Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2415



আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৯

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে দারোয়ানের চেঁচামেচি তে সবার ঘুম ভাঙ্গলো, রাতে তিথি আর আমি কখন যে মা আর ভাবির পাশে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতেই পারিনি, সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ির বাইরে গেলাম দারোয়ান পরী কে কোলে করে নিয়ে আসছে, ভাবি দৌড়ে গিয়ে পরী কে কোলে নিল পরী অজ্ঞান হয়ে আছে, তিথি পানি এনে পরীর উপরে ছিটিয়ে দিতেই পরী চোখ খুলে তাকালো, আমি রুমে এসে তাসিন কে ফোন দিলাম
–অন্নি বল
–পরী কে পাওয়া গেছে
–হ্যা জানি তো পরী ফিরে আসবে এজন্য তোমাকে এতো খুশি হতে হবে না
–মানে
–কিছুনা সবাইকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসো
–হুম

কিছুই মাথায় ঢুকছে না পরীর জন্য তাসিনের একটুও চিন্তা ছিল না পরী কে পাওয়া গেছে তাও তাসিন খুশি না তাহলে কি ও জানতো পরী কে যে আমি কিডন্যাপ করিয়েছিলাম….?

সবাইকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, গাড়িতে বসে বসে ভাবছি এখন কি কাজ করবো যে কাজে সবাই আবার কাঁদবে, হঠাৎ মাথায় আসলো তাসিন হানিমোনে যেতে চাইছে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে যেখানেই যাই তাসিন কে কষ্ট দিব আর এই কষ্টটা হবে অনেক বড় যার আগাত সহ্য করতে গিয়ে সবাই কাঁদবে

হসপিটালে চলে এসেছি বাবার রুমে একসাথে অনেক মানুষ যেতে দেয়না তাই পরী কে আসিফ ভাইয়া বাবার রুমে নিয়ে গেলো, আমরা সবাই বাইরে অপেক্ষা করছি, তাসিন বার বার আমার দিকে থাকাচ্ছে আর হাসছে বিষয়টা কেমন যেন লাগছে সত্যিই কি ও সব বুঝে গেছে
–অন্নি
–হুম
–ঠিক করেছ
–কি
–আমরা হানিমোনে কোথায় যাবো
–না
–ঠিক আছে আমিই বলছি আমরা সমুদ্র বা পাহাড়ি অঞ্চলে যাই তোমার জন্য সুবিধা হবে
–আমার সুবিধা হবে মানে
–না কিছুনা
–(কি বলছে তাসিন এসব মাথায় কিছুই ঢুকছে না)
–কি ভাবছ
–কিছুনা
–হানিমোনে অন্য কোথাও না গিয়ে চলো আমাদের বাংলো তে ঘুরে আসি আমার কিছু স্মৃতি জমানো আছে ওখানে তোমাকে দেখাবো
–হুম
–তাহলে আমরা এক সপ্তাহ পর যাচ্ছি
–(তোর হানিমোন করার সখ মিটাবো একবার যাই বাংলোতে)

পরী কে পেয়ে বাবা আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়েছেন তাই বিকেলবেলা বাবা কে রিলিজ করে দেওয়া হলো, বাবা কে নিয়ে সবাই বাসায় ফিরে আসলাম

রাতের খাবার খেয়ে এসে সোফায় বসে বসে গেমস খেলছি হঠাৎ তাসিন ভাবি কে সাথে নিয়ে রুমে ঢুকলো বুঝলাম না ভাবি কে নিয়ে আসলো কেন
তাসিন: ভাবি অন্নি কে জিজ্ঞেস করো ও আমার সাথে এমন করছে কেন (হায় আল্লাহ্‌ ভাবি কে সব বলে দিল নাকি, তাসিন যদি পরীর কথা বুঝেই থাকে ভাবি কে বললে তো আমি অনেক ছোট হয়ে যাবো)
ভাবি: কিরে অরনী কি হয়েছে
আমি: কই কি আমি আবার কি করলাম (ভয়ে তো আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে)
তাসিন: এতো ভয় পাচ্ছ কেন
ভাবি: তাসিন কে ইগনোর করছ কেন দুজন আলাদা ঘুমাও কেন
আমি: ও কি শুধু এগুলো বলেছে তোমাকে
ভাবি: হ্যা আর কি বলবে আরো কিছু করেছ নাকি
তাসিন: না ভাবি এইগুলাই
ভাবি: সব মান অভিমান ভুলে দুজন এক খাটে ঘুমাও আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে চাঁচিআম্মু হতে (ভাবি এসব বলে হাসতেছে রাগে তো ইচ্ছে হচ্ছে তাসিন কে খুন করি)
তাসিন: ভাবি আমার মনে হয় আমরা হানিমোনে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
ভাবি: তাহলে যা আমি বাবা কে বলবো
তাসিন: ভাবি আমি আমাদের বাংলো তে যেতে চাই
ভাবি: পাগল হয়েছিস ওখানে কেন যাবি শুধু শুধু নিজের কষ্ট বাড়াতে
তাসিন: না ভাবি এখন তো অরনী পাশে আছে আর কষ্ট হবে না
ভাবি: ঠিক আছে

ভাবি চলে গেলো আমি ভাবছি বাংলোতে কি এমন আছে যে তাসিন হানিমোনে ওখানে যেতে চাইছে আর ভাবি না করলো কেন, বাংলোতে গেলে তাসিনের কষ্ট বাড়বে মানে কি
–অন্নি কি ভাবছ
–কিছুনা
–বাংলোতে গেলে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে
–(অবাক হয়ে ওর দিকে থাকালাম)
–হ্যা অন্নি এই বাংলোতে অনেক কিছু আছে যা থেকে তোমার অজানা অনেক কিছুই জানবে
–কি আছে
–বললাম তো বাংলোতে গিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর পাবে এখন ঘুমাতে আস
–আমি সোফায় ঘুমাব
–অন্নি প্লিজ আমার বুকে ঘুমাও
–ইচ্ছে নেই
–হ্যা এখন তো ইচ্ছে থাকবেই না একদিন তুমি আমার বুকে ঘুমানোর জন্য ঠিক কাঁদবে সেদিন আমি বলবো তোমাকে বুকে নেওয়ার ইচ্ছে নেই
ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে শুয়ে পরলাম, বাংলোতে কি আছে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে মুখে পানির ঝটকায় ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি তাসিন হাসছে রাগে উঠে ওর গলা চেপে ধরলাম
–এই অন্নি মরে যাবো তো
–পানি দিলা কেন
–একটু পর রওনা দিতে হবে তুমি এখনো ঘুমাচ্ছ তাই ঘুম ভাঙ্গালাম
–রওনা দিতে হবে মানে
–ভুলে গিয়েছ বাংলোতে যাবার কথা
–আজকেই
–হ্যা আমি দেরি করতে চাই না তোমার সবকিছু জানা প্রয়োজন রেডি হয়ে নাও
–আচ্ছা তুমি কি বলছ আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার কি জানা প্রয়োজন
–তুমি তোমার ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে গিয়েছ আমি ভুলিনি অন্নি আমি চাই তুমি আবার সবকিছু মনে করে আগের অন্নি হয়ে যাও
–আগের অন্নি মানে
–তুমি কি বাসাতেই সময় নষ্ট করে ফেলবে আমাদের তো যেতে হবে যাও রেডি হয়ে নাও
–হুম

রেডি হচ্ছি আর তাসিনের বলা কথা গুলো ভাবছি কি বলছে তাসিন এসব, বাংলোতে কি আছে আর সবকিছু আমার জানা প্রয়োজন মানে কি মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না

রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে তাসিন আর আমি বেরিয়ে পরলাম, তাসিন ড্রাইভ করছে আর আমি বাইরে তাকিয়ে ভাবছি তাসিন আমাকে কি জানাতে চায় যে বাংলোতে নিয়ে যাচ্ছে, আগের অন্নি হয়ে যাও বলে তাসিন কি বুঝাতে চাইছে তাহলে কি তাসিন আমাকে আগে থেকে ছিনে…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৮

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

আয়নার সামনে বসে গুনগুন করে গান গাইছি আর গহনা খুলছি হঠাৎ তিথি দৌড়ে আসলো
–ভাবি পরী কি তোমার কাছে
–না কেন
–পরী কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (বলেই কেঁদে দিলো খুব খারাপ লাগছে কেন করলাম আমি এমন আমারই বা কি করার আছে মা বাবার খুনের বদলে খুন করা উচিত ছিল এইসব তো কমই করছি)

নিচে এসে দেখি তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বাদে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে, আমি ভাবির কাছে যেতেই আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল কি বলবো কি বলে শান্তনা দিব খুঁজে পাচ্ছি না কারন অপরাধী যে আমি

রাত দশটা বাজে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া এখনো বাইরে খুঁজছে ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে পরী কে এখনি এনে দেই কিন্তু এইটা করলে যে ওদের কষ্ট দেওয়া হবে না

পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছে তারা তদন্ত করছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না জানি পাবেও না কারন পরী চাচ্চুর বাসায় আছে, সারা রাত কেউ ঘুমায়নি সবাই কাঁদতে কাঁদতেই রাত কাটিয়ে দিলো

ভোরের দিকে চারদিকে যখন অন্ধকার কেটে আলো ফুটতে শুরু করেছে তখন হঠাৎ দারোয়ান দৌড়ে এসে হাপাতে শুরু করলো, দারোয়ানের হাতের দিকে থাকিয়ে সবাই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, পরীর পরনে যে জামা ছিল সেইটা রক্তাক্ত অবস্থায় দারোয়ানের হাতে তাহলে কি চাচ্চু পরী কে মেরে ফেললো, না না তা হবে কেন আমার অনুমতি ছাড়া তো চাচ্চু পরীর গায়ে একটি টোকাও দিবে না আর চাচ্চু তো এমন না,বাবা দৌড়ে গিয়ে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলেন
–এইটা কোথায় পেয়েছ
–গেইট খুলে বাইরে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি পরী মামুনির জামা গেইটের সামনে ফেলে রাখা (কথাটা শুনেই বাবা বুকে হাত দিলেন তারপর মাটিতে লুটিয়ে পরলেন)

বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে তাসিন আর ভাইয়া বাবা কে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলো, বাড়িতে কান্নার রুল পরে গেলো সবাই কাঁদছে একদিকে পরী কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অন্য দিকে বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন আচ্ছা আমি কি অন্যায় করলাম নাকি কথাটা ভাবতে ভাবতে মায়ের দিকে থাকালাম উনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে গেছেন, তাড়াতাড়ি ধরে উনার রুমে নিয়ে গেলাম মাথায় পানি দিলাম অনেক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো

মা এখন একটু সুস্থ, তিথি কে মায়ের পাশে বসিয়ে দৌড়ে রুমে এসে চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু
–কিরে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন
–পরী কোথায়
–এইতো এখানেই পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–তাহলে সকালে যে পরীর জামা…
–ওইটা তো পাঠিয়েছি আফজাল চৌধুরী কে কষ্ট দেওয়ার জন্য
–চাচ্চু উনি হার্ট এট্যাক করেছেন
–এটাই তো আমি চেয়েছিলাম
–কিন্তু
–দেখ অরনী তোর যে মন এই মন নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না শক্ত হ মা তোর বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নে
–হুম

ফোন রেখে চুপ করে ভাবছি
আমি যে এসব করছি সেগুলো কি অন্যায়….?
তাহলে আফজাল চৌধুরী যে আমার বাবা মা কে খুন করলো সেটা কি অন্যায় না….?
আমি তো কাউকে খুন করিনি শুধু ওদের তিলেতিলে কষ্ট দিচ্ছি তাহলে আমার কাজ গুলো অন্যায় হবে কেন….?
হ্যা আমি উনাকে পুলিশে দিতে পারতাম কিন্তু লাভ হতো না কারন উপযুক্ত প্রমান আমার হাতে নেই উনি ঠিক টাকার জোরে বেরিয়ে আসতেন তখন কি আমার বাবা মায়ের খুনের শাস্তি উনি পেতেন….?
আমি যা করছি তা তো খুব কম তাহলে অন্যায় হবে কেন….?
সবকিছু ভেবে মন স্থির করলাম আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবই তাতে যা করা লাগে করবো প্রয়োজন হলে ওদের সাথে নিজেকেও শেষ করে দিবো

হসপিটাল থেকে তাসিন ফোন করে জানালো বাবা এখন একটু সুস্থ কিন্তু ডক্টর বলেছে বাবা কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে হলে পরী কে উনার কাছে এনে দিতে হবে, এখন আমি কি করবো পরী কে ফিরিয়ে আনবো নাকি আর দুদিন রেখে দিবো কিন্তু বাবা যদি মারা যান, আমি তো এইটা চাই না আমি চাই ওরা কষ্ট পেয়ে তিলেতিলে শেষ হয়ে যাক
–ভাবি
–হ্যা তিথি বল
–মা তো শুধু কান্না করছে এভাবে চলতে থাকলে মা আরো অসুস্থ হয়ে পরবে ভাবির অবস্থাও ভালো না
–এক কাজ করো দুজন কে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রাখো
–ঠিক বলেছ ভাবি
–হুম যাও

নাহ আর পারছি না চেয়েছিলাম ওদের শাস্তি দিতে এখন দেখি তিন তিনটা মানুষ মারা যাবে, যতোটুকু শাস্তি পেয়েছে ততোটুকুই থাক অন্য উপায়ে নাহয় আবার দিব এখন পরী কে এনে দেই, চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু পরী কে পাঠিয়ে দাও
–কি বলছিস
–হ্যা যা বলছি তা করো
–কিন্তু কেন
–পরীর মা তো এই বাড়ির বউ উনার তো কোনো দোষ নেই উনি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাবে
–হুম
–জামাটা যেভাবে রেখেছিলে ভোরবেলা ঠিক সেভাবে পরী কে রেখে যাবা কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায়
–ঠিক আছে

এছাড়া আর কিছু করার নেই আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পরী কে মা হারা করতে পারবো না, ভাবির যা অবস্থা আর দুদিন গেলে মারা যাবে আর বাবা মায়ের তো অবস্থা আরো বেশি খারাপ, ফোনে রিংটোন বাজছে তাসিন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–কি করছ
–কিছুনা বাবার অবস্থা এখন কেমন
–সেটা জেনে তুমি কি করবে
–মানে (তাসিন কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি)
–না কিছু না বাবা ভালো আছে একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিয়েছি
–কি কথা
–ভাবছি হানিমোনে যাবো
–কি
–অবাক হচ্ছ কেন
–পরিবারের এমন অবস্থায় তুমি হানিমোনের কথা ভাবছ
–সব ঠিক হয়ে যাবে পরী ফিরে আসবে তুমি ভয় পেয়ো না
–কিন্তু আমি হানিমোনে যাচ্ছি না
–অন্নি দেখো আমাদের মধ্যে যা মান অভিমান চলছে হানিমোনে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–আর একবার যদি হানিমোনের কথা বলেছ তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো
–সেটা তুমি পারবে না
–কেন
–আমি যেতে দিব না তাই
–তাসিন তুমি কিন্তু বেশি করছ
–মোটেও না তুমি বেশি করছ আর হ্যা আমরা হানিমোনে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল এখন তুমি শুধু ঠিক করো কোথায় যাবে (বলেই ফোন কেটে দিলো)

তাসিন এভাবে কথা বলছিল কেন তাহলে কি ও কিছু বুঝতে পেরেছে কিন্তু বুঝবে কিভাবে আমি তো চাচ্চুর সাথে খুব সাবধানে কথা বলি……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৭

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমাদের বৌভাত আমাকে পার্লার থেকে সাঝিয়ে আনা হয়েছে চারদিকে অনেক মেহমান কিন্তু আমার মন একটু একা থাকতে চাইছে তাই ছাদে চলে আসলাম, ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে থাকিয়ে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু আব্বু বেঁচে থাকলে কি আমার জীবনটা এমন হতো, তাসিন কে বিয়ে করেই হয়তো আমি সুখে থাকতাম, আজ বৌভাতের দিনে এমন মন খারাপ থাকতো না আমিও হতাম পৃথিবীর সুখি মানুষদের মধ্যে একজন, ফোন বেজে উঠলো স্কিনে থাকিয়ে দেখি ছোট মা রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, করলেই তো প্রতিশোধ নিতে বলবে তাসিন কে কষ্ট দিতে বলবে কিন্তু ছোট মা কে কিভাবে বুঝাই তাসিন কে কষ্ট দিতে এখন আমার কষ্ট হয়, জানিনা কেন এমন হয় খুব বেশিই কষ্ট হয়, ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো, একটু পর আবার বেজে উঠলো রিসিভ করলাম
–হ্যা ছোট মা বলো
–ফোন রিসিভ করছিস না কেন
–অনুষ্ঠানে আছি তো
–তোর কি মন খারাপ
–হ্যা একটু
–কেন
–আব্বু আম্মুর কথা মনে পরছে
–মনে পড়াটাই ভালো মনে পড়লেই তো প্রতিশোধ নিতে পারবি
–হুম
–শোন যে কথা বলতে ফোন দিয়েছি
–বলো
–চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বৌভাতে স্ত্রী যা চায় স্বামী তাই দেয় তাসিন যখন তোকে বলবে কি চাস তখন বলবি বাড়িটা তোর নামে লিখে দিতে
–মানে বলো কি তাহলে তো তাসিন আমাকে লোভী ভাববে
–শোন এতো ভালো হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না আর এই বাড়িতে তোরও অধিকার আছে এই বাড়ি তোর বাবা আর তাসিনের বাবা দুজন মিলে তৈরী করেছিল আর এখন তাসিনের বাবা একা দখল করে আছে
–তাই বলে…
–যা বলেছি তাই করবি শুধু বাড়ি না আস্তে আস্তে তোর সবকিছু তোর নামে লিখিয়ে নিবি
–আমার সবকিছু মানে
–তোকে বলা হয়নি তোর বাবা এই বাড়ির অর্ধেক, সিলেটে একটি বাংলো, আর দুইটা কম্পানি তোর নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিল, তোর বাবা যখন খুন হয় তুই তখন ছোট তাই তাসিনের বাবা চালাকি করে সবকিছু উনার নামে করে নিয়েছে, এখন তুই বল তোর সবকিছু কি তুই ফিরিয়ে আনবি না
–আমার এসব সম্পত্তি চাই না আমি শুধু আমার আব্বু আম্মুর খুনের প্রতিশোধ নিতে চাই
–তোর তো ভবিষ্যৎ আছে তাই এসব তোকে ফিরিয়ে আনতে হবে
–হুম
–আমি যা যা বলি তাই তাই করবি মনে রাখিস আমি তোর ছোট মা আর মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না
–ঠিক আছে
–এখন ফোন রেখে অনুষ্ঠানে যা সবার সাথে ভালো ব্যবহার কর
–আচ্ছা রাখি

ফোন রেখে ফিছন ফিরতেই দেখি তাসিন দাঁড়ানো খুব ভয় পেয়ে গেলাম ও কি সব শুনে ফেললো
–তাসিননন তততুমমি
–হ্যা তোতলাচ্ছো কেন আমি কি ভূত
–না মানে কখন এলে
–এইতো এই মাত্র তোমাকে নিচে খুঁজে না পেয়ে ছাদে আসলাম
–ওহ
–চলো আমার ফ্রেন্ডসরা এসেছে তোমাকে দেখবে
–হুম
–আর হ্যা প্লিজ অন্নি এমন কিছু করো না যেন আমি ওদের কাছে ছোট হয়ে যাই
–ঠিক আছে

তাসিন ওর সব ফ্রেন্ডদের সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিল, তিনটা মেয়ে ফ্রেন্ড আর চারটা ছেলে ফ্রেন্ড, সবার সাথে কথা বলছি হঠাৎ কোথা থেকে একটি ছেলে দৌড়ে এসে তাসিন কে জরিয়ে ধরলো সাথে বাকি সবাই ওদের দুজন কে জরিয়ে ধরলো আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখছি, তাসিন ছেলেটি কে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসলো
–অন্নি ও আমার জানের দোস্ত সিয়াম (বুঝলাম জানের দোস্ত তাই এভাবে জরিয়ে ধরেছিল কিন্তু এই ছেলে আমার দিকে এভাবে হা করে থাকিয়ে আছে কেন আশেপাশে মশা মাছি থাকলে তো ওর মুখ দিয়ে ঢুকে অনায়াসে পেটে চলে যেতে পারতো হিহিহি)

যেদিকে যাচ্ছি সে দিকেই তাসিন এর ফ্রেন্ড সিয়াম যাচ্ছে জীবনে কোনো মেয়ে মানুষ দেখেনি নাকি আল্লাহ্‌ জানেন তাও আবার বন্ধুর বউ কে এভাবে দেখছে তাসিন দেখলে তো মেরেই ফেলবে

তাসিন কোথায় যেন গেছে আমি একা একা বাগানের দিকটায় গেলাম হঠাৎ সিয়াম এসে সামনে দাঁড়াল
–হাই ভাবি
–হাই
–আপনাকে একটি কথা না বলে শান্তি পাচ্ছি না
–কি কথা
–আপনি দেখতে খুব সুন্দর একদম পরীর মতো (হায় আল্লাহ্‌ এই ছেলের মতলব কি এসব কি বলছে)
–ভাবি চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি
–আপনার নাম্বারটা পেতে পারি না মানে মাঝে মাঝে একটু কথা বলবো আর কি
কিছু বলতে যাবো তখনি দেখি তাসিন এদিকে আসছে
–অন্নি আমার একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না রুমে চলো তো (এই কথা যে ও এমনি বলেছে বুঝতে পারছি তারমানে কি সিয়ামের সাথে কথা বলাতে তাসিন রাগ করেছে)

রুমে আসতেই তাসিন আমাকে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ওর চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে
–এই সিয়ামের সাথে এতো কথা কিসের
–তোমার ফ্রেন্ডই তো
–তো কি হইছে অন্য ছেলের সাথে তুমি আলাদা কথা বলবা কেন
–বেশি করে বলবো
–(ঠাস) এই তাপ্পর এর কথা মনে রেখে কথা বইলো, তোমাকে ভালোবাসি তোমার দেওয়া সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি কিন্তু কোনো ছেলের সাথে কথা বললে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো

তাসিন চৌধুরী আমার গালে তাপ্পর দিয়েছ এর প্রতিশোধ তো আমি নিবোই, এই সিয়ামের সাথে কথা বলেই আমি প্রতিশোধ নিবো তখন বুঝবা অরনী কে তাপ্পর দেওয়ার ফল কি ভয়ানক

সন্ধ্যা নেমে এসেছে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ মেহমানরা চলে যাচ্ছে আমি সুযোগ বুঝে পরী কে নিয়ে বাগানের দিকে গেলাম, বাগানের পাশেই লোকটি দাঁড়িয়ে আছে ওকে ইশারা দিয়ে পরীকে বললাম একটু দাঁড়াতে আমি আসছি, মেয়েটা কে রেখে আমি সরে গেলাম আর লোকটি এসে পরীর হাতে চকলেট দিয়ে কোলে করে নিয়ে গেলো…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৬

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে তাসিনের ডাকাডাকি তে ঘুম ভাঙ্গলো
–কি হইছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন
–তিথি নাস্তা করার জন্য ডাকছে আমি দরজা খুলতে পারছি না তুমি সোফায় ঘুমে দেখলে ও কি ভাববে
–যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি সবাই দেখুক তুমি আমাকে নিয়ে সুখে নেই
–শুনো অন্নি যা কষ্ট দেওয়ার আমাকে দাও আমার পরিবারের সবার কাছে আমার ভালোবাসা কে ছোট করো না প্লিজ বলেই নিচে চলে গেলো
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম রুমে আসতেই দেখি কাজের বুয়া নাস্তা হাতে দাড়িয়ে আছে
–কি ব্যাপার
–স্যার কইছে আপনের শরীর ভালো না নাস্তা যেন রুমে দিয়ে যাই
–রেখে যাও
–আইচ্ছা
বুয়া নাস্তা রেখে চলে গেলো বুঝলাম না তাসিন নাস্তা রুমে পাঠালো কেন, দুর যা খুশি করুক খিদে লেগেছে খেয়ে বসে থাকি

নাস্তা করে বিছানায় বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছি তখন তিথি আসলো
–ভাবি
–হুম
–আব্বু তোমাকে ড্রয়িংরুমে যেতে বলেছেন
–কেন
–কি যেন জরুরী কথা বলবে সবাইকে নিয়ে
–তুমি যাও আসছি
কি কথা বলবে কিছু টের পেয়ে গেলো না তো, যদি টের পেয়ে যায় তাহলে তো খেলা এখানেই শেষ এসব ভাবতে ভাবতে নিচে চলে আসলাম সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি নিচে আসতেই মা ডেকে উনার পাশে আমাকে বসিয়ে দিলেন
বাবা: অরনী তোমাদের সবার সাথে একটি কথা বলার ছিল
আমি: কি কথা বাবা
বাবা: তাসিনের অসুস্থতার জন্য তো বৌভাত করা হয়নি এখন তাসিন অনেকটা সুস্থ হয়েছে তাই ভাবছি বৌভাতটা করে ফেলি (যাক বাঁচলাম আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্লেন বুঝে পেলেছে কিন্তু এসব অনুষ্ঠান যে আমার ভালো লাগে না এখন কি বলি)
আমি: বাবা বৌভাত না করলে হয়না আমার এসব ভালো লাগে না
বাবা: কি বলছ মা সবাই কি ভাববে বল তো
তাসিন: আব্বু অন্নির কথা শুনো না তো তুমি আগামীকাল বৌভাতের আয়োজন কর
বাবা: ঠিক আছে
(আমার কথা না শুনে তুমি বৌভাতের আয়োজন করতে বলেছ তাসিন চৌধুরী এইটার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে)

সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলাম, বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি বৌভাতের অনুষ্ঠান যখন হবেই তখন এই সুযোগ কাজে লাগাতে হয়, অনুষ্ঠান এর ভীড়ে সবাই ব্যাস্ত থাকবে পরী কে তখন-ই কিডন্যাপ করাতে হবে এইটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ, তাসিন রুমে নেই তাড়াতাড়ি চাচ্চুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো চাচ্চু
–হ্যা বল
–সময় নেই যা বলি মন দিয়ে শুনো
–বল
–তুমি তো আসতে পারবা না একজন চালাক লোক ভাড়া করো যেন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পরী কে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে আর আমি তো এখানে আছিই লোকটার একটি ছবি আমাকে ইমেইল করবে আমি ওকে সাহায্য করবো আর হ্যা পরী দুদিন তোমাদের কাছে থাকবে খবরদার ওকে কষ্ট দিবা না সবসময় হাসিখুশি রাখবা
–ঠিক আছে
–বৌভাত হবে আগামীকাল সেখান থেকেই সন্ধ্যার সময় পরী কে কিডন্যাপ করতে হবে আর হ্যা খুব সাবধানে ওরা কিন্তু পুলিশের কাছে যাবে পুলিশ যেন কোনো ভাবেই পরী কে উদ্ধার করতে না পারে
–ওকে

ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম যাক কাজটা এখন ভালো ভাবে হলেই হয় চৌধুরী পরিবারে অশান্তি নেমে আসবে আর আমার মনে আসবে শান্তি পরম শান্তি

সারা বাড়িতে অনুষ্ঠানের কাজ চলছে চারদিক একটু ঘুরেফিরে দেখলাম তারপর পরীর রুমের দিকে গেলাম এই একদিনে একটু ফ্রি হয়ে নেই, রুমে গিয়ে দেখি পরী বিছানায় পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–পরী আম্মু কি করছ
–খেলছি আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো
–ছোট আম্মু বলে ডাকবা আর তুমি করে বলবা
–তুমি খুব ভালো আম্মু
–শুধু আম্মু না আমি তোমার বন্ধুও
–তাহলে চলো আমরা দুজন খেলা করি
–ঠিক আছে
যাক এই পিচ্ছিটার সাথে তো ফ্রি হয়ে গেলাম এখন কাজটা অনেক সহজ হবে

পরীর সাথে অনেক্ষণ খেলা করে রুমে আসলাম তাসিন বিছানায় বসে আছে খুব চিন্তিত লাগছে, সে যাই হউক আমার কি আমি বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম
–অন্নি কোথায় ছিলে
–পরীর কাছে
–হুম
–কেন সন্দেহ হচ্ছে
–মানে
–কিছু না শুধু এইটুকু জেনে রাখো এতো তাড়াতাড়ি যাবো না ভয় পেয়ো না
–অন্নি কেন করছ এমন কি লাভ হচ্ছে তোমার
–(লাভ একটাই আমার মনে শান্তি পাই, এখন তো কমই করছি আস্তে আস্তে সবার উপর আমার অত্যাচার বেড়ে যাবে তখন বুঝবা)
–কি হলো কথা বলছ না কেন কি ভাবছ
–কিছুনা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না
–হুম

রাতে চাচ্চু একজন লোকের ছবি পাঠালো বুঝলাম এই লোক পরী কে কিডন্যাপ করবে, খুব কান্না পাচ্ছে আমি তো এতো খারাপ না যে পরীর মতো পিচ্ছি একটি মেয়ে কে কিডন্যাপ করাবো কিন্তু নিয়তি যে আমাকে খারাপ বানিয়ে দিয়েছে, আমাকে যে প্রতিশোধ নিতেই হবে নাহলে যে আব্বু আম্মুর আত্মা শান্তি পাবে নাহ, খুব অসহ্য লাগছে চোখ থেকে পানি ঝরছে আমি তো এসব চাইনি প্রত্যেক মেয়ের মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম কাউকে ভালোবাসবো সংসার করবো সবাইকে নিয়ে কিন্তু নিয়তি আমাকে এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে সব স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে হয়েছে মনে আর এখন সেই প্রতিশোধ নিতে হচ্ছে, তাও এসবের মাঝে আমি একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি কিন্তু মনে একটু শান্তি আনতে চাইলেও মনে পরে যায় আমি আমার আব্বু আম্মুর খুনির বাড়িতে আছি এই খুনিদের সাথে একসাথে থাকছি খাবার খাচ্ছি উফফফ এসব মনে পরলে খুব যন্ত্রণা হয়, কেন আফজাল চৌধুরী সামান্য সম্পত্তির লোভে আব্বু আম্মুকে খুন করলো আমাকে এতিম করলো……

চলবে?

(রহস্য বের হলো এবার সবাই খুশি☺)

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৫

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

ডক্টর: উনার এতো ঠান্ডা লাগলো কিভাবে অনেকটা তো কমে গিয়েছিল উনার ওয়াইফ কোথায় (রাগে গা জ্বলতেছে ওর ঠান্ডা লাগলে আমি কি করবো ওদের কথায় বুঝা যায় আমার সারা রাত ওকে পাহারা দেওয়া উচিত ছিল যত্তোসব)
নার্স: উনার ওয়াইফ কে এসে ঘুমে পেয়েছি সারা রাত জেগে হয়তো ঘুমিয়েছে মাত্র (যাক নার্সটা বাঁচিয়ে দিলো)
ডক্টর: চৌধুরী সাহেব কে জবাব দিব কি এখন
উফফফ আহ্লাদে বাঁচি না চৌধুরী সাহেব কে জবাব দিবো কি এখন ডং যত্তোসব
রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় আসতেই দেখি মা বাবা দৌড়ে আসছেন দূর তাদের এখন কি বলবো বুঝতে তো দেওয়া যাবে না আমি যে এসি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম বুঝলে আমার প্রতিশোধ নেওয়া হবে না খেলা এখানেই শেষ হয়ে যাবে
মা: বউমা আমার তাসিনের কি হয়েছে
আমি: মা শান্ত হন তেমন কিছু হয়নি
বাবা: ডক্টর যে বললো জ্বর অনেক বেড়ে গিয়েছে
আমি: হ্যা সামান্য বেড়েছে ডক্টর দেখছে আপনারা শান্ত হন
মা: আমার ছেলেটার যে কি হলো (কাঁদছেন আর এসব বলছেন মনে হচ্ছে উনার ছেলে মারা গেছে উফফফ কবে যে আমি প্রতিশোধ নিয়ে এই আজব মানুষদের কাছ থেকে দূরে যেতে পারবো)

ডক্টর কেবিন থেকে বেড়িয়ে এসে বললো আমরা যেন ভিতরে যাই, ভিতরে যেতেই দেখি তাসিন আমাদের দিকে থাকিয়ে আছে
মা: তাসিন বাবা তোর কষ্ট হচ্ছে খুব
তাসিন: তেমন কিছু হয়নি তো তুমি শান্ত হও
বাবা: রাতে তো অনেক কম ছিল হঠাৎ বাড়লো কিভাবে
তাসিন: ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা পড়েছিল তাই হয়তো
মা: বউমা কোথায় ছিল
তাসিন: সারা রাত আমার পাশে বসেছিল ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে তাই আর ডাকিনি (বার বার কেন তাসিন আমাকে ভালো সাঝিয়ে দিচ্ছে বুঝতেছি না ওর তো আমার উপর রাগ করার কথা ও আমায় এতো ভালোবাসে কেন)

বারান্দায় দাড়িয়ে আছি হঠাৎ তাসিন ডাক দিল
–অন্নি
–হুম
–খাইয়ে দাও তো তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে (এখন ইচ্ছে হচ্ছে খুন করে ফেলি কিন্তু মা বাবা সামনে তাই কিছু বলতেও পারলাম না লক্ষী মেয়ের মতো খাইয়ে দিতে শুরু করলাম)
মা: কিরে তাসিন তোর চোখে পানি কেন (উনার কথা শুনে তাসিনের দিকে থাকালাম আমার দিকে থাকিয়ে আছে আর ওর চোখে পানি)
তাসিন: জ্বর তো তাই একটু কষ্ট হচ্ছে (মিথ্যে বললো আসলে তো কাঁদছে আমার বদলে যাওয়া দেখে)
তাসিন কে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়ালাম তারপর ওর মাথার পাশে গিয়ে বসলাম, মা বাবা সামনে তাই এতো লক্ষী মেয়ে সাঝলাম নাহলে তো এতোক্ষণে আরো কষ্ট দিয়ে ফেলতাম

ডক্টর এসে বললো তাসিন কে বিকেলে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো যাক শান্তি পেলাম এই হসপিটালে থেকে রাত জাগতে হবে না তো

সন্ধ্যায় তাসিন কে নিয়ে সবাই বাসায় চলে আসলাম, তাসিন শুয়ে আছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছি এর থেকে বেশি কষ্ট ওদের কিভাবে দেওয়া যায় তখনি ফোন বেজে উঠলো চাচ্চুর ফোন, রিসিভ করলাম
–চাচ্চু
–হ্যা মা কেমন আছিস
–শত্রুর বাড়িতে যেমন থাকা যায়
–একটু কষ্ট কর মা নাহলে যে প্রতিশোধ নিতে পারবি না
–চাচ্চু একটু বুদ্ধি দাও তো কিভাবে তাসিন কে বেশি কষ্ট দেওয়া যায় আমি না ভেবে পাচ্ছি না
–আরে এইটা কোনো ব্যাপার হলো চৌধুরী কে কাঁদাতে তাসিন কে বেশি কষ্ট দিতে হবে না একটু একটু করে কষ্ট দিবি আর চৌধুরী একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবে
–ঠিক আছে আর হ্যা চাচ্চু আরেকটা বিষয় নিয়ে তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন আমি সুযোগ পেয়ে ফোন দিব
–ঠিক আছে মা রাখি
–ওকে

ফোন রেখে ভাবছি পরী কে কিডন্যাপ করা নিয়ে চাচ্চুর সাথে কথা বলবো, উহু কোনো টাকা চাইবো না শুধু দুইটা দিন পরী কে চাচ্চুর বাসায় রেখে দিব তাহলেই চৌধুরী পরিবারের সবাই বড়সড় একটা ধাক্কা খাবে

আজকে আর তাসিন কে জ্বালাই না খাটে ঘুমিয়ে গেছে যখন থাকুক আমি সোফায় ঘুমিয়ে থাকি, সোফায় এসে শুয়ে পরলাম
–অন্নি
–হুম
–এই সন্ধ্যার সময় ঘুমাচ্ছ কেন
–ঘুম পাচ্ছে তাই
–খাবে না
–না আমার খিদে নেই
–আমার সাথে এমন কেন করছ অন্নি কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছ
–এতোই যদি কষ্ট পাও তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দাও
–চুপ কর অন্নি তুমি আমাকে যতো খুশি কষ্ট দাও কিন্তু ডিভোর্স এর কথা কখনো বলোনা
আর কিছু না বলে শুয়ে রইলাম, তাসিন ডিভোর্স চায়না তারমানে আমি নিজে থেকে ডিভোর্স দিলে তাসিন কষ্ট পাবে শুধু কষ্ট না অনেক বেশি কষ্ট পাবে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে আমি ডিভোর্স দিতে পারবো না, আগে তো আমার প্রতিশোধ নেই মনের জ্বালা মিঠাই তারপর নাহয় ডিভোর্স এর কথা ভাববো

মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি লাইট জ্বালানো তাসিন টেবিলে বসে কি যেন লিখছে আর চোখের পানি মুচ্ছে, চোখ বন্ধ করে ফেললাম তাসিন কে কষ্ট দেই ঠিকি কিন্তু পরে নিজের কাছেই খারাপ লাগে জানিনা কেন এমন হয়, এখন ও কাঁদছে দেখলে হয়তো মায়ায় পরে যাবো, মায়া জিনিসটা খুব খারাপ একবার কারো প্রতি মায়া জন্মালে সে মায়া কাটিয়ে উঠা খুব কষ্টকর, তাসিনের প্রতি মায়া জন্মালে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আম্মু আব্বু কে অপমান করা হবে চাচ্চু ছোট মা কষ্ট পাবে, নাহ আমার মনের মধ্যে তাসিনের জন্য মায়া জন্মাতে দেওয়া যাবে না এতে যদি তাসিনের থেকে দূরে থেকে প্রতিশোধ নিতে হয় তাহলে আমি সেটাই করবো, তাসিন আমাকে ওর নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে আমি দূরে থাকলে ও তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে আর ওর শেষ হয়ে যাওয়া দেখে চৌধুরী পরিবারের সবাই তিলেতিলে শেষ হবে, আমি তো চাই সবাই কে তিলেতিলে শেষ করে দিতে এই চৌধুরী মঞ্জিল এর নাম মুছে দিতে……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৪

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো মা বাবা আর তাসিনের বড় ভাই আসিফ গেলেন সাথে, বাড়ির সবাই ড্রইংরুমে চিন্তিত মুখে বসে আছে আমার তো দেখতে বেশ মজা লাগছে, কিন্তু আমি যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা তো প্রকাশ করা যাবে না বরং আমাকে এমন অভিনয় করতে হবে যে সবার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমি কারন আমি তাসিন কে ভালবেসে বিয়ে করেছি আর বিয়েরও মাত্র দুদিন হলো, সবকিছু ভেবে আমিও চিন্তিত মুখে ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বসে আছি আর কান্না করার মিথ্যে নাটক করছি, প্রতিশোধ নিতে হলে তো এইটুকু নাটক করতেই হবে আমাকে

ঘরির কাটাতে রাত নয়টা বাজে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, তাসিনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে কি দিলো তাসিন….? তাহলে কি তাসিন সুস্থ হয়ে গেছে কিন্তু ও এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক সেটা তো আমি চাইনা, ফোনটা রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অরনী মা তাসিনের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর থেকে শুধু তোমাকে দেখতে চাইছে আসিফ কে পাঠিয়েছি তুমি ওর সাথে হসপিটালে চলে এসো
–ঠিক আছে
পরলাম আরেক জ্বালায় শাশুড়ি মা ফোন করে বলেছে না গেলেও প্রব্লেম হবে কি যে করি ওদের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তো দেখি আমি নিজেই শেষ হয়ে যাবো, হসপিটালে যাওয়া মানেই তো সারা রাত জেগে থেকে তাসিনের সেবা করা যারা আমার শত্রু তাদের ছেলে কে সেবা করবো আমি ইম্পসিবল, আজ এমন সেবা করবো আমি তাসিন আর কখনো আমাকে পাশে রাখতে চাইবে না

হসপিটালে তাসিনের পাশে বসে আছি, আমার হাত তাসিনের হাতের মুঠোয় নিয়ে ও শুয়ে আছে পাশে মা বাবা তাই কিছু বলতেও পারছি না জাস্ট অসহ্য লাগছে এসব
তাসিন: আম্মু তুমি আর আব্বু বাসায় চলে যাও অন্নি তো আমার কাছে আছেই
মা: তোকে রেখে কিভাবে….
তাসিন: আম্মু অন্নি আমাকে কতোটা ভালোবাসে তোমরা তো জানো তাহলে ওর পাশে রেখে যেতে ভয় কিসের
বাবা: ভয়ের কিছু না ও মেয়ে মানুষ হঠাৎ কিছু হলে ও একা কি করবে
তাসিন: কিছু হবে না তোমরা যাও
মা: ঠিক আছে
বুঝলাম উনারা যেতে চাচ্ছেন না কিন্তু তাসিনের জিদের কাছে হার মেনে যেতে হচ্ছে

মা বাবা চলে গেলেন, এখনো তাসিন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে শুয়ে আছে আর কি এভাবে রাখা যায় এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম ও শুধু অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এতো অভাক হবার কিছু নেই এসব আমার ভালো লাগে না
–(মৃদু হাসল)
–হাসছ কেন
–নতুন অন্নির নতুন রূপ দেখে, আগে এই অন্নিটাই সারা দিন আমার হাত ধরে থাকতে চাইতো
–আগের অন্নি নেই পাল্টে গেছে
–হ্যা কবুল বলার সাথে সাথে আমার অন্নিটা পাল্টে গেছে
ভালো লাগছে না এসব শুনতে কেবিন থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, তাসিন আমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি কিন্তু আমি তো তাসিন কে কখনো ভালোবাসিনি এতোদিন শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছি চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ হয়ে আসার জন্য, ছোট বউ হয়ে তো এলাম তাসিন কে কষ্টও দিচ্ছি কিন্তু তাসিন তো দিন দিন আরো বেশি ভালোবেসে ফেলছে আমায়, আমি কি পারবো সবসময় ওর এতো ভালোবাসা কে উপেক্ষা করে সবাইকে শাস্তি দিতে আমার প্রতিশোধ নিতে
–অন্নি অন্নি (উফফফফফ তাসিন ডাকতেছে একদম ভালো লাগছে না এসব)
–কি
–আমার ওষুধটা খাইয়ে দিবে ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো
–কেন তোমার হাত নেই নিজে খেতে পারো না
–হুম খেয়ে নিবো ভেবেছিলাম আমার পাশে থাকলে আমার কষ্ট দেখে তোমার পাথর হয়ে যাওয়া মনটা হয়তো একটু নরম হবে কিন্তু এখন দেখছি আমি সম্পূর্ণ ভুল
–আমার মন পাথরের মতো নাকি নরম সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না
–খাবার রাখা আছে খেয়ে নাও
–খাবো না
–খাবারের উপর রাগ করো না অসুস্থ হয়ে পরবে
–আমার জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না
–তুমি তো আমার জন্য চিন্তা কর না আমিই নাহয় তোমার জন্য চিন্তা করলাম
–আচ্ছা তাসিন একটা কথা বলো তো তুমি কি আমাকে হসপিটালে এনেছ সারা রাত ঝগড়া করবে বলে
–না আমার অসুস্থতার সময় তুমি পাশে থাকলে আমার ভালো লাগবে তাই এনেছিলাম কিন্তু….
–কিন্তু কি
–কিছু না ঘুমিয়ে থাকো
–হসপিটালে তো এনেছ আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কোথায় ঘুমাবো আমি ফ্লোরে
–রাগের মাথায় রুমটা মনে হয় ভালো করে দেখনি
–(ওর কথা শুনে রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম সোফা এসি টিভি সব আছে)
–আফজাল চৌধুরীর কলিজা আমি আমাকে কোনো ছোট হসপিটালে ভর্তি করানো হবে ভাবলে কিভাবে যাও সোফায় ঘুমিয়ে পরো আমার হাতে স্যালাইন লাগানো নাহলে আমি সোফায় ঘুমাইতাম আর তোমাকে বেডে ঘুমাতে বলতাম
(তুমি যে আফজাল চৌধুরীর কলিজা সেটা জেনেই তো তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করলাম বিয়ে করে চৌধুরী পরিবারের বউ হয়ে আসলাম তোমাকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো এসব ভাবতে ভাবতে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম)

মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাসিনের দিকে থাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে আছে, রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম তারপর এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, ডক্টর বা নার্স কেবিনে আসার আগেই এসি বন্ধ করে ফেলবো, হাহাহা সারা রাতের এসির ঠান্ডায় তাসিন আরো অসুস্থ হয়ে পরবে আর কষ্ট পাবে আফজাল চৌধুরী & মিসেস আফজাল

বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম, নার্সরা আসার সময় হয়েছে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে এসিটা বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পড়লাম, একবার তাসিনের দিকে থাকালাম বেচারা জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে ঠান্ডা ভালোই লেগেছে এবার শুধু ওদের কান্না দেখার পালা, ওরা ওদের কলিজার টুকরা ছেলের কষ্ট দেখে কাঁদবে আর আমি ওদের কান্না দেখে শান্তি পাবো

সোফায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি হঠাৎ নার্সদের চেঁচামেচি শুনে উঠে বসলাম, কয়েক জন ডক্টর দৌড়ে রুমে আসলো……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৩

1

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সারা বাসায় শুধু চেঁচামেচি সবার মুখে একটাই কথা তাসিন অসুস্থ তাসিনের খুব জ্বর এসেছে উফফফফফ আর ভালো লাগছে না এসব চেঁচামেচি, আগে জানলে সবার এই আহ্লাদের টুকরা তাসিন কে ফ্লোরে ঘুমাতে বলতাম না এখন নিজেই শাস্তি ভোগ করছি

সবাই আমদের রুমে ভীড় করে আছে আমি আর কি করবো খাটের এক কোনে বসে রইলাম, তাসিন হয়তো বুঝতে পারছে আমার অস্বস্তি লাগছে তাই ও সবাইকে রুম থেকে বের করে দিল, যাক এতোক্ষণে একটু শান্তি পেলাম
–অন্নি সরি আমার জন্য সবাই এ রুমে এসেছে আর তুমি অস্বস্তি ফিল করেছ
–(কিছু না বলে ওর দিকে শুধু থাকিয়ে রইলাম)
–অন্নি প্লিজ আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিবে
–বল
–এমন কেন করছ আমার সাথে আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে
–(কিছু বলতে যাবো তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

–হ্যালো ছোট মা
–হ্যা মা কেমন আছিস
–আর বলো না একদম অসহ্য লাগছে এখানে
–কেন কি হয়েছে
–তাসিন কে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছিলাম এখন তো ওর ঠান্ডা লেগে গেছে বাড়িতে এইটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে জাস্ট অসহ্য লাগছে
–ওদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে হলে এমন জামেলা তো তোর সহ্য করতেই হবে তাই না
–ভালো লাগছে না এসব ছোট মা
–একটু ধৈর্য ধর মা তুই কি হতাশ হয়ে হেরে যাবি
–না ছোট মা আমাকে হারলে হবে না প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে
–এইতো আমার মেয়ের মতো কথা, এসব একটু সহ্য কর আর তুই যে এভাবে কথা বলছিস কেউ শুনে ফেলবে তো
–হ্যা এখন রাখি পরে ফোন করবো
–ঠিক আছে মা

ফোন রেখে রুমে আসতেই দেখি তাসিন অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে, ও কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি
–অভাক হয়ে থাকিয়ে আছ কেন
–আমার নতুন অন্নিটা কে দেখছি
–মানে
–এই যে আমার থেকে দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলে আগে তো এমন ছিল না
–আমার ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিল ওর সাথেও কি তোমার সামনে কথা বলতে হবে, ভালো করে শুনে রাখো আমার ব্যাক্তিগত কোনো ব্যাপারে একদম নাক গলাতে আসবে না
–হুম
–আচ্ছা তোমার বাড়ির মানুষদের কি সামান্য বিবেক বলতে কিছু নেই সকাল দশটা হয়ে গেছে অথচ নাস্তা খেতে ডাকেনি ওরা কি ভাবে নতুন বউদের খিদে লাগে না
–আসলে আমি অসুস্থ হওয়াতে কারো মন মেজাজ ঠিক নেই তুমি বস আমি খাবার রুমে নিয়ে আসি
–হ্যা তুমি যাও আর বাড়ির মেহমানরা আমাকে অসভ্য বলুক
–(একটা হাসি দিয়ে কাকে যেন ফোন দিয়ে বললো রুমে খাবার নিয়ে আসতে)

ফোন দেওয়ার একটু পরই কাজের বুয়া খাবার দিয়ে গেলো, সোফায় বসে পা নাচাচ্ছি আর খাবার খাচ্ছি তাসিন খাবে কিনা জিজ্ঞেসও করলাম না
–অন্নি
–কি
–খিদে লেগেছে
–খাবার আছে খাও
–খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি খাইয়ে দিবে
–শুনো এসব আহ্লাদী কাজ আমি করতে পারবো না নিজে খেতে পারলে খাও না খেতে পারলে ঘুমাও
–হুম

আর একবারও তাসিনের দিকে থাকালাম না ফোনে গেমস খেলতে খেলতে খেয়ে নিলাম, খাওয়া শেষে থাকালাম দেখি তাসিন ঘুমিয়ে পড়েছে মুখটা খুব মায়াবী লাগছে, নিজের অজান্তেই ওর মাথার পাশে গিয়ে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিলাম, খুব বেশিই মায়াবী লাগছে ওকে আর কষ্ট দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাসিন তো আর কোনো অপরাধ করেনি তাহলে ওকে কেন কষ্ট দিচ্ছি

হঠাৎ এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলাম ওর মাথা থেকে, বারান্দায় এসে চেয়ারে দফ করে বসে পড়লাম, কি করছি আমি এসব আমি তো এ বাড়িতে এসেছি প্রতিশোধ নিতে তাহলে আমি তাসিনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ছি কেন, আমাকে যে দূর্বল হলে চলবে না তাসিন কে কষ্ট দিয়েই যে আমার প্রতিশোধ নিতে হবে, তাসিন এই বাড়ির সবার কলিজার টুকরা ওকে কষ্ট দিলেই সবাই কষ্ট পাবে তাই ওকেই আমার কষ্ট দিতে হবে অনেক বেশি কষ্ট

–ভাবি ভাবি (হঠাৎ তিথির ডাকে চোখ খুলে থাকালাম বারান্দায় চেয়ারে বসেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি)
–ভাবি তুমি এখানে ঘুমিয়ে আছ কেন দরজা খুলা ভাইয়াও ঘুমে
–এখানে এসে বসছিলাম কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি
–তোমার চোখে তো ঘুম রইছে যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও
–হুম

তিথি চলে গেলো রুমে এসে বিছানায় বসলাম তাসিন গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, কি করবো বুঝতেছি না এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে, শত্রুর বাসায় তো আর শান্তি লাগবে না বরং অশান্তিই লাগবে, ঘুমও ধরছে খুব চোখ মেলে থাকাতে পারছি না, বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম

হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাড়াতাড়ি চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি তাসিন আমার পেটে হাত দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে, আস্তে করে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ভালো লাগছে না কিছু তাই ছাদে গেলাম

ছাদের দোলনায় বসে বসে ভাবছি কি করলে এই চৌধুরী পরিবারের সবাই কাঁদবে আর আমি পরম শান্তি পাবো, কি করবো তাসিন কে কষ্ট দিবো নাকি অন্য কাউকে, আচ্ছা পরী কে কষ্ট দিলে কেমন হয় ও তো এই চৌধুরী পরিবারের প্রথম সন্তান অবশ্যই সবাই কাঁদবে ওর জন্য, কিভাবে কষ্ট দিব পরী কে মেরে ফেলবো….?
না না খুন করা যাবে না কাউকে খুন করতে হলে তো আফজাল চৌধুরী কে খুন করে আমার প্রতিশোধের আগুন নিবাতাম, আমি তো চাই চৌধুরী পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ কষ্ট পেতে পেতে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাক মুছে যাক এই চৌধুরী মঞ্জিল এর অস্তিত্ব

হঠাৎ নিচে চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম, ড্রয়িংরুমে সবাই ভীড় জমিয়েছে একটু সামনে যেতেই দেখলাম তাসিন ফ্লোরে পরে আছে মা ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন, কে একজন যেন চিৎকার করে বললো তাসিন মাথা ঘুরিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো ওকে হসপিটাল নিতে হবে…..

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০২

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০২

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিন: এই অন্নি কি করেছ এইটা
–কি
–তুমি বিয়ের সাঝ পাল্টে এই জামা পড়েছ কেন
–আমার অস্বস্তি লাগছিল তাই
–মানে কি এইটুকু কষ্ট আমার জন্য করতে পারলা না
–না
–তুমি জানতে আমি তোমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চাই তাও তুমি চেঞ্জ করে নিলে
–হ্যা নিলাম
–এই অন্নি তুমি ঠিক আছ তো
–একদম
–তুমি কি আমার অন্নি
–উহু তোমার কখনো ছিলামই না
–পাগল হয়ে গেছ নাকি কি বলছ এসব আবুল তাবুল
–ঘুমাবো এতো চেঁচামেচি করো না তো
–ঘুমাবা মানে কি প্লেন ছিল আমাদের ভুলে গেছ
–দূর এসব প্রেম ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না আর এই বাসর টাসর তো একদমই না
–এই অন্নি কি বলছ এসব তুমি কি সেই অন্নি যে অন্নি আমার ভালোবাসা পাবার জন্য পাগল ছিলে
–আগে পাগল ছিলাম এখন আর নেই
–অন্নি লক্ষীটি প্লিজ এসব ফাজলামো বাধ দাও আমার ভালো লাগছে না
–তোমার ভালো লাগলেই কি আর না লাগলেই কি আর হ্যা আমি কোনো ফাজলামো করছি না
–তারমানে আগে যে ভালোবাসা ছিল তোমার আমার প্রতি সেটা বিয়ে হবার সাথে সাথে কমে গেছে
–হ্যা
–তাহলে বিয়ে করলে কেন
–হাহাহা
–পাগলের মতো হাসছ কেন
–আমি পাগল তাই
–অন্নি তোমার মাথা ঠিক নেই তুমি ঘুমাও সকালে মাথা ঠিক হয়ে যাবে
–আমার মাথা ঠিকি আছে তাসিন চৌধুরী
–এই রাতটি নিয়ে তুমি আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছ আর আজ এমন করছ
–হ্যা করছি আর শুনো আমি খাটে থাকবো তুমি ফ্লোরে থাকবে এইটা নিয়ে কোনো জামেলা করবে না
–মানে কি তুমি আমাকে ছাড়া ঘুমাবে তুমি না সবসময় বলতে বিয়ের পর আমার বুক ছাড়া ঘুমাবে না
–(রাগি চোখে থাকালাম)
–ঠিক আছে ফ্লোরে না ঘুমিয়ে সোফায় ঘুমাই আমি তো কখনো ফ্লোরে ঘুমাইনি ঠান্ডা লেগে যাবে
–আমি বলেছি ফ্লোরেই ঘুমাবা আমার কথা মতো না চললে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবো
–চুপ কি বলছ এসব তুমি হ্যা পাগল হয়ে গিয়েছ নাকি
–উফফফফ ঘুমাতে দিবা নাকি আমি অন্য রুমে চলে যাবো
–না না অন্য রুমে যেতে হবে না আমি ফ্লোরেই ঘুমুচ্ছি তুমি খাটে ঘুমাও
–ওকে

একটি বালিশ আর একটি বিছানা চাদর ছুড়ে নিচে দিলাম তাসিন অভাক হয়ে শুধু আমার দিকে থাকিয়ে আছে, এখন শুধু ওর অভাক হবার পালা শুধু ওর না এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ অভাক হবে প্রতিদিন আমার নতুন নতুন কাজে, ওরা চাইলেও আমাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না কারন আমি উকিলের কাছ থেকে জেনেই এসেছি ছয়মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর এই চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বাড়ির বউ কে কখনো বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় না, সবকিছু জেনেই এই বাড়িতে আমি এসেছি ওদের সবার সুখ তছনছ করে দেওয়ার জন্য

একবার নিচে থাকালাম তাসিন গুটিসুটি মেরে ফ্লোরে শুয়ে আছে হয়তো ঠান্ডা লাগছে লাগুক আমার কি, আমি বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম, সারা দিনের ক্লান্ত শরীর বিছানায় শুতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম

সকালে গোঙানির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো উঠে চারদিকে থাকিয়ে বুঝতে পারলাম ফ্লোরে তাসিন গোঙাচ্ছে, বিছানা থেকে নেমে দেখি তাসিন খালি ফ্লোরে শুয়ে আছে বিছানারচাদর গায়ে দিয়ে কাঁপছে, কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে, পড়লাম মহা মুশকিলে এতোটা ঠান্ডা লাগুক আমি চাইনি লেগেছে যখন কি আর করার ওকে টেনে হিছরে খাটে শুয়ে দিলাম মাথায় একটু সময় জলপট্টি দিলাম

তাসিনের জ্বর একটু কমেছে ঘুমিয়ে আছে ও তাই উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম

গোসল করে রুমে ঢুকতেই শুনি দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে, দরজা খুলে দেখি ভাবি দুষ্টু হাসি হাসছে
–কি রাতে আমার দেবর বুঝি ঘুমাতে দেয়নি
–(মৃদু হাসলাম)
–সাহেব বুঝি এখনো ঘুমে (বলেই রুমের ভিতরে থাকালো বিছানায় চোখ পরতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো)
–এই তাসিনের কপালে জলপট্টি কেন কি হয়েছে ওর
–তেমন কিছু না ভাবি সামান্য জ্বর এসেছে
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে আর তুমি বলছ সামান্য
–(মনে মনে ভাবছি সকালে যে জ্বর ছিল তা দেখলে তো উপায় ছিল না এখন তো কমেছে)
–চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছ কেন যাও মা কে ডাক দাও

দূর ভালো জ্বালায় পড়লাম তো, মা কে ডাকার জন্য দরজার কাছে যেতেই দেখি সিড়িতে লাইন লাগানো নিচ থেকে মা বাবা তিথি চাকর বাকর সহ আত্মীয়স্বজন সবাই আমাদের রুমের দিকে আসছে, আমি রুমে এসে খাটের এক কোনে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম, মনে মনে হাসছি তাসিনের কষ্টে ওর মা বাবা এখন কাঁদবে আমি তো চাই ওরা কাঁদুক

রুমের মধ্যে এতো মানুষ যে একটু নড়াচড়া করার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই, জ্বর উঠেছে সামান্য অথচ শহরের বড় ডক্টর কে আনা হয়েছে আহ্লাদে আর বাঁচি না উফফফ অসহ্য লাগছে এসব

ডক্টর তাসিনের জ্বর মেপে পাশে বসে আছে সবাই তাসিনের চোখ খুলার জন্য অপেক্ষা করছে

অনেক্ষণ পর তাসিন আস্তে আস্তে চোখ খুলে থাকালো, প্রথমেই আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটি হাসি দিলো, খুব অভাক হলাম আমার জন্য অসুস্থ হলো অথচ আমার উপর ওর কোনো রাগ নেই
মা: তাসিন বাবা তোর এতো জ্বর আসলো কিভাবে (কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন)
বাবা: সেই ছোট বেলায় তোর এমন জ্বর উঠেছিল আর উঠেনি উঠবে কিভাবে তোকে যেভাবে আগলে রেখেছি জ্বর তোর কাছেই আসতে পারেনি কিন্তু আজ এতো জ্বর আসলো কিভাবে
তিথি: আচ্ছা ভাবি ভাইয়ার এতো জ্বর এসেছে তুমি আমাদের ডাকোনি কেন
তাসিন: মা তোমরা শান’ত হও তো আর অন্নির কোনো দোষ নেই এতো রাতে ওর কি করার ছিল ও যতোটুকু পেরেছে করেছে সারা রাত আমার পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়েছে মেয়েটা আর কি করবে (ওর কথা শুনে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে কি বলছে এসব)
মা: তোর জ্বর আসলো কিভাবে
তাসিন: (আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে বললো) গতকাল বন্ধুদের সাথে ধুলোবালিতে একটু ঘুরাঘুরি করেছিলাম তো আর সারা দিনের ক্লান্ত শরীর ছিল তাই হয়তো জ্বর এসেছে

অভাক হয়ে ওর দিকে থাকিয়ে আছি কি বলছে তাসিন এসব ও কি পাগল, আমার জন্য ওর এতো কষ্ট হচ্ছে আর ও কিনা আমাকে সবার সামনে ভালো সাঝিয়ে দিলো, তাহলে কি আমি ওকে কষ্ট দিয়ে অন্যায় করছি……

চলবে?

আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০১

0

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমার বিয়ে বাসায় মেহমানরা গিজগিজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ সবাই খুশি শুধু খুশিই না অনেক বেশি খুশি, তবে বিয়েটা আমার বাসায় বা কোনো সেন্টারে হচ্ছে না বিয়েটা হচ্ছে আমার হবু শশুড় বাড়িতে, শহরের অনেক বড় ব্যবসায়ী আফজাল চৌধুরী (হবু শশুড়) এর ছোট ছেলের সাথে বিয়েটা হচ্ছে তাই সবাই এতো খুশি কারন এ বাড়ির ছোট ছেলে যে সবার চোখের মণি

আমি অরনী অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি, মা বাবা বেঁচে নেই আজ থেকে সাত বছর আগে আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আম্মু আব্বু মারা যান, সেই থেকে চাচ্চুর কাছে বড় হয়েছি চাঁচিআম্মু আমাকে উনার নিজের মেয়ের মতো বড় করেছেন তাই আমি উনাকে ছোট মা বলে ডাকি, ভাবছেন চাচ্চু থাকতে আমার বিয়ে হবু শশুড় বাড়িতে হচ্ছে কেন আসলে তো আমার শশুড় বাড়ির সবাই জানে আমি একটি অনাথ মেয়ে এতিমখানায় বড় হয়েছি, আমার যে চাচ্চু আছে আমিও যে কোনো এক বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে সেটা ওরা জানে না অবশ্য তারও একটি কারন আছে
–ভাবি ভাবি (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
–হ্যা
–তুমি এখানে আর ভাইয়া তোমাকে সারা বাড়ি খুঁজছে
–তুমি যাও আমি আসছি
–ওকে

যার সাথে এখন কথা বললাম সে আমার একমাত্র ননদ+ছাত্রী তিথি, মাত্র কলেজে উঠেছে, আজ থেকে এক বছর আগে তিথি যখন ক্লাস টেনে পড়তো তখন খুব কষ্ট করে অনেক কাঠকড় পুরিয়ে ওর টিউশনির টিচার হয়ে এই বাসায় ঢুকেছিলাম, যে উদ্দেশ্যে এই বাসায় এসেছিলাম সে উদ্দেশ্যর তৃতীয় ধাপ আজ পূরন হতে যাচ্ছে

প্রথম দুটি ধাপ পূরন করতে মোটামুটি অনেক কষ্ট হয়েছে আমার, প্রথম তাসিন কে প্রপোজ, ওহ আপনাদের বলা হয়নি তাসিন আমার হবু বর, প্রেম করে বিয়ে করছি অবশ্য ওকে প্রেমে রাজি করাতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, প্রথম যখন প্রপোজ করেছিলাম ও আমাকে ইগনোর করেছিল যদিও আমি মোটামুটি সুন্দরীর খাতারে পরি তাও ইগনোর করেছিল কারন তাসিনও যে খুব সুন্দর+বড় লোকের ছেলে, তাসিনের সাথে প্রেম করার জন্য আমাকে একটি বছর এতিমখানায় থাকতে হয়েছে কারন ওকে বলেছিলাম আমি অনাথ, তাসিনের সামনে আমি গরীবদের সাহায্য করতাম যদিও এইটা আমার ছোট বেলার অভ্যাস তাও তাসিনের সামনে এইসব কাজ করতাম ওকে আমার প্রতি দূর্বল করার জন্য, বুদ্ধিটা কাজেও লেগেছিল তাসিন আস্তে আস্তে আমার প্রতি দূর্বল হয় তারপর আমাদের প্রেম হয় আর এখন তো তাসিন আমার জন্য এতোটাই পাগল যে আমার কথায় মরতেও রাজি, হাহাহাহা আমি তো এটাই চেয়েছিলাম কারন ওকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো

দ্বিতীয় ধাপ পূরন করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, তাসিনের পরিবার কে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য অনেক কাঠকড় পুরাতে হয়েছে, প্রথমে কেউ রাজি ছিল না আমি অনাথ বলে না তাসিনের জন্য নাকি মেয়ে ঠিক করা ছিল ছোট বেলায়, মেয়েটি এখন হারিয়ে গিয়েছে তাই উনারা এখনো আশা করেন মেয়েটি ফিরে আসবে তাসিনের বউ হবে, সবার আশা নিরাশা করে আজ আমি তাসিনের বউ হতে যাচ্ছি, এর জন্য সুইসাইড করার মিথ্যে নাটক করতে হয়েছে তাসিনও অনেক কান্নাকাটি করেছে তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে রাজি হতে হয়েছে, এখন সবাই খুশি ওই মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে আমাকে এই বাড়ির ছোট বউ বানাতে সবাই ব্যাস্ত, এই বাড়ির বড় বউ আসিফ চৌধুরীর স্ত্রী শায়লা চৌধুরী, তাদের ছোট্ট একটি মেয়েও আছে নাম পরী, ভাবছেন সবার পরিচয় দিচ্ছি কেন
এই কারনে দিচ্ছি যেন পরে কাউকে চিনতে অসুবিধা না হয়
–অন্নি কোথায় তুমি (আবার ডাক পড়েছে বিয়ের স্টেজ ছেড়ে আমি ছাদে দাড়িয়ে আছি তো তাই, এখন এসেছে তাসিন ও আমাকে আদর করে অন্নি বলে ডাকে)
–এই ছাদে কি করছ
–কিছুনা
–ওমা আমার অন্নি কাঁদছে কেন
–আম্মু আব্বুর কথা ভাবছিলাম তো কখন চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি
–ঠিক আছে নিচে চলো এই বউ সাঝে ছাদে দাড়িয়ে থাকলে নজর লেগে যাবে
–তাই বুঝি
–হ্যা আমার অন্নিটা একদম পরীর মতো তো তাই নজর লেগে যাবে, চলো সবাই স্টেজে অপেক্ষা করছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলি আমার আর তর সইছে না
–(মৃদু হাসলাম)
–কি হলো হাসছ যে
–তোমার পাগলামি দেখে চলো নিচে যাই
–চলো

তাসিনের হাত ধরে নিচে নেমে আসলাম সবাই আমাদের দিকে হা করে থাকিয়ে আছে
ভাবি: দুইটা কে খুব সুন্দর মানিয়েছে
মা: আমার তাসিনের জন্য এই মেয়েটাই পারফেক্ট, খুব সুন্দর লাগছে আমার বউমা কে
আমি:(মনে মনে ভাবছি কতটুকু পারফেক্ট তা তো বিয়ের পরই বুঝতে পারবেন সবাই হাহাহা)
তাসিন: এই হাসছ কেন
আমি: এমনি
বাবা: তোমরা সবাই এখানে কাজি সাহেব তো বসে আছেন চলো শুভ কাজটা সেরে ফেলি
মা: হ্যা সবাই চলো চলো

বিয়েটা হয়ে গেলো সবাই খুশি সবচেয়ে বেশি খুশি আমি আমার উদ্দেশ্যের তৃতীয় ধাপ পূরন হলো

সারা দিন বিয়ের ব্যাস্ততা শেষে এখন আমাকে তাসিনের রুমে নিয়ে আসা হলো, সব নিয়ম কানুন শেষে ভাবি আমাকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো

আর আট-দশটা মেয়ের মতো আমি দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি না, উঠে ফ্রেশ হয়ে লেহেঙ্গা পাল্টে জামা পরে নিলাম জানি তাসিন রাগ করবে কারন ও আমাকে বাসর ঘরে বউ সাঝে দেখতে চেয়েছিল, করুক রাগ কারো রাগে আমার কিছু যায় আসে না আমি আমার উদ্দেশ্য সফল করেই ছাড়বো

বারান্দায় আর রুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি কিভাবে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, হঠাৎ দরজায় শব্দ হলো তাসিন এসেছে চট করে মাথায় বুদ্ধি চলে আসলো তাসিন কে দিয়েই প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করবো, ও এই বাড়ির সবার চোখের মণি ওকে কষ্ট দিতে পারলেই সবাই কষ্ট পাবে……

চলবে?

অবুঝ_বউ পার্ট: ২০/অন্তিম পর্ব

15

অবুঝ_বউ

পার্ট: ২০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

আর মাত্র আধা ঘন্টা তারপর সোহাগীর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো আর কখনো ফিরে আসবো না, সোহাগী জিসানকে নিয়ে ভালো থাকবে আমি নাহয় ওর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো
মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে তাই কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলাম, হঠাৎ মনে হলো আমার পাশের চেয়ারে কেউ এসে বসেছে চোখ খুলে পাশে তাকাতেই চমকে উঠলাম সোহাগী এখানে কিভাবে আসলো তাও আবার সেই কালো শাড়ি এই মেয়ে তো আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে, অনেকক্ষণ ধরে সোহাগীর কথা ভাবছি তো তাই হয়তো ভুলে ওকে এখানে দেখছি এইটা ভেবে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম
–এখন আমাকে চোখে দেখ না বুঝি (সোহাগীর কন্ঠ শুনে আবার চমকে উঠে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম)
–ওই কি হলো
–উফফফ এভাবে কেউ চিমটি দেয়
–তাহলে কি করবো তুমি তো বিশ্বাস করছ না আমি যে এখানে এসেছি তাই চিমটি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম সত্যি আমি এসেছি
–কেন এসেছ
–হানিমোনে যাবো
–তাহলে জিসান কোথায় আর পিচ্ছি মেয়ে তুমি হানিমোনের কি বুঝ
–ওই আমাকে পিচ্ছি বলবা না আমি বড় হয়ে গেছি আর এতো জিসান জিসান করোনা তো জিসান এখন হসপিটালের বেডে আরামে ঘুমাচ্ছে
–মানে
–অবাক হওয়ার কিছু নেই সাথে তোমার মৌরিও শান্তিতে হসপিটালের বেডে ঘুমাচ্ছে
–কি বলছ এসব এই সত্যি করে বলতো এসবের মানে কি আর তুমি জিসানের কাছে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন
–শুনবা
–হুম বল
–তাহলে শুনো, তুমি বাসা থেকে বেড়নোর পর আমিও বের হই, আমি তোমাদের পিছনের গাড়িতেই ছিলাম মৌরি যখন তোমাকে থাপ্পড় দিয়েছিল আমি দূর থেকে দেখেছি জানো আমার খুব কষ্ট হয়েছিল কিন্তু তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম তুমি ওকে কিছু না বলাতে তখন বুঝতে পারি তুমি আমার কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছ তাই মন খারাপ বলে মৌরিকে কিছু বলনি তারপর
–তারপর কি বল
–তারপর তোমরা ওখান থেকে চলে আসার পর মৌরির কাছে জিসান আসে আমি আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনেছি কিন্তু তোমাকে বলব না
–কেন
–আগে বল আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাবা আর ওখানে গিয়ে বেশি দিন থাকবা না হানিমোন করে চলে আসবা
–উফফফ ঠিক আছে বল
–আসলে সবকিছু জিসান আর মৌরি তোমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করেছে আমি না বুঝে বোকার মতো জিসানকে বিশ্বাস করেছিলাম
–তুমি যে বললে তোমরা আগামীকাল বিয়ে করবে
–জিসান মৌরিকে বলেছে আমাকে বিয়ে করে কয়েকদিন রেখে ছেড়ে চলে যাবে এই কথা শুনেই তো আমি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাই, অনেক ভেবে দেখেছি আসলে তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস আর আমি তোমাকে ভালোবাসি
–তুমি আমাকে ভালোবাস
–কেন বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি
–চেঁচাচ্ছ কেন এইটা বাসা না এয়ারপোর্ট
–হুম
–এবার বল ওরা হসপিটালে কেন
–এইটা জানার জন্য এতো পাগল হয়ে আছ কেন মৌরিকে ভালোবাস নাকি শুনো একদম অন্য মেয়ের দিকে নজর দিবা না চোখ উপড়ে তুলে ফেলব
–তুমি পিচ্ছি বউ থেকে গুন্ডি বউ হইলা কবে
–কি আমি গুন্ডি
–না না তুমি লক্ষী বউ এবার বাকি কাহিনী বল
–আমাকে পাগলের মতো দৌড়ে বাসায় যেতে দেখে আব্বু আম্মু সবাই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে আমি সবকিছু বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি তারপর….
–তারপর কি কান্না করছ কেন
–আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ডিভোর্স পেপারের কথা মনে পড়তেই কিন্তু আমার মন বলছিল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতেই পারো না তাই আমি সারা রুম তন্নতন্ন করে খুঁজি আর ডিভোর্স পেপার টেবিলের ড্রয়ার থেকে পাই সাথে ছোট্র একটা চিরকুট “পিচ্ছি বউ আমি তোমাকে সত্যি অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি তাই সাইনটা করতে পারলাম না”
–তুমি তো সাইন করেই দিয়েছিলে
–সরি
–হুম তারপর বলো
–আমি তোমার সেই ছোট্র চিরকুটটা বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্না করেছিলাম তখন মুমু আপু এসে বললো ফ্লাইটের আরো দুঘন্টা বাকি আছে চাইলে তোমার কাছে ফিরে আসতে পারবো
–তারপর তুমি আমার কাছে চলে এসেছ
–হুম আসার আগে একটা কাজ সেরে এসেছি
–কি কাজ
–আব্বুর সাথে প্ল্যান করে টাকা দিয়ে মাস্তান ভাড়া করে জিসান আর মৌরিকে পিটিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে এসেছি
–কি বলছ এসব
–কেন তোমার কষ্ট হচ্ছে নাকি আমার তো বেশ মজা লেগেছে যখন জিসানকে পিটাচ্ছিল
–সত্যি
–হ্যাঁ কষ্ট তো হয়েছিল যখন মৌরি তোমাকে থাপ্পড় দিয়েছিল (এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছি সত্যি কি ও আমাকে ভালোবাসে)
এভাবে কি দেখছ আমার লজ্জা লাগে না বুঝি
–কি বললে লজ্জা
–(নিশ্চুপ)
–আচ্ছা তুমি যে ওদের মাস্তান ভাড়া করে পিটিয়েছ এখন যদি পুলিশ এসে তোমাকে নিয়ে যায়
–এসব আমি ভয় পাই না আর আমার শশুর আব্বুটা খুব ভালো উনি বলেছেন সব জামেলা মিটিয়ে নিবেন শুধু আমি যেন আসার সময় উনার জন্য একটা….
–একটা কি
–পরে বলবো
–ওকে এখন চলো প্লেনে উঠতে হবে
–ওকে

সোহাগীকে নিয়ে প্লেনে এসে বসলাম এখন তো আমি আমেরিকা থাকার চিন্তা বাদ দিয়ে হানিমোনের চিন্তা করছি হাহাহা, কিন্তু এই পিচ্ছি মেয়ে এতোসব কান্ড করে এসেছে ভাবতেই আমার মাথা ঘুরছে, বেচারা জিসান বিয়ের সখ মিটে যাবে হসপিটালে থাকতে থাকতে হাহাহা
–এই এভাবে পাগলের মতো হাসছ কেন
–হানিমোনে যাচ্ছি তো তাই আনন্দ হচ্ছে
–এই হানিমোন কি (দিল সব আনন্দ মাটি করে বিয়ের দিন প্রশ্ন করেছিল বাসর রাত কি আর এখন হানিমোন কি এমন প্রশ্নের কি উত্তর হতে পারে সত্যি আমার জানা নেই ইচ্ছে হচ্ছে কান্না করে দেই)
–নাহিল তুমি তো কান্না করে দিচ্ছ হিহিহি
–(আবার সেই হাসি)
–কিছু বললে
–হুম
–কি
–কাছে এসো কানে কানে বলছি
–ওকে বল
–তোমার কালো সিল্কি শাড়ি আর খিলখিল করে হাসি আমাকে আগেই পাগল করে দিয়েছিল আজ আবার নতুন করে পাগল করে দিয়েছে (কথাটা ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলতেই লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো)
–নাহিল সরি আমাকে ক্ষমা করে দাও
–কেন
–এইযে তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছি, আমি না বুঝে এমন করেছি ওই জিসান যা বলত আমি তাই করতাম
–ভুল তোমার একার না আমিও ভুল করেছি বাহিরে গিয়ে তোমাকে সময় দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু আমি তা করিনি আর তোমার এই একাকীত্বের সুযোগ নিয়েছে জিসান….
–তাও তো আমার বুঝা উচিত ছিল সরি প্লিজ ক্ষমা করে দাও এইযে কান ধরছি
–দোষ করেছ তুমি আর কান ধরছ আমার ফাজি মেয়ে
–তোমার কান মানে আমার কান আর আমার কান মানে তোমার কান হিহিহি
–তাই বুঝি
–জ্বী
–এতো চটপট করোনা কখনো প্লেনে উঠনি তো প্লেন এখন উপড়ে উঠবে তুমি ভয় পেয়ে যাবে
–আমি এখন আর কিছু ভয় পাই ন….
–কি হল ভয় তো পাওনা বলতে চাইছিলে তাহলে ভয়ে আমাকে জরিয়ে ধরেছ কেন
–আজকের জরিয়ে ধরায় ভয়ের চেয়ে ভালোবাসাটা বেশি (আমার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব শান্তভাবে কথাটা বলল)
–বাব্বাহ্ পিচ্ছি দেখি লোমান্তিক কথা বলতে শিখে গেছে
–আবার পিচ্ছি বলছ আব্বু আম্মু সবাই বুঝে গেছে আমি আর পিচ্ছি নেই তুমি কেন বুঝছ না
–আব্বু আম্মু বুঝে গেছে
–হ্যাঁ নাহলে কি আব্বু আম্মু বলে দিতেন আসার সময় যেন উনাদের জন্য ফুচকে একটা নাতনী নিয়ে আসি আর মুমু আপু কি বলে দিত ফুচকে একটা….
–বলো থেমে গেলে কেন
–তুমি এভাবে তাকিয়ে আছ কেন আর বলতে পারবো না (পিচ্ছিটা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো)

সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে বকবক করে যাচ্ছে আর আমি এসব শুনছি আজ মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ
–নাহিল
–হুম
–তুমি যখন বাহিরে ছিলে তখন আমি সত্যি একা হয়ে গিয়েছিলাম সবসময় তোমার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো মনে পড়তো রাতে ঘুম আসতো না তোমার বুকে মাথা রাখতে ইচ্ছে হতো….
–সোহাগী আসলে আমারি ভুল হয়েছে কাজের জন্য আমি তোমাকে সময় দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, শত ব্যস্ততার মাঝে প্রিয়জনকে একটুখানি সময় দেওয়াই তো সত্যিকারের ভালোবাসা
–বুঝেছ তাহলে
–হুম জানো প্রথম ভেবেছিলাম জিসানকে শাস্তি দিব কিন্তু তুমি যখন বললে ওকে ভালোবাস তখন আমি মনের দিক থেকে অনেক দূর্বল হয়ে পরেছিলাম কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারবে আর আমার কাছে ফিরে আসবে, আমার বিশ্বাসই সত্যি হলো আজকে আমি অনেক খুশি তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছ এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আর চাই না
–তোমার এতো খুশির দিনে আমাকে কিছু দিবে না
–কি চাও
–একটা ফুচকে বাচ্চা
–কি
–অবাক হচ্ছ কেন আমার একটা বাচ্চা চাই বুঝেছ
–তুমি নিজেই তো একটা বাচ্চা তুমি আবার বাচ্চা দেখাশোনা কিভাবে করবে
–কেন তুমি দেখাশোনা করবে আমার আর আমি দেখাশোনা করবো আমাদের বাচ্চার (এই পিচ্ছি বলে কি এসব আমি তো হাসতে হাসতে শেষ)
–নাহিল তুমি আমাকে সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছ তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে আমি সত্যি না বুঝে…
–এই পাগলী কাঁদছ কেন আমি তোমাকে সত্যি ক্ষমা করে দিয়েছি এখন আর কোনো কান্না নয় আমরা এখন আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো আবার সবকিছু আগের মতো সুন্দর হবে (পাগলীটা নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আমি আর বাঁধা দিচ্ছি না কাঁদলে কষ্টটা হালকা হয়ে যাবে)
–নাহিল মনে হচ্ছে আমি যেন আজ প্লেনে করে আকাশে উড়ছি না কোনো এক স্বপ্নের রাজ্যে ভাসছি
–তাই বুঝি
–হ্যাঁ আজ তুমি আমার কাছে কিছু চাইবে না
–চাইলে দিবে
–হ্যাঁ কেন দিব না
–সত্যি তো
–হ্যাঁ
–ওকে দেখা যাক, তোমার নাভির একদম কাছে একটা তিল আছে ওইটায় মায়া দিতে দাও (দুষ্টুমি করে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম)
–ফাজি ছেলে তুমি জানো কিভাবে
–মনে আছে তোমাকে একদিন শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন দেখেছিলাম কিন্তু বলার সাহস হয়নি, আজ তো তুমি নিজ থেকে বলেছ যা চাই দিবে এখন দাও
–একদম না
–প্লিজ দাও
–না
–প্লিজ বউ
–না
–প্লিজ পিচ্ছি বউ
–ওকে
আমাকে আর পায় কে হিহিহি, সোহাগীর চোখের দিকে তাকালাম কেমন যেন এক মাতাল করা চাহনি আমাকে ওর দিকে টানছে, এই নেশা ধরানো দুটু চোখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে আমার এই অবুঝ বউটার কাছে এগিয়ে যেতে লাগলাম…..

প্লেনের সবাই ঘুমুচ্ছে আপনারা এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে না থেকে চোখ বন্ধ করুন আর নাহিলকে ওর পিচ্ছি বউ এর সাথে শান্তিতে রোমান্স করতে দিন???

#সমাপ্ত?

(গল্পটা পুরোটাই কাল্পনিক আমি আমার মন থেকে সাঝিয়ে লিখেছি কিন্তু এই গল্পের জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে, আমি প্রত্যেক গল্পে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় বা একটুখানি বাস্তবতার ছোঁয়া রাখি, এই গল্পেও বাস্তব কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এমন কাহিনী তো অহরহ ঘটছে ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসা, ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে প্রিয়জনকে একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দেওয়া, আমি এই দুইটা বিষয়ই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি
সবাই সোহাগীর পাল্টে যাওয়া নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছ একবারো নাহিলের ব্যস্ততা দেখনি, নাহিল যদি শত ব্যস্ততার মাঝে সোহাগীকে একটুখানি সময় দিত তাহলে সোহাগী পাল্টে যাওয়ার সুযোগ পেতো না এখানে দুজনেরই দোষ আছে।
অনেকে কমেন্ট করেছেন আমার এই গল্প পড়ে রোজ কাঁদতে হয় কারন আপনাদের সাথে এমন কিছুই ঘটেছে আমি সত্যি দুঃখিত কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি গল্প লিখিনি ক্ষমা করবেন।

আর হ্যাঁ অনেকে বলেছ নাহিল যেন সোহাগীকে কখনো ক্ষমা না করে কিন্তু আমি ক্ষমা করিয়ে দিয়েছি কারন আমার মতে ভালোবাসা সব অন্যায় ক্ষমা করতে জানে আর ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা করে আপন করে নিতে না পারলে সেটা কখনোই সত্যিকারের ভালোবাসা হয়না

প্রিয়জনের ভালোবাসা ছেড়ে একটু বেশি সুখের আশায় অন্য কাউকে ভালোবাসলে কখনো সুখী হওয়া যায় না, শত ব্যস্ততার মাঝে প্রিয়জনকে বেশি না পারেন একটুখানি সময় দিন দেখবেন সম্পর্কটাই মিষ্টি হয়ে যাবে??
টাটা??)