Wednesday, July 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 404



মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-২০+২১

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_২০

🍁
হতবিহ্বল নয়নে সামনের দৃশ্য দেখে কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিলো মীরা। মুখভঙ্গি স্বাভাবিক করে পরখ করলো বাসার সবাই উপস্থিত এখানে৷ ফুপুজান ও চলে এসেছেন। বুঝতে আর বাকি রইলো না কিছুই।সবটাই তার সামনে পরিষ্কার। বাসার সদস্য ব্যাতিত আরো তিন জন উপস্থিত। প্রবীণ লোকটি কে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনে না, দেখেও নি সে। বসে থাকা মহিলাটাকে দেখেছে মাঝে মাঝে। মীরা এদের দুজনকে স্পষ্ট ভাবে না চিনলেও শিনা টান টান করে বসে থাকা অভ’দ্র, বেহা’য়া, দু’ষ্ট দু’ষ্ট কথার জালে ফাঁ/সানো রাইফকে সে চিনে ঠিকই। পাশে বসা মহিলাটা যে তার মা আজ এক সাথে দেখে নিশ্চিত হলো। দুজনের চেহারায় মিলও রয়েছে অনেক। মীরার রাগ হলো খানিক। যার জন্য দেড়ি করে বৃষ্টিতে ভিজে এলো জুবুথুবু হয়ে, সেই আগে ভাগে এসে বসে আছে একেবার তাদের বাসার ভেতর৷ তাও আবার অতিথি হয়ে। “যেখানে বা’ঘের ভ!য় সেখানেই সন্ধ্যা হয়” প্রবাদ টা আজ খাপে খাপ মিলে গেছে তার সাথে। এতো কিছুর ভেতর আরো আশ্চর্য হচ্ছে মীরা। এখানেই আসবে, অথচ তার ভাব ভঙ্গিতে একটুও বোঝা যায় নি। কি ধু’র’ন্ধর লোক একটা! উর্মিও কম অবাক হয়নি রাইফ এবং রাজিয়া বেগম কে দেখে। কেমন টেক্কা দিলো রাইফ তাদের! উর্মি অবশ্য খুশিও হয়েছে বেশ। যাক, ঘটনা তাহলে ঘটেছে। তার টোটকা লেগেছে জায়গা মতো। এবার দুজনের মিল হবেই হবে।
মীরার চোখ পরলো খাদিজা বেগমের চোখে। তিনি আশ্বস্ত করলেন, স্বাভাবিক হতে বললেন ঘাড় নেড়ে। ত্রিশ সেকেন্ড সময় নিয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক হলো। জড়তার সহিত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল মীরা,

-‘আস সালামু আলাইকুম।’

-‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম।’

উচ্চস্বরে সালামের জবাব দিলো প্রায় সবাই। কিন্তু একজনের সালাম টা ছিলো দীর্ঘ এবং সবার থেকে একটু উচ্চ আওয়াজে। মুচকি হাসি লেপ্টে আছে তার চোখে মুখে। মীরাকে কাছে ডাকলেন ইশারায়। মীরা নজর ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকাতেই উনি মাথা নাড়লেন। ছোট ছোট পা ফেলে রাজিয়া বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। আর এক হাত পরিমাণ দূরেই বসে আছে রাইফ। কেমন বেহা/য়ার মতো তাকিয়ে আছে মীরার দিকে। এতো মানুষের মাঝেও তার ধ্যান পুরোটুকুই মীরার উপর। রাজিয়া বেগম মীরার হাত ধরে পাশে বসাতে চাইলেন। কিন্তু মীরা কাঁচুমাচু করে বাধা দিলো, আমতা আমতা করে বলল,

-‘আমার শরীর ভেজা আন্টি। আমি বরং এখানে বসি।’

সোফার এক কোনা থেকে বেতের মোড়া টেনে একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসবে তখনি রাজিয়া বেগম তার দিকে মোড়াটা টেনে কাছে আনলো। হাসি লেপ্টেই আছে তার মুখে প্রথম থেকে। ইশারায় বসতে বলল তাকে। মীরা রাজিয়া বেগমের পাশে বসলো উশখুশ করতে করতে।
মীরার বুক ধরফর করছে। স্বাভাবিক নেই তার হৃদ স্পন্দন। এ মূহুর্তে একটু বেশি তার গতি। এই যে পাশেই বসে রাইফ, খুবই নিকটে। প্রথম দিনের সেই পুরুষালী ঘ্রাণ টা আজ ও তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। এতোটা কাছাকাছি তাদের অবস্থান পরিবারের সবার সামনেই, এমনটা তো তো সে এতো দ্রুত আশাই করে নি।
রাজিয়া বেগম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলেন মীরাকে। থুতনিতে স্নেহের হাত রেখে শুধালেন,

-‘কেমন আছো মীরা মা?’

শুষ্ক অধর যুগল জ্বিহবার ডগার সাহায্যে ভিজিয়ে মীরা মিহি কন্ঠে বলল,

-‘আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম মামনি।’

-‘মাফ করবেন অপেক্ষা করানোর জন্য। জ্যাম ছিলো, তাই একটু দেড়ি হয়ে গেছে।’

রাজিয়া বেগম তার বিপরীত পাশে বসা বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাক্তিটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-‘বড় ভাই, দেখছেন। এই হলো মীরা। যার জন্য আসছি। মাশাল্লাহ, কি সুন্দর দেখতে তাই না!

প্রবীণ লোকটি রাইফের বড় চাচা। গাল ভর্তি হাসি দিয়ে ভারী গলায় বললেন,

-‘মা শা আল্লাহ!। খালাম্মার মতো দেখতে অনেকটা। তাই না শওকত ভাই।’

শওকত রহমান হাসলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘জ্বী ভাই। আম্মাজানের মতোই দেখতে আমার এই আম্মাজান। শুধু দেখতে না, কাজে কর্মেও অনেক মিল।’

-‘মীরাকে দেখেই আমার খালাম্মার কথা মনে পড়লো। কি স্নেহটাই করতেন আমাকে। দেখা হলেই ডেকে বলতেন, এই জয়নুল, বাসায় আসো না কেনো? আসো, একটু আলাপ করি৷’

এক কথার প্রেক্ষিতে অনেক কথায় অতীতের স্মৃতি চারণ করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো সবাই। কিন্তু মীরার অস্বস্তি হচ্ছে খুব। বোরকার নিচের অংশ টুকু জবজবে ভেজা। এই অবস্থাতে এখানে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসা। তার উপর নিলজ্জর মতো রাইফের অবাধ্য দৃষ্টি আরো বেশি অস্বস্তি তে ফেলছে তাকে। রাইফের দিকে না তাকিয়ে ও বুঝতে পারছে তার চাওনি। কি করে পাচ্ছে এতো গুলো মানুষের সামনে এভাবে তাকিয়ে থাকতে? একটু তো লজ্জা শরম করা দরকার! আমতা আমতা করে মীরা রাজিয়া বেগমকে কিছু বলবে সে মূহুর্তে রাইফ এর কন্ঠ কানে আসলো। রাজিয়া বেগম কে বলছে সে,

-‘আম্মা, এবার ছাড়ো ওকে। ভেজা শরীরে ঠান্ডা লাগবে।’

রাইফের কথো শোনা মাত্রই মীরার কেনো যেনো জেদ হলো খুব। দেখেছে ভেজা ঠিক আছে, উনাকেই কেনো মাতব্বরি করে বলতে হবে আম্মা ওর ঠান্ডা লাগবে। ঢং! কি ভাববে সবাই। ছিহ্, মুখ ই দেখাতে পারবো না কাউকে। ইচ্ছা তো করছে এই লজ্জায় দৌড়ে চলে যেতে এখান থেকে, কিন্তু যাবে না সে। উনার কথাতেই কেনো যেতে হবে? রাজিয়া বেগম মীরার পায়ের দিকে লক্ষ্য করে তাড়াহুড়ো করে বললেন,

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ, ভিজে গেছো তো। দেখেছো আমার কাজ। মনেই ছিলো না। যাও, চেঞ্জ করে নাও দ্রুত।’

মীরা রাইফের পানে আড়চোখে তাকালো একবার। এই লোকটা কি ঠিক হওয়ার না নাকি! এখনও কেমন ড্যাবডাব করে তাকিয়েই আছে। মীরার হালকা পাতলা জেদ এবার উঠে গেলো তুঙ্গে। রাইফ কে শোনানোর জন্য মিষ্টি মিহি কন্ঠটা একটু উঁচু করে রাজিয়া বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,

-“অস্থির হবেন না আন্টি। ঠিক আছি আমি। এতো সহজে ঠান্ডা আমার লাগবে না।’

বলতে দেড়ি, মীরার হাঁচি আসতে দেড়ি না। একবার হাঁচি দিয়েই ক্ষান্ত হলো না সে। পর পর তিনবার। রাইফ তার দমফা/টা হাসি চা;পা’লো কোনো রকমে। কিন্তু উর্মি আর সেটা পারলো না। হেসে দিলো শব্দ করে। মীরা লজ্জা পেলো, ভীষণ লজ্জা। চোখ উঁচু করে তাকালো না কারো দিকেই। ধীরে সুস্থে ওঠে হাঁটা ধরলো রুমের দিকে। মীরার মনে হচ্ছে রুমটা হাজার মাইল দূরে। এতো সময় লাগছে কেনো যেতে?

______________

মীরা বসে আছে নরম বিছানায়। পিঠে ছড়িয়ে থাকা আধো ভেজা খোলা চুল ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। বাহির থেকে গল্প গুজব, হাসি ঠাড্ডার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে সে। উর্মি বারান্দায় কাপড় নেড়ে দিয়ে রুমে এসে বসতেই খটখট করে মৃদু শব্দ হলো দরজায়। মীরা পেছন ঘুরে তাকিয়ে দ্রুত ওড়নাটা মাথায় টেনে নিলো। উর্মি চেঁচিয়ে বলল,

-‘খোলা। ভেতরে আসেন।’

শওকত রহমান রুমে প্রবেশ করলেন। সাথে খাদিজা বেগম ও পেছন পেছন আসলেন তার সহিত। দরজা লাগালেন নিঃশব্দে। শওকত রহমান বসলেন মেয়ের পাশে। খাদিজা বেগম চেয়ার টে’নে বসবেন সে মূহুর্তে শওকত রহমান বললেন,

-‘তুমি বসছো কেনো? যাও, পরে এসো। বাবা-মেয়ের আলাপে থাকা যাবে না।’

খাদিজা বেগম গাল ফুলালেন। তার মেয়ের সাথে কথা বলবে আর তাকেই রাখতে চাচ্ছে না? শওকত রহমান প্রিয় সহধর্মিণীর মলিন মুখটা দেখে কিঞ্চিৎ হাসলেন। খাদিজা বেগম রাগে বি/স্ফো/রণ হওয়ার আগেই বললেন,

-‘ভুল হয়ে গেছে আমার। আর গাল ফুলিয়ো না। বসো।’

খাদিজা বেগম বসলেন। এর মাঝে উর্মিও বসে পরলো মামুজানের গা ঘেষে। শওকত রহমান তাকাতেই উর্মি বলে উঠলো,

-‘আমি কি বেশি হলাম নাকি মামুজান। একটু বসি? অল্প একটু’

আগে যদিও সুন্দর মতো বসা ছিলো। যখন দেখল শওকত রহমান কিছু বলছে না, আরাম করে পা তুলে বসলো উর্মি।
শওকত রহমান ধীরে সুস্থে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘আপনি বুদ্ধিমতী মেয়ে আমার। উনারা কেনো এসেছেন নিশ্চয় বুঝাতে হবে না আপনাকে। রাইফ ছেলেটা দেখতে-শুনতে, আদব-কায়দায় ভালো। পাঁচ তলায় থাকে। ভালো জব ও করে। আপনার কি পছন্দ হয়? আমি কি কথা আগাবো আম্মাজান?

শওকত রহমান কথাটা শেষ করতেই উর্মি ধুমধাম হ্যাঁ বলে ফেলল মীরার আগেই। তিন জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহাম্মক হলো সে। বুঝলো সুক্ষ্ণ একটা ভুল সে করে ফেলেছে। তাই তো দ্রুত জিভ কে/টে বলল,

-‘আমার জন্য না। মীরার জন্য হ্যাঁ। ভুল বোঝেন কেনো?’

সবার দৃষ্টি আবার গেলো মীরার উপর। খাদিজা বেগম মেয়ের আরো নিকটে আসলেন। কাঁধে হাত রেখে বললেন,

-‘তোর বাবার কথা বুঝতে পারছিস? দেখ মা, বিয়ে কিন্তু করতেই হবে। ছেলেটা আসলেই ভালো। তারপরেও তোর যদি অসুবিধা থাকে বলে দে। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। ‘

মীরা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তবে সে বুঝতে পারছে আম্মা এবং আব্বাজানের পছন্দ হয়েছে তাদের। পছন্দ না হলে কখনও রাইফকে ভালো বলতেন না, তার হয়ে কথাও বলতেন না।
শওকত রহমান তাগদা দিলেন। বাহিরে অপেক্ষা করছে তারা। মীরা নিচু গলায় বিচক্ষণতার সহিত উত্তর দিলো,

-‘আপনার যদি পছন্দ হয় তবে আমার কোনো আপত্তি নেই আব্বাজান।’

মেয়ের আচরনে সন্তুষ্ট হলেন শওকত রহমান। মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছেন বলে ভেতর ভেতর গর্বিত অনুভব ও করলেন। কাছে টেনে চুমু আঁকলেন মেয়ের কপালে। মীরার জবাব আরেকটু পরিষ্কার ভাবে শোনার জন্য বললেন,

-‘আমি কি তবে তাদের হ্যাঁ বলে দিবো আম্মাজান?’

-‘জ্বী। দিতে পারেন।’

কন্ঠ কাঁপছে মীরার। জড়িয়ে যাচ্ছে কথা। ঢোক গিলে চোখ বুজে নোনা জল গুলো আর বাহিরে আসতে দিলো না সে। হজম করে নিলো তখনি। বাবা মাকে ছেড়ে তার চলে যাওয়ার প্রহর চলে এসেছে যে খুব নিকটে।

চলবে….

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_২১

🍁
গম্ভীরমুখে ড্রয়িং রুমে বসে রাইফ। বাহির টা তার বিস্তৃত নীল আকাশের মতো শান্ত হলেও ভেতর উত্তাল ঢেউ এর মতোই অশান্ত। অস্থির হয়ে উঠেছে বক্ষপিঞ্জর। ডামাডোল বাজছে বুকের বা পাশে। ভেতর জুড়ে চরম উত্তেজনাও কাজ করছে তার। মীরা যদি না করে দেয় তবে কি করবে সে? কিভাবে মানাবে? মীরার এমন জবাবে সে কি রাগ করবে নাকি হৈচৈ করবে? নাকি শান্ত হয়ে বসেই থাকবে? মাথা শূন্য লাগছে তার। কিছুই জানে না সে, বোঝেও না এবং বুঝতেও চায় না। শুধু জানে তার শান্তি চাই, এই এক জীবনে শান্তি পেতে হলে মীরাকে তার চাই ই চাই।

শওকত রহমান বেরিয়ে আসলেন। সবার নজর গেলো উনার উপর। মূল আকর্ষণ এখন তিনি। কি জবাব হতে পারে মীরার? তার চেহারা দেখে তো বোঝা যাচ্ছে না একটুও। রাইফের নজর গেলো শওকত রহমানের পেছন পেছন আসা উর্মির উপর। মুখটা একেবারে শুকনো লাগছে, বিষন্ন হয়ে আছে। তাহলে কি! না না, অসম্ভব! যেখানে সে ভাবতেই পারছে না সেখানে মেনে নিবে কি করে? র/ক্তি/ম গম্ভীর চোখ দুটো নিস্তেজ হয়ে আসছে চিন্তায়। একবার পলক ঝাঁপটিয়ে আবার খুললো। শওকত রহমান বসে রাইফের দিকে একটু তাকিয়ে তার বড় চাচার পানে তাকালেন। ধাতস্থ গলায় বললেন,

-‘আলহামদুল্লিল্লাহ ভাইসাব। আমার আম্মাজান সম্মতি দিয়েছেন। যেখানে আমার আম্মাজানের কোনো অসম্মতি নেয় সেখানে আমারও কোনো অসুবিধা নেই। একটা পবিত্র সম্পর্কে আমরা এখন বাঁ/ধা পরতেই পারি।’

সমস্বরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো সবাই। রাইফের শুষ্ক হৃদয়ে শওকত রহমানের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা কথাটা গ্রীষ্মের ত/পদা/হে হাঁসফাঁস অবস্থাকে হঠাৎ আসা এক পশলা বৃষ্টির মতো তার হৃদয়টা কে শীতল করে তুললো। এতোক্ষণের তী;ক্ষ্ণ য/ন্ত্র/ণা দেওয়া চাপা দীর্ঘশ্বাস টা অধর যুগল কিঞ্চিৎ ফাঁকা করে ছেড়ে দিলো ধীরে ধীরে। কপালের উপর জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে নিলো বা হাতের উল্টো পিঠে। মীরার ময়াময়ী মুখটা দেখতে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হামলে পরলো মনের গহীনে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়াও আদায় করে নিলো দ্রুত।
শওকত রহমানের কথার প্রেক্ষিতে হাসি ফুটেছে সবার মুখেই। ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন যার যার মতো আনন্দ ভাগাভাগি করতে। উর্মিও বসে এক কোণায়। রাইফের চোখ চোখ পারতেই এক গাল হেসে দিলো। রাইফ মিছেমিছি রাগের আভা ফুটে তুললো মুখে। এই মেয়ে বড্ড পাঁজি হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। না জানি কার ঘাড়ে পরে ওর নাজেহাল করে ছাড়ে।
সানজিদা বেগম খুশিতে আত্নহারা। তিনি তো ভাতিজির এই উত্তরের জন্য কখন থেকে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে যাচ্ছেন। দ্রুত গিয়ে মিষ্টি এনে মিষ্টি মুখ করালেন সবাইকে।
রাজিয়া বেগম ছুটলেন মীরার রুমের দিকে। খুশিতে মীরাকে জড়িয়ে মিষ্টি একটা আদর দিতে ইচ্ছা করছে তার। মীরা মাত্র দাঁড়িয়েছে বিছানা থেকে তখনি পেছন থেকে কারো আচানাক স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো। পেছন ঘুরে রাজিয়া বেগমের হাস্যজ্বল মুখ দেখে সেও ছোট্ট একটা মুচকি হাসি ফোটাল মুখে। রাজিয়া বেগম কাছে টানলেন, ছোট্ট করে একটা চুমু বসালেন মীরার কপালে। মমতা ভরা কন্ঠে বললেন,

-‘আমি যে কি খুশি হয়েছি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না মীরা। আমার একটা মেয়ে পেলাম আমি।
মেয়ে না থাকার আফসোস আমার আর নেই।’

মীরা কি বলবে ভেবে পেলো না। কথার প্রেক্ষিতে একটা মিষ্টি মুচকি হাসি ফেরত দিয়ে চুপচাপ থাকায় উত্তম মনে করলো সে।

________

সবাই নৈশভোজে বসেছে এক সাথে। হরেক রকম সুস্বাদু খাবারে ডাইনিং ভর্তি। খাদিজা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন। কখন কার কি দরকার তাতেও নজর রাখছেন।
মীরা অনুপস্থিত। এক সাথে খাওয়ার জন্য ডেকেছিলো সবাই, কিন্তু মীরা অনুরোধ করেছে সে পরে খাবে। শওকত রহমান মেয়ের মনের অবস্থা বুঝে আর জোর করেননি।

আনন্দ ফুর্তি, হাসি ঠাড্ডা, খোশ গল্প চলছে অনেক ক্ষণ। এতো কিছুর ভেতর মীরা একবারও তার নিজস্ব রুমের বাহিরে আসে নি। মীরার কেমন যেনো আজ খুব সংকোচ হচ্ছে রাইফের সামনে আসতে। এইতো সন্ধ্যায় ও রাইফের প্রতি স্বাভাবিক ছিলো তার অনুভূতি। কিন্তু এখন যেনো পাহাড়সম লজ্জা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে। নাম না জানা কিছু অনুভূতি মনের কোণায় বাসা বেঁধেছে। এই অনুভূতি গুলো য/ন্ত্র/ণা দিচ্ছে না ঠিকই, আবার তাকে স্বাভাবিক থাকতেও দিচ্ছে না। অনুভূতি গুলো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, মীরা আজ রাইফের নজরে নজর রাখতে পারবে না কিছুতেই।

__________

রাজিয়া বেগম বিদায় বেলায় শওকত রহমানের কাছে আবদার করে বসেছেন মীরাকে আংটি পরিয়েই রেখে যাবেন তিনি। শওকত রহমান প্রথমে দ্বীধায় ভুগছিলেন অনেক। তার একমাত্র বোন জামাই কে রেখে কিভাবে এই কাজ টা সম্পন্ন করবেন। আত্নীয় স্বজনকে বলার ও তো একটা ব্যাপার আছে। অবশেষে ফোনে উর্মির বাবা যখন জানালেন তিনি আসছেন তাদের বাসায়, তখন দ্বীধা খানিকটা কে/টে গেলো তার। সম্মতি রাখলেন রাইফের আম্মার প্রস্তাবে।

রাজিয়া বেগমের পাশেই জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মীরা। তার পাশেই সামান্য ব্যবধান রেখে বসেছে রাইফ। বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটা দাম্ভিকতার সহিত মাথা উঁচু করে বসে থাকলেও মীরা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে যথাসম্ভব। মাথা তার অবনত। হালকা গোলাপি রঙের ওড়নার কোণা খুঁটিয়ে যাচ্ছে নিরবে।

নিজের হাতের চকচকে আংটি টা খুলে মুঠোয় নিলেন রাজিয়া বেগম। রাইফ কে ইশারায় ডেকে তার হাতে দিলেন আংটিটা। হাস্যজ্বল কন্ঠে বললেন মীরার হাতে পরিয়ে দিতে। রাজিয়া বেগমের কথা শুনে মীরা আরষ্ঠ হলো, ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলো তার কোমল তনুমন। কোলের উপর রাখা হাত দুটো জড়িয়ে নিলো আনমনে।
রাইফের সংস্পর্শ পেতে চলেছে সে। প্রথম ধা/ক্কা লাগাটা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এই প্রথম জেনে শুনে, সুস্থ মস্তিস্কে আংগুলে আংগুল স্পর্শ হবে দুজনের। মীরার ঘাম ছুটলো ভেবেই। ধ্ব’কধ্ব’ক করে কাঁপছে আত্মা। রাইফ স্থির বসে। দুই আংগুলের সাহায্যে ঘুরাচ্ছে আংটিটা। মীরার দিকে আড় চোখে তাকালো একবার। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে সরু দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল তার গুটিয়ে যাওয়া লাজুকলতা কে। এই যে মেয়েটার ফর্সা কোমল হাত দুটো কাঁপছে রাইফের স্পর্শ পাওয়ার ভ’য়ে তা কি এই মেয়ে বুঝতে পারছে! বুঝলে নিশ্চয়ই লুকিয়ে ফেলত এতোক্ষণে। রাইফ মৃদু হাসলো। মীরার লজ্জা মিশ্রিত আদল যে রাইফ এর বক্ষপিঞ্জর এফো/ড় ওফো/ড় করে তোলে তা কি সে আদ্যও বোঝে!

রাজিয়া বেগম তাগদা দিলেন রাইফকে। রাইফ সোজা হয়ে পিঠ টান টান করে বসলো। স্বভাব বশত চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে হাতটা প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। রাজিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘আংটি টা ওর হাতে হবে না আম্মা। আর আংটির চেয়ে তোমার চুড়ি দুটো সুন্দর বেশি। ওটা তুমিই পড়িয়ে দাও।’

সুচতুর ভাবে মীরার অস্বস্তি থেকে রেহায় দিলো রাইফ। ধীরে ধীরে হালকা হলো মীরা। রাইফের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ভালো লাগাও কাজ করলো তার। রাজিয়া বেগম ছেলের কথায় যুক্তি আছে ভেবে আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন না। হাতের চকচকে স্বর্ণের চিকন বালা দুটো খুলে মীরার কোমল হাতে পড়িয়ে দিলেন। জ্ব/লজ্ব/ল করছে মীরার হাতে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে৷ বালা দুটো যেনো ওর হাতের ই অপেক্ষায় ছিলো সম্পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশের।

আত্নীয়তার বন্ধনে আব,দ্ধ হয়ে খোশ গল্পে মেতে উঠছে যার যার মতো। রাইফ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মীরার কাছাকাছি এলো আরেকটু। বেখেয়ালি মীরা, রাইফের হঠাৎ কাছে আসাতে থমকে গেলো। মীরার ভ/য় মিশ্রিত মুখের পানে তাকিয়ে রাইফ চাপা স্বরে ফিসফিস করে ডেকে উঠলো,

-‘মীরা’

মীরা ঘন পাপড়ির আঁখি পল্লব তুলে তাকালো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো,

-‘জ্বী’

রাইফ আরেক বার দেখে নিলো সবাইকে। নাহ, কেউ তাকিয়ে নেই তাদের দিকে। কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে নে/শা/লো কন্ঠে বলল,

-‘আমাদের প্রথম স্পর্শ টা আমাদের ব্যাক্তিগত হোক। তোমার অনুভূতি গুলো আমি আরো নিকট দেখে উপলব্ধি করতে চাই। এই কাঁপাকাঁপা কোমল হাতে আমার অধর ছোয়াতে চাই শক্ত করে।’

কান গরম হলো মীরার। লজ্জায় তৎক্ষনাৎ নুইয়ে নিলো মাথা। উড়না টেনে আড়াল করলো গোলাপি আভা ফুঁটে ওঠা মুখাবয়ব। কাঁপা কাঁপা হাত দুটো লুকিয়ে ফেলল ওড়নার ভেতর। মীরার আড়াল করা লাজুক মুখশ্রী দেখার লোভ হলো রাইফের। সময় নিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে গলা খাঁকারি দিতেই মীরা বেখেয়ালি নজর আবারও রাইফের দিকে ঘুরে গেলো। রাইফ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো খানিক ক্ষণ। মীরা নজর ঘুরিয়ে নিবে সে সময় আকস্মিক রাইফের ঠোঁট গোল হলো, ফু দিলো মীরার চোখে মুখে। মীরার পুরো শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো। নেত্র পল্লব বন্ধ হলো সয়ংক্রিয় ভাবে।

চলবে…

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৯

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৯

🍁
সানজিদা বেগম তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছেন। এদিক ওদিক ছুটে জিনিস পত্র গোছাচ্ছেন। গত কালকের বিষন্ন মনটা আজ একটা কলেই ফুরফুরে হয়েছে তার। কিছুক্ষণ আগেও শুয়ে ছিলেন তিনি। মাগরিবের সালাত আদায় করে গা এলিয়ে দিয়েছিলেন বিছানায়। মাত্র চোখ লেগেছিলো নিদ্রায় তক্ষুনি ফোনের ভাইব্রেশনে ধরফর করে উঠে বসেছিলেন। অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। আননোন নাম্বারে কল এলে অটোমেটিকেলি উনার দুঃচিন্তা করার অভ্যাস রয়েছে। কিয়ৎক্ষণ আগেও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। দুরুদুরু বুকে রিসিভ করতেই পরিচিত মানুষের গলা শুনে মুখ ভর্তি হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছিলো তার। কয়েক মিনিট কথা বলেই রেখে দিয়েছিলেন। চোখ মুখের ভাব ভঙ্গিতে ব্যাস্ততা ছড়িয়ে পরেছে তখনি।

সানজিদা বেগম ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে কল লাগালেন শওকত রহমান এর কাছে। জানিয়ে দিলেন দ্রুত তার ওখানে চলে আসছে সে। সানজিদা বেগমের কথার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে জরুরি তলব। ভাইজান কে কোনো রকমে ঘটনার সারাংশ টুকু বুঝিয়ে দিয়েই কলের সংযোগ বিছিন্ন করলেন। বাকি টুকু না হয় সামনা সামনি গিয়েই বুঝাবেন তিনি। ফোনে অনেক কথায় হীতে বিপরীত হয়। বোঝানো হয় একটা কিন্তু বোঝে আরেকটা। আর এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সামনাসামনি আলোচনা করাই উত্তম। সানজিদা বেগম সেই যে তাড়াহুড়ো লাগিয়েছেন, এর মধ্যে এক বোরকা তিন বার উল্টো করে পরে ফেলেছেন এই চক্করে। একবার উল্টো পাশে তো আরেক বার সামনের পার্ট পেছনের দিকে। উর্মির বাবা মোতালেব সাহেব স্ত্রীর কাজকর্মে মজা পাচ্ছেন বেশ৷ আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে চুপচাপ দেখেই যাচ্ছেন তার চল্লিশার্ধো অর্ধাঙ্গিনীর ষোড়শী বালিকার মতো আচরন। ম/ন্দ লাগছে না দেখতে।
অবশেষে সফল হলেন সানজিদা বেগম। কোনো রকমে হিজাব পেঁচিয়ে একায় ছুটলেন মীরাদের বাসার উদ্দেশ্যে।

_______________

রাইফ এবং উর্মির আড্ডা জমে উঠেছে। অর্ডার দিয়েছে আরো বিভিন্ন রকমের ফার্স্ট ফুড এবং কোমল পানীয়। উর্মি পূর্বের ন্যায় ঘপাঘপ খেয়েই চলেছে। মীরা শুধুমাত্র মানবতার খাতিরে কোল্ড ড্রিংকস এ চুমুক দিচ্ছে। বলতে গেলে অনেকটায় বাধ্য হয়ে। রাইফের সামনে মাক্স খোলার ইচ্ছে তার ছিলো না। কিন্তু এতো কিছু অর্ডার দিয়ে ফেলেছে, না খেলেও খারাপ দেখায়। উর্মি গাল ভর্তি খাবার ঠেসেও হরহর করে গল্প করছে। অনীহা নেয় তার একটুও।

মীরা নিশ্চুপ। হু হা বলতেও নারাজ সে। সেই যে মাথা নুয়েছে , নাম নিচ্ছে উপরে তোলার। যদিও কিছু বলতো, কিন্তু লোকটার ঠোঁটকা/টা অভ্যাস এ না জানি আবারও লজ্জায় ফেলে দেয় উর্মির সামনেই। নখ দিয়ে খুঁটিয়ে যাচ্ছে বোরকার জ্ব*লজ্ব*ল করা ছোট ছোট কালো পাথর। মাথার উপর ভনভন করে ঘোরা ফ্যান চলছে ফুল স্পিডে। তবুও সে ঘেমে একাকার ।
রাইফ কথার ফাঁকে মীরাকে দেখছে, নাহ আর মেয়েটাকে এভাবে রাখা উচিত হবে না। কেমন গুটিয়ে গেছে, বসে আছে এক কোণায়। উর্মি আছে বলেই সহ্য করছে, তা না হলে নির্ঘাত টেবিলের উপর রাখা স্বচ্ছ গ্লাস এতোক্ষণে রাইফের মাথার উপর ভা/ঙ্গতো তা সে ঢের জানে। আর বি’রক্ত করলো না।
শেষ বারের মতো এক পলক তাকালো মীরার দিকে। অস্বস্তি বোধ করছে মেয়েটা তা ঠিক বুঝতে পারল। এতো ক্ষণ সময় এক সাথে কাটানোর পরও মীরাকে দেখতে পায় নি মন ভরে। রাইফ কৌশলের সহিত গলা খাঁকারি দিলো মীরার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সফল ও হলো সে। মীরা তাকিয়েছে ডাগর ডাগর চাওনিতে, দৃষ্টি এক হওয়াতে নজর ঘুরিয়েও নিয়েছে চরম সংকোচে। এই যে কয়েক সেকেন্ডের চোখাচোখি তাতেই মীরার হৃদয়ের ছন্দপতন হয়েছে বোধকরি। এমন কেনো হয় সে জানে না। এমন অনুভূতি তার জন্য নতুন। সে অপারগ এই লোকটির নজরে বেশিক্ষণ নজর ধরে রাখতে। তার মনে হয় রাইফের কিঞ্চিৎ লাল বর্ণের চোখ দুটি খুব আকৃষ্ট করে তাকে। আকুল নিবেদন জানায় প্রেমাহ্বানের।

রাইফ হাত ঘড়িতে এক পলকে সময়টা দেখে নিলো। ইচ্ছা থাকা স্বতেও আজ আর এখানে বসে থাকা সম্ভব না। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ টা তার আগে করা জরুরি। এভাবে আড্ডা তো পরেও অহরহ দেওয়া যাবে। খাওয়া দাওয়াও শেষ। রাইফ দুজনকে উদ্দেশ্য করে আদেশের সুরে বলল,

-‘রাত হচ্ছে উর্মি। আজ তাহলে উঠো দুজন। রিক্সা দিচ্ছি, চলে যাও বাসায়।’

-‘হ্যাঁ, অনেক খাওয়া হয়ে গেছে ভাইয়া, পেট ফুল। ধন্যবাদ আপনাকে।’

-‘হুম। এবার ওঠো। অন্যদিন না হয় আবার আড্ডা জমাবো।’

রাইফের কথায় উর্মি উঠে দাঁড়াবে এমন সময় মীরা হাত টে’নে ধরলো। বাঁধা দিলো উর্মিকে। রাইফের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে মিহি সুরে বলল,

-‘আপনি যান, আমার কাজ আছে একটা। আমরা পরে যাবো।’

-‘আর ইউ শিওর মীরা? বাহিরে মেঘ করছে। ভ্যাপসা গরমও, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।’

মীরা বাহিরে তাকালো। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ দেখে দুরুদুরু করে কেঁপে উঠল বুক। কিন্তু এখন এই লোকটির কথায় চলে গেলে মীরা নিশ্চিত জানে আবারও দেখা হবে বাসার নিচে। অনেক ক্ষণ সহ্য করেছে, আর সামনা সামনি হতে চায় না সে। কন্ঠে জোর দিয়ে বলল,

-‘ইয়াহ, আ’ম শিওর৷ আপনি যেতে পারেন। কাজটা আমার খুব দরকারী। সেরেই যাবো।’

আর বসে থাকলো না রাইফ। উঠে দাঁড়ালো। বিল পরিশোধ করে মীরাদের কাছ থেকে বিদায় নিলো। নিজে কিনে নিলো পাঁচ কেজি বিভিন্ন রকমের মিষ্টি।
গুরুত্বপূর্ণ কাজটা হাসিল করার জন্য মিষ্টি নিয়ে যাওয়াটা তার খুব জরুরি।

___________

খাদিজা বেগম চা নাস্তা তৈরি তে ব্যাস্ত। মেহমান এসেছে, একদম নতুন মেহমান। হঠাৎ আগমন তাদের। মেহমান দের আসার খবরেই এখানে হন্তদন্ত হয়ে এসেছেন সানজিদা বেগম। উপস্থিত ভাবে যতটুকু সম্ভব আদর আপ্যায়ন এর জন্য উঠে পরে লেগেছেন তারা। কোনো ত্রুটি যেনো না থাকে।
শওকত রহমান হাঁক ছেড়ে ডাকলেন খাদিজা বেগম কে। বোনকেও সাথে আনতে বললেন। মেহমান সবার সাথেই সরাসরি কথা বলতে চায়। অতিথি তিনজন ব্যাক্তি একে অপরের মুখপানে চেয়ে বয়সে বড় বয়স্ক লোকটি বললেন,

-‘আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাদের এখানে আসছি শওকত ভাই। আপনি যদি অনুমতি দেন তবেই শুরু করি।’

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ। নিসংকোচে বলতে পারেন।’

উনি গুছিয়ে বললেন সে কথা। উনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ কিছুটা মলিন হলো শওকত রহমানের। সাথে শুকিয়ে গেলো খাদিজা বেগম এর ও। সানজিদা বেগম নড়ে চড়ে বসলেন। আগ্রহ দেখালেন তাদের প্রস্তাবে। ভাই ভাবীর মতো মুখ ফ্যাকাসে না করে বরং তিনি আনন্দিত হলেন। হাসি হাসি মুখে বললেন,

-‘মীরাকে আপনাদের পছন্দ হয়েছে তাতে আমরা খুব আনন্দিত। মেয়ে উপযুক্ত হলে তো সমন্ধ আসবেই। ‘

সানজিদা বেগমের কথায় আস্বস্থ হলেন তারা। বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটির পাশে বসে থাকা মধ্য বয়স্ক মহিলা খুশি হয়ে হাসি মুখে বললেন,

-‘আপনারা তো সব জানেন আমাদের সমন্ধে। তারপরেও খোঁজ খবর নিতে পারেন আমার ছেলের।যদি আপনাদের সম্মতি থাকে তবে খুব দ্রুত শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চাই।’

শওকত রহমান সোজা হয়ে বসলেন। ভারী গলায় বললেন,

-‘খোঁজ নিতে হবে না আপা। আমাদের সামনেই তো মানুষ হলো আপনার ছেলে। জামাতা হিসেবে কেউ অপছন্দ করতে পারবে না। কিন্তু,’

-‘কিন্তু কি ভাইসাব?’

-‘আপনি তো জানেন, আমার মেয়েটা আম্মাজানের মৃত্যুর পর একেবারে ভে/ঙ্গে পরেছিলো। বিয়ে শাদী তে মত দিচ্ছিলো না কিছুতেই। এখন একটু অভারকাম করেছে। তার পরেও পরিস্থিতি বিবেচনায় মেয়ের সাথে আলাপ না করে আমি কথা দিতে পারছি না।’

এবার বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি বলে উঠলেন,

-‘কোনো অসুবিধা নেই শওকত ভাই। মীরার সাথেই কথা বলেই আমাদের জানান। ওর অমতেও আমরা কিছু করতে চাই না।’

এপর্যায়ে খাদিজা বেগম মুখ খুললেন। জানালেন মীরা বাসায় নেই।

____________

মীরা আর উর্মি রাইফ চলে আসার পর পর ই বেরিয়ে পরেছে। আকাশ খারাপ করাতে শহরের সবারই বাসায় ফেরার তাগদা। যার জন্য রাস্তায় লেগেছে অসহ্যকর জ্যাম। বাসায় আসতে পনেরো মিনিটের রাস্তা লেগেছে পাক্কা চল্লিশ মিনিট। তার উপর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। ছাতা নেই সাথে, রিক্সাতে ভিজে গেছে পায়ের দিকের বেশির ভাগ অংশ।

কোনো রকমে জুবুথুবু হয়ে বাসায় আসলো দুজন। কলিং বেল চাপল উর্মি। মীরা ভেজা মুখ টুকু মুছে যাচ্ছে পেছন থেকে। দরজা খুলে দিতেই ঢুকে পরলো দুজন। মীরা খাদিজা বেগম কে দেখে জুতো জোড়া খুলে দরজার পাশে রাখা সেল্ফে রাখতে রাখতে আপন মনে স্বশব্দে বলে উঠলো,

-‘আম্মা, দেড়ি হয়ে গেলো। আব্বাজান রাগ করবে তাই না? কি করবো বলো। রাস্তায় জ্যাম ছিলো অনেক। এই উর্মিটাও….’

কথাটুকু সম্পূর্ণ করতে পারলো না মীরা। সামনের দৃশ্য দেখে অস্বাভাবিক রকমের বড় বড় হয়েছে তার চোখ জোড়া। স্থির হয়েছে তার সব কিছু। অল্পের জন্য স্থির হয়নি তার হৃদস্পন্দন। এক আকাশ পরিমাণ বিশ্ময় ফুটে ওঠেছে চোখে মুখে। এমন অপ্রত্যাশিত কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য ঘূনাক্ষরেও কল্পনা করেনি মীরা।

চলবে….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৮

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৮

🍁
কোলাহল পূর্ণ ব্যাস্ততম শহরে সবার এতো ব্যাস্ততার মাঝে বোধহয় ব্যাস্ত নেই শুধু দুটি মানুষের। অসল সময় পার করছে দুজন। নিথর দেহ দুটি চি’পকে আছে বিছানার সহিত। উর্মির দৃষ্টি উপরের দেয়ালে, মীরার চোখ বন্ধ। দুজন কি ভাবছে বোঝা যাচ্ছে না। সময়ের পর সময় যাচ্ছে, কথা বলছে না কেউ ই। নিরবতা ছেদ করলো মীরাই। আঁখি পল্লব বন্ধ অবস্থাতেই মোলায়েম সুরে ডাকলো,

-‘উর্মি?’

দেয়ালে দৃষ্টি রাখা অবস্থাতেই ছোট্ট করে জবাব দিলো উর্মি,

-‘হুম’

-‘তুই উনার ব্যাপারটা কিভাবে জানলি?’

উর্মি কিঞ্চিৎ ভ্রুকুটি করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটালো। এটার অপেক্ষায় ই তো করছে সে। বুঝেও অবুঝের মতো বলল,

-‘কার ব্যাপারে বলছিস?’

-‘ওই লোকটার?’

-‘কোন লোকটা?’

মীরা চোখ খুলে শোয়া থেকে উঠে বসল। ঘাড় কাত করে উর্মি দিকে তাকাল ক’ঠো’র দৃষ্টিতে। উর্মি হেসে উঠলো স্ব শব্দে। হাসি হাসি কন্ঠেই টেনে টেনে বলল,

-‘লোকটিইইই, আবার উনানানার। বাপ রে! নাম নেওয়া নিষেধ নাকি?’

-‘বুঝেও কথা ঘুরাচ্ছিস কেনো? আসল কাহিনী বল।’

-‘কোনো কাহিনী নাই’।

-‘তাহলে?’

-‘রাইফ ভাই মাঝে মাঝেই ইনিয়ে বিনিয়ে তোর কথা জিজ্ঞাসা করতো আমাকে। তাই স’ন্দেহ হলো।’

-‘কীরকম?’

-‘এখানে আসতে রাইফ ভাই কে একদিন তোর বারান্দায় তাকিয়ে থাকতে দেখে উনাকে ধমকে উঠেছিলাম। উনি তখন বলল এই বারান্দায় নাকি একটা পরী আছে, যে অলয়েজ বাতাসের সাথে মিশে থাকে। জানিস, রাইফ ভাই নাকি হাওয়াই মিশে থাকা পরীটাকে দেখতেও পাই মাঝে মাঝে। পরীটাকে অনেক দিন হলো দেখে না তাই দেখার জন্য মন আকুপাকু করছিলো তার। খুব আফসোস করতেছিলো দেখা না হওয়ার জন্য।

মীরা বিশ্বাস করলো কি না তা ওর মুখভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না। সব পরিস্থিতিতে শান্ত থাকে কি ভাবে একমাত্র সেই ভালো জানে। মীরা শান্ত গলাতেই শুধালো,

-‘তারপর?’

-‘তারপর আর কি! আমিও বলে দিছি, ঐ অমূল্য রতন পাইতে ধৈর্য ধরা লাগবে। তাবু পাবে কি না সন্দেহ। বিবাহ করা ছাড়া ধরতে পারবেন না মনে হয়। উনার আবভাব দেখেই বুঝেছিলাম উনি তোকে পছন্দ করে।’

-‘এতোটুকুতেই কিভাবে নিশ্চিত হলি?’

-‘বিয়ের সমন্ধ আসার পর তোর শুকনো মুখ বলছিলো রাইফ ভাইকে নিয়ে তুই ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিস। আমি তোকে চিনি, তুই বিয়ে করবি না বলে যে এতো টেনশনে থাকবি তা বিশ্বাস যোগ্য না। তাই তো সেদিন একটু আন্দাজে ঢিল দিলাম। আহা! তখন তোর মুখটা দেখার মতো ছিলো মীরু। এমন চেহারা দেখিনি কোনো দিন।’

-‘গো’য়েন্দা বিভাগে এখনও যাচ্ছিস না কেনো?’

কথাটা বলে পুনরায় চিৎ হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। উর্মি বিজ্ঞদের মতো ভাব ধরে বলল,

-‘ভাবছি রাইফ ভাইয়ের বিয়েটা খেয়েই যাবো।’

-‘উনারও বিয়ে নাকি?’

-‘জানি না। তবে হবে বলেই মনে হচ্ছে। যা টোটকা দিছি না। ঔষধ কাজে লাগবেই লাগবে।’

কিছুক্ষণ নিরব থাকলো মীরা। যথাসম্ভব ধীর কন্ঠে বলল,

-‘ভালো লাগছে না উর্মিমালা। দাদীজানকে খুব মনে পড়ছে। চল আজ একটু দাদীজানের কাছে যাই। যাবি?’

-‘এখন না, ঘুম পাইছে প্রচন্ড। কোল বালিশটা দে। বিকেলে যাবো।’

-‘আচ্ছা।’

__________________

শওকত রহমান আসরের সালাত আদায় করেছেন। বসে আছেন জায়নামাজেই। হাতের আঙ্গুলে তাসবিহ করছেন এক ধ্যানে। দরজা খোলা, মীরা উঁকি দিলো ভেতরে৷ আব্বাজানের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো৷ বাবার পাশে বসলো গা ঘেষে। শওকত রহমান মনে মনে আয়াতুল কুরছি পরে ফু দিলেন মেয়ের মাথায়। মীরা মুচকি হেসে শওকত রহমানকে মোলায়েম কন্ঠে বলল,

-‘আব্বাজান, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বিয়ের সমন্ধটা নাকচ করার জন্য।’

-‘আমার আম্মাজান কেও অসংখ্য ধন্যবাদ।’

-‘আমাকে! কেনো?’

মীরার বিস্মিত মুখাবয়বে শওকত রহমান চোখ বুলালেন। প্রসন্ন কন্ঠে বললেন,

-‘আমার পাশে এসে বসার জন্য। খুব একা লাগছিলো আমার আম্মাজান।’

-‘আপনি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছেন?’

-‘কিছুটা।’

-‘বলুন আমাকে।’

-‘আপনাকে যদি সবসময় পাশে রাখতে পারতাম। কিন্তু নিয়ম বলে একটা বিষয় আছে। বিয়ে তো দিতেই হবে। আমরা আর ক’দিন থাকবো দুনিয়ায়।’

-‘আব্বাজান, এভাবে বলবেন না প্লিজ। আল্লাহ আপনাদের নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দিক।’

-‘আমিন।’

-‘বিয়ে দিতেই হবে কেনো আব্বাজান? আপনার ছেলে করেই রাখেন না।’

-‘তা কি পসিবল বলেন? আপনার ফুপু রাগ করেছে উনাদের না করাতে। বোন টা আমার ছোট থেকেই গাল ফুলুনি।’

-‘আব্বাজান’

-‘জ্বী’

-‘চলেন আজ একটু দাদীজানের কাছে যাই।’

-‘আজ আমার শরীর টা ভালো না। রাতে ঘুম হয় নি।’

-‘তাহলে কি আমি আর উর্মি একাই যাবো।’

-‘আপনার আম্মা যাবে না?’

-‘না।’

-‘আচ্ছা তাহলে আপনারা দুজন ই যান, সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবেন।’

-‘ঠিক আছে। আরেক বার ফু দিয়ে দেন৷ আল্লাহ যেনো সহি সালামতে ফেরত আনে।’

-‘ইন শা আল্লাহ।’

_________________

রাইফ অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আজ একটু বসেছে। এখন ফ্রি হলেও সন্ধ্যায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এর জন্য সে ভীষণ এক্সসাইটেড ও বটে। এমন কাজের অভিজ্ঞতা এবার ই প্রথম হবে। না জানি কি হয় কে জানে। সব কিছু তার পরিকল্পনা মাফিক হলেই ভালো৷ বেশ ফুরফুরে লাগছে তাকে। কিছুক্ষণ পর ই চলে যাবে বাসায়। মাকে নিয়ে বেরিয়ে পরতে হবে দ্রুত।

মীরা আর উর্মি ক/বর জেয়ারত করে ক/বরস্থান থেকে বের হয়েছে রাস্তায়। গুটিগুটি পায়ে হাঁটছে দুজন। উর্মি সাদা রংয়ের সালোয়ার কামিজ পরলেও মীরার পরনে কালো বোরকা। লাইট জ্বলছে দোকানে দোকানে। সন্ধ্যা হয়েই গেছে। মাগরিবের আজান ভেসে আসছে মসজিদ থেকে। মীরার জন্যই দেড়ি হয়ে গেলো। নূর জাহান বেগমের কবরের পাশে ছলছল নয়নে বসে ছিলো মীরা৷ নীরবে দু ফোঁটা অশ্রু ও ঝড়ে পরে সংগোপনে। বিরবির করে বলতে থাকে মনের না বলা গোপন কথা। উর্মি শুনতে পায় না সে কথা। কিন্তু বুঝতে পারে কথা গুলো খুব কষ্টের।

উর্মি পাশ থেকে দাঁড়িয়ে পরল। পিছিয়ে গেলো কিছুটা। মীরা তাকাতেই বলল,

-‘ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে।’

-‘এখন না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আযান ও দিছে। আব্বাজান রাগ করবে।’

-‘আমার খুব খেতে ইচ্ছা করছে মীরা। পেট কেমন গুরগুর করছে দেখ। বাইরে থেকে পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে।’

-‘আব্বাজান কে বলে দিবো, পার্সেল নিয়ে যাবে। আয়, নামাজ কাজা হবে আমাদের দেড়ি করলে।’

-‘নামাজ এমনিতেও কাজা হবে। দেখছিস কি জ্যাম? জীবনেও গিয়ে নামাজ পড়তে পারবি না।’

-‘সবসময় বেশি বুঝিস কেনো উর্মিমালা? আয়।’

-‘মীরু, তুই না গেলে না যা। আমি একাই খাবো। তুই চলে যা।’

বলেই হাঁটা ধরলো ফুচকাওয়ালার দিকে। মীরা নিরুপায় হয়ে পেছন পেছন দ্রুত এগিয়ে এলো। বিরক্তির চিহ্ন ফুটে ওঠেছে দু ভ্রুতে। দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকা উর্মিকে তার হিজাব টেনে আটকালো সে। মৃদ্যু ধমকে বলল,

-‘এখানে না। ভেতরের দোকানে চল। বাহিরের টা খাবো না।’

-‘আরে, ভেতরে দাম বেশি। বাহিরের টা মজাও বেশি।’

-‘হ্যাঁ, মজা তো লাগবেই। আন হায়জেনিক জিনিস সবার ই মজা লাগে। ওদিকে চল।’

-‘তাহলে বার্গার ও খাবো। ভেতরের বার্গার হায়জেনিক হয়।’

ঠোঁট চেপে হেসে দিলো উর্মি। মীরার কথার জালে মীরাকেই ফাঁ/সিয়ে বেশ আনন্দ লাগছে তার।

মুখোমুখি বসে উর্মি এবং মীরা। মীরা রয়ে সয়ে খাচ্ছে। ফুচকার স্বাদ গ্রহন করছে পুরোপুরি। এর মাঝে কল করেছিলো বাড়িতে। জানিয়ে দিয়েছে ফিরতে একটু দেড়ি হবে। এক মিনিট কথা বলেই ফোন রেখে সামনে তাকাতেই মীরার চোখ দুটো ছানা বড়া হয়ে গেলো। উর্মির ফুচকার প্লেট ফাঁকা, এখন সে মীরার প্লেট থেকে খাওয়া শুরু করেছে। মীরা দ্রুত টেনে নিলো। চোখ রাঙ্গাতেই উর্মি বলল,

-‘এমন করিস কেনো? একটা খেয়েছি মাত্র।’

-‘এতো দ্রুত কই রাখলি এগুলা?’

-‘পেটে। হি হি’

কথাটা বলেই হেসে দিলো উর্মি। টেবিল থেকে বার্গার হাতে নিয়ে বড় এক কামড় দিবে তক্ষুনি নজরে এলো রাইফকে। এই দোকানেই ঢুকছে সে। পরিচিত মুখ পেয়ে উর্মি চেঁচিয়ে ডেকে উঠবে তৎক্ষনাৎ মীরা উর্মির পায়ে খোঁচা দিলো। বিঘ্ন হলো তার ডাক। উর্মি তাকালে মীরা ইশারায় নিষেধ করল তাকে না ডাকতে। দ্রুত এখানে থেকে চলে যাবে সেটাও বুঝিয়ে দিলো। উর্মি কি আর যাওয়ার মতো মানুষ তাও আবার বার্গার রেখে। খুঁটির মতো শক্ত হয়ে বসেই থাকলো আসনে। এতো স্বাদের বার্গার না খেয়েই কি না যেতে বলে। এতো বড় কথাটা বলতে পারলো মীরা! উর্মি রাইফ কে আরেকবার দেখার জন্য ঘাড় ঘুরাতেই আঁতকে উঠলো। তার পাশেই যথেষ্ট পরিমাণ দুরত্ব বজায় রেখে বসে আছে রাইফ। উর্মির মৃদ্যু চিৎকারে মীরা তাকাতেই রাইফকে দেখে পিঠের শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো মূহুর্তেই। শ্যমবর্ণের পর-পুরুষটি থেকে নিজেকে আড়াল করতে দ্রুত নীল রংয়ের মাক্স পরে নিলো। ঢেকে গেলো মীরার ফর্সা আদলটুকু। দৃষ্টি ঝুঁকে নিবদ্ধ করলো টেবিলের উপর।
রাইফ মিটিমিটি হাসল মীরার কান্ড কারখানা দেখে৷
উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,

-‘কেউ বোধহয় আজ আর খাবে না। নাও শুরু করো। তুমি আর আমি খাই।’

কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না রাইফ। চালাকির সহিত মীরার ফুচকার প্লেট টাই টেনে নিলো নিজের দিকে। গপাগপ মুখে পুরে নিলো একটা। উর্মিও কম না। মীরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘বার্গার ও তো খাবি না তাই না। মাক্স পরেছিস, কিভাবে খাবি। এইটাও আমি খাই।’

রাইফ আর উর্মির কার্যকলাপে আহাম্মক বনে গেলো মীরা। আশ্চর্য কাজ কারবার। লোকটি কই চলে যাবে মীরার মাক্স লাগানো দেখে তা না উল্টো খাওয়া শুরু করেছে। বেহায়া লোক, ভদ্রতা জানে না একটুও।
রাইফ খেতে খেতে উর্মিকে বলল,

-‘বুঝলা উর্মি, মানুষ আমাকে যতটা অভ’দ্র ভাবছে আমি ততটা অভ’দ্র নই। ভদ্রতা জানি বলেই তো তোমার কথা মতো লাল বেনারসি টা কিনেই ফেললাম। খুব মানাবে। একদম লাল টুকটুকে বউ।’

চলবে….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৭

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৭

🍁
স্নিগ্ধ বিকেল। তাপমাত্রা সহনীয়। খুব একটা গরম নেয় আজ। ছেলে পক্ষের মানুষজন এসেছে অনেকক্ষণ হলো। দেখা দেখি এবং খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ। বিদায়ের মূহুর্ত, চলে যাবে তারা। খোলামেলা আলোচনায় শওকত রহমানকে ছেলের বাবা সরাসরি জানিয়েছেন মীরাকে তাদের পছন্দ হয়েছে। তারা তার এবং মীরার জবাব শুনতে উন্মুখ হয়ে আছেন। শওকত রহমান জ্ঞানী-গুণী বিচক্ষণ মানুষ। যেকোনো কাজে পরিবার কে প্রাধান্য দেন একটু বেশি। আজকেও তার ব্যাতিক্রম নয়। স্ত্রী এবং বোনের মুখে হাসি ফুটলেও মেয়ের শুকনো ফ্যাকাসে মুখটা দৃষ্টিগোচর হয়েছে ঠিকই। তার মন বলছে এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আরেক বার কথা বলা উচিত মেয়ের সাথে। দুপুরের কথাটাও ভাবাচ্ছে তাকে। উর্মি যখন ধুমধাম করে রুমে এসেই বলে বসল, ‘মামু, এই সমন্ধ আমার পছন্দ হয় নি, আপনি ক্যান্সেল করে দেন। মীরাকে যদি বিয়ে দিতেই হয় ওতো দূর কেনো দিবেন? কাছে কূলেই দেন না। একটা মেয়ে আপনার, চোখের সামনে রাখেন মামুজান।’
তখন নেহাত উর্মিকে ধমকে বিদায় করে দিলেও পর মূহুর্তে ঠিকই তাকে একটু ভাবনাতেই ফেলেছে । এক দিকে আদরের কন্যাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে ভেবেই তার মনটা দুম/রে মুচ/রে শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে উর্মীর গরগর করে বলা কথাটা।
আরেকবার মীরার দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন শওকত রহমান। নিরবতায় ছেঁয়ে গেলো পুরো রুম। উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে সবাই তার সিদ্ধান্ত শোনার জন্য। শওকত রহমান সময় নিয়ে রাশভারী কন্ঠে জবাব দিলেন ছেলের বাবাকে। মীরার নিচু করে রাখা বিষন্ন মুখটা শওকত রহমানের একটা বাক্যে থমকে গেলো। জ্ব/লজ্ব/ল করে বড় বড় হয়ে গেলো চোখ জোড়া। বিষ্ময় তার চোখে মুখে ঠিকরে পরছে। টিপটিপ করে তাকালো আব্বাজানের দিকে। চোখে চোখ পরতেই মুচকি হাসলেন তিনি। মীরা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে উনার কথা। হ্যাঁ, তাই তো বলল কিছুক্ষণ আগে। শওকত রহমান মেয়ের সাথে আরেকবার কথা বলতে চেয়েছেন, সময় চেয়েছেন তাদের থেকে। মীরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে ভুললো না। অপরদিকে মামুজানের কথাতে মুখ হা হয়েছে উর্মির ও। মিনিট দশেক হলো সানজিদা বেগম জোর করে টেনে এনে বসিয়েছেন এখানে। তখন থেকেই ওর গা জ্ব*লে যাচ্ছে। না পারছে বলতে না পারছে সহ্য করতে। শক্ত হয়ে বসে আছে। হাসির কথাতেও হাসছে না, কষ্টের কথাতেও আফসোস করছে না। লাগছে তো তার বিরক্ত, সেটাও প্রকাশ করতে পারছে না পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে। এ মূহুর্তে উর্মিকে রোবট এর সহিত তুলনা করলেও বোধহয় ভুল হবে না। বিরক্তি আর রাগে অনুভূতি প্রকাশ করতেও যেনো ভুলে গেছে সে। সে ঠিক শুনছে কি না তা বুঝতে মীরার দিকে তাকাল। মীরার মুখটাও কেমন হতভম্ব অবস্থা। ওমা!একি কি করছে মীরা? নিজের হাতে নিজে চিমটি কা’টছে। উর্মিরও মনে হলো স্বপ্ন না তো? যা ভাবা তাই কাজ, পরখ করে দেখা যাক। মীরার দেখাদেখি উর্মিও চিমটি কাটল নিজের হাতে। ইয়া আল্লাহ!! একটুও ব্যাথা পাচ্ছে না, তার মানে কি এটা স্বপ্ন? না না, এটা যেনো স্বপ্ন না হয়। এবার একটু জোরে চিমটি দিলো বেশ শক্তি দিয়ে। সানজিদা বেগম সাথে সাথেই সবার অগোচরে চড় বসালেন উর্মির পিঠে। ভাইজানের কথায় তার অবস্থা এমনিতেই করুণ তার উপর উর্মির চিমটি খেয়ে মাথায় আ/গুন ধরে গেছে। র/ক্তচক্ষু করে তাকিয়ে হুশিয়ার করে দিলো উর্মিকে। কিন্তু উর্মি কে কি আর আঁটকে রাখা যায়। রাগে, দুঃখে এতো এতো সুস্বাদু খাবার না খেয়ে ছিলো এতো ক্ষণ। এখন কেনো উপস থাকবে? ক্ষুধায় চো চো করছে পেট। দ্রুত উঠে ডাইনিং এ বসে গেলো খাওয়ার জন্য। উর্মির উদ্ভট কান্ডকারখানা দেখে সানজিদা বেগম এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। মেয়ের পিছু পিছু গিয়ে কটমট দৃষ্টিতে বুঝিয়ে দিলেন চুপ করে সোফায় গিয়ে বসে থাকতে। কিন্তু উর্মির তো এখন আনন্দের সীমা নেয়। গায়েই লাগছে না মায়ের বকুনি। কিন্তু মানুষজন আছে বলে নিজের ক্ষুধাকে পেটের মাঝেই চা/পা দিয়ে বসলো মীরার পাশে।

__________________

গ্যারেজ থেকে বাইক নিয়ে গেট দিয়ে বের করল রাইফ। ডাক্তারের কাছে যাবে মাকে নিয়ে। রাজিয়া বেগম এগিয়ে আসলেন। ব্যাগ হাতরাচ্ছেন তিনি। কিছু খুঁজছেন বলেই মনে হচ্ছে। রাইফের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘রাইফ, তাড়াহুড়োয় আগের প্রেসক্রিপশন টা আনতে ভুলে গেছি।’

-‘কোথায় রাখছো আম্মা?’

-‘টেবিলের উপরেই আছে। যা তো আব্বা।’

-‘ঠিক আছে। তুমি ভেতরে এসে দাঁড়াও।’

রাইফ গাড়ি স্ট্যান্ড করেই ছুটলো প্রেসক্রিপশনের উদ্দেশ্যে। তিন তলায় গিয়ে বুঝলো মীরাদের বাসায় কেউ এসেছে। অনেক জনের কথার মৃদু আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। আমলে নিলো না সে। দৌড়ের উপরে আছে, দ্রুত পোঁছতে হবে ডাক্তারের চেম্বারে।

____________

সদর দরজা খোলা। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মীরার পরিবার। ছেলে পক্ষকে বিদায় জানাচ্ছেন সকলে। শেষ সময়ের কথা বার্তাটুকু সেরে নিচ্ছেন সবাই। রাইফ তড়িঘড়ি করে নেমে আসছে নিচে। প্রেসক্রিপশনটা খুঁজতে দেড়ি হয়ে গেছে তার। রাজিয়া বেগম টাবিলের উপর বললেও সেটা ছিলো আলমারির ভেতর। দ্রুত পদে আসলেও তিন তলার কাছাকাছি আসতেই ধীর হলো তার পায়ের গতি। দৃষ্টি সামনে রেখে এক পলকে সবাইকে দেখে নিল। মীরার পরিবারের সবাই আছে, হাস্যজ্বল মুখ তাদের। বাঁকা দৃষ্টিতে শওকত রহমান কে ভেদ করে পেছনে দাঁড়ানো বেগুনি রংয়ের ঢিলাঢুলা সালোয়ার কামিজ পরা রমণী কেও দেখে নিল। সেকেন্ডের ব্যাবধানে সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ম বিষয় গুলোও নজর এরালো না তার। মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে গেছে এই দু দিনেই। দু একটা ব্রণ ও উঠেছে ভ্রুর এক সাইডে। দাগ বিহীন মুখটাতে লাল রংয়ের ব্রণ দুটো মীরার সৌন্দর্য কে আরো বাড়িয়ে তোলেছে। এই যে হাসছে মেয়েটি, মুচকি হাসি। এই মোহনীয় হাসিতে যে রাইফ এক জীবন দেখতে দেখতেই পার করতে পারবে তা কি জানে এই নারী?
চলে গেছেন অতিথিরা। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর কি হবে। মীরা রুমের যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই বেখায়লী তে রাইফের দিকে নজর গেলো, চোখাচোখি হলো দুজনের। রাইফের রাতজাগা র/ক্তি’ম চোখের দিকে আজ মীরা কিছুতেই নজর মেলাতে পারছে না। অপরাধবোধ নাকি সংকোচে জানে না সে। কেনো অপরাধবোধ কাজ করছে সেটাও বোধগম্য না মীরার। সে তো রাইফকে ভালোবাসে নি কিংবা কথাও দেয় নি। তবে? দ্রুত পদে খাদিজা বেগমের পিছু পিছু চলে গেলো ভেতরে।
শওকত রহমানের চোখে চোখ পরলে রাইফ মুচকি হাসল । সম্মানের সহিত বলল,

-‘আস সালামু আলাইকুম চাচা। ভালো আছেন?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো? এই সময় কোথায় যাচ্ছো?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ। আম্মার শরীর টা একটু খারাপ। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যাচ্ছি। পেসক্রিপশন রেখে গেছিলো, নিতে আসছিলাম।’

-‘আল্লাহ সুস্থ করুক তোমার আম্মাকে।’

-‘জ্বী চাচা, দোয়া করবেন। তো কেউ আসছিলো নাকি?’

-‘হ্যাঁ, মীরাকে দেখতে আসছিলো। চলে গেলো এই এক মিনিটও হয় নি।’

-‘মীরার কি হয়েছে? ভালোই তো দেখলাম, অসুস্থ নাকি?’

সারাদিনের ধকলে যার যার মতো রুমে চলে গেছে বিশ্রাম নিতে। রুমের ভেতর সোফায় একা বসে খাচ্ছিলো উর্মি। রাইফের কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই খাবার মুখে রাখা অবস্থাতেই ফট করে উর্মি চেঁচিয়ে বলে উঠল,

-‘শুধু অসুস্থ হলেই কি দেখতে আসে রাইফ ভাইয়া? মীরু কে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছিলো আজ। সামনের সপ্তাহে বিয়ে। দাওয়াত থাকলো আপনার, আন্টিকেও আনবেন। আপনাকেই প্রথম দাওয়াত দিলাম বুঝছেন, এজন্য সুন্দর একটা গিফট আনবেন। সাথে আমার জন্য একটা হলুদ শাড়ি আনিয়েন, আর মীরার জন্য লাল শাড়ি। ওর একটা লাল শাড়িও নায়।’

উর্মির ফটফট করে বলা কথাতে রাইফের বাহির দেখতে যতোটাই শান্ত ভেতর টা ঠিক ততোটাই এলোমেলো হলো মূহুর্তেই। ঝড় উঠেছে, কাল বৈশাখী ঝড়। ভেতরটা এফোড় ওফোড় করে দিচ্ছে, র/ক্তক্ষ’র’ণ হচ্ছে বক্ষে। বি’ধ্ব’স্ত অবস্থা। এই ঝড় কিভাবে থামবে জানা নেই তার। উর্মি রাইফের ভেতর টা বুঝতে পারলো বোধহয়। খাবারের শেষ লুকমাটা মুখে দিয়েই বলল,

-‘রাইফ ভাই, আন্টিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আপনিও একবার চেক আপ করবেন। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে, শুনেছি হার্টের সমস্যা হলে এমন হয়।’

চলবে….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৬

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৬

🍁
বাসা ভর্তি সুস্বাদু খাবারের গন্ধ মৌ মৌ করছে। হরেক রকমের খাবারের ডিশ সাজানো ডাইনিং এ। আয়োজনের কোনো কমতি রাখছেন না বাড়ির গিন্নিরা। পুরো দমে তোড়জোড় করছেন শওকত রহমানও। কাল রাতে যখন মেয়েকে পাশে ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার সম্মতি আছে কি না তখন মীরা না করতে চেয়েও আব্বাজানের উৎসুক হাস্যজ্বল মুখের পানে চেয়ে আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারে নি। হ্যাঁ কিংবা না, কোনো নৈমিত্তিক উত্তর ও প্রদান করে নি সে। ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে জুলজুল চোখে তাকিয়ে ছিলো শুধু। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ মনে করে শওকত রহমান আজকের দিনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

দুপুরের মধ্যেই চলে আসবে ছেলে পক্ষ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো আজকেই বিয়ের তারিখ ধার্য করা হবে। সবার মাঝে ব্যাস্ততা থাকলেও উর্মি এবং মীরার মাঝে কোনো হেলদোল নেয়। দুজনে ঘাপটি মে*রে বসে আছে নরম বিছানায়। মীরা নিশ্চুপ স্থির হলেও উর্মি বরাবরের ন্যায় উল্টো। হাঁসফাঁস করছে কথা বলার জন্য। অনেক কথা মাথার ভেতর কিলবিল করছে কিন্তু মীরার নিরবতা দেখে কিছুতেই কথা এগোতে পারছে না। দুই একটা শব্দ উচ্চারণ ও করেছিলো এর মাঝে, কিন্তু মীরা কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে নি একটুও। একা একা তো আর বকবর করা যায় না তাই চুপ হয়ে গেছে তখনি।

উর্মিও চায় মীরা নতুন জীবনে পা রাখুক, পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হোক। কিন্তু এতো দ্রুততার সহিত মীরার মতামত কে গ্রাহ্য না করে হোক সেটাও সে চায় না। আর বড় যে বিষয় তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো মীরাকে একা কেনো বিয়ে দিবে, উর্মিও তো আছে। ও কি বানের জলে ভেসে আসছে নাকি কুড়িয়ে পেয়েছে? কয়েক মাসের ছোট বড়, অথচ উর্মির কথা কেউ ভাবছেই না। এক সাথে বিয়ে দিলেই তো তাদের ল্যাটা চুকে যায়, উর্মিও খুশি হয়।
সানজিদা বেগম ডায়নিং থেকে চেঁচিয়ে ডাকছেন উর্মিকে। উর্মি শুনেও না শোনার ভান ধরে কপালে বিরক্তির সুক্ষ্ণ ভাঁজ ফেলে ধরাম করে চিৎ হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। পাতলা ওড়নাটা দিয়ে মুখটাও ঢেকে ফেলল তাৎক্ষণিক। সে জানে মা কেনো ডাকছে তাকে। সাড়া দেওয়ার সাথে সাথেই বলবে গোসল কর দুজন, রেডি হ দ্রুত, এটা কর সেটা কর। হুহ, বয়েই গেছে তার। খুবই বিরক্তিকর! উর্মির তো মন চাচ্ছে মাইক লাগিয়ে বলতে, ‘ওতো ঠ্যাকা পরে নায় উর্মির অপর মানুষদের জন্য রেডি হওয়ার’। আজ এভাবেই শুয়ে শুয়ে মন খারাপ উদযাপন করবে বলে মনস্থির করলো। যদি তার ক্ষমতা থাকতো তাহলে এই বিয়ে সেই কখন ই নাকচ করে দিতো সে। হতে দিতো না কোনো ভাবেই। আগডুম বাগডুম চিন্তা করতে করতে হুট করে কিছু মনে পরলো উর্মির। তড়িৎগতিতে উঠে বসলো। কোলের উপর পরে থাকা ওড়নাটা কোনো রকমে মাথায় দিয়েই ছুটলো শওকত রহমানের রুমের দিকে। আজ একটা বোঝাপড়া আছে তার মামুজানের সাথে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া। মীরার শেষ রক্ষাটা যদি হয় এবার।

_____________

রাইফ অফিসে ভীষণ ব্যাস্ত সময় পার করছে গত কয়েক দিন হলো। কাজের চা”প প্রচুর। এক গাদা ফাইলের স্তুপ পরে আছে তার সামনে। সাদা শার্ট এর স্লিভ কুনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখে হরদম একের পর এক ফাইল চেক করে যাচ্ছে। কখনো চোখ ফাইলে তো কখনও কম্পিউটারের স্কিনে। যদিও শারিরীক কোনো কাজ করতে হয় না তার তবুও ব্রেনে অতিরিক্ত প্রেসারের ফলে শরীর টাও ভালো লাগছে না তার। আর মন, সে তো অনেক আগে থেকেই খারাপ। মীরার দেখা পায় না কয়েক দিন হলো। দু-তিন দিন কেই মাসের সমান মনে হচ্ছে যেনো। অন্য দিকে মা অসুস্থ।সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা তার। কালো রংয়ের হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো একবার। একটা বেজে উনত্রিশ মিনিট। আর এক মিনিট পর ই লাঞ্চ ব্রেক। আজ এখনি চলে যাবে সে। রাজিয়া বেগমের শরীর টা ভালো না। কাল রাতেও জাহাঙ্গীর আলম কে স্মরণ করে কান্না কাটি করেছেন। বিপি হাই, ঘাড়ের খিঁচুনি সাথে ডায়াবেটিস ও হাই হয়েছে। অবস্থা খারাপের দিকে। ডাক্তার দেখানো জুরুরি। এমন পরিস্থিতিতে অফিসে আসবে না বলে সকালেই বস কে কল দিয়েছিলো ছুটির জন্য। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়াতে রাইফকে অনুরোধ করেছে যেনো একটু এসে কমপ্লিট করে দিয়ে যায়। শেষ করতে করতে দুপুর হয়েই গেলো।
মোটামুটি ইমপোর্টেন্ট কাজ গুলো শেষ রাইফের। বাকি গুলো অন্যরাও করতে পারবে। অফিস সহকারী কে ডেকে সে ফাইল ধরিয়ে দিলো বসের কাছে পৌঁছানোর জন্য। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পরলো বাসার উদ্দেশ্যে। এর ফাঁকে কল করে মায়ের খোঁজ খবর নিতে ভুলল না।

________________

হালকা বেগুনি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরেছে মীরা। কোমড় সমান দীঘল কালো ভেজা চুলের আগা হতে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। ভিজিয়ে দিচ্ছে বিছানা। উর্মি ধরাম ধরাম শব্দ করে মীরার কাছে এসে বসলো। সেই যে গিয়েছিলো শওকত রহমানের রুমে, মাত্র ফিরলো। মীরা উর্মির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও মুখ ঘুরিয়ে আকাশ পানে দৃষ্টি রাখল। এমন পরিস্থিতিতে নবীজি (স:) এর বানী স্মরণ করেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রত্যাশা করছে। তার জন্য যেটা কল্যাণকর তাই ফরিয়াদ করছে মনে মনে।
উর্মি হতাশার শ্বাস ফেলল। মীরার কোলে মাথা রেখে বলল,

-‘তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে মীরা?’

মীরা নিচের দিকে মুখ নামালো। উর্মির মাথায় হাত বুলিয়ে ছোট্ট করে জবাব দিলো,

-‘না।’

-‘সত্যি?’

উর্মি প্রশ্ন করলো ঠিকই কিন্তু উত্তরের জন্য আর অপেক্ষা করলো না। নিজের মতো করেই বলে গেলো,

-‘জানিস, আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। কেমন অস্থির অস্থির ও লাগছে। শরীর টাও কেমন অবশ অবশ। অজ্ঞান হবো নাকি?

-‘কি বলিস এসব? ইয়া আল্লাহ! দেখি ওঠ ওঠ।

উর্মি মীরার উত্তেজনা দেখে মুচকি হাসলো। স্মিত হেসে বলল,

-‘তোর না জানি কেমন লাগছে! নিশ্চয় আমার থেকে বেশি। এতো করে বললাল তাবুও মামুজান কে মানাতে পারলাম না রে।’

মীরা শান্ত হলো। এখন আর কোনো উত্তেজনা কাজ করছে না তার মাঝে। তবে রাগ হচ্ছে ভেতর ভেতর। মাতব্বরি করে ওকে কেনো যেতে হবে আব্বাজানের কাছে।
উর্মি এবার উঠে বসলো। মীরার হাত ধরে বলল,

-‘সবাই এতো স্বার্থপর কেনো বলতে পারিস? শুধু নিজের ভালো বুঝে। তোর ভালোটা কেউ বুঝলো না।’

-‘তুই তো বুঝলি।’

-‘আমি বুঝলে তুই কেনো তাহলে বুঝিস না তোর ভালো? এখনও সময় আছে না করে দে। তুই না করলে মামুজান ঠিক মানবে বিশ্বাস কর।’

-‘বিয়ে তো একদিন করতেই হবে উর্মি। আজ হোক কিংবা কাল। এভাবে তো আর জীবন চলে না তাই না? আব্বাজান কতো খুশি দেখছিস? আমি না করলে অসন্তুষ্ট হবেন তিনি। তাদের অখুশি আমি দেখতে পারবো না।’

-‘তুই.. তুই না কর প্লিজ। ওতো দূরে যেতে হবে না। বিয়ে যদি করতেই হয় কাছেই বিয়ে দেক তোকে। চোখের সামনে থাকবি তুই।’

মীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো উর্মির দিকে। কেমন যেনো আভাস পাচ্ছে উর্মির কথায়। সে তো কাউকে বলে নি কিছু। তবে? রাইফের কথাও মনে হলো। ভালো না বাসলেও এই কয়েক দিনে কেমন মায়া কাজ করে তার। রাইফের চোখে তাকে পাওয়ার ব্যাকুলতা দেখেছে সে। কাজ কর্মে দুষ্টুমি খেলা করলেও ওর গভীর দৃষ্টি যে তাকে নিজের করে নিতে চায়, আগলে রাখতে চায় তা মীরা অনুভব করেছে।
মীরা শুধু শুধু চিন্তা করছে ভেবে বলল,

-‘যা হবার হবে উর্মি। পরে দেখা যাবে। যা গোসলে যা।’

উর্মি কপট রাগ দেখলো। ঝাটকা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো বিছানা হতে। ওয়ারড্রব হতে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে যাবে সে মূহুর্তে মীরাকে এক নজর তাকিয়ে ডেকে উঠল,

-‘মীরু..’

-‘বল।’

সরাসরি মীরার চোখের দিকে তাকিয়ে স্মিত কন্ঠে বলল,

-‘বিয়েটা যদি করতেই হয় তাহলে রাইফ ভাইকেই কর প্লিজ।’

মীরার আত্মা ছ্যা’ত করে উঠলো। সহসা চমকে উঠলো তাৎক্ষণিক। শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো, হৃদয়ে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হলো। উত্তাল ঢেউ এর মতো বক্ষস্থলে উথাল-পাতাল অবস্থা। রাত থেকেই তো মীরার মন অস্থির হয়ে আছে, এই অস্থির অবস্থায় উর্মির কি খুব প্রয়োজন ছিলো অশান্ত করার?

চলবে…..

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৫

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৫

🍁
দিনের শেষভাগ। গোধুলি লগ্নে পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পরেছে। ধারণ করেছে র’ক্তিম আভা। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ। মেঘপুঞ্জ বিভিন্ন রঙে রঙ্গিন হয়েছে, সেজেছে আজ নতুন রূপে। শিরশির করে মৃদু হাওয়া বইছে। শীতল করছে মন-প্রাণ।

মীরা ছোট্ট বারান্দায় খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে। বেতের মোড়ায় বসে সামনের টেবিলে ঝুঁকে রয়েছে সে। কানে ফোন এঁটে ডান হাতে কলম গুঁজে সাদা পাতায় হরহর করে লিখে যাচ্ছে মিডটার্ম পরীক্ষার সাজেশন। শর্টকাট সাজেশন হওয়াতে আর ছবি সংগ্রহ করে নি। কলের মাধ্যমেই ফটাফট লিখে নিচ্ছে সাদা কাগজে। দ্রুত লেখার ফলে খসখসে আওয়াজ হচ্ছে।
এমনিতে তার মন মেজাজ খুব একটা ভালো না তার উপর আবার পরীক্ষার তারিখ পরাতে আরো বিষণ্ণ হয়ে আছে মীরার কোমল হৃদয়খানা। গতরাতে বেশ ঝড় ঝাপ্টা গিয়েছে মীরার উপর দিয়ে। কিন্তু এখনও মাকে মানাতে পারেনি। কি করে সমন্ধটা আটকাবে সেটাই মস্তিষ্কের নিউরনে বাজছে। অতিরিক্ত চিন্তার দরুন খাওয়া দাওয়ার রুচিও নেয় তার। কিভাবে নাকচ করবে সে এই সমন্ধ? কোন পন্থা অবলম্বন করলে রেহায় পাবে? ঝামেলা আর ভালো লাগে না তার। বিয়েই কেনো দিতে হবে! বাবা মা এর সাথে থাকলে কি খুব অসুবিধা হবে? কতো টুকুই আর খায় মীরা? ওইতো দুই লুকমা দিয়েও দিন চলে যায়। তবে কেনো এতো তাড়া তাদের! সাজেশন নেওয়া শেষ হলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রুমে এসে বিছানার উপর দু পা ভাঁজ করে বসল। ঢিলে হয়ে আসা খোঁপাটা খুলে পুনরায় বেঁধে নিলো শক্ত করে। একটা সোনালী রঙের কাঠিও গুঁজে দিলো খোঁপার মাঝে যাতে নিপুণ কৌশলে করা চমৎকার কারুকার্য শোভা পাচ্ছে।

পাশে রাখা ফোনটা মিনিট খানেক সময় পেরুতেই বেজে উঠলো। সেভ করা নাম্বার এবং প্রিয় জনের ই নাম্বার। কিন্তু আজ কেনো যেনো কিছুতেই ফোন তুলতে ইচ্ছে করছে না মীরার। মীরা জানে অপর প্রান্তের ব্যাক্তিটাও তার মঙ্গল কামণা করে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার বন্দোবস্ত করছে জোর তাগিদে। ইন্ধন দিচ্ছে আম্মা এবং আব্বাজান কেও। এমন মঙ্গল পছন্দ হচ্ছে না কিছুতেই। ঠিক করছে না এটা ফুপু। কেনো শুধু শুধু জোর করছে? অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ব্যাতিত আর কিছুই মনে হচ্ছে না তার। এর মাঝে শান্তু হয়ে যাওয়া ফোনটায় পুনরায় রিংটোন বেজে উঠলো। এবার আর নিরব থাকতে পারলো না সে। এতো চিন্তা আর নিতে পারছে না কিছুতেই। যা হবার হবে, হু হা বলে কথা শেষ করবে ভেবে ফোন রিসিভ করলো। ধীর স্থির ভাবে কথা বলা শুরু করল সে,

-‘আস সালামু আলাইকুম ফুপুজান।’

-‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। সারাদিন কই থাকিস তুই? ফোন দিলে পাওয়া যায় না কেনো।’

-‘ব্যাস্ত ছিলাম ফুপু। কেমন আছো?’

ছোট্ট একটা ঢোক গিলে না চায়তেও আমতা আমতা করে মিথ্যা কথা টুকু বলেই ফেলল সে। কিসের ব্যাস্ত, আজ তো সে সারা দিন শুয়ে বসেই ছিলো মীরা। সানজিদা বেগমের কলও সে দেখেছে। সকালে দু বার, দুপুরে তিন বার আর বিকেলে দুই বার কল দিয়েছেন সে। মীরা একবার কল দিলেই রিসিভ করার মেয়ে কিন্তু সে।রেসপন্স করলো মাত্র। তাই সানজিদা বেগম খানিক বিশ্বাস করেও করতে পারলেন না ভাতিজির কথা। খুব ভালো করেই চিনেন মীরাকে এবং তার অভ্যাসকে। তাইতো শক্ত কন্ঠে বললেন,

-‘যা খুশি তাই বুঝাস না আমাকে। তোর আম্মা কি বলছে কিছু?’

-‘হু’

মীরার অন্তর ছে’দ হচ্ছে এ পর্যায়ে এসে। সে জানে ফুপুর পরের কথাটুকু কি হবে। সানজিদা বেগম আদেশের স্বরে বলে উঠলেন,

-‘শোন, কাল ওরা আসবে। ঠিকঠাক তৈরি থাকবি। আমার মীরা কোটিতে একটা।’

অপর প্রান্তে পিনপতন নীরবতা। নিশ্বাসের শব্দটুকুও শুনতে পাচ্ছেন না তিনি। ধমকে উঠলেন সানজিদা বেগম,

-‘কি হলো? শুনেছিস আমার কথা?’

-‘হু।’

-‘ওরা তোকে পছন্দ করেছে। শুধু ফরমালিটি করতে আসবে। তুই ও দেখ। ভালো লাগবে।’

-‘ভালো লাগা কোথা থেকে আসছে ফুপু! আমি তো বিয়েই…’

মীরার কথার মাঝের ফোঁড়ন কা’টলেন সানজিদা বেগম,

-‘মীরা, নিজের ভালো বুঝতে শেখ এখন। এভাবে আর কতো দিন? তোর মা, আমি যেমন বিয়ে করে সংসার করছি, তোকেও করতে হবে। তোর দাদীও কিন্তু বিয়ে করছিলো মনে রাখিস। আসছে, সন্ন্যাসী হবে।’

বকবক করতে করতেই ঝাড়ি দিয়ে কলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন সানজিদা বেগম। মীরা কানে ফোন রাখা অবস্থাতেই ঠাঁই বসে। মাথা এতো টাই নিচু যে ফর্সা আদল টুকুও দেখা যাচ্ছে না। একটা হাত কোলের উপর রাখা। ক্ষাণিক সময় পেরুতেই টুপ করে এক ফোঁটা স্বচ্ছ জল পরলো সেখানে। বুকের ভেতর জমে থাকা রাগ, ক্ষো’ভ কিংবা অসহায়ত্ব গুলো জল হয়েই কি গড়িয়ে পরছে তবে?

বিকেল হতে সন্ধ্যা নেমেছে পৃথিবীতে, সাথে আঁধারও। অন্ধকার কে ঠেলে দিয়ে আলো ছড়াতে চারিদিকে কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে সবাই। কিন্তু মীরার রুম এখনও অন্ধকার। বাহির হতে কিছু আলো তীর্যক ভাবে রুমে ঢুকে মীরার চোখে মুখে রাজত্ব বসিয়েছে।
খাদিজা বেগম নামাজ শেষে মেয়ের রুমের দিকে উঁকি দিলেন। কি ব্যাপার? অন্ধকার কেনো? ঘুমিয়ে পরেছে নাকি? অসময়ে তো শোয়ার কথা না। নামাজ পড়বে না? এরকম অনেক গুলো প্রশ্ন মনে জাগলো তার। ত্রস্ত পায়ে রুমে দরজায় আসলেন তিনি।
আচমকা রুম উজ্জ্বল হওয়াতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল মীরা। টিপটিপ করে ফোলা ফোলা লাল বর্ণের চোখ দুটো ধীরে ধীরে সয়ে নিলো আলো টুকু। খাদিজা বেগম ডেকে উঠলেন মেয়ের নাম ধরে। একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে সে। এই যেমন, অন্ধকার করে রেখেছে কেনো? কি হয়েছে? শরীর খারাপ? ইত্যাদি।
মীরা তাকালোনা মায়ের দিকে। চুপিসারে চোখের শুকনো জলগুলোই মুছে নিলো। ভেতরের চিনচিনে ব্যাথাটা সে আর কাওকে দেখাতে চায় না। মন খারাপের কথা টুকু কেউ না জানুক। ঝটপট উঠে দাঁড়াল সে। খাদিজা বেগমের মুখোমুখি যেনো না হতে হয় তাই কোনো রকমে কাঁপা গলায় নিচু স্বরে বলল,

-‘আম্মা, নামাজ টা পড়ি। অজু করে আসি।’

-‘এদিকে তাকা।’

মীরা তাকালো না। দ্রুতপদে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরল। খাদিজা বেগম চুপটি করে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। অপেক্ষা করতে থাকলেন মীরার জন্য। মেয়ের মনের অবস্থা যে ভালো না তা তিনি ঠাহর করতে পেরেছেন বোধহয়।

_______________

অনেক দিন পর আজ আবারও আড্ডার পসরা বসেছে রাইফের বন্ধুমহলের৷ টান টান উত্তেজনা নিয়ে একেক জন বাক বিতন্ডায় ব্যাস্ত। রাইফের ধ্যান সকালের ঘটনায়। খাবার টেবিলে রাজিয়া বেগম যখন মীরার ব্যাপারে জানতে চাইলো রাইফের কাছে তখন ছোট খাটো একটা বিষম খেয়েছিলো সে। মাকে চিনে সে, যে কোনো মূহুর্তে তোরজোড় লাগিয়ে দিবে ছেলের পছন্দ করা মেয়েকে পুত্রবধু করার জন্য। এবং হলোও সেটা। হুট করে প্রশ্ন করে বসলেন,

-‘হ্যাঁ রে রাইফ, মীরাকে বাসায় আনছিস না কেনো?’

রাজিয়া বেগমের এমন কথাতে খাওয়া বন্ধ করে রাইফ মায়ের দিকে শান্ত চোখে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে ছিলো অনেকক্ষণ। সবাই কিভাবে তাকে? আজব কাজকারবার! শুধু বলেছে পছন্দ করে তার মানে তো এই না যে তাকে কোলে নিয়ে ঘুরতেছে। যখন তখন এখানে সেখানে হাজির করবে৷ নিজেই দেখার জন্য মাথার ঘাম মাটিতে ফেলছে তবু দেখা পাচ্ছে না। আর এরা উল্টো আবদার করে বসে আছে। রাইফ বিরক্ত হয়ে উদাস কন্ঠে বলল,

-‘তুমি গিয়ে দেখে আসো।’

-‘আমি তো দেখেছি রে ওকে। কি সুন্দর মায়া মায়া চেহারা, ভীষণ চুপচাপ।’

রাইফ আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করল,

-‘তুমি কিভাবে দেখলা?’

-‘একই বিল্ডিংয়ে থাকি, দেখবো না?’

‘সবাই দেখে, ভালো তো খুব ভালো। আমি দেখি নি কেনো তবে? আমার থেকে লুকিয়ে ছিলো নাকি এতো দিন? ঠিক করে নি লুকিয়ে থেকে৷ আগে দেখা হলে নিশ্চয় এতো দিন বিয়ে হয়ে যেতো আমাদের। জীবনের কতোগুলো দিন পিছিয়ে গেলাম। ধ্যাত!’

মাথা নেড়ে আফসোস করতে করতে রাইফ নিরবে আওড়ালো কথা গুলো। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ মনে পরলো একটু আগের কথা। বেখেয়ালি ভাবে মাকে বলেছে মীরাদের বাসায় গিয়ে দেখে আসতে। স’র্ব’নাশ করেছে সে। শ্রদ্ধেয় জননী যে অতি উত্তেজনায় এই কাজ ও করতে পারে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে তার। তড়িঘড়ি করে রাজিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘শোনো আম্মা, বেশি এক্সাইটেড হয়ে ওদের বাসায় যেয়ো না আবার। তোমার চুপচাপ মীরা এখনও কোনো ইঙ্গিত দেয় নি।’

রাজিয়া বেগম কিছুটা অবাক হলেন ছেলের শেষ কথায়। হাতে তোলা খাবারের লুকমা টা আর মুখে পুরলেন না। ভ্রুকুটি করে বললেন,

-‘এখনও পাস নি? তুই কি রে রাইফ! তোর বাবা আমাকে দেখার এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করছিলো। আর তুই কিনা..!’

-‘আম্মা, তুমি কলেজে যাইতে আসতে বাবা তোমারে লেইন মা*রত। কিন্তু তোমার হবু পুত্রবধু ঘর থেকে বের হয় না। বের হলে রাইফ নামক ভূত ধরবে ওকে। ভয়ে লেজ গুটিয়ে আছে। ‘

রাইফের কথা শুনে রাজিয়া বেগম ছেলের অবস্থা বুঝতে পারলেন। ছেলে যে মীরার উপর চরম ভাবে ফেঁ’সে গেছে এটা ভেবেও মুচকি হাসলেন। রাইফ তাকিয়ে দেখে উনি হাসছেন। কপট রাগ দেখিয়ে বলল ‘আম্মা’। রাইফের আসহায় মুখটা দেখে এবার আর হাসি আটকাতে পারলেন না। উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন মা, খানিকক্ষণ পর তার সাথে যোগ দিলো ছেলেও।

চলবে….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৪

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৪

🍁
সেই কখন থেকে কলিং বেল বেজে চলেছে এক নাগারে এবং একই সাথে হাত দিয়ে দরজার উপর ধারাম ধারাম শব্দ করে ধা’ক্কা দিয়েই যাচ্ছে, দরজা খুলছে না কেউ ই। খুলবেই বা কি করে, বাসায় যে মীরা ছাড়া অন্য কেউ ই নেই। কিন্তু সেও চুপচাপ আরাম করে পা তুলে হেলান দিয়ে বসে আছে সোফায়। সাড়া দেওয়ার বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেয় তার মাঝে। এক ধ্যানে দরজার দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে কিছু একটা চিবুচ্ছে। শওকত রহমান এবং খাদিজা বেগম গিয়েছেন মীরার মামা বাড়ি। তার ছোট মামা অসুস্থ, তাই দেখতে গিয়েছেন। চলে আসবে আজকেই। উর্মিকে রেখে গিয়েছেন মীরার সাথে। বেশ চলছিলো দুজনের। খাওয়া দাওয়া, আনন্দ ফুর্তি, গল্প গুজব করে সময় ভালোই পার করছিলো৷ কিন্তু আসল ঘটনা ঘটল মিনিট দশেক হলো। মনখোলা চঞ্চল উর্মি খোশমেজাজে গল্প করতে করতে মীরার বিয়ের সমন্ধটার কথা মুখ ফসকে বলে ফেলেছে। এবং তৎক্ষনাৎ জিভে কামড় বসিয়ে চুপ ও হয়ে গিয়েছে। যদিও সরাসরি বলে নি, কিন্তু বুদ্ধিমতী মীরা ঠিক ই বুঝতে পেরেছে। তখন থেকেই জব্দ করে যাচ্ছে উর্মির পেটের কথা শোনার জন্য। কিন্তু উর্মীও পণ করে বসেছে আর একটা টু শব্দও বের করবে না পেট থেকে। এখন যা বলবে তাতেই বিপদ। শুধু বিপদ বললে ভুল হবে, মহাবিপদ।

মীরার যে প্রখর জ্ঞান আর বুদ্ধিমত্তা, তাতে সে ‘ক বলতেই কলিকাতা’ ঠিক বুঝে যাবে। কিন্তু মীরা যেভাবেই হোক শুনেই ছাড়বে পেটের গোপন কথা। মীরা আত্মবিশ্বাসী ও বটে, সে জানে এক পর্যায়ে রসকস মিশিয়েই বিস্তারিত বর্ণনা করে শুনাবে তার অগোচরে পরিকল্পনা করা কাহিনি। শুধু দরকার একটু কৌশল অবলম্বন করার। তাইতো এক পর্যায়ে ছলে বলে কৌশলে দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে লক করে দিয়েছে। মীরা জানে উর্মি দরজাতেই দাঁড়িয়েই থাকবে এবং এক পর্যায়ে ঘটনা বলবে বলে কথা দিয়ে ভেতরে প্রবেশও করবে। চলে যাওয়ার সাহস তার মাঝে নেয়। দিনের বেলা হলে ঠিক চলে যেতো নিজের বাসায়, কিন্তু রাত হওয়ার কারণে এখান থেকে এক পা নড়তে পারবে না সে। চলে না যাওয়ার কারণও আছে একটা। সন্ধ্যার পর থেকে বাসার যে দারওয়ান গার্ড দেয় তার চোখ দুটো ধূসর বর্ণের। অনেকে এমন চোখকে বিড়াল চোখ বলে থাকে। যাইহোক, সেই দারওয়ানের গায়ের রঙ আবার চকচকে কালো। যার জন্য চোখ দুটো তার চেহারায় বেশি প্রস্ফুটিত হয়। যদিও তার বয়স অল্প, এই আঠারো উনিশের দিকেই হবে। অনেক ভালো মনের মানুষ, হাসি ছাড়া কথায় বলতে পারে না। কিন্তু উর্মীর মনে হয় তার মুখে হাসি ফোটার সাথে সাথেই সাদা ফকফকা দাঁত এবং ধূসর বর্ণের চোখ জোড়া জ্বল জ্বল করে জ্ব লে উঠে। এই যে উর্মি এখানে দাঁড়িয়ে আছে, এখন যদি বাসায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ায় নির্ঘাত দেখা হবে দারওয়ান বেটার সাথে। আর তার এক চিলতে নিস্পাপ হাসি এবং উর্মিকে ‘আপা’ বলে ডাকার সাথে সাথেই খামোখা উর্মি ঘায়েল হবে, জ্ঞান হারাবে সেখানেই।

অনেক আকুতি মিনতির পর না পেরে চুপচাপ সিঁড়িতে বসে পরলো উর্মি। ফোনটাও সাথে নেয়, থাকলে সময়টুকু অনায়সেই কাটাতে পারতো। বিরক্ত হলো, নিজেকে বকা দিয়ে নিজের চোদ্দগুষ্টি নিজেই উদ্ধার করলো। এতো পাকনামি করতে হবে কেনো তার? সানজিদা বেগম যে এখানে আসার আগে একশ বার করে কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো যেনো এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে মীরার সাথে তবুও কথা পেটে হজম হলো না কেনো! বেশ হয়েছে শাস্তি পেয়েছে। মীরা কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কান খাড়া করল। টিপ টিপ করে পা ফেলে দরজার সামনে এসে লুকিং গ্লাসে চোখ রাখল। ওই তো উর্মি, সামনের সিঁড়িতেই বসে পায়ের বৃদ্ধাঙুল দিয়ে ফ্লোর খোঁচাচ্ছে। যাক, আছে তবে। মীরা মুচকি হাসল।
অপরদিকে উর্মি ধ্যানে মগ্ন। বলবে নাকি বলবে না? বললে আর কি হবে? আগে পিছে তো জানতেই পারবে। উর্মি না হয় মামুজানের কাজ আগায়ে রাখল। ভাবনার মাঝেই দারোয়ান এর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে ধড়ফড় করে ওঠে দাঁড়ালো। নীচ থেকে উপরে উঠছে তা পায়ের শব্দে বোঝা যাচ্ছে।
উর্মি তড়িঘড়ি করে দরজায় ধা’ক্কা দিতে দিতে মীরা কে ডেকে উঠে বলল,

-‘মীরু রেএএ, দরজা খোল তাড়াতাড়ি। দারোয়ান আসছে।’

-‘দরজা খুললে আমার কি লাভ?’

-‘লাভ ক্ষতি দিয়ে কি করবি? আমার কথা একবারও চিন্তা করবি না?’

-‘আমার কথাও তো তোর ভাবা উচিত তাই না?’

মীরার কথা শুনে উর্মি হতাশ হলো। বলল,

-‘তুই অনেক পাঁজি হয়ে গেছিস মীরা। বিজনেস ম্যান দের মতো কেমন ডিল করছিস আমার সাথে।’

-‘যা খুশি তাই ভাবতে পারিস, দারোয়ান ব্যাটা এলো বলে, দাঁড়ায়েই থাক।’

উর্মি নিচে উঁকি দিলো। ওই তো দেখা যাচ্ছে একটু একটু৷ সাথে আরো কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে। শেষ রক্ষা আর বুঝি হলো না। উর্মি চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো,

-‘মীরা, আপু বলছি, বড় আপু। প্লিজ দরজা খোল।’

-‘তারপরের লাইন বল। যেটা আমি শুনতে চাচ্ছি।’

-‘আচ্ছা বলব, খোল দ্রুত।’

-‘কি বলবি?’

উর্মির এবার রাগে আর দুঃখে মাথা কাজ করছে না। যখন বলেছে বলবে তখন তো বলবেই। এখানে দাঁড় করিয়ে রেখে এতো বিস্তারিত শোনার কি আছে! মামু আসলে ঠিক একটা বিচার বসাবে সে। বিরক্তিকর স্বরে বলল,

-‘এতো কাহিনি করছিস কেনো? বললাম তো বলবো, যা শুনতে চাচ্ছিস তাই বলবো।’

-‘পাক্কা?’
অধৈর্য হলো উর্মি। ধমকের সুরে চেঁচিয়ে বলল,

-‘হ্যাঁ রে বাপ, পাক্কা।’

মীরার মুখের হাসি প্রসারিত হলো। খট করে দরজা খুলে দিয়ে অপেক্ষা না করেই পুনরায় সোফায় গিয়ে বসলো।

উর্মি স্বস্তির শ্বাস ফেলল। দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। এতোকিছুর পর অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার কারণে দরজা লক না করেই মীরার দিকে ছুটে গেলো।
পেছনেই কয়েক সিঁড়ির নিচে দাঁড়ানো রাজিয়া বেগম খেয়াল করলেন উর্মিকে। মাঝে মাঝেই দেখেন তাকে। টুকটাক কথাও হয়। বেশ ভালো মেয়ে বলতে গেলে, ওই একটু বেখেয়ালি স্বভাবের। ওইটা ব্যাপার না, বয়স বাড়ার সাথে সাথেই ঠিক হয়ে যাবে।

রাইফ কে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন শপিংয়ে টুকটাক কেনাকাটার জন্য। কিন্তু একটা দুইটা করতে করতে অনেক গুলো হয়ে যাওয়ার কারণে দারোয়ান ব্যাগ পত্র নিয়ে উপরে তুলে দিচ্ছে। নিষেধ কথা সত্বেও নিষেধ মানে নি। রাইফ আর তিনি আগে আগে আগে হাঁটছেন আর দারোয়ান পেছন পেছন।
রাজিয়া বেগম একটু ভাবলেন, ছেলের মতিগতিও এর মধ্যে পরখ করলেন। ছেলেও তাকিয়ে আছে দরজার দিকে উৎসাহিত চোখে। এমন তাকানোর অর্থ তিনি বুঝেন। মনে মনে খুশি হলেন। এতো দিনে যদি তার শূন্য ঘর টা ভরে ওঠে কারো পদচারণায়। ছেলের কাছ থেকে পজেটিভ কিছুই আশা করলেন রাজিয়া বেগম। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

-‘উর্মি মেয়েটা ভালো আছে তাই না রাইফ?’

-‘হু।’

রাইফের ছোট্ট উত্তর। রাইফ কথা বলছে ঠিকই কিন্তু দৃষ্টি তার বাসার আধো খোলা দরজাতেই। ফাঁকফোকর দিয়ে যদি একটু দেখা যায় সেই আশায় বার বার নজর তাক করছে। এমন অবস্থা দেখে রাজিয়া বেগম শতভাগ নিশ্চিত না হলেও পঞ্চাশ শতাংশ নিশ্চিত হলেন। আত্মবিশ্বাসের সহিত জিজ্ঞাসা করলেন,

-‘তোর কেমন লাগে?’

মা জননীর মুখে এমন কথা শুনে রাইফ এর পা থেমে গেলো। নজর ফিরিয়ে আনলো দরজা থেকে। পকেটে হাত রেখে শুধালো,

-‘কি ব্যাপার আম্মা? কি বুঝাতে চাও? না প্যাঁচায়ে খোলাখুলি বলো।’

রাজিয়া বেগম ছেলের এমন প্রতিক্রিয়ায় একটু চিন্তায় পরে গেলেন। তবে কি তিনি ভুল বুঝলেন? আমতা আমতা করে বললেন,

-‘তুই নিজেই তো দরজায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিস। মা হিসেবে আমিও একটু জানতে চাইলাম।’

রাইফের হাসি পাচ্ছে, ভীষণ রকমের হাসি পাচ্ছে। জোর পূর্বক ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণ করল। মায়ের হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যেতে লাগল আর বলল,

-‘রং নাম্বার ডায়াল করে ফেলেছো আম্মা, আসল জন ভেতরে। সহজে ধরা না দেওয়া পাব্লিক সে। আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। আমি অপেক্ষা করছি, তুমিও না হয় আর কয়টা দিন অপেক্ষা করো।’

চলবে…….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১৩

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১৩

🍁
ত’প্ত দুপুর। আবহাওয়া ভ্যাপসা গরম। ভোঁ ভোঁ করে কেঁপে উঠে বিছানার উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠলো উচ্চশব্দে। খাদিজা বেগম এখন একটু পায়েস বসিয়েছেন চুলায়। এই ভর দুপুরে কাজের সময় কেউ কল করেছে বলে ক্ষাণিক বিরক্ত হলেন। মীরাকে ডাকবেন ফোনটা এনে দিতে সে উপায় ও নায়। নিচে গেছে টুপি নিয়ে৷ নিজেই এসে নাম্বারে চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে রিসিভ করলেন। বললেন,

-‘আস সালামু আলাইকুম আপা। কেমন আছেন?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি খাদিজা। তোমরা কেমন আছো?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ আপা। সবাই ভালো আছি। উর্মি কই, এখনও আসল না যে?’

-‘ঘুমাচ্ছে এখন। সারারাত ঘুমাতে পারে নি গরমে। সকালের নাস্তা শেষে শুইছে৷ দু বার ডেকে আসছি, উঠার নাম ই নিচ্ছে না।’

-‘থাক আপা ঘুমাক। ঘুম হলে একাই উঠবে। খিচুড়ি আর পায়েস রান্না করছি। দ্রুত পাঠিয়ে দিবেন কিন্তু।’

-‘আচ্ছা যাবে। শোনো, ভাইজান কই?’

-‘নামাজের জন্য বের হলো একটু আগে।’

-‘আর মীরা?’

-‘ওর আব্বাজান ভুলে টুপি রেখেই চলে গেছে। সেটা দিতেই নিচে গেছে। চলে আসবে এখনি।’

সানজিদা বেগম এ পর্যায়ে এসে ফিসফিস করে করে কথা বলা শুরু করলেন। এমন একটা ভাব যেনো ফোনের কথা অন্য কেউ শুনে ফেলবে। অথচ দুই প্রান্তেই দুজন রুমে একা।

-‘শোনো খাদিজা, খুব ভালো একটা সমন্ধ আসছে বুঝছো। ছেলেরা উচ্চশিক্ষিত। খুব ভালো ফ্যামেলি। ঢাকায় থাকে। বাবার বিজনেস আছে অনেক বড়। ছেলেও প্রতিষ্ঠিত। খুবই নম্র ভদ্র। তুমি ভাই আর মীরাকে বুঝাও। এমন সমন্ধ কিন্তু পরে নাও আসতে পারে।’

খাদিজা বেগম ভাবনায় পরলেন। মীরার বাবাকে নিয়ে তো কোনো সমস্যা না কিন্তু মেয়েকে বুঝাবে কি করে। দাদীর শোকে শোকার্ত হয়ে বিয়ে নামক জিনিসটা কে একের পর এক নাকচ করেই যাচ্ছে। শখ তো সবার থাকে, নূরজাহান বেগমের ও শখ ছিলো প্রিয় নাতনীর বিয়ে দু চোখ ভরে দেখার। তার জন্য ব্যাবস্থাও নিয়ে ছিলেন। এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে ঠিক করেছিলেন তিনি। ক্রমে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসায় উৎসব ভাব বিরাজ করেছিলো পুরো বাড়িতে। কিন্তু হায়াত মউত কি আর বলা যায়। বিয়ের ঠিক দু দিন আগে ফজরের নামাজ পড়ে তসবিহ তেলাওয়াত করা অবস্থাতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দাদীকে হারানোর কষ্টে এবং তার শখ পূরণ হলো না বলে মীরা সেদিন ই শওকত রহমান কে সাফ সাফ জানিয়েছে সে এই বিয়ে আর করবে না। শুধু এটা না, কখনোই বিয়ের আসরে বসবে না সে। ভালো পরিবার হওয়াতে বর পক্ষ মীরার অবস্থা বুঝেছিলো সেদিন। তারাও আর জোর করেনি। কিন্তু মীরার মতো মেয়েকে ছেলের বউ করতে না পারার আফসোস রয়েই গেছে তাদুকদার সাহেবের স্ত্রীর মনে। খাদিজা বেগম অনেক বুঝিয়েছেন মীরাকে। মেয়ে মানুষ, স্বামীর সংসার এ যেতেই হবে। আল্লাহর বিধান। কিন্তু এই মেয়েকে যে কিছুতেই রাজি করাতে পারছেন না। অসহায় কন্ঠে বললেন,

-‘আপা, আপনি তো জানেন মীরা কেমন। আমি কি করতে পারি বলেন?’

-‘তুমি পারবা বুঝছ। ওর একটা সুন্দর জীবন দরকার। দেখোনা ঝিম মে/রে থাকে সব সময়। শক্ত হওয়া লাগবো। মেয়েকে বুঝাও খাদিজা। এর পর আর আমাকে পাবা না বলে দিলাম। মাথায় রাইখো, রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।’

-‘আপা…’

টুটটুট শব্দ করে কে টে গেলো কল। কথা আর সম্পূর্ণ করতে পারলেন না তিনি।

______________

মুখোমুখি দুজন। গেটের সাথে কাঁধের এক পাশ হেলান দিয়ে শান্ত ভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রাইফ। হাত দুটো বুকের উপর ভাঁজ করা। পা একটা বাঁকা করে অন্যটার উপর আড়াআড়ি করে রেখেছে। শীতল তার চাহনি। গভীর দৃষ্টি প্রেয়সীর ঘর্মাক্ত মুখটার উপরেই নিবদ্ধ। মীরার অস্বস্তি হচ্ছে খুব। সাথে আব্বাজানের উপর রাগ ও হচ্ছে। উনি নিজে না এসে কেনো এই লোকটাকেই পাঠালেন। শওকত রহমানের কল পাওয়ার সাথে সাথেই টুপি টা হাতে নিয়েই নিচে নেমে এসেছে। দ্রুততার সহিত সিঁড়ির ধাপ দুটো করে অতিক্রম করার ফলে এখনও হাঁপাচ্ছে সে। তিন মিনিট পার হতে চলল, কিন্তু রাইফ একই ভাবে দাঁড়িয়ে। মীরার হাতে সাদা টুপিটা এখনও বিদ্যমান। একবার এগিয়ে দিয়েছে, কিন্তু রাইফ প্রত্যাখ্যান করেছে। অধৈর্য হয়ে মীরা মুখ খুলবে ঠিক তখনি রাইফ চোখ রাঙালো। ভ্রুকুটি করে বুঝিয়ে দিলো আর কিছুক্ষণ। মীরা অবাকের উপর অবাক হচ্ছে বারংবার। আশ্চর্য! এমন হাবভাব কেনো লোকটার! বার বার অধিকার খাটাচ্ছে তার উপর। মীরার এবার মনে হলো রাগে শরীরের রগ ছিড়ে যাবে৷ অধৈর্য হয়ে সামনে থেকে দু পা এগিয়ে এসে রাইফ কে অতিক্রম করে উঁকি দিলো গেটের বাহিরে। আব্বাজান কে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। রাগে গমগম করে আবারও রাইফের সামনে এলো। কাঠকাঠ কন্ঠে বলে উঠলো,

-‘আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন। বিরক্ত হচ্ছি আমি।’

-‘বিরক্ত হওয়া রমনীকে দেখতে ভালো লাগছে আমার।’

-‘বিরক্ত করা পুরুষটাকে ভালো লাগছে না আমার।’

মীরার সোজাসাপ্টা জবাব শুনে রাইফ ধীরে ধীরে মুচকি হাসল। সে তো ভেবেছিলো এখনি চলে যাবে এখান থেকে। মন ভরে দেখেছে, আপাতত কয়েক দিন দেখা না হলেও এই স্মৃতি টুকু নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এই মেয়েটাও দেখি বেশ কথা জানে তার মতো। তাহলে আর দেড়ি কিসের। আসর একটু জমানো যাক আর দু মিনিটের জন্য। মীরার বিরক্তিতে ভরা মুখ পানে গভীর দৃষ্টি রেখে রাইফ শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘তোমার ভালো না লাগা পুরুষটি রমনীর হাসি দেখে নিজেকে ধন্য করতে চায়।’

-‘ভুলে যাক লোকটি, মেয়েটি এখন থেকে হাসি কে কোরবান করে দিলো।’

-‘আর লজ্জাটাকে! নিলজ্জ দেখতেও ইচ্ছা করছে লোকটির। হোক একটু, ক্ষতি কি তাতে। আসুক কাছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে বসুক পাশে।’

মীরা এই মূহুর্তে এসে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। লজ্জাহীন কিংবা নিলজ্জ তো সে হতে পারবে না কস্মিনকালেও। এই যে লোকটির বেফাঁস কথাতেও এখন লজ্জায় লাল হলো। মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলল সাথে সাথেই। কি জবাব দিবে এই কথার প্রেক্ষিতে। কি বলে লোকটা থেকে রেহায় পাওয়া যায়। মন তো চাচ্ছে লোকটার গার্ডিয়ান কে ডেকে বলতে, “এমন অসভ্য কেনো আপনার ছেলে? নামাজে যাওয়ার আগেও অন্য মেয়েকে ডিস্টার্ব করে। কান মলে শাসন করতে পারেন না?” ওড়নার কোণা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিজেকে শান্ত করল। এতো অস্থির হলে চলবে না। ভেতরের লজ্জা মিশ্রিত রাগ টাকে হজম করে মীরা শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘দেখেন..’

মীরার কথা শেষ না হতেই রাইফের ফটাফট উত্তর,

-‘দেখছি।’

মীরার এবার নিজের চুল নিজে টেনে ছিড়তে ইচ্ছা করছে। নিজের ভুল শুধরে বলল,

-‘শোনেন…’

-‘শুনছি। কিছু শুনবো বলেই সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি। প্রহর গুনছি তীব্র আশায়। এই বুঝি সে আমার হয় যায়।’

-‘জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা ভালো। কেউ নিষেধ করবে না।’

-‘তুমিই তো আমার স্বপ্ন। তবে কেনো আড়াল থাকো? এতো কেনো লুকোচুরি, বলতে পারো?’

মীরা হতাশার শ্বাস ফেলল। এই লোকের সাথে কথায় পেরে উঠবে না সেটা এখন স্পষ্ট। আর কথা বাড়াতে চায় না সে। যতো প্যাঁচাবে ততই এই লোকের মনোবাসনা পূরণ হবে। কথায় জাল থেকে বেড়িয়ে এসে শুধালো,

-‘টুপি নিয়ে এখান থেকে বিদায় হবেন নাকি আমি বিদায় হবো।’

-‘তুমি বিদায় হও। অন্যদিন না হয় পাঁচ তলায় দেখব। চিন্তা করো না, আমার করেই দেখব।’

রাইফ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। টুপির জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো সামনে। কিন্তু মীরা থমকে আছে। চোখ মুখ একেবারে থ মে/রে গেছে রাইফের শেষ কথায়। বুকের বা পাশের ছোট্ট হৃদযন্ত্রটা মনে হলো কয়েক সেকেন্ড এর জন্য ধড়াক করে থেমে আবার চালু হয়েছে। স্পন্দন বেড়ে গেছে বহুগুণ। অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে তার। শরীরেও যেনো শক্তি পাচ্ছে না একটুও। রাইফ টুপি না পেয়ে মীরার হাত থেকেই টুপিটা টেনে নিলো। ঘুড়ে দাঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে গেলো আরো কয়েকটা শব্দ,

-‘ছোট মাথা এতো কিছু বুঝবে না। অপেক্ষা করো, আমি বুঝিয়ে দিবো। ভালোবাসার রঙে রাঙ্গাবো তোমায়।’

চলবে……

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১২

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১২

🍁
‘আমার থেকে পালিয়ে আর কতো দিন থাকবা মীরা? তোমার নীরবতা পীড়া দিচ্ছে আমাকে। আমার হয়ে যাও প্লিজ।’

ফিসফিস করে বলা কথাটা কর্ণকুহরে পোঁছা মাত্রই মীরা তেলে বেগুনে জ্ব*লে উঠলো। বিরক্তির রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে মুখাবয়বে। দু ভ্রু কুঁচকানোর ফলে কপালে সুক্ষ্ণ ভাঁজেরও সৃষ্টি হয়েছে। আচ্ছা বেহায়া তো লোকটি। পেয়েছে কি উনি, যখন তখন যা খুশি তাই বলে দিবে? আজ উনার ফুরফুরানি বের করে ছাড়বে মীরা। যা ভাবনা সেই কাজ। ফট করে দাঁড়িয়ে পরল সে। দাঁতে দাঁত চেপে গোলাপী আভা ফুটে ওঠা মুখটা ঘুরিয়ে আ*গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। চাপা স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে শুধালো,

-‘সমস্যা কি আপনার?’

এবং তৎক্ষনাৎ মীরার নজরে এলো শুভ্র পাঞ্জাবী পরা সুঠাম দেহি শ্যামবর্ণের পুরুষটিকে আজ কেমন স্নিগ্ধ সুন্দর এবং পবিত্র লাগছে। চুল গুলো বেশ পরিপাটি। গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলোও আজ খুবই ছোট। দেখতে কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে যেনো। মনে হচ্ছে কয়েক দিনের ব্যাবধানেই তার বয়স চার-পাঁচ বছর কমে গিয়েছে। দৃষ্টি এদিক সেদিক ঘুরিয়ে আবারও বেহায়া নজর গেলো রাইফের কপাল, নাক, মুখ, গলা এবং সবর্ত্র। মীরার এমন চাহনি দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসলো রাইফ। গলার স্বর অনেকটাই খাদে নামিয়ে মুখ টা এগিয়ে আনলো মীরার দিকে। সাথে সাথে মীরা পেছন দিকে নিজেকে ঠেলে দূরত্ব বজায় রাখল। যদিও দুজনের মাঝে এক হাত পরিমাণ ফাঁকা, তবুও পুরুষালী ঘ্রাণ মীরার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে। রাইফ দু ভ্রু উঁচু করে ভরাট কন্ঠে শুধালো,

-‘ওভাবে চোরা চোখে তাকিয়ে কি দেখছ? তুমি বললে আজকেই ব্যাবস্থা করি। মন ভরে দেখতে পারবা। ভয় নেই, একটুও গুনাহ হবে না। একটা বার অনুমতি দাও, শুধু একটা বার।’

মীরা চোখ গোল গোল করে বিস্ফোরণ নেত্রে তাকাতেই রাইফ পিঠ টান টান করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মীরা যতোই বুঝদার এবং আত্মবোধ সম্পন্ন মেয়ে হোক না কেনো, এমন পরিস্থিতি তার জন্য নতুন এবং এটাই প্রথম। কেউ যে তাকে পছন্দ করে নি তা নয়, কিন্তু এতোটা কাছে আসার দুঃসাহস পূর্বে কেউ করে নি। মাথাটা গোলমাল লাগছে তার কাছে। মনের ভেতর শব্দ গুলো জমাট বেঁধে আছে। শুষ্ক গলাটা ঢোক গিলে ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করল। দুরুদুরু বুকে সাত পাঁচ ভেবে অগোছালো কথাগুলো গুছিয়ে আনল। শুষ্ক অধর যুগল জিহ্বার ডগার সাহায্যে ভিজিয়ে নিয়ে জবাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিঞ্চিৎ ফাঁক করতেই রাইফ বলে উঠলো,

-‘আর কতো নীরব থাকবে? আমি আর পারছি না মীরা। সত্যি পারছিনা। তোমার কি সম্মতি আছে আমার প্রস্তাবে? আম্মাকে পাঠাবো? পাঠাই?

রাইফের চোখ মুখ ভর্তি কি আকুল আবেদন! কাছে পাওয়ার কিংবা দুচোখ ভরে প্রেয়সীকে দেখে তৃষ্ণা মেটানোর। মীরা এমন কথার অর্থ সাথে সাথেই অনুধাবন করতে সক্ষম হলো না। অন্য সময় হলে ঠিকই বুঝতে পারত। কিন্তু রাইফের একের পর এক কথার বাণে সত্যি আজ অসহায় লাগছে তাকে। নিজেকে শান্ত করতে কিছুক্ষণের জন্য নেত্র পল্লব বন্ধ করল। অধরের মাঝে হালকা ফাঁক করে ভেতরে জমা রুদ্ধশ্বাস বের করে দিয়ে পিটপিট চোখে আরেকবার রাইফের পানে তাকানোর উদ্দেশ্যে চোখ খুলল। দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখতে পেলো সম্মুখে সে নেয়। এক মূহুর্তের মাঝেই কোথায় হাওয়া হলো ভেবে মীরা এবার আরো বেশি হতভম্ব হলো। ইনি কি পাগল নাকি ছাগল! জ্বীন নাকি ভূত! কখন কি করে বোঝা মুশকিল। আকস্মিক পেছন থেকে ভেসে আসা কন্ঠস্বরে চমকে উঠলো মীরা। আব্বাজান এখানে? কখন আসলেন? সব শুনে ফেলেন নি তো? কথা বলতে দেখে কি মনে করবেন তিনি? ভুল বুঝবেন না তো? এরকম অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে মীরার মনে।
মনের প্রশ্ন মনের মাঝেই চা’পা দিয়ে চট করে পিছু তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। শওকত রহমানের হাসি হাসি মুখে রাইফের সাথে হ্যান্ড শ্যাক অবস্থায় সালাম এবং কুশল বিনিময় করতে দেখে মীরার অশান্ত মন খানিক শান্ত হলো। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে আছে সেটাও জানান দিলো তার মস্তিষ্ক। শওকত রহমান হাস্যজ্বল মুখে রাইফের উদ্দেশ্যে বলছেন,

-‘নামাজে যাচ্ছো রাইফ?’

রাইফের বেশভূষা দেখেই বোঝা যায় নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি তার মাঝে। তাই প্রশ্ন করে আর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন না। পর মূহুর্তেই বললেন,

-‘আচ্ছা চলো এক সাথেই যাই।’

রাইফ গালভর্তি হাসি দিলো। শ্রদ্ধার সহিত বলল,

-‘হ্যাঁ হ্যাঁ চাচা। চলেন।’

নীচে নামার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে বাড়াতে শওকত রহমান মীরাকে বললেন,

-‘আম্মাজান, এখন এগুলা রাখেন। গোসল করে সালাত আদায় করেন। যান, ভেতরে যান’

মীরা এক পলক শওকত রহমানের দিকে তাকিয়ে নীচু আওয়াজে বলল,

-‘জ্বী আব্বাজান। সাবধানে যাবেন।’

শওকত রহমান এবং রাইফ নিচে নেমে গেলেন খোশমেজাজে গল্প করতে করতে। মীরার ও এতো কিছুর পর এখন আর ইচ্ছা করছে না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। এমনিতেই আজ তীব্র গরম তার উপর রাইফের আজগুবি কথাবার্তা শুনে মাথা এবং কান থেকে ধোঁয়া বের হবে বলে মনে হচ্ছে। শরীর ঘেমে একাকার। ফিনফিনে শরীর টার সাথে লেপ্টে আছে পিত রঙের উপর হালকা প্রিন্টের জামাটা। কোনো রকমে জুতা গুলো উপরে তুলে ময়লা গুলো ঝাড়ুর সাহায্যে বেলচা তে তুলেই বড়বড় পা ফেলে ভেতরে প্রবেশ করল। দরজা আটকে দিলো শব্দ করে। রাইফের উপর জমানো ক্ষো’ভ দরজায় প্রয়োগ করলো কি না কে জানে!

__________________

শওকত রহমান এবং রাইফ বিভিন্ন বিষয়াদী নিয়ে আলোচনা করছেন আর পায়ে পা মিলিয়ে এগুচ্ছেন। বাসা হতে মসজিদ বেশি দূর না। এই তো দুই তিন মিনিট হাঁটলেই মসজিদ। তিন রাস্তার মোড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার নিজস্ব স্বত্তায়।
মধ্য রাস্তায় এসে শওকত রহমান পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকালেন। শূন্য পকেট। সাথে সাথে অন্যটাতে হাত দিলেন। পকেট হাতরে মুঠোফোন, তসবিহ এবং কিছু টাকা ব্যাতিত অন্য কিছু পেলেন না। নাহ, টুপিটা এটাতেও নেয়। খাদিজা বিছানার উপরেই তো রেখেছিলো পাঞ্জাবী পায়জামার সাথে। সঙ্গে নিতে একেবারেই ভুলে গেছেন। ভুলটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে ভেবে রাইফের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘দেখেছো অবস্থা, টুপিটা রেখে আসছি। বয়স হচ্ছে তো, তুমি যাও। আমি গিয়ে আনছি।’

কথাটা বলে মুঠোফোন টা বৃদ্ধাঙুলির মাধ্যমে অন করলেন। কয়েক সেকেন্ড এর ব্যাবধানে কল করলেন কারো নাম্বারে। কানে ফোন রেখে অপেক্ষা করতে করতেই রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই বলে উঠলেন,

-‘টুপিটা নিয়ে নিচে আসেন তো আম্মা। আপনার ছেলে বুড়ো হয়েছে, সব কিছু ভুলে যায়।’

অপর পাশে কি কথা বলল তা মৃদু আওয়াজেও শুনতে পারল না রাইফ। শওকত রহমান ফোনটা কান থেকে নামিয়ে পকেটে রেখে রাইফের উদ্দেশ্যে বললেন,

-‘তুমি যাও, আমি আসছি।’

রাইফ সাথে সাথেই বাধাপ্রদান করলো। গদগদ কন্ঠে বলল,

-‘আপনি কেনো কষ্ট করবেন চাচা। আমি যাই। এক মিনিট ও লাগবে না আনতে। এক কাজ করেন, অনেক গরম তো। আপনি বরং এই দোকানে বসেন।’

শওকত রহমানকে নিষেধ করারও সুযোগ দিলো না রাইফ। হনহন করে সামনের দিকে এগুতে থাকল। কোনো ভাবেই পেছন ফিরে তাকাচ্ছে না। পিছু ফিরলেই যেনো মহাবিপদ। যা খুশি তাই হয়ে যাক, আজ আর তাকে আঁটকাতে পারবে না কেউ। বেশ দূরে চলে আসার পর চোরা চোখে তাকিয়ে দেখল শওকত রহমান বসেছেন দোকানে। যাক, উনি তবে আর আসবেন না। এই সুযোগে যদি আরেক বার, হ্যাঁ আরেক বার হৃদয় দিয়ে বসা রমনীর সান্নিধ্য লাভ করা যায় তবে মন্দ কি!

চলবে….

মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব-১১

0

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_১১

🍁
পর পর কেটে গেছে কয়েকটা দিন। আজ শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ যেনো কর্মব্যাস্ততা বেড়ে গেছে সবার। ঘরের এই কাজ সেই কাজ লেগেই আছে একটার পর আরেকটা। বিছানায় বসে শওকত রহমানের সাদা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে দিচ্ছে মীরা। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। হাত খোঁপাটা ঢিলা হয়ে পিঠের উপর কোনো রকমে আঁটকে আছে। বাঁধন আগলা হতে পারে যে কোনো সময়। জায়গা করে নিবে পুরো পিঠময়। বা হাতের উল্টো পিঠের সাহায্যে কপাল এবং নাক মুখের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে মুখের উপর আসা কিছু চুল কে কানের পিঠে গুঁজে দিল। এর মধ্যে খাদিজা বেগম রুমে আসলেন। ওয়ারড্রব এর ডয়ার খুলে অপরিষ্কার কাপড় বাছাই করছেন তিনি। যদিও মীরা বেশ পরিপাটি এবং গোছানো স্বভাবের মেয়ে তবুও দুই একটা খুঁজছেন যদি পাওয়া যায় সেই আশায়। মীরা সাদা এবং হালকা রঙের কাপড় বেশি পরিধানের কারণে খুব দ্রুতই ময়লা হয়ে যায়। এদিক সেদিক ওলট পালট করে দুইটা ওড়নার এক কোণায় তরকারির হলুদ দাগ খুঁজে পেলেন। নামাজের হিজাবটাও চেয়ার থেকে নিয়ে মীরার বিপরীত পাশে বসে পরলেন তিনি। মীরা নজর উঁচু করে মুচকি হেসে নজর নামিয়ে নিলো। মাকে স্পষ্ট কন্ঠে জানিয়ে দিল,

-‘আমি গোসলের সময় ধুয়ে দিবো আম্মা। রেখে দাও।’

-‘রেখে দেওয়ার জন্য নেই নি। আজ দুপুরে কি খাবি বল?’

-‘খিচুড়ি খেতে ইচ্ছা করছে। গরুর মাংস আছে?’

-‘হ্যাঁ আছে।’

-‘আচ্ছা, তাহলে আমি রান্না করি?’

পাঞ্জাবি টা ভাঁজ করে সোজা হয়ে বসল মীরা। এতোক্ষনে পুরো পিঠ সমেত জায়গা করে নেওয়া লম্বা ঘন কালো ঝরঝরে চুল গুলোকে দু হাতের সাহায্যে হাত খোঁপা করে নিলো। খাদিজা বেগম ভাঁজ করা পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে উঠতে উঠতে বললেন,

-‘গরম অনেক কিচেনে। আজ আমি করি। তুই অন্যদিন করিস।’

-‘আমি পারব আম্মা। দেখি কাপড় গুলা দাও।’

খাদিজা বেগম দ্রুত হাত সরিয়ে দূরে নিয়ে গেলেন। কিন্তু মীরা হুড়মুড় করে লাফিয়ে এসে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো কাপড় গুলো। খাদিজা বেগম রেগে গেলেন। কিন্তু মীরা সেই রাগ কে তোয়াক্কা করলো না একটুও। বাথরুমের দরজা ঠেলে কাপড় গুলো ভেতরে বালতিতে রেখে আমারও লাগিয়ে দিল দ্রুততার সহিত। মাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল কিচেনে।

_________________

জ্ব”লন্ত চুলায় টগবগ করে ফু’টছে গরুর মাংস। ঘর সুদ্ধ লোভনীয় স্বাদের ঘ্রাণ মো মো করছে। এই ঘ্রাণ যে কারো পেট মোচর দিয়ে তুলবে গরম গরম ভাত এর সহিত দু টুকরো মাংস নিয়ে খাওয়ার ইচ্ছায়। পাশের চুলায় চিংড়ি মাছ ভুনা করছেন রাজিয়া বেগম। উনি নিজে চিংড়ি মাছ খান না এলার্জির কারণে। কিন্তু বাবা ছেলে অনেক পছন্দ করেন। এখন তো জাহাঙ্গীর আলম নেই তবুও রোজ নিয়ম করে ছেলের জন্য চিংড়ি মাছ ভুনা করেন। দুই একটা টমেটো দিয়ে ঝাল ঝাল চিংড়ি ভুনাটা ছেলে একটু বেশি পছন্দ করে কি না। খটখট করে আওয়াজ এলো সদর দরজার বাহির থেকে, পরপর দুবার। রাজিয়া বেগম পেছন ঘুরে মেইন দরজার পানে তাকিয়ে আবার সামনে মুখ ফিরালেন। দুই আঙ্গুলে মোচড় দিয়ে গ্যাসের পাওয়ার লো তে নামিয়ে ছুটলেন দরজার দিকে। তিনি জানেন দরজার ওপাশে এখন রাইফ দাঁড়িয়ে আছে। ছোট থেকেই কলিং বেল চাপে না সে। দু আঙুলের সাহায্যে সবসময় টোকা দেয় যেনো ভেতরের কারো ঘুমের ডিস্টার্ব না হয়। হুট করে কলিং বেল এর আওয়াজে চমকেও ওঠেন অনেকে। দরজা খুলে রাইফের হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে আবার ছুটলেন কিচেনে। যেতে যেতে বলে গেলেন,

-‘একেবারে গোসল করে ফেল আব্বা। গা চুলকাবে দেড়ি করলে।’

রাইফ ডাইনিং এর উপর থেকে গ্লাসে রাখা স্বচ্ছ পানি ঢকঢক করে পান করে তৃষ্ণা মিটাল। বাজার শেষে সোজা সেলুনে গিয়েছিলো সে। চুল এবং দাঁড়ি হালকা কে টে একটু অন্যরকম লাগছে দেখতে। রুমে ঢুকে ফ্যানের সুইচ অন করে দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক টানে কালো গেঞ্জি খুলে ছুড়ে ফেলল চেয়ারের উপর। টান টান উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেদহীন দেহ উন্মুক্ত হলো। বারান্দায় নেড়ে দেওয়া তাওয়াল নিয়ে গোসলে যাবে সে মূহুর্তে নাকে এলো কষানো গরুর মাংসের মাশলা মাখানো ঝাঁজালো ঘ্রাণ। লোভ সামলাতে পারল না কিছুতেই। হাতের তাওয়াল কাঁধে নিয়েই হাঁটা ধরল রান্নাঘরের দিকে। মায়ের কাছে এসে দেখে অল্প আঁ চে এখনও রান্না চুলায়। আদুরে কন্ঠে মাকে জিজ্ঞাসা করল,

-‘আম্মা, ঘেমে গেছো তো। আর কতোক্ষণ লাগবে? তুমি যাও, আমি দেখতেছি।’

ডাল ফোঁড়ন দেওয়ার জন্য কিছু পেঁয়াজ কুচি করছেন তিনি। এক পলক তাকিয়ে জবাব দিলেন,

-‘এইতো শেষ আব্বা। তুই এখন ও গোসলে ঢুকিস নি কেনো?’

-‘মাংসের ঘ্রাণে আর থাকতে পারলাম না আম্মা।’

পাশ থেকে চামচ নিয়ে মায়ের আঁচল দিয়ে সরিয়ে নিলো ঢাকনা। সাথে সাথেই হুড়মুড় করে নাকে প্রবেশ করলো লোভনীয় ঘ্রাণ যা মুখে পানি আনার জন্য যথেষ্ট। এক টুকরো মাংস নিয়েই গরম গরম মুখে পুরে দিয়েছে সে। তাপে তার মুখ ঝলসে যাবার জোগাড়। ফু দিয়ে দিয়ে কোনো রকমে গলাধঃকরণ করতে সক্ষম হলো। রাজিয়া বেগম রেগে গেলেন এমন অবস্থা দেখে। চোখ পাকিয়ে বললেন,

-‘এতো অস্থিরতা কেনো তোর রাইফ? আস্তে ধীরে খেতে পারিস না?’

-‘আহ আম্মা, এতো মজা হইছে তরকারি। ধৈর্য ধরে রাখতে পানি নাই।’

-‘যা এবার গোসলে, নামাজ পড়ে এসে একেবারেই খাবি।’

-‘চিংড়ির বাটিটা দাও একটু এদিকে। এটাও টেস্ট করে যাই। লবন বেশি দিলা না কম দিলা কে জানে!’

এমন কথা শুনে রাজিয়া বেগম রাগ করতে গিয়েও হেসে দিলেন। ছেলে যে লবনের ওছিলা করে মাছ খেতে চাচ্ছে তা উনি ঢের জানেন। তাকে আর বাটিটা দিতে হলো না। রাইফ নিজেই বাটি নিয়ে ঘপাঘপ মুখে পুরে ছুটল গোসলের উদ্দেশ্য। চিংড়ি মুখে থাকা অবস্থাতেই আধো আধো কন্ঠে চেঁচিয়ে মাকে বলল,

-‘ফাস্ট ক্লাস হইছে আম্মা। আর দুইটা খাইতে পারলে ডাবল ফার্স্ট ক্লাস হইতো।’

_________________

যোহরের আজান হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। শওকত রহমান রেডি হয়েছেন পাঞ্জাবি পরে। শেষে পাঞ্জাবী এবং হাতের কব্জিতে একটু আতর মেখে একেবারে তৈরি তিনি। মীরা সমস্ত ঘড় ঝাড়ু দিয়ে মুছে ফেলেছে। আসবাবপত্রের উপর জমে থাকা ধুলো বালিও মুছে একেবারে চকচকে করে তুলেছে। সে সময় খাদিজা বেগম কে নিয়ে কিচেনে ঢুকলেও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে বিশ মিনিট পর ই বেড়িয়ে এসেছে সেখান থেকে। এখন সে সদর দরজার সামনে এক কোণায় চুপটি করে বসে মাথা নিচু করে বাহিরে যাওয়ার জুতা গুলো গুছিয়ে রাখছে সেল্ফ এ। এক জোড়া করে জুতা হাতে নিচ্ছে আর ফ্লোরে বারি দিয়ে জুতায় লেগে থাকা বালু গুলো আলাদা করে উপরে রাখছে। সিঁড়ি বেয়ে কারো নিচে নামার শব্দ পেয়ে দ্রুত ওড়নাটা টেনে নিলো মাথায়। পায়ের শব্দটা খুব কাছাকাছি এসে থেমে গেল। সুন্দর পুরুষালী ঘ্রাণ আসছে নাকে। সেকেন্ড পাঁচেক এর মধ্যে বুঝতে পারল এই ঘ্রাণ টা তার চেনা। এর আগেও পেয়েছে সে এবং মালিক কে সেটাও ঠাহর করতে সক্ষম হলো। এখনও যাচ্ছে কেনো লোকটা! বিরক্তিতে চোখ মুখ শক্ত করলো মীরা। আজ আর নিস্তার নেই লোকটির। যা হবার হবে, কিন্তু অসভ্যতামীর জন্য একটা ধমক দিবেই সে।মাথা উঁচু করে ধমকে উঠবে সে মূহুর্তেই রাইফ ফিসফিস শব্দে ভরাট কন্ঠে বলে উঠল,

-‘আমার থেকে পালিয়ে আর কতো দিন থাকবা মীরা? তোমার নীরবতা পীড়া দিচ্ছে আমাকে। আমার হয়ে যাও প্লিজ’

চলবে…….