Tuesday, August 12, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 25



অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৯

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯

জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে আছে নয়না কান্না করছে৷
“এই পিচ্চি এভাবে কান্না করছো কেন!
‘নয়না নাক টেনে বলে,আমার চোখ আমার অশ্রু আমার ইচ্ছে আমি কাঁদবো।
‘এই আঠারো ঘন্টা জার্নি শেষ করে রেস্ট না নিয়ে তোমার কান্না দেখার জন্য কল করিনি।
‘তো কেটে দেন কল।
‘সত্যি কাটবো?
‘আমি তখন চিৎকার করে কাঁদবো।
‘তুমি কি ছিঁচকাঁদুনি।
‘জানেন রাতে আমি কি স্বপ্ন দেখেছি৷
‘চোখের পানি নাকের পানি মুছে জানাও তো লিটল প্রিন্সেস কি স্বপ্ন দেখলে।
‘নয়না ওড়না দিয়ে চোখ মুখ মুছে জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি এভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকলে কি করে বলবো!আমার বুঝি লজ্জা করে না?
‘জিয়ান দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে,এবার বলেন মহারানী।
‘দেখলাম আপনি নাকি আমার, ঠোঁটের নেশায়
মাতাল হয়ে গেছেন, আপনারর নেশা কাটাতে আমার ঠোঁট দুটো চাইছেন৷
‘জিয়ান হুট করে নয়নার দিকে তাকালো৷ দুজনের দৃষ্টি মোবাইলের স্কিনের দু’প্রান্তে থেকে স্থীর হলো একে অপরের দৃষ্টিতে।
‘কান্নার ফলে ঠোঁট দুটো হালকা ফুলে উঠে আরো আকর্ষণীয় লাগছে। নাকটা লালচে হয়ে আছে। জিয়ান অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,এমন ঠোঁট তো আফিমের চেয়ে নেশালো, মাতাল না হয়ে উপায় আছে?
‘নয়না দু’হাতে মুখ ডেকে নিলো ইশশ কি লজ্জা, কি লজ্জা এভাবে এমন স্বপ্ন কেউ কাউকে বলে! কে যানে এই ড্রাইভার কি ভাবছে!
‘লাজুকলতা.. এভাবে মুখ ঢেকে রাখলে তো তোমাকে একদম আদুরে বৌ লাগে৷
‘তো আমি কি বৌ না?
‘তুমি বৌ?তা তোমার বর কই?
‘আমার বর বিদ্যাশে।
‘জিয়ান হেসে ফেললো৷ হাতটা সরাও দেখতে দাও তোমাকে।
‘আমার লজ্জা করছে তো! এভাবে কেউ দেখতে চাইলে লজ্জা করে না বুঝি?
‘তুমি জানো আমার বয়স কত?
‘আপনার বয়স জেনে আমি কি করবো?
‘গুনে গুনে তোমার চেয়ে চৌদ্দ বছরের বড়।
‘তেরো।
‘এক যুগ বেশি কাটিয়েছি তোমার চেয়ে৷
‘এক যুগ বেশি কাটিয়ে কোন রাজ্য জয় করেছেন শুনি?
‘এখনো শিউর না তবে মনে হচ্ছে কারো মনের রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি জয় করে নেবো।
‘নয়না মোবাইলের সামনে এসে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকুন।
‘এই সব বাদ দাও তোমার না এক্সাম পড়ালেখা করছো না কেন।
‘আজকে থেকে করবো৷ আচ্ছা আমার পরিক্ষা সবাই আমাকে কিছু না কিছু দেবে৷ তো আপনি কিছু দিলেন না?
‘এক্সাম থাকলে কিছু দিতে হয়! আর দেইনি কে বলল?
‘এই যে আপনার চোখের সামনে বসা ষোড়শী, রূপবতী বললো।
‘রূপবতী মেয়েরা সহজ ভাবে মিথ্যা বলতে পারে৷
‘আপনাকে আমার মিথ্যাবাদী মনে হয়!
‘আরেহহ স্যরি মজা করে বলেছি৷
‘আমার চোখের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না।
‘রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি?সুন্দর চোখদুটোর নিচে কালসিটে দাগ বসে গেছে।
‘এসব হয়েছে আপনার জন্য মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। যত দোষ প্লেন ড্রাইভার ঘোষ।
‘তোমার চোখের চাহনি কিন্তু সুন্দর ।
‘ তেলের দাম এতো কমে যায় নি!আপনি যেভাবে তেল দিচ্ছেন মনে হচ্ছে তেল ফ্রীতে পাওয়া যায়
‘জিয়ান চৌধুরী কাউকে তেল দেয় না।
‘নয়না কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলো।
‘আচ্ছা পিচ্চি এখন রাখি খেয়ে রেস্ট নেবো। আর হ্যা এখন শুধু পড়ালেখায় ফোকাস করো।
‘আমাকে কিছু কেন দিলেননা সেটার উত্তর দিন।
‘আমি এয়ারপোর্টে তখন টাকা সাধলাম নিলে না কেনো?
‘ওটা তো বেডসিটের তাই।
‘এখন কিভাবে দেবো?
‘জানিনা৷
‘আচ্ছা বাবু রাখি। গুড বায় টেক কেয়ার৷
‘জিয়ান কল কেটে দিলো৷
নয়নার মনটা উদাস হয়ে গেলো। মাত্র চল্লিশ মিনিট কথা বললো!
‘রাতে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন চোখ লেগেছে জানা নেই নয়নার। ঘুম ভেঙেই দেখে জিয়ানের মিসডকল। কল ব্যাক করবে তার আগেই ওপাশ থেকে কল আসে৷ কিন্তু এতোটুকু কথায় তৃষ্ণা তো মিটলো না উল্টো আরো বাড়লো।
🌿নীলাঞ্জনা তালুকদার। ওর বাবার নাম মিজান তালুকদার আর চাচার নাম মাহবুব তালুকদার। তালুকদার বাড়ির বড় মেয়ে নীলাঞ্জনা৷
‘লাবীবের কথা শুনে অবাক হলেন সৈকত সাহেব। মূহুর্তেই শান্ত স্বরে বলে,শিল্পী মেয়েটাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও৷ ওর কি কি লাগে দেখো। নীলাঞ্জনা নাম তোমার?
‘জ্বি।
‘আজকে থেকে আমরাও তোমার আরেক বাবা মা৷
‘নীলাঞ্জনা বেশ অবাক হলো! মূহুর্তেই মানুষ চেঞ্জ হয়ে গেলো!বাপ চাচার টাকা থাকা বুঝি এতো প্রয়োজন?
‘শিল্পী বেগম আর নীলাঞ্জনা চলে যেতেই৷ সৈকত সাহেব বলেন,জীবনে এই প্রথম একটা কাজের মত কাজ করেছিস। আমার ছেলের বৌ কিনা তালুকদার বংশের মেয়ে! এবার এটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্যবসাটা আগে বাড়াতে হবে৷ সোনার ডিম পাড়া হাঁস পেয়েছি আস্তেধীরে কাজে লাগাবো।
‘বাবা ওনারা কি এই বিয়ে মেনে নিবে?
‘মেনে না নিয়ে উপায় আছে? কান টানলে মাথা এমনেই আসে। যাহহহ খাতির যত্ন কর বৌয়ের৷ বৌ তো না যেনো আলাদিনের চেরাগ।
🌿বাসায় ঢুকেই ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে মারলো। রত্না বেগম দৌড়ে এসে বলে কি হয়েছে মান্নাত?
‘চশমাটা ছুড়ে ফেলে বলে,কি হয়নি সেটা বলো?আম্মু আর কতদিন এমন দাদিআম্মা সেজে ঘুরবো? এই ড্রেস চশমা এসব আমার সাথে যায়?
‘আমাকে কেনো বলছিস তোর বাবাকে বল৷
‘বাবা! হিটলার বলো৷ দেখো এসব আর আমাকে দিয়ে হবে না৷ কলেজে কে জোকার সেজে যায়! জানো আজকে কি হয়েছে? দানিশের মত একটা ছেলের সাথে টক্কর হয়েছে। পুরাই আগুন। হিরোর মত এসে আমাকে বাঁচিয়েছে৷
‘চুপ থাক তোর বাবা বাসায়। ছেলের কথা শুনলে তোকে আস্ত রাখবে না৷
‘খেতে দাও কিছু আর শুনো রাতে কিন্তু রিতুর বার্থডে পার্টি সো কোন না শুনবো না৷ আগেই বলে রাখি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরবো কিন্তু।তোমার হিটলার স্বামীকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সেটা আমি জানি না৷
‘মেয়ে আর জামাই নিয়ে রত্না বেগম প্যারায় আছেন৷ যেমন পাব ঘাড়ত্যাড়া তেমন মেয়ে। কি দরকার সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে কেস নেয়া! এখন নিজের বৌ মেয়েকে ছদ্মবেশে থাকতে হচ্ছে।
‘জামাল সাহেব সৎ পুলিশ অফিসার৷ তবে বর্তমানে সততাও যে বিপদ ডেকে আনে সেটার প্রমান সে নিজেই৷ মন্ত্রীর ছেলেলে গ্রেফতার করেছিলো। কেস তো কোর্ট পর্যন্ত উঠেই নি উল্টো এখন পরিবার নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন৷
‘মান্নাত শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,মিস্টার হিরো আমাকে এভাবে দেখলে নিশ্চিত ক্রাশ খেয়ে রাতে ব্রাশ করা ভুলে যেতেন৷ বাট আই লাইক ইউর এটিটিউ। উপসসস মিস্টার হিরো নামটাও তো জানিনা আপনার! হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাতে শুকাতে বলে,আপনি এই এলাকার তাহলে ছয়মাস কই ছিলেন? একবার ও তো দেখলাম না৷ কোন ব্যাপার না নজর যখন পরেছে আপনাকে খুঁজে ঠিক বের করবোই৷ মান্নাত যা চায় তা নিজের করেই ছাড়ে। ফোনটা হাতে নিয়ে রিতুকে কল করলো।
‘কিরে আজকে নাকি আমাদের সারপ্রাইজ দিবি? তা কখন আসছিস?দাদিআম্মা?
‘সারপ্রাইজ তো দেখবিই সে-সব ছাড় আগে বল তো তোদের এলাকায় কোন ক্রাশ বয় আছে? যাকে দেখলেই ক্রাশ খাওয়া যায়?
‘হ্যা ছিলো চৌধুরী বাড়ির ছেলে আবার পাইলট যেমন দেখতে তেমন এটিটিউট। কিন্তু সে তো কয়েকদিন আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।
‘তুই শিউর আর কোন ক্রাশবয় নেই?
‘নাহহ আমার জানামতে নেই।
‘মান্নাত কল কেটে দিয়ে বলে, ধুর ও হয়তো জানেনা৷ আবার মনে মনে বলে, ওদের এলাকা ওতো জানতো থাকলে৷ বিবাহিত ছেলের উপর কিভাবে ক্রাশ খেতে পারি! মনে হচ্ছে এবার ক্রাশ খেয়ে ব্রাশ আমার নিজের করতে হবে। এখন এসব ভাবলে হবে না মান্নাত৷ আজকে সবার হুঁশ উড়িয়ে দিতে হবে তোর৷ ড্রেস সিলেক্ট কর দেখিয়ে দে তোর আসল সুরত।
‘জামাল সাহেব চট্রগ্রাম থেকে বদলি হয়ে এখানে এসেছেন মাস ছয়েক আগে। চার রুম বিশিষ্ট একতলা বাড়িটা কিনেছেন তিনমাস ধরে৷ এখানে এসে মেয়ে বৌকে সবার নজর থেকে লুকিয়ে রাখছেন যতটা সম্ভব। পৃথিবীতে তার মেয়ে আর বৌ ছাড়া তিন কুলে কেউ নেই৷ এদের আগলে রাখার জন্য সব সেক্রিফাইস করতে রাজি। তার নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ সে মারা গেলে কে দেখে রাখবে তার মেয়ে আর বৌ কে? এসব চিন্তা সব সময় জামাল সাহেবের মাথায় ঘুরতে থাকে।
‘রত্না বেগম এসে বলেন,বলছিলাম কি মেয়েটাতে এখানে এসে একদম ঘর কুনো হয়ে আছে৷ আজ রিতুর বার্থডে যেতে চাচ্ছে?
‘আমি দিয়ে আসবো। আমি নিয়ে আসবো তবেই যাওয়ার পারমিশন পাবে৷
🌿
নয়না সকালের নাস্তা করে এই পর্যন্ত একশবার মোবাইলের কাছে এসেছে। কিন্তু সাহস করে জিয়ানকে কল করেনি৷ মোবাইল হাতে নিয়ে গুগলে সার্চ করলো কোন মানুষকে কিভাবে চিন্তা থেকে বের করা যায়।
‘প্রথমেই লেখা তাকে নিয়ে না ভেবে মনযোগ অন্য দিকে দিতে৷
‘নয়না মোবাইল রেখে বলে,মনোযোগ যদি অন্য দিকে ঘোরাতে পারতাম তাহলে সার্চ করতাম!গুগলের মাথায় কি বুদ্ধি নেই নাকি? এসব কেমন টিপস হলো? এরচেয়ে তো আমার বান্ধবীদের মাথায় বুদ্ধি বেশি। এবার ওদের জিজ্ঞেস করে দেখি।
#চলবে৷
আসসালামু আলাইকুম।গত পর্ব যারা পড়েছেন তারাই এই পর্ব বুঝবেন৷ হুট করে মাঝখান থেকে পড়লে খাপছাড়া লাগবে। গল্পে তিনটা/চারটা কাপলকে হাইলাইট করা হবে তাই মেইন ক্যারেক্টারের পাশাপাশি তাদের ও এটেনশন দিবো। সো ইন্জয়। হ্যাপি রিডিং ❤️

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ
অন্তিম পর্ব
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

মহুয়াকে অফিসার জিগ্যেস করলো ” ওরা আপনার মেয়েকে শা”রীরিক হ্যারেজ করেনি?তাহলে খু”নের সিদ্ধান্ত নিলেন কেনো? ”

মহুয়া এখনো চুপ করে রইলো।অফিসার কঠিন স্বরে ” কান্না থামান।এসব দেখিয়ে সহানুভূতি পাবেন ভেবেছেন?মহিলা জন্য ভদ্র ভাবে কথা বলতেছি।এখন দেখছি মাথায় উঠে গেছেন,তিনটা মানুষ খু”ন করেছেন।এতোটাও ভোলাভালা নন ”

মহুয়া চোখের জল মুছে ” আমি নিজের জন্য কাঁদছি না।ছোট্ট মেয়েট মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলো ”

অফিসার হেসে ” ওই মেয়ে আপনার থেকে কি শিখতো? কি করে স্বামী খু”ন করতে হয়?যাইহোক,প্রথম থেকে শুরু করুন ”

মহুয়া বলতে শুরু করলো ” সে রাতে টুকুর বাবা,মজিত আর নওজান বাইরের আমের গাছটায় বসে তাশ খেলছিলো।আমি এ নিয়ে ওনাকে বারণ করেছি,নে”শাগ্রস্ত হয়ে যেন বাড়ির সামনে আসর না বসায় ”

” আপনার স্বামীর পেশা কি?কি কাজ করে? ”

মহুয়া হেসে ” ও মরোদ কাজ করবে কি!জায়গাজমি সব বেঁচে মদ বিড়ি খায়।বিয়ের পর আমার গহনা,মায়ের পক্ষের জমি সব বিক্রি করে দিয়েছে ”

” মেয়ের বিষয়ে আসুন ”

” দেড় মাসের মতো হলো।ও ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে আসলো।মেয়ের জন্য চুরি,লিপস্টিক,সাজগোছের কি কি যেন আনলো।আমি বিস্মিত হয়ে জিগ্যেস করলাম

” এতোকিছু কে দিলো?”

” কে আবার দিবে।মেয়ের জন্য কিনেছি ”

” টাকা কোথায় পেলে ”

” এতো কথা শুনে তোমার কাজ নাই।মাছ এনেছি,পাতলা করে মাছের ঝোল রাঁধো ”

রাতে খাওয়াদাওয়া করলাম।টাকা কোথায় পেলো সে প্রসঙ্গ তুললাম না।নিশ্চয়ই জুয়ার আসরে লাভ হয়েছে।মাঝেমধ্যে ওর জুয়ায় লাভ হয়।

খাওয়াদাওয়ার পর শরীরটা ভারী হয়ে এলো।ঘুমিয়ে পরলাম।তখনও জানতাম না আমার খাবারে ঘুমের কিছু মেশানো ছিলো।ও আমায় ঘুমিয়ে রেখে মেয়ের ঘরে মজিত আর নওজানকে নিয়ে যায়।

আমি তো বিষয়টা ধরতে পারিনি।কল্পণাও করতে পারিনি ওই কাপুরুষ এতো পাষাণ আর নরপিশাচ।পরেরদিন সকালে টুকু আমায় বলছে ওর নাকি বু”কে,কোম”ড়ে ব্যথা করছে।শুরুতে ভাবলাম শোয়ার বেতিক্রম।

তারপর থেকেই ও মেয়ের জন্য অনেককিছু কিনে আনে।নেশার সামগ্রীও বাড়তে লাগলো।আমি বুঝে উঠতে পারলাম না ব্যাপারটা কি।মেয়ের আর আমার শরীর যেন ঠিক থাকে সেজন্য রোজ আধা কেজি করে দুধের ব্যবস্থা করলো।

দু-তিনদিন পরপরই রাতে খাওয়ার পর শরীর কেমন হালকা হয়ে আসে।সারারাত ঘুমাই,পরেরদিনও সারাদিন ঘুম পায়।বহু কষ্টে জেগে থাকি।মেয়েও দু তিনদিন পরপর বলে গায়ে ব্যথা,কেউ তাকে জ”রিয়ে ধরে।একদিন লক্ষ্য করলাম ওর পিঠে আঁচড়ের দাগ।

কেমন সন্দেহ হলো।মনে হতে লাগলো কিছু একটা সমস্যা আছে।এরপর খাওয়া শেষে মেয়েকেও দুধ দিইনা,আমিও খাইনা।টুকুর বাবা বারবার দুধ খেতে জোরাজুরি করতে লাগলো৷

অফিসার এই পর্যায়ে এসব শুনে বললো ” তাহলে বিষয়টা হলো দুধেই ঝামেলা করে আপনাকে আর টুকুকে ঘুম পাড়িয়ে মজিত আর নওজানকে মেয়ের ঘরে ঢুকিয়ে দিতো ”

মহুয়া কাঁদছে।অফিসার বললো ” বিষয়টা ধরলেন কিভাবে? ”

” সেরাতে দুধ খাইনি।ঘুমের ভান ধরে ছিলাম।টুকুর বাবা বারান্দায় বসে আছে।বুঝলাম কিছু একটা ঝামেলা আছেই।মাঝরাতে ও বারান্দায় বসে থাকবে কেনো!একটুপর ফিসফিসানি আওয়াজ পেলাম।এতো রাতে কে এসছে!তারপর মেয়ের ঘরের ছিটকিনি খোলার শব্দ পেলাম।বিষয় কি বুঝতে চুপিচুপি বিছানা ছেড়ে উঠলাম।মেয়ের ঘর আমাদের ঘর পাশাপাশি।দেখলাম দরজার ছিটকিনি খুলে মজিত ঢুকছে।

আমায় দেখে সমীর,মজিত,নওজান তিনজনই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।”

অফিসার বিষণ্ন চাহনিতে ” সমীর তখন কিছু বলেনি? ”

” ও তখন নেশায় ভুত হয়ে ছিলো।কয়েকটা চ”র দিয়েছিলাম গা”লে। ও বলেছিলো ওরা দুজন শুধু মেয়ের শরীর স্প”র্শ করতো।এর বেশী কিছু না ”

অফিসার ” খু”নের কারণ এটাই ”

” হ্যা ”

” একসাথে তিনজনকে মা”রলেন কিকরে ”

” একসাথে মা”রিনি।সমীরকে প্রথমে ওর পাতানো জালেই ফাঁসিয়েছি।ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছি।তারপর মাঝরাতে খাদে ফেলেছি।ঢাকনা দেওয়ার সময় ওরা দু’জন দেখে ফেলে।তারপর…”

” আপনার উচিত ছিলো তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া ”

” তাতে তো বেঁচে থাকতো।ওর একটাই শাস্তি,মৃ”ত্যু ”

” ওরা তো একপ্রকার মুক্তি পেয়ে গেলো।আর আপনি!বাকি জীবনটা জেলে কাটাতে হবে ”

———–সমাপ্ত—————–

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৫

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
পর্ব=৫
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

অফিসার বললো টয়লেট হাউজে কোনো লা”শ পাওয়া যায়নি।অথচ মহুয়া নিজ হাতে তিনটা লা”শ সেখানে ফেলেছে।এটা কিভাবে সম্ভব?

মহুয়ার মুখ হা করে গেলো।এটা কি করে সম্ভব,সে নিজে হাত পা বেঁধে তিনজনকেই খাদে ফেলেছে।ওরা কি সেখান থেকে পালিয়েছে? সেটা কিভাবে সম্ভব?মহুয়া ঢাকা দেওয়ার পরও ১০ মিনিট সেখানে বসে ছিলো।লা”শ পাওয়া যায়নি এটা কিভাবে হতে পারে!

মহুয়া সে রাতের দৃশ্য মনে করার চেষ্টা করলো।যখন য় মহুয়া আকুতির স্বরে ওদের পা জড়িয়ে ধরে বলেছিলো ” কাউরে বইলেন না,আপনের পায়ে ধরি ”

মজিত ” পা ছাড় মা*,ঘরের বউ হইয়া ভাতাররে মা”ইরা ফালাইছোস “।কথাটা বলে মহুয়াকে লাথি মে”রে সরিয়ে দিলো।

মহুয়া মাটিতেই পরে রইলো।মজিত ফিসফিস করে নওজানের সাথে কি যেন বললো।একটুপর নওজান বললো

” যাহ,কাউরে কমু না।কিন্তু শর্ত ”

মহুয়া চোখের জল মুছে ” কি শর্ত? ”

” তোর মাইয়ার সাথে কয়দিন যা করছি,অহন থাইক্কা প্রতিদিন করুম।হেতে ট্যাহা দিমু না ”

মজিত বললো ” মেয়ের থাইকা তুই বেশী আগুন।মা মাইয়া একসাথে অল্প কিছু দিমুনি যা।যদি রাজি থাকোস ক ”

মহুয়া চোখের জল মুছলো।রোবটের মতো দাঁড়িয়ে বললো ” আমি রাজি ”

মহুয়ায় কথায় দুজনের চোখে মুখে পৈশাচিক আনন্দ।নওজান বললো ” তয় দেরি ক্যান,আইজ থাইকাই শুরু।মা”ল খাইয়া হিট আইছে, চল ঘরে চল ”

মহুয়া ঘরে গেলো।মজিত নওজান বোতলের শেষটুকু এক ঢোকে খেয়ে বিশ্রী শব্দে ঠেকুর তুললো।নেশা ধরেছে,শরীর হেলেদুলে যাচ্ছে।দরজার কপাট ধরে মজিত দাঁড়াতেই গ”লা বরাবর ছু”রির কো!প,সঙ্গে সঙ্গে গোঙ্গানির মতো শব্দ করতে লাগলো মজিত।এই অবস্থা দেখে নওজান পালাবে তারআগেই মহুয়া দৌড়ে তার পিঠে ছু”রি বসিয়ে দিলো।পিঠে আ”ঘাতে যখন শরীর ভাজ করলো তখন বু!ক বরাবর ছু”রিটা বসিয়ে দিলো মহুয়া।

মুহুর্তেই রক্তে ভেসে গেলো আঙ্গিনা।মজিত শেষবারের মতো হাত পা ছটফটিয়ে চির শান্তিতে ঘুমিয়ে পরলো।সমীরকে যেভাবে টেনে খাদে নিয়ে গিয়েছিলো তাদের দুজনকেও সেভাবে মাটি কাঁদা করে বস্তার উপর রেখে টেনে নিয়ে গেলো।ফেললো খাদে!এরলম জখ”ম হওয়ার পরও সেখান থেকে বেঁচে পালানো অসম্ভব।তার উপর ঢাকনা ছিলো কংক্রিটের।

অফিসারের ডাকে মহুয়ার হুশ ফিরলো৷ ” ম্যাডাম,কি ভাবছেন? ”

মহুয়া শুকনো ঠোক দিয়ে ” ন…না ক..কিছুনা ”

” আপনি ধরা পরে গেলেন ”

মহুয়া চুপ করে রইলো।অফিসার বললো ” জানতে চাননা কিভাবে বুঝলাম ওরা খাদে? ”

” কিভাবে ”

” আমি জানিনা।আপনিই জানিয়ে দিলেন।সন্দেহ করেছিলাম ওরা দুজন এখান থেকেই নিখোঁজ হয়েছে।আর আশেপাশের বাড়িতে খবর নিয়ে জানলাম সমীরের সাথে আপনার সম্পর্কটা কয়েকমাস থেকে ভালো যাচ্ছে না।রোজ গভীর রাতে ওরা আপনার কান্নার শব্দ পায়।দুজন নিখোঁজ,তারউপর আপনি মিথ্যা বলেছেন,সন্দেহ প্রবল হলো।তারপর ভাবলাম যদি খু”ন আপনিই করেন তাহলে বেশিদূর লা”শ টেনে নিয়ে যাওয়ার শ”ক্তি আপনার নেই।কাছেই কোথাও লুকানো আছে।টয়লেট হাউজের খাদটায় লুকাতে পারেন,এমনটা অনুমান করেছিলাম।আপনাকে বুঝলাম অনুমান সঠিক ”

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।মহুয়া চোখে আঁচল টেনে কাঁদছে।অফিসার দুজন সহকারীকে বললো ” কর্পোরেশন থেকে লোক আনুন ”

” গণ্ডগ্রামে কর্পোরেশন কই পাবেন স্যার।মেথর নিয়া আসি ”

” আনো ”

মহুয়া আঙ্গিনায় বসে পরলো।অফিসার ফোন বের করে কি যেন বললো।অতঃপর মহুয়াকে ” আপনার নিকটস্থ আত্নীয় আছে?আপনাকে থানায় যেতে হবে। আত্মীয়র ঠিকানা দিন তাদের কাছে রেখে আসার ব্যবস্থা করবো ”

মহুয়া ভাইকে কল দিলো।২য় বার রিং হয়ে কল ধরে ” ইন্টারেস্টিং একটা বই পড়ছিলাম।এতদিন পর কল দিলি।টুকু কেমন আছে? ”

মহুয়া অশ্রুসিক্ত কন্ঠে “দাদা টুকুকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।একটু দেখে রেখো ”

কথাটা বলে কল কা”টলো।বাইরে পুলিশের গাড়ি।মহুয়া গাড়িতে বসলো।গ্রামের লোকজনে ভর্তি চারপাশ।সোরগোল পরে গেলো মহুয়া খু”ন করেছে।গ্রামের লোকেরা এমন উৎসাহ নিয়ে দেখছে যেন খু”ন করা একটা উৎসব।সবাই মাতামাতি সেই উৎসবকে কেন্দ্র করে।

থানায় স্বীকারোক্তি নেওয়া হচ্ছে।মহুয়ার সামনে দুজন আইনের লোক।একজন আরেকজনকে বলে উঠলো

” হাউ কুড সি ডু ড্যাট!ওনাকে দেখে কে বলবে এতো ভয়ঙ্কর কাজটা করতে পারে!লুক এট হার আই,হরিণী চোখ ”

অন্যজন বললো ” হরিণী না।বাঘিনী চোখ।তিনটা মানুষ টপকে দিছে ”

মহুয়া নিলির্প্ত স্বরে ” ওরা মানুষ ছিলো না ”

এই পর্যায়ে ডিউটিরত অফিসার এলো।হাতে চায়ের কাপ।সাথে আরেকজন চা এনে টেবিলে রাখলো।

অফিসার ” চা খান ”

মহুয়া চায়ে চুমুক দিলো।তার সহজ ভঙ্গি।অফিসার ” প্রথম থেকে শুরু করুন।এই পর্যন্ত আমরা তদন্ত করেই এসছি।কাজেই আমাদের অবজারভেশন পাওয়ার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন নিশ্চয়ই।আপনি সত্য মিথ্যা যাই বলবেন আমরা তদন্ত করে সত্যিটা বের করবো।মিথ্যা বলে হয়রানি করাবেন না।সত্য বলবেন।আমি জানি ওরা খারাপ মানুষ,যতসম্ভব শাস্তি কমানোর চেষ্টা করবো ”

মহুয়া চা শেষ করলো।বলতে শুরু করলো ” ৬টা ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো গ্লাসে ”

” উহু,আরো প্রথম থেকে।মাস খানেক থেকে আপনাদের মধ্যে কিসের ঝামেলা চলছিলো ”

” মেয়েকে নিয়ে ”

” পাড়ার মাতাল লোকজনদের দিয়ে মেয়ের শরীর ব্যবসা? ”

মহুয়া চোখের জল মুছলো।তার শরীর কাঁপছে।অফিসার চোখ মুখ শক্ত করে ” কে”সটার জন্য আমার সব জানা প্রয়োজন।মা হয়ে বিষয়টা বলা খুবই অপ্রীতিকর বুঝতে পারছি।তবুও,, ওরা আপনার মেসের সাথে রাত কাটাতো? ”

মহুয়া চুপচাপ কাঁদছে।অফিসার ” ওরা টুকুর সাথে শারী”রিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো?যা সত্যি তাই বলুন ”

মহুয়া বললো ” না ”

” না?তারমানে সে”ক্সুয়াল হ্যারেজ করেনি?তাহলে খু”নের সিদ্ধান্ত নিলেন কেনো? ”

মহুয়া এখনো চুপ করে রইলো।

চলবে?

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৪

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
পর্ব=৪
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

দুপুরের দিক বাড়িতে পুলিশ অফিসার হাজির।ভয়ে মহুয়ার মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেলো।অফিসার নির্লিপ্ত স্বরে বললো…

” আপনার কথা হিসেবে আপনার স্বামী,সমীর গত চারদিন আগে শহরে গেছে।অথচ তৃতীয়দিন রাতে সে তার মেয়েকে সাজগোছের সামগ্রী কিনে দিয়েছে।কোন দৈববলে এটা সম্ভব বলতে পারেন মিসেস মহুয়া? ”

মহুয়া আমতা আমতা করে বললো ” ওসব উনি দেননি ”

অফিসার হেসে ” তাই? আপনার মেয়ে তাহলে মিথ্যা বলছে? ”

” ও মিথ্যা বলেনি।আমিই ওকে বলেছি এসব তোমার বাবা কিনে দিয়েছে।সেজন্য বলেছে ”

” আপনার স্বামী না কিনলে কে কিনে দিয়েছে সেসব? ”

” আমি জানিনা।দরজার কাছে রাখা ছিলো ”

” দরজার কাছে রেখে গেলো,আপনি টের পেলেন না? ”

” না ”

” আচ্ছা।গ্লাসটা ফেরত দিতে এলাম।নিন ”

অফিসার গ্লাস এগিয়ে দিলো।মহুয়া কম্পিত হাতে গ্লাসটা নিলো।অফিসার বললো

” আপনার রাতে ঘুম হয়না? ”

মহুয়া বুঝলো অফিসার গ্লাসের অবশিষ্ট অংশ থেকে বেড় করেছে দুধে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো।মহুয়া বললো

” টুকুর বাবা খায় ”

” গ্রামের লোকজন যতটুকু বললো,আপনার স্বামী রোজ নেশা করেন।নেশাক্তদের তো ঘুমের ওষুধ প্রয়োজন পরে না ”

” আসলে মাতলামি যখন বেড়ে যায় তখন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিই।ঘরে ছোট মেয়ে আছে।মাতলামি বেড়ে গেলে গায়ে হাত তোলে ”

” আপনি অনেক গুছিয়ে কথা বলতে পারেন।আসি,শীঘ্রই আবার দেখা হবে ”

” গ্লাসটা নিয়ে গিয়েছিলেন কেনো জানতে পারি? ”

অফিসার মৃদু হেসে ” ডিজাইনটা পছন্দ হয়েছিলো।বউকে দেখিয়ে এনেছি। ”

কথাটা বলে সে দুকদম হেঁটে আবার দাঁড়িয়ে বললো ” আপনি কখনো ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন? ”

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে বললো ” না ”

” খেলে কি হয় জানেন? ”

” কি হয়? ”

” ব্রেইন সার্প হয়।পাশেই তিনটা মানুষ খু”ন হয় তবুও টের পাওয়া যায় না ”

অফিসার চলে গেলো।মহুয়ার চোখ মুখ দিয়ে গরম ভাব বের হতে লাগলো।সে কি ধরা পরেছে?ধরা পরলে পুলিশ দেরি কেনো করছে? তারমানে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে!

সমীরের দেওয়া সাজগোছ,জামাকাপড়ের বিষয়টা মহুয়া মিথ্যা বললেও প্রকৃত পক্ষে সত্যিই বলেছে।কারন মহুয়া জানে ওসব তার স্বামী সমীর কিনে আনেনি৷কিনে দিয়েছে নোংরা মানসিকতার মানুষ মজিত আর নওজান।কিনে দেওয়ার কারণও আছে।ভয়ঙ্কর কারণ।এই কারণেই তাদের পৃথিবীতে ঠাঁই দেয়নি মহুয়া।

মহুয়া টুকুর কাছে গেলো।মেয়েটা ঘুমাচ্ছে।আজ ছুটির দিন।কি নিষ্পাপ মুখ।টুকুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই টুকু জেগে উঠলো।মহুয়াকে জড়িয়ে ধরলো।মহুয়া বললো

” টুকু ”

” উু ”

” মাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না? ”

” উঁহু ”

” খুব শীঘ্রই তোমার মাকে সবাই খারাপ ভাববে।এতে আমার কোনো আফসোস নাই।আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি।তুমি একদিন মাকে নিয়ে গর্ব করবে ”

টুকু ঘুমজরিত স্বরে বললো ” উু ”

মহুয়া দেখলো টুকুর চোখ বন্ধ,ঘুমিয়ে পড়েছে।কপালে চু”মু দিয়ে বিছানায় শোয়ালো।

বিকেলে টুকুকে নিয়ে গেলো বাজারে।টুকুর পছন্দের মাছ কিনলো।সময় কম,মহুয়ার ইচ্ছে জেলে যাওয়ার আগে মেয়ের পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবে।

বাজার করে বাসার সামনে আসতেই টুকু ভয়ে মায়ের শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো।হাত চেপে ধরে ভয়ার্ত স্বরে বললো

” মা আমাদের বাড়িতে পুলিশের গাড়ি কেনো? ”

মহুয়া হেসে বললো ” কি করে বলবো? চলো গিয়ে দেখি ”

আঙ্গিনায় অফিসার চেয়ারে বসে আছে।তার সাথে বেশ কয়েকজন পুলিশ সাথে স্যুট পরিহিত তিনজন দাঁড়িয়ে।মহুয়াকে দেখে অফিসার বললো

” ম্যাডাম আপনাকে বিরক্ত করতে চলে এলাম ”

মহুয়া রান্নাঘরে বাজার রাখলো।টুকুকে ঘরে যেতে বললো।অফিসারকে বললো

” বিরক্ত কেনো করবেন! চা করি? চা খান ”

” চা খাবো না।একটা তথ্য দিতে এলাম ”

” কি? ”

” আপনি ঠিকই বলেছেন।ওইরাতে আপনার স্বামী না,অন্যকেউ কিনে দিয়েছিলো।জানতে চান কে? ”

” কে? ”

” নওজান আর মজিত।এ গ্রামে একটা দোকানেই এসব পাওয়া যায়।দোকানে খোঁজ নিয়ে জানলাম ওরা কিনেছে ”

” ও আচ্ছা ”

” মজার ব্যাপার হলো ওরা প্রায়ই সেখান থেকে চকলেট,সাজার জিনিস কিনতো।কিন্তু ওদের দু’জনারই ছেলে সন্তান।মেয়েদের জিনিস কেনো কিনতো বলুন তো? আপনার মেয়েকে দিতে? ”

মহুয়া চুপ করে রইলো।অফিসার বললো ” আপনার স্বামীর সাথে তাদের মিল ছিলো।সেজন্যই বোধহয় দিতো৷এখন আসল কথায় আসি ”

” হু ”

” যে রাত থেকে মজিত,নওজান নিখোঁজ সে রাতে ওরা আপনার বাসায় এসছিলো।দুধের গ্লাস সমীরের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।সে হিসেবে সমীরও সেরাতে বাড়িতে ছিলো ”

মহুয়ার শরীর কাঁপতে লাগলো।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।অফিসার বললো ” মিথ্যা বলার কারণ? ”

” আ..আমি ঝামেলায় জড়াতে চাইনি ”

” সব থেকে অবাক হওয়ার বিষয়টা এখন বলবো ”

” কি? ”

” টয়লেটের মল জমা হওয়ার খাদে আমরা কোনো লা”শ পাইনি ”

মহুয়ার মুখ হা করে গেলো।এটা কি করে সম্ভব,সে নিজে হাত পা বেঁধে তিনজনকেই খাদে ফেলেছে।ওরা কি সেখান থেকে পালিয়েছে? সেটা কিভাবে সম্ভব?মহুয়া ঢাকা দেওয়ার পরও ১০ মিনিট সেখানে বসে ছিলো।লা”শ পাওয়া যায়নি এটা কিভাবে হতে পারে!

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০৩

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ [কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব=৩

মহুয়া স্বামীর হাত পা বেঁধে খাদে ফেললো।পেছন ফিরে দেখলো দুজন দাঁড়িয়ে!একজন বললো ” মানুষটারে মা”ইরা ফালাইলেন? ”

মহুয়ার সারা শরীর কাঁপছে।ঘামে গা মাখামাখি।চাদর মুড়ি দেওয়া দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে।মহুয়ার পায়ের তল থেকে মাটি সরে গেলো।এরা কখন থেকে তার উপর নজর রাখছিলো? ওরা কি দেখেছে মহুয়া সমীরের হাত পা বেঁধে খাদে ফেলেছে?

তাদের হাতে টর্চের সামান্য আলো।সেই আলোয় একজনের মুখ দেখা গেলো।মাঝবয়সী,চোখের দৃষ্টি ভয়ঙ্কর,ওনার নাম মজিত।নেশা করে পুকুরপাড়ে শুয়ে থাকে।অন্যজন নওজান,মজিতের ডান হাত।একসাথে চোরাচালানের কাজ করে।মহুয়ার স্বর যেন আঁটকে গেছে।কিছুই বলতে পারছে না।

মজিত বললো ” মাইয়া মানুষের এতো সাহস! ”

নওজান বললো ” পালা,পালা,এইহানে থাকোন যাইবো না।গেরামের লোকজনরে খবর দে ”

মহুয়া আকুতির স্বরে ওদের পা জড়িয়ে ধরে ” কাউরে বইলেন না,আপনের পায়ে ধরি ”

” পা ছাড় মা*,ঘরের বউ হইয়া ভাতাররে মা”ইরা ফালাইছোস “।কথাটা বলে মহুয়াকে লাথি মে”রে সরিয়ে দিলো।

তারপর কেটে গেলো দুইদিন।তিনদিনের দিন গ্রামে সোরগোল পরে গেলো।মজিত,নওজানকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।মহুয়া সকালে ভাত রেঁধেছে।আঙ্গিনায় বসে লাউশাক কুটছে।এমন সময় সুরাজির মা এলো।আঙ্গিনায় গালভর্তি পানের পিক ফেলে বললো

” ঘটনা হুনছোস? ”

মহুয়া আগ্রহ ভঙ্গিতে বললো ” কি? ”

” মজিত আর নওজানরে নাকি খুইজ্জা পাওন যাওচে না ”

” দেখো নেশা করে কোন পুকুর পাড়ে পরে আছে ”

” কোত্থাও নাই।হেগো বউঝিরা হায়রে কান্দান!তোগো বাড়িত নাকি আইছিলো,সমীরের লগে কতা কইতে।তুই কিছু জানোস? ”

মহুয়ার চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো।যশসম্ভব নিজেকে সামলে ” কই না তো ”

” সমীররে কইতে হইবো।সমীর কই?ওরেও তো দেখিনা, দোকানেও আহে না ”

মহিলার পানের দোকান।সমীরের আড্ডা সেখানেই।মহুয়া বললো ” কাজে গেছে,শহরে ”

এমন সময় মজিতের বউ ছুটে এলো।হাউমাউ করে কেঁদে ” আপা আপনের ভাইরে দেখছেন? সমীর ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আইছিলো,আর ফিরেনাই ”

” ওনারা তো এখানে আসেনি ”

” সমীর ভাই কই?উনি কইতে পারবো ”

” উনি শহরে গেছেন।কাইন্দো না,ঘরে যাও।ঠিক ফিরবে ”

মহুয়া সতর্কতায় দুজনকেই বিদায় দিলো।ঠান্ডা এক গ্লাস জল খেলো।হাত পা কাঁপছে।মেয়ে স্কুল থেকে ফিরেছে।ভয় ভয় চোখে বললো

” মা,মা,পুলিশের গাড়ি ”

মহুয়া চোখ বড়বড় করে বললো ” পু…পুলিশ! কোথায়? ”

” নওজান চাচার বাড়িতে।নওজান চাচা নাকি হারায় গেছে।এখন আমায় কে চকলেট, জামা কিনে দিবে।বাবাও তো নাই।মা বাবা কোথায় গেছে? ”

মহুয়া মেয়েকে ডেকে নীচু স্বরে বললো ” তোমার বাবা শহরে গেছে।আচ্ছা মা,পুলিশের কথা কিছু শুনেছো? ”

” না। আমি তো ভয়ে দৌড়ে এসছি ”

” আচ্ছা হাত মুখ ধোঁও।আমি ভাত দিচ্ছি ”

বিকেলের দিক মহুয়া তিনজন পুলিশের সামনে বসা।প্রধান একজন,বাকি দুজন কনস্টেবল।মেইন যিনি,টেবিলে রাখা গ্লাসটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।গ্লাসের চারপাশে পিঁপড়া।পিঁপড়ার দল মেঝে বেয়ে গ্লাসের মধ্যে ঘুরপাক পাচ্ছে।মেইন পুলিশ অফিসার বললো

” আপনার স্বামী কোথায়? ”

মহুয়া প্রানপণ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।স্বর তবুও এলোমেলো। বললো ” উনি একটু শহরে গেছেন ”

” কবে গেছে? ”

” চারদিন আগে ”

মহুয়া মিথ্যা বললো।তিনদিন আগে বললে পুলিশ ভাবতো মজিত,নওজান সমীরের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।তখন সন্দেহ বাড়বে।মহুয়া খুব কৌশলে নিজেকে প্রস্তুত করেছে।কোনোরকম সন্দেহ হতে দেওয়া যাবে না।পুলিশ বললো ” তিনদিন আগে মজিত আর নওজান আপনার স্বামীর সাথে দেখা করতে এসেছিলো? ”

” ওনারা তো আসেননি।তাছারা সমীর শহরে,দেখা করবে কি করে ”

” তাও ঠিক। আপনার মেয়ে কোথায়? ”

” ওই ঘরে,সাজগোছ করছে ”

” মেয়ে সাজগোছ পছন্দ করে নাকি? ”

” হ্যা ”

” যাদের পাওয়া যাচ্ছে না তারা খারাপ মানুষ। পুলিশের চাকরি নিয়ে বিপদে পরেছি,খারাপ মানুষকে খুঁজতে হয়।তার উপর নে”শাক্ত।কে জানে নেশা করে কোথায় চলে গেছে!ওদের জন্য আপনাকে বিরক্ত করতে চলে এলাম।কিছু মনে করবেন না।চা খাওয়াতে পারেন? ”

” অবশ্যই ”

মহুয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে গেলো।আতঙ্কে তার শরীর গুলিয়ে উঠছে।কলপাড়ে গিয়ে হাতে মুখে জল দিলো।চা বানিয়ে ঘরে যেতেই দেখলো পুলিশের কেউই নেই৷

মহুয়ার শরীরে কারেন্ট খেলে গেলো!চট করে তাকালো টেবিলে।সেখানে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধের গ্লাসটা রাখা ছিলো।অন্যসব প্রমান লুকাতে গিয়ে গ্লাসটার দিকে তার খেয়ালই ছিলো না৷তন্নতন্ন করে গ্লাসটা খুঁজলো।কোথাও নেই।তবে কি পুলিশ সেটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে!

মহুয়া মেঝেতে বসে পরলো।গ্লাসে সমীরের হাতের ছাপ আছে।হাতের ছাপ দেখে কি বেড় করা যায় ছাপটা কতদিন আগের? যদি বেড় করা যায় তাহলে মহুয়া নিশ্চিত ফেঁসে যাবে।মেয়ল ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে মাকে দেখে

” মা কি হয়েছে তোমার? ”

” কি..কিছু না ”

” পুলিশ আঙ্কেল এসছিলো,আমার সাথে গল্প করে চলে গেছে ”

” আচ্ছা টুকু,ওদের হাতে কোনো গ্লাস ছিলো? ”

” দেখিনি তো ”

” ওরা তোমায় কিছু বলেছে? ”

” হ্যা।বলেছে আমি দেখতে নাকি অনেক সুন্দর ”

” আচ্ছা এখন পড়তে বসো যাও ”

সারারাত কাটলো মহুয়া ঘুমাতে পারলো না।বিছানায় শুয়ে এপাশওপাশ করলো শুধু।পরেরদিন পুলিশ বাড়িতে উপস্থিত…

” আপনার কথা হিসেবে সমীর গত চারদিন আগে শহরে গেছে।অথচ তৃতীয়দিন রাতে সে তার মেয়েকে সাজগোছের সামগ্রী কিনে দিয়েছে।কোন দৈববলে এটা সম্ভব বলতে পারেন মিসেস মহুয়া? ”

চলবে?

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০২

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ
পর্ব=২
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

মহুয়া বিছানার নিচ থেকে লুকায়িত ছু”রিটা বের করলো।টুকু আজ বাবার র”ক্তে র”ক্তস্নান করবে।

রাত বাজে দুইটা।গ্রামের সবাই নিশুতি।টুকু ঘুমাচ্ছে,আজকের পর থেকে সে সারাজীবন আরামের ঘুম ঘুমাতে পারবে।ঘুমের মাঝে কেউ তার শরীর স্পর্শ করবে না।লজ্জাকাতর স্থানে হাত বুলাবে না।

খু”ন করার এটাই উপযুক্ত সময়।ঘুমের ট্যাবলেটের প্রভাব বেশ ভালোভাবেই কাজ করেছে।সমীর মুখ হা করে গভীর ঘুমে নিমজ্জিত।

মহুয়া কলপাড়ে গেলো।হাড়ির কালি তোলার জন্য একটা ঝষা পাথর আছে,সেটা দিয়ে ছু”রিটার ধার তিক্ষ্ণ করলো।ভয় লাগছে,জীবনের প্রথম মানুষ খু”ন করবে সে।ঘুমের ঘোরে গ”লায় ছু!রি বসিয়ে দিলে কি সে জেগে উঠবে?নাকি চেঁচিয়ে উঠবে? চেঁচালে সমস্যা।আশেপাশের লোকজন চলো আসবে।গ্রামের মানুষের খুব কানখাড়া।সামান্য শব্দে এরা জেগে ওঠে।শুধু জেগে উঠেই এরা শান্ত হয়না।খুঁজে বেড় করে শব্দের উৎস কি।মহুয়া রান্নাঘরে গেলো।কড়া লিকারে এককাপ চা খেয়ে আগে নিজেকে শান্ত করতে হবে।

আড়াইটা বাজে।সমীর ম”রার মতো ঘুমাচ্ছে।মহুয়া শাড়ির পার ছিঁড়লো।শক্ত করে সমীরের হাত,পা বাঁধলো।গ”লায় ছু”রি চালানোর সময় দাপাদাপি করবে,হাত পা বাঁধা থাকলে সুবিধা।

ঘরে মা”রা যাবে না।র”ক্তে ভেসে যাবে।তাছাড়া লা”শ নিয়ে সমস্যায় পরতে হবে৷খু”নের থেকেও বেশি কঠিন লা”শ লুকানো।মাটির মেঝেতে মহুয়া জগের জল ফেলে মাটি পিচ্ছিল করলো।ঠিক করলো বাড়ির পেছনে টয়লেটের মল জমা হওয়ার জন্য যে খাদ আছে,লা”শ সেখানে ফেলে রাখবে।পঁচে গেলেও গন্ধ বাইরে বের হবে না।

পেছনের খাদ পর্যন্ত যাওয়ার পুরো যায়গাটা মহুয়া জল ফেলে পিচ্ছিল করলো।এঁটেল মাটি হওয়ায় বেশ পিচ্ছিল হলো।এরপর একটা প্লাস্টিকের বস্তা ঘরের মেঝেতে ফেলে সমীরের ঘুমকাতুরে শরীরকে টেনে নিচে ফেললো।

সমীর চোখ কিঞ্চিৎ মেলে উু জাতীয় শব্দ করলো।কিন্তু জেগে উঠলো না।মহুয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো।তারপর পিচ্চিল অংশ দিয়ে টেনে নিয়ে গেলো খাদের কাছে।সেখানে যাওয়ার পর খু”নের প্লান বদলালো।যথেষ্ট গভীর এই খাদ।হাত পা বাঁধা কাউকে ফেললে সে এমনেও বাঁচবে না।তার উপর সমীর ঘুমের ওষুধ খেয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় আছে৷গ”লায় ছু”রিঘাতের সিদ্ধান্ত পাল্টালো।

খাদের উপর কংক্রিটের ঢাকনা।চারপাশে সিমেন্টের পাতলা আস্তরণ দিয়ে ঢাকা।মহুয়া ছু”রির মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে প্লাস্টার তুললো।অতঃপর ঢাকনা খুলতেই মলের গন্ধ হঠাৎ মহুয়ার নাকে লাগতেই শরীর গুলিয়ে উঠলো।হরহর করে বমি করলো খাদের ঢাকনার উপর।

কলপাড়ে গিয়ে চোখে মুখে জলের ছিঁটে দিলো। একটা কাপড়ে সমীরের মুখ শক্ত করে বাঁধলো।প্রথমে কোম”ড় থেকে পায়ের অংশটা খাদের দিকে ঠেলে দিলে,অতঃপর হাত টেনে দিতেই ধপ করে শব্দ হলো।সমীর মলমূত্রের খাদে!

মহুয়া দ্রুত ঢাকনা লাগিয়ে দিলো।কান পেতে রইলো।ভেতর থেকে তোলপাড় শব্দ ভেসে আসছে৷মিনিট খানেক এরকম শব্দ করে সব শান্ত হয়ে গেলো।

মহুয়ার সারা শরীর কাঁপছে।ঘামে গা মাখামাখি।বড় একটা শ্বাস ফেলে পেছনে তাকালো।চাদর মুড়ি দেওয়া দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে।মহুয়ার পায়ের তল থেকে মাটি সরে গেলো।এরা কখন থেকে তার উপর নজর রাখছিলো? ওরা কি দেখেছে মহুয়া সমীরের হাত পা বেঁধে খাদে ফেলেছে?

মহুয়া আতঙ্কে পাথর হয়ে রইলো।চাদর মুড়ি দেওয়া একজন বলে উঠলো ” মানুষটারে মা”ইরা ফালাইলেন? ”

চলবে?

কলঙ্কের দাগ পর্ব-০১

0

গল্প #কলঙ্কের_দাগ
[এই গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]
পর্ব-১
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

মহুয়া আজ রাতে স্বামীকে খু”ন করবে ঠিক করেছে।খু”নটা নিজে না,করাবে ১২ বয়সী মেয়েকে দিয়ে।রাতে মেয়েকে ডেকে….

” টুকু এদিকে এসো তো মা ”

টুকু কাছে এলো।মহুয়া বললো ” কাল রাতে তোমার বাবা খুব মন খারাপ করেছে ”

টুকু করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ” বাবা মন খারাপ করেছে?কেনো? ”

” তুমি ওনাকে একটুও ভালোবাসো না ”

টুকু দুঃখী মুখ করে বললো ” মিথ্যা কথা।আমি বাবাকে অনেক ভালোবাসি।বাবা খুব ভালো,আমায় চকলেট কিনে দেয় ”

” তুমি বাবার খেয়াল রাখো না।তাই বাবা অভিমান করেছে ”

” খেয়াল রাখি তো ”

” বাবা বাইরে থেকে আসলে তাকে দুধের গ্লাস এগিয়ে দাও? ”

” না ”

” এই নিয়ে বাবা অভিমান করেছে।আজ বাবা ফিরলে তুমি নিজের হাতে দুধ খাইয়ে দিবে।ঠিক আছে? ”

” আচ্ছা ”

রাত বাজে ৯টা।সমীর বাসায় ফিরলো দুটো বেলুন সঙ্গে মেয়ের সাজগোছের জন্য পাউডার,স্নো,লিপস্টিক আরো কতকিছু।ঘরে এসেই মেয়ের হাতে সাজগোছের জিনিস দিয়ে আদুরে গ”লায় বললো

” মামনি,এখন চট করে হাতমুখ ধুয়ে সাজুগুজু করো দেখি কেমন লাগে।তোমার জন্য তিন রঙ্গের লিপস্টিক নিয়ে এসছি,এই দেখো ”

লিপস্টিক দেখে টুকু আনন্দে সমীরের গলা জ”ড়িয়ে ধরলো।আদুরে স্বরে বললো ” আমার বাবা সবথেকে ভালো ”

” এই দেখো তোমার জন্য শাড়ি,ব্লা”উজ ও এনেছি।হাত মুখ ধুয়ে এসো,আমি নিজ হাতে সাজিয়ে দিবো ”

টুকু হাতমুখ ধুয়ে এলো।সমীর আগ্রহ করে সাজিয়ে দিলো।দরজার আড়াল থেকে মহুয়া সেসব দেখছে।টুকু যেই মহুয়ার দিকে তাকিয়েছে মহুয়া চোখের ইশারায় ডাকলো।টুকু বাবাকে বললো ” বাবা আমি ঘর থেকে আসি ”

এটা বলে টুকু মায়ের কাছে এলো।মা গ্লাসে দুধ মেয়ের হাতে দিলো।টুকু গাল ভর্তি হাসি নিয়ে মাকে বললো

” আমি খাইয়ে দিবো তাহলে বাবা আমার সাথে অভিমান করতে পারবে না।তাই না মা? ”

” হু ”

টুকু দুধের গ্লাস বাবার কাছে এনে ” বাবা দেখো আমি কি নিয়ে এসছি ”

” এখন দুধ!”

” আমি খাইয়ে দিবো ”

” আচ্ছা দাও।তুমিই তো খাইয়ে দিবে ”

মহুয়া দরজার আড়ালে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে দেখছে।তার পুরো শরীর ঘামছে।এইতো লোকটা গ্লাসে চু”মুক দিলো।দুধের সাথে ৬টা ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো আছে।

মহুয়া বিছানার নিচ থেকে লুকায়িত ছু”রিটা বের করলো।টুকু আজ বাবার র”ক্তে র”ক্তস্নান করবে।

চলবে…??

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৮

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৮
” সুন্দরী একা একা কোথায় চললে?
ভরদুপুরে কলেজ থেকে ফিরছিলো মান্নাত। দুপুরের টাইমে এই রাস্তাটা ফাঁকা থাকে। থ্রিপিসের ওড়নাটা টেনে আরেকটু ঠিক করে হাঁটতে লাগলো ধীর পায়ে৷
‘একটা ছেলে সামনে এসে বলে,আরেহহহ বাহহহ চাশমিশ চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?
‘মান্নাত নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর বলে প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
‘ছেলেটা সামনে থেকে সরে বলে,যাও বেবিডল।
‘কিছুটা এগোতেই মান্নাতের ওড়না ধরে ফেলে৷ মান্নাত কিছু বলবে তার আগেই একটা কালো রঙের গাড়ি এসে ব্রেক করে তাদের সামনে। গাড়ি থেকে একটা ছেলে বের হয়েই ছেলেগুলোকে মারধর করতে থাকে। বখাটেদের মধ্যে একজন জাহিনের হাতে ছুড়ি দিয়ে পো’চ দেয়। যার ফলে জাহিনের হাত বেশ খানিকটা কেটে যায়।

“এই অন্তর, এদের খোঁজ বের কর তো আমার এলাকায় বসে ইভটিজিং? ওরা হয়তো জানেনা এটা সিংহের গুহা। এখানে শিকারি ভুল করে ঢুকে পড়লেই খালাস।
‘কথা বলার মধ্যে হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ওড়না ছেঁড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন কাপড় ছেড়া কি এতোটা সহজ!মেয়েদের মাথায় আসলেই কি ঘিলু কিছুটা কম থাকে নাকি? জাহিন শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,মিস চার চোখ, আপনার কি মনে হয় এটা কোন সিনেমার শুটিং!
‘মান্নাত ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকায়। লম্বা, ফর্সা , কালো শার্ট, কালো প্যান্ট কি মারাত্মক সুদর্শন যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! এই ছেলে সত্যি কি এই দেশের নাকি পাকিস্তানি?
‘জাহিন শিশ বাজিয়ে বলে,মিস চারচোখ এর আগে কোন ছেলে দেখেননি নাকি? আর শুনুন এটা কোন সিনেমা নয় যে আপনার ওড়না ছিড়ে আমার হাত বেঁধে দিবেন৷ মাথায় কোন বুদ্ধিসুদ্বি নেই নাকি! এই ভরদুপুরে এই রাস্তায় একা একা কোন ঘাস কাটতে এসেছেন?

‘আপনার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
‘জাহিন আর কোন কথার উত্তর না দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো৷ অন্তরকে বললো, মেয়েটা বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আয়। আজকে রাতে কিন্তু পার্টি হবে মাম্মা।
‘অন্তর মান্নাত কে বললো,নাম কি আপনার?
‘মান্নাত
‘ কোন কলেজ?
‘মান্নাত চুপ করে রইলো।
‘যাতে খালাম্মা আর তালে ব্রিলিয়ান্ট! নিশ্চিত আপনি ক্লাস টপার? এরজন্যই সালার বস্তার মত ড্রেস আর চারচোখ। এতো পড়ে কি হবে?
‘ডাক্তার হবো৷
‘বাসা কই তোমার।
‘সামনের গলিতে৷
‘এমন মিন মিন করে কথা বলো কেন! এভাবে কথা বললে একটাও রোগীও পাবে না৷
‘তোমার বাবা কি করে?
‘ এসিপি।
‘ওহহ চোরদের সরদার? তা এতো কালো টাকা থাকার পরেও তোমার এ হাল কেনো?
‘ মান্নাত চুপ করে রইলো৷
‘তোমার বাসা চলে এসেছে বাসায় ঢুকে উদ্ধার করো মামুনি। অন্তর গেটের সামনে নেইম-প্লেট পড়লো। এসিপি জামাল সরদার।
‘মান্নাত চলে গেলো।
‘কি মেয়েরে বাবা একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না!
🌿 মিতা বেগম সেই কখন থেকে জাহিনের অপেক্ষায় আছে। জাহিন গেট দিয়ে ঢুকতেই তার চোখ গেলো জাহিনের হাতের ক্ষতস্থানে। সার্ভেন্টকে বললো, তাড়াতাড়ি ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসো৷

“এসেই মা’রপিট শুরু করে দিয়েছিস!তুই ম্যাচিউর হবি কবে বাবু!
‘তুমিই বলো আম্মু সিংহের সামনে শিকারী চলে আসলে সে কি শিকার ছেড়ে চলে আসে?
‘অতো সব আমি বুঝি না এসব মারামারি করার বয়স তোর নেই।এবার তোকে বিয়ে করিয়ে দেবো।
‘আম্মু এইসব ঝামেলায় আমি নেই৷ বাইদা ওয়ে আমার ভাবি কই?ভাবির জন্য গিফট নিয়ে এসেছি। দেবর ভাবি মিলে তোমার ছেলের চান্দী ফুটো করে দেবো৷

‘মিতা বেগম জাহিনের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে,এই ‘বিয়ে টিকবে নাকি কে জানে! তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।
‘ইট’স নট ফেয়ার আম্মু!ভাবির সাথে দেখা হলো না! আমি ফ্রেশ হয়ে আসি এরপর তোমার ছেলেকে ধরবো।

🌿জিয়ান নয়নার আর তার রিসেশনের ভিডিও দেখে এতোটাই তাতে ডুবে গেছে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সুনয়না “তোমার নামটা বোধহয় তোমার সরল চোখদুটো দেখেই রাখা হয়েছে! কি আছে তোমার ওই নিষ্পাপ চাহনিতে?আমি কেনো বারবার তোমার আঁখি পল্লবে হারিয়ে যাচ্ছি?
‘এই আপনার আসল রুপ!
‘ইরার কথা শুনে জিয়ানের ধ্যান ভাঙ্গলো। ইরার দিকে তাকিয়ে বলে সমস্যা কি আপনার! বারবার আমার আর আমার বৌয়ের মাঝখানে আসছেন কেনো?
‘আমাকে বোকা মনে হয়? আমি জানি আমার চোখ সুন্দর সবাই অনেক প্রশংসা করে তাই বলে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার চোখ দেখবেন।
‘হোয়াট!এরকম দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।জায়িন চৌধুরীর রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি আপনাকে নোটিশ করবে! আমার দৃষ্টি এক্সপেন্সিভ সে যেখানে সেখানে তার দৃষ্টি স্থীর করে না৷ বলেই পায়ের উপর পা তুলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷
‘ইরা বেশ অবাক হলো! একটা ছেলের এতো এটিটিউট?তার পাশে বসা সুন্দরী মেয়ে তাকে নিজে যেচে এটেনশন দিতে চাইছে এরপরে ও ইগনোর করছে! ইরা হুট করে জিয়ান এর হাতের উপর হাত রাখলো।
‘ জিয়ান দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,ডোন্ট টাচ,কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ।
‘প্লিজ এমন করবেন না। আমার খুব ভয় পাচ্ছে আপনার হাতটা একটু ধরতে দিন৷
‘সমস্যা কি আপনার! একা ট্রাভেল করতে এতো সমস্যা তাহলে একা ট্রাভেল করতে কে বলেছে! আমার বৌ খুব ডেঞ্জারাস সে যদি জানে আমাকে কেউ টাচ করেছে তাহলে তার হাত কে’টে দেবে। সাথে আমারটাও। নিজের হাতের প্রতি মায়া দয়া থাকলে এমন ক্রাইম করার চিন্তা করবেন না।
‘মানবতার খাতিরে একটু হেল্প করুন প্লিজ৷
‘জিয়ান নিজের ল্যাপটপ ব্যাগ রাখলো। এখানে হাত রাখুন শক্ত করে ধরে রাখুন।
‘এখানে হাত রাখা আর সিটের হ্যান্ডেলে হাত রাখার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? মানুষ ভয় পেলে একটু সহনশীল আচরণ করতে হয়।
‘এরচেয়ে সহনশীল হওয়া আমার জন্য সম্ভব না। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
🌿
আম্মু আট ঘন্টা হয়ে গেছে আর কতঘন্টা লাগবে?
‘নয়না আমি যতদুর জানি আঠারো /বিশ ঘন্টা লাগে। তুই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা উঠে দেখবি জামাই নিজে থেকে তোকে কল করেছে।
‘নয়না জাহানারা বেগমের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে নিয়ে বসে পরলো। নাহহ এখানে ভালো লাগছে না আমি নিজের রুমে শোবো। বলে নিজের রুমে চলে আসলো৷ জিয়ানের টিশার্ট নিজের গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরলো৷ চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ট্রাই করছে। সবে মাত্র তন্দ্রা ভাব এসেছে৷ হঠাৎ মনে হলো কারো গরম নিশ্বাস তার মুখে পরছে, ঘুমঘুম চোখ খুলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি!
‘জিয়ান নয়নার ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে বলে একদম চুপ একটুও কথা বলবে না। তোমার ঠোঁটের নেশায় আমি মাতাল হয়ে গেছি আমার নেশা কাটাতে তোমার ঠোঁট দুটো চাই।
‘নয়না ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো, আওয়াজ করে ডাকলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার আপনি কোথায়? বেড সাইড সুইচ দিয়ে লাইট অন করলো। নাহহহ কোথায় তার অস্তিত্ব নেই৷ জিয়ানের শার্টটা গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,এ কোন রোগে আমাকে আক্রান্ত করে গেলেন!আমি যে আপনার সাথে কথা বলার তৃষ্ণায় কাতরাচ্ছি! একবার আপনার কন্ঠ শুনিয়ে আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দিন। কথা বলার তৃষ্ণা যে বড্ড বাজে তৃষ্ণা।
🌿
এয়ারপোর্ট থেকে অনিকেত সোজা চলে আসলো হাফ মিঙ্গেল নাহিদের বাসায়৷ কোন মেয়েই আজ পর্যন্ত তার মনের ধারে কাছে যেতে পারলো না৷ মনের সাইড ঘেঁষে সব মেয়ে বের হয়ে যায়! মনে বিয়ে করতে না পারার পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে ধপ করে বসলো সোফায়। কোন ভুমিকা ছাড়াই নাহিদকে জিজ্ঞেস করলো, তোর বৌ যে তুই ওয়াশরুমে দুই মিনিট লেট করলেও সন্দেহ করে!এতো প্যারা দেয় কথায় কথায় সন্দেহ তোর বিরক্ত লাগে না?
‘সন্দেহ করে এটা ভালো তাতে আমি বুঝতে পারি। কিন্তু সন্দেহ না করলে বরং আমার বিরক্ত লাগতো টেনশন হতো৷
‘মাথার তার কি আছে না গেছে?
‘ এখনো একটু আছে কবুল বলার পর ততটুকু ও থাকবে নাকি গ্যারান্টি দিতে পারছি না৷
‘এ কেমন ভালোবাসা!
‘না করেছিস বিয়ে আর না করেছিস জীবনে প্রেম তুই এডি বুঝবি না। ও সন্দেহ করে আমাকে অতিরিক্ত ভালোবাসে তাই। ভালোবাসা ফেইক হলে আমি উগান্ডা গেলেও সন্দেহ করতো না৷
‘উপসসস বড্ড ব্যথা পেলুম বুকে। এজন্মে বিয়ে কি জুটবে আমার কপালে! একটা বৌ নাই এই যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যাচ্ছি।
‘নাহিদ হেসে বলে,তুই কাতরাতে থাক। তা হসপিটালে না যেয়ে আমার বাড়িতে কি?
‘আমরা চারজন দুইটা উইকেট পরে গেছে, আরেকটা আউড হওয়ার দারপ্রান্তে, শা’লার আমার উইকেটের পতন কবে হবে! জীবনে লাবিবের মত হতে পারলেই জীবন সুন্দর, ওই শা’লা বন্ধুর প্রেমিকা নিয়া ভাগছে আর আমি বন্ধুর বৌ নিয়া ভাগতাম। ব্যাস মেয়ে খোঁজার ঝামেলা চুকে যেতো।
‘লাবিব কাজটা ঠিক করে নাই।এতো কিছুর পরেও প্লেবয় রয়ে গেছে ওর এক্স সুমাইয়ার সাথে এখনো চ্যাট করে।
‘তুই কেমতে জানলি?
‘আমার হবুর ফ্রেন্ড সুমাইয়া।
‘ভাই তোর বৌটাকে দেখে রাখ আবার তোরটা নিয়ে টানাটানি না শুরু করে?
‘অন্যের টানাটানিতে যে হাত ছেড়ে দেবে তাকে চাই না। ভালোই হইছে রেজার সাথে নীলাঞ্জনার বিয়ে হয়নি৷ তুই বল,মেয়েটাও তো ভালো না? ভালো হলে নিজের প্রেমিকের ফ্রেন্ডের সাথে টু টাইমিং করে!যেমন বারো… মাইয়া তেমন তেরো,, জামাই পাইছে।
‘সে যাহোক আমার বুকে ব্যথা কমানোর ট্রাই করো বাবু।
‘শা’লা তোর কি আমাকে গে মনে হয়!
‘,চুপকর লুচ্চা। আমি কইছি চা- কফির কথা। আমার এ ইজ্জত শুধু মাত্র আমার ভবিষ্যত বৌয়ের জন্য সংরক্ষিত।

#চলবে।
আসসালামু আলাইকুম।নতুন কিছু ক্যারেক্টার যুক্ত হয়েছে। কেমন লাগছে জানাবেন৷

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৭

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৭

‘নয়না বারবার মোবাইলটার দিকে তাকাচ্ছে।নাহহ একটা কল ও আসেনি! এই লোকটা এমন রসকষহীন কেন!আরেহহ ভাই তোর প্রেমিকা পালিয়ে গেছে তাতে কি হইছে! দুনিয়ায় মেয়ের অভাব পরছে! আমার মত সুন্দরী একজনকে ভালোবাসলেই তো লেটা চুকে যায়। কত নিষ্ঠুর হলে একবারও কল না করে। নাহহ নয়না স্থীর হতে পারছে না৷ পায়চারি করছে সারা রুম জুড়ে। রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসলো। চোখ গেলো পশ্চিম কর্নারে চোখের সামনে ভেসে উঠলো জিয়ানের প্রতিচ্ছবি! এই তো মনে হচ্ছে তার অস্থিরতা দেখে লোকটা মুচকি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। দ্রুত ছুটে গেলো চেয়ারের সামনে, একদম দাঁত ফেলে দেবো এভাবে হাসলে।
‘আশ্চর্য সামনে কেউ নেই! লোকটা থাকলে ঠিক বলতো ফেলো দাও দেখি তারপর খপকরে তাকে কোলে নিয়ে নিতো? উফফ এসব আর ভাবতে পারছে না নয়না৷ দ্রুত পায়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে আসলো৷ রুমেও স্বস্তি পাচ্ছে না৷ রুম থেকে বের হয়ে টিভি অন করলো,সেখানে গান বাজচ্ছে, সখী তোরা প্রেম করিও না পিরিত ভালা না…
চ্যানেল পাল্টে চলেছে কোথাও স্থীর হতে পারছে৷ বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে বলে,মহা মুশকিলে পরলাম তো!এই প্লেন ড্রাইভারতো কিছুতেই আমার মস্তিষ্ক আর হৃদয় থেকে সরছেই না।
‘আপিতা তুমি কার সাথে কথা ও।
‘নয়না সূচনার দিকে তাকিয়ে বলে,নট আপিতা ইট’স আপি।
‘ওকে পাপিতা।
‘তুই এতো বিচ্ছু কেন সূচনা? আমার মুড ভালো নেই সর এখান থেকে।
‘সূচনা হুট করে নয়নার হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে বলে,তোর মুড দিয়ে আমি কি করবোরে আপিতা। আমি কার্টুন দেখবো সর তুই।
‘তোকে না কতবার বলছি আমাকে তুই করে বলবি না আর আপিতা বলবি না!
‘আপিতা, তুই আপিতা, তুই আপিতা।
‘চুপ করবি!
‘করবো না চুপ তুই করবি! চিনিস আবার বাবাকে?
‘নয়না সূচনার কান টেনে দিয়ে বলে,তুই মুচনা মুচনা।বলেই নিজের মায়ের রুমে চলে গেলো৷
‘সূচনা কাঁপাল কুঁচকে বলে,আমার সাথে এমন করেছিস দেখিস তোর সাথে কি করি আপিতা।
‘রুমে এসেই জাহানারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আম্মু আমার ভালো লাগছে না৷
‘জাহানারা বেগম নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,বাহিরে যাবি? চল আমরা ফুচকা খেয়ে আসি।
“,নয়না আনন্দিত হয়ে বলে সত্যি!
‘হুম সত্যি।
‘নয়নার তবুও মন ভালো হচ্ছে না। ওই লোকটা কল করবে কখন! একটা কল কি করা যেতো না! আরেহহ মানুষের জন্য একটু মায়া তো থাকবে! কি নিষ্ঠার মানব লোকটা!
‘কিরে মা এখন কি ভাবছিস? আমাকে বল।
‘কিছু না আম্মু।
‘কিছু না হলেই ভালো। এখন মাথা থেকে সব ভাবনা বাদ দিয়ে দিবি৷ একমাত্র পড়া ছাড়া। সামনে পরিক্ষা সেটাতে ফোকাস করতে হবে। শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে নয়ত লজ্জায় পরতে হবে।
‘নয়না চট করে উঠে বসলো, জাহানারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,আম্মু আমার আরেকবার বিয়ে দিলে কেমন ছেলের কাছে দিবে? এবার বিয়েতে বর কি আমি চুজ করতে পারবো?
‘মেয়ের এমন বোকার মত প্রশ্ন শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন৷
এসব তুই কি বলছিস? তোকে আবার বিয়ে কেন দেবো!বিবাহিতা মেয়েকে দ্বিতীয়বার বিয়ে কোন দুঃখে দিতে যাবো!তাছাড়া জামাই আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। যেমন দেখতে তেমন কি অমায়িক তার ব্যবহার।
‘দেখতে রানবীর কাপুড়ে হলেই হয়!একদম ভালো না৷ এখনো একটা কল করলো না আমাকে! কেমন পাষাণ হৃদয়েে মানুষ! এমন মানুষ আমার মোটেই পছন্দ না৷
‘আরেহহ বোকা মেয়ে প্লেনে থাকলে কল কি করে করবে! ল্যান্ড করলে তারপর তোকে কল করতে পারবে৷ এখন তো ফোন এরোপ্লেন মুডে আছে। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন।
‘নয়নার মন পুত হলো না কথাটা৷ কল করেনি সেটা মানলাম আমার শেষ কথাটাও তো শুনলো না!আস্তা হিটলার ড্রাইভার। আর একবার সামনে আসুন আপনাকে আমি উগান্ডা ভ্রমন করিয়ে আনবো।
‘এতো ভাবা বাদ দে। যা রেডি হয়ে আয়, ফুচকা খেয়ে আসি। আর হ্যা কাল থেকে কিন্তু স্যাররা আসা শুরু করবে পড়াতে। পরিক্ষার মাত্র সতেরোদিন বাকি।
‘তুমি না বলছিলা বিয়ে হলে আর পড়তে হবে না৷ তাহলে আর পড়বো না৷ আমার পড়াশোনা এখন বর, টিচার হলো শ্বশুর বাড়ির মানুষ, সংসার হলো ক্লাস রুম।
‘পরিক্ষা না দিলে জামাই মানুষদের কি বলবে, আমার বৌ আন্ডার মেট্রিক? জামাইয়ের যোগ্য হতে হবে না? উল্টোপাল্টা কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।
‘🌿জিয়ান চোখ বন্ধ করলেই নয়নার নিষ্পাপ মুখশ্রী ভেসে উঠে চোখের সামনে। শেষ চাহনি তার চোখের আকুলতা। চোখ খুলে ফেলে জিয়ান৷ ঘুম আসছে না তার৷ ইশশ কেনো যে তোমার কথাটা শুনলাম না! আচ্ছা এই পাঁচদিনে মেয়েটার প্রতি কেমন টান অনুভব করছি৷ আমার কি বৌ হিসেবে সুনয়নাকে মেনে নেয়া উচিৎ?
‘এই যে মিস্টার হ্যান্ডসাম।
‘হঠাৎ এমন সম্বোধনে জিয়ান পাশ ফিরে তাকালো৷ জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে?
‘আমি ইরা।
‘জিয়ান ভ্রু কুচকে আবার নিজের ধ্যানে মগ্ন হলো৷
‘ ও হ্যালো পাত্তা দিচ্ছি বলে ভাব নিচ্ছেন! আমি ইরা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আর তাছাড়া আমরা কানাডার সিটিজেন। ছেলেদের লাইন লেগে যায় আমার পিছনে কিন্তু আমি কাউকে পাত্তা দেইনা৷
‘জিয়ান কানের মধ্যে ইয়ারফোন গুঁজে নিলো৷
‘আপনি এমন একটা ভাব নিচ্ছেন মনে হচ্ছে আপনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে! আমার ভয় হচ্ছে তাই আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম৷ এতো এটিটিউট কিসের আপনার! চেহারা আর বডি থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না৷
‘জিয়ান আস্তে করে, বলল, আমি মানুষ না দানব, পিচাশ টাইপ দানব। আমি আমার বৌয়ের বিরহে বিলীন হয়ে যাচ্ছি তাই দয়া করে আমার বৌয়ের কল্পনায় বা’হাত ঢোকাবেন না৷
‘ছিহহহ আপনার বিহেভিয়ার এমন কেনো! আপনি দেখতে যতটা সুন্দর ব্যবহার ততটাই বাজে। সো কন্টিনিউ। ইরা ভেবেছিলো সুদর্শন এক যুবকের সাথে তার সিট পরেছে প্লেন জার্নিটা তার ভালোই কাটবে সতেরো ঘন্টার দীর্ঘ জার্নি কথা বলার মত একজন পাশে থাকলে একটু সহজ হতো৷ অদ্ভুত লোকটা।
‘জিয়ান মেজাজ হারাচ্ছে!বিরক্ত হচ্ছে নিজের উপর। ইচ্ছে করছে এখন এক দৌঁড় নয়নার কাছে যেয়ে নয়নাকে জড়িয়ে ধরতে। কপালে চুমু দিয়ে বলতে, বলো তুমি কি বলতে চাও তোমার কথা না শুনে কোথাও যাচ্ছি না৷ নয়নার প্রতি সে অন্যায় করেছে একে একে কতগুলো অন্যায় করে বসেছে বাচ্চা মেয়েটার প্রতি। বাচ্চা মেয়ে শব্দটা মনে আসতেই হেসে দিলো জিয়ান৷ নয়না এখন সামনে থাকলে নিশ্চিত কোমড়ে হাত রেখে বলতো, আমি মোটেও বাচ্চা মেয়ে না। আমি ষোড়শী বালিকা৷ আর কয়েকদিন পর কলেজে ভর্তি হবো৷
‘ইরা জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,লোকটার কি মাথায় সমস্যা আছে! একা একা পাগলের মত হাসছে?
🌿 মিজান তালুকদার মাহবুব তালুকদারের সামনে বসা।
‘কিছু বলবি?
‘ভাইজান আমি নীলাঞ্জনার খোঁজ পেয়েছি কিন্তু আমার মন পোড়ে তবুও আমার বিবেক তার দিকে ফিরতে দিচ্ছে না৷ আইরিন নীলাঞ্জনার জন্য কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
‘দেখ মিজান। ভুল করলে সেটা ধরে তো আর বসে থাকা যাবে না৷ যে ভুল করে তার ফল সেই ভোগ করে৷ এমন একটা ছেলেকে ছেড়ে ও যে ভুল করেছে একদিন ও নিজেই আফসোস করবে। তুইতো দেখেছিস রেজাকে কি সুদর্শন আর কর্মঠ ছেলে৷ নিজের মেয়েকে তো আমরা পর করে দিতে পারি না। তবে তুই আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধর ও নিজেই আসবে৷ আমরা সখ করে সমুদ্র ভ্রমণে যাই, হুট করে পঁচা সমুকে পা কাঁটলে তবেই টের পাই, সাবধানে চলাচল করতে হতো! অতি আবেগে আমরা ভুল করে বসি। ও পঁচা সুমুকে পা’ কেটে দগ্ধ হয়ে ঘরের মেয়ে ঘরেই ফিরে আসবে। চিন্তা করিস না৷
‘বিয়েটা টিকবে না বলছো?
‘আমি ছেলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যা বুঝেছি টেকার সম্ভবনা খুব কম৷ যদি টিকে যায় তাহলে তো ভালোই৷ আইরিনকে সামলা। বড় মেয়ের শোকে ছোট মেয়েটাকে অযত্ন যেনো না করে৷ যে চলে যায় সে স্বার্থপর। স্বার্থপর মানুষের জন্য ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে দিতে হয় কারন এমন মানুষ ভালোবাসার কদর বুঝে না৷ কি না করেছি আমরা নীলাঞ্জনার জন্য! আমাদের সম্মানের কথা একটাবারও ভাবলো না! বাবা, মায়ের,পরিবারের ভালোবাসা সম্মানের চেয়ে নিজের ভালো থাকাটা বেছে নিলো!
🌿এক ছেলে চলে গেছে আরেক ছেলে আসতেছে৷ ছেলের রুম গুছিয়ে রাখলো নিজের হাতে। কিচেনে এসে নানারকম খাবার রান্না করলো ছেলের পছন্দের। ছেলেটা তো বাসায় তেমন থাকেই না। সারাক্ষণ তার মাথায় থাকে বাউণ্ডুলেপানা৷ কোন দেশ রেখে কোন দেশে ভ্রমন করবে সেই তাড়না। রেজা রাগি তবে মা’ভক্ত। জাহিন একরোখা তার মন মর্জি বোঝা মুশকিল৷
‘দীর্ঘ আটমাস পর দেশের মাটিতে পা’রাখলো জাহিন চৌধুরী। চৌধুরী বংশের ছোট নবাব৷ এশ কালার শার্ট, শার্টের হাতা ফোল্ড করা। কালো চশমা পরা,এক হাতে লাগেজ অন্য হাতে ব্লেজার। হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে এয়ারপোর্টের গেট দিয়ে বের হচ্ছে।

#চলবে

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব-১৬

0

#অর্ধাঙ্গিনী
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬
আমার বর হ্যাসবেন্ড প্লিজ তার সাথে দেখা করতে দিন৷
‘ম্যাম আপনার বর তো হ্যাসবেন্ড হবেই। বাংলাতে বর,ইংরেজিতে হ্যাসবেন্ড৷
‘আরেহহহ আমার বর ড্রাইভার।
‘ম্যাম অযথা আমাদের সময় নষ্ট করবেন না৷ আপনার বর হ্যাসবেন্ড হোক বা ড্রাইভার আমরা আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না৷
‘জাহানারা বেগম বললেন এসব কি ভুলভাল বলছিস তুই?
‘আমার কি দোষ বলো আম্মু?এই লোক আমার মাথা খারাপ করে রেখেছে।
‘স্যরি ভাইয়া। আসলে বলতে চেয়েছিলাম আমার হ্যাসবেন্ড পাইলট। সে ফাস্ট অফিসার৷ আইমিন ক্যাপ্টেন। ওনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে গেছেন ভুলবশত প্লিজ হেল্প করুন এগুলো তাকে পৌঁছে দিতে।
‘কোন দেশে যাবে আপনার হ্যাসবেন্ড?
‘কানাডা৷
‘ওয়েট ম্যাম। দেড় হাজার টাকা দিন।
‘ নয়না কিছু বলতে নিলে,জাহানারা বেগম নয়নার হাত টেনে ধরে। নিজের ব্যগ থেকে টাকা বের করে দেন৷
‘লোকটা একটা টোকেন দিয়ে বলে,রুম নাম্বার দশে চলে যান৷ তারা আপনাকে হেল্প করবে। ধন্যবাদ ম্যাম।
‘নয়না রুম নাম্বার খুঁজতে লাগলো হঠাৎ করে চিৎকার করে ডেকে উঠলো, মিস্টার প্লেন ড্রাইভার…..
‘অনিকেতের সাথে পুরো রাস্তা হাসিঠাট্টা করতে করতে এয়ারপোর্টে চলে আসে দু’জনেই।
‘অনিকেত জিয়ানের ব্যাগ নামিয়ে এনে বলে,তুই আমার বন্ধু এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ভাই।
‘তোর বিশ্বাস করতে হবে না।
‘ভাবির কোন বান্ধবী নাই দোস্ত?
‘এখন এসব বলার সময় শা’লা।
‘বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে সময় টময় হিসেব করতে নেই। যদি পেয়ে যাই মনমতো কন্যা বিয়ে করে বনবাসে যাবো।
‘,জিয়ান হেসে বলে, বিয়ে করে বনবাসে কোন দুঃখে যাবি?
‘বৌ কে নিয়ে যাবো। জানিস তো আমি আবার প্রকৃতি লাভার
বিয়ের একবছর টানা হানিমুন করবো এক দেশের জঙ্গল থেকে আরেক দেশের জঙ্গলে।
‘হানিমুন তো ভালো কথা তোর হাড্ডি অবশিষ্ট থাকলে তবেই না এক জঙ্গল ভ্রমণ শেষ করে আরেক জঙ্গলে যাবি!চুপ কর আর চল।
‘হাঁট ছিলো দুজনে। এমন সময় অনিকেত আবার বলে উঠলো,ভাই তোর বুকে ব্যথা করছে না? এতো সুন্দরী বৌ রেখে তুই কোন বুকের পাঠা নিয়া ফ্লাই করতে চলে আসলি? বৌটাকে সাথে করে নিয়ে আসলে একটা দুইটা চুম্মা খাইতি,জড়ায়া টরায়া ধরতি!বৌ কান্না করতো তুই বলতি কেঁদো না সাথী আমার, আমি তোমার আছি তোমারই থাকবো, ফিরে ফিরে তোমারই কাছে আসবো।
‘চুপ করবি!নয়তো তোর সাথে এখানেই বিদায়।
‘আচ্ছা ভাবির কোন বোন নেই?
‘আছে একটা তোর মাথার চুল সব টেনে ছিড়ে ফেলবে৷ তবে তোর জন্য ওই একপিস যথেষ্ট।
‘তো করিস না আর দেরি নাম্বার দে তাড়াতাড়ি।
‘তুই আসলেই ডাক্তার?
‘হসপিটাল আর ক্লিনিকে আমি ডাক্তার। বাহিরে আমি রোমিও কিন্তু আমার জুলিয়েটের খবর নাই৷
‘ওর বয়স আট তবে তোরে নাকানিচুবানি খাওয়াতে পারবে৷
‘একটা হৃদয় কয়বার ভেঙে দিবি বন্ধু!পাষান বন্ধু। কথা বলছিলো আর হাঁট ছিলো৷ হটাৎ কানে আসলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। হুট করে পা’থামিয়ে দিয়ে সামনে চোখ বোলালো৷ নাহহ নেই তো!তাহলে কি আমি ইমাজিন করছি!ভাবনার ভেদ করে আবার কানে আসলো মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। পেছনে ঘুরে তাকাতেই চোখ পরলো নয়নার দিকে,এক প্রকার ছুটে আসছে সে৷জিয়ান যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা৷ নিজের দু’হাত প্রসারিত করে দিয়ে বলে, নয়না। সব মানুষ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। হুট করে দেখলে সবাই ভাববে কোন সিনেমার শুটিং চলছে এখানে,নায়ক নায়িকার জন্য দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে, আর নায়িকা দৌড়ে নায়কের কাছে আসছে!
‘অনিকেত ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,এটা তো ভাবি?তুই বললি অস্থায়ী এখন দেখি অন্য সিন? অনিকেতের কথা জেনো জিয়ানের কর্নে পৌঁছায়নি। সে তাকিয়ে আছে নয়নার দিকে।
‘নয়না জিয়ানের সামনে এসে থামলো, জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
‘জিয়ান নিজের প্রসারিত হাত দুটো সরিয়ে নিলো।আচ্ছা সে কি চাইছিলো নয়না তাকে জড়িয়ে ধরুক! কেনো তার মন এটা চাইলো?যাকে আপন করতে পারবো না তাকে কেনো বক্ষ টানছে? কেনো মনে হচ্ছে এইভাবে ছুটে এসে আমার বক্ষে আঁছড়ে পরুক!
‘প্লেন ড্রাইভার আপনি লোকটা মোটেও সুবিধার নন। রাতেই বললেন,নাম্বার লাগবে? নাম্বার না দিয়ে চলে যাচ্ছেন?
‘সিরিয়াসলি সুনয়না তুমি একটা নাম্বারের জন্য এভাবে ছুটে এসেছো? তোমার মাথার স্ক্রু আছে নাকি পরে গেছে৷
‘চুপ করুন সব সময় জটিল জটিল কথা! এতো কষ্ট করে এসেছি কই কোলে নিবে চুমু খাবে তা-না উল্টো বকড় বকড় করছেন?
‘পাবলিক প্লেসে তোমাকে কোলে নিয়ে চুমু খাবো?তুমি এটা চাইছো? তুমি চাইলে আমার কোন সমস্যা নেই।
‘অনিকেত কাশি দিয়ে বলে,ভাই তুই থাম আমার বুকে ব্যথা উঠতেছে।
‘আপনি এখানে কি করছেন! দ্রুত হসপিটালে যান। অসুস্থ মানুষ এয়ারপোর্টে না হসপিটালে থাকে।
‘নয়না ও আমার বন্ধু অনিকেত। ও পেশায় ডাক্তার কার্ডিওলজিস্ট। মজা করে বলেছে। এবার বলো কেনো এসেছো?
‘বাসায় বসে আপনার বিরহে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম৷ তাই ভাবলাম পাগল না হয়ে আপনাকে কয়েকটা কিসমিস দিয়ে যাই।
‘এখানে কেনো বেবি? খোলা ময়দানে প্রেম জমে নাকি? প্রেম জমে আড়ালে।
‘আহারে মিস্টার রোমিও। এই নিন আপনার কিসমিস।
‘ধন্যবাদ প্রিয়া।
‘ওয়েলকাম প্রিয়।
‘জিয়ান ওয়ালেট থেকে তিনহাজার টাকা বের করে নয়নার হাতে গুঁজে দিয়ে বলে, বেড সিটের দাম৷ আমি আবার এতো উদার না।
‘নয়না জিয়ানের জিন্সের পকেটে টাকাটা ঢুকিয়ে দিয়ে বলে,দাগ চলে গেছে তাই টাকা লাগবে না৷
‘তোমার সাথে কে এসেছে?
‘আম্মু এসেছে।
‘উনি কোথায়?
‘বসে আছে।
‘আচ্ছা আমার হাতে একদম সময় নেই। আমি আসি৷
‘শুনুন
‘বলো।
‘এভাবে বলো, বললে কি বলবে হু! মনে হচ্ছে আমার উপর এক্ষুনি পাহাড় ছুড়ে মারবেন৷
‘সুনয়না এখন মজা করার সময় না।
‘অনিকেত হেসে বলে,এতো কিউট একটা বচ্চা বৌয়ের মিষ্টি কথা তোর ভালো লাগছে না!
‘আপনি হার্টের ডাক্তার তাইতো?এককাজ করতে পারবেন?
‘কি কাজ লিটল ভাবি।
‘এই ড্রাইভার হার্টের সার্জারী করে সব বদ রাগ জেদগুলো বের করে দিবেন৷
‘অনিকেত জিয়ানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে সরে গেলো।
‘আপনি এভাবে চোখ রাঙিয়ে ডাক্তার বাবুকে সরিয়ে দিলেন কেন? আমি তো আপনার চোখ রাঙানোকে ভয় পাই না৷
‘নয়নার কথার উত্তর না দিয়ে নয়নার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের নাম্বার সেভ করে দিলো৷ ফোনটা নয়নার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,পড়ালেখা করো ক্যারিয়ার গড়ো।
‘আমার পড়ালেখায় হলো বিয়ে আর ক্যারিয়ার হলো সংসার।
এতো কষ্ট করে পড়ালেখা না করে বরের সাথে ঝামেলা করবো। উল্টোপাল্টা কাজ করে শ্বাশুড়ির বকা খাবো৷ এই হলো আমার মূল ক্যারিয়ার৷ জামাই ইনকাম করবে আমি তার মাথায় চড়ে দুনিয়া ভ্রমণ করবো৷
‘এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হও। আমার হাতে সময় নেই।
‘আহা আমার কথাটা তো শুনবেন।
‘এখন বাচ্চামো করার সময় না সুনয়না।
‘আমার আপনাকে কিছু বলার আছে।
জিয়ান কিছু বলবে তার আগেই এনাউন্সমেন্ট হলো, প্রিয় যাত্রীরা Ac. 87 টরন্টোগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের গেইট নাম্বার ২২ এর দিকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
‘জিয়ান নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,কিছু কথা না বলা থাকুক। কথাটা শেষ করেই দ্রুত সামনের দিকে পা’ বাড়ালো।
জিয়ানের ইচ্ছে করছে নয়নার কথাটা শুনতে কিন্তু তার গন্তব্য সামনে এই মূহুর্তে পিছু ফেরা সম্ভব না। তাছাড়া সময় একদম কম।
‘নয়না এক ভাবেই তাকিয়ে আছে জিয়ানের চলে যাওয়ার দিকে। মনে মনে বলছে,আমার কথাটা শুনলেন না! কথার ভাজে কথা জমতে থাকুক৷ আপনি ভালো থাকুন সব সময়। নয়না ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলো যতক্ষণ জিয়ানকে দেখা যাচ্ছিলো।
‘জাহানারা বেগম এসে নয়নার হাত ধরে বলে,ওতে কাজে যাচ্ছে এটাই ওর পেশা। ফিরে চল। সময় হলে আবার তোর কাছেই আসবে।
‘জিয়ান প্লেনে নিজের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে,নিজের মোবাইল বের করে নয়নার আজকে সকালে লুকিয়ে তোলা পিকটার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার চাওয়াটা আমি পূরন করতে পারলাম না।
আমার জীবন তোমার নামে বিলীন করতে পারলাম না,
ধীরে ধীরে জ্বলছি,আগুনকে হৃদয় থেকে নেভাতে পারছি না!
‘বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে। নিজেকে কখন ক্ষমা করতে পারবো না। “তুমি সদ্য ফোটা কলি আমি ঝড়ে যাওয়া ফুল, কিভাবে খুঁজবো তোমাতে কুল!
‘ভিষন ভিষণ অভিমান জমলো নয়নার৷ তার কথাটা না শুনে চলে গেলো! লোকটা একটুও ভালো না৷ আজ থেকে তার নাম নিষ্ঠুর প্লেন ড্রাইভার। মনে মনে বকবক করতে ব্যস্ত নয়না। জাহানারা বেগম বললেন, এতো কি ভাবছিস?এসব ভাবনা বাদ দিয়ে এবার বইখাতার চিন্তা কর।এখন রেজাল্ট খারাপ হলে শ্বশুর বাড়ির মানুষ ও তোকে পঁচাবে।
🌿
লাবিব বাসায় এসে ঢুকতেই। সৈকত সাহেব (লাবিবের বাবা) বলেন,তুই আমার বাসায় কেনো এসেছিস?
‘বাবা স্যরি।কিন্তু দোষটা আমার একার না৷ আমি তোমাদের বলেছিলাম তোমরা রাজি হওনি তাই এই পথ বেঁছে নিতে হলো।
‘সৈকত সাহেব লাবিবের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,তা তোমার বাবা মা তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে? বড়লোক ছেলে পেয়েই গলায় ঝুলে পরলে? কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যায় শুনি!
নীলাঞ্জনা নিচের দিকে তাকিয়ে নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কত আদরের মেয়ে ছিলো সে। মুখ ফুটে বলার আগেই সব হাজির হয়ে যেতো।এতো বিলাসী জীবন ছিলো তার৷ আজ তার একটা ভুল তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে!
‘শিল্পি বেগম এসে বলে,(লাবিবের মা) মেয়েটার কি দোষ বলো? তোমার ছেলে প্রশ্রয় দিয়েছে বলেই না এসেছে সব ছেড়ে।
‘একদম চুপ করো তুমি। আমি কি ফিডার খাওয়া বাচ্চা? মেয়েরা সায় না দিলে কোন ছেলের সাহস হয়! আমি নিশ্চিত কোন নিম্ন পরিবারের মেয়ে এরজন্য লোভে পরে আমার ছেলেকে রুপের জ্বালে ফাঁসিয়েছে। এই মেয়ে বংশ পরিচয় কি তোমার? তা আদৌও বংশ পরিচয় আছে তো নাকি ছাপড়ি?
#চলবে

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>