Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 52



হৃদয়হরণী পর্ব-৩০+৩১

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩০
#তানিশা সুলতানা

“খুলে বলো ছোঁয়া। আমি না ঠিক বুঝতে পারছি না।

সামির দুই পা গুটিয়ে গালে হাত দিয়ে আরাম করে বসে বলে৷ ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস টানে।

” সাদি চাচা যাহ চা বানিয়ে নিয়ে আয়। সাথে পকোড়া বা নুডলস আনতে ভুলবি না।

সাদি কটমট চোখে তাকায় সামিরের দিকে। সামির অবশ্য পাত্তা দিচ্ছে না। যেনে সাদির রাগে তার কিছুই এসে যায় না। সে এবার ছোঁয়ার কথা শুনবে৷

“চায়ের সাথে বিষ মিশিয়ে আনবো।
বিরবির করে বলে সাদি। সামিরের কানে অবশ্য পোঁছেছে কথাটা তবে সে মনোযোগ নষ্ট করবে না। সাদি চাচাকে পড়ে দেখে নেওয়া যাবে।

” সেই দিন। উয়য়য়য়য়য় যে আমাদের বাড়িতে। আমি লজ্জা পেলাম?

“হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে।
ইতিহাসের পাতায়ও লেখা হয়ে গেছে। জীবনে প্রথমবার তোমাকে লজ্জা পেতে দেখেছিলাম। তারপর শেখ হাসিনাকে বলে তোমার নামটা ইতিহাসের পাতায় কাজী নজরুলের বউয়ের পাশে লিখে দিয়ে এসেছি আমি।
খানিকটা ভাব নিয়েই জবাব দেয় সামির। সাদি কিচেনে যাওয়ার জন্য পা এগোচ্ছিলো সামিরের কথায় থেমে যায়। বলা বাহুল্য এই দুই পাগলের কথা শুনতে সাদুর মন্দ লাগে না। মনে মনে ভীষণ এনজয় করে।
ছোঁয়া ভাবনায় পড়ে যায়। এতো মানুষ থাকতে কাজী নজরুল ইসলামের বউয়ের পাশেই কেনো?
প্রশ্ন করতে যাবে তখনই সামির আবারও বলে

” ছোঁয়া জলদি বলো। আমার কান্না কান্না ভাব ফুরিয়ে যাচ্ছে। কষ্ট ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। তোমার কথা শুনে তো আবার আমিও বলবো।

“হ্যাঁ হ্যাঁ বলছি। সেই দিন উনি মানে এই বুইড়া বেডা আমার সাথে নিকনিক করছে। তারপর আবার ওনার এক্সের কাছে যাওয়ার প্ল্যানিং করছে।

সামির মাথা চুলকায়। নিকনিক শব্দটা সে ঠিক বুঝতে পারছে না।

” নিকনিকটা কি ছোঁয়া?

“আরেহহ চুমু খেয়েছে।

” ওহহ আচ্ছা
বলতে বলতেই সামির লাফিয়ে ওঠে। চিল্লিয়ে বলে ওঠে
“কিহহহহহহহহহ
সাদি দুই হাতে কান চেপে ধরে। ছোঁয়াও ভয় পেয়ে যায় সামিরের চিৎকারে। ভীতু চোখে তাকায় সামিরের দিকে।

” চুমু তাও আবার সাদি চাচা?

ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে মাথা নারিয়ে সম্মতি জানায়। সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে৷

“আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম। ছোঁয়া তোমাকে আমি পরামর্শ দিচ্ছি এই বেডার পেছনে আঠার মতো লেগে থাকো। ভাড়ি বজ্জাত সাদি চাচা। আমার সাথে কি করেছিলো জানো?

ছোঁয়া মাথা নারায় মানে সে জানে না।

” আমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো। মেয়ে পটাতে গিয়েছিলাম দুজন ভালোই হাত ধরে হাঁটতেছিলাম তখনই ধমক দিয়ে দেয় মেয়েটাকে। অকালে বিধবা হয়ে যাই আমি।
আমাকে বিধবা করে দিয়ে এখন নিজে চুমুর প্রতিযোগিতা নেমে গেছে

সাদির কথায় চাপা রাগের আভাস পেয়েছে ছোঁয়া।
“কিন্তু আমার কপাল কতো ভালো তুমি জানো ছোঁয়া? সেই মাইয়া আজকে আবার ও আমার সামনে পড়েছিলো। এবং ধপাস করে একটা চুমু দিয়ে আরেকটা ছেলের হাত ধরে চলে গেছে।

সামিরের কথা বিশ্বাস করে নেয় ছোঁয়া। তখনই সাদি বলে ওঠে
” তোর ওই বাঁদরের মতো মুখে কোনো মেয়ে কিস করবে? দুই পাগল এক জায়গায় হলে ফ্রীতেই জোকস দেখতে পাওয়া যায়।
আমার কপালেই জুটেছে দুটো। ডিজগাস্টিং।

ছোঁয়া ফুঁসে ওঠে
“দুই দিন পরে যখন গবুর সাথে মুভি করবো না। তখন বুঝবেন পাগল না কি নায়িকা। আফসোসও করবেন।

” হ্যাঁ
আমিও যখন গবুর ওই এক্স নায়িকার সাথে মুভি করবো না তখন বুঝবি বাঁদর না কি নায়ক।

সাদি রাগে হিসহিস করে বলে
“মাইর খাওয়ার আগে আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা তোরা।

” ইচ্ছে করে এসেছি না কি? কিডন্যাপ করে এনেছেন আমায়। তাও আবার কোলে নিয়ে।
আঙুল তুলে বলে ছোঁয়া।

“আমিও ইচ্ছে করে এসেছি না কি? এক্স গার্লফ্রেন্ডকে আরেক বেডার সাথে দেখে আবেগের বসে তোর বাড়িতে চলে এসেছি। তখন আমার আবেগে কাজ করেছিলো। বিবেগে কাজ করলে এট লিস্ট তোর বাড়িতে আসতাম না।

সাদি চুপচাপ কিনেচে চলে যায়। এদের সাথে কথা বলতে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
ছোঁয়া ফিসফিস করে বলে
” দেখলেন ভাইয়া ঝগড়া করে জিততে পারে নি বলে পালিয়ে গেলো।
সামির হাই ফাই করে ছোঁয়ার সাথে।

“ছোঁয়া শুনো। পাশের ফ্ল্যাটে একটা মেয়ে আছে নাম ঔশী। এতোদিন আমার সাথে মেসেঞ্জারে সংসার করেছে। কিন্তু কাল থেকে কথা বলছে না। এখন তুমি ওই ফ্ল্যাটে যাবে। মেয়েটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসবে। আমি ওই রুমে থাকবো। তুমি মেয়েটাকে ওই রুমে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিবে।
বুঝেছে?

ছোঁয়া একটু ভাবে।
” তাহলে আমাকেও এভাবে সাদুর সাথে রুমে বন্ধ করে দিবেন কথা দিন?

“ঠিক আছে। পাক্কা।

ছোঁয়া মাথায় ওড়না দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। সাদি নিশ্চিত ছোঁয়া ঔশীকে আনতে পারবে। তাই সে খুশিতে ” তুমি দিও না গো বাসর ঘরের বাতি নিভিয়ে গান গাইতে গাইতে রুমে ঢুকে যায়।

ছোঁয়া ঔশীদের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল চাপে। ফর্সা লম্বা সুন্দরী একটা মেয়ে দরজা খুলে।
“কাকে চাই?

ছোঁয়া ঔশীকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে
” ওয়াশরুমের দরজা খুলতে পারছি না। বাসায় কেউ নেই। একটু হেল্প করবা আপু?
ছোঁয়ার মুখখানা দেখে নিষ্পাপ মনে হয় ঔশীর। তাই সে মুচকি হেসে ছোঁয়ার সাথে যায়। ঔশী রুমে ঢুকতেই ছোঁয়া ধাক্কা দিয়ে দরজা লক করে দেয়।
ভেতর থেকে ঔশি কিছুখন চেঁচামেচি করলেও এখন চুপ হয়ে গেছে।

ছোঁয়া কিচেনে চলে যায়। সাদি সত্যিই নুডলস রান্না করছে।
“আপুটা চুপ হয়ে গেলো কেনে?

” বাঁদর দেখে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে।

সাদির কথা মোটেও ছোঁয়া বিশ্বাস করে না। তাই মুখ বাঁকিয়ে সাদির চুল টানার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। সাদি মাথা উঁচু করে ফেলে। যার ফলে ছোঁয়া নাগাল পায় না।

“হাত বড় হয়ে যাচ্ছে তোমার। এখানে ওখানে চলে যাচ্ছে। সেম টু ইউ আমি করলে কেমন হবে?

ছোঁয়া এক লাফে চুলার পাশে বসে পড়ে।

“দারুণ হবে”
সাদি তাকায় ছোঁয়ার দিকে। চোখে হাসে।
“ইডিয়েট
আমাকে জ্বালানোর একটা উপায়ও হাত ছাড়া করো না।
” দিয়া চলে আসলে আর জ্বালাবো না।

“দিয়া কে?

” আমার আর আপনার মেয়ে। সাদি এর দি ছোঁয়ার যা মোটমাট হলো দিয়া।
দারুণ না?
সাদি এবার সত্যিই হেসে ফেলে।
চুলা বন্ধ করে এসে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায়।
ছোঁয়ার দুই গালে হাত দিয়ে কপালে শব্দ করে চুমু খায়। তারপর কপাল ঠেকিয়ে বলে
“আমার আধপাগল বউ।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩১
#তানিশা সুলতানা

“আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?

ঔশীর কন্ঠে রাগ স্পষ্ট। সামির খাটের ওপর টানটান হয়ে শুয়েছিলো। ঔশীর কথায় পায়ের ওপর পা তুলে নেয়। রাগে ঔশীর শরীর কাঁপছে। দিন দিন অসয্য হয়ে উঠছে লোকটা।

” কুতকুতি মাইয়া গানটা মুখস্থ করেছি। তোমাকে শোনানোর জন্য তুলে আনছি।

সামিরের মুখে হাসি। ঝকঝকে দাঁত গুলো দেখে ঔশীর রাগ তরতর করে বাড়তে থাকে। ইচ্ছে করছে লোকটার বড়বড় দাঁত গুলো হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে পেটে ঢুকিয়ে দিতে।
সামির এক লাফে বসে পড়ে।

“আরেহহহ বা তোমায় তো দারুণ হ*ট লাগছে। উমমমম বেয়ারের থেকেও বেশি নেশা ধরে যাচ্ছে।

ঔশী এবার সামিরের গলা চেপে ধরতে যায়। সামির হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। ঔশী ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।
সামির কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলে
” একদম বাড়াবাড়ি করবে না। মানুষ মনে হয় না আমায়? কাল থেকে কন্টিনিউসলি ইগনোর করে যাচ্ছো। কষ্ট হয় না?।

ঔশী দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয়
“মায়ার সাথে কি করেছেন আপনি মনে নেই? আপনার ইগনোর কেনো খু*ন করতে পারলে ভালো লাগতো।

সামির হাসে। ঔশীর কোঁকড়াচুল গুলো বিনুনি করা ছিলো। বিনুনিটা বা পাশে দিয়ে গলায় ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। কেঁপে ওঠে ঔশী। শক্ত হয়ে বসে পড়ে।

” মায়ার সাথে আমি কিচ্ছু করি নি। ইনফ্যাক্ট আমি তাকে ভালো করে চিনিও না।

কান্না পায় ঔশীর। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। মায়া তার বেস্টফ্রেন্ড। গোটা দুনিয়া ঔশীকে মিথ্যে বললেও মায়া কখনোই মিথ্যে বলবে।
গত পৌরসু ঔশী এবং মায়া এক সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো। তখনই সামিরকে দেখিয়ে বলে “এই ছেলেটাই আমার এক্স ছিলো”
দুনিয়া থমকে গিয়েছিলো ঔশীর। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো মানুষটার সাথে আর যোগাযোগ রাখবে না।

সামির ছেড়ে দেয় ঔশীকে। মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি ঔশী। ট্রাস্ট মি আমি মায়া নামের মেয়েটিকে ঠিকভাবে চিনিও না। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

ঔশী জবাব দেয় না। সামির বিরক্ত হয়।
দাঁড়িয়ে যায় সে। দুনিয়ায় এই একটা মানুষ যার কান্না তার সয্য হয় না।

” মায়াকে ডাকো।
সামনাসামনি ক্লিয়ার করবো ব্যাপারটা। এভাবে রংতামাশা ভাল্লাগছে না আমার আর।

ঔশী তবুও জবাব দেয় না।

__

সাদি লাগেজ গোছাচ্ছে। হাতে আরও একটা দিন সময় আছে তবুও আজকেই লাগেজ গুছিয়ে রাখছে। গতকাল সারাদিন পরিবারের সাথো কাটাবে সময় পাবে না।
ছোঁয়া খাটের ওপর বসে আছে পা নাচাচ্ছে এবং নুডলস খাচ্ছে।

“আচ্ছা সাদু আমাদের বেবি কবে হবে? দিয়া কবে আসবে?

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“একটা শয়তান সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছি। আরেকটা শয়তান কি করে আনবো?

” আমি জানি আমি শয়তান। কিন্তু আমাদের দিয়া অর্ধেক শয়তান হবে। কেনো বলুন তো?
আপনি ভালো আমি শয়তান। তাহলে ভালো + শয়তান যোগ করলে কি হয়? অর্ধেক শয়তান।

সাদি জবাব দেয় না। সে তার কাজে ব্যস্ত। ছোঁয়ার নুডলস খাওয়া শেষ। বাটিটা খাটের ওপরেই রাখে। সাদির পেছনে এসে দাঁড়ায়।
“সাদু একটা প্ল্যানিং করলাম এখুনি। আপনার সাথে আমাকেও নিয়ে যান না। হানিমুনটাও সেরে আসতে পারবো।

” তোমার পাসপোর্ট নেই।

“তাতে কি হইছে? আমি নাহয় দাঁড়িয়ে যাবো। আর তাও না হলে আপনার কোলে বসে যাবো।

সাদি কোমরে হাত দিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। মেয়েটা সুন্দরী। বড়বড় চোখ দুটো উঁচু নাক চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া। ঠোঁট লিপস্টিক নিয়েছিলো। নিচের ঠোঁটের লিপস্টিক খেয়ে ফেলেছে। এবার ওপরের ঠোঁটে আছে শুধু।
নাকে চিকচিক করছে পাথরের নাক ফুল। গলায় চিকন স্বর্নের চেইন।
গোলাপি ওড়নাটা গলায় ঝোলানো।প্রথম বার বোধহয় মেয়েটাকে এতোটা গভীর চোখো পর্যবেক্ষণ করলো সাদি।

ছোঁয়া দু পা এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। মুখ ঠেকেছে সাদির প্রসস্থ বুকে।
সাদিও পরম যত্নে আগলে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।

” আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি সাদি। আপনার ভালোবাসা চাই আমি।

সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়
“সামান্য কিসটাই সয্য করতে পারো না। আমায় কিভাবে সামলাবে?

ছোঁয়া জবাব দেয় না। চুপচাপ মানুষটার হার্টবিট গুনতে থাকে।
এভাবে কতোটা সময় পার হয় জানা নেই কারোরই।
” আমায় নিবেন না?
সাদি ধমক দেয় না। খুবই নরম গলায় প্রেয়সীকে বোঝায়
“এভাবে হবে না জান। পাসপোর্ট ছাড়া তোমাকে এয়ারপোর্টের ভেতরেই ঢুকতে দেবে না।
ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত তোমাকে নিয়ে যাবো।

চট করে ছোঁয়া সাদির বুক থেকে মাথা তুলে। এক গাল হেসে শুধায়
” গবুর কাছে নিয়ে যাবে?

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি। ইচ্ছে করছে শয়তান ইডিয়েটটার তুলতুলে গাল দুটো চাপকে লাল করে দিতে।

“বলুন।
গবুর কাছে নিবে?

সাদি লাগেজে মন দিয়ে বলে
” হুমম

“আনরোমান্টিক কোথাকার।
কোথায় বলবেন “তুমি আমার ছোঁয়া তোমাকে কেনো গবুর কাছে নিয়ে যাবো”
তা না
ধুররর
রোমাঞ্চ করার বয়সে জামাইকে আমিষ বানানোর চেষ্টা করছি। আমার মতো কপাল পোড়া আর কে আছে?

ছোঁয়ার ন্যাকামি দেখে সাদি ভ্রু কুচকে ফেলে। সিরিয়াসলি ভাই?
মানুষ এভাবে কি করে ন্যাকামি করে?
“তোমাকে আমি ভালো হওয়ার ওয়ার্নিং দিলাম ইডিয়েট

” আমিও আপনাকে রোমান্টিক হওয়ার ওয়ার্নিং দিলাম জামাই।

“তাই না?

বলতে বলতো সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে কাছে টেনে নেয়।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-২৮+২৯

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৮
#তানিশা সুলতানা

উড়নচণ্ডী ছোঁয়া এইটুকু বুঝে গেছে যে সাদমান চৌধুরী তাকে অনেকটা ভালোবাসে। এবং সেটা আজকে থেকে নয়। অনেক আগে থেকেই। পাষাণ লোক একটা। সারাক্ষণ ইগনোর করে গেছে এবং এখনো করছে। তবে এখন ছোঁয়ার একটাই লক্ষ। পাষাণ লোকটার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবে। এবং গম্ভীর লোকটাকে ছোঁয়ার পেছনে মৌমাছির মতো ঘুড়াবে।
মনে মনে বুদ্ধি করে নেয় ছোঁয়া। কি করবে? সব ভেবে নিয়েছে। প্ল্যানিং সাকসেসফুল। এবার শুধু এপ্লাই করার অপেক্ষা।

রাতের খাবার খেয়ে সকলেই চলে গিয়েছে। ছোঁয়া তার দাদিমার সাথে ঘুমিয়েছে। মনে মনে সাদির সাথে ঘুমানোর ইচ্ছে থাকলেও সেটা প্রকাশ করতে পারে নি। কিভাবেই বলবে?
হনুমান লোকটা তো মুখের ওপর না করে দিতো।

কেটে গেছে কয়েকদিন। সাদি তার পরেরদিনই চলে গিয়েছিলো তার বাসায়। একটা কল পর্যন্ত দেয় নি ছোঁয়াকে। ছোঁয়া দিয়েছিলো কল। কিন্তু পাষাণ লোক রিসিভ করে নি। মেসেজও দিয়েছিলো রিপ্লাই দেয় নি। লোকটার প্রবলেম কি ঠিক বুঝতে পারে না ছোঁয়া।

ছোঁয়ার পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলা হয়েছে। মোটামুটি হাঁটতে পারে সে। শুধু দৌড়াতে পারে না।
শুক্রবারের দিন। সাবিনা বেগমের চেচামেচিতে ঘুম ছুঁটে যায় ছোঁয়ার। কেনো চেঁচামেচি করছে চতুর ছোঁয়া বুঝে যায়।
মূলত তার সাদু বাসায় ফিরেছে গতকাল মাঝরাতে। সকাল সকাল তার খাবারের আয়োজন চলছে। যদিও সে করলা আর রুটি ছাড়া কিছুই খাবে না। তবুও তার এতো আয়োজন।

এমনি দিন হলে ছোঁয়া দৌড়ে চলে যেতো ফ্রেশ না হয়েই। কিন্তু আজকে যায় না ছোঁয়া। ধীরে সুস্থে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। চুল গুলো গতকাল পার্লার থেকে সেটআপ করে এসেছে। দারুণ একটা কার্ট দিয়েছে।
চুল গুলো উঁচু করে বাঁধে। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে। ব্রাশ করে মুখ ধুঁয়ে বেরিয়ে আসে।
আলমারি খুলে বেছে বেছে নীল রংয়ের একটা টপস এবং সাদা আর নীলের মিশ্রণে একখানা স্কার্ট নিয়ে নেয়। সাথে সাদা রংয়ের পাতলা ওড়না।
ড্রেস চেঞ্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সময় নিয়ে সাজতে থাকে।
মুখে ফেইস পাউডার, চোখে কাজল ঠোঁট টকটকে লাল রংয়ের লিপস্টিক।
ব্যাস ছোঁয়া রেডি।
আয়ানায় একখানা চুমু দিয়ে বেরিয়ে য়ায় রুম থেকে।
সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় এক পলক তাকিয়ে দেখে সাদি সোফায় বসে ফোন দেখছে। পরিও তার পাশে বসে গেমস খেলছে। সাবিনা বেগম এবং নাজমা বেগম টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।
মমতা বেগমকে রুম থেকে ধরে নিয়ে আসে সিমি। একা একা হাঁটাচলা করতে তার কষ্ট হয় কি না?
সাজ্জাদ এবং সেলিম খাবার টেবিলে বসে গেছে। সিফাত খালি রুটি চিবচ্ছে।

“গুড মর্নিং গাইস

ছোঁয়া এক গাল হেসে বসে পড়ে সাজ্জাদের পাশে। সাদি আড়চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। তবে কিছু বলে না।

সাজ্জাদ ছোঁয়ার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে
” এতো সাজুগুজু? কোথাও যাবে?

“না না
বাবা কাল এনে দিয়েছে। তাই তোমাদের দেখানোর জন্য পড়ে আসলাম। সুন্দর লাগছে না?

মুচকি হাসে সাজ্জাদ। সেলিমও হাসে। সে প্রায় সময়ই মেয়ের জন্য এমন জামা জুতো নিয়ে আসে। পছন্দ হলেই নিয়ে নিবে।

” মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ পরিটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

সাজ্জাদের প্রশংসা শুনে ছোঁয়া খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠে

“বাবা এরকম আরও কয়েকটা টপস কিনে আনবে।

” ঠিক আছে।

সাবিনা বেগম সবাইকে খাবার দিয়ে দেয়। এবার ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়
“আরেহহ ছোট ভাইয়া। আপনি কখন এসেছেন? আসুন খাবেন?
আপনার পছন্দের করলা সিদ্ধ রেডি।

সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। বাকিরা মুখ টিপে হাসছে।
সাদি এসে বসে সিফাতের পাশে ছোঁয়ার মুখোমুখি।
ছোঁয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। সে খাচ্ছে এবং বাবাকে বলছে
“আব্বু আমাকে একটা আই ফোন কিনে দিও।

” ঠিক আছে

সাদি খেতে খেতে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে। আই ফোন লাগবে তার। গতকাল যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার পর তো ছোঁয়াকে বাটন ফোনও দেবে না সাদি।
ফেসবুকে পিক আপলোড দিয়েছে। এবং ক্যাপশন দিয়েছে “আজ সিঙ্গেল বলে
কাশফুল দেখতে কেউ নিয়ে গেলো না”
প্রোফাইল পাবলিশ করে দিয়েছে। সেখানে ছেলেদের কমেন্টের ধুম পড়েছে।
সেই জন্যই তো সাদি বাড়িতে এসেছে। নাহলে সে কখনোই আসতো না। রবিবার সে দেশের বাহিরে যাবে। এই সময়ে বাড়িতে আসা মানেই সময় নষ্ট।

কিন্তু এখন ছোঁয়াকে কিছু বলতেও পারছে না সাদি।

খাওয়া শেষে সাদি হাত ধুঁয়ে ছোঁয়াকে বলে
“রুমে এসো কথা আছে।

ছোঁয়া সাথে সাথে জবাব দিয়েছে
” কেনো ভাইয়া? কি কথা? আমি টিচার ঠিক করে নিয়েছি। আপনার কাছে পড়বো না। তাই কোনো কথাও নেই।

সাদি রেগে চলে যায়। কাউকে বুঝতে দেয় না তার রাগ। ছোঁয়া বাবা চাচার সাথে লুডু খেলতে শুরু করে। সাদি নিজের রুমে বসে ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কখন আসবে ছোঁয়া?
অবশেষে বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়। আর দেখে তার বউ লুডু খেলছে।
সাদি গিয়ে ছোঁয়ার পাশে বসে। ছোঁয়া একবার তাকিয়েও দেখে না। সে তার খেলায় ব্যস্ত৷

পাক্কা এক ঘন্টা পরে ছোঁয়ার খেলা শেষ হয়। সাদি ভেবেছিলো এবার হয়ত কথা বলতে পারবে। কিন্তু সাদির ভাবনায় বালতি পানি ঢেলে ছোঁয়া গান গাইতে গাইতে চলে যায় বাড়ির বাইরে। গানটা ছিলো

“পাশের বাড়ির চ্যাংড়া পোলা প্রেম করিতে চায়”

সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। পাশের বাড়ির কেউ কি ছোঁয়াকে প্রপোজ করেছে? প্রপোজ না করলে এমন গান কেনো গাইবে?
ছোঁয়ার পেছনে চলে যায় সাদি। ছোঁয়া বাড়ির সামনে ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চা ছেলের সাথে গল্প করতে থাকে। সাদি ভাবতে থাকে এদের মধ্যে কে ছোঁয়াকে প্রপোজ করতে পারে?
ওদের কাছাকাছি চলে যায় সাদি। ছোঁয়া হেসে হেসে কিছু বোঝাচ্ছে ওদের।
সাদি গম্ভীর গলায় বলে ওঠে
“এই মেয়েটাকে বাচ্চা বাচ্চা দেখতে হলেও ও বাচ্চা না। বিয়ে হয়ে গেছে ওর। আমি ওর বর”

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৯
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া দিব্যি ছেলেগুলোর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে৷ হাত ধরছে৷ ছেলেগুলোও হা করে ছোঁয়াকে দেখছে৷ প্রচন্ড রাগ হয় সাদির৷ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে৷ চেংড়া পোলা বলতে এদের মধ্যেই কাউকে বুঝিয়েছে৷ কিন্তু সাদি কি করে বুঝবে কোন ছেলেটা ছোঁয়াকে পছন্দ করে? কারণ সকলেই তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷ সাদি যে বললো ছোঁয়া বিবাহিত এসব ওরা কানেই তুললো না
এবার সাদি দু পা এগিয়ে যায়
“ইডিয়েট চেংরা পোলা বলতে কাকে বুঝিয়েছো সত্যি করে বলো?

ছোঁয়ার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি। ছোঁয়া হাতে থাকা ফোনের স্কিনে নিজের ফেইসটা একটু দেখে নেয়। পাউড করে করে চুমু দেয় ফোনের স্কিনে৷
বাচ্চারা সাদির দিকে তাকিয়ে আছে৷ মূলত এই আংকেলটা ডিস্টার্ব কেনো করছে এটাই তারা বুঝে চাইছে। ওরা ফুলবল খেলতে যাবে। এর মধ্যে এরকম ডিস্টার্ব মেনে নিতে না পেরে সাদির প্রতি রাগ জন্মায়।

ছোঁয়া সাদির হাতটা নিয়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে

” চেংরা পোলা বলতে আপনাকে বুঝিয়েছি। প্রেম করার জন্য আমার পিছে পিছে ঘুরছেন। আপনাকে পাত্তা দিবো আমি?
বুড়ো কোথাকার। সরুন সামনে থেকে। ভীমরতি ধরেছে৷

সাদি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি বলে এসব?
ছোঁয়া মাঝারি সাইজের একটা ছেলের হাত ধরে। ছোঁয়ার থেকে বয়সে একটুখানি ছোটই হবে।

“এটা আমার বয়ফ্রেন্ড
আর ডিস্টার্ব করবেন না আমায়। প্রেম আমি করবো না আপনার সাথে।

ছেলেটা নিজের চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলে শার্টের কলার তুলে দু পা এগিয়ে এসে ছোঁয়াকে নিজের পেছনে নিয়ে বলে

” আংকেল আপনার সমস্যা কি? আপুকে কেনো ডিস্টার্ব করেন? আপু আপনার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে ওবদি পারছে না৷ আপনাকে পছন্দ করে না আপু। সে আমাকে পছন্দ করে।

ছোঁয়া মুখ টিপে হাসছে৷ সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷
সাদির তাকানো দেখে ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে

“চলো চলো সবাই৷ আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ছোঁয়া এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। সে এক পা বাড়াতেই সাদি আচমকা কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। চিৎকার করে ওঠে ছোঁয়া। সকলে এগোতে নিলে সাদি ধমককে ওঠে
” এক পা এগোলে সবার বাড়িতে কমপ্লেইন দিয়ে আসবো।
ভয়ে আর কেউ এগোয় না। সাদি ছোঁয়াকে কোলে নিয়ে ওই সরু রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। তার ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যাবে। বাড়িতে এখন সকলে রয়েছে। এই অবস্থায় কোলে করে ছোঁয়াকে নিয়ে যাওয়াটা বেমানান দেখায়।
রাস্তা ঘাটে লোক সংখ্যা নেই বললেই চলে। শুক্রবারের দিন। সকলের অফিস ছুটি। এই সময়টা তারা আরাম করে ঘুমচ্ছে বা পরিবারের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।

ছোঁয়া সাদির গলা জড়িয়ে আরামসে সাদিকে দেখছে। লোকটার গম্ভীর মুখখানা। কন্ঠনালির পাশের ওই তিলটা দারুণ ভাবে টানছে ছোঁয়াকে। টুপ করে একটু ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিতে মন চাচ্ছে। কিন্তু লোকটা যাদি ঠাসস করে ফেলে দেয়?
আরেহহহ ফেললে ফেললো তাতে কি হয়েছে?
একটা চুমু খাওয়াই যায়।
ছোঁয়া আরও একটু শক্ত করে গলা জড়িয়ে নেয়। চোখ দুটো বন্ধ করে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়িয়ে দেয় সাদির গলায়। সাদি থামে না এবং কিছু বলেও না। ছোঁয়া ভেংচি কাটে। পাথর লোক একটা।
এবার ছোঁয়া ছোট করে কামড়ে দেয় সাদির গলায়। থেমে যায় সাদি। চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।

“আপনার গলা থেকে গন্ধ আসছে। ভাবলাম রাক্ষস টাক্ষস না কি তাই একটু কামড়ে পরিক্ষা করে নিলাম। জাস্ট এতটুকুই।
আপনার মতো বুড়োর প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্টি নেই।

সাদি আবার হাঁটতে থাকে। ছোঁয়া মুখ টিপে হাসে। একবার চিমটি কেটে দেয় সাদির বুকে টিশার্টের ওপর দিয়ে। পরে কি মনে করে টিশার্টের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বুকের বা পাশে শক্ত করে হাত চেপে ধরে।
সাদি আবারও তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়
” চেক করছি আপনি মানুষ না কি এলিয়েন।

“আমারও চেক করা দরকার তোমাকে ঠিক কিসে লাড়ে।

” চেক করার কি আছে। আমি নিজেই বলে দিচ্ছি আমাকে শয়তানে লাড়ে। আর আপনাকে মানুষ বানাতে বলে।

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। কপাল করে বউ পেয়েছিলো। জাদু ঘরে তুলে রাখার মতো।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে দরজার সামনে নামিয়ে দেয় ছোঁয়াকে।
পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে। ছোঁয়া ভেতরে ঢুকে টিভি চালিয়ে দেয়।

“যাকক এখানে এনে ভালোই করেছেন। এখন আমি মুভি দেখবো। উফফফফ গবুকে দেখবো। আমার জন্য চিপস নিয়ে আসুন ছোট ভাইয়া।

সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ছোঁয়ার মাথায় গাট্টা মেরে কিচেনে চলে যায়। ছোঁয়া মাথায় হাত বুলিয়ে টিভি অন করে চিল্লিয়ে বলে
” ভাবছি গ্যাব্রিয়েল এর নেক্সট মুভির নায়িকা আমি হবো।

সাদি রান্না ঘর থেকেই একটা টমেটো ছোঁয়ার মাথা বরাবর ছুঁড়ে মারে। সত্যিই মাথায় গিয়ে লাগে।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে তাকায় সাদির দিকে।

“গ্যাব্রিয়েল ওর শার্ট ধোঁয়ার জন্যও নিবে না তোমার। তুমি বরং জায়েদ খানের পেছনে লেগে যাও। দুই পাগলে মানাবে ভালো। মুভি হিট হবে।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
“জায়েদ খানও আপনার থেকে ভালো। অন্তত রোমান্টিক গান গাইতে পারে। আপনি তো করলা গেলা ছাড়া আর কিছুই পারেন না।

” তোমাকেও গিলতে পারি। গিলে দেখাবো?”

সাথে সাথে ছোঁয়া দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। মনে মনে সাদিকে শ-খানিক গালি দিয়ে টিভির চ্যানেল পাল্টাতে থাকে।
সাদি দুইজনের জন্য দুই মগ কফি বানিয়ে এসে ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়া তাকায়ও না সাদির দিকে। সাদি তাকিয়ে আছে।

“সানডে আমি সিঙ্গাপুর যাচ্ছি”

সাদির নরম গলা। সে ভাবে ছোঁয়া রিয়েক্ট করবে। সাদিকে জড়িয়ে ধরবে। যেতে না করবে। কিন্তু ছোঁয়া উল্টে হাতে কফির মগ নিয়ে গোল হয়ে বসে পড়ে।

“সত্যি?
আমার জন্য একটা রোমান্টিক সুন্দর জামাই নিয়ে আইসেন।

সাাি হতাশ হয়। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার কাঁধ জড়িয়ে ছোঁয়ার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে। ছোঁয়াও ভদ্র মেয়ের মতো পড়ে থাকে সাদির বুকে।

” তোমাকে ভালোবাসি না আমি। তুমি শুধুমাত্র আমার বউ।
ভালোবাসি শোনার জন্য তুমি যা যা করছো এতে কাজ হবে না।

বুক ভাড়ি হয়ে আসে ছোঁয়ার। চোখেও পানি টলমল করে
“ভালোবাসা লাগবে না আমার। শুধু একটা বেবি দিন। যাতে বেবিটার মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা না ভাবতে পারেন।

সাদি কিছু বলতে যাবে তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়া সাদির বুক থেকে মাথা তুলে। সাদি উঠে গিয়ে দরজা খুলে। আর তখনই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সামির। সোজা গিয়ে ছোঁয়ার পাশে বসে

” আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।

সাদি মাথায় হাত দিয়ে বলে। সাদি বিরক্ত। আবার ড্রামা শুরু করবে। ছোঁয়া আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে সামিরের জানতে চায় সে।

“কি হয়েছে ভাইয়া?।

” একটা মেয়ে আমাকে খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এই মুখ আমি সমাজে কিভাবে দেখাবো? আমার কি আর এই জীবনে বিয়ে হবে? অকালে কপাল পুড়লো আমার।

ছোঁয়া এক পলক সামিরের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেক পলক সাদির দিকে তাকাচ্ছে। খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার বেপারটা আসলে ছোঁয়া বুঝতে পারছে না।
সামির তো কেঁদেই যাচ্ছে।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে
“ভাইয়া খেয়ে ছেড়ে দেয় কিভাবে?

সামিরের কান্না শেষ। চোখে কোনো পানি নেই।
” বোঝো নাই বেপারটা?
একটা মাইয়া আমাকে চুমু খেয়ে ব্রেকআপ করে দিয়েছে। তাহলে বেপারটা খেয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো?
এখন অন্য পোলার লগে ঘোরাঘুরি করছে। আমার কি হবে?

ছোঁয়া এবার সামিরের দিকে একটু এগিয়ে বসে বলে
“ভাইয়া আমারও একই অবস্থা। খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার বেপারটা আমার সাথে ঘটেছে। আপনার কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-২৬+২৭

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৬
#তানিশা সুলতানা

অভিমানী ছোঁয়ার অভিমান গলবে কি করে?
সাদি ইরা এবং রিমিকে এনেছে ছোঁয়ার সাথে কথা বলানোর জন্য। ছোঁয়ার মনের ভাব জানার জন্য। ছোঁয়া সমস্যা কি সেটা বোঝার জন্য।
কিন্তু ওরা কি করছে? ছোঁয়াকে নিয়ে মুভি দেখতে বসে গেছে। ফানি মুভি।
তিনজন মুভি দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে। এতোদিন পরে ছোঁয়াকে হাসতে দেখে সাদির যেমন ভালো লাগছে তেমন খারাপও লাগছে। ওদের সাথে ভালো ভাবে কথা বলছে কিন্তু সাদির সাথে বলছে না।

নাজমা বেগম মেয়ের হাসি দেখছে। এতোদিনে তার কলিজা ঠান্ডা হলো। মা তার সন্তানের ওপর যতই রেগে থাকুক না কেনো সন্তানের মন খারাপে মায়েরাই বেশি ভেঙে পড়ে।
মমতা বেগমও ওদের সাথে মুভি দেখতে বসে গেছে। সাবিনা বেগম আর সিমি পকোড়া বানাচ্ছে।এটা ছোঁয়ার প্রিয়।
সাদি এসে ওদের পাশে বসে। দৃষ্টি তার ছোঁয়ার দিকে। পায়ের ব্যান্ডেজ এখনো খোলা হয় নি। পা টানটান করে মেলে দিয়ে বসেছে ছোঁয়া। সাদি ঠিক ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসেছে। ব্যান্ডেজের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ছোঁয়া খেয়াল করছে কিন্তু কিছু বলছে না। মুখে হাসি বজায় রেখে মুভি দেখে চলেছে।

পাক্কা দুই ঘন্টায় একটা মুভি শেষ করে ওরা ওঠে। সকলেই ভীষণ মজা পেয়েছে মুভি দেখে৷ মমতা বেগমের কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে তাই তিনি একটু হাঁটতে চলে গেছে। সিমি পকোড়া চা দিয়ে গেছে ওদের। ছোঁয়া চা খেতে পারে না। তারপর ঠোঁট আর জিব্বা পুরে যায়। তাই সে শুধু পকোড়া খাচ্ছে।
রিমি সাদির মুখে একটা পকোড়া ঢুকিয়ে দেয়। সাদি রাগী দৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকাতেই রিমি দাঁত কেলিয়ে হাসে।
ইরা চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলে
“ছোঁয়া তোমার জন্য ছেলে দেখেছি আমি। দারুণ দেখতে এবং প্রচন্ড রোমান্টিক।

সাদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে। এদের নিয়ে এসেছে সমাধান করতে আর এরা ঝামেলা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে
” রোমান্টিক তুমি জানলে কি করে?
“আমি জানবো না? আমারই তো এক্স।
রিমি ইরার মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“তোর এক্স কোন লেভেলের পাগল হবে ছোঁয়ার জানা আছে। চুপ চাপ থাক।
ইরা ভেংচি কাটে। ছোঁয়া ইরার দিকে একটু চেপে বসে
” ব্রেকআপ কেনো করলে? আই মিন রোমান্টিক ছিলো হ্যান্ডসামও ছিলো আই নো
তাহলে?
ইরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“মেয়েবাজ ছিলো একটা। দুনিয়ায় যত মেয়ে ছিলো সব তার চেনা
ছোঁয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে। তার সাথে তাল মেলায় রিমি
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না জানা তার।
তাই ফোনটা হাতে নিয়ে রিমিকে টেক্সট করে
” আমাদের প্রাইভেসি লাগবে। বের হ”

রিমি মেসেজটা পড়ে সাদির দিকে সরু চোখে তাকায়। সাদি ইশারায় বেরতে বলে। রিমি হাই তুলে দাঁড়িয়ে যায়।
“ইরা ইমন শিপন আশিক আসছে। চল এগিয়ে আনি। দুই হাত ভর্তি গিফট আনছে ছোঁয়ার জন্য। চল হেল্প করে আসি।

বলতে বলতে ইরার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। দরজাটাও বন্ধ করে দিয়ে যায়
ছোঁয়া লাস্ট পকোরাটা মুখে পুরে হাত ঝাড়ে। হাতের তেল মোছার জন্য আশেপাশে তাকায়। তেমন কিছু না পেয়ে বিছানার চাদরের সাথে মুছে ফেলে। এটা দেখে সাদির হাসি পায়। আজকে হাসি আটকায় না। ঠোঁট মেলে একটুখানি হাসে। শব্দহীন হাসি।
এতোখনে ছোঁয়া তাকায় সাদির দিকে। এক পলক তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলে। বিছানা থেকে নামার জন্য ভাঙা পা টা নিচে নামাতে যায়। সাদি এগিয়ে আসে। দুই হাতে ছোঁয়াকে জাপ্টে ধরে।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
সাদি ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“কারণ না বললে খেয়ে ফেলবো তোমায়।

ছোঁয়া চোখ খুলে। পেটের ওপর শক্ত করে ধরে থাকা সাদির হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। পুরুষালি শক্ত পোক্ত হাতের কাছে ছোঁয়ার এই পুচকে হাতটা যেনো চুনোপুঁটি।
ছোঁয়ার প্রচেষ্টা দেখে সাদি বিরক্ত হয়। এবার দুই হাতে ধরে ছোঁয়াকে। ব্যাথাও পাচ্ছে ছোঁয়া একটু আতটু।
“ছাড়ুন আমায়।
সাদি আরও একটু শক্ত করে চেপে ধরে। অধৈর্য্য করে দিচ্ছে মেয়েটা। সাদির রাগ বেড়ে যাচ্ছে। এবার ছোঁয়া ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে। সাদি ধমকে বলে।
” বলবা কি না?

ছোঁয়া জবাব দেয় না। একদম বলবে না সে। কেনো বলবে? এমন একটা ভাব করছে যেনো সে জানেই না।
ছোঁয়ার চোখে পানি চলে এসেছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছে।

বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। রাগ দেখিয়ে এর মুখ থেকে কথা বের করা যাবে নস বুঝে গেছে। তাই এবার হাতটা নরম করে ফেলে। ছোঁয়াকে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়। দুই হাত ছোঁয়ার দুই গালে রেখে শান্ত গলায় বলে
“জান বলো প্লিজ। কেনো ইগনোর করছো? ভালো লাগা শেষ?

ছোঁয়া কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় সাদির দিকে। নাক ফুলছে জোরে জোরে শ্বাস টানছে। এমনটা হয় ছোঁয়া ভীষণ রেগে গেলে। এখন ছোঁয়া ভীষণ রেগে আছে বুজতে পেরেছে সাদি। কিন্তু কি নিয়ে এতো রাগ? সবই তো ঠিকঠাক ছিলো। তাহলে? তাছাড়া ছোঁয়া এতো সহজে ভেঙে পড়ার মেয়ে নয়। খুব বেশি আঘাত না পেলে ছোঁয়া কাঁদে না।
” আমার কাছে কেনো এসেছেন? আমি তো আপনাকে ডিস্টার্ব করি। আমাকে তো আপনার পছন্দ না। আপনার এক্সগার্লফ্রেন্ডের কাছ যান গিয়ে।
আমি আর আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না। ডিভোর্স

বাকিটা শেষ করার আগে সাদি তার পুরুষালি ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়া গোলাপি টকটকে ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে ঢুকিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় ছোঁয়া। হাত দুটো আপনাআপনি চলে যায় সাদির চুলে।
আস্তে আস্তে দুই ওষ্ঠদ্বয়ের গভীরতা বাড়তে থাকে। চুপ করানো উদ্দেশ্য থাকলেও সাদি অজানা সুখের সন্ধান পেয়ে যায়। পুরুষালি হাতের বেহায়া স্পর্শ এবং পুরু ওষ্ঠের গভীর চুম্বন দুটোই দিশেহারা করে তুলছে ছোঁয়াকে। সয্য করতে পারছে না সে। ভালো লাগা খারাপ লাগা সবটা মিলেমিশে এক আজানা সুখে ভাসছে সে। দম নিতে পারছে না।
ছটফট করতে থাকা ছোঁয়া দুই হাতে সাদিকে দূরে ঠেলতে চাচ্ছে। বিরক্ত হয় সাদি। চুম্বন থামিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
আকুতিভরা গলায় বলে ওঠে
“পাঁচ মিনিট চুপচাপ থাকো না জান। জাস্ট পাঁচ মিনিট। নাক দিয়ে শ্বাস টানো।

এরপর আর ছটফট করার সাহস হয়ে ওঠে না ছোঁয়ার। চোখ দুটো বন্ধ করে সাদির গভীর স্পর্শ অনুভব করতে থাকে। গম্ভীর পুরুষের ঘন নিঃশ্বাস গুনতে থাকে। নিজেও সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করে সখের পুরুষের গভীর আদরে।

তখনই দরজায় কড়া নারে। ধুপধাপ শব্দ বেড়েই চলেছে। ইমন শিপন ইরা রিমা আশিক ওদের গলা শোনা হচ্ছে।

ছোঁয়া সাদিকে সরানোর জন্য আবারও ছটফট করতে থাকে। সাদি ছোঁয়ার ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছে। নিঃশ্বাস যেনো তার আটকে ছিলো।
সাদি বা হাতেট বৃদ্ধা আঙুলে নিজের ঠোঁট মুছে বলে
” নাইস টেস্টট।
বলেই সে আয়নার সামনে চলে যায়। ছোঁয়া লজ্জায় কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।

আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় সাদি।

“কাম ইন

বলতে দেরি সকলের হুরমুরিয়ে ঢুকতে দেরি নেই।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৭
#তানিশা সুলতানা

সামির গভীর দৃষ্টিতে ছোঁয়া এবং সাদিকে পর্যবেক্ষণ করছে। সাদি আয়নার সামনে থেকে সরছেই না। আর ছোঁয়ার গাল দুটো লাল টকটকে হয়ে গেছে।
কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে ছিলো। রিমি কম্বল সরিয়ে নিয়েছে।
বাই এনি চান্স ছোঁয়া কি লজ্জা পাচ্ছে? এ জীবনে সামির সব দেখেছে কিন্তু ছোঁয়াকে কখনো লজ্জা পেতে দেখে নি। শিওর হওয়ার জন্য ছোঁয়ার পাশে বসে প্রশ্ন করেই ফেলে
“তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো ছোঁয়া?

সাদি ধপ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সকলের নজর আটকে যায় ছোঁয়ার মুখ পানে। এতোগুলো মানুষকে তাকাতে দেখে ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে

” লজ্জ পাবো না? সন্তান আসতে চলেছে আমার।

সাদির হাত থেকল চিরুনি পড়ে যায়। শিপন মুখে আপেলের টুকরো ঢুকিয়েছে কামড় দিতে ভুলে গেছে। আশিক পানি খেতে গিয়েছিলো কেশে ওঠে। ইরা রিমি বড়বড় চোখ করে ছোঁয়াকে দেখছে।
সামির কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে

“শালা হারামি
টয়লেটে সময় বেশি লাগলে সেটাও আমার সাথে শেয়ার করিস। একটা প্যান্ট কিনলে আমাকে বলে কিনিস। হট একটা মুভি দেখতে ইচ্ছে হলে সেটাও আমাকে বলিস।
আর আজকে বাসর করে ফেললি আমাকে ছাড়া? এতোটা অবহেলা আমি সয্য করবো কিভাবে? ওপর থেকে কেউ দড়ি ফালাও আমি চইলা যাই। এই ধরণীতে আমি আর থাকতে চাচ্ছি না।

মিথ্যে মিথ্যে কান্নার অভিনয় করে সামির। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সব গুলো ড্রামাবাজ তার কপালেই ছিলো।
রিমি চেপে বসে ছোঁয়ার সাথে

” আমার প্রথম থেকে বলো ছোঁয়া। কিভাবে শুরু করলে। কে আগে এগিয়েছিলো। কিভাবে শেষ হলো। ঘটনাটা কবে ঘটেছে? সবটা একে একে বলো।

ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখ বড়বড় করে বলতে না করে। ছোঁয়া মুখ বাঁকায়

“আপু বলতে না করছে।
কেনো বলো তো? ওই যে মিহি পিহি আছে না? তোমরা তো তাকে চিনো। তোমাদের সাথে শেয়ার করলে যদি তোমরা মিহি পিহিকে বলে দাও। তাহলে তো সে ওনালে রিজেক্ট করো দিবে। আর যাই হোক বউয়ের সাথে উল্টা পাল্টা করা ছেলের সাথে তো সে আর পরক্রিয়া করবে না তাই না?

সকলের মুখ এবার কই মাছের মতো হা হয়ে যায়। বলে কি ছোঁয়া? মিহি আসলো কোথা থেকে? ছোঁয়ার থেকে রোমাঞ্চকর মুহুর্ত শোনার জন্য মিহির কথা চেপে যায় ওরা। মিহির চ্যাপ্টার পড়ে ধরা যাবে।

” ছোঁয়া তুমি বলতে থাকো। আমি মিহিকে বলে দিবো। চলবে?

ইরা বলে ওঠে।

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি আপু আমি বলবো।
আজকে একটু আগে উনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কি হয়েছে। আমিও বলছিলাম না। তাই উনি ঠাসস করে

ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি বলে ওঠে
” ঠাসস করে একটা চর মেরে দিয়েছি।
এখন চুপ না করলে বিদেশ চলে যাবো। আসবো না আর।

সকলেই বিরক্ত হয় তাকায় সাদির দিকে। ছোঁয়ার মুখখানা চুপসে যায়।
সামির মুখে আস্ত একটা আপেলের টুকরো পুরে বলে
“বা*ল যেখানে খুশি যা। আমাদের জ্বালাচ্ছিস কেনো? শুনতে তো দিবি। সারাক্ষণ পকপক করিস খালি।

ছোঁয়া গোমড়া মুখে বলে
“মিহিকে সাথে নিয়ে জাহান্নামে যান গিয়ে। আমার কি? আমিও গবুর কাছে চলে যাবো।

সাদির কপালে তিনটে ভাজ পড়ে। এই গবুটা আবার কে? কোথা থেকে আসলো?
আশিক প্রশ্ন করে
” এই গবুটা কে?
“মাই ফ্লট মুভির হিরোর গ্যাব্রিয়েল। আমি ভালোবেসে গবু নাম দিয়েছি।

সাদি স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে ” ইডিয়েট”
সামির বাহবা দেয় ছোঁয়াকে
“বাহহ ছোঁয়া বাহহহ
গ্যাব্রিয়েল থেকে গবু। তা আমাদের সাদিকে ভালোবেসে কি নাম দিয়েছো?

” সাদু বেবি

সকলে এক সাথে সুর তুলে বলে ওঠে “ওহহহহ হো সাদু বেবি”

সব পাগলদের এক সাথে আড্ডা দিতে দিয়ে সাদি বেরিয়ে যায়। অফিসে প্রচুর কাজ। এই সপ্তাহেই আবার অস্ট্রেলিয়া যেতে হবে তাকে বসের সাথে। সেই ব্যবস্থা করার দায়িত্বও সাদির কাঁধে পড়েছে। ছোঁয়াকে নিয়ে টেনশন করে কাজ করতে পারলো না কয়েকদিন। আপাতত ছোঁয়াকে নিয়ে টেনশন নেই।
তবে ছোঁয়ার মন খারাপ হওয়ার কারণটাও খুঁজে বের করা দরকার। পরবর্তীতে আবারও একই বিষয় নিয়ে মন খারাপ বা ভুলবোঝাবুঝি হতে পারে। সাদি চাইছে না তাদের সম্পর্কে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকুক।

নিজের রুমে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে সাদি। পাশের রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসছে। কাজ করতে একটু অসুবিধা হলেও বিরক্ত হচ্ছে না সাদি। ওই রুমে থাকা প্রতিটা মানুষ সাদির কাছে ইমপটেন্ট। ভীষণ ইমপটেন্ট।

রাতের খাবার খেয়ে তবেই সবাই বাসায় যাবে। আগেই যেতে চেয়েছিলো সাবিনা বেগম এবং নাজমা বেগম যেতে দেয় নি।
ছোঁয়া আজকে ভীষণ হেসেছে। এই কয়দিনের মন খারাপ তার গায়েব হয়ে গেছে।
এই সবাই ছাঁদে গিয়েছে। পরি নিয়ে গেছে ওদেরম পরির দাদু তার জন্য নতুন দোলনা এনেছে ছাঁদে সেটাই দেখাতে। আপাতত ছোঁয়া একা আছে। হাঁটতে পারছে না বলে আবারও মন খারাপ হচ্ছে।
পা ভাঙার আর সময় পেলো না।

সাদি কাজ শেষ করে আসে ছোঁয়ার রুমে। ছোঁয়াকে একা বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে
“বাঁদরের দল কোথায়?

” ছাঁদে গেছে।

সাদি বসে পড়ে ছোঁয়ার পাশে।
ছোঁয়া সাদিকে বসতে দেখে দুই হাতে ঠোঁট চেপে ধরে। আবারও দম বন্ধ করা চুমু খেতে আসলে ম*রেই যাবে।
আলতো হাসে সাদি।
প্রথমবার সাদিকে হাসতে দেখলো ছোঁয়া। লোকটা হাসছে? এতো সুন্দর কেনো লোকটার দাঁত গুলো। ভালো করে হাসলে মনে হয় আরও সুন্দর লাগবে।
কিপ্টা লোক। হাসির বেলায়ও কিপ্টামি করে।

ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই কানে ভেসে আসে হৃদয় কাঁপানো কয়েকটা শব্দ

“আমার জীবনে তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো নারী নেই।
আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট।

বেরিয়ে যায় সাদি। রেখে যায় হতদম্ভ হয়ে বসে থাকা ছোঁয়াকে। মনে মনে কয়েকবার আওড়ায় সাদি বলা কথা গুলো। পরপরই লাফিয়ে ওঠে ছোঁয়া।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-২৪+২৫

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৪
#তানিশা সুলতানা

প্রিয় মানুষটার পাশে অন্য কাউকে সয্য করার ক্ষমতা হয়ত পৃথিবীর কোনো নারীরই নেই। সাদির পাশে অন্য একটা মেয়েকে দেখে কিছুখনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো ছোঁয়া। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। নিজের ভরটা সামলে উঠতে পারছিলো না।
রাস্তার এক কোণে বসে পড়ে ছোঁয়া। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সামনের দৃশ্যটা কি সত্যি? এমনটা হতে পারে?
একটা মানুষকে নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসলো আর সেই মানুষটা সামান্য একটু মায়াও করলো না ছোঁয়ার প্রতি?
ভালোবাসা কি এমনই?
আর কতোটা নিচে নামলে সাদির ভালোবাসা পেতো ছোঁয়া?
মানুষ এমন কেনো? যার ভালোবাসা পাওয়া কখনো সম্ভব নয় আমরা তাকেই কেনো ভালোবেসে ফেলি? জীবনটা কেনো ওলটপালট হয়ে যায়?

রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশে রেস্টুরেন্টের সামনে সাদির কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে যাচ্ছে একটা রমনি। সাদি তাকে সরাচ্ছেও না আবার ধরছেও না। গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দুই হাতে জাপ্টে ধরেছে সাদিকে। যে কেউ দেখলে অনায়াসে বলে দিতে পারবে এই দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে।
ছোঁয়া এসেছিলো সাদির কাছে। তিন দিন হয়ে গেলো সাদিকে দেখে না ছোঁয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে পড়তেও আসে না।
কলেজ ফাঁকি দিয়ে সাদির অফিসে চলে এসেছিলো সাদিকে দেখতে। কয়েকবার কলও করেছে কিন্তু সাদি রিসিভ করে নি।

সাদি মেয়েটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে চলে যায়। ছোঁয়া শূন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশে মেঘ জমেছে। কালো মেঘগুলো সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। রাস্তাঘাটে জনমানব কমে এসেছে।
ছোঁয়া নিজেকে আটকাতে পারে না চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তখনই ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে থাকে। বৃষ্টির স্রোত বাড়তে থাকে। তার সাথে বাড়তে থাকে ছোঁয়ার কান্নার গতি। এই মুহুর্তে জানটা বেরিয়ে গেলেও মনে হয় এতোটা কষ্ট হতো না। হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। আফসোস গুলো কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে “ইসসস মানুষটার হৃদয়হরণী হতে পারলাম না”
তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা কি করে সয্য করবে?

কতোখন কেঁদেছে জানা নেই ছোঁয়ার। বৃষ্টি কমে এসেছে। কাঁদায় মাখামাখি হয়ে গেছে ছোঁয়া। ব্যাগে থাকা ফোন টাকা বই সবই ভিজে গেছে।
উঠে দাঁড়ায় ছোঁয়া। ধীর গতিতে হাঁটতে থাকে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তবুও ছোঁয়া ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু অন্য সময় হলে ঠিকই ভয়ে সিঁটিয়ে যেতো।

বাসায় কাছাকাছি আসতেই ছোটমট একটা এক্সিডেন্ট হয় ছোঁয়া। মেইন রোডে এলোমেলো ভাবে হাঁটার ফলো ট্রাকের নিচে পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। তবে ট্রাকের ধাক্কায় সিঁটকে পড়ে যায়। ডান পা হাত এবং কপালে আঘাত পায়। গাছের সিকড়ে পা আটকে পা বেকায়দায় পড়ে ব্যাথা বেশি পায়।
অনেকখন বৃষ্টিতে ভেজার ফলো হাত পায়ে বোধ কমে গেছে। সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে ছোঁয়া।

বৃষ্টি যেনো কমার নাম নিচ্ছে না। একটু কমলেও এখন আবার বেড়ে গেছে।
সিফাত অফিস থেকে ফিরছিলো। স্পিড খেয়েছে বোতলটা ফেলবে বলে বাইরে তাকাতেই ছোঁয়াকে দেখতে পায়। মুহুর্তেই বুক কেঁপে ওঠে সিফাতের। সে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে যায়। হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। সেন্স নেই। কান্না করে ফেলে সিফাত। পাজা করে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পেছনে শুয়িয়ে দেয়। তারপর কল করে সিমিকে। কল রিসিভ হয় না। এবার সিফাত মেসেজ করে দেয়। হাসপাতালে আসতে বলে। আর সিফাত এখান থেকেই হাসপাতালে চলে যায় ছোঁয়াকে নিয়ে।

কতোখন পড়ে ছোঁয়া চোখ মেলে তাকিয়েছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে চোখ খুলতেই বাড়ির সকলকে দেখতে পায়। নাজমা সিমি আর সাবিনা ছোঁয়ার পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছে। সাজ্জাদ সেলিম আর সিফাত ওরা ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট পরিটাও ছোঁয়ার বেডে বসে আছে।
সবার দিকে নজর বুলিয়ে মাথার ওপরে নীরব হয়ে স্থির থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়া।
বেশ বুঝতে পারছে ডান পাশে ব্যান্ডেজ করা হাতে ক্যানেলো।

ছোঁয়াকে চোখ খুলতে দেখে শব্দ করে কেঁদে ওঠে নাজমা। মেয়ের চোখ মুখ ছুঁয়ে দেয়।
মেয়ের সাথে ভালো করে কথা বলেন না তিনি। আদর করে খাইয়ে দেন না বিয়ে হাওয়ার পর থেকে। সিমিও তেমন কথা বলে না ছোঁয়ার সাথে। ওদের মনে ছোঁয়ার প্রতি রাগ জমে আছে সাদিকে বিয়ে করার জন্য।

মায়ের উত্তেজনা দেখে ছোঁয়া কথা বলতে যায়। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। চিৎকার করে কান্না করার ফলে গলা ভেঙে গেছে।

তখন হুরমত করে সাদি ঢুকে পড়ে। উসকোখুসকো চুল বাসায় পড়ার স্যান্ডেল টাওজার এবং টিশার্ট পড়েই এসেছে।
“ও ঠিক আছে?
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে সাদি। সে যে দৌড়ে এসেছে বোঝাই যাচ্ছে।
সাবিনা বেগম সাদির কাছে যায়। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে
” আব্বা তুই চিন্তা করিস না। ও ঠিক আছে।

সাদি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া একবারও তাকায় নি সাদির দিকে। তার চোখ দুটো বন্ধ। চোখের কুর্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে
সাদি এগিয়ে যায়। গম্ভীর গলায় ধমকে বলে
“বৃষ্টিতে কেনো ভিজেছো? কোথাও দাঁড়ালেও তো পারতে। সব সময় তোমার পাকনামি করতে হবে। ইচ্ছে করছে চাপকে সোজা করতে।

” আহহ সাদি কি করছো? মেয়েটা অসুস্থ।

সাজ্জাদ ছেলেকে ধমক দিয়ে বলে।

“শখ করে অসুখ বাঁধিয়েছে। ইডিয়েট একটা

সিফাত সাদিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছোঁয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলে
” বাবা আমি বাড়ি যেতে চাই।

সেলিম এগিয়ে আসে। ছোঁয়া পাশে বসে। ছোঁয়া সেলিমের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো বাবা। আমি ম*রে যাচ্ছি।

মেয়ের কান্না দেখে সেলিমের চোখে পানি চলে আসে। নিজেই ক্যানেলো খুলে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।

” ভাই তুমি ফর্মালিটি গুলো পূরণ করে এসে।
আর সিফাত গাড়ি বের করো।

সিফাত দৌড়ে চলে যায়। সেলিম বেরিয়ে যায়। পেছন পেছন যায় নাজমা আর সিমি। সাজ্জাদ চলে যায়। সাদি পরিকে কোলে তুলে নেয়। পরি মিষ্টি করে হেসে সাদির গালে চুমু খায়।
“পাপা আমার সাথে যাবে না?
সাদি মাথা নারাম। পরি আরও একটা চুমু খায়।
সাবিনা ছেলের হাত ধরে।

বাড়ি ফিরে ছোঁয়াকে তার রুমে শুয়িয়ে দেওয়ার পরে ছোঁয়া শুধু একটাই কথা বলেছে
” আমি ঘুমবো”

সবাই চলে গেছে রুম থেকে। সাদি যায় নি। সে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছোঁয়া এখন পর্যন্ত সাদির দিকে তাকায় নি।
সাদি বেশ বুঝেছে কিছু একটা হয়েছে৷
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে পড়ে। ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোঁয়া চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।

“আমি তোমার পায়ে চুমু খেলে ব্যাথা সেরে যাবে কি?

ছোঁয়া জবাব দেয় না। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করে ছোঁয়ার কপালে শব্দ করে চুমু খায়।
কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে
” এটা জ্বর কমানোর জন্য।
ছোঁয়া শক্ত করে থাকে।
তারপর সাদি ছোঁয়ার হাতে চুমু খায়। তারপর পায়ের কাছে হাঁটু মুরে বসে অনেক গুলে চুমু খায়। পঞ্চাশ টা হবে বা তারও বেশি। সাদি গুণে নি ছোঁয়াও গুনে নি।
সাদি ছোঁয়ার পায়ে আলতো করে গাল ছুঁয়িয়ে বসে থাকে

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৫
#তানিশা সুলতানা

অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয়ে গেলে সহজে নারীর মন গলে না। নারী যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে জানে ঠিক তেমন ভাবেই প্রচন্ড অভিমান করতেও জানে।
এই যে ছোঁয়া অভিমান করেছে। ঠিক অভিমান বলা চলে না এটাকে। নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাদিকে আর জ্বালাবে না। সাদির সাথে কথাও বলবে না। তাকে নিয়ে ভাববে কিন্তু তাকে বুঝতে দিবে না। ভালোবাসবে দূর থেকে অধিকার দেখাবে না। মানুষটা যেভাবে ভালো থাকতে চায় থাকুক। সে অন্য কাউকে নিয়ে সুখে থাকতে চাইলে থাকবে।
ছোঁয়া এতোদিনে একটা কথা বুঝে গেছে
“জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধিটাই পাওয়া যায়।
কারো ভালোবাসা না”
তাই তো এতোটা জোর করে পাগলামি করেও সাদির মনে জায়গা করে নিতে পারলো না।

সাদি এখন নির্বাক দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া কোনো রেসপন্স করছে না। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে। পরি সাদির কোলে বসে সাদির দাঁড়ি নিয়ে খেলছে। কখনো টানছে কখনো হাত বুলাচ্ছে। চাপ দাঁড়ি গুলো একটুখানি বড় হয়েছে। ভেবেছিলো আজকে সেলুনে যাবে কিন্তু ছোঁয়ার জন্য যেতে পারলো না।

নাজমা বেগম গরম গরম ভাত নিয়ে এসেছে ইলিশ ভাজা দিয়ে। সাথে কাঁচা মরিচ। এটা ছোঁয়ার প্রিয়।
ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে ছিলো সাদি। নাজমা বেগম ছোঁয়ার মাথার কাছে বসে।

“আব্বা যাও খেয়ো এসো”

সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়
“পরে খাবো

” তোমার জন্য তোমার বাবা চাচা ভাই অপেক্ষা করছে। যাও

এবার আর সাদি না করতে পারে না। চুপচাপ পরিকে কোলে নিয়ে চলে যায়৷
সাদি যেতেই ছোঁয়া চোখ খুলে। নাজমা তাকে উঠে বসতে সাহায্য করে। ছোঁয়া শুধু এক ঢোক পানি খায়।
নাজমা এতো করে জোর করেও একটা দানা ভাত মুখে দিতে পারে না। ছোঁয়া পানি খেয়েই আবার শুয়ে পড়েছে। নাজমা এতোবার ডাকছে এতো কথা বলছে কিন্তু ছোঁয়া কোনো জবাব দিচ্ছে না। ভাড়ি অবাক হয় নাজমা বেগম। পায়ে কি বেশি ব্যাথা করছে?
এমন চুপচাপ থাকার মেয়ে তো তার নয়। ১০২° জ্বর নিয়েও মেয়েটা অনবরত কথা বলে চলে। হাত কেটে গিয়েছিলো একবার৷ চারটা সেলাই পড়েছিলো তবুও সে চুপচাপ থাকে নি। বরং কথা বলতে বলতে পাগল করে দিচ্ছিলো সকলকে। একটু ব্যাথা লাগলেই কাঁদতে কাঁদতে অস্থির করে তুলছিলো সকলকে। আর আজকে সেই মেয়ে এতোটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে?
হয়ত আজকে একটু বেশিই ব্যাথা পেয়েছে। নাজমা বেগম ভাতের থালা রেখে কপালে হাত দেয়। জ্বর খুব বেশি নেই। কপালে চুমু খেয়ে লাইট অফ করে দিয়ে চলে যায় সে।
নাজমা বেগম চলে যেতেই ছোঁয়া চাপা স্বরে কান্না করতে থাকে।

সাদি দুই তিন বার রুটি মুখে নিয়েছে। গলা দিয়ে খাবার নামছো না তার। সাজ্জাত সেলিম সিফাত কেউ ই খেতে পারছে না। মমতা বেগম তো আহাজারি করে কেঁদেই চলেছে। বাড়ির ছোট সদস্য ছোঁয়া। পরিও ছোট কিন্তু নীরব। আর ছোঁয়া চঞ্চল। চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলে সকলের মনেই দাগ কেটে যায়।

সাবিনা বেগম মমতা বেগমের ভাত মেখে দিয়ে মাছের কাটা বেছে দিতে থাকে
“মা আপনাকে ঔষধ খেতে হবে। অল্প ভাত খেয়ে নিন।

অমত করে মমতা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে অল্প ভাত মুখে দিতে থাকে।
সাদি হাত ধুঁয়ে উঠে পড়ে। কেউ তাকে কিছু বলে না।

সাদি চলে যায় ছোঁয়ার রুমে। দরজা খোলার আওয়াজে ছোঁয়া কান্না থামিয়ে ফেলেছে। দরজা বন্ধ করে ছোঁয়ার পাশে এসে বসে সাদি। লাইট জ্বালায় না। হয়ত ছোঁয়ার সমস্যা হবে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
তখনই সাদির ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করে স্কিনে তাকাতেই দেখতে পায় ” হিমি” নামটা জ্বল জ্বল করছে। ছোঁয়াও হালকা চোখ খুলে দেখেছে। নামটা দেখে বুকের ব্যাথা আরও বাড়তে থাকে। কান্না আটকে রাখা দায় হয়ে পড়ে৷
সাদি কল কেটে দেয় এবং ফোনটা বন্ধ করে ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়ে। ছোঁয়ার মাথাটা নিজের বুকের ওপর রাখতে যেতেই ছোঁয়া শক্তি দেখিয়ে সরে যায়। তাতে পায়ে বেশ ব্যাথা পায়। সাদি অবাক হয়ে উঠে বসে। এই মেয়েটা কাল ওবদি সাদির কাছে আসার জন্য পাগল ছিলো আর আজকেই কি হলো?

“আমি কি করেছি জানি না। তবে সরি।
এমন কেনো করছো তুমি?

ছোঁয়া সাদির কথায় কান দেয় না। সে চিৎকার করে বাবা বলে ডেকে ওঠে। সাদি কপাল কুঁচকে ফেলে
” আশ্চর্য তোমার বাবাকে ডাকছো কেনো?

ছোঁয়া জবাব দেয় না। সে আগের মতোই চিৎকার করে বাবা বলে ডাকছে।
ছোঁয়ার চিৎকারে সাজ্জাত সহ বাড়ির সকলে চলে এসেছে দরজার সামনে। কিন্তু দরজা বন্ধ। মমতা বেগমের আহাজারির কান্না বেড়ে গেছে। সকলে দরজা ধাক্কাছে এবং ছোঁয়াকে ডাকছে। সাদি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না।

সাদি ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না ইডিয়েট। পরিণাম খুব খারাপ হবে।

ছোঁয়া এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে। চোখ দুটো ফুলে গেছে ছোঁয়া। গাল লাল হয়ে গেছে।
সাদিও এবার চিৎকার করে বলে ওঠে
” কি হয়েছে আমায় না বললে বুঝবো কি করে?

ততখনে সিফাত দরজা খুলে ফেলেছে চাবির সাহায্যে।
সাদির চিৎকারের সকলের ভয় আরও বেড়ে গেছে। সেলিম গিয়ে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে। সাজ্জাদ কঠিন দৃষ্টিতে সাদির দিকে তাকায়
“কি হয়েছে?

ছোঁয়া হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে
” আমি তোমাদের সাথে ঘুমবো।

ব্যাস সাদির রাগটা আরও বেড়ে যায়। মেয়েটা বড্ড বার বেড়েছে।
ছোঁয়ার টেবিলে থাকা কাঁচের গ্লাস এবং জগ ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সাদি।
সকলে সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে এটা বেশ বুঝতে পারছে সকলে।
“আমার সাদুর কি হইছে? আমার সাদু তো রাগে না। ওরে তোরা কি বলছিস?
বলতে বলতে সাদির পেছনে যায় মমতা বেগম।

__

নতুন ভোর নতুন দিনের সূচনা। সাদির দিন কাল একটুও ভালো যাচ্ছে না। সেই দিনের পরে কেটে গেছে এক সপ্তাহ। একই বাড়িতে থেকে ছোঁয়ার দেখা পাওয়া দায় হয়ে উঠেছে৷ সারাক্ষণ রুমে বসে থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। সাদি সামনে গেলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে। হাজার ডাকলেও সাড়া দেয় না।
নিজেকে পাগল পাগল লাগছে সাদির। অফিসে মন টিকছে না। কাজে মন দিতে পারছে না। খেতে পারছে না। গোছালো সাদি পুরো অগোছালো হয়ে গেছে।
এটা বাড়ির সকলে খেয়াল করলেও এই বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।

ছোঁয়া এখন মোটামুটি সুস্থ। হাঁটতে পারে না ভালোভাবে। তবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে একটু আতটু চলাফেরা করতে কারে।
সাদি অফিসে যাওয়ার পরে সে রুম থেকে বের হয়। মমতা বেগম মা বড়মা এবং আপির আদর খায়। তারা সারাদিন ছোঁয়ার পেছনে লেগে থাকে। ছোঁয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
আবার সাদি আসার আগে রুমে চলে যায়।
আজকেও গল্প করছিলো মমতা বেগমের সাথে। ওদের সামনে বসে পড়ি খেলছে।
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। এই সময়ে কে আসলো? মনে প্রশ্ন জাগে ছোঁয়ার।
মমতা বেগম উঠে দরজা খুলে দেয়। সাদি এসেছেম উসকোখুসকো চুল লাল লাল চোখ দুটো ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে সাদিকে।
শার্টের তিনটে বোতাম খোলা।
“দাদুভাই তুমি এই সময়ে?
সাদি জবাব দেয় না।
সাদির পেছন থেকে বেরিয়ে আসে ইরা এবং রিমি। মমতা বেগমকে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-২২+২৩

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২২
#তানিশা সুলতানা

ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ধৈর্য ধরতে হয়। হুট করে কারো থেকে ভালোবাসা পেয়ে গেলে আবার হুট করেই সেই ভালোবাসা হারিয়ে যায়।
ধীরে ধীরে মনের মিল হয়ে ভালোবাসার সৃষ্টি হলে সেই ভালোবাসা সহজে হারাবে না। বরং সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসার ধরণটাও বেড়ে যাবে।
ছোঁয়া কখনোই জানতো না সাদির জীবনে কোনো নারী ছিলো। সাদিও কোনো নারীর প্রতি দুর্বল ছিলো। নারীটিকে নিয়ে ভালো থাকতে চেয়েছিলো। সুখে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলো।
আজকে মুভি দেখার মাঝে হুট করে মুখ ফঁসকে বলে ফেলেছে ইরা। ছোঁয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে ইরাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পুরোটা শুনেছে। তাদের প্রণয়, বিচ্ছেদ এবং নারীটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টাও।

নতুন কলেজে পা দিয়েছিলো সবে সাদি। মিশতো না কারো সাথে কথা বলতো না চুপচাপ ক্লাসের এক কোণে বসে থাকতো। ব্রেক টাইমেও একা একা থাকতো।
মিহি খেয়াল করতো সাদিকে। বলা বাহুল্য সে সাদির ওপর ক্রাশ খায়। ভাব জমাতে ছুঁটে যায় সাদির কাছে। সাদি ইনগোর করতো। কিন্তু মিহি দমে যেতো না। সারাক্ষণ সাদির পেছনে লেগে থাকতো।

ইরা আর সামির সাদিকে আগে থেকেই চিনতো। তারা ছোট থেকে একই স্কুলে পড়তো। কিন্তু সেভাবে সাদির সাথে বন্ধুত্ব হয়ে উঠতো না। ওই একটু হাই হ্যালো এই টুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো তাদের পরিচয়। কিন্তু মিহির সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ইরা সামির সিপন আশিক আর রিমির।
মিহিকে ইনগোর করতে করতে সাদি ক্লান্ত হয়ে মিশতে থাকে। সত্যি বলতে মিহিকেও সাদির ভালো লাগতো। তারপর তাদের কথা বাড়তে থাকে বন্ধুত্ব থেকে প্রণয় হয়।
এইচএসসি পরিক্ষার ঠিক আগের দিন মিহি জানায় তার বিয়ে ঠিক হয়ল গেছে।
সাদি সেদিন এক ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেছিলো। হয়ত চোখের পানি লুকানোর জন্য।
তারপর থেকে সাদি আরও গম্ভীর এবং নিশ্চুপ হয়ে যায়।

ছোঁয়া মনোযোগ দিয়ে সবটুকু শুনে। মিহিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানায়। যাককক ওই মেয়েটা একটা বড়সর উপকার করেছে ছোঁয়ার। ওই ডাইনি সাদির জীবনে থাকলে সাদি কখনোই ছোঁয়াকে বিয়ে করতো না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
মনে মনে কয়েকবার শুকরিয়া আদায় করে ছোঁয়া।

আশিক শিপন আর সামির তিনজনই বেয়ার খেয়ে পড়ে আছে। এতোখন উল্টাপাল্টা বলে চলেছে সবাই কিন্তু এখন নিশ্চুপ হয়ে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। টিভির স্কিনে চলছে ফ্লট মুভির বিশেষ মুহুর্তটা। সাদির সেদিকে ইন্টারেস্টি না থাকলেও একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে।
সতালো ভাই বোনের প্রেমকাহিনী দেখে ফোঁস করে শ্বাস টানে সাদি। টিভি বন্ধ করে ফোনটা বন্ধ করে ফেলে। বেয়ারের বোতল গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে এক পাশে রেখে দেয়। তারপর একেকটাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। তিন জনকে একটা খাটে শুয়িয়ে লাইট বন্ধ করে চাদর টেনে দেয় ওদের গায়ে।
তারপর দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়।

রিমি ইরা আর ছোঁয়ার গল্প এখনো শেষ হয় নি। সাদি নক করে ঢুকে ওদের রুমে।
“আমি খাবার রেডি করছি।

বলেই সাদি চলে যায়। ছোঁয়াও সাদির পেছনে দৌড় দেয়।
সাদি কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে নেয়। দুটো ডিম আছে।
ডিম বের করে পেঁয়াজ মরিচ বের করে নেয়।
ছোঁয়া এসে সাদির সামনে বসে পড়ে চুলার পাশে। সাাি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। তারপর নিজের কাজে মন দেয়।

” ফল্ট মুভিটা সুন্দর তাই না?

সাদি গম্ভীর গলায় বলে
“ডিজগাস্টিং

ছোঁয়া মুখ বাঁকায়।
” করলা কি না আপনি। আপনার কাছে তো এমন লাগবেই। আহহহা কি ভালো হিরোটা। কি সুন্দর। ঠোঁটের পাশের তিলটা উফফফফ ইচ্ছে করছিলো টুপ করে ছুঁয়ে দেই।

সাদি পাত্তা দেয় না। ছোঁয়া আসলে জেলাস করানোর জন্য বলেছিলো ভেবেছিলো এই বুঝি জেলাস হয়ে ছোঁয়াকে একটা ধমক দিয়ে।
মনে মনে হতাশ হয় ছোঁয়া। এই করলা কি না হবে জেলাস?
কপাল কি আর এতোই ভালো?
প্রসঙ্গ বদলে ছোঁয়া বলে ওঠে
“আমি না ফিউচার প্লানিং করে ফেলেছি

এবার সাদি মনোযোগ দেয় ছোঁয়ার দিকে। পেঁয়াজ কাটা হাতটা থামিয়ে দেয়। যেনো ছোঁয়া ইন্টারেস্টিং কিছু বলবে। ইডিয়েটার যেনো এবার একটু সুবুদ্ধি হলো।
ভ্রু কুচকে সাদি বলে
” হোয়াট?

“ভেবেছি বারোটা বেবি নিবো। জমজ কলাও খেয়ে নিয়েছি। বাকিটা আপনি সামলে নিবেন।

লাজুক ভঙ্গিতে বলে ছোঁয়া। সাদি চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে৷ গরু দিয়ে হাল চাষের আশা করেছিলে সে।

” একবার চিন্তা করুন তো বারোটা বাচ্চা এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে আমাকে মাম্মাম বলে ডাকছে আপনাকে পাপা বলে ডাকছে। আপনার মাথায় চড়ে নাচছে।
তারপর ইন ফিউচার আমাদের বারো পুত্র বিশ্বকাপ খেলছে আমি আর আপনি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছি
উফফফ ইমাজিন করুন মুহুর্তেটা।

সাদি মাথা নারিয়ে চুলা জ্বালায়। ছোঁয়া এবারও হতাশ। লোকটার কি অনুভূতি নেই? এতো ইন্টারেস্টিং একটা ফিউচার প্লানিং কোথায় বাহবা দিবে তা না মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
বিরবির করে সাদিকে বকা দিতে থাকে ছোঁয়া।
সাদি এবার বলে
“লিসেন
ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় কনসিনক্রিয়েট করো।

” ধুররর পড়ালেখা কে করবে?
দেখুন আপনি কষ্ট করে নকল টকল করে সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। ভালো জব পেয়েছেন। হয়ে গেলো। আমি কেনো কষ্ট করবো? আমি তো আরাম করবো। এখন কলেজে যাচ্ছি আপনাকে দেখার আশায়। আপনার বাসায় আসার জন্য। যখন পার্মানেন্টলি আপনার কাছে চলে আসবো তখন পড়ালেখাকে টাটা বাই বাই বলে দিবো।
সবাই শিক্ষিত হলে অশিক্ষিত কে থাকবে?

সাদি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“ইডিয়েট

ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সাদির সামনে এসে দাঁড়ায়। লোকটা রেগে গেছে ভালোই জানে ছোঁয়া।
” আপনি পড়াবেন?
আপনি পড়ালে পড়তে পারি।

সাদি ডিম নামিয়ে চুলা বন্ধ করে বলে
“প্রতিদিন সকাল সাতটায় বাসায় চলে আসবে৷

বলেই সে চলে যায়। ছোঁয়া চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।
শেষমেশ এই ছিলো কপালে?
সাতটায় এখানে আসতে গেলে ঘুম থেকে উঠতে হবে সাড়ে ছয়টায়। জীবনে কি এতটুকুও আনন্দ নেই?
মানুষ বিয়ে করে সুখে থাকার জন্য আর ছোঁয়া বিয়ে করলো অসুখে থাকার জন্য।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২৩
#তানিশা সুলতানা

ফজরের নামাজ শেষে সাদি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। এই সকাল বেলার ঝিরিঝিরি বাতাস ফুরফুরে হাওয়া এবং নিস্তব্ধ পরিবেশ সবটাই সাদির ভীষণ ভালো লাগে। প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে সে একটু হাঁটতে বের হয়।
এক ঘন্টা হেঁটে তবেই বাসায় ফেরে। কিন্তু আজকে বাড়িতে সকলে আছে বলে সাদি হাঁটতে বের হয় না।
বেলকনিতে দাঁড়িয়েই হাঁটতে বের হওয়ার খায়েশ মেটায়।
ঘড়ির কাটায় ঠিক ঠিক সাড়ে ছয়টা বাজতেই সাদি ছোঁয়ার ফোনে কল দেয়। ইডিয়েটটাকে বাসায় ফিরতে হবে। আজকে সেলিম ঢাকার বাইরে যাবে। ফিরবে কিছুদিন পরে। বেরোনোর সময় সে ছোঁয়াকে দেখতে চাইবে। এটা তার স্বভাব। ছোঁয়া পৃথিবীতে আসার পর থেকেই সাদি দেখে আসছে সেলিম দূরে কোথাও যাওয়ার আগে ছোঁয়ার মুখখানা দেখে বের হয়।

কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল রিসিভ হয় না এবং কোনো রেসপন্স নেই। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই মেয়েকে ঘুম থেকে তোলা এক প্রকার যুদ্ধ করা। সাদি নোটিশ করেছে।
পাঁচ বছর হলো সাদি ছোঁয়াকে নোটিশ করে। ছোঁয়ার খোঁজ খবর রাখে। এটাকে সাদি ভালোবাসা বা ভালো লাগা বলতে পারে না। তবে মনের খায়েশ মনে করে। মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। এইটুকুই। মেয়েটার পাগলামি গুলোও ভালো লাগে। আসলে এখন এমন মেয়ে দেখা যায় না।

মেয়েরা সারাক্ষণ এটিটিউট দেখাতে ব্যস্ত। পুরোনো ফেলে নতুন খুঁজে নেওয়াই তাদের মূল দায়িত্ব। ও আমাকে ইগনোর করছে আমি নতুন কাউকে খুঁজে নিবো। ওকে ভূলো যাবো। ভুলে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। এমনটাই চিন্তা ভাবনা সকলের।
কিন্তু ছোঁয়া?
এক সাদিতে আসক্ত।
আত্মসম্মান নেই ছোঁয়ার। সত্যিই নেই। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আত্মসম্মান টিকে থাকেও না।
নিজের আত্মসম্মান নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলে কখনোই ভালোবাসা জিতে নেওয়া যায় না।
ভালোবাসার সার্থকতা সেখানেই যেখানে জয় থাকবে। নিজের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে অপরজনের ভালোবাসা আদায় করে দিতে পারবে।

এসব ভাবনার মাঝেই ছোঁয়া কল রিসিভ করে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
“কি হয়েছে?
সাদির ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসতে গিয়ে নিজেকে থামিয়ে ফেলে।
হাসিতে তাকে মানাবে না।
তাই মুখটা কালো করে গম্ভীর গলায় বলে
” জান বাসায় যাবে না?
ছোঁয়া লাফ দিয়ো উঠে বসে। ঘুম তার উড়ে গেছে। সাদি আবার তাকে জান বলে ডেকেছে? সত্যিই ডেকেছে? না কি ভুল শুনলো?
“সোনা উঠে পড়ো। বাসায় ফিরতে হবে তোমার।
এবার ছোঁয়া শিওর হয়। কোনো স্বপ্ন টপ্ন নয়। সত্যিই সাদি কথা বলছে। তাকে উঠতে বলছে।
আহহহা দ্বিতীয় বার নিরামিষ জামাই জান আর সোনা বললো।
ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে টুপ করে লোকটার ঠোঁটে একখানা চুমু খেতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব?
ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে
” গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং বদলান আপনি। দূরল থাকলে জান সোনা কাছে গেলেই ইডিয়েট স্টুপিট।
মতলবটা কি আপনার বলুন তো?

সাদি আকাশের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে
“আপাতত উদ্দেশ্য তোমার ঘুম ভাঙানো। ভেঙে গেছে। এখন বাসায় যাও।

বলেই সাদি কল কেটে দেয়। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তার এক পাশে রিমি এবং আরেকপাশে ইরা শুয়ে আছে। ছোঁয়া ওদের মাঝখান থেকে উঠে পড়ে। বেলকনিতে চলে যয। ছোঁয়া জানে সাদি সেখানেই আছে। পাশাপাশি রুম হওয়াতে দুই রুমের বেলকনি একটাই।
ছোঁয়া রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে সাদির দিকে তাকায়

” এতো তাড়াই তাড়াই করেন কেনো? মায়া হয় না?

সাদি জবাব দেয় না। তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে৷ মেয়েটা অগোছালো। ভীষণ অগোছালো। এই যে ঘুম থেকে উঠে তেলতেলা মুখ উসকোখুসকো চুল এবং কুঁচকে যাওয়া জামা পড়েই স্বামীর সামনে চলে এসেছে। এখানে তো অন্য কেউ ও থাকতে পারবো।
মেয়েটা পারেই শুধু বকবক করতে আর কোনো কিছুতেই তার মন নেই৷
সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ছোঁয়ার থেকে দৃষ্টিতে সরিয়ে নিয়ে জবাব দেয়
“আগুন আর কেরোসিন বেশিখন এক জায়গায় থাকতে নেই।
সাদির কথার মানে বুঝে উঠতে পারে না ছোঁয়া। তাই মুখ বাঁকিয়ে বলে
” শুনেছি দুরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। তাই ভাবছি আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। তাই আপনি আমায় মিস করবেন।
আমায় অনুভব করবেন।

“দুরত্ব ভালোবাসা কমায়। মায়া কমিয়ে ফেলে।

ছোঁয়া সাদির দিকে একটু এগিয়ে আসে।
” আপনি বলছেন দূরে না যেতে?

সাদিও ভনিতা ছাড়াই জবাব দেয়
“হ্যাঁ

খুশিতে ছোঁয়ার চোখ দুটো চকচক করে ওঠে
” তার মানে আপনি আমায় মিস করবেন?

সাদি জবাব দেয় না। নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ ধরে নেয় ছোঁয়া। এবারও তার খুশি বেরে যায়।

“ভালোবাসেন আমায়?

সাদি জবাব দিতে সময় নেয়। হয়ত কিছু একটা চিন্তা করে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।
” জানি না।
তবে তোমকে আমার ভালো লাগে।

ব্যাস ছোঁয়াকে আর পায় কে? সে এক লাফে সাদির কাছে চলে যায়। জোরে সাদির হাতে চিমটি কেটে দেয়। সাদি শব্দ করে না তবে হাত নারিয়ে ওঠে।
ছোঁয়া বুঝে যায় ব্যাথা পাচ্ছে। তাই ছেড়ে দেয়। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“আরেহহ শিওর হলাম আমি স্বপ্ন দেখছি কি না।
আপনার মতো নিরামিষ যখন পছন্দ করে ফেলেছে। ভালোবাসতেও আর বেশি সময় লাগবে না।
আর আমাদের ফুটবল টিম হতেও আর বেশি দেরি নেই।

” ইডিয়েট

“আপনারই তো বউ।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-২০+২১

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২০
#তানিশা সুলতানা

সাদি রান্না করছে। সাবিনা বেগম চেয়েছিলো রান্না করে রেখে যেতে কিন্তু সাদি বারণ করেছে। মায়ের হাতের তেল মসলা যুক্ত খাবার খেতে তার অসুবিধা হয়। সাদি সাধারণ অল্প তেলের কম মশলার খাবার খেতে পছন্দ করে। তবে সাবিনা বেগম অনেক গুলো রুটি বেলে রেখে গেছে সাথে অনেক সবজি মাছ এসব কেটে দিয়ে গেছে। এমনকি সাদির জামাকাপড়ও ধুয়ে দিয়ে গেছে।

সাদি ভাতের মধ্যে করলা সিদ্ধ দিয়েছিলো সেটা তুলে ফেলে। ছোঁয়া সাদির পেছনে এসে দাঁড়ায়।

“আমি কিন্তু সত্যিই আজকে যাবো না। যাবো না মানে যাবো না। কেউ জোর করলেও যাবো না। শুনেছেন আপনি?

সাদি জবাব দেয় না। সে করলা রেখে ভাতের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। সাদি যে কাজটাই করবে একদম মনোযোগ দিয়ে করবে। যেনো কোনো ভুল না হয়। সাদির থেকে জবাব না পেয়ে ছোঁয়া খুশি হয়ে যায়। তার মানে গোপনে রোমান্টিক সাদি চাইছে ছোঁয়া থাকুক। গোপনে রোমান্টিক কেনো?
এই যে কাছে থাকলে করলার মতো বিহেভিয়ার আর দূরে গেলে জান সোনা৷ এটা কি গোপনে রোমান্টিক নয়?
ছোঁয়ার এসব ভাবনার মাঝে সাদি বলে ওঠে
” তোমাকে যেতেই হবে ইডিয়েট
ছোঁয়া ভেংচি কাটে। তাকের ওপর থেকে চিনির বোয়াম নিয়ে আসে। ছুড়ি দিয়ে করলার মুখ কেটে তা থেকে বিচি বের করে তারপর মধ্যে চিনি পুরতে পুরতে বলে
“ইডিয়েট বানান করেন তো। বানান পারেন?
আচ্ছা থাক বানান করতে হবে না। শুধু এইটুকু বলুন ইডিয়েট বানানে E আছে কি না।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। ভাতের মার ফেলে৷ তাকায় এক পলক ছোঁয়া দিকে। মেয়েটা জাস্ট ইম্পসিবল।

সাদির থেকে জবাব না পেয়ে ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে
” নকল করে পাশ করছে চুরি করে ইডিয়েট বানান শিখছে। সে আবার আসে আমার সাথে তর্ক করতে। চুপচাপ থাকবেন সব সময়।

সাদি জবাব দেয় না। নিজের কাজে মন দেয়। ছোঁয়াও আর সাদিকে ঘাটায় না। করলার মধ্যে চিনি ভরতে থাকে। ছোঁয়া উদ্দেশ্য এই চিনি ভর্তি করলা সাদিকে খাওয়াবে। যাতে তার মুখ থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হয়। আর সাদি ভেবে নিয়েছে এই করলা ছোঁয়া খাবে। তাই এতো যত্ন করে চিনি ভরছে।

সাদির রান্না শেষ। মাগরিবের আজানও দিয়ে দিয়েছে। এবার সাদি ফ্রেশ হতে রুমে চলে যায়। ছোঁয়াও পেছন পেছন যায়।

সাদি সবেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। ছোঁয়া গিয়ে দাঁড়ায় সাদির সামনে। সাদি পাত্তা না দিয়ে বেলকনিতে চলে যায় টাওয়াল রাখতে। ছোঁয়াও পেছন পেছন যায়। টাওয়াল মেলে দিয়ে সাদি রুমে আসে তখনও ছোঁয়া পেছন পেছন রুমে আসে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সাদি। ছোঁয়াও পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সাদি আয়নার মধ্যেই ছোঁয়া দিকে তাকিয়ে বলে
“কি চাই?
ছোঁয়া জবাব দেয় না। দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে থাকে। ছোঁয়ার হাসি দেখে সাদি বলে
” ভাইয়া কল করেছিলো। আসছে তোমাকে নিতে।
ছোঁয়ার মুখটা কালো হয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
সাদি ছোঁয়ার দিকে ঘুরে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ছোঁয়া করলাটা ঢুকিয়ে দেয় সাদির মুখে। এবং এক লাফে সাদির ল্যাপটপ ধরে
“ফেলে দিলে এটাও ফেলে দিবো

সাদি খানিকটা তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে। তারপর আস্তে আস্তে চিবাতে থাকে। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
” আপনাকে রোমান্টিক বানানোর প্রথম ধাপ পার করলাম।

সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া খুশিতে নাচতে থাকে। উফ এখন থেকে সাদির মুখ দিৈ মিষ্টি কথা বেরুবে।
কিন্তু ছোঁয়ার নাচ বেশিক্ষণ টিকে না। সাদি এসে ছোঁয়ার হাত ধরে সাথে সাথে থেমে যায় ছোঁয়া। তাকায় সাদির দিকে।
সাদি কাঁচা একটা করলা ছোঁয়ার সামনে ধরে
“এটা খেয়ে ফেলো। নাহলে তোমাকে দিয়ে আসবো। আর কখনো আনবো না।
ছোঁয়ার হাসি মুখটা এখন কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। সাদির থেকে করলাটা নিয়ে চোখ মুখ খিঁচে এক কামড় দেয়।
অসহায় চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে চিবাতে থাকে। সাদি ঠোঁট দুটো হালকা মেলে ছোঁয়ার মাথা টোকা দিয়ে বলে
” গুড জব

ছোঁয়া মনে মনে সাদিকে বকতে থাকে। আর তেঁতো করলা চিবাতে থাকে। সাদি আবার গিয়ে দাঁড়ায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে
“বয়সের তুলনায় বেশিই মিষ্টি তুমি৷ করলা খাবে সকাল বিকাল নিয়ম করে।
ছোঁয়া করলা গিলে সাদির দিকে তেড়ে এসে বলে
” বয়সের তুলনায় বেশিই নিরামিষ আপনি। বুড়ো হয়ে গেছেন। বেশি বেশি মধু খাবেন।
যতসব
জীবনটা তামাতামা বানিয়ে দিলেন।
বলতে বলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ছোঁয়া। মুখসহ ভেতর পর্যন্ত তিঁতা হয়ে গেছে। এটা জামাই না রাক্ষস?
ছোঁয়া যেতেই সাদি আলতো হাসে।
বিরবির করে বলে
“স্টুপিট একটা।

সিফাত চলে আসে। মূলত সেলিম পাঠিয়েছে সিফাতকে। সাদি আর সিফাত সোফায় বসে আছে। সিফাত এটা সেটা বলে যাচ্ছে সাদি শুধু শুনছে। বরাবরই এমন স্বভাবের সাদি। সবাই বলবে সে শুনবে। তার যেনো বলার কিছু নেই।

ছোঁয়া এতোখন ওয়াশরুমে কাটিয়ে এসেছে। সে বমি করার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। বমিও শত্রুতা করলো আজকে।
রুম থেকে বেরিয়ে সিফাতকে দেখে ছোঁয়ার চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। এবার তাকে যেতে হবে।
মূলত সাদির সাথে থাকবে কাছাকাছি থাকবে এই জন্য ছোঁয়া সাদির কাছে থাকতে চায় না। সাদিকে একা বাড়িতে রাখডে তার ভয় করে সেই জন্য সে সাদিকে ছাড়তে চায় না। এতো বড় বাড়ি সাদি একা থাকবে। যদি কোনো বিপদ হয়? এটাই তার চিন্তা।

সিফাত হাত ঘড়ি দেখে বলে
” এবার যেতে হবে। পরি অপেক্ষা করছে। ছোঁয়া কোথায়?
“আজকে ও এখানেই থাকুক। কাল যাবে।
সিফাত মুচকি হাসে।
” আচ্ছা আসছি আমি। সাবধানে থাকিস।

বলেই সিফাত চলে যায়। সিফাত যেতেই ছোঁয়া এক দৌড়ে সাদির কাছে আসে। দুই পায়ের গোড়ালি উঁচু করে সাদির গাল টেনে দেয়
“আমার টুনুমুনু জামাই
সাদি বিরক্ত হয়ে পিছিয়ে যায়।
কপাল কুঁচকে বলে
” টুনুমুনু আবার কি?
ছোঁয়া নিজের বিনুনি ঘোরাতে ঘোরাতে বলে
“ভালোবাসার ডাক।
সাদি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে
“কতো কিছু যে শুনতে হবে
” বুড়ো বয়সে এতো মিষ্টি বউ পেয়েছেন টসব শুনতে হবে না?

সাদি রুমে যেতে যেতে বলে
“তেঁতো করার পদ্ধতি জানা আছে আমার।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:২১
#তানিশা সুলতানা

সাদির বাসায় হাজির হয়েছে তার বন্ধুরা। রিমি যখনই জানতে পেরেছে ছোঁয়া এখানে এসেছে তখনই সে ইরাকে কল করেছে। আজকে সাদির বাসায় পার্টি করবে। আশিক সামির শিপন ওরা এদেছে মূলত সাদির সাথে আড্ডা দিতে৷ ওরা জানতো না ছোঁয়া এখানে আছে এবং রিমিরাও এখানে আসছে।
কলিং বেল বাজিয়ে রিমি আর ইরা অপেক্ষা করছে তখনই আশিক সামির এবং শিপন এসে দাঁড়ায়।
“তোরা এখানে কেনো?
রিমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
সামির রিমির মাথায় গাট্টা মেরে বলে
” জামাই রাইখা তুই এখানে কেনো?
রিমিও কম যায় না। সামিরের চুল টেনে দিয়ে বলে
“তুই জানিস না আমার জামাই বিদেশ।
” ওহহ হ্যাঁ তুই তো আবার বিদেশি সাহেবা।

“চুপচাপ থাক সামিরের বাচ্চা।

তখনই খট করে দরজা খুলে দেয় সাদি। ওদের দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে
” তোরা এখানে কেনো?

ইরা সাদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয়
“তোর রোমাঞ্চের বারোটা বাজাতে আসলাম।

রিমি ভেংচি কেটে বলে
” সাদি আর রোমাঞ্চ। আকাশ কুসুম ভাবনা। অকালে ছোঁয়ার কপাল পুরলো।

এবার শিপন বিরোধিতা করে বলে
“আমার বন্ধুরে একদম অপমান্স করবি না কইয়া দিলাম। করলা খেতে খেতে অনুভূতিতে একটু মরিচিকা ধরেছে এই যাহহ। একটু ঝালাই পালাই করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

সাদি এদের কথা শুনতে শুনতে দরজা বন্ধ করে ফেলে। সাদির এসবে অভ্যাস আছে। এরা সব সময়ই এমন।
সামির সোফায় আরাম করে বসে বলে
” ঝালাই পালাই করার মেডিসিন আছে আমার কাছে। বন্ধু যেহেতু আমার। তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে আনার ব্যবস্থা করার দায়িত্বও আমার। তাই আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

সকলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় সামিরের দিকে। কি সিদ্ধান্ত নিলো এটাই জানতে চায় সকলে?
সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরে সাদি একটু ভাব নেয়। শার্টের কলার টেনে বলে
“বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়। কথাটা তোরা মানিষ?
সকলেই মাথা নারায়। মানে সবাই মানে। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে টিভি চালু করে। এদের ড্রামা দেখার এতোটুকুও ইচ্ছে তার নেই। একেকটা ড্রামাবাজ।

” মাই ফ্লট মুভিটা সাদিকে দেখাতে চাচ্ছি।

সামিরের এবারের কথা শুনে সকলে হতাশ। মুভি দেখাবে এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে? আর ওরা কি না কি ভাবলো।
রিমি ঠাসস করে একটা কিল বসিয়ে দেয় সামিরের পিঠে
“হারামি শুধু শুধু সময় নষ্ট করলি।

সামির পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
” আরেহহ বা*ল। মারলি কেন? কথা তো শেষ করতে দিবি?
মুভিটা সেই লেভেলের রোমান্টিক। আমাদের সাদু বাবাজি একবার দেখতে তার অনুভূতি কানতে কানতে বাইরা যাইবো। আর আমরা খুব তাড়াতাড়ি চাচ্চু ডাক শুনতে পারমু। আহহহা রোমান্টিক মুভি।

তখনই ছোঁয়া বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সে এতোখন তার বাবার সাথে কথা বলছি। কথা বলছিলো বললে ভুল হবে বকা খাচ্ছিলো। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেছে ছোঁয়া। আরেহহ বাবা বিয়েই তো করেছে কাউকে তো আর খুন করে নি তাহলে কেনো এতো বকবে? বরের কাছে আসবে না?

সামিরের শেষের কথাটা শুনে ফেলে ছোঁয়া। এক লাফে সামিরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে
“ওয়াও ভাইয়া রোমান্টিক মুভি? আমার যে কি ভালো লাগে কি বলবো তোমায়।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। এই পাগলের অপেক্ষায়ই ছিলো সে। এবার পারফেক্ট লাগছে ওদের। দুনিয়ায় যত পাগল ছিলো সব এক জায়গায় জড়ো হয়েছে৷

আশিক শুকনো ঢোক গিলে বলে
” তুমি রোমান্টিক মুভিও দেখো?
ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে
“আর রোমান্টিক মুভি। কপাল কি আর এতো ভালো? কলেজে একটা বান্ধবী আছে সে দেখিয়েছিলো সানাম তেরা কসম মুভিটা। বাড়িতে দেখার তো উপায় নেই। সাদুর পেছনে ঘুরতে ঘুরতেই দিন যায়। রোমান্টিক মুভি দেখবো কখন?

ইরা হেসে ছোঁয়াকে নিজের পাশে বসায়
” আহারে ছোঁয়া মন খারাপ করিও না। আমি তোমাকে কিছু রোমান্টিক মুভি ডাউনলোড করে দিয়ে যাবো। সাদুর পেছনে না ঘুরে মুভি দেখবা ফুল ভলিউম দিয়ে। আর সাদির পেছনে ঘুরতে হবে না। সাদিই তোমার পেছনে ঘুরবে।

ছোঁয়া একটু ভাবে। তখনই সাদির কর্কশ গলার ধমক কানে আসে
“তুমি এখানে কেনো? রুমে যাও দ্রুত

ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলে
” বউ হলো ভালোবাসার জিনিস। নরম গলায় কথা বলতে হয় বউয়ের সাথে। বউকে ধমক দিতে নেই।

সাদি রিমোট ছুঁড়ে মারে ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়া সেটা ধরে ফেলে।
“সকলের বউ আর আমার বউ কি এক? সবাই মেয়ে বিয়ে করেছে আর আমার কপালে জুটেছে আস্ত একটা বাঁদর।

ছোঁয়া রিমোট টি-টেবিলে রেখে এক গাল হেসে বলে
” আপনার কথায় আমি একটুও মন খারাপ করি নি। কথায় আছে না রতনে রতন চিনে আর বাঁদরে চিনে বাঁদর।

সকলে হেসে ফেলে।
ইরা হাসতে হাসতে বলে
“ছোঁয়া উড়িয়ে দিয়েছো।
সাদি বিরবির করে বলে
” ইডিয়েট
ছোঁয়া শুনতে পায়। সাদিকে ভেংচি কাটে। তারপর ইরাকে বলে
“আপু আপু চলো আমাকে মুভি ডাউনলোড করে দিবে। ইসস আপু তুমি কি যে ভালো।
ইরাও হেসে ছোঁয়ার হাত ধরে যেতে নেয়। তারপর পেছন ঘুরে সামিরকে বলে
” তোরা ফল্ট দেখতে থাক আর আমরা ফ্লট এর জন্য রুমটা গুছিয়ে ফেলি
সাদি হেসে মাথা নারায়। রিমি ছোঁয়া আর ইরা চলে যায়।
এবার সাদি উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়
“তোরা কেনো এসেছিস?
আশিক মন খারাপের নাটক করে বলে
” এভাবে বলতে পারলি তুই আমাদের? আমরা ছুঁটে চলে এসেছি তোকে দেখতে। তোর উপকার করতে আর তুই?
ছিহহ সাদি ছিহহহ
তোর কথা শুনে আমার কান্না পাচ্ছে।
আশিকের সাথে তাল মেলায় সামির আর শিপন। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
“তোরা জাস্ট ইম্পসিবল।
আশিক হাত ধরে টেনে সাদিকে পাশে বসিয়ে দেয়। সামির ফোনে মুভি প্লে করে টিভিতে কানেক্টেড করে দেয়। শিপন নিজের ব্যাগ থেকে পপকন আর বেয়ার বের করে সামনের টি টেবিলে রাখে।
দারুণ একটা মুহুর্ত।
আশিক বলে
” ওদের কি একটা বোতল দিয়ে আসবো?
সাদি চোখ গরম করে তাকায় আশিকের দিকে। আশিক চুপসে যায়।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-১৮+১৯

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৮
#তানিশা সুলতানা

শুক্রবারের সকাল। অফিস নেই স্কুল কলেজ সব বন্ধ। তবুও দুই মিনিট স্বস্তির নেওয়ার সময় নেই। কারণ পুরো এক সপ্তাহের কাজ শুক্রবারে গুছিয়ে রাখতে হয়। এই যে সাদি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রান্নার কাজে লেগে পড়েছে। ওয়াশরুমে বালতিতে পানি নিয়ে তাতে জামাকাপড় ভিজিয়ে রেখে এসেছে। রান্না শেষে সেগুলো কাঁচতে হবে।
ছোঁয়াও থেমে নেই। সেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। তবে তার কোনো কাজ নেই। সে ফ্রী। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে তার সুইট কিউট বরটাকে জ্বালানো। তাকে একটুখানি রোমান্টিক করার দায়িত্ব পড়েছে তার ওপরে।

আয়নার সামনে বসে নিজেকে পরিপার্টি করে সাজিয়েছে ছোঁয়া। সময় নিয়ে সুন্দর করে সেজেছে। সাজের বেলায় সে কখনোই তারাহুরো করে না। মানুষ সাজেই তো নিজেকে সুন্দর দেখাতে। তো তারাহুরো করে কেনো নিজেকে সুন্দর করে তুলবো?
আস্তে আস্তে রয়েসয়ে সুন্দর করে তুলবে।

এই যে ছোঁয়া সেই ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেছে। মাসজনিত কারণে নামাজ মিস গিয়েছে। তাই গোছল সেরে সাজতে বসেছে
এখন সকাল সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট। এখন তার সাজ শেষ হলো
নীল রংয়ের থ্রি পিছ। চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক। দুই হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুরি।
লম্বা চুল গুলো সুন্দর করে আঁচড়ে ছেড়ে দিয়েছে।
লাস্ট বার আয়নায় নিজেকে দেখে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় কিচেনে৷ সেখানে ছোঁয়ার সুন্দর সেফ খুবই মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে৷ ছোঁয়া প্রথমে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। টকটকে ঠোঁট দুটো লাগিয়ে দেয় সাদির সাদা টিশার্টে। সাদি কোনো রিয়াকশন করে না। চুপচাপ রুটি বেলতে থাকে। যেনো সে জানেই না এখানে কেউ এসেছে। এবং তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে।
ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দেয় সাদি। পাথর লোক একটা। আরে ভাই তোর বউ তোকে জড়িয়ে ধরেছে তুই একটু মুচকি হেসে বউকে জড়িয়ে ধর। একটু প্রশংসা কর। তা না হনুমানের মতো নো রিয়াকশন।

চোখ মুখ কুঁচকে সাদির পাশে চুলার কাছাকাছি বসে পড়ে ছোঁয়া।হাতের চুড়ি গুলো নারতে নারতে বলে
“আমাকে আজকে শাবনুরের মতো লাগছে না? লাগছে জানি আমি। আমি কিন্তু দেখতে সুন্দরী। নায়িকা হতে পারতাম আমি। হলাম না। অবশ্য এখনো চাইলে হতে পারি।

সাদি ঠোঁটটা একটু বাঁকায়। যেনো তাচ্ছিল্য হাসতে চাইলো। ছোঁয়া গাল ফুলায়। বিশ্বাস করলো না সাদি?

” সত্যিই আমি সুন্দরী। আমি নায়িকা হওয়ার ক্ষমতা রাখি।

“হুমম জায়েদ খানের।

সাদি ছোট্ট করে বলে। ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। অপমান করলে না কি?
এক লাফে নেমে পড়ে। উদ্দেশ্য ঝগড়া করবে সাদির সাথে। আঙুল তুলে কিছু বলতে যেতেই থেমে যায় ছোঁয়া। সে তার ব্যস্ত সেফের ওপর বড়সর একটা ক্রাশ খেলো এখনই।
ঘামে ভিজে গেছে লোকটা। কপাল বেয়ে চুৃয়িয়ে চুয়িয়ে ঘাম গাল বেয়ে গলার ওই উঁচু কন্ঠনালির ওপর দিয়ে বেয়ে শার্টের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।
গোলাপি ঠোঁট জোড়া একটু পরপরই জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। গরমে যে লোকটার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে অসুবিধা হয় না ছোঁয়ার।

তবে এই মুহুর্তে লোকটাকে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে। লোকটা কি জানে? তার বিয়ে করা বউ তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে? ”
গিলে খাওয়ার কথা মনে হতেই ছোঁয়ার একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জাগ্রত হয় মনের মধ্যে। ব্যস্ত সেফের ওই ঘামে ভেজা গলায় টুপ করে একটা চুমু খেতে। খাবে কি?
লোকটা কি মারবে?
ধুরর মারলে মারুক।
তবুও তো চুমু খাওয়া হলো।
মার খাওয়ার ভয় করলে এই জীবনে আর চুমু খাওয়া হবে না।
মনকে বুঝিয়ে এক বুক সাহস নিয়ে এগিয়ে যায় ছোঁয়া। লোকটার এক দম পাশ ঘেসে দাঁড়ায়। চোখ দুটো বন্ধ করে দুই পায়ের গোড়ালি উঁচু করে সাদির গলার কাছে মুখটা নিয়ে চট করে একটা চুমু খেয়ে ফেলে সাদির গলায়। ব্যস্ত হয়ে রুটি বেলতে থাকা সাদির হাত দুটো থেমে যায়। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে।

ছোঁয়া দু পা পিছিয়ে এসেছে। হাত পা কাঁপছে তার। চোখ দুটো খুলতে পারছে না। মনে মনে থাপ্পড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ এবার একটা থাপ্পড় খেয়ে চলে যাবে কিচেন থেকে। আজকে দিনের মধ্যে আর লোকটার আশেপাশে আসবে না।
চুমু খেলো মনের সাধ মেটাতে কিন্তু মনের সাধ তো মিটলোই না উল্টো মনের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে গেলো।
নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত ছোঁয়া।

সাদির কোনো রিয়াকশন না দেখে পিটপিট করে চোখ খুলে ছোঁয়া। পাষাণ সাদি এখনো আগের মতো কাজ করে যাচ্ছে। যেনো তার সাথে কিছুই হয় নি। সে দিব্যি আছে৷

ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়ে। ফ্রীজ থেকে করলা বের করে নেয়।
“আমি কেটে দিচ্ছি কেমন?

সাদি জবাব দেয় না। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে কাটতে থাকে করলা গুলো।

দুটো করলা কাটতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। এতো সকালে আবার কে আসলো?
ঘাড় বাঁকিয়ে সাদির দিকে তাকায়। তার কোনো ভাবান্তর নেই।
” পাষাণ পাষাণ পাষাণ
করলা। রোবটের সাথে থাকছি আমি।

বলতে বলতে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া। ছোঁয়া যেতেই সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ডান হাতটা গলায় রাখে ঠিক যেখানে ছোঁয়া ঠোঁট ছুঁয়িয়েছিলো।
বিরবির করে বলে
“ইডিয়েট”

দরজা খুলতেই মুখটা থমথমে হয়ে যায় ছোঁয়ার সাজ্জাদ আর সাবিনাকে দেখে। মনে মনে আন্দাজ করে ফেলে কিছু একটা প্লানিং করেছে এরা। সাদির থেকে নিয়ে যেতে এসেছে ছোঁয়াকে।
চোখ দুটো টলমল করে ওঠে ছোঁয়া।
মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে বলে
“আমাকে ছেড়ে যেতে কেনো বলো তোমার? সবাই উঠেপড়ে লেগেছো আমাদের আলাদা করতে। কেউ তো কাঁধে হাত রেখে বলতে পারতে
” ছোঁয়া গম্ভীর সাদিকে কখনো ছেড়ে যাস না”

সাজ্জাদ হাসি মুখে কিছু বলতে যাচ্ছিলো ছোঁয়াকে। কিন্তু ছোঁয়ার কথা শুনে হাসি মুখটা চুপসে যায়।

“আহহা ছোঁয়া
মামনি তোমাদের আলাদা করবো না তো। তুমি তো এখনো ছোট। তোমার এইচএসসি পরিক্ষার পরে এক সাথে থাকবে তোমরা।

ছোঁয়া ঠিক ধরেছিলো। তাকে নিতে আসা হয়েছে। সে কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে কিচেনে চলে যায়। দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদির বুকে মুখ লুকিয়ে শব্দ করে কাঁদতে থাকে।
সাদি হাত দুটো নামিয়ে রাখে ছোঁয়াকে ধরে না।

” আমি যাবো না প্লিজ। আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। একটু চুমু খেয়েছি বলে আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। মরেই যাবো আমি।
প্লিজ আমাকে যেতে দিয়েন না।
প্রমিজ আপনাকে একটুও বিরক্ত করবো না৷ আপনার আশেপাশেও আসবো না

এবার সাদি ছোঁয়ার মাথায় হাত রাখে। শান্ত গলায় জবাব দেয়

“আমি রোজ রাতে কল করবো তোমায়। আর প্রতি ফ্রাইডে ঘুরতে নিয়ে যাবো

ছোঁয়ার কান্না থেমে যায়। বুক থেকে মুখ তুলে তাকায় সাদির দিকে। তার মানে সাদি জানতো সবটা?
অভিমানে বুকটা ভরে ওঠে ছোঁয়ার।
” আমি যাবো না মানে যাবো না। আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়বো আমি।

সাদি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার মুখের পানে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব: ১৯
#তানিশা সুলতানা

থাকতে পারে নি ছোঁয়া সাদির কাছে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাদিও বাঁধা দেয় নি৷ কাঁদতে কাঁদতে সাদির কাছে আকুতি মিনতি করেছিলো তাকে রেখে দিতে। কিন্তু সাদি রেখে দেয় নি৷ সাবিনা সাজ্জাত সেলিম সিমি এবং নাজমা সবার কাছে হেরে গিয়েছে ছোঁয়া। এতোগুলো মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে তাকে আলাদা করতে। সে থাকবে কি করে?
তাই তো থাকতে পারলো না।
তবে ছোঁয়ার মন খারাপ ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরলেও রাতেই ছোঁয়ার মনটা ফুরফুরে হয়ে গিয়েছিলো। হাজারটা প্রজাপতি উড়েছিলো ছোঁয়ার ছোট্ট মন খানায়। সাদিকে বিয়ে করতে পেরেও বোধহয় এতোটা খুশি হয়েছিলো না সে। প্রথমবার চুমু খাওয়াতেও সে খুশি ছিলো না। কেনো জানি মনে হয়েছে জোর করে চুমু নিয়েছে সাদির থেকে।
সাদি কল করেছিলো তাকে। আদুরে গলায় প্রথমবার “জান” বলে ডেকেছে। আকুতি ছিলো সেই কন্ঠে। ছিলো পাহাড় সমান মায়া।
ছোঁয়া তো ভুলতেই পারছে না সাদির সেই ভয়েস, সেই আকুতিময় কন্ঠ। লোকটা পাথর নয় তবে পাথর হয়ে থাকার চেষ্টা করে।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে সেদিনের কথোপকথন মনে করতে থাকে।
ছোঁয়া কাঁদছিলো। বুকে বালিশ জড়িয়ে কাঁদছিলো ছোঁয়া। তখন তার পুতুলের কভার যুক্ত ফোনটা বেজে ওঠে। স্কিনে “সাদু বেবি” নামটা দেখে অভিমানের পাল্লা ভাড়ি হয়ে ওঠে। ফোন তুলে না। তুলবেও না বলে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু প্রেমিক পুরুষের এতোবার কল করাতে মন গলে যায় ছোঁয়ার। একবার দুইবার তিনবার এভাবে চল্লিশ বার কল করার পরে ছোঁয়ার ছোট্ট মনটা গলে যায়।
লোকটার ধৈর্য প্রচুর। মানুষ এতোটাও ধৈর্যশীল হতে পারে?
এক চল্লিশ বারের মাথায় ছোঁয়া কল রিসিভ করে কানে তুলে তবে কথা বলে না৷ ভেবেছিলো সাদি ধমক দিবে। বা কড়া কথা শোনাবে। কিন্তু সাদি সেসবের কিছুই করে না। উল্টে ওপাশ থেকেও নীরবতার আভাস আসে।
দুপাশে দুজন নিরব রয়েছে। একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকে।

এভাবে কতোখন কেটে যায় জানা নেই কারোরই। হঠাৎ করে সাদির গম্ভীর হৃদয় কাঁপানো শব্দ ভেসে আসে
“জাননন

ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। ঠিক শুনলো? সাদি তাকে জান বলেছে? চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া। প্রস্তুতি নেয় সাদিকে জিজ্ঞেস করবে ” কি বললেন এই মাত্র” কিন্তু ছোঁয়া কিছু বলার আগেই সাদি আবারও সেই সুরেলা মধুর সুরে বলে ওঠে
” জাননন আমার আশেপাশে থাকাটা তোমার জন্য রিক্স। কিছু দিন দূরে থাকার পরে যদি সারাজীবনের জন্য এক সাথে থাকার অনুমতি পাই তাহলে ক্ষতি কি বলো?

ছোঁয়া জবাব দিতে পারে নি। বলতে পারে না “আপনাকে ছাড়া আমি একটা সেকেন্ডও শান্তিতে থাকতে পারি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে”

ছোঁয়াকে নিরব থাকতে দেখে সাদি আবারও বলে ওঠে
“সোনা প্লিজ মন খারাপ করে না।

ছোঁয়া এবারেও জমে যায়। গম্ভীর গোমড়ামুখো সাদি ” জান সোনা”এসব নামে ডাকতে পারে? এটা বিশ্বাস করার মতো?
আচ্ছা লোকটা ঠিক আছে তো? সে কি নেশা টেশা করেছে?
ছোঁয়ার এসব উজবুক ভাবনার মাঝেই সাদি বলে
“ঘুমিয়ে পড়ো জান”
বলেই কল কেটে দেয়। ছোঁয়া যেনো একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলো। সাদিই কি ওর সাথে কথা বললো? এতে সুন্দর করে? জান, সোনা আবার আদর মাখা শব্দ গুলো?
ভাবতেই পারছে না ছোঁয়া। কেমন পাগল পাগল লাগছে।

তারপর থেকে লোকটা আর কোনো কল করে নি। এক সপ্তাহ কেটে গেলো। এসেছিলো শুক্রবারে আজকেও আবার শুক্রবার। তবুও লোকটা এতটুকুও খোঁজ নিলো না। একটু দেখাও হয় না মানুষটার সাথে।
ছোঁয়া কলেজ থেকে প্রায় প্রতিদিন সাদির বাড়িতে যায়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না। সাবিনা বেগমের সাথে সময় কাটিয়ে চলে আসে।
সাদি সকাল আটটায় বেরিয়ে যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে।

কেমন পাগল পাগল লাগে ছোঁয়ার। লোকটার চেহারা যেনো চোখের শান্তি। চোখ দুটোকে শান্তি দিতে পারছেই না।
আজকে সকাল থেকে ছোঁয়া ভেবে রেখেছে সাদির বাড়িতে যাবে। কিন্তু বেরুনোর সুযোগই পাচ্ছে না।
এই তো সকালে সিমি পরিকে ছোঁয়ার কোলে তুলে দিলো। আর বললো “পরি ঘুমবে তুই একটু হেঁটে হেঁটে ঘুম পারিয়ে দে। আমি কাজ করছি”

ছোঁয়া পরিকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। তারপর যাবে মমতা বেগম ধরেছে ছোঁয়াকে। কাছে বসিয়ে আদর করে খাওয়াতে থাকে। ছোঁয়া না কি শুকিয়ে যাচ্ছে ঠিক মতো খায় না। দাদির কথা শুনে ছোঁয়া মুখ ফসকে বলে ফেলে
“বিয়ে হয়েছে তবুও জামাই ছাড়া থাকছি। রোগা হবো না? জামাইয়ের চিন্তায় রোগা হয়ে যাচ্ছি”
মমতা এক গাল হাসে।
“বড় হও দাদুভাই। তারপর জামাইয়ের চিন্তা করো।
” যথেষ্ট বড় আমি। আমার একটা ফ্রেন্ডের বাচ্চা হয়ে গেছে। সেখানে আমি শোক পালন করছি”

সিফাত কেশে ওঠে। সেও খাচ্ছিলো। মূলত সিফাতকে ছোঁয়া খেয়াল করে নি। ভাড়ি লজ্জায় পড়ে যায় ছোঁয়া। আর একটাও বাক্য মুখ থেকে বের করে না চুপচাপ খেতে থাকে।

খাওয়া শেষে নিজের রুমে ঢুকে একটু সাজুগুজু করে নেয়। কতোদিন পরে বরটার সাথে দেখা করতে যাবে একটু সাজুগুজু না করলে চলে?
ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো শেষ হতেই ডাক পড়ে সেলিমের। ভাড়ি বিরক্ত ছোঁয়া। এবার বাবা ডেকে নিয়ে হাজারটা উপদেশ দিবে। আর তার উপদেশের মূল মন্ত্য হলো সাদি।
সাদির সাথে তোমাকে মানায় না।
তুমি চাইলে আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবো
তুমি আরও ভালো ডিজার্ভ করে ব্লা ব্লা ব্লা

ছোঁয়া মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয় মাঝেমধ্যে হেসে ফেলে৷ আসলে বাবা মানুষের ইনকাম আর চেহারাকে বেশি পাধান্য দেয়। সাদির রোজগার কম। বয়স বেশি এটাই সমস্যা তার।
ছোঁয়া বাবার ডাকে সাড়া দেয় না। সে তার মতো ধীরে সুস্থে রেডি হতে থাকে। ফোনের ব্যাক কভারে কিছু টাকা ভরে গলায় ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

বেশি দূরে না হওয়াতে ছোঁয়া পায়ে হেঁটেই রওনা হয়। দুটো রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় সাদির ফ্লাইটে। একটা হচ্ছে মেইন রোড। যেখানে সারাক্ষণ যানবাহন চলতে থাকে মানুষের সরগম।
আরেকটা হচ্ছে কাঁচা রাস্তা। যেখানে মানুষের চলাচল খুবই কম৷ তবে রাস্তাটা সুন্দর। মাটির রাস্তা দুই পাশে গাছপালা দিয়ে ভর্তি।
এই রাস্তার সাথে ছোঁয়া দুই দিন আগে পরিচিত হয়েছে। যেদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সাদির বাসায় গিয়েছিলো সাদিকে দেখতে। কিন্তু গিয়ে দেখে জনাব বাসায় নেই।
সাবিনা বেগম রান্না করছে।
এক প্রকার রাগ করেই বাসা থেকে বেরিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো হারিয়ে যাবে৷ যাতে সাদি তাকে খুঁজে। সেই জন্য এই রাস্তা ধরে হাঁটছিলো।
কিন্তু সে লাউ সেই কদু।
এই রাস্তা তাকে একদম বাড়ির সামনে এনে থামিয়েছে।
ছোঁয়ার আর হারিয়ে যাওয়া হলো না৷

কলিং বেল এক নাগারে বাজিয়েই চলেছে ছোঁয়া। তার মন খুঁত খুঁত করছে যদি আজকেও সাদির দেখা না পায়?
তখনই ফট করে দরজা খুলে যায়। সামনে তাকাতেই ছোঁয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারণ তার সামনে স্বয়ং তার চোখের শান্তি দাঁড়িয়ে আছে৷

ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে
“আজকে আমি এখানে থাকবোই থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আসলেও আমাকো নরাতে পারবে না। এ আমি কাঠ কাঠ বলে দিলাম।

বলেই সাদির হাতের ফাঁক দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। বড় মা বড় মা বলে ডাকতে থাকে সাবিনা বেগমকে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে ছোট্ট করে জবাব দেয়
” মা মাত্রই চলে গেলো।

এটা শুনে ছোঁয়া লাফিয়ে ওঠে।
“উফফফফ আজকে প্রকৃতিও চাইছে আমি এখানে থেকে যাই।

” আমি চাইছি না
সাদি গম্ভীর গলায় বলে। ছোঁয়া ভেংচি কাটে
“তা চাইবেন কেনো? নিরামিষ কি না আপনি?
অসভ্য ব্যাডা। একদিন কল করে জান সোনা বলে তারপর থেকে লাপাত্তা।
বলি কেউ কি আপনার গলায় চা*কু ঠেকিয়ে আমাকে জান বলিয়েছিলো?

সাদি বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে নিজের রুমে চলে যায়। ছোঁয়া ভেংচি কেটে সোফায় বসে পড়ে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-১৬+১৭

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৬
#তানিশা সুলতানা

গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত ভেতরে ভেতরে গুমরে মরে। তারা তাদের মনোভাব কারো সামনে প্রকাশ করতে পারে না। নিজের কষ্ট আনন্দ ভালো লাগা খারাপ লাগা কাউকে বোঝাতে পারে না বলেই তাদের ভেতরে সারাক্ষণ রক্তক্ষরণ হয়৷ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব গুলো একা একাই সমাধান করতে হয়। সাদি হচ্ছে সেই প্রকৃতির মানুষ।
কখনো একটু অসুস্থ হলে বাসার কাউকে বলে নি। সারা রাত জ্বরে পুরেছে তবুও কখনো মাকে বা অন্য কাউকে ডাকে নি।
একবার সাদির পা ভেঙেছিলো। দুইদিন ভাঙা পা নিয়ে নিজের রুমে পড়ে ছিলো। কাউকে বলে নি তার সমস্যার কথ। এটা অবশ্য খুব ছোট বেলায়। তখন সাদি ক্লাস এইট এ পড়তো।
সাদি এমনিতেই সারাদিন রুমে থাকে বলে কেউ তাকে দেখতে আসে নি৷ সাবিনা বাড়িতে ছিলো না। তিনি থাকলে অবশ্যই দিনে কয়েকবার আসতো সাদিকে দেখতে। তো পরের দিন সাবিনা বেগম কি মনে করে যেনো বাড়িতে ফিরেই সাদির রুমে আসে আর দেখতে পায় তার ছেলে পা ধরে কাতরাচ্ছে। জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিলো।
আজ ওবদি জানা যায় নি কিভাবে সাদির পা ভেঙেছিলো।

পাশাপাশি দুটো রুম। পাশের রুম থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ আসছে। রাত বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট।
সাদি ছোঁয়ার রুম থেকে বেরিয়েছে এগারোটা নাগাদ।
ইডিয়েট টা এখন পর্যন্ত কেঁদেই চলেছে। সাদি জানে যতখন সে গিয়ে কাঁদতে মানা করবে না ততখন পর্যন্ত কেঁদেই যাবে
সাদি ইচ্ছে করেই যাচ্ছে না। মেয়েটা দিন দিন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কানে হেডফোন গুঁজে নেয় সাদি। হৃদয় কাঁপছে তার। হার্টবিট দ্রুত লাফাচ্ছে। অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কেনো? হৃদয়হরণীকে দুঃখ দেওয়ার জন্য? তাকে আঘাত করাতে নিজের হৃদয়টা জ্বলছে?

__

নতুন ভোর নতুন দিনের সূচনা।
সকালের ফুরফুরে হাওয়া পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মনমাতানো পরিষ্কার আকাশ। মন ভালো করতে সক্ষম।
সাদি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্না চাপায়। এসএসসির পর থেকে সে পরিবার থেকে দূরে থেকেছে সেই সুবাদে রান্না থেকে শুরু করে ঘর মোছা সব কাজে পারদর্শী সে।
পরোটা ডিম ভাজা করলা ভাজা ডিম সিদ্ধ ব্যাস সাদির রান্না শেষ।
সে নিজের মতো অফিসের জন্য তৈরি হয়ে খেয়ে চলে যায়। ছোঁয়ার খোঁজ নেয় না।
প্রচন্ড কান্না করে ঘুমানোর ফলে ভালো ঘুম হয়েছে ছোঁয়ার। ঘুম ভাঙতেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে দেখে দশটা বেজে গেছে। তারাহুরো করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। এ বাবা রান্না করতে হবে তো। নাহলে সাদি খাবে কি?

ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখে ভাত তরকারি পর্যন্ত রান্না করে রেখে গেছে সাদি। ছোঁয়া ঠোঁট কামড়ে হাসে
“বাহহহ আনরোমান্টিক জামাই হলে কি হবে? কাজ করতে জানে।
যাকক আমার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি বাচ্চাদের বড় করবো আর উনি রান্নাবান্না করবো।

ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আর বাচ্চাকাচ্চা। যে লেভেলের নিরামিষ জীবনে একটা চুমু খাবে কি না এতেও সন্দেহ। বাচ্চাকাচ্চার কথা ভাবা তো বিলাসিতা। চুমুহীন জীবন পার করতে হবে।

হতাশার শ্বাস ফেলে ছোঁয়া খেতে বসে যায়। এক গ্লাস দুধ হরলিক্স দিয়ে গুলে রাখা একটা সিদ্ধ ডিম আর একটা পরোটার মধ্যে ডিম শশা অল্প পেঁয়াজ দিয়ে রোল বানানো তা আবার কাগজ দিয়ে মুরে রেখেছে। ছোঁয়া খেতে শুরু করে। খেতে খেতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। দুধ টুকু এখনো খাওয়া বাকি। এক চুমুকে দুধ শেষ করে দরজা খুলে। একটা মধ্যবয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া তাকে সালাম দেয়। মহিলাটি সালাম ফিরিয়ে পরিচয় দেয় তিনি এই বাসার মালিক। ছোঁয়াদের সামনের ফ্লাইটে থাকে।

ছোঁয়া তাকে ভেতরে আসতে বলে। মহিলাটি আসে। সোফায় বসে ছোঁয়াও বসে মহিলাটির পাশে।
” তা মেয়ে বিয়ে করেছো নাক ফুল কোথায় তোমার?

“আর আন্টি বলো না আমি তো নাকই ফুঁটো করি নি।

” নাক ফুল হলো বিবাহিত মেয়ের চিহ্ন। আর স্বামীর মঙ্গল অমঙ্গলের এতো বেপার এই নাক ফুল।

“আপনি নাক ফুটো করতে পারেন?

” বোকা মেয়ে এখন তো পার্লার থেকেই নাক ফুঁটো করা যায়।

“আমাকে নিয়ে যাবেন আন্টি?

” ঠিক আছে। এখুনি চলো।

“কিন্তু আন্টি এখন তো আমার কাছে টাকা নেই।

” লাগবে না। একশত টাকা নিবে। আমি নাহয় দিয়ে দিবো। তুমি পরে আমায় ফেরত দিও।

ছোঁয়া খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
“ঠিক আছে

পরনের জামা পাল্টে চুল গুলো পরিপাটি করে ছোঁয়া মহিলাটির সাথে বেরিয়ে পড়ে। মহিলার নাম রুণা। ভীষণ শৌখিন মহিলা। কথায় কথায় জানতে পারে ওনার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে অনার্সে পড়ছে আর মেয়ে ছোঁয়ার সেম ইয়ার।
এবং দুজন একই কলেজের। ছোঁয়া মনে মনে খুশি হয়। যাক এক সাথে যেতে পারবে কলেজে।

ভীষণ নাজুক প্রকৃতির মেয়ে ছোঁয়া। একটুতেই তার শরীর খারাপ হয়। এই যে পার্লার থেকে নাক ফুঁটো করেছে। ইয়া মোটা একটা নাক ফুল ঢুকিয়ে দিয়েছে নাকে। ভীষণ ব্যাথা করছে তার।
কিন্তু প্রকাশ করছে না।
বাড়ির নিচেই ছিলো পার্লার।

ছোঁয়া এবার বাসায় ফিরে শুয়ে পড়ে। নাকের ব্যাথায় জ্বর আসবে মনে হচ্ছে। এমনিতেই রাতে কেঁদেছে গলা ব্যাথা হয়ে আছে।

আজ প্রথমদিন হওয়াতে সাদিকে একটু তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়। এখানে কাজ করে ভালো লেগেছে সাদির। অফিসের বস এবং কলিগরা খুবই ভালো এবং রুচিশীল। তার থেকে বেশি ভালো লাগার বিষয় হলো সাদির একটা মেয়ে বন্ধু যার সাথে প্রায় ছোট থেকেই বেরে উঠেছে ইরা সেও এখানেই জব করে। এবং দুজন একই ডিপার্টমেন্টে।
ছুটির পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসেছে সাদি এবং ইরা। ইরা ছোট থেকেই প্রচন্ড কথা বলে। এখনো তার ব্যতিক্রম নয়৷ এটা ওটা বলেই যাচ্ছে। সাদি শুধু শুনছে। ইরার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সাদি হাতে গোণা কয়েকটা কথা বলেছে আর ইরা বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে।
সাদি মনে মনে বলে “বাড়িতে এক ইডিয়েট এখানে আরেক ইডিয়েট ”

“সাদি মহুয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো। তার ডিভোর্স হয়ে গেছে।

সাদি খাওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে। ইরার কথা শুনলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। ইরাও আর দ্বিতীয় বার বলে না
” তোর বউয়ের সাথে দেখা করাবি না? পাপন বললো ভীষণ দুষ্টু না কি? তোকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরায়।
বলেই শব্দ করে হেসে ওঠে ইরা।
“আজকেই চল
ইরা লাফিয়ে ওঠে। ইসস আজকেই যাবে? তারাহুরো করে খেতে থাকে সে। সাদির মত বদলানোর আগেই যেতে হবে।

নিজের কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সাদি। ইরাকে ইশারায় ছোঁয়ার রুম দেখিয়ে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে।
ইরা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ছোঁয়ার রুমে ঢুকে। কম্বল মুড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ছোঁয়া।
রুমে কারো ঢোকার আওয়াজ পেয়ে চোখ না খুলেই বলে ওঠে
” এসেছেন? জলদি আমার নাকে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে দিন তো। প্রচন্ড ব্যাথা করছে।

ইরা মুখ টিপে হাসে। পাপনের কথা সে বিশ্বাস করে নি৷ সাদির মতো গম্ভীর জোয়ান একটা ছেলেকে বাচ্চা একটা নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারবে? এটা বিশ্বাস করার যোগ্য?

ইরা যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই বেরিয়ে যায়। সাদির রুমে ঢুকে পড়ে।
সাদি সবেই চেঞ্জ করে বেরিয়েছে।
“সাদি তোর বউ তোকে ডাকে। তার না কি চুমমমমমমমমু খেতে ইচ্ছে করছে।
দাঁত কেলিয়ে বলে ইরা। সাদি বিরক্ত হয়।
ইরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।

” অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?

ছোঁয়া পিটপিট করে চোখ খুলে
“আমার নাকে ব্যাথা
ডাক্তার বলেছে সাদমান চৌধুরী চুমু খেলে সেরে যাবে।
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
” হাতেও ব্যাথা এখানেও চুমু প্রয়োজন। চুমুর অভাবে ব্যাথা সারছে না।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷ ইরা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে শুনছিলো আর কিটকিট করে হাসছিলো। মেয়েটা ভারি মিষ্টি। বেশ মনে ধরেছে ইরার।
“ইরা এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে। ফ্রেশ হয়ে এসো।

বলেই সাদি চলে যেতে নেয়
” আমার ব্যাথা না কমলে ফ্রেশ হবো কি করে? আপনি কি ব্রাশ করেন নি?

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৭
#তানিশা সুলতানা

গম্ভীর দৃষ্টি ছোঁয়াকে দেখছে সাদি। এই নারীর প্রতি তার আসক্তি নেই তবে কিছু একটা আছে।
কিশোর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলো সে। একটা নারীর সঙ্গ পেয়ে গম্ভীর একঘেয়ে সাদি মিশতে শিখেছিলো। বন্ধু বানিয়েছিলো রিমি, ইরা, পাপন, ইমন, আশিক ওদের সাথে।
সময়ের ব্যবধানে সেই নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে কিন্তু বন্ধুরা ছাড়ে নি। সেই নারীর প্রতিও সাদির আসক্তি ছিলো না ছিলো ভালো লাগা এবং মায়া। সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছিলো সাদির। অনেকটা সময় লেগেছিলো।
এখনো হয়ত মনের কোথাও সেই নারীর জন্য মায়া কাজ করে।
সেই নারীর হাত ধরার ইচ্ছে ছিলো সাদির। কিন্তু ধরতে পারে নি। সেই নারীর ললাটে দীর্ঘ চুমু খেয়ে বলার ইচ্ছে ছিলো “আমাকে ছেড়ে যেয়ো না”
কিন্তু বলতে পারে নি। তার আগেই মায়াবী নারী ছেড়ে গিয়েছে সাদিকে।
যেইদিন সেই নারীর বিয়ে ছিলো সেই দিন ছোঁয়ার ভীষণ জ্বর ছিলো। মনে আছে সাদির। বাড়ি সুদ্ধ সকলেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছিলো।
তখন বয়স কতো ছিলো ছোঁয়ার? দশ বছর হবে মনে হয়।
বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিলো না। সকলেই বাইরে ছিলো। প্রথমবার বাচ্চা ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিয়েছিলো সাদি। ছোঁয়ার গরম মাথাটা সাদির বুকে পড়তেই হৃদয় কেঁপে উঠেছিলো।

ব্যাথায় মুখটা লাল হয়ে গেছে ছোঁয়ার। উঠে বসতে গিয়ে কম্বলের নাক লেগেছিলো। চোখে পানি চলে এসেছে। হালকা রক্তও এসেছে নাক ফুলের পাশে।
সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছছে। সাদি রেগে আছে বুঝতে পারছে ঢের। অবশ্য লোকটা কখনই বা রেগে থাকে না? সদা তার নাকের ডগায় রাগ থাকে।

“আন্টি বললো নাকফুল পড়তে হয়। আম্মু পড়ে, বড় মা পড়ে,আপি পড়ে।
আমাকে একটা নাকফুল কিনে দিয়েন প্লিজ

সাদি জবাব দেয় না। তার নজর ছোঁয়ার নাকে থাকা সাদা পাথরের নাক ফুলের দিকে। বেশ মানিয়েছে ছোঁয়াকে। চেহারা থেকে বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা চলে গেছে। পারফেক্ট বউ মনে হচ্ছে। কে বলবে এই মেয়েটার শিরায় শিরায় দুষ্টমি বিরাজ করছে?

“দুইশো টাকা লাগছে। আন্টি দিয়ে দিয়েছে। আপনি আমাকে দুইশো টাকা দিয়েন। আমি আন্টিকে দিয়ে দিবোনি।

সাদি লম্বা শ্বাস টানে। ছোঁয়ার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে ছোট্ট করে বলে।

” আচ্ছা

ছোঁয়া বিছানা থেকে নামতে যায়। সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে। চমকে ওঠে ছোঁয়া। তাকায় সাদির মুখের পানে। লোকটাকে আজকে অন্য রকম লাগছে। বেশ অদ্ভুত তার চোখের দৃষ্টি। বিলাই চোখ দুটোতে রাগ, বিরক্তি কিংবা সহানুভূতি নেই। আছে শুধু গম্ভীর মুগ্ধতা।
ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাধ্য পাগল ছোঁয়ার নেই। সে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।
আমতা আমতা করতে থাকে। লোক আসলে কি করতে চাচ্ছে বোঝার চেষ্টা করতে থাকে ছোঁয়া। আজকে কেমন অচেনা লাগছে তাকে। এটা কি সত্যিই সাদমান চৌধুরী?
সাদি ছোঁয়া দিকে একটু চেপে বসে। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার নাকে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। এতোটা আশা করে নি ছোঁয়া। ধমক খাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো সে।
ছোঁয়াকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে খুব দ্রুত শব্দ করে চুমু খায় সাদি ছোঁয়ার নাকে। ভুমিকম্পোর মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এ কেমন অনুভূতি? শ্বাস টানতেও পারছে না। বুক কাঁপছে পেটে মোচর দিচ্ছে গলা শুকিয়ে গেছে। শরীরের দুর্বলতা জ্বর জ্বর ভাবটা কোথাও একটা বিলিন হয়ে গেছে। সাদির দেওয়া ছোট্ট স্পর্শ মনের মধ্যে গভীর দাগ কেটে গেছে। সুন্দর পবিত্র অনুভূতি অসুস্থতা বিলিন করে দিলো বোধহয়?
ছোঁয়া নিজের কাঁপা কাঁপা হাতটা নাকে দেয়। সাদি দূরে চলে গিয়েছে চুমু খাওয়ার পরপরই। তবে রুম থেকে বের হয় নি৷

“শ্বাস টানো
স্বাভাবিক হয়ে বাইরে এসো। ইরা এসেছে তোমায় দেখতে।

বলেই সাদি দ্রুত পা চালিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া সত্যিই শ্বাস টানে। চোখ খুলে তাকায়। এখনো মনে হচ্ছে লোকটার ছোঁয়া নাকে লেগে আছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার। লাফিয়ে ওঠে সে।
এক লাফে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে

” চুমু যেহেতু দিয়েছে আরও দিবে। যাককক ফুলবল টিম বানানোর চান্স আছে তাহলে। হয়ত একটু সময় লাগবে। তবে আমিষ হবে লোকটা৷ এটা কনফার্ম।
মনে মনে এইটুকু ভাবতেই চুমু দেওয়ার মুহুর্তটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে
“আমার বর আমাকে চুমু দিছে।
সত্যিই চুমু দিছে। ইসসসসসসসস
এই লজ্জা আমি লুকাবো কোথায়?
দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে ছোঁয়া।
” মুহুর্তেটা ভিডিও করে রাখতে পারলে ভাল্লাগতো। একটু পরপর দেখতাম। কিন্তু আফসোস।

ছোঁয়া চোখে মুখে পানি দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে রুম থেকে বের হয়। বেশ ফুরফুরে মেজাজ তার।

ইরা আর সাদি বসে আছে। ইরার হাতে কফির মগ। সে কফি খাচ্ছে আর নিজের বরের কথা গল্প করে যাচ্ছে। সাদি চুপচাপ ফোন দেখছে। ইরার কথা যে সে শুনছে না বুঝতে পেরে হাসে ছোঁয়া।
আপুটাকে বেশ মনে ধরেছে তার। একদম তার মতো।

“আপু সরি আপনাকে অপেক্ষা করালাম। আসলে নাক ফুঁটো করেছি তো তাই একটু অসুস্থ ছিলাম। এখন সুস্থ হয়ে গিয়েছি।

বলতে বলতে ইরার পাশে এসে বসে ছোঁয়া। ইরা কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে সেটা টি-টেবিলে রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে।

” তা এখন সুস্থ হলে কি করে? সাদি চুমু খেয়ে নিয়েছে?

ছোঁয়া লাজুক হাসে। মাথা নিচু করে ফেলে। বেশ লজ্জা লাগছে তার। ছোঁয়াকে লজ্জা পেতে দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে ইরা।
গাল টেনে দেয় ছোঁয়ার।

“ইসস কি মিষ্টি তুমি। তোমাকে আমি টিপস শিখিয়ে দিবোনি।

সাদি দাঁড়িয়ে যায়।
” দেখতে এসেছিস। দেখেছিস এখন চলে যাবি। আর আশা চলবে না এখানে।

ইরা ভেংচি কাটে
“বললেই হলো? আমি তো আসবোই।
ছোঁয়া বুঝলে আমি রিমি ইমন আমরা তিনজন মিলে তোমাকে

ইরাকে বলতে না দিয়ে বাকিটা সাদি বলে ওঠে
” এমনিতেই বাঁদর
এখন তোরা তিনজন মিলে গাছে উঠিয়ে দিবি।
ওকে বলে দে বাড়াবাড়ি করলে বাড়িতে রেখে আসবো।

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে। ইরা ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“তুই যা তো এখান থেকে। আমি ছোঁয়ার সাথে কথা বলতে এসেছি। আমি খাবো। রান্না কর গিয়ে। সর এখান থেকে।

সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকায়। যার অর্থ “বাড়াবাড়ি করলে সত্যিই রেখে আসবো”

সাদি চলে যায়। ইরা ছোঁয়ার সাথে গল্প করতে থাকে। দুজনের গল্প বেশ জমে উঠেছে। ইরা ভীষণ মজার মানুষ। ছোঁয়াও মজা পাচ্ছে।

রাত দশটার দিকে ইরাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বের হয় সাদি। ছোঁয়া বই নিয়ে বসে আছে। সাদি কড়া গলায় পড়তে বলেছে। কি আর করার? বাধ্য বরের বাধ্য বউ হয়েছে ছোঁয়া পড়ছে।

____

সেলিম চৌধুরী বসে আছে সাজ্জাদ চৌধুরীর সামনে। দুজনের মুখটা গম্ভীর।
“ভাইয়া আমার মেয়েটার ভবিষ্যত আছে। সে এখনই পড়ালেখা বাদ দিয়ে সংসার করুক এটা আমি চাই না।
ছোঁয়াকে তুমি নিয়ে এসো। এইচএসসি পরিক্ষার শেষে ধুমধাম করে ওদের আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। আপাতত সে এই বাড়িতে থাকবে।

সেলিমের কথাটা মন্দ না। এমনটাই ভালো হবে।

” ঠিক আছে আমি কাল গিয়ে নিয়ে আসবো ছোঁয়াকে। তবে সেলিম ছোঁয়াকে আনার পেছনে যদি তোর অন্য কারণ থাকে তাহলে জেনে রাখ আমি সেটা হতে দিবো না। তুই নিজেও জানিস তোর মেয়ে আমার ছেলের জন্য কতোটা পাগল। তো এমন কিছু করিস না যাতে মেয়েটা আঘাত পায়।

সেলিম জবাব দেয় না। বেরিয়ে যায় সাজ্জাদের রুম থেকে। দরজার আড়াল থেকে সাবিনা সবটা শুনছিলো।
তিনি স্বামীর কাঁধে হাত রাখে।
“তোমার সাথে আমিও যাবো। কয়েকটা দিন থেকে আসবো সাদুর সাথে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ।
” ঠিক আছে। ব্যাগ গুছিয়ে নাও।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-বোনাস পর্ব

0

#হৃদয়হরণী
#বোনাস পর্ব
#তানিশা সুলতানা

বিয়ে ভেঙে যাওয়া একটা মেয়ের জন্য খুবই কষ্টের একটা বিষয়। মেয়ে তো। পাড়া প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজন সবাই গাল ভরে বলতে বাকি রাখে না। কেনো বিয়ে ভেঙে গেলো এটা কেউ একবারও জিজ্ঞেস করবে না। বা ছেলের দোষ কি না এটাও জানতে চাইবে না। সকলে একবাক্যে বলে উঠবে “মেয়েটারই কোনো সমস্যা আছে। বদনাম রটিয়ে দিবে”
কিছু কিছু মেয়ের তে আবার মা এমন যে নিজেই তার মেয়েকে উঠতে বসতে কথা শোনায়। গালাগালি করে। মরে যেতেও বলে।
মায়ার মাও তেমন প্রকৃতির। যখন থেকে জেনেছে সাদি আসবে না বিয়ে করতে তখন থেকেই সে মায়াকে গালমন্দ করে যাচ্ছে। মরে যেতেও বলেছে কয়েকবার। এমনকি হাতে রশিও তুলে দিয়েছে ফাঁ*সি দেওয়ার জন্য। এতে অবশ্য মায়ার মন খারাপ হচ্ছে না। বরং বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে। এটা তো ভাগ্যের লিখন। এতে মা বা পাড়াপ্রতিবেশিদের ওপর রাগ করে লাভ আছে?
ভাগ্যে এমনটা লিখা না থাকলে তো এমন হতো না। আল্লাহ যেখানে নিজে মায়ার ভাগ্য লিখেছে সেখানে মায়া আফসোস করার কে? তাকে মেনে নিতে হবে। তাছাড়া উপায় নেই। দুনিয়াটা আল্লাহর ইশারায় চলে।

সাদিকে বিয়ে করার ইচ্ছে তার কখনোই ছিলো না। বাবা মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকবার সাদিকে কল করেছে কথা বলার জন্য। নিজের সিচুয়েশনে জানানোর জন্য। কিন্তু সাদি রেসপন্স করে নি৷
এমনকি সেই দিন শপিং করার নাম করেও সাদির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো সেটাও হয় নি। মায়া ভেবেছিলো সাদি তাকে একটু হলেও সাহায্য করবে।

মায়া ভীষণ সুন্দরী একটা মেয়ে৷ একটা সময় তার দাপট চলতো কলেজে। প্রায় ছেলের ক্রাশ ছিলো সে। ভাবটাই ছিলো অন্য রকম। হাসিখুশি চঞ্চল জীবনটা কতো সুন্দর ছিলো।
তারপর একটা পুরুষের মায়ায় জড়িয়ে গেলো পুরুষটা নিজেই এসেছিলো মায়ার জীবনে। দীর্ঘ দিন পেছন পেছন ঘুরেছে। মায়াকে মানাতে চেয়েছে৷ মায়া পটে নি। পাত্তাও দেয় নি। কিন্তু কথায় আছে নারী জাতির মন দুর্বল।
তাদের কেউ একটু বেশি ভালোবাসা দেখালেই তারা গলে যায়। মায়ারও তাই হয়েছে৷ ছেলেটার অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখে গলে গিয়েছিলো। জীবন দিয়ে ভালোবেসে ফেলে তাকে। ব্যাস সুখের দিন গুলো ফুরিয়ে গেলো। এতো অল্প বয়সেই কি মানুষের সুখ ফুরিয়ে যায়?
দুই দিনের জন্য তো পৃথিবীতে আসা। অনেকটা ঘুরতে আসার। তাহলে এই দুই দিনের জীবনে এতো কষ্ট কেনো? আল্লাহ কি মানুষকে কষ্টের সাথে পরিচিত করতেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছে?

সেইদিন ইচ্ছে করেই মায়া হাতের পিকের সাথে তার আর তার বয়ফ্রেন্ডের একখানা ছবি দিয়েছিলো। মায়া জানতো এটা দেখলে সাদি পিছিয়ে যাবে তাকে বিয়ে করতে আসবে না।
আর হলোও তাই।
তবে মায়া এটা আশা করেছিলো সাদি একবার হলেও তাকে কল করবে। জানতে চাইবে কিছু।

___

সাদি এগিয়ে এসে ওপরে ঝুলানো ফুল গুলে ছিঁড়ে ফেলে। বিছানায় লাভ সেভ এঁকে তাতে লেখা (সাদি❤️ছোঁয়া) সেটাও ভেঙে ফেলে। সব গুলো ফুলের জায়গা হয় ডাস্টবিনে। ছোট্ট ডাস্টবিনটা ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।
ছোঁয়া গোল গোল চোখে দেখতে থাকে। লোকটার মতিগতি আসলে কি? তিনি চাইছে টা কি?

সব ফুল পরিষ্কার করে সাদি বিছানায় বসে পড়ে।
“ফুল কেনো ফেলে দিলেন? আমি তো ভেবেছিলাম এক মাস রাখবে এই ফুলগুলো। যখনই রুমে আসবো তখনই ফুলগুলো দেখবো আর বিয়ের কথা মনে করবো। কিন্তু আপনি এটা কি করলেন? ফুল তে আর আপনার মাথায় বসে ছিলো না তাই না? তাহলে ফেললেন কেনো?
আমাদের তো আগেই ডিল হয়ে গিয়েছিলো। আপনার পাশের রুমে জায়গা হবে আমার। তাহলে আমার রুমে এসে মাতব্বরি কেনে করছেন? আপনি কি

সাদি চোখ তুলে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ব্যাস ছোঁয়া চুপসে যায়। মুখে আঙুল দিয়ে ফেলে।

” বই নিয়ে এসো।

ছোঁয়া মুখ থেকে আঙুল নামিয়ে ফেলে। চোখ দুটো তার বড়বড় হয়ে যায়। মুখটা গোল করে ফেলে।
বই মানে কি? এখন কি পড়তে হবে?
ছোঁয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদি উঠে পড়ে। দরজার আড়াল থেকে ছোট্ট একটা লাঠি বের করে আনে।
ছোঁয়া এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ে। নিজের লাগেজটা খুলে ঝটপট বই বের করে আবার গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
সাদিও এসে ছোঁয়ার সামনে গেল হয়ে বসে।
আইসিটি বই বের করে ছোঁয়াকে বোঝাতে থাকে।
সাদি কলম নেরে নেরে ছোঁয়াকে বোঝাচ্ছে আর ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদিকে দেখছে।
তার বরটা এতো সুন্দর যে ইচ্ছে করে টুপ করে গিলে ফেলতে। এই লোকটার সব চেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটা হচ্ছে ওষ্ঠদ্বয়। একদম গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাপি। সাদা চামড়ার ওপর কুচকুচে কালো দাঁড়ি আর তার মধ্যে গোলাপি ওষ্ঠখানা৷
খাড়া নাক, ছোট ছোট বিলাই চোখ, চোখের পাশে খানিকটা বড় লাল তিল, জোরভ্রু, ঘন সিল্ক মিডিয়াম বড় চুল। উফফফফফ যেনো আস্ত একটা চকলেট কেক। আরও একটা আকর্ষণীয় জিনিস আছে লোকটার। যা ছোঁয়াকে মাতাল হতে বাধ্য করে। লোকটার গলায় থাকা আরও একটা লাল তিল। কন্ঠনালির ঠিক একটুখানি নিচে।
এই মানুষটা অন্য কারো হয়ে গেলে ছোঁয়া ম*রেই যেতো। এই রূপে পাগল হওয়ার অধিকার শুধুমাত্র ছোঁয়ার।

“আপনি এতো হ*ট কেনো? পুরো চকলেট কেকের মতো। ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলতে।

ছোঁয়া সাদির কন্ঠনালির দিকে তাকিয়ে কথাগুলে বলছিলো।
সাদির হাত থেমে গেছে। সে একটা ইমপটেন্ট বিষয় লিখে লিখে বোঝাচ্ছিলো ছোঁয়াকে। ছোঁয়ার কথায় তার শরীর জারিয়ে ওঠে।
এই মুহুর্তে এই মেয়েকে ইঁচড়ে পাকা ছাড়া আর কোনো নাম দিতে পারছে না সাদি। একটা মেয়ে ঠিক কতেটা দুষ্টু হলে তার থেকে গুণে গুণে চোদ্দ বছরের বড় একটা ছেলেকে এভাবে বলতে পারে?

ছোঁয়া এবার হাত বাড়িয়ে সাদির দাঁড়ি ছুঁড়ে দেয়।
” আমায় ভালেবাসবেন কবে সাদু?

সাদি বেতটা হাতে নিয়ে বলে
“এখুনি

তারপর ছোঁয়ার তুলতুলে নরম হাতটা ধরে ঠাসস করে বারি মেরে দেয়।চিৎকার দিয়ে ওঠে ছোঁয়া। সে তো এতোখন ঘোরের মধ্যে ছিলো। আহহা সবেই ভাবছিলো টুপ করে একখানা চুমু খেয়ে নেবে। কিন্তু চুমুর বদলে মাইর খেলো?
পরপর দুটো বারি দেয়ে সাদি বলে
” আরও ভালোবাসা লাগবে?

ছোঁয়া এক লাফে উঠে যায়। হাত ধরে কেঁদে ফেলে। বেশ ব্যাথা পেয়েছে। লাল হয়ে গেছে হাতটা। খানিকটা ছিঁলেও গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে
“ভালেবাসা লাগবে না। আমার ভুল হয়ে গেছে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-১৪+১৫

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৪
#তানিশা সুলতানা

সাদি বড়বড় পা ফেলে হাঁটছে। কোথায় যাচ্ছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ধরেই হাঁটছে সাদি। ছোঁয়াও সাদিকে অনুসরণ করে পা মেলাচ্ছে৷ শাড়ি পড়ার অভস্ত্য না ছোঁয়া। তাই পা মেলাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে সে। খুব করে ইচ্ছে করছে সাদির ওই শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতটা ধরতে। মোটা মোটা আঙুলের ভাজে নিজের ছোট ছোট আগুন গুলো গলিয়ে দিতে। কিন্তু সেই সাহস কি আছে ছোঁয়ার? দেবে একটা ধমক। বা একটা থাপ্পড়ই দিলো। তখন কি হবে? সুন্দর গালটা লাল হয়ে যাবে। সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে। থাকক বাবা হাত ধরার প্রয়োজন নেই৷ পাশে যে হাঁটতে পারছে এটাই তো অনেক। তাই না?

প্রায় চল্লিশ মিনিট হেঁটে প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে ওরা। ছোঁয়া এবার আর চুপ থাকতে পারে না। ভীষণ ক্লান্ত সে। দৌড়াতে দৌড়াতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে।

“আপনার টাকা নেই বললেই পারতেন। আমার কাছে টাকা আছে। একটা রিকশা নিয়ে আসতাম। তা না হাঁটিয়ে আনলেন? নতুন বউ আমি ভুলে গেছেন? আপনিই বোধহয় দুনিয়াতে প্রথম ব্যক্তি যে তার বউকে হাঁটিয়ে বাড়ি নিয়ে আসলো। আপনার নাম জাদুঘরে তুলে রাখা উচিত। কিপ্টামির একটা লিমিট থাকা দরকার আপনি সেটা পেরিয়ে গেছেন। পাষান লোক একটা

সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। অভিমানী মুখটা দেখে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।
” আই থিংক তুমি বুঝতে পেরেছো আমার সাথে পথ চলা খুব একটা সহজ হবে না।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে সাদিকে। ঠিক ধরতে পেরেছে। লোকটা তাকে জব্দ করতে হাঁটিয়ে নিয়ে আসলো। কি ভেবেছে এভাবে হারিয়ে দিবে ছোঁয়াকে? কখনোই না।

“আই থিংক আপনিও বুঝতে পেরেছেন ছোঁয়া চৌধুরী এতো তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হবে না।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে৷ ভাঙবে তবু মচকাব না৷
” হাঁটা তো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাছাড়া আমার বরের টাকা নেই। হাঁটবো না হয়। আপনি পাশে থাকলে আমি হাঁটতে হাঁটতে উগান্ডাও চলে যেতে পারবো। সমস্যা নেই আমার। ভালোবাসার জন্য শাহজাহান তাজমহল বানালো, ফরহাদ পাহাড় কেটে রাস্তা বানালো আমি সামান্য হাঁটতে পারবো না?
কি যে ভাবেন না আপনি। করলা খেতে খেতে মাথায় গ্যাস্টিক হয়েছে আপনার।

সাদি চুপচাপ হাঁটতে থাকে। ছোঁয়ার কথা যেনো সে শুনতেই পাচ্ছে না। ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকে। একটা মানুষ এতোটা নিরামিষ কি করে হতে পারে?

আলোয় ঝলমল করা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে। আর কয়েক পা বাড়ালেই বাড়ির গেইট। ছোঁয়ার এখন একটু একটু ভয় করছে। সবাই কিভাবে নিবে? কি বলবে? কেমন রিয়াকশন হবে?
কিন্তু বেচারা গোমড়ামুখো চিল মুডে ভেতরে ঢুকছে। যেনো তার কোনো চিন্তাই নেই। যত চিন্তা সব ছোঁয়ার একার।
দারোয়ান চিৎকার করে বলে
” ছোট আপা আর ছোট ভাইজান চইলা আইছে।
তার চিৎকারে ছোঁয়া ভরকে যায়। বাড়ির মেইন দরজায় পা রাখতে গিয়েও ফিরিনে আনে। সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সাদি ভেতরে চলে গেছে।

আত্নীয় স্বজন পরিবারের সবাই ঘিরে দাঁড়িয়েছে সাদিকে। কাঁদতে কাঁদতে সাবিনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। নাজমা আর সিমিও কেঁদেছে অনেক।
ছোঁয়া ভেতরে ঢুকতেই নাজমা বেগম দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে ফেলে
“মা কোথায় গিয়েছিলি তুই?
কতো চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের।

ছোঁয়া কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। সেলিম আর সাজ্জাদ পাশাপাশি বসেছিলো। সেলিম দাঁতে দাঁত চেপে সাদির দিকে এগিয়ে যায়। সাদির কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে
” তোকে বলেছিলাম না আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকতে?
সিফাত এসে ওনাকে ছাড়িয়ে দূরে নেয়। রাগে থরথর করে কাঁপছেন তিনি। সাদি নিজের কলার ঠিক করে শান্ত চোখে তাকায় সেলিমের দিকে। কিন্তু জবাব দেয় না।
সাজ্জাদ ছেলের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কাঁধে হাত রেখে বলে
“কোথায় গিয়েছিলে? বরযাত্রী যেতে হবে তো। সবাই অপেক্ষা করছিলাম।

সাদি গম্ভীর গলায় জবাব দেয়।
” ওকে বিয়ে করেছি আমি।

আরও একবার চমকায় সকলে। সেলিম এবার বলার মতো কথা খুঁজে পায় না। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি। সাবিনা চোখের পানি মুছে সাদির দিকে এগিয়ে আসে।
নাজমা বেগমও রেগে যায় এবার। এটা হতে পারে না। তার ফুলের মতো পবিত্র মাসুম মেয়ে। তার বিয়ে নিয়ে হাজারটা জলপনা কল্পনা করা আছে তার৷ সাদি ছেলে ভালো। কিন্তু তার মেয়ের সাথে মানাবে না।

তিনি কঠিন সুরে বলে ওঠে
“যা বলেছিস বলেছিস। এটা আর বলবি না আব্বা। কোনো বিয়ে হয় নি।
ছোঁয়া মায়ের কথায় অবাক হয়। বিয়ে হয় নি মানে কি? বিয়ে তো হলো।
সেলিমও তেরে এসে বলে
” কোনো বিয়ে হয় নি৷ ছোঁয়াকে নিয়ে আমি এখুনি শহর ছাড়বো।

ছোঁয়া আতঙ্কে ওঠে।
“না না আমি কোথাও যাবো না। বিয়ে হয়েছে আমাদের। প্রমাণ আছে

সিমি ছোঁয়াকে কথা বলতে বারণ করে কিন্তু ছোঁয়া শোনার পাত্রী নয়।
সেলিম এবার কষিয়ে ধমক দেয় ছোঁয়াকে
” একটা কথাও বলবে না তুমি। বড় হয়ে গেছো না?
একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো তোমার। বিয়ে হয়েছে তো? ডিভোর্সও দিয়ে দিবে৷ থাকবে না তোমারা এক সাথে। তোমাদের এক সাথে মানাবে না।

বাবার ধমকে ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। জীবনে প্রথমবার সে বাবার থেকে কড়া কথা শুনলো।

সাদি এবার সাবিনাকে বলে
“মা কাল থেকে আমাকে অফিস জয়েন করতে হবে। আমি চলে যাবো এখুনি
বলেই সে নিজের রুমে চলে যায়।

সেলিম আবারও বলে ওঠে
” তুমি সাদি ডিভোর্স দিবে। ছেড়ে দিবে তাকে এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্ত নরচর হলে তোমাকে মে*রেই ফেলবো আমি।

ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে
” মায়ের সাথে তোমাকে মানলে, আপির সাথে জিজুকে মানালে আমার সাথেও ওনাকে মানাবে।
তুমি মাকে ছাড়তে পারলে, আপি জিজুকে ছাড়তে পারলে, আমিও সাদুকে ছেড়ে দিবো।
এবার সিদ্ধান্ত তোমার।

সেলিম বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মেয়ের কথা শুনে। সিফাত মুখ টিপে হাসে। সাজ্জাদের সিটি বাজাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য পারছে না। এই মেয়েই পারবে তার ছেলেকে মানুষ করতে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে নিজের রুমে ঢুকে যায়। তাকেও তো জামাকাপড় গোছাতে হবে।
কাঁদতে কাঁদতে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয় সে। শখের একটা লাগেজ আছে ছোঁয়ার। সেটা বাবা কিনে দিয়েছিলো। সেই লাগেজটাই নিয়ে যাচ্ছে ছোঁয়া।

সাদি রুম থেকে বের হতেই দেখে ছোঁয়াও বেরিয়ে গেছে৷
ছোঁয়া কাছাকাছি আসতেই সাদি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। কারো সাথে কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া সাদির পেছন পেছন দৌড় দেয়।
সবাই তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।

বাইরেই সামির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাদি গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। ছোঁয়াও পেছনে বসে।
সাদির দিকে তাকিয়ে বলে
“আমি তো ভেবেছিলাম এখন হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন। যাক একটু হলেও অপাষাণ।

সামির ড্রাইভিং করতে করতে জিজ্ঞেস করে
” অপাষাণ আবার কি?
“অপাষাণ মানে একটু হলেও মায়া আছে।
সামির হাসে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকায়। সে ফোন দেখছে।
” সামির ভাইয়া
তোমার বাকি বন্ধুরা কোথায়?
“কোথায় আবার তোমাদের জন্য ঘর সাজাচ্ছে?

“কি দিয়ে ভাইয়া? নিমপাতা আর আস্ত আস্ত করলা দিয়ে?

ছোঁয়ার কথায় সামির শব্দ করে হেসে ওঠে।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:১৫
#তানিশা সুলতানা

মানুষ সব সময় তার বিপরীতে স্বভাবের মানুষকেই ভালোবেসে ফেলে। এই যে ছোঁয়া চঞ্চল, উড়নচন্ডী, হৈ হুল্লোড় করতে পছন্দ করে। কিন্তু সাদি?
গম্ভীর! একটু বেশিই গম্ভীর সে। মানুষ কখনো এতোটা গম্ভীর হয়?
হুমম হয়
মানুষের জীবনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে যা তাকে গম্ভীর হতে বাধ্য করে। সাদি ছোট বেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের কিন্তু এতোটা গম্ভীর সে ছিলো না। একটু আতটু কথা সেও বলতো। খিলখিল করে না হাসলেও মুখ টিপে সে হাসতো। বন্ধুদের সাথে খুব বেশি আড্ডা না দিলেও মাঝেমাঝে একটু সময় দিতো।
কিন্তু এখন তার সেই হাসিটা চলে গেছে।

সামির সাদির কথা ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে কানে হেডফোন গুঁজে নিয়েছে আর ছোঁয়া সামির সাথে কথা বলে যাচ্ছে। অবশ্য সামির কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না শুধু ছোঁয়ার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। হাত নেরে নেরে কথা বলছে সে। কথার মাঝেমাঝে শব্দ করে হেসে উঠছে। হাসতে হাসতে গাড়ির কাঁচে বাড়ি খাচ্ছে।

ছোঁয়া কথা গুলো অদ্ভুত। এই যে যেমন সে পাখি হলে উড়ে চলে যেতো ফ্লাইটে। গাড়ি করে যেতে হতো না। টাকা বাঁচতো। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলে দুই চারটা গাড়ি চুরি করে ফেলতো সে। সাদির মাথা নেরা করে দিলে কেমন লাগবে। এইসবই

একই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছে সাদি। বাড়িতে থাকলেও পারতো। কিন্তু সাদি থাকবে না। এখান থেকে ছোঁয়ার কলেজে যাওয়ার রাস্তা দশ মিনিটের। আর সাদির অফিসের সামনেই বাসাটা।
মেইন রোডের পাশেই তিন তালা বিল্ডিং এর ওপরের তালার বাসাটা ভাড়া নিয়েছে সে।
বেশ বিলাশ বহুল রুমটা। তিনটে রুম। দুটো রুমের সাথে ছোট্ট বেলকনি আছে। একটা কিচেন আর ছোট্ট একটা ড্রয়িং রুম। একটা পরিবার অনায়াসে থাকতে পারবে।

রিমি আশিক পাপন তারা পুরো বাসাটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। আনাচে কানাচে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে। সব থেকে বেশি ফুল লাগানো হয়েছে সাদির রুমটাতে। মনে হচ্ছে ফুলেরই বাগান।
ছোঁয়া বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে যায়। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সবটা।
রিমি আর পাপন ছোঁয়ার সাথে সাথে যাচ্ছে। তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কোথায় কি আছে। ছোঁয়া ভীষণ খুশি। কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার। এমনটাই তো সে কল্পনা করেছিলো। স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন কি তবে সত্যি হলো?

সাদি ফাঁকা রুমটাতে ঢুকে পড়েছে। তার ফ্রেশ হওয়া দরকার।
রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

ছোঁয়া বাসর ঘরে ঢুকতেই লাফিয়ে ওঠে। খাটের মাঝখানে গিয়ে বসে রিমিকে ছবি তুলে দিতে বলে। রিমিও হাসি মুখে ছোঁয়ার ছবি তুলে দিতে থাকে।

সামির বিরিয়ানি আনে। খিধেয় সবারই পেট চৌ চৌ করছে। ছোঁয়া শাড়ি গহনা ফেলে সুতি থ্রি পিছ পড়ে নিয়েছে। এতোখনে তার শান্তি লাগছে।
রিমি পাপন খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। সাদি এখনো বের হয় নি রুম থেকে। সবাই জানে সাদি বিরিয়ানি খাবে না। তাই রিমি গিয়ে গ্যাসে ভাত আর করলা সিদ্ধ বসিয়ে দেয়। তারা খেতে খেতে হয়ে যাবে।

তারপর সবাই মিলে খেতে থাকে। বিরিয়ানি ছোঁয়ার ভীষণ প্রিয়। তাকে তিন বেলা বিরিয়ানি খেতে দিলেও সে না করবে না। ছোঁয়া গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে থাকে। আজকে তার বিয়ে হয়েছে তার বর এখনো খায় নি এদিকে ছোঁয়ার খেয়াল নেই৷ সামির ভাবে মেয়েটা নেহাতি বাচ্চা। এখনো সংসার স্বামী এসবে তার আগ্রহ হয়ে ওঠে নি।
তবে মেয়েটা সাদিকে অসম্ভব ভালোবাসে৷

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই চলে যায়। ছোঁয়া পেঁয়াজ মরিচ কেটে করলা ভর্তা করে নেয়। সত্যি বলতে এই ভার্তা ছোঁয়ারও খুব পছন্দ। গরম গরম ভাতের সাথে খেতে দারুন লাগে।
প্লেটে ভাত বেরে তারপর ভর্তা নিয়ে সাদিকে ডাকতে যায়।
পাষাণ লোকটা এখনো দরজা খুলে নি। ছোঁয়া দরজায় টোকা দেয়

“এই যে দরজা খুলুন। আপনার রুমে সোনাদানা নেই যে কেউ চুরি করে নিয়ে নিবে। ঢং বাদ দিয়ে দরজা খুলুন। আর তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। ভাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

তবুও সাদির কোনো সাড়া নেই। ছোঁয়ার রাগ হয়। দুটো লাথি মারে দরজায়। তারপর জোরে জোরে থাপ্পড় মারতে মারতে ডাকে
” সাদু দরজা খুলবেন কি না বলুন? না খুললে আমি ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম। ঢং দেখাচ্ছেন কাকে আপনি? আপনার ঢং দেখায় সময় নেই আমার। জলদি জলদি দরজা খুলুন৷ এমন একটা ভাব করছেন যেনো বিয়ে করে লজ্জা পাচ্ছেন। বা আপনি মেয়ে জোর করে আপনাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই দরজা বন্ধ করে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে দরজা খুলুন।

সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে আসে। মুখ নারিয়ে বড্ড ভুল করে ফেলেছে। কি কি বলেছে ভাবতেই আবারও শুকনো ঢোক গিলে। পিটপিট করে এক পলক তাকায় সাদির দিকে। বেচারা রোবট গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। রেগে আছে না কি বোঝা যাচ্ছে না।

ছোঁয়া জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা নিচু করে বলে
“সরি
আসলে আপনি তো দরজা খুলছিলেন না। তাই ভাবলাম মুখ চালাই। শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে আমাকে থামানোর জন্য দরজা খুলে দিবেন৷

সাদি ফোঁস করে শ্বাস টেনে ছোঁয়ার থেকে নজর ফিরিয়ে নেয়

” সত্যি বলছি। আমি শুধুমাত্র আপনাকে বের করার জন্য বেশি কথা বলেছি। তাছাড়া আমি কখনোই বেশি কথা বলি না। এই যে এই বিল্ডিং এর কসম। আমি তো পাগল যে রাক্ষসের সামনে মুখ চালাবো

“ভেরি গুড এতোদিনে নিজেকে চিনেছো।

বলেই সাদি খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে। আর ছোঁয়া ভেবাচেকা খেয়ে যায়। মুখের ওপর অপমান করে দিলো? বজ্জাত লোক। কিছু বলারও যাবে না৷

সাদি খাচ্ছে আর ছোঁয়া পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লাগলে দেবে সে।
” কোন রুমে থাকবে?

সাদির প্রশ্নটা বুঝতে পারে না ছোঁয়া। কোন রুমে থাকবে মানে?
ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া খেয়াল করে সাদি পানি ঢালছে গ্লাসে। তারাহুরো করে সাদির হাত থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাকতে যায় ছোঁয়া। কিন্তু গ্লাস পড়ে গিয়ে পুরো পানিটা সাদির শরীরে এসে পড়ে।
ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া। এই যে এখনই একটা ধমক খাবে সে।

রাতে শরীর কাঁপতে থাকে সাদির। ভাতের প্লেটেও পানি পড়েছে। পান্তা ভাত হয়ে গেছে।
ছোঁয়া কিছু বলতে যায়
“এখান থেকে যাও তুমি ইডিয়েট
সাদি গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে বলে।
কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। চোখ দুটো টলমল করছে। সে এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায়।

সাদির আর খাওয়া হয় না। বেসিনে গিয়ে হাত ধুঁয়ে এঁটো থালাবাসন গুছিয়ে নেয়। এতোগুলো মানুষ খেয়েছে। থালাবাসন জমেছে অনেক গুলে। তাই থালাবাসন মেজে নেয়।

ছোঁয়া ফুল সাজানো খাটে বসে আছে মন খারাপ করে। ইচ্ছে করে ফেলেছে না কি ছোঁয়া? এভাবে ধমক দেওয়ার কোনো মানে হয়? পাষাণ লোক। ছোঁয়া মনে মনে সাদিকে বকা দিচ্ছে তখনই সাদি ঢুকে পড়ে ছোঁয়ার রুমে।
ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। লোকটা এখানে কেনো এসেছে? বাসর করতে? ইসসস ছোঁয়া লজ্জা লুকাবে কোথায়? সাদি কি তাহলে আমিষ হয়ে গেলো?
বিয়ের রাতে রাত বারোটায় ফুল সাজানো রুমে বউয়ের কাছে মানুষ কেনো আসে?

ছোঁয়া সবটা জানে। সে তার বান্ধবীর কাছে শুনেছে। এ টু জেড সবটা শুনেছে সে।
লজ্জায় লালনীল হতে থাকে ছোঁয়া।

চলবে