Tuesday, August 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2391



contract_marriage Part- 2

0
contract_marriage
Part- 2
writer-Jubaida Sobti
আবির নিলাকে সরি বলে। নিলা কিছু না বলে ওয়াস রুমে কাপড় ওয়াস করার জন্য চলে যায়। 
আবির ও চলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ আবির আবার ভাবতে লাগলো ইসস মেয়েটার কাপড়টাই বরবাদ করে দিয়েছি।সরি বললাম ইটস ওকেটা ও বললো না। বেশি রাগ করেছে নাকি। ওয়াস রুমে গিয়ে একবার দেখে আসি।
তারপর আবির ওয়াস রুমের ঐদিকে গেল এবং নিলা ও আবিরকে দেখতে পেল। আবির নিলার চোখে পানি দেখতে পায় আবির নিলাকে গিয়ে বলে.. দেখো আমি কিন্তু ইচ্ছা করে করিনি সরি।
নিলা : ইটস ওকে।
আবির : তাহলে কাঁদছো কেন?
নিলা : কে বলেছে আমি কাদছি।?
আবির: তোমার চোখ বলেছে।
নিলা তারাতারি চোখ মুছে চলে যাচ্ছিল।
আবির : শুনো
নিলা ফিরে তাকালো
আবির তাকে একটি টিসু দিয়ে বলে এটা নিয়ে যাও কাজে লাগবে। (আবির মুচকি হাসি দিয়ে)নিলা ও চলে আসে।
নিলাকে যে বর পক্ষ দেখতে আসে বরের মা নিলাকে আর আবিরকে একসাথে কথা বলতে দেখে ফেলে।
এবং নিলার মামাকে বলে আপনারা যে বললেন মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই তাহলে নিলা এতক্ষন দাঁড়িয়ে ঐ ছেলেটির সাথে কি কথা বলছিল?
মামা : নিলা এসব কি শুনছি?
নিলা : না মামা ঐ ছেলেটিকে তো আমি চিনিনা। এই প্রথম দেখছি।
মামা বর পক্ষের মা কে বললো দেখেন নিলাকে আমি যতটুকু চিনি নিলা এমন না।নিলা যা বলছে তাই সত্য হবে।
বর পক্ষ বললো আচ্ছা আমরা বাসায় গিয়ে জানাবো আপনাদের।
নিলারা ও বাসায় ফিরে আসে।
মামি : নিলা শোন কি দরকার ছিল ছেলেটির সাথে কথা বলার।
নিলা: মামি আমি ইচ্ছা করে কথা বলিনি।ওকে তো আমি চিনিও না।ও আমাকে সরি বলতে এসেছিলো।
বর পক্ষের ফোন আসে মেয়ে রিজেক্ট।
অন্যদিকে আবির এর বাবা আবির এর উপর অনেক রাগে আছে। আবির মেয়ে রিজেক্ট করে দিয়েছে আবার।এবার ও আবিরের ভাবি আর দাদি আবিরকে বাচিয়ে নিয়েছে।
পরদিন সকালে আবির তার দাদিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় দাদির চেকাপ এর জন্য। নিলাও যায় তার মামি আর শ্রেয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে।
আবির আর নিলার আবার ও দেখা হয়ে গেল।
আবির : Hey what’s up?
নিলা : জি আপনি ? আপনি এইখানে কি করছেন।
আবির : এইখানে মানুষ কি করতে আসে?
নিলা : ও বুঝলাম তবে কি হয়েছে আপনার
আবির : ক্যানসার ?
নিলা : ??
আবির : hey! i m just kidding dear ?
নিলা আবিরকে কিছু না বলেই চলে গেল।
আবির : আরে একটা বাই তো বলে যাও।?
আবিরকে নিলার সাথে কথা বলার সময় আবিরের দাদি দেখে।
দাদি : যাক তুই তাহলে নিজের জন্য বউ নিজেই ঠিক করে রেখেছিস। তা আমাদের বললেই বা কি হতো।?
আবির : আরে দাদি না আমিতো ওর নাম সহ জানিনা।
দাদি : তবে মেয়ে কিন্তু আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।
আবির : উফফ দাদি চিনিনা জানিনা অম্নি বউ বানিয়ে দিলে।?
দাদি : হয়েছে হয়েছে আমার সাথে আর ডং করতে হবে না।?
চলবে…..?
part- 3
বাসায় এসে দাদি আবিরের বড় ভাবীকে সব বলে ভাবি ও খুশি হয়ে যায়।
ভাবি : দাদি তবে আবির আমাকে যে কিছু বলেনি ?
দাদি : আরে ও মনে হয় আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছে।তবে ও সারপ্রাইজ দেওয়ার আগে আমরাই ওকে
সারপ্রাইজ দিয়ে দিবো।
ভাবি : কি সারপ্রাইজ দাদি?
দাদি : মেয়েটা আজ হাসপাতালে এসেছিল যেভাবে হোক ঐখান থেকে হলেও মেয়েটির ঠিকানা বের করে আমরা মেয়েটির বাসায় প্রস্তাব দিব।
ভাবি : ওকে দাদি let’s start ?
দাদি আবিরের বাবা ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আবিরের বিয়ের কথা তোলে
আবিরের বাবা : দেখো মা এটা কোনো আবিরের প্লান নয়তো? কারণ ওকে আমি হারে হারে চিনি। কোনো কাজটাই ছেলেটা ঠিকভাবে করেনা।
দাদি : আরে ধুর তুই সব সময় আমার নাতিটার দোষ দিস কেন বলতো। তুর ছেলে কিন্তু পরির মতো বউ ঠিক করে রেখেছে। ? আমারতো অপেক্ষাই হচ্ছেনা।
পরদিন আবির এর বড় ভাবি নিলার ঠিকানা নিয়ে আসলো।
আবিরের দাদি দেরি করেনি নিলার বাসায় গিয়ে সব ঠিকটাক করে আসে।এবং বলে আমাদের ছেলে আবির নিলাকে খুব পছন্দ করে তাই আমরা কিছু চায়না শুধু মেয়ে চায়।নিলার পরিবার ও খুব খুশি এতবড় ঘর থেকে নিলার জন্য প্রস্তাব আসবে কেউ ভাবতে ও পারেনি।তাও আবার পরিবারের মানুষ গুলা ও কতো ভাল।নিলার ও কোনো আপত্তি নেই আবিরের জন্য আবির দেখতে সুন্দর স্মার্ট দাদির থেকে যতটুকু শুনছে আবির দুষ্টামি বেশি করে?
যাই হোক দাদি কথা পাক্কা করে কাল আবির ও তার পরিবারকে নিয়ে আসবে বলে বিদায় নিল।
পরদিন সকালে দাদি ভাবিকে বলে আবিরকে রেডি হতে বলার জন্য।
ঐদিকে আবির তারাকে ফোন করে বলে দেখা করার জন্য কিন্তু তারা বলেছে সে তার মামার বাড়ি যাচ্ছে। যদি পারে তাহলে আসবে। আসুক আর না আসুখ আবির তো তারার জন্য অপেক্ষা করবেই।তারা বলে কথা।?
ভাবি : আবির তুকে দাদি রেডি হতে বলেছে।?
আবির : রেডি হব কেন??
ভাবি : বউ দেখতে যাবি বলে।
আবির : ভাবি ডিয়ার আমিতো বলেছি এসব বিয়ে টিয়ে আমি এখন করছিনা।?
ভাবি : লুকিয়ে লুকিয়ে বউ ঠিক করছিস আবার বলিস বিয়ে টিয়ে তোর দারা হবে না।?
আবির : ভাবি ডিয়ার কি বলছো তুমি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।?
ভাবি : দেখ আবির এবার তোকে এমন মেয়ে দেখাবো তুই কখনো রিজেক্ট করতে পারবিনা।মেয়ের মামা ও রাজি হয়ে গেছে।
এই বলে ভাবি চলে যাচ্ছে
আবির : আরে ভাবি ডিয়ার শুনো কই যাও?
আবির ভাবতে লাগলো লুকিয়ে লুকিয়ে আমি আবার কবে বউ ঠিক করলাম
তবে এবার যাকে দেখাবে তাকে আমি চাইলেও রিজেক্ট করতে পারবোনা। মেয়ের মামাও রাজি হয়ে গেছে ?
আবির :????? এবার বুঝলাম তারা ও তো মামার বাড়ি যাচ্ছে। আর আমি চাইলেও মেয়ে এবার রিজেক্ট করতে পারবো না।
তার মানে ভাবি মনে হয় জেনে গিয়েছে আমি তারাকে ভালবাসি। উফফ জানবেই না বা কেন আমার ভাবি ডিয়ার বলে কথা। তারাও তো আমাকে কিছু বলেনি এই বেপারে 
আচ্ছা বুজলাম সবাই মিলে আমাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে।
ওও তাহলে আমিও কি অভিনয় করতে জানি না বুঝি ?
চলবে…?

Contract_Marriage part :1

0

Contract_Marriage part :1
writer-Jubaida Sobti

(নিলার পরিচয়)
গায়ের রঙ ধবধবে সাদা ‘লম্বা কালো চুল। উচ্চতা ৫”৩
আর ওজন ৫৪ কেজি।নিলার চোখ গুলো তার মায়ের মতো মায়াবী ‘বাদামি চোখের মণি। একাদশ শ্রেণী পাস করে এখন বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র খুজছে।
ছোট বেলায় নিলার জন্মের সময় তার মায়ের ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়াতে তার মা মারা যায়। নিলার বয়স যখন ৭ বছর তখন তার বাবা হার্ট হয়ে মারা যায়।
মা-বাবাহীন নিলাকে তার মামা নিজে মামার বাড়িতে নিয়ে চলে যায়।নিলার মামা তার মামির বাবার বাড়িতেই থাকত তার পরিবার ও নিলাকে নিয়ে। নিলার মামার পরিবারে ছিল তার মামি তার দুটো মামাতো বোন ‘(মমিতা-শ্রেয়া) একটি মামাতো ভাই(মাসুদ) ও তার স্ত্রী। এবং নানা-নানি।
নিলা তার মামার আপন মেয়ে নয় বোনের মেয়ে বলে নানি নিলাকে তেমন ভালবাসে না। মমিতা নিলার ৫ বছরের বড় তার হাজবেন্ড বেকার বলে তাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ী থাকতে হয়।মমিতার হাজবেন্ড নিলার দুলাভাই এর নজরটা তেমন নিলার ভাল লাগতো না। কেমন যেন তার চোখের চাওনিটা। আর শ্রেয়া নিলার ২ বছরের ছোট। দশম শ্রেণীর ছাত্রী। নিলা শ্রেয়াকে নিজের ছোট বোনের মতো করে ভালবাসত।?তেমনি শ্রেয়া ও নিলাকে খুব ভালবাসত।
(আবিরের পরিচয়)
উচ্চতা ৫”১০ ‘গায়ের রঙ ফর্সা। মাস্টার্স শেষ করেছে এক বছর আগে। বাবার ব্যবসায়ে হাত না বাড়িয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানো তার কাজ।অনেক মেয়েরা আবিরের জন্য পাগল কিন্তু আবিরের এসব মেয়েদের গণার সময় নেই।
আবির শুধু একজনকেই চাই তার নাম হল (তারা)।
কিন্তু তারা আবিরকে শুধু একজন ভাল বন্দু মনে করে।
তারার বাবার সপ্ন তারা পড়ালিখা করে ডাক্তার হবে।সে তার বাবার সপ্ন পুরনে ব্যস্ত।
(হক) পরিবারের সব চেয়ে ছোট ছেলে আবির হক। বাবা গোল্ড ব্যবসায়ি। আবিররা তিন ভাই আবির সবচেয়ে ছোট। কেউকে ভয় না পেলে ও আবির তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।তার বাবার কঠোর শাসন এর কারনে আবির তার বাবার নাম দিয়েছে (হিটলার)। অবশ্য তার দেওয়া নামটি তার বাবা আবিরের মা ও দাদিমা থেকে শুনেছে তাও আবিরকে কিছু বলেনা।আর মনে মনে হাসে।আবিরের বাবা চায় যে তার বাকি দুই ছেলের মতো আবির ও জিম্মাদার মানুষ হোক।
আবিরকে পরিবারের সবাই খুব ভালবাসে তার চালচলন গুলো ছিল চঞ্চল প্রকৃিতির। আবিরের বড় ভাবি আবিরকে একটু বেশি ভালবাসে এবং আবির ও।আবির তার বড় ভাবিকে আদর করে (ভাবি ডিয়ার) বলে ডাকে।?
আবিরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক মেয়ে দেখিয়েছে তার বাবা কিন্তু সবসময় আবির কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে কনের পক্ষকে রিজেক্ট করে দিত। যার কারনে আবিরের বাবা আবিরের উপর অনেক নারাজ।?
আজ সোমবার সকাল ‘আবির ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রুমে এসেছে।এসে দেখে তার ভাবি ডিয়ার তার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছে।
আবির: আরে ভাবি ডিয়ার গুডডডড মর্নিং।?
ভাবি ডিয়ার: হুম নাস্তা রেখে যাচ্ছি। খেয়ে রেডি হয়েনে। আজ বাবা বলেছে রেস্টুরেন্ট এ তোকে মেয়ে দেখাতে নিয়ে যাবে।?
আবির : আরে ভাবি এই হিটলার এর বুঝি আমার জন্য মেয়ে দেখা ছাড়া আর কাজ নেই।?
ভাবি ডিয়ার : আবির দেখ সবসময় তুই নানা অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে ভেংগে দিস। মেয়ের পক্ষের কোনো খারাপ দিক না পেয়ে ও বাবার থেকে তোর কারণে মিথ্যা কথা বলতে হয়।?
আবির : কিন্তু ভাবি,,,,?
ভাবি ডিয়ার : কোনো কিন্তু নয়।?
অন্যদিকে নিলাকে রেডি করছে আজ বর পক্ষকে দেখাতে নিয়ে যাবে। নিলার জন্য এটা খুশির কিছু নয়। এভাবে তাকে ২৩ বার দেখানো হয়েছে ২৩বার তাকে রিজেক্ট করেছে। নিলা মনে মনে ভাবছে এবার ও তেমন হবে আরকি।নিলা সেই দিন গুলির কথা মনে পরে গেল। সমাজে এখনো এমন মানুষগুলি বেচে আছে। যারা মেয়েদের মন দেখে না তার সুন্দর্য দেখে আর সারাদিন খেটে কাজ করতে পারবে কিনা তা দেখে।যৌতুকে কি কি দিতে পারবে তা দেখে।যদি তাদের পরিমান মতো না মিলে তাহলে মেয়ে রিজেক্ট।?
নানি : এই জন্মে আর এই নিলার বিয়ে হবেনা মনে হয়।
না জানি আর কতদিন মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের টাকা পয়সা খরচ করতে হবে।?
শ্রেয়া : উফফ নানি তুমি চুপ করবে। দেখবে নিলা আপুর জন্য রাজকুমার ঠিক চলে আসবে।?
নিলাকে যে রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেল মেয়ে দেখানোর জন্য আবিরকে ও সেই রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেল।
আবিরকে মেয়ে দেখালো মেয়ে সুন্দর কিন্তু আবির বিয়ে করবেনা। সে কিন্তু তার গার্লফ্রেন্ড তারার জন্য মেয়ে রিজেক্ট করছে না। আবিরের এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই সে তো তারাকে এখনো বলেওনি যে সে তারাকে ভালবাসে।কিভাবে বলবে তারা সবসময় পড়ালিখা নিয়ে ব্যস্ত।
অন্যদিকে নিলাকে বরপক্ষ দেখেছে পছন্দ করেছে কিন্তু মেয়ের মা-বাবা নেই।তাই একটু কনফিউজড ছেলের পক্ষ।মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি।
আবিরের পরিবারের ও আবিরের জন্য দেখা মেয়েটি পছন্দ হয়েছে মেয়েদেখা শেষ বাসায় গিয়ে ফোন করে মতামত জানিয়ে দিবে বলে বাসায় ফিরার জন্য প্রস্তুত।
এমন সময় আবির হেটে যাওয়ার সময় হাতের সাথে বাড়ি খেয়ে পাশের টেবিলে বসে থাকা নিলা মেয়েটির গায়ে জুসের গ্লাসটা? পড়ে যায়। নিলা ভয় পেয়ে যে না চিৎকার করে উঠলো সবাই আবির আর নিলার দিকে তাকিয়ে আছে? আবির ও ভয় পেয়ে গেল।?
চলবে….?

একটি প্লাস্টিকের ফুলের গল্প

0

নাভিদ দক্ষিণের বড় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া দেখছিলো। নিকশ কালো আধার রাত কীভাবে যেন ধীরে ধীরে রাঙা প্রভাতে রূপ নেয়। কখনোই তার ভোর এভাবে দেখা হয়নি। এতোটা মন খারাপ নিয়ে তো সে কোনোদিন থাকেনি। গত দুরাত ধরে তার ঘুম হচ্ছেনা। বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই কেটে যায়। আজ নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। যদি একটু ভালো লাগে!
মাথাটা পুরো ঝিম ধরে আছে। চোখের কোণায় পানি জমে শুকিয়ে গেছে। বুদ্ধি হবার পর এই প্রথম সে কেঁদেছে।
মা বলেন – ছেলেদের কাঁদতে নেই। কষ্টগুলো আর চেপে রাখতে পারছিলো না সে।
পুরোনো ঘটনাগুলো বারবার তাকে ভাবাচ্ছে।একসময়ের মধুর স্মৃতি গুলো এখন বিষের মতো লাগছে। ইউনিভার্সিটির ভর্তি যুদ্ধে তার ঠাই হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইচ্ছে ছিলো বুয়েট কিন্তু হলো না। সাব্জেক্ট টাও তার মনমতো ছিলোনা। হলে সিট পাওয়ার আগ পর্যন্ত দূর সম্পর্কের এক ফুফুর বাসায় ঠাই হলো। দোতলার ছাদের নোংরা এক ঘরে তার ঠাই হলো। পরিবার থেকে দূরে, অপছন্দের সাবজেক্টে পড়া, মফস্বল থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের কেমন কাটে ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন গুলো তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ফুফুর বাসায় ফুফুর ব্যবহার সহনীয় হলেও অন্যদের ব্যবহার তেমন ভালো ছিলোনা। এমন ভাবে কথা বলতো যেন সে ঐ বাড়ির চাকর।
কষ্ট গুলো দূর করার জন্য সারাদিন পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতো কিন্তু কতক্ষণ আর পড়া যায়! ফেসবুকে এক মেয়ের সাথে তার বেশ চ্যাটিং হয়। মেয়েটা তার থেকে বয়সে বড়। তার সাথে চ্যাটিং করতে তার ভালো লাগে। এভাবে চ্যাটিং করার মাত্রাও বাড়তে লাগলো। একসময় তার মনে হলো মেয়েটাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটা তাকে মেনে নিবে?
ভেবেছিলো চেপে যাবো ব্যাপারটা কিন্তু চেপে যেতে না পেরে একদিন বলেই বসলো
– রিন্তি, আমার মনে হয় তোমাকে আমি ভালোবাসি।
রিন্তি হেসে উত্তর দিলো
– জুনিয়র সাহেব, আমারো তাই মনে হয়। আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
সম্পর্কের শুরুটা অসাধারণ ছিলো নাভিদের কাছে। হঠাৎ তার ভেতরের গ্লানি, কষ্ট গুলো মুছে যেতে লাগলো।
সম্পর্কের বয়স যখন ৭ মাস তখন হলে শিফট হলো নাভিদ।
বেশ ভালোই চলছিলো, ইউনিভার্সিটির ক্লাস, পড়াশোনা, ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা, রিন্তির সাথে আদুরে, খুনসুটি তে দিন কাটিয়ে দেয়া।
রিন্তি প্রায়শই বলতো আচ্ছা একটু সময় করে দেখা করা যায়না?
নাভিদ হাসতে হাসতে বলতো
– তোমার সাথে দেখা করতে হলে একটু না প্রচুর সময় লাগবে। তুমি থাকো চট্টগ্রামে আর আমি ঢাকায়।
– প্রচুর সময় লাগবে লাগুক না। তোমাকে তো প্রতি সপ্তাহে আসতে বলছিনা।
– দেখা না করাই ভালো। দেখা করলে অনেক কিছু মাথায় আসবে। ঠিক হবেনা।
ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা সামনে। পড়াশোনার বেশ চাপ। লাইব্রেরিতেই কাটে দিনের সিংহভাগ সময়।
গত পরশুদিন নাভিদ আর তার বন্ধু নেহাল লাইব্রেরিতে বসে নোট করছিলো। নেহাল বিরক্ত হয়ে বললো
– ধুর আর ভালো লাগেনা। তুই নোট কর।আমি একটু ফেসবুকে ঢুকি।
– তোর সারাদিন খালি ফেসবুক আর ফেসবুক।
– নিজে তো ঠিকই ফেসবুকে চুটিয়ে প্রেম করছো আর আমি একটু চ্যাটিং করলেই দোষ। তাও আবার বড় আপুর সাথে।
– হয়েছে চুপ থাক।
– জানিস সিয়াম টাও তোর মতো। বড় আপুর সাথে তারও চলে। দুদিন আগেই দেখা করতে চট্টগ্রাম পাড়ি জমিয়েছে। সব কিছু একেবারে কমপ্লিট করে এসেছে। তুই কবে করবি?
– আমি একেবারে বিয়ের পর। বিয়ের আগে ঠিক না।
– সাধু সাধু। আমাদের সাথেও তো তোমার রিন্তির পরিচয় করালে না।
– করাবো করাবো।
নেহাল একটু ঠাট্টার স্বরে বললো
– তোর পোস্টে সিয়ামের প্রেয়সীর কমেন্ট ক্যান রে?
নাভিদ অবাক হয়ে বললো
– কই দেখি তো?
নাভিদ হেসে বললো
– দোস্ত এতো আমার রিন্তি।
নেহাল বললো
– সিয়ামের প্রেমিকা দোস্ত। আমি ১০০% শিওর। গতকালও আমার সামনে এই আইডি দিয়ে সেক্স চ্যাট করেছে। এমনকি ভিডিও কলে এসেছিলো। আমার মিথ্যা বলে কী লাভ? কিন্তু ওর নাম যে রিন্তি তা তো জানতাম না।
নাভিদের তখন মনে হচ্ছিলো নেহাল মিথ্যা বলছে। লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে নাভিদ বললো
– দোস্ত, সিয়ামকে এখন এখানে ডেকে আনতে পারবি?
– দাঁড়া।
নেহাল ফোন করে সিয়ামকে ডেকে আনলো। নাভিদ ফোনের গ্যালারি থেকে রিন্তির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– আপনি চিনেন একে?
সিয়াম হেসে বললো
– হ্যাঁ, আমার তিনি।
নাভিদ মনে মনে আশা করছিলো না বোধক উত্তরের৷ নাভিদের হাত পা কাঁপছিলো। কী করবে ভেবে না পেয়ে রিন্তিকে ফোন দিলো। রিন্তি ফোন রিসিভ করে বললো
– কী ব্যাপার? আজকে এই সময়ে ফোন?
– তুমি সিয়ামকে চিনো?
– কোন সিয়াম?
– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। চিনো কিনা বলো?
– না আমি চিনি না।
নাভিদ ফোন সিয়ামের হাতে দিয়ে বললো
– কথা বলুন।
সিয়াম ফোন ধরে বললো
– নাম্মি, তুমি আমাকে চিনো না?
তারপরের কথা নাভিদ মনে কর‍তে চায়না। নাভিদের সাথে সম্পর্ক ১০ মাসের আর সিয়ামের সাথে ৬ মাসের।
দুদিন যাবত রিন্তি তার কোনো ফোন রিসিভ করছেনা। ফেসবুকে ব্লক দিয়ে রেখেছে। নেহালের কাছ থেকে জানালো রিন্তি নাকি সিয়ামকে চুজ করেছে।
সিয়ামের কাছে বলেছে
– তোকে সে ভালো ফ্রেন্ড ছাড়া কিছুই ভাবেনা।
নেহাল রাগত স্বরে বললো
– তোর কি ওই মেয়েকে ঘৃণা লাগছেনা? যে নাকি অন্য কারো সাথে বেডে পর্যন্ত গেছে। প্রায় প্রতিদিনই সেক্স চ্যাট করে তারে তুই এখনো চাস। কীভাবে?

আমি চেয়েছিলাম সে আমার লালসা থেকে দূরে থাক। তাকে আমি পবিত্র রাখি। আমাদের সম্পর্কটা ভালো থাকুক। আজে বাজে ব্যাপার গুলো না আসুক। আর সে কিনা……..
নাভিদের মনে হলো তার মা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে হয়তোবা। পেছন ঘুরে মাকে দেখে বললো
– এইসময়?
রাজিয়া আহমেদ বললেন
– পরীক্ষা এক সপ্তাহ বাকি। এইসময় বাসায় আসলি? শরীর খারাপ নাকি অন্যকিছু?
– তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিলো। তাই আর কী।
– তোর ড্রয়ারে ঘুমের ঔষধ পেলাম। তিন পাতায় মোট ৩০ টার মতো ট্যাবলেট আছে। বাবা তুই কিছু করতে চাচ্ছিস?
রাজিয়া আহমেদ ডুকরে কেঁদে উঠলেন আর বলতে লাগলেন
– বাপ তুই ছাড়া আমাদের আর কেউই নাই। তোর বিকল্পও নাই। আমরা কীভাবে কী করবো? এই দুইদিনে তোর এরকম অবস্থা দেখে তোর বাবাও অসুস্থ হয়ে গেছেন। বাপজান তুই খারাপ কিছু করিস না।
নাভিদ মাকে জড়িয়ে ধরে দৃঢ় কণ্ঠে বললো
– না, মা। আমি খারাপ কিছুই করবো না।
একটি প্লাস্টিকের ফুলের জন্য নিজের মা বাবাকে কষ্ট দেয়ার কোনো কারণ নেই। নেই কোনো কারণ!

© Maria Kabir

মা… ?

0

রাতুল খেয়াল করলো তার স্ত্রী অনেকক্ষণ যাবত দরজার খুলে বাতাবি লেবু গাছটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর তার শরীর কেঁপে উঠছে। রাতুল মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল – আজ সকালেই বেচারীর মা মারা গেছে। হয়তোবা মার কথা খুব মনে পড়ছে। কাঁদুক না কাঁদলে কষ্টটা কমবেনা। হঠাৎ তার স্ত্রী দরজা আটকে দিয়ে রাতুলের পাশে বিছানার পাশে বসে বললো
– আমি যদি কোথাও চলে যাই তাহলে তোমার খুব খারাপ লাগবে?
স্ত্রীর এরকম প্রশ্নে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো রাতুল। উত্তরে কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। দুই বছরের সংসারে আজ অবদি কোনোরকমে কোনো ঝগড়া তাদের মাঝে লাগেনি। মনোমালিন্য আরো যত প্রকার সংসারী ঝামেলা আছে কিছুই না। তাহলে কী কারণে এরকম বলছে? হয়তোবা মায়ের মৃত্যু টা সহ্য করতে পারছেনা। তাই এরকম বলছে।
রাতুল স্ত্রীকে বলল
– নীতু, এখন একটু ঘুমাও তো। সকালে এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
নীতু বলল
– না, এখনই আলোচনা করতে হবে।
– আচ্ছা কী বলতে চাও বলো।
– আমি চলে গেলে তোমার খারাপ লাগবেনা?
– হ্যাঁ লাগবে।
– কারণ?
– তুমি আমার স্ত্রী। তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছাড়া আমার কষ্ট তো হবেই।
নীতু আর কথা না বাড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। রাতুল বললো
– লাইট টা তো অফ করবা?
কোনো প্রতিউত্তর না পেয়ে নিজেই লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লো।
আজ সকালে নীতুর মা মারা যান। শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামী সহ আসেন বাবার বাড়িতে। আত্মীয় স্বজনে পুরো বাড়ি ভরা কিন্তু এই মা জীবিত থাকতে কেউ ভুলেও বাড়িতে পা দেয়নি। তার মা তালাকপ্রাপ্ত ছিলেন। নীতুর যখন ১২ বছর তখন তার বাবা, মাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তার মা নাকি চরিত্রহীনা! পাশের বাসার আব্দুলের সাথে নাকি তার মায়ের মাখামাখি সম্পর্ক। নীতু জানে তার মা ওরকম না। তার বাবা মাকে তালাক দেয়ার ক’দিন পরেই আবার বিয়ে করে আনেন।
তখন থেকেই নীতু আর তার মা নানাবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। আত্মীয়রা তার মাকে একঘরে করে দিলেও তার নানা নানী তাকে ছাড়তে পারেননি।
এরকম অনেক কথাই ভাবতে ভাবতে নীতু ঘুমিয়ে পড়লো।
রাতুলের ঘুম ভাঙলো নীতুর দূর সম্পর্কের এক মামার ডাকে।
– নীতু রে খুঁইজা পাওয়া যাইতেছে না।
রাতুল লাফিয়ে উঠে বললো
– দেখুন আশেপাশেই আছে।
– তা তো কখনই দেখা হইছে। নাই কুথাও নাই। মায়ের মতো মেয়াডাও আধ পাগলা হইছে। ওর মাও এই বয়সে হুটহাট করে উধাও হইয়া যাইতো। তারপর একা একাই আসতো। সাধে সাধে কি ঘর সংসার গেছে নাকি।
রাগে গজগজ করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। এই একজনই নীতু আর তার মাকে খুব ভালো জানতো। উনিই তো রাতুল আর নীতুর বিয়ে দিয়েছে।
রাতুলের মনে পড়লো গতকাল রাতেই নীতু তাকে চলে যাওয়ার কথা বলেছে।সত্যি কি চলে গেলো নাকি? কই যাইতে পারে?
বিছানা ছেড়ে উঠে কোনোরকমে জামা কাপড় ঠিক করে বের হয়ে পড়লো।
বিকালের দিকে নীতুকে নিয়ে তার মামা ফিরে আসলো। নীতুর সারা শরীরে মাটি লেগে আছে। চোখ ফুলে আছে। ক্লান্তির মলিন ছাপ তার দেহে।
রাতের বেলা রাতুলকে, মামা ডেকে নিয়ে বললেন
– ওকে ওর মায়ের কবরের পাশে শুয়ে থাকতে দেখছি। কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল ” তার মা একা থাকতে ভয় পাইতেছে। তাই সে এখন থেকে ওখানেই থাকবে ”
তুমি একটা কাজ করো বাজান ওরে নিয়ে তোমার বাসায় চলে যাও। এই বাড়িতে আর থাকোন লাগবেনা।

রাতুল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঠিক ১২ টা বাজে। নীতু আজও দরজা খুলে বাতাবি লেবু গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীতু গতকাল রাতে ঘুমাতে যাবে তখন মনে হলো তার মা তাকে ডাকছে। প্রথমে সে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল
– না, ওসব কিছুনা।
ধীরে ধীরে মায়ের ডাকের শব্দটা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। তখন রাতুল ঘরে ছিলো না। দরজার ওপাশে উঠোন থেকে শব্দটা আসছিলো। সাহস করে দরজা খুলে দেখে তার মা বাতাবি লেবু গাছটার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। সেই রোগাটে ক্লান্ত চেহারা। যেই কাপড় টা পড়ে মারা গেছিলো সেটাই পড়ে আছে। ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললো
– নীতু।
নীতু বললো
– বলো মা।
– আমার একা খুব ভয় লাগছে রে। তোরা আমারে কোন অন্ধকারে রেখে এসেছিস রে। আমার খুব ভয় লাগছে রে। আমার সাথে তুই যাবি? এই মা তোর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। এই মাকে একা থাকতে দিবি?
কথাগুলো বলে নীতুর মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন।
নীতুও কাঁদতে শুরু করলো। আজও তার মা এসে বাতাবি লেবু গাছটার ধারে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই একই কথা বারবার বলছেন।
সত্যিই তো তার মা তার জন্য কতো কষ্টই না সহ্য করেছেন। কিন্তু সে তো কিছুই বিনিময়ে দিতে পারেনি। মা মাত্র এটুকু চেয়েছে তাও যদি সে না দিতে পারে তাহলে সে কেমন সন্তান হলো?
নীতু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো
– মা তোমার জন্য কী করতে পারি আমি?
তার মা বললেন
– তুই আতালে রাখা বিষ টা সবার আড়ালে খেয়ে নিবি। তাতেই হবে।
– মা তাতে তো আমি মইরা যাবো। তোমার কবরের পাশে শুয়ে থাকলেই তো হবে।
– না না সবাই তোরে আবার ফেরত নিয়ে আসবে। আর বিষ খাইলে কেউই পারবেনা।
রাতুল স্ত্রীর নিজের সাথে নিজের কথা বলতে দেখে ভাবলো
– কালই হুজুরের বাড়ি তাকে নিয়ে যেতে হবে। তা না পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে বেশি।

লায়েক ভোর বেলা গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে নীতুদের বাসার আতাল সামনে পড়ে। দূর থেকে লায়েক দেখলো কেউ একজন আতালের পাশেই পড়ে আছে। প্রায় দৌঁড়ে কাছে গিয়ে দেখলো নীতু পড়ে আছে।
মুখ দিয়ে সাদা ফ্যানা বের হয়ে আছে। মুখ নীল হয়ে গেছে।
রাতে যখন রাতুল গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় তখন নীতু ঘর থেকে বের হয়ে আতালে রাখা বিষ খেয়ে নেয়। তার মা পাশে দাঁড়িয়ে তাকে বলে
– এইতো আমার সন্তান।
নীতু আবছা আবছা শুনতে পায় তার মা বিকট স্বরে হাসছে। সেই হাসিতে পুরো দুনিয়া কেঁপে কেঁপে উঠছে!

© Maria Kabir

মধ্যবিত্ত ছেলেদের ভালোবাসা

2

Middle Class ছেলেদের কাছে আত্নসম্মান টাই সবচেয়ে বড়। ♥
এদের আপনি দামী গিফট দিবেন এরা খুশি হবে না এদের জাস্ট একটা বই পছন্দের কিছু খাবার বা টুকটাক ছোট খাটো ভালো লাগার কিছু গিফট করবেন দেখবেন সে গিফট টা এর কত খুশিমনে গ্রহন করে।
Middle Class ফ্যামিলির ছেলেরা Girlfriend এর Family Status/ Credit Card / Car দেখে না। এরা নিজের Bill নিজে Pay করার Mentality নিয়েই বড় হয়।♥

Girlfreind এর সাথে ঘুরতে যাওয়ার টাকা নেই? সে পাগলের মতো বন্ধুদের কাছে যাবে আর কিছু টাকা চাইবে, টাকা না পেলে কোনো একটা বাহানা দিয়ে বলবে অন্য একদিন দেখা করবো,আজকে নয়। ব্যাপারটা দেখেছেন কোনদিন নিজের চোখে?
দেখলে Must be সেটা কোন High Class ছেলে না, সেটা কিন্তু সেই Middle Class ছেলেটাই।?

বন্ধুরা কলেজ / ভার্সিটি ছুটির পরে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যাবে খেতে, কিন্তু বাসায় কাজ আছে বলা ছেলেটাকে দেখেছেন কখনো ? সে জানে বাসায় মা রান্না করে বসে আছে তার জন্য। সে সেই রেস্টুরেন্টের বিল টা পকেটেই রেখে দেয়।

সবার বন্ধুদের মাঝেই একটা কিপটা ছেলে থাকে।
সবাই তাকে পচাই, ছেলেটাকে চিনেন? সে সেই Middle Class ছেলেটা, যে দশ টাকা খরচ করার আগে ভাবে আমার বাবা ১০ মিনিট কাজ এই দশ টাকা আমাকে দিয়েছে।?

Please Don’t Blame Him,Respect Him.♥

পছন্দের কোনো জিনিশ কিনতে গিয়েও সেই Middle Class ছেলেটাই কিন্তু ভাববে, ” নিজের সখটাকেই বড় করে দেখলে চলবে না। আমি তো ওকে ভালোবাসি, আমাকে এখন থেকেই টাকা জমানোর অভ্যাস করতে হবে, সামনে কতো বড় FUTURE আমাদের।♥

জি হ্যা, সেই Middle Class ছেলেটাই চাইবে নিজের ক্যারিয়ার টা আপনার সাথে কাটাতে,সে নিজের পছন্দের জিনিসটা দোকানের বাইরে দারিয়ে দেখে Wallet এর দিকে তাকিয়ে আপনার কথা চিন্তা করবে,তারপর সে সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব চলে আসবে। সে হয়তো আপনার সব ইচ্ছা পূরন করতে পারবে না, কিন্তু নিজের বেতনের সব টাই আপনার জন্য খরচ করতে একবার ও ভাববে না। ?

সেটাও সে কিন্তু জমিয়ে জমিয়ে আপনার পিছনেই খরচ করে ফেলবে আপনার একটু পছন্দের জিনিষ টা কিনে দিতে।
আর দিনশেষে আমরা ভুলে যাই সব কিছু, Middle Class ছেলেটা হয়ে যায়
~তুমি এতো ক্ষ্যাত কেন?
~তুমি এতো কিপটা কেন?
~ তুমি নতুন জামা কিনো না কেন?
~তোমাকে নিয়ে কোথাও যেতে আমার লজ্জা লাগে ?
~তুমি Middle Class কেন?
~তুমি স্মার্ট না কেন?
~তুমি সুন্দর না কেন?
~তোমার চোখ মুখ সব কিছু পারফেক্ট কাটা কাটা না কেন?
~আমার বান্ধবিদের জামাইদের দেখছো কি সুন্দর?
~তোমার চুল এমন ক্ষ্যাত কেন?
~চুলেকালার করা না কেন?
~তুমি Rich Watch পড়ো না কেন??

মোট কথা এখন তোমার আমার লেভেল আলাদা আমি তোমার থেকে better কাওকে সব সময় ডিজার্ভ করি।
তুমি জাস্ট একটা পেইন।

খুব অবাক লাগে না??

এর পরের গল্প টা সবার জানা।
মেয়েটা তাকে ছেড়ে দিয়ে নতুন করে কাউকে নিয়ে বাচঁতে শিখে যায়, কিন্তু এক সময় বাবা মার পছন্দের বি সি এস ক্যাডার ডাক্তার ছেলেটাকে বিয়ে করে ফেলে।?
নিজের সংসারে মন দিবে আর মাঝে মাঝে আফসোস করবে কেন ছেলেটার জীবন নিয়ে খেল্লাম, আজ কোটিপতি জামাইয়ের ১ লাখ টাকাই হয়তো আমার হাতে দিবে, কিন্তু সেই ছেলেটা ২০ হাজার টাকার সবটাই আমার হাতে তুলে দিতো।?
আর সেই ছেলেটা?
তার কথাও সবাই জানে, সে এখনও হয়তো সবটা গুছিয়ে নিতে পারেনাই, হয়তো লেখা পড়াটা আগের মতো মন দিয়ে করতে পারেনা, হাজার মানুষের ভিড়ে তোমাকে খুজে, জন্মদিনে সবার মাঝে তোমার মুখ থেকে Happy Birthday শুনতে চায়।?

আর সেই মেয়ের জামাইও দেখবেন কয় জায়গায় কি করে আসবে।
একটা Middle Class ছেলে তা কোন দিন করবে না।
এই শ্রেনীর ছেলেরা সব দিবে কিন্তু ভালোবাসার ভাগ কাওকেই দিবে না।

যে যেমন তেমনই পাবে দিন শেষে।
Middle class honest একটা ছেলেকে বিয়ে করার সৌভাগ্য সবার হয় না। ♥

লেখকঃ তুষার আহমেদ

গল্পটি ভালো লাগলে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিন

মাতৃত্ব ৩ তথা শেষ পর্ব

0

মাতৃত্ব

৩ তথা শেষ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

_আয়ান -না করে আর উপায় কি।তোদের কে তো সব আগেই বলেছি।

রিমন-তুই কপাল করে একটা বউ পেয়েছিসরে,, ।

আয়ান – ঠিক বলছিস তাই নিজের স্বামীকে অন্যজনের হাতে তুলে দেয়।তোরা বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

প্রাপ্তি নাস্তা নিয়ে এসে আয়ানকে না দেখে বললো।
আয়ান ফ্রেশ হতে গেছে?
ও আসলে নাস্তা খাইয়ে রেডি করে দিবেন।
আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে তুমি কই যাচ্ছো? আমাকে নাস্তা খাইয়ে তারপর যাবে।
প্রাপ্তি একটু লজ্জা পেয়ে, মাথা ঠিক আছে তোমার?

নিহাদ-আরে ভাবী সমস্যা নেই খাইয়ে দেন।কার এমন কপাল, বিয়ের দিন বউয়ের হাতে খায়। লজ্জা পাওয়ার কোনো কারন নাই আমরাই তো।কথাটা বলেই নিহাদ আর রিমন হেঁসে উঠলো।

প্রাপ্তি কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো।

রিমন -প্রাপ্তি মনে হয় কষ্ট পাইছে।এই কথা বলা তোর উচিত হয়নি।

আয়ান -কষ্ট দেবার জন্যই তো বলছি।কেমন লাগে একটু দেখুক।অনেক উদার মনে করে নিজেকে।তার উদারতা ছুটাতে হবেনা?

নিহাদ-প্রাপ্তি কি তোর সাথে আজ যাবে মেয়েদের বাড়িতে।

আয়ান-যাবেনা মানে? ও এতো কিছু করেছে এইটুকু আর বাকী থাকবে কেন?
প্রাপ্তি !প্রাপ্তি ! এইখানে আসো তো।আয়ানের ডাকে দৌড়ে এলো প্রাপ্তি।
প্রাপ্তি -ডাকছো কেন? তুমি এখনো রেডি হওনি তাড়াতাড়ি করো।

আয়ান -তুমিও তো এখনো রেডি হওনি।

প্রাপ্তি -আমি রেডি হবো কেন? আমি যেতে পারবোনা, লোকে কি বলবে?

আয়ান -এতো কিছু করার পরও যখন লোকে কিছু বলে নাই তাহলে এখন কিছু বললে আমি আছি।আর আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে যাচ্ছি কার কি বলার আছে?

প্রাপ্তি -আচ্ছা তুমি রেডি হও আমি দেখছি।
কথাটা বলেই রুম থেকে আসার সময় আছমা বেগম বললেন
আয়ান যখন তোমাকে ছাড়া যাবে না তখন রেডি হয়ে নাও।

প্রাপ্তি -(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে)ঠিক আছে।আপনিও যখন বলছেন তাহলে আমি যাবো।দেখেছেন মা? আমার কপাল টা অনেক ভালো, নিজের স্বামীর বরযাত্রী হয়ে যাচ্ছি।আর কিছু না বলে প্রাপ্তি কান্না করতে করতে তার মায়ের কাছে গেলো।

প্রাপ্তির মা-আমার মেয়ে যে এতো উদার আমরা জানতামই না।আজ আমরা গর্ববোধ করি তোর মতো একটা মেয়ে আমরা জন্ম দিয়েছি।

প্রাপ্তি -মা! অন্তত তুমি আর কিছু বলো না।আমার ভাগ্যেই আয়ান নেই।যদি থাকতো ১৪ বছর পরে ওকে হারাতে হতো না।
আচ্ছা আমি রেডি হয়েনি।আমি যাওয়ার পর সব কিছু গুছিয়ে নিও।আমরা কাল সকালেই চলে যাবো।
প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে এইদিকে মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে।হয়তো কাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নাই তাই। আমি খেয়েছি কিনা আয়ান একবারও জিজ্ঞাস করলোনা।বিয়ে করবে না বলে বলে সবকিছু তার ঠিকি চলছে। শরীরটাও কেমন জানি ভালো লাগছেনা। কিন্তু কিছু করার নেই আমাকে যেতেই হবে আয়ানের সাথে।না হলে সে যাবেনা।

আয়ান ও রেডি হয়ে বেরিয়ে আসলো।
প্রাপ্তি কই তুমি এখনো হয়নি?

প্রাপ্তি -(মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এসে) হ্যাঁ, চলো।

সবাই যখন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে উঠতে যাবে তখনি প্রাপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার আগেই আয়ান প্রাপ্তি ধরে পেলে।
প্রাপ্তি কি হয়েছে?প্রাপ্তি !প্রাপ্তি !আয়ানের ডাকে প্রাপ্তির কোনো সাড়া নেই।

নিহাদ, রিমন ওকে হসপিটাল নিতে হবে।

আছমা বেগম-ওর মা বাবাই ওকে হসপিটালে নিতে পারবে।তুই এখন বিয়েবাড়িতে যাবি।

আয়ান -মা! আজ আর চুপ হয়ে থাকতে পারছি না।আমি তোমার কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়নি।শুধু প্রাপ্তি বলাতে আজ আমি এই পর্যন্ত এসেছি।আর প্রাপ্তি যতক্ষন না সুস্থ হচ্ছে এই বিয়েটা আমি কিছুতেই করবোনা।
আছমা বেগমকে কথা গুলো বলেই প্রাপ্তিকে গাড়ীতে উঠিয়ে আয়ান নিহাদ,রিমন, প্রাপ্তির বাবা,মা সবাই হসপিটালে চলে গেলো।
প্রাপ্তির বাবা যাওয়ার সময় আছমা বেগম কে বলেছেন ওনার মেয়ের কিছু হলে কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না।

ডাক্তার প্রাপ্তিকে খুব ভালো করে দেখলেন।
অনেক গুলো টেস্ট করাতে দিলেন।
ডাক্তার রিপোর্ট গুলো দেখে,
ডাক্তার -ওনার বাড়ীর লোক কে আছেন?

আয়ান -জ্বী আমি আছি।

ডাক্তার -কি হন আপনি?

আয়ান – ওর হ্যাজবেন্ড।

ডাক্তার-আপনি কি রকম হ্যাজবেন্ড।আমার মনে হয় আপনার ওয়াইফ কিছুদিন থেকে খাওয়া ধাওয়া ঠিকমতো করছে না।আর অনেক চিন্তিত থাকেন।আর এইসময় যদি এইভাবে চলতে থাকে মায়ের তো ক্ষতি হবেই সেই সাথে বাচ্চারও ক্ষতি হবে।

আয়ান -বাচ্চা!!! (অবাক হয়ে)ডাক্তার আপনি কি বলছেন? আমি কিছুই বুজতেছিনা।প্লিজ আমাকে একটু বুজিয়ে বলুন।

ডাক্তার -আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। কেন, আপনি জানেননা?

আয়ান খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে thanks, thanks

ডাক্তার অবাক হয়ে আরে আপনি করছেন কি?

আয়ান -আমি আপনাকে বলে বুজাতে পারবো না আজ আমি কতোটা খুশি।

ডাক্তারে রুম থেকে বেরিয়ে আয়ান নিহাদ আর রিমন কে জড়িয়ে ধরলো।
রিমন -কিরে ডাক্তার কি বলেছে? প্রাপ্তির কি অবস্থা?

প্রাপ্তির মা -কি হয়েছে বাবা তুমি এতো খুশি কেন?

আয়ান -মা! কি হয়নি সেটা বলুন।আপনি তো নানি হচ্ছেন।
সবাই অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু অবাকের মাঝেও আনন্দের সীমা নেই।

প্রাপ্তির জ্ঞান ফিরেই দেখ সবাই তার পাশে বসে আছে।চারদিক তাকিয়ে বুজতে পারলো সে হসপিটালে আছে।
কি ব্যাপার তুমি এইখানে বসে আছো।তোমার না বিয়ে করতে যাবার কথা।

আয়ান-হ্যাঁ,ঠিকি বলেছো তবে আমি আর করছিনা।কিছুদিন পর আমাদের ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিবো।

প্রাপ্তি – আমাদের ছেলেমেয়ে মানে? কি বলতে চাইছো?

প্রাপ্তির মা সব কিছু খুলে বললো প্রাপ্তিকে।
প্রাপ্তি মা হবে এইকথা শুনার পর থেকেই শুধু কান্না করছে আর কিছুই বলছেনা।

আয়ান-এইভাবে কান্নাকাটি করছো কেন?এমন একটা খুশির খবর শুনে কান্নাকাটি করছো?

প্রাপ্তি -আয়ান! মা কে সব বলেছো?মা শুনে কি বলেছে?
আয়ান -আমি খবরটা শুনার পর এতো এক্সাইটেড ছিলাম মাকে জানানোর কথা ভুলেই গেছি।
আচ্ছা ঠিকাছে মাকে ফোন দিয়ে এখনি বলছি।

আছমা বেগম-(দরজায় দাঁড়িয়ে)আমাকে আর ফোন দিতে হবে না।আমি নিজেই এসেছি।নিহাদ ফোন করে আমাকে সব বলেছে।এখন যতো কিছুই হয়ে যাকনা কেন কথা একটাই, বিয়ে আজকে হবেই।

আয়ান -(অবাক হয়ে)মানে? কি বলছো এইসব।আর মা যেই মেয়েকে বিয়ে করার কথা ছিলো তারা ফোন দিয়েছে ওই মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে।কেউ জেনে শুনে তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে আসবেনা।

আছমা বেগম -তা ঠিক বউ পাগলকে কে আর বিয়ে করতে আসবে। তারপরেও বিয়ে হবে।আর যার সাথে হবে সে হলো প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -আবার বিয়ে? মা! বিয়েটা যখন ঠিক করেছেনই এই বলদটার সাথে?যেই বউয়ের কথায় বিয়ে করতে চলে যায়।

আয়ান -এই ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু।আমি নিজের ইচ্ছায় যায়নি।তুমি বলেছো তাই।(প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকয়ে)মা আপনি বলেন আমি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ের কথা বলছি?

প্রাপ্তি -আমি বলেছি বলে বিয়ে করতে চলে যাবে? না! না!আমি মানবোনা,,,,,
এই ঝগড়া চলছে চলবে।যেই ঝগড়ার মাঝে ভালোবাসা আছে সেই ঝগড়া সারাজীবন চললেও অসুবিধে নেই।সবার ভালোবাসা এইভাবেই বেঁচে থাকুক সবার জীবনে।

সমাপ্ত

মাতৃত্ব পার্ট:২

0

মাতৃত্ব

পার্ট:২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান প্রাপ্তির কথা গুলো সহ্য করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে এক থাপ্পড় দিলো।প্রাপ্তি কিছু বলছেনা শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।

আয়ান -নিজের কাছে টেনে এনে। তোমাকে ছাড়া সুখে থাকার কথা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।যেদিন তোমাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এনেছি সেইদিন নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমার সব দুঃখ গুলোকে নিজের করে নিয়েছি,তোমার চাওয়া পাওয়া গুলোকে নিজের করে নিয়েছি।ভেবেছি যদি বাঁচতে হয় তোমাকে নিয়েই বাঁচবো।আর সেই তুমি আমায় বাদ দিয়ে এতো কিছু ভেবে পেলেছো?

প্রাপ্তি -(চোখের পানি মুছে)এই বিয়ে তোমাকে করতেই হবে।আমি তোমার আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।চলো মায়ের রুমে চলো।
প্রাপ্তি আয়ানের হাত ধরে টেনে আছমা বেগমের রুমে নিয়ে গেলো।

আছমা বেগম -আমাকে কথা শুনানো জন্য এইবার আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছো? কিরে আয়ান বউয়ের হয়ে কি বলবি বল?

প্রাপ্তি -আপনার ছেলে আমার হয়ে কিছু বলতে আসিনি।শুধু বলতে এসেছে এই বিয়েতে সে রাজি।

আছমা বেগম-(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)প্রাপ্তি যা বলছে তা কি সত্যি?

আয়ান প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষণ ছলছল চোখ নিয়ে তাকিয়ে হ্যাঁ বললো।
আয়ান মনে মনে ভাবছে,তুমি যখন তোমার স্বামীকে বিয়ে দেওয়ার এতো শখ জেগেছে দেখি এইবার সহ্য করো কিভাবে।আমি যতোটা না কষ্ট পাচ্ছি তার ছেয়েও দ্বিগুণ কষ্ট আমি তোমাকে দিবো।

প্রাপ্তি -মা! এইবার তো খেতে চলুন।আপনার ছেলেও কিছু খায়নি।

আছমা বেগম -ঠিক আছে চলো।

আছমা বেগমের খুশির শেষ নেই।ছেলেকে আবার নতুন করে বিয়ে দিবে। আত্মীয় স্বজন অনেককেই ফোন দিয়ে জানিয়েছে ছেলের বিয়ের কথা।কতো দিন পর মনে হচ্ছে এই ঘরে শান্তি পিরে এসেছে।
প্রাপ্তি ভাবছে আমি একজন কষ্ট পেয়েও যদি এই ঘরে শান্তি ফিরে আসে তাহলে এই কষ্ট আমি সারাজীবন পেতে রাজি।আয়ানের ও হয়তো বিয়ের পর পুরোনো সব ভুলে নতুন করে শুরু করবে।তখন হয়তো আয়ানের সুখটা নিজের চোখে দেখতে পাবোনা।কিন্তু এইটা তো জানোবো আমি চলে যাওয়াতে অনেকেই সুখে আছে।কথা গুলো ভাবতেই চোখের কোনে পানি চলে আসছে প্রাপ্তির।আয়ান দেখেও না দেখার ভাণ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

প্রাপ্তি রুমে এসে আয়ানকে আর কিছু না বলে নিজেও শুয়ে পড়লো।কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না প্রাপ্তির। বার বার আয়ানের দিকে তাকাচ্ছে।আর মাএ কয়টা দিন।হয়তো আর কখনো রাত জেগে এই মুখটা আর দেখা হবে না।মন কেন জানি বার বার বলছে প্রাপ্তি তুই ঠিক করিস নাই।এই মানুষটা তোকে অনেক ভালোবাসে।কিভাবে ছেড়ে থাকবি তাকে।
গভীর রাতে আয়ান উঠে দেখে প্রাপ্তি নিচে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আয়ান -কি ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?
(কথাটা বলতে বলতে আয়ানও প্রাপ্তির পাশে এসে নিচে বসলো।)
এইভাবে নিচে বসে আছো কেন? নাকি আমার সাথে এখন এক সাথে ঘুমাতেও ইচ্ছা করেনা।

(প্রাপ্তি কিছু বলছে না চুপ করে বসেই আছে)
যখন এতোই ভালোবাসো আমাকে তাহলে চলে যেতে চাইছো কেন?

প্রাপ্তি -(কথা ঘুরানোর জন্য) এখনে বসে আছো কেন?যাও ঘুমাও।সকালে তোমার অফিস আছেতো।রাত জাগলে সকালে উঠতে পারবেনা।

আয়ান বুজেছে প্রাপ্তি কথা ঘুরাচ্ছে।প্রাপ্তিকে কিছু বলেও লাভ নাই।আয়ানের কথা প্রাপ্তি কিছুতেই শুনবে না।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে।বাড়িতে অনেক গেস্ট চলে এসেছে।আছমা বেগম এমন ভাবে সব সাজ্জাচ্ছে মনে হয় ছেলের এই প্রথম বিয়ে। আগের যে একটা বউ আছে এইটা তার মাথাতেও আসেনা।
সব কাজ নিখুঁত ভাবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করছেন।মেয়ে পক্ষের লোকেরা আছমা বেগমকে বলেছে আপনাদের ছেলের হয়তো দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু আমাদের মেয়ের তো এই প্রথম তাই সবকিছুর যেন কমতি না থাকে।আছমা বেগম তাদের কথা মতো সব করছেন।
এইদিকে প্রাপ্তির বাবা মাকেও আসতে বলেছেন।প্রাপ্তি আগেই তার বাবা মা কে বলে দিয়েছে যদি মেয়েকে সুখি দেখতে চায় তাহলে এখানে এসে যেন কোনো ঝামেলা না করে।মেয়ের অনুরধে তারা এসেছেন ঠিকি কিন্তু আগেই বলেছে যাওয়ার সময় প্রাপ্তিকে নিয়ে যাবে।
সকাল থেকে প্রাপ্তি রান্না করেই যাচ্ছে গেস্টদের জন্য।তার স্বামীর আজ গাঁয়ে হলুদ বলে কথা কিছু কম হলে তো চলবেনা।কার এমন ভাগ্যে আছে যে নিজের স্বামী কে বিয়ে দিচ্ছে অন্য মেয়ের সঙ্গে। কাজের চাপে আয়ানকে একবার ও দেখা হলো না আজ।সকাল থেকে সেও অভিমান করে আমার সামনে আসছে না।এতো অভিমান আমার উপর? ও জানেনা! আমি ওকে না দেখে থাকতে পারিনা।এই যাহঃ আমি এই গুলো কি ভাবছি আজ থেকেতো আমায় অভ্যাস করতে হবে।
আয়ান ভালো করেই জানে প্রাপ্তি তাকে না দেখে থাকতে পারবেনা।কিন্তু রাগ করেই সকাল থেকে তার সামনে যাচ্ছে না।দেখি কতো সহ্য করতে পারে।রুমে বসে বসে আয়ান পুরোনো এলবাম গুলো দেখতেছে।কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে প্রাপ্তির সাথে তার।এর কিছুই আমি ভুলতে পারবোনা।প্রাপ্তির মা এসে দেখে আয়ান এলবামের দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

প্রাপ্তির মা-বাবা কেঁদে কি লাভ। তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো আমরা সবাই জানি।আমার মেয়েটাও তোমাকে ভালোবাসে।হয়তো ওকে এইখান থেকে নিয়ে গেলে বাঁচবে কি না আল্লাহ ভালো জানে।

আয়ান -মা! আপনি ভালো করেই জানেন আমি এই বিয়ে করতে চাইনি।কিন্তু কি করবো বলেন? প্রাপ্তি আর মার চাপাচাপিতে বিয়েটা করতে হচ্ছে।প্রাপ্তি হয়তো আমার সুখের জন্য সব কিছু ছেড়ে যেতে ছাইছে কিন্তু বিশ্বাস করুন এই বিয়েতে আমি কখনোই সুখি হতে পারবো না।

রাতে সব কিছু শেষ করেই সবাই যেই যার মতো ঘুমাতে চলে গেলো ।আর আয়ান আছে প্রাপ্তি কখন তার রুমে আসবে।সন্ধ্যার পর থেকে দেখা হলেও তেমন কথা হয়নি প্রাপ্তির সাথে।অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর প্রাপ্তিকে না আসতে দেখে আয়ান নিজেই খুঁজতে গেলো।গিয়ে দেখে সে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। প্রাপ্তির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর শাড়ীর আঁচল দিয়ে বার বার মুছছে। আয়ান অনেকক্ষন দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছে।
আয়ানের দিকে হঠাৎ চোখ পড়াতেই তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।
কি ব্যাপার আয়ান তুমি এইখানে? ঘুমাওনি এখনো?

আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসলো।বিয়ের পর একটা রাতের জন্যও আমি তোমাকে রেখে ঘুমাইনি।চলো রুমে চলো।

প্রাপ্তি- আয়ান ! ওই রুমের প্রতি কাল থেকে আমার কোনো অধিকার থাকবেনা।তাই আজ থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিলাম।আর আমাকে ছেড়ে থাকা আস্তে আস্তে তোমারও অভ্যাস হয়ে যাবে।আয়ান প্রাপ্তির কথায় কান না দিয়ে প্রাপ্তিকে কোলে উঠিয়ে নিলো।আয়ান প্রাপ্তির মায়ের দিকে তাকিয়ে মা আপনি কিছু মনে করবেন না।কি করবো বলেন? ভালো কথা ওর শুনতে ইচ্ছে করে না। তাই এইছাড়া আর কোনো উপায় দেখছিনা।

প্রাপ্তির মা -না বাবা আমি কিছু মনে করিনি।

প্রাপ্তি -আয়ান ভালো হচ্ছে না কিন্তু। নামাও আমাকে।
আয়ান প্রাপ্তির কোনো কথা না শুনেই প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে চলে এলো।
প্রাপ্তিকে দাঁড় করিয়ে কি বলবে এইবার বলো।সারাদিন তো দূরে দূরে ছিলে। এখন কথায় পালাবে?প্রাপ্তির! পালানো জায়গা এই আয়ানের বুকে আর কোথাও না।

প্রাপ্তি কিছু বলছে না।শুধু আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।মন কেন জানি বলছে প্রাপ্তি এখোনো সময় আছে।আয়ানকে হারিয়ে যেতে দিওনা।

আয়ান – কি হলো কি ভাবছো?

প্রাপ্তি -কিছুনা।

আয়ান -কিছুনা হলে মুগ্ধ হয়ে আমাকে এইভাবে দেখছো কেন?

প্রাপ্তি -আজ শেষ বারের মতো তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে দিবে? রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো।একটু পর মা আবার ডাকাডাকি শুরু করবে।এই কিছুক্ষন না হয় তোমার কোলেই মাথা রেখে ঘুমালাম।

আয়ান ও কথা না বাড়ায়ে আচ্ছা চলো।

প্রাপ্তি আয়ানের কোলে মাথা রেখে চুপ করে করে শুয়ে আছে।সেই আর এই জগতে নেই।কোনো এক ভালোবাসায় সে হারিয়ে গেছে।
আয়ান প্রাপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে,

আয়ান -প্রাপ্তি ! এই প্রাপ্তি ! ঘুমিয়ে গেছো?

প্রাপ্তি কোনো কথা বলছেনা।চুপ করে আয়ানকে আরও কাছে টেনে এনে আয়ানের ভালোবাসা অনুভব করছে।কথা বললেই কি যেন মিস হয়ে যাবে।কাল থেকে আয়ানকে তো আর এতোটা কাছে সে আর পাবেনা।
সকাল বেলা আয়ানকে ঘুমে রেখেই প্রাপ্তি উঠে চলে গেলো।বিয়ে বাড়ি বলে কথা বসে থাকলে চলবে না সব কিছু আমাকেই সামলাতে হবে।আজ এই জাগায় আমি আছি কাল থেকে অন্য কেউ এসে আমার নিজের হাতে সাজানো সংসারটা অন্য কারো হাতে থাকবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তি সবার জন্য চা বানাতে গেলো ।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আছমা বেগম নিজেই চা বানিয়ে পেলেছে।

প্রাপ্তি -আমি নিজেই এসে চা করতাম আপনি আমায় ডাকেননি কেন? শুধু শুধু আপনি কষ্ট করতে গেলেন।

আছমা বেগম-এতো কথা না বলে সবাইকে চা টা দিয়ে আসো।সবাইকে চা দিয়ে আয়ান কে উঠিয়ে দাও।

প্রাপ্তি সবাইকে চা দিয়ে আসার সময় দেখে আয়ানের ২ টা ফ্রেন্ড ড্রইংরুমে বসে আছে।
আরে ভাইয়া কখন এলেন আপনারা।কাল গাঁয়ে হলুদে আসেননি কেন?আয়ান কতো কষ্ট পেয়েছে বলুনতো।দেখেছেন? যার বিয়ে সে এখনো ঘুম থেকেই উঠিনি।কথায় আছে না যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।আমার হয়েছে সে এক জ্বালা।সব কিছু ওকে বলে বলে করাতে হয়।আর কাল থেকেতো আমি থাকবো না।হয়তো তার নতুন বউ এসে করবে।কথা গুলো অনবরতে বলে গেলো প্রাপ্তি ।
প্রাপ্তির এইরকম আচরণ দেখে আয়ানের ফ্রেন্ডেরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
রিমন -(আয়ানের ফ্রেন্ড) ভাবী! আপনি কিভাবে পারলেন নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের হাতে তুলে দিতে।আমার জীবনে এই রকম মেয়ে আমি ফাস্ট টাইম দেখেছি।

নিহাদ-(আয়ানের ফ্রেন্ড) ভাবী এখনো সময় আছে।

প্রাপ্তি -না ভাইয়া! ওর সুখের জন্য আমাকে এইটুকু করতেই হবে।আচ্ছা এইগুলো বাদ দিন।আমি নাস্তা নিয়ে আসছি,আয়ান রুমেই আছে আপনারা ওর কাছেই যান।আবার ওই বাড়িতে যেতে হবে।দেরি হলে মা আবার বকাবকি করবে।

আয়ান ! আয়ান ! নিহাদ আর রিমনের ডাকে আয়ানে ঘুম থেকে উঠে বসলো।

আরে তোরা কখন এলি?

নিহাদ-অনেকক্ষণ। আচ্ছা তুই সত্যি এই বিয়েটা করছিস?

আয়ান -না করে আর উপায় কি।তোদের কে তো সব আগেই বলেছি।

চলবে,,,,,

মাতৃত্ব পার্ট:১

0

মাতৃত্ব

পার্ট:১

#Rabeya Sultana Nipa

 

_নিজেকে কি মনে করো তুমি।এতো দেরিতে নাস্তা বানালে সবাই খাবেটা কখন।ঘুম থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠেই তো নাস্তাটা বানাতে পারো।অনেক সহ্য করেছি আর না।এইভাবে আর কতো দিন তোমাকে আমরা সহ্য করবো।এতোটা বছর তোমাকে সময় দেওয়া হয়েছে।এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখলাম না।আমার ছেলেটার জীবন তো আমি এইভাবে শেষ হয়ে যেতে দিতে পারি না।আমি আমার ছেলের বিয়ে ঠিক করেছি।সামনের সাপ্তাহে বিয়ে।মেয়ে পক্ষকে সব কিছু বলেই আমি বিয়েটা ঠিক করেছি।এইবার তুমি এইবাড়ী থেকে কবে যাবে সেটা চিন্তা করো। আমি চাইনা তুমি এই বাড়ীতে থাকো।তুমি এইবাড়ীতে থাকলে আমার ছেলে কখনোই সুখী হবেনা। তোমার এই অলক্ষুণে চেহারাটা আর দেখতে ভালো লাগছে আমাদের। কথা গুলো বলে আছমা বেগম তার নিজের রুমে চলে গেলো।
কথা গুলো এই কয়েক বছর থেকে শুনতে শুনতে হজম হয়ে গেছে। এখন হাজার বললেও গাঁয়ে মাখি না।কিছু করার নেই শুনতে আমাকে হবেই।
— আপনাদের তো আমার পরিচয়টা দেওয়া হলো না।আমি প্রাপ্তি।যিনি এতক্ষন আমায় কথা শুনাচ্ছিলেন তিনি আমার শাশুড়ি মা আছমা বেগম।ওনার একমাত্র সন্তান আমার স্বামী আয়ান।ওনি এতোটা খারাপ ছিলেন না।হয়তো এখন নিজের বংশের কথা চিন্তা করেই এখন আর আমাকে সহ্য হচ্ছে না।
এইবার আসল কথায় আসি।

__ড্রইংরুমে বসে আয়ান এতক্ষন তার মায়ের সবকথাই শুনছিলো।মাকে সে কিছু বলতে পারেনা কারণ মা যা বলছে সব সত্যি।প্রাপ্তিকে এই বাড়িতে বিয়ে করে এনেছে ১৪ টা বছর।৩ বছর ভালোবাসার পর অনেক কাঠখড় পুড়ে প্রাপ্তিকে বিয়ে করেছে সে।কিন্তু তাদের ঘরে এখনো কোনো সন্তান নেই।কথা গুলো ভাবতে ভাতেই প্রাপ্তি এসে বললো,,,

প্রাপ্তি -কি ব্যাপার আয়ান ! তুমি এইখানে বসে আছো? অফিসে যাবে না? যাও তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আছমা বেগম প্রাপ্তির কথা শুনে পাশের রুম থেকে ভাবতেছে এই মেয়ে কোণ ধাতু দিয়ে তৈরী এতো কথা বলে আসলাম তারপরেও হাঁসি মুখে কথা বলছে।আল্লাহ ভালো জানে।তবে যাই হোকনা কেন ওর প্রতি আমাকে দুর্বল হলে চলবেনা।

আয়ান -যাবো!তবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে খাটের উপর বসালো।

প্রাপ্তি -কি হয়েছে বলবে তো? এইভাবে টেনে নিয়ে আসছো কেন?

আয়ান প্রাপ্তির কোলে মাথা রেখে

প্রাপ্তি ! চলোনা আমরা কোথাও পালিয়ে যাই।এইভাবে আমি আর থাকেতে পারছিনা।না পারছি মাকে কিছু বলতে।না পারছি তোমার হয়ে কিছু বলতে।

প্রাপ্তি -কি বলছো তুমি এইসব? মাকে রেখে আমরা কোথায় যাবো?তুমি মায়ের একমাত্র সন্তান আমরা চলে গেলে মা কার কাছে থাকবে?

আয়ান -প্রাপ্তি! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি চাইনা তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাও।আমার কোনো সন্তান লাগবে না। শুধু তোমার ভালোবাসা হলেই হবে।জীবনে সবাই সব কিছু পায়না।আমি না হয় সন্তান পেলাম না।তাতে আমার কোনো আপসোস নেই।তুমি আমার পাশে থাকললেই হবে।প্লিজ চলো না।

প্রাপ্তি -অনেক হয়েছে এইবার রেডি হয়ে নাস্তা করে অফিসে যাও।

আয়ান -আমি যা বলছি মেনে নাও, পরে এমন যেন না হয়।সারাজীবনের জন্য তোমাকে প্রস্তাতে হয়
কথাটা বলেই আয়ান রেডি হতে চলে গেলো।

প্রাপ্তিও রুম থেকে আসতেই আছমা বেগম বললেন

আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বুজানো হচ্ছে।যতোই কিছু করোনা কেন বিয়ে আমি আমার ছেলেকে দিবোই।তোমার মতো একটা অলক্ষ্মী মেয়েকে এই সংসারে আমি রাখতে চাইনা।

প্রাপ্তি -মা আমি আপনার ছেলেকে বুজাতে যায়ইনি। ওই আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে।

আছমা বেগম-একদম মিথ্যা বলবেনা।কি মনে করেছো আমি কিছু বুজিনা।যতো কিছু তুমি করোনা কেন আমি সমানের সাপ্তাহে আমার ছেলেকে বিয়ে দিবোই।মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।শুধু আমার ছেলেটা রাজি হলেই হবে।

আয়ান তার মা আর প্রাপ্তির কথা গুলো শুনতে পেয়ে নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।রোজ রোজ এই গুলো তার আর ভালো লাগেনা। প্রাপ্তি এসে দেখে রাহাত নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেলো।প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে খাটের এক কোণায় বসে বসে ভাবছে সেইদিনের কথা যেই দিন মেঘলা এইবাড়ি বউ হয়ে এসেছিলো সবাই কতো আদর করতো।তার শাশুড়ি তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো।যখন বিয়ের ৫/৬ বছর হয়ে গেলো কোনো সন্তান হচ্ছিলোনা তখন আস্তে আস্তে তার শাশুড়িও পাল্টে গেলো।অনেক ডাক্তার দিখিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।হয়তো আয়ানের ভালোবাসায় আজও টিকে আছে এই বাড়ীতে।না হলে আরো আগে কোথায় হারিয়ে যেতো সে।না এইভাবে আর চলা যায়না।আয়ানেরও একটা ভবিষ্যৎ আছে।কিন্তু আমি কি করবো আমি যে তাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসি। আর আয়ান ! সেওতো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।মা কি সত্যি আয়ানকে বিয়ে করাবে? আমি ছাড়া আয়ানের জীবনে অন্য কোনো মেয়ে! এইটা আমি ভাবতেই পারবো না।
আর না ভেবেই উপায় কি! আমার জন্য তো আর ওর জীবনটা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।
প্রাপ্তি ! প্রাপ্তি ! শাশুড়ি মায়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে বললো মা! আমায় ডেকেছেন?

শাশুড়ি মা -রান্নাটা কখন করবে শুনি? এমনি তে তো সারাদিন শুয়ে বসে কাটাও।
তাড়াতাড়ি রান্নাটা করে আমায় উদ্ধার করো।

প্রাপ্তি – মা! সারাদিন তো আমিই সব কাজ করি।হয়তো আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেননা। তাই বলে মিথ্যা বলবেন কেন?

শাশুড়ি মা -তোমার এতো বড় সাহস আমি মিথ্যা বলছি? আজ আয়ান আসুক। হয়তো এই বাড়ীতে তুমি থাকবে নয়তো আমি।ও যদি এর কোনো বিহেত না করে আমি খাবার তো দূরের কথা একটু পানিও খাবোনা।

প্রাপ্তি -মা! আমি আপনাকে এইভাবে বলতে চাইনি।আপনি আমায় ভুল বুজতেছেন।

শাশুড়ি মা -তুমি আর একটা কথাও বলবেনা।
কথাটা বলেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রাপ্তিও আর কিছু বললো না।সেই ভালো করেই জানে এখন কিছু বললে আরো বাড়াবাড়ি হবে।এর ছেয়ে ভালো আয়ান আসুক সে সামলিয়ে নিবে।

সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো আছমা বেগম দরজা খুলেনি।প্রাপ্তি এর মাঝে অনেক বার ডেকেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রাপ্তি এসে ড্রইংরুমে বসে আছে।কি করবে বুজতে পারছেনা।আয়ান এসে দেখে প্রাপ্তি চুপচাপ চিন্তিত হয়ে বসে আছে।

আয়ান-কি হয়েছে প্রাপ্তি ? এইভাবে বসে আছো কেন?

প্রাপ্তি -আয়ান! মা সকাল থেকে কিছু খায়নি।দরজা বন্ধ করে বসে আছে।তুমি আসতে আজ এতো দেরি করলে কেন? এইভাবে না খেয়ে থাকলে মার শরীর খারাপ করবে।তুমি বললেই দরজাটা খুলবে।

আয়ান-তোমরা শুরু করেছো কি?আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবেনা? এখন চলো দেখি দরজা খুলে কিনা।

আয়ান কথাটা বলতে বলতে তার মায়ের রুমের দজার সামনে গিয়ে বললো।
মা! মা! দরজাটা খুলো! মা তুমি কি শুনতে পাচ্ছো। দরজাটা খুলো প্লিজ।

আছমা বেগম দরজাটা খুলে চুপহয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান -মা কি হয়েছে বলোতো? তোমরা দুজনে কি আমায় শান্তিতে থাকতে দিবেনা? সারা দিন অফিস করে আসছি।এসে যদি তোমাদের ঝগড়াঝাটী দেখি তাহলে ভালো লাগে বলো?

আছমা বেগম দরজা খুলেছে দেখে প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেছে।এখন এইখানে থাকলে তাকে আরো কথা শুনতে হবে।

আছমা বেগম -আয়ান রুমে আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।

আয়ান -মা আমি ফ্রেশ হয়ে এসেই তোমার সাথে কথা বলবো।আর তুমিও খেয়ে নাও।

আছমা বেগম -না! যা বলার এখনোই বলবো।আর তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে আমার এই জীবন রেখে লাভ কি।নেজের ছেলেই যখন পর হয়ে যায় তাহলে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না।

আয়ান-(দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে) আচ্ছা এখানে এসে বসো কি বলবে বলো?

আছমা বেগম -আমি আবার তোকে বিয়ে দিবো।আমি মেয়েও ঠিক করে এসেছি।তুই শুধু বিয়েতে রাজি হলেই হবে।

আয়ান -মা! তোমার কি মাথা ঠিক আছে? আমি প্রাপ্তিকে ছাড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।এই কথা তোমাকে আর কত বুজাবো?

আছমা বেগম-ঠিকিতো ওই মেয়েকে তুই ছাড়বি কেন। জানিস! আজ তোর বউ আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে।কয়েদিন পর তো আমাকেই এই বাড়ী থেকে তাড়াবে।আমি এতো কথা বুজিনা,এই মেয়ে থাকুক আর না থাকুক তোকে বিয়ে করতেই হবে।

আয়ান -প্রাপ্তি এইরকম মেয়েই নয়। ঠিক আছে তুমি আমাদের সন্তান চাওতো আমরা একটা ছেলে বা মেয়ে দত্তক নিবো।

আছমা বেগম-না! আমি বাহিরের কারো সন্তান এই বাড়ীতে চাইনা।ঠিক আছে তুই যদি বিয়ে না করিস তোর চোখের সামনে দিনের পর দিন আমি না খেয়ে থাকবো দেখি তোর সহ্য হয় কি করে।যখনি বলবি তুই বিয়েতে রাজি তখন আমি খাবো এর আগে নয়।
আয়ান মায়ের মুখ থেকে এইরকম কথা শুনে উঠে চলে গেলো।রুমে গিয়ে প্রাপ্তির সাথে কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রাপ্তি আড়াল থেকে তাদের সব কথাই শুনেছে।প্রাপ্তি ভাবছে যেই করেই হোক আয়ানকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে হবে।ওর বিয়েটা দিয়েই আমি বাবার বাড়ী চলে যাবো।শুধু শুধু এইখানে থাকলে আয়ানও কষ্ট পাবে। আয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে প্রাপ্তি কপালে হাত দিয়ে খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

আয়ান -এইভাবে বসে আছো কেন? খেতে দাও ক্ষিদে পেয়েছে।

প্রাপ্তি – হ্যাঁ! খেতে দিবো।তবে তোমাকে একা নয় মা সহ এক সাথে বসে খাবে।চলো আমার সাথে।

আয়ান -কোথায়?

প্রাপ্তি -মায়ের রুমে।আমি সব শুনেছি মা তোমাকে কি বলেছে।তুমি এখন মাকে গিয়ে বলবে তুমি বিয়ে করবে।

আয়ান-(প্রাপ্তিকে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে)তুমি কি বলছো তুমি জানো?পাগলের মতো মুখে যা আসে তাই বলো।একবার নিজের কথা ভেবে দেখেছো? আমি বিয়ে করলে এই বাড়ীতে যে আসবে সে তোমাকে টিকতে দিবে? কেন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছো।

প্রাপ্তি -কে বলেছে আমি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ীতে থাকবো?আমি কথা দিচ্ছি তোমার বিয়ের পর এই বাড়ী ছেড়ে আমি চলে যাবো।আর কখনো তোমাদের কাছে আসবোনা। কোনো অধিকার চাইবোনা।শুধু তুমি সুখে থাকবে আমি এটাই চাই।

চলবে,,,,,,

ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব

5

ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব

#Rabeya Sultana Nipa

__প্রাপ্তি আয়ানের বুকের সাথে মিশতেই বুজে গেছে এই আর কেউ নয়,তার পরী তার বুকে এসে পড়েছে।প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে।এইযে সেই শান্তি যা আমার আয়ানের বুকে মাথা রাখলে পেতাম।এ মানুষটা তো আর কেউ নয় এই যে আমার আয়ান।আয়ানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আয়ান নিজের দুই হাত দিয়ে প্রাপ্তির গাল দুটো ধরে,পরী একটা ভুলের শাস্তি যে ২৬ টা বছর পেতে হবে আমি ভাবিনি।পরী তোমার একবারো মনে হয়নি তোমার আয়ান কখনো তোমায় ঠকাতে পারেনা।

(আদর আর আশফির দুই জোড়া চোখ বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে মাকে দেখছে,)
প্রাপ্তি হঠাৎ তানিয়ার কথা মনে পড়তেই গাল থেকে আয়ানের হাত নামিয়ে, মিস্টার আয়ান আপনি কোথাও ভুল করছেন। আমি আপনার পরী নয়।আপনার পরী তো সেই মেয়ে যাকে কাছে পাবার জন্য আপনি আমায় মিথ্যা বলেছিলেন।
(আয়ান আর প্রাপ্তি ভুলেই গিয়েছিলো তাদের ছেলেমেয়ে তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
প্রাপ্তিকে নিজের কাছে হেঁচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে, প্রাপ্তি সেইদিন রাতে তুমি আমার সাথে চিট করছো,সেই রাতে তো আমি তোমাকে সবকিছু বলতেই এসেছিলাম কিন্তু তুমি সেইদিন রাতে নিজের ভালোবাসায় আমাকে ফাঁশিয়ে দিয়েছিলে।তোমার ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।পরে যখন তোমাকে বলতে ছেয়েছি তুমি আবোলতাবোল বকে আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছো।পরী আজ আমি সেই সুযোগ হাত ছাড়া করবোনা।
আদর আর আশফির বুজতে বাকি নেই ইনিই তাদের বাবা।তবুও তারা চুপ করে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে।
প্রাপ্তি নিজেকে আয়ানের কাছ থেকে ছাড়ার চেষ্টা করছে আয়ান প্রাপ্তিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,পরী তুমি যতোই চেষ্টা করো আয়ান তোমায় ছাড়ছেনা।পরী ওই তানিয়া নামের কেউ আমার মনের আসনে ছিলোনা।তানিয়া শুধুই আমার ফ্রেন্ড ছিলো।আয়ান প্রাপ্তি কে তানিয়ার ব্যাপারে এক নিশ্বাসে বলতে লাগলো।পরী তুমি আসার কয়েকদিন পরেই তানিয়া মারা গেছে।আয়ানের মুখে সব শুনে প্রাপ্তি নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।সেই ভালো করেই জানে আয়ান তাকে কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা।প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আয়ানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা তার নেই।আজ নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে প্রাপ্তির। কি ভাবে পারলো তার আয়ানকে এতো কষ্ট দিতে।আয়ান আর প্রাপ্তির সাথে সাথে আশফি আর আদরও কান্না করে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ পরে আয়ান চোখ মুছে প্রাপ্তিকে বুক থেকে সরিয়ে দাঁড় করিয়ে,প্রাপ্তি আমার আশফি কই? প্রাপ্তি চোখ দিয়ে ইশারায় আশফিকে দেখাতে আয়ান আশফির দিকে তাকিয়ে হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে, ভাগ্যের কি পরিহাস নিজের মেয়েকে কাছে পেয়েও চিনতে পারলামনা।আয়ান হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আশফির দিকে, আশফি প্রাপ্তির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তি মাথা নাড়াতেই আশফি দৌড়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আয়ান কাঁদতে কাঁদতে আমার মেয়ে আমার সামনে ছিলো তবু্ও বাবা তোকে চিনতে পারিনি।

আশফি -এতে তোমার কোনো দোষ নেই।তোমার ভালোবাসা আমাদের ভাগ্যে ছিলো না।
প্রাপ্তির আদরের দিকে চোখ পড়তেই, আদর তুই দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?কাছে আয়?
আয়ান আশফিকে ছেড়ে দিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, ওর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?
কথাটা শুনে আদর কাছে আসতে গিয়ে ও থেমে গেলো।বাবাকে পেয়ে খুশি হলেও বাবার মুখ থেকে এমন কথা আশা করেনি আদর।সব কষ্ট মনে লুকিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।প্রাপ্তি পিছন থেকে বার বার ডাকলেও কোনো সাড়া দেয়নি আদর।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে এইটা কি করলে তুমি? তোমার কথায় আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে।কিভাবে ওর অভিমান ভাঙাবো আমি?
আয়ান -এক মিনিট! তোমার ছেলে মানে?প্রাপ্তি তুমি কি,,,,,,
এমন সময় সাবিত সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে এসে, না! আদর তোমারই সন্তান।
কথাটা শুনে আয়ান অবাক হয়ে প্রশ্ন ভরা চোখ নিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকালো,
প্রাপ্তি -হ্যাঁ আদর তোমার সন্তান।আমি তোমায় ঠকায়নি সেইদিন আমিও জানতাম না আমি প্রেগন্যান্ট। (সাবিত সাহেবের দিকে তাকিয়ে) বাবার বাসায় যাওয়ার পর বুজলাম আমি আবারও তোমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।কথা গুলো বলেই প্রাপ্তি দৌড়ে আদরের রুমে দরজার সামনে দাঁড়ালো।আয়ানও পিছু পিছু আসলো।

প্রাপ্তি -আদর! এই আদর! তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস মা জানি।কিন্তু তোর বাবা তো জানে না।প্লিজ বাবা রাগ করিস না দরজাটা খোল।

আয়ান-আদর! তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।আদর আমি যে আমার ছেলেকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই।আমার ছেলেটা যে কষ্ট পেয়েছে আমি এক নিমিষেই ভুলিয়ে দিবো।তুই শুধু একবার দরজা খোল।

প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে, আদর তুই মায়ের কথা শুনবিনা।কথাটা বলতেই দরজা খুলে দিলো আদর, প্রাপ্তি ছেলেকে জড়িয়ে ধরে এতো অভিমান কেউ করে?

আদর- নিজের জন্মদিনে কেউ কান্না করে?
আয়ান এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো।
আদর -সরি! আংকেল আপনাকে কি বাবা বলে ডাকতে পারি?
ছেলের কথা শুনে আয়ান আদরের পেটে হালকা ঘুসি দিয়ে, আংকেল বললে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।বাবা ছেলের কথা শুনে সবাই হাঁসতে লাগলো।
রাতে খাওয়াদাওয়া করে সারারাত বসে সবাই আড্ডা দিতে লাগলো।

সকাল ৯.০০ টা সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। আকাশ আর আবিদ চৌধুরী পেপার পড়ছে, আয়েশা বেগম আর মুনিয়া কিছু একটা নিয়ে বসে গল্প করছে।সুমি রান্নাঘর থেকে এসে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে হা করে আছে।আয়ান আর প্রাপ্তি ভিতরে ঢুকছে এইটা তো চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা।সে সপ্ন দেখছে নাতো।সুমির দিকে আকাশের চোখ পড়তেই নিজেও দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে,বাবা দেখো কে এসেছে?আবিদ চৌধুরী হাতের পেপারটা রেখে তাকাতেই উচ্ছ্বাসিত হয়ে আরে,,,,আরে,,, আয়েশা দেখো কে এসেছে, আমার ঘরের লক্ষ্মী ফিরে এসেছে।মুনিয়াও অবাক হয়ে ম্যাম!
প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগমকে সালাম করে আশফি আর আদরকেও চোখ দিয়ে ইশারা করলো দাদা দাদীকে সালাম করতে।
আয়ান -বাবা! তোমার নাতিনাতনি।

আবিদ চৌধুরী -ডাক্তার আমার নাতনি ? (অট্র হাঁসি দিয়ে)কিন্তু নাতি?

আয়ান-বাবা আমি বুজেছি তুমি কি বলতে চাইছো। কিন্তু হ্যাঁ ও আমার সন্তান তারপর আয়ান সব বললো সবাইকে।তবে তোমাদের জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে শুধু আমার মেয়ে ডাক্তার নয় আমার ছেলেও ডাক্তার।
হঠাৎ প্রাপ্তির মুনিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মুনিয়া তুমি এইখানে?
সুমি-প্রাপ্তি তুই মুনিয়াকে চিনিস? ও আমার মেয়ে!
প্রাপ্তি -এইজন্যই মুনিয়া আমায় ফাস্ট দিনিই বলেছে ম্যাম আপনাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।

মুনিয়া-এখন তো এইটা সত্যি আমি তোমায় ছবিতে দেখেছি।
আর কাকাই ম্যাম আমার কাকী মা! ভাবতে পারছো আমি কতোটা ভাগ্যবান। আর আমার একটা ভাইয়া একটা আপুও আছে।

আবিদ চৌধুরী -আয়ান আমার ঘরের লক্ষ্মী ফিরে এসেছে এখন আর আমার কোনো চিন্তা নেই। আমার লক্ষ্মী আজ থেকে আমার বাড়িতে থাকবে। আকাশ! আসিফকে ফোন দিয়ে খুশির খবরটা দাও।সুমি আমার নাতিনাতনি কে ওদের রুম দেখিয়ে দাও।আয়ান তুই প্রাপ্তিকে নিয়ে রুমে যা।
প্রাপ্তি -বাবা আপনি কিছু মনে করবেন না! আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবোনা।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, মানে?
প্রাপ্তি করুন গলায় বলতে লাগলো, বাবা বিপদের সময় আমি আমার আরেকজন বাবাকে পেয়েছি।সেই মানুষটাকে রেখে আমি থাকি কি করে?
আবিদ চৌধুরী অট্র হাঁসি দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে, এই কথা! উনাকেও এইবাড়িতে নিয়ে আয়।আমরা সবাই এক সাথে থাকবো। এই বুড়ো বয়সে আর তোদের হারাতে চাইনা।এই বুড়ো দুটো মানুষের কথা তুই একবার ভাববিনা?
প্রাপ্তি আবিদ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে, বাবার কথা মেয়ে কি কখনো ফেলতে পারে?
মুনিয়া আশফিকে হাত ধরে, আপু চলো তোমার রুমে।আমরা দুই বোন জমিয়ে আড্ডা দিবো।
আদর চুপচাপ হয়ে সোফায় গিয়ে বসে পুরো বাড়ি টা কে দেখছে।আজ সে তার বাবার বাড়ি এসেছে।মনে শান্তি ও লাগছে।কিন্তু অনেক গুলো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে মাকে সব গুলো প্রশ্ন একসাথে করে ফেলি।না! প্রশ্ন আমি মাকে করবো না।এতে মা হয়তো কষ্ট পাবে।
ঘন্টা দুয়েক পরেই এক এক করে সবাই চলে আসতে লাগলো,নিলিমা বেগম আর আজাদ সাহেব তো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে একাকার। আসিফ প্রাপ্তির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে হচ্ছে এইতো কিছু দিন হলো আমার সেই ছোট্ট প্রাপ্তি সব কিছু সবাইকে ছাড়া কতো নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে নিয়েছে।ছেলে মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছে।প্রাপ্তি আসিফের কাছে এগিয়ে এসে, কিরে ভাইয়া কি ভাবছিস?

আসিফ-আমার বোনটাকে দেখছি বলে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরলো।
ঝিনুক রেশী অভ্র সবাই এসেছে।ঝিনুকের মেয়ের রুমকিও এসেছে তার দুই ছেলেকে নিয়ে।

প্রাপ্তি -রেশী তোর ছেলে মেয়ে আসেনি?

রেশী -ভাবী তোমরা তো হঠাৎ করেই এসেছো তাই আনতে পারিনি।ওরা ভার্সিটিতে আছে। ওদের ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি এইখানেই আসতে।
আজ চৌধুরী বাড়ি আবার সবাই মিলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।আনন্দ দুঃখ সবকিছু সবাই ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আড্ডা দিয়ে যেই যার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো।
আয়ান বারান্দায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।প্রাপ্তি রুমে এসে আয়ানকে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে,তারা গুনছো না কি চাঁদ দেখছো?
প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে দুটোই।

প্রাপ্তি -আয়ান! তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো তো?
আয়ান মুচকি হেঁসে,পরী প্রিয় মানুষের অন্যায় গুলো কখনো অন্যায় ভাবতে নেই।তাই ক্ষমা করার প্রয়োজন পড়েনা।
প্রাপ্তি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার মতো জীবন সাথী পাওয়া প্রতিটি মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
প্রাপ্তি কথা গুলো শেষ করে আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই, কি দেখছো এমন করে?

আয়ান – চাঁদ দেখছি।
প্রাপ্তি – চাঁদ তো আকাশে।কিন্তু তুমি তো আমার দিকে তাকিয়ে আছো।
আয়ান প্রাপ্তিকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে তোমার মনে আছে পরী? আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি যখন ওই দূর আকাশের চাঁদ
দেখবে তখন আমি আমার পাশে যে চাঁদ থাকবে সেটা দেখবো।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে আয়ানের বুকে মাথা রেখে তোমার পাগলামি গুলো বাদ দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান আর দেরি না করে সত্যিই প্রাপ্তিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।

সমাপ্ত

(শেষে একটা কথাই বলতে চাই মানুষ বুড়ো হতে পারে কিন্তু তাদের ভালোবাসা কখনো বুড়ো হতে পারেনা।)

ধর্ষিতাবউ২ পার্ট:৮

0

ধর্ষিতাবউ২

পার্ট:৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

_মুনিয়া বাসায় এসে সোজা আয়ানের রুমে গিয়ে প্রাপ্তির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ম্যাম কি সত্যি বলেছেন? কাকীর সাথে উনাকে আমি গুলিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এতটা মিল কি করে হতে পারে। আয়ান রুমে এসে মুনিয়াকে প্রাপ্তির ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে,মুনিয়া! এই সময় এইখানে?
মুনিয়া -কাকাই! কাকীর আর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?

সুমি মুনিয়াকে তার রুমে খুঁজে না পেয়ে আয়ানের রুমে এসে দেখে, কিরে এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
মুনিয়া -কাকা আমি তোমার সাথে পরে এসে কথা বলছি।

মুনিয়া কলেজে আসতেই প্রাপ্তির একটা ছবি নিয়ে আসলো কিন্তু প্রাপ্তিকে দেখানোর সাহস পাচ্ছেনা। ক্লাস শেষ করেই মুনিয়া আগে বেরিয়ে পড়লো।আদর গাড়ি থামিয়ে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই মুনিয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে,

আদর -এই মেয়ে চোখে দেখতে পাওনা? হাঁটো কি ভাবে?

মুনিয়া-সরি! আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই।আপনার লাগেনিতো?

আদর -না তেমন লাগেনি।
প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে?

আদর -না মা! কিছু হয়নি। তুমি চলো।
মুনিয়া অবাক হয়ে ম্যাম আপনার মা?

আদর -হ্যাঁ আমার মা! আমার শ্রেষ্ঠ মা!
মুনিয়া কিছু না বলে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।কাকাই আজ আসতে পারবে না আমাকে নিজেই বাড়ি ফিরতে হবে।কিন্তু কাল থেকে আমি যা ভেবে আসছিলাম তার সাথে তো আমার ভাবনার কোনো মিলই নেই।আমি ভেবে ছিলাম আমরা হয়তো কাকীকে পেয়ে গেছি।কাকাইকে সারপ্রাইজ দিবো ম্যামকে সামনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু এখন দেখছি ম্যাম আমার কাকী নয়, কারণ আমার কোনো ভাই নেই।ছিলো শুধু আশফি আপু।আর কাকী তো আশফি আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।ম্যাম সত্যিই বলেছিলো, কাকীর সাথে আমি ম্যাম কে গুলিয়ে ফেলেছি।

আজ সকাল থেকেই আবিদ চৌধুরীর শরীরটা ভালো না।আয়ান নিজের রুমে বসে অফিসের ফাইল গুলো দেখছে, সুমি হঠাৎই এসে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, আয়ান তাড়াতাড়ি নিচে আসো বাবার শরীর খুব খারাপ। তোমার ভাইয়া ওইখানেই আছে।।
আয়ান হাতের কাজ রেখে, কখন থেকে? তোমরা তো আমাকে কিছু বলোনি।কথা গুলো সুমিকে বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।

হসপিটালের করিডোরে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।আবিদ চৌধুরীকে একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছেন।ডাক্তার যাওয়ার সময় বলে গেছে নতুন ম্যাডাম এসে দেখে যাবেন।
সন্ধ্যায় আশফি এসে আবিদ চৌধুরীর কেবিনে গিয়ে ভালো করে দেখে রিপোর্ট সব গুলোই চেক করে
মোটামুটি ভালোই। আবিদ চৌধুরীর মাথায় হাত রেখে কেমন লাগছে আপনার কাছে?আর এই বয়সে আপনার কিসের চিন্তা বলুন তো?

আবিদ চৌধুরী -সেটা তো তোমাকে বুজাতে পারবোনা।

আশফি – সিস্টার উনাকে মেডিসিন গুলো ঠিক মতো দিয়ে দিও।আমি আসছি।
আশফি কেবিন থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবছে কাল মায়ের জন্মদিন রাত ১২.০০ টার আগেই বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো গাঁয়ের ধাক্কা খেয়ে,, সরি

আয়ান -না মা মনি! সরি তো আমার বলা উচিৎ। আমি তাড়াহুড়ায় তোমাকে দেখতে পাইনি।
আশফি কিছু বলতে যাবে এর আগে আদর এসে, আপু তুই এইখানে সারা হসপিটাল তোকে খুঁজেছি। আয়ান পিছনে ফিরে আদরকে দেখে অবাক হয় আরে আদর তুমি এইখানে? অবশ্য তুমি তো ডাক্তার হসপিটালে থাকারই কথা।

আদর -আংকেল! আপনি এইখানে?

আয়ান -আমার বাবাকে নিয়ে এসেছি।

আদর -আংকেল এই হচ্ছে আমার বড় বোন আশফি যার কথা আপনাকে বলেছিলাম।

আশফি -আদর উনাকে তুই আগে থেকে চিনিস?

আদর -আপু উনার সাথে আমার এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।উনার মেয়ের নাম ও আশফি।

আশফি-ও আচ্ছা।তুই এখন হসপিটালে কি করছিস?

আদর -ভুলে গেছিস কাল মায়ের জন্মদিন। আর তুই এখনো হসপিটাল আছিস তাই নিতে আসলাম।
জন্মদিনের কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ আজ তার পরীর ও জন্মদিন। প্রতি বছর এইদিনে সে একা একাই কাটায়।

আশফি -আংকেল আপনি কি কিছু ভাবছেন?

আয়ান-(ভাবনা থেকে ফিরে এসে)না কিছু না! তুমিই মনে হয় বাবা কে দেখেছো? এখন কেমন আছে উনি।

আশফি- অনেকটাই সুস্থ।ইচ্ছা করলে কালকেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।আর হ্যাঁ উনার বিশেষ যত্ন নিবেন।

আদর আশফির কথা শেষ হতেই, আংকেল কাল আপনি আমার মায়ের জন্মদিনে আসুন না।আমার মা আপনাকে দেখলে খুশি হবেন।

আয়ান-না আদর! অন্য একসময় যাবো।

আশফি -আংকেল চলুন না। আসলে আমরা এইখানে কাউকেই চিনিনা।আদর যখন আপনাকে আগে থেকেই চিনে তাহলে তো আর অসুবিধা নেই।

আশফির কথা শুনে তোমরা এইখানে নতুন নাকি?

আদর -জ্বি আংকেল।এখন কি! যাবেন তো?

আয়ান -এইখানে কোথায় এসেছো তোমরা?

আশফি বাড়ির ঠিকানা বলতেই আয়ান অবাক হয়ে, আরে ওই বাড়িটা তো আমার ছিলো।
আশফিও বিস্মিত হয়ে তার মানে বাশার আপনার কথা বলেছিলো?
আপনার ওয়াইফ,,,,আদর আশফিকে থামিয়ে, তাহলে তো আংকেল ভালোই হলো। কাল যেনো আমরা আপনাকে আমাদের বাসায় দেখি।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে, আচ্ছা চেষ্টা করবো।

আশফি -তাহলে আংকেল আমরা আসি!আর আপনার বাবার দিকে খেয়াল রাখবেন।

সাবিত সাহেবকে খাইয়ে প্রাপ্তি শুয়ে দিয়ে বাবা কালকের দিন তোমার মনে নেই তাই না?

সাবিত সাহেব -কেনোরে মা! কালকের দিন,,,, ওহঃ আমি তো ভুলেই গেছি।কাল তো তোর জন্মদিন।আমি ভুলেই গেছি।আমার নাতিনাতনিরা কাল যে ওদের মায়ের জন্মদিন তারা কি ভুলে গেছে?..
রাত ১২.০০ টা আশফি আর আদর একটা কেক নিয়ে এসে happy birthday to you আমাদের লক্ষ্মী মা।
প্রাপ্তি আর সাবিত সাহেব অবাক হয়ে,
সাবিত সাহেব -তোরা ভুলিসনি?

আদর-না নানা ভাই! মায়ের জন্মদিন আমরা ভুলতে পারি?
চলো মা! কেক কাটো।
ছেলেমেয়ের কান্ড দেখে চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। ২৬ বছর পর আবার এই শহরে তার জন্মদিন পালন করছে তার ছেলেমেয়েরা। আয়ানের হয়তো মনেই নেই আজকের দিনের কথা।তার পরীর জন্মদিনে সবসময় সেই সারপ্রাইজ দিতো।
মা! তুমি এতো কি ভাবছো?তাড়াতাড়ি কেক কাটো।আশফির কথা শুনে ভাবনা থেকে ফিরে এসে আমার ছেলেমেয়ে সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, হ্যাঁ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় কথা হলো তোর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে ।

আশফি -তুমি থাকতে আমার আর বিয়ের দরকার আছে?

আদর -আচ্ছা ঠিক আছে মা এইবার তুমি কেকটা কাটো।
প্রাপ্তি কেক কেটে সবাইকে এক এক করে খাইয়ে দিলো।

আদর কেক খেতে খেতে,মা! কাল আমাদের বাসায় একজন গেস্ট আসবে।আসলে এইখানে আসার আগে উনার সাথে আমার পরিচয় হয়।আজ আবার আপুর হসপিটালে দেখা হয়েছে।তাই আপু সহ উনাকে কাল আসার জন্য ইনভাইট করে আসলাম।

প্রাপ্তি -ভালো করেছিস।এখন যা রাত অনেক হয়েছে।বাবা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি।

সকাল সকাল উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলো।বারান্দায় আসলে তার মন ভালো হয়ে যায়।বাড়িটা যে বিক্রি করেছে সেই লোকটার পছন্দ আছে।বারান্দায় বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে, লোকটার সাথে আমার অনেকটাই মিল আছে ।আশফি এককাপ কফি নিয়ে প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে না দেখে বারান্দা গিয়ে, জানতাম তুমি এইখানেই আছো।এই নাও তোমার কফি।
প্রাপ্তি কফি হাতে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতেই,
আশফি-আমি এইখানে কেনো এসেছি জানো?
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে, কেনো?

আশফি -আজ তুমি কলেজে যাবে না।আজকের এই বিশেষ দিনটি আমরা একসাথে থাকতে চাই।

প্রাপ্তি -ওকে মহারানী।
আশফি আর আদর বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।মায়ের জন্মদিন বলে কথা।এই শহরের কাউকে তেমন চিনেনা।এসেছে মাত্র কয়েকদিন হলো ব্যস্ততায় কারো সাথে তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি।
বাশার এসে দেখে প্রাপ্তি নিজেই সব রান্না করেছে।সন্ধ্যা হয়ে এলো, সাবিত সাহেব বাশার কে দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজে রুমে ডেকে পাঠালেন।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেবের রুমে যাবার জন্য পা বাড়াতেই,মা! আগে তুমি রেডি হয়ে আসো তারপর নানা ভাইয়া ঘরে যাবে।আদর আবার ওই আংকেল কে এগিয়ে আনতে গেছে।আদর এসে যদি দেখে তুমি রেডি হওনি তাহলে তোমার খবর আছে।
প্রাপ্তি আশফিকে আর কিছু না বলে রেডি হয়ে সাবিত সাহেবের রুমে গেলো।
প্রাপ্তিকে দেখে সাবিত সাহেব বসে, আয় মা! আমার পাশে বস!
আজ তোর জন্মদিনে আমার দিবার মতো তেমন কিছু নেই।তবে একটা জিনিস আছে, কথাটা বলে বালিশের নিচ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে, এই নে!
প্রাপ্তি কাগজ গুলো হাতে নিয়ে বাবা এই গুলো তো জায়গার দলিল।
সাবিত সাহেব -হুম,আমার যা কিছু আছে আজ থেকে সব তোর।আমার তো কেউ নেই এইগুলো দিয়ে আমি কি করবো।কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিনে এইগুলা আমার মেয়েকে আমি উপহার দিলাম।
প্রাপ্তি কান্না জড়িত কন্ঠে, বাবা আমার এইসব কিছুই চাইনা।এই অভাগী কে তুমি তোমার নিজের মেয়ে বলে সমজে স্বীকৃতি দিয়েছিলে এইটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার।
বাশার রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে, খালাম্মা ভাইজান আর ওই মামা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে, আপনাকে ভাইজান ডাকতেছে।

প্রাপ্তি -বাশার তুমি যাও আমি আসছি।

আয়ান ড্রইংরুমে বসে আছে,সব কিছু দেখে একটু অবাক হলো।বাড়িটা সে যে ভাবে সাজিয়েছে সেইভাবেই আছে।শুধু দেওয়ালের ছবি গুলো এরাই লাগিয়েছে, আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো,এই সে কাকে দেখছে আশফি আর আদরের সাথে আমার প্রাপ্তি, আয়ান সোফা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ছবির দিকে এগুতে লাগলো।এইদিকে প্রাপ্তি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচতে মুচতে ড্রইংরুমে এসে আয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়েই আয়ানের বুকের সাথে মিশে গেলো।

চলবে,,,,,,,