Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2396



অজানা_অনুভূতি পার্ট:৩৪

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৩৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

__রাত অনেক হয়েছে ফারহান এখনো প্রাপ্তির হাত ধরে বসে আছে।সকাল থেকে এখনো কিছু খায়নি সে।সবাই অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু তার এক কথা প্রাপ্তির যতোক্ষণ জ্ঞান না ফিরছে সে কিছুই খাবেনা।প্রাপ্তির কেবিনের সামনে, মেজো কাকা, প্রাপ্তির বাবা,মা,ইমরান,মৃদুল,নীরা বসে আছে। আর সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে প্রাপ্তির মেজো কাকা।
নাদিয়া প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকে দেখে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে এখনো চোখের পানি ফেলছে।

নাদিয়া -ফারহান! প্লিজ সকাল থেকে তুই অনবরত কান্না করছিস।মেয়েরাও তো এইরকম কান্নাকাটি করেনা।তোর জন্য আমিও বাসায় যায়নি।এইখানে কি হয় না হয় মন পড়ে থাকবে তোদের কাছে।আচ্ছা, তুই তো আজ কিছুই খাসনি।যার জন্য এইরকম না খেয়ে আছিস সে জ্ঞান ফিরার পর যদি শুনে তুই আজ কিছুই খাসনি তাহলে তো ওর আরো খারাপ লাগবে।

ফারহান -আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।জানিস! প্রাপ্তি আমায় অনেক ভালোবাসে। ওর মতো করে কেউ কখনো আমায় ভালোবাসতে পারবেনা।কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো।
নাদিয়া দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে, হয়তো তুই কারো ভালোবাসা বুঝতে চাইতিস না।ভালোবাসাই তুই কখনো বিশ্বাস করতিনা।তোর কাছে ভালোবাসা মানি ছিলো প্যারা, অসহ্য। তাহলে বল কেউ মনের কথা তোকে বলবে কি করে?

ফারহান -ঠিক বলছিস, কিন্তু প্রাপ্তিকে যেইদিন প্রথম দেখেছিলাম সেইদিন থেকে অসহ্য লাগেনি প্যারা মনে হয়নি।শুধু ভেবেছি ওকেই আমার পেতে হবে যেই করে হোক।ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। জানিস ওর ভালোবাসা পেতে কিনা করেছি আমি।আমি কখনো কোনো মেয়ের কাছে ছোটো হয়নি।কিন্তু ওর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য হয়েছি।
কথাটা বলেই ফারহান আবার কান্না করতে শুরু করলো।

নাদিয়া -প্লিজ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িসনা।ওহ্ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।তুই ঠিক বলেছিস প্রাপ্তি কখনো প্রেগন্যান্ট হতে পারবেনা।ওই রির্পোট গুলোতে তাই আছে।
তবে এইটা মীরাক্কেল একটা ব্যাপার তোর ওয়াইফ এখন ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।

ফারহান -এইটা কেমন খুশীর খবর বলতো? যেটাতে কোনো আনন্দ নেই, হাঁসি নেই।আছে শুধু কষ্ট।
এমন সময় নাদিয়ার ফোনটা বেজে উঠতেই,
নাদিয়া -মা ফোন করেছে,হয়তো বাসায় যানি বলে টেনশন করছে, আমি কথা বলেই আসছি।

ফারহান তার ফোনটা খুঁজতে গিয়ে দেখে প্রাপ্তির হাতের আঙুল গুলো নড়ছে।

তাড়াতাড়ি করে প্রাপ্তি হাত শক্ত করে ধরে, প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? প্রাপ্তি দেখো আমি তোমার সাথেই আছি।ফারহানের এইভাবে চিৎকার শুনে প্রাপ্তির মা,বাবা,কাকাই সবাই এসে ফারহানের পাশে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি চোখ খুলে এইভাবে সবাইকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে আছে।শোয়া থেকে উঠার চেষ্টা করতেই ফারহান বললো উঠছো কেন? কিছু বলবে?
কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তিকে আবার শুইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি-ফারহান কি হয়েছে আমার? (চারদিকে তাকিয়ে) ফারহান আমি হাসপালে কেন?
কথা গুলো শুনে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত নিজের গালে ধরে চোখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তির মা ফারহানকে চুপ থাকতে দেখে বলতে লাগলো, প্রাপ্তি তুই জানিস তোর কি হয়েছে? তুই তো,,,,,,,,
ফারহান প্রাপ্তির মাকে থামিয়ে,, আম্মু কথাটা আমি পরে বুজিয়ে বলবো। প্লিজ এখন কিছু বলবেন না।
প্রাপ্তির মা কথাটা শুনে চুপ করে গেলেন।

তখন নীরা বললো বড় মা আমরা সবাই বাহিরে বসে অপেক্ষা করি।ওদেরকে একটু একা থাকতে দাও।

মেজো কাকা -হ্যাঁ নীরা ঠিকি বলছে।আমরা সবাই বাহিরে বসি।আমি বাড়ীতে ফোন দিয়ে জানিয়েদি প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে না হলে সবাই টেনশন করবে।

সবাই বাহিরে গিয়ে বসেছে।প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে,কি হয়েছে আমার? তুমি আম্মুকে কিছু বলতে দাওনি কেনো?

ফারহান -হুম সব বলবো আগে তুমি সুস্থ হও তারপর।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু উঠিয়ে বসাবে? আমার শুয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা।

ফারহান প্রাপ্তিকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসালো।এখন কেমন লাগছে?

প্রাপ্তি -বুজতে পারছিনা।চেহারাটা এই রকম করছো কেন? কান্নাকাটি করে চোখমুখ তো সব ফুলিয়ে ফেলছো। প্রাপ্তি এক হাত উঠিয়ে ফারহানের চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো এতো কান্নার কি আছে পাগল একটা, আমি কি মরে গেছিনাকি?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান বললো যদি কখনো যেতে হয় দুজন একসাথেই যাবো।আজকে এইকথাটার জন্য তোমাকে মাফ করে দিলাম।আর যদি কখনো বলো তাহলে দেইখো আমি কি করি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনো বলবোনা।এইবার আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরোতো।এইসব কিছু আমার ভালো লাগছেনা।

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললো একজনকে জড়িয়ে ধরলে তো হবে না সাথে যে এখন আরেকজন ভাগ ধরেছে।প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কানের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে, I Love U আমার পরীর আম্মু।কথাটা শুনে ফারহানকে প্রাপ্তি ছেড়ে দিয়ে একটু সরিয়ে কি বলছো এইসব? দুইজন, পরীর আম্মু আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

এমন সময় নাদিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে এইবার কি আসবো অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি।

ফারহান এক গাল হাঁসি দিয়ে আয় অপেক্ষা করার কি আছে?

নাদিয়া ভিতরে আসতে আসতে বললো এখন কেমন লাগছে প্রাপ্তি?নাদিয়া প্রাপ্তির দিকে হাতটা বাড়িয়ে congratulation প্রাপ্তি।

প্রাপ্তিও হাতটা বাড়িয়ে বললো কিসের জন্য?

নাদিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে ও কিছু বলেনি তোমাকে? কিরে অপদার্থ ওকে কিছু বলিসনি?

ফারহান -ওর কি অবস্থা সেটা দেখ।এইগুলো পরে বলা যাবে।

নাদিয়া- এইখানে আরেক দিন থাকুক।আর সম্পূর্ণ বেড রেস্ট।ওর দিকে খেয়াল রাখবি।আজ যা দেখলাম আশা করি তোকে কিছু বলা লাগবেনা।

প্রাপ্তি -ফারহান কি হয়েছে বলোনা?

ফারহান-আচ্ছা সব বাসায় গিয়ে বলবো।এখন কোনো কথা নয়।

নাদিয়া -প্রাপ্তি! তোমার বর আজ সারাদিন না খেয়ে আছে।দুজনে একসাথে খেয়ে নিও।ফারহান! আম্মু বাসায় একা আছে,প্রাপ্তির যখন জ্ঞান ফিরেছে তখন আর কোনো টেনশন নেই।এখন আমি যাচ্ছি আর শুন আমি সকালে আবার আসবো।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩৩

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকালের সূর্যের মৃদু আলো জানালা বিধ করে প্রাপ্তির মুখে এসে পড়তেই আস্তে আস্তে ঘুমটা ভেঙে গেল প্রাপ্তির।উঠে শরীরের আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে দেখে ফারহানের সব কিছু গুছিয়ে রেখেছে, প্রাপ্তির উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে আরেকটু ঘুমালে ভালো হতো।আচ্ছা ফারহানকেও তো রুমে দেখছিনা কোথায় গেলো? অবশ্য ও মাঝেমাঝে আমার আগেই উঠে। প্রাপ্তি খাট থেকে নামতে যাবে তখনি ফারহান ২ কাপ কফি নিয়ে এসে,প্রাপ্তি তুমি এখনো উঠে ফ্রেশ হওনি।আর আমি ভাবলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে বসে আছো তাই আমি কফি নিয়ে আসলাম।

প্রাপ্তি ওয়াসরুমে যেতে যেতে বললো, আমি গিয়েই তো নিয়ে আসতে পারতাম।তুমি কষ্ট করতে গেলে কেন?আচ্ছা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

প্রাপ্তি ওয়াস রুমে যাওয়ার পরেই নীরা এসে বললো।শুভ সকাল ভাইয়া!

ফারহান পিছনে ফিরে দেখে নীরা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

ফারহান -(মুচকি হাঁসি দিয়ে)শুভ সকাল! ভিতরে এসে বসো।প্রাপ্তি ওয়াস রুমে ফ্রেশ হতে গেছে।ওহ্ হ্যাঁ নীরা, তোমার জন্য একটা গিফট আছে।আমি দুপুরেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো। এখন দিয়েদি পরে মনে থাকবেনা।

নীরা-কিসের গিফট ভাইয়া?

ফারহান- কাল রাতের জন্য।তুমি না থাকলে আমি একা এতো কিছু করতে পারতাম না।আর তোমাকে স্পেশাল ভাবে থেনক্স আমার বউটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।

নীরা -ভাইয়া কিযে বলো না তুমি? সব ক্রেডিট তো তোমারি।

ফারহান গিফটের প্যাকেট টা নীরার হাতে দিয়ে, তুমি এইটা না নিলে ভাইয়া সত্যি অনেক কষ্ট পাবো।আমি অনেক শখ করেই এইটা কিনেছি।

নীরা -ওকে তোমাকেও থেনক্স।আচ্ছা আমি একটু পর এসে কথা বলছি।মৃদুলের অফিসের টাইম হয়ে গেছে।

নীরা যাওয়ার পরে ফারহান প্রাপ্তিকে ডেকে বললো, প্রাপ্তি! তোমার এখনো হয়নি?

প্রাপ্তি -এইতো আসছি।
কথাটা বলেই ওয়াস রুমের দরজা খুলে বাহিরে পা দিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো প্রাপ্তি। প্রাপ্তির পড়ার শব্দ শুনে ফারহান দৌঁড়ে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি!এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার? ফারহানের চিৎকার শুনে বাড়ীর সবাই দৌঁড়ে এসে দেখে ফারহানের কোলে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে আছে ফারহান তাকে ডাকছে আর পাগলের মতো করছে।

মেজো কাকা- হঠাৎ করে কি হয়েছে ওর? ফারহান তুমি পাগলামো না করে ওকে উঠিয়ে খাটে নিয়ে শুয়ে দাও।আর তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে ফোন দাও।
সাবার কথা শুনে খাটে নিয়ে শুয়ে ফারহানের মনে হলো তার ফ্রেন্ড নাদিয়াকে ফোন দিবে, সে অনেক বড় ডাক্তার।
ফারহান ফোন দিতেই নাদিয়া ফোন রিসিভ করে ফেললো।মনে হলো সেই এই ফোনের অপেক্ষায় বসে ছিলো।

ফারহান-হ্যালো, হ্যালো নাদিয়া।তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?

নাদিয়া -হ্যালো হ্যাঁ ফারহান কি হয়েছে তোর? এইভাবে কথা বলছিস কেন? কোনো প্রব্লেম?

ফারহান -তুই কোথায় আছিস সেটা বল?

নাদিয়া -আমি এইমাত্র হাসপাতালে আসলাম।কিছু বলবি?

ফারহান -তুই ওইখানেই থাক আমি আমার ওয়াইফ কে নিয়ে আসছি।কথা টা বলেই ফারহান ফোন কেটে দিয়ে, কাকাই, আব্বু, আমি গাড়ী বের করছি,আপনারা প্রাপ্তিকে নিয়ে আসুন।

হাসপাতালে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।
প্রাপ্তিকে ইমাজেন্সি রুমে নাদিয়া নিয়ে গিয়ে দেখছে।
ফারহান বাহিরে দাঁড়িয়ে ছটফট করছে। খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।মনে হচ্ছে সেই পৃথিবী সব কিছুই এক নিমিষেই হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের অবস্থা দেখে কেউ কিছু জিজ্ঞাস ও করতে পারছে না।হঠাৎ কেন প্রাপ্তির এমন হলো।ইমরান আর মৃদুল এসে ফারহানকে বুজাচ্ছে কিন্তু ফারহানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তেছে।নিজের আপন মানুষের কিছু হলে অপেক্ষা করাটা যে কতোটা কষ্টের প্রাপ্তি এই অবস্থা না হলে ফারহান হয়তো কখনোই বুজতোনা।অবশ্য ফারহান প্রাপ্তির সাথে ইমাজেন্সি রুমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নাদিয়া যেতে দেয়নি।

একটু পর নাদিয়াকে আসতে দেখেই ফারহান দৌঁড়ে তার কাছে গিয়ে,নাদিয়া! প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেছে?ওর কি হয়েছে? প্লিজ চুপ করে থাকিস না।ওর কিছু হলে আমি মরেই যাবো।
ফারহানের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে, বউয়ের প্রতি দেখছি তোর অনেক ভালোবাসা,কিন্তু তুই এইটা কি ভাবে করতে পারলি।নাদিয়ার মুখে কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো একটা প্রশ্ন সবার মনে জেগে বসেছে।ফারহান হাত দিয়ে চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো কি বলছিস আমি তোর কথার কিছুই বুজতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে বুজিয়ে বল।

নাদিয়া-আমি এতো দিন যেনে এসেছি তুই একটা কেয়ারফুল ছেলে,কিন্তু না তুই পুরোই কেয়ারলেস একটা ছেলে।আচ্ছা তুই কি জেনে বুজে করেছিস নাকি না জেনেই বুজতেছিনা।তবে এইটা বলতে পারি। মেয়েটার অনেক অল্পবয়সী তাই হয়তো তার শরীরের এই অবস্থা।

ফারহান-(চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে)প্লিজ নাদিয়া এতো হেয়ালি করিসনা।কি হয়েছে প্রাপ্তির সেটা বল?

নাদিয়া- কেন তুই জানিস না? তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।ওর শরীর পুরোই দুর্বল।আমি অনেক গুলো টেস্ট করতে দিয়েছি সেই গুলোর রির্পোট না আসা পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছিনা।তোর ওয়াইফের এখনো জ্ঞান ফিরেনি আর ফিরতে অনেক সময়ও লাগবে।
নাদিয়ার কথা গুলো শুনে ফারহান চিৎকার দিয়ে বললো তুই একটু চুপ করবি? ও প্রেগন্যান্ট মানেটা কি?তুই কি এইখানে আমার সাথে ইয়ার্কি মারছিস।নাদিয়া শুন আমি এখন কোনো ইয়ার্কির মুডে নাই।

নাদিয়া- সত্যি ফারহান তোর ওয়াইফ ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।তুই এইটা মানতে পারছিস না কেন?কেন তুই এইটা জানিসনা?

ফারহান -এইটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।কারন ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ওকে আমি ডাক্তার দেখিয়েছি।ওর সব রির্পোট নিয়ে ওকে না জানিয়ে আমি অনেক ডাক্তারকে দেখিয়েছি। সবাই একি কথা বলছে ও কখনোই মা হতে পারবেনা।ফারহানের কথা শুনে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।প্রাপ্তির মা পাশে থাকা সোপার উপর হেলান দিয়ে বসেছে।
ফারহান প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকিয়ে,আম্মু আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি চাইনি প্রাপ্তি কখনো এইকথা গুলো জানুক তাই আমি কাউওকেই বলিনি ওর সমস্যার কথা।ও শুনলে অনেক কষ্ট পাবে তাই।

নাদিয়া -এখন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এককাজ কর কাউকে দিয়ে আগের রির্পোট গুলো নিয়ে আয় আমিও একবার দেখি।

প্রাপ্তির মেজো কাকা সবার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস পেলে, এতোবড় একটা খুশীর খবর এইভাবে পেতে হবে ভাবতেই পারিনি।
প্রাপ্তির মা -আমি এইটুকুই জানতাম প্রাপ্তি মা হতে পারবেনা।তোমাদেরকে বলিনি ফারহান নিষেধ করছে।কিন্তু ফারহান এতো কিছু করেছে এইটা জানতাম না।

নীরা- বড় মা, ভাইয়া প্রাপ্তিকে অনেক ভালোবাসে।মা হওয়া না হওয়ায় কিছুই যায় আসতোনা।

ফারহান এইখান থেকে নাদিয়ার কেবিনে গেলো।একটা চেয়ার টেনে বসে নাদিয়া, ও সত্যিই কি প্রেগন্যান্ট?

নাদিয়া -আমি মিথ্যা কেন বলবো বল? রির্পোট গুলা আনিয়েছিস?

ফারহান -না ইমরান গেছে আনতে।

নাদিয়া -তোর বউ অনেক ভাগ্যেবতী। তোর মতো একজন হ্যাজবেন্ড সে পেয়েছে।কথাটা বলেই নাদিয়া বললো তুই চিন্তা করিস না।প্রাপ্তি ঠিক হয়ে যাবে। জ্ঞান ফিরলেই আর কোনো চিন্তা নেই।

ফারহান কিছু বলছে না।চুপ হয়ে অনবরত চোখের পানি গুলো টপটপ করে নিচে পড়ছে।
ফারহানের বাবা মা সবাই আসছে। ফারহানের বাবা ছেলেকে এখন শুধু শান্তনা দেওয়া ছাড়া কিছু নেই।

ফারহান সবার কাছ থেকে উঠে প্রাপ্তির কেবিনে গিয়ে ওর মাথার পাশেই বসে একনাগাড়ে প্রাপ্তির দিকেই তাকিয়ে আছে।

নাদিয়া আড় চোখে বার বার ফারহানকে দেখছে।ফারহানকে যতো দেখছে তার কষ্ট তোতোই বাড়ছে।

ফারহান! ফারহান! নাদিয়ার ডাক শুনে অনেকক্ষণ পর ফারহান নাদিয়ার দিকে তাকালো।

ফারহান- (গম্ভীরভাব নিয়ে) কিছু বলবি?

নাদিয়া -তেমন কিছু না।কাছের মানুষ হারানো যে কতো কষ্টের এইবার বুজতে পারছিস?

ফারহান কিছু বলছেনা।ফারহান ভালো করেই জানে নাদিয়া কথাটা কেন তাকে বলছে। নাদিয়ার কোনো আনসারই ফারহানের কাছে নেই।

মেজো কাকা রুমে ঢুকেই দেখে ফারহান প্রাপ্তির একটা হাত তার বুকে নিয়ে বসে আছে।
মেজো কাকা-(ফারহানের কানের কাছে গিয়ে বললো)তোমার তো মালয়েশিয়া যাওয়ার প্লাইট রাত ১০.০০ টায়।এখন কি করবে?

ফারহান অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো,কাকাই আমি যাবো না।আমি এইভাবে ওকে রেখে যেতে পারবোনা।

মেজো কাকা -তুমি যাও আমরাতো সবাই আছি।তুমি না গেলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।

ফারহান- কাকাই প্রাপ্তির থেকে কোনো কিছুই আমার কাছে বড় নয়।টাকা গেলে আবার আসবে কিন্তু আমি প্রাপ্তিকে হারিয়ে ফেললে কখনওই ফিরে পাবোনা।

মেজো কাকা নিজের চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো ঠিক আছে ফারহান।

মেজো কাকা বাহিরে এসে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।প্রাপ্তির বাবা এসে পাশে বসে বললো কিরে এইভাবে আছিস কেন ফারহান কি বললো।
মেজো কাকা প্রাপ্তির বাবাকে বললো ভাইয়া প্রাপ্তির কপাল টা অনেক ভালো। জীবনে এইরকম একজন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

প্রাপ্তির বাবা -সত্যি ছেলেটা অন্য রকম।দেখনা এতো কিছু হয়ে গেলো আমরা কেউই জানতেই পারলাম না।এবং তার ফ্যামিলির লোকও না

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩২

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি এইবাড়ীতে এসে দেখে সব কেমন নিরিবিলি হয়ে আছে।কাকাই আব্বু সবাই ড্রইংরুমে বসে প্রাপ্তিকে দেখে চুপ হয়ে আছে।প্রাপ্তি সবাইকে এইভাবে দেখে বলতে লাগলো, তোমরা কেমন মানুষ আমি বুজিনা আম্মু অসুস্থ আমাকে একবার জানালেনা?

মেজো কাকা-তুই এইখানে মাথা ঠাণ্ডা করে বস।ফারহানের ফ্যামিলিরর দিকে তাকিয়ে তোমরাও বসো।

প্রাপ্তি -তোমরা বসো আমি আম্মুকে দেখে আসছি।নিশ্চয় আম্মু রুমে আছে।

প্রাপ্তি রুমে যাবে বলে পা এগুতেই প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে কোথাও যেতে হবে না।আমি দিব্বি সুস্থ আছি।তুই এই বাড়ীতে আসিসনা তাই আমি নীরাকে বললাম তোকে এইভাবেই আনতে। নীরা এই নে নাস্তাটা সবাইকে দিয়েদে।এইফাঁকে আমি আমার মেয়েকে একটু আদর করি।প্রাপ্তির মা প্রাপ্তির কাছে গিয়ে ধরে Happy Marriage Anniversary………..প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -দেখছো শুধু তোমারই মনে আছে।আর ওই গাধাটা এখনো মনে থাকার তো দূরের কথা আমার সামনেই আসলোনা।

(প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে যাবে তখনি নীরা সবাইকে ইশারা দিলো না হাঁসার জন্য।)জানো সন্ধ্যা থেকে তাকে আমি ফোন দিয়েই যাচ্ছি একবারো রিসিভ করে নাই।

প্রাপ্তির আব্বু -আচ্ছা ঠিক আছে ওর এতো বড় সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের সাথে এইরকম করার।এখুনি বলছি বাসায় আসতে।

কথাটা শুনে নীরা প্রাপ্তির আব্বুর পাশে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো,বড় আব্বু! ভাইয়া তো ছাদে। ফোন দিলে চলে আসবে না?

প্রাপ্তির আব্বু -চিন্তা করিসনা ওইভাবেই কথা বলবো।
(ফারহান কে ফোন দিয়ে)ফারহান, তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের ফোন রিসিভ না করার।যাইহোক যেখানে থাকো তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।(একটু চুপ থেকে) কিহ আজ বাসায় আসবা না? ওহ দেরী হবে।আচ্ছা ঠিক আছে।
ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সব কিছু নিজে নিজে বলে ফোন রেখে দিলো।ফারহান ঠিকি বুজেছে আব্বু কেন এইভেবে কথা বলছে।নিশ্চয় প্রাপ্তি সামনে আছে।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও নীরার সাথে কাজে লেগে গেলো। একটু পর ইমরান এসে বললো কিরে প্রাপ্তি, তুই কখন এলি?

প্রাপ্তি-এইতো কাকাই একটু আগে।তোমার সাথে ফারহানের দেখা হয়েছে আজ?

ইমরান -নিজের হাঁসিটা চেপে রেখে কই নাতো।আচ্ছা যাইহোক এই (নীরাকে ডেকে)নীরা ছাদে যাবি? চল আমরা ছাদে গিয়ে আড্ডা দিই।

নীরা -হ্যাঁ যেতেই পারি।প্রাপ্তি চল আমরা ছাদে বসে আড্ডা দিই।

প্রাপ্তি-এতো রাতে ছাদে? আচ্ছা চল।

প্রাপ্তি আর নীরা ছাদের দিকে এগুতে লাগলো।ইমরান সবাইকে ইশারা দিয়েছে ছাদে যাওয়ার জন্য।প্রাপ্তি ছাদে যেতেই ফারহান আর মৃদুল বাঁজি ফাটাতে শুরু করলো।প্রাপ্তি সবকিছু অবাক হয়ে দেখছে।কি বলবে কিছুই বুজতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার সব ভাষা যেন সে হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের উপর সন্ধ্যা থেকে যতো রাগ হয়েছিল সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
সবার এক সাথে বলে উঠলো Happy Marriage Anniversary…….. প্রাপ্তি এন্ড ফারহান।প্রাপ্তি অবাক হয়ে ইমরান কে বললো তারমানে সবাই আগে থেকেই প্লান করে রেখেছো আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য?

নীরা -সবাই বললে ভুল হবে, হ্যাঁ আমরা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম এতো বড় করে নয়।একজন মানুষেরি এই সব ক্রেডিট।
প্রাপ্তি হাঁসি দিয়ে বললো আমি জানি ছোটো কাকাই ছাড়া আর কেউ হতেই পারেনা।কাকাই, তোমাকে অনেক গুলা thanks। কিন্তু এতো কিছু কেন করতে গেলে শুধু শুধু?
প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।যাইহোক প্রাপ্তি খুশী হয়েছে এটাই বেশী।

ইমরান -প্রাপ্তি এইসব কিছুই আমি করিনি।সব ফারহানই করেছে আমি আর মৃদুল শুধু হেল্পই করেছি।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে এই জন্য তুমি ফোন রিসিভ করছিলেনা তাইনা?

ফারহান কিছু বলার আগেই মৃদুল বললো সব কথা বাসায় গিয়ে হবে। আগে দুইজন মিলে কেকটা কেটে ফেলো দেখি।

মেজো কাকা -হুম মৃদুল ঠিকি বলেছে যা করার তাড়াতাড়ি করো।
সব ফর্মালিটি শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।ফারহান নীরার কাছে গিয়ে বললো, নীরা তুমি আর আমি গিয়ে যে শাড়ী গহনা গুলো নিয়ে এলাম ওই গুলো এইদিকে দাও।ফারহান এইগুলো হাতে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ফারহান যেতেই উঠে বসতে বসতে বললো কি দরকার ছিলো এইগুলো কারার বলোতো।আচ্ছা! হাতে ওই গুলো কিসের প্যাকেট?

ফারহান -পরে বলছি এইগুলো কি।(আস্তে করে)প্রাপ্তি! আজ আমি কিছু চাইলে দিবে তো?

প্রাপ্তি -ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি এনে কি চাও শুধু একবার বলো তাতেই চলবে।শুধু দেখো তোমার প্রাপ্তি কি করে।

ফারহান-হুম,,,নীরাকে ফোন দিয়ে কই তুমি রুমে আসো।পারমিশন পেয়ে গেছি।

প্রাপ্তি -এই তুমি কি করছো আমি তো কিছু বুজতেছিনা।

ফারহান- চুপ করে বস কিছু বুজতে হবেনা।এইতো নীরা এসে গেছে।নীরা আমি মৃদুলের কাছেই যাচ্ছি তুমি সাজিয়ে পেলো।
কথাটা বলে প্যাকেট গুলো খাটের উপরে রেখে ফারহান চলে গেলো।

প্রাপ্তি -নীরা! ও কি বলে গেলো এইগুলো।

নীরা- তোকে বউ সাজাতে বলে গেছে। ভাইয়া চায় সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবে।তোদের দিয়ের দিন তো তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস নাই তাই আজ তোর থেকে ভালোবাসা আদায় করবে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথা রাখতে গিয়ে সত্যি সত্যি বউ সাজলো।

নীরা- তুই বস আমি ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি কথাটা বলেই নীরা চলে গেলো।
প্রাপ্তি বসে আছে ফারহানের অপেক্ষায়,কিন্তু শরীরটা ভালো লাগছেনা তবে আজ ফারহানকে বুজতে দেওয়া যাবেনা।ও অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছে আমার জন্য।
আজ আমার লক্ষ্মী কে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে, ফারহানের কথা শুনেই ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো সে। ফারহান প্রাপ্তির পাশে বসতে বসতে বললো, কি ভাবছো বসে বসে?

প্রাপ্তি -শাড়ী গহনা এইগুলো কখন এনেছো?শুধু শুধু এতো অপচয় এর কোনো মানে আছে?

ফারহান-একদম চুপ! আজ আমি তোমার কাছ থেকে কোনো নীতি কথা শুনতে চাইনা। সেইদিন অনেক কথা শুনিয়েছ আজ আর না।সেই দিন তোমার প্রতি আমার কোনো অধিকার ছিলোনা।আজ এক সাথে সব উসুল করে নিবো কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে ভালোবাসি, ভালোবাসি,ভালোবাসি, শুধু আমার এই লক্ষ্মী বউটাকে।

প্রাপ্তি-(মুচকি হাঁসি দিয়ে,) 2 2 2।

ফারহান -( ইয়ার্কি মেরে)2, মানে কি?এইটা কি ফোন নাম্বার? নাকি ভালোবাসার নাম্বার?

প্রাপ্তি -ধ্যাত, আমি বলতে চাইছি সেইম টু ইউ।

ফারহান-ওওওও বুজিয়ে বলবা তো।

প্রাপ্তি -(ফারহানের বুকে মাথা রাখে)ফারহান!তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন বলতো?

ফারহান -এখন যদি একটু কষ্ট দি মেনে নিবে?

প্রাপ্তি -আমি জানি তুমি আমায় কোনো কষ্ট দিতে পারোনা।আচ্ছা তারপরে শুনি কি করছো তুমি?

ফারহান -সরি প্রাপ্তি আমিও চাইনি কষ্ট দিতে।কিন্তু কোনো উপায় নেই।কাল আমাকে মালয়েশিয়া যেতে হবে।তবে বেশী না মাত্র ৭ দিন।ওইখান থেকে ফিরে এসে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো দূরে কোথাও।শুধু আমি আর তুমি, ওইখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করার মতো থাকবেনা।

প্রাপ্তি -আমাকে আগে বললে না কেন? আচ্ছা ৭ দিন কিন্তু এর বেশী না বলে দিলাম।

ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে এইনা হলে আমার লক্ষ্মী বউ।
প্রাপ্তি ফারহানের কথা গুলো শুনছে ঠিকি কিন্তু মাথার ভিতরে কেমন যানি করছে।
ফারহান প্রাপ্তির নিরবতা দেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি আজ তুমি এতো চুপচাপ কেন? কি হয়েছে তোমার?অন্য দিন তো আমার প্রাপ্তি এতো চুপ থাকে না।আচ্ছা প্রাপ্তি কি আমার উপর কোনো কারনে রাগ হয়ে আছে।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজের মুখটা ফারহানে বুকে গুজিয়ে,তুমি কোন সময় থেকে বকবক করেই যাচ্ছো আমায় একটুও আদর করছোনা।প্রাপ্তি কথা গুলো বলছে ফারহানকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।

ফারহান -সত্যি তো আমার লক্ষ্মী বউটা কে আদর না করে বকবক করে যাচ্ছি।কথাটা বলে ফারহান প্রাপ্তিকে বুকে নিয়ে এক অজানা ভালোবাসায় ডুব দিলো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩১

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩১

#Rabeya Sultana Nipa

 

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে আজ প্রাপ্তি আর ফারহানের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। এইএক বছরে দুজনের ভালোবাসাটা এতোটাই বেড়েছে যে ফারহান ব্যবসার কাজের জন্য বাহিরে গেলেও ৭/৮ দিনের বেশী থাকতে পারেনা।অফিসে গেলেও মন বসে না।প্রাপ্তির সাথে মাঝে মাঝে আয়ানের সাথে কথা হয় এই নিয়ে ফারহান কখনো কিছু বলেনা।সেই প্রাপ্তিকে অনেক ভাবেই যাচাই করে দেখেছে সেই ফারহানকে সত্যি ভালোবাসে কিনা।যতোবারি যাচাই করেছে তোতোবারি প্রাপ্তির প্রতি তার ভালোবাসা বেড়েছে বরং একটুও কমেনি।

প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা অফিস থেকে এসে ফ্রেস হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো।মেজো কাকা সেজো কাকীকে ডেকে কফি দিতে বললো দুজনকে।নীরা আর নাজিফা এসে,
নীরা -আব্বু, বড় আব্বু আমাদের কিছু কথা ছিলো।

প্রাপ্তির বাবা -কি হয়েছে বল।

নাজিফা -তোমাদের কারো মনে নেই আজ কি?

মেজো কাকা -আজকে কি বল?

নীরা -আব্বু আজ প্রাপ্তির প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আমরা অনেক কিছু প্লান করছি। প্রাপ্তিকে সারপ্রাইজ দিবো।এখন তোমরা কি বলো?

প্রাপ্তির মা কফি হাতে নিয়ে আসতে আসতে বললো আমার মনে আছে, কিন্তু প্রাপ্তি এইবার ফারহানদের বাড়ী গেছে ৩ মাস হয়ে গেছে, আসতে বললেও আজ কাল বলে বলে কাটিয়ে দেয়।ফারহানকে বললে ও বলে আম্মু আপনার মেয়ে গেলে আমিও যেতে পারি।

মেজো কাকা -ভাবী জানেন বিয়ের সময় আমার খুব ভয় ছিলো প্রাপ্তিকে নিয়ে।ভেবেছিলাম ফারহানকে ও মেনেই নিবেনা।প্রাপ্তি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বুজিয়েছে ফারহানই সব কিছু।

নীরা -আব্বু এখন এইসব বাদ দাও।আমরা এখন প্রাপ্তি আর ফারহান ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিবো কিভাবে সেটা ভাবতে চাই।

প্রাপ্তির বাবা -মৃদুল, ইমরান, সেজো বউ সবাই কে ডেকেই ভাবা যাক।

নীরা -বড় আব্বু! কাকাই আর মৃদুল বাহিরে গেছে কিছু কিনা কাটা করবে।

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো দেখে সেজো কাকী বললো আপনারা বসুন আমি দেখছি। সেজো কাকী গিয়ে দরজা খুলেই অবাক হয়ে ফারহান! তুমি?

ফারহান -কেন কাকী? আমি আসতে পারিনা?

সেজো কাকী -না না সেই কথা বলিনি, আচ্ছা ভিতরে আসো।
ফারহান ভিতরে এসে সবাইকে এক সাথে দেখে বললো,কি ব্যাপার আব্বু সবাই একসাথে।

প্রাপ্তির আব্বু -নীরা আর নাজিফা কি প্লান করছে সেই নিয়ে আলোচনা করছি।আচ্ছা তুমি তো এই সময় না বলে আসার কথা না।

ফারহান -আসলে আব্বু আমি নীরার কাছে আসছি।(তারপর নীরার দিকে তাকিয়ে) নীরা আমার তোমার সাথে আলাদাভাবে কিছু কথা আছে।

মেজো কাকা -ঠিক আছে, নীরা! ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।ভাবী ফারহান কে নাস্তা দাও।

নীরার রুমে এসে ফারহান নীরাকে বসিয়ে নিজে একটা চেয়ার টেনে বসলো।

নীরা -কি সমস্যা সেটা তো বলবা?

ফারহান -আমি জানি তুমি সবকিছু জানো। আজ রাত ১২.০০ টার পরথেকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষকী। আমি চাই প্রাপ্তিকে কিছু একটা সারপ্রাইজ দিই।এখন তুমি আমার সাথে যাবে আমরা শপিং করবো।আমি প্রাপ্তিকে আবার নতুন করে বউয়ের সাজে দেখতে চাই।বিয়ের দিন প্রাপ্তি বউ সেজেছিল ঠিকি কিন্তু আমার জন্য নয়।সবার কথায় বাধ্য হয়ে সেজেছিলো।এখন আমি চাই ও শুধু আমার জন্যই সাজবে। সেইদিন আমি ওর কাছ থেকে ভালোবাসা পাইনি।পেয়েছি শুধু ওর দুচোখে আমার প্রতি ওর ঘৃণা। কিন্তু এখন তো আর সেই সুযোগ নেই ও এখন আমাকে অনেক ভালোবাসে।ওহ্ আরেকটা সমস্যা হয়ে গেছে।ব্যবসায়ীক কাজে আমাকে কাল রাতে মালয়েশিয়ায় যেতে হবে। আমি প্রাপ্তিকে এই কথা ভয়ে বলতে পারিনি। ভাবছিলাম সারপ্রাইজের সাথে সাথে এই কথাটাও বলবো।

নীরা -আচ্ছা ঠিক আছে ছোটো শালী হয়ে এইটুকু করতেই পারি।তুমি ড্রইংরুমে বসো আমি রেডি হয়ে আসছি।ওওওও! ছোটো কাকাই আর মৃদুলও তোমাদের সারপ্রাইজ দিবে বলে কিনাকাটা করতে গেছে। আমরা গিয়ে শপিং শেষ করে ওদেরকে ফোন দিয়ে একসাথে বাসায় চলে আসবো।
এখন শপিং করে আসি বাকী প্লান পরে করবো।

এইদিকে প্রাপ্তি ফারহানে অপেক্ষায় বসে আছে।সন্ধ্যা হয়ে গেলো আজ এখনো আসছে না কেন।আজকের কথা কি ফারহানের একবারো মনে পড়েনি? ঠিক আছে আজ বাসায় আসুক একটুও কথা বলবো না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বড় ভাবীর রুমে গিয়ে দেখে সে কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।

প্রাপ্তি -ভাবী তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?

প্রাপ্তির দিকে ফিরেই বড় ভাবী বললো কিরে তুই এখনো রেডি হলি না?

প্রাপ্তি -কেন ভাবী? কোথায় যাবো?

বড় ভাবী -তুই কিছু জানিস না? বাবা এসেই তো আমাকে বললো সবাইকে বলে দিতে তোদের বাসায় যাওয়ার জন্য। তোর মা নাকি অসুস্থ সবাই এক সাথে দেখতে যাবে।আমি রুমে আসার সময় সুমিকে বলেছি তোকে বলে দেওয়ার জন্য। কেন সে তোমাকে বলেনি?

প্রাপ্তি -আমার আম্মু অসুস্থ? আমিই জানিনা। কথাটা বলেই প্রাপ্তি রুমে দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে ফোনে নীরা, মেজো মার অনেক গুলো মিসড কল।তাড়াতাড়ি করে নীরাকে ফোন দিলো প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -হ্যালো, হ্যালো,,নীরা আম্মুর কি হয়েছে? তোরা আমাকে একবারো জানালিনা?

নীরা -বিকেল থেকে অনেক বার ফোন দিয়েছি তুই রিসিভ করিসনি।পরে তোর শশুরের ফোনে ফোন দিয়ে বলেছি তোকে বলতে।এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে আয়।
কথাটা বলেই ফোন রেখে দিয়ে ফারহান মৃদুল ইমরান সবাই হাঁসতে থাকলো।

প্রাপ্তির মা তাদেরকে বললো মেয়েটাকে এইভাবে আনাটা কি ঠিক হবে।

ফারহান -আম্মু আপনি টেনশন করবেন না। আমি বড় ভাবীকে সব বলে রেখেছি।

প্রাপ্তির মা -হুম, তোমরা যা ভালো মনে করো।আমি এইদিকে রান্নাটা দেখে আসি।আজ সব প্রাপ্তি আর ফারহানের পছন্দমতো রান্না করা হবে।

ফারহান- আম্মু, আপনি একদম আমাকে নিয়ে টেনশন করবেননা।আর মৃদুল, ইমরান চলো আমরা এইদিকে সব গুলো রেডি করে ফেলি।
মৃদুল আর ইমরান যাওয়ার পরে ফারহান নীরার কানের কাছে এসে বললো তোমার কাজ গুলো কিন্তু মনে রেখো। কথাটা বলেই ফারহান তাদের সাথে চলে গেলো।

বড় ভাবী, মেজো ভাবী সুমি সবাই এসে দেখে কিরে প্রাপ্তি তুই এখনো রেডি না হয়ে বসে আছিস।

প্রাপ্তি-দেখোনা ভাবী ফারহানকে কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি ফোন সুইচ অফ বলছে।এখন কি করি বলোতো।

বড় ভাবী -তুই আগে রেডি হয়ে চল ওই বাড়ীতে গেলে ফোন দিয়ে বলে দিবো ওইখানেই আসতে।

প্রাপ্তি -তাহলে চলো, আমার রেডি হওয়া লাগবেনা।আমার টেনশনে কিচ্ছু ভালো লাগছেনা।

বড় ভাবী -তোর যেইটা ভালো লাগে কর,তাহলে এইবার চল

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: 30

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: 30

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকালে নাস্তা করে বাড়ীর ছেলেরা সবাই অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।সবার আগে মৃদুলকেই যেতে হচ্ছে কারণ বিয়ে পর মৃদুল বেসরকারি একটা অফিসে কাজ করছে।আর সবাই নিজেদের ব্যবসা তাই একটু দেরী হলে সমস্যা নেই।ফারহান রুমে এসে রেডি হয়ে প্রাপ্তিকে ডাকছে।প্রাপ্তি সবার সাথে বসে গল্প করছে। ফারহানের ডাক শুনে উঠে গিয়ে, আমার বরটার কি হয়েছে বলোতো ?

ফারহান -তুমি জানো আমার এখন অফিসে যেতে হবে।এমনিতে সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেলো। কোথায় আমার সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে অফিসে পাঠাবে তা না উল্টো বসে বসে আড্ডা দিচ্ছো।

প্রাপ্তি- তাই বাবু সোনা? তোহ্ তোমাকে সকালে উঠতে কে মানা করেছে?

দুষ্টমার্কা একটা হাঁসি দিয়ে ফারহান একহাতে দিয়ে গলার টাই ঠিক করছে অন্য হাতে প্রাপ্তিকে কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে,
ফারহান – বাবু,এতো সুন্দর একটা চাঁদ পাশে থাকলে রাতে কি ঘুম হয়? তাই রাতে শুধু সেই চাঁদের আলোতে হারাতে ইচ্ছে করে।নিজেকে যতোই বলি ফারহান, সকালে অফিস আছে মিটিং আছে চাঁদের আলোতে নিজেকে এতো হারিয়ে ফেলিস না।তবুও মন কিছুতেই মানতে চায় না।

প্রাপ্তি ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে
প্রাপ্তি -হুম,,,এখন অফিসের দেরী হচ্ছে না? এতো কিছু করতে পারো টাই ও বাধতে পারো, শার্টের কলারটা আজ পর্যন্ত ঠিক করতে পারনা।

ফারহান -কি করবো বলো তুমি নিজ হাতে শার্টের কলার ঠিক করে দিলে সারাদিন মনে হয় ভালোই কাঁটে।

প্রাপ্তি -এইবার ছাড়ো তো আর পাম্প দিতে হবেনা।প্রাপ্তি কোনো বেলুন নয় পাম্প পেয়ে সব ভুলে যাবে।

এমন সময় নাজিফা এসে বললো, ভাইয়া আপুকে এইবার ছাড়ো। আমার আজ ক্লাস নেই তবে একটা ফ্রাইবেট আছে। তুমি যদি যাওয়ার সময় আমাকে সেইখানে নামিয়ে দাও একটু ভালো হয়।

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে, এদের জন্য বউটাকে একটু আদরও করতে পারিনা।যাইহোক প্রাপ্তি,তোমার তো কপাল এইবার পুড়লো দেখছি ।তোমার সতিন নিজে এসেই ধরা দিচ্ছে।দেখনা তোমাকে একটু আদর করবো তাও সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি মুখটা গোমড়া করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ফারহান! সবসময় ইয়ার্কি ভালোলাগে না।ওকে কিছু বললে ও তোমার সাথে যেতে চাইবে না।
নাজিফা, তুই ড্রইংরুমে বস তোর ভাইয়া আসছে।

প্রাপ্তি বলার সাথে সাথেই নাজিফা কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -এই প্রাপ্তি! তুমি কি রাগ করছো?
সরি বাবু আর বলবো না।

প্রাপ্তি -আমি একটুও রাগ করিনি।তাড়াতাড়ি যাও নাজিফার আবার দেরী হয়ে যাবে।

ফারহান -যাবো কি করে? যাবার মেডিসিন এখনো পড়েনি পড়লেই চলে যাবো।
প্রাপ্তি বুজেছে ফারহান কিসের কথা বলছে।ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহানের কাছে গিয়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে এইবার যাও।

ফারহান অবাক হয়ে, বাবু এইটা কি ঝড় উঠছে?

প্রাপ্তি -আর একটা কথাও না যাও বলছি।

ফারহান ড্রইংরুমে আসতে প্রাপ্তির হাত ধরে এসে নাজিফাকে বললো ম্যাডাম এইবার আসুন।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

নাজিফা -এতোক্ষণ আপুকে আদর করতে দেরী হয়নি।মনে হচ্ছে তোমার বউটাকে কেউ নিয়ে যাবে তাই এখনো হাত টেনে ধরে রাখছো।

ফারহানের একটুও খেয়াল ছিলো না প্রাপ্তির হাত ধরে রেখেছে সে।নাজিফার কথা শুনেই প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে ওহ্ সরি এই বার আসো।
ফারহান আর নাজিফা চলে গেলো।
প্রাপ্তি ছোটো একটা নিশ্বাস ছেড়ে নিজের রুমেই আসলো।মনে মনে এইটাই অপেক্ষা করছিলো ফারহান কখন অফিসে যাবে।
ফোনটা হাতে নিয়ে খাটের এককোণায় গুটিসুটি হয়ে বসে আয়ানকে ফোন দিলো।অনেক বার রিং হওয়ার পরে আয়ান ফোন রিসিভ করলো।

আয়ান -শুভ সকাল, মিসেস ফারহান! আপনার রাত গুলো এখন অনেক সুখের কাটতেছে অনেক মধুময় তাইনা?

প্রাপ্তি -আয়ান আমি তোমার কাছে এইসব কিছুই শুনতে ফোন দিই নি।

আয়ান -ব্যাপার কি, ফারহান সাহেব বাসায় নেই মনে হচ্ছে।না হলে আপনি থেকে তুমিতে আসতেনা।তারপর বলো?কি মনে করে ফোন করেছো।

প্রাপ্তি -তুমি আর কখনো আমার ফোনে কল দিওনা।তুমি ফোন দিলে হয়তো ফারহান কিছু বলেনা,কিন্তু আমি বুজি ও ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পায়।সেইদিন তোমার ভুলের কারণে আজ এই অবস্থা। সেইদিনের জন্য কখনওই আমাকে দায়ী করতে পারবেনা।তুমি আমাকে শুধু সন্দেহ করেছিলে।কিন্তু ভালোবাসাটা একবার দেখনি।

আয়ান -ভুল মানুষেই করে তাইনা?তাই বলে শাস্তিটা অনেক কঠিন হয়ে গেলো না?প্রাপ্তি আমি মেনে নিলাম সব ভুল আমার। সব আমার দোষ। এইবার তুমি ফিরে আসো।আমি কথা দিচ্ছি আমার ফ্যামিলির লোক কিছুই জানবেনা।তোমাকে নিয়ে ওদের কোনো অভিযোগ করতে দিবোনা।প্লিজ ফিরে আসো।

প্রাপ্তি -এইটা সম্ভব না।আমি ফারহানকে ছেড়ে তোমার কাছে যেতে পারবোনা। প্লিজ আমাকে আর ফোন দিওনা।ফারহানকে শুধু ভালোবাসাই যায় ছেড়ে যাওয়া যায় না।

আয়ান -তুমি সত্যিই ফারহান কে ভালোবাসো?বড়লোকের ছেলে ভালোতোবাসবাই।

প্রাপ্তি -হ্যাঁ সত্যি আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। তবে বড়লোকের ছেলে হিসেবে নয়।ভালোবেসেছি আমার প্রতি তার ভালোবাসা, বিশ্বাস এইগুলো দেখে।

আয়ান- ঠিক আছে আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না।তবে এক শর্তে।

প্রাপ্তি-কিসের শর্ত আয়ান?তুমি এমন কিছু বলোনা যা আমি করতে পারবোনা।

আয়ান -বেশী কিছু না শুধু মাঝে মাঝে তোমার খবর নিতে চাই।তোমাকে বেশী ডিস্টার্ব করবোনা। বিশ্বাস করো।

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবলো এইতো আর বেশী কিছুনা।মেনে নি, না হলে প্রাতিদিন ও ফোন দিবে।এতে ফারহানের কষ্টটা আরো বাড়বে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে তোমার শর্তে আমি রাজি।তাহলে এখন রাখছি।

কথাটা বলেই প্রাপ্তি ফোন কান থেকে নামিয়ে খাট থেকে নিছে পা দিতেই দেখে ফারহান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান!!!তুমি কখন এলে? অফিসে যাওনি?

ফারহান চুপচাপ রুমে ঢুকেই আলমারি থেকে ফাইল টা নিয়ে আবার চলে যাচ্ছে দেখে প্রাপ্তি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ফারহানকে।,তোমার কি হয়েছে বলতো?
কথা বলছো না কেন?

ফারহান প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে হাত ধরে টেনে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে, কাঁদোকাঁদো গলায় বললো, দেখেছো আমি কতটা হতোভাগা। নাজিফাকে নামিয়ে দিয়ে হঠাৎ ফাইলটার কথা মনে পড়ে গেলো। এসে শুনি আমার বউ শর্ত মেনে নিচ্ছে।কিসের শর্ত মেনে নিলে প্রাপ্তি? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার?বেঁচে থাকতে তো তুমি কারো কাছে গেলে আমি সহ্য করতে পারবোনা।আমার মরণে পরে না হয় যেও।কথাটা বলার সাথে সাথে প্রাপ্তি ফারহানকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে ফারহান বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করবোনা যাতে তোমার কষ্ট হবে।তারপর প্রাপ্তি আয়ানের বলা কথা গুলো সব বললো।ফারহান সব শুনে প্রাপ্তির মাথাটা উঠিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে, বাকী কথা অফিস থেকে এসে বলবো।আমার একটা মিটিং আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে যাও।তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

ফারহান- এবার সুন্দর করে একটা হাঁসি দাওতো। এই হাঁসিটা না দেখে গেলে কোনো কাজেই মন বসবে না।
প্রাপ্তি হাঁসতে হাঁসতে আচ্ছা ওকে এইবার যাও।তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু।
ফারহান যাওয়ার সময় প্রাপ্তির চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিলো।

এইভাবে রাগ, অভিমান, হাঁসি কান্নার মাঝেই চলিতেছিল তাদের সংসার দেখতে দেখতে অনেকটা দিনও কেটে গেলো

চলবে,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৯

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ঘড়ীর কাটায় টিকটিক করে রাত দুইটা বেজে গেছে।প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রেখে বেঘোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তির ফোনের রিং বেজেই যাচ্ছে।ফারহান ফোনের শব্দ পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা খুঁজে নিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোন বেজে যাচ্ছে।
ফোনের আলো প্রাপ্তির মুখে পড়তেই ঘুম ঘুম চোখে, ওহ্! ফারহান কি করছো তুমি?

ফারহান -(আস্তে করে) অনেকক্ষণ থেকে তোমার ফোন বাজতেছে।

প্রাপ্তি – ধ্যাত! ফোন অফ করে রাখো তো।

ফারহান -দেখো না হয়তো জরুরী হবে।

তুমি ছাড়া এই মুহূর্তে জরুরী কিছু নেই, কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তি উঠে বসলো। ফারহানের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্কিনের উপর নাম্বারটা দেখে প্রাপ্তির হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো।

ফারহান নিজেও উঠে বসতে বসতে হ্যাঁ আয়ানই ফোন করেছে তাই তোমাকে উঠাতে হলো।অন্য কেউ হলে তো আমি নিজেই কথা বলতাম।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের মুখের দিকে ছেয়ে আছে।একটা মানুষের কিভাবে এতোটা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে?

ফারহান -আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে ফোন রিসিভ করো। বেচারা একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথায় ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই, আমি জানতাম তুমি আমার ফোন রিসিভ না করে পারবেনা। কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো।

প্রাপ্তি -আপনার ভুল ধারণা। আপনার ফোনই আমি রিসিভ করতাম না।কিন্তু আমার হ্যাজবেন্ডের কারণেই রিসিভ করলাম।যাইহোক এতো রাতে ফোন দিলেন কেন?

আয়ান- প্লিজ এইরকম করোনা। আমি মানছি আমি সেইদিন ভুল করেছি।তোমার কোনো কথা বিশ্বাস না করে।চলোনা আমরা সবকিছু মিটিয়েনি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।ফারহান বসে বসে ফোন টিপতেছে।মনে হচ্ছে এইদিকে তার কোনো মনই নেই।

প্রাপ্তি -আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছেন এইসব? কি মিটাতে চান? কোনো কিছুই আমি মিটাতে চাই না।প্রাপ্তি কথার স্বর জরে হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারহান নিজের ফোন রেখে, প্রাপ্তি আস্তে কথা বলো,সবাই শুনতে পাবে।

আয়ান -তার মানে সত্যি তুমি বিয়ে করেছো। সকাল থেকে ভাবলাম রাগ করেই এসব বলতেছ। কিন্তু এতো রাতে যখন তোমার পাশে ছেলের কন্ঠ শুনছি তারমানে তুমি সত্যিই বিয়ে করেছ।কিন্তু আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে করেছো তাতে কি হয়েছে? তবুও আমি তোমাকেই ভালোবাসি।তুমি ঠিক থাকলে আমার সব ঠিক।কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজে গেলো আয়ানকে এইভাবে সারারাত বুজালেও বুজবেনা।এর ছেয়ে ভালো সকালে ফারহান যখন থাকবেনা তখন সব কিছু বুজিয়ে বলে ঠিক করে নিবো।ফারহান হয়তো মুখে কিছু বলছেনা।কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকি কষ্ট পাচ্ছে।ও তো রক্তেমাংস গড়া একটা মানুষ। হয়তো আমায় বেশী ভালোবাসে দেখেই সবকিছু চুপচাপ সহ্য করে নিচ্ছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আয়ানকে আর কিছু না বলে ফোন রেখে অফ করে দিলো।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়েছে দেখে ফারহান বললো,কি ব্যাপার কিছু না বলেই রেখে দিলে।
প্রাপ্তি একটা হাঁসি দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে আমার এখন ইচ্ছে করছে না কথা বলতে।এতো রাতে কেউ ফোনে কথা বলে? আমার ইচ্ছে করছে বরে আদর খেতে।
ফারহান প্রাপ্তিকে নিজে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, তাই বুজি?

প্রাপ্তি -হুম।।

ফারহান – তাহলে ফোনটা এসে ভালোই হলো।না হলে তো ঘুমিয়েই থাকতে।

প্রাপ্তি -হুম,,,

ফারহান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে হাত দুটো শক্ত করে ধরে অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে,একটা কথা বলি?

প্রাপ্তি -আমি মানা করেছি তোমাকে? যা বলার বলতে পারো কিন্তু এইভাবে নয়।
তুমি শুয়ে পড়ো আমি তোমার বুকে মাথা রেখে যা বলবে শুনবো।
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তিকে বুকে শুয়ে বললো, এই ফোনটা আর না ব্যাবহার করলে হয়না? আমি তোমাকে এর ছেয়ে ভালো ফোন এনে দিবো।ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভালো করেই বুজেছে কেন বলছে এই কথা।তাই প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,

প্রাপ্তি -তুমি যা বলবে তাই হবে।

(কথাটা শুনে ফারহান বুজে নিলো আয়ানের উপর প্রাপ্তির এখন আর সেই দুর্বলতা কাজ করেনা)
আচ্ছা সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবে তো?

ফারহান -যেইদিন তোমাকে ভালোবাসবো না তোমার মনে হচ্ছে, মনে করবে সেইদিনি ফারহান আর পৃথিবীতে নেই।

প্রাপ্তি -ওহ্ কি বলছো এইসব?যেইখানে যাবা আমাকে নিয়ে যাবে না হলে তোমার খবর আছে।

ফারহান -মুখে একটু হাঁসির ঝলক ফুটিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে বলেই প্রাপ্তির কপালে আস্তে করে একটা চুমু খেলো।
সারারাত ফারহানের ভালবাসা পেয়েই প্রাপ্তির রাত কেটে গেলো।সকাল বেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে ফারহানের জন্য চা আনতে গেলো।ফারহান চায়ের জন্য রুমে অপেক্ষা না করে ড্রইংরুমে সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।মেজো মা প্রাপ্তিকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে, কিরে তুই রান্নাঘরে?

প্রাপ্তি -ফারহানের জন্য চা নিতে আসলাম।

মেজো মা -তুই আসতে গেলি কেন? বললেই তো পাঠিয়ে দিতাম।

প্রাপ্তি- কোনো সমস্যা নেই। আমি নিজেই পারবো।
কথাটা শুনে মেজো মা বললো,তাহলেতো ভালোই।আচ্ছা এই নে,চা টা দিয়ে আয়।
প্রাপ্তি এসে ফারহানের হাতে চা দিতেই ইমরান বললো এইটা কি দেখলাম,

মেজো কাকা নিজের চায়ে চুমুক দিয়ে,কেন কি হয়েছে তোর?

আরে ভাইয়া কি হয়নি সেটা বলেন।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)এই প্রাপ্তি, কখনো তো আমাকে এক কাপ চা এনে খাওয়ালিনা।আর যার সাথে তোর সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো তাকে এনে ঠিকি খাওয়ালি।
ইমরানে কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো। ফারহান ইমরানের কানের কাছে গিয়ে, শুন তুই ওর কাকাই আর আমি ওর হ্যাজবেন্ড তাহলে আমাকে এনেতো দিবেই তাই না?তোর হিংসে কেন লাগছে আমি বুজলাম না।তুইও বিয়ে করে ফেল দেখবি বউয়ের হাতের চা কখনোই মিস করতে চাইবিনা।

চলবে,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট ২৮

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট ২৮

#Rabeya Sultana Nipa 

 

__প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

প্রাপ্তি উঠে তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখে ওইখানে সবাই আছে।

প্রাপ্তিকে দেখে তার মা বললো,কিরে তুই ওই খানে একা একা কি করছিস।আমরা সবাই এইখানে তুই আমাদের সাথে কথা বলবি তা না।আচ্ছা শুন ফারহান আর তুই আজ আমাদের বাসায় চলে আয়।নীরার শাশুড়িকে বলেছি নীরাকে নিয়ে যাওয়ার কথা।তিনিও রাজী হলেন।

প্রাপ্তি -আম্মু ফারহান কি বলবে বলো? ওর বাসায় ফোন দিয়ে আব্বুকে জিজ্ঞাস করতে হবে থাকবো কিনা?

মেজো মা -নাজিফা যাতো ফারহান কে ডেকে নিয়ে আয়। ফারহানকেই বলবো তার বাবাকে বলতে।

ফারহান এসে, মেজো মা! আমাকে ডেকেছেন?

মেজো মা- হ্যাঁ, আসলে মেয়েটা তো অনেক দিন হলো তোমাদের বাড়ীতেই আছে।আমরা চাই প্রাপ্তি এইখান থেকে আমাদের বাসায় যাবে।অবশ্য নীরাও যাবে।প্রাপ্তিকে বলছি সে বলতেছে তোমার বাবাকে বলা ছাড়া কিছু বলতে পারবেনা। এখন তুমি কি বলো?
কথাটা শুনেই ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ঠিক আছে মেজো মা।আমি বাবাকে ফোন করে দেখি কি বলে।
কথাটা শেষ করে প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো বাহিরে আসতে।
প্রাপ্তি ফারহানের পিছন পিছন পাশের রুমে আসলো।ফারহান কে দেখে মনে হচ্ছে কথাটা শুনে ওর ভালো লাগেনি। আচ্ছা ও না গেলে নাই তাই বলে রাগটা আমার উপর মিটাবে নাকি।মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান প্যান্টের পকেটে দুই হাতে ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ফারহান আর কিছু বলার আগেই প্রাপ্তি কাছে আসতে আসতে, ফারহান বিশ্বাস করো আমি আম্মুদের যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলিনি।ওনারাই ব,,,,,,,,প্রাপ্তিকে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে ডান হাত দিয়ে টেনে এনে নিজের সামনে এনে দাঁড় করালো।

ফারহান -ওনারাই বলছে,,,, তোমার একটুও ইচ্ছে করেনি?

প্রাপ্তি -তুমি রাজী হলেই যাবো।যদি তুমি যাও তাহলে।

ফারহান – যেতে পারি এক শর্তে।

প্রাপ্তি -আবার কি শর্ত বলো তো?

ফারহান- তুমি তো ওই বাড়ীতে গেলে সবাইকে পেয়ে আমাকেই ভুলে যাবে।কিন্তু আমি এইটা চাইনা।আমি চাই তুমি শুধু আমাকেই সময় দিবে।এইকথায় যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আমিও যেতে রাজী। আর বাবাকেও বুজিয়ে বলবো।

প্রাপ্তি ভালো করেই জানে ফারহানকে যখনি ওই বাড়ীতে যেতে বলবে তখনি এই শর্তই দিবে।এরচেয়ে ভালো এখনি হ্যাঁ বলেদি।
প্রাপ্তির মুখে হ্যাঁ শুনে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে তার বাবাকে ফোন দিলো।

ফারহান- আসসালামু আলাইকুম,

ফারহানের বাবা- ওয়ালাইকুম সালাম।কি ব্যাপার ফারহান,কোনো সমস্যা?

ফারহান -বাবা, আসলে প্রাপ্তির মায়েরা সবাই বলছে নীরাদের বাসা থেকে ওদের বাসায় যেতে।আর প্রাপ্তিও তো আমাদের বাড়ীতে এসেছে অনেক দিন হলো। এখন না হয় কয়েকদিন গিয়ে ওই বাড়ীতে থেকে আসুক।প্রাপ্তি বলছে তুমি না বললে ও যাবেনা।

ফারহানের বাবা -ফারহান, এতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।প্রাপ্তিকে বলো কয়দিন গিয়ে থেকে আসতে।আর প্রাপ্তিকে বলে দিও ওর হাতের চা টা আমি খুব মিস করবো এই কয়দিন।

ফারহান একটা হাঁসি দিয়ে ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বাবা তোমাকে একটা কথা বলতে বলেছে।

প্রাপ্তি -কি কথা?

ফারহান- তোমার হাতের চা নাকি অনেক মিস করবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হবে নাকি মন খারাপ করবে বুজতে পারছে না।
কারণ সে তার শুশুরের জন্য চা বানিয়ে আনে ঠিকি কিন্তু তিনি কখনো খারাপ ভালো কিছু বলেননি।কিন্তু আজ কেন বললেন এইটা প্রাপ্তির অজানা।

এই প্রাপ্তি কি ভাবছো বলোতো? ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
কিছুনা ফারহান আমি আম্মুকে বলে আসি আমরা যাচ্ছি।
সব ঝামেলা শেষ করে সবাই সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে এলো।প্রাপ্তি নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান বসে বসে প্রাপ্তির ফোন টিপতেছে।
প্রাপ্তি -ফোন দিয়ে কি করছো?

ফারহান -তোমার আর আয়ানের আগের এসএমএস গুলো দেখছি।চিন্তা করোনা দুই একটাই পড়ছি বেশী পড়িনি।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে সব গুলোই দেখো তবে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো এই ফাঁকে আমি নীরার রুম থেকে আসছি।

ফারহান -ঠিক আছে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন তোমাকে এইরুমেই দেখি।

প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নীরার রুমের দিকে গেলো।
মৃদুল শুয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে।নীরা ফ্রেশ হয়ে মাত্র দাড়িয়েছে।

প্রাপ্তি দরজায় দাঁড়িয়ে আমি কি আসবো?
নীরা হেঁসে উঠে তুই এই কথা বলছিস।তোর আর আমার মাঝে তো কোনো ফর্মালিটি নেই। তাহলে আজ কেন দেখাচ্ছিস।ওওও আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনি বড়লোক বাড়ীর বউ।এখন তো ফর্মালিটি দেখাবেনই।

প্রাপ্তি -(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)দেখেছো ভাইয়া নীরা আমায় এই কথা বলছে।তো নীরা! তোরাই তো সবাই মিলে আমাকে বড়লোক বাড়ীতে বিয়ে দিলি।এখন আবার এই কথা কেন বলছিস?

নীরা প্রাপ্তির কাছে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে প্রাপ্তি আমি মজা করছি।তুই কি রাগ করছিস? ঠিক আছে আর কখনো বলবো না।

মৃদুল শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের মাঝে আমি নেই। আমি বাহিরে যাচ্ছি তোমরা কথা বলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ মনে মনে এইটাই চেয়েছিলো কখন মৃদুল যাবে আর ও নীরার সাথে কথা বলবে।মৃদুল চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।

নীরা -তুই ওই দিকে তাকিয়ে না থেকে কিছু বলবি? মনে হচ্ছে কিছু বলতেই এসেছিস।

প্রাপ্তি কথাটা ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই বললো আজ তোদের বাসায় যাবার আগে আয়ান ফোন করেছিলো।

প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে নীরার নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।কি বলবে বুজতে পারছেনা।প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে এই আবার নতুন কোনো ঝামেলা শুরু করবে নাতো?

নীরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসি দিয়ে তুই কি ভাবছিস আমি ভালো করেই জানি।তবে তুই যা ভাবছিস ওইটা ভুল।আমি এমন কিছুই করবোনা যেতে ফারহান কষ্ট পায়। কি ভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় সেটা আমি ফারহানের কাছ থেকেই শিখেছি।আমি এইটাও শিখেছি ভালোবাসাতে কোনো মিথ্যা ছলনা থাকতে নেই।হয়তো তুই এইটাও ভাবছিস আয়ানের কথা আমি ভুলে গেলাম কি করে আমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছেনা? এইটার ও আনসার আমি জানি।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে তোকে বলে বুজাতে পারবোনা। কিন্তু ফারহানের ভালোবাসার কাছে কিছুই না।যে মানুষ সামান্য একটা ফোনে আমায় এতোটা সন্দেহ করতে পারে তাকে ভালোবাসা বলা যায়না। আর যে সব কিছু জেনেও বিশ্বাস রাখে তাকেই ভালোবাসা বলে।
প্রাপ্তির কথা শুনে নীরা নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, সত্যি বলছি তোর মধ্যে এতোটাই গভীরতা আছে যা আমাদের কারো কাছেই নেই।

প্রাপ্তি, প্তাপ্তি, সেজো কাকী ডাকতে ডাকতে নীরার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, তুই এইখানে, ফারহান তো তোকে ডাকছে।

হঠাৎ প্রাপ্তির মনে পড়ে গেলো ফারহান আসার সময় বলে দিয়েছিলো ও ফ্রেশ হয়ে এসে যেন আমাকে রুমে দেখে।নীরাকে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি দৌঁড়ে রুমে গেলো।

প্রাপ্তিকে এইভাবে যেতে দেখে নীরা সেজো কাকীর দিকে তাকিয়ে বললো কি হয়েছে কাকী? কিছুই তো বুজলাম না।

সেজো কাকী আমি ও তো কিছু বুজিনি।ফারহান আমাকে বললো,কাকী প্রাপ্তিকে একটু ডেকে দিন তাই আমি ডাকতে এলাম।

নীরা -ওহ্,,আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রাপ্তি রুমে ঢুকে ফারহান রেডি হচ্ছে দেখে।

কোথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তোমার সাথে আমার এই কথা ছিলো?তুমি আমাকে রেখে আড্ডা দিবা আর আমি একা একা বসে থাকবো ইম্পসিবল এর থেকে আমার বাড়ীই ভালো।

প্রাপ্তি ফারহান কে আর কোনো কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পর ফারহানের মনে হলো তার পরার শার্টটা বুকের পাশে ভিজা লাগছে।তাড়াতাড়ি করে বুকের থেকে প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে দেখে চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
ফারহান এতোক্ষণ প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্যই কথাটা বলেছিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি দেখে,এই পাগলি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।তোমাকে ছাড়ে গেলে তো আমি নিজেই থাকতে পারবোনা। প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে ফারহান নিজের কাছে আরো টেনে এনে প্রাপ্তির কপালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে আস্তে করে, কি হয়েছে বলা যাবে?

প্রাপ্তি -ওহ্

ফারহান -বুজেছি কি হয়েছে।

প্রাপ্তি -কি বুজেছ?

ফারহান -আমার বউয়ের তার বরে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -হুমমম

ফারহান আর কিছু না বলে প্রাপ্তির ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট গুলো নিয়ে প্রাপ্তির ঠোঁট গুলো নিজের করে নিলো। প্রাপ্তিও কোনো বাধা না দিয়ে ফারহানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ফারহানের ভালোবাসার কাছে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।

চলবে,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৭

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো।

বড় ভাবী প্রাপ্তিকে দেখে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, কিরে,, ফারহান উঠে নাই? আজ তো তোরা নীরাদের বাসায় যাবি।তোরা নাস্তা খেয়ে রেডি হয়েনে।

সুমি এসে বললো কোথায় যাবে ভাবী?

প্রাপ্তি -নীরার শশুর বাড়ীতে।তুমিও চলো না আমাদের সাথে দেখবে ভালো লাগবে।

ফারহান ফোন টিপতে টিপতে রুম থেকে এসে সোফায় বসলো।

সুমি -আজ না ভাবী অন্য কোনো সময়।

প্রাপ্তি -আরে চলো না। সবাই একসাথে গেলে ভালোই লাগবে।

ফারহান তাদের কথাগুলি শুনে সুমিকে ডেকে বললো,
কিরে তোর আজ এতো দাম বেড়ে গেলো কেন? কোনো না শুনতে চাইনা।গিয়ে রেডি হয়েনে।
সুমি আর কিছু বললোনা।প্রাপ্তি টুকিটাকি কাজ সেরে রুমে এসে রেডি হচ্ছে।ফারহান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিজের মুখটা প্রাপ্তির কাঁধে রেখলো

প্রাপ্তি -ওহ্ ফারহান, শাড়ীটা তো পরতে দিবা।এইভাবে জড়িয়ে ধরলে শাড়ী পরা যায়।
ফারহান- তুমি যখন পারবেনা আজকে আমি শাড়ী পরিয়েদি।
প্রাপ্তি -আমি নিজেই পারি।তুমি এইভাবে থাকলে পরবোই বা কি করে।কথাটা শেষ করতেই প্রাপ্তির ফোন টা বেজে উঠলো।
এইবার তো দেখতে দিবে কে ফোন করেছে?

ফারহান -(প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে)তোমার ফোন সকাল থেকে বাজতেছে।নাম্বারটা ছিনি না তাই রিসিভ করিনি।রং নাম্বার হতে পারে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, ৪২ বার কল করেছে কিন্তু আমিও নাম্বার টা চিনিনা।প্রাপ্তি রিসিভ করার আগেই কল টা কেটে গেলো।ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে নিজের বুকের সাথে টনে এনে , এইজন্যই ফোন ভালো লাগেনা।বউকে একটু আদর করবো তারও সময় দিবেনা।যখন তখন ডিস্টার্ব করে।প্রাপ্তি ফোনটা খাঁটের উপরে রেখে দিয়ে ফারহানের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো তুমি কি ওই বাড়ীতে গিয়েও এইরকম করবে?
ফারহান আনসার দিতে যাবে তখনি আবার ফোন টা বেজে উঠলো। প্রাপ্তি এইবার দেরী না করেই রিসিভ করে কানে ধরতেই,,

হ্যালো! হ্যালো,,,, প্রাপ্তি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো আমি আয়ান।

কথাটা শুনার সাথে সাথেই প্রাপ্তি নিজের অজান্তেই মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো আয়ান,,,,,!বলেই নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
প্রাপ্তি মুখে আয়ান নাম শুনার পরেই ফারহান প্রাপ্তিকে নিজের কাছ থেকে ছেড়ে দিয়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে একনিমিষেই তার সব শেষ হয়ে গেছে।প্রাপ্তিকে যখন নিজের করে পেলাম তখনি ওকে আমাদের জীবনে আবার ফিরে আসতে হলো?প্রাপ্তি কি আবার আমার থেকে দূরে সরে যাবে?

আয়ান-প্রাপ্তি তুমি কি কিছু বলবেনা।এইভাবে চুপ করেই থাকবে?

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার ভাষা নেই তার কাছে।এই সহ্য মানুষ টাই তার সবকিছু।এই কয়দিনে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে সে।

প্রাপ্তি -জ্বি আমি শুনতে পারছি।কিন্তু আপনি কেন ফোন দিয়েছেন এতো দিন পর?

আয়ান- প্রাপ্তি! তোমাকে সরি বলার ভাষা আমার নাই।আসলে এতো দিন তোমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিজেকে নিজে পরিক্ষা করে দেখলাম আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো কিনা।কিন্তু এখন বুজলাম আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবোনা।

ফারহান- মিস্টার আয়ান আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।আপনি কথা গুলো বুজেছেন ভালো কথা,নিজেকে নিজে পরিক্ষা করেছেন ভালো কথা।তবে অনেক দেরীতে।

আয়ান- আমি তোমার কথা কিছুই বুজতেছিনা।তুমি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে একটু বলবে?

প্রাপ্তি- সেই দিন আমিও আপনার কিছু বুজিনি।যেদিন আপনি আমায় ভুল বুজে ছিলেন।জানেন আপনি সেইদিন ভুল বুজে ভালোই করেছেন।না হলে সত্যিকারের ভালোবাসা আমি ফিরেই ফেতাম না।(কথাটা বলতে বলতে ফারহানের কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে)আপনার কারণে আমি একজনকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম।আজ সেই মানুষটাই আমার সব।

আয়ান -প্রাপ্তি আমি কিছু বুজতেছি না।প্রাপ্তি চলো আমরা দেখা করি? প্রাপ্তি আমি তোমার সামনে দাঁড়াতে চাই।তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।

প্রাপ্তি -সেইদিন এইকথাটা বললে হয়তো রাখতাম।তবেঁ এখন আর না।
প্রাপ্তি কথাটা শেষ করতেই ফারহান প্রাপ্তির কপালে ছোট্রো একটা চুমু দিয়ে তুমি কথা শেষ করে সুমি কে নিয়ে আসো আমি গাড়ী বের করছি।প্রাপ্তিকে এখন ফারহান নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করে ফেলেছে।তাই কিছু না বলেই চালে যাচ্ছে।

আয়ান -প্রাপ্তি তোমার সাথে কি কেউ আছে?

প্রাপ্তি -জ্বী মিস্টার আয়ান, আমার হ্যাজবেন্ড।

আয়ান- প্রাপ্তি তুমি এইসব কি বলছো।তুমি এইভাবে আমাকে কষ্ট দিতে পারো না।(একটু হেঁসে) তুমি আমাকে খেপাইতেছো তাইনা?

প্রাপ্তি- আমি আপনাকে খেপাতে যাবো কেন? ও,,,,হে আপনাকে তো বলাই হয়নি।আমি মিস প্রাপ্তি থেকে মিসেস ফারহান হয়ে গেছি।
প্রাপ্তির কথা গুলো বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আয়ানের সামনে সে কোনো দুর্বলতা দেখাতে চায় না।সেই এখন চাইলেও ফারহান ছাড়া কাউকে ভাবা সম্ভব নয়।

আয়ান- বাহ্ ভালোই।এই কি সেই ফারহান যার সাথে আমার কথা হয়েছিলো?
প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তির দেরী দেখে ফারহান এসে দরজায় দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি তোমার এখনো হয়নি? নীরা দেরী দেখে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।

প্রাপ্তি -আয়ান আপনার কিছু বলার থাকলে পরে ফোন দিবেন।আমার হ্যাজবেন্ড আমার জন্য অপেক্ষা করছে কথাটা বলেই প্রাপ্তি আয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো।

ফারহান প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।তোমার কিছু হলে আমি নিজেই মরে যাবো।প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসার কথা গুলো হয়তো আমি তোমাকে গুছিয়ে বলতে পারিনা।কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

প্রাপ্তি ফারহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমি জানি তুমি আমায় কতো টুকু ভালোবাসো।এখন সারাক্ষণ যদি এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখো তাহলে যাবেটা কখন?

ফারহান -কেন যে নীরার কথায় আজ যেতে রাজী হলাম? আরো দুইদিন পর গেলেই ভালো হতো।ওইখানে গেলে তো তুমি আমার কাছেই আসতে ছাইবেনা।ওহ্ বউটাকে এতো দিন পর কাছে পেলাম তাও কারো সহ্য হচ্ছে না।

প্রাপ্তি -ফারহান,,,,,, তুমি যেই ভাব করছো মনে হচ্ছে আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি।কয়েকটা ঘন্টারই তো ব্যাপার।

সুমি রেডি হয়ে এসে কিরে তোদের হলো?

প্রাপ্তি -হুম,,,আমারও হয়ে গেছে।কিন্তু ফারহান তোমার সাথে কথা বলতে বলতে রেডি হতে গিয়ে মনে হচ্ছে কি যেন মিসিং।

ফারহান- আর কিচ্ছু করতে হবে না।আমার বউকে এমনিতেই অনেক সুন্দর লাগছে।
এইবার চলো!

নীরার শশুর বাড়ীতে সবাই এসেছে।প্রাপ্তির পরিবারের সবার সাথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে।সবাইকে পেয়ে প্রাপ্তির ফারহানের দিকে খেয়ালি নেই।ফারহান সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে ঠিকি চোখ গুলো প্রাপ্তিকে খুঁজছে। নীরা আর মৃদুল সবাইকে নাস্তা দিচ্ছে। ফারহানের কাছে নীরা আসতেই, এই নীরা তোমার বোন তো এইখানে এসে আমাকেই ভুলে গেছে।একটু ডেকে দিবে এইখানে এসে অনেকক্ষণ হলো দেখছিনা।মনে হচ্ছে বছর হয়ে গেলো।

নীরা -ভাইয়া! আমাদের ভালোবেসে বিয়ে হয়েছে ঠিকি, কিন্তু আপনার ভালোবাসার কাছে এইটা কিছুই না।যাইহোক প্রাপ্তি আমার রুমে আছে ওইখানে নাজিফা আর সুমি আছে ইচ্ছে হলে গিয়ে দেখে আসেন।

ফারহান -(উঠে দাঁড়িয়ে) ওরা থাকলে সমস্যা নেই আমি আগে আমার বউকে দেখে আসি।কথাটা বলে ফারহান আর এক মুহূর্তের জন্যও দাড়ালোনা।

ফারহান নীরার রুমে গিয়ে দেখে ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছে।

আরে নাজিফা! তুমি আসার পর থেকেতো একবারো দেখা করোনি।দেখেছো প্রাপ্তি? নাজিফা আমার পিছু ছাড়তেইইইইইই চায়না।প্রাপ্তি সাবধানে থাকো ও কখন তোমার সতিন হয়ে যায় বলা যায়না।

নাজিফা -এই শুনো একদম বাজে কথা বলবে না।আমার কি ঠেকা পড়ছে যে তোমাকেই বিয়ে করবো।এইইই,,, আপু দেখছিস ভাইয়া তোকে একটুও ভালোবাসেনা।

প্রাপ্তি -(নাজিফাকে আরো রাগানোর জন্য)ফারহান কিন্তু ঠিকি বলেছে, ভেবে দেখ আমি আর তুই এক বাড়ীতেই থাকবো।

নাজিফা- আপু তুইও ধুত আমি আর এই রুমে থাকবোই না।সুমি, এখান থেকে চলো আমরা অন্য রুমে যাই।
সুমি নাজিফার সাথে উঠে চলে গেলো।

ফারহান প্রাপ্তির পাশে এসে বসে হাঁসতে হাঁসতে দেখেছো তোমার বোনকে কিভাবে সরালাম।

প্রাপ্তি – জ্বী সাহেব, আমিও বুজেছি আপনি ওকে সরানোর জন্যই এইগুলো বলছেন।

ফারহান প্রাপ্তির গাল দুটোকে দুই হাত দিয়ে ধরে কাছে টেনে এনে একটা চুমু দিয়ে এই না হলে আমার বউ।
সেজো কাকী ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে এসে দেখেই লজ্জা পেয়ে এই সত্যি বলছি আমি কিছু দেখিনি।

ফারহান কথাটা শুনে তাকিয়ে দেখে সেজো কাকী। তড়িঘড়ি করে প্রাপ্তির গাল থেকে হাত সরিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ওনাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা বলে রুম থেকে চলে গেলো।
প্রাপ্তি এতোক্ষণ অনেক কষ্টে হাঁসি ছেপে রেখেছিল ফারহান চলে যাওয়ার পর দুজনেই এক সাথে হাঁসতে শুরু করলো।

সেজো কাকী -বেচারা লজ্জা পাইছে।আসলে আমিও আসতাম না।বড় ভাবী তোকে ডাকছে।

প্রাপ্তি- আম্মু ডাকছে? আচ্ছা শুনো তুমি আবার সবার সামনে কিছু বলোনা প্লিজ।

চলবে,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট:২৬

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

___ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই অসহায় এইটা প্রাপ্তি আজ ঠিকি বুজেছে।যাকে একদিন সহ্য করতে পারতো না।আজ সেই মানুষটিকেই সে ভালোবেসে ফেলেছে।
ফোনের রিং কখন থেকে বেজে যাচ্ছে দেখে
ফারহান উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে।
প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ফারহান খাঁটের এক কোণায় বসে কথা বলছে,আর নিজের চুল গুলো ঠিক করছে।প্রাপ্তির ফারহানের চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে এগুচ্ছে।প্রাপ্তি চলে যাচ্ছে দেখে ফারহান ফোন রেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি কথায় যাচ্চো? জিজ্ঞাস করলেনা তো কার সাথে কথা বলছি!

ফারহানের ভাব দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে যাকিছু হয়েছে সে সব ভুলেই গেছে।খুব সাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।ফারহান ইচ্ছা করেই এইভাবে কথা বলছে সেই ভালো করেই জানে প্রাপ্তিকে কিছু বললেই সে আরো লজ্জা পেয়ে যাবে।

প্রাপ্তি- ( অন্য দিকে ফিরে)আমি কি করে জানবো?

ফারহান -ওই দিকে কে আছে যে ওই দিকে ফিরে কথা বলছো?
(কথাটা বলতে বলতে প্রাপ্তির সামনে গিয়ে প্রাপ্তি দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে ) এতোদিন অনেক অবহেলা সহ্য করছি এখন থেকে আর না।এখন থেকে আমি যা বলবো তাই হবে।

প্রাপ্তি -ছাড়ো তো আবার কি শুরু করছো বলতো?(কথাটা বলতে বলতে সন্ধ্যায় যে ফারহানের জন্য নাস্তা এনেছে তার দিকে চোখ পড়লো তার।)এই ফারহান! তুমি তো নাস্তাই খাওনি।চা তো ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে।

ফারহান- (মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে)নাস্তার ছেয়ে বেশী কিছু খেলে নাস্তার কি প্রয়োজন।

প্রাপ্তি- ঠিক আছে আজ থেকে সব কিছু খাওয়া বন্ধ।,,,,,,,,কথা টা শেষ করতেই দরজা ধাক্কানো শব্দ পেয়ে প্রাপ্তি গিয়ে দরজা খুলে দেখে মেজো ভাবী।

মেজো ভাবী রুমে ঢুকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে, এই জন্যই তো বলি প্রাপ্তি সেই সন্ধ্যায় রুমে ঢুকলো এখনো আসছে না কেন? যাইহোক এখন আর কিছু বলবো না।ড্রইংরুমে চলো বাবা খেতে ডাকছে। ওনি তোমাদের অপেক্ষায় বসে আছে।

ফারহান -তুমি যাও আমি আসছি।

ফারহানের বাবা, মা, সুমি পরিবারের সবাই বসে আছে। বড় ভাবী আর মেজো ভাবী খাবার গুলো রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে।
ফারহান এসে একটা চেয়ার টেনে তার বাবার পাশে বসলো।প্রাপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে বড় ভাবী সাথে সাহায্য করছে।সুমি অনেকক্ষণ ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান ভাতের লোকমা মুখে দিয়েছে মাত্র তখনি সুমি বলে উঠলো, হে,,রে ভাইয়া! তুই তো এই সময় কখনো গোসল করিসনা।আজ এই বৃষ্টির মধ্যে ও গোসল করেছিস তোর ঠাণ্ডা লাগবেনা? কথাটা শুনেই ফারহান গলায় ভাত আটকে ঢেকুর দিতে শুরু করলো।
ফারহানের বাবা ছেলের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে খেয়েই যাচ্ছে কোনো কথা বলছেনা।ফারহানের মাও চুপচাপ কিছু না শুনার মতোই ছেলের দিকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে, পানি খেয়েনে ঢেকুর কমে যাবে।প্রাপ্তি লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাটি ফেঁটে নিছেই চলে যেতে।বড় ভাবী সুমিকে চিমটি কেঁটে,কানের কাছে গিয়ে তুই কি এখনো ছোটো আছিস নাকি।কোথায় কি বলতে হয় মাঝে মাঝে কি সব কথা খেয়ে বসে থাকিস নাকি?
প্রাপ্তি কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।ফারহান চুপচাপ খেয়ে উঠতে যাবে তখন ফারহানের বাবা বললো, একটু বস আমি খাওয়াটা শেষ করি তোর সাথে কথা আছে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে হাত ধুয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

প্রাপ্তির কথা ভেবে ফারহানের খারাপ লাগছে।বেচারি না খেয়ে লজ্জা পেয়েই রুমে চলে গেলো।হয়তো আমার উপরে রাগ করে বসে থাকবে।সুমিকেও বা কি বলা যায় সেও হয়তো না বুজেই বলে ফেলেছে।

ফারহানের বাবা খাওয়া শেষ করে এসে তিনি ও সোফায় বসলেন।অনেকক্ষণ পরে বললেন তোমার মেজো শশুর ফোন কেরেছিলেন।কাল নাকি ওনারা সবাই নীরার শশুর বাড়ীতে যাবে। এখন তোমদেরকে যাওয়ার জন্য বলছে।আর তুমিও নাকি তাদের বলেছো কাল যেতে পারবে।এখন কি তোমরা যাচ্ছো?

ফারহান -হ্যাঁ একটু আগে নীরার শাশুড়ি আমার সাথে কথা বলেছিলো, আমি তাদের কথা দিয়েছি কাল যাবো।

ফারহানের বাবা- আচ্ছা তাহলে ভালো কথা।তোমরা ঘুরে আসো।আর তুমি তো এই মাসে তোমার ব্যবসার কি কাজে বাহিরে যাওয়ার কথা ছিলো এখন কি যাবে?

ফারহান -বাবা ওইটা আমি কেন্সেল করে দিয়েছি।

ফারহানের বাবা বুজতে পেরেছে ছেলের না যাওয়ার কারণ। একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যেই ভাবে ভালো মনে করো।কথাটা বলে উঠে চলে গেলেন ফারহানের বাবা।

ফারহান রুমে যাওয়ার সময় বড় ভাবীর দিকে তাকিয়ে, ভাবী প্রাপ্তির খাবার গুলো রেহানা (তাদের কাজের মেয়ে)কে দিয়ে পাঠিয়ে দিও।ফারহান রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি ফোনে নীরার সাথে কথা বলছে।
প্রাপ্তিকে দেখে বুজা যাচ্ছে মনটা মোটামুটি ভালোই আছে।ফারহান পাশে গিয়ে বসে প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে টেনে নিজের আরো কাছে এনে বসিয়েছে।প্রাপ্তি কিছু বলতেও পারছেনা নীরার সাথে কথা বলছে বলে।বার বার ইশারা দিয়ে বুজাচ্ছে এই রকম করছো কেন?
এইদিকে নীরা বলেই যাচ্ছে, প্রাপ্তি জানিস তোকে আজ তো কনগ্রুয়েন্স জানানো উচিত।
প্রাপ্তি -কেন? কি করলাম আমি?

নীরা -তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না? একটু আগে ভাইয়ার সাথে কথা হলো আমাকে বলেছে।
(প্রাপ্তি এই কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।ফারহান বুজতে পেরেছে নীরা বলে দিয়েছে তাকে যে কথা গুলো বলছি।)আচ্ছা যাইহোক কাল সকালে তোদের একসাথে হাঁসি মুখ গুলো দেখার অপেক্ষায় আছি।।

প্রাপ্তি হুম ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে তুমি এইটা কি করলে সব কিছু ওকে বলে দিলে?

ফারহান -তুমি যখন ফ্রেশ হয়ে আসছিলে তখন ওর সাথেই কথা বলছিলাম।ও বার বার জিজ্ঞাস করছিলো কেন ফোন ধরতে দেরী করছি।তখন না বলে আর উপায় আছে তাও আবার যদি শালী জিজ্ঞাস করে?
এমন সময় রেহানা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আসবো?
ফারহান -হুম আসো।

প্রাপ্তি- রেহানা কার জন্য খাবার এনেছো তোমার ভাইয়া ওইখানে খায়নি?

রেহানা -ভাবী ভাইয়া তো,,,,,,
রেহানাকে ফারহান থামিয়ে দিয়ে, বাকী গুলো আমি বলে দিবো তুই যা।রেহানাও আর কিছু না বলে চলে গেলো।

ফারহান -তুমি না খেলে আমিও আজ খাবোনা।তাই দুজনের জন্য একসাথেই আনতে বলেছি।(ফারহান প্রাপ্তিকে এই মিথ্যা কথাটা না বললে হয়তো প্রাপ্তি খাবেও না।ফারহান না খেয়ে আছে শুনলে না খেয়েতো উপায় নেই।)

প্রাপ্তি -ওহ্। তুমিও না।আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।

ফারহান -আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।এইবার তো খাবে।
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি আর না করতে পারলোনা।
প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ফারহান খাচ্ছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো, আমাকে খাওয়াচ্ছো তুমি খাচ্ছো না কেন?

ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে, সরি প্রাপ্তি! মিথ্যা কথাটা বলার জন্য।কিন্তু মিথ্যেটা না বললেতো খেতেনা।তাই বললছি।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।

ফারহান -আমি হাত ধুয়ে আসি, তুমি শুয়ে পড়ো।
প্রাপ্তির মাথায় একটায় চিন্তা সকাল হবে কখন কতো দিন পর সবার সাথে দেখা হবে।অবশ্য বেশিদিন হয়নি তবুও প্রাপ্তির কাছে অনেক দিন মনে হচ্ছে।
ফারহান এসে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে শুয়ে শুয়ে কিছু ভাবছে।

ফারহান- (প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে) এতো দূরে শুয়ে আছো কেন?আর তোমার বালিশ টা এই খাটে যেন আর না দেখি।

প্রাপ্তি -ফারহান, বেশী বাড়াবাড়ি করছো।তাহলে আমি ঘুমাবো কি করে?

ফারহান- কোথায় আবার ফারহানের এই বুক থাকতে বালিশের কি প্রয়োজন। হিটলারের জন্য ফারহানের বুকেই যথেষ্ট।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে তাইতো এতোক্ষন তো এইকথা ভাবিনী। ফারহান কে শুইয়ে সত্যি সত্যিই প্রাপ্তি ফারহানের বুকে শুয়ে পড়লো।

চলবে,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি পার্ট: ২৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ২৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহান ড্রইংরুমে তার আব্বু আর কাকাইদের সাথে কথা বলছে।ফারহানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারহানের ইচ্ছা করছে রুমে যেতে কিন্তু এখন রুমে গেলে সবাই কিভাববে তাই না ছাইলেও সবার কথা বসে বসে শুনতে হচ্ছে। প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো,ফারহান কখন এলে?

মেজো কাকা -ও কি বলবে? ওকে তো ইমরান ফোন করে নিয়ে আসছে। ও নাকি বিকেলে তোকে নিতে আসবে বলেছিলো তারপর আমি ইমরান কে বলে ফোন দিয়েই নিয়ে এসেছি।

প্রাপ্তিরর মা প্রাপ্তির জন্য খাবার নিয়ে এসে, প্রাপ্তি! তুই আগে খেয়েনে পরে কথা বলিস।

ফারহান -মা ঠিকি বলেছে আগে খেয়ে নাও।খেয়ে একটু পরে রেডি হয়ে নিও।

প্রাপ্তির আব্বু -ফারহান, আজ কি সত্যিই চলে যাবে?

ফারহান-জ্বী, সমস্যা নেই পরে এসে প্রাপ্তি কয়েকদিন থেকে যেতে পারবে।

কেউ আর কিছু বললো।প্রাপ্তিও খেয়ে রুমে চলে গেলো।একটু পর ফারহানও প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।
ফারহান দরজাটা বন্ধ করে খাঁটের এক কোনায় বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই একটা হাঁসি দিয়ে, ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?

ফারহান -দেখছি আমার হিটলার বউকে। আচ্ছা কাল রাতে তোমার আমার কথা একবারো মনে পড়েনি? আমাকে মিস করোনি?তুমি রাতে আমাকে একবারো ফোন দাওনি।আমি ভাবেছিলাম কি আর হলো কি।

প্রাপ্তি -(ফারহানের কাছে একটু এগিয়ে)তাইইইইইইইইই? কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে একটুও ভাবি নাই।(কাথাটা বলে প্রাপ্তি আবার হাঁসা শুরু করলো।)

ফারহান-হাঁসো! হাঁসো! যতো খুশি হেঁসে নাও।

প্রাপ্তি -হুম ঠিক আছে,তোমাদের বাড়ীতে গিয়ে যদি হাঁসতে না পারি তাই এখনি হেঁসে নিচ্ছি।কারণ বউ তো এখন সাবধানেই চলতে হবে।

প্রাপ্তির কথা শুনে যতো বেশী না অবাক হচ্ছে তার ছেয়ে বেশী খুশি হচ্ছে এই ভেবে, প্রাপ্তি সবার সাথে মানিয়ে নিতে চাইছে।

ফারহান! ফারহান! একটু এইদিকে আসোতো।
প্রাপ্তির বাবার ডাক শুনে ফারহান উঠে দাঁড়িয়ে, প্রাপ্তি তুমি রেডি হয়ে ড্রইংরুমে আসো আমি ওইখানেই আছি।

ফারহান ড্রইংরুমে গিয়ে, আব্বু ডেকেছেন?

প্রাপ্তির বাবা -নীরা আর মৃদুল তো সকালেই চলে গেছে জানো। একটু আগে নীরার শাশুড়ি ফোন করলো তাদের বাসায় সবাইকে যাওয়ার জন্য।এখন তোমরা তো চলে যাচ্ছো আমার মনে হয় তুমি আর প্রাপ্তি যে দিন যেতে পারবে সেইদিনের কথাই বলবো তাদের।এখন কি বলো তুমি?

ফারহান -আব্বু আমি আগে বাসায় যাই।তারপর না হয় আপনাকে ফোন করে জানাবো কখন যেতে পারবো।

প্রাপ্তির বাবা -আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো।

প্রাপ্তিও রেডি হয়ে চলে আসছে দেখে প্রাপ্তির কাকা বললো, কিরে একদম রেডি হয়ে চলে আসছিস? (প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে)দেখছস ভাইয়া, প্রাপ্তি আমাদের এক নিমিষেই পর করে দিলো। ফারহানের বাড়ী যাবে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই চলে আসছে।
প্রাপ্তিকে যেই যাই বলুক না কেন , কেন জানি ওর একটুও খারাপ লাগছেনা।সবাই তো ভাবে ছিলো প্রাপ্তি আজ যেতে চাইবেনা।সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে হাঁসি খুশি ভাবেই বাড়ী থেকে বিদায় নিলো। প্রাপ্তির মা ও মেয়েকে আজ আর কিছু বললো না।

ওই বাড়ীতে পৌঁছে প্রাপ্তি হাঁসি মুখে সবার সাথে ভালো ভাবেই মিশে গেছে। আজ প্রাপ্তির কাছে মনে হচ্ছে এইটাই তার পরিবার। ফারহানের পরিবারের সবাইও অনেক ভালোবাসে প্রাপ্তিকে।
এইভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো। এখন আর আগের মতো আয়ান নামের কাউকে মনে পড়ে না।ফারহানের সাথে আগের থেকে ভালোই সময় কাটছে।ফারহানও প্রাপ্তি সব কাজেই সাহায্য করে।ফারহানকেও প্রাপ্তি আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু ফারহানকে এখনো বুজতে দেয়না।

আজ সন্ধ্যা থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে।
বড় ভাবী নাস্তা বানিয়ে প্রাপ্তিকে ডেকে বললো সবাইকে রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসতে।প্রাপ্তিও সবাইকে নাস্তা দিয়ে এসে ফারহানের জন্য নাস্তা নিয়ে রুমে গেলো।ফারহান এতোক্ষণ শুয়েই ছিলো।
প্রাপ্তিকে দেখে ফারহান উঠে দাঁড়ালো

ফারহানকে দাঁড়াতে দেখে প্রাপ্তি নাস্তাটা রাখতে রাখতে বললো।কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
প্রাপ্তি নাস্তাটা রেখেই পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে।ফারহান যতো এগিয়ে আসছে প্রাপ্তি ততো পিছাতে থাকলো আর তোতলাতে তোতলাতে বলতে লাগলো ফা ফা ফার হা ন,,,এইইইইইইভা বে, আ আ আ স ছো,,কে কে ন?
আমি প প প ড়ে,,,,, যা যা বো,,,,তো

ফারহান কিছু বলছে না আর প্রাপ্তি পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে গেলো।ফারহান আস্তে আস্তে এসে প্রাপ্তির দুপাশে দেওয়ালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রাপ্তি ভয়ে ভয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান নিজে মুখটা প্রাপ্তির মুখে কাছে নিতেই প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।ফারহান এতোটাই কাছে এসেছে যে প্রাপ্তির বুকের ভেতরের শব্দটা ফারহান শুনতে পাচ্ছে।প্রাপ্তির চোখ বন্ধ করে রেখেছে দেখে ফারহান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বললো।বৃষ্টিতে ভিজবে?
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চোখ মেলে দেখে ফারহান তাকিয়ে হাঁসছে।

ফারহানের হাঁসি দেখে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে তারদিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -কি ভেবে ছিলে? তোমায় কিস করবো?
ফারহানের কথাটা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে
নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান -তুমি জানো? যখন তুমি চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তোমায় অনেক সুন্দর লেগেছে যা তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা।তবে তুমি চিন্তা করোনা তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করবোনা।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে।প্রাপ্তির এমনিতে বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে।ফারহানও বারান্দায় গিয়ে প্রাপ্তির পাশে দাড়ালো।

ফারহান -রাগ করছো? আসলে তখন তোমাকে এইভাবে ধরাটা ঠিক হয়নি আমি ও বুজতে পারছি।আচ্ছা সরি আর কখনো এমন করবো না।এইবার আমার দিকে তাকাও। (প্রাপ্তি এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলতে ফারহান আমি একটুও রাগ করিনি তোমার উপর।)

প্রাপ্তি,কানে ধরবো? আমার দিকে তাকাও এই দেখো কানে ধরছি কিন্তু!
প্রাপ্তি আর চুপ থাকতে না পেরে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রাপ্তির এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে ফারহান চমকে উঠলো।
প্রাপ্তি ফারহানের বুকে মাথা রাখে, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না হলে আবার হারিয়ে যাবো।
ফারহান কথাটা শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলোনা।ফারহান প্রাপ্তিকে এমন ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে প্রাপ্তি এখন যেতে চাইলেও যেতে দিতে পারবেনা।

বাহিরে জোরে বাতাস বইছে দেখে ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এসে খাটে শুয়ে দিলো।ফারহানকে উঠে যেতে দেখে প্রাপ্তি বললো কথায় যাচ্ছো?

ফারহান -তুমি আসার সময় দরজাতো দিয়ে আসো নাই।ওটাই দিতে যাচ্ছি।এখন কেউ এসে ডিস্টার্ব করুক এইটা আমি চাইনা।

ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তিকে কখন নাস্তা দিতে পাঠিয়েছো এখনো তো এলোনা।

বড় ভাবী -ফারহান মনে হয় রুমে আছে।হয়তো বসে কথা বলছে।

মেজো ভাবী -তুমি যাই বলো প্রাপ্তি অন্য রকম।ফারহানের প্রতি মনে হচ্ছে তার কোনো দায় নেই।কেমন জানি ওর থেকে দূরে শরে থাকে।

বড় ভাবী -বাদদে ওইসব ওদের ব্যাপার।যদি কিছু হয়ে থাকে নিজেরাই মিটিয়ে নিবে।

ফারহান দরজাটা আটকে এসে প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তিকে এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে প্রাপ্তির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রাপ্তিও বাঁধা দেয়নি। প্রাপ্তিও আজ ফারহানের ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে চায়।

চলবে,,,,,,