝি আদিরা। তুমি খুব চিন্তায় ছিলে। স্বাভাবিক।”

মৃদুলের কথা শুনে আদিরা আরেক দফা অবাক ও সাথে তার এখন কান্না পাচ্ছে। তখনই হঠাৎ আদিরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাতে টান পড়লো। হাতে টান দেওয়া ব্যাক্তিটির মুখের দিকে তাকানোর আগের ব্যাক্তিটি তাকে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। আদিরা যেতে যেতে নিজের হাতের দিকে একবার দেখছে তো আরেকবার পিছনে ঘুরে তার ফ্রেন্ড ও সিনিয়রদের উচ্ছাসিত মুখ দেখছে। যারা কীনা তাকে আবার টাটাও দিচ্ছে!

কিছুটা দূরে সমুদ্রতটে নিয়ে আদিরার হাত ছাড়লো মারসাদ। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। দুজনের মাঝে নিরবতা। সমুদ্রে ভাটার সময় চলছে গ*র্জনও শোনা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে মারসাদ বলে,

“আমি হারিয়ে গেলেই বা তোমার কী?”

আদিরা চট করে মারসাদের দিকে তাকালো। অন্ধকারে মুখ বোঝা না গেলেও এটুকু সে বুঝতে পারলো, মারসাদ এখনও সামনের দিকেই তাকানো। আদিরা মৃদু স্বরে বলল,

“মাহি আপনার জন্য খুব চিন্তা করছিল।”

“মাহি চিন্তা করছিল বলে?”

“হু। আর মাহি বলেছিল, আপনার মাও আপনাকে ফোনে পাচ্ছে না।”

“ওহ আচ্ছা। কিন্তু তাদের নিয়েও তোমার চিন্তা করার কোনো কারণ তো দেখি না। আমার পরিবার, আমি বুঝো নিব।”

মারসাদের কথার বিপরীতে আদিরা কিছু বলতে পারলো না। এক পা দিয়ে বালুতে খুঁ*চাতে খুঁ*চাতে ছোটো গর্ত করছে। আদিরার বিপরীতে এই চুপ করে থাকাটা মারসাদের পছন্দ হলো না। সে আদিরার বাহুতে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রায় অনেকটা ঝুঁকে আসে আদিরার মুখের উপর। অপ্রস্তুত হয় আদিরা। অতঃপর পিছিয়ে যেতে চাইলে মারসাদ তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। মারসাদ বলে,

“এতো ছটফট করছ কেন? আমি বা*ঘ না ভা*ল্লুক?”

মাথা নুইয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখতে চাইছে সে। মারসাদ আসমানের দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়। তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“তোমার দৃষ্টিতে আমি কেমন ছেলে? খারাপ না ভালো?”

আদিরা আবারও চুপ! মারসাদ বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে আদিরার বাহুতে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,
“বলো!”

তৎক্ষনাৎ আদিরা ফটাফট জবাব দেয়,
“ভালো! ভালো!”

উত্তর শুনেও মারসাদের ভ্রুদ্বয় কুঁচকানোই রইল।
“তাহলে আমাকে এতো ভয় পাও কেন?”

“জানিনা।”

মারসাদ আদিরাকে ছেড়ে আবার সমুদ্রপানে চাইলো। সম্মুখে দুই কদম এগিয়ে গেলো। অতঃপর বলল,
“বাহ! জানোনা কিন্তু ভয় পাও! ইন্টারেস্টিং।”

আদিরাও দৃষ্টি উঁচু করে মারসাদের দিকে তাকালো। অন্ধকারে থাকতে থাকতে এখন চোখে অন্ধকার সয়ে গেছে আদিরার। পেছন থেকে সমুদ্রতটে দাঁড়ানো কালো শার্টে মারসাদকে বেশি ভালো লাগছে। নিজের অজান্তেই মৃদু হাসলো আদিরা। কাউকে তার অগোচরে এভাবে দেখাটা কি অনুচিত? যদি আবার তার সাথে কোনো বন্ধন না থাকে! কিয়ৎ চিন্তায় পড়লো আদিরা। ভার্সিটির সিনিয়র! ফ্রেন্ডের ভাই! এগুলো নিশ্চয়ই কোনো বন্ধন না কারো দিকে তার অগোচরে অপলক চেয়ে থাকতে!

আদিরার এই আকাশকুসুম ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটালো মারসাদ। সে বলল,
“ভালোবাসো আমাকে?”

চমকে উঠে আদিরা। হতবাক দৃষ্টিতে মারসাদের দিকে চেয়ে থাকে। প্রায় মিনিট খানেক পেরিয়ে গেলে মারসাদ অধৈর্য হয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করে,
“বলো ভালোবাসো আমাকে?”

আদিরার এবারে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে এক কদম করে পেছোচ্ছে। মারসাদ তা বুঝতে পেরে হেসে উঠে। আদিরা মারসাদের হাসি শুনে থামে। মারসাদ বলে,

“ভালবাসতে হবে না আমাকে! ভালোবাসার ক্ষেত্রে তুমি মুক্ত। জোর করে বা আবদ্ধ করে ভালোবাসা হয় না। সরি ফর বোদার ইউ।”

কথাগুলো বলে মারসাদ মলিন হাসে। যা অন্ধকারে আড়ালে রয়ে যায়। এরপর মারসাদ সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ভাটার কারণে অনেক দূর পর্যন্ত শুকনো এখন। চাঁদের আলো দূরের সমুদ্রের পানিতে বেশ মায়াবি ভাবে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর মারসাদকে আর দেখা গেল না। আদিরা বালুর ওপর হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। মারসাদের বলা প্রতিটা কথা তার মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। তাই নিরবতার মাঝে মনের শান্তি খোঁজার চেষ্টায় সে।

প্রায় অনেকটা সময় পর বাঁশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখন সমুদ্রে জোয়ার আসার সময় হয়ে আসছে। আদিরার ফোন বেজে উঠলো। কাঁধের ছোটো ট্রাভেল ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো সাবিহা কল করেছে। আদিরা কল রিসিভ করে বলে,

“হু”

“কই তোরা?”

“আমি সমুদ্র পাড়ে বসে আছি।”

“আচ্ছা। ওখানে থাক। আমরা আসছি।”

সাবিহা কল কেটে দেওয়ার পর আদিরা ফোনটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে অদূরে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সাবিহা, মাহি, সুমি, আহনাফরা চলে আসে। মাহি বলে,

“তুই এখানে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“এমনি। ভালো লাগছিল।”

“চল তাহলে। তুই যেখানে বসেছিস, এর থেকেও বেশি জোয়ারের পানি আসে। উঠ। আর দাভাই কই?”

আদিরা হাতের ইশারায় সামনের দিকে দেখিয়ে বলল,
“ওদিকে গিয়েছে প্রায় অনেকক্ষণ আগে।”

আদিরার কথা শুনে আহনাফ বলে উঠে,
“সমুদ্রের দিকে?”

তদ্রুপ মৃদুল বলে,
“ভাটার সময় গিয়েছে। এখন জোয়ারের সময় হয়ে আসছে। রাফিন, কল কর তো ও-কে।”

রাফিন মারসাদকে কল করলো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না। পরপর আরও দুই বার কল করলো। তাও রিসিভ হলো না। রাফিন চিন্তিত স্বরে বলল,
“ফোন ধরছে না তো। রিং হয়েই যাচ্ছে।”

আশিক বলে,
“হোটেলে ফিরে গিয়েছে কি না? হোটেলে কল করে দেখি।”

এরপর আশিক হোটেলেও কল করে। হোটেল থেকে জানায় মারসাদ ফেরেনি মানে তার রুমের চাবি এখনও রিসিপশনে। আশিক বলে,
“হোটেলেও ফেরেনি!”

সবাই এবার চিন্তা করা শুরু করলো। দুইজন দুইজন করে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। তখনই আদিরার মনে ভয় ঢুকতে শুরু করে। তার আবারও মারসাদের বলা শেষের কথাগুলো মনে পড়তে থাকে। সেই সাথে মারসাদ ভাটার সময় সমুদ্র অভিমুখে গিয়েছিল। তবে কী মারসাদ! আদিরা হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে ছুট লাগালো। আদিরার আশেপাশে রাত্রি ও সুমি ছিল। রাত্রি পিছনে ঘুরে আদিরাকে সমুদ্রের দিকে ছুটে যেতে দেখে চিৎকার করে ডাক দিল,

“এই আদিরা, তুমি ঐদিকে কোথায় যাচ্ছ? আর কয়েক মিনিট পর জোয়ারের সময় চলে আসবে। ওদিকে যাচ্ছ কেন?”

কিন্তু আদিরা রাত্রির ডাক শোনে না। সে ছুটতে লাগলো সমুদ্রের দিকে, যেদিকে সে মারসাদকে যেতে দেখেছে। রাত্রির চিৎকার মাহি ও আহনাফও শুনে। মাহি আহনাফকে বলে,

“কী হলো? রাত্রি আপু আদুকে ডাকলো মনে হলো?”

“আমিও শুনলাম। চলো গিয়ে দেখি।”

ওরা দুজনে দ্রুত রাত্রি ও সুমির কাছে যায়। মাহি ওদেরকে শুধায়,
“আদু, কই?”

রাত্রি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলো,
“সমুদ্রের দিকে দৌড় দিয়েছে ও। ওই দেখো, একটা মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে, ওটাই।”

আহানাফ কিছু না বলেই দ্রুত আদিরা যেদিকে গেছে সেদিকে দৌঁড় দিলো। সাথে মাহিও। সুমি অস্থির হয়ে বলছে,
“আর এক দুই মিনিট আছে। বাঁশি বাজিয়ে তো ওরা সময় বলেছিল। এখন কী হবে?”

“জোয়ার তো আস্তে আস্তে শুরু হবে। এরইমধ্যে ওরা ঠিক দুইজনকে ফিরিয়ে আনবে। দোয়া করতে থাক।”

প্রায় মিনিট খানেক পর আহনাফ দৌঁড়ে প্রায় আদিরাকে ধরেই ফেলেছে। আহনাফ চিৎকার করে বলছে,
“আদিরা, আর দূরে যেও না। জোয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে।”

আদিরা পরিচিত স্বর শুনে পেছনে তাকায়। তারপর আহনাফের কাছে এসে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
“ভাইয়া, আপনার বন্ধুর কোনো খোঁজ পেলেন? আমি এতদূর এলাম, উনাকে পেলাম না। কোথায় উনি?”

“পেয়ে যাব। তুমি চিন্তা করো না। তুমি আগে ফিরে চলো।”

এই বলে আহনাফ আদিরার হাত ধরে টেনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নিলে আদিরা জোরপূর্বক নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
“না! আমি যাব না। উনি এদিকেই এসেছেন। আমি দেখেছি। উনাকে না নিয়ে আমি ফিরে যাব না।”

“পা*গলামি করো না, আদিরা। মারসাদ যথেষ্ট ম্যাচিওর একটা ছেলে। ও জোয়ারের সময় এখানে থাকবে না। চলো তুমি।”

“না! বললাম তো যাব না। আমি দেখেছি। আমার উপর রাগ করে এখানে এসেছেন উনি।”

ইতোমধ্যে মাহিও ওদের কাছে এসে পৌঁছায়। মাহি আদিরার শেষের বলা কথাগুলো শুনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“ফিরে চল, আদু। ওই দেখ পানি বাড়ছে। প্লিজ চল। দাভাই কোন ছোটো বাচ্চা না যে জোয়ারের সময় প্রায় মাঝ সমুদ্রে এসে বসে থাকবে।”

তারপর মাহিও আদিরার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু আদিরা যেতে চাইছে না। তখনই আহনাফের ফোন বেজে উঠে। আহনাফ ফোন বের করে দেখে মৃদুল কল করেছে। আহনাফ কলটা দেখে বলে উঠে,

“মারসাদকে ওরা খুঁজে পেয়েছে। চলো এবার।”

আদিরা চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো।
“সত্যি?”

“হ্যাঁ সত্যি। প্লিজ চলো।”

এরপর ওরা তাড়াতাড়ি করে ফিরতে লাগলো। আহনাফ ফোন রিসিভ করতেই মৃদুল বলল,
“ওরে খুঁজে পাইছি। কতদূর দৌঁড়ানি করাইলো। ঝাউবনের দিকে বালুর উপর বসে ছিল।”

“উফ! এতক্ষণ পর শান্তি লাগছে। কা*নের নিচে দুইটা লাগিয়ে তারপর হোটেলে নিয়ে যা।”

“হু।”

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
সবাই আবার সৈকতের কাছে একত্রিত হয়। সবার শেষে আদিরা, মাহি ও আহনাফ আসে। মারসাদ ওদেরকে সমুদ্রের দিক থেকে আসতে দেখে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায়। অতঃপর শুধায়,

“তোরা ওইদিকে গিয়েছিলি কেন? জোয়ার তো শুরু হয়ে গেছে।”

মাহি ও আহনাফ কিছু উত্তর আগেই আদিরা বলে ওঠে,
“আমরা জোয়ার শুরু হওয়ার ও ভাটা শেষ হওয়ার সময়টা খুব কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিলাম।”

মারসাদ সন্দিহান হয়ে চেয়ে রয়। রাত্রি কিছু বলতে চাইলে মৌমি রাত্রির হাত ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। রবিন তখন কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কেমন দেখতে?”

রবিনের প্রশ্নের জবাব দিতে আদিরা মারসাদের চোখের দিকে তাকায়। তারপর প্রত্যুত্তরে বলে,
“ভয়ংকর সুন্দর অভিজ্ঞতা। আরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে একটু তো রিস্ক নিতেই হয়।”

কথাটা বলেই আদিরা আর দাঁড়ালো না। সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাকিরাও বিষয়টা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে হোটেলের দিকে ফিরতে লাগলো। সৈকতে দাঁড়িয়ে মারসাদ, মাহি ও আহনাফ। মাহি আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ ইশারা করে মাহিকে আদিরার সাথে যেতে। মাহিও তাই হোটেলের দিকে যায়। সবাই যাওয়ার পর আহনাফ মারসাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে ধেয়ে আসা সমুদ্রের ঢেউরাশির দিকে। আহনাফ প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কক্সবাজার এসে নিজের মৌন অভিমান ও-কে বুঝাতে চেয়েছিলি?”

“হু?”

মারসাদ আহনাফের দিকে তাকায়। অতঃপর আহনাফও। আহনাফ মৃদু হাসে। আর বলে,
“তুই আমার সাথে প্রথমে যোগাযোগ করিসনি কারণ তুই চাসনি মাহি জানুক তুই কোথায় আছিস। আর মাহি জানলে আদিরাও জেনে যাবে। কয়েকদিন সবাইকে টেনশনে রেখে নিজের অভিমান বুঝাতে চেয়েছিলি।”

মারসাদ আবার সামনের দিকে ফিরে নিঃশব্দে হাসলো। আহনাফ তা দেখে বলল,
“হাসছিস?”

“তো হাসব না? অভিমান বুঝাতে চাইলে বুঝি তোদের সাথে যোগাযোগ করতাম? তোদের এটা মনে হওয়ার কারণও আছে, মাহিকে জানাতে না করেছিলাম। মাহিকে জানাতে না করার কারণ হচ্ছে, মাহি আমাকে বাসা, ভার্সিটি সবজায়গাতেই আদিরা রিলেটেড কথা বলা শুরু করে দিয়েছিল। ওর মাথায় এইসবই ঘুরতেছে। একচুয়েলি আমি নিজেকে বুঝতে চাইছিলাম। এর আগেও আমি খনিকের জন্য হলেও আরেকজনের উপর দুর্বল হয়েছিলাম। পরে কী হলো? তখন বাবার অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। স্কুল-কলেজে থাকাকালীন ছেলেদের চেহারায় মধ্যে অনেক সময় তেমন একটা এট্রাকটিভনেস কাজ করে না। কিন্তু আবার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তিন-চার বছর আগের ছবির সাথে মেলানোও কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। সামিরা তখন আমাকে আমার লুকস, ফিনান্সিয়াল অবস্থা দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। আর এখন সে আমার পেছনে ঘুরে! ওর মনে হয়, এখনও ওর প্রতি আমার ফিলিংস আছে! কিন্তু ও আমার কিছু সময়ের ভালোলাগা ছিল জাস্ট। ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে।”

“পুরোনো কথা বাদ। বর্তমান দেখ।”

“তোদের সবার মনে হয়, আমি আদিরাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু ওই যে, আমি ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে চেয়েছিলাম। একা থাকতে চেয়েছিলাম। যেখানে তোরা সবসময় কানের কাছে এসে বলবি না, ‘তুই আদিরাকে ভালোবাসিস!’ লাভ এট ফার্স্টসাইট হলে বুঝতে কম সময় লাগে। আমার তো আদিরার ক্ষেত্রে লাভ এট ফার্স্টসাইট না।”

“বুঝেছি। চল এবার।”

এরপর ওরা দুজনও হোটেলের দিকে ফিরতে থাকে।

———

“এই আদু, তুই দাভাইকে বলতে মানা করলি কেন?”

“আমি চাই না উনি জানুক।”

“কিন্তু জানলে তো ভালো হতো।”

আদিরা এবার ব্যাগের চেইন খুব জোরে এক টানে লাগিয়ে মাহির দিকে ঘুরে বসে। সাবিহা, রিন্তিও উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে। আদিরা বলে,

“সবসময় উনি কেন রাগ দেখাবে? আমি কী এমন করেছি? তোর চিন্তা হচ্ছিলো বলে আমি জাস্ট একটা আইডিয়া দিয়েছি। সেটাকে তোরা উনার সামনে কী বললি? ওকে মানলাম যা বলেছিস। তারপরও উনি আমাকে কী বলল? প্রথমে যখন গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে বলেছিল, আমি রাজি হইনি। এমনিতেই সামিরা আপু আমাকে পছন্দ করে না। তারপর যদি…! আমি অভিনয় করে নিজের শত্রু বানাব কেন?”

মাহির মুখটা চুপসে গেলো। সে বলল,
“দাভাই তো তোকে ভালোবাসে।”

“তুই কিভাবে শিউর? উনি তোকে বলেছে?”

“না। তবে…”

“তবে আর কিছু না। উনি আমাকে অভিনয় করার অফার করেছিল। তোদের ভাষ্যমতে, যদি উনি আমাকে ভালোবেসেও থাকে, তাহলে উনার ওই অভিনয় করতে বলার এপ্রোচটা ছিল উনার ভুল। এখনও যা করছে সেসবও যে ওই নাটকে আমাকে রাজি করাতে যে নাটক করছে না, তার কী গ্যারান্টি?”

কথাগুলো বলতে আদিরার বুকের ভেতর ভার লাগছে। চোখেও জ্বালা করছে। সে দ্রুত ব্যাগ উঠিয়ে আলমারিতে রাখতে গেলো। মাহি বিছানার দিকে তাকিয়ে রইল। তার দাভাইকে নিয়ে কথাগুলো তার খুব খারাপ লেগেছে। চোখ থেকে হুট করেই এক ফোঁটা পানি বিছানাতে পড়তেই মাহি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সাবিহা ও রিন্তি অসহায়ের মতো বসে আছে।

——-

সাগরপাড়ে সূর্যদয় দেখতে অনেকে ভীড় জমিয়েছে। ভোরের ঊষা কমলাভাব ছড়িয়ে সমুদ্র গর্ভ থেকে পূর্ব আকাশে উদিত হচ্ছে। সূর্যদয়ের সময়টা যে যার মতো উপভোগ করে এখন একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছে। একটু পর এখানেই নাস্তা করবে। তখন আশিক বলে,

“আজকে রাতেই ফিরব আমরা। বিকেল পর্যন্ত যা ঘুরাঘুরি করার করে নাও।”

সুমি মন খারাপ করে বলে,
“কালকেই তো এলাম, ভাইয়া।”

“এখন তো হুটহাট প্ল্যান করে এসেছি। আবার যখন আসব তখন সেন্টমার্টিনও যাব। বুঝোই তো, অফিস!”

“আমারও টিউশনি আছে।”

সবাই গল্প করতে করতে চা খাচ্ছে। এরপর নাস্তার অর্ডারও দিয়েছে। এদিকে মাহি ও আদিরা যে একে অপরের সাথে কথা বলছে না সেটা কয়েকজনের চোখে লেগেছে। মাহি বসেছেও তার ভাইয়ের পাশে অন্য টেবিলে। রাত্রি বলে,

“এই মাহি, তুমি আমাদের সবাইকে রেখে তোমার ভাইয়ের পাশে যে বসলে?”

মাহি চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে হালকা হেসে উত্তর দেয়,
“আশিক ভাইকে মৌমি আপুর পাশে বসার সুযোগ দিলাম।”

তখন মৌমি বলে,
“আশিকের পাশে বসতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তুমি এখানে বসতে পারতে।”

“সমস্যা নাই, আপু। আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। তাছাড়া আমি আমার দাভাইকে খুব মিস করছিলাম। তাই দাভাইয়ের পাশে বসলাম।”

কথাটা বলে মাহি মারসাদের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা এলায়। মারসাদও মৃদু হেসে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সাবিহা রাত্রির কানে কানে বলে,
“রাত্রিপু, আসলে কাল রাতে মাহি রাগ করে আদিরার সাথে রুমও শেয়ার করেনি। ওরা দুজন বলেছিল রুম শেয়ার করবে।”

রাত্রি অবাক হয়ে ফিসফিস করে শুধায়,
“ওমা! হঠাৎ কী হলো?”

“ওই আদিরা একটু মারসাদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলাতে মাহির খারাপ লেগে গেছে।”

“কী বলেছিল?”

“তেমন কিছু না। আদিরার মনে হচ্ছে, মারসাদ ভাই এসব নাটক করছে যাতে আদিরা তার ফেক গার্লফ্রেন্ড হতে রাজি হয়।”

রাত্রি কপাল কুঁচকে কিছুটা জোরেই বলে ফেলে,
“রিয়েলি? এতোকিছু হওয়ার পরও যদি ওর কাছে নাটক লাগে তবে আই হ্যাভ নাথিং টু সে হার।”

সবাই রাত্রির দিকে তাকায়। সাবিহা তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চায়। মৃদুল জিজ্ঞাসা করে,

“কীসের নাটকরে?”

রাত্রিও বোকা বনে যায়। এদিকে সাবিহা টেবিলের নিচ দিয়ে রাত্রির হাতে চি*মটি কা*টছে। রাত্রি আমতা আমতা করে বলে,
“ওই…আসলে…আমি!”

রাত্রিকে আমতা আমতা করতে দেখে মাহি বলে উঠে,
“অহেতুক বিষয় নিয়ে এতো টাইম ওয়েস্ট কেন করছো? মৃদুল ভাইয়া, নাস্তা এখনও দিচ্ছে না কেন দেখোতো। আমাদের আজকে টাইম তো খুব কম।”

মারসাদও মাহির হঠাৎ এমন কথায় ওর দিকে তাকায়। সবাই এবার মাহির দিকে চেয়ে আছে। মাহি তা দেখে বলে,
“কী হলো? সবাই এখন আমার দিকে কেন দেখছো?”

মৃদুল হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আমি দেখি নাস্তার কী অবস্থা।”

তারপর মৃদুল উঠে গেলো। এদিকে আদিরা পুরোটা সময় টেবিলের দিকে চেয়ে চুপ করে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
কক্সবাজার থেকে ফিরে এসে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফিরে আসার পরেরদিনই পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছিল, এখন পরীক্ষাও শুরু। পরীক্ষা চলাকালীন সময়টাও পেরিয়ে যাচ্ছে পড়ার ব্যস্ততায়। আজ ওদের শেষ পরীক্ষা। মাহি পরীক্ষা শেষ হতেই সবার আগে হল থেকে বেরিয়েছে। সাবিহা মাহির সাথে কথা বলতে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে ছুটে গিয়ে ও-কে ধরে। তারপর একসাথে হাঁটতে থাকে। মাহি শুধায়,

“কিছু বলবি? ছুটে এলি যে?”

সাবিহা কিঞ্চিত ভেবে বলে,
“হু।”

“তো বল।”

“তুই আদুর সাথে সব স্বাভাবিক করে নিচ্ছিস না কেন?”

“স্বাভাবিকই তো আছে।”

“না নেই। ও তোকে নোট দিতে চেয়েছিল, তুই তা নেসনি।”

মাহি থেমে সাবিহার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“আমার নোট লাগে না। তাছাড়া নোট ছাড়া যে আমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তাও না। এখানে এসে আমি একটু অলস হয়ে গিয়েছিলাম। এখন থেকে আর অলসতা করব না।”

তারপর মাহি আবার সামনের দিকে এগুতে থাকে। সাবিহা সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাড় স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তার মানে তুই আদুর সাথে সব স্বাভাবিক করবি না?”

মাহি ফের দাঁড়িয়ে যায়। তারপর সাবিহার কাছে ফিরে এসে বলে,
“দেখ, কক্সবাজারে যাওয়া ও তার আগে পর্যন্ত আমাদের মধ্যে আড্ডা বল আর যাই বল, সবেতে টপিক কিন্তু ঘুরেফিরে আমার দাভাই, তার বন্ধুরা আর নয়তো সামিরা আপু। বলতে গেলে অর্ধেকের বেশি কথা আমরা ওদের নিয়েই বলতাম। কিন্তু এখন আমাদের আড্ডাতে ওদের টপিকে কথা উঠাটা আমি ঠিক বলে মনে করছি না। তাই বুঝতে পারছি না কী করব!”

“আমরা উনাদের নিয়ে কথা বলব না। তাহলেই হলো।”

“হলো বললেই হলো না। ফ্লো ফ্লো তেই টপিক উঠবে। আমি যেই চক্রবাকে আবদ্ধ, আমি না চাইতেও সেটাই তুলে ফেলব। আচ্ছা ধরলাম, আমি টপিক তুললাম না। আদুও আড্ডাতে কোনো টপিক কখোনো তুলে না। তুই তুলবি চাইনিজ-কোরিয়ান ড্রামা, রিন্তি তুলবে ইন্ডিয়ান ড্রামা! তোর সাথে আমি কিছুটা তাল মেলাতে পারব। কিন্তু আড্ডা জমবে না। তখন রিন্তি হুট করে রাফিন ভাইয়ের টপিক তুলবে। এটা চলতেই থাকবে।”

“তাহলে তুই কী চাইছিস?”

“জানিনা আমি। আজ পরীক্ষা শেষ, আমি বাড়িতে যাব। মাইন্ড ফ্রেশ করব। আর আপিলিরও ডেলিভারি ডেইট কাছাকাছি। দাভাই জব পেয়েছে। সে যাবে আবার ৩-৪দিন পর চলে আসবে। দেখি ছুটি শেষ হওয়ার পর কী হয়।”

তারপর মাহি সাবিহাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। সাবিহা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুটা দূরে আদিরা ও রিন্তি দাঁড়িয়ে ছিল। মাহি যেতেই রিন্তি আদিরার হাত ধরে সাবিহার কাছে আসে। রিন্তি জিজ্ঞাসা করে,

“কী বলল?”

“ও ভাবছে, আমাদের মাঝে আগের মতো আড্ডা জমবে না। কারণ আমাদের ৭০% আড্ডার টপিক মারসাদ ভাইদের গ্রুপদের নিয়ে। যদিও ভুল কিছু বলেনি।”

“কী করব এখন?”

রিন্তি ও সাবিহা চিন্তা করছে তখন আদিরা রিন্তির হাত ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে রিন্তি ডাকলে আদিরা বলে,
“টিউশন আছে। সেখানে ছুটি নিব। তারপর গ্রামে যাব। সব গোছাতে হবে।”

তারপর আদিরাও চলে যায়।

——-
আদিরা তার ভাইয়ের সাথে বাড়ির সামনের উঠোনে বসে আছে। অন্যমনস্ক সে। আহাদ খেলতে খেলতে আদিরাকে বলল,
“আপু, তুমি আর কয়দিন থাকো না।”

আদিরা আহাদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। তারপর বলে,
“ছিলাম তো কয়দিন।”

আহাদ আঙুলে গুণে বলে,
“আজ সহ ৫ দিন মাত্র। কালকে সন্ধ্যায় তো চলে যাবে।”

“টিউশনি আছে তো। আবার আসব।”

“সে তো কতোদিন পর। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”

বলেই আহাদ রাগ করে চলে যায়। আদিরা ডাকলেও সাড়া দেয় না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আদিরা। তারপর নিজে নিজেই বলে,
“স্টুডেন্টের মা এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছে। কাল তো যেতেই হবে।”

তখন আদিরার মা আদিরাকে ডাকে। আদিরা সাড়া দিয়ে রান্নাঘরে যায়। আদিরার মা বলেন,
“শোন, সন্ধ্যায় ভালো জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে থাকিস।”

“কেন, মা?”

“তোর খালার বাসায় যাব। তোর খালার ননদের ছেলে কালকে সকালে কাতার থেকে আসছে। আজকে তোর খালার বাসায় আসছে।”

“তো এতে আমাদের যাওয়ার কী আছে?”

আদিরার মা আদিরার মাথায় একটা টো*কা দিয়ে বলে,
“আরে বো*কা মেয়ে! তোর খালা তার ননদের কাছে তোর কথা বলছে। এখন এজন্য একটু দেখবে। ওরা তো তোরে দেখে নাই।”

আদিরা এবার বুঝতে পারে তার মা কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আদিরা বলে,
“আমাকে দেখার কিছু নাই। আমি যাব না।”

আদিরার মা ধ*ম*ক দিয়ে উঠেন,
“চুপ কর! এতো কথা না বলে তৈরি হইয়া থাকবি। তোর বাপে রাগ করব জানলে।”

“মা, আমি পড়ালেখা করতেছি।”

“কর। তোর খালার বাসায় গেলে তো পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে না।”

আদিরা হতাশ হয়ে হনহনিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

——–
সন্ধ্যায় আদিরা ও তার বাবা-মা, ভাই সবাই আদিরার খালার বাসায় যায়। মহিলারা সবাই আদিরার খালার ঘরে বসে নাস্তা খাচ্ছে আর গল্প করছে। আদিরার খালার ননদ ও তার ছোটো মেয়ে যে কী না আদিরার বয়সীই হবে, এই দুইজন আদিরার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করে চলেছে। আদিরা বিষয়টা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকতে পারছে না। আদিরা তার মাকে কানে কানে বলে,

“মা, আমি দেখি আহাদ কোথায়।”

তারপর উঠে যায়। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে বাচ্চাদের কাছে এসে বসে থাকে। আদিরার পিছু পিছু আদিরার খালার ননদের মেয়েও আসে। সে এসে আদিরার সামনে হাসি দিয়ে বলে,

“আমার নাম ডালিয়া। তুমিই আদিরা?”

আদিরা হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়ায়। মেয়েটা আবার বলে,
“শুনলাম তুমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো।”

“জি।”

“বাড়ি থেকে এতো দূরে একা থাকো, খারাপ লাগে না?”

“না। প্রথম প্রথম লাগতো এখন লাগে না।”

“ভার্সিটির হোস্টেলেই থাকো?”

“না। এখনও পাইনি। কয়েকদিন পর পাব।”

“তাহলে কোথায় থাকো? ওখানে কি রাতে বের হতে দেয়?”

“মেসে থাকি। ওখানে রাতে বের হওয়া নিয়ে তেমন কোনো প্রবলেম নেই।”

“তুমি বের হও নাকি?”

আদিরা মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকায়। মেয়েটা যে তার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতেই এতো প্রশ্ন করছে তা সে আগেই বুঝেছিল। আদিরা উত্তর দেয়,
“প্রয়োজন পড়লে বের হই। কেন?”

মেয়েটা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। শুনেছি বাড়ি থেকে দূরে পড়তে গিয়ে মেয়েরা রাতে অনেক ঘুরাঘুরি করে। ট্যুর এসবে যায়।”

আদিরার চট করে মনে পড়লো সেও ট্যুরের কথাটা বলুক। অতঃপর বলে ফেলল!
“হ্যাঁ এই পরীক্ষা শুরুর সপ্তাহ দেড়েক আগে আমরা কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম।”

কথাটা শুনে মেয়েটা অবাক হয়। তারপর তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে,
“কার সাথে।”

“ফ্রেন্ডদের সাথে।”

“তুমি বাসায় জানিয়ে গিয়েছিলে?”

“না। পড়ালেখা নিয়ে একটু বেশিই হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। তাই সবাই মিলে গিয়েছিলাম। তবে মাকে এখানে এসে জানিয়েছি।”

“ওহ। সেখানে কি ছেলেরাও গিয়েছিল?”

“হ্যাঁ। আমরা বিকেলে রওনা করেছি। আবার পরেরদিন সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি।”

মেয়েটা আদিরার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। আদিরা মৃদু হেসে তার ভাইকে ডেকে আবার তার খালার ঘরে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-২৩+২৪+২৫

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩
সবকিছি পরিকল্পনা মোতাবেক আগাচ্ছে। মাহি আহনাফের সাথে আদিরার দুইটা স্টুডেন্টের বাড়িতে খুঁজতে গেছে। রিন্তি রাফিনের সাথে আদিরার হোস্টেলের দিকে গেছে। আর মৃদুল ও রবিনকে নিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরেই সাবিহা, সুমি ও রাত্রিরা আদিরাকে খুঁজছে। বেশ খানিকটা সময় ধরে ওরা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না! রবিন ভয়ে দুইটা ঢোক গি*লে মৃদুলকে ফিসফিস করে বলে,

“আমরা মারসাদকে কী বলব? ও যদি জানতে পারে, আদিরা মিসিং তাহলে?”

“চুপ কর! চুপ কর! পজেটিভ ভাব। রাফিনরা বা আহনাফরা পেয়ে যাবে ঠিক। মেয়েগুলোর ওভার প্যা*নিক দেখে তুইও অযথা টেনশন দিস না আমাকে। কোথায় আর যাবে? আশেপাশেই পাব।”

রবিন চিন্তিত ভঙ্গীতেই মাথা নাড়ায়। এদিকে সাবিহা রবিনের কিছু কথা শুনে মিটিমিটি হেসে সুমির কাছে গিয়ে কানে কানে বলে,
“আপু, মনে তো হচ্ছে এরা টো*প গি-লে নিয়েছে। এইবার আরো তন্ন তন্ন করে খোঁজার বাহানায় অস্থিরতা বুঝাতে হবে। আর ওই যে একটা ছেলে ছিল না, যে আদিরাকে ফলো করতো? সেটারও কিছু কিছু ভয় দেখালে কেমন হয়?”

শেষের কথাটা শুনে রাত্রি দ্রুত বলে উঠে,
“এই না না। এসব বলো না। পরে যখন সত্য জানতে পারবে তখন হিতে বিপরীত হতে পারে। তারপর যদি সত্যি সত্যি আদিরা বিপদে পড়ে তখন তো সাহায্য করতে আসবে না। তাই এসব বলো না।”

সুমি রাত্রির কথার প্রত্তুত্তরে বলে,
“আমরা তো আমাদের সন্দেহের কথা বলব। তুই এতো বেশি ভাবিস না তো!”

কথাটা বলে সুমি নিজেই মৃদুলের কাছে গিয়ে কিছুটা সংশয়ের স্বরে বলে,
“এই মৃদুল, আমার না ভয় হচ্ছে! আদিরাকে আবার ওই ছেলেটা ধরে নিয়ে গেল না তো?”

মৃদুল ও রবিন অবাক হয়ে সুমির দিকে তাকায়। তারপর মৃদুল সুমিকে জিজ্ঞাসা করে,
“কোন ছেলেটা?”

“আরে ওই ছেলেটা, যাকে মারসাদ বে*ধরক পি*টিয়েছিল। ওই ছেলেটা তো সাগরের সাথে হাত মিলিয়েছে মনে হয়। সেদিন তো পু*লিশ স্টেশনে সাগররা ওই ছেলের হয়ে কম*প্লেন লেখাতে পর্যন্ত এসেছিল।”

এবার মৃদুলও চিন্তায় পড়ে যায়। সে ভাবছে এবার মারসাদকে জানানো দরকার কি না?

———

ওদিকে মাহি ও আহনাফ আদিরার দুইটা টিউশনির বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে এখন রাস্তা ধরে হতাশ হয়ে হাঁটছে। যদিও মাহি হতাশ না! মাহি চো*রা হেসে চোখে মুখে হতাশ ও ভীত ভাব এনে বলে,

“আমার না খুব ভয় করছে! খুব ভয় করছে! কোথায় যে গেল?”

আহনাফ চিন্তিত হয়ে ভাবছে সে মারসাদকে জানানো উচিত কী না? অতঃপর জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোন বের করতেই মাহি চটজলদি হাত থেকে ছি*নিয়ে নেয়! উপস্থিত কাণ্ডে আহানাফ বোকা বনে যায়! ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে মাহি কিছুটা দূরে গিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠে। আর বলে,

“ইয়েস! এখন তাড়াতাড়ি করে ফোনের পাসওয়ার্ডটা বলে দিন।”

আহনাফ হঠাৎ বুঝতে পারে না মাহি এই ধরনের কথা কেন বলছে! সে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“তোমার কি আমাকে সন্দেহ হয়?”

“অফকোর্স সন্দেহ হয়!”

মাহির এত স্বাভাবিক ভঙ্গীতে উত্তর শুনে আহনাফ কী রকম প্রতিক্রিয়া করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।

“রিয়েলি, মাহি! তোমার সত্যিই সন্দেহ হয় আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে…..!”

কথার মাঝখানে আহানাফকে থামিয়ে দিয়ে মাহি হতভম্বি স্বরে বলে উঠে,
“ওয়েট! ওয়েট” আমি আপনাকে সন্দেহ করি বলেছি। কিন্তু কী কারণে সন্দেহ করি, সেটা তো বলিনি! আপনি আগেই এতো কিছু ভেবে নিলেন।”

“তাহলে তুমিই বলে দাও, তুমি কী কারণে সন্দেহ করো? আর ফোনটা কেন নিয়েছো? আর পাসওয়ার্ড কেন চাচ্ছো?”

মাহি এবার কিছুটা ভাব নিয়ে বলে,
“দাভাই কোথায় আছে তা জানতে। আপনাকে জিজ্ঞাসা করলে তো আপনি বলবেন না! তাই আপনার ফোনটা ছিনিয়ে নেওয়ার চিন্তা করেছি। আর এখন আপনাকে অবশ্যই ফোনের পাসওয়ার্ডটা বলতে হবে। নয়তো…. নয়তো…. ব্রেকআপ!”

আহনাফ বোকার মতো মাহির দিকে চেয়ে আছে।

——

রিন্তি রাফিনের সাথে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চিন্তা করছে রাফিনের থেকে ফোনটা কিভাবে নিবে। অনেক কিছু চিন্তা-ভাবনা করে রিন্তি রাফিনকে বলল,

“ভাইয়া, আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে?”

“কেন?”

“আসলে ভাইয়া, আমার ফোনে তো ব্যালেন্স নেই। আমি একটু সাবিহাকে কল করতাম।”

“ওহ ওইদিক র খবর জানতে? দাঁড়াও আমি মৃদুলকে কল করছি।”

রাফিন মৃদুলকে কল লাগাচ্ছে, আর রিন্তি অন্যদিকে ঘুরে নিজের কপালে নিজেই দুইটা থা-প্প*ড় মে*রে মনে মনে বলে,
“সাবিয়ার কথাটাই আমি কেন বলতে গেলাম! উফ! এখন কী করব!”

রিন্তি চিন্তা-ভাবনা করতে করতে রাফিন মৃদুলের সাথে কথা বলেছে। তারপর রাফিন রিন্তিকে জানায়,
“ওরাও এখনো খুঁজে পায়নি।”

রিন্তি এবার পুনরায় বুদ্ধি খাটিয়ে বলে,
“এখনো পেলো না! আচ্ছা ভাইয়া, আপনার ফোনটা একটু দেন না আমাকে। আমার একটু স্টুডেন্টের মাকে কল করতে হবে। আসলে কি বলুন তো, এই চিন্তায় আমি ও*কে পড়াতে যেতে পারব না। তাই ফোন করে জানিয়ে রাখি।”

তারপর রাফিন সরল মনে রিন্তির হাতে ফোন দেয়। রিন্তি খানিক দূরে গিয়ে রাফিনের কল লগ চেক করে। কল লগের তৃতীয় নাম্বারটাই মারসাদের নামের ইনিশিয়ালে সেভ করা। রিন্তি নাম্বারটা নিজের ফোন বের করে টুকে নিলো সেই সাথে স্টুডেন্টের মাকেও রাফিনের ফোন থেকে কল করলো। তারপে নিজের ফোন থেকে আশিক ভাইকে নাম্বারটা সেন্ড করে দিলো।

—–
সাবিহা সুমি ও রাত্রিকে বলে,
“মৌমি আপু আমার নাম্বারে মেসেজ করেছে। আমাদেরকে মৃদুল ভাইয়া ও রবিন ভাইয়ার থেকে ফোন নিতে হবে না। রিন্তি কাজ করে ফেলেছে।”

“তাহলে ভালোই হলো।”

ওদিকে আহনাফ মাহিকে বলে,
“তোমার দাভাই এবার আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।”

মাহি তেড়ে এসে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
“একদম মিথ্যা বলবেন না। দাভাই কোথায় গেছে সব আপনি জানেন। আর একটু আগে ফোনটা বের করেছিলেন দাভাইকে জানানোর জন্যই। আমি কি বুঝিনা মনে করেছেন?”

“আমি ফোন বের করেছি রাফিনকে কল করতে। কারণ তোমার দাভাই এবার আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। কারন সে জানে, তুমি যেকোনো উপায়ে আমার থেকে জেনে নিবে। তাই সে আমার ফোনে যোগাযোগ করেনি।”

মাহি ভ্রুকুটি করে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে। তা দেখে আহনাফ হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তবে আমি জানি ও কোথায় আছে।”

মাহির চোখ-মুখ খুশিতে চকচক করে উঠে। সে উল্লাসী হয়ে বলে,
“তাহলে চলুন, সেখানে যাই আমরা। কোথায় আছে?”

“মাহি, তোমার দাভাই যেখানেই আছে ভালো আছে। কিন্তু এখন আমাদেরকে আদিরাকে খুঁজতে হবে।”

“আপনি আগে বলুন না, দাভাই কোথায় আছে?”

“কক্সবাজার! খুশি? এবার আদিরাকে খুঁজতে হবে।”

মারসাদের খবর পেয়ে মাহির মনে স্বস্তি ফিরলো। এবার আর সে নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। সে সত্য কথা বলেই ফেলল,
“আদুরর কিছু হয়নি। ও গার্লস হোস্টেলে আছে। আমরা তো এসব নাটক করেছি যাতে দাভাইয়ের লোকেশন জানতে পারি তাই!”

আহনাফ যেন হতবাক! সে উত্তর দিতে ভুলে গেলো! মাহি চমৎকার হেসে আহনাফের বাহু জড়িয়ে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,
“আমরা এবার সবাই মিলে গিয়ে দাভাইকে একটা সারপ্রাইজ দিব। কেমন হবে বলুন তো? একটা ট্যুরও হয়ে যাবে তাই না? ভিষণ মজা হবে। বলুন?”

আহনাফ এখনও নাটকের ঘোরেই আটকা। সে কী উত্তর দিবে বুঝতেই পারছে না।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৪
সবাই এখন একত্রে হয়েছে। আহনাফ, মৃদুল, রাফিন ও রবিন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে বাকিদের দিকে চেয়ে আছে। মাহি, সুমিদের সবার মুখে চো*রা হাসি। মৃদুল বলে উঠে,

“আমাকে তো প্ল্যানে শামিল করতে পারতে। শুধু শুধু কয়েক ঘণ্টা চিন্তার মধ্যে রাখলে!”

রবিনও বলে,
“আমাকেও বলতে পারতে।”

দুইজনের কথা শুনে রাফিন ও আহনাফ ওদের দিকে একটা ধা*রালো দৃষ্টি ছুঁ*ড়ে। রাফিন বলে,
“তোরা মারসাদের ফ্রেন্ড নাকি ওদের? মারসাদ তার পারসোনাল রিজনে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। ফ্রেন্ড হিসেবে ও-কে আমরা সাপোর্ট করব।”

“আমি কি না করেছি? আমি জাস্ট বলেছি….”

মৃদুলের কথার মাঝে মৃদুলকে থামিয়ে আশিক বলে উঠে,

“তাহলে কী এখন আমরা মারসাদকে ফিরে আসতে বলব?”

মাহি তৎক্ষণাৎ হড়বড়িয়ে বলে,
“না! দাভাইকে তোমরা কেউ কিছু বলবে না। আমরা দাভাইকে সারপ্রাইজ দিব।”

কথাটা বলে মাহপ আহনাফের দিকে তাকায় কিন্তু আহনাফ সেটাকে ইগনোর করে পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে নজর ঘুরায়। তারপর রাত্রি জিজ্ঞাসা করে,
“কীভাবে?”

মাহি হঠাৎ আহনাফের এভাবে তাকে ইগনোর করা দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলল। সে আহনাফের দিকে এগিয়ে যায়। অতঃপর এক হাতে গা*ল চে*পে আহনাফকে নিজের দিকে ফিরিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“এভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন কেন?”

মাহির আকস্মিক কাণ্ডে সবাই অবাক হলেও মিটিমিটি হাসছে। আহনাফ চোখ বড়ো বড়ো করে মাহির দিকে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,

“আমি আবার কী করলাম?”

“কিছু করেননি?”

“না তো!”

মাহি ক*টমট দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে চাইলে আহনাফ দ্রুত অন্যদিকে চলে যায়।

মৃদুল জিজ্ঞাসা করে,
“তুমি কি কক্সবাজার যেতে চাইছো?”

মৃদুলের কথা শুনে মাহি খুশিতে এক প্রকার লা*ফিয়ে উঠে বলে,
“ইয়েস! আমাদের গন্তব্য এখন কক্সবাজার! সবাই জলদি প্যাকিং করে ফেলো। আমরা বিকেলেই রওনা হবো।”

মাহির কথা শুনে সবাই হা করে অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মাহি তা দেখে বলে,
“কী হলো? সবাই এভাবে চেয়ে আছো কেন? সময় কম। হাতে মাত্র ২ ঘণ্টার মতো আছে। দ্রুত প্যাকিং করো। গো ফার্স্ট!”

সাবিহা প্রত্যুত্তরে বলে,
“এতো শর্ট সময়ে ট্যুর প্ল্যান হয় নাকি! কাল যাই?”

“নো নো। আজকেই যাব। দাভাইয়ের এই চার বন্ধুর পেটে কাল পর্যন্ত কথা লুকানো থাকবে না। তাই আমরা আজকেই যাব। তাড়াতাড়ি সবাই হোস্টেলে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো।”

আশিক বলে,
“তাহলে আমি সবার জন্য হোটেল রুম আর বাসের টিকেট কে*টে ফেলি। নাকি হাইয়েস নিব?”

“হাইয়েস নিলেই ভালো হয়। নিজেদের মতো যাব।”

“তবে তাই রইলো।”

মাহি খানিক ভেবে আহনাফ, মৃদুলদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,

“যদি কোনোভাবে দাভাই আমাদের যাওয়ার কথা জানতে পারে! তাহলে…..”

রবিন ভয় পেয়ে ঢোক গিলে বলে,
“পারবে না। পারবে না।”

রবিনের কথা শুনে ওর তিন বন্ধু সরাসরি ওর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায়। এটা দেখে মাহি ফের বলে,
“রবিন ভাইয়ার দিকে এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই। যদি দাভাই কিছু জানতে পারে, তাহলে আপনাদের তিনজনকে সমুদ্রের পানিতে চু*বানো হবে! হুহ্!”

এরপর মাহেই মুখে ভে*ঙচি কে*টে চলে আসে। সে আদিরা ও সাবিহাদের কাছে আসতেই আদিরা কিছুটা ইতস্তত করে বলে,
“আমি না যাই?”

“কী বলিস! তুই না গেলে তো হবেই না। তুই তো মেইন। তোকে মাস্ট যেতে হবে। এন্ড এবার তোর মনের কথা বলতে হবে।”

মাহির শেষের কথাটা শুনে আদিরা চমকে উঠে। অতঃপর শুধায়,
“মানে?”

মাহি, সাবিহা ও রিন্তি একে অপরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। তারপর মাহি বলে,
“সেটা আমরা কীভাবে বলব? তোর মনের কথা, তুই জানিস!”

আদিরা নিজের দৃষ্টি নিচু করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তা দেখে সাবিহা বলে,
“সারা রাস্তা ভাবার সময় পাবি। সময় নিয়ে ভাবিস। এখন হোস্টেলে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফেল।”

আদিরার কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মন শান্ত হচ্ছে না। কী সময় নিবে, কী বলবে সব ভাবতে ভাবতে মাথাও ঘুরাচ্ছে। রিন্তি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বলে,

“চল, তোর সাথে তোর হোস্টেলে আমিও যাব। আর সাবু, তোকে ভিডিওকলে বলে দিব আমার ব্যাগে কী কী রাখতে হবে। তুই আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দিস।”

“আচ্ছা।”

অতঃপর রিন্তি আদিরাকে নিয়ে আদিরার হোস্টেলের দিকে গেলো।

——–

বিকেল ৪টা। ওরা সবাই ভার্সিটির গেইটের সামনে জড়ো হয়েছে। একটা হাইয়েস ভা*ড়া করেছে। সবাই সবার ছোটো ছোটো ব্যাগগ গুলো গাড়ির পেছনে উঠিয়ে দিয়েছে। তারপর আশিক বলে,
“আমি ফ্রন্টে বসছি। তোমরা বাকিরা এডজাস্ট করে বসো।”

তারপর সবাই গাড়িতে উঠে বসলো।

সন্ধ্যা প্রায় ৮টার দিকে ওরা সবাই কক্সবাজার সুগন্ধা বিচের কাছে মারসাদ যে হোটেলে আছে, সেখানে গিয়ে পৌঁছালো। গাড়ি থেকে একে একে ব্যাগ নামিয়ে হোটেলের ভেতরে যায়। আশিক রিসেপশন থেকে তিনটা রুমের চাবি এনে বলে,
“দুইটা মেয়েদের। আর একটা ছেলেদের। প্রতিটা রুম আবার দুই রুম করে। সো আরামসে থাকতে পারবে।”

চাবি নিতে সুমি ধা*ক্কা দিয়ে মৌমিকে পাঠায়। মৌমি আকস্মিক ধা*ক্কায় তাল সামলাতে না পেরে প্রায় আশিকের গায়ের উপরই পড়ে যাচ্ছিল! আশিক অতিসাবধানে মৌমিকে আগলে নেয়। দুজন দুজনের চোখের দিকে চেয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখে আহনাফ, মাহি, সুমিরা সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে। প্রায় মিনিট খানেক পেরিয়ে গেলে মৃদুল হালকা কে*শে বলে উঠে,

“ভাই, আমরা কিন্তু ট্যুরে এসেছি। হানিমুন ট্যুরে না!”

মৃদুলের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ মৌমি ও আশিক একে অপরের থেকে দূরে সরে এলো। এই কাণ্ডে কেউ আর নিজের হাসি চেপে রাখতে পারল না। একটা হাসির রোল পড়ে গেল সবার মধ্যে। মৌমি চাবি নিয়ে দ্রুত সিঁড়ির দিকে এগুতে লাগলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিতেই সুমি ডেকে বলল,

“আরে মৌমি, লিফট আছে তো! তুই সিঁড়ি দিয়ে কেন উঠতে যাচ্ছিস?”

মৌমি চোখমুখ খিঁচে এরপর লিফটের দিকে যায়।

এরপর সবাই লিফটের কাছে গেলে মাহি রাফিনকে বলে,
“ভাইয়া, আপনি একটু দাভাইকে কল করে জিজ্ঞাসা করুন তো, সে এখন কোথায় আছে?”

রাফিন বলে,
“বিচেই থাকবে।”

“তাও কল করে দেখুন না। আর বিচে কী করছে সেটাও জানতে চাইবেন। নাহলে সারপ্রাইজ কীভাবে দিব?”

“আচ্ছা কল করছি।”

এরপর রাফিন মারসাদকে কল করে। মারসাদ কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রাফিন সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করে,
“কী করছিস তুই?”

মারসাদ বিচের ধারে হাঁটছে। সে উত্তর দেয়,
“এই তো হাঁটছি।”

মাহি রাফিনকে কল মিউট করতে ইশারা করে। রাফিন কল মিউট করলে মাহি বলে,
“দাভাই যদি এখন বিচে হাঁটতে থাকে তাহলে তো আমরা দাভাইকে খুঁজে পাবো না। তাই দাভাইয়াকে বলুন যে আপনার এটা ওটা লাগবে। বিচের পাশে মার্কেট থেকে কিনতে।”

রাফিন সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“কিন্তু কী লাগবে?”

মাহি কোনো চিন্তাভাবনা না করেই বলে ফেলে,
“বলুন, ঝিনুকের মালা লাগবে।”

“মালা! আমি মালা দিয়ে কী করব?”

“উফ! বলেন না।”

রাফিন কল আনমিউট করে কিছু বলবে তখনি মারসাদের কণ্ঠে শুনতে পায়,

“তোরে কি বোবায় ধরছে? কল করে চুপ করে আছিস কেন?”

রাফিন বোকার মতো বলে,
“আসলে দোস্ত, শোন না। আমার জন্য ঝিনুকের মালা আনতে পারবি?”

“ঝিনুকের মালা! তুই মালা দিয়ে কী করবি?”

“সেটাই তো আমিও ভাবছি!”

কথাটা বলে রাফিন তাড়াতাড়ি নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে। ফোনের অপর পাশ থেকে মারসাদ বলে,

“ভাবছিস মানে?”

রাফিনের এই বোকামো দেখে সবাই ইশারায় রাফিনকে ঝাড়ছে একপ্রকার! তখন পাশ থেকে মৃদুল বলে উঠে,
“আরে রাফিন ঝিনুকের মালা ওর গার্লফ্রেন্ডকে দিবে। এটাই বলতে লজ্জা পাচ্ছিল এতক্ষণ।”

মৃদুলের কথা শুনে রাফিন বড়ো বড়ো চোখ করে মৃদুলের দিকে তাকায়। আর এদিকে রিন্তি বুকটা ধক করে উঠে। রিন্তি আদিরার হাত চেপে ধরে। তবে কী রিন্তির মন ভাঙতে চলেছে?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৫
“তোর আবার গার্লফ্রেন্ড হলো কবে?”

এবার রাফিন সহ মৃদুলরা সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মুহূর্তেই কিছু না ভেবেই রাফিন মাথা চুলকে জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আসলে প্রপোজ করব। তুই একটা ঝিনুকের মালা কিনে আন না। ওর খুব পছন্দ ঝিনুকের মালা।”

ফোনের অপরপাশে মারসাদ হাসে। তার এই হাসি অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের আড়ালে আড়াল রয়ে গেলো। অতঃপর বলল,
“আচ্ছা। আসার সময় নিয়ে আসব।”

এই কথা শুনে রাফিন প্রায় চিৎকার করে বলে,
“না! তুই এখনি কিনবি। পরে ভুলে যাবি।”

“ভুলব না। মনে থাকবে আমার।”

“বললাম তো এখন কিনবি। আমি ০% রিস্কও নিব না। সাথে আরও কিছু কিনতে হবে। ঝিনুকে নাম লেখানো। তারপর ওই যে চুলে লাগায় ওগুলো। সাথে….আর মনে পড়ছে না। তুই দোকানে কী কী আছে ছবি তুলে পাঠা তো।”

মারসাদ মৃদু হেসে বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি পাঠাচ্ছি।”

“কখন পাঠাবি?”

“তুই ফোন রাখলেই পাঠাব। যাচ্ছি ওইদিকে।”

“ওকে। জলদি পাঠা।”

এরপর রাফিন কল কে*টে তাড়াতাড়ি করে সবাইকে বলে,
“এখন রুমে যাওয়া লাগবে না সবাই লাগেজ গুলো রিসিপশনে রেখে তাড়াতাড়ি চলো। মারসাদ সাগর পাড়ে কেনাকাটা করতে যাচ্ছে।”

আশিক বলে,
“তাই চলো। রাফিনকে ছবি পাঠাতে পাঠাতে আমরা আগাই।”

ওরা সবাই নিজেদের লাগেজ গুলো রিসিপশনে রেখে তারপর সাগর পাড়ে যাওয়ার জন্য বের হয়।

____
মারসাদ দোকান ঘুরে ঘুরে ঝিনুকের মালা দেখছে। ঝিনুক দিয়ে তৈরি অনেক কিছু এখানে। মারসাদ চট করে ছবি তুলে নিয়ে রাফিনকে পাঠায়। রাফিন ছবি দেখে সবাইকে ডেকে বলে,

“এই দেখ, ও ছবি পাঠিয়েছে। মনে হচ্ছে সামনের দোকানগুলোতেই গেছে। তাড়াতাড়ি চল। আর সবার আগে আদিরা ঢুকবে।”

শেষের কথাটা শুনে আদিরা চমকে উঠে। সে তোঁতলানো স্বরে বলে,
“আ..আমি? আমি কে..ন?”

“তুমিই তো ঢুকবে। সারপ্রাইজ দিতে হবে না?”

হাত-পা কাঁপছে আদিরার। সে করুণ স্বরে বলে,
“কিন্তু ভাইয়া, আপনারাও তো সারপ্রাইজ দিতে এসেছেন। তাহলে আমি কেন ঢুকব? ভাইয়া, প্লিজ আমি ঢুকব না আগে।”

এবার মাহি খানিক ধ*মকে উঠে বলে,
“আবার ভয় পাচ্ছিস তুই? আমার দাভাই কি বা-ঘ না ভা*ল্লুক? এত ভয় পাস কেন তুই? তুই আগে যাবি। তারপর তোর পেছনে তো আমরাও যাব। কিন্তু আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে যাব।”

“কিন্তু..!”

এবার সুমিও বলে,
“কোন কিন্তু না। তুমি আগে যাবে। এমনভাবে যাবে যে তুমি কেনাকাটা করতে এসেছ। আর যদি মারসাদ তোমাকে দেখে ফেলে, তাহলে এমন একটা ভাব করবে যেন তুমি ও-কে দেখোইনি। আর তুমি ও-কে চেনোও না। বুঝতে পেরেছ?”

আদিরা মেকি হেসে এক পা দুই পা করে পেছোতে লাগলো। সবাই এটা লক্ষ্য করে ওর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আদিরা পেছন ঘুরে পালাতে চায়। তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে সাবিহা আদিরাকে ধরে ফেলে বলে,

“পালালে তো চলবে না। যা না বাবু। প্লিজ। ভাইয়া যদি তোকে মা*রতে আসে তবে আমি তোকে বাঁচাব। প্রমিস।”

সাবিহা কথাটা বলে খুব কিউট ফেস করে তাকায়। তা দেখে বাকিরা হেসে ফেলে। আহনাফ বলে,
“যাও আদিরা। মারসাদ কিছু বলবে না। অবাক হবে জাস্ট এটুকুই।”

আদিরা মাথা নিচু করে ভাবছে। কিন্তু ও-কে ভাবার জন্য কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় দিলো না। এক প্রকার জোড় করেই ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেলো। দোকানগুলোর কাছে এনে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি একত্রে বলে,

“বেস্ট অফ লাক।”

আদিরা জোরপূর্বক হেসে সবার দিকে তাকায়। সবাই বিপরীতে মৃদু হেসে সামনে যেতে ইশারা করে। আদিরা আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে বড়ো একপা ঢোক গিলে মৃদু পায়ে দোকানগুলোর ভেতরে যায়। সবগুলো দোকান সারিবদ্ধ ভাবে ঝিনুক, শামুক, প্রবাল বিক্রি করছে। কতো সুন্দর সুন্দর ঝিনুকের মালা, ঘর সাঁজানোর জিনিসপাতি। আদিরা দুরুদুরু মন নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে প্রতিটা দোকান। ঝিনুকের তৈরি জিনিসপত্র দেখতে ভালো লাগলেও মনের মধ্যে একটা ভয় তো রয়েই গেছে। সেই ভয়টাই সে কাটিয়ে উঠতে পারছে না।

এদিকে রাফিন মারসাদের পাঠানো ছবি থেকে কিছু জিনিসপত্র বেছে দিয়ে বলে কিনে আনতে। মারসাদও সেই মোতাবেক কিনে নেয়। কেনাকাটা শেষ করে মারসাদ যখন বাহিরের দিকে আসবে তখন একজনের হাতের সাথে তার হাত লেগে যায়। মারসাদ হুট করে থেমে যায়। এদিকে আদিরাও থেমে যায়। মারসাদ আদিরার চেহারা না দেখলেও আদিরা দেখেছে। আদিরার হাতের সাথেই মারসাদের হাত লেগেছে। আদিরা সেখানেই স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে। একবার মন চাচ্ছে ছুটে পালাতে, আবার মনে খনিক সাহসের সঞ্চার হচ্ছে। আদিরা খুব ধীর পায়ে পাশের দোকানটার দিকে ঘুরলো। অমনি মারসাদ আদিরার মুখের এক পাশ দেখতে পেলো। মারসাদ অবাক ও কনফিউজড দুটোই হয়ে চেয়ে আছে। সে একবার ভাবছে তার চোখের ভুল, তো আবার ভাবছে হঠাৎ সে আদিরাকেই কেন দেখবে? মারসাদ নিজের চোখ ভালো করে ক*চলে নিয়ে ফের তাকালো। কিন্তু ততক্ষণে আদিরা বিপরীত পাশের দোকানে ঘুরে গেছে। মারসাদ আগের দোকানে আদিরাকে না দেখে এগিয়ে গিয়ে খুঁজলো। তারপর বিপরীত পাশের দোকানের দিকে ঘুরতেই দেখে আদিরা ঝিনুকের জিনিসপত্র ধরে ধরে দেখছে। মারসাদ বলে উঠে,

“আদিরা!”

সঙ্গে সঙ্গে আদিরা চমকে উঠে। হাত যত্রই থেমে যায়। গলা শুকিয়ে আসছে তার। মারসাদের দিকে আস্তে আস্তে ঘুরে। আদিরা সম্পূর্ণ মারসাদের দিকে ঘুরতেই মারসাদের চোখ যেন বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে। মারসাদ ফের বলে উঠে,

“তুমি! তুমি এখানে?”

আদিরা মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। গ*লা দিয়ে তার একটা কথাও বের হচ্ছে না। মারসাদ কী রেগে গেলো? এই চিন্তাতে তার হাত-পা অসাড় হয়ে আসার দশা!
এদিকে আহনাফ, রাফিন, সুমি, মাহিরা সবাই সুযোগ বুঝে নিজেদের লুকিয়ে থাকা জায়গা থেকে উঠে একত্রে বলে উঠে,

“সারপ্রাইজ!”

আচমকা এতোগুলো কণ্ঠস্বরে ‘সারপ্রাইজ’ শব্দটা শুনে ভড়কে উঠে মারসাদ। আশেপাশে তাকিয়ে তার চিরচেনা মুখগুলো দেখে আরও অবাক হয়ে যায়। সবাই মারসাদের অবস্থা দেখে হাসছে। মারসাদ আবারও নিজের দুই চোখ ভালো করে মুছে নিয়ে তাকায়। নাহ্ সে ভুল দেখছে না।

মাহি বলে উঠে,
“কী দাভাই, কেমন দিলাম সারপ্রাইজ?”

“তোরা সবাই এখানে?”

“তো কি তুই শুধু আদিরাকে এখানে চাইছিলি? কেন, দাভাই? আমরা আসাতে খুশি হসনি?”

মাহির বলা কথাটাতে তৎক্ষনাৎ মারসাদের ভ্রুঁ কুঁচকে আসে। চট করে মাহির হাতে দু ঘা লাগিয়ে বসে। আদিরা লজ্জায় সাবিহার কাছে গিয়ে সাবিহার পেছনে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে। মাহি মা*ইর খে*য়ে কপাল কুঁচকে বিরক্তির স্বরে বলে,

“কথায় কথায় হাত চলে কেন? এমন করলে জীবনেও বউ পাবি না বলে দিলাম!”

মারসাদ প্রত্যুত্তরে বলে,
“সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই তোর নিজের চিন্তা কর।”

কথাটা বলেই মারসাদ আহনাফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তা দেখে আহনাফ বলে উঠে,
“আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আমি এবার কিছু করিনি। তুই তো আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি।”

মারসাদ এবার রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন আমতা আমতা করে বলে,
“আমার কোন দোষ নেইরে, দোস্ত। আমি সম্পূর্ণ পরিস্থিতির শি*কার! এই মেয়েগুলো (মাহি,সুমি, রিন্তিদের দিকে আঙুল তাক করে) আমাকে ফাঁ*সিয়েছে! বিশ্বাস কর, আমার কোন দোষ নেই। ওরা প্ল্যান করে এই সব কিছু করেছে। না হলে আমি কখনো তোর বিশ্বাস ভাঙ্গি? বল?”

মারসাদ এবার সুমি, রাত্রি, মৌমিদের দিকে তাকায়। এবার আশিক বলে উঠে,
“মারসাদ, ওদের কাউকে ভুল বুঝ না। ওরা তোমার জন্য চিন্তিত ছিল, তাই মাহিদের সাথে তাল মিলিয়েছে। তুমি না বলে হুট করে গায়েব হয়ে গেলে, সবাই তো চিন্তা করবেই তাই না? তার উপর তোমার বন্ধুরা মুখে যেন কুলুপ এঁটে বসে ছিল!”

মারসাদ হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে,
“আমি একটু একা থাকতে চেয়েছিলাম।”

অতঃপর মারসাদ আদিরার দিকে তাকায়। আদিরা তা দেখে নিজেকে সাবিহার পেছনে আরো আড়াল করে নেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-২০+২১+২২

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
বাইক এসে আদিরার হোস্টেল থেকে কিছুটা দূরে থামলো। মূলত আদিরার বলাতেই এখানে বাইক থামানো। বাকি রাস্তা আদিরা হেঁটেই যাবে। তারপর আদিরা বাইক থেকে নেমে মারসাদকে বলে,

“ধন্যবাদ, ভাইয়া।”

অতঃপর ঘুরে চলে যেতে নিলে মারসাদ আদিরাকে ডাকে।
“শুনো,”

আদিরা দাঁড়িয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো। তারপর বলল,
“জি বলুন।”

মারসাদ কেমন যেন থমকে গেলো! যা বলতে চেয়েছিল সেটা আর সে বলতে পারছে না! আদিরার এহনো চাহনিতে মারসাদের কাছে অন্যরকম ঠেকলো। তার মস্তিষ্ক শুধু সামনে দাঁড়ানো রমণীটির দিকেই নিবদ্ধ। তার কাছে আজ আদিরাকে এক মায়াবী পরীর মতো লাগছে। তবে পরীর মায়া থেকে কী নজর সরানো যায়? কিন্তু মারসাদ এভাবে তাকিয়ে থাকাতে অপ্রস্তুত হয় আদিরা। সর মারসাদের এমন দৃষ্টির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। সে দ্রুত দৃষ্টি নিচু করে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কিছু বলবেন, ভাইয়া?”

তৎক্ষণাৎ হুঁশ ফিরে মারসাদের। সে এদিক সেদিকে কয়েকবার নজর ঘুরিয়ে ফের আদিরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তখনি দেখে আদিরা আবার চলে যাচ্ছে। মারসাদ ফের ডাকে,

“আদিরা, শুনো।”

আবারও পেছনে ঘুরে তাকায় আদিরা। এবার মুখে নয়, ইশারায় জানতে চায় সে। মারসাদ এবার বলে,
“কালকে সকালে আমি তোমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যেতে আসব।”

এহেনো প্রস্তাব শুনে আদিরার বিষয়টা মোটেও ভালো লাগলো না। সে সাথে সাথে প্রতিবাদ করে উঠলো,
“কেন? আপনি আমাকে কেন নিয়ে যেতে আসবেন? আমি একাই যেতে পারবো। আপনাকে আসতে হবে না।”

মারসাদ এবার রাগলো না। শান্ত কণ্ঠে বলল,
“অপেক্ষা করো এসে নিয়ে যাব।”

এটা বলে সে আবার বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিবে তখন আদিরা আবার বলে ওঠে,
“বললাম তো আপনাকে আসতে হবে না। আমি একাই যেতে পারব।”

“বললাম তো নিতে আসব!”

আদিরা মারসাদের এরকম ত্যাড়ামো কথা শুনে রেগে গেলো। ঝাঁঝালো স্বরে এবার বলল,
“কেন নিতে আসবেন? আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন আসবেন? আপনি কে হন আমার?”

“বয়ফ্রেন্ড!”

মারসাদের সহজ, সাবলীল, ভাবলেশহীন উত্তর শুনে আদিরা থমকে যায়। বড়ো বড়ো চোখ করে এসে মারসাদের দিকে চেয়ে আছে। আদিরার এরকম প্রতিক্রিয়া দেখে বিষয়টা মারসাদের কাছে খুব মজার লাগলো। সে বাঁকা হেসে বাইক স্টার্ট দেয়। তারপর মারসাদ চলে যাচ্ছে, আদিরা তখন বাস্তবে ফিরে। তারপর কণ্ঠে বিদ্রোহ এনে কিছুটা জোড়েই বলে উঠে,

“আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না। ওসব নাটক আপনি অন্য কাউকে দিয়ে করান।”

মারসাদ বাইক থামায়নি। সে যেতে যেতে জোড়ে বলে যায়,
“নাটক না করে আসল গার্লফ্রেন্ডই হয়ে যাও!”

তারপর মারসাদ বাইক নিয়ে দূরে চোখের আড়াল তো হলো ঠিকি কিন্তু আদিরা সেখানেই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় মিনিট খানেক পর রিকশাওয়ালার হর্ণের শব্দে সরে দাঁড়ায়। তারপর হোস্টেলের দিকে পা বাড়ায়।

——–

পরেরদিন আদিরা সময়ের অনেক আগেই ভার্সিটিতে চলে এসেছে। তারপর একটা গাছতলায় একা একা বসে পড়ছে। পড়ছে কম ভাবছে বেশি! ইদানীং তার পড়াশোনায় মনোযোগ আসতে চায় না। একজনের কথাই সারাদিন তার ঘুরেফিরে মন ও মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়ায়। হঠাৎ আদিরার ফোন বেজে উঠে। আদিরা ব্যাগ থেকে ফোনটক বের করে স্ক্রিণে দেখে মারসাদের নাম। তাই সে কল কেটে আবারও বইতে মুখ গুঁজে বসে থাকে। তদ্রুপ একে একে তিনবার কল বেজে উঠে আদিরার। তিনবারই সে ফোন কেটেছে। চতুর্থবার ফোন না কেটে সাউন্ড কমিয়ে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে ছিলো। কিন্তু পঞ্চমবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। হাঁটুতে মাথা গোঁজা অবস্থাতেই না দেখে ব্যাগের ভেতর থেকে ফোন রিসিভ করে। তারপর ঝাঁঝালো স্বরে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,

“বারবার কেটে দিচ্ছি তাও কেন কল করছেন? আমি ভার্সিটিতে চলে এসেছি।”

আদিরা কথাটা বলার পর ফোনের অপর পাশ থেকে একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠ ভেসে আসলো,
“আপু, আমি আমি আহাদ। তুমি কল কেটে দিছিলা কেন?”

হঠাৎ ছোটো ভাইয়ের কণ্ঠস্বরে থতমত খেয়ে যায় আদিরা। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে সামনে এনে দেখে সত্যি তার মায়ের নাম্বার থেকে কল করেছে। আদিরা আবার কোন কানের কাছে নিয়ে তারপর বলে,

“সরি, সোনা। পড়ছিলাম।”

“পড়তেই থাকো! তুমি শুধু পড়া পড়া করো! আজকে যে আমার জন্মদিন তা কি তুমি ভুলে গেছো?”

ভাইয়ের মুখে জন্মদিনের কথাটা শুনে আদিরা টনক নরে। তখনি তার আজকের তারিখটা মনে পড়ে। অতঃপর চোখ মুখ খিঁচে নিজের মা*থা নিজে মা*থা চা-প*ড়ায়! ভাইয়ের জন্মদিন সে ভুলে গেলো?

“না না সোনা, আপু ভুলিনি তোর জন্মদিন। আসলে আপুর ফোনে না ব্যালেন্স ছিল না। ব্যালেন্স ভরবো আজকে। আজকে সকালে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে চলে আসার কারণে সকালে ফোনে ব্যালেন্স ভরতে পারিনি। তার আগেই তুই কল করলি। হ্যাপি বার্থডে, আমার সোনা ভাইটা।”

আহাদের মনটা একটু নরম হয়। সে জিজ্ঞাসা করে,
“আপু, এবার আমার জন্মদিনে কেক কে বানাবে? প্রতিবার তো তুই বানাস। এবার তো তুইও নেই। আসবি না আমার কাছে?”

ভাইয়ের মুখে এমন আকুল আকুতি শুনে চোখ ভরে এলো আদিরার। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে চট্টগ্রামের চলে আসার পর এটাই তার ছোটো ভাইটার প্রথম জন্মদিন। আর সে তার ভাইয়ের সাথে এই প্রথমবার জন্মদিনের দিন নেই। আদিরা মন খারাপ করে জবাব দেয়,

“আমি তো আসতে চাই রে, ভাই। কিন্তু কী করবো বল? আসতে পারছি না। তবে শোন তুই খারাপ করিস না। আমি এইবার বাড়িতে যখনই আসবো, তোকে কেক বানিয়ে খাওয়াবো।”

“যখনই আসবা তখন কেক বানিয়ে কী লাভ? তখন তো আমার জন্মদিন থাকবে না। এবারের জন্মদিনটা আমার তোমার হাতের কেক ছাড়াই শেষ হবে।”

আদিরার খারাপ লাগছে। কিন্তু কী করবে? সে তে যেতে পারছে না। কিছু একটা চিন্তা করে আদিরা তার ভাইকে বলে,

“মাকে ফোনটা দে তো। আর তুই গিয়ে চটপট খাতা কলম নিয়ে আয়।”

“কেন আপু? খাতা কলম দিয়ে কি করব?”

“তোকে আনতে বলেছি আন। আর মাকে ফোনটা দিয়ে যা।”

তারপর আহাদ তাই করলো মায়ের কাছে ফোনটা দিয়ে ছুটে গেল খাতা কলম আনতে। আদিরা তার মাকে জিজ্ঞাসা করে,

“কেমন আছো মা? বাবা কেমন আছে?”

“আমরা তো আলহামদুলিল্লাহ ভালঁই আছি। তুই কেমন আছিস?”

“আমিও খুব ভালো আছি, মা। শোনো তোমাকে যে জন্য ফোন দিতে বলা।”

“বল।”

“আহাদ খাতা কলম আনলে আমি যা যা যেই পরিমাণে বলব, সব খাতার মধ্যে আহাদকে বলবে লিখে নিতে। তারপর তুমি সেই অনুসারে আহাদের জন্য কেক বানাবে।”

আদিরার কথা শুনে আদিরের মা বেশ অবাক হন। তিনি বলেন,
“আমি কখনো কেক বানাইছি নাকি? আমি কেক বানাতে পারি না তো!”

“তোমাকে পারতে হবে না, মা। আমি যেভাবে বলবো শুধু সেভাবেই সব পরিমান করে নিয়ে স্টেপ ফলো করে যাবে।”

“আচ্ছা বল।”

ইতোমধ্যে আহাদ খাতা কলম নিয়ে হাজির। আহাদ যখন এসে কেক বানানোর কথা শুনলো, আহদ তো খুশিতে নেচে উঠেছে পুরো! আহাদের এত খুশি শুনে ও দেখে আদিরা ও আদিরার মাও বেশ খুশি। তারপর আদিরা তার মাকে আস্তে আস্তে সবগুলো উপকরণের পরিমাণ ও কেক বানানোর রেসিপিটা বলে দিলো।

মা ও ভাইয়ের সাথে কথা বলার শেষ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আদিরা তার থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়ানো মারাসাদকে দেখতে পায়। মারসাদ বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত গুঁজে তার দিকে কপাল কুঁচকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আচমকা নিজের সামনে মারসাদকে দেখে চমকে উঠে আদিরা। যার দরুন হাত থেকে তার ফোনটা পড়ে যায়। শুকনো ঢোক গিলে দুইটা। ভয়ে তাে মধ্যে আবারও জড়োসড়ো ভাব। সে ঘাসের উপর থেকে ফোনটা ও বইটা ব্যাগে ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর এক পা, দুই পা করে পিছনের দিকে পিছতে থাকে। যা দেখে মারসাদের দৃষ্টি আরো সরু হয়। অতঃপর আদিরা এরকম পেছাতে পেছাতে হঠাৎই এক প্রকার দৌড়ে স্থান ত্যাগ করে! আর মারসাদ বোকার মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকে!

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
আদিরা হাঁপাতে হাঁপাতে মাহি ও আহনাফ যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, সেখানে গেল। মাহি বাদাম খাচ্ছিলো আর আহনাফের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎ আদিরাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে মাহি প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কী রে? তোর আবার কী হলো? এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? আর কোথা থেকে দৌঁড়ে এলি?”

আদিরা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে খানিকটা পানি পান করলো। তারপর বলল,
“তোর দাভাইকে বল এসব যেন বন্ধ করে।”

আদিরার কথা শুনে মাহি ও আহনাফ একে অপরের দিকে চেয়ে আদিরার বলা কথার তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করে। মাহি পুনরায় আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,

“কী করেছে দাভাই?”

“আমি তো উনাকে বলেই দিয়েছি, আমি উনার সাথে নাটক করতে পারবো না। তারপরও উনি কেন এরকম করছে? উনি কেন বুঝতে চাইছেন না, আমি সামিরা আপুর সাথে ঝামেলায় জড়াতে চাই না। তাছাড়া কয়েকদিন পর যখন সামিরা আপু সত্যিটা জানতে পারবে তখন তো সামিরা আপু আমাকে আরও সহ্য করতে পারবে না। তোর দাভাই তো আর এক-দুই বছর পর ভার্সিটি ছেড়ে দিবে! কিন্তু আমার কী হবে? আমাকে তো এখানেই পড়তে হবে। তাই না? আর সামিরা আপু তো আমাদের মাত্র এক ব্যাচ সিনিয়র!”

এবার আহনাফ বলে,
“তুমি অযথাই চিন্তা করছো। মারসাদ থাকতে সামিরা তোমার কিছু করতে পারবে না। তাছাড়া….”

আহনাফকে তার কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না আদিরা। আদিরা ফের বলে উঠে,
“উনি থাকতে সামির আপু কি করতে পারবেন না পারবেন সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমি কোন মিথ্যা নাটকে জড়াতে চাই না। কেন বুঝতে পারছেন না আপনারা?”

মাহি ও আহনাফ ফের একে অপরের দিকে তাকায়। মাহি ইশারায় আহনাফকে কিছু বুঝালে আহনাফ বাঁকা হেসে আদিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“মিথ্যা নাটক করার কী দরকার? সত্যি সত্যি করো!”

আহনাফের এহেনো কথায় আদিরা বোকা বনে যায়। গতকাল মারসাদও তাকে এভাবেই বলেছিল। আদিরা আহনাফের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে শুধায়,

“আপনি কী বলতে চাইছেন? আপনার বন্ধুও কালকে এমন ধরণের কথা বলেছিল।”

কথাটা শুনে আহনাফ মাহির দিকে তাকায়। সেইসাথে মাহিও। দুজনের চোখে-মুখে আনন্দের ছাঁপ। আদিরা এদের দুজনকে এতো খুশি দেখে বোঝার চেষ্টা করে যে এদের মনে কী চলছে। তদ্রুপ প্রশ্নও করে,

“আপনারা এতো খুশি কেন?”

মাহি তাড়াহুড়ো করে নিজের হাসি চেপে জবাব দেয়,
“কই না তো!”

আদিরা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড মাহির দিকে চেয়ে থেকে ফের বলে,
“যাইহোক। তুই তোর দাভাইকে বলে দিবি সে যেন আমাকে ফলো না করে। আমার রাস্তাঘাটে এসব ভালো লাগে না। আমি আগেও বলেছি।”

আদিরা এই কথাটা বলে শেষ করা মাত্রই হঠাৎই মারসাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সে আদিরার পেছনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

“আমি তোমাকে রাস্তাঘাটে ফলো করি?”

হঠাৎ এই চমকে উঠে আদিরা। অতঃপর পেছন ঘুরে মারসাদকে দেখে দু পা পিছিয়ে যায়। মারসাদ ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“তোমাকে আমি ফলো করি?”

কথাটা বলতে বলতে মারসাদ আদিরার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। আদিরা ভয়ে তাড়াতাড়ি মাথা দুই দিকে নাড়ায়। তারপর থামে মারসাদ। কেমন গম্ভীর হয়ে যায় তার মুখশ্রী। সে আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,

“তুমি কি চাও? আমি তোমার সামনে না আসি?”

মারসাদের হঠাৎ এরকম প্রশ্নের মাহি ও আহনাফ অবাক হয়। মাহি আহানাফকে ফিসফিসিয়ে শুধায়,
“আপনার বন্ধু কী করতে চাইছে বলেন তো?”

আহনাফও ফিসফিস করে চিন্তিত হয়ে বলে,
“আমি কীভাবে জানব? তোমার ভাই, তুমি বলো? তোমার ভাই কি করতে চাইছে? আর তোমার ভাইয়ের মুড তো তুমি বোঝই!”

আহনাফের থেকে এরকম উত্তর পেয়ে মাহি বেশ বিরক্ত হয়। সে বিরক্তি নিয়ে বলে,
“দাভাইয়ের মুড তো আমার থেকে ভালো আপনি বোঝেন।”

আহনাফ অসহায়তা প্রকাশ করে। মাহি তা দেখে মুখ বাঁকিয়ে সামনের দিকে মনোনিবেশ করে।

মারসাদ আবার শুধায়,
“কী হলো? বলো! আমি তোমার সামনে না আসলে তুমি খুশি হবে?”

আদিরা জবাব দিতে পারছে না। তার মন কেমন যেন হাঁসফাস করছে। একবার চাইছে না বলতে আরেকবার চাইছে হ্যাঁ বলতে। নিজের মনের দোটানায় ঝু*লন্ত সে! অস্থির লাগছে তার। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারছে না। আদিরা কিছু চিন্তা করতে না পেরে এক পা দু পা করে আবার পেছোতে লাগলো। কিন্তু মারসাদ স্থির। সে একদৃষ্টিতে আদিরার পেছানো দেখছে। অতঃপর আদিরা আবারও সেখান থেকে একপ্রকার পালিয়ে গেলো। আদিরা যেতেই মারসাদ হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো। মাহি এগিয়ে এসে রুষ্ট স্বরে মারসাদকে শুধালো,

“তুই কি করতে চাইছিস, দাভাই? হুট করে এগুলো বলছিস।”

মারসাদ কাটকাট জবাব দেয়,
‘আমি তো কিছুই করতে চাইছি না। ও কী চাইছে তাই জানতে চাইলাম।”

মাহি আবার কিছু বলতে নিলে আহনাফ এসে মাহির হাত ধরে ইশারায় থামতে বলে। তারপর সে মারসাদকে বলে,
“আদিরা চাইছে না সামিরার সামনে অভিনয় করতে। তাছাড়া আমারও মনে হয় আর অভিনয়ের তো দরকার নেই। তুই আদিরাকে সরাসরি বলে দে যে তুই ও-কে ভালবাসিস। তাহলেই তো….”

আহনাফ এবারও তার বক্তব্য শেষ করতে পারলো না! মারসাদ বলে উঠে,
“আমি একটু কুমিল্লা যাব। দুই-তিন দিন থাকব। গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। মেয়েদের হোস্টেলে সুমি, মৌমিদের সাথে মাহিকে রাখার ব্যবস্থা করে যাব। এখানকার যা যা দরকার তুই তো সামলে নিতেই পারবি। সামলে নিস প্লিজ।”

আহনাফ ও মাহি বুঝতে পারে না হুট করে মারসাদ এসব কেন বলছে! মাহি জিজ্ঞাসা করে,
“হঠাৎ কী হয়েছে, দাভাই? তুই কুমিল্লা কেন যাবি?”

“হ্যাঁ কী হয়েছে? আমাকে তো বলিসনি কিছু।”

মারসাদ ওদের প্রশ্নের জবাবে বলে,
“হঠাৎ করেই যাওয়ার প্রয়োজন পড়লো। তাই যাচ্ছি। এখন তো বলছি। আর আমি জানি, আমার অনুপুস্থিতিতে তুই সব সামলে নিবি।”

আহনাফের কাঁধ চাঁ*প*ড়ে মারসাদ চলে যায়। মারসাদ যেতেই আহনাফ মাহিকে বলে,
“তোমার ভাই খুব মুখচোরা বুঝেছ! আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ওর তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই। কারণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু হলে ও আমাকে বলে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ও আদিরার উপর রাগ করে যাচ্ছে।”

“আদুর উপর রাগ করার কী আছে? দোষ আমার ভাইয়ের। সে আদুকে সরাসরি মনের কথা না বলে তাকে কী না অভিনয় করতে বলে! তাহলে এটা আদুর মতো মেয়ে মানবে? আপনার বন্ধুকে বোঝান!”

তারপর মাহিও চলে যায়। আহনাফ যত্র দাঁড়িয়ে দীর্ঘ হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়ে।

——-

লাইব্রেরিতে বসে টেবিলে মাথা নুইয়ে আদিরা মারসাদের গম্ভীর মুখশ্রী ও কথাগুলো ভাবছে। সে কেন উত্তর দিতে পারলো না তাও ভাবছে। তার মন এখনও অস্থির হয়ে আছে। এই অস্থিরতা কেন হচ্ছে সেটাও সে বুঝতে পারছে না। সে তো মারসাদের থেকে দূরত্ব মেনে চলতে চায়। মারসাদের কারণেই সে সামিরার ক্রোধের শি-কার হয়। কিন্তু সে তো এসব চায় না। শান্তিতে ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে চায়। আদিরার চিন্তার জগতে বিচরণের সময় মাহি, রিন্তি ও সাবিহা সেখানে আসে। মাহি এসেই বলে উঠে,

“আমার মনে হয় দাভাই তোকে ভালবাসে!”

নিজের পাশ থেকে এই কথাটা শুনে একপ্রকার চমকে উঠে আদিরা। টেবিল থেকে মাথা উঠিয়ে দেখে পাশে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি বসা। আদিরা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালে সাবিহা বলে,
“শুধু মাহির না। আমার ও রিন্তির দুজনেরই মনে হয়। এই দেখ তুই ভাইয়াকে দেখতে চাস না বলে ভাইয়া কয়েকদিনের জন্য কুমিল্লা চলে যাচ্ছে!”

আদিরা যেন আরও অবাক হয়। সে অবাক স্বরে শুধায়,
“উনি কুমিল্লা যাচ্ছেন?”

“হ্যাঁ। কাজের বাহানায় যাচ্ছে। কিন্তু আমি জানি তার এখন তেমন কোন দরকার নেই কুমিল্লায়। হলে তো আমি বা তার বন্ধুরা জানতো। এখন তুই যদি গিয়ে দাভাইয়ের সাথে কথা বলিস তাহলে হয়তো দাভাই যাবে না।”

আদিরা থতমত খেয়ে যায়। সে বলে,
“কাজ থাকতে পারে। তোদের বলেনি। এটাকে এতো সিরিয়াস ভাবে নেওয়ার কী আছে? উনার কাজ আছে তাই যাচ্ছে। আর তুইও এতো চিন্তা করিস না। চল ক্লাস আছে, ক্লাসে যেতে হবে।”

তারপর আদিরা ব্যাগ নিয়ে উঠে গেল। মাহি, সাবিহা ও রিন্তি হতাশ হয়ে ওরাও উঠে গেল।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
তিন দিন পেরিয়ে গেছে আদিরা একটিবারের জন্যও মারসাদকে দেখেনি। এমনকি ক্যাম্পাসেও দেখা যায়নি। তা নিয়ে ক্যাম্পাসে কানাঘুষাও চলছে। ক্লাস শেষে হাঁটতে হাঁটতে আদিরা ও মাহি ওরা মিনারের কাছে আসে। মাহির চেহারায় চিন্তার ছাঁপ দেখে সাবিহা জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে তোর? কেমন চিন্তিত লাগছে তোকে।”

মাহি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“পরশু সন্ধ্যায় মাকে ফোন করেছিলাম, মা বলেছিল, দাভাই নাকি বিকেলেই কুমিল্লা থেকে রওনা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলো ফিরেছে কী না? আমি বলেছি তখনও ফিরেনি। কিন্তু দাভাই কালও এলো না। আজও এখনও না। মা কালকেও জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আহনাফের বুদ্ধিতে মিথ্যা বলেছি যে, ফিরেছে কিন্তু তার ছেলে এখন আমার ধারেকাছে নেই। যেন তার ছেলেকে কল করে জেনে নেয়। মা বলল, দাভাইয়ের নাম্বারে কল ঢুকে না। এখন আমি কীভাবে বলি যে আমিও দাভাইয়ের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছি! কোথায় যে গেছে?”

কথাগুলো শুনে আদিরার মন খুব খারাপ হলো। সে চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো। রিন্তি বলে,
“হঠাৎ করে ভাইয়া যাবে কই? কেউ জানে না?”

মাহি তখন নিজের দৃষ্টি তীক্ষ্ম করে সামনের দিকে চেয়ে বলে,
“কে যে জানে না এমন তো না! আমার তো মনে হয় দাভাইয়ের বন্ধুরা সব জানে। আর ঐ আহনাফের বা*চ্চা তো সবচেয়ে বেশি জানে!”

“আহনাফ ভাইয়ের আবার বাচ্চা হলো কবে? আমি তো তোকে কখনো প্রেগন্যান্ট দেখিনি!”

কথাটা বলেই সাবিহা হেসে ফেলল। সাথে রিন্তিও। মাহি রেগে ওদের কয়েকটা কি/ল ঘু*ষি দিয়েই তবে ক্ষান্ত হলো। তারপর মাহি বলে,
“আমাদের এখন আহনাফের ফোন হাই*জ্যা/ক করতে হবে!”

“কিন্তু কীভাবে?”

“আমার মনে হয় মৃদুল ভাই বা রাফিন ভাইয়ের ফোন হাই*জ্যা/ক করলে ভালো হবে। আহনাফ ভাইয়ের ফোন নেওয়া অত সহজ হবে না।”

“আরে আহনাফের ফোনই লাগবে। তোর কী মনে হয়? আমার দাভাই সবার সাথে এক এক করে কল করে কথা বলবে? যেহেতু ওরা খুব শান্ত আছে, রিল্যাক্সে আছে। তার মানে দাভাই যোগাযোগ করে ওদের সাথে। আর যোগাযোগটা সেই এক ব্যক্তির সাথেই করবে। আর সেটা আহনাফ!”

“কিন্তু উনার ফোন তো নেওয়া খুব টাফ হবে না? ভাইয়া খুব চ*তুর।”

“রবিন ভাই ছাড়া দাভাইয়ের কোন বন্ধু চ*তুর না? হাহ্! আমরা এখন আহনাফের কাছে যাব। তারপর বলব…. কী বলব?”

“কী বলব?”

মাহি হতাশ হয়ে বলে,
“কী বলব সেটাই তো বুঝতে পারছি না! তারউপর যা ধু*রন্ধ*র লোক! বুঝে না ফেলে!”

মাহি, সাবিহা, রিন্তি তিন জনেই চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদিরা খুব শান্ত স্বরে বলে,
“বলিস, আদিরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সাথেই ছিল। হঠাৎ তার হোস্টেলের এক বান্ধবী কল করাতে ভার্সিটির প্রধান ফটকের কাছে গেছিলো। কিন্তু অনেকক্ষণ হলো এখনও আসেনি। আর ফোন বন্ধ বলছে।”

আদিরার মুখ থেকে এমন কথা শুনে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি তো অবাক! ওরা তিন জনে আদিরার মুখের দিকে হা করে চেয়ে আছে। তিন জনকে নিজের দিকে এভাবে তাকাতে দেখে আদিরা দৃষ্টি নত করে বলে,

“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমার জন্যই তো এসব হচ্ছে। তাই না? তাই আমাকেই সব ঠিক করতে হবে।”

আদিরার মুখ থেকে হঠাৎ এইরকম কথা শুনে মাহি সাবিহা ও রিন্তি যারপরনাই অবাক হয়। মাহি বলে,
“তোর জন্য কেন হবে? তোর দোষটা কোথায়? সবসময় নিজেকে দোষ দিবি না তো!”

“আমারই দোষ। উনি…”

“চুপ! আরেকবার মুখ দিয়ে এসব উল্টাপাল্টা কথা বলে দেখিস! আসলে কী জানিস, তোরা দুইটাই পা*গল! আর পা-গলের সাথে পা/গলকেই মানায়!”

আদিরা বিপরীতে কিছু বলল না। সে মনে মনে নিজেকেই বারংবার দোষী করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সাবিহা বলে উঠে,
“মাহি, আদুর আইডিয়াটা কিন্তু খারাপ না। ও কিন্তু বেশ ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছে। তুই চিন্তা করে দেখ, আমরা যদি এখন আহনাফ ভাই, মৃদুল ভাইয়াদের কাছে গিয়ে বলি যে আদিরাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে উনারা বেশ চিন্তিত হবেন। আর মারসাদ ভাইয়ের অনুপুস্থিতিতে উনারাই কিছু একটা করার চেষ্টা করবেন। আর নয়তো চেষ্টা করবে মারসাদ ভাইয়াকে খবরটা জানাতে। তখনই হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিতে হবে।”

মাহিও ভাবে। অতঃপর বলে,
“মন্দ না। কিন্তু রিস্কি। আমরা তিনজনে পারব না। সুমি আপু, রাত্রি আপু, মৌমি আপুকেও বললে কেমন হয়? আর আদুকে ওদের কাছেই হোস্টেলের রুমে লুকিয়ে রাখি?”

“ঠিক বলেছিস। এটা করলে আরও ভালো হবে। কারণ ছেলেরা গার্লস হোস্টেলে ঢুকতে পারবে না। তাই আদিরা সেখানে সেফলি লুকাতে পারবে। আবার কাজ হয়ে গেলে আমরা আপুদের মধ্যে কাউকে ফোন করে জানিয়ে দিব।”

“একদম তাই। তাহলে চল প্ল্যানে লেগে পড়ি।”

“তা তো লাগবোই কিন্তু রিন্তিকেও একটা কাজ করতে হবে।”

প্ল্যানের মাঝে হুট করে রিন্তির কথা উঠাতে রিন্তি অবাক হয়ে শুধায়,
“আমি? আমাকে কী করতে হবে?”

সাবিহা দুষ্ট হেসে বলে,
“মাহি তো আহনাফ ভাইয়াকে ডিল করবে। আর তুই রাফিন ভাইয়াকে ডি*ল করবি। রাফিন ভাই কিন্তু কম চ*তুর না। এর মা*থা থেকে বেশ প্যা*চালো বুদ্ধি আসে। আর আমি আমার সাথে সুমি আপু বা মৌমি আপুকে নিব। রবিন ভাই তো এমনেই বোকাসোকা। মৃদুল ভাইকে হ্যান্ডেল করা তেমন টাফ হবে না। তবে টার্গেট আহনাফ ভাইয়ের ফোন! ওটা ছি*নিয়ে নিতেই হবে। তবে চারজনেে ফোনই আমরা নিব। গট ইট?”

অতঃপর সাবিহা হাত বাড়িয়ে দিলে মাহি ও রিন্তি হেসে হাতে হাত মিলায়।

——
“সুমি আপু, তোমরা আদিরাকে দুই ঘণ্টার জন্য এখানে রাখবে। আর ওর ফোন কিন্তু সুইচড অফ। আমরা গিয়ে আহনাফ, মৃদুল ভাইয়া, রাফিন ভাইয়া ও রবিন ভাইয়াকে বলব, আদিরাকে প্রায় এক ঘন্টা যাবত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হঠাৎ ওর একটা হোস্টেলের ফ্রেন্ড আর্জেন্ট দেখা করতে বলেছিল। তাই ও ভার্সিটির গেটের কাছে গিয়েছিল। তারপর থেকে ওর কোনো খবর নেই। হুট করে ওর ফোনও বন্ধ। বুঝতে পেরেছো?”

সুমি বোকার মতো চেয়ে বলে,
“এতে কী হবে? তোমাদের কি মনে হচ্ছে মারসাদ আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে আছে?”

মাহি নিজের কপাল চাঁ*পড়ে বলে,
“আরে আপু, সেটা না। ভাইয়া যেখানেই থাকুক আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাইয়াকে ট্রেস করা। হয় ভাইয়াকে ট্রেস করতে পারব যদি লুকিয়ে থাকে। মানে তুমি যেভাবে বললে। আর যদি না থাকে তাহলে আমরা ওই চার বন্ধুর ফোন আ-ত্ম*সাৎ করব। বুঝতে পেরেছো?”

রাত্রি এসে বলে,
“সব না হয় বুঝলাম কিন্তু যদি ধরা পড়ে যাই? তোমরা ওদের বুদ্ধিকে আন্ডারস্টিমেট করো না।”

রাত্রির কথা শুনে রিন্তি কিছুটা ভীত হলো। কারণ রাফিনকে সে ভুলিয়ে আদিরার হোস্টেলের দিকে একা নিয়ে যাবে। যদি সে ধরা পড়ে? ঢোক গিলল রিন্তি। সাবিহা কিছু একটা আইডিয়া করে মৌমির হাত খ*প করে ধরে। এতে মৌমি আঁতকে উঠে। সাবিহা কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলেছে এমন উত্তেজনা নিয়ে বলে উঠে,

“এই মৌমি আপু, আমাদের সাথে আমরা আশিক ভাইয়াকেও সামিল করব।”

“এ্যাঁ!”

মৌমি যেন বোকা বনে যায়।
“আরে হ্যাঁ আপু। তুমি এখনই আশিক ভাইয়াকে কল করো। তোমাকে কথা বলতে হবে না, আমি সবটা বুঝিয়ে বলব।”

মৌমি ইতস্তত করে।
“কিন্তু ও তো….”

এবার মাহিও সাবিহার সাথে তাল মেলায়।
“কোনো কিন্তু না, আপু। আশিক ভাইয়া সবটা বুঝবেন। আমি জানি। তোমার ফোনটা খালি দাও। আমি কল করছি।”

ওরা মৌমিকে বাধ্য করে আশিকের নাম্বারটা বের করে দিতে। কিন্তু এদিকে মৌমি আশিকের সাথে প্রায় এক দিন যাবত কথা বলছে না। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে আশিক বারবার মানানোর চেষ্টা করলেও মৌমি তাকে সুযোগই দিচ্ছে না। কিন্তু এখন মাহি ও সাবিহাকে সেটা কীভাবে বুঝাবে!
এদিকে মৌমিকে দাঁ*ত দিয়ে আঙুলের নখ কা*-টতে দেখে সুমি ও রাত্রি মিটিমিটি হাসছে। রাত্রি সুমির কানে কানে বলে,

“একেই বলে এক তীরে দশ শি*কার!”

সুমিও মিটিমিটি হাসে।

—-
সবাই নিজেদের কাজ বুঝে নিয়েছে। মৌমি আদিরার সাথে হোস্টেলে রয়ে গেছে। সুমি ও রাত্রি আগের থেকেই আহানাফ ও মৃদুলদের সাথে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। তখনই সেখানে হন্তদন্ত হয়ে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি হাজির হয়। ওদেরকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে সবাই কৌতুহলী ও উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকায়। সুমি খানিক উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধায়,

“কী হয়েছে? তোমরা এভাবে ছুটে আসলে কেন?”

সাবিহা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

“আদুকে অনেকক্ষণ যাবত খুঁজে পাচ্ছি না। ওর এক ফ্রেন্ড প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে ও-কে কল করে আর্জেন্ট ভার্সিটির গেটের সামনে যেতে বলেছিল। ও গেল। তারপর থেকে ওর কোনো খবর নেই। আর ফোনও বন্ধ!”

সাবিহার কথা শুনে আহনাফ, মৃদুল রাফিন ও রবিন ওদের সবার চোখে-মুখে একটা চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-১৭+১৮+১৯

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
আদিরা একটা মোটা গাছের আড়ালে কোনোরকম লুকিয়ে আছে। সে মেই*ন গেইটের কাছে আসার পরেই এই মা*রামা*রি লেগেছে। তাই মেইন গেইট থেকে বেরোতে পারেনি। মারসাদ বাইক স্টার্ট দিয়ে ভার্সিটির গেইট ছাড়িয়ে যেতে নিয়ে বেখেয়ালিতে আশেপাশে নজরদারি রাখার সময় তার হুট করে মনে হয় সে কিছু দেখেছে! তারপর বাইক থামিয়ে পিছনে ঘুরে সেদিকে চেয়ে দেখে শাড়ির আঁচলের অংশ দেখা যাচ্ছে। মারসাদের সন্দেহ হয়। হয়তো আদিরা এখানে। কারণ আদিরার শাড়ির রঙের সাথে এই আঁচলের রঙটাও মিলে গেছে। অতঃপর মারসাদ বাইক সাইড করে বাইক থেকে নেমে অবস্থা বুঝে ওই গাছটার কাছে যায়।

পু*লিশ এসে লা*ঠিচার্জ করে বহিরাগতদের তাড়ানোর প্রচেষ্টা করছে। মারসাদ দ্রুত সেই গাছটার কাছে গিয়ে দেখতে পায়, আদিরা ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে। মারসাদ আদিরার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর মারসাদ আদিরার মাথায় হাত রাখতেই থমকে যায় আদিরা। এতক্ষণ যাবত সে ভয়ে, আতঙ্কে নিজেকে শক্ত করে বসে ছিল। কিন্তু এখন? মাথা ঘুরছে তার! ধীরে ধীরে মাথা ঘুরানোর আগেই একটা বিকট শব্দ হয়। এবার আর নিজের সাহস ধরে রাখতে পারলো না সে। চিৎকার করে উঠতেই একটা হাত তার মুখ চেপে ধরে টান দিয়ে গাছের অন্যপাশের আড়ালে নিয়ে যায়। এদিকে হঠাৎ আকস্মিক কাণ্ডে আদিরা আরও বেশি ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যায়। আদিরা এখনও তার মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটির চেহারা দেখেনি। ইতোমধ্যে তার শরীরে আর বল নেই, সে লোকটির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিবে। শ*রীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও কেমন কাজ করছে না! চোখ নিভু নিভু হয়ে আসছে। ঠিক তখনি একটা কণ্ঠস্বর কানে আসে তার।

“তুমি এখানে কী করছো? তোমাকে বলেছিলাম, ওখানে দাঁড়াও। আমি বাইক নিয়ে আসছি। তবে আমার কথার মূল্য না দিয়ে চলে এলে কেন?”

কণ্ঠস্বরটা কিছুটা পরিচিত লাগাতে আদিরার মস্তিষ্ক থেকে চাপা আতঙ্ক কমতে শুরু করে। কিন্তু সে প্রত্যুত্তর করার মতো অবস্থায় নেই। তার এই ক্ষুদ্র জীবনের এই প্রথমবার এরকম মা*রামা*রি নিজের চোখের সামনে দেখছে। কতোটা আতঙ্ক ও ভয়ে সে আছে তা সে মুখে বলেও প্রকাশ করতে পারবে না। তার ফোনটাও এখানে এসে লুকানোর সময় হড়বড়িতে কোথাও পড়ে গেছে।

আদিরার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে মারসাদ আদিরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়। তারপর ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আমার কথা অমান্য করে এখানে কেন এসেছ? বলেছিলাম না, ওখানে দাঁড়াও? তাহলে দাঁড়ালে না কেন? কী হলো? জবাব দাও?”

তৎক্ষণাৎ আদিরা নিজের শ*রীরের ভার বইতে অসমর্থ হয়ে পড়লো। নিভু নিভু আঁখি জোড়াও আর নিজের অক্ষিপল্লবের ভার নিতে পারছে না। আচমকা হেলে পড়লো আদিরা! আদিরার অবস্থা দেখে মারসাদ চকিতে ও-কে ধরে ফেলে। তারপর আদিরার গালে আলতো থা*প্প*ড় দিয়ে ডাকতে থাকে,

“আদিরা! এই আদিরা? কী হলো তোমার?”

আদিরার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ও-কে আস্তে ধীরে গাছের গুড়ির কাছে বসায়। তারপর আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। কীভাবে আদিরাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে সেই চিন্তা তার।

______

আহনাফ মাহিকে নিয়ে মাহিদের ফ্ল্যাটের বিল্ডিংয়ের কাছে এসে বাইক থামায়। তারপর একটু আগে আসা ফোনের নোটিফিকেশন দেখতে ফোনটা পকেট থেকে বের করে। মাহি বাইক থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করে,

“আপনি এখন কই যাবেন?”

আহনাফ জবাব দেয় না। সে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে দেখছে। তা দেখে মাহিও কৌতুহল হলে আহনাফের ফোনের দিকে ঝুঁকে। আহনাফ তৎক্ষণাৎ ফোনেে স্ক্রিণ অফ করে তাড়াহুড়ো করে মাহিকে বলে,

“তুমি বাসার ভেতরে চলে যায়, আমাকে এখনি যেতে হবে।”

মাহির কিছুটা সন্দেহ হয়। মাহি পালটা প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে? আর ভার্সিটিতে কী হয়েছে? কার মেসেজ ছিল? কী বলছিল?”

আহনাফ মাহিকে জানাতে চাইলো না। সে বলল,
“কিছু হয়নি। তুমি বাসার ভেতরে যাও। আমার একটা কাজ আছে।”

আহনাফ বাইক স্টার্ট দিতে নিলে মাহি ঝটপট বাইকের চাবি খুলে নেয়। বোকা বনে যায় আহনাফ। মাহি বলে,

“আপনি আমাকে না বলে যেতে পারবেন না। কী হয়েছে বলুন।”

আহনাফ শান্ত স্বরে বলে,
“প্লিজ, মাহি। চাবিটা দাও। আমার আর্জেন্ট যেতে হবে।”

“হ্যাঁ যাবেন তো। কিন্তু আমাকে বলে যাবেন। আপনারা দুই বন্ধু আমাকে শুধু টেনশনে রাখেন। দাঁড়ান, আমি দাভাইকেও কল করি।”

মাহি নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করার সময় আহনাফ মাহির হাত থেকে চাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। মাহি চমকে আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,

“তোমাকে বলব। কিন্তু এখন না। এখন সব ব্যাখ্যা করার সময় না।”

অতঃপর আহনাফ বাইক নিয়ে চলে গেলো। মাহি কিছু বলতেও পারে না।

______
মারসাদ দেখে ভার্সিটির ভেতর থেকে সাগরের বন্ধুরা হাতে লম্বা লম্বা ধা*রালো অ*স্ত্র নিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় অবস্খা আরও ভ*য়াবহ হওয়ার পথে। কীভাব সে আদিরাকে এখান থেকে সরিয়ে নিবে তা চিন্তা করছে। মারসাদ মৃদুলকে কল করলো।

“মোটা লা*ঠি কতোগুলো নিয়ে আয়। আর সোহান, হৃদয়দেরও নিয়ে আয়। সাগরের দল ধা*রালো অ*স্ত্র নিয়ে নামছে।”

অবস্থা বেশ বেগতিক। সুমি, মৌমিদের যে আসতে বলবে, এসে আদিরাকে নিয়ে যেতে বলবে, সেটাও সম্ভব না। হোস্টেল এখান থেকে বেশ দূরে। তাই ওদেরকে বিপদে ফেলতে ইচ্ছে করলো না মারসাদের। এখন আদিরার জ্ঞান ফেরাতে হবে। উপায়ন্তর না পেয়ে মারসাদ আদিরার ব্যাগ চেক করলো। সেখানে পানির বোতল তো পেলো কিন্তু তাতে অল্প পানি আছে। মারসাদ দ্রুত বোতল খুলে হাতে সামান্য পানি নিয়ে আদিরা মুখমণ্ডলে ছিঁটা দেয়। তারপর কয়েকবার আলতো থা*প্প*ড় দিয়ে আদিরার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। এতে সে সফলও হয়। পিটপিট করে নয়নজোরা খুলতে শুরু করে আদিরা। তা দেখে মারসাদের মুখে খানিক স্বস্তির হাসি ফুটে উঠে। মারসাদ আদিরাকে বলে,

“ভয় পেয়ো না। আমি আছি। বোতলে আর খুব সামান্য পরিমাণ পানি আছে। এটুকু পানি খেয়ে রিল্যাক্স হও।”

আদিরা মারসাদের কথাগুলো শুনলো। কিন্তু তার খুব দুর্বল লাগছে। ঠিক ভাবে বসেও থাকতে পারছে না। এদিকে ঝামেলা স্থান থেকে আর্তচিৎকারের শব্দ ধেয়ে আসছে। ভয়ে সত্যি তার গলা শুকিয়ে গেছে। আদিরা খুব ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা ধরতে চাইলে মারসাদ আদিরার অবস্থা বুঝে নিজেই আদিরার মুখের কাছে পানির বোতল ধরে। মাত্র এক ঢোক পানিই পান করতে পারে আদিরা। আর পানি নেই। তারপরও পানি পান করার পর কিছুটা ভালো লাগছে তার। আদিরা মৃদু, দুর্বল কণ্ঠে বলে,

“আমি এখানে আর থাকব না। হোস্টেলে যাব। আমার খুব খারাপ লাগছে।”

“হ্যাঁ যাবে। তবে এখন তুমি বের হতে পারবে না। ঝামেলা আরও বাড়বে। তোমাকে আমি এখান দিয়ে যথাসম্ভব আড়াল করে মেয়েদের হোস্টেলের কাছে দিয়ে আসব। তারপর ঝামেলা মিটলে বের হবে।”

আদিরা একদিকে মাথা নাড়ে। মারসাদ আদিরাকে কোলে তুলে নিতে চাইলে আদিরা নড়ে বসে। সে ফের দুর্বল স্বরে বলে,
“আমি হেঁটেই যাব, প্লিজ।”

মারসাদও মেনে নিলো। এখন কোলে তুলে নেওয়াটাও রিস্কি। আড়াল করেই নিয়ে যেতে হবে। তারপর মারসাদ আদিরাকে নিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের দিকে পা বাড়ায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
আদিরাকে ভার্সিটির ছাত্রী হোস্টেলের কাছে দিয়ে এসেছে মারসাদ। এরপর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর ভার্সিটির পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। পু*লিশ সাগর সহ আরও কয়েকজনকে গ্রে*ফতার করে নিয়ে গেছে। আহনাফ, মৃদুল ও রবিন হাতে-পায়ে চোট পেয়েছে। রবিন মা*থাতেও বা*ড়ি খেয়েছে। রবিন কাতর স্বরে বলছে,

“আমার মা*থা কী ফে*টে গেছে, দোস্ত? আমি কি ম*রে যাব?”

রাফিন সেখানে র*ক্ত জমাট হয়ে থাকা স্থানটা দেখছে আর চিন্তা করছে, ‘যদি এখন রবিনকে বলে, মা*থা একটু ফে*টেছে তাহলে বেচারা আরও ভয় পাবে।’ নার্সরা অন্যান্য ছাত্রদের ফার্স্টএইড করাতে ব্যস্ত থাকায় রাফিন রবিনরে ক্ষত স্থান দেখছে। তাছাড়া ছু*ড়ির আঘা*তে হা*তও কে*টেছে তবে সেটা তেমন গভীর না। আহনাফ ও মৃদুলেরও হাত কে*টেছে। পায়ে বা*ড়িও খেয়েছে। মারসাদ ও রাফিন পিঠে ও পায়ে বা*ড়ি খেয়েছে, তাই দুজনে বাকি তিনজনের তুলনায় ভালো আছে। একটু পর দুইজন নার্স এসে ওদেরকে ড্রেসিং করাতে নিয়ে যায়। রাফিন মারসাদের কাছে খোঁ*ড়াতে খোঁ*ড়াতে এসে বলে,

“দোস্ত, আমার মনে হয় পিঠে এক্সরে করতে হবে।”

“কেন?”

“কেন মানে? নিলয়ের বাচ্চায় কি আমারে আস্তে বা*ড়ি দিছে? আমি তো রবিনের মা*থায় ই*টের বা*ড়ি লাগার পর ওরে ধরতে নিজের লা*ঠি ফা-লায় দৌঁড় দিছিলাম। তখন শা*লায় আমারে পেছন থেকে এতো জোড়ে ঘার ও পিঠের কাছে বা*ড়ি দিছে! আর একটু জন্য মা*থায় লাগে নাই। তুই যদি ওই সময় না আসতি তাইলে আমার মা*থায়ও ওই নিলয়ের বা-*চ্চায় বা*ড়ি দিতো।”

“আচ্ছা করিস। ওদের ড্রেসিং করিয়ে ঠিকমতো হোস্টেলে দিয়ে এসে তোকে হসপিটালে নিয়ে যাব।”

রাফিন হালকাভাবে মাথা নাড়ে। তারপর হুট করে তার কিছু মনে পড়াতে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“এই, তুই আদিরার কোনো খোঁজ নিছিস?”

মারসাদেরও এবার মনে পড়ে। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফোন অফ! বিরক্তিতে বলে উঠে,
“শিট! চার্জ যে কম ছিল মা*থাতেই নেই। এই তোর ফোনটা দে।”

রাফিন তার প্যান্টের পকেটে ফোন দেখালো। মারসাদ সেখান থেকে ফোন বের করে তারপর রাফিন লক খুলে দিলে সুমিকে কল করে। সুমিও যেন ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সে রিসিভ করেই বলে উঠলো,

“তোরা ঠিক আছিস, রাফিন? কই এখন তোরা?”

সুমির উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বরে মৃদু হাসলো মারসাদ। তারপর বলল,
“আমি মারসাদ। আমরা ঠিক আছি। সবার কিছুটা চো*ট লেগেছে, এখন মেডিকেল সেন্টারে আছি। রবিনের বোধহয় মা*থা সামান্য ফে*টেছে।”

সুমি আঁতকে উঠে।
“কী বলিস? এখন কী অবস্থা ওর? ছেলেটা এমনিই ভীতু।”

সুমির কথা শুনে পাশ থেকে মৌমি, রাত্রিও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে। মারসাদ জবাব দেয়,
“দোয়া কর, বেশি লাগেনি। তবে ও অনেক ভয় পেয়েছে।”

মৌমি বলে উঠে,
“আমরা আসি ওখানে?”

“না। দরকার নেই। পরে ঝামেলায় পড়লে? তোরা বরং আজ হোস্টেল থেকে বের হোস না।”

“আচ্ছা। তোরাও সাবধানে থাকিস। আর নিজের খেয়াল রাখিস।”

“হু।”

তারপর মারসাদের দৃষ্টি রাফিনের দিকে যেতেই দেখে রাফিন হা করে তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। অতঃপর মারসাদ খানিক ইতস্তত করে সুমিকে জিজ্ঞেসা করে,

“আচ্ছা শোন না।”

“হ্যাঁ বল।”

“আদিরাকে বল, আমি একটু পর এসে ওকে ওর হোস্টেলে পৌঁছে দিব।”

মারসাদের কথা শুনে রাত্রি বলে উঠে,
“কিন্তু ও তো চলে গেছে!”

মারসাদ কিছুটা অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। সে মেয়েটাকে বারবার বলে এসেছিল, ও যেন মারসাদকে না জানিয়ে হোস্টেল থেকে বের না হয়। মারসাদ এসেই ওকে নিয়ে যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছোটো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মারসাদ বলল,

“ওহ। কখন গেলো?”

“এই তো মিনিট বিশেক হলো। আমরা বলেছিলাম, তোর জন্য অপেক্ষা করতে। তুই এসে নিয়ে যাবি। কিন্তু শুনলো না। বলল, রাস্তায় যেতে যেতে তোকে ফোন করে বলে দিবে। তোকে বলেনি তাই না?”

মারসাদ আর প্রশ্নের জবাব দিলো না। কথা শেষ করতে বলে,
“হয়তো কল করেছে। আমার ফোনের চার্জ শেষ। আচ্ছা তোরা সাবধানে থাক। রাখি এখন।”

তারপর মারসাদ কল কেটে রাফিনের ফোন ফিরিয়ে দিলো। তারপর চুপ করে রাফিনের পাশে বসে পড়লো। রাফিন মারসাদের নিরবতার কারণ বুঝলো। তাই বিষয়টাকে হালকা করতে বলল,

“নিজেই তো বললি ফোনের চার্জ শেষ। তাহলে আবার এমন গুমোট ভাব নিয়ে বসে রইলি কেন?”

মারসাদ জবাব দেয়,
“কিছু না। বাদ দে। ওদের ড্রেসিং হলে তোকে নিয়েও তো এ*ক্সরে করাতে যেতে হবে।

রাফিন আর ও-কে ঘাটাতে চাইলো না। কিছুক্ষণ পর আহনাফ, মৃদুল ও রবিন আসে। তারপর মারসাদ ও রাফিন ওদেরকে হোস্টেলে নিয়ে যায়। ওদেরকে হোস্টেলে রেখে মারসাদ রাফিনকে নিয়ে হসপিটালে যায়।

——–
আদিরা ভার্সিটির পরিবেশ খানিক স্বাভাবিক হতেই তার স্টুডেন্টকে পড়াতে যেতে হবে বলে বের হয়ে গেছিল। কাল তার স্টুডেন্টের পরীক্ষা বলে আজকে দ্বিতীয়বারের মতো পড়াতে যাচ্ছে। শাড়ি পরার কারণে সে রিকশায় উঠেছে। হুট করে রাস্তায় রিকশার সামনে একটা বাইক এসে থামে। রিকশাচালক তড়িঘড়ি করে রিকশা থামাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। আদিরা তো রিকশা থেকে পড়েই যেতে নিয়েছিল! কিন্তু নিজেকে সামলে সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। হেলমেটের কারণে মুখ দেখা যাচ্ছে না। পরনে সাদা-কালো চেক চেক টিশার্ট ও টাইট জিন্স! লোকটি বাইক থেকে নেমে এসে রিকশার সামনে দাঁড়ায়। রিকশাচালক লোকটির সাথে তর্ক করতে চাইলে লোকটি বলে,

“তোর লগে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি তো এই ফুলকলিরে দেখতে আইছি।”

কথাটা শুনে আদিরা ঘাবড়ে যায়। কে এই লোকটি তা সে বুঝতে পারছে না। ভয়ে রিকশার হুড শক্ত করে ধরে বসে আছে। লোকটি আদিরার কাছে এগিয়ে এসে রিকশার হুডে হাত রেখে কালো হেলমেটের সামনের গ্লাসটা উঠায়। তৎক্ষণাৎ লোকটির চেহারা দেখে আদিরা আরও ঘাবড়ে যায়। ঘামতে শুরু করে সে। লোকটা তার হলুদ দাঁত গুলো কে*লিয়ে বলে উঠে,

“কেমন আছো, ফুলকলি? কতোদিন পর তোমারে দেখলাম! আর দেখলাম তাও পরীর বেশে! আহা! চ*ক্ষু আমার জুড়ায় গেলো!”

আদিরা দেলোয়ারকে দেখে ও তার কথা শুনে কী করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ঠিক দুপুর সময় হওয়ায় রাস্তাটা নির্জন। এই রোডটা যদিও সবসময় নির্জনই থাকে। আদিরা সবসময় সকালেই এই দিকে আসে। আদিরা রাস্তার আশেপাশে অস্থির হয়ে তাকাচ্ছে। তা দেখে দেলোয়ার বলে,

“আমারে তুমি এতো ডরাও কেন? তোমার ওই আশিকরে দিয়া হুদাই আমারে মা*ইর খাওয়াইছিলা। কামডা কি ভালা করছিলা? তোমার আশিকে আমারে তো চিনে না। তোমারে আমার খুউউব মনে ধরছে বইলাই তোমার লগে খারাপ কিছু করতাছি না! নাইলে…..! থাক আর ডরাইয়ো না। কই যাইতাছিলা যাও। তয় তোমার ওই আশিকের লগে যেন তোমারে আমি ঘোরাঘুরি করতে না দেখি। হ্যাঁ?”

আদিরা শুকনো ঢোক গিলে। তার গলা শুকিয়ে আসছে। দেলোয়ার আদিরার জবাব চেয়ে আবার কিছুটা ধ*মকের সুরে বলে উঠে,
“কী? উত্তর দাও না কেন?”

আদিরা চমকে কেঁপে উঠে। দ্রুত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। তারপর দেলোয়ার খুশি হয়ে আদিরার দিকে হাত বাড়াতে চাইলে আদিরা সিটকে অপরপাশের হুডের সাথে লেপটে যাওয়াে চেষ্টা করে। দেলোয়ার তা দেখে বিশ্রি হেসে বলে,

“যাও এহন। আবার দেখা হইব।”

তারপর দেলোয়ার তার বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট করে উলটো দিকে ঘুরিয়ে চলে যেতে যেতে আদিরার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কি*স ছুঁ*ড়ে বিশ্রিভাবে হেসে চলে যায়। দেলোয়ার যাওয়ার পর রিকশাচালক এসে বলে,

“আফা, আপনে ডরাইয়েন না। এইগুলারে আমি চিনি। মা*স্তান এগুলা! রাতে নে*শাপানি খাইয়া টাল হইয়া থাকে। আবার কোনো কোনো রাইতে চু*রিও করে। পু*লিশের গু*তা*নিও কম খায় নাই! তাও সরম হয় না।”

রিকশাচালকটি যতো যাই বলুক, আদিরা ভিষণ আতঙ্কে আছে। সামনে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা ভাবতেও তার দ*মবন্ধকর লাগছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
মারসাদ রাফিনকে হসপিটালে এক্সরে করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাফিনের থেকে ফোন চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংকটাও নিয়ে নিয়েছিল। এরপর রাফিনকে এক্সরে করিয়ে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে মারসাদ আদিরার নাম্বারে কল করে। কিন্তু আদিরা কল তুলে না। তারপর সে ফের দ্বিতীয়বারও কল করে। এবারে আদিরা কল কেটে দেয়। এখন এই মূহুর্তে মারসাদের রাগ হচ্ছে আদিরার উপর। কিন্তু রাগ করে থাকলে তো খবর জানতে পারবে না। তাই সে মাহিকে কল করে। কল রিসিভ করেই মাহি উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করা শুরু করে,

“তুই ঠিক আছিস তো, দাভাই? কোথায় তুই? তোকে কতবার কল করলাম। তোর ফোন বন্ধ বলছিল। তারপর আহনাফ ভাইকে কল করলাম। সেও কল তুলছে না।”

“আমি ঠিক আছি, মাহি। তুই চিন্তা করিস না। টুকটাক লেগেছে আমাদের। তবে সেড়ে যাবে। শোন, তোকে যে কারণে কল করেছি। তুই তোর বান্ধবীকে কল করে জিজ্ঞাসা কর, সে সেফলি হোস্টেলে পৌঁছেছে কি না?”

মাহি স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রত্যুত্তরে বলে,
“কেন তুই কল কর? আর তুই না ও-কে হোস্টেলে পৌঁছে দিবি বলেছিলি?”

মারসাদ ছোটো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“বলেছিলাম তো! কিন্তু তোর বান্ধবী কি আমার কথা শোনে? আমি আসতে আসতেই সে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছিল। তারপর পথে গ*ন্ডগো-ল দেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। আমি দেখেছিলাম সেটা। তারপর তাকে সুমি, মৌমিদের কাছে রেখে এসেছিলাম যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও-কে হোস্টেলে পৌঁছে দেব। কিন্তু তোর বান্ধবী সেখান থেকে চলে গেছে। এখন আমি কল করছি কল ধরছে না।”

মারসাদের বলা কথাগুলো শুনে মাহির কিছুটা হাসিও পায়। কিন্তু এখন যদি শব্দ করে হাসে তবে ভাইয়ের থেকে মা*র একটাও মাটিতে পড়বে না। কোনোমতে হাসি চেপে রেখে মাহি বলে,

“আচ্ছা দাভাই, আমি ও*কে কল করে জিজ্ঞাসা করছি। তারপর তোকে জানাচ্ছি। তুই চিন্তা করিস না তো। এরকম হয়! মেয়েরা সবাইকে পাত্তা দিতে চায় না!”

“মানে?”

মারসাদের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ! মাহি মুখ চেপে ফের হাসি সংযত রেখে বলে,
“মানেটা হচ্ছে, বা*ঘকেও বি*ড়া-ল হতে হয়, দাভাই!”

মারসাদ বিরক্ত হয়। সে বলে,
“বেশি বেড়ে যাচ্ছিস তুই!”

“আচ্ছা আচ্ছা ফোন রাখি। আদুকে জিজ্ঞাসা করে তারপর তোকে জানাচ্ছি।”

এরপর মাহি কল কে*টে কিছুক্ষণ হেসে আদিরাকে কল করে। মাহির প্রথম কলেই আদিরা কল রিসিভ করে। মাহি শুধায়,
“কী রে, আদু? তুই হোস্টেলে পৌঁছেছিস? ভার্সিটিতে নাকি অনেক ঝামেলা হয়েছিল। ঠিকভাবে পৌঁছেছিস তো?”

আদিরা জবাবে বলে,
“আমি এখনো হোস্টেলে যাইনি। স্টুডেন্টের বাসায় এসেছি। স্টুডেন্টের কাল থেকে পরীক্ষা তো, তাই ও-কে আজকেই আবার পড়িয়ে দিচ্ছি।”

“ওহ আচ্ছা। কখন যাবি?”

“এই তো, আর আধাঘণ্টা পড়াব। তারপর বের হবো।”

“আচ্ছা সাবধানে যাস।”

মাহি আদিরার সাথে কথা বলা শেষ করে আবার তার দাভাইকে কল করে। কল রিসিভ করেই মারসাদ তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে,
“কী বলল তোর বান্ধবী?”

“বলল এই যে, সে এখনো হোস্টেলে যায়নি। সে….”

মারসাদ মাহিকে তার বাক্য সম্পূর্ণ করতে দিল না। মারসাদ সন্দিহান প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“এখনও হোস্টেলে যায়নি মানে? সে কোথায় এখন?”

“রিল্যাক্স, দাভাই। আদু ঠিক আছে। কালকে ওর স্টুডেন্টের পরীক্ষা তাই আজকে ও আবারও তাকে পড়াতে গিয়েছে। পড়ানো শেষ হলে তারপর হোস্টেলে যাবে।”

“কোন স্টুডেন্টের বাসায় গিয়েছে?”

“মনে তো হয়, যাকে সকালে পড়ায় তার বাসায়। কারণ আজকে সকালেই ওই বাচ্চাটাকে পড়িয়েছে। আবার গিয়েছে মানে সেখানেই গিয়েছে হয়তো।”

“ঠিক আছে। রাখছি এখন।”

মারসাদ কল কে*টে দিতে চাইলে মাহি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠে,
“এই দাভাই শোন না, তুই তো মনে হয় আদুর স্টুডেন্টের বাসায় যাবি। আদুর সাথে দেখা হলে ওর ব্যাগে আমার ফোনের চার্জারের ক্যাবলটা আছে। সাথে পাওয়ার ব্যাংকও আছে। আসলে ফোন চার্জ দিতে ওর ব্যাগেই রেখেছিলাম। কিন্তু ওগুলো ওর কাছেই রয়ে গেছে। এখন চার্জার ক্যাবলটা আমার লাগবে। নিয়ে আসিস।”

“ঠিক আছে।”

এরপর মারসাদ কল কে*টে বাইকে বসে। অতঃপর বাইক স্টার্ট করে আদিরার স্টুডেন্টের বাসার দিকে রওনা দেয়।

———–

স্টুডেন্টকে পড়ানো শেষে একটু ওয়াশরুমে গিয়েছে আদিরা। ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে তার স্টুডেন্ট তার ফোন কানে নিয়ে বসে আছে! আদিরা কপাল কুঁচকে তার স্টুডেন্ট রাইসাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“তুমি আমার ফোন কানে নিয়ে বসে আছো কেন, রাইসা?”

রাইসা জবাবে বলে,
“মিস, আপনার ফোন খুব বাজছিল! কল এসেছে। তাই আমি রিসিভ করলাম।”

আদিরা কিঞ্চিত বিরক্ত হলো। সে বলল,
“দাও। ফোনটা আমাকে দাও। কে কল করেছে? এভাবে কারো ফোন রিসিভ করবে না। এটা ব্যাড ম্যানার্স।”

রাইসা মাথা নাড়ে। আদিরা ফোনটা নিয়ে দেখে এটা মারসাদের নাম্বার। আর এসে এখনও কলে আছে। আদিরা ফোন কানে নিলো। তারপর বলল,
“আমি আপনার সাথে পড়ে কথা বলব, ভাইয়া। আমি এখন স্টুডেন্টের বাসায়।”

মারসাদ খুব শান্ত স্বরে বলল,
“তুমি নিচে নেমে এসো। আমি দাঁড়িয়ে আছি।”

আদিরা বেশ অবাক হয়। সে যে এখানে তা মারসাদ কীভাবে জানলো? তবে কি মাহির মাধ্যমে? ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো আদিরা। তারপর ছোটো করে উত্তরে বলল,
“হু!”

আদিরা স্টুডেন্টকে ভালো করে পড়তে ও পরীক্ষা দিতে বলে আজকের মতো বেরিয়ে আসে। স্টুডেন্টের বাসা থেকে নিচে নেমেই দেখে মারসাদ বাইকে হেলান দিয়ে বুকে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আদিরা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে এগিয়ে যায়। আদিরাকে দেখে মারসাদ সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর আদিরাকে বলে,

“বাইকে বসো।”

আদিরা চাইছে না বাইকে উঠতে। তাই সে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে আদিরাকে এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। অতঃপর বেশ শীতল কণ্ঠে বলে,

“আমি তোমাকে বাইকে উঠতে বললাম, আদিরা। এই নিয়ে ঝামেলা করো না প্লিজ।”

আদিরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তার মন চাইছে না বাইকে উঠতে কিন্তু পরক্ষণেই এখানে আসার পথের ঘটনাটা মনে পড়লে ভয় কাজ করছে। কী করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে।
আদিরাকে এমন নিরব দেখে মারসাদ ফের ডাকে,

“আদিরা, প্লিজ!”

এবার আদিরা মারসাদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফের নামিয়ে ফেলে। ধীর পায়ে বাইকের দিকে এগিয়ে যায়। তা দেখে মারসাদের ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-১৫+১৬

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
ভার্সিটিতে আসতেই আদিরাকে এক প্রকার চে’পে ধরলো মাহি।
“কাল আসিসনি কেন?”

আদিরা কী জবাব দিবে ঠিক ভেবে পেলো না। তাই তৎক্ষণাৎ কথা ঘুরানোর জন্য সে বলল,
“বলেছিলাম তো, কাল সকালের দিকে শরীরটা একটু খারাপ ছিল।”

“তুই বললি আর আমি বিশ্বাস করলাম। তুই যে দাভাইয়ের জন্য আসিসনি তা কি আমি বুঝি না?”

আদিরা ঘাসের উপর বসলো। তারপর বলল,

“তেমন কিছু না, মাহি। শরীর খারাপ লাগছিল বলেই আসিনি।”

আদিরাকে দেখে মাহিও ঘাসের ওপর বসলো। অতঃপর মুখ ভার করে বলল,
“বুঝেছি। তুইও সত্যি কথা বলবি না। সবাই আমার থেকে কথা লুকানো শুরু করে দিয়েছে। একজন ভাবে, আমার কাছে আমারই ভাইয়ের সম্পর্কে বললে আমি রাগ করব। আরেকজন ভাবে, আমার বোন তো ছোটো! তাকে সবকিছু বলা যায় না! ঠিক আছে!”

মাহিকে মুখ ভার করতে দেখে সাবিহা ও রিন্তি মুখ টিপে হাসছে। আদিরা মাহির দিকে অসহায়ের মতো চেয়ে আছে। হুট করে মাহি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর আদিরার হাত ধরে টান দেয়। আচমকা আদিরা বোকার মতো চেয়ে থাকে। মাহি বলে,

“আজ আমরা চারজনে শাড়ি পরব।”

আদিরা অবাক হয়।
“হ্যাঁ?”

“আরে হ্যাঁ। আজ আমরাও শাড়ি পরব। সামিরা আপুকে শাড়ি পরতে দেখে এখন আমারও ইচ্ছে করছে।”

সাবিহা ও রিন্তিও এতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। আদিরা অবাক হয়ে বলে,
“সামিরা আপু পরলে পরুক। আমাদের কেন পরতে হবে? আর আজ তো কোনো ফাংশন না।”

সাবিহা প্রত্যুত্তরে বলে,
“ফাংশন না কিন্তু আজ কোনো ক্লাসও হবে না।”

আদিরা যেন আরও অবাক হয়। সে শুধালো,
“কেন? ক্লাস কেন হবে না?”

মাহি আদিরাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“পরে জানতে পারবি। এখন আমার সাথে চল।”

এরপর মাহি সাবিহা ও রিন্তি আদিরার একটা কথাও শুনলো না। আদিরাকে নিয়ে মাহিদের ফ্লাটে যায়। সেখানে মাহির রুমে চারটা শাড়ি বিছানার উপর বের করে রাখা। আদিরা তা দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“এখানে আগে থেকে শাড়ি বের করা কেন?”

আদিরার প্রশ্ন শুনে ওরা তিনজন হেসে ফেলে। তারপর রিন্তি বলে,
“কারণ, আমরা কালকে রাতেই শাড়ি পরার প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর আজকে সকালে আমি ও সাবিহায আমাদের শাড়ি এখানে রেখে গিয়েছি।”

“কিন্তু মাহি যে বলল, ওর সামিরা আপুকে দেখে শাড়ি পরতে ইচ্ছে করেছে।”

“আরে না রে বোকা। আজকে দেখবি ক্যাম্পাসে প্রায় অনেকেই শাড়ি পরে এসেছে।”

“কিন্তু কেন?”

“আজকে ভি*পি নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে। কয়েকদিন দেরি হয়েছে কিছু কারণে, কিন্তু অবশেষে আজকে। এই উপলক্ষে আজ কোন ক্লাস হবে না, তাই অনেকে মনের সুখে হলেও শাড়ি পরছে। আমরাও সেই দলের।”

আদিরা ফের কিছু জিজ্ঞাসা করতে নিবে তখনই মাহি একটা হালকা আকাশী রঙের শাড়ি আদিরার কাঁধের কাছে ধরলো। শাড়িটাতে শাড়ির রঙের থেকে কিছুটা গাড়ো আকাশী রঙের সুতার কাজ করা। মাহি বলল,

“এই শাড়িটাতে তোকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগবে, আদু। তুই আজকে এই শাড়িটাই পরবি। আর ওই টিয়া রঙের শাড়িটা আমি পরব।”

রিন্তি বলল,
“ঠিক বলেছিস। আদুকে এই শাড়িটাতে দারুণ লাগবে। আর আমাদের চারজনেরই শাড়ির সাথে সাদা রঙের ক্রপ টপ ব্লাউজ। একসাথে চারজনকে কতো কিউট লাগবে। ইশ!”

সাবিহাও তাল মেলালো। কিন্তু আদিরা বেঁকে বসেছে। সে বলে,
“দেখ তোদের শখ লেগেছে তোরা পর। আমার পরতে ইচ্ছে করছে না। আজ সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলো। রাস্তাঘাটের কাঁদাপানিও আছে। এর মধ্যে শাড়ি পরবো? আর আকাশ এখনো মেঘলা।”

মাহি শাড়িটা রেখে আদিরার দুই গালে হাত দিয়ে বাচ্চাদের বুঝানোর মতো করে বলল,
“শাড়ি তো বৃষ্টির দিনেই পরে বেশি। বর্ষা ঋতুতে কবি বলেছেন, মেয়েদের শাড়ি পরার হিরিক পরে।”

“কোন কবি?”

আদিরার প্রশ্নে মাহি নিজের কপালেই চাঁ*পড়ে বলে,
“কবি মাহি খান! হয়েছে? চুপচাপ শাড়িটা পরে আয়। আর ক্রপটপ ব্লাউজ তুই ফুল স্লিভসটা পরবি নাকি হাফ স্লিভস?”

আদিরা মুখ ফুলিয়ে রাখে। জবাব দেয় না। তাই মাহি নিজেই বেছে আদিরাকে ফুল স্লিভসের ক্রপটপ ব্লাউজটা ধরিয়ে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পাঠিয়ে দেয়।

_______

নতুন ভিপির নাম ঘোষণা করতে বেশ আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষকরাও উপস্থিত (এই বিষয়ে আমার ভুল হতে পারে)। যদিও সাগররা সেখানে আসেনি। কারণ ইতোমধ্যে তারা জেনে গেছে তারা হেরে গেছে। সামিরা তার বান্ধবীকে ও সুমি, মৌমি, রাত্রিকে নিয়ে দর্শকদের সিটের সামনের সারিতে বসেছে।
এদিকে মাহি, আদিরা, সাবিহা ও রিন্তি তিনজনেই তিন রঙের শাড়ি পরে আস্তে আস্তে আয়োজন করা স্থানের দিকে আসছে। মাহি টিয়া রঙের শাড়িতে, আদিরা আকাশী রঙের শাড়িতে, রিন্তি ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়িতে, ও সাবিহা হালকা গোলাপি রঙের শাড়িতে। তিন জনের চুলেই খোঁপা। আর খোঁপায় রজনীগন্ধা। হাতে শাড়ির সাথে ম্যাচিং রেশমি চুড়ি। স্টেজে বসে মারসাদ দর্শক সারিতে আদিরাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই চোখ পড়ে সেদিকে। সাদা ফুল স্লিভস ব্লাউজের সাথে আকাশী রঙেে শাড়ি। শাড়ির সাথে ম্যাচিং চুড়িও। একহাতে শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটছে তো আরেক হাতে পেছনে খোঁপা করা রাখা চুল থেকে সামনের দিকে কিছু ছোটো চুল খুলে এসে বারবার বিরক্ত করাতে তা সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিচ্ছে। দৃশ্যটা বুঝি চোখ ফেরানো দায়? কারণ পূর্বের ভি*পি আশিককে মারসাদের কাঁধে হাত দিয়ে ধ্যান ভাঙাতে হয়েছে। মারসাদকে মাইকের কাছে গিয়ে কিছু বলতে হবে।

অতঃপর মারসাদ উঠে মাইকের কাছে যায়। মারসাদের পেছনে আহনাফ ও মৃদুল। মারসাদ সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে চুপ করে গেছে। প্রায় কয়েক সেকেন্ড পেরোনোর পর পেছন থেকে মৃদুল মারসাদের পিঠে গুঁ*তো দিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“কী রে? চুপ করে গেলি কেন?”

তারপর মারসাদ দ্রুত নিজের দৃষ্টি সংযত করে ছোটো করে নিজের বক্তব্য দিয়ে নিজের সিটে এসে বসে পড়ে। মারসাদ এসে বসার পর পেছন থেকে রিহান খানিক টিটকারির সুরে ফিসফিস করে বলে,

“তোমার ধ্যান-জ্ঞান যে এখন কই, সেটা কি আমরা বুঝি না, মামা! তোমার মনের মাঝে যে প্রজাপতি উড়তাছে!”

মারসাদ রিহানকে ইশারায় ধ*মকে আবার সামনে ফিরে।

এদিকে আদিরা মারসাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় সেই হুট করে থমকে যাওয়ার পর থেকে আর মাথা উঠাতে পারছে না। অজানা কারণেই তার ভীষণ লজ্জা করছে। তার মনের অন্দরমহল থেকে একটাই কথা ভেসে আসছে, ‘সে তোকেই দেখছিল!’ কিন্তু আদিরা নিজের মনকে বুঝাতে চাইল যে, ‘মন তো কতো কথাই বলে। সব কি আর সত্যি হয়?’ কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেই লজ্জায় চোখ খিঁচে নেয়।

মাহি বলে উঠে,
“আজ আমার দাভাইকে কেমন নে*তা নে*তা লাগছে না? সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, চোখে কালো সানগ্লাস, হাতে সিলভার রঙের ঘড়ি।”

সাবিহাও তাল মেলায়,
“ঠিক বলেছিস। ভাইয়াকে আজ অন্যরকম লাগছে। আমাদের ভি*পি বলে কথা।”

মাহি ফের কিছুটা মজার ছলে বলে,
“আজ তো মেয়েরা আমার ভাইকে চো-খ দিয়েই গি*লে খাবে! বেচারা ভাইটা আমার…”

কথাটা বলতে বলতে মাহির নজর যায় আদিরের দিকে। আদিরা মাথা নিচু করে বসে আছে। মাহি আদিরার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কী রে? তুই এরকম মাথা নিচু করে বসে আছিস কেন?”

চমকে উঠে আদিরা। আমতা আমতা করে দ্রুত বলে উঠে,
“এ..এমনিই!”

“এমনিই মাথা নিচু করে বসে থাকলে হবে? সামনের দিকে দেখ। আমার দাভাইকে আজকে হিরো টাইপ নে*তা লাগছে।”

আদিরা একপলক তাকায়। অতঃপর দ্রুত নজর নিচু করে ফেলে। কারণ মারসাদের অবিচ্ছিন্ন দৃষ্টি যে তার দিকেই নিবদ্ধ।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
অনুষ্ঠানের শেষে মারসাদ ও তার বন্ধুরা স্টেজ থেকে নামছে, তখন সামিরা মারসাদের দিকে এগিয়ে যায় তাকে অভিনন্দন জানাতে। কিন্তু মারসাদ সামিরাকে একপ্রকার ইগনোর করে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এতে সামিরা অবাক হয়। অতঃপর মারসাদের যাওয়ার পানে চেয়ে আদিরাকে মাহিদের সাথে দেখতে পায়। আর মারসাদ সেদিকেই যাচ্ছে! আদিরাকেও আকাশী রঙের শাড়িতে দেখে সামিরার রাগ হতে শুরু করে। তখন পাশ থেকে সামিরার বান্ধবী সামিরাকে বলে,

“আদিরাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে। তাই না, সামিরা?”

তা শুনে সামিরার রাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফুঁ*সছে সে। তারপর সামিরার বান্ধবী আবার বলে উঠে,
“মারসাদ ভাইয়া তো ওইদিকেই যাচ্ছে। তবে কী ওদের মধ্যে…?”

কথা শেষ করতে পারলো না মেয়েটা। সামিরা চিৎকার করে ধমক দিয়ে উঠে,
“চুপ! আরেকবার মুখ দিয়ে উলটাপালটা কিছু বের হলে দেখিস!”

রাগের মাত্রা অতিক্রম করছে সামিরার। তার মনের ভেতর রাগ যেন উত্তপ্ত লা*ভার ন্যায় ফু*টতে শুরু করেছে। অতঃপর সে গটগটিয়ে স্থান ত্যাগ করে।

____

মারসাদ মাহিদের কাছে গিয়ে মাহিকে বলে,
“তোকে আহনাফ ফ্লাটে পৌঁছে দিবে। ওর সাথে চলে যা।”

হঠাৎ করে নিজের ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয় মাহি। অতঃপর প্রশ্ন করে,
“কেন, দাভাই? আমি এখন যাব না তো।”

মারসাদ এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকায়। মাহি তৎক্ষণাৎ ভড়কে যায়। মারসাদ বলে,
“যা বলেছি, তা কর। এখানে এখন সেফ না।”

মাহিও আর কথা বাড়ায় না। মাথা নাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো আহনাফের দিকে হাঁটা ধরে। মাহির সাথে সাথে আদিরাও যেতে নিলে মারসাদ ওর হাত টেনে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আদিরার হৃৎপিন্ডের গতি যেন তেজ হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেলো তার! মারসাদ আদিরাকে বলে,

“তুমি আমার সাথে এসো। আমি তোমাকে তোমার হোস্টেলে পৌঁছে দেব।”

আদিরা জবাব দিতে চেয়েও পারছে না। তার মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করে রেখেছে। গলা দিয়ে সামান্য ‘না’ শব্দটাও বেরোচ্ছে না। সাবিহা ও রিন্তি একটু আগেই মারসাদের রাগান্বিত চোখ ও কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল, এখন দুজনেই মিটিমিটি হাসছে। মাহি আহনাফের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মারসাদ ও আদিরার দিকে তাকিয়ে আহনাফকে ফিসফিস করে বলে,

“আপনি বলেছিলেন, দুজনকে দিয়ে কনফেস করাতে হবে। দেখুন।”

আহনাফ কিঞ্চিত অবাক হয়। ফের শুধায়,
“মানে?”

“আরে বোকা ছেলে!”

কথাটা বলে মাহি আহনাফের দিকে তাকালে দেখে আহনাফ তার দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে আছে। মাহিও একই ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“কী?”

“কিছু না। তুমি কনফেসের ব্যাপারে বলছিলে?”

“হু। আপনি তো কালকে রাতে আমাকে কল করে বললেন, দাভাই আদুকে মনে মনে ভালোবাসে। শুধু মুখে স্বিকার করতে চায় না। আর আদিরা দাভাইকে এমন ভাবে ভয় পায় কিন্তু আপনাদের আর কাউকে তেমন ভয় পায় না। তার মানে ওর মনেও কিছু তো আছে।”

“হ্যাঁ বলেছিলাম।”

“এজন্যই আমি সাবিহা ও রিন্তি মিলে আজকের শাড়ি পরার প্ল্যানটা বানিয়েছি। আর দেখুন, বেছে বেছে আদিরাকে আকাশী রঙের শাড়িটাই পরিয়েছি। দাভাইয়ের ফেভারিট রঙ। আর জানেন, আদিরা দাভাইকে দেখে কী লজ্জাই না পাচ্ছিলো!”

মাহি বেশ উৎফুল্ল চিত্তেই কথাগুলো বলল। তারপর আবার মারসাদ ও আদিরার দিকে তাকায়। তখন আহনাফ হুট করে বলে বসলো,
“আর তুমি আমাকে দেখে লজ্জা পাবে দূরে থাক, ঝ*গড়া করেই কূল পাও না!”

মাহি তৎক্ষণাৎ আহনাফের দিকে ফিরলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“কী বললেন?”

“কিছু না। চলো।”

তারপর আহনাফ মাহির হাত ধরে টেনে বাইকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।

আদিরাকে নিরব দেখে মারসাদ বলে,
“আমি বাইক আনতে যাচ্ছি, তুমি এখানেই থাকবে। হু?”

আদিরা তাও চুপ করে আছে। মারসাদ তা দেখে ফের শুধালো,
“কী বললাম? এখানেই থাকবে।”

তারপর আদিরা মাথা হ্যাঁ বোধক নাড়ালে মারসাদ নিজের বাইক আনতে যায়।

মারসাদ যেতেই আদিরা গলার কাছে হাত দিয়ে লম্বা করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। যেন মনে হচ্ছিল, প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ সে নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিল! অতঃপর মারসাদ আসার আগেই দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে চাইলো। সেই চিন্তা মোতাবেক পা বাড়ালে রিন্তি ও সাবিহা এসে আদিরার হাত ধরে বসে। সাবিহা বলে,

“কী রে? কোথায় যাচ্ছিস? মারসাদ ভাইয়া না তোকে এখানে দাঁড়াতে বলল?”

“দেখ সাবু, ছাড় আমাকে। আমার ভালো লাগছে না। শরীর খারাপ করছে। তোরাও আয়।”

রিন্তি বলে,
“না না। আমরা এখন যাব না। আমাদের হোস্টেল তো কাছেই। আর তুইও এখন যাবি না। ভাইয়া কিন্তু রাগ করবেন।”

আদিরা অসহায়ের স্বরে বলে,
“প্লিজ রিন্তু, এমন করিস না। আমার দিকটাও একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমি ওনার সাথে বাইকে উঠতে পারব না।”

“কেন পারবি না?”

“জানিনা আমি। পারব না আমি।”

অতঃপর আদিরা ওদের হাত ছাড়িয়ে হাঁটা ধরে। রিন্তি ও সাবিহা ও-কে পেছন থেকে কয়েকবার ডেকেও ব্যর্থ হয়। রিন্তি সাবিহাকে বলে,
“আদু যে চলে গেল, মারসাদ ভাইয়া এসে আমাদের উপর রাগ ঝাড়লে?”

“আমি জানিনা। আমি এখানে আর দাঁড়াব না। চল প্লিজ।”

তারপর সাবিহা রিন্তির হাত ধরে ক্যাম্পাস থেকে যেদিক দিয়ে হোস্টেলে তাড়াতাড়ি হয় সেদিকে হাঁটা ধরে।

—–

মারসাদ বাইক নিয়ে এসে দেখে আদিরা ও তার বান্ধবীরা কেউ সেখানে নেই। তা দেখে মারসাদের রাগ উঠে যায়। সে বাইকে ঘু*ষি দিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“ও যে একটা ঘা*ড়ত্যাড়া মেয়ে, সেটা কেন ভুলে যাই?”

তখন মৃদুল, রিহান ও রবিন হাসতে হাসতে মারসাদের কাছে আসে। রিহান বলে,
“এই পাখিরে তুমি খাঁচায় কেমনে ভরবা, মামা!”

কথাটা শুনে মারসাদ ক*টম*ট দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকায় তারপর বলে,
“তোর এই ধরণের কথা বন্ধ কর। মা*র খাবি কিন্তু।”

“মা*র! অনেকদিন খাই না!”

রবিন হতবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকায়। আর মৃদুল রিহানের কাঁধের ভর দিয়ে হাসতে হাসতে প্রায় বসে পড়ছে অবস্থা! মারসাদ যখন বাইক থেকে নেমে রিহানকে ধাওয়া করবে তখনি রিহান ছুটে পালায় আর বলতে থাকে,

“তোর পাখি বেশিদূর যাইতে পারে নাই। বরাবর রাস্তা দিয়ে গেলেই পাবি। নে তোর উপকারও করে দিলাম।”

মারসাদ তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে বরাবর রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে। ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হতেই দেখা যায় একদল বাহিরে ছেলেরা ভার্সিটির কয়েকটা ছেলের উপর লা*ঠিচার্জ করছে। মেয়ে স্টুডেন্টরা তাড়াহুড়ো করে রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। মারসাদ বলে উঠে,

“শিট! এতো দ্রুত এরা শুরু করে দিয়েছে। পু*লিশ এখনও আসছে না কেন?”

বাইক থামিয়ে ফোন বের করে মারসাদ পু*লিশের কাছে কল করতে উদ্ধত হয়। যদিও সে অনুষ্ঠান চলাকালীনই কিছু স্টুডেন্টের হালচাল লক্ষ্য করে মৃদুলকে বলেছিল পু*লিশের কাছে খবর দিতে। বলা বাহুল্য যে, ওসব স্টুডেন্টরা সাগরকে ভি*পি হিসেবে চেয়েছিল। মারসাদ পু*লিশের কাছে কল দিতে দিতেই দেখতে পায়, পু*লিশের গাড়ির শব্দ হচ্ছে। মানে পু*লিশ এসে পড়েছে। তাই মারসাদ আর কল করে না। বাইক স্টার্ট দিয়ে আদিরাকে খুঁজতে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ
কাল্পনিক গল্পকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

এক শহর প্রেম_২ পর্ব-১৩+১৪

0

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
পরেরদিন আদিরা ভার্সিটিতে যায়নি। কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছে করেই মারসাদ বা সামিরার সম্মুখীন না হতে যায়নি। এদিকে মারসাদও ভার্সিটিতে আজ কিছুটা লেট করে গিয়েছে। রাতে বাড়ি ফিরে তার শরীর খারাপ থাকাতে সকালে ঘুমটা সহজে ভাঙতে চায়নি। আর মাহিও খুব একটা ডাকেনি। মারসাদ বাইক পার্ক করে বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে। এখন আদিরা ও মাহিদের একটা ক্লাস শেষ হওয়ার কথা। তাই মারসাদ উঠতে নিলে আহনাফ প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

মারসাদ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,
“মাহির কাছে যাচ্ছি। মাহির কাছে আমার কার্ড আছে।”

মারসাদের জবাব শুনে আহনাফ, মৃদুল, রিহান ও রবিন বিভ্রান্তের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মারসাদ সেসব পরোয়া না করে প্রতিদির ক্যাম্পাসের যেখানে মাহি, আদিরারা বসে, সেখানে যায়। তার পিছু পিছু আহনাফ, রিহানরাও যায়। মারসাদ সেখানে গিয়ে দেখে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি বসে বসে গল্প করছে। আদিরা নেই সেখানে। মারসাদ পিছনে একবার তাকিয়ে তার বন্ধুদের দেখে নেয়। তারপর মাহির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“তোর কাছে আমার ক্রোডিট কার্ডটা আছে?”

মাহি জবাব দেয়,
“না তো, দাভাই। কেন?”

“ওহ। তাহলে মনে হয় বাসায় রেখে এসেছি।”

মাহি প্রত্যুত্তরে কিছু বলে না। তারপর মারসাদ ভাবলো, আদিরা হয়তো লাইব্রেরিতে গেছে। তাই সে লাইব্রেরির দিকে যেতে নিলে মৃদুল মারসাদকে ডাক দেয়,

“কী রে? তুই এখন আবার কই যাচ্ছিস?”

মারসাদ এদিক ওদিক চেয়ে মিথ্যে জবাব দেয়,
“আমার একটা বই দরকার। তার জন্য লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।”

মারসাদ চালাকি করে জবাব দিলেও মৃদুল ও রিহানদের বিষয়টা বুঝতে বাকি নেই। রিহান বলে,
“যে এখানে নেই, সে সেখানেও নেই! তাও তোর মনের স্বান্ত্বনার জন্য যাচ্ছিস যা।”

রিহান এর কথা শুনে মারসাদের কপাল আপনা আপনি কুঁচকে আসে। সে মুখে কোন বাক্য ব্যয় না করে চোখের ইশারায় ওদের শা*সিয়ে লাইব্রেরির দিকে যেতে থাকে। মারসাদ যেতেই রিহান ও মৃদুল হাসতে হাসতে আহনাফকে বলে,
“তোর কি এখনো মনে হয় না, মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে?”

আহনাফ বলে,
“ডোন্ট নো, ইয়ার! একবার মনে হয় পছন্দ করে, আবার মনে হয়, সামিরার থেকে ছুটকারা পেতে এসব করছে। ওর মাথায় যে কি চলছে ওই জানে।”

রবিন বলে,
“আমার না আদিরার জন্য ভয় করছে। সামিরা এসব জানতে পারলে আদিরাকে যদি কিছু করে?”

রিহান হাই তুলতে তুলতে বলে,
“ফিকার নট, হোয়েন মারসাদ উইথ হার। আমি তো ভাবছি যদি এই এক্টিংটা এক্টিং পর্যায়ের থেকে রিয়েল পর্যায়ে চলে যায়? আই মিন, যদিও আমাদের মনে হয় মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। কিন্তু সেটা আমাদের ধারণা মাত্র। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি ওদের মাঝে ভালোবাসাটা হয়ে যায়? একদিকে মারসাদের জন্য ভালোই হয়। আদিরা মেয়েটা ভালো।”

রিহানের সাথে মৃদুলও তাল মেলালো। কিন্তু আহনাফ মোটেও এতে খুশি না। সামিরাকে জে*লাস করে নিজের জীবন থেকে সরানোর চক্করে মারসাদ একটা নির্দোষ মেয়েকে ব্যবহার করছে। এটা সে মন থেকে পুরোপুরি মানতে পারছে না। কাল সে মারসাদকে বুঝানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু….

______

লাইব্রেরিতে গিয়েও আদিরাকে না পেয়ে মারসাদ লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এক হাত কোমড়ে তো আরেক হাত মাথার পেছনের চুলে হাত রেখে কিছু একটা ভাবছে। তখনি সামিরা সেখানে হাজির হয়। চোখে-মুখে তার হেয় ও ক্রুর হাসি। সামিরা মারসাদের চারপাশে একবার ঘুরে ফের সামনে এসে বলে,

“কাকে খুঁজছ, মারসাদ বেবি?”

মারসাদ বিরক্তির সাথে বলে,
“এটলিস্ট তোমাকে তো না।”

“উপস! আমি তো তা আশাই করিনি। কিন্তু আমি জানি তুমি কাকে খুঁজছ। লিসেন, মিস্টার মারসাদ ইশরাক খান, তুমি যাকে খুঁজছ সে তোমাকে দু পয়সার দামও দেয় না! তারপরও তুমি ওই মেয়ের জন্য…..”

“দিস নান অফ ইউর বিজনেস। গো টু হে*ল!”

তারপর মারসাদ স্থান ত্যাগ করে। সামিরা সেখানে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে। অতঃপর রেগে নিজেও চলে যায়।

মাহি আহনাফের সামনে একটা পুকুরপাড়ে বসে আছে। মাহির মন খারাপ। সে একাধারে ছোট ছোট নুড়ি পাথর, ইটের সুড়কি ধীরে ধীরে পুকুরে ঢিল মা*রছে। আহনাফ কিছুক্ষণ যাবৎ এগুলো দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মাহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে তোমার? মন খারাপ দেখাচ্ছে।”

মাহি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“দাভাইয়ের এই হুটহাট সিদ্ধান্ত আমার ভালো লাগে না। আপনি তো একটু বুঝাতে পারেন। আমার বান্ধবী কুটিল মস্তিষ্কের না। ও সত্যি সত্যি সরল। এইযে দেখুন, প্রতিদিন ক্লাস করা মেয়েটা আজকে দাভাইয়ের ভয়ে ভার্সিটিতেই আসেনি! আমি দাভাইয়ের সাথে বাবা-মা যাওয়ার পরে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে যে বিকেলের দিকে বেরিয়েছিল, তারপর রাত বারোটার পর ফিরলো। তারপর সোজা রুমে গিয়ে দরজা লাগালো।”

আহনাফ মাহির হাত ধরে বলে,
“বুঝিয়েছিলাম আমি। শোনেনি। সে সামিরাকে শিক্ষা দিতে এসব করছে। কিন্তু জানো, আমার, রবিন, মৃদুল ও রিহানদের কেন যেন মনে হয়, মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। জানিনা কতোটুকু সত্য।”

“পছন্দ করলে সরাসরি প্রপোজ করুক। আমি নিজে সাপোর্ট করব। কিন্তু থ্রে*ট কেন?”

“দেখি কী হয়। ওর মনে কী চলছে সেটা তো এখন আমাকেও বলে না।”

আহনাফের কথা শুনে মাহি আহনাফের কাঁধে মাথা রেখে উদাস হয়ে সম্মুখে পদ্ম পাতার উপর ডাহুকের চলাচল দেখছে।

________

বিকেলে আদিরা স্টুডেন্ট পড়াতে যাচ্ছে। এই স্টুডেন্টের বাড়িতে যেতে একটা পার্ক পেরিয়ে যেতে হয়। পার্কে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সকাল-বিকেল হাঁটতে আসে। তাদের সাথে আবার ছোটো ছোটো বাচ্চাদেরও দেখা যায়। আদিরা এই রাস্তাটুকু একটু ধীরে ধীরে হাঁটে। এই পথটুকু তার মনে একপ্রকার প্রশান্তির দোল দিয়ে যায়। আজও সে এই রাস্তাটুকু হাঁটছে। হাঁটার সময় পেছন থেকে কয়েকবার হর্ণের শব্দ আসাতে চেপে চেপে হেঁটেছে কিন্তু বারবার হর্ণ শুনতে পাওয়াতে এবার পেছনে ঘুরে। পেছনে ঘুরেই আদিরা চকিতে ভয় পেয়ে যায়। বড়োসড়ো একটা ঢোক গিলে তার সামনে বাইকে বসা ব্যক্তিটির র*ক্তিম নয়নজোরার দিকে তাকায়। এক পলক চেয়ে দ্রুত মাথা নিচু করে সামনে ফিরে দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে থাকে।

আদিরা কিছু দূর যেতেই সেই ব্যক্তিটি বাইক নিয়ে আদিরার সামনে এসে দাঁড়ায়। আদিরা মুখে হাত দিয়ে এক কদম পিছিয়ে যায়। এবার বাইকে বসা ব্যক্তিটি তার দিকে তাকাচ্ছে না। আদিরাই সাহস করে বলে,

“দেখুন, ভাইয়া। আপনি এটা ঠিক করছেন না। আপনি বারবার আমার পথ রোধ করতে পারেন না। আমার টিউশন আছে, টিউশন করাতে যেতে হবে।”

ব্যক্তিটি নিচের দিকে চেয়েই নিঃশব্দে খানিক হেসে বলে,
“যাও। না করলো কে? আমি কি তোমার পা বেঁধে রেখেছি?”

আদিরা চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে তারপর বাইক পাশ কাটিয়ে চলেই যাচ্ছিল তখন তার মাথায় পেঁচিয়ে পেছনের দিকে লম্বা করে ফেলে রাখা ওড়নার অংশে টান পড়ে। সে চকিতে থমকে যায়। মনে মনে ভীত ও হতবাক সে। মারসাদ তবে তার ওড়নায় টান দিলো? রাগও হচ্ছে তার। এমনটা সে কখোনো উনার থেকে কল্পনাও করতে পারে না। চোখ-মুখ শক্ত করে পিছনে ঘুরে কিছু বলতে নিবে তার আগেই দেখতে পায়, মারসাদ বাইক থেকে নেমে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আদিরার ওড়না লেগে আছে বাইকের পেছনের একটা অংশে। বোকা বনে যায় আদিরা। সে একবার মারসাদের ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে তার দিকে নিবদ্ধ হয়ে থাকা চোখ জোরার দিকে তাকায় তো আরেকবার বাইকের পেছনের অংশের সাথে লেগে থাকা নিজের ওড়নার দিকে। তারপর চটজলদি এগিয়ে এসে নিজের ওড়নাটা বাইক থেকে ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর ফের চলে যেতে নিলে মারসাদ বলে উঠে,

“কী ভেবেছিলে? তোমার ওড়না আমি টান দিয়েছি? মুভি, সিনেমা খুব বেশি দেখো। তাই না? সেখানে দেখায়, হিরো, ভিলেনরা রাস্তাঘাটে হুট করে হিরোইনের আঁচল, ওড়না টান দিয়ে বসে! তারপর হিরোইন ঘুরে ঠা*স করে একটা… লাগিয়ে বসে!”

আদিরা যত্র দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ খিঁচে নেয়। নিজের মা*থা এখন তার সামনের কড়ই গাছের সাথে বা*ড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। আদিরার নীরবতাকে পর্যবেক্ষণ করে মারসাদ বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে,

“বাই দ্যা ওয়ে, রাগলে তোমাকে দারুন সুন্দর লাগে!”

তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে মারসাদ আদিরার সামনে দিয়ে চলে যায়। আদিরা হা হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে মারসাদের চলে যাওয়া দেখছে আর মারসাদের বলে যাওয়া কথাটা বারবার মনে মনে আউড়াচ্ছে। এই মাঝরাস্তায় এসে তার পথ রোধ করে কী বুঝাতে চেয়েছিল সে? প্রশ্নগুলো তার চেতন মনের মাঝে ঘুরপাক খেলেও অবচেতন মন যে উত্তর জানে। মারসাদ আজ তার ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণ জানতে এসেছিল। কিন্তু সত্যি কী তাই? নিজের মনেও নিজে বারবার শত সুতোর প্যাঁচে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর রিকশার টুংটাং শব্দে নিজের মনের চিন্তা থেকে বাস্তবে ফিরে। নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস করে দ্রুত স্টুডেন্টের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা চালায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আঁধার অম্বর পানে চেয়ে সি*গরেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে মারসাদ। পাশেই আহনাফ বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। তবে তার দৃষ্টি মারসাদের দিকে নিবদ্ধ। দুজনেই নিশ্চুপে, নীরবে দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর মারসাদ তার অবিচল দৃষ্টি রাতের আকাশের ওই অর্ধ চন্দ্রমার দিকে চেয়ে আহনাফের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আমার মধ্যে কি নিজের প্রেমিকাকে দেখতে পাচ্ছিস?”

থতমত খেয়ে কেঁশে উঠে আহনাফ। তারপর মারসাদের মা*থায় একটা চা*টা লাগিয়ে বলে,
“তুই কী করতে চাচ্ছিস ক্লিয়ারলি বল।”

“কেন তুই দেখতে পাচ্ছিস না? সি*গরেটের ধোঁয়ায় নিজের ফু*সফুস ঝাঁঝরা করছি। আর কী?”

মারসাদের তেঁড়ামো জবাব আহনাফকে হতাশ করলো। সে ফুঁশ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুই নিজেও জানিস, আমি তোকে কোন টপিকে জিজ্ঞাসা করছি।”

মারসাদ শুধালো,
“কোন টপিক?”

“কেন করছিস এসব? আদিরা মেয়েটা সত্যি বিপদে পড়বে। আজ তো সে ভয়ে ভার্সিটিতেই আসেনি। তুই ওর নরমাল রুটিনের মধ্যে ভয় নামক শব্দটাকে অকারণেই ঢুকিয়ে দিচ্ছিস।”

“আমি তেমন কিছুই করছি না। ওর জন্যও ভালো। আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করতে করতে যদি এই ভীতু স্বভাবটা যায়। আদিরাকে যে কেউ যা খুশি বলতে পারে, কিন্তু মারসাদ ইশরাকের গার্লফ্রেন্ডের দিকে নজর উঠিয়ে তো দেখাক! সেই চো*খই আমি উ*পরে ফেলব!”

আহনাফ অবাক হয়। মারসাদের কথাতে অধিকার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে কী সত্যি সত্যি…? আহনাফ তারপর শুধায়,

“তোকে কালকেও বলেছি, আদিরাকে তুই ইনডাইরেক্টলি সামিরার শত্রু বানিয়ে দিচ্ছিস। সামিরা….”

“আরে রাখ তো সামিরাকে! ওই মেয়ে কী ভেবেছে, আমি দুই বছর আগে ও-কে ওই কথাটা এমনি এমনি বলেছি? আজ আবার সে আমার মজা নিতে এসেছিল! হাহ্! সামিরাকে তো বলেই দিয়েছিলাম, আমার পিছনে ঘুরে লাভ নেই। আমার সুশীল মেয়ে পছন্দ। আর সামিরা বলেছিল, যদি আমি কোনোদিন আমার মন মতো মেয়েকে ভালোবেসে ফেলি তবে ও আমাকে আর বিরক্ত করবে না। এজন্যই তো ক্যাম্পাসের কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকালেও সে তাে প্রভাব দেখায়। আর আদিরাকে নিয়ে সে বেশি ইনসিকিউরড। হবেই না বা কেন? আদিরা সুশীল, চুপচাপ থাকা মেয়ে। আবার রূপে, গুণেও সামিরাকে ট*ক্কর দেওয়ার মতো। যদিও রূপ আমার কাছে ফ্যাক্ট না। হলে তো সামিরারও রূপ কম না। ক্যাম্পাসে আরও কতো মেয়ে আছে তবে তাদের দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করেনি।”

মারসাদের কথাগুলো শুনে আহনাফ ফট করে জিজ্ঞেসা করে বসে,
“তুই কি আদিরাকে ভালোবাসিস? তোর আজকের কথাতে কিন্তু আমার অন্যদিনের চেয়ে ভিন্ন সুরের লাগছে।”

মারসাদ থমকে গেলো। এই প্রশ্নটা আহনাফ তাকে আরও কয়েকবার করেছে। প্রতিবারই মারসাদ ভাবনার অতলে তলিয়ে যায়। তারপর হেসেই প্রশ্নটাকে ভিত্তিহীন প্রমান করে না বলে দেয়। এতোদিন আদিরার ভীত মুখশ্রী তাকে রাগিয়েছে, তার প্রতি আকর্ষিত করেছে। কিন্তু আজ রাগান্বিত মুখটা দেখে নিজেই নিজের বলতে চাওয়া কথাগুলো ভুলে চলে এসেছে। এই লক্ষণকে কী বলে?

মারসাদকে চুপ করে থাকতে দেখে আহনাফ ওর কাঁধে হাত রাখে। তাতে বাস্তবে ফিরে মারসাদ। আহনাফ ফের বলে,

“আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড। সেই ছোটোবেলা থেকে। তুই আমার থেকে কিছু লুকাতে পারিস না। আর চেষ্টা করলেও লুকিয়ে রাখতে পারবি না।”

মারসাদও প্রত্যুত্তরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুই মনে হয় আমার থেকে কিছু লুকাতে পারিস। চেষ্টার তো কমতি রাখিসনি।”

আহনাফ কিছুটা চমকে উঠে। মারসাদ তবে মাহি ও তার ব্যাপারে বুঝে গেছে?
মারসাদ ঘুরে তাকায় আহনাফের দিকে। আহনাফ ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে। মারসাদ আহনাফের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সব বুঝেও চুপ করে আছি মানে, আই ট্রাস্ট ইউ।”

কথাটা বলেই মারসাদ মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে বলে,
“তোর প্রশ্নেরও উত্তর দেই, ভালোবাসি কী-না জানিনা। তবে ওর কোনো ক্ষতি আমি হতে দিব না।”

তারপর মারসাদ সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে যায়। আহনাফের মুখেও স্বস্তির হাসি ফুটে। সে বুঝে গেছে, মারসাদ আদিরাকে ভালোবাসে। তাই আহনাফ খুব করে চায়, এবার অন্তত মারসাদের মন না ভাঙুক।

________

পরেরদিন আদিরা সকাল সকাল টিউশন পড়াতে যেতে বের হয়েছে। হোস্টেলের গেইট দিয়ে বের হতেই দেখে একটা বাইক দাঁড়ানো। বাইকে বসা মানুষটা আর কেউ না, মারসাদ। আদিরা দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সেই সাথে মারসাদও খুবই ধীর গতিতে বাইক নিয়ে আদিরার পিছু পিছু এগুচ্ছে। আদিরা চলতে চলতে সেটা বুঝতে পারছে ঠিক, কিন্তু তার কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। রাস্তাতে যে দুই-তিনজন মানুষ জগিং বা সকালে হাঁটার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, তারা তো দেখছে। কী ভাবছে তারা? এসব চিন্তা করে রাগও হচ্ছে তার। অতঃপর আদিরা দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর পিছনে ঘুরে কপাল কুঁচকে মারসাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আপনি এভাবে আমার পিছু পিছু আসছেন কেন?”

মারসাদ হাই তুলতে তুলতে পালটা প্রশ্ন করে,
“আমি তোমার পিছনে আসছি কে বলল? তুমি তোমার মতো যাও, আমি আমার মতো যাচ্ছি।”

আদিরা আর কোনো তর্কে গেলো না। তখন সামনের দিকে একটা রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাধ্য হয়ে রিকশাটা ডেকে উঠে পড়ে। আদিরা রিকশায় উঠতেই মারসাদ মুচকি হেসে বাইকের গতি বাড়িয়ে চলে যায়। আদিরাও তাতে স্বস্তি পায়।

স্টুডেন্টের বাড়ি পৌঁছে আদিরা রিকশা ভাড়া দিতে নিলে রিকশাওয়ালা মামা বলেন,
“ভাড়া দিতে হইব না, আফা।”

আদিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কেন, মামা? আমি আপনার রিকশায় করে এতোটা পথ আসলাম। আর আপনি বলছেন, ভাড়া দিতে হবে না?”

“ভাড়া তো ওই ভাইজানই দিয়া দিছিলো।”

এই বলে রিকশাওয়ালা মামা চলে যান। আদিরা ভাড়াটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে স্টুডেন্টের বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

________

সামিরা আজ ভার্সিটিতে শাড়ি পরে এসেছে। শাড়ির রংটাও মারসাদের প্রিয় রং। আকাশি রঙের। ক্যাম্পাসের যেসব ছেলেরা যারা সামিরাকে মনে মনে পছন্দ করে কিন্তু মুখে বলতে পারে না, তারা হাঁ করে সামিরাকে দেখছে। সামিরা এসব বেশ উপভোগও করছে। সামিরা তার বান্ধবীকে বলে,

“দেখিস, আজ মারসাদ শুধু আমাকেই দেখবে।”

সামিরার বান্ধবীও সামিরার কথার সাথে তাল মেলায়।

কিছুটা দূরে মৃদুল ও রবিন ক্যান্টিনের দিক থেকে ফিরছিল তখন সামিরাকে দেখে মৃদুল বলে,

“ও বাবা! আজ দেখি সামিরা শাড়ি পরে এসেছে!”

রবিন মুখে হাত দিয়ে হেসে বলে,
“তাও আকাশি রঙের!”

“কিন্তু লাভ নাই! মারসাদ আর কখোনো সামিরার দিকে ঘুরেও তাকাবে না।”

রবিন তখন সুমি, মৌমি ও রাত্রিকে সামিরার দিকে যেতে দেখে। রবিন বলে,
“এই সুমি, রাত্রিরা কেন যাচ্ছে ওখানে?”

মৃদুল বলে,
“যাক। আমরা বরং আমাদের হবু ভিপি কোথায় খুঁজে আসি। আজ তো ভিপি নির্বাচন। আজকেই নির্ধারণ হবে ভিপি কে হবে?”

অতঃপর রবিন ও মৃদুল মারসাদের খোঁজে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।