Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 435



হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১২

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

-“তা হলে এই কথাই থাক। কি বলেন ভাইজান? ”
আয়ানের বাবা সাদনানের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“হুম এটাই ভালো হবে। এতো দূরে যেহেতু তাই এখান থেকে একবারে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যাক। তার পর আপনারা ঢাকা চলে এলে। মাইশা মামনিকে তখনই না হয় নিয়ে যাবেন।
সবাই সায় দিলো আজ্জম মির্জার কথায়।দিবে নাই বা ক্যান? একে তো এমপি মহোদয় তার উপর এতো সুন্দর বৃদ্ধি ফেলে দেওয়া যায় নাকি? উঁহু একদম নয়।

——————————–

সামনে সাপ্তাহে বিয়ের তারিখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে গায়ে হলুদ শুক্রবার সন্ধায় বিয়ে।বর, বউ একবাড়িতে থেকে বিয়ে হবে বলে সবাই ঠিক করেছেন। যেহেতু আয়ানরা সবাই এখানেই আছে।আর তাদের সে রকম কোনো কাছের কোনো মানুষ চট্টগ্রাম থাকে না। তাই ওখানে এতো দূরে যাওয়ার কোনো কারন নেই। যা কাছের কিছু বন্ধু আছে তাই তারা আর দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এমনিতেও কিছু দিন পরতো ঢাকাতে একবারেই চলে আসবে। প্রিয়তা আর সাদনানের রেজিস্ট্রার করা হয়নি এটা প্রিয়তার আঠারো বছর হলে করা হবে। আর বড় করে অনুষ্ঠান করে বউ তোলে নিবি। বড় করে অনুষ্ঠান করতে হবে না?এমপির ছেলে বিয়ে করেছে। আর সেটা বড় করে সবাইকে নিমন্ত্রণ করে সবাইকে জানেতে হবে না।
সামনে মাসে প্রিয়তাদের ফাস্ট ইয়ারে ইয়ার চেন্জ পরীক্ষা। তার মাস তিনেক পর প্রিয়তার কাগজ কলমে আঠারো পূর্ণ হবে। তখন রেজিস্ট্রার করা হবে বলেই। প্রিয়তার বাবার বাণী।

———————————–

সওদাগর বাড়িতে বিয়ের ধুম লেগেছে। লাগার ওই কথা বংশের প্রথম মেয়ে আবার থেকেছেও সব সময় এখানে । ছোট্ট থেকে বড় হয়েছে এখানে। যতো হক বংশের বড় মেয়ে আবার বংশের প্রথম মেয়ে। কোনো রকম কোনো কমতি রাখতে চায় না শফিক। বোনের স্বামীর যেনো বুঝতেই না পারে মেয়েকে শশুর বাড়ি থেকে বিয়ে দিচ্ছে। শফিক নিজের মতো করে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মফিজের কোনো রকম কোনো অভিযোগ নেই। মেয়েকে তো তিনি ভালো করে সময়ও দেয়নি তাই এসবে তিনি কোনো রকম দ্বিমত পোষণ করেননি হাসি মুখে মেনে নিয়েছে।সারা জীবন টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে বউ মেয়ের দিকে খেয়াল দিতে বেমালুম ভুলে বসেছিলেন।টাকা পয়সা কখনো কোনো খামতি রাখেননি। তবে টাকা পয়সা হলেই তো সব হয় না। আবার টাকা পয়সা না থাকলেও হয় না। তবে তিনি ঠিক করেছে আর বিদেশ যাবে না। ওখানে যে ছোট্ট খাটো বিজনেস আছে সেটা দেশে নিয়ে আসবে। এটা অবশ্য কাউকে এখনো জানাননি।

আজ সওদাগরের বাড়ি সবাই বিয়ের শপিং করতে যাবে। যদিও গহনা সব আয়ান আগে থেকে নিজের উপার্জন করার টাকা থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে গহনা বানিয়ে রেখেছে। আবার আয়ানের মাও অনেক গহনা বানিয়ে রেখে দিয়েছিলেন একমাত্র ছেলের বউ আর মেয়ের জন্য নিজ হাতে দিবে বলে তবে তা আর হলো কই। সব শখ আহ্লাদ পূরণ করবার আগেই চলে গেলো না ফেরার দেশে।
-“আব্বা আমার একটা জরুরি কাজ পরে গেলো। আপনারা সবাই কি এদিকটা সামলে নিতে পারবেন?”
সাদনান চাইলো বাবার পানে
আলতো করে মাথা ঝাঁকি বলল
-“হুম পারবো বাবা। তুমি চিন্তা মুক্ত থাকতে পারো।”
আজ্জম ছেলের কথায় মুচকি হাসলো। তিনি জানেন তার ছেলে থাকতে কোনো রকম কোনো ঝামেলা হবে না। এই যে এতো বড় ব্যবসা ছেড়ে তিনি রাজনৈতিক কাজে বিভিন্ন জায়গায় হুটহাট করে চলে যান। ছেলের ব্যবসায় হাত দেওয়ার পর আজ্জম কখনো অফিস গিয়েছে কিনা সন্ধেহ।
বেশি কিছু না ভেবে তিনি আলতো করে ছেলের কাঁধে চাপর মারলো
-“আমি কাল গায়ে হলুদের আগে এসে যাব আব্বা। ”
-“সাবধানে থাকবে।”
বাবাকে সাবধানের সহিতে আদেশ করলেন।
আজ্জম মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে পড়লো।

——————————-

-“ভাই আর কতখন দাঁড়িয়ে থাকবো?”
আধঘন্টা অপেক্ষার পর বিরক্ত হয়ে বলল রাহান। আয়ানও বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চাপছে। সাদনান গাড়ির দরজা খুলে বসে ছিল। রাহানের কথায় সাদনান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়া ওর মাকে ডাকলো
-“মা আসবা না-কি চলে যাবো?”
সুফিয়া, সালেহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো
-“এতোখন লাগে মা? আমরা সবাই শপিং এ যাচ্ছি বিয়ে বাড়ি নই। যে তোমাদের এতো সাজুগুজু করতে হবে?”
-” আব্বা আপনি কি আমাদের একবার লক্ষ করেছেন?”
সাদনান এতোখন ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তবে ওর মার কথা শুনে সুফিয়া, সালেহার পানে চাইলো।সত্যি ওনারে কেউ সাজেনি এমনিকি বাড়িতে যে সব সময় যে সমস্ত কাপর পড়ে থাকে তেমন পড়েই এসছে।সাদনান মার পানে দৃষ্টি দিলো

-“তো এতোখন কি করছিলে?”
শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো মাকে।

-“আপনি ভিতরে গিয়ে দেখে আসবেন?”
বলেই তিনি গাড়িতে বসে পড়লো।

সাদনান বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।রাহান,আয়ান কিছু বুঝলো না। ফেলফেল করে চেয়ে রইলো।
বেশ অনেকটা সময় পর আয়ানের ফোনে কল এলো। আয়ান ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সাদনান বলল
-“আমি সারা আর মাইশাকে পাটাচ্ছি। তোমরা সবাই কে নিয়ে যাও। আমি ওকে নিয়ে আসছে।”

-“আচ্ছা। ”
শটকাট জবাব দিয়ে কলটা কাটলো। ততক্ষণে মাইশারাও চলে এসছে। আয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“প্রিয়তাকে নিয়ে ভাই পরে আসছে। আমাদের সবাইকে যেতে বলেছে। ”
সবাই আর কোনো বাক্য প্রয়োগ করলো না । আয়না আর রাহাত গিয়ে অন্য গাড়িতে বসলো। সালেহা আর সুফিয়া গিয়ে আয়নাদের গাড়িতে পিছনে বসে পরলো।

রাহান গিয়ে আরেকটা গাড়িতে ডাইভিং সিটে বসে পড়লো। মাইশা গিয়ে পিছনে বসলো। সারা যেই না পিছনে বসতে যাবে অমনি আয়ান গিয়ে মাইশার পাশে বসে পরলো। মাইশা কটমট করে চাইলো। আয়ান কেবলা মার্কা একটা বেটকি দিলো। মাইশা সারার পানে দৃষ্টি দিলো মেয়েটা মিটমিট করে একটা চোখ টিপ দিয়ে সামনের দরজাটা খুলে রাহানের পাশে বসে গেলো।
রাহান আলতো করে মাথা কাত করে আয়ান এর দিকে তাকি বিজয়ী হওয়ার হাসি হাসলো। যেনো কোনো যোদ্ধে জয়ী হয়েছে। রাহান হাসিটা দিয়ে বামে তাকাতেই একটা ফাঁকা ঢুক গিলে নিলো। সারা রাহানের দিকে অগ্নিমূর্তির নয় চেয়ে। যেটার মানি পরে তোমায় দেখে নিবো।
রাহান হে হে করে দাঁত বেড় করে হাসলো।পিছন থেকে আয়ান আর মাইশা কেবলার মতো চেয়ে রইলো।

——————————–

-“কি সমস্যা বলবেন প্লিজ। ”
অনুরোধে সুরে বলল সাদনান।প্রায় আধঘন্টা ধরে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে। ভিতরে রাগ থাকলেও ক্যান যেনো তা বহিঃপ্রকাশ করতে পারছে না।কিন্তু ক্যান?হয়তো ভালোবাসার কাছে এসব রাগ অভিমান তুচ্ছ।

-“আপনি ক্যান বাবাকে বলেননি আমাদের বিয়ের ডেটটাও ঠিক করে নিতে?”
ছিঃ কি বেহায়া আবদার। তবে কন্ঠে বেশ অভিমানের ছোঁয়া।সাদনান আলতো করে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে।

-“আপনি কি জানেন আপনি দিন কি দিন আমার চায় বেশি বেহায়া হয়ে যাচ্ছেন? ”
ভ্রুু কুচকে প্রশ্ন করলো সাদনান। মেয়েটার দিক থেকে কোনো রকম উত্তর এলো না।তবে মাথাটা তোলে চাইলো স্বামী নামক ব্যাক্তিটার দিকে। পা দুটি উঁচু করে সাদনানের পায়ের উপর রাখলো। সাদনানের চাই প্রিয়তা কিছু টা খাটো। খাটো তো হবেই কই ছ’ফুট আর কোথায় পাঁচফিট দুই। পা দুটি উঁচু করে আলতো করে সাদনানের গোলাপি ঠোঁট জোড়ার উপর চুমু খেলো। সাদনানের চোখ রসগোল্লানেয় ধারণ করলো।

নিজের কাজ হাসিল করে আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেলো।

-“হ্যাঁ, আমি আপনার ভালোবাসায় উন্মাদ। তবে সেটা যদি হয় বেহায়া তবে আমি মরবার পরও বেহায়া থাকতে চাই। যদি সেই বেহায়া পানায় আমি আপনাকে নিয়ে বেহেশতে থাকার নসিব হয় তবে আমি সত্যি বেহায়া হয়েই থাকতে চাই ”

বাক্যটা প্রয়োগ করতে দেড়ি হয়েছে কিনা সন্ধেহের। সাদনান ঝরের বেগে মেয়েটাকে দু বাহু ধরে মেঝে হতে কিছু টা শূন্যে তুলে নিলো।ঝাঁপিয়ে পরলো শ্যাম্য রমনীটার কালচে গোলাপি ঠোঁট জোড়ার উপর চিকন পাতলা ঠোঁট জোড়া মূহুর্তের মধ্যে মুখে পুড়ে নিলো। রমনীটা ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে মানবটার গলা জড়িয়ে ধরলো।
মেয়েটাও সাদরে গ্রহন করলো স্বামীর নামক ব্যাক্তিটার পবিত্র ভালোবাসার ছোঁয়া।

#চলবে……..

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১১

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১১
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা?”

মাইশা উপর থেকে দৌড়ে এসে দরজা দাঁড়ানো ব্যাক্তিটাকে জড়িয়ে ধরলো।ব্যাক্তিটাও তার মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন।তার পর ব্যাক্তিটা বাম হাতটা বাড়িয়ে প্রিয়তাকেও জড়িয়ে নিলো।প্রিয়তা যেনো এতোখনে হুস এলো। আর বাকিরা সবাই অবাক নয়নে চেয়ে আছে। মাইশা নিজেক ধাতস্থ করলো।
-“বাবা তুমি আসবে বলোনি ক্যান? কালও কথা হয়েছে তোমার সাথে আমার। ”
-“খুশি হননি আম্মা? ”
জিজ্ঞেস করলো মফিজ মেয়েকে।
মাইশা মাথা ঝাঁকি হ্যাঁ বুঝালো।আবারও জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।
হ্যা, রাস্তা সাদনানের সাথে দেখা হওয়া মানুষটা মাইশার বাবা মফিজুল ইসলাম। তিনি মুচকি হাসলেন আলতো করে মেয়ের মাথায় হাত রাখে।ততক্ষণে আয়ানও চলে এসছে। মফিজ এগিয়ে গিয়ে বোনের মেয়ে আর ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। আয়ান, আয়নাও মামাকে জড়িয়ে ধরে।এভাবে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে। সুফিয়া বেগম চুপটি করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। ওনি জানতেন আজ মফিজ আসবে ওনি সবাইকে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মফিজুল ইসলাম না করাতে আর কাউকে জানায়নি।একমাত্র মেয়ের বিয়ে আর সেটা কি তিনি বাবা হয়ে বাদ দিবে?উঁহু হয় না-কি আসতে তো হতোই। বিদেশ তো অনেক করা হলো এবার না হয় পরিবার কে সময় দেওয়া যাক।এই জন্য মেয়ের বিয়ে খবর পাওয়া মাএই দেশে আসবার জন্য টিকিট কেটে নিলেন আর সেটা শুধু স্ত্রীকে বলেছিলেন আর কাউকে নয়। সবার সঙ্গে আলাপ শেষ করে ফ্রেশ হতে গেলো মফিজ। সবাই যে যার মতো করে চলে যাচ্ছে। সালেহা আর সুফিয়া, শেফালী ওনারে চলে গেলেন কিচেনে খাবার ব্যবস্তা করতে। সারাও ইনিয়াকে নিয়ে চলে গেছে উপরে। মাইশা আয়নার সাথে ওর রুমে গিয়েছে। বসার ঘর শুধু প্রিয়তা আর সাদনান। সাদনান অবশ্য প্রিয়তাকে রুমে আসবার জন্য ইশারা করেছে। কিন্তু মেয়েটার সেদিকে কোনো হেলদুল নেই। কি সুন্দর ডাইনিং টেবিল থেকে আপেল নিয়ে সোফায় বসে তা মনের সুখে চিবচ্ছে। সাদনানের রাগ হলো। তবে কিছু ভেবে বাঁকা হেসে প্রিয়তার সামনে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা ভ্রুুজোড়া কুঁচকে সাদনানের পানে চাইলো। কথা বলবে না লোকটার সঙ্গে। ক্যান বলবে?বারোটা দিন কথা বলেনি এমন কি একবার খুঁজও নেয়নি। তাহলে এখন ক্যান আসছে দরদ দেখাতে। হুু ঢং,ভেবেই মেয়েটা আরো একবার মুখে আপেল পুড়ে নিলো তবে তা আর গিলা হলো না। হলো না বলতে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা গিলতে দিলো না।এক ঝটকায় মেয়েটাকে পাঁজা কোলে তোলে সিড়ি বেয়ে উপরে প্রিয়তার রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। প্রিয়তা চোখ দুটো যেনো রসগোল্লার আকার ধারণ করলো।
-“এভাবে তাকায় না জান।এমনিতেই অনেক কষ্টে নিজেকে কনট্রোল করে রাখি।আমার বউ ছোট সেটা তো আমাকে বুঝতে হবে।তাই প্লিজ এভাবে তাকাবেন না । ”
প্রিয়তা কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না লোকটা কি বলছে এসব পাগল হয়ে গেলো না-কি। প্রিয়তার হঠাৎ পিছনে নজড় পড়ল।সুফিয়া, সাদনানের মা এদিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে দুজনেই মিটি মিটি হাসে।শেফালীও হাসছে।মেয়েটার বুঝতে একটু সময় লাগলো ওনারা সবাই ক্যান হাসছে? পরক্ষনে মাথা এলো ওতো সাদনানের কোলে। ছিঃ সবাই কি ভাবছে নিশ্চয়ই খারাপ। আর সাদনানের মা?ওনার সামনে কি করে দাঁড়াবে? আল্লাহ এই লোকটা তো নিজে বেহায়া। সাথে আমাকেও সবার কাছে বেহায়া বানাচ্ছে।
প্রিয়তা কিছু বলবে মুখ খোলার জন্য। কিন্তু সানান তার আগেই দরজাটা ধরাস করে খোলে এক প্রকার ছুড়ে ফেলে দিলো বিছানা।মেয়েটা ব্যথা পেলো তবে মুখ দিয়ে টু শব্দ পযন্ত বের করলো না। সাদনান ঝরের বেগে গিয়ে খোলা দরজাটা আটকে এলো। মেয়েটার মুখে এখনো আপেল হাতেও আধ খাওয়া আপেল। সাদনান সেদিকে নজড় দিলো না আস্তে করে গিয়ে মেয়েটার পাশে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা উঠতে চাইলো তবে সাদনানের শক্ত বাঁধন ভেঙ্গে উঠতে পারলো না। এই বাঁধন কি এতো সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যাবে?উঁহু একদম নয়। মেয়েটা চায়ও না ভেঙ্গে ফেলতে। তবে ছোট্ট মনটা অভিমান হয়েছে এই লোকটাকে তো বুঝতে হবে। প্রিয়তা আলতো করে সাদনানের বুকে মাথা রেখে বুকের ধুকপুক করতে থাকা লাল যন্তরটার আওয়াজ শুনতে লাগলো।
-“আমি ওই তিন দিন ঘুমতে পারিনি। কিন্তু এই বারো দিন আমি মনের শান্তিতে ঘুমিয়েছি।এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন?”
প্রিয়তা মুখের আপেলটা গিলে নিয়েছে ততক্ষণে। সাদনান কথা শেষ করে আলতো করে মাথার তালুতে চুমু খেলো। মেয়েটার যেনো সর্বাঙ্গে কাঁপুনি দিলো। ছোট্ট দেহখানা কেঁপে উঠল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাদনানের বুকের বা পাশের সার্ট। কেঁদে উঠলো। মাথা তুলে চাইলো ব্যাক্তিগত পুরুষ টার পানে। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল
-“আমি বুঝতে পারিনি।আর কখনো এমন হবে। দোহাই লাগি আপনার আর ছেড়ে যাবেন প্লিজ।? ”
বাক্য শেষ শক্ত করে আবার সার্ট খামচে জড়িয়ে ধরলো।
সাদনান মুচকি হাসলো। দু’হাতে জড়িয়ে নিলো ছোট্ট পাতলা দেহপিঞ্জরা।যেনো পারলে ঢুকিয়ে নিতে বুকের মধ্যে। হয়তো মেয়েটা ব্যথাও পেলো।তবে তা গ্রহ করলো।স্বামীর ভালোবাসায় কাছে নয়তো ফিকে পরেছে।আবার চুমু আকলো মেয়েটার মাথার তালুতে তবে তা মেয়েটা টের পেলো না।
-“আর করবার সুযোগ দিলে তবে তো করবেন।ওই দিন অধিকার ছিলো না আর ভুলটাও আমার ছিল মানছি তাই কিছু বলনি। কিন্তু আপনি পরে যেটা করেছেন সেটা একদমই ঠিক করেননি।আর এখন সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার আপনার উপর । তবে চিন্তা করবেন না আপনার অনুমতি ব্যতিত আমাদের মাঝে কিছু হবে না। তবে হ্যাঁ একটু আধটু চুমু টুমু কিন্তু চলবে।”
মেয়েটা কি লজ্জা পেলো? এতোখন সাদনান নিজে বুকের ভিতর ঢুকিয়ে নিতে চাইছিল তবে এখন যেনো পারলে মেয়েটা নিজেই ঢুকে যেতো।সাদনান মুচকি হাসলো। দু’হাতে ধরে মেয়েটাকে ঝরের বেগে নিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে মেয়েটার উপর নিজের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিলো । এতোখন লজ্জা পেলোও এখন ভয়ে প্রিয়তা চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।সাদনান আলতো করে চুমু খেলো মেয়েটার কপালে। এতে যেনো মেয়েটা স্বভাবিক হলো একটু। কুঁচকে থাকা ভ্রুজোড়া সরল হলো। কিন্তু পরক্ষনে নিজের উপর কিছু নেই মনে হলো।চোখ জোড়া মেলে চাইলো। সাদনান দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়ানার সামনে হাত ঘড়ি খুলছে।
-“মা কি আমার ড্রেস দিয়েছে? ”
প্রশ্ন করলো সাদনান
-“না কেউ জানতো না-কি আপনি আজ আসবেন। আমি বাবার ঘর থেকে কিছু নিয়ে আসছি। ”
কথা সমাপ্ত করে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো প্রিয়তা।
সাদনান ওয়াশরুমে চলে গেলো অপেক্ষা না করে। বেশ অনেক টা সময় পর কারোর কোনো সারা না পেয়ে ওয়াশরুমে থাকা এক্সট্রা তোয়ালে সেটা পড়ে বেড়িয়ে এলো। ঠিক তখনই প্রিয়তা হাতে একটা লুঙ্গি নিয়ে রুমে ঢুকলো। তড়িঘড়ি করে লুঙ্গি সামনে দিয়ে ধরে বলল
-“আপনি ওয়াশরুমে যান আমি সব দিচ্ছি আপনাকে।”
ধরে আসায় গলায় বলতে দেড়ি কিন্তু সাদনান এক টানে মেয়েটাকে বুকে নিতে দেড়ি নয়।
-“তাকান আমার দিকে।”
বলে লুঙ্গি টা টেনে নিয়ে চেয়ারে রেখে দিলো।
মেয়েটা খিঁচে চোখ বন্ধ করে নিলো। এটা যেনো সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার পছন্দ হলো না। শক্ত কন্ঠে মেয়েটাকে ডাকলো
-“প্রিয়তা?”
ব্যাস কাজ যেনো এতেই হলো মিটমিট করে চোখ মেলে চাইলো মেয়েটা লম্বা চওড়া শক্ত পোক্ত মানবটার দিকে। প্রথমেই নজড়ে এলো লোমযুক্ত শক্ত চওড়া মসৃণ বুকটা। কেমন যেনো একটা আকর্ষণ অনুভব করছে। মনটা খুব করে চাইছে একটা ঠোঁটের পরশ বুলাতে ওই বুকটায়। সাদনান মেয়েটার পানে চেয়ে। ঠোঁটে লেগে রয় মুচকি হাসি।হঠাৎ বুকে নরম কিছু আবিস্কার করলো।চাইলো রমনীটার পানে। হ্যাঁ তার একান্ত নিজের ব্যাক্তিগত নারী টা তাকে এই প্রথম নিজ থেকে ভালোবাসার পরশ দিয়েছে। আচ্ছা মেয়েটাকি হুসে আছে?নিশ্চয়ই না।থাকলে জীবনেও এমন করতো না।
সাদনানের ভাবনার মাঝেই রমনীটার নিভু নিভু চোখে চেয়ে আলগোছে হাত রাখল পুরষটার উদাম শরীরের বুকের মধ্যেখানটায় অতঃপর ধরে আসায় গলায় জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
-“এই স্থানটা আমার একান্তই আমার। এখনে আমার রাজত্ব চলবে।”

#চলবে……….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১০

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা

আজ বারো দিন হয় সাদনান ঢাকা ফিরেছে।এর মধ্যে একদিনও প্রিয়তাকে ফোন দেয়নি। প্রিয়তা দিয়েছে তবে ফোনটা বন্ধ দেখায়। আজ মির্জা বাড়ির সবাই সওদাগর বাড়ি আসবে। শফিক নিজে সবাইকে আসতে বলেছে আয়ানরাও আসবে। সবাই কাজে ব্যাস্ত। আয়ানরা আসার মূল উদ্দেশ্য আজ বিয়ের ডেট ফাইনাল করা। মাইশার ফাস্ট ইয়ারে ফাইনাল শেষ তাই এখন বিয়ের কাজটা সম্পূর্ণ করতে চায় আজমল চৌধুরী। আবার আয়না আর রাহাত দেশের বাহিরে চলে যাবে কবে ফিরবে ঠিক নেই। মূলত সেই জন্য তাড়াহুড়া করছে।আয়ান এর বিয়ের পর ওনারা একেবারে ঢাকা চলে আসবে।

——————————-

-“আপনি ঠিক বলেছিলেন আমিও আগুনে পুড়ছি। আর সেটা উপলব্ধি করতে আপনি নিজে আমাকে সাহায্য করছেন।আপনার কথা আপনি রেখেছেন। আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আপনি ঠিকই আমাকে রেখে দূরে আছেন।কিন্তু আমার দিকটা একটু ভেবে দেছেন কি? সতেরো বছর বয়সী একটা কিশোরীর জন্য ওই দিন রাতের ঘটনা টা কতটা ভয়ের ছিল?না ভাবেন নি ভাবলে কখনো আজ বারোটা দিন আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারতেন না। মানছি আমি আপনাকে বাজে কথা বলেছি। কিন্তু আমি নিজেও জানি না কেন বলেছিলাম ওই সব। আমি তো নিজেই আপনাকে ভালো,,,

ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটা শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
মেয়েটার যেনো এই শব্দের কারণে গলা দিয়ে আর কিছু বেড় করতে পারলো না। লাইনটা কেটে দিলো।

ফোনটা সেন্টার টেবিলর উপর রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে কাঁদল। সাদনান যাবার পর এমন একটা দিন যায়নি মেয়েটা কাঁদে নি। রাতেও কেঁদে বালিশ ভেজায়। ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে নিচে নেমে এলো। মাইশা সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে। মেয়েটার এই একটা বাজে স্বভাব বাচ্চাদের মতো চিপস আর টিভিতে কাটুন দেখবে।এই মেয়ের না-কি কয়দিন পর বিয়ে। এ নিজেও এখন বাচ্চাদের মতো করে। বিয়ের পর বাচ্চা হলে নিজের বাচ্চাকে কি করে সামলাবে আল্লাহ মালুম। এসব ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা মাইশার পাশে বসলো।আস্তে করে চিপস এর প্যকেট টা নিয়ে দিল দৌড়ে।
-“তোমার না কয়দিন পর বিয়ে। তুমি এখন বাচ্চাদের মতো এসব খাচ্ছো লজ্জা করে না।আর আমি যে একটা মাসুম বাচ্চা বাড়িতে আছি তুমি চোখে দেখো না?
মাইশাও দৌড়াতে দৌড়াতে বলল
-“না লজ্জা করে না। তোকে কে বলেছে তুই মাসুম? আর চিপস আমকে আমার মামা কিনে দিয়েছে। তোর এতো জ্বলে ক্যান?দে আমার চিপস দে ভালো হবে না বলে দিলাম।”
-“দিবো না। তুমি পাড়লে নিয়ে দেখাও।”
বলেই সোফার চারধারে ঘুরতে লাগলো। আর সুফিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে এসব দেখে মুচকি হেসে বলল
-“দেখো মেয়েদের কান্ড। আরে ব্যথা পাবিতো পড়ে গিয়ে। প্রিয়তা তুই আয় দেখি ফুফির কাছে আয়।”
প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে দেড়ি কিন্তু প্রিয়তা ওর ফুফির পিছনে গিয়ে দাঁড়াতে দেড়ি না। প্রিয়তা জানে মাইশা ওর মার কাছে কখনো যাবে না।এর মধ্যে শফিক এলো মাইশা গিয়ে শফিকের কাছে
বলল
-“মামা দেখো প্রিয়তা আমার চিপস নিয়ে গিয়েছে। ”
বলেই শফিক সওদাগরের ডান বাহু জড়িয়ে ধরে নেকা কান্না করতে লাগলো।শফিক মুচকি হেসে বাম হাতটা সামনে এনো বলল
-“এখন আমার আম্মার এগুলো চাই?”
একটা পেকেট যেটা অনেক গুলো চিপস আর নানা জিনিস আছে। মাইশা অবাক হয়ে শফিকের হাতে পেকেটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে উপরে উঠেতে লাগলো।প্রিয়তাও ততক্ষণে কিচেন থেকে দৌড়ে মাইশার পিছনে দৌড়াতে লাগল।আর এদিক শফিক সুফিয়া দুই ভাই বোন হাসতে লাগলো।হঠাৎ করে সুফিয়া গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“কদিন পর তো ওরা অন্যর ঘরে চলে যাবে। আর বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে। ”

—————————–

বিকেলে চারটা একটা মিটিং শেষ করে সাদনান এসে গাড়িতে বসল।এখন তার উদ্দেশ্য কুমিল্লা। অনেক তো হলো কষ্ট দেওয়ার পালা এবার না হয় এটা ইতি টানা যাক।বারো দিন হলো মেয়েটাকে দেখে না। আগে সব সময় ঢাকা এলে প্রতি সাপ্তাহে একবার করে বাড়ি যেতো শুধু তার প্রয়োসীকে দেখার জন্য। এবার ফাস্ট বারো দিন থাকা মেয়েটাকে না দেখে। অনেক কষ্ট দিয়েছে আর দেওয়া যাবে না। ভেবেই গাড়িটা স্টাট দিলো।পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধা হবে। সাদনান হঠাৎ একটা শপিংমলের সামনে গাড়িটা থামাল। কিছু ভাবলো। তার পর আস্তে করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তার ছোট্ট বউয়ের জন্য কিছু নিতে হবে। মেয়েটাকে এখন অব্দি কিছু দেওয়া হয়নি আজ না হয় কিছু দেওায়র জন্য কিছু নেওয়া যাক।
বেশ কটা দোকান ঘুরলো বেশ কয়েকটা শাড়ী নিলো। কিছু গহনা, সাথে কিছু নরমাল থ্রিপিস। সাথে আরো অনেক কিছু। নিজের বাবা-মা, বোন, শফিক,সুফিয়া, মাইশার জন্যও নিয়েছে। সব কাজ শেষ করে শপিংমল থেকে বেড়িয়ে এলো তার পর প্রিয়তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি স্টাট করলো।

——————————-

একজন মধ্যে বয়স্ক লোক ঢাকা এয়ারপোর্টে থেকে বেড়িয়ে এলো। ডাইভার কে উঠিয়ে নিজে ডাইভিং সিটে বসল।
ডাইভারের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলল
-“তুমি বাস ধরে চলে এসো। ”
ডাইভার বিনাবাক্য মাথা নাড়িয়ে বলল
-“আচ্ছা স্যার।”
স্যার বলাতে যেনো গাড়িতে থাকা ব্যাক্তিটা অসন্তুষ্ট হলো। বিরক্তি নিয়ে চাইলো সাতাশ, কি আটাশ বছরের যুবক টার দিকে।
-“তোমাকে কানাডা যাবার আগেও অনেক বার বলেছি আমাকে স্যার ডাকবে না। ”
ছেলেটা মুচকি হাসলো। আলতো করে মাথা ঝাঁকি বলল
-“আর বলবো না আংকেল। ”
-“হুম। ”
বলেই তিনি গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে এলো বেশ অনেক টা পথ পর ওনার গাড়িটার তেল শেষ হয়ে গেলো।তিনি গাড়িতে দেখলো কিন্তু গাড়িতে তেল না থাকায় গাড়ি থেকে নেমে কাউকে কল করবার চেষ্টা করলেন কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে কল টাও ঢুকছে না। এদিকে সন্ধাও হয়ে এসছে। পথটা বেশি নেই কিন্তু গাড়িতে মাল পত্র ফেলে অন্য গাড়িতে যেতেও পাড়ছে না।এর মধ্যে একটা গাড়ি এসে ওনার কাছে থামলো। গাড়িতে বসা ব্যাক্তিটা সাদনান। সে গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে বলল
-“মফিজ আংকেল?”

————————

আয়ানরা সেই বিকেলে এসছে। সাদনানের বাবা এসে সারা,আর সাদনানের মাকে রেখে ওনি কোথাও বেড়িয়েছে। বলেছে আসতে আসতে রাত হবে। এখন সন্ধা সাড়ে ছয়টা বাজে। সবাই নামাজ পড়ে এসে বসার ঘরে বসে আছে। মাইশা, প্রিয়তা, সারা ইনিয়াকে নিয়ে খেলছে। সুফিয়া বেগম একটু পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। এটা বেশ অনেকখন যাবত ইনিয়ার সাথে দুষ্টমি করার ফাঁকেও প্রিয়তা লক্ষ করছে।প্রিয়তা আলতো করে মাইশার বাহুতে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলল
-“আপু ফুফির কি হয়েছে বলতো?একটু পর পর দরজার দিকে ক্যান তাকাচ্ছে? ”
-“আমি কিভাবে জানবো। দাঁড়া জিজ্ঞেস করি।”
মাইশাও ফিসফিস করে বলল।
তার পর আলগোছে উঠে মায়ের কাছে বসল
-“মা কি হয়েছে তোমার? ”
সুফিয়া বেগম দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় মাইশাকে তিনি খেয়াল করেনি কিন্তু মেয়ের হঠাৎ এমন কথায় তিনি থমথমে খেয়ে উঠলো। তবে নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বলল
-“কই কিছু নাতো। ”
ততক্ষণে সবার দৃষ্টি মা মেয়ের উপর পড়েছে।
-“আচ্ছা আমি কিছু হাল্কা নাস্তা দিতে বলি শেফালীকে।”
শেফালী হচ্ছে কাজের লোক। বলতে বলতে তিনি কিচেনে চলে গেলো।
আয়ানের ফোন কল আসায় আয়ান উঠে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। মাইশাও একটু পর পা টিপে টিপে আয়ানের পিছু পিছু উপরে গেলো।
এর মধ্যে সুফিয়া কাজের লোকের হাতে নাস্তা এনে সেন্টার টেবিলে রাখলো। তার পর টুকটাক কথা বলতে বলতে সবাই নাস্তা খেতে লাগলো। হঠাৎ করে কলিং বেল বাজাল সবাই দরজার দিকে তাকালো ভাবছে এখম কে আসতে পারে? শুধু সুফিয়া বেগমের মুখে হাসি দেখা গেলো।তবে কেউ সেটা খেয়াল করেনি। কিন্তু একজন করেছে আর সেটা প্রিয়তা।ও ভাবছে ওর ফুফি এতো খুশি ক্যান? প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সালেহা বেগম বলল
-“সাদনানের বাবা এলো নাকি? কিন্তু ওনার তো আরও পরে আসবার কথা।
সুফিয়া বেগম ঠাঁই বসে কাউকে নড়তে না দেখে প্রিয়তা পা টিপে টিপে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে মুখ হা হয়ে গেলো।

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-০৯

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা

“আমি ঢাকা যাচ্ছি কবে ফিরবো জানিনা”

ব্যাস ছোট্ট একটা বার্তা। লেখাটা পড়েই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো মেয়েটার।

লোকটা এতোটা পাষাণ ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এভাবে চলে গেলো।

———————————–

প্রিয়তার ছোট্ট মোটো ফোনটা বাজচ্ছে। সকালের নাস্তা খেয়ে কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে তখনি ফোনটা বেজে উঠলো প্রিয়তা বেশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুলে কলটা সারা করেছে।
-“হ্যা। আমি রেডি। হুম। তুই বেড় হয়ে দাঁড়া। ”
বলেই কলটা কাটলো।

-“তোর হলো প্রিয়তা?”
রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো মাইশা।

-“হ্যা, আপু চলো।”
বলেই ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দুজন সুফিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। মাইশার ভার্সিটি আর প্রিয়তাদের কলেজ একসঙ্গে। সারাদের বাড়ি আগে তার পর প্রিয়তাদের বাড়ি।কলেজও বেশি দূরে নয়। হেঁটে যেতে পনেরো-ষোলো মিনিট এর মতো লাগে। প্রিয়তা মাইশা এসে সারাকে নিয়ে তিনজনে মিলে হাঁটতে হাঁটতে কলেজে পৌঁছে গেলো।

————————-

-“ভাই ভাবি কলেজ ভেতর ঢুকে গেছে।”
রাহান কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। ওপাশের ব্যাক্তিটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“ঠিক আছে। এখন তুই তোর বাবার কাছে যা। আর শোন আমার বোনকে ভালোবাসলেই হবে না। ভরনপোষণ, সুখে রাখার মতো সামর্থ্যও থাকা লাগবে।”
রাহান অবাকের চরম পর্যায় । মুখ হা হয়ে গেলো।
তবে আমতা আমতা করে বলল
-“ভাই আপ,,,
রাহানের কথা
সাদনান সম্পূর্ণ করতে দিলো না। তার আগে নিজেই বলে উঠলো
-“আমি সব জানি। কি ভেবেছিস আমার বোনের সঙ্গে প্রেম করবি আর আমি কিছু জানবো না?তাহলে ভুল ভেবেছিস। তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি মির্জা সাদনান শাহরিয়ার ।”
কথা সমাপ্ত করে খট করে লাইনটা কেটে দিলো। এতোখন গম্ভীর হয়ে কথা বললেও লাইনাটা কেটেই সাদনান হো হা করে হেসে দিলো।
আর ভাবে যদি রাহানের মুখটা এখন সরাসরি দেখতে পাওয়া যেতো। বেচারা না জানি এখন কি অবস্থা হয়েছে।
আর এদিকে রাহান মুখ এখনো হা হয়ে আছে। ভাবছে ভাই আবার আমায় ভুল বুঝলো না তো?
আচ্ছা সে সব পরে দেখা যাবে ভাই ফিরে আসলে। এখন বাবার সাথে অফিস জয়েন করা যাক।
ভাবতে ভাবতে বাসা দিকে হাঁটা ধরলো।
রাহানের সারাকে ভালো লাগলেও তা কখনো প্রকাশ করেনি। সব সময় মেয়েটার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইত।কারন একটাই সাদনান যদি কখনো জানতে পারে তবে হয়তো রাহানকে ভুল বুঝবে। সে জন্য রাহান কখনো সারার সামনে যেতো না। আড়ালে থেকে দেখতো। তবে সারা এসব কিছু জানতো না। কিন্তু হুট করে একদিন সারা রাহানকে অবাক করে দিয়ে প্রস্তাব দেয়। রাহান সে দিন অনেক খুশি হয়েছিল। হবে নায়ে বা ক্যান নিজের ভালোবাসার মানুষটা যদি বলে সেও তাকে ভালোবাসে তো এর চায় খুশি আর কি হতে পাড়ে। কিন্তু সাদনানের কথা মাথা আসতেই সেই খুশি দীর্ঘ হলো না। না চাইতেও মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সে বার সাদনান অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পড়তো আর সারা সবে মাধ্যমিক দিয়েছিল। তার পর দেখতে দেখতে সারার রেজাল্ট দিলো। রাহানের ভার্সিটিতে ভর্তি হলো সারা। এর পর থেকে মেয়েটা ওকে রোজ জ্বালাতন করতো। এর মধ্যে রাহান ফাইনাল ইয়ার শেষ করে। কিন্তু মেয়েটার পাগলামি দিন কি দিন বাড়ছিলবই কমছিল না।একটা সময় রাহান মন আর বিবেকের সাথে যোদ্ধ করে সারাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারে নি। ভালোবাসার মানুষটা যদি সারাখন বলে ভালোবাসি ভালোবাসি কার মন চাইবে না একটু ভালোবাসতে।রাহান ও পাড়েনি ভালো না বেসে থাকতে। সারাকে পড়ে রাহান বলেছিল সারার আগে থেকে রাহান তাকে ভালোবাসতো। এই কথা শুনার পর সারা এক সাপ্তাহ রাহানের সাথে কথা বলেনি।ক্যান বলবে? ভালোবাসার পরেও তাকে বার বার ফিরিয়ে দিতো এই সিনিয়র ভাই বেশ অভিমান হয়েছিলো ছোট মেয়েটার মনে। কিন্তু রাহান ঠিক তার প্রিয়তমার অভিমান ভাঙ্গিয়ে নিয়েছিলো। তবে মনে একটা ভয় সব সময় থাকতো সাদনান ভাই মেনে নিবে তো?রাহানরা যে গরিব বা মাধ্যবিত তেমনও নয়। বেশ বড় লোক বাবার নিজস্ব ব্যবসা আছে। তবে সাদনানদের তুলনায় খুবই সামান্য। সামান্য তো হবে কোথায় এমপি আর কোথায় একজন ব্যবসায়ি। সাদনানের সঙ্গে সেই ছোট্ট বেলা থেকে থাকে রাহান। তবুও মনে একটা সংশয় থাকতো। তবে সারা সব সময় রাহানকে অভয় দিতো যে তার ভাই ঠিক মেনে নিবে। কারণ সাদনান তার বোনকে অনেক ভালোবাসে।

রাহান আজ অনেক খুশি। সাদনান ভাই যেহেতু জানে খুব শীগগির বাবা মাকে নিয়ে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে বউ করে নিয়ে আসবে।রাহানের বিশ্বাস ওর বাবা মা কখনো ছেলের পছন্দ দ্বিমত করবে না। বরং আরো খুশি হবে।রাহানের এক বোন বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সঙ্গে লন্ডন থাকে।

—————————

-“ওনি আমাকে কিছু না বলে কি করে চলে যেতে পাড়লো আপু?”
বিকেলে মাইশা আর প্রিয়তা ছাঁদে বসে গল্প করছিল তখন হটাৎ প্রিয়তা কথা টা বলে।
মাইশা বেশ অবাক হলো। চাইলো প্রিয়তার পানে। ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তার ছোট্ট বোনটা কি বলল।হাত রাখলো প্রিয়তার কাঁধে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয়
-“কি হয়েছে বল আপুকে।”
বোনের আশকারা পেয়ে যেনো আরো আহ্লাদি হলো মেয়েটা। জড়িয়ে ধরলো মাইশাকে কাঁদল মন মতো। মাইশাও বাঁধা দিলো না কাঁদুক তার বোনটা। কাঁদলে মানুষের মন দুঃখ হালকা হয়।তাই বাঁধা দিল না। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে শান্ত হলো প্রিয়তা। তার পর আলগোছে বোনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আস্তে আস্তে ওই দিন রাতের পর থেকে কাল রাতের কথাও সব খুলে বলে। কথা গুলো বলতে বলতে আবারও কেঁদে উঠলো প্রিয়তা। মাইশা বোনকে তুলে দোলনা হতে কোল থেকে। আবারও আলতো হাতে চোখের জল মুছে দেয়। বেশ শান্ত কন্ঠে বুঝায়
-“দেখ তুই যেমন অনাকাঙ্খিত র্স্পশে মেনে নিতে পারিসনি। তেমন সাদনান ভাইও ইচ্ছে করে করেনি এমনটা। তোর যেমন ভয় হ’য়ে ছিল। ওনি ঠিক অনুতপ্ত হয়েছে।ওনাকে তুই বাজে কথা না বললেও পারতি।আর ওনি তো তোকে ভালোবাসে। বিয়ে তো করতোই।
আর বিয়ে যখন হয়ে গেছে ওনি বেশি দিন তোর থেকে দূরে থাকবে না।”
প্রিয়তা শুনলো বোনের কথা তবে কিছু বলল না। এর মধ্যে মাইশার ফোনটা বাজলো স্কিন এ জলজল করছে “আয়ান ভাই” মাইশার ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলে।
প্রিয়তা চাইলো বোনের পানে। তার পর ইশারায় ফোন রিসিভ করতে বলে। নিজেও আলগোছে ছাঁদ হতে নামে।

মাইশা ফোন রিসিভ করে কথা বলে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে। মাইশা প্রিয়তার ব্যপারে সব বলেছে আয়ানকে। আয়ান মাইশাকে জানায়
-“ওকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো মনটা ভালো হয়ে যাবে।”
বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো
-“মনজুর জাঁহাপনা। ”
আয়ান মুচকি হাসলো
-“জী বেগম, এখন যান। আর হ্যা বেশি দেড়ি করবে না। একদম ছেলেদের সাথে কথা বলবা না। সাথে রাহানকে নিয়ে যাবা। আমি কল করে বলে দেবো ও এসে নিয়ে যাবে তোমাদের। ”
মাইশাও হাসলো শব্দহীন।
-“আচ্ছা। ”
-“ভালোবাসি। ”
মাইশা আবারও বলল
-“আচ্ছা। ‘
আয়ান এবার রেগে গেলো
-“কি কখন থেকে আচ্ছা আচ্ছা করছিস। যা বলেছি তার উত্তর দে।”
-“ভালোবাসি।”
বলে কল কাটলো মাইশা। আয়ান এমনি কখনো আপনি কখনো তুই কখনো তুমি। বেশ লাগে মাইশার আয়ানের এই ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো। এসব ভাবতে ভাবতে মাইশা পা টিপে টিপে নিচে গিয়ে প্রিয়তাকে বলল
-“রেডি হয়ে নে। আমরা এখন বের হবো। ”
প্রিয়তা যেতে চায়নি তবে রাহান সারাও এসে গেছে তাই আর না করেনি রেডি হয়ে চারজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।

—————————-
-“ভাই আপনি নিজেই মাইশাকে বলতে পারতেন।”
আয়ান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। ওপাশের ব্যাক্তিটা হাসলো। তবে হাসিটাতে যেনো উজ্জ্বলতা নেই কেমন মরা মরা।
-“হুম পারতাম।তবে তোমার বউ আমার বউকে ফুরত করে সব বলে দিতো। যে আমি বলেছি ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তোমার বউকে ভালো করে চিনি।আচ্ছা ধন্যবাদ উপকার করার জন্য। ”
সাদনানের কথার আয়ান বল
-“কি বলছেন ভাই এতোটুকু তো করতেই পারি। আপনি তো তার চেয়ে বড় উপকার আমার করেছেন।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-০৮

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“খারাপ পুরুষ মানুষ আমি । এই জন্যেই বুঝি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ছিলেন? ”
বাসর ঘরে বসে আছে প্রিয়তা এটাকে বাসর ঘর কেউই বলবে না। এটা প্রিয়তার নিজের রুমেই। পুস্পহীন বিছানা। কোনো সাজসজ্জা নেই। এখন রাত দেড়টা বাজে।সন্ধা বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। সাদনান আজ এখানেই রয়েছে। আর বাকীরা চলে গিয়েছে। প্রিয়তাকে বারোটা নাগাদ মাইশা এখানে রেখে গেছে। মেয়াটা নিজের রুমেও কতটা গুটি বসে আছে। অথচ কাল অব্দি মেয়েটা এই ঘরটায় নিজের মন মর্জি মতো চলছে।এমনিতেই মেয়েটা ভয়ে গুটি ছিল। তার মধ্যে সাদনানের এরূপ গম্ভীর কন্ঠে শুনে মেয়েটা আরো এক দফা ভয় গুটি গেলো। কাঁপা কাঁপা গলা দিয়ে কিছু শব্দ বের করতে চাইলো। তবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটার দিকে তাকি কথা সব যেনো কন্ঠনালি থেকে আর বেড়ি আসতে চাইলো না। ব্যক্তিটাকে দেখেই বুঝাই যাচ্ছে মারাত্মক রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুল গুলো সন্ধার চাই এখন আরো অবনতি হয়েছে। হঠাৎই সাদনানের কিছু মনে পড়লো। আবার চোয়াল শক্ত হলো। প্রিয়তাকে কিছু বলতে না দেখে সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-“কি হলো বলোন। আমিও সব পুরুষদের মতো খারাপ? আমিও নারীর দেহ চাই?আপনাকে বিয়ে করতে নয় ব্যবহার করতে চেয়েছি তাই তো? এমন তো ছিল আপনার কিছু বলা কিছু না বলা কথা গুলো? চাইলে তখন যে গুলো বলতে পারেননি এখন সব উসুল করে নিতে পারেন। ”
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলেই পাশে থাকা চেয়ার নামক বস্তুটাকে সজোরে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। প্রিয়তা এতো সময় বিছানায় বসে ছিল। কিন্তু চেয়ার ফেলে দেওয়াতে মেয়েটা ভয়ে লাফিয়ে বিছানা ছাড়ে এক কোনায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। মেয়েটার আঁখি জোড়া দিয়ে অনবরত জলের স্রোত বইছে। তবে এবার কিছু বলবেই বলবে। মাথাটা নুইয়ে ধরে আসা গলায় বল
-“আমি,,,
তবে সাদনান তা সম্পূর্ণ করতে দিলো না। আবারও নিজেই বলে উঠলো
-“হ্যা, মানছি আমি ওই দিন ওভাবে ছোঁয়াতে আপনি মানতে পারেন নি। আমিও পারিনি।ইচ্ছাকৃত করিনি। ভুল করে হয়ে গিয়েছিল। মানুষ ভুল করলে অনুতপ্ত হলে তো তাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়। আর আপনি? নিজের মন গড়া মতো কতগুলো কথা শুনিয়ে চলে গেলেন। আর আমাকেও কিছু বলতে দিলেন না।ফাঁশির আসামীকেও একটা শেষ সুযোগ দেওয়া হয়। আর আপনিতো আমকে সেই সুযোগ টাও দিলেন না। ফোন টা অব্দি ধরেন নি।কি অবস্থা হয়েছিল জানেন আপনি? দম আটকে আসছিল আমার প্রতি সেকেন্ড। মনে হয়েছে মরে গেলেই বেচে যাই। ”
সাদনানের মুখে মরার কথা শুনে প্রিয়তা মূহুর্তের মধ্যে এসে সাদনানকে জড়িয়ে ধরে ফুফাতে ফুফাতে বল
-“প্লিজ আপনি এসব বলবেন না। আমি এতসব বলতে চাইনি তবে কেন যেনো মানতে পারিনি। মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।”
সাদনান শুনলো না কিছু। জোর করে ছাড়িয়ে নিলো মেয়েটাকে।দৃষ্টি দিলো মেয়েটার দিকে। চোখ দুটো দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে। নাকটা কেমন লালচে আকার ধারণ করছে। মেয়েটা এখনো সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে। গায়ে একটা ছাই কালারের শাড়ী। ওই দিন রাতে দেওয়া গলায় দাগটা এখনো কেমন কালচে হয়ে জলজল করছে। বিয়ের সাজ ছেড়েছে অনেক টা আগেই। কি সুন্দর বউ বউ একটা ভাব মুখে ফুটেছে।মনটা একবার চাইলো নিজের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ থাকা মেয়েটাকে একবার গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে। তবে মনের কথা শুনলো না। সব গিলে খেয়ে নিলো। পর পর আলগোছে মেয়েটার বাহু ধরে নিজ নিকট হতে কিছু টা দূরে সরায়।আলতো করে গালে হাত দিয়ে বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা চোখের জল মুছে দিতে দিতে বেশ শান্ত কন্ঠে জানায়
-“এতো দিন আমি যে কষ্ট টা পেয়েছি আপনি নিজেও খুব শীগগির সেটা উপলব্ধি করবেন।আর সেই কষ্ট টা আমি নিজে আপনাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবো। তাই বলে এটা ভাববেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। যদি এটা ভাবেন তো ভুল। একটা কথা ভালো করে শুনে নিন আমার #হৃদয় জুড়ে_শুধু_আপনি# ছিলেন, আছেন, আর ভবিষ্যতেও থাকবেন।”
প্রিয়তা কিছু বুঝলো না ছলছল চোখ করে চেয়ে রইলো সাদনানের পানে।যেটা দেখে সাদনান বাকা হাসলো। তার পর আস্তে করে প্রিয়তার কানের কাছে ঝুঁকে এসে ওষ্ঠ জোড়া নেড়ে আলগোছে বলে উঠলো
-“আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত।ভুলে গেলেন না-কি?”
প্রিয়তার ফেলফেল করে এখনো সাদনানের পানে চেয়ে।

সাদনান সে সব উপেক্ষা করে ওয়াশরুমের চলে গেলো। প্রিয়তা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়ে। সাদনান কি বলে গেলো একটু সময় লাগলো বুঝতে। তবে পরক্ষনেই বুঝতে পেরে মেয়েটা গাল রক্তিম আবা ধারণ করলো।পর পরই মেয়েটার মনে প্রশ্ন উদয় হয়। সাদনান ভাই অধিকার চাইবে নাতো? এসব ভেবেই মেয়েটা ভয়ে সিটিয়ে গেলো। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে সাদনান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। এসে দেখলো মেয়েটা এখনো আগের যায়গায় দাঁড়িয়ে। একটু এগিয়ে এলো। দৃষ্টি দে মেয়েটার পানে। তার পর শান্ত কন্ঠে আদেশ দেয়
-“যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। নামাজ পড়তে হবে।”
মেয়েটা শুনলো। চাইলে তার ব্যাক্তিগত মানুষটার দিকে।কি সুন্দর একটা পুরুষ মানুষ । আর এই সুন্দর মানুষটা ওর একান্ত নিজের। একটু আগে একটা পবিত্র বন্ধ আবদ্ধ হয়েছে।একটা নাম পেয়েছে সমাজের চোখে স্বামী-স্ত্রী। এই সুন্দর পুরষটার বউ ও। ভেবেই প্রিয়তা মুচকি হাসলো।
-“আচ্ছা। ”
বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলেই দুজন মিলে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো। প্রিয়তার সব ভাবনা ভুল প্রমান করে দিয়ে নামাজ পরে সাদনান বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা এখনো দাঁড়িয়ে।ও বুঝতে পারছে না। সাদনানের পাশে শুবে কি না। এসব ভাবছিলো তখন সাদনানের কন্ঠে ভেসে এলো
-“বিছানা এসে ঘুমিয়ে যান।আমরা কোনো সিনেমা করছি না যে আপনি বিছানায় না শুবার চিন্তা করবেন।আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী। ফালতু ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ুন। ”
চোখ বন্ধ রেখেই কথা গুলো বলল সাদনান।প্রিয়তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ওনি কি করে বুঝলেন আমি এসব ভাবছিলাম?
-“আপনাকে কে বলল আপনি ভাবেন?আপনি তো সব সময় মনের কথাও জোড়ে বলেন। যেটা আমি নই আপনার আশেপাশে যে থাকে সেও শুনতে পায়। ”
সাদনানের চোখ বন্ধ এখনো।
-“কই সারা, বাবা, মাইশা আপু। কেউই তো কখনো বলেনি আমি মনে মনে কথা বল্লে ওরা শুতে পায়?
প্রিয়তার বোকা বোকা প্রশ্ন সাদনান এবার হো হা করে হেসে দিলো।প্রিয়তা সেই হাসির দিকে মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে রইলো। সাদনান হাসতে হাসতে বলল
-“তার মানে আপনি সত্যি বিছানায় ঘুমাতে চাইছিলেন না তাই তো?”
প্রিয়তা এবার বুঝলো লোকটা ওকে ওর কথার জালে ফাঁসিয়ে সত্যি বের করতে চাইছিলো? উঁহু, চাইছিল না অলরেডি বেড় করে নিয়েছে। ভেবেই প্রিয়তার রাগ হলো।কিছু বলতে গিয়েও কি ভেবে যেনো বললো না।
আস্তে করে হেঁটে গিয়ে সাদনানের সামনে দাঁড়ায়
-“সত্যি কি না জানি না। তবে যাই হয়েছে ভালোই হয়েছে। অন্তত আপনার হাসিটাতো দেখতে পেলাম। ”
সাদনান ততক্ষণে শুয়া থেকে উঠে বসে। চোখ ছোট ছোট করে তাকালো প্রিয়তার পানে। মেয়েটা কথা গুলো বলেই। বিছানার অন্য পাশে শুয়ে পড়লো। সাদনানও আর বেশি কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লো। বেশ অনেক টা সময় কেটে গেলো প্রিয়তার কোনে সারা শব্দ নেই। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।সাদনান যেনো এটার অপেক্ষা ছিল। আলগোছে মেয়েটা জড়িয়ে ধরে নিজে বুকের উপর নিয়ে শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। আজ অনেক দিন পর শান্তিতে ঘুমোবে এই মেয়েটাকে ভালোবাসার পর থেকে একটা রাতও ভালো করে ঘুমুতে পারেনি।আজ না হয় একটু শান্তির ঘুম ঘুমানো যাক। সাদনান এসব ভাবতে ভাবতে নিজেও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। আর এদিকে প্রিয়তা আস্তে করে চোখ মেলে চাইলো।তার তন্ধা ছুটেছে অনেক আগে। কিন্তু সাদনানের ঘুৃমিয়ে যাবার অপেক্ষা ছিল। কি সুন্দর লাগছে। এই মানুষটা ওর নিজের। একান্তই নিজের।
সাদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

যদি জানতো কাল কি হবে। তবে হয়তো রাত টা না ঘুমিয়ে নিজের একান্ত ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে রাত কাটিয়ে দিতো।

—————————-

সকালে কারোর চেঁচামেচির শব্দে প্রিয়তার ঘুম ভাংলো। আস্তে করে উঠে বসে মেয়েটা ডানে তাকাল। কেউ নেই দেখে বেশ অবাক হলো।
-“কিরে প্রিয়তা দরজাটা কি খুলবি? তোর কি এখনো ঘুম শেষ হলো না? সাদনান ভাই সেই সকালে উঠে চলে গেলো আর তুই বেলা নটা অব্দি ঘুমাচ্ছিস?”
মাইশার কথায় বুঝলো সাদনান চলে গেছে। কিন্তু আমায় ডাকলো না কেন?ভাবতে ভাবতে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।আর মাইশা সুড়সুড় করে ঘরে ঢুকে গেলো
-“তোমরা আমায় ডাকোনি ক্যান?”
-“,তোকে ডাকতে তো চেয়েছিলাম তোর ওনি তো ডাকতে দিলো না। বলে রাতে নাকি ঘুমসনি তাই যেনো একটু বেলা করে ডাকি।”
বলেই মুখ টিপে হাসলো।
প্রিয়তা সে সব পাত্তা দিল না। কিছু বলবে তখনই মাইশা আবার বল
-“থাক আর কিছু বলতে হবে না। আমি জানি এখন বলবি যে আপু তেমন কিছু হয়নি। এসব রেখে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আয়।”
বলেই মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।

আর প্রিয়তা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। তবে একটু আগাতেই দেখলো টেবিল কিছু রাখা। ওয়াশরুমে না গিয়ে প্রিয়তা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।

চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-০৭

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৭
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা আমি বিয়ে করবো। তুমি শফিক চাচার কাছে যত দুরত্ব সম্ভব প্রস্তাব পাঠাও। চাইলে আজই পাঠাতে পারো। ”
এটা কি ছেলের আবদার ছিল? না-কি শান্ত কন্ঠে আদেশ? আজ্জম মির্জার বোধগম্য হলো না। আজ্জম জনতো ওনার ছেলে প্রিয়তাকে পছন্দ করে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইবে তিনি তা ভাবেনি। আজ্জম আজ তিন দিন পর বাড়ি ফিরেছে।দুপুরের আগে এসেছে তাই সবাই এক সঙ্গে খাবার খেতে বসেছেন। সারা,সালেহা বেগমও অবাক হলো বেশ।কারন সাদননাতো এমন নয়। কোনো সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেয় না। কিন্তু আজ হঠাৎ কেন এসব। যদিও তারাও চাইছে ছেলের বিয়ে দিতে। সাদনান রাজি হয়নি। বিয়ের কথা হলে বলতো “তোমাদের বৌমা এখনো বড় হয়নি” আজ্জম মির্জা ছেলেকে বলল
-“আব্বা আমরা খাবার খেয়ে কথা বলি এ বিষয়ে?
শান্ত, নরম কন্ঠে সময় চাইলো ছেলের কাছে
সাদনান মাথা ঝাকালো। যার মানে “ঠিক আছে” তার পর আবার সবাই খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। আজ্জম বড় একজন নেতা হলেও ঘরে ছেলে,মেয়ে, স্ত্রী সবার সঙ্গে বেশ বন্ধু সূলভ আচরণ করেন। আমাদের পেশাগত জীবন যেমনি হোক আমাদের সবাইর উচিত পরিবারের সবার সাথে বন্ধ সূলভ আচরণ করা। সবার সাথে সব শেয়ার করা। খাবার শেষ আজ্জম সোফায় আয়েশ করে বসলেন। ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রী সবাই ওনার আসেপাশের সোফায় বসলেন।আজ্জম মির্জা ছেলের পানে চাইলো।
-“আব্বা আপনি কি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
সাদনানকে প্রশ্ন করলো আজ্জম।সাদনান বাবার দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল
-“হ্যা বাবা। তুমি এই সাপ্তাহের মধ্যে ঘরোয়া ভাবে বিয়ের ব্যাস্থা করতে বলো শফিক চাচাকে। ”
-“কিন্তু আব্বা প্রিয়তা মা তো ছোট। আর এতো তাড়া কিসের শফিক আমাকে বলেছে এখন আর প্রিয়তাকে বিয়ে দিবে না। প্রিয়তাকে লেখা পড়া করাবে। ”
-“আমি কি একবারও বলেছি বিয়ের পর লেখা পড়া করাবো না?”
-“না। কিন্তু,,
-“আর কোনো কিন্তু নয় বাবা। আমি বিয়ে করতে চাই প্রিয়তাকে আর সেটা এই সাপ্তাহের মধ্যে। আমি আর কিছু শুনতে চাই না।”
আজ্জম মির্জাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে সাদনান কথা গুলো বলেই ধুপধাপ পা ফেলে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। সালেহা বেগম স্বামীর কাছে এসে বসলো তার পর আলগোছে বলে
-“কি হয়েছে বলোনতো ছেলেটার?আচ্ছা যাইহোক আপনি শফিক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলোন।”
সারাও পাশ থেকে বল
-“হ্যা বাবা। তুমি বরং সব কিছুর আয়োজন করো।চাচার সাথে কথা বলে।”
বাহ কি সুন্দর মা, মেয়ে, ছেলে মিলে শান্ত কন্ঠে আদেশ করছে।আজ্জম জানে এখনো কিছু বলেও লাভ নেই। তাই বলল
-“আচ্ছা আমি শফিকের সাথে কথা বলবো। তোমরা সবাই রেডি হয়ে নেও । আমরা একটু পরই ওখানে যাচ্ছি। ”
বলেই তিনি সোফা ছেড়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
সারা আর সালেহা বেগমও যে যার মতো করে চলে গেলো।

————————

আজ তিন দিন হয় মেয়েটার সাথে দেখা, কথা কিছুই হয় না।হয়না বললে ভুল হবে প্রিয়তা ইচ্ছে করে এসব করছে। মেয়েটাকে ওই দিন ওভাবে ছোঁয়া ঠিক হয়নি। সাদনান কি করবে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে যে একবার ছুঁয়ে দিতে মন চাইছিল এতো কাছ থেকে দেখে যে না ছুঁয়ে থাকতে পারলো না। সব সময় তো এই কারণে মেয়েটার কাছ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু ওই দিন কেন যে নিজের উপর কন্টোল রাখতে পারে নি। এখন নিজের উপরএ রাগ হয়। কি দরকার ছিল ওভাবে এতো গভীর ছোঁয়া দেওয়ার। এসব ভেবেই সাদনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হ্যা, আজ তিন দিন হয় মেয়েটা ওর সামনে আসে না। কথা বলে না। ফোন দিলে ওটাও রিসিভ করে না।বিয়ের আগে এতোটা গভীর র্স্পশ দেওয়াতে মেয়েটা অসন্তুষ্ট। মেয়েটা এসব বিষয় মোটেও ওতোটা অবগত নয়।তাই হয়তো এই এটা সহজ ভাবে নিতে পারেনি।

———–

কলিং বেল বাজতেই প্রিয়তা দরজা খুলে বাবাকে দেখে বেশ অবাক হলো। এতো তাড়াতাড়ি তো বাসায় ফিরে না বাবা। তবে আজ এতো জলদি চলে এসছে যে?
শরীর ভালো তো? প্রিয়তা অস্তির হয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো
-“বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে? ”
শফিক মেয়ের পানে চাইলো। আস্তে করে বলে
-“হ্যা, মা আমি ঠিক আছি।তুই এতো অস্তির হোস না। ”
কথা বলতে বলতে দুজনেই এসে সোফায় বসে।এর মধ্যে সুফিয়া বেগম ভাইয়ের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এলেন।শফিক বোনের হাত থেকে পানি নিয়ে খেয়ে নিলেন।ততক্ষণে প্রিয়তা কথা গুছিয়ে নিয়ে বাবাকে ফের প্রশ্ন করে
-“বাবা কিছু কি হয়েছে? আজ এতো তাড়াতাড়ি চলে এসছো যে?”
শফিক মুচকি হেসে মেয়ের মাথায় হাত রাখে। তার পর আলগোছে বলে
-“কিছু মেহমান আসবে। তাই জলদি চলে এসছি মা। আচ্ছা আমি যাই ফ্রেশ হয়েনি। ওরা এলো বলে। আমার খাবার টা টেবিলে দে আমি আসছি। ”
শেষে সুফিয়া বেগম কে কথাটা বলতে বলতে তিনি নিজের রুমে চলে গেলো। প্রিয়তা যে কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সুযোগও দিলেন না। প্রিয়তা ওর ফুফির পানে চাইলো।
-“কে আসবে ফুফি বাবা কার কথা বলছে? আয়ান ভাইয়ারা তো কালকের আগের দিন গেলো।”
সুফিয়া বেগম কি বলবে ভাইয়ের নিষেধ আছে যে। দুপুরের দিকে না-কি আজ্জম ফোন দিয়ে জানিয়েছে ওনারা আজ সাদনান আর প্রিয়তার বিষয় কথা বলতে আসবে । শফিক সুফিয়া বেগম কে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করছেন। তাই আমতা আমতা করে বলল
-“আমি জানি না তো। তুই গিয়ে জিজ্ঞেস কর। আমি যাই আমার কত কাজ বাকি।”
কথা শেষ চলে যেতে গিয়েও আবার প্রিয়তার দিকে ফিরে বল
-“আর শোন মাইশাকে বলিস। নিচে আসতে।”
বলেই তিনি কিচেনে চলে গেলো।
প্রিয়তা জানে তার ফুফি জানে। কিন্তু বলবে না। হয়তো বাবা নিষেধ করছে।ভাবতে ভাবতে প্রিয়তা উপরে মাইশার রুমে গিয়ে মাইশাকে ডেকে দেয়।

—————————————-

-“প্লিজ বাবা। আমি লেখা পড়া করতে চাই। তুমি এমন করো না।”
শফিক শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
-“আমি বা সাদনান কেউ-ই কি বলেছি। তুমি লেখা পড়া করবে না? ”

প্রিয়তার টনক নড়ল। ঠিক এ-তো বাবা বা সাদনান কেউই না করেনি। তবে আমি ওনাকে বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু কেন? প্রিয়তা নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো।তবে প্রিয়তার ভিতর থেকে কোনো রকম উত্তর এলো না।
-“কিন্তু তুমি তো আমায় বলেছিল তুমি এখন আর আমাকে বিয়ে দিবে না।আর আমি যা বলবো তাই হবে। তবে এখন কেন এসব বলছো বাবা?”
ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো।
শফিক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
-“মা।বাবা -মা কখনো তার সন্তানের খারাপ চায় না। ”
প্রিয়তা টলমল চোখে বাবার পানে চাইলো। ব্যাস এক কথা প্রিয়তার মুখ বন্ধ।
-“সন্ধার মধ্যে কাজি আসবে।”
শফিক মেয়েকে আর কিছু বলতে না দিয়ে। তিনি প্রিয়তা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। সাদনানরা সন্ধার একটু আগে এসছে। আর কথা বার্তা বলে।এক পযার্য়ে সাদনান জানায় ওকে আজ রাতের মধ্যে ঢাকা যেতে হবে তাই আজ এ যেনো বিয়ে টা সম্পূর্ণ করে।ছেলের এমন লাগামহীন কথায় বেশ লজ্জা পেলো আজ্জম, সালেহা।তবে বেশী কথা না বাড়িয়ে শফিকের সাথে কথা বলে। শফিক আর না করেনি। কারণ তিনি সাদনান কে আগেই কথা দিয়েছে মেয়েকে ওর হাতে তুলে দিবে।তাহলে আজ নয় কাল তো দিতে হবে। তাই সব কিছু ঠিক করে। সন্ধা বিয়ের আয়োজন করে।
প্রিয়তা কিছু ভাবছে। কিন্তু কি? প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সারা, মাইশা আর কিছু প্রতিবেশী মেয়ে রুমে আসে।সারা এসে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরলো। প্রিয়তা মুচকি হাসলো। তার পর মাইশাকে আলগোছে বলে
-“আপু আমি ওনার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই। প্লিজ তুমি ফুফিকে বলো না। ”
-“ওনিটা আবার কে রে প্রিয়তা?”
মাইশা, সারা আর সাথে থাকা মেয়ে গুলো মুখটিপে হাসলো।প্রিয়তা বুঝল ভুল জায়গা ভুল কথা বলে ফেলেছে। তবে সে-সব পাত্তা না দিয়ে মাইশার দিকে করুণ দৃষ্টিতে চাইলো।ব্যাস মাইশা গলে গলো। মাইশা এমনি ও একদম নরম মনের মানুষ। আর কথা না বাড়িয়ে মাকে ডাকতে চলে গেলো। সারা প্রিয়তার হাতে শাড়ীর প্রয়োজনী সব দিয়ে বল
-“যা এগুলো পরে আয়। তার পর আমি আর আপু শাড়ী টা পড়িয়ে দিবো। ”
প্রিয়তা শুনলো। চলে গেলো ওয়াশরুমে। এর মধ্যে মাইশাও চলে এলো। প্রিয়তাও সব পড়ে বাহিরে এলো। মাইশা প্রিয়তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
-“মা বলেছে তুই রেডি হওয়ার পর আসবে।”
প্রিয়তাও আর কথা বাড়ালো না। বেশ অনেক টা সময় পর প্রিয়তাকে সাজিয়ে দিয়ে সবাই ঘর থেকে চলে গেলো। এর খানিক্ষন পর জুতোর আওয়াজ পাওয়া গেলো।ঠকঠক করে কেউ রুমে ঢুকে। প্রিয়তা সামনে চায়।সাদনান দাঁড়িয়ে কালো পেন্ট, সাদা একটা সার্ট গায়ে, চুলটা কেমন অগোছালো। চোখ দুটো লাল মনে হয় রাতে ঘুময়নি।প্রিয়তার এতো সব ভাবনা ভেঙ্গে সাদনান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“বলুন কেন ডেকেছেন? ”
প্রিয়তা বিছানা বসে ছিল। বসা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ওর এতোখন সাহস থাকলেও এখন কেন যেনো সাদনানকে দেখে ভয় করছে। সাদনান প্রিয়তাকে কিছু বলতে না দেখে বেশ বিরক্ত হলো। সাদনান ফের বলে উঠলো
-“কিছু বলবেন না-কি আমি চলে যাবো?”
প্রিয়তা এবার ধরে আসা গলায় বল
-“আমি বিয়ের পর ইন্টার পাস না করা অবধি এখানে থাকবো। ”
ভয়ে ভয়ে কথা গুলো বলেই মাথা তুলে সাদনানের পানে চাইলো। সাদনান ভাবলেশহীন প্রিয়তা কিছু বুঝলো না। সাদনান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“আপনার ইচ্ছে। ”
ব্যাস ছোট জবাব। প্রিয়তাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান কথা সমাপ্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সাদনান এতখন দাঁড়িয়ে থেকে কথা বল্লেও প্রিয়তার দিকে তাকালো না।
প্রিয়তার বেশ খারাপ লাগলো। আজ লোকটা ওর দিকে একবারও তাকালো না পযন্ত।
কিন্তু কেন? হয়তো ওই দিন রাতে ওভাবে এতো কিছু বলা ঠিক হয়নি।

#চলবে………

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-০৬

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

কালর রাতের পর প্রিয়তা আর সাদনানের সামনে আসেনি। মেয়েটা বেশ লজ্জা পেয়েছে। একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো কি? হয়তো। ইশ যদি তার প্রিয়তা বড় হতো। কবে বড় হবে এই মেয়েটা? কবে বোঝবে তার ভালোবাসা? এসব ভেবে সাদনান নিজের হাতে পরিহিত হাত ঘড়িটার দিকে দৃষ্টি দিলো। সন্ধা ছয়টা বাজে। এখনো অনুষ্ঠান শুরু হতে ঢের সময় বাকি। কিছু কিছু অতিথিরা এসছে। আসেপাশের প্রতিবেশীরাও অনেকেই চলে এসছে। আর সবাই যে যাঁর মতো করে কাজ করছে। সাদনান নিচে আসার সময় মাইশার রুম পার করে আসবার সময় ওদিকে একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিল। যদি একটাবার প্রিয়তাকে দেখতে পায় সেই আশায়। কিন্তু আফসোস সেখানে সবাই থাকলেও তার প্রিয়তাটা ছিল না। মেয়েটা শুধু কিস করার পিকচার দেখেই ওর সামনে আসছে না। বিয়ের পর বাসর রাতে না জানি কি করবে? হুম কাল সাদনান প্রিয়তাকে এটা পিকচার দেখিয়েছে যেখানে একটা মেয়েকে একটা ছেলে জড়িয়ে ধরে কিস করছে। ব্যাস এতেই তার প্রিয়তার এই দশা। তাহলে বাসর করবে কি করে? আদৌও কি তার বাসর করা হবে? এসব ভেবে সাদনান ধপ করে সোফায় বসে পরলো। সাদনান সোফায় বসে ফোনটা হতে নিলো। অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাঁদে করা হয়েছে। শফিক একবার এসে সবাইকে ছাঁদে যাওয়ার তাড়া দিলেন। আস্তে আস্তে সবাই উপরের দিকে চলে গেলো। নিচে শুধু কাজের লোক আর ডেকোরেশন এর লোকজন বাড়ির বাহিরে দিকে আছে।
-“ভাই? ”
-“হ্যা বল।”
রাহান সাদনানের সামনে দাড়িয়ে। মাথাটা নুইয়ে রাখা। এই ছেলেটা অনেক সম্মান করে তাকে এমপির ছেলে বলে কি? উঁহু একদম নয়।একজন আদর্শ বড় ভাই হিসেবে। সাদনানের রাজনৈতি পছন্দ নয়। তাই সে বাবার যে ব্যবসা আছে সেটাই দেখা সোন করে।তবে বাবা এমপি বলে নিজ এলাকার সব ছেলেপেলে তার সঙ্গে সব সময় থাকে। তবে সাদনান কুমিল্লা খুব কমই থাকে। সে প্রায়ই ঢাকা থাকে।রাহান সাদনানকে কিছু বলতে না দেখে আবারও বল
-“ভাই?”
সাদনান বুঝলো উপরে থেকে হয়তো আবারও ডাক পরেছে তাই সোজাসাপটা বলল
-“হুম চল।
তার পর দুজনেই ছাঁদে চলে গেলো।

——————————

মাইশাকে সাজিয়ে আয়না নিজের সঙ্গে করে নিয়ে উপরে এলো। আয়ান আগে থেকে সেখানে ছিল। মাইশা কালো একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। সাথে হালকা সাজুগুজু। মাইশার বেশি সাজ পছন্দ নয়। তাই আয়না প্রিয়তা সারা মিলে হালকা করে সাজিয়েছে। আয়ানও কালো পাঞ্জাবি পরেছে। বেশ লাগছে দুজনকে। আজ সকালেই সবার জন্য শপিং করা হয়েছে। আর সব শপিং করেছে সাদনান, আয়ান, রাহাত,সাথে রাহান।সবাইর বেশ পছন্দ করেছে। প্রিয়তা তখন নিজের জন্য আনা কাপর ও আনতে যায়নি। সারা নিয়ে এসছিলো প্রিয়তার জন্য আনা ড্রেস। মাইশাকে রেডি করে দিয়ে। সারা আর প্রিয়তা রেডি হতে নিজের রুমে গেলো। সারা আর প্রিয়তাও রেডি হয়ে নিলো। ওদের জন্য সাদনান সেম ডিজাইন লেহেঙ্গা এনেছে। তার পর দুজনে ছাঁদে চলে গেলো। ছাঁদে প্রবেশ করেই প্রিয়তার নজর আঁটকে গেলো দক্ষিণ সাইডে রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন কথা বলতে থাকা ব্যাস্ত সুদর্শন পুরুষটার উপর। প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে সাদনানের পানে চেয়ে রইলো। সাদনান ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয়তা তারওই দিকে তাকিয়ে। সাদনান মুগ্ধতা নিয়ে হাসলো। মেয়েটা এখন আর ওর দিকে তাকাতে কোনো আড়ষ্টতা করে না। আগে ভয়ে কখনো সামনে আসতো না। আর এখন যখননতখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সারা ছাঁদে এসেই মাইশার কাছে চলে গিয়েছে। সাদনান আলগোছে হেঁটে এসে প্রিয়তার সামনে দাঁড়াল। মেয়েটা গায়ের রং টা বেশি উজ্জ্বল নয়। আবার বেশি চাপাও নয়। এতেই যেনো আরো বেশি সুন্দর লাগে। এইযে চোখের নিচে হালকা কালচে দাগ। বেশি সাদা সুন্দর ভালোলাগে না সাদনানের। সাদনানের বেশ রাগ হয় তার গায়ে রংটা কেন এতো সাদা? প্রিয়তা সাদনানকে দেখতে এতোটাই বিবর যে সাদনান যে মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে সে খেয়াল কি আছে? উঁহু নেই। থাকলে এতোখনে নিশ্চয়ই লজ্জা নুইয়ে পড়তো।ভেবেই সাদনান শব্দহীন হাসলো।প্রিয়তার কাছ দিয়ে অন্য পাশে যেতে যেতে বল
-“আমাকে সব সময় দেখতে পাবেন। কিন্তু আপনার চারপাশের এতো সুন্দর মূহুর্তো গুলো হয়তো না পেতে পারেন। ”
কথাটা সমাপ্ত করে সাদনান হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে রাহান, আর রাহাতের সাথে আয়ানের পাশে ধারালো।

সাদনানের কথায় চমকে উঠলো। আল্লাহ কি লজ্জা ওকি এতোখন এই অসভ্য লোকটার দিকে তাকি ছিল? ছি: সাদনান ভাই কি ভাবছে? নিশ্চয়ই বলবে এ মেয়ের লাজ লজ্জা নেই। ততক্ষণে সাদনান ওর চোখের আড়াল হয়েছে। তাই লজ্জাটা বেশিখন স্থায় হলো না। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চার দিকে চাইলো। এর মধ্যে একটা দৃশ্য দেখে প্রিয়তাও বেশ অবাক হলো। আর বুঝতেও পারলো সাদনান কেন ওই কথাটা বলেছে। কারন সুফিয়া আর সালেহা বেগম কি সুন্দর এক সঙ্গে সব দিক সামলাচ্ছে। প্রিয়তা এই প্রথম ও ওর ফুফিকে সাদনানের মায়ের সঙ্গে এতো সুন্দর করে কথা বলতে দেখলো।আগে কখনো এমন দেখেনি।

সালেহা বেগম আর সুফিয়া বেগমের বেশ ভাব হয়েছে। দুজনেই কতো সুন্দর করে সব কিছু সামলাচ্ছে। যেনো দুবোন। শফিক সওদাগরের এসব দেখে মুচকি হাসলেন। ইস যদি আজ্জম আজ এখানে থাকতো তা হলে কতোই না খুশি হতো। কিন্তু আফসোস আজ্জম নেই।থাকবে কি করে এমপি বলে কথা। কত কাজ থাকে। আজ সকালেই হুট করে কল আসে রাজনৈতিক কিছু সমস্যা হয়েছে। তাই তো না চাইতোও বাধ্য হয়ে ঢাকা যেতে হয়েছে। কবে আসবে ঠিক নেই।
-“চাচা সব অতিথিরা তো এসে পরেছে? ”
কারোর কথায় বাস্তবে ফিরেলো শফিক। সামনে চেয়ে দেখলো সাদনানের সঙ্গে যে থাকে রাহান নামের যুবকটা দাঁড়িয়ে। শফিক রাহানকে বলল
-“চলো।”
বলেই তিনি কেদার ছেড়ে উঠে নিজে আগে হাঁটা ধরলো রাহানও ওনার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো।

আয়ান আর মাইশাকে একসাথে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আয়না আয়ানের হাতে একটা রিং ধরিয়ে দিলো।আয়ান মাইশার দিকে নিজের বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলো। মাইশাও মুচকি হেসে বাম হাতটা আয়ানের হাতের তালুতে রাখলো। আয়ানও মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাইশার অনামিকা আঙুলে রিংটা পড়িয়ে দিলো।তার পর মাইশাও আয়ানের হাতে পড়িয়ে দিলো। চার পাশ থেকে সবাই কর্তালি দিলো। তার পর সবাই একে একে মাইশা আর আয়ানকে অভিনন্দন জানায়। অনুষ্ঠান শেষ বড়রা সবাই খাবার খেয়ে যার যে চলে গিয়েছে। এখনে শুধু প্রতিবেশী চার পাঁচ জন মেয়ে আর প্রিয়তারা সবাই আড্ডা দিচ্ছে। এক পর্যায়ে মাইশা সাদনান হঠাৎই বলে উঠে
-“ভাইয়া একটা গান গাইবেন প্লিজ? ”
কি সুন্দর আবদার। তবে সাদনান তা নাকচ করে দিতে গিয়েও কেন যে পাড়লো না। এখন এতো মানুষের সামনে না করলে মাইশা নিশ্চয়ই কষ্ট পাবে। আজ মেয়েটা একটা খুশির দিন। থাক এক দিন নাহয় নিজের জীবনের রুলস এর বাহিরে গেলো। সাদনামের গানের গলা বেশ সুন্দর। কিন্তু সে কখনো কারোর সামনে গান করেনি। যা করে নিজের রুমেই সীমাবদ্ধ থাকে। আসলে মাইশারা কেউই জানতো না সাদনান গান পাড়ে। কিন্তু কাল কথার কথায় সারা ব’লেছিলো মাইশাকে। তবে মাইশা যে এমন কিছু করবে সারা ভাবেনি। আল্লাহ ভাইয়া নিশ্চয়ই না করে দিবে, ভাবে সারা।কিন্তু সারাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিয়ে সাদনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো
-“আচ্ছা। ”
তার পর রাহানের দিকে তাকিয়ে বলল
-“যা বাড়ি থেকে আমার গিটার টা নিয়ে আয়।”
রাহান ছোট্ট করে বলল
-“আচ্ছা ভাই।”
বলেই রাহান হাঁটা ধরলো। সাদনানদের বাড়ি প্রিয়তাদের বাড়ি থেকে বেশি দূর নয় এই সাত কি আট মিনিটের রাস্তা। মাইশা অনেক খুশি হয়েছে। আর প্রিয়তা ভাবছে ওনি গান গাইতেও পারে কই সারা তো কখনো বলেনি? অবশ্য বলবে কি করে আগে তো প্রিয়তা সাদনানের নাম শুনলেই ভয় পেতো। তাই হয়তো সাদনানের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানে না ।
বেশ কিছুখন পর রাহান সাদনানের গিটার নিয়ে ফিরে এলো। সাদনানের দিকে গিটার টা এগিয়ে দিয়ে রাহান বলল
-“ভাই। ”
সাদনান রাহানের দিকে তাকিয়ে গিটারটা নিলো।রাহানকে নিজের পাশে বসতে ইশারা করলো রাহানও কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে চট জলদি সাদনানের পাশে বসলো। সাদনান গিটার টা নিয়ে একবার প্রিয়তার পানে চাইলো। মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে গলো। তবে প্রিয়তা আর আজ অন্য দিনের মতো চোখ ফিরিয়ে নিলো না। চেয়ে রইলো হালকা বাদামী বর্ণের চোখের মনি জোড়ার দিকে। আজ বুঝি ভয় করছে না? ভিতর থেকে উত্তর এলো না আজ মুগ্ধ হচ্ছে। এই মানুষটার প্রতিটা রুপে, গুনে সবকিছুতে প্রিয়তা এখন ভালো লাগা, মুগ্ধতা খুঁজে পায়।প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই গিটারের টুংটাং শব্দে ভাবনা ছেঁদ হলো। সাদনান এখনো তার পানে চেয়ে। এবার অবশ্য প্রিয়তা কিছু টা লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে নিল। এর পর পর-ই সাদনানের মিষ্টি কন্ঠে শুনা গেলো সুন্দর একটা হিন্দি গান

***
Dua bhi lage na mujhe
Dawa bhi lage na mujhe
Jabse dil ko mere tu laga hai

Neend raaton ki meri
Chaahat baaton ki mari
Chain ko mere toone yun thaga hai

Jab saansein baroon main band
Aankhein karun main
Nazar tu yaar aaya kar

Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya
Oh yaara

Dil ko karaar aaya
Tujhpe hai pyar aaya
Pehli pehli baar aaya

Oh yaara
Har roz puchhein yeh hawayein
Hum to bata ke haare
Kyun zikar tera karte hain
Humse taare

***

[বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন ]

আড্ডা শেষ সবাই নিচে চলে গিয়েছে।রাত একটা বাজে সবার চোখ ঘুমে ঢুল ঢুল করছে তাই সবাই কোনো মতে ছাঁদ থেকে নেমেছে।সাদনান উঠে ফোন হাতে রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে ছিলো। সবাই বেশ অনেকটা আগে চলে গিয়েছে। এবার সাদনান পিছনে ফিরে যে-ই না নিচের দিকে যাওয়ার জন্য আগাবে অমনি দেখলো প্রিয়তা যায়নি। মেয়েটা এখনো নিচে বসে ওর পানে চেয়ে। ছাঁদে লাইটিং করার কারনে ছাঁদটা বেশ লাগছে।আর সেই সোডিয়াম আলোয়ে তার প্রিয়তাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। সাদনান কি বলবে ভেবে পেলো না। সে যেনো কথার খেয়া হারালো। আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসলে। মেয়েটা এখনো তার পানে এক দৃষ্টিতে চেয়ে। সাদনানের চোখ দুটো মেয়েটার সারা মুখে বিচরণ করলো। গলার কাছটা এসে যেনো থমকে গেলো। ছোট একটা তিলে চোখ আঁটকালো।খুব করে টানছে এই তিলটা। সাদনান শুকনো একটা ঢোক গিলে। একবার ছুঁয়ে দিবে কি? বেশি ক্ষতি কি হবে? এসব ভাবতে হাতটা আলতো করে প্রিয়তার গাল ছোঁয়াল। মেয়েটার সর্বাঙ্গে কাঁপুনি দিলো। প্রিয়তার যেনো এতোখনে হুস এলো কি করছিল ও?ইস সাদনান ভাই কি ভাবছে নিশ্চয়ই খারাপ? কিন্তু সাদনান ভাই আমার এতো কাছে কেন এসছে?প্রিয়তা ভাবনা শেষ কিছু বলবে। তার আগে গলদেশ এ চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। হুম সাদনান তিলটা কামরে ধরেছে। প্রিয়তা গলা দিয়ে না চাইতেও হাল্কা সুরে বেরিয়ে এলো
-“আহ।”
ততক্ষণে সাদনান কামরে ধরে রাখা জায়গায় টুপটাপ কয়েকবার তার অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়েছে। প্রিয়তার ছোট্ট দেহপিঞ্জরায় যেনো সাদনানের সন্নিত্য চাইলো নখ ডুবিয়ে খামচে ধরলো সাদনানের কাঁধ। এতে যেনো আরো উন্মাদ হলো সামনে থাকা প্রেমিক পুরুষ। আবারও কামরে ধরলো তিলটা। মেয়েটা দিশেহারা। হঠাৎই খেয়াল হলো এটা কি ঠিক হচ্ছে? কিন্তু সাদনান ততক্ষণে তার ওষ্ঠ আকরে। কিন্তু মেয়েটা সারা দিলো না। সামনে থাকা পুরুষ টা অসন্তুষ্ট হলো। ওষ্ঠযোগল ছাড়লো দৃষ্টি দিলো সামনে থাকা রমনীটার দিকে। মেয়েটা কাঁদছে। কিন্তু কেন?সাদনাম অস্তির হয়ে জিজ্ঞেস করলো
-“কি হয়েছে প্রিয়তা আপনি কাঁদছেন কেন?”
প্রিয়তার হেঁচকি উঠে গেছে ততক্ষণে। ফুফাতে ফুফাতে বল
-“ঠিক হয়নি এটা।”

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-০৫

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“উফ, আমার যে কি খুশি লাগছে মাইশাপু। তোমার বিয়ে ভাবতে আমার খুশি লাগছে। ”

মাইশাকে এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়তা। মাইশাও বোনের গালে হাত রেখে মুচকি হাসলো।হ্যা, সুফিয়া বেগম রাজি হয়েছে। কথায় আছে না? মানুষ পরিবর্তনশীল। সুফিয়া বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তিনি নিজেও কিশোরী বয়সে কোনো এক সুদর্শন পুরুষের প্রেম এ পড়েছিল। আর সেই সুদর্শন পুরুষটি ছিলেন সাদনানের বাবা আজ্জম মির্জা। আর আজ্জম মির্জা ভালোবাসতো সালেহা বেগমকে। সুফিয়া বেগম নিজের অনুভূতির কথা তার ভাই শফিক সওদাগরকে বলেছিলেন। তিনি তখন বলেছিল কিশোরী বয়সের আবেগ কয়দিন পর ভুলে যাবে। আর তার বন্ধুর ভালোবাসা সে তার কাছ থেকে কেরে নিতে পারবে না। যদি আজ্জম সালেহাকে ভালো না বাসতো তবে না হয় তিনি কিছু করতে পারতো। যেখানে আজ্জম অন্য কাউকে ভালোবাসেন। সেখানে শফিক কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। আজ্জম আর সুফিয়ার বিয়ে হলো। তার পর দেখতে দেখতে সুফিয়া বেগমেরও বিয়ে হলো। কিন্তু সুফিয়া বেগম নিজের প্রথম অনুভূতিকে ভুলতে পাড়লো না।আর সাদনান আার প্রিয়তাকে আলাদা করে তিনি আজ্জম আর শফিকে বুঝাতে চেয়েছিল ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে না পেলে কেমন লাগে। ছেলে মেয়ের কষ্টে নিশ্চয়ই তারা বুঝতো ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারোর পাশে দেখলে কতোটা কষ্ট হয়। তাই তিনি শফিকে মিথ্যা বলেছিল যে মাইশা সাদনানকে ভালোবাসে । আর প্রিয়তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে নিজের মেয়েকে সাদনানের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল। তবে সাদনানের জন্য আর পাড়লো কোথায় ।কিন্তু এখন যখন নিজের মেয়ের ভালোবাসার মানুষ আছে। তাহলে তিনি কেন তার নিজের মেয়ের ভালোবাসা তার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন। তিনি নিজে যে কষ্ট টা পেয়েছে তা কখনো তিনি তার মেয়েকে পেতে দিবে না। যদিও মাইশার বাবা মফিজুল ইসলাম অনেক ভালো মানুষ। তবুও প্রথম ভালোবাসা আজ্জম সুফিয়া বেগমের। নিজের মেয়ের প্রথম ভালোবাসা কিছুতেই তিনি হারাতে দিতে চায় না। তাইতো তিনি বিনাবাক্য রাজি হয়ে গিয়েছে।

——————-
আজ সবাই প্রিয়তাদের বাসায় রয়েছে। কাল মাইশা আর আয়ানের এনগেজমেন্ট করে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরবে । সামনে মাসে বিয়ের ডেট করবে।
সবাই কাজে ব্যাস্ত। রাত বারোটার দিকে কাজ কিছু
এগিয়ে রেখে সবাই খাবার খেয়ে ঘুমতে চলে গলো। সাদনান আর আয়ান এক রুমে থাকবে। আয়ান রুমে এসেই বেলকনিতে চলো গেলো। আর সাদনান নিজের ফোনটা নিয়ে ছাঁদের দিকে হাঁটা ধরলো।
আয়ান মাইশাকে ফোন দিলো রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ হলো। যেনো এটার অপেক্ষাই ছিল। ওই পাশের রমনীটা। আয়ান মুচকি হাসলো।মেয়েটা ওকে ওর নিজের চাইতো ওকে বেশি ভালোবাসে। আয়ানের ভাবনার মাঝেই মাইশা মিষ্টি কন্ঠে” হ্যালো “বলল

আয়ান মুখে হাসি থাকলেও কন্ঠটা বেশ গম্ভীর টেনে বলে উঠলো
-” এতো রাতে জেগে আছিস কেন?”

মাইশার বেশ অভিমান হলো সেতো এই লোকটার জন্যই এখনো ঘুমাইনি। আর ওনিই কেমন করে কথা বলছে। মাইশা বল
-“আচ্ছা ঘুমিয়ে যাচ্ছি।”

আয়ান চট করেই বল
-“এই না না জান। এমন করে না। আমি তো জাস্ট এমনি জিজ্ঞেস করেছি।”

মাইশা কোনো কথাই শুনলো না খট করে লাইনটা কেটে দিয়ে একটা বিজয় হাসি দিলে। মনে মনে বল ” সারা রাত জেগে থাকো মাই ডিয়ার হবু জামাই। আমার সাথে এভাবে কথা বলার শাস্তি এটা।”মনে মনে কথা গুলো বলেই মাইশা সারার পাশে শুয়ে পড়লো।

সারা রাহানের সঙ্গে মেসেজিং করছিল। মাইশাকে হাসতে দেখে ফোনটা পাশে রেখে মাইশাকে প্রশ্ন করলো
-“কি ব্যাপার আপু তুমি হাসছো কেন?”

মাইশা এবার বেশ জুড়ে হেসে দিল। তার পর আস্তে আস্তে সারাকে সব বলতেই সারও দমফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়লো। মাইশা হাসি থামিয়ে বলল
-“তোর সাথেরটা কোথায় আমরা এতো জুড়ে জুড়ে কথা বলছি ওর কোনো সাড়াশব্দ নেই কেন?”

মাইশা এতোখন ভেবেছে প্রিয়তা হয়তো ওয়াশরুমে। সারা চোখ দিয়ে কিছু বুঝালো। মাইশা হয়তো বুঝলো। তার পর মুচকি হেসে বল
-“শুয়ে পর। ”

সারাও কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে আলগোছে বড় বাতি অফ করে লাল বাতির আলোর একটা ছোট্ট লাইট অন করে মাইশার পাশে শুয়ে পড়লো।

————————

-“আপনি জানতেন আয়ান ভাইয়ারা আজ আসবে?”

সাদনান ছাঁদে দাঁড়িয়ে পকেটে বাম হাতটা রেখে ডান হাতে ফোনে টিপছিল।সাদনান চোখ ঘুরিয়ে প্রিয়তার দিকে চাইলো একবার তার পর আবার আগের মতো করে ফোন দিকে দৃষ্টি রেখেই ছোট্ট করে উওর দিলো
-“হুম। ”

-“বাবাতো আমায় ওই দিন বলেছিল মাইশা আপু আপনাকে পছন্দ করে তাহলে? ”
প্রিয়তা ফের প্রশ্ন করে।

সাদনান ফোনটা পকেটে রাখলো। চট করে প্রিয়তাকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে মেয়েটার কাঁধে থুতনি ঠেকালো। নিজের হাত ধারা প্রিয়তার হাত আবধ্য করে নিয়ে আলগোছে প্রিয়তার পেটের উপর জায়গা করে নিল।প্রিয়তার ছোট্ট দেহখানা নিজের বুকের মাঝে পুড়ে নিলো। মেয়েটার মনে যেনো উতালপাতাল ঝর বইতে লাগলো। সাদনানের এইভাবে হুটহাট আক্রমনে শরীর থেকে আত্মা যেনো বেরিয়ে আসতে চায়। ওনি কি সেটা জানে? আর বুকের বাম পাশের লাল বস্তুুটা যে এতো জুড়ে জুড়ে লাফায় ওনি কি সেটাও শোনতে পায়? প্রিয়তার ভাবনার মধ্যেই সাদনান বলে উঠলো
-“আপনার এই ছোট্ট মাথা এসব ঢুকবে না। আপনাকে এতো সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আরো বড় হতে হবে। ”
প্রিয়তা চমকালো সাদনান ভাই কিসের উত্তরের কথা বল? আমার মনের প্রশ্নর উত্তর নাকি মুখে বলা প্রশ্ন?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে বল
-“দুটোই। ”

প্রিয়তা অবাক হলো। সাদনান ভাই কি তবে তার মনের কথা শুনতে পায়?

সাদনান নির্লিপ্ত ভাবে পিছন হতে উত্তর করলো
-“শুনতে না পাওয়ার কি আছি? আপনি তো বেশ জোড়েই বলেছেন।”

প্রিয়তা এবার অবাকের শেষ সীমান্ত অতিক্রম করলো কি বলে সাদনান ভাই? সে কখন জোড়ে কথা বলেছে আর এটাই বা শুনলো কি করে? প্রিয়তা আরো একটা জিনিস খেয়াল করলো সে কত সহজেই সাদনানের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। আগে তো এই মানবটাকে দেখলেই ভয় পেতো। আর এখন এই যে ও রাতে ছাঁদে আসে না। ভয় করে তাই। আসলেও লাইট নিয়ে আসে। কিন্তু এখন একদম ঘুটঘুটে আঁধারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।
আর এখন এই মানবটার সঙ্গে যেখানে ওর ভয়ে হুস হারানোর কথা সেখানে কি সুন্দর নির্লিপ্ত ভাবে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। প্রিয়তা খেয়াল করে দেখেছে ইদানীং সাদনানের সন্নিকটে আসতে ভালো লাগে। সাদনান ভাই আসে পাসে থাকলে ভয়ও করে না। তবে কি ওনার প্রতি আমার ভয় আর ভালোলাগার অনুভূতি গুলো ভালোবাসায় রুপ নিল?
প্রিয়তা সাদনানের কাছ থেকে ছুটতে চাইলো তবে সাদনানের শক্ত হাতের অবস্থান নড়াতে পাড়লো না।

প্রিয়তা ছুটতে না পেরে আলগোছে প্রশ্ন করলো
-” আর কতো বড় হতে হবে আমার এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হলে সাদনান ভাই? ”

হঠাৎ এ সাদনান প্রিয়তাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বল
-“সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। আপনি আগে বলুন কেন ওই ছেলেটার সাথে কথা বলছেন আপনি? কেন আমার কাছে বা আপনার বাবার কাছে জানাননি? ”
প্রিয়তা মাথা নত করে নিল।কি বলতো ও ছেলেটা তো এমনি জাস্ট কথা বলতে চাইতো। কিন্তু আজকের মতো এমন জগন্য কিছু হবে জানলে ও সবার আগে ওর নিজের বাবাকে জানাতো। প্রিয়তা কখনো বুঝতে পারেনি ছেলেটা এমন কিছু করবে।
-” বিশ্বাস করুন আমি কথা বলতে চাইনি ও সব সময় নিজ থেকে এসছে।”
প্রিয়তা কি নিজের হয়ে ছাফায় গাইলো? নাকি সামনের পুরুষটিকে নিজের প্রতি বিশ্বাস করাতে?
তবে সাদনান কোনো কিছু তোয়াক্কা করলো বলে মনে হলো কি? না সেতো ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
হঠাৎ সাদনান বলে উঠলো
-“আমি কি আপনাকে আমার কাছে বিশ্বাস অর্জন বা নিজের হয়ে ছাফায় করতে এসব বলেছি? আমি তো আপনাকে এটা বুঝতে চেয়েছি বাই এনি চান্স ও আপনার কোনো ক্ষতি করে দিতো? সেই জন্য আগে থেকে সতর্ক হওয়ার কথা বলেছি।”
প্রিয়তা বেশ অপমা বোধ করলো। ওনি কি বলতে চাইছেন?যে ওনি বিশ্বাস না করলে আমি মরে যাবো? মোটেও ওইরকম কিছু নয়। হুু, মনে মনে কথা গুলো বলে মুখ ভেংচি কাটলো।
যেটা দেখে সাদনান দুষ্ট হেসে বলল
-“কি যেনো বলছিলেন একটু আগে?হ্যা, মনে পরেছে। আপনাকে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আর কতো বড় হতে হবে? তাই তো?”
বলেই প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো।
প্রিয়তা আলগোছে বল
-“আমার তো আর কদিন পর আঠারো বছর হবে। আর কতো বড় হবো আমি?”
সাদনান ওর ফোনটা প্রিয়তার সামনে ধরলো যেখানো এমন কিছু ছিলো যেটা দেখে প্রিয়তার চোখ বড় বড় করে তাকায় সাদনানের দিকে ফের মেয়েটা মাথা নুয়াই লজ্জা। ছি: লোকটা কতোটা অসভ্য।কিসব দেখালো ওকে।আল্লাহ লোকটার কি লজ্জা নেই?এর পর থেকে কি করে ওনার সামনে দাঁড়াবে? প্রিয়তার এতো এতো ভাবনার মাঝে সাদনান বল

-” যখন আমাকে এবং আমার ভালোবাসাকে সালানোর মতো বড় হবেন। তখন নিজেই উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন।”

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-০৪

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব _৪
#জান্নাত_সুলতানা

-” শুধু আয়না নই আমরা সবাই আছি মামনি। ”

কোনো পুরুষালী কন্ঠ শুনে সোজা হয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো আয়ান, রাহাত, আর মাইশার ফুফা আজমল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে। আর কথাটা আয়ানের বাবা আজমল চৌধুরী বলছেন। মাইশা সবাইকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে ভিতর আসতে বলল।এর মধ্যে শফিক সওদাগর, সুফিয়া বেগম দুজনেই ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়েছে। সবাইকে দেখে বেশ অবাক হলেন সুফিয়া বেগম। তবে শফিক দেখে মনে হচ্ছে না সে অবাক হয়েছে। এমন ভাবে কথা বলছে মনে হয় আগে থেকে জানতো। এই জন্যই কি আজ হোটেল যায়নি? ভাই কি জানতো ওনারা আসবেন? কই আমাকে তো কিছু বলল না। এত এত প্রশ্ন সাইডে রেখে সবাইর সাথে কুশল বিনিময় করে সবাইকে ফ্রেশ হতে বলে তিনি কিচেনে গেলেন নাস্তার ব্যবস্থা করতে। মাইশা ইনিয়াকে কোলে নিয়ে সোফায় বসে আছে। আর সবাই উপরে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।সুফিয়া বেগম কিচেনে থেকে সব দেখছেন। শফিক ইনিয়ার সাথে বেশ ভাব হয়েছে। কিছুখন পর মাইশা ইনিয়াকে নিয়ে চলে গেলো। আয়না ডাকছে। মাইশা যেতেই সুফিয়া বেগম ভাইয়ের কাছে এলো।
-” ভাইজান আপনি জানতেন ওনারা সবাই আসবে?

শফিক বেশ শান্ত কন্ঠে বলল
-“জানবো না কেন, আমি নিজেইতো ওনাদের আসতে বলেছি। ওনারা অবশ্য এখন আসতে চায়নি। কাল দেশে ফিরেছেন আজমল আর ওর মেয়ে জামাই। ওনারা পরে আসতে বলেছিল আমি জোর করাতে এসছে।”

-“আমাকে তো জানালেন না। আর হঠাৎ করে কেন ওনাদের আসতে বল্লেন?

-“একটু পর সব বুঝতে পারবি। আর হ্যা,তুই যেটা চেয়েছিলি সেটা কোনো দিন সম্ভব না। অন্তত তুই নিজে যে কষ্ট টা পেয়েছিস সেটা নিজের মেয়েকে বা আমার মেয়েকও পেতে দিস না। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। তাই একটু পর যা হবে সব মেনে নিলেই তোর মেয়ের সুখ। ”
কথা শেষ করে শফিক এক দন্ড দাঁড়াল না হনহনিয়ে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়াল।

—————————

সতেরো কি আঠারো বছর বয়সের তরুণ ছেলেটার কপাল ঘেমে চিকচিক করছে আর ছেলেটা একটু পর পর হাত দিয়ে তা মুছে ফেলার র্ব্যাথ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আটাশ বছরের পুরুষটা চোখে হাসলো। তাকে দেখেই ছেলেটা ভয়ে হাঁটু কাপছে এই ছেলে না-কি তার প্রিয়তমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে? আবার প্রেম করবে না বলাতে হাতও ধরেছে বাজে কথাও বলেছে। যে মেয়েটাকে এখন পযন্ত নিজেও একটা ধমক দিয়ে কথা বলে নাই। আর এই ছেলে না-কি বাজে কথা বলেছে আবার হাত। ভাবা যায় এতো কিছু?উঁহু, একদম নয়। মানবটার দৃষ্টি শান্ত। হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে ব’লে উঠলো
-“কিসে পড়ো তুমি? বাবার নাম কি?আমাকে চেনো?”

ছেলেটা হঠাৎ মানবটার হাঁটু জড়িয়ে ধরে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে চাইলো কি? হয়তো। কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারছে না। তবে হার মানেনি। অনেক কষ্টে যেনো মুখ দিয়ে কিছু বলবার আগে পুরুষটি ওকে টেনে উঠালো।চোয়াল শক্ত করে ফের বলে উঠলো
-“যা বলেছি তার উত্তর? ”

তরুণ ছেলে টা ভয়ে মাথা নুইয়ে নিল। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে শান্ত হয়ে। আস্তে করে বলল উঠে
-প্লিজ সাদনান ভাই বাবার কাছে কিছু বলবেন না। আমি কালেই এই কলেজ ছেড়ে চলে যাবো আর কখনো ভাবিকে জ্বালাব না। প্লিজ ভাই প্লিজ বাবাকে কিছু বলবেন না। ”

বলেই ছেলেটা কেঁদে উঠলো। সাদনান রাহানকে কিছু ইশারা করলো। রাহান কোথাও চলে গেলো। এটা দেখে ছেলেটা পাগলের মতো বলতে লাগলো
-“প্লিজ ভাই প্লিজ আমায় মা’রবেন না।”আমি,,

আর কিছু বলার আগেই রাহান প্রিয়তা আর সারাকে নিয়ে আসে।

-“বলেছিলাম না কোনো ছেলের সাথে কথা বলবি না?”
চোয়াল শক্ত করে সারাকে উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে।সারা ভাইয়ের এই রুপ দেখে মিনমিন করে বলল
-“আমরা কথা বলতে চাইতাম না ও রোজ নিজ থেকে এসে প্রিয়তার সঙ্গে কথা বলতে চাইতো। ”

সারা কথায় প্রিয়তা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে। আজ ওর খবর করে ছাড়বে সাদনান।সাদনান কয়েকজন ছেলেকে কে বলল ছেলেটাকে নিয়ে যেতে আর কলেজ থেকে টিসির ব্যবস্থা করতে। ওরা ছেলেটাকে নিয়ে বিনাবাক্য মূহুর্তের মধ্যে চলে গেলো। সাদনানও ওদের নিয়ে গাড়ির কাছে যেতে নিলে ওর একটা ফোন আসাতে সাদনান সারাকে বল
-“যা গাড়িতে গিয়ে বস। আমি আসছি।”

ওরা দুজন চলে এলো। সারা প্রিয়তাকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বলল
-“ওই দিন কি যেনো বলছিলি? আমার ভাই, তুই ছোটো বলে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। তো আজ কি বলবি রে জান? ”
বলে হাসতে লাগলো। আর প্রিয়তা নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে বসলো সত্যি কি ওনি আমায় ভালোবাসে?

সারা হাসতে হাসতে গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়লো। প্রিয়তা বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল সাদনান এসে প্রিয়তার কাছে দিয়ে সামনের দরজা টা খুলে দিল। আর নিজেও ঘুরে গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে গেলো। প্রিয়তাকে উঠতে না দেখে সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-“আজ এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে না-কি? ”

বাক্য গুলো কর্নপাত হতে প্রিয়তা চট করে গাড়িতে উঠে পড়লো। এটাদেখে সারা ফিক করে হেসে দিল। সাদনান পিছনে ফিরতেই সারা মুখে তর্জনি আঙ্গুল ঠেকিয়ে চোপ হয়ে গেলো। সাদনান ও গাড়ি স্টাট দিল। একটু সামনে গিয়ে সাদনান গাড়ি দাঁড় করালো। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বল
-“প্রিয়তা সিট বেল্টা বাঁধোন ।”

প্রিয়তা হঠাৎ গাড়ি থামাতে সাদনানের দিকে চাইলো। তবে তার কান পযন্ত সাদনানের কথা যায়নি সেতো তার পাশে বসা সুদর্শন পুরুষটিকে দেখতে ব্যাস্ত। সাদনান বুঝলো তার প্রেয়সী তার দিকে চেয়ে। আর কোনো কথাও যে তার কান পযন্ত যায়নি সেটাও বুঝলো। সাদনান একবার আঁড়চোখে পিছনে বোনের পানে চাইলো যে এখন গেমস খেলতে ব্যাস্ত। একটু আগেই সাদনানের কাছ থেকে ফোনটা নিয়েছে সারা। সাদনান চট করে ঝুঁকে এসে প্রিয়তার সিট বেল্ট পড়াতে পড়াতে বল
-“আমাকে দেখার জন্য সারাজীবন পাবেন। কিন্তু সিট বেল্ট না বাঁধলে যেকোনো সময় ক্ষতি হতে পাড়ে। আর আপনার কিছু হলে, আপনদর থেকেও আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন বেশি হয়।”

এতো সব এতো জলদির সাথে হয়েছে যে প্রিয়তা বুঝতে একটু বেগ পেতে হলো। কি বল্লেন ওনি আমার কষ্টে ওনার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়?

-“ভাইয়া আমরা সবাই প্রিয়তাদের বাড়ির দিকে কেন যাচ্ছি? তুমি আমাকে আমাদের রাস্তার মোড়ে কেন নামিয়ে দিলে না? ”
হঠাৎ সারা প্রশ্ন করাতে প্রিয়তা বাহিরে তাকালো সত্যি এতো ওনি কি তবে বাবার কাছে কলেজের সব বলে দিবে?প্রিয়তার ভাবনা ছেঁদ হলো সাদনানের কথায়
-“মা আর বাবা ওখানেই আছে। তাই আমাদেরকে ওখানে যেতে বলেছে। ”

সারা ছোট করে বল
-“ওহ। কিন্তু,,

সারকে পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে প্রিয়তা প্রশ্ন করলো
-“কেন বাড়িতে কিছু হয়েছে? বাবা, বাবা ঠিক আছে তো?কি হলো বলুন?

সাদনান হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করলো তার পর প্রিয়তার দিকে তাকি বলল
-“আমরা এসে গেছে। আপনি নিজে গিয়ে দেখে নিন।”
প্রিয়তা পুরো কথা সম্পূর্ণ না শুনেই সিট বেল্ট খুলে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। পিছন পিছন সারা, সাদনান ভিতরে গিয়ে দেখলো প্রিয়তা তার বাবকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর সোফায় আজ্জম মির্জা আর একটা ওর বাবার বয়সি লোক ওনার পাশে বসে। আর তাদের ঠিক সামনের সোফায় ওর থেকে দুই এক বছরের ছোটো হবে একটা ছেলে বসে আছে।
ওদের দেখে সুফিয়া বেগম বলল
-“তোমরা ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে এসো। এই প্রিয়তা তুই এসেই বাবার কাছে বসে গেলি। যা সারাকে আর সাদনানকে ফ্রেশ করে নিয়ে খেতে আয়।

প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলেই আবার কিচেনে চলে গেলো। প্রিয়তা উঠে সারাকে নিয়ে চলে গেলো। সাদনান গিয়ে তার বাবার পাশটায় বসলো। তার বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করবার জন্য মুখ খুলবে কিন্তু শফিক তা হতে দিলো না। তিনি আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আয়ান ও তোমার আজ্জম আংকেল এর ছেলে সাদনান।”

তার পর সাদনানের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ও আয়ান আমি ফোনে ওর কথাই বলেছিলাম। ”

সাদনান মাথা নাড়ালো। আয়ান সাদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বল
-“আমি আয়ান চৌধুরী। মাইশার কাজিন। ”

সাদনান হাতটা মিলিয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“মির্জা সাদনান শাহরিয়া।”

বলেই হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বল
-“ওকে আপনারা কথা বলোন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”

বলেই ওর মাকে ডাকলো
-“মা? ”

সালেহা বেগম কিচেন থেকে কাপরে হাত মুছতে মুছতে এসে সাদনানের কাছে দাঁড়িয়ে বল
-“হ্যা আব্বা। মা আপনার দরকারী সব জিনিস নিয়ে এসছি আপনি আমার সাথে আসুন।”

বলেই তিনি হাঁটা ধরলো সাদনানও বাধ্য ছেলের মতো মার পিছন পিছন যেতো লাগলো।

——————————

দুপুরে খাবার শেষ করতে করতে সাড়ে তিনটে বেজে গেলে তাই আর কেউ বিশ্রাম নিতে যায়নি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে । সারা,প্রিয়তা, মাইশা এক সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান, আয়না আর রাহাত এক সাথে বসে। ইনিয়া ঘুমিয়ে আছে। সাদনান তার বাবার পাশটায় চুপ করে বসে আছে। সাদনানের এখানে থাকতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কিন্তু আজ সব হিসাব না মিলালে যে আবার তার প্রিয়তমাকে কার সাথে কখন বিয়ে দিতে উঠে পরে লাগেন সুফিয়া বেগমকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।তাই বাধ্য হয়ে বসে আছে। আয়ান বেশ উশখুশ করছে। তার বাবা কিছু বলছে না কেন? ওনি এখানে নিজের শশুর বাড়ি এসে বেচারা নিজের ছেলের শশুর বাড়ি বানানোর কথা ভুলে বসছে।আয়ান কাঁদো কাঁদো মুখ করে বোনের পানে চাইলো। আয়না হয়তো ভাইয়ের চোখের ভাষা বুঝলো। তাইতো বাবার দিকে তাকালো। আর নিজের পাশে বসা স্বামীকেও খুঁচা দিল। রাহাত বউয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে যেনো বল আমি দেখছি।
এর মধ্যে সালেহা বেগম, সুফিয়া বেগম কাজের লোকদের হাতে চা, হালকা কিছু নাস্তা নিয়ে হাজির হলেন।তারাও গিয়ে প্রিয়তাদের পাশে দাঁড়াল। রাহাত চায়ে চুমুক দিয়ে শশুরকে উদ্দেশ্য করে বল
-“বাবা আমাদের তো আবার ফিরতে হবে। আমার কাল একটা মিটিং আছে।”

মিটিং তো নয় রাহাত যে ইঙ্গিত দিলো বেশ বুঝলো আজমল। তিনিও মাইশার মার পানে চাইলো। তার পর আয়নার দিকে তাকলো।আয়না চট করে উঠে এসে প্রিয়তাদের সবাইকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। কেউ কিছু বলল না। কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে সবাই আয়নার সাথে চলে গেলো।

আজমল মাইশার মার পানে ফের চাইলো তারপর আলগোছে বলে উঠে
-“ভাবি ভাই তো দেশে নেই। দেশে যেহেতু নেই আর মাইশাকে যখন শফিক ভাইজান ছোট্ট বেলা থেকে আদর যত্ন করে বড় করেছেন। তাই আমি মাইশাকে ওনার কাছে আমার ছেলের বউ নয়। আয়নার মতো করে মেয়ে চাইছি। ”

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-০৩

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“সারা যাতো মা প্রিয়তা টাকে ডেকে নিয়ে আয়।দুপুর খাবার খেলো শুধু, বিকেলে কত করে বললাম তবুও নাস্তাটা খেলো না। কি হয়েছে কি জানি। ”
সারা চমকে উঠলো ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো। সাদনান সোফায় বসে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। সারা ভাইয়ের পানে তাকি ভাবে ভাইয়া কিছু বলেনিত আমি যখন ঘুমি ছিলাম তখন? এই জন্যই কি প্রিয়তার চোখ মুখ ফোলা ছিল? হয়তো। সারার ভাবনার মাঝে সালেহা বেগম আবার বলে উঠলো
-“সারা তুই এখনো বসে আছিস। মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আয়। সেই দুপুরে খেয়েছে আর এখন রাত দশটার বেশি বাজে। জলদি ডেকে নিয়ে আয় মা।”
এর মধ্যে আজ্জম মির্জা নিজের কক্ষ হতে বেরিয়ে এলেন। তিনিও এসব শুনে সারাকে তাগাদা দিলেন প্রিয়তাকে ডাকার জন্য। সারা আর বিলম্ব না করে চট করে উপরে চলে গেলো। সার প্রিয়তাকে নিয়ে
এলেই সবাই খাবার খেতে বসে যায়। শুধু প্রিয়তা খাবার নাড়াচাড়া করছে এটা দেখে সালেহা বেগম বলল
-“কি হয়েছে তোর? খাবার না খেয়ে নাড়াচাড়া ক্যান করছিস?”
প্রিয়তা চমকালো, মাথা তুলে দেখলো সবার দৃষ্টি ওর দিকে শুধু সাদনান বাদে। প্রিয়তা মুখে মেকি হাসি টেনে আমতা আমতা করে বলল
-“খাচ্ছি তো। ”
-‘হুম। ”
খাবার খেয়ে সবাই গড়ে চলে গেলো। সারা রুমে ডুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটে গিয়ে প্রিয়তার পাশে বসে বলল
-“কি হয়েছে তোর ভাইয়া কি কিছু বলেছে? ”
প্রিয়তা সারার দিকে ফিরে আচমকায় সারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। যেনো এতখন কান্না গুলো আটকে ছিল এখন কারোর ছোঁয়ায় সব কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে। সারার প্রিয়তার পিঠে হাত রাখলো। আস্তে করে বলল
-“কি হয়েছে বলবি না আমায়?”
-“বিশ্বাস কর সারু আমি নিজ ইচ্ছে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বাবা আর ফুফি মিলে জোড় করেছে। তুই তো জানিস ফুফি কেমন। প্লিজ ওনাকে বল না।”
-“আচ্ছা আচ্ছা বলবো তুই কান্না থামা প্লিজ। ”
সারা উঠে গিয়ে পাশের সেন্টার টেবিল থেকে পানি এনে প্রিয়তাকে খাইয়ে দিল। প্রিয়তা কিছুটা শান্ত হলো। সারা মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। প্রিয়তার মন ভালো করার জন্য সারা চট করে উঠে দরজা টা খোলে বেড়ি যেতে যেতে বলল
-“তুই বস আমি আসছি। ”
সারা বেশ অনেক টা সময় পর রুমে এলো হাতে দুটো শাড়ী নিয়ে। এটা দেখে প্রিয়তা খুশি হলো। কিন্তু বিকেলে সাদনানের বলা কথা গুলো মনে হতে মুখ মলিন করে বলল
-“এই রাতের বেলা তুই শাড়ী কেন এনেছিস?”
সারা প্রিয়তার কাছে এসে প্রিয়তাকে খাট থেকে তুলে শাড়ী সাথে সব যাবতীয় জিনিস দিয়ে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠাতে পাঠাতে বলল
-“এক টা তুই পরবি আর একটা আমি তার পর ছাঁদে গিয়ে লাইট দিয়ে ছবি তোলবো অনেক সুন্দর হবে যা জলদি করে সব পড়ে আয়। আমি শাড়ী পড়িয়ে দিবো। ”
প্রিয়তাকে আর কিছু বলল না। ওয়াশরুম থেকে সব পড়ে বেরিয়ে দেখল সারা শাড়ী পড়া শেষ। প্রিয়তা বেরোতেই সারা প্রিয়তাকে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়িয়ে দিলো। তার পর হালকা করে সেজে দুজনে ছাদে চলে গেলো। তার পর দুজনে মিলে কিছু ছবি তোলবার পর সারা হঠাৎ করে বলল
-” তুই দুমিনিট দাঁড়া আমি নিচ থেকে একটা গল্পের বই নিয়ে আসি। ”
-“আচ্ছা। ”
সারা চলে যাওয়ার পর প্রিয়তা একটু সাইডের দিকে গিয়ে দাঁড়াল। বেশ অনেখন পরও যখন সারা আসছে না তখন প্রিয়তা পিছনে ফিরে দেখলো ওর পিছনে সাদনান দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে যেতে নিলেই সাদনান প্রিয়তার হাত ধরে এক ঝটকায় সাদনানের সামনে এনে দাঁড় করালো। প্রিয়তা সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কিছু তো আছে ওই চোখে কেমন নেশার মতো বেশিখন তাকিয়ে থাকা যায় না। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে কোমরে শীতল হাতের র্স্পশে চমকে তাকালো সাদনানের দিকে সাদনানের কোনো হেলদোল নেই সে এক দৃষ্টিতে তাকি প্রিয়তার পানে। প্রিয়তার শরীরে যেনো হীম হয়ে এলে নড়াচড়া মতো শক্তিও পাচ্ছে না। সাদনান প্রিয়তার এতো কাছাকাছি এই প্রথম এসছে। হয়তো নিজের ভালোবাসার মানুষটার এই রুপ টাকে উপেক্ষা করতে পারছে না। তাইতো না চাইতো এতোটা কাছে চলে এসছে। প্রিয়তা ছোটার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু সাদনান সেতো তার প্রেয়সীর রুপে এতোটাই মগ্ন যে তার কোনো দিকে খেয়াল নেই।সাদনান কে মুখটা এগিয়ে আনতে দেখে প্রিয়তা সাদনানকে শরীরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিলো। এতে যেনো সাদনানের হুুস এলো। সে পিছন ফিরে মাথার চুল খামচে ধরলো । আর ভিতু প্রিয়তা সেতু ভয়ে মাথা তোলেও তাকাচ্ছে না। সাদনান ভাই কি করতে যাচ্ছিল।আল্লাহ এই মানবটার সামনে কি করে যাবে এখন থেকে। ইস কি লজ্জা। আচ্ছা সাদনান ভাইকি রেগে গেলো তাকে এভাবে বাঁধা দেওয়াতে? এইজন্যই বোঝি তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না? প্রিয়তার এতো এতো প্রশ্নর ভাবনার ভিতর সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
-“আজ যেটা করেছেন বিয়ের পর ভুলেও এমনটা করবেন না। সম্পূর্ণ আমার না হওয়া পযন্ত যেনো আর শাড়ীও পড়তে না দেখি।কথা গুলো আপনার মন এবং মস্তিস্কে গেথে নিন মিস প্রিয়তা সওদাগর। ”

————————————-

একজন প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষটার সাঙ্গে ফোনে মনের কথা আদান-প্রদান করতে ব্যাস্ত। ঠিক তখনই রুমের দরজাটা খট করে খুলে কেউ রুমে এলো। ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা ভয়ে স্তব্দ হয়ে গলো। থমথমে কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সামনে থাকা ব্যাক্তিটা তিরতির করে বলে উঠলো
-“তোর এতোখন লাগলো একটা বই নিয়ে যেতে?”
-“আসলে প্রিয়তা হয়েছে ক,,,,
-“তোর আর কিছু বলতে হবে না।আমি ঘুমবো। ”
বলে প্রিয়তা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। সারা বই নিতে এসে যখনি গড় থেকে চলে যেতে পা বাড়াল ঠিক তখনই ওর হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিন এ “আর” লেখাটা বেসে উঠতে হাত থেকে বইটা সেন্টার টেবিল রেখে বেশ খুশি মনে কলটা রিসিব করে ব্যাক্তিটার সঙ্গে আলাপ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর ঔদিকে যে কাউকে অপেক্ষা প্রহরে রেখে এসছে সে কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে। হঠাৎ এ চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসাতে ভাবনার সুতু কাঠলো সারার। বোঝতে বাকি রইলো না প্রিয়তা লাইট অফ করে দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে গিয়ে খাটে উঠে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে নেকা সুরে বলল
-“জান তুই এমনটা করতে পারলি? তুইতো জানিস আমার অন্ধকার ভয় করে।”
-“এই ছাড় ছাড়, তুই তোর রাহানকে গিয়ে জড়িয়ে ধর।আমাকে ধরবি না। যখন আমাকে একা একা ছাঁদে রেখে গড়ে এসে তোর রাহান এর সাথে কথা বলেছিস আমার কথা তখন মনে পড়েনি।”
বলতে বলতে উঠে বসে নিজেকে সারার বাহুডোর থেকে মুক্ত করে নিলো।সারাও ছেড়ে দিয়ে বেশ ভাব নিলো। যদিও তা অন্ধকারে প্রিয়তার চোখে ফুটলো না। তবে গলা বেশ গম্ভীর করে বলে উঠলো
-“একা নাকি কেউ ছিল? ”
প্রিয়তা চমকালো, হকচকিয়ে উঠলো। থমথমে গলা বলল
-“মানে?”
-“তুই জানিস না আমাদের বাড়িতে তো আবার ইয়া লম্বা হিরোর মতো একটা ভূত আছে। সেটার সাথে ছিলি আর কি।তবে কিছু করে না শুধু একটু আধটু ধমকায় এই যা। এর বেশি কিছু না।”
প্রিয়তা ভূতের কথা শুনে ভয় পেলোও। তবে পরে বোঝতে পেড়ে হু,হা করে হেসে দিল। সাথে সারাও।সারা মনে মনে ভাবছে যাকগে মনটাতো ভালো করতে পেড়েছে বোনের মতো বান্ধবির। এভাবে কথা বলতে বলতে এক পর্যায় দু’জনেই ঘুমের দেশ এ পাড়ি দিলো।কাল কি হবে জানতে পাড়লে হয়তো কেউ একজন না ঘুমিয়ে রাত পাড় করে দিতো।

—————-

-“আমার কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে। যদি তোর মামা এমপির ছেলের ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করে। তা হলে তুই হে বলে দিবি। বুঝেছিস?”
মাইশা বেশ অবাক হলো তার মা এসব কি বলছে।কিছু না বোঝাতে মাইশা ফের তার মাকে প্রশ্ন করলো
-“কি বলছো মা আমি ঠিক বুঝিনি। ”
-“এতে না বোঝার কি আছে?তোর মামার সাথে কথা বল্লেই বোঝে যাবি। শুধু কিছু জিজ্ঞেস করলে হে বলে দিবি বাকিটা আমি সামলে নিবো। ”
কথাটা বলে সুফিয়া বেগম মাইশার গড়তেগ করলেন।আর মাইশা ভাবতে লাগলো তার মা কিসের কথা বলছে?কোনো ভাবে মামাকে সাদনান ভাইয়ের ব্যাপারে ভুল বোঝাতে চাইছে না তো? এমন হলে যে মামার সাথে এখনি আমার কথা বলতে হবে।

——————————–

-“মা ভাইয়া কোথায়?”
নাস্তার টেবিলে সাদনানকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো সারা। সাদনানের মা মুখটা মলিন করে উওর করলো
-“সেই ভোরবেলায় ঢাকার উদ্দেশ্য বেড়িয়েছে। মিটিং আছে নাকি বলল। ”
প্রিয়তার মুখটা মলিন হয়ে এলো।
-“আচ্ছা তোরা খেয়ে নে ক্লাসের লেট হয়ে যাবে নয়তো।”
বলেই তিনি কিচেনে চলে গেলো। সারা আর প্রিয়তা অল্প খেয়ে। সালেহা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের উদ্দেশে বেড়িয়ে পরলো।

———————–

-“কাল কি হয়েছিল ছাঁদে?”
হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই প্রশ্ন করলো প্রিয়তা সারার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
-“তোর কি মনে হয় আমি তোর ভাইকে চলে যেতে বলেছি?
-“আমি এমনটা বলতে চাইনি। ভাইয়া তো এতো সকালে কোথাও যায় না। তাই ভাবছি তোর সাথে রাগ করে চলে যায়নি তো?”
প্রিয়তা বেশ চমকালো সত্যি এ তো সেতো এটা একবারও ভেবে দেখেনি।তবে কি কাল ওনাকে ধাক্কা দেওয়াতে ওনি আমার উপর রেগে আজ ভোরে ঢাকা চলে গিয়েছে? প্রিয়তা এসব ভাবনা বাদ দিয়ে সারাকে বলল
-“আমি কিছু বলেনি।আচ্ছা এসব বাদ দে এখন ক্লাস এ চল।

——————–

মাইশার আজ ক্লাস নেই তাই ভার্সিটিতে যায়নি।সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে টিভি দেখছে তখনি বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। মাইশা ভাবছে তার মাতো ঘুমিয়ে আছে আর মামা আজ হোটেল যায়নি।আর প্রিয়তার তো এখন বাসায় ফিরার কথা না। তবে কে এলো এমন সময়? মাইশার ভাবনার মাঝেই মাইশার মা বেশ বিরক্ত নিয়ে রুম থেকে মাইশাকে ডেকে দেখতে বলল কে এসছে।
মাইশা সব ভাবনা বাদ দিয়ে দরজা টা খুলেই অবাক হলো সাথে খুশিও। তবে নিজেকে সামলে সামনের মানবীটাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“আপু তুমি? ”

———————
সাদনান মিটিং শেষ কুমিল্লা নিজ বাড়ি ফিরছে। সে ঢাকায় থাকলেও তার মনটা যে ছোট্ট প্রিয়তার কাছে রয়েছে। কাল একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে কি? হয়তো তাই। দিন দিন যেনো আরো দিশাহারা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে কোনো কাজে মন বসে না। মেয়েটাকে শীগগির নিজের করে নিতে হবে।আর দূরে রাখা যাবে না। ফোনের রিংটোন এর শব্দে সাদনানের ভাবনাছেদ হলো। সাদনান ফোনটা পাশের সিট থেকে হাতে নিয়ে দেখলো রাহান কল দিয়েছে। সাদনান ভ্রুুজোড়া কুচকে নিলো। রাহান কেন কল দিয়েছে আবার কিছু হলো কি? ভাবতে ভাবতে কলটা রিসিভ করলো। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওপাশ থেকে কিছু শোনে চোয়াল শক্ত করে বলল
-“ঠিক আছে। ”

তার পর কলটা কেটে দাঁতে দাত পিষে বলে উঠলো
-“কেন বার বার আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করেন প্রিয়তা?

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]