Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2452



নিশ্চুপ ছেলে পার্ট_২

0

নিশ্চুপ_ছেলে
#পার্ট_২
Written by Avantika Anha
ফুপা বসে ছিল এমন সময় নীল আসলো । এমন সময় ফুপা বলল , আনহা মা নীলকে খাবার দে
আমি আর নীল দুজনেই অবাক । নীল এর চোখের কোণে বিন্দু জলের দেখা পেলাম হয় তো তা একটু ভালোবাসা পেয়ে ।
আমি খাবার দিচ্ছিলাম এমন সময় চোখ মারলাম ওকে হিহি ।
.
নীল রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকালো ।
.
আমি এমন ভাব নিলাম যেন কিছুই করি নি ।
.
রাতে চ্যাটিং এ
তানহা ( ফেসবুকে ) : কি খবর
নীল : হাসি ইমোজি ভালোই আপনি
তানহা : তা তো ভালোই তা এতো খুশি কেন ( যদিও জানি তবুও )
নীল : আজ প্রথম আব্বু আমার কেয়ার করলো বিশ্বাস করুন এতো খুশি কোনোদিন হই নি
আমি : তা তো খুব ভালোই তাইলে কিটক্যাট খাওয়ান সেই খুশিতে হিহি
নীল : হাহা আজ এতো খুশি সামনে থাকলে ঠিক খাওয়াতাম
আমি : হাহা সময় আসুক নিবোই আমি
নীল : হুমমম
.
.
পরের দিন
নীল : আনহা
আমি : হুম
নীল : আমার ফোন দেও
আমি : আমি নেই নি এবার
নীল : মজা ভালো লাগে না দেও বলছি
আমি : সত্যি নেই ( সত্যিই নেই নি এবার )
নীল : ভালো লাগে না দেও বলছি

( জোরে আমার হাত ধরে )
( আম্মু ভয় লাগে এতো রাগ কেন নেই নি তবুও )
আমি : জানি না সত্যি
নীল ধাক্কা দিল
হঠাৎ ধাক্কা সামলাতে না পেরে লোহার টেবিলে মাথা লেগে কিছুটা আঘাত পেলাম । যদিও তা একটুই ছিল । আমি কেঁদে চলে গেলাম নিজের রুমে ।
.
কিছু সময় পর ফুপা : নীল
নীল : জ্বী ( খুশিতে তার বাবা তাকে ডাকছে )
ফুপা : তোমার ফোন টা একটু নিয়েছিলাম ।
আামার ফোনের চার্জ ছিল না একটু দরকার ছিল তাই ।
নীল : ব্যাপার না ( যদিও নীল অনেক টাই লজ্জিত হলো আনহা কে কষ্ট দিয়ে )
নীল আনহার রুমের ওদিক গেল ।
কিন্তু কান্নার আওয়াজ পেল ।
( অনেক সময় রুমে বসে কাঁদছিলাম )
.
নীলের নিজেকে লজ্জিত মনে হলো ।
.
বিকেলে
নীল : আনহা
আনহা : কিছুটা কষ্টে তাই জবাব দিলাম না
নীল : আমাকে ক্ষমা করে দেও
আমি : নিশ্চুপ
নীল : সরি রে
আমি : কিছু না বলে কেঁদে ফেললাম
নীল : প্লিজ কেঁদো না
আমি : ( কাঁদুরি বেশি আরও জোড়ে কেঁদে ফেললাম )
নীল : চুপ করো প্লিজ
আমি : আর কিছু না বলে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করলাম
নীল : ( কি আর বলবে ) কেঁদো না
আমি : চুপ করে বললাম । এমন করিস কেন আমার সাথে তোর ছোট হলেও আমি তো তোর খারাপ চাই না । আজ তো কিছু করিও নি । আমি তো নিলে স্বীকার করি যে হ্যা নিছি ।
নীল : আমি জানি সরি
আনহা : এক শর্তে মাফ করবো
নীল : কি শর্ত
আনহা : আমাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাবি আর কিটক্যাট আর আইসক্রিম কিনে দিবি এক বক্স৤
নীল : আচ্ছা ঠিক আছে
.
আনহা : চল তাহলে
নীল : এখনি
আনহা : হুম
.
ফুচকার দোকানে
নীল : এতো জ্বলদি খাও‌ কেনো আস্তে খাও
আমি : তুই কি মেয়ে
নীল : মানে ( ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে )
আমি : তুই মেয়ে না তাই বুঝবি না
নীল : ওহ
আমি : এই দেখ আমার শেষ
নীল : আমার শেষ হোক ওয়েট
আমি : ( ওর প্লেট থেকে একটা উঠিয়ে )
নীল : এটা কি করলা
আমি : কি আর‌ তুই খাচ্ছিস ধীরে তাই উঠায় নিলাম
নীল : রাক্ষসী
আমি : কি বললি
নীল : রাক্ষসী বললাম
আমি : ইসস তুই তাইলে ভুত
নীল : তুমি পেত্নী
আমি : হুম তোমারি ( আস্তে )
নীল : কিছু বললা
আমি : না ও কিছু না
নীল : ওহ
.
সেদিন বিকেলে অনেক ঘুরলাম ।
.
বাড়িতে গিয়ে
ফুপা : তোরা কই গেছিলি
আমি : কেনো ঘুরতে গেছিলাম
ফুপা : তা আমাকে বলবি না
আমি : হিহি না
ফুপা : ফাজিল মেয়ে তা নীল কই
আমি : চকলেট আনতে গেছে আমার জন্য
ফুপা : মা আমি এতকাল মিছে রাগ করছি ছেলেটার উপর তুই ঠিক ই বলছিলি । তাই ওর খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি । তুই ওর পাছে থাকিস ওকে স্বাভাবিক করিস । তুই ছাড়া এটা কেউ পারবে না রে
আমি : আচ্ছা ফুপা তুমি চিন্তা করো না
ফুপা : আমি আর কতোদিন বাঁচবো যাওয়ার‌ আগে নীলের দায়িত্ব তোর হাতে দিয়ে দিবো ।
আমি : আচ্ছা ফুপা আমি করবোই ওকে ঠিক ।৤
.
রাতে
খাওয়ার টেবিলে ,
ফুপা : নীল
নীল : জ্বী আব্বু
ফুপা : আনহার তো রেজাল্ট বের হবে কিছুদিন পর
নীল : হুম
ফুপা : আনহা কে রেজাল্ট বের হওয়ার পর এখানকার ভার্সিটি এ ভর্তি করায় দিস ও এখানেই থাকবে
নীল : আচ্ছা
ফুপা : তার আগে কিছুদিন ওদের বাড়ি থেকে ঘুরে আয়
নীল : আচ্ছা ( কখনো ফুপার কথা অমান্য করে না )
আমি : ফুপা আমার যে একটা ইচ্ছে আছে
ফুপা : হ্যা মা বল
আমি : বাসে যাবো নীলের সাথে
ফুপা : কেন গাড়ি থাকতে বাস কেন
আমি : ইইইই ওই যে ইইই
ফুপা : ও হ্যা হ্যা নীল ও যেভাবে যেতে চায় নিয়ে যা ( ইশারা বুঝছে )
.
যাওয়ার দিন
বাসে ,
নীল : জোড় করে বাস এ নিয়ে এলে
আমি : হিহি এটার মজা আছে
নীল : ভালো
আমি : নে ইয়ারফোন টা কানে ঢুকা
নীল : লাগবে না
আমি : আচ্ছা
.
কিছু সময় পরে
ওর কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম । কিছুটা ঘুমের ভানেই ।
.
নীল : কিছুটা নড়তে গিয়েও নড়লো না ভাবলো আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে এই ভয়ে
আমি : চুপচাপ হাসি পাচ্ছিল কিন্তি হাসলাম না‌
.
.
কিছু সময় পর
আমার চুল বাতাসে মুখের সামনে এসে পড়লো নড়তে গিয়ে নড়লাম না । এই ভেবে যে নড়লেই ও বুঝবে আমি জেগে ।
.
নীল : তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কি নিশ্পাপ লাগছে এই ফাজিল মেয়ে টাকে
.
নীল হাত দিয়ে চুল সরাতেই
.
আমি : একটু নড়ে ঘুম ভাঙ্গার অভিনয়ে
.
আমরা পৌঁছাইছি ?
নীল : হুম আরেকটু
.
চলবে…..
( দেরির জন্য ক্ষমা প্রার্থী )

নিশ্চুপ_ছেলে পার্ট_১

0

নিশ্চুপ_ছেলে

পার্ট_১
Written by Avantika Anha
প্রতিদিনের মতো ছেলেটি ফেসবুক এ ঘুরাঘুরি করছিল । ছেলেটির নাম হলো নীল মাহমুদ আপন‌। ভার্চুয়াল জীবন টাকে একটু বেশিই আপন করে ফেলেছে সে । কেনই বা করবে না । যার আশেপাশের মানুষগুলো কখনো তার খোঁজ নেয় না । সে ছিল চুপচাপ ছোট বেলায় মা মারা যায় তার । তারপর থেকেই একা হয়ে যায় সে । তার বাবা থাকতো ঠিক ই কিন্তু নিজের অফিস নিয়েই ব্যাস্ত । ছেলেটির মনে মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন জাগে । আচ্ছা সে কি এই পরের জীবনে আখিরাতে নিজের সাথী পাবে । ছেলেটাকে তার বাবা আরও বেশি দূর করে কারণ ছেলেটাকে বাঁচাতে গিয়েই তার স্ত্রী এর মৃত্যু হয় ।
.
তারপর থেকে কষ্টের শুরু । ছেলেটা চুপচাপ হয়ে পড়ে যায় ।
.
জীবনে চলার পথে ভার্চুয়াল টাকেই সে আপন করে নেয় । মাঝে মাঝে মন ভুলাতে গান করে । গানের গলা বেশ ভালোই কিন্তু তার গান স্থান পায় শুধুই ভার্চুয়াল লাইভে ।
.
হঠাৎ একটা মেয়ের আইডি রিকোয়েস্ট পায় সে । যদিও ভুলে রিকোয়েস্ট টা গেছিল । মেয়েটার আইডি টার প্রতি কেন যেন এক আকর্ষণ পড়ে যায় ।এক্সেপ্ট করে নেয় ।
.
প্রথম মেসেজ ছেলেটার
ছেলেটি : আমি কি আপনাকে চিনি
মেয়েটি : এমা সরি ভুলে মনে হয় রিকোয়েস্ট গেছে
ছেলেটি : ও ব্যাপার না বাই
মেয়েটি : আপনি বিজি নাকি হিহি নাকি ভাপি ডাকে
ছেলেটি : বিজি না আর ভাপি কি জিনিস
মেয়েটি : হিহি আই মিন আপনার গফ
ছেলেটি : নাই
মেয়েটি : ওওওও চকলেট খাইবেন
ছেলেটি : নাহ
মেয়েটি : এমা কিনু
ছেলেটি : মিষ্টি খাই না৤
মেয়েটি : কেন আন্টি কি মিষ্টি খেতে দেয় না
ছেলেটি : নেই আম্মু
মেয়েটি : কই গেছে
ছেলেটি : বেঁচে নেই ( কথাটি বলতেই ছেলেটির কান্না চলে আসে )
মেয়েটি : সরি এভাবে বলতে চাই নি আমি একটু বেশি মজা করি তাই আর কি
ছেলেটি : আচ্ছা
মেয়েটি : আমি আনহা আপনি
ছেলেটি : আপন
মেয়েটি : এমা কে আপনার আপন
ছেলেটি : আমি আপন
আনহা : এমা আপনি কার আপন
আপন : আরে আমার নাম আপন ( রাগ ইমোজি )
আনহা : হিহি
আপন : (রাগ ইমোজি )
আনহা : হিহি রাগেন কেন
আপন : দুরররররররর
আনহা : কোনদিক দুর হবো
আপন : ওই আপনি ভাগবেন
আনহা : না
আপন : হায় আল্লাহ এ কি মেয়ে
.
এই মেসেজ দিয়ে ছেলেটি অফলাইন হয়ে গেল ।
.
পরেরদিন
আনহা : গিট্টু
আপন : গিট্টু কি
আনহা : গিট্টু হলো গিট্টির ভাই
আপন : গিট্টি কি
আনহা : গিট্টুর বোন গিট্টি
আপন : গিট্টু আর গিট্টি কি
আনহা : ভাই বোন৤
আপন : ওই আপনি আমার মাথা খান কেন
আনহা : কইইইইইই আমি তো কিটক্যাট খাচ্ছি
আপন : হায়রে
.
পরবর্তী চ্যাট এ
আনহা : ইয়ো ইয়ো আপনি কই থাকেন
আপন : ঢাকা আপনি
আনহা : দিনাজপুর
আপন : ওহ
আনহা : কিটক্যাট খাইবেন মিস্টার
আপন : না
আনহা : বুইরা
আপন : পিচ্চি
আনহা : আপনি বিল্লি
আপন : আপনি গরু
আনহা : টিকটিকি
আপন : ছাগল
.
এভাবেই ধীরে ধীরে আনহার পিচ্চি বিহেভ গুলোর অভ্যাস হতে থাকে ছেলেটির ।
.
এভাবেই কথা হতে থাকে । সময় পেরুতে থাকে ।
.
মজার ব্যাপার ছেলেটি এখনো মেয়েটিকে দেখে নি
.
আসলে আমি ছিলাম ছেলেটার কাজিন । ছেলেটির এই একা থাকা দুর করতেই সে ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করেছিল । ছেলেটি জানতো তার কাজিন দের নাম ।‌কিন্তু কখনো দেখে নি ওতো কারো সাথে । আমাকেও অনেক আগে দেখছিল ।
.
মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে । হয়তো ছেলেটিও কিন্তু ছেলেটি তো তার মনের কথাও বুঝে না ।
.
আমি ঘুরতে যাই ওর বাড়িতে । যদিও কারণ শুধুই ওকে ভার্চুয়াল থেকে টেনে আনা । তাই ভার্চুয়াল আর রিয়েল সব দিকেই আমি থাকবো ওর । হিহি দেখি ফাজিল আনহা পারে কি না ভালো করতে ।
.
ইয়ো ইয়ো আইসা পড়ছি । জানি না ওই পোলা কোনহানে ।
আমি : কেমন আছেন ফুপা
ফুপা : এইতো ভালো মা তুমি
আমি : ভালো‌ নীল কই ( আপনের ই নাম নীল )
ফুপা : জানি না
.
( গম্ভীর ভাবে চলে গেলেন । এই গম্ভীরতার মানে যদিও আমি জানি । কিন্তু এসব আমি ভালো করবোই )
.
গম্ভীর টা এখনো ঘুমাচ্ছে
.
.
আমি : নীল ওই
নীল : কি হইছে৤ আর আপনি কে
আমি : আমি তোর বউ
নীল : আজে বাজে কথা বলবেন না বের হয়ে যান আমার রুম থেকে
আমি : ওই আমি আনহা
নীল : ওহ
আমি : এখনো গম্ভীর আছিস হিহি
নীল : যাবা তুমি ( ও তুমি ই বলে )
আমি : না
নীল : যাও বলছি
আমি : না না না
উঠ তুইইইই
নীল রেগে আমার হাত জোরে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নিল
আমি : এমা কি করবো আসছি একে মানুষ করতে আমি ই না ভুত হয়ে যাই
নীল : আমি একা থাকতে চাই
আমি : ওরে বাবারে এতো রাগ
.
কাতুকুতু দিয়ে ভাগছি
.
নীল : একটু হেসেই ফেলল আবার আনহার পালানো দেখে
কিন্তু আবার গম্ভীর হয়ে বলে না আমি একাই থাকবো ।
.
…………….খাবার টেবিলে……………..
আমি , ফুপা আর নীল । ফুপা আর নীল কেউ কারো সাথে কথা বলে না । নীল অনেক ভালোবাসে ফুপা কে কিন্তু ফুপা বুঝে না ।
আমাকেই কিছু করতে হবে ।
আমি : ফুপা দিনদিন তো ভালোই দেখতে হচ্ছ কয়টা মেয়ে ফিদা হচ্ছে
ফুপা : এরকম আর হয় মা
আমি : নীল আর তোমাকে দেখলে তো এখন ছেলে বাপ না ভাই মনে হবে
ফুপা : নিশ্চুপ
আমি : নীল এতো কম খাস কেন
নীল : এমনি
আমি : তোর তো শক্তি ই হবে না
নীল : ভালো
.
………আবার সব নিশ্চুপ
টেবিলের নিচে নীল কে গুতাচ্ছি কথা কয় না এই জন্য ।
.
এমা এমা রাগে উঠে পালাইলো ।
.
আমি ই ঠিক করবো আগে ফুপা কে বলি কিছু কথা ।
আমি : ফুপা একটা কথা বলবো ছোট হয়ে‌
ফুপা : বলো মা
আমি : জীবন আছে তো মৃত্যু ফুপির মৃত্যু এ নীলের কি দোষ ও তো ছোট ছিল তখন । খেলতে গিয়ে এরকম । তাই কি ওর দোষ । আপনি একবারো ওর কষ্ট দেখছেন । আপনার তো সব আছে । ও সবসময় একা এতোটাই চুপচাপ সে । ও একা শুধু আপনার ভালোবাসা চায় ওর চাহনি বুঝেন না আর কিছু না তো ওকে বুঝুন একটু ওর নিরব কান্না থামান ওর ভালোবাসা বুঝুন ।
.
বলে খাবার নিয়ে চলে এলাম নীলের জন্য ।
.
নীল চুপচাপ বসে ছিল ।
.
আমি : না খেয়ে আসলি কেন আমি তো মজা‌ করছিলাম
নীল : নিশ্চুপ
আমি : ওই হারামি কথা বল আর এটা খা
.
নীল রেগে প্লেট ফেলে দিল ।

আমি : ফেলাস কেন হা
নীল আবার রেগে আমাকে দেয়ালের সাথে আটকে নিল
আমি : এবার কি হবে
নীল : এমন কেন করছো কি করছি আমি তোমার । একা থাকতে দাও না কেন আমাকে ।
আমি : চিরকাল একা ছিলি এবার আর না তোকে আমি ভালো করবোই এই নিশ্চুপ‌ থাকা ছাড়াবোই ।
নীল : পারবা না কখনো
.
(আরও শক্ত করে হাত ধরে এবার খুব লেগেছিল তাই চোখে পানি চলে এল । তা দেখে নীল আমাকে ছেড়ে দিল )
ও বাইরে কই যেন চলে গেল
.
আমি : আমি ওকে ভালো করবোই
.
পরের দিন
নীল : আনহা
আনহা : এমা আমাকে ডাকে কেন নিশ্চই বুঝছে যে আমি লুকায় রাখছি
নীল : আনহা…..
আমি : হঁ্যা কিচ্ছে
নীল : প্রব্লেম কি তোমার
আমি : আমার প্রব্লেম তোর এই নিশ্চুপ ভাব
নীল : আমি এমনি থাকবো (একটু চিৎকার দিয়ে)
আমি : ভয় পেয়ে গেলাম
.
সরি
নীল : ফোন দেও
আমি : না দিবো না এতো ফোন টিপা ভালো না
নীল : আমার লাইফ এটা
আমি : হিহি এহন আমি চালাবো
নীল : দূরররর
( চলে গেল জানে যে আমার সাথে পারবে না )
হিহি
.
তারপর এফ বি তে ধুকলাম ,
আমি : কি করেন
নীল : কিছু না
আমি : মন খারাপ নাকি
নীল : হুম এক কাজিন আসছে খালি জ্বালায়
আমি : হিহি মেয়ে নাকি
নীল : জ্বী
আমি : এমা তাইলে প্রেম করুন সেই ভাবি হইবো
নীল : আরে না
আমি : কেন কিউট না নাকি
নীল : না ও অনেক সুন্দর
আমি : মানমে লাড্ডু ফুটা নাকি
নীল : না আচ্ছা পরে কথা বলবো
.
( নীল লজ্জা পেল । কারণ ও কখনো আনহার ব্যাপারে ভাবে নি )

.
দুপুরে দেখলাম রুম এ গেলাম ওর ।
ঘুমোচ্ছিল
আমি মনে মনে : জানি তোমার কষ্ট । জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি । তাই আমি ই সব ঠিক করবো । ঘুমালে কত কিউট লাগে গো তোমাকে ।‌ ( এমা ওয় ছেলে আমি মেয়ে । কি উল্টা তারিফ হিহি )
.
চলে আসলাম ।
বিকালে ,
ফুপা বসে ছিল এমন সময় নীল আসলো ।

চলবে………
(প্রথম একটু আলাদা গল্প চেষ্টা করতেছি । এই গল্পের পার্ট আমার টাইমলাইনে পাবেন)

বসের সাথে প্রেম পর্ব-৩৩(অন্তিম পর্ব)

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-৩৩(অন্তিম পর্ব)

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ঠিক বুঝতে পারলাম না…
বউ পালাইছে মানে???(জয়া)
_ মানে আর কি? পালাইছে মানে পালাইছে।(বিজয়)
_ একটু খুলে বলবেন তো। কিভাবে কি হয়েছে???(জয়া)
_ হয়েছে আর কি…
নুসরাত আমায় বিয়ে করবে না জানিয়ে দিয়েছে।(বিজয়)
— মানে? কেন???(জয়া)
_ ওকে নাকি শুনেছে একটা মেয়ে আমায় ভালোবাসে। ভিষণ ভালোবাসে। এখন ওর একটা কথা। ও আমায় বিয়ে করবে না। আমাকে এখন ঐ মেয়েকে’ই বিয়ে করতে হবে, যে আমায় ভালোবাসে।(বিজয়)
__ তাই বলে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে…(….)…???(জয়া)
_ হউক বিয়ে ঠিক, তাতে কি? বিয়েটা তো হয়ে যায় নি। তাই আমি ঠিক করেছি আমি তাকে’ই বিয়ে করব, যে আমায় ভালোবাসে…(বিজয়)
_ তা কে সেই সুভাগ্যবতী রমনী….???(জয়া)
_ যদি বলি আপনি….(বিজয়)

– আ…আ… আ… মিিিি….
কি ব ব বলছেন এইসব???(জয়া)
_ জি তুমি….(বিজয়)

কথা’টা শুনে জয়া পিছিয়ে যেতে থাকে আর বিজয় জয়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। রাস্তার মানুষজন হা করে তাকিয়ে রুমিও জুলিয়েটের প্রেমের এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে আর হাসছে। কেউ বা বলাবলি করছে-
” কি যুগ আইলোরে ভাই…
লজ্জা শরম সব উইঠা গেল।”
বিজয় কিংবা জয়া যেন কেউ সেসব শুনছে না। ওরা একজনের দিকে আরেকজন ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে যেতে যেতে ওরা রাস্তার খুব কাছে চলে যায়। আর একটু হলে গাড়ি ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে যেত। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যায় ওরা। কেউ একজন খুব জোরে সোরে জয়াকে ধাক্কা দেয়। জয়া হুমড়ি খেয়ে বিজয়ের উপর গিয়ে পরে। এ যেন এক মধুর দৃশ্য। একজন আরেকজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এদিকে অজ্ঞাত যে লোক’টা জয়াকে ধাক্কা দিয়েছিল সে সহ সব মানুষ বিজয়-জয়ার পাশে ভীড় জমায়। বিজয় মাটিতে পরে আছে আর তার উপর জয়া। বিজয় জয়াকে আঁকড়ে ধরে আছে। ঠিক তখনি কেউ একজন পাশ থেকে বলে উঠে__
” পাবলিক প্লেসে এভাবে বেশীক্ষণ শুয়ে থাকলে চরিত্রের উপর লাল দাগ লেগে যাবে।”
— জয়া ধড়মড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। বিজয়ও কালক্ষেপণ না করে উঠে দাঁড়ালো। বিজয় লোক’টার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে যাবে ঠিক তখন’ই থমকে যায় সে। একি…
নুসরাত? তুমি???
_ হুম, এসেছিলাম পাগলা-পাগলীর শুভ পরিণয়ের সাক্ষী হতে। এসে দেখা হয়ে গেল এই ভাইয়া’টার সাথে। (নুসরাত)
__ আমার যদি ভুল না হয় আপনি নুসরাতের কলেজের সেই সিনিয়র ভাইয়া পিয়াস। কি??? আমি কি ঠিক বলছি জনাব…(…)….???(বিজয়)
_ পিয়াস। ঠিক ধরেছেন আমি সেই পাগলাটে ছেলে পিয়াস।যার কাজ ছিল মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করা….(পিয়াস)
_ মেয়ে নয় বলেন নুসরাতের পিছনে। হা, হা, হা….(বিজয়)
__ নুসরাত?!!!??
তুমি সব ভুলে দিয়েছ???(পিয়াস)
_ হুম…☺☺(নুসরাত)
__ ওহ, মাই গড!
তুমি আর মানুষ হলে না…(পিয়াস)
_ জনাব পিয়াস সাহেব!
এবার তো আপনি এসে গেছেন। এবার আপনি’ই না হয় মানুষ করেন। কি বলো জয়া???(বিজয়)
__ জয়া চুপ।
__ এসেছিলাম বিয়ে খাইতে। মনে হচ্ছে ফেসে যাব। এক উড়নচন্ডী বালিকাকে বিয়ে করে বাসায় ফিরতে হবে….??(পিয়াস)
_ আমি উড়োনচন্ডী???
হুহ্! যান। বিয়ে করতে হবে না। আমি চিরকুমারী’ই থাকব।(নুসরাত)
_ ওরে আমার চিরকুমারী! তোমায় থাকলে দিলে তো…কাল রাত্রে’ই কুমারীত্ব ঘুচে যাবে.!….???(পিয়াস)
_ আপনি এত্ত খা…(..)…(নুসরাত)

নুসরাত ওনাকে নিয়ে বাসায় আসো। পাবলিক প্লেসে এসব কথা বার্তা বললে মানুষ কি ভাববে…☺☺
আর জয়া চলো….(বিজয়)
__ আমি আমার বাসায় যাব।(জয়া)
_ কেন???(বিজয়)
___ আম্মু অসুস্থ, তাই…(জয়া)

জয়া আমি কিন্তু সব জানি।
তুমি এখন পালাতে চাচ্ছো। অসুস্থ্যতা সেতো অজুহাত…
কথা’টা বলতে না বলতে’ই বিজয় অবাক বিস্ময়ে সামনে গাড়ির দিকে তাকালো। গাড়ি থেকে চেনা একজন মহিলা নামছে। বিজয়ের মনে হলো এই সেই মহিলা যাকে চিকিৎসার টাকা দিয়ে এসেছিল বিজয় আজ থেকে ছয় বছর আগে। বিজয়ের এভাবে তাকানো দেখে জয়াসহ অন্যান্যরাও পিছনে তাকালো। জয়া একবার তাকিয়ে দৌঁড়ে গেল ঐ মহিলাটির কাছে।
– মা তুমি???
__ হ্যাঁরে! মায়া কলের পর কল দিচ্ছে গত একটা সপ্তাহ ধরে। ওর ভাইয়ার নাকি বিয়ে, আমাকে বিয়েতে যে করে’ই হোক নাকি থাকতে হবে। এত করে বলতেছে তাই না এসে পারলাম না।(মা)

জয়া ওর মাকে জড়িয়ে ধরল। একবছর পর মাকে আবার দেখল। আনন্দে জয়া কেঁদে ফেলল। বিজয় জয়ার মায়ের কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। তারপর বাসায় নিয়ে গেল জয়ার মাসহ সবাইকে।
বাসায় গিয়ে সবটা খুলে বলল বিজয় ওর হবু শাশুড়িকে। হবু শাশুড়িতো খুশিতে লাফিয়ে উঠল। ওনার চোখ থেকে দু’ফোঁটা আনন্দঅশ্রু গড়িয়ে পরল।
পরদিন একই সাথে দুটো বিয়ে হয়। একদিকে পিয়াস এবং নুসরাত, অন্যদিকে বিজয় এবং জয়ার। নুসরাত এবং জয়া একই সাথে বধূবেশে একই বাসায় ছিল। বিজয় বরযাত্রী নিয়ে নুসরাতের বাড়ি থেকে ওর প্রাণপাখি জয়াকে নিয়ে আসে আর নুসরাত চলে যায় ইঞ্জিনিয়ার পিয়াসের সাথে ওর বাসায়।

রাত্রের কথা বলছি_
মায়া চুপচাপ বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। গত রাত্রে সিয়ামের সাথে একটু ঝগড়া হয়ছিল। খুব সামান্য বিষয় নিয়ে সে ঝগড়া। গতকাল মায়া সিয়ামকে বলেছিল একটু তাড়াতাড়ি’ই কাজ সেরে চলে আসতে, ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবে, কিন্তু কাজের চাপে সিয়াম ভুলে গিয়েছিল মায়াকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা। ব্যস, এতে’ই হয়ে গেল।
সেই থেকে মহারানী গাল ফুলিয়ে আছে।
__ মণিকে ঘুম পাড়িয়ে সিয়াম ধীর পায়ে মায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মায়া বুঝতে পেরে বারান্দা থেকে একটু দুরে সরে যায়।
সিয়াম আস্তে আস্তে মায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মায়া এবারও আরেকটু সরে যায়। সিয়াম আরেকটু এগিয়ে যায়। মায়া আবার সরে যায়।???

সিয়াম এবার সরে গিয়ে মায়ার কাঁধে হাত রাখে। ???
__ মায়া সিয়ামের হাত’টা দুরে ছুড়ে মারে। ??
অতঃপর হনহনিয়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে ছাদের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।??
__ সিয়ামও বউয়ের পিছুপিছু ছুটতে থাকে।☺☺☺
__ মায়া গিয়ে ছাদের এককোণে দাঁড়ায়। অতঃপর মনোযোগ দেয় আকাশে ভেসে বেড়ানো একরাশ মেঘকণার দিকে। মায়া যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘেদের ছুটে চলা দেখতে ব্যস্ত ঠিক তখনি সিয়াম মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্যরি বলে। মায়া হেঁচকা টান দিয়ে নিজেকে সারিয়ে নিয়ে ছাদের অপর পার্শ্বে চলে যায়। সিয়াম মায়ার পিছুপিছু সেখানেও যায়। জড়িয়ে ধরে মায়াকে পিছন থেকে। মায়া ছাড়াতে চাইলে সিয়াম আরো নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।??

মায়া শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে যখন সিয়ামের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে যাচ্ছিল ঠিক তখনি সিয়াম ওর হাত দুটো মায়ার পেটের দিকে নিয়ে যায় আর নাক দুটো ডুবে যায় মায়ার চুলের গহীন দেশে। ??
সিয়াম মায়ার চুলে নাক-মুখ গোজে চুলের মিষ্টি ঘ্রাণ নিচ্ছে আর দু’হাত দিয়ে মায়ার পেটে হাত বুলাচ্ছে। মায়া তবুও ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে। সিয়াম এবার মায়ার ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে নাক-মুখ ঘষতে থাকে মায়ার ঘাড়ে। মায়া যেন এবার কুপোকাত হয়ে’ই যাবে।??
সিয়াম যখন মায়ার ঘাড়ে এলোপাথাড়ি ভাবে চুমু দিতে থাকে, তখন মায়া ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে চোখ বোজে। সিয়াম মুচকি হাসি দিয়ে মায়াকে ওর দিকে ফিরিয়ে নিলে মায়া চোখ খুলে, সিয়ামের মুখ যখন ওর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে তখন আবারো বন্ধ করে ফেলে চোখ দু’টো। মুহূর্তে’ই সিয়ামের দু’টো ঠোঁট গ্রাস করে নিল মায়ার ঠোঁটজোড়াকে। এভাবে কিছুক্ষণ অমৃতরস পান করার পর একটা সময় মায়া উন্মাদ হয়ে যায়। ঝাপটে ধরে সিয়ামকে। সিয়াম কোলে করে মায়াকে নিচে নিয়ে যায়। অতঃপর_

অতঃপর কি হয়ছে জানতে চাহিয়া লজ্জা দিয়েন না। আমি চিটার কিন্তু নির্লজ্জ নহে। আমারো লজ্জা আছে……

যায় হোক…
সব কথার এক কথা সিয়াম-মায়ার টুনা-টুনির সংসার এভাবে’ই ছোট্ট ছোট্ট মান-অভিমান, হাসি-আনন্দ, দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটির ভেতর চলতে থাকে। বেশ ভালো’ই আছে ওরা। দোয়া করিও, ওদের এ সুখ যেন সারাটা জীবন এমনি থাকে…..

♦আল্লাহ হাফেজ♦

বসের সাথে প্রেম পর্ব-৩২

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-৩২

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

অতঃপর সে বৃষ্টিমুখর রাত্রে অনেক কিছু’ই হয়ে গিয়েছিল।

পরদিন সকালে সিয়াম মায়াকে নিয়ে বাসায় যায়। মায়া বাসায় গেলে আবির ও আবিরের ফ্যামিলিসহ মায়ার মামার বাড়ি থেকে সবাই আসে। মায়াকে ওর মামা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মায়া-সিয়ামের আবার নতুন করে বিয়ে দেওয়া হয়। ওদের বাসর ঘর’টা মায়ার মামাত বোন জয়া নিজ হাতে সাজায়। সে রাত্রে সিয়াম-মায়া নতুন করে ওদের বৈবাহিক জীবন শুরু করে। ছোট্ট বাবা পাগল মণি’কে কৌশল করে বিজয় ওর কাছে নিয়ে যায় সিয়াম-মায়া যাতে একান্তে কিছুদিন সময় কাটাতে পারে সে জন্য।

এদিকে দায়িত্ব নিয়ে মণি’কে নিয়ে যাওয়ার পর আরেক’টা ঝামেলায় পরে বিজয়। সকালে চেম্বারে গিয়ে ফিরতে হতো সন্ধ্যায়। কিছু’তেই যেন মণিকে সময় দিয়ে পেরে উঠছিল না বিজয়। যার কারনে মণি প্রায় অভিমান করত মামার সাথে। সেদিন চেম্বার থেকে ফিরে মণির রুম থেকে বিকট হাসির আওয়াজ পায় বিজয়। কেন জানি মনে হলো রুমে মণির সাথে এ বাড়ির কোনো কাজের মেয়ে নই, অন্য কেউ আছে। বিজয় দৌঁড়ে রুমে যায় কিন্তু কাউকে পেল না। মণিকে জিজ্ঞেস করলে বলে-
কোথায়? কেউ নেই তো…
মামা তুমি ভুল শুনছো।
বিজয় মনের ভুল ভেবে চিন্তা’টা উড়িয়ে দেয় মাথা থেকে। কিন্তু পর পর কয়েক দিন ধরে’ই যখন লক্ষ্য মণি কার সাথে যেন হাসে-খেলে, আর বিজয় নিজেও দেখছে ওর রুম’টা কেমন যেন সুন্দর করে গোছানো তখন বিজয়ের সন্দেহ বাড়ে।
কিন্তু কাউকে ধরতে পারে না।

সেদিন চেম্বার থেকে ফিরে বিজয় ওর রুমে গেলে কেমন যেন চেনা গন্ধ অনুভব করে। এই গন্ধ’টা বিজয় এর আগেও বহুবার পেয়েছে। খুব চেনা গন্ধ। কিন্তু সেই গন্ধ’টা কোথা থেকে আসে বিজয় জানে না। পরদিন রাত্রে__
বিজয় একটু তাড়াহুড়ো করে’ই বাড়ি ফিরে। এতটা তাড়াহুড়ো যা কখনো আগে হয়নি। বিজয় ওর রুমের ভেতর যাওয়ার পর আবারো সেই চেনা গন্ধ পায় যেটা বিগত ৫বছর ধরে পেয়ে আসছে। বিজয় টাই খুলতে খুলতে বারান্দায় যায়। হঠাৎ’ই মনে হলো পিছন থেকে কেউ যেন সরে গেছে। বিজয় টাই খুলা রেখে দৌঁড়ে যায় রুমের বাহিরে। কিন্তু নাহ।
কোথাও নেই।
সেদিনও মনের ভুল ভেবে বিষয়’টাকে এড়িয়ে যায় বিজয়। পরদিন সকালে চেম্বারে গিয়ে বিশেষ প্রয়োজনে চেম্বার থেকে ফিরে আসে বিজয়। সেদিন গোসল খানায় ঢুকলে একটা নূপুর পায় বিজয়। নূপুর’টা হাতে নিয়ে বিজয় যেন চমকে যায়। এটা পেত্নী তেত্নীর নূপুর নয়তো????
হতেও পারে।
কারন- এখানে এই গোসলখানায় পেত্নী ছাড়া ২য় কোনো মেয়ে আসতেই পারে না।

যায় হোক নূপুর’টা হাতে নিয়ে বিজয় কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করল। তারপর ভাবতে লাগল__
” এটা এই বাসার কোনো কাজের মহিলা/মেয়ের নইতো?”
ব্যাপারটা জেনে যার নূপুর তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেদিন দুপুরে কাজের মহিলারা আসলে বিজয় জানতে পারে ওরা কেউ নূপুর পরে না।
বিজয় যেন সপ্ত আকাশ থেকে পরল। তাহলে কি পেত্নী???? ???
যায় হোক….

পরদিন সকালে সিয়াম-মায়া এসে মণিকে নিয়ে যায়।
যাওয়ার আগে মণি যেন বার বার কিছু একটা বলতে চাইছিল বিজয়কে যেটা এখন টের পায় বিজয়। আচ্ছা, মণি আমায় কি বলবে?
আর ও কেন যেতে চাইনি সিয়াম-মায়ার সাথে?
আর কেন’ই বা যাওয়ার সময় বার বার আমার রুমের দিকে তাকাচ্ছিল?
আর কেন’ই বা বলে গেল ভালো থেকো সবাই???
এখানে তো আমি ছাড়া কেউ ছিলাম না?
মণি কি বুঝাতে চাচ্ছিল???
ব্যাপারটা সত্যি’ই রহস্যজনক।

আর সেই রহস্য উন্মোচন করার সময় এবং সুযোগ কোনো’টাই হয়ে উঠেনি বিজয়ের। তার আগে’ই অসুস্থ হয়ে গেল সে। সে রাতে প্রচন্ড জ্বরে কাঁপছিল বিজয়। শেষ রাত্রে হঠাৎ করে শরীরে উষ্ন পরশ অনুভব করে সে। মনে হচ্ছে কেউ শরীরে কম্বল/কাথা টেনে দিয়েছে। জ্বরের ঘোরের মধ্যেও বিজয় টের পায় রুমে কারো উপস্থিতি। সেই চেনা গন্ধ…..
মনে হচ্ছে কেউ একজন কপালে আলতো করে চুমু দিচ্ছে। বিজয় চোখ মেলে তাকাই। একটা অস্পর্শ মানবি ওর পাশ থেকে সরে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় বিজয় হাত’টা ধরে ফেলে।
বেড সুইচ’টা জ্বালিয়ে বিজয় হতবাক। এ যে মায়ার মামাতো বোন….

বিজয়ের জ্বর যেন মুহূর্তে’ই সেরে গেছে। ওর সারা শরীর ঘামছে। কিছু’তেই বুঝে উঠতে পারছে না এ মেয়ে এখানে কেন?

– জয়া আপনি?
আপনি এখানে? এত রাত্রে???(বিজয়)
__……. (নিশ্চুপ জয়া)
__ কি হলো? কথা বলুন?
আর আপনার এই অবস্থা কেন? চোখ এমন লাল কেন? আর কোথা থেকে আসছেন এত রাত্রে???(বিজয়)
__ জয়া তখনো নিশ্চুপ।
__ কি হলো? কথা বলুন..(বিজয়)
_ জয়া কাঁপতেছে। আর আমতা আমতা করতেছে। বিজয় কড়া গলায় বলল,
কি হলো? কিছু’তো বলুন। জয়া বলার মতো কোনো ভাষায় যেন খুঁজে পাচ্ছে না। কি বলবে সে???
কি করে সত্যি’টা বলবে।
কি করে বলবে, আমি আপনার এখানে দীর্ঘ ৫মাস’টা বছর ধরে’ই আছি। আপনার ঋন শোধ করার জন্য কাজের মেয়ের বেশে আছি। আপনার টাকাতে আমার মায়ের জীবন বাঁচলো, সেই কৃতজ্ঞতা থেকে আছি। আর চেষ্টা করছি আপনার ঋন পরিশোধ করার। আর সেই সুবাধে আপনাকে রান্না করে খাওয়াতেও পারছি, পারছি আপনার অসুস্থতার সেবা করতে…

কি হলো? কিছুতো বলেন? আপনি এখানে কেন???(বিজয়)
__ আপনার জ্বর এসেছিল তাই….কাঁপা কাঁপা গলায় জয়া জবাব দিল।
__ আমার জ্বর আসছে আপনি কিভাবে জানলেন? আর কিভাবে এখানে আসলেন?(বিজয়)

– জয়া মনে মনে বলছে_
আমি আপনাকে ভালোবাসি ডাক্তার বিজয়, আমি আপনাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। আর তাই আপনি কখন কি করেন, সেটা সব খবর আমার নিতে হয়।

_ বিজয় এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একের পর এক প্রশ্নে জয়া যেন আর পেরে উঠতে পারছিল না। পারছিল না চুপ থাকতে। যার কারনে মিথ্যে বলতে’ই হলো_
” আমি এসেছিলাম মণি’কে দেখতে। এসে দেখি ও নেই। জার্নি করে এসেছিলাম তো, যার কারনে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম ভাঙ্গে মাঝ রাত্রে। কিন্তু আমি ভাবছি কেবলি রাত হয়েছে। তাই আপনার সাথে দেখা করার জন্য এসেছিলাম।”

– ওহ!
খেয়েছেন???
আর চোখগুলো এত লাল কেন? সত্যি’ই কি ঘুমাইছিলেন নাকি অন্য কিছু?????(বিজয়)

– কেবল’ই ঘুম থেকে উঠলাম,তাই লাল হয়ে আছে।(জয়া)
_ আর খাওয়া!!!
হয়েছে??? (বিজয়)

জয়া নিশ্চুপ…
– ওহ!
খান নি তো???(বিজয়)
– আসলে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।(জয়া)
_ বুঝলাম।
এখন খাওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে???(বিজয়)
– আমার ক্ষুদা নেই। (জয়া)
– ঠিক আছে।
আপনি গিয়ে ঘুমান তাহলে।(বিজয়)

জয়া চলে যাচ্ছিল, কি যেন মনে করে ফিরে আসল।
বিজয় জয়ার দিকে তাকিয়ে বলল__
” কিছু বলবেন?”

– আপনার জ্বর কমেছে?(জয়া)
বিজয় কপালে হাত দিয়ে বলল__
হ্যাঁ, জ্বর সেরেছে।
আর যা করছেন তা সেরে তো উপায় নেই।(হাসতে হাসতে বিজয়)
_ জি??? কি করলাম?(জয়া)
__ করছেন আর কি!
মাঝরাত্রে ভেলকি দেখালেন। এই আর কি…!!!(বিজয়)
_….. (জয়া)
— আচ্ছা, যান।
ঘুমান গিয়ে…..(বিজয়)

জয়া চলে গেল।
পরদিন সকাল বেলা জয়া বিজয়ের কাছে গিয়ে এ বাসায় ভাড়া থাকার অনুমতি চাই। নিকটভর্তি কোনো কলেজে চাকরী হয়েছে,যার জন্য কারনে এখানে থাকতে হবে। এই অজুহাত দেখিয়ে বিজয়ের কাছে সে বাসায় থাকার অনুমতি চেয়ে নেয়। বিজয়ও সাত-পাঁচ না ভেবে রাজি হয়ে যায়। জয়াকে বলে দেয় এ বাসায় থাকতে, তবে ভাড়াটিয়া হিসেবে নয়, কুটুম হিসেবে।
জয়া কোনো ছদ্মবেশ ছাড়া’ই অবাধে এ বাসায় ঘুরাফেরা করতে পারবে, ভাবতে’ই আনন্দে ওর মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।

দেখতে দেখতে একটা বছর চলে গেছে।
বিয়ে নিয়ে বিজয়ের কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না, কিন্তু একমাত্র চাচার পিড়াপিড়ি’তে বিজয় রাজি হয়। চাচাকে বিয়ে করবে বলে জানায়। চাচা মায়াকে খবর দেয়। মায়া আসলে মায়াকে বলে বিজয়ের হসপিটালে’ই ডাক্তার নুসরাতের সাথে দেখা। ডাক্তার নুসরাত ওনার ভালো লেগেছে, ঐ মেয়েকে দেখার জন্য পাঠালো বিজয়ের চাচা। পরিবারের সাথে আগে’ই কথা বলে রেখেছে। মায়া গিয়ে নুসরাতকে দেখে আসে। দেখতে শুনতে ভিষণ লক্ষ্মী মেয়ে নুসরাত। যাকে পছন্দ না করে উপায়’ই নেই।
মায়া বাসায় এসে বোন হিসেবে ওর সম্মতি জানালে বিজয়ের আর কিছু’ই বলার থাকে না। চাচার সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে রাজি হয়ে যায় বিজয়।
বিজয়ের চাচা বিজয়ের বিয়েটা সামনে মাসে’ই হবে বলে জানিয়ে দেয়। যদিও একটু বেশীই তাড়া মনে হচ্ছিল তবুও চাচার অসুস্থ শরীরের কথা চিন্তা করে সেটাই মেনে নেয় বিজয়।
এই মাসের ১৫তারিখ চলতেছে। সামনে মাসে বিয়ে হলে হাতে আছে মাত্র ১৫দিন। এর ভিতরে সব করতে হবে। আর কেনাকাটার ব্যাপার’টা বিজয় মায়া এবং সাইমার উপর দিয়ে দিয়েছে।

অবশ্য জয়াকে বলছিল,কিন্তু জয়ার কলেজে সময় দিতে হয় তাই ও কেনাকাটা’ই থাকতে পারবে না বলল।
দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসে বিয়ের দিন। সেদিন জয়ার কাছে মণিকে রেখে মায়া সাইমাকে নিয়ে শপিংয়ে যায়। তারপরের কথোপকথনের কথা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরলাম এখানে_
মণি:- খালামণি!
তুমি বউ হবে না? ও খালামণি বলো না…
জয়া:-…….
মণি:- খালামণি!
তুমি না বলছ তুমি বউ হবে। বিজয় মামার বউ হবে???
জয়া:- মণি, মামণি!
প্লিজ চুপ করো। কেউ শুনবে তো….
মণি:- কেন চুপ করব?
আমি কি মিথ্যে বলছি নাকি? তুমি তো বিজয় মামার ঘর লুকিয়ে গুছিয়ে আসতে, লুকিয়ে মামার জন্য রান্না করতে। লুকিয়ে মামাকে দেখতে। তাহলে বিয়েটা করছ না কেন???
বিয়ে না করলে এসব করছ কেন???
জয়া:- ওরে আমার পাকনা বুড়ি! এত কথা বলেরে…
তোমার মামা আমার বন্ধু। তাই এসব করতাম…
মণি:- বন্ধুকে বুঝি লুকিয়ে দেখতে হয়? বন্ধুর বিয়ে হলে বুঝি মানুষ কাঁদে???
জয়া:- মণি মা!
আমার মাথা’টা একটু ব্যথা করতেছে। একটু টিপে দিবে?
মণি:- ঠিক আছে, এখন ছেড়ে দিলাম। চুপ করে শুয়ে থাকো। তবে হ্যাঁ…
মামাকে বিয়ে করোনি কেন সেটা কিন্তু আমায় বলতে হবে….

জয়া আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপ করে শুয়ে পরল চোখ বোজে। মণি ছোট্ট ছোট্ট হাতে মাথা টিপে দিচ্ছে। মাথা টিপতে টিপতে’ই জয়া ঘুমিয়ে পরে। ঘুম ভাঙে মায়ার ডাকে।
জয়া ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলিয়ে মায়ার দিকে তাকালো। তারপর__
” তুই? কখন এলি?!!”
_ এইতো, এলাম। মণি কই???(মায়া)
__ কই? এখানে’ই তো ছিল।(জয়া)
__ এখানে ছিল, নাহ???
তোমাকে দিয়ে গেছি ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য আর তুমি কি না ওকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছ।(মায়া)
_ মায়া!
কি বলছিস তুই এসব?
ও তো রুমে’ই ছিল…(জয়া)
__ রুমে ছিল, তাহলে রাস্তায় গেল ক্যামনে?(মায়া)
__ কই? মণি কই???
ওকে আনতো….(জয়া)
_ বিজয়ের সাথে ওর রুমে আছে। যা তুই। আমি ফ্রেশ হচ্ছি….(মায়া)
_ আচ্ছা…. (জয়া)

কিছুক্ষণ পর জয়া বিজয়ের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মণির নজরে পরে সেটা। খালামণি, খালামণি করে দৌঁড়ে যায় জয়ার কাছে। আঙ্গুল ধরে টেনে এনে বিজয়ের পাশে বসায়। তারপর__
মণি:- আচ্ছা, মামা!
তোমাকে কি আমি কয়’টা কথা বলতে পারি???
বিজয়:- বলো মামণি…
মণি:- বন্ধু মানে কি???
জয়া:- মণি মামণি! তোমরা গল্প করো, আমি চা করে নিয়ে আসছি….
মণি:- ঠিক আছে….

বিজয়:- হুম, মামণি এবার বলো….
মণি:- বন্ধু মানে কি???

বিজয় মণিকে কোলে টেনে নিয়ে বলল__
বন্ধু মানে হলো দুঃখের সাথী, তোমার বিপদে-আপদে যে সবসময় তোমার পাশে ছায়ার মত থাকে সেই বন্ধু। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন বলো তো???
মণি:- বলছি…
আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও….
বিজয়:- আচ্ছা, ঠিক আছে বলো।
মণি:- আচ্ছা, মামা!
বন্ধুদের জন্য কি মানুষ কাঁদে?
বিজয়:- হুম, বন্ধুর বিপদে কাঁদে। বন্ধুর কষ্টে কাঁদে।
মণি:- আর বন্ধুর বিয়ের কথা শুনেও কাঁদে???

মণির প্রশ্নের ধরন দেখে বিজয় এবার অবাক হয়ে যায়। অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে__
” বিয়ে? সে তো খুশির খবর। কাঁদবে কেন?”
মণি:- তার মানে কাঁদে না, তাই তো?
বিজয়:- হুম…

মণি গালে হাত দিয়ে গুনগুনিয়ে বলতে লাগল,
তাহলে খালামণি কেন কাঁদল? ওনিও তো মামার বন্ধু….

বিজয়:- কি হলো মামণি???
মণি:- তবে ঐ খালামণি’টা কাঁদলো কেন???
বিজয়:- কোন খালামণি???
মণি:- সে তুমি চিনবা না…
বিজয়:- আচ্ছা, তোমার খালামণির বন্ধু কি ছেলে???
মণি:- হুম…
বিজয়:- তোমার খালামণির বন্ধুর অন্য জায়গায় কি বিয়ে ঠিক হয়ছে??
মণি:- হুম।
বিজয়:- বুঝলাম।
মণি:- কি বুঝলা মামা???
বিজয়:- তোমার খালামণি ওনার বন্ধুকে ভালোবাসে। তাই কাঁদতেছে।
মণি:- ভালোবাসা কি মামা???

ঠিক তখন’ই জয়া চা হাতে রুমে প্রবেশ করে।
বিজয়ের দিকে চা’য়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলে__
” চা….”
আপনিও বসেন….(বিজয়)
_ আমি বৃষ্টির দিন ছাড়া চা খাই না।(জয়া)
_ বৃষ্টির দিন কেন?(বিজয়)
___ ভালো লাগে, তাই।(জয়া)
__ আপনার রুচি আছে বটে..(বিজয়)
_ আপনি খা’ন। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।(জয়া)

এই বলে জয়া মণিকে নিয়ে চলে যায় রুম থেকে। বিজয় চা খাচ্ছে আর মনে মনে বলছে__
” আমি বৃষ্টির দিন ছাড়া চা খাই না…”
ইস! কি মিষ্টি করে কথা বলেরে মেয়েটা….

গায়ে হলুদের দিনের বলছি। সবাই যখন বিজয়কে হলুদ দিতে ব্যস্ত, মণি তখন চুপিচুপি লুকিয়ে-চুরিয়ে সাইমার ছেলে সাইমকে নিয়ে পৌঁছে গেল ডাক্তার নুসরাতের বাসায়। পাশাপাশি বাসা হওয়ায় খুঁজতে বেগ পেতে হলো না বাচ্চা দুটির। পৌঁছে গেল নুসরাতের বাসায়। গেইট খোলা ছিল বিধায় অতি সহজেই খোলা গেইট দিয়ে উপরে চলে গেল সাইম-মণি। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলে ওদের দেখে অবাক হলো সবাই। পরে বুঝতে পারল হয়তো ঐ বাসা থেকে মেয়েরা আসছে হলুদ দিতে, বাচ্চা দুইটা বোধ হয় আগেই চলে আসছে। নুসরাত সিড়ির উপরেই দাঁড়িয়ে ছিল। বাচ্চা দুইটাকে দেখে নিচে নামল। ওদের নিয়ে উপরে চলে গেল।

মণি’ই প্রথমে কথা শুরু করল।
মণি:- ভালো আন্টি…
আপনাকে একটা কথা বলব?
নুসরাত:- জি, বলো….

মণি জয়ার ব্যাপারে সব’টা বলল। সব’টা শুনার পর ওর পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিল। কি বলছে ওরা এসব? আর জয়ার ফোনে বিজয়ের এত্তগুলো ছবি।তার মানে বাচ্চারা যা বলছে একটু হলেও সত্যি। জয়া বলে মেয়েটা বিজয়কে ভালোবাসে। ভিষণ ভালোবাসে।
নুসরাত মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিল।
নুসরাত!
একি করতে যাচ্ছিলে তুই?
না জেনে শুনে হুট করে বিয়ে করে একটা মেয়ের তিলতিল করে গড়া স্বপ্নকে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছিলে তুই। তুই এতটা খারাপ?
ছি! নুসরাত।
ছি…..
মনে মনে নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিল নুসরাত।
এদিকে মণি কেঁদে’ই চলছে।
নুসরাত মণিকে কোলে নিয়ে বলল__
” কেঁদো না মা! আমি থাকতে কিচ্ছু হবে না। আমি সব ঠিক করে দিব। তোমার মামা আমাকে নয়, তোমার জয়া খালামণি’কে বিয়ে করবে।”

মণি একটু শান্ত হলো এ কথা শুনে….

নুসরাত বাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে সাইম-মণিকে পাঠিয়ে দিয়ে বিজয়কে ফোন করে আনলো। বিজয় আসলে সব’টা খুলে বলে নুসরাত। বিজয় যেন আকাশ থেকে পরল। স্তব্ধ হয়ে গেছিল কিছুক্ষণের জন্য। তারপর নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল__
” নুসরাত! এরা বাচ্চা মানুষ। এরা ভালোবাসার কি বুঝে? এরা হয়ত না বুঝে’ই এসব বলছে।”

নুসরাত শক্ত গলায় বলল__
” বিজয়! বাচ্চারা কখনো মিথ্যে বলে না। আর এই দেখো জয়ার ফোন। তোমার অগোচরে এই ছবিগুলো ও তুলছিল। ওর সমস্ত গ্যালারী খুঁজে দেখো, কেউ আছে? না নেই। তার মানে কি? ও কেন এসব ছবি রাখতে যাবে? কেন রেখে দিবে যতনে??? বিজয়…
ওর নোটপ্যাডের সেভ করা একটা লিখাগুলো দেখো। ৬বছর আগেকার লেখা এটা। যাতে লিখা__
ওনার ঋন কখনো শোধ করা যাবে না। আবার পরিশোধ করাও যাবে না। কারন, আমরা খুব’ই নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন। একসাথে ৫লক্ষ টাকা পরিশোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু পারছিলামও নিরবে ওনার দান মেনে নিতে। আর তাইতো আজ চলে আসলাম ওনার বাসায় কাজের মেয়ের ছদ্মবেশে।
বিজয়…
দেখো। তুমি তো এই মেয়ের মায়ের চিকিৎসার জন্য’ই টাকা দিয়েছিলা, তাই না?
ও তার’ই ঋন পরিশোধ করতে এসেছিল। বিজয়! ও ছায়ার মত ৫টা বছর তোমার পাশে থেকেছে। গত বছরে যখন ধরা পরল তখন মিথ্যে কলেজের অজুহাতে তোমায় বাসায় থাকার অনুমতি চেয়েছিল। বিজয় দেখো…
এখানে কি লিখা…
এখানে লিখা ও একটা হসপিটালে জব করে। আর সেটা শুধুমাত্র তোমাকে দেখার জন্য’ই করে। তার মানে কি বিজয়? ও তোমাকে ভালোবাসে। ভিষণ ভালোবাসে। বিজয় এতেও যদি তোমার বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি ২য় কাজের মেয়েকে ফোন করে এখানে আসতে বলো। আমার মনে হয় ঐ মেয়েটি সব জানতো। বিজয় নুসরাতের কথা মতো কল দিল ২য় কাজের মেয়েকে। মেয়েটি এসে প্রথমে কাঁপতে লাগল, তারপর বলল__
” স্যার আমায় মাফ করে দেন। জয়া বলে মেয়েটা ছয় বছর আগেই এখানে আসে। ও ওর মায়ের ঋন পরিশোধ করতে চেয়েছিল, তাই রোজিনাকে সরিয়ে রোজিনার জায়গায় ঐ মেয়েকে দিয়েছিলাম। ওনি’ই রান্না বান্না করত, আর যা টাকা পেত সব দান করে দিত আপনার নামে। ও আপনার রুম গুছাতো। আর ঐ নূপুরটাও জয়া মেয়েটার। ও মানা করছিল, তাই বলিনি। স্যার, আমায় মাফ করে দিন। ঐ মেয়ে চলে যাচ্ছে আজকে। আর এমন ভুল হবে না। স্যার, আমায় তাড়িয়ে দিবেন না।

__ নুসরাত কাজের মেয়েকে বাসায় পাঠিয়ে দিল।
_ বিজয় অসহায়ের মত নুসরাতের দিকে তাকালো। বিজয়ের অসহায় দৃষ্টির ভাষা নুসরাত বুঝে যায়। আর তাই বিজয়ের কাধে হাত রেখে বলে_
” বিজয়! আমি জানি তুমি কি বলতে চাচ্ছো। আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু বিয়ে’টা হয়ে যায় নি। এখনো হাতে অনেক সময় আছে বিজয়। তুমি যাও জয়ার কাছে। ওকে চলে যেতে দিও না। ফিরাও ওকে। বিজয় ঋন পরিশোধ করতে এসে ও তোমায় চরম ঋনী করে চলে যাচ্ছে। বিজয় চুপ করে থেকো না। ওকে ফেরাও। বিজয় আমার জন্য চিন্তা করো না। তুমি প্লিজ, জয়াকে ফেরাও।”

বিজয় আর কোনো কথা না বলে ছুটে চলল বাসার দিকে। ৫মিনিটের রাস্তা ২মিনিটে পৌঁছালো বিজয়। এদিকে জয়া..?!!!
মায়ের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে মায়াকে বলে কোনো রকম বেরিয়ে পরল বাসা থেকে। যাওয়ার আগে কথা দিয়ে গেল__
“বিজয় ভাইয়ার বিয়েতে অবশ্যই আসব আমি….দুপুর ২টায় পৌছে যাব বিয়ে বাড়িতে….”

এদিকে বিজয় বাসায় ঢুকে’ই ছুটে চলল জয়ার রুমের দিকে। জয়াকে না পেয়ে দৌঁড়ে আসল মণির কাছে। হাপিয়ে জিজ্ঞেস করল__
” মা! জয়া কই?”
__ মণি কাঁদতে কাঁদতে বলল, হাতে ইয়া বড় ব্যাগ নিয়ে চলে গেছে খালামণি। চলে গেছে…”

বিজয় বসা থেকে উঠে দৌঁড়ে ছুটে চলল বাসস্টপের দিকে। চট্টগ্রামেরর উদ্দেশ্যে গাড়ি এখনো ছাড়েনি। মনে হচ্ছে জয়া এখনো যায় নি।
– হুম, ঠিক তাই।
জয়া এখনো যায় নি।

বাসস্টপে একটা বেঞ্চে চুপ করে বসে আছে জয়া…
মুখ’টা শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। বোধ হয় বিয়ের কথা’টা শুনার পর থেকে ঠিক মত খাইওনি। বিজয় গিয়ে জয়ার পাশে’ই বসল। জয়া আনমনে উদাস দৃষ্টিতে তখনো দুরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় বাস এসে যায়। বাসের আগমনে ধ্যান ভাঙে জয়ার। বেঞ্চ থেকে উঠে ব্যাগটা হাতে নিতে যাবে ঠিক তখন’ই থমকে দাঁড়ায় জয়া। এ যে ডাক্তার বিজয় দাঁড়িয়ে। যার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছি, সেই ডাক্তার সাহেব’ই দাঁড়িয়ে। জয়া অবাক বিস্ময়ে মুখ খুলল__
” ভাইয়া আপনি? এখানে?!!!
__ হুম, আমি। কেন কোনো সমস্যা???(বিজয়)
__ না, ঠিক সেটা না। আজ তো আপনার হলুদ সন্ধ্যা…তাই বলছিলাম…(জয়া)
__ হলুদ সন্ধ্যা?!!!??
তাই না?????(বিজয়)
__ আচ্ছা, মিস জয়া! আপনি জানেন তো হলুদ সন্ধ্যার পর কি হয়?!!!(বিজয়)
__ বিয়ে….(জয়া)
__ ঠিক তাই।বিয়ে। বিয়ে হয়। আচ্ছা, বিয়ে হলে তো বউ লাগে তাই না???(বিজয়)
_ জি…(জয়া)
_ আর যদি সেই বউটা’ই না থাকে তাহলে কি বিয়েটা হয়?????(বিজয়)
_ মানে??? কি বলছেন এসব???বউ নেই মানে??(জয়া)
— মানে অতীব সহজ।
বউ আমার পালাইছে…..???(বিজয়)

– কি?????(জয়া)
__ জি…. ??(বিজয়)

চলবে…

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ৩১

1

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ৩১

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

না,না!হবে না।
এভাবে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না।
চোখ খুলো…..(সিয়াম)
__ মায়া চুপ….
কি হলো? চোখ’তো খুলবা নাকি???(সিয়াম)
__ মায়া তখনো চুপ।
মায়া…..
এবার কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছে..?!!!??(সিয়াম)
_ মায়া ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। সিয়াম মায়ার হাতে আঁচল’টা ধরিয়ে দিয়ে বলল নাও। এবার পরো। আমি আবার এসব শাড়ি-টাড়ি পরাতে পারি না। মায়া সিয়ামের হাত থেকে আঁচল’টা এনে শরীর ঢেকে নিয়ে বলল_
” রাত তো অনেক হয়েছে। আপনি বরং ঘুমিয়ে পরেন।”
সিয়াম মায়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
ঠিক আছে, ঘুমাও।
তবে শাড়ি’টা পরলে ভালো হতো। দরকার হলে আমি বাহিরে চলে যেতাম কিছুক্ষণের জন্য। আর তাছাড়া খারাপ হলেও আমি এতটা খারাপ না যত’টা তুমি ভাবছ। আমি তো জাস্ট বধুরূপে তোমাকে একনজর দেখতে চেয়েছিলাম, এর বেশী আর কিছু নয়।??
আর তুমি কি না একটু বেশী’ই ভেবেছ…??
যাক, ব্যাপার না।✌✌ ঘুমিয়ে পরো।??
গুড নাইট….???
_ এই শুনোন…..(মায়া)
~কিছু’ই শুনতে চাই না এখন আর। ঘুমিয়ে পরো তাড়াতাড়ি।ঘুমের সময় যে চলে যাচ্ছে। যাও ঘুমাও। বাই।(সিয়াম)
_ আপনি নিচে কেন এখানে ঘুমান…(মায়া)
_ না।
খাট নয়, ফ্লোর’ই আমার জন্য উপযুক্ত স্থান।(সিয়াম)
__ আপনি এভাবে রাগ দেখাচ্ছেন কেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি???(মায়া)
__ না,
তুমি কিসের ভুল করবা?
ভুল তো আমি করেছি।
আসলে আমার মনে’ই ছিল না তোমার-আমার সম্পর্ক অন্য ৮/১০টা সম্পর্কের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার তো মনে’ই ছিল না আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমায় ছুঁবো না, স্পর্শ করব না। মাত্র’ই কথা’টা মনে হলো। তাই আর কি….(সিয়াম)
_ পুরনো কথা তুলছেন কেন আজ? ঐগুলো তো অতীত। যা গত হয়ে গেছে। আর যা গত হয়ে গেছে তা কেন টেনে আনছেন এভাবে? কেন নষ্ট হতে দিবেন সুন্দর মুহূর্তগুলোকে? (মায়া)
_ মায়া!
ঘুমাও তুমি। ???আমার ঘুম পাচ্ছে খুব….(সিয়াম)
__ আচ্ছা….??(মায়া)

সিয়াম বালিশ নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পরে। মায়া একহাতে ভর দিয়ে শুয়ে তাকিয়ে আছে সিয়ামের দিকে। মাঝ রাত্রে দমকা হাওয়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় সিয়ামের। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে জানালা’টা খুলা, আর বাইরের দমকা হাওয়ায় জানালা’টা বার বার এদিক-ওদিক যাচ্ছে আর জোরে আওয়াজ হচ্ছে। সিয়াম খাটে উঠে জানালা গুলো বন্ধ করে দিলো। জানালা গুলো বন্ধ করে দেওয়ার সময় সিয়াম লক্ষ্য করে খাটে কেউ নেই। সিয়াম যেন ভয় পেয়ে যায়।ঝড়-বৃষ্টির এই রাত্রে লাইট না জ্বালিয়ে অন্ধকারে কোথায় গেছে মায়া..???
আচ্ছা, বাথরুমে গেল না তো???
হয় তো….
সিয়াম দরজা’টা মেলে বসে রইল সোফায়। কখন মায়া আসবে সেই আশায় বসে আছে সিয়াম।
– কিন্তু একি???
৫মিনিট থেকে ১০মিনিট,
১০মিনিট থেকে ১৫মিনিট হয়ে গেল, মায়া আর আসছে না।

বাথরুমে গেলেও তো এতক্ষণ থাকার কথা না…
যায় দেখে আসি গিয়ে কোথায় গেছে মায়া…
কথা’টা বলে’ই সিয়াম রুমের বাইরে বের হয়ে গেল। বাথরুমসহ এ রুম ও রুম সব রুমে সিয়াম মায়া’কে খুঁজল। কিন্তু মায়াকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। তাহলে কি ছাদে গেছে?
এই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের রাত্রে ও কি ছাদে যাবে???
দেখে’ই আসি….
সিয়াম আর একমুহূর্তও দেরী না করে দৌঁড়ে গেল ছাদে। ছাদের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে একবার দেখে চলে আসছিল সিয়াম, তখন’ই সিয়ামের চোখ যায় ছাদের এককোণে। যেখানে জড়োসড়ো হয়ে একজন বসে কাঁপছে। সিয়ামের বুঝতে বেগ পেতে হলো না কে এটা? খুব শিগ্রয় সিয়াম বুঝে যায় এ হলো মায়া। ওর মায়াপরি। সিয়াম আর একমুহূর্তও দাঁড়াতে পারল না। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে’ই ছুটে চলল মায়াপরিটার দিকে। মায়ার সামনে গিয়ে__
” এত রাত্রে এখানে কি করছ এসব?!!!”….
মায়া একনজর সিয়ামের দিকে মুখ উঠিয়ে তাকালো, তারপর আবারো নিচের দিকে তাকালো।
__ কি বলছি শুনতে পাচ্ছো? নাকি কথা কানে যাচ্ছে না? ??(সিয়াম)
_ হু……???(মায়া)
_ হু কি? কথা বলতে পারো না?????(সিয়াম)
_ মায়া বেশ চুপচাপ…..

সিয়াম যেন এবার যেন বহুগুনে রেগে গেল। মায়ার দিকে রাগান্বিত মোডে তাকিয়ে বলল__
” এবার কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছে…”
_ মায়া তখনো চুপচাপ বসে ঠান্ডায় কাঁপছে। সিয়াম এবার রাগে মায়াকে হ্যাচকা টানে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে ফেলল। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে…..

এভাবে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর মায়া সিয়ামের হাতের দিকে তাকালো।
সিয়াম মায়ার দৃষ্টি লক্ষ করে মায়ার শরীর থেকে দু’হাত সরিয়ে নিল। তারপর__
” Sorry….”
মায়া:- স্যরি, কেন???
সিয়াম:- এই যে ছুঁয়ে দিলাম…
মায়া:- ওহ…
সিয়াম:- আবারো স্যরি। ভুল হয়ে গেছে।আর এমনটি হবে না কখনো…

মায়া সিয়ামের থেকে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে__
” আপনি আমার হাজবেন্ড।আমায় ছুঁতে’ই পারেন। এর জন্য স্যরি বলার কোনো প্রশ্ন’ই উঠে না। আর তাছাড়া আমার কিন্তু মন্দ লাগেনি, ভালো’ই লেগেছে আমার পরশে। আর….(…)….
যাক….
আমি কিছু মনে করিনি।(একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) আপনি রুমে যান, আমি আসছি।”
__ আচ্ছা, তুমি আসো। আমি গেলাম।(সিয়াম)

সিয়াম চলে গেলে মায়া ছাদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। মনে মনে সিয়ামকে হাজার’টা বকা দিয়ে বুকে একরাশ অভিমান চেপে দাঁড়িয়ে রইল দুর অজানার দিকে তাকিয়ে…..

মনে মনে সিয়ামকে হাজার’টা বকা দিয়ে মায়া যখন ক্লান্ত ঠিক তখন’ই মায়া ওর পেটে একটা দারুণ পরশ অনুভব করে। মনে হচ্ছে কেউ যেন পিছন দিক দিয়ে কোমর’টা জড়িয়ে পেট ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মায়ার ভিতর’টা অজানা এক শিহরণে শিহরিত হয়ে উঠল। ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে’ই মায়া ইষৎ কেঁপে উঠে। এদিকে মায়ার কোমড় জড়িয়ে রাখা সিয়াম কোমড়ের দিক দিয়ে হাতটা মায়ার পেটের দিকে নিয়ে গিয়ে, মায়ার ঘাড়ে নাক ঘসতে থাকে। মায়া মুখ না দেখে’ই বুঝে গিয়েছিল এ সিয়াম। আর তাই তো মুখ না দেখে’ই বলে উঠে__
” কি করছেন?”
সিয়াম পিছন দিক থেকে মায়াকে আরো নিবিড় ভাবে জরিয়ে ধরে বলে উঠে__
” আমার বউ’টাকে আদর করছি…”
সিয়াম মায়াকে নিবিড় থেকে আরো নিবিড়তর করে জড়িয়ে ধরে। মায়া দু’চোখের পাতা আলতো করে বন্ধ করে সিয়ামের নিবিড় আলিঙ্গনে সাড়া দেয়। সিয়াম মায়াকে একটানে ওর দিকে ফিরিয়ে নেয়। তারপর একটু একটু করে মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। সিয়াম প্রথমে দু’হাত দিয়ে মায়ার গলার পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরে, তারপর নাকের সাথে নাক লাগালো, তারপর মায়ার ঠোঁটের খুব কাছে ঠোঁটগুলো নিয়ে যায়। অতঃপর….

চলবে…..

বসের সাথে প্রেম পর্ব-৩০

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-৩০

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

মায়া চুপচাপ।
ভিষণ চুপচাপ।
সিয়াম মায়ার ঘাড়ে আবারো সুরসুরি দিলে ইষৎ কেঁপে উঠে। কাঁপা কাঁপা গলায় সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে-
” কি হচ্ছে এসব?”
দৃঢ় গলায় সিয়ামের জবাব-
” সবে তো শুরু…”
যদি কথা না বলে এভাবে মরার মত শুয়ে থাকো তবে আরো অনেক কিছু’ই হবে।
– সিয়ামের কথা শুনে মায়া সোফা থেকে উঠে খাটে চলে যায়। সিয়ামও মায়ার পিছুপিছু খাটে গিয়ে বসে।
__ আপনি?!!!
এখানে এসেছেন কেন??(মায়া)
__ তুমি যে কারনে এসেছ…??(সিয়াম)
__ আমি ঘুমাবো। আপনি সোফায় যান।ঐখানে গিয়ে ঘুমান।??(মায়া)
_ আমিও ঘুমাবো। বলে’ই সিয়াম দুটো বালিশ একসাথে করে শুয়ে পরল।
__ এই আপনি এখানে…(…)….
আর দুই বালিশ কেন নিয়েছেন???(মায়া)
_ হ্যাঁ, আমি এখানে’ই শুইব আর বালিশের কথা বলছ না???
দুই বালিশ আমার লাগবে।(সিয়াম)
__ দু’বালিশ ছাড়া আমার ঘুম হয় না। একদম না। আর সেই জায়গায় একবালিশও নেই। আমি ঘুমাবো কোথায়?????(মায়া)
_ কেন? আমার বুকে…
আমার বুক’টা থাকতে এত টেনশন কিসের??????(সিয়াম)
_ স্যরি, তার আর দরকার হবে না। আমি বালিশ ছাড়া’ই ঘুমোতে পারব। বাই….?(মায়া)

মায়া ওর দু’হাত মাথার নিচে দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে পরল। এদিকে সিয়াম মায়াকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল বুঝতে পারেনি। ঘুম ভাঙে ভোর ৫টায়। কেমন গরম গরম অনুভূত হচ্ছে। কম্বলটা গায়ের উপর থেকে সরিয়ে হাত পা মেলে ধরতে’ই দেখে মায়া। হুম, মায়া শুয়ে আছে সিয়ামের বুকে। বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারে না মায়া। তাই তো ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলেও সত্যি বলতে ঘুমায়’নি। সিয়াম ঘুমিয়ে গেলে চুপিচুপি ওর নিচ থেকে বালিশ আনবে ভাবছিল কিন্তু আনতে পারেনি। কেন যেন মনে হচ্ছিল, বালিশ টান দিলে যদি ঘুম ভেঙে যায়। আর ঘুম ভেঙে গেলে যদি কষ্ট হয় লোকটার???
মায়া ডাক দেওয়ার সাহস পায়নি আবার বালিশ ছাড়া ঘুমানোও ওর পক্ষে পসিবল না।তাইতো রাত্রে সিয়ামের বুকে’ই মাথা রাখে। ভাবছে সিয়াম জাগার আগে সরে যাবে কিন্তু তা আর হলো কই???
বহুদিন পর নিশ্চিন্তে শান্তির ঘুম দেয় মায়া।

পরদিন সকালে বিজয়ের ডাকে ঘুম ভাঙে সিয়ামের। সিয়াম ঘুম ঘুম চোখে বিজয়ের দিকে তাকালে বিজয় মুচকি হেসে বলে-
” Sorry,For disturb.”
বসলে যে কথাটি বলতে এসেছিলাম সেটা হলো__এভাবে কেউ দরজা খোলা রেখে ঘুমায়? যদি চোর আসত???”
সিয়াম তাড়াহুড়ো করে শুয়া থেকে উঠে বসে।
একি?!!!
এই মেয়ে কখন ঘুমালো এভাবে?
ওহ এবার বুঝতে পারছি বিজয় ভাইয়া কেন মুচকি হাসছিল এতক্ষণ।
_ কি হলো? বিড়বিড় করে কি বলছ সিয়াম???(বিজয়)
_ নাহ,কিছু না ভাইয়া…(সিয়াম)
__ ঠিক আছে। আমি ড্রয়িংরুমে যাচ্ছি মণিকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে। তোমরা দু’জন এসো…(বিজয়)

বিজয় চলে গেলে সিয়াম মায়াকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে উঠতে যাবে তখন’ই দেখে মায়া ওর হাতটা আঁকড়ে ধরে আছে। সিয়াম আর বিছানা থেকে উঠেনি। চুপ করে মায়ার মাথার পাশে বসে থাকে। সেই কখন থেকে মায়ার দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে সিয়াম। সেই যে কখন দেখে’ই চলছে এখনো দেখার স্বাদ মিটছে না। অনেকক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে একটা সময় কল্পনায় হারিয়ে যায় সিয়াম ওর মায়াপরিকে নিয়ে।
হঠাৎ’ই মায়া নড়ে উঠে। ঘোর কেটে যায় সিয়ামের। তাকিয়ে দেখে মায়া ওর দিকে’ই তাকিয়ে আছে আধো ঘুম, আধো জাগরিত চোখে। সিয়াম শুভ সকাল জানাতে’ই বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ০৯টা বেজে ০৫মিনিট।
– হায় আল্লাহ!
এতক্ষণ ধরে ঘুমাইলাম? মনে মনে কথাগুলো বলে বিছানা ছেড়ে উঠে বাহিরে চলে যায় মায়া।
__ ফ্রেশ হয়ে নিচে বিজয়-মণির কাছে চলে যায় সে। এদিকে সিয়াম ফোন হাতে নিয়ে দেখে 74 Missed call ভেসে আছে ওর ফোনে। সিয়াম তো হতবাক।
এত কল কি দিয়েছিল?!!!
নিশ্চয় বাসা থেকে???
– সিমটা ফোনটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথে আবারো কল। হুম, যা ভেবেছিল তাই। সাইমা-আবির, সাইমার শ্বশুর-শাশুড়ি, আর সিয়ামের বাবা-মা মিলে ৭৪টা কল দিয়েছে। সেই যে সিয়ামের বাবা একটা খবর দিয়েছে সবাইকে যে মায়াকে পাওয়া গেছে, আর মণি ওদের মেয়ে তারপর থেকে ওদের উৎকন্ঠার শেষ নেই।
কখন ছেলে তার বউ মেয়েকে নিয়ে বাসায় যাবে সেই প্রতিক্ষায় আছে সবাই।
যায় হোক!
সাত-পাঁচ না ভেবে সিয়াম কলটা রিসিভ করেই ফেলল। সিয়াম শুধু হ্যালো বলছে তারপর’ই ওপাশ থেকে_
” বাবা! মায়াকে কখন আসবি? সেই কতক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি! কলও ধরছিস না। হ্যারে, আমার ছোট্ট গিন্নিটা কেমন আছে? ও ব্রেকফাস্ট করেছে? আর আমার মায়া মা’টা কেমন আছে??? ও কখন আসবে বলছে? জানিস, তোর মা তো বউ-নাতনী বরণ করার জন্য কত কি রেডি করে রেখেছে। সাইমা আমায় পাগল করে দিয়েছে, ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবিরের বাবা-মাও ওনাদের মেয়েকে দেখতে চাচ্ছে। আবির তো পাগল হয়ে গেছে কখন ভাগ্নিকে কোলে নিবে, ওর মুখ থেকে মামা ডাক শুনবে। আচ্ছা, শুন না তুই এখনি রওয়ানা হয়ে যা। হ্যালো বাবা শুনতে পাচ্ছিস???
এরকম হাজারো প্রশ্ন একসাথে জিজ্ঞেস করছিল সিয়ামের বাবা সিয়ামকে।
সিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল__
” বাবা! আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। ব্রেকফাস্ট করেই রওয়ানা দিব। রাখি এখন।”

সেদিন ব্রেকফাস্ট করে বাসায় যাওয়ার আগে মণির কাছে গেল সিয়াম।
” আমি তাহলে যায় মা!
বিকেলে আসব। তোমাদের নিতে।”
কথা’টা মায়াকে শুনিয়ে মণিকে বলতে’ই মণি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে সত্যি বলছ তো আব্বু???
আমায় ছেড়ে যাবে না তো কোথাও???
– হ্যারে মা!
আমি সত্যি বলছি।
আমি আসব তোমাদের নিতে।ঠিক বিকেল ৫টায়। অফিস থেকে ফেরার সময়। এসে একদম দাঁড়াব না। তোমরা প্রস্তুত থেকো কিন্তু। সিয়াম কথা’টা বলে বিজয়ের থেকে বিদায় নিয়ে মায়ার কাছে গিয়ে ‘আসি’ বলে চলে গেল অফিসে।
সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে বিজয়দের বাসার গেইটের ভিতরে ঢুকতেই মায়া বের হয়ে আসে বাসার ভেতর থেকে। সিয়ামকে দেখে’ই বলল__
” এসেছেন? চলেন এদিক’টাই ঘুরে আসি একটু।”
__ মায়াকে দেখে মনে হচ্ছে এতক্ষণ ধরে মায়া ওর’ই প্রতিক্ষায় ছিল কিন্তু সিয়াম কেন যেন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
বিশ্বাস করতে পারছে না মায়া ওর’ই প্রতিক্ষায় ছিল।
যায় হোক!
সিয়াম মায়ার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যায় ওদের বাগানের ভেতরে। সেখানকার বাগান দেখাশুনাকারী গাছগুলোতে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল, মায়া কাছে গিয়ে বলল__
” চাচা! আপনি একটু বাসায় যান। মণির সাথে কথা বলেন গিয়ে।”
__ লোকটি চলে গেল। মায়া বাগানের একপাশটায় গিয়ে চুপটি করে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়ালো। সিয়ামও গিয়ে চুপচাপ পাশে দাঁড়ালো। বেশকিছু ক্ষণ এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল সিয়াম-মায়া দু’জনেই। নিরবতা ভাঙে সিয়াম।
~~ কিছু বলবে???(সিয়াম)
__ হুম। (মায়া)
~~ বলো…
আমাদের যে সন্ধ্যার আগে’ই রওয়ানা দিতে হবে।(সিয়াম)
__ আমাদের নয়, বলেন আমার।(মায়া)
~~ মানে?(সিয়াম)
__ মানে অতি সহজ। আমি কিংবা মণি কেউ যাচ্ছি না আপনার সাথে।(মায়া)
~~ কি বলছ তুমি এসব?!যাবে না মানে???(সিয়াম)
__ মিথ্যে কিছু তো বলিনি! যাব না মানে যাব না।(মায়া)
~~ঠিক আছে। আজ না যাও যাবে তো একসময়।
তাহলে কখন যাবে সেটা বলো।(সিয়াম)
_ যদি বলি এ জীবন থাকতে আর নয়।(মায়া)
~~ কি???(সিয়াম)
__ জি….(মায়া)
~~ Are you creazy?
কি বলছ তুমি বুঝতে পারছ?(সিয়াম)
__ আমি সত্যি’ই বলছি। আর যা বলছি ভেবে চিন্তে সুস্থ মস্তিষ্কে বলছি। আমি যাব না। আর যাওয়াটা সম্ভব নয়।(মায়া)
~~ আমায় ক্ষমা করা যায় না?(সিয়াম)
_ ক্ষমা???
হা, হা হাসাইলেন। কিসের ক্ষমা করতে বলছেন আপনি? আপনি জানেন না ক্ষমা তাকে’ই করে মানুষ যে অপরাধ করে। আপনি তো ভুল বা অপরাধ করেন নি। তাহলে আপনাকে কেন ক্ষমা করব???(মায়া)

সিয়াম মায়ার দুটি হাত চেপে ধরল। প্লিজ মায়া।
আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি জানি আমি যা করছি, তার কোনো ক্ষমা হয় না। তবুও বলছি আমাদের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আমায় একটু দয়া করো। সব ভুলে ফিরে চলো না আমার সাথে….

মায়া ছাড়িয়ে নিল সিয়ামের হাতের মুঠো থেকে ওর হাত দুটো। তারপর সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল_
” জনাব সিয়াম সাহেব!
আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ কিংবা অভিযোগ নেই। আমি অদৃষ্টে বিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস-
যা হয়েছে তা সব’ই আমার কপাল।
এতে আপনার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই।
আর ফিরে যাওয়ার কথা বলছিলেন না???
সেটা সম্ভব নয়।
আপনার কাছে আমি ফিরে যাব সেটা আপনি কল্পনাতেও ভাববেন না সিয়াম সাহেব।
আপনি ফিরে যান।
আর আমাদের মুক্তি দিয়ে যান। একটু প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে চাই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে। প্লিজ, আমার ভালো থাকাটাকে নষ্ট করবেন না। কথাগুলো একনিশ্বাসে মায়া বলল।

সিয়াম মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল জল ছলছল চোখে। অনেককিছু বলতে চেয়েও কেন যেন সে পারছে না বলতে।আটকে আসছে গলা। তবুও বলার জন্য মুখ খুলল সিয়াম।
মায়ার কাছে গিয়ে হাটুগেড়ে বসে পরল সিয়াম।
তারপর_
” মায়া প্লিজ এমন করো না।
আমার ভুল হয়ে গেছে। তোমার প্রতি আমার ঘোর অন্যায় করেছি। যার কোনো ক্ষমা হয় না। কিন্তু আজ আমি সত্যি’ই অনুতপ্ত।প্লিজ, আমায় একটাবার, শুধু একটা বার তোমায় ভিক্ষা দাও। কথা দিচ্ছি-
তোমার অমর্যাদা হবে না কোনো দিন। প্লিজ, মাফ করে দাও আমায়। এই শেষ বারের মত মাফ করে দাও।

__……… (মায়া চুপ)

__ প্লিজ, তুমি আমায় মাফ করে দাও মায়া। আমার কথা বাদ’ই দিলাম, অন্তত পক্ষে তোমার মেয়েটার কথা ভাবো। ওকে এভাবে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করো না। প্লিজ, মায়া।
প্লিজ। আমায় মাফ করো।

মায়া তখনো চুপ।

– মায়া! কথা বলো…
এভাবে চুপ করে থেকো না।
আমি তোমার দুটি পায়ে পরি প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। আমায় একটু ভালো ভাবে বাঁচতে দাও।

– আপনি উঠুন।
আর এসব নাটক বন্ধ করুন। আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছি না এসব। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাসায় ফিরে যান। আর প্লিজ কখনো আমার আর মেয়ের সামনে এসে দাঁড়াবেন না। নিতে আসবেন না মেয়েকে পিতৃত্বের দাবী নিয়ে। যদি আসেন কখনো তাহলে সেদিন আমার মরন হবে। আপনি আমার মরা মুখ দেখবেন।(মায়া)

– মাাাাাায়াাাাা…
তুমি….(সিয়াম)

– চুপ!
একদম চুপ।
কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। এই মুহূর্তে আপনি এখান থেকে বেরিয়ে যান যদি আমার মরা মুখ না দেখতে চান।(মায়া)

কথাটা বলে’ই মায়া বাসার দিকে চলে যায়।

– সিয়াম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরে।

সেদিন মণির কান্না শুনেও ওর কাছে যেতে পারেনি। বাহির থেকে যেতে হয় সিয়ামকে।

সেদিনের পর প্রায় ২মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। এর ভিতরে যে সিয়ামের পরিবার আসে নি তা নয়।
সিয়ামের বাবা-মা, সাইমা-আবির এসেছে অসংখ্য বার। আবার ফিরেও যেতে হয়ে ব্যর্থ হয়ে। মায়াকে বুঝাতে বুঝাতে আজ তারা ক্লান্ত। তাই একসপ্তাহ ধরে তারাও আসছে না। এদিকে বিজয়ও যেন আর পেরে উঠছে না। উপায় না পেয়ে বন্ধ করে দেয় মায়ার সাথে কথা বলা। এতে যদি একটু ভালো কিছু হয় সে আশায়। কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া মেয়েদের ঘাড় সোজা করা বোধ হয় সম্ভব নয় যতক্ষণ অবধি ওরা নিজ থেকে তা সোজা করার চেষ্টা না করে।
মায়ার ক্ষেত্রেও তাই হলো।

সেদিন পড়ন্ত বিকেল বেলায় মায়া ছাদে গিয়েছিল। ঠিক তখনি মণি মণি করে করে চেম্বার থেকে ফিরে বাসায় ঢুকে বিজয়। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মত মণিকে ঢেকেও মণির কোনো সাড়া পাইনি বিজয়। ব্যাপার কী?
গেল কই মেয়েটা???
কথাগুলো বলতে বলতে বিজয় ওর রুমে ঢুকে। দরজার কাছে যেতে’ই থমকে যায় বিজয়। ওর হাত-পা রীতিমত কাঁপতে শুরু করে। মনে হচ্ছে এই বুঝি বিজয় পরে যাচ্ছে। একটা বিকট চিৎকার দিয়ে বিজয় ছুটে যায় ওর খাটের কাছে যেখানে মণি নিথর হয়ে পরে আছে।
বিজয়ের চিৎকার শুনে ছাঁদ থেকে ছুটে আসে মায়া। এসে দেখে মণি খাটে শুয়ে আছে অচেতন হয়ে আর বিজয় তার’ই পাশে বসে কান্না করছে। মায়ার বুকের ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠে। মণির কি হয়েছে বলে ছুটে আসে মণির দিকে। মণির খুব কাছে এসে ওকে ছুঁতে যাওয়ার আগে’ই বিজয় হাত বাড়িয়ে বাধা দেয় মায়াকে।
__ কাছে আসবি না।
একদম কাছে আসবি না।
আজ ওর এই অবস্থার জন্য শুধু তুই দায়ী। দিনের পর দিন বাবা বাবা করে যখন ও অস্থির, তখন তুই মনে জেদ পুষে রেখে মেয়েকে মারধোর করেছিস। না খেয়ে-দেয়ে, অবহেলায়-অনাদরে মেয়েটা আজ মৃত্যু পথযাত্রী। ছুঁইবি না ওকে।একদম ছুঁইবি না।(বিজয়)

__ ভাইয়া….(মায়া)

__ বিজয় মণিকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে, আরেকহাতে মায়ার হাত ধরে টেনে ওকে ওর রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। তারপর মণিকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে ছুটে চলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে নিয়ে গেলে মণির জ্ঞান ফিরে আসলে, মণি অস্ফুট স্বরে আব্বু-আব্বু করতে থাকে। বলতে থাকে আমি আব্বুর কাছে যাব, আমি আব্বুর কাছে যাব। বিজয় মণির শরীরে স্যালাইন দিয়ে সিয়ামের বাসায় ফোন করে। খবর পেয়ে ছুঁটে আসে সিয়াম ও তার পরিবার।

তখনও মণির স্যালাইন চলছে। রাত ৮টায় সিয়ামের ডাকে চোখ মেলে তাকালো মণি। সিয়ামকে দেখতে পেয়ে মণি যেন প্রাণহীন দেহে প্রাণ ফিরে পেল। জাপটে ধরে মণি ওর বাবাকে। তারপর বাপ-মেয়ে দুজনে’ই কান্না শুরু করে।

পরদিন বিকেলে মণিকে নিয়ে সিয়াম ও তার পরিবার বাসায় ফিরে। অন্যদিন বিজয়কে জিজ্ঞেস করলেও আজ আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি সিয়াম। বিজয়ও বাধা দেয়নি সিয়ামকে।
কিভাবে বাধা দিবে???
কার ভরসায় আটকে রাখবে মণিকে? যার ভরসায় এতদিন রেখেছিল সেই মা’ই যে মেয়ের আজকের এই অবস্থার জন্য দায়ী।

যায় হোক।
সিয়াম মণিকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। এদিকে মায়া?!!!
কান্না করে করে সেঞ্চ হারায় রুমে। জ্ঞান ফিরে আবারো দরজার গিয়ে আঘাত করতে থাকে। কিন্তু কেউ আর দরজা খুলে দেয় না। সেদিন অনেক রাত করে বাসায় ফিরে বিজয়। দরজা খুলে বোনকে মেঝেতে পরে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন যেন ভিতরটা মুচড় দিয়ে উঠে বিজয়ের। বোনের পাশে গিয়ে বসে বিজয়। তারপর বোনকে কোলে উঠিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে একটা ইনজেকশন পুষ করে দেয় বিজয়। কিছুক্ষণ পরে’ই জ্ঞান ফিরে মায়ার। কাজের মেয়েকে ডেকে খাবার আনিয়ে জোর করে খাইয়ে দেয় বোনকে। তারপর জোর করে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় বিজয়। মায়ার শরীরটা যেন অনেকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ক্ষাণিকবাদেই ঘুমিয়ে পরে মায়া। দরজা’টা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চলে যায় বিজয় ওর রুমে।

একটা কলের আওয়াজে ভোরে ঘুম ভেঙে যায় বিজয়ের। কলটা রিসিভ করতে’ই ওপাশ থেকে ভেসে আসে বিজয়ের চাচার সহকর্মীর কন্ঠ। কক্সবাজার থেকে ফোন দিয়েছেন ওনি।
__ বিজয়! তোমার চাচার অবস্থা খুব খারাপ। এক্সিডেন্ট করেছেন ওনি। ওনি তোমাকে দেখতে চাচ্ছেন। তুমি আসতে পারবে আজকে???

বিজয় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এমন দুর্সংবাদ শুনে।
হ্যাঁ আংকেল আমি আসছি বলে বিজয় তখনি ভোরের ট্রেনে বেরিয়ে পরে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে একটা চিঠি লিখে দিয়ে যায় কাজের মেয়ের হাতে। বলে যায় চিঠি’টা মায়া জাগলে ওকে দিয়ে দিতে। সকাল ৮টায় ঘুম ভাঙে মায়ার। কাজের মেয়ে মায়ার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয়। যাতে লিখা__
” মায়া বোন আমার!
অভিমান করা ভালো তবে রাগ নয়। অতিরিক্ত রাগ অনেক সময় মানুষের জীবন থেকে অনেক কিছু কেঁড়ে নেয়। তাই বলছি-
সিয়ামের কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরে যা ওর কাছে। মণি সেখানে’ই আছে। বিশেষ কাজে আমাকে একটু ঢাকার বাহিরে যেতে হচ্ছে। কবে আসব তা জানি না। তবে এসে যাতে তোকে দেখি সিয়ামের সাথে সিয়ামের বাসায়। ভালো থাকিস।
ভাইয়া….”

চিঠি’টা পরে মায়া বিজয়কে কল দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ফোন অফ দেখাচ্ছে। মায়া ভেবে পাচ্ছে না ও কি করবে?

আচ্ছা, ভাইয়া আমার সাথে রাগ করে কিংবা আমার কৃতকর্মের জন্য রাগে ঘৃণায় দুরে সরে গেল না তো?
হতেও পারে…
না হলে ফোন অফ করবে কেন???
এমন হাজারো প্রশ্ন মায়া মনে মনে করে।

সেদিনের পর একটানা তিনদিন মায়া বিজয়ের ফোনে ট্রাই করে যায় কিন্তু ওকে আর ফোনে পায় না। মায়া বুঝতে পারে__
বিজয় এবার বুঝতে পারল মিথ্যে অজুহাতে ওর থেকে দুরে সরে গেছে। ভাইয়ার প্রতি ভিষণ রাগ হলো। একে তো মেয়ে চলে গেছে, আর এমন জায়গায় চলে গেছে যেখানে ও কখনো নিজ থেকে যেতে পারবে না আর। কারন- বেশকিছু ক্ষণ আগে একবার সিয়ামের বাসায় কল দিলে সিয়াম কলটা রিসিভ করে। রিসিভ করে সালাম দিতে’ই বলে স্যরি, ম্যাম। রং নাম্বার….
মায়া নামের কাউকে আমি চিনি না।
কি করে আমি তার বাসায় যাব???
যে কি না আমায় চিনে’ই না!!!
কাঁদতে কাঁদতে মায়া দাঁড়ানো থেকে বসে পরে। আর এই সময় ভাইটাও চলে গেছে। কি করবে মায়া???
কিছুই যেন বুঝতে পারছে না।

মায়া জানে ও যা করছে তার জন্য’ই হয়ত সিয়াম এমন করতেছে। রেগে আছে ওর উপর। কিন্তু আমি কিভাবে থাকব মণিকে ছাড়া?!!!
__ না, না! আমি পারব না মণিকে ছাড়া থাকতে। বিজয় ভাইয়াকে কল দিয়ে মাফ চেয়ে নিব।তারপর বলব নিয়ে যেতে ঐ বাসায়। আর কেউ আমায় না মানুক মা ঠিক আমায় মেনে নিবে। কথাটা বলে’ই ডায়াল করে বিজয়ের নাম্বার। কিন্তু এখনো নাম্বার’টা বন্ধ। আচ্ছা, তবে কি ভাইয়া আর চালু করবে না সিমটা???
__ হাল ছাড়ে না মায়া।
নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে একের পর এক কল দিয়েই যায় মায়া বিজয়কে।দেখতে দেখতে ৩মাস অতিবাহিত হয়ে যায়।

৩মাস পর_
বিজয় চাচার চিকিৎসা করে ফিরে আসে ঢাকায়। ঢাকায় এসে সর্বপ্রথম সিয়ামের বাসায় ঢুকে। বোন-ভাগ্নিকে দেখার জন্য। রুমে ঢুকেই__
মণি…মণি….
সিয়াম মণিকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। মণি মামাকে দেখে বাবার কোল থেকে নেমে যায়। ছুটে যায় বিজয়ের দিকে…
__ মামা! মামা! (মণি)
__ বিজয় মণিকে কোলে নিয়ে চুমু দিতে থাকে। ওরে আমার মামণি’টা। কেমন আছ?(বিজয়)
__ ভালো।
তুমি কেমন আছ?(মণি)
__ আমি ভালো আছি।
তোমরা কেমন আছে মামণি???(বিজয়)
~~ আমি ভালো আছি। আব্বুও ভালো আছে। দাদাভাইয়ার একটু জ্বর। দাদিমা ভালো আছে। সাইমা ফুপ্পি পরে গিয়ে হাঁটুতে একটু ব্যাথা পাইছে, আবির মামাও ভালো আছে….(মণি)
_ আর….(…)…???(বিজয়)
__ আর কি???
সবার কথায় তো বলছি।(মণি)
_ মণি’মা দাদিমা কি করে একটু দেখে আসো তো।(সিয়াম)
_ আচ্ছা, আব্বু…(মণি)
__ মণি দৌঁড়ে চলে যায় উপরে।

– ভাইয়া বসেন।(সিয়াম)

বিজয় বসতে বসতে সিয়ামকে প্রশ্ন করে__
” পাগলী’টা কোথায়???”
_ পাগলী???
কার কথা বলছেন ভাইয়া?(সিয়াম)
– মায়া কোথায়?
মায়াকে যে দেখছি না।(বিজয়)
_ মায়া কোথায় মানে? মায়া আপনার বাসায় না???(সিয়াম)
_ ওহ, ওখানে গেছে বুঝি? কবে গেছে? আসবে কখন?(বিজয়)
_ ভাইয়া!
কি বলছেন আপনি এসব? ও তো এই বাসায় আসে নি কখনো। ও আপনার বাসায় না???(সিয়াম)
__ সিয়াম!
মায়া আসে নি। একদিনও আসে নি???(বিজয়)
_ না, ভাইয়া!
কি হয়েছে বলেন তো!!!(সিয়াম)

মানে? ও তাহলে তিনমাস ধরে কোথায়,কি খাচ্ছে??? আমি তো কক্সবাজারে যাওয়ার আগে চাচার চিকিৎসার জন্য সব টাকা নিয়ে গেছিলাম। আর সেখান থেকে মাত্র ফিরলাম।ও তাহলে কি খাচ্ছে???(বিজয়)

– মানে????
কি বলছেন এসব ভাইয়া?(সিয়াম)

– বিজয় সিয়ামের কথার উত্তর না দিয়ে কল করে ওর বাসার বাগানের কেয়ারটেকারের কাছে। কল দিয়ে ওনার কাছে যা জানতে পারে তা হলো__
” আজ দু’মাস হলো মায়া ওকে টাকা পয়সা বুঝিয়ে শুনিয়ে বলে দেয় অন্য কোথাও গিয়ে চাকরি করতে।”
_ বিজয় কাজের লোকদের কাছে কল দিলে ওরা জানালো ওরাও দু’মাস হলো বেরিয়ে আসছে বাড়ি থেকে। ড্রাইভারকে কল দিলে ড্রাইভার এক’ই কথা বলে। মোট কথা কেউ জানে না মায়া কেন বা কি কারনে এমন করছে। বিজয় স্তব্ধ হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারছে না। তবে এটা বুঝতে পারছে ড্রাইভার, বাগান কেয়ারটেকার, কাজের লোকদের কাজ থেকে বের করে দেওয়ার একটাই কারন আর সেটা হলো টাকা। সিয়াম বিজয়ে পাশে এসে বসে। তারপর জিজ্ঞেস করে_
” কি হয়েছে ভাইয়া?!!!”

বিজয় সিয়ামের হাত দুটো চেপে ধরে। তারপর কান্না করে বলে__
” আমায় ক্ষমা করে দাও সিয়াম। আমায়া ক্ষমা করে দাও।”

অতঃপর সবটা খুলে বলে বিজয় সিয়ামকে। সবটা শুনে সিয়াম শুধু বিজয়কে একটাই কথা বলে_
” ভাইয়া আপনি মণির পাশে বসুন, আমি আসছি।”

গাড়ি নিয়ে ছুটে যায় সিয়াম বিজয়ের বাসার উদ্দেশ্যে। বিজয়ের বাসার সামনে গিয়ে কলিংবেল চাপতে’ই একজন দরজা’টা খুলে দেয়। সিয়াম তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে মায়ার রুমের দিকে চলে যায়। এ রুম, ও রুম সব রুম খুঁজে খুঁজে হয়রান। মায়াকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সিয়ামের কেন জানি মনে হলো ওর পাশে’ই একজন দাঁড়িয়ে আছে। কাজের মহিলা ভেবে বলল__
” মায়া কোথায়?”
এটুকু বলে পাশে দাঁড়ানো মহিলাটির দিকে তাকাতেই স্তম্ভিত হয়ে যায় সিয়াম।
এ যে কাজের মেয়ে নয়।
স্বয়ং মায়া দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওর পরনে এমন জীর্ণ-শীর্ণ,ছেঁড়া-পুরনো শাড়ি কেন???
আর ওর একি হাল???
চোখের নীচে কালো দাগ পরে গেছে।
__ এদিকে সিয়ামকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া লজ্জায় পরে যায়। নিচের দিকে তাকিয়ে গায়ে মুড়ানো চাদর’টা দিয়ে শরীরটা ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে মায়া।

একি অবস্থা করছ তুমি তোমার??? মায়া কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর মায়ার মুখটা দু’কাধে ধরে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করে__
” চুপ করে আছ কেন? জবাব দাও”।
__ মায়া তখনো চুপ।
সিয়াম এবার মায়ার দু’কাধ ছেড়ে মায়ার মুখ’খানি উঁচু করে ধরে। মায়া করুণ চোখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর মায়াকে ধরে ওর রুমে নিয়ে যায়।ওকে খাটে বসিয়ে দরজা’টা বন্ধ করে দেয় সিয়াম।তারপর আলমারির চাবি খুঁজতে থাকে। চাবিটা পেয়ে আলমারি খুলে সিয়াম।
কিন্তু একি?!!!
এর ভেতর যে পুরনো জীর্ণ কাপড় ছাড়া একটা কাপড়ও নেই।
সিয়াম হতভম্ব হয়ে মায়ার দিকে তাকালো। মায়া সিয়ামের চোখটা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচে তাকালো। তারপর__
” ওগুলো বিক্রি করে দিয়েছি ফেরিওয়ালার কাছে।”
__ বেঁচে দিয়েছ? কেন???(সিয়াম)
__ ভাইয়া আমার সাথে রাগ করে চলে গেছে বাসা থেকে। আমার হাতে একটা টাকাও ছিল না। আর আমিও কোনো চাকরি পাচ্ছিলাম না। তাই ভাবলাম…(….)….(মায়া)

সিয়ামের চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠে।
চোখে জল নিয়েই জিজ্ঞেস করে__
তিনমাস কি খেয়েছ???
~~ দুইটা টিউশনি করি সকালে-বিকালে। তা দিয়েই চলে যায়…(মায়া)

সিয়ামের চোখের জল যেন বাধ মানছে না। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে বলল__
আমায় কল দিয়েছিলে একসপ্তাহ আগে রাত্রে, তাই না???(বিজয়)
__ মায়া মাথা নাড়িয়ে বলে হুম।
~~ কেন দিয়েছিলে?(সিয়াম)
__ কন্ঠ’টা শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল।(মায়া)
__ তারপর রাগ হয়ছিল আমার উপর, তাই না?(সিয়াম)
_ কেন?(মায়া)
__ এই যে ফোন রিসিভ না করে বন্ধ করে দিয়েছিলাম।(সিয়াম)
– মায়া চুপচাপ বসে আছে। নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে, আর চোখ থেকে গড়িয়ে জল পরছে। সিয়াম মায়ার চোখের জলটুকু মুছতে যাবে তখন’ই বিজয়ের কল।
সিয়াম কলটা রিসিভ করে।
– হ্যাঁ, ভাইয়া বলেন।(সিয়াম)
~~ মায়া ঠিক আছে তো? কাঁদো কাঁদো গলায় বিজয়ের প্রশ্ন।
__ ভাইয়া!
ও ঠিক আছে। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।(সিয়াম)
__ কাজের লোক, বাগান কেয়ারটেকার, ড্রাইভার সবাইকে বলে দিয়েছি। সবাই আসছে। আমিও আসছি মণিকে নিয়ে।(বিজয়)
__ সর্বনাশ!
মণিকে নিয়ে আসবেন না ভাইয়া। আর আপনিও প্লিজ আসবেন না আজকে। কাজের লোকদের ফোন করে বলে দিন ওরা যাতে এখনি এসে রাত হওয়ার আগেই রান্না করে দিয়ে চলে যায়। আজকে রাত্রে যাতে ওরা এই বাসায় না থাকে সেটা বলে দিন। (সিয়াম)
__ কেন? কেন?
রাত্রে থাকলে কি হবে???(বিজয়)
__ অনেক কিছু।
ওরা কেউ রাত্রে থাকবে না।থাকলে আমাদের সমস্যা হবে। (সিয়াম)
__ কি??
কাদের বলছ???(বিজয়)
__ ভাইয়া!
মজা নিবেন না তো।??
যা বলছি সেটাই করেন। মণিকে বলবেন কালকে ওর আম্মুকে নিয়ে আসছি, আজকে যাতে কোনোরকম ডিস্টার্ব না করে+ দুষ্টুমি না করে।(সিয়াম)
— ওকে, ওকে!
ডিস্টার্ব নো করলাম।
রাখি তাহলে।(বিজয়)

বিজয় হেসে কলটা রেখে দিল। ফোনটা পাশে রেখে সিয়াম মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। মায়া তখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার চোখের জলটুকু মুছে দিয়ে সিয়াম চুপটি করে বসে থাকে মায়ার পাশে। খুব কষ্ট হচ্ছে মায়ার পরণের জীর্ণ শীর্ণ পুরনো শাড়ি দেখে। এতটা কষ্ট যা বলে বুঝানোর মত নয়।

হঠাৎ’ই কলিং বেল বাজার শব্দ হলো। সিয়াম মায়াকে চুপটি করে বসে থাকতে বলে দরজাটা খুলতে গেল।দরজা খুলে কাজের লোকদের দু’জন রুমে আসতে বলে একজন পুরুষ কাজের লোককে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়। অতঃপর কতগুলো খাবার কিনে আনার কথা বলে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কাজের মহিলা দুজনকে বলে যে তাড়াতাড়ি করে রুমগুলো গুছিয়ে চলে যেতে। সন্ধ্যার আগে’ই ওরা রুমগুলো গুছিয়ে, বাসাটা পরিষ্কার করে চলে যায়। আর সন্ধ্যার পর’ই রাতের খাবার চলে আসে। খাবারের প্যাকগুলো হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় সিয়াম।খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে রুমে চলে যায় সিয়াম। অতঃপর দু’জনে মিলে নামাজ আদায় করে নেয়।

রাত্রে সিয়াম নিজ হাতে মায়াকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে দু’জনেই বিছানার দু’প্রান্তে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছে। হঠাৎ’ই সিয়াম শুয়া থেকে উঠে বসে। হাসোজ্জ্বল মুখে আলমারির দিকে এগিয়ে যায়। বের করে আনা লাল টুকটুকে বিয়ের বেনারসি। এই শাড়ি পরে’ই মায়া একদিন ওর ঘরে গিয়েছিল বধূবেশে। আজ এই শাড়ি পরিয়ে দিবে নিজ হাতে সিয়াম তার মায়াপরিকে। খুশিতে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল সিয়ামের। শাড়ি নিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। মায়া তো শুয়া থেকে উঠে হা করে তাকিয়ে থাকে সিয়ামের দিকে।

– এই নাও…(সিয়াম)
~~ এটা কি??? (মায়া)
– বিয়ের লাল বেনারসি।(সিয়াম)
__ এটা দিয়ে কি করব আমি???(মায়া)
~~ পরবে।(সিয়াম)
— এখন….(…)…??(মায়া)
~~ জি, এখন…(সিয়াম)
_ কিন্তু…..(মায়া)
~~ একদম কথা বলবা না। চুপচাপ পরে নাও। আর কোনো কথা হবে না। চলবে না কোনো অজুহাত। মনে রেখো__
শাড়ি কিন্তু আমিও পরাতে পারি। কিন্তু আমি আবার ভদ্র ছেলে। তাই কিছু করলাম না।??(সিয়াম)
_ আমি এতবড় শাড়ি পরতে পারব না তো???
আর তাছাড়া শাড়ি পরতে গেলে অন্যান্য যা লাগে সেগুলোর একটি নেই।??(মায়া)
__ কি নেই??(সিয়াম)
__ ইয়ে মানে ব্লা…ব্লাউজ…?? (মায়া)
_ হা, হা, হা, হা…??(সিয়াম)
__ হাসেন কেন???(মায়া)
__ তোমার কথা শুনে।
ব্লাউজ নেই তাতে কি হয়ছে? তার বিকল্প জিনিসও তো আছে। ঐটা পরে কাজ চালিয়ে নাও।???(সিয়াম)
_ কি সেটা???(মায়া)
~~ বলব?!!!??(সিয়াম)
__ না, থাক…(মায়া)
__ না বললে শাড়ি পরবা কিভাবে? বলেই দেই….???(সিয়াম)
__ ??(মায়া)
__ চুপ মানে বলতে হবে।এইতো??? ওয়েট দেখাচ্ছি ব্লাউজের বিকল্প জিনিসটা….
এই বলে সিয়াম আলমারি থেকে ব্রা বের করে এনে মায়ার চোখের সামনে মেলে ধরে। এই হলো সেই বিকল্প। মায়া লজ্জায় নিচের দিকে চোখ ফিরিয়ে নিল।

– নাও।
এটা পরে শাড়ি’টা পরে নাও। তারপর অনেক কাজ বাকি আছে….??
সেগুলো করতে হবে।?(সিয়াম)

— এটা পরে শাড়ি পরা যাবে না।??(মায়া)
_ কেন???(সিয়াম)
__ এটা পরলে শরীর দেখা যাবে। ফিতা চিকন।(মায়া)
~ সমস্যা কি???
এখানে তো বাইরের কেউ নেই। পরে নাও। (সিয়াম)
_ আমার লজ্জা করে।(মায়া)
__ ওহ, তাই বলো।
শাড়ি আমাকে দিয়ে পরাতে চাও সেটা মুখে বললেই হতো। দাও, পরিয়ে দিচ্ছি। (আঁচলে টান দিয়ে সিয়াম)
__ মায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
না….
~ মায়া!
কথা বাড়াইবা না একদম। তাড়াতাড়ি শাড়ি পরতে হবে। সময় খুব কম।(সিয়াম)
_ আপনি ছাড়েন!
আমি পরছি…??(মায়া)

আঁচল টেনে একটু একটু খুলতে খুলতে_
শাড়িটা কিন্তু আমি’ই পরাবো।(সিয়াম)

চলবে……

বসের সাথে প্রেম পর্ব- ২৯

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ২৯
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

সিয়াম ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। মণি দৌঁড়ে এসে সিয়ামের পাশে বসল। আব্বু তোমার কি হয়েছে?
আম্মু তোমায় বকেছে?
– আমি জানি তো।আম্মু তোমায় বকেছে। আম্মুর সাথে আড়ি। ওর সাথে আর কখনো কথা বলব না। শুধু শুধু তোমায় বকছে। আম্মু পঁচা….
এরকম হাজারো প্রশ্ন মণির, আর প্রশ্নগুলোর উত্তরও নিজে নিজে’ই দিচ্ছে। সিয়াম সোফায় শুয়া থেকে উঠে বসল। মণির চোখের জল মুছে দিয়ে ছোট্ট হাতগুলো চেঁপে ধরল। বিজয় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল-
” সিয়াম! এখন কেমন লাগছে তোমার?”
সিয়াম বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখন ভালো আছি।”
তারপর মণির দিকে তাকিয়ে বলল-
“মামণি! আজকে যে আমার যেতে হবে।”
— মণি সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বলল,
কোথাও যাবে না তুমি আব্বু…
আমি তোমায় কোথাও যেতে দিব না।
তুমি এখানেই থাকবে এখন থেকে।
সিয়াম মৃদু হেসে বলল-
তা হয় না মামণি!
আমায় বাসায় যেতে হবে।
না হলে যে তোমার দাদা-দাদু টেনশন করবে!
_ ওরা টেনশন করবে না।
তুমি ফোন করে বলে দাও তুমি আজকে যেতে পারবে না। সিয়াম মণির গালে আলতু করে টান দিয়ে বলল-
” আমি আরেকদিন আসব, তুমি একদম কান্না করবে না।”
সিয়াম মণিকে সরিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিল তখনি মায়াকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আড়চোখে তাকিয়ে বলে-
“আর তাছাড়া আমি চাই না আমার কারনে কারো কোনো ক্ষতি হোক!”

সিয়াম এই বলে চলে যাচ্ছিল, ওমনি মণি গিয়ে সিয়ামের আঙ্গুল ধরে টান দেয়। বাবা! তুমি যেও না।(কাঁদো কাঁদো গলায়)
__ আমার এখন যেতে হবে।লক্ষ্মী মামণি রাগ করো না।
__ কথাটা শুনে মণি দৌঁড়ে চলে গেল রুমে।
সিয়াম চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে বিজয় এসে সামনে দাঁড়ায়। বিজয়ের এক কথা-
“এই শরীর খারাপ নিয়ে রাতের বেলা তোমায় ছাড়তে পারব না। আজ রাত’টা তোমায় এখানে’ই থাকতে হবে।”
_ সিয়ামকে বিজয়ের কথা রাখতে গিয়ে থেকে যেতে হয় ঐ বাড়িতে। সে রাতে সিয়ামের প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে মণি টেনে নিয়ে আসে ওর মাকে ড্রয়িংরুমে। বিজয় আর সিয়ামের মাঝে বসিয়ে দেয় মায়াকে।মায়া বসা থেকে উঠতে যাবে তখনি মণির কথা__
“উঠবানা বলে দিলাম। আব্বুর মাথা’টা খুব যন্ত্রণা করছে, তুমি আব্বুর মাথাটা টিপে দিবে।”
__ ‘মায়া-সিয়াম দু’জনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।’
__ বিজয়ের কথায় ওদের সম্ভীত ফিরে।

– মায়া!
রাত তো কম হয়নি।
তুই বরং সিয়ামকে নিয়ে রুমে চলে যা, আর মামণি…
তুমি আজকে আমার সাথে ঘুমাবে চলো….
_ তুমি দাঁড়াও মামা!
আমার কিছু কাজ আছে।
কথাটা বলে’ই মণি বিজয়ের হাতের মুঠো থেকে ওর হাতটা সরিয়ে নেই। তারপর কিছু না বলে’ই সিয়াম-মায়াকে টানতে টানতে সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যায়।
রুমে নিয়ে গিয়ে দু’জনের হাত ছেড়ে দেয় মণি। তারপর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে__
” এই যে পঁচা আম্মু!
আব্বু এই রুমে’ই ঘুমোবে। আব্বুকে বিছানা করে দাও।
মায়া তখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মণি রাগান্বিত স্বরে বলল__
” কি হলো???
এভাবে দাঁড়িয়ে আছ যে?!!!???
কি বলছি শুনতে পাচ্ছো না?”
_ এইতো করছি বলে মায়া বিছানা ঝাড়ু দিয়ে শুরু করল।

বিছানা পরিষ্কার করা হলে মণি ওর সিয়ামকে টেনে জোর করে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর মায়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে এনে মায়াকে সিয়ামের পাশে বসায়। অতঃপর সিয়ামের মাথা ভালো ভাবে টিপে দেওয়ার কথা বলে মণি রুম থেকে চলে যায়। মণি চলে গেছে বেশকিছু ক্ষণ হয়ে গেছে, মায়া এখনো চুপ করে সিয়ামের মাথার পাশে বসে আছে আর সিয়াম?!!!
চোখ দু’টো বোজে আছে।
_______
এভাবেই কেটে যায় আরো কিছুক্ষণ।মায়া ঠিক সেভাবেই বসে আছে যেভাবে মণি বসিয়ে রেখে গেছে। আর সিয়াম?!!!
সিয়ামও ঠিক সেভাবেই শুয়ে আছে যেভাবে মণি দিয়ে গেছে।

এভাবে থাকতে থাকতে কে যে কখন ঘুমিয়ে গেছে কেউ টের পাইনি। টের পায় তখন যখন শীত শীত অনুভব করে। প্রচন্ড শীতে কেঁপে উঠে সিয়াম। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে সে। তাকিয়ে দেখে মায়া সোফায় শুয়ে শীতে কাঁপছে আর ঘুমের ঘোরে’ই পরনের শাড়ি দিয়ে শীত নিবারণের বৃথা চেষ্টা করছে। সিয়াম কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর হঠাৎ করে বসা থেকে উঠে মায়ার দিকে এগিয়ে যায়। কোলে তুলে নেয় মায়াকে। এগিয়ে আসে খাটের দিকে।
শুইয়ে দেয় খাটে….
গায়ে কম্বলটা জড়িয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দেয় সিয়াম। অতঃপর সোফায় চলে যাওয়ার জন্য পিছু ঘুরতেই হাতে একটা টান অনুভব করে সিয়াম। পিছু ফিরে তাকাই সিয়াম। মায়া তখনও ঘুমে মগ্ন কিন্তু ওর একটা হাত সিয়ামের একটা হাতকে টেনে ধরে আছে।সিয়াম জানে,
হয়তো ঘুমের ঘোরে’ই মায়া এমন করছে তাই মায়ার হাতটা ছাড়িয়ে সিয়াম নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পরে। জ্বর শরীরে ঘুম আসবে না জেনেও চোখ বন্ধ করে সিয়াম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছে ঠিক তখনি কপালে কেমন যেন একটা উষ্মতা অনুভব করে সিয়াম। চোখ মেলে তাকাই সিয়াম। কেন জানি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সিয়ামের। “এও কি সম্ভব?
মায়া আমার কপালে চুমু দিচ্ছে…”
__ সিয়াম আবারও চোখ দু’টো বন্ধ করে ফেলে যাতে মায়া দেখতে না পারে ও বুঝে গেছে ব্যপারটা। সিয়াম চোখ বুঝার একটু পর’ই অনুভব করে ওর সারা শরীর যেন শীতল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ঠান্ডা জাতীয় কিছু সিয়ামকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে। সিয়াম চোখ না খুলে’ই অনুভব করতে পারে এ মায়া। মায়ার হাত। শীতে হাতগুলো অনেক ঠান্ডা হয়ে আছে। সিয়াম কি করবে বুঝতে পারছে না আবার মায়া রাতভর শীতে কষ্ট করবে এটাও সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু কি করতে পারে ও…?!!!
__ আর কিছু ভাবতে পারছে না সিয়াম। ঘুমের ভান করে’ই আচমকা টান দেয় মায়াকে। ফেলে দেয় ওর বুকের মাঝে। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
__ কি করছেন? ছাড়েন….ধীর কন্ঠে মায়ার প্রশ্ন।
__ একটু থাকো না এভাবে।প্রচন্ড শীত করতেছে যে। কাঁপা কাঁপা স্বরে সিয়ামের জবাব।
__ আমি আপনার গায়ে কম্বল’টা দিয়ে দিচ্ছি, বলে উঠতে যাচ্ছিল মায়া….
_ তুমি থাকতে কম্বল কেন??? ক্ষাণিক দুষ্টুমির স্বরে সিয়াম।
_ আমার ঘুম পাচ্ছে খুব, মায়ার জবাব।
_ ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে মানা করছে কে? ঘুমিয়ে পড় না। আমি বালিশ তো আছি’ই…???। মৃদু হেসে সিয়ামের কথা….
_ চুপ করে আছে মায়া।
__ কি হলো? চুপ করে আছ যে? শুয়ে পর….(সিয়াম)
_ আমি..আসলে..(মায়া)
__ ভয় নেই।
নেশা করে আসিনি। কিচ্ছু’টি হবে না আজকে।(সিয়াম)
__ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে মায়া..
_ ???(সিয়াম)
___ ??(মায়া)
_ কি হলো? শুয়ে পরো।(সিয়াম)
_ মায়া কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরে সোফায় সিয়ামের বুকে মাথা রেখে।
তারপর চোখ দুই’টা বন্ধ করে ফেলে মায়া। নিঃশ্বাস দ্রুত উঠা-নামা শুরু করছে মায়ার কিন্তু সে তা কমানোর প্রচেষ্টায় ব্যস্ত।
_ এদিকে সিয়াম মায়ার মাথার চুল সরানোর অজুহাতে বার বার মায়ার ঘাড় স্পর্শ করছে।
__ কি করছেন কি???(মায়া)
__ তোমার মাথার এলোমেলো চুলগুলো গুছাচ্ছি। যাতে ঘুমের ঘোরে মুখের ভেতর না ঢুকে যায়।(সিয়াম)

– মায়া নিশ্চুপ…
__ কিছুক্ষণ পর আবারো সিয়াম মায়ার ঘাড়ে আঙুল দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে। মায়া এবারো জিজ্ঞেস করে,
করছেন কি???
সিয়ামের জবাব-
বাকি চুলগুলো সরাচ্ছি।
মায়া এবারো নিশ্চুপ।
নিশ্চুপ হয়ে বোবার মত শুয়ে আছে।
_ প্রায় ১০/১৫মিনিট পর মায়া ওর ঘাড়ের কাছে উষ্ন নিঃশ্বাসের টের পায়। কি করছেন কি এসব বলতে’ই সিয়াম শ করে মুখে আঙুল দিয়ে বলে উঠে_
“চুপ! একদম চুপ।কোনো কথা হবে না।”
__ মায়া চুপ হয়ে যায়।
সিয়াম মায়ার ঘাড়ের কাছে ওর মুখটা নিয়ে যায়। অতঃপর ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসার পরশ বুলাতে থাকে মায়ার ঘাড়ে।
__ মায়া যেন এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। তবুও বহুকষ্টে নিজেকে সামলিয়ে লাজুক কন্ঠে বলল-
“কি করছেন???”

মুচকি হেসে সিয়ামের জবাব-
“মৃত মানুষকে জীবিত করছি…..”

চলবে…..

বসের সাথে প্রেম পর্ব:- ২৮

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব:- ২৮

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

সিয়াম দরজার কাছে গিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।দরজা খুলার একদম সাহস পাচ্ছে না। নিজের প্রতি নিজের’ই লজ্জা,ঘৃণা হচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে__
“কি করে করলাম আমি এত অনাচার? একটা নিষ্পাপ ফুলের মত চরিত্রের অধিকারি মেয়ের উপর কিভাবে এত বড় মিথ্যে কলঙ্কের কালি লেপে দিলাম??? কেমন করে করলাম এত বড় অপরাধ, যে অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না….”
সিয়াম দরজা না খুলে ভেবে’ই চলছে এমন হাজারো কথা। এদিকে দরজার ওপাশ থেকে কলিং বেইল চেপে’ই চলছে মায়া। বিরক্ত হয়ে মায়া মণিকে কোল থেকে নামিয়ে চলে যাচ্ছিল। মণি হাত’টা ধরে টান দিয়ে মা’কে আটকায়। তারপর ঐ ছোট্ট ছোট্ট দরজায় থাপাতে থাকে আর বলতে থাকে_
” মামা! ও মামা….
দরজা’টা খুলো না….
আম্মু তো রেগে যাচ্ছে……
মামা! ও মামা….”
মণির কথা শুনে বিজয় সোফা থেকে উঠে আসে। সিয়ামকে সোফায় বসতে বলে, খুলছি মামণি বলে দরজা’টা খুলে। মায়া ভ্রু কুচকে বলে-
” আজকে না খুললেও তো হতো”…..
আম্মু তুমি এতো রেগে যাও কেন বলো তো…(মণি)
– চুপ!
একদম চুপ!
কথা বলবি না একদম।(মায়া)
— ???(মণি)
— মায়া! তুই ওকে ধমকাচ্ছিস কেন? :/ :/
(বিজয়)
— ???(মণি)
— ধমকাবো না তো কি করব? আদর করব???
আহা! কি ভাগ্নিটাই না…!!!(মায়া)
— হয়ছে! হয়ছে!
এবার রুমে আয়….!!!(বিজয়)
— মণি দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। মায়া রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ভাইয়া এই মেয়ে’কে তুই হয় হোস্টেলে দিয়ে দে না হয় আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব…(মায়া)
_ কেন? ও আবার কি করলো???(বিজয়)
__ আমার মাথা পুরো নষ্ট করে দিয়েছে। আমি বুঝি না এত এনার্জি ও পাই কোথা থেকে। কথাগুলো বলে মাথায় দু’হাত রেখে দু’চোখ বন্ধ করে দিল মায়া। তারপর চোখ খুলতে খুলতে বলে__
আর কি বলব??? শুধু বাঁচাল নয় পুরো বাপের মত ফাজিলও…..(…..)…..???
চোখ খুলে মায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। স্বয়ং সিয়াম বসে যে….
একি স্বপ্ন নাকি সত্যি???
সিয়ামকে দেখে মায়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে মণি???
মণি সিয়ামকে জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। সিয়াম মামণি মামণি বলে মণির নাকে,মুখে,
গালে,কপালে চুমুর পর চুমু দিচ্ছে। চুমু দেওয়া শেষ হলে মণিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেই সিয়াম। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দেয়। এ এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
বিজয় আর মায়া দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করছে। বেশকিছু ক্ষণ পর সিয়াম মায়াকে সোফায় বসিয়ে নিজের চোখের জলটুকু হাত দিয়ে মুছে নেই। তারপর মৃদু হাসি দিয়ে ওখানে রাখা খেলনাগুলো হাতে নিয়ে মণির দিকে এগিয়ে দেয়। মণি খেলনা পেয়ে সেকি খুশি বলে বুঝানো যাবে না। একটার পর একটা খেলনা বের করছে আর বলছে এগুলো আমার???
সিয়াম মাথা নেড়ে বলে- হ্যাঁ, এগুলো তোমার….
মণি তো খুশিতে আত্মহারা।সবগুলো খেলনা এক জায়গায় জড়ো করে খেলনাগুলোর উপর শুয়ে সেগুলোকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে_
” এগুলো সব আমার। সবাইকে দেখাব। আমার আব্বু আমায় খেলনা দিয়েছে…”
কথাগুলো বলছে খেলনাগুলোর উপর চুমো দিচ্ছে….
সিয়ামের চোখ জলে ছলছল করে উঠল এ দৃশ্য দেখে। শুধু সিয়াম নয় বিজয়-মায়া ওদের চোখও জলে চিকচিক করতেছে।

সবাই তখন অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট মেয়েটার কান্ড-কারখানা দেখছিল। মণি খেলনা পেয়ে সেগুলো নিয়ে এত’টাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে যে সবাই যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এতক্ষণ ধরে সেটাতে ওর একটুও খেয়াল নেই। হঠাৎ করে কি মনে করে যেন মণি খেলনার উপর থেকে উঠে পরে। তারপর সিয়ামের দিকে তাকিয়ে সিয়ামকে জাপটে ধরে। সিয়ামের গলা ধরে কান্না শুরু করে মণি।
আশ্চর্য!!!
এইতো ভালো ছিল, হঠাৎ কান্না শুরু করছে কেন তাহলে? বিজয় কি হয়েছে মণি মা বলে ওর দিকে এগিয়ে যায়। মণি তখনও সিয়ামের গলা ধরে জাপটে আছে। বিজয় মণির কাছে গিয়ে মণিকে কোলে নেওয়ার জন্য টান দিলে মণি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিয়ামকে। সিয়াম বিজয়কে ইশারা করে বসতে বলে মণির দিকে তাকালো। তারপর একটা হাসি দিয়ে বলো-
” আম্মু কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?”
– মণি তখনও কেঁদে’ই চলছে। সিয়াম এবার মণির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, এই আম্মু!
কি হয়েছে তোমার???
মণি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে শুরু করে__
” আব্বু আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না। আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ…”
__ সিয়াম মুচকি হাসি দিয়ে মণির চোখের জল মুছতে মুছতে বলে-
ঠিক আছে। এই আমার আম্মুকে কথা দিলাম আর কখনো ওকে ছেড়ে কোথাও যাব না। সিয়াম কথা’টা বলার সাথে সাথে মণি সিয়ামের কোল থেকে নেমে যায়। তারপর রাগী মুড নিয়ে বলে-
” কালকে তাহলে আমায় রেখে পালিয়ে গিয়েছিলে কেন?!!!”..???
__ সিয়াম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে,
স্যরি, মামণি! আমার ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না এমন…
_ মণি গম্ভীর স্বরে বলে,
এভাবে বললে হবে না…
তোমায় এখন কান ধরতে হবে। সবার সামনে কান ধরে বলবা আর এমনটি হবে না কখনো। আর যদি হয় তাহলে তোমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। সিয়াম কান ধরে বলে-
” এই আমি কান ধরলাম…
আর কখনো আমার পুচকি বুড়িটাকে রেখে কোথাও যাব না, যদি যায় তাহলে আমি না খেয়ে থাকব। আর সেটাই আমার শাস্তি। এবার হলো..???”
_ মণি বড়দের মত গম্ভীর স্বরে বলে-
হয়ছে, হয়ছে!
এবার কান ছাড়ো।
এত বড় হয়েছ তবুও কান ধরতে হয়, লজ্জা করে না তোমার…?????
_???(সিয়াম)
_ ☺☺☺(বিজয়)
— ???(কাজের লোক)
__ মামণি?!!!
তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
মাগরিবের আযান দিল বলে….
নামাজ পড়ে কিচেনে যাবে তাড়াতাড়ি। আব্বুর জন্য ভালো করে রান্না করতে হবে।??(মণি)
_ বাব্বাহ!
বাপ পেয়ে আমায় ভুলে গেছে…!!!??(বিজয়)
__ আর এই যে বিজয়!
নামাজ পড়তে হবে না আজকে??আব্বুকে নিয়ে নামাজে যাও…??(মণি)
__ ওমাগো!
ভয় পাইছি। যাচ্ছি, যাচ্ছি….??
সিয়াম!
উঠো, আযান দিচ্ছে নামাজ’টা পড়ে আসি….
হ্যাঁ, চলেন বলে বসা থেকে উঠল সিয়াম।
রুম থেকে বের হবে তখন মণির ডাক__
এসব পরে কেউ নামাজ পড়ে? তুমি নামাজ পড়নি কখনো??????
__ সিয়াম মণির দিকে তাকিয়ে নিজের পরনের জিন্সপ্যান্টের দিকে তাকালো।
__ কি হলো আব্বু!
তোমাকে’ই বলছি। নামাজ কি পড় না কখনো???(মণি)
_ সিয়াম এর সাথে কোনো কথা বলো না। কথা বললেই কথা বাড়বে। তুমি বরং আমার সাথে আসো। আমার পাঞ্জাবী আর পাজামা পরে নামাজ’টা পরে নাও….(বিজয়)
_ কি হলো?
দু’জন ফিসফিস করে কি বলছ??? এটা কিন্তু ভালো না…. ???(মণি)
_ আরে মা!
তোর আব্বু তো পাঞ্জাবী-পাজামা আনেনি, তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আমার গুলো পরবে কি না….(বিজয়)
_ আচ্ছা, যাও যাও।
এখন সেটাই পরে আসো।পরে বেশী করে কিনে ঘরে রেখে দিও….?(মণি)

বিজয় সিয়ামকে ওর পাঞ্জাবী পাজামা পরিয়ে দু’জন মিলে নামাজ’টা আদায় করে আসে।

সিয়াম-বিজয় নামাজ থেকে ফিরে এসে দেখে মণি টিভির সামনে বসে টিভি দেখছে।
বিজয় দুর থেকে’ই বলতে বলতে মণির কাছে আসে__
কি করেগো আমার ছোট মা’টা…..???
_ বিজয়ের কন্ঠ শুনে মণি সেদিকে তাকাই, সিয়ামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মণি দৌঁড়ে যায় সিয়ামের কাছে। তারপর একলাফে সিয়ামের কোলে উঠে পরে। এদিকে সিয়ামও মণিকে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ করে’ই সিয়ামের মাথা’টা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠে। চোখ’টা কিঞ্চিৎ বন্ধ করে ফেলে সিয়াম। ঠিক তখনি বাসা থেকে কল আসে। সিয়াম মণিকে কোল থেকে নামিয়ে সোফায় বিজয়ের কোলে দেয়, তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে কল। ফোনের ওপাশ থেকে সিয়ামের বাবার কল_
” বাবা! রাত তো হয়ে গেছে।কখন আসবি???”
সিয়াম একঘন্টা পর বলে কলটা কেটে দেয়। এই মুহূর্তে ওদেরকে সিয়াম কিচ্ছু জানাতে চাই না।যায় হোক ফোন’টা পকেটে রেখে সিয়াম বিজয়ের পাশে গিয়ে বসে।”
আস্তে করে বিজয়ের একটা হাত ধরে। তারপর বিনীত স্বরে বলে-
” আমি কি মায়ার সাথে একটু কথা বলতে পারি ভাইয়া?”
_ বিজয় সিয়ামের দিকে বলে-
” কেন নয়???
অবশ্যই তুমি কথা বলতে পারো, কারন ও তোমার স্ত্রী।তাই ওর সাথে বলার পুরোপুরি অধিকার তোমার আছে, আর এর জন্য তোমার কোনো অনুমতি নিতে হবে না।”
_ তবুও…(…)…(সিয়াম)
__ তবুও কী?!!!
কোনো ভয় রেখো না মনে।
এতদিন যা হয়েছে সব জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট, এর চেয়ে বেশী কিছু মনে করবা না। মন থেকে সব দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে দাও। আর ও কিচেনে’ই আছে, যাও কথা বলে নাও….”(বিজয়)
__ __ ___
সিয়াম:- ????
বিজয়:- কি হলো? এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন???
বুকে সাহস সঞ্চয় করো, আর এগিয়ে যাও….
ও হয়তো প্রথমে একটু ওবার রিয়েক্ট করতে পারে,রাগ দেখাতে পারে, কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে। ও আজো তোমায় মনে-প্রাণে ভালোবাসে….
তাই বলছি ভয় না পেয়ে এগিয়ে যাও….

সিয়াম বিজয়ের কথা শুনে বুকে সাহস পেল একটু।
আর তাই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল সে।
উপরে উঠে সোজা ডানদিকের কিচেনে চলে গেল সিয়াম। কিচেনের পাশে যেতে’ই দেখে মায়া চা-নাস্তা নিয়ে এদিকেই আসছে। সিয়াম দরজার পাশে লুকিয়ে পরে। আর মায়া সেটা খেয়াল’ই করেনি।মায়া নিচে চলে যায় চা-নাস্তা নিয়ে। সিয়াম আড়াল থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে মণি।
দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে হাসছে। সিয়াম মণিকে জিজ্ঞেস করে-
” কি হলো? হাসছ কেন?”
মণি হাসি থামিয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলে-
“আব্বু তুমি আম্মুকে ভয় পাও??????”
_ কে বলল তোমায় আমি তোমার আম্মুকে ভয় পাই? একদম ভয় পাইনা…কথা’টা সিয়াম গম্ভীর হয়ে বলল।
মণি আবারো বলল-
” আমি তো দেখেছি নিজ চোখে, তুমি আম্মুর ভয়ে দরজার পাশে লুকিয়ে পরেছ…??(মণি)
__ ???(সিয়াম)
__ হয়ছে, হয়ছে….
এবার চলো চা নাস্তা খাবে….কথা’টা বলে’ই হাত ধরে একরকম মণি সিয়ামকে নিচে নিয়ে যায়।
নিচে তখন মায়া-বিজয় বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছিল।সিয়ামকে দেখে মায়া বসা থেকে উঠে উপরে চলে যায় কাজের অজুহাত দিয়ে। সিয়ামকে সোফায় বসিয়ে চা’য়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দেয় বিজয়। সিয়াম চা নাস্তা হাতে নিতে নিতে’ই বলে-
” ভাইয়া! আমি মায়ার সাথে….(….)….”
বিজয়:- বলবা, বলবা আগে তো খেয়ে নাও কিছু।
কথা বলতে বলতে’ই সিয়ামের ফোনে আবারো বাসা থেকে কল আসে। সিয়াম ফোন’টা হাতে নিতে’ই বিজয় বলে-
বাসা থেকে কল দিয়েছে তো? ফোন’টা আমার হাতে দাও…
সিয়াম ফোনটা বিজয়ের হাতে দেয়। বিজয় কলটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে সবটা খুলে বলে সিয়ামের বাবাকে। তারপর সিয়াম আজকে এখানে’ই থাকবে এটা বলে কল’টা রেখে দেয় বিজয়। কলটা রেখে ফোন’টা সিয়ামের হাতে দিয়ে মায়াকে ডাক দেয় বিজয়। দু’তিন বার ডাকার পর মায়া নিচে নেমে আসে। সিয়াম কিংবা বিজয় কারো দিকে না তাকিয়ে’ই বলে-
“হ্যাঁ, বল…”
বিজয় হাসতে হাসতে বলে –
কিরে? ঘাড়ে কি তোর কোনো সমস্যা হয়েছে???
– মায়া বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে নাতো….বিজয় হেসে বলে-
আমার তো মনে হয় হয়েছে।না হলে ডানে বা’মে তাকাতে পারিস না কেন???
__ কিছু বলবি? আমার তাড়া আছে। মণির জন্য খাবার বানাতে হবে….(মায়া)
_ কিছু নয়, অনেক কথায় বলব। আগে এখানে বস। মায়া বিজয়ের পাশে সোফায় গিয়ে মাথা নিচু করে বসল। বিজয় মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল_
“এবার সামনের দিকে তাকা…”
মায়া কোথাও না তাকিয়ে বলল, বল! আমি শুনতেছি….”

বিজয় বুঝতে পারল একে এভাবে সোজা করা যাবে না। তাই সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল-
” সিয়াম তুমি মায়ার সাথে কথা বলো, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।”
__ আর মায়া! সিয়ামের সাথে কথা বল।
_ বিজয় কথাটা বলে উঠতে যাবে তার আগে’ই মায়া একলাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে পরল। তারপর
“ভাইয়া! আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না তুই জানিস না?”
__ সিয়াম অপরিচিত?(বিজয়)
__ হ্যাঁ, অপরিচিত।(মায়া)
_ মণি মা! তুমি একটু রান্না করে যে দাদু আছে না? ওনার কাছে যাও। গল্প শুনো গিয়ে…(বিজয়)
_ আচ্ছা, মামা। মণি দৌঁড়ে চলে গেল।চলে যাবার পর—
— তুই কি সত্যি’ই সিয়ামকে চিনিস না?(বিজয়)
__ না,না,না। আর কতবার বলব। এই নামের আমি কাউকে চিনি না। এই আমার কেউ নেই.. (মায়া)
_ কেউ নেই….
হুম….মানলাম নেই কেউ। আচ্ছা, একটু ভালো করে মনে করে দেখতো এই নামে পূর্বে কেউ তোর জীবনে ছিল কি না কিংবা কাউকে চিনতি কি না??? মণির কসম মিথ্যে বলবি না….. (বিজয়)
__ কসমের কথা শুনে মায়া যেন থমকে গেল। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
__ কি হলো? বল…(বিজয়)
~ হ্যাঁ, ছিল। এই নামে একজন ছিল আমার পরিচিত।পরিচিত বললে ভুল হবে, সে ছিল আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।যাকে ছাড়া আমি আমার জীবন কল্পনা করতে পারতাম। একমুহূর্ত বেঁচে থাকার কথা ভাবতে পারতাম না।একনজর চোখের আড়াল হলে মনে হতো এই যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে আমার। কিন্তু একদিন সে নিজ মুখে আমার জন্য ওকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ওর জীবন থেকে অনেক অনেক দুরে তাড়িয়ে দিয়েছে। আজ শুধু সে আমার জন্য নিষিদ্ধ না, সে আমার জন্য মৃতও।
আমার জীবনে ওর জন্য আর এতটুকু জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখন ও শুধু’ই আমার অতীত। আর আমার কাছে অতীত নয়, বর্তমান’ই সব। আমি বর্তমানকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। (মায়া)
__ বিজয় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ জলে ছলছল করছে। বিজয় মায়াকে আবার প্রশ্ন করে-
” অতীত কিন্তু একদম মূল্যহীন নয়। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে নিয়েই কিন্তু মানুষের জীবন।এদের একটাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না। তাই প্লিজ, বর্তমানের পাশে অতীতকেও একটু জায়গা দে।(বিজয়)
_ যে অতীত মানুষের জীবনকে শুধু’ই কষ্ট দেয়, কষ্ট ছাড়া কিছু’ই দিতে পারে না আমার মনে হয় সে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা’ই ভালো। আমিও পায়ে মারিয়ে বেরিয়ে এসেছি….(মায়া)
__ ও যখন ওর কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত এবং অনুতপ্ত আমার মনে হয় তোর আর একটা বার সিয়ামকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ।(বিজয়)
_ ভাইয়া!
ওকে বলে দাও….
ওর কাছে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আমার স্বপ্নেও নেই। ও যদি মনে করে থাকে, মেয়ের কান্না শুনে আমি ওর কাছে ফিরে যাব তাহলে সেটা ভুল।(মায়া)
__ কিন্তু… (….)…(বিজয়)
_ আর একটাও কথা নয়।তুমি স্রেফ ওকে জানিয়ে দাও, ওর কাছে ফিরে যাওয়ার কথা ও যাতে কল্পনাও না করে….(মায়া)
_ মায়া তুই …… (….)….(বিজয়)
__ ভাইয়া! আর একটা কথাও বলবি না।ওকে চলে যেতে বল। না হলে আমি একটা কিছু করে ফেলব।(মায়া)

মায়ার কথা শুনে সিয়ামের যেন পুরো দুনিয়া ঘুরছে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।
না, না! আমার জন্য ওর আর কোনো ক্ষতি আমি চাই না। কথাটা মনে মনে বলতে বলতে বসা থেকে উঠে পরে সিয়াম। উপরে গিয়ে শার্ট-প্যান্ট পরে এসে বিজয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল। দরজার কাছে গিয়ে ছিটকিনি খুলতে গিয়েও নিচে তাকিয়ে পরে সিয়াম। একটু পর’ই মাথা ঘুরে দরজার সামনে’ই পরে যায়। বিজয় দৌঁড়ে সিয়ামের কাছে যায়। মায়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিজয় সিয়ামকে ধরে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দেই। কাজের মেয়ে পানি এনে দিলে সে পানি সিয়ামের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। মায়া তখনও দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছে।
সিয়ামের জ্ঞান ফেরার কোনো লক্ষণ’ই নেই।মণি দৌঁড়ে এসে বাবাকে জাপটে ধরল। তারপর__
” আব্বু!!!
ও আব্বু?!!! কথা বলো তুমি…”
কিন্তু সিয়াম সাড়া দিচ্ছে না।
মণি পাগলের মত একবার বাবার মুখের দিকে, আরেকবার মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর মামার দিকে তাকিয়ে বলছে-
” মামা!
ও মামা!!!
আব্বু কথা বলছে না কেন? আব্বু কি মরে গেছে???
__ ও মা!
তুমিও কথা বলছ না কেন?
তুমি কি আব্বুকে মেরে ফেলছ???
_ সবাই চুপ….
মণির একের পর এক প্রশ্ন করছে আর কেঁদে’ই চলছে।
বিজয় দৌঁড়ে গিয়ে রুম থেকে একটা বড় ব্যাগ নিয়ে এলো। তারপর সেখান থেকে ইনজেকশনের সুঁচ বের করে সিয়ামকে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিল। তারপর মণিকে কোলে নিয়ে চোখের জল মুছে বলল__
কিচ্ছু হয়নি আম্মু!!!
তোমার আব্বু এখনি কথা বলবে….
আসলে তোমার আব্বু মনে হয় আজকে খাইনি কিছু, যার কারনে শরীরটা দুর্বল হয়ে পরেছিল, আর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
বেশকিছু ক্ষণ পর সিয়ামের জ্ঞান ফিরে….
চোখ মেলে তাকালো….

চলবে…..

বসের সাথে প্রেম পর্ব:- ২৭

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব:- ২৭

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

বাসায় ঢুকে সিয়াম সরাসরি সাইমার রুমে যায়।
ওখানে গিয়ে মণিকে দেখতে না পেয়ে সিয়াম ওর বাবা-মায়ের রুমে যায়। সেখানেও মণিকে পেল না। সিয়াম এবার ওর রুমে যায়।
নাহ, এখানেও নেই।
কই গেল মেয়ে’টা???
মণি মণি করতে করতে উপরতলা থেকে নিচতলায় নামে সিয়াম।নিচতলায় ড্রয়িংরুমে সিয়ামের বাবা আর মা কি যে গল্প করতেছিলেন।সিয়ামকে দেখে দু’জনেই একদম চুপ হয়ে যায়। সিয়াম মণি মণি করতে করতেই ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সিয়াম ওর বাবা-মা দু’জনকেই মণির কথা জিজ্ঞেস করলেও একজনও কথার উপযুক্ত জবাব দেননি। একজন বলতেছে এসেছিস বাবা?!!! ফ্রেশ হয়ে আয়, নাস্তা করবি….
আরেক জনের জবাব-
বিদেশী কোম্পানির সাথে ঐ যে একটা ডিল হয়েছিল তার খবর কিরে?!!!
– সিয়াম বার বার জিজ্ঞেস করার পরও ওদের এরকম জবাবে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি। চেঁচিয়ে সাইমাকে ডাকা শুরু করে। সাইমা দৌঁড়ে নিচে আসে। কি হয়েছে ভাইয়া?
– মণি কোথায়???
সিয়ামের প্রশ্নের জবাবে প্রতিউত্তরে সাইমা যা বলেছে তা হলো-
ভাইয়া….
আজকে না ওর একটা বন্ধু ফোন দিয়ে কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলেছে।
সিয়ামের রাগটা এবার বহুগুনে বেড়ে যায়।
চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে_
আবির! আবির…..
সাইমা পিছন থেকে বলে আবির বাসায় চলে গেছে, আমি বলছি দাঁড়া….
সিয়াম পিছু ফিরে দাঁড়ালো।সাইমা বাবা মায়ের মুখের দিকে একবার শুধু চাইছে তারপর….
তারপর বলে দেই মণিকে কখন কিভাবে কোথায় দিয়ে আসা হলো।
সবটা শুনে সিয়াম কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল তারপর দাঁড়ানো থেকে বসে পরে সোফায়। অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে কাউকে কিছু না বলে একটা সময় রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় সিয়াম। তারপর ফোন’টা বের করে ছোট্ট মণির মায়া মায়া মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। চোখটা ছলছল করে উঠে তার। খেলনাগুলো বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠে সিয়াম।
তারপর সেই অবস্থাতেই ঘুৃমিয়ে পরে।সেদিন শত ডাকাডাকির পরও সিয়াম দরজা খুলেনি, কিচ্ছু খায়নি। এদিকে রাত সকাল, আর সেই সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হতে চলল। সিয়াম রুমের দরজা খুলছে না তো খুলছে না।ওর একটাই জবাব__
” আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও তোমরা….”
একে একে সবাই ডাকতে এসে ফিরে গেল। সিয়াম দরজা আর খুলছে না। সবশেষে আসল সিয়ামের বাবা। ওনি দরজার পাশ থেকে ছেলেকে বারে বার ডাকলেন। ছেলের একটা’ই জবাব এখন আমি দরজা খুলতে পারব না। ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার আগে শেষ চেষ্টা করলেন সিয়ামের বাবা। জোরে জোরে বললেন-
সিয়াম! আমার কাছে ঐ বাসার এড্রেস আছে,
আসার সময় মণির মামা দিয়ে দিয়েছে, তুই রুম থেকে বের হ, এখনি খেলনা নিয়ে ঐ বাসা থেকে মণিকে দেখে আয়….”
সিয়ামের বাবার কথা শুনে সিয়াম এক রকম লাফ দিয়ে দরজা খুলল। ফ্রেশ হয়ে এসে বাবার কাছে কার্ড চাইল।সিয়ামের বাবা সিয়ামের হাতে কার্ড দিয়ে বলে-
এই নে! আর হ্যাঁ….
কিছু খেয়ে যা। না হলে রাস্তায় মাথা ঘুরে দূর্ঘটনা একটা ঘটে যাবে। সিয়ামের কানে সেই মুহূর্তে কারো কথায় ঢুকছিল না। গাড়ির চাবি আর খেলনাগুলো রুম থেকে নিয়ে সিয়াম ছুঁটে বের হয়ে গেল রুম থেকে।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেল কাঙ্খিত স্থানে।
গেইটের সামনে গিয়ে হুইসেল দিতেই দাড়োয়ান ছুটে আসল। কাকে চাই???
সিয়াম কার্ডটা দেখিয়ে বলল-
ডাক্তার বিজয় কার্ডটা দিয়েছেন আমায়,ওনি কি বাসায় আছেন???
দাড়োয়ান বললেন-
জি….
কিন্তু ওনি তো এই সময় কারো সাথে কথা বলেন না।
সিয়াম দাড়োয়ানকে বলল,
আমার ওনার সাথে দেখা করতেই হবে।খুব দরকার ওনাকে….
দাঁড়োয়ান গেইট খুলে দিয়ে বলল- ঠিক আছে!
আপনি তাহলে যান….
সিয়াম গাড়ি নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। গাড়ি’টা রেখে খেলনাগুলো হাতে নিয়ে দরজায় নক করল সিয়াম। দু’তিনবার বাজার পর দরজা খুলল ডাক্তার বিজয়…..

বিজয় যেন চমকে গেল সিয়ামকে দেখে।
চমকে যাওয়ার’ই কথা।
কারণ- অবিকল এই লোকটার মতই একটা ছবি বিগত ৫বছর ধরে দেখে আসছে মায়াকে লুকিয়ে ছবিটাকে বুকে ধরে কাঁদতে। তাহলে কি এই সেই সিয়াম?
কিন্তু ও এই বাসার ঠিকানা কোথা থেকে পেল?!!!
বিজয় সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে সিয়ামকে ভেতরে নিয়ে আসে। সিয়াম রুমের ভেতরে ঢুকে।
বিজয় সিয়ামকে সোফায় বসে একটু ওয়েট করতে বলে চা করতে চলে যায়। সিয়ামের মাথা’টা যেন ঘুরছে। কি হচ্ছে এসব???
প্রথমত মণিকে দেখে আপন,খুব আপন লাগছে।এখন তো মণির মামাকেও পরিচিত পরিচিত লাগছে। শুধু পরিচিত না, ভিষন পরিচিত….
উফ!!!
মাথা’টা আর কাজ করছে না….

ঠিক তখন’ই বিজয় দু’কাপ চা হাতে নিয়ে হাজির।
এই নিন!
চা’টা খেয়ে নিন,
মাথা ঠিক কাজ করবে।
সিয়াম বিজয়ের দিকে তাকালো-
আপনি অবিকল আমার দেখা একজন লোকের মত। আচ্ছা, আপনি ঐ বিজয় নইতো যিনি একটা সময় প্রতিদিন পার্কে বোনের সাথে দেখা করতেন???
– কথাটা বলতে বলতে সিয়াম চা’য়ের কাপটা হাতে নেয়। বিজয় সোফায় বসে চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে-
__ আপনিও কিন্তু অবিকল সিয়ামের মত।
,
সিয়াম চোখ তোলে তাকাই-
আশ্চর্য! লোকটা আমার নামও জানে….
তার মানে আমার অনুমান ঠিক???
– কি হলো জনাব সিয়াম সাহেব? কোথায় হারিয়ে গেলেন?(বিজয়)
_ অবিকল নয় আমি সত্যি’ই সিয়াম। আর আমার অনুমান যদি ঠিক হয়, তাহলে আপনি মায়ার ভাই বিজয়….(সিয়াম)
~চা’য়ের কাপটা হাত থেকে রেখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলে-
হ্যাঁ, তুমি ঠিক’ই ধরেছ।
আমি বিজয়।
মায়ার ভাইয়া….
আপন মায়ের পেটের না তবে আপনার থেকেও কোনে অংশে কম না….
আমার সারা পৃথিবী জুড়ে একমাত্র ও’ই ছিল আমার সব, আর ওর পৃথিবীতে আমি’ই ওর একমাত্র ভরসা…..(বিজয়)
_ সিয়াম এতক্ষণ ধরে সবটা বসে বসে শুনছিল। এখন চায়ের কাপটা হাত থেকে রেখে বিজয়ের পায়ে ধরল গিয়ে সিয়াম।
বিজয় তো হতবাক….
কি করছ, কি করছ তুমি এসব???
— ভাইয়া আমি সিয়াম।
আমায় চিনতে পারছেন???
আমি মায়ার সিয়াম…..
পা জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলছিল সিয়াম।
~ আমি জানি তো। আমি চিনতে পারছি তুমি সিয়াম।তুমি প্লিজ পা ছাড়ো।(বিজয়)
__ না, আপনি আগে বলুন আমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন?(সিয়াম)
~ সিয়াম আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি, এবার তো তুমি উঠো….(বিজয়)
—- সিয়াম পা ছেড়ে দিল। বিজয় ওকে সোফায় উঠে বসালো। সিয়াম মেয়ে মানুষের মত তখনও কাঁদছে।বিজয় সিয়ামকে ধমক দিয়ে কান্না থামালো।
দু’জনেই বেশ চুপচাপ…..

কারো মুখে কোনো কথা নেই। সিয়াম যেন লজ্জায় বিজয়ের দিকে তাকাতে পারছে না। বিজয় সেটা লক্ষ করল। আর তাই বিজয়__
~ শুনেছি, তুমি এক্সিডেন্ট করেছ, মায়া খবরটা শুনে সেখানে ছুটে গিয়েছিল।তারপর কি এমন হলো যার কারনে ও বাসা থেকে চলে আসে???
কি এমন হয়ে গেল?
যার কারনে এতকিছু হয়ে গেল???
আমি শুনতে চাই,
আমি একটু শুনতে চাই।
– – – – – – – – – – – – – – – – – –
বিজয়ের কথা শুনে সিয়াম চিন্তাজগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে আসে। ও জানে মায়াকে ফিরে হলে সবটা খুলে বলতে হবে। তা হয়তো ওকে ফিরে পাওয়া যাবে না….
আর তাই সিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করে-
~ কয়েকদিন যাবৎ লক্ষ করছিলাম মায়া কেমন উদাসীন হয়ে থাকে। আর রাতের বেলা লুকিয়ে চুরিয়ে কার সাথে যেন ফোনালাপ করে। ব্যাপারটা আমি পাত্তা না দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু সেদিন যখন অফিস থেকে ফেরার পথে পার্কে গিয়ে মায়াকে দেখি-
আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না ধরে কান্না করছে আর বলছে-
আমায় ছেড়ে যাবি না তো?
কিংবা আপনি যখন বলছেন, খুব ভালোবাসি তো পাগলী তোকে। তোকে ছেড়ে আর কোথাও যাব না। সেই মুহূর্তে আমার পৃথিবীটা ঘুরছিল।
মনে হচ্ছিল যেন আমায় পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি খুব বড়সড় একটা শক্টড খেলাম।
হাতের ঐ ফুলগুলো যেগুলো মায়ার জন্য এনেছিলাম সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে একরাশ ঘৃণা বুকে নিয়ে চলে আসি। গাড়িতে উঠার পরও আপনার শেষ কথোপকথনগুলো কানে বাজছিল। মাথা’টা প্রচন্ড ঘুরছিল। তারপর কি হয়েছে আমি কিচ্ছু জানি না।
পরে দেখলাম-
আমি হসপিটালে আর আমায় ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আমার পরিবার ও রিলেটিভরা। সেদিন আমি সুস্থ হয়নি, আমায় সুস্থ হতে দু’মাস লেগেছিল। এই দু’মাস মায়ায় হসপিটালে আমার পাশে থাকত, কিন্তু আমি ওকে কাছে ঘেষতে দিতাম। কেন জানি, ওকে দেখলে খুব রাগ হতো। এতবেশী রাগ যে সে সময় আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারতাম না….
তারপর হসপিটাল থেকে বাসায় যায়। তখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। তবুও মায়াকে কাছে ঘেষতে দিতাম না। ওকে বিভিন্ন কটু কথা বলতাম, আঘাত করতাম কথার অশ্রু দিয়ে। ভেবেছিলাম এসব সহ্য করতে না পেরে ও চলে যাবে। বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাবে। কিন্তু কি আশ্চর্য!!!
ও যায়নি….বাড়ি থেকে কোথাও যায়নি।
বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, ওকে এভাবে তাড়ানো সম্ভব নয়….
কিন্তু আমি যে মন থেকে কখনো ওর সাথে থাকতে পারব না, পারব না সুখের সংসার করতে।
না, না!
আমায় যে করে’ই হোক ওকে বাসা থেকে বের করতে হবে। অবশেষে এলো সেই দিন……
যেদিন বাসায় সব রিলেটিভদের দাওয়াত করা হয় আমার সুস্থ্যতা উপলক্ষ্যে। সেদিন সবাই চা দেওয়ার পর মায়ের কথা মত আমায় চা দিতে আসতে হলো ওকে। ও যেন আমার দিকে তাকাতে পারছিল না ভয়ে, ওর হাত দুটো ঠকঠক করে কাঁপছিল। আর ঠিক সেই সুযোগ’টাই আমি কাজে লাগাইলাম। ওর হাত থেকে চা নেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই চা’টা আমার হাতে ফেলে দেই…..
তারপর ওমাগো করে উঠি।
ও দৌঁড়ে গিয়ে দৌঁড়ে আসল হাতে কাচের পানিভর্তি জগ নিয়ে। তারপর সেই জগের ভিতর আমার হাত’টা ঢুকিয়ে দেয়। ওর চোখে তখন ছিল আমার জন্য বড্ড মায়া আর চোখে?!!!
আমার চোখে ছিল ওর জন্য একরাশ ঘৃণা।
হাত ঢুকানোর সাথে সাথেই জগ থেকে হাতটা বের করে নিলাম। তারপর ওর হাত থেকে জগটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম।
ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেল কাচের জগ’টা। অপমান করা’টা তখন থেকেই শুরু। বাড়ি ভর্তি লোক বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরছিল আর আমি ওকে বাজে, খুব বাজে কথা শুনিয়েছিলাম। ওকে আমি দুশ্চরিত্রা বললাম। এতেও যেন কাজ হচ্ছিল না। ও ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিল ড্রয়িংরুমে। আর করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
বাবা-মা,আবির-সাইমা,ওর শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই আমাকে ধমকাচ্ছিল। কিন্তু আমি কারো কথা শুনিনি। ভালোবাসার দোহাই আর আমার মৃত্যুর কথা বলে তাড়িয়ে দেই ওকে। বলে দেই – হয় বাড়ি ছাড়বি না হয় আমার মরা মুখ দেখবি। ও আর একমুহূর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি, চলে আসে বাসা থেকে বের হয়ে….
_ এটুকু বলে সিয়াম থেমে যায়। বিজয়ের চোখ তখন জলে ছলছল করছে….
চোখের জল মুছে বিজয় বলা শুরু করে_

” বাবা-মাকে যেদিন খুন করা হয় সেদিন মায়া অজ্ঞান হয়ে পরেছিল। সন্ত্রাসী’রা বাবা-মাকে মেরে আমাকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসি পরদিন। কিন্তু মায়াকে আর পাইনি। শুনেছি ও ওর মামার বাড়িতে গেছে। সেদিন’ই চাচার সাথে বিদেশ চলে যায়। সেখানেই লেখা-পড়া বড় হয়ে উঠা।

সেখান থেকেই ডাক্তারি পাস করে ঢাকায় ফিরে আসি। যেদিন ঢাকায় ফিরে আসি তারপরের দিন’ই মায়ার মামার বাড়িতে যায় মায়ার সাথে দেখা করতে। কিন্তু সেখানে মায়াকে খুঁজে পায়নি। মায়ার মামী ছিল শয্যাশায়ী। ওনার থেকে’ই মায়ার সব কথা জানতে পারি। শুনতে পারি, কতটা অত্যাচার করেছিল ওরা মায়ার উপর। কঠিন রোগে শয্যাশায়ী মায়ার মামীকে শান্তনা দিয়ে আর চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা দিয়ে চলে আসছিলাম।পিছন থেকে একটা মেয়ে ডাক দেই। ফিরে তাকাই আর জানতে পারি, মেয়েটা মায়ার মামাতো বোন। ও আমায় সেদিন মায়ার ফোন নাম্বার দেই। আর এও বলে মায়া- ভালো আছে…
খুব ভালো।
সেদিন রাত্রেই মায়াকে কল দেই। এরপর থেকে’ই ওর সাথে কথা শুরু।
সেদিন আমার সাথে দেখা করতে এসে ও কিছু না বলেই কান্না করতে করতে ছুটে গিয়েছিল হসপিটালে। তারপর তিনমাস ওকে ফোনে পাইনি, ওর সাথে দেখাও হয়নি….

সেদিন চেম্বার থেকে ফেরার সময় ওভারব্রিজের কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়। একটা মেয়ে বার বার চাচ্ছে ব্রিজ থেকে লাফ দিতে আবার পেটের দিকে তাকাচ্ছে। বুঝতে বাকি রইল না কি করতে চাচ্ছে মেয়েটি। দৌঁড়ে গিয়ে হ্যাচকা টানে ওকে কাছে নিয়ে আসলাম। মেয়েটি ঢলে পরল। মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। এ যে আমার কলিজার টুকরা একমাত্র ছোট বোন মায়া….
গাড়িতে উঠিয়ে তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। পরীক্ষা করে দেখলাম ওর কোনো কিছু হয়নি, তবে যা হয়েছে তা হলো-
” ও প্রেগন্যান্ট…. “
চমকে উঠলাম।জানতাম না ও বিবাহিতা…
ওর জ্ঞান ফিরলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে পেটে হাত দেয়।
ওকে বলি-
সব ঠিক আছে…কিন্তু তুই….(…..)….???
ও মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, আমি বিবাহিতা।
আর আমি প্রেগন্যান্ট। আমার পেটে ওর বাচ্চা। ওর বয়স ৪মাস। ৪মাস ধরে ও একটু একটু করে বেড়ে উঠতেছে ও আমার পেটে…
ভেবেছিলাম ওর বাবাকে আজকে কথাটা জানাব, কিন্তু তার আগেই ও বাসা থেকে বের করে দিল….”
এরপর থেকে মায়া এ বাসায়’ই থাকে। এর মাঝে মরার প্ল্যান করেছিল শতেকবার, আবার কি মনে করে যেন মরেও নি। বোধ হয়, পেটের ভেতর থাকা অস্তিত্ব’টাই ওকে বার বার বাধা দিচ্ছিল।মানা করছিল মরতে। ও একটা সুন্দর,ফুটফুটে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। আর মণি ওর’ই মেয়ে। যে তোমার গাড়িতে উঠে তোমার বাসায় চলে গিয়েছিল। আর তোমাকে বাবা ডেকেছিল। ও প্রায়’ই দেখত ওর মা একটা ছবিকে বুকে জড়িয়ে কান্না করে, আর সেটা দেখেই পাকনা বুড়িটা বুঝে যায় এ তার জন্মদাতা বাবা। সেদিন জন্মদিন উপলক্ষ্যে ও ওর মায়ের কাছে ওর বাবাকে চাইলে ওর মা ওকে খুব বকে। এতে’ই রেগে যায় ও। স্কুল থেকে পালিয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তার কি অপার লীলা!
যেই বাবার জন্য রাগ করে স্কুল থেকে পালিয়ে যায়, সেই বাবাকেই ও পেয়ে যায় একটা পার্কের সামনে…
বিজয় এটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর আবার বলা শুরু করল__
তুমি যে এখানে আসতেছ সেটা তোমার বাবা আমায় ফোন করে জানালো। অথচ তখন অবধি আমি কিংবা তুমি কেউ জানতাম না দু’জন দু’জনের কত আপন….!!!!

— সিয়ামের চোখ দুটো জলে ছলছল করছে। বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বাড়ির এদিক ওদিক তাকালো। তারপর জিজ্ঞেস করল-
” মায়া কোথায়?”
বিজয়ের জবাব__
মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেছে। ফিরে আসবে এখন’ই…..
ঠিক তখন’ই কলিংবেলের আওয়াজ।
বিজয় হাসতে হাসতে বলল,
এই বোধ হয় মা মেয়ে আসল। যাও দরজা খুলে দাও। সিয়াম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দরজার দিকে একপা দু’পা করে এগিয়ে যায়…..

চলবে…….

বসের সাথে প্রেম পর্ব-২৬

0

বসের সাথে প্রেম
পর্ব-২৬

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

রাস্তার পাশে হাঁটুগেড়ে বসে কান্না করতেছে মায়া। এই মুহূর্তে ওর দিকে তাকিয়ে আছে হাজারো কৌতূহলী চোখ, আর ওকে ঘীরে আছে হাজারো জনতা। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পথিকরাও রাস্তার পাশে এত মানুষের ভীর দেখে ওরা ছুটে এসে ভীর জমাচ্ছে, অনেকে আবার গাড়ি থেকে নেমে এসে দেখে যাচ্ছে মায়াকে। বিজয়ের চাচাও এ রাস্তা দিয়েই ফিরছিলেন। রাস্তার পাশে কি হয়েছে দেখার জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান তিনি। ভীড় ঠেলে সেখানে পৌঁছে মায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ায় বিজয়ের চাচা। মায়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেও কাজ হয়নি। স্কুলের ম্যাডামের থেকে জানতে পারেন মণিকে নিতে আসছিলেন মায়া। কিন্তু ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকেই এভাবে রাস্তার পাশে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বিজয়ের চাচা ফোন দেই বিজয়কে। বিজয় রিসিভ করে ফোন।
__ হ্যাঁ, কাকা! বলো….
– বিজয়! তুই যত শিগ্রয় সম্ভব মডেল স্কুলের সামনে চলে আয়।(চাচা)
_ কাকা! কি হয়েছে? মায়া ঠিক আছে তো? কাকা মণি মায়ের কিছু হয়নি তো?!!! একনিঃশ্বাসে বিজয় প্রশ্নগুলো ওর চাচাকে করে। ওর চাচা শুধু বলে-
মায়া রাস্তার পাশে হাঁটুগেড়ে বোবার মত স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কথাটা শুনা মাত্র’ই ফোনটা কেটে দেয় বিজয়। চেম্বার থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে মডেলের স্কুলের উদ্দেশ্যে।কিছুক্ষণের মধ্যে’ই উপস্থিত হয় স্কুল গেইট। শত শত জনতার ভীর ঠেলে ভেতরে ঢুকে। মায়াকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চমকে গেলেও থমকে যায়নি বিজয়। বোনের পাশে গিয়ে বসে বোনের মাথায় হাত রাখে বিজয়। ফিরে তাকালো মায়া। ভাইকে দেখে জড়িয়ে কান্না করা শুরু করে মায়া। বিজয় জিজ্ঞেস করে-
কি হয়েছে? কাঁদো কাঁদো গলায় মায়ার জবাব-
ভাইয়া! আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি ভাইয়া। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব???

– কি হয়েছে? সেটা তো বল আগে!!!(বিজয়)
_ মণি নেই ভাইয়া…(মায়া)
– নেই মানে??? কি বলছিস তুই এসব? ও কোথায় গেছে?(বিজয়)
__ জানি না ভাইয়া! ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।(মায়া)

– একমিনিট তুই বস….
ম্যাম! কি বলছে ও এসব?
মণি মা স্কুলে আসে নি আজকে???(বিজয়)

– এসেছিল জনাব।
কিছুক্ষণ আগে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। ওকে ভিতরে দাঁড়াতে বলে মায়া ম্যামকে ফোন দিলাম ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ফোন দিয়ে ওকে আর খুঁজে পায়নি।অনেক জায়গায় খুঁজলাম,কোথাও খুঁজে পাইনি ওকে।(ম্যাম)

মায়া উঠ তুই…
কাকা তুমি ওকে বাসায় নিয়ে যাও, আমি আসছি….(বিজয়)

– না! আমি কোথাও যাব না। আমার মেয়েকে ছাড়া আমি কোথাও যাব না। আমি এখানে’ই বসে থাকব।ওকে নিয়ে আয়, তারপর আমি যাব।(মায়া)
___ ঠিক আছে, কিন্তু এখানে নয়। আমার গাড়িতে উঠ। আমরা দু’জন মিলে খুঁজব ওকে।
~ বিজয়ের কথা শুনে মায়া উঠে দাঁড়ায়। মায়াকে ধরে নিয়ে বিজয় গাড়িতে উঠে বসে। তারপর চাচাকে বলে-
” কাকা! আপনি চলে যান বাসায়। আমরা মণিকে নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে বিজয় চলে যায়। খুঁজতে থাকে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে।
এদিকে বিজয়ের চাচাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিজয়-মায়া চলে যেতেই ওনার লোক-লস্কর পাঠিয়ে দেই দিকে দিকে। যে করেই ছবির এই মেয়েকে খুঁজে আনতে হবে।বিজয়ের চাচাও খুঁজতে থাকে। সবাই মিলে পুরো শহর তন্নতন্ন করে ফেলে মণিকে খুঁজতে খুঁজতে। কিন্তু কিছুতেই মণিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সেদিন সারা রাতভর খুঁজেও মণিকে পাওয়া গেল না।

পরদিন সকালে বিজয় ও ওর চাচা মায়াকে নিয়ে থানায় যায়। থানায় গিয়ে ডায়েরী লিখিয়ে তবে’ই বাসায় ফিরে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত হয়, মণির আর খুঁজ পাওয়া যায় নি। যদিও এর’ই মধ্যে পত্রিকাসহ সরকারি ও বেসরকারি সবগুলো চ্যানেলে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মায়া যেন শোকে শেষ। দুদিনের নাওয়া খাওয়ার অভাবে ওর মুখ’টা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। এদিকে বিজয়?!!!
কলিজার টুকরা ভাগ্নিকে হারিয়ে ফেলেছে। ওর অবস্থা তো আরো বেহাল। ওর দিকে তাকানো’ই যায় না। মণিকে হারিয়ে সে যেন নিঃস হয়ে গেছে, কিন্তু ভেঙে পরেনি পুরোপুরি। পরদিন সকালে নিজ হাতে নাস্তা নিয়ে মায়ার রুমে গিয়ে হাজির সে। মায়া একনজর বিজয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। বিজয় গিয়ে পাশে বসল। মায়াকে কিছু মুখে দিতে বলল। মায়া খায়নি। ওর একটাই কথা খাব না। কিচ্ছু খাব না ওকে ছাড়া।

বসা থেকে উঠে গিয়ে বিজয় বলে__
” কি দরকার ছিল মেয়ে’টাকে এভাবে বকার? ও তো বেশী কিছু চায় নি, বাবা চেয়েছে। অন্যান্য জন্মদিনের মত এবারও একটা গিফ্ট চেয়েছে। তবে অন্যান্য জন্মদিনের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম এবারের আবদার’টা। ব্যতিক্রম হলেও তো পূরণ করা যেত না? ফিরে যেতে পারতি না তুই ওর কাছে? তোর জন্য না হয়, মেয়েটার জন্য পারতি না যেতে? এতে কি এমন ক্ষতি হতো???

__ ভাইয়া!
আমি কোথাও যাব?
কার কাছে যাব???
ও যে আমায় বাসা ভর্তি মানুষের সামনে অপমান করেছে, ভিষণ অপমান। ও আমায় দুশ্চরিত্রা বলে আখ্যায়িত করেছে। তবুও থাকতাম। ওর সব লাঞ্চনা, গঞ্জনা, অপবাদ সব সহ্য করে’ই থাকতাম। কিন্তু ও যখন বলল_
হয় ওর সামনে থেকে বেরিয়ে আসব, না হয় ওর মরা মুখ দেখব। তখন যে আর থাকতে পারিনি ভাইয়া। তখন যে আমি থাকতে পারিনি। সেদিন তুই না বাঁচালে হয়ত আমি মরেই যেতাম। তারপরের ঘটনা তো তুই জানোস! এরপরও বলবি আমায় ঐ বাসায় যেতে…??? (মায়া)
__ স্যরি….
প্লিজ, কান্না বন্ধ কর….(বিজয়)

__ ভাইয়া! কেন আমার সাথে এমনটি হলো? সব হারিয়ে আমি তো ওর দেওয়া স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম, আল্লাহ কেন ওকেও কেড়ে নিল। কেন আমি সব হারিয়ে এভাবে নিঃস্ব নিলাম। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব? এটুকু বলে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল মায়া। বিজয় ওর বোন’কে জড়িয়ে ধরে বলল, কাঁদিস না বোন। ও হারায় নি। ও নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে আছে। তুই দেখিস মামণি ঠিক ফিরে আসবে। বিজয় মায়াকে শান্ত করতে পারে নি। তার আগেই জ্ঞান হারায় মায়া…..

মায়ার জ্ঞান হারিয়েছে শুনে কেউ আবার ভয় পাবেন না। ওর পাশে ওর ডাক্তার ভাইয়া বিজয় আছে। ওর জ্ঞান ফিরে আসবে খুব শিগ্রয়। ওর জ্ঞান ফিরতে থাকুক এই সুযোগে চলুন ঘুরে আসা যাক সিয়ামের পরিবার থেকে। দেখে আসা যাক সে এখন কোথায়, কিভাবে, কি অবস্থায় আছে।
সকাল ১০টা_
সিয়াম আর সিয়ামের মা বসে টিভি দেখছে। টিভির পর্দায় বার বার এক’ই খবর ভেসে আসছে_
অমুক ডাক্তারের একমাত্র ভাগ্নি অমুক নিখোঁজ। সে
…..(..)…. স্কুলের একজন মেধাবী ছাত্রী। তার পরণে ছিল…. (…)…রংয়ের জামা, তার গায়ের রং ফর্সা…..

সিয়াম সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রয়িংরুমে বাবা-মায়ের সাথে বসে। একটু পর সাইমা ও আবিরও নিচে নেমে আসে।

– আবির! এখন আমি কি করব বাবা?!!!(সিয়ামের বাবা)
_ বাবা! আমি বুঝতে পারছি না।আমায় মাথা একদম কাজ করছে না।(আবির)
____ আব্বু! আমার মনে হয় একবার মেয়েটার মামার নাম্বারে কল দিয়ে সবটা বলা দরকার। ঐ পরিবারে নিশ্চিত শোকের ছায়া নেমে পরেছে।(সাইমা)
_ সেটাই মনে হয় করা উচিৎ তোমার…(মা)
__ না বাবা!
তুমি কাউকে কল দিবা না। মেয়েটা এই বাড়িতেই থাকবে, সাইমার ছেলের সাথে ও স্কুলে যাবে।(সিয়াম)

– সিয়াম কি বলছিস তুই এসব? ওর পরিবারের কথাটা একটু ভাব…ওর পরিবারের মানুষজন কি অবস্থায় আছে, একটু বুঝার চেষ্টা কর।(মা)
_ ওর পরিবার গোল্লায় যাক, আমার সেটা দেখার বিষয় না। আমার শুধু একটা কথায়। আর সেটা হলো মণি এ বাসায় থাকবে। সাইমের সাথে ও খেলবে, স্কুলে যাবে।(সিয়াম)
_ বাবা!
একটু বিবেক খাটিয়ে বুঝার চেষ্টা কর ব্যপারটা। ওর জন্য কতগুলো মানুষ কষ্টে আছে। কতগুলো মানুষের জীবন বিপন্ন। (বাবা)
_ আমার কাছে এই ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটার জীবনের থেকে কারো জীবন বড় না। তোমরা দেখনি, বাসায় দিয়ে আসব শুনে ও কিভাবে রিয়েক্ট করল কালকে? কিভাবে ফল কাটার চাকু দিয়ে হাত কাটল???
বাবা! আমরা ওকে জোর করে দিয়ে আসতে পারব, কিন্তু ও যদি সেখানে গিয়ে কিছু একটা করে বসে কিংবা সত্যি সত্যি যদি ও ছাদ থেকে লাফ দেই??!!!
পরদিন সকালে তো পত্রিকায় শিরোনাম বের হবে-
ছাদ থেকে লাফ দিয়ে অমুকের ভাগ্নি অমুকের মৃত্যু। তখন পারবে, পারবে নিজেকে ক্ষমা করতে???(সিয়াম)
_ কিন্তু ভাইয়া….(আবির)
__ কোনো কিন্তু নয় আবির। ও এখানে’ই থাকবে। আর তাছাড়া ও তো বলে’ই আমি নাকি ওর বাবা!
তো সমস্যা কি???
ও না হয় মিথ্যে হলেও আমার পরিচয়েই এখানে থাকবে। প্লিজ, বাবা না করো না। নষ্ট করে দিও না ওর ভালো থাকাকে….(সিয়াম)

– বাপরে বাপ!
কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। এ নিশ্চয় ডাকাতের বংশের মেয়ে। এর বাবা নিশ্চয় ডাকাত।(সাইমা)

– খবরদার পঁচা ফুপ্পি__
বাজে কথা বলবে না। আমি ডাকাত বংশের মেয়ে, ভদ্র পরিবারের মেয়ে। আর আমার বাবা ডাকাত নয়, আমার বাবা ইয়া বড় অফিসে কাজ করে। কথাটা বলতে বলতে নিচে নামে মণি…..

সবাই চুপ।
কারো মুখে কোনো কথা নেই। কথা বললেই এখন বিপদ।

– কি হলো?
চুপ হয়ে গেলে কেন???
বলো, বলো আমি কোন বংশের মেয়ে???(মণি)
_ ইয়ে, মানে, আসলে….(সাইমা)
– এমন করছ কেন? বলো আমি কোন বংশের মেয়ে??? চোখ রাঙিয়ে মণি সাইমাকে জিজ্ঞেস করে।

– আরে,আরে!
আমার ছোট্ট মামণিটা এসে গেছে যে। বসো….বসো….(আবির)

– তুমি থাক ভালো আংকেল। আমি পঁচা ফুপ্পির সাথে কথা বলছি।(মণি)

ওকে, চুপ….. ???(আবির)
__ মণি মা! তুমি এখানে আস।(সিয়াম)

– না, তোমার সাথে আমার কথা নাই….
তোমার সামনে পঁচা ফুপ্পি আমায় ডাকাত বলছে তুমি কিছু বলনি কেন???(মণি)
_ ???(সাইমা)
_ ????(সিয়াম)
– ?????(বাবা)
– এই যে বুড়ো দাদু!
মুখেরে এমন করছ কেন?
মশা ঢুকবে তো?!!!(মণি)
_ ???(মা)
– এইযে বুড়ি দাদি মা।তুমি হাসছ কেন? ???(মণি)

– স্যরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। আর এমন হবে না। প্লিজ, মাফ করে দাও মণি মা… ??(সাইমা)

– ওকে,ওকে…আর যাতে এমন না হয়। এখন আমারে একটু কোলে নাও। সাইমার দিকে যেতে যেতে মণি বলে….

সাইমা মণিকে কোলে তুলে নেই। অদ্ভুত!
ওকে যতবার কোলে নিচ্ছি ততবার কেমন যেন পরিচিত গন্ধ পাই ওর শরীর থেকে। খুউব পরিচিত….
সাইমা মণিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে।
আবির সামনে এনে মিষ্টির প্লেট রাখে। এই নাও মিষ্টি মামণি…
তোমার জন্য মিষ্টি এনেছি…

মণি একনজর মিষ্টির দিকে তাকালো। তারপর সাইমার কোল থেকে নেমে গেল। হুট করে মিষ্টি’টা হাতে নিয়ে সিয়ামের বাবার মুখে ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।
সবাই তো হা করে তাকিয়ে আছে পুচকি মেয়েটার দিকে।
__ এসব কি মণি?!!!(সিয়াম)
__ মিষ্টি! দাদুকে মিষ্টি দিলাম। দাদু তো আবার কালো মিষ্টি দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।(মণি)
__ সিয়ামের বাবা মিষ্টি’টা মুহূর্তেই সাবার করে ফেলল। যদিও তার মিষ্টি খাওয়া বারণ। কিন্তু এতদিন পর কালো মিষ্টি পেয়েছে, তাই খাওয়ার লোভটা সামলাতে পারে নি….

– মণি!
দাদার কালো মিষ্টি পছন্দ এটা তুমি জানো???(সাইমা)
_ হুম, জানি বলেই তো দিলাম।(মণি)

দুপুর বেলা__
সবাই খেতে বসল।
সবাই আরাম করে খাচ্ছে কিন্তু মণি?!!!
মণি বেশ চুপচাপ বসে আছে।
– কি হলো বুবুর?!!!
খাচ্ছো না কেন?
খাও… (সিয়ামের মা)
_ আমি এসব খাই না দাদিমা… ??(মণি)
,
সিয়ামের মায়ের ভেতর’টা ছ্যাঁত করে উঠে মণির কথা শুনে। মনে পড়ে যায় মায়ার কথা। আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে এভাবে রান্না করা হয়েছিল চিংড়ির তরকারি। আর সেদিন মায়াও ঠিক এক’ই ভাবে তরকারি দেখে মন খারাপ করে বসে ছিল। সিয়ামের মা যখন জিজ্ঞেস করল__
কি ব্যাপার?
খাচ্ছিস না কেন???
আজকের মতই ঠিক একই ভাবে একই ভঙিতে মায়াও বলেছিল-
আমি এসব খাই না মা….
,
অথচ আজ..!!!
আজ ও নেই। এই সংসার থেকে অনেক অনেক দুরে চলে গেছে। মায়া চলে যাবার একসপ্তাহ পর সাইমার থেকে সবাই জানতে পারে মায়া প্রেগন্যান্ট ছিল। ওর পেটে ছিল সিয়ামের বাচ্চা। আর যার সাথে কথা বলার জন্য মায়াকে এত বড় অপবাদ সহ্য করতে হয়েছিল, সে ছিল মায়ার ভাই। মায়ের পেটের না হলেও আপনার থেকেও বেশী আপন। মায়া কারো সাথে কিছু না বললেও সাইমার সাথে সব শেয়ার করত। সেদিনও শেয়ার করেছিল যেদিন ওর ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখা হয়। সাইমা বলেছিল বিজয়কে এ বাড়িতে নিয়ে আসতে, মায়া বলেছিল সিয়াম সুস্থ হয়ে উঠলেই নিয়ে আসবে। পরিচয় করিয়ে দিবে একে অপরকে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। তার আগেই মায়াকে একবুক হাহাকার বুকে চেঁপে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়।

ভাবতেই জলে ছলছল করে উঠে চোখগুলো। সিয়ামের মা মণির প্লেটে কিছু না দিয়েই বসা থেকে উঠে চলে যায়। মণি কিছুক্ষণ প্লেটের দিকে তাকিয়ে থেকে বসা থেকে উঠে পরে।
তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
সাইমা বলে উঠে__
বাবা-মা সবাই দেখো….
ও কিভাবে যেন হাঁটছে।
এ হাঁটা আমার খুব পরিচিত লাগে। খুউব বেশী পরিচিত।
তোমরা কেউ বলে দিতে পারবা কেন আমার এমন লাগে?!!!
সবাই মণির হাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে। অবিকল মায়ার মতই হাঁটা। কিন্তু এটাও কি সম্ভব? অস্ফুট স্বরে সিয়ামের বাবা বলে উঠে….
– ও তো মায়ার মত চিংড়ির তরকারীও পছন্দ করে না। অবিকল মায়ার ভঙিতে কথাও বলে।(মা)
__ আশ্চর্য তো!(বাবা)
– এটুকুতেই আশ্চর্য বাবা?
ও যে আপনি কালো মিষ্টি খান সেটাও জানে…(আবির)
_ সিয়ামের ভিতরটা হাহাকার করে উঠে। না খেয়ে’ই উঠে পরে টেবিল থেকে। জল ছলছল চোখে হাতমুখ ধূয়ে উপরে চলে যায় সিয়াম। সবাই চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সাইমার বাবা মুখ খুলে__
” আমার মনে হয় মেয়েটাকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসা দরকার। না হলে ওকে দেখে মনের ভেতরের নিভন্ত আগুন জ্বলে উঠবে দাউ দাউ করে। আর সেই আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরবে আমার ছেলেটা…”
বাবার সাথে তাল মিলিয়ে মেয়েও বলে-
” বাবা! সেটাই করা ভালো হবে। সেটাই করো।কি বলো আবির?”
আবিরও ওদের কথায় সায় দিয়ে বলল__
” হ্যাঁ, সেটাই বোধ হয় ভালো হবে। ওর পরিবার ফিরে পাবে পাবে ওকে, আর আমরা ফিরে পাব মানসিক শান্তি…. “
সিয়ামের মা বলে উঠে__
” কাল, কালকে যখন সিয়াম অফিসে চলে যাবে তখনি তুমি ওকে দিয়ে এসো বুঝিয়ে।”

পরদিন সকাল__
মণিকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে অফিসে চলে যায় সিয়াম। সিয়াম অফিসের যাওয়ার একটু পরে’ই ঘুমন্ত মেয়েটাকে গাড়িতে উঠিয়ে সিয়ামের বাবা রওয়ানা দেই মণির মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে। রওয়ানা দেওয়ার প্রাক্কালে সবাই শেষবারের মত দেখে দেয় মণি নামক ছোট্ট,মিষ্টি, মায়াবী মেয়েটাকে। সবার চোখ’ই জলে ছলছল করছে। সাইমা তো কেঁদে’ই দিয়েছিল…

গাড়ি গিয়ে থামে মডেল স্কুলের সামনে। এখান থেকেই টিভি থেকে নেওয়া নাম্বারে কল দিল সিয়ামের বাবা। ওপাশ থেকে-
” আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন???(বিজয়)
– আমি সাগর। শিল্পপতি সাগর চৌধূরী। আপনি কি ডাক্তার বিজয় বলছেন?(বাবা)
_ হ্যাঁ, আমি ডাক্তার বিজয়। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?(বিজয়)
__ আসলে মণি মেয়েটাকে নিয়ে আসছিলাম আমি।(বাবা)
__ কি?!!! মণি????
মণিকে পেয়েছেন????(বিজয়)
– হ্যাঁ, আপনি স্কুল গেইট আসেন এখনি।(বাবা)
_ জি, আমি এখনি আসছি।(বিজয়)

বিজয় চেম্বার থেকে সোজা স্কুল গেইট চলে আসে। সিয়ামের বাবা পুরো ঘটনা খুলে বলে বিজয়কে। মণিকে দিয়ে যাওয়ার আগে স্যরিও বলে যায়। বলে যায়, আসলে আমাদের উচিৎ হয়নি ওকে এভাবে রাখা, কিন্তু আমরা সাহসও পাচ্ছিলাম না ওকে নিয়ে যেতে পাছে যদি ও নিজের ক্ষতি করে বসে সে জন্য….

যায় হোক!
ক্ষমা চেয়ে সিয়ামের বাবা চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে ডাক্তার বিজয় ওনার বাসার এড্রেসটা দিয়ে দেই শিল্পপতি সাগরকে।
শিল্পপতি সাগরও হেসে হেসে এড্রেস কার্ডটা হাতে নেই আর বলে__
” খুব শিগ্রয় আমার পাগল ছেলে আসতে পারে মণিকে দেখতে….”
বিজয় শিল্পপতির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা সরুপ হাসি দিয়ে বিদায় বলে মণিকে নিয়ে রওয়ানা দেই বাসার উদ্দেশ্যে…..

সেদিন সন্ধ্যায় এত্তগুলো খেলনা হাতে বাসায় আসে সিয়াম….

চলবে……