Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 51



হৃদয়হরণী পর্ব-৫৩+৫৪

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৩
#তানিশা সুলতানা

বয়সের সাথে কখনোই ম্যাচুউরিটি আসে না। ম্যাচুউরিটি আসে পরিস্থিতির সাথে। তুমি জীবনে যত খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বে তোমার জীবনে ততদ্রুত ম্যাচুউরিটি আসবে।
সামির কোথায় যাচ্ছে এটা জানার জন্য সাদি বেরিয়েছিলো বাসা থেকে। অসাবধানতায় রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারে সাদিকে। ছিঁটকে পড়ে যায় পিচঢালা রাস্তায়। মুহুর্তেই রক্তে মাখামাখি হয়ে ওঠে সারা দেহ।
মানুষ জন জড়ো হয়ে যায়। হইচই পড়ে যায়।
বাড়ির সামনে থেকে হইচই এর শব্দ আসছে শুনে সেলিম এবং ছোঁয়া বেরিয়ে আসে দেখার জন্য।
মুহুর্তেই এম্বুলেন্স চলে এসেছে।
ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে ছোঁয়া। তার মন কু ডাকছিলো।
সাদিকে পড়ে থাকতে দেখে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে ছোঁয়া। এগোনোর শক্তি পায় না। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ছোঁয়া। রিয়েক্ট করতে পারছে না। মেয়ের চিৎকারে সেলিমও ভিড় ঠেলে ঢুকে। সাদিকে দেখে তারও বুকটা কেঁপে ওঠে। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
সাদির জ্ঞান রয়েছে। সে কথা বলতেও পারছে। কিন্তু এতো লোকজনের মাঝে তার কথা শোনা যাচ্ছে না। কয়েকজন ধরে রেখেছে তাকে
সাদি রক্ত মাখা হাতখানা উঁচু করে ছোঁয়াকে শান্ত হতে বলে। বোঝায় সে ঠিক আছে।
কিন্তু সত্যিই তো সাদি ঠিক নেই৷ মাথা ফেঁটে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে। বা হাতটা বাঁকা হয়ে গিয়েছে। ডান পায়ের প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে।

এম্বুলেন্স আসতেই সকলেই ধরাধরি করে সাদিক গাড়িতে তুলে। ছোঁয়া বসেই আছে সাদির দিকে তাকিয়ে। কাঁপছে সে। কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে সাদিকে না নিতে। কিন্তু সে বলতে পারছে না। সেলিমও মেয়ের কথা ভুলে যায়। সে সাদির সাথে চলে যায়। একা পড়ে রয় ছোঁয়া। আস্তে আস্তে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। ঘাড়ে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। বুকেও অসয্য ব্যাথা হতে থাকে।
অতঃপর ছোঁয়া তার আঁখি পল্লব বন্ধ করে পড়ে যায় রাস্তায়।

হাসপাতালের করিডোরে বাড়ির সকলেই বসে আছে। সাবিনা বেগমের অবস্থা খারাপ। কাঁদতে কাঁদতে দু বার জ্ঞান হারিয়েছে সে। সাদির ট্রিটমেন্ট চলছে। ডাক্তার বলেছে মরণ বাঁচন কোনো ব্যাপার নেই। তবুও সকলেই ভেঙে পড়েছে।
ছোঁয়ার অবস্থা দেখে সকলে আরও বেশি ঘাবড়ে গিয়েছে। মেয়েটাকে তারা রাস্তায় পেয়েছে। পাড়ার একজন গিয়ে বাকিদের খবর দিয়েছে। যে যেমনভাবে ছিলো তেমন ভাবেই বেরিয়ে পড়ে।
ছোঁয়ার আর বার্থডে কেক কাটা হয় না। এতো এতো রান্না করা হয়েছে বার্থডে উপলক্ষে। সে সব সেভাবেই পড়ে থাকে।

চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে ছোঁয়া। মস্তিষ্কে একটুখানি চাপ দিতেই মনে পড়ে যায় সাদির কথা।
চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে ছোঁয়া। হাতে ক্যানেলো লাগানো ছিলো। রক্ত উঠে যায় নলে।
ছুঁটে আসে সিমি এবং নাজমা বেগম। নার্সও আসে।
দুজন ধরে ফেল ছোঁয়াকে। ছোঁয়া ছুটোছুটি করতে থাকে৷ তাকে ধরে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
ছোঁয়া চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে

“আম্মু আমাকে ছাড়ো। আমার সাদি। আমাকে সাদির কাছে যেতে হবে। আমার সাদি ব্যাথা পেয়েছে।

নাজমা বেগমের চোখেও পানি।
তিনি মেয়ের মাথা খানা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে
” শান্ত হ মা। সাদি ঠিক আছে।
হাইপার হস না।
মায়ের বুকে ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ডাক্তার কৌশলে ক্যানেলো খুলে দেয়। সেখান থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। কিন্তু সেদিকে ছোঁয়ার খেয়াল নেই।

“আমার জন্য আমার সাদুর এই অবস্থা। আমি এতো পাগলামি কেনো করি আম্মু?

সিমিও ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
পেশার ফলস করেছিলো ছোঁয়ার।

” চুপ কর সোনা। সাদিকে দেখবি চল। সেও তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে।

ছোঁয়া মায়ের বুক থেকে মাথা তুলে মুখের দিকে তাকায়।
এক সেকেন্ডও দেরি করে না ছোঁয়া। এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়ে নিজের কেবিন থেকে।
করিডোরেই দেখতে পায় সেলিম এবং সামিরকে। সাদির সাথে কথা বলিয়ে সাবিনা বেগম এবং পরিকে বাড়িতে ছাড়তে গিয়েছে সিফাত। আর সাজ্জাত গিয়েছে সাদির জন্য ঔষধ আনতে।
ছোঁয়াকে দেখেই সেলিম দাঁড়িয়ে যায়।
“মা তুমি উঠে পড়েছো কেনো?

ছোঁয়া বাবাকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে
” আমার সাদি কোথায়?
আমি দেখবো ওকে।

সেলিম মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। হাতের ইশারায় কেবিন দেখিয়ে দেয়। ছোঁয়া এক দৌড়ে ঢুকে পড়ে।

কপালে সাদা ব্যান্ডেজ। পায়ে ব্যান্ডেজ হাতেও ব্যান্ডেজ করা। চোখ বন্ধ করে আছে সাদি। ফর্সা গোলগাল মুখখানা একদম অন্যরকম লাগছে। কুচকুচে কালো দাঁড়িতে এখনো রক্তের ছোঁয়া লেগে আছে। নাকের পাশ দিয়েও রক্তের স্রেত বয়ে গিয়েছে।
ছোঁয়া সাদির পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে কাঁদতে থাকে। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। যাতে তার কান্নার শব্দে সাদির ঘুম না ভাঙে।
কিন্তু বোকা ছোঁয়া জানেই না তার সাদি ঘুমিয়ে নেই।
সে ছোঁয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে গিয়েছে।

চোখ খুলে সাদি। তাকায় প্রেয়সীর মুখ পানে। মলিন হাসে
“কাঁদছো কেনো?
আমি ঠিক আছি।

সাদির কন্ঠ শুনেই ছোঁয়া শব্দ করে কেঁদে ওঠে। বসে পড়ে সাদির পাশে। বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।
সাদি হাত বাড়িয়ে প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারে না। কারণ তার হাতে আপাতত সেই শক্তি নেই।
শুধু বলতে থাকে
” কেঁদো না জান আমি ঠিক আছি।

“আমি আর কখনোই আপনার কথার বাইরে যাবো না। যা বলবেন তাই হবে। একদম বাচ্চামি করবো না। আপনি খ্যশুধু সুস্থ হয়ে যান।

হাসে সাদি।
” তুমি কান্না না থামালে সুস্থ হবো না।
ছোঁয়া কান্না থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারছে না।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫৪
#তানিশা সুলতানা

নার্স রাখতে চেয়েছিলো সাদির জন্য বাড়ির লোকজন। কিন্তু ছোঁয়া নাকোজ করে দিয়েছে৷ তার স্বামীর সেবা সে একাই করবে। কোনো নার্সের প্রয়োজন নেই।
ছোঁয়ার মুখের ওপর কেউ কথা বলতে পারে নি।
অগত্য সাদিকে নিয়ে বাড়িতে ফেরা হয়।

হুইল চেয়ার ব্যবহার করে সাদিকে তার জন্য বরাদ্দকৃত রুম ওবদি নিয়ে আসে ছোঁয়া। চোখ মুখের বিষন্নতা তার কমছেই না। দুই গালে এখনো লেগে আছে পানির দাগ। চোখের পাঁপড়ি ভেজা। ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে। হাজারবার সাদি কাঁদতে না করছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বিশালদেহী সাদিকে হুইট চেয়ার হতে বিছানায় বসানো চুনোপুঁটি ছোঁয়ার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।তবুও সে কোমরে ওড়না বেঁধে সাদির ভালো হাতটা কাঁধের ওপর তুলে প্রস্তুতি নিতে থাকে বিছানায় বসানোর। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে

“তুমি একা পারবে না। ভাইয়াকে ডাকো।

ছোঁয়া নাক টেনে জবাব দেয়
” আমি একাই পারবো। তাদের প্রয়োজন নেই।

অগত্য সাদি বুঝে ফেলে তার বউয়ের জেদ। তাই সে নিজেই ছোঁয়ার ওপর অল্প বল প্রয়োগ করে উঠে দাঁড়ায় এবং বিছানায় বসে৷ এই টুকুতেই হাঁপিয়ে উঠেছে সাদি। পায়ের ব্যাথা তীব্র। আজকেই ছাড়তো না হাসপাতাল থেকে। কিন্তু সাদি থাকবে না। তার দুটো কারণ।
এক হাসপাতালের এই ফিনাইলের গন্ধ তার পছন্দ না। দুই সে যতখন হাসপাতালে থাকবে তার মা এবং বউ কাঁদতে কাঁদতে আধমরা হয়ে যাবে।

ছোঁয়া সাদির পাশে বসে হাঁপাতে থাকে। তারও বেশ ধকল গেছে।
“দেখলেন পারলাম। সব সময় দুর্বল ভাবেন আমায়।

সাদি আলতো হাসে।মেয়েটা সত্যিই আর বড় হলো না।

” বসুন এখানে। আমি পানি নিয়ে আসছি। গা মুছিয়ে দিবো।
সাদি বাঁধা দেয় না। ছোঁয়া ওড়না খানা খাটে রেখে চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। বেশি সময় না নিয়ে জলদি বালতি ভর্তি পানি নিয়ে বেরিয়ে আসে। আলমারি থেকে সুঁতি একখানা ওড়না বের করে বালতিতে চুবিয়ে তা থেকে পানি ঝেড়ে আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে সাদির হাত পা মুখ বুকসহ যেখানে যেখানে রক্ত লেগে আছে সব জায়গায়। এতোটাই আলতো করে মুছে দিচ্ছে যে মনে হচ্ছে যেনো সাদি ব্যাথা না পায়।

সাদি দেখতে থাকে তার বউকে। বউয়ের এই রূপ আগে কখনো দেখা হয় নি। এই অবুঝ নারী এতোটাও যত্নশীল? কোথায় লুকিয়ে ছিলো তার এই হৃদয় কাঁপানে রূপ?

কাবাড খুলে একটা শার্ট এনে তা সাদিকে পড়িতে যেতে নেয় ছোঁয়া। একটা হাত অনায়াসে ঢুকাতে পারলেও অন্য হাত ঢুকাতে পারে না ব্যান্ডেজ করা। শেষমেশ হাতের ওপর নিয়ে শার্ট এনে বোতাম লাগিয়ে দেয়।
এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে চুমু খায় কপালে। সাদির দুই গাল হাত রেখে সুধায়

“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?

সাদি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।

” ভাবছি

“কি?

” আমার আধপাগল বউ বড় হয়ে গিয়েছে। এবার কুদ্দুসকে আনাই যায়।

ছোঁয়া মুচকি হাসে। সাদি হতাশ হয়। ভেবেছিলো ছোঁয়া লাফিয়ে উঠবে। সাদির গলা জড়িয়ে ধরবে। এখুনি বায়না ধরবে। এটা সেটা বলে বকবক শুরু করে দিবে। কিন্তু এসব কিছুই হলো না। আধপাগল কি একটা এক্সিডেন্ট এ বড় হয়ে গেলো?

ছোঁয়া সাদির পায়ের কাছে বসে পড়ে। ব্যান্ডেজ করা পায়ে চুমু খায়।

“আমার কিচ্ছু চাই না। আপনি সুস্থ থাকুন। এতেই আমি খুশি। কুদ্দুস কুদ্দুসী দিয়া এদের কাউকেই লাগবে না আমার।

তখনই হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে সাবিনা বেগম এবং সিমি। সাবিনার হাতে ভাতের থালা। চোখে তার অশ্রু টলমল করছে। সিমির হাতে ঔষধের প্যাকেট এবং পানির গ্লাস।
” আব্বা খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।

বলতে বলতে বসে সাদির পাশে। ভাতের থালা নামিয়ে আঁচল দিয়ে চোখ মুখে। ছোঁয়া সাদির আরেক পাশে বসে।
“আম্মু কাঁদছো কেনো? ঠিক আছি আমি।

নাক টেনে সাবিনা জবাব দেয়
” আর কাঁদবো না আব্বা। খেয়ে নে।

ভাত মাখতে থাকে তিনি। লোকমা বানিয়ে সাদির মুখের সামনে ধরে। কোনো বায়না ছাড়া খেয়ে নেয় সাদি।
“কি থেকে কি হয়ে গেলো আব্বা? ভালো ছেলে বাড়ি থেকে বের হলি আর
আবারও কেঁদে ওঠে সাবিনা। ছোঁয়াও ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে। যাতে তার কান্নায় শব্দ না হয়।

” মা কাঁদছেন কেনো? আপনি কাঁদলে ভাইয়া খাবে কিভাবে? বুঝুন একটু।

সাবিনা আবারও চোখের পানু মুছে নেয়। সাদি মায়ের হাত খানা মুঠোয় পুরে নেয়।
“শুকরিয়া আদায় করো না আম্মু৷ আল্লাহ তো আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। যদি আমি নাই ফির

বাকিটা শেষ করতে পারে না সাদি। ছোঁয়ার মুখের দিকে চোখ পড়ে যায়। আর থেমে যায়। চোখের ইশারায় ছোঁয়াকে শান্ত হতে বলে।
” কাঁদে না আম্মু৷ আমাকে খাইয়ে তোমরা খেয়ে নিও প্লিজ। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার সুস্থ করে তুলো আমায়।
সাবিনা মাথা নারায়।

_____

রাতে কেউই ভালো করে খেতে পারে না। ছোঁয়া তো কিছুই মুখে তুলে না। তাকে জোর করেও কেউ খাওয়াতে পারে নি।
সামির সহ সাদির সকল বন্ধুরা হাজির হয়েছে। এবং সকলে সাদির সাথে আড্ডা দিচ্ছে। এটা ওটা বলে সাদিকে হাসাচ্ছে। সাদিও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
ছোঁয়া দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছে। মনে মনে আল্লাহর দরবারে সে শতবার শুকরিয়া আদায় করে ফেলেছে।
আজকের ঘটনায় ছোঁয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে। কি হয়ে গেলো?
সামিরও ভীষণ আঘাত পেয়েছে। কিন্তু সে প্রকাশ করতে পারছে না। মনে মনে পুরছে অনুসূচনায়।

আড্ডা দিয়ে সকলে বাসায় যায় রাত এগারোটা নাগাদ। ইরা এবং রিমিকে তাদের বাড়ির লোক এসে নিয়ে যায়। সেলিম কয়েকবার সাদিকে আড়াল থেকে দেখে গিয়েছে। সাদির রুমে ঢুকতে সাহস পায় নি তিনি। তার ধারণা সে সাদিকে পছন্দ করতো না বলে সাদিও তাকে পছন্দ করে না।
পরি পুরো সময়টা জুড়েই সাদির মাথার কাছে বসে ছিলো।
একে একে সকলেই সাদিকে দেখে চলে যায় ঘুমতে। তখন ছোঁয়া রুমে আসে। এতোখন সে পাশের রুমে বসে ছিলো। শান্তিতে একটু কেঁদেছে। সাদির সামনে তো কান্না করার কায়দা নেই।

দরজা বন্ধ করে সাদির দিকে তাকায়। মানুষটা আধশোয়া হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।

“ঘুমবেন না?

ছোঁয়া মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করে।

” হুমম
এসো ভালো করে শুয়িয়ে দাও আমায়।

ছোঁয়া সাদা লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে সাদির বালিশ ঠিক করে। তারপর সাদিকে শুয়িয়ে দেয় ঠিক করে। নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে।

“বুকে মাথা রাখবা না?

ছোঁয়ার আবারও কান্না পায়। কান্না আটকে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
” আপনি ব্যাথা পাবেন।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলে ছোঁয়া।
পাবো না এসো।

“না না প্লিজ

” তুমি আসবে? না কি আমি আনবো?

ছোঁয়া সুর সুর করে সাদির বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। সাদি এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় প্রেয়সীকে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৫০+৫১+৫২

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫০
#তানিশা সুলতানা

সূর্য মামা মুখ লুকিয়ে আছে। ডিসেম্বরের শুরু। কনকনে শীত নেই তবে হালকা শীত পড়েছে। সূর্যের আলো নেই বিধায় শীতটা অনুভব করা যাচ্ছে।
বেলা বারোটা ছুঁই ছুঁই। তবুও যেনো মনে হচ্ছে ভোর সাড়ে পাঁচটা।
ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। সাদি ঘুমিয়ে আছে ছোঁয়ার ছোট্ট বুকে। দুই হাতে গভীর আলিঙ্গনে আটকে রেখেছে তাকে। স্বামী রূপী প্রেমিকের ঘুম ভেঙে যাবে বিধায় ছোঁয়া একটু নরছে না। তবে তার অস্বস্তি হচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এবং সাদির ঘন নিঃশ্বাস তার বুক কাঁপিয়ে তুলছে।
গতকাল রাতের কথা চিন্তা করতেই ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। নতুন এক সাদিকে আবিষ্কার করেছে সে। পুরুষ মানুষের দুটো রূপ থাকে? বস্রহীন সাদিকে কল্পনা করতেই বুক কেঁপে ওঠে। সাদির ঘনঘন নিশ্বাস যেনো এখনো ছোঁয়ার কানে বাজছে। আকুলতার সেই কন্ঠস্বর ফিসফিস করে বলা কিছু কথা এবং উম্মাদনা। সব মিলিয়ে পাগল সাদিকে দেখেছে ছোঁয়া।

জিভ দ্বারা ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নেয় ছোঁয়া। ছোট্ট হাত জোড়া চলে যায় সাদির মাথায়। ঘন চুলের ভাজে হাত চালাতে থাকে।
“পঁচা পুরুষ। আপনি অশ্লীল হয়ে যাচ্ছেন। সেটা কি জানেন?
ফিসফিস করে বলে ছোঁয়া।
সাদি শুনতে পায় না। কারণ সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

” আপনার দেওয়া সব ব্যাথা সয্য করে নিবো। যতই অশ্লীল হন মেনে নিবো। শুধু আমার হয়ে থাকেন। আপনার পাগলামির সঙ্গী শুধু আমাকেই করিয়েন।
তাতেই খুশি আমি।

কুদ্দুসকে দ্রুত আনতে হবে। কুদ্দুস চলে আসলে আপনাকে হারানোর ভয় পাবো না আর। আমার টিম স্ট্রং থাকবে।

ছোঁয়ার এসব ভাবনার মাঝে সাদি নরেচরে ওঠে। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। খুব জানা আছে এখন চোখ খোলা দেখলে আবারও দুষ্টুমি শুরু করবে। লোকটার হুটহাট এ্যাটার্ক সয্য করতে ছোঁয়া বেশ হিমশিম খেয়ে যায়।

সাদি চোখ খুলে দেখে তার প্রেয়সী চোখ পিটপিট করছে। ঘুমের ভান ধরছে বেশ বুঝতে পারে সাদি। মুচকি হাসে সাদি।
একট জ্বালানোর ইচ্ছে জাগে মনে। আর তখনই মুঠো ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে পড়ে।
বালিশের তলায় থেকে ফোনটা বের করে। স্কিনে মিহি নামটা ভেসে ওঠে।
সাদি বিরবির করে বলে “মিহি কেনো কল করছে”
নামটা ছোঁয়ার কানে পৌঁছায়। ছোঁয়া এক লাফে উঠে বসে। ছো মেরে সাদির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে দেয়। সাদি গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকে।

ওপাশের মানুষের কথা না শুনেই ছোঁয়া বলে ওঠে
“সরি ফোনের মালিক এখন বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতে ব্যস্ত।
এতো সকালে কেউ কাউকে কল করে? মেনার্স জানেন না? ছেলেদের নাম্বার দেখলেই কল করতে ইচ্ছে করে? চাপকে একদম গাল ফাঁটিয়ে দিবো আমার বরকে কল করলে।

ওপাশের মানুষটা কিছু বলতে যায় ছোঁয়া তাকে থামিয়ে বলে
” কথা বললে একদম জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো। আমার বরের সাথে চান্স দিতে এসে লাভ নাই। বাবা হতে চলেছে সে। আপনি ফুপি হতে চলেছেন। ভাগিনার বাবার দিকে নজর দিলে আমার কুদ্দুস আপনার চোখ তুলে নিবে। ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম আপনাকে।

এক থালা কথা বলে ছোঁয়া কল কেটে দেয়। এবং জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। হুমকি দিতে দিতে হাঁপিয়ে গিয়েছে সে।
সাদি গালে হাত দিয়ে ছোঁয়াকেই দেখছিলো।

“পাঁচ ঘন্টাও তো হলো না এর মধ্যেই প্রেগন্যান্ট? তোমার কুদ্দুস তো দেখি রকেটের গতিতে আসছে।

খানিকটা মজা করেই বলে সাদি।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।
” ঢপ মারলাম। যাতে আপনার মিহি ভয় পায়।

হাসি পেলেও সাদি হাসে না। সিরিয়াস ভঙিতে মাথা নারায়।
হুট করে ছোঁয়ার মনে পড়ে।
“সাদু বলেন তো। আমাদের কুদ্দুস কেমন হবে?

সাদি হাই তুলে বলে
“আধপাগল মায়ের কুদ্দুস ফুল পাগল হবে। আর কেমন হবে?
ছোঁয়া সাদির চুল টেনে দেয়।
” একদম পাগল হবে না। আমাদের কুদ্দুস হবে কমলা লেবুর রসগোল্লা।
কি করে বলবো?

সাদি নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মাথা নারায়।
“আমি ধলা আপনিও ধলা। আপনি করলা আমি প্রচুর মিষ্টি। তো তেঁতো আর মিষ্টি মিলে, ধলা আর ধলা মিলে মোটমাট হয়ে যাবে কমলা কালার হালকা মিষ্টি। আর কমলা লেবুর রসগোল্লা তো অতিরিক্ত মিষ্টি থাকে না। তো আমাদের কুদ্দুস কমলা লেবুর রসগোল্লা হবে।

সাদি পরপর কয়েকবার ঢোক গিলে। ফোঁস করে শ্বাসও টেনে ফেলে এবং হতাশার নিঃশ্বাসও ফেলে। মনে মনে আফসোসও করে নিজের জন্য।
নেহাৎ আল্লাহ তাকে অসীম ধৈর্যশীল বানিয়েছিলো। নাহলে পাগল হয়ে এতোদিনে পাগলা গারদে চলে যেতে হতো।

____

সেলিম মনে মনে বেশ চটে ছিলো এতখন। কিন্তু এখন সে ভয় পেয়ে আছে। ছোঁয়ার জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে হালকা আয়োজন চলছে। গরুর মাংসর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বছর সেলিম সবার আগে Wish করে মেয়েকে। কিন্তু এই বছর বেয়াদব ছেলে তার মেয়েটাকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। এবং এই যে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে এখনো ফেরার নাম নেই। চটবে না?
মেয়েটা তো তারই।
সাদির নামে এক চোট নালিশ দিয়ে ফেলেছে সাজ্জাদের কাছে।
আরেক চোট নালিশ দিতে যাবে তখনই হাসি হাসি মুখ নিয়ে রাজিয়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
সেলিম পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। এই মহিলা এখানে কি করছে?
এখন সাদি চলে আসলে তাকে সিল পাঁটায় তুলে পিষে ফেলবে।
বুরো বয়সে বোধয় তাকে বউ ছাড়া হতেই হবে। তার ডিভোর্সটা কেউ আটকাতে পারবে না।

“ভালো আছো সেলিম?

নাজমা তখনই খুনতি হাতে বেরিয়ে আসে। হাতা কাটা ব্লাউজ এবং ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়ুয়া এক মহিলাকে দেখে কপালে ভাজ পড়ে নাজমার। কে এই মহিলা?
তখনই পেছন থেকে সাদি বলে ওঠে
” শশুড় মশাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন? লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেন নি তো?

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫১
#তানিশা সুলতানা

গার্লফ্রেন্ড শব্দটাতে রাজিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসি চওড়া হয়। কিশোরী বয়স থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছে সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। ছলে বলে কৌশলে কতো বুঝিয়েছে। ঘেসে ঘেসে থেকেছে সেলিম এর আশেপাশে।
কিন্তু আফসোস সেলিম তাকে পাত্তা দেয় নি। তেইশ বছর বয়সেই বিয়ে করে নেয় নাজমাকে। এবং চব্বিশ বছর বয়সেই বাবা হয়ে যায়। রাজিয়া চোখের পানি ফেলেছে অনেক। সেলিম এর বিয়ের দিন খায় নি পর্যন্ত।
কিন্তু তার এই দুঃখের দাম তো সেলিম দেয় নি। বুড়ো বয়সে এসে তবুও তো সেলিমের গার্লফ্রেন্ড উপাধিটা পেলো।
রাজিয়া মনে মনে ভেবে ফেলে সেলিম এর সাথে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিবে। দুটো সেলফি তুলে স্টোরিও দেবে।

সেলিম শুকনো ঢোক গিলে তাকায় এক পলক নাজমার দিকে। আরেক পলক তাকায় সাদির দিকে। শয়তান ছেলের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। সেলিম না মানলেও সাদির হাসিটা তার খুব পছন্দ। ছেলেটা হাসলে খুব সুন্দর লাগে।
ঘন কালো কুচকুচে দাঁড়ির মাঝখানে গোলাপি ওষ্ঠজোড়া সবারই নজর কাড়বে আগে।
ছেলে মানুষের ঠোঁট এতোটা আকর্ষণীয় হয় জানা ছিলো না সেলিম এর।

নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত সেলিম৷ মেয়ের জামাইয়ের প্রশংসা করছে মনে মনে? বজ্জাত ছেলেটার।

“আব্বা গার্লফ্রেন্ড কেনো বলছিস?

নাজমার কপালের ভাজ চওড়া হয়েছে। রান্না ঘর থেকে সাবিনা ডেকে যাচ্ছে সেদিকে হুশ নেই তার। গার্লফ্রেন্ড এর রহস্য উন্মোচন করে তবেই তিনি সরবে এখান থেকে।
সাদি কিছু বলার আগেই রাজিয়া দু পা এগিয়ে এসে বলে
” আমি সেলিম এর গার্লফ্রেন্ড। মানে প্রেমিকা।

খুক খুক করে কেশে ওঠে সেলিম। সাজ্জাদ মুখ টিপে হাসছে। সাদির ঠোঁটের কোণেও হাসি। নাজমা রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।
সেলিম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে বলে ওঠে

“ও…… ও আ…..মার জাস্ট ফ্রেন্ড। সেই ছোট বেলায় এক সাথে স্কুলে যেতাম। ওই আর কি

সাদি ফট করে বলে ওঠে
” ছোট বেলার স্মৃতি চারণ করতেই তো ছোট বাবা সেই দিন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো ওনার সাথে রিকশায় বসে পাশাপাশি লান্স করতে।
তাই না শশুড় মশাই

সেলিম কটমট চোখে তাকায় সাদির পানে। সাদি হেসে ফেলে।
নাজমা রাজিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে
“প্রেমিককে নিয়ে বেরিয়ে যান। বিয়ে করতে চাইলে বলিয়েন আমি নিজে ডিভোর্স দিয়ে আপনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
এই অকর্মার সাথে আমিও সংসার করতে আগ্রহী নই।

বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। সেলিমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সাজ্জাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। বাড়িতে এবার সাইক্লোন বয়ে যাবে ভালোই আন্দাজ করতে পারছেন তিনি।

রাজিয়া বলে ওঠে
” সেলিম তুমি

সেলিম দুই হাত জোর করে বলে
“এখান থেকে যা বোইন তুই। বুড়ো বয়সে বউ ছাড়া করিস না আমায়।

রাজিয়া আবারও কিছু বলতে চায়। সেলিম বলতে না দিয়ে যেতে বলে। বেচারা চলে যায়। সেলিম সাদির মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। লম্বায় সেলিম কিছুটা বেটে।
সাদি বুকে হাত দিয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়ায়।
” রিভেঞ্জ নিলাম শশুড় মশাই। আমার পেছনে লাগতে আসলে একদম ডিভোর্স করিয়ে শাশুড়ী মাকে আবার বিয়ে দিয়ে দিবো। দেখতে তো এখনো মাশাআল্লাহ। তোমার মতো বুড়োর সাথে মানায় না তাকে।
নিশ্চয় শাশুড়ী মাকে পটানোর আগে সার্টিফিকেট দেখিয়ে নানাকে পটিয়ে ফেলেছিলে?

সেলিম এই ছেলেকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। শুধু তাকিয়েই আছে।
সাদি কিছু একটা ভেবে বলে
“অবশ্য সার্টিফিকেট তোমার ছিলোও না। ঘুস দিয়ে চাকরি নিয়েছো তো।
একটা কথা ভেবে দেখো
তুমি বত্রিশ বছর বয়সে দুই বাচ্চার বাবা ছিলে। আর আমি বউকে

থেমে যায় সাদি।
সেলিম চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছে। মনে মনে কয়েকবার নিলজ্জ বলে গালিও দিয়ে ফেলেছে সাদিকে। শশুড় মশাইয়ের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?

” তুই বাপ কথা বলিস না। যা তো আমার সামনে থেকে।
সাদি ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ তানিশা সুলতানা চলে যায়। সাজ্জাদ এতোখন দুটোর ফুসুরফুসুর শুনতে পায় নি। অবশ্য কান খাড়া করে ছিলো। তবে কানে পৌঁছায় নি।
সেলিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাজ্জাদ এর পাশে এসে বসে।

সাজ্জাদ সরল মনে প্রশ্ন করে
“সাদি কি বললো?

সেলিম জবাব দেয় না। কি করে বলবে তিনি তার নিলজ্জ জামাই তাকে সাবান ছাড়াই ধুঁয়ে দিচ্ছে।

_____

সাদির দেওয়া লকেট ওয়ালা চেইন এখনো গলা থেকে খুলে নি ছোঁয়া।
অসুস্থতা তার কমে নি। শরীরে ব্যাথা গুলো রয়েই গিয়েছে। কেমন ঔষধ খাওয়ালো তাকে যে এখনো ব্যাথা কমছে না?
নিশ্চয় কিপ্টা সাদি কম দামি ঔষধ এনেছিলো। লোকটার কিপ্টামি তানিশা সুলতানা আর শেষ হয় না। ১২ টা বাচ্চা হলে যে কি করবে আল্লাহ জানে?
তাদের খেতেই বোধহয় দিতে চাইবে না।

সিমি ছোঁয়ার পাশে বসে ভাত মাখছে। পরি ছোঁয়ার কোলে বসেছে।

” আচ্ছা আপি বর কয়দিন আদর করলে বেবি আসবে?

ছোঁয়ার এরকম প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে যায় সিমি। ভ্রু কুচকে তাকায়,ছোঁয়ার দিকে। বোনের মুখ দেখে ছোঁয়া ঠিক বুঝতে পারে তার কথার মিনিং তার বোন বুঝতে পারে নি।
“না মানে আমার মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম
তখনই রুমে ঢুকে পড়ে সাদি। সে ছোঁয়ার কথা শুনেছে।
মনে মনে খানিকটা রেগেও গিয়েছে সাদি। ন্যাকামি করারও একটা লিমিট থাকা দরকার। বাচ্চা তো আর না।
আজকে সাদি ছোঁয়ার বাচ্চামি ছোঁটাবে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৫২
#তানিশা সুলতানা

“তুমি কি বড়ো হবা না ছোঁয়া?

সাদি কর্কশ গলায় বলে ওঠে। ছোঁয়া গোমড়া মুখে তাকায় সাদির দিকে। লোকটাকে দেখে অভিমানে বুক ভেসে যাচ্ছে। কম দামি ঔষধ খাওয়ালো? একটা ঔষধের দাম কি কোটি কোটি টাকা? এই কিপ্টা লোকের সংসার করবে কি করে ছোঁয়া? সারাজীবন অনাহারে মারবে।
সিমি উসখুস করতে থাকে। এখান থেকে বেরুতেই পারলেই এখন বাঁচে সে। ছোট বোনকে সে ভালো করেই চিনে। যখন তখন বেফাঁস কথা বলে ফেলবে। আর সিমি পড়বে লজ্জায়।

ছোঁয়া বিছানা থেকে নামে। দাঁড়াতে যেতেও একটু ব্যাথা অনুভব করে। ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যায় সাদির দিকে।
” এগিয়ে আসছেন আমি বড় হয়েছি কি না জানতে? চোখ নেই সাথে? না কি চোখের মাথা খেয়েছেন? বড় না হলে এই ছোট মেয়ের সাথে কাল ওমন বিহেভিয়ার করলেন কি করে? করলেন ঠিক আছে তাই বলে কম দামি ঔষধ খাওয়াবেন? টাকা ছিলো না আমায় বলতেন। কিপ্টা বেডা।

সাদি চোয়াল শক্ত করে তাকায় ছোঁয়ার মুখ পানে। সিমি উপস্থিত বলে কিছু বলতে পারছে না। নাহলে একটা আছাড় মেরে ফুটিয়ে ফেলতো। বেয়াদব মেয়ে একটা।

সিমি শুকনো ঢোক গিলে নিঃশব্দে বেরিয়ে যায়। সাদিকে চুপ থাকতে দেখে ছোঁয়া আবারও বলে ওঠে
“কি?
কম দামি ঔষধ এটা ধরে ফেলেছি বলে চুপসে গেলেন? পঁচা বেডা।

সাদি ফট করে ছোঁয়া গাল চেপে ধরে। খানিকটা শক্ত করেই ধরে। ছোঁয়া ব্যাথা পায়। চোখে পানিও চলে আসে
“আমাকে খোঁচানোর সময় মনে থাকতে না? ইডিয়েট। মিনিমাম কমনসেন্স নেই৷ পুটি মাছের শরীর নিয়ে আমায় বিয়ে করার সাহস করেছিলে কি করে?

ছোঁয়া নিজের গাল ছাড়ানোর জন্য সাদির হাত টানতে থাকে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। চুনোপুঁটির মতো দুটো হাত দিয়েও সাদির একটা হাত ছাড়াতে সক্ষম হয় না ছোঁয়া। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে ছোঁয়ার।

” ব্যাথার ঔষধ দেই নি তোমায়। পিল দিয়েছিলাম৷ গাঁধা।
নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে আসলে তাজা গিলে ফেলবো একদম
আগে বড় হবি। কোথায় কি বলতে হয় শিখবি। তারপর আমার কাছে থাকতে আসবি।

বলেই সাদি গাল ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া নিজের গালে হাত বুলিয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়। এখন নতুন ড্রামা শুরু করবে এটা জানা সাদির।

“আপনি আমার বাচ্চাকে খু ন করে ফেললেন? আমার কুদ্দুস কে আসতে দিলেন না? খারাপ বাবা আপনি। আই হেইট ইউ।

সাদি বিরক্তর নিঃশ্বাস ফেলে।
“তোর বাচ্চা খু ন করেছি। এবার আর একটা কথা বললে তোকে খু ন করবো। ইডিয়েট।
আমার আশেপাশে একদম আসবি না।

বলেই সাদি হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। পিল কেনো খাওয়ালো সে? বাজে লোক। ছোঁয়া একদম ওই লোকটার আশেপাশে যাবে না। একদম কথা বলবে না।

__

সুন্দর করে কেক সাজানো হয়েছে৷ প্রতি বছর ছোঁয়া এক্সাইটেড থাকে তার জন্মদিনে। গিফট কুড়ানো সাজুগুজু একাই করতে থাকে।কিন্তু এই বার মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
সামির চলে এসেছে৷ অবশ্য তাকে কেউ দাওয়াত দেয় নি৷ বন্ধুর বউয়ের বার্থডে একটা হক আছে তো? দাওয়াতের প্রয়োজন পড়ে না কি আবার?

কিন্তু বাড়িতে ঢুকতেই সামির এর হা করে মুখটা চুপসে যায়। ছোঁয়া সোফার এক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। সেলিম আরেক কোণায় বসে আছে মন খারাপ করে। পরি এবং সিমি কেক সাজাচ্ছে। নাজমা বেগম কটমট চোখে স্বামী দিকে তাকাচ্ছে আর টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। সাদি অন্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।
” আমি এসেছি

সামির এক গাল হেসে বলে ওঠে
ছোঁয়া তাকায় সামির এর দিকে। সাদি বিরক্ত
“তোকে আসতে কে বলেছে?
সামির ভেংচি কাটে।

” বাবা এসেছিস খুব ভালো করেছিস।
নাজমা বেগম বলে। সামিরের হাসি চওড়া হয়।
“আমি আসলে সাদির হিংসা হয়।

সেলিম বলে ওঠে
” হবে না? তুমি হচ্ছো হিরার টুকরা। আর সে হচ্ছে শয়তানের নানা।
সামির বুক ফুলিয়ে ফেলে। গর্বে সে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে।

ছোঁয়া এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। এক দৌড়ে সামির এর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে
” ভাইয়া এসেছো ভালোই করেছো। আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। তুমি ছাড়া কেউ পারবে না এই সর্বনাশ তুলে দিতে।

সামির ভেবাচেকা খেয়ে যায়। কি সর্বনাশ হলো? আর সেই সর্বনাশ শুধু সেই তুলে দিতে পারবে?

“কি হয়েছে ছোঁয়া?
সামিরও ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে

“আমাকে কয়েকটা স্লিপিং পিল এনে দিতে পারবে?
” কেনো?
“আমি খাবো
শুকনো ঢোক গিলে সামির। ছোঁয়া সুইসাইড করতে চাচ্ছে?

” তুমি সুইসাইড কেনো করবে?
ছোঁয়া বিরক্ত হয়। আসলেই লোকটার মাথায় বুদ্ধি কম।
“সুইসাইড করবো না। তোমার বন্ধুকে ভয় দেখাবো। যাতে নেক্সট টাইম সে আমায় না বকে।

“খুলে বলো
ছোঁয়া তার প্ল্যানিং সামির এর সাথে শেয়ার করে। সব শুনে সামির সায় জানায়। মন্দ নয় ছোঁয়ার বুদ্ধি। সাদির একটা শিক্ষা হওয়াই দরকার।

সাদির নজর ল্যাপটপ এ থাকলেও মনোযোগ ছিলো ছোঁয়ার দিকে। দুই পাগল যে কিছু একটা গন্ডগোল পাকাচ্ছে চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না। তবে ধরতে পারে না তাদের প্ল্যানিং।

” তাহলে ভাইয়া এখুনি যাও।

“এখুনি?

” হ্যাঁ যাও
চিন্তা করিও না। তোমার জন্য বিরিয়ানির মধ্যে থেকে দু পিছ মাংস আমি সরিয়ে রাখবো। আর তুমি না আসা ওবদি কেক ও কাটবো না।

সামির খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে যায়।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৭
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়া এখনো কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভয় পেয়ে গেছে খাট ভাঙাতে। খাট তো বেশ মজবুত। তাহলে ভাঙলো কি করে?
সাদি কি বেশি ভাড়ি হয়ে গিয়েছে? না কি অন্য কোনো ব্যাপার?
নিশ্চয় সাদি ভারি হয়ে গিয়েছে বেশি। বাই এনি চান্স সাদি যদি ছোঁয়ার ওপরে পড়তো। তাহলে ছোঁয়ার কি অবস্থা হতো?
এতোখনে নিশ্চয় পটল তুলতো।
শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। ভয়ার্তক দৃষ্টি তাকায় সাদির মুখ পানে। বেচারা বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকাচ্ছে। নিশ্চয় ছোঁয়াকে এভাবে পিঁসে ফেলতে না পেরে বিরক্ত সে।

সামির বেশ আরাম করে হাই তুলছে। তার মনের মধ্যে খুশির প্রজাপতি গুলো পাখা মেলে উড়ছে।
শিপন এবং আকাশও মজা ওড়াতে প্রস্তুত।

“ভাই বলছি কি
তোর বউটা এখনো ছোট। একটু বড় হওয়ার চান্স দে। তুই যেভাবে খাট ভেঙেছিস তাতে তো মনে হচ্ছে ছোঁয়াকে

আশিক বাকি কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই সামির বলে ওঠে
” নাহহহহহহ
ছোঁয়া আমার ছোট বোন। তার সাথে এরকম অন্যায় আমি হতে দিতে পারি না। সেলিম চাচা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ছোঁয়াকে সুরক্ষিত রাখার।

সাদি কপাল চাপকে হাত মুষ্টি বন্ধ করে নেয়। মনে মনে নিজেকে বেশ কয়েকটা গালিও দিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যে। কেনো এসেছিলো হনুমানের দলকে এখানে? বাসর ঘর না সাজালে কি বাসর হয় না? অবশ্যই হয়।

শিপন বলে ওঠে
“সামির চল আমরা ছোঁয়াকে নিয়ে চলে যাই। সেলিম চাচা তার আদরের মেয়েকে সবার আগে বার্থডে উইশ করবে তো।

সাদি এবার ক্ষেপে ওঠে
” বুঝেছি বাসর করতে হলে বউ নিয়ে বনবাসে যেতে হবে আমার।

সাদির কথাটায় বেশ মজা পায় সামির। সাদির পিছে হাত দিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বলে
“সেখানেও পেছন পেছন চলে যাবো ভাই।

সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সামিরের দিকে। সামির এক গাল হেসে শার্টের কলার ঠিক করে
” ঐশির সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দে। তোর ভাঙা খাটের কসম আর জীবনেও জ্বালাবো না তোদের।

এতোখনে ছোঁয়া মুখ খুলে। সে মাথার ঘোমটা ফেলে বলে ওঠে
“সামির ভাইয়া তুমি কিন্তু ঠিক করছো না। এর দায় যে আমার ঘাড়ে এসে পড়বে সেটা জানো তুমি?
আমাকে চুমু খাবে না। এমনকি ঘরেও নেবে না বজ্জাত লোক।
তোমরা ওনার পেছনে লেগো না।

চোখ বড় বড় হয়ে যায় সকলের। রিমি হেসে ফেলে। মেয়েটা একদমই বাচ্চা।
সামির সাদিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এগিয়ে যায় ছোঁয়ার দিকে।
” সাদি চাচা চুমুও খায়?
কোথায় চুমু খায়? হাতে? না কি গালে?

ইরা সামিরের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে
‘কি রে তোর না ছোট বোন হয়।

“সর বা*ল
কথায় কথায় টাচ করবি না। আমার শরীরের একটা ভার্জিনিটি আছে। আমি চাই আমার সব ভার্জিনিটি সব ঐশি নষ্ট করুক।।
তুই ছুঁবি না।

ইরা ভেংচি কেটে চুল টেনে দেয় সামিরের।
সামির ইরাকে ধাক্কা দিয়ে সরায়
” আপাতত ছোঁয়া আমার বন্ধুর বউ। আমার হক আছে ওদের রোমাঞ্চের ঘটনা শোনার।

রিমি বলে ওঠে
“তাহলে তো তোর হক আছে ওদের বাসর ঘরে বসে থাকার।

” আয় তোরে একখান চুমু খাই। এতখনে আসল কথা মনে করাই দিছোস। বন্ধুর বাসর ঘরে আমি থাকমু।

সাদির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ইটস ওকে
তুই থাক বাসর ঘরে

বলেই সে ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে সকলের চোখের পলকে বেরিয়ে যায়। এবং পাশের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
সামির বেচারার বুঝতে পাক্কা দুই মিনিট সময় লাগে কি হলো?
যখন বুঝতে পারে তখন চিল্লায়ে বলে ওঠে ” বন্ধু আমারে ছাড়া রুম লক করিস না। আমি তোদের ডিস্টার্ব করবে না। শুধু একটু দেখবো”

কে শোনে কার কথা। সকলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সামির সাদি যে রুমে ঢুকেছে সেই রুমের দরজার সামনে বসে আহাজারি করতে থাকে।
“বন্ধুরে অন্যায় করিস না। আমি একটা ভোলাভালা পোলা। আমারে না নিলে তোর শশুড়কে কল করবো আমি”

সাদি জবাব দেয়
“হুম দে
আমার শশুড় আর তুই নাগিনী ডান্স কর গিয়ে। আপাতত বিরক্ত করিস না”

“তোর নাম আমি ইতিহাসের পাতায় লিখতে চাইছিলাম চাচা। তোর মেশিন নিয়ে বই লিখতে চাচ্ছিলাম। তুই এতো বড় অন্যায় করিস না।

ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদি সাউন্ড বক্স চালিয়ে দিয়েছে। সামিরের বকবকানি আপাতত শোনার মুড নাই। সামির যে এক দুই ঘন্টার মধ্যে থামবে না এটা সাদির জানা।

ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে
” আপনার ওয়েট কতো?

সাদি বিছানা চাদর ঠিক করতে করতে জবাব দেয়।
“৮০

ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। খাট যে এমনি এমনি ভাঙে নি এতোখনে পাক্কা কনফার্ম হয়ে গেলো।
সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার মুখপানে। বুঝে যায় বোকা প্রেয়সীর মনোভাব
” তুমি ভয় পেয়ো না। আমার ওজনের প্রভাব তোমার ওপর পড়বে না।
ছোঁয়া যেনো লজ্জা পেলো। মাথা নিচু করে ফেলে।

ঘড়ির কাটা টিকটিক শব্দে জানান দেয় রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। সাদির প্রেয়সীর জন্মদিন চলে এসেছে।
সাদি পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে ছোঁয়ার সামনে হাঁটু মুরে বসে পড়ে

“আমি না গুছিয়ে প্রপোজ করতে পারি না। কবিতা লিখে মনোভাব প্রকাশ করতে পারি না। সোজাসাপ্টা ভাষায় বলছি তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।
তুমি আমার হৃদয়হরণী। তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত চলে না। তোমাকে ছাড়া আমি আমাকেই ভাবতে পারি না।
সারাজীবন আমার হয়ে থেকো হৃদয়হরণী।

ছোঁয়া সাদির হাত থেকে বক্সটা হাতে নেয়। সাদির হাত ধরে তাকে তোলে।
” শুভ জন্মদিন শখের নারী। সারাজীবন এরকমই থেকো। আমার আধ-পাগলা বউ হয়ে আমাকে রাঙিয়ে দিও।

ছোঁয়া মুচকি হেসে মাথা রাখে সাদির বুকে। এরকম একটা রাত চেয়ে এসেছে ছোঁয়া। এমনটাই কল্পনা করে গিয়েছে সব সময়। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো?

“হৃদয়হরণী মানে কি সাদু?

” হৃদয় মানে জানো তো? হরণী মানে হরণ করা বা দখল করা।
যে তোমায় হৃদয়টা দখল করে বসে আছে তাকেই হৃদয়হরণী বলে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৮
#তানিশা সুলতানা

“তুমি আমার শখের নারী ছোঁয়া। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।

বক্স খুলে সেটার ভেতর থেকে লকেট ওয়ালা একটা চেইন বের করতে করতে বলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে ভাজ পড়ে।

” বাই এনি চান্স আপনি কি আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতেন?

মৃদু হাসে সাদি। খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে। ইশারায় ছোঁয়াকেও বসতে বলে। ছোঁয়াও সাদির পাশে বসে।

“তোমাকে আমি কবে থেকে ভালোবাসি জানি না। তবে বউ বানানোর স্বপ্ন দেখেছি অনেক আগে থেকেই। নিজের স্বপ্নটার কথা শেয়ার করেছিলাম তোমার বাবার কাছে। তিনি নাকোচ করে দেন। এবং স্পষ্ট গলায় বুঝিয়ে দেয় তোমার আর আমার মধ্যে ঠিক কতেটা দুরত্ব রয়েছে।
আমিও বুঝে গিয়েছিলাম। এবং তোমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতাম। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বন্ধুত্ব করেছিলাম মিহির সাথে।
বন্ধুত্ব ছিলো বা তার থেকেও কিছুটা বেশি৷
হয়ত আমার চাওয়াটা সত্যি ছিলো তাই তুমি আজকে আমার।

ভেংচি কাটে ছোঁয়া। লোকটা তাকে আগে থেকেই ভালোবাসে। অথচ কি নাটকটাই না করলো। একটুও ভালোবাসা দেখাতো না।
সাদি লকেটা খুলে। তার ভেতরে দুটো নাম লেখা। একটা ” দিয়া এবং অপরটা ছোঁয়াদ”
নাম দেখে ছোঁয়ার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়। সে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়।

“আমার ছেলের নাম আমি কুদ্দুসই রাখবো। ছোঁয়াদ কখনোই রাখবো না।

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” ছোঁয়া পাগলামি করে রাতটা নষ্ট করিও না।

“আর আপনি যে আমার ছেলের নাম নষ্ট করছেন।

সাদি হতাশ বুঝে যায় তার আধপাগল বউ মানবে না।
” ঠিক আছে ডাক নাম কুদ্দুস থাকবে। স্কুল কলেজে ছোঁয়াদ দেবো।

ছোঁয়া এটা মানতেও নারাজ। তাই দারুণ তেজে আবারও বলে ওঠে
“একদম না।
স্কুল কলেজেও কুদ্দুস থাকবে।

হার মানে সাদি।
” ঠিক আছে। আপাতত কাছে এসো।

“কাছে যাবো তার আগে আপনি কান ধরে বিশ বার উঠবস করবেন।

” কিন্তু কেনো?

“এতোদিন চোরকির মতো আমাকে আপনার পেছনে দৌড় করানোর জন্য।
আপনি জানেন আপনি আমাকে কতোটা পিছিয়ে দিয়েছেন? বিয়ের দিন থেকেই যদি আমরা কাছাকাছি থাকতাম তাহলে এতোদিনে কুদ্দুস আমাদের কোলে চলে আসতো। এবং কুদ্দুসীকে আনার প্ল্যানিং শুরু করে দিতে পারতাম।

” কুদ্দুসী আবার কে?

“মেয়ের নাম কুদ্দুসী রাখবো। দিয়া থাকবে ভালো নাম। ডাক নাম কুদ্দুসী।

সাদি দুই হাত জোর করে বলে
“মাপ কইরা দে বোইন। তুই বের হ আমার রুম থেকে। আমাকে একটু শান্তি দে।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে।

” আমাকে আজকে বের করে দিলে আপনার চুলের কসম। আমি চলে যাবো গ্যাব্রিয়েল এর কাছে। ২০ বছর পরে দশটা বাচ্চা নিয়ে তবেই ফিরবো আপনার কাছে।

হতাশ সাদি। কথাবার্তা ছাড়া কান ধরে উঠবস করতে থাকে। ছোঁয়া কাউন্ট করতে থাকে। গুনে গুনে বিশবার কান ধরে শেষ হলে ছোঁয়া এগিয়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে। সাদিও আগলে নেয় ছোঁয়াকে।
ছোঁয়া সাদির পানজাবির বোতাম খুলে লোমশযুক্ত বুকে ছোট ছোট চুমু খায়।
এবং ফিসফিস করে বলে
“কথা দেন

সাদি ছোঁয়ার মাথায় চুমু খেয়ে জবাব দেয়
” কি কথা দিবো?

“অল্প অল্প করে চুমু খাবেন। রাক্ষসের মতো নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিবেন না।

দাঁতে দাঁত চেপে ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয় সাদি। এই বলদ কি কোনো দিনও মানুষ হবে না?
ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে।
” এভাবে দাঁত কটমট করবেন না। দাঁত ভেঙে গেলে কুদ্দুস এবং কুদ্দুসী আপনাকে বাবা না ডেকে নানা ডাকবে।

রাগতে গিয়ে রাগ করতে পারে না সাদি। কি বলবে একে? স্বভাব তো এমনই। রাগ করলেই কি ম্যাচুউর হয়ে যাবে? কখনোই না।
ছোঁয়া হাত টেনে কাছে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরে নিজের পুরুষালী ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা।
দুই হাতের বেসামাল স্পর্শ এবং পুরু ওষ্ঠের অত্যাচারে অস্থির ছোঁয়া। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকলেও শখের পুরুষ একটুও ছাড় দেয় না ছোঁয়াকে।

অতিষ্ঠ হয়ে সাদির চুল গুলো মুঠোয় পুরে নেয় ছোঁয়া। সাদি ছেড়ে দেয়। এবং কড়া গলায় জানিয়ে দেয়
“আজকে কোনো রকমে বাঁদরামি করলে চলে যাবো মিহির কাছে মাইন্ড ইট।
ব্যাস ছোঁয়া রানী একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। চুল গুলো ছেড়ে দেয়। এবং নিজেই সাদির ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয় নিজ ওষ্ঠদ্বারা।

__

ফজরের আজান দিয়েছে বেশ কিছু খন আগে৷ ইতোমধ্যে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে গিয়েছে। ছোঁয়া এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে। মূলত সে সাদির পাশে শুবে না। এক ঘন্টা যাবত এভাবেই বসে আছে। সাদি শুয়ে শুয়ে দেখছে অভিমানী বউটাকে।

বউ রেগে নেই। তবে অভিমান করেছে সাথে ভয়ও পেয়েছে মনে হয়। সাদি ঠিক আন্দাজ করতে পারছে না। আন্দজ করবে কি করে? কথাই তো বলছে না। শেষ কথা বলেছিলো গভীর স্পর্শের মুহুর্তে। মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে সাদি মনে করে ছোঁয়া শেষ কথা কি বলেছিলো। বলেছিলো “আজ না প্লিজ। কিন্তু সাদি ছোঁয়ার কোনো কথা শোনে নি৷ আসলে শুনতে পারে নি। নিজেকে দমিয়ে রাখতেও পারে নি।
পাশে শখের নারী সে আবার বউ বত্রিশ বছরের পাকাপোক্ত যুবক হয়ে নিজেকে দমাতে সক্ষম হয় নি।
অবশ্য এর জন্য সাদি অনুসূচনাও হচ্ছে না। তানিশা সুলতানা এতোদিন অনেক জ্বালিয়েছে৷ জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছাই করে দিয়েছে। আজ নাহয় সাদি একটু জ্বালালো।

“ছোঁয়া একটু ঘুমিয়ে নাও।
ভালো লাগবে।

এটা নিয়ে চার বার বললো সাদি। তবুও ছোঁয়ার কোনো সারা নেই। একটু নরেচরে বসে ছোঁয়া। শরীরে এখনো শারি পেঁচিয়ে আসে।
বিরক্তর চরম পর্যায়ে চলে যায় সাদি। এক লাফে উঠে পড়ে। ছোঁয়া চমকে তাকায় সাদির দিকে। লোকটা উঠছে কেনো?
ছোঁয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদি পাজা করে কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। মৃদু চিৎকার করে ওঠে ছোঁয়া। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে গলা জড়িয়ে ধরে সাদির।

সাদি বাঁকা হাসে
” ঘুমবে না। তো কি করার?
চলো গোছল সেরে নেই।

চোখ দুটো বড়বড় করে মেলে ছোঁয়া। লোকটা আজকে এতোটা জ্বালাচ্ছে কেনো? ডিসেম্বরের শুরু। প্রচন্ড শীত। এই শীতে এখন গোছল? মরেই যাবে ছোঁয়া। লোকটার এতো অত্যাচারে ছোঁয়া মরে নি বলে এখন ঠান্ডা পানি দিয়ে মারতে চাইছে?
পাষাণ লোক।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৯
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার মেজাজ তুরঙ্গে। শয়তান বেডা এতো অত্যাচার কেনো করছে? এই যে কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোছল করিয়েছে।
যাক সেখানে দুঃখ নেই। এমনিতেও কাল গোছল করে নি। আজকে করতেই হতো। একটুখানি উপকারই করেছে। কিন্তু দুঃখটা এখানেই। এখনো কম্বল চাপা দিয়ে ঘুমতে দিচ্ছে না। বসিয়ে রেখেছে। এবং বলেছে কিছুখন অপেক্ষা করতে। এটা কি শাস্তি নয়? সারা রাত জ্বালাতন করে কি মানুষটার মন ভরে নি?
নেহাত ছোঁয়া পণ করেছে কথা বলবে না। নাহলে এতখনে ইচ্ছা মতো কিছু কথা শুনিয়ে দিতো।

সাদি গায়ে শার্ট চাপিয়ে চুলগুলো ঠিকঠাক করে ছোঁয়ার দিকে তাকায়। ছোঁয়া তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায়। এবং ছোঁয়া ভেংচি কেটে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সাদি হাসে। বউয়ের রাগ বুঝতে পারছে খুব।

“ঘুমিও না। জাস্ট পাঁচ মিনিট আমি আসছি।

বলেই সাদি দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দিতেই হুরমুরিয়ে একেক পর একে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে পড়ে যায়। প্রথমে সামির পড়েছে তারওপর আশিক তারপর ইরা। শিপন আর রিমি পড়তে পড়তে নিজেদের সামলে নেয়।
ভাজ পড়ে সাদির কপালে।

সামির চিৎকার করে ওঠে। বেচারা ব্যাথাও পেয়েছে বেশ।

” শা*লা বউ পাইয়া হুশজ্ঞান হারাইছে। কোমরটা আমার ভেঙেই গেছে। এখন বিয়া করমু কেমনে? বউরে ভালোবাসমু কেমনে? বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করমু কেমনে?
সব থেকে বড় কথা এই ভাঙা কোমর ওয়ালা সাইম্যার সাথে মেয়ে দিবে কে?

কোমর ধরে আহাজারি করতে করতে বলতে থাকে। বাকিরা উঠে পড়েছে।
ইরাও বেশ চটে গেছে সামিরের ওপর। একটা লাথি মারে সামিরকে।
“শালা সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে তুললি সিক্রেট দেখাবি বলে। আর এখন।

ছোঁয়া নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” দুই মিনিটের মধ্যে সব কয়টা বের হবি এখান থেকে।

সামির এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। মুহুর্তেই তার ব্যাথা গায়েব।
“বিড়াল মেরেছিস মামা? কেমন মজা রে? শান্তি লাগে?

তখনই ছোঁয়া বলে ওঠে
” বিড়াল মারে নি কিন্তু আমাকে আধমরা করেছে। এই সকালে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়েছে জানো? আর রাতে তো

ছোঁয়া বাকিটা শেষ করার আগেই সাদি ধমকে ওঠে
“চুপচাপ বসে থাকো। একটা কথা বললে মাথায় তুলে আছাড় মারবো ইডিয়েট।

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে ফেলে। এতো অত্যাচার করে এখন ধমক দেওয়া হচ্ছে?
রিমি বলে ওঠে
“ছোঁয়া পরে বলিও আমায়। কেমন?

সামির ঘোর আপত্তি এতে
” তোরে একা কেন কইবো? আমরা কি রাজাকার? ভুলে যাস না আমি সাদি চাচার জানের দোস্ত। তার বাসরের কাহিনি শোনার পুরোপুরি অধিকার আছে আমার।
ছোঁয়া মামনি তুই আমারে ক

সামির ছোঁয়ার দিকে এগোতে নেয়। সাদি সামিরের কলার টেনে ধরে
“দুই মিনিটের মধ্যে রুম থেকে বের হলে ঐশির সাথে ডেট করার ব্যবস্থা করে দিবে।

ব্যাসস সামির ঠান্ডা। পকেট থেকে ঔষধের প্যাকেট বের করে সাদির হাতে দেয়।

” তোদের কি লজ্জা শরম নেই? বাবার বয়সী বন্ধু বিয়ে করে বাসর করেছে। তোরা দল বেঁধে এসে ডিস্টার্ব করছিস? আমি তো লজ্জায় পুরো লাল হয়ে যাচ্ছি। বের হ সবাই। এক মাসের মধ্যে ওদের ডিস্টার্ব করবি না। প্রাইভেসি দিবি। শিক্ষা দিক্ষা কিচ্ছু নেই তোদের।
গেট আউট হ।

সাদি মুচকি হাসে। বিরবির করে বলে “ড্রামাবাজ একটা”
সামির সবাইকে টেনে বের করে রুম থেকে তারপর নিজেও বের হয়ে যায়। সাদি পূনরায় দরজা বন্ধ করে দেয়। এবং এগিয়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। গ্লাসে পানি ঢেলে ছোঁয়ার পাশে বসে।
“ঔষধ খেয়ে নাও

ছোঁয়া জবাব দেয় না। মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।

” ঔষধ কি খাবে না কি আবার শুরু করবো?

ছোঁয়া ছোঁ মেরে সাদির হাত থেকে ঔষধের পাতা নিয়ে নেয়।

“কিসের ঔষধ?

” ব্যাথার।

“দুটো এখানে।

” দুটোই ব্যাথার।

“পিল তো নেই?

“এতো কথা কেনো?

ছোঁয়া ভেংচি কেটে বলে
” আমি ওইসব খাবো না।

“কিন্তু কেনো?

” বললাম না আমার বেবি দরকার।

সাদি কপাল চাপকায়। কোন পূর্ণের ফলে এমন বউ পেয়েছিলো?
“দেখো ছোঁয়া। তুমি এখনো ছোট। আরও কিছুদিন সময় লাগবে আমাদের।

“কে বলেছে আমি ছোট? আঠারো আমার। দাদির বাচ্চা হয়েছিলো চোদ্দ বছরে। সেই হিসেবে আমার বেবি হওয়ার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে।

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
ব্যাথার ঔষধ ছোঁয়ার হাত থেকে নিয়ে।
” এটা পিল ছিলো।

“ওটা ফেলে দিন। আমি খাবো না। এটা খাবো।

সাদি মাথা নারায়। ছোঁয়া পিলটা খেয়ে নেয়। স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। তানিশা সুলতানা
ছোঁয়ার থেকে গ্লাস নিয়ে টেবিলে রেখে লাইট অফ করে দেয়। এবং ছোঁয়ার পাশে এসে বসে।

” চলো এবার ঘুমিয়ে পড়ি।

ছোঁয়া সাদির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।
সাদি পেছন থেকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। গলায় মুখ গুঁজে।
“এতো রাগ করতে নেই বউ। তোমারই তো বর তাই না?

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৪
#তানিশা সুলতানা

সাদির মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়ে আছে। এমনিতেই গোমড়ামুখো আজকে যেনো আরও বেশি গোমড়ামুখো হয়ে গিয়েছে। কথার সাথে তিক্ততা বেরিয়ে আসছে। কারো সাথে ঠিকঠাক কথা বলছে না। ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। ছোঁয়া বেশ বুঝতে পারছে তখনকার সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাহেবের এই মেজাজ। কিন্তু এতে তো ছোঁয়ার দোষ নেই তাই না?
ছোঁয়া কি জানতো তখনই তার বাবা আসবে? জানলে কখনোই ড্রেসটা পড়তো না। বা সাদিকে উঁসকাতো না। বাবা তো হুট করেই চলে এসেছে। কিন্তু এই সামান্য বিষয়টা সাদিকে কে৷ বোঝাবে?
ছোঁয়া বোঝাবে?
সাদি শুনবে?
কখনোই না। উল্টো ছোঁয়াকে কথা শুনিয়ে দিবে। বকে দিবে। চর থা*প্প*ড়ও দিতে পারে। যে মেজাজ।

সেলিম বসে আছে সোফায়। ছোঁয়া তার পাশেই বসে আছে। সাদি খেতে বসেছে। তাকে খাবার বেরে দিচ্ছে সিমি। পরি দুই দাদিমার সাথে সাদির ফুপি বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে।

সিমি সাদির প্লেটে আস্ত একটা করলা তুলে দিবে বলে
“থেকে যাবে আজকে?

সাদি মুখের খাবার শেষ করে জবাব দেয়
” থেকে গেলে তোমাদের প্রবলেম না কি?

সিমি যেনো কথাটা বলেও বিপদে পড়েছে। সে ঠিক এভাবে বলে নি কথাটা। সাদি তো চলে যায় হুটহাট করে। তাই জিজ্ঞেস করেছে।
ছোঁয়ার ছোট্ট মনখানা আবারও চুপসে যায়। আখিঁ পল্লবে ভীর জমায় অশ্রু কণারা।
মনটা বিষিয়ে উঠেছে। কি করে প্রেমিক পুরুষের রাগ ভাঙাবে?
কাছে ঘেসলেই বকে দিবে যে?

সেলিম বিরক্ত। মনে মনে কয়েকটা গালি দেয় সাদিকে। মুখে বলার তো সাহস নেই। ধরিবাজ ছেলে কি না? কিসের মধ্যে কি বলে ফেলবে।
তবুও চুপ থাকা যাবে না।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয় সেলিম। তারপর বলে ওঠে
“রাগ নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরবে না ছেলে।

সাদি সরু চোখে তাকায় সেলিমের দিকে।
” তো বুড়ো বয়সে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে হাত ধরে লান্স করবো? ধরাধরি করে রিকশায় ঘুরবো?

থমথমে খেয়ে যায় সেলিম। লজ্জাও পায় বটে। দুই মেয়ের সামনে ছিহহ ছিহহ।
মেয়েরা ধরতে পারলো কি কিছু? জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে তাকায় মেয়েদের মুখপানে। দুই মেয়েরই নজর সাদমান চৌধুরীতে বন্দী। তার মানে ওরা ধরতে পারে নি।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেলিম। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে ওঠে
“এ যুগের ছেলে মেয়ের কি আর লজ্জা শরম আছে? রাস্তায় বেরুলেই দেখা মেলে কতশ

বাকিটা শেষ করতে পারে না সেলিম। সাদি বলে ওঠে
” এই যুগের বুড়োদেরও লজ্জা শরম কম। বউ বাচ্চা থাকতেও তাদের গার্লফ্রেন্ড লাগে। চরিত্র তাদেরও খারাপ।

শুকনো ঢোক গিলে সেলিম। মুখ কেনো খুলতে গিয়েছিলো সে? নিজের গালে নিজেরই চর মারতে ইচ্ছে করছে। এটা কি সাধারণ ছেলে? এ হচ্ছে বজ্জাত। মস্ত বড় বজ্জাত। সম্পর্কের মানে বোঝে না। বুঝলে কি আর শশুড়ের পেছনে লাগতে আসতো?

সাদির খাওয়া শেষ। সে হাত ধুয়ে উঠে পড়েছে। ছোঁয়া তাকিয়েই আছে সাদির মুখপানে। কিন্তু সাদি একবারের জন্যও তাকালো না। টিস্যু দ্বারা হাত মুছতে মুছতে ছুটে নিজ কামড়ার পানে।
সেলিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সিমি খাবার গুছিয়ে রাখছে।

ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে সাদির কাছে যেতে। কিন্তু বাবার সামনে দিয়ে কি করে যাবে? চোখে মুখে তার অন্ধকার ভর করেছে।
এরই মধ্যে ছোঁয়াকে সুযোগ করে দিতে সিমি বলে ওঠে
“ঘুমবি না?
ছোঁয়া এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়।
” যাচ্ছি যাচ্ছি
আব্বু গুড নাইট
সেলিম মাথা নারে। ছোঁয়া এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।
দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে যায়। সাদি এবং তার রুম পাশাপাশি হওয়াতে বেলকনি দিয়ে আসাযাওয়া করা যায়।
কিন্তু সাদির কক্ষের সামনে এসে ছোঁয়ার শেষ আশা টুকু মিলিয়ে যায়। দরজা বন্ধ। ঢুকবে কি করে?
দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আঁখিপল্লব হতে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে দরজায় টোকা দেয়

“দরজা খুলুন না আব্দুল কুদ্দুসের আব্বু। আপনার আধপাগল বউ কাঁদছে। তার বুকের বা পাশটায় ব্যাথা করছে। আপনার হাতের থা*প্প*ড় খাওয়ার জন্য পেট গুরগুর করছে। চোখ রাঙানো দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। ধমক খাওয়ার জন্য হৃদয় কাঁদছে।

সাদি সবেই বিছানা ঝেড়েছে। একটু ঘুমবে। আধপাগল বউয়ের আধপাগল কথাবার্তা কানে পৌঁছাতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। এগিয়ে গিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। আরও একটু উতলা করে চায় সে তার বউকে। যাতে পরবর্তী সময় পাগল করতে আসলে প্রিপারেশন নিয়ে আসে।
বয়স পেরিয়েছে একত্রিশ। চাহিদা তারও আছে। সেও চায় বউকে উজার করে ভালোবাসতে। ছোট্ট দেহখানা বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাত পার করতে। নিজের উম্মাদনায় ছোঁয়াকে পিষে দিতে।
বয়স কম, পড়ালেখা এসব নিয়ে আপাতত তার মাথায় কিছু আসছে না। সারাক্ষণ পাগল ছোঁয়া সনিধ্য গুলোই তার মাথায় আসছে। এবং মস্তিষ্ক অসুস্থ করে দিচ্ছে।
কাছে পাওয়ার তাগিদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অসয্য এক পিঁড়া হচ্ছে অবুঝ প্রেয়সীর জন্য।

সাদির থেকে রেসপন্স না পেয়ে ছোঁয়া আবারও বলতে থাকে

” জামাই খুলুন না দরজাটা। পাক্কা প্রমিজ জ্বালাবো না আপনায়। চুপটি করে পাশে শুয়ে থাকবো। একটাও কথা বলবো না। একটুও জ্বালাবো না।

তখনই সাদি গম্ভীর গলা ভেসে আসে

“না জ্বালালে এখানে কি? নিজের রুমে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে থাকো ইডিয়েট।

সাদির ধমকে ছোঁয়া হতদম্ভ। সে কি জ্বালাতে বলছে?

” জ্বালাবো।প্রচুর জ্বালাবো।
প্লিজ দরজা খুলো।

হাসি পায় সাদির। হাসি চেপে মুখটা গম্ভীর করে বলে

“ট্রায়ার্ড আমি। তোমার জ্বালা সয্য হবে না।

ছোঁয়া এবার বুঝতে পারছে না কি বলবে?
একবার জ্বালাতে বলছে আবার জ্বালাতে বলছে না। কোন পরিস্থিতি এটা? লোকটা চাইছেটা কি?

” আপনি যেটা বলবেন সেটাই হবে।
মাথা টিপে দিবোনি। পা টিপে দিবে।
কারেন্ট গেলে বাতাস করবো।
মশা তাড়িয়ে দিবো। তবুও আমায় নিন না একটু। প্লিজজজ আব্দুল কুদ্দুসের পাপা।

বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরে সাদি। ইসস এভাবে বললে রাগ করে থাকা যায়? ঢং করে রাগ গলাতে উস্তাদ সে।
“ভালোবাসতে পারলে এসো।
নাহলে দুইশত হাত দূরে যাও ইডিয়েট

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৫
#তানিশা সুলতানা

দীর্ঘ এক ঘন্টা ঘ্যান ঘ্যান করার পরে অবশেষে দরজা খুলেছে সাদি। ছোঁয়ার চোখে পানি টলমল করছে। প্রেয়সীর মলিন মুখখানা দেখে বুকটা কেঁপে ওটে সাদমান চৌধুরী। দোষটা তো তার অবুঝ বউয়ের নয়। দোষটা হচ্ছে চরিত্রহীন শশুড়ের। শশুড়কে আচ্ছা করে টাইট দিতে হবে। শুধু শুধু বউটাকে কাঁদালো।
সাদির ইচ্ছে করছিলো বউটাকে বুকের মধ্যে আগলে নিতে। কিন্তু কিন্তু কিন্তু
নরম হওয়া চলবে না।
ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়
“পাষাণ পাষাণ পাষাণ
সাদি জবাব দেয় না। চলে যায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে। ঘুমনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো বলে শার্ট খুলে ফেলেছে। ফর্সা লোমশ যুক্ত বুক খানা ছোঁয়ার দুর্বলতা। ভালো করেই জানে সাদি।

ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটের ওপর বসে। আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সাদি অবয়ন। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট এবং উদাম বুক। নেশা লেগে যাবে না?
হাত পা বুকে অজস্র লোম। যা ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তাকে বেসামাল করে দিচ্ছে।
বউয়ের মন পড়তে পেরে বাঁকা হাসে সাদি। দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। ছোঁয়ার ওপর পাশে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।

ছোঁয়া মুখটা গোমড়া করে বসে থাকে। হার্টলেস লোক একটা। একবার বললোও না ” ছোঁয়া আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও”
পাষাণ।
দয়ামায়া নেই একটুও।
কান্না পায় ছোঁয়ার। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারে না। অবাধ্য আঁখি পল্লবের অবাধ্য অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে দুই গাল বেয়ে। নাকে পানি চলে আসে। এই একটা সমস্যা। চোখে পানি আসার আগেই নাকে পানি চলে আসবে।
মাঝেমধ্যে ছোঁয়ার ইচ্ছে করে নাক খানা কেটে ফেলতে। শান্তিতে একটু কান্নাও করতে দেয় না।
পাষাণ লোকটার মতো নাকটাও পাষাণ।

কতোখন ছোঁয়া একই ভাবে বসে ছিলো জানা নেই। কিন্তু যখন কোমরে চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো তখন আর বসে থাকতে পারলো না।
গুটিগুটি পা মেলে শুয়ে পড়ে শখের পুরুষের পাশে। লোকটা ঘাড় ব্যাঁকা করে বুকের ওপর কোলবালিশ দিয়ে আরামসে ঘুমচ্ছে। কি করে আসলো তার ঘুম?
তার বউটা বসে কাঁদছে তাতে তার কিচ্ছু এসে যায় না? ঘুমটাই বড় হয়ে গেলো?
অভিমানে বুক খানা ভাড়ি হয়ে আসে। মনে মনে কঠোর প্রতিজ্ঞা করে ফেলে। লোকটাকে ছুঁয়ে দিবে না। তার পেছনে আর ঘুরবে না। ইগনোর করবে। চরম লেভেলের ইগনোর যাকে বলে।

আবার পরমুহূর্তেই ভাবে। এখন তো সে ঘুমিয়ে আছে। একটুখানি ছুঁয়ে দিলে কি আর হবে? বুকে মাথা রাখলে সে কি টের পাবে? অবশ্যই পাবে না।
আবার না হয় সে জেগে ওঠার আগেই সরে আসবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।
আলতো হাতে কোলবালিশ সরিয়ে। মাথাটা রাখে লোমশ যুক্ত বুকখানার ওপরে। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
আহহহহহা
এখানে এতো শান্তি কেনো? মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব সুখ এখানে এসেই জমা হয়েছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার।
সাদি একটু নরেচরে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বউটাকে।
ছোঁয়া চমকে ওঠে। জেগে গেলো না কি?
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
সাদি চুমু খায় ছোঁয়ার চুলের ভাজে।
ফিসফিস করে বলে ওঠে
“তোমাকে বুকে না নিলে ঘুম হয় না জান।

তার মানে সাহেব ঘুমায় নি? জেগেই ছিলো? মুখ বাঁকায় ছোঁয়া।
বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে নরম গলায় আমতাআমতা করে বলে
” এখন ভালোবাসুন।

“উহু

” কেনো?

“মুড নাই

মুখটা কালো করে ফেলে ছোঁয়া। সরে যেতে চায়। কিন্তু সাদির শক্ত বাঁধন ছাড়িয়ে সরতে পারে না।

” আমাদের ফাস্ট নাইট এভাবে হবে না। একটু স্পেশাল হবে। আফটার অল আব্দুল কুদ্দুস আসার প্রথম ধাপ এগোবো বলে কথা।

লজ্জা পায় ছোঁয়া। লজ্জা মাখা মুখখানা সাদি দেখতে পেলে নিশ্চয় স্পেশাল করার জন্য অপেক্ষা করতো না। এখুনি বাচ্চা বউটাকে ভালোবাসায় মুরিয়ে ফেলতো।

_____

সকাল সকাল সেলিমের হাঁকডাক। কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে শুধু তারই গলা শোনা যাচ্ছে।
সাদির ঘুম ভেঙেছে আরও কিছুখন আগে। বুকের ওপর ঘাপটি মেরে বিড়াল ছানার মতে ঘুমিয়ে আছে অধপাগল বউ। একটু নরাচরা করলেই তার ঘুম ছুটে যাবে। যা সাদি চাইছে না। সারাক্ষণ ছুটোছুটি করতে থাকে। এখন একটু শান্তিতে ঘুমোক না হয়।
কিন্তু জল্লাদ শশুড়ের জন্য কি আর ঘুমতে পারবে?

সাদির ইচ্ছে করছে পুরো এলাকার লেক জড়ো করপ চিৎকার করে বলতে
“শুনুন সকলে আমার শশুড় আমার বউকে আদর করতে দেয় না। আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট করে।

কিন্তু এই কথাখানা বললে কি আর সমাজে মুখ দেখানো যাবো?
অবশ্যই না
হাহহহহ
মানসম্মানের ভয়ে আমরা কতো কিছু করি না।

ছোঁয়ারও ঘুম ছুটে যায়। সে মাথা তুলে ঘুম ঘুম কন্ঠে মুচকি হেসে বলে
” গুড মর্নিং আব্দুল কুদ্দুসের পাপা

সাদির কি হয়ে যায় নিজেও জানে না। একটা সেকেন্ডও নষ্ট করে না।
দুই হাতে আগলে নিয়ে ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে নিজের ওষ্ঠদ্বয় বিলিন করে দেয়।
হতদম্ভ ছোঁয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে দেয়।
রাতে এতো খোঁচাখুঁচির পরেও কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো না। আর সেই বরের কি না এখন মধু খাওয়ার সাধ জেগেছে।

সেলিমের আরেকটা চিৎকারে সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ছেড়ে দেয় বউকে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে নেশালো গলায় বলে
“গুড মর্নিং জান

” আই লাভ ইউ

“উমমমমম ভালোবাসি
যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমাকে কলেজে ছেড়ে আমি অফিস যাবো।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৬
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার জন্মদিন আগামীকাল। আর সাদি বাড়িতে ফিরতে পারবে না। ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিলো ঠিকঠিক বারোটায় তার বর তাকে বার্থডে উইস করবে। হ্যাপি বার্থডে বলবে। ছোট একটা কেক কাটবে।
কিন্তু তার বরটাই লাপাত্তা। সকালে বলেও গেলো না যে বাসায় ফিরতে পারবো না। দিব্যি কলেজে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।
কলেজ শেষ করে ছোঁয়া বাসায় ফেরার পরে জানতে পারলো সাদমান চৌধুরী ওরফে ছোঁয়ার করলা বর বাসায় ফিরবে না আজকে।

মনটা তার ভীষণ খারাপ। প্রতি বছর ছোঁয়া অপেক্ষায় থাকতো সাদির থেকে একটু শুভ জন্মদিন শুনবে বলে। কিন্তু কোনোদিনও সেই সুভাগ্য হয় নি। আজকে তো সে ছোঁয়ার বর। তো আজকে তো একটু উইস পেতেই পারতো।

কলেজ থেকে ফিরে ছোঁয়া কিচ্ছু মুখে তুলে নি। মন খারাপ করে বসে আছে তার রুমের বেলকনিতে। নাজমা বেগম অনেকখন টানা টানি করে গিয়েছে খাওয়ার জন্য। কিন্তু ছোঁয়া যায় নি। বলেছে পরে খাবে। নাজমা বেগমও ভেবে নিয়েছে হয়ত খেয়ে এসেছে। তাই জোর করে নি।
সিমিও এসেছিলো। তবে খাওয়ার জন্য জোর করে নি। শুধু জিজ্ঞেস করেছিলো জন্মদিনে কি উপহার নিবে। প্রতি বছরই ছোঁয়া এটা ওটা আনতে বলে। কিন্তু এই বছর কিছুই আনতে বলে নি।
বলেছে “গিফট কি বলে দিতে হয়? তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই এনো”
সিমি প্রথমে অবাক হয়েছিলো। পরে চিন্তা করলো বয়স বাড়ছে। তার সাথে বুদ্ধি। চিন্তা ভাবনা বদলেছে।

বিকেল গড়িয়ে রাত নেমে আসে। ছোঁয়ার মন ঠিকই হচ্ছে না। সে এখনো বেলকনি থেকে নরে নি।
তখনই ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা পায়ের কাছে ফ্লোরে পড়ে ছিলো। ছোঁয়া কালো আসমান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফোনটা হাতে তুলে। রিসিভ করার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু সাদি নামটা দেখে রিসিভ না করে পারলো না।
ভালোবাসার মানুষ তো। তার ডাকে সারা না দিয়ে পারা যায়?
ফোনটা কানে রাখতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ
“ভাইয়ার সাথে চলে এসো জান।
তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

বলেই কল কেটে দেয়। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় ছোঁয়ার। তার গোমড়ামুখো করলা বর তার জন্য সারপ্রাইজ রেখেছে?
এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। অগোছালো চুল গুলো হাত খোঁপা করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। কাউকে না জানিয়ে চলে আসে বাইরে। সেখানে সিফাত গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। ছোঁয়াকে ঝড়ের বেগে আসতে দেখে মুচকি হাসে। পাগল একটা।

ছোঁয়া সিফাতের সামনে এসে দুই হাতে পেট চেপে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
” ভাইয়া তাড়াতাড়ি চলো।
আমার জামাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

সিফাত শব্দ করে হেসে ওঠে।
“চলো

__
বাসর ঘর সাজানোর দায়িত্ব চেপেছে সামির আশিক শিপন রিমি এবং ইরার কাঁধে। সকলেই কাজে লেগে পড়েছে। আর সামির ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসে গাঁদা ফুলের একখানা মালা গলায় পড়ে উচ্চস্বরে গান ধরেছে
“আকাশে লক্ষ তারা চাঁদের মতো আলো দেয় না
আমার মন মানে না যৌবন জ্বালা সহে না।
আমার বাপ বুঝে না
বিয়ে আমার দেয় না
দুঃখ আমি রাখবো কোথায়?
ঐশি তো পাত্তা দেয় না
বুইড়া তো হইয়া গেলাম
বিড়াল মারতে পারলাম না”

সামিরের উদ্ভট গান শুনে সকলেই হেসে ফেলে।
সামির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“সাদি চাচা
যার মেশিন নিয়ে কাল ওবদি চিন্তিত ছিলাম আমি। সেও বাসর করতে যাচ্ছে। আর আমি?
তরতাজা জোয়ান রোমান্টিক বেডা আমার কপালে বাসর জুটছে না?
দুঃখের কথা কমু কার কাছে?

সামিরের আহাজারিতে কেউ দুঃখ পায় না। বরং সকলেই মজা নেয়।
আশিক বলে ওঠে
“তোর কপালে বিয়া নাই।

সামির এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। আশিকের পা দুটো চেপে ধরে
” এমন কথা কইস না। বিয়া ছাড়া আমি বাঁচতে পারমু না।

রিমি চুল টেনে সরিয়ে দেয় সামিরকে।
“ডিস্টার্ব করিস না সর এখান থেকে।
শিপন বলে ওঠে
” তোরা দুজন সর। ছোঁয়া চলে আসছে প্রায়। তোরা গিয়ে তাকে সাজিয়ে দে। বাকিটা আমরা সামনে নিবো।

রিমি এবং ইরা মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়।
এখনে সামিরের মাথায় একখানা বুদ্ধি চলে আসে।
“সাদি চাচার খাট ভাঙলে কেমন হয়?

আশিক এবং শিপন ভ্রু কুচকে তাকায়।
সামির ব্যাপারটা ওদের বুঝিয়ে বলে। এবং ওরাও সঙ্গ দেয় সামিরকে। প্ল্যানিং করে ফেলে সাদি চাচাকে জব্দ করার।

___

বাসর খাট সাজানো শেষ। সাদিও চলে এসেছে। সামির সাদিকে পানজাবি পড়িয়ে দিয়েছে। সাদির পড়ার একদম ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আজকে কেনো জানি বাঁধা দিতে ইচ্ছে হলো না।

ওইদিকে ছোঁয়াকে সাজিয়ে দিচ্ছে ইরা এবং রিমি। সব জিনিস সাদি পছন্দ করে কিনে এনেছে৷ এটা রিমির থেকে শুনেছে ছোঁয়া। আর শুনতেই মনটা খুশিতে নেচে উঠেছে। বরের থেকে প্রথমবার কিছু পেলো। মনটা খুশি হয়ে যাবে না?
লাল টুকটুকে জামদানী শাড়ি। ম্যাচিং ব্লাউজ। হালকা মেকাপ। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। গায়ে হালকা গোল্ডের গহনা। সব মিলিয়ে পারফেক্ট লাগছে ছোঁয়াকে। নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে ছোঁয়া।

রিমি ছোঁয়ার গালে হাত দিয়ে বলে
” মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ
বন্ধু আমার আজকে পাগল হয়ে যাবে।

ছোঁয়া লাজুক হাসে।
“আপু লজ্জা দিও না প্লিজ। আমার গা শিওরে উঠছে।

হেসে ফেলে রিমি।
আরও একটু লজ্জা দিতে ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু বাচ্চা একটা মেয়ে। তাকে আর কতো লজ্জা দিবে?

ছোঁয়াকে ফুলসাজানো খাটে বসিয়ে দেয় রিমি। বসিয়েছে সামিরের নির্দেশনা মতে। কারণ সামির ওঁত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়াকে বার বার বলছে
” ছোঁয়া বউদের ডান পাশে বসতে হয়। বা পাশে বররা বসে। তুমি জানোই তো স্বামীর বা পাজরের হার দিয়ে বউদের তৈরি করা হয়?
সামিরের ছলে গলে গিয়েছে ছোঁয়া। সে আর বাম পাশে বসবেই না।

ছোঁয়াকে বসিয়ে সকলে দরজার কাছে চলে যায়। সাদি কোনো কথা না বলে দশ হাজার টাকার একটা ব্যান্ডিল সামিরের হাতে দেয়। সামির খুশি হতে পারে না। ভেবেছিলো বন্ধুর সাথে একটু মশকরা করবে। কিন্তু তা আর হতে দিলো কই?

“শালা বাসর করার জন্য একদম পাগল হয়ে গিয়েছে। একটু মশকরা করতেও দিলো না।
সাদি সামিরের কান ধরে তাকে দরজা থেকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এবং ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। সামির বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।

” তোরা দাঁড়া এখানে। এখুনি একটা ম্যাজিক দেখাবো।

শিপন আশিক ওরা বুঝতে পারলেও ইরা এবং রিমি বুঝতে পারে না। ওরা সামিরের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আর সামির আশিক শিপন দরজায় কান পাতে।

সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হাসে। ছোঁয়া লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে রেখেছে। পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা যেনো আজকে তার ওপরে ভর করেছে। এতো লজ্জা এতোদিন কোথায় ছিলো?
এই যে মাথা তুলে সাদির দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।

সাদি খাটে বসতে যায়। নিজের ভরটা খাটের ওপর দিতেই ঠাসসস করে শব্দ হয়ে খাটটা ভেঙে যায়। ছোঁয়া লাফিয়ে ওঠে। সাদিও হতদম্ভ। খাট কি করে ভাঙলো?

সামির চেঁচিয়ে ওঠে
“কি হলো? কি হলো?
কিসের শব্দ?

ছোঁয়া এক দৌড়ে দরজা খুলে দেয়। ভয় পেয়েছে সে ভীষণ।
হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে সকলে। ইরা ছোঁয়াকে জড়িয়ে নেয়।
সাদি শুকনো ঢোক গিলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

“সামির বিশ্বাস কর ভাই। খাটটা আগেই ভাঙা ছিলো।
সাদির চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। এরকম বেকায়দায়র সম্মুখীন সে আগে হয় নি। বন্ধু বান্ধবরা কি ভাববে? বাসর রাতে খাট ভাঙলো?
সামির দাঁত কেলিয়ে খাটটার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে সে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আহহহা বাসর ঘরে বন্ধু খাট ভেঙেছে? ইতিহাসের পাতায় কি লিখে রাখা উচিত নয়?
রিমি দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” একটু প্রাইভেসি দিলাম কি না দিলাম তাতেই খাট ভেঙে ফেললি?
সামির রাজকীয় ভঙ্গিমায় ভাঙা খাটের এক কোণায় বসে পড়ে
“আহহ রিমি আমাদের সাদু বেবি স্পেশাল না?
তার বাসর স্পেশাল হবে না?

আশিকও তাল মেলায়
“সাদির থেকে আমাদের শেখা উচিত। বাসর ঘরে খাট ভাঙা বাদ্ধতামূলক।

সামির হাই তুলে বলে
” বাসর ঘরে খাট ভাঙতে না পারলে বউকে ছুঁয়েও দেখবো না। এই যে সাদির ভাঙা খাটের কসম।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৪২+৪৩

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪২
#তানিশা সুলতানা

সেলিম ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি তিনি মেয়েকে বদমাইশটার হাতে তুলে দিতে চায় না। এমনিতেই তার মেয়ের বয়স কম। তার ওপর পড়ালেখায় ভালো না। এখনই স্বামীর সাথে বেঁধে দিলে কখনোই সে পড়তেই চাইবে না। এই বছর বিয়ে পরের বছর বাচ্চা। মেয়েটার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। সেলিম চায় না তার ছোঁয়া সিমির মতো সংসার নিয়ে পড়ে থাকুক। তার ইচ্ছে মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত দেখা।

আর রইলো পড়ে সাদির কথা?
সে আরেক বেয়াদব। শশুড়কে যে ছেলে হুমকি দিতে পারে। অবশ্যই সে ছেলে ভালো নয়।
বুড়ো বয়সে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি লাগিয়ে দিয়েছে। কয়েকদিনে জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে।

সেলিমের কলিগ সুফিয়া। সে সেলিমের ছোট বেলার বান্ধবী। দুজন এক সাথে বড় হয়েছে। এবং এখন একই অফিসে চাকরি করছেন। দুজন এসেছিলো এক সাথে লান্স করতে। কিন্তু বদমাইশটা এতো দূরে থেকে ব্যাপারটা জানলো কি করে?
টেনশনে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে সেলিমের। সে হাত মোছা টিস্যু দিয়েই কপালের ঘাম মুছে নেয়। সেলিমের অবস্থা দেখে সুফিয়া জিজ্ঞেস করে
“আর ইউ ওকে সেলিম?
চমকে ওঠে সেলিম। তাকায় সুফিয়ার দিকে। সুফিয়ার একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে আছে। বরকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে আরও কয়েক বছর আগে। ডিভোর্স বলতে কাগজে কলমে ছাড়া খাড়া হয় নি। মুখে মুখে দুজন দুজনকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং এক সাথে থাকে না। সুফিয়ার স্বামী সুফিয়াকে বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছেন সেলিমকে। বুড়ো বয়সে বউ ছাড়া থাকতে পারছে না সে।
তাই তো সেলিম কাজ ফেলে এসেছে লান্স করতে।
আর বদমাইশ সাদি এটারই সুযোগ দিচ্ছে।
বুড়ো বয়সে পরক্রিয়া ট্যাগ লাগিয়ে দিচ্ছে। ডেঞ্জারাস ছেলে।

সেলিমের থেকে জবাব না পেয়ে সুফিয়া সেলিমের হাতের ওপর হাত রাখে। চমকে নিজের হাতটা সরিয়ে নেয় সেলিম৷ নাজমা এই ব্যাপার জানতে পারলে তেলের মধ্যে চুবিয়ে ভাজি করবে তাকে।
শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলে
” স্বামীর কাছে ফিরে যাচ্ছো না কেনো?
সুফিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“সেলিম তোমার ইচ্ছে করে না প্রেম করতে?
সুফিয়ার মুখ থেকে এমন কথা শুনে কেশে ওঠে সেলিম। সুফিয়া তাকে পছন্দ করে ছোট বেলা থেকে এটা তার জানা। ছোট বেলায় অনেকবার প্রপোজও করেছে। সেলিমের বিয়ের দিনও প্রচুর কান্না করেছিলো।
সেলিম আশেপাশে তাকায়। সাদি কি আশেপাশে আছে? জানতে পারলে হালুয়া টাইট করে ছাড়বে। কপাল করে জামাই পেয়েছে কি না?

সেলিম তারাহুরো করে দাঁড়িয়ে যায়।
” আআমি আসছি। তোমার বর খুব ভালো মানুষ তার কাছে ফিরে যাও

বলেই এক প্রকার দৌড়ে চলে যায় সেলিম।

__

অফিস বাদ দিয়েই বউকে নিয়ে শপিং মলে আসতে হয়েছে সাদিকে। কিচ্ছু করার নাই। বাচ্চা কাচ্চা বিয়ে করলে এমনটাই হবে। বসের মেয়ে ঈশিতা বারবার কল করে যাচ্ছে সাদিকে। আজকে তাদের ইমপটেন্ট একটা মিটিং ছিলো। ঈশিতা ভীষণ বিরক্ত সাদির প্রতি। বউ আসবে আর নাচতে নাচতে চলে যেতে হবে? কাজের থেকে বউ বড় হয়ে গেলো?

ছোঁয়াকে একটা দোকানে ঢুকিয়ে সাদি একটু সাইডে গিয়ে ফোন রিসিভ করে।
ভেসে আসে ঈশিতার রাগান্বিত কন্ঠ

“কাজের থেকে বউ বড়? তুমি জানো না মিটিং আছে?

সাদি শান্ত গলায় জবাব দেয়
” হ্যাঁ কাজের থেকে আমার কাছে আমার বউ বেশি। প্রতিদিন কাজ করি। আমার বউ প্রতিদিন আবদার করে না।

ঈশিতা দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবন্ধ করে ফেলে।
“তুমি জানো তোমার এই গফিলতির জন্য তোমার চাকরি চলে যেতে পারে?

” গেলে যাবে। ডিস্টার্ব করবেন না আমায়।

সাদি কল কেটে দেয়। কয়েকদিন ধরেই মেয়েটা জ্বালাচ্ছে। বসের মেয়ে বলে কিছু বলতেও পারছে না। আবার সয্য করতেও পারছে না। গায়ে পড়া মেয়েদের বরাবরই সাদির অপছন্দ।

ছোঁয়া জামা পছন্দ করে ফেলেছে। হাতা কাটা একদম হাঁটুর পর্যন্ত জামাটা কালো রংয়ের। দেখতে দারুণ। ছোঁয়াকে বেশ মানাবে।

সাদি এগিয়ে যায়।
“পছন্দ হয়েছে?
ছোঁয়া হেসে মাথা নারায়।
” প্রাইজ কতো?
সাদি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে।
“পাঁচ হাজার।
সাদি পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে।

” একটা লম্বা জামার দাম যদি হাজার টাকা হয়। তাহলে হাঁটু ওবদি জামার দাম ৩০০ টাকা হওয়ার কথা। জানি আমার বরটাকে দেখতে বোকা বোকা লাগে। তাই বলে দিনে দুপুরে ডাকাতি?
বলেন তো কয়টা এক টাকার নোটে পাঁচ হাজার টাকা হয়? জীবনে চোখে দেখছেন?
৩০০ টাকার এক টাকা বেশি দিবো না।

ছোঁয়ার কথা শুনে দোকানদার শুকনো ঢোক গিলে। সাদিও ঘাবড়ে যায়। সিনক্রিয়েট করে ফেলবে এবার তার আধপাগল বউ।
“দেখো
সাদি কিছু বলতে যায়।
” দেখাদেখির কিছুই নাই। দেড় ফুট জামার দাম এতো টাকা কখনোই হতে পারে না। মামলা করবো আমি ওনাদের নামে। একদম বোকা ভাববেন না আমায়।
দোকানদার কিছু বলতে যায়
“ম্যাম এটা
সাদি হাত উঁচু করে দোকানদারকে থামিয়ে দেয়। ওয়ালেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে দোকানদারের হাতে দেয়
” ৩০০ টাকার এক টাকাও বেশি রাখবে না ঠিক আছে।
ইশারায় বলে দেয়। যা দাম তাই রাখতে।
দোকানদার হেসে চলে যায়।
ছোঁয়া জামা দেখতে ব্যস্ত। তার ইচ্ছে করছে এখুনি জামাখানা গায়ে চাপাতে। এই রকম জামা সে ফল্ট মুভির নায়িকা নোয়ার গায়ে দেখেছিলো। ছোঁয়াকেও কি একদম নোয়ার মতো লাগবে?

কেনাকাটা শেষে ছোঁয়াকে বাসায় ড্রপ করে সাদি আবারও অফিসে চলে যায়। বউয়ের চক্করে তার খাওয়াটা হয় না।
তবুও এতটুকুও রাগ হচ্ছে না আধপাগল বউয়ের ওপর। বড্ড আদরের তার বউটা।

__

ছোঁয়া আজকে ভীষণ খুশি। খুশি হওয়ার দুটো কারণ আছে। এক. সাদি আজকেও বাড়িতে আসবে। দুই. হাঁটু কাটা জামা পেয়েছে। সাদির ফুপি বাড়িতে আজকে দাওয়াত ছিলো। সেখানেই সকলে চলে গিয়েছে। সাদি এবং ছোঁয়াকে রাতে যেতে বলেছে। কিন্তু ছোঁয়া তো যাবেই না। আর সাদিও যাবে না ছোঁয়া জানে।
আজকে একটু সাজুগুজু করা যাক।
কখনো বরকে ইমপ্রেস করার জন্য সাজুগুজু করা হয় নি।
জামা খানা শরীরে চাপিয়ে সাজতে বসে ছোঁয়া। চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি বেঁধে নেয়। ঠোঁট টকটকে লাল লিপস্টিক। চোখে হালকা কাজল। উঁচু জুতো। হাতে কালো একটা ব্যাচ।
আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। সাদি দেখে কি বলবে? “হট, কিউট, সুইট, নাইস”
কোনটা বলবে?
ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই খট করে দরজা খোলার আওয়াজ পায়। ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়। পেছনে ঘুরে তাকায়।
সাদি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। হাতে থাকা ফাইল খানা পরে যায়। চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। দুই ঠোঁটের মাঝখানে কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে?

ছোঁয়া এক গাল হেসে এগিয়ে আসে।
“আমায় কেমন লাগছে?
সাদির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে।
সাদি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘোরায়। নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালায়।

” ভভভালো

ছোঁয়া বিরক্ত হয়।। আরও একটু এগিয়ে যায় সাদির দিকে৷ কলার টেনে কাছাকাছি নিয়ে আসে
‘”ভালো করে দেখে বলুন।
সাদি আবারও শুকনো ঢোক গিলে।
তাকায় ছোঁয়ার লাল টকটকে ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে।
শুকনো কশি দিয়ে বলে
“হ
ছোঁয়া হাসে। আরও একটু টানে নিজের দিকে।
” তারপর
“টটট
” এক সাথে কি হয়?
“হহহটটটট

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪৩
#তানিশা সুলতানা

ইতিহাসের কোথাও লেখা আছে বউকে দেখে বর নার্ভাস হয়ে যায়? হয়ত লেখা নেই। তবে সাদমান চৌধুরী নামটা গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রাখা উচিত। এই যে বেচারা বউকে দেখে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে। তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে সে ভীষণ পানি পিপাসায় ভুগছে।
অথচ সারাদিন ছোট ছোট ড্রেস পড়া মেয়েদের সাথে তার ওঠাবসা। কখনো তাদের দিকে ভালো করে তাকানোও হয় নি।
কিন্তু বউকে দেখে অবস্থা খারাপ।
সাদির আধপাগল বউটা বুকের সাথে লেপ্টে আছে। শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে ছোঁয়া নাক ডুবিয়ে দেয় লোমশযুক্ত বুকে। ছোট ছোট কিছু চুমুও খেয়ে নেয়।
মানুষ কতো কিছুতে আসক্ত হয়। আর ছোঁয়া আসক্ত এই বুকটাতে। এতো ভালো লাগে। যেনো জাদু মিশে আছে। সারাদিন এখানে লেপ্টে থাকতে পারলো মন জুড়াতো। কিন্তু কিপ্টা বর তো থাকতেই দেয় না।

সাদি এখনো ছোঁয়াকে ধরে নি। বিরক্ত ছোঁয়া। একা একা ব্যালেন্স রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
“আমাকে জড়িয়ে ধরছেন না কেনো?
কেরোসিন মেখেছি কি?
ছোঁয়া সাদির হাতটা তার পিঠে রাখে। আবারও শুকনো ঢোক গিলে সাদি। মনে মনে বলেও ওঠে
” কেরোসিন কি মাখো নি? জ্বালিয়ে পুরিয়ে দিচ্ছে আমায়।
ছোঁয়া চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভব করছে মুহুর্তটা। প্রিয় মানুষটিকে আলিঙ্গন করতে এতোটা সুখ সুখ লাগে কেনো?
পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তি কেনো মনে হয় নিজেকে?
“আই লাভ ইউ সাদু বেবি।
আপনাকে ছাড়া আমি দুটো সেকেন্ডও কেনো চিন্তা করতে পারি না? আপনার একটু ইগনোরও আমি সয্য করতে পারি না। আমার না টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি কিছুই লাগবে না। আপনি শুধু আমার হয়ে থাকুন।
ভালোবাসতে হবে না।শুধু আমার ভালোবাসা টুকু গ্রহণ করিয়েন।

প্রায়প্রিয় স্ত্রীকে আরও একটু গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে সাদি। মাথায় অধর ছোঁয়ায়। বড্ড বেশি বলতে ইচ্ছে করছে
” তুমি আমার শখের নারী ছোঁয়া। তোমাকে পাওয়ার জন্য হাজারবার তোমার বাবার কাছে হাত পেতেছি। তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলো আমায়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমায় ভুলে যাওয়ার। কিন্তু পারি নি।
তোমায় আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।

মনের কথা মনেই রেখে দেয় সাদি। বলা হয় ছোঁয়াকে। বরাবরই অনুভূতি প্রকাশ কাঁচা সাদি। মন খুলে সবাই বলতে পারে না দুঃখ কষ্ট বা ভালোলাগা খারাপ লাগা। সবটা নিজের মধ্যে পুষে রাখে।

ছোঁয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় সাদি। দুই হাতে ছোঁয়ার মুখখানা তুলে ধরে। বন্ধ চোখের পাতায় ফু দেয়। পিচ্চিটা কেঁপে ওঠে। হাসে সাদি। অন্য রকম সুন্দর লাগছে ছোঁয়াকে। চোখেমুখে ভর করেছে অন্য রকম মুগ্ধতা। আবেদময়ী লাগছে। হঠাৎ বড় হয়ে গেলো না কি? চোখে মুখের সেই বাচ্চামি ভাবটা কোথায় চলে গেলো?
না কি সাদিই ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। এবং ছোট্ট ছোঁয়াকে পরিপূর্ণ নারী ভাবতে শুরু করেছে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় সাদি। দৃষ্টি তার ছোঁয়া অধরপানে।

“ইই..ডিয়েট ক্যান আই

চোখ খুলে তাকায় ছোঁয়ার। সাদির ইশারা বুঝতে পেরে লজ্জায় নুয়িয়ে পড়ে। অধর কামড়ে দুই দিকে মাথা নেরে না করে। চোখে তার ভয়।
মনে পড়েছে একবার সাদির কথা পাগলামির কথা। দম বন্ধ হয়েই যাচ্ছিলো প্রায়।
আজকেও এমন করবে কি?
সাদির থেকে নিজেকক ছাড়াতে চেষ্টা করে ছোঁয়া। সাদি ছাড়ে না। বরং আরও একটু চেপে দাঁড়ায়।

” জান প্লিজজ
একটু

বলতে বলতে ছোঁয়া অধর জোড়া নিজের অধরের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।
তখনই ছোঁয়া মুখটা পিছিয়ে নেয়। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়। বিরক্ত সে। নিজেই উসকাবে। তার পিছিয়ে যাবে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে

“আগে ভালোবাসি বলেন।

মুখ বাঁকায় সাদি। হাতের মুঠোয় পুরে নেয় ছোঁয়া ঝুঁটি বাঁধা চুল গুলো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” ভালোবাসি বললে কিন্তু তুই আজকে শেষ।

শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। আজকে থেকে সাদির থেকে ভালোবাসি শুনেই ছাড়বে। ঢেড় জানো লোকটা তাকে অনেক ভালোবাসে। তবুও কেনো এতো লুকোচুরি? সে কি বোঝে না তার থেকে ভালোবাসি শুনতে ছোঁয়া কতোটা পাগল হয়ে আছে?

“প্লিজজ
একবার বলুন।
একদম নরাচরা করবো না। স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।

হাসে সাদি।
কপালে পড়ে থাকা ছোঁয়ার ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। মাথা নুয়িয়ে ছোঁয়ার কানের কাছে ঠোঁট নেয়।

“ভালোবাসি তোমায় ছোঁয়া। বড্ড বেশি ভালোবাসি। তুমি আমার শখের নারী।

চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকে ছোঁয়া। এই প্রথমবার সাদি তার নাম ধরে ডাকলো। লোকটার মুখে ছোঁয়া নামটা একটু বেশিই সুন্দর শোনালো।আর কি বললো? “শখের নারী”
এটাও লিখা ছিলো কপালে?
ছোঁয়ার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছো “সবাই শুনো
আমার সাদমান চৌধুরী আমাকে ভালোবাসি বলেছে। আমি তার শখের নারী। যে পুরুষটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। সেই পুরুষটাও আমাকে ভালোবাসে।
তোমরা শুনো সবাই।।
আমাদের জন্য দোয়া করো। আমি যেনো এই পুরুটার বুকেই মাথা রেখে দূনিয়া ছাড়তে পারি।”

ছোঁয়া চোখ খুলে। সাদির চুল গুলো মুঠো করে ধরে অধরে অধর ছোঁয়ায়। প্রেয়সীর সাড়া পেয়ে উম্মাদ হয়ে ওঠে গোমড়ামুখো সাদি। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে পাগলীটাকে।
হাতের লাগামহীন ছোঁয়া এবং প্রেমিক রূপি স্বামীর চুম্বনে পাগল প্রায় অবস্থা ছোঁয়ার। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তল পেটে মোচর দিচ্ছে। সুখ কষ্ট ভালো লাগা খারাপ লাগার এক অদ্ভুত অনুভুতিতে ভাসতে থাকে। মুঠো করে চুল ধরে রাখা হাতটা আরও শক্ত হয়ে আসে। দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোঁটা নোনাজল।
সাদি ছোঁয়ার চোখের পানির মূল্যায়ন না করে কোলে তুকে নেয়। বউটাকে।
আর তখনই ভেসে আসে সেলিমের কন্ঠ

“মামনি দরজা খুলো। আব্বু চলে এসেছে।

ছোঁয়া হাঁসফাঁস করতে থাকে। সাদি বিরক্ত। ঠাসস করে কোল থেকে নামিয়ে দেয় ছোঁয়াকে।
” আজকে শশুড়ের মুখোশ উন্মোচন না করলে আমার নামও সাদি না।
রোমাঞ্চটাও করতে দিচ্ছে না।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৪০+৪১

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪০
#তানিশা সুলতানা

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম হালকা যায় ছোঁয়ার। গতরাতে অস্বস্তির সাগরে ভাসতে ভাসতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো মনে নেই।
বিরক্ত হয় সূর্যের ওপর। হাত দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা চালায় মুখখানা। তবুও কাজ হয় না। আলোটা আসছে কোথা থেকে?
টেনে টুনে চোখ খুলে। দেখে জানালা খোলা। এটা তার নিরামিষ জামাইয়ের কাজ ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু সাহেব কোথায়?
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে ছোঁয়া। পরিপাটি রুম এবং বেলকনিতে মেলে দেওয়া শার্ট দেখে বুঝতে পারে লোকটা অফিসে চলে গেছে। ছোঁয়া হামি দিয়ে বিছানা থেকে নামে। এলোমেলো চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে রুম থেকে বের হয়।
প্রথমেই চোখ পড়ে সাবিনা বেগমের দিকে। সে ড্রয়িং রুম ঝাঁড়ু দিচ্ছে।
ছোঁয়াকে দেখে তিনি ঝাঁড়ু রেখে এগিয়ে আসে। ছোঁয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে রিনরিনিয়ে বলে
“গোছল করে নে গিয়ে।
ছোঁয়া আবারও হামি দেয়। তার ঘুমই সম্পূর্ণ হয় নি। এখন নিজের তুলতুলে বিছানায় গিয়ে আরেক দরফা ঘুমিয়ে নিবে এটাই তার প্ল্যানিং।
কিন্তু নিরামিষ বরের নিরামিষ মা গোছল করতে বলছে?মারতে চায় না কি?

” জ্বালিয়ো না বড়মা। আমি শুধু আজকে কেনো? কালকেও গোছল করবো না। পানি দেখেছো? যে ঠান্ডা। শীত পড়ে যাচ্ছে। তুমি কি ফিল করছো না?
দুই দিন পরপর গোছল করা শীতকালের নিয়ম।

সাবিনা ভ্রু কুচকে ফেলে। এরকমই ছোঁয়া। ঠান্ডার দিনে সে গোছল নিয়ে বায়না করবে। কিছুতেই গোছল করতে চাইবে না। একদিন বা দুইদিন পরপর তিনি গোছল করবে।

“ছোঁয়া কথা বাড়াস না। জলদি গোছল সেরে আয়। এখুনি সকলে চলে আসবে খেতে।

ছোঁয়া বিরক্ত। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
” রাতে তোমার ছেলে ঘুমতে দেয় নি। জ্বালিয়ে মেরেছে। এখন তুমি জ্বালাচ্ছো? তোমরা দুজন কি ঠিক করে রেখেছো আমাকে শান্তি দিবে না?

লজ্জা পেয়ে যায় সাবিনা। মাথা নিচু করে ফেলে। অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছেন তিনি। ছেলে এবং ছেলের বড়য়ের পারসোনাল কথা শোনার মতো ধৈর্য তার নেই।
“বেশি কথা বলিস না ছোঁয়া।
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” বলবো না? তোমার ছেলে কি করেছে শুনবে না? বজ্জাত ছেলে তোমার। তুমি তো জানো আমি ঘুম কতো ভালোবাসি। তোমার নিরামিষ ছেলে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে।
সাবিনা বেগম কিছু বলতে পারে না।
নাজমা বেগম চলে আসেন। তিনি রান্না করছিলো। ছোঁয়া এবং সাবিনার ফুঁস ফুঁস শুনে টিকতে পারলো না।
“কি হয়েছে ছোঁয়া?
মাকে পেয়ে ছোঁয়া আহ্লাদী হয়ে ওঠে। গাল ফুলিয়ে বলে
” দেখো না বড় মা গোছল করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই ঠান্ডায় গোছল করা যায়? আমাকে আর বড়মার পছন্দ হচ্ছে না। সে আমাকে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে মা*রতে চাচ্ছে। ভালোবাসে না আমায়।

নেকা কান্না করে বলে ছোঁয়া।

নাজমা বেগম মেয়ের অবস্থা দেখে শুকনো ঢোক গিলে। গলার খানিকটা নিচে স্পষ্ট কামড়ের দাগ। টিশার্টের গলা বেশ খানিকটা নেমে আছে৷ পাগল মেয়ের এসবে খেয়াল নেই।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে
“ছোঁয়া এক সাথে থাকলে ফরজ গোছল করতে হয়। ন্যাকামি না করে চুপচাপ যাও গোছল সেরে আসো।

এতখনে ছোঁয়ার মাথায় কথাটা ঢোকে। চমকে চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। একসাথে ছিলো তারা? এটাকে এক সাথে থাকা বলে? এখন এদের কি করে বোঝাবে? তাদের নিরামিষ ছেলে একটা চুমু পর্যন্ত খায় নি? দুঃখের কথা তো সবাই বলে বেড়ানো যায় না।

আড়চোখে মা এবং চাচিমার মুখখানা দেখে নেয়। তারপর মুখ গোমড়া করে বলে
” সেরকম কিছু না। আমি গোছল করবো না প্লিজ। তোমরা ভুল ভাবছো।
বলেই ছোঁয়া এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। সাবিনা এবং নাজমা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে ফেলে।

রুমে এসে ছোঁয়া আয়নার সামনে দাঁড়ায়। প্রথমেই তার চোখ পড়ে গলার দিকে। দাগ আসলো কোথা থেকে? হাত চলে যায় গলায়। কেউ রাক্ষসের মতো কামড়ালে যেমন দাগ হয় তেমন দাগ। এটা দেখে ফেলেছে মা এবং বড়মা? এটা দেখেই ভেবেছে সামথিং সামথিং?
তাদের নিরামিষ ছেলে যে ছোঁয়ার ঘুমের সুযোগ নিয়ে দাঁত বসিয়েছে এটা তারা বুঝবে না তো।

রেগে যায় ছোঁয়া।
বিছানা থেকে ফোনখানা উদ্ধার করে কল দেয় সাদিকে।
রিং হতে হতে কেটে যায়। ধরে না। কিন্তু না ধরা ওবদি ছোঁয়া তো থামবে না।
আবারও কল করে। এভাবে পাঁচ বার কল করার পরে রিসিভ হয়।
ওপাশের মানুষকে কিছু বলতে না দিয়ে ছোঁয়া বলে ওঠে
“আমাকে কামড়িয়েছেন কেনো আপনি? দাঁত বড় হয়ে গেছে? বজ্জাত লোক। আপনার জন্য সবাই আমাকে দেখে হেসেছে। আসুন আজকে বাড়িতে কামড়ে আপনার নাক ছিঁড়ে ফেলবো আমি৷
নিজের কথা শেষ করে থামে ছোঁয়া। হাঁপিয়ে গেছে সে তার লম্বা বক্তব্য প্রেষণ করে।
তখনই ওপাশ থেকে ভেসে আসে একটা মেয়েলি ভয়ার্তক কন্ঠ
” সরি ম্যাম স্যার মিটিং এ ঢুকেছে। আমি ওনার
বাকি টুকু শেষ করতে পারে না মেয়েটা। ছোঁয়া কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে
“শাঁকচুন্নি তোর সাহস হয় কি করে আমার বরের ফোন হাতে নেওয়ার।
মেয়েটা আরও ভয় পেয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে
” অনেকখন বেজে চলেছিলো। ভেবেছিলাম ইমপটেন্ট কল কি না

” ভাবতে কে বলেছে? ফোন বাজতে বাজতে ভেঙে যাবে। আপনি কেনো ধরবেন? জানেন না এটা ছোঁয়া চৌধুরীর স্বামীর ফোন?
মেয়েটা জবাব দিতে পারে না। সে ঘনঘন ঢোক চিপছে। ছোঁয়া একটু থেমে বলে
“আসছি আমি। তোর চুল যদি না ছিঁড়েছি আমার নামও ছোঁয়া চৌধুরী নয়। আমার বরের ফোন ধরা না?
খট করে কল কেটে দেয়। রাগে তার শরীর কাঁপছে৷ ফঁস ফঁস করে শ্বাস টানছে। আজ ওবদি ছোঁয়াই ফোনটাতে হাত লাগাতে পারলো না। আর ওই মেয়ে কি না ধরে নিলো?
হাত আজকে কেটেই দিবে মেয়েটার।

রাগ দমন করে কাবাড থেকে জামাকাপড় বের করে নেয়। গোছল সে করবেই না। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোছল করার চেয়ে বিষ পান করে কোমায় যাওয়া বেটার।
ব্রাশ করে চোখে মুখে পানি দিয়ে জামা পাল্টে নেয়। তারপর কলেজ ব্যাগটা কাঁধে চেপে বেরিয়ে পড়ে শাঁকচুন্নি দমন করতে।

সাদির অফিস চেনে ছোঁয়া। চিনবে না? একমাত্র বর বলে কথা। সামিরের থেকে ঠিক জেনেছে অফিসের ঠিকানা। সাদি তো আর বলবে না। নিরামিষ কি না।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৪১
#তানিশা সুলতানা

বিশাল বড় বিল্ডিং। কয় তালা হবে? কড়া রোদ বিধায় তাকানো যাচ্ছে না। নাহলে ছোঁয়া গুনে নিতো। বড়বড় গাড়ি দাঁড় করানো বিল্ডিং এর সামনে। গেইটে দুজন দারোয়ান পায়চারি করছে। হাতে তাদের লাঠি। ছোঁয়া চিন্তা করে। তাদের হাতে লাঠি কেনো? ডাকাত আসলে তো বন্দুক বোমা ছুড়ি এসব নিয়ে আসবে। তখন এরা এই লাঠি দিয়ে তাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। তাহলে লাঠি কেনো হাতে নিয়েছে?
নিজের চিন্তায় নিজেই বিরক্ত ছোঁয়া। ধুরর এসব কি তার ভাবার বিষয় না কি?
মাথার ঘোমটা টা ভালো করে ঠিক ঠাক করে এগোয় ছোঁয়া। মাথায় ঘোমটা দেওয়ার কারণ আছে। এলোমেলো চুল তার। চুল গুলো পরিপাটি করার সময় ছিলো না।

দারোয়ান দুটোকে দুই দিকে যেতে দেখে হুরমুরিয়ে ঢুকতে যায় ভেতরে। দারোয়ান দৌড়ে এসে লাঠি এগিয়ে দিয়ে থামায় ছোঁয়াকে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় দারোয়ানের দিকে।

“এভাবে ঢোকা নিষেধ।

দারোয়ানের শক্ত কন্ঠ।
ছোঁয়া দারোয়ানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয়।

” তাহলে কিভাবে ঢুকতে হবে? মাথায় শিং লাগিয়ে আসবো? না কি পেছনে লেজ?

দারোয়ান হকচকিয়ে যায় ছোঁয়ার কথা শুনে। দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নেয়।
ছোঁয়া আবারও বলে
“দেখুন ভেতরে আমার একমাত্র বর নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাকে যেতেই হবে।

ছোঁয়ার কথা তারা বুঝতে পারে না। তাকিয়েই থাকে শুধু।
বিরক্ত ছোঁয়া। কে এরা? কথা কি বুঝতে পারে না?
” সরি ম্যাম
আপনাকে ভেতরে যেতে দেওয়া হবে না।

রেগে যায় ছোঁয়া। রাগ দমানোর চেষ্টা চালায়। সরু চোখে তাকিয়ে দাঁত কটমট করতে থাকে। এদের সাথে কড়া কথা বললে কখনোই ঢুকতে দেবে না। একটু অন্য ভাবে চেষ্টা করতে হবে।।
মুহুর্তেই ছোঁয়ার রাগান্বিত মুখখানা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। ওড়নার আঁচল টেনে নাক মুছে নেয়।
“আমার একমাত্র স্বামী এই অফিসে চাকরি করে। নাম সাদমান চৌধুরী। ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে আমার। আরেকটা হবে। তিন মাস চলছে।
পেট দেখে বোঝা যাচ্ছে না তাই না?

দারোয়ান শুকনো ঢোক গিলে। আকপটে মাথা নারিয়ে জবাব দেয় ” না”
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“কি করে বোঝা যাবে? স্বামী যত্ন নেয় না। সংসারে টাকা দেয় না। প্রেগন্যান্সির সময় ভালো মন্দ দুটো খাওয়া উচিত কিন্তু আমি তো মন্দ মন্দ খাবারই পাই না। ভালো মন্দ পাবো কই?
খবর পেয়েছি অফিসের একটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে। আমি সেই কাল নাগিনীকেই ধরতে এসেছি।
আপনারা প্লিজ একটু সাহায্য করুন। এই অসহায় পোয়াতি মেয়েটার একটা উপকার করুন।

ছোঁয়ার আহাজারিতে মন গলে যায় দারোয়ানদের।
” আহারে
এই টুকুনি মেয়ে। তার কতো কষ্ট। যাও মা।
সাদমান চৌধুরী এতো খারাপ? ছিহহ ছিহহ

ছোঁয়া এক গাল হাসে।
দারোয়ানের দুই গাল টেনে দিয়ে বলে
“থ্যাংক ইউ টাক দাদু

বলেই এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। দারোয়ান বড়বড় চোখ করে তাকায়। এখনো বিয়ে করে নি সে। অল্প বয়সেই চুল পড়েছে। চাচা বলতে পারতো তিনি মাইন্ড করতো না। তাই বলে দাদু?

সাদি ডায়াল করে শশুড়ের নাম্বারে। রিং হতে না হতেই কলটা রিসিভ হয়। সাদি নিজের হাসি লুকিয়ে বলে
” ছিহহ শশুড় মশাই ছিহহহ
আপনি প্রেম করছেন?

সেলিম সবেই মুখে কফি নিয়েছিলো। সাদির কথা শুনে ফুসস করে বের করে দেয় মুখে থাকা কফি। এমনিতেই গতরাতে গেস্ট রুমে কাটাতে হয়েছে তার। এখন এই কথা নাজমার কানে গেছে বাড়ি ছাড়া করবে তাকে।

“ততোমার প্রবলেম কি? এমনিতেই গতকাল রুমে ঢুকতে দেয় নি। আজগবি কথা পাও কোথায়?

হাসে সাদি।
” নিজের কষ্টটা দেখলেন। আমার কষ্ট দেখলেন না? একদিন বউ ছাড়া থাকতে পারছেন না। আমি কি করে থাকছি চিন্তা করুন।

“অসভ্য ছেলে। আমি তোমার শশুড় হই।

” কিছু পিকচার আমার হাতে আছে। আপনি দেখলাম একটা মেয়ের সাথে রিকশায় ঘুরছেন। রোমান্টিক দৃশ্য

কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যায় সেলিমের। কলিগের সাথে রিকশায় বসেছিলো। সেই কলিগ আবার সেলিমের বাল্য কালের বান্ধবী।
“ভাবছি ছোট মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠাবো।

” তুই আমার মেয়েকে নিয়ে যা বাপ। আমি আজকেই বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলবো। সামনে শুক্রবারে তোদের আবার বিয়ে দিবো। তবুও আমাকে মাপ কর। তোদের হানিমুনে যাওয়ার খরচ আমার।

সাদি এবার শব্দ করে হেসে ওঠে।
“আই লাভ ইউ শশুড় মশাই

সেলিম কল কেটে দেয়। বিরবির করে বকা দেয় সাদিকে
” শয়তাম ছেলে। গোটা দুনিয়াকে দেখায় সে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। অথচ আমার জানটা জ্বালিয়ে খাচ্ছে। এই অসভ্য ছেলের বাচ্চা কাচ্চা কতোটা অসভ্য হতে পারে?

__

মিটিং শেষে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে বসে আছে সাদি। ঠোঁটের কোণে তার মিটিমিটি হাসি। শশুড় মশাইকে জ্বালানোর আরও একটা ফয়দা পেয়ে গেছে সে। এতোদিন শশুড় জ্বালিয়েছে এবার সাদি জ্বালাবে। শশুড়ের ভীতু মুখখানা বড্ড ভালো লাগে সাদির। শশুড়কে দেখতে সুইটও লাগে।

ছোঁয়া দেখতে পায় রিমিকে। পানির বোতল হাতে নিয়ে এদিকেই আসছে। ছোঁয়া এক দৌড়ে চলে যেতে নেয় রিমির কাছে। তখনই দেখে ফেলে এক অবিশ্বাস্য জিনিস। মেয়েদের ড্রেসআপ। হাঁটু ওবদি ড্রেস। কি সুন্দর হাঁটু বেরিয়ে আছে। উঁচু জুতো পড়েছে৷ দেখতে জোশশ লাগছে। মনে মনে ছোঁয়া ভেবে ফেলে এরকম একটা ড্রেস ছোঁয়া পড়লে তাকে কেমন লাগবে? সাদি নিশ্চয় তাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে।
লজ্জা পায় ছোঁয়া। মুহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
এতো এতো হাঁটু বের করা রমণীর মধ্যে তার বরটা থাকে। কতোটা রিক্স? নেহাত বেডা নিরামিষ।

“তুমি এখানে?

হঠাৎ সাদির গলা শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। তাকায় সাদির দিকে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। সে বেরিয়েছিলো বসের কেবিনে যাবে বলে তখনই নজর পড়ে ছোঁয়ার দিকে। এক মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলো সাদি। যে পাগল বউ তার।

” আপনার ফোন যে মেয়ে ধরেছিলো তার হাত কাটতে এসেছি। কোন কাল নাগিনী? দেখান আমায়?

সাদির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সে শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় তার কেবিনে।

“আমারই ভুল। আমি ফোন রেখে গিয়েছিলাম মিটিং এ।

” আমি ঠিক ভুল জানি না। মেয়েটার হাত কাটবোই কাটবো আমি। জীবনে আমাকে দিয়েছেন কখনো ফোনটা ধরতে? ওই মেয়ে কেনো ধরবে?

সাদি দুই হাতে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে। বুকের মাঝখানে ছোঁয়ার ছোট্ট মাথাখানা চেপে ধরে। চুমু খায় মাথায়।
আদূরে গলায় বলে
“জান পাগলামি করে না। আমি তো তোমারই।
ছোঁয়া গলে যায়। নারীর পাহাড় সমান রাগ গলিয়ে দিতে শখের পুরুষের দুটো আদূরে কথাই যথেষ্ট।

ছোঁয়া সাদির বুকে চুমু খায়।
” ঠিক আছে পাগলামি করবো না। আমাকে একটা হাঁটু বের করা জামা কিনে দিবেন?

“ঠিক আছে দিবো।

” আই লাভ ইউ
আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ছোঁয়া। সাদি জবাব দেয় না।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৩৮+৩৯

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৮
#তানিশা সুলতানা

সাদি রুমে ঢুকে দেখতে পায় নাজমা বেগমের আরেক দরফা বমি করা শেষ। নেতিয়ে পড়েছেন একদম। বসে থাকার শক্তি টুকুও তার অবশিষ্ট নেই। ওয়াশরুম থেকে ধরে আনতে হচ্ছে। ফর্সা মুখ খানা লালচে হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। চোখ দুটো টকটকে লাল। অসুস্থতা ওনাকে বেশ কাবু করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে।
ছোঁয়া এবার কেঁদে ফেলেছে। সে কখনো বাবা মাকে অসুস্থ হতে দেখে নি। মায়ের এই রূপ দেখে তার কলিজা কাঁপছে। সাবিনা বেগমও চিন্তিত। হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু সাজ্জাদ চৌধুরী বাড়িতে নেই। সিফাত অফিস থেকে ফেরে নি৷ আর সেলিম চৌধুরী তো উল্টা পাল্টা চিন্তা করে আরও অস্থির হয়ে উঠেছেন। এই মুহুর্তে কি করে ডাক্তারের কাছে নেবে?

সকলের চিন্তিত মুখখানা এক পলক দেখে সাদি ভেতরে ঢুকে পড়ে।
সাদিকে দেখেই পরি চাচ্চু চাচ্চু বলে দৌড়ে কোলে ওঠে। ছোঁয়ারও চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে। সাদি এসেছে মানে মাকে সুস্থ করেই তুলবে। সাহেলা বেগম স্বস্তি পায়। সিমিও একটুখানি ভরসা পায়

“হাসপাতালে নিচ্ছো না কেনো ছোট মাকে?

গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে সাদি। নিজের গলার আওয়াজ শুনে নিজেই বিরক্ত। ভেবেছিলো নরম গলায় কথা বলবে। কিন্তু উয়য় যে স্বভাব। স্বভাব কি আর সহজে পরিবর্তন হয়?
সাবিনা বেগম জবাব দেয়
” কিভাবে নিবো? তোর চাচ্চু তো

বাকি টুকু বলে না সাবিনা। ছেলের সাথে এসব বলতে তিনি লজ্জা পায়। নাজমা বেগমও লজ্জা পাচ্ছে সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চারা বড় হয়েছে। তাদের সামনে এমন একটা পরিস্থিতি?
ছিহহ ছিহহহ ছিহহহ
নাজমা বেগমের ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
সাদি বিরক্ত হয়।

“গ্যাস্টিকে প্রবলেম হয়েছে ছোট মার। সিম্পল বিষয়টা বুঝতে পারো নি? আজিব
আর যেটা আন্দাজ করেছো সেটা হলেই বা কি?
মানুষটা এভাবে চিকিৎসা বিনে মা*রবে?

সিমি আমতা আমতা করে বলে
” আসলে বাবা বলছিলো

“ভাবি তোমার বাবার মাথায় এমনিতেই বুদ্ধি কয়েক কেজি কম আছে। তার কথা শুনে নেচোনা প্লিজ।

সেই মুহুর্তে সেলিমও রুমে ঢুকে পড়ে। তার চিন্তা হচ্ছিলো সাদি কি না কি করে? একদম ভরসা পাচ্ছে না এই ছেলেকে। আবোল তাবোল কিছু বলে দিলে মানসম্মান কোথায় যাবে?
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে ওঠে
“আমিও তাই বলছিলাম। তাছাড়া পরি বড় হয়ে গেছে নতুন বেবি আসলে আমরা তো খুশিই হবো। আমার তো আর সেই কপ
কথা শেষ করতে দেয় না সাদি। ধমকে ওঠে
” চুপচাপ বসে থাকো ইডিয়েট
কথা শেষ করতে না পেরে ছোঁয়া হতাশ। ছোঁয়া একটা বাচাল মেয়ে। তার পেটে অনেক কথা জমে থাকে। সেই কথা কাউকে না বলতে পারলে পেটের মধ্যে গুড়ুম গুড়ুম করে।লোকটা নিজেও শুনবে না অন্যদের শোনাতে দিবে না। নিরামিষ একটা।
ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়
“বড় মা করলা ভাজি করতে গেলাম। তোমার ছেলে খায় নি কিছুই।
বলেই চলে যায়।
ছোঁয়ার এই কথায় সকলেই অবাক হয়। মেয়েটা চঞ্চল, পাগলামি করে বেশি। কারো কখনোই ধারণা ছিলো না এই মেয়েটা সাদিকে এতোটা ভালোবাসে। মন প্রাণ উজার করে দিয়ে ভালোবাসে।
সাদি শুকনো কাশি দেয়। খেয়াল করে সেলিম চৌধুরীকে। চোখে মুখে দুষ্টুমি ফুটে ওঠে

” চাচ্চু কংগ্রাচুলেশনস
ছোট মার অবস্থা দেখে আমি শিওর আমাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে। এতোখন শিওর ছিলাম না।

গলা শুকিয়ে কাঠ সেলিমের। এগিয়ে গিয়ে বসবে সেই শক্তি টুকুও অবশিষ্ট নেই। সিমিও শুকনো ঢোক গিলে। যদিও এটা পাপের কিছু নয়। তবুও তার চিন্তা হচ্ছে। মানুষকে ফেস করবে কিভাবে?
সাবিনা বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকায় সাদির দিকে।
নাজমা বেগম কেঁদেই ফেলেছে।
পরি হাত তালি দিচ্ছে খুশিতে।
সাদি সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ওঠে। এক হাত চোখের ওপর রেখে শব্দ করে হাসছে সে। হাসতে হাসতে চোখের কোণে পানি চলে আসে।
সকলেই মুগ্ধ হয়ে সাদির হাসি দেখে। ছেলের হাসি দেখে সাবিনা বেগমের চোখে পানি চলে আসে। জীবনেও কখনো ছেলেকে এভাবে হাসতে দেখে নি সে। এসব কি ছোঁয়ার কামাল?

সেলিম কপাট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে তাকায় সাদির দিকে
“বেহায়া ছেলে। আমার মেয়ের থেকেও এক কাঠি এগিয়ে।
ভাবি এরা দুজন যেভাবে জ্বালাচ্ছে। এদের ছেলে পুলে হলে আমাকে হার্টের রুগি বানিয়ে ছাড়বে।
সেলিম অভিযোগ জানায় সাবিনা বেগমকে। হাসছে সাবিনা। সাদিও হাসি থামিয়েছে। সিমির ঠোঁটেও হাসি। নাজমা বেগম এরকম একটা মুহুর্ত পেয়ে অনেকটা সুস্থতা অনুভব করছে।

” ডাক্তার আসছে। চাচ্চু চলুন এক সাথে খেয়ে নেই। তারপর মিষ্টি কিনতে যেতে হবে তো। আমার শশুড় প্রেগন্যান্ট বলে কথা।

আবারও রেগে ওঠে সেলিম। চোখ রাঙিয়ে জবাব দেয়
“প্রেগন্যান্ট আমি হবো না। হবে তোমার চাচি।

” ওহহহহ হো
সম্ভাবনা আছে? চাচ্চু আপনার বয়স বোধহয় কমছে ধীরে ধীরে। নটি বয়
এবার সাবিনা বেগম এবং সিমি খিলখিল করে হেসে ওঠে। সেলিমের মুখ খানা থমথমে হয়ে যায়। সে গটগট পায়ে চলে যায়। এখানে থাকলে মানসম্মান থাকবে না।
সেলিম যেতেই সাদি হাসি থামিয়ে ফেলে

“সরি ভাবি
ছোট মা সরি
চাচ্চু ভয় পাচ্ছিলো তাই একটু মজা করেছি। সরি হ্যাঁ

সাদি পরিকে নিয়েই চলে যায়। সাবিনা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” জীবনে প্রথমবার ছেলের প্রাণ খোলা হাসি দেখলাম।

“আমাদের ছোঁয়াটা কিভাবে পাল্টে দিলো ভাইয়াকে। ওদের ওপর এখন আর কোনো রাগ নেই। আল্লাহ ওদের ভালো রাখুক। দোয়া করি।

____

ডাক্তার চলে এসেছে। চেকআপ করছে নাজমা বেগমকে। তেমন সিরিয়াস কোনো ব্যাপার না।
ছোঁয়া সাদিকে নিয়ে গিয়েছে খাওয়ার জন্য। খিধেটা ভালোই পেয়েছে।
ছোঁয়া ওড়না কোমরে বেঁধে খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে। সাদি উসখুস করছে। ছোঁয়াকে কিছু বলবে সে।

” বসছেন না কেনো?

“বাবা ভাইয়া আসুক। সবাই এক সাথে খাবো।

ছোঁয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়
” এই যে কষ্ট করে কাজ করলাম। আগে বলবেন না খাবেন না। পাষাণ লোক একটা।

“জিজ্ঞেস করেছো আমায়?

” না করলাম তাও বলবেন। আব্দুল কুদ্দুসের বাপ যে এতো বজ্জাত এখন টের পাচ্ছি।

সাদি মুখ বাঁকায়।
“তোমার রুমে যাচ্ছি। পেছন পেছন এসো।

ছোঁয়া ভ্রু কুচকে বলে ওঠে
” আপনার মতলবটা কি বলুন তো? গবু হওয়ার চেষ্টা করছেন না কি? খালি কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে। আবার ঠোঁট চৌকা করছেন। রোমান্টিক লুক দিচ্ছেন। ছোঁয়া কিন্তু বোকা না। সব বুঝতে পারে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরলো না কি?

সাদি ছোঁয়ার মাথায় টোকা দেয়
“এরকম হ*ট নোয়া চোখের সামনে ঘুরঘুর করলে একটু তো ভীমরতি ধরবোই।

ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার স্যাপার

” মুভিটা দেখেছেন?

“আরও আট মাস আগে।
এসো

সাদি চলে যায়। ছোঁয়া এক দৌড়ে বেসিনের আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
” দিন দিন কিউট হয়ে যাচ্ছি না কি? জামাই দেখি উল্টো সুরে গান ধরেছে। কপাল খুলে গেলো না কি?

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৯
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার অপেক্ষায় বসে রইলো সাদি। ইডিয়েটটা আর আসলো না সাদির কাছে৷ এই মেয়েটার মনোভাব বোঝে না সাদি। কি চায়? কি করে? কিছুই মাথায় ঢোকে না। আসলেই একটা ইডিয়েট। এই যে সারাক্ষণ পিছু পিছু ঘুরবে। জ্বালাবে। আর যখন সাদি ডাকবে পাত্তাই পাওয়া যাবে না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে না? একটা বাচ্চা মেয়ে। তার প্রতি এখনই এতোটা দুর্বলতা প্রকাশ করা ঠিক নয়। আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন বা ছোঁয়াকে দেওয়া প্রয়োজন। গম্ভীর হয়ে যাবে না কি আগের মতো?
হুমম সেটাই বোধহয় ঠিক হবে।
খাটে টানটান হয়ে শুতে গিয়েও শয় না সাদি৷ শরীর ম্যাচম্যাচ করছে শুলেই ঘুমতে ইচ্ছে করবে। আর তখনই ডাক পড়বে জানা কথা সাদির।
পকেট থেকে ছোঁয়ার জন্য আনা গিফটখানা বের করে এক পলক দেখে তারপর সেটা রেখে দেয় পড়ার টেবিলের ওপর।
এখন অবশ্যই সাদির পড়ালেখা নেই। তবুও টেবিল এবং বই গুলো রয়ে গেছে৷ সাবিনা বেগম রোজ পরম যত্নে গুছিয়ে রাখে। মাঝেমধ্যে সাদিও পুরনো বই গুলো পড়ে দেখে। এটা তার স্বভাব।
রুমটা বড্ড অগোছালো সাদির। বিছানা চাদরের ভাজ পড়ে গেছে। কোলবালিশ খাটের এক কোণায় পড়ে। কম্বলটার ভাজ খোলা। বালিশ ঠিক জায়গায় নেই। চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না তার ইডিয়েট বউ এসেছিলো এই রুমে। তার খাটে শুয়ে ছিলো তারই কম্বল গায়ে দিয়ে।
পাগল কি না?

সকলেই খাবার টেবিলে বসেছে। ছোঁয়া ফ্লোরে গোল হয়ে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। আসলে তারপর টেনশন হচ্ছে। সাদি যে যেতে বলেছিলো। এমনিতে তার নিরামিষ বর কাছাকাছি ঘেসলেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে ওঠে বুড়োদের মতো। আর আজকে একটু ভালোবেসে ডাকলো। নিশ্চয় একটা চুমু টুমু দিতো। কিন্তু কি হলো? ছোঁয়া যেতেই পারলো না?
আসলে যাবে কি করে? বাবাকে তো প্রমিজ করেছিলো এইচএসসির আগে দূরে দূরে থাকবে। তবুও সে কথা ছোঁয়া রাখতো না। লুকিয়ে চুকিয়ে দেখা করতোই। যেমনটা সকালেও করেছিলো। কিন্তু বাবা চোখের সামনেই বসে আছে৷ এভাবে বাবার সামনে দিয়ে যাবে কিভাবে?
যদিও ছোঁয়ার লজ্জা একটু কম। তবুও বেশ লজ্জা লাগছে৷ তাই তো ফ্লোরে বসে পড়েছে৷
সেলিম বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে “তুমি ফ্লোরে কেনো বসেছো? ঠান্ডা লাগবে?”
জবাব দেয় নি ছোঁয়া।
এখন সাজ্জাদ চৌধুরীরও একই প্রশ্ন।সে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
“এখানে কেনো তুমি? উঠে এসো।
ছোঁয়া মন খারাপ করে জবাব দেয়
“গরম লাগছে বড় বাবা। ঠান্ডা লাগলে উঠে যাবো।
আর কিছু বলে না সাজ্জাদ। তিনি খেতে বসে যায়।
সবাইকে খাবার বেরে দিতে গিয়ে সাবিনা বলে ওঠে
” ছোঁয়া সাদুকে ডেকে নিয়ে আয়।

ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। এক লাফে উঠে এক দৌড় দেয়।
সাদির রুমে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
“আব্দুল কুদ্দুসের নানা বড়বড় চোখ করে বসেছিলো। কথা দিয়েছিলাম না তাকে এইচএসসির আগে কাছাকাছি আসবো না? তাই আসতে পারি নি।
সরি জামাই।

সাদি খাটে আধশোয়া হয়ে একটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিলো। ছোঁয়াকে দেখে সোজা হয়ে বসে৷ কথা বলার ধরণ দেখে হাসি পায়। তবু লুকিয়ে রাখে।
” ইটস ওকে
রাতে আমার সাথে ঘুমাবে।

ছোঁয়ার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।কিভাবে ঘুমাবে তার সাথে? ছিহহ ছিহহহ বাড়ির সবাই কি ভাববে?
সাদি বই রেখে দেয় টেবিলে। টিশার্ট টেনে টুনে ঠিক করে। বা হাতে চুল গুলো পেছনে ঠেলে স্যান্ডেল পায়ে চাপিয়ে বেরুনোর প্রস্তুতি নেয়।
ছোঁয়া এখনো ভাবনায় বিভোর।
সাদি মাথা নিচু করে মুখটা ছোঁয়ার কান বরাবর নিয়ে নেয়। ফু দেয় ছোঁয়ার কানে। শুকনো ঢোক গিলে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
“আব্দুল কুদ্দুসে মা না আসলে। আব্দুল কুদ্দুসের বাবা চলে যাবে মিহির কাছে৷ বুঝেছো ডার্লিং?

পরপর বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় সাদি। রেখে যায় কাঁপতে থাকা ছোট্ট সত্তার ছোঁয়াকে। দিয়ে যায় টেনশন বাড়িয়ে।
কিভাবে কি করবে এবার?
মুখটা গোমড়া করে মাথা ছোঁয়াও সাদির পিছু ছুঁটে।

___

নাজমা বেগম এখন অনেকটাই সুস্থ। ঔষধ খাওয়ার পরে বমি করেছে। হালকা পাতলা কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে সাহেলা বেগম। আপাতত তিনি চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিচ্ছে। ছোঁয়া একবার এসে দেখে যায় মাকে। আজকে নাজমা বেগমের কাছে ঘুমবে পরি। মাঝেমধ্যেই সে দাদি বা নানির মাঝখানে থাকে। আজকে অবশ্য ছোঁয়া চেয়েছিলো পরিকে সাদির কাছে পাঠাতে। পরি থাকলে একটু স্বস্তি পেতো।
নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ছোঁয়া। এই তো সারাক্ষণ মৌমাছির মতো ছুঁটে বেড়ায় সাদির পিছু পিছু। আর আজকে এমন গলা শুকিয়ে আসছে কেনো? নার্ভাস লাগছে কেনো? আশ্চর্য ব্যাপার স্যাপার।

সেলিম চৌধুরী প্রচন্ড রেগে আছে সাদির ওপর। বেয়াদব ছেলে। মনের মধ্যে আবোলতাবোল চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তাই তো সে তার সুন্দরী বউকে ডাক্তারের কাছে নিলো না। ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালো। এখন সে বউয়ের কাছে যাবে কি করে? ঝাঁটার বাড়ি মেরে তাকে তাড়িয়ে দেবেন নাজমা বেগম। অসহায় সেলিম চৌধুরীর আজকে গেস্ট রুমে ঘুমতে হবে। এসবের জন্য কি সাদি দায়ী নয়? আলবাত সাদি দায়ী।
বিরবির করতে করতে তিনি গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়।
ছোঁয়া এটারই অপেক্ষায় ছিলো। বাবা সরতেই সে এক দৌড়ে সাদির রুমের সামনে আসে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে। দরজা আধখোলা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে প্রথমে মাথাটা ঢুকিয়ে দেয়। লাইট জ্বলছে। সাদিও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। টিশার্ট খুলে ফেলেছে। প্রথমবার বোধহয় সাদিকে খালি গায়ে দেখলো ছোঁয়া। লোকটা এতো আকর্ষণীয় কেনো? উফফফ
এই যে ফর্সা বুকে কালো লোমশ জড়িয়ে আছে। কি আদুরে লাগছে।

“তোমার পেছনে আব্দুল কুদ্দুসে নানা

সাদির বলতে দেরি ছোঁয়ার ঠাসস করে পড়ে যেতে দেরি নেই। দরজার সামনে ঝোলানো পর্দায় ছিঁড়ে পড়েছে সে। সমস্ত ভর পর্দায় দিয়েছিলো কি না।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এগিয়ে যায় ওঠাবে বলে। কিন্তু তার আগেই ছোঁয়া উঠে পড়ে। দরজা বন্ধ করে দেয়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে সে।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” মানুষ হবে কবে তুমি?

ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে জবাব দেয়
“মানুষই তো

” বাঁদর তুমি। শুধু একটা লেজ থাকলে গাছে ঝুলতে।

ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। জবাব দেয় না।
“ঘুমবে আমি। সারাদিন যেভাবে দৌড় করিয়েছো।

সাদি লাইট অফ করে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ড্রিম লাইট জ্বালানো আছে অবশ্যই।
ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকতে থাকে। কতো রিক্স নিয়ে আসলো? আবার পড়েও গেলো। একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো না? ” ছোঁয়া ঠিক আছো তুমি?
“ব্যাথা পেয়েছো?”
তা না ধমকে শেষ করলো।
বজ্জাত লোক। নিরামিষ একটা।

“সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকার প্ল্যানিং করেছো না কি? ওকে আমি যাচ্ছি

সাদি উঠতে নিলেই ছোঁয়া ঠাসস করে শুয়ে পড়ে
সাদির দাঁড়ি দুই আঙুলে টান দিয়ে ফিসফিস করে বলে
” এতো যাই যাই করেন কেনো? একটু ভয় পাই বলে ভয় দেখাতে হবে?

সাদি আলতো হাসে। জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। বুকের মাঝখানে ছোঁয়ার ছোট্ট মাথাটা চেপে ধরে।
ছোঁয়া আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। টুপ করে চুমু খেয়ে নেয় সাদির বুকে।
পরপর নিজেই লজ্জায় হাসফাস করতে থাকে। অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবেি ঘুমবে না কি?
সাদি নিজের দাঁড়ি যুক্ত গালখানা ছোঁয়ার গলায় রাখে। ভুমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ছটফট করতে থাকে।
বিরক্ত সাদি।
“ডিস্টার্ব করলে যা করতে মন যাচ্ছে সব করে ফেলবো।

ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। রিনরিনিয়ে জবাব দেয়
” কাতুকুতু লাগছে।
“লাগুক।
” দম বন্ধ হয়ে আসছে
“মরে যাও
” বুক কাঁপছে
“কাঁপতে দাও
“সয্য হচ্ছে না।
” এইটুকু সয্য করতে না পারলে আমাকে সামলাবে কিভাবে?
ছোঁয়ার মুখে কথা নেই। সাদি মুখ তুলে চুমু খায় ছোঁয়ার ললাটে।
তারপর আবারও কাঁধে মুখখানা লুকিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।
“ঘুমাও জান। গুড নাইট

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৩৬+৩৭

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৬
#তানিশা সুলতানা

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন সেলিম এবং সাদি। সেলিমের অবয়নে ক্রোধ স্পষ্ট। কখনো কটমট চোখে তাকাচ্ছে আবার কখনো পায়চারি করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। চাচার এরূপ দেখে সাদির হাসি পাচ্ছে। কথায় কথায় হাসি পাওয়ার স্বভাব ছিলো না সাদমান চৌধুরীর। ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি লাগিয়ে রাখতে শিখিয়েছে তার আধপাগল বউটা।
সাদি গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় মেলে দেওয়া দেখে সেলিমের ক্রোধ বেরে যায়। গম্ভীর রগচটা সাদমান চৌধুরী হাসতে শিখে গেছে? তার শিশু বাচ্চা মেয়েকে পাগল করতে?

“আমার মেয়ের আশেপাশে ঘেসবে না তুমি।

আঙুল তুলে সেলিম। ক্রোধে আঙুলটাও কাঁপছে। আঁখিপল্লব বরাবরের তুলনায় বেশ খানিকটা বড় করে ফেলেছেন। নিশ্বাস দ্রুত পড়ছে তার।
সোজা হয়ে দাঁড়ায় সাদি। বুক টানটান করে মাথা তুলে তাকায় চাচার মুখপানে। উচ্চতায় চাচাকে ছাড়িয়েছে আরও বারো তেরো বছর আগে। বলা বাহুল্য পুরো চৌধুরি বংশে সব চেয়ে লম্বা পুরুষটি সাদমান চৌধুরী। তাই বলে বাকি সবাই খাটো এমনটা কিন্তু নয়। সকলেরই উচ্চতা মানানসই। সাদি একটু বেশিই লম্বা। ছয় ফুট ছুঁয়েছে সে। বুকের বা পাশে হাত চাপে সাদি। চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে জবাব দেয়

” ইদানীং আপনার মেয়েকে ছাড়া থাকতেই হচ্ছে করে না। এখানে চেপে রাখতে ইচ্ছে করে।

সাদির এহেন কথায় বিষম খায় সেলিম। আঙুল নামিয়ে ফেলে। ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে যায়। রাগে লাল হয়ে থাকা মুখখানা এখন থমথমে রূপ ধারণ করে।
সাধারণ সাদি কখনো এভাবে কথা বলে না। সেলিম চৌধুরীর সাথে সাদির শত্রুতা বহুবছর আগে থেকে। ছোঁয়ার বয়স তখন ছিলো দশ বছর।
প্রচন্ড চঞ্চল এবং দুষ্টু মেয়েটি সারাক্ষণ ভয় পেতো সাদিকে। কখনো আশেপাশে ঘেসতো না। তবে দূরে থেকে উঁকি ঝুঁকি মারতো। কখনো খাটের তলায় লুকিয়ে থাকতো, তো কখনো পর্দার আড়ালে। সাদি সবটাই বুঝে যেতো কিন্তু কখনো কিছু বলতো না। কখনো খাবার দিতে আসতো মায়ের সাথে, কখনো মায়ের সাথে মিলে জামাকাপড় ধুয়ে দিতো, কখনো বিছানা গুটিয়ে রাখতো। খুব ভালো লাগতো সাদির। মনে হতো পিচ্চিটার গন্ধ মিশে আছে রুমটাতে।
দুই পায়ে নুপুর পড়ে সারা বাড়ি ঘুরঘুর করতো। আর সেই নুপুরের শব্দে দেওয়ানা হতো সাদমান চৌধুরীর মন৷ বাইশ বছরের যুবক ছিলো তখন সে। বাড়ন্ত বয়সের অনুভূতি একটু বেশিই প্রবল হয়।
সাদির ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছিলো। ছোট্ট ছোঁয়া অগোছালো চঞ্চল, বেহায়াপনা স্বভাব মনের মধ্যে দাগ কেটে গিয়েছিলো। অনুভূতি জন্মেছিলো প্রবল রূপে। সেই অনুভূতির কথা জানিয়েছিলো সেলিম চৌধুরীকে। বলেছিলো “চাচা ছোঁয়া বড় হলে আমি তাকে বিয়ে করবো”
সেলিম ভীষণ বকে ছিলো সাদিকে। তারপর থেকে একটু কমই দেখতে পারতো। আদরের ছোট মেয়ের দিকে কেউ তাকালেও তার সয্য হতো না।
সাদিও বুঝেছিলো তার চাওয়াটা ঠিক নয়। সে ভুল করছে। সম্পর্কে জড়ায় মিহির সাথে। দুষ্টুপরিকে ভুলে যাওয়ার শপথ নেয়। কিন্তু পারে নি। কঠোর হয়ে ওঠে। ছোঁয়া আশেপাশে ঘেসলে কঠিন চোখে তাকাতো তাতেই ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তা ভয়ে কেঁপে উঠতো। আশেপাশে ঘেসতো না কখনো।
তবে দুষ্টুপরি সাদিকে দেখা কমিয়ে ফেলে না।
সে লুকিয়ে ঝুঁকিয়ে তবুও দেখে যেতো সাদিকে।

সেলিম চৌধুরী দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“সাদি তোমাকে আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি।

” আপনার মেয়েই নেচে-কুঁদে এগিয়ে যায়। পুরুষ মানুষ তো আমি। উসকালে দমে থাকতে পারি না।

থমথমে মুখে আশেপাশে তাকায় সেলিম। কেউ শুনে ফেললো না কি? শুনে ফেললে মানসম্মান থাকবে? ভাতিজার ভাষার ছিঁড়ি শুনলে আশেপাশের মানুষজন নিশ্চয় বলবে “ছিহহ সেলিম ছিহহহ
কি সব কথাবার্তা”
জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় তিনি।
থেমে থেমে বলে ওঠে
“ঠিক করে কথা বলো সাদি। আমি তোমার চাচা।

” আপনিও চুপচাপ কাকিমার সাথে সংসারে মনোযোগ দিন৷ এই বয়সে আমার শা*লা শালি*কা হলে কোনো আপত্তি নেই৷ নিজ দায়িত্ব কোলে পিঠে করে বড় করে দিবো।

পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে সেলিম চৌধুরী। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ।
লজ্জাও পাচ্ছেন ঢেড়। মুখ থেকে কথা হারিয়ে যাচ্ছে।
চাচার মুখখানা দেখে হাসি পায় সাদি। হাসি চেপে বলে

“আপনি তাহলে চেষ্টা শুরু করে দিন। আমাদেরও একটু রিলাক্স দিন। আব্দুল কুদ্দুস এবং দিয়াকে তো আনতে হবে বলুন।

আনকমন নাম দুটো শুনে হালকা একটু মুখ তুলে সেলিম। রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করে
” এরা কারা?

“আপনার ফুল পাগল মেয়ে তার ফিউচার বাচ্চার নাম ঠিক করেছেন আব্দুল কুদ্দুস এবং দিয়া।
আসছি চাচা।
চিন্তা করবেন না। খরচ আমিই চালাবো।

বড়বড় পা ফেলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সাদি। প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নেয় সেলিম৷ শেষবারের মতো শুকনো ঢোক চিপে
” ডেঞ্জারাস
যেমন মেয়ে আমার তেমনই ঠোঁট কাটা জামাই
দু’জনই আমার হার্ট দুর্বল করে দিচ্ছে। এদের ছানাপোনা এলে আমার কি হবে?
সারাক্ষণ পানির বোতল নিয়ে ঘুরতে হবে।

ছোঁয়া আড়াল থেকে বাবা এবং সাদির কথপোকথন শোনার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারে নি। তবে মশার কামড় খেয়েছে ইচ্ছে মতো। মশারও কোনো আক্কেল নেই। যখন তখন কামড়ে দিবে?
চোখ মুখ কুঁচকে মশার চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকে ছোঁয়া।
বাবাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে বেরিয়ে পড়ে ঝোপের আড়াল থেকে।
আসলে যখন সাদি এবং সেলিম কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো ছোঁয়া তখন চুপি চুপি এখানে এসে লুকিয়েছিলো।

🌸🌸

মায়া এবং মিহি উপস্থিত হয়েছে সাদির বাড়িতে। তাদের সাথে সামিরও আছে। ভীষণ বিরক্ত সাদি। একটা সেকেন্ডও রেস্ট নিতে পারছে না সে বাংলাদেশে পা ফেলার পর থেকে।
দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো তারা। সাদি ওদের সাথে কথা না বলে চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে যায়। এখানে একটা সিনক্রিয়েট হবে এখন।

সাদির পেছন পেছন ওরাও ঢুকে পড়ে। সামির ঔশির ফ্ল্যাটের দিকে বার বার তাকাচ্ছে। কিন্তু হায়য়য় মহারাণীর দেখা নেই।

সাদি নিজের রুমে ঢুকতে যেতেই মিহি বলে ওঠে
“কথা বলতে এসেছি তোমার সাথে বুঝতে পারছো না?

সাদি দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সামিরের দিকে। সামির শুকনো ঢোক গিলে
” তোর আইফোন ছুঁয়ে বললাম বিশ্বাস কর
আমি ওদের চিনি না।
সাদি নিজের পায়ের জুতো খুলতে যায়। সামির এক লাফে সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়ে
“ভাই ওরা আমারে কিডন্যাপ কইরা আনছে এইহানে। আমি তো তোরে আর তোর বউরে চিনি ক?

মিহি বিরক্ত
” ভয় কেনো পাচ্ছিস সামির? আমি এসেছি তোমার সাথে কথা বলতে।

সাদি কথা না বলে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। ঠাসস করে দরজাটাও লাগিয়ে দেয়। অপমানে গা রিনরিন করে ওঠে মিহির।

সাদি পকেট থেকে ফোন বের মেসেজ দেয় ছোঁয়াকে।

“মিহি চলে আসছে আমার কাছে। বলছে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে”
ব্যাস ফোন রেখে কাবাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে সাদি। বাকিটা ছোঁয়াই সামলে নিবে। সাথে আজকে রাতে পাগলীটা সাদির সাথেই থাকবে। এটা শিওর সাদি।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পব:৩৭
#তানিশা সুলতানা

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সাদি। এবার একটু ঘুম দরকার। শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে। সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি করে যাচ্ছে কন্টিনিউসলি। খাওয়াটাও হয় নি ঠিকঠাক। খিধেও পেয়েছে প্রচুর। তবে এই মুহুর্তে খেতে ইচ্ছে করছে না।

নভেম্বরের শুরুর দিক। ঘন কুয়াশার দেখা না মিললেও শীত পড়েছে ভালোই। কম্বল মুড়ি দেওয়ার মতোই শীত। সাদি গলা ওবদি কম্বল টেনে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। বাইরে থেকে আবছা কথার আওয়াত ভেসে আসছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কি কথা বলা হচ্ছে।
তবে সাদি আন্দাজ করে নেয় সামিরকে ধুয়ে দিচ্ছে মিহি এবং মায়া।

চোখ দুটো বন্ধ করতেই ফোনটা বেজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে। ইডিয়েট নামটা ফোনের স্কিনে জ্বল জ্বল করছে।
ফোঁস করে শ্বাস টেনে কলটা রিসিভ করে নেয় সাদি।

“হ্যালো আব্দুল কুদ্দুসে পাপা?
আমি না যেতে পারবো না। আম্মু প্রেগন্যান্ট।

এক লাফে উঠে বসে সাদি। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। ছোঁয়ার আম্মু মানে তো সাদির শাশুড়ী। তিনি প্রেগন্যান্ট?
জিভ দ্বার ঠোঁট ভিজিয়ে খানিকক্ষণ চিন্তা করে সাদি। মনে মনে আওড়ায়
“মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো। এরই মধ্যে সুখবর?”
শুকনো ঢোক গিলে সাদি। না মানে অফিসে যদি ব্যাপারটা লিক হয়ে যায় মুখখানা দেখাবে কিভাবে? শশুড়কেও বলি হারি। বুড়ো হয়েও এতো একটিভ?

ওইদিকে ছোঁয়া হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। সাদির সেদিকে হুশ নেই।

“আছেন না কি আপনি? কি হলো? আব্বুর মতো সেন্সলেস হয়ে গেলেন না কি?

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” চাচ্চু সেন্সলেস হয়েছে?

“পরপর দুইবার।
আপি তো কথাই বলছে না। সবাই মুড অফ করে বসে আছে। শুধু পরি খুশিতে লাফাচ্ছে।

সাদির হাসি পায়। খুব কৌশলে হাসি চেপে যায়।
“ভেবেছিলাম আমাদের বেবি হবে৷ কিন্তু কি হলো? আমার না ভালো লাগছে না।
আবার এর মধ্যে মিহি ফিহি। পাগল পাগল লাগছে

” আচ্ছা
” আমি আসছি।

খুশিতে ছোঁয়ার চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। যাকক তাহলে মিহির সাথে থাকছে না।
“তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ। মিষ্টি নিয়ে আসিয়েন।

” মিষ্টি কেনো?

“আমার নতুন ভাই বোনের জন্য।

” রাখো তুমি।

“শুনেন

” বলো

“রাতে থাকবেন?

” তোমার কাছে রাখবা?

ছোঁয়া লজ্জা পায়।
“হুমমম

” আচ্ছা থাকবো।

“বুইঝো কিন্তু

” বুঝেছি
আনমনে জবাব দেয় ছোঁয়া।
সাদি ফিসফিস করে বলে
“আমি থাকলে তুমি শেষ।
কেঁপে ওঠে ছোঁয়ার সত্তা। দেয় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে জবাব দেয়
“বাজে হয়ে যাচ্ছেন।
ছোঁয়া ফোন রেখে দেয়। সাদি একটু হেসে নেয়। বউয়ের কাছে থাকবে আজ? শশুড় মশাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে?

শশুড়ের উঁচু নাক এবার থেঁতো করা যাবে। নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘুরে লোকটা। সাদির থেকে ছোঁয়াকে আলাদা করার পরিকল্পনা আঁটে। এবার সাদি নিজের বউকে শশুড়ের নাকের ডগা দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসবে৷

দরজা খুলতেই দেখতে পায় সামির ফ্লোরে শুয়ে আছে। মিহি সোফায় বসে ফোন দেখছে। আর মায়া এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। দরজা খোলার আওয়াজে সকলের দৃষ্টি পড়ে সাদির দিকে। সামির এক লাফে উঠে বসে।

“ভাই ওরা তোর সাথে কথা না বলে যাবে না।

অসহায় সুর সামিরের। সাদি সামিরের দিকে চাবি ছুঁড়ে মারে। ক্যাচ ধরে ফেলে সামির।

” আমি যাচ্ছি। বউ প্রেগন্যান্ট।
তোরা কথা বল

বলেই হনহনিয়ে চলে যায়। মিহি বড়বড় চোখ করে তাকায়। সামিরও হতদম্ভ। এত দ্রুত প্রেগন্যান্ট? বিয়ের কয়মাস হলো?

“প্রেগন্যান্ট মানে?
মিহি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে। সামির ভেংচি কাটে
” প্রেগন্যান্ট মানে পোয়াতি। বাচ্চা হবে। পেটের মধ্যে আরেকজন বড় হচ্ছে।
এর থেকে ভেঙে বলতে পারবো না। নিজের বউ হলে কিভাবে বাচ্চা এলো এটাও তোকে বলতাম

মিহি বিরক্ত হয়। অতিরিক্ত কথা বলে ছেলেটা। মায়া মুখ টিপে হাসে।

“আপু একটা কথা বলি তোকে। সাদি ভাইয়ার পেছন ছেড়ে দে।

” আমি ওর জীবনটা জাস্ট হেল করে ছাড়বো। ওর জন্য সব হারিয়েছি আমি।

___

নাজমা বেগম এই পর্যন্ত চার বার বমি করেছে। মাথা ঘুরছে সকাল থেকেই। প্রথমেই তিনি স্বামীকে বলেছিলো। তিনি কথা না বলে বেরিয়ে গিয়েছিলো বাসা থেকে। স্বামীর থেকে এমন অবহেলা পেয়ে নিজের রুমেই ঘাপটি মেরে শুয়ে ছিলো।
তারপর সাবিনা বেগম খোঁজ নিতে এসে দেখে এই অবস্থা।
সকলের সন্দেহ মোতাবেক ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বাচ্চা দুনিয়াতে আসা খুশির সংবাদ। কিন্তু এই বয়সে এসে কেউ খুশি হতে পারছেন না।

সেলিম বাগানে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। তিনি ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
নাজমা বেগমের পাশে বসে আছে ছোঁয়া সিমি এবং সাবিনা৷

সাদি গেইট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই নজর পড়ে সেলিমের দিকে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সাদি গিয়ে পাশে দাঁড়ায়।

“বললাম কি না বললাম তাতেই সুখবর? বাহহ এই না হলো আমার শশুড় মশাই।

সেলিম কপালের ঘাম মুছে তাকায় সাদির দিকে। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে
” বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করি নি।

সাদির হাসি পায়। তবুও হাসি চেপে বলে
“এটাকে কিছু করা বলে না তো। ভালো কাজ তো। ভয় কেনো পাচ্ছেন?

” মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। নাতনি আছে আমার। এই বয়সে ছি ছি ছি

“এসব কি আর আপনার ভাবনায় ছিলো শশুড় মশাই? আপনি তো ভেবেছিলেন সদ্য যৌবনে পা দিয়েছেন।

সেলিম কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে
” হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে।

“আপনি হাতি?

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেলিম। এর সাথে কথা বলার মানেই হয় না।
” যাও তো এখান থেকে।

“হুমম যাচ্ছি শাশুড়ী মাকে চেকআপ করাতে নিয়ে যেতে হবে তো।

সাদি চলে যায়। সেলিম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৩৪+৩৫

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৪
#তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার সামনে লম্বা সুন্দরী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। যার পরণে হালকা নীল রংয়ের শাড়ি। হাঁটু সমান লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথে রেখেছে। মুখে নেই কোনো সাজসজ্জা তবুও মেয়েটিকে অপূর্ব লাগছে।
এই মেয়েটিকে ছোঁয়া চিনে৷ চিনবে না কেনো? এই সেই মেয়ে যে ছোঁয়ার সাদির মনে জায়গা করে নিয়েছিলো। এই জীবনে মুখখানা ভুলতে পারবে না ছোঁয়া। এই মানুষটার প্রতি ভীষণ জেলাস ছোঁয়া।
গোল গোল চোখ করে মিহির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ছোঁয়া।
ছোঁয়ার তাকানো দেখে মুচকি হাসে মিহি। হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার মুখখানা ছুঁয়ে দিতে চায়। ছোঁয়া দু পা পিছিয়ে যায়। এতেও হাসে মিহি। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“ভালো আছো?
প্রশ্ন খানা ছোঁয়ার পছন্দ হয় নি। রসিকতা করতে এসেছে উনি? সেই দিন এই কপালই তো সাদির কাঁধে চেপে কাঁদছিলো। ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে মিহির কপাল ফা*টি*য়ে দিতে। বা খুব জোরে আঘাত করতে, ব্যাথা দিতে।
সাদির কাঁধে মাথা রেখে উনি দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে এই বিষয়টা মহিলাটিকে বুঝিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার। কিন্তু পারছে না।

” কথা বলবে না ছোঁয়া?

ছোঁয়ার থেকে জবাব না পেয়ে বলে মিহি।
ছোঁয়া কটমট চোখে তাকায় মিহির দিকে।

“আমার স্বামীর কাঁধে কপাল ঠেকিয়ে কেঁদেছিলেন৷ আমি ভুলে যাই নি। আমার সাদিকে টাচ করার সাহস হয় কি করে? কেনো ছুঁয়েছিলেন? এই মুহুর্তে আপনার কপাল আমি ফাটিয়ে দিলে ব্যাপাটা ভালো দেখাবে?

উচ্চ স্বর ছোঁয়ার। কথায় বা আঁখি পল্লবে রাগের ছড়াছড়ি। ফর্সা গোলগাল মুখখানা লাল হয়ে উঠেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। রাগের কারণে বোধহয় মেয়েটার নিঃশ্বাসও জোরে জোরে পড়ছে।
মিহি সব কিছু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

” রেগে গেলে তো হেরে গেলে ছোঁয়া।

আলতো হেসে বলে মিহি।

“ছোঁয়া চৌধুরী হারতে শিখে নি। সাদমান চৌধুরী আমার। একান্তই আমার। তার দিকে নজর দিবেন না আপনি। এটা আমার ওয়ার্নিং।

ছোঁয়ার উচ্চ স্বরের কথায় দমে যায় মিহি। এসেছিলো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।কিন্তু উদ্দেশ্য খানা এই মুহুর্তে বলে দিলে ছোঁয়া কিছুতেই মানবে না।

” ঠিক আছে নজর দিবো না। তো একটা প্রশ্নের জবাব দাও। কেনো এতো ভালোবাসো তাকে? তার তো প্রচুর টাকা পয়সা নেই। দেখতেও আহামরি রাজকুমার নয়। বয়সটাও বেশি। তাহলে?
কি দেখে পাগল হলে?

“ভালোবাসা কখনো বয়স মানে না। টাকা পয়সার বিচার করে না। আমার চোখ দুটো খুলে নিয়ে নিজের চোখে লাগিয়ে দেখুন৷ এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরতম ব্যক্তি হচ্ছে আমার সাদু। তাকে ভালোবাসার জন্য আমার শ-খানিক কারণ লাগে না। বরং তাকে ভালো না বাসার জন্য অনেক কারণ লাগবে৷

মুগ্ধ হয় মিহি। নিজের ওপর রাগ হয়। এভাবে কখনোই ভালোবাসতে পারে নি সে। ভালোবাসতে পারলে অবশ্যই তার জীবনে এমন একটা দিন আসতো না।

” সাদি যদি আমাকে চায়? তোমাকে ডিভোর্স দিতে চায়?

মিহির প্রশ্নে ছোঁয়ার বুক কেঁপে ওঠে। হৃদয়ের আর্তনাদ শুরু হয়ে যায়। তবুও মিহির সামনে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে নারাজ সে।
বুক ফুলিয়ে জবাব দেয়
“আমি আটকে রাখতে জানি। আগলে রাখতেও জানি৷ আমার সাদি কখনোই আপনার কাছে ফিরবে না। আর ফিরতে চাইলেও আমি ফিরতে দিবো না। আমার অনেক সাধনার ফল সাদু, আমার বর। তাকে প্রাণ থাকতে আমি হারাতে দিবো না।

বলেই ছোঁয়া কলেজের দিকে চলে যায়। মিহির আর একটা কথাও সে শুনতে নারাজ। কলেজের গেইটের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়ে ছোঁয়া। মিহি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কলেজে নতুন বিল্ডিং দেওয়া হচ্ছে। তারপর জন্য ইট ভেঙে রাখা হয়েছে। ছোঁয়া এক টুকরো ইট খুঁজে ছুঁড়ে মারে মিহির কপাল বরাবর। ছোট থেকেই ঢিল ছোঁড়ায় এক্সপার্ট ছোঁয়া। তাই এবারের ঢিলটাও বিফলে যায় না। সোজা গিয়ে লেগে পড়ে মিহির কপালে। মুহুর্তেই কপালে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে মিহি। ছোঁয়া বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে ক্লাসের দিকে চলে যায়।

__

সাদি সবেই বাসায় এসে পৌঁছালো। ভীষণ ক্লান্ত সে। বড় একটা জার্নি। বরাবরই জার্নিতে অসুস্থতা অনুভব করে সাদি। ইচ্ছে ছিলো বাসায় ফিরবে। কিন্তু মানুষের কোলাহল ভালো লাগবে না এই মুহুর্তে। তাই বাসায় ফেরা হলো না। ভেবে নিয়েছে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবে।
তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। সাদি বিরক্ত। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এই মুহুর্তে সামির ছাড়া কেউ আসে নি এটাই তার ধারণা।
ঘামে ভেজা সাদা রংয়ের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে দরজা খুলে দেয় সাদি।
সাথে সাথে ছোঁয়া শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদিকে।
সাদি প্রথমে হতদম্ভ হয়ে যায়। পরে মুচকি হেসে দুই হাতে আগলে নেয় আধ পাগল বউটাকে৷
ছোঁয়াকে ভেতরে এনে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।

“ইসসস কতো মিস করছিলাম আপনাকে জানেন আপনি? শেষমেশ আপনার দেখা পেলাম। শুনুন এটাই ছিলো আপনার বউ ছাড়া শেষ ঘুরতে যাওয়া। পরের বার থেকে আপনার সাথে যাবো আমি।

সাদি ছোঁয়াকে ছাড়িয়ে নেয় নিজের থেকে৷ সোফায় বসিয়ে দেয়। নিজেও বসে ছোঁয়ার পাশে। ছোঁয়া তার সুদর্শন বরটাকে দেখতে থাকে। আর সাদি চোখ বন্ধ করে ঘাম জুড়ানোর অপেক্ষায় থাকে

ছোঁয়া সাদির দিকে একটু চেপে বসে বলে
” শুনুন না একটা জিনিস ভেবেছি

সাদি চোখ বন্ধ করে গম্ভীর গলায় বলে
“বলো

” ভাবছি নকল একটা সার্টিফিকেট বানাবো।

ধপ করে চোখ খুলে সাদি। তাকায় ছোঁয়ার মুখপান।

“এভাবে কেনো তাকাচ্ছেন? বাবা বলেছে এইচএসসির পরে দুজনকে এক সাথে থাকতে। সেইইইইইই আরও দেড় বছর। এতোদিন আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
তো আমি যদি একটা নকল সার্টিফিকেট বানাতে পারি এইচএসসির। তাহলে বাবাকে দেখিয়ে বলতে পারবো ” দেখো বাবা পাশ করেছি। এবার আমাকে আমার সাদুর সাথে থাকতে দাও”
আইডিয়াটা দারুণ না?

সাদি হেসে ফেলে। থা*প্প*,ড় মারে ছোঁয়ার মাথায়। সাথে বিনুনি টেনে দেয়। কিঞ্চিৎ ব্যাথা পেলেও ছোঁয়া তা প্রকাশ করে না।

“লেজ ছাড়া বাঁদর। উনি তোমার বাবা।
ছোট বাঁদরের থেকে বড় বাঁদরের বুদ্ধি অলওয়েজ বেশি থাকে।

ছোঁয়া আবারও ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো। বাবা চট করে ধরে ফেলবে। সাদি ছোঁয়ার আঙুল গুলো দেখতে থাকে আর ছোঁয়া ভাবতে থাকে। তারপর লাফিয়ে উঠে বলে

” তাহলে চলুন আব্দুল কুদ্দুসকে নিয়ে নেই।

সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
“কিভাবে নিবো? আর আব্দুল কুদ্দুস কে?;

” কে আবার আমার আর আপনার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো তো। মেয়ে দিয়া ছেলে কুদ্দুস। দারুণ না?

“এইসব উদ্ভট নাম তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে?

” পাশের বাসার দাদিমার ছেলের নাম কুদ্দুস। দাদিমা দাদুকে ডাকতেছি “ও কুদ্দুসের বাপ আইসা দেখো তোমার আকাইম্মা কুদ্দুস মাইয়া লইয়া আইছে”
উফফফ কি যে জোশ লাগছিলো। তখনই ঠিক করে ফেলি আমার ছেলের নাম আব্দুল কুদ্দুস রাখবো।
তারপর আপনাকে ডাকবো “ও কুদ্দুসের বাপ। আপনার কুদ্দুস আপনার মতোই নিরামিষ হইছে। আমার তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখায় না।

ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হাসি আটকাতে পারে না। বা হাত চোখের ওপর রেখে হো হো করে হাসতে থাকে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদির হাসি দেখতে থাকে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৫
#তানিশা সুলতানা

পুলিশ স্টেশন এ ডাকা হয়েছে সাদি এবং ছোঁয়াকে। মিহি নামের একটা মেয়ের মাথা ফাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন অসুস্থ ব্যক্তি নিজেই।
সাদি ভ্রু কুচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ছোঁয়ার মুখপানে। মেয়েটা মিহির মাথা ফাঁটিয়েছে? এতোটা ডেঞ্জারাস?
ব্যাপারটা সাদির বিশ্বাসই হচ্ছে না। ছোঁয়া এমন একটা কাজ করতে পারে? মেয়েটাকে মাঝেমধ্যে চিনতে অসুবিধা হয়।
তবে এটা নিয়ে ছোঁয়ার চোখে মুখে কোনো অনুসূচনা প্রকাশ পাচ্ছে না। সে দিব্যি সাদির হাত জড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে।
সাদি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করে নি। এমনকি ছোঁয়াকে জানানোও হয় নি তারা থানায় যাচ্ছে। জানলে কি মেয়েটা ভয় পাবে?

পুলিশের সামনে বসে আছে ছোঁয়া এবং সাদি। ওদের থেকে একটু দূরে মিহিও বসে আছে৷ তার কপালে ব্যান্ডেজ করা। গুটি কয়েক পুলিশ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। জেল খানা দেখতে পাচ্ছে না ছোঁয়া। সে আপাতত উঁকি ঝুঁকি মেরে জেল খানা দেখতে চাচ্ছে। পুলিশদের মাথার ক্যাপটা একবার পড়ে দেখতে চায় ছোঁয়া। বা রিভেলবারটা একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। সাদি পাশে না থাকলে অবশ্যই নিজের ইচ্ছে কথা পুলিশকে জানিয়ে দিতো। কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে জানাচ্ছে না। এতোগুলো পুলিশের সামনে ধমক খেলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।

পুলিশ অফিসার আসিফ সাদি এবং মিহির ক্লাসমেট। এই সামান্য কারণে থানা ওবদি আসার মোটেও কোনো কারণ হয় না।মিহি শুধুমাত্র ছোঁয়াকে একটু অপমানিত করতে চায়। অপমানিত হলে নিশ্চয় মেয়েটার এই হাসিহাসি মুখটা চুপসে যাবে। তাই সে আসিফকে বলে সাদিকে কল করায়। তাছাড়া বাচ্চা মেয়ে আজকে মাথা ফাঁটানোর সাহস পেয়েছে কাল বড় কোনো অপরাধ করার সাহস পাবে। আগে থেকেই একটু বকে দিকে নেক্সট টাইম এমন করবে না।

আসিফ চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে তাকায় সাদির দিকে। সাদির চোখে মুখে প্রশ্ন। তাদের কেনো এখানে ডাকা হয়েছে? নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছে না। যেহেতু ডেকেছে সেহেতু তারাই বলবে। শুধু শুধু আগে আগে জিজ্ঞেস করার মানে হয় না।
“আপনার বউ মাথা ফাঁটিয়েছে। দিনে দুপুরে মানুষ খু*ন করার চেষ্টা। জানেন আপনি?

সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে। পা গুটিয়ে বসে তাকায় মিহির দিকে। মিহির দৃষ্টি সাদির দিকে। মাথাটা আবারও গরম হয়ে যায় ছোঁয়ার।

” দেখছো বুড়ি তুমি এখানে আছো তবুও আমার বর তোমার দিকে তাকাচ্ছে না। তাহলে ভাবো তুমি ঠিক কতোটা বিশ্রী দেখতে। তোমার থেকেও তো এই পুলিশ কাকু সুন্দর বেশি। তার দিকেও চার বার তাকিয়েছে।

মিহি থমথমে খেয়ে যায়। সে সাদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। পুলিশও সরু চোখে তাকায়।

“অপরাধ করেছো তুমি। এখনো এভাবে হাসছো কি করে?

আসিফ গম্ভীর গলায় বলে। পুলিশলর পেশায় এমন। নরম গলায় কথা বললে অবশ্যই আসামি ভয় পাবে না। উল্টো আশকারা পেয়ে যাবে।
ছোঁয়া পা নামিয়ে টেবিলে দুই হাতে দিয়ে একটু ঝুঁকে পুলিশকে উল্টো প্রশ্ন করে
” আপনার মনে হলো আমি অপরাধ করেছি?

“অবিয়েসলি

” আপনার বউয়ের কাঁধে কেউ কপাল ঠেকিয়ে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করলো। আপনার বউকে পটিয়ে আপনার সংসার ভাঙার চেষ্টা করলো। এমনকি আপনাকে হুমকি দিলো আপনার বউকে ছেড়ে দেওয়ার। তখন আপনি কি করবেন?

জটিল প্রশ্ন। সাদির হাসি পাচ্ছে। এতখনে সে বুঝতে পারলো কেনো পা ভেঙেছিলো ছোঁয়ার। কেনো কথা বলে নি। এবং কেনো আজকে এমনটা করলো। মেয়েটাকে আর আধ পাগল বলা চলে না। ফুল পাগল সে।
আসিফ খানিকক্ষণ ভাবে। সত্যিই তো। এমনটা করলে কখনোই মাথা ঠান্ডা রাখে যাবে না।

“আমি তাকে জেলে পুরবো।

” আপনার জেল আছে আপনি জেলে পুরবেন। আর আমার হাত আছে আমি ঢিল ছুঁড়েছি। হিসাব ক্লিয়ার?
এখানে আমি কোনো অপরাধ করি নি। আপনি বরং ওই মিহি ফিহি বুড়িকে জেলে পুরে রাখেন। আস্ত একটা শয়তান সে।
জানেন কি করেছে?

আসিফ মাথা নারায়। মানে সে জানে না।

“আমাকে বলে কি না আমার বরকে নিয়ে নিবে। আমি কষ্ট করে বিয়ে করি নি? আমি কান্নাকাটি করে বিয়ে করেছি। বিয়ের দিন আমাকে পাঁচশো কিলোমিটার হাঁটিয়েছিলো। এতো কষ্টের বিয়ে। আর আমি তাকে জামাই দিয়ে দিবো?

আসিফ শুকনো ঢোক গিলে। তাকায় মিহির দিকে। সে রাগে ফুঁসছে। সাদি একবার ভুল করেও তাকায় নি মিহির দিকে। এটাই রাগের কারণ। একটা সময় তাদের রিলেশন ছিলো। সাদি তাকে ভালোবাসতো। এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো? মিহিকে ভুলে গেলো?

আসিফ জবাব দিতে পারছে না।
সাদি গম্ভীর গলায় বলে
“মিহিকে সরি বলো জলদি। বাসায় যেতে হবে।

ছোঁয়া ভেংচি কাটে। মিহিকে সরি বলবে? ওই মিহিকে? কখনোই না। পারলে পুলিশের রিভলভার নিয়ে শু*ট করবে তবুও সরি বলবে না।

” সরি তো বলবে পুলিশ কাকু। যুক্তি না বুঝে একটা বুড়ির কথায় নাচতে নাচতে আমাকে মানে ছোঁয়া চৌধুরীকে ডেকে আনলো? মানসম্মান হার্ট হলো না আমার?

আসিফ মাথা নারায় সত্যিই তো মানসম্মান হার্ট হলো।

“আচ্ছা সবই বুঝলাম। কিন্তু মিহিকে বুড়ি কেনো বলছো?

” ও মা বলবো না? বয়স কতো ওনার? আমার জামাইয়ের যদি বত্রিশ হয় তাহলে ওনারও বত্রিশ। আঠারোর নিচে সবাই শিশু। আর ত্রিশের ওপরে সবাই বুড়ো।

আসিফের মাথা ঘুরছে এই মেয়ের কথা শুনে। সে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে

“এটা মেয়ে না এলিয়েন?

সাদি একটু হেসে বলে
” আমার আধ পাগল বউ।

আসিফের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। সাদি হাসলো? বেচারা হাসতেও শিখে গেছে। মেয়েটা জাদু জানে।
আসিফ এবার মিহিকে বলে
“ওর কোনো দোষ নেই। তুই ই উস্কে দিয়েছিলি ওকে। যেটা অন্যায় করেছিস। নেক্সট টাইম এরকম ছোট খাটো বিষয়ে থানায় আসবি না।

মিহি দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সাদির মুখপানে। সাদি এখনো তাকালো না মিহির দিকে। মিহি গটগট পায়ে চলে যায়।

__

ছোঁয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিতে বলেছে ছোঁয়া। সাদি বেশ অবাক হয়েছে। এই মেয়ে তো পেছন ছাড়ে না। আজকে হঠাৎ কি হলো এর? নিজে থেকেই বাড়ি যেতে চাইছে?
তবে প্রশ্ন করে না। চুপচাপ আছে থাকুক। একবার কথা বলা শুরু করলে থামানো যাবে না।
সিএনজি নিয়েছিলো সাদি।
একটা সেকেন্ডও সে রেস্ট নিতে পারে নি আধপাগল বউটার জন্য। তবে তার ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে। আধ পাগল সাথে থাকলে তার কখনোই ক্লান্ত লাগে না।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ছোঁয়া নেমে পড়ে। সাদিও নামে ছোঁয়ার সাথে।

” দেখুন আব্দুল কুদ্দুসের বাপ। আপনি প্লিজ আমার পেছনে আসবেন না। আমার সাথে ঘুরঘুর করবেন না। আমি আব্বুকে কথা দিয়েছি। এইচএসসি শেষ না করে আপনার বাড়িতে যাবো না। আমি সরল মানুষ। আপনি ঘুরঘুর করেন মুখ ফুটে না করতে পারি না।
প্লিজ আর এমন করবেন না। আমি আব্বুকে তো আর বোঝাতে পারবো না আপনি কিভাবে পেছনে লেগে থাকেন।

ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হতদম্ভ। ডাইভার মিটমিট করে হাসছে।

চলবে

হৃদয়হরণী পর্ব-৩২+৩৩

0

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩২
#তানিশা সুলতানা

গিফট!
খুব ছোট্ট একটা শব্দ। তবে এই শব্দটার ওজন অনেক ভাড়ি। গিফট যে কোনো মানুষকে খুশি করতে সক্ষম। যে কোনো মানুষের মন খারাপ দূর করে দিতে পারে। এই যে ছোঁয়ার মনটা আনন্দে নেচে নেচে উঠছে। কারণ তার প্রেমিক পুরুষ তাকে গিফট দিয়েছে। বিয়ের পরে এই প্রথমবার লোকটা ছোঁয়াকে গিফট দিলো। সেই গিফটটার মূল্য কতো জানা নেই ছোঁয়ার তবে ছোঁয়ার কাছে তা কোটি কোটি টাকার সমান মূল্য।
বিবাহিত মেয়েদের সব থেকে শখের যে জিনিসটি তা হলো নাক ফুল। স্বামীর থেকে নাক ফুল সব মেয়েরাই আশা করে। ছোঁয়াও আবদার করেছিলো সাদির কাছে। কিন্তু সাদি দেয় নি। আর ছোঁয়াও এতো গুরুত্ব দিয়ে চায় নি। সাদির থেকে জোর করে নাক ফুল আদায় করা ছোঁয়ার জন্য কঠিন কোনো বিষয় নয়।

ডায়মন্ডের নাকফুল। দেখতে দারুণ। ছোঁয়া সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। আর সাদি ছোঁয়াকে দেখছে। সামান্য গিফট পেয়ে মানুষ এতোটাও খুশি হতে পারে?

“আমাকে পরিয়ে দিবেন?

নিঃসংকোচ আবদার। না করার সাধ্য সাদির নেই। সে ছোঁয়ার হাত থেকে নাক ফুলটা নেয়। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে মুখটা এগিয়ে দেয়। ছোঁয়ার নাকে থাকা ছোট্ট নাক ফুলটা খুলে নেয়। ছোঁয়া একটু ব্যাথা পেলেও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
এরপর সাদি খুব যত্ন নিয়ে ছোঁয়া নাকের বা পাশটায় থাকা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে নাক ফুলটা ঢুকিয়ে দেয়। ছোঁয়া গোলগাল মুখখানায় দারুণ মানিয়েছে নাকফুলটায়। পুরো মুখেরই যেনো অদল পাল্টে গেছে। অন্য রকম মোহনীয় লাগছে মেয়েটাকে।
ছোঁয়া চোখ খুলে হাসে। তাকায় প্রেমিক পুরুষের মুখপানে।

” সুন্দর লাগছে না?

প্রশ্ন করে সাদিকে। সাদিও মুচকি হাসে। ডান হাতটা রাখে ছোঁয়ার গালে।

“তুমি খুশি তো?

” আপনি আমার সাথে ভালো করে একটু কথা বললেই আমি খুশি হয়ে যাই”

সাদি বাম হাতটাও রাখে ছোঁয়ার অন্য গালে। দুই হাতে ছোট্ট মুখখানা উঁচু করে ধরে। ওষ্ঠ ছোঁয়ায় ললাটে। পরপর নাক ফুলের ওপরের ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া সত্তা। লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে মুখখানা। আঁখি পল্লব খুলে তাকানো দায়। প্রেমিক পুরুষের প্রেমময় ছোঁয়া বুকে কম্পন শুরু করে দিয়েছে। চঞ্চল ছোঁয়ার চঞ্চলতা মিয়িয়ে গিয়েছে। মাথা থেকে দুষ্টুমি বুদ্ধি বুঝি বিলুপ্ত হয়ে গেলো?
স্বামীর স্বইচ্ছায় সনিধ্য পেয়ে মেয়েটা বুঝি বড় হয়ে গেলো? আর বুঝি দুষ্টুমি করবে না? এই বুঝি লক্ষী বউ হয়ে উঠলো?

সাদির ভাবনাখানা প্রকাশ করার আগেই ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে ওঠে
“আপনার দাড়ি গুলো আমাকে বড্ড জ্বালাতন করে। কাতুকুতু দেয়। হাসি পায় আমার।
হাসি পেলে রোমাঞ্চ করবো কিভাবে? মুড নষ্ট হবে না?”

ছোঁয়ার কথায় সাদি ছোঁয়াকে ছেড়ে দেয়। এবার আর মুচকি হাসি নয়৷ ওষ্ঠদ্বয় মেলে দিয়ে খানিকটা শব্দ করেই হেসে ওঠে সাদি। এই মেয়ের থেকে ম্যাচুউরিটি আশা করেছিলো সে।
ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদির হাসি দেখছে। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ
হাসলে মানুষটাকে অনেক সুন্দর লাগে।
বাম গালে টোল পড়ে। গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় বড্ড মোহনীয় লাগে। হাসি দিয়ে নারীদের কাবু করতে পারবে সে। কিন্তু ছোঁয়া সেটা হতে দিবে? লঙ্কা পোড়া দিবে লোকটার চারপাশে

“আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সামনে আপনার হাসা বারণ।

সাদির ছোঁয়ার নাক টেনে দিয়ে জবাব দেয়
” আমার শয়তান বউ জেলাস হবে এটাই তার কারণ

___
মানুষ গিরগিটির মতো রং কি করে বদলায়? এই তো সেই দিন ছোঁয়াকে কতো ভালোবাসে চুমু খেয়ে বিদেশে পাড়ি জমালো সাদি। ছোঁয়া ছোট্ট সত্তা ভেবে নিয়েছিলো তার বর বুঝি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এবার থেকে দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। কেটে গেছে তিনটে দিন অথচ সাদি একবার কলও করলো না। চিন্তা হয় না ছোঁয়ার?
সাবিনা বেগম তো একটু পরপর আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠছে। তার কান্না দেখে ছোঁয়ার বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
সেলিম বিরক্ত।
খাবার টেবিলে সকলকেই খাবার পরিবেশন করছেন নাজমা বেগম। সাবিনা নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে না। সিমি রান্নায় সাহায্য করেছে নাজমা বেগমকে। মমতা বেগমও একটু পরপর আহাজারি করে উঠছে।
সাজ্জাদ সেলিম এবং সিফাত খাচ্ছে। সিমি পরিকে খাওয়াচ্ছে। ছোঁয়া ভাতের থালায় হাত নাড়াচাড়া করছে। মুখে খাবার তুলতে পারছে না সে।

মেয়ের এই করুন অবস্থা এবং সকলের চিন্তিত মুখ দেখে সেলিম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে ওঠে
“এতো ইরেসপন্সিবল ছেলে আমি জীবনে দেখি নি। বেয়াদব একটা। বাড়ির সকলে চিন্তা করবে এটা তার মগজে নেই?

সাজ্জাদ বিরক্ত হয়। কোনো একটা কারণে সাদিকে একদম পছন্দ করে না সেলিম৷ দুচোখে দেখতে পারে না।
বাবার কথায় ছোঁয়ার চোখে পানি চলে আসে। বেয়াদব কেনো বলবে?
কিন্তু বাবার মুখের ওপর জবাব দিতে পারে না।

সিফাত বলে
” আব্বু মোটেও সাদি বেয়াদব না। হতে পারে কাজে আটকে পড়েছে।

“সেটা বোঝাও তোমার বোনকে৷ বড় হয়ে গেছে সে। একা একা বিয়ে করেছে। এখন স্বামীর চিন্তায় শোক দিবস পালন করছে।

বাবার কথা শুনে ছোঁয়া মুখে ভাত পুরে দেয়। গাল ভর্তি করে ভাত নিয়ে পানি দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছে। নাজমা বেগম মেয়ের কান্ড দেখে কিন্তু কোনো জবাব দেয় না।

” বাবা এভাবে কেনো বলছো?

সিমি বলে ওঠে
“মুখে মুখল কথা বলবে না সিমি। বিরক্ত লাগে আমার।

সিমি আর কথা বলার সাহস পায় না। আর বাকি সবাইও কথা বলে না। চুপচাপ খেতে থাকে।

খাওয়া শেষে রুমে এসে সাদির নাম্বারে কল করে ছোঁয়া। যদিও বাংলাদেশের নাম্বারে কল যাবে না। বিদেশে গিয়ে নতুন সিম নিয়েছে সেই সিমের নাম্বার ছোঁয়ার জানা নেই। তবুও কল করে যাচ্ছে।
ইমু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক কোথাও সাদিকে একটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার। ওয়ালপেপারে থাকা সাদির ছবিখানার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে

” আপনাকে ভালোবেসে দুটো সেকেন্ডও আমি শান্তিতে থাকতে পারলাম না। একটা দিনও ভালো থাকতে পারি নি। খুব বেশি ভুল করে ফেলেছিলাম আপনাকে ভালোবেসে? সেই ভুলের শাস্তি দিচ্ছেন আমায়? আমি মরে গেলে কাকে জ্বালাবেন সাদি? কাকে এতো কষ্ট দিবেন?
মনটা পুরবে না আপনার?

ফোনটা ছুঁড়ে মারে ছোঁয়া। বিছানার এক পাশে অযত্নে পড়ে থাকে। বালিশে মুখ গুঁজে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। এটা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই।
কতোখন কেঁদেছে জানা নেই ছোঁয়ার। তবে চোখ দুটো যখন একটু লেগে এসেছিলো, নিদ্রা ভর করেছিলো দুই চোখে তখনই বিকট শব্দে ফোনটা বেজে ওঠে।
চমকে এক লাফে বসে পড়ে ছোঁয়া। কাঁচা ঘুম ভাঙার ফলে বুক কাঁপছে মস্তিষ্ক কাজ করছে না। হাত এগিয়ে ফোনটা তুলে নেয়। স্কিনে বিদেশি একটা অচেনা নাম্বার ভেসে ওঠে।
সাদি বুঝি কল করলো?
পাগল ছোঁয়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। তারাহুরো করে কল রিসিভ করে।

চলবে

#হৃদয়হরণী
#পর্ব:৩৩
#তানিশা সুলতানা

বিরহ মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। অভিমানে বুক ভেসেছে সরল কন্যার। অশ্রুকণা আটকাতে ব্যর্থ সে। নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না তবুও মনকে মানাতে পারছে না।
প্রেম তাকে সুখ এনে দিতে পারে নি। প্রেম তাকে ভালোবাসা দেয় নি৷ বরং প্রেম তাকে পাহাড় সমান দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।
নিজের সত্তাকে পাগল ভাবতে বাধ্য করেছে।
কান্না করার একটা বাজে দিক হলো নাক দিয়ে পানি পড়বে, মাথা ব্যাথা করবে এবং আঁখি পল্লব ফুলে উঠবে। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েদের চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে।
সরল কন্যার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন আঁখি পল্লবে বৃষ্টি কমেছে তবে নাক পিটপিট কমছে না। সমানে নাক টেনে যাচ্ছে।

সাদি বরাবরই ধৈর্যশীল। সে ধৈর্য সহকারে প্রেমিকা রূপি বউয়ের নাক টানার শব্দ শুনছে। মনে মনে এঁকে ফেলে এই মুহুর্তে ইডিয়েটটাকে কেমন দেখতে লাগছে?
সিঁচকাদুনি মেয়ে।
তবে সাদি মুখের ওপর বলতে পারলো না কথাটা। মনে মনে আওড়ালো বেশ কয়েকবার।
সে অপেক্ষায় আছে ইডিয়েটের থেকে কিছু শোনার। তবে ছোঁয়া কথাই বলছে না।
দীর্ঘ সময় পার হয়। সাদি শ্বাস টেনে শুধায়

“কেমন আছো?

প্রেমিক পুরুষের মধুর সুরের কথা মন গলিয়ে দেয় ছোঁয়ার। তবে অভিমান কমে না। আবারও ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। এতোদিন পরে মনে পড়েছে তার? জানতে ইচ্ছে হয়েছে ” কেমন আছে?”
এই বদ লোকটার সাথে কথা বলাই উচিত না।

আবারও ছোঁয়ার কান্নার শব্দে সাদি বিরক্ত হয়। নাক মুখ কুঁচকে বলে
“ওকে রাখছি আমি।

” হ্যাঁ রাখুন। কথা বলবো না আপনার সাথে। সারাক্ষণ কথা বলবো না, ছেড়ে দিবো এমন ভয় কেনো দেখান? আপনার প্রতি একটু বেশিই দুর্বল বলে? আমার দুর্বলতা জেনে গেছেন বলে? ভেবে নিয়েছেন আপনি যাই করবেন পাগল ছোঁয়া সারাজীবন আপনার লেজ ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে ওঠে ছোঁয়া। সাদির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ইদানীং এক অদ্ভুত রোগ বাসা বেঁধেছে বুকের ভেতর। সারাক্ষণ মুচকি হাসি চলে আসে। গম্ভীর হয়ে থাকতেই পারছে না।
এই তো মিটিং এর মধ্যে হুট করে সাদি হেসে ওঠে। একটু শব্দ করেই হেসেছিলো। বস সহ সকলেই হা করে তাকিয়ে ছিলো সাদির। দিকে। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো সাদি। পাগল ছোঁয়া সাদমান চৌধুরীকেও পাগল বানিয়ে দিয়েছে৷

ছোঁয়ার নাক টানার শব্দে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে ছোঁয়াতে মনোযোগ দেয় সাদি। বুকে বালিশ জড়িয়ে আধশোয়া হয়।

“কাঁদে না জান।
কথা শুনো।

ছোঁয়া কান্না থামায়। প্রেমিক পুরুষের মুখের জান ডাকটাতে যে নেশা মেশানো আছে। ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তাকে নারিয়ে দিতে সক্ষম সেই নেশা।
বিছানায় টিস্যুর ছড়াছড়ি। কেঁদেছে আর নাক পরিষ্কার করেছে যে।
টিস্যু বাক্সে শেষ দুটো টিস্যু আছে। একটা নিয়ে নেয় ছোঁয়া। ভালো করে নাক এবং চোখের পানি মুছে নেয়।

” এতো কাজের চাপ ছিলো। বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কল করি নি৷

ছোঁয়া ঢোক গিলে বলে
“বড় মায়ের সাথে কথা বলেছেন?

” হুমম
মায়ের সাথে কথা বলেই তোমাকে কল করলাম৷

“আমাকে এতো জ্বালান কেনো আপনি?

” এখনো তো শুরুই করি নি জ্বালানো। এইচএসসিটা শেষ করো তারপর তোমাকে জ্বালানোর পিএইচডি দেখাবো।

লজ্জা পায় ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু এখানে লজ্জার কি হলো এটা নিজেও বুঝে না। ইদানীং লজ্জা নামক শব্দটা একটু বেশিই ঘায়েল করছে ছোঁয়াকে।
লজ্জা কমাতে ছোঁয়া রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করে
“ফিরবেন কবে?
” কালকে।
“আমি কিন্তু আপনার সাথে থাকবো। এখানে থাকবো না আমি। আমাকে না রাখতে চাইলে থানা পুলিশ করবো। কাঠ কাঠ বলে দিলাম।

আবারও হাসে সাদি।
” আচ্ছা থাকবে।

“আপনাকে আমি ভালোবাসি।

” জানি আমি।

“আপনি বাসেন না?

” জানি না।

“জানতে হবে। আমি একা একা অনেকদিন ভালোবেসেছি এবার আপনিও একটু বাসুন না। কতোকাল একা একা পাগলামি করবো? একটু সঙ্গ চাই আমার।

” আচ্ছা
গুড নাইট। কাল দেখা হবে।

সাদি কল কেটে দেয়। ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। লোকটা এমন কেনো? একটু ভালোবাসলে কি হবে?
“ভালোবাসা লাগবে না আমার। শুধু আমার হয়ে থাকুক। আমার কাছে থাকুক। আমি তাকে দু চোখ ভরে সারাজীবন দেখতে পারলেই হলো। ভালোবাসা লাগবে না।

___

মনটা ভীষণ খুশি ছোঁয়ার। আজকে যে সাদি ফিরবে। নাজমা বেগমের গাল ধরে ঝুলে আছে ছোঁয়া। নাজমা বেগমের দুই হাতো ময়দা লেগে আছে তাই ছোঁয়াকে ছোটাতে পারছে না নিজের থেকে।

” ছোঁয়া ছাড় আমায়। বাঁদরের মতো কেনো ঝুলছিস?

ছোঁয়া টুপ করে মায়ের গালে দুটো চুমু খেয়ে নেয়।

“আমাকে ভালোবাসি বলো। নাহলে ছাড়বোই না তোমায়।

” ভালোবাসি ছাড় এবার।

“রেগে নেই তো আমার ওপর? অবশ্য রেগে থাকলেও চলবে। যখন আমার বেবি হবে বেবির মুখ দেখে আর রাগ করতে পারবে না।

নাজমা কটমট চোখে তাকায় মেয়ের দিকে।

“সর আমার সামনে থেকে। কাজ করতে দে।

ছোঁয়া নাজমা বেগমের নাকে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায়। নাজমা বেগম মুচকি হাসে।
ছোঁয়া এবার বাবার রুমে ঢুকে। সেলিম অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ছোঁয়া এগিয়ে দিয়ে বাবার ট্রাই হাতে নিয়ে বেঁধে দিতে থাকে। সেলিম সরু চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

” আব্বু আমি রিয়েলাইজ করলাম। তোমার কথা না শুনে সাদুকে বিয়ে করে ভুল করেছি। আমি তো ছোট বলো। কিউট একটা বেবি না? ভুল তো করেই ফেলেছি। এবার আমার ওপর রাগ করে থাকলে তো আর ভুলটা সঠিক হয়ে যাবে না তাই না?
শেষবারের মতো আমাকে ক্ষমা করো। এই যে তোমার চুল ছুঁয়ে বললাম আর জীবনেও ভুল করবো না। পাক্কা প্রমিজ।

মেয়ের কথা বলার ভঙিমা দেখে হেসে ফেলে সেলিম। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। মাথায় চুমু খায়।
“রেগে নেই আমি। তবে আমি চাই তুমি এইচএসসি শেষ করো তারপর এসব নিয়ে ভাবো। দুটো বছর পুরোপুরি নেই। এই দিনগুলো পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করো।

” তুমি যেমনটা বলবে। তেমনটাই হবে।

__

সাদা কলেজ ড্রেস পড়ে মাথায় সাদা হিজাব জড়িয়ে দুই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছে ছোঁয়া। রিকশা পায় নি আজকে। তাই পায়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে। কলেজ শেষে সাদির বাড়িতে যাবে। ইসস কতোদিন পরে লোকটাকে দেখবে। খুশিতে মনটা লাফাচ্ছে ছোঁয়ার।

“তুমি ছোঁয়া?

হঠাৎ পেছনে থেকে কারো ডাক শুনে থেমে যায় ছোঁয়া। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় পেছনে।

চলবে