Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 433



চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘর পর্ব-০৫

0

#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#ফিজা_সিদ্দিকী
#পর্ব_৫(চোরা অনুভূতি)

রাত বিরেতে আরাধ্যর মেসেজে বিরক্ত হলেও কৌতূহল চেপে রাখতে পারলো না শ্রেষ্ঠা। অতঃপর লিখে পাঠালো ছোট্টো একটা বার্তা।

“ইশ! কীভাবে মারা গেলেন?”

“খুব সম্ভবত মার্ডার।”

“যদিও লোকটা একদমই ভালো ছিল না। তাও এভাবে কাউকে মার্ডার করা ঠিক নয়। খবরটা শুনে খারাপ লাগলো বেশ।”

“হুম। কী করো?”

“আপনার মাথা চেবানো সহ্য করি।”

শ্রেষ্ঠার কাটকাট জবাবে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয় আরাধ্যর। খানিকটা সময় নিস্তব্ধ থেকে স্বল্প সময়ে টাইপ করে এক ক্ষুদে বার্তা।

“বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।”

শ্রেষ্ঠা রিপ্লাই করলোনা। ফোনটা সাইড টেবিলে রেখে ঘুমন্ত শ্রেয়ার কপালে, গেলে চুমু দিয়ে শুয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।

৭.

ব্যস্ত শহরের জ্যাম ঠেলে ভীড় বাসে গা ঘেষাঘষি করে আজ অফিসে আসতে হয়নি শ্রেষ্ঠাকে। প্রোজেক্টের কিছু কাজ পেন্ডিং ছিল, তাই আজ সকাল সাতটার মধ্যে অফিসে উপস্থিত হতে হয় তাকে। এসময় অফিস সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকার কথা, তাই গলা থেকে ওড়না খুলে ডেস্কে রাখে শ্রেষ্ঠা। অতঃপর ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের কাজে। হটাৎ লোডশেডিং এর ফলে ধ্যানভঙ্গ হতেই চারপাশে চোখ বুলিয়ে তাকায় শ্রেষ্ঠা। কেমন যেনো অনুভব হচ্ছে তার। যেনো সে ছাড়াও কেউ আছে এখানে। তার অগোচরে কেউ যেনো খুঁটিয়ে দেখছে তাকে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন কেবিন। কেবিনের একপাশে কাঁচের থাই গ্লাস থাকায় দিনের আলো খানিকটা প্রবেশ করেছে ভেতরে। ফলস্বরূপ কিছুক্ষনের মাঝেই চোখ সয়ে যায় অন্ধকারে। আসেপাশের জিনিস বেশ খানিকটা দৃশ্যমান। আচমকা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে অফিসের ম্যানেজার। একগাল হেসে অনুমতিবিহীন এসে বসে শ্রেষ্ঠার মুখোমুখি চেয়ারে।

“ম্যাডামের দর্শনা আজ এত সকালে যে!”

“সেই একই প্রশ্ন তো আমি আপনাকেও করতে পারি ম্যানেজার সাহেব!”

“হ্যাঁ হ্যাঁ সে পারেন। আপনার কাছ থেকে এমন পাল্টা প্রশ্ন পাওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়।”

“জি, একদম। কিন্তু আপনি বোধহয় মাঝে মাঝে ভুলে যান শ্রেষ্ঠা অফিসের বাকি মেয়ে কলিগদের মতো নাহ। তাই তো আমাকেই বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়।”

শ্রেষ্ঠার কথায় খানিকটা নড়েচড়ে বসে আরমান। হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নির্ভীক কণ্ঠে বলে ওঠে,

“বড্ডো দেমাগ দেখছি তোমার। তা এতো দেমাগ আসে কোন নাগরের থেকে? শুনলাম সেই সংখ্যা নাকি একাধিক!”

“আমার নাগরগুলো যথেষ্ট ক্লাসি। যাকে তাকে আমি আবার চুজ করিনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আপনার, আপনি সেই ক্লাসে বিলং করেন না। বড্ডো লো ক্লাসের তো তাই!”

রাগে অপমানে চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে আরমানের। অফিসের প্রায় সকল মেয়ে কলিগকে বিছানায় পেয়েছে সে। কেউ স্বেচ্ছায় প্রমোশনের তাগিদে, আবার কাউকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিছানায় ফুর্তি করেছে আরমান। সুদর্শন আর প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়েরাও বেশ খানিকটা পাত্তা দিয়েই চলে তাকে। এমনকি অনেকে তো সরাসরি সামনে থেকে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেয়। ইন্টারভিউ এর দিন থেকেই শ্রেষ্ঠার উপর নজর পড়ে আরমানের। নিকৃষ্ট আদিম খেলার অদম্য ইচ্ছের তাগিদে বার কয়েক শ্রেষ্ঠাকে উত্যক্ত করার চেষ্টাও করেছে সে। কিন্তু ফলাফল শুন্য। কাজ ব্যতীত শ্রেষ্ঠা একপলকের জন্য ঘুরেও তাকায় না তার দিকে। এভাবে দিনে দিনে আরো জেদ চেপে বসে আরমানকে। শক্তপোক্ত এই মানবীর অহংকার ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। শুধু সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগের সন্ধানে ছিলো সে। আর আজকে সেই সুযোগটা পেয়ে গেছে আরমান। পুরো অফিসে সে আর শ্রেষ্ঠা ব্যতিত কেউ নেই। গেটের গার্ডকে কৌশলে কিছুটা সময়ের জন্য বেশ দূরে একটা কাজে পাঠিয়ে অফিসের মেইন সুইচ অফ করে দেয় আরমান।

“আমাকে চটালে রাস্তায় এসে যাবে কিন্তু! সাবধান!”

আরমানের কুটিল হাসি দেখে শব্দ করে হেসে ওঠে শ্রেষ্ঠা। নিস্তব্ধ রুমে এসে হাসির ঝঙ্কার একটু বেশীই কানে লাগে আরমানের। খানিক বিরক্তও হয় সে।

“যে নিজে রাস্তার মানুষ, সে আমাকে রাস্তায় নামবে বুঝি! আমি তো জানতাম রাস্তার কুকুরগুলো শুধু শব্দ করে ঘেউ ঘেউই করতে পারে। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা তাদের থাকেনা।”

সশব্দে চেয়ারে লাথি দিয়ে উঠে দাঁড়ায় আরমান। অতঃপর দাঁত কিড়মিড় করে এগিয়ে যায় শ্রেষ্ঠার দিকে। মুখে তার অসহ্যকর হাসি। অঙ্গভঙ্গি অশ্লীল। ছেলেটাকে দেখে গা গুলিয়ে উঠছে শ্রেষ্ঠার। যেনো কেনো ডাস্টবিন তার কাছাকাছি আসছে। যতো কাছে আসছে তার দুর্গন্ধ ততো তীব্র হচ্ছে। অসহ্যকর ঠেকছে নাকে। বিশ্রী রকম গন্ধ বের হচ্ছে সেখান থেকে।

“ছিঃ! দূরে সরুন বলছি। কেমন অসহ্যরকম বিশ্রী গন্ধ আসছে আপনার থেকে। নর্দমার কীট তো তাই! শুধু দামী পোশাক পরে ভদ্রলোকেদের মাঝে বসে গেলেই ভদ্র মানুষ হওয়া যায়না। চরিত্র মানুষের কদর্য মনের পরিচয় দেয়।”

“এই রূপ নিয়েই তোর এতো অহংকার তাইনা! আজকের পর থেকে এই মুখ নিয়ে বাইরে বের হতে ভয় পাবি। তোর রুপ, অহংকার সব ধুলোয় না মিশিয়ে পারলে আমার নামও আরমান নাহ।”

“আর কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করবেন এভাবে!”

“আপাতত তোরটা করি। পরেরগুলো পরে দেখা যাবে।”

“এবার কিন্তু গার্ডকে ডাকতে বাধ্য হবো আমি। এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কাজ পেন্ডিং আছে আমার।”

“সুন্দরীরা বোকা হয় জানতাম। তবে আজ প্রমান পেলাম সচক্ষে। গার্ডকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে আসার মতো কাঁচা কাজ আমি করবো! ভাবা যায়!”

এতক্ষন বেশ জোর নিয়ে কথা বললেও এবার ভেতরে ভেতরে ভয় পেতে শুরু করে শ্রেষ্ঠা। যতোই হোক একজন পুরুষ মানুষের শক্তির কাছে পেরে ওঠা বেশ মুশকিল। তাই যথাসম্ভব নিরব থেকে নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো সে। কিন্তু থেমে থাকলো না আরমান। চোখে মুখে স্পষ্ট তার উশৃঙ্খলতা। আড়চোখে আরমানকে নিজের কাছাকাছি আসতে দেখে ভয়ে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় শ্রেষ্ঠার। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। ভেতরে ভয়ে ডগমগে অবস্থা হলেও কঠোর দৃষ্টিতে তাকায় আরমানের দিকে।

প্রজেক্টের ফাইল রাতে অফিসেই ফেলে এসেছিলো আরাধ্য। ফলস্বরূপ সকাল সকাল রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। পথিমধ্যে বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠাকে ফোন করতে গিয়েও করেনি। বারবার নম্বর ডায়াল করতে গিয়েও কোথাও একটা বাধা দিচ্ছে তাকে কল করতে। হয়তো কাল রাতে শ্রেষ্ঠার কথায় অপমানিত বোধ করেছে একটু বেশীই। মনে মনে প্রজেক্টের কাজটা দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলো আরাধ্য। সেইসাথে কাজ ব্যতিত কোনোরূপ আলাপচারিতা না করার কথাও ভাবলো। শ্রেষ্ঠা তাকে পছন্দ করেনা, বিষয়টা বুঝতে আর কোনোভাবেই বাকি নেই তার। আর এভাবে কাউকে অকারণে বিরক্ত করা তার স্বভাবের সাথে যায়না। যেহেতু শ্রেষ্ঠা তার ব্যবহারে বিরক্ত হচ্ছে, তাই দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়।

গাড়ি পার্ক করে অফিসে ঢুকতে গিয়ে বেশ অবাক হলো আরাধ্য। গার্ড নেই। সচরাচর এমনটা হওয়ার কথা নয়। যেহেতু এটা তার কোম্পানি নয়, তাই এব্যাপারে বিশেষ খেয়াল দিলো না সে। কেবিন থেকে ফাইল নিয়ে বের হতে গিয়ে উপতলায় কিছু পড়ার শব্দে বেশ অবাক হয় আরাধ্য। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে অবাকের রেশটা আরো গাঢ় হলো তার। অফিস আওয়ার শুরু হতে আরো এক ঘন্টা বাকি। তাই এ সময়ে অফিসে কারোর থাকার কথা নয়। তবে কিসের শব্দ হলো উপরে! নাকি সে ভুল শুনলো! উপরতলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দোটানায় ভোগে সে। তাৎক্ষণিক আবারও একসাথে বেশ কিছু জিনিস পড়ার শব্দ হয়। যেনো টেবিল থেকে অনেকগুলো জিনিস একসাথে নীচে ফেলে দিয়েছে কেউ। এবার আর এক মুহুর্ত না করে সিড়ি দিয়ে দ্রুতবেগে উপরে ওঠে আরাধ্য। শব্দের উৎস খেয়াল করে যেতে গিয়ে হৃদস্পন্দন থেমে যায় যেনো তার। শব্দটা শ্রেষ্ঠার কেবিন থেকে আসছে। যতো কাছাকাছি যাচ্ছে শব্দের তীব্রতা ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভয়ে বেশ কয়েকটা হার্ট বিট মিসও হয়ে গেলো বুঝি!

কেবিনের দরজা খুলতেই থমকে যায় আরাধ্য। শ্রেষ্ঠাকে টেবিলের সাথে চেপে ধরে জোরপূর্বক তাকে ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আরমান। দুজনের তুমুল ধস্তাধস্তিতে টেবিলের জিনিষপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে শব্দ সৃষ্টি করছে। এই অসময়ে আরাধ্যকে এখানে কোনোভাবেই আশা করেনি আরমান। তাই থতমত খেয়ে হাত ছেড়ে দেয় শ্রেষ্ঠার। ছাড়া পেয়ে সেখান থেকে দৌড়ে আরাধ্যর কাছে আসে শ্রেষ্ঠা। চোখ ভর্তি জল, কাঁদো কাঁদো মুখ, জোরে জোরে হাঁপিয়ে আরাধ্যর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকানো, সবকিছুতেই মুগ্ধতা খুঁজে পায় আরাধ্য। হাঁপাতে হাঁপাতে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে শ্রেষ্ঠা। এমনিতেই সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তার, তার উপর এতক্ষন ধস্তাধস্তি করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্তও কতখানি জোর ছিলো তার মাঝে। অথচ যেই আরাধ্যকে দেখতে পেলো, দূর্বল হয়ে পড়ল কতখানি। এর কারণ শ্রেষ্ঠার জানা নেই। তবে সে মনেপ্রাণে চায় মানুষটা তাকে ভুল না বুঝুক।

শ্রেষ্ঠাকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখে অস্থির হয়ে যায় আরাধ্য। টেবিল থেকে পানির গ্লাস এনে দ্রুত ধরে তার মুখের সামনে। ইতিমধ্যে সুযোগ পেয়ে পালিয়েছে আরমান। আরাধ্য এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না। এখন সবার আগে শ্রেষ্ঠাকে সামলানো উচিৎ। ওই রাস্কেলকে তো পরেও খোঁজা যাবে।

“তুমি ঠিক আছো? শরীর কী খুব বেশি খারাপ লাগছে? ডক্টরকে কল করবো?”

ইশারায় মাথা নাড়ায় শ্রেষ্ঠা। যার অর্থ এসব কিছু করতে হবেনা। সে ঠিক আছে। তবুও আশ্বস্ত হতে পারছে না আরাধ্য। সমস্ত রাগ উপচে পড়তে চাইছে শ্রেষ্ঠার উপর।

“এভাবে ফাঁকা অফিসে কেউ একা আসে? আজ যদি আমি না আসতাম? কী হতো ভাবতে পারছো?”

“আপনি আছেন তো।”

#চলবে!

চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘর পর্ব-০৪

0

#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#ফিজা_সিদ্দিকী
#পর্ব_৪(মেয়ে নাকি পরী!)

৫.
“রহস্যময় মৃত্যু! খুন নাকি আত্মহত্যা বোঝা দায়।”

সকাল সকাল পত্রিকা খুলতেই এমন কিছু চোখের সামনে পড়বে কল্পনাতীত ছিলো আরাধ্যর। তবে যেটা সবচেয়ে আশ্চর্য্যের তা হলো লোকটাকে সে চেনে। এক দেখায় যাকে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ বলা যায়। এক পলক তাকিয়েই যাকে চরিত্রহীন লম্পট বলতেও দুইবার ভাবতে হয়না, লোকটা তেমনই একজন। শ্রেষ্ঠার সাথে অসভ্যতামি করা সেই বাসের লোকটার ছবি পত্রিকার প্রথম পেজেই বড়ো বড়ো ছাপা। পাশে সমবয়সী আরও একজনের লাশ পড়ে রয়েছে। হেডলাইনটা পড়ে যতটা না আক্ষেপ হয়েছিল, লোকটার চেহারা দেখে তা নিমেষেই গায়েব হয়ে যায় আরাধ্যর। তপ্ত দীর্ঘশ্বাসের সাথে মুখে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে পেপারটা এমনভাবে টেবিলে ফেলে যেনো সেটা একটা আবর্জনা। অতঃপর দুইহাত ঝেড়ে পকেটে ঢুকিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ঢুকে পড়ে ওয়াশরুমে।

খাঁন ইন্ডাস্ট্রির সাথে ডিল হওয়া নতুন প্রজেক্ট এর কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়ে শ্রেষ্ঠার উপর। কাল থেকে বিষয়টা নিয়ে চরম বিরক্ত সে। আরাধ্যর পিঞ্চ মেরে বলা কথাগুলো একেবারেই সহ্য করার মতো নয়। আবার কোম্পানির কথা ভেবে কিছু বলাও সম্ভব নয়। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করা বিষয়টাও একেবারে যায় না তার সাথে।

নতুন কাজের মেয়েটার কাছে শ্রেয়াকে রেখে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে শ্রেষ্ঠা। বের হতে হতে ঘড়িতে সময় দেখে, আটটা ত্রিশ বাজে। বেশ কিছু আর্কিটেকচার এর সাথে মিটিং আছে তাদের আজ। যার মধ্যে থেকে দুইজনকে অ্যাপয়েন্ট করা হবে নতুন প্রজেক্ট এর জন্য। যেহেতু এই প্রজেক্টের মুখ্য পরিচালক শ্রেষ্ঠা, তাই শ্রেষ্ঠা আর আরাধ্য মিলে আজকের মিটিংটা দেখাশোনা করবে।

সময় নয়টা ত্রিশ বাজার আরও পনেরো মিনিট আগে থেকে মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে বেশ কিছু নতুন পুরনো আর্কিটেকচাররা। ঘড়ির কাঁটা নয়টা ত্রিশ বাজতেই একসাথে রুমে প্রবেশ করে শ্রেষ্ঠা আর আরাধ্য। মোট পাঁচজন আর্কিটেকচারের মধ্যে চারজন ছেলে আর একজন মেয়ে। শ্রেষ্ঠাকে দেখে ছেলেরা সহ মেয়েটাও হা করে তাকায় সেদিকে। একেবারে নেপালিদের মত ধবধবে সাদা। খানিকটা লালচে আবার খানিকটা কালচে, কেমন যেন মদ্যজাতীয় পানীয় রঙের কোমর সমান চুল। কালো রঙের হাই নেক টি শার্টের মাঝে শরীরের ধবধবে সাদা রংটা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভীষণভাবে।

“ড্যাম বিউটিফুল!”

“আসলেই জোশ ভাই!”

“ভাই এটা মেয়ে নাকি পরী!”

“হ্যাঁ, আপনাদের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য আসমান থেকে নেমে এসেছেন উনি। পরীলোক থেকে স্পেশাল পারমিশন করিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। ইন্টারভিউ নিয়ে আবার ফিরে যাবেন।”

হিশহিশিয়ে বলা আরাধ্যর কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় পাশাপাশি বসে আলোচনা করতে থাকা ছেলে দুটো। মুখ কাঁচুমাচু করে, দৃষ্টি নত করে সোজা হয়ে বসে টেবিলে।

দীর্ঘ এক ঘন্টা মিটিং শেষে তাদেরকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে শ্রেষ্ঠা। অতঃপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করে তারা।

“ঈশানের প্ল্যানিং বেশ ভালো ছিল। আমি ওকে অ্যাপয়েন্ট করতে চাইছি, আপনার কি কোন আপত্তি আছে!”

“অবশ্যই আছে। ছেলেটাকে আমার পছন্দ নয়।”

“আসলেই!”

“হুম”

আরাধ্যর কথা শুনে শব্দ করে হেসে ওঠে শ্রেষ্ঠা। আরাধ্য আরও একবার মুগ্ধ হয় সেই হাসিতে। অথচ মুখে গাম্ভীর্য ভাব বজায় রেখে তাকায় শ্রেষ্ঠার দিকে।

“আপনি এখানে নিজের জন্য পাত্রী পছন্দ করতে আসেননি, মিস্টার! ওপস সরি! সে তো আবার পাত্র।”

“মানে কী?”

“বাই দা ওয়ে, আপনি কি আবার ওই টাইপের নাকি? মানে ছেলে ছেলে…”

“ছি! রুচি এতটাও নিচে নামেনি আমার এখনো। মেয়েদের প্রতি দারুণ লেভেলের ফিল আসে আমার।”

“হ্যাঁ সেটা তো দেখতেই পেলাম। মেয়ে হলে ফকফকা সাদা, আর ছেলে হলে তুম ফিদা।”

“এই! এই! কি দেখতে পেলে হ্যাঁ! উমমম, বিশ্বাস সেহেতু করছ না তাহলে একটা প্রমাণ তো দিতেই হয় তোমাকে। আর প্রমাণ চাওয়া মানুষটাকে দিয়েই প্রমাণ দিলে প্রমাণ আরও জোশ হয়।”

“মানে!”

“মানে হল তুমি একা, আমিও একা। বন্ধ রুম, এখন যদি কিছু মিছু করে বসি একটা! মানে ওই টাইপের কিছু!”

রাগী চোখে তাকায় শ্রেষ্ঠা, অতঃপর বিনা বাক্য ব্যয়ে হাতের ফাইলগুলো ঘাঁটতে শুরু করে সে। খানিকটা কাশির শব্দ করে শ্রেষ্ঠার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে আরাধ্য। অতঃপর নরম কণ্ঠে বলে ওঠে,

“তোমাকে জোশ বলছিলো ছেলেটা।”

“ভুল তো কিছু বলেছি। একজনের চোখ খারাপ বলে পছন্দ হয়নি, তাই বলে কি সবাই চোখে অন্ধ হবে নাকি?”

“এই কমপ্লিমেন্টটা পছন্দ তোমার!”

“পছন্দ না হওয়ার মতো তো কিছু দেখছিনা। কেনো আপনার কি হিংসা হচ্ছে! আর ইউ ফিলিং জেলাস?”

“মে বি অর মে নট।”

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

নতুন কাজের মেয়েটা শ্রেয়াকে সাথে করে নিয়ে যায় পাশের ফ্ল্যাটে। আরোহী খাঁন বসে বসে টিভি দেখছিলেন। শ্রেয়াকে দেখে বেশ খুশি হন তিনি। কাজের মেয়ে সুমিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে। মেয়েটা সারাদিন অফিসে থাকে, তাই শ্রেয়ার স্কুল ছাড়া বাকি সময়টা দেখাশোনার জন্য সুমিকে বেশ কিছু টাকা দেবেন বলেছেন। শ্রেয়ার সাথে পুরোটা দিন বেশ ভালোই কাটে আরোহী খাঁনের। মূলত তিনি অপেক্ষা করছেন আরাধ্যর ফেরার। এর মাঝেই সুমিকে ডেকে বাড়িঘরটা পরিষ্কার করিয়ে ফেলেছেন। সুমি এই ফ্ল্যাটের প্রায় বেশিভাগ মানুষের হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করে। প্রায় অনেক বছর ধরে এই কাজ করায়, সকলের কাছেই বেশ বিশ্বস্ত সে।

শ্রেয়ার সাথে টম অ্যান্ড জেরি দেখতে দেখতে আরোহী খাঁনও কখন যেনো তার মতোই বাচ্চা হয়ে গেছেন খেয়াল নেই। দুজনে মিলে টিভি দেখতে দেখতে চিপস খাচ্ছে, আর মাঝে মাঝে খিলখিল করে হেঁসে উঠছে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বাড়ির মধ্যে এমন এক দৃশ্য দেখে বিস্মিত, অভিভূত আরাধ্য। যেনো ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে সে। আজ কতোগুলো বছর পর আবারও সে হাসতে দেখছে আরোহী খাঁনকে। বিগত পাঁচ বছরে যেনো তিনি হাসতেই ভুলে গেছিলেন। একটা দূর্ঘটনা তাদের জীবনের সবটুকু সুখ ধুয়ে মুছে নিয়ে চলে গেছে। সে কথা ভাবলেই বুক ভারী হয়ে ওঠে আরাধ্যর। দুজনের এতখানি সুখের মুহূর্ত কিছুতেই নষ্ট করতে চায় না আরাধ্য। এজন্যে চুপি চুপি পা টিপে টিপে পিছন থেকে চলে যায় নিজের রুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে সামনে থেকে বাচ্চাটার মুখটা দেখে বিস্ময়ে কিংক্তব্যবিমূঢ় আরাধ্য। কিছু বলার ভাষা কেনো হারিয়ে ফেলেছে। ইতিমধ্যেই শ্রেয়া সোফা থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে আরাধ্যর। অতঃপর ঘাড় উঁচু করে কোমল কণ্ঠে বলে ওঠে,

“এইতো ভালো আঙ্কেল! তুমি এই আন্টির ঘরে কেনো? আন্টি কি তোমার কেউ হয়?”

“আগে বলো তুমি এখানে কিভাবে?”

“আমি তো আম্মুর সাথে ওইযে পাশের দরজা, ওখানে থাকি।”

” তাই নাকি! ইশ রে! আমি তো জানতামই নাহ। আর এই আন্টিটা হলো আমার আম্মু।”

“ওহ হো। আমার যেমন আম্মু আছে, তোমারও আছে তাইনা? এইযে এই আন্টি তোমার আম্মু তাইতো!”

“হুম একদম।”

“খালাম্মা, সব কাজ হয়ে গেছে। ওরে নিয়া যাই এখন। আপা এসে পড়বে এহনি।”

সুমির কথা শুনে মাথা নেড়ে সম্মতি দেন আরোহী খাঁন। অতঃপর শ্রেয়াকে খানিকটা আদর করে পাঠিয়ে দেন তার সাথে। সুমি চলে যেতেই মায়ের কোলে মাথা রাখে আরাধ্য। অতঃপর আসল ঘটনা কী জিজ্ঞাসা করতেই একে একে সব বলেন তিনি। এবার ব্যাপারটা পুরোপুরি পরিষ্কার হয় আরাধ্যর কাছে। সেই সাথে শ্রেয়ার সাথে ঘটা পূর্ব পরিচয়ের কথাও আরাধ্য জানায় মাকে।

৬.

“নিউজ দেখেছ!”

এতো রাতে আরাধ্যর মেসেজ দেখে বেশ খানিকটা বিরক্তবোধ করে শ্রেষ্ঠা। অতঃপর সিন করেও কোনো রিপ্লাই না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় বেডে। কিছুক্ষণ পর আবারো বেজে ওঠা মেসেজ টোনে ফোনের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় সর শ্রেষ্ঠা।

“সেদিনের বাসের লোকটাকে কেউ খুন করেছে সম্ভবত। যদিও পুলিশ এখনও সিদ্ধান্ত জানাননি, তবুও আমার শতভাগ বিশ্বাস কেউ খুব চতুরতার সাথে খুন করেছে তাকে। তবে যে করেছে তাকে আমার ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। দেশ থেকে একটা আবর্জনা কমিয়ে দিলো।”

#চলবে!

চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘর পর্ব-০৩

0

#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#ফিজা_সিদ্দিকী
#পর্ব_৩(সর্বনাশা কৌতূহল)

৪.
“ম্যাডাম, মেকাপ জিনিসটা সবার সাথে ঠিক যায়না। কিছু মানুষকে মাঝে মাঝে হোয়াইট পেইন্টেড ওয়ালের মতোও লাগে।”

মিটিং রুমে ঢোকার পথে পাশ কাটিয়ে যাওয়া মানবের এহেন মন্তব্যে ভ্রু কুঁচকে তাকায় শ্রেষ্ঠা। সদ্য জয়েন হওয়া অফিসে এটাই তার প্রথম মিটিং। বসের নির্দেশে আজকে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে তাকে। যদিও কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছে, তাও মিটিংয়ে থেকে খানিকটা অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য এ আয়োজন। কিন্তু হুট করেই অপরপক্ষে আরাধ্যকে দেখবে, ব্যাপারটা অপ্রত্যাশিত ছিলো। আরাধ্যর পায়ে পা দিয়ে পারা দিতেই ব্যাথাতুর শব্দ উচ্চারণ করে খানিকটা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে সে। সেই সুযোগে সকলের অগোচরে আরাধ্যর কানের কাছে খানিকটা ফিসফিসিয়ে শ্রেষ্ঠা বলে,

“সাবধান মিষ্টার, হোয়াইট হলেও অয়েল পেন্ট কিন্তু! দাগ লাগানো এতো সহজ নয়। আপনাদের মতো মানুষের কাছে তো একেবারেই অসম্ভব।”

একেবারে বেকুব বনে যায় আরাধ্য। শ্রেষ্ঠাকে যতো দেখে অবাক না হয়ে পারেনা। মেয়েটার প্রতি জন্মানো সদ্য কৌতূহলকে বেশ ভয় পাচ্ছে সে। ক্ষণিকের জন্ম নেওয়া কৌতূহল ভবিষ্যতের সর্বনাশের কারণ হতে পারে। তাই যথাসম্ভব নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেও, কিভাবে যেনো প্রকৃতি বারবার তাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। যেনো ইঙ্গিত দিচ্ছে কিছু একটার। যা বোঝার সাধ্য কিংবা মানসিকতা কোনোটাই আরাধ্যর নেই।

বেশ কিছু কোম্পানির সাথে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে আজ। যেখানে খাঁন ইন্ডাস্ট্রির তরফ থেকে উপস্থিত হয়েছে আরাধ্য আর নির্ঝর। শ্রেষ্ঠার সামনাসামনি বিপরীত চেয়ারে বসে আছে নির্ঝর। তার পাশেই বসেছে আরাধ্য। বিজনেস সম্পর্কিত কিছু ডিল চলছে বেশ কয়েকটা কোম্পানির সাথে। সবটা বেশ মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করছে শ্রেষ্ঠা। আরাধ্যও কোম্পানি ওনার মিষ্টার চৌধুরীর সাথে বেশ কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে আলোচনা করছে। কিন্তু নির্ঝরের এসবে কোনো খেয়াল নেই। সে খামখেয়ালীভাবে একমনে দেখে যাচ্ছে শ্রেষ্ঠাকে। যেনো তার প্রতিটা কথা বলার সাথে সাথে কম্পনরত ঠোঁট, মাঝে মাঝে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে প্রজেক্টরের দিকে তাকানো, কখনও বা ঠোঁট কামড়ে না বোঝা ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করা, সবটাই অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত করছে সে। মিটিং রুমের মাঝে যে তারা ছাড়াও বাকিরা উপস্থিত সে ব্যাপারেও চরম উদাসীন নির্ঝর। শ্রেষ্ঠাকে দেখে অন্য এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে যেনো।

“নির্ঝর, ফাইলটা দে।”

“নির্ঝর, নির্ঝর!”

আরাধ্যর জোরে ধাক্কানোর ফলে ধ্যানভঙ্গ হয় নির্ঝরের। খেয়াল করে, রুমের সকলে তার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে লজ্জায় মাথা নীচু করে সে। জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই এতটা লজ্জায় পড়তে হয়নি তাকে। অথচ আজ কিনা একটা মেয়ের জন্য!

আজ সকালেই নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করেছে শ্রেষ্ঠা। বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শ্রেয়াকে নিয়ে আলাদা থাকার এই আয়োজন তার। যদিও শিমূল নিহার এতে বেশ আপত্তি করেছিলেন। একেবারে গো ধরে বসে ছিলেন যাকে বলে। আদিল সাহেবও মেয়ের এমন সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশি হননি। কিন্তু পরিশেষে শ্রেষ্ঠার যুক্তির কাছে হেরে যেতে হয় তাদের। ফলস্বরূপ, অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্রেষ্ঠাকে অনুমতি দিতে বাধ্য হন তারা।

নতুন জায়গায় শিফটের ফলে রুম গোছানো থেকে শুরু করে অনেকখানি কাজ। অফিস শেষে ফেরার পথে শ্রেয়াকে স্কুল থেকে সাথে করে নিয়ে আসে শ্রেষ্ঠা। সেইসাথে বাইরে থেকে কিছু প্যাকেট খাবারও নেয়। যেহেতু আজকে প্রথম দিন, তাই কিচেনে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম পাওয়া যাবেনা। তাই খাওয়ার রান্না করে খাওয়া সম্ভব নয়। শ্রেয়াকে সাথে নিয়েই আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনে ফেলে শ্রেষ্ঠা।

“জানো মানি, ওই ভালো আঙ্কেলটা আজকে আবার এসেছিল আমাদের স্কুলে। আমাকে চকলেট দিয়েছে এত্তোগুলো।”

শ্রেয়ার দুই হাত দুইদিকে ছড়িয়ে চকলেটের পরিমাণ বলা দেখে ফিক করে হেসে দেয় শ্রেষ্ঠা। শ্রেয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,

“তুমি আঙ্কেলের ব্যথা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করেছ?”

“ইশ রে! একদম ভুলে গেছি তো। এবার কি হবে! আঙ্কেল তো আমাকে পচা মেয়ে ভাববে।”

শ্রেয়ার মুখ ভার হয়ে আসে। যেনো এখনই কেঁদে দেবে। বাচ্চারা ঠিক কতখানি নিস্পাপ হলে, এই সামান্য একটা ব্যাপারে কান্না করে দেয়। বড়দের মতো এদের মাঝে থাকেনা কোনো ইগো। এদের রাগ ভাঙ্গানো অতি সহজ। চাহিদা কম, তাই প্রাপ্তিও অঢেল। অথচ বড়দের মাঝে থাকে হাজারো চাহিদা। তাই দিনশেষে তাদের ফিরতে হয় শূন্য হাতে। ভালোবাসাময় একটা হাতের কতো অভাব! আগলে রাখার মতো একটা মানুষের জন্য কতো হাহাকার! তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রেয়ার গালে শব্দ করে চুমু খায় শ্রেষ্ঠা। বলে,

“একটুও পচা ভাববে না তোমাকে। কারণ, ভালো মানুষরা কাউকে পচা ভাবতেই পারেনা। যারা ভালো হয়, তারা সবাইকে ভালো ভালো ভাবে।”

“আঙ্কেল ভালো মানুষ বুঝলে কিভাবে? তুমি কি আঙ্কেলের সাথে কথা বলেছো?”

“তুমি না ভালো আঙ্কেল বলে ডাকো! সেজন্যই তো বললাম সে ভালো মানুষ।”

দুজনের কথোপকথনের মাঝে রিক্সা এসে দাঁড়ায় বাড়ির গেটের সামনে। ভাড়া পরিশোধ করে একহাতে শ্রেয়ার হাত ধরে অপরহাতে জিনিসপত্রগুলো নেওয়ার চেষ্টা করে শ্রেষ্ঠা। কিন্তু বারবার কিছু না কিছু পড়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো জিনিস হওয়ায় একহাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা তার পক্ষে। ইতিমধ্যে পাশে এসে দাঁড়ায় বাড়ির দারোয়ান। সাস্থ্যবহুল বেশ মোটাসোটা গোছের লোকটাকে তাদের কাছাকাছি দেখে প্রাথমিকভাবে খানিকটা ভড়কে গেলেও পরবর্তীতে তার বেশভূষা দেখে আশ্বস্ত হয় শ্রেষ্ঠা।

“আজকেই নতুন ফ্ল্যাটে ওঠা মানুষটা আপনি!”

“জ্বী”

“আপনার কোনরকম সমস্যা হলে আমাকে বলবেন ম্যাডাম। বাড়িওয়ালা স্যার সকালেই আপনার কথা আমাকে বলেছেন। শুনলাম একাই থাকছেন এখানে বাচ্চা নিয়ে! কোনো প্রয়োজন হলে জানাবেন কিন্তু ম্যাডাম। আর এগুলো আমাকে দিন, আমি দিয়ে আসছি।”

তীক্ষ্ণ চোখে লোকটাকে পরখ করে শ্রেষ্ঠা। অতঃপর ব্যাগগুলো রেখে এগিয়ে যায় লিফটের দিকে। জিনিসপত্রের ব্যাগ হাতে দারোয়ান গোছের লোকটাও লিফটে ওঠে। চতুর্থ ফ্লোরের নির্দিষ্ট রুমের সামনে গিয়ে গেট খুলে দেয় শ্রেষ্ঠা। লোকটা ভেতরে ঢুকে ব্যাগগুলো রাখতে চাইলে বাধা দেয় শ্রেষ্ঠা। বলে,

“ধন্যবাদ দাদা। আপনি এমনিতেই অনেকটা সাহায্য করলেন। বাকিটা আমি নিজেই করে নিতে পারবো।”

শ্রেষ্ঠার হাসিমুখে বলা কথার মাঝে সূক্ষ্ম এক বাধা দেওয়ার প্রবনতা দেখে বিপরীতে হাসলো লোকটা। এরপর শ্রেষ্ঠার ওড়না ধরে পিছনে দাঁড়ানো ছোটো শ্রেয়ার গাল টেনে দিয়ে পিছু ফিরে চলে গেলো। শ্রেয়া চরম বিরক্ত হলো তার এই কাজে। গাল টানা বিষয়টা একদমই পছন্দের নয় তার। আবার সেটা যদি অপরিচিত কেউ হয়, তো বেজায় ক্ষেপে ওঠে। লোকটাকে চোখ মুখ কুঁচকে কিছু বলতে গিয়েও বলা হলোনা তার। কারন ততক্ষনে লিফটের দরজা বন্ধ করে সে নীচে নেমে যাচ্ছে।

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

আরাধ্যকে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতে দেখে বিচলিত হন আরোহী। মাত্র কিছুক্ষন আগেই অফিস থেকে ফিরেছে সে। এর মাঝেই হুট করেই এভাবে রেডি হয়ে ব্যাগ গুছাতে দেখে প্রশ্ন করেন তিনি। প্রতিউত্তরে আরাধ্য বলে,

“ফ্ল্যাটে ফিরে যাচ্ছি। এদিক থেকে আমার অফিস কতোটা দূরে হয় জানোই তো মা!”

“আর আমার একা একা থাকতে খুব ভালো লাগে বুঝি?”

“তুমি একা কোথায় মা! শিনু তো আছে তোমার সাথে। আমি বিদেশে যাওয়ার পর তো ওই তোমাকে সঙ্গ দিতো!”

“নিজের ছেলে পড়ে থাকবে ফ্ল্যাটে। কী খাবে, কী করবে কোনো ঠিক নেই। আর আমি শিনুকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবো?”

“তাহলে তুমিও চলো আমার সাথে। বাবা মারা যাওয়ার পর এই বাড়ি ছেড়ে এক পাও নড়েছো তুমি? তাহলে এখন উপায় কী বলো?”

লেবুর শরবত হাতে আরাধ্যর রুমে ঢুকতে ঢুকতে শিনু বলে,

“ভাইয়া, তুমি বরং সপ্তাহের ছুটির দুটো দিন এই বাড়িতে কাটিয়ো। তাহলে তোমারও ভালো লাগবে, আর খালামনিরও একা একা মনে হবেনা।”

আরাধ্যর সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই শিনুর। বছর চারেক আগে এক রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন তারা। হুট করে মাঝরাস্তায় শুরু হয় প্রবল ঝড়বৃষ্টি। গাড়ি সাইডে দাঁড় করিয়ে আনিসুল খাঁন অপেক্ষা করেন ঝড় বৃষ্টি কমার। হুট করেই বাইরের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যান আরোহী। একটা চোদ্দো পনেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে তুমুল ঝড় বৃষ্টির রাতে রাস্তায় জমে থাকা গোড়ালি সমান পানির মধ্যে থেকে কী যেনো কুড়িয়ে নিচ্ছে! কৌতূহলবশত গাড়ি থেকে নেমে ছাতা হাতে এগিয়ে যান তিনি। আনিসুলের বহু বারণ উপেক্ষা করে মেয়েটার কাছে গিয়ে আরও বেশি অবাক হন। ঠান্ডায় রীতিমত কাঁপছে মেয়েটা। শরীরের রং কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অথচ সে একমনে পানির মধ্যে থেকে পাঁপড় কুড়াচ্ছে। এই কাজে সে এতটাই নিমগ্ন যে, সামনে কারোর উপস্থিতি টের অবদি পায়নি।

“এই মেয়ে, এতো ঝড় বৃষ্টির মাঝে এগুলো কী করছো তুমি? এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ করবে তো!”

রাতের শুনশান জায়গায় আচমকা কারোর কণ্ঠস্বর শুনে কেঁপে ওঠে মেয়েটা। ভয়ে ছিটকে পিছিয়ে যায় দুই পা। সেই সাথে এতক্ষন ধরে কুড়িয়ে জড়ো করা পাঁপড়গুলো আবারও পড়ে যায় পানিতে। মেয়েটা কাঁদো কাঁদো মুখে তাকায় আরোহীর দিকে। তার নিস্পাপ মলীন চেহারা দেখে ভীষণ মায়া হয় আরোহীর। অতঃপর কোমল কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করেন,

“এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজে এগুলো তুলছিলে কেনো? খিদে পেয়েছে তোমার?”

মেয়েটা মাথা নাড়ায়। যার অর্থ তার খিদে পায়নি।

“তাহলে?”

ঘনঘন নেত্রপল্লব ফেলে মেয়েটা। ক্রমাগত ধারায় গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানি মুখ হতে মোছার বৃথা চেষ্টা করে ক্ষীণ কণ্ঠে বলে ওঠে,

“বেচতে বের হইছিলুম সকালে। বেশি একটা বেচতে পারি নাই। এহন এগুলা মাসির কাছে নিয়ে যাচ্ছিলুম। আর ঝড়ে সব উল্টে গেছে গা। কুড়াচ্ছিলুম, আর পানি এসে গেছে গা। সব ভেসে যায়। মাসি হিসেব দিতি না পারলে মারে খুব। তো এহন এগুলো কুরাচ্ছিলুম। ফের পড়ি গেছে গা। এহন মাসির হাতে মার খেতি হবে। রাতে খেতিও পামু না।”

“তোমার নিজের মাসী?”

“আমার কেউ নাই। আমার মতো অনেকজন আছে মাসির কাছে। সব একসাথে থাহি। মাসির মাল বেচে দিলে খাওন দেয়। লাভ বেশি হলি দশ টেহা করি দেয়। আমরা খাবার কিনি খাই।”

কণ্ঠ ভিজে আসে আরোহীর। এতটুকু একটা মেয়ে কতোটা যন্ত্রণায় দিন পার করে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে তার। বাবা মা হীন অনাদরে বড়ো হওয়া মেয়েটা সমাজের কাছে প্রতিনিয়ত নাজানি কতো লাঞ্ছনা অবমাননা শোনে! একটু এদিক ওদিক হলে মার খায়। তাও পেটের দায়ে সেখানেই পড়ে থাকে। এতক্ষণে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এসেছে অনেকটা। বৃষ্টির পানি মেয়েটার শরীরের সমস্ত ময়লা পরিষ্কার করে দিয়ে একেবারে ফুটফুটে, নিস্পাপরূপে প্রতিস্থাপিত করেছে। সেদিন মেয়েটাকে নিজের সাথে করে নিয়ে আসেন তিনি। কাছাকাছি একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। নতুন নামে নামকরণ করে তার নাম রাখেন শিনু। রক্তের সম্পর্ক না হলেও ধীরে ধীরে শিনু হয়ে উঠেছে এই বাড়ির একজন। আরাধ্যও তাকে বেশ ভালোবাসে। একেবারে নিজের বোনের আসনে বসিয়েছে। শিনুও খুব অল্পদিনের মাঝেই সবাইকে এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে আপন করে ফেলেছিল যে, তাদেরও পাল্টা না ভালোবেসে উপায় ছিল না।

#চলবে!

চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘর পর্ব-০২

0

#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#ফিজা_সিদ্দিকী
#পর্ব_২(বউয়ের রাগ না ভাঙ্গাতে পারলে কিসের পুরুষ মানুষ!)

“হেই মিস হাওয়াই মিঠাই, আপনার পাশে বসলে গলে যাবেন না তো!”

লোকাল বাসের জনসমাগমের মাঝে হুট করেই কিঞ্চিৎ পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে ওঠে শ্রেষ্ঠা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে সাথে সাথেই বিরক্তিতে চ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে। অতঃপর নিঃশব্দে চোখ রাখে জানালা হতে বাইরে। কিছুক্ষন পর পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়েও আগের মতোই নিঃশব্দে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বোঁজে শ্রেষ্ঠা। কানে ভেসে আসছে কন্ট্রাক্টরের তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর, বাসের মধ্যে মানুষজনের চেঁচামেচির শব্দ। তবুও শান্ত ভঙ্গিতে নিরব হয়ে বসে আছে সে। আচমকা কিছু একটা অনুভব হতেই চকিতে চোখ খুলে পাশে তাকায় শ্রেষ্ঠা। অচেনা এক মুখের আদল। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। পাশে বসা চল্লিশোর্ধ বয়সের পুরুষ মানুষটা ক্রমাগত নোংরাভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে তাকে। রুদ্ধশ্বাসে আশেপাশে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে কিছু বলার চেষ্টা করে। তৎক্ষনাৎ পাশে বসে থাকা মানুষটা হাতের কনুই হতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে কুটিল হেসে মিহি কণ্ঠে বলে ওঠে,

“লাভ নেই। গলা থেকে আওয়াজ বের হলে ক্ষতিটা তোমারই হবে। তুমি একা আর আমরা চারজন। বাড়িতে ফেরার মতো অবস্থায় থাকবে কিনা সন্দেহ।”

ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে শ্রেষ্ঠার। ব্যথায় চোখ থেকে পানি আসার উপক্রম। না পারছে কাউকে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে চেয়েও অস্ফুটস্বরে মুখ থেকে বের হয়ে যায় ব্যাথাতুর শব্দ। টলমলে চোখে অন্যপাশে তাকিয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায় সে। কিন্তু ফলাফল শুন্য। বলিষ্ঠ দেহের একজন পুরুষ মানুষের শক্তির সাথে পেরে ওঠা প্রায় অবসম্ভব এক ব্যাপার। তবুও মনের জোরে নীরব যুদ্ধ আর খানিক নিশ্চল ধস্তাধস্তি চলতে থাকে দুজনের মাঝে। হটাৎ পিছনে চোখ ঘোরাতেই শ্রেষ্ঠার চোখাচোখি হয় আরাধ্যর সাথে। তার থেকে খানিকটা দূরে বাসের লম্বা লোহার দন্ড ধরে ঝুলে দাঁড়িয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই করুন চোখে তাকায় শ্রেষ্ঠা। শ্রেষ্ঠার করুণ চাহনী দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আরাধ্য। যেনো বাঘিনীর হুট করে ভেজা বিড়াল হয়ে ওঠার মতো দৃশ্য। সন্ধিহান চোখে আরাধ্য একপলক তাকায় পাশে বসে থাকা লোকটার দিকে। অতঃপর এগিয়ে এসে মুখোমুখি দাঁড়ায় দুজনের। আরাধ্যকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে মনে মনে ভরসা পায় শ্রেষ্ঠা। কণ্ঠে খানিকটা মাধুরী মিশিয়ে বলে ওঠে,

“এখানে এসে বসুন প্লিজ!”

“তুমি না একটু আগে বসতে না করলে!”

“কখন না করলাম?”

“হ্যা ও তো বলোনি!”

“এখন বলছি তো।”

শ্রেষ্ঠার করুন চোখের দিকে তাকিয়ে ঘটনাটা আগেই খানিকটা আন্দাজ করে ফেলেছিলো আরাধ্য। এতক্ষন শ্রেষ্ঠার সাথে কথা বলার মাঝে লোকটার গতিবিধি খেয়াল করতেই ব্যাপারটা পুরোপুরি স্পষ্ট হলো তার কাছে। অতিরিক্ত রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলে আরাধ্য।

“লোকটা আমাকে বাজেভাবে টাচ করছে বারবার। আমি কিছু বলতে চাইলে তাদের পুরো গ্যাং নিয়ে আমাকে রেপ করার হুমকি দিয়েছে। প্লীজ কিছু একটা করুন। ঝামেলা না করে ওনাকে এখান থেকে উঠিয়ে আপনি এসে বসুন, প্লীইইইজ।”

শ্রেষ্ঠার পাঠানো মেসেজ দেখে রাগে শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আরাধ্যর। ঘৃণায় ধিৎকার দিতে ইচ্ছে করছে লোকটাকে। চোখ গরম করে বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। কিন্ত তার সেদিকে কোনো হেলদোল নেই। সে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মতো কাজে ব্যস্ত। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে আরাধ্য বিনয়ী ভঙ্গিতে বলে ওঠে,

“চাচা, একটু উঠুন তো। আমি বসবো।”

“আজব তো! আমি কেনো উঠবো? অন্য জায়গায় গিয়ে বসো, যাও।”

“আরে চাচা, বুঝছেন না কেনো বউ রাগ করেছে। বউয়ের রাগ না ভাঙ্গাতে পারলে আমি কিসের পুরুষ মানুষ বলুন! আপনিও নিশ্চয়ই একজন সঠিক পুরুষ! কোনো গন্ডগোল নেই। তাই আমি জানি আপনি আমার ব্যাপারটা বুঝবেন।”

আরাধ্যর মশকরা ধাঁচের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় লোকটা। কথার জালে এমনভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে যে না উঠে উপায় নেই। নয়তো পুরুষত্বে খুঁত ধরবে। অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ মুখ কুঁচকে উঠে দাঁড়ায় সে।

“ধন্যবাদ চাচা। আপনার যে পুরুষত্বে কোনো সমস্যা নেই এটা বুঝে গেছি। চাচী জোস একটা মানুষ পেয়েছে। একেবারে ধোয়া তুলসিপাতা।”

প্রতিউত্তরে ক্যাবলাকান্তের মতো হাসে লোকটা। আরাধ্যর মন চাইছে এক ধাক্কায় চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিতে তাকে। কিন্তু শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠার নিরাপত্তার জন্য অনেককিছু করতে চেয়েও করতে পারছেনা সে।

লোকটা উঠে যেতেই শ্রেষ্ঠার পাশে আয়েশ করে বসে আরাধ্য। অতঃপর ডানহাত দিয়ে ঘাড় ম্যাসাজ করতে করতে ফিচেল কণ্ঠে বলে ওঠে,

“আমাকে বিশ্বাস করছো তবে! যদি খারাপ কিছু করে বসি!”

“গলা চেপে মেরে দেবো।”

“বাহ! আমার বেলায় শুধু এই নিয়ম। অথচ ওই লোকটাকে ঠিকই যেতে দিলে।”

“এক মিনিট, আপনি ওই লোকটার সামনে কি বললেন! বউ! মিথ্যে কেনো বললেন?”

“তবে সত্যিটা বলে দিতে বলছো! আচ্ছা দাড়াও বলে আসি।”

“এই না না, থাক কিছু বলতে হবেনা।”

” তার মানে নিজেকে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছ!”

আরাধ্যর কথার প্রেক্ষিতে মুখ ভেংচি কেটে খানিকটা ভাব নিয়ে শ্রেষ্ঠা বলে ওঠে,

“হ্যান্ডসাম না ছাই।”

“আমার নম্বর কিভাবে পেলে?”

নিরলস ভঙ্গিতে জানালায় মুখ ঠেকায় শ্রেষ্ঠা। অতঃপর স্পষ্ট কণ্ঠে বলে, “অনেক আগে থেকেই আমার কাছে ছিলো। আপনার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু কখনও আগ্রহ কিংবা প্রয়োজনবোধ করিনি, তাই ইউজ করা হয়নি।”

৩.

ডাইভিং সিটের পাশে কপাল একহাত ঠেকিয়ে বসে আছে আরাধ্য। ড্রাইভ করছে নির্ঝর। কর্মসূত্রে আরাধ্যর সেক্রেটারি হলেও দুজনের মাঝে সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ন। নির্ঝরের বাবা খাঁন ইন্ডাস্ট্রির একজন সাধারণ এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। সেই সূত্রে ছোটো থেকেই দুজনের একসাথে খেলাধূলা ও বড়ো হয়ে ওঠা। একসাথে কলেজ কমপ্লিট করে আরাধ্যকে এম.বি.এ কমপ্লিট করার জন্য জোর করে বিদেশে পাঠান আনিসুল খাঁন। বাবার পীড়াপীড়িতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিদেশে যায় আরাধ্য। আর নির্ঝর ইন্ডিয়া থেকেই নিজের পড়াশোনা শেষ করে খাঁন ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করে।

বিজনেস সম্পর্কিত কিছু আলোচনা করতে করতে নির্ঝর আর আরাধ্য একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে যাচ্ছিলো। আচমকা চার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে তাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ে। দ্রুতবেগে ব্রেক কষে নির্ঝর। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে যে কিছু বুঝে ওঠার আগে আরাধ্যর মাথা ঠুকে যায় ডেস্কের সাথে। নির্ঝরের নিম্ন গতিতে ড্রাইভ সম্পর্কে অগবত হাওয়ায়, স্বভাবতই সিটবেল্ট না লাগিয়েই বসেছিলো আরাধ্য। তাই আচমকা ব্রেক কষার ফলে নিজেকে সামলানোর সুযোগ পায়নি সে। ফলস্বরূপ কপালের বামপাশে খানিকটা চোট পায়।

বাচ্চা মেয়েটাকে রাস্তায় বসে কান্না করতে দেখে দুজনে দৌড়ে যায় তার কাছে। খুব বেশি না লাগলেও হাতের কিছুটা অংশ আর পায়ের হাঁটুতে খানিকটা ছিলে গেছে। পড়ে গিয়ে সেই অবস্থায় বসেই কান্না করছে মেয়েটা। মেয়েটার মুখের আদল কি মায়াবী। খুব যেনো চেনা চেনা লাগছে আরাধ্যর কাছে। কারোর সাথে যেনো ভীষণ মিল এই মুখের। যাকে সে চেনে, খুব ভালো করেই চেনে। মস্তিষ্কে খানিকটা চাপ দিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করলো আরাধ্য। তবুও মেয়েটাকে এতো কেনো চেনা চেনা লাগে সে বুঝে উঠতে পারছে না।

“একটা সুইট কিউট মেয়ে বসে বসে কান্না করছে, আর তুমি চুপ করে দেখছো! খুব পতা আঙ্কেল তো তুমি!”

বাচ্চাটার কথা শুনে ধ্যানভঙ্গ হয় আরাধ্যর। মুখে দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বলে ওঠে,

“এভাবে কেউ রাস্তা দিয়ে দৌড়ায়? তোমার জন্য তো আঙ্কেলও ব্যথা পেয়েছে মামনি! এইযে দেখো!”

“তুমি বেশি ব্যথা পেয়েছো নাকি আমি? দেখো এখানে ব্যাথা পেয়েছি, এখানে ব্যথা পেয়েছি, এখানেও লেগেছে। সব জায়গায় ব্যথা পেয়েছি।”

কান্না করতে করতে নাক টেনে টেনে বলা বাচ্চাটার কথায় না হেসে পারলো না নির্ঝর। মিটি মিটি হাসছে আরাধ্যও। তবে তা প্রকাশ করলো না। এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে কথার দিক থেকে বেশ পাকাপোক্ত বটে। তবে বাচ্চাদের পাকা পাকা কথাগুলো বেশ লাগে।

গাড়ি পার্ক করা আছে স্কুলের মাঠে। ব্যাকসিটে বসে শ্রেয়ার ব্যথা পাওয়া যায়গাগুলো তুলো দিয়ে পরিষ্কার করছে আরাধ্য। খানিকটা সময়ের পরিচয়ে বেশ অনেকটা কথা হয়েছে দুজনের। সেই প্রেক্ষিতেই আরাধ্য জেনেছে মেয়েটার নাম শ্রেয়া। তুলো দিয়ে খুব সাবধানে যত্ন সহকারে শ্রেয়ার ব্যাথাতুর অংশগুলো পরিষ্কার করে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দেয় আরাধ্য। কান্না করতে করতে চোখ,নাক, মুখ লাল হয়ে ফুলে গেছে শ্রেয়ার। এখন আরো বেশি মায়া মায়া লাগছে তার। আরাধ্য বাচ্চাদের সান্নিধ্য বেশ উপভোগ করে। এজন্য অল্প সময়েই বেশ ভাব জমে যায় শ্রেয়ার সাথে।

“আমিও তোমাকে ওষুধ লাগিয়ে দিই আংকেল?”

“নাহ মামনি, আমি পরে লাগিয়ে নেবো।”

“পরে কেনো লাগাবে? আমি না তোমাকে ব্যথা দিয়েছি! তাই আমিই ওষুধ লাগিয়ে দেবো। নাহলে এখানেই বসে থাকবো আমি, কোথাও যাবনা।”

শ্রেয়ার মিষ্টি আবদারে সম্মতি না দিয়ে পারেনা আরাধ্য। অতঃপর শ্রেয়া তার ছোটো ছোটো হাত দিয়ে আস্তে আস্তে রক্ত মুছে ওষুধ লাগিয়ে দেয় আরাধ্যর কপালে। এরপর ছোটো একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেড লাগিয়ে দেয় সেখানে। ইতিমধ্যে নির্ঝর এসে দাঁড়ায় গাড়ির কাছে। শ্রেয়ার সান্নিধ্য আরাধ্য বেশ উপভোগ করছে, তা আর বুঝতে বাকি নেই নির্ঝরের। তার ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। মেয়েটা আসলেই ভীষণ আদুরে। নাহলে এতো অল্প সময়ে আরাধ্যর মতো মানুষের মনে জায়গা করে ফেলতে পারতো না। বেশ কিছুটা সময় নিঃশব্দে বাইরে দাঁড়িয়ে আরাধ্য আর শ্রেয়াকে একান্তে খানিকটা সময় উপভোগ করতে দেয় নির্ঝর। অতঃপর হাতের জিনিসগুলো নিয়ে এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে।

“এইযে পুচকে, নাও তোমার আচার। কতো খুঁজে খুঁজে নিয়ে এলাম।”

নির্ঝরের কথায় চোখ ঘুরিয়ে তাকায় শ্রেয়া। অতঃপর ছোঁ মেরে আচারের প্যাকেট নিয়ে তেজী কণ্ঠে নাক ফুলিয়ে বলে ওঠে,

“একদম পুচকে বলবে না আমাকে। নাহলে এই যে সুন্দর সুন্দর দাঁত দেখছো না! এগুলো দিয়ে কুটুস করে কামড়ে নেবো।”

কথাটুকু বলে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ক্লাসের দিকে চলে যায় শ্রেয়া। পথিমধ্যে একবার পিছন ঘুরে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে টাটা দেয় আরাধ্যকে। শ্রেয়া চলে যেতেই হো হো করে হেঁসে ওঠে আরাধ্য। নির্ঝর চোখ ছোটো ছোটো করে তাকায় তার দিকে। যার অর্থ এতো হাসার মতো কী এমন হলো! মূলত আচার বিক্রেতা এক লোককে দেখেই রাস্তার ওপারে দৌড়ে যাচ্ছিলো শ্রেয়া। ফলে অসাবধানবসত সেইসময় আরাধ্যর গাড়ির সামনে এসে পড়ে সে। ভাবনার মাঝে স্কুল গেট দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরাধ্য। মানুষটাকে এখানে দেখে বেশ খানিকটা সন্দিহান চোখে তার গতিবিধি লক্ষ্য করে সে।

#চলবে!

চিলেকোঠার ভাঙ্গা ঘর পর্ব-০১

0

#চিলেকোঠার_ভাঙ্গা_ঘর
#ফিজা_সিদ্দিকী
#সূচনা_পর্ব

১.
“এমন ফকফকা সাদা মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

পাত্রী দেখতে এসে আরাধ্যর এহেন চড়া কণ্ঠের রুষ্ঠ বাক্যে হতবিহ্বল সকলে। হইহুল্লোড়ে ভরপুর পরিবেশ হুট করেই ছেয়ে গেল নিস্তব্ধতায়। বুকের মধ্যে দামামা বাজানোর মতো শব্দ হচ্ছে শ্রেষ্ঠার। তবুও সে নির্বাক। নতশিরে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মেঝের দিকে। যেনো এই মূহুর্তে তার একমাত্র কাজ মেঝেতে পড়ে থাকা প্রতিটা অনু পরমাণু থেকে শুরু করে জীবাণুদের পর্যবেক্ষণ করা। দুই পরিবারের মাঝে ছোটোখাটো একটা যুদ্ধ লেগে যেতেই নিঃশব্দে বসার ঘর থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে যায় শ্রেষ্ঠা। ভাবখানা এমন, যেনো এই মূহুর্তে তার পিছনে ফেলে আসা বসার ঘরটায় কিছুই হয়নি। সবটাই সরল, স্বাভাবিক।

“অভদ্রতামি করবিনা আরাধ্য। সেই কবে থেকে মেয়েটাকে পছন্দ আমাদের। শুধু তোর ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম। এখন পুরো পাড়া জানাজানি হয়ে গেছে এই ব্যাপারে। এই মূহুর্তে তুই এই বিয়ে থেকে সরে আসতে পারিস না। এটা অন্যায়।”

“সিরিয়াসলি মা! এটা অন্যায়! পছন্দ না হলে জোর করে বিয়ে করে নেবো! তুমি আমাকে এমনটাই বলছো তবে!”

ফোঁস করে শ্বাস ছাড়েন আরোহী খাঁন। আরাধ্যর জেদ সম্পর্কে অবগত তিনি। কিন্তু মেয়েটার সাথে হওয়া অন্যায়ও মেনে নিতে পারছেন না। অতঃপর বিনয়ী ভঙ্গিতে তাকান সামনের সোফায় বসে থাকা শিমূল নিহারের দিকে। তৎক্ষনাৎ খ্যাক করে ওঠেন শিমূল নিহার। পাত্রপক্ষের মতিগতি বুঝতে তার আর বাকি নেই।

“না চাইলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনার ছেলের ভদ্রতার যথেষ্ট অভাব আছে। বিয়ে দেওয়ার চেয়ে তাকে সুশিক্ষা আর ভদ্রতা শেখানো উচিৎ আগে।”

রাগে কপাল কুঁচকে ফেলেন আরোহী খাঁন। আরাধ্যকে ভীষণ ভালোবাসেন তিনি। বাইরের কোনো মানুষের কাছ থেকে তার সম্পর্কে এহেন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন তিনি। অতঃপর দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠেন,

“একদম ফালতু কথা বলবেন নাহ। পাত্রপক্ষকে বাড়িতে ডেকে, যেচে অপমান করা মানুষদের পারিবারিক শিক্ষা কেমন হতে পারে বুঝতে আর বাকি নেই আমার। আমার ছেলে চাইলেও এই বিয়ে হতে দেবো না আমি আর।”

মুহুর্তের শীতল পরিবেশ আরও একবার গমগমে হয়ে উঠলো দুই নারীর কথা কাটাকাটিতে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেলে আরাধ্য। অতঃপর কাউকে কিছু না বলে হুট করেই বসার ঘর থেকে উঠে যায় সে। বসার ঘর পেরিয়ে আরও দুটো রুম পার হয়ে তৃতীয় রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা হালকা ভেজানো। আরাধ্য হালকা ধাক্কা দেয় দরজায়, অতঃপর রুমের মধ্যে ঢুকেই হুট করে লক করে দেয় ভেতরে থেকে। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় শ্রেষ্ঠা। আচানক এহেন আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। বিয়ের ব্যাপারটা মিটমাট করার জন্যই তো বসার ঘর ছেড়ে উঠে এসেছে সে! তবে সদ্য সাক্ষাৎ হওয়া এই ছেলে তার রুমে কেনো! আবার ভেতর থেকে লকই বা করলো কেনো!

“মিষ্টার আরাধ্য, যতদূর জানি আপনি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। অন্তত এতদিন পর্যন্ত সেই ধারনাই ছিলো। কিন্ত আজকের একের পর এক প্রত্যেকটা ব্যবহার প্রমাণ দিচ্ছে অন্যকিছুর। আশা করছি, নিজের সাথে সাথে পরিবারের মাথা হেঁট হওয়ার কারণ হতে চাইবেন না। ভদ্রভাবে বলছি, রুম থেকে বের হয়ে যান।”

“আপনাকে আমার সিগারেটের মতো লেগেছে। একেবারে নেশা নেশা। দুই ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরে রাখতেই মন চায় যেনো। ঠোঁটের ভাঁজ থেকে উন্মুক্ত করবো শুধু ফু দেওয়ার জন্য। একটা শেষ হলে আর একটা, সেটা শেষ হলে আরও একখানা জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধরে রাখার মতো। ইশ কী যেন এক নেশায় বুঁদ আমি।”

আরাধ্যর কথায় বেকুব বনে যায় শ্রেষ্ঠা। কিছুক্ষন আগেই তো এই ছেলেটা তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলো! মূহুর্তের মাঝে এমন পল্টিবাজ লোকের দর্শনটাও বোধহয় এবার হয়েই গেলো। ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাঁসি ফুটে ওঠে শ্রেষ্ঠার।

“এমন কিছু বলবো আশা করছিলে নিশ্চয়ই! হাহ! মেয়ে জাতিটাই হলো এমন। ন্যাকামো করে কয়েকটা কথা বললেই গলে যায়। যেনো হাওয়াই মিঠাই! দুইদিনের প্রেমের দুই চারটে মিষ্টি কথায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে হোটেল পর্যন্ত চলে যায়। রেডিকিউলাস!”

এতক্ষন বহু কষ্টে নিজের রাগ সংবরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল শ্রেষ্ঠা। কিন্তু আরাধ্যর শেষোক্ত কথায় রাগে শরীর কাঁপতে থাকে তার। চোখ বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে নিজেকে ধাতস্থ করে সে। অতঃপর তীক্ষ্ণ চোখে সরাসরি তাকায় আরাধ্যর দিকে। তার চাহনিতে কী ছিল জানা নেই, তবে আরাধ্যর বুক কেঁপে ওঠে। চনমনে দৃষ্টিতে তাকায় এদিক সেদিক।

“মিস্টার আরাধ্য, আমি কিন্তু কারোর বেডরুমে যাইনি। এমনকি কারোর পারমিশন ছাড়া সেই রুমের দরজা লক করে একটা অভদ্র, আনকালচার, ইম্যাচিওর, তথাকথিত শিক্ষায় শিক্ষিত, মানুষের সাথে কথা বলার আদব জ্ঞ্যানহীন পুরুষের সাথে বার্তালাপ শুরু করিনি। এমনকি তারই বাড়িতে দাঁড়িয়ে তাকে অপদস্তও করিনি। এবার নিশ্চয়ই কে কাকে কিভাবে বিলিয়ে দিচ্ছে, হোটেলে নাকি একটা মেয়ের বেডরুমে, সেই সংজ্ঞাটা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয়নি!”

শ্রেষ্ঠার বলা প্রতিটা শব্দে ছিলো তীব্র অপমানের রেশ। প্রতিটা শব্দ যেনো খুব নিখুঁতভাবে তীরের ন্যায় ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে আরাধ্যর দিকে। রাগে শরীরের প্রতিটা রোমকূপ খাড়া হয়ে ওঠে তার। অথচ দাঁতে দাঁত চেপে তা নিঃসংকোচে গিলে ফেলে আরাধ্য। পরিবর্তে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,

“চলুন বিয়েটা বরং সেরে ফেলি। দুইমাস ট্রায়াল দেওয়ার পর যদি পছন্দ না হয়, ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন। ওহ হ্যা, আপনার খরচের চিন্তা করতে হবেনা। প্রতি মাসে একটা মোটা অঙ্কের টাকা ঠিকই পেয়ে যাবেন।”

“আমার এতটাও দুর্দিন আসেনি, যে আপনার মতো একটা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষকে বিয়ে করতে যাবো। এই মূহুর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান। নইলে এতক্ষন ধরে করা একের পর এক বেয়াদবির জবাব কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে নিতে এই শ্রেষ্ঠা তালুকদার খুব ভালো ভাবেই জানে।”

চারপাশ শুনশান, নিরবতায় আচ্ছন্ন। রাতের অন্তিমপ্রহর চলছে। অথচ নির্ঘুম আরাধ্য। আজকের ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনা কিছুতেই মাথা থেকে মুছে ফেলতে পারছে না সে। রাগে সাঁপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে। কখনও এপাশ তো কখনো ওপাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে উঠে বসে। রাগে হাতের বালিশটা ছুঁড়ে মারে দূরে। এতোখানি অপমান আজ পর্যন্ত কেউ তাকে করেনি। এমনকি বহু বিদেশিনী মেয়ে তার সাথে লিভইন রিলেশনে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে থাকতো। অথচ মেয়েদের প্রতি তীব্র ঘৃণা আরাধ্যর। আরোহী খাঁন ছাড়া পৃথিবীর কোনো নারীকেই সহ্য হয়না তার। বিয়েতেও একমাত্র মায়ের জোরাজোরিতে রাজি হয়েছিলো সে।

২.

চাকরির ইন্টারভিউ এর জন্য রেডি হচ্ছে শ্রেষ্ঠা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্পাপ ভাসা ভাসা একজোড়া চোখ পলকহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে। হটাৎ আয়নায় চোখ পড়ে শ্রেষ্ঠার। শ্রেয়াকে এভাবে পলকহীন তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শব্দ করে হেসে ফেলে সে। হাতের ঘড়ির বেল্টটা লাগাতে লাগাতে পিছন ফিরে কোলে তুলে নেয় শ্রেয়াকে। আদুরে গলায় বলে,

“মানিকে আজকে খুব পচা লাগছে বুঝি! শ্রেয়া মামনি এভাবে তাকিয়ে আছে যে!”

“এম্মা, মানি তো প্রিন্সেস। প্রিন্সেসকে কি কখনো খারাপ লাগে নাকি? আমিও বড়ো হয়ে তোমার মতো প্রিন্সেস হবো। কার্টুনের প্রিন্সেসের মতো মিত্তি মিত্তি লাগে তোমাকে।”

“একদম নাহ বাচ্চা। প্রিন্সেসদের জীবন অনেক ভয়াবহ হয়। তোকে সুন্দর হতে দেবো না আমি। একটুও সুন্দর হবি না তুই। এই দুনিয়ায় সৌন্দর্য্য নিয়ে জন্ম নেওয়া পাপ, মহাপাপ। আমার মতো ভয়ংকর জীবনে আমি তোকে কখনও ঠেলে দেবোনা। প্রয়োজনে কালি মাখিয়ে রাখবো তাও ভালো।”

“এইটুকু বাচ্চা একটা মেয়েকে কিসব শেখাচ্ছিস তুই শ্রেষ্ঠা। পাগল হলি নাকি!”

শিমূল নিহারের কণ্ঠস্বর শুনে শ্রেয়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় শ্রেষ্ঠা। পিছন ফিরে সন্তর্পনে মুছে ফেলে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকনা। অতঃপর মুখে মেকি হাসি বজায় দেখে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,

“তোমাদের পছন্দের পাত্রের কী খবর মা? শেষমেষ এই বিয়েটাও ক্যান্সেল তবে!”

“কথা ঘোরাচ্ছিস কেনো? আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলাম।”

“সেসব প্রশ্নের উত্তর বোধহয় আমার চেয়ে ভালো জানা তোমাদের। অহেতুক কেনো একই প্রশ্ন করো?”

“তাই বলে এই বাচ্চা মেয়েটাকে এসব বলবি তুই!”

“ও যে ওর মায়ের মতোই রূপসী হয়েছে মা! ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে যদি কপালটাও মায়ের মতোই হয়!”

“এমন একটা ভাব করিস যেনো শ্রেয়া তোরই মেয়ে। এভাবে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করার কোনো মানে হয়না। আশপাশের মানুষজন ছিঃ ছিঃ করে, সেদিকে কি কোনো খেয়াল আছে?”

ব্যাগে ফাইলপত্র গোছাতে গোছাতে বাঁকা চোখে শিমুল নিহারের দিকে তাকায় শ্রেষ্ঠা। অতঃপর কণ্ঠে তাচ্ছিল্যভাব ফুটিয়ে তুলে বলে,

“আর কতকাল সমাজের জন্য আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে? অনেক তো হারালে! এবার অন্তত নিজের জন্য বাঁচো, আমাদের জন্য ভালো থাকো। কালকে তো তোমাদের পছন্দ করা ছেলেকে আমি শ্রেয়ার ব্যাপারে কিছু বলিনি। তাও তো বিয়েটা ভাঙলো। এবার নাহয় এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা বন্ধ করো। আমি সত্যিই ক্লান্ত। শ্রেয়া আমার মেয়ে, ওকে আমি সেই পরিচয়েই বড়ো করবো, এতে কেউ আমার পাশে থাকুক বা না থাকুক।”

#চলবে!

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#অন্তিম_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা

প্রিয়তা এক দৃষ্টিতে চাঁদ হীন আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।
এখন অবশ্য চাঁদ থাকলেও দেখা যেতো না এতো উঁচু উঁচু দালানের ফাকে বেলকনি হতে চাঁদ দেখা বিলাসিতা বই কিছুই না।যেমন টা এখন সাদনান নামক পুরুষ টার দেখাও খুব কমই পাওয়া যায়।
কিন্তু আকাশ টা একটু একটু দেখা যাচ্ছে।
ঠিক প্রিয়তাও সাদনানের এভাবে একটু একটু রোজ সকালে দেখা পায়।

কিছু তাঁরা মিটমিট করেছে।
ঠিক প্রিয়তার মনটাও মিটমিট করছে।কখন প্রিয় পুরুষটার দেখা পাবে।

রাত হয়তো বারো টার কোঠা পেড়িয়েছে।
আজও সাদনান দেড়ি কি করে করতে পারে প্রিয়তা সেটা ভেবেই মন টা খারাপ হচ্ছে বেশি। আজ বিয়ের দু বছরেও সাদনান আগের মতো এখনো লেট করে বাড়ি ফেরা।যদিও এখন আর হুটহাট কোথাও যায় না। আর গেলো জানিয়ে যায়। এখন অবশ্য সাদনান রা ঢাকা থাকে ওদের যে বাড়ি টা আছে সেখানে।
তবে সাদনান আর প্রিয়তা আগের নেয় সাদনানের সঙ্গে সাদনানের অফিসের সুবিধারতে আগের ফ্ল্যাট এ থাকে।
প্রিয়তার ছোট্ট মনটা অনেক অভিযোগ, অভিমান জমা হয়েছে এই দু বছরে।
তবে এই অভিযোগ সাদনানের শোনার সময় কোথা? অভিমান সেটাই বা দেখার সময় কোথায়? সে তো বিজনেস টপ করে এখন আরো বড় বড় কোম্পানির সাথে দেশের বাহিরেও ডিল,মিটিং, এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
তবে সাদনান নিজেও বেশ অনুতপ্ত। বউয়ের প্রতি এমন হেলাফেলা সে করতে চায় না। তবে সাদনান চেয়েও যেনো কিছু করতে ব্যর্থ।

প্রিয়তার এখন ঢাকা একটা ভার্সিটিতে পড়ে।সারাও কুমিল্লা একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। রাহানের বাবা মা ওর বোনের কাছে দেশের বাহিরে আছে এখন।আর মাইশার একটা ছেলে আছে।নাম মিশান চৌধুরী। এক বছর চলে।
দেখতে অনেক মিষ্টি। আয়না আর রাহাত ইনিয়া কে নিয়ে আর দেশে আসে নি।ওখানেই নিজেদের পরিচয় করেছে।
আজমল চৌধুরী কেও লন্ডন নিয়েছে।
আজমল চৌধুরী অসুস্থ তাই ওখানে ওনার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।
আয়ান আর মাইশা আজমল চৌধুরী সাথে দুবার লন্ডন গিয়ে দেখা করে এসছে।

সাদনানের বাবা মাও হজ করতে গিয়েছে। মূলত সেই জন্যই এখন সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে ওদের অফিসের কাছে ফ্ল্যাট এ রয়েছে।

প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতেই বেলকনিতে সোফায় বসে।
তবে আজ যত রাতেই হোক প্রিয়তা সাদনানের সঙ্গে কথা বলবে।
আর একটা আবদারও করবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রুমে এসে ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর দেয়।
একটা বাজতে আর বেশি সময় নেই।
বিয়ের দু টি বছর আজ শেষ হয়ে তিনে পা দিলো।
গত বছর সাদনান বেশ ঘটা করে বউ কে নিয়ে বিবাহ বার্ষিকী পালন করেছে।
কিন্তু এবার কোনো খবর পযন্ত নেই।

প্রিয়তা আলমারি খোলে বিয়ের কিছু ফটো দেখে। তার পর সে গুলো রেখে দিয়ে আলমারি টা বন্ধ করতে গিয়ে একটা কিছু ভেবেই মিষ্টি কালারের একটা শাড়ী হাতে তোলে নেয়।
শাড়ী টা দেখতে বেশ সুন্দর। শাড়ী টা সোনালী বর্ণের সুতু দিয়ে মিষ্টি কালারের উপর কাজ করা কি সুন্দর ফুটে আছে।
এটা গত বছর সাদনান উপহার দিয়েছিল প্রিয়তা কে।
তবে এক বার পড়ে শুধু বাবা বাড়ি গিয়েছে প্রিয়তা।
আর কখনো ধরেও দেখা হয়নি।
মুলত এতো এতো শাড়ী ভিড়ে নিতান্তই তুচ্ছ বলা চলে শাড়ী টাকে ।
কারণ সাদনান প্রিয়তা কে সাপ্তাহ বা মার্কেট গেলেই শাড়ি কি দেয়।
প্রিয়তা বাসায়ও শাড়ী পড়ে থাকতে হয়।
আর এটা সাদনানের আদেশ।
এই শাড়ী পড়ে থাকার আইন টা সাদনান নিজে করলেও
তবে এখন সাদনানের সে সব দেখার সময় কোথায়?

—————–

-“সাদনান ভাই।আপনি বরং এখন রুমে চলে যান
বাকি টা আমরা সবাই মিলে সামলে নেবো।”

সাদনান লাইটিং এর কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে একটা ছেলে কে।
ঠিক তখুনি মাইশা কথা টা বলে।
আয়ানও এগিয়ে আসে রাহান, সারাও আসে।

-“হ্যাঁ ভাইয়া তুমি গিয়ে প্রিয়তা কে দেখো।
মহারানী নিশ্চয়ই রেগে আছে। ”

-“আচ্ছা। ”

সারার কথায় সাদনান ছোট জবাব দেয়।
অতঃপর ছাঁদ হতে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
প্রিয়তা শাড়ী টা বিছানায় রেখে এটার সব প্রয়োজনী জিনিস বের করেছিল।
আর ঠিক তখনি বলিষ্ঠ শরীরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো কোমরে।
প্রিয়তা চোখ জোরা বন্ধ করতেই টুপ করে এক ফোঁটা জল চোখ হতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো।
এই স্পর্শ যে ওর পরিচিত। অতি কাছের ভালোবাসার মানুষটার স্পর্শ।

সাদনান ততক্ষণে বউ কে নিজের দিকে ঘুরি নিয়েছে।

-“সরি সোনা৷”

বলতে বলতে সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে।

প্রিয়তা কিছু বলে না। নিজেও জড়িয়ে ধরে স্বামী কে।প্রিয়তা জানে সাদনান ইচ্ছে করে এমন করে না। কিন্তু তবুও মন টা কেন যেনো মানতে নারাজ।
সব সময় অভিমান, অভিযোগ করতে ব্যস্ত থাকে।

-“চলো রেডি হয়ে নেও।”

দুটি পেকেট বিছানায় রাখতে রাখতে বলে সাদনান।

প্রিয়তা জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকায় সাদনানের পানে।

সাদনান সে সব উপেক্ষা করেই আলমারি থেকে সব নামিয়ে রাখা শাড়ীর সাথে প্রয়োজন সব প্রিয়তার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
তার পর নিজেও সার্ট পেন্ট পাল্টে পাজামা পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নেয়।
সাদনান রেডি হয়ে চুল আঁচড়ে পিছনে ফিরে দেখলো প্রিয়তা শরীর তোয়ালে জড়িয়ে দৃষ্টি নত রেখেই কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদনান মুচকি হাসে।এখন প্রিয়তা নিজে শাড়ী পড়তে পারে।
তবে আজ সাদনান আগের মতো করে নিজে পড়িয়ে দিবে।
কিন্তু আগে চোখ বন্ধ করে পড়াতো।
আজ চোখ খোলা রেখেই পড়াবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই সাদনান বিছানায় রাখা শপিং ব্যাগ টা হাতে নেয় তার পর সে টার ভিতর থেকে একটা সাদা আর মিষ্টি কালার সংমিশ্রণ এর শাড়ী বের করে।

-“আপনি বাহিরে,,,

প্রিয়তা আর কিছু মুখ দিয়ে বের করতে পারে না। তার আগেই সাদনান প্রিয়তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছে।
প্রিয়তা দৃষ্টি আবারও নত করে।
সাদনান শাড়ী টা প্রিয়তার কোমরে গুঁজে দিতেই প্রিয়তা সাদনানের বাহু খামচে ধরে।
সাদনান অধর কামরে ধরে কিছু ভাবে। অতঃপর প্রিয়তা কে ছাড়িয়ে সুন্দর করে শাড়ি টা পড়িয়ে চুল গুলো খোলা রেখে হালকা করে সাজিয়ে দেয়।
প্রিয়তাও সাদনানের দিকে একবারও আর তাকায় নি। লজ্জা বেচারি রংধনুনেয় রং ধারণ করছে।
সাদনানও বুঝতে পারে বউ তার লজ্জা পাচ্ছে।
সাদনান চোখে হাসে। এই মেয়ে একটু আগে কি অভিমান টাই না করে ছিল। আর রাগও যে কি পরিমাণ জমা আছে আল্লাহ ভালো জানে।
কিন্তু এখন। সাদনান জানে বউ তার বড্ড সরল। কখনো মুখ দিয়ে ঝগড়া করে না। আর নাই সাদনানের সঙ্গে রাগ করে।বেশি কিছু আবদারও করে না।
শুধু কিছু কিছু ছোট ছোট চাওয়া আবদার আছে মেয়েটার। সময় দেওয়া। রোজ অফিস থেকে ফিরার সময় একটা বেলি ফুলের মালা।সাথে দুই একটা চকলেট বা আইসক্রিম।
সাদনান বউয়ের শখ আহ্লাদ পূরণ করে তবুও কাজের চাপের জন্য আজ বেশ অনেক দিন হয় বউয়ের সাথে সময় করে বেলকনিতে বসে এক কাপ চা বা কফি দুজনে একই কাপে ভাগ করে খাওয়া, না ফুল, নাই বা আইসক্রিম, কোনো টাই দিতে পারে না।
তবে এখন থেকে দিবে বলে ঠিক করেছে।
আর অফিস এখন ভালো পজিশনে আছে।আর তাদের অফিসের সঙ্গে সবাই ডিল করতে আসে এখন আর তাদের কোথাও যেতে হয় না।
সাদনান এই দু বছরে অনেক পরিশ্রম করে কোম্পানি কে এখানে এনেছে।
এই জন্যই বউয়ের সাথে দূরত্ব টা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছিল।
তবে এখন সব ঠিক করে নিবে।
সাদনান হালকা করে প্রিয়তার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগায় অতঃপর সেটা আগের স্থানে রেখে দিয়ে।
ঝুকে ঝট করে প্রিয়তা কোলে তোলে নেয়।
প্রিয়তা আকস্মিক চমকে উঠে। কিন্তু সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে ঠিক।

-“কোলে কেন নিচ্ছেন?আর এভাবে কোথায় যাব আমরা?”

-“যাওয়ার পর না হয় দেখে নিয়েন।আর কোনো প্রশ্ন
থাকলে যেখানে যাচ্ছি
সেখানে গেলে উত্তর পেয়ে যাবেন।”

সাদনান প্রিয়তা কে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠছে।

-“আরে আপনি এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
লিফটে দিয়ে যান।নয়তো আমাকে নামিয়ে দিন।”

ততক্ষণে সাদনান পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে উঠে এসছে।

-“আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করলে ছয় তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেবো।”

দাঁত কটমট করে বলে সাদনান।

-“আপনার কষ্ট হচ্ছে। ”

মলিন মুখ করে বলে প্রিয়তা।

-“আমি একবারও বলেছি?”

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন করে সাদনান কিন্তু প্রিয়তা ফটাফট উত্তর দেয়

-“না কিন্তু,,,

আর কিছু বলতে পারে না প্রিয়তা কারণ ওরা ছাঁদে চলে এসছে।
আর সামনে আয়ান, মাইশা,সারা,রাহান মিশান কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা বুঝতে পারছে না অবাক হবে না খুশি না-কি সাদনান এখনো ওকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে জন্য লজ্জা পাবে।

তবে সব সাইডে রেখে রাগ টাই হলো। ওরা কেউ আজ একটা ফোনও দেয় নি এমনকি এ বাসায় আসবে এটাও কেউ বলে নি। আর বেচারি প্রিয়তা রুমে বসে বসে কি কষ্ট টাই না পাচ্ছিল।
এখন কারোর সঙ্গে কথা বলবে না।কিন্তু প্রিয়তার সব ভুলে গেলো মিশানের আদোও আদোও বলা কন্ঠে কথার জালে।

-“তুমি কি আমার মতো ছোটো খালামনি?”

মিশানের কথায় সবাই ফিক করে হেসে দিল। প্রিয়তা রাগ ভুল অস্থিরতা আর লজ্জায় পড়ে গেলো।
সাদনানের দিকে তাকায়।
সাদনান বুঝলো বউ তার লজ্জা পাচ্ছে। তাই কোল হতে নামিয়ে দেয়।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে মিশাননকে কোলে নেয়।

-“না বাবা। তুমি কখনো এসছো মনি কে বলো নি কেন? সকালে তো কথা বলে ছিলে।”

-“মা না করছে।”

প্রিয়তা মাইশা আর সারা দিকে রাগি চোখে তাকাল।

-“আচ্ছা রাত তো অনেক হলো।চলো কেক টা কেটে নেও।”

-“হ্যাঁ,তার পর না হয় তারা তাদের মতো করে সময় কাটাবে।”

আয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে সারা তবে পরের কথা টা আস্তে করে বলে।প্রিয়তা আর মাইশা কাছে থাকায় শুধু দুজনেই শুনতে পেয়েছে।
প্রিয়তা সারার দিকে কটমট করে তাকালো তবে সারা সে সব উপেক্ষা করে এগিয়ে এসে মিশান কে কোলে নিয়ে কেকে এর কাছে চলে গেলো।
মাইশাও কেক টা সাজিয়ে নিলো।
তার পর কেক কাটে সবাই প্রিয়তা আর সাদনানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ওরা সবাই নিচে চলে যায়।রাহান সারা আজ আয়ানদের সাথে ওদের বাসায় চলে যাবে। বেশি দূরে না হওয়াতে সবাই ওখানেই থাকবে আজ রাতে।

সাদনান ছাঁদ টাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।লাইট, ফুল, বেলুন।
প্রিয়তা সব ঘুরে ঘুরে দেখছে।প্রিয়তা ভাবছিল সাদনান আজ-ও অফিসে কাজ করছে।কিন্তু সাদনান ওকে সারপ্রাইজ দিতে এতো সব করছিল।আর ও কিনা সাদনানের উপর রাগ অভিমান সব করে বসে ছিল।
ভেবে বেচারি প্রিয়তার মন টা একটু একটু খারাপ হলো।
কাঁধ শীতল ছোঁয়া পেতেই প্রিয়তা হালকা নড়েচড়ে উঠলো। সাদনান নিজের অধর ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে

-“এখানে কি আরো কিছুখন থাকবেন? ”

-“হুম আরোও একটু থাকি।”

সাদনান কিছু বলে না নিজেও বউ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
বেশ কিছু সময় নিরবতা কাটে।

-“রাত দুটো বাজতে বেশি সময় নেই। রুমে যাই? ”

-“আচ্ছা। ”

কথা টা বলেই প্রিয়তা পিছনে ফিরতে সাদনান আবারও বউ কে কোলে নিয়ে সোজা রুমে এসে পা দিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে।
তার পর মেইন দরজা আটকে এসে রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে বউয়ের পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তার গলায় মুখ ডুবিয়ে সেখানে ছোট ছোট চুমু আঁকে।

-“আমি একটা জিনিস চাই।”

সাদনান প্রিয়তার কথায় গলা হতে মুখ তোলে।
জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকায় বউয়ের দিকে।

-“আপনি যখন বাসায় থাকেন না। আমার বড্ড একা একা লাগে। আমি আপনার মতো একটা,,,

-“আল্লাহ চাইলে অবশ্য আসবে সোনা।”

কথা শেষ করে সাদনান বউয়ের অধরে শব্দ করে চুমু খেলো।
প্রিয়তাও আঁকড়ে ধরে সামনের পুরুষ টাকে।
দুটি মানুষের মন দেহ ভালোবাসা আদান-প্রদান ব্যস্ত হলো।

——————-

-“মিশান ভাই তুমি কেন বার বার আমার সব বন্ধুদের ভয় দেখাও? ”

-“তুই খুব ভালো করেই জানিস। আমি কাউ কে জবাবদিহি করতে পছন্দ করি না। ”

সায়রার করা প্রশ্নে মিশান বুকে হাত গুঁজে ভাব নিয়ে জবাব দেয়

-“আচ্ছা তোমাকে বলতে হবে না।
আমি মনির কাছে সব বলে দেবো।”

মিশান ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে

-“কি বলবি?”

-“বলবো তুমি আমার সাথে কাউ কে খেলতে দেও না।”

সায়রা কথা শেষ করে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই মিশান সায়রার হাত টেনে ধরে।

-“তুই আজ থেকে আমার সাথে খেলবি।আর তোকে আমি রোজ একটা করে চকলেট দেবো।
তাও মাকে বলবি?”

চার বছরের বাচ্চা সায়রা সাত বছরের মিশান এর এমন প্রস্তাবে খুশি মনে রাজি হয়ে গেলো।

-“কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?”

মিশানের কথা সায়রা ছোট হাসি খুশি মুখ টা নিমেষেই চুপসে গেলো।
বয়স চার হলেও তার মিশান ভাই যে ভালো কিছু বলবে না সে ব্যাপারে ছোট সায়রা অবগত।

মুখ মলিন হয়।

-“বলো।”

-“তুই আমি আর প্রহর ছাড়া কোনো ছেলের ধারে কাছে যাবি না।
রাজি?”

সায়রা মনে মনে ভাবে এ আর এমন কি।
দু এক দিন গেলেই মিশান ভুলে যাবে।

-“আচ্ছা। ”

মিশান ওর ডান হাত সামনে আনে। সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে

-“তবে আমাকে ছুঁয়ে কথা দে।”

সায়রা ছোট হাত টা মিশান এর হাতের উপর রাখে।
মিশান খুশি হয়।
অতঃপর মিশান নিজে পরিহিত থ্রি কোয়ার্টার পেন্ট এর পকেট হতে একটা চকলেট বের করে সায়রার হাতে দেয়।
সায়রাও খুশি হয়ে দোলনার উপর উঠে মিশানের ডান গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মিশান সায়রার কান্ডে থ হয়ে গেলো।
তার পর সায়রা চুমু খাওয়া স্থানে হাত দিয়ে কিছু ভেবে মুচকি হাসে।
আর ঠিক তখনি মাইশা আর প্রিয়তা দু বোন বাগানে এসছিল।
এটা দেখে দু বোন অনেক খুশি হয়।
কারণ মিশান সব সময় গম্ভীর কথা কম বলা চুপ থাকে। কিন্তু সায়রার সাথে হাসি খুশি দেখে খুশি হওয়া টাই স্বাভাবিক।

———
কেটে গেছে ছয় বছর। এরমধ্যে অনেক কিছু বদলেছে।
মাইশা আয়ান এখন প্রিয়তাদের সাথে এক বাড়িতে থাকে। সাদনানের বাবা মা তারা তাদের মতো নাতি নাতনী নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আজ্জম মির্জা আর এখন রাজনৈতি করে না।
মূলত সাদনানের কড়াকড়িতেই ওনি এসব ছেড়ে দিয়েছে।
তবে মাঝে মাঝে অফিস যায়।
আজমল চৌধুরী মা’রা গিয়েছে গত বছর। শফিক সওদাগর মারা গিয়েছে সায়রা হওয়ার এক বছর পর। সায়রা আর প্রহর প্রিয়তা আর সাদনানের ভালোবাসার অংশ।
প্রহর এর এক বছর চলে আর সায়রার চার বছর।
সুফিয়া বেগমও এখন প্রিয়তাদের সাথে থাকে।
রাহান সারা শশুর শাশুড়ী নিয়ে কুমিল্লা থাকে। সারা আর রাহানের একটা ছেলে হয়েছে। নাম সোহান আহামেদ ।তিন বছর চলে।
মাইশার চার মাস চলে আবারও দ্বিতীয় বারের মতো আয়ানের ভালোবাসার ফল আসতে চলেছে।

———-

রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই করছে।
প্রিয়তা কফি নিয়ে এসে দেখলো সাদনান বেলকনিতে দোলনায় বসে আছে।
একটু একটু দেখা যাওয়া চাঁদ হীন আকাশের পানে চেয়ে।

প্রিয়তা কফির মগ টায় একবার চুমুক দিয়ে সাদনানের হাতে দিলো।
সাদনানও বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বিনিময়ে প্রিয়তাও হাসে।

সাদনান বউ কে টেনে আরো কিছু টা নিজের সন্নিকটে আনে।
এক হাত ধারা শক্ত করে গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে বউকে।
নিজের রক্ষ ওষ্ঠ ছুঁয়ে বউয়ের কাপলে।

-“ধন্যবাদ জনাব।”

-“কেন?”

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাদনান।

-“এতো এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য।”

-“আপাকেও ধন্যবাদ। এই দুট টা ভালোবাসা আমার জীবনে এনে দেওয়ার জন্য। ”

রুমে থাকা সায়রা আর প্রহর কে ইশারা করে দেখিয়ে বলে সাদনান।

সাদনানের কথা প্রিয়তা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।

-“আপনার জীবন আপনার ভালোবাসা কি?
বলবেন আমাদের ভালোবাসা আমাদের জীবন,হুু।”

প্রিয়তার এমন কথায় সাদনান হেসে দিল।
অতঃপর বউকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
নিজেও বলে

-“আমাদের ভালোবাসার অংশ। ”

এভাবে ঝগড়া ভালোবাসা মিলিয়ে চলছে।সাদনান প্রিয়তার জীবন। আর এভাবেই চলতে থাকুক তাদের সংসার সন্তান নিয়ে তাদের জীবন।

“ভালোবাসা সত্যি সুন্দর যদি ভালোবাসার মানুষ টা সঠিক হয়। ”
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসার মানুষ গুলো।

~সমাপ্ত~

হৃদয় জুড়ে শুধু আপনি সিজন-০২ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২৬

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৬
#জান্নাত_সুলতানা

“আমার লেট হচ্ছে সোনা ।তাড়াতাড়ি আসুন”

সাদনান সেই কখন থেকে প্রিয়তা কে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রিয়তা পারবে না বলে প্রতি বারই সাদনানের ডাক নাকচ করছে।

দুই দুবার খবর পাঠিয়েছে। তবুও মেয়েটা আসার নাম নেই তাই তো বাধ্য হয়ে।
মেসেজ দিয়েছে।
সাদনান ফোনটা সোফায় রেখে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সাদনান জানে এবার তার বউ ঠিক আসবে।
আর হলোও তাই সাদনান ওয়াশরুমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
প্রিয়তা রুমে প্রবেশ করে।আর শুনতে পেলো ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ।
মেয়ে টা মুচকি হাসে।ভাবে সাদনান নিশ্চয়ই এতোখন অপেক্ষা করে সাওয়ার নিতে গিয়েছে।

এসব ভাবতে ভাবতে সাদনানের প্রয়োজনীয় সব আলমারি হতে নামি বিছানায় রাখে।

সব বিছানায় রেখে পিছনে ঘুরতেই ধাক্কা খেলো সাদনানের শক্ত পোক্ত শরীরটার সঙ্গে।
নাক মুখ কুঁচকে নিলো প্রিয়তা।
তবে তৎক্ষনাৎ সাদনানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শে পেলো কোমরে।
চোখ তোলে দৃষ্টি দেয় সামনে থাকা পুরুষ টার পানে।
ফের সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামায় ।এই চোখে যে দৃষ্টি মিলানো সম্ভব নয়। হয়তো আর কোনো দিন সম্ভব হবেও না।

সাদনান বউয়ের কোমর জড়িয়ে ধরে ওষ্ঠ ছোঁয়া কপালে।
তার পর ছেড়ে দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় সব হাতে নেয়।

আবারও ওয়াশরুম যেতে যেতে আদেশের সুরে বলে

-“নড়াচড়া করবেন না।
আমি পাঁচ মিনিট এর মধ্যে আসছি।

প্রিয়তা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো সাদনান।
প্রিয়তা মুচকি হাসে।

পা ঝুলিয়ে বিছানার ধারে বসে পরে।
মিনিট পাঁচেক পর সাদনান বেড়িয়ে আসে।
সাদনান রেডি হচ্ছে প্রিয়তা বসে বসে দেখছে।
না দেখেও উপায় নেই।
এটা প্রিয়তার এখন রোজ কার রুটিন।
সাদনান রেডি হবে আর সেটা বসে বসে দেখতে হবে।

সাদনান রেডি হয়ে বউ কে বসে থাকতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
এখন বেলা এগারো টা বাজে।
রাহানরা বারো টা নাগাদ আসবে বলে ফোনে জানিয়েছে।

সারা কে সাজানো এখনো শেষ হয়নি।
পার্লার থেকে মেয়ে এসছে।
ওরাই ওকে সাজাচ্ছে। প্রিয়তা তখন ওখানেই বসে ছিল।

সাদনান কক্ষে হতে বেড়িয়ে সোজা রান্না ঘরে এলো
সালেহা বেগম ছেলে কে রান্না ঘরে দেখে হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে

-“আব্বা কিছু লাগবে?”

সাদনান সোজা সাপটা জবাব

-“খাবার লাগবে।আমার বউ এখনো কিছু খায়নি।
কাজ করতে দেও না ঠিক আছে।
অন্তত আমার বউ কে ঠিক মতো খাবার টা তো খেতে দিবা মা।
তুমি তো জানো ও কেমন মেয়ে।”

ছেলের কথায় সালেহা দাঁত ধারা জ্বি হা কাটে।
ওনার তো মনেই ছিল না।ইস মেয়ে টা নিশ্চয়ই এতো বেলা অব্দি না খেয়ো আছে।আর ওনি তো কাজের চাপে ভুলে বসেছে।এসব ভেবে সালেহা বেগম মন খারাপ করে বলে

-“আমার খেয়াল ছিল না আব্বা।
একটু কষ্ট করে আপনি যদি ওকে,,,

-“তুমি খাবার টা দেও আমি খাইয়ে দেবো।”

সালেহা বেগম হয়তো ছেলে কে বলতে ইতস্তত বোধ করছিলো।
সাদনান বুঝতে পারে।
মার কথা সমাপ্ত করার আগেই নিজ থেকে বলে উঠে।

সালেহা বেগম খাবার প্লেট ছেলের হাতে দেয়। সাদনান মা কে একটা মুচকি হাসি দেয়।
সালেহা বেগমও হাসে। ছেলে তার বড্ড বউ পাগলো।
অবশ্য বাবা যেমন ছেলে তো তার তেমন এ হবে।
আজ্জম মির্জা এখনো স্ত্রী কে বোশ যত্ন করে সাথে ভালোবাসা।
যদিও সময় করে উঠতে পারে না তবে যতোটুকু সময় থাকে স্ত্রী কে ভালোবাসা যত্ন কোনো টাই ত্রুটি রাখে না।

প্রিয়তা কে খাবার টা একটু জোর করেই খাওয়াতে হয়।নয়তো এ মেয়ে খাবারের প্রতি বেশ অনিহা করে।
সাদনান বউ কে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।
বউ তার বাধ্য মেয়ের মতো টপাটপ গিলছে।
না গিলেও উপায় নেই।
সাদনান বেশ গম্ভীরতা বজায় রেখে বউয়ের মুখে খাবার তোলে দিচ্ছে।
যেনো একটু হে’র ফের হলেই মস্ত কোনো অঘটন ঘটে যাবে।

-“এখন যান। তবে হ্যাঁ ডাকলে যেনো সাথে সাথে সামনে দেখতে পাই।”

সাদনান এঁটো প্লেট টা সেন্টার টেবিল রাখতে রাখতে বলে প্রিয়তা কে।

প্রিয়তা টিসু দিয়ে মুখ মুছে।
অতঃপর ভদ্র মেয়ের মতো জানায়

-“আচ্ছা। ”

———————

মির্জা বাড়ি একদম পানির মতো ঠান্ডা হয়ে আছে।
কোনো রকম কোনো শব্দ নেই।
প্রিয়তা সালেহা বেগম পাশে বসে আছে।
সাদনান হয়তো নিজের রুমে আছে।
আজ্জম মির্জাও গম্ভীর মুখে সোফায় বসে।
মুলত সারা কে বিদায় দিয়ে সবাই ভেঙ্গে পড়েছে।
সালেহা বেগম তো কেঁদে কেটে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।
সাদনান নিজেও বোনের বিদায় বেলা কেঁদে ফেলেছে।
আজ্জম মির্জা যেনো পাথরে হয়ে বসে আছে।
কোনো অনুভূতি প্রকাশ করছে না।
করছে না নাকি পারছে না?
পুরুষ মানুষ বুঝি এমনি?
কারোর সামনে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করে না?
হয়তো।
রাত তো অনেক হয়েছে।
রাত প্রায় একটা।সওদাগর বাড়ির সবাই এতোখন এখানেই ছিল।
প্রিয়তা আর আজ্জম মির্জা বলে কইয়ে সবাই কে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়েছে ধকল তো আর কারোর উপর দিয়েই কম যায় নি।

-“তুই এবার যা। আমি ঠিক আছি।
দেখ গিয়ে আমার ছেলে টা কি করছে।”

সালেহা বেগমের কথায় প্রিয়তা কিছু বলতে চায়। কিন্তু তিনি তার আগেই ঠেলে ঠুলে প্রিয়তা কে কক্ষ হতে বের করে দেয়।
প্রিয়তা কথা বারায় না আর।
রুমে এসেই দেখলো সাদনান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা পা টিপে টিপে সাদনানের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়।

-“রুমে চলুন। রাত অনেক হয়েছে। ”

মিনমিন করে বলে প্রিয়তা।

সাদনান ঝরের বেগে পিছন ফিরে মেয়ে টাকে ঝাপটে ধরে।

প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠলো।
বুঝতে পেরে পরবর্তীতে নিজেও সাদনানকে জড়িয়ে ধরে।
বুঝানোর সুরে বলে

-“এভাবে ভেঙ্গে পড়লে মা-বাবা কে কে সামলাবে?
আর তাছাড়া মেয়েদের তো এক দিন না এক দিন পরের ঘরে যেতেই হবে। এটাই নিয়ম।
এটাই হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে । আর রাহান ভাই ভালো মানুষ ওনি সারা কে আগলে রাখবে। ”

সাদনান কিছু বলে না।

-“এখন চলুন ঘুমাতে হবে।”

কথা গুলো শেষ করে সাদনান কে নিয়ে রুমে আসে।
সাদনান কিছু বলে না।
ভদ্র ছেলের মতো বউয়ের সঙ্গে রুমে আসে।
সাদনান ফ্রেশ হতে চলে যায়।
প্রিয়তাও বিছানা গুছিয়ে নেয়।
ঘুমানোর আগে সাদনান সব সময় বিছানা ঠিক করে।আবার ঘুম থেকে উঠার পরেও।
তবে আজ প্রিয়তা করে।

সাদনান ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসার পর প্রিয়তাও ফ্রেশ হয়ে রাতের পোষাক পড়ে বেড়িয়ে এসে দেখলো সাদনান চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে।
দেখা বুঝা যাচ্ছে না ঘুমিয়ে পরেছে না-কি ঘুমায় নি।
প্রিয়তা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। অতঃপর চুল গুলো চিরুনী করে যেই না বিনুনি করতে ভাগ করবে তখনি ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলে চুলের বাজে।
প্রিয়তা তৎক্ষনাৎ মাথা তোলে সামনে আয়নায় তাকিয়ে সাদনান কে দেখতে পায়।
ততক্ষণে সাদনান বউয়ের লম্বা চুল গুলো বিনুনি করতে শুরু করছে।
প্রিয়তা কিছু বলে না। প্রশান্তির হাসি হাসে।
এটা সাদনান প্রায় করে থাকে।
সাদনান বউয়ের চুল বেধে দিয়ে বউ কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বউ কে।

———————

একজন রমণী বঁধু বেসে বিছানায় কি সুন্দর গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
তার ঠিক পাশেই গাল হাত রেখে মুগ্ধ নয়নে এক দৃষ্টিতে রমণী টার পানে তাকিয়ে আছে একটা বলিষ্ঠ শরীরে অধিকারী পুরুষ।
রাত আনুমানিক একটার কোঠা পেড়িয়েছে। সে দিকে পুরুষ- টির খেয়াল নেই।
কিন্তু পুরুষ টার চোখে আজ ঘুম নেই। এই রমণী টাকে দেখার তৃষ্ণা যেনো শেষ হচ্ছে না। হয়তো আর কোনো দিন শেষও হবেও না।

আসার সময় পথে কান্না করতে করতে গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা।
বাড়িতে আসার পর কেউ কেউ বলেছিল। জাগিয়ে দিতে তবে রাহান তার বউ কে না জাগিয়ে উল্টো সবাই কে ধমক দিয়ে বউ কে সোজা কোলে নিয়ে কক্ষে চলে এসছে।রাহানের বাবা মা লজ্জা পেয়েছে।তবে বেশ খুশিও হয়েছে।ছেলের এমন বউয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে।
রাহান সারার কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।
সারা নড়েচড়ে উঠে।
রাহান কিছু দূরে সরে বসে।এই নারীর সন্নিকটে বেশিখন থাকা যাবে না নয়তো যখন তখন যে কোনো ভুল করে বসবে।
ভেবে রাহান আলমারি খোলে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দেই সারা চোখ জোড়া মেলে তাকায়।
সারা তন্দ্রা অনেক আগেই ছুটছে কিন্তু এতোখন ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।

সারা শুয়া থেকে উঠে বসে। পুড়েটা রুমে চোখ বুলায়।
অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো একটা বিছানায় বসে আছে ও বুঝতে পারে। সাথে রুমটাও বেশ গুছানো।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই রুমের মালিক বেশ শৌখিন।
সারার বেশ মন খারাপ হলো। আজকের একটা রাতেও ও অর্ধেক রাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে।
রাহানের নিশ্চয়ই এই রাত টা নিয়ে অনেক সপ্ন ছিল?অবশ্য থাকারই কথা। এই রাত টা নিয়ে প্রতি টা নারী-পুরষের সপ্ন থাকে।যদিও রাহান বিয়ের আগে এসব নিয়ে কখনো কোনো রকম কথা বলে নি। তবুও কিছু ইচ্ছে তো থাকে। আর ও কি করে ঘুমি পড়লো?আর রাহান কেন ওকে ডাকে নি? তাই তো ঘুম ছুটার পরেও চোখ বন্ধ করে ছিল।

সারা এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা হতে নেমে চার দিকে ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগলো।
তার ঠিক মিনিট দুই এক এর মাথায় পূর্বের নেয় আওয়াজ করে ওয়াশরুমের দরজা টা খোলে রাহান বেড়িয়ে এলো

সারা রাহান কে দেখেই চুপ করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়।
রাহান সারা কে এভাবে দেখে অবাক হয়।
মেয়ে টা ঘুমিয়ে ছিল।তবে কি ঘুমায় নি?
রাহান বেশি কিছু ভাবে না বউ হয় তার সজাগ থাকলেই কি না থাকলেই বা কি।হুু,।

-“উঠেই যখন গিয়েছো। ফ্রেশ হয়ে এসো।
এক সাথে নামাজ টা পড়েই ঘুমাই।”

বলতে বলতে রাহান গিয়ে আলমারি খোলে। একটা সিল্কি শাড়ী সাথে সব প্রয়োজন বের করে সারার হাতে দেয়।

সারা শাড়ী অবস্থা দেখে চোখ বড় বড় করে রাহানের মুখু পানে চায়।
কারণ শাড়ী টা একটু বেশি পাতলা।

-“আমি তোমার হাসবেন্ড। এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

রাহান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে।

সারা আর কি করবে। এই রুম বাড়ি সব কিছু নতুন কিছু চিনে না।
এখন এটা না পড়েও থাকা যাবে না। কারণ শরীরে যে পোষাক সে সব নিয়ে কিছুতেই ঘুমানো যাবে না।
বাধ্য হয়ে এটা পড়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলো।
রাহান কিছু বলে না।
এমনকি একবার তাকালো পর্যন্ত না। সারাও বেশ খুশি হলো।
কারণ ওর এমনিতেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছিল।তার উপর রাহান তাকালে হয়তো হুঁশ হারাবে।
দুজনে এক সাথে নামাজ পড়ে নেয়।
রাহান জায়নামাজ গুছিয়ে রাখে।
তার পর আলমারি খোলে দুটো টাকার বান্ডিল আর একটা বক্স বের করে।
সারা সে দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
রাহান টাকা গুলো এনে সারা হাতে দেয়।
সারা না চাইতেও টাকা গুলো ধরে। আর জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকায় রাহানের দিকে।
রাহান সে সব উপেক্ষা করে বক্স এর ভিতর হতে একটা গোল্ড এর চেইন বের করে সারা কে পড়িয়ে দিতে দিতে বলে

-“এখানে দেড় লাখ আছে।কাবিনের টাকা যদিও আরো বেশি। তবে আমার নিজের রোজগারের এটুকুই এখন আছে।
এখন তুমি এটা রেখে দেও।
আর চেইন টা বাসর রাতের উপহার আমার কাছ থেকে।
তবে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। তোমাকে আমার রাজ্যের রানী করে রাখার।”

কথা গুলো বলে রাহান সারার কাঁধে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়া।
এতো টা গভীর স্পর্শ রাহান এই প্রথম করলো।এর আগে চুমু খেয়েছে তবে এতো টা গভীরতা নিয়ে স্পর্শ কখনো করে নি।

সারা শিউরে উঠে।
শরীরের সব ঘুমন্ত লম্বা লম্বা পশম গুলো জেগে উঠে।
চোখ বন্ধ করেই মিনমিন করে বলে

-“আপনি আমার সব এসব টাকা আমার লাগবে না।এটা আপনি রেখে দিন।
আর তাছাড়া আপনার সব তো আমার। আমার আলাদা করে কিছু চাই না।

বলতে বলতে টাকা গুলো পাশের টেবিলে রাখে।
তবে রাহান টাকার দিকে কোনো নজর নেই।
সে এক নেশালো দৃষ্টিতে সারার দিকে তাকিয়ে।

সারা কথা শেষ করে পিছনে ফিরে রাহান কে জড়িয়ে ধরে।
রাহান সযত্নে বউ কে আগলে ধরে।

রাহান সারার মাথা টা দু হাত ধরে বুক হতে আলগা করে।
আলতো করে চুমু আঁকে মেয়েটার অধরে।
পর পরই শক্ত করে চেপে ধরে নিজের অধর ধারা মেয়ে টার অধর জোড়া। সারাও আবেশে চোখ বন্ধ করে।

বেশ কিছু সময় গাঢ় একটা চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের সম্পূর্ণ ভর ছাড়ে বউয়ের ছোট্ট দেহখানার উপর।

#চলবে…..

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২৫

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“থাকবো না আমি আপনার সঙ্গে। আমায় বাবার কাছে দিয়ে আসুন।
নয়তো আমি একাই চলে যাবো।”

-“প্লিজ প্রিয়তা অবুঝের মতো ব্যবহার করবেন না।
আমি আপনা কে বলেছি,,,

-“আমি আপনার কাছে একবারও কিছু জানতে চাইনি।
আর আপনা কে আমায় দিয়ে আসতে হবে না।
আমি একাই যেতে পারবো।”

সাদনানের সব টা কথা না শুনেই বলে উঠে প্রিয়তা।
তবে সাদনান দমলো না আবারও কিছু বলতে চায়

-“প্লিজ আমার কথা,,,,

কিন্তু প্রিয়তা শোনে না।
তার আগে কক্ষে হতে বেড়িয়ে গেলো। সাদনান আটকাতে চেয়েও যেনো ব্যর্থ হলো।
কি বলবে কি করবে কিছুই যেনো মস্তিষ্কে আসছে না। পরক্ষণেই ভাবে এখন যদি প্রিয়তা একবার মির্জা বাড়ির চৌকাঠ পেড়িয়ে যায়। তবে হয়তো পরবর্তিতে ফিরে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
তাছাড়া দু’দিন বাদে তার বোনের বিয়ে।
এখন কিছুতেই প্রিয়তা কে রাগ করে চলে যেতে দেওয়া যাবে না। আর প্রথম থেকে ভুল গুলো তো সে নিজেই করে আসছে।
সব টা দোষ তো নিজেরই।
আগের ভুল গুলো ক্ষমা পেতে হলে এখন বউকে যেতে দেওয়ার মতো এতো বড় ভুল কিছুতেই করা যাবে না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সাদনান সিঁড়ি কোঠার কাছ থেকে প্রিয়তা কে এক ঝটকায় পাঁজা কোলে তোলে নিয়ে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরে।
প্রিয়তার ব্যাপার টা বুঝতে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগে।
যখন বুঝতে পাড়লো ততক্ষণে সাদনান মেয়ে টা কে রুমে এনে বিছানায় ছুড়ে ফেলে।
ঝরের বেগে গিয়ে দরজাটা আটকে এসে মেয়ে টাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো মেয়েটার সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো।

প্রিয়তা যেনো সাদনানের এমন স্পর্শে শরীরের কোনো রকম নড়াচড়া করতে ভুলে গেলো।

অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে রইলো।

সাদনান সারা মুখে অধর ছুঁয়ে। দিয়ে মাথা টা তোলে বউয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো।
মেয়ে টা এখনো চোখ বন্ধ।
সাদনান বেশি কিছু না ভেবে নিজের অধর জোড়া দিয়ে মেয়ে টার অধর চেপে ধরে।
লম্বা একটা চুম্বন আবদ্ধ হয় মেয়েটার পাতলা ওষ্ঠে।

প্রিয়তার যেনো শ্বাস আঁটকে আসার জোগাড়।
সাদনান অনেক সময় নিয়ে গাঢ় একটা চুম্বন পর মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে শাড়ীর আঁচল হাত রাখে।
তৎক্ষনাৎ প্রিয়তা সাদনানের হাত ধরে বাধা দেয়।
মেয়েটার চোখ চিকচিক করছে।
আর সেই মায়াবী চোখ জোড়ায় যেনো বলছে আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দেন।

-“সোনা আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন।”

আদুরে কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান বউয়ের বুকের উপরি ভাগের অংশে অধর ছোঁয়া।

প্রিয়তা সাদনানের কথায় কোনো রকম উত্তর করে না।
এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চার দিকে।
চোখের পানি আড়াল করে।
সাদনান বউ কে আবারও আগলে নেয়।
প্রিয়াতও আর বাধা দেয় না।
চুপ টি করে স্বামীর সঙ্গ দেয়।
সাদনান যেনো আরো উন্মাদ হয়।
প্রিয়তার চোখ হতে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখের জল।
খামচে ধরে সাদনানের পিঠ।
নখ ডাবে সাদনানের উদাম শরীরে।

-” প্লিজ শান্ত হোন আপনি। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

প্রিয়তা জানায়।
কিন্তু উন্মাদ সাদনান শুনে না।

-“সরি সোনা। আপনি নিজে আমাকে এমন করতে বাধ্য করলেন।
এখন আমি কিছুই করতে পারবো না।
কষ্ট হলে এখন আপনাকে সহ্য করতে হবে।”

প্রিয়তা সাদনানের যুক্তিতে আর কিছু বলে না।
তবে সাদনান একটা অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ উচ্চারণ করে

-“ভালোবাসি বউ।”

অধরে চুমু খেয়ে আলগোছে জানান দেয় বউ কে।

প্রিয়তার এ-তোখন সাদনানের হাতের এলোমেলো স্পর্শে সুখ অনুভব না করলেও যেনো “ভালোবাসি” শব্দ টা শুনে মূহুর্তের মধ্যে বুকের বা পাশটায় সুখ সুখ অনুভব করে। মেয়ে টা খুশিতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয় পুরুষ টাকে।

————–

প্রিয়তা পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ সাপ্তাহের বেশি সময় হতে চলে।
সে দিন সাদনান রিসোর্টে রাত টা থেকে প্রিয়তা কে নিয়ে এর পর দিন বাড়ি ফিরে।
মাঝে ক-দিন ভালোই চলছিল।
কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হয় তখনি যে দিন প্রিয়তার পরীক্ষা শেষ হয়।
সাদনান সে দিন প্রিয়তা কে নিতে আসবে বলেও আসে নি।
প্রিয়তা ভেবে ছিল হয়তো কোনো কাজে আটকে গিয়েছে।
আর তাছাড়া রাতে তো বাড়ি আসবেই।
এসব ভেবেই প্রিয়তা মন খারাপ করে নি।
বাড়ি চলে গিয়ে ছিল।
কিন্তু সাদনান সে দিন প্রিয়তা কে নিরাশ করে দেয়। সে দিন রাতে বাড়ি আসা তো দূর এক টা কলও দেয় নি। আর যখন এক সাপ্তাহ পরও কোনো রকম উত্তর সাদনানের পক্ষ হতে আসে নি তখন মেয়ে টার ছোট্ট মনটা অভিমানে ঘিরে ধরে ছিল।

কিন্তু সাদনান সে অভিমান টা বউকে করে থাকতে দেয় নি।
বেচারা সাদনানের বা কি দোষ কাজের জন্য যে এলাকায় গিয়ে ছিল ওখানে নেট সার্ভার বন্ধ ছিল।
তাই তখন চাইলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
আর কাজ টাও ইম্পরট্যান্ট থাকায় ফেলে আসতে পারছিল না।
তবে যাবার পর একবার আজ্জম মির্জার সঙ্গে কথা বলেছিল।
আর আজ্জম মির্জাই সবাই কে খবর টা দিয়ে ছিল।
আর সেই থেকে প্রিয়তা অভিমান হতে লাগলো।
আর এক সপ্তাহে সে টা রাগে পরিণত হলো।
সাদনান আজ সকালেই বাড়ি এসছে।
আর বুঝতে পেড়েছিল বউ তার বড্ড অভিমান করছে।
সকাল থেকে প্রিয়তা একবার কক্ষে আসে নি সারা আর সালেহা বেগম এর সঙ্গে থেকেছে।রান্নার কাজে সাহায্য করেছে।
আর যখন রুমে এসছিল তখনি সাদনানের সঙ্গে রাগ করে চলে যেতে চেয়েছিল।
তবে সাদনান তার ভালোবার কাছে সে সব কে তুচ্ছ করে বউকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে দিলো।

এ-র মধ্যেই আবার রাহানের বাবা মা আবদার করেছে।
তাদের ছেলের বউ তারা খুব শীগগির বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।
মূলত রাহানের পিড়াপীড়িতে ওনার অতিষ্ঠ।
তাই তো রেজাল্ট দেওয়ার আগেই নির্লজ্জের মতো আজ্জম মির্জার সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রফিক আহমেদ।

——————

মির্জা বাড়ি উৎসবে মেতে আছে। বাড়ি এক মাত্র মেয়ের বিয়ে।
কোনো রকম খামতি রাখছে না আজ্জম মির্জা।
কোনো আত্মীয় স্বজন বাকি রাখে নি।
তবে নিজের বলতে বিশেষ কেউই নেই।আর সালেহা বেগম ওনারো কোনো আত্মীয় নেই ওনি ওনার বাবা মার একমাত্র সন্তান।
আর আজ্জম মির্জার এক বোন তিনি দেশে থাকে না ছেলেদের সঙ্গে বাহিরেই থাকে।
আর ওনার ছেলেরাও এখন বউ বাচ্চা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত তাই তো কেউ আসতে পারবে না।

——————

-“দেখে হাটঁ ইডিয়েট।”

মাইশা আয়ানের কথা শুনলে তো ঝরের বেগে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
প্রিয়তা মাইশা কে দেখেই বলে উঠলো

-“আপু আস্তে। পুঁচকো ব্যথা পাবে।”

মাইশা ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রিয়তার দিকে। তার পর সারার দিকে তাকিয়ে বলে

-“দেখলি কত
দিন পর দেখা কোথায় জড়িয়ে ধরবে তা না করে যার এখনো পৃথিবীতে আসাতে আরো সাত মাস বাকি তাকে নিয়ে সবাই চিন্তা করছে।”

বলেই নেকা কান্না করতে লাগলো।
সারা মিট মিট করে হাসে কিছু বলে না।
প্রিয়তা সারার পাশ হতে সোফা ছেড়ে উঠে এসে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে তার পর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।। ততক্ষণে আয়ানও এসছে।
আর বাড়ি বড়দের সাথে কথা বলছে।
মাইশাও সবার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

মাইশা আর আয়ানের অস্তিত্ব আসতে চলছে।
তিন মাস চলে।
এবারও মাইশা আসতে চাইছিল না।
কিন্তু সারার আর প্রিয়তার আবদার টা ফেলতে পারে নি আয়ানরা সবাই চলে এসছে।

আজ সন্ধায় গায়ে হলুদ।
মূলত তখন সবাই সারার হলুদ নিয়ে গবেষণা করছিল আর তখনি মাইশাদের আগমন ঘটে।

মাইশার বাবা মা, শফিক সওদাগর সবাই দু দিন আগেই চলে এসছে মির্জা বাড়ি।

—————

হলুদের অনুষ্ঠান বাগানে করা হয়েছে।
সাদনানদের বাড়ি টা যেমন দেখতে বাগান টা এর চাইতে বেশি সুন্দর।
বিয়েও এখানেই হবে।
আজ্জম বেশ কড়াকড়ি ভাবে গার্ড রেখেছে।
এতো মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে যেনো না হয় সে জন্য বেশ মার্জিত ভাবে গোছগাছ করছে।
আর এক মাত্র মেয়ের বিয়ে। সঙ্গে তিনি এমবি। এলাকায় একটা নাম ডাকের ব্যাপার আছে।

হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত একটার বেশি সময় নিয়ে শেষ হলো।
প্রিয়তাও ফ্রেশ হয়ে রাতের পোষাক পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানায় শরীর
এলিয়ে দেয়।
সাদনান এতোখন বসে বসে বউ কে দেখছিল।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করতে যাবে
আর অমিন সাদনান মেয়ে টাকে ঝাপটে ধরে।
প্রিয়তা ক্লান্ত চোখে স্বামীর দিকে তাকালো।

কিন্তু রুমে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সামনে থাকা পুরুষ টার চোখে সে টা ধরা পড়ে না।

সাদনান নিজের অধর ছুঁয়ে দেয় মেয়েটার গলায়।

প্রিয়তা পরিহিত রাতের পোষাক এর হাতা টেনে নামায় কাঁধ হতে।
প্রিয়তা বাধা দেয়।

মিনমিন করে অনুরোধ করে

-“আজ না প্লিজ। অনেক ঘুম পাচ্ছে আমার।”

সাদনান আরো ক’টা চুমু আঁকে। আগের তুলনায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে জানায়

-“মনজুর বেগম।”

#চলবে…

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২৪

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“ওনি বলেছিল এক মাসের মধ্যে ফিরে আসবে।কিন্তু আজ এক মাস এর চেয়ে বেশি সময় হলো ওনার ফিরা তো দূরে এক টা ফোন কল অব্দি আমাকে দেয় না সারা।”

সারা কে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠলো প্রিয়তা।
সারা কি বলে শান্তনা দিবে? কি বলবে? তার ভাই যে সত্যি আজ কয় দিন ধরে তাকেও ফোন দেয় না।
এমনি কি কারোর সাথেই যোগাযোগ করছে না।

-“তুই টেনশন করিস না তো।ভাইয়া হয়তো কাজের জন্য সময় করে উঠতে পারছে না। দেখবি খুব শীগগির ভাইয়া চলে আসবে।
আর তাছাড়া আমাদের পরীক্ষা শুরু হতে তো আর বেশি দিন নেই।
দেখবি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ভাইয়া ঠিক চলে আসবে।”

সারার কথায় প্রিয়তা মনে মনে ভাবে হয়তো কাজের জন্য সময় করে উঠতে পারছে না। কিন্তু পরক্ষণেই এটা ভেবে অভিমান হয়। একটা বার কি কল করে কিছু বলা যায় না?

-“এখন ঘুমিয়ে পর। রাত তো অনেক হলো।”

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে উঠে সারা।

-“হুম। তুই যা।”

-“আচ্ছা।”

বলে সারা বিছানা হতে নেমে নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলো।
প্রিয়তাও দরজা টা আটকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে।

——————

রাত তখন তিন টার বেশি সময় বাজে।
প্রিয়তার বড় ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে।
প্রিয়তা তখন গভীর ঘুমে।
দুবার রিং হওয়ার পর প্রিয়তা চোখ কচলাতে কচলাতে বালিশের নিচ হাতরে ফোন টা বের করে।
বাহিরের দেশের নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে আসে প্রিয়তার কে হতে পারে? এতো রাতে তাও আবার বিদেশি নাম্বার?
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে যায়।
প্রিয়তা আর বেশি কিছু ভাবে না ফোন টা যেই না আবার পূর্বের স্থানে রাখতে যাবে তখন আবারও একই নাম্বার থেকে ফোন এলো।
প্রিয়তা ফোন টা রিসিভ করে।
কানে নেয় ফোন টা, অপর প্রান্ত হতে ব্যক্তি টা বাজখাঁই গলার আওয়াজে মেয়ে টার চোখের কোল ভিজে উঠলো জলে।

-“আপনি এতো দি,,,

-“আর একবার যদি কান্নার শব্দ হয় তবে কল টা আমি এখুনি কেটে দেবো।”

ব্যস প্রিয়তা চোখর জল হাতের তালু ধারা মুছে নেয়।
কিন্তু খুশিতে কান্না গুলো যেনো থামতেই চাচ্ছে না আবারও জল গড়ায় চোক্ষুর কার্নিশ হতে।
তবে এবার কোনো শব্দ করে না মেয়ে টা।

সুন্দর করে সাবলীল গলায় প্রশ্ন করে

-“এতো দিন কেন ফোন করেন নি? আর এটা তো বাংলাদেশের নাম্বার নয়।কোথায় আছেন আপনি? কবে বাড়ি আসবেন?”

মেয়েটার এতো এতো প্রশ্নে ওপাশ হতে সাদনান নিঃশব্দে হাসলো।

-“অফিসের কাজে লন্ডন এসছি আপনার সাথে ওই দিন কথা বলার পর। কিন্তু এখানকার কোনো সিম নেই নি।তাই ফোন দিতে পারি নি।এখন এক জনের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কল দিলাম।
পরশু দিন সন্ধার ফ্লাইট এ বাংলাদেশ ফিরছি।
আর ফোন দেবো না।
আশা করি আর কান্না কাটি করবেন না।”

-“আপনি কি করে জানলেন আমি কান্না করি?”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে প্রিয়তা।

সাদনান অধর কামরে ধরে। কিছু ভাবে।
পর পর নিজেও প্রশ্ন করে

-“তার মানি আপনি সত্যি কান্না করেন?”

প্রিয়তা ভেবাচেকা খেলো।
তার মানি সাদনান আন্দাজ করে বলেছিল।আর বেচারি নিজে সত্যি বলে দিলো।

-“মোটেও না।পরশু থেকে আমার পরীক্ষা শুরু হবে।”

প্রসঙ্গে পাল্টাতে প্রিয়তা কথা ঘুরায়।
সাদনান বুঝলো প্রিয়তা হয়তো নিজে কে শক্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই আর কথা বেশি ঘাঁটে না।
টুকটাক কথা বলে ফোন রাখে।

———————————

-“দু’জন কে-ই বলছি।মন দিয়ে প্রশ্ন পড়বে।তার পর
লেখা শুরু করবে।
বাবা তো যেতে পারবো না।
তোমাদের রাহান দিয়ে আসবে।
পরীক্ষা শেষ হলে অপেক্ষা করবে রাহান আবার নিয়ে আসবে।”

আজ্জম মির্জার কথায়
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই বাধ্য মেয়ের মতো মথা নাড়ে। যার মানে “ঠিক আছে”।
তার পর দু’জনে সালেহা বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে এসে দেখলো রাহান দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা মুচকি হেসে পিছনে সিটে বসে পড়ে।
সারা একটা ভেংচি কেটে দিয়ে সামনে বসলো।
রাহান সারার কান্ড দেখে নিঃশব্দে হেসে বাম হাত ধারা আলগোছে মাথার পিছনের চুল খামচে ধরে।
মেয়ে টা ওর উপর অভিমান করেছে।
আর অভিমান করার কারণ কাল রাতে যখন দুজন ফোনে কথা বলছিল তখন রাহান কথার কথায় বলেছিল সারা যদি ফেল করে তবে রাহান ফেল টুস মেয়ে কে বিয়ে করবে না।
ব্যস সেই থেকে সারা ফোন বন্ধ করছে আর ফোন অন করে নি।
অভিমান হয়েছে মেয়ে টার লোকটা এভাবে বলতে পাড়লো?এই তার ভালোবাসা?
তাই তো আর কথা বলবে না ঠিক করেছে।
কিন্তু কথা না বলে থাকতে পারে কি না এখন সেটা দেখা যাক।

গাড়ি টা এসে কলেজ গেটের কাছে থামাতেই প্রিয়তা ঝটপট নেমে কলেজ এর ভিতর দিকে যেতে লাগলো। কারণ রাস্তায় অনেক মানুষ জন গাড়ি।

তাই কলেজের ভিতর গিয়ে সারার জন্য অপেক্ষা করবে ভাবে। আর তাছাড়া দুটি ভালোবাসার মানুষের একান্ত কিছু কথা থাকতেই পারে।

আর সারা যেই না গাড়ি থেকে নামতে যাবে রাহান অমনি এক টানে মেয়েটাকে নিজের বুকে উপর নিয়ে আসে।
সারা রাহানের এতো টা সন্নিকটে এসে হাঁটবিট দূত
লাফাতে লাগলো।
শরীরের শীর দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।

রাহান সারার ছোট গোল গাল মুখ খানায় টুপ টাপ কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো।
কপালে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে মেয়ে টা কে আবার আগের স্থানে বসিয়ে দেয়।

আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো

-“সরি জান।”

সারা তাকালো তো নাই উল্টো বাহিরে দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলো।
রাহান আগলে নিলো মেয়ে টাকে
অস্থির হয়ে আবারও শুধালো

-“এই জান সরি তো।
আর কখনো এমন বলবো না। প্লিজ কাঁদে না। ”

চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও চুমু খেলো মেয়েটার কপালে।
সারা ততক্ষণে কান্না থামি রাহানের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে আলতো হাসে।

-“হুম। ”

-“হুম। এখন যা-ও লেট হচ্ছে। ”

-“আচ্ছা। ”

বলে সারা গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
তার পর প্রিয়তার কাছে চলে গেলো।

সারা যাওয়ার পর রাহান নিজের পরিহিত পেন্ট এ-র পকেট হতে নিজের ফোন বেড় করে।
অতঃপর কল লাগায় একটা ব্যক্তি কে।
দুবার কল করার পরেও ফোন টা বন্ধ এলো।

রাহান ফোন টা বিরক্তি হয়ে কেটে দিয়ে গাড়ি টা স্টাট দিলো।
গাড়ি চালাতে চালাতে আবারও সে কাংখিত নাম্বার টা কল দিলো।
কিন্তু এবার কলটা রিং হলো।
কিন্তু ওপাশ হতে কল টা রিসিভ হলো না।
রাহান হতাশ হয়ে যেইনা ফোন টা পাশের সিটে রাখতে যাবে তখনি সশব্দে ফোন টা বেজে উঠে।
রাহান সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ করে প্রশ্ন করলো

-“ভাই আপনি এখন কোথায়? ”

-” দুপুর একটার মধ্যেই আমি কেলেজ পৌঁছে যাবো।”

ওপর পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো সাদনান।

-“আমি তাহলে সার,,,,

আমতা আমতা করে রাহান কিছু বলতে যাচ্ছিল। তবে সাদনান তার আগেই বলে উঠলো

-“আমার বোন যেনো ঠিক টাইমে বাড়ি পৌঁছে যায়।”

-“জী ভাই।”

সাদনান সব টা শুনলো কি না কে জানে তার আগেই খট করে লাইনটা কেটে দিলো।
রাহান বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা দম নিলো।
তার পর বিরবির করে বলে উঠলো

-“দু ভাই-বোন এক রকম। ”

——————–

-“তুই এখানে দাঁড়া আমি ওই দিক থেকে পানির বোতল নিয়ে আসছি।”

-“আচ্ছা। তাড়াতাড়ি ফিরবি। ”

প্রিয়তা আর কিছু না বলেই একটু সামনের দিকে চলে গেলো।
ঠিক তখুনি রাহান এসে সারার সামনে দাঁড়াল।
সারা চমকে উঠলো।
বুকে থুতু দিয়ে।
মাথা উঁচু করতে। রাহান ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

-“কি হয়েছে রাহান ভাই?এভাবে টানছেন কেন? আর প্রিয়তা পানি আনতে দোকানে গিয়েছে ফিরে এসে আমাকে না দেখলে টেনশন করবে।”

-“ভাবির টেনশন করতে হবে না তোমাকে।
তুমি আমার সাথে চলো জান।”

কথা গুলো বলতে বলতে রাহান সারা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দিলো।

আর এদিকে প্রিয়তা মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে আসে। কিন্তু সারা কে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।

-“ও আবার কোথায় গেলো?ধুর ভালো লাগে না। ”

-“বউ আমি এখানে।”

প্রিয়তা সারা কে খুঁজতে খুঁজতে কেলেজ থেকে একটু দূরে পার্কিং এড়িয়ে চলে এসছে। মূলত ও ভেবেছে রাহান আর সারা যদি এখানে থেকে থাকে।তাই কিন্তু
এখানে তেমন মানুষ জন নেই।
এর মধ্যে সাদনানের কণ্ঠ শোনে প্রিয়তা অবাক হলো।আবার ভয়ও পেলে কারণ এখানে সাদনান কোথা থেকে আসবে হয়তো ও ভুল শুনেছে।
তাই আস্তে করে পিছনে ফিরে।
আর তৎক্ষনাৎ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ব্যক্তিগত পুরুষ টাকে দেখে মুখে হাসি ফোটে উঠলো।

-“আপনি?আপনি কখনো,,,,

কিন্তু কিছু আর মুখ দিয়ে বেড় করতে পারলো না। খুশিতে মেয়ে টা কেঁদে উঠলো।

সাদনান এগিয়ে এলো কিন্তু আসার আগে গাড়ির দরজা টা খোলে আসতে ভুলে না।

ঝট করে কোলে তোলে নেয় বউ কে। তার পর গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।

———————-
-“আমরা এখানে কেন এসছি?”

সাদনান গাড়ি টা এক রিসোর্টের সামনে থামিয়েছে।
এটা দেখে প্রিয়তা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

-“কাল তো পরীক্ষা নেই।
আমরা আজ এখানে থাকবো কাল সকালে বাড়ি ফিরবো সোনা।”

মুচকি হেসে বলে সাদনান।

-“কিন্তু কেন?”

প্রিয়তা আবারও প্রশ্ন করে

-” বাসর করবো তাই।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি পর্ব-২৩

0

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“Happy birthday বউ।”

প্রিয়তা এতোখন রুমে ছিল না এই মাত্র রুমে এসছে। কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে সাদনান ওর চোখে হাত দিয়ে ধরে নিয়ে সোজা বেলকনিতে চলে আসে।
প্রিয়তা জিজ্ঞেস করলেও সাদনান কোনো রকম উত্তর দেয় নি এক্কেবারে বেলকনিতে এনে চোখ হতে হাত সরিয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো।

প্রিয়তা চার দিকে তাকায়।
বেলকনিত টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। বেলুন, ফুল। আর ছোট্ট ছোট্ট মোম বাতি দিয়ে। কখন করলো এসব প্রিয়তা বুঝতে পারছে না। প্রিয়তা অবাক হলো সাথে অনেক খুশি।
কিন্তু নিজে কে সামলে সাদনান কে জড়িয়ে ধরে।

-“ধন্যবাদ। ”

মিষ্টি হেসে বলে প্রিয়তা।

-“হুম। দেখতে দেখতে আমার বউ টার আঠারো বছর হয়ে গেলো। ”

সাদনান মুচকি হেসে বলল।

তার পর প্রিয়তা কে ছাড়িয়ে নি দু’জনেই সামনে সেন্টার টেবিলে রাখা কেক টা সামনে হাঁটু গেড়ে বসে প্রিয়তা কে ইশারা করে কেক টা কাঁটার জন্য।
প্রিয়তাও বাধ্য মেয়ের মতো কেক টা কাটে।
তার পর সাদনান কে খাইয়ে দেয় সাদনানও একটু নিয়ে বউ কে খাইয়ে দেয়।
কিন্তু বেচারি প্রিয়তা কে আর গিলতে দিলো না।
নিজের অধর জোড়া ধারা মেয়ে টার অধর চেপে ধরে।
মিনিট দুই এক এ-র মতো এভাবে ছিল তার পর ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।

নিজের পরিহিত ট্রাউজারের ডান পকেট হাতরে কিছু একটা বক্স এর মতো বের করে সাদনান।
বক্স টা খোলে ভিতরে থেকে একটা লকেট বেড় করে।
ঘুরে গিয়ে প্রিয়তার পিছনে দাঁড়ায়।
খোলা চুল গুলো পিঠ হতে সরিয়ে লকেট টা পড়িয়ে দেয়।
প্রিয় পুরুষ টার ছোঁয়া পেয়ে মেয়েটার ছোট দেহপিঞ্জর কেঁপে উঠে।
চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নেয়।

সাদনান লকেট টা গলায় পড়িয়ে দিয়ে আবারও সামনে এসে দাঁড়ায়।
প্রিয়তার চোখ তখনো বন্ধ সাদনান মুচকি হাসলো। সেই প্রথম থেকে মেয়ে টা ওর ছোঁয়া পেলে কেঁপে উঠে। আর আজ বিয়ের চার মাসে এসেও ঠিক আগের মতো কেঁপে উঠে। আর এই দু’মাস ধরে তো রোজ আদর, ভালোবাসা দিয়ে আসছে। তবুও মেয়ে টার এই কাঁপা কাপির অভ্যাস টা গেলো না। হয়তো আর কখনো যাবেও না।
এস ভাবতে ভাবতেই সাদনান
হালকা ঝুঁকে ঝট করে কোলে তোলে নেয় বউ কে।
মেয়ে টা নিজে কে শূন্যে অনুভব করতে চোখ জোড়া খোলে চাইল।
আর অমনি সাদনানের নেশালো চোখ জোড়া সাথে দৃষ্টি মিলে। প্রিয়তা লজ্জা চোখ নামালো। বেশিখন এই চোখে তাকিয়ে থাকতে পারে না মেয়ে টা কিছু তো আছে এই চোখ জোড়ায়। তাইতো মাথা ঠেকালো স্বামীর শক্ত চওড়া বুকে।সাদনানও মুচকি হেসে কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো। বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের বলিষ্ঠ দেহের ভর ছাড়ে মেয়ে টার ছোট্ট দেহখানার উপর।

———————–

প্রিয়তা এখন সাদনানদের বাড়ি থাকে। সে দিন সাদনান তার নিজের কথা রেখেছে।
প্রথম নিজের বাড়ি এসছে।
পরের দিন প্রিয়তা কে নিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়ে দু- দিন থেকে আবার নিজের বাড়ি চলে এসছে।
এর মধ্যে প্রিয়তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।
আবার দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়েছে।
আর এর ভিতর সাদনান আর প্রিয়তার প্রতি ভালোবাসা যত্ন আরো দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে সেটা কাজে কর্মে।
কিন্তু সাদনান আজও নিজের মুখে প্রিয়তা কে ভালোবাসে বলে নি।
প্রিয়তার অবশ্য এ বিষয় টা নিয়ে প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন আর লাগে না।
কারণ সাদনান মুখে না বললেও প্রিয়তা জানে সাদনান নিজের চেয়ে বেশি ওকে ভালোবাসে।
তাই তো এখন আর খারাপ লাগে না।
কিন্তু তবুও কেন যেনো মন টা মানতে নারাজ।
ভালোবাসর মানুষটার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ টা শোনতে কার না ভালো লাগে। প্রিয়তারও লাগতো যদি সাদনান ভালোবাসি বলতো।
প্রিয়তার মনের কোথাও একটু শূন্য অনুভব হয়।
হয়তো সাদনানের মুখে ভালোবাসার কথাটাই এই শূন্য অনুভব টাকে পূর্ণ করতে পারবে।

———————-

-“এক মাস তো সোনা। দেখতে দেখতে কেটে যাবে।”

-“হুম। ”

-“চলো। তোমাকে কলেজ পৌঁছে দিয়ে আমি চলে যাবো।”

-“সারা যাবে না আজ।”

-“হুম আমি জানি। এখন চলো লেট হচ্ছে আমার।”

প্রিয়তা সাদনান কে ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে সাদনানের পিছনে পিছনে বেড়িয়ে এলো।
তার পর বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
সাদনান কলেজের সামনে গাড়ি টা থামিয়ে প্রিয়তা কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়।

-“সোনা মন খারাপ করে না প্লিজ।
আমি কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করবো বউ।”

-“হুম। ”

কথা টা বলতে বলতে প্রিয়তা কেঁদে দিলো।
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরে। এই মেয়ে কে নিয়ে কি করবে সাদনান? কাল সাদনান যখন থেকে বলছে কাজের জন্য বাহিরে যেতে হবে তখন থেকে মেয়ে টা কেঁদেই চলেছে। সাদনানের নিজের যে কষ্ট হচ্ছে না তেমনটা নয়। এই ছোট্ট বউ টাকে রেখে যেতে মন কিছুতেই চাইছে না। কিন্তু যেতে হবে।যাওয়াটা ভিষণ জরুরি।

সাদনান প্রিয়তার মুখ টা নিজের দু হাতের আঁজলে নিয়ে দু চোখের পাতায় ছোট্ট ছোট্ট কটা চুমু খেলো।
প্রিয়তা তখনো কাঁদছে।

-“প্রিয়তা?”

সাদনানের ডাকে প্রিয়তা কান্না আপনি আপনি বন্ধ হয়ে গেলো। তবে সে টা ধমক দেওয়াতে নয়।”প্রিয়তা ” সাদনান কখনো ওকে নাম ধরে ডাকে না। প্রিয়তা বেশ অবাক হলো। কিন্তু সাদনানের পরবর্তী কথা শোনে অবাক নয় ভিষণ অভিমান হলো।

-“আর এক ফোঁটা জল গড়ালে। আমার খারাপ রুপ টা দেখাতে আমি বাধ্য হবো মেয়ে। আর পরীক্ষা শুরু হতে বেশি দিন বাকি নেই মন দিয়ে পড়বে।”

প্রিয়তা সাদনানের কথায় আর কোনো উত্তর দিলো না। চোখের পানি মুছে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে মেইন গেট দিয়ে কলেজে এর ভিতর চলে গেলো।

সাদনান দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে।ও এভাবে কথা গুলো বলতে চায় নি কিন্তু কি করতো মেয়ে টা তো কিছুতেই কান্না থামাচ্ছিল না। এই মেয়ে কি জানে সাদনান এই মেয়ে কান্না কিছুতেই সহ্য করতে পারে না সাথে মা আর বোনের। জানলে নিশ্চয়ই এভাবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাল রাত ধরে কেঁদে কেটে এমন অবস্থা করতো না। তাই তো বাধ্য হয়ে এভাবে কথা বলতে হলো। তবে সাদনান কিছু ভেবে মুচকি হাসলো। মুচকি হাসার কারণ সাদনান জানে এই মেয়ে এখন অভিমান করলেও সাদনান ফোন দিলে ঠিকই আবার ধরে কথা বলবে।
এটা ভাবার কারণও আছে সাদনান যখন এর আগে নয় দিনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিল তখন এমন কান্না কাটি করছে। পরে যখন ধমক দিয়েছিল তখন সে কি অভিমান কিন্তু পরে ঠিক সব ভুলে ফোন করলে কথা বলতো।
আর বেশি কিছু ভাবে না সাদনান গাড়ি স্টাট দিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে রওনা দিলো।

———————–

-“তোর ফোন কোথায়? তোর জামাই তোকে ফোনে না পেয়ে আমাকে কল করেছে। ”

বিকেলে প্রিয়তা সাদনানের রুমের বেলকনিতে বস বসে একটা বই পড়ছিল তখনি সারা পিছন হতে কথা গুলো বলে উঠলো।

-“রুমে হয়তো আমি সাইলেন্ট করে রেখেছি।”

-“ফোন টা রিসিভ করে আমাকে উদ্ধার কর বইন।”

কথা টা বলে মুখ ভেংচি কেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সারা।
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। কারণ সারা হয়তো রাহানের সঙ্গে কথা বলছিল।আর সাদনান সেটায় ভাগাড় দিলো।
কিন্তু ভাইকে তো আর কিছু বলতে পারবে না তাই তো প্রিয়তার উপর সব রাগ ঝেড়ে গেলো।

প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে রুমে এসে বড় ফোন টা হাতে নিলো।
বড় ফোন বলার অবশ্য একটা কারণ আছে সাদনান প্রিয়তা কে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছে ঢাকা থেকে আসার পড়।

প্রিয়তা ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো বাইশটা কল এসছে “মাই লাভ” দিয়ে সেভ করে রাখা নাম্বার টা থেকে।
আর এটা সাদনানের নাম্বার সাদনান নিজে নতুন সিম নিয়ে নিজের হাতে সেভ করে দিয়েছিল।
মূলত ফোনের সব সেটিংস সাদনান নিজে করে দিয়েছে।
ওয়েল পেপারেও প্রিয়তার আর নিজের কাঁপেল পিক দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতেই আবার ফোনটা থরথর করে কেঁপে উঠল।
সাদনান আবার কল দিয়েছে।

-“এতোখন কোথায় ছিলে?”

প্রিয়তা ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই সাদনান দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন টা করে।

-“ফোন সাইলেন্ট ছিল। ”

মিনমিন করে জানায় প্রিয়তম।

-“দুপুর খাবার খেয়েছো?”

-“হুম। আপনি?”

-“না মিটিং শেষ করে এই মাত্র রুমে এলাম।”

-“ওহ।”

তার পর দু’জনেই চুপ। সাদনান হুট করে বলে উঠে

-“কষ্ট হয় সোনা?”

প্রিয়তার যেনো সাদনানের এমন মধুর কণ্ঠে বলা কথায় এতোখন চেপে রাখা কষ্ট গুলো বেড়িয়ে এলো শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
কিছু বলতে পারলো না।
তবে অপর প্রান্ত হতে সাদনান চোখ রাগে লাল হয়ে এলো এই মেয়ে এই পনেরো দিনে যতবার ফোন দিয়েছে ঠিক ততবারই এমন কান্না করে।
একবার ফিরে এসে এই মেয়ের খবর করে ছাড়বে সাদনান।

-“খুব শীগগির ফিরছি আমি। তবে আমাকে এভাবে পোড়াবার জন্য খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে সোনা।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]