Tuesday, August 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 419



রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-১০+১১

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১০)

অনলদের বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই নেমে পরে দুজনে। অনলের মা আর আরও একটা মেয়ে এগিয়ে আসে। ওদের থেকে ব্যাগ গুলি নিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। মেয়েটার নাম মিষ্টি। মিষ্টি অনলের সামনে মাথা নুয়ে জিজ্ঞেস করে , কেমন আছো তুমি?অনেক দেরি করে এলে যে এবার?

ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি।

ওহ। আর ওই মেয়েটা?

অনল মৈএীকে দেখিয়ে বলে, আমার কলেজের স্টুডেন্ট!কখনো গ্রাম দেখেনি তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। তোর রুমে নিয়ে যা……
মিষ্টি হাসি মুখে মৈএীর সাথে কথা বলে গেট পেরিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। একতলা খুবই ছোট একটা বাড়ি অনলদের চারটা শোবার রুম আর কিচেন বাথরুম রয়েছে। মৈএীকে একটা রুমে নিয়ে এসে মিষ্টি বলে।

আমি জানতাম শুধু অনল আসবে তুমি আসবে তা জানতাম না। তাই অন্য একটা রুম পরিস্কার করে রাখিনি। এখানে আমার সাথে এক রুমে থাকবে কি তুমি?একটা রাত?

সমস্যা নেই আপু।
।আচ্ছা। বসো আমি খাবার সাজিয়ে নিচ্ছি।চেঞ্জ করে নাও তুমি।

হুম আপু।

মিষ্টি মৈএীকে রুমে দিয়ে এসে টেবিল সাজিয়ে দেয়। অনল আর মৈএীকে ও গিয়ে ডেকে নিয়ে আসে। খাবার শেষ করে মৈএী মিষ্টির সাথে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

পরের দিন সকাল সকাল মৈএী উঠে দেখে মিষ্টি মেয়েটা এখনো ঘুমিয়ে আছে ওর পাশে তাই ব্রাশ বের করে ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে আসে। গত রাতে অনল যে রুমে গিয়েছিলো মৈএী সেই রুমের দিকে যায় দরজা খুলেই রাখা আছে ভেতরে লাইট অন তার মানে অনল উঠেছে। মৈএী ভেতরে গিয়ে দেখে অনল একটা বই নিয়ে বিছানার সাথে আধশোয়া অবস্থাই রয়েছে। অনল ওকে আসতে দেখেই ঠিক করে বসে এই প্রথম অনল মৈএীকে এত সকালে স্নিগ্ধ অবস্থায় দেখছে একদম সকালে বাগানে ফোটা ফুলের মতো লাগছে। অনল ওর দিকে তকিয়ে হাতের বই বন্ধ করে।

কি করছিলে অনল?

ইশ্ এই মৈএী তাকে এভাবে ডাকে কেন একদম অনলের বুকের বাম পাশে এসে ধাঁক্কা লাগে। অনলের সেভাবেই সাড়া দিতে ইচ্ছে করে তবুও নিজ ইচ্ছা লুকিয়ে বলে,

বই দেখছিলাম। কোন দরকার?

হ্যাঁ।

কি হয়েছে?

আমি সকালের রাস্তা দিয়ে ঘুরতে চাই।

এখন?

হুম।

একটু পর নিয়ে যাই?

না এখনই চলো…আমার ইচ্ছে হয়েছে প্রেমিকের হাত ধরে সকালের সুর্য দেখতে বের হব।

অনল আবার ও নিজেকে শক্ত করে বলে,
প্লিজ মৈএী আমি তোমায় ভালোবাসিনা। কেন বুঝনা?

ভালো কেন বাসছো না অনল?

অনল কঠিন গলায় বলে,কেন. এর জবাব দিতে বাধ্য নই আমি মৈএী! আমি শুধু এটা বলছি তুমি ভালো করে শুনে নাও, আমি তোমায় ভালোবাসিনা, আর কখনো ভালোবাসতেও পারবো না। শুধু তোমার পাগলামি দেখানো বন্ধ করে দাও প্লিজ!

– আমার ভালোবাসা তোমার কাছে পাগলামি মনে হয়?
-তা নয়তো কি? তুমি যা সব করেছো আর করছো সেই সব কি ঠিক হয়েছে বুঝাও আমাকে?

– অনল তুমি এভাবে কেন আমার সাথে কথা বলছ?
-তুমি কি আমাকে শিক্ষক এর সন্মান দিবে না মৈএী? বিশ্বাস করো আমার নুন্যতম ইচ্ছাও ছিলো না তোমাকে আমার গ্রামে নিয়ে আসার। শুধু মাত্র তোমার বাবার কথা ফেলতে না পেরে নিয়ে এসেছি। প্লিজ এখন এমন কোনো ঝামেলা করো না যে আমি বিরক্ত হয়ে তোমাকে দিয়ে আসি ফিরিয়ে। মিষ্টিকে বলে দেব যে কয়দিন তুমি এখানে আছো ও নিজে তোমাকে এই গ্রাম সহ আশে পাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবে।

মৈএী অনলের কথা গুলো শুনে এক ধাপ রে*গে যায় আরেএ ও কি এখানে শুধু গ্রাম ঘুরবে বলে এসেছে?সে এসেছে অনলের মনে জায়গা করে নিতে।

অনল বললাম না আমি তোমায় ভালোবাসি! বুঝতে কেন চাও না তুমি? চলো আমার সাথে…. আমি আজকেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি যাবে??নাকি যাবেনা?

অনল হুট করেই বিছানা থেকে নেমে মৈএীর সামনে দাঁড়িয়ে পরে এবং ডান হাত দিয়ে মৈএীর বাম গালে ঠাস করে একটা থা প্প ড় বসিয়ে দেয়। থা প্প ড় টা দেওয়ার সাথে সাথেই অনলের বুকের মাঝে ব্যাথা অনুভুত হয়। সে মুখে না বলুক ভালো তো মৈএীকেই বাসে।আর এখন এই মেয়েটা যা সব বলছে ভুল না হয়ে যায় কিছু একটা মৈএীর বাবার কাছে তাহলে কি জবাব দেবে সে?

অনল…….তুমি আমার সাথে প্রথম দিনে প্রতিশোধ নিলে?

মৈএী আমি…….

আমায় এখন ভালোবাসবে তুমি?

উফফ্ মৈএী প্লিজ এখন আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ!!

মৈএী মুখে হাসি বজায় রাখলেও ভেতরে সব টা ভাংচুর হয়ে যায়……অনল কি তাকে কখনোই ভালোবাসবে না?

চলবে
#মিশকাতুল

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১১)

অনল বাবা শোন, দুই দিন হয় আমাদের গ্রামে মেলা বসেছে মিষ্টি এখনো যায়নি বলেছে তুই আসলে তোর সাথে যাবে ওকে নিয়ে বিকেলে ঘুরেফিরে আয়।

অনলের মা বিছানায় বসে অনলকে কথা গুলো বলছিলো মিষ্টিও পাশেই বসে আছে। মাথা লজ্জায় নিচু করে রেখেছে। অনল সম্পর্কে ওর চাচার ছেলে। মিষ্টি কে জন্ম দিতে গিয়েই ওর মা ম*রে যায় সেই তখন থেকেই অনলের মায়ের হাতে মানুষ হয়েছে সে। অনল মিষ্টির চার বছরের বড়। ছোট থেকে অনলের সাথেই বেড়ে ওঠে এই বাড়িতে। অনলকে ঘিরে রয়েছে ওর ঘর বাধাঁর সপ্ন। সেই অনলের সাথে মেলাতে না গিয়ে কি বন্ধুদের সাথে যাওয়া চলে??

বিকেলে নিয়ে যাবো।

মিষ্টি খুশি হয় অনল ওকে নিয়ে যাবে বলেছে যখন তখন নিয়ে যাবেই।
দুপুরের পর মিষ্টি তৈরি হয়ে অনলের রুমে যায়।

কই তুমি?

এসেছিস?মৈএী কি করছে?

রুমে নেই।

নেই মানে?ও এখানে নতুন একা একা কই যাবে?

জানিনা। আমি বলেছিলাম রুমেই থাকতে কিন্তু নেই।

ওহ। তুই বোস
আমি ওকে খুঁজে আনি ও আমাদের সাথেই যাবে এখানে আসার পর কোথাও নিয়েই গেলাম না এখনো।

অনল তুমি ওকে পরে নিয়ে যেও আমাদের সাথে……

অনল ভ্রঁ কুচকে বলে, পরে কেন?এখনই যাবে আমাদের সাথেই যাবে……

অনল বের হয়ে মৈএীকে বাড়ির পেছনে পায় তখন ওভাবে চ*ড় টা দেওয়ায় জন্যই হয়তো আর ওর সামনে যায়নি। এ জন্যই মোন খারাপ করে বসে আছে…..অনল মুখে শিট! বলে এগিয়ে যায় ওর দিকে।

মৈএী……

অনলে কন্ঠে মৈএী উঠে পেছনে ফিরে তাকায় অনলের সকালের ব্যাবহারে যে দুঃখ পেয়েছে তা অনলকে বুঝতে দিতে চায়না মৈএী তাই মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে বলে,
হ্যাঁ…

অনল মৈএীকে দেখেই বুঝতে পারে ওর মোন ভালো নেই না হলে প্রফুল্লতায় মত্ত হয়ে থাকতো মৈএী।
অনল কি যেনো বলতে এসেছে. তা মনেই করতে পারছেনা মৈএীকে দেখে।
মৈএী অনলের গেটআপ দেখে বলে,

কোথাও যাবে অনল?

হুম।

ওহ আচ্ছা।

চলো তুমিও যাবে।

কোথায়?

মেলাতে যাবো।

মেলা?

হুম….
এতক্ষনে মৈএী আবারও চঞ্চল হয়ে ওঠে,
ওহ্ গ্রামের মেলা বুঝি অন্যরকম হয়?আচ্ছা চলো চলো…….

মিষ্টি আর মৈএীকে নিয়ে অনল মেলাতে এসে নানারকম খাবার খাওয়াচ্ছে। কেউ কেউ সাজঁ গোছের জিনিস পত্র ও নিচ্ছে মৈএী একটা দোকানে গিয়ে কয়েকটি ক্লিপ সহ এটা ওটা নিলো মিষ্টির সাথে সাথে ঘুরছে বলে ওকেও নিয়ে দিলো।
অনলের অগোচরে অনলের জন্য একটা গিফট ও নিয়ে নিয়েছে। বাসায় গিয়ে দেওয়া যাবে আচ্ছা অনল কি নিবে?
ওদিকে অনল বেশ সময় ধরে দুজনের জন্য অপেক্ষা করছে ওদিকে মেয়েদের যাতায়ত বেশ রয়েছে সেখানে অনল পা রাখার মতো জায়গা পাচ্ছেনা বলে একাই দাঁড়িয়ে রয়েছে। চুড়ির দোকান চোখে পরছে। ওখান থেকে নিল রং এর কাচেঁর চুড়ি গুলি নিলে মৈএীর হাতে কেমন লাগবে?অসম্ভব সুন্দর লাগবে!!অনলের চোখে উকিঁ দিচ্ছে সেই সৌন্দর্যতা।নেওয়াই যায়!!

সন্ধ্যা হতেই অনল দুইজনকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। অনলের মা খাবার রান্না করে রেখেছে। অনল রুমে গিয়েছে। মৈএী মিষ্টির সাথে কিচেনের সামনে এসেছে। অনলের মা ওদের দেখেই বলেন,

ভেতরে আয় দুজনে…..

কি করছো এখনো আম্মু?

কিছুনা সব কাজ শেষ! তা আমার ছেলের সাথে বিয়ের কথা এবার তুলবো? ছেলের বয়স হয়ে যাচ্ছে…. আমার কত দিনের সপ্ন তোকে ছেলের বউ বানাবো…. আমি জানি আমার অনল তোকে বিয়ে করবে তুইও রাজি এখন কি তোর বাবার সাথে কথা বলবো?

মিষ্টি লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয় মুখে বলে,
আগামীকাল যেও বাবার কাছে…..

আচ্ছা। এখন যা অনলকে ডেকে নিয়ে আয় খাবার খাবি কখন?

মিষ্টি উঠে অনলের রুমের দিকে যায়….
আর মৈএী যেনো পাথর বনে গেছে…. অনল আর মিষ্টির বিয়ে হবে??এ সব কি শুনছে ও??তার মানে……….
মৈএী আর ভাবতেও পারেনা…… উঠে মিষ্টির রুমে যায়…..অনল কি এই জন্যই এত দিন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে?এ জন্যই মৈএীকে ভালোবাসেনা?কি করে ভালোবাসবে?এখানে যে প্রেম সংঘটিত হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। অনল আর মিষ্টির বিয়ের কথা আগামীকাল পাকাপোক্ত হবে??

মৈএীর ভাবনার মাঝেই মিষ্টি আসে রুমে….

কই মৈএী এসো খাবার খাবে না?
মৈএী সাহস করতে পারে না আর অনলের সামনে যাওয়ার না জেনে কত বিরক্তই না করেছে অনলকে! এভাবে কাউকে বিরক্ত করা ঠিক হয় নি মৈএীর।

আমার ভালো লাগছেনা আপু। আপনারা খেয়ে নিন! আমার ক্ষুদা নেই…..

অল্প করে খেয়ে নাও। অনল তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে চলো….

স্যারকে বলবেন আমার ক্ষিদে নেই আর মাথা ব্যাথা করছে একটু ঘুমুতে হবে।

মিষ্টিও আর জোর করেনা চলে যায় খাবার খেতে।

অনল খাবার শেষ করে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে চুড়ি গুলো দেখে আর ভাবে… এখন কি দিতে যাবে?
নাহ্ ওর সমস্যা হবে ঘুমুচ্ছে হয়তো কাল সকালে দিয়ে দেওয়া যাবে……

সকাল সকাল মৈএীর ঘুম ভেংগেছে গত রাতে খাবার না খাওয়াতে এই সাতসকালেই ক্ষিদে লাগছে ওর। দ্রুত উঠে ব্রাশ করে নেয় কিচেনের দিকে যেতেই দেখে অনলের মা রান্নার কাজে হাত লাগিয়েছে। মহিলা দেখতে একদম অনলের মতো ফর্সা, লম্বা সুন্দরী। কথা বার্তায় মনে হয় হালকা করে হলেও শিক্ষিত। অবশ্য শিক্ষিত না হলে কি আর স্বামী ছাড়া ছেলেকে এত দূর পড়াশোনা করাতে পেরেছে?

আন্টি আসবো?

হ্যাঁ মা এসো। রাতে খাবার না খেয়েই ঘুমালে?

এখন ক্ষিদ্ব লাগছে খাবার কি পেতে পারি আমি এখন?

হ্যাঁ মা কেন নয়?আমি এক্ষুনি প্লেট সাজিয়ে দিচ্ছি।
বলতে বলতেই তিনি মৈএীর হাতে প্লেট দিলেন। মৈএী বুঝলো অনলের মা খুবই মিশুক। না হলে কি আর সামান্য চেনায় ওকে এত আদর করবেন?মৈএী খাবার শেষ করে রুমের দিকে যেতেই দেখলো,
মিষ্টি অনলের রুম থেকে নিল রঙ এর কাচের চুড়ির মুঠো নিয়ে আসছে। নিশ্চয় অনল দিল?? মৈএীর ভিষন কান্নাঁ পাচ্ছে……এখানে আর থাকা যাবেনা…..অনলের সাথে অন্য একটা মেয়েকে সে নিজ চোখে আর দেখতেও চায় না……..

রুমে গিয়ে নিজের ল্যাগেজ গুছিয়ে নিয়ে বের হয়। অনল, মিষ্টি আর ওর মা মিলে খাবার খাচ্ছে। মৈএী ল্যাগেজ নিয়ে সেদিকেই যায়।ওকে দেখে অনল ব্যাস্ত হয়ে বলে,
এগুলো বাইরে নিয়ে এসেছ কেন মৈএী?

আসলে, আসলে আমি চলে যাচ্ছি।

অনল হাত পরিস্কার করে চেয়ার থেকে উঠে বলে,
চলে যাবে মানে?

আমার বাসায় যাবো।

কিন্তু এখন এভাবে?আমি তো আজকে চলে যাওয়ার জন্য আসিনি। তোমার বাবা বলেছেন যেদিন আমি যাই সেদিন এক সাথে ফিরতে।

না স্যার । আমার গ্রাম দেখার ইচ্ছে ছিলো দেখেছি…..আর ভালো লাগছেনা….তাই চলে যাচ্ছি…আর আপনি আপনার কাজ শেষ হলেই চলে আসবেন। আজ আমি একাই যেতে চাচ্ছি।

কিন্তু মৈএী এভাবে তুমি কেন যাবে… এছাড়াও আমি তোমাকে একা যেতে দিতে
পারবোনা।

ভাইয়াকে রাতে কল করেছিলাম স্টেশনে গাড়ি নিয়ে এসেছে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

অনল যেনো কথা বলতেও ভুলে যাচ্ছে। কি এমন হলো যে মৈএী চলে যেতে চাইছে!! আচ্ছা গত কাল সকালের ওই একটা থা প্প ড় এর জন্য নয় তো?

মৈএী তুমি কি আমার সাথে রা*গ করে……

মৈএী অনলের মা আর মিষ্টি কে দেখে নিয়ে অনলকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে,

সেরকম নয় স্যার। আমি যাচ্ছি…. আমার ভালো লাগছেনা …..
অনল আর কিছুই বললো না চলে যাওয়া নিয়ে। মৈএীর হাত থেকে ল্যাগেজ নিজের হাতে নিয়ে বলে,

চলো এটুকু রাস্তা আমি দিয়ে আসছি।

মৈএী চুপচাপ অনলের সাথে রিক্সা নিয়ে চলে আসে মুহিবের গাড়ির কাছে। এইটুকু সময়েও মৈএী অনলের সাথে কোন কথাই বলেনি। রিক্সা থেকে নেমে মৈএী অনলের দিকে তাকায় অনল টাকা দিচ্ছে চালক কে। অনল ঘুরে দাড়াঁতেই
দেখে মৈএী ওর দিকে কেমন ছল ছল নয়নে দেখছে।

কি হয়েছে মৈএী?

কিছুনা।।

এভাবে কথা বলছো কেন?আমার আচরণের জন্যই কি চলে যাচ্ছ?আমি সরি মৈএী ওভাবে আমার বলা উচিৎ হয়নি আর না তোমাকে আঘা*ত করা। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই আমার দিকটা জানিয়েছি। তারপর ও তুমি বার বার……, তোমার বাবার কথা ফেলতে পারিনা বলেই তোমায় আমার বাড়িতে এনেছিলাম তুমি এখানেও ওই একই……..

ভুল করেছি স্যার…..আর হবেনা ক্ষমা করে দেবেন। আমি আপনাকে ভুল বুঝে বা আপনার সাথে অভিমান করে চলে যাচ্ছিনা। আমি কে আপনার সাথে অভিমান করার?না জেনে না বুঝেই বার বার বিরক্ত করেছি। এজন্যই গতকাল ওভাবে রিয়েক্ট করেছেন। আপনার তো কোনো ভুল নেই এখানে। যাই হোক ওই যে ভাইয়ার গাড়ি……………

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৯

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৯)

মৈএীর রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে সময়টা
রাত ১০ টা বাজবে বোধ হয়। মৈএী ভেতরে উচ্চশব্দে কান্নাঁ করছে অথচ দরজা খুলছে না। রাবেয়া আর মজনু দুজনে রয়েছে বাসায়। দুজনেই দরজাতে ধাক্কাধাক্কি করছে আর খুলে দিতে বলছে অথচ মৈএী সেসব শুনছে না।রাবেয়া ব্যাস্ত হয়ে ময়নুলকে বার বার কল করেই যাচ্ছে। মুহিব আর মোহনকেও মজনু কল করেছে তাদের বোন কেন এভাবে কান্নাঁ করবে?মিজানুর সাহেব কে এখনো কল করেনি কেউ উনি শুনলে এই রাতের বেলাতেই ঢাকা থেকে ব্যাস্ত হয়ে চলে আসবেন। মুহিব আর মোহন আসতেই ওরা ধাক্কাধাক্কি করে দরজা ভেংগে ফেলেছে। মৈএী বিছানার পাশে ফ্লোরে বসে কান্নাঁ করছে বাম হাতে লালা র*ক্ত ভেসে যাচ্ছে। মৈএী কি ইচ্ছা করেই এমন করেছে নাকি?হ্যাঁ ওই তো পাশেই ব্লে**ড পরে রয়েছে। মৈএী আঘা*ত সহ্য করতে পারেনা… তাহলে নিজেই নিজেকে কেন এভাবে আঘা*ত করেছে?ওরা দ্রুত ভেতরে আসে ময়নুলকে কল করে সাথে ডক্টর নিয়ে আসতে বলে। ওরা আসতেই মৈএীর হাতে সেলাই করে দেয় ও ব্যান্ডেজ করে দেয় রাবেয়ার বুকের সাথে মিশে রয়েছে মৈএী।মোহন মৈএীর সামনে এসে বলে,

সমস্যা কি তোর? এভাবে নাটক করলি কেন?

মুহিব বলে,
থাম মোহন ও হয়তো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে রয়েছে তাই না বনু আমার?
আমায় বল কি হয়েছে?

মৈএী তবুও কিছুই বলেনা।
মজনু আর ময়নুল ওদের দুজনকে থামতে বলে।

রাবেয়া মৈএীকে খাবার খাইয়ে দেয় আজ সে মৈএীর সাথেই থাকবে।

পরের দিন অনল এসে দেখে মৈএীর এরকম অবস্থা। তবুও সে বই সামনে নিয়ে বসেছে। অনল আসতেই মৈএী বলে,
আজ দুপুরে বাবা এসেছে। নিশ্চয়ই আজ তাকে বলবেন আপনি আর আসবেন না তাইনা?

অনল একবার মৈএীর মুখের দিকে চোখ রাখে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা।
হ্যাঁ। আমি আর আসবো না।কাল থেকে।

ওহ তাই?তাতেই কি আমি আপনাকে ভুলে যাবো? দেখা হবে না আমাদের?

অনল চুপ করে থাকে কিছুই বলেনা। মৈএী আবার বলে, কলেজে কি করবেন?বদলি নিবেন?

সে নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।আমার আর ও অনেক ছাত্র ছাত্রী রয়েছে মৈএী তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট সব শিখেছ এবাফ ওদের কে সময় দিতে চাই আমি।

আচ্ছা? দেখুন চেষ্টা করে।

অনল মৈএীকে পড়িয়ে নিচে আসতেই মিজানুর কে দেখতে পায় সামনে গিয়ে বলে,
আংকেল আমি আর কাল থেকে আসবো না। আপনার মেয়ের সিলেবাস শেষ হয়ে গেছে এখন সে নিজেই সব পারবে।

মিজানুর সাহেব বলেন,
হ্যাঁ ও বলেছিলো কিন্তু ও বলে না যদি তুমি আসো তাহলে সব ভুলে যেতে পারে। দুই ঘন্টা সময় না দাও এক ঘন্টা করে দাও। তবুও প্রতিদিন এসে মেয়েটাকে একটু সময় দিও।

অনলের সাতবে আর ও অনেক কথাই তিনি বলেন। অগত্যা অনলকে আসতেই হবে। তবুও বলে,
আসলে আংকেল আমি গ্রামে যেতে চাই আগামীকাল।

সে যাবে।

এক সপ্তাহ তাহলে আমি আসছিনা এখন যাচ্ছি আংকেল।

সেই সময় মৈএী আসে। সে গ্রামে যাবে অনল শুনেছে। তাই বাবার কাছে বলে,
বাবা আমি কখনো গ্রামে যাইনি। আমিও যেতে চাই।

সে কি কথা?অনলের গ্রামে কেন যাবে তুমি?

প্লিজ বাবা আমি যেতে চাই তুমি স্যারকে বলো প্লিজ।

মেয়ের জেদের কাছে মিজানুর অনলকে রিকুয়েষ্ট করে কল করে যেনো আগামীকাল যাওয়ার সময় মৈএীকে সাথে করে নিয়ে যায়।

পরের দিন মৈএী ব্যাগ প্যাক করে নিয়ে বের হয় অনলের সাথে যেতে খুব হাসি খুশি মুডে দেখে মোহন বলে,

আজকাল তোর মতিগতি বুঝতে পারছিনা কি চলছে তোর মনে?

মোহনের প্রশ্নে মৈএীর আত্নার পানি যেনো শুকিয়ে যায়। মোহন এর মনে দয়া মায়ার ছিটে ফোটা খুবই অল্প নেই বললেও চলে। সে যদি একবার জানে তার বোন প্রেমে পরেছে তাহলে বোন আর বোনের প্রেমিক কে এক কো**পে শেষ করে দেবে।
আমতা আমতা করে মৈএী বলে,

কি চলবে?আমি গ্রাম দেখতে যাব তুই বলার কে?বাবা পারমিশন দিয়ে দিয়েছে আমাকে।

মোহন বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আব্বু তুমি এখন নিজের হাতে মেয়েকে খারাপ বানিও না!ওর বিয়ের বয়স হয়েছে এই ঝামেলা নিয়ে আর কত দিন? ওরা বলেছে এই শত্রুতা শেষ করতে দুই পরিবারে এই বিয়েটা খুবই দরকার। তুমি ওদের সাথে কথা বলে নাও!

মৈএী রে*গে যায় শত্রুতা শেষ করতে তাকে শত্ররুর ছেলেকে বিয়ে করতে হবে কেন?ভাইয়ের উপর রে*গে যায় সে। মিজানুরকে বলে,

আব্বু আম কোন ভাবেই ওই পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।আর হ্যাঁ আমি যাকে বিয়ে করবো তাকে আমি নিজেই পছন্দ করবো!

মোহন ধমকে ওঠে মৈএীকে আজকাল বোনটা অতিরিক্ত কথা শুনছেই না তাদের। ইচ্ছে করে বোনকে ঠাটিয়ে এক চ*ড় দিতে। কিন্তু বাবার ভয়ে সেও পারেনা।মোহন হন হন করে নিজের রুমে চলে যায় মৈএী সোফায় বসে অনলের আসার অপেক্ষা করে। এই কয়েকদিনে সে অনলকে রাজি করেই নেবে তাকে বাধ্য করবে ভালোবাসতে……..

——-
বাসে দুই সিট নিয়েছে অনল। মৈএীর বাবা নিজেদের গাড়ি দিতে চেয়েছিলো কিন্তু অনল বলেছে সে ম্যানেজ করে নেবে। মৈএীও তাই জানিয়েছে সে বাস জার্নি করতে চায় অনলের সাথে। মৈএী কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে ল্যাগেজ ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, ল্যাগেজটা খুব একটা বড় নয় তবুও অনল ওর অসুবিধা বুঝতে পেরে নিজের হাতে নেয়।
যতই মুখে না বলুক না কেন বেহায়া মোন মৈএীকে নিয়ে কতটা ভাবে সে জানে চোখ বন্ধ করলেই মৈএীর করা পাগলামী মনে পরে যায়। মৈএী নিজের হাতের ওই অবস্থা শুধু এ জন্যই করেছে যেনো অনল ওকে সময় দেয়। বলে কয়ে অনলকে রাজি তো করাতে পেরেছে এই অনেক…….

অনল দের গ্রামের বাস স্টপএ বাস থামতেই রিক্সা নেয় অনল। মৈএীকে নিয়ে চেপে বসে বাড়ির দিকে যায়। গ্রামের রাস্তা খুব সুন্দর কেমন নিরবতা কাজ করে। মৈএী অনুভব করে নতুন কিছু। তার পাশে অনল আছে এত ভাল লাগছে কেন এই সময়???

অনলদের বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই নেমে পরে দুজনে। অনলের মা আর আরও একটা মেয়ে এগিয়ে আসে। ওদের থেকে ব্যাগ গুলি নিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। মেয়েটার নাম মিষ্টি। মিষ্টি অনলের সামনে মাথা নুয়ে জিজ্ঞেস করে , কেমন আছো তুমি?অনেক দেরি করে এলে যে এবার?

ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি।

ওহ। আর ওই মেয়েটা?

অনল মৈএীকে দেখিয়ে বলে, আমার কলেজের স্টুডেন্ট!কখনো গ্রাম দেখেনি তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। তোর রুমে নিয়ে যা……

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৮

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৮)

বিকেল হতেই মৈএী সাদা রঙ এর থ্রি পিস সাদা পাথরের চুড়ি, সাদা পাথর বসানো ছোট একটা
মালা কানের দুল সব পরে নিয়ে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছে অনলের আসার। অনল আজকে এত লেট করছে কেন?
গত চার মাস ধরেই অনল তাকে পড়াতে আসছে। এর মাঝে হাজার বার মৈএী অনলকে প্রেমের বাক্য শুনিয়েছে। অনল মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে আসেনা কিন্তু মৈএী বাবাকে বলায় মিজানুর কল করে অনলকে জিজ্ঞেস করেন,
কি হলো বাবা? আসছো না যে?
অনল কিছু একটা বলে পরের দিন ঠিক চলে আসে। মৈএীকে কয়েক বার ধমকিয়েছেও তবুও মৈএী বাদ রাখেনা অনলকে বিরক্তি করার তাই গতকালই অনল মৈএীর উপর চরম বিরক্ত আর রা*গে ফর্সা হাতের তালুতে কয়েক বার স্টিলের
স্কেল দিয়ে আঘা ত করেছে মুহুর্তেই মৈএীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছিলো। কথা বলতেও ভুলে গেছিলো এভাবে কেউ তাকে আঘা ত করেছে?তাও আবার পছন্দের মানুষ টা? অনলের কি মায়া হয় না মৈএীর উপর? একটা মেয়ে প্রতিদিন ব্যার্থ হয়েও আবার প্রেম নিবেদন জানাচ্ছে আর অনল বার বার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে?মৈএী ব্যাথা পাওয়া হাত সোজা রেখেই ছলছল নয়নে অনলের দিকে তাকিয়ে দেখে অনল চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
মৈএী চুপ করেই থাকে হাতের ব্যাথায় কান দিয়ে ধুয়াঁ বের হচ্ছে যেনো গলায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার যোগাড়! সেই মুহুর্তে অনল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে চলে গেছে। হাতের ব্যাথায় আজ আর মৈএী কলেজ এ যায়নি। অনল আজকেও আসতো না তাই মৈত্রী আগেই বাবাকে বলে দিয়েছে আগামীকাল ক্লাস এক্সামের অনেক পড়া জমে আছে স্যারকে কল করে এই বিকেলেই আসতে বলো। অনলকে বলা মাত্র অনল জানিয়েছে সে আসবে,…

অনল আসে ঘন্টাখানেক পর। মৈএী বই নিয়েই বসে ছিলো অনল এসে পাশে চেয়ারে বসে।মেয়েটা আজকাল ওকে ইম্প্রেস করতে সাজুগুজুর দিকেও নজর দিয়েছে!মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোয়াঁ দেখা যায় আজকাল। শুধু তাই নয় অনলের মতো সাদা কালো মিশেলের জামা কাপড় চুজ করে। অনল বুঝতে পারে মৈএী তাকে সত্যই ভালোবেসে ফেলেছে বার বার যে মেয়েকে ফিরে দিয়েছে অনল সেই মেয়ে বার বার ওকে চাইছে ওকে পাওয়ার চেষ্টা করছে অবশ্যই সে খাঁটি প্রেম। কিন্তু অনলের করার কিছুই নেই মৈএীর মতো একটা মেয়ে কখনোই অনলের হতে পারবেনা। মৈএীর বাবার কি নেই?সব আছে মেয়েকে নিশ্চয়ই সেরকম ঘরেই বিয়ে দিবেন তার মতো এতিম সন্তানের হাতে কখনোই মেয়েকে তুলে দিবেন না। অনলের মতো করে কে বুঝাবে মৈএীকে সেই কথাট? শুধু মন দিয়ে প্রেম হলেও বিয়ে হয় না।পয়সা ছাড়া কোনো ভালোবাসাই বেশি দূর অবধি যেতে পারবেনা। মৈএী যে পরিবারে বিলং করেছে সে পরিবারের সাথে অনলের পরিবারের মিল নেই। মৈএীর একদিনের হাত খরচই অনলের সারা মাসের যোগাড়। কি করে পুর্নতা পাবে এই ভালোবাসা? অনল নিজেকে শক্ত রাখতে চায় কোনভাবেই মৈএীর সাথে সাথে নিজেকেও দুর্বল করলে হবে না মৈএী এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে তার মতো করব অনলকে ভাবলে তো আর চলবে না।

অনল পাশে আসতেই মৈএী বই এগিয়ে দেয় অনলের দিকে। অনল বই নিয়ে তা খুলে দেখে বলে,

কোন চ্যাপ্টার?

কোনোটাই না।

তাহলে?

আমার সব চ্যাপ্টার বোঝা শেষ এখন তোমায় বুঝতে চাই অনল!

আমি তোমার টিচার মৈএী সন্মান দিতে চেষ্টা করো।

তুমি আমার প্রেমিক পুরুষ!!

অনল হকচকিয়ে যায় এরকম কেন মেয়েটা যা মুখে আসে বলে দেয়!গত চার মাস ধরেই মৈএী অনলকে হুট হাট তুমি তুমি করে বলে আর উদ্ভট যা তা বলে ফেলে অনল বিব্রত হয় ।
এখন আবার কেমন প্রেমিক পুরুষ বলছে!!
অনল রে*গে যায় ভেতর ভেতর মেয়েটা এরকম কেন?তাকে বার বার দুর্বল করে দিতে চায় । অনল নিজেকে আবার ও শক্ত করার চেষ্টা করে আজকাল কেন যেনো মৈএীর ডাকে সাড়া
দিতে ইচ্ছে করে। মানুষের মন তো…….. একটু ভালোবাসা পেলেই গলে যেগে ইচ্ছে করে……

এসব কেমন কথা.তোমার সব বই বুঝে নেওয়া শেষ?

নাহ!

কোন টা বুঝোনি?আমায় দেখাও……

তোমাকে বুঝিনি অনল……..তোমাকে আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছিনা……একটু বুঝিয়ে দাও না অনল……আমি একা একা আর পারছিনা……..

বাদ দাও…….

বাদ দিতে চেয়েও তো পারছিনা……বুঝতে তো আমাকে হবেই….. অনল……. আমায় বিয়ে করবে?

আমি আর কাল থেকে আসবো না মৈএী তোমার বাবাকে প্লিজ তুমি বলে দিও যে তোমার সব বই বুঝে নেওয়া হয়েছে আমার থেকে। প্লিজ………

তুমি আমায় ভালো কেন বাসছো না অনল?আমার কোন দিক দিয়ে অপুর্নতা রয়েছে অনল?তুমি আমাকে বলো……

মৈএী প্লিজ স্টপ! ভালো লাগেনা আমার এসব কথা শুনতে….. আরেএ আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি মৈএী….. কলেজ এ তো তাও যেটুকু চুপ থাকে তোমার প্রেম প্রস্তাব দেওয়া কিন্তু বাসায় তুমি অনেক বিরক্ত করছো আমাকে আমি আর পারছিনা……..

প্লিজ অনল আমাকে একবার ভালোবাসো তুমি…….
শুধু একবার…….

আমি যাচ্ছি….

তুমি যাবেনা…..

কি তুমি তুমি করছো মৈএী স্যার হই আমি তোমার বুঝতে পারো না?

অনলকে এই প্রথম বার মৈএী উত্তেজিত হতে দেখলো…. তবুও মুখ বন্ধ করলো না সে আবার ও অনলকে বুঝাতে লাগলো,
কোন ভাবেই তুমি ছাড়া আমি ভাবতে পারছিনা অনল….আমি কেন প্রেমে পরলাম? তাও আবার তোমার? আমাকে একবার….

প্লিজ বন্ধ করো তোমার মুখটা। আমি আসছি……..

অনল রাস্তায় এসেছে রিক্সা পেতেই সেখানে বসে নিজের বাসার দিকে যেতে লাগলো আর ভাবলো,
তুমি কেন আমাকে কেন দুর্বল করছো মৈএী কেন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছো না?তুমি তো স্বর্ণের চামচ মুখে নিয়ে বেড়ে উঠেছো আর আমি??কিভাবে তোমায় বলি! ভালোবাসি………

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৭

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৭)

মৈএী আমতা আমতা করে ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে অন্যদিকে সবাই ভাবে এখন মৈএী কি করতে পারে?প্রথম দিন এই স্যারের সাথে যে কাজ করেছে তা আবার করবে নাকি ভেবে পায় না সকলেই। তবে মৈএী সবাইকে অবাক করিয়ে দিয়্ব উঠে দাঁড়িয়ে অনলের চোখের দিকে চোখ রাখে। যেনো অনলকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
অনল বলে,
কি দেখছিলে?

মৈএী খেয়াল হারিয়েছে অনেক আগেই সেভাবেই বলে, তোমাকে…..

অনল বিব্রত হয় ক্লাসের সবাই হা করে মৈএীর মুখের দিকে তাকিয়ে ওটা সেটা বলেই যাচ্ছে। অনল ঘাবড়ে যায় মৈএীর দিকে কট*মট করে তাকিয়ে বলে,
এভাবে কথা বলছো কেন আমার সাথে?টিচার না আমি তোমার?? সকলেই কি ভাবছে!!

মৈএী অনলের ধম*কে আবার ও হুশে ফিরে আসে। অন্যদিকে চোখ ফেরায় বলে,
সরি স্যার আর হবে না।

সুমনা তাজ্জব বনে যায় এই মেয়ে সরিও বলতে জানে??অনল আর কিছুই বলেনা ওকে। আবার ও সামনে গিয়ে বই ও নজর দিতে বলে সবাইকে।

—–

কিরে তুই আজকে ক্লাসে ওভাবে কথা বলছিলি কেন স্যারের সাথে?

ও তুই বুঝবি না সুমনা।

কেন বুঝবো না?তুই বুঝিয়ে বল আমায়!

আমি ওনার প্রেমে পরেছি সুমনা!

সুমনার ভেতরটা কে*পে ওঠে এই মেয়ে প্রেমেও পরতে পারে??
সে হতাশা গলায় বলে,
এসব কি বলছিস কি তুই?

একদম ঠিক বলছি। আমি স্যারের প্রেমে পরেছি।

কবে?

সে তো জানিনা। সময় খেয়াল করে আমি প্রেমে পরিনি। শুধু জানি ওনাকে আমার খুব ভালো লাগে। আচ্ছা তুই একটা আইডিয়া দে কি ভাবে আমি স্যারকে ইম্প্রেস করবো?

সুমনা কিছু ভাবে এরপর বলে,
বুদ্ধি পেয়েছি। স্যার তো তোকে প্রতিদিন বিকেলে বাসায় গিয়ে পড়িয়ে আসে তুই সেই সময় সুন্দর করে সেজে গুজে প্রস্তাব দিবি ব্যাস হয়ে যাবে।

যদি না মেনে নেয় আমাকে।

তাহলে আর কি? খু*ন করে ফেলবি। তোর যা স্বভাব!!

মৈএী ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে,
এসব কি বলছিস কি তুই?খু*ন কেন করবো? আমি সত্যই ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

তাহলে যেভাবে বললাম সেভাবেই বলবি অনল স্যারকে কেমন?

হুম।

মৈএী আজকে বিকেল হতেই সুন্দর করে সেজে গুজে চেয়ার নিয়ে বসে। এখনো স্যারের সময় হয়নি আসার তাই আরেকবার গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে, ব্ল্যাক লং থ্রি পিস । মাথার চুল গুলি বেনুনী করা। চোখে কাজল দেওয়া দুই হাতে ব্ল্যাক কাচের চুড়ি। দুই ঠোঁটের ভাজে হালকা পিংক রঙ এর লিপস্টিক। কপালে ছোটে কালো টিপ দেখা যাচ্ছে এতেই মৈএীকে অসাধারণ সুন্দরী লাগছে। আজ তো মৈএী নিজেই নিজের প্রেমে পরতে বাধ্য হয়েছে তাহলে কি অনল ও প্রেমে পরবে আজ?

অনল যথা সময়ে আসতেই মৈএী নিজেকে ঠিক করে নিয়ে চেয়ারে বসে বই খুলে ভাবে কি দিয়ে অনলকে বলা শুরু করবে?আচ্ছা অনল কি তাকে ফিরিয়ে দিবে?ভেবে পায় না ।
অনল সামনের চেয়ারে বসতেই মৈএীর ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে এমন কেন লাগছে ওর?অনলের দিকে তাকিয়ে দেখে অনল একটা বই খুলছে।এরপর মৈএীর দিকে এগিয়ে দিয়ে সেগুলো সমাধান করতে বলে। মৈএী নিজের কাজ শেষ করে অনলের দিকে খাতা দেয়।

স্যার!

অনল খাতা দেখতে দেখতে বলে,

হ্যাঁ।

আসলে মানে স্যার!!

কিছু বলবে?

জ্বি মানে! আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।

বলে ফেলো।

আসলে স্যার মানে…….

অনল খাতা সরিয়ে রাখে মৈএীর দিকে তাকিতে দেখে আজ মৈএী সুন্দর করে সেজে বসে আছে। এত সুন্দরী কেন লাগছে মৈএীক? নাকি মৈএী আগে থেকেই এমন সুন্দরী সে খেয়াল করেনি?

আমতা আমতা করছো কেন বলে ফেল……

আপনি বলুন আপনি রাগ করবেন না।

না।

আসলে স্যার আমি আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছি!

অনলের দুই চোখ সরু হয়। কপালে ভাজের সংখ্যা বেড়ে যায়।
এসব কি ধরনের কথা বার্তা মৈএী?

ভালোবাসা ধরনের কথা বার্তা স্যার।

অনল বিরক্তির সাথে বলে,
আমার সাথে এরকম মজা করবেনা মৈএী প্লিজ!

না স্যার মজা নয় আমি একদম সিরিয়াস!

মৈএী প্লিজ! এসব বলবেনা আমাকে।

মৈএী টেবিলের উপরে রাখা অনলের হাত ধরে ফেলে তারপর বলে ,
মজা নয় অনল….আমি তোমাকে সত্যই ভালোবেসে ফেলেছি কবে কখন, কিভাবে জানিনা, তবে আমি তোমায় অনেক বেশিই ভালোবেসেফেলেছি।
আমার প্রথম আবেগ তুমি, প্রথম কোন পছন্দের পুরুষ তুমি আমার সপ্ন থেকে শুরু করে বাস্তবতা তুমি তোমার কাছে থেকে নতুন একটা জীবন পেয়েছি আমি আর সেই জীবন তোমার সাথেই পার করে দিতে চাই অনল তুমি কি আমার পাশে রবে না??বলো??

অনল নিজের হাত মৈএীর হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় চোখ বন্ধ করে কিছু সময় চুপ করে থাকে এরপর বলে , এ রকম ভালোবাসা, প্রেমময় কাব্য আমাকে শুনাবেনা প্লিজ। তা হলে আমি তোমাকে আর পড়াতে আসবো না মৈএী।

মৈএী কিছুই বললোনা শুধু অনলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো আর অনল?সে এক মুহুর্তের জন্য ও মৈএীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো না। চুপ করে বই দেখলো, বইয়ের দিকে চোখ রেখেই মৈএীকে বুঝিয়ে দিয়ে লিখতেও দিলো।
মৈএী বুঝতেও পারলো না অনল এসব শুনেও কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে আর সে একদম এভাবে স্বাভাবিক নেই!! অনল কি তাকে বুঝবে না?ওকে কি ভালোবাসবে না??

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৬

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৬)

অনল তোমার সাথে মিজানুর সাহেব দেখা করতে এসেছেন। উনি অনেক্ষন আগেই এসেছেন। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে রয়েছেন ক্লাস শেষ করে চলে এসো স্যারের কেবিনে।

ওকে স্যার।

অনল একটু ভাবে মিজানুর সাহেব কেন তার সাথে দেখা করতে এসেছে।মৈএী কি বাসায় বলে দিয়েছে নাকি যে অনল মানা করে দিয়েছে ওর প্রস্তাব?ক্লাস শেষ করেই অনল প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে আসে। মিজানুর সাহেব আর প্রিন্সিপাল স্যার এখনো গল্প করেই চলেছেন ।
অনল কে দেখেই তিনি বলেন,
মিজানুর ভাই এ হলো অনল। যার সাথে আপনি দেখা করতে এসেছেন।

অনলকে দেখে মিজানুর সাহেব হাসলেন তারপর পাশের চেয়ারে ইশারায় বসতে বলেন। অনল সেখানে বসতেই তিনি বললেন,

আসলে আমি তোমার ছাত্রী মৈএীর বাবা।
ওকে তো তুমি চেনো! শুনেছিলাম তুমিই একদিন রাস্তার মাঝখানে থেকে আমার মেয়েকে বাচিঁয়ে এনেছিলে।
আমার মেয়েটার আমার জন্যই কিছু শত্রুর সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ এ নেওয়া আসা করাও ঝামেলা হয়ে যাচ্ছে এখন তুমি তো জানো আমার মেয়েটা খুবই মেধাবী ছাত্রী এই সময় ক্লাস মিস দিলে অনেক ক্ষতি হবে ওর তা ও নিজেই চায় না। আসলে আমি চাইছিলাম তুমি কি প্রতি দিন বিকেলে আমার মেয়েকে দুটো ঘন্টা সময় দেবে?তাহলে আমার খুবই উপকার হয় বাবা । অনেক আশা নিয়ে আমি তোমার কাছে এসেছি।
অনল কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে যতটা জানে মিজানুর সাহেব অত্যান্ত ক্ষমতাবান মানুষ সে কাউকে রিকুয়েষ্ট করতেও জানে?ক্ষমতা দেখিয়ে হুমকু দিয়েও তো অনলকে প্রস্তাব দিতে পারতো। অনল কিছুটা ভাবলো এরপর জানালো,

আমি চেষ্টা করবো আংকেল।

মিজানুর সাহেব খুশি হলেন অনলের উওর শুনে এরপর মুখে হাসির রেখা আর ও টেনে বললো,
আচ্ছা বাবা তাহলে তুমি আজ বিকেলেই চলে আসার চেষ্টা করো আমি অপেক্ষায় থাকবো তুমি তো আমার বাসার ঠিকানা জানো তাই না?মৈএীকে রেখে এসেছিলে সেদিন।

জ্বি আংকেল আমি যাবো।

আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি তুমি একটু জলদি আসার চেষ্টা করো আমার মেয়েটা বই নিয়ে বসেই থাকবে।

জ্বি আংকেল।

কলেজ শেষ করে অনল নিজের বাসায় চলে গেলো। প্রতিদিন সকালেই অনল গোসল করে কলেজ এ চলে যায় তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। রান্না করে রেখে রেডি হয়ে মৈএীর বাসার দিকে চলে গেলো।
বাসার সামনে গিয়ে রিক্সা থেকে নামতেই দেখে মৈএী গেট এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অনলকে দেখেই গেইট খুলে দিতে বলে এরপর অনলকে সালাম দেয়। অনল উত্তর দিয়ে মৈএীর দিকে তাকিয়ে বলে,

চলো।

জ্বি স্যার। আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার মতো বাবাকেও ফিরিয়ে দিবেন।

সেরকম নয়।

মৈএী অনলের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হয়। এরপর অনলকে সাথে করে নিয়ে বাসার ভেতরে যায়। দোতলা বিশাল বাড়ির নিচ তলায় অনেকটাই ফাকাঁ সেখানে অনেক গুলি সোফা সহ সামনে কাচের টেবিল রাখা ও সামনে মনিটর স্যেট করে রাখা সেখানেই দুইজন ছেলে বসে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছে। ওদের দেখিয়ে দিয়ে মৈএী
জানায় ওরা ওর বড় ভাই মুহিব আর মোহন। অনল ওদেরকেও সালাম দেয় মোহন কে সে চেনে গত বছরই কলেজ এ থেকে বিদায় নিয়েছে মোহন। সে উঠে অনলকে সালাম দেয় কথা বার্তা বলে তারপর রাবেয়া নাস্তা সাজিয়ে আনে। এরপর মৈএীর রুমে নিয়ে যায় দোতলাতে। বিশাল রুমের এক পাশে রয়েছে বিছানা ও চেয়ার টেবিল। আলমারি ও ওয়ারড্রব আর ও রয়েছে বিভিন্ন সামগ্রী। অনল একটা চেয়ারে বসে সামনের চেয়ারে মৈএী বসে সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে শুধু পড়া দেখিয়ে দিয়েই অনল চলে যায় আজ তো প্রথম দিন তাই সবার সাথে পরিচয় করতে গিয়েই সময় বেশিটা চলে গেছে।

—-
পরের দিন সকালে মৈএী মুহিবের সাথে কলেজ এ আসবে ব্যাগ নিয়ে নেমে আসতেই মোহন বললো,

চল আমি নিয়ে যাই আজকে।

তুমি কেন?মুহিব ভাইয়া না যাবে বলেছিলো।

এত কথা বলিস কেন সব সময়?আমার সাথে যেতে কি সমস্যা তোর? যদি সমস্যা হয় তাহলে তুই একাই চলে যা। আদিক্ষ্যতা দেখানোর কি আছে!তুই একাই শত্রুদের নজরে আর আমরা নেই??রোজ রোজ হাজার হাজার মেয়ে রাস্তায় একাই চলাফেরা করছে কই তাদের তো কাউকে দরকার হচ্ছেনা! তোর বেলায় কেন এত হচ্ছে?তুই কি আহামরি সুন্দরী??

মৈএী ছোটো ভাইয়ের কথা শুনে ব্যাথা অনুভব করলো মনের মাঝে। সে জানে এই ভাইটা সব সময় তাকে খোঁচা দিয়্ব কথা বললেও অসংখ্য ভালোবাসে সে অনেক কেয়ার করে জ্বর হলে সারা রাত রুমের মাঝেই পাশে রবে। তবুও যেনো এভাবে কথা বলে কি শান্তি পায় বুঝেনা।
মোহন মৈএীর চোখে জল দেখে বলে,
এভাবে কান্নাঁ করার কি মানে?আমি তোকে অপ**মান করে কথা বলেছি?প্রেত্নিকে প্রেতাত্মা বললেই ক্ষ্যেপে য্যায় কেন??যত্তসব!!

মৈএী কিছুই বললোনা হন হন করে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে। মোহন এসে পাশের সিট এ বসে।

খাবার না খেয়েই এলি কেন?

তোর খাবার তুই খা না আমাকে বলতে আসছিস কেন?কে হই আমি তোর?

মোহন বুঝে ফেলে বোন তার রে*গে বোম হয়ে আছে তবে। কি করবে এই ছোটে বোন নামক এটম বোমাদের রা গাতে এত ভালো লাগে!!

ওহ আচ্ছা আচ্ছা! ধন্যবাদ আপনাকে আফা!আমাদের খাবার বাচাঁনোর চেষ্টা করেছেন আপনি। খুব ভালো মহৎ কাজ করলেন আপনি সকাল সকাল আপনার এই কাজে খুব আনন্দিত আমি আফা!!

তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!!
মৈএী আর সত্য কিছুই বলেনা মোহন নানা রকম খোঁচা মার্কা কথা বলেই যাচ্ছে। তবে মৈএী একদম চুপ করে আছে।

——
মৈএী সব ক্লাসে মনযোগী হতে পারলেও অনলের ক্লাসে মনযোগী হতে পারেনা। কি করে দিবে মন?মনটাতো অনলকে নিয়স ভাবতেই ব্যাস্ত থাকে। অনল কি খেয়াল করে ক্লাসে এত সবার মাঝে মৈএী কে?নিশ্চয় না কেননা মৈএীর দিকে অনল এক মুহুর্তের জন্য ও তাকিয়ে দেখেনা। যেমন আসে বই খুলে সব বুঝিয়ে দেয় যাদের সমস্যা হয় তারা কুয়েশ্চন করলে উত্তর করে অনল ব্যাস এই তার দিন কালের সূচি।
অনল মৈএীকে ভুল প্রমান করে মৈএীর একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। মৈএী এতটাই বেখেয়ালি ছিলো যে পাশে থেকে সুমনা সেই কখন থেকে মৈএীকে ঠিক করে বসতে বলছে খেয়াল করেনি অনল যখন মৈএীকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তখন হুশ ফিরে।

কি হলো এখনো বসে আছো কেন?

মৈএী আমতা আমতা করে ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে অন্যদিকে সবাই ভাবে এখন মৈএী কি করতে পারে?প্রথম দিন এই স্যারের সাথে যে কাজ করেছে তা আবার করবে নাকি ভেবে পায় না সকলেই।

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৫

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৫)

গুনে গুনে দুই সপ্তাহ পর মৈএী ভাইয়ের সাথে কলেজ এসেছে এই কয়েকদিন বাসাতেই ছিলো অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন ভাবেই কলেজ এ ক্লাস করতে আসতে পারছিলো না। আজকেও বাসার বাইরে বের হতে ভয় লাগছিলো কিন্তু কি করবে? বাইরে তো আসতে হবেই তাই না?মৈএী সুমনাদের সাথে গিয়ে বেঞ্চ এ বসে কিছু কিছু জায়গায় এখনো ক্ষ*তের দাগ বসে রয়েছে। সুমনা মৈএীকপ সাবধানে বসতে বলে মৈএী এতদিন না আসাতে সুমনা ওর জন্য নোট করে রাখে সেগুলো দিয়ে দেয় এত গুলি দিন পর মৈএী আসাতে বন্ধু মহলে হৈ চৈ শুরু হয়েছে মৈএী সবার সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছে তাই তো ওর অসুস্থতার খবর শুনে ক্লাসের অনেকেই ওর বাসায় গিয়ে দেখে এসেছে। সব গুলি ক্লাস মৈএী ভালো ভাবেই করে। ছুটির আগে অফিস রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে ওকে দেখে একজন টিচার এগিয়ে আসে।

কি হয়েছে মা মৈএী?

আসলে…..

কোন প্রয়োজন তোমার?

জ্বি।

কাকে ডেকে দেব?

অনল স্যার কে…

অনল?তিনি শুকনো ঢোক গিলে নেয় এই মেয়ে অনল স্যার কে কেন খুজঁতে এসেছে?প্রথম দিন অনলের সাথে মৈএী যা করেছে এরপর আর কেউ অনলের সাথে মৈএীকে ঝ গ ড়া বা ঝামেলা করতে দেখেনি। রাগী স্যার হয়েও অনল মৈএীকে কিছুই বলেনি তাহলে কেন ওকে ডাকছে?

অনলের সাথে দেখা করতে এসেছো তুমি?

জ্বি।

ওর সাথে কি কোন ঝামেলা হয়েছে তোমার আর মা মৈএী?

কথায় কথায় ঝামেলা করছেন কেন?ওনার সাথে আমার দেখা করা দরকার তাই এসেছি আপনি ওনাকে ডেকে দিবেন কি না তাই বলুন অযথা কেন কথা বলছেন?

মৈএীর উত্তর শুনে রাজ্জাক স্যার আর কিছুই বলেনা অনলকে দেখে ডেকে এগিয়ে আনে। অনল চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বারান্দায় আসে মৈএীকে দেখে সেদিকেই এগিয়ে আসে। অনল আসতেই।মৈএী সালাম জানায় অনল একটু হকচকিয়ে যায় এরপর উত্তর দেয়।

আপনিকি বিরক্ত হয়েছেন স্যার এখানে আসতে?

না। তুমি কি বলতে চাও বলে ফেলো …

sory স্যার… সেদিন আপনার সাথে চরম বেয়া*দবী করে ফেলেছিলাম। আসলে আমার ওই আচরণ করা উচিৎ ছিলো না। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি স্যার। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ সেদিন যদি আপনি না এগিয়ে আসতেন আমার বিপদে তাহলে আমি হয়তো আজ আর এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। আমাকে নতুন একটা জীবন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে স্যার।

তোমার জীবন আমি নই প্রভু বাঁচিয়েছেন। আর হ্যাঁ সব কিছুই বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ এখন কি আমি আসতে পারি?

মৈএী স্বাভাবিক চোখেই অনলকে দেখে নেয় সম্পুর্ন এক বার এরপর বলে,
হ্যাঁ আসুন।

—–

মৈএী এখন নিয়মিত ক্লাস করে ভাইয়া অথবা বাবা এসে নিয়ে যায় আবার রেখে যায়। মৈএী খেয়াল করে প্রতিদিন অনলকে। কেন জানেনা অনলকে খেয়াল করতে করতে এখন অনলের ভেতরটা বুঝতেও চেষ্টা করে মৈএী আর ও একটা জিনিস খেয়াল করেছে মৈএী ক্লাসে যখন কোন মেয়ে উঠে অনলের কাছে পড়া বুঝে নিতে যায় আর অনল খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় মৈএীর রাগ হয় কেন মেয়ে গুলোর সাথে অনল কথা বলবে?অনল সব সময় সাদা আর কালো মিশেলে সব ড্রেস ইউস করে। আজকাল নুসরাত কেও মৈএী সহ্য করতে পারেনা। বিশেষ করে যখন খেয়াল করে অনল আর নুসরাত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মৈএী বিরক্ত হয় এত এত সব এর মাঝে।

অনলের কথা মৈএী বাসায় বলে রেখেছে বাবার কাছে সে প্রায়ভেট নিতে চায় তাও আবার সেই টিচার যে একদিন মৈএীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে এনেছে। মিজানুর সাহেব বলেছেন তিনি ওই স্যারের সাথে কথা বলবেন এ ব্যাপার নিয়ে।
মৈএী ক্লাস শেষ করে অনলের সাথে দেখা করতে যায় আর বলে,

স্যার স্যার থামুন…..

অনল পেছন ফিরে মৈএীকে দেখে নেয় এরপর থেমে দাঁড়িয়ে পরে।

জ্বি ….

আসলে স্যার আমি সেই ক্লাস শেষ এর পর থেকেই আপনাকে একটা কথা বলার জন্য ছুটো ছুটি করে আসছি।

কি? কেন?

আসলে স্যার আমার মনে হয় আমি আপনাকে প………..

মৈএী কাচুঁমুচু করে ফেলে নিজের মুখটা কি বলতে কি বলে ফেলছিলো সে এখন…….কথা পাল্টে নিয়ে বলে,
আসলে…. আসলে….,স্যার আমার মনে হয় আপনি যদি আমাকে একটু সময় করে বাসায় গিয়ে ক্লাসের পড়া গুলো বুঝিয়ে দিয়ে আসতেন আমার খুবই উপকার হতো……
আপনি তো জানেন আমি কি অবস্থায় রয়েছি…. স্যার আপনার কি সময় হবে…..

অনল চুপ করে মৈএীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে শুধু মৈএীর কথা শেষ হতেই অনল বলে,
আমি সময় বের করতে পারবো না মৈএী। আমার কলেজ শেষ এ দুটো টিউশন রয়েছে এরপর বাসায় ফিরে রান্না করতে হয় আবার আমাকে। কিভাবে সময় দেব আমি তোমায়? তোমার বাবাকে বলে অন্য একটা টিচার ঠিক করে নিলেই পারো……

মৈএী নিভে যায় সে জানে অনল তার ব্যাবহারের জন্যই সময় দেবে না তা না হলে মৈএী যতটা জানে অনল একটা অতিরিক্ত টিউশন খুজঁছে ক্লাসের সবাই মিলে ব্যাস ওঠিক করতে চাইছে কিন্ত মৈএী সবার সাথে নয় একটু একা অনলের সাথে সময় চাইছে কেম চাইছে নিজেও সেভাবে বুঝতে পারছে না। সে চায় অনল তাকে পড়াক অন্য সবাইকে নয় সেখানে কত ঢং করা মেয়েরাও রয়েছে। যেভাবেই হোক অনলকে সময় দিতেই হবে মানে হবে।

চলছেই তো…………
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৪

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৪)

অনলকে শক্ত করে জ*ড়িয়ে ধরে রেখেছে মৈএী মাথা কেমন ভাড়ি লাগছে নিজের কাছে ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে শক্তি পাচ্ছে না দাঁড়িয়ে থাকার বিভ্রান্ত হয়ে অনলের পিঠের শার্ট আকঁড়ে ধরে বুকের সাথে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। যদি অনল না আসতো? তাহলে নিশ্চয়ই মৈএী এতক্ষন বেচেঁ থাকতো না।ভয়ে জ্ঞান হারা*তে বসেছে ও এখনো র*ক্তে ভিঁজে রয়েছে মৈএী চার পাশের ছুটে আসা গাড়ির সাথে কম তো ধাঁক্কা খায় নি! ব্যাথা করছে পুরো শরীরে। অনল ওকে নিয়ে রাস্তার এক পাশে আসে দোকান থেকে পানির বোতল নিয়ে মুখে দিয়ে দেয় কিছুটা পান করে মৈএী যেনো ছোট একটা বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে এই মুহুর্তে ভয়ে। অনল মৈএীর মুখের র*ক্ত নিজের রুমাল বের করে হালকা করে মুছে দিয়ে পানি দিয়ে ধুঁয়ে দেয় হালকা করে এরপর রিক্সা নিয়ে ফার্মেসিতে যায় ওকে ট্রিটমেন্ট করিয়ে বের হয়ে আসে। এখনো মৈএী ভয়ে অনলের হাত শক্ত করে ধরে আছে।

তোমার বাসা কোথায়? আমি কি রিক্সা দেখিয়ে দেব??

মৈএী অনলের হাতে হাত রেখে মুখের দিকে খেয়াল করে। অনল রাস্তার দিকে তাকিয়ে রিক্সা দেখছে। মুখ জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মৈএী নিশ্চুপ হয়ে রইলেও ভেবে যাচ্ছে একটু আগের কথা কি হচ্ছিলো তার সাথে?সে এখন রিক্সা নিয়ে কিভাবে একা বাসায় যাবে যদি রাস্তায় কিছু হয়ে যায়? না না এভাবে সে একা যাবেনা। এখন কি করবে?

অনল একটা রিক্সা থামিয়ে মৈএীকে উঠে বসতে বলে,
যাও ওখানে গিয়ে বসো।

মৈএী অনলের হাত ছেড়ে দেয় না। আরও শক্ত করে বন্ধন ভয়ে অনলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কি হয়েছে?

অনলের প্রশ্নে উত্তর দেয় না মৈএী উল্টো কান্নাঁ শুরু করে দেয়। অনল হকচকিয়ে যায়। এই মেয়ে এভাবে কান্নাঁ করতেও পারে?সেদিন না কিভাবে সবার সামনে অনলের গালে চ*ড় বসিয়েছিল? কই গেছে সেই সাহস?
অনল সে নিয়ে আর চিন্তা করেনা উল্টো মৈএীকে শান্তনা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
এভাবে কান্নাঁ করব কি হবে?বাসায় যাবা না?
কোথায় যাচ্ছিলে? কলেজের সময় ছিলো তো তখন কিন্ত্ তোমার সাথে তো বই ব্যাগ কিছুই ছিলো না নাকি নিজ ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছিলে?বড় লোক বাবার আদরের মেয়ে এভাবে রাস্তায় ম*র*তে এসেছে??

মৈএী অপমান হচ্ছে বুঝতে পারে তবুও অনল কে কিছুই বলেনা কি বলবে ও?আজ যদি অনল ওকে ওখান থেকে না তুলে নিতো? কি হতো? মৈএী তো অনলের সাথে যে ব্যবহার করেছিলো তা মনে করতেই আজ নিজেকে ছোটো মনের মানুষ মনে হচ্ছে। বাবা আর ভাই ছাড়া মৈএী এই মুহুর্তে কাউকে নিজের জন্য বিশ্বাস করতে পারবেনা কিন্তু একটা কিছু রয়েছে যার জন্য অনলের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে হয়তো অনল ওকে সাহায্য করেছে বলেই এমন মনে হচ্ছে।

আমি, আমি বাসায় যেতে চাই ।

আচ্ছা তাহলে রিক্সায় গিয়ে বসো উনি তোমায় নামিয়ে দিবে।

মৈএী কিভাবে বলবে?সে একা যেতে চাচ্ছেনা ভয় লাগছে কখন আবার কে এসে ওকে মা*র*তে চাইবে কে জানে?

আমি মানে আমি….. একাঁ যাবো না।

অনল বিব্রত হয় বলে,
কার সাথে যাবে তবে?

আপনি আমাকে একটু বাসায় রেখে আসবেন স্যার?একাঁ আমি বাসা পর্যন্ত যেতে পারবো না ওরা আমাকে মে*রে ফেলে দিবে তা হলে!

অনল চিন্তিত হয়….কেউ কি মৈএীর ক্ষতি করতে চায়??হবে হয়তো….

আমি তোমার বাসা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো?

হু।

আমাকে আঘা*ত করার সময় আমার অবস্থান নিয়ে ভেবেছিলে?

সোজা কথায় মৈএী লজ্জা পায় অপেক্ষা রাখেনা অনল তাকে কিসের কথা বলতে বুঝাচ্ছে তা বুঝতে।

মৈএী কান্নাঁ ভেজাঁ চোখে অনলের দিকে তাকিয়ে বলে,
স্যরি স্যার।

অনল কাউকে কল করে বলে দেয়,ক্লাস গুলো সে সময় পরিবর্তন করে নেবে আজ।
অনল প্রথমে রিক্সায় বসে এরপর মৈএী ফাঁকা স্থানে গিয়ে বসে পরে। অনল খেয়াল করে মৈএীর জামা কাপড় লেগে থাকা র**ক্ত শুকিয়ে শুকিয়ে গেছে। ব্যাথায় ফর্সা মুখ ফ্যাকাসে হয়ে রয়েছে। এখনো নীরবে কান্নাঁ করেই যাচ্ছে। রিক্সা ওয়ালা মামাকে মৈএী বাসার ঠিকানা বলে।

—–

ঝকঝকে সাদা রঙের বিশাল একটা দোতলা বাড়ির সামনে রিক্সা থামিয়েছে অনল মৈএীর হাত ধরে নামিয়ে নেয় রিক্সা থেকে এরপর ওর সাথে কথা বার্তা বলে রেখে আসে গেইট এর সামনেই। মৈএী যদিও অনলকে বার বার রিকুয়েষ্ট করে ভেতরে গিয়ে একটু বসার জন্য কিন্তু অনল শুনেনা। একই রিক্সা নিয়ে কলেজের দিকে চলে যায় মৈএী দুর্বল শরীরে গেইটম্যানকে ডাক দিয়ে ভেতরে যেতেই রাবেয়া সহ বাসার কাজের মেয়েটা ছুটে আসে ওর দিকে মৈএীকে দ্বখেই সকলে আতঁকে ওঠে সকাল বেলা যে মেয়ে কলেজ এর জন্য হাসিমুখে বের হয়েছে সেই মেয়ে দুপুর না হতেই হাতে, পায়েঁ,মুখে, মাথায় ব্যান্ডেজ সহ র**ক্তে লাল হয়ে বাসায় ফিরছে?

কি হয়েছে মৈএী?এসব কি করে হলো?
রাবেয়া বলতে বলতেই কান্নাঁ শুরু করে দেয়…মৈএী একদম ব্যাথা সহ্য করত্ব পারেনা। এতক্ষন বাইরে অনলের সামনে চিৎকার করে না কান্নাঁ করলেও পরিবারের মানুষ দের পেয়ে চাপাঁ রাখা কান্নাঁ বাইরে আসে। রাবেয়াকে সব খুলে বলে শুরু থেকে। রাবেয়ার বুকটা কেঁপে ওঠে মৈএীর সাথে এরকম হয়েছে?ওদের বাসাতেই এতদিন গার্ড হিসেবে থেকে আজ মৈএীর সাথে এরকম করেছে?ময়নুল বা অন্য তিন ভাই শুনলে কি করবে কে জানে?আর মিজানুর সাহেব এর কথা তো ভাবতেই পারছেনা রাবেয়া। রাবেয়া অনলের জন্য দোয়া করে দেয় ওভাবে সাহায্য করেছে বলে।

খবর পেয়েছে বাবা আর ভাইয়েরা মৈএীর পাগলের মতো সব কাজ ফেলে রেখে বোনের কাছে চলে এসেছে ডাক্টারকে কল করে বাসায় এনেছে। মিজানুর সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার আদরের মেয়ে এটা যদি আজ কিছু হতো? যদি অনল নামের ছেলেটা না এগিয়ে আসতো??
ভাবতেও পারছেন না তিনি! যে শত্রু ওর মেয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের কাউকে ছাড়বেন না তিনি কাউকে না!!

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৩

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৩)

অনল ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখে মৈএী কলেজ এ নেই ওদের ক্লাসে চেক করে এসেছে অনল। নেই মেয়েটা হয়তো চলে গেছে অনল আর মাথা ঘামায় না। আওব গুলো ক্লাস করিয়ে বাসায় চলে আসে।
মৈএীর বাবা আর ভাইয়েরা দুপুরের আগেই বাসায় এসেছে। নিজানুর সাহেব গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মৈএীকে কলেজ থেকে বাসায় এনে রেখে যেতে কিন্তু গাড়ি গিয়ে তাকে পায় নি। পরে কল করে জেনে নেয় আজকে মৈএী একা আগেই ফিরেছে কিন্তু কেন?তিনি দুপুরে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। মৈএীর তিন ভাই ও সাথেই আসে তবে ছোটো ভাই মোহন সেই সময় আসেনা ও একটু চার ভাইয়ের মাঝে মৈএীকে কম ভালোবাসে তবে খেয়াল ও রাখে। মৈএীর বড় ভাই ময়নুল,মেজো ভাই মজনু,সেজো ভাই মুহিব আর ছোটো ভাই মোহন। সবার আদরের ছোট বোন মৈএী। মা চলে যাওয়ার পর মৈএীর আদর যেনো আর ও বেড়েছে।

পরের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে মিজানুর সাহেব নিজেই মেয়ের সাথে আসে। ওনাকে দেখেই প্রিন্সিপাল স্যার কাচুমাচু করতে থাকে এই লোক সুবিধার নয় এখন কি হবে উনি বুঝতে পারছেন না। গত কাল নুসরাত ম্যাম যে কাজটা করেছে তাতে সে নিশ্চিত এই কারণেই মেয়েকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।
স্যার উঠে মিজানুর সাহেব কে বসতে বলে,

বসুন না ভাই। আপনি আজ মৈএী মায়ের সাথে এলেন যে? আমি কিন্তু অনেক খুশি হয়েছি আপনার আসায় এখানে।

জ্বি, আসলে মেয়ে আমাকে নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। আমার আপনার সাথে কিছু একান্ত কথা ছিলো। যদি আপনার সময় হতো।

স্যার আমতা আমতা করে বলে,
বলুন না ভাই আমি এখন ফ্রি আছি।

মিজানুর সাহেব মৈএীর দিকে তাকিয়ে বলে,
মা তুমি একটু বাইরে ক্লাসে যাও ওনার সাথে আমি কথা বলে দেখা করতে আসছি তোমার সাথে।

জ্বি আব্বু , বলেই মৈএী ক্লাসের দিকে যায় সে জানে বাবা এখন ওই ম্যাম কে নিয়েই কথা বলবে। সাহস কি করে হয় তাকে আঘা**ত করে??

—–

আমার পরিবারে এক মাত্র আদরে লালন পালন হওয়া মেয়ে মৈএী। বছর দুয়েক আগে গাড়ি এক্সিডেন্ট এ ওর মা গত হন সেখানে সেদিন আমার মেয়েও মাথায় আঘা*ত পায় এতে করে ও একটু নয় অনেকটাই অসুস্থ হয়ে যায়। এখন সুস্থ হলেও ওর মাথায় আঘা*ত পাওয়ার জন্য নানা রকম ব্যাবহার চেঞ্জ করে ফেলেছে তার মাঝে একটা ও হুট করেই অস্বাভাবিক আচরণ করে ফেলে যখন তখন যার তার উপর রে**গে যায়। আমার আপনার সাথে এ নিয়ে আগেই কথা বলা দরকার ছিলো সে যাই হোক এটা বাচ্চাদের স্কুল নয় কলেজ আর সকল প্রতিষ্ঠান কেই বলা আছে বাচ্চাদের আঘা*ত করে নয় বুঝিয়ে ও যত্ন সহকারে শিক্ষা দান করতে হবে।
সেখানে আমি আমার মেয়ের সাথে গতকালের ওই ব্যাবহার আশা করিনি। আপনার কলেজ এ আমার মেয়ে থাকবে। সে অবশ্যই একজন ট্যালেন্টেড ছাত্রী। ও ভালো রেজাল্ট করবে আমি জানি তাই ওকে অযথা আঘা*,ত করতে বাধা দিবেন। আর হ্যাঁ এই প্রথম একটা ভুল তাই আমি চাই ওই ম্যাম যেনো আমার মেয়েকে সরি বলে আসে।

নিজের কথা শেষ করেই মিজানুর সাহেব উঠে আসেন প্রিন্সিপালের রুমের চেয়ার থেকে বাইরে এসে মেয়ের সাথে দেখা করে গাড়ি নিয়ে বের হয় সে। অনল প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে ছিলো সে সব শুনেছে। নুসরাত আসলেই ভুল করেছে মেয়েটার হাতে সাদা ব্যান্ডেজ রয়েছে।

অনল আর প্রিন্সিপাল স্যার বলাতে নুসরাত বাধ্য হয়েই মৈএীকে সরি বলে। এতে তার ইগো হার্ট হয় সামান্য একটা ছাত্রী কে তার সরি বলা লেগেছে??ক্ষমতাই কি সব??

দিন কয়েক পরে সকাল বেলাতে মৈএী কে দুজন গার্ড এর সাথে কলেজ এ পাঠিয়ে দেয় ময়নুল। বোনের সাথে আজ আর সে আসতে পারেনা অফিসে কাজ রয়েছে। ওরা মৈএীকে বাসা থেকে নিয়ে আসে কলেজের রাস্তায় না নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতেই মৈএী অবাক হয় সে বার বার বলে,
এদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে?

ওরা দুজনে কথা বলে না। ড্রাইভার কে ভয় দেখিয়ে আগেই নামিয়ে দেয়। মৈএী ভয় পেলেও সাহস রাখে ব্যাগ থেকে ফোন করতে নিবে খেয়াল করে ব্যাগ সামনে একজন গার্ড এর কাছে রয়েছে মৈএী ব্যাগ ফিরে দিতে বল্লেও ওরা দেয় না।
মৈএী রে*গে যায় এবার শক্ত গলায় বলে,

কি হচ্ছে কি এসব?ব্যাগ কেন দিচ্ছিস না আমাকে তোরা?

দুজনের মাঝের একজ ন ধমক দিয়ে বলে,

চুপ কর তুই শা**লি! অনেক হয়েছে আর না!! বাবা ভাইয়াদের খুব আদরের না তুই.?দেখ আজ কি হয় তোর অবস্থা??

মৈএী এবার দ্বিগুণ তেতেঁ ওঠে মুখে বলে,
ওহ আছা!!আমাকে মে**রে ফেলার চান্স নিয়েছিস তবে?বুঝতে পারছিস কি তোরা? বাবা ভাইয়ারা জানলে তোদের কি করবে??

ওদের মাঝে আবার একজন বলে,
আরেএ চুপ করনা তুই! তোর খ বর জানবে তো আমরাই জানাবো আগে তোকে শেষ করে দেই!!

দে দে দেখ আমার সাথে ভুলেও খারাপ কিছু করার চেষ্টা করবিনা বলে দিলাম।

মৈএীর কথাকে ওরা দুজনে একদম পাত্তা দেয় না উল্টো বলে,
এই মেয়ে মেইনরোডে পায়েঁ চলতে ভয় পায় রে বিপ্লব আমি বলি কি!ওকে আমাদের হাত দিয়ে খু**ন করে হাত অপরিস্কার করার মানে হয়না বরং রাস্তার মাঝে নামিয়ে রেখে দিলেও কেল্লাফতে#!

বলা শেষ করেই ওরা মৈএীকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার মাঝে নামিয়ে দেয় ওদিকে সত্যই মৈএী অতিরিক্ত গাড়ির শব্দে ভয় পায় চোখে ভাসে মায়ের শেষ বেলা চলে যাওয়া কত শত র**ক্ত…
মৈএী দুই হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে রাখে কান্নাঁ আসছে মুহুর্তেই চোখ বুঝে ফেলে কি অসহ্য ব্যাথা লাগছে তার!!
গাড়ি নিয়ে দুজনে সরে গেছে মৈএী দুই চোখ খুলে দেখে ওর আশে পাশের গাড়ি গুলো দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ ওকে পাগল বলে গালি গালাজ ও করছে অথচ কেউ ওকে সাহায্য করছে না। মৈএীর মনে হয় সামনে থেকে আসা গাড়ি ওকে এখন পি**ষে দিয়ে যাবে একটা গাড়ি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে যায় তবুও গাড়ি থেকে নেমে এসে কেউ ওকে রাস্তার কিনারায় নিয়ে যায় না। মৈএীর বুক কেপেঁ ওঠে এই বুঝি ওর শেষ সময় চলে এসেছে!! মৈএী রাস্তায় পরে থেকেই চোখ বন্ধ করতে নেয় ওর শরীরে আঘা*ত লেগেছে র**ক্ত
দেখেছে ও এতে করে ওর ভয় আরও বেড়েছে আর হবেনা, হবেনা বাবা ভাইয়াদের দেখা!!

কিন্তু মৈএীকে অবাক করে দিয়ে কেউ একজন আসে দ্রুত পাঁয়ে ছুটে ওর দিকে মৈএীর দিকে হাত এগিয়ে দেয় যেনো এই হাত ধরে উঠে আসতে বলছে তাকে…………

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০২

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(২)

সন্ধ্যার দিকে অনল তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে বের হয়েছে। কলেজ জীবন সে এই রাজশাহী শহরেই পার করেছে।গ্রামে তার মা খুব কষ্টে পয়সা অর্জন করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছে তখনই প্রায় অনলের মা চার লাখ টাকা ঋণ করেছে প্রতি বছরে চল্লিশ হাজার টাকা লাভ দিবে বলেছে সেই ব্যাক্তি। অনল এখানে আসার পর ক্লাসের কয়েকজনের সাথেই বন্ধুত্ব স্থাপন করে এখন সবাই এখানে না থাকলেও তিনজন রয়েছে ওরা। অনল আজকে যাবে রাব্বির সাথে দেখা করতে। বাসা থেকে বের হয় খাবার না খেয়েই। এখন রাত আটটা বাজবে বোধ হয় । অনল রিক্সা নিয়ে কফিশপের দিকে যায়। সামনেই ফজলে রাব্বির সাথে দেখা হয় দুজনে এক সাথে ভেতরে গিয়ে বসে । নানা রকম কথা বার্তা হয় দুজনের মাঝে। অনল প্রায় দশটার দিকে নিজের বাসায় চলে আসে যাওয়ার আগে রান্না করে যাওয়া খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

পরের দিন সকালে আবার ও রান্না করে খাবার খেয়ে কলেজ এ যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়।অনল প্রায় সময় সাদা আর কালো রঙ এ শার্ট পরে থাকে এই দুই রঙ ছাড়া তার আর কোন রঙ এর জামা কাপড় সেরকম নেই বললেই চলে। এতে ওর বন্ধুমহল ও আগে অনেক টি প্প নী কে*টেছে। অনল সে কথা গাঁয়ে মাখেনি।
অনল বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা নেয়। আজকে জ্যাম থাকার কারণে রিক্সা একটু পর পর থেমে থেমে চলছে অনল বিরক্ত হয়। কলেজ এর প্রথম ক্লাস আছে তার একটা। লেট করে যাওয়া হয়না অনলের।আজ মনে হয় নিজের রুলস তার ব্রেক হবে এই জ্যামের জন্য। অনল বিরক্ত হয়ে আশে পাশে দেখে। হাতের কালো চামড়ার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় অনুমান করে।

সেই সময়ে অনলের রিক্সার পাশেই মৈএীর মাইক্রো থামে। এসি গাড়ি বলে কাচঁ তোলা রয়েছে বাইরে থেকে ভেতরে কে কে আছে দেখা না গেলেও মৈএী বাইরের টা দেখতে পারে । বাম দিকে তাকিয়েই অনলের রিক্সা দেখে ফেলে কালকের সেই স্যারটা! অনলের মুখ দেখেই বিরক্ত হয় মৈএী। বছর হবে ৩০-৩১আর ফর্সা পেটানো সাস্থবান শরীর মাথার চুল গুলো সিল্কি নয় একটু ছোট করে ছেটে নেওয়া হলেও উপরের দিকে কেমন যেনো কোকড়া টাইপ। সাদা আর কালো মিশ্রনে শার্ট প্যান্ট। ডান হাতে রয়েছে কালো চামড়ার কাটা ঘড়ি। একটু পর পর সেদ্দিকে দেখছে। মুখটা কেমন মলিন দেখাচ্ছে যেনো কত রকমের চিন্তায় ব্যাস্ত স্যার!! মৈএী বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে চাইলো।
বিশ মিনিট পর জ্যাম ছাড়তেই গাড়ি এগিয়ে গেলো। প্রথম ক্লাস এ যেতেই অনল সময় পেয়েছে মাত্র ১০মিনিট তাও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের এরপর আবার সেউ ফার্স্ট ইয়ারদের ক্লাস নিতে যেতে হবে ভেবেই অনল বিরক্ত হয় আবার ও সেই মেয়েটা তার সামনে আসবে কেমন একটা অদ্ভুদ দৃশ্য আসছে চোখের ভাজে।
তবুও অনল নিজেকে কঠিন করে ক্লাস নিতে যায় নিজের মতো ক্লাস করিয়েই বের হয়ে আসে সে খেয়াল করেছে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলো কেন করেছে?নিশ্চয়ই গতকালের জন্য!!
অনলের ইচ্ছে করছিলো সবাইকে ধমক দিতে তবুও সে সব কিছুই করেনি শুধু শান্ত ভাবে দেখেছে, ছেলে মেয়েদের ফিস ফিস শুনেছে আর একবার সাহস যুগিয়ে মৈএীকে দেখেছে। দুই দিনে অনল জেনেগেছে এই শহরের নাম করা বিজনেসম্যান ও ক্ষমতা ওয়ালা মানুষ এর মেয়ে এই কন্যা যে কারনে এই কলেজ এও মেয়ের বাবাকে সন্মান দেয়া হয় ও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে বলে তার মেয়েকে গত কাল কোনো পানিশমেন্ট দেওয়া হয়নি আর হবেও না কখনো।
অনল চুপ চাপ ক্লাস নিয়ে অন্য ক্লাস নিতে যায়।
মৈএী ও ক্লাস শেষ করে দুপুরের দিকে সুমনা সহ আরও তিন জন নতুন বন্ধু নিয়ে বের হয় কফি শপের দিকে। আজকে মৈএী বাবা আর ভাইয়াদের সাফ সাফ বলে দিয়েছে একা কিছুটা টাইম স্পেন্যড করতে চায় সে। যখন বাসায় ফিরবে সে কল করে জানাবে ভাইয়াদের এসে নিয়ে যেতে।

কফিশপে কিছুটা সময় ওরা আড্ডা দিয়ে বের হয় রাস্তার পাশ দিয়ে হাটঁতে পাচঁ জন মিলে নানা রকম ভাবে পিক তুলে নেয়। এরপর খেয়াল করে একটা মেয়ের সাথে অনল আসছে। সুমনা অনলকে দেখেই বলে,

এই তোরা দেখেছিস!কে ওদিকে?

হবে হয়তো স্যারের সাথে এই ম্যামের চক্কর চলে সেদিকে আমাদের ভেবে কি চল ওদিকে যাই।

বলেই মৈএী সবাইকে নিয়ে অন্যদিকে যায় স্যারের সাথে তাদের কলেজ এরই একটা ম্যাম রয়েছে একটা রিক্সাতে দুজনে এক সাথেই বসে রয়েছে।

মৈএী সময় দেখে নিয়ে সেজো ভাইয়ের কাছে কল করে কিছুক্ষন পরেই ওর ভাই
মুকিদ আসে বাইক নিয়ে ভাইকে পেয়েই চলে যায় মৈএী, সুমনা মুকিদকে ভালো করে খেয়াল করে এই ছেলেকে এত সুদর্শন কেন লাগে তার কাছে?আচ্ছা সে কি কোন ভাবে মুকিদকে ভালোবেসে ফেলেছে?
তাহলে তো বিরাট সর্বনাশ!!

দিন কয়েক পর মৈএীদের ক্লাস নিতে আসে সে ম্যাম ইনিও নাকি আই সি টি ক্লাস করায় সেই সাথে পদার্থ বিজ্ঞান ও নেবেন একদম অনলের মতোই। মৈএী হুট করেই একটা অংক ভুল করে ফেলে সবে ভর্তি হওয়া এখনই কি বাইনারী অংক থেকে হেক্সা বানাতে পারদর্শী হয়ে উঠবে কেউ?দিন কয়েক যাক না!
কিন্তু ম্যাম যেনো তা বুঝতেও চায় না। স্টিলের স্কেল নিয়ে সবাইকে আঘা*ত করা শুরু করে দেয় হাতে মৈএী অবাক হয় কলেজ লাইফে কেউ স্কেল দিয়ে আ*ঘাত করে??মৈএী ভাবে হয়তো তাকে ম্যাম কিছুই বলবেনা। কিন্তু ওর চিন্তা ভাবনা ভুল লরে দিয়ে ম্যাম ওকে ক্লাসের সবার থেকে বেশি শক্ত করে আঘা*ত করে ।
মৈএী ছোট থেকে বড় হওয়ার পর যা মনে আছে এভাবে কেউ তাকে আঘা*ত করেনি । করবে কে?সাহস আছে কার??অথচ আজ? এই ম্যামের সাহস কি করে হয়??মৈএী ভাবতে পারে না পারবে কি করে ডান হাত যেনো জ্বলে যাচ্ছে। মৈএীর মাথা চক্কর দেয় এই আঘা*তে কোন ভাবে ব্যাগ ধরে বাম হাতে সেখান থেকে মোবাইল বের করে এখন সবে বাজেঁ দশটা এই সময়ে বাবা বা ভাইয়ারা অফসে থাকে মৈএী কল করলে সাথে সাথেই তবুও চলে আসবে কিন্তু মৈএী কল করেনা । সোজা প্রিন্সিপাল এর রুমে চলে যায় ম্যামের নামে কম্পলেইন করে আসে । এরপর গেট পেরুতেই দেখে তার ভাবী গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছে। মাত্র বিশ মিনিট এর মাঝেই তাহলে বাসায় খবর পৌছেঁ গেছে??রাবেয়া মৈএীর লাল হওয়া হাত আর মুখ দেখে আতঁকে উঠে যে মেয়েকে ফুলের টোকা পর্যন্ত বাবা ভাইয়েরা লাগাতে দেয়নি সেই মেয়ের শরীর এ আজ আঘা*তের চিহ্ন??যদি ওর স্বামী, দেবর আর শশুড় রা এই খবর শুনতে পারে তাহলে ওই ম্যামের যে কি হাল করবে ভেবে পায় না রাবেয়া। মৈএীর খবর তাকে সুমনা দিয়েছে। তাই তো প্রিন্সিপাল কে কল করে বলেছে আগেই যেনো তিনি মৈএীর বাবা বা ভাইয়েদের না জানায় সে আসছে।
মৈএীকে নিয়ে রাবেয়া গাড়িতে গিয়ে বসে ওকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে।

—–
অনল আর তার সহকর্মী মেয়ে নুসরাত দাঁড়িয়ে আছে। এই নুসরাতই তখন মৈএীকে আঘা*ত করেছে করবে নাই বা কেন?অনল কে সে বিগত একটা বছর ধরে ভালোবেসে আসছে কেউ না বুঝলেও সে বুঝে অনল সেই দিনের পর থেকে প্রায় ডিপ্রেশনে থাকে ওই ক্লাস নিতে যেতে। তাই তো নুসরাত অনলের হয়ে প্রতিশোধ তুলেছে। সে জানে অনল কখনোই এ নিয়ে কিছুই বলবেনা শুধু তাই নয় যদি কেউ তার ক্ষতিও করে ফেলে অনল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবেনা। হয়তো তাকে ঘৃণা করবে তবে লক্ষ সম্মুক্ষে কিছুই বলবেনা বা প্রতিবাদ করবেনা।
কেন করেছ এরকম?
আমি বলেছিলাম?

আমি আপনার জন্য ওই মেয়েকে আঘা*ত করিনি স্যার। আসলেই মেয়েটা খাতায় ভুল অংক করেছিলো।

ছাত্র ছাত্রী দের বুঝানো কাজ আমাদের আঘা*ত করা নয়।

সরি স্যার। আর হবে না।

অনল কিছুই বলেনা বিরক্ত হয় সে নুসরাতের কাজে। সে জানে নুসরাত না বলুক তবে তাকে পছন্দ করে আর তার কারণ ধরেই আজ এরকম করেছে।

অনল বের হয় ক্লাস শেষ করে কিন্তু…………

চলবে
#মিশকাতুল

রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০১

0

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১)
#মিশকাতুল

কতটা বেয়া*দব মেয়ে হলে প্রথম দিন কলেজে এ এসেই একজন টিচারের গালে পর পর দুটো থা প্প ড় দিতে পারে?বুঝতে পারেনা সুমনা পাশেই বসে সেই বেয়াদ*ব রমনী তারই প্রান প্রিয় বান্ধবী মৈএী। ভয়ে ভয়ে সুমনা জিজ্ঞেস করে,

প্রথম দিন কলেজ এ পা রাখতে না রাখতেই মৈএী তুই একজন স্যারের গালে চ*ড় দিয়েছিস ?

মৈএীর বুকে জ্বলা দাবানল এ কেউ যেনো এবার এক বালতি কেরোসিন দিয়েছে এবার । ফুঁসে ওঠে মৈএী ওই স্যারের সাহস কি করে হয় তাকে প্রথম দিন ক্লাসেই দাঁড়িয়ে রাখার? কি করেছে সে?শুধু নতুন ফ্রেন্ড দের সাথে পরিচয় হয়ে নিচ্ছিলো।এ তে কি এমন হয়েছে?আজ কি কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিলো? যে ক্লাস রুমে অমনোযোগী হয়েছিলো মৈএী?সেরকম কিছুই হয়নি শুধু শুধু কেন স্যার তাকে দাঁড়িয়ে রাখবে ক্লাস রুমে দাঁড়িয়ে থাকা কাজ টা মৈএীর একদম পছন্দ নয় আর যে তাকে দিয়ে অপছন্দের কাজ করাতে চায় তাকে একদম সহ্য করতে পারেনা মৈএী। তাহলে ওই স্যারকে কেন সে সন্মান দিবে?পুরো ক্লাসের সামানে মৈএী অপমা**ন হবে এ মেনে নেবে কি করে?তাই তো স্যার আদেশ করার সাথে সাথেই মৈএী দাঁড়িয়ে পরে এগিয়ে যায় সামনের দিকে কোন কথা না বলেই দুটো থা প্প ড় বসিয়ে দিয়েছে ওই স্যার এর ডান গালে। সেই সময় স্যারের মুখটা ছিলো দেখার মতো। এত বড় একটা অনৈতিক কাজ করেও মৈএী স্বাভাবিক আছে প্রিন্সিপাল স্যার তাকে অবশ্য এ নিয়ে ডেকেছিলো যেই ক্লাস টিচার কে সে মে*রেছে সে হয়তো অপমানে প্রিন্সিপাল কে জানিয়েছে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই করতে পারেনি সেই স্যার। প্রিন্সিপাল মৈএীকে কিছুই বলে নি শুধু বলেছে,

এই রকম কাজ আর দুবার করো না মা! উনি একজন শিক্ষক শুধু তাই নয় এখানে যারা আছে সবাই তোমাকে শেখাবে তাদের সন্মান দেওয়া দরকার।

মৈএী এতেও কিছুই বলেনি অযথা কথা বার্তা তার পছন্দ নয়। সুমনাকে কিছুই বললো না মৈএী কলেজ এর মেইন গেইট এর দিকে তাকিয়ে দেখে কালো রঙ এর মাইক্রো হাজির হয়েছে সেখানে ভেতর থেকে দুজন সাদা রঙ এর শার্ট পরা বছর ত্রিশ এর মতো ছেলে বের হয়ে আসে সোজা মৈএীর দিকে মৈত্রী ওদের দেখেই সুমনার থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে আসে সেদিকে। ওদেরকে বলে,

আজ ভাইয়ারা কেউ আসলো না?

একজন ছেলে মাথা নিচু রেখেই বলে,
স্যারের অনেক কাজ রয়েছে আজ আপনার চার ভাই সবাই একটা প্রজেক্ট নিয়ে বসেছে তাই আসতে পারেনি।
মৈএী ছোট করে ওহ্ বলে ওদের সাথে গাড়ি তে গিয়ে বসে। দুজনছেলের একজন সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে আর অন্যজন পেছনে মৈএী বসে মাঝের সিট এ।বাবা আর ভায়ারা তাকে নিয়ে অনেক পজেসিভ তাই গার্ড দেওয়া হয়েছে মৈএীকে শহরে শত্রুর সংখ্যা অনেক রয়েছে তার বাবা ভাইয়াদের। আদরের এক মাত্র মেয়ে ও বোন ওদের কোন রিস্ক নিতে চায় না মৈত্রীকে নিয়ে।

মৈএী ওদের সাথে গাড়ি করে বাসায় আসে । গেট পেরিয়ে গাড়ি ভেতরে এসে থামতেই নেমে আসে মৈএী। ওর বড় ভাইয়ের বৌ দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার কাছে নিশ্চয়ই ভাইয়ার আসার অপেক্ষা করছে। মৈএী গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে তারপর দুষ্টু গলায় বলে,

ভাইয়াকে অনেক মিস্ করা হচ্ছে বুঝি??চলো আমি তোমায় অফিসের দিকে নিয়ে যাই যাবে??

ময়নুল এর স্ত্রী রাবেয়া মৈএীকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,
আমি এখন তোমার ভাইয়ের জন্য নয় তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চলো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো আমি খাবার সাজিয়ে দিচ্ছি ততক্ষনে তারপর প্রথম দিন কলেজ এ কি কি করলে কয়েকটি ছেলেকে ঘোল খাইয়ে এলে সব বলবে আমাকে!
কেমন?

মৈএী রাবেয়ার কথা মতো হুঁ বলেই দোতলার সিড়ি বেঁয়ে উপরে নিজের রুমে আসে। রাবেয়া আর মৈএীই এখন এই বাড়ির মেয়েদের মাঝে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে মৈএীর মা গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মা*রা গেছে বাবা ভাইয়েরা বলেছে কেউ ষড়যন্ত্র করে তাদের পুরো পরিবারকে শেষ করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারে নি। মাঝ খান থেকে চার ভাই ও এক বোনের প্রিয় মা চলে গেলো। মিজানুর সাহেব আজ ও স্ত্রী কে ভুলতে পারেনা । মেয়েটা হয়েছে একদম মায়ের মতো সুন্দরী তাই তো এখন সব দিক দিয়ে চেষ্টা করে মেয়েকে সমিয় দেয়ার মেয়েকে সেফ রাখার।
মিজানুর সাহেব এর ক্ষমতা সম্পর্কে এই এলাকার সবাই অবগত যেখানেই যাক না কেন!তাকে সবাই সন্মান ও ভয় পায় সে বলা যায় একটু মাফিয়া টাইপের লোক দের মতো যখন তখন অনয়াসে খু*ন করতো তবে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর কথা দিয়েছে এখন থেকে আর কোন অনৈতিক কাজে সে জড়াবেনা মোন দিয়ে নিজেদের বিজনেস সামলাবে । তবুও তার ভয়ে থাকে সাধারণ মানুষ গুলো না জানি কখন কি হয়ে যায়??
—–/———-

অনল কলেজ থেকে এসেই শার্ট এর বোতাম খুলে রুমে থাকা আলনার সাথে তা মেলে দেয়। বুকের মাঝে চিকন এক ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে। রা*গ ও লাগছে কার উপর?অনল বুঝতে পারছেনা প্রিন্সিপাল স্যারের উপর না কি ওই বেয়াদব মহিলাটার উপর?মেয়েটা সকালে ক্লাসে অনল কথা বলার সময় পেছন ফিরে বসে অনেক্ষন যাবৎ কথা বলছিলো বলে সাবধান করে তবুও মেয়েটার হেলদোল দেখা যায় না। তাই তো অনল মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলো। অথচ মেয়েটা?কি করেছে!উঠে এসে সোজা তার গালে হাত দিয়েছে??নিজেকে কি ভাবে ওওই মেয়েটা?প্রিন্সেস?
অবশ্যই তাই হবে বলে মনে হয় না হলে ক্লাস টিচার কম্পলেইন করার পর ও প্রিন্সিপাল স্যার মেয়েটাকে কিছুই বললো না কেন?একবার সরি ও বলতে বলেনি! কে ওই মেয়েট? এই কলেজ এ অনল দুই বছর ধরে রয়েছে গ্রামের এক সাধারণ পরবারের বেড়ে ওঠা অনলের ভদ্র,শিক্ষিত একটা ছেলে গ্রামের সবাই তাকে কতটা ভালোবাসে ছোট বড় সবাই অনলেক সন্মান দেয় আর সেখানে আজ??

শহরের নামী দামী মানুষ এর মাঝে এই শিক্ষিত অনল কিছুই না। একটা মেয়ের হাতের থা প্প ড় তার গালে নয় বুকে লেগেছে যার দাগঁ হয়তো ইহজন্মেও মুছেঁ যাবেনা।
অনল শক্ত বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় বালিশে মাথা রাখারও প্রয়োজন পরেনা মুহুর্তের মাঝেই ঘুমিয়ে যায় অনল। ঠিক কতটা সময় অনল ঘুমিয়েছে?দেখার প্রয়োজন পরেনা আযানের শব্দে উঠে বসে বিছানায়। ক্ষিদে পাচ্ছে ওর এই শহরে তার আপন বলতে কেউ নেই ওর অবশ্য বেশি কেউ নেই ও এক মা ছাড়া। সে তো গ্রামেই রয়েছে । একটা বেডরুম আর ওয়াশরুম সেই সাথে ছোট একটা কিচেন রুম নিয়েই তার ছোট একটা ফ্ল্যাট নেওয়া এর ভাড়া দিতে গিয়েই তো অনল হিমশিম খেয়ে যায় প্রতি মাসে মায়ের চেক আপ ঔষধ পত্র,ঋণের ভাড় শোধ করতে গিয়েই সব মাইনে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে।

অনল বিছানা থেকে উঠে কিচেনের দিকে যায় সবজি দেখে নেয় চলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজে হাত লাগায় । রান্না শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বিকেল পাচঁটা বেজে গেছে। মায়ের নাম্বারে কল করে অনল।

চলবে