Tuesday, June 17, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2394



ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১৭

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

__কথাটা শুনেই আয়েশা বেগম ছেলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।নিজের পায়ে নিজে এইভাবে কেউ কুড়াল মারে?ওই বাড়ীতে কি কি হয়েছে ধীরে ধীরে সব কিছু সুমি আয়েশা বেগমের কাছে বলতে লাগলো।সব শুনে আয়েশা বেগম আয়ান কে উঠিয়ে নিজের পাশে বসালো।

আয়ান -আম্মু তুমিও কিছু বলবে না? কেউ আমার পাশে থাকুক আর না থাকুক আমি জানি আমার আম্মু আমার পাশে থাকবে।

আয়েশা বেগম আয়ানের মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে বললো আমি তোকে বলবো না ওই মেয়েকে ছেড়ে দে।কারণ আমি মেয়ে, আমি মা,আমি বোন, ওর কষ্ট টা আমি বুজি।আমি শুধু এইটুকুই বলবো তুই যখন মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছিস ওর কোনো অসম্মান করিস না।তোকে এখন একেক জন একেক কথা বলবে তুই কোনো কথায় কান দিস না।শুধু এইটাই ভাববি ওই এখন তোর জীবনে একটা অংশ।
কথা গুলো শুনে আয়ান চোখের কোনে পানি এসে গেছে আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে thank you আম্মু।আমি তোমার কথা রাখবো।

সুমি আয়ানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে মায়ের বাধ্য ছেলে।

আয়েশা বেগম মনে মনে ভাবছে তোর বাবা আসলে জানি না ওই মেয়েকে মেনে নিবে কিনা।তাই তোকে আগেই কথা গুলো বলে দিলাম।যেনো তুই ওই মেয়েকে ছেড়ে না যাস।

ঝিনুক সুমিকে খুঁজতে খুঁজতে আয়েশা বেগমের রুমে এসে আয়ানকে দেখে বাহ্ আগেভাগে মাকে বুজিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আয়ান -তোর হিংসে হচ্ছে নাকি? অবশ্য তোর হিংসে হতেই পারে।

ঝিনুক -আমি তোকে হিংসে করি? এইটা তুই বলতে পারলি?

সুমি -আপু থাকনা।রুমকি কোথায়?

ঝিনুক -আমিও তাকে খুঁজতে এসেছি।এখানে এসে তো দেখি অন্য কিছু।

সুমি -আচ্ছা চলো দেখি ও কোথায় আছে।

রুমকি প্রাপ্তির পাশে গিয়ে গালে আঙুল দিয়ে প্রাপ্তিকে ভালো করে দেখছে।প্রাপ্তির চোখ পড়তেই মুছকি হাঁসি দিয়ে, এক হাত দিয়ে রুমকিকে কাছে টেনে এনে কোলে বসিয়ে, কি নাম তোমার?

রুমকি কি যেন ভেবে বললো আমি রুমকি। তুমি?

প্রাপ্তি -আমি প্রাপ্তি।

রুমকি -তুমি জানো আমি তোমার কি হই?

প্রাপ্তি -প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।

রুমকি -ওমা এটাও জানোনা? আমি তোমার ছোটো মা হই ছোটো মা।এইবার বুজেছো?

প্রাপ্তি এইটাও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।

রুমকি -তুমি কিন্তু আমার আরেকটা মামনি বুজলেতো?আচ্ছা তুমি গল্প বলতে পারো?

প্রাপ্তি -একটুআধটু পারি।

রুমকি -ধুত তোমার মধ্যে কোনো রোমাঞ্চ নাই।তাহলে ছোটো মামার সাথে কথা বলবা কেমনে।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে, তাই নাকি তুমি জানো রোমাঞ্চ কি করে করে।

রুমকি -ওই যে তোমার মতো একটুআধটু জানি।

সুমি আর ঝিনুক এসে দেখে রুমকির আর প্রাপ্তির ভালোই ভাব হয়েছে।

সুমি -বাহ্ আমাদের রুমকি মামনি দেখছি তার ছোটো মামনির সাথে ভালোই ভাব হয়েছে।এইযে প্রাপ্তি এই হচ্ছে এই বাড়ীর মহারাণী। ওর জেনো কোনো অযত্ন না হয়।

ঝিনুক -রুমকি আসো রাত অনেক হয়েছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।এইখানে বসার কোনো দরকার নেই।
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি ঝিনুকের দিকে আড় চোখে তাকাতেই এই শুনো আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি।

সুমি -আপু তুমি ওর সাথে এইভাবে কথা বলো না।

ঝিনুক -আমি কোনো ভাবেই কথা বলছিনা।তোমরা থাকো তোমাদের নিয়ে আমি যাই।
কথাটা বলেই ঝিনুক নিজের রুমে চলে গেলো।

সুমি -প্রাপ্তি! আপুর কথায় কিছু মনে করো না।আপু কিন্তু অনেক ভালো। হয়তো কাল দেখবে সবছেয়ে বেশী আপুই তোমাকে আদর করবে।

প্রাপ্তি -আমি কিছু মনে করিনি।এইগুলো শুনতে শুনতে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

সুমি -আচ্ছা ঠিক আছে এখন চলো খাবে।

প্রাপ্তি -না ভাবী আমি একটু ও খেতে পারবো না।

সুমি -যার বউ সে দেখবে।এখন চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।মিনুটা কই গেলো। মিনু! এই মিনু একটু এইদিকে আসো।

মিনু এসে, ভাবী আমায় ডেকেছো?

সুমি-হুম চলো প্রাপ্তিকে রুমে দিয়ে আসি।

আয়ান এখনো আয়েশা বেগমের রুমে বসে আছে।কিরে বাবা এইখানেই বসে থাকবি?
আয়ান -আম্মু তুমি এতো ভালো কেনো বলো তো?

আয়েশা বেগম -কোনো মাই কখনো খারাপ হয়না।সব বাবা মাই তার সন্তানের জন্য ভালো চায়।এখন যাও রুমে যাও মেয়েটা মনে হয় একাই বসে আছে।

আয়ান মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে, তুমি রেস্ট নাও তাহলে আমি আসি।

প্রাপ্তি বসে আছে আয়ানের রুমেই।রুমটাকে ফুল দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।
সব কিছুই গুছানো। ছেলেদের রুম এতোটা গুছানো হয় তার জানা ছিলো না।প্রাপ্তি মনে মনে তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে রুমটা সাজিয়েছে কার জন্য আর বসে আছে কে? আজ এইখানে অরণীর থাকার কথা ছিলো। আর এখন আমার মতো একটা মেয়ে বসে আছে।আচ্ছা বাসরঘরে নাকি দুজনের জীবনের জন্য একটা সপ্নের রাত।কিন্তু আমার তো কোনো সপ্ন নেই। থাকবেই বা কি করে আমার মতো মেয়েদের থাকার কথাও না। আয়ান চৌধুরী যখন নিজের অধিকার চাইবে আমি কি বলবো।অবশ্য ছেলে বলে কথা নিজের অধিকার ঠিকি ছিনিয়ে নিবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আয়ান দরজায় নক করে ভিতরে ঢুকলো। প্রাপ্তিকে বসে থাকতে দেখে, আরে,,,,,,আপনি এখনো ফ্রেশ হননি? এই ভারী সাজ নিয়ে কিভাবে বসে আছেন আপনার কষ্ট হচ্ছে না?কথাটা বলতে বলতে আলমারি থেকে একটা থ্রি পিজ বের করে প্রাপ্তির সামনে দিয়ে ওই পাশে ওয়াশরুম আছে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।(প্রাপ্তি আয়ানের কথা শুনে অবাক হয়েই তার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে হয়তো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসতে বলছে তার অধিকার ফলানোর জন্য নাকি?)এইযে,,,, হা াাাাাাাাাাা করে এইভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন?মশা ডুকে যাবে তো।(কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে)তাড়াতাড়ি উঠুন।
প্রাপ্তি উঠে জামা নিয়েই ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়ান ওই বাড়ী থেকে এসেই ফ্রেশ হয়ে আয়েশা বেগমের রুমে গিয়েছিলো । তাই তার ফ্রেশ হওয়ার চিন্তা নেই।ফোন টা হাতে নিয়ে খাটে বসে মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখে এসএমএস এ ভরপুর।অনেক ফ্রেন্ড এর এসএমএস দেখে আয়ানের মেজাজ টাই গরম হয়ে গেলো ফোনটা জিদ করে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখটা মুছেই সামনে চোখ পড়তেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুমের দরজা আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানের তাকানো দেখে প্রাপ্তিও লজ্জা পেয়ে গেছে।আয়ান নিজের অজান্তেই বলে উঠলো আমার ঘরে কি কোনো পরী নেমে আসলো নাকি?
এমন সময় দরজায় নক করার শব্দে আয়ানের হুশ ফিরে এলো।আয়ান গিয়ে দরজা খুলেই দেখে সুমি খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান -সুইট হার্ট তুমি এই সময়?

সুমি -দেখছো না খাবার নিয়ে আসছি।তোমার বউ তো কিছুই খায়নি।এখন সামনে থেকে সরো ভিতরে ঢুকতে দাও।নাকি সমস্যা আছে?

আয়ান -আরে না! না! আসো।
সুমি ঢুকেই প্রাপ্তির দিকে চোখ পড়তেই, আয়ানের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু একটা হাঁসি দিয়ে আয়ান বাবু আর দেরী সয়েছিলো না।তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি?
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি লজ্জায় নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ান -সুইট হার্ট কি যা তা বলছো, কিছুই তো বুজতেছি না।

সুমি -গোসল ও সেরে নিয়েছে তারপর ও বুজাতে হবে? যাই হোক দুইজনি খেয়ে নাও কথা টা বলে সুমি হাঁসতে হাঁসতে চলে গেলো।
আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে, বুজা যাচ্ছে মেয়েটা অনেক লজ্জা পেয়েছে।আসলে আপনি কিছু মনে করবেন না।আপনি শাড়ী চেঞ্জ করেছেন বলে ভাবী এই কথা বলেছে

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:১৬

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:১৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সবাই প্রাপ্তির জন্য কান্নাকাটি করছে এতে প্রাপ্তির কোনো কুরুক্ষেপ নেই।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে নিজের যে বিপদ যে নিজে ডেকে আনতে পারে সেটা এই ছেলেকে না দেখলে বুজতামই না।মিঃ আয়ান আপনি হয়তো বড়লোক বাবার ছেলে বিয়েটা আপনার কাছে ছেলে খেলা হয়তো মনে হয়েছে।নাকি নিজেকে সবার কাছে মহৎ সাজার জন্য বিয়ে করেছেন সেটা আল্লাহ ভালো জানে।আয়ান প্রাপ্তির কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো মিসেস আয়ান চৌধরী আপনি মনে মনে যা ভাবছেন তা ঠিক নয়। আমি কারো কাছে মহৎ সাজার চেষ্টা করিনি।আপনাকে ভালোবেসেই বিয়েটা করেছি।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে,এই কি করে জানলো আমি কি ভাবছি?মানুষের মনের কথা পড়তে পারে নাকি?

আকাশ আসিফকে ডেকে এনে বললো, আসিফ এমনিতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এইবার তো আমাদের যেতে হবে।আমাদের গাড়ী এসে গেছে প্রাপ্তিকে বিদায় দেওয়ার ব্যবস্থা করো।

আসিফ -হ্যাঁ ভাইয়া দিচ্ছি।

সুমি, ঝিনুক, মিনু যে বিয়ে নিয়ে এতো আনন্দ ছিলো সেই বিয়েতে তারা মন মরা হয়ে আছে।

রুমকি ঝিনুককে চুপচাপ থেকতে দেখে নিহাদ কে বলতে লাগলো,বাবাই এই নতুন বউটা ভালো না?সবাই কেনো এমন কররছে?

নিহাদ -না মা! নতুন বউটা অনেক ভালো।নতুন বউ এখন আমাদের সাথে চলে যাবে তাই সবার মন খারাপ।

সুমি এসে প্রাপ্তির হাত ধরে এসো আমার সাথে আসো, সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রাপ্তিকে গাড়ীতে বসালো সুমি।নিলিমা বেগম মেয়ের নিস্তব্ধতা দেখে আজাদ সাহেবকে বললো দেখোছো মেয়ে কেমন জানি হয়ে গেছে।বিয়েটা দিয়ে কোনো ভুল করলাম নাতো? মেয়েটা কারো সাথে একটা কথাও বললো না।

আজাদ সাহেব আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বাবা আয়ান তোমাকে বিশ্বাস করেই কিন্তু মেয়েটা তোমার হাতে তুলে দিলাম।তুমি তো সবি জেনেছো এবং জেনে শুনেই বিয়ে করেছো মেয়েটা অনেক গম্ভীর কাউকে শত কষ্টেও মুখ ফুটে কিছু বলেনা তাই বলছি মেয়েটার দিকে একটু খেয়াল রেখো। প্রাপ্তির বাবার কথা শুনে আয়ান বললো আপনি চিন্তা করবেন না।

সুমি মুছকি হাঁসি দিয়ে,আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না আমরা সবাইতো আছিই।

আসিফ -ভাবী প্লিজ একটু খেয়াল রাখবেন।

সুমি -বললাম তো আসিফ কোনো চিন্তা করো না।আমরা সবাই মিলেই দেখবো।
প্রাপ্তি গাড়ীর ভিতরেই বসে চোখের পানি গুলোকে লুকানোর চেষ্টা করছে,আসিফ গাড়ী ভেতরে ঢুকে প্রাপ্তির চোখ গুলোকে মুছে আমি জানি তুই রাগ করে আছিস আমার উপর তাইনা? প্রাপ্তি বিশ্বাস কর আমি সবসময় চাই তুই ভালো থাকবি তুই সুখে থাকবি।আমার মনে হচ্ছে তোকে ভালো রাখার মানুষের কাছেই তোকে তুলে দিলাম।তুই আমার কথা কোনো একদিন মিলিয়ে নিস তোকে এই মানুষ টাই তোর অতীতকে ভুলিয়ে দিবে।(প্রাপ্তি কিছু বলছে না শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।)প্রাপ্তি! লক্ষ্মী বোন যাওয়ার আগেও আমার সাথে কথা বলবিনা? রাগ করেই থাকবি? কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আসিফ কে জড়িয়ে ধরে ভাইয়া! আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারবোনা। তুই ছাড়া আমাকে কেউ বুজেনা।(আসিফ প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে চোখ মুছে) কাঁদতে কাঁদতে কি করেছিস চেহারাটার।
আকাশ গাড়ীর সামনে এগিয়ে এসে, আসিফ আমাদের তো এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে একটু তাড়াতাড়ি করো।

আসিফ প্রাপ্তিকে বসিয়ে নিজে বেরিয়ে এসে আয়ান তুমি বসো।
সব গুলো গাড়ী আগেই চলতে শুরু করলো।শুধু আয়ানের গাড়ীটাই বাকী ছিলো। আয়ান উঠে বসতেই সেটাও চলেতে শুরু করলো।গাড়ী পিছন পিছন আসিফ এগুতে থাকলো প্রাপ্তি পানি ভরা একজোড়া চোখ গাড়ী বাহিরেই তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ আসিফ কে দেখা যায় ততক্ষণ।
তারপর চুপ করে বসে ছিলো আয়ানদের বাড়ী আসা পর্যন্ত। আয়ান ও কিছু বলেনি।

আয়েশা বেগম অপেক্ষায় বসে আছে কখন ছেলের বউ আসবে।মিনু অবশ্য একবার ফোন করে বলেছিলো কি সব ঝামেলার কথা।তারপর কি হলো একবার জানালো না।সুমিদের গাড়ী এসে থামতেই আয়শা বেগম এগিয়ে দরজার দিকে গেলো।ঝিনুক রুমকিকে কোলে নিয়ে মন খারাপ করে বাসায় ঢুকেই সোঝা নিজের রুমেই চলে গেলো।আয়শা বেগমের সাথে একটা কথাও বললো না।সুমি ও এসে, একি মা! আপনি দরজায় দাঁড়িয়ে কেনো বউকে বরন করতে হবে তো।ওরা পিছনের গাড়ীতেই আছে হাতে বেশী সময় নেই।

আয়েশা বেগম -এতো উতালা হওয়ার কি আছে? আসুক না আগে।কিন্তু ওই বাড়ীতে কি এতো ঝামেলা হয়েছে সেটা বল? ঝিনুকও কিছু না বলে মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো কি হয়েছে মা বলনা?

সুমি আস্তে করে আয়েশা বেগমের কাছে গিয়ে, মা! এখন এতো কথা বলার সময় নয় আমি তোমাকে পরে সব বুজিয়ে বলবো।আর শুনো বউকে এইখানে রাখা ঠিক হবেনা।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়ানের রুমে দিয়ে দেওয়াটা ভালো হবে।

আয়েশা বেগম -তুমি কি বলছো আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

কথাটা বলতেই গাড়ী থেকে আয়ান নেমে এসে, ভাবী তুমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসো, আয়ানের কথা শুনে সুমি মুছকি হেঁসে, হুম নিয়ে আসছি।
সুমি গিয়ে প্রাপ্তিকে নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়াতেই আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে দেখে,মাসাল্লাহ্ আমার ছোটো ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।সুমি আয়ানের মায়ের সামনে প্রাপ্তিকে দাঁড় করিয়ে, প্রাপ্তি ইনি আমাদের শাশুড়ি মা! শাশুড়ি বললে ভুল হবে, মা,বন্ধু, যা থাকে একটা সম্পর্কের মাঝে সবটা! প্রাপ্তি পা ছুঁয়ে আয়েশা বেগমকে সালাম করতে যাবে তখনি আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে উঠিয়ে আরে আরে পাগলি মেয়েটা কি করছে? পা ছুঁয়ে সালাম করতে হবে না।এই বাড়ী সবার ছোটো তুমি তাই আজ থেকে তুমি আমার ছোটো মেয়ে। কি বুজেছোতো?আর আমাকে মা বলে ডাকবে, শুধু মা না বুন্ধুও ভাববে এইটাও বুজেছোতো,,,,,বলে হা হা হা করেই হাঁসা শুরু করলো।
প্রাপ্তি সারাটা দিন মন খারাপ করে থাকলেও আয়ানের মায়ের কথা শুনে না হেঁসে পারলো না।মুছকি হাঁসি দিয়ে হ্যাঁ বুজালো।

এইদিকে সবাই প্রাপ্তিকে দেখেতে ড্রইংরুমে ভিড় জমিয়েছে।সুমি প্রাপ্তিকে নিয়ে মোটামুটি পরিচয় করিয়ে দিলো।আয়েশা বেগম মিনু আর সুমি কে সব সামলাতে বলে নিজে রুমে গেলো আবিদ চৌধুরী ফোন দিয়েছে কথা বলার জন্য।আবিদ চৌধুরী বার বার ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করছে বিয়ের সব কিছু আকাশ সামলাতে পারছে কিনা। সুমি মিনুকে ডেকে নিয়ে বললো, এক কাজ করো মিনু! প্রাপ্তিকে আপাদত তোমার রুমে নিয়ে যাও।মাকে তো এখনো কিছু বলা হয়নি প্রাপ্তির ব্যাপারে।লোকজনকে দেখো সবাই কানাঘুষায় নেমেছে মনে হচ্ছে ওদের কানাঘুষার জন্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী রাখা হয়েছে।

মিনু -ভাবী কিছু করার নাই এরা বলবেই কারণ বলার জন্য আমার ভাই নিজের হাতে বদনাম গুলো ওদের মুখে তুলে দিয়েছে। আর যতোই চেষ্টা করো এইগুলো থামাতে পারবেনা।

সুমি -আরে আমি সেই কথা বলছিনা।মা সবার মুখ থেকে জানার আগে আমরা বলে দিলে ভালো হয় না?

মিনু-আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিয়ে যাচ্ছি। তবে মহারাজা কথায় গেলেন মহারানীকে রেখে? আমাদেরকে এখন ঝামেলার মধ্যে ফেলে নিজেই উধাও।
প্রাপ্তি সোপায় বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে।চারপাশ থেকে লোকজন একেকজন একেক কথায় বলে যাচ্ছে।প্রাপ্তি তাদের কথা গুলো নিজের শরীরের সাথে তেমন মাখছেনা।কারণ এই কানাঘুষা শুনা তার জন্য নতুন কোনো ব্যাপার নয়। এইগুলো শুনতে শুনতে সেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মিনু এসে বললো উঠে দাঁড়াও! প্রাপ্তি দাঁড়াতেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসালো।মিনু প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেয়েটাকে খারাপ লাগছেনা।আয়ানের পছন্দ আছে মানতে হবে।

প্রাপ্তি মিনুর দিকে চোখ পড়তেই, আপু আপনি কিছু বলবেন?

মিনু প্রাপ্তির কথা শুনে একটু চমকিয়ে,আরে না না! তুমি বসো আমি আসছি।
সুমি আয়েশা বেগমের রুমের দিকে পা এগুতেই কাজের লোক রফিক এসে, ভাবী! যে রান্নাটা বসিয়েছি যদি একটু দেখে নিতেন তাহলে ভালো হতো।

সুমি -আচ্ছা চলো পরে না হয় মায়ের কাছে যাবো।

আয়েশা বেগম ফোনে কথা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে দেখে আয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।কিরে বাবা তুই দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয়।
আয়ান ভিতরে এসে আয়েশা বেগমকে বসিয়ে পা দুটো জড়িয়ে কলে মাথা রেখে নিচে বসলো।
আয়েশা বেগম -কিরে বাবা! কি হয়েছে? মন খারাপ করে আছিস মেয়ে তো তোর পছন্দ করা মেয়ে তাহলে মন খারাপ কেনো?
আয়ান -আম্মু আমি যদি তোমাকে না জানিয়ে কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেতো?

আয়েশা বেগম -আমি জানি আমার আকাশ আর আয়ান কখনো কোনো ভুল করতে পারে না।যদিও কোনো ভুল করে সেটা কারো না কারো ভালোর জন্যই করবে।

আয়ান -আম্মু আজ আমি একটা ভুল করেছি অবশ্য এইটা ভুল কিনা আমি জানি না কারো ভালো হয়েছে কিনা আমি তাও জানি না শুধু জানি আমার ভালোবাসার জয় হয়েছে।

আয়েশা বেগম -কি হয়েছে বাবা আমি তোর কথা কিছুই বুজতেছিনা।তুই এতো পেছিয়ে না বলে সোজাসুজি ভাবে বল বাবা?

আয়ান -আম্মু ঠিকি বলেছো তোমাকে কথাটা সোজাসুজি ভাবেই বলা উচিত। আসলে আব্বু যে মেয়েকে ঠিক করে এসেছে এই মেয়ে সেই মেয়ে নয়। কিন্তু সেই দিন আমি ওকে পছন্দ করে ছিলাম ওই মেয়েকে নয়।

আয়েশা বেগম -তাতে কি হয়েছে তোর পছন্দ বড় কথা।

আয়ান -আরো একটা কারণ আছে আম্মু,এইমেয়ের জীবনে অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা আছে সেটা শুনলে তো আব্বু কখনো মেনে নিবেনা আম্মু।

আয়েশা বেগম-কি হয়েছে বলতো?

আয়ান আমতা আমতা করে, আাাাাম্মুুুুুুুুুুুুুুও ও ও সুমি এসে আয়ানকে তোতলাতে দেখে, আয়ান আমি বলছি। আসলে মা ওই মেয়ে ধর্ষিতা।সুমি কতো সহজে কথাটা বলে পেললো দেখে আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুমির দিকে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:১৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:১৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আয়ানের কথা শুনে আকাশ আর ঝিনুক আয়ানকে এক পাশে টেনে নিয়ে,

আকাশ -তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
না জেনে শুনে তুই মেয়েটাকে বিয়ে করবি?
আব্বু যখন জিজ্ঞাস করবে তখন কি বলবো?

আয়ান -ভাইয়া আমি ওই অরণী নামের মেয়েটা কে কখনোই বিয়ে করবোনা।বিয়ে যদি করতেই হয় আমি প্রাপ্তিকেই করবো ওর জীবনে যাই ঘটুকনা কেনো!

ঝিনুক -প্লিজ আয়ান তুই একবার ভেবে দেখ, এই মেয়ের সাথে এমন কিছু ঘটেছে যা এই এলাকার সবাই জানে।

আয়ান -আপু! তোরা ভালো করেই জানিস আমি এক কথার মানুষ। বিয়ে যখন আমি করবো বলছি ওই মেয়েকেই করবো।
আয়ান আসিফের কাছে এসে, ভাইয়া প্লিজ আমাকে একবার ওর সাথে কথা বলতে দিন।
আসিফ চোখে কোনে পানি নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে, আব্বু! তুমি বাহিরের দিক টা দেখো আমি এইদিক টা ঠিক করেই আসছি।

আসিফ আয়ানকে নিয়ে প্রাপ্তির দরজার সামনে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে আটকানো। আসিফ দরজায় নক করে, প্রাপ্তিকে বলতে লাগলো,আমি জানি তুই আমার কথা গুলো শুনছিস।আমি তোকে কোনো কিছু নিয়ে জোর করবো না শুধু এইটুকু বলবো তোর জন্য যদি আমি সামান্য কিছুও করে থাকি সেই আবদার নিয়ে বলছি তুই দরজাটা একবার খোল।
আমি জানি তোর সঙ্গে আজ যা হয়েছে সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। কি করবো বল আমি যে তোকে সুখে দেখতে চাই।কিরে,,,, দরজাটা খুলবিনা?ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।কথা বলতেই প্রাপ্তি দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আসিফ আর আয়ানকে কিছু না বলেই খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে পড়লো।
আয়ান রুমে এসে আসিফ কে বললো ভাইয়া আপনি কিছু মনে করবেন না আমি ওনার সাথে আলাদা ভাবে একটু কথা বলতে চাই।আসিফ কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আয়ান চুপ করে থেকে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে একদম অপ্সরী। দেখেছেন আমার পছন্দ আছে মানতে হবে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি আয়ানের দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ান আবার বলতে লাগলো আপনার জীবনে কি ঘটেছে আমার জানার দরকার নেই।আমি শুধু জানি আপনাকে প্রথম দেখাতেই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আরেক টা জিনিস আমি খেয়াল করেছি আল্লাহ চান আমাদের বিয়েটা হোক।
এই কথাটা শুনে প্রাপ্তি পুরোপুরি ভাবে আয়ানের দিকে তাকালো,আয়ান মুছকি হেঁসে আমার কিন্তু তাই মনে হচ্ছে না হলে দেখুন না আপনার পরার শাড়ী গহনা গুলোতো যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা তাকেই দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ভুল হয়ে হয়তো সেই গুলো আপনাকেই পরানোই হয়েছে।তাহলে এইভার ভেবে দেখুন তো কিছু কিছু ভুলও মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে পারে।
ওহ্ দেখেছে কতক্ষণ থেকে আমি একা একাই বকবক করেই যাচ্ছি আপনি কিছু বলুন।(প্রাপ্তি আবার অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে)কি বলবেন না তাই তো?আচ্ছা আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়নি? না হলেও বলতে পারেন।
আচ্ছা আপনি এইরকম পাথরের মতো হয়ে আছেন কেনো? কিছুতো বলুন! বিয়ে টা কি হচ্ছে?

প্রাপ্তি -(নিরবতা ভেঙে বললো) নাহ্।

আয়ান -কেনো আমাকে কি আপনার যোগ্য
মনে হয় মা?

প্রাপ্তি -আমিই আপনার যোগ্য না।আমার জীবন এতো সহজ সরল নয়। আমাকে বিয়ে করলে এই সমাজ আপনাকে ভালো চোখে দেখবেনা।আর আপনি জানলেও এই বিয়ের কথা মুখ দিয়েই বের করতেন না।

আয়ান -আমার জানা দরকার নেই।তোমার অতীত আমি জানতে চা,,,,,,,,,,

প্রাপ্তি আয়ানকে থামিয়ে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা ছেয়ে নিচ্ছি আপনারা চলে যান।তবে এইটা ভেবে আমি শান্তি পাচ্ছি দুটো মানুষের ভালোবাসার জয় হয়েছে আজ।

আয়ান -না আমি যাবো না। আমি জানতে চাই কেনো আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?

আয়ানের কথা শুনি প্রাপ্তি উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার দিয়ে কারণ আমি ধর্ষিতা।(কথাটা বলতেই আয়ানের সব কিছু যেনো থমকে গেছে মনে হচ্ছে আবার প্রাপ্তির কথাটা বার বার তার কানে ভেসে আসছে প্রাপ্তির দিকে একরাশ অবাক দুটো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান)হ্যাঁ আমি ধর্ষিতা।আমাকে সেইদিন ৪ জন মিলে ৩ দিন ধরে একটা রুমে আটকে রেখে ছিলো। যখন যার ইচ্ছে হতো সেই এসে আমাকে ভোগ করতো।আমি তাদের হাতের একটা পুতুল ছিলাম মাত্র।আমি এই এইগুলোর কথা বলতে সাহস পাইনা। আজ যখন আপনি জোর করেলে তাই বললাম।বুজতে পেরেছেন মিঃ আয়ান।আর কিছু জানতে চান? নাকি ওই ৩ দিন যা যা আমার সাথে করে ছিলো সেই গুলোও আপনাকে ভেঙে ভেঙে বলতে হবে।ওকে তাহলে সেই গুলোও বলছি তাহলে শুনুন
কথাটা বলতেই আয়ান চিৎকার দিয়ে জাস্ট সেট আপ।আপনাকে আমি একবারো বলেছি এইগুলো বলতে।আপনার মন মানসিকতা ঠিক করে নিন কারণ আজ এবং এখনি বিয়েটা হচ্ছে।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি অবাক দুটো চোখ নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, করুণা করছেন? চাইনা আমি কারো করুণা।

আয়ান -বললাম না আপনার মন মানসিকতা ঠিক করুণ। যেটাকে আপনার কাছে করুণা মনে হচ্ছে সেটা আমার কাছে ভালোবাসা।কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে ড্রইংরুমে নিয়ে গেলো।সবার মনে এক বিষণ্ণতার চাপ।আসিফ ভাবছে আয়ান কি পারবে প্রাপ্তিকে রাজি করেতে?
আয়ানে আর প্রাপ্তিকে একসাথে দেখে ঝিনুক আর সুমি বসা থেকে উঠে আয়ানের কাছে আসলো।আয়ান তাদেরকে কিছু না বলে আসিফ কে বললো আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আসিফ দৌঁড়ে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে তুই আমার লক্ষ্মী বোন।আমি জানতাম তুই আমার কথা রাখবি।(মামার দিকে তাকিয়ে)মামা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।
সবকিছু ঠিকঠাক করে দুইটো বিয়েই একসাথে হলো।প্রাপ্তির মুখে কোনো কথা নেই সেইযে আয়ানের সাথে কয়েকটা কথা বলেই চুপ করলো আর এখনো কথা বলেনি।সিয়ামরা সন্ধ্যার আগেই বিদায় নিয়ে অরণীকে নিয়ে চলে গেলো। এইবার প্রাপ্তিকে বিদায় দেওয়ার ফালা কিন্তু সেই কোনো কথাই বলছেনা।আসিফ আয়ানের হাতে প্রাপ্তির হাত তুলে দিতে যাবে তখনি প্রাপ্তি আয়ানের হাতে তুলে দেওয়ার আগেই হাতটা গুটিয়ে নিলো।
আয়ান দেখে আসিফ কে বললো ভাইয়া হাত দিতে হবেনা শুধু পরিস্থিতি টা সামাল দিন।আয়ানের কথা শুনে আসিফ মনে মনে ভাবছে আমার বোনের জন্য হয়তো আল্লাহ ঠিক মানুষটাই তার জীবনে পাঠিয়েছে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তিকে দেখেই সিয়াম চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে, আপনি কে?
প্রাপ্তি আস্তে করে নিজের কাঁধের থেকে সিয়ামের হাত দুটো সরিয়ে সিয়ামকে সামনে থেকে সরিয়ে চুপচাপ দরজার দিকে এগুতে লাগলো।প্রাপ্তির নিস্তব্ধতায় চেহারায় কোনো বিষণ্ণতার কোনো চাপ নাই।আছে শুধু একরাশ অভিমান। দরজাটা খুলেই প্রাপ্তি ড্রইংরুমে চলে গেলো।প্রাপ্তিকে দেখে সব কিছু যেনো থমকে গেলো,যারা বসা ছিলো তারা দাঁড়িয়ে গেলো।যারা হাট ছিলো তারাও দাঁড়িয়ে গেছে তাকে দেখে।নিলিমা বেগম মেয়েকে দেখে কাছে এসে বললো প্রাপ্তি তুই এইখা,,,,,,,,,নিলিমা বেগম কে হাত দিয়ে এশারায় করে থামিয়ে দিলো প্রাপ্তি।অরণীর রুমে গিয়ে অরণীকে হাত ধরে টেনে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।

অরণী -আপু তুই কি করছিস?এইভাবে এইখানে টেনে নিয়ে এলি কেনো?
প্রাপ্তির রুম থেকে সিয়াম এসে দাঁড়াতেই অরণী ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তির অবস্থা দেখে নিলিমা বেগম আজাদ সাহেব কে আসিফকে ডেকে আনতে বললো।প্রাপ্তির কাণ্ড দেখে বাহিরের লোকজন ও ভিতরে আসতে শুরু করলো।
আয়ানদের আর সিয়ামদের বাড়ীর সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঝিনুক সুমি কানের কাছে গিয়ে ভাবী এইগুলো কি হচ্ছে মান সম্মান তো কিছুই থাকবে না।আকাশ ঝিনুক কে থামিয়ে, চুপ কর এইখানে এমন কিছু আছে যা আমরা জানিনা।হয়তো আমাদেরকে জানানো হয়নি।
সুমি -আমি আগেই বলেছিলাম। মা আমাকে সেইদিন চুপ করিরে দিয়েছিলো।
নিহাদ-ভাবী এইসব না ভেবে নাটক শেষ পর্যন্ত দেখা উচিত আমাদের।দেখিনা কি হয়।
রাহাত -ভাইয়া! আয়ান তো ওইখানে একা একা বসে আছে।

আকাশ -আগে দেখি এইখানে কি হয়।তারপর না হয় ডাকবো।

প্রাপ্তি নিস্তব্ধতা ভেঙে সবার উদ্দেশ্য বললো, আপনাদের সবার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আজ এই পরিস্থিতি জন্য।
আসিফ এসে প্রাপ্তিকে থামানোর চেষ্টা করছে,প্রাপ্তি আসিফের দিকে তাকিয়ে আজ শুধু আমি বলবো।আর তুই চুপ থাকবি।আমি আমার ফ্যামিলিকে একটা কথা আগে জিজ্ঞাস করতে চাই আচ্ছা আমি কি তোমাদের কাছে এতোই বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম? যার কারণে একটা ছেলের কোনো মতামত না জেনে আমাকে তার কাছে বিয়ে দিচ্ছো?তোমরা আমাকে বলতে পারতে আমি সবাইকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতাম।

আসিফ -কি বলছিস তুই এইসব? তুই কখনো আমাদের কাছে বোঝা হয়ে যাসনি।তোকে কি আমরা কখনো বুজতে দিয়েছি?

প্রাপ্তি -হুম এতো দিন দেসনি তবে আজ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিস।কেনো রে ভাইয়া আমি জানি সেইদিনের ঘটনাটা পরিণাম শুধু আমাকেই ভোগ করতে হবে।কিন্তু তোদের কাছ থেকে করতে হবে তা কখনো ভাবিনি।

আজাদ সাহেব -প্রাপ্তি তুই কি বলছিস মা?আমরা তো তোর ভালোর জন্যই করছি।

প্রাপ্তি -আব্বু আমাকে বলতে দাও।আজ যদি আমি চুপ করে থাকি তাহলে চারটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
আপনারা যারা এইখানে আছেন আমি সবাইকে বলছি এবং এইখানে থাকা অনেকেই কমবেশি জানেন আমার সম্পর্কে।
যাইহোক আমি ওই দিকে এগুতে চাচ্ছিনা।আপনারা সবাই এইখানে আছেন তাই আমি বলছি আজ দুইটা বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এইখানে এখন একটাই বিয়ে হবে আর সেটা অরণী আর সিয়ামের।কথাটা শুনেই সবাই অবাক চোখে প্রাপ্তি আর অরণীকে দেখছে।

নিলিমা বেগম -আসিফ তুই চুপ করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? ওকে এইখান থেকে নিয়ে যা।

প্রাপ্তি -আম্মু! আমাকে এইখান থেকে সরালেই কি সত্যিটা চাপা পড়ে যাবে, কখনোই না।সিয়াম এইখানে তোমার বড় মেয়েকে বিয়ে করতে আসেনি এসেছে অরণীকে বিয়ে করতে।সেইদিন তোমাদের আর ওর বাবা মায়ের ভুলের কারণে আজ সবাইকে এই জায়গা এসে দাঁড়াতে হচ্ছে।

আসিফ -কি বলছিস তুই এইগুলো?
আমি কিছুইতো বুজতে পারছিনা।(সিয়ামের দদিকে তাকিয়ে)সিয়াম তুমি কি বলেছো ওকে?

সিয়াম -আমি ওনাকে খারাপ কিছু বলিনি।আমি সেইদিন আমার বাবা মা কে পাঠিয়েছিলাম অরণীকে দেখে যাওয়ার জন্য কিন্তু সেটা বিপরীত হয়ে গেলো।

প্রাপ্তি -অরণী তুইকি এখনো চুপ করে থাকবি? তুই যদি চুপ করে থাকিস তাহলে আমিই বলছি।ভাইয়া, আম্মু, আব্বু তোমরা একটা বার ভেবে দেখেছো যে মানুষ টা সারাক্ষণ হাঁসি খুশি থাকতো সেই মানুষ টা হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো কেন? কিন্তু আমি ভেবেছি।আমার কাছে সবকিছু গোলমাল লাগছিলো আর সেটা আজ পুরোপুরি ক্লিয়ার হলো।অরণী আর সিয়াম দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।

আকাশ -কি বলছে এই সব এরা। আজ কি অপমানিত হয়ে বাড়ীতে যেতে হবে নাকি।রাহাত! তুমি গিয়ে আয়ানকে ডেকে আনো। দেখি ও কি বলতে চায়।

আসিফ অরণীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে, নিছের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমার দিকে তাকা।(ধমকিয়ে)তাকা বলছি!
(অরণী ভেজা চোখ দুটো নিয়ে আসিফের দিকে তাকাতেই) প্রাপ্তি যা বলছে সব কি সত্যি? অরণী কথা বলছেনা দেখে ধাক্কা দিয়ে কি হলো অরণী সেইদিনের মতো আজও চুপ করে থাকবি? তোর সেই দিনে চুপ থাকায় প্রাপ্তির আজ এই অবস্থা! আর আজও চুপ করে থেকে ওর কোন ক্ষতি করতে চাস তুই?
কথাটা শুনে অরণী চিৎকার দিয়ে কি বলছিস ভাইয়া? আমি আপুর কোনো ক্ষতি চাইনা।সেই দিন আমি ভেবেছিলাম সিয়ামের বাবা মা আপুকেই দেখতে আসছে তাই আমি আপুর ভালো থাকার কথা ভেবে সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম।

প্রাপ্তি -(প্প্রাপ্তির চোখের পানি গুলো অনবরত ঝরছে।)বাহ্ তুই সাক্রিফাইস করা শিখেগেছিস। তোরা সবাই এইটা কেনো বুজতে চাস না আমার মতো মেয়েদের কেউ বিয়ে করেনা বা করবেও না।কথাটা বলেই প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে তখনি আয়ান পিছন দিক থেকে বললো দাঁড়ান!কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

আয়ানের ডাক শুনে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে দেখে সেই ছেলেটা, যার সাথে তার এক পলক দেখা হয়েছিলো।

আয়ান একটু এগিয়ে এসে ভাবী সেইদিন তোমরা কাকে দেখে গেছো?

সুমি -(অরণীকে দেখিয়ে) ওকেই তো দেখে দেখে গেলাম।কিন্তু এখন তো,,,,,,

আয়ান -কিন্তু আমি তো তোমাকে সেইদিন এই মেয়ের কথা বলিনি।(প্রাপ্তিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)আমি তো তোমাকে এর কথা বলেছিলাম।

সুমি -মানে, কি বলছো?

আয়ান -হ্যাঁ ভাবী আমি এর কথাই বলেছিলা।আর বিয়ে করলে আমি একেই করবো।

প্রাপ্তি আয়ানের কথা শুনে চিৎকার দিয়ে এইখানে শুধু একটাই বিয়ে হবে।আর সেটা অরণী আর সিয়ামের।কথাটা বলেই প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেলো।

আসিফ -আপনাদের সবার উদ্দেশ্য বলছি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারণে আজ এই অবস্থা।আপনারা সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করুন এইদিকে আমরা বিয়ের জন্য সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
কথা গুলো বলতেই গেস্টরা সবাই বাহিরে চলে এলো।আয়ান দের বাড়ীর সবাই ড্রইংরুমেই আছে।

আকাশ -আসিফ এখন আমারা এইখানে থাকাটা মনে হয় ভালো দেখায়না।আমাদের মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে।তোমাদের কি ঘটেছে না ঘটেছে তার জন্য ফল আমরাও ভোগ করতে হলো।

আয়ান -ভাইয়া চুপ কর! বিয়েটা হবে আর সেটা আমি প্রাপ্তি নামের মেয়েটাকেই করবো।ভালো হয়েছে ঝামেলাটা আগেই শুরু হয়েছে না হলে তো আমিই ঝামেলা করতাম। কারণ আমি ওর কথাই সেইদিন বলেছিলাম ভাবীকে।

আসিফ -সরি ভাই! বিয়েটা আর হচ্ছে না।আর ওর অতীতের কথা শুনলে তুমিও এই বিয়ে করবে না।

আয়ান -ওর অতীত নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাইনা।আপনারা চাইলে আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।

ঝিনুক -তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? এতোক্ষণ লোকজন ওই মেয়েকে নিয়ে অনেক কানাঘুষা করতে শুনলাম আর তুই কিনা সেই মেয়েকে,,,,,,,,

আয়ান -আপু শুন আমরা যা দেখি তা কিন্তু ঘটনা নাও হতে পারে। আমাদের দেখার বাহিরেও যে কিছু থাকতে পারে সেটা আমরা মানিনা।
(প্রাপ্তির ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে) প্লিজ আমি আপনাদের আবারো বলছি ওর সাথে আমাক একবার কথা বলতে দিন।

চলবে,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১৩

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সকাল আট টা বাজে ছেলেটা এখনো ঘুম থেকে উঠিনি?কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নেই,পাড়া পড়শির ঘুম নেই।আমার ছেলেটার ও হয়েছে তাই।আয়েশা বেগম কথা গুলো বলতে বলতে সুমির হাতে আয়ানের জন্য চায়ের কাপ টা দিয়ে, সুমি যাও তো! আয়ান টা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দাও।আর কতো ঘুমাবে?আমার আকাশটা আজ কয়েক দিন থেকে খাওয়াদাওয়া নেই ঘুম নেই শুধু ওর বিয়ে জন্য।
সুমি চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে মা! আপনি চিন্তা করবেননা তো, আর মাত্র দুইদিন পরে তো সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে।

ঝিনুক এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবী তুমি এই খানে?

সুমি -কেনো? কিছু হয়েছে?

ঝিনুক -দেখনা রুমকি টা কি জেদ ধরেছে।মেয়েদের বাড়ীতে কি ড্রেস পরে যাবে সে নিয়ে বসে আছে।আর বলছে তুমি চয়েস না করে দিলে ও পরবে না।
তোমার এইদিকে কতো কাজ ওকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
সুমি -ঝিনুক তুমি যাও আমি আয়ানকে চা টা দিয়ে আসছি।আর মা! আপনি সিয়ামদের বাড়ীতে ফোন দিয়েছেন?

আয়েশা বেগম -না আজ আর দিই নি।কেনো?

সুমি -আপনি ওনাদের বলেদিন আমরা একসাথেই ওদের বাড়ীতে যাবো।তাহলে আর আসিফদের ও কষ্ট হবেনা।

আয়েশা বেগম- তুমি ঠিকি বলেছো।আমরা এক ছেলের বিয়ে নিয়ে কি জালায় আছি আর ওদের দুইটা বিয়ে।

সুমি আর কিছু না বলে আয়ানের রুমে চলে গেলো।
আয়ানের রুমে গিয়ে লাইট অন করে দেখে আয়ান গভীর ঘুমে ডুবে আছে।
হায়রে! মা ঠিকি বলেছে ওর বিয়ে ওরি খবর নাই।আর আমরা ওর বিয়ে নিয়ে জ্বালায় মরছি।(আয়ানকে ধাক্কিয়ে)আয়ান! আয়ান! তুমি কি উঠবা নাকি পানি এনে ঢালবো?

আয়ান-(ঘুম ঘুম চোখে)ভাবী! প্লিজ আরেকটু ঘুমাই না।

সুমি -আয়ান! এইবার মা এসে তোমাকে বকা দিবে।দিনের কয়টা বাজে একবার দেখেছো? এইদিকে কতো কাজ পড়ে আছে।তোমাকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে?
সুমির পেঁনপেঁনানি শুনে আয়ান উঠে বসলো।
এইতো গুড বয়।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।কাল থেকে অবশ্য একটা জ্বালা আমার কমবে।

আয়ান আড়মোড় ভাঙতে ভাঙতে সুমির দিকে তাকিয়ে কি জ্বালা কমবে তোমার?

সুমি -সকালে এসে ঘুম থেকে উঠানো।কাল থেকে এই কাজ তোমার বউয়ের।

আয়ান বউ কথা টা শুনেই একটু লজ্জা পেয়ে, সুইট হার্ট কাল থেকে তোমার ডিউটি বাড়িয়ে দিলাম।এতোদিন তুমি শুধু আমায় ডাকতে কাল থেকে দুইজন কে ডাকবে। তুমি যতোক্ষণ না ডাকবে আমার তো সকাল হবে না।
সুমি -ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।আমি নিহাদ আর রাহাত ভাইয়াকে ডেকে আনতেছি তোমাকে ভালো করে পানিতে চুবানোর জন্য।কথাটা বলেই সুমি হাঁসতে হাঁসতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

প্রাপ্তি আর অরণীকে গোসল করিয়ে সাজতে বসিয়ে দিলো।প্রাপ্তি অরণীকে সাজাতে বলে উঠে ড্রইংরুমে আসলো আসিফকে খুঁজার জন্য।

সামনে প্রাপ্তির মামাকে আসতে দেখে মামা! ভাইয়াকে দেখেছেন?
মামা -প্রাপ্তি তোমাকে এখনো সাজানো হয়নাই এইদিকে ছেলের বাড়ী থেকে লোকজন রওনা দিয়ে দিয়েছে । নিলিমা! কোথায় গেলো কাজের সময় তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়না।

নিলিমা বেগম এসে কি হয়েছে ভাইয়া?কোনো কিছু লাগবে?

মামা -প্রাপ্তিকে এখনো সাজানো হয়নি?এইদিকে দুই বাড়ীথেকেই ফোন দিয়েছে তারা আসতেছে।

নিলিমা বেগম -ওকে তো আমি সাজাতেই বসিয়ে দিয়ে এলাম।

প্রাপ্তি -আম্মু! মামা! সমস্যা নেই অরণীকে আগে সাজিয়ে নেক আমি পরে সাজলেও হবে।কিন্তু ভাইয়া কোথায়? ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

মামা-তুই যা মা! আমি আসিফ কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও হয়তো কোনো কাজে আটকে আছে।

নিলিমা বেগম -এখন চল তোর ভাইয়া আসতে আসতে সেজে নে।

আসিফ মামার মুখ থেকে প্রাপ্তি তাকে ডাকছে শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো।প্রাপ্তি তাকে কেনো ডাকছে তার ভালো করেই জানা আছে।ওকে যে কিভাবে বুজাই! আচ্ছা গিয়ে দেখি কি বলে।প্রাপ্তি সেজে নিজের রুমেই বসে আছে আসিফের অপেক্ষায়।আসিফ ভিতরে আসতেই,কিরে ভাইয়া তোকে কতো বারা ডেকেছি আর তোর এখন আসার সময় হলো?

আসিফ প্রাপ্তির কথা ঘুরিয়ে, আমার বোনটাকে পুরো রাজকন্যার মতো লাগছে।
সিয়াম ব্যাটার চয়েস আছে বলতে হবে।তোর জন্য যতো গুলো শাড়ী গহনা পাঠিয়েছে সব গুলোই পরলে তোকে অনেক সুন্দর দেখায়।কিন্তু অরণী শ্বশুর বাড়ীর গুলো আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনি।

প্রাপ্তি -(আসিফের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে)তোকে আমি এইখানে এইগুলো বলার জন্য ডাকিনি।কে শাড়ী গহনা ভালো দিয়েছে আর কে খারাপ দিয়েছে।তোকে যে জন্য ডেকেছি তুই সেটা ভালো করেই জানিস।

আসিফ -প্রাপ্তি! তুই আমার লক্ষ্মী বোন। প্লিজ কোনো পাগলামো করিস না এখন।

প্রাপ্তি -(চেঁচিয়ে) পাগলামি! কোনটা কে তুই পাগলামি বলছিস ভাইয়া।তোরা কোনো কিছু না জানিয়ে একটা ছেলের কাছে আমাকে বিয়ে দিবি এইটা সে পরে জানতে পারলে আমাকে মেনে নিবে? কখনোই না! কোনো ছেলেই মেনে নিবে না।কারণ টা তুই ভালো করেই জানিস।আর আমার কাছে কেনো জানি মনে হচ্ছে বড় কোনো ঝড় আসতে যাচ্ছে। সব কিছু কেমন জানি গোলমাল লাগছে।

আসিফ কিছু বলতে যাবে তখনি আজাদ সাহেব এসে আসিফ তুই এইখানে তাড়াতাড়ি চল বর এসে গেছে।তোর জন্য সবাই বসে আছে।
আসিফ প্রাপ্তিকে খাটে বসিয়ে চুপ করে এইখানে বস আমি দেখছি তুই কোনো বাজে চিন্তা করবিনা।

আয়ান আর সিয়াম কে এনে স্টেজে বসিয়েছে। দুইজন দুজনার সাথে তেমন কথা নেই চুপচাপ হয়েই বসে আছে।সিয়াম অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে তারপর তার বন্ধু রাফসান কে বললো বিয়ে পড়ার আগে আমি অরণীর সাথে কথা বলতে চাই তুই ব্যবস্থা কর প্লিজ।আয়ান নিহাদ রাহাত আকাশের সাথেই কথা বলে যাচ্ছে।

আকাশ -তোরা বস আমি ভিতরে গিয়ে দেখে আসি।ঝিনুক মিনু সুমি সবাই ভিতরে কি করছে আমি দেখে আসি।আয়ান সুমি কথায় ভাবছে ভাবী তো পারতো আমার সাথে এখন থাকার। ভাবীকে বলে না হয় ওকে একবার দেখার সুযোগ করে নিতাম।
রাফসান আসিফকে দেখতে পেয়ে আরে ভাইয়া আপনাকে অনেকক্ষণ হলো খুঁজছি।

আসিফ -কেনো কিছু লাগবে?

রাফসান -আসলে ভাইয়া কি বলবো সিয়াম চাচ্ছে আপনার বোনের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলতে।
কথাটা শুনেই আসিফ থমকে গেলো।সিয়াম কি প্রাপ্তির ঘটনা টা জেনেই প্রাপ্তির সাথে কথা বলতে চাইছে?তাহলে তো ভালোই হলো দুজনে আলাদা ভাবে কথা বলুক।

রাফসান -ভাইয়া আপনি চুপ করে আছেন কেনো?
আসিফ -সিয়াম কে নিয়ে আসো আমি ব্যবস্থা করছি।আর শুনো এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।

রাফসান -না ভাইয়া কেউ কিছু জানবে না।

সুমি, ঝিনুক,মিনু অরণীর রুমে এসে অরণী কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে।তাদেরকে দেখে অরণী বসা থেকে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।সুমি অরণীর কাছে এসে মুছকি হাঁসি দিয়ে অরণী তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু তোমাকে কে সাজিয়েছে এই শাড়ী গহনা গুলো দিয়ে?
অরণী -জ্বী আপনারা নাকি কাল এইগুলো পাঠিয়েছেন।
ঝিনুক -কিহ্ আমরা এইগুলো,,,,,,,,
সুমি ঝিনুককে থামিয়ে হুম আমরাই তো পাঠালাম।(মিনুর আর ঝিনুককে চোখের ইশারা দিয়ে) বাহিরে আসো। আকাশ মনে হয় ডাকছে।

সুমি বাহিরে এসে মিনুর দিকে তাকিয়ে তুমি আর রাহাত ভাইয়া যে কাল শাড়ী গহনা গুলা নিয়ে আসছো এইগুলো কার কাছে দিছো।

মিনু -ভাবী! প্যাকেট গুলো মেয়ের মায়ের হাতেই দিয়েছিলাম।কিন্তু তখন সিয়ামদের বাড়ী থেকে লোক এসেছিলো আমার মনে হয় এই গুলো পাল্টা পাল্টি হয়ে গেছে।

সুমি -হুম তাই মনে হচ্ছে। শুনো এখন কেউ কিছু বলার দরকার নেই। পরে সব আমরা আসিফ কে বুজিয়ে বলা যাবে।

আসিফ সিয়াম কে প্রাপ্তির রুমের সামনে দাঁড় করিয়ে প্রাপ্তিকে একা রেখে সবাইকে বাহিরে যেতে বললো।

প্রাপ্তি -কি হয়েছে ভাইয়া?

আসিফ -তুই আমাকে তখন যেই প্রশ্ন গুলো করেছিস সেই গুলোর আনসার সাথে করে নিয়ে এসেছি।তুই বস সিয়াম বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে তোর সাথে কথা বলবে বলে।আমি আসছি!
সিয়াম ভিতরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে প্রাপ্তির পাশে এসে বসলো।কি! ম্যাডাম কেমন সারপ্রাইজ দিলাম? ম্যাডাম আমার দিকে ফিরেন। আমি এইদিকে ওই দিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই।(কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি ভাবছে ওনি এইভাবে কথা বলছে কেনো মনে হচ্ছে ওনি আমাকে আগে থেকেই চিনেন।)
তুমি কি ভেবেছিলে ফোন অফ করে রেখে একসাথে বউয়ের সাজে আমার কাছে আসবে? আমি ভেবেছিলাম বাবা মাকে পাঠিয়েছি বিয়ে ঠিক করার জন্য সেই খুশিতে সারপ্রাইজ হয়ে তুমি আমাকে ফোন দিবে তানা উল্টো ফোন অফ করেই রাখলে?
আচ্ছা এই শাড়ী টা তুমি পরলে কেনো। তোমার পছন্দমতই শাড়ী আমি তোমার জন্য পাঠিয়েছি আর তুমি সেই শাড়ী না পরে অন্য শাড়ী পরে আছো।এই অরণী কথা বলছো না কেনো।
কথাটা গুলো শুনে প্রাপ্তি নিস্তব্ধতায় কান্না করেই যাচ্ছে।আর ভাবতে লাগলো অরণী আমার বোন হয়ে সব জেনেও আমার সাথে এইরকম করতে পারলো?
সিয়াম বিরক্তিকর ভাব নিয়ে প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিয়ে এই অরণী এইদিকে ফিরে কিছু বলো প্লিজ।কথা বলেই প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ফিরালো সিয়াম।
প্রাপ্তিকে দেখেই সিয়াম চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে, আপনি কে?

চলবে,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১২

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_গোসল করেই ওই বাড়ীর দেওয়া শাড়ীটা পরেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো প্রাপ্তি।নিলিমা বেগম মেয়েকে দেখে মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে মেয়েকে টেনে এনে আয়নার সামনে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে নিজের চোখেই নিজেকে দেখ কতোটা ভালো লাগছে তোকে।

প্রাপ্তি-(মুখে বিরক্তির ভাব এনে)ওহ্ আম্মু ছাড়োতো। ভালোলাগছে না! আমাকে যতোই সুন্দর দেখাক না কেনো তার পরোও সবাই বলবে আমি ধর্ষিতা।

নিলিমা বেগম -তোকে একটা কথা বললে একটুও শান্তি পাইনা।তুই এইটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য জায়গা নিয়ে যাস।এখন চল আসিফ তোদের জন্য এখনো খায়নি। খেয়েনিবি চল।

আসিফের কথা শুনে প্রাপ্তি নিলিমা বেগম কে কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেলো। প্রাপ্তিকে সবাই দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

প্রাপ্তির মামী -আসিফ দেখ তোর বোনকে। একদম পরীর মতো লাগছে।মনে হচ্ছে ভুলে কোনো পরী এই বাড়ীতে চলে আসছে। আসিফ পিছনে ফিরে প্রাপ্তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার বোনকে সত্যিই পরীর মতো লাগছে।প্রাপ্তিকে দেখে আসিফের নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি এসে গেছে।প্রাপ্তি এসে আসিফের সামনে দাঁড়াতেই আসিফ প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঙে পড়লো।কান্নার আওয়াজ শুনে আজাদ সাহেব রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।আজাদ সাহেব ভাইবোনের এমন দৃশ্য দেখে নিজের চোখ দুটো ও পানিতে টলমল করছে।অরণী ও রুম থেকে এসে আসিফকে ধরে সে কাঁদতে শুরু করলো।

প্রাপ্তির কাকী আসিফের কাঁধে হাত রেখে আসিফ আজকে দিনে কাঁদতে নেই বাবা।তোর বোনেরা তো একসাথে কোথাও চলে যাচ্ছে না।
নিলিমা বেগম নিজের মনকে শক্ত করে এই তিন জনি ছাড়। ছাড় বলছি এতো কান্নাকাটি করার কি আছে? কই আমি তো কাঁদছি না।তাহলে তোরা কেনো কাঁদছিস?

আসিফ দুই বোনকে ছেড়ে দিয়ে না খেয়েই রুমে চলে গেলো।প্রাপ্তি তখনো কাঁদতে ছিলো।

নিলিমা বেগম -দেখেছিস ছেলের কাণ্ড না খেয়েই চলে গেলো।আমি কি ওকে খারাপ কিছু বলেছি?

প্রাপ্তি -আম্মু খাবার টা আমার হাতে দাও আমি ভাইয়ার রুমে যাচ্ছি।প্রাপ্তির মামী খাবার প্লেটটা প্রাপ্তির হাতে দিয়ে বললো সকাল থেকেই ছেলেটা কিছু খায়নি।খাবেই বা কি করে? দেখ খাওয়াতে পারিস কিনা।

প্রাপ্তি মামী কে কিছু না বলে খাবারটা নিয়ে আসিফের রুমে গিয়ে দেখে রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। প্রাপ্তি লাইট অন করে দেখে আসিফ খাঁটের সামনে নিচে হাত পা গুটে বসে আছে।প্রাপ্তিও সামনে এসে বসেছে প্রাপ্তিকে বসতে দেখে আয়ান মাথাটা উঠিয়ে কিরে,,, তুই লাইট অন করলি কেনো?

প্রাপ্তি -তুই কি মনে করছিস তুই শুধু একা তোর বোনদের ভালোবাসিস।ওরা তোকে ভালোবাসেনা?তাই একা একা থাকতে চাইছিস।

আসিফ -আমি তা তো একবারো বলিনি।তোদের ছাড়া আমি এই বাড়ীতে থাকবো কি করে?
প্রাপ্তি -পরে দেখা যাবে কিভাবে থাকবি আগে খেয়েনে।

আসিফ -নারে,,,তুই খায়েনে আমি খাবোনা।

প্রাপ্তি -তুই কি করে ভাবলি তুই খাবিনা আমি খেয়ে নিবো।খেলে এক সাথেই খাবো।
হাঁ করতো আজ আমি তোকে খাইয়ে দিবো।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান চোখ মুছে ঠিক আছে তাহলে খেতেই পারি।

আবিদ চৌধুরী রেডি হচ্ছে সন্ধ্যার আগেই বাড়ী থেকে বের হয়ে যাবে।সবার মন খারাপ করে আছে।আয়েশা বেগম ব্যাগ গুছিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে এসেছে।বাসায় অনেক গেস্ট সবাই ড্রইংরুমেই দাঁড়িয়ে আছে।

আবিদ চৌধুরী -রফিক ব্যাগ গুলো গাড়ীতে রেখে আসো।সবার দিকে তাকিয়ে, তোমরা কেউ মন খারাপ করার দরকার নেই।মাত্র এক মাসেরই তো ব্যাপার আর আমি তো চেষ্টা করবো আরো আগেই আসার জন্য।(আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে)যে আসছে মনে করবে সে তোমার ঘরের লক্ষ্মী আর ঘরের লক্ষ্মীকে যত্ন করেই ঘরে তুলবে। আকাশ! তোমাকে তো আর কিছু বলতে হবে না।সবাইকেই বলছি ভালো ভাবে বিয়েটা ইনজয় করো।আমার কথা ভেবে কেউ মন খারাপ করবে না।
কথা গুলো বলেই আবিদ চৌধুরী চলে গেলো।সবাই যে যার কাজে লেগে গেলো।

ঝিনুক -ভাবী! এই ভাবী! মেয়েদের বাড়ীতে একটা ফোন দিয়ে দেখো কি অবস্থা।আমাদের তো যাওয়ার কথা ছিলো ওনাদের বলে দাও এখন আর যাবো না।

সুমি -চিন্তা নেই আমি সব আগেই বলে দিয়েছি আসিফ কে।ঝিনুক আপু এক কাজ করো তুমি আয়ান কে রেডি হতে বলো। অনুষ্ঠান যখন হবে মা বলেছে তাড়াতাড়িই করতে। বেশী রাত জেনো না হয়।
ঝিনুক -আচ্ছা আমি দেখছি। ভাবী রুমকি কে দেখেছো?

সুমি -হুম আয়ানের কাছেই আছে।আর তুমিও যাও।আয়ান কে তাড়া দাও না হলে ও আজও লেট করবে।

ঝিনুক সুমির কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে আয়ানের রুমে চলে গেলো।

পার্লার থেকে লোক এসে দুই বোনকে সাজিয়ে দিয়ে গেলো।প্রাপ্তির না চাইলেও সাজতে হয়েছে। আসিফ অনেক বার বলাতে ভাইয়ে কথা ফেলতে না পেরে সেজেছে। নিজের কাছে খুব অসস্থি লাগছে প্রাপ্তির।আর অরণী! সেই এতো চঞ্চল মেয়ে হয়েও কেমন জানি নিরব হয়ে আছে।সব কিছুতেই চুপচাপ থাকে।প্রাপ্তির মনে বার বার একটাই প্রশ্ন জাগে উঠে কোথাও কোনো কিছু গোলমাল আছে।কিন্তু এই প্রশ্নটা কেনো আসে।হাজার বার চেষ্টা করলেও ভুলতে পারিনা।কি করে ভুলবো অরণীকে দেখলে তো ভুলা যায় না।প্রাপ্তি কথা গুলো ভাবছে আর অরণীর দিকে তাকিয়ে আছে।
অরণীর নজর পড়তেই, মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে কিরে আপু এইভাবে তাকিয়ে আমায় কি দেখছিস?

প্রাপ্তি -তোকে ! আমার সেই ছোট্র বোন আজ কতো বড় হয়ে গেছে। জানিস অরণী আমি কিন্তু আজ একটা জিনিস খুব মিস করছি।

অরণী -কি মিস করছিস আপু?

প্রাপ্তি -সেই চঞ্চল অরণীকে।যে অরণী সবার নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতো।কোনো বিষয় তার কাছে সিরিয়াস ছিলোনা। আমি সেই অরণীকে মিস করছি আজ যে অরণী এই আপুকে ছাড়া তার দিনই শুরু হতো না।আচ্ছা অরণী কি আমার কিছু লুকাচ্ছে?

অরণী -আপু তুইইতো আমার থেকে দূরে সরে গেলি।হ্যাঁ হয়তো তার কারণ আছে।এইসব বাদ দে আপু আজ আমি অতীত কে এইখানে টেনে নিয়ে আসতে চাইনা।আর হ্যাঁ আমি তোর কাছে কিছুই লুকাচ্ছিনা।
কথা গুলো শেষ করে অরণী ভাবছে, আপু মিথ্যা টা বলার জন্য আমায় ক্ষমা করেদিস।আমি তোর ভালো চাই।সিয়াম হয়তো সব কিছু জেনে বুজেই এই বিয়েটা করেছে।হয়তো আমাকে ওর ভালো লাগেনি।

এমন সময় আজাদ সাহেব এসে বললো অনুষ্ঠান শুরু করা হক। আসিফ কোথায় গেলো প্রাপ্তি আর অরণী কে নিয়ে ছাদে আসতে বলো।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।

প্রাপ্তির মামা -ওই তো আসিফ এসে গেছে।এই আসিফ তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি? চল ওদেরকে নিয়ে যাই।
তিন বাড়ীতেই হৈচৈ চলছে।সবার মনে আনন্দের রেখা থাকলে ও প্রাপ্তি আর অরণীর মনে নেই।প্রাপ্তির মনে শুধু একটাই চিন্তা তার জীবনে কি কোনো নতুন ঝড় আসছে? ভাইয়া কে এতো করে জিজ্ঞাস করলাম আমার কোনো আনসার সে দিলোনা।জানিনা কাল আমার জীবনে কি ঘটতে চলেছে।সিয়ামের সাথে আমার একটু কথা বলা উচিত ছিলো কিন্তু তাও পারলাম না।
মিনু! এই মিনু! তুই কতো পিকচার উঠাবি আর অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেলো।আয়েশা বেগমে কথা শুনে মিনু অট্র হাঁসি দিয়ে আম্মু আমাদের বাড়ীতে এটাই শেষ বিয়ে।আবার কবে বিয়ে হবে না হবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে।
সুমি -আচ্ছা এখন এইদিকে আসো।

মিনু -ঝিনুক আপু! দেখ ভাবী কে আজ কতো সুন্দর লাগছে।কিন্তু আমার ছাগল ভাইটা কাজ নিয়ে পড়েই আছে বউয়ের দিকে কোনো খবর আছে?

রাহাত-মিনু যা বলো না কেনো আজ যদি আয়ান হতো বউয়ের পিছু আর ছাড়তোনা।

আয়ানের এইসব কথায় কোনো মন নেই।তার চোখে প্রাপ্তির মুখ বার বার ভেসে উঠছে।হুলুদের সাজে আজ তাকে কেমন লাগছে একটা বার যদি দেখতে পেতাম। নিশ্চয় পরীর মতোই লাগছে, আমার বউ বলে কথা।কাল গিয়ে আগে ওকে দেখবো।
এইদিকে সিয়ামের মনেও একি কথা । কাল যেই করেই হোক আগে গিয়ে আমি অরণী সাথে কথা বলবো তার পর বিয়ে।তিন বাড়ীতেই গাঁয়ে হলুদের সব নিয়মনীতি শেষ করতে করতে ভোর হয়ে গেলো।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১১

#Rabeya Sultana Nipa

 

__ দুই মেয়ের একসাথে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে উনি।একা হাতে কতো করবো আমি।এই লোকের সাথে ৩০ টা বছর ঘর করে এলাম এখনো আমার কষ্টটা বুজলো না।আমার জায়গা অন্য কেউ থাকলে কবেই এইবাড়ী রেখে চলে যেতো।নিলিমা বেগমের মাছির মতো পেঁনপেঁনানি শুনে পিছন থেকে আজাদ সাহেব হাঁসি ছেপে রেখে বলতে লাগলেন,সব মেয়েই এই কথা বলে।আমার জায়গা অন্য কেউ থাকলে চলে যেতো।এইটা পুরনো ডায়লগ, আমার কাছে ভালো লাগেনি অন্য কিছু বলো।

নিলিমা বেগম -দেখেছো আবার মুখে মুখে তর্ক করছে, এখন তর্ক করার সময়?
আসিফ গাঁয়ে হলুদের ফুল নিয়ে এসে ছাদে যাবে তখনি মা বাবারর কাণ্ড দেখে,আব্বু
এখন রাগারাগি করার সময়?আম্মু শুনো প্রাপ্তি আর অরণীর বন্ধুরা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে। মামী কে বলো তাদের নাস্তা দিতে।

আজাদ সাহেব- হে রে আসিফ তোর বন্ধুদের আসতে বলিসনি?

আসিফ- হ্যাঁ আব্বু ওরা সবাই একটু পর চলে আসবে।আচ্ছা আমি গিয়ে ছাদে স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল গুলো দিয়ে আসি।তুমি ডেকোরেশন গুলো ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখো।আসিফ কথা গুলো বলতে বলতে উপরে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম প্রাপ্তির রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি বই পড়ছে।
নিলিমা বেগম -কিরে,,,,,তুই এখনো গোসল করিসনি? অরণী তো গোসল সেরে ফেলেছে।যা না মা বই পড়ার অনেক টাইম পাবি। কিন্তু বিয়েটা মানুষের জীবনে একবারে আসে।মন টা কে পাথরের মতো না রেখে একটু নরম কর।
যা উঠে যা এই নে এই শাড়ী টা গোসল করে পরেনিবি।
প্রাপ্তি -(বিরুক্তির চাপ নিয়ে)আম্মু আমার ভালোলাগছে না।কেন শাড়ী পড়বো এখন?

নিলিমা বেগম -দুই বাড়ী থেকে সকালে শাড়ী গহনা পাঠিয়েছে। সিয়াম আর আয়ানের মা যোগাযোগ করে এইগুলো পাঠিয়েছে।যখন শুনেছে তোদের দুই বোনের এক সাথে বিয়ে আয়ানের মা নাকি আসিফের থেকে নাম্বার নিয়ে সিয়ামের মাকে ফোন দিয়েছে, সবছেয়ে অবাক ব্যাপার কি জানিস ফোন দিয়ে দেখে আয়ানের মায়ের ছোটো বেলার বন্ধু সিয়ামের মা! (কথাটা বলেই হাঁসিতে গড়িয়ে পড়ছে নিলিমা বেগম)আয়ানের মা তো ফোন করে বলেছে ওনাদের বাড়ী বউ আজ থেকেই ওদের বাড়ীর শাড়ী গহনা পরে থাকবে।সিয়ামের মা ও তাই বললো। শাড়ীর প্যাকেট টা প্রাপ্তির হাতে দিয়ে ঠেলে নিয়ে ওয়াশ রুমে দিয়ে আসলো নিলিমা বেগম।তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও একটু পর পার্লারে যেতে হবে তোদের।
মায়ের কথা শুনে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে থেকে গেলো।গোসল টা সেরেনি পরে না হয় বলা যাবে।

ভাবী! সুইট হার্ট! কই তুমি এইদিকে আসোতো। দোতালা থেকে আয়ানের ডাক শুনে সুমি হাতের কাজ টা রেখে তাড়াতাড়ি করে আয়ানের রুমে গেলো।

সুমি -এই শুনো আমাকে আর সুইট হার্ট বলে ডাকবেনা।

আয়ান -(গোসল করে এসে চুলের পানি নিতে নিতে)কেন সুইট হার্ট?এতো দিনের অভ্যাস সেটা কি চেঞ্জ করা যায়?

সুমি -হুম করবা। কারণ তোমার বউ এসে হয়তো সহ্য করবে না হয়তো তোমার সাথে রাগও করতে পারে।পরে আমাকেও খারাপ ভাববে।
আয়ান মন খারাপ করে মেয়েটাকে কি তোমার এইরকম মনে হয়।আমার কিন্তু তেমন মনে হয়নি।মনে হয়েছে ঠান্ডা,সহজ, সরল, ভালোবাসার মতো একজন মানুষ। চোখ গুলো দেখে মনে হয় যাকে একনজর দেখলেই বিশ্বাস করা যায় ভালোবাসা যায়।আমি এতো মেয়ে দেখেছি ওর মতো মেয়ে আগে কখনো দেখিনি।

সুমি -তুমি যে রকম বলছো আমার কাছে মেয়ের বড় বোনকে সেই রকমই লেগেছে।তবে মেয়েটাও খারাপ না।যাইহোক আমাকে এই ভাবে ডেকেছো কেন?
আয়ান -আজকের জন্য আমি যে শাড়ী টা পছন্দ করে কিনে ছিলাম পাঠিয়ে ছিলে ওদের বাড়ী তে?
সুমি -হুম মিনু আর ওর হ্যাজবেন্ড গিয়ে সকালে দিয়ে এসেছে।গাঁয়ে হলুদের আর বিয়ের শাড়ী গুলোও পাঠিয়ে দিয়েছি।

আয়ান -হুম ভালো করেছো।

সুমি -আচ্ছা আমি এখন যাই কতো কাজ পড়ে আছে। এখন তোমার সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় নয়।ঘরে নতুন বউ আসুক একসাথে আড্ডা দিবো।

রুমকি এসে মামনি, মামা নানা ভাইয়া সবাইকে নিচে ডাকছে।

আয়ান রুমকি কে কোলে নিয়ে চলোতো দেখি কেনো ডাকছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখে আয়েশা বেগম ঝিনুক, আকাশ,মিনু, সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।আবিদ সাহেবও গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
সুমি সবার দিকে তাকিয়ে, কি হয়েছে সবার? সবাই চুপ কেন?

ঝিনুক -ভাবী! আব্বু এইসব কি বলছে?

আয়ান -কেন? কি হয়েছে?

আয়েশা বেগম -তোর আব্বু বলছে তোর বিয়েতে নাকি থাকতে পারবেনা। এইটা কোনো কথা বল? নিজের ছেলের বিয়ে আর নিজেই থাকবে না।

আয়ান -আব্বু কি শুনছি এইসব? কেনো থাকবে না বিয়েতে।

আবিদ চৌধুরী গলা টা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললো,আয়ান তোকে বলা হয়নি আমাদের
নতুন প্রজেক্ট এর কাজে আমাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে এইখানে কছু করার নেই।

আকাশ -আয়ান! আমি আব্বুকে অনেক বার বলেছি আমি যাই।কিন্তু আব্বু কিছুতেই রাজী হচ্ছেনা।

আবিদ চৌধুরী -তুমি গেলে এতো দ্বায়িত্ব বিয়ের সেই গুলো করবে কে? আমি তোমার কাঁধে বিয়ের সব দ্বায়িত্ব দিয়ে যাবো।আমি এসে যেনো শুনি সব ঠিক ভাবেই হয়েছে।আর বাড়ীর জামাইরা তো আছেই তারাও তোমাকে হেল্প করবে।(মিনু আর ঝিনুকের হ্যাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে)কি বলো তোমরা?

নিহাদ(ঝিনুকের হ্যাজবেন্ড)-হ্যাঁ বাবা আমি আর রাহাত(মিনুর হ্যাজবেন্ড)আকাশ ভাইয়ার সাথে আছি।আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।

আয়েশা বেগম -তোহ্ তুমি যাচ্ছো কখন?

আবিদ চৌধুরী -আজ সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হবো।তুমি গিয়ে আমার সব কিছু গুছিয়ে দাও।
কথাটা শুনে আয়েশা বেগম মন খারাপ করে কেমন বাবা কাল ছেলের বিয়ে আর তুমিই থাকবে না।এমন টাকার দরকার কি যেই টাকা নিজের আপন জনদের সাথে থাকতে দেয়না কথা গুলো বলতে বলতে আয়েশা বেগম রুমে চলে গেলেন।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১১

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১১

#Rabeya Sultana Nipa

 

__ দুই মেয়ের একসাথে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে উনি।একা হাতে কতো করবো আমি।এই লোকের সাথে ৩০ টা বছর ঘর করে এলাম এখনো আমার কষ্টটা বুজলো না।আমার জায়গা অন্য কেউ থাকলে কবেই এইবাড়ী রেখে চলে যেতো।নিলিমা বেগমের মাছির মতো পেঁনপেঁনানি শুনে পিছন থেকে আজাদ সাহেব হাঁসি ছেপে রেখে বলতে লাগলেন,সব মেয়েই এই কথা বলে।আমার জায়গা অন্য কেউ থাকলে চলে যেতো।এইটা পুরনো ডায়লগ, আমার কাছে ভালো লাগেনি অন্য কিছু বলো।

নিলিমা বেগম -দেখেছো আবার মুখে মুখে তর্ক করছে, এখন তর্ক করার সময়?
আসিফ গাঁয়ে হলুদের ফুল নিয়ে এসে ছাদে যাবে তখনি মা বাবারর কাণ্ড দেখে,আব্বু
এখন রাগারাগি করার সময়?আম্মু শুনো প্রাপ্তি আর অরণীর বন্ধুরা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে। মামী কে বলো তাদের নাস্তা দিতে।

আজাদ সাহেব- হে রে আসিফ তোর বন্ধুদের আসতে বলিসনি?

আসিফ- হ্যাঁ আব্বু ওরা সবাই একটু পর চলে আসবে।আচ্ছা আমি গিয়ে ছাদে স্টেজ সাজানোর জন্য ফুল গুলো দিয়ে আসি।তুমি ডেকোরেশন গুলো ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখো।আসিফ কথা গুলো বলতে বলতে উপরে চলে গেলো।

নিলিমা বেগম প্রাপ্তির রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি বই পড়ছে।
নিলিমা বেগম -কিরে,,,,,তুই এখনো গোসল করিসনি? অরণী তো গোসল সেরে ফেলেছে।যা না মা বই পড়ার অনেক টাইম পাবি। কিন্তু বিয়েটা মানুষের জীবনে একবারে আসে।মন টা কে পাথরের মতো না রেখে একটু নরম কর।
যা উঠে যা এই নে এই শাড়ী টা গোসল করে পরেনিবি।
প্রাপ্তি -(বিরুক্তির চাপ নিয়ে)আম্মু আমার ভালোলাগছে না।কেন শাড়ী পড়বো এখন?

নিলিমা বেগম -দুই বাড়ী থেকে সকালে শাড়ী গহনা পাঠিয়েছে। সিয়াম আর আয়ানের মা যোগাযোগ করে এইগুলো পাঠিয়েছে।যখন শুনেছে তোদের দুই বোনের এক সাথে বিয়ে আয়ানের মা নাকি আসিফের থেকে নাম্বার নিয়ে সিয়ামের মাকে ফোন দিয়েছে, সবছেয়ে অবাক ব্যাপার কি জানিস ফোন দিয়ে দেখে আয়ানের মায়ের ছোটো বেলার বন্ধু সিয়ামের মা! (কথাটা বলেই হাঁসিতে গড়িয়ে পড়ছে নিলিমা বেগম)আয়ানের মা তো ফোন করে বলেছে ওনাদের বাড়ী বউ আজ থেকেই ওদের বাড়ীর শাড়ী গহনা পরে থাকবে।সিয়ামের মা ও তাই বললো। শাড়ীর প্যাকেট টা প্রাপ্তির হাতে দিয়ে ঠেলে নিয়ে ওয়াশ রুমে দিয়ে আসলো নিলিমা বেগম।তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও একটু পর পার্লারে যেতে হবে তোদের।
মায়ের কথা শুনে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে থেকে গেলো।গোসল টা সেরেনি পরে না হয় বলা যাবে।

ভাবী! সুইট হার্ট! কই তুমি এইদিকে আসোতো। দোতালা থেকে আয়ানের ডাক শুনে সুমি হাতের কাজ টা রেখে তাড়াতাড়ি করে আয়ানের রুমে গেলো।

সুমি -এই শুনো আমাকে আর সুইট হার্ট বলে ডাকবেনা।

আয়ান -(গোসল করে এসে চুলের পানি নিতে নিতে)কেন সুইট হার্ট?এতো দিনের অভ্যাস সেটা কি চেঞ্জ করা যায়?

সুমি -হুম করবা। কারণ তোমার বউ এসে হয়তো সহ্য করবে না হয়তো তোমার সাথে রাগও করতে পারে।পরে আমাকেও খারাপ ভাববে।
আয়ান মন খারাপ করে মেয়েটাকে কি তোমার এইরকম মনে হয়।আমার কিন্তু তেমন মনে হয়নি।মনে হয়েছে ঠান্ডা,সহজ, সরল, ভালোবাসার মতো একজন মানুষ। চোখ গুলো দেখে মনে হয় যাকে একনজর দেখলেই বিশ্বাস করা যায় ভালোবাসা যায়।আমি এতো মেয়ে দেখেছি ওর মতো মেয়ে আগে কখনো দেখিনি।

সুমি -তুমি যে রকম বলছো আমার কাছে মেয়ের বড় বোনকে সেই রকমই লেগেছে।তবে মেয়েটাও খারাপ না।যাইহোক আমাকে এই ভাবে ডেকেছো কেন?
আয়ান -আজকের জন্য আমি যে শাড়ী টা পছন্দ করে কিনে ছিলাম পাঠিয়ে ছিলে ওদের বাড়ী তে?
সুমি -হুম মিনু আর ওর হ্যাজবেন্ড গিয়ে সকালে দিয়ে এসেছে।গাঁয়ে হলুদের আর বিয়ের শাড়ী গুলোও পাঠিয়ে দিয়েছি।

আয়ান -হুম ভালো করেছো।

সুমি -আচ্ছা আমি এখন যাই কতো কাজ পড়ে আছে। এখন তোমার সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় নয়।ঘরে নতুন বউ আসুক একসাথে আড্ডা দিবো।

রুমকি এসে মামনি, মামা নানা ভাইয়া সবাইকে নিচে ডাকছে।

আয়ান রুমকি কে কোলে নিয়ে চলোতো দেখি কেনো ডাকছে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখে আয়েশা বেগম ঝিনুক, আকাশ,মিনু, সবাই মন খারাপ করে বসে আছে।আবিদ সাহেবও গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
সুমি সবার দিকে তাকিয়ে, কি হয়েছে সবার? সবাই চুপ কেন?

ঝিনুক -ভাবী! আব্বু এইসব কি বলছে?

আয়ান -কেন? কি হয়েছে?

আয়েশা বেগম -তোর আব্বু বলছে তোর বিয়েতে নাকি থাকতে পারবেনা। এইটা কোনো কথা বল? নিজের ছেলের বিয়ে আর নিজেই থাকবে না।

আয়ান -আব্বু কি শুনছি এইসব? কেনো থাকবে না বিয়েতে।

আবিদ চৌধুরী গলা টা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললো,আয়ান তোকে বলা হয়নি আমাদের
নতুন প্রজেক্ট এর কাজে আমাকে দেশের বাহিরে যেতে হবে এইখানে কছু করার নেই।

আকাশ -আয়ান! আমি আব্বুকে অনেক বার বলেছি আমি যাই।কিন্তু আব্বু কিছুতেই রাজী হচ্ছেনা।

আবিদ চৌধুরী -তুমি গেলে এতো দ্বায়িত্ব বিয়ের সেই গুলো করবে কে? আমি তোমার কাঁধে বিয়ের সব দ্বায়িত্ব দিয়ে যাবো।আমি এসে যেনো শুনি সব ঠিক ভাবেই হয়েছে।আর বাড়ীর জামাইরা তো আছেই তারাও তোমাকে হেল্প করবে।(মিনু আর ঝিনুকের হ্যাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে)কি বলো তোমরা?

নিহাদ(ঝিনুকের হ্যাজবেন্ড)-হ্যাঁ বাবা আমি আর রাহাত(মিনুর হ্যাজবেন্ড)আকাশ ভাইয়ার সাথে আছি।আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।

আয়েশা বেগম -তোহ্ তুমি যাচ্ছো কখন?

আবিদ চৌধুরী -আজ সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হবো।তুমি গিয়ে আমার সব কিছু গুছিয়ে দাও।
কথাটা শুনে আয়েশা বেগম মন খারাপ করে কেমন বাবা কাল ছেলের বিয়ে আর তুমিই থাকবে না।এমন টাকার দরকার কি যেই টাকা নিজের আপন জনদের সাথে থাকতে দেয়না কথা গুলো বলতে বলতে আয়েশা বেগম রুমে চলে গেলেন।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১০

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১০

#Rabeya Sultana Nipa

 

__ঝিনুক আর মিনু অরণীকে দেখে আসার কথা শুনেই পরের দিনই বাপের বাড়ীতে চলে এলো।মিনুরর ৩ বছর বিয়ে হয়েছে। তার সংসার নিয়ে ভালোই কাঁটছে তার দিন।ঝিনুকের মেয়ে রুমকি বয়স ৫ বছর কিন্তু কথা শুনলে ৬০ বছরকেও হার মানায়।তার দুই বাড়ীতেই রাজত্ব। রুমকির দাদার বাড়ীতে রুমকি ছাড়া আর ছোটো বাচ্চা নেই। নানার বাড়ীতেও তাই।সবার আদরের রুমকি।নানার বাড়ীতে এলে সারাক্ষণ সুমির কাছেই থাকে।তার যতো আবদার সুমি আর আয়ানের কাছেই।আজ রাতে রুমকি সুমির হাতে খাবে বলেই জিদ ধরেছে।ঝিনুক খাবারের প্লেট নিয়ে পিছন পিছন দৌঁড়াচ্ছে,

রুমকি -আম্মু আমি তোমার হাতে খাবো না। মামনি কে ডাকো আমি তার হাতেই খাবো।

মিনু আর আয়েশা বেগম মা মেয়ের কান্ড দেখে হাঁসতে লাগলো।

আয়েশ বেগম -ঝিনুক! ওর সাথে জোরাজোরি করছিস কেনো?একটু পর সুমি আর আয়ান চলে আসবে শপিং থেকে।তারপর সুমি এসেই খাইয়ে দিবে। কথাটা শেষ করতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

মিনু -আম্মু তুমি বসো আমি দরজা খুলছি।

মিনুকে দেখে আয়ান অবাক হয়ে তোরা কখন এলি?

মিনু- কেন তোকে ভাবী বলেনি আমরা এসেছি।

সুমি ভিতরে আসতে আসতে না বলিনি।আমি ছেয়েছি ওকে একটু সারপ্রাইজ দিবো।
ঝিনুক আর মিনু এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে,
ঝিনুক -কেমন আছিস তুই।একটু আমাকে দেখতেই যাস না।ফোনে দুই এক মিনিট কথা বলে দ্বায়িত্ব গুলো ঝেড়ে ফেলছিস।এখনি এই অবস্থা বিয়ের পর তো ফোনই দিবিনা।

আয়ান -আপু তুই আমাকে ভুল বুজছিস।আমি সময় পাই না।(সুমির দিকে তাকিয়ে) ভাবী তুমি বলো আমি সময় পাই?

রুমকি -ছাড়ো তো আম্মুর কথা।তোমার ছোটো আম্মু যে এইখানে দাঁড়িয়ে আছে তা কি তোমার খেয়াল আছে?

আয়ান -আমি একদমি ভুলে গেছি ছোটো আম্মু। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।কথাটা বলতে বলতে রুমকিকে কোলে তুলে নিলো।

রুমকি -ওকে ওকে আজকের মতো ক্ষমা করে দিলাম।

আয়েশা বেগম কাজের লোক রফিক কে চা দিতে বললো সবাইকে।আয়ান শুনে বললো আম্মু আমি চা খাবোনা আমাকে কফি দিতে বলো।
মিনু -আম্মুউউউউ!!!! কয়েকদিন পর তোমার আর এতো কিছু খেয়াল রাখতে হবে না।এই বাড়ীতে যে আসছে সেই খেয়াল রাখবে।

আয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো ছোটো আপু তুই কি মনে করেছিস যে আসছে তার জন্য কি সব পাল্টে যাবে নাকি।আয়ানের কিছুই পাল্টাবে না।

সুমি -ঝিনুক আপু জানো? আয়ানের বউ দেখতে সত্যিই অনেক সুন্দর তবে বড় বোন টা কে আরো বেশী ভালো লাগে।

আয়ান -বড় বোন! বড় বোন আমি তো দেখিনি।তুমি দেখেছো? কিন্তু আমাদের সামনে আসলো নাতো।

সুমি -হ্যাঁ সেটা আমিও ভাবছি।আমি ও দেখতাম না যদি আমি উঠে গিয়ে বাসাটা ঘুরে না দেখতাম। জানো আমি যখন ওর রুমে গেলাম একটাও কথা বললোনা।
মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।পরে মেয়ের ভাইকে জিজ্ঞাস করলাম মেয়েটা কে এবং কথা বললো না কেন?সে বললো আমার বোন ও কারো সাথে কথা বলেনা।জানো কিছু একটা আছে হয়তো আমরা জানি না।

আয়েশা বেগম -সুমি! এইগুলো ভাবার দরকার নেই সবার পরিবারে কম বেশী কিছু ঘটনা থাকে।আজকের পর আর এইসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করার দরকার নেই।
রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবিদ চৌধুরী বসতে বললো সবাইকে।

আবিদ চৌধুরী -সবাইকে থাকতে বলেছি কারণ আমি আর আকাশ সন্ধ্যায় মেয়েদের বাড়ীতে গিয়ে পাকা কথা দিয়ে আসছি সামনের সোমবার বিয়ে।মেয়েদের বাড়ীতে একসাথে দুইটো বিয়ে।

ঝিনুক -আব্বু কি বলো আমরা দুই বোন তো এখনো মেয়েই দেখলাম না। আর আজ বুধবার আর মাত্র ৪ দিন পর।

সুমি-আব্বু আমরা কি এতো কিছু এতো তাড়াতাড়ি সামাল দিতে পারবো?
আয়ান মনে মনে ভাবছে কেমন মেয়েরে বাবা! একটা ফোন ও দিলোনা।অন্য কোনো মেয়ে হলে কতো বার যে ফোন দিতো হিসাব ছাড়া।আর এই মেয়ে একটা কথাও বললো না।আচ্ছা শুধু বিয়েটা হতে দাও তারপর দেখাবো আয়ান চৌধুরী কী!

আবিদ চৌধুরী আয়ানের দিকে তাকিয়ে তোমার কিছু বলার আছে?

আকাশ -আব্বু ও আবার কি বলবে? ও শুধু এখন বিয়ে জন্য প্রস্তুত নিবে।
আয়ান কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

সুমি -রুমকি চলো আজ তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে।
রুমকি -ওকে মামনি।(সুমির হাত ধরে) টাটা আম্মু গুড নাইট।

আবিদ চৌধুরী ঝিনুক আর মিনুকে বললো,জামাইরা কখন আসবে?

ঝিনুক -আব্বু! ও বলছে বিয়ের আগের দিন ঠিক চলে আসবে।আগেই আসতো কাজের জন্য আসতে পারবেনা।

আবিদ চৌধুরী -মিনু তুমি কিছু বলছো না যে?

মিনু -আব্বু! কলেজ অফ করে তো আর আসতে পারবেনা।আমি বলেছি বিয়ের তারিখ পড়লেই ফোন দিবো ও চলে আসবে।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে তাহলে আর কি সবাই ঘুমাতে যাও কথাটা বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।

প্রাপ্তিদের বাড়ীতে মেহমানের আনাগোনা তেমনি আয়ান আর সিয়ামদের বাড়ীতেও।প্রাপ্তির মামীরা চাচীরা সবাই কাজ করছে প্রাপ্তির মায়ের সাথে। প্রাপ্তির মনে একটাই চিন্তা আমার ব্যাপারে ভাইয়া কি ওদের সব জানিয়েছে? ভাইয়া তো বলেছে জানাবে। আচ্ছা সেইদিন অরণীর ব্যাপার আমার কাছে ভালো লাগলো না।অরণী কি সিয়াম কে চিনে।আমার বিয়েটা ঠিক হওয়ার পর থেকেই মন মরা হয়ে আছে।যে অরণী আমার বিয়ে নিয়ে কতো প্লান করতো আর সে অরণী আমার সাথেও তেমন কথা বলে না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি উঠে গিয়ে অরণীর রুমে গেলো।অরণী খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে কি করবো আমি? সিয়ামকে আমি কখনো ভুলতে পারবোনা আর ওই আয়ান না কি, ওই ছেলের সাথেও সংসার করতে পারবোনা।প্রাপ্তি অরণী পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রাখতেই অরণী চমকে উঠে বললো আরে আপু তুই?

প্রাপ্তি -হুম আমি! কি ভাবছিস এতো দেওয়ানা হয়ে? মনে হচ্ছে রাজ্যের চিন্তা তোর মাথায়।

অরণী -নাহ্ আপু কিছু ভাবছিনা।তুই কেমনে কেমনে এই রুমে?

প্রাপ্তি দুইদিন পরতো তোর সাথে তেমন সময় কাটাতে পারবোনা। আচ্ছা অরণী সিয়াম কে তুই আগে থেকে ছিনিস তাইনা?

অরণী প্রাপ্তির এমন প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আ আ আ পু পু,,,, কি কি,,, ব ব ব লছি স স?
প্রাপ্তি -তুই এইরকম তোতলাচ্ছিস কেনো?
আমি তোকে একটা প্রশ্ন করলাম মাত্র।

অরণী ভাবছে সরি আপু এই মিথ্যা অভিনয়টা আমাকে করতেই হবে।শুধু তোকে ভালো রাখার জন্য।

প্রাপ্তি -কি ভাবছিস এতো?

অরণী -আমি কি করে চিনবো বল? ধুর এই সব বাদ দে। শুননা আপু! তুই ওই বাড়ীতে গেলে তুই আমাকে রোজ একবার করে ফোন দিবি।কি! দিবি তো?

প্রাপ্তি হাঁসি দিয়ে অরণীকে জড়িয়ে ধরে হুম দিবো।আসিফ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বাহ্ ভালোই তো, আমাকে কেউ ফোন দিবেনা? আমাকে পর করে দিলি?
প্রাপ্তি অরণীকে ছেড়ে দিয়ে তুই আমার সব রে ভাইয়া।তুই না থাকলে তো আমি কতো আগেই হারিয়ে যেতাম।

আসিফ -আবার শুরু করলি? খুশীর এই দুইটা দিনে পুরোনো কোনো অতীত নয়।কাল তোদের গাঁয়ে হলুদ আমার কতো কাজ পড়ে আছে তোরা গল্প কর আমি আসছি।

চলবে,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৯

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ান -ওহ্ মাই গড আমিতো ভুলেই গেছিলাম আজ আব্বুর সাথে মেয়ে দেখতে যাবার কথা।আবিদ চৌধুরী আজ আমায় গিলে খাবে । তুমিও তো রেডি হয়ে আছো দেখছি।ভাবী আমি ৫ মিনিটেই রেডি হয়ে আসছি।

সুমি -তাড়াতাড়ি করো। ৫ মিনিট বলে ৫০ মিনিট লাগাবা।

আয়ান মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে, ওকে সুইট হার্ট বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসতেই আবিদ চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে ঘড়ির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন কয়টা বাজে দেখেছো? তোমার কাছে সময়ের কোনো মূল্য না থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আছে।মেয়েদের বাড়ীতে জানিয়েছিলাম ১১ টায় যাবো। এখুনি তো ১০ টা বাজে। আয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো, আব্বু আমার মনে ছিলো না।

আবিদ চৌধুরী -তোমার যে সময়ের জ্ঞানের অভাব আছে সেটা আমার আগেই জানা আছে।

আকাশ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে আব্বু ঠিক আছে ওকে বকতে হবেনা।আমাদের তো দেরী হয়ে যাবে।আমি গাড়ী বের করছি তোমরা আসো।আয়ানও আকাশের পিছন পিছন চলে গেলো।

আদিদ চৌধুরী -সুমি! মেয়ের জন্য যে আংটি টা এনেছি ওইটা নিয়েছো তো?

সুমি -আব্বু আজ সত্যিই আংটি পরিয়ে আসবেন?

আবিদ চৌধুরী -হ্যাঁ আসবো। এখন চলো।

আয়ানরা সবাই প্রাপ্তিদের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
প্রাপ্তি নাস্তা করতে এসে দেখে অনেক আয়োজন চলছে বাড়ীতে।প্রাপ্তির মামী আর আম্মু কাজে অনেক ব্যস্ত। বড় ঘর থেকে অরণীর জন্য প্রস্তাব আসছে এইটা তো আর হাত ছাড়া করা যায়না।
প্রাপ্তির মামী -আপা! (নিলিমা বেগমকে)আসিফ তো অফিসে চলে গেলো এইদিকে ছেলের বাড়ী থেকেও নাকি লোকজন আসছে ভাই (প্রাপ্তির বাবা)কি পারবে এতো কিছু সামাল দিতে।

নিলিমা বেগম-চিন্তা করিস না।আসিফ বলেছে মিটিং শেষ করেই চলে আসবে।

সিয়াম বার বার অরণীকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে অরণী একবারের জন্যও রিসিভ করছেনা।উল্টো ফোন অফ করে দিয়েছে।সিয়াম মনে মনে ভাবছে ব্যাপার কি ওকে সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো বাবা মা কে না বলে ওদের বাড়ীতে পাঠিয়েছিলাম।মা তো বলেছে বিয়ের কথা পাকাপাকি করে আসছে শুধু তারিখটা ফেলবে।ও তো খুশী হয়ে আমাকে ফোন দেওয়া উচিত কিন্তু তানা উল্টো ফোনটাই অফ করে রেখেছে।আচ্ছা ও কি আমাকে বিয়ের দিন সারপ্রাইজ দিবে বলে হয়তো ফোন অফ করে রেখেছে।হয়তো ও বউয়ের সাজেই এক সাথে সামনে আসতে চায়।ঠিক আছে আমিও অপেক্ষা করে রইলাম।তোমাকে একসাথেই দেখবো আর ফোন দিবো না তোমাকে।

প্রাপ্তি হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকে এলো।ফুল গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে কিযে ভালো লাগছে তার।তাদের বাড়ীর সামনে যে একটা গাড়ী এসে থামলো সেই দিকে তার কোনো খেয়ালই নেই।
গাড়ী থেকে নেমেই আবিদ চৌধুরী ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ীর ভিতরে ঢুকলেন।আকাশ আর সুমি কথা বলতে বলতে তারাও চলে গেলো।
আয়ান বাড়ীতে ঢুকতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো।তখন প্রাপ্তি ফুলের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে ফুল গুলোর সাথে কথা বলছে।প্রাপ্তির ধারনা মানুষের থেকে ফুল গুলোই ভালো। কারণ শুধু ফুল গুলোই তার কথা শুনে। তার দিকে খারাপ ধারনা নিয়ে তাকায়না।আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়েই আছে তার মনে হচ্ছে তার দেখা সুন্দর মানুষটি তার সামনে।আচ্ছা ওই ফুল গুলোকে কি বলছে আর নিজে নিজে মিটমিট করে হাঁসছে।আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগুতে এগুতে ভাবতে লাগলো এই মেয়েকেই আজ দেখতে আসছি? আমি যাকে এতো দিন মনে মনে খুঁজছি এইসেই মেয়ে।আমি ওকে হারাতে চাই না কোনো ভাবেই না।আব্বু কে আজ আর বলবো না আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি।মনে হচ্ছে একটা পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ প্রাপ্তির নজর পড়তেই দেখে আয়ান তার পাশে দাঁড়িয়ে পলকহীন ভাবে তাকেই দেখছে।প্রাপ্তি কিছু না বলেই দৌঁড়েই বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।আয়ান মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজেও বাসায় ঢুকলো।

সুমি আয়ানকে দেখে কোথায় ছিলে এতোক্ষণ তুমি?

আয়ান-(ফিসফিস করে)সুইট হার্ট মেয়ে আমার দেখা হয়ে গেছে।আমি এখনি হ্যাঁ বলে দিলাম।তোমাদের আর মেয়ে খুঁজতে হবে না।

সুমি -ঠিক আছে দেখি তোমার পছন্দ কি রকম। বাবা তো বলেইছে পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে।

নিলিমা বেগম আর আজাদ সেহেব বসে মেয়ের গুনো গান গাইছেন। কিন্তু আয়ানের সেইদিকে কোনো মন নেই। আয়ান ভাবছে কখন মেয়েটাকে তার সামনে নিয়ে আসবে।
আসিফ এসে সবাইকে সালাম দিয়ে বাসায় ঢুকলো।সবার সাথে একটু কথাবার্তা বলে বললো আপনার বসুন আমি আমার বোনকে নিয়ে আসছি।
আসিফ ভিতরের রুমে যেতেই আবিদ সাহেবের অফিস থেকে ফোন আসলো জরুরী ভাবে যাওয়ার জন্য।ফোন রেখেই আবিদ সাহেব বললো অফিস থেকে ফোন আসলো তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তোমরা তাহলে দেখো আমি আসছি।

সুমি -বাবা আপনি চলে গেলে আংটি পরাবে কে?
আবিদ সাহেব -আগে আয়ানের পছন্দ হয় কিনা দেখো তারপর বাকী কথা।

সুমি -বাবা আমি বলি কি আয়ান নাকি মেয়েকে দেখেছে এবং তার পছন্দ ও হয়েছে।

আকাশ -তাই নাকি।আব্বু তাহলে বরং অফিসে আয়ান যাক আপনি থাকেন।ওর যখন পছন্দ হয়েছে তাহলেতো আর কথাই নেই।

আয়ান -আব্বু আপনি থাকেন আমিই যাচ্ছি। একদিক দিয়ে আসিফ অরণী কে নিয়ে আসলো অন্যদিক দিয়ে আয়ান বেরিয়ে গেলো।আয়ানের যেতে ইচ্ছে করছেনা ওই পরীর মতো মুখটা আরেক বার দেখতে ইচ্ছে করছে।ওই মেয়ের চোখে একটা মায়া আছে যে মায়া আমাকে বার বার টানে।
অরণী কে দেখে আবিদ চৌধুরীর পছন্দ হয়েছে। সুমির দিকে তাকিয়ে তোমরা কি বলো আয়ানেরও যখন পছন্দ হয়েছে তাহলে আংটি পরিয়েই যাই।

আকাশ -আব্বু আপনি ঠিকি বলেছেন। আয়ানের তো মতের কোনো ঠিকই নেই।কখন আবার কি করে। এর ছেড়ে ভালো পরিয়েই যাওয়াটা ভালো হবে।

আবিদ সাহেব আংটি টা অরণীর আঙুলে না পরিয়ে আসিফের হাতে দিয়ে বললো আপনারা পড়িয়ে নিবেন।প্রাপ্তিদের বাড়ীতে খাওয়াদাওয়া করে বাড়ী ফিরে এলো আয়ানদের সবাই।আয়েশা বেগম ড্রইংরুমে বসে অপেক্ষা করছিলো তাদের জন্য।আবিদ সাহেব কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।সুমি এসে বসতে বসতে মা! আর কোনো চিন্তা নেই আপনার ছোটো ছেলের বউ বাড়ীতে আসছে কয়দিন পর। সব কিছু রেডী করেন।ঝিনুক আর মিনু (আয়ানের বোন)আপুদের খবর দিন।

আকাশ -সুমি তুমি এমন ভাব করছো যেন বউ কালকেই ঘরে আসছে।

আয়েশা বেগম খুশী হয়ে তোরা সত্যিই বলছিস বিয়েটা হচ্ছে? আচ্ছা আয়ানের মেয়ে পছন্দ হয়েছে? আয়ান কোথায় ওকে তো দেখছিনা?

আকাশ -আম্মু! আয়ান অফিসের কাজে গেছে।তবে ওর পছন্দেরই মেয়ে।ও সুমিকে ওইখানেই বলেছে মেয়ে নাকি তার পছন্দ হয়েছে।

আয়েশা বেগম- আলহামদুলিল্লাহ্‌! ওকে নিয়েই তে বড় চিন্তা ছিলো।আমি এখনি ঝিনুক আর মিনুকে ফোন দিয়ে বলছি।ওরা শুনে কতো খুশীই না হবে।রুমকি (ঝিনুকের মেয়ে)শুনলে তো এখনি আসার জন্য কান্নাকাটি করা শুরু করবে।

সুমি -হ্যাঁ মা ঝিনুক আপু তো ভাইয়ার চাকরীর জন্য আসতেই পারে না।রুমকি কে কতো দিন হয়েছে দেখি না।কতো মিষ্টি একটা মেয়ে।সারাক্ষণ মামনি মামনি বলে আমার কাছে পড়ে থাকে। ওকে কাছে ফেলে আমার মা না হওয়ার কষ্ট টা আর মনে থাকেনা।কথাটা বলেই সুমি কান্না করতে করতে দোতালায় চলে গেলো।নিজের রুমে গিয়ে বালিশ বুকের নিছে দিয়ে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।

আয়েশা বেগম আকাশ কে চোখ দিয়ে ইশারা দিলো সুমির কাছে যেতে।আকাশ ও মায়ের কথা শুনে রুমে গিয়ে সুমির পাশে গিয়ে বসলো।

আকাশ -সুমি! এই সুমি! তুমি কেন কান্না করছো? আমি তো তোমাকে কতো বার বলেছি সমস্যা যারি থাকুক না কেন ডাক্তার দেখাতে কিন্তু না তুমি যাবে না।আমি তোমাকে এটাও বলেছি না হলে আমারা বাচ্চা দত্তক নিবো তুমি সেটাও মানো না।কি হলো কথা বলছো না কেন? ওকে,,,,, তুমি যদি চাও আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারো আমি বাঁধা দিবো না।কথাটা শুনেই সুমি এক ঝটকায় উঠে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িতো কন্ঠে বললো এইসব কি বলছো তুমি আমি তোমায় ছেড়ে কোথায় যাবো? ওকে ফাইন (চোখ মুছতে মুছতে) আমি আর কখনো কাঁদবো না।এইবার তুমি খুশীতো?

আকাশ -তুমি জানো তোমার কান্না আমার ভালো লাগেনা।আচ্ছা সুমি তুমিই বলো আল্লাহ আমাদের পরিক্ষা করছে তাইনা? আল্লাহ সবাইকে সব কিছু দেয়না সুমি।আল্লা আমাদের কি না দিয়েছে কিন্তু একটা সন্তান দেয়নি।

সুমি আকাশে কথা শুনে চুপ করে আছে।আমার তো আর একা কষ্ট হচ্ছে না আমি জানি আকাশ ও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু কাউকে বুজতে দেয়না।

চলবে,,,,,,,