Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 32



তিনি আমার সৎ মা পর্ব-৪

0

তিনি_আমার_সৎমা
পর্বঃ৪
মিথিলা জামান নিভা

সারাঘরে পিনপতন নীরবতা। সবাই মুখ থমথমে করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। একটু আগে দাদী যা বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি ভুল শুনেছি। আমি হালকা হেসে পরিবেশটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। দাদীর কাছে যেয়ে দাদীর হাতে হাত রেখে বললাম,”দাদী মজা করো না তো এখন। এখন কি মজা করার সময় বলো?”
দাদী ঘোলাটে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি একটু কেঁপে উঠলাম সেই চোখের দিকে তাকিয়ে।
“মজা করার মতো অবস্থায় আমরা আর নেই রে বোন। তুই যা শুনেছিস ঠিক শুনেছিস। আফজাল, আমার ছেলে যাকে তুই বাবা বলে ডাকিস, সে তোর নিজের বাবা নয়। আমিও তোর নিজের দাদী নই।”
আমি চিৎকার করে দাদীকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াই, আমার সৎমা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলেন। দাদী এখনো নির্বিকার।
“শান্ত হও, নীরা শান্ত হও। তুমি এমনিতেই অসুস্থ। আর মা আপনাকেও বলি, এখনই এসব কথা জানানোর খুব দরকার ছিলো? ওর শরীরটা খারাপ, গায়ে জ্বর। এখন এতোকিছু কীভাবে সহ্য করবে ও?”
“ওকে শক্ত হতে হবে বৌমা। এতো নরম হওয়া ওর যাবে না। ওর মায়ের সাথে হওয়া সব অন্যায়ের বিচার করতে হবে ওকে।”
আমি কাঁপছি থরথর করে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”তবে যে ছোট থেকে শুনে আসছি আমি আমার বাবার মতো রাগ পেয়েছি?”
“তুই ছোট থেকে আফজালকে দেখেছিস তোর মায়ের উপর এভাবে চণ্ডালের মতো রাগ দেখাতে, তোর সাথেও সে কম করেনি। সেখান থেকে দেখতে দেখতে তোর মধ্যে ওই রাগ ঢুকে গেছে। কিন্তু তোর চেহারায় তোর বাবার কোনো ছাপ আছে?”
আমি একটু থমকে গেলাম। আসলেই তাই। সবাই বলতো আমি আমার মায়ের মতো দেখতে হয়েছি।
“তাহলে আমার আসল বাবা কে দাদী?”
“তোর আসল বাবা তুই জন্মের পরপরই মা*রা গিয়েছিলেন। তার ছিলো কোটি টাকার সম্পত্তি আর নিজের বিশাল ব্যবসা। যার একমাত্র উত্তরাধিকারী ছিলি তুই। তোর বাবা চলে যাওয়ার পর তোর মা ছোট্ট তোকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়ে। যদিও অঢেল টাকাপয়সা তার ছিলো, কিন্তু সেসব দেখার কেউ ছিলো না। একে তো এতো টাকাপয়সা অন্যদিকে ছিলো তার রূপ। যার ফলে অনেক মানুষের নজর পড়ে তোর মায়ের দিকে। তারমধ্যে একজন ছিলো তোর নিজের বাবার বন্ধু হাশেম, হ্যা এই অসভ্য হাশেম।”
আমি হতভম্ব হয়ে সব শুনছি। মনে হচ্ছে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছি আমি। ঘুম ভাঙলেই স্বপ্নটাও ভেঙ্গে যাবে। টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে আমার চোখ দিয়ে।
“সেই সময় তোর বাবার অফিসে চাকরি করতো আফজাল, যাকে তুই কিনা এখন নিজের বাবা হিসেবে জানিস। তোর মায়ের বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠতে থাকে সে দিনদিন। তোর মা ও ওকে বিশ্বাস করতে শুরু করে অন্ধের মতো। আসলে ওই অবস্থায় তার আর কিছু করারও ছিলো না। এরমধ্যে একদিন আফজাল তোর মা কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, সাথে তোর দায়িত্বও নিতে চায়।”
আমি কথা বলতেও যেনো ভুলে গিয়েছি। আমার কথা আটকে আছে মুখে। আস্তে করে তাকিয়ে নতুন ভদ্রমহিলার দিকে তাকালাম। কি নাম দিবো আমি উনার? আফজাল সাহেব নিজেই তো আমার বাবা নয়, তার স্ত্রী আমার মা কীভাবে হবে?
“তোর মা অনেক ভেবে রাজি হয়ে যায় আফজালের কথায়। ঘরোয়া পরিবেশে ছোটখাটো করে বিয়ে হয়ে যায় ওদের। আমি তোর মা কে দেখে ভেবেছিলাম আমার ঘরে একফালি চাঁদ এসে ঢুকেছে। সেই সাথে তোকেও আমি নিজের করে নিয়েছিলাম। তোর মা কে আমি সেদিন কথা দিয়েছিলাম, নীরা কোনোদিন জানতে পারবে না সে আমাদের কেউ না। আফসোস তাকে দেওয়া কথা আমি আজ রাখতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা করে দিও গো মা রাত্রি, ক্ষমা করে দিও।”
দাদী শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলেন। আমি অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমার জায়গায়।
“এরপর আফজাল তোকে দত্তক নেয়, তোর সব দায়দায়িত্ব নিজের করে নেয়। সবকিছু ভালোই চলছিলো। তোকেও আফজাল নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতো। সবকিছু সুন্দর ভাবেই কাটছিলো। হঠাৎ একটা ঝড়ে সব এলোমেলো হয়ে গেলো।”
“কি ঝড় দাদী?”
“আফজাল হঠাৎ করে কিছু খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে যায়। জু*য়া খেলতে শুরু করে। আরো অনেকরকম খারাপ কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। এরই মধ্যে কৌশল করে সে তোর বাবার সব সম্পত্তি আস্তে আস্তে নিজের নামে করে নিতে থাকে তোর মায়ের কাছ থেকে। তোর মা ছিলো বোকা, সে আফজালকে অন্ধবিশ্বাস করতে থাকে। তাই অন্যকিছু বুঝতে পারে না। কিন্তু আমি তো মা। আমি বুঝতে পারি আমার ছেলের কথা। আমি বৌমাকে বারণ করি এভাবে নীরার নামের সম্পত্তি ওকে না দিতে। আর যা হলো আমার কাল। আফজাল খারাপ সঙ্গে পড়ে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো টাকার জন্য। আমি এভাবে সাবধান করায় আমার উপর রেগে যায়। এমনকি সে আমার গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। আমাকে বলে আমি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি, আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। এই বয়সে আমি কোথায় যাবো? সেই থেকে আমি আফজালকে এমন ভয় করি।”
“কিন্তু বাবার সাথে হাশেম আঙ্কেলের পরিচয় কীভাবে হয় দাদী?”
“হাশেমই তোর বাবাকে খুঁজে নেয়। আমি নিষেধ করার পর থেকে তোর মা আফজালকে কোনো রকম টাকা দিতে অস্বীকার করে। টাকার জন্য যখন আফজাল দিশেহারা, তখন হাশেম তার কাছে আসে।”
“তারপর?”
“আফজালের তখন প্রচুর দেনাদার। ওদিকে জু*য়ার নেশা,ম*দের নেশা। পাগলের মতো অবস্থা তখন তার। এরমধ্যে হাশেম খুঁজে নেয় আফজালকে। সে তখন সবচেয়ে কুরুচিপূর্ণ একটা প্রস্তাব দেয় আফজালকে। আর আফজালও টাকার জন্য সেই প্রস্তাব মেনে নেয়, নিতে বাধ্য হয়।”
আমার কণ্ঠ থেকে কোনো স্বর বের হতে চাচ্ছে না। কোনোরকমে বললাম,”কি ছিলো সেই প্রস্তাব দাদী?”
“সেসব আমি তোকে বলতে পারবো না। শুধু শুনে রাখ দিনের পর দিন তোর বাবাকে টাকার লোভ দেখিয়ে তোর মায়ের সাথে অসভ্যতা করেছে ওই জানো*য়ার হাশেম। আর আমার কুলাঙ্গার ছেলেটা সেসব উপভোগ করেছে। আমি কোনোদিন মুখ খুলতে পারিনি। আমি মুখ খুললেই আমার উপর চলতো আফজালের অমানুষিক অত্যাচার।”
দাদীর কোনো কথাই যেনো কানে যাচ্ছে না আমার। পুরো পৃথিবীটা যেনো টলছে আমার সামনে। যে কোনো মুহূর্তে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বো আমি। আফজাল নামক লোকটার উপর ঘৃণায় বারবার অস্থির হয়ে উঠছি আমি। ইচ্ছা করছে এখনই পিশাচটাকে….
“কিন্তু দাদী, মা কেনো আইনের আশ্রয় নিলো না? অর্থবল থাকতেও কেনো সে দিনের পর দিন এই শাস্তি মেনে নিলো?”
“কে বলেছে সে আইনের আশ্রয় নেয়নি? সে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলো আফজালকে। কিন্তু হাশেম অত্যন্ত ধুরন্ধর একটা কীট। ও আফজালকে ছাড়িয়ে এনেছে কৌশল করে। তারপরই আফজাল তোর মায়ের সামনে তোকে দিতো বিভিন্ন ধরণের শাস্তি। তোর মা আর যাই হোক, তোর কষ্ট সহ্য করতে পারতো না। অনেকবার আফজালকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছে সে। কিন্তু এই আফজাল আর হাশেম মিলে ছকটা এমনভাবে সাজিয়েছিলো, তারা সবসময় তোর মা কে হাতের পুতুল করে রেখেছিলো। পরে রনি হলো। তোর মায়ের পায়ে পড়ানো হলো আরো একপ্রস্থ শেকল। তোর মায়ের বাপের বাড়ির দিকেরও এমন কেউ ছিলো না যে তাকে বাঁচাতে পারে। এক বুড়ি আমি, তোর মা শুধু ছুটে ছুটে আমার কাছে আসতো। মা আমাকে এই নরক থেকে আপনি বাঁচান। এই সম্পত্তির কিচ্ছু চাইনা আমি। শুধু আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে চাই আমি। আপনি ব্যবস্থা করে দিন। কারণ সে সময়ে তোর মা কে একরকম বন্দী করেই রাখা হতো এই চার দেওয়ালের মধ্যে। বাইরের কারো সাথে কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না তাকে। শেষের দিকে তোর মা মানসিক রোগীর মতো হয়ে গিয়েছিলো তোর মনে আছে বোধহয়। একরাতে সে আমার কাছে এসে বললো,” মা আপনি তো কিছুই করতে পারলেন না আমার জন্য। তাই নিজেই আমি নিজেকে এই নরক থেকে উদ্ধার করবো। আমার ছেলেমেয়েগুলোকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছি আমি। আপনি ওদের দেখবেন।” আমি সেদিন ভেবেছিলাম হয়তো ও এমন কোনো একটা প্লান করেছে এই বাড়ি থেকে মুক্তি পাওয়ার। আমি খুশি হয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু কে জানতো, সে এভাবে তার মুক্তি খুঁজে নেবে?”
এটুকু বলে দাদী থামলো এরপর হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আরো যেনো কি কি বলতে লাগলো। আমার কানে গেলো না কিচ্ছু সেসব। আমার সামনে দুনিয়াটা ঘুরতে অদ্ভুতভাবে। আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। দেওয়াল চেপে নিজেকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। হঠাৎ আমাকে ওই অবস্থায় দেখে উনি ছুটে আসলেন আমাকে ধরতে। কিন্তু তার আগেই আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। জ্ঞান হারানো আগে আধবোজা চোখে আমি দেখলাম আমার মায়ের মতো কেউ আমাকে কোলে তুলে নিলো, আহা রে, কেনো জানি উনার গায়ের গন্ধটাও আমার বড্ড পরিচিত মনে হলো, আচ্ছা তবে কি এই গন্ধ আমার মায়ের? আর কিছুই মনে নেই আমার।

কতক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফেরে আমি জানিনা। জ্ঞান ফিরতেই আমি নিজেকে আমার খাটে দেখলাম। আমার মাথার কাছে বসে আছেন আমার নতুন মা।
নতুন মা কথাটা ভাবতেই আমি নিজের মধ্যে একটু শক খাই। আমি উনাকে মা বললাম? ভাগ্যিস মনে মনে বলেছি, নাহলে উনি তো শুনে ফেলতেন। কি একটা লজ্জা হতো। উনি আমার মা কীভাবে হবেন? উনি এই আফজাল নামক পাষণ্ডটার স্ত্রী। আর ওই লোকের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই পৃথিবীতে কেউ নেই আমার আপন। আমি একা, এই পৃথিবীতে আমি একা। এই ভদ্রমহিলা আমার কিছু হয়না, দাদীও আমার কিছু হয়না। রনি যদিও আমার ভাই, কিন্তু সে এই আফজালের ছেলে। আমি হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলাম শুয়ে শুয়েই। মাথার কাছে চিন্তিত মুখে বসে ছিলেন উনি। আমার কান্নার আওয়াজ শুনেই ধড়ফর করে উঠে বসলেন। আমার মাথাটা বুকে চেপে বললেন,”আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া। মা, ও মা নীরার জ্ঞান ফিরে এসেছে। একটা ডাক্তারও ওর বাবা ডাকতে দিলো না। আমি তো চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। আর একটু হলে আমি নিজেই ওকে কোলে তুলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম। দেখতাম কে আটকায় আমাকে। বের করে দিলে দিতো আমাকে এই বাড়ি থেকে। তবুও আমার মেয়ের সুস্থতার সাথে কোনো আপোষ নেই।”
আমি অবাক চোখে দেখলাম উনার দিকে। কি বললেন উনি? উনার মেয়ে? আমার কেনো উনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছা করছে এখন? যেভাবে মাকে জড়িয়ে কাঁদতাম?
দাদী ছুটে আসলেন। আমাকে দেখে বললেন,”আলহামদুলিল্লাহ। ও বোন, আমার সোনা বোন। এখন কেমন লাগে বোন? ও বৌমা, ওর মাথায় হাত দিয়ে দেখো ওর জ্বর কেমন এখন। মেয়ের জ্ঞান ফেরার খুশিতে তো ফরফর করে কথা বলেই যাচ্ছো। আগে দেখো ওর জ্বর কেমন।”
“জ্বর নেই মা। দেখেছি আমি। কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর শরীর খুব দূর্বল। দেখেন না কীভাবে তাকিয়ে আছে। ওকে এখনই কিছু খেতে দিতে হবে।”
আচ্ছা মা ছাড়া কি কখনো কেউ এতোটা বুঝতে পারে? সত্যিই খিদায় আমার প্রাণ ছটফট করছে। আমি উনাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। মনের মধ্যে বললেও আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম।
“আপনি ওর কাছে বসেন মা। আমি ওর জন্য খাবার নিয়ে আসি।”
উনি ছুটে উঠে যাচ্ছিলেন। আমি পিছন থেকে হঠাৎ করে উনার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরলাম।
উনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালেন পেছন ঘুরে। দাদীও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আবার আমার পাশে পড়লেন উনি। মিষ্টি করে হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”কিছু বলবে নীরা?”
আমার শক্তি নেই কোনো কথা বলার। আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বললাম,”আপনাকে কি আমি আন্টি বলে ডাকতে পারি?”
আমি চেয়েছিলাম আমি বলবো আপনাকে মা বলে ডাকতে চাই আমি। কিন্তু ভিতর থেকে কিছু একটা বাঁধা পেলাম বলতে।
আবারও সুন্দর করে হাসলেন উনি। আমি একটু লজ্জা পেলাম আবার।
“আন্টি কেনো? মা বলে ডেকো?”
“আপনি তো আমার মা নন। এই বাড়ির কেউ আমার কিছু হয়না। এই বাড়িতে আমি একটা আগন্তুক ছাড়া আর কিছুই না।”
“নীরা।” দাদীর চিৎকার শুনে তার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসার চেষ্টা করলাম আমি।
“দাদী ভুল কিছু বলেছি?”
দাদী কোনো কথা না বলে মুখ শক্ত করে অন্যদিকে ফিরলেন। আমি জানি এখন উনি বসে বসে কাঁদবেন। সারাজীবন শুধু কাঁদতেই দেখলাম মানুষটাকে।
“বেশ, তুমি আমাকে আন্টি বলেই ডেকো। যেদিন জানতে পারবে আমি তোমার কে, সেদিনই নাহয় ডেকো আমাকে মা বলে, যদি তুমি চাও।”
“কে আপনি?”
“কেনো তোমার সৎমা, ওহ দুঃখিত, তোমার রুনা আন্টি।”
এই বলে অদ্ভুত করে হাসতে লাগলেন উনি। হাসিটা এতো পরিচিত লাগছে কেনো আমার?

(চলবে….)
এই পোস্ট এ যদি ৫০০ লাইক হয় ১০ টার আগে তাহলে আরেক পার্ট পাবেন

তিনি আমার সৎ মা পর্ব- ৩

0

তিনি আমার সৎ মা
পর্ব ৩
মিথিলা জামান নিভা
আমি আড়চোখে বাবার দিকে তাকালাম। তার চোখমুখ রাগে টকটকে লাল হয়ে আছে। ঠিক কি কারণে রাগ করছে আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি। আমার এইরকম লুকের জন্য তিনি মনে হয় রীতিমতো লজ্জা পাচ্ছে এই লোকটার সামনে। আমি বাবার ওই রাগী চোখ উপেক্ষা করে অন্যদিকে তাকালাম। এই রাগী চোখের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন আমার মা কে দিয়ে তার কার্যসিদ্ধি করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আর না! এভাবে চুপ করে থাকলে উনি এবার আমাকে পেয়ে বসবেন। আমি আর ভয় পাবো না এই লোকটাকে। এক অজানা সাহস আমার মধ্যে ভর করেছে। তবে কি আমি ওই ভদ্রমহিলাকেই ভরসা করতে শুরু করেছি?

বাবা থমথমে গলায় বললো,”তোমার এই চেহারা কেনো?”

আমি নির্বিকার হয়ে উনার চোখে চোখ রেখে বললাম,”আমার চেহারা এমনই খারাপ বাবা। কি করবো আমি? মায়ের মতো সুন্দরী আমি নই, যে আমাকে দিয়ে যা খুশি তাই করাবে তুমি।”

শেষের কথাটা একটু জোরের সাথেই বললাম আমি। বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। মনে হয় ভাবতেই পারছে না আমি তার মুখের উপর এভাবে বলতে পারি।

আবারও ভারী কণ্ঠে বাবা বললো,”চুলে এমন বিশ্রী করে তেল দিয়েছো কেনো? আর এসব কি জামা পরেছো? তোমাকে দামী জামাকাপড় আমি কিনে দিই না?”

হ্যা এটা ঠিক। বুঝ হওয়ার পর থেকে দেখেছি বাবা নামের এই লোকটা আমাদের সমস্ত চাহিদা না চাইতেই পূরণ করেছে। হয়তো তার উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই।

“মাথা যন্ত্রণা করছিলো, তাই তেল দিয়েছি চুলে। আর এই জামা আমার এখন পরতে ভালো লাগছে তাই পরেছি। বাড়িতে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কেউ আসেনি যে তার জন্য আমার এখন বেনারসী কাতান পরে আসতে হবে।”

বাবা চোখ গোল গোল করে আমার দিকে তাকালো। আমি তখনও নির্বিকার। এতোক্ষণ ওই লোকটার দিকে আমার চোখ পড়েনি। উনি বেশ আগ্রহের সাথে এতোক্ষণ বাবা মেয়ের ঝগড়া দেখছিলো। কিন্তু আমার শেষ কথাটায় মনে হয় একটু অপমানিত হলেন উনি। দুইবার খুক খুক করে শুকনো কাশি দিলেন শুধু।

বাবা অগ্নিচক্ষু দিয়ে আমার দিকে একবার তাকালো এরপর ওই লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,”ইয়ে মানে হাশেম ভাই, আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি বুঝতে পারছি না ও আজ কেনো এমন করে কথা বলছে। ও তো এভাবে কথা বলে না। নীরা, হাশেম আঙ্কেলের কাছে ক্ষমা চাও এক্ষুনি।”

আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম,”আমি কোনো অন্যায় কথা বলিনি যে তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কি বলার আছে তোমার তাড়াতাড়ি বলো, আমাকে পড়তে বসতে হবে।”

“নীরা।” বাবার চিৎকারে একটু কেঁপে উঠলাম আমি। কিন্তু তবুও একদম অনড় দাঁড়িয়ে থাকলাম।

বাবা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওই লোকটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,”আরে আরে আফজাল, কি করছো? এতো বড় মেয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? এসো আঙ্কেল তুমি আমার কাছে এসে বসো।”

আমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে, উনি কিছুটা দমে গেলেন।

“ওর মায়েরও এমন তেজ ছিলো শুরুতে। তেজ কীভাবে কমাতে হয় আমার ভালো করে জানা আছে।” বাবার গলায় রাগ, আমি নিশ্চুপ।

“কি যে বলো আফজাল। নীরা ওর মায়ের মতো ভুল করবে না। ও বুদ্ধিমতী মেয়ে। ও খুব ভালো করে জানবে ওর জন্য কি ভালো হবে কি ভালো হবে না। তাই না নীরা?”

আমি মুচকি হাসলাম,”জ্বি ঠিক বলেছেন হাশেম আঙ্কেল। আমি খুব ভালো করে জানি কোনটা আমার জন্য ভালো হবে আর কোনটা হবে না।”

তেলতেলে একটা হাসি দিলো লোকটা। দেখে গা জ্বলে গেলো আমার। তবুও যথেষ্ট শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি।

হঠাৎ করে লোকটা আমার পাশে এসে আমার হাতটা ধরলো। আমি যেনো হাজার ভোল্টের শক খেলাম। হতভম্ব হয়ে গেলাম লোকটার সাহস দেখে। আমার বাবার সামনে একটা পরপুরুষ আমার হাত ধরলো? আমি এক ঝটকায় বাবার দিকে তাকালাম। বাবা না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইলো। কিন্তু না, এখন কান্নাকাটি করা যাবে না। নিজেকে দূর্বল করে ফেললে এই মানুষরূপী পশুগুলো আরো পেয়ে বসবে আমাকে।

আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি, আর হাশেম নামের লোকটা মনে হলো বেশ মজা পাচ্ছে আমার এই ব্যবহারে।

“কি হচ্ছে কি? আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো? আর বাবা? তুমি কিছু বলছো না কেনো? একটা পরপুরুষ কীভাবে তোমার সামনে আমার হাত ধরতে পারে? সেই সাহস সে পায় কীভাবে? উনাকে বলো আমার হাত ছাড়তে।”

বাবা একটু আমতা আমতা করতে থাকে। মিনমিন করে বলে,”ইয়ে মানে হাশেম ভাই, বলছিলাম যে ওর বয়সটা তো বেশি না। সামনে ওর পরীক্ষা। এখন এসব থাক।”

“আরে আফজাল, আমি তো ওর আঙ্কেল। তুমি এতোসব ভেবো না তো। ওর হাতটা একদম ওর মায়ের মতো ফর্সা আর কি নরম। ধরতেই খুব ভালো লাগছে।”

আমি অবাক হয়ে শুধু আমার বাবাকে দেখছি। কীভাবে সে এমন নরমসুরে কথা বলছে?

“দেখুন, আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন। এক্ষুনি আমার হাত ছাড়ুন। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“আরেহ আফজাল, মেয়ের দেখি তার মায়ের সবকিছুই পেয়েছে। মায়ের মতো তেজ। বেশ বেশ, যে মেয়ের তেজ বেশী আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগে।”

আমি আরো বেশ কয়েকবার নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। শেষের দিকে লোকটা আমার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো, আর মুখে একটা পিশাচের মতো বিশ্রী হাসি। আমি আর থাকতে পারলাম না। সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে উনার মুখে থুতু ছুঁড়ে মারলাম।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব ওরা দুইজন। আর আমি কাঁপছি থরথর করে। আমার ভিতরের নিয়ন্ত্রণহীন রাগটা হু হু করে বাড়ছে আবার। আমার চোখ জ্বলছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলাম আমি।

কোথা থেকে যেনো ছুটে এলেন সেই ভদ্রমহিলা। আমাকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কম্পন ধারণ করলেন নিজের মধ্যে। আমি শান্ত হতে চাইলাম, কোনোভাবেই পারলাম না।

বাবা যেনো কথা বলতে ভুলে গিয়েছেন। আর ওই অসভ্যটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। চোখে আগুন ঝরছে তার।

“নীরা, কি করলে কি তুমি এটা? তোমার মা পর্যন্ত সাহস করেনি কখনো এই কাজের। তোমার এতো সাহস কীভাবে হয়? এক্ষুনি ক্ষমা চাও হাশেম আঙ্কেলের পা ধরে।”

“নীরা কোনো অন্যায় করেনি যে ক্ষমা চাইবে। ওই লোকটাই নীরার সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করেছে ও শুধু নিজেকে বাঁচিয়েছে, আর কিছু না। ক্ষমা চাইতে হলে উনি চাইবে নীরার কাছে।”

আমি অবাক হয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকালাম। কেনো জানি বড্ড মা কে মনে পড়ছে আজ উনার দিকে তাকিয়ে। যদিও মায়ের সাথে উনার কোনো মিল নেই। আমার মা ছিলেন ভূবনভোলানো সুন্দরী, যে সৌন্দর্যই হয়েছিলো তার কাল।

“রুনা, তুমি এতোক্ষণ আড়ি পেতেছিলে? দুইদিন আসতে পারলে না এতো সাহস কে দিয়েছে তোমাকে? এখন আবার ওকে উস্কে দিচ্ছো। ছাড়ো ওকে, ওর ক্ষমা চাইতেই হবে হাশেম ভাইয়ের কাছে।”

“থাক আফজাল, এখন আর ক্ষমা চাওয়ার কোনো দরকার নেই। তোমার মেয়েকে বলবে, তেজ থাকা ভালো। তাই বলে এতোটা নয়। এর শেষ আমি দেখে ছাড়বো, আবার আসবো আমি। আর তোমার মেয়ে সোজা না হলে তোমার অবস্থা কি হবে এটাও ভালো করে জানো তুমি। খুব তাড়াতাড়ি আবার আসবো আমি। হাশেমকে রাগানোর ফল তোমাদের পেতে হবে।”

এই বলে ধুপধাপ করে পা ফেলে অসভ্যটা বেরিয়ে গেলো, বাবা ছুটলো আর পিছু পিছু।

আমি আর থাকতে পারলাম না। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লাম আমি। আমার সৎমাও মাটিতে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি। উনিও উঠে দাঁড়ালেন আমার সাথে।

“কি ব্যাপার নীরা? কোথায় যাচ্ছো?”

“দাদীর কাছে।”

“নীরা, সব কথা পরে হবে। তোমার শরীরটা এখন ভালো না। শরীর বেশ গরম, মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। এখন তোমার ঘরে চলো, রেস্ট নিবে। বাকি সব কথা পরে হবে।”

“আমাকে আটকাবেন না। উনার কাছে আমার আজ শোনার আছে, কীভাবে আমার বাবা নিজের রক্তের সাথে এমন করতে পারে? নিজের মেয়েকে একটা জানো*য়ারের হাতে তুলে দিতে পারে? আজ আমাকে শুনতেই হবে।”

“নীরা, এসব পরে জানবে, এখন আমার সাথে ঘরে চলো।”

আমি উনার কোনো কথা শুনলাম না। উনার হাত থেকে নিজেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটলাম দাদীর ঘরের দিকে। উনি না পেরে আমার পিছু পিছু আমাকে ডাকতে ডাকতে ছুটতে লাগলেন।

দাদী ঘর অন্ধকার করে রনিকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলেন। আমি যেয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। দেখলাম দাদীর চোখ লাল, নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছেন।

“দাদী, তোমার সাথে আমার কথা আছে।”

“তোর শরীরটা ভালো না নীরা। ঘরে যেয়ে বিশ্রাম নে।”

“না, আজ আমার কিছু প্রশ্ন আছে তোমার কাছে, যার উত্তর না নিয়ে আমি এই ঘর থেকে কোথাও যাবো না।”

দাদী রনির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললেন,”যাও তো দাদুভাই, অন্যঘরে যেয়ে খেলা করো।”

রনি একবার আমার দিকে তাকালো, কি বুঝলো কে জানে, খাট থেকে আস্তে করে নেমে চলে গেলো অন্যঘরে।

এবার দাদী নির্লিপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”বল কি জানতে চাস। আজ হোক কাল হোক, তুই যে আমার কাছে এসে প্রশ্ন করবি আমি খুব ভালো করেই জানতাম। মনে হচ্ছে সেই দিন চলে এসেছে।”

ততক্ষণে উনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার হাতটা চেপে ধরলেন শক্ত করে।

“মা একটা কথা বলবো আমি? ও এখনো অনেক ছোট, সামনে ওর পরীক্ষা। তাছাড়া ওর শরীরটাও ভালো না। এমন কিছু ওকে জানাবেন না, যা জেনে ওর মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায় আর নিজের সত্ত্বাকেই ভুলে যায়।”

আমি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। মাত্র কয়দিন এসে উনি আমার ব্যাপারে কি এমন জানেন যা আমি জানিনা? কে জানিয়েছে উনাকে?

“কি ব্যাপার? কি এমন কথা? আমাকে বলতেই হবে তোমাদের।”

“না বউমা, ওকে জানতে দাও। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ওকে একা চলতে হবে, নিজেকে শক্ত করুক। ওর জীবন বাকি দশটা মেয়ের মতো সরল নয়, এটা ও বুঝুক। এতোদিন ওর মা ছিলো বুঝতে হয়নি। এখন বুঝতে হবে।”

“আমি কি ওর মা নই, মা?আমি কি ওকে আগলে রাখতে পারবো না?”

দাদী একটু হাসলেন, সেই হাসিতে বিষাদ। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি নিয়ে কথা বলছেন উনারা।

“বল বোন, কি জানতে চাস তুই?”

“বাবা কীভাবে পারলো দাদী? নিজের মেয়েকে, নিজের রক্তকে একটা পরপুরুষের হাতে তুলে দিতে? নিজের মেয়ের সম্মান এভাবে কোনো বাবা শেষ করে দিতে চায়? আমার মা এতোদিন সব সহ্য করেছে, তাই বলে আমাকেও? কেনো দাদী?”

দাদী অনেকক্ষণ শুণ্যের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকলেন। আমি অসহিষ্ণু হয়ে একবার দাদীর দিকে আর একবার ওই ভদ্রমহিলার দিকে তাকালাম। এরপর দাদী ভাসা ভাসা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”নিজের রক্ত না বলেই তোর বাবা পেরেছে রে বোন।”

(চলবে….

৪ পার্ট রাত ১০ টাই দিবো

তিনি আমার সৎমা পর্ব-১+২

0

তিনি আমার সৎমা
পার্ট ১&২
মিথিলা জামান নিভা

তিনি আমার সৎ মা ।ইদানীং ভদ্রমহিলা বড্ড আমাদের পরিবারের সব ব্যাপারে নাক গলানো শুরু করেছে যেটা আমার একদম পছন্দ হচ্ছেনা। তিনি আমার বাবার স্ত্রী, তার অধিকার আছে এই সংসারের উপর ঠিক আছে। কিন্তু আমি আর রনি উনার সন্তান নই। আমাদের ব্যাপারে এতো খবরদারি আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। রনির অনেক রকম অভ্যাস ছিলো, সে আগে ভাত খেতে চাইতো না একদম। আমার মা শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়েছিলো। রনি যা খেতে চাইতো তাই দিতো। কিন্তু আজকাল আমি বেশ অবাক হয়ে খেয়াল করছি নতুন ভদ্রমহিলা রনিকে ভাত খাওয়ায়, রনিও দিব্বি খেয়ে ওঠে। উনার এসব আচরণ আমার ঠিক সুবিধার লাগছে না কেনো জানি। এমনিতে উনাকে খারাপ লাগার কিছু নাই। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে উনি আমাদের পরিবারের জন্য অনেক করছেন এবং আমাদের সাথে মিশে যেতে চাইছেন। সবাই এমনটাই বলবে উনাকে দেখে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমার ষষ্ঠইন্দ্রীয় বেশ প্রখর। আমি কথা কম বলি, তবে আমি বোকা নই। এমন অনেক কিছু আমি বেশ আগে থেকেই বুঝতে পারি যেটা কিনা কেউ ধারণাও করতে পারেনি ওই সময়। আমি জানিনা এটা কেনো হয়, আমি চাইও না এমন হোক আমার সাথে। আমি সবার মতো স্বাভাবিক হতে চাই, কিন্তু আমি না চাইতেই এসব আমার সাথে ঘটে। আমার মায়ের মৃত্যুর আগেও ঠিক এমন কিছু বুঝতে পেরেছিলাম আমি যা এখনো কাউকে বলতে পারিনি আমি।

সেদিন সন্ধ্যায় আমি আমার ঘরে বসে পড়ছিলাম, পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। তাই একমনে বসে পড়ছিলাম আমি। খুট করে দরজা খোলার শব্দ শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। বইয়ের দিকে তাকিয়েই স্পষ্ট বুঝতে পারছি না উনি এসেছেন।

“আপনি আবার এসেছেন আমার ঘরে?” আমি বইয়ের দিক থেকে মাথা না তুলেই বললাম।

ভদ্রমহিলা বেশ আয়েশ করে আমার খাটের উপর পা তুলে বসলেন। উনার হাতে একটা বাটি।

“বাহ রে! আমার মেয়ের ঘরে আমি এসেছি, তার জন্য আবার কার অনুমতি নিতে হবে?”

আমি ঘুরে উনার দিকে তাকালাম। কতো বয়স হবে মহিলার? পঁয়ত্রিশ বা চল্লিশ। মোটামুটি ফর্সা, ছোটখাটো গড়নের মহিলা। মুখে সবসময় হাসি, যে হাসির একটা মানে আছে। যা আমি বুঝতে চেষ্টা করছি।

“শোনো নীরা, আমি শুনেছি তোমার মায়ের অনেক লম্বা চুল ছিলো। তোমার চুলগুলোও অনেক সুন্দর। কিন্তু যত্নের অভাবে কেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এইযে বাটিতে নারকেল তেল এনেছি। তোমার চুলে লাগিয়ে দিবো এখন।”

“আশ্চর্য! আপনাকে কি বলেছি আমার চুলে তেল দেওয়ার দরকার? কেনো এসেছেন? দেখুন আমার সামনে পরীক্ষা। দয়া করে এভাবে ডিস্টার্ব করবেন না আমাকে।”

মহিলার মুখে তখনও হাসি। মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললেন,”তোমার বাবার বন্ধু হাশেম সাহেব এসেছেন। তোমার বাবা ডাকছেন তোমাকে। যাও দেখা করে এসো।”

আমার চোখমুখ মুহুর্তেই রক্তশূণ্য হয়ে গেলো উনার কথা শুনে। হাত পা কাঁপতে শুরু করলো থরথর করে। আমার ফ্যাকাশে মুখের দিকে তাকিয়ে আবার একটু হাসলেন উনি।

“কি ব্যাপার নীরা? তোমার হাশেম আঙ্কেলের কথা শুনে এভাবে চুপ হয়ে গেলে যে? তোমার বাবা ডাকতে আসছেন তোমাকে।”

এই মুহুর্তে ওই মহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো উনি আমার বিষয়ে অনেক কিছু জানেন।

আমি উনার দিকে শীতলচক্ষু দিয়ে তাকালাম। উনি নির্বিকার।

চোয়াল শক্ত করে বললাম,”কে আপনি?”

“কেনো? তোমার সৎমা।”

উনাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই দরজায় টোকা পড়লো।

“নীরা, রুমে আছো?”

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “জ্বি বাবা।”

বাবা ঘরে ঢুকে উনার দিকে তাকালেন।

“রুনা, তুমি এখানে কি করো?”

“এই এসেছিলাম মেয়ের সাথে একটু গল্প করতে।”

“যাই হোক, নীরা তোমার হাশেম আঙ্কেল এসেছেন। তোমাকে ডাকছেন।”

আমি চোখমুখ শক্ত করে বললাম,”আমি যাবো না। আমার পড়া আছে।”

“নীরা, তোমাকে আগে অনেকবার আমি বলেছি, মুখে মুখে তর্ক করা একদম পছন্দ না আমার। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসবে। সুন্দর করে সেজে। আমার যেনো আবার ডাকতে আসতে না হয়। আমি রেগে গেলে কি হতে পারে জানো তো?”

“আমি তো বললাম আমি যাবো না উনার সামনে। তোমার যা করার তুমি করতে পারো।”

বেশ কিছুক্ষণ বাবা কোনো কথা বললেন না। ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে কাহিনি দেখছেন আমাদের।

“নীরা, তুমি কি চাও তুমি যে শাস্তি গুলো পাও, রনিও তেমন শাস্তি পাক?”

আমি ভয়াবহভাবে কেঁপে বাবার দিকে তাকালাম। তার চোখ রক্তলাল। বাবা কি তবে আমাকে ব্লাকমেইল করছে? রনিকে শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে সব কাজ হাসিল করবে? এখন আমি কি করবো?

বাবা আমার দৃষ্টি উপেক্ষা করে বললেন,”ইউ হ্যাভ অনলি ফাইভ মিনিটস, জাস্ট ফাইভ।”

এই বলে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে উনি চলে গেলো। আমি ধপ করে বসে পড়লাম। আমাকে এখন কে বাঁচাবে? তবে কি মায়ের সাথে যা হয়েছে, আমার সাথেও তেমন কিছু হতে চলেছে? বাবা তার সন্তান, নিজের রক্ত তার সাথেও এমনটা করবেন?

হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে আমি একটু চমকে উঠি। সন্তর্পণে চোখ থেকে আসা দুই ফোঁটা পানি মুছে ফেলি।

“কি তেল দিবে চুলে? দিয়ে দিবো?”

আমি কোনো কথা বললাম না। আমি জানিনা এই মহিলা কে? কি তার উদ্দেশ্য। তবে এই মুহুর্তে আমার নিজেকে বাঁচানোর জন্য উনার কথা শুনতে হবে।

ভদ্রমহিলা আমাকে জবজবে করে চুলে তেল লাগিয়ে দিলেন। আজ অসহ্য রকম কষ্ট হচ্ছে। খুব বেশি মনে পড়ছে আমার মা কে। মা নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিয়ে আমাকে আগলে রেখেছেন এতোদিন। কিন্তু এখন? কীভাবে বাঁচবো আমি এই নরক থেকে?

তেল দেওয়া চুল শক্ত করে খোঁপা করে দিলেন উনি। সস্তা একটা সালোয়ার কামিজ পরে মাথায় ওড়না দিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটু সাহস হলো আমার। আমাকে দেখতে খুবই খারাপ লাগছে। তবে আমি জানিনা কাজ হবে কিনা এতে। কারণ হাশেম নামক লোকটা একটা নরকের কীট। আমার মা এসব অনেক চেষ্টাই করেছে তার হাত থেকে বাঁচতে। কিন্তু কখনো কি পেরেছে? শেষ পর্যন্ত মৃত্যুটাকেই তার বেছে নিতে হলো।

“কি ভাবছো নীরা?” আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন উনি।

“আমার আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে। আমার মনে হয় না আপনি কিছু না জেনেই এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছেন। কে জানিয়েছে আপনাকে? কে আপনি?”

ভদ্রমহিলা আবারও সেই রহস্যের হাসি হাসলো। আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সেই হাসি দেখলাম।

হঠাৎ বাইরের ঘর থেকে বাবার চিৎকার করে ডাক শুনে ধাতস্থ হলাম। উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”উত্তর আপনাকে দিতেই হবে, আজ হোক বা কাল।”

“আগে নিজেকে বাঁচাও নীরা। আমি জানি তুমি তোমার মায়ের মতো বোকা নও, তুমি বুদ্ধিমতী। কীভাবে নিজেকে বাঁচাতে হবে খুব ভালো করেই জানো তুমি।”

আমি কিছু বললাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। উনি আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,”রনি বা তোমার দাদীকে নিয়ে ভয় পেয়ো না। তোমার বাবা কিচ্ছু করতে পারবেন না ওদের।”

আমার কি উচিত হবে উনাকে ভরসা করা? কিন্তু এই মুহুর্তে তা না করা ছাড়া আমার কি-ই বা করার আছে?

বসার ঘরের দরজার সামনে এসে দোয়া ইউনুস পড়ে বুকে ফুঁ দিলাম। আমার মা আমাকে বিপদে এই দোয়া পড়তে বলেছেন। আস্তে করে পর্দা সরিয়ে ভিতরে তাকালাম। অসভ্য হাশেম আর আমার বাবা দুইজন মুখোমুখি হয়ে ভীষণ হাসিঠাট্টায় মগ্ন। এই নরকের কীটটাকে আমি প্রায় চারমাস পর দেখলাম। এই অসভ্যটার জন্য আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। শেষ দেখা হয়েছিলো, মায়ের মৃত্যুর দিনে। বড্ড শোক পালন করছিলো।

“আহা রে, এতো ভালো একজন মানুষ, কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারলো? ছোট দুইটা মাসুম বাচ্চাকে ফেলে। আল্লাহ তুমি উনাকে জান্নাত দান করো গো, জান্নাত দান করো।”

সেদিন আমার ইচ্ছা করছিলো উনার সমস্ত শরীরে আগুন লাগিয়ে দিতে। সেদিন থেকেই উনার বিশ্রী নজরে পড়লাম আমি। এতোদিন যে নজরে উনি আমার মা কে দেখেছে। এরপর থেকে শুরু হলো উনার ফোন কল, বাজে বাজে টেক্সট, অশালীন কথাবার্তা। বাবাকে বলায় কোনো লাভ হয়নি। অবশ্য হবে কীভাবে? বাবা-ই যে সব কিছুর রচয়িতা। আমি এই লোকের জন্য মোবাইল ব্যবহার করাই ছেড়ে দিয়েছি। আজ নিজেই বাড়ি এসে হাজির। তবে কি, মায়ের মতো আমারও সর্বনাশ করতে চান উনি?

“কি ব্যাপার নীরা? বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে এসো। কতোদিন তোমাকে দেখিনা। আজ মন ভরে দেখবো।”

অসভ্যটার অশালীন কথায় গা জ্বলে গেলো আমার। আমি স্পষ্ট টের পেলাম আমার ভিতরের নিয়ন্ত্রণহীন রাগটা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে, কারণ এই লোকের ছায়ায় আমার মায়ের করুণ মুখটা দেখতে পাচ্ছি।

চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১১

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১১
আপনার কি আমার কথা মনে পড়বে না?
‘হয়তো পড়তেও পারে আবার নাও পড়তে পারে৷
‘আচ্ছা আমি বেশী সুন্দরী নাকি আপনার প্লেনের এয়ারহোস্টরা?
‘কোনটা বললে খুশি হবে?
‘নয়না জিয়ানের পাশে এসে বসে বলে,সত্যি টা।
‘ওরা ফরেনার তাই সুন্দর বললে ওরা তো অনেক সুন্দরী।
‘নয়না খানিকটা গাল ফুলিয়ে নিলো।
‘তবে বাঙালি নারীদের সৌন্দর্যের কাছে ওসব সুন্দরী কিছুই না।
‘নয়না উৎসাহ নিয়ে বলে সত্যি!
‘হু সত্যি আমার দেশের নারীদের তুলনা হয় না।
‘জানেন নীলাঞ্জনা আপি একটা ফরেনার ছেলের সাথে রিলেশন করেছিলো৷ তারপর কি হইছে জানেন?
‘জিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো হাতের সামনে থাকা কাঁচের গ্লাসটা সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরলো৷
‘নয়না ভয় পেয়ে গেলো। জিয়ানের চোখ লাল হয়ে গেছে গ্লাসটা যেকোন সময় ভেঙে কাঁচের টুকরো হাতে ঢুকে যেতে পারে। নয়না কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,আমার ভুল হয়ে গেছে কখন এই নাম আপনার সামনে নেবো না৷ প্লিজ গ্লাসটা ছেড়েদিন আপনার হাত কেটে যাবে।নয়নার কথা শেষ হওয়ার আগেই শব্দ করে গ্লাসটা ভেঙে গেলো৷ সাদা ফ্লোরে মূহুর্তে ছড়িয়ে পরতে লাগলো টকটকে লাল তাজা রক্ত।
‘নয়না জিয়ানের হাতটা ধরে বলে,ইশশ কতখানি কেটে গেছে এমন রাগ কারো কিভাবে থাকতে পারে?
‘জিয়ান নয়নার বাহু চেপে ধরে দু হাত দিয়ে নিজের কাছে এনে বলে,ঘৃণা করি আমি এই নামটাকে কেনো বললে!আমি জিয়ান রেজা চৌধুরী যতদিন বেঁচে আছি এই নাম আমার সামনে নেবে না৷
‘ছাড়ুন আমার লাগছে।
‘জিয়ান নয়নাকে আরো কাছে টেনে নিলো৷ নয়না ভয়ে চোখ বন্ধ করে বল,আপনার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে আমাকে ছাড়ুন আমি বেন্ডেজ করে দেই। আর কোন কথা বের করতে পারলো না নয়না৷ তার আগেই জিয়ান নয়নার ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের ওষ্ঠের মিলন ঘটালো৷ আকষ্মিক ঘটনায় নয়া ঘাবড়ে গেলো। জিয়ানের শার্ট খামচে ধরলো। নক বসে গেলো জিয়ানের পিঠে৷
প্রায় পাঁচ মিনিট পর নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
‘নয়না নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে সেভাবেই বসে রইলো৷
বেশকিছু ক্ষন পর জিয়ানকে খুঁজতে লাগলো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দৃষ্টি স্থীর করলো৷ নয়না উঠে ড্রায়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে ধীরে পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো। নয়নার শখের বারান্দা। বিশার বড়ো বারান্দার এক কোনে নয়নার শখের বুক প্লেস। নিজের পছন্দের লেখকের বই সাজানো আছে তাতে। ওই পশ্চিম কর্নার টা নয়নার মন খারাপের ঔষধ ও বলা যায়।
‘জিয়ানের হাতে একটা বই। নীলাঞ্জনার বিয়ের জন্য পুরো বইটা শেষ করা হয়নি নয়নার। প্রিয়তম অসুখ সে। সাদাত হোসাইনের লেখা বইটি। নয়নার পছন্দের লেখক সাদাত হোসাইন। গত বই মেলায় ভীড় ঠেলে অটোগ্রাফ সহ সংগ্রহ করেছিলো৷ নয়না ধীর পায়ে জিয়ানের পাশে পায়ের কাছে বসলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য মৃদু স্বরে বললো,আমার প্রিয় বইটি আপনি রক্তাক্ত করছেন কেনো!ও বেচারার কি দোষ?
‘জিয়ান শান্ত স্বরে বলল,স্যরি। আমি আবারও একটা ভুল করলাম৷ আচ্ছা তুমি কি বলতে পারো সুনয়না মানুষ হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কেনো দেখতে পায় না! এই যে আমার সামান্য কেটে যাওয়া ক্ষতে তুমি প্রলেপ লাগাতে এসেছো কখন কেউ মনের ক্ষতে প্রলেপ কেনো লাগায় না?
‘কারো মনের ক্ষতের প্রলেব হতে হলে মনের মানুষ হতে হয়। মনের মানুষ মন বোঝে অন্য মানুষ তো বুঝবে না।
‘কেউ কি আসলেই আমাদের মনের মানুষ হয়?
‘হবে না কেনো? ভালোবাসা থাকলেই হয়।
‘ভালোবাসা বলতে আদতে কিছু আছে সুনয়না?
‘ভালোবাস হলো অনেকগুলো অংশের এক কথায় প্রকাশ করার মত শব্দ। বিশ্বাস, ভরসা, মায়া, প্রশান্তি এই সব মিলিয়ে ভালোবাসা। এখান থেকে একটাও কম হলে সেখানে ভালোবাসা থাকে না৷ কথার মধ্যেই নয়না জিয়ানের হাতটা ধরলো,আলতো হাতে কাচগুলো টেনে বের করতে করতে বলে,নিজেকে যে ভালোবাসতে পারে না সে অন্যকে কি করে ভালোবাসবে! এই যে নিজের ক্ষতি করলেন এই দায় তো আপনার! এই ক্ষতির পরিমাণ আপনাকেই চুকাতে হবে। মানুষ ভুল করলে সে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আর নয়তো সে ভুল থেকে শতশত ভুলের জন্ম হয়।
‘জিয়ান অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে। কে বলবে, তার সাথে এতো গুছিয়ে কথা বলা মেয়েটা ষোড়শী বালিকা৷ মনে হচ্ছে উপন্যাসের মাধবীলতা। কত যত্ন নিয়ে সে হাতের ক্ষতে প্রলেপ লাগাচ্ছে। যেনো আমার চেয়ে তার ব্যথা অনুভব হচ্ছে বেশি! জীবন এতো অদ্ভুত কেনো?
‘নয়না হাতে ব্যান্ডেজ করা শেষ করে বলে,আজকে সবচেয়ে ভালো লেগেছে কোনটা জানেন?
‘আজ তো ভালো লাগার মত কিছু হয়নি নয়না৷
‘হয়েছে। তবে তা আপনি বুঝবেন না মিস্টার প্লেন ড্রাইভার।
‘বলো তাহলেই তো বুঝবো।
‘বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজপাতা৷
‘আপনাকে আবার আমার বাসায় আসতে হলো!
‘তুমি আমার বাড়ির সম্মান রক্ষা করেছো আমি তোমার বাড়ির সম্মান রক্ষা করলাম। শোধবোধ।
‘এটা কিন্তু কথা ছিলো না। আমার প্রাপ্য কই?
‘এটা দিলে তোমার বাসার কেউ কিছু বলবে না? সামনে তো তোমার পরিক্ষা।
‘আরেহহ বুদ্বু সবাইকে বলবো জামাই বিদ্যাশে এরজন্য মোবাইল দিয়ে গেছে। এবার তাড়াতাড়ি দিন তো। এই আসার সময় নিয়ে এসেছেন তো? নাকি খালি হাতে চলে এসেছেন?
‘জিয়ান হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,উপসসস একটুও মনে ছিলো না আমার!
‘আশ্চর্য মনে ছিলো না মানে কি? সকালে তো পালাবেন তখন আপনাকে আমি কই পাবো?
‘আমাকে পেতে চাও?
‘নো নেভার৷ তবে মোবাইল পেতে চাই।
‘হায়রে নিষ্ঠুর রমনী তুমি মোবাইল চাইলে কিন্তু আমাকে চাইলে না!
‘নাটক কম করেন প্রিয়।
‘আমি তোমার প্রিয়!
‘আপনার সাথে প্রিয় শব্দ যায়!
‘তাও ঠিক। জিয়ান পকেট থেকে একটা ফোন বের করে নয়নার সামনে ধরে বলে,এই নাও তোমার প্রাপ্য।
‘নয়না খুশি হয়ে বলে,লাভ ইউ।
‘লাভ ইউ টু ডার্লিং। এরপর দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে৷
‘কিন্তু আমি সিম পাবো কই?
‘সিম দিয়ে কি করবে?
‘সিম ছাড়া মোবাইলের কোন মূল্য আছে?
‘অবশ্যই আছে, তুমি এটাতে ওয়াই-ফাই কানেক্ট করে ভিডিও দেখতে পারবে।
‘আমাকে বোকা মনে হয়! জিমেইল ছাড়া কিছু ওপেন হবে?
‘বাহহ সবই জানো দেখি।
‘তো কি সাইন্সের স্টুডেন্ট এতো সহজ ভাবে নেয়ার কিছু নেই!
‘বড় হয়ে কি হতে চাও?
‘আপনার কি আমাকে বাচ্চা মনে হয়!প্রশ্নটা ভুল করেছেন প্রশ্ন হতো, পড়ালেখা করে কি হতে চাও?
‘কি হতে চাও?
‘পাইলট।
‘জিয়ান হেসে বলে বাহ অবশেষে তুমিও প্লেন ড্রাইভার হতে চাও?
‘মোটেই না শুধুমাত্র আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম প্লেন ড্রাইভার শব্দটা। আগেই তো বলেছিলাম সাইন্সের স্টুডেন্ট সহজ ভাবে নেবেন না। নয়না উঠে হাঁটা শুরু করতেই।

‘জিয়ান পা বাড়িয়ে দেয়। নয়না পড়ে যেতে নিলে জিয়ান হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসায়। জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,বাচ্চা মানুষ যখন তখন কোলে বসে পরে!

🌿মাহবুব তালুকদার যা চায় তাই হয়।
‘মিজান বলে,ভাইয়া আমার মেয়েটা আজ পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ! কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে কিছুই জানিনা।
‘এমন মেয়ে দিয়ে কি হবে! যে মেয়ে পরিবারের মানসম্মান ডুবিয়ে দেয়ার আগে একবার ভাবে না তাকে খুঁজে কি করবে?
‘ভাইজান এভাবে বলবেন না। শতহোক আমার ঔরসজাত মেয়ে শত অন্যায় করলেও তাকে ফেলে দিতে পারবো না৷
‘তোর মেয়ের জন্য তুই কাঁদছিস আর তোর মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে।
‘কি বলছেন ভাইজান?
‘ঠিকি বলছি নীলাঞ্জনা ওই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিয়েছে আমি সব খোঁজ নিয়েছি৷ ওরা এখন শরিয়তপুর আছে। এই নে ঠিকানা তোর একার মেয়ে তোরই মায়া আছে যা দেখে আয়।
‘আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন ভাইজান আমার জন্য আজ নয়নার জীবনে এতো বড় তুফান আসলো। নিজের মেয়েকে মানুষ করতে কি ত্রুটি রেখেছি আমার জানা নেই!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১০

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০

ইউ লিটল স্নেক।
‘আপনাকে আজ আমি ছাড়বো না।
‘প্লিজ বেবি আমাকে ছেড়ো না। অসমাপ্ত কাজটা পুরোপুরি সমাপ্ত করি৷ প্লিজ ছেড়ো না কিন্তু।
‘আপনি জানেন আপনি চরম অসভ্য৷
‘পুরুষ মানুষ একটু আধটু অসভ্যতা করেই থাকে ইট’স কমন বেবি।
‘দূরে সরুন। ভুলে গেছেন কি বলে নিয়ে এসেছিলেন?
‘তুমিই না একটু আগে বললে আমাকে ছাড়বে না!
‘অসভ্য লোক।আপনার মোবাইলটা একটু দেন তো।
‘পার্সোনাল জিনিস কাউকে দেই না৷
‘মোবাইলে কয়টা জিএফ নিয়ে ঘুরেন!যে মোবাইল কেউ চাইলে তাকে দেয়া যাবে না!
‘গার্লফ্রেন্ড ছাড়া বুঝি মানুষের আর কোন পার্সোনাল লাইফ নেই?
‘থাকবে না কেন অবশ্যই আছে কিন্তু সেটা মোবাইলে না।একটু আগে যখন রুমে ড্রেস চেঞ্জ করলেন সেটা ছিলো পার্সোনাল কাজ।সেটা যখন আমার সামনে করতে পেরেছেন তো মোবাইল দিতে কি সমস্যা? আর আমি আপনার মোবাইলে জাসুসি করবো না। যাস্ট কয়েকটা পিক তুলবো। নয়তো এক কাজ করুন আমাকে কয়েকটা পিক তুলে দিন।
‘সিরিয়াসলি! তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে পিক তুলে দেবো?
‘হ্যা দেবেন নয়ত আমিও রুম থেকে বের হবো না৷ আপনার কথায় আমি এতোকিছু করতে পারলে আপনি সামান্য পিক দিতে তুলে দিতে পারবেন না?
‘জিয়ান নয়নার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে পিক দিয়ে কি করবে?
‘ফুরসৎ পেলে লবন মরিচ মাখিয়ে আচর করে খাবো।
‘সোজা কথা বলা যায় না?
‘না বলা যায় না৷ মুখ বন্ধ করে ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে দিন৷
‘জিয়ান আর কথা না বাড়িয়ে,কয়েকটা পিক তুলে দিলো৷ বুঝে গেছে এই মেয়ে নাছোড়বান্দা। পিক না তুলে দেয়া পর্যন্ত শান্তি দিবে না৷
নয়না সুযোগ বুঝে মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে বলে,তিনটা সেল্ফি তুলবো।
‘আমার মোবাইল আমার কাছে দাও ভালো হবে না কিন্তু।
‘ভালো আর কি হবে তারচেয়ে খারাপ হোক।
‘ওকে বেবি তুমি যখন চাইছো খারাপ কিছু হোক তাহলে তো খারাপ করতেই হয়৷
‘এই একদম আমাকে টাচ করবেন না৷ যাস্ট তিনটা সেল্ফি তুলবো।
জিয়ান নয়নার কাছে এসে নয়নার কোমড়ে হাত রেখে নয়নাকে জড়িয়ে ধরে।
নয়নার হার্ট বিট বাড়তে থাকে, নয়না নিজের হাত উঁচু করে নেয়।
জিয়ান মুচকি হেসে নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, তাহলে খারাপ কিছু হয়ে যাক৷
‘নয়না চোখ বন্ধ করে নেয়৷
জিয়ান নয়নার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেয়। বাহ খারাপ কিছুর জন্য এতো প্রস্তুতি!
‘নয়না কিছু বলবে তার আগেই নাহিদ রুমে এসে বলে,তোদের প্রেম শেষ হলে নিচে আয় সবাই অপেক্ষা করছে৷
‘নয়না জিয়ানের হাত টেনে কানে মুখে বলে,এটা কে?
‘আমি নাহিদ জিয়ানের ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড। ভাবি আপনার বর কিন্তু শুধু পাইলট নয় ইংরেজিতে অনার্স ও করেছে।
‘আরে বাহহহ এরজন্য ই তো বলি আপনার ফ্রেন্ডের ব্যবহার করলার মত কেনো? ইংরেজি সাবজেক্ট নিয়ে যে অনার্স করে তার মধ্যে মধুসূদন আসবে কোথা থেকে!
‘ভাবি আপনি তো জোসসস।
‘তুমি নাহিদকে আগে থেকে চিনো?
‘আগে কি আপনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন?
‘হোয়াট!
‘তো আগে চিনবো কি করে? আজকেই চিনলাম।
‘আজকে চিনে এতো সহজ ভাবে কথা বলছো!
‘স্যরি দেবর ভাইয়া আমি আজকে আপনাকে চিনলাম তাই একদম কঠিন কথা বলবো।
‘নাহিদ হেসে বলে,ভাবি রক রেজা শকড।
‘তাড়াতাড়ি নিচে আয় সবাই অপেক্ষা করছে।
‘নাহিদ চলে গেলে। নয়না বলে আপনার মাথাটা একটু নিচু করেন।
‘কেনো?
‘একটা গোপন কথা আছে।
‘জিয়ান নিচু হয়ে বলে,তাড়াতাড়ি বলো।
‘আমি আপনার কথা মতো নাটক করতে চলে এসেছি৷ আমার কথা আমি রাখছি আপনার কথা রাখছেননা কেনো?
‘সব মিটে যাক তারপর পেয়ে যাবে৷
‘জানেন লম্বা ছেলেদের সাথে বিয়ে হলে এই এক সুবিধা।
‘কি সুবিধা?
‘আপনি সব সময় আমার কথা মাথা নিচু করে শুনবেন। আর আমি সব সময় আপনাকে মাথা উঁচু করে কথা শোনাবো৷
‘জিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে হাতে হাত রাখো আর চলো৷ আর হ্যা মনে আছো তো আমাদের মধ্যে কি ডিল হয়েছিলো?
‘হু মনে আছে। তো কিপ স্মাইল।
‘জিয়ান আর সুনয়না যখন এন্ট্রি নিচ্ছিলো উপর থেকে গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ হচ্ছিলো৷ জিয়ান নয়নাকে নিয়ে হেঁটে একটু সামনে এসে হাত ধরে নয়নাকে নিয়ে স্টেজে বসলো।
‘সবাই নয়নার প্রশংসা করছে। সবাই বলছে চৌধুরী বাড়ির বড় বৌ একদম পরির মত। সো প্রিটি।
‘জেরিন চৌধুরী উপরে উপরে প্রশংসা করলেও মনে মনে ক্ষোপ। তার মেঝো মেয়ে সায়নার জন্য পছন্দ করেছিলো৷ কিন্তু জিয়ান কিছুতেই রাজি হয়নি৷
‘সায়না এসে বলে, মম ভাবি এত্তো কিউট! একদম রুপকথা রাজকন্যার মত লাগছে। নজর না লাগুক কারো৷ বলতেই হবে দ্যা পার্ফেক্ট রেজা চৌধুরীর পার্ফেক্ট ওয়াইফ৷ ভাইয়ার পছন্দের প্রশংসা করতেই হয়।
‘চুপ করো এই মেয়ে এখানে তোমার জায়গা দখল করে বসে আছে।
‘উঁহু আমার জায়গা হলো জাহিনের হৃদয়ে।মম আমি জাহিনকে ভালোবাসি৷
‘রেজা তাও ভদ্রতা বজায় রাখে। জাহিন! ও কোনদিন তোমাকে পাত্তা দিবে? সারা দেশ ভ্রমণ করা ছাড়া আর কোন দিকে খেয়াল আছে? এমন ছেলের সাথে সংসার হয়?নিজের ভাইয়ের বিয়ে পর্যন্ত এটেন্ড করলো না!
“এটাই তো আমাকে আরো টানে জাহিনের দিকে৷ বিয়ের পরে বরের সাথে একেক দেশে ঘুরে বেড়াবো।
‘চুপ করো আর আমার সাথে আসো খেয়ে নেই৷
🌿মাহবুব তালুকদার তার ভাই আরো আত্মীয় স্বজনরা সবাই এসেছে।
‘জাহানারা বেগম নিজের মেয়ের সাথে সবার আগে দেখা করলেন৷ নয়নার হাতটা ধরে জিয়ানের হাতের উপর দিয়ে বলে,আমার মেয়েটার সব দ্বায়িত্ব আজ থেকে তোমার৷ আমার একমাত্র মেয়ে কোনদিন কোন দুঃখ ওকে আমাদের ভেদ করে স্পর্শ করতে পারেনি। তুমিই ওর এভাবেই খেয়াল রাখবে তো বাবা?
‘জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,যতদিন আছি আমি আগলে রাখার চেষ্টা করবো।
‘জানহারা বেগম বলেন, যতদিন আছি মানে!
‘আম্মু এতো কথা বলার সময় এটা? দেখো আশেপাশে কত মানুষ। পরেও তো বলতে পারবে এসব কথা।
‘ নাহিত সুন্দর করে ডেকোরেশন করে একটা ট্রের মধ্যে আংটি নিয়ে আসলো দুটো।
‘জিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলে এসব কি?
‘মিতা বেগম এসে বলেন, তোমরা দুজন দুজনের থেকে দূরে থাকবে তাই এই আংটি একে অপরকে পরিয়ে দাও৷ এটা স্মৃতি হিসেবে বহন করবে দুজন।
‘সবাই একত্রিত হয়ে ঘীরে রেখেছে জিয়ান, নয়নাকে৷ চারপাশ থেকে ফুলের বর্ষণ হতে লাগলো। এমন মূহুর্তে না করার কোন অপশন পেলো না৷ আংটি উঠিয়ে নয়নার অনামিকা আঙ্গুল পরিয়ে দিলো।
‘নয়নাও আংটি নিয়ে জিয়ানের রিং ফিঙ্গারে আংটি পরিয়ে দিলো।ওদের উপরে যেনো ফুলের বৃষ্টি হচ্ছে। নয়না মনে মনে বলে,ইশশ এগুলো যদি ভিডিও করে রাখতে পারতাম! থাক সমস্যা নেই শ্বাশুড়ি আন্টির থেকে পরে নিয়ে নেবো ভিডিও।
নয়না আংটি পরিয়ে জিয়ানের হাত এখনো ছাড়েনি৷ সে চলে গেছে তার ভাবনার জগতে।
‘নাহিদ বলে,ভাবি হাত আর ছাড়াছাড়ি নেই এভাবে ধরে রাখবেন সারাজীবন।
‘নয়না সাথে সাথে হাত ছেড়ে দেয়।
🌿
নীলাঞ্জনা রুমের মধ্যে এককোনে গুটিশুটি মেরে বসে বসে কান্না করছে। পরিবারের বড় মেয়ে সবার আদুরে৷ কেউ কখনো ফুলের টোকা পর্যন্ত দেয়নি৷
‘লাবিব বাহিরে গিয়েছিলো। রুমে এসে নীলাঞ্জনার সামনের বসে, নীলাঞ্জনার হাত ধরে বলে,আমি কি করে মেনে নিতাম আমার ওয়াইফ বাসর রাতে তার এক্সকে টেক্সট করছে!স্যরি জান আমি আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না। নীলাঞ্জনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে। ধীরে ধীরে লাবিবের স্পর্শ গভীর হতে থাকে।
নীলাঞ্জনা পাথরে মূর্তির মত তার যেনো কোন হেলদোল নেই।
লাবিব নিজের কার্জ সাধন করে নীলাঞ্জনার কপালে চুমু খেয়ে বলে,আমি তো কাল রাতেই বুঝেছি তুমি ইনটেক। তবুও রাগের মাথায় ভুলভাল বলে ফেলেছি রাগ করে থেকো না জান।
‘নীলাঞ্জনা উঠে এসে ব্যগ থেকে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে বসে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। মানুষ নিজের ভুলে নিজেই যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে তখন কাউকে কিছু বলা যায় আবার সহ্যও করা যায় না। অন্তর পুড়ে ছাই হলেও আগুনের লেলিহান কাউকে দেখানো যায় না৷

#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯
রয়েল ব্লু কালারের গর্জিয়াছ লেহেঙ্গা সাথে ভারি গহনা পরে বসে আছে নয়না। রুম ফাঁকা হতেই দু’হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে ধরে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে আয়নায় দেখে বলে,হেই সুনয়না তোমার কোন অধিকার নেই এতো সুন্দর হওয়ার! তোমাকে তো বলিউডের নায়িকা মনে হচ্ছে। ম্যা ইতনি সুন্দর হু ম্যা কিয়া কারু৷ বিয়ে করতে চাইতাম সুন্দর করে বৌ সাজতে বৌ সাজা শেষ বিয়ের শখ ও শেষ। আবার নিজেই বিড়বিড় করে বলে,শখ আবার কি তোর তো বিয়েই শেষ। ধুর যাও একটা বিয়ে হলো স্বামী থাকবে বিদ্যাশে! পড়ালেখা ছাড়ার কোন উপায় নেই!
‘জিয়ান সদ্য শাওয়ার নিয়ে কোমড়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে বের হয়েছে। শরীর জুড়ে এখন মুক্তর দানার মত পানির ফোঁটা টপকে পরছে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। অর্ধ নগ্ন ফর্সা জীম করা পেটানো বডি। নয়না একটু পেছনে সরে তাকিয়ে আছে জিয়ানের দিকে। মনে মনে বলে,বাপরে কি বডি বানিয়েছে পুরাই সালমান খান। নয়নার ইচ্ছে করছে একটু টাচ করে দেখতে।
‘হঠাৎ জিয়ানের নজর পরলো নয়নার দিকে, লিটল পরি লাগছে আজ নায়নাকে। আয়নার দিক থেকে তাকিয়ে বলে,মেয়েটা একটু এক্সট্রা সুন্দরী। কিউট ফেইস সাথে কেমন একটা সুইটনেস আছে। চুলগুলো লম্বা। জিয়ান হঠাৎ খেয়াল করলো নয়না তার বডির দিকে তাকিয়ে আছে৷ এভাবে তাকিয়ে নজর দিচ্ছো কেনো!

নজর দেয়ার মত জিনিস চোখের সামনে থাকলে নজর তো দেবোই।

‘আমার ইজ্জত লুট করছো চোখ দিয়ে,?

রাবিশ কথাবার্তা বলবেন না।

‘আচ্ছা ছেলেরা জীম করে সিক্স প্যাক বডি কেনো বানায়?

‘তুমি ই বলো কেনো বানায়?

আপনি জানেনা বুঝি!এতো কষ্ট করে বডি বানায়ই তো মেয়েদের দেখানোর জন্য। ওই যে টনি কাকারের গান আছে না
Main gym-shim jaata hoon tere liye
Main body banata hoon tere liye
Main ande shande khata hoon tere liye

‘তো আজ পর্যন্ত কতজনের বডি দেখেছো।

‘নয়না হাতের কড় গুনে বলে,দশজনের।

‘হোয়াট!

‘আরেহহহ হ্যা। তবে সবচেয়ে জোসসস ফিটনেস কিন্তু প্রভাসের। জানেন আমার ক্রাশ ছিলো মহেশ বাবু তারপর দেখি তার মেয়ে আছে আমার বয়সী। তারপর ক্রাশ থেকে সোজা আঙ্কেল। সালমান খানের বডি দেখেছেন কি বডি!

‘বাস্তবে নিজের চোখের সামনে কতজনকে দেখেছো?

‘ওরা কি চোখের পেছনে ছিলো। ওরা তো আমার চোখের সামনেই ছিলো টিভির স্কিনে।

‘সরাসরি কতজনকে দেখেছো।

‘নয়না জিয়ানের একদম কাছে এসে বলে এইতো দেখছি ওয়ান এন্ড অনলি প্লেনের ড্রাইভারের বডি।

‘কতবার বলবো আমি পাইলট।

‘ওই একি কথা যাহা কদু তাহাই লাউ। এসব বাদ দিন আগে বলুনতো এমন নায়কদের মত বডি আপনি কি করে বানালেন?
‘পাইলট হওয়ার জন্য কিছু শারীরিক মানদণ্ড ও পূর্ণ করতে হয়। যেমন, চোখের দৃশ্য ক্ষমতা, রক্তচাপ, শারীরিক শক্তি ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে একজন পাইলটের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরজন্য জীম করে বডি বানিয়েছি মেয়েদের দেখাতে না।
‘মেয়েদের দেখানোর ইচ্ছে না থাকলে ওয়াশরুম থেকে লুঙ্গি টিশার্ট পরে আসতেন। এভাবে অর্ধনগ্ন হয়ে চলে আসতেন না।
‘আমার ঠোঁটের ইজ্জত তো লুট করেছোই এখন চোখ দিয়ে শরীরের ইজ্জতও লুট করার ধান্দা?
‘আপনার আবার ইজ্জতও আছে?
‘নেই?
‘নাহহহ
‘ওকে বেবি ইজ্জত যেহেতু নেই তা হরন হলেই বা কি? বলেই নয়নার সামনে দাঁড়ালো৷
‘নয়না চোখ বন্ধ করে বলে,দূরে সরুন আমার লজ্জা লাগছে।
‘এতোক্ষণ চোখ দিয়ে গিলে খেতে লজ্জা লাগেনি।
‘ছিহহহ কি ভাষা ব্যবহার করছেন। আমি গিলে খাবো কেনো!আমি যাস্ট উপভোগ করছিলাম৷
‘তো এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে না?
‘পুরুষ মানুষের আবার কিসের লজ্জা? সুযোগ পেলেই তো টিশার্ট খুলে ফেলে৷
‘ লজ্জা যখন নেই আসো তোমাকে জড়িয়ে ধরি।
‘আপনার নায়কের মত বডি বলে আপনি ইমরান হাশমি ভাববেন নিজেকে! সালমান খানও তো ভাবতে পারেন।
‘এবার বুঝলাম।
‘নয়না এক চোখ একটু ফাঁকা করে বলে,কি বুঝলেন?
‘ঠোঁটে স্টাম্পকার্ড কি করে বসালে। ইমরান হাশমির ছাত্রী তাই তো আমার নিরীহ ঠোঁটের এই দশা।
‘আপনার সাহস তো কম না আমাকে এসব বলেন! তো আপনি কি? নিজেই তো ইমরান হাশমির টু পিস?
‘ইয়েস বেবি। তোমার পিংকি ঠোঁট আমার ইমরান হাশমির মত স্বভাবের কারন। আই নিড ইউর লিপস যাস্ট টু মিনিট। ফ্লেভার চেক করেই ছেড়ে দেবো।
‘নয়না পেছনের দিকে ঘুরে বলে,এটা স্টবেরি ফ্লেভারের হুদা বিউটির গ্লাসি লিপস্টিক মাত্র টু থাউজ্যান্ড টাকায় কিনে চকোলেটের মত খেয়ে ফ্লেভার টেস্ট করতে পারেন। ভাবলাম নায়ক বের হলো ইমরান হাশমি! ছিহহহহহহ।
‘জিয়ান ততক্ষণে হোয়াইট শার্ট, রয়েল ব্লু কালারের ব্লেজার পরে নয়নার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,তোমাদের মেয়েদের টাকার জন্য মায়া হয় না। দুই হাজার টাকা দিয়ে লিপস্টিক কে কিনে? আজকে তো টেস্ট করে দেখতেই হবে। কি এমন আছে এতে? তাছাড়া ফ্রীতে পেলে কে টাকা নষ্ট করে?
‘নয়না দৌড়ে সরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে জিয়ান নয়নাকে ধরে ফেলে।
‘প্লিজ ছেড়েদিন তিনঘন্টা লাগিয়ে এতো সুন্দর একটা হেয়ার স্টাইল করেছি। নষ্ট হয়ে যাবে।
‘আমার ঠোঁটে স্টাম্প লাগিয়ে দিয়েছো আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কি করে!
‘আমি আপনাকে সাজেশন দিতে পারি। আপনি মাস্ক পরবেন বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবেন।
জিয়ান নয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,সেম স্টাম্প তোমাকেও দিবো। শোধবোধ।
‘শোধবোধের কথা আসলে তো আপনি আরো অনেকগুলো পাওনা। আর আপনি কিন্তু আমাকে পটিয়ে এখানে এনেছেন ভুলভাল কিছু করলে চলে যাবো কিন্তু। নয়না সামনের দিকে তাকিয়ে বলে হায়.. আপনাকে তো পুরাই বলেই চুপ হয়ে গেলো নিজের কথা পূর্ণ করলো না।
‘বলো পুরাই কি?
‘বাজে দেখতে লাগছে একদম কলা গাছের মত৷
‘এরমধ্যেই ডাক পরলো, মিতা বেগম বললেন কিরে তোদের হলো?
‘হ্যা আম্মু আসো।
‘মিতা বেগম এসে বলে মাশা আল্লাহ আমার বৌমাকে তো একদম পরি লাগছে, কারো নজর না লাগুক। আমি যাচ্ছি তোরা আয়। তাড়াতাড়ি আসিস দেরি করিস না।
‘জিয়ান নয়নার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,আমার হাতে হাত রাখো। আর ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি।
‘কেনো!আমরা কি সিনেমার শ্যুটিং করতে যাচ্ছি!
‘মনে করো তাই। যা বলছি তাই করো।
‘কিন্তু আপনার পাশে আমাকে মানাবে না৷ আপনি তালগাছ আমি আম গাছ।
‘ আমার পাশে তোমাকে বাটার মাশরুম লাগবে। তোমাকে দেখলেই সবাই বলবে আমার ভাগ্য ভালো বলেই এতো সুন্দরী বৌ পেয়েছি।
‘সত্যি!
‘হ্যা সত্যি আজকে তোমাকে দেখতে রুপকথার রাজকন্যা লাগছে।
🌿লাবিব বেডের পাশে হাত দিয়ে দেখে পাশে কেউ নেই। মোবাইলের টচ অন করে নীলাঞ্জনাকে খুঁজতে থাকে।
‘হঠাৎ লাবিবকে দেখে নীলাঞ্জনার হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পরে যায়।
‘লাবিব নয়নার মোবাইল হাতে নিয়ে বলে,এতো রাতে তুমি মোবাইলে কি করছো?টেক্সটগুলো দেখে লাবিব মোবাইলটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
‘নীলাঞ্জনা কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলে,তুমি যা ভাবছো তা-না। আমি যাস্ট।
‘আর কিছু বলার আগেই লাবীব নীলাঞ্জনার মুখ চেপে ধরে বলে,তোর যাস্ট নিজের বাসর রাতে বরের সাথে ফুলসজ্জা সেরে তোর এক্সের কথা মনে পরেছে! কেনো মনে পরলো? তোর বর তোকে খুশি করতে পারেনি। তাই এক্সের কথা মনে পড়লো!
‘ছাড়ো আমার লাগছে।
‘লাগুক। চুলগুলো মুঠ করে ধরে বলে,তুই তো বলেছিলি রেজা তোকে কখনো স্পর্শ করেনি। মিথ্যে বলেছিস বল,তোর কোন কোন জায়গার স্পর্শ করেছে? আমার স্পর্শ তোর ভালো লাগেনি! তোর পুরোনো প্রেমিকের স্পর্শ মনে পরলো!
#চলবেে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৮

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮

নয়না চোখ মেলে চিৎকার দিয়ে বলে,আম্মু বাঁচাও।
‘জিয়ান নয়নার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,সমস্যা কি তোমার! আর ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাঙ্গলো কি করে?
‘নয়না হাত দিয়ে চোখ ডলে বলে,পাইলট মহাশয় আপনি? এতো রাতে ভুতের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো! দেখুন ওইদিন রাতের মত কিছু করার কথা ভাবলে আজকে আপনার খবর আছে।এই বলে দিলাম হু।
‘আচ্ছা বলো তো আকাশের চাঁদের পাশে সবচেয়ে সুন্দর কোন জিনিস লাগে?
‘তারা।
‘নাহহহ।
‘তাহলে?
‘অন্ধকার। রাত যত নিকোষ কালো হবে চাঁদের সৌন্দর্য তত বৃদ্ধি পাবে৷
‘আপনি না ঘুমিয়ে আমাকে চাঁদের সৌন্দর্যের পাঠ পড়াচ্ছেন!
‘তুমি ঘুমাও।
‘ঘুম ভাঙ্গিয়ে এখন বলেন ঘুমাও! আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলো রে মরার পাইলটে। আচ্ছা আপনি প্লেনের ড্রাইভার নাকি হেলপার? নাকি আপনি বাটপার?
‘তুমি জানো না পাইলট মানে কি?
‘জানেন আর ক্লাসে আমার রোল নাম্বার কত?
‘ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত?
‘আমাদের শাখায় ১০০ জন
‘তাহলে আর কত ৯৫ হবে হয়তো।
‘আপনি আমাকে ইনসাল্ট করছেন? আপনি জানেন আমি ক্লাসের ক্যাপটেন। আমাকে কেউ ফার্স্ট হওয়া থেকে নড়াতে পারে না। সামনে এসএসসি পরিক্ষা নিশ্চিত আমি গোল্ডেন পাবো৷ এই আপনার জন্য আমার পড়ালেখায় ডিস্টার্ব হচ্ছে। আপনার বৌ পালিয়ে গেছে আপনার বিয়ে করা কেন লাগবে!আমার বাবা বললেই বিয়ে করতে হবে? আপনি বলতে পারলেন না না আমি বিয়ে করবো না৷
‘আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।
‘”আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্ত আমার সারাজীবনের কলঙ্ক। আপনার গায়ে তো কেউ কলঙ্ক লেপন করবে না।কলঙ্কের ভাগ সব আমার!
‘আমি সত্যি দুঃখিত। আচ্ছা শোন আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। চলো আমরা লুডু খেলি।
‘নাহহ আমি ঘুমাবো।
‘ভোর হতে বেশি সময় বাকি নেই। আসো বাকি রাতটুকু একসাথে কাটাই।
‘আপনাকে কে পাইলট বানিয়েছে বলুন তো! আমরা কি আলাদা আছি? একসাথে একি বেডে বসে বলেন আসো একসাথে কাটাই?
‘একটু আগেই তুমি কত সুন্দর ম্যাচিউর কথা বললে, আর এখন বাচ্চাদের মত কথা কেন বলছো?
‘আপনি বুঝিয়ে বলুন কি বলতে চাইছেন?
‘তোমার কাছে ছোট একটা আবদার।
‘আয়হায় আমাকে কি আপনার মামা বাড়ি পেয়েছেন? আবদার করবেন মামার বাড়িতে আমার কাছে না।
‘একটা অনুরোধ করতে চাই রাখবা প্লিজ?
‘আপনার ঠোঁট থেকে রক্ত বের হচ্ছে।আমি অ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে দেই আপনি একটু চুপ করে বসে থাকুন৷
‘তোমার জীবন থেকে আগামীকাল দিনটা আমাকে দেবে?
‘নয়না ড্রায়ার থেকে আ্যান্টিসেপটিক এনে জিয়ানের ঠোঁটে লাগিয়ে দিচ্ছে।
‘জিয়ান নয়নার হাতটা ধরে বলে,প্লিজ আগামীকাল দিনটা দাও আমাকে।
‘আমার একটা দিন আপনার কি উপকারে আসবে?
‘তোমার একটা দিন আমার পরিবারের সম্মান রক্ষা করবে৷
‘হাত ছাড়ুন আপনি টাচ করলে কেমন যেনো লাগে৷
‘জিয়ান হাত সরিয়ে নিলো।
‘নয়না জিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি কিন্তু দেখতে সুন্দর। আমি কি আপনাকে আগে কখনো দেখেছি?
‘আমার তো মনে পরে না।
‘আমি বলবো কবে আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো।
‘বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। আপনার ঘড়ি আমার ওড়নাতে আটকে গিয়েছিল। আপনি রেগে বলেছিন ওড়না সামলে না রাখতে পারলে পরার কি দরকার?
‘তোমার ফিল্মি ডায়লগ এসব কখনো আমার সাথে হয়নি।
‘অদ্ভুত আপনাকে আমি মিথ্যে কেন বলবো আপনিই ছিলেন ওটা। আমার ওড়নাটা ছিড়ে ফেলেছিলেন।
‘আচ্ছা তা তুমি বাচ্চা মানুষ একা-একা বসুন্ধরা কি করছিলে?
‘আরেহহহ একা একা মানে? ফুপ্পির সাথে গিয়েছিলাম। সে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত ছিলো৷ জানেন আমি তো সেদিন আপনাকে দেখে পুরাই ফিদা। ব্ল্যাক কোর্ট সাদা শার্ট সুন্দর করে চুলগুলো সেট করা৷ এরজন্য স্যরি বলেছি নয়তো ঝগড়া করতাম।
‘তোমার বাজে কথা শেষ হলে আমার কথাটা শোন। আমরা ভোরেই চলে যাবো বাসায়। পরশু আমার ডিউটি শুরু আগামীকাল রাতেই চলে যাবো আমি। এরপর তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না৷ তুমি ভুলে যেও আমার নাম, মনে করো আমি ছিলাম দূর থেকে ভেসে আসা কোন স্লোগান।
‘নয়না জিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে বলে,আপনি চলে যাওয়ার পরে কি হবে?
‘কিছুই হবে না। তুমি আগের মত নিজের জীবনটা গুছিয়ে নেবে। আমি তোমার জীবনের এমন এক কালো অধ্যায় যা আমার সারাজীবনের সবটুকু অনুনয়ের বিনিময়ে ও মুছে দিতে পারবো না৷ ক্ষমা চাইবো সেই যোগ্যতাটুকুও আমার নেই। আমায় ভুলে যেয়ে নতুন করে জীবনটা সাজিয়ে নিও। মনে করো আমি ছিলাম হঠাৎ আসা কোন সুনামি যে ক্ষয়ক্ষতির দায় না চুকিয়ে হারিয়ে যায় অতল গহব্বরে।জিয়ান কথাগুলো শেষ করে তাকিয়ে দেখে নয়না তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে। জিয়ান নয়নার মাথাটা সরালো না। সেভাবেই বসে থেকে ভাবতে লাগলো। আমি জানি আমি তোমার সাথে অন্যায় করছি। তোমাকে কিভাবে মেনে নেবো! আমি তোমার দৃষ্টিতে ধর্ষক ছাড়া কিছুই না৷ কোনদিন ও তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না৷ আর এসব কিছুর জন্য দায়ী আমি নিজেই। জিয়ানের হঠাৎ ইচ্ছে করছে নয়নার কপাল আলত করে ছুঁয়ে দিতে৷
🌿
নীলাঞ্জনা ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে৷ লাবিব বেডের উপরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলাঞ্জনা যে রাতটার জন্য এতো অপেক্ষায় ছিলো সেই রাত তার কাছে বিষাক্ত মনে হচ্ছে। আচ্ছা একজন পুরুষের কি মেয়েদের শরীর ছাড়া আর কিছু লাগে না! ভালোবাসা তাহলে কি মিথ্যে আশা? যাকে ভালোবেসে সব ছেড়ে আসলাম সে শুধু শরীর ভোগ করতে ব্যস্ত ছিলো। আমার চোখের পানি আমার দুঃখ কষ্ট তাকে বিন্দু মাত্র স্পর্শ করতে পারলো না! নীলাঞ্জনার হঠাৎ করে জিয়ানের কথা মনে পরলো৷
…. অতীত……
আচ্ছা তুমি আমাকে কখনো কিস কেনো করো নি! এতোটুকু তো করাই যায় তাই না৷
‘জিয়ান নীলাঞ্জনার হাতের উপর হাত রেখে বলে,তোমাকে আমি পরিপূর্ণ পেতে চাই। এই একটু আধটু পাওয়াতে আমার পোষাবে না গো।আজকে কিস করবো, কালকে হাগ করবো এরপর ধীরে ধীরে অন্য কিছু। একদিন তোমার মনে হবে আমাকে তুমি ভালোবাসো না৷ কারন আমি তোমাকে ভোগ করেছি। আমি তোমাকে পরিপূর্ণ পেতে চাই৷
‘পরিপূর্ণ পাওয়া মানে কি গো?
‘তুমি যা ভাবছো তা না। পরিপূর্ণ পাওয়া মানে তোমাকে ভালোবেসে এমন ভাবে অনুভব করা যাতে আমার প্রতিটি স্পর্শ তোমার কাছে ভালোবাসার চুড়ান্ত পূর্নতা মনে হয়। আর তা এমন এক মোহ তৈরি করবে যা বারবার আমাদেরকে আরো কাছে টানবে৷ যাকে মানুষ মন দেয় তার জন্য জীবনও দিতে পারে শরীর তো সেখানে সামান্য। এসব মনে করে নিজের চুলমুঠ করে ধরলো। ঠোঁটে লেপ্টে থাকা লিপস্টিক শরীরে দাগ প্রমান করছে এই স্পর্শে ভালোবাসা ছিলো না৷ ছিলো শুধু চাহিদা পূরণ। উঠে এসে বেডের সাইট থেকে মোবাইল নিলো৷ ভয়ে ভয়ে তিনদিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকা মোবাইলটা অন করলো৷ মেসেঞ্জারে ঠুকতেই বুক কেঁপে উঠলো৷ একটা মানুষকে কতটা বাজে ভাবে ঠকিয়েছে! গায়ে হলুদের পিক দিয়েও বলেছিলো তোমার জন্য শেষ অপেক্ষা এরপর আর কোন অপেক্ষা নেই৷ সবার প্রথম জিয়ানের ইনবক্সে উঁকি দিলো। নিক নেইম এখনো মাই হার্ট দেয়া৷ কতশত টেক্সট। লাস্ট টেক্সট ছিলো,ভালো থেকো৷
‘কাঁপা-কাঁপা হাতে টাইপিং করতে যেয়েও ধমকে গেলো৷ এক পলক দৃষ্টি দিলো লাবিবের দিকে৷ ড্রিম লাইটের আধো আলোতে উজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে বলে,আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে জয় করে নেবো৷ মোবাইলটা আবার বন্ধ করে দিতে যেয়ে আবার উঁকি দিলো জিয়ানের ইনবক্সে,টাইপিং করলো,পারলে ক্ষমা করে দিও আমাকে।তুমি আমার চেয়ে ভালো কাউকে পাবে জীবনে। নতুন কাউকে নিয়ে জীবনটা গুছিয়ে নিও৷ ক্ষমা করে দিও।…
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৭

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭
“প্লিজ জাস্ট ওয়ান কিস।
‘তোমার মাথা ঠিক নেই? কি বলছো এসব?
‘একটা কিস করতে ভয় পাচ্ছেন! এরপর কোনদিন নিজেকে আর সাহসী বলবেন না৷
‘তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো? তুমি যেচে কেনো উত্তপ্ত স্পাতে হাত দিতে চাইছো৷
‘কিস না করলে কিন্ত আপনাকে আমি এখান থেকে বের হতে বিন্দুমাত্র সাহায্য করবো না।
‘ওকে কাম অন বাবু। তবে এরপর যা হবে তারজন্য কিন্তু দায়ী তুমি।
‘একটা কিস করার জন্য এতো কথা! সেদিন রাতে তো! বলেই মুখে হাত দিলো।
‘জিয়ান নয়নার কাছাকাছি এসে বলে,আগেই ঠোঁট আড়াল করেছো! বলেই আলতো করে নয়নার কপালে নিজের ঠোঁটের উষ্ণতা ছোঁয়ালো।
‘নয়না জিয়ানের টিশার্ট আঁকড়ে ধরে বলে লিপ কিস।
‘নয়নার কথাটা কানে যেতেই জিয়ানের হার্টবিট ফাস্ট হতে লাগল। কি হলো এই মেয়ের কেনো আমাকে ঠিক থাকতে দিতে চাইছে না! এর কি সত্যি ষোল বছর!
‘এতো কি ভাবছেন? এখান থেকে বের হতে হলে এক্ষুনি আমাকে কিস করতে হবে।
‘জিয়ান একটু সরে আসলো জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,এই মেয়ে আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছো তুমি তা বুঝতে পারছো?জানো তুমি আমাকে উষ্কে দিচ্ছো এরপর সামলাতে পারবে তো?
‘নয়না শার্টের বাটনগুলো খুলে শার্টটা বেডের উপর রাখলো।
‘জিয়ান পেছন দিকে ঘুরে বলে কি হচ্ছে এসব! প্লিজ ডোন্ট ডু দ্যাট৷ এর পরিনতি ভালো হবে না।
‘নয়না শার্টখুলে শাড়ীটা কোমড়ে গুঁজে টুল নিয়ে এসে জিয়ানের পেছনে দাঁড়ালো। মিস্টার পাইলট মহাশয় এদিকে ঘুরে দাঁড়ান। গত রাতে আমার পরনের শাড়িটা যখন খুলে ফেলেছিলেন নিজের হাতে তখন লজ্জা কোথায় ছিলো!
‘জিয়ান নরম স্বরে বলে,আমি দুঃখিত।
‘ওসব দুঃখ পরে দেখাবেন এখন আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ান।
‘জিয়ান সামনে ঘুরে দেখে নয়না আর সে সেম সেম। শাড়ি গুঁজে রাখার ফলে কোমড় উন্মুক্ত এতোক্ষণ শীত লাগছিলো কিন্তু এখন গরম লাগছে৷
‘নয়না জিয়ানের মাথা দু’হাতে চেপে ধরে নিজের দাঁত দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে জিয়ানের ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো। এরপর টুপ করে সরে আসতে চাইলে আটকা পরলো জিয়ানের হাতে। জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে রেখেছে। ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।
‘ছাড়ুন নয়ত চিৎকার করে বাসার মানুষ জড়ো করবো।এমনিতেই আটকা আছেন তারপর খাবেন ধোলাই।
‘জিয়ান কিছু একটা ভেবে নয়নাকে ছেড়ে দিলো৷
‘নয়না বেডের উপর বসে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,এবার বলুন এই কিস আপনাকে কেমন ফিলিংস এনে দিলো?
‘বুঝলাম তুমি ছোট করে প্রতিশোধ নিলে তাই তো?
‘নাহহহ। শুধুমাত্র আমার কষ্টের বিন্দু পরিমাণ অনুভব করালাম।
‘জিয়ান নয়নার পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো।
‘নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি দেখতে কিন্তু ঠিকঠাক আছেন। আচ্ছা আপনার চুলগুলো আসল নাকি নকল?
‘ফাস্টএইড বক্স কোথায়?
‘আমি কি ডাক্তার নাকি আমার কাছে ওসব থাকবে?
‘জিয়ান সামনের দিকে ঘুরে বলে, ব্লড বন্ধ করো। নয়তো দ্বিতীয় উপায় আমার জানা আছে৷
‘নয়না দ্রুত ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স এনে জিয়ানের সামনে রাখলো। নিজে চলে গেলো ড্রেস চেঞ্জ করতে৷
‘আলতো হাতে নিজেই এন্টিবায়োটিক লাগালো৷
‘নয়না এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
‘আমি যে একটা মানুষ তোমার চোখের সামনে বসে আছি এটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না?
‘নয়না আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে নাহহ৷ আমার রুমে তো আমি নিজেকে ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছি না৷ ওপসসস স্যরি আমি তো দেখতে পাচ্ছি দ্যা গ্রেট পাইলট জিয়ান ভেজা চৌধুরী। স্যরি রেজা।
‘তা ভাই এতো রাতে আমার রুমে কি করছেন? আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
‘ডিয়ার পিচ্চি বাবু প্লিজ আপনি আমাকে এই রুম থেকে বের হতে সাহায্য করুন৷
‘আহা শখ কত! পিচ্চি বাবু এতোকিছু কিভাবে করবে?
‘তুমি দেখতে পারছো না আমার অবস্থা? ঠোঁট ফুলে গেছে কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। জংলী বিল্লির মত কেউ কামড় দেয়।
‘আমি দেখাবো আমাকে কোন এক হিংস্র বাঘ কিভাবে কামড়ে ছিলো৷
‘তাই বলে ঠোঁটে?
‘চুপ করে শুয়ে পরুন বেডে এসে৷ এখন বাজে রাত দুইটা চল্লিশ মিনিট। ঘুমিয়ে পরুন ভোর হোক আপনাকে বের করার ব্যবস্থা করবো।
‘আমি এখানেই ঠিক আছি।
‘ওকে ডিয়ার হ্যাসবেন্ড আপনি ঠিক থাকুন আমি একটা আরামসে ঘুম দেই। বলেই ব্লাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলো।
‘জিয়ান একি ভাবে বসে নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।
কম্ফোর্টারের ভেতর থেকে নয়না বললো এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না আমার কম্ফোর্টার লজ্জা পাচ্ছে। ছিহহহ একটা কম্ফোর্টারকেও ছাড় দিচ্ছেননা!

🌿 ঘোমটা টেনে বাসর ঘরে নিজের বরের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে নীলাঞ্জনা। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝড়েই যাচ্ছে। নিঃশব্দ কান্না।
‘লাবিব রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নীলাঞ্জনার পাশে বসলো। নীলাঞ্জনার হাতটা ধরে হাতে চুমু খেয়ে বলে,অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটতে চললো। তোমাকে পাওয়ায় যুদ্ধে আমি জিতে গেলাম।
‘নীলাঞ্জনা ঘুমটা তুলে বলে,পাওয়ায় যুদ্ধ মানে?
‘লাবিব নীলাঞ্জনার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ধরে বলে,এতোদিন তো আমাকে বাঁধা দিয়েছো আজ থেকে তোমাকে স্পর্শ করতে কোন বাঁধা নেই। আজ আমার ভালোবাসবার চাদরে তোমাকে পুরোপুরি মুড়িয়ে নেবো।
‘শরীর পাওয়া মানেই কি সব পেয়ে যাওয়া লাবিব?
তোমার কাছে কোনটার দাম বেশি দেহ নাকি মনের?
‘লাবিব নীলাঞ্জনাকে নিজের কাছে এনে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,আজকে রাতে কোন তর্কবিতর্ক নয়, আজ শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা৷বলেই নীলাঞ্জনার অধরে অধর মিলিয়ে দিলো৷
‘নিয়াজ সাহেব বলেন, তোমার ছেলের জন্য আমি কি সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না! আমাদের কিছু না বলে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো! আবার ওই বাড়িতে যেয়ে বলে ফেরত দিতে এসেছি আপনার মেয়েকে? এই বুদ্ধি নিয়ে ও পাইলট হয়েছে! সব কিছু এতো সহজ?
‘ছেলে তো আমার একার। ছেলে যার জন্মের হবে তো তার মতই। ঘাড়ত্যাড়ামি তো আমার থেকে পায়নি তোমার থেকে পেয়েছে৷ আচ্ছা একটা কথা বলো, ছেলেরা যা ভুল করুক সব দোষ আমার ঘাড়ে কেন চাপিয়ে দাও৷
‘আরেক নবাবজাদার তো খবরই নেই সে ব্যস্ত দেশ ভ্রমণ করতে! বাপের টাকায় ফুর্তি করতে খুব আয়েশ৷ নিজের ভাইয়ের বিয়েতে ও আসলো না৷ এরচেয়ে দুটো মেয়ে হলে ভালো হতো বিয়ে দিয়ে চিন্তা মুক্ত থাকতাম। ও-ই তালুকদার বংশের লোকদের কোনদিন সাহস হতো আমাদের কথা শোনানোর? আজকে তোমার ছেলের জন্য সেই সাহস পেলো৷ কল করো আর বলো সকালে বৌমাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে কাল রিসিপশন৷ মানুষ দাওয়াত দেয়া। তাদের সামনে আমাকে জেনো ছোট না হতে হয়।
‘মিতা বেগম মোবাইল নিয়ে কল করলো জিয়ানকে৷
‘কিছুক্ষণ আগেই চুপিসারে নয়নার পাশে এসে শুয়েছে জিয়ান। মোবাইল বেজে উঠতেই রিসিভ করলো৷, উঠে বসে বলে,এতো রাতে কেনো কল করেছো আম্মু?
‘কল করেছি,!নাকি তোর কর্ম করিয়েছে! সকালের নাস্তা বাসায় করবি বৌমাকে সাথে নিয়ে আসবি৷ কিভাবে আনবি আমি জানিনা। কাল রিসিপশনে শত শত মানুষকে দাওয়াত দেয়া৷ আর তুই আমাদের কিছু না জানিয়ে চলে গেছিস!
‘এসবের কি দরকার ছিলো!
‘তুই জানিস না? এসব তোর জন্যই হয়েছে। তুই ভবিষ্যতে কি করবি আমি জানিনা তবে এই মেয়েকে তোকে মেনে নিতে হবে। প্রেম করেছিস ধোঁকা খেয়েছিস সব ফল্ট তোর। এখানে এই মেয়েটার দোষ কোথায়? মনে রাখিস কবুল বলার আগে কবুল বলার ভার বহন করার যোগ্যতা আছে কিনা সেটা ভেবে কবুল বলতে হয়। কবুল বলার পরে ও-ই মেয়েটাই তোর অর্ধাঙ্গিনী তোর জীবনসঙ্গীনি, তার মর্যাদা রক্ষার দায়ভার তোর। নিজের দ্বায়িত্ব থেকে পালাতে পারবি না৷
‘মিতা বেগম কল কেটে দিলো৷
‘জিয়ান ঘুমন্ত নয়নার দিকে তবে একি এরসাথেই বাকিটা জীবন কাটাতে হবে!এটাকি সম্ভব!
#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৬

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬

লাল টুকটুকে বেনারসিতে বৌ সেজে বসে আছে নীলাঞ্জনা৷ হাত ভর্তি মেহেদী। বাসা থেকে পালানোর সময় টাকা আর গহনা নিয়ে এসেছিলো। সে-সব দিয়েই বিয়ের আয়োজনে করেছে লাবিব।
‘মেরুন রংঙয়ের শেরওয়ানি পরে রুমে প্রবেশ করলো লাবিব। নীলাঞ্জনাকে দেখে তার রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমার প্রেমে আমি কেন! যে কোন পুরুষ পরতে বাধ্য। তোমার সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ইশশ সবাই বলবে জিতেছি। ইচ্ছে করছে টুপ করে তোমাকে খেয়ে ফেলি। নিজের বৌকে নিজেই না নজর দিয়ে ফেলি!
‘নীলাঞ্জনা বেশ অবাক হলো। আচ্ছা লাবিব আমার রুপ দেখছে? আমার চোখ ভর্তি অশ্রু ওর চোখে পরছে না? কই একবারও জিজ্ঞেস করলো না তোমার চোখে পানি কেনো? একবারও বললো না তোমার হাতের মেহদীর রং কেমন গাড় হয়েছে দেখি। তোমার কি মন খারাপ! তাহলে লাবিব কি আমায় ভালোবাসে নাকি আমার রুপের মোহে আটকে পরেছে।
‘এই আমার সুন্দরী বৌ কি ভাবছো বলো তো?
”তুমি আমাকে দেখে আমার সৌন্দর্য উপভোগ করো! অথচ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হৃদয় পড়তে পারো না! তুমি কি আমায় ভালোবাসো? নাকি শুধুই আটকে আছো আমার মোহ মায়ায়?
‘লাবিব এগিয়ে এসে বলে,কবুল বলতে দাও তারপর দেখো আমি কিসে আটকে আছি আর কি পড়তে পারি। সুন্দরী।
এক্ষুনি কাজি আসবে।
‘নীলাঞ্জনার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হঠাৎ মনে হলো ভালোবাসার চেয়ে মন পড়তে পারে এমন মানুষ জীবনে বেশি প্রয়োজন। রংচঙে ভালোবাসা হয় না, রংতো কেবল মোহ।
‘কাজি সাহেব আসলেন বিয়ে পরালেন। লাবিবের চাচা আর তার পরিবার উপস্থিত ছিলো বিয়েতে। নীলাঞ্জনার পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত নেই। কবুল বলতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পরে নীলাঞ্জনা। হঠাৎ তার মন বলছে সে জেনো বড়ো কোন ধ্বংসের সূচনা করছে। মনে মনে আওরালো, তোমাদের অভিশাপ নিয়ে আমি সুখে হতে পারবো তো বাবা?
‘রঙিন বেলুন আর জরি দিয়ে সাজানো রুমে বসে আছে নীলাঞ্জনা। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে। সব কিছু কেমন বিষাক্ত মনে হচ্ছে। ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে ছেড়ে আসা প্রিয় মানুষদের কাছে।
🌿মাহফুজা বেগম বলেন, এটা কি করলে তুমি? জামাই প্রথমবার এসেছে কই তাকে আপ্যায়ন করবে তা-না উল্টো বন্দী করে রেখেছো?
‘একদম চুপ করো তুমি। জামাই? কতোবড় সাহস তুমি ভেবে দেখো। আমার মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এখন আবার ফেরত দিতে এসেছে? ওর চৌদ্দপুরুষ চৌধুরী হলে আমরাও তালুকদার বংশ দেখি কার ঘাড়ে কটা মাথা৷ আমার মেয়ের জীবন নিয়ে কোন শা’লার বেডাকে সাপ লুডো খেলতে দেবো না। মাহবুব তালুকদার বেঁচে থাকতে কখনোই তা সম্ভব না।
‘মিজান তালুকদার এসে বলে, ভাইজান এতো রাতে ডেকে পাঠালেন কোন সমস্যা?
‘সমস্যা বলেই ডেকে এনেছি। ও-ই ছেলে আমার মেয়েকে ফেরত দিতে এসেছে ওর এতো বড়ো স্পর্ধা! আমার মেয়েকে ও পন্য ভেবেছে?
‘মাথা ঠান্ডা করেন ভাইজান। শতহোক আমরা মেয়ে পক্ষের তাই হুটকরেই হটকারিতায় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না৷
‘রাতটা শেষ হোক চৌধুরী সাহেব কি বলে এ-র উপর ডিপেন্ডেবল আগে কি হবে।
🌿
আশ্চর্য তোমাদের পরিবারের সবার কি মাথায় সমস্যা! তোমরা এখানে কি করো পাবনা মেন্টাল হসপিটালে যাও।
‘নয়না বেডের উপর দাঁড়িয়ে বলে,মুখ বন্ধ করুন মিস্টার পাইলট। আপনার মাথায় সমস্যা আপনাকে এখন বরফের নিচে চাপা দিয়ে রাখা উচিৎ ঘন্টা খানেক৷ আর হ্যা একদম চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন না। ওটা আপনার এড়িয়া ছিলো এটা আমার। এবার বুঝবেন সুনয়না কি চিজ।
‘ওহহহ রিয়েলি! প্রথমে আমার সন্দেহ হয়েছিলো তোমরা বংশগত পাগল। এখন বিশ্বাসে পরিনত হলো। সো শেইম অন মি শেষ পর্যন্ত কি না পাগলের সাথে বিয়ে হলো! এই ছিলো কপালে?
‘নিজের লিমিট ক্রস করবেন না। পাগল যে বলছেন পাগলামি শুরু করলে যে পালাবেন সে রাস্তা ও কিন্তু বন্ধ। তাই চুপ করুন। নয়না চোখ পাকিয়ে বলে,এবার আমি আপনাকে টর্চার করবো। আমাকে একা পেয়ে আমাকে টর্চার করেছেন। আজকে ইতিহাস হয়ে যাবে ছেলে নির্যাতনের৷
‘উপসসস আমি তো ভিষণ ভয় পেয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করেদিন রাজকন্যা। এবাবের মত আমাকে ক্ষমা করুন৷ বলেই হাসতে লাগলো।
‘চুপ একদম হাসবেন না৷ দেখুন আমি কি করি৷
‘পটোলের মত হাইট ইঁদুর হয়ে বেড়ালের সাথে লড়াই করা বোকামি। আমার শার্ট দাও শীত করছে।
‘দেবো না শার্ট শীতের দিনে বিয়ে করতে কে বলছে।
‘মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে?
‘এখন আমি আপনার বস্ত্র হরন করবো। তারপর কামড়ে, নখের আঁচড়ে আপনার শরীর ক্ষত বিক্ষত করে দিবো। এরপর আপনি বুঝবেন কারো সাথে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জবরদস্তি করলে কেমন লাগে।
‘মাথা ঠিক আছে তোমার? এই বাড়ি থেকে আমি বের হবো কি করে সেই ব্যবস্থা করো। এই ড্রেসের সাথে কিছু করবে না বলে দিলাম।
‘নয়না বেড থেকে নেমে পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিজার নিয়ে এসে হুট করেই জিয়ানের টিশার্ট ঘেচাং করে কাটা শুরু করলো।
‘জিয়ান নয়নার হাত ধরে বলে,কি হচ্ছে এসব বাচ্চাদের মত বিহেভিয়ার কেন করছো! উফফ শিট বাচ্চা তো বাচ্চামো করবেই। আমারই ভুল হয়েছে ফেরত দিতে আসা৷
‘আপনাকে কতবার বলবো আমাকে বাচ্চা বলবেন না৷ আজকে আপনার খবর আছে। বলেই ধস্তাধস্তি করা শুরু করল।
‘জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আরেক হাত দিয়ে নয়নার হাত দুটো পেছনের দিকে শক্ত করে ধরে রাখলো।
‘নয়নার কেমন অদ্ভুত লাগছে। মনে মনে বিড়বিড় করে বলে,নয়না দূর্বল হলে চলবে না এটা তোর বাসা৷ সাহস দেখা।
‘ছাড়ুন আমাকে। এখন জোড় দেখাচ্ছেন?
‘জিয়ান নয়নাকে আর নিজের কাছে টেনে আনলো। কাম অন বাবু৷ সুইট কিউট বেবি বৌ আমার লেটস ইন্জয়।
‘নয়না চোখ বন্ধ করে বলে প্লিজ ছাড়ুন কিছু করবো না আপনাকে।
‘জিয়ান নয়নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,কেন বাবু ভয় করছে! আরেহহ বেবি কিসের ভয় এটা তো তোমারই বাসা গুন্ডামি করতেই পারো৷
‘ছাড়ুন আমি সত্যি কিছু করবো না৷
‘ছাড়তে পারি তবে আমাকে এখান থেকে সেইভ ভাবে বের পারে দিতে হবে। আমি কথা দিচ্ছি তো আর কোনদিন তোমার উপর আমার কালো ছায়া পরবে না৷
কথা বলতে বলতে দুজনে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। নয়নার বুকের ভেতর কারা জেনো তবলা বাজাচ্ছে।
‘জিয়ান দ্রুত নয়নাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো৷
‘দুজনেই জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে খারাপ কিছু হয়ে যেতো।
‘নয়না নিজের ঠোঁট মুছছে।
‘স্যরি। এক্সট্রিমলি স্যরি৷ দেখো তোমার বয়স কম কিন্তু এতোটুকু তো জানো কোন ছেলে মেয়ে একাকী এতো কাছাকাছি আসলে প্রাপ্ত বয়স্ক একটা ছেলের জন্য কন্ট্রোল করা সহজ নয়।আর সেই নারী যদি হয় তার বিয়ে করা বৌ! স্যরি এই অনাকাঙ্ক্ষিত কিসের জন্য।
‘নয়না কোন কথা না বলে মুখে হাত দিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘প্লিজ আমাকে এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। এই শেষ অনুগ্রহ টুকু করো আমার প্রতি।
‘নয়না আস্তে করে বলে,আমি আপনাকে আরেকবার কিস করতে পারি?
‘নয়নার কথা শুনে জিয়ান শকড। এই মেয়ে কি বলে! আগুনে ঘী ঢালার কাজ কেন করতে চাইছে?
‘আর ইউ ম্যাড? মাথা ঠিক আছে তোমার? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?
‘নয়না বলে হ্যা বুঝতে পারছি প্লিজ ওয়ান কিস৷ এরপর আমি আপনাকে বোঝাচ্ছি আসলে আমি কি চাইছি?
‘জিয়ান দু কদম পেছনে সরে এসে বলে প্লিজ ডোন্ট টু দিস। এই মূহুর্তে এটা বিপদজনক।

#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-০৫

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
রাত তখন প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই, জিয়ান পা টিপে টিপে রুমে আসলো। বেডের উপর এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে এক কিশোরী, শাড়ি সরে যেয়ে কিশোরীর উন্মুক্ত হয়ে আছে শরীরে বেশ খানিকটা অংশ। আলতো হাতে কোলে তুলো নিলো ঘুমন্ত কিশোরীকে চুপাসারে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলো। গাড়ির সামনের সিটে নয়নাকে বসিয়ে শাড়িটা কোনমতে পেঁচিয়ে দিলো শরীরে। হঠাৎ ঘুমন্ত রমনী হাত ধরে বসলো৷
‘জিয়ান খানিকটা ভয় পেলো। কিছু সময় সেভাবেই রইলো৷
বুঝতে পারলো ঘুম ভাঙ্গেনি৷ আলতো করে হাত সরিয়ে এনে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলো৷রাতের নিরব রাস্তা দু’একটা দূরপাল্লার বাসের শো শো ক্ষীন আওয়াজ৷ সাথে সাথে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিলো। খুব ধীর গতিতে গাড়ি ড্রাইভ করছে। নয়নার মাথাটা জিয়ানের কাঁধে একবার সরিয়ে দিয়েছিলে তারপর নিজেই ঠিক করে রাখলো।বেশ কিছু দূর আসার পরে পুলিশ চেকপোস্ট পার হতে হয়।
নয়নার মাথাটা গাড়ির সিটে ঠিকভাবে রেখে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে জিয়ান৷
‘গাড়ির কাগজ পত্র সব দেখায়।
’একজন অফিসার বলে,আপনার সাথে গাড়িতে উনি কে?
‘আমার ওয়াইফ।
‘আপনার ওয়াইফ তার প্রমান কি?
‘আপনার কি মনে হয় এই রাতে আমি ম্যারেজ সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরবো! বলছি যখন আমার ওয়াইফ তখন অবশ্যই আমার ওয়াইফ।
‘প্রমান দেখান তারপর বিশ্বাস করবো। আপনাদের বিয়ে হয়ে হয়েছে কতদিন?
‘গত সপ্তাহে শুক্রবার।
‘আজতো রবিবার নিশ্চয়ই আপনার ফোনে বিয়ের পিকচার আছে সেটা দেখান।
‘দেখুন স্যার আমি একজন পাইলট তাছাড়া আমার ওয়াইফ ঘুমিয়ে আছে। আপনারা প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না৷
‘আপনার বাসায় কারো সাথে কথা বলিয়ে দেন৷ আর আপনি যেই হোন না কেনো আইন সবার জন্য সমান। হতেই তো পারে মেয়েটিকে আপনি কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
‘একজন যেয়ে জানালার কাচে বাড়ি দিয়ে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকতে লাগলো।
‘জিয়ান দ্রুত গাড়িতে এসে নিজের গায়ের শার্ট খুলে নয়নার গায়ে পরিয়ে দিচ্ছে।
‘নয়না ঘুমঘুম চোখ দুটো কোনমতে খুলতেই জিয়ানকে দেখে ঘাবড়ে যায়। কান্না মিশ্রত কন্ঠে বলে,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন আমাকে আর ব্যথা দেবেন না।
‘একদম চুপ একটাও কথা বলবে না৷ বাহিরে পুলিশ শাড়ি তো খুলে রাখছো অর্ধেক আমার ওয়াইফকে এই অবস্থায় অন্য কেউ দেখবে!
‘নয়না জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে,কে আছো বাঁচাও।
‘বাহিরে পুলিশের লোকেরা বলতে থাকে গাড়ি থেকে বের না হলে আমরা গাড়ির দরজা ভেঙে ফেলতে বাধ্য হবো।
‘একটা শব্দ ও করবে না৷ চুপ করে থাকো বলেই শার্টের বাটন লাগিয়ে দিলো।তোমার বাবার নাম্বার বলো৷
‘বাবা! এতো রাতে? হ্যা তোমার বাবা৷
‘আপনি না চৌধুরী বংশের ছেলে তো বলুন আমাকে হ্যারাসমেন্টের দায়ে আপনাদের চাকরি খেয়ে দেবো৷
‘যাস্ট সাইলেন্ট যেটা বলেছি সেটা করো৷
‘ফোনটা দিন নাম্বার উঠিয়ে দেই।
‘যেটা বলেছি সেটা করো। এরপর বের হয়ে এসে বলে, আপনাদের কাজ কি রাতের বেলা ভদ্র মানুষদের অসম্মান করা?
‘নাহ আমাদের ডিউটি দেশ ও জনগণকে নিরাপত্তা দেয়া। আমরা সেটাই করছি।
‘যাস্ট ওয়েট৷ কল করলো মাহবুব তালুকদাররের নাম্বারে৷ কল ঢোকার আগেই কেউ একজন মোবাইল নিয়ে কল কেটে দিলো৷
‘তুমি বাহিরে কেনো এসোছো?
‘তুমি আদর্শ হ্যাসবেন্ডের মত আমাকে প্রটেক্ট করার জন্য একা লড়াই করবে আর আমি ঘুমিয়ে থাকবো জান!
‘আমি সুনয়না তালুকদার। পিতা মাহবুব তালুকদার। এই যে দুদিন আগে শুক্রবার গেলো সেই দিন টাই ছিলো আমার আর আমাদের ভালোবাসার প্রনয়ের দিন৷ আমরা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ লং ড্রাইভে বের হয়েছিলাম। এতে আপনাদের সমস্যা কি?
‘ আচ্ছা ম্যাডাম স্যরি। তবে আপনাকে তার ওয়াইফ মনে হচ্ছে না।
‘সুনয়না রাগি কন্ঠে বলল, আপনার বৌয়ের সাথে নিশ্চয়ই আপনি বেমানান তাই এসব উল্টোপাল্টা কথা বলছেন৷
‘এই চলো তো সময় নষ্ট না করে বলেই জিয়ানের হাতের মধ্যে হাত রাখলো।
গাড়িতে এসে বসে, জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আসলে আমি অনেক সাহসী কিন্তু সমস্যা হলো আমার আরেকটু সাহস দরকার তারপর আপনার সাথে বোঝাপড়া করবো৷
‘এই প্রথম সুনয়নার মুখ থেকে স্বাভাবিক কথা শুনলো জিয়ান। বেশ কিছুক্ষণ সুনয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো৷
‘এভাবে দেখার কি আছে? আপনারই তো বৌ না চাইলেও সারাজীবন এই মুখ দর্শন করতে হবে। আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?
‘স্যরি।
‘নয়না অবাক হয়ে বলে আপনি কিছু বললেন এই মাত্র?
‘স্যরি আমি আসলেই দুঃখিত আমার উচিৎ হয়নি তোমার সাথে এমন আচরণ করা৷ তোমার তো এখানে কোন দোষ নেই উল্টো আমাদের মাঝে তুমি ফেঁসে গেছো রিয়েলি স্যরি সুনয়না।
‘আপনি স্যরিও বলতে পারেন! এক কাজ করুন আপনার স্যরির আচার বানিয়ে ধীরে ধীরে এক চামচ করে খেয়ে ফেলুন।
‘আমি তোমাকে একেবারের জন্য রেখে যাবো এখানে। খুব তাড়াতাড়ি তোমার জন্য তোমার উপহার চলে আসবে।
‘দেখুন আমার এইটুকু মাথা তাও আবার বিশাল চুল তার ভেতরে খোলস, খোলসের ভেতরে এইটুকু বুদ্ধি তাই সহজ ভাবে বলুন মিস্টার পাইলট।
‘খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমার জন্য ডিভোর্স লেটার পাঠাবো।
‘যা ইচ্ছে করুন আগে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।নাহহহ আমি বাসায় যাবো না। আপনি এক কাজ করুন আমাকে কোন হোস্টেলে রেখে আসুন।
‘আর ইউ ক্রেজি?
‘ হঠাৎ করে অশ্রু টলমল নেত্রে তাকিয়ে বলে,জানেন আমি না ধর্ষণ সম্পর্কে পত্রিকায় পরেছি টিভিতে নিউজ দেখেছি কখনো কল্পনা ও করিনি সেই সব কিছুর ভিক্টিম আমি নিজে হবো। আমার আপনাকে দেখলে ভয় হয় মনে হয় এখনি হিংস্র জানোয়ারের মত ঝাপিয়ে পরবেন আমার উপর। বলতে বলতে হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো৷
‘এই মূহুর্তে নিজেকে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে জিয়ানের। শেষে কিনা সে কোন মেয়ের কাছে ধর্ষক! চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে হাত মুঠো করে নিজের প্রতি আসা রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। নয়নার গায়ে হাত দিতেও লজ্জা হচ্ছে এখন। কিভাবে করলাম আমি এটা! নিজেকে ক্ষমা করবো কিভাবে? নয়নার মাথায় হাত রেখে বলে,
আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি, আর তা কখনোই আমি চাইনি। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, তোমার যন্ত্রণার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি জানি, কথা দিয়ে সব কিছু ঠিক হবে না। আমি তোমার হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত দিয়েছে জানিনা তুমি কখনো আমাকে ক্ষমা করবে কিনা!
আর কিছু বলার আগেই নয়না জিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। প্লিজ কেঁদো না নয়না আমার কালো ছায়া কোনদিন আর তোমার উপর পরবে না৷ আমি জানি তোমার হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত তাজা আছে তা হয়তো এজন্মে আমি মুছে দিতে পারবো না৷ পারলে ক্ষমা করে দিও।
‘নয়না কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না৷ গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো৷
‘জিয়ান নয়নার বাড়ির সামনে এসে বলে,আমি কি এখান থেকে চলে যাবো? নাকি বাসার ভেতর পর্যন্ত আসবো?
‘আপনি আমাকে বাবা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন তাই তাদের হাতে ফেরত দিয়ে আসবেন৷
‘দারোয়ান বেশ অবাক হলো এতো রাতে নয়নাকে দেখে।
বাসায় দরজায় এসে বার কয়েক কলিং বেল দেয়ার পর মাহফুজা বেগমের ঘুম ভেঙে গেলো। ড্রয়িংরুমে এসে লাইট অন করে বলে, এতো রাতে কে আসলো? দরজা খুলে নয়নাকে দেখে বলে মা’ তুই এতো রাতে “সব ঠিক আছে তো?
কি হয়েছে? তোমার শার্ট ওর শরীরে কেনো? কি করেছো আমার মেয়ের সাথে?
‘আম্মু ভেতরে আসতে দাও আগে।
‘আয়। বলেই দ্রুত মাহবুব তালুকদারকে ডেকে তুললো৷ চোখ ডলতে ডলতে বলেন, এতো রাতে তোমার আবার কি হলো?
‘মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে দ্রুত চলো আমার কিছু ঠিক মনে হচ্ছে না৷
‘মাহবুব তালুকদার এসেই বলেন এতো রাতে? কি এমন ইমার্জেন্সি পরলো যে বাসায় চলে আসলে! আসার আগে একটা ইনফর্ম তো করবে?
‘আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফেরত দিতে আসলাম।
‘আচ্ছা কথা পরে হবে, নয়না তুই বরং জামাইকে নিয়ে রুমে যা৷
‘ওরা দুজন রুমে ঢুকতেই মাহবুব তালুকদার বাহির থেকে দরজা লক করে দিলো৷
#চলবে