Monday, August 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2394



ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

_দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে অভ্র বার বার রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশীও আড় চোখে তাকিয়ে অভ্রকে দেখছে।

অভ্র-রেশী! তুমি কি কাউকে কখনো ভালোবেসেছো?মানে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?
রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।

অভ্র -কি বলো তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নেই এইটা তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
কথা বলতে বলতে আবার দুজনে হাঁটতে লাগলো।

আয়ান -কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো যেতে বলছিতো।
প্রাপ্তি আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজার দিকে একটু এগিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। পিছনে ফিরে দেখে আয়ান মন খারাপ করে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে আবার দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি চোখ দুটো বন্ধ করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।চোখ বন্ধ করা ওই মায়াবী মুখটা দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।ইচ্ছে করবে তাকে শত জন্মে ভালোবাসতে।ইচ্ছে করবে ওর মতো মানুষটাকেই সারাজীবন পাশে পেতে।ওকে দেখে নিজের চোখের পলক ফেলতে ইচ্ছে করেনা।একটা পলক ফেললেই মনে হবে শত যুগ এই মায়াবী মুখটা দেখা হবে না।

আয়ান -(আস্তে আস্তে নরম স্বরে)প্রাপ্তি! এই প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমার?

প্রাপ্তি আয়ানের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে চুপ তাকতে ইশারা করলো।
আয়ান প্রাপ্তির হাতটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে নিচে নামালো।আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে আনতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে ফেললো।আয়ান ঠোঁট প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে ছোঁয়া লাগাতেই
অভ্র এসে আয়ান তুই,,,,,,,,,
কথাটা বলতেই আয়ান চমকে উঠে প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে, অভ্র!তুই এইসময়?
অভ্র-সরি সরি আমি কিছু দেখিনি।
আয়ান রেশীর দিকে তাকাতেই রেশী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তিও লজ্জা পেয়ে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।
অভ্রর প্রতি আয়ানের খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেও পাচ্ছেনা।অনেক ধৈর্যের পরিক্ষা দিয়ে প্রাপ্তির এতো কাছে গেলাম আর অভ্র এসে সব ভেস্তে দিলো।

অভ্র -সরি রে,,,আমি সত্যি তোদের এইভাবে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।উপরের সবাই তোদেরকে না দেখতে পেয়ে ডাকছে।সরি বন্ধু এইরকম সময়ে ডিস্টার্ব করার জন্য।

আয়ান-(নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে)নো প্রবলেম! রেশীকে দেখে একটু খারাপ লাগছে।

অভ্র -আরে রেশীকি এখনো ছোটো নাকি? ও সব বুজে।হয়তো শান্ত ভাবখানি নিয়ে থাকে।
আয়ান -তুই বুজচ্ছিস না কেনো।ও আমার ছোটো বোনের মতোই । কখনো এইটা ভাবিনি ওকে আমি রাস্তার পাশে পেয়েছি।তাই একটু খারাপ লাগছে।

অভ্র -আচ্ছা আয়ান তুই যখন ওকে পেয়েছিস ও কি তখন বিয়ের পোষাকে ছিলো তাইনা?

আয়ান -হুম। চল ছাদে যাই।

অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।নিলিমা বেগম সবাইকে ঘুমানো ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এই বাড়িতে এতো গেস্ট সবাইকে তো আর আলাদা আলাদা রুম দেওয়া যায় না।প্রাপ্তি নিচে এসে নিলিমা বেগমকে নিজের রুমটা আকাশদের আর অরণীর রুম টা ঝিকুকদের দিতে বললো।সুমি এসে প্রাপ্তির কথা শুনে প্রাপ্তি! এক দিন না ঘুমালে কিচ্ছু হবে না এককাজ করো যে যে আড্ডা দিতে চায় তাদের সবাইকে নিয়ে ছাদে চলো আমরা সবাই আড্ডা দিবো।

অরণী -ভাবী তুমি ঠিকি বলছো।

ঠিক আছে তোমরা সবাই যাও আমি তোমাদের সবাইকে কফি বানিয়ে দিয়ে আসবো।

প্রাপ্তি-আম্মু তুমি ঘুমাতে যাও! আমি সবার জন্য কফি বানিয়ে নিবো।

সুমি -হ্যাঁ আন্টি আমিও প্রাপ্তিকে হেল্প করবো।
নিলিমা বেগম মুচকি হেঁসে আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
সবাই উপরে চলে গেলো, রেশীকে সোফায় বসে থাকতে দেখে প্রাপ্তি এসে, রেশী! তুই যাবি না।প্রাপ্তির কথাটা শুনে রেশী তখনকার ঘটনার জন্য নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি রেশীর সাথে বসে নিচের দিক থেকে নিজের দিকে রেশীর মুখটা ফিরিয়ে, তুই তখনকার ঘটনার জন্য লজ্জা পাচ্ছিস? আমি খেয়াল করলাম এর পর থেকে তুই আমার আর তোর ভাইয়ার থেকে দূরে দূরে থাকছিস।রেশী এইখানে তো তোর কোনো দোষ নেই।মাঝে মাঝে আমরা না চাইতেও এমন ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে।এখন চল আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।

রেশী -ভাবী তুমি যাও আমি আসছি।

প্রাপ্তি -ওকে আমি যাচ্ছি।তুই তাড়াতাড়ি আয়।কথাটা বলেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।
রেশী বসে বসে নিহাদের কথা ভাবছে।সেইদিন ওনি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। অনেক কথাও বলেছিলেন আমার সাথে।কিন্তু যদি সব আয়ান ভাইয়াকে বলে ভাইয়া আমায় কি ভাববে।অবশ্য ভাইয়াকে তো আমি সবি বলেছিলাম।আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।তারপরও কি আমায় ভুল বুজবে।আমার কি তাহলে এখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমি কোথায় যাবো?আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
অভ্র চেঞ্জ করে ছাদে যাবে তখনি দেখে রেশী বসে আছে।রেশীর কাছে একটু এগিয়ে এসে, রেশী তুমি উপরে যাবেনা?বসে বসে কি ভাবছো?
অভ্রর কথা শুন রেশী চমকে উঠে, হ্যাঁ!

অভ্র -তুমি কি কিছু ভাবছো নাকি?
কথাটা শুনে রেশী অভ্রর দিকে তাকালো।

অভ্র-না! তুমি চুপচাপ বসে আছো দেখেই কথাটা বললাম।আচ্ছা চলো ছাদে যাই।
রেশী অভ্রর পিছন পিছন ছাদে গেলো।
আয়ান রেশীকে দেখে অন্য দিকে ফিরে আছে।প্রাপ্তি আয়ানকে ইশারা করলো রেশীর সাথে কথা বলার জন্য।সুমি অভ্র আর রেশীকে একসাথে দেখে, আয়ান! একটা জিনিস খেয়াল করেছিস রেশী আর অভ্রকে কিন্তু খারাপ লাগছেনা।দেখ দুজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে।কথাটা শুনেই রেশী অবাক হয়ে অভ্রর দিকে তাকালো।

সুমি -রেশী তুমি কি আমার কথায় রাগ করেছো?
রেশী কিছু বলছেনা অভ্রর দিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।অভ্রও রেশীর দিকে অসহায় মতো তাকিয়ে আছে আর ভাবছে আমি তো ছেয়েই ছিলাম তোমাকে আমার সারা জীবনের সাথী করে রাখতে।কিন্তু সেইদিন কি এমন হলো তুমি আমাকে অসহায়ের মতো ছেড়ে দিয়ে আসলে।যেইদিন আয়ানের বাসায় আমি তোমাকে দেখলাম সেইদিন আমার মতো অবাক কেউ হয়েছে কিনা কখনো আমি জানিনা।
আয়ান দুজনের দিকে তাকিয়ে, অভ্র তুই যে ভাবে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে ভাবী তোর সাথে সত্যিই রেশীকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।

আয়ানের কথা শুনে রেশীর থেকে চোখ ফিরিয়ে অভ্র কিছু না বলেই আকাশের সাথে গিয়ে বসলো।
সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সকাল হয়ে গেলো কেউ টেরি পেলোনা।সকাল বেলা সবাই নিচে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো।আসিফ রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই নিহাদ বললো আসিফ! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী এর মধ্যে যা খুশি করতে পারো,পরে আর পারবেনা।তখন মৃতদের মতোই থাকতে হবে চাইলেই নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারবেনা।

ঝিনুক -(ঝাড়ি দিয়ে)এই তুমি কি বলতে চাইছো বলোতো? বিয়ের পর সবাই মৃত হয়ে যায়?

আকাশ -ঝিনুক! নিহাদ কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি।বিয়ের পর ছেলেদে সব কিছুই চেঞ্জ হয়ে যায়।নিজের ইচ্ছা মতো কিছু করা যায়না।

সুমি -আমি কিন্তু এইখানেই বসে আছি।আমি কি তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে বারণ করেছি?এই প্রাপ্তি তুই করেছিস আয়ানকে কখনো?

আয়ান -সুইট হার্ট! প্রাপ্তি কিন্তু আমায় কোনো দিন কিছু বলেনি।আমি যেই ভাবে ইচ্ছে হয়েছে সেইভাবেই চলেছি।

প্রাপ্তি -ভাবী! আমি কি বারণ করবো বলো? নিজের ইচ্ছে মতো চললেও খারাপ কিছুতো করেনা।তাই আমার কখনো বারণ করতে হয়নি।শুধু চুপচাপ দেখেই যেতাম।

সবার কথা শুনে আসিফ বললো,এইতো দেখছি পুরোই ঝামেলা। প্রাপ্তি! তোরা কি জেনে শুনে আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছিস নাকি?

প্রাপ্তি -ভাইয়া তুই কি এখনো ছোটো বাচ্ছা? আজ তোর বিয়ে এখন তো একটু সিরিয়াস হও।

সিয়াম ফোনে কথা বলতে বলতে এসে এইযে সবাই নাস্তা করতে এসেতো ভালোই আড্ডা দিচ্ছেন! মেয়ের বাড়ি থেকে নিশান ফোন করেছে আমরা কখন রওনা দিবো?
কিন্তু আপনারা সবাই যে ভাবে আড্ডা দিচ্ছেন আজকে তো রওনা দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।

আয়ান -সিয়াম কিন্তু ঠিক কথায় বলেছে।মেয়েদের তো আবার সাজতে সাজতে একদিন কাটিয়ে দেয়।

অরণী -ভাইয়া নিজের বউ সাজেনা বলে আমাদেরকে কথা গুলো বলছো তাইতো?

আকাশ -আচ্ছা সবাই যাও রেডি হয়ে নাও।সিয়াম কিন্তু সত্যি বলছে মেয়েদের বাড়িতে যেতে অনেক লেট হয়ে যাবে।

আকাশের কথা শুনে সবাই উঠে গেলো রেডি হওয়ার জন্য।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__গাঁয়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।অভ্র আর আকাশ আসিফকে রেডি করিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। রেশীকে দেখে অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে।আয়ান সবাইকে ড্রইংরুমে দেখতে পেয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, অরণী! তোমার আপু কই তাকে তো দেখছিনা? নিলিমা বেগম এসে এই মেয়েটা যে কি করছে আল্লাই ভালো জানে।

আয়ান- তোমরা সবাই ছাদে যাও আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি বলেই আয়ান প্রাপ্তির রুমের দিকে এগুতেই প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে এলো।প্রাপ্তিকে দেখে আয়ান হা করে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।তার মনের অপ্সরী তার চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।সবাইও কম অবাক হয়নি প্রাপ্তিকে দেখে।সুমি আয়ানকে এইভাবে থাকতে দেখে আয়ানের কাছে এসে, হা বন্ধ করো, না হলে মশা ঢুকে যাবে।
আয়ান লজ্জা পেয়ে মন না চাইলেও প্রাপ্তির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

নিলিমা বেগম -কিরে,,, প্রাপ্তি! এতো দেরী হলো কেন?

প্রাপ্তি -রেডি হতেও তো সময় লাগে তাইনা।তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো!

সবাই ছাদে চলে গেলো। নিহাদ বার বার অভ্র আর রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশী চুপচাপ হয়ে অরণীর সাথে বসে আছে।অভ্র আয়ানের সাথে বিভিন্ন কাজে হেল্প করছে।সবাই একে একে আসিফকে হলুদ লাগাচ্ছে আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।আজাদ সাহেব আয়ান আর অভ্রকে ডেকে নিয়ে যা যা নিয়মনীতি আছে সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করবে।রাত যেনো বেশি না হয়।

অভ্র -আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না। আমরাতো আছিই।

ঝিনুক নিহাদের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে,ঝিনুক চুপ করে না থেকে,এই তোমার সমস্যা কোন জায়গায় বলোতো? আসার পর দেখছি গোয়েন্দাগিরি তে নাম লিখিয়েছো।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এইখানে আসিফের বিয়ের ইনজয় করতে আসোনি।এসেছো গোয়েন্দাগিরি করতে। চোখ গুলোকে একবার এই দিকে আরেকবার ওই দিকে করছো। সবাই কি ভাববে বলোতো?

নিহাদ -চুপ করবে? চোখ গুলো কোথায় নিয়ে থাকো সেটা বলো? ওইযে আয়ানের পাশের ছেলেটার দিকে তাকাও! ওকে চিনতে পারো কিনা দেখো?

ঝিনুক বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে, অভ্র!

নিহাদ -হুম অভ্র!

ঝিনুক – ও এইখানে কিভাবে? আমিতো কিছুই বুজতেছিনা।ওর সাথে তুমি কথা বলনি।দাঁড়াও আমি গিয়েই ওর সাথে কথা বলছি।কথাটা বলেই ঝিনুক উঠতেই নিহাদ হাত ধরে, বসো এই খানে।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে কিন্তু ও আয়ানের সামনে আমাকে না চিনার ভাব করছে।কিন্তু কেনো সেটাই বুজতে পারছিনা।

ঝিনুক -কিন্তু অভ্র এইখানে কার রিলেটিভ হয়? প্রাপ্তিদের?

নিহাদ -না! তোমার ছোটো ভাইয়ের।মানে আয়ানের বেষ্ট ফ্রেন্ড। আয়ানের হয়েই সে এই বাড়িতে।

ঝিনুক -তাহলে সমস্যা নেই! একজন আরেক জনের ফ্রেন্ড হতেই পারে।জীবনে চলার পথে কত মানুষ আসে আর যায়।তবে অভ্রকে অনেক দিন পরে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।ছেলেটার সহ্য শক্তি অনেক।ওর জায়গা অন্য কেউ থাকলে সেইদিনের অপমানে ভেঙে পড়তো। কিন্তু অভ্র নিজের জীবনকে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলো। তবে মেয়েটা জানতেই পারলোনা মেয়েটা অভ্রকে বিয়ে না করে কত বড় ভুল করেছে।অভ্রর মতো এইরকম ছেলে কয়জনের ভাগ্যে জুটে।

নিহাদ -(একটু চুপ করে থেকে)আচ্ছা ঝিনুক আমি যদি বলি সেইদিনের মেয়েটা আজ এইখানেও আছে তুমি কি অবাক হবে?

ঝিনুক-(একটু জোর গলায়)কিহ্! অবাক হবোনা মানে?ওই মেয়েকে পেলে আমি আগে এইটা জিজ্ঞাস করতাম অভ্রর কোন দিকে কম আছে ? অভ্রকে কেনো সেইদিন সবার সামনে অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে?মানুষে সামনে হাঁসির পাত্র বানিয়েছে কেনো?সেইদিন অভ্রর মা বাবাকে কতোটা হেনস্থা হতে হয়েছে।কই মেয়েটা! আমাকে একবার দেখিয়ে দাওতো।আজকে মেয়েটা আমার সব প্রশ্নের আনসার দিতেই হবে।

নিহাদ-ঝিনুক! প্লিজ এখন চুপ করো।তুমি এখন কোনো ঝামেলা করোনা প্লিজ।ওদের বিয়েটা মিটে যাক তারপর না হয় এইসব নিয়ে কথা বলা যাবে।

ঝিনুক -তুমি আগে এইটা বলো মেয়েটা কে? আমি মেয়েটা কে দেখতে চাই।

নিহাদ -রেশী! আয়ানদের সাথে যে মেয়েটা থাকে সেই মেয়েটা।

ঝিনুক নিহাদের কথা শুনে অবাক হয়ে, কি বলো রেশী?আচ্ছা আয়ান কি এই মেয়ের ব্যাপারে সব জানে?

নিহাদ -সেটা তো জানি না।

আয়ান প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো নিচে যাওয়ার জন্য।ইশারা করে আয়ান নিচে চলে গেলো।প্রাপ্তিও নিচে নিজের রুমে আসতেই দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতেছে।আয়ানকে দেখে নিজের কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে এখন তোমার ডাকার সময়? সবাই কি ভাববে বলো তো? সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমাকে এইখানে আসতে হয়েছে।
আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।প্রাপ্তির কথা শেষ হতেই আয়ান প্রাপ্তিকে হেছকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে প্রাপ্তি কোমর জড়িয়ে ধরে মহারানী তুমি আমার জন্য সেজেছো কিন্তু আমার সামনেই আসছোনা।লজ্জা পাচ্ছো?

প্রাপ্তি -মোটেও না।লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

আয়ান সেটাই তো। তাহলে দূরে দূরে থাকছো কেনো?

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে আর মনে মনে ভাবছে আয়ানকে কি করে যে বুজাই।

প্রাপ্তি -চলো না উপরে যাই। সবাই হয়তো আমাদের খুঁজছে।

আয়ান -পালাতে চাইছো তাই তো। ওকে যাও।

আকাশ এইপাশ ওপাশ তাকিয়ে, সুমি! আয়ান কোথায়?

সুমি-প্রাপ্তি ও তো দেখছি এইখানে নাই।হয়তো দেখো দুই জনে লুকিয়ে প্রেম করছে।রেশী! যাওতো ওদের কে ডেকে নিয়ে আসো।

রেশী মুচকি হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে উঠে সিঁড়ির দিকে এগুতেই, অভ্র ও আসিফের কাছে যাচ্ছিলো এমন সময় রেশী অভ্রর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতেই অভ্র ধরে ফেললো।রেশী লজ্জা পেয়ে নিজেকে অভ্রর কাছ থেকে ছাড়িয়ে সরি ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি।

অভ্র -আমার মনে হয় তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে ধাক্কাটা খেয়েছো(হাঁসি চেপে রেখে)কি! ঠিক বলছিতো?

রেশী -(ভয়ে ভয়ে,) না না ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে একদম দেখতে পাইনি।আমি তো ভাইয়া আর ভাবীকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।

অভ্র-তাই! তার মানে তুমি ভালোবাসার মাঝ খানে ডিস্টার্ব করতে যাচ্ছিলে?

রেশী -না ভাইয়া সত্যি বলছি আমি ইচ্ছে করে যাচ্ছি না।সুমি ভাবী আমাকে বললো তাদের ডেকে আনতে।

অভ্র -না তুমি মিথ্যা বলছো। ছিঃ রেশী এইটা কি তুমি ঠিক করছিলে।দুজন মানুষ একান্তে সময় কাটাচ্ছে আর তুমি,,,,,,, আমি ভাতেই পাচ্ছি না।(রেশীকে খেপানোর জন্য কথা গুলো বলেই অভ্র মিটমিট করে হাঁসতে থাকলো)

রেশী অভ্রর কথা শুনে নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।ওনি কেনো আমায় এইগুলো বলছে? আমি কি ইচ্ছে করে যাচ্ছিলাম নাকি।ওরাই তো আমাকে যেতে বললো।কেন ওনি বিশ্বাস করছেন না।কথা গুলো ভাবতেই রেশীর চোখের কোনে পানি এসে গেছে।
অভ্র -সেই দিন আমিও কান্না করেছিলাম।হয়তো এইকান্না আমি কাউকে দেখাতে পারিনি।তোমরা মেয়েরা যখন যেভাবে খুশি কাঁদতে পারে।কিন্তু আমরা ছেলেরা কখনোই কাঁদতে পারিনা।নিজেদের যন্ত্রণা গুলো নিজেদের মনের কঠোরেই রাখতে হয়। রেশী! কেনো সেইদিন আমাকে এতো কষ্ট দিলে?(সব কথা মাঝে এই কথা একটু জোরে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো)

রেশি কথাটা শুনেই মুখটা উঠিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আপনি কিছু বলছিলেন?

অভ্র (বিব্রতভাব নিয়ে)না তোমাকে না!কোথায় যাচ্ছিলে যাও।

রেশী -না আমি যাবো না।

অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তির কথা শুনে অভ্র মুচকি হেঁসে আচ্ছা আমি কোন রুমে থাকবো সেটা দেখিয়ে দাও।

আসিফ -তুমি আমার সাথে আসো আমার পাশের রুমটাই তোমার।প্রাপ্তি আগেই ঠিক করে রেখেছে।
সিয়াম বাহিরে থেকে এসে অরণীকে ডাকছে। অরণী এসে, এতক্ষণ লাগে আসতে? বাহিরে বের হলে কি তোমার বাসায় আসার কথা মনে থাকেনা তাইনা?তোমার সাথে তো আয়ান ভাইয়াও থাকে কই ওনি তো বাহিরে গিয়ে ফালতু সময় কাটায় না।

সিয়াম -আস্তে কথা বলোনা, সবাই শুনলে কি ভাববে?

অরণী -শুনুক না।সবাই শুনলে যদি তোমার একটু উন্নতি হয় আরকি।

প্রাপ্তি আর নিলিমা বেগম এসে,

নিলিমা বেগম -কিরে, তুই সিয়ামের সাথে এইরকম চিল্লাচিল্লি করছিস কেনো? বাসায় অনকে গেস্ট তারা কি ভাববে?

অরণী -আম্মু তুমি এর মাঝে কথা বলোনা।

প্রাপ্তি -ঠিক আছে আমরা কথা বলবোনা।তোরা রুমে গিয়ে ঝগড়া কর মারামারি কর আমাদের কিছু যায় আসেনা।আর সিয়াম ভাইয়া! বউয়ে প্রতি একটু কেয়ার করতে শিখুন।

সিয়াম-আপু আপনি বলেন আমার কাজ থাকলে তো আমায় বাহিরে যেতেই হবে।কিন্তু অরণী শুধু শুধু আমায় বকা দিচ্ছে।

আয়ান এসে এই তোমরা সবাই পরে কথা বলো সিয়াম তুমি আমার সাথে আসো প্রাপ্তি তুমি যাবে? চল! মজার জিনিশ দেখাবো।

সবাই গিয়ে আসিফের রুমের দরজার সামনে গিয়ে,

আয়ান -চুপ করে সবাই শুনো।ভাইয়া নীরার সাথে কথা বলছে। আমরা সবাই গিয়ে একটু ডিস্টার্ব করে আসি।

সবাই রুমে ঢুকে,
আয়ান -ভাইয়া আপনি কি করছেন?
আসিফ সবাইকে দেখে, (তাড়াতাড়ি করে ফোন টা কান থেকে নামিয়ে) কই কিছু করছি না তো।

সিয়াম-ভাইয়া মনে হচ্ছে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন?

আয়ান সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, আরে সিয়াম! তুমি কি বলছো ভাইয়া তো কিছু করছিলোনা।সমস্যা নেই ভাইয়া আমরা এখন বসে আপনার সাথে আড্ডা দিবো।
আয়ানের কথা গুলো শুনে সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।

আসিফ -হ্যাঁ সমস্যা নেই।

অভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে আমিও কিন্তু আড্ডা দিতে চলে এলাম তোমাদের সাথে।

অভ্র -ভাইয়া আমাদের নীরা ভাবীর সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথা হয়তো? নাকি এখানেও আপনার লজ্জার ব্যাপার স্যাপার আছে?

আসিফ -(আমতা আমতা করে) অভ্র তুমি কিযে বলনা?

অভ্র -ভাইয়া আমি কি খারাপ কিছু বলে ফেললাম?আচ্ছা ভাবীর খবর আমরা না নিলে কে নিবে?

আসিফ -আমার কথা বাদ দাও, নিজে বিয়ে করছো না কেন? সব কিছু তো ঠিক আছে বিয়েটা করে ফেলো।

সবাই বসে আসিফের রুমে আড্ডা দিচ্ছে।নিলিমা বেগম রেশীকে বললো, রেশী! আসিফের রুমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, একটু ডেকে আনোতো। সবাই খাবে কখন? আমি খাবার দিয়ে দিচ্ছি কষ্ট করে সবাইকে ডাকো।

রেশী -জ্বী আন্টি! আপনি খাবার রেডি করেন আমি সবাইকে ডেকে আনছি।

রেশী আসিফের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে, ভাবী! খাবার খেতে সবাইকে ডাকছে।

প্রাপ্তি-রেশী ভিতরে আসো।কিভাবে যে একা একা পড়ে থাকো বুজিনা।কোথাও যেতে বললে ও যায় না।আসো ভিতরে আসো।

অভ্র রেশীর দিকে তাকিয়ে, কেমন আছো রেশী? বিকালবেলা একঝলক দেখা দিয়ে কোথায় যে হারিয়ে গেলে?

রেশী -ভাইয়া আন্টি ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য।পরে কথা বলি।

সবাই উঠে গেলো খাবার খেতে,আজাদ সাহেব এসে বসলেন খাওয়ার জন্য,আয়ান কালকের আয়োজন কেমন চলছে? কোনো সমস্যা হবে নাতো?

আয়ান -বাবা আপনি একদম চিন্তা করবেন না?আমরা সবাই তো আছি।সিয়াম! তোমার অফিস থেকে ছুটি নিয়েছো?

সিয়াম -হ্যাঁ আজকেই ছুটি নিলাম।৩ দিনের জন্য।

সকাল থেকেই সবাই অনেক ব্যস্ত। প্রাপ্তির সকাল থেকে একবারো আয়ানের সাথে দেখা হয়নি।ডেকোরেটরের লোকের সাথে আঠার মতো লেগে থাকতে হচ্ছে। আজাদ সাহেব অনেক আশা নিয়ে সব দায়িত্ব আয়ানের উপর দিয়েছে।ঠিকঠাক ভাবে পালন করতেই হবে।
অভ্রকে আয়ান স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল আনতে পাঠিয়েছে।সিয়াম আর অরণী গাঁয়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে নীরাদের বাড়ি গেলো।

আয়ান এসে ড্রইংরুমে বসতে বসতে রেশীকে ডেকে বললো, রেশী এক কাপ চা দাও তো।প্রাপ্তি চা হাতে করে এসে রেশী তুমি বসো আমি নিয়ে এসেছি। আমি জানতাম স্যার এখন এসে চা চাইবে।
তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি।

আয়ান মুচকি হেঁসে কিভাবে তুমি আমার মনে কথা গুলো বুজো বলো তো?
এমন সময় দরজায় দাঁড়িয়ে সুমি বললো, আয়ান এইকথাটা আগে আমাকেও বলতে তাইনা? এখন বউ পেয়ে তো সব ভুলে গেলে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি তো বিশ্বাস করতেই পারছেনা।সে সুমিকে দেখছে।একবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার সুমির দিকে।
আয়ান প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারায় সুমিকে দেখিয়ে মিটমিট করে হাঁসতে লাগলো।

সুমি -প্রাপ্তি! আমি কি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো ভিতরে আসতে বলবে না?
প্রাপ্তি -(এগিয়ে গিয়ে) আরে না না! ভাবী আমি কি সত্যি দেখছি নাকি সপ্ন বুজতে পারছিনা তাই থমকে গেছিলাম।(জড়িয়ে ধরে) কতো দিন পর তোমাকে দেখলাম।কিন্তু ভাইয়া কোথায়? ভাইয়াকে তো দেখছিনা।
তোমার ভাইয়া গাড়ি থেকে ব্যাগ গুলো নামিয়ে আসছে।তোমাদের জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।
রুমকি দৌড়ে এসে মা মনি!
প্রাপ্তি মা মনি কথাটা শুনেই পাশের দিকে তাকিয়ে দেখে রুমকি।রুমকিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে (কান্না জুড়িত কন্ঠে) আম্মু তুমি কেমন আছো? কতো দিন পর তোমায় দেখেছি।

রুমকি -মা মনি আমি একা আসিনি আম্মু আব্বুও আসছে।

প্রাপ্তি -তাই! কোথায় ওরা? পিছনে আসছে।
আকাশ আর নিহাদ কে সালাম দিয়ে ঝিনুক কে জড়িয়ে ধরে বাসার ভিতরে ঢুকলো।

ঝিনুক কে দেখে আয়ানও অবাক হয়ে আছে।ঝিনুক এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।(সবাই এসে ড্রইংরুমে ঝোড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আয়ানদের দেখছে।)আয়ানও নিজের চোখের পানি গুলো লুকোতে পারলোনা।আকাশ ও এসে ভাইবোনকে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলো।

ঝিনুক -কতো দিন পর তোকে দেখেছি।কতোটা বদলে গেছিস তুই।তোর কি আমাদের কথা একবারো মনে পড়েনা।

আয়ান -তুইও তো আমাকে ফোন দিসনি।তাই আমার ও একটু অভিমান হয়েছিলো তোর উপর।ভাইয়া! তুই বাচ্চাদের মতো কেনো কান্না করছিস? দুইটা বছর পর তোদের দেখা পেয়েছি।তাই আজকের দিনে আমি কাঁদতে চাইনা আর।
রুমকি আয়ানের কাছে এসে, মামা! তুমি তোমার ছোটো আম্মুকে ভুলে গেছো?

আয়ান নিজের চোখের পানি মুছে রুমকিকে কোলে নিয়ে না আম্মু তোমায় একটুও ভুলিনি।আমার আম্মু দেখছি কতো বড় হয়ে গেছে।(নিহাদের দিকে চোখ পড়তেই)আরে ভাইয়া তুমি কেমন আছো? তুমি দেখছি কোনো কথাই বলছোনা।

নিহাদ -কি করে বলবো? তোমাদের ভাইবোনদের দেখে আমি নিজেই ইমোশনাল হয়ে গেছি।নিলিমা বেগম কাছে আসতেই সুমি জড়িয়ে ধরে আন্টি কেমন আছেন?

নিলিমা বেগম -তোমাদের দেখে এখন অনেক ভালো আছি।

প্রাপ্তি ঝিনুক, নিহাদ,আকাশকে সবার সাথে পরিচর করিয়ে দিচ্ছে।নিহাদ রেশীকে দেখে, আয়ান! এ তোমাদের কি হয়?

রেশী নিহাদকে দেখে ভয় পেয়ে আছে। নিহাদ ভাইয়া কি সব বলে দিবে? আয়ান ভাইয়া আর ভাবী যদি আমায় ভুল বুজে।

আয়ান -ভাইয়া তুমি কি ওকে চিনো নাকি?

নিহাদ -হ্যাঁ! ওকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি,,,এমনকি ও তো,,,,,,,,

নিলিমা বেগম -আচ্ছা বাবা তোমরা পরে কথা বলো।আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।প্রাপ্তি তুই ওদেরকে রুম দেখিয়ে দে সবাই ফ্রেশ হয়ে নেক।(অরণী আর সিয়াম আসতেই) ওইতো অরণী আর সিয়াম এসে গেছে।অরণীকে দেখে সবাই ওদের সাথে কথা বলেছে।কথা শেষ করেই প্রাপ্তি সবাইকে রুমে নিয়ে গেলো।
ঝিনুক নিহাদকে চুপচাপ থাকতে দেখে, নিহাদ তখন থেকে দেখছি ওই মেয়েটাকে দেখে চুপ করে আছো। কিন্তু কেনো? মেয়েটাকে তুমি কিভাবে চিনো

নিহাদ -ঝিনুক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি পরে তোমায় বলবো।
প্রাপ্তি নিহাদের কথা গুলো কেমন জেনো মাথায় গেঁথে গেছে।রেশীকে ভাইয়া কিভাবে চিনে? আয়ান কে একবার বলে দেখি,আয়ান ফোনে কথা বলছে, প্রাপ্তিকে দেখে কিছু বলবে?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।
আয়ান কল কেটে দিয়ে, হুম বলো? কি হয়েছে মন খারাপ? আমার লক্ষ্মী বউটার তো মন খারাপ হওয়ার কথা না।সবাইকে পেয়ে তো খুশি থাকার কথা।

প্রাপ্তি- নিহাদ ভাইয়ার কথাটা তোমার মনে আছে রেশীকে নাকি ওনি চিনে!ওনি যখন কথাটা বলছিলো রেশীর মুখের দিকে একবার দেখেছো? কেমন যেনো ভয়ে ভয়ে ছিলো।

আয়ান -(কাছে এসে প্রাপ্তির গাল দুটোকে দুই হাত দিয়ে ধরে)ঠিক আছে আমার বউটার চিন্তা করার দরকার নেই। আমি পরে নিহাদ ভাইয়ার কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিবো।এইবার একটু হাঁসো? আমার বউয়ে হাঁসি মুখটাই যে আমার কাছে সব।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে আয়ানের বুকে মাথা রেখে তোমাকে অনেক অনেক thanks!
আয়ানও প্রাপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
thanks কিসের জন্য মহারাণী?

প্রাপ্তি-আমার আবদার টা রাখার জন্য।

আয়ান- এর জন্য শুধুই মাত্র thanks? আর কিছু না?

প্রাপ্তি -তাহলে আরকি?

আয়ান -আর হচ্ছে,,,, আর তোমার ওই দুটো ঠোঁট আমার দুটো ঠোঁটের সাথে এক করতে চাই।

প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে, তোমাকে কাল কি বলেছি ভুলে গেছো?

আয়ান -আয়ান প্রাপ্তিকে সরিয়ে দিয়ে না ভুলিনি।কিন্তু আমার যে ইচ্ছে করে আমার বউকে একটু কাছে পেতে।প্রাপ্তি আমি মানুষ, পাথর নয়।

প্রাপ্তি -আমি জানি। এতোদিন যখন সহ্য করেছো তাহলে আরেকটু করো প্লিজ।

আয়ান- ওকে।আমার একটা কথা রাখবে?

প্রাপ্তি -বলনা কি কথা?

আয়ান -তুমি কখনো সাজো না।আজ হলুদের অনুষ্ঠানে একটু সাজবে? প্লিজ আমার জন্য না হয় এইটুকু কষ্ট করো।
কথা টা বলে আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে আয়ান প্রাপ্তির হাতে দিয়ে এইগুলো তোমার জন্য।এইখানে সব কিছু আছে তুমি সেজে নিও।আয়ান বাহিরে চলে গেলো।প্রাপ্তি প্যাকেট টা হাতে নিয়ে সেইখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
অরণী প্রাপ্তিকে ডাকতে এসে দেখে প্রাপ্তি প্যাকেট হাতে নিয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

অরণী -আপু তোর কি হয়েছে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?গেস্টরা অকেই এসে গেছে আম্মু তোকে ডাকছে।আচ্ছা আপু আজকেও তুই সাজগোজ কিছুই করবিনা? আয়ান ভাইয়াও যে কি কিভাবে তোর এইসব পাগলামো সহ্য করে বুজিনা।

প্রাপ্তি প্যাকেট টা খাটের উপর রেখে দিয়ে, তোর ভাইয়ার ধৈর্য শক্তি হয়তো একটু বেশি তাই আমার মতো মেয়েকে তার কপালে জুটেছে।আচ্ছা চল আম্মু কেনো ডাকছে দেখি।

অভ্র এসে নিলিমা বেগমকে আন্টি আমার জন্য এক কাপ চা দিয়েন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।নিহাদ ও নিজের রুম থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছিলো।অভ্র নিলিমা বেগমকে কথা টা বলেই নিজের রুমে যেতে নিহাদের সাথে ধাক্কা খেতেই নিহাদের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। নিহাদের মুখের দিকে না তাকিয়ে অভ্র নিচু হয়ে ফোনটা নিচ থেকে নিয়ে নিহাদের হাতে দিতেই চমকে গেলো।নিহাদ ও অভ্রকে দেখে কম অবাক হলোনা।অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে,
নিহাদ-তুমি এইখানে?

অভ্র -ভাইয়া আপনি এইখানে?

আয়ান রেডি হয়ে এসে, কিরে অভ্র তুই এখনো রেডি হয়ে আসিসনি।তোকে বলছিনা তুই রেডি হয়ে এসে আসিফ ভাইয়াকে রেডি করাতে হবে।অভ্রকে নিহাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বললো, অভ্র তোকে তো পরিচয় করাতে তো ভুলেই গেছি, ইনি হচ্ছে আমার দুলাভাই। আমার বড় আপুর হ্যাজবেন্ড।
আর ভাইয়া এ হচ্ছে,,,,,,,,,,

আয়ান বলার আগেই নিহাদ মুচকি হেঁসে বললো মাহবুবুল রাহমান অভ্র।
আয়ান আশ্চর্য হয়ে ভাইয়া তুমি ওকে চিনো?
নিহাদ -অভ্র আমি কি তোমাকে সত্যিই চিনি?

অভ্র কিছু না বলে, আয়ান আমি রেডি হয়ে আসছি।বলেই অভ্র নিজে রুমে চলে গেলো।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩০

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩০

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আকাশের ফোন টা অনেকক্ষণ থেকে বেজে যাচ্ছে, আকাশ ওয়াশরুমে থাকায় ফোনটা ধরতে পারছেনা।সুমি এসে দেখে বার বার আকাশের ফোনে কল আসছে,,

সুমি -আকাশ তোমার ফোনটা অনেকক্ষণ থেকে বেজে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হও।

আকাশ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে, রিসিভ করোনি কেনো?

সুমি -তোমার অফিসের কলও তো হতে পারে, তাই করিনি।

আকাশ ফোন নিয়ে দেখে আয়ানের নাম্বার থেকে ফোন।
আকাশ -আয়ান ফোন করছে।

সুমি -নাম্বার ওর নাম দিয়ে সেভ করোনি কেনো?আমি ভাবলাম অন্য কেউ।

আকাশ -আব্বুর চোখের সামনে কখন পড়ে যায় ঠিক আছে?দেখি কেনো ফোন করছে।
(ফোন রিসিভ করে)কেমন আছিস?

আয়ান -এইতো ভালো।কি করছিস সবাই? আমার সুইট হার্ট কোথায়?

আকাশ -সবাই ভালো।তোর ভাবী ও আছে ভালো।আমার সামনেই আছে।

আয়ান -কাল আব্বু কিছু বলেছে?

আকাশ -নাতো কেনো কি হয়েছে? তবে কাল অনেক গম্ভীর ছিলো।কারো সাথে কথা বলেনি।রাতে খাওয়া খায়নি।

আয়ান -কাল আমার সাথে দেখা হয়েছে আব্বুর। তাও এমন ভাবে দেখা হবে যা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।যাই হোক তোকে একটা কারণে ফোন দিয়েছি ভাইয়া।

আকাশ -কি কারণ বল।

আয়ান-প্রাপ্তি একটা আবদার করেছে।ও কখনোই আমার কাছে কিছু চায়নি।এখন এমন একটা জিনিস ছেয়ে বসলো যা তুই ছাড়া মিটানো সম্ভব না।

আকাশ -তুই শুধু একবার বল প্রাপ্তি কি চায়? সাথে সাথেই দেখবি প্রাপ্তির সামনে পৌঁছে গেছে।

আয়ান -আসলে আসিফ ভাইয়ার বিয়ে সামনের মাসে ৩ তারিখ। এখন প্রাপ্তির ইচ্ছা তুই আর ভাবী এই বিয়েতে আসবি।আমি জানি বাড়িতে বললে আব্বু তোকে আসতে দিবে না তাই তোকে আলাদা ভাবে বললাম।
প্রাপ্তির এই আবদারটা তোকে পূরণ করতেই হবে ভাইয়া।তুই ছাড়া যে এইটা কেউ পারবেনা।

আকাশ -কি বলবো তোকে বুজতে পারছিনা। আচ্ছা আমি তোকে পরে জানাবো।।
আয়ান -ঠিক আছে তুই আমাকে জানাশ। তাহলে এখন রাখি।
ফোন টা রেখে আয়ান সুস্থির নিশ্বাস ফেলে ভাইয়া যখন বলেছে তাহলে ঠিকি চেষ্টা করবে।

বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে, তাই প্রাপ্তি আর আয়ান এইদিকটার সব কিছু সামলিয়ে প্রাপ্তিদের বাড়ি গেলো।বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে সবাই অনেক ব্যস্ত।আসিফ আর নীরার মাঝেমাঝে ফোনে কথা চলতে থাকে।নীরা চৌঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে আর আসিফ সবসময় গম্ভীর থাকতেই পছন্দ করে।মেয়েদের সাথে তেমন বেশি কথা বলেনা।নিজের বোনদের নিয়েই তার ভাবনার জগত। সেই জগতে কোনো মেয়েই জায়গা করে নিতে পারিনি।এখন নীরাই হবে সেই জায়গার মালিক।

সকাল বেলা কলিংবেলের শব্দ শুনে রফিক গিয়ে দরজা খুললো।আবিদ চৌধুরী পেপার পড়তে পড়তে নিজের রুম থেকে ড্রইংরুমে বসলো।আকাশ ও নাস্তা করার জন্য নিছে নিমে এলো।কিন্তু আবিদ চৌধুরীকে পেপার পড়তে দেখে নিজেও বসে পড়লো।

রফিক -(দরজার সামনে দুইজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে)কাকে চাই?

একজন বললো,আবিদ চৌধুরী আছে?

রফিক -জ্বী! স্যার ভিতরেই আছে কিন্তু আপনারা কারা?

দ্বিতীয় লোক -আমরা কুরিয়ার থেকে এসেছি।আসলে কয়দিন আগে আবিদ চৌধুরীর নামে কয়েকটা পার্সেল এসেছে।সমস্যা থাকার কারনে দিয়ে যেতে পারিনি।

আবিদ চৌধুরী রফিক কে দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে রফিক কোনো সমস্যা?

রফিক পার্সেল গুলো নিয়ে লোক গুলোকে বিদায় দিয়ে,আবিদ চৌধুরীর কাছে আসলো।

আবিদ চৌধুরী -তোমার হাতে এইগুলো কি?

রফিক -জানি না স্যার। কুরিয়ার থেকে আসছে আপনার নামে।

আবিদ চৌধুরী -আকাশ! খুলে দেখো তো এই গুলোতে কি আছে।
সুমি আর আয়েশা বেগমও রান্নাঘর থেকে এগিয়ে এলেন।

আকাশ পার্সেল গুলো খুলতেই সবাই অবাক হয়ে আছে।সবার জন্য জামা কাপড়। কে পাঠিয়েছে এইগুলো?

সুমি আবিদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে,বাবা আপনি সবার জন্য শপিং করে তো সবাইকে সারপ্রাইজ করে দিলেন।

আবিদ চৌধুরী -সুমি আমি কোনো শপিং করিনি।কিন্তু এই গুলো কে পাঠিয়েছে।

আকাশ -আব্বু দেখো? মনে হচ্ছে এইখানে দেখছি সবার থেকে রুমকির জন্যই বেশি।

আবিদ চৌধুরী -কিন্তু এই গুলো পাঠালো কে?

সুমি -মনে হচ্ছে যে শপিং করেছে সে জেনে বুজেই করেছে।

সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো কে পাঠিয়েছে এইসব?
আয়েশা বেগম আকাশের দিকে তাকিয়ে, আমার মনে হয় এইগুলো আয়ানই পাঠিয়েছে।আয়ান ছাড়া কে আর পাঠাবে বল?

সুমি -মা আপনি ঠিকি বলেছেন।এইগুলো আয়ানই পাঠিয়েছে হয়তো।
আবিদ চৌধুরী কিছু না বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।রুমে গিয়ে ভাবছে আমি যদি এখন ওদের কিছু বলি হয়তো এতে বিপরীত হতে পারে।সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি করে করা ঠিক হবেনা।আমাকে এখন বুজে শুনে কাজ করতে হবে।

সুমি আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে, মা! বাবা কিছুই না বলে চলে গেলো? আমার কাছে কেমন গোলমাল লাগছে।আয়ান এইগুলো পাঠিয়েছে শুনেও বাবা কোনো রিয়েক্ট করলেন না।আপনি কি কিছু বুজতে পেরেছেন?নাকি বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে?

আকাশ -সুমি তুমি একটু বেশিই ভাবছ। বাবা হয়তো আয়ান কে আস্তে আস্তে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।আমরা একা আয়ান কে ভালোবাসি তা কিন্তু না বাবাও আয়ানকে অনেক ভালোবাসে।ভুল বুজাবুজি সবার মাঝেই থাকে। হয়তো বাবার অভিমান টা একটু বেশিই করেছে।

আয়েশা বেগমের চোখ গুলো ছলছল করছে। কিছু না বলেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।

প্রাপ্তিদের বাড়ি সাজানো শুরু হয়েছে।তার মামা, মামী, চাচা, চাচী অনেকেই চলে এসেছে। শপিং নিয়ে আয়ান প্রাপ্তি অরণী অনেক ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছে। আজাদ সাহেবের একটাই কথা সবকিছু জেনো ঠিকঠাক ভাবেই হয়।তার একটা মাত্র ছেলে কোনো কিছুতে জেনো কমতি না থাকে।আজাদ সাহেব বেশিরভাগ দায়িত্ব আয়ানের কাঁধে দিয়েছে।আয়ান ছাড়া তিনি কাউকে ভরসা করতে পারেননা। সিয়াম সবসময় নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।আয়ান অভ্রকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য। সন্ধ্যায় বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে নিলিমা বেগমের রুমে,কি কি কেনাকাটা করেছে সবাইকে দেখাছে প্রাপ্তি।আয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে অনেক বার ইশারা করছে তার কথা শুনার জন্য।সবার সেই দিকে নজর না পড়লেও প্রাপ্তি দেখছে।প্রাপ্তি ভাবছে হাতের কাজ শেষ করে করেই তারপর যাবে।কিন্তু আয়ানকে আবার ইশারা করতে দেখে অরণী, আপু! তুই যা আমি সবাইকে দেখাচ্ছি। তুই না গেলে ভাইয়া হয়তো এইখানেই জ্ঞান হারাবে।কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে শুরু করলো।আয়ান লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো আসলে প্রাপ্তি তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে প্লিজ শুনে যাও।

প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের কাছে গিয়ে, চলো জানি আমি কি কথা আছে।

প্রাপ্তি আর আয়ান চলে যেতেই,
প্রাপ্তির চাচী -মেয়েটার কপাল অনেক ভালো। না হলে এমন বর কেউ পায়? কাল আসার পর থেকে দেখছি মেয়েটাকে অনেক যত্ন করে,অনেক খেয়াল রেখে,এইটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালোবাসা। অরণী! তোর বর তোকে এইরকম খেয়াল রাখে?

অরণী -রাখবে না কেন? হয়তো ভাইয়ার ছেয়ে কম।চাচী! এইগুলো নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে। আগে কাজ গুলো সেরে ফেলা যাক।
প্রাপ্তি আয়ানের সাথে রুমে আসতেই আয়ান দরজা বন্ধ করে দিলো,

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার এই সময় দরজা বন্ধ করলে কেনো?

আয়ান -তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো, তাই তোমাকে ডেকেছি কিন্তু তুমি সবার সামনে এমন ভাব করছিলে মনে হচ্ছে আমায় দেখোইনি।

প্রাপ্তি -তুমি তো দেখছিলে আমি অনেক ব্যস্ত ছিলাম তারপর ও কেনো তুমি আমায় ডাকছিলে?

আয়ান -প্রাপ্তি! তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা।(বলেই আস্তে আস্তে প্রাপ্তির কাছে আসতে থাকলো)

প্রাপ্তি আয়ানকে কাছে আসতে দেখে,(রাগিভাব দেখিয়ে) দাঁড়াও ওইখানে। একদম কাছে আসবেনা বলে দিলাম।

আয়ান সত্যিই দাঁড়িয়ে গেলো প্রাপ্তির কথা শুনে,কি ব্যাপার প্রাপ্তি তোমার কি মন খারাপ?এইভাবে কথা বলছো কেনো?

প্রাপ্তি- আমি ঠিক আছি। আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম সেটার কি করেছো? ভাইয়ারা কি আসবে?

আয়ান -প্রাপ্তি! তুমি কিন্তু কথা কাটানোর চেষ্টা করছো।

প্রাপ্তি এইবার নিজেই আয়ানের কাছে এসে, তুমি রাগ করেছো? দেখছিলাম কি করো বউয়ের মুখে এইরকম কথা শুনে।

আয়ান -তোমার উপর আমার কখনোই রাগ হয়না এইটা তুমি ভালো করেই জানো।আচ্ছা প্রাপ্তি তোমাকে কি আমি কখনোই নিজের করে পাবোনা?

প্রাপ্তি- পাবে না কেনো? পাবে! যেইদিন তোমার বাবা আমাকে মেনে নিবে। যেইদিন সব কিছু ভুলে আমরা আবার এক হবো সেইদিনই তুমি আমাকে তোমার করে পাবে।

আয়ান -যদি আব্বু কখনোই মেনে না নেয়?

প্রাপ্তি -তোমার চিন্তা করতে হবে না শুধু বিয়ে টা মিটে যেতে দাও তোমার আব্বুর অহংকার কি করে ভাঙতে হবে সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে।আমার জন্য যখন তুমি পরিবার থেকে আলাদা হয়েছো তখন আমিই জোড়া লাগাবো।
আমি আর তোমাদের মা ছেলেকে কষ্ট পেতে দিবোনা।

আয়ান প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে,তোমার মতো বউ যার আছে তার আর কিছুর প্র‍য়োজন নেই।সারাটা জীবন সুখের অভাব হবেনা।
প্রাপ্তি আয়ানের নাক টেনে দিয়ে আমাকে পাম দেওয়া হচ্ছে? এইযে মিস্টার আয়ান চৌধুরী আমি কিন্তু বেলুন না আপনার কথায় আমি ফুলে যাবো বলেই হাঁসতে শুরু করলো দুজনেই।রেশী এসে দরজার ওপাশ থেকে বলে গেলো,ভাইয়া! অভ্র ভাইয়া আসছে! তোমাকে ডাকছে।
প্রাপ্তি আর আয়ান ড্রইংরুমে এসে অভ্রকে দেখে,
আয়ান- কিরে তোর আসতে এতো দেরি হলো কেনো?কাল গাঁয়ে হলুদ আর তুই আজ আসছিস।

অভ্র -কি করবো বল? অফিস শেষ করেই বাসায় গিয়ে জামা কাপড় গুছিয়েই তো রওনা দিলাম।তাই আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো।নীশান ও সকাল থেকে ফোন দিচ্ছে ওদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। আমি বলেছি আসিফ ভাইয়া সহ আমাকে ছাড়বেনা।যদি ওদের ম্যানেজ করতে পারি তাহলে পরে দেখা যাবে।
আসিফ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, সেই কথা ভুলে যাও এই বাড়ি ছেড়ে তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা।

অভ্রও আসিফের কথা শুনে মুচকি হাঁসি দিয়ে মনে মনে ভাবছে, এই বাড়ি থেকে আমার এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করবে না।কারন এই বাড়িতে আমার এমন একটা জিনিস আছে যেটা না দেখে আমি থাকতে পারিনা।কিন্তু যার কথা ভাবছি সে কোথায় গেলো? আসার পর এক পলক দেখা দিয়ে যে কোথায় গেলো বুজতেই তো পারছিনা।
কথাটা আয়ান কে বার বার বলতে গিয়েও আমি বলতে পারলাম না। কারণ আয়ানের সাথে আমি আমার বন্ধুত্ব কখনোই নষ্ট করতে চাইনা।

প্রাপ্তি অভ্রর চোখের সামনে তুড়ি মেরে এইযে ভাইয়া আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন।আমরা কিন্তু সবাই এইখানেই আছি তাহলে আপনি এইদিক ওদিক ফিরে কাকে খুঁজছেন?

অভ্র চমকে উঠে, কিছু বললে?

প্রাপ্তি -আমি কিন্তু কিছু কি বুজতে পারছি আপনি কি খুঁজছেন!

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৯

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়লো।আবিদ চৌধুরী আয়ান কে দেখেই চোখ বড় বড় করে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে ও এই খানে কি করছে ওকে দেখে সবাই এই ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো কেনো?

আয়ান সবাইকে বসতে বলে নিজের চেয়ারের পাশে দাঁড়ালো।কিভাবে বসবে সে এই চেয়ারে? যেইখানে পাশের চেয়ারটায় তার বাবা বসে আছে।

আয়ান -আপনারা সবাই কেমন আছেন?

পাশের একজন বললো, স্যার আমরা তো ভালোই আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি।

অভ্র এসে, স্যার আসবো?
আয়ান -ইয়েস! অভ্রর কাছ থেকে ফাইল নিয়ে বললো, আপনি কেনো অবাক হলেন বললেন না তো?

লোকটা -আপনাকে দেখেই!এতো অল্প বয়সে এতো দূর এইটা কি ভাবা যায়?

আয়ান -(মুচকি হেঁসে) আসলে আমার আব্বু বিখ্যাত বিজনেসম্যান! আমি যদি ওনার ছেলে হয়ে পিছিয়ে থাকি তাহলে তো আমার আব্বু কে অসম্মান করা হলো।এইবার আমরা কাজের কথায় আসি?

কথাটা শুনে অভ্র অবাক হয়ে আয়ানকে দেখছে, সে এতো দিন যা অনুমান করেছে তা দেখছি সত্যিই হলো।

আবিদ চৌধুরীর রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে আছে।গম্ভীর হয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আজ নিজের ছেলের জ্ঞান মুলুক কথা শুনতে হচ্ছে।কেনো জানি খারাপও লাগছে না। আমার ছেলেটা হয়তো আমাকে দেখানোর জন্যই এতো দূর পাড়ি দিয়েছে।

আয়ানকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখে,
অভ্র-স্যার আপনি বসছেন না কেনো? বসে কথা বলুন।

আয়ান -অভ্র তুমি ভালো করেই জানো আমি সব জায়গায় বসিনা।এইখানে সবাই আমার মুরুব্বী আমি ওনাদের ছেলের মতো আমি এইখানে বসলে ওনাদের অসম্মান করা হবে।

আবিদ চৌধুরী বুজে গেছে আয়ান যে তাকেই শুনানোর জন্য কথা গুলো বলেছে।
আয়ান প্রেজেন্টেশন দেখে আবিদ চৌধুরী মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে।
এমন সময় আয়ানের ফোন বাজতেই আয়ান বিব্রতবোধ নিয়ে সরি বলে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে প্রাপ্তির নাম্বার।প্রাপ্তি আমাকে কখনোই আর ফোন দেয়নি আজ এমন সময় দিলো কল টা রিসিভ না করলে হয়তো ওর মন খারাপ হয়ে যাবে, তাই একটু সরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে, বাবু আমি মিটিং এ আছি,আর মিটিং শেষ করেই তোমাকে ফোন দিচ্ছি,প্লিজ রাগ করোনা।

প্রাপ্তি -ওকে!
কথা শেষ করে আয়ান তার কাজে মন দিলো,নাহ্ আব্বুকে দেখে এইভাবে দুর্বল হলে আমায় চলবেনা।আমাকে শক্ত হতে হবে।সবকিছু শেষ করে আয়ান আবিদ চৌধুরীর সাথে ডিল টা ফাইনাল করে নিলো।এমন ভাবে তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে মনে হচ্ছে আজই তাদের বিজনেসের কাজে প্রথম দেখা। আয়ান কাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো।

অভ্র এসে আমি বললাম না তুই ছাড়া এইরকম প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।আবিদ চৌধুরী খুশি হয়েই ডিলটা করে নিলো।
আয়ান চুপচাপ বসেই আছে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আজ আমার নিজের বাবার সাথেই বিজনেসের সম্পর্ক।

অভ্র আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে কিরে আমি একাই বকবক করে যাচ্ছি আর তুই চুপ করে এতো কিভাবছিস? তুই তখন মিটিং এ একটা কথা বললি,তোর বাবা নাকি বিজনেসম্যান। অবশ্য আমি আগেই বুজেছিলাম তুই আমার কাছে অনেক কিছু লুকাচ্ছিস।

আয়ান -অভ্র তুই ঠিকি বলেছিস! সত্যি কখনো লুকানো যায়না,সেটা যে কোনো সময় সামনে চলে আসে।জানিস অভ্র আজ আমি কার সাথে প্রজেক্ট এর ডিল করেছি?

অভ্র -(হাঁসি দিয়ে) কেনো জানবো না, আবিদ চৌধুরীর সাথে।

আয়ান -এর বাহিরেও ওনার সাথে আমার একটা পরিচয় আছে আর সেটা হলো ওনিই আমার বাবা!

অভ্র বিস্মিত কন্ঠে, মানে?তোর বাবা!
আমি তো কিছুই বুজতে পারছিনা।তোদের দুজনকে দেখে তো তা মনে হলো না।এমন ভাবে ছিলি মনে হলো তোদের আজকেই প্রথম দেখা।

আয়ান -সে অনেক কথা সময় করে তোকে একদিন বলবো।আচ্ছা আমি তাহলে এখন আসি, তুই রাতে কিন্তু বাসায় আসবি।

সে কখন আমি ফোন দিলাম মিটিং এ আছে বলে যে রেখে দিলো তার কোনো খবর নেই।বাসায় যে দিয়ে গেলো একটা বার ফোন দিয়ে খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলোনা।আগেই ভালো ছিলো কথা বলতাম না,ফোনও দেওয়া লাগতো না।জামা কাপড় গুছাইতে গুছাইতে বিড়বিড় করছে প্রাপ্তি।
আয়ান এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কি হয়েছে আমার লক্ষ্মী বউয়ের।আমার উপর কি তার রাগ হয়েছে।

প্রাপ্তি -(আয়ানকে দেখে অবাক হয়ে,)তুমি এই সময় বাসায় চলে এলে? শরীর খারাপ নাকি? দেখি সামনে আসো।

আয়ান -(প্রাপ্তিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)এতক্ষণ আমাকে বকা দেওয়া হচ্ছে, এখন আবার ভালোবাসাও দেখানো হচ্ছে।

প্রাপ্তি -আমার যা খুশি তাই করবো তাতে তোমার কি।আমার হ্যাজবেন্ডকে আমি মারবো, আদর করবো, (হাতে একটা চিমটি কেটে)চিমটি কাটবো তাতে আয়ান চৌধুরী কি?
আয়ান- ওহ্ ব্যথা পেলাম তো,(প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে)আচ্ছা তুমি সত্যি আমাকে মারবে? ওকে তাহলে শুরু করো।

প্রাপ্তি আয়ানকে ছাড়িয়ে ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? এখন যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।আয়ানের হাতে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসতে বসতে রেশী কোথায়?

প্রাপ্তি -ওর শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই আগেই খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দিলাম।হয়তো শুয়ে আছে।ভাবছি ভাইয়ার বিয়েটা শেষ হলে রেশীর বিয়ের জন্য ছেলে দেখবো।

আয়ান -(খেতে খেতে)রেশী যদি বলে ও বিয়ে করবেনা। ও ওর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চায় তখন?
কথাটা শুনে প্রাপ্তি মন খারাপ করে হুম সেটাই, তবে একবার বলতে অসুবিধা কোথায়?

আয়ান -হুম!তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি।রাতে অভ্র আসবে।আমাদের সাথে খাওয়াদাওয়া করবে।

প্রাপ্তি -সমস্যা নেই।

আয়ান -রান্না করতে তোমার কষ্ট হবেনা? এক কাজ করলে কেমন হয় সব রান্না বাহিরের থেকে নিয়ে আসি?

প্রাপ্তি -কোনো দরকার নেই।আমিই পারবো।অভ্র আমার ভাইয়া মতো ভাইকে রান্না করে খাওয়াবো এতে কষ্ট কিসের?তুমি কোনো চিন্তা করো না আমি পারবো।

আয়ান -আমি জানি তুমি পারবে।কিন্তু তোমার তো কষ্ট হবে।

প্রাপ্তি -বললাম তো তুমি চিন্তা করোনা।আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বললে রাগ করবা?

আয়ান -রাগ করবো কেন? কি বলবে বলো?

প্রাপ্তি -ভাইয়ার বিয়েতে তোমাদের বাড়ির সবাইকে ইনভাইট করলে কেমন হয়?

আয়ান -তুমি ভালো করেই জানো ওরা আসবেনা।

প্রাপ্তি -আকাশ ভাইয়া আর ভাবী তো আসতে পারে।প্লিজ বলোনা!
আয়ান -কি বলি বলো তো? তুমি আমার কাছে কোনো দিন কিছু চাওনি। এখন এমন একটা কথা বললে,,,, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।

আবিদ চৌধুরী নিজের রুম অন্ধকার করে ইজিচেয়ারটায় বসে দুলছে।কেমন জানি নিজেকে আজ একা লাগছে।সবার মাঝে থেকেও চারপাশ টা কেমন খাঁ খাঁ করছে।আয়ান যখন এই বাড়িতে ছিলো যখনি বাসায় থাকতো হৈচৈ করে বাড়িটা মাতিয়ে রাখতো।অফিসে থাকলেও নিজের কাজ গুলো মন দিয়ে করতো।কখনো কোনো কিছু বলে দিতে হয়নি।আজ একটা মেয়ের জন্য আমার ছেলে আমাকে পর্যন্ত ত্যাগ করে দিলো।আমার সম্মানের কথা একটাবার চিন্তা করলো না।এইদুইটা বছর আমি হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম সবাইকে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না দিয়ে।সবাই হয়তো ভাবে আমার মনে কোনো মায়া নেই কারো প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।আমার মন পাথরের মতো। সত্যিই কি তাই?কথা গুলো ভাবতেই গলাটা কেমন জানি ভারী হয়ে আসছে।
আয়েশা বেগম রুমে ঢুকে অন্ধকার দেখে লাইটটা জ্বালিয়ে আবিদ চৌধুরীকে দেখে কি হয়েছে বাহিরের থেকে আসার পর থেকেই দেখছি মন খারাপ।কিছু হয়েছে?

আবিদ চৌধুরী চশমা টা মুছে পরতে পরতে দীর্ঘশ্বাস পেলে বললো নাহ কিছু না!

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৮

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

_বাড়ি ফিরে এসে সবাই তো নীরার প্রশংসা করছে।আজাদ সাহেব সবার কথা শুনে বললেন তোমাদের পছন্দ হয়েছে এইটাতেই আমি খুশি।আমার পরিবার খুশি মানে আমি খুশি।তবে তোমরা আসতে এতো দেরি করলে কেনো?

অরণী -আব্বু নীরার মা তো না খাইয়ে আসতেই দিলোনা।আমি কিন্তু আজ একটা জিনিশ বুজেছি।নীরার মা ও আপুকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।হয়তো ছেলের বন্ধুর বউ বলে কথা আদর তো একটু বেশি করবেই।

আয়ান -অরণী! তোমার কি হিংসে হচ্ছে?(অরণী কে খেপানোর জন্য)এই জন্যই তো বলি কেমন পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ আসতেছে।

অরণী -আমার আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।

সিয়াম -অরণী! তোমরা গল্প করো আমার আবার সকালে অফিস আছে।

আয়ান -বাবা আপনি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে আমাদের জানিয়েন।আমরা কাল সকালে চলে যাবো।আমার অফিসে কাল যেতেই হবে।

আজাদ সাহেব -আমার মনে হয় সামনের মাসের ৩ তারিখের দিকে বিয়েটা হলে ভালো হবে।আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।

অরণী -আব্বু এই মাসেরই তো আজ ১৯ তারিখ বেশি দিন আর সময় কই।

আয়ান -আমার মনে হয় এটাই ঠিক আছে।কি বলো প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি -আমি কি বলবো তোমরা যা ভালো মনে করো।

নিলিমা বেগম -প্রাপ্তি আর অরণী তোরা সব কিছু গুছিয়ে এই বাড়িতে চলে আয়।তারপর সব কিছু ভাবা যাবে।

আয়ান -(আয়ান হাই তুলে)প্রাপ্তি উঠো আমার ঘুম আসছে।কাল অনেক সকাল সকাল উঠতে হবে।

কথা শেষ করে সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।

প্রাপ্তি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে এলো,আয়ান বসে বসে অভ্রর সাথে ফোনে কথা বলছে।প্রাপ্তিকে এসে শুইতে দেখে আয়ান ফোন রেখে দিয়ে, বিকেলবেলা যেই কথাটা বলেছি মনে আছে?

প্রাপ্তি -অনেক কথাই তো বললে। কোনটা মনে রাখবো?

আয়ান -বাবু! আমি জানি তোমার মনে আছে, কারণ আমার বউ তো আমি ভালো করেই চিনি।

প্রাপ্তি -তোমার এই সব কথা বাদ দিয়ে ঘুমাও সকালে আবার বাসায় যেতে হবে।

আয়ান -না আমি ঘুমাবো না,আগে তুমি বলো তুমি আমার কথায় রাজি?প্রাপ্তি আমি তোমাকে জোর করবো না তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছুই করবোনা।কথা টা বলেই আয়ান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তি চুপ করে বসেই আছে,কি বলবে আয়ানের কথায়। অনেক তো কষ্ট দিয়েছি আয়ান কে। আর কতো কষ্ট দিবো!আয়ানের মতো ছেলে আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করতে পারতো। আমি তার যোগ্য না তবুও আমায় কতো ভালোবাসে, কতো কেয়ার করে।আমাকে বিয়ে না করলে এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।ওকে ওর পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হতোনা।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছে।আস্তে করে পিছনদিক থেকে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের পিঠে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।আয়ান প্রাপ্তির ছোঁয়ার অনুভূতি পেয়ে, প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে ফিরে ওকে জড়িয়ে ধরে,কি ব্যাপার মহারাণী নিজের ইচ্ছায় জড়িয়ে ধরেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছিনা।তবে এই জড়িয়ে ধরার মাঝে একটা মায়া লুকিয়ে আছে।দুইটা বছর এতো টা কাছে থেকেও এই মায়াটা বিষণ মিস করেছি।প্রতিটা রাতে তোমার ঘুমের পরে যখন তোমার দিকে তাকাতাম ইচ্ছে করতো তোমাকে একবার ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু সাহস হতো না।

প্রাপ্তি -আমি ও মাঝে মাঝে তোমায় দেখেতাম।আমারো ইচ্ছে করতো তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। কিন্তু কেনো জানি পুরোনো সেই দিন গুলোর কথা মনে হলেই আমার কাছে সব অসহ্য লাগতো।তখন মনে হতো আমি মরে যাওয়াটাই ভালো ছিলো।
প্রাপ্তি কথাটা বলতেই আয়ান প্রাপ্তির ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে, আর কখনো এই কথা বলবেনা,আজকের জন্য ক্ষমা করে দিলাম।যদি এই কথা তোমার মুখ থেকে দ্বিতীয় বার শুনেছি আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা।
এইভাবে কথা বলতে বলতে কখন দুজনে ঘুমিয়ে পড়লো মনে নেই।

সকালে প্রাপ্তি উঠেই ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ানের পাশে বসে একটা শোলা নিয়ে কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। আয়ানকে সুড়সুড়ি দিতেই লাফ দিয়ে উঠে বসে দেখে প্রাপ্তি একিবারে গোসল করেই ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।

আয়ান -(দুষ্টামি করে)কি ব্যাপার মহারাণী একদম সকাল সকাল গোসল সেরে নিয়েছো।আমার জানা মতে রাতে তো আমি তোমার সাথে কিছু করেনি।

আয়ান -বাসায় যাবা না?আমাদেরকে তো বাসায় নামিয়ে দিয়ে তোমার আবার অফিসে যেতে হবে।তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।বলে প্রাপ্তি উঠতে যাবে তখনি আয়ান হাত টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক লাগিয়ে এইটা কিন্তু আমার আনসার নয়।
প্রাপ্তি নিজেকে ছাড়িয়ে, এইটাই আনসার বলে উঠে রুম থেকে চলে গেলো।ড্রইংরুমে গিয়ে দেখে রেশী রেডি হয়ে বসে আছে।
নিলিমা বেগম টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে প্রাপ্তিকে আসতে দেখে, দেখনা প্রাপ্তি! রেশী সে সকাল থেকে রেডি হয়ে বসে আছে।কিছু খাচ্ছেও না।তোরা সত্যিই আজ চলে যাবি?

প্রাপ্তি -আম্মু এখন যেতেই হবে। দুইদিন পর তো চলেই আসবো। অরণী তো আছে এখন তোমার কাছে।আমিও থেকে যেতে পারতাম যদি তোমাদের জামাইয়ের অফিসে যেতে অসুবিধা না হতো।(রেশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে)রেশী নাস্তা করছো না কেনো?

রেশী -তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
সকালে নাস্তা করে আয়ানরা বেরিয়ে পড়িলো, রেশী আর প্রাপ্তিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়ান অফিসে চলে গেলো।

আয়ানকে দেখেই অভ্র এগিয়ে এসে স্যার আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন কখন?
আয়ান নিজের রুমে যেতে যেতে তোকে কতো বার বলেছি আমাকে স্যার বলে ডাকবিনা।তারপরেও তুই স্যার বলছিস কেনো?

অভ্র -এইটা তো অফিস। ফর্মালিটি মেনে তো চলতেই হয়। তুই অফিসের এমডি মানে আমাদের স্যার তোকে যদি সাবার সামনে আমি আয়ান বলে ডাকি তাহলে আমারও খারাপ লাগবে।সবাই বলবে আমি তোকে বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ব্যাবহার করছি।

আয়ান -(অভ্রর কাছ থেকে ফাইল গুলো নিয়ে বসতে বসতে)বুজলাম! এখন বল কিসের মিষ্টি তোকে খাওয়াবো?

অভ্র -ভাবীকে কাছে পেয়ে সব ভুলে গেলি?
মিষ্টি দুইটা কারণে খাওয়াবি,
১/ভাবী তোর সাথে এখন ঠিক মতো কথা বলছে।
২/ আসিফ ভাইয়ার বিয়ে।
এখন বল কখন খাওয়াবি?

আয়ান -ওকে আজ রাতেই,তুই আমার বাসায় ডিনার করবি,আর এক সাথে মিষ্টিও খাওয়া হয়ে যাবে।

অভ্র -ওহ্ঃ তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি।১২.০০টার সময় আমাদের নতুন ক্লাইন্ট আসবে আর বস বলছে মিটিং টা তুই সামলে নিতে।বস এটাও বলছে তুই ছাড়া ভালো প্রেজেন্টেশন কেউ দিতে পারেনা।
আচ্ছা আয়ান একটা সত্যি কথা বলবি?

আয়ান -তোর সাথে কখনো মিথ্যা বলেছি?

অভ্র-মিথ্যা বলিসনি ঠিকি অনেক কিছু লুকিয়েছিস।আমার মনে হয় এইখানে আসার আগে তুই বড় কোনো কোম্পানিতে চাকরী করেছিস।আমি কি ঠিক বলেছি আয়ান?
আয়ান -তোর হঠাৎ করে এইগুলো মনে হলো কেনো?

অভ্র- হঠাৎ নয় আমার সবসময় তোর কাজ দেখে, তোর লাইফ স্টেইল দেখে মনে হয়।

আয়ান অভ্রর কথা কিছু না বলে চুপচাপ ফাইল গুলো দেখছে আর ভাবছে কি বলবো অভ্রকে? আব্বুর নাম বললে অভ্র হয়তো চিনে যাবে।এতে আমার প্রাপ্তিকেও ছোটো করা হবে।

অভ্র -কিরে কিছু বলছিস না কেনো?

আয়ান -পরে একসময় বলবো।আচ্ছা যে ক্লেইন্ট আসছে ওদের কোম্পানির নাম কি?

অভ্র -চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি! আবিদ চৌধুরীকে ছিনিস ওনি নিজেই নাকি আজ আসবে।
আমাদের কোম্পানির কাজ নাকি ওনার খুব ভালো লেগেছে।সব তো তোর জন্যই বল?

আবিদ চৌধুরী! নিজের বাবার নামটা শুনেই আয়ানের সব কিছু যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।অভ্রর দিকে আশ্চর্য ভরা দুটো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।নিজের হাত থেকে ফাইল গুলো রেখে ঘড়ির দিকে তাকালো আয়ান!সময় আর বেশি নেই হয়তো একটু পর চলে আসবে আবিদ চৌধুরী। কারণ সময়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক তিনি।

অভ্র আয়ানের চোখমুখের অবস্থা দেখে কিরে কি হয়েছে তোর? ওনাকে ছিনিস নাকি আগে থেকে?নাম টা শুনে কেমন জানি মনে হচ্ছে তোকে।
আয়ান- অভ্র মিটিং টা তুই সামলে নিতে পারবিনা? প্রাপ্তিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।ওই বাড়ি থেকে এসেছে,হয়তো মন খারাপ করে আছে ওকে এখন একটু সময় দেওয়া উচিত।

অভ্র -(অট্ট হাঁসি দিয়ে) তুই এতো বউ পাগল কেন বলতো? মিটিং শেষ করেই বাসায় চলে যাস কেউ তোকে আটকাতে যাবেনা।

এমন সময় অফিসের স্টাফ সাইদ এসে, স্যার আবিদ চৌধুরী এসে মিটিং এ যোগ দিয়েছেন বস আপনাকে ডাকছেন।

সাইদের কথা শুনে অভ্রর দিকে তাকালো আয়ান,
অভ্র -স্যার তাহলে আপনি যান আমি ফাইল গুলো গুছিয়ে আসছি।

আয়ান -সাইদ চলো!
আব্বুর কোম্পানি হয়তো এই কোম্পানি থেকে ছোটো হতে পারে কিন্তু আমার আব্বুতো আমার কাছে ছোটো নয়।অভ্র সবসময় বলে এই কোম্পানিটা আমার জন্যই আজ এতো দূর পর্যন্ত এসেছে।কিন্তু এইভাবে আব্বুর সামনাসামনি হতে হবে আমাকে আমি কখনোই ভাবিনি।

চলবে,,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৭

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_বিকেলবেলা প্রাপ্তি অরণী,আয়ান,সিয়াম,আসিফ রেডি হয়ে পাঁচ জনে মিলে আয়ানের বন্ধুর বোনকে দেখতে বের হয়েছে। আসিফ গাড়ী নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়ান নিতে দেয়নি।

আয়ান -আমার গাড়ী থাকতে আপনারা অন্য গাড়ী নিবেন কেনো? আমরা সবাই একসাথেই যাবো।

আসিফ কাল রাতের কথা মনে করে আর কিছু বললোনা।রাতে একবার রাগ করেছে এখন আর রাগাতে চাই না।
সবাই মিলে মেয়েদের বাড়ীর সামনে নামলো।আয়ানের বন্ধু নিশান (মেয়ের ভাই)এসে তাদের কে এগিয়ে নিলো।
নিশানদের পরিবারে তার মা আর বোন নীরা (যাকে দেখতে আসছে)থাকে।নীরাকে দেখতে আসাতে তার কাকা আর কাকী শহরের থেকে এসেছে।নিশান আর নীরার কয়েকজন ফ্রেন্ড ও এসেছে।নিশান সবাইকে এনে ড্রইংরুমে বসিয়েছে।নিশানের মা তাদের সামনে এসে দাঁড়াতেই নিশান বললো,মা! এই হচ্ছে আয়ান আমার ফ্রেন্ড। প্রাপ্তি ওর ওয়াইফ, (অরণী কে দেখিয়ে)এই হচ্ছে আয়ানের শালি অরণী, অরণীর হ্যাজবেন্ড,আর নীরা জন্য যেই পাত্র এই হলো আসিফ।কথাটা বলতেই আসিফ সালাম দিলো।নিশানের মা সালাম টা নিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, তোমার কথা অনেক শুনেছি নিশানের কাছ থেকে,নিশান তো দেখছি কম বলে ফেলছে তোমার ব্যাপারে।তুমি তো দেখতে এর ছেয়ে বেশি সুন্দর।

আয়ান বসে ফোন টিপতেছে আর বউয়ের প্রশংসা শুনে মুছকি মুছকি হাঁসছে।

অরণী আয়ানকে একটা চিমটি কেটে বউয়ের প্রশংসা শুনে খুব খুশি তাইনা?

আয়ান -কি করবো বলো আমার বউটা এতো বেশি সুন্দর যে কেউ প্রশংসা না করেই পারে না।
একটু পর নীরাকে তার কাজিন বিথী নিয়ে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে ড্রইংরুমে আসলো।
প্রাপ্তি আর অরণী এগিয়ে গিয়ে নীরাকে নিয়ে এসে নিজেদের পাশে বসালো।

সিয়াম সবার দিকে তাকিয়ে বললো আমি আগে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবীকে একটা প্রশ্ন করি।
আয়ান -হুম করতেই পারো।

সিয়াম-(নীরার দিকে মুখ ফিরিয়ে) আমরা কিন্তু সবাই আপনাকে অনেক জ্বালাতন করবো আপনার কি এইগুলো সহ্য হবে?
(কথাটা শুনে নীরা হেঁসে দিলো।) আসিফ ভাইয়া! হাঁসি দেখে মনে হচ্ছে সহ্য হবে।

প্রাপ্তি -কিসে পড়ো?

নীরা -অনার্স ফাস্ট ইয়ার।

আয়ান -নিশান! এক কাজ কর ভাইয়া আর নীরা আলাদা ভাবে কথা বলুক। সেই ব্যবস্থাই কর।

নিশান -নীরা যাও আসিফ ভাইকে নিয়ে যা আয়ান ঠিকে বলেছে তোমেদের আলাদা ভাবে কথা বলা প্রয়োজন।
নীরা আর আসিফ ছাদে চলে গেলো কথা বলার জন্য।
অরণীকে চুপ থাকতে দেখে,

প্রাপ্তি-কিরে,,, পছন্দ হয়নি? এইভাবে আছিস কেনো?

অরণী -না,,,,হয়েছে।কিন্তু ভাইয়াকে কেমন চুপচাপ লাগলো না?

আয়ান -এখন দেখবা ঠিকি কথা বলবে।হয়তো আমাদের সামনে লজ্জাবোধ করছে।

প্রাপ্তি -হুম ঠিকি বলেছো।

চুপচাপ হয়ে দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে।নীরাতো নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কেমন লোক একটা কথাও বলছেনা।ইচ্ছে করছে একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিতে।কেনো যে কয়েকটা তেলাপোকা ধরে রাখলাম না!

নীরাই আগে কাশি দিয়ে গলাটা ঝেড়ে নিয়ে এহেম,,,আপনি কি রোবটের ছোটো ভাই?

আসিফ -মানে?

নীরা -আপনি কি কানেও কম শুনেন?

আসিফ-কি বলছেন এইসব?

নীরা -ঠিকি বলছি।একটা মেয়ে মানুষ আপনার সামনে একা দাঁড়িয়ে আছে আপনি কোনো কথাই বলছেন না।নাকি আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?

আসিফ -আরে না কি বলেন।আপনাকে পছন্দ না করার উপায় আছে?অবশ্যই পছন্দ হয়েছে।

নীরা একটু রাগি ভাব নিয়ে, উপায় নাই মানে? আমার কি নাক একটা বেশি নাকি তাই আমাকে তোর পছন্দ হয়েছে।

আসিফ -আপনি আমাকে তুইতোকারি করছেন কেনো।সোজা বললেই তো হয় আপনি এই বিয়েতে রাজি না।

নীরা -তুই বলবো নাতো কি বলবো।আমিতো তোর ৬০ বছরের বড় তাই তুই আমাকে আপনি করে বলছিস। যতক্ষণ না আমাকে তুমি করে ডাকবি ততক্ষণ আমি তুই ডাকবো।

আসিফ ঘাবড়ে গিয়ে ওকে ওকে আমি তুমি করেই ডাকছি।আচ্ছা তুমি কি সবসময় এইভাবেই কথা বলো।

নীরা -না মাঝে মাঝে।তবে সবার সাথে করিনা শুধু আপনার সাথেই করবো।(কথাটা বলেই নীরা ফিক করে হেঁসে দিলো)

আসিফ -তার মানে এই বিয়েতে তুমি রাজি। তাহলে সোজাসুজি ভাবে তোমাকে কয়েকটা কথা বলি।তুমি কি পারবে আমার পরিবারের সবাইকে নিজের পরিবার বলে ভাবতে?পারবে আমার দুই বোনকে নিজের বোন ভাবতে? আমার পৃথিবী একদিকে আর আমার বোনরা আরেক দিকে।যদি তুমি এইসব সহ্য করতে পারো তাহলে বিয়েতে আমার কোনো অমত নেই।ও হ্যাঁ তুমি এই কথা ভেবো না তোমার কোনো অযত্ন হবে, বা তোমাকে আমি ভালোবাসবো না, এইসব কখনো ভেবো না।তোমার সবকিছুই আমার দায়িত্ব। আর আমার পরিবারের দায়িত্ব তোমার।এইবার তুমি ভাবো আমাকে কি তুমি বিয়ে করবে নাকি করবেনা।যদি তোমার সময় লাগে তাও দিলাম।
কথা গুলো বলেই আসিফ হাঁটতে শুরু করলো নিচে আসবে বলে।
নীরা আসিফ একটু হাঁটতেই বললো, দাঁড়ান!
আসিফ দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালো।

নীরা -আপনি আমাকে সময় দিয়েছিলেন না? কোনো সময়ের দরকার নেই আমি এখনি আনসারটা দিয়ে দিচ্ছি।

আসিফ -(নীরার দিকে এগিয়ে গিয়ে)জানি তুমি কি বলবে! তুমি এই বিয়েতে রাজিনা তাই তো? ওকে আমি নিচে গিয়ে বলে দিচ্ছি।সমস্যা নেই তোমার কোনো দোষ দিবোনা। আমি নিচে গিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করে নিবো।

নীরা -রাখেন তো আপনার বকবক। আমি আপনাকে বিয়ে করছি বুজছেন?আমি আমার লাইফে এমন একজনকেই ছেয়েছি।যার মনে শুধু ভালোবাসা থাকবে। থাকবেনা কোনো অহংকার।আমি আপনাকে দেখে বুজেছি, যে মানুষটা পরিবারকে এতো ভালোবাসতে পারে সে মানুষের কখনোই মনে কোনো হিংসা থাকতে পারেনা।আমার আপনার মতো এইরকম একজন মানুষের দরকার।যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে।

নীরার কথা গুলো শুনে আসিফ মুছকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে নিচে নেমে এলো।

আসিফকে আসতে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে,ভাইয়া আপনার কি পছন্দ হয়েছে?আমরা কি সামনে এগিয়ে যাবো?

আসিফ – সমস্যা নেই এগুতে পারো।
কথাটা শুনে সবাই আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে একজন আরেকজন মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো।আয়ান এসে প্রাপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে মহারাণী বিয়ে হবে একটা বাসরঘর হবে দুইটা।কথাটা শুনে প্রাপ্তি ভ্রু কুঁচকে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখা যাবে।
আয়ান -আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।আমি যেটা বলবো সেটাই।

অরণী -এই তোমরা আবার কি ফিসফিস করছো? দুজনে মিষ্টি খাও।

আয়ান -আচ্ছা তাহলে আমরা কাজের কথায় আসি।আমাদের সবার মেয়ে পছন্দ হয়েছে।এখন বিয়ের ডেট তো ফাইনাল করতে হবে।আমরা তো দেখেই গেলাম।বাবা এবং মুরুব্বিরা এসে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে যাবে।কি বলেন সবাই(নীরাদের সবার দিকে তাকিয়ে)

নীরার মা- আলহামদুলিল্লাহ্‌! তোমরা যা ভালো মনে করো।

নিশান -আয়ান আমি কিন্তু একা সব সামলেতে পারবোনা।তুই ওই দিকের কাজ সেরে সময় পেলে আমাকেও একটু সময় দিস।

আয়ান -চিন্তা করিস না।বিয়ে ফাইনাল হলেই অভ্রকে তোর জন্য পাঠিয়ে দিবো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৬

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অবাক চোখে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।,,,,,,
মনে মনে ভাবছে আচ্ছা এইটা কি পাগল নাকি অন্য কিছু।কেউ এইভাবে কারো,, ওয়াক থুঃ,,

আয়ান -এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আর অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।ভালোবাসার মানুষের সবকিছু ভালো লাগা উচিত হকনা ঘাম তাতে কি?( কথার ফাঁকে আয়ান খাবার অর্ডার দিয়ে দিলো)

অরণী কথা শেষ করে এসে বসতে বসতে কি ব্যাপার দুজনে কথা শেষ হয়েছে? হলে খাবার তাড়াতাড়ি দিতে বলো।

প্রাপ্তি আবারো আড় চোখে পাশের টেবিলের দিকে তাকাচ্ছে।কেনো আমার এই ভদ্র লোককে এতো চেনা মনে হচ্ছে।ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে ওনি আমাদের দিকে রাগীভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।কিন্তু কেন?

ওয়েটার এসে অনেক রকমের খাবার এনে দিয়ে গেলো।
আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম ভাবে না থেকে খাওয়া শুরু করো।
প্রাপ্তির সেইদিকে কোনো মন নেই।আয়ান প্রাপ্তির অন্যমনস্ক দেখে, এই তুমি আমার দিকে তাকাওতো আমি তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি খেয়ে নিচ্ছি।
আয়ান -একদম চুপ! হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে জোর করে খাইয়ে দিলো।

প্রাপ্তি -এইবার আপনি খান।

আয়ান -অরণী! প্রাপ্তি আজ আমাকে একবার তুমি বলে ডেকেছে।এখন আবার আপনিতে চলে গেলো।

অরণী – কিরে? সকালে তোকে বলছিনা ভাইয়াকে তুমি বলে ডাকতে?

প্রাপ্তি -অভ্যাস হয়ে গেছে পাল্টাতে তো সময় লাগবে তাই না?

আয়ান – নো প্রবলেম।তোমার যেমনটা ভালো লাগে।
প্রাপ্তিকে পাশের টেবিলে আবার তাকাতে দেখে, কখন থেকে ওই দিকে তাকিয়ে কি দেখছো?দেখিতো! কথাটা বলেই আয়ান ফিরে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আয়ানের হাঁসি মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।প্রাপ্তি আর অরণী আয়ানের অবস্থা দেখে,
অরণী _ভাইয়া কি হয়েছে? তুমি মুহূর্তের মধ্যেই চেঞ্জ হয়ে গেলা?

প্রাপ্তি -আমার থেকে লোকটাকে কেমন চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছিনা কোথায় দেখেছি ওনাকে।।

আয়ান গম্ভীর গলায় নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ওনি আমার আব্বু!
প্রাপ্তি -(বিস্মিত হয়ে) কিহ্।

আয়ান -হুম প্রাপ্তি!

প্রাপ্তি -এই জন্যইতো অনেকক্ষণ থেকে আমার চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু ওনি এইখানে কি করছেন?

আয়ান -হয়তো বিজনেসের কোনো কাজে আসছে।

প্রাপ্তি -ওনার সাথে গিয়ে কথা বলবানা?
তুমি এখনো বসে আছো।যাও ওনার সাথে গিয়ে কথা বলো।

আয়ান উঠে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী উঠে চলে গেলো। আয়ান তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি! ওনি হচ্ছেন বিখ্যাত বিজনেস ম্যান আবিদ চৌধুরী। ওনার সাথে আমাদের যায়না।

প্রাপ্তি -আমার হ্যাজবেন্ডও কোনো অংশে কম নয়। সেটা ওনাকে বুজতে হবে।আর সেটা আমি ওনাকে বুজাবো।শুধু ভাইয়ার বিয়েটা মিটে যেতে দাও।

অরণী আচ্ছা এখন খাওয়া শেষ করো বাসায় যেতে হবে।বিকালে আবার নাকি মেয়েও দেখতে যাবা।ভাইয়া তোমার বন্ধুকে ফোন করেছো ওদের বাসায় যে যাবা।

আয়ান বসতে বসতে, ওইটা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবেনা।

প্রাপ্তি -এককাজ করো ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখো রেশী কে নিয়ে কলেজ থেকে আসছে কিনা।

আয়ান -ভাইয়া আমাকে এসএমএস অনেক আগেই দিয়েছে ওরা বাসায়।

অরণী খাওয়া শেষ করে পানি ঢালতে ঢালতে, তবে যাই বলিস রেশীকে আমার খুব ভালো লাগে।অনেক সহজ সরল একটা মেয়ে।বুজা যাচ্ছে মেয়েটা তোদের অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।আর ভালোবাসবে না কেনো বল তোরা তো ওকে কাজের মেয়ের মতো করে রাখিসনা।

প্রাপ্তি -অরণী! ও অনেক বড় ঘরের মেয়ে হয়তো ভাগ্যে তাকে আমাদের কাছে টেনে এনেছে।শুনেছি ওর বাবা নাকি মেয়েকে অনেক খুঁজেছে।কিন্তু পায়নি।পাবেই বা কি করে ও তো আমাদের কাছেই।জানিস ও বিয়ে থেকে পালিয়ে আসছিলো। ওর সৎ মা নাকি কোনো এক বাজে ছেলের সাথে ওকে বিয়ে দিতে ছেয়েছিলো।কোনোরকম ভাবে সেইখান থেকে পালিয়ে এসে রাস্তার পাশেই বসে ছিলো।তোর ভাইয়া সেই দিন রাতে কোনো একটা কাজে বাহিরে গিয়েছিলো। একা একটা মেয়ে আশেপাশে ছেলেরাও অন্য রকম ভাবে দেখছে। তোর ভাইয়া তো ওকে দেখেই বুজে ফেলেছিলো ও হয়তো পালিয়ে টালিয়ে আসছে।আর ওকে যখন তোর ভাইয়া একবার জিজ্ঞাস করলো যে ও একা কেনো বসে আছে ও সবকিছু গড়গড় করে বলে দিলো।তখন তো তোর ভাইয়া ওকে একা রেখে আসতে পারেনি। তাই সাথে করে নিয়ে এসেছে।আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো শুনছে আর মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।অরণী প্রাপ্তি কথা গুলো শুনছে আর বারবার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
অরণী -ভাইয়া কথা জিজ্ঞাস করি?

আয়ান -হুম করো না!

অরণী -আপনি হাঁসছেন কেনো?
অরণীর কথা শুনে প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)সত্যি বলছি আমি অন্য কিছু ভেবে হাঁসিনি। একটা কথা ভেবেই আমি হাঁসছি, আর সেটা হলো। তুমি যখন আমার সাথে কথা বলতেনা তখন তো আমি নিজেই বকবক করতাম।আর আমি তখন ভাবতাম আচ্ছা আমি যে এতো বকবক করছি ও কি আমার কথা গুলো শুনে নাকি শুনে না, সেটাও তো বুজতে পারিনা।তবে আজ বুজলাম তুমি আমার সব কথায় শুনতে।

প্রাপ্তি- (একটু ভেংচিয়ে) শু,,,,,,ধু শুনতাম না! ম,,,,,,ন দিয়ে শুনতাম।

আয়ান -জানো অরণী! তবে আমার একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে তোমার আপুর,সেটা হলো ও আমাকে কখনো সন্দেহ করেনি।কারন যেদিন রাতে আমি রেশীকে নিয়ে এসেছিলাম কিছু না বলে, সেইদিন রেশীকে নিয়ে আমি খুব ভয়ে ভয়ে কলিংবেল চাপলাম। যদি তোমার আপু আমাকে ভুল বুজে কিছু করে বসে।কিন্তু তোমার আপু দরজা খুলে আমাকেই অবাক করে দিয়েছে।কারণ রেশীকে দেখে তার চোখেমুখে বিষণ্ণতার কোনো চাপ নেই।উল্টো মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে রেশীকে বাসায় নিয়ে বসালো।আর রেশীর কি যে যত্ন করেছে তোমাকে বলে শেষ করা যাবেনা।আমি সেইদিন বুজলাম তোমার আপু আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।আর আমার প্রতি ওর বিশ্বাস দেখে আমি নতুন ভাবে আবার ওর প্রেমে পড়লাম।

অরণী -আপু দেখেছিস ভাইয়া তোকে কতো ভালোবাসে।আর তুই ভাইয়াকে অনেক কষ্ট দিস।

প্রাপ্তি -অনেক কথা বলা হয়েছে এইবার বাসায় চলো।

আবিদ চৌধুরী বাসায় এসেই চিৎকার দিয়ে, আয়েশা! আয়েশা! কোথায় তুমি?

আয়েশা বেগম নিজের রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসে, এইরকম বাহিরে থেকে এসে চেঁচাচ্ছ কেনো?
সুমিও উপরের থেকে দৌড়ে নিচে নেমে এলো।

আবিদ চৌধুরী -তোমাদের কি মনে হয় আমি এতোই পাষাণ? আমার মনে কোনো দয়ামায়া নেই।আমি দয়ামায়াহীন?

আয়েশা বেগম -তোমার মনে অনেক দয়ামায়া তাই আমার কলিজা টুকরো টা বউ নিয়ে বাহিরে থাকতে হয়।অবশ্য ভালোই হয়েছে ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে।এইবার কি হয়েছে সেটা বলো।

আবিদ চৌধুরী আয়েশা বেগমের কথা শুনে নিমিষেই যেনো রাগ টা কমে গেলো।চুপচাপ সোফায় বসে পড়লো।

সুমি -বাবা কি হয়েছে আপনার? আপনি যে কাজে গেছেন সেটা হয়নি?

সোফায় মাথাটা হেলান দিয়ে কান্না জড়িতো কন্ঠে, আবিদ চৌধুরী কোনো কাজে হারতে শিখেনি। কিন্তু তার ছেলের কাছেই হেরে বসে আছে।(ঠাট্টা করে)জানো আয়েশা আমার ছেলে বউয়ের প্রতি কি অবিরাম ভালোবাসা দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেছি।বউয়ের ঘাম খাওয়া হচ্ছে।পাবলিক প্লেসে বউকে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কথা গুলো শুনে আয়েশা বেগম আর সুমি দুজন দুজানার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়েশা বেগম -কার কথা বলছো তুমি?

আবিদ চৌধুরী -কেনো বুজতে পারোনি? তোমার গুণোধর ছোটো ছেলের কথা বলছি।কথাটা বলেই আবিদ চৌধুরী উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।
সুমি আর আয়েশা বেগম দুজনে কাছাকাছি এগিয়ে এসে হাঁসতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_অরণী অট্ট হাঁসি দিয়ে আমার জন্য কোনো মানা নাই ভাইয়া।যেতেই পারি।

অরণীর কথা শুনে আয়ান নিজেও হাঁসতে শুরু করলো।
অরণী- আচ্ছা তাহলে তোমরা কথা বলো আমি আসছি।সিয়াম আবার একা রুমে বসে আছে।কাল কিন্তু আমরা বিকেলবেলা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।
কথাটা বলেই অরণী চলে গেলো।

আয়ান -প্রাপ্তি! তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ান মনে মনে ভাবছে সবেমাত্র কথা বলা শুরু করেছে কোনো কিছু নিয়ে বেশি চাপাচাপি করা যাবেনা।না হলে আবার আগের মতোই হয়ে যাবে।
সকাল বেলা অরণীর ডাকে ঘুম ভাঙলো প্রাপ্তি আর আয়ানের। আয়ান ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে অরণীকে দেখে কি ব্যাপার অরণী কিছু বলবে?অরণী রুমে ঢুকে কয়টা বাজে দেখেছো? (প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)বাহ্ মহারাণী ও তো দেখছি এখনি আড়মোড়া ভাঙতেছে।
আয়ান হাতের ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে দেখে ৯.২০ বেজে গেছে।ও মাই গড! তুমি এতোক্ষণ ডাকনি কেনো?

অরণী -আচ্ছা সারারাত কি দুজন ঘুমাওনি?
অবশ্য জেগে থেকেই বা কি করবে ঘুমানো ছাড়া।

প্রাপ্তি -তুই একটু চুপ করবি?কখন থেকেই বকবক করে যাচ্ছিস।
(আয়ান তয়ালেটা হাতে নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছে)

অরণী -চুপ থাকতে বলছিস কেন? আপু আমি কিন্তু ছোটো নয় সবকিছুই বুজার বয়স আমার হয়েছে।

প্রাপ্তি -কি বলতে চাইছিস তুই?

অরণী -কথা টা শুনে তুই রাগ করিস না। তবে আমার যা মনে হচ্ছে তাই বলছি।
আমার মনে হয় তোদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে সেটাই তোদের মাঝে নাই।
অরণীর কথা শুনেই আয়ান ওয়াশ রুমের দরজাই দাঁড়িয়ে পড়লো।
আর প্রাপ্তি অবাক হয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে কি বলছিস তুই এই সব?
আয়ান আবার অরণীর আর প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে অরণী তোমার এমন কেনো মনে হলো?

অরণী -আগে মনে হয়নি, কাল তোমার কথা শুনেই মনে হলো,আচ্ছা তুমিই বলো কেউ কারো বউয়ের জামা কাপড় চেঞ্জ করতে লজ্জা পায়?
(অরণীর কথা শুনেই প্রাপ্তি আর আয়ান দুইজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে।)

কথাটা মনে হয় ঠিকি বলছি না হলে দুজন এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

আয়ান অরণীকে আর কিছু না বলেই ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।

প্রাপ্তি -তুই আসলে কি বলতো কথা টা আমাকে আলাদা ভাবেও তো বলতে পারতি।এইভাবে ওনার সামনে না বললেও পারতি।

অরণী -তুই চুপ করতো।দোষ তো তোরই তুই ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেনো?একটা মানুষের সাথে দুইটা বছরের বেশি সংসার করছিস এখনো তুমি কথাটা বলতে শিখিসনি।তোর এইসব পাগলামো কিভাবে যে ভাইয়া সহ্য করে আল্লাহ ভালো জানে।সিয়ামের সাথে তোর বিয়েটা হয়নি ভালোই হয়েছে।না হলে আরো আগে তোকে এই বাড়িতে আসা লাগতো।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।আমি যেনো তোকে আর না দেখি ভাইয়াকে আপনি করে ডাকছিস।তুমি করে বলবি।এখন ফ্রেশ হয়ে দুইজনে নাস্তা করতে আয়।

প্রাপ্তি বোকার মতো দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনেই যাচ্ছিলো।অরণী চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে অরণী সত্যিই বলছে অন্য কোনো ছেলে হলে আমাকে আরো আগেই ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতো।কিন্তু আয়ান আমার জন্য নিজের সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে পড়ে আছে। শুধু আমাকে ভালোবাসে।এখনকার ছেলেরা শুধু মেয়েদের দেহ টাই বুজে কিন্তু আয়ান কখনো আমাকে কোনো কিছু নিয়ে জোর করেনি।আয়ানের মতো যদি ছেলেরা হতো তাহলে কখনো মেয়েদের এতো অপমান,অপদস্থ, লাঞ্ছিত হতে হতো না।মেয়েরা নিজেদের সম্মান নিয়েই বেঁচে থাকতে পারতো।আয়ান এসে প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিতেই প্রাপ্তি চমকে গিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো,

আয়ান -কি হলো এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তি হুম বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম টেবিলে নাস্তা দিয়েছে, আয়ান, প্রাপ্তি, অরণী আর আজাদ সাহেব বসেছে নাস্তা করার জন্য।

আয়ান -মা রেশী কোথায়?ভাইয়া আর সিয়াম কেও তো দেখছি না।ওরা নাস্তা করবেনা?
নিলিমা বেগম -আসিফ নাস্তা করেই রেশীকে নিয়ে ওর কলেজে গেছে,বলেছে রেশীকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবে।

অরণী -সিয়াম ও খেয়ে অফিসে চলে গেলো।আব্বু তোমার সাথে নাস্তা করবে বলেই সকাল থেকে নাস্তা করেনি।
কথা শুনেই আয়ান লজ্জা পেয়ে গেলো।তার কখনোই ঘুম থেকে উঠতে এতো দেরী হয়না।আজ যে কি হলো বুজলাম না।

আয়ান-সরি আসলে আমি আজ বলতেই পারবো না।

আজাদ সাহেব -আরে কোনো প্রবলেম নাই।আমি এমনিতেই নাস্তা একটু দেরিতেই করি।

কথাটা শুনে আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি তুমি না আজ শপিং করতে যাও? নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।অরণী তাহলে তুমিও রেডি হয়ে নাও।

প্রাপ্তি -আজকেই যেতে হবে?

আয়ান -হুম আজকেই।(মনে মনে)আজ যখন তোমাকে নিয়ে ঘুরার সুযোগ পেয়েছি এইটা হাত ছাড়া করি কিভাবে?

অরণী -আপু তুই না করিস না।চলনা একসাথে ঘুরে আসি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে।

সবাই নাস্তা শেষ করে তিন জনই শপিং করার উদ্দেশ্য বের হলো।
প্রাপ্তি এই প্রথম আয়ানের সাথে শপিং করতে আসলো। এতো দিন প্রাপ্তির যা কিছু লেগেছে আয়ানই সব কিছু প্রাপ্তি না চাইতেই এনে দিতো।আয়ান কেমন করে সব বুজে যায়। প্রাপ্তির মনে কখন কি চায়।সবকিছু বুজার চেষ্টা করে।হয়তো প্রাপ্তির চোখে চোখ রেখে প্রাপ্তির মনকে পড়তে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আজ অনেক শপিং করলো প্রাপ্তি কিন্তু নিজের জন্য কিছুই নিলো না সব কিছু আয়ান আর নিজের পরিবারের জন্য।রুমকির জন্য তো ড্রেস খেলনা সব কিছুই নিয়েছে।

আয়ান প্রাপ্তির কান্ড গুলো দেখেই যাচ্ছে কিছু বলছেনা প্রাপ্তির মনে কষ্ট পাবে তাই।কিন্তু একটা কথা না বলে পারছেনা। তাই প্রাপ্তির কানের কাছে গিয়ে, আচ্ছা প্রাপ্তি সবার জন্য এতো কিছু নিলে নিজের জন্য কিছু নিচ্ছো না যে।

প্রাপ্তি মুছকি হেঁসে আমার নিজের জন্য নিজে কিনার প্রয়োজন নেই।তুমিই আমার জন্য যে শপিং করো সেই গুলোই শেষ করতে পারিনা।এখন যদি আমিও আমার জন্য নিতে থাকি তাহলে মানুষে কি নিবে।
কথাটা শুনে আয়ানের খুব ভালো লেগেছে,কিন্তু না হেঁসে পারলোনা।

আয়ান -আচ্ছা তাই নাকি?কিন্তু প্রাপ্তি আমাদের বাড়ির সবার জন্য যে নিলে এইগুলো দিবে কি করে?

প্রাপ্তি -ওইটা নিয়ে তোমায় এখন ভাবতে হবে না। বাসায় গিয়ে দেখা যাবে কি করা যায়।
এইদিকে আয়ানও প্রাপ্তিকে না জানিয়ে নিজের পছন্দের দুইটা শাড়ি নিয়ে নিলো।
শপিং শেষ করে তিন জনে একটা রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য রওনা হলো।আয়ান প্রাপ্তি আর অরণীকে রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে,তোমরা গিয়ে বসো আমি গাড়িটা রেখে আসছি।প্রাপ্তি আর অরণী কথা বলতে বলতে দুইজনে গিয়ে বসলো।অরণী বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।

অরণী ফোনটা পার্স থেকে বের করতে করতে সিয়াম মনে হয় ফোন করেছে, তুই এইখানে বস আমি কথা বলেই আসছি।

পাশের টেবিলের একটা লোক বার বার প্রাপ্তিকে দেখছে।প্রাপ্তির নজর পড়তেই অস অসস্থি বোধ হচ্ছে।কিন্তু লোকটাকে কোথায় যেনো দেখেছি।মনে হচ্ছে ওনার সাথে আমার আগেও দেখা হয়েছে।ওনাকে দেখে বাজে লোক মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ওনিও আমাকে চিনার চেষ্টা করছে।এমন সময় আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসতে বসতে কি ব্যাপার অরণী কই? এখনো খাবার অর্ডার করোনি?
কথা গুলো বলতে বলতে আয়ান খাবারে মেনু গুলো দেখছে।কি হলো কিছু বলছনাযে,প্রাপ্তি চুপ হয়ে থাকতে দেখে দুই হাত দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে সে পাশের টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের হাত দিয়ে প্রাপ্তির মাথাটা ঘুরিয়ে, আমার দিকে তাকাও এতোক্ষণ কি জিজ্ঞেস করছি তোমায়?
আর এইভাবে ঘামাচ্ছো কেনো কি হয়েছে তোমার?

প্রাপ্তি নিজের ঘাম গুলো মুছতে যাবে তখনি আয়ান হাতটা ধরে ফেললো।আয়ানের হাত ধরতে দেখে প্রাপ্তি আস্তে করে বললো কিছু হয়নি।এমনি হয়তো ঘামাচ্ছি।

আয়ান অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।ঘামালেও মানুষকে সুন্দর দেখায় এইটা তোমাকে দেখে বুজলাম।এখন আমি তোমার ঘাম খাবো।

প্রাপ্তি -(চোখ মুখ কুঁচকে) কিহ্। আপনার মাথা খারাপ হলো নাকি? কি উল্টা পাল্টা বকছেন? (প্রাপ্তি ভেবেছে আয়ান হয়তো তাকে কিস করা কথা বলছে। এইখানে পাবলিক প্লেসে যে ওনার মাথায় কি ভূত চাপছে বুজতেই তো পারছিনা।)আমি বুজেছি কি বলতে চাচ্ছেন আমরা বাসায় যাই তারপর না হয়,,,,,,

আয়ান -না এইখানেই,,,কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে প্রাপ্তির কপাল থেকে একটু খানি ঘাম আয়ান মুখে দিয়ে হুম্মম্মম্মম অনেক টেস্ট।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অবাক চোখে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।,,,,,,

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো এক অজানার পথে। কোথায় যাবে কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না আয়ানের। বাড়ি থেকে না এসেও উপায় কি? ওই বাড়িতে থাকলে প্রাপ্তিকে বার বার আব্বুর কাছে অপমান আর অপদস্থ হতে হতো।নিজের স্ত্রী কে নিজের চোখের সামনে এইভাবে দেখা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো আয়ানের। সকাল থেকে তো মেয়েটা কিছু খায়নি।আমি অফিসে যাবো বলে সবকিছু রেডি করতেই তো সময় চলে গেলো তারপর তো আব্বু আসার পর আর খাওয়াই হয়নি।
একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে, মামা রেস্টুরেন্ট এর দিকে চলেন।কথাটা শুনে প্রাপ্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এমন একটা অবস্থায় রেস্টুরেন্টে যাবার কথা মাথায় আসে কি করে। এখন কি রেস্টুরেন্টে যাবার সময়?

আয়ান-হা করে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? রিকশায় উঠো।

প্রাপ্তি চুপচাপ রিকশায় উঠে বসলো।দুজনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। আয়ান অনেক গুলা খাবার অর্ডার করলো। প্রাপ্তি শুধু দেখেই যাচ্ছে।

আয়ান প্রাপ্তির তাকানো দেখে, চিন্তা হচ্ছে?
চিন্তা করোনা! দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।ওয়েট! আসিফ ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে এইখানে আসতে বলি।
ফোনটা পকেট থেকে বের করে আসিফকে ফোন দিয়ে বললো রেস্টুরেন্টে আসার জন্য।
আসিফ আর কোনো প্রশ্ন করলো না আয়ান কে।
আয়ান আসিফের সাথে কথা শেষ করে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।সকাল থেকেতো কিছুই খাওনি।
এখন খেয়ে নাও।ভাইয়া আসলে তুমি ভাইয়ার সাথে চলে যাবে।এইদিকে আমি বাসা ঠিক করে একটা চাকরি পেয়ে গেলেই তোমাকে নিয়ে আসবো।

প্রাপ্তির হাজার টা প্রশ্ন নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে ওই বাড়িতে দিয়ে ওনি কোথায় থাকবে? চাকরি বা পাবে কোথায় এখন?এই কয়েকটা দিন ওনাকে দেখেই কেমন জানি মায়া কাজ করে।

আয়ান প্রাপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে মুছকি হেঁসে,শুধু তাকিয়েই থাকতে পারো মুখে তো আর কিছু বলতে পারো না।মনে যে প্রশ্ন গুলো দানা বেধেছে সেই প্রশ্ন গুলো আনসার পরে দিবো। আগে খেয়ে নাও।

অনেকক্ষণ পরে আসিফ চলে আসলো।আসিফকে দেখে আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে ভাইয়া বসুন।

আসিফ -হুম তুমিও বসো।

আসিফ বসতে বসতে তোমরা কোথাও যাচ্ছো নাকি?

প্রাপ্তি -তুই কি করে বুজলি আমরা কোথাও যচ্ছি?
আসিফ -ব্যাগ দেখে।তো হঠাৎ আমাকে ডাকা?
আয়ান -আসলে ভাইয়া,,, আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। আমার আব্বু হঠাৎ করে আজ সকালেই দেশে চলে আসে তারপর কি আর বলবো আপনাকে!

আসিফ -আর কিছু বলতে হবেনা আমি বুজেছি।এখন কি! আমার বোন কে আমি নিয়ে যাবো তাই তো? আয়ান আমি তোমাকে বিয়ের দিনে বলেছিলাম এই বিয়েটা করোনা। (প্রাপ্তি আসিফকে আকটাতে চেষ্টা করছে,সেই দিকে আসিফের কোনো খেয়ালি নেই,)কিন্তু তুমি আমার কথা শুনো নাই।আমার বোন আমাদের কাছে এতোটা ফেলনা নয় যে তাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিবো।

আয়ান -ভাইয়া আপনি আমার কথা টা একবার শুনুন?

আসিফ -কি শুনবো তুমি আমার কাছে এখন ক্ষমা চাইবে তাই তো? কোনো প্রয়োজন নেই, আমি আমার বোন কে নিয়ে যাচ্ছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে উঠাতে যাবে তখনি প্রাপ্তি আসিফের হাত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তুই একটু চুপ করবি? অনেকক্ষণ থেকে একটা মানুষের নামে যা নয় তাই বলে যাচ্ছিস।

আসিফ -কি শুনাবি? দেখি শুনা। আবার বসে পড়ে)

প্রাপ্তি -(কমল স্বরে)ওনিও সব কিছু ছেড়ে আমার সাথে চলে এসেছে।প্রাপ্তি সব কিছুই আসিফকে বললো।আসিফ সব শুনে লজ্জা পেয়ে আয়ানের হাত দুটো ছেপে ধরে সরি আয়ান! আসলে আমি বুজতে পারিনি।

আয়ান -কোনো সমস্যা না।আপনাকে শুধু এই জন্যই ডেকেছি প্রাপ্তিকে কয়েক দিনের জন্য আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করেই নিয়ে আসবো।

আসিফ প্রাপ্তিকে নিয়ে আসার দুইদিন পরেই আয়ান অভ্রকে নিয়ে প্রাপ্তিদের বাড়ি আসে প্রাপ্তিকে নিতে। এই দুই দিন প্রাপ্তির কিভাবে যে কেটেছিলো প্রাপ্তি কাউকে বুজাতে পারবেনা।রুমে বসে আয়ানের কথার শব্দ শুনে যেনো সুস্থির নিশ্বাস ফিরে এলো প্রাপ্তির।

আসিফ আর আজাদ সাহেব এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে,,
আজাদ সাহেব -কেমন আছো বাবা?

আয়ান -জ্বী বাবা ভালো।অভ্রর দিকে তাকিয়ে ওহ্ বাবা আপনাদের তো পরিচয় করানো হলোনা।ও হচ্ছে অভ্র আমি যে অফিসে এমডি হিসেবে জয়েন করেছি। ও সেই অফিসে চাকরি করে।

আসিফ -হাই অভ্র কেমন আছো?

অভ্র -জ্বী ভালো।

আয়ান -ভাইয়া অভ্র আমাকে আর ও একটা হেল্প করেছে।নতুন যে বাসাটা নিয়েছি সেটা অভ্রর জন্যই।

নিলিমা বেগম নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে আয়ান তুমি দেখছি একদম সব ঠিক করেই আসছো?

আয়ান -আসসালামু আলাইকুম মা! আপনি কেমন আছেন?

নিলিমা বেগম -আমি একদম ঠিক আছি।
এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক করে ফেললে?

আয়ান -মা! আমার পক্ষে একা সম্ভব ছিলোনা।পাশে অভ্র ছিলো বলেই এতো তাড়াতাড়ি সব সম্ভব হয়েছে।আচ্ছা মা! প্রাপ্তি কোথায় ওকে দেখছিনা তো।

আজাদ সাহেব -আয়ান! ও এই বাড়িতে আসার পর থেকেই তো কারো সাথে কথা বলে না।সবসময় কেমন যেনো চিন্তার ভাব নিয়ে থাকে।ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া ও করেনা।

আসিফ -তুমি বসো আমি ডেকে নিয়ে আসছি।

আয়ান -ভাইয়া! আমিই যাচ্ছি আপনি বসেন।
আয়ান প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে,প্রাপ্তি মুখে হাঁসির ঝলক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান গিয়ে খাটের উপর বসে পায়ের উপর পা দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বললো মহারাণী! নতুন বাসা ঠিক করে আসলাম।বলেছিলাম না বেশি সময় লাগবেনা।
সব কিছু গুছিয়ে নাও নতুন বাসায় নতুন করে প্রাপ্তিকে পেতে চাই। (কথাটা শুনে প্রাপ্তি হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো) কি! ভয়ে পেয়ে গেলে?আমি সেই পাবার কথা বলিনি।ওই বাসাতে তো সব কিছু তোমার ছোঁয়াই থাকবে।তোমার হাতের রান্না খাবো।কি! খাওয়াবে তো।আমিও কিন্তু মোটামোটি রান্না পারি তুমি না পারলেও আমি যা পারি ওতেই চলে যাবে আমাদের, কি বলো?ও তুমি তো আবার কথা বলনা আমার সাথে কাকে যে কি বলি।
বিকাল বেলা সব কিছু গুছিয়ে প্রাপ্তি আর আয়ান নতুন এক সংসারে পা বাড়ালো।সেই সংসারে কয়েক দিন পর এলো রেশী। তিন জন মিলেই চলতে থাকলো তাদের নতুন জীবন।

_আপু! আপু! কই তোরা? অরণী বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে বাহ্ দুজনে এইখানে প্রেম করা হচ্ছে?অরণীর ডাক শুনে আয়ান আর প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
(পাঠক আপনারাও ফিরে আসুন ভাবনার জগত থেকে।)

প্রাপ্তি -হুম কিরে,,, কিছু বলবি?
অরণীকে দেখে আয়ান আবার অন্য দিকে ফিরে আছে।

অরণী আয়ানের মুখ ফিরেতে দেখে ভাইয়া আপনি কেনো যে আমার সাথে এই রকম করেন আমি জানি না।যদিও আমার কোনো অন্যায় থাকে তাহলে কি ক্ষমা করা যায়না?

প্রাপ্তি আয়ান কিছু বলার আশায় তাকিয়ে দুজনকেই দেখছে।আয়ান কিছু বলছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো,আপনি কিন্তু অরণীকে আজ ক্ষমা করা উচিত। আপনি তো ভাবতেন সেইদিনের ঘটনার জন্যই আমি আপনার সাথে কথা বলিনা।আজ তো আমি আপনার সাথে কথা বলছি তাহলে আপনার ও উচিত ওর সাথে কথা বলার।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান অরণীর দিকে ফিরে তাকিয়ে, বলতে পারি যদি তুমি কাল প্রাপ্তির সাথে শপিং এ যাও।

অরণী অট্ট হাঁসি দিয়ে আমার জন্য কোনো মানা নাই ভাইয়া।যেতেই পারি।

চলবে,,,,,,