Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 312



গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৫

0

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_5
#ইয়াসমিন_খন্দকার

স্টেজে উঠেই নিজের গানের যাদুতে সবাইকে বুদ করে দেয় ভিনচেঞ্জো৷ তার অতুলনীয় কন্ঠে গাওয়া সুন্দর কিছু গান সর্বস্তরের জনগণের মন জয় করে নেয়। ভিনচেঞ্জো এখন ইটালিয়ান একটা গান বলছে। যার মানে হয়তো মান্যতা বুঝতে পারছে না কিন্তু গানের ছন্দ তার মন জয় করে নিচ্ছে। ভিনচেঞ্জোর বলা গানের একটি লাইনে তার কান আটকে যায়। “তি আমো” সেই প্রিয় শব্দটা। মান্যতা তো অপেক্ষায় আছে কবে সে নিজের ভালোবাসার মানুষ, ভিনচেঞ্জোকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলবে, “তি আমো।”

মান্যতার ভাবনার মধ্যেই ভিনচেঞ্জোর গান শেষ হয়ে যায়। ভিনচেঞ্জো তার অনুরাগীদের উদ্দ্যেশ্যে ইটালিয়ান ভাষায় কিছু বলে যা মান্যতার বোধগম্য হয় না। সে শুধু ভিনচেঞ্জোর মোহনীয় কন্ঠেই বুদ হয়ে থাকে। ভিনচেঞ্জোর ভাবনাতে সে এতো বিভোর ছিল যে কিছু বুঝতেই পারে না। এরইমধ্যে ভিনচেঞ্জো সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। লক্ষ লক্ষ জনগণের মধ্যে হঠাৎ করে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। মান্যতা হঠাৎ করে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। কিন্তু এত ভিড়ের মধ্যে উড়ে দাঁড়াতে পারে না। মান্যতার খুব ভয় করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে এত গুলো মানুষের মধ্যে আবার পদদলিত না হয়। তাহলে তো আর ভিনচেঞ্জোর সাথে তার দেখা হবে না। এরইমধ্যে কেউ মান্যতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মান্যতা সেই হাতটা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “Grazie.” ইতালিয়ান ভাষায় যেই শব্দটির অর্থ ধন্যবাদ। তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি ইটালিয়ান। লোকটি ইংরেজিতে মান্যতাকে বলল, “Do you know Italian? i think that you are foreigner.”(তুমি কি ইটালিয়ান ভাষা জানো? আমি ভেবেছিলাম তুমি ভিনদেশী।)

“Yes, a little bit.”(হ্যাঁ, একটু একটু।)

“Are you a big fan of Vincenzo?”(তুমি কি ভিনচেঞ্জোর বড় ভক্ত?)

“Yeah. I’m his big fan.”(হুম। অনেক।)

“Do you want to meet with him?”(তুমি কি তার সাথে দেখা করতে চাও?)

“Yeah. I want.”(হ্যাঁ, আমি চাই।)

“Okay…Let’s go with me. I know vincenzo. I can introduced you with him..”(ঠিক আছে। আমার সাথে চলো। আমি ভিনচেঞ্জোকে চিনি। আমি তার সাথে তোমার পরিচয় করে দিতে পারি।)

“Really?”(সত্যি।)

“Yeah. Come Come.”(হ্যাঁ, এসো আমার সাথে।)

মান্যতা লোকটিকে বিশ্বাস করে নেয় এবং তার সাথে যেতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পরেই লোকটি কাউকে একটা ফোন করে ইটালিয়ান ভাষায় বলে,”মিশন কমপ্লিট। আমি এখানে একজন ভিনদেশি বোকা মেয়েকে পেয়েছি। মেয়েটা মনে হয় ভিনচেঞ্জোর অনেক বড় ভক্ত। ওকে যেই না বলেছি আমি ভিনচেঞ্জোকে চিনি এবং তার সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারব সেই ও নাচতে নাচতে আমার সাথে আসতে রাজি হয়েছে। বোকা মেয়ে।”

বিপরীত দিক থেকে বলে,”এমন বোকা মেয়েদেরই তো আমাদের দরকার। মেয়েটা সুন্দর আছে তো?”

“মেয়েটা মনে হচ্ছে এশিয়ান। হ্যাঁ, সুন্দর আছে।”

“তাহলে নিয়ে এসো ওকে। বস খুব খুশি হবেন। ওনার তো এশিয়ান মেয়ে অনেক বেশি পছন্দ।”

“উনি তো সব কন্টিনেন্টের মেয়েকেই পছন্দ করেন।”

বলেই ফিচেল হেসে ফোন রেখে দেন। অতঃপর মান্যতাকে নিয়ে নিজের সাথে চলতে থাকেন। এদিকে বোকা মান্যতা বুঝতেই পারে না সে কোন বিপদের দিকে পা বাড়াচ্ছে। ১৮ বছর বয়সী মেয়েটা দুনিয়ার প্যাচ তেমন বুঝতে শেখে নি। সে লোকটার কথাকেই সত্য ভেবে নিয়েছে৷ তাছাড়া লোকটা তখন তাকে সাহায্য করায় লোকটির উপর ভরসাও তৈরি হয়েছে। মেয়েটা ভিনচেঞ্জোর জন্য এতটাই পাগল যে ভিনচেঞ্জোর কথা শুনে কোন কিছু বিবেচনা না করেই লোকটার সাথে আসতে রাজি হয়েছে। লোকটি একটি গাড়ির সামনে এসে মান্যতাকে সেটিতে চড়তে বললো৷ মান্যতা জিজ্ঞেস করল,”গাড়িতে করে কোথায় যাব?”

লোকটি বলল,”ভিনচেঞ্জো দূরে একটা রিসোর্টে আছেন৷ তুমি গাড়িতে উঠে বসো। আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।”

“আচ্ছা।”

~~~~~
অনুরাগ যথাস্থানে ফিরে এসে মান্যতাকে দেখতে না পেয়ে বলতে থাকে,”মান্যতা গেলো টা কোথায়? ওকে তো এখানেই থাকতে বলেছিলাম। ভিড়ের মধ্যে আবার কোথাও হারিয়ে গেল না তো?”

অনুরাগ এদিক ওদিক খুঁজে মান্যতাকে। খুঁজে না পেয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তাকে ফোন লাগায়। অন্যদিকে, মান্যতা তখন গাড়িতে করে যাচ্ছিল। অনুরাগের কল দেখে সে বিড়বিড় করে বলে,”ফোনটা রিসিভ না করাটাই ভালো হবে। এখন ফোন রিসিভ করলে উনি হাজারটা প্রশ্ন করবেন। আমি তখন কি উত্তর দেব? আগে ভিনচেঞ্জোর সাথে দেখা করি। তারপর ওনার সাথে কথা বলে নিবো।”

এদিকে মান্যতা ফোন রিসিভ না করায় অনুরাগের চিন্তা বাড়ে। সে নিজেকেই দোষ দিয়ে বলতে থাকে,”আমারই ভুল হয়েছে। মান্যতাকে এভাবে একা ছেড়ে যাওয়াই আমার উচিৎ হয়নি। কিন্তু আমার তো এছাড়া আর কোন উপায় ছিলই না। কি করব এখন? না, আমায় হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কিছু করতে হবে। মান্যতার কোন বিপদ হয়ে গেলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।”

~~~~~~“
মান্যতাকে একটি রিসোর্টে নিয়ে এসে নামায় মধ্যবয়সী লোকটা। তারপর মান্যতাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে৷ মান্যতা গাড়ি থেকে নেমে তাকে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন আপনি? ভিনচেঞ্জো কি এখানেই আছে?”

লোকটি সম্মতি জানায়। মান্যতা খুশি হয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পরেই সে নিজের স্বপ্নের পুরুষের দেখা পেতে চলেছে। লোকটি অন্য একটি লোকের হাতে মান্যতাকে তুলে দিয়ে বলে,”ইনি তোমায় ভিনচেঞ্জো অব্দি নিয়ে যাবে।”

মান্যতা খুশি মনে লোকটির সাথে যেতে রাজি হয়। মান্যতা যেতে নিতেই লোকটি বাকা হেসে বলে,”বোকা মেয়ে। এবার তুমি আমাদের বসের শিকার হবে।”

~~~~
কুচকুচে কালো অন্ধকার একটি রুম। সেই রুমেই বসে রয়েছে সাদা ধবধবে ভেনাস। তার হাতে শোভা পাচ্ছে সুরা(মদ)। তার চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকজন রমণী৷ যাদের পড়নে খুবই অশোভন বস্ত্র। কয়েকজন নারী ভেনাসের চারিপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে তো কেউ আবার তার মুখে সুরা(মদ) তুলে দিচ্ছে।

ভেনাস সেই মেয়েদের স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত বুলাচ্ছে এবং বলছে,”এজন্যই গুরুজনরা বলে টাকা থাকলে জীবনে কোন কিছুর অবাক হয়না। যখন আমার টাকা ছিলনা তখন আমি সব হারিয়েছি। নিজের পরিবার, নিজের প্রেমিকা সব। আর আজ যখন আমার কাছে টাকা রয়েছে তখন আমার কাছে আমার প্রেমিকার থেকেও সুন্দরী হাজার হাজার রমণী রয়েছে।”

বলেই সে একটা মেয়েকে কাছে টেনে তাকে চুম্বন করতে শুরু করে দেয়।

ইতিমধ্যে মান্যতাকে নিয়ে ভেনাসের রুমে আসে ঐ লোকটি। মান্যতা এখানকার পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়ে যায়৷ দৌড়ে পালানোর বৃথা চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। লোকটি মান্যতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। তাকে নিয়ে এসে ছু’ড়ে মা*রে ভেনাসের দিকে। তারপর বলতে থাকে,”এই নিন বস। আপনার নতুন শিকার।”

মান্যতা ভয়ার্ত কন্ঠে আর্তনাদ করে ওঠে। ভেনাস উঠে দাঁড়িয়ে মান্যতার কাছে আসে। মান্যতার সামনে এসে বলে,”What’s your name.”

মান্যতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,”মান্যতা।”

“Your name is so beautiful. And you are more beautiful.”

মান্যতা কেদে উঠল। তাকে কাঁদতে দেখে ভেনাস বলে,
“Why you are crying?”

মান্যতা কিছু না বলে কাঁদতে থাকে। সে বুঝতে পারে অনেক বড় বিপদে পড়ে গেছে।

To be continue

গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৪

0

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“তোর ইটালি যাওয়ার ভিসা হয়ে গেছে মান্যতা। খুব শীঘ্রই তুই ইটালিতে যেতে পারবি।”

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল মান্যতা। অবশেষে কয়েক মাস অপেক্ষার পর তার কাঙ্ক্ষিত দিনটি এলো। কয়েক মাস আগে অনুরাগকে ইটালিতে ফিরে যাবার আগেই মান্যতার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছিল। পাসপোর্ট কিছুদিন আগেই পেয়ে গেছিল সে আজ ভিসাও হয়ে গেল। এবার নিশ্চিতে ভিনচেঞ্জোর দেশে যেতে পারবে মান্যতা। এটা ভাবতেও তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে মনে।

মান্যতা মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা ভিনচেঞ্জো। তারপর আমি তোমার দেখা পাবো।”

মান্যতার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল নোটিফকেশনের টুংটাং আওয়াজে। রাসেল তাকে ম্যাসেজ দিয়েছে। মান্যতা ম্যাসেজ চেক করে দেখে রাসেল লিখেছে,”তোকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল।”

“আমারও তোকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল রাসেল।”

“ঠিক আছে, আগে তুই বল।”

“আমি ইটালির ভিসা পেয়ে গেছি। এখন জাস্ট প্লেনে চড়ে উড়াল দেওয়া বাকি।”

“বাহ, তাহলে তো ভালোই। পরশু তাহলে তুই ভিনচেঞ্জোর কনসার্টটা দেখতে পারবি।”

“ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট?”

“কেন জানিস না? তুই কি আদৌ নিউজ পোর্টাল বা ফ্যান গ্রুপ গুলোতে চেক করিস জীবনে?”

“না রে। তুই তো জানিস আমি ফোনে শুধু ইউটিউবে গিয়ে ভিনচেঞ্জোর গান শুনি আর নাহলে ম্যাসেঞ্জারে টুকটাক চ্যাটিং।”

“হুম। তো যাইহোক, তুই তো তাহলে ভালোই সুযোগ পেয়ে গেলি।”

“ঠিক বলেছিস, এখন এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে হবে।”

~~~~
মহিউদ্দিন বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিলে। একটু দূরে বসেই কাঁথা সেলাই করছিলেন রাহেলা বেগম। এমন সময় মান্যতা এসে বলল,”আব্বু, আম্মু তোমাদের কিছু বলার ছিল।”

“হ্যাঁ, বল।”

বলে উঠলেন মহিউদ্দিন। মান্যতা বলল,”তোমরা দ্রুত আমার জন্য প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করো। আমি কালই ইটালির জন্য রওনা দিতে চাই।”

মহিউদ্দিন অবাক হয়ে বললেন,”কাল? এত তাড়াহুড়ো কেন? আজই তো তুই ভিসা হাতে পেলি। আর ক’টা দিন অপেক্ষা কর। আমি তোর খালার সাথে কথা বলি।”

“ওহ, আব্বু। তুমি বুঝছ না কেন? শুভ কাজে একদম দেরি করতে নেই।”

রাহেলা বেগম বলে ওঠেন,”ও তো ঠিকই বলছে। শুভ কাজে তো দেরি করতে নেই। তুমি ওর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা হতে তো কিছুদিন সময় লাগবে। ও নাহয় ততদিন ঐ দেশটা একটু ঘুরে দেখুক। কারণ এরপর তো ওকে ওখানেই থাকতে হবে।”

“কিন্তু ওকে একা আমি কিভাবে ভিনদেশে পাঠাতে পারি? মেয়েটা তো অনেক ছোট।”

“ছোট কই? ওর তো ১৮ বছর হয়েই গেছে। ও ঠিক সব সামলে নেবে। তাছাড়া ওখানে আপু আছে তো। আমি জানি আপু ওকে নিজের মেয়ের মতোই আগলে রাখবে।”

“তারপরেও…”

“শোনো মান্যতার বাবা, মান্যতা যখন যেতে চাইছে তখন তুমি এত আপত্তি করছ কেন? আমি আপুর সাথে কথা বলছি। আপু অনুরাগকে পাঠিয়ে দেবে বিমানবন্দরে মান্যতাকে রিসিভ করার জন্য। তুমি দেখো তো অনলাইনে প্লেনের টিকিট বুক করা যায় কিনা। আর মান্যতা তুই যা নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখ। কালকের ফ্লাইটেই তুই ইটালিতে যাবি।”

মান্যতা খুশি হয়ে নিজের রুমে চলে আসে। তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে নাচতে শুরু করে দেয়। রেডিওতে ছেড়ে দেয় ভিনচেঞ্জোর গাওয়া একটি গান। মান্যতা নাচতে নাচতে বলে,”আমি আসছি ভিনচেঞ্জো। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো।”

~~~~~~
মান্যতাকে নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে তার বাবা মহিউদ্দিন। আর কিছুক্ষণ পরেই মান্যতার ফ্লাইট। এখন চলছে চেকিং। মান্যতার হৃদস্পন্দন আজ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যতবারই সে ভাবছে এবার হয়তো সামনাসামনি ভিনচেঞ্জোর দেখা পাবে ততোবারই তার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। মান্যতা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুণে চলেছে। অবশেষে সেই সময় এলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ফ্লাইট। সে একটু পরেই প্লেনে আরোহন করবে। এমন সময় মহিউদ্দিন তাকে বলে দিল,”সাবধানে থাকবি কিন্তু ওখানে গিয়ে নিজের খালা-খালুর কথা শুনে চলবে। ওখানে কিন্তু সবকিছু তোর অচেনা। তাই একা একা কোথাও যাস না। প্রতিদিন বাসায় ফোন করে কথা বলবি৷ আমরা কিন্তু চিন্তা করবো।”

“ঠিক আছে, বাবা। তোমাকে এত চিন্তা করতে হবে না। আমি সব সামলে নেব। বাই বাই। টেক কেয়ার।”

“সাবধানে যাস।”

~~~~~
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার ফ্লাইটের জার্নির পর অবশেষে ইটালির মাটিতে পা রাখল মান্যতা। ইটালিতে পৌঁছে গিয়ে তার আনন্দের আর শেষ থাকল না৷ মান্যতা প্লেন থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে অনুরাগকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু তার কোন দেখাই পেলো না। মান্যতার একটু একটু ভয় করতে লাগল। হঠাৎ করেই কেউ মান্যতাকে স্পর্শ করল। মান্যতা ভয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই সে বলে উঠল,”ওয়েলকাম টু ইটালি। সুইটহার্ট।”

“মিস্টার অনুরাগ?”

“হুম, আমিই। কেন চিনতে পারছ না?”

“সেটা নয়। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।”

“থাক, আর ভয় পেতে হবে না। চলো এসো আমার সাথে।”

অনুরাগকে অনুসরণ করে চলতে লাগল মান্যতা। হঠাৎ করেই তার সাথে একটা লোকের ধাক্কা লাগায় লোকটি বলে উঠল,”Scusa.”

বলেই চলে গেল। মান্যতা অনুরাগকে বললো,”আচ্ছা লোকটা আমাকে Scusa বলল কেন? এটা কি কোন গালি নাকি? ভুল করে তো একটু ধাক্কাই খেয়েছি সেইজন্য গালি দিতে হবে। দাঁড়ান আমি লোকটাকে দেখে নিচ্ছি। বাংলায় এমন সব গালি দিব যে…”

“আরে কাম ডাউন। উনি কোন গালি দেননি। ইটালিয়ান ভাষায় Scusa মানে হচ্ছে sorry বা দুঃখিত।”

“ওহ।”

“এইরকম আরো কিছু বেসিক ওয়ার্ড আছে যা তোমায় জানতে হবে। যেমন Grazie মানে ধন্যবাদ, Buongiorno মানে শুভ সকাল, Ti Amo মানে…”

বলেই মুগ্ধ চোখে মান্যতার দিকে দেখতে লাগল অনুরাগ। মান্যতা বলল,”কি হলো থেমে গেলেন কেন? বলুন তিয়ামো মানে কি?”

“বলব তার আগে তুমি আমায় বলো, তি আমো।”

“এর মানেটা তো আগে জানতে হবে।”

“তুমি আমায় বলো তাহলেই জানবা।”

“তি আমো।”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

“কি?”

“এটার মানে।”

মান্যতা মনে মনে বললো,”এই কথাটা তো তাহলে আমি আমার ভিনচেঞ্জোকেই বলবো। তি আমো বলেই তাকে প্রপোজ করব। আমি শুধু ভিনচেঞ্জোকেই ভালোবাসি মিস্টার অনুরাগ। জানি আমি হয়তোবা শুধু মাত্র নিজের স্বার্থে আপনার ফিলিং নিয়ে খেলছি তবে এছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। কারণ everything is fare in love and war.”

~~~
ইটালিতে মান্যতার দ্বিতীয় দিন। আজ মান্যতা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। কারণ আজ রাতেই রোমে ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট। সৌভাগ্যবশত অনুরাগরাও রোমের বাসিন্দা। অনুরাগ মান্যতার রুমে এসে বললো,”মান্যতা, তুমি কি রোম ঘুরে দেখতে চাও?”

মান্যতার তো এসব ঘোরাঘুরি নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। সে তো এখানে এসেছে ভিনচেঞ্জোর জন্য। তাই সে বলে,”আমি রোমে ঘুরতে চাই না। আপনি আমার জাস্ট একটা উপকার করে দিন আমায় ভিনচেঞ্জোর কনসার্টের টিকিট এনে দিন। আসলে আমি ভিনচেঞ্জোর অনেক বড় ফ্যান। আজ প্রথমবার উনি সামনাসামনি কনসার্ট করবেন।”

“ভিনচেঞ্জোর কনসার্ট?? বাট সেটার সব টিকিট তো মনে হয়ে সেল হয়ে গেছে।”

“আপনি একটু দেখুন না যদি ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা?”

“আচ্ছা, দেখছি।”

বলেই অনুরাগ বাইরে এসে কাউকে ফোন করল। তারপর আবার রুমে গিয়ে মান্যতাকে বলল,”টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। চিন্তা করো না তুমি কনসার্ট দেখতে পারবা।”

“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”

~~~~~
রাতে মান্যতা গেল অনুরাগের রুমে তাকে ডাকতে। গিয়ে দেখল অনুরাগের রুমে গিটারসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। অনুরাগ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মান্যতাকে দেখে বললো,”আপনি রেডি তো?”

“হুম। আচ্ছা, আপনার ঘরে তো অনেক মিউজিক ওর্নামেটস দেখছি। আপনি কি গান করেন?”

“টুকটাক।”

“ওহ।”

“তাহলে চলা যাক।”

“হুম।”

~~~~
ভিনচেঞ্জোর কনসার্টে এসেছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের হাতে রয়েছে অসংখ্যা প্ল্যাকার্ড। অনেক মেয়েরাই চিৎকার করে বলছে “তি আমো ভিনচেঞ্জো।”

“এসব দেখে মান্যতা তেলে বেগুনে জ্বলে যাচ্ছে। তার ভিনচেঞ্জোকে কেন অন্য মেয়েরা ভালোবাসবে?”

অনুরাগ মান্যতার পাশেই ছিল। হঠাৎ করে অনুরাগের ফোনে একটা কল আসে৷ অনুরাগ খুবই নিচু সুরে কথা বলে৷ তারপর মান্যতাকে বলে,”তুমি এখানেই থেকো। আমার কিছু জরুরি কাজ আছে। আমি আসছি। কোথাও যেওনা কিন্তু? আর আমার ফোন নাম্বার তো আছেই। কল দিও।”

“আচ্ছা।”

অনুরাগ চলে যায়৷ অনুরাগ যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই স্টেজে এসে উপস্থিত হয় ভিনচেঞ্জো। লক্ষ্য লক্ষ্য জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সবার হই হুল্লোড় বেড়ে যায়। সবাই ভেবেছিল আজ ভিনচেঞ্জোকে সামনাসামনি দেখতে পারবে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সে এসেছে মাস্ক পড়ে। লক্ষ্য লক্ষ্য তরুণী আশাহত হলো।

to be continue

গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০৩

0

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার

“শেষ বারের মতো বলছি বিয়েটা করবি কি না বল।”

নিজের মায়ের মুখে এই প্রশ্নটা শুনে স্বাভাবিকভাবেই রেগে গেল মান্যতা। এক প্রকার চিৎকার করে বলল,”করব না আমি বিয়ে। আর কতবার বলতে হবে তোমায়?”

এরইমধ্যে মান্যতার বাবা মহিউদ্দিন দৌড়ে চলে এলেন৷ তাকে দেখে রাহেলা বেগম বললেন,”তুমি তোমার মেয়েকে বোঝাও ও কিন্তু হাতের লক্ষ্ণী পায়ে ঠেলছে। অনুরাগের মতো ছেলে কিন্তু তোমার মেয়ের জন্য আর পাবে না। ও বিদেশে সেটেল্ড। ওকে বিয়ে করলে তোমার মেয়ের জীবন সোনায় সোহাগা।”

মান্যতা মহিউদ্দিনের সামনে বলতে লাগল,”আমি এখন বিয়ে করতে চাই না আব্বু। আমি পড়তে চাই। মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর আমি বিয়ে কর‍তে চাই।”

রাহেলা বেগম রেগে বললেন,”তোমার নিজের পায়ে দাঁড়ানো আমি বের করছি। হয় ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাও আর নয়তো….”

মহিউদ্দিন নিজের স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,”তুমি চুপ করো রাহেলা। আমি আমার মেয়ের কথাই শুনব। ও যখন এই বিয়েটা করতে চাইছে না তখন ওকে জোর করা মোটেই ঠিক হবে না। আমি আমার মেয়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়ে দিতে চাই না।”

“কিন্তু…”

“কোন কিন্তু নয়। আমি এই নিয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না। আমার যা বলার বলে দিয়েছি।”

“তুমি তো বলেই খালাস। আমি আপু আর দুলাভাইকে এখন কি বলব? ওনারা যে অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন যে আমাদের মেয়ের সাথে অনুরাগের বিয়ে দেবেন। এখন কি আমি ওনাদের মুখের উপর গিয়ে না বলে দিব?”

“তোমাকে কিছু বলতে হবে না রাহেলা। যা বলার আমি বলব।”

“যা ইচ্ছা করো। তোমাদের বাবা মেয়েকে একসময় এর জন্য পস্তাতে হবে দেখে নিও।”

এই বলে রাহেলা বেগম হনহন করে মান্যতার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাহেলা বেগম বেরিয়ে যেতেই মান্যতা নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ইউ আর দা বেস্ট আব্বু। আই লাভ ইউ।”

“লাভ ইউ টু মাই ডিয়ার ডটার।”

~~~~~~~
মান্যতা নিজের ঘরে বসেই ফেসবুক স্ক্রল করছিল। এমন সময় রাসেল তাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দেয়। মান্যতা সেদিনের ঘটনার জন্য রাসেলের উপর রেগে ছিল তাই সে ম্যাসেজের কোন রিপ্লাই দেয় না। কিন্তু রাসেল একের পর এক ম্যাসেজ দিতেই থাকে৷ শেষে বাধ্য হয়ে মান্যতা রাসেলকে রিপ্লাই করে,”আরে বা** ম্যাসেজ দিচ্ছিস কেন? তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।”

“তোকে ভিনচেঞ্জো নিয়ে একটা জরুরি খবর দেওয়ার ছিল। আচ্ছা, তুই যদি আমার সাথে কথা বলতে না চাস তাহলে ঠিক আছে।”

“এই না, না। তুই বল কি বলবি।”

“তুই তো আমার সাথে কথা বলবি না।”

“এই মেয়ে মানুষদের মতো ন্যাকামি না করে যা বলার বল।”

“তার মানে তুই স্বীকার করে নিচ্ছিস মেয়েরা ন্যাকা? তাহলে তুইও ন্যাকা?”

“ধৈর্যের কিন্তু একটা সীমা থাকে রাসেল।”

“ওকে কাম ডাউন। আমি বলছি। একটা নতুন নিউজ বেরিয়েছে দেখিস নি?”

“কি নিউজ?”

“ভিনচেঞ্জোর ঠিকানা নিয়ে।”

“কি?”

“হুম। যতদূর জানা যাচ্ছে ভিনচেঞ্জো থাকে ইটালিতে।”

“ইটালি?”

“হুম। সেরকমই খবর। বিশ্বাস না হলে তুই যেকোন অনলাইন নিউজ পোর্টালে দেখতে পারিস বা ফ্যান গ্রুপেও দেখতে পারিস।”

মান্যতা আর সময় নষ্ট না করে তাই করে। আর এতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। সত্যিই ভিনচেঞ্জোর ঠিকানা ইটালিতে।

মান্যতা বলে ওঠে,”এত দিনে ভিনচেঞ্জোর খোঁজ পেলাম। কিন্তু এখন আমি ইটালিতে যাব কিভাবে? কিছু একটা তো করতেই হবে আমায়।”

মান্যতা কিছুক্ষণ ভেবে বলে,”অনুরাগই পারে আমায় ভিনচেঞ্জোর কাছে পৌঁছে দিতে। তাই এখন আমায় ওরই সাহায্য নিতে হবে।”

~~~
সকলে রাতের খাবার খেতে ডিনার টেবিলে উপস্থিত হয়েছে। অনুরাগ, তার মা-বাবা, মহিউদ্দিন সবাই। মান্যতাও এসে হাজির হয়েছে। রাহেলা বেগম গোমড়া মুখে সবাইকে খাবার পরিবেশন করছেন। কারণ তিনি জানেন আজই মহিউদ্দিন হয়তো অনুরাগের মা-বাবার সামনে মান্যতার বিয়েতে নিমরাজি থাকার কথাটা বলে দেবেন।

আর হলোও তাই। অনিতা খান যখনই বলে উঠলেন,”আসলে আমার অনুরাগ আর মান্যতার সম্পর্কে কিছু বলার ছিল। তোমরা তো জানোই আমি এই দেশে আমার ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজতেই এসেছি। আর আমার মান্যতাকে অনেক বেশি পছন্দও হয়েছে। এখন তোমরা কি বলো?”

মহিউদ্দিন তখন বলতে উদ্যত হন মান্যতার অমতের কথা। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই মান্যতা বলে ওঠে,”আমি এই বিয়েতে রাজি আছি খালা। এখন তুমি আব্বু-আম্মুর মতামত নাও।”

মান্যতার এমন উত্তর তিন জোড়া বিস্মিত চোখ তার দিকেই তাকায়। অনিতা খান এবং তার স্বামী খুশি হলেও মহিউদ্দিন, রাহেলা, অনুরাগ এই তিনজনই মান্যতার হঠাৎ এমন ৩৬০° টার্ন নেওয়ায় অনেক বেশি অবাক হয়ে যায়। মহিউদ্দিন মান্যতার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”এটা তুই কি বলছিস মান্যতা? তুই না একটু আগেই বললি..”

“আগের কথা বাদ দাও আব্বু। এখন যা বলছি তাই ঠিক।”

রাহেলা বেগম অবশ্য নিজের মেয়ের উপর এবার বেজায় খুশি হন। মনে মনে বলেন,”যাক, মেয়েটার তাহলে সুমতি হয়েছে।”

অনুরাগ মান্যতার দিকে তাকিয়ে ছিল বিস্মিত নয়নে। যেই মেয়ে কাল অব্দি তাকে বিয়ে করতে নারাজ ছিল, যার জন্য সে এত ছলচাতুরী করল তার হঠাৎ এমন ভাবে বদলে গেল। এদিকে মান্যতা মনে মনে বলছিল,”ভিনচেঞ্জোর কাছে পৌঁছানোর জন্য এখন এটাই আমার কাছে একমাত্র পথ। তাই আমাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও এই বিয়েতে মত দিতে হলো।”

অনিতা খান বললেন,”সবারই যখন বিয়েতে মত আছে তাহলে শুভ কাজে আর দেরি কেন? দ্রুতই কাজি ডেকে দুজনের চার হাত এক করে দেই।”

রাহেলা বেগম একমত জানিয়ে বলে,”হ্যাঁ, তাই হোক।”

“না জানি এই মেয়ে আবার কখন বেকে বসে। তার থেকে ভালো দ্রুতই বিয়েটা হয়ে যাক।”(মনে মনে)

মান্যতা বলে,” আমার একটা আর্জি ছিল খালা।”

“হ্যাঁ, জানাও তোমার আর্জি।”

“আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা আমি বিদেশের মাটিতে বিয়ে করব। তাই আমি চাই এই দেশে নয় ইটালিতে গিয়ে বিয়েটা করতে। যদি তোমাদের কোন আপত্তি না থাকে।”

“আপত্তি থাকবে কেন? অনুরাগ তুমি দেখো তো মান্যতার পাসপোর্ট ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের তো দ্রুতই এখান থেকে যেতে হবে। এরপর কয়েক মাস পর মান্যতার পাসপোর্ট ভিসা পেলেই ওকে নিয়ে ইটালিতে যাব। তারপর ওখানে গিয়েই তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা হবে।”

মান্যতা মনে মনে বলে,”একবার শুধু আমাকে ইটালিতে যেতে দাও। তারপর আমি ঠিক খুঁজে নেব আমার ভিনচেঞ্জোকে। বিয়ে করলে আমি শুধু ওকেই করব। আর কাউকে নয়।”

~~
মান্যতা রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে যাবে এমন সময় অনুরাগ তার রুমের বাইরে এসে নক করে বলল,”একটু বাইরে আসবে তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”

মান্যতা দরজার কাছে গিয়ে বলে,”হ্যাঁ, বলুন।”

“তুমি কি সত্যি এই বিয়েতে রাজি আছ? নাকি বাধ্য হয়ে মত দিয়েছ?”

“আমি মন থেকেই রাজি হয়েছি।”

“কিন্তু তুমি তো কাল অব্দি আমায় পছন্দ করতে না তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো তোমার?”

“কে বললো আমি আপনাকে পছন্দ করতাম না? আমি তো প্রথম দেখাতেই আপনাকে পছন্দ করে ফেলি।”

“সত্যি বলছ?”

“হুম।”

“তাহলে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এমন নাটক করলে কেন?”

“আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম যাতে আপনি ১০০ তে ২০০ পেয়ে জিতেছেন।”

“সত্যিই তাই?”

“হু”

“আমার কেন জানি তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। তোমার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ আমাকে ঠকিও না। জীবনে একবার খুব বাজে ভাবে ঠকে গেছিলাম। দ্বিতীয় বার আর ঠকতে চাই না।”

মান্যতা কিছু না বলে নির্বিকার চিত্তে অনুরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুরাগ বলে, “আমি যাচ্ছি। তুমি দরজাটা লক করে দাও।”

to be continue

গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০২

0

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অনুরাগ অনিমেষ চেয়ে রইল মান্যতার দিকে। মান্যতাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে। সপ্তদশী তরুণীর রূপ লাবন্য যেন তাকে আরো বেশি করে আড়ষ্ট করে তুলল। মান্যতাও খেয়াল করল অনুরাগ তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিজনক ঠেকছিল তার কাছে। এভাবে একজন পুরুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি তার মনে অসন্তোষ তৈরি করল। মান্যতা বিরক্তির সহিত বিড়বিড় করে বলল,”এমন করে দেখছে যেন চোখ দিলেই গিলে খাবে। অসহ্য লোক একটা। আমার ভিনচেঞ্জো ছাড়া আর কাউকে আমি আমার দিকে এভাবে চেয়ে থাকার অধিকার কিছুতেই দেব না।”

এমন ভাবনা থেকেই নিজের গলায় জড়ানো ওড়নাটা দিয়ে নিজের মাথাটা খুব ভালো ভাবে ঢেকে নিলো। ওড়নাটা এমন ভাবে মুখে পেচিয়ে নিলো যেন অনুরাগ তার মুখ দেখতে না পায়। তারপর গিয়ে মান্যতা একটু স্বস্তি পেল।

তবে তার এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাহেলা বেগম অনুরাগকে বললেন,”তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন বাবা? সবাই তো খেতে বসে পড়েছে তুমিও এসো।”

অনিতা খানও নিজের ছেলেকে বলেন,”হ্যাঁ, তাই তো৷ তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এসো, বসো এখানে।”

অনুরাগ সুযোগ বুঝে একদম মান্যতার সামনাসামনি চেয়ারটায় বসে পড়ে। যার ফলে তার আর মান্যতার চেহারা দেখতে কোন অসুবিধা হয় না। এ বিষয়টা মান্যতাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। কিন্তু সে না পারছিল কিছু সইতে আর না পারছিল কিছু বলতে।

মান্যতার মনের অবস্থা ঠিক বুঝতে পারছিল অনুরাগ। তাই তো সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আর মনে মনে বললো,”এভাবেই না চাইতেই একসময় তুমি আমার জীবনে জড়িয়ে যাবে সুইটহার্ট।”

~~~
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর ১২ টা। দেশে বর্তমানে চলছে শীতের আমেজ। তাই এই ভরদুপুরেও সুয্যিমামার কোন দেখা নেই। আকাশ ঢেকে আছে ঘন কুয়াশার আস্তরণে। মান্যতাদের বাড়ি রাজশাহীতে। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই শীতের প্রকোপ বেশি। তাই হাড় কাপানো ঠান্ডা থেকে বাঁচতে মান্যতা কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন চাপছিল। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। মান্যতা বিরক্ত কন্ঠে বলে,”নক না করে ভেতরে আসুন তো!”

অনুরাগ মান্যতার রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল,”কারো রুমে নক না করে প্রবেশ করাকে অভদ্রতা মানা হয় ইটালিতে।”

মান্যতা খানিক খোঁচা দিয়েই বলল,”একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করা বোধহয় আপনাদের ইটালির সভ্যতা?”

অনুরাগ কিছু বলল না। মান্যতা চাইল অনুরাগের পানে। তার পরণে নেই কোন শীতের কাপড়। এই প্রচণ্ড শীতেও ছেলেটা এত হালকা পোশাকে কিভাবে আছে ভেবে পায়না মান্যতা। অনুরাগের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার কি ঠান্ডা লাগে না?”

অনুরাগ স্মিত হেসে বলে,”এটাকে আবার কেউ ঠান্ডা বলে নাকি? আমার কাছে তো এসব ঠান্ডা কিছুই না। আমাদের ইটালিতে তো টেম্পারেচার মাইনাসে নেমে যায়, স্নো ফলও হয়। তার তুলনায় এখানকার ঠান্ডা তো নস্যি। তাই আমার কিছুই মনে হচ্ছে না।”

“অথচ আমরা এই শীতেই কাঁবু হয়ে যাচ্ছি!'”

“আমার সাথে ইটালিতে চলো। তারপর দেখবা ঠান্ডায় একদম অভ্যস্ত হয়ে যাবা।”

“আমার কোন ইচ্ছা নেই আপনার ইটালি ফিটালিতে যাওয়ার। আপনি যান তো এখান থেকে।”

“আমাকে নিয়ে তোমার সমস্যাটা কি মান্যতা? আমি কি পাত্র হিসেবে খুবই খারাপ?”

মান্যতা বিরক্তিকে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলল,”আমি এত কিছু জানি না। আমি তো আপনাকে বলেইছি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তাহলে আপনি বুঝছেন না কেন?”

“ওকে। আমি বুঝছি সবটা।”

“হ্যাঁ, বুঝুন।”

” তোমার বয়ফ্রেন্ডের নাম যেন কি বলেছিলে?”

“রাসেল।”

“ইয়াহ, দ্যাটস রাস্কেল। ওর সাথে আমায় দেখা করাও।”

“কে..কেন? আপনি ওর সাথে দেখা করে কি করবেন?”

“এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। তোমাকে যা বলছি করো। আদারওয়াইজ আমি কিন্তু…”

মান্যতার কেন জানি খুব ভয় করতে লাগল। অনুরাগের কথা শুনে তাকে ভীষণ সিরিয়াস লাগছে। যদি কোন উল্টাপাটা কিছু করে দেয়। এমন ভাবনা থেকেই মান্যতা রাসেলকে ম্যাসেজ করে। ম্যাসেজে লিখে,”তুই এক্ষুনি সানরাইজ ক্যাফেতে চলে আয়। কুইক। আজ তোকে আমার বয়ফ্রেন্ডের এক্টিং করতে হবে সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নিয়ে আসবি। আমিও ওখানে যাচ্ছি। সি ইউ।”

ম্যাসেজটা সেন্ড করার পর মান্যতা অনুরাগের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনার খুব শখ না আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিট করার? বেশ, তাহলে চলুন আমার সাথে। আজ আমি আপনার শখ পূরণ করেই দেই।”

~~~~
ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে রাসেল ও অনুরাগ। তাদের মাঝে বসে আছে মান্যতা। অনুরাগ বেশ কিছুক্ষণ ধরে রাসেলকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে। এরপর হঠাৎ করেই ভারী কন্ঠে বলে ওঠে,”তুমিই তাহলে সেই রাস্কেল!”

“রাস্কেল হতে যাবো কেন? আমি রাসেল। বয় শূণ্য রয় আকারে রা, দন্ত সয় রিসিকার আর দন্ত স রাসেল।”

“বেশি কথা না বলে চুপ করে থাকো ষ্টুপিড।”

রাসেল অসহায় চোখে মান্যতার দিকে তাকায়৷ মান্যতা অনুরাগকে বলে,”আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডকে এভাবে অপমান করতে পারেন না মিস্টার অনুরাগ খান।”

“আমি কি পারি আর কি পারি না সেটা তুমি এখন বুঝতে পারবা। এইটুকুনি একটা ছেলে যার নাক টিপলে দুধ বেরোবে, তার সাথে কিনা তুমি রিলেশনে গেছ। আচ্ছা, তুমি যখন ওর সাথে রিলেশনে আছ তখন আমি একটা কাজ করি ওর সাথেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করি।”

মান্যতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,”মা..মানে..”

“মানেটা এক্ষুনি বুঝতে পারবে।”

বলেই অনুরাগ রাসেলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”এই রাস্কেল মানে রাসেল তুমি এক্ষুনি তোমার গার্ডিয়ানের ফোন নম্বর দাঁড়াও। আমি মান্যতার মা-বাবাকেও ফোন করছি। আজই তোমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা প্রান্তি হোক।”

রাসেল এবার বেশ ভয় পেয়ে যায়। মান্যতাকে বলে,”এই মান্যতা তোর খালাতো ভাই এসব কি বলছে? আমাকে কি এখন সত্যি তোকে বিয়ে করতে হবে। তাহলে জেসমিনের কি হবে?”

অনুরাগ বলে,”জেসমিন? কে এই জেসমিন? ওহ তোমার আরেকটা গার্লফ্রেন্ড। দেখো মান্যতা আমি তোমাকে বলেছিলাম না এরকম ছেলেরা প্লেবয় হয়। এখন মিললো তো আমার কথা? এই ছেলে তোমার এত বড় সাহস তুমি এই বয়সেই মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলছ, তোমাকে তো আমি…”

“বিশ্বাস করুন ভাই আমার কোন দোষ নেই, আমি নির্দোষ। সব দোষ ঐ মান্যতার। আমি ওর বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড কিছু নই। আমরা তো জাস্ট ফ্রেন্ড!”

“ওহ! এখন গার্লফ্রেন্ড জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেল তাইনা? আমার বাইশেপস দেখেছ? এই হাতের দাবাং মার্কা চ*-ড় খেলে তোমার সব ফাতরামি বেরিয়ে যাবে।”

রাসেল এবার ভয়ে মান্যতার ম্যাসেজ অনুরাগকে দেখিয়ে বলে,”এই দেখুন ভাই। মান্যতাই আমাকে নাটকটা করতে বাধ্য করেছিল। আমি কিছু করি নি।”

অনুরাগ বাকা হাসি দিয়ে মান্যতার দিকে তাকিয়ে বলে,”ওহ তাহলে এই ব্যাপার।”

মান্যতা চিৎকার করে বলে ওঠে,”তুই আসলেই একটা রাস্কেল। দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। নয়তো…”

রাসেল আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে উঠে দাঁড়িয়ে ভো দৌড় দেয়। অনুরাগ তখনো হাসতে ব্যস্ত। মান্যতা বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। সেও উঠে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় অনুরাগ তার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,”এবার আর তোমাকে আমি কোন সুযোগ দেব না সুইটহার্ট। আমার স্ত্রী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও। তোমার কোন নাটক আর চলবে না।”

to be continue

গোধূলি লগ্নে হলো দেখা পর্ব-০১

0

#গোধূলি_লগ্নে_হলো_দেখা
#ইয়াসমিন_খন্দকার
#Part_1

“আমার বয়স এখনো ১৮ হয়নি তাই আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারেন না মিস্টার.. হোয়াট এভার।”

মান্যতার মুখে এহেন কথা শুনে ফিচেল হাসল অনুরাগ। নিজের টাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে চোখ মে’রে বলল,”আমি তো তোমাকে এখনই বিয়ে করতে চাইনি সুইটহার্ট। আমি তো অপেক্ষা করতে রাজি আছি। তোমার বয়স ১৮ হলেই আমি তোমাকে বিয়ে করব। আমি এটাও জানি তোমার বয়স ১৭ বছর ১১ মাস ১৩ দিন। সুতরাং আর মাত্র ১৭ দিন পেরোলেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব।”

মান্যতা দমল না। সে বলল,”আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”

“কেন সুইটহার্ট আমি কি খুব খারাপ?”

“আপনি বুড়ো। আপনার বয়স ২৫+ আর আমি ১৭ বছরের একটা নাদান মেয়ে। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবো।”

“তোমার বয়ফ্রেন্ডের বয়স কত?”

“১৯ বছর বয়স।”

“ওর নামটা যেন কি?”

“রাসেল। কেন?”

“এত কম বয়সে যে ছেলেরা প্রেম করে তারা সাধারণত প্লেবয় হয়।”

“সে প্লেবয় হোক বা যেই বয় হোক ও তো আপনার মতো আধবুড়ো নয়। তাই আমি ওকেই বিয়ে করব।”

“২৫ বছর কেউ আধবুড়ো হয় কিভাবে?”

“ঐভাবে।”

বলেই দৌড়ে নিজের রুমে চলে এলো মান্যতা। অতঃপর দরজা বন্ধ করে দিল। অনুরাগ মান্যতার এহেন কান্ড দেখে হাসতে শুরু করে দিলো। আদতে মান্যতা হলো অনুরাগের খালাতো বোন। অনুরাগ যখন অনেক ছোট তখন তার বাবা মা তাকে নিয়ে ইটালিতে চলে যায়। অনুরাগ সেখানেই বেড়ে উঠেছে। বিদেশে বড় হলেও অনুরাগকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। চালচলন, কথাবার্তা সবদিকেই তার বাঙালিয়ানার স্পর্শ। সে যেন একদম খাটি বাঙালি। বিদেশের সুন্দরী রমণীরা অনুরাগের মন জয় করতে পারে নি। সে চেয়েছে নিজের দেশের কোন মেয়েকে বিয়ে করতে। এজন্যই তো সে ফিরে এসেছে নিজের জন্মভূমিতে। এখন তার ইচ্ছা এখান থেকেই বউ নিয়ে একেবারে ফিরবে।

অনুরাগের মা অনিতা খান নিজের বোনঝিকেই পছন্দ করেছেন নিজের ছেলের বউ হিসেবে। অনুরাগের বাবারও এই সম্পর্কে কোন আপত্তি নেই। আর বেচারা অনুরাগ তো একবারের দেখাতেই মান্যতার প্রেমে পড়ে গেছে। তাই সে ভেবে নিয়েছে বিয়ে করলে মান্যতাকেই করবে। সে মান্যতা যতই নিমরাজি হোক না কেন!

~~~~~
আপন শয়ন কক্ষে এসে নিজের ফোনটা হাতে তুলে নিলো মান্যতা। এরপর ধীরেসুস্থে ডায়েল করল কাঙখিত নম্বরটিতে। একবার, দুবার করে পাঁচবার ফোনের রিং বেজে চলেছে কিন্তু রাসেলের ফোন রিসিভ করার নাম নেই। মান্যতার ভীষণ রাগ হতে লাগল। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”রাসেলের বাচ্চা রাসেল ফোনটা রিসিভ কর। নাহলে তোর একদিন কি আমার দশদিন।”

কিছুক্ষণ বাদেই রাসেল ফোনটা রিসিভ করল। রিসিভ করেই ন্যাকা সুরে বলল,”সরি জান একটু লেইট হয়ে গেল। আসলে ওয়াশরুমে ছিলাম।”

“তোর এসব জানটান বাদ দে নাহলে তোকে গিয়ে ওয়াশরুমের কমোডে চু**বিয়ে আসব।”

“আরে জা…না মানে দোস্ত তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?”

“কিছু হয়েছে মানে? কি হয়নি সেটা বল। আমার ফ্যামিলি আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”

“ভালোই তো অনেকদিন পর বিয়ের দাওয়াত খেতে পারবো। মেনুতে বিরিয়ানি থাকছে তো?”

“বিরিয়ানি আমি তোর মাথায় বানাবো! আমি পড়েছি বিপদে আর তুই মশকরা করছিস।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। কুল, কুল। বল কি সমস্যা।”

“তুই তো জানিস আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।”

“না করার কারণ কি দোস্ত? তুই কি কাউকে ভালো টালো বাসিস?”

“হ্যাঁ, আমি ভিনচেঞ্জোকে ভালোবাসি।”

“ভিনচেঞ্জো মানে তোর ঐ সিক্রেট সুপারস্টার?”

“হ্যাঁ, যার ভিডিও আমি সবসময় দেখি। কি সুন্দর গান গায়, কি সুন্দর ছবি আঁকে। সে দেখতেও নিশ্চয়ই খুব হ্যান্ডসাম হবে।”

“হতেই পারে।”

“হতে পারে না হবেই। আমি ভিনচেঞ্জো ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।”

“শোন, মান্যতা। তোকে একটা কথা বলছি। এই ভিনচেঞ্জো হলো একজন ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রিটি যার চেহারাটা পর্যন্ত কেউ দেখে নি। এমনকি সে কোথায় আছে এটাও কেউ জানে না। গোটা বিশ্বে তার কোটি কোটি ফলোয়ার তবুও সে জনসম্মুখে আসে না। তার ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না৷ তুই শুধু শুধু তার অপেক্ষায় বসে থাকবি কেন বল তো?”

“আমি এত কিছু জানি না। আমার তো ভিনচেঞ্জোকেই লাগবে সেটা যে কোন কিছুর বিনিময়েই হোক না কেন।”

“তুই কিন্তু মরীচিকার পিছনে ছুটছিস।”

“সেটা আমার ব্যাপার তোকে এত ভাবতে হবে না। তোকে আমি যেটা বলছি তুই সেটা শোন। তুই প্রস্তুত থাকিস। তোকে যেকোন সময় আমার কাজে লাগবে।”

“আমাকে তোর কি কাজে লাগবে?”

“আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে আমার খালাতো ভাই..নামটা যেন কি… হোয়াট এভার। আমি এই বিয়ে করব না জন্য তাকে বলেছি আমার একটা বয়ফ্রেন্ড আছে নাম রাসেল। মানে তোর কথাই বলেছি।”

“আমি আবার তোর কোন জন্মের বয়ফ্রেন্ড?”

“আরে ভাই চুপ করে আগে আমার কথাটা শোন।”

“হু, বল আমি শুনছি।”

” তোকে আমার খালাতো ভাইয়ের সামনে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার নাটক করতে হবে।”

“কি!!! বাচ্চো কি জান লোগি কেয়া? আমি পারব না।”

“তোকে পারতেই হবে….নাহলে আমি কিন্তু জেসমিনকে বলে দেব যে তুই তলে তলে অন্য মেয়েদের সাথে…”

“এই এমন করিস না প্লিজ। তুই তো জানিস আমি কত কষ্ট করে ওকে পটিয়েছি।”

“যদি নিজের ভালো চাস তাহলে আমার কথাটা শোন।”

“ঠিক আছে বোন ঠিক আছে। তোর কথাই মেনে নিলাম। তুই যা বলবি তাই করব। শুধু তুই জেসমিনকে কিছু বলিস না।”

“এই তো এজন্যই বলে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাকাতে হয়। এখন তুই আমার সব কথা মেনে চললে আমিও জেসমিনকে কিছু বলব না।”

“আচ্ছা মান্যতা একটা কথা বল, তুই কি সত্যি ঐ ভিনচেঞ্জোর আশায় সবসময় বসে থাকবি।”

“হ্যাঁ।”

“যদি আজীবন তার দেখা না পাস, তবে?”

” তাহলে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার জন্যই ওয়েট করব। কারণ আমি ভিনচেঞ্জোকেই নিজের স্বামী মেনে নিয়েছি। তাই তার স্থলে অন্য কাউকে বসানো সম্ভবপর নয়।”

“এসব তোর আবেগের কথা।”

“আবেগের বয়স আমার নেই।”

“এটা তো আবেগেরই বয়স। তুই, আমি আমরা সবাই তো আবেগের বয়সেই আছি।”

“আমি ডিফরেন্ট। তুই বুঝবি না। আমার মেন্টাল এইজ অনেক বেশি৷ আমি তোর মতো ইমম্যাচিউর নই। গট ইট?”

“ইয়া।”

“কল রাখ।”

~~~~
দুপুরের লাঞ্চ করতে ডিনার টেবিলে গিয়ে বসল মান্যতা। তার মা তার পাতে পোলাও, কোরমা তুলে দিলো। মান্যতা বুঝল তার খালার আগমন উপলক্ষেই এসব রান্না হয়েছে। নাহলে তার বাবা যা কৃপণ মাসে একবারও এমন রাজসিক খাবার তাদের পাতে পড়ে না। মান্যতার পাশেই বসে আছে তার ১৩ বছর বয়সী ছোট ভাই মুবিন। সে পোলাওয়ের সুবাস নিয়ে বলতে লাগল,”ইস যদি খালারা এভাবে প্রতিদিন আসত তাহলে আমরা প্রতিদিন এমন খাবার খেতে পেতাম।”

তাদের মা রাহেলা মুবিনের এমন কথা শুনে মুখ বাকিয়ে বলেন,”এমন ভাবে বলছিস যেন সারাদিন না খেয়ে থাকিস! রোজই তো ভালোমন্দ খাস।”

মান্যতা এবার আর থাকতে পেরে বলল,”হ্যাঁ, ঐ তো ডাল, ভাজি আর গরম গরম ভাত। এই তো ভালোমন্দ খাওয়া।”

মুবিন ও মান্যতা সমস্বরে হেসে উঠল। এরমধ্যেই সেখানে চলে আসল অনুরাগ ও তার বাবা-মা। তাদেরকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিলো মান্যতা।

To be continue…

ভালোবাসার রূপান্তর পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

ভালোবাসার রূপান্তর (শেষাংশ)

অন্য এক শহরে থাকত দিয়ার দূর সম্পর্কের খালাতো বোন। দূরত্বের কারণে তাদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ তেমন একটা হয়নি, মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হত। কিন্তু এই বিপদে কেন জানি তার কথাই সর্বাগ্রে মনে পড়ল দিয়ার। সব শুনে নাজিয়া এসে দিয়া আর রিনিকে নিয়ে গেল। নিঃসন্তান নাজিয়া ও তার স্বামীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে দিয়া। কারণ এর কয়মাস বাদে যখন সে লেখাপড়া আরম্ভ করল, তখন রিনিকে দেখে রাখার দায়িত্ব নিল নাজিয়া। এর মাঝে রুদ্র বহুবার ফোন করেছে, দেখা করতে চেয়েছে কিন্তু দিয়ার সেই যে চোখ থেকে রঙিন চশমা খসে পড়েছিল, সেটাই কায়েম থাকল। প্রাথমিক নিস্পৃহ ঠান্ডাভাবের পর রুদ্রকে দেখলে অন্ধরাগে সে শুধু ফুঁসতে থাকত। রুদ্র তার সুন্দর স্বপ্নটাকে চুরচুর করে ভেঙে দিয়েছে। কিছুতেই মন থেকে মাফ করতে পারল না সে রুদ্রকে, দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। তবে যোগাযোগ বজায় থাকে রিনির জন্য।
রিনি একটু বড় হতে রুদ্র মাঝে মাঝে এসে নিয়ে যেত তার কাছে। দুজনের জয়েন্ট কাস্টডি ছিল।

দিয়া মনপ্রাণ ঢেলে দিল লেখাপড়ায়। এত মনোযোগ দিয়ে সে কখনো পড়াশোনা করেনি। দুবছর বাদে এক কোর্সে গ্রুপ প্রেজেন্টেশন করতে গিয়ে পরিচয় হয় রেহানের সাথে। সেও কিছুদিন আগে কানাডায় এসেছে। বয়সে দিয়ার থেকে বছর পাঁচেকের বড়, অবিবাহিত। দিয়াকে দেখে প্রথম দর্শনেই রেহানের ভালো লেগেছিল। দিয়ার দিক থেকে অবশ্য সেরকম কিছুই ছিল না। সে রেহানকে পাত্তাই দিত না। তার মাথায় তখনো আগুন জ্বলছে। রুদ্রর সুবাদে পৃথিবীর সব পুরুষকে সে বিশ্বাসঘাতক মনে করছে। কিন্তু রেহানের সবচাইতে বড়গুণ তার ধৈর্য্য ও তার একনিষ্ঠতা। আর সেটা দিয়ে সে দিয়ার প্রতিটা প্রতিরোধ, প্রতিটা অজুহাত ভেঙে দিতে থাকে।

রেহানের শান্ত সমাহিত ইনফ্লুয়েন্সে দিয়ার ক্ষতবিক্ষত মনে ধীরে ধীরে প্রলেপ পড়তে থাকে, হৃদয় শান্ত হয়ে আসে। কোর্স শেষ হয়ে যাবার পর দুজনে এক অফিসে কো-অপ করে। সেখানে রেহান বহু সাহায্য করতে থাকে। এভাবেই সে একসময়ে দিয়ার মনজয় করে নেয়। গতদুই বছর ধরে তারা সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করছে রিনিকে নিয়ে। আর রুদ্র উইকেন্ডে উইকেন্ডে এসে রিনিকে নিয়ে যায়। দিয়া এখন আগের চেয়ে অনেকটা শান্ত, রুদ্রর সাথে সে স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলে। আগের রাগ সে পুষে রাখেনি।

দূর থেকে রুদ্রকে দেখে এগিয়ে গেল দিয়া। রুদ্রকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত, নার্ভাসও। নার্ভাস হলে সে যে বা হাঁটু নাচাতে থাকে সেটা দিয়ার থেকে ভালো আর কে জানবে? সম্পর্ক বহু আগেই ছিঁড়ে গেছে কিন্তু এসব ছোটখাট জিনিস তো বহু পরিচিত। সেসব ইচ্ছা করলে ভোলা যায় না।

দিয়া রুদ্রের সামনে এসে দাঁড়ায়- এত জরুরী তলব কেন? কি কথা তোমার?
দিয়াকে বেঞ্চে বসতে ইঙ্গিত করে রুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে অস্থিরভাবে পায়চারী করতে আরম্ভ করে। একবার পকেট থেকে সিগারেট বের করে, পরমুহূর্তে সেটা ঢুকিয়ে ফেলে। হয়ত তার মনে পড়ে যে দিয়া সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। এনিয়ে তাদের বহু বাদানুবাদ, মান অভিমান হয়েছে।
বেঞ্চে চুপ করে বসে থাকে দিয়া। রুদ্রকে এই মুহূর্তে কিছু জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। একটু পরে সে নিজে থেকেই বলতে আরম্ভ করবে। ও কোনো কথা পেটে রাখতে পারেনা। আগের দিয়া হলে হয়ত এই মুহূর্তেই খোঁচাখুঁচি আরম্ভ করে দিত। কিন্তু এখনকার দিয়া অনেক পরিণত।

অনেক্ষণ পায়চারী করবার পর রুদ্র দিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়—দিয়া, আমি একটা ভালো চাকরী পেয়ে গেছি।
দিয়ার স্কুলে ঢোকবার একবছরের মাথায় বহু কান্ডকীর্তি করে রুদ্রও অবশেষে স্কুল আরম্ভ করে। মাসকয়েক আগে শেষ করেছে।
শুনে আন্তরিকভাবে খুশী হয় দিয়া। -এ তো খুব ভালো খবর, রুদ্র।
-তবে চাকরীটা এখানে না। আমাকে এলবার্টায় যেতে হবে।
-ওহ। দিয়া কী বলবে ভেবে পায় না। চাকরীর খাতিরে তো যেতেই হবে।
এবারে রুদ্র ঝপ করে বলে বসে- দিয়া, আমাদের বিয়েটা করে ফেলা দরকার।
দিয়া যেন শুন্য থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ল- কী বললে তুমি?
মরিয়া দেখায় রুদ্রকে- ঠিকই বলছি আমি। তোমার তো এই চাহিদাই ছিল, না? যে আমি একটা চাকরী পাব, ভাল চাকরী। তো সেটা তো আমি পুরণ করেই দিলাম। এখন তাহলে আর কিসের আপত্তি তোমার?

দিয়া থ মেরে বসে থাকল। সে কি হাসবে না কাঁদবে? শুধু চাকরি পাওয়া না পাওয়া তাদের সমস্যার মূলে ছিল বলে মনে হয়েছে রুদ্রর কাছে? তারমানে রুদ্রর মেন্টাল ম্যাচিউরিটি এতটুকু বাড়েনি। দশবছর আগে সে যে জায়গায় ছিল, সেখান থেকে সে একচুলও আগায়নি।
ফ্যাঁকাসে হেসে দিয়া কথা শুরু করে- রুদ্র, তুমি কি পাগল হলে? আমাদের যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে সেটা কি তোমার মনে আছে? আর আমি যে এখন অন্যের স্ত্রী সেটাও কি তোমার খেয়াল আছে?
রুদ্র অবুঝের মত বলে- সব মনে আছে, দিয়া। কিন্তু আমি তোমাকে চাই, আমি হাজারবার স্বীকার করছি যে আমি ভুল করেছি। আর এমন হবে না, দিয়া। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।

আগেকার দিয়া হলে গলে যাবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু এখনকার দিয়া অনেক পরিণত। উপরন্ত সে একজন মা। মা হলে মেয়েরা যে খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়।
-রুদ্র, তুমি কি বলছ সেটা কি তুমি ভেবে বলছ? কিভাবে সম্ভব এটা? তাছাড়া তুমি রেহানের কথা ভুলে গেলে? তারও তো একটা দাবী আছে আমার উপরে, নাকি?
একটু থমকে যায় রুদ্র। তারপরে করুণমুখ করে বলে- তুমি আমাকে আর ভালোবাস না, দিয়া?

থমকে যায় দিয়া। এর কী জবাব দেবে সে? কিন্তু আজ তাকে জবাব দিতে হবেই। নাহলে রুদ্র এক অলীক কল্পনা নিয়ে বসে থাকবে, আর কিছুদিন পরপর তাকেও জ্বালাবে।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে ধীরে ধীরে দিয়া বলতে আরম্ভ করে- অবশ্যই ভালোবাসি, রুদ্র। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা, আমার জীবনের প্রথম পুরুষ। তুমি আমার সন্তানের বাবাও। তাই চাইলেও তোমাকে আমি ভালো না বেসে থাকতে পারব না। কিন্তু এখন সে ভালোবাসার পরিবর্তন এসেছে। আগেকার যে আমি তোমাকে অন্ধভাবে ভালবাসতাম, তোমাকে নিয়ে অবসেসড ছিলাম, এখনকার আমি আর তা নই। এখন আমার চোখে তোমার দোষগুণ সব ধরা পড়ে। তোমার গুণের পরিমাণ যেমন প্রচুর, তেমনি তোমার দোষের পরিমাণও কম না। আর এই দোষগুণ মিলিয়ে যে পরিপূর্ণ মানুষ তুমি, তাকে আমি ভালবাসি, তার ভালো চাই। তবে এই ভালবাসাকে তুমি প্রেম বলে ভুল করোনা। আমি আর তোমাকে সেভাবে ভালবাসি না। ভালোবাসি আমার একসময়ের ভালবাসা হিসেবে, আমার সন্তানের বাবা হিসেবে।
-কিন্তু আমি তো তোমাকে চাই। গোঁয়ারের মত বলে রুদ্র।

এবারে একটু কঠোর হয় দিয়া। রুদ্রকে প্রশ্রয় দিলে সে আরো পেয়ে বসবে।— চেয়ে লাভ নাই, রুদ্র। তুমি সেই আগের রুদ্রই রয়ে গেছ। আর আমি মানসিকভাবে তোমাকে পেছনে ফেলে বহুদূর এগিয়ে গেছি। আমি এখন জানি প্রকৃত ভালবাসা কাকে বলে। আর আমার এখনকার জীবন নিয়ে আমি পুরোপুরি সন্তষ্ট।
হতাশভাবে রুদ্র বলে- তুমি কি রেহানকে ভালোবাস?
কিছুক্ষণ চুপ থাকে দিয়া।– হ্যাঁ, রুদ্র। আমি রেহানকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসাটা আমার আগের সেই সর্বস্ব উজাড় করে নিজের জন্য কিছু না রেখে ভালোবাসা না। অনেকটা শান্ত সমাহিত একটা ভালোবাসা। আমি জানি আমার জন্য রেহান আছে, আমিও ওর জন্য আছি। কিন্তু আমরা পরস্পরকে প্রচুর জায়গা দিয়ে রাখি। একে অপরকে গ্রাস করতে চাই না। আর রিনির ব্যপারেও আমরা খুব সিরিয়াস।
মনে শঙ্কা নিয়ে রুদ্রর দিকে তাকায় দিয়া। রুদ্র কি বুঝবে সে কি বোঝাতে চাইছে? সে রুদ্রর ভালো চায়। তাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সে ভালবাসার এখন অন্য রূপ।
কোমলস্বরে এবারে দিয়া বলে- দেখ রুদ্র। আমি তোমার ভালো চাই। একসময়ে তোমার উপরে আমার যে রাগ, ক্ষোভ, হতাশা ছিল সেগুলি আমি মুছে ফেলেছি। কেন জানো? রিনির জন্য। রিনি যেন না দেখে যে তার বাবা মার পরস্পরের জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নাই। আর তোমার ভাল চাই বলেই তোমার ভালো চাকরীর খবর পেয়ে আমি আন্তরিকভাবে খুশী হয়েছি।
-আমি তো তোমাকে ভালবাসি, দিয়া।
-প্লিজ রুদ্র, এই কথাটা আর বলোনা। আমিও তোমাকে ভালবাসি কিন্তু সে ভালবাসার রুপান্তর ঘটেছে। সেজন্য তোমাকে বলছি যে এই অবাস্তব কল্পনা ধরে বসে থেকো না। আমি চাই তুমি স্বাভাবিক জীবন যাপন কর। আর দশটা সাধারণ মানুষের মত বিয়ে কর, থিতু হও। জীবনকে উপভোগ কর, অসম্ভব জিনিসের পিছে মিথ্যে ছুটে বেড়িও না।

ভেঙ্গে পড়া মানুষের মত রুদ্র বেঞ্চিতে ঝপ করে বসে পড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে দিয়ার সেল ফোনটা বেজে উঠে। রেহান।
রুদ্রকে সামলে নেবার জন্য সময় দিতে দিয়া উঠে দাঁড়ায়- রুদ্র, আমাকে এই কলটা নিতে হবে।
একটু দূরে সরে এসে বলে- রেহান?
-হুম, আমি। রিনির ক্লাস শেষ। ওকে তুলে নিয়ে বাসায় ফিরছি আমরা। তুমি কোথায়?
-রুদ্রর সাথে কিছু দরকারী কথা ছিল। সেটাই সারছি এখনো।
-আচ্ছা। রেহানের কাছ থেকে এর বেশী শোনা যায় না, রেহান এর বেশী জানতেও চাইবে না।
একটু ভাবে দিয়া। তারপরে বলে- রেহান, একটা কাজ করতে পারবে? রোজেটা পার্কে চলে আসো প্লীজ। আমি আর রুদ্র এখানেই আছি। রিনি আজ রুদ্রর সঙ্গে থাক। রুদ্র নতুন চাকরী পেয়েছে। বাপ-বেটি মিলে সেলিব্রেট করুক না হয়।
একমুহূর্ত চুপ থেকে রেহান বলে- বেশ তো। বাপ বেটি সেলিব্রেট করবে এ তো ভালো কথা। কিন্তু আমার কি হবে?
-তোমার আবার কি হল?
-এই যে আমি সারা দুনিয়া ড্রাইভ করছি, আমাকে তার জন্য কাউকে এতটুকু ধন্যবাদও দিতে দেখলাম না। রেহানের স্বরে কৌতুক ঝরে পড়ল।
-বেশ, দিলাম ধন্যবাদ। হাসিমুখে বলে দিয়া।
-শুকনা ধন্যবাদ আমি নেই না!
-আচ্ছা, আচ্ছা। সাথে ডিনারও জুড়ে দিলাম না হয়। তোমার প্রিয় রেস্তোরাতে, আমার ট্রিট।
-শুধু ডিনার? হতাশ গলায় জানতে চায় রেহান।
-আর কি চাও? মুভি?
-দূর, ওসব টিনেজ ডেটিং আমার পোষাবে না।
-তবে কি চাও?
-ভেবে দেখো। মেয়ে পাশে আছে, বেশি বলতে পারছিনা।
এবারে খিলখিল করে বাচ্চা মেয়েদের মত হেসে ওঠে দিয়া।
বললো- আচ্ছা, বিবেচনায় থাকল। এসো তো আগে।
(সমাপ্ত)

বি দ্রঃ আমার লেখা দ্বিতীয় ছোটগল্প। প্রচুর বানান ভুল দেখলাম,

ভালোবাসার রুপান্তর পর্ব-০১

0

ভালোবাসার রুপান্তর

মিঠু কেবলি গেছে দেশে। গিয়ে একদিনও হয়নি, আজ সকালে উঠে দেখি ইয়া বিশাল এক ফিচারের লিঙ্ক পাঠিয়ে দিয়েছে। সাথে মেসেজ—
— তোমার লেখার সাবজেক্ট হতে পারে।

পড়লাম। বিদেশকে স্বপ্নের দেশ মনে করে এলে কীভাবে স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে তার সত্য ঘটনা।
তবে এনিয়ে গল্প আমি চার বছর আগে লিখেছিলাম। সেটাও আংশিকভাবে সত্য ঘটনার ওপরেই লেখা।

ভালোবাসার রূপান্তর

নিজের ডেস্কে বসে নিবিস্টমনে কাজ করছিল দিয়া। ফোনটা বেজে উঠতে বিরক্ত চোখে তাকালো। আজকের মধ্যে রিসার্চ প্রপোজালটার অধিকাংশ কাজ তার শেষ করতে হবে। এখন আবার কে জ্বালাতে এল রে বাবা! দেখে রুদ্রর কল। ধরবে না ধরবে না করেও ফোন উঠিয়ে নিয়ে বলে
– হ্যালো, রুদ্র?
-দিয়া?
-হ্যাঁ, আমি ছাড়া আর কে হবে, আমাকেই যখন ফোন করেছ। কী বলবে তাড়াতাড়ি বল, আজ খুব ব্যস্ত আছি।
কন্ঠের অসহিষ্ণুতা ঢাকতে পারে না দিয়া।
-তোমার সাথে দেখা হওয়া আজ খুব জরুরী, দিয়া।
-আজকে অসম্ভব, রুদ্র। পাঁচটা পর্যন্ত অফিস সেরেই আমি রিনিকে নিয়ে দৌড় দিব ওর পিয়ানো টিচারের কাছে। তারপরে বাসায় ফিরে ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু বলতে কিছু নাই ফ্রিজে।
-দিয়া, তোমার সাথে দেখা আজ হতেই হবে।
এবারে একটু কঠোর হয় দিয়া।
বলে- রুদ্র, তোমাকে আমার স্কেজুলটা তো জানালাম। এর মধ্যে আমি কখন তোমার সাথে দেখা করবার সময় বের করতে পারব, বলতো?
তারপর একটু থেমে বলে- কী এমন জরুরী ব্যপার? রিনিকে নিয়ে কিছু?
-না, রিনিকে নিয়ে না। ফোনে বলা যাবে না, সামনাসামনি বলতে হবে।
-তাহলে আজ হচ্ছে না, রুদ্র। কাল হলেও হতে পারে।
-না, আজই। আজই দেখা করতে হবে। অবুঝের মত পীড়াপীড়ি করতে থাকে রুদ্র।

অবিকল সেই ইউনিভার্সিটির রুদ্র। গোয়ার, একরোখা, খামখেয়ালী, সর্বোপরি স্বার্থপর। খালি নিজেরটা বোঝে। অন্যের সুবিধা অসুবিধার প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টি নাই।
কড়া একটা জবাব দিতে গিয়েও পারে না দিয়া। কোন এক অজানা কারণে সে এখনো রুদ্রর এসব অবুঝ জবরদস্তিকে এককথায় নাকচ করে দিতে পারে না। কোথায় যেন বেঁধে যায়। কেন পারে না সেটা খুব বেশি তলিয়ে দেখবার সাহস তার নাই।
একটা লম্বা শ্বাস নেয় দিয়া- আচ্ছা, আমি দেখছি রেহান আজ রিনিকে পিয়ানো টিচারের কাছে নিয়ে যেতে পারবে কিনা। যদি পারে তবে তোমাকে আমি কল দিয়ে জানাচ্ছি।
-আচ্ছা, দিয়া। ফোন কেটে দিল রুদ্র।

-আচ্ছা দিয়া! মনে মনে আগুন হয়ে ভেংচে ওঠে দিয়া। সবাই তাদের কাজকর্ম চুলায় দিয়ে তেনার সুবিধামত চলবে আর তিনি কৃপা করে তা গ্রহণ করবেন। কিছু মানুষের কখনো পরিবর্তন হবে না- ভাবতে ভাবতে দিয়া রেহানের সাথে কথা বলে রিনির দ্বায়িত্ব রেহানের উপর ন্যস্ত করে। রিনিকে পিয়ানো টিচারের কাছে নিয়ে যেতে হলে রেহানকে আগেভাগে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে অনেকটা ড্রাইভ করতে হবে। কিন্তু রেহান আপত্তি জানায় না। এমনকি জানতেও চায়না দিয়া কি নিয়ে হঠাৎ এত ব্যস্ত যে তাদের স্বাভাবিক রুটিনের এদিকসেদিক করছে। কাজ করতে করতে রেহানের প্রতি মনটা দ্রব হয়ে গেল দিয়ার। দিয়া সত্যি খুব ভাগ্যবতী যে রেহানের মত একজন ভদ্র আর উদারমনা স্বামী সে পেয়েছে। রেহান দিয়াকে তার নিজের মতো থাকতে দেয়, কখনো আকারণে জোর করে তার উপরে কিছু চাপাতে যায় না। আর রিনির ব্যপারে দায়িত্ব নিতে তো সে এতটুকু পিছু হটে না।

নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়িটা পার্ক করে রুদ্রর খোঁজে এদিক সেদিক হাঁটতে থাকে দিয়া। অনেকদিন বাদে এখানে আসা হল। সামারের শেষ, শরৎকাল আসবার আগে দিয়ে গাছগুলি যেন দুহাতে অজস্র ফুল ফুটিয়েছে। একটু দূরে স্প্ল্যাশ প্যাডের পানিতে বাচ্চারা হইচই করে ভিজছে। দুচারটে কাঠবিড়ালীকে এদিকসেদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রুদ্র কই? রুদ্র কি বরাবরের মত আজও লেট লতিফ হবে? জীবনে তো একবারও সময়মত কোথাও পৌঁছুতে পারল না সে। ইউনিভার্সিটিতে তার সহপাঠী ছিল রুদ্র। সুদর্শন, কথাবার্তায় চৌকশ, অশান্ত, খামখেয়ালী, ক্যারিশমাটিক রুদ্র। জীবনটা ছিল যার হাতের মুঠোয়। দিয়া একেবারে পতঙ্গের মত তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল সেই প্রথমদিন থেকেই। সেই দূর্বার আকর্ষণে তার সবকিছু ভেসে গেছিল। ইউনিভার্সিটি জীবনের কথা মনে করলে শুধু রুদ্রর কথাই সে মনে করতে পারে, বাকি সবকিছুর স্মৃতি ঝাপসা ঝাপসা। কারণ সে আর কোনোকিছুর দিকে মন দেয়ার অবকাশ পায়নি, তার মনপ্রাণ জুড়ে ছিল শুধু রুদ্র। রুদ্রর দিক থেকে হয়ত সমান পরিমাণ পাগলামী ছিলনা কিন্তু সেও দিয়াকে ভালবাসতো। ঝোঁকের মাথায় চলতো বটে তবে দিয়ার প্রতি একনিষ্ঠ ছিল। মাঝেমাঝে অবশ্য খ্যাপার মত উধাও হয়ে যেত কিন্তু ফিরে এসে দিয়ার হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতো। দিয়ার দিক থেকে মাফ না করবার প্রশ্নই উঠত না। সে তখন প্রেমে অন্ধ, রুদ্র ছাড়া কিছুই বোঝে না।

বাবামার চোখে কিছুদিনের মধ্যে দিয়ার দিশেহারা ভাব ধরা পড়ে যেতে দেরী হয়না। মেয়ের অবস্থা দেখে তারা বুঝে যান যে একে আর যাই হোক অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়া চলবে না। একটা কেলেংকারি হয়ে যাবে তাহলে। ভাগ্যক্রমে রুদ্রর পরিবারের সাথে দিয়ার পরিবারের সামাজিক অবস্থান কাছাকাছি হওয়াতে দুপক্ষের জোরালোভাবে আপত্তি করবার মত কিছু ছিল না। যারজন্য ইউনিভার্সিটির পাট চুকতে না চুকতে বিয়ের কথাটা ওঠে। ঐ সময় দিয়া যেন একটা স্বপ্নের মধ্যে বাস করছিল। বিয়ের পরের দুইতিনটা বছর তরতর করে কেটে গেল। রুদ্রর প্রতি দিয়ার অন্ধ ভালবাসা কিছুমাত্র কমল তো নাই বরং দিনেদিনে যেন বেড়ে চলল। সে যেন রুপকথার রাজকন্যা যে তার প্রিন্স চার্মিংকে পেয়েছে। রুদ্রর সমস্ত আদর-আব্দার-অত্যাচার-ছেলেমানুষী দিয়া হাসিমুখে মেনে নিত।

প্রথম ধাক্কাটা খেল দিয়া যখন তারা দুজনেই বিদেশে পাড়ি জমালো। আত্মীয় বন্ধু পরিবর্জিত বিদেশের কঠিন জীবনে মানিয়ে নিতে গিয়ে দুজনে হিমশিম খেতে থাকে।
সকলে পরামর্শ দিল- স্কুলে যাও। তোমাদের দেশী ডিগ্রী, দেশী কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে সুবিধা করতে পারবে না। একটা কানাডিয়ান ডিগ্রী নিয়ে যাও। দেখবে সুযোগের দরজা খুলে যাবে তোমাদের কাছে।

কথাটা যুক্তিযুক্ত মনে হল তাদের কাছে। সরকার থেকেও ঋণের সুযোগসুবিধা রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। টিউশন ফি’র জন্য তো বটেই, থাকা খাওয়া বাবদ খরচের জন্যও। কাজেই এইটাই সবচাইতে সহজ উপায়। মুশকিল হল সময়কাল নিয়ে। তারা কানাডায় এসে পৌঁছেছে জানুয়ারীর প্রচন্ড শীতে আর নতুন সেমেস্টার শুরু হবে সেই সেপ্টেম্বারে। এতগুলো মাসের সংস্থান তাহলে কী করে হবে? বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরায়, তাই চাকরীবাকরীর একটা ব্যবস্থা করতে হবে এই মনোভাব নিয়ে দুজনেই চাকরী করবে বলে মনস্থির করে। দিয়া সেসময় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আসবার ঠিক আগে দিয়ে সে জানতে পেরেছিল ব্যাপারটা। ঠিক এই সময়ে নতুন অতিথির আগমন হয়ত পুরোপুরিভাবে কাম্য নয় কিন্তু তারপরও দুজনে খুশীতে বিভোর। নতুন দেশে নতুন আগন্তুকের সমাগম হবে এই স্বপ্ন দেখত দুজনে, বিশেষ করে দিয়া।

বিদেশ বিভূঁই এ আত্মীয়পরিজনহীন দিয়া আর রুদ্র যাদের কাছ থেকে সাহায্য, উপদেশ আর পরামর্শ নিচ্ছিল, তারা প্রত্যেকে একই কথা তাদেরকে বলে—এই মুহূর্তে নিজের ইগো এক কলসীতে ভরে লেক ওন্টারিওতে ফেলে দিয়ে আসো। দেশে তুমি কী ছিলে, তোমার কত বড় ডিগ্রী আছে, কত ভাল চাকরী করতে, বাবা কত বড়লোক ছিল সেসব ভুলে যাও। প্রথম কয়েক বছর সবাইকে কষ্ট করতে হয়। নিজের যোগ্যতার ধারেকাছেও না এমন চাকরী করতে হবে- কারণ মাসশেষে সংসার খরচের ব্যবস্থা তো করতে হবেই। তারজন্য অড জব সবচাইতে সহজ রাস্তা। চোখ কান বুজে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাই করে যাও। সেপ্টেম্বারে তো স্কুলই শুরু হয়ে যাবে।

আর সেখান থেকে শুরু হল সমস্যা। পরামর্শ হিসেবে কথাগুলি যতটা অকাট্য লেগেছিল, কাজের ক্ষেত্রে দেখা গেল সে মতে চলা ততোটা কঠিন। বিশেষ করে রুদ্রর কাছে। দিয়ার কাছে অবশ্য অতটা না। তার কথা যা করতে হবে, তা করতে হবে। এনিয়ে এত ভেবে লাভ নাই। তাই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সে যতদিন সম্ভব কাজ করে গেছে। কিন্তু রুদ্র পুরো ব্যপারটাকে খুব খারাপভাবে নিল। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। তার ভালো ডিগ্রী ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ভালো চাকরি করত সে- আর এখন সে কিনা অন্যের স্যান্ডউইচ বানিয়ে দেবে? কাজশেষে দোকান ঝাড়ু দেবে? দুইদিনেই ইস্তফা দিয়ে বসল সে। এরপর পরিচিত কারও মাধ্যমে টেলিমার্কেটিং শুরু করল। সেখানেও দুইদিনের বেশি টিকতে পারল না। কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে সেই ফুর্তিবাজ, ক্যারিশম্যাটিক রুদ্র খুব তাড়াতাড়ি পরিণত হল এক বদমেজাজী, হতাশাগ্রস্ত রুদ্রে। দিয়া তাকে বহু বুঝিয়েছে। কিন্তু সে নিজেই তখন প্রেগন্যান্সীর শেষ পর্যায়ে। কষ্ট করে কাজে যেতে হয় আর বাসায় ফিরে এসে শোনে রুদ্র ফের চাকরী ছেড়ে দিয়েছে।

কিছুদিনের মধ্যে দুজনের ঘনঘন ঝগড়া বেধে যেতে লাগল। এইটা অভাবনীয় ব্যপার, তাদের মধ্যে ঝগড়া কখনো ছিল না। মানঅভিমান ছিল কিন্তু দিয়াই সবসময় আগ বাড়িয়ে রুদ্রর মান ভাঙ্গিয়েছে। কিন্তু এখন অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সারাদিন কাজ করে ফেরবার পর যখন শোনে যে রুদ্র ফের চাকরী ছেড়ে দিয়েছে, তখন যেন মন থেকে আর ইচ্ছা করে না।

তারপরও ভালো খারাপ মিলিয়ে চলছিল। ভালো সময়ে দিয়া রুদ্রকে বোঝাবার চেষ্টা করত। রুদ্র মেনে নিত কিন্তু কয়দিন পর আবার যে কে সেই। এর মাঝে জন্ম নিল তাদের সন্তান রিনি। রিনির জন্মের সাথে সাথে পরিস্থিতি যেন আরো হাতের বাইরে চলে গেল। একটা বাচ্চা যে কতটা সময় নেয়, কতটা শ্রম, কত নির্ঘুম রাত যে তার পিছে ব্যয় করতে হয় এ ব্যপারে দিয়া অথবা রুদ্র কারোরই ধারণা ছিল না। দিয়া তবুও সহজাতবোধে জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছিল, না পেরে তো তার উপায় নাই। কিন্তু আজীবন দায়িত্ব নিতে না চাওয়া, স্বার্থপর রুদ্রর ব্যবহার দেখে তার চোখ ধীরে ধীরে খুলে যেতে লাগল। রুদ্রকে সে যেন নতুনভাবে দেখল, আর দেখে চমকে উঠল। এই রুদ্রকে তো সে চেনে না। দুজনের মাঝে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকত, রুদ্র বেশিরভাগ সময় কাটাতে লাগল বাড়ির বাইরে। দিয়ার তো আর সে সুযোগ নাই। তাকে একাহাতে মেয়ের দেখভালের জন্য বাড়িতে থাকতে হত। একনিমেষের জন্য তার ছুটি মিলত না।

এক গভীর রাতে রুদ্র বাড়ি ফিরতে দুজনের মধ্যে লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। রাগের মাথায় রুদ্র দিয়াকে এক চড় মেরে বসলে দিয়া টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে টেবিলের কোণে মাথায় চোট খেল। ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই হতভম্ব। যা ঘটেছে তা দুজেনের একজনও বিশ্বাস করতে না পেরে একজন আরেকজনের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। পরমুহূর্তে রুদ্র দরজা খুলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। আর দিয়া কাঠ হয়ে সেখানেই সকাল অবধি বসে থাকে। এতদিনে তার চোখ থেকে রঙ্গীন চশমা সম্পুর্ণরূপে খসে পড়ল। রুদ্রকে তার আসলরূপে দেখতে পেল দিয়া- ইমম্যাচিউর, ইগোসর্বস্ব, স্বার্থপর। ওর এইদিকটা তার কখনো চোখে পড়েনি। সে বিভোর হয়ে ছিল সুদর্শন রুদ্রর আমুদে, ক্যারিশম্যাটিক দিক নিয়ে।

দুইদিন ঘরে ফিরল না রুদ্র। তৃতীয়দিনের দিন ফিরে পুরনো অভ্যাসমত দিয়ার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে গেল। কিন্তু এই কদিনে দিয়ার আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেমন ঠান্ডা আর নিস্পৃহ হয়ে রুদ্রর পুরনো নাটক সে দেখতে থাকে। রুদ্র প্রতিবার অন্যায় করত, ফিরে এসে মাফ চাইত আর দিয়াও মুখিয়ে থাকত তাকে ক্ষমা করে দেবার জন্য। কিন্তু সেটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের কথা, বিয়ের প্রথমদিককার কথা। সেসময় যে অপরিণত ব্যবহার প্রশ্রয় দেয়া গেছে, আজ এই কঠিন সময়েও তা মেনে নিতে হবে? উপরন্ত আছে গায়ে হাত তোলা। যদিও দিয়া সেটাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার রুদ্র অপরিণত হতে পারে, অবিবেচক হতে পারে কিন্তু এতটা ছোটলোক সে কখনোই না। স্বপ্নভঙ্গ হবারও তো একটা সীমাপরিসীমা আছে। দিয়ার মনটাই যেন মরে গেল। রুদ্রকে মনে হচ্ছে অপরিচিত, অনাত্মীয় কেউ। এই অচেনা লোকের সাথে দিয়া একবাড়িতে থাকবে কেমন করে?
(আগামী পর্বে সমাপ্য)

শেষ ঠিকানা পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১৪ (শেষ পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_অপু!কি হয়েছে অপুর?

_আমি জানিনা হিমি। আমিতো ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম ওর কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ও সেন্সলেস হয়ে পরে আছে। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি, তুই প্লিজ একটু আসতে পারবি।

_আচ্ছা আচ্ছা তুই শান্ত হ আমি আসছি।

হিমি কলটা রাখতেই অর্নব ও চলে আসে অফিস থেকে। হিমি ওকে সবটা জানানোর পর অর্নব এবং হিমি একসঙ্গে হসপিটালে যায়।
অর্নব,হিমি হসপিটালে যেতেই সেখানে দিবাকে দেখতে পায়। যদিও দিবার সঙ্গে কোন কথা বলেনা হিমি। সেদিন অপূর্বের কথা শোনার পর দিবা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে হিমির কাছে গিয়ে নিজের সব কাজের কথা জানিয়ে দেয়। সেদিনের পর থেকে হিমি দিবার সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলে না,সে ভাবতেও পারেনি তার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী এমনটা করতে পারে। দিবা অনেকবার অর্নবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও অর্নব তার সঙ্গে কোন কথা বলেনি। হিমি আর অপূর্বের সম্পর্কের কথা জানার পর অর্নব নিজে থেকেই দূড়ে সরে গিয়েছিল। কিন্তু দিবা অর্নবকে অপূর্বের ব্যাপারে বিভিন্ন খারাপ কথা শোনায়, সে বলে অপূর্ব হিমিকে ঠকাচ্ছে। অর্নবের এখন নিজের উপর রাগ হয়, সে কি করে দিবার কথায় কনভিন্স হয়ে গেলো নিজেও জানেনা। নাহলে সে কখনই কারোর সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইতো না।

হিমি আর অর্নব কে দেখেই দিবা তাদের কাছে এসে বলে,
_দেখনা হিমি, অপুর কি হলো হঠাৎ। এই সবকিছু আমার জন্য হচ্ছে তাইনা? ও আমাকে বলেছিল যেন ওর সামনে না আসি,আমি তবুও বারবার ওর কাছে গিয়েছি। এই জন্যই ওর এই অবস্থা তাইনা? আমি ওর কাছ থেকে দূড়ে চলে যাবো হিমি,বিশ্বাস কর। তাহলে অপু ঠিক হয়ে যাবে বল?

হিমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
_প্লিজ দিবা,আমরা এখানে তোর কান্না দেখতে আসিনি। ডক্টর কি বলল সেটা বল।

তাদের কথার মাঝেই ডক্টর বেরিয়ে এলো। অর্নব,হিমি গিয়ে ডক্টরকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল,
_দেখুন আমরা যতটা বুঝতে পারছি, অধিক পরিমানে নেশা করার কারণে ওনার এই অবস্থা হয়েছে। আর তার উপর উনি হয়তো কোনো কারণে প্রচুর পরিমানে ডিপ্রেসড। ওনার নেশা করাটা কমাতে হবে, নাহলে আরো বড় কিছু হয়ে যেতে পারে।

অর্নব বলল,
_ডক্টর ও এখন ঠিক আছে তো?

_হ্যা আপাতত উনি আউট অফ ডেঞ্জার। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।

ডক্টর সেখান থেকে চলে যেতেই দিবা বলে,
_আ আমি যাবো ওর সাথে দেখা করতে।

দিবা যেতে নিলেই অর্নব তাকে আটকে দিয়ে বলে,
_দিবা,তুমি নিজেও জানো অপূর্ব তোমাকে দেখতে চায়না। তাই ওর সামনে গিয়ে ওকে শুধুশুধু বিরক্ত করোনা।
অর্নব হিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
_হিমি,তুই যাও।

হিমি অবাক হয়ে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বলে,
_আমি একা যাবো?

অর্নব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
_কোথাও না কোথাও অপূর্বের এই অবস্থার জন্য আমিও দায়ী,আর সেইজন্য প্রচুর গিল্টি ফিল হচ্ছে আমার। অপূর্বকে একমাত্র তুমি ই বোঝাতে পারবে,আমার মনে হয় তুমি বললে অন্তত ও কিছুটা বুঝবে।

হিমি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অপূর্বর কেবিনের দিকে গেলো।
অপূর্ব চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে। হিমি ধীরে ধীরে একটা চেয়ার টেনে বেড এর পাশে বসে বলল,
_অ অপু..

চেনা কণ্ঠ শুনে অপূর্ব হাত সরিয়ে নিলো চোখ থেকে। হিমির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামান্য হেসে বলল,
_আমি কি জাগ্রত অবস্থাতেও স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম।

হিমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
_কেমন আছো এখন?

ঠোঁটে থাকা হাসিটা মিলিয়ে গেলো অপূর্বের। হিমি যে আসলেই তার সামনে বসে আছে সেটা বুঝতে পেরে উঠে বসলো সে। অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_ত তুমি এখানে!

_নিষেধাজ্ঞা আছে বুঝি?

_তেমন টা নয়। আসলে তোমাকে আশা করিনি তাই আরকি।

_বললে না তো কেমন আছো?

অপূর্ব সামান্য হেসে বলল,
_ভালোই আছি।

_কত ভালো আছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি।

অপূর্ব কিছু বলল না। হিমি এবার অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার জন্য নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো? আমার যে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে অপু।

_আমি তোমাকে কিছু বলিনি তো, তোমার কোনো দোষ নেই। যা হয়েছে তা আমার ভাগ্যে ছিল।

_তাহলে নিজের ভাগ্যকে মেনে নিচ্ছোনা কেন? আমিতো সবটা মেনে নিয়েছি অপু,কিন্তু তুমি? তুমি কেন ভালো থাকার চেষ্টা করছো না?

_কি করবো বলো…. বড্ড একা লাগে নিজেকে। আমি যে কেন বেঁচে আছি এর কারণ টাই খুজে পাইনা।

_তাহলে তুমি বিয়ে করছো না কেন? নিজের জীবনটা নতুন করে শুরু করো অপু।

_সম্ভব না, এ জীবনে আমি তোমাকে ভুলতে পারব না।

_আমি তো ভুলতে বলছি না, তুমি নাহয় নতুন করে কাউকে নিজের মনে জায়গা দাও। দেখো দিবাও তো তোমাকে….

_প্লিজ হিমি,প্লিজ। ওর নাম নিওনা আমার সামনে।

_আচ্ছা ঠিক আছে, ওর কথা আমি বাদ দিলাম। কিন্তু তুমি একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করো, জীবন কারো জন্য থেমে থাকতে পারেনা। তুমি এভাবে নিজের হাতে নিজের জীবনটা নষ্ট করতে পারোনা অপু।

অপূর্ব কিছু বললো না। হিমি নিজের চোখের জলটুকু মুছে বলল,
_এটা আমার রিকুয়েস্ট অপু, জীবনটা নতুনভাবে শুরু করো। এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করো যে সারাজীবন তোমার পাশে থাকবে।

অপূর্ব অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে রইলো হিমির দিকে। তবে হিমি তার দিকে তাকাতে পারলোনা। ছুটে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। অপূর্ব চোখ বন্ধ করে নিলো। মনে মনে হিমির বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো, সত্যি ই কি জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ!

____
কেঁটে গেছে আরো এক বছর। তবে সেদিনের পর থেকে দিবা আর অপূর্বর সামনে আসেনি,হয়তো নিজের দোষের শাস্তি সে মেনে নিয়েছে। সে বুঝে গেছে অপূর্ব কখনোই তাকে মেনে নেবে না,তাই আর তাকে বিরক্ত করেনি দিবা। নিজেকেই গুটিয়ে নিয়েছে সে।

আজ অপূর্বর বিয়ে। হ্যা অপূর্ব বিয়ে করছে, খুব সাধারণ একটা মেয়েকে। অপূর্বের মতোই তারও মা বাবা নেই। কাজের সূত্রে এক পাহাড়ি এলাকায় যাওয়া হয়েছিল অপূর্বের,সেখানেই নিশির সঙ্গে পরিচয় তার। নিশি খুব মিশুক একটা মেয়ে, ওর সঙ্গে যেন হিমির অনেকটা মিল খুজে পায় অপূর্ব। হিমির সম্পর্কে সবটাই জানে নিশি, সে হাসিমুখেই সবটা মেনে নিয়েছে। অপূর্ব এবং নিশি দুজনেই মূলত ভালোভাবে বাঁচার জন্য একজন সঙ্গী চায়। অত:পর, অনেক চিন্তা ভাবনা শেষে অপূর্বও নিজেকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হিমিকে ভুলতে পারবেনা সে জানে,তবে নিশিকে নতুনভাবে নিজের মনে জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করবে সে।

হিমি-অর্নব ও এসেছে বিয়েতে। অপূর্ব যে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা জানতে পেরে তারা দুজনেই ভীষণ খুশি হয়েছে। খুব সাধারণভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। অপূর্ব এবং নিশির নামমাত্র কিছু আত্মীয় আর বন্ধুরা ছাড়া কেউই নেই।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। নিশিকে কবুল বলতে বলার পর সে কিছুক্ষন চুপ থেকে কবুল বলে দেয়। এবার অপূর্বের পালা,অপূর্বকে কবুল বলতে বলার পর সে পাশ ফিরে হিমির দিকে তাকায়।
হিমি অর্নবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অপুর্ব তার দিকে তাকাতেই সে মুচকি হেসে হাত দ্বারা ‘অল দা বেস্ট’ বোঝায়। অপূর্ব সামান্য হেসে নিশির দিকে তাকিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে কবুল বলে দেয়।

হিমিও সকলের সঙ্গে হাসে। তবে নিজের ভিতর এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। নাহ, তার কষ্ট হচ্ছে না বরং সে খুশি হয়েছে। তবুও এই অদ্ভুত অনুভূতির মানে জানা নেই তার, জানতেও চায় না। নিজের হাতে কারোর ছোঁয়া পেয়ে উপরে তাকালো হিমি। অর্নব তার কানের কাছে এসে বলল,
_কষ্ট হচ্ছে?

হিমি ঠোঁটে চওড়া হাসির রেখা টেনে অর্নবের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলল,
_আপনি আমায় কষ্ট পেতেই দেবেন না।

অপূর্ব অনেক্ষন ধরে সামনের দিকে তাকিয়েই বসে আছে। নিশি সেটা খেয়াল করে তার দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল,
_হিমি আপুর কথা মনে পরছে? কষ্ট হচ্ছে তার জন্য?

অপূর্ব নিশির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
_কষ্ট হলেই বা কি? তুমি আছো না! কি,পারবে না আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে?

হাসলো নিশি। অপূর্বর বাহু জড়িয়ে ধরে তার কাধে মাথা রেখে বললো,
_আমিতো তাই চাই অপু.. আপনার প্রথম ভালোবাসা হতে পারনি তো কি হয়েছে? শেষ ঠিকানা হয়ে তো সারাজীবন আপনার পাশে থাকতেই পারি…

#সমাপ্ত

শেষ ঠিকানা পর্ব-১৩

0

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১৩
#মেহরিন_রিম

বিছানার উপর মাথা চেপে ধরে বসে আছে হিমি। কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। অপূর্বের সঙ্গে যে এত কিছু ঘটে গেছে তা ওর কল্পনার ও বাহিরে ছিল। তার ই বা কি করার ছিল তখন! পরিস্থিতি টা এমনই ছিল যে না চাইতেও অপূর্বকে ভুল বুঝতে হয়েছিল। এমন নয় যে নিজের সিদ্ধান্তের উপর আফসোস হচ্ছে হিমির,তবে খারাপ লাগছে অপূর্বের জন্য।

ঐসময়ে অর্নবের গায়ে হাত তোলার পর থেকে নিজের উপর রাগ হচ্ছে হিমির। তবে তখন অর্নবকে থামানোর আর কোনো উপায় ছিল না। হিমি বেশ ভালো করেই জানে অর্নব রেগে গেলে ঠিক কি কি করতে পারে।

হিমির চিন্তার মাঝেই ঘরে প্রবেশ করলো অর্নব। তবে সে একবারো হিমির দিকে তাকালো না। হিমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্নব তার উপর রেগে আছে। হিমি নিজের ক্রাচ টা নিয়ে উঠে দাড়ালো।
অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো,
_অর্নব আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।

অর্নব কোনো উত্তর না দেওয়ায় হিমি আবারো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_দেখুন আপনি সবটা জানেন না বলেই এভাবে ভুল বুঝছেন। ঐসময়ের ঘটনার জন্য আই এম রিয়েলি সরি।

_হিমি প্লিজ,আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা এই বিষয়ে।

হিমি অর্নবের কাছে গিয়ে বললো,
_আপনাকে শুনতেই হবে।

কথাটা বলেই হিমি অর্নবকে অপূর্বের ব্যাপারে সব কথাগুলো বলতে লাগলো। সবটা শোনার পর অর্নব অবাক চোখে হিমির দিকে তাকালো।
হিমি এবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_আমি বলছিনা যে আমি অপূর্ব কে সম্পূর্নভাবে ভুলতে পেরেছি। তবে আমি সজ্ঞানে যখন আপনাকে বিয়ে করেছি, তখন সেই বিয়েটাও আমি মেনে নিয়েছি। আমি জানি অপূর্ব এই কথাটা জানলে কখনই আমাকে ওভাবে বিয়ের কথা বলত না। আর যদি বলত, তবুও যে আমি রাজি হয়ে যাবো এটা আপনি ভাবলেন কি করে বলুন তো। একটা সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস জিনিসটা সবচেয়ে বড়, আপনার কি আমার প্রতি সেই বিশ্বাস টুকুও নেই?

অর্নব এবার হিমিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_অবিশ্বাস নয় হিমপরি, ব্যাপারটা ভয়ের। বড্ড ভয় হয় আমার, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।

হিমি চুপ করে রইলো,অর্নবের অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। তবে হঠাৎ করে তার ভয় হচ্ছে অপূর্বের জন্য, ও যদি ভুল কিছু করে ফেলে।

___
নদীর পারে বসে আছে অপূর্ব। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। তবে সেখানে সে একা বসে নেই,পাশে বসে আছে দিবা। তাদের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে অনেক্ষন ধরে। হিমি ই দিবাকে অপূর্বের ব্যাপারে জানিয়েছিল। আর দিবা জানে এই সময়ে অপূর্ব কোথায় যেতে পারে, সেই ধারণা নিয়েই এখানে এসেছিল সে। আর তার ধারণা সঠিক হয়ে গেলো।
অবশেষে নিরবতা ভাঙিয়ে দিবা বলল,
_তুই হিমিকে ভুল বুঝিস না অপু। আমি জানি তুই ওকে ভালোবাসিস,তবে ওর এখন বিয়ে হয়ে গেছে সেটা তোকে বুঝতে হবে। এখন যদি তুই…

_আমাকে কি তোর সিনেমার হিরো মনে হয়?

দিবা অবাক হয়ে বললো,
_মানে?

অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমি কোনো অসাধারন মানুষ নই দিবা। আমি খুব সাধারণ একটা মানুষ। আমি চাইলেই কোনো গল্পের নায়কের মতো হিমিকে তুলে আনতে পারব না। চাইলেই ওর হাসবেন্ড এর ক্ষতি করতে পারবোনা, ওর হাসবেন্ড এর নামে ওর কাছে খারাপ কথা বলতে পারবোনা। ভালোবাসার পরিনতি টা অধিকাংশেই অনেক বেশি নির্মম জানিস তো,ভালোবাসলে কাউকে না কাউকে কষ্ট পেতেই হবে। যেমন এক্ষেত্রে আমি পাচ্ছি। তবে হিমি আমাকে ভুলে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারলেও, আমার পক্ষে হয়তো সেটা সম্ভব হবে না। আমি ওকেই ভালোবাসি আর ভালোবেসে যাবো।

দিবা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,
_ভালোবাসতে চাইলে না ভালোবাসার মানুষটাকে খুশি থাকতে দিতে হয়। এই কথাটা বোধ হয় তুই জানতিস না তাইনা?

_ত তুই কি বলতে চাচ্ছিস?

_তোর কি মনে হয় বলতো? আমি কিছুই জানিনা! হাহ,এই সবকিছুর পিছনে আসল মানুষটা যে তুই সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি দিবা।

বড়বড় চোখে অপূর্বের দিকে তাকালো দিবা। অপূর্ব আবারো বাকা হেসে বলতে লাগলো,
_মা যাওয়ার আগে আমাকে সবটাই বলেছে দিবা। এই সব প্ল্যান যে তুই মায়ের মাথায় ঢুকিয়েছিস সেটা আমি জানি। অর্নব এর ব্রেইন ওয়াশ করা থেকে শুরু করে সেদিন যখন আমার বন্ধু হিমিকে সবটা জানাতে কল দিয়েছিল, সেদিন তুই ই ওকে ভুল ভাল বুঝিয়েছিলি সেটাও আমি জানি।

দিবা কিছু বলতে পারলো না,অপূর্ব যে সবটা জানতে পেরে যাবে এটা সে ভাবতেও পারে নি।
অপূর্ব দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_ভালো লাগছে তোর? আমাকে এই অবস্থায় দেখে তো তোর আনন্দ হওয়ার কথা।

দিবা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_অপু বিশ্বাস কর,আমি তোকে..

_ভালোবাসিস,তাইতো? তাইতো হিমিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিলি,আমি আমার মাকে পর্যন্ত হারালাম। এরপর ও কথাটা বলতে পারবি তুই?

_আমি এতকিছু বুঝতে পারিনি অপু,আমার ভুল হয়ে গেছে।

অপূর্ব তাচ্ছিল্যের সূরে হেসে উঠে দাড়ালো। সেখান থেকে চলে যেতে নিয়ে আবারো পিছনে তাকালো। দিবার দিকে তাকিয়ে বলল,
_চিন্তা করিস না,আমি হিমিকে কিছু বলবো না। তোদের বন্ধুত্ব নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। তবে একটা রিকুয়েস্ট রাখবি প্লিজ, আমার সামনে আর কখনো আসিস না।

অপূর্ব চলে গেলো সেখান থেকে। তবে দিবা একই জায়গায় বসে রইলো, নিজের কাজের জন্য এখন নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে তার। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার জন্য তাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেললো,এমনকি সেই মানুষটা এখন তার মুখ পর্যন্ত দেখতে চায় না। এটাই হয়তো তার প্রাপ্য।

____
কেটে গেছে আরো ছয় মাস। অপূর্ব এতদিনে আর হিমির সামনে আসেনি। হিমি এখন ক্রাচ ছাড়াই হাটতে পারে। অর্নবের সাথে বেশ সুখেই আছে সে,তবে মাঝে মধ্যে অপূর্বের কথা ভেবে নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করে হিমির।
রাত ৮ টা বাজে,অর্নব কিছুক্ষন পরেই চলে আসবে। হিমি বসে বসে টিভি দেখছিল এমন সময় তার ফোনে দিবার কল আসে। হিমি কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে দিবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
_হিমি অপু..

#চলবে

শেষ ঠিকানা পর্ব-১২

0

#শেষ_ঠিকানা
#পর্ব_১২
#মেহরিন_রিম
এলোমেলো চুল, গাল ভর্তি দাড়ি, চোখে যেন হাজারো ক্লান্তিরা এসে ভিড় জমিয়েছে। অপূর্ব কে এমন বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখে বুকের ভেতর মোচড় নিয়ে উঠলো হিমির। কেন আবারো এই মানুষটার সামনে আসতে হলো তাকে! সবটা তো মেনেই নিয়েছিল হিমি, তবে কেন সেই চিরপরিচিত মুখ তাকে আবারো দেখতে হচ্ছে? তাও আবার এই অবস্থায়।
নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরলো হিমির। অপূর্ব এখনো তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজের ধ্যান কাটতেই চোখ সরিয়ে নেয় হিমি, হাতের উল্টোপাশ দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় সে। তবে স্থান ত্যাগ করার পূর্বেই অপূর্ব তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অনুরোধ এর সুরে বলে,
_এভাবে চলে যেওনা হিমি। আমার যে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।

_কিন্তু আমার তোমার থেকে আর কিছু শোনার নেই অপু। আমায় যেতে দাও।

_হিমি প্লিজ, শুধু ৫ মিনিট। আমি জানি তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো, তবুও বলছি শুধু একটা বার আমার কথাটা শোন। তারপর তোমাকে আমি আর কখনো আটকাবো না।

অপূর্বের কথায় যেন কিছুটা মায়া হলো হিমির, আবারো চেয়ারে গিয়ে বসলো সে। অপূর্ব তার পাশ থেকে আরেকটা চেয়ার টেনে হিমির পাশে বসে পড়লো। হিমির দিকে তাকিয়ে সামান্য ক্লান্ত হাসি দিয়ে বললো,
_তুমি আবারো হাটতে পারছো, এটা দেখে যে আমার কতটা ভালো লাগছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না হিমি।

হিমি নিজেকে সামলে সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমার জরুরি কিছু বলার থাকলে বলো,নাহলে আমাকে যেতে দাও।

_আমার জন্য এখন একটুও সময় নেই তোমার কাছে হিমি?

অপূর্বের অসহায় কণ্ঠে বলা কথায় যেন কষ্টটা আরো বেড়ে গেলো হিমির। তবুও চোখ বন্ধ করে কড়া গলায় বললো,
_না নেই।

অপূর্ব কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো,
_সেদিন তুমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমি তোমার সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম হিমি,তবে মায়ের ইমোশনাল ব্লাকমেইল এর কারণে আমি যেতে পারিনি। তুমি তো যানো মা ছাড়া আমার নিজের বলতে এই পৃথিবীতে তেমন কেউই নেই। মাকে হারানোর ভয়ে আমি তোমার সঙ্গে চেয়েও যোগাযোগ করতে পারিনি। তার দুদিন পরে জমিজমার কিছু কাজে আমাকে গ্রামে যেতে হয়। পরবর্তীতে জানতে পারি,মা বাড়ির আশেপাশের সবাইকে বলেছে যে আমি বিয়ে করতে গ্রামে যাচ্ছি।

হিমি অবাক চোখে তাকালো অপূর্বের দিকে। এর মানে তার ধারণা ঠিক ছিল,অপূর্ব বিয়ে করতে যায়নি!
অপূর্ব আবারো বলতে লাগলো,
_বিশ্বাস করো হিমি, আমি যেই মুহূর্তে এই কথাটা জানতে পারি আমি তোমার কাছে চলে আসতে চেয়েছিলাম। মায়ের কথাও শুনিনি আমি, তবে যেই মুহূর্তে আমি বাড়ি থেকে বের হতে যাবো তখনই মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরে। হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি, মা ব্রেইন স্টোক করেছে।
কিছুটা থামলো অপূর্ব। তারপর হিমির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
_আমার না নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমার জন্যই মায়ের এই অবস্থা হয়েছে। আমি তোমাকে অনেকবার কথাটা জানাতে চেয়েছি হিমি, তবে মনে হচ্ছিল মা যদি আমার উপর রাগ করে আমায় ছেড়ে চলে যায়! এই ভয়ে আমি তোমাকে কিচ্ছু জানাতে পারিনি হিমি। ভেবেছিলাম, মা একবার সুস্থ হয়ে যাক। তারপর আমি মাকে আবার বোঝাবো। কিন্তু সেটা হয়তো আমার ভাগ্যেই ছিলনা।
অপূর্ব চুপ করে রইলো, চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তার। পাথর এর ন্যায় বসে ধরা গলায় বললো,
_মাকে বাঁচাতে পারলাম না জানো তো।

বড়বড় চোখ করে অপূর্বের দিকে তাকালো হিমি, তার চোখ থেকেও অবাধ্য অশ্রুধারা গড়িয়ে পরলো। অপূর্বের সাথে এতকিছু হয়ে গেছে,কথাটা বিশ্বাস করতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে তার।
অপূর্ব একইভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
_যার জন্য আমি তোমার থেকে দূরে সরে গেলাম, সেই মানুষটাই আমায় ছেড়ে চলে গেলো হিমি। আমায় একদম একা করে দিলো।
অপূর্ব এবার হিমির দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল চোখে বলল,
_তুমি ছাড়া আমার আর আপন বলতে কেউ থাকলো না হিমি, কেউ না। আমার যে তোমাকে এখন ভীষণভাবে প্রয়োজন হিমি।

হিমি কিছু বলতে পারছে না, সব কথাগুলো যেন কোথাও গিয়ে আটকে যাচ্ছে। অপূর্ব এবার হিমির হাতটা ধরে বললো,
_আমায় ফিরিয়ে দিওনা হিমি। তোমায় ছাড়া যে বেচে থাকার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলছি আমি। তুমি বললে আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।

অপূর্ব যে এভাবে হুট করে হিমির হাত ধরে বসবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি। অপূর্বকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিমির চোখ পড়ে সামনের দিকে। অর্নব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হিমির হাতের দিকে,চোখদুটো লাল হয়ে আছে তার। অর্নব কে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে যায় হিমি, এক ঝটকায় অপূর্বের হাতটা সরিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। অপূর্ব ও উঠে দাঁড়িয়ে হিমির দৃষ্টি অনুসরণ করে অর্নবের দিকে তাকায়।
অর্নব সবেমাত্রই গাড়ি পার্ক করে এসেছে। তাই তাদের আগের কথাগুলো কিছুই শুনতে পায়নি সে। শুধু শুনতে পেরেছে বিয়ের কথাটা,তার উপর অপূর্বকে এভাবে হিমির হাত ধরতে দেখে রাগটা মাথায় উঠে যায় তার।
অর্নব রাগী চোখে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে ওর কাছে এগিয়ে যায়। অর্নবের অবস্থাটা বুঝতে পেরে হিমি তাকে বলে,
_অ অর্নব আপনি ভুল ভাবছেন,আমার কথাটা..

কিছুই শুনলো না অর্নব। অপূর্বের কাছে এগিয়ে বলতে লাগলো,
_কেন এসেছিস তুই? হিমিকে আমার থেকে নিতে?

অপূর্ব কিছু বুঝতে না পেরে হিমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
_হিমি,উনি কে? তোমার কোনো আত্মীয়?

হিমি কিছু বলার আগেই অর্নব অপূর্বের শার্টের কলার ধরে বলে,
_তুই একবার ওকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিস, আবারো একই কাজ করতে এসেছিস তাইনা? পারবিনা। আমার আর হিমির মাঝে তুই আর আসতে পারবিনা।

হিমি এক হাত দিয়ে অর্নবকে ছাড়িয়ে বলে,
_অর্নব,কি করছেন আপনি? রাস্তার মাঝে এভাবে সিনক্রিয়েট করবেন না,আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।

অপূর্ব আবারো অবাক চোখে হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_উনি কে হিমি?

হিমি অপূর্বের দিকে তাকালো, তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। হিমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
_উ উনি আমার হাসবেন্ড।

মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো অপূর্বের। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো হিমির দিকে। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোট ভিজিয়ে বললো,
_হ হিমি, আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো। হ্যা সেটা স্বাভাবিক, তার জন্য তুমি আমাকে যেই শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো। তবে এভাবে আমার সঙ্গে মজা করোনা প্লিজ।

_আমি মজা করছিনা অপু।

_না না তুমি মজা করছো আ আমি জানি। প্লিজ হিমি, এভাবে শাস্তি দিওনা আমাকে। নিঃশ্বাস আটকে যায় আমার।
কথাটা বলে অপূর্ব হিমির দিকে এগোতে নিলেই অর্নব তাকে আটকে দেয়। এবার দুহাত দিয়ে তার কলার টেনে ধরে বলে,
_ কেন? কেন মজা করবে ও তোর সাথে? ও বলছে আমি ওর হাসবেন্ড,তারপর ও তুই ওর দিকে এগোতে যাচ্ছিস। এত্ত সাহস তোর!

অপূর্বের কানে এর কোনো কথাই যাচ্ছে না। সে শুধু একদৃষ্টিতে হিমির দিকে তাকিয়ে বলছে,
_তুমি তো জানো হিমি,আ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ আ লট হিমি। আর তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো,আই নো দ্যাট।

অর্নব এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না। অপূর্বের ঘাড়ে জোরে ধাক্কা দিতেই সে পড়ে যায় নিচে। অর্নব অপূর্বের দিকে এগোতে যাবে তার আগেই তার গালে সজোরে ঠাস করে চড় মা*র*ল হিমি। ঘটনার আকষ্মিকতায় অর্নব অবাক হয়ে তাকায় হিমির দিকে। হিমি অর্নবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
_স্টপ ইট অর্নব! পাগল হয়ে গেছেন আপনি? আমি আপনার থেকে এটা আশা করিনি।

কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত ও সেখানে দাড়ালো না হিমি। ক্রাচ টা নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে অটোতে বসে স্থান ত্যাগ করলো সে। অর্নব রাগী দৃষ্টিতে একবার অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোকে তো আমি দেখে নেবো।
কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে গেলো অর্নব। তবে এতকিছুর মাঝেও পাথর এর ন্যায় একইভাবে পড়ে আছে অপূর্ব। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো যেন কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে তার। আশেপাশের কোনোকিছুই তার কানে যাচ্ছে না। মনের মাঝে শুধু একটা কথাই ঘুড়ছে,
_তুমি এটা করতে পারোনা হিমি,ইউ কান্ট ডু দ্যাট…

#চলবে