Tuesday, August 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2392



ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৭

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আদরের সাথে আশফি বকবক করতে করতে চোখ পড়লো প্রাপ্তির দিকে।আদর সামনে তাকা মা কোথায় দেখ! আদর তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে প্রাপ্তিকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো,মা!কোথায় যাচ্ছো তুমি ? দেখছো না ওইখানে অনেক ভিড়। চলো গাড়িতে বসবে। প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে, আপু মা কে দরে রাখ।
আয়ান এগিয়ে এসেও আবার দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবছে না প্রাপ্তি এইখানে কেনো আসবে হয়তো এইটা আমার মনের ভুল।আয়ান আবার পিছিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।মানুষের ভিড় আস্তে আস্তে কমতে থাকে।প্রাপ্তিদের গাড়ি আয়ানের পাশ দিয়ে চললো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে এসে পৌঁছে সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে,
আশফি -ওয়াও! বাড়িটা তো অনেক সুন্দর।
আদর আশফির মাথায় টোকা দিয়ে, ওয়াও বাড়িটা কতো সুন্দর এইসব ন্যাকামি রাখ।তোদের মেয়েদের একটাই অভ্যাস কোনো কিছু দেখলেই ন্যাকামি।

আশফি-মা দেখেছো তোমার ছেলে
সবসময়,,,,,,, তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকছে।মনে হচ্ছে এই বাড়িটা প্রাপ্তির অনেক চেনা।আদর পিছনদিক থেকে এসে, মা! তুমি কি আগে কখনো এই বাড়িতে এসেছো?

প্রাপ্তি -হুম? না,কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছে এই বাড়িটা আমার অনেক চেনা।সবকিছু মনে হচ্ছে আমার মতো করে সাজানো। ঠিক যেমনটি আমি চাইতাম। আচ্ছা যাইহোক, তোর নানা ভাইকে নিয়ে আয়।
আদর- এক কাজ করলে কেমন হয়! এই বাড়িটা কে বিক্রি করেছে সেটা জানলে কেমন হয়?

আশফি -তুই এইসব কিভাবে জানবি?
আদর-আরে বোকা যিনি আমাদের ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে গেলেন ইনি হচ্ছেন এই বাড়ির পুরনো কাজের লোক।এবং উনি এই বাড়ির দেখা শুনা করেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে উনার সাথে কথা বলেছি।তোর মতো না যে সারাদিন সাজা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো।
প্রাপ্তি -ওহঃ আদর ও তোর বড় বোন।সারাক্ষণ ওর পিছনে না লাগলে তোর হয়না। তোদের মতো থাকতে আমার ভাই আমাকে চোখের মনি করে রাখতো।

আদর-আমাদের মামা ও আছে? আপু জানিস এই জায়গা টা মনে হয় আমাদের জন্য শুভ। কেনো জানিস?এই জায়গার নাম নেওয়ার পর থেকেই মা তার পুরোনো স্মৃতি গুলো একটু একটু করে মনে করছে।

প্রাপ্তি – তোরা এখন বড় হয়েছিস। তোদের আস্তে আস্তে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন আছে।
বাশার কে উপর থেকে নামতে দেখে(আদর যার কথা বলে ছিলো)
আশফি -সব কিছু ঠিকঠাক মতো আছে তো?

বাশার -জ্বী আপা মনি সব কিছু ঠিকঠাক করেই রেখে আসলাম।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে বাশারের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা এই বাড়িটা আগে কার ছিলো দেখে তো মনে হচ্ছে উনারা এই বাড়িতে থাকতেন না।

বাশার মন খারাপ করে, জ্বী খালাম্মা এই বাড়িতে কেউ থাকতো না।মাঝে মাঝে একজন এসে থাকতো।ওনাকে আমি মামা বলে ডাকতাম।আর মামার মুখ থেকেই শুনেছিলাম মামা ওনার স্ত্রীর জন্যই এই বাড়ি বানিয়েছিলেন মামীকে উপহার দেওয়ার জইন্য।কিন্তু ওনার স্ত্রী ফিরে এলোনা বাড়িও দেওয়া হলোনা।কিছু দিন আগে কোনো একটা কারনে তিনি বাড়িটা বিক্রি করে দেন।আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যদি মামী ফিরে আসে তখন? মামা কইলো মামী নাকি আর কখনোই ফিরা আইবো না।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে সাবিত সাহেব কে নিয়ে চলে গেলেন রুমে।

আশফি -দেখেছিস আদর লোকটা মনে হয় ওনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসতেন।আচ্ছা বাশার! ওনার স্ত্রী কোথায় থাকেন?

বাশার- কোনো কারণে ওনার স্ত্রী ভুল বুজে চলে গেছেন। আচ্ছা আপা মনি আপনারা কি খাবেন বলেন।আমি এখুনি নিয়ে আসছি।

আদর-আজ তোমার পছন্দের মতো কিছু নিয়ে আসো।(কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে)আমরা তো জানিনা তোমার মতো মজার একটা মানুষ এইখানে আছে।তাহলে আসার সময় কিছু নিয়ে আসতাম।এখন এই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের কিছু কিনে নিও।
বাশার খুশি হয়ে খাবার রেডি করতে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এসে দেখে ভাইবোন এখনো দাঁড়িয়ে আছে।।
প্রাপ্তি -কিরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।কে কোন রুমে থাকবি দেখে নে।প্রাপ্তি কথাটা বলেই উপরে চলে গেলো।

রাত ১০. ০০ টায় প্রাপ্তি সবাইকে খেতে ডাকলো।বাশার প্রাপ্তির সাথে হেল্প করছে।বাশারের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে প্লেট ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি বললো,বাশার দুপুরে যে স্যারের কথা বলছিলে,ওই স্যার কি করেন?

বাশার-অনেক বড় ব্যবসা শুনেছি।এক ডাকে সবাই চিনেন।

প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে, নাম কি উনার?

বাশার নাম বলার আগেই আশফি আর আদর উপর থেকে নামতে নামতে,
আদর -মা! এই বাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আশফি চেয়ারে বসতে বসতে, মা!আমার এক কলিং ফোন করেছে।
এইখানে আসার সময় একটা হসপিটালের সাথে কথা বলেছিলাম ওই হসপিটালে কাল থেকেই যেতে হবে।আদর! তুই আরও কয়েক দিন রেস্ট নে তারপর না হয় হসপিটালে জয়েন করিস।

প্রাপ্তি -আদর! আশফি কথাটা খারাপ বলেনি।কাল থেকে আমারও কলেজে যেতে হবে।তুই একা একা বাড়িতে বসে না থেকে শহরটা কে ভালো করে ঘুরে দেখ।

আদর মাথা নাড়িয়ে মায়ের কথায় সায় দিল।

সকাল থেকে সুমি নাস্তা বানাচ্ছে সবার জন্য। আয়ান ড্রইংরুমে বসে পেপার পড়ছে।মুনিয়া তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। মুনিয়াকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে আয়ান পেপার থেকে মুখ সরিয়ে, কিরে তোর এতো তাড়া কিসের? কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
মুনিয়া আয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাকাই আর বলোনা কলেজে আজ নতুন ম্যাডাম আসছে।আর উনি নাকি খুব রাগী।

আয়ান মুনিয়ার কথা শুনে হাঁসি দিয়ে, যার যত রাগ তার মনটাই অনেক সুন্দর।
মুনিয়া-একটু ভেবে,তা ঠিক বলেছো।আচ্ছা তাহলে আমি আসি।(চেঁচিয়ে সুমিকে বললো)মা! আমি আসছি।
সুমি রান্নাঘর থেকে এসে, এই মুনিয়া আসছি মানে? নাশতা করে যা?
মুনিয়া দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে, মা! বাহিরে খেয়ে নিবো।
আয়ান মুনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে, আচ্ছা ভাবী! আমার আশফিও আজ কতো বড় হয়ে গেছে তাই না?
সুমি-সেটা আর বলতে,,,প্রাপ্তি চলে যাওয়ার অনেক বছর পর মুনিয়া দুনিয়াতে এসেছে।আর আশফির তো এখন বিয়ে হওয়ার কথা।ওদের কথা ভেবে আর কি লাভ।প্রাপ্তি হয়তো তার সংসার অন্য কারো সাথে ঠিকি গুছিয়ে নিয়েছে।
আয়ান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমি আমার পরীকে খুব ভালো করেই চিনি।আমি ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না আমার পরী।
আকাশ আয়েশা বেগমকে ধরে ধরে এনে আয়ানের সাথে বসিয়েছে।নিজের ছেলের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কতো করে তোকে বললাম বিয়েটা কর।কিন্তু না তুই প্রাপ্তি আশায় এখনো বিয়ে না করে আছিস।
আয়ান পেপার হাত থেকে রেখে দিয়ে, অন্য একটা মেয়েকে এই বাড়িতে এনে কি লাভ হতো,কারণ আয়ানের কাছ থেকে কখনোই ভালোবাসা পেতো না।আয়ানের যা কিছু ছিলো সব তার পরীকেই দিয়ে দিয়েছে। অন্য মেয়ে আসলে তাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই।
আয়েশা বেগম- তুই কেমন ছেলেরে বাবা! যে মেয়ে তোর ভালোবাসাই বুজলোনা আজও তুই তাকেই ভালোবাসিস।সেইদিন তোদের কি হয়েছিলো কেউ এখনো জানতে পারলোনা।

আকাশ-থাকনা মা! রোজ রোজ ওকে এইগুলো বলে লাভ কি?ওর অপেক্ষার একদিন অবসানও হতে পারে।
প্রাপ্তির নতুন কলেজের আজ ফাস্ট দিন।ক্লাস পড়েছে তাও মুনিয়াদের ক্লাসে।ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সালাম দিলো।প্রাপ্তি সালামের আনসার নিয়ে, আজ তোমাদের সাথে আমার ফাস্ট ক্লাস। তাই আগে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নি। আমি মিফতাহুল জান্নাত। তোমাদের ম্যাথ টিচার।
মুনিয়া প্রাপ্তি ক্লাসে আসার পর থেকেই হা করে তাকিয়ে আছে।মুনিয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি (মুনিয়ার ফ্রেন্ড) এই মুনিয়া তুই যে ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে তোর বয় ফ্রেন্ড আসছে। এইভাবে হা করে কি দেখছিস?

মুনিয়া-ফোটো কপি!

বৃষ্টি -মানে?

মুনিয়া থুতনির নিচ থেকে হাত সরিয়ে, আমার কাকাইয়ের রুমে উনার মতো দেখতে একজনের ছবি দেওয়ালে ঝুলানো আছে, মানে! ওইটা আমার কাকীর ছবি অনেক পুরোনো। অবশ্য ম্যাডামের বয়সের সাথে ওই ছবির কোনো মিল নেই।
মনে হচ্ছে ওইটা ম্যাডামের যৌবন কালের ছবি।

প্রাপ্তির মুনিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে, দাঁড়াও! কথা বলছিলে কেনো?

মুনিয়া- ইয়ে মানে!।
প্রাপ্তি -ঠিক আছে বসো! আমার ক্লাসে কেউ কথা বলবে না।
প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ম্যাম! ম্যাম! কারো ডাক শুনে প্রাপ্তি পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সেই মেয়েটা।
মুনিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।
প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে,মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া।
মেয়েটা একটু খানি দম নিয়ে, ম্যাম আমি মুনিয়া! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

প্রাপ্তি -অবশ্যই করতে পারো।

মুনিয়া-আপনার সাথে আমার আগে কখনো দেখা হয়েছে?
মুনিয়ার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে প্রাপ্তি না হেঁসে পারলো না।
কেনো তোমার এমন মনে হয় ?
মুনিয়া ছবির কথাটা বলবে কিনা বুজতে পারছেনা।না! আপনাকে মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখেছি।

প্রাপ্তি -দেখো মুনিয়া! পৃথিবীতে আমার মতো দেখতে আরও অনেক জন আছে।হয়তো তুমি কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছো।তোমার আর কিছু বলার আছে?

আদর কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, প্রাপ্তিকে নিতে এসেছে সে।প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে আদর কে দেখে, দায়িত্ব শীল ছেলে।
কখন এসেছিস?

আদর -অনেকক্ষণ! প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসতে গাড়ির দরজা খুলতেই আরেকটা গাড়ি এসে পাশে দাঁড়ালো।আদর একবার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে দেখে মুনিয়া আস্তে আস্তে বের হচ্ছে।
মুনিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে,আমার মা মনির কি মন খারাপ? নতুন ম্যাডামকে ভালোলাগেনি?
মুনিয়া কোনো কথা না বলেই গাড়িতে এসে বসলো।
আয়ান ও কথা না বাড়িয়ে মুনিয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৬

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সাবিত সাহেবকে শুয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে খাটের কিনারায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো প্রাপ্তি । ভালো লাগছেনা দেখে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আকাশের তারা গুলো ঝলমল করছে। চারদিকে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আজ আয়ানের কথা খুব মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে আয়ান আমার শিরা উপশিরায় মিশে আছে।হয়তো তানিয়াকে নিয়ে আয়ান সুখেই আছে।আয়ান! আমার কথা কি তোমার মনে পড়েনা?পৃথিবীতে কোনো কিছু থেমে থাকেনি।থেমে গিয়েছিল তোমার আর আমার সম্পর্ক। তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে রাতের আকাশের চাঁদ দেখবো।যখন আকাশ মেঘে ডেকে যাবে চারদিকে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকবে তখন তুমি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলবে, পরী আই লাভ ইউ। যখন বৃষ্টি হবে ছাদে গিয়ে তুমি আমি একসাথে ভিজবো। হ্যাঁ আরও অনেক কথাই দিয়েছিলে।আমি কিছুই ভুলিনি আয়ান।এখন সব কিছু সময় মতো ঠিকি হয়, শুধু হয়নি তোমার আমার সাথে চাঁদ দেখা,হয়নি কপালে চুমু খেয়ে আই লাভ ইউ বলা,হয়নি দুজনে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। কিন্তু হ্যাঁ সব কিছুর মাঝে একটা কথাই সত্যিই হয়েছে, তুমি আমাকে বলতে প্রাপ্তি আমি তোমাকে সামলানোর জন্য সারাজীবন থাকবোনা। তুমি ঠিকি বলেছো তুমি আমার পাশে নেই আছে শুধু তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি গুলো। আছে শুধু তোমার অস্তিত্ব। তানিয়ার চিঠিতে লিখা গুলো আমাকে আজও অনেক কষ্ট দেয়।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি ওই মেয়ের কতো টা কাছে গিয়েছিলে? অবশ্য এখন তো তুমি ওর কাছেই থাকো।সেইদিন রাতে তুমি যদি আমায় থাপ্পড় গুলো না দিয়ে সত্যি কথা গুলো বলতে আমি এক নিমিষেই তোমায় ক্ষমা করে দিতাম।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে আশফি।

প্রাপ্তি -তুই এখনো ঘুমাসনি?

আশফি -তুমিও তো ঘুমাও নি! অবশ্য তোমাকে আমি কখনো দিখিনি শান্তিতে একটা রাত ঘুমিয়েছো।

প্রাপ্তি মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাঁসি দিয়ে,যা ঘুমিয়ে পড় সকালে অনেক কাজ।নতুন বাড়ি নতুন একটা জায়গা,নতুন পরিবেশ, বুজিস তো কতো কাজ।

আশফি-তোমার কলেজ থেকেও আর সময় পেলোনা ট্রান্সফার করানোর জন্য। আদরটা আসলো কয়েক দিন থেকে তার পর না যেতে পারতাম।কিন্তু না” আচ্ছা মা! যেখানে যাচ্ছো জায়গাটা কি তুমি আগে থেকে চিনো?কথাটা বলতেই প্রাপ্তি থমকে গেলো।কারণ শহর টা তার আগে থেকেই চেনা।তার সব অস্তিত্ব জুড়ে আছে এই শহর। তার প্রিয় মানুষটাই যে ওই শহরে থাকে।

আশফি -মা! আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।কারণ জানোই তো আমাকে ওইখানে গিয়ে হসপিটালে জয়েন করতে হবে।।

আশফির কথা শুনে মেয়ের মাথায় হাত রেখে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।ওই শরের মানুষ গুলো অনেক ভালো তবে কাছের মানুষ গুলো ভালো না।কথাটা বলেই প্রাপ্তি বারান্দা থেকে চলে এলো।
আশফি মায়ের কথা শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের কথা তো কিছুই মাথায় ঢুকলো না।মানুষ ভালো কিন্তু কাছের মানুষ গুলো ভালো না। ধ্যাৎ! মা মাঝে মাঝে এমন কথা বলে মাথায় ঢুকেনা।
রাত ২ টা সারাদিনের জার্নি করে আদর বেঘোরে ঘুমাছে।প্রাপ্তি রুমে এসে আদরকে দেখে মুচকি হেঁসে মাথাটা নাড়িয়ে কাছে গিয়ে কাঁথা গাঁয়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে প্রাপ্তি। নতুন বাড়িতে যাবে আগে আগে পৌঁছানো টা ভালো।ওইখানেই গিয়েও কতো কাজ।বাড়িটা নিজের মনের মতো করে সাজাতে হবে।অবশ্য সাজানোর ব্যাপারে প্রাপ্তির এতো মাথা ব্যাথা নেই।এইসব এখন আশফিই করে।
আদর রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে মা! তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো আমি নানা ভাইকে নিয়ে আসছি।
আশফি -থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না নানা ভাইকে আমি গাড়িতে বসিয়ে এসেছি।সকাল থেকে তো হনুমানের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি।এখন আসছে ওনি নানা ভাইকে নিয়ে যেতে।

আদর -দাঁড়া তোকে তাড়াতাড়ি করে এইবাড়ি থেকে বিদায় করতে হবে।না হলে সাতচুন্নির মতো আমার পিছনে পড়ে থাকবি।একটা প্রেম করেই তো বিদায় হতে পারিস তাহলে আমাদের খরচটা বেঁচে যেতো।
প্রাপ্তি কথাটা শুনে কোনো কিছু খেয়াল না করেই,আদর! আমার মেয়ে আয়ান চৌধুরী মেয়ে আর আয়ান চৌধুরী কখনো তার মেয়েকে পালিয়ে যেতে দিতো না।
সে যদি অন্যের মেয়েকে কুড়িয়ে এনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে পারে আর নিজের মেয়ে কথা তো বাদই দিলাম।

আদর -আয়ান চৌধুরীর মেয়ে মানে? বাবার নাম তো ইকবাল মাহমুদ! আয়ান চৌধুরী নাম টা আমি কোথায় যেনো শুনেছি।
আদরের কথা শুনে প্রাপ্তি থতমত খেয়ে গম্ভীর গলায়, তুই বুজতে ভুল করেছিস চল এখন তোর নানা ভাই গাড়িতে একা বসে আছে।কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
আশফি দিকে আদর তাকিয়ে, আপু তুই ও কি ভুল শুনেছিস?তবে এই আয়ান চৌধুরী নাম টা খুব চেনা লাগছে তবে মনে করতে পারছিনা।
আশফি -চল তো! তুই বেশি কথা বলিস।

নতুন শহরে প্রাপ্তিদের গাড়ি আসতেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে প্রাপ্তির।নিজের কাছের মানুষ গুলো সবাই এই শহরে থাকে।২৬ টা বছর পর আবার এই শহরে। সব কিছুতেই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তার আয়ান হারিয়ে গেছে হয়তো। সংসার, ছেলেমেয়েদের নিয়ে হয়তো সুখেই আছে।সেই সংসারে হয়তো আমার কোনো স্থান ছিলোনা। ছেলের কথা তো আয়ান জানেই না।আশফির কথা হয়তো ভুলে গেছে ,কারণ তার নিজের সংসারে আমার মেয়ের কি কোনো স্থান থাকতে পারে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তিদের গাড়িয়ে এসে থামলো একটা ব্রিজের উপর।

প্রাপ্তি আদরকে উদ্যেশ্য করে, কি হয়েছে আদর গাড়ি থামালি কেনো।বাড়ি কি এসে গেছে নাকি।আমি তো বাড়ীটা সরাসরি দেখিনি।ড্রাইভার তো চিনে।

আদর -না মা! সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে হয়তো তাই অনেক ভিড়।(আয়ানের গাড়িটাও ব্রিজের উপর প্রান্তে এসে ভিড় দেখে থামলো।)
প্রাপ্তি -ওহ্ তাহলে তো অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হবে।

আশফি -আমি গিয়ে দেখি!

আদর -রাস্তার মধ্যেও কি তুই ডাক্তারি শুরু করবি নাকি?

আশফি -আদর! সবসময় ফাজলামো ভালো লাগেনা।এইটা আমার দায়িত্ব।

ভাইবোনের ঝগড়া দেখে প্রাপ্তি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
আয়ানের কেমন জানি লাগতে শুরু করলো।মনে হচ্ছে তার প্রাপ্তি আশেপাশে কোথাও আছে।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে ভিড়ের দিকে আগাতে লাগলো । প্রাপ্তিরও খুব অস্থির লাগছে।কেনো মনে হচ্ছে আয়ান তার পাশেই আছে।হয়তো সারাটা রাস্তায় আয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে আসছে তাই?কিন্তু না এই অস্থিরতা অনেক বিশাল। আয়ান হয়তো সত্যিই আমার পাশে আছে এই ভেবে প্রাপ্তিও ভিড়ের মধ্যে এগুতে লাগলো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৫

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

আমেরিকার এয়ারপোর্টে বসে আছে আয়ান! অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশে আসার জন্য।হঠাৎ করেই একটা ছেলে এসে আয়ানের পাশে বসলো।আয়ান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলেটা নিজের ব্যাগ ঠিক করে রাখছে।ছেলেটার চেহারায় অনেক মায়া আছে ছেলেটা ব্যাগ রেখেই আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, হাই! আমি ইশফিয়াক চৌধুরী আদর।
আয়ান ও হাত বাড়িয়ে আমি আয়ান চৌধুরী। আবার দুজনেই চুপ করে বসে আছে।খানিকক্ষণ পর আয়ান নিরবতা ভেঙে, তুমি আমার ছোটো তাই তুমিই করেই বলছি, দেখে তো বুজা যাচ্ছে দেশেই যাচ্ছো। আমেরিকায় কি কাজে আসছো?
আদর- it’s ok.আমি ডাক্তার।এইখানেই পড়াশুনা শেষ করেছি। কিন্তু মায়ের আদেশ বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য।

আয়ান-মা কে অনেক ভালোবাসো?
আদর -অনেক অনেক ভালোবাসি! কারণ আমার জীবনে মা আর আপুই সব।আচ্ছা আপনি কেনো আসলেন?
আয়ান -আমি বিজনেসের কাজে আসছি।
আদর -হুম,,আপনাকে আংকেল বলে ডাকতে পারি?

আয়ান – দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, কেনো পারবেনা! হয়তো তোমার বয়সের আমার একটা ছেলে থাকতো।অবশ্য আমার একটা মেয়ে ছিলো।

আদর -ছিলো মানে? এখন কোথায়?
আয়ান -জানিনা।তবে আমার মেয়ে আশফি আমার মনে সারাক্ষণই বিরাজ করে।।

আদর-আশফি! আমার বড় আপুর নামও আশফি। দেখেছেন আংকেল আপনার সাথে কেমন যেনো মিলে গেলো ।

আয়ান -সব কিছু বিধাতা মিলায়না।যাইহোক, এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ড যদি কখনো মনে পড়ে চলে এসো।আজকের মতো আবার দুজনে জমিয়ে আড্ডা দিবো। তোমার সাথে কথা বলে ২৬ বছর পর মনে শান্তি পেলাম।আদর মুচকি হেঁসে আংকেল আপনাকে আমারও খুব ভালো লেগেছে।অবশ্যই দেশে গেলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আদরের কথা শুনে আয়ানের চোখ গুলো কেমন টলমল করছে,আদরের থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো,আমার পরী আমার জীবন থেকে চলে গেছে ২৬ টা বছর হয়ে গেলো।এই ২৬ বছরে মনে হলো এই ছেলেটাই আমার কাছে অনেক আপন। বাংলাদেশে এসে দুইজন দুই দিকে পা বাড়ালো।আয়ান চললো চৌধুরী বাড়ির দিকে আর আদর চললো তার মায়ের কাছে।

মা! মা! কাকাই আসতে এতো দেরি করছে কেনো বলো তো।কাকা এইবার অনেক দিন পর দেশে আসছে।তুমি দেইখো কাকাই শুধু এইবার আমাকেই ভালোবাসবে।মেয়ের কথা শুনে সুমি খুব বিরক্তিকর ভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে সকাল থেকে অনেক বকবক করেছিস তোর কাকাইকে নিয়ে এইবার উপরে যা। যখন তোর কাকাই আসবে তোর কাকাই তোকে ডেকে নিবে।সুমির কথা শেষ হতেই আয়ান সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে আমার মা মনিকে বকছো কেনো তুমি?মুনিয়া কাকাই এসে গেছি এখন আর তোমাকে কেউ বকা দিবেনা।মুনিয়া দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাকাই মাকে ভালো করে বকে দাওতো।
আয়ান -আচ্ছা একটু পর দিচ্ছি।করিম (নতুন কাজের লোক)গাড়ি থেকে আমার ব্যাগ গুলো নিয়ে আসো তো।
আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগম আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এসে,,
আবিদ চৌধুরী -কখন এলি? আমি এতোক্ষণ এইখানে বসেই তোর অপেক্ষা করছিলাম।তোর দেরি দেখেই রুমে গেলাম।
আয়ান-এইতো আব্বু কিছুক্ষণ।

সুমি-বাবা! কাকা ভাতিজী এক সাথে হলে আর কারো কথা মনে থাকে?আয়ান আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলা যাবে।

মুনিয়া- কাকাই মা ঠিক বলেছে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আয়ান নিজের রুমে গিয়ে কোর্ট খুলে দেওয়ালের প্রাপ্তির ছবির দিকে নজর পড়তেই, কেমন আছো তুমি? আমাকে কষ্ট দিয়ে কি তুমি সত্যি ভালো থাকতে পারবে।না আমি অভিশাপ দিচ্ছি না।শুধু বলছি আমার প্রাপ্তিও তো আমায় ভালোবাসতো।আমার প্রাপ্তি তো আমায় ছাড়া ভালো থাকতে পারেনা।আচ্ছা প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসায় কি কোনো খাদ ছিলো? কেনো চলে গেলে তুমি আমায় একা রেখে খুব কষ্ট হয় আমার।তোমাকে একটা মিথ্যা বলায় ২৬ টা বছর এর শাস্তি পেতে হবে আমি কল্পনায় করিনি।(আয়ান ছবি তে হাত রেখে)মিস করি তোমায় আর আমার মেয়েকে।আমার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে তাইনা?

তোর মেয়ে শুধু বড় হয়নি হয়তো বিয়েও হয়েছে।কথাটা শুনে পিছনে ফিরে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান-ভাইয়া কখন এলি?

আকাশ-কিছু ক্ষণ! তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

গাড়ি থেকে নেমেই আদর সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে মা! মা! কোথায় তুমি? আদরের মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করতে ছিলাম।তোর দেরি দেখে ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে আসি।আদর তার মাকে জড়িয়ে ধরে। I miss u মা! অনেক অনেক করেছি তোমায়?
আদরের মা আদরের কপালে চুমু দিয়ে পাগল ছেলে।আমি ও আমার ছেলেকে অনেক মিস করেছি।তুই ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছিস এতেই আমার সব অপেক্ষার অবসান হয়েছে।এখন আর কোনো কষ্ট নেই।

আদর -মা! আপু কোথায়? আমি আসবো জেনেও এখনো বাসা এলোনা?

ডাক্তার আদর আপনি ভুল বুজছেন। আদর পিছনে ফিরে নিজের বোন আশফিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার হসপিটালে ইমারজেন্সি রুগি ছিলো তাই না গিয়ে থাকতে পারলাম না। হসপিটালে যেদিন থেকে জয়েন করবি সেদিন থেকে বুজবি দায়িত্ব কাকে বলে।
আশফির কথা শুনে আদর আশফির নাক টেনে দিয়ে, জ্বি ডাক্তার আপু বুজেছি।।

আশফি আদরকে নিয়ে একটু এগিয়ে এসে দেখেছো মা!

মা-হুম দেখেছি।আদর! যার জন্য আজ তুই দুনিয়ায় আলো দেখেছিস তাকে বলবিনা?

আশফি- কি! তুই এখনো দেখা করিসনে? আদরের কান টেনে ধরে চল আমার সাথে।

আদর গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, মিঃ সাবিত সাহেব আসবো?
সাবিত সাহেব -কে? গলাটা কেমন চেনে লাগছে।
আশফি ধাক্কা দিয়ে আদরকে রুমে ঢুকিয়ে, নানা ভাই, আদর আসছে দেখো।সাবিত সাহেব খুব বুড়ো মানুষ তাই চোখে কম দেখেন।চশমা টা খুঁজে নিয়ে চোখে দিতে দিতে আদর এসেছে?কই আমার আদর নানা ভাই। কতো বছর তোকে দেখিনা।তোর মা কে কতো করে বললাম আমার নানা ভাই দেশে থেকেই পড়াশুনা করবে। কিন্তু না তোর মা জেদ ধরেছে তোকে বড় ডাক্তার বানাবে।তাই আমিও আর জোর করলাম না।
আদর সাবিত সাহেবের পাশে বসে আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি এখন চলো মা অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে, চলো এক সাথে খাবো।
আদর আর সাবিত সাহেব ড্রইংরুমে এসে কই তোর মা” প্রাপ্তি! প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি এসে এইতো বাবা আমি রান্নাঘরে ছিলাম। খাবার আনতে গেছি।তুমি বসো না! নাতিনাতনিদের সাথে একসাথে বসে খেয়ে নাও।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, প্রাপ্তি মা” আজ তো আদর ডাক্তার হয়ে এসেছে, কথাটা ভেবেছিলাম বলবো না।কিন্তু না বলেও পারছি না।তাই বলছিলাম ওদের বাবা,,,,,, প্রাপ্তি সাবিত সাহেবকে থামিয়ে বাবা আপনি খেয়ে নিন।আর ওদের বাবা নেই।বাবা ছাড়া কি ছেলেমেয়ে মানুষ করা যায় না? হ্যাঁ হয়তো সেই দিন আপনি না থাকলে আমি অজানায় হারিয়ে যেতাম।হয়তো আমার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হতো। শুধু মেয়ে কেনো বলছি! আমার ছেলে যে কিনা আমার গর্ভে দুই মাসের বাচ্ছা। হয়তো সেইদিন জানতাম না আমি আরেক সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।আর সেইদিন যদি বাস স্টেশন থেকে আমাদের না নিয়ে আসতে হয়তো আমরা কোথায় হারিয়ে যেতাম। কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।আশফি নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে, মা! প্লিজ তুমি কেঁদো না।আমাদের বাবার দরকার নেই। তুমি আমাদের কাছে বাবা মা সব।আদর উঠে এসে হ্যাঁ মা আপু ঠিক বলেছে তুমি আমাদের কাছে সব।আমার লক্ষ্মী মা! প্লিজ কাঁদেনা।

প্রাপ্তি চোখ মুছে তোদের একটা কথা বলা হয়নি। আমাদের কাল এই বাসা ছেড়ে যেতে হচ্ছে।আমার কলেজ থেকে বদলির অর্ডার আসছে।
কেউ আর কিছু বললো না সবাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।

প্রাপ্তি -তোরা গিয়ে রেস্ট নে আমি বাবা কে নিয়ে তার রুমে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেব কে রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে,আমার কথায় তোমার কষ্ট লেগেছে তাইনা।
সাবিত সাহেব -নারে,,,,মা! কষ্ট লাগে নাই।তবে এই ২৬ বছর তুই অনেক কষ্ট করেছিস।নিজেকে সুশিক্ষিত করে কলেজের শিক্ষক হয়েছিস।ছেলে মেয়ে দুজনকেই ডাক্তার বানিয়েছিস।তোর এই কষ্টের সাক্ষী যে আমি নিজে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৪

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।রাত ১২.২০,প্রাপ্তি হয়তো আমার অপেক্ষায় বসে আছে।বিকেল থেকে ফোনেরও চার্জ নেই। হয়তো সবাই মিলে আমাকে বকাঝকাও করেছে।কথা গুলো ভাবছে আর হাত দিয়ে মুখটাকে মুছে নিচ্ছে।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে তানিয়ার মা।
আয়ান-আন্টি! কিছু বলবেন?

তানিয়ার মা- আয়ান! তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। তোমাকে ফোন দিয়ে বলার পর তুমি যদি না আসতে তাহলে হয়তো আমার মেয়েটার খারাপ কিছু হয়ে যেতো।।

আয়ান -আন্টি আমি ওর বন্ধু আর বন্ধু হিসেবে আমি এইটুকু করতেই পারি।আর সময় মতো তানিয়াকে আপনি হসপিটালে নিয়ে এসে আপনি ভালোই করেছেন।

তানিয়ার মা- হ্যাঁ সকালে তোমার সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে মেয়েটার যে কি হলো,, বলেই তানিয়ার মা হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।।
আয়ান -প্লিজ আন্টি ভেঙে পড়বেন না।আমি আপনাদের পাশে সবমসময় আছি।
তানিয়ার মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো, জানি বাবা।তবে তুমি এখন বাসায় যাও। তোমার পরিবারের সবাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে আন্টি কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।

আসিফ আর নীরাকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তি আশফিকে এনে ঘুম পাড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আয়ান রুমে ঢুকছে,আয়ানকে দেখে প্রাপ্তি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে এসে আমার পরীটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।আমি জানি পার্টিতে সবার চোখ আমার পরীর দিকে ছিলো। প্রাপ্তির রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে,আয়ান নরম স্বরে বললো, সরি! আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি,,,,,, আয়ানকে বলার সুযোগ না দিয়ে প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটে সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো। আয়ানও প্রাপ্তির ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা। প্রাপ্তির ভালোবাসায় আস্তে আস্তে নিজেকে হারাতে লাগলো।
রাত ৩.০০ টায় আয়ানকে রেখে প্রাপ্তি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।আয়ান পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে, তুমি ফ্রেশ হয়ে এলে যে? চলোনা তোমায় আরেকটু,,,, প্রাপ্তি আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে, আমার থেকে কি ওই মেয়েটা তোমায় ভালোবাসা বেশি দেয়? যার কারণে বার বার ওই মেয়ের কাছে ছুটে যাও।আমার শরীর তোমার কাছে ভালো লাগেনা তাইনা?ওই মেয়েটার ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে রাঙিয়ে আমার কাছে আসো তাইনা।এখন বলো তো সারারাত তোমাকে যে ভালোবাসা দিলাম ওই মেয়েটার থেকে কম পড়ছে? আর কতো ভালোবাসা দিলে তুমি ওই মেয়ের কাছে যাবেনা?
আয়ান কথা গুলো শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে থাপ্পড় দিয়ে, একদম চুপ!
কি বলছো আবল তাবল এই গুলো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
বাড়ির সবাই শুনলে কি বলবে?
প্রাপ্তি চেঁচিয়ে, লজ্জা করছে তোমার? যখন ওই মেয়েটার কাছে যাও তখন লজ্জা লাগেনা?
তখন একবারো মনে হয়না বাড়ির কথা।আরে আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তোমার তো একটা মেয়ে আছে ওর কথা তো ভাবতে পারতে?

আয়ান করুন গলায় বলতে লাগলো, প্রাপ্তি প্লিজ, আমার কথা ঠান্ডা মাথায় একবার শুনো,আমি তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি।

প্রাপ্তি -থাপ্পড় দিয়ে বুজাতে আসছো। কি বুজাবে তুমি? সব মিথ্যে? হ্যাঁ আমি অন্ধের মতোই তোমাকে বিশ্বাস করেছি।কিন্তু তুমি আমার সেই বিশ্বাসের কি মূল্য দিয়েছো।তোমার থেকে তো সায়মন ও ভালো ছিলো।অপকর্মের কথা গুলো নিজের মুখে স্বীকার করে নিয়েছিলো। সায়মনের কথা শুনে আয়ানের মনে হচ্ছে তার শরীরের সব রক্ত তার মাথায় উঠে গেছে,প্রাপ্তিকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে, কি ভেবেছো! তোমাকে ভালোবাসি বলে এইনা তোমার দেওয়া মিথ্যা অভিযোগ গুলো মাথা পেতে নিবো।
প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে বাহঃ বাহঃ মিঃ আয়ান আপানাকে আর আমার মিথ্যা অভিযোগ সহ্য করতে হবেনা।কথাটা বলে আশফিকে কোলে নিয়ে আমি এখুনি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।আপনার সুখের মাঝে আমি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবো না।থাকেন আপনি আপনার লুকানো ভালোবাসা নিয়ে।আমি চলে যাচ্ছি আর লুকাতে হবেনা আপনাকে।
প্রাপ্তি হঠাৎ এমন কথা বলবে আয়ান প্রস্তুত ছিলো না,বিস্ময় ভরা দুটো চোখ নিয়ে, মানে? কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে তুমি।কথাটা বলে আয়ান প্রাপ্তির এদিকে এগুতেই, একদম আমার দিকে এগুবে না বলে আশফিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ান পিছন পিছন প্রাপ্তিকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো।আয়ানের এইভাবে ডাকাডাকি শুনে সবাই বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, আয়ান কখন এসেছিস? আর এতো রাতে তোদের কি হয়েছে?
আয়ান আবিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে, আব্বু প্রাপ্তিকে আটকাও” প্লিজ আব্বু প্রাপ্তিকে যেতে দিও না।

আবিদ চৌধুরী -আমি তো কিছু বুজতেছিনা। প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমাদের?
প্রাপ্তি -বাবা যাই হয়ে যাকনা কেনো আপনি আমাকে আটকাতে পারেন না।তবে কি হয়েছে সেটাও আমার কাছ থেকে কেউ জানতে চাইও না।কারণ সবার কোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিবোনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান এগিয়ে যেতেই, তুমি যদি আমার আর আমার মেয়েকে আটকানো বা ছোঁয়ার চেষ্টা করো তাহলে আমাদের মরা মুখ দেখবে।প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান নিস্তব্ধ হয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউ কিছু বুজতেছেনা।সুমি এগিয়ে কাছে যেতেই প্রাপ্তি মাথা ইশারা করলো আর এগোতে না।চার দিকে ফজরের আজান দিচ্ছে সেইসময় প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । প্রাপ্তি চলে গেছে ঠিকি আয়ানের সব কিছু হারিয়ে গেছে।আকাশ আর অভ্র এসে আয়ানকে ধরতেই আয়ান ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে প্রাপ্তিকে আটকানোর জন্য।
পুরো টা বাড়ি যেনো থমথমে হয়ে আছে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো।আয়ান চোখ মুখ মুছে উঠে আসিফকে ফোন দিলো।ভাইয়া! আপনি কোথায়?
আয়ানের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে আসিফ বিস্মিত হয়ে আয়ান কি হয়েছে সব কিছু ঠিক আছে?

আয়ান -কিচ্ছু ঠিক নেই।প্রাপ্তি আমাকে ভুল বুজে বাড়ি থেকে চলে গেছে।আপনাদের বাড়ি গেলে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন!

আশফিকে নিয়ে বাস স্টেশনে বসে আছে প্রাপ্তি। কোথায় যাবে কি করবে সে জানেনা। বাপের বাড়িও যাবেনা। সেইখানে আয়ান গিয়ে ঠিকিই পৌঁছাবে। আমার জন্য কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে ওই মেয়ের সাথে দেখা করবে। এর ছেয়ে ভালো ওকে সম্মান দিয়েই ঘরে নিয়ে আসুক।আমি হয়তো ভালোবাসা পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারি নাই। তাই অন্য মেয়ের ভালোবাসায় নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চাইছে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তির খোঁজ এখনো কেউ পায়নি।আয়ান আসিফকে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আমি কি এতোই খারাপ? নাকি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো?
আসিফ আয়ানকে ছাড়িয়ে কাঁধে হাত দিয়ে, আয়ান আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তবে এইটা জানি তুমি কখনো কোনো অন্যায় করতে পারোনা।আমার বোনটার যে হঠাৎ কি হলো আমিও বুজতেছিনা।এখন কোথায় গেছে কি করছে?

সুমি-আমি তো ভেবেছিলাম রাগ করে যখন বেরিয়ে গেছে হয়তো তোমাদের বাড়ি যাবে।কিন্তু এখন তো দেখছি ভয়ংকর রূপে দাঁড়িয়েছে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট: ৩

1

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি রান্নাঘরে ঢুকতেই সুমি মুচকি হেঁসে বললো,কিরে আজ পরীর জন্মদিন আর তুই ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট করলি? দুজনে কি সারারাত চোর পাহারা দিছিস নাকি?সুমি কথাটা বলতেই ঝিনুক আর রেশী অট্র হাঁসিতে লুটিয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে, ভাবী! মিনু আপুকে ফোন করেছো? আশফির জন্মদিন জেনেও একটা ফোন দিলো না।
ঝিনুক -ঠিক বলছো। মিনু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর থেকে সবাইকে কেমন জানি ভুলে গেছে।অবশ্য রাহাত মাঝে মাঝে নিহাদের কাছে ফোন দেয়।

সুমি -মিনু দুইদিন আগে আমায় ফোন করেছিলো।বেশ ভালোই আছে।বার বার আশফির কথা জিজ্ঞেস করছিলো।

আয়েশা বেগম এসে দেখে সবাই রান্নাঘরে কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।
কি ব্যাপার সবাইকে নাশতা দিবে কখন? আজ তো কেউ অফিসে যাবেনা তাই সবাই আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু তোমরা ওদের সকালের নাশতা না দিয়েই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছো।

সুমি-এইতো মা! হয়ে গেছে।আসলে মিনুর কথা উঠলো তাই বলছিলাম।
সবাই নাশতা করতে বসেছে।সুমি আশফিকে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি! সবাইকে কফি ঢেলে দে।
প্রাপ্তি সবাইকে দিয়ে আয়ানকে দিতে যাবে তখনি আয়ান চোখ রাংগিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কফিটা নিজেই ঢেলে নিলো।সকালে তুমি আমার সাথে যা করছো এইটার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।শুধু আশফির জন্মদিনের পার্টিটা মিটে যাক তারপর তোমাকে বুজাবো আয়ান কি জিনিস। আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর প্রাপ্তির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি ভালো করেই জানে আয়ান কেনো তার হাতের কফিটা খেলো না।সকাল বেলা যখন আয়ান প্রাপ্তিকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে ছেয়েছিল প্রাপ্তি তখন ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।।
আয়ান নাশতা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। প্রাপ্তি আয়ানকে রুমে যেতে দেখে, কি ব্যাপার ও সবাইকে রেখে রুমে চলে গেলো কেনো?না আমাকে দেখতে হবে ও রুমে গিয়ে কি করছে।প্রাপ্তি রুমে এসে দেখে আয়ান রুমে নেই ফোনটা খাটের উপর রেখে ওয়াশ রুমে গেছে।প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে সরি আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার ফোন আমায় এইভাবে লুকিয়ে দেখতে হবে । তবে আমি এর শেষ দেখতে চাই।এতো কিছু জেনেও কেনো জানি তোমার উপর বিশ্বাস হারাতে ইচ্ছে করে না।আমাকে জানতেই হবে এই তানিয়া কে।ফোন টা খুলে দেখে অনেক গুলা মিসড কল আর এসএমএস।ফাস্ট এসএমএস এ লেখা ছিলো,

“আয়ান তুমি তোমার বউয়ের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো।কিন্তু আমি সারাটা রাত শুধু তোমার কথায় ভেবে কাটাচ্ছি। ”

প্রাপ্তি ভাবছে সব গুলো এসএমএস পড়লে হয়তো আমি ঠিক থাকতে পারবোনা।আচ্ছা লাস্ট এসএমএস টা দেখি,সেই এসএমএস এ লেখা,
“আয়ান আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি, তাড়াতাড়ি এসো।”

প্রাপ্তি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে, ধুম করে বসে পড়লো খাটে।সুখের সময়টা হয়তো মানুষের জীবনে বেশি দিন টিকে না।আজ কি সেই জায়গায় আমিও এসে দাঁড়িয়েছি।আমি কি পারবো আমার আয়ান কে অন্যের হাতে তুলে দিতে?এর আগেতো আমার মরণ ভালো।কেনো করলে আমার সাথে এইরকম। আমাকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে এখন আমায় ভালোবাসার কাংগাল বানাতে ছাইছো।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তি হু হু করে কাঁদতে লাগলো।
আয়ানকে ওয়াশ রুম থেকে বেরতে দেখে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আয়ানও কিছু না বলে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরতে যাওয়ার সময় প্রাপ্তি হাত ধরে ফেললো। আয়ান পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে তার হাত টেনে ধরে আছে।

আয়ান -কিছু বলবে?

প্রাপ্তি -কোথায় যাচ্ছো?

আয়ান -তুমি জানোনা? প্রতিদিন সকাল বেলা আমি কোথায় যাই?
আমি অফিসে যাচ্ছি কিছু বলার থাকলে বলো?
আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এই কোন আয়ানকে আমি দেখছি।কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা গুলো বলে ফেললো?
একটা বার ভাবলেনা প্রাপ্তি যে তোমার মিথ্যা সহ্য করতে পারেনা।

আয়ান -কিছু বললে বলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? তোমার সব শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরো যেনো কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা না করতে পারে।

আয়ান- সকালে ন্যাকামি দেখিয়ে এখন কি প্রমাণ করতে চাও।কথাটা শুনে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে হাত ছেড়ে দিয়ে, যাও তুমি!আর আটকাবো না।যার সাথেই ঘুরতে যাও সাবধানে যেও।সন্ধ্যার আগে ফিরে এসো আজকের দিনে আমি কোনো ঝামেলা চাইনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ানের মুখে কেমন একটা ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে। আমতা আমতা করে কোনো কারণে তুমি আমায় ভুল বুজছো?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে, প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে,সরি লক্ষ্মী। তোমার যতো কষ্ট জমা হয়েছে আমার উপর আমি ফিরে এসে সব দূর করে দিবো।
আয়ান চলে গেলো। প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে আয়ানের যাওয়ার পথের দিকে।

তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি আয়ান।ভেবেছিলাম আজ সারাদিন তোমার সাথে ঘুরবো বেড়াবো তা না এসেছো লেট করে এখন মুখ গোমড়া করে বসে আছো।
তানিয়ার কথা গুলো আয়ানের খুব বিরক্তিকর লাগছে।তানিয়া হচ্ছে আয়ানের কলেজের ফ্রেন্ড। অবশ্য ফ্রেন্ডের ছেয়ে বেশি কিছু তানিয়া ভাবে।তানিয়া আয়ানকে ভালোবাসে সে কলেজের সময় থেকেই।কিন্তু আয়ান কখনো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবিনি।তানিয়ার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকে তানিয়া তার হ্যাজবেন্ডের সাথে দেশের বাহিরে থাকতো।কিছুদিন আগে তানিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেছে তানিয়ার ক্যান্সার, বেশি দিন বাঁচবেনা।সেটা শুনেই তানিয়া দেশে চলে আসে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু আয়ানকে সে এখনো ভুলতে পারিনি।তাই দেশে এসে আয়ানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য।আয়ানও সব শুনে কাল অফিস থেকেই তানিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।দেখা করার শেষে তানিয়া কখন যে তার পকেটে ওই চিঠিটা দিয়েছিল আয়ান নিজেই জানেনা।
তানিয়া -জানো আয়ান তোমাকে যখন দেখি মনে কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগে। আচ্ছা কাল যে তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম পড়েছো?
আয়ান অবাক হয়ে, কিসের চিঠি?

তানিয়া- কাল তোমাকে না জানিয়ে আমার কিছু অনুভূতির কথা লিখেছিলাম ওই চিঠিতে।পড়ে ছিলে?
আয়ানের বুজতে আর বাকি রইলোনা কাল থেকে প্রাপ্তি ওই চিঠি পেয়েই আমার সাথে এইরকম করছে।তানিয়া আমি আসছি!

তানিয়া-কোথায় যাচ্ছো । এইমাত্র আসলে আর এখুনি চলে যাবে।

আয়ান – হ্যাঁ আমাকে যেতেই হবে।আমার প্রাপ্তি যে আমায় ভুল বুজেছে।আয়ান তানিয়াকে আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? রেশীর কথা শুনে অভ্র চমকে উঠলো। বলো কি দেখছিলে?

অভ্র -আমার বউটাকে দেখছিলাম।

রেশী -আমাকে তো সারাদিনই দেখো নতুন করে দেখার কি আছে।

অভ্র -তুমি যে আনরোমান্টিক সেটা আমি জানি।তাই বলে মুখে ফুটিয়ে জাগান দিতে হবে না।তোমার ভাই আর ভাবীকে দেখে তো কিছু শিখতে পারো।প্রাপ্তি আয়ানকে কতো ভালোবাসে।আর তুমি! তাকালেও কেনো তাকিয়ে আছি তার কৈফিয়ত ও তোমাকে দিতে হবে।অভ্রর কথা গুলো শুনে রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলতে লাগলো,আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি হয়তো আমি ভালো করে বুজাতে পারি না।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কোথায় তুমি?
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানের গলা না? প্রাপ্তিকে এইভাবে ডাকছে কেনো?
রেশী -চলো তো দেখি কি হয়েছে?

ঝিনুক আয়ানকে দেখে, কিরে কি হয়েছে? তুই এইভাবে ঘামছিস কেনো? মনে হচ্ছে কোথাও কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছি।

আয়ান-তার থেকেও বড় কিছু হয়ে গেছে আপু।প্রাপ্তি কই?

ঝিনুক -ও তো আশফিকে নিয়ে রুমে গেলো দেখলাম।।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে রুমের দিকে গেলো।তাড়াহুড়ায় সিঁড়ি বেয়ে উঠাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এনে আয়ানের সামনে ধরলো। আয়ান পানি খেয়ে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে আয়ানের পাশে বসালো। প্রাপ্তিও চুপচাপ বসে পড়লো। প্রাপ্তি! আমি জানি কেনো তুমি আমার সাথে এইরকম করছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকায়,,,,,,,কথাটা শেষ না করতেই আয়ানের ফোন বাজতে শুরু করলো।
ধ্যাৎ! এখন আবার কে ফোন দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে তানিয়ার নাম্বার। প্রাপ্তি আড় চোখে নাম্বারটা দেখে মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটা শুরু করলো। তবুও আয়ানকে কিছু না বলে আয়ানের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো লুকানোর চেষ্টা করছে।
আয়ান ফোন রিসিভ করে, ওপাশ থেকে কথা গুলো শুনে, আমি এখুনি আসছি।ফোন আবার পকেটে রেখে,প্রাপ্তি আমি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। আব্বু, ভাইয়া এরা সবাই পার্টির সব সামলে নিবে।
আয়ান চলে গেলো, প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, চোখের পানি মুছে নিচে এলো।
সুমি – প্রাপ্তি! আজকাল আয়ানের কি হয়েছে? এখন আবার দেখলাম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?

প্রাপ্তি -ও আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।আমাকে বলে যায়নি।
আবিদ চৌধুরী সন্ধ্যা থেকে বার বার আয়ানের কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এর ফাঁকে আসিফ আর নীরা এসেছে দেখে, আয়ানের কথা ভুলে গেছে।ওদের সাথে কথায় মগ্ন হয়ে আছে।প্রাপ্তি আশফিকে রেডি করে এনে আকাশের কোলে দিয়ে নিজে রেডি হতে গেলো।সবাই আশফিকে নিয়ে মেতে আছে। প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে আজ আমি এতটা সুন্দর করে সাজবো যেন আয়ান চোখ না ফেরাতে পারে।ওই মেয়ে কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর যার কারণে আয়ান তার কাছে বার বার ছুটে যায়।প্রাপ্তি নীল রঙের শাড়ি পরেছে,চোখে গাড় কাজল,ঠোঁটে হালকা রঙের একটু খানি ছোঁয়া।সবমিলিয়ে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে প্রাপ্তিকে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আয়ানের কোনো খবর নেই।অনেকক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করেছে,ফোন দিয়েছে শেষমেষ আবিদ চৌধুরীর কথায় অনুষ্ঠান শুরু করলো। সবকিছু হাঁসিখুশি ভাবেই শেষ করলো প্রাপ্তি। যেনো তার কিছুই হয়নি।আয়ানকে দেওয়া কথা সে রেখেছে। পরিস্থিতি যেমনই হোকনা কেনো তাল মিলিয়ে সে চলবে।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:২

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আয়ান আশফিকে আয়েশা বেগমের কোলে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে,আরে আপু! রেশী! তোরা?

ঝিনুক আর রেশী ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে, হুম আমরা! আম্মু কাল যে ওর মেয়ের জন্মদিন একবার ফোন করে বলেছে?মেয়ের বাবা হওয়ার পরও যে তুই এতোটাই কান্ড জ্ঞানহীন থাকবি এইটা আমি কখনো ভাবিনি।
আয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমি একটু পর তোদের ফোন দিতাম কাল আসার জন্য।
রেশী এগিয়ে এসে ভাইয়া কেমন আছো?
আয়ান-ভালো! অভ্র আসেনি?

ঝিনুক -নিহাদের সাথে রাতে আসবে।আশফিকে কোলে নিয়ে,প্রাপ্তি কোথায়। ভাইয়া আর ভাবী এরা কোথায়?
প্রাপ্তি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে কেমন আছো আপু?

ঝিনুক -এইতো ভালো।
রেশী এগিয়ে গিয়ে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো ভাবী?

প্রাপ্তি -তোদের এখন আসার সময় হলো বিকেল থেকে কি করেছিস?
আয়ান বার বার প্রাপ্তির দিকে তাকাচ্ছে, এই প্রাপ্তিকে কেমন জানি অচেনা লাগছে।সবার সাথে কথা বলছে ঠিকি কিন্তু কোনো মাধুর্যতা নেই।প্রাপ্তি যার সাথেই কথা বলুক না কেনো তার মুখে হাঁসি লেগেই থাকে। কিন্তু আজ যেন এক অন্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আয়ানের সামনে।
আয়ান কাছে যেতেই,আপু তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমাদের জন্য নাশতা নিয়ে আসছি বলেই রান্নাঘরে আবার চলে গেলো।আয়ান পিছন পিছন রান্নাঘরে গিয়ে প্রাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রাপ্তি না দেখার ভাণ করে নিজের কাজ করেই যাচ্ছে।
আয়ান খানিকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, কি হয়েছে তোমার?
প্রাপ্তি চুপ করেই আছে,
আয়ান আবারও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে কথা বলছো না কেনো?
প্রাপ্তি কফি নেওয়ার জন্য কাপ নিতে হাতটা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে ফেললো।ধমকিয়ে,কি সমস্যা তোমার?তুমি যদি,,,, কথাটা বলতেই রফিক এসে, আয়ান বাবা তুমি এইখানে? আয়ান রফিকে কিছু না বলে প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আয়ানকে গম্ভীর হয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে, কি হয়েছে মা! আয়ান বাবা রাগ করছে কেনো?
প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছড়ে দিয়ে কফি ঢালতে ঢালতে, কাকা এই বাড়িতে হয়তো আমার আয়ু গনিয়ে আসছে তাই।

রফিক প্রাপ্তির কথা শুনে, কি বলছো এইসব? মা! আয়ান একটু রাগী ঠিক আছে কিন্তু তুমি এই বাড়ি থেকে গেলে কি আয়ান বাবা এই বাড়িতে থাকবো?থাকবে না! সেইবার দেখলেনা তোমাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলো ।

প্রাপ্তি- সব সময় এক রকম যায়না।ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।আমি গিয়ে সবাইকে নাশতাটা দিয়ে আসি।
প্রাপ্তি এসে দেখে আকাশ আর সুমিও চলে এসেছে। আয়েশা বেগম আশফিকে প্রাপ্তির কোলে দিয়ে, প্রাপ্তি ওর ক্ষিধে লেগেছে মনে হয়।তুই ওকে খাইয়ে নিয়ে আয়।
প্রাপ্তি আশফিকে কোলে নিয়ে, ভাবী! ডাক্তার কি বলেছে?

সুমি – রিপোর্ট সব গুলোই ভালো আসছে।বাকীটা আল্লার হাতে।তুই যা পরীকে খাইয়ে আমার কাছে দে।অনেকক্ষণ হলো আমার পরীটাকে কোলে নিই না।
প্রাপ্তি রুমে গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ফোনে কথা বলতেছে।প্রাপ্তি আয়ানের দিকে না তাকিয়ে আশফির জন্য খাবার রেডি করে খাওয়াচ্ছে।আয়ান বার বার প্রাপ্তিকে আড় চোখে দেখছে আর বুজার চেষ্টা করছে কেনো প্রাপ্তি হঠাৎ তার সাথে এমন আচরণ করছে। বাহিরের থেকে আসার পরও তো সব ঠিক ছিলো। ওয়াশ রুমে যাওয়া পর কি এমন ঘটলো যার কারণে ও এইরকম করছে।
প্রাপ্তির আসতে দেরী দেখে সুমি নিজেই এসে, কিরে তোর হলো?
আয়ান ফোনটা রেখে, ভাবী আশফিকে একটু নিয়ে গিয়ে তোমার কাছে রাখো।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
সুমি প্রাপ্তির কাছ থেকে আশফিকে কোলে তুলে নিতে নিতে আমি তো আমার পরীটাকেই নিতে আসছি।
প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।সুমি রুম থেকে যেতেই প্রাপ্তিও উঠে চল যাবার জন্য পা বাড়াতেই আয়ান হাত ধরে টেনে খাটের উপর বসিয়ে,(নরম স্বরে) রাগ করেছো কেনো আমার উপর? আমি কি আমার অজান্তেই তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়ে ফেলেছি? কারণ আমার জানা অনুযায়ী আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না।
আয়ানের কথা গুলো শুনে প্রাপ্তির মনে হচ্ছে তার বুকের মধ্যে তীর গুলো গুছিয়ে গুছিয়ে কেউ বসিয়ে দিচ্ছে।আমার আয়ান ঠিক সেই রকম গুছিয়ে মিথ্যা গুলো আমাকে শুনাচ্ছে।আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আমাকে সত্যিটা বলতেই পারতে।আমি সরে যেতাম।কেন এখন গুছিয়ে গুছিয়ে এই মিথ্যা বাক্য গুলো আমায় শুনাচ্ছো।তোমার চোখে আমার প্রতি যে ভালোবাসা দেখেছি সবি কি মিথ্যা? আমার এখনো কেনো তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।তুমি অফিসে যাওনি যেনেও আমার মনে হয় আয়ান আমাকে ঠকাতে পারেনা।ওই চিঠিটা পড়ার পরও কেন তোমাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।মেয়েটা লিখেছে তুমি ওর কাছে গেছো।কতোটা কাছে? যতটা তোমার আর আমার সম্পর্কে, ততটা? কথাটা ভাবতে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে চোখের পানি গুলো অঝোরে ঝরছে। আয়ান কিছুক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে, থুনিটা উঠিয়ে নিজের দিকে করে, প্রাপ্তি আমার চোখের দিকে তাকাও।(ধমকিয়ে)কি হলো তাকাতে বললাম তো?
প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বে তাকাতেই,
আমি জানিনা আমার উপর কেনো তোমার এতো রাগ অভিমান। শুধু এইটুকু বলবো,কাল আমাদের মেয়ের জন্মদিন। কতো গেস্ট আসবে। অলরেডি আপুরা চলেও এসেছে।তুমি যদি সবার সামনে এইভাবে গম্ভীর হয়ে থাকো এইটা কি সবার কাছে ভালো দেখাবে।এর ছেয়ে তুমি আমাকে বলো কি কারণে আমার উপর তোমার এতো রাগ! প্লিজ বলো!
প্রাপ্তি আয়ানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়য়ে আমার কিছু হয়নি।আর তোমার আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।আমি সবার সামনে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।
অভ্র আর নিহাদ এসেছে,সবাই আড্ডা দিচ্ছে, আয়ান কিছু বলছেনা চুপচাপ সবার কথা গুলো শুনছে।প্রাপ্তি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবার সাথে তাল মিলাচ্ছে।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেই যার মতো করে ঘুমাতে গেলো।প্রাপ্তি আশফিকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে আছে।আয়ান আশফির পাশে শুয়ে প্রাপ্তি আসার অপেক্ষায় আছে। প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশটাকে মেঘ ঢেকে রেখেছে।মেঘে ঢেকে থাকায় চাঁদটাকে বুজা যাচ্ছেনা।চারপাশ কেমন যেন এক অজানা নিস্তব্ধতায় বর করেছে।আমার জীবনে যেই দিনই কোনো ঝড় আসুক সেইদিন আকাশেরও মন খারাপ থাকে।কথাটা ভেবেই প্রাপ্তি তাচ্ছিল্য একটা হাঁসি দিয়ে।মানুষ না হয় ঠকে কিন্তু আকাশ! তার তো কোনো চাঞ্জ নেই।তাহলে কেনো তার মন খারাপ?আচ্ছা এই তানিয়াটা কে।হটাৎ কোথায় থেকে আসলো এই তানিয়া? নাকি আয়ানের জীবনে তানিয়া নামের কেউ আগেই ছিলো। কথা গুলো ভাবতেই কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনের দিকে না ফিরেই ঘুমাও নি এখনো?

আয়ান -তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না এইটা তুমি ভালো করেই জানো। তার পরেও কেনো এই কথা জিজ্ঞেস করলে?
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে ফিরে, আমাকে ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস করো।সারাজীবন তো আর আমি থাকবো না।আমার জাগায় অন্য কেউ আসবে তাকেও কি এই কথা বলবে? কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে রুমে এসে শুয়ে পড়লো।
আয়ান প্রাপ্তির কথার আগামাথা কিছুই মাথায় ঢুকলো না।প্রাপ্তি এসে আশফিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
সকালের সোনালী রোদের আভা প্রাপ্তির রুমের দেওয়ালে এসে ঝিকঝিক করছে।প্রাপ্তি আড়মোড়া ভেঙে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান নেই।আয়ানকে না দেখে বুকের ভিতরটা কেমন যেন দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখে আয়ান বসে বসে ঘুমাচ্ছে।সুস্থির নিশ্বাস ফেলে পাশে বসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।এই মায়াময় চেহারা কি তার প্রাপ্তিকে ঠকাতে পারে? কতো নিস্পাপ লাগছে আমার আয়ানকে।আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় আয়ান প্রাপ্তির হাত টেনে ধরে ফেললো।

আয়ান – যখন এতটাই ভালোবাসো তাহলে কষ্ট দাও কেনো?

প্রাপ্তি -হাত ছাড়ো! আমার অনেক কাজ আছে।

আয়ান-আমার থেকে আজ তোমার কাজ বেশি হয়ে গেলো। আমি তো জানি আমার প্রাপ্তির যতই কাজ থাকুক তার আয়ানের সব কিছু ঠিক থাকে।প্রাপ্তি কিছু না বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আয়ান অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রাপ্তিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে, আয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া এতো সহজ নয় বলেই প্রাপ্তির ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট এক করে নিলো।

সকাল থেকেই জামাল সাহেব ড্রইংরুমে বসে আছে। আয়ানের সাথে কথা বলার জন্য। আবিদ চৌধুরীও পাশে বসে অনেক কথাই বুজালেন।কিন্তু জামিল সাহেব আয়ানের সাথে কথা না বলে যাবেননা।

জামিল – (আবিদ চৌধুরীর হাত টেনে নিয়ে) তুই আমার অনেক পুরনো বন্ধু, সেই বন্ধুত্বের আবদার নিয়ে রিকুয়েষ্ট করছি তোর ছেলেকে বল আমার ছেলেটার মামলাটা তুলে নিতে।সারাজীবন আমার ছেলে ওই অন্ধকারে পড়ে থাকবে?

আবিদ চৌধুরী -সরি এইখানে আমার কিছু বলার নেই।তোর ছেলে যে অন্যায় করেছে তার জন্য আয়ানের কাছে কোনো রিকুয়েষ্ট করলেও লাভ হবে না।
আয়ান আশফিকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে, আপনি এখানে কেনো এসেছেন আপনাকে যা বলার কাল তো আমি সব বলেই দিয়েছি।তাহলে আজ আবারও কেনো বাসায় আসলেন?
জামিল সাহেব কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে প্রাপ্তি নিচে নামছে। প্রাপ্তি আসতে জামিল সাহেব এগিয়ে গিয়ে, মা! আমি তোমার কাছে রিকুয়েষ্ট করছি প্রয়োজনে তোমার হাতে পায়ে ধরছি, আমার ছেলেটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।দরকার হলে আমার ছেলেকে নিয়ে বাহিরের দেশে চলে যাবো।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে, দেখুন! এইখানে আমার কিছু বলার নেই। আমার হ্যাজবেন্ড যা ভালো মনে করে সেই তাই করবে।এইখানে আমার কিছু বলার থাকতে পারেনা।কথা গুলো বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। আয়ান জামিল সাহেবের দিকে তাকিয়ে, এটাই আপনার ছেলের শাস্তি।এইটাও অনেক কম পড়ে গেছে। ওকে গুলি করে মেরে ফেলা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি সেটা করলামনা। কারণ কুকুরকে মেরে কখনো হাত নোংরা করতে নেই।এখন সারাজীবন জেলে চার দেওয়ালের ভিতরে থাকুক মজাটা একটু বুজক।আর হ্যাঁ আপনি আর কখনো আমাদের এইখানে আসবেনা। আয়ান সদর দরজাটা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে আপনি এখন আসতে পারেন।

চলবে,,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:১

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সকাল থেকেই আশফি কান্না করছে।কিছুতেই প্রাপ্তি থামাতে পারছেনা।আবিদ চৌধুরীও অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু না সেই কান্না করেই যাচ্ছে।আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কি ব্যাপার তোমরা এতো জন থাকতেও বাড়ির পরী রানী যদি কান্না করে তাহলে ভালো লাগে? কি হয়েছে প্রাপ্তি? দেখি আমার কাছে দাও।কি হলো আমার আম্মুটার? কে বকে দিয়েছে?
কথা গুলো বলতে বলতে আকাশ আশফিকে কোলে নিচ্ছে ।

প্রাপ্তি -ভাইয়া, এইরকম বাবা কাতুরে মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি।ওর বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না বলেই এইরকম কান্না করছে।

আকাশ -আয়ানকে ফোন দিয়ে আসতে বলো ওর মেয়ে যখন বাবাকে ছাড়া থাকতে পারেনা তাহলে মেয়েকেই বেশি করে সময় দেওয়া উচিত।
আকাশের কোলে গিয়ে আশফির আস্তে আস্তে কান্না কমছে।
আবিদ চৌধুরী আশফির কান্না বন্ধ হয়েছে দেখে,প্রাপ্তি দেখেছো আকাশ কোলে নিতেই কেমন শান্ত হয়ে গেলো।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে ভাইয়া! আপনি না ভাবীকে নিয়ে ডাক্তার কাছে যাবেন?

আকাশ-হ্যাঁ! সুমি রেডি হচ্ছে।আশফির কান্না শুনে বেরিয়ে আসলাম।
আয়েশা বেগম এসে আবিদ চৌধুরী পাশে বসতে বসতে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে,আমি তোকে বলেছি বাহিরের দেশে নিয়ে সুমিকে ডাক্তার দেখা তোরা তো আমার কথা শুনছিস না।
আকাশ কিছু বলছে না গম্ভীর হয়ে আশফির দিকে তাকিয়ে আছে।আশফি কান্না বন্ধ করে দিয়ে বাবা, বাবা বলে ডাকছে।কাল আশফির দুই বছর পূর্ণ হবে।দুই বছর হলেও আশফি একটু আধটু কথা বলে।আকাশকে এইভাবে গম্ভীর হতে দেখে।

প্রাপ্তি -মা! আপনিও না? দেখবেন এইবার ভাবী ডাক্তার কাছে গেলে ঠিক খুশির খবর নিয়ে আসবে।
সুমি রেডি হয়ে এসে, আকাশ! আমার হয়ে গেছে, চলো।পিছন দিকে তাকিয়ে, সুমিকে দেখে আশফিকে প্রাপ্তির কোলে দিয়ে মুচকি হেঁসে, চলো।
সুমি আশফির গালে চুমু দিয়ে, প্রাপ্তি ওর দিকে খেয়াল রাখিস।একটু পর আয়ানই চলে আসবে।আসফিকে বাবার কাছে দিয়ে আগে আয়ানকে সময় দিস।
প্রাপ্তি -ভাবী তুমিও না।এখন সাবধানে যাও।
সুমি আর আকাশ বাসা থেকে বের হতে যাবে তখনি আয়ান বাসায় ঢুকলো,আকাশকে দেখে কিরে ভাইয়া তুই এখনো যাসনি?
আকাশ -এইতো যাচ্ছি।
আয়ানকে দেখে আশফি প্রাপ্তির কোল থেকে বাবা বাবা বলে আয়ানের কাছে ছুটে এলো।
আয়ান আশফিকে কোলে নিয়ে এগিয়ে এসে আবিদ চৌধুরীর পাশে বসলো।
আবিদ চৌধুরী -তুই আগে ফ্রেশ হয়ে নে। পরীকে আমার কাছে দে।আয়ান আশফিকে রেখে উপরে গেলো ফ্রেশ হতে।পিছন পিছন প্রাপ্তিও গেলো।আয়ানকে চুপচাপ থাকতে দেখে,
প্রাপ্তি -মন খারাপ?
আয়ান পিছনে ফিরে প্রাপ্তিকে দেখে মুচকি হেঁসে,কই না তো।

প্রাপ্তি -তাহলে চুপচাপ কেনো?

আয়ান -আমার লক্ষ্মী বউটাকে না দেখলে মোটেও ভালো লাগেনা।ভাবছি কাল থেকে অফিসে কয়দিন যাবো না।এইকয়দিন আমার বউটাকে দেখে দেখে কাটাবো।

প্রাপ্তি এগিয়ে এসে ঢং করোনাতো! সত্যি করে বলোনা কি হয়েছে তোমার? প্লিজ বলো!

আয়ান তোয়ালেটা হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে যেতে যেতে আজ আব্বুর বন্ধু জামিল আংকেল আসছে আমার অফিসে ওনার ছেলের ব্যাপারে কথা বলতে।
প্রাপ্তি কিছু বলার আগেই আয়ান ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।প্রাপ্তি নিচে গিয়ে আশফিকে এনে খাটে বসিয়ে আয়ানের শার্ট গুলো গোছাচ্ছিলো।হঠাৎ শার্টের পকেট থেকে একটা কাগজ নিচে পড়তেই প্রাপ্তির চোখ পড়লো সেই কাগজের উপর। প্রাপ্তি কাগজ টা উঠয়ে খুলে দেখে একটা চিঠি, প্রাপ্তি চিঠিটা পড়তে শুরু করলো।
আয়ান,
তোমাকে আজ অনেক দিন পর এতোটা কাছে পেলাম।বিশ্বাস করো তোমাকে আমি কখনো এতোটা কাছ থেকে পাবো কখনোই ভাবিনি। তুমি সেই আগের মতই আছো।সুন্দর, স্মার্ট, চলাফেরা সবকিছুই আগের মতোই। আমি তো ভেবেছিলম তোমার জীবনে যেই মেয়েটা এসেছে তোমাকে পাল্টিয়ে সে তার নিজের মতো করে নিবে।কিন্তু না! আয়ান তো আয়ানই সেই সবসময়ই নিজের মতো করেই থাকে,এইটা অবশ্য আমি জানি।আচ্ছা তুমি কি এখনো আমায় একটু ভালোবাসতে পারোনা? আচ্ছা তোমার নাকি একটা মেয়ে আছে সেই কি তোমার মতো এতো সুন্দর দেখতে? তবে তোমার মেয়ে আর মায়ের মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।কারণ তারা ভাগ্য করে জন্মেছে।কেউ তোমার মতো স্বামী পেয়েছে আর কেউ বাবা! তাদেরকে নিয়ে তুমি অনেক ভালো আছো তাইনা?আয়ান! আমি জানি যখন তুমি এই চিঠি পড়বে তখন আমায় পাগল ভাববে। কিন্তু হ্যাঁ আমি পাগল আর সেটা আয়ানের পাগল এইটা তুমি ভালো করেই জানো।আজ এইখানে আর কিছু বলতে চাইনা।শেষে এইটুকুই বলবো আজকের দিনটা আমাকে দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

তানিয়া।
চিঠিটা পড়ে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। চিঠিটা সত্যিই কোনো মেয়ের ছিলো?যে আমায় এতোটা ভালোবাসে একটা চিঠিই কি সব মিথ্যে করে ফেলবে?বিশ্বাস কি এতোটাই ঠুনকো। না! না!আয়ান কখনো আমায় ঠকাতে পারেনা।আমার ভালোবাসা আমি কখনো মিথ্যা হতে দিবেনা। সন্দেহের কাছে আমার আয়ান হেরে যেতে পারেনা।এর ছেয়ে ভালো আমি অফিসে একটা ফোন দিয়ে দেখি,প্রাপ্তি চিঠিটা লুকিয়ে অফিসে ফোন দিলো।
সাইদ ফোন ধরে সালাম দিয়ে ম্যাডাম আপনি?
প্রাপ্তি -তোমাদের স্যার তো এখনো বাসায় এলো না। অফিসে কি কাজ বেশি নাকি?(প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে আয়ান আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি চাইনা আমাদের ভালোবাসা সন্দেহের কাছে হেরে যাক তাই মিথ্যা আমাকে বলতেই হলো।)
সাইদ -ম্যাডাম! স্যার তো সকালে অফিসে এসেই জামিল সাহেবের সাথে দেখা করে চলে গেছেন।বললো ওনার জরুরী কাজ আছে।কথাটা শুনে প্রাপ্তি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।কথাটা শুনে মনে হলো কেউ তার কলিজাটা ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। আশফি মায়ের চোখের পানি দেখে মাম্মা মাম্মা বলে খাটের কিনারায় এসে প্রাপ্তিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।
আয়ান ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বাহিরে এসে আশফিকে কিনারায় দেখে দৌড়ে এসে কোলে নিয়ে প্রাপ্তি তুমি পাশে থাকতেও আশফির দেকে খেয়াল করছো না কেনো? মুক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো,,,,কথা বলেই প্রাপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।প্রাপ্তিকে এক হাত দিয়ে কাছে টেনে এনে আমার পরীর আম্মুর কি হয়েছে কাঁদছে কেনো?
প্রাপ্তি নিজের কাঁধ থেকে আয়ানের হাতটা সরিয়ে চোখে পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রাপ্তির কান্ডে অবাক হয়ে প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! শুনো! পিছন থেকে আয়ান অনেক বার ডাকলেও প্রাপ্তি পিছনে ফিরে না তাকিয়ে চলে গেলো।
আশফিকে আয়ান আদর করে, পরীর মাম্মা কেনো অভিমান করেছে তার বাবার উপর? পরী কি কিছু জানে? আশফি সাথে নানা ভংগিমায় কথা বলতে বলতে আয়ান নিচে এলো।
আয়েশা বেগমের পাশে বসতে বসতে আম্মু! আব্বু কই? এখানেই তো ছিলো।
আয়েশা বেগম -রুমে গেছে “কেনো কিছু বলবি?

আয়ান -কাল তো আশফির জন্মদিন।তাই ভাবছি এইবার বড় করে তেমন কোনো পার্টি দেওয়ার দরকার নেই।
আয়েশা বেগম -ঠিক আছে আকাশ আসুক তার পর না হয় এইসব নিয়ে ভাবা যাবে।
আয়ান এইদিক সেদিক তাকিয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, আম্মু প্রাপ্তি কই?

আয়েশা বেগম -(রান্নাঘরের দিকে দেখিয়ে)সুমি নাইতো তাই মনে হয় তোদের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে।আকাশকে একটা ফোন কর তো এখনো তো এলো না!

আয়ান -আম্মু ওরা এখনো ছোটো নয়।ডাক্তার দেখিয়ে ঠিক সময় মতো চলে আসবে।
কলিং বেলর শব্দ আসতেই ওইতো আম্মু তারা মনে হয় এসে গেছে।রফিক চাচা! দরজাটা খুলে দাও।
রফিক এসে দরজা খুলে অবাক হয়ে আরে, আপনারা! আয়ান বাবা দেখো কারা এসেছে।আসেন আসেন ভিতরে আসেন।

চলবে,,,,,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৬ শেষ পর্ব

7

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৬ শেষ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

 

__প্রাপ্তি চোখ মুখ মুছে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান তার সামনে বসে আছে।আয়ানকে দেখেই জড়িয়ে ধরে আয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে কাঁদতে কাঁদতে, আমি তোমাকে ঠকায়নি। তুমি তো আমার সবি জানো।আমি তো বিয়ের দিনই তোমাকে সব বলছি বলো।আমি কি তোমার কাছে কিছু লুকাইছি বলো?

আয়ান কথা গুলো শুনে, কার জন্য কাঁদতেছো? কেনো তুমি ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছো?কাকে ভয় পেয়ে তুমি সবার আড়াল হয়ে গেলে।

প্রাপ্তি -ও এইখানেও এসে গেছে।ও আমাকে কখনো সুখী হতে দিবেনা। তুমি জানোনা ও কতটা খারাপ ছেলে। ওর বাবার টাকা আছে বলেই যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়। আমার জন্য এখন তোমাদেরও অসম্মান হবে।

আয়ান-প্রাপ্তি! ও আয়ান কে জানেনা আয়ান তার প্রাপ্তির জন্য কি না করতে পারে।এর শেষ আমি আজকেই করে ছাড়বো।প্রাপ্তি তুমি কেনো এতো ভয় পাচ্ছো?এই ভয়কে জয় করেই তোমাকে সোসাইটিতে থাকতে হবে । তুমি যত ভয় পেয়ে পিছনে যাবে।তারা তত তোমাকে ভয় দেখিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে। নিজেকে শক্ত করে তাদের সামনে এগিয়ে যাও দেখবে তারা তোমাকে ভয় পেয়ে পিছনে যাবে । তোমাকে আমি কতবার বলবো আমি সারাজীবন থাকবোনা তোমাকে আলগে রাখার জন্য। নিজেকে শক্ত করে পরিস্থিতি সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো।তোমাকে দেখিয়ে দিতে হবে এই সমাজের লোক গুলোকে যাদের ভয়ে নিজেকে আড়ালে রাখতে চাইছো।কথা গুলো প্রাপ্তিকে বলে আয়ান প্রাপ্তি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে,নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে আছে। আয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে প্রাপ্তিকে খাটের উপরে উঠিয়ে শুইয়ে দিলো।আসিফ আর অভ্র এসে প্রাপ্তিকে দেখে,
আসিফ -আয়ান, ওকে তো ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু এতো গেস্ট বাড়িতে, হসপিটালে নিবে কি করে?

আয়ান -এই নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা ভাইয়া! নিচে ডাক্তার আংকেল আসছেনা ওনাকে ডেকে আনলেই হবে।কিন্তু আপনারা সায়মন কে কোথায় রেখেছেন?

অভ্র -চিন্তা করিস না! ছাদের চিলেকোঠার ঘরটাতে রেখে তালা মেরে এসেছি।গেস্টরা চলে যাক তারপর ওর ব্যবস্থা করবো।

আয়ান -তাহলে তোমার প্রাপ্তির পাশে বসো আমি আংকেলকে ডেকে আনছি।
আয়ান নিচে এসে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী আয়ানকে দেখে কি ব্যাপার আয়ান তুমি আর প্রাপ্তি কোথায় গেছো? প্রাপ্তি কই ওকে ডাকো।তোমাদের জন্য পার্টি আর তোমরাই দূরে সরে থাকতেছো।

আয়ান -আব্বু ও আসছে।আকাশের কাছে গিয়ে আয়ান বললো ভাইয়া আমি এইদিক টা সামলিয়ে নিচ্ছি তুই ডাক্তার আংকেল কে নিয়ে আমার রুমে যা।প্রাপ্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

আকাশ -মানে? কি হয়েছে ওর?

আয়ান -তুই উপরে গেলেই বুঝতে পারবি।আমিই যেতাম কিন্তু আব্বু আমাকে না দেখলে সমস্যা করতে পারে ।
জামিল সাহেব ছেলেকে না দেখতে পেয়ে, সায়মন কোথায় গেলো আবার, এই ছেলে আমার মানসম্মান নিয়ে আবার জানি টানাটানি না করে।

আবিদ চৌধুরী -কিরে কিছু ভাবছিস নাকি?

জামিল সাহেব -সায়মন কোথায় গেলো? ওকে দেখছি না তাই ভাবছি।

আবিদ চৌধুরী -কোথায় আর যাবে দেখ কোথাও এনজয় করছে।

প্রাপ্তিকে ডাক্তার দেখে ভয়ের কিছু নেই।চোখে মুখে একটু পানি ছিটকে দাও ঠিক হয়ে যাবে।।
ডাক্তার প্রাপ্তিকে দেখে নিচে নেমে এসে আয়ানকে গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখে, আয়ান চিন্তা করোনা উপরে গিয়ে দেখ প্রাপ্তির হয়তো জ্ঞান ফিরেছে।আয়ান মুচকি হেঁসে সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখে আসিফ প্রাপ্তিকে নিয়ে নিচে নামছে।আয়ান কাছে গিয়ে ভাইয়া ওকে নামিয়ে আনলেন কেনো?

আসিফ – কি করবো জ্ঞান ফেরার পর থেকে তোমাকে খুঁজচ্ছে কিছুতেই স্থির থাকছেনা। তাই ভাবলাম সবার সামনে থাকলে ভালোই থাকবে।প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।।
আয়ান আর কিছু না বলে প্রাপ্তিকে নিজের চোখে চোখেই রাখলো।রেশীর বিয়ে তারিখ ফাইনাল করে পার্টি শেষ করলো।আয়ান প্রাপ্তিকে রুমে নিয়ে, যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি অভ্রর সাথে কথা বলে আসছি।পাশের রুমে অভ্রর কাছে এসে আচ্ছা অভ্র জামিল সাহেব ছেলের খোঁজ না করেই চলে গেলো কিন্তু কেনো?
আসিফ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আমি বলছি।ছেলের খোঁজ করেছে।পরে ভেবেছে ছেলে ওনাকে না বলেই চলে গেছে।

আয়ান -ভালোই” ছেলেকে কাল থেকে আর কষ্ট করে খুঁজতে হবেনা।প্রতিদিন জেলে গিয়ে দেখা করে আসতে পারবে।এতো সহজে ওকে হাতে পাবো এইটা আমি ভাবতেই পারিনি।ওকে এতোটা কঠোর শান্তির ব্যবস্থা করবো যেন কোনো ছেলে ওর কথা মনে হলে মেয়েদের দিকে তাকাতে হাজার বার ভাববে।।
আসিফ আয়ানের কথা গুলো শুনে আয়ানকে এসে জড়িয়ে ধরে তোমার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা। প্রতিটি প্রাপ্তি যেন তোমার মতো একজন আয়ান পায় তাহলে এই সমাজের মেয়েদের আর কোনো অবহেলা হবেনা।
আয়ান আসিফের কথা শুনে মুচকি হেঁসে ভাইয়া আমিতো প্রাপ্তির জীবনে অনেক পরে এসেছি। আপনিই তো আগে ওকে সামলিয়েছেন।আপনার মতো ভাই পাশে থাকলে সব বোনই হাজার টা কষ্ট সহ্য করে নিতে পারবে।(অভ্রর দিকে তাকিয়ে) আমার পাশে থাকার জন্য তোকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না।তবে তোর মতো এইরকম বন্ধু সারাজীবন আমার পাশে চাই।
অভ্র একটু মজা করে সাবধানে কথা বল এখন আমি তোর ছোটো বোনের স্বামী বলেই হাঁসা শুরু করলো।
আয়ান রুমে এসে দেখে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে একপাশ হয়ে শুয়ে আছে।আয়ান এসে পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরে প্রাপ্তির কাঁধে নিজের মুখটা গুজে দিয়ে, আমার লক্ষ্মী বউটা কি আমার আরও কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে?প্রাপ্তি চুপ হয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।

আয়ান -আমি জানি আমার পাগলি এখনো ঘুমায়নি।কারণ আমি আমার পাগলি নিশ্বাসের শব্দ শুনেই বুজে গেছি।
প্রাপ্তি আয়ানের স্পর্শ পেয়ে নিশ্বাসের শব্দ ভারী হয়ে আসছে।তবুও ইচ্ছে করে চুপ করে আছে।
আয়ান প্রাপ্তির মুখের উপরে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে আবার বললো, আমি কি ঘুমিয়ে যাবো? ঠিক আছে আমার পাগলি যখন ঠিক করেছে সে আমাকে ভালোবাসবেনা তাহলে ওকে আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। আয়ান প্রাপ্তিকে ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুতে যাবে তখনি প্রাপ্তি আয়ানের দিকে ফিরে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো।
আয়ান ও প্রাপ্তিকে আরও শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে প্রাপ্তির ভালোবাসায় নিজেকে হারাতে লাগলো।।

আয়ান খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।এইদিকে প্রাপ্তি মা হতে চলছে অন্য দিকে দুইটা অফিসের দায়িত্ব সামলাতে হয়।আবিদ চৌধুরী নিজের ব্যবসায়ীক সব দায়িত্ব ছেলেদের কাঁধে দিয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন।যে অফিসে এমডি হিসেবে জয়েন করেছিলো সেখানেই কাজ করতে হচ্ছে।যতই কাজ থাকুক না কেনো মন পড়ে থাকে তার পাগলির কাছেই।অফিস শেষ করে এসে আবার তার পাগলির যত্ন আতি শুরু হয়।সারাটা বাড়ির সবাই প্রাপ্তিকে নিয়েই মেতে থাকে।চৌধুরী বাড়ির নতুন অতিথি আসছে। এইভাবেই চলছে প্রাপ্তি আর আয়ানের সংসার। কয়েক মাস পর প্রাপ্তির ডেলিভারি সময় হয়ে গেছে।আয়ান অফিসে যাবেনা বলে ড্রইংরুমে বসে সুমির সাথে বসে বকবক করছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসে, কি ব্যাপার তুমি অফিসে যাবেনা?

আয়ান-না আজ যাবো না।তোমাকে নিয়ে হসপিটাল যাবো ।
প্রাপ্তি সোফায় বসতে বসতে প্লিজ আমি একদম ঠিক আছি।তুমি অফিসে যাও কিছু হলে বাবা আর ভাবী তো আছেই।ওরা তোমাকে ফোন দিবে।আর কাল থেকে তোমার লম্বা ছুটি নিয়ে নিবে অফিস থেকে।
সুমি-আয়ান! আজ যাও।কাল থেকে আর যেতে হবেনা। তোমার ভাইয়া সব সামলে নিবে।
আয়ানের ইচ্ছা করছেনা যেতে কিন্তু প্রাপ্তির কোথায় উঠে গিয়ে অফিসে গেলো।অফিসে গিয়ে একটু পর পর ফোন দিয়ে প্রাপ্তির খবর নিচ্ছে।
বিকেল থেকে অবস্থা বেশি ভালো না।প্রচন্ড ব্যাথা উঠেছে প্রাপ্তির।সুমি আর আবিদ চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেলো। সবাই অনেক চিন্তার মাঝেও অনেক খুশি তাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসছে।আকাশ আর আয়ানকে খবর দেওয়া হয়েছে।অভ্র আর রেশীও আসছে প্রাপ্তিকে দেখার জন্য । আকাশ হসপিটালে এসেই সুমি! সুমি! প্রাপ্তির এখন কি অবস্থা?সব কিছু ঠিক আছে?
সুমি -একদম ঠিক আছে।ডাক্তারা প্রাপ্তিকে নিয়ে গেছে আর আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছে । আয়ান কোথায় ও এখনো এলোনা?

আকাশ -ও আসছে! চিন্তা করোনা।
প্রাপ্তির প্রচন্ড ব্যাথা কিন্তু আয়ানের জন্য মন কেনন করছে । তার চোখ দুটো বার বার আয়ানকে খুঁজছে।

একটু পর সিস্টার এসে প্রাপ্তির বাবুকে সুমির কোলে দিয়ে গেছে।

আবিদ চৌধুরী -সিস্টার আমার মেয়ে কেমন আছে?

সিস্টার -ওনি সুস্থ আছেন।কিন্তু ওনি ওনার হ্যাজবেন্ডকে খুঁজছেন।
আবিদ চৌধুরী মনে মনে ভাবছে সত্যি তো আয়ান এখনো এলো না কেনো।সবাই নতুন বেবি কে নিয়ে খুব খুশি। সবাই কোলে নিবে বলে কাড়াকাড়ি করছে। এইদিকে প্রাপ্তির বাবা মা আসিফরাও চলে এসেছে।আবিদ চৌধুরী চিন্তিত হয়ে আয়ানের অফিসে ফোন দিয়ে জেনেছে আয়ান ফোন পাওয়ার পরেই অফিস থেকে বের হয়ে গেছে।আবিদ চৌধুরী আকাশকে ডেকে এনে, আকাশ! আয়ান অফিস থেকে অনেক আগেই বের হয়েছে।প্রাপ্তির এই অবস্থায় আয়ান কোথাও যাবেও না।কিন্তু আয়ান তো এখনো এলোনা।
আকাশ -আব্বু সত্যিই আয়ান তাহলে কোথায়?
এইদিকে প্রাপ্তি তো আয়ানকে খুঁজছে।

হঠাৎই অভ্রর ফোন বাজতেই দেখে তাদের অফিসের কলিং সাইদ ফোন দিয়েছে।অভ্র ফোন রিসিভ করে,
হ্যাঁ সাইদ কিছু বলবে?

সাইদ -স্যার আপনি কোথায়?

অভ্র -আমি হসপিটাল তোমদের আয়ান স্যারের বেবি হচ্ছে আমি সেইখানেই। কিন্তু কেনো কিছু বলবে?
কথাটা শুনে সাইদ চুপ করে খানিকক্ষণ পরে বললো, স্যার! আয়ান স্যারের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে।অফিস থেকে একটু দূরেই।
কিন্তু অনেকে বলাবলি করছে গাড়িতে যিনি ড্রাইভিং করছিলেন তিনি নাকি বেঁচে নাই।

সাইদের কথাটা শুনে চেঁচিয়ে, হোয়াট! কি বলছ তুমি কথাটা বলেই ফোন টা হাত থেকে পড়ে গেলো।
আসিফ ফোন পড়ে যেতে দেখে কি হয়েছে অভ্র? অভ্র কথাটা বলতে যাবে তখনি দেখে আয়ান দৌড়ে এসে, প্রাপ্তি কোথায়?
অভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আয়া,,,,,,ন!দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে তুই ঠিক আছিস তো?

আয়ান – আমি একদম ঠিক আছি।

আবিদ চৌধুরী -তাহলে তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি?

আয়ান -আব্বু আর বলোনা।আমার গাড়ি টা কে বা কারা নিয়ে গেছে। তাই থানায় গিয়ে কিছু কাজ ছিলো সেই গুলো করে আসলাম।আর আমি জানি তোমারা সবাই প্রাপ্তির পাশে আছো।অভ্র বুজে গেছে গাড়ি যারা নিয়েছে তারাই এক্সিডেন্ট করেছে। অরণী বেবি নিয়ে এসে আয়ান ভাইয়া! আপনার মেয়েকে কোলে নিবেননা।আপনার ঘরেযে পরী এসেছে।
আয়ান বেবির কপালে চুমু দিয়ে আমি আগে আমার বড় পরীকে দেখে আসি।আয়ান প্রাপ্তির কেবিনে ঢুকেই প্রাপ্তির পাশে এসে বসেছে।আমার পরীর আম্মু কেমন আছে? প্রাপ্তি চোখ খুলে আয়ানকে দেখতে পেয়ে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আয়ান প্রাপ্তির চোখের পানি মুছে সরি পাগলি লেট করার জন্য।
প্রাপ্তি আয়ানের হাতটা গালের সাথে শক্ত করে ধরে, আমি ভাবেছিলাম তোমাকে হয়তো আমার আর দেখা হবেনা। আয়ান প্রাপ্তির মুখে আঙুল দিয়ে ধুর পাগলি আমি তোমাকে ছেড়ে মরে গিয়ে শান্তি পাবোনা।কথাটা বলে প্রাপ্তির ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে I love u পরীর আম্মু ।

সমাপ্ত

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৫

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

সকাল থেকেই সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। প্রাপ্তির বাপের বাড়ি থেকে সবাই সকালেই চলে এসেছে।আবিদ চৌধুরীর কড়া অর্ডার ছিলো প্রাপ্তির আর সুমির বাপের বাড়ির লোক যেনো সকালেই আসে।অরণী প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে, কেমন আছিস আপু?

প্রাপ্তি -ভালো। নীরা কই?
নীরা দরজায় দাঁড়িয়ে এইতো আমি।নিচে সবাই কথা বলছে তাই তোমার কাছে আসতে দেরি হয়ে গেছে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এসে অরণী আর নীরাকে দেখে, বাহ্ আমার শালিকে তো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।অবশ্য নীরাও কম যায় না।

নীরা- আপুর থেকে তো আর বেশি না।

আয়ান মুচকি হেঁসে তা ঠিক বলেছো আমার বউয়ের থেকে বেশি না।আমার বউ সারা দুনিয়াতে এই একটাই যা শুধু এই আয়ানের।প্রাপ্তি একটা শার্ট আয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে,চুপচাপ নিচে যাও। সবার সাথে শুধু বউ বউ,তোমার লজ্জা লাগেনা সারাক্ষণ বউ বউ করো যে?

আয়ান -আমার বউ আমি যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে লজ্জা কিসের?

প্রাপ্তি-(চোখ রাঙিয়ে মুখটা গম্ভীর করে)যেতে বলছি তোমাকে!

আয়ান-যাচ্ছি তো কি রাগ দেখায়রে বাবা।
আয়ান নিছে এসে প্রাপ্তির বাবা মায়ের সাথে দেখা করে বসতেই আসিফ এসে, আয়ান একটু সাইডে আসো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।আয়ান আসিফের কথা শুনে আসিফের দিকে মুচকি হেঁসে তাকিয়ে চলুন ভাইয়া ছাদে যাই ওইখানে বসে কথা বলা যাবে।

আসিফ -ঠিক আছে চলো।
আয়ান আর আসিফ ছাদে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসিফ নিরবতা ভেঙে আয়ান আমি এইখানে তোমাকে আলাদা ভাবে কেন ডেকে এনেছি আশা করি তুমি তা ভালো করেই জানো।

আয়ান -ভাইয়া আমি জানি আপনি জয়ের কথা বলছেন।

আসিফ -আমি জানি জয় তোমার কাছেই আছে। ওর বাবা মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিলে মনে হয় সবার জন্য ভালো হবে ।

আয়ান – ভাইয়া আপনি এইখানে কার হয়ে কথা বলতে আসছেন?
শ্বশুর বাড়ি পক্ষ হয়ে নাকি আপনার বোনের হয়ে?

আসিফ -কি বলতে ছাইছো তুমি?
তুমি আমার বোন কে বিয়ে করেছো বলে এই না তুমিই শুধু আমরা বোন কে ভালোবাসো।আমার বোনেরা আমরা জীবনের একটা অংশ। আর সেটা নিয়ে তুমি কথা বলতে পারোনা।

আয়ান – ভাইয়া! আপনি আমাকে ভুল বুজবেন না।আমি শুধু এইটুকুই বলবো আপনাকে, প্রাপ্তির সাথে যারা অন্যায় করেছে আমি কাউকেই ছাড়বো না।যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন ওর গায়ে আমি কোনো আঁচ লাগতে দিবো না।

আসিফ -তারমানে জয় ও এর সাথে আছে।ঠিক আছে আয়ান তোমার যা ইচ্ছা করো যেনো তোমার কোনো সমস্যা না হয়।

আয়ান – ভাইয়া আপনি চিন্তা করবেন না।জয়কে পুলিশের হেপাজত করেই রেখেছি যতদিন আসল কাল পিটকে ধরতে না পারছে ততদিন কাউকে জানানো হবেনা জয় কোথায় আছে।
দুজনে কথা শেষ করে নিচে নেমে এলো। সন্ধ্যায় পার্টি শুরু হবে। সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত। অভ্র তার বাবা মাকে নিয়ে চলে আসছে । ঝিনুক তাদেরকে এনে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।প্রাপ্তি আসতেই ঝিনুক অভ্রর মাকে পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রাপ্তি তাদেরকে সালাম করে আপনারা বসুন।
ঝিনুক -প্রাপ্তি! রেশী কোথায়? ওকে ডেকে আনো।।

প্রাপ্তি -আপু রেশীকে অরণী আর নীরা রেডি করছে। অভ্র ভাইয়া আপনি কেমন আছেন? অনেকে দিন পরে দেখা।

অভ্র -সেই জন্যই অবাক হয়ে তোমাকে দেখছি। আয়ান কোথায়? ওকে তো দেখছি না।

আকাশ আর আয়ান কথা বলতে বলতে এসে অভ্রকে দেখে,
আয়ান -তোর আজকেও লেট! আজ তোর এনগেজমেন্ট আর তোরই দেখা নেই।

অভ্র- পার্টি কিন্তু শুধু তোদের জন্যই হচ্ছে।শুধু শুধু আমার দোষ দিস কেনো?আকাশ ভাইয়া আপনি বলেন এইটা কি ঠিক?
আবিদ চৌধুরী নিজের রুম থেকে বের হয়ে এসে অভ্রর বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে।অভ্রর বাবা অভ্রকে দেখিয়ে, বেয়াই সাহেব এই হচ্ছে আমার ছেলে অভ্র।
অভ্র সালাম দিয়ে আংকেল কেমন আছেন?
আবিদ চৌধুরী অভ্রর দিকে তাকিয়ে ভালো । কিন্তু আয়ান ও তো তোমার বন্ধু। এখন দেখছি ঝিনুকেরও দেবর।যাক ভালোই হয়েছে।
প্রাপ্তি সবার জন্য নাশতা নিয়ে এসেছে।আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তিকে দেখে তোমরা এখনো রেডি হওনি? একটু পর তো সব গেস্ট এসে যাবে।

ঝিনুক -প্রাপ্তি যাও তুমি রেডি হয়ে নাও। আব্বু সত্যিই বলছেন। এইতো আমরাও যাচ্ছি।আয়ান! তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

আয়ান রেডি হয়ে নিচে চলে এসেছে। প্রাপ্তি নিজেই রেডি হচ্ছে।সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেও শাড়ির কুচিটা ঠিক মতো হচ্ছেনা।বার বার চেষ্টা করছে সে।।
আয়ানের হঠাৎই মনে হলো তার ফোনটা উপরে রুমে ফেলে রেখে এসেছে। ফোন আনতে রুমে গিয়ে প্রাপ্তির শাড়ির কুচি নিয়ে ঝামেলা করছে দেখে নিজেই হাটু ভেঙে বসে কুচি ঠিক করে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, মনে মনে ভাবছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমাকে।তোমার এই চোখ দুটোতে কোনো এক অজানা মায়া আছে। যে মায়ায় এই আয়ান বার বার তোমার প্রেমে পড়ে।ইচ্ছে করে হাজার বছর তোমাকে সামনে বসিয়ে রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে, মনে হচ্ছে কিছু একটা ভাবছ।

আয়ান -হুম ভাবছি তো।ভাবছি আমার বউটা এতো সুন্দর কেনো?
যার দিকে তাকালে আমি পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যাই। ইচ্ছে করে সারাক্ষণ তাকে কাছে পেতে।

প্রাপ্তি -হুম মাথায় আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে।তোমাকে দেখছি ডাক্তার এইবার দেখাতেই হবে।

আয়ান-বুজেছি ভালো লাগছেনা তোমার! যখন আমি থাকবোনা তখন বুজবে ঠেলা।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি আয়ানের ঠোঁটে হাত দিয়ে, আর কখনো এইরকম কথা বলোনা।তুমি না থাকলে তোমার প্রাপ্তিই যে থাকবে না।
সুমি দরজায় এসে দাঁড়িয়ে, দুজনের ভালোবাসা শেষ হলে নিচে চলেন বাবা ডাকছে।
সুমিকে দেখে প্রাপ্তি সরে গিয়ে, চলো বাবা ডাকছে।

প্রাপ্তি আর আয়ান নিচে নামতেই আবিদ চৌধুরী একগাল হাঁসি নিয়ে তাদেরকে দেখছে।পাশে দাঁড়িয়ে আয়েশা বেগম ও চোখ দুটো ছলছল নিয়ে তাকিয়ে আছে।

আবিদ চৌধুরী – আয়েশা! আজ আমার আনন্দের সিমা নেই।আমার ছেলের সাথে বাড়ির যোগ্য বউই দাঁড়িয়ে আছে।আজ আমি সবার সামনে গর্ব করে বলবো প্রাপ্তি আমার ঘরের লক্ষ্মী।
প্রাপ্তি আর আয়ান সবাইকে সালাম করলো। আবিদ চৌধুরীকে সালাম করতেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোদের পরিবার থেকে আলাদা করে।ক্ষমা করে দিস তোর এই বাবাকে।

আয়ান- আব্বু আমি জানি তুমি আমাদের কতটা ভালোবাসো।আজকের এই দিনে আমরা কেউই মন খারাপ করতে চাইনা।

আকাশ -আব্বু এককাজ করলে কেমন হয় আগে রেশীর আর অভ্রর এনগেজডটা করে পেলি।

আবিদ চৌধুরী -ভালো বলেছিস।কিন্তু রেশীকে কই তাকে তো দেখছিনা।।
অভ্র এদিক সেদিক তাকিয়ে সত্যিই তো রেশী কোথায় ওকে দেখছি না কেনো?(ঝিনুকে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে,) ভাবী ও কোথায়?

ঝিনুক – সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো।
অভ্র ঝিনুকের কথা শুনে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অরণী রেশীকে নিয়ে আসছে।অভ্র মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে, অসাধারণ ।।

ঝিনুক -কিছু বললে?
অভ্র থতমত খেয়ে, কই কিছু বলিনি তো।
আবিদ চৌধুরী -আকাশ! রেশী যখন এসেই গেছে এনগেজডটা করে ফেল।আমি জামিলকে একটা ফোন করে আসছি।ওর ফ্যামিলি নিয়ে তো এখনো আসলোনা।
ঝিনুক অভ্রকে এনে রেশীর পাশে দাঁড় করিয়ে, অভ্রর হাতে একটা আংটি দিয়ে, অভ্র! রেশীকে এইটা পরিয়ে দাও।
আয়ান -আপু তুই তো এই বাড়ির লোক হয়ে ছেলে পক্ষ নিয়ে কাজ করছিস।
ঝিনুক -চুপ কর আগে দেবর তারপর তোরা।অভ্র কথা না বাড়িয়ে আংটি পরিয়ে দাও।অভ্র রেশীকে আংটি পরিয়ে দিতেই আয়ান ও রেশীর হাতে একটা আংটি দিয়ে এইটা অভ্রকে পরিয়ে দে।
সবকিছু ভালো ভাবেই চলছিলো। জামিল সাহেব দরজা এসে দাড়াতেই আবিদ চৌধুরী এগিয়ে এসে কোলাকুলি করে তুই বিদেশ গিয়ে তো আমাদের ভুলেই গেছিস।তোর ছেলে কোথায় ও আসেনি?

জামিল -এসেছে! গাড়ি পার্কিং করে আসছে।
আবিদ চৌধুরী -আচ্ছা চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দি । অবশ্য তুই তো কম বেশী সবাইকেই চিনিস। আমাদের পরিবারের নতুন সদস্যর সাথে আগে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।প্রাপ্তি! আয়ান এইদিকে আসো।
(তারা কাছে আসতেই)ও আমার বন্ধু জামিল।জামিল! আমার ছোটো ছেলে আয়ান আর ছেলের বউ প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি জামিল সাহেবকে সালাম দিতেই,
জামিল -তোমাকে কোথাও যেন দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছিনা।(এমন সময় জামিল সাহেবের ছেলে আসতেই) ওইতো, আবিদ আমার ছেলে চলে এসেছে।
পিছিন ফিরে তাকিয়ে দেখে, প্রাপ্তি নিজের অজান্তেই আস্তে করে বলে উঠলো সায়মন!
প্রাপ্তির আস্তে কথাটাও আয়ানের কানে পৌঁছাতেই প্রাপ্তির দিকে তাকালো।সায়মন ও প্রাপ্তিকে দেখে
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি আস্তে আস্তে এক পা দুই পা করে পিছাতে লাগলো।আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে প্রাপ্তিকে বুজার চেষ্টা করছে। প্রাপ্তি আয়ানের দিকে খেয়েল না করে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে গেল।

আবিদ চৌধুরী -আয়ান! প্রাপ্তি এই ভাবে চলে গেল কেনো?
আয়ান কথা গুরিয়ে আব্বু ও মনে হয় রুমে কিছু রেখে আসছে ওইটা আনার জন্য গেছে। জামিল সাহেব খুব গর্ব করে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
আয়ান অরণীর দিকে তাকিয়ে দেখে সুমি সহ অন্য গেস্টদের সাথে কথা বলছে।অরণীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে, অরণী ওইদিকে তাকাও কিছু দেখতে পাও কিনা দেখো তো?

অরণী -মুচকি হেঁসে ভাইয়া তুমিও না! কথাটা বলে তাকাতেই চোখ বড়সড় করে সায়মন! ও এইখানে কি করছে? আপু কোথায়।
অরণীর কথা শুনে আয়ান এইবার পুরোপুরি ভাবে শিওর হলো এইটাই সে সায়মন।।
ভাইয়া! আপু কোথায়?

আয়ান -অরণী চুপ করো। তোমার আপু উপরে চলে গেছে।অরণী প্লিজ তুমি এমন ভাবে থাকো যেন কেউ কিছু না বুজতে পারে।
সায়মন প্রাপ্তিকে উপরে চলে যেতে দেখে বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছে।জামিল সাহেব ছেলের মুখে বিষন্নতার চাপ দেখে কি হয়েছে পার্টিতে এসেছিস এনজয় কর।এইভাবে ডাস্টবিনের ময়লার মতো মুখ করে রেখছিস কেনো?
সায়মন বিরক্তিকর ভাব নিয়ে আব্বু যে মেয়েটা এইখান থেকে দৌড়ে উপরে গেলো মেয়েটা এই বাড়ির কে?
জামিল – আবিদের ছোটো ছেলের বউ। পার্টিতো ওদের জন্যই দেওয়া হয়েছে।কেন? তুই মেয়েকে চিনিস?
সায়মন কিছু না বলে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে উপরে উঠে গেলো।
প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে নিজের রুমে এসে খাটের উপর চোখ বন্ধ করে বসে আছে । তার অতীত গুলোকে যতই সে ভুলার চেষ্টা করছে ততই তার সামনে এসে থমকে দাঁড়াচ্ছে।কেনো আমার সাথেই শুধু এইরকম হয়।নাহ্ আমি আমার অতীত মনে করতে চাইনা। আমি শুধু আমার আয়ানকেই বুজি। আমি আর কিছু মাথায় আনতে চাইনা।কথা গুলো ভাবছে আর অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
সায়মন প্রাপ্তির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,সুন্দরী তুমিকি আমাকে ভাবছো।কথাটা শুনে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে তুই এইখানে?।
সায়মন -তোমাকে এতো ভালোবাসা দিয়েছি যে আজও আমায় মনে রাখছো?কিন্তু মনে তোমার এতো রাগ আমার জন্য যে তুই বলে ডাকছো?
আচ্ছা! আয়ান কি জানে তোমার সাথে আমার ভালোবাসার কথা?কতোটা ভালোবাসা দিয়েছি তোমাকে ওকে বলেছো?নাকি ওই ছেলেকে নিজের এই রুপ দেখিয়ে সব ভুলিয়ে রেখেছো?সত্যি এইটা মানতে হবে তুমি এক অপরুপ সুন্দরী। যে কেউই তোমার ভালোবাসায় ডুবে থাকতে ইচ্ছে করবে।সায়মনের কথা গুলো আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে প্লিজ তুই চুপ কর। আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।আমার আয়ান আমাকে ভালোবাসে।আমি ওকে ঠকায়নি।আমি সত্যি ওকে ঠকায়নি। কথা গুলো বলতে বলতে হাঁটু ভেঙে নিচে বসে পড়লো।

চলবে,,,,,

ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৪৪

0

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৪৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_সকালে সবাই বসে নাশতা করছে।আবিদ চৌধুরী প্রাপ্তি আর আয়ানকে না দেখে কি ব্যাপার সুমি আয়ান এখনো উপরের থেকে আসেনি?
সুমি -না বাবা আপনারা নাশতা করুণ আমি ডেকে আনছি।

আবিদ চৌধুরী -তোমার যেতে হবে না ওদের সময় হলে ওরাই নিছে নেমে আসবে।আকাশ! পার্টির কথা কি ভাবলে?পার্টিতে কেউ জেনো বাদ না পড়ে।প্রাপ্তিদের বাড়ির নাম্বার আছে তোমার কাছে?

আকাশ -আছে! কথা বলবে?

আবিদ চৌধুরী -তুমি ফোন করে বলো বিকেলে আমি প্রাপ্তি আর আয়ানকে নিয়ে ওদের বাড়ি যাবো।

আকাশ -আচ্ছা ঠিক আছে।আব্বু পার্টির তারিখটা দুই দিন পর দিই।

আবিদ চৌধুরী -এতো তাড়াতাড়ি দিয়ে সবকিছু সামলাতে পারবিতো?(রেশীর দিকে নজর পড়তেই) কি ব্যাপার রেশী তুমি খাচ্ছ না কেনো?এই বাড়ির কাউকে তোমার ভালো লাগেনি?
রেশী লজ্জা ভাব নিয়ে, খাচ্ছি তো আংকেল।আর এই বাড়ির সবাইকে আমার খুব ভালো লেগেছে।সবাই আমাকে কতো ভালোবাসে। কথা গুলো বলতেই রেশীর চোখের কোনে পানি আসতেই রেশী চুপ হয়ে গেলো।
আয়েশা বেগম রেশীর কাঁধে হাতরেখে মন খারাপ করো না।আমরা সবাই তোমার আপনজন।

আবিদ চৌধুরী -আকাশ কতো দিন হলো অফিসে যাচ্ছিনা। আজ না হয় গিয়ে একবার আমি ঘুরে আসি।

আকাশ-আব্বু তুমি এই শরীর নিয়ে অফিসে যাবে?আরো কয়েকদিন যাক তারপর না হয় যেও।

আবিদ চৌধুরী -কিচ্ছু হবেনা।তোরা এতো টেনশন করছিস কেনো।(টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে উঠে যেতে যেতে)আমি গিয়ে রেডি হয়ে আসি।

আয়ান ফোনের শব্দ শুনে ফোনটা বালিশের পাশ থেকে খুঁজে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে অভ্রর ফোন।আয়ান ফোন রিসিভ করে চুপ করে আছে,আর অভ্র বলেই যাচ্ছে,আয়ান! তুই এখনো অফিসে আসিস নাই কেনো।কয়টা বাজে দেখেছিস।আজ না মিটিং আছে।তুই নিজেই মিটিং ডেকে এখন তুই নেই।আয়ান টাইমের কথা মনে পড়তেই ফোনটা কান থেকে সামনে এনে টাইম দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেছে।১০.৪০ কখন রেডি হবো আর কখন অফিসে যাবো।

আয়ান -অভ্র! আমি একঘণ্টার ভিতরেই আসছি।ফোনটা রেখে রাতের কথা মনে পড়তেই প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে প্রাপ্তিকে কাছ থেকে সরিয়ে উঠতেই প্রাপ্তি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।আয়ানেরও ইচ্ছে করছেনা যেতে। কিন্তু সে আজ যেতেই হবে অফিসে কাল সে নিজেই আজকের জন্য মিটিং ডেকেছে।আয়ান মনে মনে ভাবছে যদি সে জানতো প্রাপ্তি তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে আপন করে নিবে তাহলে মিটিং তো দূরের কথা অফিসের নামও মাথায় আনতো না।প্রাপ্তিকে আস্তে করে সরিয়ে আয়ান উঠে ওয়াশ রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

সুমি, ঝিনুক, রেশী, মিনু ড্রইরুমে সোফায় বসে গল্প করছে । আয়ানকে তাড়াহুড়ো করে নিছে নামতে দেখে, সুমি উঠে একটু এগিয়ে গিয়ে, আয়ান তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো নাশতা করবে না?

আয়ান -সুইট হার্ট হাতে একদম সময় নেই।বাহিরে পরে খেয়ে নিবো।

সুমি -প্রাপ্তি কোথায়? ও জানেনা সকালে তোমার অফিস আছে তারপর ও তোমাকে ঘুম থেকে ডাকিনি কেনো? তাহলে তো আর দেরি হতো না।
আয়ান -আয়ান মুচকি হেঁসে ও নিজেই ঘুম থেকে এখনো উঠেনি আমাকে কি ডাকবে?
কথা গুলো বলতে বলতে আয়ান বেরিয়ে গেলো। আয়ানের কথা শুনে সুমি হিসাব মিলাতে পারছেনা।প্রাপ্তি তো এতো লেট করে ঘুম থেকে উঠেনা তাহলে আজ কি হলো?প্রাপ্তি আসুক ওকে পরে জিজ্ঞাস করে নিবো।

আয়ান অফিসে গিয়ে প্রাপ্তির ফোনে কল দিচ্ছে।
প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আয়ানের নাম্বার। অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে আয়ানকে না দেখে মুচকি হেঁসে ফোন রিসিভ করলো।

আয়ান -আমার পাগলিটা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?
প্রাপ্তি-কোথায় থেকে ফোন দিয়েছো? কাছে আসো তোমাকে দেখবো।
আয়ান -এখন তো আসতে পারবো না জান। আমি অফিস শেষ করেই চলে আসবো।

প্রাপ্তি-(অবাক হয়ে)তুমি অফিসে? আমাকে ডাকোনি কেনো?

আয়ান মিটমিট করে হাঁসছে প্রাপ্তির কথা শুনে কারণ প্রাপ্তির মুখে এইরকম কথা সে আগে কখনোই শুনেনি।আয়ানের মাথায় প্রাপ্তিকে খেপানোর জন্য বুদ্ধি এলো,ডাকলে কি আবার ভালোবাসা দিতে।তাহলে আমি তো মিস করে ফেলেছি আমার বউয়ের সকালের ভালোবাসাটা।

প্রাপ্তি- ধ্যাত তোমার সাথে কোনো কথা নেই।

আয়ান-এই শুনো শুনো আসলে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তোমাকে এমদম পরীর মতো লাগছিলো।মনে হয়েছে কোনো একটা পরী ভুলে আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমার এই পরীকে কতোটা ভালোবাসি আমার পরী কি জানে?
প্রাপ্তির আয়ানের কথা গুলো শুনতে ভালোই লাগছে।তাই আয়ানকে বাধা দিচ্ছেনা চুপচাপ শুনেই যাচ্ছে।

মিনু এসে প্রাপ্তিকে এখনো খাটে বসে থাকতে দেখে, প্রাপ্তি তুমি এখনো ফ্রেশ হওনি। আর আব্বু ফোন করে বলেছে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যেতে।

প্রাপ্তি ফোন রেখে দিয়ে, আপু এখন কিসের শপিং করবো?

মিনু -তোমাদের জন্য আব্বু এতো আয়োজন করে পার্টি দিচ্ছে আর তুমি বলছো কিসের শপিং? এখন উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিছে আসো বাকি কথা ওইখানেই হবে।

মিনু সুমি আর প্রাপ্তি শপিং করতে গেলো।আয়ানকে আবিদ চৌধুরী ফোন দিয়ে আসতে বলেছে তাদের সাথে শপিং এ যাওয়ার জন্য।আয়ান মিটিং শেষে তাদের সাথে যোগ দিলো শপিং করতে।শপিং শেষ করে বাহিরে খাওয়া খেয়েই সবাই বাড়িতে আসলো।সুমি বাড়িতে এসে সবাইকে সবকিছু দেখাচ্ছে।প্রাপ্তি আর আয়ান উপরে উঠতে যাবে এমন সময় আবিদ চৌধুরী এসে, আয়ান! বিকেলে তুকে আর প্রাপ্তিকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবো।আমরা গিয়ে তাদের ইনভাইট করে আসি।কথাটা শুনে প্রাপ্তি খুশি হয়ে বাবা সত্যিই আপনি আমাদের বাড়িতে যাবেন?

আবিদ চৌধুরী -আমার মেয়ের খুশির জন্য এইটুকু করতেই পারি।
নিজের বাবার মুখে কথা গুলো শুনতে আয়ানের অনেক ভালো লাগছে।বাবার প্রতি ভালোবাসা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আয়ানের।আবিদ চৌধুরী নিজের ভুল গুলো এইভাবে বুজতে পারবে আয়ান কখনোই ভাবিনি।প্রাপ্তির মতো মেয়েরা এই সমাজের বোঝা নয় বরং ভালোবাসা একটা অংশ। আমার আব্বু এইটা বুজতে পেরেছে এতেই আমিই খুশি।
আয়ান আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো,সাথে প্রাপ্তিও।

আয়ান রুমে এসে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে মেয়েদের সাথে শপিং এ যাওয়া মানে নিজের কাঁধে নিজেই বিপদ ডেকে আনা।শুধু আব্বু ফোন করেছে বলেই এতো গুলো প্যারা সহ্য করতে হয়েছে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তি রাগি ভাব নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে, আমি প্যারা?
আয়ান -এই কথা তোমাকে বলিনি।আমার লক্ষ্মী কি কখনো প্যারা হতে পারে? ওর জন্য তো পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি।প্রাপ্তি কাছে এসে বসতে বসতে, একটু আগে যে বললে?

আচ্ছা তুমিই বলো শপিং টা ওরা গিয়ে করলেই তো হয়।তুমি আর আমি আলাদা ভাবে যেতাম। কিছুটা আলাদা ভাবে সময় কাটাতাম।কথাটা বলে প্রাপ্তিকে কাছে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেছে আয়ান।
প্রাপ্তিও বাধা না দিয়ে আয়ানের বুকে মাথা রেখে, বাবা এতোটা পাল্টাবে আমি ভাবতেই পারিনি।তোমাকে আমি বলেছিলাম না ওনি হয়তো গম্ভীর থাকে, তবে মনটা অনেক ভালো।
সুমি এসে রুমে ঢুকে দেখে আয়ানের বুকে প্রাপ্তি মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে,ভুল সময় এসে পড়লাম নাকি?
প্রাপ্তি উঠে বসে, ভাবী তুমি?

সুমি-হুম আমি! ভাবলাম তোর সাথে বসে আড্ডা দিবো।কিন্তু এখন দেখছি ভুল সময় এসে গেছি।
আয়ান মুচকি হেঁসে এইখানে ভুলের কি আছে এমনিতেই আমিও উঠে যেতাম।
আব্বু বলছে প্রাপ্তিকে নিয়ে ওদের বাড়িতে যাবে তাই রেডি হতে হবেনা?

সুমি-ওহ।আচ্ছা রেশীর দিয়েটা নিয়ে কি ভেবেছো?

আয়ান -অভ্র সাথে কথা বলে ওর বাবা মাকে বলবো এই বাড়িতে আসতে।প্রাপ্তি এক কাজ করলে কেমন হয়? পার্টির দিন ওর আর অভ্র engaged টা করে পেললে কেমন হয়? সেইদিন বিয়ের ডেট টাও ফাইনাল করা যাবে।

প্রাপ্তি- তাহলে তো ভালোই হবে।কি বলো ভাবী?

সুমি -আমারো তাই মনে হয়।আয়ান তুমি বাবার সাথে একবার কথা বলে নিও।

নিলিমা বেগম আর নীরা খুব ব্যস্ত, আবিদ চৌধুরী আসছে।সাথে মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে।নানা রকমের খাবার তৈরি করেছে নিলিমা বেগম।আসিফ তাদেরকে বিভিন্ন কাজে হেল্প করছে।
কলিংবেলের শব্দ শুনে আজাদ সাহেব গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আবিদ চৌধুরী আর আজাদ সাহেব কোলাকোলি করে বাসায় ঢুকলেন।পিছন পিছন আয়ান আর প্রাপ্তিও ।নীরা প্রাপ্তিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেমন আছো আপু?
প্রাপ্তি -আমি ভালো।নীরা! (আবিদ চৌধুরীকে দেখিয়ে)ইনি হচ্ছে আমার আরেকজন বাবা মানে তোমার ভাইয়ার বাবা।

নীরা আবিদ চৌধুরীকে সালাম করে দাঁড়াতেই আবিদ চৌধুরী কোর্টের পকেট থেকে সোনার চেইনের বাক্স বের করে আমি জানি এইবাড়িতে নতুন একজন মেম্বার আছে আর তাকে তো আমাকে কিছুনা কিছু উপহার দেওয়া উচিত। তাই চেইন টা নিয়ে আসতে ভুলিনি।আয়ান নিজের বাবাকে যতো দেখছে তোতোই ভালো লাগছে।সবাই একসাথে আড্ডা দিয়ে রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বাড়ি ফিরলেন তারা।ফ্রেশ হয়ে এসে ইজিচেয়ারে বসতে বসতে জানো আয়েশা এখন আর নিজেকে একা মনে হয়না। সবাই একসাথে থাকাটা যে অনেক আনন্দের ব্যাপার প্রাপ্তি না থাকলে হয়তো আমি কখনোই বুজতাম না।মেয়েটা বড্ড ভালো।মেয়েটার মাঝে এমন কিছু আছে যেটা সকলের বুজার ক্ষমতা নেই।এমন কি আমারো ছিল না।

আয়েশা বেগম -তুমি যে সবকিছু বুজেছ এটাই অনেক আমাদের কাছে।আমি তো ভেবে ছিলাম আমার ছেলেকে হয়তো আমি আর কাছেই পাবোনা।

_বাবা আসবো! কথাটা শুনেই দুজনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিহাদ আর রাহাত, সাথে ঝিনুক, মিনু, আর আকাশ।

আবিদ চৌধুরী -কি ব্যাপার জামাইদের এখন আসার সময় হলো আসো ভিতরে আসো।নিহাদ আর রাহাত দুজনকেই সালাম করে,
নিহাদ-বাবা আপনার শরীর এখন কেমন আছে?
আবিদ চৌধুরী -যেই ঘরে প্রাপ্তি আর সুমির মতো বউ থাকে সেই ঘরে শ্বশুরের অসুস্থ থাকতে নেই।মনের জোর দিয়ে হলেও সুস্থ থাকার দরকার।তোহ, তোমরা কখন এলে?

রাহাত -কাজে ছাপে তো সময় পাইনা বাবা।আকাশ ভাইয়া ফোন দিয়ে বলেছে আজকে আসতেই হবে।

রাহাত বাকি গুলো বলার আগেই আকাশ বলতে লাগলো আব্বু তুমি বলো বাড়িতে এতো বড় একটা পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে আর জামাইরা সব কাজ ফাঁকি দিয়ে বসে থাকবে।
আকাশের কথা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো।
আবিদ চৌধুরী -আকাশ সবাইকে ইনভাইট করা শেষ তো? তোকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি আমার অনেক পুরোনো ফ্রেন্ড জামিল আর ওর ছেলে নাকি দেশে আসছে ওদের ইনভাইট করতে ভুলিসনা যেনো।

আকাশ -জামিল আংকেল ওনার ছেলেকে নিয়ে তিন বছর আগে বাহিরে চলে গেছিলোনা? তবে আব্বু জামিল আংকেলের একমাত্র ছেলে।কিন্তু ছেলেটাকে মানুষ বানাতে পারিনি।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক বলেছিস। তাহলে কাল থেকে সবাই কাজে লেগে পড়ো।

ঝিনুক- আব্বু প্রাপ্তিদের বাড়িতে আসার পর থেকে তো কিছু খাওনি।এখন খাবেনা?

আবিদ চৌধুরী -ওইটা সম্ভব না।শুধু একটা কথায় বলবো তাদের আপ্যায়নে আমি মুগ্ধ।
একটা পরিবারে শুধু টাকা থাকলেই ভালোবাসা থাকেনা।টাকা দিয়ে ভালোবাসা কিনাও যায়না।ওদের ফ্যামিলিটা না দেখলে আমি বুজতাম না।

চলবে,,,,,,,