Friday, June 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 260



আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ_২ পর্ব-৩৭+৩৮

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৭( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

ডক্টর মরিয়ম মান্নানের সামনে বসে আছে তুষার চিত্রা। ডক্টরের হাতে চিত্রার রিপোর্ট। ডক্টর মরিয়ম মান্নান রিপোর্ট টার দিকে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে তুষারকে উদ্দেশ্য করে বলল-
-“ এই সময়ে যে শারীরিক সম্পর্ক করা ঠিক না এটা আপনারা জানেন না?
তুষার আড় চোখে তাকালো চিত্রার দিকে। বিষয় টা বেশ লজ্জার লাগছে তুষারের কাছে। কিন্তু কিছু বললো না। ডক্টর মরিয়ম মান্নান রিপোর্ট টা তুষারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ এমনি সব ঠিকঠাক আছে। তবে ঐ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবেন।

তুষার মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রিপোর্ট টা নিলো। মনে মনে চিত্রা কে ইচ্ছে মতো বকে নিলো। ডক্টর তো আর জানছে না তার বউ কন্ট্রোলে থাকতে পারে না। চেয়ার ছেড় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে-
-“ আসছি তাহলে আমরা।
চিত্রা কে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো কেবিন থেকে। তুষারের মুখে গম্ভীর ভাব বিদ্যমান। চিত্রা কয়েক ঢোক গিললো। তার বোকামির জন্য কতটা লজ্জায় পড়তে হলো। তুষার গাড়ির দরজা খুলে দেয় চিত্রা কে বসার জন্য। চিত্রা উঠে বসে। তুষার ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

গাড়িতে চলছে পিনপিনে নিরবতা। চিত্রা তুষারকে সেই থেকে চুপ থাকতে দেখে আমতাআমতা করে বলে-
-“ আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর?
তুষার কথা বললো না।
-“ আমি জানতামই না ওসব করলে রিপোর্টে ওভাবে ধরা পড়ে যাবে। সরি।
তুষার দৃষ্টি সামনে রেখেই জবাব দিলো-
-“ দোষ টা আমারই৷ আমারই উচিত ছিলো তোমার তালে তাল না দেওয়া। যার জন্য লজ্জায় পড়তে হলো আজ। তোমার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।
-“ কত দূরে থাকবেন?
-“ মাঝখানে একটা কোলবালিশ রাখলে যতটা দূরত্ব হয় ততটা।

চিত্রা আর কিছু বললো না। বাসায় ফিরতেই তানিয়া বেগম তুষার আর চিত্রা কে জিজ্ঞেস করলো রিপোর্ট ঠিকঠাক আছে কি না। তুষার জবাব দিলো ঠিকঠাক আছে। তানিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে কুসুম কুসুম গরম দুধের গ্লাস এনে চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। চিত্রা দুধের গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে রইলো। বাহির থেকে আসলে ঠান্ডা পানি দিত আগে আর এখন গরম দুধ। তপ্ত শ্বাস ফেলে গ্লাস টা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলো। তানিয়া বেগম চিত্রা কে দুধ খেতে না দেখে ধমক দিয়ে বলল-
-“ খাচ্ছো না কেনো?
চিত্রা তানিয়া বেগমের এমন টুকটাক ধমকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। মিনমিন সুরে বলল-
-“ ঠান্ডা পানি খাবো।
-“ দুধ টা আগে শেষ করো ঠান্ডা পানি আনছি।
ব্যাপার টা চিত্রার কাছে লাগলো যেই লাউ সেই কদু। দুধ না খাওয়ার জন্যই তো বললো সে পানি খাবে আর শ্বাশুড়ি তাকে দুধ খাওয়ার পর পানি দিবে। চিত্রা নাক চেপে দুধ টা খেয়ে নিলো। তানিয়া বেগম গ্লাসে ঠান্ডা পানি এনে দেয়। চিত্রা পানিটা খেয়ে উপরে চলে যায়।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে তুষার রুমে এসে দেখে চিত্রা মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুষার কিছু বললো না সেটা নিয়ে। টেবিল থেকে মেডিসিনের পাতা থেকে একটা টেবলেট নিয়ে চিত্রার সামনে ধরে বলে-
-“ ভুলে গেছো এটা খাওয়ার কথা?
-“ হুম।
ছোট্ট জবাব টা দিয়ে চিত্রা ঔষধ টা খেয়ে নেয়। তুষার বাতি নিভিয়ে দিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করে। প্রায় মধ্য রাত অব্দি কাজ করে তুষার। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে চিত্রা ঘুমে বিভোর। তুষার স্মিত হেঁসে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বিছানায় আসলো। মাঝখান থেকে কোলবালিশ টা সরিয়ে চিত্রা কে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম দিলো। চিত্রা মুচকি হেসে দিলো। সেটা দেখে তুষার চিত্রার কপালে চুমু খেলো।

এভাবেই চলল ছয় মাস। চিত্রার পেট আগের তুলনায় বড় হয়েছে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। পেট বড় হওয়ায় দেখতে মোটা লাগে। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে। গায়ের রং আলের তুলনায় কালো কালো হয়ে গেছে। মাথার কালো চুল গুলো ঝড়ে পড়ে এখন অল্প হয়ে গেছে। প্রেগন্যান্সির সময় কত কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো চিত্রা। আগের চিত্রা আর এখন কার চিত্রা কতটা আকাশপাতাল পার্থক্য। প্রায় রাত্রিরে চিত্রা তুষার কে জিজ্ঞেস করে- আচ্ছা আমাকে কি দেখতে আগের থেকেও বাজে লাগে? খুব মোটা লাগে তাই না? দেখতেও কালো হয়ে গেছি। আচ্ছা আমাকে কি তোমার এখন অপছন্দ হয়?বাহিরে কোনো সুন্দর রমণী পছন্দ হয়েছে?
এসব কথার পৃষ্ঠায় তুষার নির্নিমেষ চোখে চেয়ে থাকে তুষার। চিত্রার গালে আলতো করে দু হাত ঠেকিয়ে বলত-
-“ আগের তুলনায় তুমি এখন বেশ নাদুসনুদুস হয়েছো দেখতে। কি কিউট লাগে ইচ্ছে করে গাল দুটো টেনে ধরি। আর তোমার গায়ের রং আগের তুলনায় কালো হয়েছে কে বলেছে?। প্রেগন্যান্সির সময় এসব হয়েই থাকে। একটা প্রাণের মধ্যে আরেকটা প্রাণ কে প্রতিনিয়ত পালন করছো সেটা কি চাট্টিখানি কথা নাকি? আর রইলো বাহিরে মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না? আমার এতো সুন্দর কিউট হর্নি বউ থাকতে আমি বাহিরে নজর দিবো এমন অরুচি হয় নি আমার।
চিত্রা ঠোঁট উল্টে বলতো- সত্যি?
তুষার চিত্রার গালে চুমু দিয়ে বলতো হুমম সত্যি।

-“ আবার আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছো?
তুষার ওয়াশরুম থেকে ভেজা মাথা টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে কথাটা বলে।
চিত্রা আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। কোমড়ে হাত গুঁজে বলল-
-“ এতক্ষণ লাগে! বাহিরে যে রাতুল ভাইয়ারা বসে আছে সে খেয়াল কি নেই?
-“ তুমি তৈরি হও নি কেনো?

চিত্রা নিজের দিকে তাকালো। পড়নে তো নতুন মেক্সি। আর কিভাবে রেডি হবে?
-“ আমি তো রেডিই।
-“ কোথায় রেডি? মেক্সি পড়ে আছো।
-“ তো আমি কি পড়বো?
-“ কেনো শাড়ি।
-“ পাগল নাকি। আমি এই অবস্থায় শাড়ি পড়বো হোঁচট খেয়ে পড়ার জন্য নাকি!
-“ ওহ্ সেটাও তো কথা। আচ্ছা চলো নিচে।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রাতুল আর রাতুলের মা রোমিলা বেগম। সামনেই বসে আছে তৃষ্ণা, অধরা,তামিম খাঁন,তাসলিমা খাঁন,তানিয়া বেগম। সবাই একে ওপরের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অধরা আর রাতুলের বিয়ের ডেট ফিক্সড করলো সামনে মাসরে ১৫ তারিখে। চিত্রা তুষারের হাতে গুতা দিয়ে ফিসফিস করে আফসোস করে বলে-
-“ ইশ বিয়ে টা আমার ডেলিভারের পর হলে কি হতো? আমার পুচকুটাও তার ফুপির বিয়ে খেতে পারতো।
তুষার চোখ টিপে বলে- সমস্যা কি আমি তুমি আবার বিয়ে করবো। বাবা মায়ের বিয়ে খাবে আমার বাচ্চা সেটা কম কথা নাকি?
চিত্রা ভেঙচি কাটলো। বিকেলের দিকে তুষার আর রাতুল বেরিয়ে গেলো। পার্টি অফিসে আসতেই দেখা মিলল হালিম সরকারের সাথে। হালিম সরকার তুষারের কাঁধে হাত রেখে বলে-
-“ শুনলাম ছেলের বাবা হতে চলছো। মিষ্টি খাওয়ালে না তো।
তুষার হালিম সরকারের হাত কাঁধ থেকে সরিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ উনাকে পেট ভরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিস তো।
হালিম সরকার রাতুলের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠে –
-“ রাতুল কে ছাড়া তুমি বড্ড অচল তুষার তাই না?
তুষার ভ্রু কুঁচকালো। হালিম সরকার আর কিছু না বলে চলে গেলো। রাতুল চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে-
-“ শুনলাম কাল রাফি আসছে দেশে।
-“ হ্যাঁ। প্রজেক্টের কাজ নাকি শেষ।
-“ শোন কাল কিন্তু সিএমবি যেতে হবে তোকে। ওখানকার রাস্তা ভেঙে গেছে।
-“ আচ্ছা।

অধরা বসে আছে রুমে। মুখে তার লজ্জা মাখা হাসি। চিত্রা থেকে থেকে এটা ওটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। তাদের থেকে একটু দূরে তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে রাফির সাথে কথা বলছে। মানুষ টাকে কতগুলো মাস পর সামনাসামনি কাল দেখবে। এমনি ভিডিও কলে কথা হয়েছে কিন্তু সেটায় কি আর তৃপ্তি পেতো?
-“ কয়টায় ফ্লাইট কাল আপনার?
ওপাশ থেকে জবাব আসলো-
-“ সন্ধ্যার আগে তোমার কাছে পৌঁছে যাব।
-“ অপেক্ষায় থাকবো সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
-“ হ্যাঁ সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য আমিও অপেক্ষায় আছি।

পরের দিন সকালে,,

তুষার সিএমবি যাওয়ার জন্য রেডি হয়। চিত্রা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুষার কে দেখলো। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ এতে সেজে যেতে হবে কেনো?
তুষার স্মিত হাসলো।
-“ বাহ রে এমপি আমি। যেনো তেনো বেশে গেলে চলে নাকি?
-“ কেনো চলবে না? মেয়েদের দেখাতে হবে আপনার ফিটফাট চেহারা?
-“ হ্যাঁ তেমন টাই।
-“ বাসায় ফিরবেন না। ওখানেই সংসার পেতে ফেলবেন।
তুষার চিত্রার রেগে বলা কথা গুলো শুনে বলে-
-“ নিজেই একা একা সব ভেবে নাও। আর আমি তাল দিলেই রেগে যাও কেনো?
-“ আপনি আমাকে মানাবেন তা না করে কেনো আমার কথায় তাল মেলান?
ভেঙচি কেটে কথাটা বলে চিত্রা। তুষার গলার টাই টা খুলে ফেলে। ইন করা শার্ট অগোছালো করে বলে- ঠিক আছে এখন?
-“ আশ্চর্য এমন বেশ ধরলেন কেনো?
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে-
-“ তুমিই তো বললে এতো সেজে যেতে না।
-“ আমি তো এমনি কথার কথা বলছি। ইন করেন শার্ট।
-“ না থাক আর করা লাগবে না। সময় নেই।
চিত্রা তুষার নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলে বসে অধরা আর তৃষ্ণা খাচ্ছে। তুষার গিয়ে চিত্রা কে নিয়ে বসে। খাবার খেয়ে চিত্রার কপালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ আসছি। সাবধানে থেকো। সন্ধ্যার আগেই ফিরবো।

চিত্রা মাথা নাড়ালো। তুষার চলে গেলো। চিত্রা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তুষারের যাওয়া দেখলো।

তুষার প্রথমে পার্টি অফিসে গেলো সেখানে রাতুলের সাথে কিছু গুরত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে আলোচনা করলো।

চিত্রা কিছুক্ষণ শ্বাশুড়ি আর দাদির সাথে গল্পগুজব করলো। বেলা হতেই রুমেই গিয়ে গোসল করে নামাজ পড়ে ঘুম দিলো। সেই ঘুম গিয়ে ভাঙলো মাগরিবের আজানের দিকে। চিত্রা বিছানা থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিয়ে হাই তুলতে তুলে রুম থেকে বের হলো। সিঁড়ি দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে নামতেই আকস্মিক বাড়ির দারোয়ান বাড়ির ভেতর দৌড়ে এসে বলল গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। তানিয়া বেগম আর তৃষ্ণা চমকে উঠে। কথাটা আকস্মিক চিত্রার কানে আসতেই সামনে তাকিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই পা পিছলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে পড়ে গেলো। প্রচন্ড ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে চিত্রা। কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে ঘাড় ঘুরায় তৃষ্ণা। চিত্রা পড়ে গেছে। তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দৌড়ে আসে। চিত্রার মাথা কোলে নেয়। কাঁপা কাঁপা হাতে চিত্রার গালে হাত দিয়ে জোরে বলে উঠে –
-“ মা চিত্রা। ও পড়ে গেছে।
ভয়ে দিকশূন্য তৃষ্ণা। ফ্লোর ভেসে গেছে র’ক্তে। তানিয়া বেগম দৌড়ে আসলো চিত্রার কাছে। চিত্রা পেট ধরে ব্যাথায় ছটফট করছে।
চিত্রার অবস্থা দেখে ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। বাসায় কেউ নেই। তাসলিমা খাঁন আর অধরা বেরিয়েছে বাড়ির পাশে হাঁটতে। পুরুষ গুলোও গেছে কাজে।
তানিয়া বেগমের মাথা কাজ করছে না। তুষারের নম্বরে ফোন করলো। ফোন বন্ধ। তামিম খাঁন কে ফোন করতেই তামিম খাঁন ফোন রিসিভ করলো। তানিয়া বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় তামিম খাঁন কে চিত্রার খবর জানালো। তামিম খাঁন তড়িঘড়ি করে চিত্রা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে বলে। সে আসছে। তানিয়া বেগম ফোন কেটে দিয়ে ড্রাইভার কে তাড়াতাড়ি করে চিত্রা কে ধরতে বলে। ড্রাইভারের সাহায্যে তানিয়া বেগম আর তৃষ্ণা চিত্রা কে গাড়িতে উঠায়৷ কারো আর শোনা হলো না সেই এক্সিডেন্টের কথা। চিত্রা কে নিয়ে ছুটে গেলো সবাই হসপিটালে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে খাঁন পরিবার। চিত্রার মা কেঁদে কেঁদে আল্লাহ কে স্মরণ করছে। তৃষ্ণা তানিয়া বেগমের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। তুষার কে এখনও ফোনে পাওয়া যায় নি। ফোন বেজে চলছে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। ডক্টর জানিয়েছে চিত্রার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সার্জারি করতে হবে। প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে। ইমিডিয়েটলি বি নেগেটিভের ব্লাড লাগবে। তাদের হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত এখন নেই। তানিয়া বেগম অধরা কে ফোন করছে। অধরার ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ। কিন্তু অধরাও ফোন ধরছে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তানিয়া বেগমের।
এদিকে এত বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেছে কিন্তু যাদের এখন বেশি দরকার তারাই নেই।

তামিম খাঁন না পেরে রাতুল কে ফোন করলো। রাতুলের ফোন বন্ধ বলছে। বিষয় টা মোটেও ভালো লাগলো না। তুষার রাতুলের সাথে লিমন কে এবার ফোন করলো। লিমন ফোন রিসিভ করতেই তামিম খাঁন বলল-
-“ তুষার রাতুল কোথায়?
লিমন হয়তো তাড়ায় আছে৷ কন্ঠ শুনে তেমনটাই মনে হলো। ভেঙে যাওয়া কন্ঠে তড়তড় করে বলল-
-“ তুষার ভাইয়া রাতুল ভাইয়ার কাছে গেছে। রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা তামিম খাঁনের কর্ণকুহর হতেই বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন-
-“ র..রাতুল এক্সিডেন্ট করেছে!কিভাবে?
সবাই চকতি তাকালো তামিম খাঁনের দিকে।
-“ তুষার ভাইয়ার যাওয়ার কথা ছিলো সিএমবি তুষার ভাইয়া মিটিং এর জন্য যেতে পারে নি। তাই রাতুল ভাইয়া গিয়েছিল। আর যাওয়ার পথেই গাড়ি ব্রেক ফেইল করে খাদে পড়ে গেছে।
-“ রাতুল ঠিক আছে তো?
-“ রাতুল ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ খুঁজছে।
-“ আমি আসছি এক্ষুনি।

তামিম খাঁন ফোন কেটে দিতেই তানিয়া বেগম ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে কাঁপা গলায় বলল- র.. রাতুলের কি হয়েছে?
-“ এক্সিডেন্ট করেছে।
দু কদম পিছিয়ে গেলো তানিয়া বেগম। তৃষ্ণা ধরে নিলো। তামিম খাঁন সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে যেতে নিলে সাহেল আহমেদ বলেন-“ আমিও যাই তোর সাথে?
তামিম খাঁন না করলেন। এই পরিস্থিতিতে হসপিটালে শক্ত পোক্ত কাউকে থাকা দরকার।

তুষার হন্যে হয়ে খাদের নিচের দিকটায় রাতুল কে খুঁজে চলছে। ঘন জঙ্গল। রাতুলের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে তুষার। কিন্তু কোনো আওয়াজ ভেসে আসছে না। তুষার হাঁটু গেড়ে বসলো। আকাশের পানে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো। বারবার আল্লাহ কে ডেকে বলতে লাগলো রাতুলের যেনো কিছু না হয়।
আকবর এসেছে ছেলের এক্সিডেন্টের কথা শুনে। যতই হোক ছেলে তো। ছেলের এমন মর্মান্তিক খবর শুনে কোনো বাবাই ঠিক থাকতে পারে না। তুষার কে দেখা মাত্রই তুষারের দিকে তেড়ে যায়। তুষারের কলার ধরে হুংকার দিয়ে বলে- আমার ছেলের যদি কিছু হয় আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো না তুষার।

অন্য সময় হলে তুষার রেগে যেত আকবরের এমন স্পর্ধা দেখে। কিন্তু এবার সে পানির মতই শীতল রইলো। পুলিশ এসে জানালো রাতুলের বডি পাওয়া যায় নি। এদিকে রাত ও হয়ে এসেছে।
তামিম খাঁন আসলেন। ছেলের বিধ্বস্ত রূপ দেখে নিজেও ভেঙে গেলেন ভেতরে। রাতুল ছেলেটাকে নিজের ছেলের মতোই দেখে এসেছে এতকাল। ছেলের পাশে এসে বললেন-
-“ পাওয়া গেলো রাতুল কে?
তুষার বোবার মতো দু দিকে মাথা নাড়ালো। পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে তুষার দের চলে যেত বলল। তারা খুঁজবে হন্যে হয়ে। এমপির আত্মীয় বলে কথা।
তামিম খাঁন তুষার কে সাইডে টেনে নিয়ে চিত্রার কথা বললেন। তুষার চিত্রার কথা শুনেই আতঙ্কিত হয়ে বলে-
-“ ও ঠিক আছে তো বাবা?
-“ অবস্থা ভালো না। একদিকে চিত্রা আরেক দিকে রাতুল। আল্লাহ কোন ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে আমাদের?

সাইড থেকে আকবরের কন্ঠ ভেসে আসলো। আকবর যাবে না সে পুলিশদের সাথে থেকেই ছেলেকে খুঁজবে। ফোনের লাইট জ্বালিয়ে খুঁজতে লাগলো রাতুল বলে। তুষার সেদিকে একবার তাকালো। তামিম খাঁন ছেলেকে ধরে হাঁটা ধরলেন।

খাদের শেষ প্রান্তে গাছের সাথে ঝুলে আছে রাতুল। চেষ্টা এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার। এই খাদ থেকে নিচে পড়ে গেলে নির্ঘাত মৃ’ত্যু হবে। এই উঁচু খাদের নিচে রয়েছে গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা।

আকবর ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে খাদের শেষ প্রান্তে আসে। সামনের দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাঁটতে হাঁটতে আকস্মিক সামনে কিছু পড়ার শব্দ শোনা যায়। আকবর থেমে যায়। ফোনের লাইট সামনে ধরে দেখে তার সামনে পিস্তল রাখা আছে। হঠাৎ এমন জিনিস এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। এগিয়ে গিয়ে পিস্তল টা তুলে নিলো। পিস্তল টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে সেটা হাতে নিয়েই সামনে এগোলো আর রাতুল বলে চিৎকার করে উঠলো। রাতুলের গলায় জোর নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মৃত্যুর দুয়ারে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে কন্ঠ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না।

আচমকা চোখের সামনে আলোর রশ্মি দেখতে পেয়ে বুকে এক ফোঁটা আশা জাগে বাঁচার। পরক্ষণেই আলো টি ক্রমশ সামনে এগিয়ে আসে। স্পষ্ট হয় আলোর পেছনে থাকা মুখশ্রী। রাতুল গাছের ডাল শক্ত করে ধরে বলে-
-“ আপনি?
আকবর ছেলেকে পেয়ে যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পায়। পিস্তল টা হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুট লাগায়। রাতুল ভয় পেয়ে যায়। গলায় খানিকটা জোর এনে কষ্ট করে শুধায়-
-“ আপনি মারতে এসেছেন আমায়?
আকবর থেমে যায়। -“ না না আমি তোকে মারতে আসি নি। বাঁচাতে এসেছি।
-“ পিস্তল হাতে করে এসেছেন বাঁচাতে!
আকবর পিস্তল টা সামনে তুলে ধরে। হেঁসে বলে-
-“ না রে পাগল এটা এখানে পেয়ছি। তুই থাক আমি আসছি। নড়বি না। আমি দড়ি নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে আবার ছুট লাগায় পিস্তল টা মাটিতে রেখে। রাতুল ক্লান্ত হয়ে আসে। হাত দুটো অসার হয়ে আসে। চোখ দুটো থেকে বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। বিধাতার কাছে খুব করে বলছে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিতে। কথা গুলো মনে মনে আওড়িয়ে সামনে তাকায়। মুহূর্তে পরিচিত এক মুখশ্রী দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু সেই হাসিটা ক্ষণস্থায়ী হলো না। সামনে থাকা ব্যাক্তি পিস্তল তাক করে রেখেছে তার দিকে। বিশ্বাসের পাহাড় ভেঙে গুড়িয়ে গেলো। মুখ তুলে কিছু বলার আগেই পরপর দুটো গুলি রাতুলের বুকের খাঁচা টাকে ভেদ করে বেরিয়ে যায়। হাত ফস্কে খাদে পড়ে যায় রাতুল। চিৎকার করার সময় টুকুও পেলো না।

আকবর তড়িঘড়ি করে গাড়ির কাছে এসে দড়ি নিয়ে ছুটে যায় ছেলের কাছে। খাদের কিনারায় আসতেই দেখে রাতুল নেই। সহসা বুক ধক করে উঠলো। খাদের কিনারা দিয়ে মাথা খানিক টা ঝুকালো। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। রাতুল কি পড়ে গেছে তাহলে? মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো আকবর। মাথা কাজ করছে না। এটা তো হবার ছিলো না। খেলা পাল্টে গেলো কি করে?

আজ জাহাঙ্গীর নগর ভর্তির এডমিশন পরীক্ষা চলছে। সেই উপলক্ষে ক্যাম্পাসের রাস্তার সাইড দিয়ে বিভিন্ন স্টলের দোকান বসেছে৷ সেখানে অধরাদের ক্লাসের কয়েকজন একটা স্টল দিয়েছে। নানি কে নিয়ে সেই স্টলেই এসেছিল অধরা। ওয়াশরুমে চাপ আসায় তাসলিমা খাঁন কে স্টলে বসিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছিল। হালকা পাতলা ঠান্ডা খেয়ে তারপর দাদি কে নিয়ে বের হলো ক্যাম্পাস থেকে। বাহিরে বের হয়ে অধরা ফোন চেক করতেই দেখে তানিয়া বেগমের ফোন কল। ফোন সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারে নি। অধরা তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করলো। ফোন কানে নিতেই জানতে পারলো চিত্রার খবর। ব্লাড লাগবে। অধরা তাসলিমা খাঁন কে নিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠলো। যতদ্রুত সম্ভব হসপিটালে যেতে হবে।

হসপিটালে এসে রিসেপশন থেকে সার্জারির রুম নম্বর জেনে ছুটে গেলো সেখানে। সবাই কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা তানিয়া বেগমের কাছে ছুটে গিয়ে বলে-
-“ মামি তুমি বললে ব্লাড লাগবে। আমি এসেছি। ডক্টর কে ডাক দাও।
সাহেল আহমেদ ডক্টর কে ডেকে আনে। ডক্টর আলাদা কেবিনে নিয়ে গিয়ে অধরার থেকে ব্লাড কালেক্ট করে।

তুষার এলোমেলো পায়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ঢুকে। কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির কন্ঠে বলে-
-“ চিত্রা কেমন আছে মা? আর এসব হলো কি করে?
তুষার কে দেখে যেনো মনে বল পেলো তানিয়া। তখনকার সব ঘটনা খুলে বলল তুষার কে। তুষার নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মনের ভেতর বইছে ঝড়। একদিকে স্ত্রী সন্তান আর আরেক দিকে প্রাণপ্রিয় বন্ধু। ধপ করে বসে পড়লো তুষার। কিছুক্ষণ পর পর ওটি থেকে বের হচ্ছে ডক্টর। তুষার উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গিয়ে বলল-
-“ ডক্টর আমার স্ত্রী সন্তান ঠিক আছে তো?
-“ আপাতত কিছু বলতে পারছি না। আল্লাহ কে ডাকুন।
কথাটা বলে ওটির ভেতরে ঢুকে পড়ে ডক্টর৷ ওটির বাহিরে পায়চারি করে তুষার। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর ওটির বাতি নিভে। ধড়াস ধড়াস করে লাফিয়ে উঠলো হৃদপিণ্ডটা।
ডক্টর এগিয়ে আসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল-
-“ বেবিটার অবস্থা ভালো না। কাঁদছে না। কিন্তু শ্বাস কার্যক্রম চলছে।
তুষার অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ আমার স্ত্রী কেমন আছে?
-“ পাঁচ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারবো।
-“ মানে?
-“ অনেক ব্লিডিং হয়েছে। তার শরীর ভীষণ দুর্বল। এখন কতোটুকু সার্ভাইব করতে পারবে সেটা বলা মুশকিল।
-“ আর বাচ্চা টা? কোলে নিতে পারবো আমরা?
তানিয়া বেগম কথাটা বলে উঠলেন। ডক্টর অভয় দিয়ে বললেন- পরিষ্কার করিয়ে দেওয়া হবে।
চলে গেলো ডক্টর। কিছুক্ষণ পর সাদা কপাড়ে মুড়িয়ে এক নবজাতক শিশু কে নিয়ে আসা হলো। তানিয়া বেগম এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলেন। পিটপিট করে তাকাচ্ছে বাচ্চাটা। এই টুকু বাচ্চার তো কাঁদার কথা। কিন্তু বাচ্চাটা কাঁদছে না।
-“ তুষার তোর ছেলে।
তুষার তাকালো। বিরবির করে বলল-
-“ আমাদের ছেলে। কোলে নিলো তুষার। কেবিন থেকে চিত্রা কে বের করে অন্য কেবিনে শিফট করা হলো। তুষার বাচ্চা কে কোলে নিয়েই চিত্রা কে রাখা কেবিনে ঢুকে পড়লো। চিত্রা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। হাতে স্যালাইন। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। তুষার পাশে টুল টেনে বসলো।
-“ বাবু কে দেখবে না চিত্রা? তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকাও। বাবুর তো তোমাকেই প্রয়োজন বেশি। উঠো তাড়াতাড়ি লক্ষীটি।

অধরা কেবিন থেকে বের হলো। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে ব্লাড দিয়ে। তৃষ্ণার কাছে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ চিত্রা আর বাবু সুস্থ আছে?
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়। অধরার মুখে হাসি ফুটে উঠে। ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করে বলে-
-“ রাতুল কে ফোন দেই। আসার পথে মিষ্টি নিয়ে আসবে।
কথাটা বলে ফোন দিতে থাকে। আশ্চর্য রাতুলের ফোন বন্ধ বলছে। অধরা বিরক্ত হয়। -“ কাজের সময় পাওয়া যায় না। ফোন কেনো সুইচ অফ বলছে?

তানিয়া বেগম তৃষ্ণা কে বলল অধরাকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে। তৃষ্ণা অধরা কে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। রাতটা চিত্রা আর বাচ্চার কাছে রইলো চয়নিকা বেগম সাহেল আহমেদ আর তুষার।

বাসার বসার ঘরে বসে তৃষ্ণা আর তানিয়া বেগম একে ওপরের দিকে তাকায়৷ সত্যি টা কি করে বলবে এই মেয়েকে সেই সাহস টা পাচ্ছে না। তানিয়া বেগম অধরাকে ধরে পাশে বসিয়ে বলে-
-“ কথাটা কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
-“ কি কথা মামি?
তানিয়া বেগমের কন্ঠ কেঁপে উঠে। তৃষ্ণা এগিয়ে এসে বলে-
-“ আপু।
-“ হু।
-“ রাতুল ভাইয়া..
-“ হুমম রাতুল কি?
-“ রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা বলে শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা। অধরা বসা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো।
অধরা হাসার চেষ্টা করে বলল-
-“ মজা করছিস তাই না?
-“ না। সত্যি রাতুল ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে। বডি এখনও পাওয়া যায় নি। সে জন্য তোমার ফোন তুলছে না।

অধরা এর প্রতিত্তোরে কি রিয়াক্ট দিবে ভুলে গেছে। এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো তৃষ্ণার দিকে। আচমকা তানিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ সত্যি মাি?
তানিয়া বেগম মাথা ঝাকালো। মুহূর্তে ঢলে পড়ে গেলো অধরা। এমনি তে শরীর দূর্বল ব্লাড দেওয়ায় তার উপর এমন নিউজ, শরীর সইতে পারে নি। তানিয়া বেগম তড়িঘড়ি করে অধরা কে ধরলো। তৃষ্ণা কে তাড়াতাড়ি পানি আনতে বলে। তৃষ্ণা পানি আনে। অধরার চোখে মুখে পানি দেয় কিন্তু অধরা উঠে না। আর তখনই দরজায় কলিং বেল বাজে। তৃষ্ণা গিয়ে দরজা খুলে। রাফি হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তৃষ্ণার মুখে হাসি নেই। তৃষ্ণা কে খুশি হতে না দেখে রাফি ভ্রু কুঁচকায়।
-“ খুশি হও নি?
তৃষ্ণা সরে দাঁড়ালো দরজা থেকে। রাফির চোখ গেলো ফ্লোরে পড়ে থাকা অধরার দিকে। চোখ মুখে বিস্ময় নিয়ে বলল-
-“ অধরার কি হয়েছে?
তৃষ্ণা ডুকরে কেঁদে উঠলো।
-“ আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেনো? চিত্রা হসপিটালে৷ রাতুল ভাইয়া নিখোঁজ ।
রাফি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ মানে?
তৃষ্ণা সব খুলে বলে। রাফি তড়িৎ গতিতে একটা শক খায়। হাতের ল্যাগেজ টা ছেড়ে দিয়ে অধরার দিকে এগিয়ে যায়। অধরা কে পাঁজা কোলে তুলে রুমে নিয়ে গিয়ে শোয়ায়।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ_২ পর্ব-৩৫+৩৬

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কি রে তোরা এখানে যে?

আচমকা চিরচেনা পুরুষালি কন্ঠ শুনে পেছন ফিরে তাকায় অধরা আর চিত্রা। রাফিকে এখানে দেখে অধরা বলে উঠে –
-“ ভাইয়া তুমি এখানে!

রাফি অধরা চিত্রার দিকে আগাতে আগাতে বলে-
-“ হ্যাঁ একটা দরকারে এসেছিলাম।

-“ ওহ্ আমি আর চিত্রা একটু কেনাকাটা করতে এসেছিলাম।
-“ তৃষ্ণা আসে নি?

-“ না ও বাসায়। বাসায় ফিরবে না এখন?
-“ না একটু দেরি হবে। তোরা যা তাহলে।

অধরা মাথা নাড়িয়ে চিত্রার হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফি চলে যাওয়া গাড়ির পানে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে চলে যায়।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তানিয়া বেগম আর তাসলিমা খাঁন। তার পাশেই জুবুথুবু হয়ে বসে আছে চিত্রা। তাসলিমা খাঁন তামিম খাঁন আর সামির খাঁনের ছোট বেলার দুষ্টুমির কথা বলছেন। নিজের রুমে বসে আছে তৃষ্ণা। অধরা রেডি হচ্ছে প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য। এর মধ্যে ঘামান্ত শরীর নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রাফি। সোফায় বসে গা এলিয়ে দেয়। তানিয়া বেগম এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দেয়। রাফি ঢকঢক করে গিলে বলে-

-“ চাচি আজ রাতে আমার ফ্লাইট।
তানিয়া বেগম অবাক হয়ে বলে-
-“ তোর না কাল ছিল ফ্লাইট।

-“ না আজই। আমি আজকের ফ্লাইটের টিকিট বুক করেছি।
-“ ওহ্। ফিরবি কবে?

-“ এখনও তো যাই নি। যাওয়ার পর বুঝতে পারবো ফিরবো কবে।
-“ আচ্ছা রুমে যা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। আমি খাবার উপর পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম খাবার প্লেটে সাজিয়ে তৃষ্ণা কে ডাক দেয়। তৃষ্ণা মায়ের ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামে। তানিয়া বেগম তৃষ্ণার হাতে খাবারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলে –

-“ নিয়ে যাও।
তৃষ্ণা খাবারের প্লেট নিয়ে উপরে উঠে চলে যায়। রাফি ফ্রেশ হয়ে টি-শার্ট পড়ে বিছানায় বসে আছে। তৃষ্ণা দরজায় কড়া নাড়ে। রাফি এক নজর দরজার পানে তাকিয়ে বলে- কামিং।

তৃষ্ণা ভেতরে ঢুকে। খাবার টা বিছানায় রেখে বলে-
-“ আপনার খাবার এনেছি।
-“ হুম দেখেছি।
তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে রইলো। রাফি খাবারের প্লেট টা হাতে তুলে নিতে নিতে বলে-

-“ আমার ল্যাগেজ টা একটু গুছিয়ে দাও তো। রাতে ফ্লাইট।
তৃষ্ণা অবাক চিত্তে তাকিয়ে থাকে।
-“ আপনার ফ্লাইট রাতে!
-“ হুমম।

-“ কই আপনি যে বললেন আগামী কাল ফ্লাইট।
-“ হ্যাঁ ছিলো তবে সেটা বাতিল হয়ে আজ হয়েছে।
তৃষ্ণা ওহ্ বলে ল্যাগেজ গুছিয়ে দেয়।

রাত সাতটার দিকে রাফি বাসার সবার থেকে বিদায় নেয়। তৃষ্ণা কিয়ৎ ক্ষন অভিমান করে ছিলো কিন্তু বেশি দীর্ঘ হয় নি। রাফি বলেছে তাড়াতাড়ি কাজের পার্ট চুকে ফেরার চেষ্টা করবে। তুষার বাসায় নেই। অধরা এখনও ফিরে নি। বাসায় রয়েছে তানিয়া বেগম, তাসলিমা খাঁন, তরিকুল খাঁন, তামিম খান,তৃষ্ণা, চিত্রা আর সামির খাঁন। কিছুক্ষণ আগেই সামির খাঁন ছেলেকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে আসে।

অধরাকে এখনও বাসায় আসতে না দেখে অধরার নম্বরে ফোন করে তামিম খাঁন।
অধরার ফোন রিসিভ হয় না। হবে কি করে? এতো এতো সাউন্ডের মাঝে ফোনের রিংটোন যেনো বন্ধ ব্যাগের চারপাশেই আবদ্ধ রইলো।
অধরাকে না পেয়ে তামিম খাঁন এবার রাতুল কে ফোন করলো।

-“ হ্যালো রাতুল তুমি কোথায়?
রাতুল জবাব দিলো-
-“ আমি বিশ মাইল আছি।
-“ অধরা এখনও বাসায় ফিরে নি। একটু খোঁজ নাও তো৷ রাত হচ্ছে তো।

-“ আমি অধরার কাছেই যাচ্ছি। পৌঁছে দিয়ে আসবো বাসায় চিন্তা করবেন না।

তামিম খাঁন স্বস্তি পেলেন। রাতুল সোজা ভার্সিটিতে এসে অধরা কে খুঁজতে লাগলো। অধরা বলেছিল অমর একুশে চত্বরের ওখানে গেলে তাকে পাবে। রাতুল অধরার কথা মতে ওখানে গিয়ে দেখে অধরা বসে আছে। রাতুল দৌড়ে গিয়ে অধরার পাশে বসলো। অধরা চমকালো। চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে রাতুল কে দেখতে পেয়ে স্বাভাবিক হয়।

-“ অনেক্ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।
-“ বাসায় যাবেন না? আপনার মামা অনেকবার ফোন দিয়েছিল আপনাকে। ফোন রিসিভ করেন নি দেখে আমায় দিয়েছে ফোন।

-“ শুনতে পারি নি এতো সাউন্ডের মাঝে।
-“ বাসায় চলুন তাহলে।
অধরা হুমম বলে উঠে দাঁড়ালো। তারপর রাতুলের সাথে বাসায় ফিরলো।

তুষার এসেছে রাত ১২ টার দিকে। সবাই তখন ঘুমে বিভোর। আর তন্দ্রা হীন হয়ে ছিলে কেবল চিত্রা। তুষার রুমে আাতেই চিত্রা খাবার গরম করে রুমে নিয়ে আসে। তুষার ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসে। আজ আর তুষারের জন্য অপেক্ষা করে নি চিত্রা। তানিয়া বেগম জোর করে চিত্রা কে খাইয়েছেন। তুষার খাওয়া আগে চিত্রা কে জিজ্ঞেস করলো খেয়েছে কি না। চিত্রা হ্যাঁ জানালো।

তুষার নিরবে খাবার টা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে এঁটো হাত ধুয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো। এঁটো প্লেট ঢেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। রাত ১ টা অব্দি কাজ করলো তুষার। তারপর এলোমেলো পায়ে বিছানায় এসে চিত্রা কে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। চিত্রা যেনো এতক্ষণ এটার ই অপেক্ষায় ছিলো। তুষার কাছে আসতেই মনেমনে হাসলো। তারপর ঘুম দিলো।

নতুন সকাল নতুনত্বের আগমন নিয়ে হাজির হয়। রাফি কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছে সে সুস্থ মতোই পৌঁছিয়েছে মালদ্বীপ। নামকরা একটা হোটেলে উঠছে। দুই একদিনের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শুরু করবে। সবাই স্বস্তি পেলো কথাটা শুনে।
তৃষ্ণা চিত্রা এক্সাম দিতে ভার্সিটি এসেছে। আজ তামিম খাঁন পৌঁছে দিয়ে গেছে। প্রায় তিনঘণ্টা এক্সাম দেওয়ার শেষে বাড়ি ফিরে তামিম খাঁনের সাথেই।

এভাবেই চলে কয়েকদিন। গরম পড়েছে,সোফায় ফ্যান ছেড়ে বসে আছে চিত্রা। এক্সাম শেষ হয়েছে দিন দুয়েক হলো। শরীর তার ভীষণ ক্লান্ত। ঠিকমতো খেতে পারে না। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে যায়। এই তো শুধু সবজি কাটতে গিয়েই হাঁপিয়ে উঠেছে। তানিয়া বেগম একা একা রান্না করে টেবিলে খাবার সাজায়। চিত্রার পাশে এসে বসে বলে-
-“ এখনও খারাপ লাগছে?
চিত্রা উপর নিচ মাথা নাড়ায়।

-“ লেবুর শরবত করে দেই?
চিত্রা আচ্ছা বলে। তানিয়া বেগম ঠান্ডা পানি দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত তৈরি করে। চিত্রার হাতপ দেয় খাওয়ার জন্য। চিত্রা গ্লাস টা নিয়ে চুমুক দেয়। এক চুমুক খেয়েই দৌড়ে ছুটে যায় বেসিনে। মুখ খুলতেই পেট থেকে গড়গড় করে সব বেরিয়ে যায়। বুমি করতে করতে চিত্রার শরীর নেতিয়ে যায়। তানিয়া বেগম চিন্তিত হলো। চিত্রা কে ধরে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো।

সন্ধ্যার দিকে তুষার ফিরতেই তানিয়া বেগম তুষার কে বলেন সব কথা। সব শুনে তুষার নিজেও চিন্তিত হয়। দুপুরের পর থেকে চিত্রার শরীর আরো খারাপ হয়েছে। তুষার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো চিত্রা শুয়ে আছে। তুষার গিয়ে চিত্রার পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলালো। কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে চোখ মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আস্তে করে চিত্রা কে ডাকলো। চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। তুষার আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো-

-“ এখন কেমন লাগছে শরীর?
চিত্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুধালো-
-“ ভালো না।

-“ খাবার খাও নি কেনো?
-“ খেতে পারছি না তো। বুমি আসছে।
-“ লাস্ট পি’রিয়ড হয়েছে কবে?
চিত্রা স্বাভাবিক হয়েই জবাব দিলে-
-“ দু মাস আগে।

তুষার কিছু একটা ভেবে আবার বাহিরে চলে গেলো। আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরলো। হাতে প্রেগন্যান্সি কিট। চিত্রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ পরীক্ষা করে আসো।
চিত্রা কিট টা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে বলে-
-“ আপনার মনেও এটা এসেছে?
-“ হুমম।

চিত্রা অসুস্থ শরীর নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সম নিয়ে কিট টা হাতে নিয়ে বের হলো। তুষার তখন বিছানায় বসে চিত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। চিত্রা বেরিয়ে আসতেই তুষার বলে-
-“ রেজাল্ট কি এসেছে?

চিত্রা কিট টা মেলে ধরলো তুষার সামনে। তাতে টকটকে দুটো লাল দাগ ভেসে আছে। দুজনের মুখে ফুটে উঠলো হাসি। তুষার এগিয়ে আসলো৷ আলতো করে জড়িয়ে ধরলে চিত্রা কে। চিত্রা তখনও তাকিয়ে আছে লাল টকটকে দাগ দুটের দিকে। মুখ চেপে ধরা গলায় বলে-
-“ উই আর প্রেগন্যান্ট!
তুষার চিত্রার এহেন কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠে। চুলের ভাজে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ উই আর প্রেগন্যান্ট শোনা।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৬( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

পুরো বাড়িতে আনন্দের আমেজ। খাঁন বাড়িতে নতুন সদস্যর আগমন। বার্তাটা পুরে বাড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তামিম খাঁন মিষ্টি নিয়ে এসেছেন। আশেপাশে মিষ্টি বিলিয়েছেন। চয়নিকা বেগম আর সাহেল আহমেদ এসেছেন সুখবর টা পেয়ে। রাফি খবর টা পেয়েই তুষারকে আর চিত্রা কে কংগ্রাচুলেশনস জানিয়েছে। অধরা আর তৃষ্ণা বসে আছে চিত্রার পাশে। তৃষ্ণার খুশির সীমা নেই। সে ফুপি হতে যাচ্ছে! বিষয় টা স্বপ্নের মতো লাগছে। অধরা চিত্রা কে জড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালো। তৃষ্ণা এটা ওটা বলছে,বাচ্চা হবার পর বাচ্চার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সে নিবে। তার ভাইয়ে ছেলে হোক আর মেয়ে সে পেলেপুষে বড় করবে।
চিত্রা চুপচাপ তৃষ্ণার কার্যকলাপ দেখলো। তৃষ্ণা দের কথার মাঝখানেই তুষার গলা খাকড়ি দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা আর অধরা উঠে দাঁড়ায়। তুষার রুমে ঢুকে। তৃষ্ণা অধরা বেরিয়ে যায়। তুষার দরজাটা চাপিয়ে চিত্রার পাশে বসে। চিত্রার হাত দুটো মুঠোবন্দী করে চুমু খেয়ে বলে-
-” চিন্তা টা এখন বেড়ে গেলো।

চিত্রা স্মিত হাসলো। তুষার আলতো করে চিত্রার পেটে হাত রেখে বলে-
-“ এই খানে কিন্তু একটা অংশ আছে। দেখেশুনে চলাফেরা করবে। খাবার ঠিক মতো খেতে হবে। তোমার সুনিশ্চিত স্বাস্থ্য আমার বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করবে। আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে না।
চিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তুষার স্মিত হেঁসে কপালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ মিনিট কয়েক পড়েই সব ভুলে যাবে মিসেস খাঁন। উঠো এবার গোসল করে আসো। অবেলা করে গোসল করা যাবে না এখন থেকে আর।

চিত্রা নিজে নিজে উঠতে নিলে তুষার ধরে উঠায়। চিত্রা ওয়ারড্রব থেকে কাপড় নিয়ে বলে-
-“ আমার এখন পেট বড় হয় নি। সবে আড়াই মাস। এমন হবে টেক কেয়ার করছেন মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যেই আমার ডেলিভারি।
-“ শুরুর দিকেই বেশি কেয়ার করতে হয় মিসেস খাঁন। তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আসো। ফ্লোরে কিন্তু দেখেশুনে পা ফেলবে।
-“ ওক্কে।
তুষার খাটের উপর পা তুলে বসে রয়। এরমধ্যে চয়নিকা বেগম এসে দরজায় কড়া নাড়ে। তুষার গিয়ে দরজা খুলে। শাশুড়ী কে দেখে দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। চয়নিকা বেগম ভেতরে উঁকি দিয়ে বলে-
-” চিত্রা কোথায়?
-“ গোসল খানায়। ভেতরে আসুন।
চয়নিকা বেগম ভেতরে ঢুকে। বিছানায় বসে। কয়েক মিনিট পর চিত্রা ভেজা কাপড় হাতে করে বের হয়। তুষার এগিয়ে যায়। চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে চিত্রার হাত থেকে ভেজা কাপড় গুলো নিয়ে বেলকনিতে মেলে দেয়। চয়নিকা বেগম চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে। ছোট্ট মেয়েটা নিজেও মা হতে চলছে ভাবা যায়! চয়নিকা বেগম হেসে বলেন-

-“ এবার বুঝবে মায়েদের কেনো সন্তানদের নিয়ে এতো অযথা চিন্তা হয়।
চিত্রা হেসে বলে-
-“ আমি বেস্ট মা হবো বাবুর।
-“ অবশ্যই। দেখেশুনে চলাফেরা করবে। সন্ধ্যা হলেই ঘরের জানালা বন্ধ করপ দিবে। বেলকনিতে রাতের বেলায় যাবে না। আর সাথে সবসময় লোহা, রসুন আর ম্যাচকাঠি সাথে রাখবে।

চিত্রা আচ্ছা বলল। ততক্ষণে তুষার চলে আসলো বেলকনি থেকে। চয়নিকা বেগম চলে গেলো।

রোমিলা বেগম বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে কাপড় মেলে দিচ্ছেন। আকস্মিক গেটের দিকে চোখ যেতেই সুপরিচিত মুখ দেখে কাপড় মেলতে গিয়ে থমকালেন। আকবর এগিয়ে আসলো রোমিলার দিকে।
-“ কেমন আছো রোমিলা?
রোমিলা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কাটকাট গলায় বলল-
-“ এখানে কেনো আপনি?
-“ বাহ রে ছেলে আর প্রাক্তন স্ত্রী কে দেখতে এসেছি।
রোমিলার মুখ জুড়ে বিস্তৃত হলো তাচ্ছিল্যের হাসি।
-“ এতো গুলো বছর পর!
-“ না প্রায়ই খবর নেই লোক লাগিয়ে।
-“ কেনো মরছি না সেজন্য?
-“ না, তোমাদের মৃ’ত্যু কামনা করি না। আমি মৃ’ত্যু কামনা করি আমার শত্রুদের।
-“ সেই শত্রুদের হয়েই তো কাজ করে রাতুল। নিশ্চয়ই তার মৃ’ত্যু কামনা করেন।
-“ যতোই হোক ছেলেতো তাই মনুষ্যত্বে বাঝে ওর মৃ’ত্যু চাইতে।
-“ যার মনুষ্যত্ব নেই তার মনুষ্যত্বে বাঝে কি করে?
-“ সেটাই তো। আচ্ছা বাদ দাও,ছেলের বিয়ে দিচ্ছো বাবা হিসেবে তো আমাকে জানাতে পারতে।
-“ প্রয়োজন বোধ করি নি জানানোর।
-“ আচ্ছা বেশ। কেমন আছো?
-“ আগের তুলনায় বেশ ভালোই আছি।
-“ হুম বোঝাই যায়।
-“ হুমম।
-“ রাতুলের মুখ থেকে অনেকদিন বাবা ডাক শুনি নি। ছেলেটাকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছো তুমিই তাই না?
-“ হাসালেন। আপনার করা কুকীর্তি দেখেই লজ্জায় ঘৃণায় আপনায় বাবা ডাকে না। ভুলে গেছেন সেদিন রাতের কথা? যেদিন রাতে অমানবিক নির্যাতন করে আমাকে আর আমার ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বউ নিয়ে মেতে ছিলেন সেই রাত। আর আমি আমার ঐ ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছিলাম। আর সেই শিশুর থেকে আপনি বাবা ডাক আশা করেন হাস্যকর!
-“ রাতুল কে আমি কখনই বাড়ি থেকে বের করি নি রোমিলা। তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে সেদিন।
-“ কোন বাচ্চা থাকতে চাইবে এমন নরপশুর কাছে?
-“ পুরোনো কাসন্দি ঘাঁটতে চাই না। ভালো থেকো আসি।

কথাটা বলে আকবর চলে যায়। রোমিলা কাপড় মেলে রুমে চলে আসে।

রাতুল বসে আছে পুকুরের ধারে। পাশেই আছে অধরা। দুজনের মুখে কোনো কথা নেই। দৃষ্টি দুজনেরই ঐ পুকুরের জলে। নিরবতা ভেঙে রাতুল বলে উঠে –
-“ ঠিক তারিখ টা মনে নেই। সেদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। মা সেদিন সেজেছিল খুব। কারন সেদিন বাবা আর মায়ের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। মা বাবার সব পছন্দের খাবার রেঁধেছিল। সোফায় বসে অপেক্ষা করছিল। মায়ের অপেক্ষার প্রহর ভেঙে বাবা এসেছিল তবে একা না। সাথে ছিল দ্বিতীয় স্ত্রী আর তার কোলে ছিলো বছর একের এক বাচ্চা ছেলে। বাবা তাকে নিয়ে ঢুকেই বলেছিল সে বাবার দ্বিতীয় বউ। বছর তিনেক আগে বিয়ে করেছে। অথচ মা জানতোও না। সেদিন বাবাকে ধরে প্রচুর কেঁদেছিল মা। কিন্তু বাবা তার দ্বিতীয় বউয়ের এক কথায় মা কে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার মা বাড়ি থাকলে তিনি থাকবেন না। মা কিছুতেই যেতে রাজি হচ্ছিলো না। আর বাবা অল্পতেই ভীষণ রেগে যেত। মাকে সেদিন প্রচুর মেরেছিল৷ ধাক্কা মে’রে বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে। আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বাবার ওমন ভয়াবহ রূপ দেখে। মায়ের কাছে ছুটে যাওয়ার জন্য দৌড় দিতেই বাবা আটকে দেয়। সে কিছুতেই যেতে দিবে না মায়ের কাছে। মা ও আকুতি মিনতি করছিল আমাকে নেওয়ার। আমার কান্নার আওয়াজ বাবার দ্বিতীয় বউ বিরক্ত বোধ করছিল। রেগেই বাবা কে বলেছিল সে সতীনের ছেলে কে দেখভাল করতে পারবে না। বাবা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু উনি বলতে দেন নি। বাবার হাত থেকে আমাকে ছাড়িয়ে বলেছিল যা তোর মায়ের কাছে। আর আসবি না এদিক পানে। আমার ছোট্ট মন ছাড়া পেতেই দৌড়ে ছুটে গিয়েছিলাম মায়ের কাছে। সে থেকে আজ অব্দি ও বাড়িতে পা রাখি নি। সেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মা পাগলের মতো আশ্রয় খুঁজেছিল থাকার। একেই তো বাবার হাতে মাইর খেয়ে মায়ের বেহাল দশা তার উপর রাতে থাকার জন্য আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। আমি হঠাৎ মা’কে পড়ে যেতে দেখে কেঁদে কেঁদে মা’কে ডাকছিলাম। আমার নানা বা মামা কেউ ছিল না দেশে। তারা সবাই বাহিরের দেশে থাকতো। ঐ রাতে ফেরেস্তা হিসেবে উদয় হন আপনার মামু। আমাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন জিজ্ঞেস করে কি হেয়েছে। আমি বলেছি মা উঠছে না কথা বলছে না আমার সাথে। আঙ্কেল পরখ করে দেখলো মা কে। তারপর ড্রাইভার কে ডেকে মাকে আর আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে খাঁন ভিলাতে নিয়ে গেলো। মায়ের চিকিৎসা করালো। মায়ের থেকে সব কথা শুনলো। আইনি ব্যাবস্থা নিতে চাইলে মা না করে দেন। তিনি আর দ্বিতীয় বার ঐ লোকের মুখোমুখি হতে চান নি। মা’কে স্কুলে চাকরি দিয়ে দিলেন। সেই থেকে মা একাই আমাকে লালনপালন করে গেছে। দিনের বেলা তুষারের সাথে থাকতাম আর বিকেল হলেই মা স্কুল থেকে ফেরার পথে আমায় বাসায় নিয়ে আসতো।

কথাটা বলে থামে রাতুল। অধরা নির্বাক হয়। দু’জনে একই পথের পথিক। রাতুল কে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা তার জানা নেই। রাতুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাত বাড়িয়ে দিলো অধরার দিকে। অধরা নির্নিমেষ চোখ চেয়ে থেকে হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো।

চিত্রা কে বাড়ির কোনো কাজ করতে দেয় না তানিয়া বেগম। সব কাজ নিজে একাই করে। এ নিয়ে চিত্রা কথা বলে না তানিয়া বেগমের সাথে। তার শরীরে তো এখনও তেমন পরিবর্তন ঘটে নি আর এখনই তাকে সব কিছু থেকে দূরে দূরে রাখছে। তানিয়া বেগম চিত্রার রাগ কে পাত্তা দেয় নি। বাড়ির প্রথম বাচ্চা সে আসবে রাজকীয় ভাবে। কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না। চিত্রা শুধু খাবে আর শুয়ে থাকবে। আর একটু আধটু হাটাহাটি করবে। বাড়ির কাজে হাত লাগানো মানা।

তুষার এখন তাড়াতাড়ি কাজকর্ম শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে। বেশি দেরি হলে রাত আট টা বাজে। তার বেশি হবেই না। যতো রাজ্যের কাজ থাকুক না কেনো সে চলে আসবে বাসায়। হয় বাসায় এসে করবে ল্যাপটপে রাত জেগে। তবুও বাসায় আসবে। তুষার এসেছে সন্ধ্যা সাতটা বাজে। হাতে তার ফুচকার পলিথিন। চিত্রা ফেরার পথে ফোন করে বলেছিল তার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। সেজন্য তুষার নিয়ে এসেছে। ফুচকার পলিথিন টা তৃষ্ণার হাতে দিয়ে বলল প্লেটে সাজিয়ে দিতে। ফুচকার ব্যাগ দুটো। একটা অধরা তৃষ্ণার জন্য আরেক টা চিত্রার জন্য। একটা পলিথিনের ফুচকা সাজিয়ে দিলো প্লেটে তৃষ্ণা । তুষার প্লেট টা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। চিত্রা বিছানায় আধশোয়া হয়ে হুমায়ুন আহমেদের কোথাও কেউ নেই বই টা পড়ছে। তুষার ফুচকার প্লেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ নাও তোমার ফুচকা।
চিত্রা তাকায় প্লেটের দিকে। মুখে বিস্তৃত হলো হাসি। ফুচকার প্লেট টা নিয়ে ফুচকা খেতে আরম্ভ করলো। তুষার চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে।

খাওয়া শেষে চিত্রা প্লেট রাখার জন্য উঠতে নিলে তুষার প্লেট টা নিয়ে নিজে গিয়ে রেখে আসে। এতো আহ্লাদী পনা এখন বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কাজ বা একটু হাঁটলেই বড় কিছু হয়ে যাবে। চিত্রা ভেঙচি কাটলো। তুষার ড্রেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতল এনে চিত্রার মাথা ম্যাসাজ করে দেয়। আজকাল রাতে তেল না দিয়ে ঘুমালে প্রচুর মাথা ব্যাথা করে চিত্রার। মধ্য রাতে হাত পা জ্বালাপোড়া করে। তুষার তখন টিপে দেয়।

-“ ঐ শুনুন না।
তুষার মাথা ম্যাসাজ করতে করতে বলে-
-“ হুমম।
-“ কাল ডক্টরের কাছে যেতে হবে মনে আছে?
-“ হুমম।
-“ কখন নিয়ে যাবেন?
-“ বিকেলে।
-“ তাহলে কাল বাহিরে খাবো।
-“ আচ্ছা।
-“ ঘুমাবো।
-“ এই তো হয়ে গেছে। এবার ঘুমাও।
চুল গুলো বেণি করে দেয় তুষার চিত্রার। চিত্রা বেণি টেনে দেখে শুয়ে পড়ে। তুষার লাইট নিভিয়ে চিত্রার পাশে শুয়ে পড়ে। চিত্রা তুষারের বুকে মাথা রাখে। তুষার মাথায় হাত বুলোয়। চিত্রা তুষারের শার্টের বোতামে হাত দিয়ে খুলতে থাকে।
-“ পাখি শরীর ভালো না তোমার।
চিত্রা বোতাম খুলতে খুলতে জবাব দেয় –
-“ তাতে কি?
-“ এই সময় ওসব করা উচিত না। ঘুমাও।
-“ আমার লাগবে আপনাকে।
-“ আমি পুরুষ হয়ে নিজেকে সামলাতে পারছি আর তুমি পারছো না!
চিত্রা তুষারের কানে ফিসফিস করে বলল-
-“ না।
তুষার কিছু বললো না। চুপচাপ শুয়ে রইলো। কিন্তু চিত্রা ছাড়লো না তুষারকে। শেষ মেষ না পেরে চিত্রার মাঝে ডুব দিলো। একটা পুরুষের পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা ভীষণ কষ্টের। আর সেখানে নিজেই তুষার কে সিডিউস করে চলছে। কন্ট্রোলে থাকতেই পারলো না।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-৩৩+৩৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৩( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ ইম্পসিবল চাচা। নেক্সট উইকে আমার ফ্লাইট আর তুমি বলছো দু মাস পর বিয়ের ব্যাবস্থা করবে!

তামিম খাঁন হকচকিয়ে গেলেন। সামির খাঁনের সাথে কথা বললেন তামিম। সামির খাঁনের আপত্তি নেই তৃষ্ণা কে রাফির বউ হিসেবে মেনে নিতে। তাছাড়া বাড়ির মেয়ে বাড়িতেই থাকছে। এর চেয়ে বড় আর কিই বা হতে পারে। তো তামিম খাঁন জানতেন না নেক্সট উইকে রাফি মালদ্বীপ যাবে। সেজন্য উনি অনুমান করে বলেন দু মাস পর ডেট ফিক্সড করে বিয়ে দিবেন। সেটা শুনেই রাফি সহসা বাঁধা দেয়।
তামিম খাঁন ভ্রু কুঁচকে বলেন-
-“ নেক্সট উইকে কোথায় যাচ্ছ?
-“ মালদ্বীপ প্রেজেক্টের জন্য।
-“ ওহ্ তাহলে সমস্যা কোথায়? একেবারের জন্য তো আর চলে যাচ্ছো না। ফিরে আসলে দিন তারিখ ফিক্সড করবো।
-“ তুমি বুঝতে পারছো না চাচা। আমি নেক্সট উইকে গেলে কবে ফিরবো শিউর নই। বিডি ফিরতে মাস চার থেকে পাঁচ লাগতে পারে।
-“ এতো সময় কেনো?
-“ প্রজেক্ট টা মালদ্বীপ হবে সেজন্য। আমি কাজি কে বলে রেখেছি আপাতত আমি ঘরোয়া ভাবে তৃষ্ণা কে বিয়ে করে তারপর মালদ্বীপ যেতে চাইছি। ফিরে আসার পর ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ো।
তুষার চুপচাপ বসে রাফির কথা গুলো শুনলো।
-“ এতো তাড়া কেনো তোর বিয়ে করার জন্য? ফিরে এসে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?

রাফি বিরক্তি নিয়ে শুধালো-
-“ তুমি তো বিয়ে করে ফেলছো তাই বুঝতে পারছো না আমার বিষয় টা। এখন তো আর সিঙ্গেল না তুমি। মিঙ্গেল হওয়ার জন্য তো তুমি ও তাড়া দিয়েছিলে বিয়ে করার জন্য। মীরজাফর গিরি না করে তোমার বোন কে আমার হাতে তুলে দাও ব্রো।
-“ না করেছি কখন যে দিব না?
-“ তাহলে কাজি কে ডাকি?
-“ যাবি নেক্সট উইকে তো আজ কেনো কাজি ডাকবি? চলে যাওয়ার দু একদিন আগে ডাকলেই তো হয়।
-“ তুমি কি আমার বিয়েতে বাগড়া দিতে চাইছো? এতো লজিক দেখাচ্ছো কেনো? জীবন নিয়ে ভরসা নেই যদি ম-রে যাই তখন? আফসোস থেকে যাবে না আমার?

তুষার চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিতে দিতে বলে-
-“ সমস্যা কি ফেসবুকে একটা ভিডিও তে শুনেছিলাম কোনো নারী বিয়ে করার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে মা-রা গেলে তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দেওয়া হবে।
-“ আমি কি নারী?
ফসফস করে কথাটা বলে উঠলো রাফি। তুষার বিনিময়ে ঠোঁট কামড়ে চুপ রইলো। তারপর রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ তোর ও কি রাফির মতো বিয়ে করার জন্য তোড় সইছে না? আজই করে ফেলবি?
রাতুল থতমত খেয়ে গেলো। রোমিলা বেগম হাস্যমুখ করে বলে-
-“ না না আমরা তেমন প্রস্তুতি নিয়ে আসি নি রে। আমরা তো শুধু প্রস্তাব নিয়ে এসেছি৷ তোরা কি রাজি?
-“ রাজি না হওয়ার কি আছে? অধরা নিজের মুখেই তো বললো তার কোনো সমস্যা নেই।
-“ তা ঠিক তবে ধীরেই আগাতে চাই। সামনে তো অধরার পরীক্ষা শুনলাম। পরীক্ষা টা শেষ হোক তারপর ধুমধাম করে ছেলের বউ ঘরে নিয়ে যাব। রাফি আর তৃষ্ণার কাবিনের দিন না হয় আংটি পড়িয়ে রাখবো।
-“ হুমম বিষয় টা মন্দ না।

চিত্রা রুমে বিছানায় বসে আছে। পাশেই তুষার উল্টো হয়ে শুয়ে আছে খালি গায়ে। চিত্রার হাত তুষারের চুলের ভাজে। তুষার চেয়ে আছে চিত্রার দিকে। সন্ধ্যার পরপরই রাতুলরা চলে গেছে। তিনদিন পর ফের আসবেন আংটি পড়াতে। সেদিন রাফি তৃষ্ণার ও ছোট্ট পরিসরে বিয়ে। আকস্মিক তুষার চিত্রার কামিজের ফাঁক দিয়ে উন্মুক্ত পেটে হাত দেয়। চিত্রা সরু চোখে তাকায়।
-“ আবার শুরু করলেন।
তুষার চোখ টিপে বলে-
-“ শুরু করতে চাইছি।
চিত্রা উঠে দাঁড়ালো। রুমের লাইট অফ করে চাদরের নিচে ঢুকে পড়লো। তুষারের মেলে রাখা হাতের উপর মাথা দিয়ে তুষার কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে বলল-
-“ ভালো লাগছে না আজ।
তুষার চিত্রার মাথার চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলে-
-“ মন খারাপ?
-“ না বিষন্ন।
-“ কেনো?
-“ তা জানি না। অস্থির অস্থির লাগছে ভীষণ। ভালো লাগছে না।
-“ ঘুমানোর চেষ্টা করো ভালো লাগবে।

চিত্রা হুমম বলে। তুষার চিত্রার কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

ব্রিজের পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছে অধরা আর রাতুল। পাশেই স্বর্ণকারের দোকান। আংটির মাপ নিয়ে আংটি কিনতে এসেছে তারা। স্বর্ণকারের দোকানে যাওয়ার পথেই হঠাৎ করে দেখা হয়ে যায় আকবরের সাথে। আকবর এসেছিল বউয়ের রুলি নিতে। সামনে রাতুল কে দেখে ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠে। রাতুল অধরার হাত ধরে আকবর কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আকবর পেছন ফিরে বলে-
-“ শুনলাম বিয়ে করছো।
রাতুলের হাঁটার গতি থেমে গেল। তা দেখে আকবর ফের বলল-
-“ এটাই সেই মেয়ে যাকে বিয়ে করছো?
রাতুল ঘুরে আকবরের সোজাসুজি দাঁড়ালো।
-“ হুম।
-“ জানাও নি তো।
রাতুল ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আপনাকে কেনো জানাবো?
-“ আমাকে কেনো জানাবে সেটা তুমিই ভালো করে জানো।
-“ না জানি না। যাকে তাকে আমার বিয়ের খবর কেনো জানাবো?
-“ যাকে তাকে মানে? আমি কে ভুলে গেছো?
-“ উঁহু ভুলি নি আপনি কে। আপনি হচ্ছেন চাঁদাবাজ, অহরহ অন্যায় করা এক অপরাধী।

আকবর স্মিত হাসলো।
-“ তার উর্ধ্বে আমি তোমার….
-“ কেউ না।
-“ তুমি বললেই তো হবে না। রক্ত বলবে কথা।
রাতুল ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে-
-“ যদি পারতাম এই রক্ত গুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করতে শরীরের ময়লার মতো তাহলে এই দূষিত রক্ত শরীরে ঠাই দিতাম না।
-“ এটা যখন পারবে না তাহলে বলে লাভ নেই। বিয়েতে তো থাকা আবশ্যক আমার তাই না? বিনা আমন্ত্রণে চলে যাব সে নিয়ে চিন্তা করো না। তা বউ কে নিয়ে একদিন নিজের বাড়ি এসো খুশি হবো।
-“ জীবিত থাকতে ঐ বাড়িতে পা রাখবো না।
-“ তাহলে মৃ’ত শরীরেই না হয় ঢুকো।
-“ আপনাকে দেখলে আমার জাস্ট ঘৃণা লাগে। আমি যে আপনার রক্তের কথাটা মনে পড়লেই শরীর ঘিনঘিন করে উঠে।

অধরা এতোক্ষণ হা হয়ে তাদের কথা শুনছিল। বুঝতে পারছিলো না এই লোকটা কে। আর রাতুলের সাথেই বা কেনো এভাবে কথা বলছে। মাঝের কিছু কথা আর রাতুলের বলা লাস্টের কথা শুনে বিষয় টা হালকার উপর ঝাপসা ক্লিয়ার হলো।
আকবর নৈঃশব্দ্যে হেসে স্থান ত্যাগ করলো। অধরা রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ উনি আপনার বাবা?
রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেললো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। অধরা আকবরের যাওয়ার পানে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে রইলো। কিছু একটা ভেবে বলল-
-“ আপনার বাবা আর আপনার মধ্যকার সম্পর্ক ভালো না?
-“ প্লিজ উনাকে আমার বাবা বলো না। কথাটা ভিষণ কানে বাজে।
-“ সত্যি বলতে গেলে উনিতো আপনার বাবাই। তাহলে আপনাদের বাবা ছেলের সম্পর্ক এমন কেনো?
-“ অনেক কাহিনি আছে সেসব না শুনলেও চলবে। কোনো একসময় সময় পেলে বলবো। এখন চলুন আংটি নিতে হবে।

—————————-

চিত্রা দের বাসা থেকে চিত্রার মা বাবা এসেছে। সিমি আর রিয়াদ চলে গেছে বাসায়। আজ তৃষ্ণা রাফির ছোট্ট পরিসরে বিয়ে। তৃষ্ণা পেঁয়াজ কালারের একটা কাতান শাড়ি পড়েছে। সিম্পল সাজ। রাফি নিজেও পেঁয়াজ কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে। চিত্রা ব্লু কালারের শাড়ি পড়েছে আর অধরা ব্লাক কালারে। রাতুল আর রোমিলা বেগম এখনও আসে নি।

সামির খাঁন ফোন করে কাজিকে আসতে বলেছেন। ঘন্টা একের মধ্যে কাজিও চলে আসে। রাফি আর তৃষ্ণা কে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসানো হয়। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে। কাজি কবুল বলতে বললে রাফি ফট করে বলে বসে-
-“ কে বলবে?
কাজি সাহেব বলেন মেয়ে বলবে। রাফি ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে। তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তাড়াতাড়ি বলো।
তৃষ্ণা সময় নিয়ে কবুল বলে। কাজি এবার রাফিকে বলতে বললেই রাফি সময় না নিয়েই কবুল বলে উঠে।

বিয়ে পড়ানোর শেষে কাজি চলে যেতেই রাতুল আর রোমিলা বেগম আসেন। অধরা তখন তৃষ্ণার পাশে বসে ছিল। রাতুল কে দেখে তুষার এগিয়ে যায়।
-“ সব ঠিকঠাক আছে?
রাতুল সময় নিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। রোমিলা বেগম গিয়ে সোফায় বসেন। তানিয়া বেগম মিষ্টির প্লেট নিয়ে আসেন। তামিম খাঁন অধরার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমির আসবে না।
অধরা তপ্ত শ্বাস ফেলে। এমন একটা দিনে অধরা চেয়েছিল তার বাবা নামক ঐ মানুষ টা খনিকের জন্য হলেও যেনো আসে। কিন্তু না লোকটা আসবে না। রাতুল এসে অধরার বরাবর বসে। রোমিলা বেগম ব্যাগ থেকে আংটি বের করে রাতুলের হাতে দেয়। রাতুল আংটি টা হাতে নিয়ে অধরার হতে পড়িয়ে দেয়।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩৪( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

রাতের আকাশে আজ ইয়া বড় দেখতে থালার মত চাঁদ উঠেছে। আর সেই চাঁদের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জ্বলে আছে নক্ষত্র তারা। বেলকনির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা রাফি। দুজনের দৃষ্টি ঐ আকাশের দিকে। নিরবতা কে শ্বাসরুদ্ধ করার জন্য রাফি তৃষ্ণার বা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো। হাতের উল্টো পাশে হালকা করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। কেঁপে উঠলো তৃষ্ণা। ডান হাতে খামচে ধরলো পড়নের পেঁয়াজ কালারের শাড়ি। রাফি হাত মুঠোবন্দি করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-

-❝ পৃথিবী বলো কার চাঁদ সবচেয়ে সুন্দর, তোমার আকাশে থাকা চাঁদ নাকি আমার হৃদয়ে থাকা চাঁদ,কোনটা?❞
কথাটা বলে তৃষ্ণার দিকে তাকালো। চোখাচোখি হলো দু’জনের। তৃষ্ণা মাথা নত করে ফেললো তা দেখে রাফি মুচকি হাসলো। তৃষ্ণার নত হয়ে যাওয়া মুখ উঁচু করে কপালে চুমু খায়। চোখে চোখ রেখে বলে-
-“ যাও ঘুমিয়ে পড়ো রাত অনেকটাই হয়েছে।
তৃষ্ণার ঠোঁট কম্পিত হলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠলো-
-“ আপনি ঘুমাবেন না?
রাফি তৃষ্ণার ধরে রাখা নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ আমার কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করেই ঘুমাবো। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
-“ আজ আমাদের বাসর রাত ভুলে গেছেন?
বেফাঁস মুখে কথাটা বলে ফেলে তৃষ্ণা। রাফির ভ্রু কুঁচকিত হয়। নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল-
-“ বাসর করার জন্য ভীষণ তাড়া নাকি?
তৃষ্ণা এদিক ওদিক তাকালো। মুখ ফস্কে কথাটা বলে ফেলছে। এখন এটা নিয়েও রাফি খেপাবে।
-“ আ..আপনার না কি কাজ আছে আপনি শেষ করুন। আমি ঘুমাবো।
কথাটা বলে তড়িঘড়ি করে তৃষ্ণা বিছানায় গিয়ে একপাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। রাফি ঠোঁট কামড়ে হেঁসে চাদর টা তৃষ্ণার শরীরে দিয়ে লাইট অফ করে সোফায় বসে ল্যাপটপ টা কোলে নিয়ে।

বিছানায় তুষারের লোমযুক্ত বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে আছি চিত্রা। তুষারের হাত চিত্রা চুলের ভাজে। কখন চিত্রার কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিচ্ছে তো কখন চুলের ভাজে। আর চিত্রা মনোযোগ সহকারে তুষারের বুকে আঁকিবুঁকি করে যাচ্ছে। রুম জুড়ে পিনপিনে নিরবতা। নিরবতা ভেঙে চিত্রা আহ্লাদী স্বরে বলে-
-“ এমপি মশাই।
তুষার হুমম বললো। চিত্রা মাথা তুলে তাকালো। তুষারের মুখ বরাবর মুখ এনে বলল-
-“ আমি কিছু চাইবো দিবেন?
তুষার হাল্কা মাথা উঁচু করে চিত্রার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলে-
-“ মুখ ফুটে চেয়ে দেখুন শুধু।
চিত্রা মুচকি হাসলো। তুষারের গলা জড়িয়ে বায়নার স্বরে পিচ্চিদের মতো বলল-
-“ আমার একটা ছোট্ট তুষার চাই দিবেন?
তুষার চিত্রার মুখে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছন গুঁজে দিয়ে বলে-
-“ তুমি নিজেই এখনও পিচ্চি শোনা। এই তুষারকেই সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাও। ছোট্ট তুষার আসলে তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
-“ আমি মোটেও পিচ্চি না। আমার ছোট্ট একটা তুষার চাই। যার নরম তুলতুলে স্পর্শে আপনার আর আমার সকাল ভাঙবে আর ভাঙা কান্নার গলার আওয়াজে ঘুম। আমি আর আপনি সমন্বয়ে ও আসলে হবো আমরা।
-“ পাগলি বাচ্চা দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তুমি আমি চাইলেই তো আর বাবু এসে পড়বে না।
-“ আমি আর এখন থেকে কোনো মেডিসিন খাবো না।

তুষার চিত্রা কে ভালো করে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ ছেলে মানুষি কেনো করছো জান। সময় এখনও ফুরিয়ে যায় নি। মাত্র মাস কয়েক হলো আমাদের বিয়ের। বছর খানিক যেতে দাও।
-“ উহু এমপি মশাই আমার ভীষণ শখ একটা ছোট্ট তুষারের। আপনি না করছেন কেনো এতো? আমি খুব আদর করবো ছোট্ট বাবু টাকে। একটু ও কাঁদাতে দিবো না।
-“ আচ্ছা ভেবে দেখবো। এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো।
-“ কতদিন লাগবে ভাবার জন্য?
-“ ভীষণ প্রশ্ন করছো পাখি। আমি এই বিষয় টা এভয়ড করতে চাচ্ছি।
-“ এভয়ড কেনো করতে চাইছেন? আপনি সারাদিন বাসায় থাকেন না। কয়েকদিন পর আমার এক্সাম ও শেষ। তখন এই চার দেওয়ালে একা একা কি করবো আমি? একটা বাচ্চা থাকলে আমি তাকে নিয়ে মেতে থাকতে পারবো।
চিত্রার গমগমে গলায় বলা কথা গুলে শুনে তুষার বলল-
-“ আচ্ছা আচ্ছা আমরা বেবি নিবো।
-“ পাক্কা?
-“ হুমম।
-“ ভালোবাসি।
-“ বুঝলাম।
-“ কি বঝলেন?
-“ ভালোবাসো এটা বুঝলাম।
-“ আর আপনি বাসেন না বুঝি?
তুষার শোয়া থেকে উঠে চিত্রার উপর ঝুঁকল। চিত্রার তুলতুলে গালে নিজের খোঁচা দাড়ি ওয়ালা গাল ছুঁইয়ে দিয়ে বলে-

❝ আমি তোমাকে ভালোবেসে চেয়েছি বলেই,,আমাকে যে ভীষণ ভাবে ভালোবেসে চেয়ে গেছে সে আমাকে পায় নি।❞
চিত্রা তুষারের গালে হাত রাখলো। কুঁচকে যাওয়া কপাল নিয়ে চেয়ে বলে-
-“ আপনাকে কেউ ভালোবেসে চেয়েছিল?
তুষার হাল্কা হাসলো

-“ চাইতেই পারে অস্বাভাবিক তো নয়। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম ড্যাশিং দেখতে তোমার বর। কলেজ ভার্সিটিতে বেশ সংখ্যক মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ ছিলাম। তাদের মধ্যে তো চাইতেই পারে তাই নয় কি?
চিত্রা পলকহীন নয়নে তাকিয়ে রইলো তুষারের দিকে।
-“ আপনি এতে সুন্দর কেনো এমপি মশাই? অসুন্দর হলে তো আর এতো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হতেন না।

-“ আমার বউয়ের পেছনে কম ছেলের লাইন নাকি? একটা যেতে না যেতেই আরেকটা এসে জুটে।

চিত্রা এবার হেসে উঠলো। তুষারের উন্মুক্ত পিঠে হাত দিয়ে বলল-
-“ এবার ঘুমান। শুভ রাত্রি।

তুষার চিত্রার কথার প্রতিত্তোরে চিত্রার গলায় চুমু খেয়ে পাশে শুয়ে বলে-
-“ শুভ রাত্রি বউ জান।

জানালা ভেদ করে সূর্য্যি মামা তার রশ্মি ছড়িয়ে দিচ্ছে রুম জুড়ে। আশপাশে পাখি গুলোর কিচিরমিচির গুঞ্জনে আশেপাশ টা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। আর পাশে উল্টো হয়ে শুয়ে তার ব্যাক্তিগত পুরুষ। এমন এক সকালের স্বপ্ন দেখে এসেছে একুশের ঘরে পা দেওয়া রমণী। কথটা গুলো ভাবতেই ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি। বিছানা থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে নিজের রুমে চলে গেলো তৃষ্ণা।
তৃষ্ণা যেতেই রাফি চোখ মেলে তাকায়। তারপর নিজেও বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।

চিত্রা আর তানিয়া বেগম রান্না করছে। তুষার বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তৃষ্ণা এসে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়ায়। তানিয়া বেগম এক পলক তাকায় তারপর নিজের কাজে মনযোগ দেয়। চিত্রা তৃষ্ণা কে দেখে বলে-
-“ কিছু লাগবে?
তৃষ্ণা মাথা নেড়ে না জানায়। এরমধ্যে উপর থেকে তুষারের গলার আওয়াজ আসে। এক কাপ ব্লাক কফি চাচ্ছে। তানিয়া বেগম কফির মগে কফি ঢালতে ঢালতে চিত্রার উদ্দেশ্যে বলে-
-“ কফি টা নিয়ে যাও চিত্রা।
চিত্রা শ্বাশুড়ির কথা মতো কফির মগ টা নিয়ে উপরে চলে যায়। তানিয়া বেগম এবার আরেক মগে কফি ঢেলে বলে-
-“ রাফিকে গিয়ে দিয়ে আয় এটা।
তৃষ্ণা এটারই অপেক্ষায় ছিলো। দাঁড়িয়ে থেকে সময় ব্যায় না করে কফির মগ নিয়ে উপরে চলে গেলো।

অধরা আজ সকাল সকাল ই বাসা থেকে বের হয়েছে। কাল প্রোগ্রাম ভার্সিটি তে। সে নিয়ে ভীষন ব্যাস্ততা তার। ম্যানেজমেন্টের এক বিশাল বড় দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাঁধে। সেই দায়িত্ব পালন করতেই তাকে এই সাত সকালে ছুটতে হচ্ছে। রাতুলের সাথে কালকের পর আর কথা হয় নি এখনও অব্দি। রাতুলও ফোন দেয় নি দেখে অধরা নিজেও আর ফোন দেয় নি৷ ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে তারপর ফ্রী হয়ে ফোন দিবে।

ভার্সিটির গেইটে পা রাখতেই দেখে পুরো রাস্তা মাঠ সাজানোর পুরোদমে কাজ চলছে। প্রজাপতি মেলা বলে কথা যেনোতেনো করে সাজালে চলে নাকি?
অধরা মুগ্ধ হয়ে তাকালো চারিপাশে। বেশ কিছুদিন আগেই অতিথি পাখির মেলা হয়ে গেলো।

কয়েকদিন পর পরই এই ভার্সিটি টা বিভিন্ন উৎসবমুখর হয়ে মেতে থাকে। অধরা হাঁটতে হাঁটতে তার ডিপার্টমেন্টের দিকে এগিয়ে গেলো।
ক্লাসে ঢুকতেই দেখা হয়ে গেলো সুমন স্যারের সাথে। যিনি অধরাদের ডিপার্টমেন্টের হেড। অধরা বিনয়ী হয়ে সালাম জানালো। লোকটা প্রতিত্তোরে মিষ্টি হাসি উপরহার দিয়ে সালামের জবাব দিলো। অধরা ক্লাসে গিয়ে দেখলো তার বন্ধু বান্ধবীদের প্রোগ্রাম নিয়ে প্ল্যান প্রায় শেষের দিকে। অধরা হাফ ছেড়ে বাঁচে। চুপচাপ গিয়ে স্মৃতির পাশে গিয়ে বসে।

তেমন ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্কে এখনও হয়ে উঠে নি কারো সাথে অধরার। হালকা পাতলা কথা হয় এই যা। তবে ক্লাসের বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী অধরাকে বেশ মানে। ক্লাসে স্যার আসতেই সবাই ক্লাসে মনোযোগী হয়।

বসন্তের বিকেলে, চিত্রা কে নিয়ে অধরা এসেছে মার্কেটে। কাল উৎসব কলেজে সে উপলক্ষে কেনাকাটা করতে। একাই আসতে হতো মার্কেটে তাই চিত্রা কে নিয়ে এসেছে। প্রচুর ভীড় জমেছে মার্কেটের সামনে। চিত্রা আর অধরা ভীড় ঠেলে কোনো রকমে বের হয়। শাড়ির দোকানে গিয়ে একটা বাসন্তী কালারের শাড়ি কিনে অধরা। শাড়ি নিয়ে বের হতেই অধরা চিত্রা কে এক সাইডে দাঁড় করিয়ে একটা কসমেটিকসের দোকানে ঢুকে এক জোড়া পায়েল কিনতে।

চিত্রা চুপচাপ দাঁড়িয়ে না থেকে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটতে লাগলো। আবার সেই ভীড় গুলোর মাঝে এসে থেমে গেলো। বিরক্তি নিয়ে আশেপাশে তাকালো। উদ্দেশ্য তার ভীড় ঠেলে গাড়ির কাছে যাবে। ভীড়ের মধ্যে যেতেই চিত্রা অনুভব করলো কেউ তাকে জোরে ধাক্কা মারলো। ধাক্কা সামলাতে না পেরে উল্টো হয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যেতে নিলে কেউ একজন ভীড়ের মধ্যেই চিত্রার বাহু ধরে ফেলে। চিত্রা পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যায়। হাত ধরে রাখা মালিকের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
-“ ওহ্ অধরা আপু।
অধরা চিত্রা কে সোজা করে দাঁড় করলাো। ভীড় ঠেলে গাড়ির কাছে এসে বলে-
-“ তোমাকে না আমি দাঁড়াতে বললাম। ভীড়ের মধ্যে একা একা আসতে নিয়েছিলে কেনো? একটুর জন্য তো ধাক্কাধাক্কি তে পড়ে যাচ্ছিলে।
চিত্রার মনে হওয়া কথাটা চেপে গেলো। মনের ভুল হতে পারে। সত্যিই হয়তো ভীড়ের ধাক্কাধাক্কি তে পড়ে যাচ্ছিলো।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-৩১+৩২

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩১( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ ব্রো বিয়ে তো হলো এখন তো তোমার ভাবি কে নিয়ে হানিমুনে যাওয়া উচিত।

খাবার টেবিলে থাকা সবার দৃষ্টি রাফির দিকে। রাফির সেদিকে খেয়াল নেই। সে নিজের মত মাথা নিচু করে খাচ্ছে। সামির খাঁন কেশে উঠলো। তৃষ্ণা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। রাফি সামির খাঁনের দিকে তাকালো।
-“ আহ বাবা তাড়াহুড়ো করে খেয়ো না। আস্তে ধীরে খাও।
সামির খাঁন কিছু বলল না। রাফি চারপাশে তাকালো। সবাইকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে-
-“ হোয়াট’স হ্যাপেন্ড’? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো সবাই?
তুষার খেতে ব্যাস্ত। চিত্রা রান্না ঘরে বিধায় রাফির বলা কথা শুনে নি। তানিয়া বেগম রাফির প্লেটে মাংস তুলে দিয়ে বলে-
-“ কিছু হয় নি বাপ। প্লেট থেকে তরকারি ফুরিয়ে গেছে বলিস নি কেনো?
রাফি প্লেটের দিকে তাকালো। তরকারি তো ফুরায় নি। মাংস ছিঁড়ে মুখে নিতে নিতে আবার তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ব্রো কিছু তো বললে না। হানি উইথ মুন কবে যাবে?
তুষার ভ্রু কুঁচকে তাকালো রাফির দিকে।
-“ কিসের হানিমুন? হানিমুনের জন্য অন্য কোথাও যেতে হবে কেনো আমার? হানিমুনের জন্য কোনো কিছু আটকে নেই আমার।

তামিম খাঁন তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পড়লো। টেবিল ছেড়ে উঠার আগে সামির খাঁন কে বললেন তাড়াতাড়ি খেয়ে তার রুমে আসতে। সামির খাঁন মাথা নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে গেলেন। তানিয়া বেগম রান্না ঘরে গেলেন। রাফি মাংস মুখে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বলে-
-“ আহ ব্রো আমি ভেবেছি তোমার আর ভাবির এই মধুচন্দ্রিমার সব কিছু আমি এরেঞ্জ করবো। আই মিন আমার তরফ থেকে গিফট থাকতো বাট তুমি কি যাবে না তাহলে?
তুষার এঁটো হাত ধুতে ধুতে বলে-
-“ না।
রাফি আশাহত হয়। তুষার চলে যায়। রাফি খেয়ে নিয়ে নিজেও চলে যায় অফিসে।

আজ ভোট প্রচারের শেষ দিন। তৃষ্ণা আর চিত্রা ভার্সিটি গেছে। অবশ্য একা যায় নি সাথে দুজন গার্ড ছিল। এখনও আছে ভার্সিটির গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে। সামনেই ফাইনাল এক্সাম এখন আপাতত তারা ক্লাস মিস দিতে চাইছে না। তুষার ও বিমত করে নি। তুষার নিজেও বেরিয়েছে ভোট প্রচারের জন্য। রেডিও কলোনির কাছে আসতেই সাক্ষাৎ হয় হালিম সরকার ও তার ছেলে হৃদয়ের সাথে। তারাও ভোট প্রচারের জন্য বের হয়েছে। তুষার কে দেখা মাত্রই হালিম সরকার তার ছেলে কে নিয়ে তুষারের দিকে এগিয়ে আসে। তুষার তখন ফুটপাতে থাকা দোকানের মালিক গুলোর সাথে কথা বলছিলো।
-“ আরে তুষার তুমি ও এসেছো ভোট সংগ্রহ করতে!
তুষারের ব্যাঘাত ঘটে। ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকিয়ে হালিম সরকার ও তার ছেলেকে এক নজর দেখে শক্ত গলায় বলে-
-“ আমি কোনো প্রাইম মিনিস্টার নই যে ভোট প্রচারের জন্য আমি বের হতে পারবো না। আপনি নিজেও এসেছেন ছেলে নিয়ে।
হালিম সরকার স্মিত হাসলো।
-“ সে যা বলেছো। তোমার বাবার জন্য তো এমপি হতে হতে গিয়েও হতে পারলাম না এযাবৎ দিন ধরে। এবার ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দেখি কি হয়।
-“ সৎ পথে থেকে নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে জনগণের কথা ভাবলে জনগণ ই আপনাকে সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করতো। এবার ছেলেকে দাঁড় করিয়েছেন আমার বিপরীতে। আমার মনে হয় না খুব একটা লাভ হবেন বা জিততে পারবেন। জনগণ জানে কাকে জিতালে তাদের সুবিধা হবে।

হালিম সরকার পৈশাচিক ভাবে হাসলো। হৃদয় তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আপনি বেশ কনফিডেন্স নিজেকে নিয়ে দেখছি!
তুষার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ অবশ্যই।
-“ ওভার কনফিডেন্স কিন্তু ভালো নয়।
-“ ভেঙে দেখাও আমার এই কনফিডেন্স কালকের মধ্যে। পারলে জিতে দেখাও। আমিও দেখতে চাই।

কথাটা বলে তুষার চলে আসে। রাফি অফিসে বসে আছে। একটু পরই একটা প্রজেক্টের মিটিং এটেন্ড করতে হবে। রাফির পিএ রুমকি এসে দরজায় কড়া নেড়ে জানান দিলো মিটিং রুমে সবাই এসেছে। তাকেও যেতে হবে। রাফি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আজ ফাস্ট টাইম সে কোনো প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশনের জন্য মিটিং এটেন্ড করবে। তার এই প্রেজেন্টেশনের সম্পূর্ণ দায়ভার সামির খাঁন তাকে দিয়েছে। জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে মিটিং রুমের দিকে গেলো।
মিটিং রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে সাত থেকে আট জন লোক বসে আছে। তার মধ্যে তিনজন ইয়াং আর বাকি লোক তার বাবার বয়সী। রাফি ভেতরে ঢুকে ল্যাপটপ টা টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ সরি ফর লেট।
লোক গুলোর মধ্যে থাকা এক লোক বলে উঠলো –
-“ ইট’স ওকে। বাট হু আ’র ইউ? হয়ার ইজ মিস্টার সামির খাঁন?
-“ লেট মি ইন্ট্রোডিউস মাইসেলফ। মাই নেইম ইজ রাফি খাঁন। মিস্টার সামির খাঁন ইজ মাই ড্যাড। এ্যান্ড আই এ্যাম রেসপন্সিবল ফর দ্যিস প্রজেক্ট।
-“ ওহ্।
-“ ইয়াহ, আই থিঙ্ক উই শুড স্টার্ট দ্যা প্রেজেন্টেশন।
-“ প্লিজ স্টার্ট ইউ।
রাফি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। প্রজেক্টর টা অন করে বলল-
-“ দ্যিস প্রোডাক্ট, আই প্রেজেনট ইজ এক্সট্রাওরডিনারি। দ্যা পাই চার্ট ইজ ডিভাইডেড ইন্টু সেভরল পার্টস। হেয়ার আর সাম ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফিগারস……….. প্রেজেন্টেশনের মধ্যে রাফি বলে উঠলো- প্লিজ ফীল ফ্রি টু ইন্টারপট মি ইফ ইউ হেভ এনি কুইসচেনস…………..।

সবাই মনোযোগ সহকারে রাফির প্রেজেন্টেশন দেখলো। লোক গুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করলো। দ্যান তারা রাজি হলো এই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করতে। রাফি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

মিটিং শেষে নিজের কেবিনে গিয়ে গা এলিয়ে দিলো। রুমকি দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ মে আই কমিং স্যার?
-“ ইয়েস।
রুমকি ঢুকলো। কফির মগ টা রাফির দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল-
-“ আপনার কফি।
রাফি চোখ মেলে তাকালো। এই মুহুর্তে তার এই কফির ই দরকার ছিলো। দুই ঘন্টা বকবক করে তার চোয়াল ব্যাথা হয়ে গেছে। তার বাবা যে কি করে এতোদিন সামলিয়েছে সেটা ভাবতেই রাফি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কফির মগ টায় চুমুক বসিয়ে রুমকির উদ্দেশ্যে বলে-
-“ নাউ ইউ ক্যান গো।
রুমকি চলে যায়। রাফি কফির মগটা হাতে নিয়ে কেবিনের সাথে থাকা বড় বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। মুহুর্তে ঠান্ডা শীতল বাতাস রাফির শরীর কে শীতল করে তোলে। ক্লান্ত শরীর আরাম পায়। বেলকনিতে থাকা দোলনা টায় বসে পড়ে। ওয়েদার টা দারুন। এখানে বসে পুরো শহর টা কে দেখা যাচ্ছে।

তৃষ্ণা চিত্রার ক্লাস শেষ। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ক্লাস রুম থেকে বের হতেই চিত্রার ফোন বেজে উঠে। চিত্রা ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে দেখে তুষারের ফোন। মুহুর্তে মুখের হাসি চওড়া হয়। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ ক্লাস শেষ?
চিত্রা হুমম জানায়।
-“ বাহিরে গার্ড আছে তোমাকে আর তৃষ্ণা কে বাসায় পৌঁছে দিবে।
-“ আচ্ছা। বাসায় ফিরবেন কখন?
-“ সন্ধ্যা হবে। কোনো কিছু দরকার?
-“ হুমম।
-“ কি দরকার বলো ফেরার পথে আমি নিয়ে আসবো।
-“ ফেরার পথে আস্ত তুষার টাকে নিরাপদে নিয়ে ফিরবেন তার চিত্রার কাছে।
তুষার স্মিত হাসলো চিত্রার কথা শুনে।
-“ ভীষণ চিন্তা করো দেখছি তাকে নিয়ে?
-“ অবশ্যই। তাকে নিয়ে চিন্তা করার যথেষ্ট কারন আছে।
-“ একটা কারন আমাকেও বলো,শুনি।
-“ ঐ একটা কারন হচ্ছে,,আই লাভ স্নো।
-“ আচ্ছা! সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
-“ জ্বি আল্লাহ হাফেজ।

তুষার আজ সন্ধ্যার দিকেই ফিরেছে। কাল ভোট। ড্রয়িং রুমের বাড়ির প্রত্যেক সদস্য বসে আছে। রাতুল ও এসেছে আজ। বাড়ির সকলে কাল ভোট কেন্দ্রে যাবে ভোট দিতে। রাফি নিয়ে যাবে নিজ দায়িত্বে। তৃষ্ণা ভীষণ এক্সাইটেড ফাস্ট টাইম সে ভোট দিবে। চিত্রা এর আগে দিয়েছিল তার বাবা কে। এবার নিয়ে দু বার হবে। তামিম খাঁন ছেলের পানে তাকিয়ে বলল-
-“ আমার মনে হয় না ভোট কেন্দ্রে কোনো গোলমাল হবে। সব জায়গায়ই তো আমাদের লোক লগানো আছে। হালিম সরকার এমন ভুল ভুলেও করবে না। সে নিজেও জানে সে জিতবে না।

তুষার আড়চোখে তাকালো। তবে কিছু বললো না। আজ রাত টা দুশ্চিন্তায় কাটবে তার। জনগণ ই ঠিক করবে তাদের উপযুক্ত এমপি কে। রাতে তাড়াতাড়ি করে ডিনার সেরে নিজের রুমে চলে গেলো তুষার। চিত্রা তুষার কে পরখ করলো। হাতের কাজকর্ম তাড়াতাড়ি শেষ করে রুমে এসে দেখে তুষার বিছানায় শুয়ে আছেস সটান হয়ে। এক হাত কপালে। চিত্রা এগিয়ে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এসেছে কি না। কিন্তু নাহ জ্বর আসে নি।
-“ শুয়ে শুয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জ্বর আসে নি।
চিত্রা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তুষার চোখ মেলে তাকালো। ইশারায় চিত্রা কে লাইট নিভিয়ে দিয়ে পাশে শুতে বললো। চিত্রা লাইট নিভিয়ে তুষারের পাশে শুতেই তুষার চিত্রা কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। চিত্রা অভস্ত্য হয়ে গেছ এখন। হুটহাট ছোঁয়ায় কেঁপে উঠে না এখন। তবে আজ আর তুষার পাগলামি করলো না। আর না অধর ছুঁয়ে মাতলামি। শুধু মুখ ডুবিয়ে রেখেছ গলায়৷ নিশ্বাসের গরম বাতাস পড়ছে চিত্রার গলায়৷ চিত্রা তুষারের দিকে ঘুরলো। তুষারের গালে হাত রেখে বলল-
-“ কি হয়েছে? কালকের জন্য চিন্তিত আপনি?
তুষার চোখ মেলে তাকালো। মৃদু শব্দে বলল- না।

-“ তাহলে এমন চুপচাপ কেনো?
-“ ভাবছি।
-“ কি ভাবছেন?
-“ সামনে কোনো বড় ঝড় আসতে চলছে। কিন্তু কিভাবে সেই ঝড় টা আমাদের জীবনে আসবে সেটা নিয়েই ভাবছি।
-“ কিসের ঝড়ের কথা বলছেন?
-“ কালবৈশাখী ঝড়ের নাম শুনেছো তো? তেমনই এক ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি। সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিবে।
চিত্রা তুষারের শার্ট খামচে ধরলো।
-“ এসব অলক্ষুণে চিন্তা করছেন কেনো। পজিটিভ ভাবুন। আল্লাহ আছেন,সব ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করবে।

তুষার তপ্ত শ্বাস ফেললো। পুনরায় চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ আচ্ছা সেই ঝড়ে যদি আমি বিলিন হয়ে যাই তখন….
তুষার আর শেষ করতে পারলো না কথাটা। চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। তুষারের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টি তে। তুষার নিজেও উঠে বসলো।
-“ কি হলো?
চিত্রা আগের ন্যায় তাকিয়ে জবাব দেয়।
-“ আপনার হয়েছে টা কি? এসব কেনো বলছেন আপনি? আমি বিয়ের আগে কি বলেছিলাম আপনায়? আমি সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছিলাম। আপনি কি বলছেন এখন এসব? আমি জানি রাজনীতি করলে প্রানের সংশয় থাকে। তাই বলে আপনি এসব কেনো বলবেন? বিয়ের পর আমার গোটা পৃথিবী আপনি হয়ে গেছেন। আপনি কি করে আমাকে একা ফেলে নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন বিলিন হয়ে যাওয়ার কথা।

তুষার চিত্রার বাহু ধরে তাকে শোয়ালো। চিত্রার মাথাটা তুষারের বুকের উপর। তুষার চিত্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে-
-“ সরি। আমাকে বাঁচতে হবে তোমার জন্য। বাচ্চার বাবা হওয়া বাকি এখনও,,বৃদ্ধ হতে হবে তোমার সাথে। অনেক কিছু বাকি। এতো আগেই ঝড়ে পড়তে চাই না।

অন্ধকার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে এক অবয়ব। হাতে তার একটা ফটো। দৃষ্টি তার আকাশে থাকা চাঁদে। মুখ থেকে মৃদু আওয়াজে ভেসে আসলো –
-“ দ্যিস গেইম স্টার্ট’স ফ্রম নাউ। সেভ ইউর লাইফ ইফ ইউ ক্যান।

কথাটা বলেই লাইটারের আগুনের সাহায্যে হাসতে থাকা দুই যুগলবন্দী ছবি পু’ড়িয়ে ভস্ম করে দিলো। ছাই গুলো কে হাতে নিয়ে ফু দিয়ে আকাশে উড়িয়ে দিলো।

————————-

টিভির সামনে বসে আছে খাঁন পরিবারের সবাই। দুপুরে গিয়ে তারা ভোট দিয়ে এসেছে সবাই। চিত্রা আজ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়েছে তুষারের পাঞ্জাবির সাথে মেচিং করে। তুষার রাফি রাতুল ভোট কেন্দ্রে। পুরো সিকিউরিটি দ্বারা আবদ্ধ ভোট কেন্দ্রে। কোনো নকল ফেইক ভোট দেওয়ার কোনো চান্স নেই। তামিম খাঁন সব ঠিক করে রেখেছেন। তুষারের ভোট নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই। তার চিন্তা অন্য কিছু নিয়ে। গতকাল রাতে বাহিরের দেশের একটা নম্বর একটা মেসেজ আসে তুষারের নম্বরে।
মেসেজ টা ছিলো- “ দ্যিস গেইম স্টার্ট’স ফ্রম নাউ। সেভ ইউর লাইফ ইফ ইউ ক্যান।”

নম্বর টা মালদ্বীপের। কিন্তু মালদ্বীপ থেকে কেই বা তাকে এমন মেসেজ পাঠাবে? মালদ্বীপে কেউ থাকতে পারে এমন জানা শোনা কেউ তো নেই। এসব ভাবনার মাঝেই হুট করে কারো সঙ্গে ধাক্কা খায় তুষার। তুষার সরি বলে চলে আসে।
রাতুল সেই কখন থেকে তুষার কে চিন্তিত দেখছে। ভোটের জন্য চিন্তিত মনে করে আর ঘাটে নি তুষার কে।

চিত্রা খাবার টেবিলে এক এক করে তুষারের সকল পছন্দের খাবার রাখছে। এর মধ্যে টিভির হেডলাইনে জ্বল জ্বল করে উঠলো ঢাকা ১৯ আসনে এমপি পদে জয়ী হয়েছে তুষার খাঁন। লেখাটা পড়ে তৃষ্ণা জোরে চিৎকার করে উঠে। চিত্রা তাকায় টিভির পানে। মুখে হাসি ফুটে উঠে। এগিয়ে আসে সোফার দিকে। অধরা চেয়ে আছে চিত্রার মুখে দিকে। চিত্রার মুখের হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। এগিয়ে এসে চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ ভাইয়া কে ফোন দিয়ে কথা বলো ভাইয়ার সাথে।
চিত্রা না জানালো। সে ফোন করবে না। লোকটা হয়তে ব্যাস্ত আছে এখন। তুষারপর এমপি হওয়ার খবর শুনে সাহেল আহমেদ ফোন দিয়েছিল চিত্রা কে। চিত্রা বাবার সাথে কথা বলে। এখন অপেক্ষা গুনছে স্বামীর বাড়ি ফেরার।

অপেক্ষারা দীর্ঘ হলো না। সন্ধ্যার আগেই ঘামার্তক শরীর নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তুষার। চিত্রা রুমে ছিল। তুষার ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে চিত্রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার এলোমেলো পায়ে এগিয়ে গেলো। পেছন থেকে চিত্রা কে ধরলো। চিত্রা বেলকনির রেলিং ধরে বলল-
-“ কংগ্রাচুলেশনস এমপি মশাই।
তুষার শাড়ি ভেদ করে চিত্রার উন্মুক্ত পেটে হাত রেখে বলল-
-“ শুধু কংগ্রাচুলেশনে চিঁড়া ভিজবে না মিসেস খাঁন।
চিত্রা ফিরলো। তুষারের চোখে চেয়ে বলল-
-“ উমম তাহলে কি করলে চিঁড়া ভিজবে?
-“ আই থিংক কিস।
চিত্রা ঠোঁট কামড়ে ভাবার মতো করে কিছু ভাবলো তার পর শুধালো।
-“ ওকে মিস্টার খাঁন আই উইল ডু ইট।
কথাটা বলে চিত্রা তুষারের অধরে নিজের অধর ডুবিয়ে দিলো। তুষার এক হাতে চিত্রা কে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেয়। চিত্রার দু হাত তুষারের পাঞ্জাবির কলারে। মিনিট দুয়েক পর চিত্রা ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে তুষার আঁকড়ে ধরে চিত্রার অধর। চিত্রা হাঁপিয়ে উঠলো। মিনিট কয়েক পর তুষার ছেড়ে দিলো। চিত্রার মাথা টা বুকে চেপে ধরে বলে-
-“ এখনও অভ্যস্ত হতে পারলে না। এই টুকুতেই হাঁপিয়ে যাও!
চিত্রার শ্বাস উঠানামা করছে দ্রুতবেগে।
-“ শান্ত হও চিত্রা।
চিত্রা চেষ্টা করলো শান্ত হওয়ার। চিত্রার চুলে চুমু খেয়ে চিত্রার হাত ধরে রুমে আসে। চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে ওয়ারড্রবের উপর থেকে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

মধ্য রাত্রি,, আকাশে জ্বলজ্বল করছে চাঁদ। ছাঁদে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা আর রাফি। রাফি আজকাল ভীষণ ব্যাস্ত থাকে। এ নিয়ে তৃষ্ণার মনে বিষাদ জমেছে ভীষনভাবে। রাফি কোনো ভনিতা ছাড়াই তৃষ্ণার হাত ধরলো। তৃষ্ণা তাকালো। তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে রাফি বলে-
-“ যতোই আমি তোমার কাজিন হই না কেনো। এমপির বাড়ির মেয়েকে তারা কোনো বেকার ছেলের কাছে মেয়ে দিতে চাইবে না। আমি জানি চাচার কাছে তোমায় চাইলে তারাও না করবে না। কিন্তু আমার আলাদা কোনো পরিচয় আগে ছিলো না এখন হয়েছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বাবার ব্যাবসার হাল ধরেছি পুরোদমে। সেজন্য আমাকে ব্যাস্ত সময় পার করতে হয়েছে নিজেকে পুরোদমে গুছিয়ে নিতে। নাউ আই’ম ফ্রী। তোমাকে চেয়ে নেওয়ার সময় এখন। কালই চাচার কাছে তোমাকে চাইবো। তার আগে তোমার অনুমতি নিতে চাই তুমি কি রাজি বা শিওর আমার সাথে বাকি জীবন এক সাথে থাকার জন্য?

তৃষ্ণা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। শব্দ গুলে গলায় আঁটকে আছে। কোনো রকম টলমল চোখে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। রাফি স্মিত হাসলো। এই প্রথম তৃষ্ণা কে সে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তৃষ্ণার শরীর কাঁপছে। মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। রাফি তৃষ্ণার মাথায় চুমু খেলো। তৃষ্ণা কে ছেড়ে তৃষ্ণার গালে আলতো করে দু হাত রেখে বলে-
-“ ঘুমিয়ে পড়ো রুমে গিয় রাত হয়েছে।

তৃষ্ণা বাধ্য মেয়ের মতো ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে উঠে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩২( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ নেক্সট উইকে তোমায় মালদ্বীপ যেতে হবে রাফি নতুন প্রজেক্ট টার জন্য। আই থিংক তোমার সমস্যা নেই। সো প্রিপেয়ার্ড হও যাওয়ার জন্য।

খাওয়ার টেবিলে খাবার খেতে খেতে কথাটা বলেন সামির খাঁন। চকিতে ঘাড় ঘুরায় রাফি। বিস্ময় হয়ে বলে-
-“ আগে তো বলো নি।
-“ কাল রাতেই মিস্টার জেইদ জানিয়েছেন। টাকা টা তারা ইনভেস্ট করছে তো তারা চাচ্ছে প্রজেক্ট টা তাদের ওখানেই কমপ্লিট করতে।
-“ কতদিন থাকতে হবে?
-“ সেটা তোমার প্রজেক্টের উপর নির্ভর করছে। মাস দুয়েক লাগতে পারে বা মাস তিনেক বা তার ও বেশি।
-“ অনেক দিনের ব্যাপার।
-“ হুম কোনো সমস্যা?

-“ হুমম সমস্যা ই তো। বিয়ের প্ল্যান করছি আর তুমি প্রজেক্টের কাজে পাঠাচ্ছো তাও আবার দু চার দিনের জন্য নয় মাস কয়েকের জন্য!

কথাটা বিরবির করে উচ্চারণ করে রাফি। সামির খাঁন প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-
-“ কিছু বললে?
রাফি প্লেটে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে-
-“ না না কিছু বলি নি।
-“ তাহলে যাচ্ছ নেক্সট উইক। আমি ভিসা রেডি করে রাখবো।
-“ আচ্ছা।

সামির খাঁন চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফি কে ভাবান্তর হয়ে থাকতে দেখে বলে-
-“ খাচ্ছিস না কেনো?
তুষার ঠোঁট কামড়ে কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে শুধালো-
-“ ভাবছি।
তানিয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি ভাবছিস?
রাফি এঁটো প্লেটে হাত ধুতেধুতে বলে-
-“ অনেক কিছু ভাবছি। ধীরে ধীরে প্রকাশিতব্য হবে।
রাফি চলে যায়। তানিয়া বেগম রাফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। কি বললো কিছুই বুঝলেন না তিনি।

চিত্রা আর তৃষ্ণা ভার্সিটির ক্লাস রুমে বসে আছে। গত কাল রাতে রাফির বলা সব কথা চিত্রা কে বলছে তৃষ্ণা। চিত্রা চুপচাপ শুনলো। তৃষ্ণার খুশির সীমানা নেই। তার আজ মুক্ত পাখির মতো আকাশে উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে। ক্লাসে স্যার আসতেই দু’জনে ক্লাসে মনোযোগী হয়। তুষার আজ সংসদ ভবনে গেছে। প্রাইম মিনিস্টার সব এমপি কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তুষারের সাথে রাতুল আর তামিম খান সহ কয়েকজন গার্ড গিয়েছেন। আপাতত তারা বসে প্রাইম মিনিস্টারের বক্তব্য শুনছেন।

চিত্রা কে যাওয়ার আগে বলে দিয়ে গেছে চিত্রার ক্লাস শেষ হতে হতে তুষার এসে পড়বে। অপেক্ষা করতে বলেছে।

ক্লাস শেষে মাঠে বসে অপেক্ষা করছে তৃষ্ণা চিত্রা তুষারের। এরমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে রাফি এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। কাউকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে তারা মাথা উঁচু করে তাকায়। রাফিকে দেখে চিত্রা ভাবে হয়তো তুষার এসেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“ ভাবি তৃষ্ণা কে নিয়ে যাচ্ছি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আমাকে নিবেন না? আপনার ভাই কোথায়? আসে নি?
রাফি মাথা চুলকে জবাব দিলো-
-“ ব্রো জানালো তার আসতে আর একটু লেট হবে। আমি তৃষ্ণা কে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি ব্রো এর সাথে ফিরবেন।
চিত্রা পুনরায় ঘাসের উপর বসে পড়লো। তৃষ্ণার হাত ধরে বলল-
-“ ভাবি আসছি। ব্রো এসে পড়লো বলে।
চিত্রা প্রতিত্তোরে স্মিত হেঁসে মাথা নাড়ালো। রাফি তৃষ্ণা চলে যাওয়া পর খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় নি চিত্রা কে তার এমপি মশাই এর জন্য। ক্লান্ত শরীর নিয়ে এলোমেলো পায়ে হেঁটে এসেছিল তার সামনে। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে শরীরে লেপ্টে ছিলো। লোকটা আজকাল কালো রঙের বাহিরে ভিন্ন রঙের শার্ট পড়ে। ভালোই লাগে চিত্রার।

তুষার কে দেখা মাত্রই উঠে দাঁড়ালো চিত্রা।
-“ ওখান থেকে সোজা এখানে চলে এসেছেন?
তুষার চুল গুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা বিরক্ত হলো। নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে-
-“ মাস্ক খুলুন। আমি দেখবো আপনাকে।
তুষার চিত্রার হাত চেপে ধরলো। চিত্রা কে নিয়ে হেঁটে গাড়ির সামনে আসলো। ইশারায় চিত্রা কে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে। তারপর মুখে মাস্ক টা খুলে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ নাও মন ভরে দেখো।
চিত্রা তাকালে ঐ মুখ টার দিকে। ওড়নার এক প্রান্ত দিয়ে মুখে গলায় লেগে থাকা ঘাম যত্নসহকারে মুছে দেয়।
-“ আপনার কিন্তু না আসলেও চলতো। রাফি ভাইয়া এসেছিল আমি তার সাথেই বাসায় চলে যেতে পারতাম।

তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-
-“ আমার বউ অন্য কারো সাথে কেনো যাবে আমি থাকতে?
-“ আপনি এখানে না এসে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিলে এই ক্লান্ত ভাব টা এখন থাকতো না।
-“ তোমাকে দেখলেই আমার সব ক্লান্তি এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
-“ হয়েছে হয়েছে। শুনুন একটা কথা বলবো।
-“ হুমম বলো শুনছি।
-“ আমাদের বিয়ের ক মাস হলো?
-“ উমম সেদিন না বিয়ে করলাম? মাস তো হয় নি।
চিত্রা সরু চোখে তাকালো।
-“ আড়াই মাস হয়েছে।
-“ সিরিয়াসলি আড়াই মাস!
-“ ফাজলামি বন্ধ করবেন? আমার কথাটা শুনুন।
-“ আচ্ছা বলো।
-“ দাদি কি বলছে জানেন?
-“ কি বলছে?
-“ আজ সকালে আপনি চলে যাওয়ার পর খাবার টেবিলে দাদি ফট করে বাচ্চার কথা তুলেছে।

তুষার গাড়ি চালানোর মাঝে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলে-
-“ কার বাচ্চার কথা বললো?
চিত্রা তুষারের দিকে তাকালো।
-“ বুঝেন নি কার বাচ্চা হতে পারে?
-“ না। আমাদের রিলেটিভ দের মধ্যে তো বাচ্চা নেই। সবাই যথেষ্ট বড়।
-“ থাক আর বুঝে কাজ নেই। তাড়াতাড়ি বাসায় চলেন ভীষণ টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।
-“ সারাদিন ছোটাছুটি করি আমি আর টায়ার্ড ফিল হয় তোমার!
-“ হ্যাঁ হয়।

-“ চাচা তোমার সাথে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।
তামিম খাঁন বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলেন। দরজার পানে তাকিয়ে দেখলেন রাফি তৃষ্ণার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম খাঁন উঠে বসলেন। তানিয়া বেগম গেছেন ওয়াশরুমে।
-“ ভেতরে আসো।
রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ততক্ষণে তানিয়া বেগম ও ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলেন। রাফি সোজা তামিম খাঁনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল-
-“ চাচা আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
আকস্মিক রাফির মুখ থেকে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে যায় তামিম খাঁন। একবার স্ত্রীর পানে তাকায়। রাফি তামিম খাঁন কে চুপ থাকতে দেখে বলে-
-“ কি হলো চাচা বলো আমি পাত্র হিসেবে কেমন?
তামিম খাঁন রাফির দিকে তাকালো। মুচকি হেঁসে বলল-
-“ সুপার ডুপার।
রাফি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তারমানে বলছো পাত্র হিসেবে আমি ঠিকঠাক।
তামিম খাঁন হ্যাঁ জানালো।
-“ আমি কোনো মেয়ের বাবার কাছে গিয়ে তার মেয়েকে চাইলে সে না করতে পারবে না তাই তো?
-“ হঠাৎ এসব বলছিস কেনো?
তামিম খাঁনের সন্দেহান দৃষ্টি দেখে রাফি ফের বলল-
-“ আহা বলোই না। না করবে মেয়ের বাবা?
-“ না করার সম্ভাবনা কম।
-“ উমম তাহলে পজিটিভ টাই কাউন্ট করছি। তোমার মেয়ের তো বয়স হচ্ছে বিয়ের জন্য পাত্র লাগবে না?
-“ তা তো লাগবেই। কিন্তু এসব কেনো বলছিস?
তানিয়া বেগমের কথা শুনে রাফি তানিয়া বেগমের দিকে তাকায়।
-“ তোমার মেয়ের জন্য আমার চাইতে কি ভালো ছেলে পাবে?

তানিয়া বেগম তামিম খাঁন একে ওপরের দিকে তাকালো। তানিয়া বেগম একবার তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে ফের রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ মানে?
-“ কোনো মানে টানে নেই। চাচা নিজের মুখেই স্বীকার করেছে পাত্র হিসেবে আমি ভালো। তোমাদের কাছে প্রস্তাব রাখছি তোমরা কি তোমাদের মেয়েকে আমায় দিবে? ভীষণ ভালোবাসবো তাকে। একদম আগলে রাখবো। কোনো কষ্ট পেতে দিবো না। দিবে আমায় তোমাদের মেয়ে?

তৃষ্ণার হৃদপিণ্ড ধুরুধুরু করছে। ভয়ে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। রাফির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে। সেজন্য রাফি শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে।
তামিম খাঁন মেয়ের দিকে তাকালো। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই বলল-
-” ভালোবাসো দু’জন দু’জনকে?
-“ ভালোবাসা না থাকলে কি বিয়ে করা যায় না চাচা? ধরে নাও এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ।
-“ সামির জানে এসব?
-“ না বাবা ফিরলে জানাবো। বাবার মনে হয় না আপত্তি থাকবে।
-“ সামির আসুক তারপর এ বিষয় নিয়ে কথা হবে। এখন রুমে যাও।

রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে তামিম খাঁন বলেন-
-“ তৃষ্ণা কে রেখে যাও। কথা আছে আমার ওর সাথে।

রাফি পেছন ফিরে একবার তাকায়।
-“ কি কথা চাচা? এখনই বলো আমার সামনে। আমি তৃষ্ণা কে একা রেখে যাচ্ছি না।

তামিম খাঁন বালিশের নিচ থেকে ফোন টা বের করে। সামির কে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি বাসায় আসতে বলে।

তুষার আর চিত্রা বাসায় ফিরেছে। ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে সোফায় থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে পরিবারের সবাই। সাথে আছে রাতুল ও তার মা।
চিত্রা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। তামিম খাঁন ছেলেকে দেখে বললেন-
-“ ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আসো।
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি হয়েছে?
তানিয়া বেগম তুষারের বাহু ধরে টেনে বলে-
-“ আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।
তুষার চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

তৃষ্ণা অধরা রুম জুড়ে পায়চারি করছে। আজকের দিনেই সব হতে হলো? এক রাফি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিল আর এখন রাতুল আর রাতুলের মা এসেছে অধরার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। একই দিনে পরিবারের দু মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব। রাতুল তাকে জানায় নি যে আজ প্রস্তাব নিয়ে আসবে। সে নিয়ে ভীষণ রেগে আছে অধরা। চিত্রা ফ্রেশ হয়ে তৃষ্ণা দের রুমে আসে। দু’জন কে পায়চারি করতে দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে গো বাসায়? নিচে ওমন থমথমে পরিবেশ আর এখানে তোমরা এমন পায়চারি করছো যে?
তৃষ্ণা চিত্রার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ নিচে গিয়ে দেখ তোর দেওর কি করেছে আজ।
-“ কি করেছে?
-“ আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বাবার কাছে।
চিত্রা স্মিত হেঁসে বলল-
-“ এটা তো ভালো কথা। তুই তো এটাই চাইতি। তো খুশি না হয়ে এমন ভয় পাচ্ছিস কেনো?

তৃষ্ণা তখনকার ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল। চিত্রা সব শুনে জাস্ট হা হয়ে গেলো। তৃষ্ণার বাহু তে আলতো থাপ্পড় দিয়ে বলে-
-“ দেবর আমার সেই লেভেলের চিজ তো। সোজা কাপ নিয়ে নিবে না খেলেই।
-“ আর জানিস রাতুল ভাই কি করছে।
-“ কি করছে?
-“ তার মা কে নিয়ে এসেছে অধরা আপুকে বিয়ে করবে বলে।

চিত্রা অধরার পানে তাকালো। অধরা মাথা চেপে বসে আছে।
-“ বাই এনি চান্স আজ কি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দিবস নাকি?

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-২৯+৩০

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৯( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

ছেলেবেলায় শহরে যেমন বৃষ্টি দেখা যেত, তেমন ঘনিয়ে বৃষ্টি বোধহয় এখন হয় না। বৃষ্টির তেমন সমারোহ নেই যেন, বৃষ্টি এখন যেন ইকনমিতে মন দিয়েছে – কোনরকম করে জল ছিটিয়ে চলে যায়। আগেকার মতো সে বজ্র বিদ্যুৎ বৃষ্টি বাতাসের মাতামাতি দেখা যায় না। আগেকার বৃষ্টির মধ্যে একটা নৃত্য ও গান ছিল, একটা ছন্দ ও তাল ছিল – এখন যেন প্রকৃতির বৃষ্টির মধ্যেও বয়স প্রবেশ করেছে, হিসাব কিতাব ও ভাবনা ঢুকেছে, শ্লেষ্মা শঙ্কা ও সাবধানের প্রাদুর্ভাব হয়েছে।
তবুও পরিবেশ টার সাথে আজকের দিন টা খাপে খাপ মিলে গেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারী, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিন কে কেন্দ্র করে সহস্র যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকার অনেক প্ল্যান থাকে।

ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেসব হাজার কল্পনা জল্পনা করতে ব্যাস্ত তৃষ্ণা। না হোক তার আর রাফির প্রেম তাকে গোলাপ দিতে সমস্যা কোথায়? আজ না হয় একটু মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলবে। ভালোবাসার দিবসে ভালোবাসায় গা এলাবে।

কথাগুলো ভেবেই তৃষ্ণা রাফির নম্বরে একটা মেসেজ পাঠায়।
রাফি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলো। মেসেজে টুং টাং শব্দ কানে ভেসে আসতেই বিছানার পাশ থেকে ফোন টা নিয়ে দেখে তৃষ্ণার আইডি থেকে মেসেজ এসেছে। রাফি মেসেজ নোটিফিকেশনে ক্লিক করতেই দেখে ভালোবাসা দিবস নিয়ে একটা রচনা। এই রচনা টা সচারাচর ফেসবুকের মেসেজ অপশনে সবাই একাধারে ফরওয়ার্ড করতে থাকে। রাফি টাইপ করলো-
-“ এমন গরুর রচনা পাঠানোর মানে কি?
তৃষ্ণা রাফির এমন মেসেজ টা দেখেই ভ্রু কুঁচকালো।
-“ হার্টলেস নাকি আপনি?
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওপাশ থেকে টাইপ হলো-
-“ হার্টলেস হলে এই মন এতো সহজে একটা পুচকি মেয়ে নিজের বশে নিয়ে যেতে পারতো না।
-“ আজ কি জানেন?
-“ রচনা দেখে বুঝলাম এখন আজ কি।
-“ তো আপনার কি উচিত না কিছু করার?
-“ হ্যাঁ বিয়ে টা করে ফেলা উচিত। ব্রো এর বিয়ে শেষ আমার ও তো বয়স হচ্ছে।
-“ পাত্রী দেখবো?
-“ সে তোমার ইচ্ছে। তুমি নিজেই পাত্রী হবে নাকি অন্য কাউকে তোমার পরিবর্তে দিবে।
-“ আচ্ছা শুনুন না।
-“ হুমম বলো।
-“ আজ ঘুরতে নিয়ে যান না।
-“ কোথায় যাবা?
-“ আগে বাসা থেকে বের হই। তারপর ভাবা যাবে কোথায় যাওয়া যায়।
-“ আকাশের অবস্থা তো ভালো না।
-“ তাতে কি।
-“ যদি বৃষ্টি হয় তখন?
-“ আরো ভালো হবে বৃষ্টি তে ভিজবো।
-“ আচ্ছা দুপুরে রেডি হয়ে থেকো।
-“ আচ্ছা। শুনুন ব্লাক স্যুট পড়বেন কেমন?
-“ আচ্ছা। এখন এক কাপ কফি দিয়ে যাও রুমে। মাথা ব্যাথা করছে।

তৃষ্ণা ছাঁদ থেকে নিচে নেমে গেলো।

চিত্রা আজ ডার্ক রেড কালারের শাড়ি পড়েছে। হাতে লাল রেশমি চুড়ি আখি জোড়া কালো কাজল দ্বারা রাঙায়িত চুলগুলো খোঁপায় বাধা। খোঁপায় আছে বেলি ফুলের গাজরা । তুষারের শরীরে ব্লাক শার্ট। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। চিত্রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার নিজেকে দেখে নিলো। তার পর গলায় একটা ছোট্ট গয়না পড়ে তুষার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আমি রেডি।
তুষার একপলক তাকালো চিত্রার পানে। আজ সকালেই এসেছে চিত্রা দের বাসা থেকে। এখন বাজে দুপুর দু’টো। বায়না ধরেছে আসার পর থেকেই সে ঘুরতে বের হবে। তুষার ও আজ ফ্রী তাই নাকচ করে নি। কোল থেকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
-“ চলো তাহলে।
চিত্রা মুচকি হাসে। তুষারের বা হাতে নিজের ডান হাত দিতেই তুষার শক্ত করে মুঠোবন্দি করে। তারপর বাসা থেকে বের হয়।

তুষার আজ নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে চিত্রা কে নিয়ে কাটাবো। তাই তার সেই পছন্দের জায়গায় চলে যায়। যেখানে নেই কোনো মানুষের সমাগম আছে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য আর ঘ্রাণ। তুষার গাড়িটা নিয়ে শহর থেকে একটু দূরে অবস্থিত সেই খোলা মাঠ টায় আসে। যার একপাশে একটা কুঁড়েঘর আর তার পাশে ছোট্ট একটা নদী। তুষার গাড়ি থেকে নামে। চিত্রার কাছে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে চিত্রা কে বের হতে সাহায্য করে। চিত্রা বের হয়। পরিচিত সেই জায়গা টা দেখে মুখের হাসি চওড়া হয়।

তুষারের হাতের মধ্যে তার হাত। পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছে। চিত্রা লম্বা একটা শ্বাস নিলো। এক হাত দিয়ে তুষারের বাহু চেপে ধরে বলে-
-” আপনার আমার মিলে এখন জায়গা টা আমাদের তাই না?
তুষার স্মিত হাসলো। ইশারায় বলল হ্যাঁ। নদীর একপাশে একটা ঝুড়িতে রয়েছে ঝুড়ি ভর্তি লাল,হলুদ,সাদা গোলাপ ফুল। ঝুড়ি টা চিত্রার নজরে আসলো। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনি আনিয়েছেন তাই না?
তুষার কিছু বললো না। চিত্রা এগিয়ে গেলো ফুল গুলোর দিকে। একটু ঝুঁকে ফুল গুলোর কাছে মুখ নিয়ে সুবাস নিতে থাকে। গোলাপ ফুলের সুবাস আছে নাকি? এটা না ফুলের রাণী এর তো থাকা উচিত সুবাসিত ঘ্রাণ। যেনো ক্রোশ মাইল দূরে থেকেও ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
কোনো ঘ্রাণ না পেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। একটা হলুদ কালার ফুল নিয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আপনার আনা ফুলে ঘ্রাণ নেই এমপি মশাই। এই ফুলটা বরং আমার খোঁপায় লাগিয়ে দিন তো।
তুষার এগিয়ে আসলো। ফুল টা নিয়ে যত্ন সহকারে খোঁপায় গেঁথে দিলো। চুলের ভাজে আলতো করে চুমু খেলো। নদীর পাশে থাকা বকুল ফুলের গাছের ছায়াতলের বেশ টাতে গিয়ে বসলো। নদীতে একটা পদ্মফুল আছে। রং টা বেশ গাঢ়। অকপটে আবদার করে তুষার কে বলে উঠলো-
-“ ফুল টা আমার চাই এমপি মশাই। এনে দিন না।

তুষার পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে আসতে বলল। মিনিট দশেক পর লিমন হাঁপাতে হাঁপাতে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ জ্বি ভাই বলেন।
তুষার পদ্মফুলের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ফুল টা এনে দাও তো লিমন।

লিমন পদ্মফুলের দিকে তাকালো। পাশেই তো পড়ে আছে এক গাদা হরেক রকমের গোলাপ ফুল। এখন আবার পানিতে থাকা পদ্মফুল ও লাগবে! ক্যাবলরামের মতো কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে প্যান্ট গুটিয়ে পানিতে নেমে পদ্ম ফুল টা এনে দেয়। তুষার হাতে নেয়। ইশারায় চলে যেতে বলে। লিমন চলে যায়। তুষার লতি সহ পদ্মফুল টা চিত্রার দিকে বাড়িয়ে দেয়। চিত্রা পদ্মফুল টা হাতে নিয়ে তুষারের কাঁধে মাথা রাখে।

-“ আর কতক্ষণ লাগবে আপনার?
তৃষ্ণা অধৈর্য্য হয়ে উক্ত কথাটি রাফির মোবাইলে পাঠাশ। সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু রাফির আসার নাম গন্ধ নেই। মিনিট দশেক পরে হোয়াইট স্যুট পড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। তৃষ্ণা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তাকে না বলেছিল ব্লাক স্যুট পড়তে? রাফি কাছে আসতেই তৃষ্ণা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ ব্লাক স্যুট না পড়তে বলেছিলাম?
রাফি টাই টা ঢিলে করতে করতে বলে-
-“ বোতাম একটা খুলে গেছে সেজন্য আর পড়ি নি। আর তাছাড়া আমরা ম্যাচিং ম্যাচিং তো। তুমিও হোয়াইট আমি ও হোয়াইট।
-“ এবার চলুন যাই।
রাফি আগে আগে হাঁটা শুরু করে। তৃষ্ণা পেছন পেছন। রাফির পাশে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। রাফি গাড়িটা নিয়ে সোজা ধানমন্ডির লেকের পাড় চলে যায়।
ঢাকা শহরের সবচেয়ে সুন্দর লেকগুলোর একটি ধানমন্ডি লেক। মানুষ মর্নিংওয়াকের জন্য এর ওয়াকওয়ে ব্যবহার করেন এবং অনেকে পার্কিং স্পেসে করেন ব্যায়াম। সামাজিকীকরণের স্থান হিসেবে ধানমন্ডি লেক রাজধানীবাসীর জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।

ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬টা ১২। লেকের ভেতরে অফিস ফিরতি সারি সারি গাড়ি, রিকশার টুং টাং শব্দ, সিএনজির কালো ধোঁয়া,শীতের সন্ধ্যা। আরো ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল আলো-আধারিযুক্ত আবহ। রাস্তার এক পাশে লেকের টলটলে পানি। পানির ওপর গাছের ছায়া আর দূর থেকে ভেসে আসা টীমটীমে আলোর চাদরে লেকের ভেতর সে এক অন্যরকম দৃশ্য। অন্য দিকটায় কিছুটা দূরত্ব পর পর বসেছে যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকার সমাগম। এসব অবলোকন করতে করতে হঠাৎ সামনে মিলে গেল পরিচিত কিছু মুখ।

রিয়া আর রায়ান এগিয়ে আসছে রাফি তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে রাফির দিকে তাকালো। মুখে লেগে আছে মৃদু হাসি। রায়ান এগিয়ে এসে রাফি কে জড়িয়ে ধরে।
-“ কেমন আছিস?
রায়ান রাফি কে ছেড়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোরা?
রাফি তৃষ্ণার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ এই তো আছি ভালো। তোরা এখানে যে?
-“ আজ কি?
-“ ফাগুন,বসন্ত।
-“ আরেক টা কি?
-“ নিব্বা নিব্বির প্রেম বিনিময় দিবস।

রায়ান হোহো করে হেঁসে উঠে। রাফির বাহুতে কিল দিয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ সেটাই তো এর জন্যই এই সাঝ সন্ধ্যায় বেলা এসেছিস প্রেম বিনিময় করতে।

রিয়া রাফি আর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাহ ম্যাচিং ম্যাচিং দু’জনে।
-“ হ্যাঁ।
তৃষ্ণা বোবার মতো চুপ রইলো। রাফি তৃষ্ণার হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে। রায়ান, রিয়া,তৃষ্ণা রাফি গিয়ে টঙের দোকানে যায়। চারজনে মিলে চা খায়।

এরমধ্যে ঝুম বৃষ্টি নামা শুরু করে। টঙের ছাওনিতে দাঁড়িয়ে ঝুম বৃষ্টি দেখে তারা।

কুঁড়েঘর কৃত্রিম আলোয় সজ্জিত। বিছানার উপর লাল টকটকে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। টেবিলের উপর কয়েকটা মোমবাতি জ্বালানো আর তার পাশে পাপড়ি দিয়ে লেখা- হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে মাই লাভলি ওয়াইফ।
বেডের পাশে ছোট্ট টেবিলটায় রাখা তাদের বিয়ের ফটো।
চিত্রা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব। একটু আগেই বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল দেখে তুষার চিত্রা কে নিয়ে কুঁড়েঘরে আসে। আজ রাতে বাড়ি ফিরবে না তারা। সময়টা নিজেদের মতো করে একান্তে কাটাবে। খুব বেশি আসবাবপত্র নেই ঘরে। একটা বেড,একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি, এক জোড়া সোফা,একটা বুক সেলফ আর ছোট ছোট কয়েকটা শর্ট টেবিল।
-” পছন্দ হয়েছে?
চিত্রা চারদিকে তাকাতে তাকাতে বলে-
-“ ভীষণ। কে সাজিয়েছে এভাবে রুম টা?
-“ লিমন ছেলে টা।
-“ যে ফুল তুলে দিলো?
-“ হ্যাঁ।

কথাটা বলতে বলতে তুষার চিত্রাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ কি করছেন।
তুষার চিত্রার কানের ললিতে অধর ছুঁয়ে বলে-
-“ এখন ও তো কিছুই করলাম না সোনা।
চিত্রা তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-
-“ আপনি বন্ধ দরজার ভেতরে এক রকম। আর বাহিরে আরেক রকম।
-“ যেমন?
-“ এই যে এখন আপনাকে অন্য কেউ দেখলে বিশ্বাস ই করবে না যে তুষার খাঁন বন্ধ দরজার ভেতরে এতোটা অসভ্য।

তুষার চিত্রা কে টেনে কাছে নিয়ে এসে বলে-
-“ তুষার খাঁন তার বউয়ের কাছে শুধু অসভ্য কেনো আরো কিছু হতে পারে। দেখতে চাও?

চিত্রা আমতা আমতা করে বলে-
-“ ম..মোটেও ন..না। ছাড়ুন আমায় বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আমি বৃষ্টি দেখবো।
-“ বৃষ্টি দেখে কি হবে। বৃষ্টিময় প্রেমে পাড়ি জমাবো তোমাকে নিয়ে। আজকের পরিবেশ টা মারাত্মক রোমান্টিক। মিঙ্গেল দের জন্য পারফেক্ট।

কথাটা বলে তুষার চিত্রা কে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। চিত্রা তুষারের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। চিত্রা কে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কপালে অধর ছুঁয়ে ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়। ঘর জুড়ে একখণ্ড মোমবাতি জ্বলে রইলো। খোলা জানালার দমকা হাওয়া এসে সেই মোমবাতি টাকেও নিভিয়ে দিয়ে গেলো। রাত যত গভীর হলো কারো নিশ্বাস ফেলার শব্দ তত ভারী হলো।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব৩০( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

একের পর এক হাঁচি দিচ্ছে রাফি। তার পাশেই অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বসে আছে তৃষ্ণা। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। গায়ে জ্বর। তানিয়া বেগম মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। বিছানার পাশেই রাখা গরম স্যুপ। তৃষ্ণা বানিয়ে এনেছে। নিচ থেকে তামিম খাঁনের ডাক ভেসে আসে। তানিয়া বেগম তৃষ্ণা কে জলপট্টি দিতে বলে নিচে চলে যান। তৃষ্ণা রাফির পাশে বসে। জল থে পট্টি তুলে সেটা চেপে রাফির কপালে দিয়ে মিনমিন করে বলে-
-“ সরি আমি বুঝতে পারি নি আপনার সত্যি সত্যি জ্বর চলে আসবে সামান্য বৃষ্টিতে ভেজায়।

রাফি পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুছে।
-“ এখন সরি বলে কি হবে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে।

তৃষ্ণার ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে। রাফি পই পই করে কাল বলেছিল সে বৃষ্টি তে ভিজবে না। শরীর অসুস্থ হবে। তৃষ্ণা এক প্রকার জোর করেই রাফিকে বৃষ্টিতে ভেজায়। যার দরুন ছেলেটা এখন বিছানায় শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছে।
-“ স্যুপ টা খেয়ে নিন না আরাম লাগবে কিছু টা।
রাফি স্যুপের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে বলে-
-“ ঐ তরল জিনিস টা প্লিজ খেতে বলো না। সব কিছু তিতা তিতা লাগছে।
-“ বেলা বাজে দশটা। এখনও পেটে কিছু পড়ে নি আপনার। ঔষধ খেতে হবে তো। তা না হলে জ্বর কমবে কি করে? আপনি একটু উঠে বসুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি। অল্প করে একটু খান।

তৃষ্ণা রাফি কে উঠে বসতে সাহায্য করে। পিঠের পেছনে বালিশ দেয়। রাফি বালিশে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়। তৃষ্ণা স্যুপের বাটি টা তুলে ফু দিয়ে দিয়ে রাফি কে খাইয়ে দেয়। তিন চামচ খেতেই রাফি মুখ সরিয়ে নেয়। সে আর খাবে না। তৃষ্ণা ও আর জোর করলো না। টেবিল থেকে মেডিসিন নিয়ে খাইয়ে দেয়। রাফি মেডিসিন টা খেয়ে আবার কম্বলের তলে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। তৃষ্ণা কে বলে দেয় যাওয়ার আগে রুমের লাইট গুলো অফ করে দিতে।
তৃষ্ণা স্যুপের বাটি টা নিয়ে রুমের লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে চলে যায়।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তুষার,তামিম খাঁন,সামির খাঁন,তরিকুল খাঁন। তানিয়া বেগম আর চিত্রা রান্না ঘরে।
সামনে ভোট আজ থেকেই ভোট প্রচারণা চালানো শুরু করবে। জায়গায় জায়গায় ছোটাছুটি করতে হবে। চিত্রা রান্না ঘর থেকে খাবার গুলো এনে ডাইনিং টেবিলে রাখে। সোফার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাবা আপনারা খেতে আসুন।
তুষার এক পলক তাকায়। তারপর সবাই সোফা থেকে উঠে টেবিলে বসে খাবার খেতে। খাওয়া দাওয়া শেষে তুষার আর তামিম খাঁন চলে যায় ভোট প্রচারের জন্য। যাওয়ার আগে চিত্রা কে বলে গেছে তুষার,সময়মত খাবার খেয়ে নিতে তার ফিরতে দেরি হতে পারে। সামির খাঁন তানিয়া বেগমের কাছে রাফির শরীরের অবস্থার খবর জেনে তিনিও অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে। তরিকুল খাঁন চিত্রা কে ডেকে ফিসফিসিয়ে বলে- ফ্রিজ থেকে লুকিয়ে একটা মিষ্টি দিতে।
চিত্রা আশেপাশে তাকায়। কাউকে আশেপাশে না দেখে চুপিচুপি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে টেবিলের সামনে আনতেই পেছন থেকে তাসলিমা খাঁন বলে উঠে –
-“ তোমার হাতে কি নাত বউ ওটা?
চিত্রা হকচকিয়ে যায়। মিষ্টির বক্স সমেত পেছন ঘুরে বলে-
-“ আ….আসলে দাদিজান আমার হাতে মিষ্টি।
তরিকুল খাঁনের মুখে আঁধার ঘনিয়ে আসে। কত আশা নিয়ে ছিল একটা মিষ্টি খাবে। সেই আশা তে বালতি ভরে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য তার সহধর্মিণী হাজির। তাসলিমা খাঁন মিষ্টির বক্স থেকে একটা মিষ্টি মুখে নিয়ে বলে-
-“ তোমার দাদাজান কে মিষ্টি দিয়ো না নাত বউ। তার ডায়বেটিস মিষ্টি খাওয়া বারন।
চিত্রা তরিকুল খাঁনের দিকে তাকালো। চোখ মুখে অসহায়ত্ব। চিত্রা আশ্বাস দিলো পরে ডাবল মিষ্টি দিবে।
-“ জ্বি দাদি জান মনে থাকবে। আসলে মিষ্টি রাফি ভাইয়ার জন্য নিচ্ছিলাম। তার তো শরীর খারাপ। কিচ্ছু খেতে পারছে না। তাই ভাবলাম মিষ্টি নিয়ে যাই।

-“ আচ্ছা নিয়ে যাও।
চিত্রা প্লেটে তিন খানা মিষ্টি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে যায়। তাসলিমা খাঁন স্বামীর পানে তাকিয়ে বলে-
-“ খবরদার লুকিয়ে মিষ্টি খাবা না। এখন রুমে চলো খাওয়া শেষ তোমার।
তরিকুল খাঁন একবার ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীর সাথে চলে যায়।

চিত্রা উপরে উঠে সোজা তৃষ্ণার রুমে চলে যায়। রুম পুরো ফাকা। অধরা সকালেই ভার্সিটি চলে গেছ। পুরো রুম জুড়ে যখন তৃষ্ণার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পেলো না তখন বেলকনির দিকে তাকাতেই দেখে তৃষ্ণা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
চিত্রা মিষ্টির প্লেট টা সেন্টার টেবিলে রেখে তৃষ্ণার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ মুড অফ?
তৃষ্ণা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো চিত্রার দিকে। তারপর দৃষ্টি সামনে রেখে বলল-
-“ নাহ মুড অফ না।
-“ তাহলে?
-“ অনুশোচনা হচ্ছে।
-“ কি নিয়ে?
-“ রাফি ভাইয়ার শরীর খারাপ টা আমার জন্যই হলো। কাল যদি তার কথা মেনে নিয়ে তাকে জোর না করতাম তাহলে অসুস্থ হতো না।

চিত্রা মৃদু হাসলো। তৃষ্ণা কে রুমে এনে বলল-
-“ এতে অনুশোচনা হবে কেনো। মাঝেমধ্যে শরীর অসুস্থ হবে এটাই স্বাভাবিক। আর তুই তো আছিস তার সেবা করার জন্য। দেখবি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
তৃষ্ণা আগের ন্যায়ই রইলো।

সন্ধ্যার দিকে,,

সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে চিত্রা। অধরা ভার্সিটি থেকে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। রুমে গিয়েছে ফ্রেশ হতে। বসার ঘরে তরিকুল খাঁন, তাসলিমা খাঁন, তানিয়া বেগম বসে টিভি দেখছেন। রাফির শরীর আগের তুলনায় একটু ভালো। তৃষ্ণা রাফি কে ধরে নিয়ে আসছে।
চিত্রা গরম-গরম পকোড়াগুলো এনে সেন্টার টেবিলে রাখে। তানিয়া বেগমের পাশে বসে বলে-
-“ আম্মা আপনার ছেলে কি ফোন দিয়েছিল?
তানিয়া বেগম না বলে। অধরা ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। তাসলিমা খাঁনের পাশে বসে। পকোড়ার প্লেট থেকে পকোড়া নিয়ে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি বানালে?
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। সদর দরজার দিকে তাকাতেই দেখে সামির খাঁন আর তামিম খাঁন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভেতরে ঢুকছেন। চিত্রা ঘাড় উঁচিয়ে দেখলো তুষার আছে কি না পেছনে। কিন্তু নাহ তুষার নেই। সামির খাঁন রাফির পাশে এসে বসে বলে-
-“ এখন শরীর কেমন আছে আব্বা?
রাফি স্মিত হাসে।
-“ এখন ভালো আছি। ফ্রেশ হয়ে আসো।
সামির খাঁন উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে সাথে তামিম খাঁন ও।
মিনিট বিশেক পর দু ভাই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। তানিয়া বেগম তামিম খাঁনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুষার কোথায়?
তামিম খান পকোড়া খেতে খেতে বলে-
-“ ভোট প্রচারের ওখানে। ফিরতে দেরি হবে।
চিত্রা অধৈর্য্য হয়ে বলল-
-“ কত দেরি বাবা?
তামিম খাঁন চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ দশ টা এগারো টা বাজতে পারে মা।
তানিয়া বেগম স্বামীর দিকে তাকালেন। বিরক্তি হয়ে বললেন –
-“ তুষার কে একা রেখে আসলে কেনো? জানো তো পরিবেশ এখন কত গরম। বিপরীত দলের লোকেরা কেমন জানা নেই তোমার?
-“ গার্ড আছে সাথে রাতুল লিমন ও আছে। মিছে মিছে চিন্তা করছো।
অধরা গলা ঝাড়লো। তামিম খাঁনের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ মামু আমি একটা কথা বলতে চাই তোমাদের।
সবার দৃষ্টি গিয়ে পড়লো অধরার দিকে। অধরা হাত কচলে নিজেকে ধাতস্থ করে। তামিম খাঁন বলেন-
-“ কি কথা অধরা?
-“ মামু আসলে আমি নেক্সট উইক থেকে হলে থাকতে চাচ্ছি।
সবার কপালের মাঝে দু ভাজ পড়লো। এমপির ভাগ্নি কি না থাকবে হলে! তার চেয়ে বড় কথা এখন ভোটাভুটির তোড়জোড় চলছে। পরিবেশ গরম। এই সময়ে ঘরের মেয়ে বাহিরে থাকা মানে আলাদা এক্সট্রা করে চিন্তা মাথায় নেওয়া। তামিম খাঁন সহসা না করে দেন।
-“ হলে থাকার পারমিশন পাবা না অধরা। বুঝতেই পারছো পরিবেশ ভালো না। বাই এনি চান্স শত্রুরা তোমার উপর হামলা করলে তখন কে প্রটেক্ট করবে? তুমি দূরে থাকা মানে আলাদা করে এক্সট্রা চিন্তার মধ্যে থাকা আমাদের। আর আছোই তো কয়েক মাস ভার্সিটি তে শুধু শুধু এই কয়েকটা দিনের জন্য হলে উঠে কি করবা।

অধরা নুইয়ে যায়। হলে থাকা নিয়ে রাতুলের সাথেও তার কথা হয়েছে। রাতুল ও মানা করেছে। কিন্তু অধরা তো বাসায় থাকলে যখন তখন বের হতে পারবে না। এমনিতেই রাফি সন্দেহ করে। হলে থাকলে রাতুলের বাসা হল থেকে বেশি দূরে না। মুড সুয়িং হলে যখন তখন রাতুলের সান্নিধ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু জোর দিয়েও বলতে পারছে না। তাদের কথাতেও লজিক আছে।

রাত বাজে পনে দশটা। ডিনার করে যে যার রুমে চলে গেছে। শুধু ড্রয়িং রুমে একাকী বসে আছে চিত্রা। তানিয়া বেগম বলেছিল তাদের সাথে খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে শুতে। কিন্তু চিত্রা না করেছে। লোকটা কোনে কাণ্ডজ্ঞান নেই? সেই যে সকালে যাওয়ার আগে বলল ফিরতে দেরি হবে সময়মত খাবার খেয়ে নিতে। তার কি একটা বার ফোন দেওয়া উচিত ছিলো না? ফোন না দিলো রিসিভ তো করতে পারতো ফোন। কথাগুলো ভাবতেই চোখ মুখ কুঁচকে এলো। এগারো টার দিকে তুষারের আগমন ঘটে। এক্সট্রা চাবি দিয়ে ঢুকে বাসায়। ড্রয়িং রুমের লাইট নিভানো। সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালাতেই দেখে ডাইনিং টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে চিত্রা। অপেক্ষা করতে করতে তার অপেক্ষারাণীর চোখে তন্দ্রা ভর করেছে। স্মিত হাসলো তুষার।

আজ কাজের প্রেসারের জন্য ফোন করতে পারে নি বউ টাকে। আর ফোন টা ছিলো রাতুলের কাছে। সারাদিনের দৌড়াদৌড়ি জন্য শরীর একদম নেতিয়ে গেছে তুষারের। এমপি হওয়া কি এতোই সহজ? শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে চিত্রার কাছে আসে। মুখের উপর এসে জড়ো হয়েছে অবাধ্য চুল। আলতো হাতে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো চিত্রা। তুষার তার অধর চিত্রার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ জান উঠো ক্ষিধে পেয়েছে।
চিত্রা ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে তাকালো। অস্পষ্ট হলো সামনে থাকা মানুষটার অবয়ব। চোখ টা আবার বন্ধ করে হুট করে আবার চোখ মেলে তাকায়। টেবিলের উপর থেকে মাথা উঠায়। চোখ ঢ’লে বলে-
-“ কখন আসছেন আপনি? আমি বুঝতে পারি নি হুট করে চোখ টা লেগে আসছিলো। চেয়েও মেলে রাখতে পারি নি।
-“ চোখ মুখে পানি দিয়ে আসো। আর খাবার টা রুমে নিয়ে আসো। আমি ফ্রেশ হবো।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা জানালো। তুষার উপরে উঠে চলে গেলো। চিত্রা খাবার বেড়ে প্লেটে করে নিয়ে উপরে রুমে চলে গেলো।
তুষার সেন্টু গেঞ্জি পড়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়। ফর্সা নগ্ন পেশীবহুল বাহু বেশ আকর্ষণীয় লাগছে।
ভেজা টাওয়াল টা বেলকনিতে মেলে সোফায় বসে। ইশারায় পাশে বসতে বলে চিত্রা কে। চিত্রা খাবারের প্লেট টা নিয়ে তুষারের পাশে বসে। তুষার পাশ থেকে ল্যাপটপ টা কোলে তুলে নিয়ে বলে-
-“ একটু কষ্ট করে আমাকে খাইয়ে দাও আর নিজেও চটপট খেয়ে নাও।
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ আপনার কাজ এখনও শেষ হয় নি?
তুষার ল্যাপটপেই চোখ রেখে বলে-
-“ কেনো? স্বামী কে কাছে চাইছো?
-“ অসভ্য পুরুষ।
কথাটা বলে চিত্রা তুষার কে খাবার খাইয়ে দেয়। চিত্রা কে খেতে না দেখে বলে-
-“ সোনা আমি ভীষণ বিজি। একটু তুমিও খেয়ে নাও না।
চিত্রা তুষারের মুখের সামনে ভাতের লোকমা তুলে বলে-
-“ আমি খেয়েছি আপনি খান।
তুষার চিত্রার দিকে তাকালো।
-“ মিথ্যা বলা আমি মোটেও পছন্দ করি না চিত্রা। আমি জানি খাও নি তুমি।
চিত্রার এবার অভিমান হলো। কপাট রেগে বলল-
-“ আমার খাওয়ার চিন্তা আপনার করা লাগবে না। আপনি খান,খেয়েদেয়ে কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন। আমাকে নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। কতগুলো ফোন দিছি আমি আপনাকে? একটা ফোন ও রিসিভ করেন নি।
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। কোল থেকে ল্যাপটপ টা পাশে রেখে চিত্রা কে টেনে কোলে বসালো। কাঁধে থুঁতনি রেখে বলল-
-“ ফোন টা আমার কাছে ছিলো না। বুঝতেই তো পারছো ভোট প্রচারের জন্য গিয়েছিলাম। সারাটা দিন আমাকে এদিকে ওদিকে ছুটতে হয়েছে। সেখানে বাসায় এসে যদি তোমার এই অভিমানী মুখশ্রীর দেখা মিলে তাহলে আমি সারাদিনের ক্লান্তি কার কাছে গিয়ে সুখে পরিনত করবো?
-“ আর আমার আপনাকে নিয়ে যে চিন্তা হয় সেটা বুঝেন না? একটু তো ফোন দিয়ে আপনার কন্ঠ স্বর শুনতে ইচ্ছে করে। বুঝেন না আপনি?
-“ জ্বি আমারই ভুল হয়েছে ফোন টা রাতুলের কাছে রেখে। এবার থেকে ফোন করবো,তোমার তৃষ্ণা মেটাবো। খুশি?

চিত্রা তুষারের কোল থেকে উঠে পাশে বসলো। তুষার কে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। এঁটো হাত পানি দিয়ে ধুয়ে সেন্টার টেবিলের পাশে প্লেট টা রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে চিত্রা। তুষার রুমের লাইট অফ করে ল্যাপটপ টা আবার কোলে নেয়। চিত্রা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে মাথা উঁচু করে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বেশি রাত যেনো না হয় বিছানায় আসতে।
তুষার চোখ তুলে তাকায়। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে সোজা বিছানায় গিয়ে চিত্রা কে কাছে টেনে নেয়। চিত্রা তুষারের বুকে মুখ গুঁজে এক হাত দিয়ে সেন্টু গেঞ্জি খামচে ধরে আছে। চিত্রার কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে-
-“ আজ ভীষণ ক্লান্ত আমি। ওসবের মুডে একদম নেই। তবে তুমি চাইলে…..

চিত্রা মাথা তুলে তাকায়। জ্যোৎস্নার আলোয় ঘর খানিক টা আলোকিত। ঝাপসা বোঝা যাচ্ছে তুষারের মুখের আদল। চোখ বন্ধ করে আছে। ক্লান্ত ভীষণ সে তার মুখই বলে দিচ্ছে।
-“ আমি মোটেও ওসব ইঙ্গিত করি নি। আপনাকে ছাড়া ঘুম ধরবে না তাই বলেছি বিছানায় আসতে যেনো বেশি রাত না হয়।
তুষার কিছু বললো না। চিত্রা কে জড়িয়ে ধরেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। চিত্রা তুষারের দিকে কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।

———————————-

পুরো কয়েকদিন ব্যাপি ভোট প্রচারের কাজে পুরোদমে ব্যাস্ত ছিলো তুষার। জনগণ কে আস্বস্ত করেছে তার শহরে চাঁদা বাজির বিষয়ক কোনো ঘটনা ঘটবে না। রাস্তার ধারে দোকানপাট করার জন্য ব্যাবসায়িদের আলাদা চাঁদা দিতে হয় এলাকার কিছু নিম্ন মানের রাজনীতি করা লোকদের। সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিহ্ন করবে। এলাকার রাস্তা ঘাট গুলো সম্পূর্ণ মেরামত করবে। যেই এলাকায় ঝুম বৃষ্টি হলেই পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায় সেই এলাকা গুলো চিহ্নিত করে সেই এলাকার রাস্তাঘাটে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাওয়ার জন্য ড্রেন তৈরি করবে। রাস্তা ঘাটে ফুটপাতে থাকা দোকানদারদের দোকানের জন্য আলাদা জায়গা দিবে।

শহর জুড়ে রাস্তার আনাচে-কানাচেতে তুষারের ভোটের পোষ্টার। বিরোধী দলের লোক হালিম সরকার ও তার ছেলেকে এবার নামিয়েছে তুষারের বিপরীতে। ছেলেটা রাজনীতির র ও বুঝে না। তাই তুষার সেদিকে মাথা ঘামাতে মোটেই চাইছে না।

আজ চিত্রা দের বাসা থেকে চিত্রার মা বাব আর সিমি রিয়াদ এসেছে। চিত্রা আর তানিয়া বেগম তারজন্য সেই বেলা থেকেই রান্নার তোড়জোড় শুরু করেছে। বেশ অনেক আইটেমের ই খাবার রান্না করে বউ শ্বাশুড়ি মিলে।
রিয়াদ চুপচাপ বসে আছে। কত কিছু ভেবে এসেছিল এই শহরে। এখন তাকেই নিরব হয়ে সব দেখতে হচ্ছে। এমপির বাড়ির বউ মনে যা এঁটে এসেছিল তা বাস্তবায়ন করতে গেলে নির্ঘাত মা-ইর গুতা খেয়ে শহর ছেড়ে যেতে হবে। আপাতত চুপ চাপ থেকে দেখা ছাড়া উপায় নেই। সুযোগ বুঝে কোঁপ বসাবে।

তুষার ফিরেছে দুপুরের দিকে। আজ শুক্রবার,গোসল সেরে বাপ চাচা,শ্বশুরের সাথে জুম্মার নামাজ আদায় করে মসজিদে গিয়ে। মসজিদের ইমাম সাহেব তুষার কে ডেকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানায় তার বেতন নিয়ে। মাস কয়েক হলো তার বেতন ঠিক মতো পাচ্ছেন না। তুষার তার বেতনের সুনিশ্চিয়তা দেয়। ইমাম সাহেব খুশি হন।
তুষার মাথার টুপি খুলতে খুলতে বাসার ভেতর ঢুকে। শরীর ঘেমে একাকার। চিত্রা তুষার কে দেখেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়। রিয়াদ যায় নি জুম্মার নামাজে। চিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষার লক্ষ করলো। পানি টা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে সেন্টার টেবিলে রাখলো। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাওয়ার সময় চিত্রা কে ডেকে রুমে আসতে বলল।

রাফি এখন পুরোপুরি সুস্থ। পুরো দমে বাবার ব্যাবসার হাল ধরেছে। এখনই সব বুঝে নেওয়ার সময়। বাবার বয়স হচ্ছে আর যোগ্য পাত্র হিসেবে নিজের ও আলাদা পরিচয় হচ্ছে। সব ঠিকঠাক করে নিয়েছে ভোটাভুটি শেষ হলে চাচার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখবে। ওসব রিলেশনশিপ টিলেশনশীপ রাফির ধাঁচে নেই। একদম হালাল করে তারপর জমিয়ে প্রেম করবে। সেই ভেবে সব প্ল্যান করা শেষ। আর তো মাত্র কয়েক টা দিন। তারপরই তো ভোটাভুটি শেষ। কথাটা ভেবেই আনমনে হেঁসে উঠলো।

সামির খাঁন ছেলের রুমে এসেছেন। এখনও সব সব কিছু বুঝিয়ে দিতে পারেন নি তিনি ছেলেকে। ছেলেটা তার বড্ড আদরের। স্ত্রী মা-রা যাওয়ার পর আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। তার ধারণা সৎ মা কখনই মায়ের মতো হয়ে উঠতে পারে না। তার ছেলের অযত্ন হবে। আর ছেলেও বড় হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিয়ে করে লজ্জার সম্মুখীন হতে চান নি।
রাফি সামির খাঁন কে দেখে স্মিত হেঁসে বলে-
-“ কিছু বলবে?
-“ হুম।
রাফির পাশে বসলো। মাথায় হাত রেখে আলতো হেঁসে বলে-
-“ কারওয়ান বাজারের একটা নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে। সময় সুযোগ বুঝে এই সপ্তাহের মধ্যে একবার দেখে এসো বরং।
রাফি আচ্ছা জানালো। তৃষ্ণা এসেছিল রাফি কে ডাকতে খাবার খেতে। রুমের মধ্যে চাচা কে দেখে হকচকিয়ে যায়। মৃদু হেসে বলে-
-“ চাচা খেতে আসো।
তৃষ্ণা চলে যায়। সামির খাঁন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নিচে নামে।

আজকাল নিত্যদিনের মতো অভ্যাসে পরিনত হচ্ছে রোজ তিনবেলা করে রাতুলের সাথে কথা বলা। রাতের প্রায় মধ্যে রাত অব্দি দু’জনের কথোপকথন চলে। কথা বলতে বলতে কখন ও অধরা বেলকনির চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়ে। আজ ও ব্যাতিক্রম নয়। রাতুলের ব্যাক্তিত্ব মারাত্মক ভাবে আকৃষ্ট করছে অধরা কে। তাদের প্রণয় হয় নি সেভাবে কিন্তু বন্ধুত্ব হয়েছে মজবুত। মাঝেমধ্যে ঘুরাঘুরি,খাওয়াদাওয়া, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটা ভীষণ ভালো লাগছে অধরার। রাতুল কখনও হাঁটার মধ্যে অধররা হাত ভুলের নিজের হাতের মুঠোয় নেয় নি। বরংচ বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে তারা হাটতো। পাশাপাশি বসলেও তাদের মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব থাকতো।
এই ছোট্ট ছোট্ট বিষয় গুলো খুব চোখে লাগে অধরার।

চিত্রা ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে। তুষার চিত্রার উপস্থিতি টের পেয়ে কোল থেকে ল্যাপটপ টা পাশে রেখে বলে-
-“ এদিকে আসো।
চিত্রা বাধ্য মেয়ের মতো তুষারের কাছে যায়। তুষারের পাশে বসতে ইশারা করে। চিত্রা বসতেই তুষার গম্ভীর কন্ঠে বলে-
-“ তোমার কাজিন রিয়াদ ওভাবে তাকিয়ে থাকে কেনো তোমার দিকে?
চিত্রা আকস্মিক এমন কথায় মাথা তুলে তাকায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে-
-“ কি বলছেন এসব,কিভাবে তাকাবে আমার দিকে।
-“ কেমন একটা নজরে তাকায়। ভালো লাগে না ঐ নজর। আমার বউয়ের দিকে ওভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে কেনো?
-“ আর বইলেন না। এই ছেলের সাথে একটা সময় রিলেশন করছিলাম।
তুষার সরু চোখে তাকায়। কি নির্দ্বিধায় তাকে বলছে মেয়েটা। বিস্ময় হয়ে বলে-
-“ ঐ ছেলে তোমার এক্স?
-“ হ,বাদ দিন তো এখন ওর কথা।
-“ এটা মোটেও বাদ দেওয়ার কথা না। একটা মেয়ের পেছন কেনো এতো ছেলের নজর থাকবে হোয়াই? এক আরহাম এরপর তোমার এই কাজিন। মানে কি একটা ব্যাপার। আমার বউয়ের দিকেই এতো ছেলের নজর পড়তে হলো!
-“ আচ্ছা ভালো কথা মনে করিয়েছেন তো। আরহাম লোকটার কি খবর? কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায় না ইদানিং।
তুষার হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ আপাতত দেশে নাই। বাহিরের হাওয়া খাচ্ছে।
-“ মানে?
-“ মানে টা না হয় রহস্য থাক। তোমার কাজিন কে বলে দিয়ো আমি যদি আর একবার তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখছি তো..
-“ তো কি?
-“ কিছুনা জাস্ট মনের রাগ মেটাবো তার উপর ব্যাস।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-২৭+২৮

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৭( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

সদ্য শাওয়ার নিয়ে ভেজা উদাম বলিষ্ঠ শরীরে টাওয়াল পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় তুষার। ভেজা চুলগুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে। দৃষ্টি তার বেঘোরে ঘুমানো চিত্রার দিকে। চাদর জড়িয়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। বিছানার পাশেই পড়ে আছে কাল রাতে পড়নে থাকা বস্ত্র। ঘুমন্ত চিত্রা কে কি নিষ্পাপ শুভ্র পরী লাগছে। শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে দু’জনে। আজান কানে আসতেই তুষার বিছানা থেকে উঠে পড়েছিল। চিত্রার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলেছিল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিতে আজান দিয়েছে৷ নামাজ পড়তে হবে।

চিত্রা তার ব্যাথাযুক্ত শরীর নিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলেছিল-
-“ আজকের দিন টা বাদ যাক। পুরো শরীর ব্যাথা। নড়তে পারছি না। একটু ঘুমাতে দিন।

তুষার চিত্রার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায়। নিচ পড়ে থাকা শার্ট টা হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে বলে-
-“ খুব কি ব্যাথা করছে শরীর?

চিত্রা ঘুমঘুম চোখে মাথা ঝাকায়। তুষার চিত্রার ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি তো সতর্ক ছিলাম খুব বেশি ওয়াইল্ড হই নি। তবুও কেনো এমন টা হলো? উঠে বসো ফ্রেশ হও পেইন কিলার খেয়ে আবার না হয় ঘুমিয়ো। স্বস্তি পাবে কিছুটা।

চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। তুষারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ অসভ্য পুরুষ ওসবের জন্য আমার শরীর ব্যাথা না।

তুষার ক্যাবলরামের চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-“ তাহলে কিসের জন্য ব্যাথা?
চিত্রা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলে-

-“ একে তো সারা রাত জ্বালিয়েছেন। তার উপর যখন শেষ রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম তখন আপনি শক্ত করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমালেন। যার কারনে আমাকে এক পাশ হয়ে ঘুমাতে হয়েছে এখন শরীর ব্যাথা করছে। কত বার বললাম ছাড়তে শুনেছেন?
তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মোমে গড়া শরীর,এটুকুতেই এই অবস্থা, সামনে কি করে সামলাবে। অতঃপর তুষার একাই চলে যায় ওয়াশরুমে।

তুষার ওয়ারড্রব থেকে টাওজার আর শার্ট বের করে। শার্ট পড়ার সময় ঘাড়ে হাতে অসংখ্য খামচির দাগ গুলো দেখে মুচকি হাসে। চিত্রার দেওয়া প্রথম ভালোবাসার চিহ্ন।
তুষার ফজরের নামাজ টা রুমেই পড়ে নেয়। চিত্রা ঘুমাচ্ছে দেখে তুষার আর রুমের বাহিরে না গিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করতে থাকে। কাজের মধ্যে হঠাৎ করে দরজায় টোকা নাড়ে কেউ। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কে?

দরজার ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ ভাই আমি তৃষ্ণা। দাদি জিজ্ঞেস করছে নতুন বউ কি উঠেছে কি না। তুমি তাড়াতাড়ি চিত্রা কে দাদির কাছে পাঠাও।

-“ তুই যা আমি আর চিত্রা আসতেছি।
ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসলো না। তৃষ্ণা চলে গেছে। তুষার কোল থেকে ল্যাপটপ টা সরিয়ে চিত্রার কাছে এগিয়ে মাথায় হাত রেখে আলতো করে বলে-
-“ চিত্রা উঠো,এবার উঠে ফ্রেশ হও দাদি জান ডাকছে তোমায় পাখি।

চিত্রা নড়েচড়ে উঠতেই ব্যাথায় মৃদু শব্দ করে উঠে। তুষার অসহায় চোখে তাকায়।

-“ একটু কষ্ট করে গোসল টা সেরে নাও।
চিত্রা মাথা নেড়ে উঠে বসতেই নিজের অবস্থা বুঝে। চাদর দিয়ে শরীর টা পেঁচিয়ে বলে-

-“ আমার কাপড় ওয়াশরুমে দিয়ে আসুন। আর তারপর চোখে সামনে থেকে যান।

তুষার আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে শাড়ি ব্লাউজ ওয়াশরুমে রেখে এসে বলে-
-“ চোখের সামনে থেকে যাব কেনো?

-“ আমি ওয়াশরুমে যাব।

-“ তো যাও। আচ্ছা ব্যাথার জন্য কি উঠে দাঁড়াতে পারবে না? কোলে করে নিয়ে দিয়ে আসবো?

চিত্রা রাগী চোখে তাকালো তুষারের দিকে। তুষার ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলে-
-“ ওভাবে তাকাচ্ছো কেনো?

-“ আপনি বেলকনিতে যান। দেখছেন তো আমার কি অবস্থা। অস্বস্তি লাগছে।

তুষার চিত্রার দিকে ঝুকলো। কানের ললিতে অধর ছুঁয়ে বলল-

-“ রাতেই না সকল অস্বস্তি কাটিয়ে দিলাম। এখনও কেনো অস্বস্তি হচ্ছে আমার সামনে?

চিত্রা বিরবির করে উচ্চারণ করলো-অসভ্য।
তুষার উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। বেলকনিতে যেতে যেতে বলে-

-“ তাড়াতাড়ি গোসল সেরে বের হও।
তুষার যেতেই চিত্রা চাদর জড়িয়ে বসা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল করে শাড়ি পড়ে মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে বের হয়। সামনে তাকাতেই দেখে তুষার খাবারের প্লেট বিছানার উপর রাখছে। চিত্রা কে দেখে তুষার মুচকি হাসে।

-“ খাবার টা খেয়ে পেইন কিলার টা খেয়ে নাও আরাম পাবে। বাহিরে বের হওয়ার পর আহ উহ করলে লজ্জায় পড়বে।

চিত্রা টাওয়াল টা দিয়ে ভেজা চুল গুলে মুছে সেটা বেলকনিতে শুকাতে দিয়ে তুষারের পাশে দাঁড়ায়। প্লেটে রাখা আছে স্যান্ডউইচ। তার পাশেই মেডিসিন আর গ্লাস ভর্তি পানি।
-“ আপনি খেয়েছেন?

তুষার ঘাড় কাত করে তাকায়।
-“ না খাই নি। তুমি খেয়ে নাও চটপট।
চিত্রা বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সেটা খাটের সাথে ঠেকিয়ে তার উপর ভর দিয়ে বসে। একটা স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে বলে-
-“ বসুন এখানে।
তুষার বসে। চিত্রা স্যান্ডউইচ টা তুষারের মুখের সামনে ধরে বলে-
-“ হা করুন।
তুষার স্বাভাবিক চোখে তাকায়। স্যান্ডউইচ টা কেঁড়ে নিয়ে বলে-
-“ আমি হা করলে কি তোমার পেটে চলে যাবে খাবার টা? আগে তুমি খাও।

কথাটা বলে তুষার চিত্রার মুখের সামনে ধরে। চিত্রা এক কামড় বসায় স্যান্ডউইচে। স্যান্ডউইচ টা খেতে খেতে বলে-
-“ এবার আপনি খান।
তুষার চিত্রার কামড় দেওয়া স্যান্ডউইচ টা খায়। খাওয়া শেষে তুষার পেইন কিলার টা চিত্রার হাতে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।

চিত্রা মেডিসিন টা খেয়ে নেয়। তুষার এঁটো প্লেট টা টি-টেবিলের উপর রেখে বলে-
-“ শাড়িটা ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দাও।
চিত্রা শাড়িরর কুঁচি গুলো ঠিক করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে তুষারের পেছন পেছন বের হয় রুম থেকে। তাসলিমা খাঁনের রুমের সামনে এসে তুষার দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ দাদিজান আছেন?
তাসলিমা খাঁন হ্যাঁ বলে। তুষার চিত্রার হাত ধরে রুমের ভেতর ঢুকেন। তাসলিমা খাঁন ইশারায় চিত্রা কে তার পাশে বসতে বলে। চিত্রা গিয়ে তার পাশে বসে। তাসলিমা খাঁন তার পাশ থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে চিত্রার হাতে দেয়।

চিত্রা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ কি এটা দাদিজান?
তাসলিমা খাঁন মুচকি হেঁসে বলে-
-“ খুলে দেখো নাতবউ।
চিত্রা প্যাকেট টা খুলেন। একটা জায়নামাজ, তসবিহ পাঠ করার জন্য একটা তসবিহ আর আতর।

-“ হজ্জ থেকে ফেরার সময় সবার জন্য এনেছিলাম। সবাইকে সাথে সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এটা তুষারের বউয়ের জন্য এনেছিলাম। তুষারের বউ তো তুমি,তাই তোমার প্রাপ্য তোমায় দিলাম। আর একটা কোরআন শরিফ আছে। কোনো একসময় ওজু করে ওটা নিয়ে যেয়ো।

চিত্রা মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা জানায়। টুকটাক কথা বার্তা বলে তাসলিমা খাঁনের রুম থেকে বের হয় তুষার চিত্রা। রুম থেকে বের হয়ে তুষারের সাথে কথা বলার সময় আকস্মিক মাথার ঘোমটা টা পড়ে যায়। খুলে ছেড়ে রাখা ভেজা কোমড় অব্দি চুল গুলো উন্মুক্ত হয়৷ অধরা চশমা টা ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছিলো। সামনে তাকাতেই তুষার আর চিত্রা কে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ গিয়ে পড়ে চিত্রার ভেজা চুলের উপর। সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।এই ভেজা চুলের মানে অধরা খুব ভালো করেই জানে।

চিত্রা অধরা কে দেখে হাতে থাকা প্যাকেট টা তুষারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অধরার কাছে এগিয়ে যায়। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেঁসে বলে-
-“ চলো মামি ডাকছে।
চিত্রা ঘুরে তুষারের দিকে তাকায়। তুষার ইশারায় যেতে বলে। চিত্রা অধরার পেছন পেছন নিচে যায়।

ড্রয়িং রুমের সোফায় তানিয়া বেগম সহ পাড়ার চার পাঁচ জন মহিলা বসে আছেন। তারা এসেছে নতুন বউ দেখতে। অধরা ফিসফিস করে চিত্রা কে বলে মাথায় কাপড় দিতে। চিত্রার খেয়ালই ছিলো না মাথার কাপড় যে পড়ে গেছে।
আঁচল উঠিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলে অধরা চিত্রা কে নিয়ে তানিয়া বেগমের পাশে বসায়। চিত্রা সবাই কে সালাম দেয়। তানিয়া বেগম চিত্রা কে দেখে মুচকি হাসেন। পড়ার মহিলা গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ এই যে আমার তুষারের বউ।
মহিলা গুলো চিত্রার মুখশ্রীর দিকে তাকায়৷ তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে –

-“ মাশা-আল্লাহ দেখতে শুনতে ভালোই। শুনছি আপা মাইয়ার বাপ চেয়ারম্যান?

তানিয়া বেগম হ্যাঁ বলে। টুকটাক অনেক কথাই চলতে লাগলো,চিত্রা কে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লগো। এতে চিত্রার ভীষণ আনইজি লাগা শুরু করলো। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে চিত্রার মনের ভাষা হয়তো বুঝলো। তাই তানিয়া বেগম কে বললো-

-“ মামি চিত্রা কে নিয়ে যাই? একটু পর তো পার্লারের লোক আসবে সাজাতে।
তানিয়া বেগম অনুমতি দেয়। অধরা চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ চলো চিত্রা উপরে।

চিত্রা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বসা থেকে উঠে অধরার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে-
-“ উফ অধরা আপু তুমি আমাকে ওখান থেকে নিয়ে এসে কি যে উপকার করলে। ভীষণ আনইজি লাগছিলো।

-“ প্রথম প্রথম তো তাই এমন লাগছে। কয়েকদিন গেলে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

দুপুরের দিকে,,,

ডার্ক ব্লু কালারের শাড়িতে স্টেজে বসে আছে চিত্রা। পাশেই ব্লু কালারে স্যুট পড়ে বসে আছে তুষার। চিত্রা দের বাসা থেকে সাহেল আহমেদ, রিয়াদ,সিমি,নুপুর আর চিত্রার মামা এসেছে।
সাহেল আহমেদ কে দেখে চিত্রা আপ্লূত হয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। প্রায় কত গুলো দিন কতগুলো মাস কতগুলো বছর পর মেয়ে তার কাল আসার সময় আর আজ জড়িয়ে ধরেছে। সাহেল আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে আদর করে। রিয়াদ জলন্ত উনুনের চোখে তুষার আর চিত্রা কে দেখে চলছে। কেমন যেনো খারাপ লাগছে। সিমি রিয়াদের জলন্ত চোখে আরো একটু ঘি ঢালার জন্য তার ফোন টা রিয়াদের হাতে দিয়ে বলে-

-“ চিত্রা আর ভাইয়ার সাথে আমার পিক তুলে দাও তো।
রিয়াদ অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। সিমি বেক্কলের মতো হেসে রিয়াদ কে টেনে নিয়ে যায়। চিত্রার পাশে দাঁড়িয়ে পোস নেয় সাথে চিত্রা কেও নিতে বলে। চিত্রা তুষারের বা হাত জড়িয়ে ধরে। তুষার বিষয় টাকে আরো একটু রোমাঞ্চকর করার জন্য চিত্রার কোমরে হাত রাখে পেছন থেকে। রিয়াদ থমকে গেলো। চিত্রার দিকে তাকালো। চিত্রার মুখে লেপ্টে আছে বিশ্বজয়ী হাসি। পরপর তিনটে ছবি তুলে সিমির ফোন নিয়েই চলে যায়। সিমি হেঁসে ফেলে। চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ জামাই আমার রেগে গেলো গো আপু।
চিত্রা হাসতে হাসতে গিয়ে বলে-
-“ যা খোকার রাগ ভাঙা গিয়ে।

সিমি চলে যায়।

তৃষ্ণা পিংক কালারের গ্রাউন পড়েছে। পিঠ অব্দি থাকা ছোট চুল গুলো বা পাশে সিঁথি করে খুলে রেখেছে। রাফি ব্লাক স্যুট পড়েছে। তৃষ্ণা ভাই ভাবির সাথে ছবি তুলতে ব্যাস্ত। রাফি আড়চোখে বারবার তৃষ্ণা কে দেখলো। একদম বার্বি ডলের মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে টুক করে ধরে নিয়ে সামনে বসিয়ে রাখতে। তৃষ্ণা আড়চোখে রাফির দিকে তাকালো। আজ সারাটাদিন লোকটার দেখা পায় নি আর এখন যখন পেলো তখন বাপ চাচার সাথে সাথে ঘুরছে।
তপ্ত শ্বাস ফেললো তৃষ্ণা। ওয়েটার কে ডেকে একটা অরেঞ্জ জুশ নেয়। জুশ টা নিয়ে স্টেজ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে একাকী দাঁড়ায়। হুট করে কোমরে কারে হাতের স্পর্শ পেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত চেনা মুখ দেখে চাহনি আগের তুলনায় নিষ্প্রভ হলো। মানুষটাকে জ্বালানোর জন্য বলল-
-“ আশেপাশে মেয়েগুলো কে দেখা শেষ?
রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তোমাকে দেখেই কূল পাই না ওদের আর দেখবো কখন?
-“ ঐ যে দেখুন বেগুনি রঙের শাড়ি পড়া মেয়ে টা কি জোশ দেখতে।
রাফি তাকালো না। দৃষ্টি তৃষ্ণার দিকে রেখেই বলে-
-“ হ্যাঁ অনেক জুশ্শি দেখতে। ইচ্ছে করে টুপ করে খেয়ে ফেলি।
চকিতে তৃষ্ণা ঘাড় ঘুরায়। শান্ত চোখে তাকিয়ে চলে যায়।
রাফি হাই তুলতে তুলতে তুষার দের কাছে যায় পিক তুলতে।

অধরা গোল্ডেন কালারের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। চুল গুলো মেলে দিয়েছে। চোখে চশমা,চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। ব্যাস এতেই অধরা কে অসাধারণ লাগছে। রাতুল অধরার পাশেই দাঁড়ানো। অধরা একবার রাতুলের দিকে তাকায়। হুট করে বলে বসে-
-“ আজ কি যাবেন জাবির ময়দানে থাকা ছোট্ট সেই টঙের দোকান টায়? ধোঁয়া উঠানো গরম চায়ে নতুন আমিটাকে খুঁজে পেতে। যত্নসহকারে আঁকড়ে ধরবো নতুন আমি টার খোঁজ পেলে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৮( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

জাহাঙ্গীরনগর নামটি শুনলেই মনের মধ্যে এক প্রকার অদ্ভূত আলোড়নের সৃষ্টি হয়। কবিতায় পড়েছি ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঠিক এরকমই ওই দেখা যায় জাহাঙ্গীরনগর ওই আমাদের গাঁ। দেখে মনে হবে ইট পাথরের কর্কশ নগরীর মধ্যে এক টুকরো গ্রামীণ পরিবেশ। গ্রামীণ পরিবেশের সব উপাদান নিয়ে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগর। বাংলাদেশের সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা গুলোর মধ্যে একটি। ঘন গাছপালা আর পাখপাখালির মিশ্রণে একাকার এখানকার পরিবেশ। আধুনিক সভ্যতার আদলে তৈরি হয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রযুক্তির একই ধাঁচে নির্মিত। শহরের ভারি আবহাওয়ায় মলিন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মসৃণ দেয়াল। ক্যাম্পাসে নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার। আধুনিকতার কৃত্রিম সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছে। শিক্ষার পরিবেশ প্রাকৃতিক হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। অথচ আধুনিক কৃত্রিম শিক্ষা আর কৃত্রিম ক্যাম্পাস জীবন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাচ্ছে জটিল ও কঠিন পৃথিবীতে।

আজকের এই জাহাঙ্গীরনগর অতীতের চেয়ে বেশ আলাদা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন তার সমস্ত ঐশ্বর্য নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে। বিচিত্র ধরনের গাছপালা থেকে শুরু করে পাখপাখালি, সরীসৃপ, বাহারি সব উদ্ভিদের অবস্থান এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
চারিদিকে হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস। শরীরে কোনো শীতের জন্য পোষাক নেই। ব্লু পাঞ্জাবি পরিহিত এক পুরুষের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটছে গোল্ডেন কালারের সেলোয়ার-কামিজ পড়া এক রমণী। হাঁটার মাঝেমাঝে একে ওপরের হাতে ছোঁয়া লাগছে। দৃষ্টি তাদের সামনের দিকে থাকা রাস্তা সহ রাস্তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েক জোড়া যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকার দিকে। কেউ কেউ হাত ধরে হাঁটছে তো কেউ টঙের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । আর কেউ প্রিয় পুরুষের কাঁধে মাথা রেখে বসে চন্দ্র বিলাস করছে।
ইট-কাঠের এই রঙিন দুনিয়া যেন মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রকৃতি বরাবরই মানুষকে মানবিকতার শিক্ষা দেয়। মানুষ প্রকৃতির কাছে না গেলে বুঝতে পারে না প্রকৃত জীবনের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ আলাদা। আর এর পেছনে রয়েছে এর রূপ বৈচিত্র্যর সমাহার। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে রয়েছে অগাধ প্রাকৃতিক সম্পদ। যে সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়কে করেছে বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে রয়েছে অগাধ প্রজাতির গাছপালা। যে গাছপালাগুলো ক্যাম্পাস জুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করছে।

হুট করে হাঁটার গতি থমকে গেলো। টঙের দোকান থেকে দু কাপ চা নিয়ে দোকান দার কে বিল পে করে দিয়ে একটা চায়ের কাপ অধরার হাতে ধরিয়ে আবার হাঁটা ধরলো।

আজ হেঁটে হেঁটে পুরো জাবির ক্যাম্পাস ঘুরবে তারা। মুহুর্ত টা এনজয় করবে। কোনো এক জায়গা থেকে সেই নতুনত্ব কে খুঁজে বাড়ি ফিরবে বলে মনস্থির করেছে।

গরম চায়ে ফু দিয়ে ঠোঁট ছোয়ালো। পিনপিনে নিরবতাকে বিদায় দিয়ে রাতুল বলে উঠলো-
-“ আমাদের বাসায় যেতে পারবেন আজ?

অধরা মুখের সামনে থেকে চায়ের কাপ সরালো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে-
-“ হঠাৎ বাসায় কেনো?
রাতুলের সোজা কথা।
-“ আম্মার সাথে দেখা করাতে।
অধরা কিয়ৎ ক্ষন চুপ থাকে। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে বলে-
-“ আচ্ছা যাব।
রাতুলের মুখে হাসি ফুটে উঠে। অধরা কে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি ছোট্ট ব্রিজে আসে। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা আদর করে গোল্ডেন ব্রীজ বলে ডাকে, এরকম ব্রিজের সংখ্যা ও অগনিত, সুযোগ পেলেই যার উপরে অনেকে বসে পড়ে, আড্ডা জমায়। ব্রিজের পাশে পদ্ম ফোটা লেক, এখানে বসলে দুর থেকে প্রীতলতা হলের স্থাপত্যশৈলীর মাঝে নিজেকে কিছুক্ষন হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে যে কারো। চোখ জুড়িয়ে আসবে, হাতছানি দিয়ে ডাকবে হলের চূড়াটি। যা ভাষায় প্রকাশের সীমাও ছাড়িয়ে যায়।

ব্রিজের উপর রাতুল আর অধরা বসে পড়ে। দৃষ্টি তাদের পদ্ম ফোটা লেকের দিকে। এখানটায় আসলেই অধরা ঐ পদ্ম ফুল গুলোকে ছুঁইয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কথাটা মনে মনে ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেলে। হঠাৎ পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখে রোমিলা বেগমের ফোন। রাতুল ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় ভেসে আসলো-

-“ কি রে বাসায় আসবি কখন? রাত জেগে তোর জন্য আর কতক্ষণ বসে থাকা লাগবে আমার?
রাতুল স্মিত হাসলো। অধররা দিকে একপলক তাকিয়ে বলল-
-“ আসছি আর একটু সময় জেগে থাকো।
-“ আচ্ছা আয় তাড়াতাড়ি।
রাতুল ফোন টা কে’টে পকেটে ভরে বসা থেকে উঠে অধরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
-“ উঠুন অধরা বাসায় যেতে হবে,তারপর আবার আপনাকে বাসায় ও দিয়ে আসতে হবে।

অধরা রাতুলের হাত ধরে বসা থেকে উঠে। রাতুল একটা রিকশা ডেকে দু’জনে সেই রিকশায় চড়ে বসে।

চিত্রা দের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা লেগে যায়। চিত্রারা বাসায় যেতে না যেতেই চিত্রার মা চয়নিকা বেগম তোরজোড় শুরু করে দেয়। প্রথমবারের মতো মেয়ের জামাই এসেছে বলে কথা। খাতির মাতিরের কমতি হলে কি চলে! মেয়ের জামাইকে আনার পরে চা নাস্তা দিয়ে আবার রান্না ঘরে রান্না বান্না শুরু করে দিছে। এসব দেখে আলগোছে চিত্রাকে ঘরে ঢেকে বলেছিলো এতোসব আয়োজন করতে না। চিত্রা তখন মুচকি হেঁসে বলে,,

-“ আমার মা শুনলে তো এসব করতে মানা করবো। এসবের জন্য মানা করতে গিয়ে উল্টো আমিই বকা খেয়ে আসবো। তার চেয়ে যা হচ্ছে হতে দিন।

চিত্রার রুমে তুষার বিছানায় বসে আছে। চিত্রা ওয়াশরুমে গেছে ফ্রেশ হতে। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তুষারের দিকে চেয়ে বলে-
-“ এবার আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।

তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রার হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। চিত্রা ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
মিনিট বিশেক পর তুষার ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ভেজা টাওয়াল টা চিত্রার পেটের উপর ছুঁড়ে দেয়। ঘুমন্ত চিত্রা ছিটকে উঠে।

চোখ লেগে আসছিলো। আকস্মিক নিজের উপর কিছু পড়ার শব্দে ছিটকে চোখ মেলে তাকায়। তুষার স্মিত হাসছে। চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। থমথমে গলায় বলল-

-” বেলকনিতে মেলে দিয়ে আসেন।
তুষার শুনলো না। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে চিত্রার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। আর তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসলো। চিত্রা উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কে?
নুপুর দরজায় আরেক বার কড়া নেড়ে বলে-
-“ আপু আমি। ফুপি ডাকছে খেতে।
-“ তুই যা আসছি।
চিত্রা শোয়া থেকে উঠে বসে। তুষারের চোখ তখন বন্ধ। তুষারের বুকে হাত দিয়ে বলে-
-“ এই উঠুন মা ডাকছে খাওয়ার জন্য।
তুষার চোখ মেলে তাকায়।
-“ তুমি গিয়ে খেয়ো আসো। আমার এখনও ক্ষিদে পায় নি।
-“ পাগল নাকি। আপনাকে রেখে আমি খেয়ে আসবো! হালকা করে হলেও কিছু খান। মা কত কষ্ট করে আপনার জন্য সেই কখন থেকে রান্না করছে।

তুষার উঠে বসলো। বালিশের পাশ থেকে ফোন টা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রা কে ইশারায় ঠিক হতে বললো। চিত্রা ওড়না টা মাথায় দিয়ে দরজার সিটকানি খুলল।

ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই তুষারের চোখ আটকে যায় খাবার দেখে, পুরো ডাইনিং টেবিল নানান পদের খাবারে সজ্জিত।

টেবিলে পোলাও, গরুর মাংস, মরুগির রোস্ট, পায়েস, দই, মিষ্টি,তিন চার রকমের ভাজি,ডিম ভুনা,সাদা ভাত, মাছ। মেয়ের জামাইকে টেনে বসিয়ে দেয় চেয়ারে সাহেল আহমেদ। সাথে নিজেও বসে পড়ে। রিয়াদ আড়চোখে দেখে চলছে। চয়নিকা বেগম সবাই কে খাবার পরিবেশন করছে, মেয়ের জামাইয়ের পাতে পোলাও দিয়ে চয়নিকা বেগম বলে,,

-“ বাবা কিছু মনে করো না এই টুকু টাইমে এইটুকুই আয়োজন করতে পেরেছি।

শাশুড়ীর কথা শুনে তুষার বিষম খায় এতো আয়োজন কে বলছে কি না এই টুকু আয়োজন!

তুষার কে বিষম খেতে দেখে চিত্রা তারাতাড়ি করে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। তুষার তারাতাড়ি পানি টা খেয়ে শেষ করে। চিত্রার মা একটার পর একটা খাবার শুধু তুষারের প্লেটে উঠিয়ে দিচ্ছে তুষারের মানা শুনছেন না। চয়নিকা বেগম ভেবে বসে আছেন তার মেয়ের জামাই লজ্জার কারনে কিছু নিতে চাচ্ছে না। এদিকে বেচারা তুষারের পেটে জায়গা নেই, সাহেল আহমেদ খানিক আগেই খাবার খাওয়া শেষ করে রুমে গেছে রেস্ট নেবার জন্য, তুষার অসহায় মুখ করে চিত্রার দিকে তাকায়,চিত্রা বিষয়ে টা বুঝতে পেরে তার মা’কে থামতে বলে,,

-“মা আর দিয়ো না তোমার মেয়ের জামাইয়ের পেট একটাই,এতো খাবার কিভাবে খাবে।

-“ সামান্যই তো দিলাম এখনো তো দই পায়েস মিষ্টি বাকি আছে।

-“তুমি রেখে দাও ওগুলো ফ্রিজে শুয়ার আগে আমি তাকে খেতে দিবো নি এখন আর জোর করো না।

চয়নিকা বেগম মেয়ের কথা শুনে আর কিছু বলে না, চিত্রা তুষারের উদ্দেশ্যে বলে,

-“আপনি বরং উঠে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিন।

চিত্রার কথা মতো তুষার উঠে হাত ধুয়ে ঘরে চলে গেলো। চিত্রা, চয়নিকা বেগম,সিমি, খাবার খাওয়া শেষ করে প্লেট গুলো ধুয়ে যে যার রুমে যায়।

চিত্রা রুমে গিয়ে দেখে রাসেল শুয়ে আছে, তাই এগিয়ে তুষারের মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়লো। তুষার চিত্রার উপস্থিতি টের পেয়ে এক হাত দিয়ে চিত্রার কোমড় পেঁচিয়ে পেটের কাছে মুখ গুজিয়ে দিলো।

-“ আপনার কি খুব খারাপ লাগছে। ঔষধ আনতে বলবো ডাক্তারের দোকান থেকে।

-“ না তার আর দরকার নেই আমার মেডিসিন আমি পেয়ে গেছি। এই মেডিসিনের সেবায় ঠিক হয়ে যাবো।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কথায় কথায় ছোঁয়ার বাহানা খুঁজেন কেনো এতো।
তুষার স্মিত হাসলো। শাড়ির ভেতরে থাকা উন্মুক্ত পেটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে-
-“ তুমি আস্ত টাই তো আমার। সেখানে বাহানা কেনো খুঁজবো?
চিত্রা কেঁপে উঠলো তুষারের ওষ্ঠর ছোঁয়ায়। তুষার বিরক্ত হয়ে বলে-
-“ এখনও এতো কাঁপা-কাঁপি কিসের?
চিত্রা তুষারের মাথা কোল থেকে নামিয়ে বসা থেকে উঠে। কোমড়ে হাত গুঁজে বলে-
-“ শরীর খারাপ লাগছে তো ঘুমানোর চেষ্টা করুন না। তা না করে এখানে ওখানে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছেন।
তুষার মাথা উঁচু করলো। ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আহ উঠলে কেনো? এখান টায় আসো। চুপচাপ শুয়ে থাকো।
চিত্রা বেলকনিতে যেতে যেতে বলে-
-“ মোটেও না। এই সাঝ সন্ধ্যায় আমি সন্ধ্যা বিলাস করবো। আপনি শুয়ে থাকুন।

তুষার শোয়া থেকে উঠে বসলো। বেলকনিতে গিয়ে চিত্রা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে-
-“ আজ না হয় চন্দ্র বিলাস করবো মিসেস খাঁন। সন্ধ্যা বিলাস না অন্য কোনো একদিন হবে।

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে ছেলের সাথে পরিচিত মুখ দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। দরজার পাশ থেকে তাড়াতাড়ি করে সরে দাঁড়িয়ে অধরার গালে হাত দিয়ে বলে-
-“ আরে অধরা যে।
অধরা স্মিত হাসলো। রোমিলা বেগম অধরার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে সোফায় বসায়। রাতুল দরজা আটকিয়ে দেয়। রোমিলা বেগম রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ ওঁকে নিয়ে আসছিস বললি না কেনো?
-“ সারপ্রাইজ।
-“ আমি তো সেভাবে রান্না করি নি। আচ্ছা বস চটপট কিছু রান্না করে আসছি।

অধরা হাত টেনে ধরলো। আস্বস্ত করে বলল-
-“ আন্টি আমি খেয়ে এসেছি। এতো তোড়জোড় করার দরকার নেই।
-“ তাই বললে হয় নাকি?
-“ কেনো হবে না? আপনি বসুন। কিচ্ছু করতে হবে না।
রোমিলা বেগম বসে রইলো। রাতুল রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। রোমিলা বেগম ছেলের ঘরের দিকে গেলো। ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ হঠাৎ রাত করে অধরা কে নিয়ে আসলি যে?
-“ কেনো খুশি হও নি?
-“ হয়েছি। কিন্তু কখনও তো দেখি নি ওর সাথে মিশতে তোকে।
-“ এখন থেকে মেশার চেষ্টা করবো।
-“ তোদের মধ্যে কিছু চলছে?

রোমিলা বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে কথাটা বলল। রাতুল স্মিত হাসলো। রোমিলা রহমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ বুঝলে কি করে?
-“ কে হই আমি তোর?
-“ মা।
-“ তো ছেলের ভাবসাব আমি বুঝবো না?
-“ একা রেখে চলে আসছো। কিছু ভেবে বসে যদি। চলো।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে তৃষ্ণা। অপেক্ষা করছে অধরার জন্য। অধরা জানিয়েছে সে ফিরছে,তৃষ্ণা যেনো ড্রয়িং রুমে থাকে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। রাফি পানি খাওয়ার জন্য নিচে নেমেছিল। তৃষ্ণা কে একাকী বসে থাকতে দেখে রাফি ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ একা একা এখানে বসে কি করছো?
-“ অপেক্ষা।
-“ কার?
-“ অবশ্যই আপনার জন্য না।
-“ তা তো জানি। তা কার জন্য অপেক্ষা করছো? তুর্যর জন্য?
তৃষ্ণা রাগান্বিত হয়ে তাকালো। আর তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। তৃষ্ণা গিয়ে দরজা খুললো। অধরা ভেতরে ঢুকলো। রাফি অধরা কে দেখে বলল-
-” কোথায় গিয়েছিলি তুই?
অধরা নুইয়ে গেলো। মৃদু স্বরে বলল-
-“ রাতুল ভাইয়ার সাথে।
-“ কেনো?

তৃষ্ণা বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলল-
-“ আহ অধরা আপু এতো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কোনো দরকার আছে? চলো তো ঘরে।

অধরা কে নিয়ে তৃষ্ণা চলে যায়।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-২৫+২৬

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

চিত্রা গাঢ় হলুদ কালারের শাড়ি পড়ে স্টেজে বসে আছে। শরীরে তাজা ফুলের গহনা। রিয়াদ হা করে তাকিয়ে আছে চিত্রার পানে। চিত্রার ইচ্ছে করলো রিয়াদের চোখ দুটো গেলে দিতে। তৃষ্ণা একের পর এক সেলফি তুলছে চিত্রার সাথে। সেলফি তুলা শেষ হলে চিত্রার কয়েক টা সিঙ্গেল পিক তুলে।
ও বাড়ি থেকে তৃষ্ণা রাফি রাতুল আর তুর্য এসেছে। অধরা আসে নি,শরীর খারাপ বলে রুমে থেকে গেছে।

তৃষ্ণা ছবি তুলার শেষে খানিকটা দূরে গিয়ে কয়েক টা ছবি তুষারের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠায়।

তুর্য তৃষ্ণা কে একা দেখে তৃষ্ণার কাছে এগিয়ে আসে। দূর থেকে সেটা লক্ষ করে রাফি। মুহুর্তে চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সাহেল আহমেদ আর চয়নিকা বেগম এসে চিত্রার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়। হলুদ লাগানোর অনুষ্ঠান শেষ হলে হালকা পাতলা নাচ গান হয়। সিমি তৃষ্ণা নাচে। তুর্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তৃষ্ণার নাচ দেখছিল। মুহূর্তে রাফির মেজাজ চটে গেলো নাচের মাঝখান থেকে তৃষ্ণার হাত টেনে সাইডে আনে। কাটকাট গলায় বলে-
-“ চুপচাপ আমার পাশে বসে থাকবে। আমার থেকে দূরে যাবে তো এই লোকসমাগমেই থাপ্পড় দিয়ে বসবো বলে রাখলাম।
তৃষ্ণা রাফির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বলে-
-“ আশ্চর্য আমার ভাই ফ্রেন্ডের বিয়ে আর আমি এনজয় করবো না? আপনার কথা আমার শুনতে হবে?
-“ শুনবে কি শুনবে না সেটা তোমার ব্যাপার। শুনলে ভালো আর না শুনলে আরো ভালো।
-“ অসহ্যকর একটা।

তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে কথাটা বলে চুপচাপ বসে থাকে। রাফি শুনে ফেলে। গম্ভীর মুখখানায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।

চিত্রা চোখ জুড়ে ঘুমেরা এসে হানা দিচ্ছে। এই চাকচিক্যময় পরিবেশ অসহ্যকর হয়ে উঠছে। এমন থম মেরে বসে থাকলে কার না ঘুম পাবে? বসে থাকতে থাকতে মাজা ব্যাথা হয়ে আসছে। ইশারায় চয়নিকা বেগম কে ডাকলেন। চয়নিকা বেগম মেয়ের ইশারা পেয়ে কাছে এগিয়ে গেলেন। মেয়ের চোখ মুখে বিরক্তি ভাব দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে?
-“ প্রচুর ঘুম পাচ্ছে মা। আমি রুমে যাব।
চয়নিকা বেগম আশেপাশে তাকালো। অনুষ্ঠান তো শেষের দিকেই তাই আর কিছু বললো না।
-“ আচ্ছা রুমে গিয়ে ঘুমাও।
চিত্রা সম্মতি পেয়ে ঢুলো ঢুলো শরীরে ছাঁদ থেকে নামে। সিঁড়ির কাছে এসে আকস্মিক হাতে টান পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে কারো সুঠাম দেহের সাথে গিয়ে পিঠ ঠেকে যায়। মুহূর্তে ঘুম উবে যায়। পেছন ফিরে সুঠাম দেহের মানুষ টাকে দেখতেই রাগে চোখ মুখ জ্বলতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ঐ মানুষটার দুরত্ব তৈরি করে।
আকস্মিক ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় রিয়াদ। চিত্রা হাতের আঙুল উঁচু করে চিৎকার করে বলে উঠলো-
-“ ব্লাডি রাসকেল,অসভ্য সমস্যা কি আপনার? নেক্সট টাইম এমন অশ্লীল কিছু দেখলে ঠ্যাং ভে’ঙে রাস্তায় ফেলে আসবো।

চিত্রা আর কিছু বললো না। ওর ঘুম দরকার। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিজের রুমে ঢুকে। মুহুর্তে রুমের লাইট গুলো নিভে যায়। পুরো বাসা ফাঁকা, সবাই ছাঁদে রয়েছে। হঠাৎ লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ভরকে যায় চিত্রা। ফোন টাও হাতে নেই,বাহিরে কৃত্রিম আলোয় হালকা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। শোবার খাট টা হালকা স্পষ্ট হলো। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুতেই হঠাৎ আকস্মিক দরজা লাগানোর শব্দে বুকটা ধক করে উঠে। তড়িৎ গতিতে পেছন ফিরে। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অস্পষ্ট এক পুরুষ অবয়ব দেখা গেলো।
স্বস্তির শ্বাস ফেললো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। পুরুষ টি এগিয়ে এলো। চিত্রা মুখোমুখি বসলো। চাঁদের আলোর রশ্মি চিত্রার মুখশ্রী তে এসে পড়ছে। পুরুষ টি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। চিত্রা চোখ বন্ধ রেখেই বলল-
-“ এতো অধৈর্য্য আপনি আগে জানা ছিলো না। কালকের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না? এই রাতে চলে আসলেন দেখতে।
অন্ধকার আর চোখ বন্ধ থাকায় চিত্রা বুঝতেই পারলো না তার প্রেমিক পুরুষের কতটা গাঢ় দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

চিত্রা তুষারের নিরবতা দেখে ফট করে চোখ মেলে তাকায়। দ্রুত শাড়ি পাল্টাতে হবে,শরীর ভীষণ জ্বালা করছে। শোয়া থেকে উঠে বসলো। তুষার আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে। চিত্রা এক এক করে ফুলের গহনা গুলো খুলে ফেললো। মাথার চুলে থাকা ফুলের টায়রা টা খুলতে গিয়ে ব্যার্থ হলো। তুষারের দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলল-
-“ এভাবে না তাকিয়ে একটু সাহায্য করুন টায়রা টা খুলতে।
চিত্রা তুষারের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে বসলো। তুষার যত্ন সহকারে টায়রা টা খুলে দিলো। সেই সাথে মারাত্মক একটা কাজ করে বসলো। চিত্রার উন্মুক্ত ফর্সা পিঠে নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো। মুহুর্তে চিত্রার শরীর কেঁপে উঠলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। নড়ার শক্তি পাচ্ছে না। তুষার চিত্রার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে,ডান হাত টা চিত্রার পেটে শাড়ি ভেদ করে চলে যায়। চিত্রার পিঠ ঠেকে আছে তুষারের বুকে। চিত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ ক… কি করছেন…
তুষার চিত্রার গলায় চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে-
-“ এখনও কিছু করি নি।
-“ আ…..আমি ফ্রেশ হবো। ভীষণ জ্বালা করছে শরীর।
-“ কাল ও কি এটা বলবেন?
কথাটার মানে তৎক্ষনাৎ বুঝলো না চিত্রা। একটু সময় নিয়ে যখন বুঝলো তখন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। তুষারের থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলো। তুষার বিরক্ত হয়ে শুধালো-
-“ আহ এমন ছোটাছুটি করছেন কেনো?
-“ একটু ফোনের টর্চ টা জ্বালান না আমি ফ্রেশ হবো।
তুষার কিছুটা সময় নিয়ে চিত্রা কে ছেড়ে দিলো। পকেট থেকে ফোন টা বের করে টর্চ টা জ্বালালো। চিত্রা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পেটের দিকে থাকা সেফটিপিন গুলো খুলে নিলো। কিন্তু পেছনে থাকা আঁচল আঁটকে রাখা সেফটিপিন টা খুলতে পারলো না। ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তুষার কে মৃদু স্বরে ডেকে বলল-
-“ একটু সেফটিপিন টা খুলে দিন না।
তুষার বিনাবাক্যে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রার দিকে এগিয়ে এসে সেফটিপিন টা খুলে দিলো। চিত্রা আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে শুভ রঙের একটা কুর্তি নিয়ে তুষারের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
তুষার বিছানায় আয়েশ করে বসে। মিনিট দশেক পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনে তুষার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকায়। সাদা পোষাক,চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে কোমড় অব্দি ছাড়া,মুখে পানি লেগে আছে। ফোনের টর্চ আলোয় এক অন্য রকম স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে গেলো। চিত্রা বা হাতে থাকা শাড়ি ব্লাউজ পেটিকোট সোফার উপর ছুঁড়ে ফেললো। ওয়ারড্রবের উপরে থাকা টাওয়াল টা নিয়ে মুখ মুছে বিছানায় এসে বসলো। তুষার তখনও ঘোরলাগানো দৃষ্টি নিয়ে চিত্রার দিকে চেয়ে আছে। চিত্রা বিছানায় শুতে শুতে বলে-
-“ দেখা শেষ হলে এবার আসুন। একটু পর সবাই এক এক করে চলে আসবে।

তুষার নড়েচড়ে উঠলো। চিত্রার দিকে ঝুঁকে কপালে গাঢ় চুম্বন একে দেয়। কানের ললিতে হালকা ওষ্ঠ ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ কালকের রাত টা খুব সুন্দর একটা রাত হবে আপনার আর আমার জন্য। আপনি প্রোপার তৈরি হয়ে থাকবেন। আমি মানুষ টা ভীষণ অধৈর্য্যশীল। মানিয়ে নিবেন এই অধৈর্য্যশীল পুরুষ টাকে।

চিত্রা চোখ বন্ধ ফেললো। তাকানোর সাহস হচ্ছে না। চোখ মেলে তাকালেই মনে হচ্ছে লজ্জায় কুঁকড়ে ম-রেই যাবে। তুষার কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো।
দরজা খোলার শব্দ শুনতেই চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। ততক্ষণে তুষার আড়ালে চলে গেছে। তুষার চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরই ঘরের বাতি জ্বলে উঠে। চিত্রা হেঁসে উঠলো। বুঝতে আর বাকি নেই তার এমপি মশাইয়ের কাজ এটা। চক্ষুলজ্জা থেকে বাঁচার দরুন এই পথ অবলম্বন তার। চিত্রা বিছানা থেকে উঠে সুইচ চেপে বাতি নিভিয়ে ঘুম দেয়।

তুষার নিচে নেমে গাড়িতে উঠতেই রাতুল তুষারের পিঠে কিল বসিয়ে বলে-
-“ শালা এতো অধৈর্য্যে কেনো তুই। দেখার জন্য সোজা চলে আসলি।
রাফি আর তৃষ্ণা গাড়িতে উঠতেই রাতুলের বলা কথা শুনে ফেলে। সহসা তৃষ্ণা হেঁসে ফেলে। রাফির মুখ গম্ভীর। পেছনে তুর্য কে আসতে দেখে আর গাড়ির ভেতর উঠলো না। তড়িৎ গতিতে গাড়ির অন্য পাশে এসে তৃষ্ণার কব্জি ধরে বলে-
-“ ব্রো তোমরা তিনজন এই গাড়িতে চলে যাও। আমি আর তৃষ্ণা অন্য গাড়িতে আসছি।
তুষার প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। তুর্য গাড়ির কাছে আসতেই রাফির কথা শুনে বলে-
-“ আমিও তোমাদের সাথে যাব।
রাফি মুখ খুলে কিছু বলবে তার আগেই তুষার বলে উঠে –
-“ তুমি তাহলে রাফির গাড়িতে যাও তুর্য।
কথাটা বলে তুষার গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফি বেশ বুঝলো তুষার ইচ্ছে করেই এটা করলো। তুষার জানে সে তুর্য কে খুব একটা পছন্দ করে না।
রাগান্বিত চেহারা নিয়েই তৃষ্ণার হাত চেপে গাড়ির কাছে গেলো। সামনের সিটের দরজা খুলে তৃষ্ণা কে ইশারা করলো বসার জন্য। তৃষ্ণা এক ঢোক গিলে চুপচাপ বসে পড়লো। রাফি দরজা টা আটকে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। তুর্য এসে পেছনের সিটে বসতেই রাফি গাড়ি স্টার্ট দেয় সারা টা রাস্তা তৃষ্ণা চুপচাপ বসে আড়চোখে রাফিকে দেখে চলছিল। রাফি বিষয় টা খেয়াল করে মনে মনে হাসলেও মুখে গম্ভীরভাব এনে রেখেছিল।

সকাল সকাল রোদের মিষ্টি রশ্মি চোখে পড়তেই চিত্রার ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসতেই পাশে তাকাতেই দেখে নুপুর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। চিত্রা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো। আচমকা হাত দুটোর দিকে চোখ গেলো। মেহেদী তে রাঙা হাত। হাত দুটো মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো ডান হাতে তুষারের নাম,আর বাম হাতে নিজের নাম। অনুভূতি টা দারুন। আজকের পর থেকে মানুষ টা সম্পূর্ণ রুপে হালাল হবে তারজন্য।

বেশকিছুক্ষন হাত দুটোর দিকে চেয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর চিত্রা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে চয়নিকা বেগম খাবার নিয়ে এসেছেন। চিত্রা কে দেখামাত্রই তাড়া দিয়ে বলে-
-“ খাবার টা চটপট খেয়ে নাও। পার্লারের মেয়েগুলো চলে আসবে।
চিত্রা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে সেটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে চয়নিকা বেগমের সামনে দাঁড়ায়। আচমকা চয়নিকা বেগম কে জড়িয়ে ধরে চিত্রা। আজকের পর থেকে মায়ের সাথে তর দুরত্ব বেড়ে যাবে৷ যখন খুশি তখন চাইলেই মা কে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। খাবার বেড়ে কেউ মিনিটের পর মিনিট অপেক্ষা করে গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে বলবে না,,কই রে খেতে আয়। মন খারাপ হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে মন খারাপ হওয়ার কথা গুলো আর বলা হবে না।

চয়নিকা বেগম বুঝলেন মেয়ের জড়িয়ে ধরার মানে। মুচকি হেঁসে মেয়ের পিঠে হাত রেখে বলে-
-“ খাইয়ে দেই?
চিত্রা ধরা গলায় বলে-
-“ দাও।
চয়নিকা বেগম চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে নিজ হাতে মাংস দিয়ে ভাত মেখে খাইয়ে দিলো। চিত্রা তৃপ্তি নিয়ে খাবার খেলো।
খাওয়া শেষে মেয়ের এঁটো মুখ ধুয়ে কপালে চুমু একে চলে যায়।

দশটার দিকে পার্লারের মেয়ে গুলো আসে। ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে চিত্রা কে সাজায়। লেমন কালারের লেহেঙ্গা মুখে ব্রাইডাল সাজ,শরীরে ডায়মন্ডের জুয়েলার্স, নাকে নথ,মাথায় টায়রা। হাতে ডায়মন্ডের চিকন মোটা চুড়ি। শরীরে যা গহনা সব ডায়মন্ডের। লেমন কালারের লেহেঙ্গার সাথে গহনা গুলো একদম পারফেক্ট। পার্লারের একটা মেয়ে চিত্রার মুখের সামনে আয়না ধরে বলে-
-“ আপু দেখুন তো কেমন লাগছে?
চিত্রা আয়নায় নিজেকে দেখলো। এ যেনো অন্য এক চিত্রা। সাজ টা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে কিন্তু নিজের রিয়েল ফেসের সাথে একটু ও মিলছে না। মনে হচ্ছে ফেসটাকে এই সাজের মাধ্যমে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
সিমি এসেছিল দেখতে চিত্রার সাজ কতদূর। চিত্রার সাজ দেখে থমকে গিয়ে বলে-
-“ ওয়াও চিত্রা আপু তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগছে। হায় আজ নির্ঘাত ভাইয়া হার্ট অ্যাটাক করে বসবে।
চিত্রা লজ্জা পেলো।

তুষার চিত্রার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে লেমন কালারের শেরওয়ানি কিনেছে। শেরওয়ানি টা পড়ে মাথায় পাগড়ি নিলো। হাতে সিলভার কালারের ব্র্যান্ডের ঘড়ি। রাজকীয় রাজকীয় ভাব ফুটে উঠেছে। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে ফোন টা হাতে নিয়ে চিত্রা কে তার আগমনের বার্তা পাঠালো।
চিত্রা সবেই ফোনটা হাতে নিয়ে লক খুলতে যাচ্ছিল ওমনি তুষারের মেসেজ আসলো।
-“ দেখা হচ্ছে মিস চিত্রা। মিস চিত্রা থেকে মিসেস খাঁন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি কত দূর?
চিত্রা মুচকি হেঁসে মাথার ওড়না টা একটু নিচে টেনে নিজের একটা সেলফি তুলে তুষার কে সেন্ড করলো। তুষার নোটিফিকেশনের আওয়াজ পেয়ে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে চিত্রার একটা পিক যেখানে চিত্রার মুখে ঘুমটা,ঢাকা চোখ,শুধু মুখশ্রীর নাক থেকে নিচের টুকু দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে একটা মেসেজ আসলো।
-“ মিসেস খাঁন হবার জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত এমপি মশাই। এবার শুধু আমার শহরে আপনার আগমনের অপেক্ষা ব্যাস।

তুষার হাসলো। ফোনটা পকেটে ভরে বের হলো রুম থেকে। বিয়ের সাজে সাজানো গাড়িটায়,তুষার,তামিম খাঁন,তৃষ্ণা আর তরিকুল খাঁন, তুষারের মামা মামুন বসেছে।
পরের গাড়িতে রাফি,তানিয়া বেগম,তাসলিমা খাঁন,সামির খাঁন,
আর শেষের গাড়িতে অধরা, রাতুল,আর তুষারের মামি সাইফা বেগম আর তার মেয়ে স্মৃতি।
তার আজ সকালে এসেছে।
অধরা একনজর দেখেছিল তুষার কে। তুষারের মুখে লেগে ছিল মাতাল করা এক হাসি। এতো সুন্দর হাসিটা। এত সুন্দর! সব ভুলিয়ে দেয় যেন।
বিষাক্ত একটা শ্বাস ছাড়লো অধরা। কষ্টগুলো কি বাতাসে ছড়িয়ে গেলো? বাতাসটাও কি বিষাক্ত হয়ে উঠলো? হ্যাঁ মনেহয়, শ্বাস নিতে পারছে না তো ঠিকমতো । হাসফাস লাগলো কে যেনো চাপাতি দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে ফেললো হৃদপিন্ডটা। ভালবাসা নাকি? আহ্! সহ্য হচ্ছেনা কেনো? কাল রাতেই না কি সুন্দর নিজেকে বুঝালো নিজেই,বুঝেও তো গেলো। কিন্তু এখন এমন করছে কেনো? অধরা নড়েচড়ে বসলো খানিক টা। রাতুল খেয়াল করলো সেটা। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো –
-“ খারাপ লাগছে?
অধরা চমকে উঠলো। মনে ভয় হলো রাতুল বুঝে গেলো নাকি। অধরা কে স্বস্তি দিয়ে রাতুল বলে উঠলো-
-“ খারাপ লাগছে? এসির পাওয়া বাড়িয়ে দিব?
অধরা না সূচক জানালো। রাতুল দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। হালকা টিয়া রঙের লেহেঙ্গায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে অধরা কে। কালকের তুলনায় আজকে মেকআপ বেশি করেছে। চুল গুলো খোলা। মেয়েটাকে সেদিন বলল চুল গুলো বেঁধে রাখতে মেয়েটা নির্ঘাত ভুলে গেছে। শারীরে হালকা অলংকার। চোখে আজ চশমা নেই। বেশ পরিবর্তন লাগছে অধরা কে। খুব শীগ্রই নিজের মনের কথা জানাবে সে অধরা কে। কথাটা ভেবেই নৈঃশব্দ্যে হাসলো।
অধরা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। কাল রাতে কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফুলে গিয়েছিল যার দরুন না চাইতেও তাকে গাঢ় মেকআপ করতে হয়েছে।

দুপুর দেড় টার নাগাত তুষারদের গাড়ি এসে পৌঁছায় চিত্রাদের বাসায়। বাড়ির ছোট সদস্য রা এসে গেট আটকে রেখেছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিলে তারা গেট ছাড়বে না। এর মধ্যে সিমি এসে বলে বসে এ লাখ টাকা না দিলে তারা বর ঢুকতে দিবে না।
রাফি ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সিমির উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
-“ টাকা কি মগের মুল্লুক নাকি যে আব্দার করলেন আর দিয়ে দেওয়া হলো। শখের বসে না হয় দশ বিশ হাজার টাকা চাইতে পারেন তাই বলে এক লাখ!
সিমি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে-
-“ সামান্য এক লাখ ই তো চাইছি এক কোটি তো আর চাই নি। এমপি দুলা ভাইয়ের কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। যতো দেরি করবে ততই ভেতরে ঢুকতে দেরি হবে।
তুষার রাফির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। এতো কথা বাড়ানোর কি আছে সেটা তার মাথায় আসছে না। সে চিত্রা কে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে আছে আর রাফি তর্কবিতর্ক করছে। রাফির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ টাকা টা চুপচাপ দিয়ে দে। তুই আর একটা তর্ক করবি তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
-“ তাই বলে ব্রো…..
-“ দিতে বলছি টাকা টা।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে টাকা টা দিয়ে দিলো। সিমি কেঁচি টা তুষারের হাতে দিলো। তুষার ফিতা টা কেটে ভেতরে ঢুকলো। তৃষ্ণা অধরা ভেতরে ঢুকতেই সিমি তাদের হাত চেপে বলল-
-“ আরে তোমরা কোথায় যাচ্ছ। এই টাকা কি পুরো টা আমরা নিবো নাকি। ৫০ হাজার তোমাদের আর ৫০ হাজার আমাদের।
তৃষ্ণা টাকা টা নিয়ে সিমির গাল টেনে বলে-
-“ হাউ সুইট। চলো এবার ভেতরে।
সিমি হেঁসে চলে যায় ওদের সাথে।

তুষার কে বসানো হয়েছে স্টেজে। চয়নিকা বেগম সিমি আর তৃষ্ণা কে পাঠিয়েছে চিত্রা কে নিয়ে আসার জন্য। চিত্রা রুম থেকেই শুনতে পেয়েছে তুষার দের আসার খবর। তৃষ্ণা সিমি কে নিজের রুমে আসতে দেখে স্মিত হাসলো। তৃষ্ণা এসেই চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে। কানে ফিসফিস করে বলে –
-“ আমার ভাই আজকে শেষ তোর রূপের ঝলকে।
চিত্রা হেঁসে উঠলো। তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে বের হলো। তুষার রাতুলের সাথে কথা বলছিলো। আকস্মিক চোখ ঘুরাতেই থমকে যায়। রাতুল তুষারের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখলো চিত্রা আসছে। তুষার কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে-
-“ কন্ট্রোল ইউর আইস।
তুষার মুচকি হাসে। তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে তুষারের কাছে আসতেই তুষার হাত বাড়িয়ে দেয়। চিত্রা তুষারের হাত টা ধরে পাশে বসে। ধরে রাখা হাতটায় হালকা করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়। রাতুল দূরে সরে যায়। তুষার চিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ আপনাকে বড্ড অচেনা লাগছে মিস চিত্রা।
চিত্রা ঘুরে তাকালো। বিষন্ন মনে বলল-
-“ বেশি মেক-আপ করা হয়েছে যে।
তুষার কিছু বললো না। কাজি এসেছে তুষার কে কবুল বলতেই তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে কবুল বলে উঠে। এবার চিত্রার পালা,চিত্রা কে কবুল বলতেই চিত্রা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলো। কবুল তিনটা শব্দ কিন্তু এই কবুল বলার মাধ্যমেই তো চিত্রা গোটা জীবন এক মিনিটেই বদলে যাবে। গলা শুকিয়ে আসলো। তুষার চিত্রার বা হাত টা চেপে ধরলো। ফিসফিস করে বলল-
-“ আগে লম্বা একটা শ্বাস নিন। নিজেকে শান্ত করুন তার পর বলুন।
চিত্রা তাই করলো। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে কবুল বলে উঠলো।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। তুষারের মুখে প্রাপ্তির হাসি।
অন্য দিকে এক ভেঙে যাওয়া নারীর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনা জল। প্রিয় মানুষটার খুশিতে এই জল গড়িয়ে পড়লো নাকি প্রিয় মানুষ টিকে এ জীবনে না পাওয়ার যন্ত্রণায়?

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৬( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

রুমজুড়ে শীতলতা বিরাজমান। কেননা বাহিরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। পুরো কক্ষে ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। হরেক রকম ফুল দিয়ে আজ সাজানো রুমটা।ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসে আছে চিত্রা ।একটু আগেই সকল নিয়ম রীতি শেষ করে তাকে রুমে এসে দিয়ে গিয়েছে তৃষ্ণা আর আর অধরা। অধরা পুরো ঘরটায় একবার চোখ বুলিয়েছিল। ফুলের গন্ধে শ্বাস আটকে আসছিল। ইচ্ছে করছিল সব ফুল গুলো ছিঁড়ে ফেলতে। রুম থেকে বের হবার আগে আরেক বার চিত্রা সহ পুরো রুম টায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়।

ভয়ে,লজ্জায়,উত্তেজনায় শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে চিত্রার। কিরকম যে এক অনুভূতি। বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে। তার মানে তুষার এসে পরেছে। বুকটা ধুকপুক করছে ।পরিহিত বিয়ের লেহেঙা খামছে ধরলো উত্তেজনায় বুক কাঁপছে। চিত্রার ভাবনার ঘোর কাটলো কক্ষের দরজা খোলার আওয়াজে। তুষার এসেছে গলা খাকারি দিলো।
ভয়ে আড়ষ্ট হলো চিত্রা । তুষার ধীরে পায়ে এসে চিত্রার পাশে বসে। একদৃষ্টিতে চিত্রার দিকেই তাকিয়ে থাকে। নিরবতা কাটিয়ে তুষার বলে উঠে-
-“আপনার হাত টা দিন তো চিত্রা।
চিত্রা কাঁপা কাঁপা হাত টা বাড়িয়ে দেয়।
চিত্রার বাম হাত টা তুষার তার ডান হাতের মুঠোয় নেয়। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে চিত্রার। তুষার তার মুখটা চিত্রার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
-“আমাকে মা”রার প্ল্যান করেছেন আপনি মিসেস খাঁন ।
কথাটা শুনে কেঁপে উঠে চিত্রা । লোকটা কি বলছে এসব। তাকে কখন মা”রার প্ল্যান করলো।

-“এসব কি বলছেন আপনি,আমি কখন আপনায় মা”রার প্ল্যান করেছি?

তুষার আলতো হাতে চিত্রার ঘোমটা টা উঁচু করে সরিয়ে ফেলে। মূহুর্তে তুষারেরর মুখ থেকে ভেসে আসে মাশাল্লাহ শব্দটা। বৃষ্টি চোখ বন্ধ করে ফেলে । তার ভীষণ লজ্জা লাগছে চোখ মেলে তাকাতে। তুষার চিত্রার কপালে চুমু দিয়ে বলে-

-“ এই যে আপনার রূপ এটাই তো যথেষ্ট আমায় মা”রার জন্য। আপনার লেপ্টে যাওয়া কাজল কালো চোখে ভীষণ মায়াবী লাগছে। ইশ তখন কাঁদছিলেন কেনো ওভাবে। আপনি কি জানেন আপনার চোখের একফোঁটা অশ্রু আমাকে কতোটা পিড়া দেয়? আর কখনো আমার সামনে কাঁদবেন না আপনি। এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন দু রাকাত নফল নামাজ পড়ব।

চিত্রা মাথা নাড়িয়ে বিছানা থেকে নামে। তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে বলে-
-“আলমারি তে দেখো তোমার পোষাক আছে সেখান থেকে যেকোনো একটা পছন্দ করে পাল্টে আসো।

চিত্রা আলমারির কাছে গিয়ে আবার থেমে যায়। পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনি কি বললেন?
তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে বলে-
-“ বলছি আলমারি তে তোমার পোষাক আছে,খুলে দেখো।
-“ আমি এটার কথা বলি নি।
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তাহলে কিসের কথা?
-“ আপনি তুমি করে সম্বোধন করছেন।
তুষার মুচকি হাসলো। বসা থেকে উঠে চিত্রা দিকে এগিয়ে এসে চিত্রা কে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড় করালো। চিত্রার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে আয়নায় চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তোমার আর আমার সম্পর্ক এখন কিসের?
-“ হাসবেন্ড ওয়াইফের।
-“ তো আপনি করে তাহলে আর কেনো ডাকবো? আজ থেকেই তুমি ডাকার প্র্যাকটিস করছি। তুমি ও তুমি করে ডাকবে।
চিত্রা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি অনড়ভাবে রেখে বলে-
-“ সময় লাগবে।
-“ যত ইচ্ছে সময় নাও।

কথাটা বলে চিত্রার গলায় চুমু খেলো। তার পর এক এক করে সব গয়না খুলতে সাহায্য করলো। এখন শরীরে বাম হাতের অনামিকা আঙুলে আংটি ছাড়া আর একটা অলংকার ও নেই। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে চিত্রা কে। তুষার দৃষ্টি সংযত করলো।
-“ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো কুইক।
চিত্রা আলমারির কাছে আসলো। আলমারি খুলে দেখে আলমারির এক পাশ শাড়ি আর সেলোয়ার-কামিজ দিয়ে ভরা। সেদিন করা সেই পোষাক গুলে। যেগুলো তুষার পরে দিবে বলেছিল। শাড়ি গুলোর মধ্যে থেকে একটা ব্লাক রঙের শাড়ি বের করে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

মিনিট বিশেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে সুতি শাড়ি টা পড়ে ওজু করে বের হয়।

চিত্রা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তুষার পোষাক চেঞ্জ করে ব্লাক শার্ট আর টাওজার পড়ে আছে। চিত্রা কে আলমারি থেকে জায়নামাজ টা বের করতে বলে তুষার নিজে ওজু করার জন্য ওয়াশরুমে যায়।

তুষার ওজু করে বের হয়ে দেখে চিত্রা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার গিয়ে চিত্রার ঠিক কিছুটা সামনপ গিয়ে দাঁড়ায়। দুজনে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়।

নামাজ শেষে তুষার চিত্রা কে নিয়ে বিছানায় বসে। আলমারির ড্রয়ার খুলে একটা প্যাকেট এনে চিত্রার হাতে ধরিয়ে দেয়। হকচকিয়ে যায় চিত্রা ।
-“এটা কি?

-“ ইসলামের মোতাবেক এটা তোমার মোহরানা টাকা। দশলক্ষ এক টাকা।
চিত্রা টাকাগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলে-
-“এটা দিয়ে আমি কি করবো।
-“ যা খুশি করতে পারো। যেভাবে খুশি খরচ করতে পারো। এই টাকার মালিক তুমি।

চিত্রা প্যাকেট টা নিয়ে আলমারিতে তুলে রাখে। তুষারের পাশে বসতেই তুষার ইশারায় পাশে শুতে বলে। চিত্রা পাশে শুয়ে বলে-
-“ আমার যা প্রয়োজন সব তো আপনি এনেই দিবেন। ওটা খরচ করার প্রয়োজন হবে না।

তুষার মুচকি হেসে বা হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করে। চোখ মুখে দুষ্ট হাসি এনে বলে-
-“ আজ কি আমাদের জানো তো?
চিত্রা তুষারের মুখের দিকে তাকায়। তার চোখ জোড়া নেশালো। চিত্রার ঠোঁট কাঁপছে। কিছু বলবে কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। তুষার চিত্রার মুখ টার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখ টা চিত্রার গলার কাছে নিয়ে যায়। গলায় ওষ্ঠ ছুঁয়ে নাক দিয়ে ঘষতে থাকে। তুষারের গরম নিঃশ্বাস চিত্রার গলায় পরছে। বিছানার চাদর খামচে ধরলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তুষার এবার গলা থেকে মুখ সরিয়ে চিত্রার চোখ বন্ধ করে রাখা মুখশ্রীর দিকে তাকায়। এক হাত রাখে চিত্রার গালে। কিছুটা ধমক দিয়ে বলে-
-“ এই মেয়ে চোখ খুলো।

তুষারের ধমক শুনে চোখ মেলে তাকায়। তুষারের হঠাৎ এমন ধমক শুনে ভরকে যায় চিত্রা । ধিরে ধিরে মুখটা চিত্রার অধরের কাছে নিয়ে আসে তুষার। আস্তে আস্তে চিত্রার অধরে অধর ছোঁয়ায় তুষার। ইশ কি একটা অনুভূতি। চিত্রাকে তুষারের সাথে রেসপন্স করতে না দেখে তুষার ছোট্ট করে চিত্রার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় আহ শব্দ টাও করতে পারলো না চিত্রা। তুষারের বুকের শার্ট খামচে শক্ত করে ধরে। তুষার নিজের মত করে চিত্রার ঠোঁটে অত্যাচার করতে থাকে। হ্যাঁ এটা অত্যাচার চিত্রার ভাষ্যমতে। চিত্রা ঠিক মতো শ্বাস ও নিতে পারছে না। তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়াতে গেলেই তুষার আরো জোরে চেপে ধরছে৷ চিত্রা মনে মনে শ’খানেক বকাবকি করলো তুষার কে।

মিনিট দশেক পর তুষার ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেতেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলে চিত্রা। তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বিয়ে হতে না হতেই মা-রার প্ল্যান করছেন আমাকে?
তুষার চিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ এখনও পুরোপুরি ভাবে মা-রি নি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। তুষার চিত্রার শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে হাত রাখে। চিত্রা অসহায় চোখে তাকায়। তুষার সেটাকে গুরত্ব দিলো না। চিত্রা কে নিজের কাছে টেনে আনে। চিত্রা হুড়মুড়িয়ে তুষারের বুকের উপর এসে পড়ে। তুষার আলতো হাতে চিত্রার শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে ফেলে। চিত্রা এবার লজ্জায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে। তার এবার মাটি ফাঁক করে গর্তে ঢুকতে ইচ্ছে করছে। আস্তে আস্তে যখন তুষারের স্পষ্ট গাঢ় হতে লাগলো শাড়ির কুঁচি ধরে টান দিতেই চিত্রা তুষার কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ কেমন যেনো লাগছে।
-“ ভয় করছে?
চিত্রা হুম বলে। কন্ঠে মাদকতা নিয়ে বলল-
-“ ভয় কে জয় করতে শিখো মিসেস খাঁন। আমি বলেছিলাম আমি শুদ্ধ পুরুষ নই। এই অশুদ্ধ পুরুষ কে এবার সামলান।
কথাটা বলেই তুষার চিত্রার বুকের ভাঁজে চুমু খেলো। আস্তে আস্তে ডুব দিলো চিত্রার মাঝে। চিত্রা গ্রহণ করে নিলো তুষারের দেওয়া ভালোবাসা।

পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ নিরব। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ ভালোবাসার উন্মাদনায় মেতে আছে,আর কেউ এই নির্জন রাতে একাকি বসে দুঃখবিলাস করছে। হ্যাঁ দুঃখবিলাস ই তো। এই দুঃখ না মোচন করা যায় আর না কাউকে বলে নিজেকে হালকা করা যায়। এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে? বাস্তব টা মেনে নিতে কেনো পারছে না? এই চব্বিশ বছরের জীবনে কোনো সুখই তো পেলো না অধরা। এতো টাই দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছে সে?
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। ছাঁদের ফ্লোর বৃষ্টির পানিতে ভিজতে একাকার। ছাঁদে থাকা দোলনা টায় বসে আছে অধরা। দৃষ্টি তার আকাশ পানে। এই দৃষ্টিতে আছে পৃথিবী কে নিয়ে একঝাঁক অভিযোগ। চোখের পলক বন্ধ করতেই টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। সাথে সাথে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো । চোখের জল গুলোও বেহায়া । না চাইতেও কেনো বেরিয়ে আসে? ওরা বেরিয়ে আসলেই তো অধরা ভেঙে পড়ে এক যুদ্ধে হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো।

চাইলেই কি এতো সহজে অনুভূতি মুছে ফেলা যায়? যায় না তো। এখন থেকে দুজন কে একই সাথে দেখতে হবে এই বাড়িতে। অধরা সহ্য করবে কি করে? অধরা তো দম বন্ধ হয়ে ম-রেই যাবে। অধরা কান্নারত গলায় বিরবির করে বলে-
-“ আল্লাহ ধৈর্য্য দিয়ো আমায়। আমি মানতেই পারছি না। এতোটা অবুঝ কেনো হচ্ছি আমি? আমার ভাগ্যে যখন তাকে রাখলেই না। তাহলে মন মস্তিষ্ক থেকে তাকে চিরতরে মুছে ফেলতে সাহায্য করো। এই টুকু সাহায্য করে একটু শান্তি দাও আমায়।

কথাটা বলে আবার ডুকরে কেঁদে উঠে অধরা।
-“ মিস অধরা আবার ও কাঁদছেন আপনি?
অধরা তড়িৎ গতিতে কান্না থামায়। কন্ঠের মালিক কে সে চিনে। তাই পেছনে ফিরলো না। রাতুল এগিয়ে এলো অধরার সামনে। নিজের রুম বিছানা ছাড়া রাতুলের ঘুম হয় না। আজও ব্যাতিক্রম না,ঘুম ধরছিলো না। সেজন্য ছাঁদে এসেছিল একটু পায়চারি করতে। কিন্তু হঠাৎ অধরার কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাকায়। অধরার মাথা থেকে পা অব্দি দেখে আবার ও বলে উঠে –
-“ আজও কাঁদছেন কেনো?
অধরা হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ আ…আসলে আম্মুর কথা মনে পড়ছিলো তাই….
-“ মিথ্যা বলতে পারেন না আপনি, তাহলে কেনো মিথ্যা বলার চেষ্টা করছেন?
জহুরির চোখে অধরাকে দেখে কথাটা বলে রাতুল।
অধরা আমতা আমতা করে বলে-
-“ ন..না না মিথ্যা বলবো কেনো সত্যি বলছি।
-“ আপনি নিজেও জানেন আপনি মিথ্যা বলছেন অধরা।
অধরা আর কিছু বললো না। সত্যি টা তো বলা সম্ভব নয়। আর মিথ্যা টা যখন বিশ্বাস করছে না তার পরিবর্তে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। রাতুল অধরার পাশে বসে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ তুষারের বিয়ে টা মানতে পারছেন না এখনও?
অধরা চমকে উঠলো। তড়িৎ গতিতে পাশ ফিরে তাকালো। অধরার চমকে উঠা মুখশ্রী দেখে রাতুল মুচকি হাসলো।
-“ আমি বিষয় টা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছি অধরা যে আপনি তুষার কে পছন্দ করেন। আপনার চাহনি সব তাই বলে দিত। শিওর হলাম সেদিন যেদিন এই ছাঁদে আপনাকে একাকী বসে কাঁদতে দেখলাম। ট্রাস্ট মি সেদিন নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছিল। আপনার চোখে অন্য পুরুষের জন্য জল দেখে হৃদপিণ্ডটা কয়েকশো টুকরোয় বিভক্ত হচ্ছিল। আচ্ছা মিস অধরা আপনার তো তুষার কে পাওয়া অসম্ভব, আর আপনিই তো বলেছিলেন একা জীবন চলে না। আপনি কি আমায় আপনার সাথে পথ চলার সঙ্গী করবেন? আমি আপনার শখের পুরুষ কখনই হতে চাই না। শখের জিনিস গুলো সবসময় ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে,আর আমি তো আপনার ধরাছোঁয়ার বাহিরে নই। আমি আপনার সখা হতে চাই। আপনি কি হবেন আমার সখী? ট্রাস্ট মি একটু ও কষ্ট পেতে দিব না।সবসময় আগলে রাখবো,বিনিময়ে আপনি না হয় সারাজীবন আমার পাশে থাকবেন,আর রোজ নিয়ম করে একটু খানি ভালোবাসবেন..ব্যাস পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ টা আমি।
অধরা নিশ্চুপ রইলো। রাতুলের এমন আকুতিভরা কন্ঠে বলে উঠা কথা গুলো ভীষণ পিড়া দিচ্ছে তাকে। রাতুলের ভালোবাসা গ্রহণ করার সাধ্যি তার নেই। একজনের মায়াই তো সে কাটিয়ে উঠতে পারছে না,দ্বিতীয় কারো মায়ায় কি করে পড়বে সে? রাতুল অধরার নিশ্চুপতা দেখে অসহায় চোখে তাকালো। অধরা আশেপাশে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল-
-“ প্রেম ভালোবাসা আসলেই কঠিন জিনিস। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সবচাইতে কঠিন জিনিস। আপনি দয়া করে আমাকে এই কঠিন জিনিস থেকে বের করুন। উনাকে ভুলতে আমায় সাহায্য করবেন? আমি উনাকে ভুলতে চাই। উনাকে যতবার মনে পড়ে ততবারই এক মরণব্যাধি যন্ত্রণায় বুকটা ছাড়খাড় হয়ে যায়। আমি এই ট্রমা থেকে বের হতে চাই। একটু কি করবেন সাহায্য আমায়?

রাতুলের মুখে হাসি ফুটলো আশ্বাস ভরা চোখে বলল-
-“ করবো সাহায্য বিনিময়ে কি আপনি আমাকে রাখবেন আপনার পাশে?
-“ খুব,ভীষণ ভাবে চেষ্টা করবো।
-“ আচ্ছা তাহলে এখন রুমে যান। কাঁদবেন না আর। আপনার ভেজা অশ্রু নয়ন জোড়া ভীষণ কষ্ট দেয় আমায়।

অধরা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। মিনিট কয়েক চুপ থেকে বসা থেকে উঠে রাতুল কে “ আসি” বলে চলে যায়।

রাতুল অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে-
-“ অনুমতি পেয়ে গেছি,সব রকম চেষ্টা করবো আপনাকে নিজের করে পাওয়ার। আল্লাহ বলেছেন মন থেকে কিছু চাইলে আর সেটা আমার জন্য কল্যাণকর হলে সেটা আমায় তিনি নিজ দায়িত্বে দিয়ে দিবে। আই হোপ আল্লাহ আমার ভাগ্যে আপনাকে রাখবে।

মধ্যে গভীররাত্রী চিত্রা বারবার শিউরে শিউরে উঠছে। তুষারের উন্মুক্ত শরীর খামচে ধরে বলে-

-“ আপনিতো খুবই বাজে।

তুষার আরো বাজে হতে হতে বলে-

-“সত্যিই তো! আমার মতো বাজে একটা ছেলেকে মিসেস খাঁন কি করে সামলাচ্ছে এতক্ষণ ধরে?”
চলবে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-২৩+২৪

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৩( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

শেষ সন্ধ্যায় ছাঁদে দাঁড়িয়ে রাস্তায় জ্বলতে থাকা কৃত্রিম আলোর ল্যাম্পপোস্ট দেখ চলছে চিত্রা। কানে রয়েছে মুঠোফোন। ফোনের ওপাশ থেকে পরপর দুটো জোরে নিশ্বাস ফেলার শব্দ শোনা গেলো। এতে একটুও বিচলিত হলো না চিত্রা। সে আগের ন্যায় ঐ ল্যাম্পপোস্ট টা দেখেই চললো। হঠাৎ আকাশে অসময়ে মেঘের ডাক শুনতেই চিত্রা দৃষ্টি সরায়। আশেপাশে তাকিয়ে আকাশ পানে তাকায়। আস্তে আস্তে চারপাশ থেকে বাতাস বইতে শুরু করলো। খুব গর্জে বৃষ্টি নামার সংকেত দিচ্ছে।
-“ ফোন কেটে দিব?
তুষার মুহুর্তে কথার পিঠে কথা বলতে পারলো না। সময় নিলো,কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলল-
-“ ফোন কেটে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি?
-“ তাহলে কি কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছেন?
-“ হুমম।
-“ তাহলে কথা কোথায় মুখে? মৌনব্রত পালন করার ইচ্ছে হলে ফোন কেটে মৌনব্রত পালন করুন।
-“ কাল রেডি হয়ে থাকবেন আমি আসবো নিতে।
-“ কোথায় নিয়ে যাবেন?
-“ বিয়ের কেনাকাটা করতে। ভুলে গেছেন নাকি সামনে যে বিয়ে?
-“ ভুলতে দিলেন কই? সেই তো মনে করিয়েই দিলেন।
-“ রেগে আছেন মনে হচ্ছে?
-“ এতক্ষণ লাগলো এটা বুঝতে?
-“ না আগেই বুঝেছি সেজন্য নিশ্চুপ ছিলাম। হয়েছে টা কি, রেগে আছেন কেনো?

চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেললো। অভিযোগ সুরে বলল-
-“ সারাদিন ফোন দেন নি কেনো? ফোন কোথায় থাকে? ফোনের যথাযথ ব্যাবহার করতে জানেন না নাকি সময় হয় না আমাকে একটা ফোন দেওয়া কোনটা?

তুষার আগের ন্যায় থেকে জবাব দিলো-
-“ কথা বলার জন্য এই সময়টাই উপযুক্ত সেজন্য অন্য সময় ফোন দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন বোধ করছিলাম না। আকাশে তাকান দেখুন আকাশের রং পরিবর্তন হচ্ছে। কালো মেঘ গুলো জমাট বাঁধছে। চাঁদ টাও আড়াল হয়ে যাচ্ছে সেই মেঘে। আর দমকা ঠান্ডা হাওয়া গুলো শরীর কে মাতোয়ারা করে তুলছে সেই সাথে অনুভূতি গুলো কে সজাগ। বুঝলেন কিছু?

চিত্রা গায়ের ওড়না টা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে বলে-
-“ হ্যাঁ বুঝলাম,মুশলধারায় বৃষ্টি নামবে হয়তো, এই বাতাস আমার সর্বাঙ্গ দেহে একমাত্র শীতের অনুভূতি কে মাতোয়ারা করছে খুব শীত লাগছে।
-“ রোমান্টিক পরিবেশ আর মুড টার এভাবে ১২ টা বাজাচ্ছেন কেনো।
-“ আপনি কোথায় এখন?
-“ বেলকনিতে।
-“ রুমে যান,কম্বলের তলে গিয়ে ঘুম দিন। আমারও ঘুম পাচ্ছে।
-“ আচ্ছা ঘুমান তাহলে।

কথাটা বলেই তুষার ফোন কে’টে দেয়। চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। ফোন টা মুখের সামনে এনে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারলো না তুষার রেগে ফোন কাটলো নাকি স্বাভাবিক হয়েই।

-“ হবু স্বামীর সাথে কথা বলা শেষ?
চিত্রা ছাঁদ থেকে চলে যাওয়ার জন্য পেছন ঘুরতেই রিয়াদ কথাটা বলে উঠে। রিয়াদ তার মানে চুপিচুপি ছাঁদে এসো চিত্রার কথাগুলো শুনছিলো। অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে রিয়াদের পানে চেয়ে কিছু না বলে হনহন করে ছাঁদ থেকে নেমে চলে যায়। রিয়াদ চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠে।

চয়নিকা বেগম আর সিমি মিলে রান্না ঘরে রান্না করছে। চিত্রা বসার ঘরে ঢুকে সোফায় বসে। চোখ বন্ধ করতেই বুঝতে পারে সে একা নেই বসার ঘরে। তার আশেপাশে কেউ বসেছে। ফট করে চোখ মেলে তাকায়। রিয়াদ কে দেখে এবার রাগ সপ্ত আকাশে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ আমি যেখানে থাকছি আপনিও সেখানে সেখানেই থাকছেন কেনো?
-“ আমার অস্তিত্ব জানাতে।
রিয়াদের গা-ছাড়া কথা শুনে চিত্রা নিজের রাগ কন্ট্রোল করে। এর সাথে রেগে কথা মানে একে জিতিয়ে দেওয়া যা চিত্রা করবে না। শান্ত করলো নিজেকে।
-“ শুনেছিলাম কুত্তার লেজ কখনও সোজা হয় না। ওমা আজ দেখি মানুষ সেই লেজা বেকা হওয়া কুত্তার মতো। হাউ ইন্টারেস্টিং!

মুহুর্তে রিয়াদের মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যায়।
-“ হোয়াট ডু ইউ মিন?
-“ নাথিং ব্রো,জাস্ট চিলল করুন আজকের রাত টা। বোনের বিয়ে খেতে এসেছেন,সারাদিন শুয়ে বসে এর ওর পেছন ঘুরাঘুরি বন্ধ করে কাল থেকে আমার বিয়ের যাবতীয় কাজ আছে সব হাতে হাতে সাহায্য করবেন।
-“ কেনো কাজের লোকের অভাব পড়েছে নাকি চেয়ারম্যান বাড়িতে?
-“ না তবে বেকার মানুষের আনাগোনা কি করে যেনো চেয়ারম্যান বাড়িতে বেড়ে যাচ্ছে।

চিত্রা চিন্তিত ভঙ্গিমায় কথাটা বলে। রিয়াদ বেশ বুঝলো কথাটা তাকেই মিন করা। তাই কথার প্রসঙ্গ টা বদলাতে হাক ছেড়ে সিমি কে ডেকে কফি চাইলো। চিত্রা সেটা দেখে হাসতে হাসতে রুমে চলে আসলো।

ছাঁদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হেঁসে হেঁসে ফোনে কথা বলছে তৃষ্ণা। ফোনের ওপাশে আছে তুর্য। আর ছাঁদে উল্টোপাশে কান খাঁড়া করে ফোন স্ক্রোল করছে রাফি। নামের ফোন টিপছে তার সব মস্তিষ্ক রয়েছে তৃষ্ণার পেছনে। তৃষ্ণা হাসি অসহ্য লাগছে রাফির কাছে। কিছু বলতে গেলেই শুধু বলে বসে “ আপনার সমস্যা কি? আমি যা ইচ্ছে তাই করবো।” অতঃপর রাফিকে চুপ থাকতে হয়। বলতেও পারছে না তার খারাপ লাগছে। এভাবে আর কতদিন চলবে কে জানে?
তৃষ্ণা কথা বলার পরপর আড়চোখে বারবার রাফিকে দেখছে। এই সুযোগ টা সে কোনো মতেই হাত ছাড়া করবে না। সুযোগের ব্যাবহার টা সে এবার ভালো করেই করে ছাড়বে। তুর্য ছেলেটা ভালোই। মজার ভিষণ যার জন্য কাজ খুব সহজেই হয়ে যাবে।

-“ তৃষ্ণা কাল ফ্রী আছো?
তৃষ্ণা রাফির থেকে দৃষ্টি সরায়। রাফিকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিছুটা জোরে বলে-
-“ হ্যাঁ ফ্রী আছি কাল। কিন্তু কেনো?
ওপাশ থেকে কি বললো রাফি শুনতে পারলো না। তৃষ্ণা বলে উঠে-
-“ হ্যাঁ যাওয়াই যায়।
রাফি বুঝে গেলো তারা কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে। মেজাজ বিগড়ে গেলো। তুর্য ছেলে টাকে শাসিয়ে আসতে হবে তৃষ্ণার থেকে যেনো দূরে থাকে। সে নিজেই এখনও তৃষ্ণা কে নিয়ে বাহিরে যায় নি সেখানে তুর্য এই সাহস দেখাচ্ছে। তৃষ্ণা আরো টুকটাক কথা বললো তুর্যর সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে সেসব কথা রাফি সহ্য করলো। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন হতেই তৃষ্ণা ফোন কেটে ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলে রাফি পেছন থেকে ডেকে উঠে –
-“ এই ছোট প্যাকেট এদিকে আসো।
তৃষ্ণা মনে মনে হেঁসে মুখে গম্ভীর ভাব এনে রাফির দিকে এগিয়ে যায়।
-“ হ্যাঁ ভাইয়া বলুন।
-“ কাল কোথায় যাচ্ছ তুমি?
-“ এই তো ভাইয়া একটু ঘুরতে যাব।
-“ কোথায় যাবে সেটা জিজ্ঞেস করছি।
-“ সেটা তো ভাইয়া তুর্য জানে।
-“ তুর্য তোমার কি লাগে?
-“ কিছুই না।
-“ তাহলে কোন সাহসে তুমি ওর সাথে বাহিরে যেতে চাচ্ছো?
-“ উনি তো নিজে থেকেই বললো। আমি কি করে মুখের উপর না করে দেই বলুন তো?
-“ ফোন করে বলে দাও তুমি কাল ফ্রী নেই। আমার সাথে বের হবে।
-“ মিথ্যা বলবো?
-“ মিথ্যা কেনো বলবে? সত্যি ই বলবে।
-“ এটা তো সত্যি না।
-“ সত্যি না কেনো?
-“ আপনি তো আমায় শিখিয়ে দিচ্ছেন।
-“ না সত্যি বের হবে কাল আমার সাথে।
-“ কোথায় যাব?
-“ ঘুরতে।
-“ না আমি আপনার সাথে যাব না। তুর্যর সাথেই যাব ভাইয়া।
-“ আর একবার ভাইয়া ভাইয়া করলে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিব।
-“ বলবোই ভাইয়া।
-“ না বলবে না।
-“ আপনার ইচ্ছেতে নাকি? আমার যা মন চায় তাই ডাকবো।
-“ ওকে দ্যান তাহলে ছ্যাইয়া,জান বাবু শোনা,কলিজা বলে ডাকো।

তৃষ্ণা রাফির কথা শুনে নাক ছিটকালো।
-“ আপনি আমার জান,কলিজা,বাবু শোনা বা ছ্যাইয়া নন যে এসব বলে ডাকবো। আপনি তো আমার প্রিয় চাচার ছেলে প্রিয় ভাইয়া।
-“ চাচার ছেলে ভাই থেকে জান কলিজা বাবু শোনা, ছ্যাইয়া হতে বেশি সময় লাগে না।
-“ তাতে আমার কি?
-“ তোমারই তো সব শোনা।
তৃষ্ণা আড়চোখে তাকালো রাফির পানে। রাফির মুখে লেগে আছে দুষ্টু হাসি।
-“ আপনার ভাবসাব ভালো লাগছে না। কিসব বলছেন সকাল হলেই ভুলে যাবেন ভাইয়া।
-“ আর ভুলবো না জান।
-“ কি শোনা জান বলছেন ভাইয়া। মাথা ঠিক আছে?
-“ হ্যাঁ বাবু আমার মাথা একদম ঠিক ছিলো কিন্তু তোমাকে দেখে মাথা আউলে গেছে।
-“ লেবুর শরবত খান ভাইয়া। মাথা ঠিক হয়ে যাবে।
-“ তোমার হাতে শুধু লেবুর শরবত কেনো ডার্লিং করল্লার শরবত ও অমৃত ভেবে খেয়ে নিব।

তৃষ্ণা এবার আর দেরি করলো না হন্তদন্ত হয়ে ছাঁদ থেকে নেমে পড়লো। কিসব ডেকে সম্বোধন করছে। সকাল হলে নির্ঘাত ভুলে যাবে। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হোহো করে হেসে উঠে। বিরবির করে বলে-
-“ আমাকে ভালো থাকতেই দিলে না। ভাইয়া বলে বলে হৃদপিণ্ড টা ঝলসে দিলে এবার তোমার হৃদপিণ্ড টা ঝলসানোর বাকি।

———————–

শেষ রাতের দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছিল। রাস্তা কিছুটা কাদায় কানা কানা হয়ে আছে। আকাশ এখনও মেঘলা। অধরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আরেক হাতে ছাতা নিয়ে হেঁটে চলছে। গন্তব্য তার ভার্সিটি। পড়নে আজ সাদা রঙের গোল জামা। রাস্তার কাদা নোংরা পানি ছিটকে তার পায়ের লেগে গেছে। যার দরুন সেলোয়ারের নিচের দিকটায় কাদা লাগে।

বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে অধরা। চারুকলা ভবনে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে কাদা ধুয়ে নেয়। এরপর চারুকলা ভবন থেকে বেরিয়ে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে ঢুকে। ক্লাস শেষ করে বটতলা চলে যায়। আপাতত ভর্তা ভাত খাবে সে। বটতলা গিয়ে ভর্তা দিয়ে ভাত খায়। তারপর আবার সেই পদ্ম বিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ মনে বাসনা জেগেছে পদ্মবিল থেকে একটা পদ্ম তোলার। কিন্তু নাগালে পাওয়া অসম্ভব পদ্ম। তাই চুপচাপ বসে রইলো। আর তখনই হুড়মুড়িয়ে কাউকে পাশে বসতে দেখলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে তৃষ্ণা বসেছে।

হঠাৎ তৃষ্ণা কে দেখে আপনা-আপনি অধরার কপালে দু ভাজ পড়ে। অবাক হয়ে বলে-
-“ তুই এখানে কেনো?
তৃষ্ণা অধরার কাঁধে মাথা দিয়ে বলে-
-“ আজ তো বিয়ের শপিং করার কথা ভুলে গেছো? ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে তোমাকে যেতে বললো।

অধরার বেলুমাল ভুলে গেছিলো আজ যে তুষার চিত্রার বিয়ের শপিং করার কথা। মন কিছুটা খারাপ হলেও সেটাকে পাত্তা দিলো না। এখন থেকেই তাকে বাস্তবতা মানতে হবে। কষ্ট পেলে নিজ ব্যাতিত অন্য কাউকে বুঝতে দেওয়া চলবে না।
অধরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা ও বসা থেকে উঠে অধরার হাত ধরে হাঁটতে থাকে। মেন রোডে আসতেই দেখে তুষারের ব্লাক রঙের গাড়িটা। অধরা তৃষ্ণা এগিয়ে গেলো। ড্রাইভিং সিটে তুষার আর তার পাশে চিত্রা বসে আছে।চিত্রা অধরা কে দেখা মাত্রই মিষ্টি করে হেঁসে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কেমন আছো আপু?
অধরা প্রতিত্তোরে চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো চিত্রা?
-“ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
অধরা আর কিছু বললো না। তৃষ্ণা আর অধরা পেছনের সিটে বসে পড়লো। তুষার তৎক্ষনাৎ গাড়ি স্টার্ট দেয়। ওদের শপিং করিয়ে তারপর পার্টি অফিসে ছুটতে হবে। ইলেকশন যতো এগিয়ে আসছে ততই তুষারের এদিক ওদিক ছোটাছুটির মাত্রা বেড়ে গেছে। তুষার খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া চিত্রার সাথে কথা বলছে না। এ নিয়ে চিত্রার মন প্রচুর খারাপ। কাল কি বেশি করে ফেলছে সে? চিত্রা কি খুব বেশি কিছু চেয়েছে তার কাছে? প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে কি নিজের জন্য একটু গুরুত্ব চাওয়া অপরাধ? সবাই চায় তার প্রিয় মানুষ টা তাকে একটু পরপর ফোন করে খোঁজ খবর নিক। চিত্রা ও তো তাই চেয়েছে সে নিয়ে না হয় একটু অভিমানে বলেছে তাই বলে কথা বলবে না?
বসুন্ধরা শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি থামায় তুষার। গাড়ি থেকে বের হয়ে ইশারায় চিত্রা কে নামতে বলে। চিত্রা চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে তুষারের পাশে দাঁড়ায়।
এদিকে তৃষ্ণা অধরা গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই দেখে রাফি আর রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। রাফি তুষার কে দেখা মাত্র ই তুষারের কাছে এসে বলে-
-“ আসতে এতো দেরি করে কেউ ব্রো?
তুষার উত্তর দিলো না। চিত্রর ডান হাত নিজের বা হাত দ্বারা মুঠোবন্দি করে মলের ভেতর ঢুকে। রাতুল আঁড়চোখে অধরা কে দেখে নেয় একবার। মেয়েটার শরীরে আজ ও সাদা পোষাক দেখে অবিলম্বে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে। মেয়েটার উচিত সাদা রং এর পরিবর্তে অন্য রং এর পোষাক ট্রাই করার।
রাতুল কে দেখে অধরা সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে-
-“ আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন?
রাতুল সালামে জবাব দেয়। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বলে।
রাফি তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমিও শপিং করবে নাকি জান?
তৃষ্ণা সরু চোখে তাকালো রাফির দিকে।
-“ কি শুরু করছেন কাল থেকে। কথায় কথায় এসব বলে ডাকছেন কেনো? বিরক্তিকর লাগছে এসব ডাক।
রাফি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে-
-“ আমার বেশ লাগছে এসব বলে ডাকতে শোনা।
-“ ছোট বোন হই আমি আপনার ভাইয়া।
-“ মায়ের পেটের তো না।
-“ আপনার চাচির পেটের তো।
-“ হুদাই বেহুদা লজিক দাঁড় করিয়ো না তো। চলো ভেতরে তোমাকে শপিং করিয়ে দেই।

তৃষ্ণা ভেঙচি কেটে বলে-
-“ এ্যাহ এমন ভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বউ।
-“ তুমি তো আমার জান।
তৃষ্ণা রাগান্বিত হলো।
-“ আর একবার জান জান করলে একদম জান টাই কেঁড়ে নিবো।
-“ আমি হাসতে হাসতে সেটাও দিয়ে দিব।
-“ অসহ্যকর।

কথাটা বলে তৃষ্ণা অধরার হাত ধরে মলের ভেতর ঢুকে পড়ে।
রাফি হাসতে হাসতে রাতুলের কাছে এসে বলে-
-“ ভাই চলো ভেতরে যাই।
রাতুল রাফির পিঠে ধপাস করে একটা কিল বসিয়ে বলে-
-“ ছোট বোনকে জালাচ্ছিস কেনো?
-“ ওর এটাই প্রাপ্য।
-“ কিছু চলছে নাকি দু’জনের মাঝে?
-“ সে-রকম ই কিছু একটা। চলো এবার আমার উপর গোয়েন্দাগিরি না করে।

তুষার চিত্রা কে নিয়ে লেহেঙ্গার দোকানে ঢুকে। দোকানদার তুষার কে দেখামাত্র ই সালাম দেয়। তুষার সালামের জবাব দেয়। দোকানদার কে বিয়ের জন্য টপ কালেকশনের লেহেঙ্গা দেখাতে বলে। দোকান দার তার দোকানে থাকা টপ কালেকশনের দশটা ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের লেহেঙ্গা দেখায়। চিত্রার চোখ আটকে যায় লেমন কালারের একটা লেহেঙ্গায়। বিয়েতে কেউ লেমন কালারের লেহেঙ্গা পড়ে আশ্চর্য! তুষার ইশারায় চয়েস করতে বললো। চিত্রা ভেবে পেলো না কোনটা নিবে।
-“ আপনি পছন্দ করে দিন।
তুষার বাক্য ব্যয় করলো না। লেমন কালারের লেহেঙ্গা টা তুলে প্যাক করে দিতে বললো। চিত্রা ফিসফিস করে তুষার কে বলল-
-“ বিয়েতে কেউ লেমন কালার পড়ে?
-“ ব্লাক পড়বে?
চিত্রা ভরকে গেলো। প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। শাড়ির দোকানে গিয়ে গায়ে হলুদ আর বউ ভাত সহ বিয়ের পরে পড়ার জন্য শাড়ি কিনলো। সাথে কিছু সেলোয়ার-কামিজ। জুতার দোকানে গিয়ে জুতা কিনে গয়নার দোকানে ঢুকে। ডায়মন্ডের নিউ কালেশনের কয়েকটা গয়না সহ স্বর্নের গহনা কিনে।

পুরো টা সময় চিত্রা চুপ ছিলো। পুরো শপিং তুষার একাই করলো। চিত্রা হা হু না কিছুই বলে নি।

এদিকে রাতুল রাফি অধরা আর তৃষ্ণার সাথে। তৃষ্ণা একের পর এক ড্রেস লেহেঙ্গা দেখেই চলছে কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা নিবে ভেবে পাচ্ছে না। রাফি তৃষ্ণার কানে ফিসফিস করে বলে-
-“ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবে শোনা কিন্তু একটাও সিলেক্ট করতে পারবে না। আর আমি তো সেটা হতে দিতে পারি না তাই না। বরং আমিই সিলেক্ট করে দেই।

কথাটা বলে রাফি কমলা রঙের একটা লেহেঙ্গা তুলে ধরে।
-“ এটা নিতে পারো মানবাে সুন্দর।
তৃষ্ণা লেহেঙ্গা টার দিকে তাকালো। সত্যি সুন্দর লেহেঙ্গা টা। তৃষ্ণার চুপচাপ কে সম্মতি ভেবে রাফি দোকানদার কে সেটা প্যাক করে দিতে বলে। তারপর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আর কি কি নিবে বলো?
-“ সবে তো একটা লেহেঙ্গা নিলাম। আর কত কিছু নেওয়ার বাকি, গায়ে হলুদ বউ ভাতের পোষাক কিনা লাগবে সাথে জুতা কসমেটিক, জুয়েলারি।
-“ আচ্ছা চলো।

রাফি তৃষ্ণা কে নিয়ে চলে যায়। এদিকে অধরাকে কোনো কিছু নিতে না দেখে রাতুল গলা ঝেড়ে বলে-
-“ আপনি কিছু নিবেন না?
অধরা এদিক ওদিল চেয়ে সব দেখছিলো আকস্মিক রাতুলের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে-
-“ তেমন কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।
-“ এতো এতো পোষাক লেহেঙ্গা শাড়ি তবুও আপনার পছন্দ হচ্ছে না?
-“ আসলে আমার এমন চাকচিক্য পোষাক পছন্দ না।

রাতুল দোকানদারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে-
-“ ভাই সিম্পলের ভেতর কয়েকটা শাড়ির কালেকশন দেখান।
দোকানদার সিম্পলের ভেতর কয়েকটা শাড়ি বের করলো। রাতুল অধরার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ এদিকে আসুন দেখুন কোনটা পছন্দ হয়।
অধরা এগিয়ে আসে। শাড়ি গুলো এক নজর দেখে। শাড়ি গুলোর মধ্যে থাকা কাতানের সাদা রঙের শাড়ি টার দিকে হাত বাড়াতেই রাতুল গম্ভীর কন্ঠে বলে-
-“ সাদা টা বাদে সিলেক্ট করুন।
অধরা হাত সরিয়ে আনে।
-“ সাদা টা বাদ কেনো?
-“ কারন আপনি এবার সাদা পড়তে পারবেন না। বিয়ে বাড়িতে কেউ সাদা রঙের পোষাক পড়ে?
-“ আমার সাদা রঙ পছন্দের।
-“ বিয়ে বাড়ির কয়েক টা দিন না হয় পছন্দ কে অপছন্দের তালিকায় রাখুন আর রঙিন কিছু সিলেক্ট করুন।
অধরা ঠোঁট কামড়ে পার্পল আর সবুজ কালারের শাড়ি সিলেক্ট করে। সেই সাথে রাতুল পাশ থেকে সিম্পলের মধ্যে হালকা টিয়া কালারে একটা লেহেঙ্গা আনে। তিনটে জিনিস প্যাক করতে বলে রাতুল।
অধরা লেহেঙ্গার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” গার্লফ্রেন্ডের জন্য নিলেন ওটা?
রাতুল ঠোঁট চেপে হাসলো।
-“ না আপনার জন্য।

অধরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই রাতুল বলে উঠলো-
-“ কোনো ওয়ার্ড যেনো বের না হয় মুখ দিয়ে। প্যাক করা শেষ পেমেন্ট ও করা শেষ সো আপনাকে নিতে হবে ওটা। বিয়ের দিন পড়বেন লেহেঙ্গা টা।

অধরা আর কিছু বললো না।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৪( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ আপাতত এই প্যাক গুলো আপনার। আর বাকি গুলো বিয়ের পর পাবেন।

চিত্রা দের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে চিত্রা কে সাতটা শপিং ব্যাগ দিয়ে কথাটা বলে তুষার। এই সাতটা শপিং ব্যাগে মূলত বিয়ে গায়ে হলুদের সহ আউট দুই তিনটে ড্রেস আর কসমেটিক আছে । চিত্রা শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নেয়। তুষারের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে মিহি কন্ঠে বলে-
-“ ভেতরে আসবেন না?
তুষার গাড়িতে বসতে বাতে জবাব দেয় –
-“ না, আপনি ভেতরে গিয়ে রেস্ট নিন। টায়ার্ড ফিল হচ্ছে নিশ্চয়ই।
-“ রেগে আছেন আমার উপর?
-“ আপনার উপর রেগে থাকা যায় নাকি?
-“ তারমানে ছিলেন রেগে?
-“ না। বাসার ভেতরে যান,রাতে ফোন দিব।

তুষার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। চিত্রা শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকে। সোফায় চয়নিকা বেগম, সিমি আর রিয়াদ বসে ছিল। চিত্রা কে দেখা মাত্র ই সিমি দৌড়ে চিত্রার কাছে আসে। ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে-
-“ দেখি দেখি আপু কি কি কিনলে।
চিত্রা ব্যাগ গুলো সিমির হাতে দিয়ে ক্লান্ত শরীর টা নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। চয়নিকা বেগম রান্না ঘর থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে চিত্রার মুখের সামনে ধরে ইশারায় খেতে বলে।

চিত্রার এই পানি টুকুই দরকার ছিলো। ঢকঢক করে গ্লাসের পানি টুকু খেয়ে সামনে থাকা ছোট্ট টেবিল টায় রাখতেই রিয়াদ বলে উঠে –
-“ আমাদের ও বলতে চিত্রা আমি আর সিমি ও যেতাম। আমাদের ও কিছু শপিং বাকি আছে।
চিত্রা পূনরায় সোফায় মাথা ঠেকিয়ে বলে-
-“ সবে তো আমার শপিং শেষ হলো। বাসার সবার এখনও বাকি। তাদের সাথে গিয়ে করবেন,প্যারা কিসের।

রিয়াদ আর কিছু বলল না। সিমি লেমন কালারের লেহেঙ্গা টা বের করে বলে-
-“ ওয়াও আপু লেহেঙ্গা টা দারুন তো। কে পছন্দ করছে তুমি নাকি ভাইয়া?
চিত্রা স্মিত হেঁসে বলে-
-“ সব তোর ভাইয়া কিনে দিছে। আমি তো শুধু নামেই তার সাথে গেছি।
-“ বাহ! ভাইয়ার চয়েস দারুন তো।
-“ দেখা শেষ হলে ব্যাগ গুলো আমার রুমে দিয়ে যাস।

কথাটা বলে চিত্রা নিজের রুমে চলে যায়।

গাড়ির সামের সিটে বসে আছে রাফি আর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে রাতুল। রাতুল গাড়ি আনায় চিত্রা আর তুষার কে তুষারের গাড়িতে একা পাঠিয়ে দেয়। গাড়ির আয়না টা দিয়ে রাতুল আড়চোখে বারবার অধরা কে দেখে চলছে। মেয়ে টা অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। দমকা হাওয়া গুলো এসে চুলগুলো বারবার চোখ মুখে উপচে পড়ছে। এতে বেশ বিরক্ত অধরা,চোখ মুখ বারবার কুঁচকে আসছে। ক্লিপ বা কাকড়া থাকলে চুল গুলো কে এতক্ষণে বেঁধে ফেলতো।
কিন্তু হাত খোঁপা করতে চাচ্ছে না সে। হাত খোঁপা করলে আস্ত মহিলা মহিলা লাগবে তাকে। রাতুল নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তারপর আবার মনোযোগ দিলো গাড়ি চালানো তে।

তৃষ্ণা ফোন টিপছে গাড়িতে বসে বসে। রাফি শুরু থেকেই লক্ষ করছে তৃষ্ণা ফোন টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। বিষয় টা ভালো লাগছে না রাফির। রাতুল অধরা না থাকলে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে বাহিরে ফেলে দিত।

গাড়িটা এনে খাঁন ভিলার সামনে থামায় রাতুল। রাফি গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। গাড়ির ডিঁকি থেকে শপিং ব্যাগ গুলো এক এক করে বের করে। তৃষ্ণা কে হাঁক ছেড়ে ডাক দিতেই তৃষ্ণা গাড়ি থেকে বের হয়ে রাফির সামনে দাঁড়ায়। রাফি ইশারায় ব্যাগ গুলো নিতে বলে। তৃষ্ণা ব্যাগ গুলো নিয়ে হাঁটা লাগায়। অধরা গাড়ি থেকে নামার আগেই রাতুল গাড়ি থেকে নামে। গাড়ির দরজা খুলে অধরা কে বের হতে সাহায্য করে। অধরা বের হয় গাড়ি থেকে। রাতুল গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে অধরার সামনে দাঁড়ায়। বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে-
-“ বাহিরে বের হলে সব সময় চুল গুলো বেঁধে তারপর বের হবেন। আপনার এই খোলা চুল গুলো আপনি ব্যাতিত অন্য কাউকেও বিরক্ত করে খুব।

রাতুলের এহেন কথা শুনে অধরার কপালে আপনা-আপনি দু ভাজ পড়ে। রাতুল সেটা দেখে গাড়ির ভেতর থেকে একটা শপিং ব্যাগ এনে অধরার সামনে ধরে। ইশারায় নিতে বলে।
অধরা শপিং ব্যাগ টার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নাতীত দৃষ্টি নিয়ে ভ্রু উঁচু করে জিগ্যেস করে, কি?
-“ এটায় সেই সাদা শাড়ি টা আছে যেটা নিতে মানা করেছিলাম।
অধরা অবাকের পর শুধু অবাকই হচ্ছে। তখন তো বলল ঐ শাড়ি নিতে না। আর কিনলোই বা কখন? ব্যাগ টা হাতে না নিয়েই অধরা বলল-
-“ অনেক গুলো তো কিনলাম। এটা আবার কিনলেন কেনো? আর কখনই বা কিনলেন?
-“ সেটা জেনে কাজ কি? আপনার নজর বারবার শাড়ি টার দিকে যাচ্ছিল তাই কিনেছি। আপনি কিন্তু এটা বিয়ের মধ্যে পড়বেন না। যেদিন আপনার মন টা ভীষণ ভালো থাকবে। মনে হবে আজ আর দুঃখ কষ্ট রা আপনার নাগাল পাচ্ছে না সেদিন এই শাড়িতে নিজেকে সাজাবেন।

অধরা শাড়ি টা নিবে কি নিবে না সেই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে। রাতুল বুঝলো বিষয় টা। তাড়া দিয়ে বলল-
-“ মিস অধরা ব্যাগ টা ধরুন হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তো।

অধরা চট করে ব্যাগ টা নিজের হাতে নিলো। রাতুল মুচকি হেসে বলল-
-“ এবার বাসায় যান। এনজয় করতে থাকুন বিয়ে টা, আসি।
রাতুল গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির বাহির জানালা দিয়ে একবার তাকালো। অধরা তার পানেই চেয়ে আছে। রাতুল গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়িটা যতক্ষণ দৃষ্টি সীমার মধ্যে ছিলো ততক্ষণ অধরা পলকহীন ভাবে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। গাড়িটা যেই দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো ওমনি অধরার বুক টা ধক করে উঠলো। আচমকা বা হাত টা বুকের উপর চলে যায়। ঘনঘন শ্বাস ফেলে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে।

পার্টি অফিসে এসে বসে আছে তুষার। মাস দুয়েক পর ইলেকশন। এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করছে তুষার। সামনে কতবড় দায়িত্ব, সেই সাথে আশেপাশে শত্রুর আনাগোনা বেড়েছে কয়েক ধাপ। প্রতিমুহূর্তে তাকে চিন্তায় থাকতে হয় সাথে সতর্ক। কখন না জানি কোন দিক দিয়ে আক্রমণ করে বসে। তুষার বাবা তামিম খাঁন, আর দাদা তরিকুল খাঁন তুষারের দু পাশে বসে আছে।

সামনের ওপর পাশে বসে আছে হালিম সরকার পাশে তার ছেলে হৃদয়। এখানে এসে শুনতে পারে তুষার এবার নির্বাচনে হালিম সরকারের পরিবর্তে তার ছেলে হৃদয় দাঁড়াবে।
বিষয় টা নিয়ে মোটেও মাথা ব্যাথা নেই তার। মনোনয়ন ফ্রম টা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে তুষার।

আহমেদ বাড়ি আর খাঁন বাড়ি পুরোদমে সাজানো হচ্ছে। কোথাও কোনো ফাঁক নেই। সিমি চয়নিকা বেগম, রিয়াদ গিয়েছিল শপিং এ তাদের জন্য কেনাকাটা করতে। সাহেল আহমেদ ব্যাস্ত থাকায় যেতে পারে নি। চয়নিকা বেগম নিজেই স্বামীর জন্য নিয়ে এসেছেন। পরশু গায়ে হলুদ,তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে চিত্রার খালা,মামা,মামি,নানি,ফুফু, এসেছেন। চিত্রার নানা নেই। মারা গেছেন বছর সাতেক আগে। চিত্রার ফুফাতো বোন নুপুর এসে চিত্রার সাথে গল্প করছে।

মেয়েটা এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। দেখতে শুনতে ভীষণ কিউট। চিত্রা কথার ছলে বারবার নুপুরের গাল টেনে ধরে। আর প্রতিবারের মতো নুপুর গাল দুটো ফুলিয়ে বলে-
-“ আমার গাল টাকে তুমি ছিড়েই ফেলবে চিত্রা আপু। দেখো সফট্ তুলতুলে গাল টা শক্ত হয়ে গেছে।

চিত্রা খিলখিল করে হেসে উঠতো। কথার মাঝেই হঠাৎ চিত্রার মুঠোফোন টা বেজে উঠে। চিত্রা স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষার ফোন দিয়েছে। বাড়ি জুড়ে মানুষের গিজগিজ। তাই ফোন টা নিয়ে ছাঁদে ছুটলো,পেছন পেছন নুপুর ও আসলো। চিত্রা ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভরাট কন্ঠে ভেসে আসলো-
-“ এতো সময় লাগে ফোনটা ধরতে?
-“ খুব বেশি কিন্তু সময় লাগে নি ফোন রিসিভ করতে।
চিত্রার মিহি কন্ঠে বলা কথাটা শুনে নিরবে ঠোঁট কামড়ে হাসলো তুষার।
-“ বলেছিলাম ফোন দিব,দিয়েছি।
-“ ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম সেজন্য।
-“ বড্ড অপেক্ষা করিয়েছি?
-“ বেশি না অল্প।
-“ এমন অল্প স্বল্প অপেক্ষা কিন্তু প্রায়ই করতে হতে পারে। তবে অপেক্ষারা দীর্ঘ হবে না। পারবেন না অপেক্ষা করতে এমন?

চিত্রার মুখ জুড়ে হাসির রেখা পাওয়া গেল।
-“ খুব পারবো।
-“ কথা দিচ্ছেন তো?
-“ হুমম।
-“ পরে কিন্তু অভিযোগ করতে পারবেন না।
-“ টুকটাক করবো। আমার অধিকার এটা।
-“ সেটাও ঠিক।
-“ রাত জাগবেন না,তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন। কারন এরপর কিন্তু রাতে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ পাবেন না।

মুহূর্তে চিত্রার চোখ মুখ জুড়ে লজ্জারা হানা দিলো। গাল দুটো টকটকে টমেটোর মতো লাল হলো। বিরবির করে বলে উঠল-
-“ অসভ্য।
তুষার শুনে ফেললো।
-“ আমি সাধু পুরুষ নই, সত্যি টা আগেই বলে দিলাম। এতে যদি অসভ্যের ট্যাগ নিতে হয় সেটাও না হয় নিলাম।

চিত্রা আর কিছু বললো না। বেশ খানিকক্ষণ সময় নিশ্চুপ থেকে ফোন রাখছি বলে ফোনটা কেটে দিলো চিত্রা। নুপুর পুরে টা সময় চিত্রার দিকে চেয়ে ছিল।

তুষারদের দোতালা বাড়িটা সাদা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। বিয়ের গেটটা কি সুন্দর দেখাচ্ছে! অপূর্ব সাজবাতি!
ইশশ… চোখে চোখে ভীষণ বিঁধছে আলোগুলো? কেন যেনো মনে হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট মরিচ বাতি বিদ্রুপ করে হাসছে অধরার দিকে চেয়ে।

খোলা ছাদে হলুদের স্টেজ। গাঁদা ফুলের গন্ধ বাতাসের সাথে মিশে একাকার। বাড়ির সবার কি একটা উত্তেজনা, আনন্দ। চারিদিকে রংমহলের খেলায় অধরার যেনো ফিকে এক রঙহীন। ভালবাসার মানুষের ভালো থাকাটাই তো সবচেয়ে প্রিয় হওয়া উচিত। আচ্ছা ভালোবাসলে কি সবাই এমন স্বার্থপর হয়ে যায়?
সাউন্ড স্পিকারের গানবাজনা হচ্ছে! প্রিয় মানুষটার অন্যের হয়ে যাওয়ার উৎসব!
অধরা নির্বিকারচিত্তে ছাঁদের এক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। মনে বইছে অশান্তির ঝড়। আর কয়েক টা প্রহর তারপর এই পুরুষ টি তার জন্য চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

কথায় আছে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মায় বেশি। এই পুরুষ টা তার জন্য নিষিদ্ধ কথাটা মনে আসতেই ঠেলে কান্না পাচ্ছে অধরার।
আজ পড়নে তার পার্পল রাঙের সেই শাড়ি। যেটা সেদিন কেনা হলো। মুখে হালকা সাজ,শরীরে তাজা ফুলের গহনা। শরীরের পারফিউম আর তাজা ফুলের গন্ধে পাশে থাকা রাতুলকে বারংবার মাতোয়ারা করে তুলছে। কেউ যে তাকে মুগ্ধ দৃষ্টি তে দেখে চলছে সেদিকে অধরার ভ্রুক্ষেপ নেই। অধরা মনে তো না পাওয়ার যন্ত্রণা টার মাত্রা ভারি হচ্ছে।

তামিম খাঁন এখনও ছেলেকে স্টেজে দেখতে না পেয়ে রাফিকে ডাকেন। ডেকে তাড়াতাড়ি তুষারকে আসতে বলেন। ও বাড়িও তো যেতে হবে।

রাতুল অধরার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাফি সাথে নিচে নামলো।
তুষার নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা ঘেঁটে দেখছে। রাতুল ভেতরে এসে তুষার কে ল্যাপটপে ডুবে থাকতে দেখে তুষারের পিঠে কিল দিয়ে বলে-
-“ আজ তোর গায়ে হলুদ আর তুই এখনও ল্যাপটপে মুখ ডুবিয়ে বসে আছিস!
তুষার ল্যাপটপ বন্ধ করলো। বসা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিলো। তারপর রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ চল।
তুষারের ছাঁদে আসা মাত্রই অধরার বুক কেঁপে উঠলো। সাদা পাঞ্জাবি তে লোকটাকে কি সুন্দর লাগছে। তৃষ্ণা দৌড়ে গেলো ভাইয়ে কাছে। তুষারের হাত ধরে স্টেজের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল-
-“ উফ ভাইয়া আজকের দিনেও এতো লেট করে কেউ? ওদিকে যে চিত্রা তোমার জন্য অধীর হয়ে বসে আছে।

তুষার বিনিময়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তানিয়া বেগম আর তামিম খাঁন এসে ছেলের গালে হলুদ ছোয়ালো। এরপর তরিকুল খাঁন ও তার স্ত্রী তাসলিমা খাঁন এসে তুষার কে হলুদ ছায়ালো। চিত্রা দের ও বাড়ি থেকে রিয়াদ সিমি নুপুর আর চিত্রার মামা,ফুফু এসেছে। রিয়াদ বারবার তুষারের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটা রিয়াদের থেকে অত্যাধিক সুদর্শন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিমি বারবার রিয়াদ কে বলে চলেছে-
-“ দেখো চিত্রা আপুর স্বামী টা কি হ্যান্ডসাম।
প্রতিত্তোরে রিয়াদ বিরক্তিকর চাহনি দিচ্ছে সিমি কে। নুপুর অধরার পাশে বসে আছে। সবাই হলুদ শাড়ি পড়েছে কেবল অধরাই পার্পল। চোখে চশমা থাকায় নুপুরে মনে হলো মেয়েটা শান্ত,গম্ভীর আর ভীষণ পড়ুয়া মেয়ে।
অধরা খেয়াল করলো নুপুর নামের মেয়েটা বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে। অধরা এবার নুপুরের দিকে ঘুরে বসে বলে-
-“ এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো দেখছো?ভালো করে দেখো।
নুপুর ভরকে গেলো। চুরি করে ধরা পড়লে যেমন টা হয় ঠিক তেমন টাই। অধরা স্মিত হাসলো। মুহূর্তে পাশে কারো বসার অস্তিত্ব টের পেতেই দেখে রাতুল এসে আসেছে। মুখে হাতে তার হলুদ লেগে আছে। অধরার দিকে চেয়ে বলে-
-“ ভাইয়ে বিয়েতে কেউ এমন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে? হলুদ লাগিয়ে আসুন।
অধরার মন আবার অশান্ত হয়ে গেলো। যতই মন কে শান্ত করতে চাচ্ছে হুটহাট এক একটা কান্ড তাকে সেটা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তৃষ্ণা ও দৌড়ে আসলো অধরার হাত ধরে বলল-
-“ আপু আসো তুমিই বাকি আছো শুধু। তাড়াতাড়ি হলুদ লাগাও ছবি তুলবো।

অধরা যথই স্টেজের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ততই নিঃশ্বাস টা যেনো বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। এমন যন্ত্রণা কেনো হচ্ছে স্বাভাবিক হতে পারছে না কেনো? মনের উপর রাজত্ব চলে না তাই বলে কি মন বুঝতে পারছে না তার কষ্ট টা? এতোটা নির্দয় হয় কেনো মন?
কাঁপা কাঁপা পায়ে স্টেজে এগিয়ে গেলো। হলুদ টা হাতে ছোঁয়াতেই হৃদপিণ্ড টায় রক্তক্ষরণ হতে লাগলো। ইশ কি অসহ্য ব্যাথা। কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা তুষারের গালে ছোঁয়াল। মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করলে-
-“ অতঃপর শখের পুরুষ আজ থেকে আপনি আমার কাছে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। আপনার আর আমার ভিন্ন রাস্তা ভিন্ন সংসার হবে। আপনাকে আর এ জীবনে পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো।

আর এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো। এভাবে কি কষ্ট আটকে রাখা যায়?

যায় না,এখন তো সাউন্ড বক্সে গান বাজছে। রুমের ভেতর গলা ফেটে কান্না করলেও কেউ বুঝবে না। কান্না করে যদি একটু মনের কষ্ট টা হালকা হয়ে এই মরণব্যাধি যন্ত্রণা থেকে খানিকটা মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে তাই সই।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-২১+২২

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২১( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripte

পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢোলে পড়েছে। থেকে থেকে প্রকৃতি তার ঠান্ডা বাতাস মেলে ধরছে। চারিদিক অন্ধকার হতে লাগলো। রাস্তা ঘাটে কৃত্রিম লাইট গুলো এক এক করে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। গাড়ির মধ্যে চিত্রা কে জাপ্টে ধরে আছে তুষার। কতক্ষণ ব্যাপি ধরে আছে জানা নেই। সময় টা যেনো থমকে গেছে। আশেপাশে যে অন্ধকার হয়ে আসছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। হঠাৎ আকস্মিক গাড়ির হর্ণে তুষারের ভ্রম ভাঙে। আশেপাশে একবার চোখ বুলায়। চিত্রা গুটিশুটি হয়ে তুষারের শার্টের কলার এক হাত দিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। তুষার চিত্রার চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে শীতল কন্ঠে বলে উঠে-
-“ যন্ত্রণা কমেছে?
চিত্রা চোখ মেলে তাকায়। বুকে মাথা রেখেই উপর নিচ মাথা ঝাকায়। যার মানে কিছুটা কমেছে।
-“ এভাবেই থাকবেন নাকি বাসায় ফিরবেন? রাত হচ্ছে।

চিত্রা চট করে মাথা তুলে সোজা হয়। আশেপাশে চোখ বুলোয়। অলরেডি অন্ধকার হয়ে এসেছে। ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে সময় দেখে নিলো। শুষ্ক ঠোঁট দুটো জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে কাচুমাচু হয়ে বলল-
-“ বাসায় ফিরবো আমি,একটু পৌঁছে দিন না।
তুষার সময় ব্যায় করলো না আর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
-“ এসির পাওয়ার টা একটু কমিয়ে দিন না ঠান্ডা লাগছে ভীষণ।

তুষার এসির পাওয়ার একদম লো করে দিলো। চিত্রা সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ফের চোখ বন্ধ করে ফেললো। তুষার আড়চোখে একবার দেখে নিলো।
-“ আপনার যন্ত্রণার কথাটা আমায় জানালেন না তো চিত্রা।
-“ বুকটা ফেড়ে দেখানো গেলে দেখিয়ে দিতাম। মুখ থেকে কথা গুলো বের হতে চাইছে না। শ্বাসরুদ্ধ করে তুলছে।

চিত্রা চোখ বন্ধ রেখেই কথাটা বলে। তুষার চিত্রার ডান হাতের উপর নিজের বা হাত রাখে।
-“ আপনার জীবনে আসাটা কি বড্ড দেরি হয়ে গেছে আমার?
চিত্রা চোখ মেললো। সিটে মাথা রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে স্মিত হেসে বলল-
-“ আপনি জীবনে আরো কয়েকটা বছর আগে আসলে জীবনটা এখনকার থেকে আরো সুন্দর হতো। আমার অনুভূতি গুলো পূর্ণতা পেত। আমার ভালোবাসা ভালো লাগার প্রথম পুরুষ হতেন আপনি।

তুষার গম্ভীর হলো। চিত্রার বা হাত উচু করতেই চোখ গেলো অনামিকা আঙুলে। কয়েকদিন আগে এই আংটি টা নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়েছি। হাত টায় চুমু খেয়ে বলল-
-“ কাউকে ভালোবেসে ঠকে গেছেন মিস চিত্রা? যদি ঠকে থাকেন তাহলে শুকরিয়া আদায় করবেন দু রাকাআত নফল নামাজ পড়ে।

চিত্রা নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো। পলকহীনভাবে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ খারাপ লাগছে না?
তুষারের অকপট জবাব-
-“ একটু ও না।
-“ আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।
-“ কেনো? আপনার ভালোবাসার প্রথম পুরুষ হতে পারি নি সেজন্য?

চিত্রা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তুষার ইশারায় চিত্রা কে কাছে আসতে বললো। চিত্রা কিছুটা তুষারের দিকে চেপে বসলো। তুষার নিজের কাঁধ দেখিয়ে সেখানে মাথা রাখতে বললো। চিত্রা বাধ্য মেয়ের মতন তুষারের কাঁধে মাথা রাখলো। তুষার গাড়ি চালাতে চালাতে বলল-
-“ কাকে ভালোবেসে ঠকে গেছেন সেটা আজ শুনতে চাই না। কোনো একদিন নিরালায় বসে আপনার দুঃখবিলাসের গল্প শুনবো কেমন?আর আমি আপনার ভালোবাসার প্রথম পুরুষ হতে পারি নি তো কি হয়েছে,শেষাংশে তো শুধু আমিই থাকবো৷ প্রথম পুরুষ, নারী যে কেউই হতে পারে কিন্তু শেষাংশে সবাই যেতে পারে না। আমি আপনার শেষাংশের উপসংহার। এই আমিতেই আপনার মুক্তি।

চিত্রা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। চুপ রইলো। ঠিকই তো বলেছে,সবাই তো সূচনায় আসে কিন্তু উপসংহারে তো আর সবাই থাকতে পারে না।

তুষার চিত্রা দের বাসার সামনে গাড়ি থামায়। চিত্রা বাড়ির দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পেছনে ঘুরে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ সাবধানে যাবেন।
তুষার মাথা নাড়ালো। কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলে-
-“ নফল নামাজ টা মনে করে পড়ে নিবেন।
চিত্রা প্রশ্নাতীত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ নফল নামাজ কেনো?
-“ ঐ যে তখন বললাম নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করবেন।
-“ আচ্ছা পড়বো। আসি।

চিত্রা চলে গেলো। তুষার চিত্রার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

আজও সেই চায়ের টঙয়ের দোকানের সামনে বেঞ্চ টাতে বসে অপেক্ষা করছে রাতুল অধরার জন্য। অধরা তাড়াহুড়ো করে টঙের দোকানে এসে দাঁড়িয়ে অপরাধীর ন্যায় বলে-
-“ খুব কি অপেক্ষা করালাম আপনায়?
রাতুল স্মিত হেঁসে বলে-
-“ খুব একটা করতে হয় নি।
রাতুল গলা ছেড়ে দোকান দার কে বলল-
-“ মামা দুকাপ মালাই চা দিন।
ইশারায় রাতুল অধরাকে বেঞ্চে বসতে বললো। অধরা গায়ের চাদর ভালো করে জড়িয়ে ধরে বসে বেঞ্চ টাতে। দোকানদার দুকাপ চা রাতুল আর অধরার কাছে এনে বলে-
-“ এই যে মামা আপনাগো চা নেন।
রাতুল সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে একটা কাপ উঠিয়ে অধরার দিকে বাড়িয়ে দেয়। অধরা চায়ের কাপ হাতে নেয়। রাতুল নিজের কাপ টা উঠিয়ে সেটায় চুমুক বসায়। চা খেতে খেতে রাতুল অধরাকে জিজ্ঞেস করে, –
-“ আপনার ফিউচার প্ল্যান কি অধরা?
অধরা চা খাওয়া থামিয়ে দিলো। দৃষ্টি আকাশ পানে রেখে বলল-
-“ অনেক পড়াশোনা করা।নিজের আলাদা পরিচয় গড়ে তোলা।
রাতুল ফট করে বলে উঠে –
-“ বিয়ে করার প্ল্যান নেই?
অধরা তপ্ত শ্বাস ফেললো। কাপে থাকা চায়ে চুমুক দিয়ে বলল-
-“ জীবন কি একা চলে? চলে না তো। জীবনে চলার পথে একটা সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। আর যেদিন মনে হবে মনের মত কাউকে পেয়ে গেছি সেদিন অবশ্যই বিয়ে করবো।
-” কেমন সঙ্গী চান?
-“ খুব সাধারন সঙ্গী চাই, নির্ভেজাল সহজসরল প্রকৃতির। যে রোজ নিয়ম করে একটু ভালোবাসবে আমায়।
-“ একটু না রোজ নিয়ম করে আপনায় অনেকটাই ভালোবাসবো মিস অধরা।
রাতুলের বিরবির করে বলা কথাটা অধরার কান অব্দি পৌঁছালো না।
-“ কিছু বললেন?
-“ হ্যাঁ, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-“ হুম করুন।
-“ কখনও কাউকে ভালোবেসেছেন?

অধরা চুপ হয়ে গেলো। মুখে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। চশমা টা ঠেলে বলল-
-“ জ্বি।
মুহূর্তে মুখ খানা চুপসে যায় রাতুলের।
-“ খুব ভালোবাসেন?
-“ হুমম।
-“ বিয়ে করবেন নিশ্চয়ই তাকে?
-“ না।
রাতুলের মুখের এক্সপ্রেশন পাল্টে যায়।
-“ না কেনো?
-“ কখনও কি দেখেছেন বামুন কে চাঁদের নাগাল পেতে? সে হচ্ছে আকাশে জ্বলজ্বল করতে থাকা হাজার লক্ষ তারার মাঝে এক চাঁদ। তাকে ছোঁয়া যায় না সেখানে ধরা তো দূর।
-“ নিজেকে এতো মূল্যহীন ভাবছেন কেনো? আপনি কারো কাছে এক মূল্যবান কোহিনূর।
-“ হয়তো।
-“ আচ্ছা চা তো শেষ। তবে বাসায় ফেরা হোক। আপনার ড্রাইভার এসেছে?
-“ না।
-“ আমি পৌঁছে দিয়ে আসলে কোনো সমস্যা হবে?
-“ না সমস্যা হবে না বরং উপকার ই হবে।
-“ আচ্ছা চলুন তাহলে।

-“ এই ছোট প্যাকেট এক কাপ কফি দাও তো।

তৃষ্ণা কফি খাচ্ছিলো। রাফিকে তার থেকে কিছুটা দূরে বসে কথাটা বলতেই আড়চোখে তাকায়। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলে-
-“ রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন বেচে আছে হয়তো কফি। নিয়ে খান।
রাফি ভ্রু কুঁচকায়।
-“ আশ্চর্য তুমি গিয়ে আনতে পারছো না?
-“ আমি খাচ্ছি।
-“ আমিও তো খাবো।
-“ আমি কি আটকিয়েছি?
-“ আটকাও নি তবে এনেও তো দিচ্ছো না। বিয়ের পর স্বামী কফি খেতে চাইলে এভাবেই না করে দিবে মুখের উপর?
-” না গরম কফি এনে মুখের ভেতর ঢেলে দিব। সে শুধু গিলবে।
-“ আচ্ছা যাও যাও এখন কফি নিয়ে আসো৷ বিয়ের পরে কি করবে না করবে পরের টা পরে দেখা যাবে।

তৃষ্ণা তার আধখাওয়া কফির মগটা রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ কফিটা খেতে পারবেন?
-“ তোমার আধখাওয়া কফি টা আমি খাবো কেনো?
-“ ওয়াজ মাহফিলে যে হুজুর রা বলে শুনেন নি? আধখাওয়া কোনো কিছু খেলে মহব্বত বাড়ে।
-“ সেটা তো স্বামী স্ত্রী এর ক্ষেত্রে। কাজিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

মুহুর্তে তৃষ্ণার মুখের আকৃতি পরিবর্তন হলো। কফির মগটা শব্দ করে সেন্টার টেবিলে রেখে বলল-
-“ তো আমাকে হুকুম না করে আপনার ফরমায়েশ খাটার জন্য বিয়ে করে বউ নিয়ে আসেন চাচার ছেলে ভাই।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২২( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ তোকে না বললাম আজ ভার্সিটি যেতে না। রিয়াদ আর সিমি আসছে,তুই বাসায় না থাকলে বিষয় টা কেমন দেখায় বলতো?

চিত্রা ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো আর তখনই চয়নিকা বেগম কথাটা বলে উঠেন। চিত্রা একবার চয়নিকা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ওদের আসার জন্য কি আমার ভার্সিটির ক্লাস মিস দিতে হবে? এমনিতেই তো বিয়ের জন্য কয়েক দিন যেতে পারবো না।
-“ সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আজকের দিন টা না যা। খুব তো আহামরি ক্ষতি হবে না।
চিত্রা বিরক্ত হলো। কাটকাট গলায় বলল-
-“ আমার যে কি ক্ষতি টা হবে তা যদি জানতে তাহলে আর এটা বলতে না। যাই হোক তোমার কথা রাখছি ভার্সিটি যাচ্ছি না।
চিত্রা রুমে চলে গেলো ব্যাগ নিয়ে। চায়নিকা বেগম রান্না ঘরে গেলে রিয়াদের জন্য রান্নার ব্যাবস্থা করতে।

চিত্রা রুমে এসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তৃষ্ণাকে জানিয়ে দিলো সে আজ ভার্সিটি যেতে পারবে না। তৃষ্ণা কথাটা শুনে সে ও বলে দিলো সেও আজ তাহলে যাবে না।

দুপুরের শেষ প্রহরে আহমেদ বাড়িতে রিয়াদ ও তার স্ত্রী সিমির আগমন ঘটে। সিমি সম্পর্কে চিত্রার মামা তো বোন আর রিয়াদ সম্পর্কে খালাতো ভাই। সিমি বাড়িতে ঢুকেই চয়নিকা বেগম কে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী হয়ে পড়ে। রিয়াদ চয়নিকা বেগমের সাথে কুশলাদী করে জিজ্ঞেস করে –
-“ চিত্রা কোথায়,আর খালু কোথায়?
চয়নিকা বেগম চিত্রার ঘরের দিকে ইশারা করে বলে-
-“ চিত্রা ওর রুমে আর তোর খালু সে তো তার কাজে।
-“ চিত্রা আপু এখনও রুম থেকে বের হলো না আমাদের দেখতে?
মন খারাপ করে কথাটা বলল সিমি। চায়নিকা বেগম হেসে বলেন-
-“ হয়তো ঘুমিয়েছে। তোদের গলার আওয়াজ শুনলে নিশ্চয়ই আসতো।
রিয়াদ আর সিমি কে তাদের জন্য রুম দেখিয়ে দেয়। রিয়াদ একবার চিত্রার রুমের দিকে তাকিয়ে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়।

চিত্রা ঘুমায় নি মূলত ইচ্ছে করেই রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় থম মেরে বসে আছে। সে চাইছে না রিয়াদের মুখোমুখি হতে। এই ছেলের থেকে যথাসাধ্য দূরে থাকার চেষ্টা করবে চিত্রা।

প্রান্তিকের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তুষার রাতুল। তুষার আজ রাতুল দের বাসায় গিয়েছিল। রাতুলের মা কে পার্সোনালি ইনভাইট করতে তার বিয়ের। যেহেতু হাতে বেশি সময় নেই,কিছু কাছের মানুষকে তুষার নিজে গিয়েই ইনভাইট করছে। রাতুলের মা রোমিলা বেগম তুষারের পছন্দ অনুযায়ী সব খাবার রেঁধেছিলেন। তুষার রাতুল আর রোমিলা বেগম তিনজনে দুপুরের ভোজন সেরে নেয়। টুকটাক আলাপচারিতা করে তিনটের দিকে চলে আসে। তুষারের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে রাতুল বলে উঠে –
-“ আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই ফিরিয়ে দিবি আমায় তুষার?

তুষার ভ্রু কুঁচকায়।
-“ সাধ্যমতো চেষ্টা করবো যেনো না ফেরাতে হয়।
রাতুল স্মিত হাসে।
-“ সাধ্যের বাহিরে কিছু চাইবো না।
-“ তাহলে ফেরানোর প্রশ্নই আসছে না।
-“ ভরসা দিচ্ছিস?
-“ না আশ্বাস দিচ্ছি।
-“ তোর বিয়ে টা মিটে যাক তোর কাছে, না না তোদের কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।

তুষার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে রাতুলের পানে চাইলো। কিছু একটা আন্দাজ করলো। বুঝতে পারলো কি পারলো না তা বুঝা গেলো না।

-“ আজ ভার্সিটি ছিলো না তোমার?
তৃষ্ণা কে এই দুপুরে বাসায় দেখে অবাক হয়ে বলে রাফি। মূলত তৃষ্ণার বাসায় ফিরতে বিকেল হয়। সেখানে আজ দুপুরে বাসায়। সকালে ব্যাবসার কাজে ভোরেই চলে যেতে হয় অফিসে। সেখানে আজ প্রচুর কাজ করতে হয়েছে সামির খাঁনের অবর্তমানে। কাজ শেষে টায়ার্ড হয়ে বাসায় ফিরতেই সোফায় তৃষ্ণা কে উক্ত কথাটা বলে। তৃষ্ণা রাফির ঘামার্তক মুখ টার দিকে একবার তাকিয়ে বলে-
-“ যাই নি ভাইয়া।
-“ কেনো?
-“ আমার ভাবি যায় নি তাই আমিও যাই নি ভাইয়া।

রাফি গলার টাই টা ঢিলে করতে করতে সোফায় বসে বলে-
-“ প্লিজ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও না।
-“ জ্বি ভাইয়া এনে দিচ্ছি।
কথাটা বলে তৃষ্ণা রান্না ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি গ্লাসে ঢেলে সেটায় নরমাল পানি মিক্স করে রাফির সামনে ধরে বলে-
-“ নিন ভাইয়া আপনার পানি।
রাফি গ্লাস টা নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নেয়। প্রান টা জুড়িয়ে গেলো রাফির। খুব তেষ্টা পেয়েছিল। খালি গ্লাস টা সামনে থাকা টেবিলটায় রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তৃষ্ণার দিকে। এতো সুন্দর করে তার কথা বলার ধরন মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। তার উপর যা বলছে কেমন বাধ্য মেয়ের মতো সব শুনছে।
-“ চাচি কোথায়?
-“ ভাইয়া মা তো লিনা আন্টিদের বাসায় গেছে ইনভাইট করতে।
-“ তুমি গেলে না যে? তোমার লিনা আন্টির ছেলে বোধহয় হা-হুতাশ করছে তুমি যাও নি বলে।

তৃষ্ণা লজ্জা পাওয়া মুখশ্রী নিয়ে বলে-
-“ একদম ঠিক ধরছেন ভাইয়া। তুর্য কেবলই ফোন করে হাহুতাশ করছিল ভাইয়া আমি কেনো গেলাম না সেজন্য। ভাইয়া আমার যাওয়া উচিত ছিলো তাই না বলুন?
-“ কি তখন থেকে প্রত্যেক লাইনে লাইনে ভাইয়া ভাইয়া করে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো ভ্যা ভ্যা করে চলছো ইডিয়েট।

রাফি আচমকা এক রাম ধমক দিয়ে বসলো তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা তার ত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলে-
-“ ভাইয়া আপনি তো আমার ভাইয়া লাগেন,আর বয়সেও বড়। তো আমি তো আপনায় ভাইয়াই ডাকবো তাই না? ছ্যাইয়া তো আর ডাকতে পারি না।

তুষার বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ ছ্যাইয়া না ডাকতে পারো প্লিজ ভাইয়া ডেকে মাথা গরম করিয়ো না।
-“ তাহলে কি নাম ধরে ডাকবো?বলবো এই রাফি শুনুন এভাবে?

এরমধ্যে তৃষ্ণার ফোন বেজে উঠে। তৃষ্ণা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে হাসে। সেটা রাফির নজরে পরে। সন্দেহাতীত হয়ে বলে-
-“ কে ফোন দিছে?
-“ লিনা আন্টির ছেলে তুর্য।
-“ তুর্য না তোমার বয়সে বড়। ভাই কেনো ডাকো না?
-“ ধূরু কি বলেন তাকে কি আর ভাইয়া ডাকা যায়? ভাইয়া ডাকলে তার হার্টে ব্যাথা করে। আমি জেনেশুনে কারো হার্টে ব্যাথা দি না।
-“ এদিকে ক্ষণে ক্ষণে আমায় ভাইয়া ডেকে ডেকে হার্টের ভেতর জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছো আর বলছো জেনেশুনে ব্যাথা দাও না।

রাফি বিরবির করে কথাটা বললো । তৃষ্ণার কর্ণধার অব্দি পৌঁছালো না।
-“ কি বিরবির করছেন ভাইয়া?
রাফির চোখ মুখ শক্ত হলো
-“ কিছু না,আর একবার ভ্যা ভ্যা করে ভাইয়া ভাইয়া বলে কান ঝালাপালা করলে চড়িয়ে দিব গাল লাল করে।
-“ এক মিনিট হ্যাঁ ফোনটা না হয় কেটে যাবে। কথাটা বলে নেই ভাইয়া।

তৃষ্ণা ফোনটা রিসিভ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাফি রাগান্বিত হয়ে তাকালো তৃষ্ণার পানে। তৃষ্ণার সেদিকে খেয়াল নেই। বাহিরে বের হয়ে বাগানের দোলায় বসে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে সালাম। তৃষ্ণা সালামের জবাব দেয়।
-“ কেমন আছো তৃষ্ণা?
তৃষ্ণা মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে-
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?
-“ এই তৃষ্ণা খাবার টা গরম করে দাও ক্ষিদে পেয়েছে খুব।

কথাটা বলতে বলতে রাফি এসে তৃষ্ণার সামনে দাঁড়ায়। তৃষ্ণা রাফির পানে তাকিয়ে বলে-
-“ ভাইয়া আপনি তো পোশাক পাল্টান নি। আগে ফ্রেশ হোন আর খাবার টেবিলেই আছে খেয়ে নিন। দেখছেন তো ইমপোর্টেন্স কথা বলছি।
রাফি সূচালো দৃষ্টি দিয়ে তৃষ্ণা কে পরখ করলো। ফোনটা কেঁড়ে কে’টে দিয়ে বলে-
-“ একটা মানুষের ক্ষুধার থেকে কথা বলাটা কখনই ইমপোর্টেন্স হতে পারে না।
তৃষ্ণা রাফির থেকে ফোন টা কেঁড়ে নিয়ে বলে-
-“ আমি কি খাবার ধরে বসে আছি নাকি খাবার সব লুকিয়ে রেখেছি। আপনার ক্ষুধা পেয়েছে গিয়ে খান।
-“ তুমি চলো বেড়ে দিবে। এ বাড়ির ছেলেরা কখনও খাবার নিজ হাতে বেড়ে খায় না এটা নিশ্চয়ই অজানা নয়।
-“ না এ বাড়ির ছেলেরা তো লাটসাহেব তারা কেনো নিজ হাতে ভাত বেড়ে খাবে। হাত তো লজ্জায় মিইয়ে যাবে ভাত বেড়ে খেলে যত্তসব।

কথাটা বলে হনহন করে চলে যায় তৃষ্ণা। রাফি তৃষ্ণার পেছন পেছন যায়।

-“ এড়িয়ে চলছো আমায়? কিন্তু এড়িয়ে চলে কোনো লাভের লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।

চিত্রা সন্ধ্যা হওয়ায় রুম থেকে বের হয় মাগরিবের নামাজ টা পড়ে। এই সন্ধ্যা বেলায় সব সময় হালকা পাতলা নাস্তা করার অভ্যাস তার। আজ ও ব্যাতিক্রম হবার নয়। রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে আসে একটু নুডলস রান্না করতে। রিয়াদ বসা ছিলো বসার ঘরে। চিত্রা কে রান্না ঘরে আসতে দেখে। সিমি তখন রুমে ঘুমে ব্যাস্ত। রিয়াদ রান্না ঘরে ঢুকে,চিত্রা বলে এক কাপ কফি বানিয়ে দিতে। চিত্রা শুনেও না শোনার ভান করে নুডুলস টা রান্না করে বাটিতে ঢেলে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে হাক ছেড়ে তার মা’কে ডেকে বলে রিয়াদ কে যেনো কফি বানিয়ে দেয়।

রিয়াদের ইগো তে লাগলো। তখন শক্ত মুখে কথাটা বলে উঠে। চিত্রা রিয়াদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ হু আ’র ইউ ম্যান? কোনো প্রিন্স চার্মিং নাকি কোনো বিল গেটস যে আপনাকে ইগনোর বা এভয়ড করা যাবে না।
-“ ইউ নো হু আই অ্যা’ম ইউর।
-“ ইয়াহ আই নো। বোনের স্বামী দুলাভাই।
রিয়াদ চোখ টিপ দিয়ে বলল-
-“ দ্যাট’স লাইক অ্যা গুড গার্ল। রিমেম্বার শালি অর্ধেক ঘরওয়ালি ইউ নো?
চিত্রার ইচ্ছে করলো গরম নুডলস টা রিয়াদের মুখে চেপে ধরতে। রিয়াদ যদি ওর রিলেটিভ না হতো তাহলে এতক্ষণে চড়িয়ে গাল লাল করে দিত ফাজিল ছেলের।
চিত্রা আর ব্যাক্য ব্যায় না করে নুডুলস টা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।

অধরা বেলকনি তে বসে ছিলো ইজি চেয়ারে। হাতে তার হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বই টি। বইটা মনোযোগ সহকারে পড়ছে সে। ছোট্ট একটা ছেলে স্বামী,শ্বাশুড়ি আর দেবর নিয়ে সুরাইয়ার ছোট্ট সংসার।সংসারে তেমন অভাব ছিল না। মাস শেষে পাওয়া বেতন দিয়ে বেশ চলে যেত।সুরাইয়ার ছোট ছেলের নাম ইমন।ইমনের বাবা একদিন অফিস করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।ইমনের বাবা হারিয়ে যাওয়ার আগে তাকে ইমনের মায়ের বলা হয়ে উঠেনি আর তাদের আলোকিত করে আরেকজন নতুন সদস্য আসতে চলেছে।এভাবে অনেকদিন কেটে গেল ইমনের বাবার খোঁজ নেই।কোনো পরিবারে শিশুর আগমন হলে মনে হয় যেন ঘর আলোকিত হয়, কিন্তু সুরাইয়ার মনে হয়েছিল সে আরও ঘর আঁধার করে দিয়েছে।সুরাইয়ার মনে এক ভ্রান্ত ধারনা জন্মালো এই ছোট্ট শিশুটিই নাকি তার বাবা হারিয়ে যাওয়া এবং সকল অশান্তির কারণ।ছোট্ট শিশুটির নাম রাখা হয় সুপ্রভা।কিন্তু এই সংসারের মায়ায় ছোট্ট মেয়ে সুপ্রভা নিজেকে আর বেশিদিন আষ্টেপৃষ্ঠে রাখতে পারিনি। ছোট সুপ্রভাকে যখন মা বললো তুই মরতে পারিস না!ছাদে গিয়ে লাফ দে।সুপ্রভা তাই করলো,মনে হচ্ছিলো বারবার বলি এই ভুলটা করো না!কিন্তু সেই ছোট্ট সুপ্রভা তাই করলো। অভিমানি ছোট্ট মেয়েটি জানল না, বুঝল না।এই পৃথিবীতে তার জন্যে কত ভালবাসাই না জমা ছিল।

সুপ্রভা যখন মারা গেলো, তখন অধরা খেয়াল করলো মনের অজান্তেই চোখের কোণে এক ফোঁটা জল জমেছে। এই নিয়ে চার থেকে পাঁচ বার পড়ে হয়ে গেলো অধরার হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটা। প্রতিবারই সুপ্রভার মৃত্যু অংশ টুকু পড়া কালিন তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। অধরার ভাবনাগুলো কেমন যেন প্রতিবার ঝাপসা হয়ে আসে। কতই না বিচিত্র মানুষের জীবন। লেখকের কয়েকটা কথা ভীষণ ভালো লেগেছে।

ঘর খুলিয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যাই
আমার ঘর ভর্তি চাঁন্দের আলো
ধরতে গেলেই নাই………..!”

হুমায়ূন আহমেদের ভাষ্যমতে,
পৃথিবী শূন্যস্থান পছন্দ করে না।
তিনি বলতেন,কিছু না কিছু,কেউ না কেউ
শূন্যস্থান পূর্ণ করে দেয় কিংবা দখল করে নেয়।

অধরা আনমনে আকাশ পানে তাকিয়ে বইটা বুকে জড়িয়ে বলল-
-“ আমার শূন্য স্থান ও একদিন পূর্ণ হবে। পৃথিবী নিজ দায়িত্বে পূর্ণ করবে সেই শূন্য জায়গা। আমি অধির আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে আছি যে।

#চলবে?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ ২ পর্ব-১৯+২০

0

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৯( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ এই ছ্যামড়ি রাফি ভাইকে সব বলে দিছিস কেনো?
চিত্রা খেতে বসেছিল তৃষ্ণার ফোন পেয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই কথাটা বলে উঠে তৃষ্ণা। চিত্রা মুখে নুডলস নিতে নিতে বলে-
-“ ছেলেটা তো ফ্রট। তোর ভালোবাসা বুঝে না আবার অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। তোর কষ্ট হচ্ছিল দেখেই তো কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম।

তৃষ্ণা মাথায় হাত দিলো।
-“ সেজন্য তুই বলে দিবি?
-“ হ্যাঁ।
-“ গাঁধি একটা তুই জানিস।
-“ আশ্চর্য গাঁধি বলছিস কেনো?
-“ রাফি ভাই তো জেনেই গেলো আমি তাকে ভালোবাসি।
-“ তাতে কি তুই ইগনোর করবি।
-“ সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিছে।
নুডলস টুকু আর মুখে নিতে পারলো না চিত্রা। অবাক হয়ে শুধালো-
-“ কিহ! এই ছেলের ক্যারেক্টর এমন ঢিলা কিউ বেহনা? খাঁন বাড়ির ছেলেরা এমন ও হয়?
-“ চপ। আমারই বুঝতে ভুল হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ঐ মেয়ের সাথে রাফি ভাইয়ের রিলেশন আছে কিন্তু না। ঐ মেয়ের অলরেডি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ঐ মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
-“ তুই তো নিজেই একটা গাঁধি আবার আমাকে বলিস। না জেনে না শুনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে কেটে বুক ভাসালি। আর আমিও আহাম্মকের মতো ঐ ছেলেরে যাতা বললাম।
-“ এখন আমি কি করবো সেটা বল।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তুই কি করবি মানে?
-“ ঐ যে বললাম প্রস্তাব দিছে বিয়ের।
-“ নাচতে নাচতে হ্যাঁ বলে দে গিয়ে।
-“ ধূরু মজা করিস না। বল না কি করবো?
-“ আমি জানি নাকি তুই কি করবি। তোর মন যেটা বলে সেটা কর।
-“ আচ্ছা এখন রাখি পরে ফোন দিব নি।

তৃষ্ণা ফোন কেটে দেয়। চিত্রা নুডুলস টা খেয়ে নিজের রুমে ঢুকতেই চয়নিকা বেগম ডেকে উঠে। চিত্রা চয়নিকা বেগমের রুমে ঢুকে। চয়নিকা বেগম মেয়ে কে বিছানায় বসতে বলে।
-“ তোর খালা,মামি, মামা সবাই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে আসবে। রিয়াদ আর ওর বউ পরশু আসবে। পরশু বরং ভার্সিটি যাস না। অনেক গুলো বছর পর আসছে ওরা।

মুহুর্তে মুখটায় ঘোর আমাবস্যা নেমে আসলো চিত্রার। হাস্যোজ্জ্বল মুখ টায় ভিড়লো কালো অতীত। অনুভূতি রা পাগলপড়া হলো। দম টা বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো। মনে পড়ে গেলো কিছু অতীত নামক বিষাক্ত অধ্যায়। কোনো রকমে জবাব দিলো-
-“ আমি আসছি মা শরীর টা ভালো লাগছে না।

চিত্রা চলে গেলো। চয়নিকা বেগম মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলো।

চিত্রা ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিছানায় থম মেরে বসে রইলো। স্টাডি টেবিলের সামনে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা পুরোনো একটা ডায়েরি বের করে। ডায়রি টার দিকে চেয়ে আনমনে বলে উঠে,
-“ অতীত টা আজও তাড়া করে বেড়ায়। কিচ্ছু ভুলি নি আমি,সব মনে আছে। এবার আসছেন আমার শহরে। যন্ত্রণা কে আমন্ত্রণ জানান। লাইফ টা আপনার হ্যাল হয়ে যাবে। একই যন্ত্রণায় আপনিও পুড়বেন যেই যন্ত্রণায় পুড়েছি আমি চারটা মাস।

ডায়েরি টার প্রথম পৃষ্ঠা বের করে সেখানে আজকের তারিখ টা লিখে রাখলো চিত্রা। তারপর ডায়েরি টা বন্ধ করে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ট্যাপ ছেড়ে চোখে মুখে পানির ছিটা দেয়। মন মস্তিষ্ক শীতল করে বিছানায় পা তুলে বসে।

বাহির থেকে ভেসে আসে কলিং বেলের আওয়াজ। চয়নিকা বেগম চিত্রা কে ডেকে বলেন দরজা টা খুলতে। চিত্রা রুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছে আসে। পরপর কলিং বেল বাজায় চোখ মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গেলো।
-“ আরে বাবা আসতেছি তো। এতো বেল বাজানোর কি দরকার।

কথাটা বলে চিত্রা দরজা খুলে দেয়। মুহুর্তে ভেসে উঠে আরহামের মুখশ্রী। চিত্রা দরজায় হাত দিয়ে একটু মুখ বের করে বলে-
-“ আরে আপনি আমাদের বাসায় কেনো। আপনার বাসায় কি জায়গা নেই নাকি থাকার।
-“ আন্টি আঙ্কেল কোথায়?
-“ বাবা বাসায় নাই। আর মা ঘুমায়।

কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আরহাম চিত্রার হাত চেপে ধরে। টান দিয়ে বলে-
-“ চলো আমার বাসায়,বিয়ে করবো আমরা।
চিত্রা আরহামের থেকে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-
-“ আরে পাগল নাকি আপনি। আমি অলরেডি অর্ধেক ম্যারিড। লজ্জা করে না একজন হাফ অর্ধেক মেয়েকে বিয়ে করার কথা মুখে আনতে।
-“ হাফ হয়েছো আমিই না হয় পুরোপুরি করবো।
-“ এই যে আমার পায়ের জুতা চিনেন,এই জুতা দিয়ে এমন একটা বারি দিব না একদম আমাকে বিয়ে করার ভূত মাথা থেকে পালাবে।
-“ আহ এতো কথা না বলে চলো। তোমার বাপ চলে আসলে তোমাকে নিয়ে যেতে দিবে না।
-“ কে এসেছে রে চিত্রা?

চয়নিকা বেগমের ডাক শুনে চিত্রা জোরে বলে-
-“ তোমার মেয়ের জামাই হতে এসেছে টোকাই, দেখে যাও।
চয়নিকা বেগম রুম থেকে বের হলেন। দরজার কাছে এসে আরহাম কে দেখে বলে-
-“ এই ছেলে তুমি আমাদের বাসায় কেনো? বের হও বলছি।

আরহাম চিত্রার হাত টেনে চলে যেতে নিলে চয়নিকা বেগম বলে উঠে-
-“ এই আমার মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
-“ আপনিই তো বললেন বের হতে। তাই চলে যাচ্ছি।
-“ আরে আমার মেয়েকে ছাড়ো। ওর বাবার কানে গেলে তোমার কি হবে বুঝতে পারছো?
-“ আর মা আরেকটু বলো তুষারের কানে গেলে ওর কি অবস্থা হবে। কলি’জা কে’টে ভুনা করে খাবে।
-“ আমি কাউকে ভয় পাই না।
আরহামের ওভার স্মার্ট সেজে বলা কথাটা ঠিক হজম হলো না চিত্রার। মুখে আঙুল দিয়ে বলে-
-“ সিরিয়াসলি?
-“ হ্যাঁ।
চিত্রা রুমে ঢুকে নিজের ফোন টা নিয়ে তার বাবার নম্বরে কল দিয়ে বাহিরে এসে বলে-
-“ হ্যালো বাবা তোমার ঐ বিরোধী দলের আরহাম এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। আমি কি চলে যাব? নাকি এবার কিছু একটা করবে।

সাহেল আহমেদ সাভার নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখানকার রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর মালিকের সাথে কথা বলছিলো। পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠায় ফোন রিসিভ করতেই তার মেয়ে গড়গড় করে কথাটা বলে উঠে। কপালে চিন্তার দু ভাজ পড়ে। উৎকন্ঠা হয়ে বলে-
-“ উল্টা পাল্টা কিছু করছে না তো?
-“ আমাকে নিয়ে যেতে চাইছে। যাব চলে?
-“ আমি আসছি।

চিত্রা কান থেকে ফোন টা নামিয়ে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বাবা আসতেছে আর আমি চুলায় খুন্তি পুড়া দিয়ে এসেছি।
আরহাম অবাক হয়ে বলে-
-“ খুন্তি পুড়া দিয়ে এসেছো কেনো?
-“ খুন্তি পুড়া দিয়ে দাগ বসাবো। জীবনেও আর চেয়ারম্যান বাড়ির মুখো যেনো আসতে না দেখি সেজন্য।

আরহাম এক ঢোক গিললো। বেশি হিরো গিরি দেখাতে এসে না আবার মানসম্মান যায়।
সাহেল আহমেদ তড়িঘড়ি করে বাসায় আসেন। সদর দরজার সামনে আরহাম কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাজখাঁই গলায় বলে-
-“ এই ছেলে আমার বাসায় কি তোমার? আর দারোয়ান তোমায় ঢুকতে দিলো কি করে।
আরহাম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল-
-“ ঘুষ দিয়ে ঢুকছি।
চিত্রা তার বাবার গলার আওয়াজ শুনে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলে-
-“ কেমন দারোয়ান পুষো বাবা তুমি যে সে ঘুষ দিলে ঢুকতে দিয়ে দেয় বাসায়। আর এই বেলেহাজ ছেলের লাজলজ্জা তো কিছুই নেই। দু ঘা দিয়ে দিতো পারো না ছেলেপেলে লাগিয়ে।
-“ আরহাম দেখো অশান্তি করো না চলে যাও। তুমি জানো তোমার বাবার আর আমার মাঝে রেষারেষি অনেক।
-“ আপনার মেয়ে টাকে দিয়ে দিন আঙ্কেল নিয়ে চলে যাই।

চিত্রা গরম খুন্তি নিয়ে আরহামের মুখের সামনে ধরে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার,এই ছেলের মাত্রাতিরিক্ত পাগলামি তে।
-“ আর একবার আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দেখ এই খুন্তি তোর পিঠে পড়বে। তোর মতো পাগল দুটো দেখি নি আমি।

সাহেল আহমেদ মেয়েকে টেনে দূরে সরে নিয়ে আসে। এরমধ্যে বাহির থেকে গাড়ির আওয়াজ আসে। সাহেল আহমেদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তুষার এসেছে,আসার আগে ছেলেটা কে বলে এসেছে সব।

তুষার গাড়ি থেকে নামে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে রাগে। রাতুল তুষারের নামার পর গাড়ি থেকে নামে। তুষার বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখে সদর দরজায় একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভেতরে সাহেল আহমেদ মেয়েকে ধরে রেখেছে। চিত্রার হাতে খুন্তি,ছাড়া পাবার জন্য ছোটাছুটি করছে। তুষার কে দেখতে পেয়ে সাহেল আহমেদ মেয়েকে ছেড়ে দেয়। চিত্রা ছাড়া পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে তুষারকে।

চিত্রা এবার সব রাগ ক্ষোভ নিয়ে তুষারের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ এই আপনার হবু বউকে এই ছেলে ডিস্টার্ব করে রাস্তাঘাটে। আজ বাসা অব্দি চলে এসেছে। আপনি চুপচাপ মেনে নিবেন? মে’রে ওর হাত পা ভে’ঙে ফেলতে পারবেন না?

তুষার চিত্রার দিকে তাকালো। রেগে বোম হয়ে আছে। শান্ত কন্ঠে বলে-
-“ আপনি এটাই চান?
-“ হ্যাঁ, এই ছেলে হুটহাট শরীর স্পর্শ করে। হাত ধরে টানাটানি করে।
তুষার চুপচাপ শুনলো। হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করলো। রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। আরহামের দিকে শীতল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে-
-“ আপনি চিত্রা কে স্পর্শ করার আগে অনুমতি নিয়েছিলেন?
আরহাম ঢোক গিলে। তুষারের নাম আগেও শুনেছে। ছেলেটার রাগ ক্ষমতা তাদের থেকেও বেশি। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে-
-” না।
সহসা তুষার তার শক্তপোক্ত হাত দিয়ে আরহামের গালে চড় বসিয়ে দেয়। চড়ের ভার সইতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে যায় আরহাম। রাতুল টেনে ধরে তুষার কে। ফিসফিসিয়ে বলে-
-“ করছিস টা কি। কন্ট্রোল ইউর সেলফ।
রাতুল এগিয়ে গেলো আরহামের দিকে। আরহামের কলার ধরে বলে-
-“ বয়স কম তোমার,বাবার কথায় না নেচে এসব থেকে দূরে থাকো। তাতেই তোমার মঙ্গল। আর যার দিকে লেলিয়ে দিয়েছে তোমার বাবা সে কিন্তু তুষারের অক্সিজেন সো অক্সিজেন নিয়ে টানাটানি করলে তোমার অক্সিজেনই কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে। এবার বাসায় যাও।

আরহাম কে বিন্দু মাত্র নড়তে না দেখে তুষার রাতুলের দিকে তাকায়। রাতুল ইশারায় শান্ত থাকতে বলে।
-“ কি হলো যাচ্ছো না কেনো? আরো খেতে চাও তুষারের শক্তপোক্ত হাতের চড়?

আরহাম ডানে বামে মাথা নাড়ালো।
-“ তাহলে বাসায় যাও। বাবার কথায় না নেচে ভালো হও।
আরহাম একবার সবার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। চিত্রা শব্দ করে শ্বাস ফেলে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। সাহেল আহমেদ তুষারকে আর রাতুল কে সোফায় বসতে বলে। তুষার আর রাতুল সোফায় বসে। চয়নিকা বেগম রান্না ঘরে যান কফি বানাতে।
-“ আঙ্কেল চিন্তা করবেন না আর দ্বিতীয় বার এ বাড়ি মুখো আর চিত্রা মুখো ও হবে না।
-“ ছেলেটাকে নিজের সুবিধার জন্য জাস্ট ইউজ করছে আকবর।
-“ আমি সামলে নিব।
সাহেল আহমেদ তপ্ত শ্বাস ফেলেন। চয়নিকা বেগম কফি এনে রাতুল তুষার কে দেয়। রাতুল তুষার কফিটা খেয়ে চলে আসতে নেয়। সদর দরজায় আসতেই দেখে চিত্রা ও তার পেছন পেছন এসেছে। তুষার চিত্রার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ নিশ্চিন্তে ঘুমান,আপনার চাওয়া পূরণ হবে।
চিত্রা তুষারের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তুষার গাড়িতে উঠে বসতেই রাতুল বলে উঠে –
-“ ছেলেটাকে আর কিছু করিস না তুষার। লাস্ট চান্স দে। এরপর কিছু করলে আটকাবো না।
-“ রক্তে টান লেগেছে?
রাতুল নিশ্চুপ হয়ে যায়। তুষার গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে-
-“ লাস্ট চান্স দিলাম। এরপর রক্ষে নেই।

রাতুল মাথা নাড়ায়। তুষার গাড়ি চালাতে শুরু করে। জাহাঙ্গীরনগর আসতেই রাতুল গাড়ি থেকে নেমে যায়। তুষার রাতুল কে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।
রাতুল চুপচাপ হাঁটতে থাকে। বারবার কানে বাজছে তুষারের বলা কথা “ রক্তে টান লেগেছে?” সত্যি কি তাই?। কথাটা আনমনে ভাবতেই সামনে তাকিয়ে দেখে অধরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে শরীরে চাদর জড়াতে জড়াতে হেঁটে আসছে। এই ভার্সিটি তে পড়ে অধরা রাতুল জানে। কিন্তু রাতে অধরা কে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়। দ্রুত হাঁটা ধরে অধরার কাছে যায়। অধরার নাম ধরে ডেকে উঠে।

অধরার আজ দেড়ি হয়ে গেছে। সামনে ভার্সিটি তে প্রোগ্রাম। সেটা নিয়ে ডিসকাশন করতে করতে রাত হয়ে গেলো। আকস্মিক নিজের নাম ধরে কারো ডাকার শব্দে পাশ ফিরে দেখে রাতুল এগিয়ে আসছে। অধরা চোখের চশমা টা ঠিক করে বলে-
-“ রাতুল ভাইয়া আপনি!
-“ হ্যাঁ আমি। আপনি আজ এখনো এখানে কেনো?
-” ভার্সিটির প্রোগ্রাম সামনে সেটা নিয়েই আলোচনা করতে করতে দেরি হয়ে গেলো।
-“ গাড়ি এনেছেন?
-“ হ্যাঁ ড্রাইভার আঙ্কেল এসেছে নিতে।
-“ আচ্ছা সাবধানে যাবেন।
-“ জ্বি। আপনি বাসায় যাচ্ছেন?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা আপনি ও সাবধানে যাবেন।
-“ আচ্ছা খুব কি তাড়া আছে আপনার বাসায় যাওয়ার?

অধরা হাত ঘড়িটায় টাইম দেখে বললো-
-“ কেনো?
-“ না মানে এক কাপ চা খাওয়ার জন্য সময় হবে?
অধরা আশেপাশে তাকালো। সাত টা বাজে। অধরার ও খুব চা খেতে ইচ্ছে করছিল। রাতুলের বলা অফার টায় রাজি হয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ খাওয়া যেতেই পারে। ভিষণ চা খেতে ইচ্ছে করছিলো। ভেবেছিলাম বাসায় গিয়ে খাবো। তবে এখান কার চা টা বেশ পছন্দের আমার।
-“ তাহলে চলুন ঐ টঙের দোকান থেকে খাওয়া যাক।
অধরা স্মিত হেঁসে বলে-
-“ নিশ্চয়ই।

অধরা আর রাতুল পাশাপাশি হাঁটে। চারিপাশে বইছে শীতল ঠান্ডা বাতাস। সেই শীতল ঠান্ডা বাতাস অধরা আর রাতুলের শরীরে মিশে যাচ্ছে। কয়েক কদম এগিয়ে এসে সেই টঙের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। রাতুল দোকান টার ভেতর ঢুকে মাটির কাপে দু কাপ মালাই চা নিয়ে আসে। এক কাপ অধরার হাতে ধরিয়ে দেয়। টঙের সামনে থাকা বেঞ্চ টায় বসে পড়ে দু’জনে। অধরা ফু দিয়ে একটু একটু চা মুখে নেয়। রাতুল চা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে অধরার কে আড়চোখে দেখে। মেয়েটার মাঝে কিছু তো একটা আছে যেটা রাতুল কে ভীষণ ভাবে টানে।

মেয়েটাকে উচ্চস্বরে কখনো হাসতে দেখে নি,সাজতে ও দেখে নি। যখনই দেখা হয়েছে তখনই এমন সাদামাটা ভাবেই দেখেছে। অধরাকে বেশির ভাগ সাদা রঙের পোষাকেই দেখেছ রাতুল। এই তো আজও সাদা রঙের গোল জামা পড়েছে। বরাবরের মতো আজও সাইডে সিঁথি করে চুল গুলো বেণি করেছে। মুখে কোনো রকম প্রসাধনীর ছিটেফোঁটা নেই। একদম শুভ্র পরি। অধরা নাম না রেখে শুভ্রতা রাখা উচিত ছিলো নাম।

-“ ভাইয়া আসি তাহলে আজ।
অধরার কথায় ঘোর ভাঙে রাতুলের। রাতুল কাপের দিকে তাকিয়ে দেখে খাওয়া শেষ। দোকানে বিল দেওয়ার জন্য যেতে চাইলে অধরা বাঁধা দিয়ে বলে-
-“ আমি বিল দিয়ে দিছি ভাইয়া,আপনাকে দিতে হবে না।

রাতুল কিছুটা রাগ নিয়ে বলে-
-“ আপনি কেনো দিছেন বিল। আমি খেতে নিয়ে এসেছি আমি বিল টা আমার দেওয়ার কথা।
-“ আরেক দিন না হয় আপনি দিবেন বিল। আজ আসি বরং,অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।
-“ তারমানে আরেক বার আমাদের চা খাওয়া হবে একসাথে?
-“ কেনো নয়। ইনশাআল্লাহ হবে।
-“ আশ্বাস দিচ্ছেন তাহলে?
-“ জ্বি।
-“ সাবধানে যাবেন, আল্লাহ হাফেজ।
-“ আপনিও, আল্লাহ হাফেজ।

অধরা চলে যায়। রাতুল অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। দৃষ্টির অগোচরে যেতেই রাতুল নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।

#চলবে?

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২০( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripte

-“ কি ব্যাপার আজ এতো প্রানউচ্ছাস দেখাচ্ছে কেনো? প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি?

রোমিলা বেগমের কথায় কোনো ভবান্তর হলো না রাতুলের। ডাইনিং টেবিলে বসে ফলের ঝুড়ি থেকে আপেল নিয়ে সেটায় কামড় বসালো। রোমিলা বেগম রাতুলের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ফের বলে-
-” কিছু জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
রাতুল আপেল টা শেষ করলো। ফলের ঝুড়ি থেকে এবার একটা আঙুর তুলে নিয়ে বলে-
-“ প্রানউচ্ছাস থাকলেই যে সে প্রেমে পড়বে এটা কোথায় লিখা আছে?
-“ কোথাও নেই লিখা আমি নিজে থেকেই বললাম।
-“ তেমন কিছুই না মা।
-“ ওহ্ তোকে দ্বারা যে এসব হবে না আমার আগেই বুঝে নেওয়া উচিত ছিলো।
-“ হয়েছে তোমাকে আর এঁটো থালাবাসন ধুতে হবে না। আমি ধুয়ে রাখবো নি তুমি গিয়ে ঘুমাও রাত হয়েছে অনেক।

রোমিলা বেগম এঁটো থালাবাসন গুলো বেসিনের সামনে নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন-
-“ এসব কাজ ছেলেদের নয়। কত করে বলছি বিয়ে কর বিয়ে কর। কথাই কানে নিচ্ছিস না। সারাদিন তো এদিকে ওদিকে একাজ ওকাজ করিস,আমি বৃদ্ধ মানুষ বাসায় একা থাকি,আমারও তো একাকিত্ব লাগে।তুই বিয়ে করলে তো আমি একটা সঙ্গী পাই। যার সাথে সারাদিন গল্পগুজব করে এক সাথে মিলেমিশে কাজ করতে করতে দিনটা পাড় করতে পারবো। একটু মায়ের কষ্ট টা বুঝবি না তুই? তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো?

শেষের কথাগুলো বলার সময় রোমিলা রহমানের গলা ধরে আসছিলো। রাতুল রান্না ঘরের বেসিনের সামনে গিয়ে পেছন থেকে রোমিলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ তোমার কি খুব আফসোস হচ্ছে একটা ছেলের বউয়ের জন্য?
রোমিলা বেগম প্লেট ধুতে ধুতে বলেন-
-“ হুমম।
-“ আচ্ছা বেশ তুষারের বিয়েটা হওয়ার পরই আমি তোমার জন্য বউমা নিয়ে আসবো।

রোমিলা বেগম প্লেট ধোয়া বন্ধ করে পেছনে ঘুরে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে-
-“ সত্যি!
রাতুল রোমিলা বেগমের কাঁধ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রান্না ঘর থেকে বের হতে হতে বলে-
-“ হ্যাঁ সত্যি। এবার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও। বাকি কাজ গুলো আমি করছি।
রোমিলা বেগম বাঁধ সেজে বলে-
-” তুই বিশ্রাম নে ওগুলো আমি শেষ করে যাচ্ছি।
-“ আমি তো বললাম আমি করবো তুমি যাও।

রোমিলা বেগম চলে গেলেন। রাতুল থালাবাসন গুলে ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে উপর করে রাখে। পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে নেয়। দশটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। ফোনটা ফের পকেটে ঢুকিয়ে ড্রয়িং রুমের লাইট নিভিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

-“ তোর গাল এমন লাল হয়ে আছে কেনো? মনে হচ্ছে কেউ থাপ্পড় মেরেছে।
আরহাম বাসায় এসে নিরবে সোফায় বসতেই আকবর কথাটা বলে উঠে। আরহাম আকবরের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে-
-“ তোমার জন্য ই তো থাপ্পড় পড়লো আমার গালে। কেনো বলেছিলে চিত্রা কে তুলে আনতে?
-“ তোর জন্য ই তো বলেছিলাম। ওদের বাসায় তো চিত্রা আর ওর মা ছাড়া কেউ ছিলো না তাহলে।
-“ চিত্রা ফোন করেছিলো ওর বাবাকে।
-“ তুই বাঁধা দিস নি?
-“ বাঁধা কেনো দিবো?
আকবর ছেলের উপর ক্ষুব্ধ হলেন। কিছুটা চিৎকার করে বললেন-
-“ আহাম্মক তুই সোজা চিত্রা কে নিয়ে চলে আসবি। তা না করে ঐ মেয়েকে ফোন করার জন্য সময় দিয়েছিস গাধা।
-“ একদম গাধা বলবা না।
-“ মেরেছে টা কে তোরে?
-“ এমপির ছেলে তুষার।
-“ আর তুই চুপচাপ মাইর খেলি? পাল্টা দিতে পারিস নি?
-“ এমনিই চাপাটা ব্যাথা করছে তারউপর কি নিজের মুখ টাকে বিকৃতি করার জন্য যেচে নিজের উপর বিপদ ডেকে আনবো নাকি?
-“ তুই চিত্রা কে চাস না তাহলে?
-“ মাইর গুতা খেয়ে চাই না। তুমি যদি পারো তাহলে এনে দাও।

কুয়াশায় জড়ানো চারিপাশ। কুয়াশার জন্য সামনে থাকা কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না। সকাল টা শুরু হয় এমন ঘন কু্য়াশায় প্রকোপ শীতে আর দুপুর গড়াতে না গড়াতেই গরমের মাত্রা বাড়ে। আবার সন্ধ্যা হলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকে চলে আসে।
চিত্রা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ফজরের সময় উঠেছিল টাংকির পানি তখন বরফের মতো ঠান্ডা ছিলো। সেই পানি দিয়ে ওজু করতে গিয়েই শরীর জমে উঠেছিল ঠান্ডায়। ওজু শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে সূরা ইয়াসিন পড়ে বিছানায় গিয়ে আবার শুয়ে পড়ে।

হঠাৎ বালিশের তলে থাকা ফোনটা বেজে উঠায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিত্রা। ঘুমঘুম চোখে বলিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে কানে নেয়।

-“ বিয়ে করছো শুনলাম?
কথাটা কর্ণকুহর হতেই সমস্ত ঘুম উবে যায় চিত্রার। কান থেকে ফোনটা সামনে এনে নম্বর টা দেখে নেয়। আজ তিনটা বছর পর সেই চিরচেনা নম্বর থেকে ফোন এসেছে। একটা সময় এই নম্বর থেকে একটা ফোন পাওয়ার আসায় গভীর রাত অব্দি জেগে থাকতে। আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই নম্বরের থেকে আসা ফোন কলটা হৃদয় টাকে বিষাদে রূপান্তরিত করছে। চোখ মুখ শক্ত করে চিত্রা জবাব দেয়-
-“ বিয়ের খবর যেহেতু শুনেছেন সেহেতু বিয়েটা আমি করছি এটাই কি স্বাভাবিক নয়?
-“ অস্বাভাবিক লাগলো আমার কাছে। তিন বছরের মধ্যেই মুভ অন। হাউ?

ঘৃণায় চিত্রার চোখ মুখ জ্বলতে শুরু করলো। বিশ্রী রকমের ভাষাও মুখ থেকে বের হতে চাইলো। কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামাল দিয়ে শুধালে-
-“ আপনি যদি তিন বছর আগেই সব শেষ করে মুভ অন করতে পারেন তাহলে আমি কেনো পারবো না? আমার কি আপনার শোকে প্রতি নিয়ত দুমড়ে মুচড়ে উঠার কথা ছিলো নাকি?

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো। হাসি টা চিত্রার শরীরে কাঁটার মতো বিধলো।
-“ আমি তেমন টাই ভেবেছিলাম। যেই মেয়ে পাগলের ন্যায় আমায় ভালোবাসে সেই মেয়ে বিয়ে করবে ভাবনাতে আসেই নি।

চিত্রা কথা শুনে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
-“ ভালো বেসেছিলাম, মানে অতীতে। আপনার মত নিকৃষ্ট মানুষ কে যে আমি ভালোবেসেছিলাম কথাটা মনে পড়লেই রাগ হয় প্রচন্ড নিজের উপর।
-“ এখন কি ভালোবাসো না?
-“ জীবনে সব চাইতে যদি বেশি ঘৃণা কাউকে করি সেটা আপনি।
-“ হাস্যকর চিত্রা বিয়ে করে নিলেই কি তার জীবন থেকে রিয়াদ নামক নাম টা মুছে যাবে? নো নেভার। আসছি আমি।
-“ সহ্য ক্ষমতা সাথে করে নিয়ে আসবেন। এবার কিন্তু চিত্রা সব কড়ায় গণ্ডায় ফেরত দিবে।
-“ রিয়াদের সহ্য ক্ষমতা প্রচুর। দেখলে না তোমার ন্যাকা মামাতো বোন কে কি করে সহ্য করছি দিনের পর দিন।
-“ আপনার সাথে কথা বলার মতো রুচি নেই আমার।

কথাটা বলে দুম করে ফোনটা কেটে দেয় চিত্রা। রাগে মাথার চুল গুলো দু হাত ধরে চেপে ধরে। এক দমকা হাওয়ার মতো এসেছিল এই রিয়াদ। আর জীবনের সব শান্তি সুখ অশান্তি অসুখে পরিনত করে দিয়েছে। এখন আবার যখন সব ভুলে নিজেকে নিয়ে ভাবছে তখন আবার নিজের অস্তিত্ব জানাতে চলে আসছে। কথায় আছে না পৃথিবীর ছিয়ানব্বই শতাংশ মানুষই প্রথমে ভুল মানুষকেই ভালোবাসে।
-“ আমার জীবনের সব চাইতে বড় ভুল আপনি। প্রথম অনুভূতি ছিলেন আপনি আমার। আর আপনার থেকেই বাজে ভাবে ঠকে গেছি আমি। আপনাকে মানুষ বলতে রুচিতে বাঁধে আমার। আপনি মানুষরূপী অমানুষ। আপনার চোখের সামনেই এই চিত্রা সুখে শান্তিতে সংসার করবে। আপনি নিজেও চিনতে পারবেন না তিন বছর আগের চিত্রা আর এখনকার চিত্রার মধ্যে কত মিল অমিল।

-“ রাফি ভাই কাল আপনি আমায় একটা কথা বলেছিলেন,উত্তর টা শুনবেন না?

রাফি বাগানের দোলনায় বসে ফোন স্ক্রোল করছিল। পাশ থেকে তৃষ্ণার কথা শুনে পাশ ফিরে। ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-“ কি বলেছিলাম আমি?
তৃষ্ণার হাস্যজ্বল মুখটা মুহূর্তে চুপসে গেলো।
-“ ভুলে গেছেন? কাল রাতে যে ড্রয়িং রুমে আমায় বললেন।
রাফি তৃষ্ণার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে-
-“ আমার ঠিক মনে পড়ছে না কি বলেছিলাম তোমায়। আচ্ছা কি বলেছিলাম আমি তোমায়?

তৃষ্ণা পারে না তো এবার কেঁদে দিতে। চোখে অলরেডি পানি এসে পড়েছে। এবার শুধু টুপ করে গাল বেয়ে পড়ার বাকি। গলা ধরা কন্ঠে বলে উঠলো-
-“ সত্যি মনে পড়ছে না?
-“ না।
-” আপনি ভীষণ পঁচা রাফি ভাই।

কথাটা বলে রাগে হনহন করতে করতে চলে গেলো তৃষ্ণা। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে হোহো করে হেসে উঠলো। ভারি মজাই লাগছে তৃষ্ণা কে কনফিউজড, রাগাতে।

তুষারের মুখোমুখি বসে আছে আকবর। আকবরের চোখ মুখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। তুষার সেদিকে তাকিয়ে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলে-
-“ চোখ মুখে ঠান্ডা জল টা ঢেলে দিন। বয়স হচ্ছে আপনার অযথা এই সো কোল্ড রাগ আমার সামনে বহিঃপ্রকাশ করবেন না।

আকবরের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। হাত শক্ত করে বলল-
-“ সাহস হয় কি করে তোমার আমার ছেলেকে চড় মারার?

তুষারের কপালে দু ভাজ পড়লো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ আপনার ছেলের সাহস হয় কি করে চিত্রা কে স্পর্শ করার? ভদ্রতা শেখাতে পারেন নি ছেলেকে। অপ্স সরি আপনার নিজেরই তো ভদ্রতা নেই ছেলেকে কি শিক্ষা দিবেন।
আকবর এবার হুংকার দিয়ে বলে উঠে-
-“ মুখ সামলে কথা বলো তুষার।
তুষার হাতে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে-
-“ গলার স্বর নিচু করুন। বয়সের জন্য খুব একটা ভালো না।
-“ থ্রেট দিচ্ছো?
-“ মোটেও না। আপনার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় ট্রাস্ট মি আমার নেই। আপনি আসতে পারেন।
-“ অপমান করছো?
-“ যার মান নেই তার আবার কিসের অপমান। যাইহোক নিজে যেমন দয়া করে ছেলেকে তেমন বানাবেন না। ছেলে হারালে কিন্তু তারজন্য দায়ী থাকবেন আপনি।

আকবর তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তুষারের কেবিন থেকে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। আকবর এদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন সামনে তুষারের অফিস টা দেখে ভেতরে ঢুকেন ছেলেকে চড় মারা নিয়ে কিছু কটাক্ষ শুনাতে। কিন্তু পারলেন আর কই তুষারের কটাক্ষ কথা শুনে শরীরে জ্বালা ধরে গেলো।

রাতুল কেবলই অফিসের মধ্যে ঢুকছিল, আকস্মিক সামনে আকবর কে দেখে দৃষ্টি মাটিতে নিবন্ধন করে। এদের মত কিট দের দৃষ্টি নিয়ে দেখা মানে নিজের দৃষ্টি কে কলুষিত করা। রাতুল আলগোছে আকবর কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আকবর রাতুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আকবরের মনে হলো রাতুল তাকে যেনো ইচ্ছে করে উপেক্ষা করে চলে গেলো।

রাতুল তুষার কেবিনে এসে গম্ভীর কন্ঠে বলে-
-“ লোকটা এখানে এসেছিল কেনো?
তুষারের কাটকাট জবাব-
-“ যেচে অপমান হতে।
-“ অপমান বুঝে নাকি সে।
রাতুলের বলা তাচ্ছিল্যের কথা শুনে তুষার আর কিছু বললো না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাতুল নিজ থেকেই তুষার কে বলে-
-“ তুষার অধরার নম্বর হবে?
তুষার ভ্রু কুঁচকায়।
-“ ওর নম্বর দিয়ে কি করবি?
-“ দরকার ছিলো।
-“ ০১৭৯৯******।
-“ ধন্যবাদ।

ভার্সিটি শেষে জাহাঙ্গীরনগরের পদ্মবিল পুকুর টার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। তার এখন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য পড়াশোনা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কথাগুলো ভাবতেই হঠাৎ বেগে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। অধরা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে আননোন নম্বর। রিসিভ করবে কি করবে না এ নিয়ে দ্বিধায় রইলো। ফোনটা কেটে যেতেই স্বস্তি পেলো অধরা। স্বস্তি টা স্থায়ী হলো না। ফোনটা দ্বিতীয় বার বেজে উঠলো।

অধরা মনে দ্বিধা সংশয় নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলো। ফোনের ওপায় থেকে ভেসে আসলো সুমধুর কন্ঠে সালাম। অধরা সালামের জবাব দিলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো –
-“ আমি রাতুল বলছি। কেমন আছেন?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
-“ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ ফ্রী আছেন? বাসায় ফিরবেন কখন?
-“ কালকের মতো হয়তো দেরি হতে পারে। কিন্তু কেনো?
-“ আমি আসতাম তাহলে। আমি আসলে মাইন্ড করবেন? আপনার সাথে আরেক কাপ চা খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে।

অধরা স্মিত হাসলো। চশমা টা চোখ থেকে খুলে বলল-
-“ না মাইন্ড করবো না।
-“ তাহলে আসবো অপেক্ষা করবেন?
-“ জ্বি।
-“ আচ্ছা রাখি তাহলে।

রাতুল ফোন কে’টে দিতেই অধরা ফোন ব্যাগে ভরে ফেলে। পদ্মবিলের দিকে তাকিয়ে নিজের ডিপার্টমেন্টে চলে যায়।

-“ আজ এমন মন মরা কেনো আপনি? কিছু হয়েছে?
ভার্সিটি শেষে আজ তুষার এসেছে চিত্রা কে নিতে। তুষার এসে থেকেই খেয়াল করছে চিত্রার নিরবতা। সচারাচর তুষার চিত্রা কে নিরব খুব কম দেখেছে বললে ভুল হবে নিরব থাকতেই দেখে নি। চিত্রা দৃষ্টি সামনে চলতে থাকা চলন্ত গাড়ি গুলোর দিকে রেখে আনমনে বলে-
-“ আপনি আমার জীবনে আসতে দেরি করলেন কেনো এমপি মশাই? তিনটা বছর আগে দেখা দিলে কি খুব ক্ষতি হতো?
তুষার আড় চোখে তাকালো। চিত্রার আনমনে বলা কথাটায় কিছু একটা ছিলো। গাড়িটা সাইডে পার্ক করে পুর্ণ দৃষ্টি চিত্রার পানে দেয়। চিত্রা হঠাৎ গাড়ি থামায় হকচকিয়ে উঠে। তুষারের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার তার দিকে তাকিয়ে আছে। তুষারের চোখের চাহনি শীতল।
-“ কি হয়েছে আপনার আজ? এমন নিরব নিস্তব্ধতা কেনো? আপনার ঐ চঞ্চল স্বভাব টা আমার যে বড্ড পছন্দের। কালকের ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন?
তুষারের কথা গুলো চিত্রার হৃদয়ে বইতে থাকা অশান্ত ঝড় টাকে কিছুটা শান্ত করলো। আশ্বস্ত ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। যার মানে সে ঐ বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে না।
চিত্রা এদিক ওদিক তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে-
-“ একটু পানি হবে? খুব তেষ্টা পেয়েছে।
তুষার গাড়িতে থাকা পানির বোতল টা বের করে। চিত্রার সামনে ধরতেই চিত্রা পানির বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খায়। চিত্রার শরীর বেয়ে তরতর করে ঘাম ঝড়ছে,অথচ গাড়িতে এসি চলছে। তুষারের মোটেও ভালে লাগছে না। হৃদয় জুড়ে বইছে অশান্ত হাওয়া। চিত্রার বাহু চেপে চিত্রা কে নিজের কাছে এনে বলে-

-“ সমস্যা টা খুলে বলুন না।
তুষারের অসহায়ত্ব ভরা কন্ঠে বলা কথাটা শুনে চিত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন এমপি মশাই? হৃদয় টায় খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে অদ্ভুত এক যন্ত্রণায়। নিঃশ্বাস মনে হয় থেমে যাবে…
চিত্রা আর কিছু বলতে পারলো না। তুষার শক্ত করে চিত্রা কে জড়িয়ে ধরলো।

#চলবে?