Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 436



হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-০২

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২
#জান্নাত _সুলতানা

-“যা বলেছিলাম তা করেছিস রাহান ।

-“জী ভাই, মাইশা প্রায় এক সাপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম আছে ফুফির বাসায়। ওর মা এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে চাইছিল। আর …
বলে থেমে গেলো রাহান

সাদনান রাহানের পানে দৃষ্টি দিলো
-“থেমে গেলি ক্যান, বল আর কি ?

রাহান আমতা আমতা করে বলল
-“আসলে ভাই ওই মহিলা মাইশার সাথে আপনার বিয়ে দিতে চায়। তাই ….

-“তাই প্রিয়তা কে বিয়ে দিয়ে পথের কাটা ছাফ করতে চেয়েছে।
রাহানকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো সাদনান

-“হে ভাই ওনি হয়তো কোনো ভাবে টের পেয়েছেন আপনি ভাবিকে ভালোবাসেন। তাই শফিক চাচাকে ফুসলিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে রাজি করিয়েছেন। আচ্ছা ভাই আমি এটা বোঝতে পারছি না শফিক চাচাতো আপনাকে কথা…
রাহানের কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না সাদনান
-“তোরা সবাই বাবার কাছে পার্টি অফিস যা। আমি ঘন্টা খানেক বাদে পৌঁছে যাব।
সাদনান কথা সমাপ্ত করেই বাইক স্টাট দিয়ে বাজারের পথে চলে গেলো।
রাহান সবাইকে নিয়ে পার্টি অফিস চলে গেলো।

—————————–

-“উফ, আমার যে কি খুশি লাগছে সারু। আমি পড়া লেখা করবো। ”
সারাকে জড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়তা
সারাও খুশি হলো কিন্তু প্রিয়তাকে ক্ষেপানোর জন্য বলল
-“পড়া লেখার জন্য নাকী অন্য কেউর জন্য খুশি সেটা আমি ভালো করেই জানি, হুু।”

-“কি বলতে চাইছিস তুই?”
ভ্রুু কুঁচকে প্রশ্ন করলো প্রিয়তা

-“আমার ভাইকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে না। ”

-“হুু, তোর ভাই বুঝলেতো।”

-“না বুঝলে কি আর বিয়ে ভেঙ্গে দিতো। ”

-“সেতো আমি ছোটো বলে। ”
সারা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“হুু, সময় এ বলে দিবে। ”
-“হুম। ”
সারা কিছু মনে করবার মতো হঠাৎ এ বলে উঠলো
-“শুন মা তোকে আমার সাথে যেতে বলেছে। তোকে নাকি অনেক দিন হয় দেখে না। ”
-“আচ্ছা কলেজ থেকে ফিরার সময় বাবাকে বলে দেখি। ”
কথা বলতে বলতে দুজনেই ক্লাস এ চলে এলো।
শফিক সওদাগরের আর আজ্জম মির্জা শৈশব থেকেই দুজনে এক সঙ্গে বেশ ভাব। তাই দুই পরিবারের মঝে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক।

—————————–

-” আসসালামু আলাইকুম চাচা। ”
হঠাৎ কারোর কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরেই বেশ অবাক হলেন। তবে নিজেকে সামলে সালামের উত্তর করলেন
-” ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসো বাবা। তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে? ”
-“জী চাচা ভালো। ”
-“তা হঠাৎ কিছু কি হয়েছে? ”
-“জী, চাচা অনেক কিছুই হয়ে যতো যদি না আমি কিছু করতাম। কেনো করলেন এমন? ”
শফিক মাথা নিচু করে নিলেন। কিভাবে তিনি একজকে কথা দিয়ে তার খেলাফ করতে পারেন।
বেশ অপরাধী গলায় বল্লেন
-“দেখো বাবা তোমার সাথে আমার মেয়ের যায় না। তুমি কোথায় আর আমার সম্পর্কে তো তোমরা জানো। ”
সাদনান কিছু টা অবাক করা কন্ঠে বলল
-“আপনি এসব কি বলছেন? আপনি আমার বাবার সাথে সেই ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে থেকেছেন তার পরও কি করে এসব বলতে পারছেন? তাছাড়া আমি যখন দেড়বছর আগে আপনাকে বলেছিলাম তখন আপনি বলেছিলেন প্রিয়তা ছোট একটু বড় হয়ে নিক আপনি নিজে তাকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন। আর এখন অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে চাইছেন।”
-“প্রিয়তার ফুফি চাইছে মাইশার বিয়েটা তোমার সাথে দিতে। মাইশা নাকি তোমাকে পছন্দ করে। ”
-“চাচা অপনি নিজে একবার মাইশাকে জিজ্ঞেস করবেন। আর হে, আমি চাইলে আপনার মেয়েকে দেড়বছর আগেই বিয়ে করতে পারতাম । কিন্তু কিছু করেনি কারণ আমি চাইতাম আপনার মেয়ে আমায় ভালোবেসে গ্রহন করুক। আর কাল আমি আপনার মেয়ের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমি দুই একদিনের মাঝে আবার ঢাকা বেক করবো। ফিরে এসে বাবাকে আপনার কাছে আসতে বলবো।”
শফিককে কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান বসা ছেরে উঠে চলে এলো। বাহিরে এসেই দেখলো সারা আর প্রিয়তা দুজনেই হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে।

-“তোরা এখানে? ”
সারাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করলো সাদনান
হঠাৎ সাদনানকে দেখে দুজনেই কিছু টা চমকে উঠলো। সাথে ভয়ও পেলো সারার হাত চেপে ধরলো প্রিয়তা। কাল রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে। কি হয়েছিল হঠাৎ কি করে এতো সাহস কোথা থেকে এসছিল কে জানে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সারা বলে উঠলো
-“আসলে হয়েছে কি ভাই মা প্রিয়তাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তাই চাচার কাছে বলতে এসছি।
আমতা আমতা করে বলেই দিলো।সাদনান একবার আঁড়চোখে প্রিয়তার পানে তাকায় যে এখন বাম হাত দিয়ে নেভি রং এর কলেজ ড্রেসটা খামচে ধরে। নিচের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা ওকে দেখলেই ভয় পায়। কাল হঠাৎ,, থাক এসব কথা সাদনান এসব ভাবনা সাইডে রেখে সারার দিকে শান্ত দৃষ্টি দিয়ে বলল
-“তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবি।”
বলেই বাইকে উঠে ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো।
ওরা দুজনেও হোটেলের ভিতর এলো
শফিক সাদনানের বলা কথা গুলো ভাবছে ওনি জানেন সাদনান একবার যখন বলেই দিয়েছে তখন সাদনানের কথার নড়চড় হবে না। তিনি নিজেও চায় না নড়চড় হোক। এসব ভাবনার মাঝে কানে ভেসে এলো তার একমাত্র রাজকন্যার কন্ঠ
-“বাবা?”

শফিক মেয়ের পানে তাকায়। তারপর নিজে উঠে মেয়েকে নিজের এক বাহুতে পুরে নিলো আর সারার হাত ধরে দু’জন কে নিয়ে বসে বলল
-“কলেজ কেমন কাটলো?

প্রিয়তা চট করে বলল
-“ভালো বাবা।”

শফিক সারার দিকে তাকায়
-“তা কি মনে করে দুই মা আজ এক সঙ্গে? ”
শফিক মিয়া জানেন দুজনেই নিশ্চয়ই কোনো মতলব নিয়ে তবে এসছে তাই সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো

সারার আমতা আমতা করে বলল
-“চাচা আসলে মা বলছিল প্রিয়তাকে আজ আমার সাথে নিয়ে যেতে। ”
বলে মাথা নিচু করে নিলো। শফিক মেয়ের পানে দৃষ্টি দেয় যে আপাতত বাবার দিকে অনুমতির আসায় তাকিয়ে। শফিক মেয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল
-“আমার মা যদি চায় তবেই । ”

সারা খুশি হলো সাথে প্রিয়তাও কিন্তু বাবা সামনে বলে তা প্রকাশ কলো না। শফিক মিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো দুজনে।

——————-

একজন প্রেমিক তার প্রিয়তমাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে রয়েছে যেনো ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবে? হে যাবেইতো আজ তো তাদের শেষ দেখা। আর বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা সে তো একটু পর পর ফুফিয়ে উঠছে হয়তো কান্না করছে প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে যেতে হবে বলে। বেশ অনেক টা সময় পর পুরুষটা তার বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা গালে আলতো করে ধরে মুখটা উঁচু করে অধর জোড়া ছোঁয়ে দিল রমনীটার কপালে।প্রিয় পুরুষটার ছোঁয়া যেনো কান্না গুলো আরো বেশি করে বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইলো কি? হয়তো তাই। তবে রমনিটা নিজেকে সামলে নিয়ে মানবটাকে প্রশ্ন করলো
-“কবে যাবেন মা আর মামার কাছে আয়ান ভাই?
-“যাবো খুব শীগগির জান। বাবা আর রাহাত ভাই দেশে আসবে এ মাসের মধ্যে। আর কটা দিন কষ্ট কর জান।”
আয়ান উত্তর দিয়ে আবারও জড়িয়ে নিলো তার প্রিয়তমাকে।
-“মাইশা তোর হলো?
রুমের বাইরে থেকে মিষ্টি কন্ঠে কেউ প্রশ্ন করলো
মাইশা ছিটকে দূরে সরে এলো। চোখের পানিটুকু মুছে পিছনে ফিরে দেখলো বাহিরে থাকা মানুষটা গড়ে প্রবেশ করেছে।
-“হে আয়না আপু শেষ। চলো। ”
আয়না ভাইয়ের পানে দৃষ্টি দিলো একাবার তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“মন খারাপ করে না সোনা। তোর ফুফা আর তোর রাহাত ভাই দেশে ফিরলে তোদের বাসায় যাবো আমরা। এখন চল তোর ডাইনি মা সেই সকাল থেকে ফোন করে করে আমায় জ্বালিয়ে মারছে তোকে কখন পাটাবো। এখনো পাটাইনি জানলে আমার আর রক্ষে নেই। ”
আয়নার কথায় ফিক করে হেসে দিল মাইশা। এটা দেখে আয়না বলল
-“এই তো আমার লক্ষি বোন। আর কান্না কাটি নয়। আয়ান যা যা গাড়ি বেড় কর। আমরা আসছি। ”
আয়ান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে গড় ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।আয়ান চলে যেতে মাইশা আয়নাকে জড়িয়ে ধরলো।
-“ইনিয়া কই আপু? ওকে তো দেখছি না।
-“ও ঘুমিয়ে আছে। ভালোই হয়েছে। নয়তো তুই যেতে পারতিস না। আবার তোর সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতো।”
মাইশা মুচকি হেসে বলল
-“হুম, ঠিক বলছো। আচ্ছা চলো।”
-“হুম। ”
বলেই আয়না মাইশাকে নিয়ে নিচে এলো।
-“সাবধানে যাস বোন। রাস্তা কেউ কিছু দিলে ভুলেও নিবি না সোনা।”
আয়নার কথায় আয়ান বেশ বিরক্ত হলো। তবে মাইশা বেশ মনোযোগ সহকারে কথা গুলো শুনছে। কারণ এটা ওর কাছে নতুন নয়। মাইশা চট্টগ্রাম এলেই আয়না প্রতি বার এসব বলে তাই মাইশার আর এখন বিরক্ত হয় না।
-“আপু তোমার হয়েছে? ও বাচ্চা নয় অনার্স এ পড়ে।তাই তুমি এসব বন্ধ করো। ”
তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“এই তুই আসবি নাকি আমি তোর ব্যাগ নিয়েই স্টেশনে গিয়ে রেখে আসবো?
আয়না আয়ানের দিকে কটমট করে তাকালো যেটার মানে আমি তোকে পরে দেখে নিবো। আর আয়ানের কথা শুনে চট করে গাড়ি দরজা খুলে আয়ানের পাশে বসে পড়লো। তার পর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আসি আপু।ইনিয়াকে দেখে রেখে। ”
মাইশার কথা শেষ আয়ান গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে গেলো আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না।

————————————–

-“আপনার বিয়ে করার খুব শখ তাই না প্রিয়তা?”
প্রিয়তা বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো সারা ঘুমিয়ে আছে তাই প্রিয়তা একা। হঠাৎ এমন কথায় বেশ অবাক হলো সাথে ভয়। কারন এমন শান্ত ভাবে সাদনান তখনই কথা বলে যখন সাদনান রেগে থাকে। প্রিয়তার পিছনে ফিরতেও ভয় লাগছে। তবুও অনেক কষ্টে পিছনে ফিরতে দেখতে পেলো সাদনানের রাগী চেহেরা। এতে যেনো আরো এক দফা ভয় পেলো। প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খোলবে কিন্তু সাদনান সেটা হতে দিল না তার আগেই তিরতির করে বলে উঠলো

-“আমি আপনার বিয়ে করার সখ মিটিয়ে দেবে আর কটা দিন অপেক্ষা করুন।এতো দিন আমি একা আগুনে পুড়েছি এখন থেকে আপনিও পুরবেন।”

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-০১

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

-“কেন বার বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন, সাদনান ভাই ? ”

লম্বাটে শক্ত পোক্ত পুরুষটি সামনে থাকা শ্যাম রমনীটার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিহ্মেপ করলো। এতেই যেনো মানবীটা এক অজানা ভয় তটস্থ হলো। কথা বলার বাকশক্তি হারি গেলো। ঠোঁট জোড়া নেড়ে কিছু বলার জন্য কুলিয়ে উঠতে ব্যার্থ হলো ।
কেন এই মানবটার সামনে এলে তার এমন হয়?
এই সাদনান নামক মানব টিকে তো আজ কিছু কটু বাক্য শুনাতে এসে ছিল সে । কেন প্রতি বার তার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। সে তো এই মানবটার প্রতি অনুভূতি গুলো মাটি চাপা দিয়ে দূরে চলে যেতে চাই। তাহেলে কেন এই মানবটা বার বার তার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়? এই নিয়ে চারটি বিয়ে ভেঙ্গেছে । মধ্যেবিত পরিবারের জন্য কি এটি চাট্টি খানি কথা? উঁহু মোটেও না। আর কতোটা লজ্জা জনক। একবারও কি এই মানবটা ভেবে দেখেছে। তাহলে কেন , সে বার বার চেয়েও কিছু বলতে পাড়ছে না।
বাইকে ঠেস দিয়ে হেলে থাকা মানবটা সামনে থাকা রমনীটার পানে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, ফের তার চার ধারে তাকায়
-“কেউ যেনো এদিক টা না আসে খেয়াল রাখবি।
যা। ”
সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে পেলে গুলোর কথাটা কর্নপাত হতে সবাই পস্তান করলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা একবার আঁখি জোড়া তোলে সামনে সাদনান নাম পুরুষটার পানে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কি আছে ওই নয়নে এ কেন সে ওই চক্ষু জোড়ার দিকে তাকি থাকতে পাড়ে না।

-“হে, এখন বলোন প্রিয়তা। কি যেনো বলছিলেন? ”
শান্ত দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে সাদনান

এতে যেনো প্রিয়তা নামের রমনীটা ভয়ে আর এক দফা আড়ষ্ট হলো । তবুও চেহারা সেটা ফুটতে দিলো না ।

-” আর কেউ না জানুক আমি তো জানি, আপনিই প্রতি বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন। কিন্তু কেন বার বার আমার বিয়ে ভেঙ্গে দেন ? এনিয়ে চাট্টি বিয়ে ভেঙ্গেছেন। জানেন এতে আমার বাবার লোকের সামনে কতটা অপমানিত, অপদস্ত হতে হয়েছে।
এক টানা কথা গুলো বলেই দম নিলো রমনীটি।

প্রিয়তা নামের রমনীটা চক্ষু কার্নিশ হতে গরিয়ে পরলো কয়েক ফোঁটা জল। এটা যেনো সামনে থাকা সাদনান নামক মানবটার সহ্য হলো না । হাত বাড়িয়ে মুছে দিতে গিয়েও ফের হাত নামিয়ে নিলো।

-“সবে মাত্র , এস এস সি, পরীক্ষা দিয়ে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছেন । এতো তারা কেন বিয়ে নিয়ে ? আমি চাচার সাথে কথা বলবো এবিষয়ে। আপনি বাড়ি চলে যান। ”
বলেই রাহান নামের একটা যুবক কে ডেকে ফের শুধালো
-“একটা রিকশা ডেকে ওনাকে বাড়ি পৌঁছে দে।
বলেই বাইক নামক জরব্যস্তুটাকে স্টাট দিল। ”

-“আমি একাই এসছি। ”
বলেই প্রিয়তা হনহনিয়ে হেঁটে যায়গা থেকে মূহুর্তের মধ্যে পস্তান নিল প্রিয়তা।

-“ভাই ভাবি কি কিছু নিয়ে রেগে আছে ?
রাহান সাদনানের বিশস্ত লোক ও সাদনানের ব্যাপারে সব জানে। এক কথায় সাদনানের বাম হাত।

-“এবারও বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি, রেগে থাকার কথা নয় কি রাহান? ”

-“ভাই ভাবির বাবার সাথে কথা বলে দেখেন না একবার। ”

সাদানান এবার বাইক থেকে নেমে রাহানের কাঁধে হাত রাখে
-“তোর কি মনে হয় চাচা আমায় এমনি এমনি সব বলে দিবে। যে কেন ওনি প্রিয়তা কে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছেন? উঁহু, কখনো না এর পিছনে নিশ্চিত অন্য কেউ আছে। ”
-“আপনার কি মনে হয় ভাই কে আছে? আর কি কারণ থাকতে পাড়ে বলে মনে হয়? ”
রাহান ফের প্রশ্ন করে

-“এখন বাড়ি যা। কাল দেখা হবে, আর যে কাজটা দিয়েছি ঠিক মতো করবি ।
সাদনান কথাটা বলেই বাইক স্টাট দিয়ে ধুলো উড়িয়ে পস্তান ঘটালো। আর পিছনে একঝাক প্রশ্নর ভিড়ে রেখে গেলো এক মানবকে।

———————————–

-“ভাইয়া বাবা তোমারে ডাকে। ”
সারা সাদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।

-“তুই যা। আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি। ”
শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল সাদনান

-“আচ্ছা। ”
শটকাট জবাব দিয়ে চলে গেলো সারা।

সাদনান ফ্রেশ হয়ে বাবার গড়ের দিকে হাঁটা ধরলো।
-“আসবো ? ”

-“এসো। ”
শান্ত স্পষ্ট স্বরে জাবাব এলো ভিতর থেকে।

সাদনান দরজা ঠেলে গড়ের ভিতর প্রবেশ করে।
-“ডেকেছিলে? ”

আজ্জম মির্জা ছেলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিজে বসে থাকা স্থানে পাশে ছেলেকে বসতে ইশারা করে । সাদনান বিনাবাক্য বাবার পাশে বসে পড়ে।

-“আব্বা আপনি কি জানেন, শফিক সওদাগরের মেয়ের বিয়েটা এবারও কেউ ভেঙ্গে দিয়েছে । ”
আজ্জম মির্জা কোনো ভনিতা না করে বলল

-“হুম বাবা, আমি খুঁজ নিবো ”
বাবাকে আশাস্ত করলো।

-“হুম , আরেক টা বিষয় আব্বা, শফিক হটাৎ কেন প্রিয়তা মাকে এতো তাড়াহুড়া করে বিয়ে দিতে চাইছে একটু খুঁজ নিবে। ওতো বলে ছিল ওর মেয়েকে অনেক পড়া লেখা করাবে। তাহলে এখন কেন এসব। ”
আজ্জম মির্জা চিন্তিত কন্ঠে বলল

এর মাঝে সাদনানের মা সালেহা বেগম, সাদনানের জন্য কফি আর স্বামীর জন্য চা নিয়ে উপস্থিত হলেন

-“হে আব্বা জান আপনার বাবা ঠিক বলছে। এ বিশয়টা একটু খুঁজ নিয়েন তো।

-“হুম, মা আমি খুঁজ নিবো তোমরা এনিয়ে চিন্তা করো না। আচ্ছা আমি গেলাম, ঘুমাব। ”
মা -বাবা দু’জন কেই কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো
“-বুঝতে পাড়ছি না কি হলো শফিের হঠাৎ করে? ”

-” আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না মেয়েটাকে এ বয়সে বিয়ে দিতে বা কেন পাগলো হলো শফিক ভাই। আচ্ছা যাই বলো বিয়ে গুলো যে ভেঙে দিচ্ছে সে ভালোই করছে। কি বলো? ”

আজ্জম সাহেব ওনার স্রীর কথায় শুধু মুচকি হেসে চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবতে মগ্ন হলো “চৌদ্দ বছর ধরে তো আর এমনি এমনি চেয়ারম্যানের করে আসছি না। আমি খুব ভালো করেই জানি তোমার ছেলেই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এটা ভালো, কিন্তু হঠাৎই কেন আজ্জম ওর মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছে? ”
ওতো আমায় বলেছিল ওর মেয়েকে অনেক পড়া লেখা করাবে।

——————————

-“ভাইজান আপনি কি জানেন প্রিয়তা আজ আবার ওই চেয়ারম্যান এর ছেলের সাথে দেখা করেছে ? ”
ক্রোধ মিশ্রত কন্ঠে কথা গুলো বলেই উঠলো প্রিয়তার ফুপ্পি সুফিয়া বেগম। শফিক সওদাগর মাত্র হোটেল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বসেছেন। মেয়ের নামে নালিশ শুনে বোনের পানে তাকালেন

-“আমি ওকে বলে দিবো যেনো ও আর বাহিরে না যায়। ”
কথা শেষ করে শফিক মিয়া খাবারে খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন। নিজের একটা ছোটো খাটো হোটেল আছে। আগে নিজেই আর একজন মিলে সামলাতো। এখন অবশ্য চার জন কর্মচারি। হটাৎ করে স্রী চলে গেলো। মেয়ের বয়স তখন চার। মেয়ের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করলেন না। এদিকে আবার হোটেলের জন্য মেয়েকে সময় দিতে পারতো না তাই বোনকে নিয়ে এলেন নিজের বাড়ি মেয়ের দেখা শোনা করার জন্য। বোনেরও এক মেয়ে আছে। বোনকে নিয়ে আসার আরো একটা কারন বোনের স্বামী দেশের বাহিরে থাকেন। বোনের শশুর -শাশুড়ী নেই তিনি একা মেয়ে কে নিয়ে থাকে। তাই বোনকে নিয়ে এসেছে। আর বোনের জামাইও দেশে আসলে এখানেই থাকে। বউ, আর মেয়ে এখানে থাকে তাই ভদ্রলোকও ছুটিতে এখানেই থাকে।

———————————

-“প্রিয়তা মা তুমি কি কোনো কারণে চিন্তিত ? ”
প্রিয়তা পড়ার টেবিলে আনমনে বসে ছিল বাবার
কন্ঠ শুনে মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখলো দরজায় তার বাবা দাঁড়িয়ে রয়

-“না বাবা । তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কেন ভিতরে এসো।
প্রিয়তা কেদারা ছেড়ে দরজার কাছ হতে বাবার হাত ধরে আনলো তার পর খাটে বসিয়ে নিজে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো শফিক নিজেও মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় বিলি কাটতে লাগলেন

-“বাবা কিছু বলবে ?”
প্রিয়তা বাবার চোখ দেখেই বোঝলো বাবা কিছু বলতে চায় তাই বিলম্ব না করেই বাবাকে চট করে প্রশ্ন করলো

-“হুম, মা বাবার ক্ষমা করে দিয়েন বাবা আপনাকে এ কয়দলিনে অনেকটাই আঘাত দিয়েছি। ”
ধরে আসায় গলায় উত্তর করলেন শফিক

-“না বাবা এতে তো তোমার কোনো দোষ নেই । সব আল্লাহর ইচ্ছে তিনি হয়তো চান না আমি আমার বাবাকে এতো তারা তাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমি অনেক খুশি বাবা। আর একটা অনুরোধ করবো প্লিজ বাবা আমি আরো পড়া লেখা করতে চাই। ”
সতেরো বছরের মেয়ের করুন কন্ঠে বলা কথা শফিকের কানে যেনে এখনো জন জন করে বাজচ্ছে

-“হে, মা আমার তুমি অনেক পড়বে বাবা আর কখনো ঔবিষয়ে তোমায় বাধ্য করবো না ।
বাবার কথায় প্রিয়তা অনেক খুশি হলো মনে মনে ছক কষলো কালই গিয়ে সারাকে সব বলবে। তার বাবা আর তাকে এখন বিয়ে দিবে না। সেও অনেক পড়বে, অনেক বড় অফিসার হবে। ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো প্রিয়তা। শফিক মেয়ের পানে তাকি ভাবে। আমি আমার ভুল বোঝতে পেরেছি মা। কাউকেতো আমি কথা দিয়েছিলাম আমি আমার মেয়েকে তার হাতে তুলে দিবো। তাহলে অন্য কারোর জন্য কেন আমি সেই কথার খেলাফ করতে পারি? উঁহু কখনো না । আমার মেয়ের সুখেই আমার ভালো থাকার কারন।

– “মা তুমি নিশ্চিতে ঘুমাও। বাবা আর কারোর কথায় শুনবো না। আমি তোমার অমতে আর কিছু করবো না। ”
বালিশে শুইয়ে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে গড় থেকে পস্তান করলেন।

#চলবে……..

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি সিজন-০২ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#শেষ_পর্ব
অবন্তী আর চন্দ্রিমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরেই তাদের বাস এসে হাজির হলো। তাদের নিয়ে বাসায় রেখেই আমি আবার অফিসে চলে আসলাম। মায়া হয়তো একটু পরেই আসবে তাই জন্য আমি কাজে চলে আসি।
দুপুরের দিকে মায়া দরজার সামনে কয়েক বার কলিং বেল বাজানোর পর চন্দ্রিমা এসে দরজা খুলে দিলো।
মায়া কোনো কিছু না ভেবেই চন্দ্রিমা কে জড়িয়ে ধরলো।
– আমার কত দিনের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেখবো। অবশেষে তোমাকে দেখার ইচ্ছে আমার পূর্ণ হলো।
চন্দ্রিমা এতক্ষণ শুধু মায়ার কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো। মায়ার কথা শেষ হতেই চন্দ্রিমা বললো- আপনি কে?
– আমি তোমার মায়া আপু। তুমি অবন্তী না?
– আমি চন্দ্রিমা। অবন্তী ভিতরে আছে। ভিতরে আসুন।

মায়া অবন্তী আর চন্দ্রিমা তিনজন মিলে রাতের জন্য রান্না করলো। কিন্তু আমি বাসায় ফেরার আগেই মায়া বাসা থেকে চলে গেলো।

রাতে বাসায় ফিরে অবন্তীর থেকে জানতে চাইলাম মায়া এসেছিলো কি না!
– আপু এসে আবার চলে গিয়েছে। তবে আপুর কি কোনো প্রকার মানসিক সমস্যা আছে!
– এমন প্রশ্ন কেন?
– আপু কেমন অস্থির ছিলো পুরোটা সময়। আমি আর চন্দ্রিমা যখন রান্না ঘরে রান্না করছিলাম তখন উনি বড় মা’র রুমে এসে কি যেন খুজছিলো।
এটা শুনে আমি মুচকি হেঁসে বললাম – ও আম্মুর রুমে একটু বেশি যাতায়াত করতো তো। ওর কিছু ছিলো মনে হয় ঐ রুমে তাই খুজেছে।
– হবে হয়তো।
রাতের খাবার একসাথে খেয়ে অবন্তী আর চন্দ্রিমা আম্মুর রুমে চলে গেলো। আমি আমার রুমে এসে কিছুক্ষণ ফেসবুক ঘাটাঘাটি করলাম।

এখন মোটামুটি গভীর রাত। হয়তো অবন্তী আর চন্দ্রিমা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার রুমের বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট জ্বলালাম।
– তুমি সিগারেট খাও!
অবন্তী ভেবে তড়িঘড়ি করে সিগারেট লুকিয়ে ফেললাম। কিন্তু সে চন্দ্রিমা ছিলো। তাই আবার বের করলাম।
– হুম।
– এটাতে কি সুখ পাও?
– ঠিক সুখ না তবে পৈশাচিক একটা প্রশান্তি মেলে।
– কিভাবে!
– এই যে ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে আমার মনের মাঝে থাকা সব ডিপ্রেশন আমার সব কষ্ট, যন্ত্রণা সব কিছু সেই ধোঁয়ার সাথে উড়ে উড়ে ঐ আকাশে চলে যাচ্ছে।
– এই সব কিছু মনের ভ্রম।
– তুমি এতো রাতে এখানে কেনো?
একটা হাত এতক্ষণ থেকে পিছনে ছিলো সেই হাতটা সামনে নিয়ে আসলো।
– এটা কোথায় পেলে! আমার এই টি-শার্ট তো হারিয়ে ফেলেছি।
– হারায় নি। আমি চুরি করেছিলাম।
– কেন!
– তোমাকে আমার ভালো লাগে সেটা তো তোমাকে বলার সাহস হয়নি। তোমার সাথে আমার সব সময় কথা বলতে ইচ্ছে হয় সেটাও তো বলতে পারিনি। তাই তোমার টি-শার্ট এর সাথে সব সময় কথা বলতাম।
– এতে করে কি লাভ হয়?
– ঐ যে প্রশান্তি পাই।
– তো ফেরত দিচ্ছো কেন?
– আমি প্রতিনিয়ত এটার প্রতি প্রচন্ড আসক্ত হয়ে পড়ছি। তাড়াছা এখন তো তুমি কাছেই আছো কিছু দিন। ডিরেক্ট তোমার সাথেই কথা বলতে পারবো। তাই এটার দরকার পড়বে না।
– মাথা থেকে এইসব ভুত তাড়িয়ে দাও। যা করতে আসছো সেটা করো। ছোট মা’র কানে যদি এই কথা যায় তবে তোমার কি হবে ভাবছো!
– সেটা তুমি ভাববে।
– রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
চন্দ্রিমা আর কিছু না বলে রুমে যেতে লাগলো।
– এই শোনো।
– বলো।
– সিগারেটের কথা যেন অবন্তী না জানে।
– আচ্ছা।
এমনটা নয় যে চন্দ্রিমা কে আমার মনে ধরেনি। প্রথম দেখার পর থেকে অবসরে চন্দ্রিমা কে খুঁজতাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম চন্দ্রিমা ছোট মা’র ভাগ্নী তখন থেকে নিজের চাওয়াকে দাবিয়ে রাখতে লেগেছি। তাছাড়া চন্দ্রিমার মায়াবী চোখের চাহনিতে যে কেউ ঘায়েল হবে।

পরের দিন সকালে অবন্তী আর চন্দ্রিমা কে নিয়ে চারপাশে একটু ঘুরলাম। বাসায় ফেরার পথে বাসার পাশের একটা ভালো এডমিশন কোচিং-এ অবন্তী আর চন্দ্রিমা কে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসলাম।

বিকেলের হঠাৎ বৃষ্টিতে চন্দ্রিমা আমি অবন্তী দীর্ঘ সময় ভিজলাম। আমার ছোট বেলা থেকেই অল্প ঠান্ডাতেই অসুখ বেঁধে যায়। এবার অবশ্যই তার ব্যাতিক্রম কিছুই হবে না। রাতের খাবারের সময় হতে না হতেই জ্বর সর্দি এসে জুড়ে বসেছে। অবন্তী জোর করে একটু খাইয়ে দিলো। এরপর ঔষধ খেয়ে নিজের রুমে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়লাম।
– ভাইয়া!
কাঁপা কাঁপা হাতে মাথা থেকে কম্বল সরালাম।
– এই গরম দুধ খেয়ে নাও। হয়তো ভালো লাগবে।
– আমি এখন কিছুই খাবো না। আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।
চন্দ্রিমা অবন্তীকে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়ে কোলে আমার মাথা তুলে নিয়ে চুলগুলো ধীরে ধীরে টানতে লাগলো। মা’য়ের মতো স্নিগ্ধ কোমল স্পর্শ অনুভব হচ্ছে। প্রতিটি পুরুষের চাওয়া থাকে ঠিক তার মায়ের মতোই কেউ একজন তার জীবন সঙ্গী হোক। আজ চন্দ্রিমার স্পর্শে আমি দীর্ঘ দিন পর আম্মুর স্পর্শ অনুভব করতে পারছি।
পরদিন সকালে যখন চোখ খুললাম তখন বুকের উপর ভারী কিছু একটার উপস্থিতি লক্ষ করলাম। মনে হচ্ছে বুকের মাঝে এই ভারী বস্তুটা কেউ খোদাই করে বসিয়ে দিয়েছে। যখন মাথা তুলে দেখলাম সেটা চন্দ্রিমা ছিলো। মেয়েটা মনে হয় গতকাল রুমেই যায় নি। ধীরে ধীরে চন্দ্রিমার মাথা বুক থেকে নামিয়ে বালিশে দিলাম। এরপর ওকে ভালো করে শুইয়ে দিলাম।
গতকাল রাতের থেকে আজ মাথাটা বেশ হালকা লাগছে। ধীরে পায়ে হেঁটে বাড়ির সামনে আঙ্গিনায় গেলাম। সেখানে ফালানো চেয়ারে বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে সকালের মিষ্টি রোদের ছোয়া উপভোগ করেছি।
– তুমি এখানে!
অবন্তী চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবা?
– তোমার জন্য চা নিয়ে এসেছি।
– ওহ আচ্ছা। দাও এদিকে।
– এখন কেমন লাগছে?
– গতকাল রাতের থেকে ভালো। চন্দ্রিমা কি সারারাত আমার রুমেই ছিলো?
– একবার রুমে এসে শুয়ে পড়েছিলো। কিন্তু মাঝ রাতে আবার তোমার রুম থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে শুনে দৌড়ে আসি। তখন তোমার জ্বর অনেক বেড়েছে। আমি তোমার মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছিলাম। কিন্তু আমার শরীর ও হালকা খারাপ ছিলো জন্য ও জোর করে আমায় রুমে পাঠিয়ে সারা রাত তোমার মাথায় পানি পট্টি দিয়েছে। মেয়েটা অনেক ভালো জানো। তবে ও কিন্তু এখানে কোচিং ভর্তি হতে আসে নি।
– তাহলে!
– ও তোমার জন্য এসেছে। ঐ কয়েকদিনে তোমার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো। পরীক্ষা শেষ তাই বাসা থেকে ওর জন্য পাত্র দেখছে। এরপর দুজন মিলে বুদ্ধি করে এখানে চলে আসি। যদি তুমি ওকে রেখে দাও সেই আশায়।
– বাহ্। আমার বোন আমার জন্য পাত্রী ঠিক করে সেটা আবার সাথে করে নিয়ে এসেছে।
দু’জনেই হাসাহাসি করছি। হঠাৎই অবন্তী বললো- জানো ভাইয়া ওর আব্বু আম্মু কেউ বেঁচে নেই। ছোট বেলা থেকে আমাদের বাসায়। মাঝে মাঝে ওকে খুব উদাস দেখি। কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পারি ও একজন নিজের মানুষের অভাবে উদাস হয়ে যায়। তোমার মাঝে ও নিজের উদাসীনতার সীমান্ত দেখতে পায়। তুমি ওকে রেখে দিলে খুব ভালো হবে।
– তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো দেখছি। তোমার আম্মুর ভাইয়ের ( ছোট মা’র ভাই শব্দটা আসতেই ডায়েরির কথা মনে পড়ে গেলো)
– অবন্তী তুমি আমার রুমে গিয়ে আমার বালিশের কাছে তোশক এর নিচে একটা ডায়েরি আছে ঐটা নিয়ে আসো।

অবন্তী উঠে গিয়ে ডায়েরি টা নিয়ে আসলো। সেখানে থেকে আম্মু আর ছোট মা’র ছবিটা বের করে দেখলাম – এটা বিষয়ে কিছু জানো কি তুমি!
বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে অবন্তী – এটা তো অসম্ভব ভাইয়া। আমি কি সত্যি দেখছি?
ডায়েরি টা অবন্তীর হাতে দিয়ে বললাম – যে পেইজটা ভাজ করা আছে সেটা জোরে পড়।
অবন্তী পেইজটা পড়তে শুরু করলো – আল্লাহ এমন অবিচার কখনোই সহ্য করবে না। আমার অপরাধের শাস্তি আমার মেয়ে কেন পাবে! ও তো নিষ্পাপ ছিলো। আমার টুইনস বাবুর একজন কে আজ বিসর্জন দিতে হলো। আমি যদি আগে জানতাম এমন কিছু হবে তবে কখনোই তোকে ঐ বাড়িতে পাঠাতাম না মা। আমায় ক্ষমা করে দিস। তোর আম্মু তোকে বাঁচাতে পারলো না।

– তোমারা টুইনস ছিলে!
– আমি ও এই ডায়েরিটা পড়ার পরেই জেনেছি। সুমন এবং সুনয়না।
– ডায়েরিটা কার! অনেক পুরোনো মনে হচ্ছে।
– ডায়েরি টা আম্মুর। এখানে বিচ্ছেদের পর থেকে লেখা আছে।
অবন্তী তড়িঘড়ি করে বললো- ভাইয়া এখানে দেখে।
ডায়েরির উপরে আঠা দিয়ে একটা ছোট কালো কাগজে কালো কালি দিয়ে কিছু একটা লেখা। যেটা এর আগে আমার নজরে আসে নি। খুব সুক্ষ্ম ভাবে লেখা আমার জীবনের ২য় ডায়েরি।
– ভাইয়া আম্মুর আর ও একটা ডায়েরি আছে। যেটা খুঁজে পেলেই হয়তো আমরা সম্পূর্ণ ঘটনাটা জানতে পারবো।
চন্দ্রিমা অবন্তীর পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি অবন্তীর হাত থেকে ডায়েরি টা নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

একটু পরেই সকালের খাওয়া শেষ করে কাজে বেরিয়ে পড়লাম। বিকেলের দিকে চন্দ্রিমা কল করে কান্না করতে শুরু করলো।
– কি হয়েছে! কান্না করছো কেন?
কিন্তু চন্দ্রিমা কোনো কথা বলছে না। অবন্তী পাশে থেকে বলছে- এভাবে কান্না করলে কিছুই ঠিক হবে না। আমায় ফোন দাও।
চন্দ্রিমার হাত থেকে ফোনটা করে নিয়ে অবন্তী বললো- ভাইয়া আম্মু একটু আগেই কল করেছিলো। চন্দ্রিমার বিয়ে ঠিক করেছে। আম্মু হয়তো কাল চন্দ্রিমা কে নিতে আসবে। আমি তোমায় সকালেই বলেছি ভাইয়া প্লিজ মেয়েটার লাইফটা নষ্ট হতে দিও না।
– সেখানে তো ও সুখেও থাকতে পারে তাই না?
– ও তোমার মাঝে নিজেকে খুঁজে পায়।
– তুমি কি চাও! আমায় কি করতে হবে!
– আমি চন্দ্রিমা কে আমার ভাবী বলে ডাকতে চাই। প্লিজ ভাইয়া।
– আচ্ছা।
অবন্তীর ফোন কেটে বাসায় আব্বু কে কল করে বলে দিলাম চন্দ্রিমা কে আমি বিয়ে করছি বাসা থেকে যেন কেউ না আসে ওকে নিতে।

এখন রাত।
আমার খুব কাছের কয়েকজন বন্ধু কে ডেকে বাসায় ছোট্ট পরিসরে বিয়ের কাজ শেষ করলাম। মায়াও আসতে পারেনি এইটুকু সময়ে। বাসরঘর, কিন্তু ঘরে ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই। চন্দ্রিমা খাটে বসে আছে।
– সব কিছু কেমন হঠাৎই হয়ে গেলো তাই না!
– হঠাৎ হলেও ভালোই হয়েছে।
– তুমি জানো আমি তোমায় কেন বিয়ে করেছি?
– অবন্তী রিকুয়েষ্ট করছে জন্য।
– না, তোমার স্পর্শে আমি আম্মু কে খুঁজে পেয়েছি। পৃথিবীতে খুব মেয়ের মাঝে একজন ছেলে তার মা’কে খুঁজে পায়। কিন্তু আমি খুব সহজেই তোমার মাঝে খুঁজে পেয়েছি তাই আর হারাতে চাই নি।
– তাহলে আমি তোমায় একবার জড়িয়ে ধরি?
– তোমার বর একবার ধরবে নাকি দশবার ধরবে তোমার ইচ্ছে।
চন্দ্রিমা ঝটপট উঠে এসে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

এখন প্রায় মাঝ রাত। দরজায় অনবরত ঠকঠক শব্দ । দরজা খুললাম। অবন্তী হাপাচ্ছে।
– কি হয়েছে!
অবন্তী আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।

(সমাপ্ত)
[ প্রথম সিজন এখানেই শেষ করলাম। দ্বিতীয় সিজনে সকল রহস্য উদঘাটন হবে ইনশাআল্লাহ। তবে এই সিজন সম্পর্কে আপনার মতামত জানাবেন প্লিজ। যাতে আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় সিজন দিতে পারি।]

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-১০

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১০ম_পর্ব
ঐ বাসা ছেড়ে নিজের বাসায় আসার আজ প্রায় তিন মাস হলো। মাঝে মাঝে তাদের কথা অনেক মনে পড়ে। মাঝে মাঝে অবন্তীর সাথে কথা হয়। সেখানে আমার অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। অনেকেই আমার থেকে কিছু না কিছু লুকিয়েছে সেটা তাদের আচরণেই বুঝতে পারছিলাম। তবে আসার আগে আমার সহস্র প্রশ্নের উত্তর হিসাবে আব্বু শুধু আমায় একটা কথাই বলেছিলো ” তোমার গলার এই কাটা দাগটা তোমার দাদুর দেওয়া ” তাহলে আম্মু এতোদিন আমায় মিথ্যা বলেছিলো যাতে আমার পরিবারের প্রতি আমার কোনো ঘৃণা না জন্মায়।

কাজ থেকে ফিরে রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। অবন্তীর কল আসলো।
– ভাইয়া জানো আজ আমি অনেক খুশি।
– হঠাৎ এতো খুশি হওয়ার কারণ কি শুনি?
– আমার তো এইচএসসি পরীক্ষা শেষ, এখন এডমিশন টেষ্ট এর জন্য আব্বু আমায় তোমার ওখানে পাঠাবে। আব্বু নিজেই বলেছে আমায়।
– তাই! এটা তো আসলেই অনেক খুশির কথা। ছোট মা কিছু বলেনি?
– আম্মুকে তুমি ভয় দেখিয়ে গেছো না! তাই আম্মু হয়তো কিছু বলেনি।
– তুমি কবে আসবে?
– আগামী পরশু হয়তো রওনা দিবো।
– আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?
– না, আমি যেতে পারবো।
– এতটা পথ একা একা আসবে বোরিং লাগবে তো।
– একা যাবো না তো। চন্দ্রিমা আমার সাথে যাবে। ও তো এডমিশন টেষ্ট দিবে।
– আচ্ছা।
– তুমি শুধু সময় মতো আমাদের রিসিভ করবে তাতেই হবে।
– সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না পাগলী বোন আমার। তোমার ভাই যথা সময়ে পৌঁছে যাবে।

অবন্তী আসলে ওকে তো একটা সুন্দর রুম দিতে হবে থকতে। এই বাসায় আমার রুম আর আম্মুর রুমের স্পেসটা একটু বড় বাকী যে গুলো আছে সেগুলো তুলনামূলক ছোট। কাল সারা দিন সময় পাবো না জন্য আজ রাতেই রুম পরিস্কার করতে শুরু করে দিলাম।
সাধারনত আম্মুর রুমের কোনো জিনিসে আমি কখনো হাত দেই নি। আম্মুর মৃত্যুর পর এই রুমে আসাই কমিয়ে দিয়েছি। মায়া আসতো এই রুমে কিন্তু ওর বিয়ে হবার পর এই রুম অনেকটা মরুভূমি হয়ে আছে জনমানবহীন।

বিছানা গুছানো শেষ। আলমারি থেকে আম্মুর কাপড় গুলো বের করে অন্য রুমে রেখে দেই। তাহলে অবন্তী ওর কাপড় আলমারিতে রাখতে পারবে। আলমারির সব কাপড় সরানোর পরে সেখানে একটা ডায়েরি আমার নজরে আসলো। ডায়েরিটা হাতে নিতেই ভিতরে থেকে একটা ছবি মাটিতে পড়ে গেলো। সেখানে আব্বু আর আম্মু ছিলো। আম্মুর কাছে আব্বুর ছবি থাকা সত্বেও কোনো দিন আমায় দেখায়নি! এমনটা কেন?

ডায়েটি হাতে নিয়ে মায়া কে কল করে জিজ্ঞেস করলাম- মায়া, তুমি কি আম্মুর কোনো ডায়েরির ব্যাপারে কিছু জানো?
মায়া কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো- আম্মুর একটা ডায়েরি ছিলো। সেটার কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। উনি মাঝে মাঝে ওটাতে লেখালেখি করতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো আমি যখন থাকবো না তখন পড়বি তাহলে জানতে পারবি আমি কি লিখেছি।
– ওহ আচ্ছা।
– তুমি কি ডায়েরিটা পেয়েছো ভাইয়া?
– হ্যাঁ। ওহ তোমায় একটা কথা জানাতে ভুলেই গিয়েছি।
– কি কথা ভাইয়া?
– পরশু অবন্তী আসছে আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকতে।
– আব্বুর মেয়ে মানে আমাদের বোন?
– হ্যাঁ।
– তুমি কিন্তু ভাইয়া আমায় বাসায় নিয়ে যাবে ও আসলে।
– পাগলী মেয়ে এটা তো তোমারও বাসা নিয়ে আসতে হবে কেন ! চলে আসবে তুমি।
– তুমি এসে নিয়ে গেলে তখন বেশ কিছু দিন থাকতে পারবে।
– আচ্ছা। আমার চাপ কমলে গিয়ে নিয়ে আসবো। কেমন!
– আচ্ছা ভাইয়া।

ডায়েরি টা আমার রুমে নিয়ে আমার আলমারিতে রাখতে যাবো কিন্তু খুব আগ্রহ কাজ করছে ভিতরে কি লেখা আছে সেটা জানার জন্য। নিজের কৌতুহল কে সংযত করতে না পেরে ডায়েরির শেষ লেখা কি ছিলো সেটা দেখার জন্য শেষের দিকে পাতা খুললাম। এই পাতায় লেখার সময় আম্মু কান্না করেছিলো ডায়েরির পাতায় স্পষ্ট পানির দাগ লেগে আছে। লেখাটা প্রায় এক বছর আগের। সেখানে লেখা আছে ” আজ আবার তোমার সাথে আমার দেখা হলো। তোমার সাথে এই দীর্ঘ সময়ে হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। তুমি যেটুকু সময় পাশে থাকো সেই সময়টুকু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের তালিকায় যোগ হয়। তবে তুমি বললে আমাদের আর কখনো দেখে হবে না। কারণ রিয়া আমাদের দেখা করার ব্যাপারে কিছুটা আন্দাজ করছে। রিয়ার ভাই তোমাকে ফলো করে ইদানীং। তবে এতে আমার কোনো ভয় কাজ করে না। খুব বেশি কিছু হলে আমার এই পৃথিবীতে থাকা হবে না। ওরা যে তোমার কোনো ক্ষতি করবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে তোমায় দেখতে দেখতে তোমার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেও নিজেকে পরম ভাগ্যবতী মনে করবো আমি। তবে আজকে অবন্তীর ছবি দেখলাম মেয়েটা তোমার মতোই হয়েছে। ও যখন আমায় দেখতে চায় তবে ওকে সাথে করে নিয়ে আসলেই পারতে মেয়েটাকে কিছুদিন রেখে দিতাম আমার কাছে। ”

সেখানে একটা খাম টেপ দিয়ে আটকানো। খামের ভিতরে অবন্তীর ভিন্ন বয়সের প্রায় পাঁচ ছয়টি ছবি ছিলো।
আব্বুর সাথে আম্মুর রেগুলার না হলেও মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। আমাদের আড়াল করে আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করতো । কিন্ত অবন্তীর মামার জানার বিষয়ে আম্মু এমনটা কেন ভেবেছিলো যে এতে তার প্রাণ যাবে!
ডায়েরিটা রাখতে যাবো তখন আবার কৌতুহল বশত মাঝের একটা পেইজ খুললাম। সেখানে আমার দৃষ্টি শক্তি আটকে গেলো। আম্মু আর ছোট মা একজন অপর জন কে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!

To be continue….

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৯

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৯ম_পর্ব
গতকাল যে বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় ছিলো আজ সেই বাড়ি একদম নিশ্চুপ। সকালে খাবার টেবিলে দাদু বলছিলো- বিয়ে শেষ হয়ে গেছে এখন তুমি চলে যেতে পারো।
দাদুর কথায় উত্তর দিলো মেজো চাচী – সুমন তো এই বাড়ির ছেলে, এখানে থেকে গেলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে!
– তুমি কবে থেকে মুখে মুখে কথা বলতে শিখলে! নাকি এই ছেলে তোমাদের বেয়াদবি শেখাচ্ছে?
মেজো চাচীকে সাপোর্ট দিচ্ছে আব্বু – এখানে থাকার অধিকার আছে ওর। ও চাইলে এখানে থেকে যেতেই পারে।
– আমি আমার বাসায় কোনো বেয়াদবকে রাখবো না।
– আমায় নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি আগেই বলেছি আমি এখানে থাকতে আসিনি। আজকের কোনো টিকেট পাইনি। আগামী কাল রাতেই আমি চলে যাবো। এই বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে এতো আলোচনা করে দূরত্ব বাড়াতে হবে না। আমি যেমন এসেছি আবার তেমন চলেও যাবো।

খাবার টেবিলে নিরবতা ছেয়ে গেলো।

দাদু, ছোট মা আর অবন্তী ছাড়া বাসার সবাই একে একে শুধু মাত্র এটা বলার জন্য আমার রুমে আসছে ” তুমি থেকে যাও ”
এখন দুপুর
বড় বড় দুইটা লাল চোখ নিয়ে অবন্তী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে যে কান্না করছে এতক্ষণ সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অবন্তী কে কাছে বসালাম – পাগলী মেয়ে কান্না করছো কেন?
– তুমি কেন চলে যাবা? তুমি আমার কাছে থেকে যাও না প্লিজ!
– পাগলী মেয়ে আমার তো একটা বাসা আছে। সেখানে আমার জব আছে। আমি এখানে থাকলে হবে?
– আমি এতো কিছু জানিনা তুমি থেকে যাও।
– আমার নাম্বার তো এখন তোমার কাছে থাকলোই। তুমি ছুটি পেলেই আমার কাছে ঘুরতে যেতে পারবে।
– তোমার মনে হয় আম্মু আমায় যেতে দিবে?
– না দিলে আমি এসে দেখা করে যাবো কেমন! তবুও কান্না থামাও। পাগলী মেয়ে একটা, কেউ এতো কান্না করে?
অবন্তী অনেক টা সময় আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করলো। বাসার সবারই কেমন যেন মন খারাপ। হয়তো আমার জন্যই। মাত্র এই কয়েকদিনে সবার সাথে এভাবে মিশে যাবো ভাবতে পারিনি।

রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের নিরবতা অনুভব করছি। হঠাৎই কেউ পিছনে থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
প্রথমে অবন্তী ভেবে কিছু বলিনি। কিন্তু এটা অবন্তী নয়। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কে পিছনে! কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। অতঃপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছনে ফিরলাম। অধরা ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– তুমি এখানে! আর আমায় এভাবে ধরেছিল কেন?
– তুমি কেন চলে যাবে?
– আমি এখানে থাকতে আসিনি। তাই চলে যেতে হবে। আমি তো এসেছিলাম অতিথি হয়ে।
– তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে যাও।
– কোথায় যাবে তুমি?
– তোমার সাথে তোমার বাসায় যাবো।
– বিয়ে হোক তারপর তোমার বর সহ তোমাকে নিয়ে যাবো আমার বাসায়।
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– মানে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– পাগল হয়ে গেলে নাকি? আমি তোমার ভাইয়া। নিজের ঘুমন্ত বিবেক কে জাগাও।
– আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।
– তোমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে? আগে নিজের পড়ালেখা শেষ করো। তাছাড়া আমাকে তো তুমি ভালো করে চেনেই না।
– আমি চিনতে চাই না।
– মিষ্টি বেন আমার পাগলামি করে না। তুমি বড় হও আমি তোমাকে আমার বাসায় ঘুরতে নিয়ে যাবো।
– আমি তোমার বোন না।
– আচ্ছা শোনো, তুমি যে আমায় এসব কথা বলেছো সেগুলো যেন কেউ না জানে কেমন! তুমি বড় হয়ে নাও, নিজের পড়ালেখা শেষ করো। তারপর ভেবে দেখবো তুমি আমার বোন নাকি অন্য কিছু। তবে পড়ালেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার বোন। কেমন!
– তুমি সত্যি বলছো তো?
– একদম।
– আচ্ছা, নিচে তোমায় খেতে ডাকছে। তাড়াতাড়ি আসো।
– তুমি যাও আমি আসছি।
অধরা চলে গেলো। মানুষ আবেগের বয়সে কত কিছুই না করে। অল্পতেই যে কাউকে ভালো লেগে যায় আবার অল্পতেই কারো প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। অল্প আঘাতেই অনেক বেশি কষ্ট হয় আবার মাঝে মাঝে প্রবল আঘাত ও বিন্দু মাত্র ব্যাথা দিতে পারে না।
খাওয়া শেষ করে ছোট মা’র রুমে আবার গেলাম।
– কি সমস্যা! আমার রুমে কেন আসছো?
– গত পরশু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে আসছিলাম।
– ওহ হ্যাঁ। বলো কি কথা!
– আপনি সেন্ট্রাল জেলে কেন গিয়েছিলেন?
– তুমি কি আমায় ফলো করো?
– আমি সেখানে একটা কাজে গিয়েছিলাম। আপনাকে দেখলাম তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– তোমার কাজ থাকতে পারে আমার থাকতে পারে না?
– আমি সেখানে জেলার এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সেখানে কোনো কয়েদির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যদি কোনো সাহায্য লাগে তবে অবশ্যই আমায় বলতে পারেন বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারবো।
– আমার কোনো সাহায্য লাগবে না। তুমি তাড়াতাড়ি এই বাসা থেকে চলে গেলেই বেশি খুশি হবো। দয়া করে এই সাহায্য টুকু করো।
মুচকি হেঁসে বললাম- আমি এখানে থাকতে আসিনি। তবুও আমাকে নিয়ে আপনাদের চিন্তার শেষ নেই। যদি থাকতে আসতাম তাহলে না জানি আপনাদের কি অবস্থা হয়ে যেতো। একটা কথা বলুন শুনি, আমায় নিয়ে এতো ভয় কেন! আমার আম্মু তো নেই যে আপনার থেকে আপনার স্বামী কে নিয়ে যাবে। তবে কেন এতো ভয়!
– কিসের ভয়! তোমাকে কেন ভয় পাবো? তোমাকে আমার সহ্য হয় না। তাই তুমি যত তাড়াতাড়ি এখানে থেকে চলে যাও আমার জন্য স্বস্তি আসে।

ছোট মা’র সাথে কথা বলতে সময় মোবাইলে একটা কল আসে। কথা বলতে বলতেই বেরিয়ে আসলাম। নিজের রুমে এসে কথা বলা শেষ করে ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম৷
দরজার ফাক থেকে চন্দ্রিমা বেড়িয়ে আসলো- ভালোই তো প্রেমের কথোপকথন হচ্ছে চারদিকে।
চন্দ্রিমা কে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। কারণ এতক্ষণ ফোনে যা কথা বলছিলাম সেগুলো শুনে ফেললো না তো আবার!
– তুমি এখানে কেন! কখন আসলে?
– আসছি তো অনেক আগেই। তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
– আমার জন্য অপেক্ষা করছো কেন?
চন্দ্রিমা হাতে একটা ছুড়ি নিয়ে আমার গলায় ধরে।
– তোমায় বলিনি ঐ মেয়ে তোমার চারদিকে বেশি ঘুরঘুর করছে ওর থেকে দূরে থাকতে!
– গলা থেকে এটা সরাও। কেটে যাবে। তাছাড়া ও ছোট মেয়ে এটা ওর আবেগের বয়স। এখন ওর বিবেক এর থেকে আবেগ বেশি প্রধান্য পাবে।

চন্দ্রিমা হঠাৎ আমার কথা থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমার গলাশ খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখতে লাগলো।
– তোমার গলায় এই কাটা দাগটা কিসের?
– ওটা আম্মু বলছে ছোট বেলায় নখ বড় ছিলো আমার ঐ নখ দিয়ে কেটে গেছে।
– কিন্তু মনে হচ্ছে এটা কোনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে কেটে গেছে।
– তোমার মনে হলেই তো আর হবে না।
– যাই হোক, ওর আশেপাশে যেন আর না দেখি।
চন্দ্রিমা চলে যাচ্ছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। হয়তো আমার কথা শুনতে পায় নি। কিন্তু হঠাৎই থেমে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- তুমি ফোনে কিসের কথা বলছিলে! কাকে মারার কথা না গুম করে দেওয়ার কথা! ঠিক বুঝতে পারি নি।
– তুমি শুনতে ভুল করছো আমি এমন কিছুই বলিনি। আমি তো আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।
চন্দ্রিমা আমার কথা বিশ্বাস করে চলে গেলো। আমিও প্রশান্তির একটা শ্বাস ছাড়লাম।

To be continue…

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৮

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৮ম_পর্ব
” ভাইয়া কোথায় ছিলে! সারাটা বিকেল তোমার কোনো পাত্তা নেই। “- বাসায় ঢুকতেই অবন্তীর প্রশ্ন।
– একটু কাজ ছিলো তাই বাইরে ছিলাম। কেমন আনন্দ করলে আজ সারাদিন?
– আজকের দিনটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে। রাদিয়া আপু তোমায় দেখা করতে বলছে।
– কোথায় ও?
– ওর রুমে।
রুমে গিয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে রাদিয়ার রুমে নক করলাম – আসবো!
– না, একদম আসবে না।
– আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
– যাবেই তো। আমি কে যে আমার রাগ ভাঙ্গাবে তুমি।
– তুমি তো ভিতরে আসতেই দিচ্ছো না।
ওপাশে থেকে কোনো শব্দ আসছে না।
– আমি কি আসবো?
– আসো।
– আমার উপর এতো রাগের কারণ কি শুনি?
– তুমি কোথায় ছিলে দুপুরের পর থেকে!
– আমায় খুঁজছো নাকি! নতুন বউ, যাকে কেন্দ্র করে বাসার সবাই আনন্দ করবে। সে কেন আমায় খুঁজছে শুনি।
– জানো ভাইয়া দাদু আমায় অনেক কথা শুনিয়েছেন।
– কেন?
– এই যে আমি বিয়ে করতে রাজি হইনি। তারপর আবার তোমার কথায় রাজি হয়েছি তাই।
– বিয়েটা হোক তারপর উনাকে ছোট একটা শিক্ষা দিবো আমরা সবাই মিলে। কেমন!
– সেটাই ভালো হবে। আমি শুনেছি তোমার আম্মু কে বড় বাবা এই বাসায় আনতে পারেনি শুধু মাত্র দাদুর জন্য। যে কারণে আমরা তোমার থেকে দূরে ছিলাম এতো দিন। উনাকে তো একটা শিক্ষা দিতেই হবে। সব সময় নিজের জিদ টা কে বড় মনে করে।
– তুমি কি করে জানলে! আম্মু কে দাদু এই বাসায় আনতে দেয় নি?
– আমি শুনেছিলাম। বড় বাবা একদিন বলেছিলো।
– আর কি কি জানো?
– আর তেমন কিছু জানি না। তবে জানো শুভ্রর সাথে আমার কথা হয়েছে। অনার্স শেষে মাস্টার্স করার জন্য পারমিশন ও পেয়ে গেছি।
– বলেছিলাম না তোমার স্বপ্ন পূর্ণ হবে। আমি তাহলে এখন আসি। বাইরে থেকে আসলাম তো ফ্রেশ হওয়া বাকী এখনো।
– ওহ, ভালো কথা। কোথায় ছিলে তুমি!
– এখানে এক পুরোনো বন্ধু আছে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
– আমাদের এলাকায় তোমার বন্ধুও আছে! ভালো।

আমার রুমে বেডের উপর চন্দ্রিমা ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করছে।
– তুমি এখানে কি করছো?
– ছবি দেখছি।
– কিসের ছবি!
– আজ সকালে যেগুলো তুললাম সেগুলোই।
– সেগুলো দেখার জন্য কি আমার রুমটাই পরে ছিলো। নিজের রুমে যাও।
– ছবি গুলো তোমাকে দেখাবো তাই তোমার রুমে আসলাম।
– কি দেখাবা আমায়!
– এই যে, অধরা সব সময় আপনার সাথে এমন চিপকায় আছে কেন!
– আমি তো খেয়াল করিনি। তাছাড়া ও আমার বোন। আমার সাথে চিপকায় থাকতেই পারে।
চন্দ্রিমা একটা ছবি জুম করে দেখালো- ওর চাহনি দেখে কি তোমার তাই মনে হয়?
– আমি মাঝে মাঝে মানুষের মুখের ভাষাই বুঝতে পারি না। চাহনির ভাষা বুঝবো কিভাবে?
– বুঝতে হবে না। তবে ওর থেকে দূরে থাকবে।

চন্দ্রিমার কথায় আমার তেমন মনোযোগ নেই। খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি ছোট মা হনহন করে নিজের রুমে যাচ্ছে।
– চন্দ্রিমা, তুমি এখন তোমার রুমে যাও। আমরা পরে একসময় এবিষয়ে কথা বলবো কেমন!
– এখানে তেমন কোনো কথা নেই শুধু ওর থেকে দূরে থাকলেই হবে।
– আচ্ছা।
চন্দ্রিমা চলে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ছোট মা’র রুমে আসলাম।
– আসবো?
– কে!
– আমি, সুমন। আসবো ভিতরে?
– কোনো দরকার!
– একটু কথ বলতাম।
– এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। পরে ডাকবো।
– আচ্ছা।

বাসায় দাদুর সাথে সবারই একটা দূরত্ব বেঁধে গেছে। সেই দূরত্বের কারণ মনে হয় আমি নিজেই। দাদু নিজের মতো করে সবাইকে চালাতে পছন্দ করে। আগের মানুষ যেমন হয় আর কি। বাবা চাচ্চু সবাই ছিলো দাদুর বাধ্যগত। কিন্তু আমি আসার পর আমার পক্ষ নিয়ে সবাই কমবেশি দাদুর বিপক্ষে কথা বলেছে। এটা সম্পূর্ণ উনার নীতির বিরুদ্ধে।

রাতে খাওয়া শেষ হবার পর বাসার সবাই নিজেদের মতো বিয়ের প্রস্তুতি নিতে ব্যাস্ত। সবার মাঝে থেকে দাদু যখন উঠে নিজের রুমে চলে গেলো তখন ভাবলাম এটাই হয়তো সুযোগ। আমি ও দাদুর পিছনে পিছনে তার রুমে গেলাম।
– তুমি আমার রুমে আসছো কেন!
– আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– তোমার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। তুমি যাও আমি ঘুমাবো।
– দাদু, শুধু এতটুকু জানবো যে, আমার আম্মুকে আপনি এই বাড়িতে আসতে দেন নি কেন!
– যার বউ সে নিজে আনতে পারেনি এখানে আমি কি করবো! এর থেকে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না আর বলতে চাই ও না।

জানতে চাওয়ার পিপাসা বুকে নিয়ে ফিরে আসলাম। সবার সাথে বসে আবার বিয়ের আয়োজনে অংশ নিলাম।

পরের দিন সারাটাদিন সকলের হাজারো ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেলো। কারো সাথেই সেভাবে কথা হলো না। আব্বু অনেকের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো। বরযাত্রী বিদায় হবার পর মেজো চাচী কান্নায় লুটিয়ে পড়লো। তাদের অনেক আদরের মেয়ে। কিন্তু আশেপাশে মেজো চাচ্চু নেই। ওনাকে খুজতে খুঁজতে ছাঁদে এসে ওনার দেখা পেলাম।
– আপনি এখানে কি করছেন!
আমার কথার শব্দে চোখের পানি মুছে আমার দিকে তাকালো।
– মেয়েটা আমার অনেক আদরের ছিলো জানো। চলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে আমার হৃদয় কেউ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বুকের মাঝে শূন্যতা অনুভব করছি।
– ও তো সারাজীবন আপনাদের কাছে থাকবে না তাই না। তবে ও এমন এক জায়গায় গেছে যেখানে ও আপনাদের মতোই ভালোবাসা পাবে।
– সব কিছু তো তোমার জন্য হলো। আমার মেয়ের জীবনে দেবদূত হয়ে আসলে তুমি।
– আমি বড় ছেলে হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
মেজো চাচ্চু খুবই কোমল হৃদয়ের মানুষ। আমায় জড়িয়ে ধরে বাচ্চার মতো কান্না জুড়ে দিলেন।
– চাচ্চু, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আমায় ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো- কি জানতে চাও?
– আব্বু আর আম্মুর বিয়ের পর কি হয়েছিলো?
মেজো চাচ্চু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো- সেটা তোমার না জানাই আমার মনে হয় সব থেকে ভালো হবে।
– আমি জানতে চাই। আমার মা’র সাথে কি ঘটেছে সেটা আমার জানতে হবে।
– তোমার মায়ের সাথে যা ঘটেছিলো সেটা ছিলো এই বাড়ির এক নিকৃষ্ট অতীত। যা শুনলে তোমার হয়তো এই বাড়ির মানুষের উপর থেকে ভালোবাসা সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
– আমি ( কারো আসার শব্দে চুপ হয়ে গেলাম)
আধরা এসে মেজো চাচ্চু কে ডেকে নিয়ে গেলো।

To be continue…

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৭

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৭ম_পর্ব
-তুমি কাউকে ভালোবাসো! যার জন্য তুমি বিয়েতে রাজি না?
রাদিয়া চুপচাপ আমার কথা শুনছে।
– কিছু বলো। আমায় বললে তোমার জন্য ভালোই হবে। আমি নিজের সাধ্য মতো তোমায় সাহায্য করবো।
– আমার জীবনে তেমন কেউ নেই ভাইয়া। আমি আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে চাই। বাবাকে কতবার বললাম আর মাত্র একটা বছর তারপর আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হবে। তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবতে। কিন্তু বাবা হঠাৎই সব কিছু ঠিক করে ফেললো। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে উনি একমাত্র ভালো ছেলে।
– বিয়েতে রাজি না হওয়ার একমাত্র কারণ কি শুধুই এই গ্রাজুয়েশন!
– হ্যাঁ ভাইয়া। কিন্তু ছেলের বাবা প্রথম দিন দেখতে এসেই বলেছে ছেলের বউ সব সময় বাসায় থাকবে। পড়ালেখা করাবে না।
– তাই জন্য নিজেকে অসুস্থ বানাবে অন্যের কাছে!
– তুমি কি করে জানলে?
– আমি সবটাই জানি। তুমি জানো শুভ্র আমায় কি বলেছে?
– কি?
– তোমার ব্রেইন টিউমার তাতে কিছুই যায় আসে না ও তোমার শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চায়। এই কথাটা বলতে কতটা গভীর ভালোবাসার দরকার পড়ে সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
– আমি জানি উনি ভালো ছেলে কিন্তু ভাইয়া আমার নিজের তো কিছু স্বপ্ন আছে।
– আমি কথা দিচ্ছি তোমার সকল স্বপ্ন পুরনে শুভ্র তোমার সঙ্গ দিবে।
– তুমি কি করে জানলে?
– যে মানুষটা তোমায় ভালোবাসবে সে তোমার সব স্বপ্নকে নিজের করে নিবে। তাছাড়া শুভ্র যদি তোমার সঙ্গ না দেয় আমি তো আছি। তুমি তো জানোই এটা শহর এলাকা নয় এখানে ছোট ছোট বিষয়গুলো অনেক বড় করে দেখা হয়। এই বিয়েটা যদি শহরে হতো ভেঙে গেলেও তেমন কোনো বিষয় ছিলো না। কারণ শহরে বসবাসরত মানুষ গুলো বাঙ্গালী হলেও তাদের বেশির ভাগ ঐতিহ্য পশ্চিমাদের মতো। এলাকায় এই বাড়ির সম্মান মর্যাদা সম্পর্কে আমার থেকে তোমরা ভালো জানো। সবাইকে ইনভাইটেশন দেওয়া হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আর না করো না।

রাদিয়া কিছুসময় চুপচাপ থেকে বললো- আমার স্বপ্ন গুলো কি ডানা মেলবে ভাইয়া?
– অবশ্যই।
– তাহলে আমি রাজি।
– তোমায় আঘাত করার পর তোমার বাবা এসে তোমায় সরি বলছে না?
– হ্যাঁ।
– তুমি এখন গিয়ে তোমার বাবা কে সরি বলে জানিয়ে আসবা তুমি বিয়েতে রাজি আছো। কেমন!
– আচ্ছা ভাইয়া।

রাতে ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে গুনগুন করছি।
” একটু জোরে গাইলে আমিও একটু শুনতে পারতাম ”
আমি পিছনে ফিরলাম। চন্দ্রিমা দাঁড়িয়ে আছে।
– তুমি কখন আসলো?
– এই তো কিছুক্ষণ হবে। এমন গুনগুন করে না গেয়ে জোরে জোরে গাইলেই তো পারেন।
– আমি অন্য কে শোনানোর জন্য গান গাই না। এই জন্য জোরে গাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
– ওহ আচ্ছা।
– এতো রাতে ছাঁদে কেন?
– বসার সবাই তো নিজের মতো ব্যাস্ত তাই নিজেকে একটু সময় দিতে আসলাম। তাছাড়া আপনি যখন ছাঁদে আসলেন তখন আপনাকে দেখেছিলাম।
– ওহ আচ্ছা।
– আকাশে চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না?
– চাঁদ সব সময় সুন্দরই হয়।
– চলুন কোথাও থেকে হেঁটে আসি। চাঁদের আলোয় হাঁটতে ভালোই লাগবে।
– আপনার সাথে কেন আমি হাঁটবো?
– বাসদয় সবাই কাজ করছে আপনি আর আমি ফ্রী আছি তাই।
– ছোট মা যদি জানতে পারে তার ভাইয়ার মেয়েকে নিয়ে আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম তাহলে আমার আর নিস্তার নেই। এমনপ হতে পারে বিয়ের আগেই আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে।
– আচ্ছা বিয়ের পর কি আপনি চলে যাবেন?
– আমার কি থেকে যাওয়া উচিত?
– থেকে গেলেই পারেন।
চন্দ্রিমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম- কেন থেকে যাবো? থেকে যেতে তো কোনো কারণ লাগবে তাই না?
– ইচ্ছে থাকলে কারণ ছাড়াও থেকে যাওয়া যায়। আপনি সেই কারণ ছাড়াই থেকে যান। নয়তো আমার জন্য থেকে যান।
এই কথাটা বলেই চন্দ্রিমা দু’হাতে নিজের মুখ ঢাকলো।
– দেখি যদি থেকে যেতে পারি তবে থেকেই যাবো না হয়।

দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে চন্দ্রিমা আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গেলো। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে রইলাম কে আসছে সেটা জানার জন্য।
ছোট মা এসে দাঁড়ালো।
– তুমি এতো রাতে এখানে কি করো?
– তেমন কিছুই না। জোছনা স্নান করছি।
– চন্দ্রিমা আসছে এখানে?
– ফুপি আমি এদিকে।
– তুমি এখানে কি করো! নিচে চলো।

চন্দ্রিমাকে নিয়ে ছোট মা নিচে চলে গেলো। আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম।
” হালকা কুয়াশা পড়ছে এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো। কাল আবার রাদিয়ার গায়ে হলুদ। ”
কথাটা ছোট মা বলেছিলো। আমি স্পষ্ট ছোট মা’র কন্ঠ শুনতে পেয়েছি। কিন্তু পিছনে ফিরতে না ফিরতেই ছোট মা চলে গেছে।
মা হীন কেউ যদি হঠাৎই মা’য়ের মতো কারো ভালোবাসা মাখা শাসন পায় তবে সেটা তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাওয়া গুলোর একটা হয়ে যায়।

পরদিন সকাল থেকে সবাই খুব ব্যাস্ত। সবাই সবার মতো আনন্দ করছে। বাসায় প্রথম কারো বিয়ে হচ্ছে। আমার আব্বু আর ছোট মা কারো সাথে আমার পরিচয় না করিয়ে দিলেও মেজো চাচ্চু আর চাচী সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তাদের মুখে আজ বিন্দু মাত্র চিন্তার ছাপ নেই। পৃথিবীর সব খুশি আনন্দ সব কিছু যেন তাদের আঙ্গিনায় ঘর বেঁধেছে।

কনে বসে আছে তার চারপাশে বাসার সব মেয়ে তাদের ছবি তুলে দিচ্ছে চন্দ্রিমা। আমি দূর থেকে বসে বসে তাদের দেখছি। সেই সময় হঠাৎই মায়ার কথা মনে পড়ে গেলো। বেশ কিছু দিন মায়ার সাথে কথা বলা হয় না। কল করে কিছুক্ষণ কথা বললাম। কথা শেষ মোবাইল পকেটে রাখলাম।
” প্রেমিকা ছিলো বুঝি! ”
– তোমাদের মতোই ছোট বোন। আমার আম্মু একে এডপ্ট করেছিলো।
– ওহ আচ্ছা। রাদিয়া আপু আপনাকে ডাকছে।
– কেন?
– ছবি তুলবে জন্য।
– আমি ছবি তুলবো না।
অধরা তবুও আমায় জোর করে টেনে নিয়ে গেলো।
এখন বিকেল।
এখানের সেন্ট্রাল জেলে জেলারের সাথে দেখা করে মাত্র বের হয়েছি। তখন দূর থেকে ছোট মা’কে দেখতে পেলাম। কিন্তু উনি জেলে কেন আসবে! তাছাড়া আজ বাসায় অনুষ্ঠান সেগুলো ছেড়ে উনি জেলে আসবেন না। আমি বোধ হয় ভুল দেখলাম। কিন্তু আরো কিছুটা সামনে যাওয়ার পর নিশ্চিত হলাম এটা ছোট মা। উনি হয়তো আমায় দেখতে পায় নি। কিন্তু আমি ওনাকে ঠিকই দেখেছি।
পাশেই একজন পুলিশ সদস্য কে জিজ্ঞেস করলাম উনি এখানে কেন আসছে।
– ওখানে যারা আছে সবাই কারো না কারো সাথে দেখা করতে আসছে।
ছোট মা’র কে জেলে! উনি কার সাথে দেখা করতে আসতে পারেন? আমাদের বাসার কেউ! উনারা সবাই মিলে কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? এমন হাজারো প্রশ্ন মনে ঘর বাঁধছে।

To be continue…

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৬

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৬ষ্ঠ_পর্ব
– অবন্তী তুমি কি জানো আব্বু আর আমার আম্মু আলাদা কেন হয়েছিল!
অবন্তী কিছু সময় একটু ভাবলো। হয়তো মনে করার চেষ্টা করলো।
– আব্বুকে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের বিচ্ছেদ কেন হলো কিন্তু আব্বু বলেনি। বার বার শুধু বলতো আমার ভাগ্যে ছিলো না তাই বিচ্ছেদ হয়েছে।
– ওহ আচ্ছা।
– কিন্তু তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো কেন ভাইয়া!
– এই বাড়িতে এতো সুন্দর একটা পরিবারের সাথে আমার আম্মুর কেন থাকা হলো না সেই কারণটা ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে।
– আমার খুব ইচ্ছে ছিলো বড় মা’র কাছে গিয়ে কিছু দিন থাকতে। আচ্ছা ভাইয়া বড় মা ও কি আমার সাথে এমন কিছু করতো যেমনটা আমার আম্মু তোমার সাথে করে।
– না রে পাগলী। আম্মু একটু ভিন্ন রকম ছিলো। একবার গেলেই বুঝতে। এখন রেডি হয়ে নাও আমরা সবাই বাইরে যাবো।

কলেজ গেইটের একটা ফুচকার দোকানে বসে আছি। সেই সময় কয়েকজন পুলিশ এসে ওদের থেকে একটু দূরে আমায় ডেকে নিয়ে গেলো। সেখানে গিয়ে পুলিশ অফিসারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার চলে আসলাম।
– কি হলো তোমরা এখনো খাওয়া শুরু করোনি যে!
– তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
– আমি খাবো না তো। আমি এসব কখনো খাই নি।
রাদিয়া বললো- এই জন্যই তোমার খাওয়া দরকার। এতোদিন কি মিস করছো সেটা জানার জন্য।
একটা ফুচকা তুলে মুখে দিতে দিতে অবন্তী কে জিজ্ঞেস করলাম- এখানে কেউ ফুপির মেয়ে কেউ চাচ্চুর কিন্তু চান্দ্রিমা কার মেয়ে!
অবন্তী হেঁসে বললো- ও আমার মামার মেয়ে। তোমার সামনে ভদ্র সাজার ভান করছে।
– সব সময় বেশি বেশি বলো তুমি। আমি সব সময় ভদ্র।
– সেটা তো প্রথম দিনেই দেখেছিলাম।

ফুচকা খাওয়া শেষে সবাই মিলে ক্যাম্পাসে হাঁটতে গেলাম। সবাই সামনে সামনে হাঁটছে আমি তাঁদের পিছনে পিছনে। অবন্তী আমার কাছে এসে জানতে চাইলো ” পুলিশ আমার কাছে কেন এসেছিলো। ”
– একটা ঠিকানা জানতে এসেছিলো।
– ভাইয়া আমি ছোট না। উনি এসে তোমার নাম ধরে ডেকেছিলো। তার মানে তোমরা পূর্ব পরিচিত।
– হয়েছে আর গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না।

বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। অবন্তী রাদিয়া, সবাই আগে আগেই বাসায় ঢুকলো আমি তাদের পিছনে পিছনে ছিলাম। দাদু সবাইকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করছে কোথায় গিয়েছিল। দাদুর প্রশ্নে সাবাই ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ একটি শব্দ উচ্চারণ করছে না। তখন পিছনপ থেকে এসে বললাম- তোমরা সবাই এমন মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন! রুমে যাও। আর রাদিয়া ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে এসো একবার।
– আচ্ছা ভাইয়া।
সবাই চলে যাওয়ার পর দাদু আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো- তুমি আমাদের বাড়ির মেয়েদের নিয়ে এসব করা বন্ধ করো। নয়তো ভালো হবে না।
– আপনার বাড়ির মেয়ে হলেও তারা আমার বোন। তাদের আনন্দের বিষয়টা খেয়াল রাখা ভাই হিসাবে আমার দায়িত্ব।
ছোট চাচ্চু আমায় সাপোর্ট করে বললো- বাবা এসব কথা বাদ দিন। দুপুর থেকে সবাই কেমন মন মরা হয়ে ছিলো। সুমন সবাইকে বাইরে থেকে আসার পর সবাই হাসছিলো মনে হচ্ছিল পুরো বাড়িটা আবার প্রাণ ফিরে পেলো।
– বাহ্। তোদের ও দেখি পাখা গজিয়েছে। একটা হাঁটুর বয়সের ছেলের পক্ষ নিয়ে বাবার মুখের উপর কথা বলছিস।
বৃদ্ধ ভদ্রলোক নিজের মনে মনে কিসব বলতে বলতে বাড়ির বাইরে গেলো।
– আচ্ছা ছোট চাচ্চু উনাকে বাসার সবাই এমন ভয় পায় কেন?
– উনি কারো সাথেই ফ্রেন্ডলি মিশেন না আর সব সময় গম্ভীর একটা ভাব থাকে।
মেজো চাচ্চু আমার কাছে এসে বললো- রাদিয়ার মন ভালো হয়েছে!
– আমার যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি বাকীটা আপনার উপর, গিয়ে একটু কথা বলুন আপনার ও ভালো লাগবে রাদিয়ার ও মন ভালো হয়ে যাবে।
ঠিক খানিকটা সময় পরে দরজায় রাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
– কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন!
– তুমি ফোন চাপছো তাই ভাবছিলাম ভিতরে আসবো কি না।
– তুমি আসবে জন্য দরজা খুলে রেখেছিলাম। ভিতরে আসো।
রাদিয়া এসে আমার সাথে দাঁড়ালো- কি বলবে ভাইয়া!
আমি রাদিয়ার দিকে তাকালাম। প্রচন্ড সিরিয়াস একটা ফেস আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাদিয়ার এমন চাহনি দেখে ফিক করে হেসে দিলাম। – তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন! তোমায় বকার জন্য ডাকিনি। এমনি একটু কথা বলবো জন্য ডাকলাম। চেয়ারটা টেনে বসো। আমি শুধু একটা মেইল করে নেই।

মেইল সেন্ড করে রাদিয়ার দিকে তাকালাম – তো, মন ভালো হয়েছে!
– হুম ।
– বাবার উপর রাগ কমেছে!
– হ্যাঁ। বাবা একটু আগে রুমে এসে আদর করে গেছে।
– কত্তো ভালোবাসা।
– অনেক।
– রাদিয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করবো বন্ধুর মতো মনে করে সত্যিটাই বলবা। যদি সত্যি বলো তবে তোমার জন্যই ভালো হবে।
– কি কথা ভাইয়া!
– তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না কেন! কাউকে ভালোবাসো?
রাদিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। রাদিয়ার উত্তরের জন্য আমি চাতকের মতো অপেক্ষা করছি। রাদিয়ার নিরবতা কি তবে আমার কথায় সম্মতি দিচ্ছে! সে কি আসলেই কাউকে ভালোবাসে?

To be continue…

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৫

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৫ম_পর্ব
মেজো চাচী রুমে এসে আমার মুখে একটা মিষ্টি ভরে দিয়ে বললো- ছেলের বাড়ি থেকে কল করেছিল, উনারা বিয়েতে রাজি।
– আমি একটু আগেই তো বললাম আপনারা সবাই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করুন বিয়ে হবে।
– তুমি না থাকলে হয়তো বিয়েটাই হতো না। আমার মেয়ের জীবনে একটা ঝড় বয়ে যেতো।
– আমি কিছুই করিনি। আসলে আপনারা সবাই মিলে এতো ভালো একটা ছেলে খুঁজে এনেছেন যে, চাইলেও কেউ বিয়ে ভাঙ্গতে পারবে না।
– আচ্ছা এসব নিয়ে পরে কথা বলবো তুমি তাড়াতাড়ি বাইরে আসো দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে।
– আমি এখন কিছু খাবো না চাচী। আপনারা খেয়ে নেন। আমি এখন একটু ঘুমাবো।
বাইরে কারো চিৎকার করে ধমক দেওয়ার শব্দ রুমে আসছে। চাচীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম- বাইরে কি হয়েছে! এতো জোরে জোরে কে কথা বলছে!
– এটা তো তোমার মেজো চাচ্চুর কন্ঠস্বর। কিন্তু উনি তো কোনো কারণ ছাড়া এতো জোরে কথা বলে না।
কথাটা শেষ হতে না হতেই চাচী দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। চাচীর পিছনে পিছনে আমিও দৌড়ে বের হলাম।
বের হতেই দেখলাম বাসার সবার সামনে মেজো চাচ্চু রাদিয়ার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। দৌড়ে তাদের সামনে গেলাম – আপনি এতো বড় মেয়েকে মারছেন কেন! সেটা আবার এতো মানুষের সামনে।
রাদিয়া এতক্ষণে দৌড়ে রুমে চলে গেছে।
– অবন্তী তুমি রাদিয়ার কাছে যাও। এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো তোমরা যাও সবাই ওর কাছে।
আমার ধমকে রাফছি, চন্দ্রিমা, অধরা সবাই অবন্তীর সাথে রাদিয়ার রুমে গেলো।
সকলের মুখের মাঝে ক্রোধের উজ্জ্বল শিখা জ্বলজ্বল করছে।
আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম- কি কারণে ওকে মারলো! এতো বড় মেয়েকে কেউ মারে! আপনারা কেউ ওকে সেইফ করলেন না!
দাদু পাশে বসা- ঠিক করেছে। যে মেয়ে বড়দের কথার অমান্য করে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করে তাকে তো কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত।
– কিন্তু কি এমন করছে!
বড় ফুপি বললো- সবাই মিলে এতো কষ্ট করে বিয়েটা আবার জুড়ে দিচ্ছে কিন্তু ও এসে বললো ও বিয়ে করবে না। ছেলে নাকি ওর পছন্দ হয় নি।
– এইটুকু কারণ! ( এতটুকু বলে দাদুর চোখে চোখ পড়লো। অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।) সরি সরি। এতো বড় কারণ! আপনারা এখনো ওকে জীবিত রেখেছেন! দা, কাঁচি যা আছে সব নিয়ে চলে আসুন কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসি। গতকাল ও আমার আফসোস হতো যে আমার এতো বড় একটা পরিবার থাকতেও আমি অসহায়ের মতো একা ছিলাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে যে বাড়িতে নিজের পছন্দ অপছন্দের কথা সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলা যায় না সে বাড়িতে না থাকাই আমার জন্য আনন্দের ছিলো।
– তো থাকতে কে বলেছে তোমায়! চলে যাও। এটা আমাদের বাড়ি, আর আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমরা মারবো না কি করবো সেটা আমাদের ব্যাপার।
এবার একটু চিৎকার করে বললাম- আমি এই বাড়ির ছেলে। যতদিন ছিলাম না ততদিন কিছু বলিনি এখন আছি তাই কথা বলবো। রাদিয়া আপনার বাড়ির মেয়ে হলেও আমার বোন। আমার তো মনে হচ্ছে মেজো চাচ্চু রাদিয়ার গালে থাপ্পড় দেয় নি সেটা আপনি উনাকে দিয়ে করিয়েছেন।
– তোমার মা’কে না আমরা দেখেছি আর না তোমার জন্মের ইতিহাস আমরা জানি উড়ে এসে জুড়ে বসা একজন তুমি। তাই নিজেকে আমাদের পরিবারের ছেলে ভাবা বাদ দাও।
এতক্ষণ আব্বু চুপচাপ থাকলেও এবার উনি নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে মুখ খুললেন- এতক্ষণে আপনি সুমনকে যা খুশি বলে ছিলেন সেখানে আমি কোনো কথা বলি নি। কিন্তু ওর মা’কে নিয়ে বিন্দু মাত্র কথা আমি শুনতে চাই না। সুমন এই বাড়ির ছেলে এবং সব থেকে বড় ছেলে সেটা কেউ মানলো বা না মানলো আমার যায় আসে না। আমি যদি সেদিন আপনাদের ইমোশনাল ব্লাকমেইলের শিকার না হতাম তাহলে হয়তো এই কথা বলার মতো সুযোগ আপনি কোনো দিন ও পেতেন না।
লোকটার কথায়, চাহনিতে আম্মুর প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে। তবে কেন উনি আলাদা হয়ে গেলো! কি জন্যই বা ছিলো সেই ব্লাকমেইল!
– সুমন, এই বিয়েতে আমাদের পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে। আমি চাই না বাবা আমাদের পরিবারের এতো দিনের অর্জিত সম্মান এভাবে শেষ হয়ে যাক। আমি জানি সেটা তুমি হতে দিবে না।
আব্বু আমার ঘাড়ে হাত রেখে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।
– সবাই এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা এক ছেলের ভরসায় বসে থাকো।
দাদুর সামনে গিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বললাম – পৃথিবীর কোনো ছেলেই তার মা’র ব্যাপারে বিন্দু মাত্র বাজে কথা সহ্য করতে পারে না। তাই পরবর্তীতে এমন কিছু বলার আগে একবার হলেও ভেবে নিবেন। নয়তো আমি আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের কথা ভুলে যাবো।

দাদু আর কিছু না বলে উনিও উঠে চলে গেলো। একে একে সবাই নিজের কাজে চলে গেলো। শুধু মেজো চাচ্চু আর ছোট চাচ্চু বসে রইলো। এতক্ষণ এখানে এতো কিছু হয়ে গেলো কিন্তু মেজো চাচ্চু একটি বারের জন্য মুখ খোলেনি। দূরে দাঁড়িয়ে মেজো চাচী নিরব দৃষ্টিতে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

মেজো চাচ্চুর পাশে বসে ওনার কাঁধে হাত রাখলাম- কি এতো ভাবছেন!
উনি আমার দিকে তাকালো। দুচোখে পানি টলমল করছে – আমি কখনো রাদিয়ার উপর জোর গলায় একটা কথা পর্যন্ত বলিনি। আজ ওকে মারলাম।
ভদ্রলোক নিজের চোখের পানি আটকাতে ব্যার্থ চেষ্টা করছে। মেয়েদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা একটু ভিন্ন ধরনের হয়। উনারা মেয়েকে ঠিক ফুটন্ত ফুলের মতোই ভালোবাসে। না তো তীব্র রোদ লাগতে দেয় ঝড়ে যাওয়ার ভয়ে আর না প্রবল বাতাস লাগতে দেয় ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে।
তাদেরকে আশ্বস্ত করলাম, যেভাবেই হোক এই বিয়ে হবে। তবে মনে মনে একটা তীব্র প্রতিজ্ঞা করলাম। এখানে থেকে চলে যাওয়ার আগে বৃদ্ধ কে ভালো একটা চমক দেখিয়ে যাবো। কারণ এতক্ষণ বুঝতে পারছি এই বাড়িতে আমার বেড়ে ওঠার সব থেকে বড় বাধা সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক ছিলেন।
চাচীর থেকে রাদিয়ার রুমটা দেখিয়ে নিলাম।
দরজায় নক করার পর ভিতরে থেকে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো- কে!
– আমি, দরজা খোলো।
চন্দ্রিমা দরজা খুলে দিলো।
– রাদিয়ার কি অবস্থা!
– ভিতরে এসে দেখুন।
রাদিয়া তখনও চোখ মুচছে- বাহ্ মেয়ে থাপ্পড় খেয়ে রুমে বসে কান্না করছে আর বাবা থাপ্পড় দিয়ে ওখানে বসে কান্না করছে।
আমার কথায় রাদিয়ার কান্না তৎক্ষনাৎ উধাও – বাবার কি হয়েছে?
– তেমন কিছু না। তোমার গায়ে হাত তুলেছে তাই গিল্টি হচ্ছে।
– জানো ভাইয়া আব্বু কখনো আমায় বকা ও দেয় নি। কিন্তু আজ দাদুর কথায় আমায় মারলো।
রাফছি পাশে থেকে বললো- ভাইয়া দাদুকে আচ্ছা করে বকে দিছে আপু।
– তুমি কিভাবে জানলে?
– আমি সব দেখেছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে এসব নিয়ে পরে আমরা কথা বলবো আগে বলো রাদিয়ার প্রিয় খাবার কি!
পাশে থেকে রাফছি বললো- আমি জানি ভাইয়া। ফুচকা।
– আশেপাশে কোথাও ভালো ফুচকা পাওয়া যায়!
– আমার পাড়ার মোড়ে কলেজ গেইটে।
– আচ্ছা তাহলে আজ আমরা সবাই বজ ফুচকা খেতে যাবো। সবাই দ্রুত রেডি হয়ে নাও।
– দাদু যেতে দিবে না।
– দাদু ভাইয়ার উপর কোনো কথা বলবে না। আমি জানি।
– অবন্তী আমার সাথে এসো তুমি।

অবন্তীকে নিয়ে আমার রুমে আসলাম। এখন অবন্তীর থেকেই জেনে নিতে হবে আব্বু আম্মুর আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ আর কি ছিলো সেই ব্লাকমেইল যার কথা আব্বু আজ অশ্রু সিক্ত চোখে সকলের সামনে বললো।

To be continue…..

প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-০৪

0

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব
অবন্তী নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিচ্ছে এটা দেখে ছোট মা’র চোখে যেন আগুন ঝড়ছে। অবন্তী এখনো খেয়াল করেনি যে দরজায় ছোট মা দাঁড়িয়ে আছে।
– অবন্তী, তুমি এখানে কি করছো!
ছোট মা’র কর্কশ কন্ঠ কানে আসতেই অবন্তী ভয়ে চমকে গেলো হাতে থাকা খাবার আবার প্লেটে পড়ে গেলো। – কিছু না আম্মু। তখন ভাইয়া খায়নি তো তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
– কেন! খাবার রুমে নিয়ে এসে খাওয়াতে হবে কেন! সেখানে কি তাকে খাবার দেওয়া হয়নি?
অবন্তী নিথর হয়ে বসে রইলো।
– এখনো বসে আছো কেন! নিজের রুমে যাও।
– তুমি রুমে যাও আমি খেয়ে নিবো চিন্তা করতে হবে না।
– সত্যি তো!
– হ্যাঁ সত্যি।
খাবারের প্লেটটা আমার হাতে দিয়ে অবন্তী বেড়িয়ে গেলো। ছোট মা তখনও দাঁড়িয়ে ছিলো।
– আপনি কিছু বলবেন!
– তুমি অতিথি অতিথির মতো থাকো আমার মেয়ের মাথাটা খেতে এসো না।
আমায় কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই প্রস্থান করলেন।

রাত আনুমানিক বারোটা হবে। প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু রুমে যে পানি অবন্তী দিয়ে গিয়েছিল সেটা তখনই শেষ। পানির জন্য রুম থেকে বের হলাম। ড্রয়িংরুমে আব্বু দাদু মেজো চাচ্চু আর ছোট চাচ্চু বসে কথা বলছে। মনে হয় রাদিয়ার বিয়ে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। হঠাৎই আব্বুর নজর আমার দিকে পড়লো- দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন! এদিকে আসো।
– আমি পানি নেওয়ার জন্য এসেছিলাম।
ছোট চাচ্চু বললো- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি পানি খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
পানি খাওয়া শেষে রুমে চলে আসবো তখন আবার আব্বু পিছিয়ে থেকে ডাকলেন – এদিকে আসো।
– কিছু বলবেন?
– তুমি হয়তো এর মাঝে জেনেই গেছো বাসার সবার অবস্থা এখন খুব বেশি ভালো না। সবাই বিয়েটা নিয়ে খুবই চিন্তা করছে। কি করা যায় বলে তোমার মনে হয়!
– এটা তো খুবই সাধারণ একটা বিষয়। কেউ একজন মেয়ের বিষয়ে তাদের ভুল খবর দিয়েছে এটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। আমার মনে হয় তারা বুঝতে পারবে আর যদি বুঝতে না পারে তবে সেখানে সম্পর্ক করার থেকে না করাই ভালো হবে। কার যে বাসার মানুষ সত্য মিথ্যা যাচাই না করে কাউকে অপবাদ দেয় তারা আর যাই হোক না কেন উত্তম মানসিকতার মানুষ হতে পারে না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কাল তুমি আমাদের সাথে যাবে।
– কোথায়!
– ছেলের বাসায়।
– আমি কেন?
– তোমার ও তো বোন তোমার তো একটা দায়িত্ব আছে।
প্রসঙ্গ যখন দায়িত্বের আসলো তখন আর না করতে পারলাম না।

পরদিন সকাল বেলা নাস্তার বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। চোখ খুলে সামনে ওকে দেখে ভয়ে ভিতরটা কেঁপে উঠলো।
– তুমি রুমে আসলে কিভাবে!
– দরজা তো খোলাই ছিলো।
– কখন আসছো রুমে!
– একটু আগেই।
– ডাকতে পারতে।
– আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকিনি। আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছিলাম ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবেন। টেবিলে তো মামীর কথায় শান্তি করে খেতে পারবেন না। তবে মামী কিন্তু এমন না। খুব ভালো একজন মানুষ কিন্তু আপনার সাথে কেন যে এমন করছে সেটাই ঠিক বুঝতে পারছি না।
– সেইটা বোঝার মতো বয়স হয়নি তোমার এখনো।
“অধরা, তুমি এখানে কি করো!”- কথাটা বলতে বলতে মেজো চাচী রুমে ঢুকে পড়লো।
– উনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছিলাম।
– তুমি বাইরে যাও আর নাস্তার বাটিও নিয়ে যাও।
অধরা মুখটা অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার করে চলে গেলো।
– কিছু বলবেন!
– তোমার জন্য তোমার আব্বু চাচ্চু সবাই অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে।
– আমার জন্য কেন অপেক্ষা করবে উনারা!
– তুমি নাকি ছেলের বাসায় যাবে উনাদের সাথে সেই জন্য।
– আপনি যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ছেলের বাসায় বসে আছি। আব্বু চাচ্চু দাদু সবাই মিলে ছেলের বাবার সাথে কথা বলছে। কিন্তু ছেলের বাবা কিছুতেই রাজি না। উনি তার ছেলের ভবিষ্যত এভাবে নষ্ট করতে চাচ্ছেন না। আমি চুপচাপ উনাদের মন বিনিময়ে দেখছিলাম। বিরক্ত হয়ে ছেলেকে নিয়ে আমি বাসা থেকে বাইরে আসলাম। বাসার বাইরে একটা টং দোকানে বসে দু’জনেই চা খাচ্ছি।
– বাসার থেকে টং দোকানের চা খুব বেশি টেষ্টি না!
ছেলেটা হয়তো ভেবেছিলাে আমি বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলবো তাই আমার এমন অফটপিকে প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলো।
– হ্যাঁ ভাইয়া।
– আচ্ছা তোমার নাম যেন কি?
– শুভ্র।
– আচ্ছা শুভ্র আমার বোনটাকে তোমার কেমন লাগে!
শুভ্র চা’য়ের কাপটা টংয়ের উপর রেখে আমার খুব কাছে এসে আমার হাতটা জড়িয়ে ধরলো। আমি শুভ্র’র থেকে এমনটা মোটেও আশা করিনি।
– ভাইয়া ওকে প্রথম দেখেই ভালো লেগে যায় আমার। এরপর আমরা কয়েকদিন একসাথে ঘুরেছি। আমি যে সময়টুকু ওর সাথে থাকি নিজের সমস্ত ক্লান্তি গ্লানি সব দূর হয়ে যায়। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
শুভ্র’র আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমি পাগলকে পাগলামি শেখাতে এসেছি। যেখানে ও রাদিয়ার জন্য আগে থেকেই পাগল সেখানে আমি ওর কাছে রাদিয়াকে হাইলাইটস করতে এসেছি।
– তাহলে বিয়ে নিয়ে এতো আকাশ পাতাল সমস্যা কেন!
– আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু রাদিয়া বার বার শুধু এতটুকুই বলে ও আমার জীবন নষ্ট করতে চায় না। আমি ওকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না আমি ওর সাথে ওর শেষ পর্যন্ত থেকে যেতে চাই।

শুভ্র’কে নিয়ে বাসার ভিতরে আসলাম। ততক্ষণে আব্বু চাচ্চু বিদায় নেওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
– আপনাদের এখানে কি সিদ্ধান্ত হলো!
আব্বু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন – ওনারা কিছুতেই এই আত্মীয়তা করবে না।
আমি শুভ্র’কে নিয়ে ওর বাবার কাছে গেলাম।
কিছুক্ষণ ওনার সাথে কথা বলে আব্বু চাচ্চুর সাথে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে নিজের রুমে যাওয়ার আগে শুধু এতটুকুই বললাম – আপনারা বিয়ের প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিয়েটা কিন্তু হচ্ছে।
দাদু আমায় তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো- আমরা এতক্ষণ বোঝানোর পরেও রাজি হলো না। এখানে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর প্রয়োজন নেই।
ছোট মা’র মতো এই লোকটারও যে আমি চোখের বালি সেটা উনার সামনে এলেই মুখের আকৃতিতে অনুমান করা যায়।
দাদুর শরীরে একটু আগুন জ্বলানোর জন্য মজা করে বললাম – আপনি বুঝিয়েছেন প্রাচীন নিয়মে তাই বোঝেনি। আমি আধুনিক নিয়মে অল্প সময়েই বুঝিয়ে দিয়েছি। সময় হতো হয়ে এলো রিটায়ার্ড করার। তাড়াতাড়ি রিটায়ার্ড করে নিন।
দাদু হয়তো প্রচুর রেগে গেছে তাই ওনার দিকে তাকালাম না। তাকালেই হয়তো হেঁসে দিবো যেটা পরিবেশের সাথে একদম ম্যাচ করবে না। সেখানে থেকে দ্রুত রুমে চলে আসলাম।

To be continue…..