Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2414



আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৯

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি যতো দিন যাচ্ছে আমার প্রতি যেন ওর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে ইদানীং আমারো কেন যেন মনে হয় আমিও তাসিন কে ভালোবাসি কিন্তু অবনী….
তাসিন: কি হলো দূরে সরে গেলে কেন
–অবনী যদি জানতে পারে তোমার উপর রাগ করবে
–(ও কিছু না বলে চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলো)

দুজন বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি
আমি: আজকে কলেজে যাওনি কেন
তাসিন: তুমি আসবে তাই
–আমি যে আসবো তুমি জানতে
–তুমি কখন কোথায় যাও বা যাওয়ার প্ল্যান কর সব আমি আগে থেকে জানি তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে
–কি রকম
–একবারো ভাবনি আমার অনুমতি ছাড়া হোস্টেল থেকে বেরিয়েছ কিভাবে
–তাই তো
–আমি অনুমতি দিয়ে রেখেছিলাম আর তুমি হোস্টেল থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত আমার দুজন লোক তোমার পিছু পিছু এসেছে তুমি লক্ষ করনি
–মানে কি তুমি আমার পিছনে…..
–আমি জানি তোমার নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই তাই তোমার নিরাপত্তার জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও আমাকে এত্তো ভালোবাসে)
–অরনী জানি তুমি প্রমানের জন্য এসেছ আব্বুকে একটু সুস্থ হতে দাও প্লিজ কথা দিচ্ছি আমিই প্রমান এনে দিব
–হুম

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম, বসে বসে গেমস খেলছি
–অরনী পায়েলটা খুব সুন্দর যাই বলিস ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে
–তাহলে অবনী
–(নিশ্চুপ)
–মেয়েটা কাল যা ইচ্ছে তাই বললো তাও তাসিন চুপ করে ছিল
–বাদ দে না
–উহু বাদ দিবো না আমি আর ক্লাসেই যাবো না
–দুর ভাইয়া তোকেই ভালোবাসে নাহলে কি নিজ হাতে পায়েল পরিয়ে দিত
–এখনো আমাদের ডিভোর্স হয়নি তাই বউ যেহেতু পায়েলটা দিয়েছে
–তুই যে কি
–আমি অরনী হিহিহি
–হাসি বের হবে ভাইয়া কে যখন হারাবি তখন
–ওকে

চার দিন কেটে গেলো এই চার দিনের মধ্যে একদিনও ক্লাসে যাইনি, আশ্চর্যের বিষয় হলো যে তাসিন আমাকে পড়া চুরি করতে নিষেধ করে সে তাসিন চারদিনের মধ্যে একবারো জানতে চায়নি কেন ক্লাসে যাচ্ছি না জানবে কিভাবে ও তো চার দিনের ভিতরে একবারো ফোন দেয়নি, অবশ্য এটাই এখন স্বাভাবিক অবনী আছে না, সবাই বলে তাসিন আমাকে ভালোবাসে এখন দেখেছ ওর ভালোবাসার নমুনা
–অরনী তোর ফোন বাজছে
–কে
–ভাইয়া
–চারদিনে ইচ্ছে হয়েছে
–কোনো সমস্যা ছিল মনে হয়
ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি রিসিভ করবো নাকি কেটে দিবো, ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো একটু পর মেসেজটোন বেজে উঠলো “অন্নি প্লিজ ফোনটা রিসিভ করো প্রয়োজন আছে” তারপর সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো, আল্লাহ জানেন কিসের প্রয়োজন রিসিভ করলাম
–অন্নি প্লিজ একটা হেল্প করবে
–কি
–আমাদের তো ডিভোর্স হয়েই যাবে ডিভোর্স এর আগে নাহয় একটু হেল্প করো
–বলবা তো কি
–অবনীর খুব ইচ্ছে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে কিন্তু সাথে আমাকে যেতে হবে
–তো যাও এখানে আমার কি করার আছে
–বাসায় কি বলবো তুমি যদি আমাদের সাথে যেতে
–মানে কি
–বাসায় বলবো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি তাহলে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না তোমাকে ছাড়া গেলে তো বুঝই
–তাই বলে…
–অন্নি প্লিজ তুমি চাইলে শিলা কে সাথে নিয়ে যেতে পারো
–ভেবে দেখি
–প্লিজ অন্নি না করো না
–হুম রাখ এখন
ইসস প্রেম করতে যাবে ওরা আর আমি পাহারাদার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার
–কিরে অরনী কি বিড়বিড় করছিস
–শিলা কক্সবাজার যাবি
–সত্যি নিয়ে যাবি উফফফ আমার অনেক ইচ্ছে কক্সবাজার যাওয়ার
–আমি তোকে নিয়ে যাবো কিভাবে আমাকেই তো যেতে হবে পাহারাদার হিসেবে
–মানে
–তাসিনের অবনী কক্সবাজার যেতে চায় তাসিন বাসায় কি বলে যাবে তাই সাথে আমাকে যেতে হবে আর আমি চাইলে তোকে নিয়ে যেতে পারি
–ওয়াও অরনী প্লিজ না করিস না আমি যেতে চাই
–কি বলছিস যে মেয়ে আমাকে এতো কথা শুনিয়েছে সে মেয়ের সখ পূরন করতে আমি যাবো কক্সবাজার
–অবনীর ইচ্ছেটা বাদ দে আমার ইচ্ছেটার কথা ভাব (সত্যি তো অবনীর কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু শিলা যে যেতে চাচ্ছে)
–প্লিজ অরনী আমার জন্য হলেও চল
–ঠিক আছে যাবো
–থ্যাংক ইউ

তাসিন কে ফোন দিলাম ওয়েটিং হয়তো অবনীর সাথে কথা বলছে, একটু পর তাসিন নিজেই ফোন দিল
–অরনী সরি অবনীর সাথে কথা বলছিলাম জানো মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে আ…
–কক্সবাজার যাবো
–সত্যি
–হুম
–অবনী শুনলে খুব খুশি হবে
–আমি তোমার অবনীর জন্য যাচ্ছি না শিলার জন্য যাচ্ছি
–তুমি গেলেই হলো তাহলে আমরা আগামীকালই যাই
–এতো তাড়াতাড়ি
–হ্যা অবনীর আবদার তাড়াতাড়ি পূরন করতে চাই
–ভালো
–আমি বাসায় বলে তোমাকে জানাবো
–ঠিক আছে

আচ্ছা তাসিন যে বলেছিল ও ছোটবেলার কথা ভুলতে পারবে না আমাকে ভুলবে কিভাবে কিন্তু এখন তো তাসিন অবনী কে ভালোবাসে তাহলে কি তাসিন ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে, হ্যা ভুলাটাই তো স্বাভাবিক তাসিন তো এতোদিন মনে রেখেছে আমার তো কিছুই মনে নেই, আচ্ছা তাসিন ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে অবনী কে ভালোবাসলে আমার কি আমার তো খুশি হবার কথা তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হবে কিন্তু আমার এমন লাগছে কেন, অবনী নামটা মনে হলেই কোথাও যেন একটু কষ্ট হয় তাহলে কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি
–অরনী সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে আছিস কেন
–ভালো লাগছে না
–আমি জানি কেন
–কেন
–অরনী তোকে ছোটবেলা থেকে ভুলের মধ্য দিয়ে বড় করা হয়েছে তাই তোর ভুল ধারনা গুলো ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে এতোটাই বাড়ছে যে এই ভুল ধারনার কারনে তুই তোর ভালোবাসাটা বুঝতে পারছিস না
–(নিশ্চুপ)
–অরনী তুই ভাইয়া কে ভালোবাসিস এটাই সত্যি কিন্তু তুই ভালোবাসা বুঝতে পারতেছিস না প্লিজ অরনী এখনো সময় আছে
–হুম

রাতে তাসিন ফোন করে জানালো বাসার সবাই রাজি সকাল দশটায় যেন শিলা কে নিয়ে রেলস্টেশনে থাকি, রাতেই দুজনের ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শিলা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম

রেলস্টেশনে পৌঁছে দেখি তাসিন আর অবনী দাঁড়ানো, বাহ্ অবনী আজ তাসিনের পছন্দের নীল শাড়ি পরেছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু আমার কেন জানি এই মেয়েটা কে সহ্য হচ্ছে না, সত্যিই কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি….

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৮

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

মাঠের এক কোনে বসে বসে ভাবছি তাসিন কিসের প্ল্যানের কথা বলছিল আবার কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ওর এই কথায় হঠাৎ দেখলাম তাসিন এদিকে আসছে
তাসিন: অন্নি এই নাও তোমার ফোন
আমি: লাগবে না
তাসিন: কেন
আমি: ক্লাসে তো আমাকে না চেনার ভান করেছ আর এইটা তোমার দেওয়া ফোন তাই তুমি নিয়ে গেছ এখন আবার দিচ্ছ কেন
তাসিন: তুমি ক্লাস না করে গান শুনছিলে তাই নিয়েছি রাগ করো না প্লিজ
আমি: লাগবে না তোমার ফোন আর এখান থেকে যাও তোমার অবনী দেখলে রাগ করবে
তাসিন: সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি ফোনটা নাও শুধু
আমি: আমার ফোন লাগবে না
তাসি: তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
আমি: কোনো প্রয়োজন নেই তো কথা বলার অবনী তো আছেই
তাসিন: (নিশ্চুপ)
আমি: যাও
তাসিন: অন্নি ফোনটা নাও প্লিজ আমি অবনী কে ভালোবাসি কিন্তু তোমার সাথে….
আমি: একসাথে দুই মেয়ের সাথে কথা বলতে চাও
তাসিন: (আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে এই সুযোগে ওকে শাস্তি দেওয়া যাক আমাকে না চেনার ভান করে ফোন নিয়ে যাওয়া এবার বুঝবে ঠেলা)
আমি: নিতে পারি এক শর্তে
তাসিন: কি বলো
আমি: কান ধরে উঠবস করো আর বলো আমার গান শুনাতে কখনো ডিস্টার্ব করবা না
শিলা: অরনী পাগল হয়ে গেছিস কি বলছিস এসব এই কলেজের….
তাসিন: শিলা থামো সমস্যা নেই ওর কথায় আমি সব করতে রাজি (বলেই কান ধরে বসতে গেলো)
আমি: তাসিন আমি ফাজলামো করেছি সবাই দেখছে কান ছাড়ো
তাসিন: না
আমি: তাসিন প্লিজ সবাই হাসছে আমি ফাজলামো করেছি ফোন দাও আমি নিচ্ছি
অবনী: তাসিন কি করছ এসব (পাশে তাকিয়ে দেখি অবনী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর রাগ দেখে তাসিন কান ছেড়ে সুজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো)
অবনী: এসব কি করছিলে সবাই যে হাসছে দেখেছ ওহ বুঝেছি এই মেয়ের কথায় এসব করেছ
তাসিন: (নিশ্চুপ)
অবনী: এই মেয়ে তোমার নাহয় লজ্জা শরম নাই ও তো এই কলেজের টিচার ওকে কান ধরতে বললা কিভাবে (অবনী আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো একদমে বলে ফেললো আমি তো ফাজলামো করেছিলাম তাই বলে এসব বলবে)
তাসিন: অবনী মুখ সামলে কথা বলো অন্নি কে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলো
অবনী: পারবো না তুমি এখন আমার তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্বটাও আমার আর ওকে কখনো অন্নি বলে ডাকবা না এতো আদর করে ডাকতে হবে না চলো আমার সাথে

নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তাসিন চুপচাপ অবনীর সাথে চলে যেতে লাগলো, আবার ফিরে এসে ফোনটা শিলার হাতে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “নিজের দোষে আমাকে হারিয়েছ আর অন্য মেয়ে তোমাকে এত্তোগুলো কথা শুনানোর সুযোগ করে দিয়েছ” বলেই হনহন করে চলে গেলো, আমি মাঠে বসে পড়লাম আমি ফাজলামো করেছিলাম আর মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনালো তাসিনও মেয়েটা কে কিছু বললো না
শিলা: এখন কান্না করে কি হবে নিজের দোষেই সব হারালি
–তাই বলে মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনাবে
–মেয়েটা ভাইয়া কে ভালোবাসে তাই ওর অধিকার আছে
–হুম
–নিজের অধিকার তো নিজেই শেষ করে দিলি
–তুই থাক আমি হোস্টেলে যাই

হঠাৎ শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, হোস্টেলে এসে শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি
–রাত হয়ে গেছে উঠে পড়তে বস আর ভাইয়া অনেক বার ফোন দিয়েছিল তুই ঘুমে তাই জাগাতে বারন করেছিল এখন ফোন দে
–পারবো না
–কেন
–ওর সাথে তো আমার কোনো কথা নেই যা কথা হবার ডিভোর্স এর সময় হবে
–পাগলামি করিস না
–আমি কাল তাসিনের বাবার কাছে যাবো প্রমান চাইবো
–কিন্তু
–আর কতো অপেক্ষা করবো আর বাবা হয়তো এতোদিনে সুস্থ হয়েছেন
–ঠিক আছে

সকালে শিলা কে নিয়ে তাসিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম, কলিংবেল বাজাতেই তিথি এসে দরজা খুলে দিলো, আমাকে দেখেই জরিয়ে ধরে সবাইকে ডাকতে শুরু করলো ভাবি এসেছে ভাবি এসেছে বলে, মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে এসে হাজির, মা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন
মা: আমাদের কথা মনে পড়েছে বুঝি কতোদিন পর তোকে দেখলাম
ভাবি: তাসিন কে তো কলেজেই সারাক্ষণ কাছে পায় বাসায় এসে কি করবে আমাদের জন্য কি আর কষ্ট করে আসবে (বলেই আমাকে ধাক্কা মারলো সবাই আমাকে কতোটা ভালোবাসে আজ বুঝতে পারলাম)
আমি: মা বাবা কোথায়
মা: কেন তুই জানিস না কাল রাত থেকে তো উনি অসুস্থ তাসিন বলেনি
আমি: হ্যা বলেছিল এজন্যই তো দেখতে এসেছি (মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নেই রাতে হয়তো তাসিন বার বার এজন্যই ফোন দিয়েছিল দুর সব প্ল্যান বেস্তে গেলো আবার উনার সুস্থ হবার অপেক্ষা)

বাবার রুমে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বসা আমাকে দেখেই বাবা হাত বাড়িয়ে দিলেন আমিও গিয়ে বাবার মাথার কাছে বসলাম
বাবা: এতোদিন পর আসলি
তাসিন: আব্বু ও আসতে চেয়েছিল আমিই না করেছি ওর সামনে পরিক্ষা তো তাই (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আজো ও আমাকে ভালো সাজিয়ে দিলো)
বাবা: ঠিক আছে মা ভালো করে পড়াশুনা করবি কেমন আর বাবার জন্য দোয়া করবি
আমি: আচ্ছা

সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, তাসিন কে কোথাও দেখতে না পেয়ে আমাদের রুমে গেলাম, রুমের যা অবস্থা করে রেখেছে কিন্তু তাসিন তো রুমেও নেই হঠাৎ দেখলাম বারান্দার দরজা খুলা এগিয়ে দেখি তাসিন বাইরে তাকিয়ে আছে হাতে সিগারেট
–তাসিন
–হুম (তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলে দিলো)
–এখন তো অবনী আছে সিগারেট খাচ্ছ কেন
–(মৃদু হাসল)
–অরনী শুনো না….
–বাহ অবনীর কথায় অন্নি থেকে অরনী
–সরি ভুল হয়ে গেছে
–আগে এমন ভুল হতো না বাদ দাও আসি

রুমের যা অবস্থা এমন অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই রুম গুছাতে লেগে গেলাম, বালিশ ঠিক করতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে একটি পায়েল, পায়েল হাতে নিয়ে তাসিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি
–তুমি বাসায় নেই বালিশের নিচে পায়েল আসলো কোথায় থেকে এইটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছ আসলে সেদিন একটা কাজে এক জায়গায় গিয়েছিলাম এই পায়েলটা দেখে পছন্দ হয়েছে তাই এনেছি কিন্তু তোমাকে দেওয়ার সাহস হয়নি যদি রাগ করো
–(সত্যি কি ও অবনী কে ভালোবাসে যদি অবনী কে ভালোবাসে তাহলে ও আমার জন্য পায়েল আনবে কেন আর…)
–অন্নি প্লিজ একটি কথা রাখবে আমার
–হুম বল
–পায়েলটা তোমার পায়ে পড়িয়ে দেই প্লিজ (কি করবো বুঝতেছি না তাসিন মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে)
–ঠিক আছে

তাসিন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো খুশি হয়ে আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো তারপর খুব যত্ন করে পায়েলটা পড়িয়ে দিলো….

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৭

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

–অরনী এই অরনী
–হুম
–এতো বেলা হয়ে গেছে এখনো শুয়ে আছিস ক্লাসে যাবি না
–না ভালো লাগছে না
–ক্লাসে চল ভালো লাগবে
–না
–চল বলছি

শিলা আমাকে টেনে ঘুম থেকে তুললো, রাতে যে কখন ঘুমিয়ে ছিলাম মনেই নেই, এখন এই পাগলীর জন্য ক্লাসে যেতে হবে আমার তো মোটেও ক্লাসে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না গেলেই তো তাসিনের চেহারা দেখতে হবে কিন্তু যাওয়া লাগবে শিলার জন্য, উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম
–এই অরনী হলো তোর
–হ্যা চল
–কিছু খেয়ে নে
–ইচ্ছে নেই চল

কলেজের ভিতর ঢুকতেই শুনলাম তাসিন কে নিয়ে সবাই কি যেন বলাবলি করছে কিন্তু বিষয়টা কি বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ পিছন থেকে শিলা কে তাসিন ডাক দিলো, আমি দাঁড়িয়ে রইলাম শিলা আর তাসিন দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে অনেক দূরে যেহেতু কি কথা বলছে শুনতে পাচ্ছি না, অনেক্ষণ পর শিলা আসলো
–কিরে কি কথা বললি
–শুনলে সহ্য করতে পারবি তো
–মানে
–সবাই কি বিষয় নিয়ে বলাবলি করছে জানিস
–না তো
–কলেজে একটি নতুন মেয়ে এসেছে নাম অবনী, এই মেয়ে ভাইয়া কে প্রপোজ করেছে ভাইয়াও রাজি আজ ওদের দুজনের প্রেম হলো
–তাতে আমার কি আমি কেন সহ্য করতে পারবো না
–কলেজে যে মেয়েরা ভাইয়া কে দেখে ক্রাশ খাইছিল তারা কষ্ট পাচ্ছে আর তুই উনার বউ হয়ে বলছিস তাতে কি
–আমি ওর ছয়মাসের বউ তাও শুধু কাগজে কলমে ও প্রেম করুক বা বিয়ে করুক আমার কিছু না
–দূর তোর সাথে এই বিষয়ে কথা না বলাই ভালো
–আমিও তো এটাই বলতে চাইছিলাম এসব আজাইরা বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই
–হুম ক্লাসে চল

ক্লাসে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছি আর পা নাচাচ্ছি এইটা আমার খুব পুরনো অভ্যাস মন খারাপ থাকলে এমন করি হঠাৎ শিলা ধাক্কা দিয়ে সামনে থাকাতে ইশারা করলো, সামনে তাকিয়ে তো আমি অবাক একটি মেয়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে কিন্তু এই মেয়ের সাথে আমার চেহারার এতো মিল কেন দুজন এক জায়গায় দাঁড়ালে সবাই ভাববে আমরা দুবোন
–অরনী
–হুম
–এই মেয়ে কে জানিস
–কে
–অবনী তাসিন ভাইয়ার…
–বুঝেছি কিন্তু ওর সাথে আমার চেহারার এতো মিল কেন
–এক চেহারার মানুষ নাকি পৃথিবীতে সাতজন থাকে শুনেছি অবনী তো আর তোর মতো হুবহু না দেখতে কিছুটা তোর মতো
–তাও কেমন যেন আমার সাথে ওর চেহারা মিলে যাচ্ছে
–তোর সতিন হবে তো তাই হিহিহি
–ফাজলামো করবি না
–ওকে ক্লাস শুরু হবে হেডফোন রেখে ক্লাসে মন দে
–আর ক্লাসে মন তাসিনের ক্লাস করতে তো ইচ্ছেই হয়না আমার
–ওই উনি কিন্তু এখানে তোর টিচার নাম ধরে ডাকবি না
–হুহ

কোন কাজের শাস্তি হিসেবে যে তাসিন আমার টিচার হয়েছে আল্লাহ জানেন ওর ক্লাস করতে একদম ইচ্ছে হয়না তাই হেডফোন কান থেকে না খুলে উল্টো সাউন্ড বারিয়ে দিয়ে গান শুনতে লাগলাম সাথে তো পা নাচানি আছেই, তাসিন ক্লাসে ঢুকেই আমার কানে হেডফোন দেখে রাগি চোখে তাকালো পড়া চুরি তো ও দেখতে পারে না তাই হয়তো, ওকে আর একটু রাগানোর জন্য আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিলাম সাথে সাথে ও আমাকে দেখিয়ে অবনীর দিকে তাকিয়ে ওকে চোখ মারলো মেয়েটাও কেমন নির্লজ্জের মতো হাসছে উফফফ মন চাইছে সবার সামনেই তাসিনের গলা টিপে ধরি কিন্তু বর্তমানে ও আমার টিচার তাই রাগটা কন্ট্রোল করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে গান শুনতে লাগলাম
–এই মেয়ে তোমার নাম কি (কথাটা শুনে পাশে তাকালাম হাসবো নাকি কাঁদব এখন তাসিন আমার নাম জিজ্ঞেস করছে)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–(শিলার দিকে তাকালাম আমার মতো ওর একি অবস্থা অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে আছে)
–এই মেয়ে কথা কান দিয়ে যায় না ওহ যাবে কিভাবে কানে তো হেডফোন লাগানো
–(চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকালাম)
–দাও ফোন আর হেডফোন আমার কাছে দাও ক্লাস শেষে নিয়ে যেও (বলেই ফোনটা আর হেডফোন নিয়ে গেলো তারপর আমার কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো “বলেছিলাম না পড়া চুরি করতে পারবা না এখন মন দিয়ে ক্লাস কর”)

তাসিন ফোন নিয়ে চলে গেলো আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে বসে ভাবতেছি ওর এই কাজের শাস্তি কি দেওয়া যায়
–অরনী
–কি কানের কাছে ফিসফিস করছিস কেন
–আরে রাগিস না একটা বিষয় ভেবে দেখেছিস
–কি
–ভাইয়া তোকে যেমন ভালোবাসে তুইও যদি তেমন ভালোবাসতি তাহলে আজকের ক্লাসটা হেব্বি হতো
–মানে
–স্বামী টিচার আর বউ ছাত্রী হিহিহি
–তোর ফাজলামো ছাড়াচ্ছি
–দেখ অবনী মেয়েটা তোর দিকে বার বার তাকাচ্ছে (অবনীর দিকে তাকালাম মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওর প্রতি আগে একটু হিংসা হলেও এখন ওর চোখ দুটি দেখে কেমন যেন মায়া লাগছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি বুঝতে পেরে মিষ্টি করে একটি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো)
–কিরে কি হয়েছে হিংসা হচ্ছে
–নারে কেমন যেন মায়া লাগছে আচ্ছা অবনীর বাসা কোথায় ওর বাবার নাম কি
–লন্ডন থেকে এসেছে জানি আর কিছু জানিনা
–হুম

ক্লাস শেষে লাইব্রেরীর দিকে গেলাম হঠাৎ তাসিনের কন্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম, কার সাথে যেন কথা বলছে
–তুমি এমন করলে হবে নাকি
–কি করলাম
–ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলে তো বুঝে ফেলবে
–আর থাকাবো না
–তুমি দূর্বল হয়ে পরলে আমার সব প্ল্যান বেস্তে যাবে বুঝার চেষ্টা করো
–বুঝি তো কিন্তু
–প্লিজ এখন থামো ও এদিকে আসলে শুনে ফেলবে তোমাকে যা বলার ফোনে বলবো
–হুম
হঠাৎ শিলা আমার হাত ধরে টেনে মাঠে নিয়ে এলো
–এভাবে টেনে আনলি কেন
–ওরা এখন প্রেম করছে তাই ওদের কথা আমাদের শুনা উচিত না
–কিন্তু তাসিন কি যেন বলছিল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে কেন এমন করলে বুঝে যাবে তারমানে কি অবনী আমার দিকে তাকিয়ে ছিল বলে ও এসব বলেছে কিন্তু আমি কি বুঝে যাবো
–দুর অজতা তোর বিষয় ভাবছিস ওরা অন্য কিছু নিয়ে হয়তো কথা বলছিল
–না কেমন যেন রহস্য লাগছে আর তাসিন কি যেন প্ল্যান এর কথা বলছিল
–তুই না বললি এসব আজাইরা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো ঠিক না তাহলে এখন ভাবছিস কেন চুপ করে বসে থাক ওদের কে ওদের মতো থাকতে দে
–হুম

চুপ করে বসে আছি টিকি কিন্তু মাথা থেকে একটা কথা সরাতে পারছি না তাসিন কিসের প্ল্যানের কথা বলছিল…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৬

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি ও দিব্যি হাসছে
–রাগ করেনা সোনা বউ
–আমি তোমাকে খুন করবো
–এখনি করবা নাকি যখন আশেপাশে কেউ থাকবে না তখন
–তাসিন
–হ্যা বল বউ
–দূর

ওর চোখের সামনে থেকে চলে আসলাম, ক্লাসে বসে আছি
–অরনী রাগ করছিস কেন
–কার উপর রাগ করবো যার মা বাবা নেই তার তো কিছুই নেই
–ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে
–হুম জানি
–তাহলে এমন করছিস কেন
–তাসিনের বাবা যে খুনি না সেটার কোনো প্রমান নেই আমার কাছে চাচ্চু তাসিন কে মেনে নিবে না আর চাচ্চু তো আমার সব উনাকে কষ্ট দেই কিভাবে
–তারমানে তুইও ভাইয়া কে ভালোবাসিস
–ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু ওর প্রতি কেমন যেন মায়া কাজ করে আমি আর এই মায়া বাড়াতে চাইনা
–প্লিজ কান্না করিস না
–হুম
–ভাইয়া আসছে ক্লাসে যদি কান্না করিস ভাইয়া কিন্তু কষ্ট পাবে
তাসিন রুমে ঢুকার আগেই চোখের পানি মুছে নিলাম, সবাই ওর সাথে হাসছে কথা বলছে এসব আমার ভালো লাগছে না আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পরছে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদি, ক্লাসে মনোযোগ নেই কিন্তু তাসিন যে ভালো ভাবে ক্লাস নিচ্ছে সেটা সবার মনোযোগ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তাসিন ক্লাস নিচ্ছে আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে

ক্লাস শেষে শিলা আর আমি বাইরে একটু হাটতে বেরুলাম হঠাৎ পিছন থেকে তাসিন ডাক দিল
তাসিন: অন্নি এদিকে এসো
আমি: কেন
তাসিন: আসতে বলছি আস আর শিলা তুমি একটু দাড়াও এখানে
আমি: আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ
তাসিন আমার হাত ধরে টানতে টানতে লাইব্রেরিতে নিয়ে আসলো
–এখানে এনেছ কেন
–এখানে কেউ নেই তাই
–মানে
–ক্লাসে কান্না করছিলে কেন
–এমনি
–তুমি এমনি কাঁদবা কেন
–তাতে তোমার কি
–আমার কি তাই না
–তাসিন আমার দিকে এগুবে না ভালো হবে না কিন্তু
–চুপ (তাসিন আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিলো, অনেক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে দফ করে বসে পরলো, আমি এখনো পাথরের মূর্তির মতো দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে আছি একটু সময়ের মধ্যে তাসিন কি করে ফেললো ভাবছি)
–অন্নি সরি
–(নিশ্চুপ)
–তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে তো আর মাইর দিতে পারবো না তাই এই কাজ করলাম এখন থেকে যতবার কাঁদবা ততোবার তোমার ঠোট আমার ঠোট দিয়ে চুষে খাবো
–(নিশ্চুপ)
–অন্নি তোমার চোখে পানি কেন আমি কিন্তু আবা….. (ওর কথা আর না শুনে দৌড়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসলাম)
শিলা: কাঁদছিস কেন
আমি: হোস্টেলে চল
শিলা: কিন্তু ক্লাস
আমি: তুই কর আমি যাই
শিলা: হয়েছে কি
আমি: যাই

আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হোস্টেলে চলে আসলাম, ফোনটা হাতে নিলাম চাচ্চুকে বলবো আমাকে যেন এসে নিয়ে যায় কিন্তু চাচ্চুকে ফোন দেওয়ার আগেই তাসিন ফোন দিল কেটে দিলাম, বার বার কল দিচ্ছে আর আমি কেটে দিচ্ছি হঠাৎ মেসেজটোন বেজে উঠলো “কাঁদলে কিন্তু তোমার রুমে চলে আসবো আর হ্যা ভুলেও তোমার চাচ্চুর কাছে যাওয়ার চিন্তা করো না আমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে এই হোস্টেল থেকে কেউ বের করতে পারবে না” মেসেজটা পড়ে হাসব নাকি কাঁদবো ভেবে পেলাম না, আমি এখন চাচ্চুর কাছে যেতে পারবো না কাঁদতেও পারবো না কতোটা পরাধীন হয়ে গেলাম, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এখন নিজেই কষ্টে ভুগছি, হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো চাচ্চুর কল রিসিভ করবো কিনা ভাবতে ভাবতে রিসিভ করে ফেললাম
–হ্যালো
–কিরে মা তোর কোনো খুঁজ নেই ফোন বন্ধ
–আমার মোবাইল নষ্ট ছিল কেমন আছ তোমরা
–তোর কোনো খুঁজ নেই আমরা ভালো থাকবো কিভাবে (আমি ছাড়া যে চাচ্চু ভালো থাকে না আমি নাকি তাকেই ভুলে যাবো, তাসিনের উপর খুব রাগ হচ্ছে)
–কিরে মা চুপ হয়ে আছিস কেন
–এমনি ছোট মা কোথায়
–বাসায় আমি একটু বাইরে এসেছি তুই কথা বলছিস কেউ দেখবে নাতো
–চাচ্চু আমি হোস্টেলে উঠেছি
–কেন
–সামনে পরিক্ষা
–কিন্তু
–সমস্যা নেই আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি ছোট মা কে বলো বাড়িটা আমার নামে লিখিয়ে নিয়েছি
–সত্যি
–হ্যা
–এখন শুধু বাকি আছে বাংলোটা আর দুইটা কোম্পানি
–এগুলা বাধ দাও না চাচ্চু আমার সম্পত্তি চাইনা
–এইগুলার মুল্য কতো তোর কোনো ধারনা আছে
–সম্পত্তি দিয়ে কি হবে আব্বু আম্মুকে তো আর ফিরিয়ে আনতে পারবো না
–কাঁদিস না মা আমরা আছি তো
–হুম আচ্ছা এখন রাখি পরে ফোন করবো
–আচ্ছা

ফোন রেখে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, একটি মাস কিভাবে যেন কেটে গেলো, মাত্র একমাসে তাসিনের প্রতি মায়া জন্মে গেলো কেমন মেয়ে আমি নিজের মা বাবার খুনির ছেলে কে নিয়ে এসব ভাবছি, নাহ তাসিনের আব্বু খুনি হউক বা না হউক আমি তাসিন কে ডিভোর্স দিব আর ডিভোর্স দিয়ে বাহিরে চলে যাবো এই দেশে আর থাকবো না, হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম তাসিন দাঁড়িয়ে আছে
–তুমি হোস্টেলে আসলে কিভাবে
–তোমার কাছে আসতে আমাকে কোনো বাধা আটকে রাখতে পারবে না
–তাসিন কেন করছ এসব
–তুমি আবারো কান্না করেছ
–নাতো
–তোমার চোখ বলে দিচ্ছে
–আচ্ছা তোমার জন্য কি আমি এখন কাঁদতেও পারবো না
–না পারবে না কারন তুমি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়
–আর পাঁচটা মাস অপেক্ষা করো কষ্ট হবে না
–কি করবে তুমি হ্যা কি করবে (আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো, তাসিন যে খুব রেগে গেছে ওর চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, ও রাগলে চোখ দুটু লাল হয়ে যায়)
–চুপ হয়ে আছ কেন বলো কি করবা
–ডিভোর্স দিব
–তাই (বলেই আমার চুলে ধরে জোর করে আমার ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দিল, অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না, অনেক্ষণ পর ও নিজেই ছেড়ে দিল তারপর আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে বললো)
–আর কখনো ডিভোর্স এর কথা বললে খুন করে ফেলবো
–(ঠাস) এই তাপ্পর এর কথা মনে রেখো
–অন্নি
–অনেক হয়েছে তাসিন আর না অনেক সহ্য করেছি তোমার অত্যাচার আমি একা থাকতে চাই তুমি আমাকে আর ডিস্টার্ব করোনা প্লিজ আমি ডিভোর্স চাই
–ওকে অরনী ম্যাডাম তাসিন কি এখন থেকে বুঝবা আমার ভালোবাসা যখন তোমার কাছে অত্যাচার মনে হয় এই ভালোবাসার জন্যই আমি তোমাকে কাঁদাবো
তাসিন হাসতে হাসতে চলে গেলো…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৫

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

ক্লাসে বসে আছি কিসের ক্লাস করবো সারাক্ষণ তাসিনের কথা মনে পরছে মনে হয় এই বুঝি ও পাশে থেকে বকবক করছে, সবসময় ওর বকবক করাটা বিরক্ত লাগতো কিন্তু আজ কেন যেন খুব মিসস করছি ক্লাসেও মন বসছে না কি যে করি
–এই অরনী কি হয়েছে তোর
–কিছুনা
–বল
–কি বলবো তাসিন কে মাথা থেকে সরাতে পারছি না
–হিহিহি
–হাসছিস কেন
–তুই না ভাইয়া কে ভালোবাসিস না তাহলে মিসস করছিস কেন
–জানিনা
–হুম বুঝেছি ভালো বাসতে শুরু করেছিস
–মোটেও না কোনো খুনির ছেলে কে আমি ভালোবাসবো না
–অরনী প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা ঠিক না
–প্রমান পেলে তো ওদের সবাই কে জেলে পাঠাইতাম
–নাই যেহেতু অযতা খুনি বলবি না
–ক্লাস করবো না চল
–কোথায়
–ঘুরতে যাবো
–ওকে

শিলার সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের কাছে চলে আসলাম বেরুতে যাবো তখনি দারোয়ান গেইট লাগিয়ে দিল
শিলা: কি হলো
দারোয়ান: স্যার এর অনুমতি ছাড়া ম্যাডাম বেরুতে পারবে না
শিলা: কোন স্যার আর ম্যাডাম কে
দারোয়ান: তাসিন স্যার
আমি: কি (দারোয়ানের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে রইলাম কি বলে এইসব)
দারোয়ান: উনি কড়া নিষেধ করে গেছেন উনার অনুমতি ছাড়া যেন আপনাকে বাইরে যেতে না দেই
শিলা আর আমি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমার এখন হাসা উচিত নাকি কান্না করা উচিত বুঝতেছি না তবে তাসিন কে সামনে পেলে এখন কষিয়ে একটা তাপ্পর দিতাম এইটা নিশ্চিত
–অরনী চল হোস্টেলে চলে যাই
–আমি তো বাইরে যাবোই
–কিভাবে যাবি
–দাড়া
তাসিন কে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরছেই না মন চাইছে ওকে, যাক ফোন রিসিভ করেছে
–অন্নি আমি ভিজি আছি পরে ফোন দেই
–তুমি কি ভেবেছ আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিবা
–মানে
–আমি বাইরে ঘুরতে যেতে চাই কিন্তু দারোয়ান যেতে দিচ্ছে না এসব কি তাসিন
–এখন হোস্টেলে যাও আমি কাজ শেষ করে এসে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো
–আমি তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যেতে চাই
–একা যেতে দিচ্ছি না চুপচাপ হোস্টেলে চলে যাও বলেই ফোনটা কেটে দিল

মোবাইলটা একটা আছাড় দিয়ে গেইটের কাছে ফেলে রেখে হোস্টেলে চলে আসলাম, ছোট থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি চাচ্চু কখনো আমার কোনো কিছুতে বাঁধা দেননি আর দুদিনের তাসিন এখন আমাকে সব কিছুতে বাঁধা দিচ্ছে আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে
–অরনী এভাবে কাঁদছিস কেন
–ও আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেবার কে
–দেখ আমার মনে হয় ভাইয়া তোর কোনো বিপদ হতে পারে বুঝতে পেরেছে তাই এমন করছে প্লিজ কান্না করিস না
–ছয়মাস যেদিন পূরন হবে সেদিনই আমি ওকে ডিভোর্স দিব ওকে আর সহ্য হচ্ছে না
–আচ্ছা দিস এখন কান্না থামা
–হুম তোর ফোন বাজছে
–দাড়া আমি কথা বলে আসি
–হুম

দুর ওর উপর রাগ করে ফোনটা কেন ভাঙ্গলাম এখন তো অন্তত গেমস খেলতে পারতাম
–অরনী আমাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে
–কেন
–আমার কাজিন অসুস্থ সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো
–হুম
–দুপুর হয়ে গিয়েছে তুই গোসল করে ঘুম দে কান্নাকাটি করিস না
–আচ্ছা যা

গোসল করে বের হতেই শুনি বাইরে হর্ন বাজছে একটার পর একটা বাজছেই বিরক্ত হয়ে কে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে দেখার জন্য জানালা দিয়ে নিচে থাকালাম, আশ্চর্য তাসিন এই জানালার দিকে তাকিয়ে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে, আমাকে দেখা মাত্র ইশারা দিল নিচে যাওয়ার জন্য, যাবো কি যাবো না এসব ভাবছি তখন তাসিন ইশারা দিয়ে বুঝালো আমি না গেলে ও উপরে চলে আসবে, ও উপরে না আসাটাই ভালো তাই আমিই নিচে গেলাম
–এই ফোন ভেঙ্গেছ কেন এতোক্ষণ ধরে হর্ন বাজাতে হয়েছে
–ভেঙ্গেছি বেশ করেছি এখানে কেন এসেছ
–তুমি না বলেছিলে ঘুরতে যেতে চাও
–তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যাবো
–এইটা সম্ভব না
–তাসিন আমাদের মধ্যে কিন্তু এমন কথা ছিল না তুমি বলেছিলে আমি এখন হোস্টেলে থাকবো ছয়মাস হলে আমাদের ডিভোর্স হবে কিন্তু তুমি এখন তার উল্টো করছ
–আমি তোমাকে ভালোবাসি ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর তোমার বিপদ হতে পারে তাই এমন করছি
–আমার কোনো বিপদ হবে না আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
–সম্ভব না এই নাও তোমার ফোন
–আমার জন্য ফোন এনেছ কেন
–আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
–তাহলে আমার সিম দাও
–ফোনের মধ্যেই আছে গাড়িতে উঠো
–না যাবো না বাসায় চলে যাও বলেই হনহন করে হেটে হোস্টেলে চলে আসলাম

কিছুই ভালো লাগছে না আমি চাই একা বাঁচতে কিন্তু তাসিন আমার পিছুই ছাড়ছে না, ফোনের দিকে চোখ পরলো ফোন হাতে নিয়ে অফ করে ফেললাম, এখন শান্তিতে ঘুমাবো নাহলে তাসিন ফোন দিবে

সকালে মুখে পানি ছিটায় ঘুম ভাঙ্গলো
–ওই পানি দিছিস কেন
–কি করবো এতোক্ষণ ধরে ডাকতেছি খবর নেই ক্লাসে যাওয়া লাগবে না নাকি
–আমার তো খিদা লেগেছে
–রাক্ষসী পরে খাবি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি চল
–হুম

উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে দৌড়ে ক্লাসে গেলাম কিন্তু গিয়ে শুনি ক্লাস হবে না এখন নতুন স্যার আসবে সবাই উনাকে বরণ করতে ব্যাস্ত, এই প্রথম শুনছি নতুন স্যার আসবে বলে ক্লাস হবে না, শিলার দিকে রাগি চোখে তাকালাম
–এই এভাবে তাকাস না প্লিজ ক্যান্টিনে চল খাওয়াই
–হুম

ক্যান্টিনে বসে বসে সমুচা খাচ্ছি পাশ দিয়ে দুটি মেয়ে যাচ্ছে আর বলছে
–নতুন স্যার কে দেখেছিস কি হ্যান্ডসাম
–হ্যা আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল গিয়ে জরিয়ে ধরে কিস করি
ছি কি মেয়ে স্যার কে কিস করার কথা ভাবছে
–অরনী চল নতুন স্যার কে দেখে আসি
–তোরও কিস করার সখ জাগছে নাকি
–আরে চলনা
–তুই যা আমি খেয়ে আসি
–সমুচাটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে চল বলেই আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো

–অরনী দেখ কি সুন্দর স্যার (সমুচা মুখে দিতে দিতে সামনে তাকালাম আমার চোখ তো কপালে উঠে গেছে সমুচা গলায় আটকে বিষম খেলাম)
–কিরে কি হয়েছে স্যার কে দেখে বিষম খেলি হিহিহি
–হ্যা আপনার স্যার কে দেখেই বিষম খেয়েছি কারন এটাই তাসিন
–কি
–ও আমার পিছু ছাড়বে না বুঝে গেছি

আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাসিন আমার কাছে আসলো তারপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “পড়া চুরনি আর পড়া চুরি করতে পারবা না একেবারে তোমার টিচার হয়ে এই কলেজে ঢুকেছি আর এতো দিন যতো কষ্ট দিয়েছ তারচেয়ে বেশি ভালোবাসা আমাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও”

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৪

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছি কিছুই ভালো লাগছে না তাসিনের কথা শুধু মনে পরছে, আমি যে কি বুঝি না যাকে ভালো লাগে না তার কথাই এতো মনে পরছে
–আরে অরনী তুই হোস্টেলে (কারো ডাকে ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসলাম তাকিয়ে দেখি আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী শিলা)
–তুই এখানে
–আমি তো হোস্টেলে উঠেছি এক সপ্তাহ হলো
–তুই না বলেছিলি বাহিরে চলে যাবি
–যাওয়া হয়নি ভাবছি অনার্সটা শেষ করেই যাবো আচ্ছা তোর ফোন কোথায় আমি দুদিন ধরে ট্রাই করছি সুইচড অফ বলছে
–মানে কি অফ হবে কেন এইতো ফোন
–ফোন তো অন তাহলে অফ দেখায় কেন
–এখন দে তো
–অফই তো
–(তাড়াতাড়ি সিমের নাম্বার চেক করলাম একি এইটা তো আমার সিম না এই সিম আসলো কোথা থেকে আর আমার সিম গেলো কোথায়)
–কিরে কি হয়েছে
–ফোনে তো অন্য সিম লাগানো
–এইটা কিভাবে সম্ভব (সাথে সাথে ফোন বেজে উঠলো স্কিনে হাব্বি নাম ভেসে উঠলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না, ফোন রিসিভ করলাম)
–হাই সোনা বউ
–তাসিন তুমি
–হ্যা কেন অন্য কারো ফোন আসা করেছিলে বুঝি
–তারমানে তুমি আমার সিম চেঞ্জ করেছ
–হ্যা
–কেন
–তোমার চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করবে তাই
–ফোন করতে পারবো না কিন্তু বাসায় তো যেতে পারবো আমি কালই চলে যাবো
–সম্ভব না লক্ষীটি আমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে হোস্টেল থেকে বের হতে দিবে না
–তাসিন আমি তোমাকে খুন করবো
–তোমার ভালোবাসায় খুন হবার জন্য তো আমি অপেক্ষা করছি
–দূর

ফোনটা কেটে দিলাম ভেবেছিলাম হোস্টেলে আসলে তাসিনের যন্ত্রণা থেকে বাঁচবো এখন দেখছি ও আমার পিছু ছাড়বে না
–কিরে কি হয়েছে
–অনেক কিছু
–বল আমাকে (শিলা কে সবকিছু বললাম)
–অরনী আমার মনে হয় ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে তুই বাসায় ফিরে যা
–অসম্ভব ওর বাবা আম্মু আব্বু কে খুন করেছে আর আমি সংসার করবো ওর সাথে
–কিন্তু ভাইয়া তো বললো উনি খুনি না
–ওর কথা যে সত্যি সেটার কি প্রমান আছে নিজের বাবা যেহেতু ও নির্দোষ বলবেই
–উনি যে খুনি এইটারও তো প্রমান নেই
–হ্যা এটাই তো সমস্যা কি যে করি
–আমার মনে হয় এখন কিছুটা দিন তোর ধৈর্য ধরা প্রয়োজন তারপর তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ হলে পর উনার সাথে সরাসরি কথা বলবি আর ওরা যেহেতু বলছে প্রমান আছে তাহলে নিশ্চই প্রমান তোর হাতে দিবে তখন তুই আসল খুনিকে পেয়ে যাবি শাস্তিও দিতে পারবি
–হ্যা ঠিক বলেছিস কিন্তু আমার চুপ করে থাকাটা তো চাচ্চু মানবে না চাচ্চু কে কি বলবো
–দেখ কথাটা তোর কাছে খারাপ লাগলেও আমি বলছি আমার মনে হয় এসবে তোর চাচ্চুর হাত আছে বুঝে শুনে কাজ করিস
–কি করবো আমার মাথায় কিছু আসছে না
–আমি যা বলি শুন তাহলেই হবে
–বল
–তুই আপাতত চুপ থাক তাসিনের বাবা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আর তোর চাচ্চু কে বল তোর সামনে পরিক্ষা তাই হোস্টেলে উঠেছিস
–চাচ্চু কি মানবে
–তাহলে এক কাজ কর উনাকে বল তুই হোস্টেলে থাকলেও প্রতিশোধ ঠিকি নিচ্ছিস আর বাড়িটা তোর নামে করে নিয়েছিস
–ঠিক আছে
–এখন পড়তে বস
–নারে আজ আর পড়বো না
–ঠিক আছে রেস্ট নে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি তাসিন আমাকে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না কেন এতে ওর কি লাভ, তাহলে কি চাচ্চু আম্মু আব্বুর খুনি আর তাসিন এইটা জানে আমার ক্ষতি হবে ভেবে কি চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না, কিন্তু চাচ্চু খুনি হয়ে থাকলে তো চাচ্চুর সাথে আমার যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন নাহলে চাচ্চু সন্দেহ করবে যে আমি সব জেনে গেছি, তাড়াতাড়ি তাসিন কে ফোন দিলাম
–আমি জানতাম আমার বউটা আমাকে ফোন দিবে
–ফাজলামি করো না আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও
–কি প্রশ্ন
–চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছ না কেন
–এমনি
–তাসিন প্লিজ বলো
–এখন জানতে হবে না
–কিন্তু তাসিন আমি যদি হঠাৎ করে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তাহলে তো উনি আমাকে সন্দেহ করবেন
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–ভাবছিলাম
–কি
–তুমি ঠিক বলেছ উনি তোমাকে সন্দেহ করবেন
–হ্যা
–আমি তোমাকে সিমটা দিব কিন্তু সবসময় অন রাখতে পারবা না প্রয়োজন হলে অন করে উনার সাথে কথা বলে আবার অফ করে ফেলবা
–ঠিক আছে
–কালকে সিম পেয়ে যাইবা এখন পড়তে বস
–উহু ফোন রাখো ঘুমাবো
–পড়া চুরনি এখন কিসের ঘুম পড়তে বস
–ওই শুনো তুমি আমার হাজবেন্ড কিন্তু সেটা কাগজে কলমে শুধু আর ছয়মাস পূর্ন হলেই আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব কাজেই এতো অধিকার দেখাবা না
–হুহ পড়া চুরি করার জন্য এতো কথা শুনিয়েছ আজকে যতো খুশি পড়া চুরি কর আগামীকাল থেকে আর চুরি করতে পারবা না আর ডিভোর্স সেটা তোমার আশা আশাই থেকে যাবে
–এই ফোনটা রাখ তো তোমার সাথে বকবক করতে আমার ভালো লাগছে না
–ফোনটা কি আমি দিয়েছি
–আমিই দিয়েছি কিন্তু সেটা প্রয়োজনে তুমি তো অপ্রয়োজনীয় কথা বলছ
–মোটেও অপ্রয়োজনীয় কথা বলিনি, এই শুনোনা আমার না আব্বু ডাক শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে
–আর কয়টা মাস অপেক্ষা কর আমি তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার পর একটা বিয়ে করে নিও আর আব্বু ডাক শুনো যত্তোসব

সকালে শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে অরনী রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছিলি কেন
–(রাতের কথা মনে পড়লো রাগ করে তাসিনের ফোন কেটে ওকে বকা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ওর জন্য রাতের খাওয়াটা হলো না)
–কি ভাবছিস
–কিছুনা খিদা লেগেছে
–ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে ক্লাসে যেতে হবে
–ওকে

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেডি হচ্ছি ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো “একটু সুন্দর করে সেঝে ক্লাসে যেও পেত্নীর মতো যেও না” মেসেজটা পড়ে ইচ্ছে হচ্ছে মোবাইলটা তাসিনের মাথায় আছাড় দিয়ে ভাঙি, কোনোরকমে রাগ সব কমিয়ে শিলা কে নিয়ে কলেজে চলে গেলাম…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৩

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে তাসিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে থাকালাম, ভয় পেয়ে গেলাম ওকে দেখে চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে চুল গুলো উসকোখুসকো একদম রোগা রোগা মনে হচ্ছে
–হা করে কি দেখছ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও বের হতে হবে
–হুম

ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম তাসিন টেবিল রেখে সোফায় বসে নাস্তা করছে, ওর থেকে চোখ ফিরাতে গিয়ে ফ্লোরে চোখ পরলো, ফ্লোরের অবস্থা দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে
–তাসিন এসব কি
–কোন সব
–ফ্লোরে অর্ধেক অর্ধেক সিগারেট পালানো কেন
–ওহ তারমানে পুরোটা খাওয়া উচিত ছিল
–আগে তো সিগারেট খেতে না
–এখন পরিস্থিতি খেতে বাধ্য করছে
–তাই বলে তুমি….
–চুপ করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও এখনি রওনা দিব
–হুম

চুপচাপ খেয়ে নিলাম তাসিনের দিকে আর থাকালাম না কথাও বললাম না

আয়নার সামনে বসে রেডি হচ্ছি তাসিন ফিছনে এসে দাঁড়াল
–কিছু বলবে
–হুম
–বলো
–রাখবে তো
–চেষ্টা করবো
–শেষ অনুরোধ এইটা প্লিজ রেখো
–কি
–জানো তো আমার নীল রঙ পছন্দ তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছিলাম নীল রঙের আজ পরবে প্লিজ
–শাড়ি কখন আনলে
–এখানে এসে তো ঘুরতে যাওনি ঢাকা থেকই এনেছিলাম ভেবেছিলাম হানিমোনে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–রেখে যাও
–হুম

শাড়ি পরে রেডি হয়ে তাসিনের সামনে গেলাম ও হা করে তাকিয়ে আছে কিছু না বলে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম, তাসিন চুপচাপ গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিল, বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছি মাঝে মাঝে আয়নায় চোখ পরছে আমার শাড়ির আচল বাতাসে উড়ে বার বার তাসিনের মুখে গিয়ে পরছে কিন্তু ও একটু বিরক্তও হচ্ছে না, তাসিন পারেও বটে

বিকেলের দিকে আমরা ঢাকায় পৌছালাম, বাসায় যেতেই সবাই আমাদের দেখে অবাক, আজ পর্যন্ত কোনো দম্পতী মনে হয় একদিনের জন্য হানিমোনে যায়নি
তিথি: ভাবি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে
ভাবি: কি হয়েছে কোনো সমস্যা একদিন থেকেই তোরা চলে আসলি যে
তাসিন: তেমন কিছু না ভাবি অন্নির কলেজ থেকে ফোন এসেছিল ওকে কলেজে যেতে হবে
মা: নতুন বউ এতো তাড়াতাড়ি কলেজে যাবে
তাসিন: তাতে কি হয়েছে বিয়ের জন্য কি পড়াশুনার ক্ষতি করবে নাকি
মা: ঠিক আছে তাহলে তোর আর অফিসে যেতে হবে না এসব ব্যবসা তোর বাবা আর আসিফ বুঝে নিবে তুই বরং প্রতিদিন বউমা কে কলেজে দিয়ে আসবি আবার নিয়ে আসবি
তাসিন: মা ও হোস্টেলে থাকবে
মা: কেন
তাসিন: পড়াশুনার সুবিধা হবে
মা: হোস্টেলে কিসব খাবার দেয় আমার বউমা তো অসুস্থ হয়ে পরবে (মায়ের কথাটা শুনে চমকে উঠলাম উনার দিকে তাকিয়ে আছি, কি মায়াবী চেহারা হোস্টেলে থাকবো বলে কতো চিন্তা করছেন)
তাসিন: পড়তে হলে একটু কষ্ট তো করতে হবেই
মা: ঠিক আছে
ভাবি: তাসিন আমার সাথে চল তো
তাসিন: কোথায়

ভাবি তাসিনের হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেলো, আমিও উপরে চলে গেলাম রুমে ব্যাগ রেখে বের হতেই দেখি ভাবি আর তাসিন তিথির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন কথা বলছে তাসিন কাঁদছে, কাঁদছে কেন জানার জন্য একটু এগুলাম
ভাবি: আরে গাধা বউয়ের ভালোবাসা পাবার জন্য কি সিগারেট খেতে হয়
তাসিন: তাহলে কি করবো অন্নি তো আমাকে একটুও ভালোবাসে না
ভাবি: আমি যা বলি তাই কর
তাসিন: কি বল
ভাবি: কানেকানে বলি

দূর কি বলে জোরেই বলতো আমি শুনতাম কিন্তু ভাবি উনার দেবরের কানেকানে বলছে যত্তোসব, আবার রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তাসিন সোফায় বসে বসে গেমস খেলছে আর হাসছে, বুঝলাম না ভাবি ওকে কি এমন বললো যে কান্না থেমে গেছে এখন বসে বসে হাসছে
–অন্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ কেন এখানে এসে বস
–ভাবি তোমাকে কি বলেছে
–এইটা বলা যাবে না
–বলবা কিনা
–জ্বী না
–তাসিন
–রাগ দেখিয়ে লাভ নেই আর শুনো সন্ধ্যায় তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–তোমার থেকে দূরে গেলেই আমি বাঁচি
–দেখো আবার না কোনো সময় আমাকে কাছে না পেয়ে মরতে বস হিহিহি
–তোমার হাসিটা একদম ভূতের মতো
–হুহ ইউনিভার্সিটি তে যখন পড়তাম তখন ক্লাসের মেয়েরা তো আমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত সাথে বড় আপুরাও খেত
–ওদের রুচি খারাপ তাই তোমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত
–তুমিও একদিন এই হাসির প্রেমে পরবা
–তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না প্লিজ মুখটা বন্ধ রাখো
–অন্নি আমার একটা কথা রাখবে
–আবার কথা বলছ বললাম না চুপ থাকতে
–প্লিজ এই কথাটা রাখবে বল শুধু
–কি বলো
–হোস্টেলে গিয়ে তুমি তোমার চাচ্চুর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না বলো
–মানে কি চাচ্চু আমার মা বাবা সব উনি আমাকে বড় করেছেন আর তুমি উনাকেই ভুলে যেতে বলছ
–হ্যা বলছি প্লিজ বল আমার এই কথাটা রাখবা
–তাসিন তুমি পাগল হয়ে গেছ ডক্টর দেখাও
তাসিনের চোখের সামন থেকে চলে আসলাম বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, খুব খারাপ লাগছে তাসিন কি বললো এসব চাচ্চু কে ভুলে যেতে বলছে তাসিন এমন আগে জানতাম না তো, আমি আর ওর কাছে থাকবো না এখনি হোস্টেলে চলে যাবো, রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম
–অন্নি ব্যাগ গুচাচ্ছ কেন
–চলে যাবো
–এখনি
–হ্যা
–একা যাবে
–হ্যা একাই যাবো আমার সাথে কাউকে যেতে হবে না
–বাসার সবাই ভাববে তুমি ঝগড়া করে যাচ্ছ রেডি হয়ে নাও আমিই দিয়ে আসবো
–হুম

রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম, তাসিন ড্রাইভ করছে আর বার বার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে
–অন্নি
–কথা বলতে ভালো লাগছে না চুপ থাকো
–একটু পর তো কেউ আর এভাবে বকবক করবে না এখন নাহয় একটু সহ্য করো (কথাটায় কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে সত্যিই তো তাসিন আর আমার সামনে বকবক করবে না আমিও বিরক্ত হবো না, আচ্ছা তাসিন আমাকে বিরক্ত করবে না এইটা তে তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে কেন)
–অন্নি সোনা কাঁদে না চিন্তা করো না তুমি যেন আমাকে রোজ দেখতে পারো সে ব্যবস্থা করবো (চোখে হাত দিয়ে তো আমি অবাক নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পরছে)
–কি ম্যাম তুমি না আমায় ভালোবাস না তাহলে কাঁদছ কেন
–তোমার জন্য কাঁদতে আমার বয়েই গেছে, চোখে কি যেন পরেছে
–হুম বুঝেছি হোস্টেলে চলে এসেছি এবার নামো

হোস্টেলের সব জামেলা শেষ করে তাসিন আমাকে রুমে দিয়ে চলে গেলো, আশ্চর্য আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাসিন একটু মন খারাপও করলো না, দৌড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তাসিন কে দেখা যাচ্ছে গাড়িতে উঠে চলে গেলো একবার পিছন ফিরে থাকালো না…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১২

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

–অন্নি এই অন্নি
–হুম
–এই ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছ কেন
–কখন ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতে পারিনি
–তুমি ঠিক আছ তো (চোখ মেলে তাসিনের দিকে তাকালাম ফ্লোরে কিভাবে আসলাম আবার ঘুমিয়েও পরেছিলাম কিছুই বুঝতে পারছি না, মাথাটা কেমন যেন করছে অতিরিক্ত টেনশন করার কারনে হয়তো)
–বিছানায় গিয়ে ঘুমাও
–হুম
ফ্লোর থেকে উঠতে চাইলাম তখনি মাথাটা কেমন যেন করে উঠলো সাথে সাথে পরে গেলাম

ভেবেই নিয়েছিলাম এখন পরে গিয়ে বুঝি মাথাটা ফেটে গেছে কিন্তু পরার আগেই তাসিন ধরে ফেলেছে, ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আছে আমাকে, আস্তে আস্তে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকালাম আজো ওর চোখ দুইটা আমার চোখে ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে ওকে এভাবে কষ্ট কেন দিচ্ছি খুন তো ওর বাবা করেছে আর তাসিন তো বলছে খুনি অন্য কেউ তাহলে ওকে কষ্ট দেওয়া কি আমার ঠিক হচ্ছে
–অন্নি
–হুম
–কি হয়েছে তোমার (তাসিন কাঁদছে ওর দুচোখ থেকে পানি টুপটুপ করে আমার উপরে পরছে আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ওর দিকে মাথা নিচু করে ফেললাম, তাসিন আমাকে কোলে তুলে নিল তারপর বিছানায় শুয়ে দিল)
–চুপ করে শুয়ে থাকো
–আমার কিছু হয়নি
–তা তো দেখতেই পারছি
–তাসিন….
–অন্নি প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না চলো সব ভুলে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করি (কিছু না বলে চুপ করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, তাসিন মৃদু হেসে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, দুজনের ঠোটের মধ্যে সামান্য ফাক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়তো তাসিন ওর ঠোটের উষ্ণ ছুঁয়া আমার ঠোটে ছুঁয়ে দিবে কিন্তু আমি তো এমন কিছু চাই না আমি তাসিন কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না, এক ঝটকায় তাসিন কে দূরে সরিয়ে দিলাম ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
–কি হলো অন্নি
–তাসিন আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
–বুঝেছি আমাকে ভালোবাস এইটা বলবা তো তাড়াতাড়ি বলে ফেলো প্লিজ বিয়ের পর একবারো তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে পারিনি
–তাসিন আমি ফিরে যেতে চাই
–মানে
–আমি তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছি না চাচ্চুর কাছে চলে যাবো
–অন্নি ফাজলামো করনা প্লিজ
–আমি সিরিয়াসলি বলছি
–আমার সাথে থাকতে চাওনা কেন তুমি না আমায় ভালোবাস
–না আমি তোমাকে ভালোবাসি না
–আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতো (ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা কিন্তু তোমার প্রতি কেমন যেন এক মায়া জন্মে গেছে” এই মায়া বাড়তে দেয়া যাবেনা আমি মুক্তি চাই)
–কি হল চুপ হয়ে আছ কেন বল
–(ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একদমে বলে দিলাম “আমি তোমাকে ভালোবাসি না”)

তাসিন আমাকে ছেড়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে গেলো, জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে, আমি বিছানায় উঠে বসলাম তাসিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি “মাফ করে দিও তাসিন তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করার জন্য, আমি এতোটা খারাপ মেয়ে নই শুধু তোমার বাবার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না, তোমাকে কষ্ট না দিয়ে উনাকে শাস্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমান নেই তাই উনাকে পুলিশে দিতে পারিনি আর কাউকে খুন করার মতো এতো সাহস আমার নেই যদি থাকতো তাহলে খুনের বদলে আমিও খুন করতাম”

তাসিন চোখের পানি মুছতে মুছতে আমার কাছে এসে বসলো তারপর একটুখানি হেসে বললো
–অন্নি তুমি যা চাও তাই হবে কিন্তু তোমার চাচ্চুর কাছে যেতে পারবে না
–কেন
–আমি জেনে শুনে তোমাকে বিপদে ফেলতে পারবো না তাছাড়া আমার পরিবারের সবাই জানে তুমি অনাথ মেয়ে ডিভোর্স এর আগে তোমার চাচ্চুর কাছে গেলে সবাই জেনে ফেলবে
–তাহলে আমি কোথায় যাবো
–ছয়মাসের আগে তো ডিভোর্স হবে না এই সময়টুকু তুমি তোমার কলেজের হোস্টেলে থাক আমি সব ব্যবস্থা করে দিব
–হুম
–আর হ্যা ভালো করে পড়াশুনা করো
–হুম
–এখান থেকে আগামীকাল যাই আজ ভালো লাগছে না বাসায় গিয়ে সবাইকে বলেই তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–ঠিক আছে

রাত আটটা বাজে কিন্তু এই বাংলোতে মনে হচ্ছে গভীর রাত, তাসিন সেই সন্ধ্যায় বেরিয়ে ছিল এখনো ফিরার নাম নেই একা একা খুব ভয় করছে, খাটের এক কোনে বসে আছি হঠাৎ ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো তাসিনের মেসেজ “ভয় পেয়ো না আমি বারান্দায় আছি”
আমি ভয় পাচ্ছি তাসিন বুঝলো কিভাবে ভালোবাসলে হয়তো প্রিয়জনের মনের অনুভূতি বুঝা যায়

রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসলাম তাসিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে হাতে সিগারেট একটু অবাকই হলাম কারন তাসিনের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিল না, আমি আসছি বুঝতে পেরে সিগারেট হাত থেকে পেলে দিল
–বাইরে কেন এসেছ এখানে খুব ঠান্ডা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–তুমি ঘুমাবে না
–এখানে ভালো লাগছে
–তোমার ঠান্ডা লাগবে তো, তোমার তো আবার ঠান্ডা লাগলে সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়
–সবাই বাইরের কষ্ট দেখে তাই এমন করে ভিতরের কষ্ট তো আর কেউ দেখে না
–তাসিন
–অন্নি আর একটা বার ভেবে দেখনা প্লিজ তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে
–আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
–যা এত্তোগুলো বছরে ঠিক হয়নি তা আর কখনো ঠিক হবে না সেই ছোট বেলায় ভালোবেসে ছিলাম হারিয়ে গিয়েছিলে কিন্তু ভুলতে পারিনি প্রতিটা মুহূর্তে কষ্ট পেয়েছি
–দেখ তাসিন আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি আর বাসতে পারবোও না তুমি তোমার জীবনটা নতুন করে শুরু করো
–নতুন করে শুরু করতে হলে তোমাকে ভুলতে হবে যাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি তাকে ভুলবো কিভাবে
–চেষ্টা করো পারবে
–পাগলী (বলে একটু হাসি দিল)
–সারা জীবন একা থাকবে নাকি
–হয়তো
–পারবে
–(আবারো হাসল)
–হাসছ যে
–এমনি
–তাসিন
–যাও ঘুমিয়ে পর সকালে রওনা দিতে হবে আর যা চাইছ তাই হবে আটকাবো না আর তোমাকে
–হুম

বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না তাসিনের সাথে অন্যায় করেছি জানি কিন্তু তাসিন কে ভালোবাসাও আমার পক্ষে সম্ভব না চাচ্চু মেনে নিবেন না তাছাড়া আমি জানি তাসিনের বাবা আমার আব্বু আম্মুর খুনি, মেয়ে হয়ে নিজের মা বাবার খুনির ছেলে কে ভালোবাসবো কিভাবে….?

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১১

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন কে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দিলাম ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি
–অন্নি তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তুমি কি জানো তুমি যে ভুল ধারনা নিয়ে এই অপরাধ গুলো করছ
–কিসের ভুল ধারনা নিজের বাবা কে ভালো সাজাচ্ছ তোমার বাবা আমার আব্বু আম্মুকে খুন করেছে এটাই সত্যি
–ভুল অন্নি তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আব্বু কেন খুন করতে যাবেন
–কারন এই বাংলো, ঢাকার ফ্ল্যাট, দুইটা কম্পানি সবকিছু দুজনের নামে ছিল আর তোমার বাবা আব্বুকে খুন করে সবকিছুর মালিক একা হতে চেয়েছে আর এখন উনি সব একা ভোগ করছে
–আচ্ছা তুমিই বলো আব্বু আর আঙ্কেল তো খুব ভালো বন্ধু ছিল তাহলে আব্বু বন্ধু হয়ে কি বন্ধুকে খুন করতে পারেন
–হ্যা পেরেছে তো লোভে পরে তোমার বাবা আব্বু আম্মুকে খুন করেছে
–তাহলে তোমাকে খুন করলো না কেন তোমার বাবা মায়ের অবর্তমানে তো সব সম্পত্তি তোমারই হবে তাই না
–আমাকে তোমরা খুঁজে পাওনি তাই খুন করতে পারনি
–ভুল করছ অন্নি আব্বু তোমার বাবা মা কে খুন করেননি খুন করেছে তো….
–কে খুন করেছে বলো
–(নিশ্চুপ)
–খুন তো তোমার আব্বুই করেছে তাই চুপ হয়ে আছ
–আসল খুনি কে সেটা বললে তুমি সহ্য করতে পারবে না তাই এখন বলতে চাইছি না তুমি খুঁজে দেখ পাও কি না
–চাচ্চু বলেছেন তোমার আব্বুই খুনি তাই আমার আর খুঁজার প্রয়োজন নেই
–আব্বু যে খুনি তার প্রমান দিয়েছে তোমার চাচ্চু
–না
–তাহলে বিশ্বাস করেছ কিভাবে প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা যায় না
–চাচ্চু তো আমাকে মিথ্যে বলবে না
–হ্যা মিথ্যে বলবে না কিন্তু সত্যি যে বলেছে এইটারও তো প্রমান নেই খুন করার সময় কি তোমার চাচ্চু ওখানে ছিলো যদি থেকেই থাকতো তাহলে তোমার আব্বু কে বাঁচায়নি কেন
–(নিশ্চুপ)
–যখন খুন হয় তখন তুমি তোমার চাচ্চুর বাসায় ঢাকা ছিলে আমরাও বাংলোতে ছিলাম না ঘুরতে গিয়েছিলাম ফিরে এসে দেখি আঙ্কেল আন্টি কে খুন করা হয়েছে তাহলে আব্বু কিভাবে খুন করলেন বলতো
–তাহলে চাচ্চু আমাকে বললো কেন
–যেদিন খুন হয়েছিল সেদিন কি তোমাকে লাশ দেখানো হয়েছিল
–না চাচ্চু বলেছে আমি অজ্ঞান অবস্থায় হসপিটালে ছিলাম
–তুমি কি এইটা জানো তোমার আম্মু জায়গায় মারা গেলেও তোমার আব্বু একদিন পর মারা গিয়েছিলেন
–কি
–হ্যা আর তখনি উনি আব্বুকে সব বলে গেছেন খুনি তোমাকে খুন করতে পারে এই ভেবে উনি তোমার নামে সব সম্পত্তি আব্বুর নামে দিয়ে যান আর উইল করে যান তোমার আঠারো বছর হলে তুমি এই সম্পত্তি ফিরে পাবে
–তাহলে কি চাচ্চু আমাকে মিথ্যে বলেছে কিন্তু মিথ্যে বলবে কেন
–অন্নি তুমি ভুলের জগতে বাস করছ খুঁজে দেখ খুনি তোমার চোখের সামনেই আছে তোমার আপনজনই কেউ একজন
–কে
–আমি বলবো না বললে বিশ্বাসও করবে না তারচেয়ে ভালো তুমি নিজে খুঁজে বের করো তবে হ্যা কখনো যদি খুঁজে ব্যর্থ হও আব্বুর কাছে যেও আব্বুর কাছে প্রমান আছে কে আসল খুনি
–তাহলে এখন নিয়ে চলো তোমার বাবার কাছে
–এখন সম্ভব নয়
–কেন
–আব্বু যদি জানতে পারেন তুমি উনার সেই ছোট্ট অরনী তাহলে অনেক খুশি হবেন কিন্তু যখন জানতে পারবেন তুমি উনাকে খুনি ভেবে এতোকিছু করেছ আর উনার ছেলেকে ভালোবাস না মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেছ তখন উনি অনেক কষ্ট পাবেন, মাত্র হার্ট এট্যাক করেছেন উনি আবার কোনো বড় আগাত দিতে চাইনা
–শুনো এসব বলে লাভ নেই আমি জানি উনিই আব্বু আম্মুর খুনি আর তুমি খুনির ছেলে, আমার তো ভয় হয় কখন জানি তুমি আমাকে খুন করে ফেল
–আরে পাগলী তোমাকে খুন করার ইচ্ছে তো দূরের কথা একটা ফুলের টোকা দিতেও কষ্ট হয়, বৌভাতের দিন তোমাকে তাপ্পর দিয়ে তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আমি সারা রাত কেঁদেছি বুঝতে পেরেছ একবারও….?
বুঝনি কারন তুমি আমাকে ভালোবাস না তাই এতো কষ্ট দিতে পার
–কষ্ট দিয়েছি বেশ করেছি আরো বেশি দেওয়া উচিত ছিল
–তুমি কখন কিভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছ তা সব জানি কিন্তু কখনো কিছু বলিনি, ইচ্ছে করে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছ, হসপিটালে এসি বাড়িয়ে দিয়েছ, পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছ এখানে এসেও আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্লেন ছিল তোমার সবকিছু জানি কিন্তু কিছুই বলিনি কেন জানো তুমি যদি কষ্ট পেয়ে কাঁদো সহ্য করতে পারবো না
–সবকিছু জানো কিভাবে
–তুমি আমাকে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতে সন্দেহ হয়েছিল তোমার ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে জানতে পারি তোমার চাচ্চুর সাথে কথা বল আর তখন জানতে পারি তুমি সেই অরনী, এসি যখন বাড়িয়ে দিয়েছিলে তখন আমি সজাগ ছিলাম, ছাদে যখন পরী কে কিডন্যাপ করার কথা বলছিলে তখন শুনেছি, খুন করার কথা বলেছ তোমাকে খুন করার ইচ্ছে থাকলে তখনি করতাম যখন তুমি আমাদের সবার কলিজার টুকরা পরী কে কিডন্যাপ করিয়েছিলে কেন করিনি জানো
–কেন
–কারন তোমার জায়গায় থাকলে আমিও এসবই করতাম
–মানে
–তোমাকে আমি দোষ দিব না কারন তোমাকে ভুল বুঝানো হয়েছে আর প্রত্যেক সন্তানই তার মা বাবার খুনের প্রতিশোধ নিতে চাইবে সেটা যেভাবেই হউক
(অবাক হয়ে তাসিনের দিকে তাকিয়ে আছি এতোকিছুর পরও তাসিন আমাকে অপরাধী বলছে না)
–যা হবার হয়েছে অন্নি এবার সব ভুলে যাও প্লিজ চলো আমরা সব নতুন করে শুরু করি
–আব্বু আম্মুর খুনিকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই ভুলতে পারবো না আর ভালো করে শুনে রাখ আমি তোমাকে ভালোবাসি না ছয়মাস পর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব
–(তাসিন আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো “কিভাবে ভালো বাসাতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি ছয়মাস আমার জন্য যথেষ্ট সময়”)
একটি মুচকি হাসি দিয়ে তাসিন চলে যেতে লাগলো, দরজার কাছে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “অন্নি ভুলেও তোমার চাচ্চু কে বলো না যে আব্বু তোমার বাবা মায়ের খুনি না এইটা তুমি জানতে পেরেছ যদি বলো তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে”

তাসিন বাইরে চলে গেলো আমি আস্তে আস্তে এই রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গেলাম, মাথা ঘুরছে কি হচ্ছে এসব আমার সাথে চাচ্চু বলছে তাসিনের আব্বু খুনি আর তাসিন বলছে অন্য কেউ, আচ্ছা তাসিন চাচ্চু কে বলতে নিষেধ করলো কেন এর মধ্যে আবার কি প্যাচ আছে তাহলে কি চাচ্চু আসল খুনি…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১০

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

বিকেলের দিকে আমরা বাংলোতে পৌছালাম, খুব সুন্দর বাংলো কিছুটা পাহাড়ি এলাকা একটু উঁচুতে বাংলোটা খুব সুন্দর দেখতে, ভিতরে আরো বেশি সুন্দর কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এতো বড় বাংলোতে একটা কাজের লোক পর্যন্ত নেই
–তাসিন এখানে তো কোনো কাজের লোক নেই
–ছিল আমি ছুটি দিয়ে দিয়েছি
–তাহলে খাবো কি আমি তো রান্না করতে পারিনা
–পাশে রেস্টুরেন্ট আছে ওখান থেকেই খাবার আনবো
–হুম
–ভয় পেয়ো না তোমার কোনো ক্ষতি করবো না
–তুমি তো আমাকে ভালোবাস তাহলে আমার ক্ষতি করবে কিভাবে
–তারমানে কি তুমি আমাকে ভালোবাস না (ওর চোখের দিকে থাকালাম সত্যিই তো আমি ওকে ভালোবাসি না কিন্তু ওর চোখ দুটি তো আমার চোখে ভালবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে)
–অন্নি খিদে লেগেছে
–হ্যা
–তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার নিয়ে আসছি
–ঠিক আছে

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তাসিন চলে গেছে খাটের উপর একটি ডায়েরি রাখা, ভাবছি ডায়েরিটা পড়বো কিনা, পড়াটা ঠিক হবে কিনা এসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরিটা খুললাম
প্রথমেই লিখা “এইটা পিচ্ছি বউয়ের জন্য”
ডায়েরিটা তো তাসিনের হবে তাহলে ওর পিচ্ছি বউ আবার কে, কৌতূহল নিয়ে পড়তে শুরু করলাম

পৃষ্ঠা নং ১
জানিনা আমার পিচ্ছি বউটা কোথায় আছে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে বউটা কে খুঁজে বেড়াচ্ছি কিন্তু খুঁজে পাইনি, আমার মন বলে ও বেঁচে আছে আর একদিন ঠিক ও আমার কাছে ফিরে আসবে

পৃষ্ঠা নং ২
ইদানীং পিচ্ছি বউটার কথা খুব মনে পরে খুব কষ্ট হয় জানিনা ওকে কখনো ফিরে পাবো কিনা

পৃষ্ঠা নং ৩
সেদিন হঠাৎ করে রাস্তার উপারে অন্নির মতো একটি মেয়েকে দেখেছি দৌড়ে ওর কাছে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু এক্সিডেন্ট করে ফেলি, এই কয়দিন হসপিটালে ছিলাম তাই বউটা কে নিয়ে কিছু লিখা হয়নি

পৃষ্ঠা নং ৪
ছোট বেলার সেই দিন গুলো খুব মনে পরে অন্নি কে বউ সাঝানো আর আমি বর সেজে দুজন মিলে খেলা করা, এখন এসব মনে পরলে হাসি পায় জানিনা অন্নিকে কখনো খুঁজে পাবো কিনা আমার বউ বানাতে পারবো কিনা

ডায়েরির বেশকিছু পাতা জুরে শুধু পিচ্ছি বউকে নিয়ে লিখা, তাসিনের পিচ্ছি বউয়ের নাম অন্নি আমার নামও অন্নি তাহলে কি আমিই সেই মেয়ে কিন্তু কিভাবে সবকিছু রহস্যের মতো লাগছে, আরো কিছু পাতা উল্টিয়ে পড়তে শুরু করলাম

পৃষ্ঠা নং ১
আবার প্রথম থেকে শুরু করলাম কারন আজ থেকে ডায়েরিতে নতুন অন্নির কথা লিখবো, কয়েকদিন ধরে একটি মেয়ে আমাকে খুব জ্বালাচ্ছে, আমি আমার পিচ্ছি বউ কে ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না তাও মেয়েটি কে ভালোবাসতে হলো নাহলে নাকি মেয়েটি সুইসাইড করবে, হয়তো পিচ্ছি বউকে যতটা ভালোবাসি ততোটা ভালোবাসতে পারবো না অন্নিকে কিন্তু দুজনের নাম তো এক পিচ্ছি বউয়ের পাশে নাহয় অন্নিকে একটু জায়গা দিলাম

পৃষ্ঠা নং ২
আমার কেন জানি মনে হয় এই অন্নিটাই আমার পিচ্ছি বউ অনেক মিল খুঁজে পাই দুজনের মাঝে

পৃষ্ঠা নং ৩
আজ অন্নি আর আমার বিয়ে কাল থেকে এই ডায়েরিতে শুধু আমাদের রোমান্স গুলো লিখবো ভাবতেই ভালো লাগছে

পৃষ্ঠা নং ৪
মানুষের সব ইচ্ছা কখনো পূর্ন হয়না তাই হয়তো অন্নি আমার সাথে এমন করেছে
হাহাহা আমি কেমন বোকা অন্নি আমাকে ভালোই বাসে না আর আমি বুঝতেও পারিনি

পৃষ্ঠা নং ৫
এই অন্নিই আমার সেই পিচ্ছি বউ আজ জানতে পেরেছি কিন্তু অন্নির তো ছোটবেলার কথা কিছুই মনে নেই আমি কি পারবো অন্নিকে সবকিছু মনে করিয়ে দিতে

পৃষ্ঠা নং ৬
যতো দিন যাচ্ছে ততোই অন্নির নতুন রূপ দেখতে পারছি জানিনা অন্নি এমন পাল্টে গেলো কেন

পৃষ্ঠা নং ৭
অন্নিকে ভুল বুঝানো হয়েছে অনেক বড় ভুল অন্নি ভাবছে আব্বু ওর মা বাবা কে খুন করেছেন কিন্তু এইটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যে আমি কি পারবো অন্নিকে এই ভুল ধারনা থেক বের করতে

আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না তাও পড়লাম
তাসিন কে কষ্ট দেওয়া থেকে শুরু করে পরী কে কিডন্যাপ করা সহ সব লিখা আছে ডায়েরিতে, আমার আন্দাজ ঠিকি ছিল তাসিন বুঝে ফেলেছিল সবকিছু কিন্তু বুঝলো কিভাবে আর ওর বাবা খুন করেছে এইটা মিথ্যে বললো কেন
–অন্নি (দরজায় তাসিন দাড়িয়ে আছে আমার হাতে ডায়েরিটা দেখে একটি মুচকি হাসি দিলো)
–হাসছ যে
–আমি চেয়েছিলাম ডায়েরিটা তুমি পড় পড়েছ তাই হাসছি
–কিন্তু
–অন্নি ডায়েরিটা পড়ে এই বাংলোতে এসেও কি তোমার কিছুই মনে পড়ছে না
–কি মনে পরবে
–না কিছু না খাবার এনেছি খেয়ে নাও
–খাবো না আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর চাই
–সব প্রশ্নের উত্তর দিবো আগে খেয়ে নাও আমিও ফ্রেশ হয়ে নেই
–হুম

তাসিন ফ্রেশ হতে চলে গেলো, আমি খাবার মুখে দিচ্ছি কিন্তু গলা দিয়ে যাচ্ছে না, শুধু মনে পরছে কি আছে এই বাংলোতে তাসিন কেন বললো আমার কিছু মনে পরেছে কিনা তাহলে কি আমিই তাসিনের সেই পিচ্ছি বউ কিন্তু আমার তো ছোটবেলার কথা কিছুই মনে পরছে না
–অন্নি তুমি তো কিছুই খাওনি
–খেতে ইচ্ছে করছে না
–টেনশন হচ্ছে
–হুম বলনা তোমার বলা কথা গুলোর মানে কি
–আগে আমার সাথে চলো
–কোথায়
–পাশের রুমে

তাসিনের পিছু পিছু গেলাম একটি রুমে তালা দেওয়া তাসিন তালাটা খুলে ভিতরে ঢুকলো আমিও ওর পিছু পিছু রুমের ভিতরে ঢুকলাম, তাসিন রুমে লাইট জ্বালাতেই চমকে উঠলাম পুরু রুমের দেয়াল জোরে শুধু ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, একটি ছবিতে তাসিনের পুরু পরিবার আর একটি ছবিতে আব্বু আম্মু আর আমি, অনেক গুলো ছবিতে আব্বু আর তাসিনের আব্বু আর সবচেয়ে বেশি গুলোতে তাসিন আর আমার ছোটবেলার ছবি, কোনও ছবিতে তাসিন আমাকে দৌড়াচ্ছে কোনোটিতে তাসিন বর সাঝে আমি বউ সাঝে খেলা করছি এমন অনেক ছবি, তাসিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে থাকালাম ও আস্তে করে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো অন্নি তুমিই আমার সেই পিচ্ছি বউ আশরাফ আঙ্কেলের মেয়ে….

চলবে?