Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2395



ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৮

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান চোখ বড় বড় করে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি মাথাটা নিচু করে, সরি।

আসিফ প্রাপ্তির রুমে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের কথাবার্তা শুনে ভালোই লাগছে তার।তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছে। দরজার দিকে রেশীর নজর পড়তেই আরে ভাইয়া আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

আয়ান -ভাইয়া ভিতরে আসুন।

আসিফ -দুজোনের তো আজ কিছুই খাওয়া হয়নি, চলো খাবে।

রেশী আর প্রাপ্তি উঠে গিয়ে নিলামা বেগমের কাছে গেলো।

আসিফ ওদের কে চলে যেতে দেখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো তোমাকে ধন্যবাদ বললে ছোটো করা হবে,শুধু একটা কথায় বলতে চাই তোমার মতো ছেলে আর একটাও হবেনা।আমাদের সমাজের দিকে তাকিয়েই দেখলে খুব ঘৃণা লাগে।কারণ প্রাপ্তির মতো মেয়েদের সমাজের লোক ভালো চোখে দেখেনা।এবং বিয়ের পর তাদের স্বামী ও না। যখন তোমার কথা মনে পড়ে তখন খুব গর্ব হয় তোমার মতো একটা ছেলে আমাদের পরিবারের একজন। প্রাপ্তিকে আগে আমি সবসময় বলতাম তোর জীবনে এমন একজন আসবে যে তোকে সবকিছু ভুলিয়ে দিবে।তোর অতীত কখনো তোকে মনে করতে দিবে না।

আয়ান কথা গুলো এতোক্ষন চুপ করে শুনছিলো।আসিফের বলা শেষ হতেই, ভাইয়া প্রাপ্তিকে আমি যেদিন ফাস্ট দেখেছিলাম সেইদিন থেকেই ভালোবেসেছি তার সবকিছু না জেনেই।এইখানে প্রাপ্তির কোনো দোষ ছিলোনা।এইটা তার ভাগ্যেই লিখা ছিলো।আর কার ভাগ্যে কখন কি লিখা থাকে বলা যায়না।যাইহোক আপনারা প্রাপ্তিকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবেননা। আমি আছিতো।
আসিফ আয়ান কে জড়িয়ে ধরে, ঠিক বলছো,, আচ্ছা খেতে চলো সারাদিন তো না খেয়েই আছো।

খাওয়া শেষ করে সবাই রুমে যাবে এমন সময় আজাদ সাহেব বললেন তোমরা সবাই বসো আমার কিছু জরুরী কথা বলার আছে।সিয়াম বিরক্তির চাপ নিয়ে আব্বু কি বলবেন বলেন।আমার খুব টায়ার্ড লাগছে।

আজাদ সাহেব -বাবা তুমি না শুনতে চাইলে সমস্যা নেই।তোমার বেশী টায়ার্ড লাগলে যেতে পারো।

সিয়াম -আব্বু আমি তেমন ভাবে বলতে চাইনি।আচ্ছা বলুন!

আজাদ সাহেব -আয়ান! তুমি এখন আমার বাড়ীর বড় জামাই তোমার ও দায়ীত্ব আছে আছে তাই বলছি,কথাটা হচ্ছে আসিফের বিয়ের ব্যাপারে।

আয়ান-ভাইয়ার বিয়ে! সত্যি আব্বু আমার খুব ভালো লাগছে শুনে।তোহ্ মেয়ে দেখেছেন?

আজাদ সাহেব -না! ভাবছি দেখবো তোমরা সহ।

আয়ান -আব্বু ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে আপনি যখন বলবেন আমি আপনার পাশে আছি।

আয়ানের কথা শুনে সিয়ামও বললো আব্বু আমি আপনার পাশে আছি।

আসিফ -তোমরা একটু চুপ করবে?আমি এখন বিয়ে করবোনা।

নিলিমা বেগম আসিফের কথা শুনে তুই কি বলছিস? বয়স তো কম হলো না তোর।বুড়ো হলে কোনো মেয়েকে কেউ তোর কাছে বিয়ে দিবে?

প্রাপ্তি -ভাইয়া! তুই একদম কথা বলবি না।বিয়ে তোকে দিচ্ছি।আর যদি তোর পছন্দের কেউ থাকে তাহলে বল? তাকে আমরা সবাই মিলে দেখে আসি কি বলো সবাই।

আয়ান -প্রাপ্তি যা বলবে তাই হবে।বিয়ে হচ্ছে মানে হচ্ছে।আমার ফ্রেন্ডের একটা বোন আছে তোমরা যদি চাও তাহলে ওকে দেখতে পারো।

প্রাপ্তি -দেখবো কখন আপনি তো বললেন কাল চলে যাবেন।নাহলে অরণী আর আমি দেখে আসতে পারতাম।সাথে আপনি আর সিয়াম ভাইয়াও যেতে পারেন।

আয়ান -আমার জন্য তো সমস্যা না অভ্র আছে ও সব সামলে নিবে।কিন্তু রেশীর কলেজ তো খোলা।

আসিফ -আচ্ছা আমি না হয় দিয়ে আসবো।যদি ও যেতে চায়।

রেশী কথাটা শুনেই প্রাপ্তি আর আয়ানের দিকে তাকালো।

প্রাপ্তি মুছকি হেঁসে বললো তাহলে কোনো সমস্যা নেই, কি রেশী তুমি যাবেতো?
রেশী মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো সে যাবে।

অরণী -এইবার আমি কিছু বলি?

নিলিমা বেগম -কি বলবি বল?

ভাইয়ার বিয়েতে সকল গেস্ট দুইদিন আগেই থেকেই আসতে হবে। বিয়ের শপিং আমি আর আপু মিলেই করবো ইচ্ছে মতো।

আয়ান -তাহলে আমার একটা কথা আছে?

আসিফ -কি কথা?

আয়ান -যে যতো শপিং করবে কোনো সমস্যা নাই শপিং এর বিল টা আমি দিবো।

আসিফ -না আয়ান এইটা হয় না।আমি আছি কি করতে আমার বোনেরা শপিং করবে টাকাটা আমিই দিবো।

সাথে আজাদ সাহেবও বললেন না আয়ান এইটা খারাপ দেখা যায়।

আয়ান মন খারাপ করে আপনার তাহলে আমাকে আপনাদের পরিবারের কেউ ভাবতে পারেন নাই।আব্বু আপনারা আমায় এতোটা পর ভাববেন আমি জানতামই না।
আসলে কি বলুন তো আমার ভাগ্যেটাই খারাপ।কথাটা বলেই আয়ান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে গেলো।

প্রাপ্তি -শুনুন আরে শুনুননা! (প্রাপ্তি বার বার ডাকাতেও সাড়া না দিয়ে চলে গেলো।)তোমরা ওকে কষ্ট না দিলেও পারতে।ও যখন চাইছে তখন করুক না।ও হয়তো একটু শান্তি পেতো। কথাটা বলে প্রাপ্তিও উঠে চলে গেলো।
রুমে এসে দেখে আয়ান রুমে নেই। বারান্দা থেকে কান্নার শব্দ শুনে প্রাপ্তি বারান্দা গিয়ে দেখে আয়ান ইজিচেয়ারটায় বসে কান্না করছে।প্রাপ্তিকে দেখে তাড়াতাড়ি করে চোখমুখ মুছে দাঁড়িয়ে,তুমি!,,,,,

প্রাপ্তি কাছে এসে নিজের কোমরে হাত দিয়ে কাল আমি শপিং এ যাবো।আর কতো টাকা আছে আপনার আমি একটু দেখতে চাই।

আয়ান চোখমুখ ভালো করে মুছে, মানে?যেই মেয়ে আমার কাছে মুখ ফু্ঁটে কিছু চায় না আর সে করবে শপিং?

প্রাপ্তি -কেন করবোনা বলেন? আপনার তো অনেক টাকা হয়েছে তাই কাল শপিং করবো।আর হ্যাঁ ভাইয়ার বিয়ের শপিং টা ও আপনি করবেন।

আয়ান -সত্যি! তাহলে ঠিক আছে।জানো আমার খুব ভালো লাগছে কথাটা শুনে।

প্রাপ্তি -(গলার স্বর টা একটু নরম করে)কান্না করছিলেন কেন?আপনার পরিবারে কথা খুব মনে পড়ছে তাইনা?

আয়ান -(আয়ান কথাটা শুনে মন খারাপ করে)কই নাতো।

প্রাপ্তি -আমি জানি! চলেন না আমরা ওই বাড়ীতে গিয়ে মা কে একবার দেখে আসি।কতো দিন হয়েছে মাকে দেখি না।

আয়ান -প্রাপ্তি! এইটা সম্ভব না! আমরা গেলে মা আরো কষ্ট পাবে।আমরা আসার সময় মা আরো কান্নাকাটি করবে।এরছেয়ে ভালো আবিদ চৌধুরীর অহংকার যেইদিন থাকবে না সেইদিন তোমাকে নিয়ে ওই বাড়ীতে যাবো।(কথাটা বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে) জানো প্রাপ্তি সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি কিন্তু তোমাকে ছাড়তে পারবোনা।

প্রাপ্তি -আপনার আব্বুর ও হয়তো আপনার জন্য মন কাঁদে। হয়তো তিনি প্রকাশ করতে পারেন না।গম্ভীর মানুষ তো তাই হয়তো নিজেকে ছোটো করতে রাজী না।যারা উপরে কঠোর তবে ওদের নাকি মন ভালো হয়।

আয়ান -প্রাপ্তি! ওনি আমার বাবা, আমার থেকে বেশী তুমি ওনাকে ছিনোনা।প্রাপ্তি মনে আছে তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা।আয়ান ফিরে গিয়েছিলো সেইদিন গুলোতে।সেই দিন অরণীকে দেখতে আসার কথা ছিলো। সকাল থেকেই আয়ানদের বাড়ীতে অনেক হৈ চৈ হচ্ছিলো।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছিলো আয়ানের।সুমি (আয়ানের বড় ভাবী) আয়ানের রুমে এসে কি আয়ান সাহেব আজও লেট? বাবা নিচে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে?

আয়ান -কেন? মাই সুইট হার্ট?

সুমি -ফাজলামো রাখো। তোমার না আজ মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা?এই নিয়ে ১৩ টা মেয়ে দেখছো। তোমার কি কোনো মেয়েই পছন্দ হবেনা? আচ্ছা বলোতো তুমি কি রকম মেয়ে চাও একটু বলবে আমায়? বাবা কে বলবো বাবা! আয়ানের জন্য এইরকম মেয়েই খুঁজেন।তুমি যেই রকম বলবে।

আয়ান -ওহ্ মাই গড আমিতো ভুলেই গেছিলাম আজ আব্বুর সাথে মেয়ে দেখতে যাবার কথা।আবিদ চৌধুরী আজ আমায় গিলে খাবে । তুমিও তো রেডি হয়ে আছো দেখছি।ভাবী আমি ৫ মিনিটেই রেডি হয়ে আসছি।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৭

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকালের মিষ্টি রোদের আভা জানালার ফাঁক দিয়ে চোখে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো প্রাপ্তির।আড়মোড় ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠেই বারান্দায় গেলো।বাড়ীরর এক কোনায় ফুলের বাগানের দিকে চোখ পড়তেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তি।অবাক হবে নাবাই কেনো? এক বছর আগে প্রাপ্তি অনেক গুলো গোলাপের গাছ এনে লাগিয়ে ছিলো ওই বাগান টায়।কখনো ভালো করে ফুল ফুটেনি কিন্তু আজ সব গাছে ফুল ফুটেছে।কি ভালো লাগছে প্রাপ্তির কাউকে বলে বুজাতে পারবেনা।ফ্রেশ হয়ে আসি,তারপর ওদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো আজ।
প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! আমার মিষ্টি বোনটা কোথায় গেলো।এখনো ঘুম থেকে উঠেনি নাকি? আসিফ ডাকতে ডাকতে প্রাপ্তির রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি রুমে নেই।
আসিফের ডাক শুনে প্রাপ্তি বারান্দা থেকে দৌঁড়ে রুমে গেলো,ভাইয়া ডেকেছিস?

আসিফ -তুই বারান্দায়? মনে হচ্ছে আজ আমার মিষ্টি বোনটি অনেক খুশী।

প্রাপ্তি – (এক্সাইটেড হয়ে)ভাইয়া জানিস আজ বাগানে সব গুলো ফুল ফুটেছে কি ভালো লাগছে তোকে বলে বুজাতে পারবো না।

আসিফ অনেক দিন পর প্রাপ্তিকে এইভাবে দেখে মুখে হাঁসি নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই কথা বলেই যাচ্ছে।আসিফ মাথায় হাত রাখতেই, ওহ্ তুই আমায় কেন ডাকছিলি বললিনা তো? আমি তো বকবক করেই যাচ্ছি।

আসিফ -থামলি কেন? ভালোই লাগছে শুনতে।কতো দিন পর সেই আগের প্রাপ্তিকে একটু খানিকের জন্য ফেরে ফেলাম।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি আসিফের হাতটা মাথা থেকে সরিয়ে কি জন্য এসেছিস সেটা বল?

আসিফ ভালো করেই জানে প্রাপ্তি এই কথা থেকে নিজেকে সরাতে চাইছে,হুম আমি অফিসে যাচ্ছি তোর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞাস করতে এলাম।তুই তো কাউকে কিছু বলিসনা তাই আরকি।

প্রাপ্তি -না আমার কিছু লাগবেনা।

আসিফ -তাহলে চল নাস্তা করেনি।

প্রাপ্তি -ভাইয়া, তুই যা আমি আসছি।

কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো প্রাপ্তি।পিছনে ফিরে অবাক হয়ে আপনি কখন এলেন?
আর বৃষ্টিতে কেন ভিজছেন ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।

আয়ান -এতো কষ্ট কেন দিচ্ছো নিজেকে?এই বৃষ্টির মধ্যে কান্না করলে কেউ বুজবেনা তাই তো?আমি অফিসে যাওয়ার পর কেউ তোমাকে কিছু বলেছে? আমি এইজন্য এইখানে আসতে চাইনা।তোমাকে আর কতো বুজাবো লোকের কথায় কোনো কান দিবানা।
এতোক্ষণ টানা বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে, আয়ানের দিকে ঠিক ভাবে তাকাতে পারচ্ছেনা প্রাপ্তি।চোখ গুলো নিভো নিভো হয়ে আসছে,প্রাপ্তি মুখে বাজিয়ে বাজিয়ে বলতে লাগলো জানেন আমার ভাইয়া ঠিক বলেছিলো এমন একজন আমার জীবনে আসবে যে আমার সবকিছু ভুলিয়ে দিবে।পৃথিবীর মানুষ গুলো আমায় বার বার মনে করিয়ে দেয় আমি ধর্ষিতা।শুধু একমাত্র আপনি বলেন আমিই আপনার সব আমি যে ধর্ষিতা আপনি মনেই করতে দেন না।কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতেই আয়ান ধরে ফেললো।আয়ান কোলে করে প্রাপ্তিকে নিচে নামিয়ে এনে প্রাপ্তির রুমে নিয়ে রেশী কে ডাক দিলো।
আয়ান -রেশী তোর ভাবীর শাড়ীটা পাল্টে দে।আমি এইগুলো চেইঞ্জ করে আসছি।আয়ানের কথা শুনে অরণীর খটকা লাগলো,বিয়ের দুই বছর হয়ে গেলো। নিজের বউয়ের শাড়ী চেইঞ্জ করতে কিসের এতো লজ্জা।আমাকে তো জানতেই হবে।
অরণী আসিফকে ফোন দিয়ে আসতে বলো। নিলিমা বেগম আর রেশী প্রাপ্তির হাতে পায়ে মালিশ করছে।আয়ান তার ডাক্তার আংকেল কে ফোন দিয়ে প্রাপ্তির কথা জানালো।তিনি আশ্বাস দিলেন এসে দেখে যাবেন। আসিফ অফিস থেকে এসেই প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তির অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
আসিফ -ওর এই অবস্থা হলো কিভাবে? তোমরা কোথায় ছিলা সবাই?

অরণী -আসলে ভাইয়া আমি সকালে,,,,,, কথাটা বলার আগেই নিলিমা বেগম থামিয়ে
আসলে সকালে আয়ান যাওয়ার পর থেকেই এই রকম হয়েছে।

আয়ান -আম্মু আপনি সত্যি কথা বলছেন না।আমি যাওয়ার পর প্রাপ্তিকে কেউ কিছু বলেছে।রেশী তুই কোথায় ছিলি?

রেশী -ভাইয়া আমি এসে দেখি ভাবী রান্নাঘরের সামনে আন্টির কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।তারপর কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো।ভাবী রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো।তারপর কি হলো আমি জানি না ভাবী দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলো।আমি ভাবীর পিছনেই যাচ্ছিলাম অরণী আপু বললেন ভাবী নাকি এখন একাই থাকবে।আমি গেলে রাগ করবে।

আসিফ বুজতে পেরেছে প্রাপ্তিকে কেউ কিছু বলেছে।আয়ান! তুমি কখন এলে?

আয়ান -রেশী আমায় ফোন দিয়েছিলো।আমি তখনি বুজতে পেরেছি প্রাপ্তির কিছু একটা হয়েছে।আম্মু প্লিজ বলেননা কি হয়েছে।

আসিফ -আয়ান যা হবার হয়ে গেছে। আমি ডাক্তার কে ফোন দিচ্ছি, চিন্তা করোনা।

আয়ান -ভাইয়া আমি ফোন দিয়েছি।

সবাই বসে অপেক্ষা করছে প্রাপ্তির কখন জ্ঞান ফিরবে।ডাক্তার ও এসে দেখে গেছে।জ্ঞান ফিরতে একটু দেরী হবেই।

সন্ধ্যায় প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরে দেখে সবাই বসে আছে।আয়ানের চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে অনেক কান্না করেছে।আসিফ প্রাপ্তিকে উঠিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়েছে।কিরে,,,,,,কেমন লাগছে এখন তোর?

প্রাপ্তি -ভালো,,,,,,,,

আসিফ -তুই কি আমাদের কোনো কথা শুনবি না?আমাদের কথা না হয় বাদ দিলাম ওই ছেলেটার দিকে তাকা।তোর এই অবস্থার পর থেকে এখনো এক গ্লাস পানিও খায়নি।

(প্রাপ্তি আয়ানের দিকে আড় চোখে বার বার দেখছে।)

এই ছেলেটা মুখের দিকে তাকিয়েও তো সব ভুলে যেতে পারিস।

প্রাপ্তি চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। গলাটা এতোটাই ভারী হয়ে আছে যে কথা বলতেও পারছেনা।

আয়ান প্রাপ্তির চোখের পানি দেখে ভাইয়া প্লিজ ওকে কিছু বলবেননা। ওর এইসব ব্যবহার আমার সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে।
নিলিমা বেগম -মানুষের জীবনে কতো কিছুই ঘটে কই তারা তো এইরকম করে না।তুই করছিস কেন?

অরণী -আপু তুই সবসময় বাড়াবাড়ি করছিস।কতো মেয়ে নিজের ইচ্ছায় ছেলেদের সাথে মিলামিশা করে আর তুই! তুই তো নিজের ইচ্ছায় যাসনি।প্লিজ আপু তুই স্বাভাবিক ভাবেই থাকতে পারিস না?

প্রাপ্তি চিৎকার দিয়ে না আমি পারিনা।তোমরা প্লিজ যাও এখান থেকে আমাকে একা থাকতে দাও।

আসিফ -আয়ান তুমি থাকো আমরা সবাই যাচ্ছি।
সবাই চলে গেলো,

আয়ান ও প্রাপ্তির পাশে এসে বসলো।প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা হাত টেনে নিজের কাছে নিলো।সবাইকে এইরকম ভাবে না বললেও পারতে।

প্রাপ্তি -না বললে ওরা কেউ এখান থেকে যেতো না।আর ওদের এইসব জ্ঞান মূলক কথা আমার ভালো লাগছিলো না।আপনি থেকে গেলেন কেন?

আয়ান -কেন থেকেছি জানো আমার পাগলি সবাইকে যেতে বললেও মনে মনে ঠিকি ছেয়েছে আমি যেনো থেকে যাই।আমি কি ঠিক বলছি?

প্রাপ্তি -না আপনি ঠিক বলেননি। আপনি খাননি কেন?

আয়ান -আমার পাগলি না খেলে আমি কি খেতে পারি? তুমিও তো কিছু খাওনি।

রেশী! রেশী! একটু এইদিকে আয়?

রেশী রুমে এসে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, জ্বী ভাইয়া কিছু লাগবে?

আসিফ -কাল তো তোর কলেজ নাই তাই না?
রেশী -না ভাইয়া।পরশু দিন থেকে কলেজ খোলা।

আসিফ -ঠিক আছে আমরা কাল এইখান থেকে চলে যাবো।তুই এককাজ কর তোর ভাবীরর জন্য খাবার নিয়ে আয়।

প্রাপ্তি -রেশী তুই এইখানে বস।আমি ড্রইংরুমে গিয়ে সবাই একসাথেই খাবো।তোর কষ্ট করতে হবে না।

রেশী বসতে বসতে বললো জানো ভাবী আজ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভাইয়া পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। ভাইয়া যখন অফিস থেকে আসলো তুমি যদি দেখতে ভাইয়ার কি অবস্থা হয়েছিলো। ভাবী তুমি আর ভাইয়া যদি না থাকতে এই রেশী কোথায় হারিয়ে যেতো।তোমারা এনে আমাকে নতুন জীবন দিলে।কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিলে।সেই দিন ভাইয়া যদি আমাকে রাতের অন্ধকারে না বাঁচাতো আমাকে তো ওরা মেরেই ফেলতো।

প্রাপ্তি -পাগলি মেয়ে এখন এইসব মনে করার সময়।তোর ভাইয়া উদার মনের মানুষ তাই আমাকে রাখতে গিয়ে নিজেই ঘর ছাড়া।

প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান চোখ বড় বড় করে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি মাথাটা নিচু করে, সরি।

চলবে,,,,,

ধষিতা_বউ পার্ট: ৬

0

ধষিতা_বউ

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

দীর্ঘ এক বছর পর প্রাপ্তিদের বাড়ীতে আনন্দের ঝলক। অনেক ঝড়ঝাপটা দিয়েই কাটিয়েছে দিন গুলো।প্রাপ্তিদের বাড়ীটা সুন্দর করে সাজিয়েছে আসিফ।সব কাজ গুলো নিজের হাতেই করছে আসিফ।কারণ আজ তার আদরের বোন প্রাপ্তিকে দেখতে আসছে।কিন্তু প্রাপ্তির মন ভালো নেই।তারা কি তার ব্যাপারে সব জেনেই তাকে দেখতে আসছে? এই ব্যাপারে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে। কথা বলবোই বা কিভাবে সকাল থেকে একটা বারের জন্য ভাইয়ার দেখা পেলাম না।কাজ নিয়ে পড়ে আছে।মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে।আসিফ অরণীর রুমে গিয়ে, এই অরণী প্রাপ্তিকে একটু সাজিয়ে দিস তোর হাতে।ও তো সাজগোছ করতে একদম পছন্দ করেনা।

অরণী -ভাইয়া তুই চিন্তা করিস না আমি আছি না।তুই অন্য দিক সামলিয়ে নে।
প্রাপ্তির মা এসে বললো, আসিফ এইদিকের আয়োজনটা কেমন চলছে?

আসিফ -আম্মু আমি সব সামলিয়ে নিয়েছি।তোমরা চিন্তা করোনা।

নিলিমা বেগম -আসিফ! প্রাপ্তি তো সকাল থেকে রুমেই বসে আছে তুই ছাড়া তো কারো সাথে কথা ও বলে না।একটু গিয়ে দেখনা।

আসিফ -হেঁ ঠিকি বলেছো দেখি কি করে।
আসিফ প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে গান ছেড়ে দিয়ে খাটের এক কোণায় চোখ বন্ধ করে মাথার উপর হাত রেখে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।আসিফ একটা চেয়ার টেনে সামনে বসলো। গালের মধ্যে হাত রেখে,আমার বোনের কি মন খারাপ আজকের দিনে?

প্রাপ্তি চমকে উঠে ভাইয়া তুই? কখন এলি?

আসিফ -এখনি। এইভাবে মনমরা হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি -ভাইয়া! ছেলেরা কি সব জেনেই আসছে নাকি না জেনে?
আসিফ কথা কাটানোর জন্য তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে একটু পর ওনারা এসে যাবে।

প্রাপ্তি -ভাইয়া এইটা আমার আনসার নয়।
আমি চাইনা আমার কোনো বিষয় গোপন থাকুক।ওনারা যদি সব জেনে এগুতে চান তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

আসিফ -এই নিয়ে তুই চিন্তা করিসনা,আমি আছিতো।কথাটা বলেই আসিফ উঠে গেলো।
অরণী প্রাপ্তির রুমে এসেছে প্রাপ্তিকে রেডি করাবে বলে।অরণী কে দেখে প্রাপ্তি মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আমাকে তোর সাজাতে হবেনা।আমি নিজেই হালকা সেজে নিচ্ছি।

অরণী -ওকে আপু।আমি তাহলে আসি।ছেলেরা নাকি এসে গেছে আমি দেখে আসি।
নিলিমা বেগম অরণীকে ডেকে তুই এখন ওদের সামনে যাওয়ার দরকার নেই।প্রাপ্তিকে নিয়েই একসাথে যাস।

অরণী -ঠিক আছে আম্মু।(নাস্তার প্লেট হাতে নিতে নিতে)আচ্ছা আম্মু আপুকে যে দেখতে আসছে ওই ছেলের নাম কি? কি করে?

নিলিমা বেগম -ওমাঃ তুই জানিসনা?
ছেলের নাম সিয়াম,বিজনেস করে।
কথাটা শুনেই অরণীর হাত থেকে প্লেট গুলো পড়ে গেলো।

নিলিমা বেগম -তুই এইটা কি করলি আজকের এই শুভ দিনে ভাঙাভাঙি শুরো করলি।
নিলিমা বেগমের মুখে সিয়ামের নামটা শুনে অরণী অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো সিয়াম পারলো আমাকে এইভাবে ঠকাতে? আমরা দুজন দুজনকে এতো ভালোভাসি আর সে কিনা,,,,,,,, এইটা কিভাবে পারলো সিয়াম।ঠিক আছে ও যখন ভেবে নিয়েছে আপুকে বিয়ে করবে তাহলে আমি এর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।আমার আপু অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি আর ওকে কোনো কষ্ট পেতে দিবোনা।সিয়ামকে নিয়ে আপু যেন সুখে থাকে তার ব্যবস্থাই করবো। আসিফ এসে আম্মু তোমাদের হলো ওদেরকে নাস্তা দিতে হবেতো।

অরণী আস্তে করে আসিফকে জিজ্ঞাস করলো,ভাইয়া ছেলে আসছে?

আসিফ -নারে,,,,,ছেলের মা,বাবা,চাচা,আর বোন আসছে,ছেলে নাকি বিজনেসের কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি।যাইহোক তুই প্রাপ্তিকে নিয়ে আয়।আমি এইদিকটা দেখছি।

প্রাপ্তির ইচ্ছে করছিলোনা ছেলে পক্ষের সামনে যেতে কিন্তু কি করবে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে যেতে হবে।অরণী প্রাপ্তিকে এনে তাদের সামনে বসালো। সিয়ামের মা উঠে এসে প্রাপ্তি সাথেই বসলো।অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে,কি নাম তোমার?

প্রাপ্তি -জ্বী,,, মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।

সিয়ামের মা -মানুষ টা যেমন সুন্দরী নামটাও রেখেছে সেই রকম।

সিয়ামের মা -আমার আর কিছু জিজ্ঞাস করার নেই তোমাদের আছে?

সিয়ামের বাবা- না আমাদেরও নেই।প্রাপ্তির বাবার দিকে তাকিয়ে,আজাদ সাহেব! মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।

আজাদ সাহেব -আলহামদুলিল্লাহ্‌। অরণী প্রাপ্তিকে নিয়ে যাও।

সিয়ামের বাবা -আজ তো আমার ছেলে আসতে পারিনি।আগে আপনারা সিয়ামকে দেখুন। দেখে পছন্দ হলে না হয় দিন তারিখ ফেলা যাবে।

আজাদ সাহেব -আমাদের কিন্তু দুটো বিয়ে একসাথেই হবে।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আসিফের মনে প্রশ্ন জাগলেও সবার সামনে করা ঠিক হবেনা ভেবেই আর কিছু বলেনি।

সিয়ামের বাবা -এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।তো বেয়াই সাহেব আজ তাহলে উঠি।মেয়ে কিন্তু আমার ঘরের লক্ষ্মী হয়েই থাকবে।

ছেলের বাড়ীর সবাইকে বিদায় দিয়েই আসিফ আজাদ সাহেব কে বললো,আব্বু! দুটো বিয়ে মানে? কার কার বিয়ে?

আজাদ সাহেব মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে আসিফের কাঁধে হাত রেখে, অরণীর বিয়ে।
ভাবছি দুই বোনের বিয়ে একসাথেই দিবো।

আসিফ -অরণীর জন্য ছেলে দেখেছো নাকি?
আজাদ সাহেব-আচ্ছা পরে বলবো।এখন আমার কাজ আছে।
আসিফ -আব্বু তোমার যা ভালো মনে হয়।

প্রাপ্তি বারান্দায় বসে বই পড়ছে।পাশে অরণী গিয়ে দাঁড়িয়ে আপু জানিস আজকে তোকে পরীর মতো লাগছে।

প্রাপ্তি বইয়ের দিকে তাকিয়েই ওইটা তোর মনের ধারনা।

অরণী -আচ্ছা আপু তুই এই বিয়েতে খুশী?

প্রাপ্তি -সবাই খুশী মানে আমিও খুশী। আমি সবার মতের বাহিরে নয়।
আচ্ছা তুই,,,,, এইসব কেন বলছিস।তোর ভালো লাগেনি?

অরণী নিজের চোখে পানি লুকাতে চেষ্টা করছে আর বলছে, আরে নাহ্ আমি অনেক খুশী তবে তোকে অনেক মিস করবো।

প্রাপ্তি -আমি কি বরাবরের জন্য যাচ্ছি নাকি?

অরণী -তুই দেখিস সিয়াম তোকে এতো ভালোবাসবে তোকে আসতেই দিবেনা।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি বইয়ের থেকে মুখ উঠিয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে, তুই এমন ভাবে বলছি মনে হচ্ছে তোর আগে থেকেই ওই ছেলেকে চেনা।

অরণী -না আপু এমনিই বললাম।

প্রাপ্তি -আব্বু কি বলেছে শুনেছিস?তোকে নাকি কাল দেখতে আসবে।

অরণী -হুম শুনেছি।ভাইয়াকে বলবো আব্বুকে বুজিয়ে এই বিয়ে বাদ দিতে।

প্রাপ্তি -কেন? তোর কি পছন্দের কোনো ছেলে আছে নাকি?

অরণী -আরে নাহ্ এমনি বললাম।আসলে আমার এখন বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই।কথাটা বলেই অরণী চলে গেলো।
প্রাপ্তির কাছে অরণী কথা গুলো একটুও ভালো লাগেনি। মনে হচ্ছে কথার মধ্যে কিছু একটা লুকাচ্ছে।প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বইয়ের দিকে মন দিলো। আজাদ সাহেব মাগরিবের নামাজ পড়ে বাহিরে থেকে এসে নিলিমা বেগম কে চা দিতে বললেন।আসিফ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

আজাদ সাহেব -হ্যাঁ কি বলবি বল?

আসিফ তার মাকে ডেকে বললো তাকেও চা দিতে,আচ্ছা আব্বু অরণীর হঠাৎ করে বিয়ে দিতে চাইছো? ছেলেটা কি তোমার জানা শুনা কেউ?
আজাদ সাহেব -আরে নাহ্ তেমন চিনিনা।আমার এক কলিং এর ভাগ্নে। শুনেছি প্রখ্যাত ব্যবসায়ী আবিদ চৌধুরীর ছোটো ছেলে ইকবাল মাহমুদ আয়ান। যদি অরণীকে দেখে ভালো লাগে তাহলে নাকি একসাথে আংটি পরিয়ে যাবে।

আসিফ -তাহলে তো ভালো কথা।
নিলিমা বেগম রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললেন এতো বড় ঘরের ছেলে আমাদের মেয়েকে কি পছন্দ হবে?

আসিফ -আম্মু এখনকার ছেলেরা টাকাপয়সা দেখে বিয়ে করেনা।মেয়ে সুন্দরী দেখে বিয়ে করে।
নিলিমা বেগম মুচকি হাঁসি দিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে তুমি কিছু বুজেছো? তোমার ছেলে বোন কে দিয়ে আগেই বুজিয়ে দিচ্ছে ঘরে কেমন মেয়ে আনতে হবে।
আজাদ সাহেব -হুম ভাবছি মেয়ে দুটোকে পরের ঘরে দিয়ে নতুন আরেক টা মেয়ে নিয়ে আসবো।কি বলো আসিফের আম্মু?

নিলিমা বেগম -কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো না বলে হেঁসে দিলেন।

আসিফ লজ্জা পেয়ে আম্মু তুমিও না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম পিছন থেকে ডেকে বললো মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

প্রাপ্তিদের বাড়ীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিলিমা বেগম খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছে।এক নাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছে।আসিফ আর আজাদ সাহেব থানায় ডায়রি করেছে।অরণী তার মায়ের পাশে বসে আছে।নিজের বোনের এই অবস্থার জন্য কি ও নিজেই দায়ী? ভাইয়াকে কি সব বলবো? আচ্ছা ভাইয়া কি জানে সায়মন ছাড়া পেয়েছ?

আসিফ ড্রইরুমে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।অরণী মাথা নিচু করে আসিফের সামনে এসে দাড়িয়েছে দেখে আসিফ কান থেকে ফোন নামিয়ে, কিরে কিছু বলবি?

অরণী আমতা আমতা করে বললো,ভাইয়া সায়মন আপুকে নিয়ে যায়নিতো?

আসিফ অরণীরর কথা শুনে অবাক হয়ে সায়মন তো জেলে আছে।

অরণী -সায়মন কে তার বাবা ছেড়ে নিয়ে এসেছে।ও হয়তো আমাদের পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতেই হয়তো আপুকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

আজাদ সাহেব এসে অরণী কে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন তুই এতো কিছু জেনেও চুপ করে ছিলি।তুই কি করে তোর বোন কে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে চুপ করে ছিলি।আমার মেয়েটা এখন কি অবস্থায় আছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।কথা গুলো বলতে বলতে আজাদ সাহেব কান্না ভেঙে পড়লেন।(আসিফের দিকে তাকিয়ে)আসিফ আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেলো। এখন কি হবে? প্রাপ্তিকে কোথায় খুঁজবো?

আসিফ -আব্বু তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।
অরণী তুই আম্মুর দেখে খেয়াল রাখিস আমি আরেক বার থানা থেকে আসছি।কথা বলেই আসিফ বেরিয়ে পড়ল।
কাটতে থাকে দিন।বাহিরের মানুষের আনাগোনায় কেটে যায় প্রাপ্তিদের বাড়ী। নিলিমা বেগম জ্ঞান হারায় আবার ঠিক হয়।এইভাবেই কেটে যায় তিনদিন। এইতিন দিনও মেয়েটার খুঁজ মিলেনি। বিকেল বেলা
ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে আসিফ।প্রাপ্তি হারিয়ে যাওয়ার পর তাদের চাচা,চাচী মামা,মামী সবাই এই বাড়ীতেই আছে।আসিফের ফোন বেজে উঠতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোনাম্বার থেকে কল আসছে।

আসিফের মামা ফোন বাজতেছে দেখে, কি রে আসিফ ফোন রিসিভ করছিস না কেন? ফোনের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?

আসিফ -আসলে মামা, নাম্বারটা ছিনিনা।

মামা- রিসিভ করে দেখ প্রাপ্তির কোনো যদি খবর পাওয়া যায়।

আসিফ ফোন রিসিভ করতেই একজন মহিলা, আসসালামু আলাইকুম

আসিফ -ওয়ালাইকুম সালাম,

মহিলা -নাম্বারটা কি আপনার?

আসিফ -জ্বী আমার আপনি কে বলছেন?

মহিলা -আপনি আমাকে ছিনবেন না।আমি একজন টিচার, আজ সকালে ভোর ৫.০০ টায় একটা মেয়েকে আমার বাড়ীর সামনে একটা গাড়ী এসে ফেলে দিয়ে গেছে।মেয়েটার অবস্থা খুবি খারাপ।মেয়েটা জ্ঞান হারাবার আগেই আমাকে এই নাম্বারটা দিয়েছিলো।

আসিফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হয়ে আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলুন।আপনি যাকে পেয়েছেন ও আমার বোন কোথায় আছে ও। আমি এখনি আসছি।

মহিলা -জ্বী আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি।আমি আপনাকে এসএমএস এ ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনারা আসুন।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই পগলের মতো হয়ে গেছে নিলিমা বেগম দৌঁড়ে এসে, আসিফ! প্রাপ্তি কোথায় আছে আমিও যাবো তোদের সাথে।

আসিফ -আচ্ছা চলো।আব্বু,মামা তাড়াতাড়ি চলো।

ওই মহিলা আসিফকে ঠিকানা দেওয়াতে সবাই হাসপাতালে চলে আসছে।

আসিফ মহিলার সামনে গিয়ে আপনি আমাদের ফোন দিয়েছিলেন?

মহিলা -জ্বী। ও কেবিনেই আছে।সকাল থেকে এখনো জ্ঞান ফিরেনি ডাক্তার আবার দেখছে আপনারা বসুন।
নিলিমা,অরণী বসে কান্নাকাটি করছে,মেয়েটাকে এতো কাছে পেয়েও দেখতে পারছিনা।আমার মেয়েটার সাথে না জানি কি কি ঘটেছে আল্লাহ্‌ ভালো জানে।

ডাক্তার প্রাপ্তির কেবিন থেকে বের হতেই আসিফ আর আজাদ সাহেব দৌঁড়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করেতে লাগলো,

আসিফ-ডাক্তার আমি ওর ভাই,ওর কি হয়েছে?

ডাক্তার -দেখুন আমরা পুলিশকে খবর দিয়েছি ওনারা আসছে।আর আমারা মেয়েটাকে দেখে যা বুজেছি মেয়েটাকে Rape করা হয়েছে।ওর জ্ঞান এখনো ফিরেনি আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবে।আপনার অপেক্ষা করুন।

কথা গুলো যখন ডাক্তার বলছিলো মনে হচ্ছে সবাই একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো।
প্রাপ্তির বাবা নিস্তব্ধ হয়ে পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো।মনে হচ্ছে কলিজাটা ছিড়ে কেউ নিয়ে গেছে।আসিফ দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অরণীর দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।আসিফের মামা আসিফের কাঁধে হাত দিয়ে বললো আসিফ তুই যদি এইভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে এই মানুষ গুলোকে কে দেখবে।কথাটা বলতেই আসিফ তার মামাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো,মামা আমি কখনো নিজের কথা ভাবিনি শুধু এই বোনদের জন্য,নিজের সপ্ন গুলকে মাটি ছাপা দিয়ে নিজের বোনদের সপ্ন গুলোকে দেখতে শিখেছি।মামা! মামা! আপনিই বলেন আমার বোনের এখন কি হবে?আমার বোন তো কারো ক্ষতি করে নাই তাহলে ওর কেন এই অবস্থা হলো।

মামা -আসিফ তুই এইভাবে ভেঙে পড়িস না।তোকে শক্ত থাকতে হবে।প্রাপ্তির সামনে গিয়ে এইভাবে কান্নাকাটি করলে মেয়েটা কি করবে বল?
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো আপনাদের রুগীর জ্ঞান ফিরেছে।তবে সাবধান ওকে বেশি কথা বলাবেন না।কান্নাকাটি করবেননা একটু পর পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করবে।সবাই প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকলো।নিলিমা বেগম আর অরণী দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।প্রাপ্তি কিছু বলছেনা চুপচাপ হাত পা গুলোকে গুটিয়ে বসে আছে।কারো দিকে তাকাচ্ছে না।নিছের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখের পানি গুলো অঝরে ঝরছে ।
নিলিমা বেগম -মা রে,,,, তুই কথা বল! তুই এইভাবে চুপ করে থাকিস না।প্রাপ্তি কথা বলছে না দেখে আসিফ অরণীকে সরিয়ে দিয়ে নিজে প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তি আসিফ কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করলো।

আসিফ -প্রাপ্তি! তুই এইভাবে কাঁদিস না।ভাইয়া সব ঠিক করে ফেলবো।প্রাপ্তি তোর কিচ্ছু হয়নি।মনের ভেতর খারাপ কোনো চিন্তা আনবিনা।দেখ আমরা সবাই তোর পাশে আছি।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
প্রাপ্তি কারো সাথে কথা বলেনা।সারাক্ষণ শুধু কাঁদতেই থাকে।এক দুইটা বললেও তাও আসিফের সাথে।দুইদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে নিয়ে এসেছে প্রাপ্তিকে।প্রাপ্তিকে সময় দেওয়ার জন্য আসিফ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।বাসায় এসে নিজের রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের ভাবনার জগত টাকে ভাবছে।একনিমিষেই মানুষের জীবনটা কিভাবে পাল্টে যেতে পারে।এইতো কয়দিন আগেও তাদের ঘরটায় কতো হৈ চৈ ছিলো। কতো হাঁসি খুশি ছিলো আর আজ ইচ্ছে করছে নিজের জীবন টাই শেষ করে ফেলি।
পিছন থেকে আসিফ এসে বললো আরে তুই এইখানে? আমি ভাবলাম ড্রইংরুমে সবাই মিলে আড্ডা দিবো তা না তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস।আসিফের কথা শুনে চোখের পানি গুলোকে আড়াল করে ভাইয়া তুই যা আমার ইচ্ছে করছে না।

আসিফ -সব কিছু থেকে নিজেকে সরাতে ছাইছিস?প্রাপ্তি! মানুষে জীবনে কতো কিছুইতো ঘটে সবকিছু মনে রাখতে নেই।দেখবি একদিন তোর জীবনে এমন কেউ আসবে তোর পিছনে ফেলা দিন গুলো মনে করতেই দিবেনা।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি আসিফকে জড়িয়ে ধরে এমন কেউ আর আসবেনারে ভাইয়া। কেউ তোর বোন কে বিয়ে করবে না।ধর্ষিতা মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না।

আসিফ প্রাপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, পুলিশের সামনে সেদিন মিথ্যা বললি কেন যে তুই কাউকেই ছিনিস নাই?
আমি জানি ওই ছেলেটা সায়মন ছিলো।তুই না বললেও আমি জানি।

প্রাপ্তি -আমার জীবনটা তো শেষ হয়ে গেছে।সমাজের লোক গুলো আমার জন্য তোমাদের কথা শুনায়।কেউ এখন আর আমায় ভালো চোখে দেখেনা।আমি চাই না অরণীর জীবন ও সেই রকম হোক। সায়মন বলেছিলো আমি যদি কিছু বলি অরণী অবস্থাও নাকি আমার মতো হবে।জানিস ভাইয়া সেইদিন আমি তোকে অনেক বার ডেকেছিলাম কিন্তু তুই শুনিসনি।অবশ্য এতে তোর কোনো দোষ নেই। জানিস একেকটা দিন আমি যে কিভাবে কাঁটিয়েছি তা শুধু আমি জানি।
প্রাপ্তির কথা গুলো শুনে আসিফের বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।ইচ্ছে করছে সায়মন নামের কীট টাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে।সায়মন কে আমি কখনোই ছাড়বো না।আজ প্রাপ্তিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই।প্রাপ্তি! জীবনে কখনো নিজেকে ছোটো করে দেখবিনা।তুই কয়েকটা দিন সময়নে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ান- প্রাপ্তি এই বুকে যে মাথা রাখলে কিছু শুনতে পাচ্ছো?

প্রাপ্তি- হুম,, তোমার,,,,,,, ধ্যাত, লজ্জা পেয়ে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। প্রাপ্তি আজ আয়ানের কাছাকাছি এই প্রথম গিয়েছে।এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে তার মনে।বার বার লুকিয়ে লুকিয়ে এসে আয়ান কে দেখছে।আয়ান সেই জায়গা এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য সে সপ্ন দেখছিলো।প্রাপ্তি তার সপ্নে এসে তার কাছে ধরা দিয়েছে।মেয়েটার মধ্যে এক মায়া ভরা নেশা কাজ করে।যেই নেশা আমি ছাড়তে চাই না।আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসলো।

আজাদ সাহেব -কি হয়েছে আয়ান এইভাবে নিস্তব্ধ হয়ে আছো কেন? কিছু হয়েছে?

আয়ান -চমকে উঠে,, কই না তো কিছু হয়নি।আসলে আমি কাল সকালে চলে যাবো।প্রাপ্তি আর রেশী দুইদিন থাকবে বলছে।তাই নিয়ে ভাবছি।
আজাদ সাহেব -কিছু না হলেই ভালো।তবে তুমি বাসায় একা থাকবে নাকি? তুমি এই দুই দিন এখান থেকে অফিসে গেলেই তো পারো।
আয়ান -আব্বু,এখান থেকে আসা যাওয়াটা আমার জন্য লং জার্নি। সমস্যা নেই দুই দিনেরি তো ব্যাপার। কথাটা বলে আয়ান নিজেই ভাবছে প্রাপ্তি ছাড়া থাকতে পারবো আমি? কিন্তু কি করবো বিয়ে পর পাগলী টা এই ফাস্ট আমার কাছে কিছু ছেয়েছে এই বাড়ীতে সেই দুইটা দিন থাকতে চায়।আমার সময় হয়ে উঠে না তাই ওর এই বাড়ীতে আসা হয়না।

পরের দিন সকাল বেলা আয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রাপ্তি কোর্টটা এগিয়ে দিতে দিতে সত্যিই কি আপনি এই দুইদিন আসবেননা?

আয়ান -(কোর্ট পরতে পরতে)না আসলে কি তোমার মন খারাপ হবে?

প্রাপ্তি- (মন খারাপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে)জানিনা!

আয়ান -মন কে জিজ্ঞাস করে ফোন দিও।ভেবে দেখবো।

প্রাপ্তি -আপনি বাসায় একা একা থাকবেন?

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে ফিরে মুছকি হেঁসে)বিশ্বাস নেই আমার প্রতি?

প্রাপ্তি -ওমা,,,,, ছিঃ ছিঃ কি বলেন? আমি বলতে চাইছি একা একা আপনার খারাপ লাগবে না?

আয়ান -(গলাটা নরম করে)তোমার গালে হাত দিই?

প্রাপ্তি মাথাটা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ান দুই হাত দিয়ে গাল দুটো ধরে, আই লাভ ইউ।তোমাকে অনেক মিস করবো।
প্রাপ্তি আয়ানের হাত দুটো গাল থেকে নামিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, আপনি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেননা তো?

আয়ান -যদি যাওয়ার হতো আরো আগেই যেতাম।এই প্রাপ্তির মায়া ছেড়ে কোথাও গিয়ে এই ইকবাল মাহমুদ আয়ান শান্তি পাবেনা।

প্রাপ্তি -(আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে) হয়েছে হয়েছে এইবার যান অফিসের দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।

আয়ান অফিসে যাওয়া পর থেকেই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে আছে।এইখান থেকে আয়ানকে অফিসে একঘণ্টা আগেই যেতে হয়েছে।আয়ানের অফিস এইখান থেকে দূরে। প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছে অরণী বসে বসে পেপার পড়ছে।প্রাপ্তি এসে তার আম্মুর কাছে রান্নাঘরে ঢুকতে যাবে তখনি অরণী বলে উঠলো, আপু এইদিকে দেখে যা আজকের পেপারে কি আসছে।অজ্ঞাত একটা মেয়েকে কেউ ধর্ষন করে মেরে ডোবায় ফেলে রেখেছে।অরণীর মুখের কথাটা শুনেই প্রাপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এসে চিৎকার দিয়ে, অরণী তুই এইটা কি করলি?রেশীও দৌঁড়ে এসে ভাবীর কি হয়েছে? জ্ঞান হারালো কি ভাবে?

নিলিমা বেগম-অরনী আগে পানি নিয়ে আয়।রেশী একটু ধরোতো আপাদত সোপায় নিয়ে বসাই।

রেশী প্রাপ্তিকে ধরে সোপায় বসাতে বসাতে আমি কিছু বুজতেছি না ভাবীর কি হলো একটু আগেও তো ঠিকি ছিলো।

অরণী দৌঁড়ে এসে প্রাপ্তির চোখে মুখে পানি দাওয়াতে আস্তে আস্তে প্রাপ্তি চোখ খুললো।
নিলিমা বেগম আর রেশী পাশে তাকে ধরে বসে আছে।অরণী পানির গ্লাস নিয়ে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।এইখানে কিছু না বলে নিজেকে নিলিমা বেগম আর রেশীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো প্রাপ্তি।অরণী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।নিলিমা বেগম আর রেশী চুপ করেই বসেই আছে। রেশী মনে মনে ভাবছে ভাইয়া কে কি ফোন দিয়ে কথাটা বলবো?না শুনালে তো আবার আমাকেই রাগ দেখাবে।
আচ্ছা ভাবীর কি হয়েছে হঠাৎ?হয়তো সবাই জানে আমাকেই বলছেনা।
আকাশটা আজ কালো হয়ে আসছে।প্রাপ্তি মতো হয়তো তারও মন খারপ হয়েছে।আকাশ তো মন খুলে কাঁদতে পারে কিন্তু আমি তো পারিনা।আমার কেন লুকিয়ে কাঁদতে হয়।নাহ্ আজ আকাশের সাথে আমিও মন খুলে কাঁদতে চাই।কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলো।প্রাপ্তিকে এইভাবে ছাদে যেতে দেখে রেশী উঠে গিয়ে আয়ান কে ফোন দিয়ে সব বললো, অভ্রকে সব সামলাতে বলে আয়ান গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে আছে প্রাপ্তি বৃষ্টিতে ভেজার আশায়।আকাশে বিদ্যুৎচমকাচ্ছে,ঝিরঝির বৃষ্টিও পড়ছে চোখের পানি গুলোকে বৃষ্টির পানির সাথে মিশাইতে চাইছে।নিজের কষ্ট গুলোকে হয়তো বৃষ্টির সাথে ভাগ করতে চাইছে।মনে হচ্ছে এইতো সেইদিনের ঘটনা, কিন্তু না ওই ঘটানার পর ৩ টা বছর কেটে গেছে।এই ৩ টা বছরের একেক টা দিন কিভাবে কাটিয়েছে এইটা শুধু নিজেই জানে।কাউকে বুজতে দেয়নি কখনো বুজাতে চায়ও নি,কিন্তু মাঝ খানে আয়ান জীবনে চলে আসে।ছেলেটা আমার কাছ থেকে কিছুই পায়নি।উল্টো আমার কারণেই তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। হারাতে হয়েছে সবার ভালোবাসা।সেইদিনের তারিখটা প্রাপ্তি কখনো ভুলতে পারবেনা এপ্রিলের ১০ তারিখ সকাল বেলা,ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছে প্রাপ্তি।প্রাপ্তি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আর অরণী এইসএসচি ফাস্ট ইয়ার।সবকিছু ভালোই চলছিলো।প্রাপ্তির সব বন্ধুরা বলতো তোদের পরিবারের মতো আরেকটা পরিবার দেখিনি।একজনের প্রতি একজনে কি ভালোবাসা।সবাই বলে বোনে বোনে নাকি অনেক ঝগড়া হয় কিন্তু আমার আর অরণীর মাঝে কখনোই ছিলো না।অবশ্য অরণী একটু চঞ্চল প্রকৃতির।ওর একটা বাজে অভ্যাস আছে,সেটা হলো ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো, ওর যে বাজে অভ্যাস আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটা কখনোই ভাবিনি।

অরণী পিছন দিক থেকে এসে বললো, আপু তুই ভার্সিটিতে যাচ্ছিস?

প্রাপ্তি -হুম ক্লাস আছে,,কেন? তুই যাবিনা?

অরণী -না আপু আমার ভালো লাগছে না।তুই যা। আর শুন সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি -কেন? কি হয়েছে? হঠাৎ এই কথা বলছিস?

অরণী -তোর মনে আছে সায়মনের কথা?

প্রাপ্তি -হুম মনে থাকবে না কেন? ওই ছেলে তো তোকে অনেক ডিস্টার্ব করতো একদিন তো তুই ভেবে আমাকেই ডিস্টার্ব করছিলো আমি বাসায় এসে বলাতে আব্বু থানায় ওর নামে ডায়রি করেছিলো। এখন তো জেলেই আছে।

অরণী -আরে সেই জন্যই তো বলছি,ওর বাবার টাকার খমতায় নাকি ছাড়া পেয়ে গেছে।তাই বলছি সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি ওই নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।ভাইয়া যাবে আমার সাথে।
আসিফ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে প্রাপ্তির রুমে এসে কিরে প্রাপ্তি তোর হলো?

প্রাপ্তি -হ্যাঁ আমার হয়ে গেছে চলো।অরণী, আম্মু, আব্বু আমি আসি।

আজাদ সাহেব -আসিফ সাধানে যাস,আর অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস।
আসিফ -চেষ্টা করবো।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে) তুই আবার দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? চল!

আসিফ প্রাপ্তিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।কেন জানি প্রাপ্তিকে রেখে আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা।মনটা কেমন জানি খচখচ করছে।প্রাপ্তিকে বললে ও সব ঠাট্টা ভেবে উড়িয়ে দিবে।আসিফ মোটর সাইকেলটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো পিছন ফিরে প্রাপ্তিকে দেখতে যাবে তখন দেখে প্রাপ্তি নেই একটা মাইক্রো চলে যাচ্ছে।আসিফ ভাবলো প্রাপ্তি হয়তো ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে গেছে ভেবে আসিফ অফিসের দিকে রওনা হলো।গাড়ীটা আসিফের পাশ দিয়ে যেতেই প্রাপ্তি বার বার হাত দিয়ে ইশারা করছে।প্রাপ্তির মুখটা বাঁধা তাই ডাকতে পারছিলোনা।আসিফ অফিসে গিয়ে পৌঁছানোর ২০ মিনিট পরেই প্রাপ্তির ফ্রেন্ড মেঘলা ফোন দিলো।
আসিফ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেঘলার ফোন।ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অফিসের ফাইলটা খুললো।

আসিফ -কি ব্যাপার মেঘলা হঠাৎ ফোন?

মেঘলা -ভাইয়া! প্রাপ্তি আজ ভার্সিটিতে আসবে না?

আসিফ -কি বলছো প্রাপ্তি ক্লাসে যায়নি।আমি ওকে নিজে নিমিয়ে দিয়ে আসলাম।ভালো করে খুঁজে আমাকে ফোন দাও।

মেঘলা আসিফের কথা মত ভার্সিটির সব জায়গায় খুঁজে আসিফ কে ফোন দিলো।

মেঘলা -ভাইয়া প্রাপ্তি তো কোথাও নেই।

আসিফ -(চিন্তিত হয়ে)কি বলছো আমি নিজে ওকে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।আচ্ছা তুমি রাখো আমি দেখছি।প্রাপ্তির ফোনে অনেক বার কল দিয়েছে আসিফ।ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা।আসিফ বাসায় ফোন দিয়ে আজাদ সাহেবকে বললো থানায় যেতে।অরণী আসিফের ফোনে বলা কথা গুলো শুনে বুজার আর বাকী নেই সায়মন কিছু একটা করেছে।কথাটা ভাবতে অরণী চোখ বন্ধ করে সোপায় বসে পড়লো।ওরা যদি আপু কোনো ক্ষতি করে তাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। সায়মের দলের ছেলে গুলোও ভালোনা।ওহ্ঃ আমি এখন কি করি।আচ্ছা আব্বু কি জানে সায়মন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
নিলিমা বেগম মেয়ের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি করবে বুজতে পারছেনা আমার মেয়েটা এইভাবে না বলে কোথাও যাবার মেয়ে ও না।ওর কোনো বিপদ হলো নাতো?নিলিমা বেগম উঠে গিয়ে অরণী কাছে এসে,অরণী! তুই কিছু জানিস প্রাপ্তি কোথায় যেতে পারে?

অরণী -আম্মু আপু তো এইভাবে কোথাও না বলে যায় না।আব্বু আর ভাইয়া আসুক দেখো তারা কোনো খোঁজ পায় কিনা।
এইভাবেই সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।আসিফ আর আজাদ সাহেব সব জায়গায় খুঁজেছে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডদের বাসায়ও খোঁজ করা হয়েছে।এলাকাজুড়ে সবাই জেনে গেছে আজাদ সাহেবের মেয়ে প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।পাশের বাড়ীর মানুষ তো এসে নানান কথা বলাও শুরু করেছে।প্রাপ্তির মা! দেখো মেয়ে হয়তো কারো সাথে ভেগে গেছে।
অন্য একজন বলছে ঠিকি বলেছেন এখনকার মেয়ে কোথাও গেছে পষ্টিনষ্টি কারার জন্য দুইদিন গেলেই চলে আসবে।
আরেকজন বলছে কতোবার বলেছি আসিফের মা! মেয়ে বড় হয়ে বিয়ে দিয়ে দাও এতো পড়িয়ে লাভ কি।এখন দেখেছো মেয়ে চুনকালি মাখিয়ে চলে গেলো।এইভাবে একেকজন একেকভাবে বলেই যাচ্ছে। নিলিমা বেগম ড্রইংরুমের ফ্লোরে পাগলের মতো নিস্তব্ধ হয়ে চোখের পানি ঝরছে আর মানুষের কথা গুলো শুনছে।অরণী আর সহ্য করতে না পেরে সবার উদ্দেশ্য করে বলে ফেললো আপনার কি মানুষ? আমাদের এমন একটা সময় আপনারা এইসব কি বলছেন? হয়তো আমার আপুর অন্য কোনো বিপদআপদ ও তো হতে পারে।আপনারা সবাই এইখানে এসেছেন আমাদের মজা দেখতে? প্লিজ আপনার এখন এইখান থেকে যান।অনেক মজা দেখেছেন আর না।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ দরজা খুলার সাথে সাথেই প্রাপ্তি তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।নিলিমা বেগম মেয়েকে কপালে অনেক গুলো চুমু দিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো কতো দিন হয়েছে তোকে দেখিনা।

মা মেয়ের এমন দৃশ দেখে আয়ানের মুখে হাঁসির ঝলক ফুটে উঠলো।

আসিফ ভিতরের রুম থেকে এসে আম্মু! এইবার তো প্রাপ্তিকে ভিতরে আসতে দাও।সব কিছু কি দরজায় দাঁড়িয়েই শেষ করে ফেলবে?
(আয়ান এগিয়ে এসে আসিফের সাথে কোলাকোলি করলো।)কেমন আছো আয়ান?
আয়ান -জ্বী ভালো।

এমন সময় অরণী আর তার হ্যাজবেন্ড সিয়াম দরজায় দাঁড়িয়ে,

অরনী -আসতে পারি?
কথাটা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে,

প্রাপ্তি -অরণী!!!!!! আম্মু অরণী আসবে আমায় বলোনি তো?

নিলিমা বেগম -আমার কি দোষ, অরণী আমায় মানা করেছে তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।

অরণী ভিতরে এসে, কেমন আছিস আপু?

প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে অনেক ভালো আছিরে।সিয়াম তুমি কেমন আছো?

সিয়াম- এইতো ভালো।আপনি তো আয়ান ভাইয়াকে পেয়ে আমাদের সবাইকে ভুলেই গেছেন।

কথাটা শুনে আয়ান মনে মনে তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে, ও যদি আমাকে পেয়ে ওর অতীত ভুলে যেতো তাহলে আমার মতো ভাগ্যেবাণ কেউ ছিলো না।যাইহোক
তবে আজকের মতো খুশী আমি প্রাপ্তিকে কখনোই দেখিনি।সবার সাথে কতো সুন্দর করে কথা বলছে।আর আমার কাছে আসলে মনে হয় বোবা একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

নিলিমা বেগম -বাবা তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

আয়ান -আম্মু আপনি আমার জন্য এতো ব্যস্ত হবেন না।আমাকে এই বাড়ীর একজন ভেবেই ভালোবাসবেন।আপনি যদি বাড়তি আপ্যায়ন করেন এতে আমার অনেক খারাপ লাগবে এইভেবে আপনি আমাকে নিজের ছেলে মনে করেন না।

আয়ানের কথা গুলো শুনে নিলিমা বেগম আয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, তোমার মতো ছেলের মা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলবো। এই প্রাপ্তি, যা আয়ানকে রুমে নিয়ে যা।অরণী তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা।রেশী! তুমি (একটা রুম দেখিয়ে)ওই রুমে যাও।ওইখানে তুমি থাকবে।

আয়ান প্রাপ্তির রুমে এসে অবাক হয়ে সব কিছু দেখছে।রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সব কিছু প্রাপ্তির পছন্দমতই।এর আগেও আয়ান এই বাড়ীতে দুইবার এসেছিলো তখন সবকিছু ঝামেলার মাঝেই কাটিয়েছিলো।

প্রাপ্তি ব্যাগ থেকে জামা কাপড় গুলো বের করে ড্রয়ারে রাখতে রাখতে বললো আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আম্মু একটু পর আবার ডাকাডাকি শুরু করবে।

আয়ান -এতো জামা কাড়প নিয়ে আসলে থাকবে কতো দিন এইখানে?

প্রাপ্তি -আপনি যেইদিন বলবেন সেইদিনি চলে যাবো।

আয়ান -আমি তো কালই চলে যাবো। তুমি দুইদিন থাকো তারপর না হয় আমি এসে নিয়ে যাবো।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি কিছু বললোনা।মনে কেন জানি ধাক্কা লাগলো।ওনাকে ছাড়া আমি এইখানে থাকবো কি করে? এইখানে এমনেতেই দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি এসেছি শুনলে পাড়ার চাচী, জেঠী সবাই চলে আসবে আমাদের কথা শুনানোর জন্য।জানি এইগুলো শুনলে আয়ানের খারাপ লাগবে।কিন্তু মানুষের মুখতো আর বন্ধ করা যায়না।আমাদের সমাজের মানুষ গুলোই এই রকম।নিজের ঘরে কি হয়েছে সে নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু অন্যের ঘরের দোষ কিভাবে বের করা যায় সেই নিয়েই বেশী চিন্তায় থাকে।

এই প্রাপ্তি ভাবছো টা কি? তোয়ালেটা দাওতো।

প্রাপ্তি -(চমকে উঠে)ওওওওও হ্যাঁ।

আয়ান -কি ওওও হ্যাঁ করছো? যেটা ভাবতেছো সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে পেলো।জানি আমি, তোমার ভাবনাতে কি থাকতে পারে।

অরণী প্রাপ্তির রুমে এসে তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,কিরে আপু এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। আম্মু নাস্তা নিয়ে বসে আছে,চল!
ভাইয়া আপনিও চলেন।
অরণী কে দেখে আয়ান অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি ব্যাপারটা বুজে অরণীকে বললো তুই যা আমরা আসছি।অরণী ও আয়ানের ব্যাপারটা বুজতে পেরে চলে গেল।

প্রাপ্তি -ওর সাথে এইভাব না করলেও পারতেন।

আয়ান -কেন করবো না।ওর জন্যই তো এতো কিছু।কথা টা বলেই আয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে হয়তো তাই।

প্রাপ্তি এসে তার মাকে কাজে হেল্প করছে।অরণী পাশ থেকে বলে উঠলো,আচ্ছা আপু! আয়ান ভাইয়া আমার উপর এখনো রাগ তাই না?সেই দিনের সবকিছুর জন্য আমি দায়ী তাইনা?

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে,দূর পাগলি,ও তো এইরকমভাবেই চুপচাপ থাকে।
অরণী কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে,
আয়ান ফ্রেশ হয়ে সোপায় এসে বসেছে।সাথে সিয়াম ও।দুজনে এইখানে এসে ভালোভাবে মিশে গেছে।অবশ্য এর আগে সিয়াম আর আয়ান একসাথে হয়নি।সেইদিনে ঘটানার পর সিয়ামও এই বাড়ীতে আসেনি।প্রাপ্তির বাবা এসে প্রাপ্তির মাকে বলতে লাগলো তোমার মেয়েকে এগিয়ে আনতে গেছি আর তারা আমার আগেই চলে এসেছে।

নিলিমা বেগম -তুমি হয়তো আড্ডা দিতে বসে গেছো তাই আমার মেয়েকে খুঁজে পাওনি।কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান এগিয়ে এসে প্রাপ্তির বাবাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো।আজাদ সাহেব আয়ান জড়িয়ে ধরতেই কেমন আছো বাবা?

আয়ান -জ্বী ভালো।

সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, তুমি কেমন আছো?

সিয়াম -জ্বী আমিও ভালো আছি।

আজাদ -নিলিমা! আজ আমার ঘরটা অনেক দিন পর পরিপূর্ণ হলো।আমার মেয়েরা দেখছি আল্লাহ্‌ রহমতে ভালোই আছে।
আয়ান -আব্বু আপনি বসেন।বসে কথা বলা যাবে।আসিফও এসে তাদের সাথে যোগ দিলো।
সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আয়ানের ফোনে কল আসাতে আয়ানের মন ভারী হয়ে উঠলো।ফোন দিয়েছে তার বড় ভাই আকাশ। ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।প্রাপ্তি কিছুটা বুজতে পেরে, আপনার অফিসের কল আসছে মনে হয়।সমস্যা নেই আপনি রুমে গিয়ে কথা বলে আসুন।

আসিফ -হ্যাঁ আয়ান! জরুরী ফোন হবে কথা বলে আসো।আয়ান বুজেছে প্রাপ্তি ওকে এখান থেকে সরাতে চাইছে।মেয়েটা আমাকে কিভাবে যেন বুজে যায়।কিন্তু ভালোবাসতে চায় না। কথাটা ভাবতে ভাবতে আয়ান রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো,

আকাশ -কিরে তোকে এতোক্ষণ ফোন দিচ্ছি ধরছিস না কেন?

আয়ান- একটু ব্যস্ত ছিলাম, কি বলবে বলো?

আকাশ -প্রাপ্তি কেমন আছে? প্রাপ্তিকে অনেক মিস করছি।তোর ভাবী বার বার বলছে তোদের বাসায় গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কিছুটা সময় কাটাতে,অবশ্য এটা ওর একার ইচ্ছা নয়,আমারো বলতে পারিস।মেয়েটা সহজে সবাইকে আপন করে নেয়।

আয়ান- হুম ঠিক বলছিস।ভাইয়া তাহলে তুই কবে আসছিস বল? জানিস প্রাপ্তি শুনলে কতো খুশী হবে তুই জানিস?

আকাশ -একদিন সময় করে চলে আসবো।তোরা বাড়ীতে এসে একবার মাকে দেখে যা।মা সারা দিন তোর কথা বলে।তোকে অনেক মিস করে, তোর কথা বলতে গেলেই ফেল ফেল করে কেঁদে পেলে।তুই বাড়ীর ছোটো ছেলে,সবার অনেক আদরের।

আয়ান -ভাইয়া আমিও তোদের অনেক মিস করি।সবচেয়ে বেশী মিস করি তোর আর মায়ের ভালোবাসাটা।আমি কোনো অন্যায় করলেও তুই বাবার কাছে সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে নিতি।কথা গুলো বলতে বলতে আয়ানের গলাটা ভারী হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে এখুনি কেঁধে ফেলবে।

আয়ান আকাশের সাথে কথা শেষ করেই চোখ গুলো মুছতে মুছতে পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।

প্রাপ্তি -কেন দিচ্ছেন নিজেকে এতো কষ্ট? নিজের পরিবারে কাছ থেকে আমাকে নিয়ে আলাদা থেকে কি বুজাতে চাইছেন আপনি? আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন? কেনো করছেন আমার জন্য এতো কিছু? এই সমাজ আমাকে ভালো চোখে দেখে না।আর কখনো দেখবেও না।কারণ আমি ধর্ষিতা মেয়ে,না না ভুল হয়েছে #ধর্ষিতা_বউ।আমার জন্য আপনাকে সবাই অন্য চোখে দেখে।যতো দিন আমি বাঁচবো এই পাপের বোঝা নিয়ে বাঁচতে হবে।কথা গুলো বলে কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়লো প্রাপ্তি।

আয়ানও প্রাপ্তির সামনে বসে পড়লো,আস্তে আস্তে হাত দুটো নিয়ে প্রাপ্তির দুগাল ধরে, পাগলি কথাকার।এতো গুলো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে?নিজেকে এতো ছোটো ভাবো কেনো? ধর্ষিতারা কখনো পাপি হয় না।পাপী তো তারা যারা তোমাকে জোর করে ধর্ষন করেছে।এই সমাজের কোনো দোষ নেই, দোষ এই সমাজের মানুষ গুলোর।তারাই সমাজকে প্রতি নিয়তো নষ্ট করছে।তোমার মতো হাজারো প্রাপ্তি আছে যারো কারো সার্পোট পায় না।তোমার সাথে আমরা সবাই আছি। কেউ থাকুক আর না থাকুক আমি তোমার পাশে থাকবো।কেনো জানো তোমাকে ভালোবাসি বলে।তোমার মতোই একটা মেয়ে আমার জীবনে খুব প্রয়োজন। জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না।কিন্তু একদিন না একদিন তো ভালোবাসবেই।আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে তাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে আমিও আপনাকে ভালোবাসি।কিন্তু কেন জানি ভয় কাজ করে।

আয়ান প্রাপ্তিকে দাড় করিয়ে, আমি জানি তোমার মন এখন কি বলছে।

প্রাপ্তি -(কাঁদো কাঁদো গলায়)কি বলছে?

আয়ান -কাজে করে দেখাই, প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ানের বুকে মাথা রেখে প্রাপ্তি যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।এই প্রথম আয়ানের বুকে সে মাথা রেখেছে।এই বুকে এতোটা শান্তি আছে তার জানা ছিলো না।মনে হচ্ছে পৃথিবীর কথাও গেলে সে এতো সুখ খুঁজে পাবেনা।মনে হচ্ছে আয়ানের বুকের হৃদয়েরস্পন্দন গুলো শুধু আমায় ডাকছে।

অনেকক্ষণ এইভাবে থাকার পরে আয়ান আস্তে করে প্রাপ্তিকে ডাক দিলো।এই প্রাপ্তি! কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? কিছু বলছো না কেনো?

প্রাপ্তি-(আয়ানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,) ওহ্ঃ কথা বলবেন না।কথা বললে ডিস্টার্ব হবে আমার।

আয়ান- এতো দিন কাছে না এসে আমাকে কষ্ট দিয়েছো কেন?

প্রাপ্তি -আমি কি জানতাম এইবুকে এতো শান্তি লুকিয়ে আছে?আর আপনার কাছে গেলেই আমার ভয় লাগতো।আপনি তো সবি জানেন।নতুন করে আমি কি বলবো বলেন?
আয়ান -আমি জানতাম দেখেই তো তোমাকে কাছে টানতাম না।ভাবতাম যেইদিন তুমি নিজের ইচ্ছায় কাছে আসবে সেইদিন তোমাকে কাছে টেনে নিবো।যাইহোক ওইসব কিছু ভুলে যাও।শুধু ভাববে আমি তোমার সব।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।

আয়ান -মা! বাবার কি হয়েছে?

আয়েশা বেগম – বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে,তোর কি ইচ্ছে করেনা আমাদের কে দেখার? তোর বাবা, আমি, তোর বড় ভাই,ভাবী, তোর বোনেরা সবাই তোকে কতো ভালোবাসে।তোর কি ইচ্ছে করেনা সবার কাছে থাকার?
কথা গুলো শুনে আয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বললো, মা! আমারো ইচ্ছে করে সবার সাথে থাকতে।আমিও সবাইকে ভালোবাসি। তোমাদের ছেড়ে থাকতে আমারো কষ্ট হয় মা।কিন্তু কি করবো বলো ওই মেয়েটা কে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।ভালোবাসি আমি ওকে। আমি যদি ওকে ছেড়েদি ও নিশ্চিত সুইসাইড করবে।বাবাও ওকে নিবে না আর আমার বাড়ীতেও যাওয়া হবেনা।

আয়েশা বেগম – তোরা বাপ ছেলে যা ভালো বুঝিস কর। কিন্তু এর মাঝে তোর এই মায়ের ভালোবাসা টা কবর দিয়ে দিস না।যদি পারিস একবার এসে এই মায়ের সাথে দেখা করে যাস।আজ তাহলে রাখী।

আয়ান ফোন রেখেই দেখে প্রাপ্তি ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দুটো টলমটল করছে।আজ তার কারনেই আয়ান তার পরিবারের থেকে আলাদা।

আয়ান এগিয়ে এসে বললো, কি? কান্না করবা নাকি?

প্রাপ্তি ছোট্র একটা নিশ্বাস ছেড়ে,
প্রাপ্তি -রেশী! খাবার গুলো নিয়ে আসো।আর তুমিও খেয়ে পেলো রাত অনেক হয়েছে।

আয়ান আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে বসলো।প্রাপ্তিও বসতে বসতে বললো,
একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন?

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)তুমি কথা বলবে এইটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কি বলবে বলো?

প্রাপ্তি -আপনি কাল গিয়ে আপনার বাবা মা কে দেখে আসুন।আমার জন্য শুধু শুধু ওনাদের কষ্ট দেন কেন? আমি আর পারছি না।কথা গুলো বলেই প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।
প্রাপ্তির কান্না দেখে আয়ান বললো এইখানে নিজেকে দোষ দিচ্ছো কেন।তুমি তো কিছু করোনি।ওনাদের যদি আমার প্রতি ভালোবাসায় থাকতো তাহলে আর তোমাকে নিয়ে আমার বাড়ী ছাড়তে হতোনা।(প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে দিতে দিতে) প্লিজ কান্না করোনা।আমি তো তোমাকে প্রেম করে বিয়ে করিনি। বিয়েটা তো ওনারাই করিয়ে ছিলো তাহলে এখন মেনে নিতে পারচ্ছেনা কেন?

প্রাপ্তি -ওনারা মেনে নিবে কি করে আমি যে,,,,,,,,,,
আয়ান প্রাপ্তিকে থামিয়ে একদম চুপ আর কোনো কথা নয়।চুপচাপ খেয়ে রুমে আসো।
প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কথা না বললেও মাঝে মাঝে বাড়ী যাওয়া নিয়ে কথা বলেই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়ান ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি টেবিলের উপর নাস্তা দিয়ে রেখেছে।রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে প্রাপ্তি চুলায় রান্না বসিয়েছে।

আয়ান – প্রাপ্তি! তুমি নাস্তা করেছো? আর এতো সকাল রান্না করছো কেন?

রেশী -প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে,ভাইয়া ভাবী তো এখনো কিছু খায় নাই।

আয়ান -না খেয়ে রান্না করার কারণ কি?

রেশী -ভাবী বলছিলো রান্না করে বাহিরে যাবে।আপনি খেয়ে নিন।

আয়ান রান্না ঘরে ঢুকে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে ডাইনিং টেবিলের সামনে এনে চেয়ারে বসিয়ে বাহিরে যাবে আমাকে বললেইতো হতো।রান্না করার দরকার নেই বাহিরেই খেয়ে নিবো।সাথে রেশীকেও নিয়ে নাও।আর এখন নাস্তাটা করে নাও।

প্রাপ্তি -আপনি অফিসে যাবেননা?

আয়ান -সমস্যা নেই অভ্রকে ফোন করে বলে দিলেই হবে।

প্রাপ্তি -চলুন না আমাদের বাসায় যাই।অনেক দিন হলো মাকে দেখিনা।আপনি যদি বলেন তাহলে মাকে ফোন দিয়ে বলবো আমরা যাচ্ছি।

আয়ান ভাবলো সারাদিন মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকার চেয়ে ঘুরে আসুক সেটাই ভালো হবে।

আয়ান -ঠিক আছে রেডি হয়ে নাও।আমি অভ্র কে ফোন দিয়ে বলছি।

প্রাপ্তি নাস্তা টা খেয়েই রেশীকে ডেকে চুলার আগুন নিভিয়ে রেডি হতে বললো। তাদের সাথে যাওয়ার জন্য।

আয়ান অভ্রকে ফোন দিয়ে সব বুজিয়ে দিলো।

কতো দিন পর প্রাপ্তি আয়ানের সাথে কোথাও বেরাতে যাচ্ছে।অবশ্য আয়ান প্রায়ই বলে,কিন্তু প্রাপ্তির যেতে ইচ্ছে করেনা।প্রাপ্তি চায় না তার জন্য আয়ান কে কেউ অন্য নজরে দেখুক।আয়ান অভ্রর সাথে কথা শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে প্রাপ্তি রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানের ইচ্ছে করছে না চোখ সরাতে। তার বউ এতো সুন্দর এতো মায়াবী কিন্তু বিয়ে হয়েছে ২ বছর, আজও পর্যন্ত প্রাপ্তিকে ছুঁয়েও দেখনি।দেখবেই বা কি করে প্রাপ্তি কখনোই তার কাছে আসেনা।যা বলে দূর থেকেই বলে।

প্রাপ্তি আয়ানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আপনি আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

আয়ান প্রাপ্তির কথায় চমকে উঠে, কিছু বলেছো আমাকে?

প্রাপ্তি -বলেছি আপনি এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?

আয়ান একটু লজ্জা পেয়ে কিছুনা।আমি গাড়ী বের করছি তুমি আর রেশী আসো।

—কতো দিন পর মেয়েটা আসতেছে।তোমাদের তো উচিত মেয়েটা কে এগিয়ে নিয়ে আসার।আয়ান তো এখনো নতুন জামাই। যাওনা ওদের এগিয়ে গিয়ে নিয়ে আসো।কথা গুলো রান্নাঘর থেকে প্রাপ্তির মা নিলিমা বেগম প্রাপ্তির বাবাকে আর ভাইকে বলছে।

মায়ের বকা দেখে আসিফ(প্রাপ্তির বড় ভাই) বললো দেখেছো আব্বু? আম্মুর মেয়ে আসছে এখন আর আমাদের দিকে কোনো খেয়াল থাকবে না।পান থেকে চুন ঘষলেই বকা খেতে হবে।
ছেলের কথা শুনে প্রাপ্তির বাবা আজাদ চৌধুরী বললেন, তোর আম্মুকে এখন কিছু বলিস না।পরে আরো খেপে যাবে।তুই তোর মায়েকে একটু হেল্প কর আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রাপ্তিরা এসেছে কিনা।
আসিফ আজাদ সাহেব চলে যাওয়ার পর সামনের দরজাটা আটকিয়ে রান্নাঘরে মায়ের পাশে এসে বললো,আম্মু! অরণী (প্রাপ্তির ছোটো বোন)আসবে না?

নিলিমা বেগম -আসবে না!!! বড় বোন আসছে, না এসে পারে?যাইহোক ওরা আসার আগেই সব কাজ করে ফেলতে হবে। অনেক দিন পর আমার মেয়েরা আসতেছে জমিয়ে আড্ডা দিবো।তুই এককাজ কর প্রাপ্তির রুমটা ঠিক করে দিয়ে আয়।অবশ্য আমি ঠিক করেছি তুই দেখে আয় কিছু কমতি আছে কিনা।

আসিফ -ওহ্ঃ মা! তুমিও না, একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না।

নিলিমা বেগম রান্নাবান্না শেষ করে ড্রইংরুমের ফ্যান চালিয়ে সোপায় গিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।আর ভাবতে লাগলো বিয়ের পর এই নিয়ে আয়ান দুই বার আসছে এই বাড়ীতে।আসবেই বা কি করে, প্রথম বার এসে কতো নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে তাকে। বাসা থেকে বের হলেই গ্রামের লোকেরা প্রাপ্তিকে নিয়ে নানা কথা বলতো।ছেলেটা ভালো দেখেই সব কিছু মেনে নিয়েছে।অন্য কোনো ছেলে হলে মেয়েটা কে আমাদের বাড়ী রেখে কবেই চলে যেতো।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আজ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তবে একটুও খারাপ লাগছে না।হালকা হালকা বাতাস বইছে, চারদিকে পাখীরা কিচিরমিচির করে ডাকছে,মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যা নেমে এলো বুজি।কিন্তু না এখন মাত্র বিকাল হয়েছে।
সত্যি ভালো লাগার মতো বিকাল।আমি মাঝে মাঝে অপেক্ষা করে থাকি এইসময়টার জন্য।কেন জানেন? আমার একটা পাগলি আছে ও এইরকম সময় তার খুব পছন্দের।ওহ্ঃ অফিস কখন শেষ হবে আর কখন পাগলীর মুখ খানা দেখতে পাবো।কারণ এই মেঘাচ্ছন্ন বিকেলবেলা পাগলী বারান্দায় ইজিচেয়ারটায় হাতে একমগ কফি নিয়ে বসে। যতোক্ষণ না কফি শেষ হবে ততোক্ষণ বসে বসে দুলবে। তবে আমি পাশে থাকলে অন্য ব্যাপার। পাগলীর কথা গুলো ভাবছি আর অফিসে ফাইল গুলো দেখে শেষ করছি।

পিছন দিক থেকে অভ্র এসে বললো কিরে বাড়ী যাবিনা অফিস তো ছুটি।
অভ্রর কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আর বলিস না আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করিনি।আচ্ছা এইবার চল।দেখেছিস আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই পাঠকদের পরিচয়টাই দেওয়া হলোনা।যাইহোক বাড়ীতে যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়েই পেলি।
_আমি ইকাবাল মাহমুদ আয়ান, বাবা মায়ের ৪ নাম্বার সন্তান, দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোটো আমি।পড়া লেখা শেষ করে একটা কম্পানির এমডি তে জয়েন করেছি।আর যাকে পাগলী পাগলী বলছি সেই সত্যিকারের পাগলি নয়,সেই আমার মনের রাজ্যের পাগলী,মানে আমার বউ মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।চাকরী সূত্রে আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে ঢাকায় থাকি অবশ্য অরো অনেক কারণও আছে সেই গুলো আস্তে আস্তেই জানতে পারবেন।আর অভ্র তার কথা না বললেই নয়,কারণ এই অচেনা শহরে যখন আমি এসেছিলাম তখন এই অভ্রই আমার সব ছিলো আর কাউকেই তেমন আপন ভাবে পাইনাই।যাইহোক আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম। সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবলাম কলিংবেল বাজিয়ে পাগলীটাকে ডিস্টার্ব করবোনা। আমার কাছে যে বাড়তি চাবিটা আছে ওইটা দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।আরেকটা কথা না বললেই নয়।আমার পাগলীকে আমি যতোই ভালোবাসি না কেন ও আমার সাথে কথা বলেনা, তারও একটা কারন আছে আস্তে আস্তে এটাও জানবেন।বাসার ভেতরে ঢুকেই আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিতেই আমাদের কাজের মেয়ে রেশি এসে বললো, ভাইয়া, আপনি কলিংবেল না বাজিয়ে এইভাবে আসলেন কেন?ওর কথা শুনে দরজাটা আটকিয়ে পিছনে ফিরে বললাম আমি আসেছি জানলে তোর ভাবী এসে দরজা খুলতো তাই ওকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।তোর ভাবী তো এখন বারান্দায় তাইনা?

রেশী -হুম ভাইয়া, ভাবী এই সময় তো বারান্দায় বসে থাকে।
রেশীর কথাটা শুনে না দাঁড়িয়ে রুমে গেলাম।হাতের ব্যাগটা রেখে বারান্দার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম মেঘাচ্ছন্ন আকাশ মৃদু হাওয়া তার চুল গুলো বার বার চোখের উপরে এসে পড়ছে আর ও সরিয়ে দিচ্ছে। সত্যি আমার বউটাকে কতোটা মায়াবী লাগছে বলে বুজানো যাবেনা।ইচ্ছে করছে বউ টাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করি।কিন্তু না ওকে তো ছোঁয়া আমার নিষেধ, ও নিজেই সে নিষেধটা করেছিলো।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বউটার নজর পড়লো আমার দিকে।আমাকে দেখে তড়িঘড়ি করে আমাকে সরিয়ে রুমে এসে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।প্রাপ্তিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রেশী! রেশী! প্রাপ্তির ডাকে রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এলো রেশী।

রেশী -ভাবী আপনি কিছু বলবেন?

প্রাপ্তি -তোমার ভাইয়া যখন আসছে আমায় ডাকোনি কেন?

রেশী -ভাবী আমিও তো দেখেনি, যখন ভাইয়া ভেতরে ঢুকে দরজা আটকাচ্ছিলো তখন দেখেছি।আমি বলেও ছিলাম কলিং বেল বাজায়নি কেন? ভাইয়া বলেছে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে চায়নি তাই।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে, ওর জন্য কফি বানিয়েছ?
রেশী- জ্বী ভাবী, আমি নিয়ে আসছি।

আয়ান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছচ্ছে।
প্রাপ্তি কফিটা নিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানকে এক অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে আয়ানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিতে।ইচ্ছে করছে আয়ানের চোখ রেখে বলতে আয়ান! আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু না! আমার মতো মেয়ের তো কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই।আমি তো,,,,,,,আমি তো,,,,,,,কথাটা ভাবনার জগতে বলার আগেই আয়ান বললো কি হলো কফিটা কি ঠাণ্ডা করে ফেলবা? আমাকে দিবেনা? আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে, আয়ানের হাতে কফিটা দিলো।আয়ান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে একটা কথা বলবো রাগ করবে নাতো?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে বুজালো না।

আয়ান -আজ তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।জানি এর কোনো আনসার আমি পাবোনা।তবে মাঝে মাঝে মনে হয় একটা বোবা মেয়ে বিয়ে করা ভালো ছিলো।কথাটা বলেই আয়ান একগাল অট্র হাঁসিতে ঢোলে পড়লো।
প্রাপ্তি কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। প্রাপ্তির অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু না ভালোবাসার মানুষের কথায় কাঁদতে নেই।রাগ করতে নেই, তবে হ্যাঁ শুধু অভিমান করা যায়।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।আয়ানের মনের কষ্টটা কাউকে দেখানোর মতো না। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাপ্তি সাথে সংসার করে ঠিকে কিন্তু আজও মেয়েটার কাছ থেকে কোনো ভালোবাসায় পায়নি।প্রাপ্তি জোরেশোরে বৃষ্টি হচ্ছে দেখে বারান্দায় দরজা আটকাতে গিয়ে দেখে আয়ান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।প্রবল বাতাসের কারণে বৃষ্টি বারান্দায় পর্যন্ত এসে গেছে।আয়ানও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজচ্ছে।
প্রাপ্তি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়ান বললো, ভিজতেছো কেন ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।যাও রুমে যাও।

প্রাপ্তি -অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে আপনার ঠাণ্ডা লাগে যাবে।অনেকক্ষণ থেকেই তো ভিজেই চলেছেন।এইবার রুমে আসুন।

আয়ান প্রাপ্তির দিকে মুখ ফিরিয়ে বৃষ্টিতে ভেজাটাই দেখলা মনের যে ঝড় বইছে সেটা দেখতে পাচ্ছ?

প্রাপ্তি- (অসহায়র মতো করে)প্লিজ রুমে চলুন।

আয়ান -জানো বৃষ্টিতে ভিজাতে তোমার মুখের কয়েকটা শব্দ শুনতে ফেলাম এইটাই আমার জন্য অনেক।

আয়ান রুমে এসে চেঞ্জ করে ড্রইংরুমে সোপায় গিয়ে বসলো।পাশে থাকা ফোন বেজে উঠতেই ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মা আয়েশা বেগম ফোন করেছে।আয়ান দেরী না করে ফোন রিসিভ করেই

আয়ান- আসসালামু আলাইকুম। মা কেমন আছো তুমি?

আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।

চলবে,,,,,,,,

অজানা_অনুভূতি শেষ তথা ৩৬ পর্ব

0

অজানা_অনুভূতি
শেষ তথা ৩৬ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

_সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবেই চলছে।ফারহানের ভালোবাসার কাছে হার মেনে নিয়েছে প্রাপ্তি।প্রাপ্তি প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়ীতেই বেশী থাকা হয়।এই নিয়ে ফারহানও কিছু বলেনা।প্রাপ্তি যেইখানে ভালোলাগবে সে সেখানেই থাকবে।অফিস থেকে এসেই ফারহানের মনটা আজ ভালো নেই। ফ্রেশ না হয়ে হাত পা ছেড়ে দিয়ে খাটের উপর শুয়ে আছে।প্রাপ্তি নীরার রুমেই বসে গল্প করছে।একা একা রুমে থাকতে ভালো লাগছেনা। তাই নীরার সাথে গল্প করছে।কাজের মেয়ে রিতা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বললো, আপু! আপু! প্রাপ্তি পিছনে ফিরে তেকিয়ে, রিতা তুমি আমায় ডাকছো?

রিতা -হ্যাঁ,আপু ভাইয়া অফিস থেকে আসছে। আমি যখন কফি দিতে গিয়েছিলাম হাত পা গুলো ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছে।মনে হচ্ছে ওনার কিছু হয়েছে।
রিতার কথা শুনে প্রাপ্তি বসে না থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে গেলো।ফারহান সত্যিই চোখ দুটো বন্ধ করে হাত পা ছেড়ে দিয়ে শুয়ে আছে।রিতা দিয়ে যাওয়া পাশের কফিটা ও ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।প্রাপ্তি ফারহানের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে বুলাইতে বুলাইতে বললো,কি হয়েছে তোমার? এইভাবে শুয়ে আছো কেন?
আমার মনে হচ্ছে আমি নতুন কোনো ফারহানকে দেখছি, আমার ফারহান তো যতো ঝড়ই আসুক না কেন এইভাবে ভেঙে পড়েনা।উল্টো আমাকেই বুঝায় কিন্তু আজ কি হলো তুমি এই রকম করছো কেন?
ফারহান কিছু না বলে প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে শুয়েছে।ফারহান কিছু বলছেনা দেখে প্রাপ্তি আবার বললো কি হয়েছে তোমার বলবেতো।

ফারহান -কিছু হয়নি।ভালো লাগছিলো না অফিসে তোমাকে ছাড়া তাই চলে আসলাম।
ফারহানের কথা শুনে প্রাপ্তি অট্ট হাঁসি দিয়ে,ফারহান তুমিও না,,,,,এক কাজ করো অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেও তুমি কাজ করবে আমি তোমার সামনে বসে থাকবো।

ফারহান -ধুর পাগলি সবসময় উল্টাপাল্টা কথা বলবে।যাইহোক খাওয়াদাওয়া করে ঔষধ খাইছো?

প্রাপ্তি -হুম,,,এইবার যাও ফ্রেশ হয়ে আসো,এই কফিটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে আমি আরেকটা নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠতে যাবে তখনি ফারহান হাত ধরে টেনে বসিয়ে কফি আনতে হবে না তুমি আমার পাশেই বসো,আচ্ছা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তোয়ালে টা হাতে নিয়ে একটু হেঁটে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো ফারহান।

প্রাপ্তি -আবার কি মনে পড়লো? দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে,তুমিও রেডি হয়ে নাও।

প্রাপ্তি- কেন, এখন এইসময় কথায় যাবো?

ফারহান -নাদিয়া বলছে তোমাকে নিয়ে যেতে।দেখতে দেখতে ৭ মাস কাটিয়ে দিলে।নাদিয়া সকালে ফোন দিয়ে বলেছে আজ চেকাপ করানোর জন্য।আমি ছেলে বাবু না মেয়ে বাবুর বাবা হচ্ছি দেখতে হবেনা?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো আজ না গেলে হয় না?
ফারহান প্রাপ্তির পাশে এসে বসে, না হয় না।আজকে তো আজকেই।আমার মন পাগল হয়ে আছে জানার জন্য। যদি আমাদের একটা পরী আসে তাহলে তুমি যা চাইবে তাই দিবো আর যদি ছেলে হয় তাহলে ভেবে তারপর বলবো।এখন যাও রেডি হও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

হাসপাতালে গিয়ে নাদিয়া চেকাপ করিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো, প্রাপ্তি! তুমি কি হলে খুশী হবে?

প্রাপ্তি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নাদিয়াকে বললো আল্লাহ্‌ খুশী মনে যাই দেয় তাই।

নাদিয়া -ভেরি গুড, তোমাদের ছেলে বাবু আসছে।কথাটা শুনেই প্রাপ্তি চুপ হয়ে গেলো।

নাদিয়া প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি! মন খারাপ করলে নাকি?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে না বলে চেকাপ শেষে ফারহানের পাশে এসে বসেছে।প্রাপ্তির মন খারাপ দেখে ফারহান বললো মন খারাপ করে আছো কেন? কি হয়েছে বলবে তো।

প্রাপ্তি মন খারাপ করে,!ফারহান! তোমার পরী আমি এনে দিতে পারবোনা আমাদের ছেলে বেবি হবে।প্রাপ্তির মুখে কথাটা শুনে ফারহান আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি মন খারাপ করে আসছো কেন?

প্রাপ্তি -তোমাকে পরী দিতে পারলাম না তাই।
ফারহান ধুর বকা আল্লাহ্‌ যা খুশী হয়ে দিয়েছেন তাতেই আলহামদুলিল্লাহ্‌।
কথাটা শুনার পর প্রাপ্তির ঠোঁটের কোনে হাঁসির ঝিলিক ফুঠেছে দেখে বললো এতো অল্প হাঁসলে হবে আরো জোরে হাঁসোতো।
প্রাপ্তি সত্যি সত্যিই না হেঁসে পারলোনা।

বাড়িতে এসে কলিংবেল চাপ দিতেই প্রাপ্তির মা দরজা খুলে দিলো। প্রাপ্তি ভিতরে এসে ড্রইংরুমে বসলো। সবাই একি কথা জিজ্ঞাস করছে নতুন সদস্য কি আসতে চলেছে?
ফারহানকে তো নীরা আর নাজিফা ভালো করে ছেপে বসেছে।তারপর প্রাপ্তি বললো আমি বলছি, এইদিকে আয় তোরা।নীরা আর নাজিফা এগিয়ে আসতেই প্রাপ্তি বললো তোরা ছেলে বাবুর খালামনি হচ্ছিস।কথাটা শুনে সবাই খুশীতে আত্যহারা।মেজো মা,মাজো কাকাইকে ফোন দিয়ে আসার সময় মিষ্ট নিয়ে আসবা। তুমি তো নাতিনের নানা হয়ে যাচ্ছো।
আজ এই বাড়ীতে সবাই খুশী, আবার আগের মতো সব কিছু ফিরে এসেছে।দিন মাস কখন যে চলে যায় কেউ টেরি পায়না।তেমনি প্রাপ্তির ও আজ ডেলিভারি সময় হয়ে আসছে।সবাই হাসপাতালে অপেক্ষা করছে।ফারহান তো বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁদে চোখ গুলোকে ফুলিয়ে ফেলেছে।একটু পর বাবুকে নিয়ে দুইজন সিস্টার এসে বললো বাচ্চাকে কে কোলে নিবেন আসেন।সবার আগে মেজো কাকা আর নীরা গেলো।মেজো কাকা হাত পেতে কোলে নিতে যাবে তখনি সিস্টার বললো এইভাবে তো কোলে নাওয়া যাবেনা।

মাজো কাকা -তাহলে কি করতে হবে আগে বলে পেলুন আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

সিস্টার -(মুচকি হাঁসি দিয়ে)দশ হাজার টাকা ছাড়ুন তারপর।আর না হলে আমাদের কাছেই থাকুক।

মেজো কাকা -আরে আপানারা কোথায় যাচ্ছেন।(পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে)টাকাটা সিস্টারদের হাতে দিয়ে আপাদত আমার কাছে এটাই আছে। এইবার আমার কোলে দিন।

মেজো কাকার কাণ্ড দেখে সবাই না হেঁসে পারলোনা।কিন্তু বিষণ চিন্তাও হচ্ছে প্রাপ্তির জন্য।সবাই বাবুকে পেয়ে অনেক খুশী এই বলে আমার কাছে দাও, ওই আমার কাছে দাও।এইদিকে ফারহানতো বাবুর দিকে কোনো খেয়ালি নেই।বার বার অপারেশন রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে কখন প্রাপ্তিকে বের করবে।আচ্ছা প্রাপ্তি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো ।প্রাপ্তি এখন কি করছে।অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা এতো অল্পবয়সেই সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। ফারহানের মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন উকি মারছে।বড় ভাবী ফারহানকে নিছের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে দেখে বাবু কে কোলে নিয়ে ফারহানের সামনে এসে,

বড় ভাবী -ফারহান! দেখ তোর ছেলে ঠিক তোর আর প্রাপ্তির দুজনের চেহারাই পেয়েছে।
কথাটা বলা শেষ করতেই ফারহান নিছের দিক থেকে মাথাটা উঠিয়ে বড় ভাবীর দিকে চোখ গুলোকে বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।এইভাবে তাকাতে দেখে বড় ভাবী একটু ভয় পেয়ে কিরে এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে?তোর বাবু কোলে নিবিনা? তোর বাবুকে দেখ ঠিক তোদের মতোই হয়েছে।
ফারহান আর চুপ থাকতে না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামি করতেছো।প্রাপ্তি ওইখানে একা একা অনেক কষ্ট করতেছে আর আমি বাচ্চা পেয়ে সব ভুলে যাবো? সবার দিকে তাকিয়ে আপনারা সবাই একটা কথা মনে রাখবেন আমার প্রাপ্তির যদি কিছু হয় না আমি এই বাচ্চার মুখ কখনোই দেখবোনা।
ফারহানকে কেউ এর আগে এতো রাগী ভাবে দেখেনি।ইমারান দৌঁড়ে এসে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে প্লিজ তুই ঠাণ্ডা হও এতো উত্তেজিত হয়ে পড়িসনা সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

৪ বছর পর

বাবাই! বাবাই! তুমি এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছো? জানো? তোমাকে আমি পুরো বাড়ী খুঁজেছি। ফারাবীর কথা শুনে ফারহান পিছনে ফিরে তাকালো।ফারাবীর কাছে এগিয়ে এসে তাকে আদর করে কোলে নিয়ে ফারহান বললো,
বাবা আমিতো প্রতিদিন বিকালেই ছাদে আসি তুমি জানো না?তুমি আমাকে পুরো বাড়ী না খুঁজে ছাদে চলে আসতে তাহলেই তো তোমার বাবাই কে পেয়ে যেতে।

ফারাবী -কুটকুটে হাঁসি দিয়ে আচ্ছা বাবাই তুমি প্রতিইইইইইই দিন ছাদে এসে ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? ওইখানে কি আমার আম্মু আছে?

ছেলের কথা শুনে ফারহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।কি বলবে খুঁজে পাচ্ছিলোনা।
তাই ছেলেকে বললো নিছে চলো তারপর তোমাকে বলবো আমি কেন তাকিয়ে আকাশ দেখি।
ফারাবীকে কোলে করে এসে ড্রইংরুমে সোফায় ফারাবীকে বসিয়ে প্রজেক্টের কাগজ পত্র গুলো গুছিয়ে ফারাবীর পাশে বসে কাজ করছে।
বাবাকে কাজ করতে দেখে ফারাবী বললো কি হলো বাবাই বলো না কেন?
এমন সময় প্রাপ্তি দুই কাপ কফি নিয়ে আসতে আসতে বললো কী হয়েছে আমার লক্ষ্মী সোনাটার? ফারহান! ও কি জানতে চাইছে বলোনা কেন?

ফারহান হাতের কাজটা রেখে প্রাপ্তির থেকে কফি নিতে নিতে বললো, তোমার ছেলে জানতে চাইছে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি কেন? ওই আকাশে কি ওর আম্মু আছে?কথাটা শুনে প্রাপ্তি একগাল অট্র হাঁসি দিয়ে ফারাবীকে কোলে নিয়ে বললো বাবা তোমার কেন এমন মনে হয়েছে আমি ওই আকাশেই থাকি?

ফারাবী -আম্মু তুমি বলো বাবাই যতোক্ষণ বাসায় থাকে তোমার দিকেই তো বেশীর ভাগ তাকিয়ে থাকে তাই আমি ভাবলাম তুমি ওই আকাশে আছো তাই বাবাই ওই আকাশ দেখে।ছেলের কথা শুনে এইবার প্রাপ্তিও ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসে আছে।

(সারাজীবন সবার ভালোবাসায় কাটুক গভীর সুখের ও শান্তিতে।ছোট্র ছোট্র ভালোবাসা দিয়ে সুন্দর একটা সংসার গড়া যায়।সব ভুল গুলোকে শুধরে নিয়ে বেঁচে থাকুক সবার জীবনের ভালোবাসা।)

সমাপ্ত

অজানা_অনুভূতি পার্ট:৩৫

0

অজানা_অনুভূতি

পার্ট:৩৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

দুই দিন হাসপাতাল থাকার পর প্রাপ্তি আজ বাড়ীতে আসবে।সবাই অনেক খুশী। এই দুইদিন প্রতিনিয়ত ফারহান প্রাপ্তির খেয়াল রেখেছে।প্রাপ্তির কাছে কাউকেই বলতে দেয়নি ও যে প্রেগন্যান্ট। সকাল ১১.০০ টা বেজে গেছে,নীরার প্রাপ্তির সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।প্রাপ্তি ফারহানকে না দেখতে পেয়ে,

প্রাপ্তি -নীরা, ফারহান কোথায়? ওকে সকাল থেকে দেখছিনা কেন?

নীরা -তোকে বাসায় নেওয়ার জন্য হয়তো সব রেডি করছে।টেনশন করিসনা চলে আসবে।

প্রাপ্তি- তাই হয়তো হবে। জানিস? নাদিয়া আপুকে আমার কেমন জানি লাগে। সবকিছুতেই রহস্য নিয়ে কথা বলে।

নীরা -কেন তোর এইরকম মনে হলো? কই আমিতো এমন কিছু দেখিনি যেটাকে রহস্য বলা যেতে পারে।

প্রাপ্তি- জানিস কাল রাতে ফারহান যখন আমায় খাইয়ে দিচ্ছিলো,কিন্তু আমি খাচ্ছিলাম না দেখে ফারহান বললো তুমি না খেলে তোমায় একটুও ভালোবাসবোনা।তখন নাদিয়া আপু এইখানেই ছিলো। কথাটা শুনার পর ওনি অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো মুচতে মুচতে এখান থেকে চলে গেলেন।

নীরা -হয়তো তোদের ভালোবাসা দেখে ওনারও পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।

এমন সময় ফারহান এসে বললো, নীরা সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে নিয়েছোতো?

নীরা -হ্যাঁ।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে, কোথায় ছিলে তুমি এতোক্ষণ?

ফারহান -বাসায় যাবা এইখনের বিল পরিশোধ করতে হবে না?হাসপাতালে আরো অনেক কিছু ফর্মালিটি আছে সেইগুলো শেষ করে আসলাম।

প্রাপ্তি -তাহলে আর দেরী করছো কেন? আমার এইখানে একটুও ভালো লাগছেনা।
আচ্ছা ফারহান নাদিয়া আপু কোথায়? সকাল থেকে একবারো আমায় দেখতে এলোনা।

ফারহান -কাজে ব্যস্ত আছে। তুমি হঠাৎ ওকে নিয়ে পড়লে কেন?

নীরা -ভাইয়া আর বলবা না।প্রাপ্তি এতোক্ষণ কি বলে জানো? নাদিয়া আপু নাকি কেমন রহস্য নিয়ে কথা বলে।

ফারহান -প্রাপ্তির কাছে এসে আরে পাগলি ওই এইভাবেই বলে।এইটা নিয়ে ভাবার কি আছে।নীরা এইবার চলো বাসায় সবাই অপেক্ষা করছে।
কথাটা বলেই ফারহান প্রাপ্তিকে কোলে তুলে নিলো,

প্রাপ্তি অবাক হয়ে, এই কি করছো তুমি? আমাকে ছাড়ো।
ফারহান -গাড়ীতে বসিয়ে তারপর ছাড়বো।

প্রাপ্তি -কিহ্ঃ মানুষে কি বলবে বলোতো? নীরা! নামাতে বলনা।
নীরা কিছু না বলে একগাল হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলো।

ফারহান -চুপ করে থাকোনা, এইভাবে চেঁচাচ্ছ কেন?লোকে এখন এইটাই ভাববে আমি তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি আর কথা বাড়ালো না,পাগলটাকে বলেও কোনো লাব নাই এর ছেয়ে ভালো চুপ করেই থাকি।
প্রাপ্তিকে নিয়ে গাড়ীতে বসিয়ে ফারহান পিছনের দিকে ফিরে তাকাতেই নাদিয়া চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান এগিয়ে গিয়ে নাদিয়া আমরা চলে যাচ্ছি।প্রাপ্তিকে নিয়ে মাঝে মাঝে তোর কাছে আসবো,চিন্তা করিস না।
নাদিয়া-এই দুইদিন তোকে অনেক কাছ থেকেই দেখেছি তুই সত্যিই প্রাপ্তিকে পেয়ে অন্য রকম হয়ে গেছিস। সেই আগের ফারহান আর নেই।

ফারহান -ভালোবাসার জন্য মানুষ কিনা করতে পারে বল?তাই আমি করছি প্রাপ্তির জন্য। কোনো কিছুর কমতি রাখতে চাইনা।
ভালোবাসি অনেক তাকে আমি, কতোটা সেটা বলে বুজাতে পারবোনা।

নাদিয়া -তোকেও তো কেউ একজন পাগলের মতো ভালোবাসতো তাহলে তারটা অবহেলা করলি কেন?

ফারহান -প্লিজ নাদিয়া পুরোনো কিছুই আমি মনে করতে চাইনা।আর তুই যেটা বলছিস আমি তোকে আগেও বলেছি তোকে আমি কখনো ভালো একটা বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবিনি।প্রাপ্তি বসে আমাদের দেখছে, সকাল থেকে তোকে নিয়ে ওর মনে অনেক প্রশ্ন জেগে বসেছে।আমি চাইনা ও কোনো কিছুতে কষ্ট পাক।আমি জানি তুই আমাদের বিয়েতেও এই কারনেই আসিস নাই।কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না, কারণ আমি প্রাপ্তিকেই ভালোবাসি।আচ্ছা আজ তাহলে আসি।
নাদিয়া চোখ গুলো টলমল করছে মনে হচ্ছে এইযানি চোখের পানি গুলো নিচেই পড়ে গেলো।প্রাপ্তি গাড়ীতে বসে থেকে নাদিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।হয়তো বুজার চেষ্টা করছে ফারহান ওকে কি এমন কথা বলছে যে চোখের পানি টলমটল করছে।নীরা প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কিরে কি ভাবছিস ওই দিকে ফিরে।

প্রাপ্তি -নারে কিছু না।

ফারহানকে এসে ড্রাইভিং সিটে বসতে দেখে প্রাপ্তি বললো,তুমি ড্রাইভ করবে?আজ ড্রাইভার আসেনি?

ফারহান -না আমি মানা করেছি,কিচ্ছু হবেনা আমি আছিতো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

বাসার সবাই বসে আছে প্রাপ্তির অপেক্ষায়।বাড়ীর সবাই অনেক খুশী বাড়ীতে কিছুদিন পর নতুন কেউ আসবে।প্রাপ্তির মা, মেজো মা বিভিন্ন রকমের মিষ্টি নিয়ে ড্রইংরুমে বসে আছে।
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ইমরান একগাল হাঁসি নিয়ে দরজা খুলে দিলো।

প্রাপ্তি বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললো কাকাই তুমি আমাকে আনতে যাওনি কেন? শুধু নীরাই গিয়েছিলো।আর তোমরা কেউ যাওনি।

ইমরান -আরে আমি তো যেতে ছেয়েছিলাম কিন্তু ফারহান বললো ওই তোকে নিয়ে আসবে।কথাটা শেষ করতেই নাজিফা দৌঁড়ে এসে আপু,,,,,উউউউউউউউ,,,,,,, কনগ্রুয়েন্স।কথাটা শুনার পর অনেক অনেক খুশী আমি খালামনি হবো।আমার সব ফ্রেন্ডকে আমি ফাস্ট টাইম খালামনি হবো তাই সবাইকে ট্রিট দিয়ে এলাম।নাজিফার মুখে কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক চোখে ফারহানের দিকে তাকালো।
ফারহান প্রাপ্তির তাকানো দেখে অন্য দিকে ফিরে আছে।মেজো মা এসে বললো এইদিকে আসো একসাথে দুজনেই দাঁড়াও।লজ্জা পাওয়ার কি আছে।নীরা মিষ্টির প্লেট এই দিকে দে।আমাদের মেয়ে আর জামাইকে মিষ্টিমুখ করাতে হবেনা।
এমন ভাবে শুনবো কখনো ভাবিনি।এখন যখন প্রাপ্তি সুস্থ হয়ে এসেছে তাহলে সবাই মিলে একটু মিষ্টিমুখ হয়ে যাক।

প্রাপ্তি কিছু বলছেনা নিস্তব্ধ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান বার বার আড় চোখে প্রাপ্তিকে দেখছে।আল্লাহ আমার কপালে আজ কি আছে।হয়তো সবার সামনে কিছু বলছেনা।রুমে নিয়ে গিয়ে যদি রাম ধোলাই করে তাহলে আমি শেষ।

প্রাপ্তি অনেকক্ষণ পর নিস্তব্ধতা ভেঙে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে, আম্মু আমি রুমে যাই
পরে এসে কথা বলবো।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে গেলো। পিছন পিছন ফারহানও রুমে গেলো।গিয়ে দেখে প্রাপ্তি বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে একটু চুপ করে থেকে, সরি প্রাপ্তি। প্লিজ তুমি এইভাবে রাগকরে থেকোনা।

প্রাপ্তি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে।
ফারহান আবার বলতে শুরু করলো বিশ্বাস করো আমিও চাইনি এতো সকাল বেবি আসুক।আল্লাহ্‌ যখন খুশী হয়ে দিয়েছে তখন তো মেনে নিতেই হবে তাই না।আর যদি তুমি না চাও তাহলে,,,,,,,,,,ফারহান বলার আগেই প্রাপ্তি ফারহানের মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে , আমি অনেক খুশী অনেক,যা আমি তোমাকে বলে বুজাতে পারবোনা, আসলে এইখুশীটা কিভাবে প্রকাশ করবো বুজতে পারছিনা।তাই চুপ হয়ে আছি।
কথাটা শুনে ফারহান প্রাপ্তিকে কাছেটেনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে I love u.I love u, I love u.

প্রাপ্তি -মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে উমমমম,,,,,,ছাড়োতো।হয়েছে হয়েছে এতো ভালোবাসা দেখাতে হবেনা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর তোমার সাথে অনেক আড্ডা দিবো।

ফারহান -চলো আমিও যাবো।

প্রাপ্তি -কোথায় যাবা তুমি?

ফারহান -তোমায় হেল্প করবো।

প্রাপ্তি-একদম আসবেনা।না হলে আমি ফ্রেশ হতে যাবো না।

ফারহান -আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও।
আমি ড্রইংরুমে আছি।

ফারহানকে আসতে দেখে ইমরান বললো কিরে আমিতো নানা ভাই হয়ে যাচ্ছি।তোর কি হিংসে হচ্ছে?কথাটা বলে ইমরান হাসঁতে শুরু করলো।

ফারহান -তুই একা কিছু হচ্ছিস না আমিও বাবা হচ্ছি।এখন তো তোর আরো বেশী হিংসে হচ্ছে।

নীরা -তোমরা ঝগড়াঝাঁটি বাদ দাও। সবছেয়ে বেশী আমি খুশী কারণ আমি (চিৎকার দিয়ে)খালামনি হচ্ছি।

চলবে,,,,,,,,,