Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 434



হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২২

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২২
#জান্নাত_সুলতানা

-“বলতে পারতে কষ্ট হচ্ছে। আমি তো আর অমানুষ নই।”

প্রিয়তা সাদনানের বুকে শুয়ে আছে। সাদনান ওর বউয়ের মাথায় চুলের বাজে বাজে আঙ্গুল চালাচ্ছে। তখনি হঠাৎ করে বলে উঠলো সাদনান।

-“এভাবে কেন বলছেন আপনি?”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মেয়ে টা।

-“তোমার কষ্ট হচ্ছে। ”

অসহায় গলায় উত্তর করে সাদনান।

-“আমি একবারও বলেছি? আর অসভ্যের মতো কি সব বলছেন?”

-“না,,,

-“আমি ফ্রেশ হবো।”

আবারও প্রশ্ন করে। কিন্তু সাদনান কে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো প্রিয়তা।
সাদনানও কথা বাড়ায় না। বউ তার এ বিষয় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে।
সাদনান বুক হতে দু হাত ধারা আলগা করে মেয়ে টাকে।

আলগোছে কোলে করে ওয়াশরুমে নিয়ে এলো। বউ তার নাজুক। প্রথম বারে মেয়ে টা সাদনানের ছোঁয়া অবস্থা করুন। বউ তার বয়সে এখনো ছোট্ট। সাথে শরীরও বেশি কিছু নেই। বউয়ের ধারে কাছে বেশি ঘেঁষা যাবে না।ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ করিয়ে আবারও কোলে করে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বউয়ের কাপড় সহ নিজের সব ধুয়ে বেলকনিতে দিয়ে আসে।যদি এখন বাহিরে আলো নেই।হালকা অন্ধকার।

কাপড় মেলে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। খাবার খাইয়ে ঔষধ দিতে হবে বউ কে।

কাল রাতে দুটি ভালোবাসার মানুষের একান্ত মূহুর্ত পার করার সময় প্রথম কাছাকাছি হওয়ার ধরুনে প্রিয়তার বেশ কষ্ট হয়েছে। হবারই কথা সাদনান এমন বলিষ্ঠ শরীরের ছোঁয়া মেয়ে টার এই ছোট্ট দেহ টা নিতে বেশ কসরত করতে হয়। অতি সন্নিকটে আসা প্রিয়তা অজানা এক আনন্দ পেয়েছে। কিন্তু কষ্ট ভুলে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বাধা দিতে পারেনি। সাদনান বুঝতে পেড়ে সরে যেতে চেয়ে ছিল। কিন্তু বউ তার সেটা হতে দেয় নি।

কিন্তু এখন অবস্থা বেশি ভালো না।
সাদনান নুডলস রান্না করে নিয়ে রুমে এলো।প্রিয়তা শুয়ে আছে।

-“সোনা উঠতে পারবে?”

প্রিয়তার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে ডাকে সাদনান।
প্রিয়তা সাদনানের ছোঁয়া পেয়ে পিটপিট করে তাকায়।

-“আমি পারবো।”

মিনমিন করে জানায় প্রিয়তা।

সাদনান ধরে বসিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে আনে।সুন্দর করে বউয়ের হাত মুখ মুছে দেয়।
প্রিয়তা অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছে নিজের একান্ত কাছের পুরুষ টাকে।

সাদনান একটা নেবি কালর টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে।দেখতে বেশ লাগছে এমনিতেই সুন্দর। আবার গোসল করেছে সকালে আরো স্নিগ্ধ লাগছে।
প্রিয়তা বেচারি বেহায়া মন টা আবার এই পুরুষ টাকে এখন আবার নিজের করে পেতে মন চাইছে। কিন্তু পরক্ষণেই সাদনানের মুখের দিকে ভালো করে তাকায় কপালের পাশে হলুদ নাকের সাইডেও আছে।
এখন আরো বাচ্চা বাচ্চা ভাব আসছে চেহেরা। কি সুন্দর করে বাচ্চাদের মতো করে ভ্রু কুচকে রেখেছে।
প্রিয়তা এসব ভেবেই নিজে নিজে হেসে ফেলে।

সাদনান ভ্রু জোড়া সরল করে তাকায় বউয়ের দিকে।

-“কি হয়েছে? কি নিয়ে এতো হাসি হচ্ছে? ”

-“ভালোবাসি সাদনান ভাই।”

সাদনানের চমকানো নয়নে চাইলো প্রিয়তার দিকে। মেয়ে টা লজ্জা পাচ্ছে। আজ প্রথম মেয়ে টা ওকে “ভালোবাসি” বলেছে।
সাদনান মুচকি হাসলো। তবে অবাক হলেও নিজেকে সামলে জড়িয়ে ধরে গলায় ছোট্ট ছোট্ট কটা চুমু খেয়ে নিলো।
প্রিয়তাও চুপটি করে রইলো।
সাদনান ছেড়ে দিলো।

-“হা করুন। ”

সাদনানের কথায় প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো মুখ খোলে। সাদনানও মুখে খাবার দেয়।

-“আপনিও খেয়ে নিন।”

প্রিয়তা বলতে দেড়ি কিন্তু সাদনান খাবার নিজেও মুখে পুরে।
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। এই এক দিনে প্রিয়তা নিজে হাতে খাবার খায়নি।সাদনান খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও একই প্লেট এ খেয়ে নেয়।প্রিয়তার এই ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে।
কিন্তু পরক্ষণেই কিছু ভেবে মন টা খারাপ হয়ে গেলো।
তবে সামনে থাকা পুরুষ টাকে সেটা টের পেতে দিলো না।

———————–

-“সোনা চলো উঠে রেডি হয়ে নেও।”

প্রিয়তা একটা বই হাতে বসে আছে। এখন সকাল আটটার বেশি সময় বাজে। তখুনি সাদনান হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে কক্ষে প্রবেশ করে বলে উঠলো।
প্রিয়তা ভ্রু কুচকে তাকায় সাদনানের দিকে। সাদনান রেডি হয়ে এসছে পাশের রুম হতে।

-“আপনি কোথায় যাচ্ছেন? ”

-“ভুলে গেলে সোনা অফিস জরুরি মিটিং আছে। আমরা কিন্তু সেই জন্যই কাল এখানে এসছি।”

প্রিয়তার মুখ টা কালো হয়ে গেলো।

-“তাহলে বাসায় আমি এ,,,,

-“আমি কিন্তু রেডি হতে বলেছি।আপনি হয়তো শোনেননি।”

প্রিয়তা চোখ চকচক করে উঠলো। ও তো খেয়াল এ করে নি সাদনান ওকেও রেডি হতে বলেছে। বেচারি প্রিয়তা সাদনান কে দেখলে কথা, কাজ সব ভুলে যায়।

প্রিয়তা বিছানা হতে নামতে গিয়ে ব্যথায় হালকা আর্তনা করে উঠে। সাদনান তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গিয়ে কোলে তোলে নেয়। চোখ লাল করে তাকায়। অতঃপর হাটা দেয় ওয়াশরুমের দিকে।

প্রিয়তা সাদনানের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ করে ওর কিছু মনে হলো। নিমেষেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো।

-“আমার তো এখানে শাড়ী ছাড়া কিছু নেই। ”

মুখ মলিন করে বলে মেয়ে টা।
সাদনান প্রিয়তার কথা তাকালো বউয়ের দিকে।
ওয়াশরুমের ভিতর নামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

-“শাড়ী পড়েই যাবেন। ফ্রেশ হয়ে আসুন শাড়ী আমি পড়িয়ে দেবো।”

বলে চলে গেলো। প্রিয়তাও ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখলো সাদনান হালকা মিষ্টি কালার একটা শাড়ী নিয়েছে।
প্রিয়তা বেড়িয়ে আসতেই সাদনান প্রিয়তা কে শাড়ী টা পড়িয়ে হালকা করে সাজিয়ে দিলো।

তার পর সাদনান বউ কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।বউ কে কোলে নিতে চেয়েছিল সাদনান কিন্তু বউ তার কিছুতেই রাজি নয়। সাদনান বুঝে মেয়ে টা লোক লজ্জার ভয়ে। তাই আর কথা বাড়ায় না। বউকে নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে এসে পড়ে।

সাদনানের দামী গাড়ি টা এসে বিশাল বড় একটা দালানের কাছে থামে।

প্রিয়তা কে নামতে বলে। প্রিয়তাও গাড়ি হতে নেমে দাঁড়ায়। সাদনান গাড়ি টা পার্ক করে আসে।
তার পর প্রিয়তার হাত ধরে বিল্ডিং এর ভিতর প্রবেশ করে।

সাদনান অফিসে ডুকতেই একজন ছাব্বিশ কি সাতাশ বছরের পুরুষ দৌড়ে আসে। তার পর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে সাদনান গম্ভীর মুখে সব বলে।

আর বাকিরা সবাই সাদনান কে দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। কেউ কেউ প্রিয়তার দিকে অবাক চোখে চেয়ে কেউ আবার ভ্রু কুচকে তাকায়।
হয়তো সবার মনে প্রশ্ন “কে এই মেয়ে যাকে তাদের স্যার এমন সযত্নে সংরক্ষণ করে দাঁড়িয়ে?” প্রশ্ন টা সবার মস্তিষ্কের ভিতর আসার কারণ সাদনান প্রিয়তা কে ছোট্ট বাচ্চার মতো আগলে দাঁড়িয়ে আছপ।
যেনো হে’র ফের হলে কোনো অনর্থ হয়ে যাবে।

সবার অবাক হবার বড় কারণ সাদনান কে কখনো কেউ কোনো মেয়ের ধারে কাছে দেখেনি তাই কৌতুহল টা সবাইরে হওয়ার কথা।

-“আমার ওয়াইফ। মিসেস সাদনান। ”

কেউ কেউ প্রিয়তার সঙ্গে কথা বলল। আবার কিছু মানুষ নাক মুখ কুঁচকে নিলো।
তবে প্রিয়তা সবার সাথে কথা বলে।
তার পর সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ওর কেবিনে চলে এলো।

কেবিনে আসার একটু পর সেই ছেলে টা আবার এসে সাদনানকে জানায় মিটিং এর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
তাই সাদনান প্রিয়তা কে রেখে মিটিং রুমে চলে গেলো।

সাদনান কেবিন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার মিনিট পাঁচের মাথায় একটা মেয়ে এলো।

-“ম্যাম আমি তনি। স্যার মিটিং শেষ হতে লেট হবে। ততক্ষণ আমি আপনার সাথে থাকবো।”

প্রিয়তা খুশি হলো কারণ ও এই ক মিনিটেি কেমন হাঁপিয়ে উঠেছিল।
কেমন হাঁস পাশ লাগছিল। মেয়ে টা এসছে ভালোই হয়েছে।
কথা বলতে বলতে সময় টা কেটে যাবে।

প্রিয়তা মেয়ে টার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পাড়লো মেয়ে টা অনেক মিশুক আর ভালো।

দুপুরের দিকে মেয়ে টা চলে গেলো। এর একটু বাদে সাদনান কেবিনে প্রবেশ করে।
তার পর প্রিয়তা কে নিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

সাদনানের গাড়ি টা একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে থামায়।
গাড়ি থেকে নেমে বউয়ের হাত ধরে রেস্টুরেন্টে এর ভিতর প্রবেশ করে।

দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক বড় রেস্টুরেন্ট।আর মানুষ জনও বেশ ভদ্র ভাবে চলা ফেরা করছে কোনো হৈ-হুল্লোড় নেই।

সাদনান এক কর্নারে গিয়ে একটা টেবিলে বসে।
ওয়েটার ডেকে প্রিয়তা কে জিজ্ঞেস করে খাবার অর্ডার করে।

-“ওই তনি মেয়ে টা অনেক ভালো।”

প্রিয়তা বলে।
সাদনান বউয়ের পাশে বসা বউকে আরো একটু কাছে টানে।

-“হুম। ছেলে টাকে দেখছো, রিফাত?।ওরা দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ।”

প্রিয়তা সাদনানের কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।

প্রিয়তা কিছু বলবে মুখ খোলার আগেই দেখলো ওই মেয়ে টা আর ছেলে টা এই রেস্টুরেন্টে এসছে।

-“ওই দেখুন ওরা। ”

হাত দিয়ে ইশার করে দেখিয়ে বলে প্রিয়তা। সাদনান প্রিয়তার ইশার অনুসরণ করে তাকায়। হুম রিফাত আর তনি।

সাদনান বউয়ের নিকট হতে একটু দূরে বসে।
তার পর হাত উঁচিয়ে ডাকে

-“রিফাত? ”

রিফাত, তনি দুজনেই অবাক হলো সাদনান, প্রিয়তা কে দেখে।
তবে নিজেদের সামলে এগিয়ে গেলো।

-“স্যার আপনারা? আপনি তো বলেছিলেন কুমিল্লা চলে যাবেন আজ?”

-“বসো।”

রিফাতের কথায় সাদনান বলে।
রিফাত আর তনি অপর প্রান্তে বসে পড়ে।

-“সন্ধায় ফিরে যাবো।”

সাদনান জানায়।
তার পর ওয়েটার ডেকে আগের অর্ডারকৃত সব চারটা করে দিতে বলে।

এতোখনে সাদনানের বউ তনির সাথে এক দফা আলাপ সেরে নিয়েছে।

তনি আর রিফাত দুজন দুজন কে ভালোবাসে। কিন্তু তনির পরিবার কিছুতেই রিফাত কে মানছিল না। কারণ রিফাত এতিম। তনির বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তনিকে নিয়ে রিফাত পালিয়ে বিয়ে করছ।দুজনে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার ধরুনে বিয়ে করতে ঝামেলা হয় নি। কিন্তু রিফাত বেকার ছিল। শুধু দুটি টিউশন করিয়ে যা পেতো তা দিয়ে কোনো রকম হতো। তবে রিফাত চাকরি খুঁজছিল। এক দিন টিউশন করিয়ে বাসায় ফিরবার সময় রাস্তা সাদনান কে গাড়ি ভিতর পড়ে থাকতে দেখে। সে দিন সাদনানের গাড়িতে কিছু হয়েছিল। যার কারণে নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে সাদনানের বেশি চোট লাগে নি তবে হুস ছিল না।সে দিন সাদনানের সঙ্গে অনেক টাকাও ছিল। কিন্তু রিফাত সে সব কিছু উপেক্ষা করে সাদনান কে পাশের ছোট একটা ক্লিনিক এ নিয়ে ছিল। তার পর সাদনানের হুস আসার পর সাদনান কে বাসায় নিয়ে আসে সেই দিন রিফাতের সততা দেখে সাদনান রিফাত কে চাকরি দেয়। পড়ে তনির কথা জানতে পাড়ে। রিফাত বলেছিল তনি অনার্স এ পড়ে।
তনি অনার্স শেষ করার পড় তনি কে সাদনান চাকরি দেয়।

-“স্যার ম্যাম কে নিয়ে আজ আমাদের বাসায় চলেন।”

খাবার খেয়ে সবাই রেস্টুরেন্টে হতে বেড়িয়েছে।
রিফাত বিদায় বেলা বলে উঠলো। রিফাতের সাথে তাল মেলায় তনিও

-“হ্যাঁ,চলুন না স্যার। ”

সাদনান মুচকি হাসলো। রিফাতের কাঁধে চাপর মারে।

-“আজ নয়। আরেক দিন।”

তার পর ওদের বিদায় দিয়ে সাদনান প্রিয়তা গাড়িতে উঠে।

গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।

-“আচ্ছা আমরা এখন কোথায় যাবো?”

প্রশ্ন করে প্রিয়তা।

-“সোনা আমরা এখন আমাদের বাড়িতে যাবো।কাল তোমাকে নিয়ে তোমাদের বাড়ি যাবো।”

গাড়ি চালাতে চালাতে উত্তর করে সাদনান।
মেয়ে টা ওর কোলে বসা। গলা জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
সাদনান আর কোনো সারা না পেয়ে ডাকলো মেয়ে টাকে

-“সোনা ঘুমিয়ে গেছো?”

-“না। আর কতখন লাগবে? ”

মিনমিন করে আবারও প্রশ্ন করে প্রিয়তা।

-“বেশি না,আধঘন্টার মতো।”

বলে সাদনান বউয়ের মাথার তালুতে চুমু আঁকে।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। শব্দ সংখ্যা ১৫০০+ ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২১

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা

-“আমি আর খাবো না প্লিজ। ”

-“আর এক বার সোনা। ”

সাদনানের কথায় অসহায় চোখে তাকালো প্রিয়তা।
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে আবারও প্রিয়তার মুখে খাবার তুলে দিলো।
প্রিয়তাও আর কথা বাড়াল না। চুপ চাপ খেয়ে নিলো।
কি হবে আর কিছু বলে সেই কখন থেকে বলে যাচ্ছে খাবে না কিন্তু সাদনান শুনলে তো?এক বার এক বার করতে করতে সব খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে আর বলেও কাজ নেই। অবশ্য সাদনান নিজেও খাচ্ছে।

খাবার শেষ প্রিয়তা সোফায় বসে আছে। সাদনান সব কি গুছিয়ে রাখছে রান্না ঘরে।
প্রিয়তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সাদনান তার বউ কে কিছু করতে দেয় নি। নিজে নিজে সব করছে।

আগে যখন এখানে থেকে ভার্সিটিতে পড়তো তখন সাদনান নিজের কাজ নিজেকেই করতো। আর এখনো ঢাকা এলে নিজের কাজ নিজেই করে। তাই সাদনানের কাছে রান্না করা প্লেট হাঁড়ি পাতিল ধোঁয়া বেশি কিছু কঠিন কাজ নয়।

প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে সাদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর সামনে অবশ্য টিভি নামক জিনিস টায় একটা কিছু দেখাচ্ছে কিন্তু মেয়েটার সে দিকে কোনো খেয়াল নেই।
সে পলকহীন চোখ চেয়ে রান্না ঘরে কাজে ব্যস্থ থাকা স্বামী নামক পুরুষ টার দিকে।

কি সুন্দর করে বেসিনে প্লেট ধুয়ে টেবিলে এনে রাখে।
সাদনান প্লেট গুলো টেবিলে গুছিয়ে রেখে এগিয়ে এলো প্রিয়তার দিকে। কিন্তু মেয়ে টার সে দিকে কি কোনো হুস আছে?উঁহু থাকলে এতোখনে নিশ্চয়ই লজ্জা নুইয়ে পড়তো।

সাদনান সেন্টার টেবিল হতে রিমোট নেয় টিভি অফ করে।
ঘুরে এসে মেয়েটার সামনে দাঁড়াল হালকা ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে বউ কে।
প্রিয়তার যেনো ঘুর কাটলো।চোখ বড় বড় করে।
ছোট্ট ছোট্ট হাত ধারা গলা আঁকড়ে ধরে সাদনানের।
সাদনান তাকায় না মেয়েটার দিকে।

বারান্দায় যায় সোজা। প্রিয়তা এখনো তাকিয়ে আছে সাদনানের দিকে।
হঠাৎ পানি পড়া আশে পাশে তাকায় প্রিয়তা। বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে সাদনান ওকে নিয়ে বারান্দায় এসে পড়েছে।
কিন্তু বৃষ্টি কখনো থেকে হচ্ছে ওতো দেখেনি।
সাদনান ততক্ষণে প্রিয়তা কে কোল হতে নামি দিয়েছে।
প্রিয়তাও জড়সড় হয়ে দাঁড়ায়। ওর বৃষ্টি ভালো লাগে।
কিন্তু এখন শীত।
তাই বেশি খুশি হতে পাড়লো না।
সাদনানের বেলকনির ছাঁদ না থাকায় বেশ সুবিধা হয়েছে।
সাদনান রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে।
বৃষ্টির ফোঁটা দুজনকেই ভিজিয়ে দিচ্ছে।

সাদনান ভেবেছে প্রিয়তা ওর পাশে এসে হয়তো দাঁড়িয়ে। কিন্তু যখন ডানে তাকাল তখন দেখলো প্রিয়তা আগের যায়গায় দাঁড়িয়ে।
হালকা হালকা কাপছে সাদনান আর এক মূহুর্তে নষ্ট করলো না।
তড়িৎ গতিতে এসে মেয়ে টাকে ঝাপটে ধরে।

অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“কি হয়েছে সোনা?শরীর খারাপ লাগছে? ”

প্রিয়তা নিবু নিবু চোখে চেয়ে

-“আমার ঠান্ডা লাগছে। ”

আরো অস্থির হয় সাদনান। ও ভুলেই গিয়ে ছিল এখন হালকা ঠান্ডা তার মধ্যে মেয়ে টা সন্ধায় একবার গোসল করেছে। এখন দশটার বেশি বাজে।
ছোট্ট বউ তার এতো টা ঠান্ডা নিতে পাড়ছে না তাই।
সাদনান বেশি কিছু ভাবলো না আর।
আবারও কোলে করে বেলকনি হতে রুমে এনে ওয়াশরুমে যায়।
প্রিয়তা বেচারি ঠান্ডা বেশ কাবু করছে মেয়ে টাকে।
সাদনানের এখন নিজের গালে নিজের চর মা’রতে ইচ্ছে করছে। কে বলে ছিল এতো ছোট একটা মেয়ে কে নিয়ে এই ঠান্ডার মাঝে বৃষ্টিতে ভিজতে যাবার? রোমাঞ্চ করতে গিয়ে এখন বউয়ের যদি কিছু হয়? নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়তে মন চাইছে। কিন্তু এখন মা-রা মারির চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের বউয়ের কাপড় চেঞ্জ করে দিতে হবে।

সাদনান আশে পাশে তাকায়। নাহ ওয়াশরুমের কোথাও বউয়ের কাপড় নেই। শুধু সাদনানের একটা হালকা আকাশ রংয়ের সার্ট আছে।দরজায় ঝুলানো সার্ট এগিয়ে গিয়ে নিলো।
কিন্তু শরীর হতে শাড়ীর আঁচল ফেলে বেচারা সাদনানের গলা শুকিয়ে এলো।
ফাঁকা এক টা ঢোক গিলে নিলো।এই মেয়ে হুস না থেকেও বেচারা সাদনানের হুস ও উড়িয়ে দিচ্ছে।
সাদনান যতবার প্রিয়তাকে শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে চোখ বন্ধ রেখে।মেয়ে টা নিজেও চোখ বন্ধ রাখে।
এই যে সন্ধায়ও কাপড় পড়িয়েছে তখন চোখ বন্ধ অবস্থা পড়িয়েছে।
সাদনানের পরক্ষণেই মনে হলো এখন এসব ভেবে কাজ নেই।আগে বউকে সুস্থ করতে হবে।
শ্বাস টানে বার কয়েক।
কন্টোল করে।
পড়িয়ে দেয় হাতে থাকা সার্ট টা। আবারও কোলে নেয়।
রুমে এনে শুইয়ে দেয়। কম্বল জড়িয়ে দেয় শরীরে।
নিজেও একটা ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা টি-শার্ট পড়ে বেড়িয়ে এলো।
প্রিয়তার এখন কিছু টা ঠান্ডা কম লাগছে।
চেয়ে আছে গোল গোল চোখ করে

সাদনান বেড়িয়ে এসে লাইট অফ করে। ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়ে এসিও কমিয়ে দেয়।
বাহিরে বৃষ্টি এখনো পড়ছে।

জড়িয়ে ধরে প্রিয়তা কে।
প্রিয়তা নিজেও জড়িয়ে ধরে। বেশ ঠান্ডা লাগছে।
সাদনান প্রিয়তার গলায় মুখ আনে। ছোট্ট ছোট্ট টুপ টাপ কয়েকটা চুমে আঁকে গলার নিচ বুকের উপরিভাগের অংশে। প্রিয়তার গায়ে থাকা সার্ট এর একটা উপরের বোতাম খোলে নেয় সাদনান।

-“আমি ওয়াশরুম যাব।”

হঠাৎ মিনমিন করে বলে প্রিয়তা

-“আমি নিয়ে যাচ্ছি।”

বলে সাদনান সাইডে থাকা টেবিল লাইট অন করে।

-“আমি পারবো। ”

বারণ করলো কি? না-কি লজ্জা? তবে সাদনান সে সব কথা কানে তোলে না। ঘুরে এসে বিছানা হতে নিজের কোলে নেয় প্রিয়তাকে।

ওয়াশরুমের দরজার সামনে নামিয়ে দেয়।
মিনিট দশেকের মতো অপেক্ষা পরেও যখন মেয়ে টার কোনো সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না তখন সাদনান ডাকে

-“প্রিয়তা?”

না কোনো আওয়াজ আসছে না। সাদনান ভয় পায় কিছু কি হলো আবার?

-“সোনা কি হয়েছে? শরীর কি আবার খারাপ লাগছে?”

সাদনান অস্থির।পাগলের মতো ডেকেই যাচ্ছে।
তবে ভিতর হতে কোনো রকম রেসপন্স আসছে না।

-“আমার ভয় করছে সাদনান ভাই।”

হঠাৎ করে প্রিয়তা ভিতর থেকে বলে উঠে।

সাদনান অবাক হয়। কি বলছে মেয়ে টা ভয় করছে? কিন্তু কেন?

-“বেড়িয়ে এসো জান।তুমি না চাইলে আমি কিছু করবো না। ”

সাদনানের এরূপ কথা ভরসা পায় মেয়ে টা।
বেড়িয়ে আসে।কিন্তু সাদনান আর একটা বাক্যও প্রয়োগ করে না। চুপ চাপ বিছানায় শুয়ে পরে।রাগ হচ্ছে। কি করে এমন একটা পরিস্থিতি করতে পারলো মেয়ে টা। একবার কি সাদনান কে বলা যেতো না যে ওর ভয় লাগছে। সাদনান কি জোড় করতো? এতোটাও কাপুরষ নয় সাদনান। ভালোবাসে মেয়ে টাকে। আর এই মেয়ে কি করে পারলো এমন টা করতে।

প্রিয়তাও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে।ও বুঝতে পারছে না সাদনান কি রাগ করলো?আবার পরক্ষণেই ভাবে করারই কথা।
কিন্তু ওর কি দোষ ওর তো কেমন ভয় ভয় করছে।

প্রিয়তা আবারও গিয়ে জড়িয়ে ধরে সাদনান কে।
সাদনান নিজের গা হতে হাত সরায়। কিন্তু প্রিয়তা আবার দেয় সাদনান এবার আগের ঘটনা ঘটায়। আবারও হাত রাখে। কিন্তু সাদনান এবার সরায় না উঠে বসে মেয়ে টাকে নিয়ে।
কিছু বলবে মস্তিস্ক কথা রেডি করে নিয়েছে। কিন্তু মেয়ে টার দিকে
পূর্ণ দৃষ্টি পরতেই সব কথা গলায় আটকায়।
চোখের দৃষ্টি ফেলে এলোমেলো।

-“ঘুমিয়ে পড়ুন। ”

বলেই উল্টো দিকে ঘুরতে যাবে কিন্তু প্রিয়তা সেই সুযোগ দিলো না। এই এলোমেলো কাপড় নিয়ে জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।সাদনান দিশেহারা অবস্থা।

-“অনেক কষ্ট নিজেকে সামলে রেখেছি সোনা। প্লিজ এমন কিছু করো না। যাতে করে আমি তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করে ফেলি।”

সাদনান মিহি কণ্ঠে বলে।
প্রিয়তার কোনো হেলেদুল নেয় আগের নেয় ঝাপটে ধরে।
সাদনান আবাও বলে

-“তুমি এখানে ঘুমিয়ে পড়ো।আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ডেকে নিও আমি এসে দিয়ে যাবো।”

-“আমার আপনাকে প্রয়োজন। প্লিজ যাবেন না। জানি না কি হয়েছিল তখন আমার। কিন্তু আমি আর,,,

ব্যাস সাদনান আর কিছু তোয়াক্কা করে না কিছু শুনেও না। মেয়ে টার অধর জোড়া মুখে নিয়ে নেয়।

বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বন করে।
ছেড়ে দিয়ে মেয়েটার কপালে নিজের কপাল ঠেকায় শ্বাস নেয় জুড়ে দুজনেরই এক অবস্থা।

সাদনান নিজের গা হতে একটু আগে পরিহিত টি-শার্ট খোলে ছুঁড়ে ফেলে মেঝেতে।
আস্তে করে বউকে শুইয়ে দেয়। একটু আগে যত্ন করে বউকে পড়িয়ে দেওয়া সার্টটাও স্থান পায় মেঝেতে।
নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে মেয়েটার ছোট শরীর টার উপর। এতো দিন কাছে কাছে থেকেও ভালোবাসতে না পারা সব জমিয়ে রাখা নিজের আদর, ভালোবাসা উজাড় করে দিলো। মেয়েটাও নিজের স্বামীর ভালোবাসা ছুঁয়া উতলা হলো। ছোট্ট দেহখানা ঢেকে গেলো সাদনানের পেশিবহুল শরীরের নিচে।

#চলবে……..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২০

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা

-“সোনা উঠে যাও। আমরা চলে এসছি। ”

সাদনান ডাকে মেয়ে টা আরো একটু গুটি শুটি মেরে ওকে জড়িয়ে ধরলো।
সাদনান মুচকি হাসলো। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়া মেয়ে টার মাথার তালুতে।

প্রিয়তা ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানিক সময় হয়ে এলো।
সাদনান চাইলে বউ কে কোলে করে ফ্ল্যাট এ নিয়ে যেতে পারে। গেটের দারওয়ান কে বলে গাড়ির দরজা খুলে দিবে। কিন্তু সাদনান চাইছে না ওর বউ কে
এই এলোমেলো অবস্থা কেউ দেখে।
তাই তো জাগ্রত করতে চাইছে।
কিন্তু এই মেয়ে তো বিড়াল ছানার মতো আরও একটু মুচড়া মুচড়ি করে বুকের ভিতর ঢোকে যেতে চাইছে।

সাদনান চুপ করে কিছু ভাবলো। তার পর একটা বাঁকা হাসি দিলো।
হুট করে মেয়ে টার গলায় একটা চুমু খেলো মিনিট দুই এক এর সময় মতো এভাবে ছিল।
প্রিয়তা নড়েচড়ে উঠলো তবে তন্দ্রা এখন ছুটে নি।
সাদনান এবার বেজায় বিরক্ত হলো।
এই মেয়ে তো ঘুম থেকে উঠছেই না। কিন্তু না উঠলে তো হবে না উঠতে হবে। শরীরের বস্ত নামক জিনিস গুলো ঠিক করতে হবে। এভাবে কিছুতেই গাড়ি থেকে নয়তো বের হওয়া যাবে না।

-“আহ,,,

ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করতেই আর্তনা করে উঠলো প্রিয়তা।
সাদনান তখন মেয়ে টার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে রাখা।

প্রিয়তা সাদনানের চুল শক্ত করে খামচে ধরে। মেয়ে টার তন্দ্রা এখন একদম ছুটে পালিয়েছে। বেশি সময় লাগলো না ব্যথার কারণ বুঝতে। চুলে টান পড়ায় সাদনান যেনো আর বেসামাল হলো। পাগলের মতো অধর স্পর্শ দিতে লাগলে মেয়ে টার গলায়।
হুট করেই থেমে গেলো।
মাথা তুলে দৃষ্টি দিলো প্রিয়তার মুখের দিকে ।
মেয়ে টার চোখ এখনো বন্ধ আছে।
সাদনান নিজের হাত প্রিয়তার কোমর হতে ছাড়িয়ে নিলো।
হাত মুঠো বন্দি করে। লম্বা লম্বা কটা শাস টানে।
নিজে কনট্রোল করে।
অতঃপর প্রিয়তার গালে আলতো করে হাত রাখে
শক্ত হাতের স্পর্শ মেয়ে টার নরম গালে পড়তে চোখ জোড়া মেলে সামনে চায়।
দৃষ্টি মিলে দু’জনেরই।
সাদনান এক দৃষ্টিতে চেয়ে।
প্রিয়তা লজ্জা পেলো। দৃষ্টি ঘুরালো এলোমেলো।
আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো গাড়ি টা এক টা ছয় তলা বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে।
প্রিয়তা কিছু বুঝতে পারছে না। হয়তো সাদনান এখানে থাকে। সব ভাবনা বাদ দিয়ে
প্রশ্ন করলো

-“আমরা কি এসে পরেছি?”

সাদনান যেনো এতোখন একটা ঘুরে ছিল। প্রিয়তার প্রশ্নে সম্মতি ফিরে
পেলো। নিজে কে স্বাভাবিক করলো।

বেশ মিহি কণ্ঠে উত্তর করে

-“হুম। আরো আধঘন্টা আগে। ”
বলতে বলতে প্রিয়তা কে পাশের সিটে বসি দিলো।
তার পর গাড়ির দরজা খোলে
বেড়িয়ে প্রিয়তার পাশের দরজা টাও খোলে দিলো।

প্রিয়তা নামতে নিবে তার আগেই সাদনান বলল

-“সব কিছু গুছিয়ে,,
এতো টুকু বলতেই প্রিয়তা ঝটপট নিজের কাপড় ঠিক করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে।

অতঃপর আঁড়চোখে তাকালো সাদনানের দিকে। সাদনান এখন চেয়ে পলকহীন চোখে।
প্রিয়তা বেচারি আবারও লজ্জা পেলো।
ইস সারা রাস্তা ওনার সামনে এভাবে বসে ছিল?

-“এখন লজ্জা পেতে হবে না। রাতের জন্য তোলা রাখুন। ”

মেয়ে টা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না । তবে মনে মনে বেশ কিছু কটু কথাও আওড়ে নিলো।

বিরবির করতে করতে প্রিয়তা গাড়ি ভিতর হতে নেমে সাদনানের পাশে দাঁড়াল।
আশে পাশে তাকিয়ে সব কিছু দেখছে।
সাদনান গাড়ি লক করে।
ঘুরে মেয়ে টার হাত নিজের হাতের মুঠোয়ে পুড়ে নিলো।
পা বাড়ায় সামনের দিকে।
মিনিটের মতো হাঁটার পর একটা লিফটের সামনে এসে দাঁড়ায়।

সেকেন্ড এর মধ্যে দরজা টা খোলে। সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ভিতরে যায়।
একটু পর সেটা চার তালায় এসে থামে।
সাদনান এতখন প্রিয়তার হাত ধরে ছিল।
কিন্তু লিফট থেকে বেড়িয়ে হাত টা ছাড়ে।
নিজ পরিহিত পেন্ট হতে পকেট হাতরে কিছু খুঁজে? হয়তো। হুম চাবি।
একটু এগিয়ে গিয়ে সামনের ফ্লাট এর দরজা টা খোলে পিছনে ফিরে দেখলো প্রিয়তা ওর থেকে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে।

-“এসো।”

ডাকলো সাদনান।

প্রিয়তা আস্তে আস্তে করে এগিয়ে গেলো।
সাদনান আবারও মেয়ে টার হাত টা আঁকড়ে ধরে। দরজা টা খুলে ভিতরে এলো।

বাসা অন্ধকার। সাদনান ডানে হাত দিয়ে হাতরে সুইচ টিপে লাইট অন করে।
প্রিয়তা চার দিকে তাকালো। অনেক সুন্দর বাসা টা রান্না ঘরটা দরজা থেকে বরাবর দেখা যাচ্ছে। তিন টা রুম আর ডাইনিং একটা ড্রয়িং নেই ডাইনিং এর পাশেই সোফায়।

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই হাতে টান অনুভব করে।
সাদনান হাঁটছে।
একটা রুমে সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে এলো।

-“ফ্রেশ হয়ে নেও।আমি পাশের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
বলেই নিজে আলমারি থেকে কাপড় নিতে নিতে আবারও বলে

-“এখানে কাপড় রাখা আছে। যে টা ভালো লাগে পড়ে নিও।”

বলতে বলতে প্রিয়তাকে ইশারা করে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।

প্রিয়তা রুম টাকে দেখতে লাগলো। অনেক বড় এই রুম টা সাথে একটা ছাঁদহীন বেলকনিও আছে। আর অনেক সুন্দর করে গোছানোও।
যে কেউ দেখলে নিসন্দেহে বলতে পারবে এই রুমের মানুষ টা বেশ পরিষ্কার।

প্রিয়তা এর বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারলো না।
শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে।
ফ্রেশ হলে হয়তো ভালো লাগবে। তাই আলমারি দিকে এগিয়ে এলো।
সেটা খোলে প্রিয়তা বেশ অবাক হলো। এক সাইডে অনেক গুলো শাড়ী অনেক সুন্দর করে বাজ করে রাখা।
প্রিয়তা সেখান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

——————–

-“সত্যি করে বলুন আপনি এতো শাড়ী কার জন্য নিয়েছেন? ”

সাদনান ফ্রেশ হয়ে মাত্র রুমে এসছে।তখনই প্রিয়তা পিছন থেকে কথা টা বলে উঠলো।
সাদনান পিছনে চাইলো। মেয়ে টা শাড়ি টা কোনো রকম গায়ে পেচিয়ে দাঁড়িয়ে।

সাদনান আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো।
এক টানে মেয়েটাকে নিজের বুকে নিয়ে এলো। মেয়ে টা কেপে উঠে।ছোট্ট বুকটায় ঝর উঠে।

-“আমার বউয়ের জন্য। অনেক আগে থেকে এগুলো কিনে রেখেছি। মূলত যখন মার্কেট যেতাম নিজের জন্য কাপড় নিতে তখন একটা করে নিতাম। মানে পছন্দ হলেই নিয়ে নিতাম।”

প্রিয়তা অনেক খুশি হলো। তবে প্রকাশ করলো না।
সাদনান প্রিতার কিছু বলতে না দেখে।
নিজের শক্ত চওড়া বুক হতে দু হাত ধারা আলগা করে।
প্রিয়তা লজ্জা পেলো। পাবারই কথা শরীরে যে শুধু শাড়ীর সাথে প্রয়োজন জিনিস পরিহিত আর শাড়ী টা কোনো রকম পেচানো।
সাদনান হাসলো শব্দহীন হাসি।
অতঃপর আঁচলে হাত রাখে।
প্রিয়তা ফট করে চোখ তোলে চাইলো সাদনানের দিকে।
পর পর চোখ বন্ধ করে নিলো। এই চোখে যে বেশিখন তাকাতে পারে না মেয়ে টা।
প্রিয়তা কে চোখ বন্ধ করতে দেখে রাগ হলো সাদনানের। আগে না হয় ভয়ে তাকাতো না কিন্তু এখন তো ভালোবাসে তা হলে এখন কেন তাকাতে পারে না?
কিন্তু রাগলে চলবে না।

-“তাকান।”

মিহি কণ্ঠে বলে সাদনান।

-“না আমার লজ্জা করে।

-“লজ্জার কি আছে আমি তো আপনারি।তাকান। ”

-“না প্লিজ। ”

-“প্রিয়তা?”

ব্যাস কাজ হয়ে গেলো। ফট করে চোখ তোলে তাকালো। সাদনান উন্মুক্ত। শুধু তোয়ালে পড়ে।
প্রিয়তা চোখ নামালো না। চেয়ে রইলো প্রিয় পুরুষ টার শক্ত চওড়া বুক টার দিকে। এখন লোভ হচ্ছে মেয়ে টার মনটা চাইছে ওখানে একবার নিজের পাতলা অধর জোড়া ছুঁয়ে দিতে।
সাদনান
এখনো মেয়ে টার মুখ পানে দৃষ্টি।

প্রিয়তা কিছুখন চেয়ে রইলো। একটা মন বলছে একবার ছুঁয়ে দিতে আরেক টা মন বলছে একদম না।আবার নিজেই নিজে বেশ বিরক্ত হলো। স্বামী হয়। একবার ছুঁয়ে দিলে কিছু হবে না।
আস্তে করে মুখ টা উচু করে নিজের অধর জোরা হালকে করে ছুঁয়ে দিলো।

সাদনান নিজেও মেয়ে টার মাথায় তালুতে চুমু খেলো।
প্রিয়তার মুখ টা নিজের দু হাতের আঁজলো নিলো।

কপালে ছোট করে একটা ভালোবাসার পরশ দিলো।
পর পরই নিজের অধর জোড়া দিয়ে মেয়েটার অধর জোড়া আবদ্ধ করে নিলো।বেশ অনেক টা সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বন করলো।
প্রিয়তা শাস নিতেও পারছে না। হাতের নখ সাদনানের বুকে বিঁধে। নিজের ঠোঁটেও ব্যাথা অনুভব করে। হুম সাদনান দাঁত বিঁধিয়েছে মেয়েটা অধরে।প্রিয়তা ছটফট করে।
তবে সাদনান কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।
নিজের ইচ্ছে মতো ছাড়ে।

নিজের বুকের দিকে একবার তাকিয়ে প্রিয়তার
দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
মেয়ে টার মুখের অবস্থা করুন৷ অধর জোড়া ফোলা। চোখে পানি চিকচিক করে । সাদনান মুচকি হাসে।

-“এটা কি করলেন আপনি? ”

মিনমিন করে প্রশ্ন করে প্রিয়তা। সাদনান চোখে হাসির রেশ স্পষ্ট। আরো একটু কাছে টানে মেয়েটাকে

-“ভালোবাসা সোনা।”

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ। ]

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-১৯

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

[ পর্ব টা কিছু রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

-“ওই ছেলে যেনো আজকে দিনের ভিতর কুমিল্লা থেকে বিদায় হয়।”

উদোম লোমযুক্ত বুক হাত বুলাতে বুলাতে আদেশের সুরে বলে উঠলো সাদনান।

-“ভাই আপনি চিন্তা করবেন না আমি সব সামলে নেবো। ”

সাদনান কথা টা বলতেই রাহান ভদ্র ভাবে জানায়।

-“হুম।”

নিজের কথা সমাপ্ত করে।
রাহান কে কিছু বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দেয় সাদনান।

ফোন পাশের সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আলমারি দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটা খোলে একটা
টি-শার্ট পরে নিলো।
তার পর নিচে চলে এলো।
সবাই খাবার টেবিলে বসে সাদনানের জন্য অপেক্ষা করছে ।
সাদনান বোন আর মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
অতঃপর একটা চেয়ার টেনে বাবার বরাবর বসে পড়লো।

-“কাল রাতে কথা হয়েছে শফিকের সঙ্গে। ”

খাবার শেষ আজ্জম মির্জা টিসু বক্স হতে টিসু নিয়ে সেটায় হাত মুছতে মুছতে জানায়।

-“কি বলেছেন ওনি? রাজি হয়েছে কি?”

আজ্জম মির্জা কথা শেষ করতেই বেশ উত্তেজিত
হয়ে প্রশ্ন গুলো করে বসল সালেহা বেগম।

তবে স্বামী তার আজ বড্ড গম্ভীর। প্রশ্ন গুলো করলেও এখন আজ্জম মির্জার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে নিলেন।
আজ্জম সকালে বেড়ি ছিল কোনো রাজনৈতিক দরকারে। যখন বাড়ি এসছে তখন থেকে একদম চুপ চাপ।
স্ত্রী সাথেও কোনো বাক্য বিনিময় করেনি।
তাই সালেহা বেগম ভেবেছে হয়তো রাজনৈতিক কোনো ঝামেলা হয়েছে।
কিন্তু এখন স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে বেশ আগ্রহী
হয়ে প্রশ্ন করে এখন ভয়ে আছে।
কিন্তু সালেহা বেগম কে অবাক করে দিয়ে আজ্জম মির্জা উত্তর করলো

-“হুম রাজি হয়েছে। তবে একটা সমস্যা হলো আমায় কালকের পর দিন চট্টগ্রাম যেতে হবে। রাজনৈতিক কিছু সমস্যা সমাধান করতে। তাই ভাবছি যদি এ মা,,,,

ব্যাস আর কিছু আজ্জম মির্জা মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না।
তার আগেই সাদনান বলে উঠলো

-“তাহলে আমরা কালকে গিয়ে আমি আমার বউ নিয়ে আসি।”

সালেহা বেগম সারা খুশি হলো সাদনানের কথায়।
আজ্জম ছেলের দিকে পলকহীন চোখ চেয়ে। তিনি ভাবছে এই নির্লজ্জ ছেলে সত্যি ওনার ছেলে তো?
সাদনান সে সব উপেক্ষা করে আবারও বলে উঠলো

-“আমাদের তো তেমন কেউ নেই। আর ফুফিরা তো দেশের বাহিরে তারা তো আসবে না। আর তোমার দলের যারা আছে তাদের বলে দেও। শেষ তা হলেই তো হলো।”

সালেহা ছেলের কথায় সাই দিয়ে কিছু বলবে তার আগে আজ্জম মির্জা হাত দিয়ে ইশারা করে বলল

-“তোমাকে আর ছেলের হয়ে কিছু বলতে হবে না। আমি শফিক কে জানিয়ে দেবো আমরা কাল যাচ্ছি। ”

সারা খুশি হয়ে ভাইয়ের এক বাহু জড়িয়ে ধরে। সালেহা বেগম মুচকি হেসে ছেলের নিকট এসে মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে আলতো করে ভালোবাসার একটা পরশ দিলো।
আর এ সব কিছু সোফায় বসে চেয়ে চেয়ে দেখলেন আজ্জম।এছাড়া আর কিছু করার নেই ওনার।

——————————

-“আপনার কাছে কি অফিস থেকে ফোন এসছে আব্বা?”

সাদনান সোফায় বসে। বিয়ে শেষ হয়েছে মিনিট দশেক হবে হয়তো। বিয়ে আর কি শুধু ফর্মালিটি বলাও চলে। বিয়ে ইসলামের রীতি অনুযায়ী তো আগেই হয়েছে এখন আবার হয়েছে।

সাদনান বসে ফোনে কিছু করছিলো। তখুনি এসে আজ্জম মির্জা প্রশ্ন টা করে।

-“হ্যাঁ বাবা। আমি আজই চলে যাবো তুমি টেনশন করো না। ”

বাবাকে আশ্বস্ত করে সাদনান।
ছেলের কথায় আজ্জম চিন্তিত কন্ঠে ব’লে

-“কিন্তু প্রিয়তা?”

-“আমি আমার বউ সঙ্গে নিয়ে যাবো।”

আজ্জম মির্জা প্রশ্নে সাদনান সোজা সাপটা জবাব।
আজ্জম মির্জা ছেলের কথা আগে পিছে চাইলেন। না কেউ আশে পাশে নেই। যাক কেউ নেই থাকলে কি হতো? আজ্জম আর বেশি কিছু ভাবতে চাইলেন না। তবে লম্বা একটা শস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

বাড়িতে তেমন লোক জন নেই যা আছে কিছু প্রতিবেশ লোক।
আর বেশি মানুষ জন নেই প্রিয়তার মামাও এবার কোনো কাজের চাপের জন্য আসতে পারবে না বলে জানিয়েছেন।
মাইশা আয়ানও আসেনি। আজমল চৌধুরীর অসুস্থ তাই ওনাকে ফেলে মাইশা আসতে রাজি হয়নি।

সাদনান উঠতে নিবে কিন্তু তার আগে শফিক সওদাগর উপস্থিত হলেন।

-“আমি বলি কি ওকে না হয় সাদনান বাবা কাল ঢাকা থেকে আসার পর নিয়ে,,,,

-“না তার দরকার নেই। প্রিয়তা কে আজই সাদনানের সঙ্গে ঢাকা নিয়ে যাবে। ”

শফিক সওদাগর কে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে আজ্জম মির্জা কথা টা বলে উঠলো।

-“কিন্তু ওরা দুজন থাকবে ক,,,,

-“শফিক তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছি আমার ঢাকা একটা দুতলা বাড়ি সাথে একটা ফ্লাটও বরাদ্দ আছে আমার ছেলের নামে।”

-” না আমি সে রকম কিছু বলতে চাইনি। আসলেও ও একা থাকতে পারবে কি না তাই বলছিলাম। ”

আজ্জম এর কথায় আমতা আমতা করে বলে শফিক।

-“আপনি এ নিয়ে চিন্তা করবেন না চাচা। আমি সামলে নেবো।”

সাদনান আশ্বাস দেয়।

-“আমি জানি বাবা।তবুও,,,,,,
শফিক আরো কিছু বলতে চাইলেন।কিন্তু আজ্জম তাড়া দিলেন।

-“আচ্ছা এসব ভেবে কাজ নেই।তুই বরং সুফিয়া কে বল জলদি সব নিয়ম কানন শেষ করতে। রাত হয়ে যাচ্ছে। ”

আজ্জম মির্জার কথায় যুক্তি আছে। শফিক চট করে বোন কে ডাকলো।
তার পর প্রিয়তা কে নিয়ে আসার জন্য তাড়া দেয়।
ততক্ষণে রাহান ওর বাবা – মা, কে নিয়ে বাগান থেকে বাড়ির ভিতরে এলো।
বেচারা কাজ করে বেহাল অবস্থা।
বাগানে খাবার জায়গা করেছেন সেখানেই ছিল। সাথে আরো ছেলে পেলে আছে কিন্তু বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কারোর।
সাথে মফিজুল ইসলামেরও তদারকি দায়িত্বে আছেন।

এখন মোটামুটি বাড়িতে মানুষ জন ভালোই ভিড় জমিয়েছে।

প্রিয়তাকে সারা আরও কিছু মেয়ে সঙ্গে করে নিচে নিয়ে এসছে।

তার পর সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়তাকে নিয়ে বাহিরে এলো।
কিন্তু প্রিয়তা তখনো বাবাকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।
ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
অনেক কষ্টে শফিক মেয়ে কে ছাড়িয়ে কপালে এক টা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে

-“আমার মা কাঁদে না। বাবার কষ্ট হয়।”

বাবার কথায় যেনো কিছু টা দমন হলো। এবার শুধু হেঁচকি উঠেছে। হয়তো চেপে রাখা চেষ্টা চালাচ্ছে।

-“কালকের পর দিন তো আপনি আবার বাবার কাছে চলে আসবেন। ”

ততক্ষণে গাড়ির কাছে এসে তিনি দরজা টা খোলে প্রিয়তাকে সিটে বসতে ইশারা করলো।
সাদনান আগে থেকেই গাড়ির ডাইভিং সিটে বসে আছে।
মূলত ও সবাইর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আগে গিয়ে গাড়িতে বসে পরেছে।

শফিক প্রিয়তা কে সিটি বসিয়ে সাদনানের পানে চাইলো। সাদনান আবার ভরসার দৃষ্টিতে আশ্বস্ত করলো।

শফিক দরজা টা লাগিয়ে দিলেন। প্রিয়তা তখনো জানালা দিয়ে বাবার হাত আঁকড়ে ধরে।
সাদনান এবার সবাই কে বলে গাড়ি স্টাট দিলো।
মূহুর্তের মধ্যে গাড়ি টা রাস্তার ধুলো উড়িয়ে ছুটতে লাগলো গন্তব্যের দিকে।
প্রিয়তা ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সাদনান মেয়ে টার বাহুতে হাত রেখে এক টানে নিজের কোলে উপর নিয়ে এলো । এক হাতে ডাইভ করতে করতে আরেক হাত ধারা চোখের জল মুছে দিলো।

-“কাঁদে সোনা।”

আস্তে করে বলে সাদনান।

মেয়ে টা এখন আর কাঁদছে না। কি সুন্দর প্রিয় পুরুষ টার বুকে মাথা ঠেকিয়ে হাট বিট শুনছে। সাদনানের হাট অনেক দূত উঠা নামা করছে।
করবারই কথা এমন একটা মেয়ে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। তার উপর মেয়ে টার ওর ভালোবাসার মানুষ সেই সঙ্গে বউ। হাট তো জোরে জোরে বিট করবেই।
যদিও এর আগেও তিন কি চারবার এভাবে কোলে নিয়ে গাড়ি চালিয়েছে। কিন্তু তখন মেয়ে টাকে এতোটা গভীর ভাবে ধরে নি।
কিন্তু আজ তো এ মেয়ে নিজ থেকে এক্কেবারে লেপটে গিয়েছে।

সাদনান জোরে জোরে কয়েক বার শাস টানলো।
নিজে কে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কিন্তু এই মেয়ে কি সে টা আদৌও সম্ভব হতে দিবে?

সাদনান হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো। জায়গায় টা সামান্য নির্জন। শুধু বড় বড় কিছু গাড়ি একটু পর পর সাই সাই করে আওয়াজ তোলে আবারও চলে যাচ্ছে।

সাদনান তার বউকে বুক হতে দু হাত ধারা আলগা করে।
প্রিয়তা পিটপিট করে চাইলো সাদনানের পানে।
চোখের কাজল লেপ্টে একাকার অবস্থা। এলোমেলো চুলে। ফোলা ফোলা চোখ। লেহেঙ্গার উপরি ভাগ এর ঠিক ঠিকানা কোনো টাই নেই। যার জন্য দেহে থাকা গো’পন ব’স্তুর দৃশ্য মান।
তবে সামনে বসা পুরুষ টা সে সব উপেক্ষা করে রমনীটার অধর জোড়া কে বেশি প্রাধান্য দিলো।
সারা মুখে পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো। অতঃপর অধর জোড়া স্পর্শ করলো। মেয়ে টা সাই দিলো।
আরও প্রখর হলো স্পর্শ। আরো গাঢ় হলো চুম্বন।
এবার স্পর্শ অনুভব করলো স্পর্শ’কাতর জায়গাতেও।
মেয়েটা ছটফট করতে লাগলো।
সাদনান ছেড়ে দিলো বউ কে। আলগোছে এক হাত ধারা গাল স্পর্শ করে।
মেয়ে টা তখনো অসহায় চোখে চেয়ে
তবে স্বামী কে বাঁধা দিতে যেনো সাহস কুলিয়ে উঠতে ব্যর্থ।
কিন্তু সহ্য করতে পারলো না সাদনানের হাতের উপর হাত রাখে মিনমিন করে জানায়

-“ব্যথা পাই।”

-“আর একটু সহ্য করো সোনা। বাসায় গিয়ে আদর দেবো।”

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৮

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“বাবা আজ শফিক চাচার সাথে কথা বলে। এই সাপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে। আমি আমার বউ আর শশুর বাড়ি রাখতে চাই না।”

ছেলের কথায় আজ্জম
চোরা চোখে চাই ছেলের পানে।

-“কিন্তু শফিক তো বলেছিল প্রিয়তার আঠ,,,,

-“আমি আমার বউ চাই এই সাপ্তাহের ভিতর। বিয়ের পরও আর কতো দিন বউ ছাড়া থাকবো। আর বয়স সেটা সময় হলে আমি রেজিস্ট্রার করে নিবো।”

বাবা কে বলতে না দিয়ে বলে উঠলো সাদনান।
ছেলের এমন কথায় আজ্জম তাজ্জব বনে গেলো।
ছেলে নির্লজ্জ জানে।
কিন্তু এতো টা বেহায়া পানা ? মোটেও কাম্য নয়। মা-বোনের সামনি কি সব বলছে ছি:।

সারা তাদের থেকে একটু দূরে সোফায় বসে গেমস খেলছে। সালেহা বেগম ভাবলেশহীন যেনো এসব কথায় ওনার মোটেও কিছু আসে যায় না। ছেলে বড় হয়েছে। মেয়েরও বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তাহলে এখন বউ নিয়ে এলেই হয়।এতো পেঁচাল ক্যান পাড়ছে স্বামী সেটাই বুঝতে পারছে না সালেহা বেগম।

-“আমি বলছিলাম কি। আপনি না হয় শফিক ভাইজান এর সঙ্গে একবা কথা টা পেরে দেখেন।আমার মনে হয় না তিনি দ্বিধা মত করবে।”

আজ্জম ছেলে কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু স্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে।
তবে তিনি আরো একবার কিছু বলে পাতাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি হয়তো ভাবেইনি এর পর ওনার নির্লজ্জ ছেলে কি বলতে পারে।

-“আমি বলি কি। প্রিয়তা মা তো অনেক ছোট। আর কটা দিন,,,

-“তুমি যখন মা কে বিয়ে করেছিলে তখন মা-র বয়স ষোলো বছর ছিল। আর আমার বউ তবুও আঠারো হতে আর মাস খানিক বাকি। ”

এবারও তিনি কথা পুরো টা সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হলেন।
ছেলের এমন কথায় আজ্জম বউয়ের দিকে চোখ বড় বড় করে চাইলো
এভাবে তাকানোর একটাই অর্থ আর সে টা হলো “এই নির্লজ্জ ছেলে এসব কোথা থেকে জেনেছে। ”

-“মা-র দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন দাদু আমাকে এসব বলেছিল। ”

-“আচ্ছা। আমি কাল শফিকের সাথে কথা বলবো।”

বলেই সোফা ছেড়ে উঠে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরলো। আজ্জম বেশি ঘাঁটতে চাইছেন না।আর
এখানে থেকে এই ছেলের এমন নির্লজ্জ মার্কা কথা বার্তা শুনার কোনো ইচ্ছে নেই।
এই ছেলের সঙ্গে কথা বলে নিজের সম্মানের রফাদফা করা চেয়ে। কক্ষে গিয়ে বসে বই পড়া ভালো।

—————————

সে দিন বিকেলে রাহান আর সারার আংটি বদল হয়ে ছিল। সারা তো এতো টা ঝটকা খেয়েছিল বেচারি। কিছুই বুঝতে পারছিল না। তবে ভাইকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছে মেয়েটা।
আজ্জম মির্জা বলেছে সারার ইন্টার পাস কর বার পর বিয়ে হবে। এর আগে তিনি মেয়ে কে দিবে না।
রাহানের বাবা -মা সবাই মেনে নিয়েছে।
সে দিন সন্ধা সবাই চলে গিয়ে ছিল।
শফিক সওদাগর নিজে এসে ছিল আংটি পড়াবার মিনিট দশেক আগে। আংটি পড়ানো শেষ বোন আর মেয়ে কে নিয়ে রাহানরা যাবার পর পর চল গিয়েছে।
সাদনানের বাবা মা অবশ্য বলে ছিলো।
রাত টা যেনো থেকে যায়। কিন্তু শফিক রাজি হয় নি।

তাই কেউ বেশি জোর করে নি।
কয় দিন পর তো চলেই আসবে সারা জীবনের জন্য।
এখন না হয় এ সময় টা বাবার সঙ্গী হোক।
শফিক সওদাগর এই মেয়ে বেশ আদুরে।
স্ত্রী মা-রা যাবার পর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করে নি। অনেক ভালোবাসতো স্ত্রী কে। আর সেই স্ত্রী শেষ চিহ্ন কে তিনি কি করে অবহেলা করতে পারেন। তাই তো জীবন টা একা একা কাটিয়ে দিলেন।

————————————

প্রিয়তার ছোট্ট মোটো ফোনটা বাজাচ্ছে। অবশ্য ছোট্ট বলার একটা কারন আছে। এটা দিয়ে শুধু ফোনে কথা বলা যায় আর একটা সাপের গেমস আছে।
এটা দিতেও সুফিয়া রাজি ছিল না।
নিজের মেয়ে কেও তিনি কোনো ফোন দেয়নি প্রিয়তার সমান বয়সে।
মাইশাকে ফোন দিয়েছিল মাইশা ইন্টার পাস করে অনার্স এ ভর্তি হওয়ার পর।
প্রিয়তাকে দিতে চাই ছিল না কিন্তু শফিক ছোট একটা দিয়েছে।
সুফিয়া তাই কিছু বলে নি।যেখানে বাবা হয়ে নিজে ওনার মেয়ে কে ফোন দিচ্ছে। সেখানে ফুফি হয়ে ওনার কিছু বলা সাজে না।

-“এতো খন কোথায় ছিলেন? ”

কণ্ঠে চাপা ধমক।
বেচারি প্রিয়তা বেশ ভয় পেলো।তবে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি টা সে টা টের পেতে দিলো না।

-“ওয়াশ রুমে রাতের পোষাক পড় ছিলাম। ”

মিনমিন করে জানায়

-“বেলকনির দরজা টা খুলে দিন।”

আদেশ করলো? হয়তো কিন্তু এতো রাতে বেলকনির দরজা ক্যান খুলেবে? মেয়ে টার ছোট্ট মস্তিস্ক সেই প্রশ্নের উত্তর টা তৈরি করতে ব্যর্থ।

-“কি হলো তারাতাড়ি করুন। আর কতখন এভাবে ঝুলে থাকবে।? ”

কণ্ঠে অসহায়ত্বের ছোঁয়া।
পর পর আবারও শুধালো

-“সোনা আমার হাত ব্যাথা করছে।

এবার কণ্ঠে বেশ করুন।

প্রিয়তা এ-তোখন যেনো কিছু ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না।
কিন্তু এবার যেনো “সোনা আমার হাত ব্যাথা করছে” কথা টা পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।
ফোন তড়িঘড়ি করে বিছানা ছুড়ে ফেলে।
হন্তদন্ত হয়ে বেলকনির দরজা হাতল হাতরে দরজা খুলে।
প্রিয়তার বেলকনিতে বেশি জায়গায় নেই আবার সাথে রয়েছে কিছু ফুল গাছ। সেই সাথে আছে ছোট একটা দোলনা। দুজন মানুষ দাঁড়াতে বেশ কসরত করতে হবে।
প্রিয়তা দরজা খুলে দক্ষিণ সাইডে এগিয়ে এলো। সাদনান লোহার রেলিং ধরে ঝুলে আছে ফুলের টপ গুলোর জন্য উপর উঠতে পারছে না।

প্রিয়তা জলদি করে ফুলের টপ গুলো নিচে সাইডে রাখে।
এর মধ্যে সাদনান উঠে এসছে।
ফুলের টপ রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বেচারী শক্ত পোক্ত চওড়া একটা বুকে ধাক্কা খেলো। ছোট্ট ডান হাত ধারা নাক ধরে আর্ত -না করে উঠে

-“আহ,,।”

-“সরি সরি সোনা। বেশি লেগেছে? ”

নিজের দানবী হাত জোড়া মেয়ে টার বাহুতে রেখে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে সাদনান।

তার পর হঠাৎ মেয়ে টার দিকে নজর দিতেই তড়িঘড়ি করে জড়িয়ে ধরে।

অতঃপর দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বলে

-“তুই যা রাহান। ”

রাহান নিচে মই ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। রাহানের ভদ্র ভাবে জানায়

-“আচ্ছা ভাই।”

তার পর আর কোনো সারা পাওয়া গেলো না।

প্রিয়তা চুপটি করে আছে।
কোনো সারা শব্দ নাই শুধু দুটি মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ বাদে।

মিনিট দশেকের বেশী সময় হয়তো এভাবে ছিল তারা।

-“এতো রাতে আপনি এখান দিয়ে ক্যান আসতে গেলেন?
মেইন দরজা দিয়ে আসলেই হতো। এতো কষ্ট হতো না।”

-“কি বলে আসতাম?যে আমার বউ এই বাড়িতে তাই আমিও এ বাড়িতে থাকবো?”

-“তো যা সত্যি তা-ই তো বলবেন,,,,

সাদনানের কথা প্রিয়তা মনোযোগ দিয়ে না শুনেই বলেতে নিয়ে আবারও থেমে বলে

-“আচ্ছা থাক কাউকে বলতে হবে না।
আমি এখন থেকে রোজ বেলকনির দরজা মেলে রাখবো।”

সাদনান আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। পারলে হয়তো নিজের মাঝে নিয়ে নিতো।

তার পর জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থা সাদনান মেয়ে টাকে নিয়ে আস্তে আস্তে রুমের দিকে এগোতে এগোতে বলে

-“সে সব আমি পরে দেখে নিবো। কিন্তু আপনি তার আগে এটা বলুন গায়ে ওড়না কোথায়?”

ততক্ষণে রুমে এসে প্রিয়তা কে বিছানায় ছুড়ে ফেলবার মতো করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।

চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন করে।
যদি সাদনান আর রাহান থাকতে তবে না হয় একটা কথা ছিল।
কিন্তু রাহানের সঙ্গে ওর এক খালা তো ভাইও ছিল। রাহান আর সারার আংটি বদলের দিন এসেছিল। সে দিন প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ছিলো সাদনান দেখেছিল।কিন্তু কিছু বলে নি। এবার বলবে কাল এক্কেবারে ভালো করে বুঝিয়ে দিবে। মির্জা সাদনান শাহরিয়ার জিনিসের দিকে নজর দিলে তার ফল কি।
তখন প্রিয়তা যখন ফুলের টপ গুলো নিচে উবু হয়ে রাখছিল তখন
ওই ছেলেটা লোহার রেলিং হালকা হালকা ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
যদিও এতো দূর থেকে স্পষ্ট নয়। আবার রাত তবুও আশে পাশে থেকে আসা আলো ভালোই ছিল।
তাই তো তখন ওভাবে হুট করে জড়িয়ে নিয়ে ছিলো।

প্রিয়তা বেচারি একটু বাদে বাদে ফুফিয়ে ফুফিয়ে উঠছে।
মিনিট পাঁচের মতো সময় নিরবতায় অতি বাহিত হলো।
সাদনান এখন চুপ।
প্রিয়তা একটা সর্ট ফতুয়া, বিভিন্ন প্রাণীর ছবি আঁকা ঢোলা ঢালি একটা প্লাজু।
মেয়ে টার কি দোষ সাদনান তখন তাড়া দেওয়াতেই তো ওড়না নিতে ভুলে ছিলো।
আর এখন নিজেই বকা বকি করছে। অভিমানে ঘিরে ধরলো ছোট্ট মন টা।
তবে নিজে এখন অভিমান করলে চলবে না।
এই রাগী বেডার রাগ ভাংতে হবে।

সাদনান তখন থেকে আলমারিতে হেলান দিয়ে ফোনে কিছু করছে। সত্যি কি কিছু করছে? নাকি রাগ দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে? হয়তো।
প্রিয়তা উঠে দাঁড়াল।
পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো স্বামী নামক ব্যাক্তি টার নিকট।
সাদনান টের পেয়েছে। কিন্তু মাথা এখনো ফোনের দিকে ঝুঁকে রেখেছে।

প্রিয়তা সামনি গিয়ে দাঁড়ায় বেশ ভয় পাচ্ছে মেয়ে টা।
পাবারই কথা একটু আগে যা খেল দেখেছে।

-“আর কখনো এমন হবে না। সরি। ”

প্রিয়তা কথা শেষ করে সাদনানের পানে চাইলো।
সাদনান ফোন টা ট্রাউজারের পকেটে রেখে দিয়েছে।

প্রিয়তাও সুযোগ বুঝে আলতো করে সাদনানের বুকে মাথা রেখে দিলো।
সাদনান নড়াচড়া করলো না।আগের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে।

-“প্লিজ কিছু বলুন। ”

প্রিয়তা কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা হয়ে এসেছে আবারও।
তবে সাদনান তা হতে দিলো না এর আগেই ঝট করে প্রিয়তার মুখ খানা দু হাতের তালুতে নিয়ে নিজের অধর জোড়া মেয়েটার অধরে চেপে ধরে গাঢ় চুম্বনে লিপ্ত হলো।
প্রিয়তা বেচারি শাস বন্ধ হয়ে এলো বোধহয়।
পা-হাত ছুঁড়া ছুঁড়ি করতে লাগলো।

সাদনান ছাড়লো।

-‘সোনা আর দু মিনিট। প্লিজ চুপ করে থাকো।”

কথা সমাপ্ত করে আবারও মুখে পুড়ে নিলো মেয়েটার অধর।
ছোট্ট দেহখান আরও কিছু টা কাছে টানলো।

প্রিয়তা আর হাত পা ছুঁড়ছে না।
কিন্তু ওর মনো হলো আজকের চুম্বন টা বেশ কঠিন।
এর আগে তো দু, তিন বার করেছে। কিন্তু আজকের টা অন্য রকম শাস নেবার সময়ও পাচ্ছে না।

মিনিট দুই এর মধ্যেই সাদনান প্রিয়তা কে ছাড়ে।
একটু ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে হাঁটা দিলো বিছানার দিকে।
শুয়ে দিয়ে লাইট অফ করে।
নিজেও এসে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে জানায়

-“আপনি শুধু আমার। আপনার সব কিছুর উপর শুধু আমার অধিকার। খারাপ, ভালো এভরিথিং। আশা করি আমার জন্য হলে নিজেকে সেভ করে রাখবেন।”

#চলবে……

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৭

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

আজ প্রিয়তাদের শেষ পরীক্ষা। সাদনান বউ আর বোন কে নিয়ে যাবে। চার দিনের মতো ঢাকা ছিল। প্রিয়তার দুটা পরীক্ষা অব্দি বোন বউকে কলেজ নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে যেতো। পরীক্ষা শেষ রাহান ওদের বাসায় পৌঁছে দিতো।
আর সাদনান প্রতি দিন ঠিক আবার রাতে বাড়ি চলে আসতো।
কিন্তু তৃতীয় পরীক্ষার দিন হঠাৎ সাদনানের একটা জরুরি ডিলের জন্য চট্টগ্রাম যেতে হ’য়ে ছিল।
ওখানে তিন দিন থেকে কাল ঢাকা থেকে এক্কেবারে শশুর বাড়ি চলে এসছিল।
উপর উপর তিন টা পরীক্ষা থাকায় আজ প্রিয়তার পরীক্ষা শেষ হতে চলল।

———————

সকাল নয় টার বেশি সময় বাজে এখন। প্রিয়তা রেডি হয়ে নিয়েছে।
শফিক সওদাগর হোটেল চলে গিয়েছে সকালের দিকে।
বাড়িতে কেউ নেই। মফিজ ঢাকা গিয়েছে কিছু দরকার আছে ওনার সেই জন্য। সুফিয়া বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে থেকে প্রিয়তা বেড়িয়ে এলো।
সাদনান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন কিছু করছে।
প্রিয়তা কে দেখে ফোন পকেটে রেখে গাড়ির দরজা খুলে দিলো।প্রিয়তা মুচকি হাসলো। এখন সিটে বসতে দিচ্ছে গাড়ি স্টাট করার পর কি হয় এখন সেটা দেখা যাক।
প্রিয়তা বসে যেতে সাদনানও ঘুরে গিয়ে ডাইভিং সিটে বসে পড়লো।
মিনিটের মধ্যে গাড়ি স্টাট করে দিয়ে মেয়েটাকে এক টানে
নিজের কোলের উপর নিয়ে এলো।মেয়ে টা চমকালো না হকচকিয়ে উঠলো না।বরং মুচকি হাসলো। এটা আজ প্রথম নয়।
গত দিন গুলোর পরীক্ষায় সময় যখন সাদনান ছিল তখন এমন করছে। প্রথম দিন অবশ্য মেয়ে টা বেশ ইতস্তত বোধ করছিলো।সাথে লজ্জা। তবে আস্তে আস্তে এখন দুটোর কোনো টাই করে না।
প্রিয়তার এসব ভাবনার মাঝে সাদনান ওকে ওর সিটে বসিয়ে দিলো। গাড়ি টা ততক্ষণে থামিয়ে নিয়েছে। সারা দাঁড়িয়ে।
সারা উঠতেই আবার গাড়ি স্টাট করলো।
তার টুকটাক কথা বলতে বলতে ওরা কলেজ পৌঁছে গেলো।
গাড়ি থামাতেই প্রিয়তা আর সারা দুজনেই নেমে পড়ল

-“মাথা ঠান্ডা রেখে সব প্রশ্নের উত্তর করবে। ঠিক আছে? ”
গাড়ি থেকে নেমে সার্ট এর হাতা বাজ করে কনুইয় পযন্ত নিতে নিতে বলল সাদনান।

-“আচ্ছা। ”
সারা বলে।

কিন্তু প্রিয়তা কিছু বলছে না। বলবে কি সে তো পাশের মেয়ে গুলোর দিকে ছলছল চোখে চেয়ে।
চেয়ে থাকবে না? ওরা যে তার সুদর্শন স্বামীর দিকে তাকিয়ে সবাই চোখ দিয়ে গিলছে। ওরা ক্যান ওনার দিকে তাকাবে? ওনি ক্যান এতো সুন্দর? কে বলেছ ওনাকে এতো সুন্দর হতে?

সাদনান প্রিয়তা কে কিছু বলতে না দেখে মেয়ে টার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়।
সাদনান দেখলো কত গুলো মেয়ে দাঁড়িয়ে।
সাদনান এর বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ করতে মন চাইলো না।
কারণ এটা নতুন কিছু নয়।এটা ওর সাথে রোজ হয়।

সাদনান আস্তে করে হেঁটে গিয়ে প্রিয়তার সামনে দাঁড়ায়।
ততক্ষণে বেচারি প্রিয়তা কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা।

সাদনান আলতো করে নিজের দানবী হাত জোড়া মেয়েটার গালে রাখল।
নিজের সিগারেটে পোড়া গোলাপি কালচে অধর জোড়া ছুঁয়ে দিল প্রিয়তার কপালে।
এসব দেখে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে গুলোর চোখ বড় বড় করে তাকায়।তার পর সব গুলো আস্তে আস্তে সেখান থেকে কেটে পরে।
সাদনান অধর জোড়া ছুঁয়ে দিতেই মেয়েটা পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করতে টুপ করে ডান চোখ হতে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।

-” শুনো মেয়ে, তুমি আমার অনেক শখের। আমি শুধু তোমার আর তুমি শুধু আমার হয়ে থেকে যেয়েও। ( বুকের পাশে হাত টা রেখে) আমরা এইখানের প্রথম নারী এবং শেষ নারী হয়ে তুমিই থাকবে মেয়ে।”

প্রিয়তা কান্না চোখে প্রশান্তির হাসি হাসলো। এই লোকটা ওকে ভালোবাসে আর ও কি সব ভাবছিল।

কথা টা বলেই সাদনান বোন কে কিছু ইশারা করলো।
সারা এগিয়ে এসে প্রিয়তার হাত ধরে দু’জন গেইট দিয়ে কলেজের ভিতর চলে গেলো।
প্রিয়তা যেনো সাদনানের বলা কথা গুলো এখনো কানে বাজছে।
প্রিয়তা বেশ খুশি লাগছে। মন টাও সাদনানের কথায় ভালো হয়েছে। তাই বেশি কিছু না ভেবে মন খারাপ না করে পরীক্ষার হলে চলে গেলো সারার সঙ্গে।

সাদনান গাড়িতে বসে কাউকে কল দিলো।
এক বার বাজার সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ হলো

-“হ্যাঁ, বাবা বাড়িতেই থাকবে আজ। তুই আন্টি-আংকেল নিয়ে বেরিয়ে পর। আমি সময় মতো পৌঁছে যাবে।”
ওপাশের ব্যাক্তি টাকে কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান ফোনটা কেটে দিলো।
তার পর এক মিনিট সময় ব্যায় না করেই গাড়ি টা স্টাট দিয়ে ঘুরিয়ে নিজ বাড়ির দিকে সাই সাই করে চলে গেলো।

———————–

-“ভাই -ভাবি আপনারা চাইলে আমরা আজ আংটি টা পরিয়ে যেতে চাই।”

রাহানের বাবার কথায় সালেহা বেগম কিছু বলবে তার আগেই আজ্জম মির্জা বলল

-“আমি চাইছিলাম কি আমার আম্মা আসবার পর ওনার সঙ্গে কথা বলে না হয় আপনাদের জানাই।
ওনার সঙ্গে কথা বলে আমি সন্ধা আপনাদের খবর দিয়ে দেবো?”
সাদনান যেনো তার বাবার কথায় বেশ বিরক্ত হলো। ওতো জানে ওর বোন রাজি। তাহলে বাবা ক্যান আবার সময় চাইছে? হুম মেয়ে রাজি কিন্তু তার বাবা তো আর জানে না।বিরক্ত হওয়া যাবে না। সামলাতে হবে।
রাহান অসহায় চোখে চাইলো সাদনানের পানে। সাদনান চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করলো।

-“বাবা আমার মনে হয় না বনু তোমার উপর দিয়ে কিছু বলবে।”

ছেলের এমন কথায় আজ্জম মির্জা কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। ছেলে যা বলছে তা ঠিক
কিন্তু তবু্ও একটা “কিন্তু” থেকেই যাচ্ছে।
মেয়ের বাবা তো আবার মেয়ের বয়স কম।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি বললেন

-“এখন বারোটা বাজে। পরীক্ষা এক টার মধ্যেই শেষ। আপনারা অপেক্ষা করুন। আমার আম্মা আসলে না হয় ওর সাথে কথা বলে নিবো।”

-“আচ্ছা ভাইজান।”
আজ্জম মির্জার কথায় রফিক আহমেদ বললেন।

রাহান বেশ কিছু কটু কথা মনে মনে আজ্জম মির্জা কে বলেও নিলেন। বেটা যে ভয় পাচ্ছে। যদি মেয়ে রাজি না হয়? কিন্তু ওনি তো আর জানে না ওনার মেয়ে যে এই ছেলে কে ভালোবাসে।যদি পাত্র কে জানতে পারে তবে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে যাবে বিয়ে করতে। এসব ভেবে রাহান মনে মনে হাসলো।

আসলে আজ্জম আর সালেহা বেগম রাহান আর সারার বিষয় কিছু জানে না। রাহানের বাবা মা জানে তবে সাদনান বলেছে রাহান আর সারা যে আগে থেকে সম্পর্ক আছে সে টা যেনো না বলে।রাহানও ওর বাবা মাকে সুন্দর করে এই বিষয়ে প্রেকটিস করিয়ে এনেছে। সাধারণ ভাবে যেনো কথা বলে। মানি তাদের মেয়ে ভালো লেগেছে তাই প্রস্তাব এনেছে।

——————–

-“আচ্ছা আমি ক্যান তোর সাথে তোদের বাড়িতে যাচ্ছি? ”

-“বইন থুক্কু ভাবি আপনি যেখানে আমিও সেই খানে।তো আমি কি করে জানবো? আপনি বরং আপনার জামাইরে কাছে জিজ্ঞেস করেন।”

-“না মানি আমি সে রকম কিছু বলতে চাইনি। কিছু কি হয়েছে? মানে তুই কিছু জানিস? ”

-“না। বাড়ির ভিতরে চল সব জানা জাব,,,,

-“ফুফি?”
সারাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো প্রিয়তা। ওরা পরীক্ষা শেষ সাদনান ওদের আনতে গিয়েছে। কিন্তু প্রিয়তাকেও আজ মির্জা বাড়ি নিয়ে এসছে সে জন্যই দুজনেই বেশ চিন্তা আছে।কিন্তু সুফিয়া বেগম কে দেখে প্রিয়তা বেশ অবাক হয়েছে।

-“তোরা এসেছিস?যা ফ্রেশ হয়ে নে। প্রিয়তা তুই ফুফির সাথে আয়।”
বলেই তিনি আগে আগে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু প্রিয়তা পা বাড়াবে তার আগেই সাদনানের মা রান্না ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে কফি মগ হাতে ছুটে এলো।

-“মা তুই এটা নিয়ে সাদনান কে দিয়ে আয়।আর তুইও ওখানেই ফ্রেশ হয়ে নিস।”
কথা টা বলেই তিনি মগ টা প্রিয়তার হাতে ধরিয়ে দিলো।

-“আর তুমি এসো আপা আমার সঙ্গে। কত কাজ বাকি।?

বলতে বলতে সুফিয়া বেগম কে নিয়ে চলে গেলো।

সারা এতো সব কথার মাঝে বেচারি নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছে।
কিন্তু সেটাও হলো না গেস্ট রুম থেকে রাহানের বাবা মাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে। সারার মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন আর সে টা হলো “ওনারা আমাদের বাড়িতে কি করছে?”
হঠাৎ সারার বাবা এসে বলল
-” আম্মা আপনি ফ্রেশ হয়ে আমার ঘরে আসবেন একবার?”

-“আচ্ছা বাবা।”
বলেই সারা উপরে নিজের কক্ষে চলে গেলো।
আজ্জম প্রিয়তার সাথে কুশল বিনিময় করে। তার পর প্রিয়তা উপরে সাদনানের কক্ষের দিকে আগাতে লাগলো।

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৬

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা

সময় আর নদীর স্রোত কেউই বেঁধে রাখতে পারে না।
সময় চলমান এটা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না।এটা কারোর পরোয়া করে না।এটা এটার গতি বিধি সব সময় এক থাকে। বরং আমাদের এটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বছর, মাস, সাপ্তাহ,দিন ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড সব সময় মানুষ এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে।

আয়নরা সবাই ঢাকা শিফট করেছে। মাইশাকে ঢাকা শিফট করবার সাপ্তাহ খানিক বাঁধে নিয়ে গিয়েছে।
আয়না রাহাত,ইনিয়া সবাই লন্ডন গিয়েছে মাস হতে চললো। সময় তার নিজ কাঁটায় ঠিক একই ভাবে চলতে থাকে। শুধু সময় আমাদের মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দেয়।
ঠিক তেমন অপেক্ষা করতে করতে এখন প্রিয়তার, সারা পরীক্ষা সময়ও হয়ে গেলো। কাল থেকে ওদের পরীক্ষা শুরু। সাদনান ঢাকা থেকে আজ সন্ধা ফিরেছে।গিয়েছে অবশ্য সাপ্তাহ এখনো হয়নি। আজ্জম মির্জা ছেলে কে বলেছিল “এই সাপ্তাহ যেনো ঢাকা থাকে একটা জরুরি মিটিং আছে।” সাদনান এক কথা জানিয়ে দিয়ে ছিল “আমি আমার বউ কে ছাড়া থাকতে পাড়বো না । দরকার পরলে প্রতি দিন সে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসে অফিস সামলাবে।”
” কিন্তু সে তার বউ কে ছাড়া থাকতে পারে না। ”
ছেলের এমন বেহায়া কথা বার্তা শুনে আজ্জম কান হতে ফোন নামিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু সালেহা বেগম ঠিক তার ছেলে কে সাই দিয়ে বলেছিল “আব্বা আপনার যা ভালো লাগে তাই করেন।”
ব্যাস আর কি তিনি আর কিছু বলবার মতো সাহস করেনি।কারণ বউ তার এক কথার মানুষ। আর ছেলে?সে তো থাক এই নির্লজ্জ ছেলের কথা না হয় নাই বা ভাবলেন।

————————-

রাত এগারো টা বেশি সময় বাজে এখন। খাবার সবাই দশটার দিকে খেয়ে নিয়েছে। তার পর ঘরে এসে প্রিয়তা বই নি বসেছে আর সাদনান লেপ্টপ নিয়ে বিছানায় বসে কিছু করছে?উঁহু, সাদনান তো বিছানায় বসে ওর ছোট্ট বউ টার পানে চেয়ে। কি সুন্দর করে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চেয়ারে বসে পড়ছে মেয়ে টা। এটা সাদনানের কাছে বেশ লাগছে। এই যে এখন মন চাইছে ঠুস ঠাস কটা চুমু খেয়ে নিতে।তবে তা এখন করা যাবে না দমন করতে হবে। কারণ এসব করলে তার বউয়ের পড়ায় সমস্যা হবে। আর পড়ায় সমস্যা হলে যে ফেল করবে।আর ফেল করলে যে তার শশুড় মশায় তাকে তার বউ দিবে না।

হাঠাৎ করে সাদনানের মনে হলো কাল তো পরীক্ষা। আর পরীক্ষার আগের দিন বেশি রাত জাগতে নেই।
সাদনান কোলের উপর থাকা লেপ্টপ সহ বালিশ সাইডে রেখে বিছানা হতে নেমে দাঁড়াল।

-“এখন আর পড়তে হবে না সোনা। চলো ঘুমুতে হবে।”
বেশ আদুরে কন্ঠে বলল

প্রিয়তা পড়া বাদ দিয়ে চাইলো তার একান্ত নিজের ব্যাক্তি টার পানে।

-“এখনো সব রিভিশন দেওয়া শেষ হয়নি। ”
আফসোস সুরে বলল প্রিয়তা।

সাদনান তার বউকে আচমকাই পাঁজা কোলে তোলে নিলো।

প্রিয়তা চমকে উঠলো। তবে নিজেকে সামলে মুচকি হেসে ছোট্ট ছোট্ট হাত জোড়া দিয়ে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরলো। তার পর কেমন আদুরে বাচ্চার মতো নাক গসে নিলো তার ব্যাক্তি গত পুরষ টার বুকে।সাদনান চোখে হাসলো।এটা আজ নতুন নয়। যে দিন প্রথম মেয়ে টাকে কোলে নিয়েছিল শুধু সে দিন বাদ গিয়েছে। আর নয়তো এর পর যতো বার কোলে নিয়েছে ঠিক তত বারই মেয়ে টা এমন কাজ করে সাদনানের বেশ লাগে ওর এই ছোট্ট বিষয় টা। ছোট্ট ক্যান হবে?একদম ছোট্ট নয় ভালোবাসার মানুষ গুলোর ভালেবাসা কখনো ছোট্ট হয় না। কোনো কিছু খারাপ বা বিরক্ত লাগে না।

প্রিয়তাকে বিছানায় শুয়ে দিতে দিতে সাদনান বলল
-“এখন আর কিছু পড়তে হবে না। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে বাকি টা কাল সকালে শেষ করে নিও বউ।”

বলতে বলতে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো।
তার পর নিজে শুয়ে প্রিয়তা কে টেনে বুকের উপর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
-“ঘুমি যাও সব ঠিক হবে।”

প্রিয়তা আলতো করে নিজের অধর জোড়া সাদনানের বুকে ছুঁয়ে দিল।
তার আবারও জড়িয়ে ধরে নিজেও প্রশান্তির হাসি হাসলো।

এই সুদর্শন পুরুষ টা ওর নিজের। ভাবতেই বেচারির এই ছোট্ট মন টা হাজার রংয়ের প্রজাপতি উড়ু উড়ি করে যায়।

————————————

-“শোনো একদম তাড়াহুড়ো করবে না সারু। মন দিয়ে প্রশ্নটা পড়ে তার পর ঠান্ডা মাথায় লেখা শুরু করবে। বুঝতে পেরেছো?”

ফোনের ওপাশে থাকা সারা শব্দহীন হাসলো। যেনো সে রাহান নামক প্রেমিক পুরষটির এমন কথায় বেশ মজা পাচ্ছে।অবশ্য মজা পাবারই কথা রাহান এ নিয়ে এই একটা কথাই না হলেও আট থেকে দশবার তো বলে ফেলেছে।

-“আচ্ছা আপনি এই একটা কথা আর কবার বলবেন? না মানি সেই কখন থেকে এটাই বলে যাচ্ছেন। আমি কি না ঘুমিয়ে আপনার এই একটা কথা শুনার জন্য রাত বারোটা অব্দি জেগে আছি?”
সারা কখনো রেগে কথা বলে না এমনকি কারোর সাথে রাগ করে বেশিখন থাকতেও পাড়ে না মেয়ে টা।
এই যে এতোখন অনেক বার রাহান এই কথা টা “একদম তাড়াহুড়ো করবে না” বলেই যাচ্ছে। কিন্তু সারা একটু বিরক্ত হচ্ছে না। বরং কতো সুন্দর মস্করা করছে এই মধ্যে রাতে।

-“তুমি কি মজা করছো?”
ভ্রুু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রাহান।

-“একদম না।”
বেশ শান্ত কন্ঠে বলল সারা

-“আমি জানি তুমি আমার কথা গুলো মজা মনে করে উড়িয়ে দিচ্ছো সারা। কিন্তু এমনটা করলে কিন্তু পরে সব দোষ আমার হবে জান।”
রাহানের কথায় ভ্রুু জোড়া কুঁচকে নিলো সারা।

-“আপনার দোষ ক্যান হবে?”
মেয়ে টার এমন বোকা বোকা প্রশ্ন রাহানের মনে হলো এই মেয়ের কথায় এই শীতের রাতেও একবার ওর গোসল করা দরকার। কে বলবে এই মেয়ের বয়স সতেরো। কি সব অবুঝের মতো প্রশ্ন করছে। তবে রাহান নিজেকে কনট্রোল করলো।রাগ করলে চলবে না। তার ছোট প্রিয়তমা সবকিছু এখনো বুঝে না। তাকে বুঝাতে হবে।বলতে হবে তবেই না মেয়ে টা বুঝতে পারবে।

-“এখন শুধু যা যা বলবো তার উত্তর দিবে ব্যাস।আচ্ছা তুমি এখন প্রেম করছো কার সাথে?
রাহানের এমন প্রশ্নে সারা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। এটা আবার বলতে হয় না-কি? ওতো এই লোক টার সাথেই প্রেম করছে।
তবে মুখে বলল
-“আপনার সাথে। ”

-“রাত বিরেতে রাত জেগে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলো?”
-“আপনার সঙ্গে। ”
-“আর যদি পরীক্ষায় ফেল করো তো দোষ টাও আমার হবে জান।বুঝতে পেড়েছো?”
রাহানের এমন যুক্তির কথায় সারা বেশ অবাক হলো। শুধু অবাক নয়।অবাকের চরম পর্যায়ে মেয়ে টা।

সারা মুখে হাত দিয়ে বলল
-“সত্যি এ তো আমি একবারও ভেবে দেখিনি।এই আপনার মাথায় এতো বৃদ্ধি কোথা থেকে আসে?”

-“জান এটা বৃদ্ধির প্রশ্ন নয়। এটা একটা টেনশন। ”
একটা দীর্ঘ শাস টেনে বল রাহান

-“মানে? ”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সারা। মেয়ে টা রাহানের কথা বুঝতে পারেনি।

-“তুমি যদি পরীক্ষায় ফেল করো তো সাদনান ভাই মনে করবে তুমি আমার জন্য হয়তো ঠিক মতো পড়া লেখা করোনি।আর তার পর যদি আমরা সাথে তোমার বিয়ে না দেয়?”
রাহানের এমন কথায় সারা শব্দহীন হাসলো।

-“আপনি ভুল ভাবছেন। ভাইয়া এমন নয় সে টা আপনিও খুব ভালো করে জানেন রাহান ভাই।”
দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলল।

রাহান সারার কথায় নিজ ভাইয়ের প্রতি এক বুক ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা খুঁজে পেলো।

সারার কথায় রাহানের বুক শীতল হলো। এই মেয়ে ওকে সব সময় ভরসা দেয়। ভালোবাসার মানুষটার এই একটু ভরসা, দিবে এটায় তো অনেক শক্তি জোগায় অপর মানুষ টাকে। মানুষটাকে শক্ত থাকতে সাহায্য করে।

-“আমি জানি জান। তবে তুমি সম্পূর্ণ আমার না হওয়া পযন্ত আমি শান্ত হতে পারবো না। কবে বড় হবে আমার ছোট জান টা?”
রাহানের কথায় সারা বলল
-“আর কতো বড় হতে হবে আপনি আমাকে সম্পূর্ণ পেতে হলে?”

রাহান দুষ্ট হেসে বলল

-“যতো টা বড় হলে বিয়ের পর আমাদের পরিবারকে আমি আর তুমি মিলে ক্রিকেট টিমে পরিনত করতে পারবো।”

#চলবে…….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৫

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

মাইশার নিজের রুমেই বাসর সাজিয়েছে সবাই মিলে।
মাইশাকে দশটা নাগাদ আয়না আর সারা মিলে বিয়ের সাজ চেন্জ করিয়ে একটা সিল্কি শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। হালকা করে সাজিয়ে দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে।
এখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই করছে।

মাইশা কখন থেকে বসে বিরক্তি হচ্ছে এভাবে আর কতখন বসে থাকা যায়। ভালো লাগছে না মেয়েটার।
এর মধ্যে দরজা খুলার শব্দ হলো।
কেউ ঘরে ঢুকে আস্তে করে দরজাটা লাগাচ্ছে।
মাইশার একটু নড়েচড়ে বসলো।মেয়েটার এতোখন বিরক্ত লাগলেও এখন ভয় সাথে লজ্জাও পাচ্ছে।

আয়ান ঘরে ঢুকে দরজাটা আটকে মাইশার পানে দৃষ্টি দিলো একবার।
মেয়েটা একদম গুটিয়ে বসে আছে।
আয়ান মুচকি হাসলো।
তার পর হাতের ঘড়ি সাথে আরো কিছু একটা টা সেন্টার টেবিল রাখলো।
কিছু না বলে লাগেজ থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

মাইশা এতোখনে মাথা টা নিচু করে রেখেছিল। ওয়াশরুমে দরজার খোলার শব্দের মাথা টা একটু উঁচু করে চাইলো না কেউ নেই।
তার পর মাথা হতে শাড়ীর আঁচল টা ফেলে দিলো।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস ছাড়লো।মেয়েটা নার্ভাস। ওর আজ এই সুদর্শন চিনা পরিচিত পুরুষ টা কে ভয় ক্যান লাগছে? এই অতি সুদর্শন পুরুষ টিকে তো ও ভালোবাসে।তাহলে এতো নার্ভাস ক্যান হচ্ছে? নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো মাইশা। মিনিট দশে কের বেশি সময় আয়ান বের হলো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে।
এসেই দেখলো তার বউ ঘুমটা ফেলে কি সুন্দর আরাম করে বসে কিছু ভাবছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই এখনো বুঝতে পারেনি আয়ান এসছে। বুঝতে পাড়লে এতোখনে কি করতো হয়তো নিজেও জানে না।
আয়ান বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল

-“মাথার আঁচল কই?”

মাইশা থমথমে খেয়ে উঠলো। তড়িঘড়ি করে মাথায় ঘুমটা দিলো। মেয়েটা ওকে ভালোবাসলেও বেশ সম্মান করে।সব সময় কেমন বেজা বিড়াল হয়ে থাকে। তবে চট্টগ্রামে ওই দিন কি হয়েছিল কে জানে।
কেমন লজ্জা ভয় সব ভুলে বলেই ফেলেছিল” মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখতে”। সব ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে আয়ান গম্ভীর কন্ঠে আবার শুধাল

-“ফ্রেশ হয়ে এসো। নামাজ পরতে হবে।”

-“আচ্ছা। ”
বলে তড়িঘড়ি করে বিছানা হতে নামতে গিয়ে কুঁচি তে পা বেজে আয়ানকে নিয়ে ধরাস করে দুজনেই নিচে পড়লো।
বেচারা আয়ান চোখ মুখ কুচকে নিলো।
ব্যাথা পেছে হয়তো। মাইশা তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলেই আয়ান ওর হাত ধরে আটকে নিলো।যার কারণে মেয়েটার মুখ একদম আয়ানের মুখে ছুঁই ছুঁই করলো।আয়ান পূর্ণ দৃষ্টি দিলো মেয়েটার পানে। ছোট্ট ছোট্ট কটা চুল কপালের আশেপাশে খেলা করছে। আর লম্বা লম্বা বাকি চুল গুলো কিছু পিঠে কিছু কাঁধের দু ধারে ঝুলে রয়েছে।
ভ্রুুজোড়া কুচকে রেখেছে।
চোখের নিচে হালকা কালচে দাগ। হয়তো এই কয় দিন বিয়ের জন্য ঠিক মতো ঘুমুতে পারেনি। কিন্তু তবুও আয়ানের কাছে মেয়েটাকে আজও আরো মায়াবী লাগছে। যদিও সব সময় লাগে। তবুও অন্য দিনের চাই আজ বেশী সুন্দর লাগছে। তবে কি গুরুজনেরা যে বলে বিয়ের পানি গায়ে পড়লে মেয়েদের সুন্দর্য বারে তবে কি তা সত্যি? হুম সত্যি সেটা ওর বউকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ আয়ানের নজড় পড়ল ওর বউয়ের ঠোঁট জোড়ার দিকে তবে নিজেকে কনট্রোল করে নিলো।
আলতো করে মেয়েটার কপালে নিজের রক্ষ অধর জোড়া ছুঁয়ে দিল।
ছেড়ে দিলো। মাইশা ছাড়া পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি শাড়ী সব কুঁচি খোলেছে।
তবে নিজেকে সামলে কুঁচি ধরে উঠে দাঁড়ালো না।
এক দৌড়ে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো।
আয়ানের সবটা বিষয় বুঝতে মিনিট খানিক সময় লাগলো।
পরক্ষনে বুঝতে পেরে হো, হা করে হেসে উঠলো।

-“তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে আয়।”
আয়ান কথা টা বলে নিজে গিয়ে খুঁজে জায়নামাজ বের করলো। তার পর সেটা বিছিয়ে বউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যে মাইশা ওজু করে বেরিয়ে এলে দুজন মিলে দু’রাকাআত নফল নামাজ পড়ে নিলো।
নামাজ শেষ মাইশা জায়নামাজ গুছিয়ে পিছন ফিরতেই আয়ান মাইশাকে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে নিলো। আস্তে করে হেঁটে গিয়ে আলগোছে বিছানা বসিয়ে দিলো। তার পর সেন্টার টেবিল রাখা একটা বক্স নিলো। মাইশা অবাক হয়ে বলল

-“এটা কখন এনেছেন আমি তো দেখে নি?”

-“আমি এটা অনেক আগেই কিনে রেখেছি।আর এটা আমি ঘরে ঢুকেই সেন্টার টেবিল রেখেছি ইডিয়ট। ”

পরের কথা গুলো কিছু টা চাপা সুরে বলল।মাইশা মুখ ভেংচি কাটলো। এই কথাটা একটু সুন্দর করে বললে কি এমন হতো?
আর কথা বলবে না লোক টার সাথে। ছোট্ট মনটায় অভিমান ভিড় জমিয়েছে। ততক্ষণে আয়ান বক্স টা খোলে নিয়েছে বক্স টার ভিতরে এক জোড়া দোল, একটা নোস পিন, সাথে একটা চেইন। মাইশা আর বেশি কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পাড়লো না।কারণ আয়ান মাইশার কানে হাত দিয়ে আগের দোল টা খোলে নিজে আনা বক্স হতে ছোট্ট ছোট্ট দোল জোড়া পরি দিয়েছে মেয়েটাকে। তার পর মাইশাকে বলল

-“নোস পিন টা খোল।”
মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো। খোলে নিলো।
আয়ান আলতো করে ধরে নোস পিন টা পড়িয়ে দিলো। তার পর এক জোড়া চুড়ি।
নিজে মেঝে হতে উঠে মেয়ে টার হাত টা ধরে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করালো।
তার পর বক্স থেকে চেইন টা নিয়ে আলতো করে পিঠ হতে খোলা চুল গুলো সরিয়ে নিলো। মেয়েটা হালকা কেঁপে উঠল। আয়ান মুচকি হাসলো। নিজের বলিষ্ঠ হাত ধারা দিয়ে পড়িয়ে দিলো হাতে থাকা চেইন টা।

-“এগুলো সব সময় পরে থাকবি। বুঝেছিস?”

আদেশের কণ্ঠে জানালো। মাইশা চোখ এতোখন বন্ধ ছিলো। আয়ানের এমন কড়া কণ্ঠে মেয়েটা নড়েচড়ে দাঁড়াল। মাথা টা উপর নিচ করে “আচ্ছা” বুঝালো।
আয়ান আর কাল বিলম্ব করলো না। ঝট করে আবারও কোলে তোলে নিলো।
বিছানায় নিয়ে শুয়ে দিলো নিজেও মেয়ে টার উপর আধ শুয়া হলো।

আয়ানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিক চিক করছে।মাইশা আলতো করে হাত ছোঁয়ালো।
তড়িঘড়ি করে বলল
-“আপনার মনে হয় গরম লাগছে।আমি পাখা টা ছেড়ে দিয়ে আসি? ”
পালাতে চাইলো কি? আয়ান বুঝলো না। হয়তো এখন বুঝতে চাইছে না। তবে এই মেয়েটার কাছে এলে অতি ঠান্ডায় ও ওর গরম লাগে এই যে এখন নবেম্বর মাস চলছে। হালকা হালকা শীত পরেছে। কিন্তু এই মেয়ের সন্নিকটে এসে ওর নার্ভাস লাগছে। অবশ্য সব সময় এই মেয়ের আশেপাশে থাকলে ওর কেমন নার্ভাস লাগে। আর এখন তো এতো কাছে গরম লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাইশা উঠতে চাইলো কিন্তু আয়ান তা হতে দিলো না শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

-“তুই আমার পাশে থাকলে এসিতেও আমার গরম লাগে জান।”

বলেই মাইশার ঠোঁটের কোনে আলতো করে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
মাইশা পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।

আয়ান মাইশার উপর থেকে সরে ওকে জড়িয়ে ধরে বল
-“ঘুমি পড়।”

মাইশা ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
কই বেচারি ভেবে ছিল আয়ান কিছু করবে। এই রাত টা নিয়ে সব মেয়ের সব থাকে ওর ও ছিল। কিন্তু কই এই বেডা তো কিছু করলো না। মাইশার মনে মনে বেশ কয়েকটা কটু কথাও বলে নিলো আয়ানকে।
তার পর আলতো করে আয়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠতে চাইলো তবে সে ব্যর্থ। লাইট এখনো জ্বালানো লাইট অফ না করলে ওর ঘুম হবে না। কিন্তু এই লোক তো ওকে ছাড়ছেই না। মাইশা বেশ অনেকখন মুচড়া মুচড়ি করে যখন কালান্ত হয়ে গেলো। তার পর হুট করেই একটা কান্ড ঘটালো। শক্ত পোক্ত মানবটার লোমযুক্ত বুকে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। আয়ানের বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকা বেশ সুবিধা হয়ছে।কিন্তু ও হয়তো এটাই ভাবে নি এর পর কি হতে পারে।
আয়ান মেয়েটাকে এক ঝটকায় নিচে ফেলে ওর উপর উঠে গেলো

-“এতোখন কনট্রোল করছিলাম। কিন্তু তুই? এখন আমাকে কিছু বলতে পারবি না। ”

বলেই অধর অধর মিলিয়ে দিলো। মাইশা আস্তে করে চোখ বন্ধ করতে চোখের কার্নিশ হতে দুফোঁটা জল গড়ি পড়লো।
এই চোখের জল কষ্টের নয় সুখের।
আয়ান মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে ঝরের বেগে গিয়ে লাইট অফ করে দিলো।

[এর বেশি কিছু আপনাদের লেখিকা জানে না😐।]

——————————

একটা রমনী তার প্রিয় পুরুষ টার কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছে।

-“আচ্ছা আপনি আমাকে আপনি আপনি করে ক্যান বলেন? আমি তো আপনার অনেক ছোট। ”
হঠাৎই প্রশ্ন টা করলো। উওরের জন্য কাঁধ হতে মাথা তোলে ব্যাক্তি টার মুখে পানে চাইলো।

-“ক্যান আপনার ভালো লাগে না?”
ব্যাক্তিটা মুচকি হাসলো। তবে সে পাল্টা প্রশ্ন করলো

-“ভালো লাগে। কিন্তু তুমি করে বল্লে আরো ভালো লাগতো।”
রমনীটা ঝটপট জবাব দিলো। তবে মুখটা মলিন করে।
আবারও মাথা এলিয়ে দিলো পুরুষ টার শক্ত চওড়া কাঁধ টায়।
বেশ অনেক টা সময় নিরবতায় কাটলো।

-“জান ঘরে চলো। রাত অনেক হয়েছে। ”
মেয়েটা বিস্ময় নিয়ে চাইলো।অবাক হয়ে বল
-“আপনি সত্যি। ”
অবাক হয়ে জড়িয়ে ধরলো মানব টাকে।
মানব টা মুচকি হাসলো। আস্তে করে মেয়ে টাকে ছাড়িয়ে নিলো।
ভালোবাসার পরশ একে দিলো তার প্রিয়তামার কপালে।
কণ্ঠে শীতলতা এনে শুধালো
-“আমার ছোট্ট বউ টা আবদার করে বলেছে আর সেটা কি আমি আগ্রহ করতে পারি? উঁহু, একদম নয় জান।”

কথা টা সমাপ্ত করে সাদনান প্রিয়তাকে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে বেলকনি হতে ঘরে ভিতর যেতে যেতে বল
-“অনেক রাত হয়েছে জান।কাল কলেজ যেতে হবে তো? এখন ঘুমুতে হবে বউ।”

প্রিয়তা কে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সাদনান লাইট অফ করে দিয়ে নিজেও এসে ছোট পুচকে বউ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।

#চলবে……….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৪

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“প্রিয়তা? ”
প্রিয়তা বাগানে যাচ্ছিল। শাড়ী সাদনান পড়িয়ে দিয়েছে।নিজে গোসলে গিয়েছে আর প্রিয়তাকে বলেছে অনুষ্ঠানের জায়গা যেতে সাদনান একটু পর আসবে।হঠাৎ কোনো পুরুষালী কন্ঠে মেয়েটা আকষ্মিকভাবে চমকালো হকচকিয়ে উঠলো। তার পর মনে হলো এই কণ্ঠ কোথাও শুনেছে হ্যাঁ ওর মামাতো ভাই নাদিম এর কণ্ঠ। পিছনে ফিরলো চাইলো
-“আপনি এখনো যাননি নাদিম ভাই?”
বলেই আসে পাশে দৃষ্টি বুলাল কিন্তু কেউ নেই থাকবে কি করে সবাই তো অনুষ্ঠানে বাগানে চলে গেছে মাইশাকেও একটু আগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওকে অবশ্য সারা ডেকে ছিল কিন্তু সাদনান বলেছে “তোরা যা ও রেডি হয়ে আসছে ” মেয়েটার মন খারাপ হয়েছিল। তবে সে সব পাত্তা না দিয়ে স্বামী নামক পুরুষ টার যত্ন করে শাড়ী পড়িয়ে দেওয়া উপভোগ করছিল।
সামনে দাঁড়ানো মানবটা এক দৃষ্টিতে চেয়ে সতেরো বছরের রমনীটার পানে। কি স্নিগ্ধ লাগছে। নাদিম কে কিছু বলতে না দেখে প্রিয়তা আবারও বলল
-“এই দিকে মনে হয় কেউ নেই। আমরা বাগানে যাই। ”

-“তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ”
প্রিয়তা কথাটা বলা হতে না হতেই বলল নাদিম।প্রিয়তা ভ্রুু কুঁচকাল। ক্যান যেনো ওর কাছে এই নাদিম ভাই কে আজ বেশি ভালো লাগছে না। তবে মনের ভাব প্রকাশ করলো না। ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও মুখে মুচকি হাসি রেখে বলল
-“ধন্যবাদ ভাইয়া।আর আপনাকেও সুন্দর লাগছে। ”
প্রিয়তার কথায় নাদিম মুচকি হাসলো বাম হাতটা দিয়ে মাথা পিছনের উপরি ভাগের চুল খামচে ধরলো। তার পর নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ধন্যবাদ।”
ব্যাস চলে গেলেও মেইন দরজার দিকে। নাদিম ঠিক বুঝতে পেরেছে প্রিয়তা ওর সঙ্গে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করছে। বুঝবে না যাকে ভালোবাসে তার মনের কথাই যদি না বুঝতে পাড়ে তাহলে কিসের ভালোবাসা হলো? হ্যাঁ, নাদিম এই রমনীটাকে ভালোবাসে। যখন থেকে ভালোবাসা মানি বুঝতে পেরেছে তখন থেকে। আর ভালোবাসার মানুষটার যদি অনুভূতিই না বুঝে। ভালোবাসার মানুষটার মনের কথাই যদি না বুঝে তা হলে তা ভালোবাসা নয় মোহ, আবেগ। কিন্তু নাদিম তো সত্যি ভালোবাসে সেই ছোট্ট থেকে যদিও তখন বুঝেনি তখন এটা ভালোবাসা নাকি মোহ। কিন্তু যখন বুঝতে পাড়লো ঠিক করেছিলো মেয়েটাকে বলবে। আর যখন মাইশার বিয়ের কথা শফিক বলেছিল তখন ভেবেছিলো এখানে আসার পর বলবে।কিন্তু এখানে এসে জানতে পারলো তার ভালোবাসা মানুষটা এখন অন্য কারোর অর্ধাঙ্গিনী। এসব ভাবতে ভাবতে নাদিম রাহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। এই রাহান ছেলেটা বেশ মিশুক সবার সাথে কেমন ভাব হয়ে যায়। এই যে নাফিজ নাদিম দুই ভাই কি সুন্দর রাহানের সাথে একদম বন্ধুর মতো করে কথা বার্তা বলে।যদিও তাদের বয়সটা তিনজনেরই তিন দেশ। নাদিম রাহানের চেয়ে বড় কিন্তু নাফিজ রাহানের ছোট। কিন্তু তবুও বেশ ভাব হয়েছে তিনজনের।

-“আপনি এখানে কি করছেন? আপনাকে তো আমি গার্ডেনে যেতে বলেছিলাম সারা কাছে।”
প্রিয়তা এখনো বাড়ির ভিতরে দাঁড়িয়ে। সাদনান এক্কেবারে রেডি হয়ে নিচে এসছে।কিন্তু এই মেয়েকে আরো আধঘন্টা আগে রেডি করে দিয়েছে কিন্তু এই মেয়ে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছেটা কি? প্রিয়তা এখনো সাদনানের পানে অপলক চেয়ে। আজ দুজন সেম কালার পড়েছে কলা পাতা রং এর।প্রিয়তার শাড়ী কালারেই সাদনান পাঞ্জাবি পড়েছে। দুজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।প্রিয়তা কিছু বলছে না মেয়েটার মুখ দেখে যে কেউ বলতে পারবে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার কোনো কথায় এই রমনীর কান অব্দি যায়নি।যাবে কি করে এমন সুদর্শন পুরুষ যদি সামনি রয়।আর যদি হয় সেই পুরুষ নিজের একান্ত কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষ। প্রিয়তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদনান মুচকি হাসলো। এই মেয়ে এখন সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নিশ্চয়ই। আজ কাল বড্ড বেহায়া পানা দেখায়। সাদনান আরো একটু এগুলো মেয়েটার দিকে। যেটুকুনি দূরত্ব ছিলো সেটাও পূর্ণ করলো। আলতো করে মেয়েটার ডান হাতটা ধরলো। যদি জোরে ধরলে ভেঙ্গে যায়? ব্যাথা পায়?কোনো সন্দেহ নাই হাতের যা অবস্থা। আচ্ছা সব মেয়ের হাত কি এমন হয়? না-কি ওর ছোট্ট পুচকে বউটার হাতটাই এতো তুলতুলে নরম?সাদনানের এসব আজগুবী ভাবনা চিন্তায় নিজেই বিরক্ত হলো।কি সব ভাবছে ও?কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো না আজগুবি ক্যান হবে? এই মেয়েটার সব কিছু নিয়ে ভাবতেই ভালো লাগে ওর। এসব ভেবেই সাদনান শব্দ হীন হাসার প্রচেষ্টা চালালো।তবে প্রিয়তার নজড় এড়ালো না।
-“আপনি হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর দেখায়।”
কথাটা বলে নিজেই নিজের দাঁত ধারা অধর কামরে ধরলো। ইস মনের কথা মুখে চলে এসছে।
-“বাসরটা খুব শীগগির শেষ করেতে হবে।”
বলেই সাদনান সামনের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। প্রিয়তা ভেবাচেকা খেয়ে চেয়ে রইলো সাদনানের অর্ধ মুখমন্ডলের দিকে।
ও কি বলল আর এই লোক কি বলল।কিছুই বুঝলো না বেচারি।

—————————

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দুটো ছুঁই ছুঁই করলো।বড়রা অবশ্য অনেক আগেই হলুদ ছোঁয়া দিয়ে চলে এসছে। কিন্তু অল্পবয়স্ক সবাই অনেক রাতে অব্দি হৈ-হুল্লোড় করেছে।
প্রিয়তা তো ঘুমের জন্য ওখান থেকে উঠতেই পারছিলো না। ভাগ ভালো সাদনান ওখানে ছিলো ওর এসব ভালো লাগে না। কিন্তু নিজের পুচকে বউটাকে ফেলে আসতেও পারছিলো না। কত ছেলে আছে আশেপাশের। বলা তো যায় না তার বউকে কে কখন নিয়ে যায়। সেই জনই প্রিয়তার পাশে গাপটি মেরে বসেছিল। এই নিয়ে অবশ্য সবাই কানা কানি করছিল। কিন্তু কেউ সামনে কিছু বলার সাহস পায়নি।।অনুষ্ঠান শেষ যখন সবাই যে যাঁর মতো করে চলে যাচ্ছিল তখন সাদনান তার বউকে ডাকতে গিয়ে দেখলো তার বউ তার কাঁধ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাইশা অবশ্য বলেছিল ডেকে দিতে তবে সাদনান কি মনে করে যেনো কোলে তোলে নিয়ে সারাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বসার ঘরে কে কে আছে দেখ আয়।
-“আচ্ছা। ”
বলেই সারা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
মিনিট দুই এর মাথায় ফিরে এসে বল
-“কেউ নেই। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো।”
সাদনান আর কিছু না বলে প্রিয়তাকে নিয়ে হাঁটা ধরলো।
এদিকে একজন মানব এক বুক ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো এই সুন্দরতম ভালোবাসাময় দুইটি মানুষের দিকে। আর সেটা হলো নাদিম। নাফিজ ভাইয়ের দিকে চাইলো। আলতো করে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। নাফিজ সব জানে নাদিমের এই দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক মিল। এরা কখনো কোনো দিন ঝগড়া করেছে কি না এরা নিজেরও হয়তো বলতে পারবে না।
-“ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমনটা কিন্তু নয় ভাইয়া।ভালেবাসা গোপনে সুন্দর। আর তোমার টা নাহয় গোপনেই থাক। ”
ছোট্ট ভাইয়ের কথায় মুচকি হাসলো। নাক টানলো চোখের জল আড়াল করলো।নিজেও ভাইকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো
-“হুম। ”
ছোট্ট করে জবাব দিলো
-“আমি তোমার জন্য একটা পুতুল বউ খুঁজে আনবো।”
ছোট ভাইয়ের এমন কথায় নাদিমের বুক শীতল হলো। এমন ভাই ক’জনের হয়। এতো অল্প বয়সে ক’জন পাড়ে এমন সুন্দর করে সান্তনা দিতে। এসব ভেবেই নাদিমের মুখের হাসিটা চওড়া হলো। তার ভাই সবে ক্লাস নাইনে পড়ে কে বলবে কি সুন্দর করে ভাইয়ের দুঃখ দূর করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

———————–

মিষ্টি রোদের হাতছানি চোখের উপর পরতেই রমনীটা ঘুমের মাঝেও মুখের ভঙ্গিমা পালটে নিলো। ভ্রুুজোড়া কুচকে নিয়েছে। মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ কাজে বাঁধা পড়েছে। হ্যাঁ, পড়েছেই তো এই যে এতো সুন্দর সাধের ঘুমটা নষ্ট করতে চাইছে এই খারাপ সূর্য মামা টা।।বেশ কিছু টা সময় পর মনে হলো সূর্য সোনালী বর্ণের রোদ টা ওর উপর আর পরছে না। সামনে দাঁড়িয়ে কেউ রোদ থেকে বিছানায় থাকা রমনীটাকে আড়াল করতে চাইছে। রমনীটার ভ্রু জোড়া সরল হলো। আবার ছোট্ট মিনি কম্বল টা আঁকড়ে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা বেশ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে মনে হয় আজ আর ঘুম থেকে উঠবে না। সকাল আটটা বাজে। বিয়ে বাড়ি তে কেউ এতোখন ঘুমায় এই পুরষটির হয়তো জানা ছিল না। এই ছোট্ট বউটার কাছ থেকে হয়তো এটাও জানা হয়ে গেলো। কিছু ভেবে পুরুষ টা বাকা হাসলো
-“প্রিয়তা আপনি কি উঠবেন? মাইশা চলে যাচ্ছে। ”
ব্যাস বুদ্ধি কাজে লাগলো ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলে রমনীটা।
-“কই কই?আল্লাহ আমি এতো ঘুমিয়েছি যে আপুর বিয়েটাও দেখতে পারলাম না?কয়টা বাজে?আর আপনি আমায় ডাকেননি ক্যান?”
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলে কান্না করতে লাগলো প্রিয়তা। সাদনান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। হায় আল্লাহ এই মেয়েকি সত্যি বোকা? সাদনান কিছু বলল না সেন্টার টেবিলে রাখা ঘড়িটা প্রিয়তার হাতে দিয়ে। ঘড় ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বল
-“আধঘন্টার মধ্যে রেডি হবেন। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

—————————–

বিকেল চারটের দিকে বাসায় পার্লার থেকে মেয়ে এসছে তিন জন।সব মেয়েদের সাজবার জন্য পার্লারে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ্জম বেশ করা ভাবে জানিয়েছে কেউ যেনো বাড়ির বাহিরে এক পাও না দে। তিনি বাড়িতে সব ব্যবস্তা করে দিবে। ব্যাস আর কি লাগে সব মেয়েরা অনেক খুশি হয়েছে।

এখন সন্ধা ছয়টা। মাইশাকে রেডি করে এখন বাকি সবাইকে রেডি করছে।প্রিয়তাদের বাড়িটা বেশ বড় বাগানটাও বেশ বড় সব কিছুর আয়োজন ওখানেই করা হয়েছে। একটু পর মাইশাকে নিয়ে যাবার জন্য নিচ থেকে ডাক পরলো। আয়না মাইশাকে নিয়ে গেলো।তার পর আর কি জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পা রাখার পালা। প্রথমে আয়ান তার পর মাইশার। দুজনের ছয়টি শব্দ মিলে হয়ে গেলো একে অপরের। যদি তাদের মনের মিলন অনেক আগেই হয়েছে। আজ সমাজ সামনেও সম্মানের একটা সম্পর্ক হলো।হাললা একটা জীবনে পা বাড়াল। একটা পবিত্র বন্ধে আবদ্ধ হলো।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-১৩

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“কিরে তখন তো খুব বলছিলি আসবি না। তা আমার ভাই গিয়ে কি এমন করলো যে এখন এক্কেবারে বোরকা নেকাব পড়ে চলে এলি? ”

ফিসফিস করে টিটকারির সুরে বলল সারা।প্রিয়তা আর সারা এক সঙ্গে হাঁটছিল। সবাই আগে হাঁটছে। রাহান, রাহাত, আয়না গিয়েছে হলুদের জন্য কাপড় নিতে। মাইশা ইনিয়াকে নিয়ে হাঁটছে আর মাইশার পিছনে আয়ান এর একটু পিছনে সারা প্রিয়তা। আর ওদের দুজনের পিছনে সাদনান কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটছে। হয়তো অফিসের কারোর সঙ্গে কথা বলছে। মুখের ভাবটা এমন মনে হচ্ছে সে মহা বিরক্ত। প্রিয়তা এতোখন এসব পর্যবেক্ষণ করছিল এর মধ্যে আবারও সারা হালকা করে মেয়েটার বাহুতে ধাক্কা মারলো যার মানি”কি হলো বল”

মেয়েটার ঠোঁটের কোনেও সাদনানের দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন। সাথে গলায়ও পড়েছে কিছু টা ছাপ এসব নিয়ে কি এমনি বের হওয়া যা?উঁহু, একদম নয়।এই জন্যই তো বোরকা নেকাব পড়া।কিন্তু এসব কথা কি এই মেয়েকে বলা যাবে? মোটেও নয়। এ মেয়ে যেই সব মাইশাকে বলে দিবে। তার পর দুজনে মিলে আচ্ছা মতো পঁচাবে।
প্রিয়তার এসব ভাবনার মাঝেই সাদনানের মা সারাকে ডাকলো সারা একটু সামনে চলে গেলো। সালেহা বেগমরা শাড়ীর দোকানে ঢুকেছে।আর ওনার হাতের অন্য জিনিসপত্র গুলো সারা হাতে ধরিয়েছে এই জন্য এখন সারাও তাদের সঙ্গে থাকা টা জরুরি। সাদনান পিছনে ছিলো। সারাকে সামনে এগোতে দেখে খট করে লাইনটা কেটে ফোনটা পকেটে নিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে সবার চাই একটু পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো। প্রিয়তা লজ্জা পেলো, মুচকি হাসলো।তবে হিজাবের নিচে তা চাপা পড়া।

——————————-

দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলেই এলো। সকাল থেকে সবাই কাজে ব্যস্ত। সাদনানের বাবা বিকেলের দিকে চলে এসছে। বাড়িতে মুটামুটি আত্মীয়স্বজনরা সবাই চলে এসছে। প্রিয়তার এক মামা তিনিও ঢাকা থেকে আজ সকালেই ওনার দুই ছেলে বউ নিয়ে চলে এসছে। প্রিয়তার নানা নানি নেই ওনারা অনেক আগেই গত হয়েছে। মামা নাসির উদ্দীন খাঁন বড় ছেলে নাদিম খাঁন ছোট ছেলে নাফিজ খাঁন স্ত্রী নুর নাহার নাসির। ওনারা সবাই খুব ভালো। আগে প্রায় কুমিল্লা আসতেন ওনারা। কিন্তু বোনও চলে গেলো আবার নিজেদের কর্ম জীবন সব দিক দিয়ে মাঝখানে সময়টা কিছু টা দূরত্ব বাড়িয়েছে। প্রিয়তা রেডি হবে মাইশাকে রেডি করে এসছে। এখন আর সারা ওর সাথে আসেনি। আসবে কি করে এখন তো নিজের ভাইও থাকে এই রুমে এখন কি আর যখন তখন আসা যাবে?উঁহু, চাইলেও পারবে না। তাই আয়নার সাথে আয়নার রুমে চলে গেছে। প্রিয়তা গোসল সেরে একটা কুর্তি আর প্লাজু পড়ে বেড়িয়েছে। আজ সবাই মেয়েরা হলুদ শাড়ী পরবে আর ছেলেরা কলা পাতা রং এর পাঞ্জাবী আর হলুদ কুর্তি। কিন্তু প্রিয়তা শাড়ী পরতে পাড়ে না। এখন কি করবে। সারা নিশ্চয়ই এখন সাজুগুজু করতে বসে গেছে। আর কার কাছে যাবে সবাইতো কাজে ব্যস্ত। এসব ভেবেই প্রিয়তার মনটা খারাপ হলো।এখন কি করবে সে? সাদনান বিছানায় বসে লেপ্টে কিছু করছে। আর আঁড়চোখে তার ছোট্ট বউটার মুখ ভঙ্গিমা লক্ষ্য করছে কখন থেকে আয়নার সামনে বসে মেয়েটা এখনো রেডি হবার কোনো নামগন্ধও নেই। কি হয়েছে তার ছোট্ট পুচকে বউটার? হঠাৎ সাদনান কিছু মনে পড়ার মতো করে প্রশ্ন করলো
-“ওই দিন যে শাড়ী গুলো এনেছি?”

প্রিয়তা আলতো করে মাথা ঘুরিয়ে সাদনানের পানে চাইলো
-“হুম?”
নিজেও প্রশ্ন করলো

সাদনান উঠে এসে প্রিয়তার ছোট্ট মিনি ওয়ারড্রব টা খুলে ওখান থেকে একটা কলা পাতা রং এর শাড়ী নিলো। তার পর এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার পাশে দাঁড়ালো। মেয়েটা এখনো বসা ও এটা বুঝতে পারছে না। সাদনান ক্যান এই রং এর শাড়ী বের করেছে? মেয়েটার ভাবনার মাঝে সাদনান ওর গায়ে শাড়ী টা মেলে ধরলো
-“হলুদ শাড়ী না। আপনি এটা পড়বেন অনুষ্ঠানে। ”
সাদনান শাড়ী টা প্রিয়তার কোলের উপর রেখে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। প্রিয়তার মনটা একটু একটু খারাপ হলো।কারণ সবাই হলুদ শাড়ী পরবে আর ও একা এটা। কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
তার পর শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

এদিকে সাদনান অনেকখন যাবত সবাইকে দেখে যাচ্ছে। কেউ মনে হয় না আজ ওর বউকে শাড়ী পরিয়ে দিবে। এদের আশায় থাকলে নিজের বউকে আর শাড়ী পরতে হবে না। ভেবেই সাদনান সোফায় ছেড়ে উঠে আসতে নিলে সুফিয়া বেগম বলল
-“তুমি অনেক যাবত বসে আছো। ভাবি তো একটু কাজে। তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো।”
সাদনান কিছু বলবে ঠিক তখনই প্রিয়তা ‘সারা ‘বলে উপর নিজের রুম থেকে ডাকলো। সাদনান বুঝলো মেয়েটা ওকেই ডাকছে। তাই সাদনানের সেদিকে তাকিয়ে কাল বিলম্ব না করে উপরে চলে গেলো। সুফিয়া বেগম আর কিছু বলা হলো না।সুফিয়া মুচকি হাসলো। তিনি কি ভেবে মুচকি হাসলো তিনিই ভালো জানেন।

———————————-

-“কি হয়েছে জান এভাবে কেউ ডাকে?”
ঘরে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল সাদনান
-“তো কি করবো কখন থেকে এভাবে বসে আছি। আর আপনি কখন গিয়েছেন?”
সাদনান এবার দৃষ্টি দিলো মেয়েটার পানে। মেয়েটা শাড়ীটা কোনো রকম পেচিয়ে দাঁড়িয়ে। গলায় ওর দেওয়া চিহ্ন গুলো এখনো জলজল করছে। আচ্ছা এমন অবস্থা কি মেয়েটা কে অন্য কারোর সন্নিকটে যেতে দেওয়া উচিত? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো সাদনান। উঁহু, একদমই নয়।নিজের বউকে আদর করছে তা ক্যান অন্য কেউ দেখবে? দরকার পড়লে নিজে পার্লারের কাজ শিখে নিবে।হুুঁ, ভেবেই সাদনান দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। প্রিয়তা ভাবছে সাদনান হয়তো কাউকে ডাকতে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার ভাবনা চিন্তা ভুল প্রমান করে সাদনান দরজাটা আটকে দিলো। প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে চাইলো। ছোট্ট দেহখানা বারোহাত শাড়ীটা দিয়ে আরো একটু আঁটিসাঁটি করে নিলো। সাদনান দরজাটা আটকে পিছনে ফিরলো।চাইল তার ছোট্ট বউটার পানে। চোখে হাসলো সাদনান। মেয়েটা এমনি ওকে ঠিকই ভালোবাসে। কিন্তু কখনো সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসে।আবার কখনো ভয়ে। এখন কি লজ্জা না-কি ভয়?
-“আমি চাই না আমার ব্যক্তিগত সম্পদ কেউ দেখে।শাড়ী টা আমি পড়ি দিচ্ছি। আপনি চোখটা বন্ধ করে রাখবেন। কারণ আপনার ওই চোখ দেখে আমি আবারও কোনো সর্বনাশ হোক তা আমি এখন চাই না।”
বেশ গম্ভীরতা বজায় রেখে বল সাদনান।
সাদনানের কথার মানে বুঝতে না পাড়লেও প্রিয়তা এটা বুঝে গিয়েছে ওকে এখন শাড়ীটা সাদনান পড়িয়ে দিবে।এটা ভেবেই মেয়েটার গলা শুকিয়ে গেলো।
না চাইতেও মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো
-“পানি খাবো আমি।”
সাদনান যেনো জানতো এমন কিছু হবে।একটু এগিয়ে প্রিয়তার পিছনে সেন্টার টেবিলে রাখা পানির গ্লাস টা নিয়ে মেয়েটার সামনে ধরলো।মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হতে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক চুমুকে সবটা পানি শেষ করে নিলো।সাদনানের মন চাইলো জুড়ে জুড়ে হাসতে। গলা ফাটিয়ে হাসতে তবে তা আর করলো না মেয়েটা নয়তো ভয়+লজ্জা এখন বেহুশ হয়ে যাবে। সব চিন্তা ভাবনা সাইডে রেখে বল
-“চোখটা বন্ধ করোন।”
বাধ্য মেয়ের মতো প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে নিলো। সাদনানও প্রিয়তাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে নিজেও চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।

———————————-

-“প্লিজ একবার শুধু একবার দেখবো। জান এমন করে না। আমি দেখে চলে যাবো। ”
দশমিনিটের বেশি সময় ধরে আয়ান বাগানে মাইশার রুমের বেলকনির নিচে দাঁড়িয়ে। এদিকটায় তেমন কেউ আসে না। রাহানকে নিয়ে অনেক কষ্ট বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসছে কিছু দরকার আছে বলে।মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে একবার দেখা বাড়িতে তো আর সরাসরি দেখা যাবে না তাই। এই পদ্ধতি অবলম্বন। কিন্তু এতো কষ্ট কার কি হলো এই মেয়েটায় তো আসছে না। উঁহু আসছে না বললে ভুল হবে।মেয়েটা আসতে চাইছে কিন্তু সবাই ওকে ঘিরে বসে ও আসবে কি করে?আর কি বলে এখন মেয়েটা বেলকনিতে আসবে? কনের প্রতি সবার একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে। সবার নজর এড়িয়ে আসাটাও চাট্টি খানি কথা নয়।

বেশ অনেকটা সময় পর মাইশা মেসেজের রিপ্লাই করলো
-“আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন আসছি।”
ব্যাস আয়ানের খুশি দেখে কে রাহানকে জড়িয়ে ধরলো খুশির ঠেলায়।পরক্ষনে ভাবলো ইস মেয়েটার নিশ্চয়ই এখন এখানে আসতে কতো কাঠখড় পোড়াতে হবে।কিন্তু ও কি করবে মনটা যে মানছে না একবার দেখার জন্য উতলা।

আয়ানের ভাবনার মাঝে কেউ ওকে জড়িয়ে ধরলো। আয়ান চমকালো হকচকিয়ে উঠলো। পর পর আয়ানের মনে হলো এই ছোঁয়া ওর পরিচিত খুব করে চেনে এই ছোঁয়া। হ্যাঁ,ওর ভালোবাসার মানুষটার ছোঁয়া। ছোট্ট ছোট্ট হাত দুটি ওর বুকে এসেও আসে নি। মেয়েটা হাতের নাগালে পাচ্ছে না। পাবে কি করে এমন একটা বলিষ্ঠ পুরুষ কে এমন একটা পুচকে মেয়ের আয়াতে পুরোটা নিতে পারে নাকি?উঁহু, কিন্তু শরীরটা না পেলোও মনটা পুরো টাই মেয়েটার আয়াতে নিয়ে গেছে। ভেবেই আয়ানের মুখের হাসিটা আরও চওড়া হলো।ততক্ষণে সারা রাহান ওদের নিকট হতে কিছু টা দূরে।
-“আমিতো বলেছিলাম বেলকনিতে আসতে। তুই তো নিচে বাগানে চলে এসছিস দেখ,,,,
পিছনে ঘুরতে ঘুরতে কথা গুলো বলছিল। কিন্তু পিছনে ফিরে আর কিছু মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না। মেয়েটার অধর জোড়ার উপর দৃষ্টি যেতেই যেনো আয়ান কিছু বলার মতো খুঁজে পেলো না। ছেলেটার মনে এখন একটাই কথা ঘুরছে। আর সেটা হলো এই মূহুর্তে এই মেয়েটার ভালোবাসাময় নীল বিশ প্রাণ করতে হবে।
ব্যাস বলিষ্ঠ দু’হাতে মেয়েটার গাল আঁকড়ে ধরলো। মুহূর্তের মধ্যে মুখে পুড়ে নিলো মেয়েটার পাতলা অধর জোড়া।
মাইশা আকষ্মিক চমকে উঠলো তবে তা সামনের ব্যক্তিটার ভালোবাসার কাছে হারমানাল।
চুপ করে ভালবাসার গ্রহন করলো। বেশ অনেক টা সময় পর আয়ান মাইশাকে ছেড়ে দু’হাতে আগলে নিলো।আলগোছে জানালো
-” যতদিন বেঁচে থাকবো। তোর এই ভালোবাসাময় নীল বিশ প্রাণ করে মরে গিয়েও বেঁচে থাকতে চাই জান। ভালোবাসি। ”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]