Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 244



পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(অন্তিম পর্ব)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

রাযীন ভাইয়া?
সাফিরার অস্ফুট স্বরে রাযীন সারা দেয় না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাই আগে ওয়াশরুমের কাজ শেষ করে এসে আবারো ডাকলো। এবার কাজ হলো। রাযীনের ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ মেলে তাকিয়ে বলল,
–” এতো রাতে ডাকছো কেন? দিলা তো আমার সুন্দর ঘুমের তেরোটা বাজিয়ে।
সাফিরা মিনমিনে গলায় বলল,
–” ভাইয়া আপনি এখানে ঘুমিয়েছেন কেন? আপনার রুমে গিয়ে ঘুমান নাই কেন?

রাযীন ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
–” আমাদের বাড়ি, আমার ব‌উ, আমার যেখান মন চায় সেখানে ঘুমাবো। তোমাকে বলে নিতে হবে?

“আমার বউ” কথাটা যেন কান গরম করে দিল সাফিরার। এই সম্বোধন আগে কখনো করেনি রাযীন। প্রথম বার করায় সারা শরীর শিরশির করে উঠলো। এ কেমন অনুভূতি? কাউকে বলে বুঝানোর মতো নয়। তারউপর তুমি সম্বোধন! একসাথে এতো গুলো স‌ইতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাফিরার।
রাযীনের পরবর্তী কথা,
–” বেয়াদব মেয়ে! স্বামীকে ভাই ডাকে কেউ? আর যেন না শুনি!
–” ভাইয়া বলেই তো সব সময় ডাকি।
–” আমি বলেছিলাম ডাকতে?
–” না।
–” তবে? আর ডাকবে না। যদি ভুল করেও ডাকো তাহলে শা*স্তি পেতে হবে! কথাটা যেন মনে থাকে।
মাথা কাত করে সাফিরা বলল,
–” আচ্ছা।
রাযীন আবারো ঠিকঠাক হয়ে শুয়ে পড়ল। আর বলল,
–” অনেক রাত হয়েছে শুয়ে যাও।
সাফিরা একটু দূরত্ব নিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
সাফিরার আহত স্থানের সেলাই কাটা হয়েছে। এখন কাটা দাগটা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মন খারাপ হয়ে যায় সাফিরার। তবুও ফোনের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। একটু আধটু ফোন ইউজ না করলে সময় গুলো বড্ড বেশি বোরিং লাগে।

শুক্রবার ছুটির দিন মিনহাজ আর রাযীন ঘুরতে বেরিয়েছে। ঢাকা বসুন্ধরা সিটিতে এসেছে তারা। রাযীন বিশেষ করে এসেছেন ফোন কিনার জন্য আর মিনহাজ তার কিছু কেনাকাটা করার জন্য।
রেস্তোরাঁয় বসে বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে খেতে
মিনহাজ জিজ্ঞাসা করল,
–” কিরে কতদূর আগালি?
রাযীন মিনহাজ এর ইঙ্গিত বুঝতে না পেরে বলল,
–” কিসের?
–” ভাবির সাথে সবকিছু ঠিক করে নেওয়ার?
–” চেষ্টা করছি দেখা যাক কি হয়।
–” ইনশা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে।
–” হুম ইনশা আল্লাহ।
.
রাযীন আগের মতো আর বকাঝকা করে না সাফিরাকে। তবে খুব কম কথা বলে। পড়াশোনা করতে ও জোর করে না। সময় মত পড়িয়ে দেয়, এরপর সাফিরার ইচ্ছা হলে পড়ে না হলে পড়ে না।

সাফিরা ঘুমানোর জন্য বিছানা ঝেড়ে নিল।
ঘুমানোর আগে বিছানা ঝাড়া সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে বিছানা ঝাড়তে উৎসাহিত করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করবে, তখন সে যেন নিজ লুঙ্গীর একাংশ দ্বারা তার বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে কি কি জিনিস সেখানে এসেছে‌। [১]
.
সাফিরা বিছানা ছেড়ে মশারী টাঙানোর সময় রাযীন রুমে এসে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়! রাযীনের এহেন কান্ডে চমকে উঠে সাফিরা। মশারীর দুই কোনা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কাছে এসে রাযীন বলল,
–” আর বাকি দুই কোনা কি লাগাবে না?
সাফিরা আবার দুই কোনা লাগিয়ে নেয়। এরমধ্যে রাযীন মশারীর ভিতরে ঢুকে মশারীর চারিদিক সুন্দর করে গুঁজে দিল। তারপর আরাম করে শুয়ে বলল,
–” এই লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দেও।

রাত বারোটা বাজে। সবাই সবার রুমে ঘুমিয়ে আছে। তাই নিশ্চিন্তে রাযীন শুয়ে আছে। সাফিরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
–” দাঁড়িয়ে থেকে মশার কামড় খাবে নাকি ঘুমাতে আসবে?
সাফিরা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে বিছানায়। বুক তার টিপটিপ করছে। রাযীনের কর্মকাণ্ড গুলো মেনে নিতে খানিকটা বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎ এমন আচরণ কেন করছে রাযীন? বুঝতে পারছে না সাফিরা।

প্রায় এক মাস যাবত এমনি চলছে। এখন একটু স্বাভাবিক হয়েছে সাফিরা। আগের মতো আন‌ইজি ফিল হয় না। বরং অন্যর‌কম এক ভালোলাগা কাজ করে। সাফিরার যখন পড়া কমপ্লিট করতে লেইট হয় তখন বিছানা ঝেড়ে মশারী টাঙিয়ে অপেক্ষা করে রাযীন। তাছাড়া সাফিরার সাথে অনেক কথা বলে। সাফিরার মন খারাপ থাকলে কারণ জিজ্ঞাসা করে মন ভালো করার চেষ্টা করে।
তবে সবার সামনে আগের মতোই থাকে রাযীন! যেন সে সাফিরাকে পছন্দ করে না।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও পরে সেটা বুঝতে পারে সাফিরা। তবে এই লুকোচুরি খেলার কারণ খুঁজে পায় না সাফিরা। সে তো তার বিয়ে করা বউ, তাবে এই লুকোচুরির আশ্রয় কেন নেয় রাযীন?

একদিন তামান্নার রুমে খাবার পানি শেষ হয়ে যায়। পানির জগ নিয়ে ডাইনিংয়ে আসে পানি নিতে। পানি নেওয়ার এক পর্যায়ে দেখতে পায় এদিক ওদিক তাকিয়ে রাযীন সাফিরার রুমে ডুকছে! যেন সে চু*রি করতে যাচ্ছে লুকিয়ে!
সবাই জানে রাযীন সাফিরাকে পড়ানোর জন্য তার রুমে যায়। পড়িয়ে আবার চলে আসে, থাকে না। কিন্তু এই মাঝ রাতে এভাবে যেতে দেখে তামান্নার মনে সন্দেহ জাগে। যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী কিন্তু রাযীন তো আর মানে না।

এরকম কয়েকরাত দেখে তামান্না সিউর হলো রাযীন তাকে মেনে নিয়েছে ব‌উ হিসেবে। তাই আর ব্যাপারটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলো না।
কিন্তু একদিন রাযীন রুমের বাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন বাল্ব লাগাতে লম্বা টুলের উপর দাঁড়িয়ে সাফিরা কে বলল, যে লাইনে বাল্ব লাগাবে ঐ লাইনের সুইচ অফ করে দিতে। কিন্তু ভুলবশত সাফিরা অন্য লাইনের সুইচ অফ করে দিয়ে চলে গেল। এদিকে রাযীন বাল্ব লাগাতে গিয়ে হঠাৎ বাল্ব জ্বলে ওঠায় হাত থেকে ফেলে দিল! নিচে পরে ভেঙে চুরমার বাল্ব! ভীষণ রা*গ হলো রাযীনের। আর তাই রা*গ মিটাতে সাফিরা কে ডেকে এনে ইচ্ছা মতো বকাঝকা করেছে।
যার কারণে সাফিরা নিজের রুমে এসে অনেক কান্নাকাটি করে। সে জানে তার ভুল হয়েছে তাই বলে এভাবে বকবে রাযীন?
তামান্না সবকিছু দেখে রাযীনের উপর প্রতি*শোধ নিতে সাফিরা কে বলল,
–” নিষ্ঠুর রাযীন ভাইয়া শুধু শুধু তোকে কতগুলো ঝাড়ি দিল। তোকে যদি ব‌উ হিসেবে মানতো তাহলে কি এভাবে ঝাড়ি দিতে পারতো? উহু পারতো না। তোর জন্য অনেক মায়া হচ্ছে রে। আজকে এতিম বলে ভাইয়া তোকে এরকম ব্যবহার করতে পারছে!

সাফিরা চোখের পানি মুছে বলল,
–” ব্যবহার করছে মানে?
–” দেখিস না? যখন যা ইচ্ছা তাই করছে তোর সাথে!

সাফিরাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল তামান্না। সাফিরা তামান্নার বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে। প্রতিদিনের মত রাতের বেলা যখন রাযীন ঘুমাতে আসে। তখন সাফিরা বলল,
–” আমাকে এভাবে ব্যবহার করছেন কেন? আমি এতিম বলে? আমার কেউ নেই বলে যাচ্ছে তাই করে চলেছেন। আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না আপনার? এবাড়িতে আসার পর থেকে আপনার অত্যাচারে গুমরে মর*ছি আমি! প্লিজ দয়া করুন আমাকে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না আপনাকে!
–” কি করেছি আমি তোমার সাথে? তুমি যেন ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারো তার জন্য দিনরাত তোমাকে পড়াশোনা করিয়েছি।
পড়াশোনা করার জন্য সাশন করেছি এগুলো আমার অত্যাচার?
খেতে না দিয়ে পরে আবার নিজেই নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছি এগুলো অত্যাচার?
স্বামীর অধিকার নিয়েও তোমাকে ব্যাড টাচ করিনি তাহলে কোনটা কে তুমি ব্যবহার সম্বোধন করছো বলো?
সাফিরা চুপ করে রইলো। রাযীন আর কথা না বাড়িয়ে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা সাফিরাকে দিয়ে চলে যায় রুম থেকে। শপিং ব্যাগ টা খুলে দেখে নতুন মোবাইল ফোন! দেখে বেশ দামী মনে হচ্ছে। আবারো কান্না করে দেয় সাফিরা। তামান্নার ফাঁদে পা দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সাফিরা। এখন বুঝতে পেরে অনুসোচনায় দগ্ধ হচ্ছে।
সাথে সাথে দৌড়ে রাযীনের রুমে যায় কিন্তু রাযীন নিজের রুমে নেই। বাড়ির মেইন গেট ভিতর থেকে বন্ধ করা। তাই ছাদে গিয়ে দেখে একপাশে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাযীন।
সাফিরা দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে জাপটে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর মাফ চেয়ে বলে,
–” আমাকে মাফ করে দিন। এরকম জগন্য বাক্য আমি আর কখনো মুখেও উচ্চারণ করবো না ইনশা আল্লাহ।

রাযীন সামনে ঘুরে বলল,
–” মাফ করে দিয়েছি।
এতো গুলো দিন স্ত্রীর হক আদায় না করার জন্য আমাকেও মাফ করে দাও?
–” মাফ করে দিয়েছি।
তারপর নিজের স্ত্রীকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাযীন। এ এক অদ্ভুত সুখের মুহূর্ত।
.
.
অতঃপর রাযীন সাফিরাকে মেনে নিয়েছে শুনে করিম সাহেব আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, এতিম শিশুদের খাওয়ানোর আয়োজন করেন।
রাযীনের কাজিনরা বাসর ঘর সাজিয়, তারপর সবকিছু নতুন করে শুরু হয় রাযীন আর সাফিরার জীবনে।

কয়েক মাস পর তামান্নার ও বিয়ে হয়ে যায়। শশুর বাড়ী গিয়ে স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সবাই সবার জীবনে ভালোবাসা খুঁজে নেয়।

রেফারেন্স:
[১] (সহীহ বুখারী, হাদীস (৬৩২০)

#সমাপ্ত

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৭

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৭)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

অফিস শেষ করে সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে রাযীন। বাসায় ফিরেই দেখে আফরোজা বেগম কান্না করেছেন। পাশে করিম সাহেব থমথমে মুখ করে বসে আছেন। কাছে গিয়ে আফরোজা বেগম কে জিজ্ঞাসা করলো,
–” কি হয়েছে? কান্না করতেছো কেন?
–” সাফিরা আজকে বাসায় ফিরে নাই! তোকে কতোবার কল করলাম কল রিসিভ করলি না কেন? আল্লাহ না করুন মেয়েটার কোন ক্ষতি হলো না তো?
বলতে বলতে আফরোজা বেগম আবার চোখের পানি ফেলছেন। করিম সাহেব বললেন তিনি সাফিরার কলেজ পর্যন্ত খুঁজে এসেছেন কিন্তু কোথাও খুঁজে পাননি। তখন রাযীন বলল,
–” আব্বা পুলিশে ডায়রী করলে না কেন?

করিম সাহেব বললেন,
–” টেনশনে কিছু মাথায় আসে নাই।

রাযীন আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে খুঁজতে বের হবে বলে বাড়ির মেইন গেট দিয়ে বের হতে নিবে তখন সাফিরা কে আসতে দেখে! একজন মহিলা তাকে ধরে নিয়ে আসতেছে আরেকজন পুরুষ সাথে। রাযীন এগিয়ে গিয়ে বলল,
–” কোথায় ছিলি সারাদিন?
পাশের ভদ্রলোক বললেন,
–” উনি অসুস্থ! আগে বাসায় যেতে দিন।
রাযীন বিচলিত হয়ে বলল,
–” কি হয়েছে?
ভদ্রলোক আবারো বললেন,
–” আগে বাসায় যেতে দিন?
তারপর রাযীন বলল,
–” আসুন।
.
কলেজ থেকে ফেরার পথে ছিনতাই/কারী সাফিরার ফোন ছিন/তাই করে দৌড় দেয়। তখন সাফিরা ফোনের জন্য পিছুপিছু দৌড়ে যায়। মেয়ে মানুষ হয়ে তো আর ছিনতাই/কারীর সাথে দৌড়ে পারা যায় না। উল্টো বেখেয়ালে রাস্তায় দৌড়ে সিএনজির সাথে এক্সি/ডেন্ট করে! কপাল কে/টে যায়! যার জন্য পাঁচটা সেলাই লাগে। তাছাড়া হাতের কিছু অংশ ছি/লে গেছে এবং হিজাবের অংশ ছিঁড়ে গেছে।
যারা তাকে ধরে নিয়ে এসেছে বাসায় তারা সাফিরা কে হসপিটালে নিয়ে যায়।
সাফিরার যখন জ্ঞান ফিরে তখন ঠিকানা বললে তারা বাসায় নিয়ে আসে।

সম্পদ আত্মসাৎকারী বা ছিনতাই/কারী নিঃসন্দেহে কবীরা গোনাহগার ও মহাপাপী এবং তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শা/স্তি[১]
আদালতে বিচারক তাদের অপরাধের মাত্রা অনুপাতে শাস্তি নির্ধারণ করবেন। সেটি জে/ল বা জরিমানা বা উভয়টি হ’তে পারে। কিন্তু সকল বিদ্বানদের ঐক্যমতে তার হাত কা/টা যাবে না [২]
কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘লুণ্ঠনকারী, ছিনতাই/কারী ও আত্মসাৎকারীর হাত কর্তন করা হবে না [৩]
তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যের মাল ছিন/তাই করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় [৪]
হাসান বাছরী ও ইয়াস বিন মু‘আবিয়ার মধ্যে ছিনতাইকারীর হাত কাটা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে তারা খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীযের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তিনি উত্তরে লিখেন ছিনতাই/কারীর হাত কা/টা যাবে না। বরং তার পিঠে চাবুক মার এবং তাকে ব/ন্দী কর। [৫]
মানুষ যদি সবসময় মৃ/ত্যুর কথা স্মরণে রাখতো তাহলে অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকতো।
.
.
আফরোজা বেগম সাফিরাকে উপকারী ব্যাক্তিদের নাস্তার ব্যবস্থা করলেন। নাস্তা খাওয়া শেষে তারা
চলে যেতে উদ্যত হলে রাযীন বলল,
–” হসপিটালে নিশ্চয়ই অনেক টাকা খরচ হয়েছে? যদি বলতেন তাহলে আমি টাকা দিয়ে দিতে চাই।

তারা বলতে না চাইলে করিম সাহেব বিনয়ের সাথে বললেন,
–” আপনাদের জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। আপনাদের মতো কিছু ভালো মানুষ আছে বলেই আজো পৃথিবীটা সুন্দর। না হয় যেভাবে প্রতিদিন দূর্ঘট/না ঘটে চলেছে, তাতে ভালো মানুষরা ঘর থেকে বের হতে পারতো না, কখন কি হয়ে যায় এই ভয়ে। তাই আজকে আপনারা টাকাটা রাখুন আবার কারো বিপদে উপকার করতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।

অতঃপর তাদের সমস্ত খরচ মিটিয়ে দেয় রাযীন। তারপর রাত বেরে যাচ্ছে বলে চলে যায় তারা।
.
সাফিরাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে বলেছে ডাক্তার। আফরোজা বেগম সাফিরাকে পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেও ক্ষ/ত স্থান দেখে বুকটা যেন ফে/টে যাচ্ছে। এতিম মেয়েটার কপালে কি সুখ নেই? এই ভেবে ভয় তার।
সাফিরা নিরবে শুয়ে আছে, মাথা যন্ত্রনা করছে খুব। পাশে হাত বুলিয়ে সূরা কালাম পড়ে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে আফরোজা বেগম। তামান্না একবার এসে দেখে গেছে সাফিরাকে।
তারপর রাযীন এসে বকাঝকা করে গেছে! এই জন্য যে একটা ফোনের জন্য পিছুপিছু দৌড়াতে গেল কেন সাফিরা? ফোন তো পেল‌ই না উল্টো নিজের ক্ষ/তি করে আসলো। জবাবে নিরব র‌ইলো সাফিরা।
ফোনটা আফরোজা বেগম কিনে দিয়েছিল সাফিরাকে। অবসর সময়ে ইসলামিক বই বা বিভিন্ন হাদীস সম্পর্কে জানতে পারে এই ফোনের মাধ্যমে। তাই ফোনটা অনেক প্রিয় ছিল সাফিরার।

রাতের খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল সাফিরা। সাথে ঘুমের ঔষধ থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। আফরোজা বেগম সাথে ঘুমাতে চেয়েছিলেন কিন্তু সাফিরা না করে। কারণ সাফিরা জানে করিম সাহেব কখনো স্ত্রীকে ছাড়া থাকেন না। স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসেন কিনা।
সাফিরার সাথে না পেরে আফরোজা বেগম বললেন,
–” তাহলে দরজা ভেজিয়ে ঘুমাস। আমি রাতের বেলা এসে দেখে যাব তোকে। আল্লাহ না করুন ব্যাথার জন্য যদি জ্বর আসে।
–” ঠিক আছে তুমি ভেজিয়ে দিয়ে যাও।
আফরোজা বেগম তাই করলেন।
.
.
গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে আছে তখন, রাযীন পা টিপে টিপে সাফিরার রুমে আসে!
সাফিরা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাযীন ধীরে ধীরে সাফিরা পাশে গিয়ে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। খুব মায়া হচ্ছে মেয়েটার জন্য। তাকিয়ে রইল অপলক। কপালের ক্ষ/ত স্থানে চুম্বন এঁকে দিল!
সকালে অফিস আছে ভেবে পাশে শুয়ে পড়ল! রাতে ঘুম না হলে অফিস করতে কষ্ট হবে তাই ঘুমানো প্রয়োজন।
আফরোজা বেগম আর করিম সাহেব তাহাজ্জুদ নামায আদায় করার জন্য রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উঠেন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উদ্দেশে কোরআন কারিমে বলেন, ‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জত কায়েম করো, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে—মাকামে মাহমুদে। [৬]

রাতের ইবাদত প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে আরও রয়েছে, ‘হে কম্বলাবৃত! রাতে দণ্ডায়মান হও কিছু অংশ বাদ দিয়ে; অর্ধরাত্রি অথবা তার চেয়ে কিছু কম অথবা তার চেয়ে বেশি এবং কোরআন তিলাওয়াত করো সুবিন্যস্তভাবে ও স্পষ্টভাবে। আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী। নিশ্চয়ই ইবাদতের জন্য রাত্রিতে ওঠা প্রবৃত্তি দমনে সহায়ক এবং স্পষ্ট উচ্চারণের অনুকূল। নিশ্চয়ই দিবাভাগে রয়েছে তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। তুমি নিজ পালনকর্তার নাম স্মরণ করো এবং একাগ্রচিত্তে তাতে নিমগ্ন হও। [৭]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! ওঠো, সতর্ক করো, আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো, স্বীয় পোশাক পবিত্র করো এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। অন্যকে কিছু দান করে অধিক প্রতিদান আশা করবে না। আর তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে ধৈর্য ধারণ করো। [৮]

আফরোজা বেগম অযু করে এসে সাফিরাকে দেখতে এসে দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা! বন্ধ দেখে তিনি আশ্চর্য হলেন। সাফিরাকে তো বলেছিলেন দরজা বন্ধ করতে না। কেন করলো তাহলে? তিনি আর এই মুহূর্তে মাথা ঘামালেন না। সাফিরাকে ডাকলেন ও না। এমনিতেই অসুস্থ ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙ্গালে মাথায় আঘাত পেতে
পারে তাই তিনি চলে গেলেন।

ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে দ্রুত উঠে বসে রাযীন। সাফিরা ঘুমে থাকতে থাকতে রুম ত্যাগ করে।
সকালে অফিসে চলে গেল। আফিস থেকে ফিরে নিজের রুমেই থাকলো। সাফিরাকে একবার গিয়ে জিজ্ঞাসা ও করলো না শরীরের কি অবস্থা? সাফিরা আসা করছিল তাকে অন্তত জিজ্ঞাসা করবে রাযীন কিন্তু করে নাই দেখে সামান্য মন খারাপ হলো।

দ্বিতীয় দিন আবারো সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রাযীন সাফিরার রুমে আসে! দেখে ঘুমিয়ে আছে সাফিরা। দ্বিতীয় দিন ও এক‌ই কাজ করলো। সাফিরার পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে র‌ইলো।

আজকে সাফিরা ঘুমের ঔষধ খায়নি, ঘুমের ঔষধ খাওয়া ভালো না বলে। তাই মাঝ রাতে ওয়াশরুমে যাবে বলে ঘুম ভেঙ্গে গেল। শোয়া থেকে উঠে বসে, পাশে তাকাতেই ড্রিম লাইটের আলোয় পাশে রাযীনকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে কিছুটা দূরে সরে গেল। বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর হতে চলল কিন্তু রাযীনকে তার পাশে কখনো দেখেনি! আজকে এভাবে দেখে কপালে নাকের ডগায় চিকন ঘাম বের হতে শুরু হলো!.…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্স:
[১] (শূরা ৪২/৪২; মুত্বাফ্ফেফীন ৮৩/১-৬)
[২] (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১২/৪১৬)
[৩] (দারেমী হা/২৩৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৪০২)
[৪] (আহমাদ হা/১৫১১২; মিশকাত হা/৩৫৯৬; ইরওয়া হা/২৪০৩)
[৫] (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৮৬৬৫)।
[৬] (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৭৯)
[৭] (সুরা-৭৩ মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-৮)
[৮] (সুরা-৭৪ মুদ্দাচ্ছির, আয়াত: ১-৭)

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৬

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৬)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

অতীত,
দুপুরের রান্না শেষে মনোয়ারা বেগম পুকুর ঘাটে গিয়েছেন হাড়ি পাতিল ধোঁয়ার জন্য। ধুয়ে এসে রোদে শুকাতে দিয়ে সাফিরার কাছে গেলেন। সাফিরা পেয়ারা গাছে বসে পেয়ারা খাচ্ছিলো। তার স্কুল কোচিং সবকিছু বন্ধ তাই আরাম করে গাছের ডালে বসে আছে, পাশে রুমানার সাথে গল্প করছে। মনোয়ারা বেগম বাঁশ ঝাড়ের থেকে একটা কঞ্চি নিয়ে সাফিরা কে ভয় দেখিয়ে বলে, নিচে নামবি নাকি এটা দিয়ে তোকে ফিডামু? (পিটাবো) বেইন্নাবেলা থেইক্কা কাম করতাছি, (সকালবেলা থেকে কাজ করতেছি) আমার আতে আতে একটু কাম করবি তা না, (আমার হাতে হাতে কাজ)
ট‌ই ট‌ই করে পাড়া বেরাচ্ছিস! আমি তোর এসব সহ্য করতাছি, পরের মায় পিছা দিয়া বাইরাইয়া কাম করাইবো দেখিস। ( শাশুড়ি মা ঝাড়ু দিয়ে মেরে কাজ করাবে।) সাফিরা মায়ের ভয়ে উপরের ডালে উঠে দাঁড়ায়। আর বলে, কালকে থেকে তোমার হাতে হাতে সব কাজ করে দিব আম্মা।
মেয়ের কথা শুনে আরো রেগে গেলেন মনোয়ারা বেগম। বললেন, তোর কালকে আর জীবনে আইতো না। তোদের বাপ তো সারছে! এই বলে চোখের পানি ফেলে ঘরের দিকে চলে গেলেন।

সাফিরা একটু অলস প্রকৃতির মেয়ে। প্রায় সময় বলে মাকে সাহায্য করবে কিন্তু সেই দিন আর মনোয়ারা বেগমের ভাগ্যে জুটে না।
মনোয়ারা বেগম চোখের পানি মুছে ঘথের কাছে গিয়ে দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা। দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বললেন, এই সিনথিয়া ঘরো কি করতাছোস তুই? দরজা বন্ধ করছোস কেন? দরজা খুল।
অনেকক্ষণ ধরে ডাকার পরেও যখন সিনথিয়া দরজা খুললো না তখন মনোয়ারা বেগম বিলাপ করতে শুরু করেন। আর্তনাদ শুনে সাফিরা দৌড়ে আসে, আসেপাশের প্রতিবেশীরা দৌড়ে আসে।
তারপর সাফিরার পাশের ঘরের চাচারা এসে কাঠের দরজা কেটে ঘরে ডুকে। সিনথিয়া কে খুঁজতে দ্বিতীয় রুমে গিয়ে দেখে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁ/স দিয়ে আত্মহ/ত্যা করেছে মেয়েটা! মেয়ের পা দুটো জড়িয়ে ধরে ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো মনোয়ারা। সাফিরা আপু বলে চিৎকার। এই খবর বাতাসের মতো ছড়িয়ে গেল এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম। খবর পেয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ বাড়িতে চলে এলো।
মনোয়ারা বেগমকে কেউ শান্ত করতে পারছেন না। মেয়ের জন্য পাগল প্রায় তিনি। শেষে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
গ্রামের মানুষ পুলিশকে খবর দিলেন। ঘন্টা খানেক পর পুলি/শ চলে এলো, এসে গ্রামের মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলো, সাফিরা কে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। শুধু যা দেখেছে তাই বলল।
তারপর পুলিশ সিনথিয়ার লা/শ নিয়ে চলে গেল।
মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য ময়নাতদন্ত বা পোস্টমর্টেম করা হয়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখে জানা যায় সিনথিয়া তিন মাসের গর্ভবতী ছিল! এ ব্যাপারে মনোয়ারা বেগম বা সাফিরা কিছু জানতো না। তাই গ্রামের মানুষজন শুনে সিনথিয়ার পরিবারকে যা-তা কথা বলতে শুরু করল। বলল,
সিনথিয়া ন/ষ্টা, বিয়ের পূর্বেই অবৈধ সম্পর্ক করে পেটে বাচ্চা পয়দা করছে! আরো কত কথা। এসব কথা সহ্য করতে না পেরে মনোয়ারা বেগম স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেন!
সাফিরার বাবা হাই স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। খুব সুন্দর ভাবে চলছিল তাদের জীবন। একটা রোড এক্সিডেন্ট এ তিন বছর আগে সাফিরার বাবা মারা যান, তারপর থেকে মনোয়ারা বেগম মেয়ে দুটো কে আগলে জীবন পার করেন। আফরোজা বেগমের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো আলহামদুলিল্লাহ। তাই বোনকে যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করেন এবং কি সিনথিয়া কে ছেলের বউ করবেন বলে ঠিক করেন। কথা হয় করিম সাহেব এবং আফরোজা বেগম হজ্জ পালন করে এসে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হলো তার উল্টো বড় মেয়ের আত্মহত্যা, গ্রামের কিছু মানুষের কটুক্তি মেনে নিতে না পেরে মনোয়ারা বেগম পরপারে পাড়ি জমান।

করিম সাহেব আর আফরোজা বেগম হজ্জ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছেন। তাই এমন পরিস্থিতিতে সাফিরা একা হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রাযীন আসে। খালাম্মার দাফন কাফন শেষ করে সাফিরা কে সাথে করে নিয়ে যেতে চায় ঢাকা তাদের বাসায়। তখন গ্রামের মানুষ বাঁধা দিয়ে বলল, তোমার বাপ মা হজ্জ করতে গেছে তাই একটা যুবতী মেয়েকে এভাবে নিয়ে যেতে পারবে না! রাযীন তখন রুক্ষ গলায় বলল,
–” আমি নিয়ে না গেলে ও কার কাছে থাকবে এখানে? থাকলেও ওর সিকিউরিটি কে দিবে?
তখন গ্রামের মানুষজন বলল, তুমি যে ওর কোন ক্ষতি করবা না সেটা কিভাবে বুঝবো? তোমার বাসায় বাপ মা নাই তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা এভাবে যেতে দিতে পারুম না।
তখন রাযীন বলল,
–” তাহলে কি চান আপনারা? আমি ওকে এখানে একা রেখে চলে যাই?
মেম্বার সাহেব গ্রামের মানুষজনের সাথে একমত হয়ে বললেন,
–” তুমি মাইয়াটা কে বিয়ে করো! তাহলেই সমাধান হবে।
রাযীন বিয়ে করতে রাজি হয় না। তখন গ্রামের মানুষ একরকম জোর করেই রাযীনের সাথে সাফিরার বিয়ে দিয়ে দেয়!
তারপর রাযীন সাফিরা কে নিয়ে ঢাকা তাদের বাড়িতে যায়। হজ্জ পালন করে করিম সাহেব আর আফরোজা বেগম এসব শুনে কষ্টে ভেঙ্গে পড়েন। তারপর ধীরে ধীরে ভাগ্য কে মেনে নেন। রাযীন কে বুঝান সাফিরা কে মেনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু ওরকম ভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়ায় মেনে নিতে পারে না রাযীন।
.
.
এক‌ই সাথে দুটো অন্যায় দুনিয়ার বুকে করে গেল সিনথিয়া। না পেল ইহকাল আর না পাবে পরকাল।
যার কারণে হাসিখুশি পরিবারটি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ঘরে ভাতি (লাইট) দেওয়ার ও কেউ র‌ইলো না। দোরগোড়ায় তালা ঝুলে গেল চিরস্থায়ী।
অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা!
তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। [১]

একবার রাসুল (সা.) আনসার সাহাবিদের কিছু লোককে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না। [২]
.
.
বর্তমান,
তামান্নার বাবা মা তাকে আর করিম সাহেবের বাসায় রাখতে চাইছিলেন না। তামান্না দের বাড়ি কলেজ থেকে প্রায় তিন ঘন্টার পথ। তাই করিম সাহেবের বাসায় থেকে পড়াশোনা করার জন্য তার মা দিয়েছেন। মেয়ের স্বভাবের জন্য তারা পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু করিম সাহেব আর আফরোজা বেগম তাদেরকে বুঝিয়ে তামান্না কে আবার নিয়ে আসেন।
অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক চলছিল সবকিছু। রিমা কিছুদিন থেকে শশুর বাড়িতে চলে গেছে। সাফিরা আর তামান্না কলেজে আসা যাওয়া করে। রাযীন অফিস করে, রাতের বেলা সাফিরা কে পড়াশোনায় সাহায্য করে। করিম সাহেব অবসর সময়ে ইসলামিক বই পড়েন। আফরোজা বেগম ঘরের টুকটাক কাজ সবার খেয়াল রাখেন। এখন সাফিরা আর তামান্না ও তাকে কাজে সাহায্য করে।
.
একদিন কলেজ শেষে তামান্না বাসায় চলে আসে। কিন্তু সাফিরা আসে না। আফরোজা বেগম মনে করেন হয়তো মিমের সাথে তাদের বাসায় গিয়েছে। কিন্তু মিম কে কল করে জানতে পারে তাদের বাসায় যায়নি তারচেয়ে বড় কথা মিম একটু অসুস্থ বলে কলেজে যায়নি। এ কথা শুনে আফরোজা বেগম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে অথচ সাফিরার আসার নাম নেই। করিম সাহেব কলেজ পর্যন্ত যায় কিন্তু পায় না সাফিরাকে। আফরোজা বেগম রাযীনকে কল করে কিন্তু রাযীন কল রিসিভ করে না.……

#চলবে ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্স:
[১] (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
[২] (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৫

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৫)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

বাম দিকে কোনায় একটা ছোট রুম আছে যেখানে রাযিনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তামান্না কে রুমে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় রাযীন! তামান্নাকে আজকে একটা শিক্ষা দিবে বলে ঠিক করে নেয় রাযীন। এর আগেও অনেকবার সাবধান করেছে কিন্তু তামান্না শুনে নাই। তাই আজকে এর বিহিত করবেই।
তামান্না ভেতর থেকে দরজায় অনেক ধাক্কাতে থাকে রাগে দুঃখে কান্না করে বলতে থাকে, ভাইয়া আমি আর এরকম করবো না। দরজাটা খুলে দিন প্লিজ? তামান্নার দরজা ধাক্কানো আর আর্তনাদে ছোট বাচ্চারা চলে আসে। তখন রাযীন তাদের বলল,
–” তোমাদের একটা কাজ দিলে করতে পারবে?
বাচ্চা গুলো কিছু বুঝতে না পেরে ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর যে ছেলেটা সবার বড় সেই ছেলেটা বলল,
–” কি কাজ? ভিতরে কে আছে? দরজা খুলে দেই?
রাযীন কাছে গিয়ে বসে বলল,
–” ভিতরে একটা দুষ্টু মেয়ে আছে। আমাকে খুব বিরক্ত করে সে জন্য বন্দি করে রেখেছি। তোমরা দেখবে কেউ যেন দরজা খুলে না দেয়। ঠিক আছে?
ছেলেটা মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। তারপর রাযীন বলল,
–” তোমরা চকলেট পছন্দ করো?
পিছন থেকে ছোট মেয়ে বলল,
–” আমি চকলেট খাব।
–” আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ে শেষে আমি তোমাদের সবাইকে চকলেট কিনে দিব ইনশা আল্লাহ।
তারপর রাযীন পুনরায় গিয়ে বিয়ের কাজে মনোযোগী হল।

বিয়েতে আগত অতিথিদের খাওয়া দাওয়া তারপর বিয়ে, কনে বিদায় সবকিছু মিলিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই সম্পূর্ণ হয় আলহামদুলিল্লাহ। মাগরিব নামায পড়ে বড়রা যখন ফ্রি হয়ে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে তখন তামান্না ছাড়া পেয়ে বসার ঘরে ছুটে আসে। অবস্থা তার করুন। সাজগোজের দশা খারাপ। চোখের কাজল লেপ্টে, কান্না করে ফুলিয়ে ফেলেছে। তামান্নার মা দৌড়ে এসে মেয়ে ধরে আর্তনাদ শুরু করেন। মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হয়েছে মুহুর্তেই ভেবেনিলেন। মানুষের মন সেকেন্ডের মধ্যেই কতো শত ভালো মন্দ কথা ভেবে ফেলে সেই জানে।
তামান্নার বাবা এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–” কি হয়েছে মা? কোথায় ছিলি তুই? কতোবার তোকে এদিক ওদিক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। ভাবলাম বিয়ে বাড়ীতে কোথাও হয়তো আছিস, আনন্দ করছিস তাই অতো মাথা ঘামায়নি।

তামান্না তার মা’কে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। যার কারণে রুবিনা বেগম আরো ভয় পেয়ে গেলেন। উত্তেজনা হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?
তামান্না কান্নাজড়িত কন্ঠে রাযীন ভাইয়া বলে আবার কান্না করা শুরু করলো।
সবাই রাযীনের নাম শুনে হতবাক। তখন পিছন থেকে রাযীন এসে দাঁড়ায়। সবাই রাযীনের দিকে তাকিয়ে থাকে। করিম সাহেব উঠে গিয়ে তামান্না কে জিজ্ঞাসা করে কি করেছে রাযীন? পিছন থেকে রাযীন বলল,
–” আমি বলছি।
তারপর তামান্না কিভাবে বিরক্ত করে রাযীন কে সেসব কথা বলে আজকের সবটা বলল রাযীন।
সবকিছু শুনে তামান্নার বাবার লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেল। আজকে মেয়ের কারণে এতোটা লজ্জায় পড়বেন ভাবতেও পারেন নাই তিনি।
রুবিনা বেগম রাগ সামলাতে না পেরে মেয়ের গালে সজোরে থাপ্পর দিলেন। আরো দিতে গেলে আফরোজা বেগম গিয়ে ধরলেন। রুবিনা বেগম কে দূরে সরিয়ে নিলেন। তামান্না গালে হাত দিয়ে, মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

জাসমিন বেগমের স্বামী মানে রাযীনের বড় ফুফা বসা থেকে উঠে এসে সবাইকে শান্ত হতে বললেন।
তারপর তিনি সবাইকে বসতে বলে তামান্নাকে ও বসতে বললেন। তারপর ইসলামের রেফারেন্স দিয়ে বললেন,
–” আল্লাহ্‌ তায়ালা সূরা নুরে বলেন, আর মুমিন নারীদেরকে বল, “তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে” এবং “তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে”। আর “যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না”। “তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে”।

আর “তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে”। আর “তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে”। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

উপোরুক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা নারীদের কে কিছু নীতিমালা দিয়েছেন যেগুলো সবগুলোই সামাজিক আমরা কথা বলব ঘরের বাহিরে পর্দা নিয়ে। আয়াতে হিজাবে ও বোরকার ব্যাপারে কিছুই বলেনি। বরং আল্লাহ্‌ তায়ালা ঘরের বাহিরে পর্দার ব্যাপারে বলেছেন “যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না” এবং বলেছেন “তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে” দুটি কথায় সহজে বুঝতে পারা যায় নারীদেরকে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশে নিষেধ করা হয়েছে, সুতরাং ঘরের বাহিরে নিজের সৌন্দর্যকে আবৃত করে তারপর বের হওয়া আর তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখার নামই পর্দা। তাই মা পর্দা মেনে চলো, এই দুনিয়া কিছুই না। আমাদের সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে কাজেই মৃত্যুর পূর্ব প্রস্তুতি নিতে আমাদের ইসলামের সকল বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আজকে তোমার কারণে তোমার বাবা মায়ের মাথা নিচু হয়েছে তাই তোমার বাবা মায়ের কাছে মাফ চেয়ে বলো, আর কখনো এমন কাজ করবে না যে কাজে আল্লাহ পাক নারাজ হন। তোমার বাবা মায়ের মাথা নত হয়।

অতঃপর তামান্না নিজের ভুল বুঝতে পেরে মা বাবার কাছে মাফ চেয়ে নেয়। আল্লাহ তাআলার কাছে ত‌ওবা করে নেয়।
.
.
রাযীন আর এখানে থাকলো না, বিয়ের পরের দিনেই চলে গেল নিজেদের বাড়ি ঢাকায়। বাকিরা মেয়েকে শশুর বাড়ী থেকে নিয়ে আসা পর্যন্ত থাকবে।
বিয়ের জন্য অফিস থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছিল রাযীন। কিন্তু ছুটি শেষ হ‌ওয়ার আগেই যখন অফিসে গেল।
লাঞ্চ আওয়ারে মিনহাজ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
–” কিরে মানুষ ছুটি চেয়েও ছুটি পায় না আর তুই ছুটি শেষ হ‌ওয়ার একদিন আগেই চলে এসেছিস? ব্যাপার কি? বিয়ে ঠিকঠাক মতো সম্পূর্ণ হয়েছে তো?
–” হুম বিয়ে ঠিকঠাক মতোই হয়েছে।
–” তাহলে চলে এলি কেন?
তামান্নার ব্যাপারটা সবটা বলে রাযীন বলল, তাই আর ওখানে থাকতে ইচ্ছা করে নাই।
মিনহাজ সবটা শুনে বলল,
–” আচ্ছা তোর যে ব‌উ…

ব‌উ কথাটা বলতেই রাযীন কেমন করে তাকালো মিনহাজ এর দিকে। তাই মিনহাজ বলল,
–” মানে তোর খালাতো বোন। উনি ও কি পর্দা করেন?
রাযীন শান্ত স্বরে বলল,
–” হুম।
–” তোর সামনে ও করে?
রাযীন খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,
–” না।
–” কেন করে না?
খাবার খাওয়া থামিয়ে রাযীন বলল,
–” ও আমার বিয়ে করা বউ! ও কেন আমার সামনে পর্দা করবে?

মিনহাজ মুচকি হেসে বলল,
–” তাহলে মানছিস ও তোর বিয়ে করা বউ?
জবাবে রাযীন কিছু বলল না, চুপ করে খাওয়াতে মনোযোগ দিল।
খাবার খাওয়া শেষে মিনহাজ আবার বলল,
–” তুই মানিস আর নাই মানিস উনি তোর বিয়ে করা বউ। আজকে তোর ফুফাতো বোন তোর সামনে বে-পর্দায় ঘুরে বেড়ায় বলে তোর রাগ হচ্ছে অপরদিকে তোর খালাতো বোন সেও তোর সামনে বে-পর্দায় ঘুরে বেড়ায় সেটা তোর কাছে মোটেও খারাপ লাগছে না তাই বুঝা যায় এটাই হালাল সম্পর্কের পাওয়ার বুঝলি?

রাযীন আগে কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি। তাই এখন চুপ করে বসে রইলো। তারপর যখন অফিস থেকে বাসায় ফিরলো তখনো তার মাথায় এসব ঘুরপাক খেতে শুরু করলো। রাতে ঘুম ও ঠিকঠাক মতো হলো না।
এর দুদিন পর বাসার সবাই ফিরে এলো। সাফিরা কে পড়ানোর মাঝে মাঝে রাযীন তাকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলো…..

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্স:
(১) (সূরা আন-নূর-৩১)

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৪

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৪)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

নিজের রুমে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাফিরা। এই দুনিয়ায় তার মা-বাবা, বোন কেউ র‌ইলো না। আর কে আছে তার মতো এমন অভাগী? মা বাবা বোন সবার কত্ত আদরের ছিল সাফিরা অথচ আজকে অন্যের বাসায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। তার জীবনটা তো এমন হ‌ওয়ার কথা ছিল না। এগুলো যত‌ই ভুলে থাকতে চায় ততোই কেউ না কেউ মনে করিয়ে দেয়। মানুষ গুলো কি বুঝে না? সাফিরার বড্ড কষ্ট হয়। মানুষ গুলো এতো নিষ্ঠুর কেন?

ফ্লোরে বসে খাটের উপর মাথা রেখে অঝোরে কাঁদছে সাফিরা। কাঁদতে কাঁদতে একসময় চোখের পানি শুকিয়ে আসে। কিন্তু ওভাবেই বসে থাকে। দশ পনেরো মিনিট পর পেয়ারা মাখা খাওয়ার জন্য আফরোজা বেগম এসে দরজা করাঘাত করে কিন্তু সাফিরা কোন সাড়া শব্দ করে না। তাই আফরোজা বেগম ভাবলেন সাফিরা বোধহয় ঘুমিয়ে আছে সে জন্য তিনি আর বেশি ডাকাডাকি করলেন না।
এর ঘন্টা খানেক পর ফোনের রিং টোন শুনে মাথা তুলে সাফিরা। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বান্ধবী মিম কল করেছে। কলেজ জীবন থেকে মিমের সাথে পরিচয় সাফিরার। দু’জন খুবই ভালো বান্ধবী। কলেজ শেষে এক‌ই কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছে তারা যেন একসাথে পড়াশুনা করতে পারে সে জন্য। মিমের মা খুব আদর করে সাফিরা কে। যাই হোক কল রিসিভ করে সালাম দেয় সাফিরা।
সালামের জবাব দিয়ে মিম বলল,
–” জানিস আমার জন্য মামা একটা বিয়ের ঘর এনেছেন। কিন্তু পাত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে আমার পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু আমি আম্মুকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। আচ্ছা তুই একটু গগআম্মুকে বুঝিয়ে বলবি? আমি জানি আম্মু তোর কথা শুনবে ইনশা আল্লাহ। কিরে তুই কিছু বলছিস না কেন?গল্পের
–” হুম।জ্ঞজ্ঞ
–” কি হুম?
–” আচ্ছা ঠিক আছে।
–” সাফি তুই কি আবারো কান্না করেছিস?
সাফিরার কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে মিম। নিশ্চয়ই সাফিরা কান্না করেছে। তাই উদগ্রীব হয়ে উঠে জিজ্ঞেস করে কেন কান্না করেছে? কেউ কিছু বলেছে নাকি অতীতের কথা মনে করে কাঁদছে সাফিরা? উত্তরে সাফিরা কিছু বলে না। এই সময় গুলোতে কাছের মানুষজন যদি এসে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? তাহলে আরো বেশি কান্না চলে আসে। তাই সাফিরা কান্না দমাতে ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রইলো। মিম বুঝতে পারে তাই বলল,
–” এই বিশাল পৃথিবীটা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তোর সামান্য কষ্ট গুলো মুছে দিতে পারবেন না? অবশ্য‌ই পারবেন। আল্লাহ তাআলার উপর থেকে আস্থা, বিশ্বাস হারাবি না একদম। একদিন দেখবি ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পারবেন, তখন তোকে মেনে নিবেন।
কোরআন আছে,
হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। [১]
তাই আল্লাহ তাআলার কাছে চাইতে থাক নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কাউকে নিরাশ করেন না। যখন তোর দুঃখগুলো ভুলিয়ে দিবেন তখন তুই নিজেই বলবি, হে আল্লাহ, আমি তো কখনো আপনাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি।
আচ্ছা সাফি দুপুরের খাবার খেয়েছিস?
সাফিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–” গোসল করে নামায পড়বো। আমার জন্য দুআ করিস। এখন রাখি পরে কথা বলবো ইনশা আল্লাহ।
–” আচ্ছা আচ্ছা তাড়াতাড়ি যা।
আসসালামু আলাইকুম।
–” ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
.
.
করিম সাহেবের বড় বোন জাসমিন, তার ছোট মেয়ের বিয়ে। জাসমিন এক সপ্তাহ আগে, একমাত্র ভাই এবং তার পরিবারকে চলে যাওয়ার জন্য বললেও রাযীনের অফিস এবং ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা ক্ষতি হবে ভেবে করিম সাহেব বোনকে কথা দিয়েছে, আল্লাহ চাহেতু বিয়ের দু’দিন আগে যাবে। আর তাই রিমা বাপের বাড়ি চলে এসেছে একসাথে সবাই যাবে বলে।
আজকে সেই দিন। আফরোজা বেগম সবাইকে তাড়া দিচ্ছেন তৈরি হ‌ওয়ার জন্য। ধীরে ধীরে সবাই তৈরি হয়ে ডয়িং রুমে চলে আসে। মেয়েরা সবাই পরিপূর্ণ পর্দা করলেও তামান্না বোরকার সাথে ফ্যাশনেবল হিজাব পরেছে যা দ্বারা পরিপূর্ণ পর্দা হয় না। প্রথম প্রথম করিম সাহেব আর আফরোজা বেগম তামান্না কে বুঝাতেন পরিপূর্ণ পর্দা করার জন্য। কিন্তু তামান্না নাছোড়বান্দা কথা শুনে না তাই আল্লাহ তায়ালার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কাউকে হেদায়েত দান না করলে সাধ্য নেই কারো দ্বীনের পথে আনার। তবে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। যাই হোক বিয়ে বাড়িতে তারা গিয়ে দুপুরে পৌঁছায়। যোহরের নামায আদায় করে খাওয়া দাওয়া করে নেয়। তারপর বড়রা নিজেদের মতো কথাবার্তা বলে, মেয়েরা মেয়েদের মতো করে মজা করে। তবে যাই করে না কেন ইসলামের পরিপন্থী হবে এমন কিছু যেন না হয় তা বড়দের আদেশ।

দুই দিন যাবত সাফিরার মন ভালো নেই এরমধ্যে বিয়ে বাড়ি এসেছে। সারা বাড়ি জুড়ে মেহমানদের সমাগম। গ্রামের বাড়ি বলে আশেপাশের লোকজন ও এসেছে, বৃদ্ধদের পান সুপারি দেওয়া হয়েছে তারা আরামে খাচ্ছেন আর কথাবার্তা বলছেন। তাই সাফিরা একটু নিরিবিলি পরিবেশে থাকার জন্য ছাদে গিয়ে বসে থাকে একাকী। রাতের বেলা জোছনার আলোয় আলোকিত হয়ে আছে ছাদ। চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল লাগছে সাফিরা মুখশ্রী। এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সাফিরা। পিছনে রাযীন এসে দাঁড়ায় কিন্তু সাফিরা তা টের পায় না। সাফিরা কে দেখতে পেয়ে কি করবে ভেবে পায় না রাযীন। এখানে রাযীনের সমবয়সী কোন ছেলে নেই যে তার সাথে সময় কাটাবে। সে জন্য ছাদে আসে রাযীন। কিন্তু সাফিরাকে দেখতে পেয়ে ছাদের দরজার কাছেই থেমে ভাবতে থাকে কি করবে?

কিছুক্ষণ ভেবে সামনে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে বলে কিরে ফাঁকিবাজ! রাতের বেলা একা একা এখানে কি করছিস? বিয়ের উসিলায় তো পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিস একদম।
হঠাৎ কারো কথা শুনতে পেয়ে ভয়ে লাফিয়ে উঠে সাফিরা। বুকে হাত দিয়ে ধম নিতে শুরু করে। বুকে স্পষ্ট ধুকপুকুনির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
সাফিরা কে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাযীন আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে ত্যারা চোখে তাকিয়ে বলল,
–” কিরে কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে?
সাফিরা ছোট করে বলল,
–” ভয় পেয়েছি।
–” কেন?
–” তুমি হঠাৎ এসে কথা বলায়।
তখন আকস্মিক সাফিরার গালে হাত রেখে রাযীন বলল,
–” তুই দেখছি ভীতুর ডিম!
রাযীনের এমন স্পর্শে কেঁপে উঠে সাফিরা। ছিটকে দূরে সরে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে আটকে রেখেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রাযীন শুকনো কাশি দিয়ে ছাদের অন্য পাশে চলে যায়। এই সুযোগে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায় সাফিরা। সাফিরার যাওয়ার শব্দ শুনে সেদিকে তাকায় রাযীন। নিজের কাজে নিজেই হতভম্ব সে।
.
.
বিয়ের দিন,
ছেলেরা ছেলেদের মতো আর মেয়েরা মেয়েদের মতো করে সাজতে ব্যস্ত। একদিকে ব‌উকে সাজানো হচ্ছে। অন্যান্য মেয়েরা রঙিন পোশাক পরে হিজাব নিকাব পরলেও সাফিরা বোরকার সাথে ছয় পার্ট হিজাব, নিকাব পরে। রুমের এক কোনায় বসে থেকে বৌয়ের সাজানো দেখছে সে। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় নামেরা কে কোলে নিয়ে সময় পার করছে সাফিরা। বিয়ে বাড়ি এসে রিমা নিশ্চিন্তে মজা করছে কারণ খাওয়া আর ঘুমের সময়টা বাদ দিয়ে নামেরা সাফিরার কাছেই থাকছে। সাফিরার ও বোরিং লাগছে না নামেরার জন্য।

বরযাত্রী আসার পর তাদের আপ্যায়নের তদারকি করছে রাযীন। তাদের কি প্রয়োজন তা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছে। তার বড় ফুফির বড় ছেলে নেই। তাই ফুফাতো বোনের মামাতো ভাই হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে রাযীন কে সাহায্য করার অজুহাতে তামান্না তার পিছুপিছু ঘুরছে! একেই তো কীসব সাজগোজ করেছে পর্দার “প” ও নেই তার‌উপর রাযীন কে বিরক্ত করছে। এক সময় রাযীন সহ্য করতে না পেরে তামান্নার হাত ধরে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে! হাত খুব শক্ত করে ধরায় তামান্না ব্যাথা পেয়ে বলল,
–” ভাইয়া ছাড়ো আমার খুব লাগছে।
কিন্তু তামান্নার কথা পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে রাযীন।….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

রেফারেন্স:
(১) [সুরা বাকারা : ১৫৩]

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০৩

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(৩)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

বোনের শাস্তি বোনকে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? মেয়েটা তো আর কোন দোষ করেনি তাহলে ওকে কেন শাস্তি দিচ্ছিস? দিনের পর দিন।
এসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না বলে উঠে দাঁড়ায় রাযীন। যাওয়ার আগে বলে যায়,
–” বোনের মতো যে বোনের চরিত্র হবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?
অতঃপর মিনহাজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হানহান করে নিজের কেবিনে চলে যায় রাযীন। মিনহাজ মাথা নেড়ে মনে মনে বলে যতদিন না রাযীন মন থেকে মেয়েটাকে মেনে নিচ্ছে ততদিন কেউ তাকে বোঝাতে পারবে না।
.
.
নতুন অবস্থায় তেমন ক্লাস হয় না বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে সাফিরা আর তামান্না। যদিও তারা একসাথে আসে না কারণ তামান্না নিজেই মিশতে চায় না সাফিরার সাথে। সাফিরা এতিম বলে তাকে হিংসা করে এরিয়ে চলে। তারচেয়ে বড় কথা হলো রাযীন কে পছন্দ করে, তাকে বিয়ে করতে চায় তামান্না!
কিন্তু সাফিরার জন্য তার স্বপ্ন পূরণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সেই কারণে সাফিরাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায় তামান্না!

সাফিরা গোসল করে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে। তখন তামান্না এসে বলল,
–” কিরে কি করছিস?
সচরাচর সাফিরার রুমে তামান্না আসে না। আজকে আসতে দেখে একটু অবাক হয়ে চুপ করে থাকে।
তামান্না হাসি হাসি মুখ করে বলে,
–” তোর সাথে একটা জরুরী কথা আছে।
তারপর সাফিরার পাশে বসে দুঃখি ফেইস করে বলল,
–” রাযীন ভাইয়া তো তোকে একদম পছন্দ করে না তাই বিয়েটা মানে না! আর কোনদিন মেনে ও নিবে না। তাই তোর জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিব আমি! আমার বান্ধবীর বড় ভাই কাতার থাকে। খুবই ভালো বেতনের চাকরি করে। বান্ধবীকে তোর ছবি দেখাতেই ও পছন্দ করে ফেলল। নিজে থেকেই বলল, ওর ভাইয়ের বউ করে নিয়ে যাবে তোকে!

তামান্নার কথা সবটাই মনোযোগ দিয়ে শুনলো সাফিরা। কিন্তু কিছু বলল না। তামান্না আবার নিজ থেকেই বলল,
–” কিরে কিছু বলছিস না যে?
সাফিরা ফোন বন্ধ করে টেবিলের উপর রেখে ফ্যান বন্ধ করতে করতে বলল,
–” হঠাৎ আমাকে নিয়ে এতো ভাবছিস দেখে বিস্ময়ে হতবাক আমি। তাই কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না রে। যাই হোক জাযাকিল্লাহু খাইরান আমার জন্য এতোটা ভাববার জন্য। আমি ভেবে তোকে জানাবো।
–” ঠিক আছে আমি তাহলে যাই এখন।

তামান্না চলে যাওয়ার পর বাথরুম থেকে অযু করে এসে যোহর নামায আদায় করে নেয় সাফিরা।
ঈমান লাভের পর ইসলামি শরিয়তের আবশ্যিক ইবাদত ও দ্বীনের মূল ভিত্তি হলো নামায। আর বেহেশতে প্রবেশের চাবি হলো নামায। এ কারণেই ঈমান লাভের পর মুসলমানের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো নামায।
সাফিরার খালামনি আর খালু ভীষণ ধার্মিক মানুষ মা শা আল্লাহ। তাদের এক মেয়ে এবং দুই ছেলে। তাঁরাও মা বাবার শিক্ষায় বড় হয়েছে, যদিও ছোট ছেলে এখনো ছোট তাও বাবা মায়ের কথা মতোই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে রাযীন মা বাবার অবাধ্য। সাফিরা কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করা! এর পিছনে যথাযুক্ত কারণ আছে বলে মনে করে রাযীন।
.
.
সূর্য যখন পশ্চিম দিকে ডুবু ডুবু তখন সাফিরা, রাযীন এর ছোট ভাই আহম্মেদকে নিয়ে যায় চারা গাছ রোপণের জন্য।
কলেজ থেকে ফেরার পথে ভ্যান গাড়িতে বিভিন্ন ফলের চারা গাছ বিক্রি করতে দেখে সেখান থেকে লেবু আর পেয়ারার চারা গাছ কিনে আনে। সকাল কিংবা বিকাল বেলা চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তাই সূর্য ডুবার অপেক্ষায় ছিল সাফিরা।

রাযীন এর বাবা করিম সাহেব ঢাকায় দু’তলা বাড়ি করেছেন। তিনি খুব শৌখিন মানুষ। প্রতি তলায় দুটো ফ্লাট। ভাড়া দেয়ার জন্য বাড়ি করেন নি, করেছেন নিজেরা থাকার জন্য। নিজে শৌখিন, তার বাড়িটাও শৌখিন। চারপাশে বারান্দা, নিচতলার ফ্লাটের ড্রইংরুম থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। গেটের পূর্ব দিকে দারোয়ানের জন্য পাকা টিনশেডের একটা রুম। গাড়ি রাখার গ্যারেজ নেই। বারান্দার কড়িডোর বেশ বড়। তারই একপাশে গাড়ি থাকে। পুরো বাড়িটা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পশ্চিম পাশে ফল, ফুলের বাগান। বাকি জায়গাটা ফাঁকা রেখেছেন ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার জন্য। ভবিষ্যতে নাতি-নাতনি, মানে এক মেয়ে এবং দুই ছেলের বাচ্চাকাচ্চা খেলাধুলা করবে চিন্তা করে এই ব্যবস্থা।
প্রায় সময় বাগানের পরিচর্যা করে সাফিরা। ছোট বেলা থেকে বাগান করার খুব শখ তার। এখানে এসে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তাই বাগানে দেখছে এই দুটো গাছ নেই, সে জন্য দুটো গাছ কিনে আনলো। তাছাড়া পেয়ারা খুব পছন্দ সাফিরার। সাফিরাদের গ্রামের বাড়িতে বড় একটা পেয়ারা গাছ ছিল। পেয়ারা গুলো খুবই মিষ্টি আর ভেতরে গোলাপী রঙের হতো। সাফিরা গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে পেয়ারা পেরে খেত। লাস্ট যখন পাশের বাড়ির রুমানা কে নিয়ে পেয়ারা খাচ্ছিল তখন মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে যায়। ঘরে গিয়ে দেখে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ হয়ে আছে সাফিরার বড় বোন সিনথিয়া!
.
.
অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমেই থাকলো রাযীন। আজকে মন মেজাজ ভালো নেই বলে সাফিরা কে পড়াতে যায়নি। এতে সাফিরা ও বেশ খুশি হলো।
খাবার টেবিলে সবাই এক সাথে খেতে বসলে দুপুরে বলা তামান্নার কথাটা তুলে সাফিরা! এদিকে রাগে মুখ চোখ কালো করে তামান্না। আফরোজা বেগম
চক্ষু বিস্ফোরিত করে বলল,
–” এসব কি তামান্না! তুই কি জানিস না সাফিরা এ বাড়ির বউ? তবুও কেন পরপুরুষের কথা ওর কাছে গিয়ে বলিস তুই?
করিম সাহেব ও বললেন,
–” সত্যি ই তো এগুলো কি মা?

তামান্না করিম সাহেবের মেজ বোনের মেয়ে। আর সাফিরা, আফরোজা বেগমের বড় বোনের মেয়ে। দুজনকেই খুব স্নেহ করেন তিনি। তাই আদর করে দুজনকেই মা বলে ডাকেন।
করিম সাহেবের জিজ্ঞাসায় থতমত খেয়ে যায় তামান্না। সে ভাবেনি সবার সামনে এভাবে সবকিছু বলে দিবে সাফিরা। ঢিমে যাওয়া গলায় বলল,
–” মামা আসলে ভাইয়া তো সাফিরা কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করছে না, তাই আমি ভাবলাম….

এতোক্ষণ সবটা নীরবে সহ্য করলেও এবার রেগে গেল রাযীন। বলল,
–” সবাই কি খেতে বসছো নাকি আলোচনার সভা নিয়ে বসছো?
তারপর সবাই চুপ হয়ে গেল আর রাযীন তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে চলে গেল। তামান্না ও তাই করলো, ও এখন পালাতে পারলে বেঁচে যায়।

আজকে রাযীন পড়াতে আসেনি বলে বিছানা ঝেড়ে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সাফিরা। তখন আহম্মেদ এসে বলল,
–” আপু ভাবী আসবো?
সাফিরার এক হাতে বিছানার ঝাড়ু অন্য হাত কোমরে রেখে বলল,
–” তোকে না বলেছি এমন অদ্ভুত ডাকে ডাকবি না আমাকে?
আহম্মেদ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
–” তোমাকে এভাবে ডাকার পিছনে তো লজিক আছে! এমনি এমনি তো আর ডাকছি না বলো? আগে তুমি আমার আপু ছিলে তারপর ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করলো! আগের আপু বর্তমানের ভাবী। তাহলে কি দাঁড়ালো? আপু ভাবী!

সাফিরা ঝাড়ু রেখে মশারী টাঙ্গাতে টাঙ্গাতে মজা করে বলল,
–” তোর ভাই তো আমাকে ব‌উ হিসেবে মানেই না তাহলে ভাবী কিভাবে হলাম?
আহম্মেদ একটু চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে থেকে বলল,
–” আচ্ছা আমাকে একটু বড় হতে দাও। ততোদিন তুমি অপেক্ষা করতে পারবে না?
–” কি হবে বড় হয়ে?
–” তখন আমি তোমাকে বিয়ে করে নিব!
–” তবে রে….
আহম্মেদ দৌড়ে পালায়। এদিকে সাফিরা হাসতে হাসতে শেষ। যদিও মুখ চেপে হাসছে। তবুও বেশ অনেক দিন পর মনটা একটু ফুরফুরে হলো। আজকে ঘুমটাও ভালো হবে ইনশা আল্লাহ।
.
.
সাফিরা আর তামান্না কলেজ থেকে ফিরে দেখে রাযীন এর বড় বোন রিমা এসেছে শশুর বাড়ি থেকে। তার দুই মেয়ে বড় মেয়ে নিপুণ আর ছোট মেয়ে নামেরা। ছোট্ট নামেরাকে দেখে কোলে তুলে নেয় সাফিরা। বাচ্চা মেয়েটা খুবই সুন্দর মা শা আল্লাহ। সাফিরা কে অনেক পছন্দ করে। এ বাড়ি আসলে সাফিরা সারাক্ষণ কোলে নিয়ে রাখে। বাচ্চারা কোল অনেক পছন্দ করে তাই সাফিরা কে ভীষণ পছন্দ করে নামেরা।
তামান্না বসে কথা বলছে রিমার সাথে। আফরোজা বেগম কাজের বুয়া কে নিয়ে মেয়ের জন্য ভালো মন্দ রান্না করছেন। কথায় কথায় রিমা বলে ফেলল,
–” সিনথিয়া এমনটা না করলে আজকে রাযীনের ও
ফুটফুটে বাচ্চা থাকতো! সিনথিয়া যে কেন করলো আল্লাহ জানেন?

প্রিয় বড় বোনের কথা মনে হতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না সাফিরা। নামেরা কে রিমার কোলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়….

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

পথ হারা প্রজাপতি পর্ব-০২

0

#পথ_হারা_প্রজাপতি(২)
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সাফিরা, অবস্থা বেগতিক দেখলে এক দৌড় দিবে বলে ঠিক করে নেয় মনে মনে। এদিকে কটমট করে এগিয়ে আসে রাযীন!
যেই না সাফিরা দৌড় দিতে উদ্যত হয় অমনি পড়ার টেবিলের একপাশে লম্বা হাত রেখে পথ আটকে দাঁড়ায়! ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় সাফিরা। জানে না আজকে তার কপালে কি আছে? কেন যে ফটর ফটর করতে গেল? এখন সব ঘুম চোখ থেকে উধাও হয়ে গেছে। একটু আগে উধাও হলে কি এমন ক্ষতি হতো ঘুমের? সব দোষ ঐ ঘুমের, তা না হলে কি সে অমন কথা বলতে পারতো?

দাঁতে দাঁত চেপে রাযীন বলল,
–” খুব সাহসী হয়ে গেছিস দেখছি! আমার মুখে উপর কথা বলতে দুবার ভাবলি না? আমি ঠিক কি করতে পারি ভুলে গেছিস?
সাফিরা দৃষ্টি নামিয়ে নরম গলায় বলল,
–” দুঃখিত ভাইয়া, আমি আসলে ঘুমের জন্য এগুলো বলে ফেলছি। আর কখনো এমন ভুল হবে না।
টেবিল থেকে হাত সরিয়ে একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রাযীন বলল,
–” আজকে যদি আমি তোকে ছেড়ে দেই তাহলে দ্বিতীয়বার আবারো ভুল করবি তাই আজকে তোর শাস্তি উমমম, একটু ভেবে বললো,
তুই চেয়ারে বসে ঘুমাবি।

তারপর পুনরায় ফোন হাতে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে রাযীন! দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়ে সাফিরা। এটা আজকে নতুন না এরকম শাস্তি প্রায়ই পেতে হয় তাকে! তাই আজকে আর কান্না পেল না একটু হাসিই আসলো। ভেবেছিল এর থেকেও কঠিন শাস্তি দিবে রাযীন।

আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত চারদিক। সাফিরা পড়ার টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। রাযীনের ঘুম ভেঙ্গে যায় আজানের ধ্বনি কানে পৌঁছাতে। হাই তোলে উঠে বসে, কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল সোফায় তার মানে নেই। সামনে তাকাতে দেখে সাফিরা পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। যাওয়ার সময় দরজা অনেক শব্দ করে লাগিয়ে যায়, যার ফলে সাফিরার ঘুম ভেঙে যায়। মাথা তুলে তাকিয়ে আশেপাশে দেখতে পায় রাযীন নেই। দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখে বুঝতে পারেন রাযীন মসজিদে গিয়েছে।
সাফিরা ও উঠে ফ্রেশ হয়ে অজু করে ফজর নামাজ পড়ে নেয়। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
আরাম স্থান পেয়ে নিমিষেই ঘুম চোখের পাতায় নেমে আসে।
.
.
সকাল বেলা রাযীন অফিসে যাওয়ার সময় আফরোজা বেগম বললেন,
–” তোর সাথে সাফিরা কে নিয়ে যা। ওর কলেজের পথ দিয়েই তো যাবি, নামিয়ে দিস।
রাযীন ফোনে দৃষ্টি রেখেই বলল,
–” আমরা পায়ে হেঁটে কলেজে গিয়েছি আর ওর প্রাইভেট কারে করে যেতে হবে? রিক্সা করে চলে যেতে বলো।
এই বলে বেড়িয়ে যায় রাযীন। আফরোজা বেগম মন খারাপ করে পিছনে ফিরলে দেখতে পায় ঠোঁটে হালকা হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাফিরা। আফরোজা বেগম বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলেন,
–” হাসছিস কেন?
–” তোমার কান্ড দেখে হাসবো না তো কাঁদবো? খালামনি। আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো যেন তোমার ছেলের মনে ধরে আমাকে। অথচ ফলাফল সেই শূন্যের কোঠায়। প্লিজ খালামনি এরকম করো না। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আল্লাহ ভরসা এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না আমি। তুমিও দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করো।

রাযীন গাড়িতে উঠবে তখন দেখে তামান্না গাড়িতে বসে আছে! রাযীন কে দেখে আমতা আমতা করে বলল,
–” ভাইয়া আমাকে একটু কলেজে নামিয়ে দিবেন প্লিজ?
তামান্না কে দেখে আবারো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল রাযীনের। চাপা রাগের গনগনে গলায় বলল,
–” কার পারমিশন নিয়ে গাড়িতে উঠেছিস তুই?
নাম বলছি!
তামান্না ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে যেই গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখন সাফিরা বাড়ির মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে আসে। রাযীন সাফিরা কে দেখতে পেয়ে তামান্না কে বলল,
–” গাড়িতে বস আমি কলেজে নিয়ে যাব!
তামান্না হতভম্ব হয়ে ঠিক হয়ে বসে, সাফিরা কে দেখতে পায়নি সে। তারপর রাযীন সামনে ড্রাইভারের সাথের সিটে বসলে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।
পিছন থেকে সাফিরা দেখলো রাযীন তামান্না কে তার গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার বেলায় বলল, রিক্সায় করে যেতে। যা সাফিরার মনে অনেক কষ্ট দিল। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে রিক্সাওয়ালা মামাকে হাতে ইশারা দিয়ে বলল,
–” মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালা মামা বললেন,
–” ক‌ই যাইবেন?
–” তো… কলেজ।
–” হ যামু।

এদিকে দুটো গলি পেরিয়ে গাড়ি থামিয়ে তামান্না কে নামতে বলে রাযীন! তামান্না আবারো কিছু বুঝতে না পেরে বসেই থাকে গাড়িতে। রাযীন ধমকে উঠলে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামে তামান্না।
রিক্সায় করে চলে যা বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায় রাযীন! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে রাস্তার মাঝে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে তামান্না। তার সাথে আজকে কি হচ্ছে এসব? কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল আজকে? পিছন থেকে রিক্সার হর্ন দিয়ে যাচ্ছে, তামান্না মাঝ রাস্তা থেকে সরছে না বলে রিক্সার ড্রাইভার বললেন, কি আফা আর কোন গাড়ি খুইজ্জা ফাইলেন না রিক্সার নিচে নি মারতে আইছেন?
নিজেকে সামলে নিয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তামান্না। তারপর সাফিরার কথা মনে হতেই অন্য গলিতে ঢুকে যায়। কেননা সাফিরা যদি তাকে রাস্তায় দেখতে পায় তাহলে বুঝে যাবে রাযীন তাকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। যা তার কাছে খুবই লজ্জার হবে।

কলেজে পৌঁছে ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছে সাফিরা। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো তামান্না কে কলেজ গেইট দিয়ে ঢুকতে। তামান্না আর সাফিরার ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই তামান্না তার ডিপার্টমেন্টের দিকে চলে গেল। সাফিরা মনে মনে ভাবলো রাযীন হয়তো তামান্না কে গাড়ি করে কোথাও ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল। তা না হলে সাফিরার আগে তামান্নার পৌঁছানোর কথা কলেজে।

সাফিরা ভুলে গিয়েছে কারো প্রতি কখনো খারাপ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। মানুষের প্রতি যে কোনো বিষয়ে ভালো ধারণা পোষণ করা উত্তম ইবাদতের সমতুল্য। কুরআন এবং হাদিসে মানুষের প্রতি খারাপ বা মন্দ ধারণা পোষণকে গোনাহের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ। আর তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয়ে খোঁজ নিও না। আর একজন অন্য জনের গিবত করো না। [১]
অযথা কারো প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে গোনাহগার হওয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে উপদেশই দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণাভিত্তিক কথা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা একে অপরের দোষ অনুসন্ধান করো না। আর তোমরা একে অপরের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি পোষণ করো না।

পরক্ষনেই মনে কুরআন এবং হাদিসের কথা মনে হতে নিজেকে বকা দিয়ে, মনে মনে আল্লাহ তাআলা কাছে মাফ চেয়ে নিল সাফিরা।
.
.
রাযীন আর তার কলিগ বন্ধু মিনহাজ একসাথে ক্যান্টিনে বসে। চাকরির সুবাদে দুজনে খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এক সময় মিনহাজ বলল,
–” বয়স তো কম হচ্ছে না আর কতদিন এভাবে থাকবি? হয় মেয়েটাকে ছেড়ে দে নয়তো মেনে নে! এভাবে তো আর জীবন চলবে না। মেয়েটার ও তো একটা ভবিষ্যত আছে। তোর জন্য তো মেয়েটা আটকে আছে!

রাযীন কোক পান করছিল মিনহাজ এর কথায় থেমে গিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
–” আটকে আছে মানে?

আজকে সকাল বেলা মিনহাজ যখন অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হয় তখন আফরোজা বেগম কল করে মিনহাজ কে সুপারিশ ধরে। রাযীন কে যেন সে একটু বুঝায়। তাই এসব কথা তুলে মিনহাজ।
মিনহাজ কে চুপ করে থাকতে দেখে রাযীন নিজেই বলে,
–” মেয়েটা নিজের প্রয়োজনে আমাদের বাড়িতে আছে। কেউ তাকে আটকে রাখেনি। ওর মুখের দিকে তাকালে ওর সেই ন*ষ্ট বোনের কথা মনে পড়ে যায় আমার!….

#চলবে ইনশা আল্লাহ

রেফারেন্স:-
[১] (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

পথ হারা প্রজাপতিগল্পের পর্ব-০১

0

পথ_হারা_প্রজাপতি
#Israt_Bintey_Ishaqu(লেখিকা)

চিকেনের লেগ পিস আর নান রুটি দিয়ে খুব মজা করে খাচ্ছিলো সাফিরা। হঠাৎ রাযীন এসে সাফিরার প্লেট দুটো কেড়ে নিয়ে বললো,
–” লজ্জা করে না তোর? একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ও চান্স পেলি না, অথচ এখানে বসে বসে কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছিস!

তারপর আফরোজা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল,
–” আম্মা আজকে ওর খাবার খাওয়া বন্ধ! আমি যদি শুনেছি ওরে তোমরা কেউ খাবার খেতে দিয়েছো তাহলে আমি কি করবো ভেবে দেখো!গল্পের জ্ঞ

এই বলে গটগট পায়ে প্রস্থান করলো এখান থেকে। এদিকে রাগে দুঃখে চোখের পানি টলমল করছে সাফিরার। তাই সবার থেকে চোখের পানি আড়াল করতে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই দেখলে কি ভাববে? বলবে খাবারের জন্য কাঁদছে! বিশেষ করে তামান্না যদি দেখে তাহলে উল্লাসে মেতে উঠবে তা তো সে হতে দিতে পারে না, কখনোই না।

কিছুক্ষণ পর আফরোজা বেগম দরজায় কড়াঘাত করে বলল,
–” সাফিরা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি খেয়ে নে মা!
খালামনির এই কান্ড দেখে খুব হাসি পাচ্ছে সাফিরার। একমাত্র ছেলেকে এতো ভয় পায় যে শাসন ও করতে পারে না। যদি ছেলে রাগ করে বাসা থেকে চলে যায় সে জন্য। অথচ আফরোজা বেগম কিনা স্বপ্ন দেখে সাফিরাকে তার….! সো ফানি হা হা হা!

সাফিরা দরজা খুলে তার খালামনি কে বলল,
–” একদিন না খেয়ে থাকলে আমার কিছুই হবে না খালামনি তুমি বরং এগুলো নিয়ে যাও। তুমি তো জানো আমি না খেয়ে খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন আর কোন কষ্ট হয় না।
তখন তামান্না এসে বলল,
–” মামি তুমি ভাইয়ার অবাধ্য হয়ে সাফিরাকে খাবার দিচ্ছ? ভাইয়া জানলে কি হবে ভেবে দেখেছো?

আফরোজা বেগম রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
–” সাফিরার খাবার খাওয়া বন্ধ হলে তো তোর‌ও খাবার খাওয়া ও বন্ধ তামান্না! তুই কি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিস? পাস নাই তো, তাহলে তোর মুখ দিয়ে কিভাবে কথা বের হয় লজ্জা করে না তোর?

আফরোজা বেগম এর কথায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তামান্না চলে গেল। সাফিরা ড্যাম শিউর এ কথা এক সময় না এক সময় রাযীনের কানে তুলবে তামান্না! তখন সাফিরার নাজেহাল অবস্থা করবে রাযীন! তাই আফরোজা বেগম কে সাফিরা বলল,
–” এসবের মধ্যে তুমি এসো না, তবুও কথা শুনো না আমার ভাল্লাগে না।
এই বলে দরজা লাগিয়ে বেডে গিয়ে বসে নিজে নিজে রাযীনের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করলো। তারমধ্যে একটা হাস্যকর কথা বলল,
যেমন তার নাম তেমন তার ব্যবহার আর দেখতেও। “রাযীন” অর্থ- গম্ভীর্যশীল।
. কেন যে খালামনিরা উনার নাম “রাযীন” রাখতে গেল? আল্লাহ তাআলা জানেন।
এ জীবনে বোধহয় এই লোকটার থেকে আমি ছাড়া পাবো না
.
বিকাল বেলা,
সাফিরা ঘুমিয়ে ছিলো দরজার ঠাসঠুস শব্দে ঘুম ছুটে দৌড়ে পালাতে বাধ্য হলো। আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে দেখে রাযীন কতো গুলো মোটা মোটা ব‌ই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভিশন বিরক্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সাফিরা। কিন্তু রাযীন এক ধমক দিয়ে বলল,
–” তোর চেহারা দেখতে এখানে এসেছি আমি? ব‌ই গুলো ধর?
সাফিরা হাতে নিতে,
রাযীন বলল,
–” ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বস, আমি আসছি পড়াতে!

সাফিরা কিছু না বলে চুপচাপ ব‌ইগুলো টেবিলে ধিরাম করে রাখে। পিছন থেকে রাযীন বলে উঠে,
–” ব‌ই’কে যত্ন করিস না বলেই আজকে তোর এই দশা। আজকে যদি পড়া না পারিস তাহলে দেখবি তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে!

অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসে সাফিরা রাযীন এখনো আসেনি। সাফিরা ব‌ই গুলো উল্টে পাল্টে দেখে বড় করে ঢোক গিলে। কারণ সব কেমন কঠিন লাগছে তার কাছে। বিশেষ করে হিসাববিজ্ঞান বিষয়টি, এতো দিন বাংলায় অঙ্ক করে এসেছে আর এখন কিনা সব ইংরেজিতে করতে হবে! সে মনে করে এই একটা বিষয় তার জীবনকে তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বে তা আর বুঝতে বাকি নেই।

রাযীন শুকনো কাশি দিয়ে রুমে এসে সাফিরার মুখোমুখি চেয়ারে বসে বলল,
–” এখন একাউন্টিং সাবজেক্ট টা বের কর। প্রথমে জাবেদা গুলো ইংরেজিতে শিখবি। তারপর অঙ্কে যাবো।

এদিকে সাফিরার মাথা ঘুরছে যেই ইংরেজিকে সে বরাবরই ভয় পেয়ে এসেছে সেই ইংরেজি এখন তার প্রাণপ্রিয় হিসাববিজ্ঞানে ঢুকে গেলো! এটা মেনে নিতে পারছে না সে, এমনিতেই সারাদিন ধরে না খেয়ে আছে। তার উপর এই নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অচিরেই সে চেয়ার থেকে ধপাস করে নিচে পরে গেল!
.
বেশ কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রাযীন রাগি মুখশ্রী করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাফিরা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বলল,
–” ভাইয়া আমি আর পড়বো না। খালামনি কে বলো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে!
বলতে না বলতেই রাযীন তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলল,
–” একটা থাপ্পড় দিয়ে বিয়ের ভুত মাথা থেকে ছাড়িয়ে দিব। কতোবার বিয়ে করার শখ তোর?বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। লজ্জা করলো না নিজের মুখে বিয়ের কথা বলতে?

এতো বড় ধমক খেয়ে হুশ ফিরল সাফিরার, মনে মনে বলে,
–” আমি কার কাছে কি বলে ফেললাম হায় আল্লাহ! এখন এগুলো বলে আমায় কথা শুনাতে ছাড়বেন না ভাইয়া।

সাফিরার ভাবনার মাঝে রাযীন বলে,
–” হাঁ কর!

সাফিরা চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। স্বপ্ন দেখছে কিনা সেটাই ভাবছে। না হয় কি এই দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে? এর মধ্যে রাযীন ধারাজ গলায় বলল,
–” চোখ দুটো দিয়ে কি ভষ্ম করে দিবি নাকি! এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি খেয়ে নে, এরপর পড়তে বসবি।
সাফিরা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে চুপচাপ খাবার খেয়ে নিল।
.
.
ঘরির কাঁটায় রাত দুইটা বেজে দুই মিনিট। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছে সাফিরার চোখ দুটো। কিন্তু রাযীনের জন্য ঘুমাতে পারছে না। অসহায় মুখে একবার ঘড়ির দিকে তো আরেকবার বিছানার দিকে তাকায় সাফিরা। সাফিরা পড়া শুনতে না পেয়ে রাযীন মোবাইল ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সাফিরাকে বলল,
–” কিরে তোর পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছি না কেন?

সাফিরা আর থাকতে না পেরে অসহায় ভাবে বলল,
–” ভাইয়া আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, সকাল সকাল উঠে আবার বাকি পড়াটা কমপ্লিট করব।

রাযীন সময় দেখে বলল,
–” আর ত্রিশ মিনিট পড়। ততোক্ষণে আমার অফিসের কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
–” আমার রুমেই কাজ কমপ্লিট করতে হবে? তোমার রুমে গিয়ে করলে কি সমস্যা? আমার এখন বোর্ড পরীক্ষা চলছে না যে রাত জেগে এভাবে পড়াশোনা করতে হবে। আর মানতে পারছি না তোমার এই অত্যাচার! আমাকে একটু শান্তি দাও।

এতটুকু বলে মুখ চেপে ধরে সাফিরা। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে মাথা আউলা ঝাউলা হয়ে গেছে তার, তা না হলে বাঘের মুখে দাঁড়িয়ে এমন সাহসীকতা দেখায় সে?
এদিকে ফোন বন্ধ করে কটমট করে এগিয়ে আসে রাযীন!…..

#চলবে?

অলৌকিক পর্ব-০২ এবং শেষ পর্ব

0

অলৌকিক
শেষ অংশ।

শুক্রবার বিকেলে রাকিব ভাই সহ মিলিদের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। দোতলা ছিমছাম একটা বাড়ি। দোতলা পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি। বাড়ির সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানে একপাশে ছোট একটা ফুলের বাগান। আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়ালের চারপাশ ধরে নানান রকম ফলের গাছ। দোতলা এখনো কমপ্লিট হয়নি। দুটো ঘরের কাঠামো তুলে রাখা হয়েছে।
আসার পথেই মিষ্টি কিনে এনেছি। সেগুলো একটা কমবয়সী মেয়ে এসে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেছে। বসার ঘরে মিলির বাবা আর বড় ভাই আছেন। আমাকে টুকটাক প্রশ্ন করলেন।

তা বাবাজি বাড়ি কোথায় আপনার?

জ্বী বরিশালে।

চাকরি যেন কোথায় করেন।

আমি কোম্পানির নাম বললাম।

এটার অফিস কোথায়?

গাজীপুরে।

বাবাজি যেন কি পাস দিছেন?

বি,এ পাস করেছি।

মাশাআল্লাহ।

বাড়িতে কে কে আছেন?

কাছের বলতে তেমন কেউ নাই। এক দূর সম্পর্কের মামা আছেন। দাদী আর চাচারা আছেন। খুব একটা যোগাযোগ নেই।

আচ্ছা।

কথাবার্তার এই পর্যায়ে মিলি ঢুকল শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে।

আসসালামুআলাইকুম।

রাকিব ভাই জোরে সালামের উত্তর দিলেন।

ওয়ালাইকুমুস সালাম।

মিলির কন্ঠস্বর ভীষণ মিষ্টি। যেন রিনিঝিনি করে কাঁচের চুড়ির আওয়াজ তুলছে।

আমি মুখ তুলে মিলির দিকে তাকালাম।

বড় করে ঘোমটা টানা। চেহারা দেখা যাচ্ছে না।

মিলির এক ভাবি ঢুকল পেছনে পেছনে। উনি মিলি বসার পর পেছন থেকে ঘোমটা একটু টেনে মুখটা বের করে দিলেন।

রাকিব ভাই বললেন,

মাশাআল্লাহ।

আমি হা হয়ে গেলাম।
এতো সুন্দর দেখতে কোনো মানুষ হয় নাকি!এই মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেবে এনারা?

ভাবি বললেন,

আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।

রাকিব ভাই বললেন,

আপনার পুরো নামটা যেন কি?

মোছাঃ শাহরিন মিলি।

সুন্দর নাম।

রাকিব ভাই আমাকে বললেন,

ভাই কিছু জানতে চাইলে বলেন।

আমি রাকিব ভাইকে বললাম,

আমার তেমন কোনো প্রশ্ন নাই।

মিলি ওর ভাবির কানে কানে কি যেন বলল।

উনি বললেন,

আপনারা বরং নিজেরা একা কথা বলুন।

আমাকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছুক্ষণ পরেই মিলি এলো।

আপনি ভালো আছেন?

জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

আলহামদুলিল্লাহ।

আমার সম্পর্কে সবকিছু জানেনতো?

জ্বি শুনেছি।

আপনার বিয়েতে আপত্তি নেই?

নাহ। অতীত নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আপনি হয়তো আমার সম্পর্কে সবটা জানেন না। আমি খুব সাধারণ পরিবারের ছেলে। ছোটখাটো একটা চাকরি করি। গাজীপুরে একটা একরুমের বাসায় ভাড়া থাকি। আমার সম্পত্তি বলতে কিছু নাই,মানে জমিজমার কথা বলছি। আপনি বিয়েতে রাজীতো?

আমার আপত্তি নেই।

তাহলে দিনতারিখ ঠিক করে ফেলি?

জ্বি, বাবার সাথে কথা বলুন।

সাতদিনের মধ্যে মিলির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো। মিলিকে নিয়ে উঠলাম আমার একরুমের ছোট্ট বাসায়।

বাসর রাতে মিলি আমাকে বলল,
আপনি আমাকে বিয়ে করলেন, আপনার ভয় নাই?

কিসের ভয়।

এই যে আমার সাথে জ্বীন থাকে এটা জেনেও বিয়ে করলেন।

এসব জ্বীন ভুত কখনো মানুষের সাথে থাকে না। এসব আমি বিশ্বাস করি না।
হিহি।
হাসছেন কেনো, হাসির কিছু বলিনি।
আমার সাথে কিন্তু আসলেই জ্বীন আছে।

আচ্ছা ডাকুন আপনার জ্বীনকে। উনিও তো আমাদের সাথেই এ বাসাতে থাকবেন আজ থেকে। আমার সাথে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেন।

আপনি বিশ্বাস করলেন না। কিন্তু সবাই বিশ্বাস করে।

এই পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ। এক একজন একেকরকমের মতে বিশ্বাস রাখে। তাদের বিশ্বাস তো আর আমি বদলাতে পারবো না।

আমার আগের স্বামী কিন্তু বিয়ের পরদিন মারা গেছে।

শুনেছি।

কিভাবে মারা গেছে শুনবেন?

এসব কথা থাক। আপনি এখন ঘুমান। ক্লান্ত দেখাচ্ছে আপনাকে। ঘরটা ভীষণ এলোমেলো। একটাই ঘরতো। রান্না খাওয়া সব এখানে। আপনার কষ্ট হবে এভাবে থাকতে।

আমার কষ্ট হবে না। আমি গুছিয়ে ফেলব।

একটা কথা বলব?

জ্বি বলেন।

আপনি এতো সুন্দর, এতো সুন্দর কোনো মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে কখনো ভাবিনি।

মিলি আমার কাছে সরে এসে বলল,

আপনিও সুন্দর। এখন গলার হারটা খুলে দিনতো। এসব খুব ভারি লাগছে।
মিলি তার মাথায় দেয়া লাল ওড়না সরিয়ে আমার দিকে পেছন ফিরে বসল। আমি কাঁপা হাতে ওর গলারটা খুলতে চাইছি। কিছুতেই খুলছে না। মিলি খিলখিল শব্দে হাসছে। আমি সাহস করে ওর ঘাড়ে আমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। ও আমার দিকে ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল।

মিলি আমার ছোট্ট এক রুমে খুব সুন্দর করে সংসার পাতলো। ঘরের একপাশে সুন্দর একটা কাপড় রাখার আলনা রাখল। আরেকপাশে ছোট একটা মিটসেফে রান্নার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখল। সাইড টেবিলে সুন্দর একটা ঘড়ি রেখেছে। ঘড়িটার নীচের দিকে একটা ছেলে একটা মেয়েকে পেছন থেকে জড়িয়ে আছে। খাটের পাশের টেবিলেটায় বেশ কিছু গল্পের বই রাখল। ওগুলো ও বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছে সাথে করে।

মেয়েটা দারুণ গোছানো। নিজেও পরিপাটি থাকে। ওকে দেখলে মনে হয় না ওর মধ্যে অশুভ কিছুর বাস আছে।

মিলির অস্বাভাবিকতা প্রথম ধরা পড়ল একদিন রাতে। আমি আর মিলি বসে আছি। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলো। মিলি বলল,

মোমবাতি আছে?

হুম, আমি আনছি,তুমি বসে থাকো।

আমি উঠে গেলাম ম্যাচ আর মোম আনতে। হাতরে হাতরে এগোচ্ছি। হঠাৎ মিলি বলল,

বায়ে সরে যান। দরজা বা দিকে।

আমি একটু বা দিকে সরে এগোলাম। তারপর থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মিলি কিভাবে দেখছে সারা ঘরতো ঘুটঘুটে অন্ধকার।

তুমি আমাকে অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছো ?

হুম,আমি অন্ধকারে দেখতে পাই।

ও মিথ্যা বলেনি। মিলি অন্ধকারে দেখতে পায়,অনায়াসে হাঁটা চলা করতে পারে। এমনকি তরকারি কাটা ,খাবার বাড়া এসব টুকটাক কাজ আলো ছাড়াই করে ফেলে। ও মাঝে মাঝেই অকারণে হিহি করে হাসে। একা একাই কথা বলে। আবার হঠাৎ হঠাৎ মন খারাপ করে থাকে।

যখন ওর মন খারাপ থাকে তখন আমার সাথে তেমন কথা বলে না। ওর চোখ ফোলা থাকে। আমি বুঝি ও লুকিয়ে কান্না করেছে।

যেই আমি এসব জ্বীন, ভুত, জাদুটোনা বিশ্বাস করতাম না সেই এখন মাঝে মাঝে ভাবি সত্যি কি মিলির সাথে খারাপ কিছু আছে?

একদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে দেখি ও অসময়ে শুয়ে আছে। আমি বুঝলাম ওর মন খারাপ। কারণ আমার সাথে কোনো কথা বলেনি। উঠে চুপচাপ খাবার বেড়ে দিয়েছে।

আমি বললাম,

তোমার মনখারাপ?

হুম।

আমাকে কারণটা বলা যায়?

আপনি তো বিশ্বাস করবেন না।

আচ্ছা বলো, বিশ্বাস করব।

মিলি আগ্রহ নিয়ে পা গুছিয়ে আরাম করে বসল। যেন কোনো মজার রুপকথার গল্প বলবে।

আমার না একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। আমি মাঝে মাঝে মানুষের অতীতের বিশেষ কোনো ঘটনা বলতে পারি।

কিভাবে পারো। তোমার সাথে থাকা জ্বীন বলে দেয়?

হি হি হি।

হাসো কেন?

আচ্ছা হাসবো না। শোনেন,জাফর লোকটা কিভাবে মারা গেলো বলি।

আমি আজ আর না করলাম না।

আচ্ছা বলো।

মিলি এমনভাবে বলছে যেন খুব স্বাভাবিক কোনো ঘটনা।

লোকটা বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে সোজা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। লোকটার মুখ থেকে একটা বাজে গন্ধ আসছে। হয়তো নেশা করেছে। আমার দমবন্ধ লাগতে শুরু করল। বলা নেই, কওয়া নেই এভাবে অচেনা কেউ জড়িয়ে ধরলে কেমন লাগে বলুন?

হুম, খারাপ লাগারই তো কথা।

হঠাৎ আমার মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। আমি গরগর করে বললাম,মানে কেউ একজন বলিয়ে নিলো, জলজ্যান্ত মেয়েটাকে মেরে ফললেন,আর কেউ কিছু জানলো না।

লোকটা ছিটকে সরে গেল। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।

আমি বলেই গেলাম,

আপনি ওর পরিচিত। ওর সাথে বাজে কাজ করেছেন। ছেড়ে দিলে সবাইকে বলে দিতো তাইনা!

জাফর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

কিসব উলটা পালটা বকতেছো।

সারারাত অত্যাচার করে তারপর গলা টিপে মেরে বস্তায় করে ভোররাতে সোজা নদীতে। লাশ কোথায় ভেসে চলে গেলো । কেউ কিছু টের পেলো না।

জাফর দাঁড়িয়ে টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে খেলো। তারপর বিস্তারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। এতো বছর আগের ঘটনা আমি কিভাবে হরহর করে বলে দিচ্ছি তাই ভেবে ঘামতে শুরু করল। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

আজকে আমাদের বাসররাত। আর তুমি ভয় দেখাইতেছো কেন?

আমি হি হি করে হেসে ফেললাম।

ঘটনাতো সত্য। সত্যি কিনা বলেন।

তোমার মাথায় গন্ডগোল আছে।

তারপর বাইরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বাইরে হৈচৈ কান্নাকাটি। জাফর স্ট্রোক করেছে।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।

এসব বলে তুমি কি মজা পাও মিলি। জাফর লোকটার হয়তো প্রেশার হাই ছিল। বিয়ে বাড়ির টেনশন,রিচ ফুড খাওয়া,তার ওপর নেশা করা এসব কারণে স্ট্রোক করেছিল।

মিলি আহত চোখে তাকাল।

আপনি বিশ্বাস করেন নাই তাইতো।

হুম। আমাকে বলছ বলছ,আর কাউকে এসব বলবা না ঠিক আছে?

হুম।

মিলি আর ওসব বলেনি। কিন্তু আমি কিভাবে কিভাবে যেন এই বিষয়টা মাথা থেকে সরাতে পারলাম না। মিলিকে আমার একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করল। ও যখন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু খোঁজে আমার ভয় করে। আমি মনেপ্রাণে বলতে থাকি মিলি যেন আমার অতীত বলতে না পারে। ওকে আমি আর ভয় পেতে চাই না।

বিয়ের ছয়মাসের মাথায় সুখবর পেলাম। মিলি মা হতে চলেছে। খুশিতে আমার চোখে পানি চলে আসল। কেউ না থাকা আমার একজন রক্তের কেউ আসবে। আমার সন্তান। মিলির প্রতি আমার ভীষণ খেয়াল রাখতে হয়। ও খুব অনিয়ম করে। একা একা থাকতে খারাপ লাগে ওর।

একদিন আমার শশুর এসে মিলিকে নিয়ে গেলেন। এ সময় নাকি মেয়েদের মায়ের কাছে থাকতে হয়। নিয়মিত চেক আপ করাও হলো। ডাক্তার বললেন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। কিন্তু মিলির ব্যথা উঠলো ডেটের দেড়মাস আগেই। প্রচন্ড ব্যথা হলো সারারাত। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হলো না। কিসব জটিলতা দেখা দিলো। শেষে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিলেন সিজার করার। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগে মিলি আমাকে ডেকে বলল,

আপনার কোনো দোষ নাই। বাচ্চাটা দৌড়ে আপনার বাইকের সামনে চলে আসছিল। আপনি নিজেকে অপরাধী ভাববেন না।

আমি কেঁপে উঠলাম। সেই কলেজ জীবনের ঘটনা। মামার বাইক নিয়ে বাজারে গেছি। মামির একটা ঔষধ গ্রামের ঔষধের দোকানে পাচ্ছিনা। তাই মামা তার বাইক দিয়ে উপজেলায় পাঠালেন। মামা দোকানে ব্যস্ত। ঔষধ নিয়ে ফেরার পথে বকখালির মোড়ে গাড়ি ঘুরিয়েছি মাত্র একটা পাঁচ বছরের বাচ্চা হুট করে দৌড় দিয়ে এসে পড়ল বাইকের সামনে। তারপর ছিটকে একপাশে পড়ে গেল। আমি ব্রেক কষে দাঁড়ালাম । বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিতে হবে। কিন্তু পেছনে ফিরতেই দেখলাম কিছু মানুষ হৈ করতে করতে ছুটে আসছে।

ধর ধর ধর,শালাকে পুঁতে ফেলব আজ।

খুব ভয় পেয়েছিলাম। জোরে বাইক টেনে চলে এসেছিলাম। পরে খবর পেয়েছি বাচ্চাটা মারা গেছে। আমি চুপ করে থাকলাম। কাউকে কিছু জানাইনি। কিন্তু সেই দহন আজো আমাকে তাড়া করে। কিন্তু এই কথা মিলি কিভাবে জানল!

একজন ইন্টার্ন ডাক্তার এসে জানালো রক্ত রেডি রাখতে। মা আর বাচ্চা দুইজনের কন্ডিশন ক্রিটিকাল।
সব চিন্তা ছেড়ে দিয়ে খোদাকে ডাকলাম।

খোদা আমার মিলির আর বাচ্চাটার যেন কিছু না হয়।

ডাক্তাররা চেষ্টা করল কিন্তু মিলিকে বাঁচাতে পারলো না। আমার কোলে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান আর কিছু অমিমাংসিত প্রশ্ন দিয়ে মিলি চলে গেলো ওপারে।

**

রুজাইফার বয়স এখন দশ চলে। আমাদের বাপ বেটির সংসার বেশ কেটে যাচ্ছে। রুজাইফা দেখতে ঠিক মিলির মতো হয়েছে। আমার মুখে ও ওর মায়ের গল্প শোনে। আমি যখন মিলির কথা বলি ওর চোখেমুখে একটা আলো ছড়িয়ে পড়ে। মাকে যেন ও দেখতে পাচ্ছে।

আমরা এখন নিজেদের বাড়িতে থাকি। চাকরি ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। রুজাইফাকে বড় করতে গিয়ে চাকরি করা হয়নি। ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন নিজের দোকান আছে।

রুজাইফাকে ওর নানা নানী নিজেদের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওকে ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে। তাই নিজেই ওকে লালনপালন করছি।

কয়দিন হয় আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন এক পরিবার উঠেছে। সেখানে প্রায়দিন একটা বাচ্চা ছেলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে আর বলে,

আমাকে ছেড়ে দাও,আর মেরো না। আর ভুল করবো না।

খোঁজ নিয়ে জানলাম ছেলেটার নিজের মা নেই। চার পাঁচ বছর বয়স হবে। বাবা আবার বিয়ে করেছে। সৎমাটা ছেলেটাকে দুই চোখে দেখতে পারে না।

রোজ রোজ কান্না শুনি। ভীষণ মায়া হয়। একদিন বাইরে লোকটার দেখা পেয়ে বলেই ফেললাম,

এতটুকু একটা ছেলেকে আপনার ওয়াইফ এভাবে পেটায়,এটাতো ঠিক না।

লোকটা চটে উঠল,

আরে মশাই,এটা আমার পারিবারিক বিষয়। আপনি কথা বলার কে? মা ছেলেকে শাসন করে না! সৎ মা বলেই খারাপ লাগছে। নিজের মা হলে কেউ কিছু বলতো না।

আর কি বলব। মনখারাপ হয়ে গেল। আহারে বাচ্চা ছেলেটা।

একদিন বাজার করে ফিরছি। রুজাইফাও আছে। বাসায় ঢুকতে যাব। দেখলাম সিঁড়ির গোড়ায় ছেলেটা মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রুজাইফাকে চকোলেট কিনে দিয়েছিলাম। ও ছেলেটাকে বলল,

চকোলেট খাবে?

উহু।

আরে নাও। কিছু হবে না। আমার ভাই থাকলে ওকেতো চকোলেটের ভাগ দিতাম।

ছেলেটা চকোলেট হাতে নিলো। ওর মুখটায় হাসি ফুটে উঠল। হঠাৎ ওর মা এসে হাত থেকে চকোলেট কেড়ে নিয়ে মারতে শুরু করল।

ফকির কোথাকার। এখন মানুষের থেকে চেয়ে খাওয়া শুরু করছিস। কি দেখাচ্ছিস, তোকে খেতে দেইনা।

আমি হতচকিত হয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখলাম রুজাইফা একপাশে সরে গিয়ে চোখ বড় বড় করে মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মাথার দুপাশের রগ ফুলে উঠেছে। তারপর অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল। মহিলা হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বসে পড়ল। আর্তনাদ করতে থাকল,

উফ! মরে গেলাম। কেউ যেন কলিজাটা খামচে ধরেছে।

কিছু সময় পর রুজাইফার মুখ স্বাভাবিক হলো। ও হাসছে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম ওকে এখন ঠিক মিলির মতো দেখতে লাগছে।

(সমাপ্ত)

অলৌকিক পর্ব-০১

0

গল্প
অলৌকিক

আমার ওয়াইফ মিলিকে আজকাল আমার একটু ভয় ভয় লাগে। এই ভয় আগে ছিলো না। নতুন হয়েছে। বিয়ের আগেও শুনেছিলাম মিলির ওপর জ্বীনের আছর আছে। সেই জ্বীন চায় না মিলির কারো সাথে বিয়ে হোক। এজন্যই মিলির প্রথম স্বামী বিয়ের পরদিন স্ট্রোক করে মারা যায়। আসলে স্ট্রোক একটা উছিলা, ঐ জ্বীন মিলির বরকে মেরে ফেলেছিলো। নাহলে সুস্থ সবল মানুষ কেনো হঠাৎ বিয়ের রাতে স্ট্রোক করতে যাবে।

অনেকেতো নাকি এটাও বলত যে মিলির সাথে ঐ জ্বীন নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক করে। মিলির পেটে ঐ জ্বীনের বাচ্চাও ছিল। সেটা পরে মিলি নষ্ট করেছে। এসব আমি শুনেছিলাম মিলির সাথে আমার বিয়ের কথা যখন চলছিলো সে সময়।

আমি অবশ্য এসব জ্বীন ভুতে বিশ্বাস করি না। তাইতো এসব কথায় কান না দিয়ে মিলিকে বিয়ে করেছি। তবে এখন মাঝে মাঝে ওকে আমার ভয় লাগে।

আমার পরিচয় দিয়ে নিই। আমি মোকাদ্দেস। গরীব পরিবারের ছেলে। অবশ্য পরিবার বলতে তেমন কেউ নেই আমার। মা বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন লঞ্চ ডুবিতে। আমার দাদা বাড়ি ছিলো বরিশাল। আমরা থাকতাম ঢাকায়। বাবা একটা ছোট চাকরি করতেন। একবার আমার দাদি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নানিমা সেসময় আমাদের দেখতে ঢাকায় এসেছেন। চার বছরের আমাকে নানির কাছে রেখে মা আর বাবা গেলেন বরিশালের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর আগেই লঞ্চ ডুবিতে মারা যান দু’জনেই।

সেই থেকে নানির কাছে রয়ে গেলাম। সেই নানিও মারা গেলেন আমার চৌদ্দ বছর বয়সে। আমার মা ছিলেন নানির একমাত্র সন্তান। তাই কাছের বলতে আর কেউ রইলোনা । দাদী অসুস্থ মানুষ,থাকেন চাচাদের সংসারে। আমাকে রাখবেন কিভাবে। নানী মারা যাবার পর দূর সম্পর্কের এক মামার কাছে থেকে এস এস সি পাস করে ঢাকা চলে আসি। এখানে এসে টিউশনি করে, মানুষের দোকানে কাজ করে বি এ পাস করেছি। এখন একটা বিস্কিট কোম্পানির কেরানির পোস্টে চাকরি করছি।

বিয়ে থা করার কথা ভাবতে ভাবতে বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেছে। আসলে আমার জন্য যে মেয়ে দেখবে এমন কাছের কেউ নেই। একরুম আর বারান্দাওয়ালা একটা বাসায় একাই থাকি। নিজেই রান্না করে খাই। কেরোসিনের চুলায় ভাত, আলু সিদ্ধ,ডিমভাজি করে খাই। মাঝে মাঝে বাইরে হোটেলেও খেয়ে নিই যখন রান্না করতে ভালো লাগে না। তো একদিন অফিস থেকে ফিরে ভাত রাঁধতে গিয়ে মার পড়ে হাত পুড়ে গেলো। পরদিন অফিসে গেলে আমার কলিগ রাকিব ভাই বললেন,

এভাবে কি চলে নাকি মিয়া, এবার একটা বিয়েশাদী করে ফেলেনতো।

আমাকে মেয়ে দেবে কে?

কি যে বলেন। এই দেশে মেয়ের অভাব আছে নাকি। আপনি শুধু হ্যা বলেন।

আমি কি বলব । শুধু হাসলাম,যার মানে দেখেন।

খুব সুন্দর একটা মেয়ে আছে। সিনেমার নায়িকাদের মতো দেখতে। বাবার অবস্থাও ভালো। দেখলেই পছন্দ হবে আপনার।

এমন মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেবে?

কথাতো এইখানেই ভাই। আপনাকে খুলেই বলি তবে। বিয়েশাদীর ব্যাপার। লুকিয়ে রাখা ঠিক হবে না। মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সংসার হয়নি একদিনও।

আমি একটু দমে যাই।

ওহ। একদিনো সংসার হয়নি কেনো?

ছেলেটা বিয়ের রাতেই মারা যায়। স্ট্রোক করেছিল।

ইশ! খুব দুঃখজনক ঘটনা।

হুম আরও দুঃখজনক হলো এই ঘটনার পর সবাই ভাবতে শুরু করল মেয়েটার কোনো দোষ আছে। অলক্ষুনে মেয়ে আরকি। ওর জন্য বরটা মারা গেছে।

এমন আবার হয় নাকি এখনও। এসব কুসংস্কার এখন কেউ মানে?

আপনার যা কথা! হয় মানে। অহরহ হচ্ছে। কত বিচিত্র কারণে যে মেয়েদের বিয়ে ভাঙে। এই যে এই মেয়েটার আর বিয়েই হচ্ছে না। পাত্র পক্ষ আসে,দেখে পছন্দ করে কিন্তু এসব কথা শোনার পর বিয়ে ভেঙে দেয়।

এটাতো ঠিক না। জীবন মৃত্যু সব খোদার হাতে। কে কখন মারা যাবে কেউ বলতে পারে না। এই যে আমি আপনার সাথে কথা বলছি, এখুনি আমার মৃত্যু হতে পারে। সেখানে আপনার তো কোনো হাত নেই।

আপনি এভাবে ভাবছেন কিন্তু সবাইতো এমন করে ভাবতে পারে না। আপনাকে একটু হলেও চিনি বলেই এই মেয়ের কথা বললাম। মেয়ের বাড়ির লোকজন মেয়েটাকে নিয়ে ভীষণ টেনশনে আছে। বিবাহযোগ্য মেয়েকে আর কতদিন ঘরে রাখবে। আপনি দেখেন। মেয়ে যদি পছন্দ হয়তো কথা ফাইনাল করব। পছন্দ না হলে আরও মেয়ে আছে।

আমার একটু আগ্রহ হলো। মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। মেয়ে নাকি ভীষণ সুন্দরী। সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ সব মানুষেরই কম বেশি আছে। আমিও এর বাইরে না। আর তাছাড়া আমার যেহুতু এসব কুসংস্কার নিয়ে মাথাব্যথা নাই তাই বললাম,

এই মেয়েটাকেই দেখি তাহলে।

আচ্ছা আমি ডেট ঠিক করে জানাব। মেয়ের বাসায় কথা বলে নিই।

পরদিন অফিসে যেতেই রাকিব ভাই বললেন,

ভাই তৈরি থাইকেন। আগামী শুক্রবার মেয়ে দেখতে যাব।

(চলবে)